এবাদত
নামায দ্বারা গোনাহ মোচন হয়
(আরবী****************************)
৪৪. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে যদি একটা নদী থাকে এবং তাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে বলতো তার শরীরে কি কিছুমাত্র ময়লা থাকতে পারে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না, তার দেহে এক বিন্দুও ময়লা থাকতে পারেনা। রাসূল (সা) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপাটাও তদ্রূপ। আল্লাহ তায়ালা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায দ্বারা গুনাহগুলো মোচন করেন। (বোখারী, মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা নবী (সা) এ সত্য স্পষ্ট করে দিলেন যে, নামায মানুষের গুনাহ মাফ হবার মাধ্যম ও উপলক্ষ হয়ে তাকে। এ বিষয়টাকে তিনি একটা সহজ বোধ্য উদাহরণ দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন। নামায দ্বারা মানুষের মনে কৃতজ্ঞতার এমন অবস্থা ও ভাবধারার সৃষ্টি হয় যে, তার ফলে সে আল্লাহর আনুগত্যের পথে ক্রমাগতভাবে ও অব্যাহতভাবে অগ্রসর হতে থাকে এবং নাফরমানী থেকে তার মনমগজ দূরে সরে যায়। এমনকি তার দ্বারা যদি কখনো কোন ভুলত্রুটি হয়েও থাকে, তবে তা সে জেনে বুঝে করেনা। ভুলত্রুটি সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই সে আপন প্রতিপালকের সামনে লুটিয়ে পড়ে ও কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চায়।
(আরবী**********************)
৪৫.(ক) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি জনৈকা অচেনা মহিলাকে চুমু খেল। অতঃপর সে রাসূল (সা) এর কাছে উপস্থিত হলো এবং তাকে তার কৃত এই গুনাহর সংবাদ জানালো। তৎক্ষণাৎ এ আয়াত নাযিল হলো এবং রাসূল (সা) তা পড়ে শোনালেন।
(আরবী*************)
অর্থাৎ দিনের দুই প্রান্ত ভাগে নামায পড় এবং রাতেরও কোন কোন অংশে।
নিশ্চয়ই সৎকাজ মন্দ কাজকে মোচন করে। এ কথা শুনে লোকটা বললোঃ এটা কি শুধু আমার জন্য নির্দিষ্ট? তিনি বললেনঃ না, আমার উম্মাতের সকলের জন্য। (বোখারী, মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা উপরোক্ত হাদীসের অধিকতর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে যে, নদীর পানির দ্বারা গোসল করলে শরীরের ময়লা ধুয়ে যায়। তেমনি নামায দ্বারা পাপ মোচন হয়। এ হাদিসটিতে যে ব্যক্তির উল্লেখ করা হয়েছে, সে একজন ঈমানদার লোক ছিল। সে স্বেচ্ছায় সচেতনভাবে ও জেনে বুঝে পাপ কার্য্য করতো না। কিন্তু মানবীয় দুর্বলতাবশত পথিমধ্যে আবেগের তাড়নায় সংযম হারিয়ে জনৈকা অচেনা মহিলাকে চুমু খেয়ে বসলো। এতে সে এত পেরেশান ও অনুতপ্ত হয়ে যে, সে রাসূল (সা) এর কাছে এসে বরে যে, আমি একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছি। আমাকে শাস্তি দেয়া হোক। রাসূল (সা) সূরা হুদের শেষ রুকুর উপরোক্ত আয়াতটি তাকে শোনালেন, যাতে আল্লাহ মুমিনদেরকে দিনের ও রাতের বিভিন্ন সময়ে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। তারপর আয়াতে বলা হয়েছে (আরবী****) সৎকাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে বিনষ্ট করে দেয় এবং মন্দ কাজগুলোর কাফফারায় পরিণত হয়। এতে লোকটি আশ্বস্ত হলো ও তার অস্থিরতা দূরীভূত হলো । এ দ্বারা অনুমিত হয় যে, রাসূল (সা) স্বীয় সাহাবীগণকে কত উঁচুমানের প্রশিক্ষণ দিতেন।
নামায দ্বারা গুনাহ মোচনের শর্ত
(আরবী**********************************)
