৮। মাওলানা বেলায়েত হোছাইন
[মৃঃ ১৩৪০ হিঃ মোঃ ১৯২১ ইং]
তিনি ১২৬৯ হিঃ বর্ধমান জিলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতা মাওলানা খয়রাত হোছাইন চাহেব তৎকালের ছদরে আমীন ছিলেন। তিনি তদীয় পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় এবং রামপুরে মাওলানা খায়েরাবাদীর নিকট ফনুনাত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর মাওলানা আহমদ আলী সাহারনপুরী কলিকাতায় জামালুদ্দীন ছাহেবের মসজিদে অবস্থান কালে তিনি তাঁহার নিকট ছেহাহ ছেত্তা অধ্যয়ন করেন।
তিনি একজন নিষ্ঠাবান আলেম, ফকীহ ও মধুরভাষী ব্যক্তি ছিলেন। এলমে বাতেনের খেলাফত তিনি শাহ মোরশেদ আলী আল কাদেরী হইতে লাভ করেন। শেষ বয়সে তিনি হজ্জ পালন করিতে যাইয়া ১৩৪০ হিঃ আরাফাত ময়দানে এন্তেকাল করেন।
৯। শামছুল ওলামা মুফতী আবদুল্লাহ টংকী
তিনি বিহারে জন্মগ্রহণ করেন, অতঃপর টংকে যাইয়া বসবাস করেন। তিনি মাওলানা লুৎফুল্লাহ আলীগড় নিকট ফনুনাত এবং মাওলানা ছৈয়দ নজীর হোছাইন ও মাওলানা আহমদ আলী সাহারনপুরীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
তিনি প্রথমে আলিয়া মাদ্রাছায় যোগদান করেন, অতঃপর কিছুদিন লাহোর সেন্ট্রাল কলেজের প্রিন্সিপাল ও পাঞ্জাব ইউনিভারসিটিতে লেকচারার হিসাবে কাজ করেন। ১৯১৭ ইং তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং তথায় হাদীছ শিক্ষা দেন। ১৯২০ ইং তিনি অবসর গ্রহণ করিয়া স্বদেশ চলিয়া যান। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁহার বহু কিতাব রহিয়াছে।
১০। শামছুল ওলামা নাজের হাছান
[মৃঃ ১৩৪২ হিঃ মোঃ ১৯২৩ ইং]
সাহারানপুর জিলার দেওবন্দে তাঁহার জন্ম হয়। তিনি দেওবন্দের দারুল উলুমে যাবতীয় এলম শিক্ষা করেন। মাওলানা আহমদ আলী সাহারনপুরী প্রমুখ বিশিষ্ট মোহাদ্দেছীন তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ। তিনি প্রথমে মিরাঠের অন্দরকোট ইছলামিয়া মাদ্রাছায় অতঃপর ভূপাল ও লক্ষ্মৌর নুদওয়াতুল ওলামায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯১৪ ইং তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় সহকারী প্রধান অধ্যাপক পদে এবং ১৯১৫ ইং সামরিকভাবে প্রধান অধ্যাপকের পদে কাজ করেন। অবসর গ্রহণের কিছুদিন পর ১৯২০ ইং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইছলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। মাদ্রাছা ও বিশ্ববিদ্যালয় উভয় স্থানেই তিনি হাদীছ শিক্ষা দেন। ঢাকার বংশাল হাজী বাড়ীর কবরস্থানে তিনি সমাধিস্থ আছেন।
১১। মাওলানা আবদুল হামীদ
[মৃঃ ১৩৪৬ হিঃ মোঃ ১৯২৭ ইং]
তিনি নোয়াখালী জিলার রায়পুর অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম হাজী হাছান আলী। তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় ছেহাহ ছেত্তার কিতাবসমূহ অধ্যয়ন করেন। পুনরায় তিনি হিন্দুস্থান হইতে হাদীছের ছনদ লাভ করেন।
১২। মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক বর্ধমানী
[মৃঃ ১৩৪৭ হিঃ মোঃ ১৯২৮ ইং]
তিনি মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর খলীফা ও বড় বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁহার আদেশেই তিনি কানপুর জামেউল উলুমে শিক্ষকতা করার ফলে তিন মাসে (৮৪ দিনে) হাফেজ আবদুল্লাহ ছাহেবের নিকট কোরআন-পাক হেফজ করেন। তাঁহার স্মৃতিশ্কিতক এক প্রখর ছিল যে, কিতাবের বরাত দেওয়ার সময় তিনি উহার পৃষ্ঠা, কখনও লাইন পর্যন্ত বলিয়া দিতেন এবং কিতাব একবার উল্টাইয়া প্রায় সেই জায়গা ধরিয়া দিতেন। তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় –উভয় স্থানেই হাদীছ শিক্ষা দিয়াছেন। [তাঁহার অপরাপর অবস্থার জন্য ১৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন]
১৩। মাওলানা মোহাম্মদ কাছেম
[মৃঃ ১৩৪৯ হিঃ মোঃ ১৯৩০ ইং]
তিনি বরিশাল জিলার মঠবাড়িয়ার অন্তর্গত দেবীপুরের অধিবাসী ছিলেন। তিনি দেওবন্দ দারুল উলুমে হাদীছ শিক্ষা করেন এবং দেবীপুরে আনওয়ারুল উলুম নামে এক মাদ্রাছা প্রতিষ্ঠা করেন।
১৪। মাওলানা ইব্রাহীম পেশওয়ারী
[মৃঃ ১৩৪৯ হিঃ মোঃ ১৯৩০ ইং]
