بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
‘দ্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা
ইকামাতে দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে প্রথমে কুরআন পাকের আলোকে ‘দ্বীন’ শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। দ্বীন শব্দিটির একাধিক অর্থ রয়েছে। কুরআন মজীদে বিভিন্ন অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কোন শব্দের একাধিক অর্থ থাকলে সব অর্থ প্রত্যেক স্থানেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং একই অর্থ সবখানে গ্রহণ করা চলে ন। কোন্ স্থানে কী অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা পূর্ণ বাক্য থেকেই বুঝা যায়। যে বাক্যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ঐ শব্দের অর্থ সঠিকভাবে বুঝবার উপায় নেই।
দ্বীন শব্দের কয়েকটি অর্থ কুরআন পাকে সুস্পষ্ট:
এক: প্রতিদান, প্রতিফল, বদলা ইত্যাদি।
দুই: আনুগত্য বা ত্ব’আত বা হুকুম মেনে চলা।
তিন: আনুগত্য করার বিধান (নেজামু ত্ব’আত) বা আনুগত্যের নিয়ম।
চার: আইন বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে আইনে চলে, সমাজ ব্যবস্থাও বুঝায়।
কুরআন পাকের কয়েকটি আয়াত থেকে দ্বীন শব্দের এসব বিভিন্ন অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়।
এক: প্রথম অর্থ প্রতিদান বা বদলা
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (সূরা ফাতেহা) অর্থ: “প্রতিদান দিবসের মালিক।”
كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِالدِّينِ “না, তা নয়, বরং তোমরা প্রতিদানকে মিথ্যা মনে কর।” -(সূরা ইনফিতার)
এ জাতীয় আয়াতে দ্বীন অর্থ প্রতিদান, প্রতিফল, বদলা ইত্যাদি। আখেরাতে মানুষের কাজের যে বদলা দেয়া হবে তা-ই এখানে বুঝাচ্ছে।
দুই: দ্বিতীয় অর্থ আনুগত্য
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ অর্থ: “এরা কি আল্লার আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছু চায়?অথচ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবাই তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করছে। ” -(সূরা আলে ইমরান: ৮৩)
এখানে ‘দ্বীন’ শব্দটি আত্মসমপণ বা আনুগত্য অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। دان শব্দের একটা অর্থ اطاع বা আনুগত্য করল। এ থেকে دِينِ মানে اطاعة বা আনুগত্য।
إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ
আর্থ: “আল্লার প্রতি আনুগত্যকে নিরংকুশ (খাস) করে তার দাসত্ব কর। ” -(সূরা আয যুমার: ২)
অর্থাৎ এমনভাবে আল্লার দাসত্ব কর যে, তিনিই তোমার একমাত্র মনিব ও আনুগত্য পাওয়ার অধিকারী।
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ ۖ
অর্থ: “তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যে পর্যন্ত ফিতনা শেষ না হয় এবং আনগত্য শুধু আল্লারই বাকী থাকে। ”-(সূরা আল বাকারা: ১৯৩)
এখানে ফিতনা অর্থ আল্লার আনুগত্যের পথে বাধা সৃষ্টিকারী ইসলাম বিরোধী শক্তি। জিহাদের নির্দেশ দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে, বিরোধী শক্তিকে এমনভাবে দমন কর যাতে আল্লার আনুগত্য করতে কেউ বাধা দিতে না পারে।
এ তিনটি আয়াত নমুনা স্বরূপ দেয়া হল। কুরআনে এ জাতীয় আয়াত বহু আছে। তিন ধরনের তিনটি আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আনুগত্য-ই হলো দ্বীন শব্দের প্রধান অর্থ।
তিন: তৃতীয় অর্থ আনুগত্যের বিধান বা পদ্ধতি
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
অর্থ: “নিশ্চয় আল্লার নিকট একমাত্র ইসলামই আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান)। ”-(সূরা আলে ইমরান: ১৯)
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ
অর্থ: যে ইসলাম ছাড়া অন্য প্রকার আনুগত্যের বিধান চয় তার থেকে সেটা গ্রহণ করা হবে ন। ”-(সূরা আলে ইমরান: ৮৫)
অর্থাৎ আল্লার আনুগত্যের বিধন আল্লার নিকট একমাত্র ইসলামই।
شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
অর্থঃ “তোমাদের জন্য আনুগত্যের বিধান ধার্য করা হয়েছে যা নূহ (আঃ) কেও নির্দেশ করা হয়েছিল এবং যা তোমার নিকট অহী করেছি এবং যা ইবরাহীম (আঃ), মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা দ্বীনকে কায়েম কর এবং এ বিষয়ে মতবিরোধ করো না। ” (সূরা আশ শূরা:১৩)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সব নবীকেই তার আনুগত্যের বিধানকে কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ
অর্থ: “তিনি সে, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও আনুগত্যের একমাত্র সত্য বিধান সহ পাঠিয়েছেন যেন (রাসূল) তাকে (বিধান) আর সব রকমের আনুগত্যের বিধানের উপর বিজয়ী করেন। ” (সূরা আস সফ: ৯)
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ
অর্থ: “আজ তোমাদের বিধান (জীবন বিধান) পূর্ণ করে দিলাম। ”(সূরা আল মায়েদা: ৩)
অর্থাৎ জীবনে একমাত্র আল্লাহর আনুগত্যের বিধান যাতে পালন করা যায় এবং কোন ক্ষেত্রেই অন্য বিধান থেকে কিছু নিতে না হয় সেজন্য তোমাদের জীবন বিধান পূর্ণ করে দিলাম।
চার: চতুর্থ অর্থ আইন, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَىٰ وَلْيَدْعُ رَبَّهُ ۖ إِنِّي أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَن يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ
অর্থ: “ফিরাউন বললো, আমাকে ছাড়, আমি মূসাকে হত্যা করবো। সে তার রবকে ডেকে দেখুক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলিয়ে দেবে অথবা (অন্ততপক্ষে) দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে। ”-(সূরা মুমিন: ২৬)
ۖ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ
অর্থ: “বাদশার আইনে অন্য কাউকে ধরা যায় না। অর্থাৎ যে চুরি করেছে তাকেই ধরতে হবে। দেশের আইনে দোষীর বদলে অন্য কাউকে ধরা যায় না। ”-(সূরা ইউসুফ: ৭৬)
وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
অর্থ: “যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে (যিনার শাস্তি দেবার সময়) আল্লার আইনের ব্যাপারে তোমাদের মনে তাদের প্রতি যেন দয়া না জাগে। ”-(সূরা আন নূর: ২)
এ কয়কটি আয়াতে দ্বীন শব্দের যে কয় প্রকার অর্থ পাওয়া যায় তাতে মৌলিকভাবে আনুগত্যের উপরই গুরুত্ব বেশী বলে মনে হয়। একটি আয়াতে দ্বীন শব্দটিকে ক্রিয়াবাচক অর্থে ব্যবহার করে আনুগত্যের অর্থকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে:
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ
অর্থ: “তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর যারা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান আনে না এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাকে হারাম গণ্য করে না এবং আল্লার দ্বীনের আনুগত্য করে না। ”-(সূরা আত তাওবা: ২৯)
দ্বীন শব্দের ব্যাখ্যা প্রসংগে কুরআন পাকের এ ক’টি আয়াত থেকে পরিষ্কার হয়েছে যে, আল্লাহ পাক দুনিয়ার জীবনে মানুষকে সঠিক জীবন যাপনের জন্য যে বিধান ও পদ্ধতি নবীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তার মূল কথাই হলো আল্লার আনুগত্য।
দ্বীনের ব্যাপকতা
আল্লার আনুগত্যের যে বিধান হিসেবে দ্বীন ইসলামকে পাঠানো হয়েছে তা মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্যই তৈরী করা হয়েছে। ব্যাক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে যাতে মানুষ একমাত্র আল্লার সঠিক আনুগত্য করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহ পাক স্বয়ং ইসলামী জীবন বিধান রচনা করেছেন। সব দেশ, সব কাল ও সব জাতির উপযোগী জীবন বিধান রচনার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো হতেই পারে না।
