কায়রো ও সারাদেশে ইখওয়ান প্রসার
বিয়ের পর হাসান ভাবলেন এবার তিনি ইসমাঈলিয়া ছাড়বেন। কেননা এখানে সবাই ইখওয়ানে যোগ দিয়েছে। আন্দোলনের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেছে। এখন দেশের অন্যান্য স্থানেও ইখওয়ান গড়ে তুলতে হবে। এজন্য তিনি মনে মনে বদলি হতে চাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে বন্ধুদের সাথে আলাপ করলেন। আল্লাহ তার এই প্রিয় বান্দার মনের ইচ্ছা পূরন করলেন। ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে তাঁকে কায়রোতে বদলি করা হয়। হাসান কায়রোতে এলেন। এর ফলে ইখওয়ানের সদর সফতরও কায়রোতে স্থানান্তরিত হল। কায়রোতে ইখওয়ানের কাজ বাড় থাকে। ১৯৩৪ সালের মধ্যে মিসরের ৫০টি বেশী শহর আর নগরে ইখওয়ানের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে। এসব স্থানে বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। এছাড়া শিল্প কারখানাও স্থাপন করা হয়। মাহমুদিয়ায় একটা কাপড়ের কল ও একটা কার্পেট কারখানাও স্থাপন করা হয়।
সরকারের কাছে পত্র
১৯৩৫ সাল থেকে হাসান দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের কাছে পত্র দিতে থাকেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপদেশ দেন। ১৯৩৮ সালে তিন লেখেন, ইখওয়ান আল্লাহর কেতাব আর রাসূলের সুন্নাহ মত চলতে চায়। ইখওয়ান বুঝতে পেরেছে, আল্লাহর প্রতি ভালবাসাই হচ্ছে সকল কল্যাণের উৎস। ইখওয়ান শাসননীতির সংস্কার চায়। ইখওয়ান শরীর চর্চা করে এবং অন্যান্য খেলোয়ড় দলের সাথে ম্যাচও খেলে। ইখওয়ানের ক্লাব ও কেন্দ্রে জ্ঞান ও বিবেককে চাঙ্গা করা হয়। ইখওয়ান অর্থনৈতিক কোম্পানী। কারণ ইসলাম অর্থনীতির ব্যাপারেও নির্দেশ দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ইখওয়ান
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল। এ সময় বিশ্ব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এদিকে হাসান ইখওয়ানের দাওয়াতকে আরো বাড়াতে থাকেন। এর ফলে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় ও আল আজহার বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্ররা দলে দলে ইখওয়ানে যোগ দেয়। নানান পেশা আর শ্রেণীর লোক ইখওয়ানের দাওয়াতে সাড়া দেয়। ফলে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী ও চাকুরীজীবীসহ সব ধরনের লোকই ইখওয়ানে শরীক হয়।
ইখওয়ানের উপর নির্যাতন
মিশরের রাজা ফারুক নামে মাত্র শাসক ছিলেন। আসল ক্ষশতা ছিল ইংরেজদের হাতে। দেশে ব্যবসা বানিজ্যসহ সব অর্থনৈতিক শক্তি ইহুদীদের কব্জায় ছিল। এই খৃষ্টান আর ইহুদীরা ইখওয়ানের শক্তিকে বাড়তে দেখে ভয় পেয়ে গেল। তারা প্রধানমন্ত্রী হুসাইন সিররি পাশার উপর চাপ দিতে থাকে। তাদের চাপের মুখে সিররি পাশা ইখওয়ানের দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ করে দেন। মাসিক পত্রিকা আল মানারও নিষিদ্ধ হয়। ইখওয়ানের ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইখওয়ানের কোন খবর ছাপানো নিষিদ্ধ করা হয়। তাদের সভা সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয় না। হাসানকে কায়রো থেকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়। সে সয়ও তিনি শিক্ষা বিভাগে চাকুরী করতেন। এসব বিষয়ে মিসরের পার্লামেন্টে আলোচনা হয়। তীব্র প্রতিবাদের মুখে তাকে পুনরায় কায়রোতে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু কায়রো পৌছামাত্র হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। নাহাশ পাশা প্রধানমন্ত্রী হলে ইখওয়ানের ওপর জুলুম বন্ধ হয়। ১৯৪৪ সালে আহমদ মাহের পাশা প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি আবার ইখওয়ানের উপর কড়াকড়ি করতে থাকেন। ইংরেজদের চাপের মুখে তিনি জার্মানী ও ইটালীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। ইখওয়ান অযথা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিরোধীতা করে। এ সময় আহমদ মাহের পাশা আততায়ীর হাতে নিহত হন। নোকরাশি পাশা নয়া প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি হাসানকে ইখওয়ান নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠান।
আজাদী আন্দোলনের ডাক
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধের সময় ইংরেজরা ওয়াদা করে, মিসরীয়রা ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে শরীক হলে বৃটেন মিসরকে স্বাধীনতা দেবে। যুদ্ধ শেষ হলে ইখওয়ান স্বাধীনতা দাবী করে ব্যাপক গণ আন্দোলন সৃষ্টি করে। তারা ইংরেজদের ওয়াদা পূরণেরও দাবী জানায়। ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ইখওয়ানের এক গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়। এরপর নতুন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ইখওয়ানের সমর্থন বাড়তে থাকে। এসময় আল ইখওয়ান নামে নতুন একটি দৈনিক পত্রিকাও বের হয় এবং বিভিন্ন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়। হাসান ইখওয়ানের কেন্দ্রীয় সভাপতি বা মুর্শিদে আম হন। তাকে আজীবন নেতা নির্বাচিত করা হয়। এ সময় মিসরেই ইখওয়ানের কর্মী হয় ৫ লাখ লোক। সারা দেশে ২ হাজার শাখা খোলা হয়।
হাসান ইংরেজদের ওয়াদাভঙ্গের কারণে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। তার প্রচেষ্টায় সারাদেশে আজাদীর আগুন জ্বলে ওঠে। নোকরাশি পাশা পদত্যাগ করেন। তখন ইসমাঈল সেদিক পাশা সরকার গঠন করেন। তিনি ইখওয়ানের লোকজনকে গ্রেফতার করতে থাকেন। কিন্তু তাকে পদত্যাগ করতে হয়। আার নোকরাশি পাশা ক্ষমতায় আসেন। ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইখওয়ান বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বের করে। হাসান এ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তিনি মোটর গাড়ীতে বসে মাইক যোগে নির্দেশদেন। ১৯৪৮ সালের ৬ মে। হাসান ইখওয়ানের শীর্ষ পরিষদের বৈঠক করেন। এতে ইসরাঈলের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করার সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বনের জন্য মিসর ও অন্যান্য আরব দেশের সরকাগুলোর প্রতি জোর দাবী জানানো হয়।
ইখওয়ানকে বেআইনী ঘোষণা
