মোয়ামালাত (লেনদেন)
নিজের হাতে জীবিকা উপার্জনের ফযিলত
(আরবী******************************************)
৮৮. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন নিজের হাতে উপার্জিত জীবিকার চেয়ে উত্তম জীবিকা কেউ কখনো ভোগ করেনি আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ) স্বহস্তে উপার্জিত সম্পদই ভোগ করতেন। (বোখারী)
মুমিনদের ভিক্ষাবৃত্তি ও অপরের কাচে হাত পাতা থেকে বিরত রাখাই এ হাদীসের মুল উদ্দেশ্য। এতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেকের নিজের জীবিকা নিজেই উপার্জন করা এবং কারো ওপর বোঝা হয়ে জীবন না করাই উত্তম।
হারাম জীবিকা উপার্জন করলে দোয়া কবুল হয় না
(আরবী************************************************)
৮৯.রাসূল (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু কবুল করেন না। আর আল্লাহ তাঁর রাসুলদেরকে যে আদেশ দিয়েছেন মুমিনেদেরকেও অবিকল সেই আদেশ দিয়েছেন। তাই তিনি বলেছেন হে রসূলগণ, তোমরা পবিত্র জীবিকা ভোগ কর ও সৎকাজ কর। আল্লাহ আরো বলেছেন, হে মুমিনগণ তোমাদেরকে যে হালাল জীবিকা দিয়েছি তাই ভোগ কর। এরপর রাসূল (সা) এমন এক ব্যক্তির উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পবিত্র স্থানে পৌঁছেছে। তার সমস্ত শরীর ধুলায় আচ্ছন্ন। সে দুহাত আকাশে তুলে দোয়া করে অথচ তার খাদ্য হারাম পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম জীবিকা দ্বারাই সে লালিত পালিত হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে। (মুসলিম)
এ হাদীসে প্রথম যে কথাটা বলা হয়েছে তা হলোঃ আল্লাহ তায়ালা কেবল সেই ছদকাই কবুল করেন, যা পবিত্র ও বৈধ। আল্লাহ তায়ালার পথে হারাম সম্পদ ব্যয় করলে আল্লাহ তা গ্রহণ করেন না।
হালাল হারামের বাছবিচার
(আরবী*******************************)
৯০.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন মানব জাতি একদিন এমন এক সময়ের সম্মুখীন হবে, যখন কেউ হালাল হারামের বাছবিচার করবে না।
হারাম সম্পদ জাহান্নামের পাথেয়
(আরবী**********************************)
৯১.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ কোন বান্দা যদি হারাম সম্পদ উপার্জন করে এবং তা থেকে আল্লাহর পথে ছদকা করে তবে সে ছদকা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না। আর তা যদি নিজের ওপর ও নিজের পরিবার পরিজনের ওপর ব্যয় করে তবে তাতে বরকত থাকবে না। আর যদি সে হারাম সম্পদ রেখে মারা যায় তবে তা তার জাহান্নামের সফরে পাথেয় হবে। আল্লাহ তায়ালা অন্যায়কে অন্যায় দ্বারা প্রতিহত করেন না। অন্যায়কে ন্যায় দ্বারা প্রতিহত করেন। খারাপ কাজ খারাপ কাজকে প্রতিহত করে না। (মেশকাত)
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, ভালো কাজ বৈধ উপায়ে করা হলেই তাকে ভালো কাজ বিবেচনা করা হবে। ভালো কাজের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি উভয়ই পবিত্র হওয়া চাই। নচেৎ তা দ্বারা আখিরাতের কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করা যায় না।
চিত্র শিল্পীর আযাব অবধারিত
(আরবী*************************************)
৯২.হযরত সাঈদ বিন আবিল হাসান বলেন আমি (একদিন) ইবনে আব্বাসের নিকটে ছিলাম। সহসা এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এল। সে বললোঃ হে ইবনে আব্বাস! আমি এমন এক ব্যক্তি, যে নিজ হাতেই নিজের জীবিকা উপার্জন করি। আমি এই সব চিত্র তৈরী করে থাকি। ইবনে আব্বাস বললেনঃ আমি তোমাকে শুধু সেই কথাই বলছি, যা রাসূল (সা) এর কাছ থেকে শুনেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি কোন ছবি নির্মাণ করবে, সে যতক্ষণ তাতে প্রাণ সঞ্চার না করবে ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালা তাকে শাস্তি দেবেন। অথচ সে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটির মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল এবং সে জোরে জোরে ওপরের দিকে শ্বাস নিতে লাগলো। ইবনে আব্বাস বললেন, তুমি যদি চিত্র শিল্পের কাজ করতেই চাও তবে গাছ ও যাবতীয় নিষ্প্রাণ বস্তুর ছবি নির্মাণ কর। (বোখারী)
এই চিত্রগুলো নিজের উপার্জন সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। তাই সে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের নিকট এসে প্রশ্ন করেছিল। এই প্রশ্ন করাটা তার ঈমানদারীর আলামত। তার মনে যদি আল্লাহ ভীতি না থাকতো এবং হালাল হারাম বাছবিচারের চেতনা না থাকতো তা হলে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের কাছে যেতইনা। আখিরাতে ধরপাকড়ের ভয় যার থাকেনা, সে হালাল হারামের বাছবিচার করে না।