আল্লাহ রচিত এ জীবন বিধানকে বাস্তব জীবনে কিভাবে পালন করা যায় এর সত্যিকার নমুনা মানব জাতির নিকট পেশ করার জন্যই রাসূল (সঃ) কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কুরআন পাকে আল্লাহ পাক স্বয়ং এ ঘোষণা দিয়েছেন যে,
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লার (সন্তুষ্টি) ও শেষ দিনের (মুক্তির) আকাংখা করে তাদের জন্য রাসূল (সঃ) এর মধ্যে সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে। “-(সূরা আল আহযাব: ২১)
অর্থাৎ মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জীবনের নমুনা রাসূল (সঃ) এর জীবনেই পাওয়া যায়।
যে কালেমায়ে তাইয়েবা কবুল করার মাধ্যমে ইসলামে দাখিল হতে হয় সে কালেমার মর্ম একথারই দাবী করে যে, আল্লাহর আনুগত্য সর্বব্যাপী।
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ “আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লার রাসূল।” এ শব্দগুলো এমন কোনো মন্ত্র নয় যে, তা উচ্চারণ করলেই আল্লাহর নিকট মুসলিম বলে গণ্য হয়ে যাবে। কালেমার অর্থ বুঝে কালেমার মর্মের প্রতি বিশ্বাস না করলে ঈমানের দাবী পূরণ হতে পারে না।
কালেমায়ে তাইয়্যেবা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে মানব জীবনের মূলনীতিই ঘোষণা করা হয়। যে ব্যক্তি এ কালেমা কবুল করে সে আসলে দুটো এমন নীতি কথা মেনে নেয় যা তার সারা জীবন আল্লার দেয়া বিধান অনুযায়ী চলার জন্য জরুরী।
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ দ্বারা ঘোষণা করা হয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানবো না–অর্থাৎ আল্লার হুকুমের বিরুদ্ধে কারো কথাই মানবো না। এটাই পয়লা নীতি বা পলিসি। হাদীসে একথাটিকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে:
لاطاعة لمخلؤق فى معصية الخالق “স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতে কারো আনুগত্য চলবে না।” অর্থাৎ আল্লার আনুগত্যের বিপরীতে আর কারো হুকুম মানবো না–একথাই পয়লা নীতি।
কালেমা তইয়্যেবার দ্বিতীয় অংশে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)” কথাটিতে দ্বিতীয় নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মর্মকথা হলো, “আল্লার আনুগত্যের বাস্তব যে নমুনা রাসূল দেখিয়ে গেছেন একমাত্র সে নিয়মেই (তরীকা) আল্লাহর হুকুম মানবো। রাসূলুল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছ থেকে আল্লার আনুগত্য ও দাসত্বের নিয়ম গ্রহণ করবো না। ”
এভাবে আল্লার হুকুম ও রাসূল (সঃ) এর তরীকা অনুযায়ী জীবনে চলার সিদ্ধান্তই কালেমার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ সিদ্ধান্ত জীবনের সব ব্যাপারে পালন করাই কালেমার দাবী। কথায় ও কাজে, চিন্তায় ও বাস্তবে সবসময় এবং সব অবস্থায় এ নীতি মানবার ইচ্ছই এ কালেমার মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। এভাবে কালেমাকে বুঝে যারা কবুল করে তারাই প্রকৃত অর্থে মুসলিম। নফসের দুর্বলতার দরুন বা শয়তানের ধোঁকার ফলে মুসলিম হয়ে ও আল্লার হুকুম বা রাসূলের আনুগত্য করাই যে মুসলিমের কর্তব্য এবং কালেমার দাবী সে কথা সরল মনে স্বীকার করতেই হবে–যদি কেউ ঈমানদার ও মুসলিম হিসেবে আল্লার নিকট গণ্য হতে চায়। এভাবে যে ইসলাম কবুল করে তার দ্বারা আল্লার হুকুম ও রাসুল (সঃ) এর তরীকার বিরোধী কোন কাজ হয়ে গেলে সে অবশ্যই তাওবা করবে, মাফ পাওয়ার আশা করবে এবং আর এ অন্যায় না করার সংকল্প গ্রহণ করবে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনই দ্বীন ইসলামের বাস্তব নমুনা
