আরবের প্রশাসনিক অবস্থা
ইসলাম পূর্বকালের আরবের অবস্থা আলোচনা প্রসঙ্গে আরবের প্রশাসনিক অবস্থা, সর্দারি এবং ধর্মীয় আদর্শ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। এতে ইসলামের আবির্ভাবে আরবের অবস্থা সহজে বোঝা যাবে।
জাযিরাতুল আরবে যে সময় ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময় আরবের দুধরণের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত ছিল। প্রথমত মুকুটধারী বাদশাহ, এরা ও আবার পরিপূর্ণ স্বাধীন ছিল না। দ্বিতীয়ত গোত্রীয় সর্দার। এরা মুকুটধারী বাদশাহদের মতোই ক্ষমতা প্রয়োগ করত তবে এরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীন ছিল। প্রকৃত বাদশাহ ছিল ইয়েমেনের বাদশাহ, সিরিয়ার গাসসান বংশের বাদশাহরা ও ইরাকের হীরার বাদশাহরা। এছাড়া আরবে অন্য কোন মুকুটধারী বাদশাহ ছিল না।
ইয়েমেনের বাদশাহী
‘আরবের আরেবার’ মধ্যে প্রাচীন ইয়েমেনী গোত্রের নাম ছিল কওমে সাবা। ইরাকে আবিষ্কৃত প্রাচীন শিলালিপি থেকে জানা যায়, খৃষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে সাবা জাতির এখানে বসতি ছিল। তবে এ জাতির উন্নতি অগ্রগতির সূচনা হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব একাদশ শতাব্দীতে। উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক সময়কাল নিম্নরূপ-
এক) খৃষ্টপূর্ব ৬৫০ সালের পূর্বেকার সময়। সেই সময়ে সাবার বাদশাহদের উপাধি ছিল মাকরাবে সাবা। এদের রাজধানী ছিল সরওয়াহ নামক জায়গায়। এই রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ মা-আবের থেকে পশ্চিমে একদিনের পথের দূরত্ব পাওয়া যায়। সেই জায়গায় বর্তমান নাম খারিবা। সেই যুগে মা-আরেবের বিখ্যাত বাঁধের ভিত্তি স্থাপনকরা হয়েছিল। ইয়েমেনে ইতিহাসে এটা এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সেই সময়ে সাবার বাদশাহদের শাসনামলে বহুলোক আরবের ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন স্থানে নতুন বসতি স্থাপন করেছিল।
দুই) খৃষ্টপূর্ব ৬৫০ থেকে খৃষ্টপূর্ব ১১৫ সাল। এ সময়ে সাবার বাদশাহরা মাকরাব উপাধি পরিত্যাগ করে বাদশাহ উপাধি ধারণ করে এবং সরওয়াহ এর পরিবতে মায়ারেবকে রাজধানী হিসাবে মনোনীত করে নেই। এই শহরের ধ্বংসাবশেষ এখনো সান-আ থেকে ৬০ মাইল পূব দিকে পাওয়া যায়।
তিন) খৃষ্টপূর্ব ১১৫ থেকে ৩০০ সাল। এ সময়ে সাবার বাদশাহদের ওপর হেমইয়ার গোত্র অধিপত্য বিস্তার করে এবং তারা মা-আরেবের পরিবতে রাইদানকে নিজেদের রাজধানী মনোনীত করে। পরবর্তী সময়ে রাইদানের নাম পরিবর্তন করে জেফার রাখা হয়। এর ধ্বংসাবশেষ এখনো ইয়েমেনের কাছাকাছি একটি পাহাড়ে পাওয়া যায়।
এক যুগে সাবা জাতির পতন শুরু হয়। প্রথমে নাবেতিরা হেজাজের উত্তরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে এবং সাবার নতুন জনবসতি উৎখাত করতে শুরু করে। এরপর রোমকরা মিসর, সিরিয়া এবং হেজাজের উত্তরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে তাদের বাণিজ্যের স্থলপথে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয় যায়। এদিকে কাহতানি গোত্রসমূহ নিজেরাও ছিল আর্থিক দিক থেকে দুর্দশাগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে কাহতানি গোত্রসমূহ নিজেদের দেশ ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
চার) খৃষ্টাব্দ ৩০০ থেকে ইসলামের সূচনাকাল পর্যন্ত। এ সময়ে ইয়েমেনে ক্রমাগত বিভেদ বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে। বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ, বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ চলতে থাকে। এমনি করে এক পর্যায়ে ইয়েমেনের স্বাধীনতাও কেড়ে নেয়া হয়। এই সময়ে রোমকরা আদনের ওপর সামরিক হস্তক্ষেপ করে এবং তাদের সাহায্য হাবশী অর্থাৎ আবিসিনিয়ার হেমইয়ার ও হামাদান গোত্রের পারস্পরিক সংঘাত থেকে লাভবান হয়ে ৩৪০ সালে প্রথমবার ইয়েমেন দখল করে নেই। এই দখল ৩৭৮ সাল পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকে। এরপর ইয়েমেন স্বাধীনতা লাভ করে বটে কিন্তু মাআরেবের বিখ্যাত বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ৪৫০ বা ৪৫১ সালে এই বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পবিত্র কোরআনে এই ভাঙ্গনকে বাঁধভাঙ্গা বন্যা বলে অভিহিত করা হয়েছিল। সুরা সাবায় এর উল্লেখ রয়েছে। এটা ছিল বড় ধরনের একটা দুর্ঘটনা। এ বন্যার ফলে বহু জনপদ বিরান জনশূন্য হয়ে পড়েছিল এবং বহু গোত্র বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল।
