ব্যবসায় –বাণিজ্য
হাতের কাজ থেকে উপার্জিত অর্থ সর্বাধিক পবিত্র
(আরবী**********************************************)
৯৩. হযরত রাফে বিন খাদীজ (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন উপার্জন সর্বাধিক পবিত্র? রাসূল(সা) বললেন, মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং যে ব্যবসায় মিথ্যাচার বেঈমানী থেকে মুক্ত। (মেশকাত)
ক্রয় বিক্রয়ে উদার আচরণের তাগিদ
(আরবী************************************************)
৯৪. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষণ করুন, যে ক্রয়ে বিক্রয়ে ও নিজের দেয়া ঋণ আদায়ে নমনীয় ও উদার আচরণ করে। (বোখারী, জাবের (রা) থেকে বর্ণিত)
সৎ ব্যবসায়ীর উচ্চ মর্যাদা
(আরবী***************************************************)
৯৫. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন সত্যবাদিতা ও সততার সাথে লেনদেনকারী আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবীগণ, সিদ্দীকগণ ও শহীদগণের সাথে থাকবে। (তিরমিযি, আবু সাঈদ খুদরী(রা) থেকে বর্ণিত) ব্যবসায় দৃশ্যত একটা দুনিয়াদার সুলভ কাজ। কিন্তু এ কাজ যদি সততা ও সত্যবাদিতার সাথে করা হয়, তবে তা এবাদতে পরিণত হয়। এই সদগুণাবলীর অধিকারী ব্যবসায়ী আল্লাহ তায়ালার পুণ্যবান বান্দা নবী, সিদ্দিক ও আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণকারীদের সাহচর্য লাভ করবে।
সিদ্দিক সেই মুমিনকে বলা হয় যার জীবন সততা ও সত্যবাদিতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এবং যে আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকার সমগ্র জীবন ব্যাপী পালন করে এবং যার জীবনে কথা ও কাজে অমিল ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না।
সততা ব্যতীত ব্যবসায়ী পাপী গণ্য হবে
(আরবী*****************************************)
৯৬.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, একমাত্র তাকওয়া ও সততা অবলম্বনকারী (অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্যতা পরিহারকারী ও মানুষের হক অর্থাৎ পাওনা পুরোপুরিভাবে প্রদানকারী) এবং সত্যবাদী ব্যতীত সফল ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন পাপী ও বদকার হিসাবে উত্থিত হবে। (তিরমিযী)
বেশী কসম খাওয়ায় ব্যবসায়ে বরকত নষ্ট হয়
(আরবী*************************************)
৯৭.রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন সাবধান পণ্য বিক্রয়ে বেশী কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকে এতে (সাময়িকভাবে) ব্যবসায়ে উন্নতি হয় বটে। তবে শেষ পর্যন্ত বরকত নষ্ট হয়ে যায়। (মুসলিম, আবু কাতাদা(রা) থেকে বর্ণিত) ব্যবসায়ী যদি ক্রেতাকে তার পণ্যের ব্যাপারে কসম খেয়ে খেয়ে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, পণ্যের এই মূল্যই সঠিক এবং পণ্যটি খুবই ভালো, তা হলে সাময়িকভাবে ক্রেতা হয়তো ধোঁকা খেয়ে যাবে। কিন্তু পরে যখন প্রকৃত ব্যাপার জানতে পারবে, তখন আর ঐ দোকানের ধারে কাচেও যাবে না। ফলে তার ব্যবসায়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।
মিথ্যে শপথকারী ব্যবসায়ীর সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না
(আরবী************************************)
৯৮.রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পাক পবিত্র করে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন না। উপরন্তু তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। আবু যর বললেনঃ যে ব্যক্তি অহংকার ও দাম্ভিকতা বশত টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করে, যে ব্যক্তি কারো উপকার করে খোটা দেয় এবং যে ব্যক্তি মিথ্যে কসম খেয়ে নিজের বাণিজ্যিক পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি করে। (মুসলিম, আবু যর গিফারী(রা) থেকে বর্ণিত)
আল্লাহ তায়ালার কথা না বলা ও না তাকানোর অর্থ হলো আল্লাহ তার ওপর রুষ্ট ও অসন্তুষ্ট হবেন এবং তার সাথে স্নেহ ও মমতার সাথে আচরণ করবেন না। একজন সাধারণ মানুষও যার ওপর অসন্তুষ্ট হয় তার দিকে তাকায় না এবং তার সাথে কথাও বলে না।
পরিধেয় পোশাককে টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে রাখার বিরুদ্ধে উচ্চারিত এই হুমকি সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে, অহংকার দাম্ভিকতার বশে এটা করে। যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে পোশাক পরে বটে, তবে সে অহংকারী ও দাম্ভিক নয়, তার এ কাজও গুনাহ। কেননা রাসুল (সা) মুসলমানদেরকে টাখনুর নীচে পোশাক পরতে সর্বতোভাবে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এ ব্যক্তিও গুনাহগার যদিও তার গুনাহ অহংকারীর তুলনায় কিছুটা হালকা। অবশ্য মুমিন কোন গুনাহকেই হালকা মনে করে না। একজন অনুগত গোলামের কাছে মনিবের সামান্যতম অসন্তোষও অত্যন্ত ভয়ংকর মনে হয়।
