ছাহাবীগণের জীবনী সম্পর্কীয় কিতাব
ছাহাবীগণের জীবনী অর্থ তাঁহাদের মধ্যে কে হাদীছ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য এবং কে বিশ্বাসযোগ্য নহেন ইহার অনুসন্ধান করা নহে। কারণ, ছাহাবীগণ সকলেই যে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলেন –তাহা পূর্বেই বলা হইয়াছে। তাঁহাদের জীবনী আলোচনার অর্থ এই যে, তাঁহাদের কে, কবে, কোথায় মুসলমান হইয়াছেন এবং কতদিন রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর সাহচর্য (ছোহবত) লাভ করিয়াছেন, অতঃপর কবে, কোথায় এন্তেকাল করিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট কে কোথায় হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন প্রভৃতি জানা। এ সকল কথা জানা না থাকিলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, তিনি ছাহাবী ছিলেন কি তাবেয়ী এবং তাঁহার নিকট যে বা যাহারা হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন বলিয়া দাবী করিতেছেন তাহার বা তাহাদের সে দাবী সত্য কি না। এসব কারণে অনেকেই ছাহাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেন। যথা-
১। ইমাম বোখারী -(মৃঃ ২৫৬ হিঃ)। তিনি এ ব্যাপারে সকলের অগ্রণী।
২। হাফেজ বাগাবী –আবদুল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ ইবনে আবদুল আজীজ (মৃঃ ৩৩৩ হিঃ)।
৩। হাফেজ আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনে আবু দাঊদ (মৃঃ ৩১৬ হিঃ)।
৪। ইবনুছ ছাকান –আবু আলী ছাঈদ ইবনে ওছমান বছরী (মৃঃ ৩৫৩ হিঃ)।
৫। ইবনুছ ছাকান –আবু হাতেম মোহাম্মদ ইবনে হিব্বান বুস্তী (মৃঃ ৩৫৪ হিঃ)
৬। তবরানী –আবুল কাছেম ছোলাইমান ইবনে আহমদ (মৃঃ ৩৬০ হিঃ)।
৭। ইবনে শাহীন –ওমর ইবনে আহমদ আবু বকর (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)।
৮। আবু মানছুর বাওয়ারদী-
৯। ইবনে মান্দাহ –আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইছহাক (মৃঃ ৩৯৫ হিঃ)। আবু মূছা মাদীনী তাহার কিতাবের পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন।
১০। হাফেজ আবু নোয়াইম –আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ (মৃঃ ৪৬৩ হিঃ)।
১১। ইবনে আবদুল বার –আবু ওমর ইউছুফ কোরতবী (মৃঃ ৪৬৩ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘আল ইসতিয়াব’ (আরবী)। ইবনে ফাতহুন প্রমুখ ইহার পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন।
১২। ইবনুল আছীর –ইজ্জুদ্দীন আবুল হোছাইন আলী ইবনে মোহাম্মদ জজরী (মৃঃ ৬৩০ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘উছদুল গাবাহ’। ইহা একটি বিরাট কিতাব। কিন্তু ইহাতে কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রহিয়াছে।