এ সময় ইংরেজরা গায়ের জোরে আরবদের বুকে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করে। শুরু হয় যুদ্ধ। হাসান হাজার হাজার ইখওয়ান স্বেচ্ছাসেবককে ফিলিস্তিনে পাঠান যুদ্ধ করতে। এই যুদ্ধে ইখওয়ানরা খুবই বীরত্ব দেখায়। এর ফলে ইংরেজ ও ইহুদীরা ভয় পেয়ে যায়। ইংরেজদের দালাল নোকরাশি পাশা ১৯৪৮ সালের ৮ ডিসেম্বর জরুরী আইনের ৭৩ ধারাই ইখওয়ানকে বেআইনী ঘোষণা করেন। ইখওয়ানের সব কেন্দ্র ও দফতর বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার ইখওয়ান যুবককে জেলে পাঠানো হয়। তাদের ওপর ভয়াবহ জুলূম নিপীড়ণ চালানো হয়। এ সময় এক যুবক নোকরাশি পাশাকে খুন করে। ফলে ইবরাহীম আব্দুল হাদী প্রধানমন্ত্রী হন।
আল্লাহর রাহে শহীদ হাসানুল বান্না
তার আমলে ইখওয়ানের মুর্শিদে আম হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী। হাসান একটি স্থানে দাওয়াতের কাজ করে মোটর যোগে ফিরছেন। এ সময় সরকারের নিয়োজিত সশস্ত্র লোকেরা প্রকাশ্য রাজপথে তাকে লক্ষ্য করে গুলী করে। গুলী বিদ্ধ হয়ে হাসান লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর রুহ মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। তিনি আল্লাহর পথে শহীদ হলেন। এ সময় তার বয়স মাত্র ৪৩ বছর। তিনি খুব কম সময়ের মধ্যে মিসরসহ গোটা আরব জাহানে তোলপাড় সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। তার দরদ ভরা দাওয়াতের কারণে ২০ লাখ মিসরীয় নাগরিক ইখওয়ানে যোগ দেন। সারা দেশে ইখওয়ানের দু’জাহারের বেশী শাখা গড়ে ওঠে। মিসরের বাইরে সুদান, সিরিয়া, ইরাক ও তুরষ্টেক পর্যন্ত ইখওয়ানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
হাসান একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। দিনের বেলা মানুষকে খোদার পথে দাওয়াত দিতেন আর সারা রাত আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন আর মানুষের হেদায়েতের জন্য কান্নাকাটি করতেন। হাসানের শাহাদাত বৃথা যায়নি। তার পথ ধরে বিপ্লবী কাফেলা এগিযে চলেছে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে: আল্লাহর সন্তুষ্টি আমাদের চরম লক্ষ্য, রাসুল (সা) আমাদের নেতা, আল কুরআন আমাদের সংবিধান, জিহাদ আমাদের পথ, আল্লাহর পথে মৃত্যু আমাদের পরম কাম্য।
হাসানুল সম্পর্কে মন্তব্য
হাসানের পুরা নাম ইমাম হাসানুল বান্না। তাঁর ছোট ভাই ছিলেন আব্দুর রহমান আল বান্না। তিনি বড় ভাই হাসানের চেয়ে দু’বছরের ছোট। উভয়ে এক সাথে লেখা পড়া করেন এবং ইসলামী আন্দোলনে এক সাথে কাজ করেন। ছোট ভাই আবদুর রহমান লিখেছেন: ছোট বেলা থেকেই বড় ভাই হাসান নামাজ রোজা ও জিকরে মশগুল থাকতেন। ফকির দরবেশ আর নেককারদের সাথে ছিল হাসানের অগাধ ভালবাসা। ইখওয়ানের অন্যতম নেতা আমিন ইসমাইল বলেন, একবার হাসানের সাথে তিনি এক দর্জির কাছে গেলেন।দর্জি তৈরা করা জামা এনে দিয়ে তিন মিসরী পাউন্ড মজুরী দাবী করেন। হাসান তাঁকে পাঁচ পাউন্ড দিয়ে জামা নিয়ে আসেন। বাকী ২ পাউন্ড তিনি আর ফেরত নেননি। সামনে একজন অসহায় ভিক্ষুককে দেখে হাসান তাকে কিছু দিতে চাইলেন। কিন্তু তার কাছে আর কিছুই নেই। এ কারণে সাথী আমিন ইসমাইলকে এক রিয়াল দিতে বললেন। এরকমই উদার মন ছিল তার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলা কালে ইংরেজরা হাসানকে কয়েক হাজার পাউন্ড দিতে চেয়েছিল। এর বিনিময়ে তারা হাসানের সমর্থন কামনা করছিল। কিন্তু তিনি ইংরেজদের টাকা নেননি। এমনকি ইংরেজরা হাসানকে আরো বেশী টাকা পয়সা দেয়ারও লোভ দেখায়। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।