দ্বীন ইসলাম কতটা ব্যাপক তা শেষ নবী (সঃ) এর বাস্তব জীবন থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায়। তিনি আল্লার রাসূল হিসেবেই সব কাজ করতেন। মসজিদে ইমামতি করার সময় তিনি যেমন রাসূল ছিলেন, মদীনার রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় কাজ করার সময়ও তিনি রাসূলই ছিলেন। যুদ্ধের ময়দানেও তিনি রাসূল ছিলেন। অর্থাৎ তিনি যত কাজকরেছেন ও যত কথা বলেছেন তা রাসূল হিসেবেই করেছেন ও বলেছেন। ধর্মীয় বিষয়ে যেমন তিনি রাসূল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধনীতি ইত্যাদি বিষয়েও রাসূল হিসেবেই সবকিছু করেছেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর গোটা জীবনটাই ইসলামী জীবন এবং আল্লাহ্র দ্বীন বা আল্লাহ্র আনুগত্যের মধ্যে শামিল। অর্থাৎ রাসুলের জীবন যতাটা ব্যাপক দ্বীন ইসলামও ততটা ব্যাপক। রাসূলকে সব অবস্থায় পূর্ণরূপে মেনে চলাই মুসলিম জীবনের কর্তব্য। শুধু ধর্মীয় বিষয়ে রাসূলকে মেনে চললেই ইসলামী জীবন গড়ে উঠে না।
মুসলিম হবার দাবীদার হয়েও যারা শুধু ধর্মীয় বিষয়ে রাসূলকে আদর্শ নেতা মেনে চলে কিন্তু রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ব্যাপারে রাসূলের বিপরীত নীতি ও চরিত্রের লোকদেরকে নেতা মানে, তারা কালেমার বিপরীত কাজই করে। শুধু তাই নয় এ জাতীয় লোকেরা আল্লাহকে জীবনের সবক্ষেত্রে মনিব মানতেই রাজী নয় এবং রাসূল (সঃ) কে সব বিষয়ে নেতা মানতেও তৈরী নয়।
কতক লোক “ইসলামকে রাজনৈতিক ময়দানে টেনে আনার” বিরুদ্ধে কথা বলে। তারা ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মতো কতক আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্মই মনে করে। তারা আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) এর উপর “১৪৪ ধারা” জারী করতে চায় যাতে মসজিদের বাইরে আল্লাহ ও রাসূলকে মানতে না হয়। প্রকৃতপক্ষে তারা ইসলামকেই মানতে রাজী নয়, যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু ধর্ম কর্মও করে থাকে। হয়তো ইসলামের ব্যাপকতা সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই। এ জাতীয় লোকদেরকে “ধর্মনিরপেক্ষ” বলা হয়।
খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে, পাকা দ্বীনদার হিসেবে সমাজে পরিচিত এক শ্রেণীর লোকও ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের মতো কথা বলে। তারা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, তাসবীহ, তেলাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের আনুগত্য করছেন। কিন্তুআইন-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, দেশ শাসন ইত্যাদি ব্যাপারেও আল্লার কুরআন ও রাসূল (সঃ) এর সুন্নাতকে মানান চেষ্টা করা প্রয়োজন বলে তারা মনেই করেন না। কারণ তারাও দ্বীনের ব্যাপকতা সম্পর্কে সজাগ নন। সে হিসেব তাদেরকেও ধর্মনিরপেক্ষ বলা চলে। কারণ তারাও ইসলামকে ধর্মীয় গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি।
এসব ধার্মিক লোক ইসলমকে রাজনীতি বর্জিত ধর্ম মনে করে। তাঁদের নিকট রাসূল (সঃ) পরিপূর্ণ অদর্শ মানব হলে তাঁরা কিছুতেই এমন ভুল করতে পারতেন না। রাজনীতির ময়দানে কারো থাকা সম্ভব হয়না । নির্বাচনে তো কোন পক্ষকে সমর্থন করতেই হয় এছড়াও বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে কোন না কোন মতামত গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকে না। যারা ধার্মিক হয়েও রাজনীতির ময়দানে ইসলামের পক্ষে কাজ করেন না তাদের পক্ষে নির্বচনে এবং জাতীয় ইস্যূতে অধার্মিক রাজিনৈতিক দলের খপ্পরে পড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একদল “ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে” বিশ্বাসী আর অন্যদল “রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্মে” বিশ্বাসী। রাসূল (সঃ) এর আনীত দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে উভয় দলই ভুল পথে আছেন।