তাহারাত অধ্যায়
তাহারাত
নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত হবার পর নবীর দায়ত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে নবী মুস্তফা (সা)এর উপর প্রথমে যে অহী নাযিল হয় তাতে তৌহীদের শিক্ষার পরই এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, পরিপূর্ণ পরিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা (তাহারাত) অবলম্বন করতে হবে।
وَثِيَابَكَ فَطَهِّر )المدثر-4)
নিজেকে পাক পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন (মুদ্দাসসির-৪)।
ثياب শব্দটি ثوب শব্দের বহুবচন। যার শাব্দিক অর্থ পোশাক। কিন্তু এখানে ثياب (সিয়াব) বলতে শুধুমাত্র পোশাক-পরিচ্ছদ বুঝানো হয়নি। বরঞ্চ শরীর, পোশাক, মন-মস্তিস্ক মোট কথা সমগ্র ব্যক্তিসত্তাকে বুঝানো হয়েছে। আরবী ভাষায় طاهر الثوب ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে সকল ক্রটি-বিচ্যুতি ও মলিনতার উর্ধে। কুরআনের নির্দেশের মর্ম এই যে, স্বীয় পোশাক, শরীর ও মন-মস্তিস্কের মলিনতার অর্থ শির্ক কুফরের ভ্রন্ত মতবাদ ও চিন্তাধারা এবং চরিত্রের উপর তার প্রতিফলন। শরীর ও পোশাক পরিচ্ছদের মলিনতার অর্থ এমন অপবিত্রতা ও অশুচিতা যা অনুভব করা যায় এবং রুচিপ্রকৃতির কাছে ঘৃণ্য। অতপর শরীয়তও যার অপবিত্র (নাপাক) হওয়ার ঘোষণা করেছে।
পবিত্রতার এ গুরুত্বকে সামনে রেখে কুরআন পাক স্থানে স্থনে এর জন্যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। কুরআনের দু স্থনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন যে, যারা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে তারা তাঁর প্রিয়া বান্দাহ।
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
যারা পাকসাফ এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন- (তওবাঃ ১০৮)
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
যারা বার বার তওবা করে এবং পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন (বাকারাঃ ২২২)।
নবী পাক (সা) স্বয়ং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। উম্মতকে তিনি পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার জন্যে বিশেষভাবে তাগীদ করেছেন এবং বিভিন্নভাবে তার গুরুত্ব বর্ণনা করে পাকসাফ থাকার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি এরশাদ করেন, পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক (الطهور شطر لايمان) । অতপর তিনি বিস্তারিতভাবে ও সুস্পষ্টরূপে তার হুকুম-আহকাম ও পন্থা বলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি স্বয়ং তাঁর বাস্তব জীবনে তা কার্যকর করে তাঁর অনুসারীদেরকে বুঝাবার এবং হৃদয়ংগম করার হক আদায় করেছেন। অতএব প্রতিটি মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে তাঁর সে সব মূল্যবান নির্দেশ মেনে নেয়া স্মরণ রাখা এবং তদনুযায়ী নিজের যাহের ও বাতেনকে (বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক) পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা। মন ও মস্তিস্ককে ভ্রন্ত মতবাদ ও চিন্তধারা এবং শির্ক ও কুফরের আকীদাহ-বিশ্বাস থেকে পবিত্র রাখা, নিজের শরীর, পোশাক ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলোকেও সকল প্রকার অপবিত্রতা ও মলিনতা থেকে পাক রাখাও প্রত্যেকের অপরিহার্য কর্তব্য। শির্ক কুফরের