তিনি আনুমানিক ১৮৫০ ইং মরদান জিলার হুটী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সীমান্ত প্রদেশের বিখ্যাত আলেমগণের নিকট ফনুনাত এবং দারুল উলুম দেওবন্দে হাদীছ অধ্যয়ন করেন। অতঃপর তিনি গঙ্গুহতে গমন করেন এবং মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহীর নিকট পুনঃ হাদীছের ছনদ লাভ করেন।
শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি প্রথমে পাক-ভারতের নৈনিতালের অন্তর্গত দাড়ো মাদ্রাছায় শিক্ষকতা করেন, অতঃপর ঢাকা আগমন করিয়া চকবাজার মসজিদ সংলগ্ন একটি মাদ্রাছা প্রতিষ্ঠা করেন। তথায় তিনি হাদীছ প্রভৃতি এলম শিক্ষা দেন। মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ খাঁ প্রমুখ বহু বড় বড় আলেম তাঁহার শাগরিদ। তিনি অনুমান ১৯৩০ ইং ঢাকায় এন্তেকাল করেন এবং খাজে দেওয়ান বড় মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে সমাধিস্থ হন।
১৫। মাওলানা আবদুর রহমান
[মৃঃ ১৩৩৭ বাঃ মোঃ ১৯৩০ ইং]
তিনি আনুমানিক ১২৮৫ বাং ময়মনসিংহ জিলার জাঙ্গালিয়া (পোঃ গুণারীতলা) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া সাহারানপুর মাজাহেরে উলুম মাদ্রাছায় ফনুনাত ও হাদীছ শিক্ষা করেন। পুনরায় তিনি মাওলানা ছৈয়দ নজীর হোছাইন দেহলবীর নিকট হইতে হাদীছের শিক্ষা করেন। স্বদেশ ফিরিয়া তিনি তাবলীগের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলা ভাষায় তাঁহার ২/৩ খানা কিতাব রহিয়াছে।
১৬। মাওলানা আহমদ আলী দুর্গাপুরী
তিনি ১২৮৯ বাং সিলেট জিলার দুর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম মুনসী রমজান আলী। তাঁহার পূর্বপুরুষগণ রাওয়ালপিণ্ডি হইতে সিলেট আসিয়া বসতি স্থাপন করেন। তিনি নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া ১৩১৩ বাং হিন্দুস্থানের রামপুর গমন করেন এবং ১৩১৪ বাং মুরাদাবাদ মাদ্রাছায় মাওলানা হাফেজ আবদুর রহমান প্রমুখ মোহাদ্দেছগণের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর তিনি দেওবন্দ দারুল উলুম হইতে পুনরায় হাদীছ-তফছীল ও ফনুনাতের ছনদ লাভ করেন। তথায় মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী প্রমুখ মনীষীগণ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ।
স্বদেশ ফিরিয়া তিনি দুর্গাপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, অতঃপর গাছবাড়ী ও খরিলহাট মাদ্রাছায় শিক্ষকতা করেন। পুনরায় ১৩৩৬ বাং তিনি গাছবাড়ী মাদ্রাছায় মোহাদ্দেছরূপে বরিত হন। ইহার অল্প কয়েক বৎসর পরই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।
১৭। মাওলানা মাজেদ আলী জৌনপুরী
[মৃঃ ১৩৫৫ হিঃ মোঃ ১৯৩৬ ইং]
তিনি জৌনপুরের (হিন্দুস্তান) মানিকাঁলা মহল্লার অধিবাসী ছিলেন। ফনুনাত তিনি মাওলানা আহমদ হাছান কানপুরী ও মাওলানা আবদুল হক খায়রাবাদীর নিকট এবং হাদীছ হজরত মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহীর নিকট অধ্যয়ন করেন।
তিনি প্রথমে ১২ বৎসর যাবৎ আ’জমগড় জিলার মিণ্ডু মাদ্রাছার, অতঃপর যথাক্রমে দিল্লীর আমীনিয়া ও আরা জিলার হানাফিয়া মাদ্রাছার প্রধান অধ্যাপক ছিলেন। মাওলানা আবদুল আওয়াল জৌনপুরীর অনুরোধে তিনি কিছুকাল জৌনপুরের মাদ্রাছায় অধ্যাপনা করেন। ১৯২০ইং তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছার হেড মাওলানা ও শায়খুল হাদীছ নিযুক্ত হন এবং ১৯২৭ ইং তথা হইতে অবসর গ্রহণ ও জৌনপুর প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি মা’কুল, মানকুল উভয় বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন।
১৮। হজরত মাওলানা জমীর উদ্দীন চাটগামী
[মৃঃ ১৩৫৯ হিঃ মোঃ ১৯৪০ ইং]