১৩। ইমাম জাহবী –শামছুদ্দীন আবু আবদুল্লাহ (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)। ‘তাজরীদু আছমাইছ ছাহাবাহ’ (আরবী***********) তাঁহার কিতাবের নাম। ইহাতে ‘উছদুল গাবাহ’র ত্রুটি দূর করার চেষ্টা করা হইয়াছে।
১৪। হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)। ইহার নাম ‘আল এছাবা’ (আরবী**********)। ইহাই এ বিষয়ের সর্বাপেক্ষা ব্যাপক কিতাব। ইসতিয়াব’ ও ‘উছদুল গাবায়’ যে সকল নাম বাদ পড়িয়াছে ইহাতে সেগুলির সমাবেশ করা হইয়াছে। জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)। ‘আইনুল এছাবা’ নামে ইহার সংক্ষেপ করিয়াছেন।
ছেকাহ রাবীদের জীবনী সম্পর্কীত কিতাব
শুধু ছেকাহ রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াও অনেকে অনেক কিতাব লিখিয়াছেন। যথা-
১। কিতাবুছ ছেকাত –আজালী হাফেজ আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ (মৃঃ ২৬১ হিঃ)।
২। কিতাবুছ ছেকাত –আবু হাতেম বুস্তী মোহাম্মদ ইবনে হিব্বান (মৃঃ ৩৫৪ হিঃ)।
৩। কিতাবুছ ছেকাত –ইবনে শাহীন –আবু হাফছ ওমর ইবনে আহমদ শাহীন (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)।
৪। কিতাবুছ ছেকাত –জায়নুদ্দীন কাছেম ইবনে কুতলুবাগা (মৃঃ ৮৭৯ হিঃ)।
৫। তাবাকাতুল হোফফাজ –ইবনে দাব্বাগ (মৃঃ ৫৪৬ হিঃ)।
৬। তাবাকাতুল হোফফাজ –ইবনে মোফাজ্জল মাকদেছী (মৃঃ ৬১৬ হিঃ)।
৭। তাজকেরাতুল হোফফাজ –ইমাম জাহবী –শামছুদ্দীন (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)। [ইহা অতি মশহুর কিতাব (প্রকাশিত)]
৮। তাবাকাতুল হোফফাজ –হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)।
৯। তাবাকাতুল হোফফাজ –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)।
১০। তাবাকাতুল হোফফাজ –তাকীউদ্দীন ইবনে ফাহদ।
১১। তাবাকাতুল হোফফাজ –মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ হাশেমী।
জঈফ রাবীদের জীবনী সম্পর্কীয় কিতাব
অনেকে আবার স্বতন্ত্র কিতাবে কেবল জঈফ রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেন। যথা-
১। কিতাবুজ জুআফা –ইমাম বোখারী (মৃঃ ২৫৬ হিঃ)।
২। কিতাবুজ জুআফা –(আরবী**********) –ইমাম নাছায়ী (মৃঃ ৩০৩ হিঃ)।
৩। কিতাবুজ জুআফা –উকাইলী মোহাম্মদ ইবনে আমর (মৃঃ ৩২২ হিঃ)।
৪। কিতাবুজ জুআফা –ইবনে হিব্বান বুস্তী (মৃঃ ৩৫৪ হিঃ)। ইহা একটি বিরাট কিতাব।
৫। আল কামেল ইবনে আদী –আবু আহমদ (মৃঃ ৩৬৫ হিঃ)। ইহা এ বিষয়ের সর্ববৃহৎ ও সর্বজনগ্রাহ্য কিতাব। পরবর্তী মোহাদ্দেছগণ ইহার উপরই অধিকতর নির্ভর করিয়াছেন। ইবনুর রুমিয়া আহমদ ইবনে মোহাম্মদ ইশবেলী (মৃঃ ৬৩৭ হিঃ) ‘আল হাফিল’ নামে ইহার এক বিরাট পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন।
৬। কিতাবুজ জুআফা –ইমাম দারা কুতনী (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)।