৫২৩ ঈসায়ী সালে আরেকটি বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে। বাদশাহ জুনুয়াস ইয়েমেনের ঈসায়ীদের ওপর হামলা করে তাদের কে খৃষ্টধর্ম ত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা করে। তারা রাজি না হওয়ায় তাদেরকে পরিখা খনন করে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা বুরুজে ‘ধ্বংস হয়েছিল কুণ্ডের অধিপতিরা বলে এই লোমহর্ষক ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠ। আবিসিনিয়রা রোমকদের সমর্থন পেয়ে ৫১৫ সালে আরিয়াতের নেতৃত্বে ৭০ হাজার সৈন্যসহ পুনরায় হামলা চালায়। এবং ইয়েমেন অধিকার করে নেয়। অধিকারের পর আবিসিনিয়ার সম্রাটের গভর্নর হিসাবে আরিয়াত ইয়েমেন শাসন করতে থাকেন। কিছুকাল পর আরিয়াতের সেনাবাহিনীর এক অধিনায়ক আরিয়াতকে হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ অধিনায়কের নাম ছিল আবরাহা। ক্ষমতা গ্রহণের পর আবরাহা শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং আবিসিনিয়ার সম্রাটকে ও তার বশ্যতা স্বীকারে রাজি করায়। এই আবরাহাই পরবর্তীকালে কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করেছিল। দুর্ধর্ষ একদল সৈন্য এবং কয়েকটি হাতী নিরয় আবরাহা মক্কা অভিযানে পরিচালনা করেছিল। এই অভিযানকে ‘আসহাবে ফীল’ নামে কোরআনে সুরা ফীলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসহাবে ফীলের ঘটনায় আবিসিনীয়দের যে ক্ষতি হয়েছিল তার প্রেক্ষিতে ইয়েমেনের অধিবাসীরা পারস্য সরকারের নিকট সাহায্য চায়। তারা আবিসিনীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং সাইফে যী ইয়াযান ইময়ারীর পুত্র মাদি কারাবের নেতৃত্বে আবিসিনীয়দের দেশ থেকে বের করে দেয়। এরপর তারা একটি স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হিসাবে মাদিকারাবকে ইয়েমেনের বাদশাহ বলে ঘোষণা করে। এটা ছিল ৫০৫ সালের ঘটন।
স্বাধীনতার পর মাদিকারাব তার সেবার জন্য এবং রাজকীয় বাহিনীর সৌন্দর্যের জন্য কিছু সংখ্যক হাবশী অর্থাৎ আবিসিনীয়দের রেখে দেয়। তার এ পথ বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়। কর্মরত হাবশীরা একদিন ধোঁকা দিয়ে বাদশাহ মাদিকারাবকে হত্যা করে। এর ফলে যী ইয়াযান পরিবারের রাজত্ব চিরতরে শেষ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে সুবিধা আদায়ের জন্য এগিয়ে আসেন পারশ্যের সম্রাট কিসরা। তিনি সন্য়া’য় পারশ্য বংশোদ্ভূত একজন গভর্নর নিয়োগ করে ফরাসী গভর্নর নিযুক্ত হতে থাকেন। সর্বশেষ গভর্নর বাযান ৬২৮ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। এর ফলে ইয়েমেনে পারস্য আধিপত্য লোপ পায় এবং ইয়েমেন ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয় (মাওলানা সেইয়েদ সোলায়মান নদভী তারীখে আরদুল কোরআন গ্রন্থের প্রথম খন্ডে ১৩৬ পৃষ্ঠা থেকে গ্রন্থের শেষ পযন্ত ঐতিহারিসক তথ্য সংরক্ষনের আলোকে সারা জাতি সম্পকে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। মওলানা আবুল আলা মওদুদী তাফহিমুল কোরআনের চতুথ খন্ডের ১৫৮-১৯৮ পৃষ্টায় ও এ পযায় কিছু কিছু তথ্য সন্নীবেশিত করেছেন)।
হীরার বাদশাহী
ইরাক এবং তার আশেপাশের এলাকায় কোরোশ কাবির অথবা সায়রাম যুল কারনাইনের (খৃষ্টপূর্ব ৫৭৫ থেকে ৫২৯ সাল পর্যন্ত) সময় থেকেই পারস্যদের রাজত্ব চলে আসছিল। ফরাসীদের মোকাবেলা করার মতো শক্তি কারো ছিলনা। খৃষ্টপূর্ব ৩২৬ সালে সিকান্দার মাকদুনি প্রথম রাজিত করে পারস্য শক্তি নস্যাৎ করেন। এর ফলে পারস্য সাম্রাজ্য খন্ড খন্ড হয়ে যায়। এ বিশৃংখলা অবস্থা ২৩০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় কাহতানী গোত্রসমুহ দেশত্যাগ করে। ইরাকের এক বিস্তীর্ণ সীমান্ত থেকে যেসব আদনানীরা দেশত্যাগ করে গিয়েছিল তারা এ সময় কারিলায় ফিরে আসে এবং প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করে ফোরাত নদীর উপকুল ভাগের একাংশে নিজেদের বসতি স্থাপন করে।
এদিকে ২২৬ সালে আদের্শির সাসানি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার পর ধীরে ধীরে পারশ্য শক্তি সংহত হতে শুরু করে। আদের্শির পারস্যদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং তার দেশের সীমান্তে বসবাসকারী আরবদের প্রতিহত করেন। এর ফলে কোযাআ গোত্র সিরিয়ার পথে রওয়ানা হন। পক্ষান্তরে হীরা এবং আনবারের আরব অধিবাসীরা বশ্যতা স্বীকারে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
আর্দেশিরের শাসনামলে হীরা, বাদিয়াতুল ইরাক এবং উপদ্বীপের ওপর রবিয়ী গোত্রর শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। মোদারী গোত্রসমূহের ওপর জাযিরাতুল ওয়াযযাহদের শাসন ছিল। মনে হয়, আর্দেশিয়রা বুঝতে পেরেছিলো যে, আরব অধিবাসীদের ওপর সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনা করা এবং সীমান্তে তাদেরকে লুটতরাজ থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয় বরং ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে এমন কোন আরব নেতাকে শাসক হিসেবে নিযুক্ত করাই হবে বুদ্ধিমত্তার কাজ। এর ফলে একটা লাভ এই হবে যে, প্রয়োজনের সময় রোমকদের বিরুদ্ধে এসব আরবের সাহায্য নেয়া যাবে এবং সিরিয়ার রোমকপন্থী আরব শাসকদের মোকাবেলায় ইরাকের এসব শাসনকর্তাকে দাড় করানো যাবে। হীরার বাদশাহদের অধীনে পারশ্য সৈন্যদের একটি ইউনিট আবিসিনিয়ায় থাকতো। এদের দ্বারা বিভিন্ন স্থানে আরব বিদ্রোহীদের দমন করা হতো।