তিনি ১২৯৬ হিঃ চট্টগ্রাম জিলার ফটিকছড়ি থানাধীন শুয়াবীল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম মীর নূরুদ্দীন। তিনি যৌবনের প্রারম্ভেই অর্থোপার্জনের উদ্দেশ্যে বার্মা গমন করেন এবং রাত্রে জনৈক পাঞ্জাবী ইমামের নিকট এলমে দ্বীন শিক্ষা করিতে থাকেন। ইতিমধ্যে তিনি দুইটি অভিনব স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন শুনিয়া ইমাম ছাহেব তাঁহাকে গঙ্গুহ চলিয়া যাইতে বলেন। তদনুসারে তিনি বার্মা দেশ হইতে সোজা গঙ্গুহতে হজরত মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহীর খেদমনে উপনীত হন। হজরত গঙ্গুহী তাঁহাকে প্রথমে জাহেরী এলম সমাপ্ত করিতে বলেন। সুতরাং তিনি দেওবন্দের দারুল উলুমে উপস্থিন হইয়া ৬ বৎসর যাবৎ এলমে জাহের অর্জন করেন। হাদীছ তিনি হজরত শায়খুল হিন্দ এবং ফেকাহ হজরত মুফতী আজীজুর রহমান ওছমানীর নিকট শিক্ষা করেন। অতঃপর তিনি গঙ্গুহতে যাইয়া হজরত গঙ্গুহীর নিকট তিন বৎসরকাল এলমে বাতেন শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৩২২ হিঃ মোঃ ১৯০৫ ইং তিনি হজরত গঙ্গুহী হইতে এলমে বাতেনের খেলাফত লাভ করেন।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি প্রথমে কিছুদিন ফটিকছড়ির বিবিরহাট মাদ্রাছায় শিক্ষকতা করেন, অতঃপর মুঈনুল ইছলাম হাটহাজারীর পৃষ্ঠপোষকতার ভার গ্রহণ করেন এবং হাটহাজারীতে স্থায়ীভাবে বসবাস এখতেয়ার করেন। মাদ্রাছায় তিনি রীতিমত হাদীছ, তফছীর, ফেকাহ প্রভৃতি এলম শিক্ষা দেন। কিছুদিনের জন্য তিনি বার্মা বোতাতাং মসজিদে ইমামতিও করিয়াছিলেন।
তিনি একজন জবরদস্ত ফকীহ, মোহাদ্দেছ ও মুর্শিদে কামেল ছিলেন। হাফেজ ফয়েজ আহমদ ইছলামাবাদী ‘তাজকেরায়ে জমীর’ নামে তাঁহার স্বতন্ত্র জীবনী লিখিয়াছেন। এ অধীন তাঁহার কমনছীব খাদেম। খেদমতের সুযোগ পাইয়াও কিছু লাভ করিতে পারি নাই। তাঁহার বহু শাগরিদ ও মুরীদ রহিয়াছে। -[তাঁহার বিশিষ্ট শাগরিদগণঃ ১। মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ ছাহেব মেখলী। ২। মাওলানা আহমদ হাছান, জিরী মাদ্রাছার প্রতিষ্ঠাতা। ৩। মাওলানা আবদুল ওহহাব ছাহেব, হাটহাজারী মাদ্রাছার প্রধান পরিচালক ও হজরত থানবীর খলীফা। ৪। মাওলানা আবদুল মজিদ মাদারশাহী। ৫। মাওলানা ইছমাঈল, ফতেহপুর মাদ্রাছার মোহতামেম। ৬। মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াকুব ছাহেব, শায়খুল হাদীছ হাটহাজারী মাদ্রাছা। ৭। মাওলানা ইছকান্দার ছাহেব, তাঁহার খলীফা। ৮। মাওলানা মোহাম্মদ আমীন ছাহেব, বাবুনগর মাদ্রাছার মোহতামেম। ৯। মাওলানা নূর আহমদ ছাহেব, নাজীরহাট মাদ্রাছার মোহতামেম। ১০। মাওলানা আবুল কাছেম, বরুড়া মাদ্রাছা।
তাঁহার খলীফাগণঃ মাওলানা ইছকান্দার ছাহেব, খরুন্দীপী (রঃ)। ২। মাওলানা আজীজুল হক ছাহেব (রঃ), পটিয়া। ৩। মাওলানা আহমদ ছাহেব,মোহরা-চট্টগ্রাম। ৪। মাওলানা আমজান ছাহেব, মাদার শাহ। ৫। মাওলানা মূছা ছাহেব, বাবুনগরী। ৬। মাওলানা হাফেজুর রহমান, ইছাপুরী। ৭। মাওলানা ক্বারী ইব্রাহীম খলীল, চান্দপুরী। ৮। মাওলানা ইউনুছ, মেখলী। ৯। মাওলানা আবদুল কাইয়্যুম ছাহেব, গহিরা। ১০। মাওলানা হাফেজুর রহমান, হাটহাজারী। ১১। মাওলানা ওবাইদুর রহমান ছাহেব, মাদারশাহ। ১২। মাওলানা আবদুল জব্বার ছাহেব, মোমেনশাহী। ১৩। মাওলানা মহীউদ্দীন ছাহেব, মোমেনশঅহী। ১৪। মাওলানা আবদুল আজীজ ছাহেব, চান্দপুরী। ১৫। মাওলানা ছোলতান আহমদ ছাহেব, মেগলাম।]
১৯। মাওলানা মোহাম্মদ তাহের সিলেটী
[মৃঃ ১৩৫৯ হিঃ মোঃ ১৯৪০ ইং]
মাওলানা মোহাম্মদ তাহের ইবনে আবদুল মজিদ ১২৭৫ হিঃ সিলেট জিলার কানাইঘাট থানাধীন বাঁশবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিয়া দুই বৎসরকাল কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায়, অতঃপর কিছুদিন লক্ষ্মৌতে মাওলানা আবদুল হাই ছাহেবের নিকট ফনুনাত, তৎসর দিল্লীতে মাওলানা নজীর হোছাইন ছাহেবের নিকট হাদীছ অধ্যয়ন করেন।
শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তিনি দিল্লীতে মিঞা ছাহেবের মাদ্রাছায় এক বৎসরকাল শিক্ষকতা করেন, অতঃপর বর্ধমানের মাওলানা মূছা ছাহেবের মাদ্রাছায় ও কলিকাতা কুলুটোলা মাদ্রাছায় হাদীছ শিক্ষা দেন।
তাঁহার হাদীছের কিতাবঃ
(ক) ইবনে মাজাহর হাশিয়া। ইহা নেজামী (ইন্তেজামী) মাতবায় ইবনে মাজাহর হাশিয়ায় মুদ্রিত হইয়াছে। (খ) জু’আফায়ে ইবনে মাজাহ’ রেজাল শাস্ত্রের কিতাব। -অপ্রকাশিক
২০। মাওলান মোহাম্মদ আলী
[মৃঃ ১৩৫৯ হিঃ মোঃ ১৯৪০ ইং]
তিনি ময়মনসিংহ জিলার সরধনবাড়ী (পোঃ কাশীগঞ্জ) গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তিনি জামতলী মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাছা হইতে ফাজেল পাস করেন। অতঃপর তিনি লাহোর ইউনিভার্সিটি হইতে হাদীছের ছনদ লাভ করেন। এছাড়া তিনি এলমে তিব্বও শিক্ষা করেন। শিক্ষা শেষ করিয়াই তিনি দিল্লীর দারুল হাদীছ রহমানিয়া মাদ্রাছায় শিক্ষকতা কার্যে আত্মনিয়োগ করেন এবং দিল্লীতেই এন্তোকল করেন।
