রাহে আমল – ২য় খন্ড
আল্লামা জলিল আহসান নদভি
অনুবাদঃ হাফেয আকরাম ফারুক
এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের অধিকার অধ্যায়
জান ও মালের পবিত্রতাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী***) ফি হিজ্জাতিল- বিদায় হজ্জ। (আরবী***) হাররামা- পবিত্র ঘোষণা করেছেন। (আরবী****) দিমায়াকুম – তোমাদের রক্ত। (আরবী****) আমওয়ালাকুম- তোমাদের সম্পদ। (আরবী****) হাল বাল্লাগতু- আমি কি পৌছে দিয়েছি? (আরবী***) আল্লাহুম্মা- হে আল্লাহ!(আরবী***) ইশহাদ – তুমি সাক্ষী থাকো। (আরবী****) উনযুরু – তামরা দেখো। (আরবী****) লাতারজিউ- তোমরা ফিরে যেও না। (আরবী***) রিকাবুন – ঘাড়, মাথা।
২০৯।রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিদায় হজ্জের ভাষণে উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ মনে রেখো, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের ইযযাতকে আল্লাহ এমন পবিত্র ঘোষণা করেচেন যেমন পবিত্র আজকের দিন, এ শহর এবং এ মাস। শোন! আমি কি আল্লাহর বাণী তোমাদের নিকট পৌছে দিয়েছি? তারা বললোঃ হাঁ, আপনি পৌছে দিয়েছেন্ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী, আমি তোমার দ্বীনকে উম্মতের নিকট পৌছে দিয়েছি একথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করার পর বললেন, দেখো! তোমরা আমারপর কাফের হয়ে যয়ো না মুসলিম হয়েও তোমরা একে অপরের মাথা কেটো না।– বুখারী
মুসলমানের কল্যান কামনা করাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী***) বাইয়াতু- আমি বাইয়াত গ্রহণ করেছি। (আরবী****) ইকামিসলাতি- নামায কায়িম করতে। (আরবী***) ইতায়ীযযাকাতি যাকাত আদায় করতে। (আরবী***) আননুছহু- সদুপদেশ। (আরবী***) লিকুল্লী মুসলীমিন – প্রত্যেক মুসলমানের জন্য।
২১০.জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে সালাত কায়েম করার, যাকাত দেবার ও প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে কল্যাণ কামনা করার শর্তে বায়আত গ্রহণ করিয়াছি।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ বায়আত শব্দের অর্থ হলো বিক্রি করে দেয়া। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যখন কারো হাতে বায়আত গ্রহণ করে তখন প্রকৃতপক্ষে সে এ ওয়াদাই করে যে, সারা জীবন আমি আমার ওয়াদা পালন করে চলবো। জারীর ইবনে আবদুল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের নিকট তিনটি জিনিসের ওয়াদা করেছিলেন। প্রথম যাবতীয় শর্তসহকারে নামায কায়েম করবে। দ্বিতীয় মালের যাকাত দেবে । তৃতীয় কোন মুসলমান ভাইয়ের জন্যে ক্ষতিকর হবে এমন কিছু করবে না। বরং তাদের সাথে প্রেম, প্রীতি ও হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করবে। উম্মতে মুহাম্মদীর প্রত্যেকটি সদস্য একে অপরের সহিত কিরুপ ব্যবহার করবে তাঁর সুস্পষ্ট নির্দেশ এ হাদিসে রয়েছে।
মুসলমানদের পারস্পিরিক সম্পর্কঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) তারাহুমিহিম – তাদের সহযোগিতায় ও দয়ায়্ (আরবী***) তাওয়াদ্দিহিম – তাদের হৃদয় নিংড়ানো সদ্ব্যবহার। (আরবী**) তাআতুফিহিম- তাদের হৃদ্যতাপূর্ণ আচার আচরনে।(আরবী****) ইশতাকা – পীড়িত হয়্ (আরবী***) তাদাআ- সাড়া দেয়। (আরবী**) বিসসাহরি- বিনিদ্রা। (আরবী***) আলহুমা- জ্বর।
