কাফফারার মাসায়েল
রমযানের রোযা নষ্ট হয়ে গেলে তার কাফফারা এই যে, ক্রমাগত ষাট দিন রোযা রাখতে হবে। মাঝে কোনো রোযা ছুটে গেলে আবার নতুন করে ক্রমাগত ষাট রোযা রাখতে হবে। মাঝে যে রোযা ছুটে গেছে তা হিসেবের মধ্যে গণ্য হবে না।
কোনো কারণে কেউ রোযা রাখতে না পারলে ষাটজন অভাবগ্রস্তকে দু বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে।
১. মেয়েদের জন্যে কাফফারা এ সুবিধা আছে যে, হায়েযের জন্যে মাঝে রোযা বাদ পড়লে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে না। তবে হায়েয বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে রোযা শুরু করতে হবে।
২. কাফফারা রোযা রাখার সময় যদি নেফাসের অবস্থায় হয় তাহলে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। আবার নতুন করে ষাট রোযা রাখতে হবে।
৩. কাফফরা রোযা রাখার সময় যদি রমযান মাস এসে যায় তাহলে রমযানের রোযা রাখতে হবে। তারপর পুনরায় এক সাথে ষাট রাখতে হবে।
৪. যদি একই রমযানে একাধিক রোযা নষ্ট হয় তাহলে সব নষ্ট রোযার জন্যে একই কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৫. কারো ওপর একটি কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। এ আদায় করার পূর্বে আর এক কাফফারা ওয়াজিব হলো। তাহলে দুয়ের জন্যে একই কাফফারা ওয়াজিব হবে তা এ দুটি কাফফারা দুটি রমযানের হোক না কেন। শর্ত এই যে, যৌনক্রিয়ার কারণে যদি রোযা নষ্ট না হয়ে থাকে। যৌনক্রিয়ার কারণে যতো রোযা নষ্ট হবে তার প্রত্যেকটির জন্যে আলাদা আলাদা কাফফারা ওয়াজিব হবে।
৬. ষাটজন দুঃস্থ লোকের ব্যাপারে এটা লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তারা পূর্ণ বয়স্ক হতে হবে, ছোট বালককে খানা খাওয়ালে তার বদলায় পুনরায় বয়স্ক দুঃস্থকে খাওয়াতে হবে।
৭. খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে খাদ্য শস্য দেয়াও জায়েয। অথবা তার মূল্যও দিয়ে দেয়া যায়।
৮. দুঃস্থদের খাওয়ানোর ব্যাপারে সাধারণ মানের খাদ্য হতে হবে- না খুব ভালো, না খারাপ।
৯. দুঃস্থদের খাওয়াবার ব্যাপারে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করলে কোনো ক্ষতি নেই কাফফারা হয়ে যাবে।
১০. একই ব্যক্তিকে ষাটদিন খাওয়ালে সহীহ হবে না- খাদ্য শস্য বা তার মূল্য দেয়ার ব্যাপারেও তাই।
ফিদিয়া
কেউ যদি বার্ধক্যের কারণে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে অথবা এমন কঠিন পীড়ায় ভুগছে যে, বাহ্যত সুস্থ হওয়ার আশা নেই এবং তার রোযা রাখার শক্তি নেই। এমন অবস্থায় শায়িত এ ধরনের লোকের জন্যে রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। প্রত্যেক রোযার বদলে এক একজন দুঃস্থকে ফিদিয়া দেবে। ফিদিয়ার মধ্যে খানাও খাওয়ানো যেতে পারে, পরিমাণ মতো খাদ্য শস্যও দেয়া যেতে পারে অথবা তার মূল্যও দেয়া যেতে পারে।
ফিদিয়ার পরিমাণ
একজন ফকীরকে সাদকায়ে ফিতরের পরিমাণ খাদ্য শস্য দেয়া অথবা তার মূল্য দেয়া। প্রত্যেক রোযার বদলায় দু বেলা কোনো অভাবগ্রস্তকে খানা খাওয়ানোও দুরস্ত আছে। মধ্যম ধরনের খানা খাওয়াতে হবে।
ফিদিয়ার মাসায়েল
১. ফিদিয়া আদায় করা সত্ত্বেও যদি রোগী স্বাস্থ্যবান হয়ে যায় তাহলে রোযাগুলোর কাযা ওয়াজিব হবে। যে ফিদিয়া দেয়া হয়েছে তার আলাদা সওয়াব আল্লাহ দেবেন।