২১। মাওলানা মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ
[মৃঃ ১৩৬১ হিঃ মোঃ ১৯৪২ ইং]
মাওলানা মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ কাজী মুতীউল্লাহ মিয়াজী অনুঃ ১২৮৭ হিঃ চট্টগ্রাম জিলার হাটহাজারী থানাধীন চারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম হোছিনিয়া মাদ্রাছায়, অতঃপর কানপুর জামেউল উলুম মাদ্রাছায় অধ্যয়ন করেন এবং দেওবন্দ দারুল উলুম হইতে হাদীছের ছনদ লাভ করেন। হজরত মাওলান আশরাফ আলী থানবী, মাওলানা মুছীরুল্লাহ মির্জাপুরী ও শায়খুল হিন্দ প্রমুখ মনীষীগণ তাঁহার হিন্দুস্তানের ওস্তাদ।
স্বদেশ ফিরিয়া তিনি মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখের সহিত হাটহাজারী মাদ্রাছার প্রতিষ্ঠা করেন এবং জীবনের শেষাবধি মোহতামেম আ’লারূপে উহার যাবতীয় কার্য পরিচালনাক করেন। তিনি একজন বিখ্যাত আলেম ও সংস্কারক ছিলেন। চট্টগ্রামের লোকেরা তাঁহার অত্যন্ত সম্মানের সহিত স্মরণ করিয়া থাকেন।
২২। মাওলানা মোহাম্মদ আবদুছ ছামাদ
[মৃঃ ১৩৬৪ হিঃ মোঃ ১৯৪৫ ইং]
তিনি ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধিবাসী ছিলেন। তিনি ঠুটিয়ারচর মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিয়া দেওবন্দ দারুল উলুমে হাধীছ ও ফনুনাতের বিষয়সমূহ অধ্যয়ন করেন। হজরত মাওলান আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী প্রমুখ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ।
তিনি প্রথমে কাতলাসেন ও কিশোরগঞ্জ ইছলামিয়া মাদ্রাছায়, অতঃপর হয়বতনগর আলিয়া মাদ্রাছায় প্রধান শিক্ষকরূপে কাজ করেন। তিনি একজন জবরদস্ত আলেম ছিলেন।
২৩। মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ
[মৃঃ ১৩৬৪ হিঃ মোঃ ১৯৪৫ ইং]
তিনি নোয়াখালী জিলার রায়পুরার অধিবাসী ছিলেন, পিতার নাম মাওলানা আবদুল্লাহ। তিনি দেওবন্দ দারুল উলুমে হাদীছ অধ্যয়ন করেন এবং শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাছান দেওবন্দী হইতে এলমে মা’রেফাত হাছিল করেন।
২৪। মাওলানা মোহাম্মদ ছহুল ওছমানী
তিনি ১২৯৩ হিঃ বিহার প্রদেশের ভাগলপুর জিলার পুর্ণিয়া মহকুমায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, পিতার নাম মাওলানা আফজাল হোছাইন। তিনি তদীয় পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর যথাক্রমে কানপুর ও হায়দরাবাদ নেজামিয়া মাদ্রাছায় মাওলানা আহমদ আলী ও মাওলানা ওহহাব প্রমুখ ওস্তাদগণের নিকট ফনুনাত এবং দেওন্দ দারুল উলুমে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাছান প্রমুখ মোহাদ্দেছগণের নিকট হাদীছ ও হজরত গঙ্গুহীর নিকট মা’রেফাতের এলম হাছিল করেন।
তিনি প্রথমে যথাক্রমে শাহজাহানপুর ও ভাগলপুর মাদ্রাছার প্রধান শিক্ষক এবং দেওন্দ দারুল উলুমে প্রায় ৮ বৎসরকাল ছিনিয়র শিক্ষকরূপে কাজ করেন। ১৯১৫ ইং তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় মোদাররেছ নিযুক্ত হন এবং তিন বৎসর পর সিলেট মাদ্রাছায় বদলী হন। ১৯১৯ ইং তিনি পাটনার শামছুল হুদা মাদ্রাছার প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন এবং ১৯৩৬ ইং অবসর গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি দেওবন্দ দারুল উলুমে দেড় বৎসরকাল প্রধান মুফতীর পদে অধিষ্ঠিত থাকেন, তৎপর সিলেট আলিয়া মাদ্রাছায় হাদীছেল অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৪৩ ইং পদত্যাগ করিয়া তিনি স্বদেশ চলিয়া যান। ১৯৪৭ ইং আত্মীয়-স্বজনের অনুরোধে জন্মভূমিতে চলিয়া যান এবং তথঅয় এন্তেকাল করেন।
হজরত গঙ্গুহীর মৃত্যুর পর তিনি শায়খুল হিন্দ (রঃ)-এর নিকট মা’রেফতের তা’লীম ও খেলাফত হাছিল করেন।
তাঁহার রচনাবলীঃ
১। ‘ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া’ (আরবী****************)
২। ‘রেছালায়ে রূহুত তাছাওফ’ (আরবী**********)
৩। ‘রেছালায়ে তা’লীমুল আনছার’ (আরবী***************)
২৫। হাফেজ মাওলানা জহুরুল হক ছাহেব