আকীদাহ-বিশ্বাসসমূহ পূর্ববর্তী অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে প্রকাশ্যে নাজাসাতগুলোর (নাপাকীর) হুকুম বর্ণনা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এ বিষয়টি ভালোভাবে মনে রাখতে হবে যে, পাক-নাপাকের কষ্টিপাথর হলো আল্লাহর শরীয়ত। এ ব্যাপারে নিজের জ্ঞান বিবেক অথবা রুচি অনুযায়ী কিছু কম-বেশী করার অধিকার কারো নেই। একমাত্র ওসব বস্তুই পাক যাকে শরীয়ত পাক বলেছে এবং হক শুধু তাই যাকে শরীয়ত হক বলে ঘোষণা করেছে। ঠিক তেমনি ওসব বস্তু অবশ্য অবশ্যই বাতিল এবং নাপাক যাকে শরীয়ত বাতিল ও নাপাক বলেছে। অতপর শরীয়ত পাক করার ও পাক হওয়ার যেসব পন্থা পদ্ধতি বলে দিয়েছে একমাত্র সেভাবেই পবিত্রতা অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে নিজস্ব কোন রুচি ও ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে পাক-নাপাকের কোন কষ্টিপাথর ঠিক করা এবং অযথা কুসংস্কার ও সন্দেহের কারণে আল্লাহর সহজ সরল শরীয়তকে দুঃসাধ্য করে ফেলা শুধু নিজেকেই বিরাট অসুবিধার মাধ্যে ঠেলে দেয়া নয়, বরঞ্চ একটা সাংঘাতিক রকমের গোমরাহী এবং দ্বীনের সঠিক ধারণা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা। এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণা ও কর্যকলাপের ফলে অনেক সময় মারাত্মক কুফল দেখতে পাওয়া যায় এবং লোকে শরীয়তকে নিজের জন্যে এক বিরাট মসীবত মনে করে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।
নাজাসাতের (অপবিত্রতা) বর্ণনা
নাজাসাতের (نجاست) অর্থ হচ্ছে মলিনতা, অশুচিতা ও অপবিত্রতা। এ হলো তাহারাত (طهارت) বা পবিত্রতার বিপরীত। তাহারাতের মর্ম পন্থা-পদ্ধতি, হুকুম-আহকাম এবং মাসয়ালা জানার জন্যে প্রথমে প্রয়োজন হচ্ছে যে, নাজাসাতের মর্ম, তার প্রকারভেদ এবং তা পাক করার নিয়মপদ্ধতি জেজে নিতে হবে। এ জন্যে প্রথমেই নাজাসাতের হুকুমগুলো ও সে সম্পর্কিত মাসয়ালাগুলো বর্ণনা করা হচ্ছে।
নাজাসাতের প্রকারভেদ
নাজাসাত দুই প্রকারের। নাজাসাতের হাকিকী ও নাজাসাতে হুকমী। উভয়ের হুকুম আহকাম ও মাসয়ালা পৃথক পৃথক। পবিত্রতা অর্জন করার জন্যে তার হুকুম ও মাসয়ালাগুলো ভালো করে বুঝেসুঝে তা মনে রাখা অত্যন্ত জুরুরী।
নাজাসাতে হাকিকী
ঐ সব জিনিসকে নাজাসাতে গালিযা বলা হয় যাদের নাপাক হওয়া সম্পর্কে কোন প্রশ্নই থাকতে পারে না। মানুষের স্বভাব প্রকৃতি সগুলোকে ঘৃণা করে এবং শরীয়ত সেগুলোকে নাপাক বলে ঘোষণা করে। এ সবের অপবিত্রতা অসুচিত্রা খুব তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং সে জন্যে শরীয়তে এ সবের জন্যে কঠোর নির্দেশ রয়েছে। নিম্নে নাজাসাতে গালিযার কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে।
১. শূকর। তার প্রতিটি বস্তুই নাজাসাতে গালযা। সে জীবিত হোক অথবা মৃত।
২. মানুষের পেশাব, পায়খানা, বীর্য, প্রশ্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত যে কোন তরল বস্তু, সকল পশুর বীর্য এবং ছোট ছেলেমেয়েদের পেশাব-পায়খানা।
৩. মানুষ অথবা পশুর রক্ত।
৪. বমি যে কোন বয়সের মানুষের হোক।
৫. মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত রক্ত।
৬. মেয়েদের প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে নির্গত কোন তরল পদার্থ।
৭. ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পূঁজ, রস অথবা অন্য কোন তরর পদার্থ।
৮. যে সব পশুর ঝুটা নাপাক তাদের ঘাম ও লালা।