২. কারো জিম্মায় কিছু কাযা রোযা আছে। মৃত্যুর সময় সে অসিয়ত করে গেল যে, তার মাল থেকে যেন ফিদিয়া দিয়ে দেয়া হয়। কাযা রোযার মোট ফিদিয়া যদি তার এ পরিত্যক্ত মালের এক তৃতীয়াংশের পরিমাণ হয় (পরিত্যক্ত মাল বলতে বুঝায় যা দাফন কাফনের ব্যয় ভার বহন এবং ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করার পর যা বাচে। তার এক তৃতীয়াংশ।) তাহলে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে। ফিদিয়ার মূল্য যদি অধিক হয় আর এক তৃতীয়াংশের মালের পরিমাণ কম হয়, তাহলে এক তৃতীয়াংশ মালের বেশী ফিদিয়া তখন জায়েয হবে যখন ওয়ারিশগণ খুশী হয়ে রাযী হবে। নাবালেগ বাচ্চাদের অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই।
৩. মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে না থাকে এবং ওয়ারিশগণ আপন ইচ্ছায় যদি ফিদিয়া আদায় করে তাহলেও দুরস্ত হবে। আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা ফিদিয়া কবুল করবেন।
৪. প্রতি ওয়াক্তের নামাযের ফিদিয়াও তাই যা রোযার ফিদিয়া। মনে রাখতে হবে দিনে পাঁচ ওয়াক্তের নামায এবং তার সাথে বেতের নামায অর্থাৎ দৈনিক ছয় নামায।
৫. মৃত্যুর সময় কেউ নামাযের জন্যে ফিদিয়া দেয়ার অসিয়ত করলে তার হুকুম রোযার ফিদিয়ার মতোই হবো।
৬. মৃত ব্যক্তি পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশ যদি নামায পড়ে বা রোযা রাখে, তাহলে তা দুরস্ত হবে না।
৭. সামান্য অসুখের জন্যে রমযানের রোযা কাযা করা অথবা এ ধারণা করা যে পরে কাযা আদায় করবে অথবা ফিদিয়া দিয়ে মনে করবে যে, রোযার হক আদায় হয়েছে এমন মনে করা ঠিক নয়।
নবী (স) বলেন, যদি কেউ বিনা ওজরে অথবা রোগের কারণ ছাড়া একটা রোযাও ছেড়ে দেবে- সারা জীবন রোযা রাখলেও তার ক্ষতি পূরণ হবে না। (তিরমিযি, আবু দাউদ)
রোযার বিভিন্ন হুকুম ও নিয়মনীতি
১. যে ব্যক্তি কোনো কারণে রোযা রাখতে পারলো না তার জন্যে এটা জরুরী যে, সে যেন প্রকাশ্যে খানাপিনা না করে এবং বাহ্যত রোযাদারের মতো হয়ে থাকে।
২. যার মধ্যে রোযা ফরয হওয়া ও সহীহ হওয়ার সকল শর্ত পাওয়া যায়, তার রোযা যদি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার জন্যে ওয়াজিব যে, সে দিনে বাকী অংশ রোযাদারের মতো হয়ে থাকবে এবং খানাপিনা ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকবে।
৩. কোনো মুসাফির যদি দুপুরের পর বাড়ী পৌঁছে অথবা কোথাও মুকীম হওয়ার এরাদা করে তাহলে দিনের বাকী অংশ রোযাদারের মতো হয়ে থাকা এবং খানাপিনা থেকে বিরত থাকা তার জন্যে মুস্তাহাব হবে। এমনিভাবে কোনো স্ত্রীলোক যদি দুপুরের পর হায়েয বা নেফাস থেকে পাক হয় তাহলে তার জন্যেও মুস্তাহাব যে, সে দিনের বাকী অংশ খানাপিনা থেকে বিরত থাকবে।
৪. যদি কেউ ইচ্ছা করে রোযা নষ্ট করে অথবা কেউ রাত আছে মনে করে সুবেহ সাদেকের পর খানা খায়, তাহলে তার জন্যে ওয়াজিব হবে সারাদিন রোযাদারের মতো কাটানো এবং খানাপিনা থেকে বিরত থাকা।
৫. দুপুরের পর যদি কোনো শিশু বালেগ হয় অথবা কেউ যদি মুসলমান হয়, তাহলে তাদের জন্যে মুস্তাহাব এই যে, তারা বাকী দিনটুকু রোযাদারের মতো কাটাবে।
৬. রোযা রাখার পর যদি কোনো মেয়ে মানুষের হায়েয শুরু হয় তাহলে রোযা নষ্ট হবে। কিন্তু তারপর তার উচিত রোযাদারের মতো খানাপিনা থেকে বিরত থাকা।