[মৃঃ ১৩৩৬ হিঃ মোঃ ১৯৪৬ ইং]
তিনি অনুমান ১২৯৫ বাং মোঃ ১৮৮৯ ইং সিলেট জিলায় বারঠাকুরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, পিতার নাম শায়খ উমেদ রাজা। তিনি যথাক্রমে ১৯১১ ইং ও ১৯১৩ ইং ঢাকা মোহছিনিয়া মাদ্রাছা হইতে ছুয়াম ও উলা পাস করিয়া স্বগ্রামে দ্বীনী শিক্ষা দানে আত্মনিয়োগ করেন। ১৩৩৪ হিঃ মোঃ ১৯১৫ ইং তিনি উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে হিন্দুস্থান গমন করেন এবং যথাক্রমে সাহারনপুর ও দেওন্দ দারুল উলুমে ফনুনাত ও হাদীছ শিক্ষা করেন। মাওলান আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী, শিব্বীর আহমদ ওছমানী প্রমুখ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ। এলমে মা’রেফাতের খেলাফত তিনি ১৩৩৬ হিঃ হাকীমুল উম্মত মাওলান আশরাফ আলী থানবী (রঃ) হইতে লাভ করেন। হজরত থানবী (রঃ)-এর কলমে লিখিত খেলাফতনামা আমি দেখিয়াছি।
শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি প্রথমে সাহারনপুর মাজাহেরে উলুমে, অতঃপর স্বদেশ ফিরিয়া স্থানীয় মাদ্রাছায় ও ঢাকা বেগমবাজার কাছেমুল উলুম মাদ্রাছায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পুনরায় তিনি স্থানীয় মাদ্রছায় প্রাথমিক শিক্ষঅ হইতে ছেহাহ ছেত্তা পর্যন্ত শিক্ষাদানে এবং সমাজ সংস্কার ও প্রচারকার্যে আত্মনিয়োগ করেন। শেষ বয়সে তিনি বার্ধক্য হেতু নির্জনবাস এখতেয়ার করেন এবং একদিন মাহফিল করিয়া তিনি ওয়াজ-নছীহত করিতেন। তিনি একজন নিষ্ঠাবান, সত্যে অটল ও ছুফীপ্রকৃতির লোক ছিলেন।
আবু দাঊদ শিক্ষাকালে তিনি আল্লামা কাশ্মীরীর তাকারীর সংগ্রহ করিয়াছিলেন। উহা তাঁহার সুযোগ্য পুত্র মাওলানা ওবাইদুল হক ছাহেবের নিকট পাণ্ডুলিপি আকারে রক্ষিত আছে।
২৬। মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ বরাআত বলখী
তিনি খোরাসানের অন্তর্গথ বলখে জন্মগ্রহণ করেন। যৌবনের প্রারম্ভে তিনি তদানীন্তত ভারতে সীমান্ত প্রদেশে আগমন করেন এবং তথাকার আলেমগণের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা হইত আরম্ভ করিয়া হাদীছ, তফছীর পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর তিনি দেওন্দ দারুল উলুমে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাছান প্রমুখ মোহাদ্দেছগণের নিকট পূনঃহাদীছ অধ্যয়ন করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি ঢাকা আগমন করেন এবং আজীবন নবাব বাড়ীর মসজীদে ইমামতী করেন। প্রথমে তিনি প্রাইভেটভাবে কিছুসংখ্যক ছাত্রকে হাদীছ-তফছীর শিক্ষা দিতে থাকেন। ঢাকা ইছলামিয়া মাদ্রাছা স্থাপিত হইলে তথায় তিনি জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নিয়মিতভাবে হাদীছ-তফছীরের শিক্ষা দেন।
তিনি নোয়াখালী জিলার রায়পুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ তোহা মক্কী ছাহেবের জ্যেষ্ঠ কন্যাকে বিবাহ করেন এবং পাঁচ পুত্র ও কয়েকজন কন্যা রাখিয়া ১৯৪৭ কিংবা ১৯৪৮ ইং ইহলীলা ত্যাগ করেন।
তাঁহার একটি বিরাট কুতুবখানা ছিল। তাঁহার মৃত্যুর পর কুতুবখানা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং উহার অবশিষ্টাংশ লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়ায় স্থানান্তরির হয়। প্রায় কিতাবেই নানা জায়গায় তাঁহার নোট রহিয়াছে। তিনি একজন ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও জবরস্ত মোহাক্কেক আলেম ছিলেন। ঢাকার মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ খান ছাহেব তাঁহার একজন শাগরিদ।
২৭। শামছুল ওলামা মাওলানা ইয়াহইয়া ছাহছারামী
[মৃঃ ১৩৭০ হিঃ মোঃ ১৯৫১ ইং]
তিনি ১৮৮৬ ইং শাহআবাদ জিলার ছাহছারামের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মা’কুলাত তিনি মাওলানা আবদুল ওহহাব বিহারী, মাওলানা মুনীরুদ্দীন ও মাওলানা আহমদ হাছান কানপুরীর নিকট এবং এলমে হাইয়াত (খগোল-বিদ্যা) মাওলানা লুৎফুল্লাহ আলীগড়ীর নিকট অধ্যয়ন করেন। হাদীছ তিনি দেওবন্দে হজরত শায়খুল হিন্দ মরহুমের নিকট শিক্ষা করেন। এলমে মা’রেফাত তিনি মাওলানা মোহাম্মদ আলী মুঙ্গেবীর নিকট হইতে লাভ করেন।