৯. যবেহ করা ব্যতীত যে সব পশু মারা গেছে তাদের গোশত, চর্বি ইত্যাদি এবং চামড়া নাজাসাতে গালিযা। অবশ্য চামড়া দাবাগাত (tanning) করা হলে তা পাক। ঠিক তেমনি যার মধ্যে রক্ত চলাচল করে না যেমন শিং দাঁত ক্ষুর ইত্যাদি পাক।
১০. হারাম পশুর-জীবিত অথবা মৃত-দুধ এবং মৃত পশুর (হালাল অথবা হারাম) দুধ।
১১. মৃত পশুর দেহ থেকে নির্গত তরল পদার্থ।
১২. নাপাক বস্তু থেকে নির্গত নির্যাস অথবা ঐ ধরণের কোন বস্তু।
১৩. পাখী ব্যতীত সকল পশুর পেশাব পায়খনা। গরু, মহিষ, হাতি, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর প্রভৃতির গোবর, উট ছাগল প্রভৃতির লাদ। উড়তে পারে না এমন পাখী, যেমন হাঁস-মুরগী ইত্যাদির পায়খানা। সকল হিংস্র পশুর পেশাব পায়খানা।
১৪. মদ এবং অন্যান্য তরল মাদক দ্রব্য।
১৫. সাপের খাল।
১৬. মৃত ব্যক্তির মুখের লালা।
১৭. শহীদ দেহ থেকে নির্গত রক্ত যা প্রবাহিত হয়।
নাজাসাতে খফিফা
ঐ সব জিনিস নাজাসাতে খফিফা যার মায়লা কিছুটা হালাকা। শরীয়তের কোন কোন দলিল-প্রমাণ থেকে তাদের পাক হওয়ার সন্দেহ হয়। এ জন্যে শরীয়তে তাদের সম্পর্কে হুকুমও কিছুটা লঘু। নিম্নে এমন সব জিনিসের নাম করা হচ্ছে যাদের নাজাসাত নাজাসাতে খফিফা ।
১. হালাল পশুর পেশাব, যেমন গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি।
২. ঘোড়ার পেশাব।
৩. হারাম পাখীর মল, যেমন কাক, চিল, বাজ প্রভৃতি। অবশ্যি বাদুরের পেশাব-পায়খানা পাক।
৪. হালাল পাখীর পায়খানা যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
৫. নাজাসাতে খফিফা যদি নাজাসাতে গালিযার সাথে মিশে যায় তা গলিযার পরিমাণ যতোই কম হোক না কেন, তথাপি সব নাজাসাতে গালিযা হয়ে যাবে।
নাজাসাতে হাকিকী থেকে পাক করার পদ্ধতি
নাপাক হওয়ার জিনিসগুলো যেমন বিভিন্ন ধরনের তেমনি তা থেকে পাক হওয়ার পদ্ধতিও বিভিন্ন, যেমন কতকগুলো জিনিস স্থির থাকে। কতকগুলো হালকা এবং বয়ে যায়। কতকগুলো আর্দ্রতায় শুকে যায়। কতকগুলো শুকায় না অথবা অল্পমাত্রায় শুকায়। কতকগুলো ময়লা নিঃশেষ হয়ে যায়। আবার কতকগুলো হয় না। সে জন্যে তাদের পাক করার নিয়ম-পদ্ধতি ভালো করে বুঝে নিতে হবে।
মাটি প্রভৃতি পাক করার নিয়ম
১. মাটি নাপাক হলে, অল্প কিংবা তারল মল দ্বারা হোক অথবা ঘনো গাঢ় মল দ্বারা, উভয় অবস্থাতেই শুকে গেলেই পাক হয়ে যাবে। কিন্তু এমন মাটিতে তায়াম্মুম করা ঠিক হবে না।
২. নাপাক মাটি শুকোবার আগে তাতে ভালো করে পানি ঢেলে দিতে হবে যেন পানি বয়ে যায়। অথবা পানিঢেলে দিয়ে তা কোন কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে চুষিয়ে নিতে হবে যেন মলের কোন চিহ্ন না থাকে বা গন্ধ না থাকে। এতেও মাটি পাক হয়ে যাবে। অবশ্যি তিন বার এ রকম করা উচিত।
৩. মাটি, ঢিল, বালু, পাথর প্রভৃতি শুকে গেলে পাক হয়। যে পাথর মসৃণ নয় এবং তরল বস্তু চুষে নেয়, তা শুকে গেলে পাক হয়।
৪. মাটি থেকে উদগত ঘাস, শস্য, গাছের চারা নাপাক হওয়ার পর শুকে গেলে পাক হয়ে যায়।
৫. মাটিতে যেসব জিনিস সুদৃঢ় হয়ে থাকে, যেমন দেয়াল, স্তম্ভ, বেড়াটাটি, চৌকাঠ প্রভৃতি, তা শুকে গেলে পাক হয়ে যায়।
৬. নাপাক মাটি ওলট পালট করে দিলেও তা পাক হয়ে যায়।
৭. চুলা যদি মলদ্বার নাপাক হয়ে যায় তাহলে আগুন জ্বালিয়ে ময়লার চিহ্ন মিটিয়ে দিলে পাক হয়ে যায়।
৮. নাপাক যমীনের উপর মাটি ঢেলে দিয়ে মল এভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন মলের গন্ধ না আসে, তাহলে তা পাক হয়ে যায়। অবশ্যি তাতে তায়াম্মুম করা যাবে না।
