সন্তানদের অধিকার
উত্তম শিক্ষাই উত্তম উপহার
(আরবী***********)
১৬২.রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ পিতা সন্তানকে যা কিছুই উপহার দিক, সবচেয়ে ভালো উপহার হলো তাকে উত্তম শিক্ষা দান। (মেশকাত)
সাত বছর বয়সেই নামাযের আদেশ দেয়া চাই
(আরবী********)
১৬৩.রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়স থেকেই নামায পড়ার আদেশ দাও। আর দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের সারকথা এই যে, ছেলেমেয়েদের বয়স সাত বছর হলেই তাদেরকে নামাযের নিয়ম শোকানো ও নামায পড়তে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। আর দশ বছর বয়সে যদি নামায না পড়ে তবে সেজন্য তাদেরকে মারপিটও করা যেতে পারে। তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, তোমরা নামায না পড়লে আমরা অসন্তুষ্ট হই। এই বয়সে ডেপৗচার পর শিশুদের বিছানাও পৃথক করে দেয়া উচিত। এক সাথে একই খাটে বা চৌকিতে একাধিক ছেলেমেয়েকে শুতে দেয়া উচিত নয়।
সৎ সন্তান এক মহা মূল্যবান সম্পদ
(আরবী***************************)
১৬৪. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কেবল তিন রকমের আমল রয়েছে, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। (১) সে যদি সদকায়ে জারিয়া করে যায়। (২) সে যদি এমন কোন জ্ঞান বা বিদ্যা রেখে যায়, যা দ্বারা জনগণ উপকৃত হতে থাকবে, (৩) সে যদি কোন সৎ সন্তান রেখে যায়, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকবে।
ব্যাখ্যাঃ সদকায়ে জারিয়া দ্বারা সেই সদকাকে বুঝানো হয়, যা দীর্ঘকাল চালু থাকে। যেমন, খাল বা কুয়া খনন করে দেয়া, প্রবাসীদের বাসস্থান বানিয়ে দেয়া। পথের পারে গাছ লাগিয়ে দেয়া, কোন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী পুস্তকাদি দান করা ইত্যাদি। যতদিন মৃত জনসাধারণ এসব কাজ দ্বারা উপকৃত হতে থাকবে, ততদিন ব্যক্তি এর সওয়াব পেতে থাকবে। অনুরূপভাবে, সে যদি কাউকে বিদ্যাশিক্ষা দিয়ে যায়, অথবা ধর্মীয় পুস্তকাদি লিখে রেখে যায়, তবে তার সওয়াবও সে পেতে থাকবে।
তৃতীয় যে জিনিসটির সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে, তাহলো তার নিজ সন্তান, যাকে সে প্রথম থেকেই উত্তম শিক্ষা দিয়েছে এবং সেই শিক্ষার ফলে সে খোদাভীরু ও পরহেজগার হিসাবে গড়ে উঠেছে। এই সন্তান যতদিন দুনিয়ায় বেঁচে থাকবে, ততদিন তার যাবতীয় সৎকাজের সওয়াব তার বাবা মা কবরে বসে পেতে থাকবে। উপরন্তু সে যেহেতু নেকার সন্তান, তাই তার বাবা মায়ের জন্য তো সে দোয়া করতেই থাকবে এবং তাদ্বারাও বাবা মা উপকৃত হতে থাকবে।
ইয়াতীম ও মেয়ে সন্তান লালন পালনের ফযিলত
(আরবী******************)
১৬৫.ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন এতিমকে আশ্রয় দেবে এবং নিজের খানাপিনায় শরীক করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দেবেন। অবশ্য সে যদি ক্ষমার অযোগ্য কোন গুনাহ করে থাকে তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি তিনটে মেয়ে অথবা তিনটে বোনের লাল পালন ও অভিভাবকত্ব করবে, তাদের লেখাপড়া করাবে, প্রশিক্ষণ দে;বে এবং তাদের সাথে সদয় আচরণ করবে, যাতে তারা অন্যের মুখাপেক্ষী না থাকে, তার জন্য আল্লাহ বেহেশত অবধারিত করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, যদি বোন বা মেয় মাত্র দুটোই হয়, তাহলেও? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন দুটো মেয়ের অভিভাবকত্বের জন্যও একই রকম পুরস্কার। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, লোকেরা যদি একজনের কথা জিজ্ঞেস করতো, তবে তিনি একজনের ব্যাপারেও এরূপ সুসংবাদই দিতেন। আর যে ব্যক্তির দুটো অতি প্রিয় জিনিস আল্লাহ নিয়ে নেন, তার জন্য বেহেশত অবধারিত হয়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে রাসূলুল্লাহ, দুটো অতি প্রিয় জিনিস কী? তিনি জবাব দিলেনঃ তার দুটো চোখ।
