ইমামতি
ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব
(আরবী****************************)
৫৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ ইমাম জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদেরকে সৎ বানাও এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা কর। (আবু দাউদ)
ইমামকে যামিন বা যিম্মাদার বলার তাৎপর্য এই যে, ইমাম জনগণের নামাযের জন্য দায়ী। সে যদি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ না হয়, তাহলে সবার নামায নষ্ট করে দেবে। এ জন্য রাসূল (সা) দোয়া করেন যে, হে আল্লাহ, ইমামদেরকে নেকার ও সৎ বানাও। মুয়াজ্জিনের আমানতদার হবার অর্থ হলো, লোকেরা তাদের নামাযের বিষয়টা তার হাতে সমর্পণ করেছে। তার দায়িত্ব সময় মত আযান দেয়া, যাতে লোকেরা আযান শুনে নামাযের প্রস্তুতি নিতে পারে এবং ধীরে সুস্থে জামায়াতে শরীক হতে পারে। সময় মত আযান দেয়া না হলে আশংকা থাকে যে, বহু লোক জামায়াত থেকে হয় বঞ্চিতই হয়ে যাবে, নতুবা দুই এক রাকায়াত ছুটে যাবে। এ হাদীসে একদিকে তো ইমাম ও মুয়াজ্জিনদেরকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলছে। অপরদিকে মুসলমানদেরকে আদেশ দেয়া হচ্ছে যেন সৎ ও পরহেজগার লোক দেখে ইমাম নিয়োগ করে এবং দায়িত্ব সচেতন লোক দেখে মুয়াজ্জিন নিয়োগ করে।
জামায়াতবদ্ধ নামায সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত
(আরবী*****************************************)
৫৮.রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্য থেকে কেউ ইমামতি করে তখন (পরিস্থিতি ও নামাযীদের অবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে) সে যেন হালকা নামায পড়ায়। কেননা তোমাদের পেছনে দুর্বল, রোগী ও বৃদ্ধ নামাযী থাকতে পারে। অবশ্য তোমাদের কেউ যখন একাকী নামায পড়ে তখন যত লম্বা নামায পড়তে চায় পড়তে পারে। (বোখারী, মুসলিম, আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত)
(আরবী******************************************)
৫৯.হযরত আবু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট এল। সে বললোঃ অমুক ইমাম ফজরের নামায অত্যন্ত লম্বা করে পড়ায়। তার কারণে আমি ফজরের জামায়াতে দেরীতে পৌঁছাই। (আবু মাসউদ বলেন) আমি বক্তৃতা ও উপদেশ দানরত অবস্থায় রাসূল (সা) কে এত রাগান্বিত হতে আর কখনো দেখিনি যতটা সেদিন দেখলাম। তিনি বললেনঃ হে জনতা, তোমাদের মধ্যে কিছু ইমাম এমন আছে যারা আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর এবাদতের প্রতি বিরক্ত ও তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। সাবধান!তোমাদের যে করে ইমামতি করবে, সে যেন নামাযকে সংক্ষিপ্ত করে। কেননা তার পেছনে বৃদ্ধও থাকতে পারে, বালকও থাকতে পারে এবং কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া আছে এমন লোকও থাকতে পারে। (বোখারী, মুসলিম)
নামায সংক্ষিপ্ত করার অর্থ এটা নয় যে, তাড়াহুড়ো করে ত্রুটিপূর্ণ নামায পড়িয়ে দিতে হবে এবং চার রাকায়াত নামায দু এক মিনিটে সেরে দেবে। এ ধরনের নামায ইসলাম সম্মত নামায নয়। তবে নামাযীদের সময় ও অবস্থার দাবী বিবেচনায় আনা দরকার।
ইমামের কিরাত সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়
(আরবী*******************************************)
৬০.হযরত জাবের(রা) বর্ণনা করেন যে, হযরত মুয়ায বিন জাবাল রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে (মসজিদে নববীতে নফলের নিয়তে) নামায পড়তেন। এরপরে বাড়ীতে যেয়ে পুনরায় নিজ গোত্রের লোকদের জামায়াতে ইমামতি করতেন। একদিন এশার নামায রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাথে পড়লেন। তারপর নিজ গোত্রের জামায়াতে গিয়ে পুনরায় ইমামতি করলেন এবং সূরা বাকারা পড়া শুরু করলেন। এক ব্যক্তি সালাম ফিরিয়ে নামায ছেড়ে দিল এবং পৃথকভাবে নিজের নামায পড়ে বাড়ী চলে গেল। অন্যান্য নামাযীরা (নামায শেষে ) তাকে বললোঃ তুমি তো মোনাফেক সুলভ কাজ করেছ। সে বললোঃ না, আমি মোনাফেক সুলভ কাজ করিনি। আল্লাহর কসম, আমি রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে যাবো(এবং মুয়াযের লম্বা কিরাতের কথা জানাবো) সে গিয়ে বললোঃ হে রাসুলুল্লাহ, আমরা উপ দিয়ে পানি আনাই(পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মানুষের ক্ষেতখামার ও বাগানের পানি সিঞ্চনের কাজ করি। ) দিনভর এ কাজ করে শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে যাই। আর মুয়ায এশার নামায একবার আপনার সাথে পড়ে গিয়েছিল। তারপর আবার আমাদের ওখানে গিয়ে সূরা বাকারা দিয়ে পড়া শুরু করেছিল। (সারা দিনের কর্মক্লান্ত ও অবসন্ন শরীর নিয়ে এত দীর্ঘ সময় আমরা কিভাবে তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি?) একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) মুয়াযকে লক্ষ্য করে বললেন হে মুয়ায, তুমি কি মানুষকে বিপথগামী করতে চাও? তুমি নামাযে ওয়াশ শামছি ওয়া দুহাহা, ওয়াল লাইলি ইযা ইয়াগশা এবং ছাব্বি হিসমা রব্বিকাল আলা পড়বে। (বোখারী, মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিয়ম ছিল এশার নামায রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে পড়তেন। হযরত মুয়ায রাসূল (সা) এর সাথে নফলের নিয়তে শরীক হতেন। তারপর বাড়ীতে যেতে খানিকটা সময় লাগতো। তারপর আবার সূরা বাকারার মত লম্বা সূরা দিয়ে ইমামতি করতেন। এতে প্রচুর সময় ব্যয় হতো। ওদিকে লোকেরা সারাদিন ক্ষেত খামারে ও বাগানে কাজ করতে করতে শ্রান্ত, ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়তো। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এবং এই শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে এ রকমের লম্বা কিরাত দিয়ে নামায পড়ালে লোকদের নামায ছেড়ে চলে যাওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। এ কারণেই রাসূল (সা) হযরত মুয়াযকে সতর্ক করলেন। হযরত মুয়াযের এই কাজটার ওসিলায় মুসলিম জাতির ইমামরা যে এত মূল্যবান একটি শিক্ষা লাভ করলেন। সে জন্য আল্লাহ তায়ালা হযরত মুয়াযের ওপর সন্তুষ্ট হোন ও রহমত বর্ষণ করুন।