তালবিয়ার হিকমত ও ফযীলত
কাবা নির্মাণের পর আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিব হযরত ইবরাহীম (আ ) কে হুকুম করেন-
এবং মানুষকে হজ্জের জন্যে সাধারণ আহবান জানিয়ে দাও যেন তারা তোমার কাছে দূর দূরান্ত থেকে পায়ে হেটে অথবা উটের পিঠে চড়ে আসে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই য আহবান, বান্দার পক্ষ থেকে তার জবাব হচ্ছে এই তালবিয়া। বান্দাহ বলে, পরওয়ারদেগার তোমার ডাক শুনেছি এবং তুমি যে তলব করেছ তার জন্যে তামার দরবারে হাজির হয়েছি। আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারী কিছুক্ষণ পরপর এ ধ্বনি বুলন্দ করেছে। প্রকৃতপক্ষে সে বলেছে, পরওয়ারদেগার! তুমি তোমার ঘরে হাজিরা দেয়ার জন্যে ডেকেছ এবং আমরা শুধু তোমার মহব্বতে সবকিছু ছেড়েছুড়ে পাগলের মতো এসে হাজির হয়েছি। আমরা তোমার সে দয়া অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করছি। তোমার তাওহীদের স্বীকৃতি দিচ্ছি। এ তালবিয়া ধ্বনি মুমিনের শিরায় শিরায় তাওহিদের বিশ্বাস প্রতিধ্বনিত করে এবং তাকে এভাবে তৈরী করে যে, দুনিয়াতে তার জীবনের উদ্দেশ্য শুধু মাত্র এই যে, সে তাওহীদের বাণী সর্বত্র পৌছিয়ে দেবে।
নবী (স) তালবিয়ার ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যখন কোনো মুমিন বান্দাহ লাব্বায়েক ধ্বনি করে, তখন তার ডানে বামে যাকিছু আছে সবই লাব্বায়েক ধ্বনি করে তা পাথর হোক, বৃক্ষলতা হোক কিংবা মাটি হোক। এমনি কি যমীনের এক প্রান্ত থেকে তা অপর প্রান্তে পৌঁছে যায়। (তিরমিযি)
নবী (স) আরও বলেন, যে মুহররম ব্যক্তি সারাদিন লাব্বায়েক লাব্বায়েক ধ্বনি করে এবং এভাবে যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন তার সকল গুনাহ মিটে যায় এবং সে এমন পাক হয়ে যায় যেন সে সদ্য তার মায়ের পেট থেকে জন্ম লাভ করেছে।
তালবিয়ার পর দোয়া
*******আরবী*********
হে আল্লাহ আমি তোমার কাছ থেকে তোমার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রার্থী এবং জাহান্নাম থেকে তোমার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় চাই।
হযরত আম্মার বিন খুযায়মা তার পিতা থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, নবী (স) যখন ইহরাম বাধার জন্যে তালবিয়া পড়তেন, তখন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত ভিক্ষা চাইতেন এবং তার রহমতের বদৌলতে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইতেন। (মুসনাদে শায়েফী)
ইহরামের পর বায়তুল্লাহ যিয়ারতকারী যে দোয়া ইচ্ছা করতে পারে এবং যতো খুশী করতে পারে। কিন্তু প্রথমে ওপরের মসনুন অবশ্যই করবে। কারণ এ এক সার্বিক দোয়া। আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি এ তিনটি বস্তু একজন মুমিনের চরম আকাঙ্ক্ষা এবং তার সকল চেষ্টার চরিত্রের ফল।
ওয়াকুফ ও তার মাসয়ালা
১. ওয়াকুফ অর্থ দাঁড়ানো ও অবস্থান করা। হজ্জর সময় তিন স্থানে অবস্থান করতে হয় এবং তিন স্থানের হুকুম বিভিন্ন রকমের। উপরন্তু এসব স্থানে অবস্থানকালে যেসব আমল করতে হয় তার জন্যে সেখানে পৌছাতে হয়। এর নিয়ত করা এবং দাঁড়ানো জরুরী নয়। কিন্তু আহলে হাদীসের মতে নিয়ত করা শর্ত।
২. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরাফাত, যেখানে অবস্থান করতে হয়। আরাফাত এক অতি প্রকাণ্ড ময়দান। হেরেমের সীমা যেখানে শেষ সেখান থেকে আরাফাত এলাকা শুরু হয় এ ময়দান মক্কা মুকাররামা থেকে প্রায় পনের কিলোমিটার দূর। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজ্জের রুকনগুলোর বড়ো একটা রুকন। বরঞ্চ নবী (স) একবার আরাফাতের অবস্থানকেই হজ্জ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেনঃ *******আরবী********* আরাফাতের দিনে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ একই পোশাক পরিধান করে আল্লাহর দরবারে বিনয় নম্রতার মূর্ত ছবি হয়ে দাড়ায় তখন তারা যেন এ সময়ের জন্যে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে হাশরের ময়দানে পৌঁছে যায়। এ এক বিরাট ঈমান উদ্দীপক দৃশ্য। এখানে অবস্থানের ফলে হাশরের ময়দানের কথা মনে জাগ্রত হয়।
এর গুরুত্ব এই যে, যদি কোনো কারণে হাজী ৯ই যুলহজ্জের দিনে অথবা দিনগত রাতে আরাফায় পৌছাতে না পারে তাহলে তার হজ্জ হবে না। হজ্জের অন্যান্য অনুষ্ঠান যথা তাওয়াফ, সায়ী, রামি প্রভৃতি যদি বাদ পড়ে তাহলে তার ক্ষতি পূরণ সম্ভব। কিন্তু আরাফাতে অবস্থান করা না হলে তার ক্ষতিপূরণ কোনো উপায় নেই।
৩. আরাফাতে অবস্থানের সময় ৯ই যুলহজ্জ বেলা পড়ে গড়ে যাওয়ার পর (যোহর ও আসরের নামায পড়ার পর)। কিন্তু যেহেতু এ হজ্জের সবচেয়ে বড়ো রুকন এবং এর ওপরেই হজ্জ নির্ভরশীল, সে জন্যে এ সময়কে প্রশস্ত করে দিয়ে এ সুযোগ দেয়া দেয়া হয়েছে যে, যদি কেউ নয় ও দশ যুলহজ্জের মধ্যবর্তী রাত সুবেহ সাদেকের পূর্বে কোনো সময় কিছুক্ষণের জন্যে হরেও আরাফাতে পৌছা যায় তাহলে তার অবস্থান নির্ভরযোগ্য হবে এবং তার হজ্জ হয়ে যাবে। (আবদুর রহমান বিন ইয়ামার ওয়াবলী বলেন, আমি নবী (স) কে একথা বলতে শুনেছি যে, হজ্জের ওয়াকুফ হচ্ছে আরাফাত। যে ব্যক্তি মুযদালফার রাতে ফজর হওয়ার পূর্বে পৌছবে, তার হজ্জ হয়ে যাবে। তিরমিযি, আবু দাউদ)
৪. আরাফাতের অবস্থান যতো দীর্ঘ হয় ততো ভালো। এ ধারণা ও অনুভূতি সহ আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানো যেন হাশরের ময়দান। বান্দার নিজের মনে বলবে আমি সকল কিছু থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে একাকী নিজের মামলা মিটাবার জন্যে ও তার অনুগ্রহ ভিক্ষা করার জন্য তার দরবারে দাঁড়িয়েছি। এ হচ্ছে মুমিনের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। কে জানে জীবনে এ সৌভাগ্য আর হবে কিনা। এজন্যে ঈমান ও আত্মবিশ্লষণের শক্তি জাগ্রত রেখে পূর্ণ অনুভূতির সাথে এ দিন রাতের এক একটি মুহূর্তের গুরুত্ব অনুভব করতে হবে। নবী (স) এর ব্যাপারে হযরত জাবের (রা) বলেন, যোহর ও আসর নামাযের পর নবী (স) তার উটনী কাসওয়ার পিঠে সওয়ার হলেন এবং আরাফাতের ময়দানের বিশেষ অবস্থানের জায়গায় এলেন। তারপর যেদিকে পাথরের বড়বড় খন্ড পড়েছিল তার উটনীকে সে মুখী করলেন। তারপর জনতাকে সামনে রেখে কেবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে গেলেন। এভাবে যখন সূর্য অস্ত গেল তখন তিনি মুযদালফার দিকে রওয়ানা হলেন। – (মুসলিম)