৯. নাপাক মাটি থেকে তৈরী পাত্র যতোক্ষণ কাঁচা থাকে ততোক্ষণ নাপাক। তা যখন শুকে পাকা হয়ে যাবে তখন পাক হবে।
১০. গোবর মাখা মাটি নাপাক। তাঁর উপর কোন কিছু বিছিয়ে না নিলে নামায পড়া দুরস্ত হবে না।
নাপাক শোষণ করে নিতে পারে না
এমন জিনিস পাক করার নিয়ম
১. ধাতু নির্মিত জিনিস, যেমন- তলোয়ার, ছুরি, চাকু আয়না, সোনা, চাঁদি ও অন্যান্য ধাতুর গহনা অথবা তামা, পিতল, এলোমনিয়াম ও স্টীলের বাসন, বাটি প্রভৃতি নাপাক হয়ে গেলে মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে এথবা ভিজে কাপাড় দিয়ে ভালো করে মুছে ফেললে পাক হয়ে যাবে। এমনভাবে ঘষে মেজে নিতে হবে যা মুছে ফেলতে হবে যেন নাজাসাতের কোন চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে। অবশ্যি জিনিসগুলো যেন নকশী না হয়।
২. চিনা মাটি, কাঁচ অথবা মসৃণ পাথরের থালা, বাটি অথবা পুরাতন ব্যবহৃহ থালা, বাটি, পাতিল যা নাজাসাত চুষে নিতে পারে না, মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে অথবা ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হয়। এমনভাবে তা করতে হবে যেন নাপাকীর কোন চিহ্ন না থাকে। অবশ্য যদি তা নকশী না হয়।
৩. ধাতু নির্মিত জিসিন অথবা চিনা মাটির জিনিস তিন বার পানি দিয়ে ধুলে পাক হয়।
৪. এসব জিসিসপত্র যদি নকশী হয় যেমন অলংকার অথবা নকশী থালা বাটি, তাহলে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা ব্যতীত শুধু ঘষলে অথবা ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হবে না।
৫. ধাতু নির্মিত থালা, বাটি অথবা অন্যান্য জিনিসপত্র যেমন চাকু, ছুরি, চিমটা, বেড়ি প্রভৃতি আগুনে দিলে পাক হয়।
৬. মাটি ও পাথরের থালা বাটি আগুনে দিলে পাক হয়ে যায়।
৭. চাটাই, চৌকি, টুল-বেঞ্চ অথবা এ ধরনের কোন জিনিসের উপর ঘন বা তরল ময়লা লেগে গেলে শুধু ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে দিলে পাক হবে না। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
যেসব জিসিস নাজাসাত চুষে নেয় তা পাক করার নিয়ম
১. মুজা, জুতা অথবা চামড়ার তৈরী অন্যান্য জিনিস যদি নাপাক হয়ে যায় আর নাজাসাত যদি ঘনো হয় যেমন- গোবর, পায়খান, রক্ত, বীর্য প্রভৃতি, তাহলে নাজাসাত চেঁচে বা ঘষে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর নাজাসাত যদি তরল হয় এবং শুকে গেলে দেখা না যায়, তাহলে না ধুলে পাক হবে না। তা ধুয়ে ফেলার নিময় এই যে, প্রত্যেক বার ধুবার পর এতটা বিলম্ব করতে হবে যেন পানি টপকানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার ধুতে হবে।
২. মাটির নতুন বরতন (থালা, বাটি, বদনা) অথবা পাথরের বরতন যা পানি চুষে নেয় অথবা কাঠের বরতন যাতে নাজাসত মিশে যায় এ ধরনের থালা, বাটি অথবা ব্যবহারের জিসিসেপত্র যদি নাপাক হয়ে যায়, তাহলে তা পাক করার নিয়ম এই যে, তা তিনবার ধুতে হবে এবং প্রতিবার এতখানি শুকনো হতে হবে যেন পানি টপকানো থেমে যায়। কিন্তু প্রবাহিত পানিতে ধুতে গেলে এ শর্ত পালনের দরকার নেই। ভালো করে ধয়ে ফেলার পর পানি সব নিংড়ে গেলেই যথেষ্ট হবে।