৪৫.(খ) রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ও যথাযথভাবে ওযু করে নির্ধারিত সময়ের ভেতরে নামায আদায় করে। রুকু ও সিজদা সঠিকভাবে করে এবং নামাযের মধ্যে আল্লাহর দিকে মন ঝুঁকিয়ে রাখে। আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যে ব্যক্তি এরূপ করে না তার জন্য আল্লাহ তায়ালা এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন না। ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করে দেবেন, ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন। (আবু দাউদ)
(আরবী***********************************)
৪৬.আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) বর্ণনা করেন যে, একদিন রাসূল (সা) নামাযের আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নিজের নামাযের তত্ত্বাবধান করবে, তার জন্য কেয়ামতের দিন নামায আলো ও দলীল প্রমাণে পরিণত হবে এবং মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের নামাযগুলোর তত্ত্বাবধান করবে না, তার নামায তার জন্য আলোও হবে না। দলীল প্রমাণও হবে না এবং মুক্তির কারণ হবে না।
এ হাদীসে মোহাফাযাত শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ তদারকী, তত্ত্বাবধান, লক্ষ্য রাখা ও দেখাশুনা করা। এর মর্মার্থ এই যে, একজন নামাযীর সর্বক্ষণ লক্ষ্য রাখা কর্তব্য যে, সে সঠিকভাবে ওযু করেছে কিনা, নামাযের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামায পড়ছে কিনা, রুকু সজদা যথাযথ করছে কিনা এবং সর্বোপরি নামাযের মধ্যে তার মনের অবস্থা কেমন ছিল। মন কি আল্লাহর দিকে ছিল, না দুনিয়াবি কাজ কারবার ও চিন্তাভাবনার মধ্যে নিমজ্জিত ও ঘূর্ণায়মান ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যে ব্যক্তি এভাবে নিবিড় তদারকীর মধ্য দিয়ে নামায পড়েছে এবং তার মন নামাযে সর্বক্ষণ আল্লাহর দিকে নিবিষ্ট থেকেছে, সে জীবনের অন্যান্য কাজ কর্মেও আল্লাহর অনুগত বান্দা হবার চেষ্টা করবে এবং এরই ফলে আখিরাতে সফল হবে।
মুনাফিকের নামায
(আরবী************************************)
৪৭. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মোনাফেকের নামায এরকম হয়ে থাকে যে, সে বসে বসে সূর্যর গতিবিধি দেখতে থাকে। অবশেষে যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং মোশরেকদের সূর্য পূজার সময় সমাগত হয়। তখন সে ধড়মড় করে ওঠে এবং পড়িমরি করে চার রাকায়াতের বারটা ঠোকর মারে। (ঠিক যেমন মুরগী মাটিতে চঞ্চু দিয়ে ঠোকর মারে এবং তৎক্ষণাৎ চঞ্চু তুলে আনে) নামাযে আল্লাহকে মোটেই স্মরণ করে না। (মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা মোমেন ও মোনাফেকের নামাযের পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মোমেন সময়মত নামায পড়ে, রুকু সিজদা ঠিকমত করে এবং তার মন আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট থাকে। পক্ষান্তরে মোনাফেক যথাসময়ে নামায পড়েনা। রুকু সিজদা যথাযথভাবে করে না এবং তার মন আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট থাকে না। সাধারণভাবে সব নামাযই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফজর ও আসরের গুরুত্ব একটু বেশী। আসরের সময়টা অবহেলা ও উদাসীনতার সময়। মানুষ কায়কারবারে ব্যস্ত থাকে। রাত হওয়ার আগে কেনা বেচা শেষ করে নিতে এবং ছড়িয়ে থাকা কাজগুলোকে গুটিয়ে আনতে চায়। এ জন্য মুমিনের মন সতর্ক ও সচেতন না হলে আসরের নামায বিপন্ন তথা কাযা হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। ফজরের নামাযের গুরুত্বের কারণ এই যে, ওটা ঘুমের সময়। রাতের শেষ ভাগের ঘুম কত গভীর হয় ও কত মিষ্টি লাগে তা সবাই জানে। মানুষের অন্তরে যদি জীবন্ত ঈমান না থাকে, তাহলে অমন মজার ও প্রিয় ঘুম ছেড়ে সে আল্লাহর সে আল্লাহর স্মরণের জন্য উঠতে পারে না।
ফজর ও আসরের নামাযের জামায়াতে ফেরেশতাদের অংশগ্রহণ