ব্যবসায়ীদের দান ছদকার মাধ্যমে ভুলত্রুটির কাফফারা দেয়া উচিত
(আরবী***********************************************)
৯৯.হযরত কায়েস বিন আবু গারযা (রা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) এর আমলে আমাদেরকে সামাসিরা (দালাল বা ফড়িয়া) বলে আখ্যায়িত করা হতো। রাসুলুল্লাহ (সা) একদিন আমাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি আমাদেরকে আরো ভালো নামে আখ্যায়িত করলেন। তিনি বললেনঃ ওহে ব্যবসায়ীর দল, পণ্য বিক্রয়ের সময় অতিশয়োক্তি করা ও মিথ্যা কসম খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং তোমরা তোমাদের ব্যবসায়ে সদকার মিশ্রণ ঘটাও। (আবু দাউদ)
রাসুলুল্লাহ (সা) এর এ উক্তির তাৎপর্য এই যে, ব্যবসায়ে অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তেই অনেক অর্থহীন কথাবার্তা বলে ফেলে, কখনো বা মিথ্যে কসমও খেয়ে বসে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বিশেষভাবে আল্লাহর পথে দান সদকা করার নিয়ম চালু করা উচিত, যাতে তাদের ঐ সব ভুলত্রুটির কাফফারা হয়ে যায়।
মাপ ও ওজনে সতর্কতা
(আরবী************************************)
১০০. রাসূলুল্লাহ (সা) মাপ ও ওজনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা এমন দুটো কাজের দায়িত্ব পেয়েছ, যার কারণে তোমাদের পূর্বে অতিবাহিত জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। (তিরমিযি)
মজুদদারী মহাপাপ
(আরবী********************)
১০১.রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুজদদারী করে, সে পাপী। মূর আরবী শব্দ ইহতিকারের অর্থ হচ্ছে মুজদদারী।
অর্থাৎ জনগণের প্রয়োজনীয় জিনিস আটকে রাখা, বাজারে না আনা, কবে অনেক দাম বাড়বে তার অপেক্ষা করা, দাম বেড়ে যাওয়া মাত্রই পণ্য বাজারজাত করা এবং প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জন করা। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচরাচর এই মানসিকতা দেখা যায়। তাই রাসূল (সা) এই মানসিকতা প্রতিহত করেছেন। কেননা এ মানসিকতা মানুষকে নির্দয় ও পাষাণ হৃদয়ে পরিণত করে। অথচ ইসলাম মানুষের সাথে সদয় আচরণ করার শিক্ষা দেয়। কিছু সংখ্যক আলেমের মত এই যে, যে মজুদদারীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা শুধু খাদ্য শস্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য ছাড়া অন্যান্য জিনিস আটকে রাখলে ও বাজারে না আনলে তারা এই হুমকির আওতাভুক্ত হবে না। পক্ষান্তরে অন্যান্য আলেমদের মত হলো, এটা শুধু খাদ্যশস্যের জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং যে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য আওতাভুক্ত হবে। আমার মতে শেষোক্ত দলের মতটি অধিকতর যুক্তি গ্রাহ্য।
মজুদদার অভিশপ্ত
(আরবী*************************)
১০২.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যথা সময়ে বাজারে সরবরাহ করে সে আল্লাহর রহমত ও অধিকতর জীবিকা লাভের যোগ্য। আর যে ব্যক্তি মজুদদারীতে লিপ্ত, সে অভিশপ্ত। (ইবনে মাজা)
মজুদদার আল্লাহর নিকৃষ্ট বান্দা
(আরবী***************************)
১০৩.হযরত মুয়ায থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেনঃ মজুদদার হচ্ছে নিকৃষ্ট বান্দা। আল্লাহ যদি জিনিসপত্র সস্তা করে দেন তবে সে মনোকষ্টে ভোগে। আর যদি দাম বাড়ে তবে সে খুশী হয়। (মেশকাত)
পণ্যের ত্রুটি ক্রেতাকে জানাতে হবে
(আরবী*********************************)
১০৪.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কোন জিনিসের ভেতরে যে ত্রুটি রয়েছে তা জানিয়ে দেয়া ব্যতীত বিক্রি করা বৈধ নয়। আর যে ব্যক্তি উক্ত দোষত্রুটির কথা জানে তার পক্ষে তা খোলাখুলিভাবে বর্ণনা না করে নীরবতা অবলম্বন করা বৈধ নয় (মুনতাকা, ওয়াসেলা (রা) থেকে বর্ণিত)
এ হাদীসে প্রথমে বিক্রেতাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, সে যেন তার পণ্য বিক্রির সময় পণ্যের দোষ ক্রেতাকে জানিয়ে দেয়। অতঃপর বিক্রেতার নিকটে যদি এমন কেউ থাকে যে, ঐ পণ্যের দোষত্রুটির কথা জানে, তবে সেই ব্যক্তিকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, সে যেন ক্রেতাকে দোষত্রুটির কথা জানিয়ে দেয়। (বিক্রেতা যদি দোষ গোপন করে তবে ক্রেতাকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য এটি সর্বশেষ ব্যবস্থা। –অনুবাদক)
একবার রাসূল(সা) জনৈক বিক্রেতার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন সে খাদ্য শস্য বিক্রি করছিল। তিনি ঐ খাদ্য শস্যের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। ভেতরের অংশটা ভিজে ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ কি? সে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। তিনি বললেনঃ তাহলে এটিকে ওপরে রাখনি কেন? তারপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমাদেরকে (সমাজকে) ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।