২১১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মুমিনদেরকে পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা এবং হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখতে পাবে।দেহেরেোন অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তাহলে অপর অঙ্গগুলোও জ্বর এবং নিদ্রাহীনতা সহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ দেহের দৃষ্টান্ত দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝাতে চেয়েছেন, মুসলিম জাতির এটি একটি স্বতন্ত্র ও স্থায়ী গুণ।দুনিয়ার যে কোন স্থানের ও যে কোন বর্ণের মুসলমানের মধ্যেই এ গুণটি স্বাভাবিকভাবেই বিরাজমান। সর্বত্রই মুসলমানেরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও একাত্নবোধ প্রকাশ করে থাকে।
ভ্রাতৃত্ব একটি মজবুত প্রাসাদঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলমুমিনু লিলমুমিনি এক মুসলমান অপর মুসলমানের জন্য।(আরবী) কালবুনইয়ানি- অট্রালিকার মত (আরবী) ইয়াশুদ্দু- গ্রথিত, গ্রন্থিত। (আরবী) বাদ্বাহু বা দ্বান – একে অপরের। (আরবী) সুস্মা- অতঃপর।(আরবী) শাব্বাকা তিনি প্রবেশ করালেন। (আরবী) আসাবিআহু- তার আঙ্গুলগুলো।
২১২।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের জন্যে অট্রালিকা স্বরুপ। যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তি যুগিয়ে থাকে। অথঃপর তিনি এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে মুসলিম সমাজকে অট্রালিকার সাথে তুলনা করা হযেছে। অট্রালিকার ইটগুলো যেমন পরস্পরের সাথে ঘনিষ্টভাবে মিলেমিশে থাকে। ঠিক তেমনি মুসলমানদেরকেও পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকা উচিত। দেয়ালেরর প্রত্যেকটি েইট েযমন অপর ইটকে শক্তিশালী করে এবং আশ্রয় প্রদান করে তাকে। ঠিক সেভাবে এক মুমিন অন্য মুমিন ভাইকে আশ্রয় প্রদান এবং সাহায্য সহযোগিতা করা উচিত। বিচ্ছিন্ন কতগুলি ইট যেমন একত্রিত হয়ে এক মজবুত ইমারাতে পরিণত হয়। তেমনি মুসলমানদের শক্তি নিহিত রয়েছে পারস্পরিক গভীর সম্পর্কও একাত্নবোধের মধ্যে। যদি মুসলমানগণ বিচ্ছিন্ন ইটের ন্যায় বিক্ষিপ্ত থাকে তাহলে বাতাসের যে কোন ঝাপটা তাকে উড়িয়ে নিতে এবং পানির সামান্য স্রোত তাকে কচুরি পানার ন্যায় ভাসিয়ে নিতে সক্ষম হবে। অবশেষে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম তার এক হাতের আঙ্গুলগুলো অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে মুসলমানদের পারস্পরিক মিলন ও ঐক্যের এক বাস্তব চিত্র দেখিয়ে দিলেন।
মুমিনের আয়নাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মিরআতুল মুমিনি- মুসলমানের আয়না।(আরবী) আখুল মুমিনি মুমিনের ভাই। (আরবী) ইয়কুফফু – রক্ষা করে। (আরবী) দ্বাইআতাহু- তার ধ্বংস। (আরবী) ইয়াহুতুহু তাকে ঘিরে রাখে। (আরবী) মিও ওয়ারায়িহি- তার পিছন থেকে।
২১৩।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক মুমিন অন্য মুমিনের আয়না এবং এক মুমিন অন্য মুমিনের ভাই। সে তার ভাইকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করে এবং পেচন থেকে তাকে হিফাযত করে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়না। অর্থাৎ এক মুমিন অপর মুমিনের বিপদ আপদকে নিজের বিপদ আপদ বলে মনে করে। যেভাবে সে নিজের কষ্টে ছটফট করে তেমনি সে অপর মুমিনের কষ্টেও ছটফট করবে এবং তা দূর করার জন্যে অস্থির হয়ে উঠবে। অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের এক ভাই অন্য ভাইয়ের আয়না। অতেএব এক ভাই অন্য ভাইয়ের কষ্ট দেখলে তা দূরীভূত করবে। এভাবে তার মধ্যে কোন দুর্বলতা দেখলে তাকে নিজের দুর্বলতা মনে করে দূর করার চেষ্টা করবে।