(আরবী************************)
৪৮. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ রাত ও দিনের যে সব ফেরেশতা পৃথিবীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকে, তারা নিজেদের দায়িত্বের পালা বদলের জন্য ফজর ও আসরের নামাযে একত্রিত হয়। যে সকল ফেরেশতা তোমাদের মধ্যে কর্মরত ছিল, তারা যখন আপন প্রতিপালকের নিকট চলে যায়, তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাকে কি অবস্থায় রেখে এসেছে? তারা বলেঃ যখন আমরা তাদের কাছে পৌঁছেছিলাম, তখনও তাদেরকে নামাযরত অবস্থায় পেয়েছিলাম। আর যখন তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি তখনও তাদেরকে নামাযরত অবস্থায় দেখে এসেছি। (বোখারী, মুসলিম)
এ হাদীস ফজর ও আসরের গুরুত্ব খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে। ফজরের নামাযে দায়িত্ব পালন করবে, তারাও যোগদান করে। আর যে ফেরেশতারা দিনের বেলায় দায়িত্ব পালন করবে, তারাও যোগদান করে। অনুরূপভাবে আসরের নামাযেও বিদায়ী ও নবাগত উভয় শ্রেণীর ফেরেশতারা যোগদান করে। মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার আর কি হতে পারে যে, তার ফেরেশতাদের সাথে নামায আদায় করার সুযোগ পায়।
নামাযের হেফাজত ছাড়া দ্বীনের হেফাজত অসম্ভব
(আরবী***************************)
৪৯. হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তার সকল প্রাদেশিক গভর্নরদেরকে লিখেছিলেন যে, তোমাদের যাবতীয় কাজের মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নামায। যে ব্যক্তি নিজের নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং তার ওপর দৃষ্টি রাখবে, সে তার গোটা দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হবে। সে নামায ছাড়া অন্যান্য দ্বীনি কাজের রক্ষণাবেক্ষণে আরো বেশী ব্যর্থ হবে। (মেশকাত)
কেয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ায় আশ্রয় পাবে যারা
(আরবী***********************************)
৫০.রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবেনা, সেদিন আল্লাহ তায়ালা সাত ধরনের মানুষকে নিজের ছায়ায় নীচে স্থান দেবেন। (১) ন্যায় বিচারক নেতা ও শাসক (২) যে যুবকের যৌবনকাল আল্লাহর এবাদত ও হুকুম পালনে অতিবাহিত হয় (৩) যে ব্যক্তির মন মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে। একবার মসজিদ থেকে বের হলে আবার মসজিদে প্রবেশ করার সময়ের অপেক্ষায় থাকে। (৪) যে দুই ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীনের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব করে, এই প্রেরণা নিয়েই একত্রিত হয় এবং এই প্রেরণা নিয়েই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। (৫) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং অশ্রু বিসর্জন করে। (৬) যে ব্যক্তিকে কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরমা সুন্দরী মহিলা ব্যভিচারের আহবান জানায় এবং সে শুধু আল্লাহর ভয়ে সেই আহবানকে প্রত্যাখ্যান করে। (৭) যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার বাম হাতও জানেনা ডান হাত কি দান করছে। (বোখারী ও মুসলিম)
লোক দেখানো এবাদত শিরকের শামিল
(আরবী************************************)
৫১. হযরত শাদ্দাদ বিন আওস (রা) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায পড়ে সে শিরকে লিপ্ত হয়। যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে রোযা রাখে সে শিরক করে এবং যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করে সে শিরক করে। (মুসনাদে আহমাদ)