৭। কিতাবুজ জুআফা –হাকেম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরী (মৃঃ ৪০৫ হিঃ)।
৮। কিতাবুজ জুআফা –ইমাম ইবনে জাওজী (মৃঃ ৫৯৭ হিঃ)। ইহা একটি বিরাট ও প্রসিদ্ধ কিতাব। হাফেজ জাহবী (৭৪৮ হিঃ) ইহার সংক্ষেপ করিয়াছেন; অতঃপর ইহার পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন। এছাড়া হাফেজ আলাউদ্দীন মোগলতায়ীও (মৃঃ ৭৬২ হিঃ) ইহার এক পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন।
৯। কিতাবুজ জুআফা –ইমাম হাছান ছাগানী লাহোরী (মৃঃ ৬৫০ হিঃ)।
১০। মীজানুল ই’তেদাল –ইমাম জাহবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)। ইহা এ বিষয়ের একটি ব্যাপক এ মূল্যবান কিতাব। হাফেজ জায়নুদ্দীন ইরাকী (মৃঃ ৮০৬ হিঃ) ‘জায়নুল মীজান’ নামে দুই খণ্ডে ইহার এক পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন। এতদ্ব্যতীত হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ) ‘লেছানুল মীজান’ নামে ইহার এক পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন এবং তাহার ‘তাহরীরুল মীজান’ ও ‘তাকবীমুল মীজান’ নামক কিতাবদ্বয়ে ইহাকে সুন্দররূপে সাজাইয়াছেন। এছাড়া এ বিষয়ে আরো বহু কিতাব রহিয়াছে।
মোদাল্লেছীণ ও মোরছেলীনদের জীবনী আলোচনা
শুধু মুদাল্লেছীনদের জীবনী আলোচনা করিয়া স্বতন্ত্র কিতাব লিখিয়াছেন অনেকেই। যথা-
১। ইমাম হোছাইন ইবনে আলী কারাবিছী (২৪৮ হিঃ)। ইনি ইমাম শাফেয়ীর শাগরিদ ছিলেন।
২। ইমাম নাছায়ী –আহমদ ইবনে শোয়াইব (মৃঃ ৩০৩ হিঃ)।
৩। ইমাম দারা কুতনী (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)।
৪। ইমাম আলায়ী। তাঁহার কিতাবের নাম ‘জামেউততাহছীল’। -(আরবী********) হাফেজ জায়নুদ্দীন ইরাকী (মৃঃ ৮০৬ হিঃ) ইহার ‘জায়ল’ (পাদ পরিশিষ্ট) লিখিয়াছেন। অতঃপর তাঁহার পুত্র ওলীউদ্দীন ইরাকী, আলায়ীও তাঁহার পিতার কিতাবকে একত্র করিয়া এক স্বতন্ত্র কিতাব লিখিয়াছেন।
৫। ইমাম জাহবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)। তিনি ইহা পদ্যে লিখিয়াছেন। তাঁহার শাগরিদ আহমদ ইবনে ইব্রাহীম মাকদেছী আলায়ীর কিতাব হইতে আরো কতক নাম সংগ্রহ করিয়া ইহার পরিশিষ্ট লিখিয়াছেন।
৬। ইব্রাহীম ইবনে মোহাম্মদ হালাবী (মৃঃ ৮৪১ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘তাবয়ীন’ –(আরবী**********)। ইহাতে তিনি পূর্ববর্তী নামসমূহের সহিত আরো ৩২টি নূতন নামের সমাবেশ করিয়াছেন।
৭। হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)। তিনি ইহাদের সহিত আরো ৩৯ জনের জীবনী যোগ করিয়াছেন। সুতরাং তাঁহার কিতাবে মোট ১৫২ জন মোদাল্লেছের নাম রহিয়াছে।
৮। জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)। এ বিষয়ে তাঁহার একটি সংক্ষিপ্ত কিতাব রহিয়াছে। ‘মোরছেলীন’দের সম্পর্কে স্বতন্ত্র কিতাব লিখিয়াছেন ইবনে আবু হাতেম রাজী (মৃঃ ৩২৭ হিঃ)। ইহা ‘মারাছীলে আবি হাতেম’ নামে প্রসিদ্ধ।