অত্যাচারী বা অত্যাচারিত উভয় অবস্থায় মুসলমান ভাইয়ের সাহায্য করাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) উনসুর সাহায্য করো। (আরবী) আখাকা – তোমার ভাইকে। (আরবী) যালিমান অত্যাচারী। (আরবী) মাযলুমান – অত্যাচারিত।(আরবী) তামনাউহু তাকে বিরত রাখো। (আরবী) ফাযালিকা- এইটাই (আরবী) নাসরুকা – তোমার সাহায্য (আরবী) ইয়্যাহু – বিশেষ করে।
২১৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি তোমার ভাইয়ের সাহায্য করো। চাই সে যালিম হোক বা মযলুম এক ব্যক্তি জিঙ্গেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল।মযলুম হলে আমি তাকে সাহায্য করবো। কিন্তু যালিম হলে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন তাকে অত্যাচার করা হতে বিরত রাখবে। আর এটাই হলো তাকে সাহায্য করা।– বুখারী, মুসলিম
মুসলমানের কষ্ট দূর করা এবং দোষ গোপন রাখাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা ইয়াযলিমুহু – সে তার প্রতি যুলুম করবে না। (আরবী)লা ইউসলিমুহু তাকে (শত্র্রুর হাতে) সোপর্দ করবে না। (আরবী) হাজাতুহু তার প্রয়োজন। (আরবী) ফাররাজা – সে বিপদমুক্ত করবে (আরবী) কুরুবাতিন – বিপদসমূহ। (আরবী) সাতারা সে গোপন করে।
২১৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি নিজের ভাইয়ে প্রয়োজন মিটাবে। আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে বিপদমুক্ত করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বিপদমুক্ত করবেন যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাকবেন।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ হাদীসের শেষাংশের মর্মকথা হলো, যদি কোন নেক্কার মুসলমান ভুলবশত কোন ত্রুটি করে বসে তাহলে তাকে অন্যের চোখে হেয় করার উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করে বেড়াবে না। বরং তা গোপন রাখবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রকাশ্যভাবে আল্লাহর আইনসমূহ লংঘন এবং তাঁর নাফরমানী করতে থাকে সে ক্ষেত্রে তার দোষ গোপন রাখার স্থলে তা প্রকাশ করে দেয়ার নির্দেশই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম দিয়েছেন।
মুসলমান ভাইয়ের জন্য পছন্দ অপছন্দের মাপকাঠিঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) নাফসী- আমার জীবন। (আরবী) লা ইউমিনু- মুমিন হতে পারবে না। (আরবী) আবদুন – কোন বান্দাহ। (আরবী) ইউহিব্বু- সে পছন্দ করবে।(আরবী) লিনাফসিহি- নিজের জন্য।
২১৬।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার জীবন তার শপথ করে বলছিঃ কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করবে নিজের ভাইয়ের জন্যেও তা পছন্দ করবে। – বুখারী, মুসলিম
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা ইয়াহিলু হালাল নয়, ঠিক নয়। (আরবী) বা আ – সে বিক্রি করলো।(আরবী) আখীহি তার ভাই।(আরবী) আইবুন দোষ ত্রুটি।(আরবী) বাইয়্যানাহু লাহু – তার কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে।
২১৭।উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলিম তার বাইয়ের নিকট্ কিছু বিক্রি করার সময় তাতে যদি কোন দোষ ত্রুটি থাকে তা যেনো স্পষ্টভাবে বলে দেয়। কেনোনা দোষ ত্রুটি গোপন রাখা কোন মুসলিম ব্যবসায়ীর জন্য হালাল নয়।– ইবনে মাজা।
আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসা পোষণকারীদের মর্যাদাঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থ ঃ (আরবী) ইবাদিল্লাহি- আল্লাহর বান্দাগন। (আরবী) ইয়াগবিতুহুম- তাদের জন্য আশ্চর্য হবে। (আরবী) বিমাকানিহিম- তাদের মর্যাদার জন্য। (আরবী) তুখবিরনা আমাদেরকে জানাও। (আরবী) মান হুম – তারা কারা? (আরবী) তাহাব্বু – একে অপরকে ভালবাসতো।(আরবী) বিরাওহিল্লাহি- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। (আরবী) উজুহাহুম- তাদের চেহারা। (আরবী) নূরুন- আলো। (আরবী) লা ইয়াখাফূনা তারা ভীত হবে না। (আরবী) লা ইয়াহযানূনা তারা চিন্তিত হবে না।
২১৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা নবীও নন এবং শহীদও নন। অথচ আম্বিয়া ও শহীদগণ কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা দেখে ঈর্ষা বোধ করবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কারা?জবাবে তিনি বললেন, এরা সেই সব ব্যক্তি যারা পরস্পরকে কেবল আল্লাহর দ্বীনের ভিত্তিতেই ভালোবাসতো। তাদের মধ্যে আত্নীয়তার কোন বন্ধন কিংবা ধন সম্পদ আদান প্রদানের কোন সম্পর্ক ছিলো না। আল্লাহর কসম। এদের চেহারা হবে জৌতির্ময়। নিঃসন্দেহে তাঁরা নূর দ্বারাই পরিবেষ্টিতথাকবে। মানুষ যখন থাকবে ভীত বিহর্বল তখন এরা থাকবে শংকাহীন। মানুষ যখন থাকবে চিন্তায় নিমগ্ন তখন এরা থাকবে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ (আরবী***)
মনে রেখো, আল্লাহর বন্ধুগণ নিশ্চয়ই ভীত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। – সূরা ইউনুস -৬২।-আবু দাউদ, শরহে সুন্নাহ
ব্যাখ্যাঃ মূল হাদীসে (আরবী) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ অধিক পরিমাণে খুশী হওয়া। এ শব্দটি হিংসা দ্বেষ অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।কিন্তু এখানে প্রথমোক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।হাদীসটির অর্থ হলো, কোন উস্তাদ যেমন নিজের ছাত্রের পদোন্নতি ও উচ্চমর্যাদা লাভের দরুন আনন্দিত হন। গর্ববোধ করে থাকেন। ঠিক একইভাবে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী নবী ও শহীদগণ এদের পারস্পরিক ভালোবাসার ভিত্তি ছিল একমাত্র আল্লাহর দ্বীন। রক্তের সম্পর্ক এবং ধন সম্পদের লেনদেন তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ককে মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ করেনি। বরং ইসলাম এবং ইসলামী জীবন গঠনের উদগ্র বাসনাই তাঁদের পরস্পরকে নিঃস্বার্থ বন্ধুতে পরিণত করেছে।এসব লোকদেরকে ইহকালের সফলতা ও সাহয্যের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। পরকালের জন্য দেয়া হয়েছে স্থায়ী সুখ ও নেয়ামতের পূর্ণ আশ্বাস। সূরা ইউনুসের উল্রেখিত আয়াতটি রাসূলুল্রাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহওয়াসাল্লামের উপর ঈমান অনয়নকারী দ্বীনের পথে উৎপীড়িত ব্যক্তি, ঈমানী জীবন যাপনের প্রচেষ্টাকারী এবং জাহেলী জীবনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংঘাত সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেছেনঃ(আরবী****) তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ, যেমন হইকালে তেমন পরকালেও।