৩. খাদ্য শস্য নাপাক হলে তিনবার ধুতে হবে এবং প্রত্যেক বার শুকাতে হবে, যদি নাজাসাত গাঢ় হয় এবং এক স্থানে জমা হয়ে থাকে তাহলে তা সরিয়ে ফেললেই হবে। যেমন শস্যের স্তুপের উপর বিড়াল পায়খানা করেছে এবং তা শুকে জমাট হয়ে আছে। তা সরিয়ে ফেললেই চলবে। বড়ো জোর অন্য শস্যের উপর যদি তার কোন লেশ আছে বলে সন্দেহ হয় তাহলে সেগুলো তিনবার ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. কাপড়ে নাজাসাত লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেক বার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধুবার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাক তাতে কোন দোষ নেই, পাক হয়ে যাবে।
৫. কাপড়ে যদি বীর্য লাগে এবং শুকে যায়, তাহলে আচড়ে তুলে ফেললে অথবা রগড়ে মর্দন করে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর যদি বীর্য শুকনো না হয় তাহলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। পেশাব করে পানি নেয়ার পর যদি বীর্য বের হয় তাহলে আবার ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি বীর্য খুব তরর হয় এবং শুকে যায় তাহলে ধুলেই পাক হবে।
৬. পানির মতো যেসব জিনিস তরল এবং যদি তৈলাক্ত না হয় তাহলে তা দিয়ে কাপড়ে লাগা নাজাসাত ধুয়ে পাক করা যায়।
৭. প্রবাহিত পানিতে কাপড় ধুবার সময় নিংড়াবার দরকার নেই। কাপড়ের একদিক থেকে অন্যদিকে পানি চলে গেলেই যথেষ্ট।
৮. কাপড় যদি এমন হয় যে, চাপ দিয়ে নিংড়াতে গেলে তা ফেটে যাবে, তাহলে তিনবার ধুয়ে দিতে হবে। তারপর হাত দিয়ে অথবা অন্য কিছু দিয়ে এমনভাবে চাপ দিতে হবে যেন পানি বেরিয়ে যায় এবং কাপড়েও না ফাটে।
৯. নাপাক তেল, ঘি বা অন্য কোন তেল যদি কাপড়ে লাগে তাহলে তিনবার ধুয়ে দিলে কাপড় পাক হয় যদিও তেলের তৈলাক্ততা কাপড়ে রয়ে যায়। তেলের সাথে মিশ্রিত নাজাসাত তিনবার ধুলে পাক হয়ে যায়।
১০. যদি কোন মৃতের চর্বি দ্বারা কাপড় নাপাক হয় তাহলে তিনবার ধুলেই যথেষ্ট হবে না। তৈলাক্ততা দূর করে ফেরতে হবে।
১১. চাটাই, বড় সতরঞ্চি, কার্পেট বা এ ধরনের কোন বিছানা-পত্র যা নিংড়ানো যায় না, তার উপর যদি নাজাসাত লাগে তাহলে তা পাক করার নিয়ম এই যে, তার উপর তিনবার পানি ঢালতে হবে। প্রত্যেকবার পানি ঢালার পর শুকাতে হবে। শুকাবার অর্থ এই যে, তার উপর কিছু রাখলে তা ভিজে উঠবে না।
১২. কোন খালি শূন্যগর্ভ পাত্র যদি নাপাক হয় এবং তা নাজাসাত চুষে নিয়ে থাকে তাহলে তা পাক করার পদ্ধতি এই যে, তা পানি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। নাজাসাতের চিহ্ন বা প্রভাব পানির মধ্যে দেখা গেলে পানি ফেলে দিয়ে আবার ভরতে হবে। যতোক্ষণ পানিতে নাজাসাতের লেশ পাওয়া যায় ততোক্ষণ এভাবে পানি ফেলতে হবে এবং নতুন পানি ভরতে হবে। এমনি করে যখন নাজাসাতের রং এবং দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে তখন পাত্র পাক হয়ে যাবে।
১৩. নাপাক রঙে রং করা কাপড় পাক করার জন্যে এতবার ধুতে হবে যেন পরিস্কার পানি আসতে থাকে। তারপর রং থাক বা না থাক কাপড় পাক হয়ে যাবে।
তরল ও তৈলাক্ত জিনিস পাক করার নিয়ম
১. নাপাক চর্বি অথবা তেল থেকে সাবান তৈরী করলে সাবান পাক হবে।
২. তেল অথবা ঘি যদি নাপাক হয় তাহলে তেল বা ঘিয়ে সমপরিমাণ পানি ঢেলে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। পানি শেষ হবার পর পুনরায় ঐ পরিমাণ পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হবে। অথবা তেল বা ঘিয়ের মধ্যে পানি দিতে হবে। পানির উপর তেল বা ঘি এসে যাবে। তখন তা উপর থেকে তুলে নিয়ে আবার পানি ঢালতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হয়ে যাবে।
