ভূমিকা
সুন্নাত অস্বীকার করার ফেতনা ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম দ্বিতীয় হিজরী শতকে উত্থিত হয়েছিল। এই ফিতনার সূত্রপাত করেছিল খারিজী ও মুতাযিলা সম্প্রদায়। খারিজীদের এই ফিতনা উত্থাপনের প্রয়োজন এজন্যে হয়েছিল যে, তারা মুসলিম সমাজে যে নৈরাজ্যে ছড়াতে চাচ্ছিল তার পথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ (হাদীস) প্রতিবন্ধক ছিল যা এই সমাজকে একটি সুশৃংখল ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাদের এ পথে মহানবী (স) এর সেই সব বাণীও প্রতিবন্ধক ছিল যার বর্তমানে খারিজীদের চরমপন্থী মতবাদ অচল হয়ে পড়েছিল। এ কারণে তারা হাদীসের যথার্থতায় সন্দেহ পোষণ এবং সুন্নাহর অনুসরণ অপরিহার্য হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার দ্বিবিধ পন্থা অবলম্বন করে।
মুতাযিলাদের এই ফিতনার সূত্রপাত করার প্রয়োজন এজন্য দেখা দেয় যে, অনারব ও গ্রীক দর্শনের সাথে প্রথম বারের মত সাক্ষাত হওয়ার সাথে সাথেই ইসলামী আকীদা- বিশ্বাস, নীতিমালা ও আইন-বিধান সম্পর্কে যেসব সন্দেহের সৃষ্টি হতে থাকে তা পূর্ণরূপে অনুধাবনের পূর্বে তারা কোন না কোনভাবে এর সমাধান দিতে চাচ্ছিল। স্বয়ং এই দর্শনের উপর তাদের এতটা অন্তর্দৃষ্টি সৃষ্টি হয়নি যে, তার সমালোচনামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে তার বিশুদ্ধতা ও শক্তি উপলদ্ধি করতে পারে। দর্শনের নামে যে কথাই এসেছে তারা তাকে সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবী মনে করেছে এবং তারা চাচ্ছিল যে, ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস ও নীতিমালার এমন ব্যাখ্যা করা হোক যাতে তা এই নামমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক দাবীর অনুরূপ হয়ে যায়। এ পথেও হাদীস এবং সুন্নাহ্ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য তারাও খারিজীদের মত হাদীসকে সন্দেহযুক্ত মনে করে এবং সুন্নাহকে দলীল হিসাবে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।
এই উভয় দলের ফেতনার উদ্দেশ্যে এবং তাদের কৌশল ছিল অভিন্ন। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল, কুরআন মজীদকে তার বাহকের মৌখিক ও আমলী (বাস্তব) ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ থেকে এবং আল্লাহর রসূল (স) স্বীয় পরিচালনায় ও নির্দেশনায় যে চিন্তা ও কর্ম ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধুমাত্র একটি গ্রন্থের আকারে উপস্থাপন করা, অতপর তার একটা মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে আরেকটি ব্যবস্থায় রূপান্তর করা, যার উপর ইসলামের লেবেল আঁটা থাকবে। এ উদ্দেশ্যে তারা যে কৌশল অবলম্বন করে তার দুটি অস্ত্র ছিলঃ
(এক) হাদীস সম্পর্কে মনের মধ্যে এই সন্দেহ সৃষ্টি করতে হবে যে, তা আদৌ মহানবী (স) এর বাণী কি না?
(দুই) এই মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে যে, কোন কথা বা কাজ মহানবী (স)-এর হলেও তার অনুসরণ ও আনুগত্য করতে আমরা কখন বাধ্য?
তাদের দৃষ্টিভংগী এই ছিল যে, মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (স) আমাদের পর্যন্ত কুরআন মজীদ পৌছিয়ে দিতে আদিষ্ট ছিলেন। অতএব তিনি তা পৌছে দিয়েছেন। অতপর মুহাম্মদ (স) ইবনে আবদুল্লাহ আমাদের মতই একজন মানুষ ছিলেন। তিনি যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন তা কি আমাদের জন্য হুজ্জাত (অকাট্য প্রমাণ) হতে পারে?
