আল্লাহর দিকে আহ্বান
এ কে এম নাজির আহমদ
বইটির অডিও শুনুন
গোড়ার কথা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইচ্ছা করলেন তিনি এক নতুন জীব সৃষ্টি করবেন যে হবে পৃথিবীতে তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি। আদমের (আ) সৃষ্টি আল্লাহ্র সেই ইচ্ছারই বাস্তবায়ন।
খালীফাহ তাঁকেই বলা হয় মালিকের অধীনতা স্বীকার করে যিনি মালিকের দেয়া ক্ষমতা-ইখতিয়ার প্রয়োগ করেন। খালীফাহ কখনো মালিক হতে পারেন না। মালিকের ইচ্ছানুযায়ী ক্ষমতা-ইখতিয়ার প্রয়োগ করাই হচ্ছে তাঁর কর্তব্য।
খালীফাহ রুপে নতুন এক সৃষ্টিকে পৃথিবীতে পাঠানো হবে,আল্লাহর এই সিদ্ধান্ত জানার পর ফেরেস্তাদের মনে খটকা সৃষ্টি হয়। তারা বলে আপনি কি এমন জীব সৃষ্টি করবেন যে তাতে বিপর্যয় ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে?’
ফিরিশতাগন এটা বুঝেছিলো যে এই নতুন জীবকে ক্ষমতা-ইখতিয়ার দেয়া হবে। তবে এটা তারা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলো না যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ যেখানে বিশ্বজাহানের শৃঙ্খলা বিধান করেছেন সেখানে তাঁর সৃষ্ট কোন জীব পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানকার শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয়ে পারে কিভাবে? ফেরেশতাগণ আরও বলে, “আমরাইতো আপনার প্রশংসামূলক তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনার কাজ করছি”।
আল্লাহ্ ফিরিশতাদেরকে কোন ইখতিয়ার দেননি। আল্লাহর কোন নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা তাদের নেই। তাদেরকে বিশ্বজাহানের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা তাদের উপর অর্পিত কাজ সঠিকভাবে করে চলছে। তাদের কাজের কোন ত্রুটিতে অসন্তুষ্ট হয়েই আল্লাহ্ নতুন সৃষ্টি করছেন কিনা এটা ছিল তাদের মনের দ্বিতীয় খটকা।
এই খটকা দূর করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ বলেন,“নিশ্চইয়ই আমি যা জানি তোমরা তা জানো না” এ কথার মাধ্যমে আল্লাহ্ ফিরিশতাদেরকে এটা বোঝালেন যে আদমের (আ) সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে। যে উদ্দেশ্যে ফিরিশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যে নয়, বরং ভিন্নতর উদ্দেশ্যে আদমকে (আ) সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোন সৃষ্ট জীবকে ক্ষমতা-ইখতিয়ার দিলে সে যেখানে নিযুক্ত হবে সেখানে শৃঙ্খলা বিনষ্ট না হয়ে পারে কি করে- এই খটকা দূর করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ একটি মহড়ার আয়োজন করেন। বিশ্বজাহানের বিভিন্ন বস্তুর নাম বলার জন্য আল্লাহ ফিরিশতাদের প্রতি আহবান জানান। ফিরিশতাগণ অকপটে স্বীকার করে যে তাদেরকে যেই জিনিসের যতটুকু জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাঁর বাইরে তাদের কিছুই জানা নেই। অতঃপর আল্লাহ্ আদমকে (আ) বললেন, “তুমি এদেরকে এসব বস্তুর নাম বলে দাও”
আদম (আ) সকল বস্তুর নাম বলে দিলেন। এই মহড়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন একথা সুস্পষ্ট করে দিলেন যে তিনি যাকে ক্ষমতা-ইখতিয়ার দিচ্ছেন তাকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক জ্ঞান ও দেয়া হচ্ছে। তাঁকে ক্ষমতা-ইখতিয়ার দেয়াতে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে তা প্রকৃত ব্যাপারের একটি দিক মাত্র। তাতে কল্যাণেরও একটি সম্ভাবনাময় দিক রয়েছে। এবার আল্লাহ্ ফেরেশতাদেরকে আদমের নিকট অবনত হতে নির্দেশ দেন।
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ
“যখন আমি ফেরেশতাদের আদেশ করলামঃ আদমের নিকট অবনত হও ইবলিস ছাড়া সকলেই অবনত হল”। (আল বাকারা-৩৪)