সম্পর্ক ছিন্নের মেয়াদঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আই ইয়াহজুরা- সম্পর্ক ছিন্ন করা। (আরবী) সম্পর্ক ছিন্ন করা। (আরবী) ফাওকা- উপরে। (আরবী) সালাসি লায়ালিন তিন রাত (আরবী) ইয়ালতাকিয়ানি তাদের দুজনের দেখা হয়। (আরবী) ফাইয়ারিযু- ফিরে যায়। (আরবী) খাইরুহুমা – তাদের দুজনের মধ্যে উত্তম।
২১৯।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য তার বাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখা জায়েয নয় যে, রাস্তায় দেখা হয়ে গেলেও একজন অপরজন হতে মুখ ফিরিয়ে রাখবে। আর দুজনের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যে আগে সালাম দেবে।– বুখারী, মুসলিম।
ব্যাখ্যাঃ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজন মুসলমানের মধ্যে মনোমালিন্যের সূত্রপাত হওয়া এমন কি কথার্তা পর্যন্ত বন্ধ হওয়াও স্বাভাবিক। কিন্তু তিন দিনের অধিককাল এ অবস্থায় থাকা কোন মুসলমানের জন্য উচিত নয়। সাধারণত দুব্যক্তির মধ্যে এরুপ তিক্ততার সৃষ্টি হলে, উভয়ের মধ্যেই যদি কিছু আল্রাহভীতি থেকে থাকে তাহলে তিন দিন অতিবাহিত হবার পূর্বেই তাদের মধ্যে মিলনের আগ্রহ সৃস্টি হতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত দুজনের একজন সালাম জানালেই এ শয়তানী তিক্ততার অবসান ঘটকেব। এ জন্যে সর্বপ্রথম সালাম দানকারী, যার মাধ্যমে তিক্ততার অবসান সূচিত হবে তার মর্যাদা বেশী বলে এ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ চাড়া অন্যান্য হাদীসেও একথার উল্লেখ আছে।
সামষ্টিক চরিত্রঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়্যাকুম- তোমরা বেঁচে থাকবে। (আরবী) আযযান্নু খারাপ ধারণা। (আরবী) আকযাবু – অধিক মিথ্যা। (আরবী) লা- তাহাসসাসু- তেনমরা কারো গোপন খবর বের করার চেষ্টা করো না। (আরবী) ওয়ালা তাজাসসাসু? ক্ষতি করার জন্য কারো গোপন কথা শুনতে চেষ্টা করবে না। (আরবী) ওয়ালা শানাজাশূ – তোমরা পরস্পর দাম বৃদ্ধি কর না।(আরবী)লা তাদাবারু – কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না।
২২০।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা খারাপ ধারণা পোষণ করা হতে বিরত থেকো। কেনোনা খারাপ ধারণাপ্রসূত কথা নিকৃষ্টতম মিথ্যা। তোমরা অপরের দোষ খুঁজে বেড়িওনা। কারো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গোপন খবর বের করার চেষ্টা করো না। কারো একান্ত গোপন কথা শুনার চেষ্টা করো না এবং পরস্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করো না। একজন অপরজনের অনিষ্ট সাধনের জন্য পিছে লেগে থেকো না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দাহ হয়ে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে বসবাস করো।– বুখারী, মুসলিম
মুসলমানদের দোষ ফাঁস করা থেকে বিরত থাকাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সায়িদা- তিনি আরোহণ করলেন। (আরবী) আলমিম্বারা – মিম্বরে (আরবী) ফানাদা – আর তিনি আহবান করলেন। (আরবী) বিসাউতিন রাফিইন উচ্চস্বরে। (আরবী) ইয়া মাশারা- হে লোকেরা! (আরবী) লাম ইউফযে পৌছেনি। (আরবী) লাতুযু- কষ্ট দিওনা। (আরবী) লা তুআইয়্যেরুহুম – তাদেরকে শরম দিওনা। (আরবী) লাতাত্তাবিউ – পিছে লেগে থেকো না। (আরবী) আওরাতিহিম – তাদের গোপন কথা। (আরবী) ইয়াত্তাবিউ – পেছনে লেগে থাকে। (আরবী) ইয়াফদাহুহু- তাকে অপমান করবেন। (আরবী) জাওফা রিহলিহী- তার ঘরের নিভৃত কোণে।