এই দুটি ফিতনা সামান্য কাল চলার পর নিজের অপমৃত্যু নিজেই ঘটিয়েছে এবং তৃতীয় হিজরী শতকের পর কয়েক শতক পর্যন্ত ইসলামী দুনিয়ার কোথাও তার নামগন্ধও অবশিষ্ট ছিল না। নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো ঐ সময় উল্লেখিত ফিতনার মূলোৎপাটন করেঃ
১.মুহাদ্দিসগণের ব্যাপক অনুসন্ধানমূলক কাজ যা মুসলিম সমাজের সকল চিন্তাশীল ও বুদ্ধিমান লোকদের আশ্বস্ত করে যে, রসূলুল্লাহ (স)-এর সুন্নাহ যেসব রিওয়ায়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তা কখনও সন্দেহযুক্ত নয়, বরং অতীব বিশ্বস্ত মাধ্যমে উম্মাতের নিকট পৌছেছে এবং তাকে সন্দেহযুক্ত রিওয়ায়াত থেকে পৃথক করার জন্য সর্বোত্তম বুদ্ধিবৃত্তিক মাধ্যম ও উপায় উপকরণ বর্তমান রয়েছে।
২.কুরআনের ব্যাখ্যা, যার সাহায্যে তৎকালীন যুগের বিশেষজ্ঞ আলেমগণ মুসলিম জনসাধারণের সামনে এ কথা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (স)-এর মর্যাদা তাই নয়-যা হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীরা তাঁকে দিতে চাচ্ছে। কুরআন মজীদ পৌছে দেয়ার জন্য তাঁকে একজন পত্রবাহক মাত্র নিযুক্ত করা হয়নি, বরং আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিক্ষক, পথপ্রদর্শক, কুরআনের ভাষ্যকার, আইনপ্রণেতা এবং বিচারক ও প্রশাসকও নিযুক্ত করেছিলেন। অতএব স্বয়ং কুরআন মজীদের আলোকেই তাঁর আনুগত্য ও অনুবর্তন আমাদের জন্য ফরয এবং তা থেকে মুক্ত হয়ে যে ব্যক্তি কুরআনের অনুসরণের দাবী করে সে মূলত: কুরআনের অনুসারীই নয়।
৩.সুন্নাত অস্বীকারকারীদের স্বকপোল কল্পিত ব্যাখ্যা- যারা কুরআনকে খেলনায় পরিণত করেছিল। সে বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ মুসলিম সর্বসাধারণের সামনে এই সত্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে তুলে ধরেন যে, রসূলুল্লাহ (স)-এর সুন্নাতের সাথে কুরআন মজীদের সম্পর্ক ছিন্ন করা হলে দীন ইসলামের অবয়ব কতটা নিকৃষ্টভাবে বিকৃত হয়ে যায়, আল্লাহর কিতাবের সাথে কিভাবে কিভাবে খেলতামাশা করা যায় এবং তার অর্থগত বিকৃতির কি ধরনের হাস্যকর নমুনা সামনে আসে।
৪.উম্মাতের ঐক্যবদ্ধ চিন্তা, যা কোন ক্রমেই একথা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না যে, মুসলিম ব্যক্তি কখনও রসূলুল্লাহ (স)- এর আনুগত্য ও অনুবর্তন থেকে মুক্তও হতে পারে। মুষ্টিমেয় এমন কিছু লোক তো প্রতিটি যুগেই এবং প্রতিটি জাতির মধ্যেই থাকে যারা ছন্দহীন কথার মধ্যেই ছন্দ অনুভবকরে,যুক্তিহীনকথারমধ্যেযুক্তিঅনুভবকরে, কিন্তু সমগ্র উম্মাতের চালিকা শক্তি হওয়া তাদের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। মুসলিম সর্বসাধারণের মানসিক ছাঁচে এই অযৌক্তিক কথা কখনও ঠিকভাবে খাপ খায় না যে, লোকে রসূলুল্লাহ (স)-এর রিসালাতের উপর ঈমানও আনবে আবার নিজের ঘাড় থেকে তাঁর আনুগত্যের রশিও খুলে ফেলবে। একজন সহজ সরল প্রকৃতির মুসলমান যার মনমগজে বক্রতা নেই, কার্যত নাফরমানিতে লিপ্ত হতে পারে,কিন্তু এই আকীদা কখনও গ্রহণ করতে পারে না যে, যেই রসূলের উপর সে ঈমান এনেছে তাঁর আনুগত্য করতে মোটেই বাধ্য নয়।