বিশ্বজাহানের বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ফেরেশতাগণ।খালিফাহ হিসাবে ক্ষমতা-ইখতিয়ার প্রয়োগ করতে গেলে আদম (আ) ও তাঁর সন্তানদেরকে প্রাণী ও বস্তুজগতের অনেক কিছু ব্যবহার করতে হবে । এক্ষেত্রে ফেরেশতাগণ তাদের স্বাভাবিক কর্তব্য পালনের তাকিদে আদম (আ) ও তাঁর সন্তানদেরকে বাধা দিলে জটিলতার সৃষ্টি হবে। তাই আল্লাহ্ নিজের পক্ষ থেকেই ফেরেশতাদেরকে এভাবে আদমের (আ) অনুগত করে দেয়া ছিলো বিচক্ষনতারই দাবী।
এবার আসে ইবলীসের অবনত হওয়ার কথা। ইবলীস জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর ইবাদত করে সে ফেরেশতাদের অনুরূপ মর্যাদা লাভ করে। তাই ফেরেশতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আদমের (আ) নিকট অবনত হওয়ার নির্দেশ তাঁর জন্যও প্রযোজ্য ছিল।
আল্লাহর নির্দেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতারা আদমের(আ) নিকট অবনত হয়। কিন্তু ইবলিশ মাথা উঁচিয়ে থাকে।
জ্বীন হয়েও ইবাদতের বদৌলতে ইবলিস ফেরেশতাদের অনুরূপ মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু তাঁর মনে গোপনে একটি ব্যাধি বাসা বাঁধে। সে ব্যাধির নাম অহংকার। এই অহংকারের কারনেই সে খালীফাহ হিসেবে আদমের (আ) নিযুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই সে আদমের (আ) অনুগত হতেও রাজী হয় নি।
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ
আল্লাহ্ বললেন,“আমি যখন নির্দেশ দিলাম তখন অবনত হওয়া থেকে কিসে তোমাকে বিরত রাখলো?”
সে বলল,“আমি তাঁর চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে” আল আ’রাফ ১২
আল্লাহর নির্দেশ মানতে না পারার পিছনে ইবলিসের অহংকারই যে একমাত্র কারণ ছিল তা এখানে ব্যক্ত হয়েছে।।ইবলিস এই যুক্তি দেখায় যে শ্রেষ্ঠতর উপাদানে তৈরি হওয়ার কারণে সে নিকৃষ্টতর উপাদানে তৈরি আদমের নিকট মাথা নত করতে পারে না।
অহংকারের কারণেই ইবলিস এই বাঁকা যুক্তি বেছে নেয়। সরল মনে স্রষ্টার নির্দেশ পালনই যে তাঁর জন্য শোভনীয় এই সহজ কথা সে ভুলে যায়।
স্রষ্টা তো মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। তাঁর প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশই বিশ্বসৃষ্টি। তাঁর বিশ্ব পরিকল্পনায় তিনি কোন সৃষ্টিকে কোন স্থান দিবেন, কোন সৃষ্টিকে কোন মর্যাদা দেবেন এটা তাঁর ব্যাপার।
সৃষ্টির কর্তব্য শুধু স্রষ্টার নির্দেশ পালন করা। স্রষ্টার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে এটা জানার পর সে নির্দেশ পালনে সামান্যতম বিলম্ব না করাই সৃষ্টির পক্ষে শোভনীয়। প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কোন নির্দেশের তাৎপর্য কারো নিকট বোধগম্য না হলেও তাঁর অনুসরণের মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা বিশ্বাস করে সেই মুতাবেক পদক্ষেপ নেয়াই সৃষ্টির কর্তব্য।
ইবলীস এই সোজা পথে এলো না। সে আল্লাহর নির্দেশের ত্রুটি (নাউজুবিল্লাহ) আবিষ্কার করতে লেগে গেলো। শ্রেষ্ঠতর উপাদানে তৈরি এই যুক্তিতে ভর করে সে যিনি তাকে সৃষ্টি করলেন তাঁরই নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানিয়ে বসল। ইবলীসের এই অবাঞ্ছিত আচরনে আল্লাহ্ রাগান্বিত হন। তিনি ইবলিসকে তাঁর সান্নিধ্য থেকে সরে যাবার নির্দেশ দেন।
قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ
আল্লাহ্ বলেন, “এখান থেকে নিচে নেমে যাও। এখানে অবস্থান করে অহংকার দেখাবার কোন অধিকার তোমার নেই। বের হয়ে যাও। তুমি হীনদের মধ্যেই শামিল”। – আল আরাফঃ ১৩
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনকে এতো বেশী অসন্তুষ্ট হতে দেখেও ইবলিস সাবধান হল না। সে অহংকারে এতোই মেতে উঠেছিলো যে এই অবস্থাতেও সে আল্লাহর নিকট নত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করল না। আল্লাহর আনুগত্য পরিহার করে অবাধ্যতার পথে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হওয়াকেই সে শ্রেয় মনে করলো।