২২১।একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর বসে উচ্চস্বরে বললেন, হে লোক সকল!যারা মুখে মুখে ইসলাম গ্রহণ করছো। কিন্তু ঈমান এখনো অন্তরে পৌছেনি। তোমরা মুসলমানদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না এবং তাদের দোষ ত্রুটির পিছে লেগে থেকো না। কেনোনা যে ব্যক্তি মুসলমান ভাইয়ের দোষ উদঘাটনের পশ্চাতে লেগে থাকে, আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেন। আল্লাহ সে ব্যক্তির দোষ প্রকাশ করে দেন, তাকে লজ্জিত ও অপমানিত করে ছাড়েন। যদি সে নিজের ঘরের মধ্যে বসে থাকে।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ মুনাফিকরা সত্যবাদী এবং নিষ্ঠাবান মুসলমাদেরকে নানাভাবে দুঃখ-কষ্ট দিতো। তারা মুসলমানদের জাহেলী যুগের লজ্জাজনক বংশীয় দোষ ত্রুটির কথা লোক সম্মুখে বলে বেড়াতো। এ ধরনের লোকদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম এ হাদীস দ্বারা ধমক দিয়েছেন। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এ বক্তব্য প্রদানের সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠস্বর এতই উচ্চ হয়েছিল যে, পার্শ্বপর্তী ঘরগুলোতে পর্যন্ত আওয়ায পৌছে যায় এভং মেয়েরাও একথাগুলো শুনেছিলো।
পরনিন্দার পরিনামঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়া লাম্বা আরাজা রাব্বী- আমার প্রতিপালক যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে গেলেন।(আরবী) আযফারুন- নখগুলো। (আরবী) নুহাসুন – পিতল। (আরবী) ইয়াখমাশূনা- তারা খামচাচ্ছে। (আরবী) ওজুহাহুম- তাদের চেহারা। (আরবী) ুদূরাহুম- তাদের বুক। (আরবী) মান হাউলায়ি – এরা কারা? (আরবী) ইয়াকুলুনা- তারা খেতো।(আরবী) লুহূমান্নাসি- মানুষের গোশত। (আরবী) আরাদ্বিহিম- তাদের ইযযত।
২২২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আমার প্রতিপালক প্রভূ আমাকে মেরাজে নিয়ে যান তখন আমি এক সময় এমন এক শ্রেনীর লোকের নিকট দিয়ে যাচ্চিলাম যাদের নখগুলো ছিলো পিতলের নখের মতো। এ নখ দ্বারা তারা নিজেদের চেহারা ও বুক খামচাচ্চিল। আমি তাদের সম্পর্কে জিবরীল আমীনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরা সেই সব ব্যক্তি যারা দুনিয়াতে লোকের গোশত খেতো এবং তাদের ইযযত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতো।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ মানুষের গোশত খাওয়ার অর্থ, লোক সমাজে তাদের গীবত ও নিন্দা করে বেড়াতো। তাদের সুনাম ও খ্যাতি বিনষ্ট কার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকতো।
মুসলমানদের পারস্পরিক অধিকারঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) হাক্কুল মুসলিমি- এক মুসলমানের হক (আরবী) সিত্তুন – ছয়। (আরবী) মা হুন্না – এগুলো কি? (আরবী) লাকীতাহু- তোমার সাথে তার দেখা হবে।(আরবী) ফাসাল্লিাম – তখন তাকে সালাম করবে। (আরবী) দা আকা – তোমাকে দাওয়াত দিবে। (আরবী) ফা আজিবহু – তা গ্রহণ করবে। (আরবী) ইস্তানসাহাকা- সে তোমার নিকট উপদেশ চাইবে। (আরবী) ফানসাহ লাহু – তুমি তাকে উপদেশ প্রদান করবে। (আরবী) ইযা আতাসা- যখন হাঁচি দেবে। (আরবী) ইযা মারিযা- যখন অসুস্থ হবে। (আরবী) ফাত্তাবিহু – তাকে দেখতে যাবে।
