পিতামাতা ও আত্নীয় স্বজনের অধিকার
বাবার চেয়ে মায়ের অধিকার তিনগুণ বেশী
(আরবী******************************************)
১৪০.এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো হে রাসূলুল্লাহ কোন ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বেশী সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী? তিনি বললেনঃ তোমার মা, সে বললো তারপর কে? তিনি বললেন তোমার মা। সে আবার বললোঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে বললোঃ তারপর কে? তিনি বললেন তোমার বাবা। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বললেনঃ তোমার মা। তারপর তোমার মা। তারপর তোমার মা। তারপর তোমার বাবা। তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়স্বজন। (বোখারী, মুসলিম)
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, মার মর্যাদা বাবার চেয়ে বেশী। কোরআন থেকেও এ কথাই জানা যায়। সূরা লোকমানে আল্লাহ বলেন আমি মানুষকে মা বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছি। এর অব্যবহিত পরেই আল্লাহ আবার বলেছেনঃ তার মা কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে নয় মাস পর্যন্ত তাকে নিজের পেটে বয়ে বেড়িয়েছেন। এ জন্যই আলেমগণ লিখেছেন যে, ভক্তিশ্রদ্ধা ও সম্মানের দিক দিয়ে বাবার এবং খেদমতের দিক দিয়ে মায়ের অধিকার সবচেয়ে বেশী।
বার্ধক্যে মা বাবার খেদমতের গুরুত্ব
(আরবী**********************************************)
১৪১.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন সেই ব্যক্তি ধিকৃত, সেই ব্যক্তি ধিকৃত, সেই ব্যক্তি ধিকৃত। জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসুলুল্লাহ কে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি তার মা বাবাকে বা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, তারপরও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে যেতে পারলো না। (মুসলিম, আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত)
মায়ের অবাধ্যতা হারাম
(আরবী*************************************************)
১৪২.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মায়ের অবাধ্য হওয়া, মেয়েদেরকে জ্যান্ত কবর দেয়া এবং লোভ-লালসা ও কৃপণতা। আর তিনি নিষ্প্রয়োজন কথা বলা, বেশী প্রশ্ন করা ও সাহায্য চাওয়া এবং সম্পদ অপচয় করাকে গর্হিত কাজ গণ্য করেছেন।
বেশী প্রশ্ন করার অর্থ হলো নিষ্প্রয়োজন প্রশ্ন করা। অজানা জিনিসকে জানতো চাওয়ার জন্য প্রশ্ন করা দোষের নয়। বনী ইসরাইল যেমন গাভী সম্পর্কে অনর্থক প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছিল। সে রকম করা ঠিক নয়। সে ধরনের প্রশ্ন সাধারণত তারই করে থাকে যারা দ্বীন অনুযায়ী কাজ করতে চায়না।
মা বাবার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি করণীয়
(আরবী********************************************)
১৪৩. আবু উসাইদ (রা) বলেন আমরা রাসূল (সা) এর কাছে বসেছিলাম। এমতাবস্থায় বনু সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর কাছে এল। সে বললো হে আল্লাহর রাসূল (সা) , মা বাপের ইন্তিকালের পরও কি তাদের কোন হক বাকী থাকে, যা আমার প্রদান করা উচিত? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন হা, তাদের জন্য দোয়া করবে, ক্ষমা চাইবে, তারা যদি (শরীয়াত সম্মতভাবে) কোন ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে, তবে তা পূরণ করবে। যাদের সাথে মা বাপের আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিল, তাদের আত্নীয়তার বন্ধন বজায় রাখবে এবং মা বাপের বন্ধুবান্ধবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। (আবু দাউদ)
দুধ মায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে
(আরবী************************************)
১৪৪.আবু তোফাইল (রা) বলেন আমি রাসূল (সা) কে জিয়াররানা নামক স্থানে গোশত বন্টনরত অবস্থায় দেখলাম। সহসা জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এল এবং রাসূল (সা) এর কাছে চলে গেল। তিনি নিজের চাদর বিছিয়ে দিলেন এবং তাতে সে বসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ মহিলা কে? লোকেরা বললো, এ মহিলা রাসূল(সা) এর দুধ মা। (আবু দাউদ)
দুধ মা মোশরেক হলেও তাকে সমাদর করতে হবে
(আরবী**********************)
১৪৫. হযরত আবু বকরের মেয়ে আসমা বলেন যে সময়ে কোরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে সন্ধি হয়েছিল (হোদায়বিয়ার সন্ধি) তখন আমার মা (দুধ মা) আমার কাছে এলেন। তিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি বরং মোশরেক ছিলেন। আমি রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলাম আমার মা আমার কাছে এসেছেন এবং তিনি চান আমি যেন তাকে কিছু দেই। আমি কি তাকে কিছু দিতে পারি? তিনি বললেন হাঁ তুমি তার সাথে মমতা-পূর্ণ আচরণ কর। (বোখারী, মুসলিম)
আত্নীয়তার প্রকৃত সমাদর
(আরবী***************)
১৪৬.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কোন আত্নীয় সম্প্রীতি-পূর্ণ আচরণ করলে তার বদলায় সম্প্রীতি-পূর্ণ আচরণকারী প্রকৃত আত্নীয় সমাদর-কারী নয়। বরং আত্নীয়তার প্রকৃত সমাদর হলো, অন্য আত্মীয়স্বজন যখন আত্নীয়সুলভ আচরণ করবে না, তখন তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা ও তাদের হক দেয়া। (বোখারী, ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত)
অর্থাৎ আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকে সদাচরণের জবাবে সদাচরণ করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সদাচরণ ও সমাদর নয়। সবচেয়ে বড় আত্নীয় তোষণকারী হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যাকে অন্যান্য আত্নীয়রা দূরে ঠেলে দেয় ও সম্পর্ক ছিন্ন করে, অথচ সে তাদের সাথে সম্পর্ক জোড়ার চেষ্টা করে। অন্য আত্নীয়রা তাকে তার প্রাপ্য হক দেয় না, অথচ সে তাদের সমস্ত হক দিতে সদা প্রস্তুত থাকে। এটা মহত্ব ও মহানুভবতার এত উঁচু একটা স্তর যেখানে আরোহণ করা সর্বোত্তম মানের তাকওয়া ও খোদাভীতি ছাড়া সম্ভব নয়।
অসদাচরণের জবাবে সদাচরণের মর্যাদা
(আরবী*************************)
১৪৭.এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার এমন কিছু আত্নীয় স্বজন রয়েছে যাদের যাবতীয় অধিকার আমি দিয়ে থাকি। কিন্তু তারা আমার অধিকার দেয় না। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে অসদাচরণ করে। আমি তাদের সাথে সহনশীলতা প্রদর্শন করি, কিন্তু তারা আমার সাথে গোয়ার্তমি করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার অবস্থা যদি সত্যই তুমি যেমন বলছ তেমন হয়ে থাকে, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে কালিমা লেপন করে চলেছ এবং যতক্ষণ তুমি এই আচরণ বজায় রাখবে, ততক্ষণ আল্লাহ তাদের মোকাবিলায় তোমাকে সাহায্য করতে থাকবেন। (মুসলিম, আবু হুরাইরা(রা) থেকে বর্ণিত)