২৬৮ সালে, জাযিমা মৃত্যু বরণ করেন এবং আমর ইবনে আদী ইবনে নসর লাখামী হাদরামি তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ছিলেন লাখাম গোত্রর প্রথম শাসনকর্তা। শাপুল কোবাজ ইবনে ফিরোজের যুগ পর্যন্ত একাধারে হীরার ওপর লাখমিদের শাসন চলতে থাকে। কোবাজের সমসাময়িককালে মোজদকের আবির্ভাব ঘটে। তিনি ছিলেন সংস্কারবাদের প্রবক্তা। কোবাজ এবং তার বহুসংখ্যক অনুসারী বাদশাহ মোনযার ইবনে মাউসসামাকে বাতা পাঠালেন যে, তুমিও এ ধর্ম গ্রহণ করো। মোনযার ছিল বড়ই দুরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ, তিনি অস্বীকার করে বসলেন। ফলে কোবাজ তাকে বরখাস্ত করে তার স্থলে মোজদাকি মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা হারেস ইবনে আমর ইবনে হাযার ফিন্দীর হাতে হীরার শাসনভার ন্যস্ত করলেন।
কোবাজের পরে পারস্যের শাসনক্ষমতা কিসরা নওশেরওয়ার হাতে আসে। তিনি এ ধর্মকে প্রচন্ড ঘৃণা করতেন। তিনি মোজদাক এবং তার বহু সংখ্যক সমর্থকে হত্যা করেন। মোনযারকে পুনরায় হীরার শাসনভার ন্যস্ত করেন এবং হারেস ইবনে আমরকে নিজের কাছে ডেকে পাঠান। কিন্তু হারেস বনু কেনায়ের এলাকায় পালিয়ে গেলেন এবং তিনি সেখানেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেন।
মোনযার ইবনে মাউসসামার পরে নোমান ইবনে মোনাযের কাল পর্যন্ত হীরার শাসনক্ষমতা তার বংশধরদের মধ্যে আবর্তিত হয়। এরপর যায়েদ ইবনে আদী এবাদী কিসরার কাছে নোমান ইবনে মোনযারের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে। কিসরা নওশেরওয়া এতে ক্ষেপে যান এবং নোমানকে তার কাছে ডেকে পাঠান। নোমান প্রথমেই হাযির না হয়ে চুপিসারে বনু শায়বানের সদার হানি ইবনে মাসুদের কাছে যান এবং পরিবার -পরিজন, ধন-সম্পদ সবকিছু তার কাছে রেখে কিসরার দরবারে হাযির হন। কিসরা তাকে বন্দী করেন এবং বন্দী অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে কিসরা নোমানকে বন্দী করার পর তার স্থলে ইয়াস ইবনে কোবায়সা তাঈকে কীরার শাসনকর্তা নিয়োগ করেন এবং হানি ইবনে মাসুদের কাছে নোমানের জামানত চাওয়ার জন্য ইয়াসকে নির্দেশ দেন। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হানি যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ইয়াস কিসরার সৈন্যদের নিয়ে এবং মুরযবনদের দল নিয়ে রওয়ানা হন। জিকার ময়দান উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে বনু শায়বান জয়লাভ করেন এবং ফরাসীরা লজ্জাকরভাবে পরাজিত হয়। এই প্রথম আরবরা অনারবদের ওপর জয়লাভ করেন। এ ঘটনা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জন্মের কিছুকালে পরে ঘটেছিল। হীরায় ইয়াস এর শাসন পরিচালনার অষ্টম মাসে রসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করেন।
ইয়াস এর পরে কিসরা হীরায় একজন ফরাসী গভর্নর নিয়োগ করেন। কিন্তু ৬৩২ সালে লাখমিদের ক্ষমতা পুনর্বহাল হয় এবং মোনযের ইবনে মারুর নামে এক ব্যক্তি শাসন ক্ষমতা দখল করেন। শাসনকার্য পরিচালনার আট মাস পরেই হযরত খালেদ রাদি আল্লাহু আনহু ইসলামের শক্তির পতাকা নিয়ে হীরায় প্রবেশ করেন।
সিরিয়ার বাদশাহী
আরব গোত্রসমূহের হিজরত যে সময় চলছিল সে সময় কোযায়া গোত্রের কয়েকটি শাখা সিরিয়া সীমান্তে এসে বসবাস শুর করে। বনু সোলাইম ইবনে হুলওয়ানের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল। এদের একটি শাখা ছিল বনু জাজআন ইবনে সোলাইম। এর জাজায়েমা নামে খ্যাতি লাভ করেছিল। কোজাআর এই শাখাকে রোমানরা আরবের মুর বেদুইনদের লুটতরাজ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং পারস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য কাছে টেনে নিয়েছিল। এই গোত্রর একজনের ওপর শাসনভার ন্যস্ত করার জন্য কাছে টেনে নিয়েছিল। এই গোত্রের একজনের ওপর শাসনভার ন্যস্ত করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন যাবত তাদের শাসন চলতে থাকে। এদের বিখ্যাত বাদশাহ ছিলেন যিয়াদ ইবনে হিউলা। ধারনা করা হচ্ছে যে, জাযায়েমার শাসনকাল দ্বিতীয় খৃষ্টীয় শতকের পুরো সময়ব্যাপী পরিব্যাপ্ত ছিল। এরপর গাসসান বংশের আবির্ভাব গটে এবং জাযায়েমাদের শাসনামলের অবসান ঘটে। গাসসান বংশের লোকেরা বনু জাযায়েমাদের পরাজিত করে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। এ অবস্থা দেখে রোমকরা গাসসানী বংশের শাসকদের সিরিয়ার আরব অধিবাসীদের শাসনকর্তা হিসাবে মেনে নেয়। গাসসান বংশের রাজধানী ছিল দওমাতুল জন্দল। রোমকরা শক্তির ক্রীড়ানক হিসাবে সিরিয়ায় দীর্ঘকাল তাদের শাসন ক্ষমতা অটুট থাকে। ফারুক খেলাফতের সময় ত্রয়োদশ হিজরতে ইয়ারমুকের যুদ্ধে সংঘটিত হয় এ সময় গাস্সান বংশের সর্বশেষ শাসনকর্তা জাবলা ইবনে আইহাম ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু অহংকারের কারণে এই লোকটি বেশীদিন ইসলামের ওপর টিকে থাকতে পারেনি পরে সে ধর্মান্তরিত বা মুরতাদ হয়ে যায়।