এটা ছিল সবচেয়ে বড় বুনিয়াদী জিনিস যা শেষ পর্যন্ত সুন্নাহ প্রত্যাখ্যানকরীদের শিকড় কেটে দিয়েছে। উপরন্তু মুসলিম জাতির মেজাজ এত বড় বিদআতকে হজম করার জন্য কোন প্রকারেই প্রস্তুত হয়নি যে, এই পূর্ণাংগ জীবন-বিধান,তার সমস্ত আইন কানুন,বিধি ব্যবস্থা এবং কাঠামো সমেত প্রত্যাখ্যান করা হবে যা রসূলুল্লাহ (স)-এর যুগ থেকে শুরু হয়ে খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, আইম্মাই মুজতাহিদীন (মুজতাহিদ ইমামগণ) এবং উম্মাতের ফকীহগণে পথনির্দেশনায় ধারাবাহিকভাবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় উত্তরোত্তর ক্রমবিকাশ লাভ করে আসছিল,এবং তা পরিত্যাগ করে ভাবিষ্যতে একটি নতুন ব্যবস্থা এমন লোকদের দ্বারা গড়ে তোলা হবে যারা দুনিয়ার প্রতিটি দর্শন ও প্রতিটি হেয়ালির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামের একটি আধুনিক সংস্করণ বের করতে চায়।
এভাবে ধ্বংসের অতল গহবরে নিমজ্জিত হয়ে সুন্নাত প্রত্যাখ্যানের এই ফিতনা কয়েক শতাব্দী যাবত নিজের শ্মশানভূমিতে পড়ে থাকে। অবশেষে হিজরী ত্রয়োদশ শতকে(খৃষ্টীয় উনবিংশ শতকে) তা পুনরায় জীবন্ত হয়ে উঠে। তার পহেলা জন্ম হয় ইরাকে,এখন পুনর্জন্ম লাভ করেছে ভারতে। এখানে স্যার সায়্যিদ আহমাদ খান ও মৌলভী চেরাগ আলী এর সূচনা করেন। অতপর মৌলভী আব্দুল্লাহ চক্রালোভী এর পতাকাবাহীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। পরে মৌলভী আহমাদুদ-দীন অমৃতসরী এর ভেলা ভাসালেন এবং মাওলানা আসলাম জয়রাজপুরী তা নিয়ে সামনে অগ্রসর হন। অবশেষে আসে চৌধুরী গোলাম আহমাদ পারভেযের ভুমিকা, যিনি এই গোমরাহীকে চরম পর্যায় পৌছান।
এর পুনর্জন্মের কারণও তাই ছিল, যা দ্বিতীয় হিজরী শতকে এর জন্মের কারণ হয়েছিল। অর্থাৎ বাইরের দর্শন ও ইসলাম-বিরোধী সংস্কৃতির সম্মুখীন হয়ে মানসিক পরাজয় বরণ করা এবং সমালোচনা ব্যতীতই বাইরের এসব জিনিসকে সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তির দাবী বলে মেনে নিয়ে ইসলামকে তদনুযায়ী ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা। কিন্তু দ্বিতীয় শতকের তুলনায় ত্রয়োদশ শতকের পরিস্থিতি ছিল অনেক ভিন্নতর। ঐ সময় মুসলমানরা ছিল বিজয়ী, তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যও ছিল এবং তারা যেসব দর্শনের সম্মুখীণ হয়েছিল তা ছিল বিজিত ও পরাভূত জাতিসমূহের দর্শন। একারণে তাদের মন- মগজে এসব দর্শনের আক্রমণ খুবই হালকা প্রমাণিত হয় এবং অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