৩. মধু, সিরাপ বা শরবত যদি নাপাক হয় তাহলে তাতে পানি দিয়ে জ্বল দিতে হবে। পানি সরে গেলে আবার পানি দিতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হবে।
৪. যদি নাপাক তেল মাথায় বা শরীরে মালিশ করা হয়, তাহলে শুধু তিনবার ধলেই মাথা বা শরীর পাক হবে। কোন কিছু দিয়ে তৈলক্ততা দূর করার দরকার নেই।
জমাট জিনিস পাক করার নিয়ম
১. জমাট হওয়া ঘি, চর্বি অথবা মধু যদি নাপাক হয়, তাহলে নাপাক অংশটুকু বাদ দিলেই পাক হয়ে যাবে।
২. সানা আটা অথবা শুকনো আটা নাপাক হয়ে গেলে আপাক অংশ তুলে ফেললেই বাকীটা পাক হয়ে যাবে। যেমন সানা আটার উপরে কুকুরে মুখ দিয়েছে, তাহলে সে অংশটুকু ফেলে দিলেই পাক হয়ে যাবে অথবা শুকনো আটায় যদি মুখ দেয় তাহলে তার মুখের লালা যতখানিতে লেগেছে বলে মনে হবে ততখানি আলাদা করে দিলে বাকীটুকু পাক হয়ে যাবে।
৩. সাবানে যদি কোন নাপাক লাগে তাহলে নাপাক অংশ কেটে ফেললেই বাকী অংশ পাক থাকবে।
চামড়া পাক করার নিয়ম
১. দাবাগত (পাকা) করার পর প্রত্যেক চামড়া পাক হয়ে যায়। সে চামড়া হালাল পশুর হোক অথবা হারাম পশুর। হিংস্র পশুর হোক অথবা তৃণভোজী পশুর। কিন্তু শূকরের চামড়া কোনক্রমেই পাক হবে না।
২. হালাল পশুর চামড়া যবেহ করার পরই পাক হয়, তা পাক করার জন্যে দাবাগাত করার দরকার হয় না।
৩. যদি শুকরের চর্বি অথবা অন্য কোন নাপাক জিনিস দিয়ে চামড়া পাকা করা হয় তাহলে তা তিনবার ধুয়ে ফেললেই পাক হবে।
শরীর পাক করার নিয়ম
১. শরীরে নাজাসাতে হাকিকী লাগলে তিনবার ধুলেই পাক হবে। যদি বীর্য লাগে এবং শুকে যায় তাহলে তা তুলে ফেললেই শরীর পাক হবে। বীর্য তরল হলে ধুলে পাক হবে।
২. যদি নাপাক রঙে শরীর বা চুল রাঙানো হয়, তাহলে এতটুকু ধুলে যথেষ্ট হবে যাতে পরিস্কার পানি বেরুতে থাকে। রং তুলে ফেলার দরকার করে না।
৩. শরীরে খোদাই করে যদি তার মধ্যে কোন নাপাক জিনিস ভরে দেয়া হয়, তাহলে তিনবার ধুলেই শরীর পাক হবে ঐ নাপাক জিনিস বের করে ফেলার দরকার নেই।
৪. যদি ক্ষতের মধ্যে কোন নাপাক জিনিস ঢুকিয়ে দেয়া হয় তারপর ক্ষত ভালো হয়ে গেল, তাহলে ঐ নাপাক জিনিস বের করে ফেলার দরকার নেই। শুধু ধুলেই শরীর পাক হবে। যদি হাড় ভেঙ্গে যায় তার স্থানে যদি নাপাক হাড় বসানো হয়, অথবা ক্ষতস্থান নাপাক জিনিস দিয়ে সিলাই করা হলো, অথবা ভাঙ্গা দাঁত কোন জিনিস দিয়ে জমিয়ে দেয়া হলো- এ সকল অবস্থায় সুস্থ হওয়ার পর তিনবার পানি দিয়ে ধুলেই পাক হয়ে যাবে।
৫. শরীরে নাপাক তেল অথবা অন্য কোন তৈলাক্ত কিছু মালিশ করার পর শুধু তিনবার ধুয়ে ফেললেই শরীর পাক হবে। তৈলাক্ততা দূর করার প্রয়োজন নেই।
তাহারাতের ছয়টি কার্যকর মূলনীতি
১. অযথা পরিশ্রম থেকে বাঁচার জন্যে তাহারাতের হুকুমগুলোতে লাঘবতা করা হয়।
অর্থাৎ যে হুকুমগুলো কিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত, তাদের মধ্যে কোন সময়ে যদি কোন অসাধারণ অসুবিধা হয়ে পড়ে, তাহলে শরীয়তের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং লাঘব করা হয়। যেমন ধরুন, মাইয়েত ধুয়ে দেবার সময় তার লাশ থেকে যে পানি পড়ে তা নাপাক। কিন্তু যারা লাশ ধুয়ে দেয় তাদের শরীরে যদি সে পানির ছিটা পড়ে তাহলে তা মাফ করে দেয়া হয়েছে। কারণ এর থেকে শরীর রক্ষা করা খুব কঠিন।