২২৩।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন মুসলমানের উপর অপর একজন মুসলমানের ছয়টি অধিকার আছে। অধিকারগুলো সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ (১) কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে দো হলে তাকে সালাম জানাবে। (২) যখন তোমাকে সে দাওয়াত দিবে, তা গ্রহণ করবে।(৩) যখন সে তোমার কাছে শুভেচ্ছা ও কল্যাণ কামনা করবে, তাকে তা প্রদান করবে।(৪)যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তার জবাব দেবে।(৫) যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়বে, তখন তাকে দেখতে যাবে এবং (৬) যখন সে মৃত্যুবরণ করবে, তখন তার জানাযায় শরীক হবে।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ(ক) সালাম করার অর্থ কেবল আসসালামু আলাইকুম শব্দের উচ্চারণ করা নয়। বরং এটআ এমন একটি ঘোষণা ও স্বীকারোক্তি যে, আমার পক্ষ হতে তোমার জান এবং ইযযত নিরাপদ। কোনাবে আমি তোমাকে কষ্ট দেবো না। আর শুভেচ্ছা ও কল্যাণ কামনার অর্থ হলো, আল্লাহ তোমার দ্বীন ও ঈমানকে হেফাযত করুন এবং তোমার উপর তাঁর করূণা বর্ষণ করুন।
(খ) তাশমীত শব্দের অর্থ হাঁচি।হাঁচি প্রদানকারীরর জন্য মঙ্গল সূচক কথা বলা উচিত।যেমন ইয়ার হামুকাল্লাহ অর্থাৎ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার উপর রহম করুন। তুমি আল্লাহর আনুগত্যের পথে প্রতিষ্ঠিত থাকো। তোমার পক্ষ থেকে এমন কোন ত্রুটি বিচ্যুতি না ঘটুক যা অপরের হাসির খোরাকে পরিণত হবে।
ক্ষমাঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আকুবিলূ- ক্ষমা করে দিবে। (আরবী) যাবীয়াল হাইআতি-সৎও ভালো লোকের। (আরবী) আসারাতিহিম- তাদের দোষ ত্রুটি। (আরবী) আলহুদূদু- শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২২৪।আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সৎ ও ভালো কোনো লোকের দোষ ত্রুটি হলে তা ক্ষমা করে দিবে। কিন্তু হুদুদ সংক্রান্ত ব্যাপারে নয়।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎেোন নেক্কার লোক যিনি কখনো আল্লাহর নাফরমানী করেন না। যদি কখনো হঠাৎ পদস্থলিত হয়ে কোন অন্যায় কাজ করে বসেন তাহলে তাকে হেয় দৃষ্টিতে দেখো না। কোনরুপ অম্মান করো না। বরং তাকে মাফ করে দিও। অবশ্য যদি তার থেকে এমন কোন পাপ কাজ সংঘঠিত হয় যার সাজা শরীয়তে নির্দিষ্ট আছে। যেমন ব্যভিচার, চুরি ইত্যাদি হাহলে এরুপ অপরাধ ক্ষমা করা যাবে না।
শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তিসমূহকে হুদুদ বলা হয়।
অমুসলিম নাগরিকের অধিকারঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলা- মনে রেখো। (আরবী) মুআহিদান – কোন মুসলমান কোন অমুসলিম চুক্তিবদ্ধ নাগরিকের উপর। (আরবী) ইনতাকাসা – অধিকার খর্ব করে।(আরবী) কাল্লাফাহু- তাকে কষ্ট দেয়। (আরবী) বিগাইরি তীবি নাফসিন- অনিচ্ছায়, জোরপূর্বক। (আরবী) আনা হাজীজুহু- আমি তার পক্ষে বাদী হবো। অভিযোগ উঠাবো।
২২৫।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মনে রেখো যদি কোন মুসলমান কোন অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়। তার অধিকার খর্ব করে। তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করবো।–আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ প্রসংগত উল্লেখ্য যে, এ হাদীসটির পূর্বে উল্লেখিত অধ্যায়গুলোতে প্রতিবেশী, মেহমান, পীড়িত ব্যক্তি এবং সফরসঙ্গীদের যেসব অধিকারের কথা বর্ণিত হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম উভেই সমান।