এ উক্তি দ্বারা রাসূল(সা) বলতে চান, যে কোন সৎকাজই করা হোক, তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই করা উচিত। নিয়ত শুধু এই হবে যে, এটা আমার প্রতিপালকের নির্দেশ। আমি শুধু তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই এ নির্দেশ পালন করছি। অন্যদের চোখে পুণ্যবান বলে খ্যাত হওয়া এবং অন্যদেরকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে সৎকাজ করা হবে তার কোন মূল্য নেই। মূল্য আছে শুধু সেই কাজের, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হবে।
জামায়াতে নামায পড়ার গুরুত্ব ও মর্যাদা
(আরবী*********************************)
৫২.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি শরীয়ত সম্মত ওজর ছাড়া মুসলমানদের জামায়াত থেকে পৃথক একাকী নামায পড়ে, তার নামায অপেক্ষা জামায়াতের নামায সাতাইশ গুণ বেশী মর্যাদার অধিকারী। (বোখারী, মুসলিম)
এ হাদীসে ফায শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ একাকী ও বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থানকারী। জামায়াতের নামায়ে সকল ধরনের মুসলমান অংশ গ্রহণ করে। ধনী, গরীব, দামী ও সুন্দর পোশাকধারী এবং পুরানো ছেড়া ফাটা কাপড় পরিধানকারী সবাই। যারা আভিজাত্য ও ধন ঐশ্বর্যর অহংকারে মত্ত থাকে, তারা পছন্দ করে না যে, তাদের সাথে কোন গরীব মানুষ নামাযে দাঁড়াক। তাই তারা নামায একাকী বাড়ীতে পড়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা) এই মানসিক রোগের চিকিৎসার্থে আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা জামায়াতের সাথে নামায পড়, নিজের ঘরে বা মসজিদে একা একা নামায পড়েনা।
এ কথাও জানা দরকার যে, সাধারণত জামায়াতের সাথে নামায পড়ায় শয়তানের কু প্ররোচনা সৃষ্টির অবকাশ খুবই কম থাকে। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক মজবুত হয়। এ কারনেই রাসূল (সা) এর ঘোষণা অনুসারে জামায়াতে নামাযের মর্যাদা সাতাইশ গুন বেশী। পরবর্তী ৫৩ নং হাদীসেও এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
(আরবী*****************************************)
৫৩.রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাথে যে নামায আদায় করে, তা তার একাকী পড়া নামাযের চেয়ে অধিকতর ঈমানী প্রেরণা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক। আর যে নামায সে দুজনের সাথে পড়ে, তা একজনের সাথে পড়া নামাযের চেয়ে বেশী ঈমানোদ্দীপক। এভাবে যত বেশী লোকের সাথে নামায পড়া হবে ততই তা আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে। (আবু দাউদ)
অর্থাৎ ততই আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত হবে। বিনা জামায়াতে নামায পড়লে শয়তানের প্রভাব জোরদার হয়।
(আরবী*********************************)
৫৪. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে জনপদে বা গ্রামে তিনজন মুসলমান বাস করে অথচ তারা জামায়াতের সাথে নামায পড়ে না, সেই গ্রাম বা জনপদের অধিবাসীদের ওপর শয়তান বিজয়ী হয়। সুতরাং তুমি জামায়াতের সাথে নামায পড়াকে নিজের জন্য বাধ্যতামূলক বানিয়ে নাও। মনে রেখ, বাঘ সেই ছাগলেরই ঘাড় মটকায়, যে তার রাখাল থেকে দূরে ও পাল থেকে আলাদা থাকে। এ হাদীসের মর্মার্থ এই যে, জামায়াতবদ্ধভাবে নামায আদায়কারীদের ওপর আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তাদের হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কিন্তু কোন জনপদে যদি জামায়াতবদ্ধভাবে নামায পড়ার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে আল্লাহ সেই জনপদবাসীর হেফাজত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেন। ফলে