২. সাধারণত যেসব বিষয়ের সাথে মানুষ জড়িত হয়ে পড়ে তাও অযথা পরিশ্রমের মধ্যে শামিল। অর্থাৎ যে কাজ সাধারণত সকলেই করে থাকে এবঙ কিয়াসের দ্বারা তাকে নাপাক বলা হয়, কিন্তু তা পরিহার করা বড়ই কঠিন। এ জন্যে এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম সহজ করা হয়েছে। যেমন ধরুন বৃষ্টির সময় সাধারণত রাস্তায় পানি কাদা হয়ে যায়। তার থেকে নিজেকে বাঁচানো খুব মুশকিল। সে জন্যে কাদা পানির ছিটা কাপড়ে লাগলে তা মাফ করা হয়েছে।
৩. যে জিনিস বিশেষ প্রয়োজনে জায়েয বলা হয়েছে, তা প্রয়োজন হলেই জায়েয হবে। অর্থাৎ যে জিনিস কোন সময়ে কোন বিশেষ প্রয়োজনে জায়েয করা হয়েছে, তা শুধু সে অবস্থায় জায়েয হবে। অন্য অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে তা জায়েয হবে না।
যেমন, পশুর সাহায্যে শস্য মাড়াবার সময় শস্যের উপর পশু পেশাব করে দিলে প্রয়োজনের খাতিরে তা মাফ এবং শস্য পাক থাকবে। কিন্তু এ সময় ছাড়া অন্য কোন সময়ে শস্যের উপর পেশাব করলে তা নাপাক হবে।
৪. যে নাপাক একবার মিটে গেছে তা পুনরায় ফিরে আসবে না। অর্থাৎ শরীয়তে যে নাপাকি খতম হয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়া হয়তা আর পুনরায় হবে না। যেমন কাপড় থেকে শুকনো মণি বা বীর্য ঘষে তুলে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। তারপর সে কাপড় পানিতে পড়লে না কাপড় নাপাক হবে, না পানি। এমনি নাপাক মাটি শুকাবার পরে পাক হয়। তারপর ভিজে গেলে সে নাপাকী আর ফিরে আসে না।
৫. বিশ্বাস এবং দৃঢ় ধারণার স্থলে কুসংস্কার ও সন্দেহের কোন মূল্য দেয়া হবে না। অর্থাৎ যে বস্তু সম্পর্কে বিশ্বাস অথবা দৃঢ় ধারণা আছে যে, তা পাক, তাহলে তা পাকই হবে। শুধু সন্দেহের কারণে তা নাপাক বলা যাবে না।
৬. সাধারণ ভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হুকুম দিতে হবে। অর্থাৎ জায়েয নাজায়েয হুকুম দেবার সময় প্রচলিত নিয়ম ও অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন, মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস এই যে, সকলে খানাপিনাকে নাপাকী থেকে রক্ষা করতে চায়। অতএব অমুসলমানদের খানাপিনার বস্তুকেও পাক মনে করতে হবে। তা নাপাক বলা তখনই ঠিক হবে যখন কোন প্রকৃতি দলীল প্রমাণ দ্বারা তার নাপাক হওয়াটা জানা যাবে।
তাহারাতের হুকুমগুলোতে শরীয়তের সহজকরণ
১. নাজাসাতে গালিযা এক দিরহাম পরিমাণ মাফ। গাঢ় হলে এক দিরহাম ওযন পরিমাণ এবং তরল হলে এক দিরহাম আকারের পরিমান। অর্থাৎ এ পরিমাণে শরীর অথবা কাপড়ে নাজাসাতে গালিযা লাগলে যদি তা নিয়ে নামায আদায় করা হয় তবে নামায হয়ে যাবে, দোহরাতে হবে না। অবশ্যি ধুয়ে ফেলার সুযোগ হলে তা করা উত্তম।
২. নাজাসাতে খফিফা যদি শরীর অথবা কাপড়ে লাগে তাহলে এক চতুর্থাংশ পরিমাণ মাফ।
৩. মাইয়েত গোসল করার সময় গোসলকারীদের যে ছিটা লাগে তা মাফ।
৪. উঠানে মাড়া দেবার সময় পশু পেশাব করলে শস্য পাক থাকে।
৫. পেশাব অথবা অন্য কোন নাজাসাতের সূচনা মাথা পরিমাণ ছি’টা কাপড় বা শরীরে লাগলে তা নাপাক হবে না। যারা গৃহপালিত পশু বাড়ীতে প্রতিপালন করে তাদের শরীরে বা কাপড়ে পশুর পেশাব গোবর ইত্যাদি লাগলে তা এক দিরহাতের বেশী হলেও মাফ।
৬. বর্ষার সময যখন রাস্তাঘাটে পানি কাঁদা হয়ে যায় এবং তা থেকে বাঁচা মুশকিল হলে তার ছিটা মাফ।
৭. খাদ্যশস্যের সাথে ইঁদুরের পায়খানা মিশে গেলে এবং তা যদি এমন অল্প পরিমাণ হয় যে, তার কোন প্রভাব আটার মধ্যে অনুভব করা যায় না তাহলে সে আটা পাক। যদি কিছু পরিমাণ ইঁদুরের মল রুটি বা ভাতের সঙ্গে রান্না হয়ে যায় এবং তা যদি গলে না গিয়ে শক্ত থাকে, তাহলে সে খাদ্য পাক থাকবে এবং খাওয়া যেতে পারে।