হাদীছ জালকারীদের জীবনী আলোচনা
জঈফ ও মাতরূক রাবীদের জীবনী আলোচনা প্রসঙ্গে যদিও হাদীছ জালকারী মিথ্যুকদের প্রায় সকলের জীবনীই আলোচিত হইয়া গিয়াছে, তথাটি আমাদের মোহাদ্দেছগণের অনেকে স্বতন্ত্রভাবে তাহাদের জীবনী আলোচনা করা সমীচীন মনে করিয়াছেন এবং পৃথক কিতাবে তাহাদের জীবনী লিখিয়া গিয়াছেন। নীচে এইরূপ দুইটি কিতাবের নাম দেওয়া গেল।
(ক) আল কাশফুল হাদীছ (আরবী*********) –হালাবী।
(খ) কানুনুল মাওজুআত –মোহাম্মদ ইবনে তাহের পাট্টনী সিন্ধী।
রাবীদের জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কীয় কিতাবঃ
যে রাবী যাঁহার নিকট হাদীছ শুনিয়াছেন বলিয়া দাবী করাহ হইতেছে তিনি তাঁহার যুগ পাইয়াছিলেন কি না ইহা পরীক্ষা করার জন্য অনেকে বিশেষ তাহকীক করিয়া শুধু রাবীদের জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে কিতাব লিখিয়াছেন। যথা-
১। হাফেজ আবু ছোলাইমান মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। তিনি হিজরতের প্রথম সন হইতে ৩৩৮ সন পর্যন্ত সনক্রমে হিসাবে এক কিতাব লেখেন এবংকোন কোন সনে কোন কোন শায়খ বা রাবী এন্তেকাল করিয়াছেন তাহার ফিরিস্তি দান করেন। হাফেজ আবু মোহাম্মদ ইবনে আবদুল আজীজ কাত্তানী (মৃঃ ৪৪৬ হিঃ) ইহার এক পরিশিষ্ট লেখেন। অতঃপর হিবাতুল্লাহ ইবনে আহমদ আফফানী কাত্তানীর কিতাবের পরিশিষ্ট লেখেন এবং ৪৮৫ সন পর্যন্ত পৌঁছেন। আফফানীর এ কিতাবের পরিশিষ।ট লেখেন আলী ইবনে মোফাজ্জাল মাকদেশী (মৃঃ ৬১১ হিঃ)। ইহাতে তিনি ৫৮১ সন পর্যন্ত মৃত সকল শায়খ বা রাবীদের নাম যোগ করেন। অতঃপর ইবনুল মোফাজ্জালের এ কিতাবের পরিশিষ্ট লেখেন হাফেজ আবুদল আজীম মুনজেরী (মৃঃ ৬৫৬ হিঃ)। ইহার নাম ‘তাকমেলাহ’ (আরবী**********)। মুনজেরীর কিতাবের পরিশিষ্ট লেখেন তাঁহার শাগরিত ইজ্জুদ্বীন আহমদ ইবনে মোহাম্মদ। ইহাতে তিনি ৬৭৪ সন পর্যন্ত পৌঁছেন। অতঃপর ইজ্জুদ্দীনের কিতাবের পরিশিষ্ট লেখেন আহমদ ইবনে আইবক দেমইয়াতী এবং ৭৪৯ সন পর্যন্ত সকল হাদীছ বর্ণনাকারীর নাম ইহার সহিত যোগ করেন। আর আইবকের কিতাবের পরিশিষ্ট লেখেন হাফেজ জায়নুদ্দীন ইরাকী (মৃঃ ৮০৬ হিঃ)।
২। বারজালী –আবুল কাসেম মোহাম্মদ দেমাশকী (মৃঃ ৭৩৮ হিঃ)। ইহার পরিশিষ্ট লেখেন তকীউদ্দীন রাফে’। ইহাতে তিনি ৭৭৪ সন পর্যন্ত পৌঁছেন। তকীউদ্দীনের কিতাবের পরিশিষ্ট লেখেন অপর এক তকীউদ্দীন ইবনে হাজার।
৩। মোবারক ইবনে আহমদ আনছারী। তাঁহার কিতাব ‘ওয়াফায়াতুশ শুয়ুখ’।
৪। হাব্বাল –ইব্রাহীম ইবনে ইছমাঈল (মৃঃ ৪৮২ হিঃ)। (কিতাবুল ওয়াফায়াত।)
