ইসলামের নৈতিকতা ও আচরণ
ড. মারওয়ান ইবরাহীম আল-কায়সি
ইসলাম আদবের নির্দেশনা
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউব অব ইসলামিক থ্যট
প্রকাশকের বথা
ইসলামি সংস্কৃতি ও সভ্যতা ও সমগ্র বিশ্বকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল প্রায় আট’শ বছর । বর্তমান সভ্যতার অগ্রগতিতে ইসলামি সভ্যতার অগ্রগতিতে ইসলামি সভ্যতার অবদান কম নয় মোটেই। অষ্টম শতকের ইউরোপের অন্ধকার যুগে মুসলিম স্পেনের জ্ঞান বিজ্ঞানের উজ্জ্ব আলোকবর্তিকায় অবগাহন করে ইউরোপ নবজীব লাভ করে এবং শুরু হয় ইউরোপের নব উত্থান।
নৈতিকতা এবং আচরণ- এ দুই-ই মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইসলামে এ বিষয়গুলো সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতা ও আচরণের চর্চা উপাদানগুলোর চর্চা ব্যক্তিজীবন এবং সমাজ জীবকে সুন্দর, সাবলীল ও গতিময় করে। এসবের আর্থিক মূল্য খুব বেশি না হলেও সামাজিক মূল্য অপরিসীম। ইসলাসি সমাজে নৈতকতা ও আচরণের ছোট খাট বিষয়কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় বলে ইসলামি সমাজ এবং সংস্কৃতি সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও শোভা লাভ করেছে। যে সমাজ এবং সংস্কৃতিক সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও শোভা লাভ করেছে। যে সমাজে নৈতিকতার কোন বাছ-বিচার নেই, সে সমাজ অত্যন্ত বিশৃংখল। বইটির লেখক মারওয়ান ইবরাহীম আল কায়সি ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি গ্রন্ধাবদ্ধ করে পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামি কৃষ্টি এবং সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধনে যথার্থ অবদান রেখেছে।
সংস্কৃতির পরিধি বিরাট। লেখকের এ পুস্তিকাটি মূলতঃ তাঁর দেশের সাংস্কৃতিক আবহে লেখা। এ জন্য বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে কোন কোন বিষয় বৈদাদৃশ্য মনে হতে পারে। কিন্তু মূল ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক নয়- এ বিষয়টি পাঠককে বিবেচনায় রাখতে হবে।
বইটির অনুবাদক সাংবাদিক শেখ এনামুল হক সাহেব অনেক পরিশ্রম করে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে এ বইটি তুলে ধরার সুযোগ করে দিযেছেন। এ জন্য আমরা তাঁকে মোবারকবাদ জানাই। অনুদিত পাণ্ডলিপি সম্পদানার কাজটি করেছেন ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খান সাহেব। এ জন্য আমরা তার কাছেও কৃতজ্ঞ। ব্যাপক পাঠক- চাহিদার প্রেক্ষিতে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হলো। এতে আমরা পূর্বের ভুলত্রুটি শুধরে নেয়ার চেষ্টা করেছি। যাদের উদ্দেশ্যে আমাদের এ প্রচেষ্টা, বইটি তাঁদের কাজে আসলে আমাদের প্রয়াস সার্থক হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের এ প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন ।
প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান
ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিআিআইটি
সেপ্টেম্বর, ২০১০।
অনুবাদকের কথা
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিক আলোকে বিশ্ব সভ্যতা বিনির্মাণে মুসলমানদের ভূমিকা আজ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। ইসলামি সভ্যতার সেই স্বর্ণযুগের আলোকে নতুন করে বিশ্ব সভ্যতা পুনর্গঠনে মুসলমানদের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বহু দিন হল। প্যান ইসলামি যুগের স্বপ্নদ্রষ্টা মরহুম জামাল উদ্দিন আফগানির স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষআ আজ মুসলিম বিশ্বে জোরদার।
ইসলারেম শাশ্বত আদর্শে সমাজ গঠনের ঢেউ লেগেছে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র। মুসলমানরা আজ ইসলামি জীবন বিধানের আলোকে নিজেদের জীবন রাঙিয়ে তোলার জন্য উন্মুখ। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সুদমুক্ত ব্যাংক বীমা আজ বিশ্বের সর্বত্র বাস্তবরূপ লাভ করেছে। বর্তমান বিশ্বসভ্যতার পুনর্গঠনেও ইসলাম যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ড. মারওয়ান ইব্রাহিম আল কায়সির লিখিত Morals and Manners in Islkam A Guide to Islamick Adab বা “ইসলামে নৈতিকতা ও আচরণ; ইসলামি আদাবে দিক নির্দেশনা”-নামে বইটি বাংলাভাষায় এ ধরনের বই নেই। বললেই চলে। সুতরাং গ্রন্থখানি বাংলাভাষী পাঠকদের ইসলামি জ্ঞানের দিগন্তকে আরো প্রসারিত করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