তিনি প্রথমে কিছুকাল সাহারনপুরের মাজাহেরে উলুম মাদ্রাছায় অধ্যাপন করেন, অতঃপর ১৯০৯ ইং কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছার সহকারী শিক্ষক ও ১৯২৭ ইং উহার হেড মাওলানার পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৪২ ইং তথা হইতে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি একজন বিখ্যাত মোহাদ্দেছ ও বিচক্ষণ আলেম ছিলেন। তাঁহার তিরমিজী শরীফের একটি হাশিয়া রহিয়াছে। -অপ্রকাশিত
২৮। মাওলানা মোহাম্মদ নূরুল্লাহ
[মৃঃ ১৩৭০ হিঃ মোঃ ১৯৫১ ইং]
মাওলানা আবুল আ’লা মোহাম্মদ নূরুল্লাহ ছাহেব নোয়াখালী (বর্তমান চট্টগ্রাম) জিলার সন্দ্বীপের অধিবাসী ছিলেন। ১৮৯৯ ইং তাঁহার জন্ম হয়্ তিনি স্থানীয় মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিয়অ ১৯১৮ ইং কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছা হইতে ‘ফখরুল মোহাদ্দেছীণ’ ডিগ্রী লাভ করেন, অতঃপর কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায়ই শিক্ষক নিয়োজিত হন। ১৯৪৭ ইং উক্ত মাদ্রাছা ঢাকা স্তানান্তরিত হওয়ার সাথে সাথে নিতি ঢাকা আগমন করেন এবং ১৯৫১ ইং ইহদুনিয়া ত্যাগ করেন।
২৯। মাওলানা আবদুছ ছামাদ ছাহেব
[মৃঃ ১৩৭১ হিঃ মোঃ ১৯৫২ ইং]
তিনি ১২৮৮ বাং মোঃ ১৮৮১ ইং সিলেট জিলার কানাইঘাট থানাধীন বানীগ্রাম মৌজায় জন্মগ্রহণ করেন, পিতার নাম মোহাম্মদ ছফদর। তিনি রায়পুর মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং দিল্লী আবদুর রব মাদ্রাছায় বিভিন্ন ওস্তাদগণের নিকট ফনুনাত ও মাওলানা আবদুল আলী প্রমুখ মোহাদ্দেছগণের নিকট হাদীছ অধ্যয়ন করেন। হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রঃ) তাঁহার বাতেনী এলমের মুরশীদ।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি যথাক্রমে চুরখাই, ফুলবাড়ী ও সিলেট আলিয়া মাদ্রাছায় শিক্ষকতা করেন। অতঃপর তিনি গাছবাড়ী মাদ্রাছায় দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকরূপে কাজ করেন।
৩০। মাওলানা নজীরুদ্দীন
[মৃঃ ১৩৭২ হিঃ মোঃ ১৯৫৩ ইং]
তিনি উড়িষ্যা প্রদেশের কটকের অধিবাসী ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি বিহার শরীফের ইছলামিয়া মাদ্রাছায় ফনুনাত মাওলানা মোবারক করীম ও মাওলানা ইব্রাহীম ছাহেবের নিকট এবং হাদীছ মাওলানা আছগর হোছাইন ছাহেবের নিকট শিক্ষা করেন।
১৯১৪ ইং তিনি ঢাকা দারুল উলুম মাদ্রাছার প্রধান শিক্ষক, ১৯২০ ইং ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ১৯২৭ ইং কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছার মোদাররেছ নিযুক্ত হন। আলিয়া মাদ্রাছা ঢাকা স্থানান্তরিত হওয়ার সহিত তিনি ঢাকা আগমন করেন এবং ১৯৫৩ ইং ঢাকায় এন্তেকাল করেন। মাদ্রাছায় তিনি বোখারী শরীফ শিক্ষা দিতেন।
৩১। মাওলানা হাবীবুর রহমান ছাহেব
[মৃঃ ১৩৭২ হিঃ মোঃ ১৯৫৩ ইং]
তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় ফনুনাত ও হাদীছ অধ্যয়ন করেন। এতদ্ব্যতীত তিনি এলমের তিব্বও শিক্ষা করেন। তিনি ১০ বৎসরকাল শর্ষিণা দারুছছুন্নত মাদ্রাছার সুপারেন্টেণ্ডেন্ট ছিলেন।
৩২। মাওলানা আবদুল আওয়াল
[মৃঃ ১৩৭৫ হিঃ মোঃ ১৯৫৫ ইং]
তিনি কুমিল্লা জিলার লাকসামের অন্তর্গত দাড়াঁচ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম মৌলবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তিনি পশ্চিম গায়েঁ মাওলানা মোহাম্মদ মোস্তফা ছাহেবের মাদ্রাছায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া চট্টগ্রামের দারুল উলুমে অধ্যাপন করেন, অতঃপর শর্ষিণা আলিয়া মাদ্রাছায় শায়খুল হাদীছের পদে থাকিয়া দীর্ঘনিদ হাদীছ শিক্ষা দেন। তিনি একজন অসাধারণ মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি ও জবরদস্ত আলেম ছিলেন। জীবনে কখনও দ্বিতীয় হন নাই। দুঃখের বিষয় তিনি অষ্প বয়সেই এন্তেকাল করেন।
৩৩। মাওলানা ছাঈদ সাহেব সন্দ্বীপী
[মৃঃ ১৩৭৫ হিঃ মোঃ ১৯৫৫ ইং]