রাবীদের নাম, লকব ও কুনিয়াত সম্পর্কীয় কিতাবঃ [ডাকনাম, উপনাম বা উপাধিসূচক নামকে লকব বলে। পিতা বা পুত্রের সহিত সম্পর্কিত নাম যথা অমুকের বাপ অমুকের পুত্র, ইহাকে কুনিয়াত বলে। ‘কবী’ জঈফের বিপরীত শব্দ। ইহার অর্থ সবল বা নির্ভরযোগ্য।]
এক নামের, এক লকবের বা এক কুনিয়াতের বিভিন্ন রাবী রহিয়াছেন। ইহা রাবীদের পরিচয়ের পক্ষে নিতান্ত অসুবিধার ব্যাপার বটে। ইহাতে কোন ‘জঈফ’ রাবীকে নির্ভরযোগ্য (কবী) অথবা ‘কবী’কে ‘জঈফ’, জাল রাবীকে আসল রাবী অথবা আসল রাবীকে জাল মনে করা যাইতে পারে। এ কারণে আমাদের একদল মনীষী যে রাবী তাহার নামের সহিত পরিচিত তাহার লকব বা কুনিয়াত কি এবং যিনি তাঁহার কুনিয়াত বা লকবের সহিত পরিচিত তাঁহার নাম কি তাহা অনুসন্ধান করিয়াছেন। যথা-
১। আলী ইবনে মাদীনী (মৃঃ ২৩৪ হিঃ)
২। ইমাম নাছায়ী (মৃঃ ৩০৩ হিঃ)
৩। ইবনে হিব্বান বুস্তী (মৃঃ ৩৫৪ হিঃ)
৪। হাকেম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরী (মৃঃ ৪০৫ হিঃ)
৫। আবু বকর শিরাজী (মৃঃ ৪০৭ হিঃ)
৬। ইবনে আবদুল বার (মৃঃ ৪০৭ হিঃ)
৭। আবুল ফজল (মৃঃ ৪৬৭ হিঃ) [তাঁহার কিতাবের নাম ‘মুন্তাহাল কামাল’ (আরবী********)]
৮। ইবনে জওজী (মৃঃ ৫৭৭ হিঃ)
৯। হাফেজ জাহবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ) [তাঁহার কিতাবের নাম ‘আল মোকতানা’]
১০। হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)
বিশেষ বিশেষ কিতাবের রাবীদের জীবনী আলোচনা
অনেকে আবার বিশেষ বিশেষ কিতাবের রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেন; যথা-
বোখারী শরীফঃ
বোখারী শরীফের ছনদসমূহে যে সকল রাবীদের নাম রহিয়াছে তাঁহাদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। আহমদ ইবনে মোহাম্মদ কালাবাজী (মৃঃ ৩৯৮ হিঃ)
২। মোহাম্মদ ইবনে দাঊদ কুরদী (মৃঃ ৯২৮ হিঃ)
মোছলেম শরীফঃ
মোছলেম শরীফের রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। আহমদ ইবনে আলী ইস্পাহানী (মৃঃ ২৬৯ হিঃ)
২। ইবনে মানজু ওয়াইয়াহ (কাজনুওয়াইহ) (মৃঃ ৪২৮ হিঃ)
মোআত্তাঃ
মোআত্তা-এ-মালেকের রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)
মোছনাদে আহমদঃ
ইহার রাবীগণের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। আবু মূছা ইস্পাহানী
আবু দাঊদঃ
ইহার রাবীগণের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। হোছাইন ইবনে মোহাম্মদ হিব্বানী (মৃঃ ৪৯৮ হিঃ)
কিতাবুল আছারঃ
ইমাম আবু ইউছুফ ছাহেবের ‘কিতাবুল আছার’-এর রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। মোহাম্মদ আবুল ওফা আফগানী
কিতাবুল আছার ও কিতাবুল হুজাজঃ
ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাছান শায়বানীর এ দুই কিতাবের রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। মাওলানা আবদুল বারী ফিরিঙ্গী মহল্লী (মৃঃ ১৩৪৪ হিঃ)
কিতাবুল আছার ইমাম মোহাম্মদঃ