হেজাযের নেতৃত্ব
হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম থেকেই মক্কায় মানব বসতি গড়ে ওঠে। তিনি ১৩৭ বছর বেঁচে ছিলেন (বাইবেল, জন্ম শীষক অধ্যায় পৃ”-১৭-২৫)। যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তিনিই ছিলেন মক্কার নেতা এবং কাবাঘরের মোতাওয়াল্লী (কলবে জাযিরাতুল আরব, পৃ-২৩০-২৩৭)। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নাবেত এবং কাইদার মক্কায় শাসনভার পরিচালনা করেন।
এই দুজনের মধ্যে কে আগে এবং কে পরে ক্ষমতাসীন ছিলেন এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন প্রথমে নাবেত ক্ষমতাসীন ছিলেন এবং পরে কাইদার । কেউ বলেন প্রথমে কাইদার ক্ষমতাসীন ছিলেন এবং পরে নাবেত। এদের পরে এদের নানা মাজাজ ইবনে জোরহামি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এমনি করে মক্কার শাসন ক্ষমতা জোরহামিদের হাতে চলে যায়। দীর্ঘদিন এ ক্ষমতা তাদের কাছে থাকে। হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যেহেতু তাঁর পিতার সাথে কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন একারণে তাঁর বংশধরদের একটি সম্মানজনক অবস্থান ছিল, কিন্তু ক্ষমতা ও নেতৃত্ব পরবর্তী সময়ে তাদের অংশ ছিলনা (ইবনে হিশাম ১ম খন্য, পৃ-১১১-১১৩, ইবনে হিশাম, হযরত ইসমাইলের বংশধরদের মধ্যে শুধুমাত্র নাবেতের ক্ষমতাসীন থাকার কথা উল্লেখ করেছেন)।
বছরের পর বছর কেটে যায় কিন্তু হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশধরগণ অজ্ঞাত পরিচয় অবস্থা থেকে বাইরে আসতে পারেননি। বখতে নসরের আবির্ভাবের কিছুকাল আগে বনু জোরহামের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মক্কায় রাজনৈতিক গগনে আদনানীদের রাজনৈতিক নক্ষত্র চমকাতে শুরু করে। এর প্রমাণ এই যে, যাতে ইরক নামক জায়গায় বখতে নসর আরবদের সাথে যে যুদ্ধ করেন সেই যুদ্ধে আরব সেনাদলের অধিনায়কদের মধ্যে জোরহাম গোত্রের কেউ ছিলেন না (কলবে জাযিরাতুল আরব, পৃ-২৩০)।
খৃষ্টপূর্ব ৫৮৭ সালে বখতে নসরের দ্বিতীয় অভিযানের সময়ে বনু আদনান ইয়েমেনে পালিয়ে যায়। সে সময়ে বনি ইসরাইলের নবী ছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি আদনানের পুত্র মাআদকে সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ায় যান। বখতে নসরের দাপট হ্রাস পাওয়ার পর মায়াদ মক্কায় ফিরে আসেন। এ সময় তিনি লক্ষ্য করেন যে, মক্কায় জোরহাম গোত্রর জোরশাম নামে শুধু একজন লোক রয়েছেন। জোরশাম ছিলেন জুলহামার পুত্র। মায়াদ তখন জোরশামের কন্যা মায়ানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার গর্ভ থেকে নাযার জন্মগ্রহণ করেন (রহমতুন লিল আলামিন,২য় খন্ড পৃ-৪৮)।
যে সময় মক্কায় জোরহামের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দারিদ্রের নিষ্পেষণে তারা ছিল জর্জরিত। এর ফলে তারা কাবা ঘরে তাওয়াফ করতে আসা লোকদের ওপর বাড়াবাড়ি করে এমনকি কাবাঘরের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করতেও দ্বিধা বোধ করেনি। (কলবে জাযিরাতুল আরব, পৃ-২৩১)। বনু আদনান বনু জোরহামের এসব কাচে ভেতরে ভেতরে ছিল দারুন অসন্তুষ্ট। ফলে বনু খোজাআ মাররাজ জাহরানে অভিযানের সময় আদনান বংশের লোকদের লোভকে কাজে লাগায়। বনু খোজাআ আদনান গোত্রের বনু বকর ইবনে আবদে মান্নাফ ইবনে কেনানাকে সঙ্গে নিয়ে বনু জোরহামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বনু জোরহাম পরাজিত হয়ে মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়। এ ঘটনা ঘটেছিল খৃষ্টীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়।
মক্কা ছেড়ে যাওয়ার সময় বনু জোরহাম যমযম কুপ ভরাট করে দেয়। এ সময় তারা যমযমে কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন নিক্ষেপ করে তা প্রায় ভরাট করে ফেলে। মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক লিখেছেন , আমর ইবনে হারেস মায়ায জোরহামি (হযরত ইসমাঈলের ঘটনায় উল্লেখিত মাযাযে জোরহামী এবং এই লোক এক ব্যক্তি নন)। কাবাঘরের দুটি সোনার হরিণ (মাসুদ লিখেছেন, পারস্যবাসী কাবাঘরের জন্য মূল্যবান সম্পদ এবং উপঢৌকন পাঠাতেন। যায়েদ ইবনে বাক সোনার তৈরি দুটি হরিণ, মনি-মুক্তা, তলোয়ার এবং বহু সোনা প্রেরণ করেছিলেন। আমর এসব কিছু যমযম কুপে নিক্ষেপ করেন। মুরাও অযজাহাব ১ম খন্ড, পৃ:২ও৫)। এবং কাবার কোণে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদকে বের করে যমযম কুপে প্রোথিত করে। এরপর তারা জোরহাম গোত্রের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ইয়েমেন জলে যায়। বনু জোরহাম মক্কা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার এবং ক্ষমতা হারানোর ব্যথা ভুলতে পারছিল না। জোরহাম গোত্রের আমর নামক এক ব্যক্তি এ সম্পর্কে রচিত কবিতায় বলেছেন,