মাওলানা ছাঈদ ইবনে নূর বখস চৌধুরী নোয়াখারী (হালে চট্টগ্রাম) জিলার সন্দ্বীপের অধিবাসী ছিলেন। তিনি দেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ হইতে ফনুনাতের যাবতীয় বিষয় ও হাদীছ শিক্ষা করেন। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাছান প্রমুখ মনীষীগণ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ। তিনি প্রায় ৪০ বৎসরকাল হাটহাজারী মাদ্রাছার শায়খুল হাদীছ ছিলেন, অতঃপর ১৩৬৩ হিঃ চারিয়া মাদ্রাছার পরিচালক ও শায়খুল হাদীছের পদ গ্রহণ করেন। তিনি হজরত গঙ্গুহীর মুরীদ, শায়খুল হিন্দ মরহুমের খলীফা ও দেওবন্দ দারুল উলুমের মজলিসে শুরার একজন সদস্য ছিলেন। তিনি চারিবার হজ্জব্রত পালন করেন। তাঁহার বহু শাগরিদ ও মুরীদ রহিয়াছে। তিনি রাজশাহী হইতে ফিরিবার পথে সিরাজগঞ্জে এন্তেকাল করেন এবং চারিয়ায় সমাধিস্থ হন। তিনি একজন জবরদস্ত মোহাদ্দেছ ও বুজুর্গ আলেম ছিলেন।
৩৪। মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াকুব ছাহেব
[মৃঃ ১৩৭৭ হিঃ মোঃ ১৯৫৭ ইং]
তিনি চট্টগ্রাম জিলার পটিয়া থানাধীন প্রসিদ্ধ জিরী নামজ স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। মুঈনুল ইছলাম হাটহাজারীতে শিক্ষা সমাপ্তির পর আপন ওস্তাদ মাওলানা হাবীবুল্লাহ ছাহেবের আদেশে তিনি দেওবন্দে গমন করেন এবং তথা হইতে পুনরায় কৃতিত্বের সহিত ফনুনাত ও হাদীছের ছনদ লাভ করেন। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী প্রমুখ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি হাটহাজারী মুঈনুল ইছলাম মাদ্রাছার মোদাররেছ নিযুক্ত হন এবং মাওলানা ইব্রাহীম বৈলয়াবীর হাটহাজারী ত্যাগের পর তিনি তথাকার শায়খুল হাদীছ পদে বরিত হন। জীবনের শেষাবধি তিনি উক্ত পদে বহাল থাকেন এবং ১৩৭৭ হিঃ মোঃ ১৯৫৭ ইং ইহদুনিয়া ত্যাগ করেন। তিনি একজন বুজুর্গ আলেম ও বিশিষ্ট মোহাদ্দেছ ছিলেন।
৩৫। মাওলানা ফজলুল করীম ছাহেব
[মৃঃ ১৩৭৮ হিঃ মোঃ ১৯৫৮ ইং]
নোয়াখালী জিলার রাজারামপুর গ্রামে তাঁহার জন্ম হয়। তিনি প্রথমে নোয়াখালী ইছলামিয়া মাদ্রাছায় শিক্ষালাভ করেন, অতঃপর দেওবন্দ দারুল উলুমে হাদীছ অধ্যয়ন করেন। মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী প্রমুখ মোহাদ্দেছীন তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ। তিনি দীর্ঘদিন নোয়াখালী ইছলামিয়া মাদ্রাছায় ফনুনাত ও হাদীছ শিক্ষা দিয়াছেন।
৩৬। হাকীম মাওলানা আবদুল লতীফ ছাহেব
[মৃঃ ১৩৭৮ হিঃ মোঃ ১৯৫৮ ইং]
তিনি কুমিল্লা জিলার অধিবাসী ছিলেন। তাঁহার পিতার নাম মৌলবী মুজীবুর রহমান। তিনি এলাহাবাদ ইউনিয়ভারসিটি হইতে ফাজেল পাস করেন এবং রামপুরে হাদীছ অধ্যায়ন করেন। তিনি প্রায় ১২ বৎসর কাল শর্ষিণা আলিয়া মাদ্রাছায় আদব, তফছীর ও হাদীছ শিক্ষা দেন।
৩৭। মাওলানা আমীনুল্লাহ বাবুনগরী
[মৃঃ ১৩৭৯ হিঃ মোঃ ১৯৫৯ ইং]
তিনি ১৩১২ হিঃ চট্টগ্রাম জিলার ফটিকছড়ি থানাধীন বাবুনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন,পিতার নাম মাওলানা ছূফী আজীজুর রহমান (হাটহাজারী মাদ্রাছা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা)। তিনি হাদীছসহ যাবতীয় এলম প্রথমে হাটহাজারী মাদ্রাছঅয় শিক্ষা করেন, অতঃপর দেওবন্দে যাইয়া উহার পুনঃছনদ লাভ করেন। হাটহাজারীতে মাওলানা ছাঈদ ছাহেব ও দেওবন্দে আল্লামা কাশ্মীরী প্রমুখ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ। তিনি হাকীমুল উম্মত মাওলানা থানবীর হাতে ‘বয়ত’ করেন এবং ৬ মাসকাল তাঁহার খেদমতে অবস্থান করেন।
দেশে ফিরিয়া তিনি প্রথমে বিভিন্ন মাদ্রাছায় শিক্ষকতা করেন, অতঃপর বাবুনগর আজীজুল উলুম মাদ্রাছায় ছদরে মোদাররেছ ও পরে শায়খুল হাদীছ নিযুক্ত হন। তিনি একজন জ্ঞানী, ফকীহ ও বুজুর্গ আলেম ছিলেন।
৩৮। মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ আজিজুল হক
[মৃঃ ১৩৮০ হিঃ মোঃ ১৯৬০ ইং]
তিনি ১৩২২ হিঃ চট্টগ্রাম জিলার পটিয়া থানাধীন চরকানাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, পিতার নাম মাওলানা নূর আহমদ ছাহেব। তিনি জিরী মাদ্রাছা হইতে দাওরা পাস করিয়া সাহারনপুর মাজাহেরে উলুম মাদ্রাছা হইতে উহার ছদন লাভ করেন। জিরীর মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ ও মাজাহেরে উলুমের মাওলানা আবদুর রহমান কামেলপুরী প্রমুখ মোহাদ্দেছগণ তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ।