ইহার রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। মাওলানা আবদুর রশীদ নো’মানী
শরহে মাআনীল আছারঃ
ইমাম তাহাবীর এ কিতাবের রাবীগণের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। হাফেজ বদরুদ্দীন আইনী –মাহমুদ ইবনে আহমদ (মৃঃ ৮৫৫ হিঃ)
(‘কাশফুল আছতার’ নামে ইহার সংক্ষেপ করিয়াছেন শায়খ ছাহেবুল এলম সিন্ধী। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।)
মেশকাত শরীফ
মেশকাত শরীফের রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেন স্বয়ং উহার প্রণেতাঃ
১। আল্লামা খতীব তাবরেজী (মৃঃ ৮০০ হিজরীরর কাছাকাছি)
ছহীহাইনঃ
বোখারী ও মোছলেম শরীফের রাবীদের জীবনী একসাথে আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। মোহাদ্দেছ হিবাতুল্লাহ লালাকানী (মৃঃ ৪১৮ হিঃ)
২। মোহাম্মদ তাহের মাকদেছী (মৃঃ ৫০৭ হিঃ)
ছুনানে আরবা’আ
ছুনানে আরবা’আ –আবু দাঊদ, নাছায়ী, তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ –এ চারি কিতাবের রাবীদের জীবনী আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। মোহাদ্দেছ আহমদ ইবনে মোহাম্মদ কুরদী (মৃঃ ৭৬৩ হিঃ)
মোআত্তাঃ
মোআত্তা-এ মালেক, মোছনাদে আহমদ, মোছনাদে শাফেয়ী ও মোছনাদে আবু হানীফা –এ চারি কিতাবের রাবীদের জীবনী এক সংগে আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)
ছেহাহ ছেত্তাঃ
ছেহাহ ছেত্তার ছয় কিতাবের রাবীদের জীবনী এক সংগে আলোচনা করিয়াছেনঃ
১। আবু মোহাম্মদ আবদুল গনী মাকদেছী (মৃঃ ৬০০ হিঃ) [তাঁহার কিতাবের নাম ‘আল কামাল’]
২। জামালুদ্দীন ইউছুফ মেজজী (মৃঃ ৭৪২ হিঃ)
তিনি মাকদেছীর ‘আল কামাল’কেই সুন্দররূপে সাজাইয়াছেন এবং নাম দিয়াছেন ‘তাহজীবুল কামাল’। ইহা অতি উত্তম কিতাব। ৩৩ খণ্ডে সমাপ্ত হইয়াছে।
৩। ইবনুল মুলাক্কেন (মৃঃ ৮০৪ হিঃ)
তিনি মেজজীর ‘তাহজীবের’ই সংশোধন ও পরিবর্তন করিয়াছেন তাঁহার ‘ইকমালূত তাহজীব’ কিতাবে।
৪। জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (আরবী***********************) (মৃঃ ৯১১ হিঃ)
তিনি ‘তাহজীবুল কামালের’ সহিত আরো কিছু তথ্য যোজন করিয়া তাহার নাম রাখিয়াছেন ‘জাওয়ায়েদুর রেজাল’
৫। হাফেজ জাহবী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ)
তাঁহার কিতাবের নাম ‘আল কাশেফ’। ইহাতে তিনি মেজজীর তাহজীবকে সংক্ষেপ করিয়াছেন।
৬। হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)
তিনি মেজজীর ‘তাহজীবের’ এবারতকে সংক্ষেপ করিয়া এবং বিষয়বস্তু বাড়াইয়া নাম রাখিয়াছেন ‘তাহজীবুত তাহজীব’। অতঃপর ইহাকে সংক্ষেপ করিয়া নাম করিয়াছেন ‘তাকরীবুত তাহজীব’। এ উভয় কিতাবই প্রকাশিত হইয়াছে। জাহবীর ‘মীজান’ এবং ইবনে হাজারের ‘তাহজীব’ এব বিষয়ের দুইটি প্রসিদ্ধ ও উৎকৃষ্ট কিতাব।