আজুন থেকে সাফা পর্যন্ত মিত্র কেউ নেই, রাতের মহফিলে নেই গল্প বলার কেউ। নেই কেন? আমরা তো এখানের অধিবাসী, সময়ের আবর্তনে ভাঙ্গা কপাল, হায়রে হায় আজ আমাদের করে দিয়েছে সর্বহারা। (ইবনে হিশাম ১ম খন্ড, পৃ-১১৪-১১৫)।
হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের সময়কাল ছিলো খৃষ্টপূর্ব প্রায় দুহাজার বছর আগে। এ হিসেবে অনুযায়ী মক্কার জোরহাম গোত্রের অস্তিত্ব ছিল দুই হাজার একশত বছর। প্রায় দুহাজার বছর তারা রাজত্ব করেছিল।
বনু খোজাআ মক্কায় তাদের আধিপত্য বিস্তারের পর বনু বকরের বাদ দিয়েই শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকে। তবে তিনটি মর্যাদাসম্পন্ন পদে মোদীর গোত্রের লোকদের অধিষ্ঠিত করা হয়। সে তিনটি পদ নিম্নরূপ,
এক) হাজীদের আরাফাত থেকে মোযদালেফায় নিয়ে যাওয়া এবং ইয়াওমুন নাহারে হাজীদের মিনা থেকে রওয়ানা হওয়ার পরোয়ানা প্রদান। ১৩ই জিলহজ্জ হচ্ছে ইয়াওমুন নাফার, এই দিন হচ্ছে হজ্জের শেষদিন। এই মর্যাদা ইলিয়াস ইবনে মোদারের পরিবার বনু সাওম ইবনে মারবার অধিকারে ছিল। এদেরকে সোফা বলা হতো। সোফার একজন লোক পাথর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত ১৩ই জিলহজ্জ হাজীরা পাথর নিক্ষেপ করতে পারতেন না। হাজীদের পাথর নিক্ষেপ এবং মিনায় রওয়ানা হওয়ার সময় সোফার লোকেরা মিনার একমাত্র পথ আকাবার দুপাশে দাড়িয়ে থাকতো। তাদের যাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন হাজী সে পথ অতিক্রম করতে পারত না। তাদের যাওয়ার পর অন্য লোকদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হতো। সোফাদের পর এই বিরল সম্মান বনু তামিমের একটি পরিবার বনু সাদ ইবনে যায়েদ মানাত লাভ করে।
দুই) ১০ই জিলহজ্জ সকালে মোযদালেফা থেকে মিনা যাওয়ার সম্মান বনু আদনানের অধিকার ছিল।
তিন) হারাম মাসসমূহের আগে এগিয়ে নেয়া ও পিছিয়ে দেয়া। বনু কেনানাহ গোত্রের একটি শাখা বনু তামিম ইবনে আদী এই মর্যাদার অধিকারী ছিল। (ইবনে হিশাম ১ম খন্য, পৃ-১১৯-১২২। )
মক্কার ওপর বনু খোজাআ গোত্রের আধিপত্য তিনশত বছর যাবত স্থায়ী ছিল। (ইয়াকুত, সাদ্দা, মক্কা)
এই সময়ে আদনানী গোত্রসমুহ মক্কা এবং হেজায থেকে বের হয়ে নজদ, ইরাকের বিভিন্ন এলাকায়, বাহরাইন এবং অন্যান্য জায়গায় প্রসারিত হয়। মক্কার আশেপাশে কোরাইশদের কয়েকটি শাখা অবশিষ্ট থাকে। এরা ছিল বেদুইন। এদের পৃথক পৃথক দল ছিল এবং বনু কেনানায় এদের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন পরিবার বসবাস করছিল। মক্কার শাসন পরিচালনা এবং কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণে এদের কোন ভূমিকা ছিল না। এরপর কুসাই ইবনে কেলাবের আবির্ভাব ঘটে। (মোহাদেরাতে খাযরামি, ১ম খন্ড, পৃ:-৩৫ ইবনে হিশাম ১ম খন্ড পৃ-১১৭)।
কুসাই সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, মায়ের কোলে থাকার সময়েই তার পিতার মৃত্যু হয়। এরপর তার মা বনু ওজরা গোত্রের এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর গোত্র যেহেতু সিরিয়ায় থাকতো এ কারণে কুসাইয়ের মা সিরিয়ায় চলে যান। কুসাইকেও তিনি সঙ্গে নিয়ে যান। যুবক হওয়ার পর কুসাই মক্কায় ফিরে আসেন। সে সময় মক্কার গভর্নর ছিলেন হোলাইল ইবনে হাবশিয়া খোযায়ী। কুসাই হোলাইলের কন্যা হোবাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।
হোলাইল সে প্রস্তাব গ্রহণ করে হোবাকে বিবাহ দেন। (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃ:১১৭-১১৮) হোলাইলের মৃত্যুর পর মক্কা ও কাবাঘরের ওপর আধিপত্যর বিষয় নিয়ে খোযায়ী এবং কোরাইশদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে জয় লাভ করে কুসাই শাসন ক্ষমতা এবং কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার লাভ করেন।
এ যুদ্ধের কারণ কি ছিল? এ সম্পর্কে তিনটি বিবরণ পাওয়া যায়।
প্রথমত, কুসাইয়ের বংশধরদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ধন সম্পদের প্রাচুর্য আসার পর কুসাইয়ের সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বেড়ে যায়। এদিকে যখন হোলাইলের মৃত্যু হয়। তখন কুসাই চিন্তা করলেন যে বনু খোযাআ এবং বনু বকরের পরিবতে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মক্কার শাসন পরিচালনার জন্য আমিই উপযুক্ত। তিনি এ কথাও চিন্তা করেছিলেন যে, কোরাইশরা নির্ভেজাল ইসমাইলি বংশোদ্ভূত আরব এবং অন্যান্য ইসমাইলিদের সদার। কাজেই নেতৃত্ব কর্তৃত্বের অধিকার শুধু তাদেরই রয়েছে। এসব কথা চিন্তা করে কুসাই কোরাইশ এবং বনু খোযাআ গোত্রের কয়েকজন লোকো সাথে আলোচনা করেন। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বনু খোযাআ গোত্রের বনু বকরকে মক্কা থেকে বের করে না দেয়ার কোন চুক্তি আছে কি? সবাই তার সাথে ঐক্যমত্য প্রকাশ করলো এবং তাকে সমর্থন জানালো (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃ:১১৭-১১৮)।