পক্ষান্তরে ত্রয়োদশ শতকে মুসলমানদের উপর এই হামলা এমন সময় করা হয় যখন তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে থেকে গুটিয়ে আসছিল,তাদের আধিপত্যের এক একটি ইট খসে পড়ছিল, তাদের দেশ শত্রুরা দখল করে নিয়েছিল, অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদেরকে নিকৃষ্টভাবে পংগু করে দেয়া হয়েছিল, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উলোটপালট করে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের উপর বিজয়ী জাতি নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতি,ভাষা, আইন-কানুন এবং নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শাসন ও শৃংখল পুরোপুরি চাপিয়ে দিয়েছিল। এই অবস্থায় যখন মুসলমানগন বিজয়ী জাতির দর্শন, বিজ্ঞান এবং তাদের আইন-কানুন ও সাংস্কৃতিক নীতিমালার সম্মুখীন হল তখন তাদের মধ্যে পূর্বকালের মুতাযিলাদের তুলনায় হাজার গুণ বেশী ভীত প্রভাবিত মনের মুতাযিলার আবির্ভাব হতে থাকল। তারা মনে করে নিল যে, পাশ্চাত্য থেকে যে মতবাদ. যে চিন্তা, যে ধ্যানধারণা, সভ্যতা-সংস্কৃতির যে নীতিমালা এবং জীবন-বিধান আমদানী হচ্ছে তা সম্পূর্ণ যুক্তিগ্রাহ্য, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তার সমালোচনা করে সত্য-মিথ্যার ফয়সালা করা অজ্ঞতা প্রসূত ধারণা বৈ কিছু নয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ইসলামকে যেভাবেই হোক কেটেছেটে যুগোপযোগী করে নিতে হবে।
এই উদ্দেশ্যে তারা যখনই ইসলামকে মেরামত করতে চাইল তখন তারাও অতীতের মুতাযিলাদের অনুরুপ অসুবিধারই সম্মুখীন হল। তারা অনুভব করল যে,ইসলামের জীবন ব্যবস্থাকে যে জিনিস পৃর্ণাংগ ও বাস্তবরূপে কায়েম করেছে তা হচ্ছে রসূলুল্লাহ (স) এর সুন্নাহ। এই সুন্নাহই কুরআন মজীদের উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করে মুসলমানদের পূর্ণ সমাজিক ও সাংস্কতিক ধারণার বিনির্মাণ করেছে এবং এই সুন্নাহই জীবনের প্রতিটি শাখায় ইসলামের বাস্তব রূপ মজবুত ভিত্তির উপর গঠন করেছে। অতএব এই সুন্নাহর ব্যাপারে মানুষকে বীতশ্রদ্ধ না করা পর্যন্ত ইসলামের কোনরুপ নতুন মেরামত সম্ভব নয়। তারপর অবশিষ্ট থাকবে কেবল কুরআনের শব্দ ও বাক্যসমূহ, যেগুলো বুঝার ক্ষেত্রে না থাকবে কোন বাস্তব নমুনা,না কোন নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, আর না কোন প্রকারের রিওয়ায়াত ও নযীর। এভাবে কুরআনকে অপব্যাখ্যার নিপুণ ফলকে পরিণত করা সহজ হবে এবং ইসলাম পরিণত হবে একটি মোমের পিন্ডে, যাকে দুনিয়ার প্রতিটি প্রচলিত দর্শন অনুযায়ী প্রতি দিন একটি নতুন আকৃতি দান করা যাবে।
এই উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য তারাও আবার অতীত কালে ব্যবহৃত দুটি কৌশল দুটি মারণাস্ত্র হিসাবে অবলম্বন করে। অর্থাৎ একদিকে যেসব হাদীসের মাধ্যমে সুন্নাত প্রতিষ্ঠিত হয়-তার যথার্থতায় সন্দেহের সৃষ্টি করা হল এবং অপরদিকে সুন্নাতের স্বয়ং ও সরাসরি হুজ্জাত (প্রমান) হওয়ার বিষয়কে অস্বীকার করা হল। কিন্তু এখানে পরিস্থিতির পার্থক্য এই কৌশল ও তার মারনাস্ত্রের বিস্তারিত আকারের মধ্যে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি করে দেয়। অতীত কালে যেসব লোক এই ফেতনার পতাকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল তারা ছিল জ্ঞান ও বুদ্ধিতে পরিপক্ক। তারা আরবী ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ পারদর্শী ছিল। কুরআন, হাদীস