এছাড়া এ বিষয়ে আরো অনেকে অনেক কিতাব লিখিয়াছেন। হাফেজ আবুল মাহাছেন দেমাশকী (মৃঃ ৭৬৫ হিঃ) তাহার ‘আত তাজকেরা’ (আরবী**************) নামক কিতাবে এক সংগে দশ কিতাবের ছনদ আলোচনা করিয়াছেন। -মেফতাহুছ ছুন্নাহ
এক কথায় আমাদের মনীষীবৃন্দ রাবীদের জীবনী সম্পর্কে এত অধিক আলোচনা-সমালোচনা করিয়াছেন যার নজীর দুনিয়ার কোন জাতিই পেশ করিতে সক্ষম নহে। প্রসিদ্ধ প্রাচ্যবিদ্যা বিশারদ ডঃ স্প্রীংগার বলিয়াছেন, দুনিয়ার এমন কোন জাতি ছিল না এবং এখনো নাই যাহারা মুসলামানদের ন্যায় আছমাউর রেজালের মত একটি বিরাট শাস্ত্রের আবিস্কার করিতে পারিয়াছেন, যদ্দ্বারা পাঁচ লক্ষ লোকের জীবনী জানা যাইতেছে।
-মোকাদ্দমায়ে এছাবা
জাল হাদীছ সংগ্রহ
বাছাই করিয়া ছহীহ হাদীছসমূঞ সংগ্রহ করার পর জাল হাদীছ সংগ্রহ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। তথাটি আমাদের মনীষীবৃন্দ আসল ও নকল দুইট জিনিসকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করার এবং জনসাধারণকে নকল হাদীছের ধোঁকা হইতে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে নকল হাদীছসমূহ সংগ্রহ করারও পৃথকভাবে ব্যবস্থা করিয়াছেন। ইহাকে হাদীছ জাল প্রতিকারের সর্বশেষ ব্যবস্থা বলা যাইতে পারে। নীচে এরূপ কতিপয় জাল হাদীছ সম্বলিত কিতাবের নাম দেওয়া গেলঃ
১। ‘আল মাওজুআত’ (আরবী*******) –ইবনে জাওজী হাম্বলী (মৃঃ ৫৭৭ হিঃ)।
২। ‘আদদুররুল মুলতাকাত’ (আরবী**********) হাছান ছাগানী লাহোরী (মৃঃ ৬৫০ হিঃ)।
৩। ‘কিতাবুল আবাতীল’ (আরবী*******************) –জুজেজানী।
৪। ‘আল মুগনী’ (আরবী***************) –মুছেলী।
৫। ‘আল লাআলিউল মাছনূআ’ (আরবী***************) জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)।
৬। ‘আদদুরারুল মুনতাশেরাহ’ (আরবী***************) –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)।
৭। ‘জায়লু লাআলিউল মাছনুআ’ –‘ঐ’
৮। ‘আল মাওজুআত’ –ইবনুল কিরাণী।
৯। ‘আল মাকাছিদুল হাছানাহ’ (আরবী****************) –ইমাম ছাখাবী (মৃঃ ৯০২ হিঃ)। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
১০। ‘আল মাছনু ফিল আহাদীছুল মাওজু –মোল্লা আলী কারী (মৃঃ ১০১৪ হিঃ)
১১। ‘মাওজুআতে কবীর’- ‘ঐ’
১২। ‘তাজকিরাতুল মাওজুআত’ –মোহাম্মদ তাহের পাট্টনী (মৃঃ ৯৮৬ হিঃ)। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
১৩। ‘তাময়ীজুত তাইয়েবা’ (আরবী********************) –শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেছ দেহলবী (মৃঃ ১০৪৬ হিঃ)।
১৪। ‘আল ফাওয়াএদুল মাজমুআহ’ (আরবী*********************) –ইমাম শাওকানী (মৃঃ ১২৫০ হিঃ)।
১৫। ‘আল আছারুল মারফুআহ’ (আরবী*******************) –মাওলানা আবদুল হাই লক্ষ্মৌবী।
১৬। ‘আল কালামুল মারফু’ (আরবী***********************) –মাওলানা আনওয়ারুল্লাহ হায়দরাবাদী।