তারা শয়তানের কর্তৃত্বে চলে যায়। তারপর সে তাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা শিকার করে এবং যেদিকে ইচ্ছা চালায়। উদাহরণস্বরূপ, ছাগলের পাল যতক্ষণ রাখালের নিকটে থাকে, ততক্ষণ তার ওপর দুদিক থেকে প্রহরা থাকে। প্রথমত রাখালের প্রহরা, দ্বিতীয়ত নিজেদের একতা। এই দুটি কারণে বাঘ তাদেরকে শিকার করতে পারে না। কিন্তু কোন নির্বোধ ছাগল যদি তার রাখালে মর্জির বিরুদ্ধে পাল থেকে বেরিয়ে যায় ও পেছনে একাকী পড়ে থাকে, তবে বাঘ অতি সহজেই তাকে শিকার করে। কেননা একে তো একাকী হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। উপরন্তু রাখালের হেফাজত থেকেও নিজেকে বঞ্চিত করেছে।
বিনা ওজরে জামায়াত ত্যাগ করলে নামায কবুল হয় না।
(আরবী********)
৫৫. রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনলো এবং তার এমন কোন ওজর নেই, যা তাকে তৎক্ষণাৎ আযানের ডাকে সাড়া দিতে বাধা দেয়, সে ব্যক্তি যদি একাকী নামায পড়ে তবে সে নামায কুবল হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ ওজর দ্বারা কি বুঝানো হচ্ছে? তিনি বললেনঃ ভয় অথবা রোগ।
এখানে ভয় দ্বারা প্রাণনাশের ভয় বুঝানো হয়েছে। চাই কোন শত্রুর কারণে হোক অথবা হিংস্র প্রাণী বা সাপের কারণে হোক। আর রোগ দ্বারা এমন শারীরিক অবস্থা বুঝানো হয়েছে, যার কারণে মসজিদ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়না। প্রবল ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টি বা অস্বাভাবিক ঠাণ্ডাও ওজর হিসাবে গণ্য। তবে শীত প্রধান দেশে ঠাণ্ডা ওজর হিসেবে গণ্য নয়। বরঞ্চ গরম দেশে কখনো কখনো প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে এবং তাতে প্রাণনাশের আশংকা থাকে। এ ধরণের ঠাণ্ডা ওজর হিসাবে গণ্য। অনুরুপ ঠিক নামাযের সময়ে যদি পেশাব বা পায়খানা প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে সেটিও ওজরের অন্তর্ভুক্ত।
মসজিদে জামায়াতে নামায পড়া বিধিবদ্ধ সুন্নাত
(আরবী*************************************)
৫৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেনঃ (রাসুল (সা) এর যুগে আমাদের অবস্থা ছিল এ রকম যে, মোনাফেক হিসাবে সুপরিচিত অথবা রোগী চাড়া আমাদের আর কেউ জামায়াতবদ্ধ নামায থেকে পিছিয়ে থাকতো না। এমনকি রোগীও দুজন লোকের সাহায্যে মসজিদে পৌছাতো এবং জামায়াতে অংশ গ্রহণ করতো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আরো বলেন, রাসূল(সা) আমাদেরকে সুন্নাতুল হুদা (বিধিবদ্ধ সুন্নাত) শিক্ষা দিয়েছেন এবং যে মসজিদে আযান দেয়া হয়, সে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়াও সুন্নাতুল হুদার অন্তর্ভুক্ত। (সুন্নাতুল হুদা বা বিধিবদ্ধ সুন্নাত বলা হয় আইনগত মর্যাদার অধিকারী সুন্নাতকে। যা করার জন্য উম্মাতকে আদেশ দেয়া হয়েছে। ) অপর এক বর্ণনা মতে তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন অনুগত ও ফরমাবরদার বান্দা হিসাবে আল্লাহর সাথে মিলিত হতে চায়, সে যেন এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায সেই মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করে, যেখান থেকে আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নবীকে বিধিবদ্ধ সুন্নাত শিখিয়েছেন এবং এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায বিধিবদ্ধ সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা যদি মোনাফেকদের মত (মসজিদের পরিবর্তে নিজ নিজ বাড়ীতে নামায পড়, তাহলে তোমাদের নবীর সুন্নাত পরিত্যাগ করবে। আর নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে তোমরা বিপথগামী হয়ে যাবে। (মুসলিম)