৮. মানুষের রক্ত শোষণকারী ঐসব প্রাণী যাদের মধ্যে চলাচলকারী রক্ত নেই, যেমন মাছি, মশা, ছারপোকা ইত্যাদি। তারা যদি রক্ত পান করে এবং তাদের মারলে যদি শরীরে বা কাপড়ে রক্ত লাগে তাহলে শরীর ও কাপড় নাপাক হবে না।
৯. নাজাসাত আগুনে জ্বালালে তার ধুয়া পাক এবং ছাইও পাক। যেমন গোবর জ্বালালে তার ধুঁয়া যদি রুটি বা কোন খাদ্যে লাগে অথবা তার ছাই দিয়ে থালা বাটি মাজা হয় তা জায়েয। কোন কিছু নাপাক হবে না।
১০. নাপাক বিছানায়, চাটাইয়ে, চৌকি অথবা মাটিতে যদি কেউ শয়ন করে আর যদি ভিজা থাকে অথবা নাপাক বিছানা অথবা মাটিতে কেউ ভিজা পা দেয় অথবা নাপাক বিছানার উপর নাজাসাতের প্রভাব সুস্পষ্ট না হয় তাহলে শরীর পাক থাকবে।
১১. দুধ দোহন করার সময় যদি হাঠাৎ দু’এক টুকরা গোবর দুধে পড়ে যায়, গাইয়ের হোক অথবা বাছুরের, তাহলে সংগে সংগে তা তুলে ফেলতে হবে। এ দুধ পাক থাকবে এবং তা ব্যবহার করতে দোষ নেই।
১২. ভিজা কাপড় কোন নাপাক জায়গায় শুকাবার জন্যে দেয়া হয়েছে অথবা এমনিই রাখা হয়েছে, অথবা কেউ নাপাক চৌকির উপর বসে পড়েছে আর তার কাপড় ভিজা ছিল, তাহলে কাপড় নাপাক হবে না। কিন্তু কাপড়ে যদি নাজাসাত অনুভব করা যায় তাহলে পাক থাকবে না।
পাক নাপাকের বিভিন্ন মাসয়ালা
১. মাছ, মাছি, মশা, ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। শরীর এবং কাপড়েগ তা লাগলে নাপাক হবে না।
২. সতরঞ্চি, চাটাই বা এ ধরণের কোন বিছানার এক অংশ নাপাক এবং বাকী অংশ পাক হলে পাক অংশের উপর নামায পড়া ঠিক হবে।
৩. হাত, পা এবং চুলে মেহেদী লাগাবার পর মনে হলো যে মেহেদী নাপাক ছিল। তখন তিন বার ধুয়ে ফেললেই পাক হবে, মেহেদীর রং উঠাবার প্রয়োজন নেই।
৪. চোখে সুরমা আথবা কাজল লাগানোর পর জানা গেল যে, এ নাপাক ছিল। এখন তা মুছে ফেলা বা ধুয়ে ফেলা ওয়াজেব নয়। কিন্তু কিছু পরিমাণ যদি প্রবাহিত হয়ে বাহির বেরিয়ে আসে। তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
৫. কুকুরের লালা নাপাক কিন্তু শরীর নাপাক নয়। কুকুর যদি কারো শরীর অথবা কাপড় ছুয়ে দেয় আর যদি তার গা ভিজাও হয়, তথাপি কাপড় বা শরীর নাপাক হবে না। কিন্তু কুকুরের গায়ে নাপাকী লেগে থাকলে তখন সে ছুলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে।
৬. এমন মোটা তক্তা যে তা মাঝখানে থেকে ফাঁড়া যাবে তাতে নাজাসাত লাগলে উল্টা দিকের উপর নামায পড়া যাবে।
৭. মানুষের ঘাম পাক সে মুসলমান হোক অথবা অমুসলমান এবং কোন স্ত্রী লোক হায়েয ও নেফাসের অবস্থায় হোক না কেন তার ঘাম পাক। ঐ ব্যক্তির ঘামও পাক যার গোসলের দরকার।
৮. নাজাসাত জ্বালায়ে তার ধূয়া দিয়ে কোন কিছু রান্না করলে তা পাক হবে। নাজাসাত থেকে উথিত বাষ্পও পাক।
৯. মিশক এবং মৃগনাভি পাক।
১০. ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে যদি শরীর এবং কাপড়েগ লাগে তা পাক থাকবে।
১১. হালাল পাখীর আণ্ডা পচে গেলেও পাক থাকে। কাপড় অথবা শরীরে লাগলে তা পাক থাকবে।
১২. যদি কোন কিছু নাপাক হয়ে যায় কিন্তু কোন স্থানে নাজাসাত লেগেছে তা স্মরণ নেই, তখন সবটাই ধুয়ে ফেলা উচিত।
১৩. কুকুরের লালা যদি ধাতু নির্মিত বা মাটির বাসনপত্রে লাগে তাহলে তিনবার ভালো করে ধুলে পাক হয়ে যাবে। উত্কৃষ্ট পন্থা এই যে, একবার মাটি দিয়ে মেজে পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং দুবার শুধু পানি দিয়ে ধুতে হবে।