তিনি ১৩৪৫ হিঃ জিরী মাদ্রাছায় মোদাররেছী আরম্ভ করেন, অতঃপর ১৩৫৭ হিঃ পটিয়া কাছেমুল উলুম মাদ্রাছা প্রতিষ্ঠা করিয়া তথায় হাদীছ প্রভৃতি এলম শিক্ষা দেন। তিনি হজরত মাওলানা জমীরুদ্দীন মরহুমের বিশিষ্ট খলীফা ও একজন পীরে কামেল ছিলেন। তাঁহার বহু শাগরিদ ও মুরীদ রহিয়াছে। তাঁহার যুক্তিপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী ভাষার ওয়াজ শুনিয়া বহু খোদা-বিমুখ মানুষ খোদা-ভক্ত হইয়াছে।
তাঁহার রচনাবলীঃ
১। ‘আল এ’তেদাল’ (আরবী********)
২। ‘খায়রুজজাদ’ (আরবী***********)
৩। ‘নে’মাল উরূজ’ (আরবী**********)
৪। ‘মাকালাতে হেকমত’ (আরবী***********)
৫। ‘এ’তেকাফে চেহেল রোজাহ’ (আরবী*************)
৩৯। মাওলানা মোস্তাফীজুর রহমান
[মৃঃ ১৩৮০ হিঃ মোঃ ১৯৬০ ইং]
তিনি ১৯১৯ ইং নোয়াখারী জিলার আবদুল্লাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিয়া তিনি নোয়াখারী কারামতিয়া মাদ্রাছায় ফনুনাত এবং কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় হাদীছ অধ্যয়ন করেন।
১৯৪৩ ইং তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় অধ্যাপক নিযুক্ত হন। মাদ্রাছায় তিনি বিভিন্ন বিষয় ও হাদীছের তিরমিজী শরীফ শিক্ষা দেন। তিনি একজন সুসাহিত্যিক ও সুবক্তা ছিলেন।
তাঁহার রচনাবলীঃ
১। জামালুদ্দীন আফগানী। ২। পশ্চিম পাকিস্তানের সাহিত্য। ৩। শাহ ওলীউল্লাহ। ৪। মুফতী আবদুহু। ৫। ছৈয়দ আহমদ শহীদ। ৬। মুসলিম জাহান। ৭। তাজরীদে বোখারীরর বঙ্গানুবাদ।
৪০। মাওলানা মোহাম্মদ মোবারক উল্লাহ
[মৃঃ ১৩৮১ হিঃ মোঃ ১৯৬১ ইং]
তিনি নোয়াখালী জিলার লক্ষ্মীপুর থানাধীন মান্দারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে নোয়াখালী মাদ্রাছা হইতে উলা পাস করেন, অতঃপর দারুল উলুম দেওবন্দে হাদীছ অধ্যয়ন করেন। মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী প্রমুখ মোহাদ্দেছীন তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ। তিনি নোয়াখালী ইছলামিয়া আলিয়া মাদ্রাছায় হাদীছ শিক্ষা দিয়াছেন।
৪১। মাওলানা ছূফী ওছমান গনী
[মৃঃ ১৩৮২ হিঃ মোঃ ১৯৬২ ইং]
কুমিল্লা জিলার থানাধীন চন্দনপুরায় ১৯০৬ ইং তাঁহার জন্ম হয়্ তিনি দেশে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিয়া যথাক্রমে কলিকাতা আলিয়া, কানপুর জামেউল উলুম ও রামপুর আলিয়া মাদ্রাছায় হাদীছ, তফছীর ও ফনুনাতের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা করেন। তিনি ১৯২০ ইং পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি হইতে আলেম পাস করেন এবং ১৯২৪ ইং রামপুর আলিয়া মাদ্রাছা হইতে ফারেগ হইয়া দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
তিনি প্রথমে ৬ বৎসর হাম্মাদিয়া মাদ্রাছায় শিক্ষকতা করেন, অতঃপর ১৯৩২ ইং কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় মোদাররেছ নিযুক্ত হন; পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ঢাকা আলিয়া মাদ্রাছায় হাদীছ শিক্ষা দানের সুযোগলাভ করেন। তিনি একজন আবেদ ও ছূফী ব্যক্তি ছিলেন।
৪২। মাওলানা কবীরুদ্দীন রহমানী
[মৃঃ ১৩৮৩ হিঃ মোঃ ১৯৬৩ ইং]
তিনি ১৯০২ কিংবা ১৯০৩ ইং ঢাকা জিলার কালীগঞ্জ থানাধীন বড়কয়েক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার নাম মুনসী আবদুল খালেক ভুঁইয়া। তিনি স্বগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া ১৯১৬ ইং ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাছায়, ১৯২০ ইং দিল্লী দারুল হাদীছ রহমানিয়া মাদ্রাছায়, অতঃপর এক বৎসরকাল মিরাঠের এক মাদ্রাছায় অধ্যয়ন করেন। মাওলানা আহমদ উল্লাহ প্রতাপগড়ী প্রমুখ মোহাদ্দেছীন তাঁহার হাদীছের ওস্তাদ।
তিনি প্রথমে দিল্লী দারুল হাদীছ মাদ্রাছায় এক বৎসরকাল অধ্যাপনা করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি জিলার বেরাইদ গ্রামে একটি মাদ্রাছা স্থাপন করেন। ১৯৩৬ ইং তিনি ঢাকার (বংশাল) জামে মসজিদে ইমাম ও খতীবরূপে যোগদান করেন। ১৯৪৮ ইং তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাছায় মোদাররেছ নিযুক্ত হন। তিনি পূর্বপাক জমঈয়তে আহলে হাদীছের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও একজন বিজ্ঞ আলেম ছিলেন।