দ্বিতীয়ত, মৃত্যুর সময়ে কুসাইয়ের শ্বশুর হোলাইল অসিয়ত করেছিলেন যে, কুসাই কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন এবং মক্কার ওপর শাসন কাজ পরিচালনা করবেন (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃ: ১১৮)।
তৃতীয়ত, হোলাইল তার ক্যা হোবাকে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। আবু গিবশান খোযায়ীকে উকিল নিযুক্ত করা হয়। হোবার প্রতিনিধি হিসাবে আবু গিবশান কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব করতেন। হোলাইলের মৃত্যুর পর কুসাই এক মশক মদের বিনিময়ে আবু গিবশানের নিকট কাবার রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা ক্রয় করেন। কিন্তু খোযাআ গোত্র এ ক্রয় বিক্রয়ের অনুমোদন করেনি। তারা কুসেইকে কাবাঘরে যেতে বাধা দেয়। এর ফরে কুসাই বনু খোযাআদের মক্কা থেকে বের করে দেয়ার জন্য কোরাইশ এবং বনু কেনানাদের একত্রিত করে। কুসাইয়ের ডাকে সবাই সাড়া দেয় এবং বনু খোযাআদের মক্কা থেকে বের করে দেয়া হয়(রহমাতুল লিল আলামিন, ২য় খন্ড, পৃ: ৫৫)।
মোটকথা, কারণ যা কিছুই হোক না কেন ঘটনাধারা ছিল এরূপ যে হোলাইলের মৃত্যুর পর সোফা গোত্রের লোকেরা ইতিপূর্বে যা করতো তাই করতে চাইলো। এ সময়ে কুসাই কোরাইশ এবং কেনানা গোত্রের লোকদের একত্রিত করেন। আকাবার পথের ধারে সমবেত লোকদের কুসাই বললেন, তোমার চেয়ে আমরা এ সম্মানের অধিক যোগ্য (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃ ১১৭)। এ কথার পর উভয়ে পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয় এবং কুসাই সোফাদের নিকট থেকে মর্যাদা ছিনিয়ে নেন। এ সময়ে বনু খোজাআ এবং বনু বকর গোত্রের লোকেরা কুসাইয়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার পরিবতে তার বিরোধিতা করে। এতে কুসাই তাদের হুমকি দেন। ফিলে উভয় পক্ষে যুদ্ধ বেধে যায় এবং বহু লোক মারা যায় (কলবে জাযিরাতুল আরব, পৃ-২৩২)। যুদ্ধের পর সন্ধির শত অনুযায়ী কুসাই মক্কার প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করেন। মক্কার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরাইশদের ডেকে এনে তাদেরকে প্রশাসনের সাথে যুক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি প্রত্যেক কোরাইশ পরিবারের রমযানের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে বরাদ্দ করেন। মাসের হিসাব গণনাকারী, আল সফওয়ানদের বনু আদওয়ান এবং বনু মাররা ইবনে আওফকে তাদের পদমর্যাদায় টিকিয়ে রাখেন। কুসাই মনে করতেন এটাও ধমের অংশ, এতে রদবদলের অধিকার কারো নেই (ইবনে হিশাম ১ম খন্ড পৃ: ১২৪-১২৫)।
কারা ঘরের উভয় দিকে দারুন নোদওয়া প্রতিষ্ঠা করা কুসাইয়ের অন্যতম কীর্তি। এর দরোজা ছিল মসজিদের দিকে। দারুন নোদওয়া ছিল প্রকৃতপক্ষে কোরাইশদের সংসদ ভবন। কোরাইশদের সামাজিক জীবন দারুন নোদওয়ার গুরুত্ব ও প্রভাব ছিল অসামান্য। এই প্রতিষ্ঠান ছিল কোরাইশদের ঐক্যের প্রতীক। সমাজের বহু জটিল সমস্যার সমাধান এখানে হতো। (ঐ ১ম খন্ড, পৃ: ১২৫, মোহাযেরাতে খাযরমি ১ম খন্ড, পৃ-৩৬)
কুসাই নিন্মেল্লিখিত মর্যাদার ও ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।
এক) দারুন নোদওয়ার সভাপতি। এখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ হতো। যুবক যুবতীদের বিয়েও এখানে অনুষ্ঠিতে হতো।
দুই) লেওয়া, অর্থাৎ যুদ্ধের পতাকা কুসাইয়ের হাতে বেঁধে রাখা হতো।
তিন) হেজাবাত, কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণে। এর মানে হচ্ছে কাবাঘরের দরোজা কুসাই খুলতেন এবং কাবা ঘরের যাবতীয় খেদমত এবং রক্ষণাবেক্ষণ তার তদারকিতেই সম্পন্ন হতো।
চার) সেকায়া, পানি পান করানো। কয়েকটি হাউজে হাজীদের পানি ভরে রাখা হতো। এরপর সোই পানিতে খেজুর এবং কিসমিস মিশিয়ে পানি মিঠা করা হতো। হজ্জ যাত্রীরা মক্কায় এলেই সেই পানি পান করতেন। (মোহাদেরাতে খাযরমি, ১ম খন্ড, পৃ-৩৬)।
পাঁচ) রেফাদা, হাজীদের মেহমানদারী। এর অর্থ হচ্ছে হাজীদের মেহমানদারীর জন্য খাবার তৈরি করা। এ উদ্দেশ্যে কোরাইশদের ওপর কুসাই নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা ধার্য করে দিতেন। সেই অর্থ হজ্জ মৗসুমে কুসাইদের কাছে জমা দিতে হতো। কুসাই জমাকৃত অর্থে হাজীদের জন্য খাবার তৈরি করাতেন। দরিদ্র, নিঃস্ব হাজীদেরকে যেসব খাবার পরিবেশন করা হতো। যেসব হাজীর কাছে বাড়ী ফিরে যাওয়ার অর্থ সম্বল থাকতো না তাদের সাহায্য করা হতো (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃ:-১১)।