৫. আরাফাতে অবস্থানের গুরুত্ব ও ফযীলত বয়ান করে নবী (স) বলেন, বছরের ৩৬০ দিনের মধ্যে এমন কোনো দিন নেই যে দিনে আল্লাহ তায়ালা আরাফাতের দিনের চেয়ে অধিক পরিমাণে বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। এ দিন আল্লাহ বান্দার অতি নিকটবর্তী হন। ফেরেশতাদের কাছে তিনি বান্দাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলেন, হে ফেরেশতাগণ! দেখছ এ বান্দারা কি চায় (মুসলিম)? হযরত আনাস বিন মালেক (রা) বলেন, নবী (স) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করলেন। সূর্য অস্ত যাবে এমন সময় তিনি হযরত বেলাল (রা) এর প্রতি ইশারায় বললেন, চুপ কর। তখন নবী (স) বললেন, হে লোক সব। এই মাত্র জিবরাঈল আমার কাছে এসে আল্লাহ তায়ালার সালাম ও এ পয়গাম পৌঁছে গেলেন আল্লাহ আরাফাতের ময়দানের সকলকে মাফ করে দিয়েছেন। হযরত ওমর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!এ পয়গাম কি আমরা সাহাবীদের জন্যে খাস না সকল উম্মতের জন্যে? নবী (স) বললেন, এ তোমাদের জন্যে এবং ঐসব লোকের জন্যেও যারা তোমাদের পরে এখানে আসবে।(আত তারগীব)
আরাফাতের ময়দানের দোয়া
আরাফাতের ময়দানের দোয়ার বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার এবং ওখানে অবস্থানকালে সর্বদা আল্লাহর দিকে একাগ্রচিত্ত হয়ে থাকতে হবে। নবী (স) বলেন, সবচেয়ে ভালো দোয়া হলো আরাফাতের দিনের দোয়া। নিম্নে কিছু মসনুন দোয়া দেয়া হলোঃ
(ক) নিম্নের দোয়া নবী (স) আরাফাতের ময়দানে খুব বেশী করে করতেনঃ
*******আরবী*********
হে আল্লাহ! তুমি এমন প্রশংসার অধিকারী যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছ এবং আমরা যতোটা করতে পারি তার চেয়ে অনেক ভালো প্রশংসার হকদার তুমি। হে আল্লাহ! তোমার জন্যেই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু। তোমার দিকেই আমাকে ফিরে যেতে হবে এবং তোমার জন্যেই আমার সবকিছু। হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাই কবর আযাব থেকে, মনে মধ্যে সৃষ্ট কুমন্ত্রণা (অসঅসা) থেকে কাজকর্মের কুফল ও বিভেদ থেকে। হে আল্লাহ! আমি তামার আশ্রয় গ্রহণ করছি ওসব বিপদ থেকে যা বাতাসে বয়ে নিয়ে আসে। (তিরমিযি)
(খ) আল হিযবুল মকবুলে এক সার্বিক দোয়া বর্ণিত হয়েছে যা করলে বরকত পাওয়া যাবে।
*******আরবী*********
আয় আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সেই কল্যাণ চাই যা তোমার নবী (স) তোমার কাছে চেয়েছেন ঐসব অমঙ্গল তেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেসব থেকে তোমার নবী (স) তোমার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। পরওয়ারদেগার! আমরা আমাদের জীবনের ওপরে বড়ো যুলুম করেছি। তুমি যদি মাফ না কর এবং আমাদের ওপর রহম না কর তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হবো। হে আমার রব! আমাকে নামায কায়েমকারী বানাও এবং আমার সন্তানদেরকেও তার তাওফীক দাও। পরওয়ারদেগার! আমার দোয়া কবুল কর। আমার মা-বাপকে মাফ করে দাও। সেদিন সকল মুসলমানকে মাফ করে দিও যেদিন হবে হিসাব কেতাবের দিন। হে আমার রব! আমার মা-বাপ উভয়ের ওপর রহম কর যেমন তারা আমার শৈশবকালে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আমার প্রতিপালন করেছে। হে রব! আমাদের মাফ করে দাও এবং আমাদের ঐসব ভাইদেরকে মাফ করে দাও যারা ঈমান আনার ব্যাপারে আমাদের অগ্রগামী ছিল, এবং আমাদের মনের মধ্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো হিংসা বিদ্বেষ হতে দিও না। যারা ঈমান এনেছে। হে আল্লাহ! তুমি বড়ো মেহেরবান ও দয়াশীল! পরওয়ারদেগার! তুমি সবকিছু শুন এবং জান, তুমি আমাদের তাওবা কবুল করো, তুমি তাওবা কবুলকারী ও দয়াশীল। গুনাহ থেকে বাচার কোনো শক্তি এবং হুকুম পালন করার সামর্থ অতীব উচ্চ ও মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কোথাও থেকে পাওয়া যেতে পারে না।