এ হাদীসের যে বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলোঃ কারো যদি শুধুই মেয়ে হয়, তবে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়, বরং তাদের যথাযথ অভিভাবকত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত। তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া উচিত এবং তাদের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে দয়া, স্নেহ ও মমতা-পূর্ণ আচরণ করা উচিত। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তাকে রাসূল (সা) বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন। অনুরুপ কোন ভাই এর কাচে যদি কয়েকটি ছোট বোন থাকে। তবে তারও উচিত ঐ বোনগুলোকে যেন গলার কাঁটা না মনে করে। বরং সাধ্যমত তাদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা উচিত। তাদেরকে ইসলামী শিক্ষা ও দ্বীনদারীর প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত এবং বিয়ে হওয়া পর্যন্ত সদয় ব্যবহার করা উচিত।
পুরুষ সন্তান ও মেয়ে সন্তান বৈষম্য করা উচিত নয়
(আরবী***************)
১৬৬.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তির মেয়ে সন্তান জন্মে এবং সে জাহেলী প্রথা অনুসারে তাকে জীবিত মাটিতে পুতে ফেলে না, তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা করে না কিংবা তার ওপর ছেলে সন্তানকে অগ্রাধিকার দেয় না, তাকে আল্লাহ বেহেশতে প্রবেশ করবেন।
ভালো ব্যবহার করলে মেয়ে সন্তান দোযখ থেকে রক্ষা করবে
(আরবী*************)
১৬৭. হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ আমার কাছে দুটো মেয়েসহ এক মহিলা সাহায্য চাইতে এল। আমার কাছে তখন একটা খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিল না। আমি সেটাই তাকে দিলাম। মহিলা সেই খেজুরটি তার দুই মেয়েকে ভাগ করে দিল এবং নিজে কিছুই খেল না। তারপর সে উঠলো ও চলে গেল। এরপর যখন রাসূল (সা) আমার কাছে এলেন তখন আমি তাকে সেই মহিলার ঘটনা জানালাম (যে সে নিজে ক্ষুধার্ত হয়েও নিজে না খেয়ে নিজের মেয়ে দুটিকে খাওয়ালো। ) রাসূল (সা) বললেন এইসব মেয়ে সন্তান দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও যে ব্যক্তি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, মেয়েগুলো তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে। অর্থাৎ আল্লাহ যাকে শুধুই মেয়ে সন্তান দেন, তার জন্য মেয়ে সন্তানও একটি মূল্যবান উপহারস্বরুপ হয়ে থাকে। আল্লাহ দেখতে চান, মা বাবা এসব মেয়ে সন্তানের সাথে কেমন আচরণ করে। মেয়ে সন্তানরা আয় উপার্জন করেও মা বাবাকে দেয় না, তাদেরকে সেবা করার জন্য তাদের কাছে আজীবন থাকে না। তথাপি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে তারা মা বাবার গুনাহ মাফ করানোর ওসীলা হয়ে যাবে।
সন্তানদেরকে উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে সাম্য জরুরী
(আরবী***************)