কুসাই উল্লিখিত সকল প্রকার পদমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। কুসাই এর জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল আবদুদ দার। দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল আবদে মান্নাফ। দ্বিতীয় পুত্র কুসাইয়ের জীবদ্দশায়ই নেতৃত্ব কর্তৃত্বের উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। এ কারণে কুসাই তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আবদুদ দারকে বলেছিলেন, ওরা যদিও তোমাকে ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু আমি তোমাকে তাদের সমমর্যাদায় উন্নীত করবো। এরপর কসাই সকল পদমর্যাদার ব্যাপারে আবদুদ দারকে উত্তরসূরি করে অসিয়ত কর যান। অর্থাৎ দারুন নোদওয়ার সভাপতি, কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করানো যুদ্ধের পতাকা বহন, হাজীদের পানি পান করানো, হাজীদের মেহমানদারী সব কিছুই তিনি আবদুদ দারকে ন্যস্ত করেন। জীবদ্দশায় কুসাই এর কোন কথা এবং কাজের কেউ প্রতিবাদ করতো না বরং সব কিছু সবাই বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতো, এ কারণে মৃত্যুর পরে তার সব সিদ্ধান্ত সবাই বিনা সমালোচনায় মেনে নিয়েছিল। কুসাইয়ের সন্তানরা পিতার অসিয়তের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করেন। আবদে মান্নাফের মৃত্যুর পর তার সন্তানেরা চাচাতো ভাইদের সাথে উল্লিখিথ বিষয় গুলোতে দরকষাকষি শুরু করে। চাচতো ভাইদের একক পদমর্যাদার সমালোচনা করে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকে। এর ফলে কোরাইশরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। উভয় দলের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ আপোষ নিষ্পত্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এবং বিভিন্ন পদমর্যাদা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এরপর হাজীদের পানি পান করানো এবং হাজীদের আতিথেয়তার দায়িত্ব বনু আবদে মান্নাফের ওপর ন্যস্ত করা হয়। দারুন নোদওয়ার নেতৃত্ব এবং কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আবদুদ দারের সন্তানদের হাতে থাকে। অর্জিত পদ মর্যাদার ব্যাপারে আবদে মান্নাফের সন্তানরা কোরা অর্থাৎ লটারির ব্যবস্থা করেন। কোরায় আবদে মান্নাফের পুত্র হাশেমের নাম ওঠে। এর ফলে হাশেম সারা জীবন হাজীদের পানি পান করানো এবং হাজীদের মেহমানদারীর দায়িত্ব পালন করেন। হাশেমের মৃত্যুর পর তার ভাই মোত্তালেবের এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মোত্তালেবের পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র আব্দুল মোত্তালেবের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। তিনি ছিলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা। আবদুল মোত্তালেবের পুত্র আব্বাস এ দায়িত্ব লাভ করে। (ঐ ১ম খন্ড পৃ: ১২৯, ১৩২, ১৭৮, ১৭৯)।
এছাড়া আরো কিছু পদমর্যাদা ছল, যেসব কোরাইশরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এসব পদমর্যাদার মাধ্যমে কোরাইশরা একটি ছোটখাটো সরকার গঠন করে রেখেছিলেন। সে সরকারের ব্যবস্থাপনা ছিল অনেকটা বর্তমান কালের সংসদ পদ্ধতির মতো। পদমর্যাদার রূপরেখা ছিল নিম্নরূপ-
ক) ঈসার, অর্থাৎ ফালগিরি। ভাগ্য জানার জন্য মূর্তিদের কাছে যে তীর রাখা হতো সে তাও রক্ষণাবেক্ষণ এই মর্যাদা ছিল বনু জমহের নিকট।
খ) অর্থ ব্যবস্থাপনা, মূর্তিদের নৈকট্য লাভের জন্য যেসব উপঢৌকন, নযরানা এবং কোরবানী পেশ করা হতো তার ব্যবস্থাপনা। এছাড়া ঝগড়া বিবাদের ফয়সালা করার দায়িত্বও বনু সাহাম দেয়া হয়েছিল।
গ) শুরা, এ সম্মান বনু আছাদের কাছে ছিল।
ঘ) আশনাক, ক্ষতিপূরণ এবং জরিমানা র অর্থ আদায় ও বণ্টন। বনু তাঈম গোত্র এ মর্যাদার অধিষ্ঠিত ছল।
ঙ)উকাব, জাতীয় পতাকা বহন । এ মর্যাদা বনু উমাহিয়া গোত্রের ওপর ন্যস্ত ছিল।
চ) কুব্বা, সামরিক ছাউনির ব্যবস্থাপনা এবং সৈন্যদের অধিনায়কত্ব। এ সম্মান বনু মাখযুমের অধিকার ছিল।
ছ) সাফায়াত, সফর সম্পর্কিত বিষয় তত্ত্বাবধান। দায়িত্ব বনু আদী গোত্র পালন করতো। (তারীখে আবদুল কোরআন ২য় খন্ড, পৃ: ১০৪, ১০৫, ১০৬)।
আরবের অন্যান্য অংশের প্রশাসনিক অবস্থা
ইতিপূর্বে কাহতানি এবং আদনানী আরবের দেশ ত্যাগের কথা আলোচনা করা হয়েছে এবং উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমগ্র দেশ আরবের এসব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এরপর তাদের নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্বের অবস্থা এরূপ ছিল যে, কাবার আশেপাশে যেসব গোত্র বসবাস করতো তাদেরকে হীরার অধীনস্থ মনে করা হতো। কিন্তু এটা ছিল নামকাওয়াস্তে, বাস্তবে সেরূপ ছিল না। উল্লেখিত দুটি জায়গা বাদে অন্যান্য এলাকার আরবরা ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন।