শেখ এনামুল হক ১৯৯৮ ইং
মুখবন্ধ
ইতিহাসের সূচনা থেকেই মানব সমাজ এমনকি প্রাথমিক পর্যাযের গোত্রীয় সমাজেও ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক পরিচালনার বিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। প্রাচীন মিশরীয় সমাজে প্রচলিত পতে হোতেপ-এর নির্দেশনাবলিতে (The Instructions of path Hotep) সুষ্ঠু আচরণ সম্পর্কে পুত্রের প্রতি পিতার নির্দেশনাবলি জানা যায়। প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব বিধিবিধান ও আচরণ মেনে চলেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের আচরণবিধি ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে। এমনকি কোন এক জনগোষ্ঠির ক্ষেত্রেও একই সমযে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা পরিবর্তি হয়েছে। মুসলমানদের বেলায়ও এটা সত্য যে, মুসলিম বিশ্বের দৈনন্দিন জনজীবনের বিভিন্ন স্তর ইসলামি আদবের বিভিন্ন দিক এখনও প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তথাপি, এটাও সত্য যে, বহিরাগত ভাবধারা ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করেছে। ইসলমি ভাবধারার সাথে স্বল্প যোগাযোগের ফলেই এ ধরনের প্রভাব পড়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন প্রকার উপযুক্ত গ্রন্থ না থাকায় বিদেশী ভাবধারা প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। এ ধরনের গ্রন্থ না থাকায় বিদেশী ভাবধারা প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। এ ধরনের গ্রন্থ রচনার প্রয়োজনের নিরিএখই এই রচনার প্রয়াস। সম্ভাব্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কাছে ইসলামি আদবের বিস্তারিত দিক তুলে ধরা এর উদ্দেশ্য।
পাশ্চাত্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক এবং অব্যাহত পারস্পরিক আন্তঃযোগাযোগের ফলে মুসলমানদে দৈনন্দিন জীবনে পশ্চিমা আচরণের কতিপয় ধারার আমাদানি ঘটেছে। কিন্তু এই আন্তঃযোগাযোগ প্রতিষ্ঠার আগেই নতুন নতুন ধ্যান-ধারাণার সঙ্গে পরিচিতির দরুণ ইসলামি জীবনধিান অনৈসলামিক ভাবধারার প্রভাবাধীনে পড়ে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইসলামের মৌলিক সূত্র আল-কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উপাদান সংগ্রহ করে মুসলমানদেরকে তাদের আচরণকে ইসলামিকরণ করতে হবে। তাদেরকে প্রকৃত ইসলাম ও ঐতিহাসিক ইসলাম এবং ইসলাম ও অইসলামের মধ্যকার পার্থক্য জানতে হবে। প্রাথমিক ইসলামে প্রচলিত অনেক আচার-আচরণ, যা এখনও মুসলমানদের মধ্যে বিরাজ করছে, তাদের চিহ্নত করতে হবে। এই দায়িত্ব পালনের পর, যুগ যুগ ধরে মুসলিম সমাজে অনপ্রবিষ্ট সাংস্কৃতিক প্রাধান্য থেকে ইসলামি সমাজকে মুক্ত করার পথ সুগম করতে হবে।
সবকালে এবং সর্বত্র মুসলিম শিশুদেরকে ইসলামি আদম অনুসারে জীবন যাপনের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার উপর নেই। আশা করা যায়, এই গ্রন্থখানি ইনশাআল্লাহ উল্লিখিত শূন্যতা পূরণে সহায়ক হবে এবং বিশেষ পরিস্থিতি বা সময়ে কি ধরনের আদম লেহাজ প্রদর্শন করা উচিত সেজন্য একটি সহজবোধ পুস্তিকা হিসেবে এটি কাজ করবে। প্রসঙ্গের () সুবিধার জন্য প্রতিটি অধ্যায় পয়েন্টভিত্তিক সাজানো হয়েছে এবং সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন পরিচ্ছেদের সাধারণ আলোচ্যসূচির ক্ষেত্রে বেশকিছু পয়েন্টের পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
সবশেসে এই গ্রন্থের ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে পরামর্শ দিলে লেখক পাঠকদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন।
১৯৮৬ ইং। ড. মারওয়ান ইবরাহীম আল-কায়সি
মানবিক বিভাগ
ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়, ইরবিদ, জর্দান।