(গ) নবী (স) এ দোয়া বেশী করে করতে বলেছেনঃ
*******আরবী*********
হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।
এসব মসনুন দোয়া ছাড়াও আরও কিছু মসনুন দোয়া আছে যা পড়া যেতে পারে। তাছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতের যে যে কল্যাণ মানুষ আল্লাহর কাছে চাইতে পারে তা চাইবে এবং বারবার চাইবে। কারণ ঐ সময়ে আল্লাহ বান্দার ওপর বড়ো দয়াশীল হয়ে যান এবং তিনি তার মেহমানকে বঞ্চিত করেন না।
৭. মুযদালফার অবস্থান করা ওয়াজিব। মুযদালফার সীমানায় পায়ে হেটে প্রবেশ করা মসনুন। এখানে অবস্থানের সময় মাঝে মাঝে তালবিয়া, তাহলীল ও তাহমীদ পড়া মুস্তাহাব। এখানে একরাত্রি কাটানো মসনুন। হাদীসে আছে নবী (স) সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাত থেকে মুযদালাফা রওয়ানা হন এবং এখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশা এক সাথে পড়েন। তারপর শুয়ে পড়েন এবং ফজর পর্যন্ত বিশ্রাম করেন।
৮. যুলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে কোনো সময়ে মিনাতে পৌছা মসনুন। সূর্য উঠার পর ওখানে পৌছা যোহর ওখানে পড়া এবং ওখানেই রাত্রি যাপন করা মুস্তাহাব।
তাওয়াফ ও তার মাসায়েল
তাওয়াফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর চারদিকে চক্কর দেয়া ও প্রদক্ষিণ করা। ইসলামী পরিভাষায় তার অর্থ বায়তুল্লাহর চার ধারে ভক্তি সহকারে প্রদক্ষিণ করা ও চক্কর দেয়া।
বায়তুল্লাহর মহত্ব ও মর্যাদা
বায়তুল্লাহ ইট পাথরের নিছক একটা ঘর নয়। বরঞ্চ দুনিয়ার বুকে আল্লাহর মহত্বের বিশেষ নিদর্শন ও তার দীনের বিশেষ অনুভূত কেন্দ্র যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার আপন তত্ত্বাবধানে এমন একজন শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য পয়গাম্বর দ্বারা নির্মাণ করান যার নেতৃত্ব ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমান সমভাবে মেনে নিয়েছে। *******আরবী********* এবং স্মরণ করো সে সময়টি যখন আমরা ইবরাহীমকে এ ঘরের (কাবা) স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম। (সূরা হজ্জঃ ২৬)
কুরআন পাক একথার সাক্ষ্য দান করে যে, আল্লাহর ইবাদাতের জন্যে সর্বপ্রথম যে ঘর তৈরী করা হয় তাহলো এ বায়তুল্লাহ (কাবা ঘর)।
*******আরবী*********
নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ইবাদাতের ঘর যা মানুষের জন্যে তৈরী করা হয় তা ঐ ঘর যা মক্কায় রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বায়তুল্লাহ দীনের উৎস কেন্দ্র।কুরআনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এ তাওহীদের উৎস এবং নামাযের প্রকৃত স্থান, আর এ তাওহীদ এবং নামায গোটা দীনের মস্তিষ্ক ও সারাংশ। আকীদার দিক দিয়ে তাওহীদ দীনের আসল বুনিয়াদ এবং আমলের দিক দিয়ে নামায দীনের স্তম্ভ। বায়তুল্লাহর নির্মাণ এদু বুনিয়াদী উদ্দেশ্যের জন্যেই। এক জন্যে আল্লাহ তাকে কল্যাণ ও বরকতের এবং হেদায়াতের উৎস বলে ঘোষণা করেছেন। *******আরবী*********এতে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছে এবং বিশ্ববাসীর জন্যে তাকে হেদায়াতের উৎস বানিয়ে দেয়া হয়েছে। (সূরা আল বাকারার ১২৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