সে বললো,
قَالَ أَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
“আমাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত সুযোগ দিন”
قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ
আল্লাহ্ বললেন, “তোমাকে সেই সু্যোগ দেয়া হলো” –আল আ’রাফঃ ১৪-১৫
ইবলিস পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত বেঁচে থাকার সুযোগ চেয়ে নিল আদম সন্তানদের আল্লাহর অবাধ্য বান্দায় পরিণত করার জন্য।
ইবলীস অহংকারের বশবর্তী হয়ে বিদ্রোহের পতাকা উড়ালো। অথচ তাঁর গুমরাহীর জন্য সে আল্লাহ্কেই দায়ী করে বসল। অর্থাৎ তার দৃষ্টিতে আল্লাহর অন্যায় নির্দেশেই (নাউজুবিল্লাহ) তাঁর বিদ্রোহের ক্ষেত্র রচনা করেছে। সংশোধিত হবার সর্বশেষ সুযোগটিও সে পদদলিত করলো এবং আল্লাহর পথ থেকে আদম সন্তানদেরকে বিপথে নিয়ে যাবার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবার দৃঢ় সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করলো।
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ
- ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
সে বললো, “আপনি আমাকে গুমরাহ করেছেন। আমি লোকদের জন্য সিরাতুল মুস্তাকীমের পাশে ওঁত পেতে থাকবো- সম্মুখ, পেছন, ডান, বাম সব দিক থেকেই তাদের ঘিরে ফেলবো। আপনি তাদের অনেককেই অকৃতজ্ঞ বান্দা রূপে পাবেন”- আল আরাফঃ ১৬-১৭
ইবলীসের এইসব উদ্ধত্যপূর্ণ উক্তির জবাবে আল্লাহ্ তাকে এক কঠোর সিদ্ধান্তের কথা শুনিয়ে দেন।
قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا ۖ لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ
আল্লাহ্ বললেন, “লাঞ্ছিত ও উপেক্ষিত সত্ত্বারূপে বেরিয়ে যাও। লোকদের মধ্যে যারাই তোমার আনুগত্য করবে আমি তাদেরকে এবং তোমাকে দিয়ে জাহান্নাম ভর্তি করবো”।
– আল আ’রাফঃ ১৮
এভাবে দূর অতীতের কোন এক সময়ে আল্লাহ্র এক সৃষ্টি ইবলিস আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করে বসে এবং আদম (আ) ও আদম সন্তানদের দুশমনী করাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে। সেদিন থেকে আদম সন্তানেরা ইবলীসের পক্ষ থেকে চিরস্থায়ী দুশমনীর সম্মুখীন।
মানুষের কর্তব্য
আল্লাহ্ মানুষকে ব্যাপক জ্ঞান দান করেছেন। কিন্তু সেই জ্ঞানও খুব সীমিত। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জ্ঞানের তুলনায় সেই জ্ঞান এতই তুচ্ছ যে তা হিসাবের মধ্যেই আসে না।
এই সীমিত জ্ঞানের সাহায্যে কোন নির্ভুল জীবন বিধান রচনা করা মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। আবার দুনিয়ায় অবস্থানকালে সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে মানুষ ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে, সেটাও আল্লাহর অভিপ্রেত নয়। তাই মানুষের জন্য জীবন বিধান রচনার দায়িত্ব আল্লাহ্ নিজেই নিয়েছেন।
প্রথম মানব আদম (আ) এবং তাঁর স্ত্রীকে পৃথিবীতে পাঠানোর প্রাক্কালে আল্লাহ্ মানুষের জন্য জীবন বিধান পাঠানোর ওয়াদা ঘোষনা করেছেন।
قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
“অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের জন্য হিদায়াত আসবে। যারা তা অনুসরণ করে চলবে তাদের ভয় ও চিন্তার কোন কারণ থাকবে না”- আল বাকারাঃ৩৮
একেতো সীমিত জ্ঞানের অধিকারী হবার কারণে মানুষের পক্ষে কোন নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান রচনা করা সম্ভবপর নয়। তদুপরি আল্লাহর কাছ থেকে জীবন বিধান আসার পর অন্য কোন জীবনবিধান রচনা করা এবং সেই মুতাবিক জীবন যাপন করার অধিকার ও মানুষের নেই।
আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন বিধান উপেক্ষা করে মানুষ যদি অন্য কোন জীবন বিধান রচনা করে এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করে তবে তো মানুষ ইবলীসের যথার্থ শাগরিদেই পরিণত হবে। ইবলিসের মতই সে বিদ্রোহী বলে গণ্য হয়। তখন ইবলীসের মত তাঁর উপর ও আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসে।
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ
“আল্লাহর নিকট একমাত্র স্বীকৃত জীবন বিধান হল আল ইসলাম”। – আলে ইমরানঃ ১৯
বাস্তব অবস্থা যখন এই তখন আপন মনের ইচ্ছা-বাসনা অথবা অন্য কোন ব্যক্তির ইচ্ছা-বাসনার আনুগত্য না করে মানুষের জন্য শোভনীয় হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা-বাসনার আনুগত্য করা।
এছাড়া অন্য কোন আনুগত্যই আল্লহর পছন্দনীয় নয়।
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যেই ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান অবলম্বন করতে চায় তার কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যেই থাকবে”। – আলে ইমরানঃ ৮৫
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজাহানের যাবতীয় সৃষ্টি আল্লাহর নির্দেশের নিকট মাথা নত করে আছে। আল্লাহর নির্ধারিত আইনগুলো মেনে বিশ্বলোকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্বজাহান আল্লাহর আইন মেনে চলছে বলেই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি ও শৃংখলা বিরাজ করছে।
বিশ্বব্যাপী আল্লাহর যে সব আইন কার্যকর রয়েছে সেগুলোর সাথে সংগতিশীল আইন তৈরী করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। আবার নিজেদের জন্য জীবন বিধান রচনা করে তার সাথে সংগতিশীলরূপে বিশ্বলোকের সব আইনকে নতুনভাবে সাজিয়ে নেয়াও সাধ্যাতীত। এমতাবস্থায় বিনা দ্বিধায় আল্লাহর বিধান মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
“এসব লোক কি আল্লাহর দ্বীন পরিত্যাগ করে অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চায়? অথচ আসমান ও পৃথিবীর সব কিছুই ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক তাঁর আনুগত্য মেনে নিয়েছে। আর মূলতঃ তাঁর দিকেই সকলকে ফিরে যেতে হবে।”— আলে ইমরানঃ ৮৩
আল্লাহর বিধান মেনে না নেয়ার মানেই কুফর। যারা এই কুফর অবলম্বন করে তাদের পরিণাম ভয়াবহ। পৃথিবীর জীবনে কুফর অবলম্বন করেও আখিরাতের জীবন কোন না কোন প্রকারে নাজাত পাওয়া যাবে, এ ধারণা পোষণ নিতান্তই বোকামী। আল্লাহ বলেন—
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِمْ مِلْءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدَىٰ بِهِ ۗ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ
“যারা কুফর অবলম্বন করলো এবং সেই অবস্থায় প্রাণত্যাগ করলো তাদের কেউ যদি শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য পৃথিবী ভরা পরিমাণ স্বর্ণও বিনিময় হিসেবে হাজির করে, তবুও তা কবুল হবে না। এদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই”।– আলে ইমরানঃ ৯১
ইবলীসের দুশমনী থেকে আত্মরক্ষা করা ও আখিরাতের আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার উপায় হচ্ছে বিশুদ্ধ মন নিয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা এবং আল্লাহর বিধান মুতাবিক জীবন গড়ে তোলা। আত্মরক্ষার এই নির্ভুল পথেই রাব্বুল আলামীন বিশ্ব মানবতাকে আহবান জানাচ্ছেন এভাবেঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَكُمْ ۚ
“হে মানব জাতি, এই রাসূল তোমাদের রবের নিকট থেকে সত্য বিধান সহ এসেছে। তোমরা ঈমান আন, এতেই তোমাদের কল্যাণ”। –সূরা আন নিসাঃ ১৭০