ও ফিকহ-এর জ্ঞানেও তারা ছিল যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তাদের প্রতিদ্বন্ধিতা হয় সেইসব মুসলমানদের সাথে যাদের জ্ঞান চর্চার ভাষা ছিল আরবী। তখনকার সাধারণ মুসলমানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল অনেক উন্নত। সেখানে ইসলামী জ্ঞান- বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ সর্বত্র বিচরণ করতেন এবং এই ধরনের জনগণের সামনে কোন কাঁচা কথা এনে পরিবেশন করলে স্বয়ং সেই ব্যক্তিরই বিপাকে পড়ে যাওয়ার আশংকা ছিল। এ কারণে অতীত কালের মুতাযিলাগণ পরিমাপ করে কথা বলত। পক্ষান্তরে আমাদের যুগে যেসব লোক এই ফিতনা ছড়ানোর জন্য আবির্ভুত হয়েছে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মানও স্যার সায়্যিদ আহমাদ খানের যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে একজন থেকে আরেকজনের নিম্নতর হতে থাকে। আর তাদেরকে এমন লোকদের মোকাবিলা করতে হয় যাদের মধ্যে আরবী ভাষা ও ইসলামী জ্ঞানের অধিকারীদের নাম “শিক্ষিত” নয়, এবং “শিক্ষিত” এমন ব্যক্তির নাম যে পার্থিব বিষয়ে চাই যত কিছুই জানুক, কিন্তু, কুরআনের উপর খুব মেহেরবানী করে থাকলে শুধু তার তরজমাটুকু-তাও আবার ইংরেজী তরজমার সাহায্যে পড়তে পারে। হাদীস ও ফিকহ সম্পর্কে বেশী জোর তারা কানে শুনা জ্ঞানের অধিকারী, তাও আবার প্রাচ্যবিদদের পৌছানো জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। ইসলামী রীতিনীতির উপর খুব বেশী হলে বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে, আবার তাও এই দৃষ্টিকোণ থেকে যে, কতগুলো বাসিপঁচা হাড়ের সমষ্টি-যাতে ঠোকর মেরে যুগ অনেক সামনে এগিয়ে গেছে। পুনশ্চ ইসলামী জ্ঞান- বিজ্ঞানের ভান্ডার সম্পর্কে তারা এই ধারণায় লিপ্ত হয়েছে যে, ইসলাম সম্পর্কে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানে তারা সম্পূর্ণ সক্ষম। এই অবস্থায় অতীতের মুতাযিলাদের তুলনায় বর্তমান কালের মুতাযিলাদের যোগ্যতার মানদন্ড কতটা নিম্নতর হতে পারে তা সুস্পষ্ট। এখানে জ্ঞানের পরিমাণ কম এবং অজ্ঞাতার বাহাদুরী ও দৃষ্টতা অত্যধিক।
বর্তমানে এই ফেতনার প্রসারের জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে তার গুরুত্বপূর্ন অংশগুলো নিম্নেউল্লেখ করা হলঃ
১. হাদীসকে সন্দেহপূর্ণ প্রমাণ করার জন্য পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিদগণ যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেন তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং নিজেদের পক্ষ থেকে টীকা সংযোজন করে তা মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া,যাতে অজ্ঞ লোকেরা এই বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয় যে, উম্মাত রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট থেকে কুরআন ব্যতীত কোন জিনিসই নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়নি।