১৬৮. নুমান বিন বশীর (রা) বলেনঃ আমার বাবা (বশীর) আমাকে সাথে নিয়ে রাসূল (সা) এর কাছে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল, আমার কাছে একটা ক্রীতদাস ছিল, তা এই ছেলেকে দিয়েছি। রাসূল (সা) বললেন, তোমার সব ছেলেকেই কি দিয়েছ?বাবা বললেনঃ না। রাসূল (সা) বললেন তাহলে ক্রীতদাসটি ফেরত নাও। অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ রাসূল(সা) বললেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানের সাথে এরূপ আচরণ করেছ? বাবা বললেন না । রাসূল(সা) বললেন আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজের সন্তানদের সাথে সমান আচরণ কর। এরপর বাবা বাড়ী ফিরে আমাকে দেয়া ক্রীতদাসটি ফিরিয়ে নিলেন। অপর বর্ণনায় আছে, রাসূল (সা) বললেনঃ তাহলে আমাকে সাক্ষী বানিও না। আমি যালেমের সাক্ষী হব না।
আরো একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়ঃ রাসূল (সা) বললেন, তুমি কি চাও যে সকল ছেলে তোমার সাথে সমান আচরণ করুক?বাবা বললেনঃ হা। রাসূল (সা) বললেনঃ তাহলে এরূপ করো না।
এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, সন্তানদের সাথে সমান আচরণ করা উচিত। নচেৎ তা হবে যুলুম। সমান আচর না করলে তাদের মন খারাপ হবে এবং যে সন্তানরা বঞ্চিত হবে বা কম পাবে, তাদের মনে বাবার প্রতি বিদ্বেষের সৃষ্টি হবে।
প্রাক্তন স্বামীর সন্তানদেরকে দান করলেও সওয়াব হবে
(আরবী********************)
১৬৯.হযরত উম্মে সালমা(রা) বলেনঃ আমি রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যদি আবু সালমার সন্তানদেরকে দান করি, তাহলেও কি আমি সওয়াব পাব?আমি তো তাদেরকে পরমুখাপেক্ষী হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। কারণ তারা তো আমারই সন্তান। রাসূল (সা) বললেন হা, তুমি তাদের পেছনে যা কিছু ব্যয় করবে, তারও সওয়াব পাবে।
হযরত উম্মে সালমা (রা) এর প্রথম স্বামীর নাম আবু সালমা (রা) তার ইন্তিকালের পরে তিনি রাসূল (সা) এর সহধর্মিণী হন। তাই আবু সালমার ঔরসে তার যেসব সন্তান ছিল, তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন।
যে মহিলা শিশু সন্তানের লালন পালনের খাতিরে পুনরায় বিয়ে করে না
(আরবী***********)
১৭০. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন আমি ও ঝলসে যাওয়া মুখমন্ডলধারিনী কেয়ামতের দিন এই দু আঙ্গুলের মত থাকবো। (বর্ণনাকারী সাহাবী এযীদ বিন যারী নিজের লাগোয়া দুই আঙ্গুর দেখান) অর্থাৎ যে মহিলার স্বামী মারা গেছে এবং সে সম্ভ্রান্ত বংশীয় ও সুন্দরীও বটে, কিন্তু সে তার মৃত স্বামীর সন্তানদের খাতিরে পুনরায় বিয়ে করে না এবং তারা তার কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া বা মৃত্যু বরণ করা পর্যন্ত সে তাদের কাছেই থাকে। (আবু দাউদ, আওফ বিন মালেক থেকে বর্ণিত)
এ হাদীসের মর্ম এই যে, কোন মহিলা যদি বিধবা হয়, তার ছোট ছেলে মেয়ে থাকে এবং লোকেরা তাকে বিয়ে করতে আগ্রহীও হয়। কিন্তু সে তার সেই এতীম শিশুদের লালনপালনের খাতিরে পুনরায় বিয়ে করে না এবং সতীত্ব ও সম্ভ্রম রক্ষণ করে জীবন যাপন করে, তবে এ ধরনের মহিলা কেয়ামতের দিন রাসূল (সা) এর নৈকট্য লাভ করবে।
তালাকপ্রাপ্ত মেয়ের ভরণ পোষণ সর্বোত্তম সদকা
(আরবী*****************)
১৭১.রাসূলুল্লাহ (সা) সর্বোত্তম সদকা কি, তা কি আমি বলে দেব? তা হচ্ছে তোমার সেই মেয়ে, যাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তুমি ছাড়া তার আর কোন উপার্জনকারী নেই।
অর্থাৎ কদাকার বা শারীরিক খুঁত থাকার কারণে যে মেয়ের বিয়ে হয় না, কিংবা বিয়ের পর তালাকপ্রাপ্ত হয় এবং মা অথবা বাবা চাড়া তার ভরণ পোষণকারী আর কেউ নেই। তার পেছনে যা কিছু করা হবে, তা হবে আল্লাহর দৃষ্টিতে সর্বোত্তম সদকা।