ইখওয়ানের বহু কোম্বানী ছিল। হাসান সেগুলোর পরিচালনা বোর্ডের সাদস্য ছিলেন। কোম্পানীর কাজে তাকে সময় দিতে হত। এজন্য তিনি ভীষণ পরিশ্রম করতেন। কোম্পানী থেকে তাকে ভাতা দেয়ার কথা উঠল। কিন্তু তিনি তা নেননি।
হাসানুল বান্নার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
তিনি সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। কায়রোতে তাঁর নিজের কোন বাড়ী ছিলনা। বরং পুরাতন ধাঁচের এক মহল্লায় জরাজীর্ণ এক ভাড়া বাড়ীতে তিনি থাকতেন। বাড়ীর ভাড়া ছিল মাসে ১ পাউন্ড ৮০ ক্রোশ। তার ঘরের আসবাবপত্র ছিল নিতান্তই মামুলী ধরনের। তিনি অল্পেই সন্তুষ্ট থাকতেন। তিনি সস্তা দামের লম্বা জামা পরতেন। জামার উপরে আবা গায়ে দিতেন। মাথায় পাগড়ী বাঁধতেন। তার চেহারা উজ্জ্বল গৌরবর্ণের। চেহারা থেকে নূরের আভা ফুটে বের হত। কথাবার্তায় কোন কৃত্রিমতা ছিল না। সাদাসিধে ও প্রচলিত ভাষা ব্যবহার করতেন। কথায় কথায় তিনি কুরআনের আয়াত উল্লেখ করতেন। তিনি কোরআনের হাফেজ ছিলেন। হাসান স্বভাবে ছিলেন একজন দরবেশ। খাবার জন্য যা কিছু মিলতো তাই তিনি খেয়ে নিতেন। পরার জন্য যা মিলতো তাই পরতেন। অফিসের সহকর্মীদের সাথ তিনি মধুর ব্যবহার করতেন। ফলে সকলেই তাকে ভালোবাসতো। সফরসঙ্গী আমিন ইসমাঈল বলেন, হাসান আমার কাজ ভালভাবে পরীক্ষা করতেন। ভুল থাকলে সংশোধন করে দিতেন। আমার সেবা করতেন। আমার কষ্ট হলে আমার বাসায় এসে সান্ত্বনা দিতেন। অথচ আমি অফিসের সামান্য কেরানী আর তিনি এতবড় লোক। তিনি খুব কমই ঘুমাতেন। খুব সামান্য খাবার খেতেন।
চির প্রতিবাদী হাসানুল বান্না
কায়রোতে ইখওয়ানরা একবার মিছিল করে ফিলিস্তিনী ভাইদের সাথে সহযোগিতা করার দাবী জানাতে থাকে। এ সময় হাসান মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মিছিল আল আতাবা আল কাদারা নাম স্থানে পৌঁছলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলী চালায়। হাসান সামনে এগিয়ে গিয়ে গুলি চালাতে পুলিশকে নিষেধ করেন। এ সময় গুলী তার হাতে লাগে। ফলে হাত থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।
হাসানুল বান্নার ভবিষ্যদ্বানী
সফরে গেলে তিনি মসজিদে থাকতেন। আর রমজানের সময় সফরে থাকতেন। মসজিদে খেজুর ও পানি দিযে ইফতার করতেন। হাসান খাঁটি আল্লাহ্ওয়ালা চিলেন। তিনি খুবই বিজ্ঞ ও দূরদর্শী ছিলেন। হাসান ইখওয়ানদের যেসব কথা আগে ভাগে বলেছিলেন পরবর্তীতে তাই সত্যে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনো শুরু হয়নি। একবার তিনি বললেন, যেদিন অধিকাংম মানুষ ইখওয়ানদের আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারবে সেদিন তাদের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা ও কঠোর শত্রুতা করা হবে। সে সময় ইখওয়ানদের অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। সত্যের পতাকাবাহী হওয়ার দাবী সে সময় যথার্থ হবে। তখন দাওয়াতের জন্য কোরবানী দিতে হবে। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। সরকারী আলেমরাও ইখওয়ানের বিরোধীতা করবে। শাসক শ্রেণী, নেতা আর হর্তা কর্তারা ইখওয়ানদের দেখে জ্বলে পুরে মরবে। সরকার বাধা দেবে। দাওয়াতের আলো নেভানোর জন্য তারা সব রকম অস্ত্র ব্যবহার করবে। দাওয়াত সম্পর্কে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করবে। যেকোন দোষ এখওয়ানের ঘাড়ে চাপাবার চেষ্টা করবে। এরকম অবস্থায় ইখওয়ানদের ধৈর্যের সাথে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সে সময় ইখওয়ানদের জেলে পাঠানো হবে, বাড়ী ঘর থেকে বহিষ্কার আর দেশান্তরিত করা হবে। তাদের জমি জমা বাজেয়াপ্ত করা হবে। গৃহ তল্লাশি করা হবে। হাসান যেসব কথা বলেছিলেন পরবর্তীকালে তাই ঘটে ছিল।
তিনি কালামে পাকের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, লোকেরা কি মনে করেছে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? তাদেরকে কোন পরীক্ষা করা হবে না? আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, তিনি মুজাহিদদের সাহায্য করবেন এবং যারা ভাল কাজ করে তাদেরকে শুভ পরিণাম দান করবেন।
মানুষগড়ার কারিগর হাসানুল বান্না
হাসানুল বান্না বই পুস্তক রচনায় সময় দিতে পারেননি। তিনি গোটা জীবন মানুষের চরিত্র গঠনের লক্ষে দাওয়াতের কাজে ব্যয় করেন। তিনি কোন লেখক বা সাহিত্যিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর দিকে আহ্বানহারী। তিনি একদল লোককে ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলেন। তাদের দ্বারা ইসলামী আন্দোলনের কাজ করতে থাকেন। একবার এত লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা আপনি বই পুস্তক রচনা করেন না কেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি মানুষ রচনা করি। অর্থাৎ তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। মানুষ গড়ার কারিগর।
হাসানের স্ত্রীও স্বামীর মতই নেককার মহিলা ছিলেন। যেদিন হাসান শহীদ হন সেদিন তার শেষ কন্যা জন্ম গ্রহণ করেন। মা এ মেয়ের নাম রাখেন ইসতিশহাদ বা নিশান। হাসানের একমাত্র পুত্র আহমদ সাইফুল ইসলাম চিকিৎসক ছিলেন। তার চাল-চলন আর স্বাভব চরিত্র পিতা হাসানের মতই সুন্দর ছিল। ছাত্র জীবনে সাইফুল ইসলাম সব সময় প্রথম হতেন। কায়রোর দারুল উলুম থকে একই বছরে তিনি দু’টো ডিগ্রী লাভ করেন।
মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুন রাসেন সেদেশে ফেরাউনের শাসন কায়েমের চেষ্টা করেছিলেন। ইখওয়ানরা তার বিরোধীতা করেন। ফলে তিনি ইখওয়ানদের জেলে পাঠান। এ সময় হাসানুল বান্নার পুত্র আহম্মদ সাইফুল ইসলামকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। ইসলামী দাওয়াতের কাজ করার অপরাধে তাকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। কিন্তু এতে দেম যাননি হাসানুল বান্নার সুযোগ্য পুত্র সাইফুল ইসলাম। তিনি ইখওয়ানের আলোর মশাল নিয়ে শত নির্যাতনের মুখেও এগিয়ে চলেছেন সম্মুখের পানে। তার সামনে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একদিন তিনি পৌঁছতে পারবেন সেই মঞ্জিলে। সেদিন মিসরসহ সারা দুনিয়াতে কায়েম হবে ইসলামী শাসন। মানুষ লাভ করবে শান্তি আর নিরাত্তা।
যবনিকা