এ সকল গোত্রের মধ্যে মর্যাদা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। গোত্রের লোকেরই নিজেদের মর্যাদা নিযুক্ত করতো। এ সকল সর্দারদের জন্য গোত্র হতো একটি ছোট খাট সরকার। রাজনৈতিক অস্তিত্বের নিরাপত্তার ভিত্তি, গোত্রীয় বিবাদ বিশৃঙ্খলা নিরসন এবং নিজেদের ভূখণ্ডের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রতিরক্ষার স্বার্থ এর দ্বারা করা হতো।
সর্দারদের মর্যাদা ছিল তাদের সমাজের বাদশার মতো। যুদ্ধ সন্ধির ব্যাপারে সর্দারদের ফয়সালা হতো চূড়ান্ত। এ অবস্থায় কোন পরিবর্তন কোন অবস্থায়ই হতো না। একজন একনায়কের যেরূপ ক্ষমতা থাকা দরকার এসব গোত্রীয় সর্দারের ক্ষমতা তার চেয়ে কোন অংশ কম ছিলনা, কোন কোন সর্দারের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা সব দিক থেকে স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী হতেন। একজন কবি একথা এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের মধ্যে তোমার জন্য গণিমতের মালে এক চতুর্থাংশ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে নির্বাচিত ধন-সম্পদ। তুমি ফয়সালা করে দেবে, সে সম্পদেও রয়েছে তোমার মালিকানা। পথে যা কুড়িয়ে পাওয়া যাবে এবং যা বণ্টন না হয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে সে সম্পদের মালিকও তুমি।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
জাযিরাতুল আরবরে সরকার পদ্ধতি এবং শাসনকর্তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কাজেই রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করাই সমীচীন হবে।
জাযিরাতুল আরবের তিনটি সীমান্ত এলাকার জনগণ ছিল ভিন্ন দেশের প্রতিবেশী। যে তিনটি দেশে অশান্তি বিশৃঙ্খলা রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদ্যমান ছিল। মানুষরা দাস এবং প্রভু এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা, নেতাদের, বিশেষত্ব বিদেশী শাসকদের করতলগত ছিল। সকল বোঝা ছিল দাসদের মাথায়। সুস্পষ্ট ভাষায় বললে বলা যায় যে, প্রশাসন ছিল খেত খামারের মতো। তারা সরকারের আয়ের ইৎস হিসাবে পরিগণিত হতো। শাসকবর্গ সেই অর্থ সম্পদ নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ ঐশ্বর্য এবং বিলাসিতায় ব্যয় করতো। জনগণ অন্ধকার হাত পা ছুড়তো। শাসকরা জনগণের ওপর সকল প্রকার যুলুম-অত্যাচার চালিয়ে যেতো, জনগণ সেসব মুখ বুজে নির্বিচারে সহ্য করতো। কোন প্রকার অভিযোগ করার তাদের উপায় ছিল না। অসম্মান অবমাননা অত্যাচার তাদের সহ্য করতে হতো। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তরা ডিক্টেটরে মতো আচরণ করতো। মানুষের অধিকার বলতে কোন কিছুই ছিলনা।
এ সকল এলাকার পাশে বসতি স্থাপনকারী প্রতিবেশীরা সিদ্ধান্তহীনতার ভুগতো। এ সব গোত্রের রোকেরা পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতো। কখনো তারা ইরাকীদের প্রতি সমর্থন জানাতো আবার কখনো সিরীয়দের সুরে মেলাতো।
আরবের ভেতরে বসবাসকারী গোত্র সমূহও ছিল শতধা বিচ্ছিন্ন। চারিদিকে ঝগড়া বিবাদ, কলহ কোন্দল বংশগত ধর্মীয় বিভেদ বিশৃংখলা চলছিল।
এ সব অশান্তির মধ্যেও বিভক্ত বিচ্ছিন্ন লোকেরা প্রয়োজন নিজেদের গোত্রের প্রতিই সমর্থন দিতো। এক্ষেত্রে ন্যায় -অন্যায়ের ধার ধারতো না। একটি গোত্রের মুখপাত্র একজন কবি বলেন,
আমি তো গাযিরা গোত্রের একজন মানুষ। ওরা যদি ভুল পথে চলে তবে অমি ভুল পথে চলবো, ওরা যদি সঠিক পথে চলে তবে আমিও সঠিক পথে চলবো।
আরেবের ভেতরে এমন কোন বাদশাহ ছিল না, যিনি যিনি জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতো। কারো কোন আশ্রয়স্থল ছিল না। দু:খ কষ্ট সমস্যা সংকট আপদে বিপদে বিশ্বাস এবং নির্ভরতার মতো কেউ ছিল না।
হেজাজের শাসককে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হতো এবং কেন্দ্রীয় হিসাবে তাকে সম্মান করা হতো। হেজাযের শাসক ছিলো প্রকৃতপক্ষে দুনিয়াবি এবং দ্বীনি নেতা। দমীয় নেতা হিসাবে আরবদের ওপর তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। কাবাঘর এবং আশেপাশের এলাকায় তার শাসন বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়া হতো। কাবাঘর জেয়ারতের জন্য যারা আসতো তাদের দেখাশোনা, তাদের প্রয়োজন পূরণ, শরীয়াতের বাস্তবায়ন, সংসদীয় পদ্ধতির লালন ও বিকাশ ইত্যাদি কাজ সেই শাসনকর্তার ওপর ন্যস্ত থাকতো। কিন্তু সেই শাসকরা এমন দুর্বল হতেন যে, আরবের আভ্যন্তরীণ সমস্যার বোঝা মাথায় নেয়া অর্থাৎ যাবতীয় সমস্যার সমাধান করার শক্তি তার থাকতো না। আবিসিনীয়দের হামলার সময় এই দুর্বলতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।