২. ক্রটি বের করার উদ্দেশ্যে হাদীস ভান্ডারে শুদ্ধি অভিযান চালানো-ঠিক সেই ভাবে যেভাবে আর্য সমাজ ও খৃষ্টান মিশনারীরা কখনও কুরআন মজীদে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছিল এবং এমন এমন জিনিস বের করে বরং মনগড়াভাবে রচনা করে জনসাধারণের সমানে পেশ করা যাতে তাদের নিকৃষ্টভাবে প্রভাবিত করা যায় যে, হাদীসের গ্রন্থাবলী নেহায়েত লজ্জাজনক অথবা হাস্যকর উপাদানে প্লাবিত। অতপর অশ্রু বিসর্জন পূর্বক এই আবেদন পেশ করা যে, ইসলামকে অপমান থেকে বাঁচাতে হলে এই সমস্ত মূল্যহীন ভান্ডার সমুদ্রে নিক্ষেপ কর।
৩. রসূলুল্লাহ (স) এর রিসালাতের পদমর্যাদাকে শুধুমাত্র একজন ডাকপিয়নের পদ সাব্যস্ত করা যার দায়িত্ব কেবলমাত্র জনগনের নিকট কুরআন মজীদ পৌছে দেয়া।
৪. শুধুমাত্র কুরআন মজীদকে ইসলামী আইনের উৎস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া এবং রসূলুল্লাহ (স) এর সুন্নাতকে ইসলামী আইন ব্যবস্থার আওতা থেকে বহিস্কৃত করা।
৫. উম্মাতের সকল আলেম, ফকীহ (আইন শাস্ত্রবিদ), মুহাদ্দিস (হাদীস শাস্ত্রজ্ঞ) মুফাসসির (কুরআনের ভাষ্যকার) এবং ভাষাবিশারদ ইমামগণকে অনির্ভরযোগ্য ও অবিশ্বস্ত সাব্যস্ত করা, যাতে মুসলমানগণ কুরআন মজীদের বক্তব্য হৃদয়ংগম করার জন্য তাদের শরনাপন্ন না হয়, বরং তাদের সম্পর্কে এই ভ্রান্তির শিকার হয়যে, তাঁরা সকলে কুরআনের যথার্থ শিক্ষাকে গোপন করার জন্য একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
৬. স্বয়ং একটি নতুন অভিধান রচনা করে কুরআন মজীদের সমস্ত পরিভাষাসমূহের অর্থের পরিবর্তন সাধন এবং কুরআনের আয়াতসমূহের এমন বিকৃত অর্থ আবিষ্কার করা যা পৃথিবীর যে কোনো আরবী ভাষাবিদের দৃষ্টিতে কুরআনের শব্দ থেকে বের করার কোনো অবকাশ নেই। (মজার ব্যাপার এই যে, যে ব্যক্তি এই কাজ করছে তার সামনে যদি কুরআন মজীদের কয়েকটি আয়াত স্বরচিহৃ বাদ দিয়ে লিখে রাখা হয় তবে সে তা সঠিকভাবে পড়তেও সক্ষম নয়। কিন্তু তার দাবি এই যে, এখন স্বয়ং আরবরাই আরবী জানে না। তাই তাদের বর্ণিত অর্থ যদি কোন আরব কুরআনের শব্দভান্ডারে না দেখতে পায় তবে অপরাধ এই আরবদেরই।)
এই ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে সাথে একটা অভিনব ইসলামের বিনির্মাণ কাজও চলছে যার মৌলনীতি সংখ্যায় মাত্র তিনটি,কিন্তু দেখুন না তা কতটা তুলনাহীন মৌলনীতি (!)
১.প্রথম মূলনীতি এই যে, সমস্ত ব্যক্তিমালিকানা খতম করে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকারে ন্যস্ত করা হবে এবং সেই সরকার জনগণের মধ্যে রিযিক বন্টনের সর্বময় কর্তা হবে। এর নাম ‘প্রতিপালন ব্যবস্থা’এবংবলা হয়ে থাকে যে, এই ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাই ছিল কুরআন মজীদের উদ্দেশ্য। কিন্তু বিগত তের শতাব্দী ধরে কারো পক্ষেই তা বুঝে উঠার সৌভাগ্য হয়নি। শুধুমাত্র অতি বুযুর্গ কার্ল মারক্স এবং তার বিশিষ্ট খলীফা এঞ্জেলসই কুরআনের এই মৌল উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হয়েছে।