*******আরবী*********
এবং আমরা ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে অসিয়ত করেছিলাম এই বলে আমার এ ঘরকে রুকু ও সিজদাকারীদের জন্যে পাক রেখো। সূরা হজ্জের ২৬ আয়াতে বলা হয়-
*******আরবী*********
এবং স্মরণ কর যে সময়কে যখন আমি ইবরাহীম এর জন্যে এ ঘর নির্ধারিত করেছিলাম হেদায়াত সহ যে, আমার সাথে যেন কাউকে শরীক করা না হয় এবং আমার ঘরকে তাওয়াফ, কিয়াম, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্যে যেন পাক রাখা হয়।)
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা দু স্থানে তাকে *******আরবী********* (আমার ঘর) বলে উল্লেখ করেছেন এবং হযরত ইবরাহীম (আ ) তার বংশধরকে মক্কার প্রস্তরময় মরু প্রান্তরে পুনর্বাসিত করার সময় বলেন হে আল্লাহ! আমি তাদেরকে তোমার ঘরের প্রতিবেশী করে পুনর্বাসিত করেছি। (সূরা ইবরাহীমের ৩৭ আয়াতে বলা হয়েছে-
*******আরবী*********
হে আল্লাহ! পানি ও তরুলতাহীন মরুপ্রান্তরে তোমার পবিত্র ঘরের পাশে আমার সন্তানদেরকে পুনর্বাসিত করলাম।)বায়তুল্লাহর মহত্ব এর চেয়ে অধিক আর কি হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা এ ঘর যিয়ারত করে হজ্জ করাকে মুসলমানদের ওপরে তার এক অধিকার বলে উল্লেখ করেছেন। আর হজ্জ এই যে, মুমিন ইহরাম বেধে অর্থাৎ নিজেকে বায়তুল্লাহতে হাজির হওয়ার যোগ্য জানিয়ে ভক্তি ভরে তার চারিদিকে প্রদক্ষিণ করবে। তাতে লাগানো হিজরে আসওয়াদের চুমো দেবে। মুলতাযেমের সাথে দেহমন নিবিড় করে দেবে। মসজিদুল হারামে নামায পড়বে এবং আরাফাতে অবস্থান করবে।
তাওয়াফের ফযীলত
আল্লাহর ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্যে এই যে, তার তাওয়াফ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহীম (আ ) কে এর জন্যে তাকীদ করেছেন এবং এ তাকীদ কুরআনে দু স্থানে করা হয়েছে।
*******আরবী*********
*******আরবী*********
১. আমার ঘরকে তাওয়াফকারীদের জন্যে পাক রাখ। (সূরা আল বাকারাঃ ১২৫)
২. এ প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করতে হবে। (সুরা আল হাজ্জঃ ২৬)
তাওয়াফের ফযীলত বর্ণনা করে নবী (স) বলেন, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ নামাযের মতোই এক ইবাদত। পার্থক্য শুধু এই যে, তাওয়াফে তোমরা কথা বলতে পার এবং নামাযে তার অনুমতি নেই। অতএব তাওয়াফের সময় কেউ কথা বলতে চাইলে মুখ থেকে যেন ভালো কথা বের হয়। (তিরমিযি, নাসায়ী)
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা) বলেন, আমি নবী (স) কে একথা বলতে শুনেছি যে, হিজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামেনী হাত দিয়ে স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। আমি তাকে একথাও বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এ ঘর সাতবার তাওয়াফ করেছে এবং পূর্ণ অনুভূতি ও নিবিষ্ট মনে করেছে তার প্রতিদান এক টি গোলাম আযাদ করার সমান। নবী (স) কে আরও বলতে শুনেছি যে, তাওয়াফের সময় যে কদম ওঠাবে তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে একটি করে গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং একটি করে নেকী লিখে দেবেন। (তিরমিযি)