২.তাদের দ্বিতীয় মূলনীতি হলো, সমস্ত দল-উপদলের বিলুপ্তি সাধন করতে হবে এবং মুসলমানদের কোন দল গঠনের অনুমতিই দেয়া হবে না,যাতে অর্থনৈতিক দিক থেকে অসহায় হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করতে চায় তবে যেন অসংগঠিত থাকার ফলে তা করতে সক্ষম না হয়।
৩.তাদের তৃতীয় মূলনীতি এই যে, কুরআন মজীদে যে “আল্লাহ ও রাসূলের” উপর ঈমান আনার, যাদের আনুগত্য করার এবং যাদেরকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার দ্বারা মূলত বুঝানো হয়েছেঃ“জাতির কেন্দ্র” (কেন্দ্রীয় সরকার)। সরকারই যেহেতু স্বয়ং“খোদা আর খোদার রসূল” তাই এই কেন্দ্রীয় সরকার কুরআনের যে অর্থই করবে তাই হবে তার আসল অর্থ। তার কোন নির্দেশ বা বিধান সম্পর্কে এই প্রশ্ন মোটেই তোলা যাবে না যে, তা কুরআনের পরিপন্থী। সে যা কিছুই হারাম করবে তাই হারাম, যা কিছু হালাল করবে তাই হালাল। তার নির্দেশই হচ্ছে শরীআত এবং ইবাদত থেকে শুরু করে পারস্পরিক কার্যক্রম পর্যন্ত যে জিনিসের যে নমুনা সে প্রস্তাব করবে তা মান্য করা ফরজ, বরং ইসলামের শর্ত। যেভাবে ‘রাজা’ ভুল করতে পারেনা, অনুরূপভাবে এই ‘জাতির কেন্দ্র’ ও সম্পূর্ন নির্ভল ও পবিত্র। জনগণের কাজ কেবল তার সামনে মাথা পেতে দেয়। কারণ “আল্লাহ ও রাসূল” না সমালোচনার লক্ষ্য বস্তু হতে পারে, আর না তাদের দ্বারা ভুল করার প্রশ্ন উঠতে পরে, আর না তাদের পরিবর্তন করা যেতে পারে।
এই নতুন ইসলামের “প্রতিপালন ব্যবস্থার” উপর ঈমান আনয়নকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। কিন্তু তার অবশিষ্ট সকল পুনর্গঠনমূলক ও ধ্বংসাত্বক শাখাগুলো কতিপয় বিশিষ্ট পরিমন্ডলে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের শাসকদের নিকট তাদের “জাতির কেন্দ্র” শীর্ষক মতবাদ বহুত আবেদন সৃষ্টি করছে। তবে এই শর্তে যে , সমস্ত উপায়- উপকরণ থাকবে তাদের হাতে এটাও তাদের খুবই জনপ্রিয় যে, সমস্ত উপা- উপকরণ থাকবে তাদের হাতে এবং জাতি সম্পূর্ণরূপে অসংগঠিত অবস্থায় তাদের মুষ্টিবদ্ধ হয়ে থাকবে। তা এজন্য পছন্দনীয় মনে করে যে, বৃটিশ রাজত্বকালে তারা যে ধরনের আইন ব্যবস্থার শিক্ষ ও প্রশিক্ষণ লাভ করেছে তার, মূলনীতি, বুনিয়াদী দৃষ্টিভংগী ও আনুষংগিক বিধানের সাথে ইসলামের সুপ্রসিদ্ধ আইন ব্যবস্থার পদে পদে সংঘর্ষ হচ্ছে এবং তার উৎস সম্পর্কেও তাদের কোন জ্ঞান নেই। এই কারণে উপরোক্ত মতবাদ তাদের নিকট খুবই পছন্দনীয় লাগল যে, সুন্নাহ ও ফিকহ-এর ঝঞ্জাট থেকে তারা মুক্তি পেয়ে যাবে এবং শুধুমাত্র কুরআন অবশিষ্ট থাকবে যার ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ আধুনিক অভিধানের সাহায্যে এখন আরও সহজতর হয়ে গেছে। তাছাড়া পাশ্চাত্য প্রভাবিত সমস্ত লোককে এই মতবাদ নিজের দিকে আকৃষ্ট করছে। কারণ ইসলাম থেকে বহিষ্কার হয়েও মুসলমান থাকার জন্য এর চেয়ে উত্তম আর কোন ব্যবস্থাপত্র এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তা ছাড়াও তাদের জন্য এর চেয়ে অধিক খুশীর কথা আর কি হতে পারে যে, যা কিছু পাশ্চত্যে হালাল কি “মোল্লা-মৌলভীর ইসলামে” এতোদিন পর্যন্ত হারাম ছিল তা এখন হালালও হয়ে যাবে এবং হালাকারীদের অনুকূলেই কুরআনের প্রমাণও বিদ্ধমান পাওয়া যাবে?
আমি বিগত পচিশ- ছাব্বিশ বছর ধরে এই ফেতনার মূলোচ্ছদের জন্য অনেক প্রবন্ধ লিখেছি যা আমার বিভিন্ন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এখন এই গ্রন্থে অনেক প্রবন্ধ স্থান পাচ্ছে তা দুই অংশে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে আমার ও ডকটর আবদুল ওয়াদুদ সাহেবের মধ্যে “সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা” সম্পর্কে যে দীর্ঘ ও ধারাবাহিক পত্রালাপ হয়েছিল তার সবগুলো একত্র সন্নিবেশ করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে পশ্চিম পাকিস্তানি হাইকোর্টেল একজন সদস্য বিচারপতি মুহাম্মদ শফী সাহেবর একটি সিদ্ধান্ত উধৃত করা হচ্ছে। তিনি ১৯৬০ সালের ২১ জুলাই রাশীদা বেগম বনাম শিহাবুদ্দীন গং-এর মামলায় এই রায় প্রদান করেন এবং আমি এর বিস্তারিত সমালোচনা পেশ করেছি।
এই দুই অধ্যায়ে পাঠকগণ একদিকে হাদীস অস্কীকারকারীদের সমস্ত প্রশ্ন ও যুক্তি প্রমাণ তাদের ভাষায় শুনতে পাবেন এবং অপরদিকে তারা এও জানতে পারবেন যে, দীন ইসলামের সার্বিক ব্যবস্থা ও কাঠামোতে সুন্নাহর আসল মর্যাদা কী। এরপর পাঠক কোন মত গ্রহণ করবেন সেই সিদ্বান্তে উপনীত হওয়া তার নিজের দায়িত্ব।
যেসব বিদগ্ধ পাঠকের হাতে আমার এ গ্রন্থটি পৌছবে তাদের নিকট আমি একটি বিশেষ আবেদন রাখতে চাই। তার হল, এই আলোচনা দীন ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত, যেখানে কোন একটি দিক বর্জন এবং অপর দিক গ্রহণের পরিণতি সুদূরপ্রসারী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীন ইসলামের ভিত্তি সম্পর্কে এই বিতর্ক আমাদের দেশে শুধুমাত্র ছড়িয়েই পড়েনি, বরং এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। আমাদের ক্ষমতাসীন মহলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সুন্নাত প্রত্যাখ্যানের মতবাদে বিভ্রন্ত হচ্ছে। আমাদের উচ্চ বিচারালয়সমূহের বিচারকগণ এর দ্বারপা প্রভাবান্বিত হচ্ছে, এমনকি হাইকোর্ট থেকে সম্পূর্ণত সন্নাহ অস্বীকার করার ভিত্তির উর একটি রায়ও প্রদান করা হয়েছে। কে জানে এই রায়কে ভবিষ্যতে কতো মোকদ্দমায় নযীর হিসাবে পেশ করা হবে। আমদের শিক্ষিত সমাজে এবং বিশেষত সরকারী দফতরসমূহে এই অশুভ আন্দোলন সংগঠিতভাবে চলছে। তাই জরুরী প্রয়েজন মনে করছি,যাদের নিকট এই গ্রন্থখানা পৌছবে শুধুমাত্র আপনারা নিজেরাই যেন তা গভীরভাবে অধ্যয়ন করে ক্ষান্ত না হন, বরং তা অধ্যয়নের জন্য অন্যদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করুন, চাই তারা সুন্নাহগ্রহণকারীই হোক অথবা অস্বীকারকারী। যে ব্যক্তি যেরুপ চায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। কিন্তু শুধু একতরফা অধ্যয়নপূর্বক নিজের একটি দৃষ্টিভংগী গড়ে তোলা এবং প্রতিপক্ষের বক্তব্যে আমল দিতে অস্বীকার করা কোন শিক্ষিত লোকের জন্য শোভনীয় নয়। এই গ্রন্থে যেহেতু দুই পক্ষের বক্তব্যই বিস্তারিতাভাবে এসে গেছে তাই আশা করা যায়, এটা সুন্নাহ গ্রহণকারী ও সুন্নাহ প্রত্যাখ্যানকারী উভয় দলকে একটি ভরসাম্যপূর্ন সিদ্ধান্তে পৌছতে সাহায্য করবে।
লাহোর,৩০ জুলাই, ১৯৬১ খৃ.
বিনীত
আবুল আ’লা