দরবেশীর বিদ্রুপ
বলা হয়েছে, “জামায়াতে ইসলামী কতগুলি দরবেশি বা দুনিয়াত্যাগী লোকের দল বিশেষ। পৃথিবীর বাস্তব ব্যাপারসমূহ হইতে ও বর্তমান রাজনীতি হইতে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া এক কোনায় গিয়া বসিয়াছে। অথচ মুসলমানদের বর্তমান সংকটপূর্ণ সময়ে সম্মূখে অগ্রসর হইয়া সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ চিন্তা করা কর্তব্য। শুধু মুসলমানই নহে, অমুসলিমগণও সর্ব প্রথম নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রচনায় নিযুক্ত হইতে বাধ্য। অতএব বাস্তব জীবনের সমস্যার দিকে যাহাদের দৃষ্টি রহিয়াছে তাহারা তো এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। অবশ্য কিছু সংখ্যক দুনিয়াত্যাগী ও ধর্মপন্থী লোকই ইহাতে মিলিত হইতে পারে?’’
প্রশ্নটি বিদ্রুপাত্নক এবং স্থুলদৃষ্টির পরিচায়ক। আমাদের বর্তমান রাজনীতিকগণও এইরূপ স্থুলদৃষ্টি লইয়াই কর্মক্ষেত্রে নামিয়াছে। ইহারা শুধু রাজনৈতিক সমস্যা এবং বাহ্যিক বেশের রদ বদলকেই গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া মনে করে। আর নিজেদের যাবতীয় সমস্যার সমাধানও এই পথেই পাইতে চায়। কিন্তু রাজনীতির প্রাসাদ যে ভিত্তিসমূহের উপর স্থাপিত হয়, ইহাদের দৃষ্টি ততদূর পৌছায় না। বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা কি কারনে জটিল আকার ধারন করিয়াছে? এই প্রশ্নের উত্তর এই যে, এই দেশের সমাজ, নৈতিক চরিত্র, বিশ্বাস, চিন্তা, তাহজীব ও তমুদ্দুন, কর্মশক্তি এবং যোগ্যতা সর্বাধিক উন্নত ছিল বলিয়া কয়েক সহস্র মাইল দূর হইতে আসিয়া এই দেশকে পরাভূত করিয়াছিল। এই দেশের মুসলিম জাতির দীর্ঘকালের অবসাদ, অবহেলা ও দুর্বলতার সুযোগে এই পরাধীনতার মধ্যেও প্রতিবেশি জাতি তাহাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হইয়া উঠিয়াছে। ফলে মুসলমানগণ সর্বপ্রথম নিজে ঘরের শত্রু হইতে বাঁচবে না বাহিরের শত্রু হইতে রক্ষা করিবে? ইহাই হইয়াছিল তাহাদের নিকট জটিল সমস্যা। বস্তুত পরাধীন ভারতের মুসলিম রাজনীতির ইহাই হল সংক্ষিপ্ত সার। মুসলমান ও অন্যান্য প্রতিবেশি ভারতীয় জাতি দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার সামান্য বাহ্যিক পরিবর্তনের দ্বারা এই সমস্যার সমাধান করিতে চাহে। আমি এই রাজনীতি ও সমস্যা সমাধানের এই পন্থাকে একেবারে অর্থহীন এবং অবিবেচনাসূলভ মনেকরি। ইহাতে একটুও সময় ব্যয় করা আমার দৃষ্টিতে নিস্ফল। শুধু ভারতেই নহে, সমগ্র পৃথিবীর বর্তমান রাজনৈতিক জটিলতা ও সমস্যার সারকথা আমার মতে, “পৃথিবীতে মানুষ তাহার প্রকৃত স্থান হারাইয়া, যাহা তাহার প্রকৃত স্থান নহে তাহাই লাভ করিবার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করিতেছে এবং নিজেদের নৈতিক চরিত্র তাহজীব, তমুদ্দুন, অর্থনীতি ও রাজনীতির ভিত্তি রাখিয়াছে খোদাদ্রোহীতার উপর। ইহার ফলে আজ সমগ্র পৃথিবীব্যাপী এক মহা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হইয়াছে। ফাসেক ও কাফেরীর এক প্রচন্ড তুফান জাগিয়াছে। এই মারাত্নক পরিনতিকে বিশ্ব ব্যবস্থার শুধু রূপ পুরবর্তনের সাহায্যে দৃঢ় করিবার জন্য যে চেষ্টা চালিয়াছে ইহারই নাম হইতেছে ‘বিশ্ব রাজনীতি’। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে মূলতঃ ইসলামেরই দৃষ্টিতে এই রাজনীতি একেবারেই অর্থহীন, নিছক স্থুল দৃষ্টিরই ফলমাত্র। ইসলামের যেসব তত্ব কথা আমি জানিতে পারিয়াছি, তাহার ভিত্তিতে আমি বলিতে পারি যে ভারতের মুসলমানদের ভারতের সমগ্র অধিবাসীদের এবং বিশ্ব মুসলিমের তথা বিশ্বের সকল মানুষের সমস্ত রাজনৈতিক সমস্যা ও জটিলতার একটি মাত্র সমাধান রহিয়াছে তাহা এই যে আমরা সকলে মিলিয়া এক খোদার দাসত্ব করব, তাহার আইন বিধানকে নিজেদের জীবন ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করিব এবং বিশ্ব ব্যবস্থপনা পরিচালনার কর্তত্ব খোদাদ্রোহী ফাসেক ও কাফেরদের হাত হইতে কাড়িয়া লইয়া খোদার নেক ও সৎ বান্দাহদের হাতে তুলিয়া দিব। এই রাজনীতি যাহাদের মনঃপুত নহে অন্য কোন প্রকার রাজনীতির সাহায্যে যাহারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করিতে চাহে, তাহাদের পথ সম্পূর্ণ সতন্ত্র। আমার এই পথের সহিত তাহাদের পথের কোন সম্পর্ক নাই। আপনারা আপনাদের মত অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করিয়া দেখুন। কিন্তু আমি ও আমার সহকর্মীগণ গভীরভাবে বিচেনার পর যে আদর্শ ও কর্মপন্থায় নিজেদের দেশের, জাতির ও সমগ্র পৃথীবির কল্যাণ নিহিত রহিয়াছে বলিয়া মনে করি আমরা তাহাতেই আমাদের সকল শক্তি নিয়োগ করিব। পৃথীবির মানুষ আমাদের কথায় দৃষ্টিপাত করিলে তাহাদেরই কল্যাণ হইবে। না করিলে তাহাদেরই ক্ষতি হইবে। তাহাতে আমাদের কোন ক্ষতি বৃদ্ধি হইবে না।
তারপর দরবেশ ও দুনিয়াত্যাগী একটি দল গঠন করার কথা বলিয়া যে বিদ্রুপ করা হইয়াছে, তাহার উত্তরে আমাদের কথা এই যে, এই সম্পর্কে কোন প্রকার ভুল ধারণা বা ভুল ব্যাখ্যাদানের অবকাশ থাকা উচিত নহে। বস্তুত আমরা এমন একটি দল গঠন করিতে চাই, যাহার প্রত্যেকটি লোক একদিকে তাকওয়া -পরহেযগারীর ক্ষত্রে সমাজের সাধারণ পরহেযগার মুত্তাকীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর হইবে, আর অপরদিকে বিশ্ব পরিচালনার যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার দিক দিয়াও সাধারণ দুনিয়াদার লোকের অপেক্ষা অনেক অগ্রসর হইবে। আমাদের মতে বিশ্বের সকল ভাঙ্গন ও বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ এই যে, সততা ও নেকী সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার দরুন ঘরের কোণায় গিয়া বসা এবং বাস্তব জগতের কাজ – কর্মের সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করাকেই পরহেযগারী মনে করা হয়। ইহার ফলে সমগ্র বিশ্বের পরিচালন-ভার সর্বাপেক্ষা অসৎ লোকদের হাতে আসিয়া পড়ে। এই অসৎ লোকদের মুখে নেকীর নাম উচ্চারিত হইলেও তাহা শুধু জনগণকে তাহাদের কোন সম্পর্ক থাকে না। এই বিপর্যয়ের সংশোধন হইতে পারে একটিমাত্র উপায়ে এবং তাহা এই যে খোদার নেক বান্দাহদের একটি সুসংবদ্ধ জামায়াত গঠন করিতে হইবে, এই দলের প্রত্যেকটি লোক খোদাভীরু হইবে, ন্যায়পন্হী ও বিশ্বাসভাজন হইবে, খোদার মোনোনীত চরিত্র ও গুণাবলীতে ভূষিত হইবে এবং সেই সঙ্গে বিশ্ব পরিচালনার যোগ্যতাও সর্বাধীক হইবে, যেন বর্তমান দুনিয়ার লোকদের এই দুনিয়াদারীর ব্যাপারেই তাহারা পরাজিত করিতে পারে। আমাদের দৃষ্টিতে এতদপেক্ষা বড় রাজনীতি আর কিছুই হইতে পারে না। উপরন্তু ন্যায়পন্হীদের সুসংবদ্ধ করিয়া তুলিবার চাইতে বেশী কালোপযোগী ও সফল রাজনৈতিক আন্দোলন আর কিছুই হইতে পারে না। বস্তুত এমন একটি দল যতদিন গড়িয়া না উঠিতেছে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান নৈতিক চরিত্রহীন ও আদর্শহীন নেতৃবৃন্দ দুনিয়ার চারণভূমিতে চরিয়া বেড়াইবার অবসর পাইবে। কিন্তু যখন এই দল গঠিত হইবে তখন আপনারা বিশ্বাস করুন-কেবল এই দেশেরই নহে, সমগ্র পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, বিচার-ইনসাফ সব কিছুরই কর্তৃত্ব এই নতুন আদর্শবাদী দলেরই হস্তে অর্পিত হইবে। তখন এখানে ফাসিক ও কাফিরদের প্রদীপ আদৌ জ্বলিতে পারিবে না। এই বিপ্লব কিভাবে সম্পন্ন হইবে, তাহা আমি বলিতে পারি না। কিন্তু ইহা যে অনুষ্ঠিত হইবে তাহাতে আমার আগামীকালের সূর্যদয়ের ন্যায় সন্দেহাতীত বিশ্বাস রহিয়াছে। কিন্তু সেই জন্য শর্ত এই যে, সৎ লোকদের একটি দল সুসংবদ্ধ করিয়া গড়িয়া তুলিতে হইবে।
জামায়াতের কর্মীদের প্রতি উপদেশ
সাধারণ আলোচনা এখানেই শেষ করিয়া অতঃপর আমি জামায়াতের কর্মীদের নিকট কয়েকটি বিশেষ দরকারী কথা বলিতে চাই।
সর্বপ্রথম আমি আপনাদের যে কথাটি বলিতে চাই, তাহা যদিও প্রত্যেক সম্মেলনেই বলিয়া থাকি, তবুও আমি আজও তাহাই আপনাদেরকে বলিব। আপনারা বুঝিয়া শুনিয়া সচেতনভাবে খোদার নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়া যে বিরাট দায়িত্ব নিজেদের স্কন্ধে চাপাইয়া লইয়াছেন, তাহার গুরুত্ব আপনারা গভীরভাবে অনুভব করুন। আপনারা খোদার আইন নিজেরা সর্বাধিক পালন করিয়া চলিলেই আপনাদের বিশ্বাস, কথা ও কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হইলেই এবং আপনাদের জীবনের প্রত্যেকটি দিক ও বিভাগ ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী গঠন করিয়া হইলেই এই বিষয়ে আপনার কর্তব্য আদৌ পূর্ণরূপে পালিত হইতে পারে না। বরং আপনি যে ইসলামের প্রতি ঈমান আনিয়াছেন, যে আদর্শকে আপনি আপনার প্রভুর দ্বীন বলিয়া বশ্বাস করিয়াছেন, যে পথকে আপনি গোটা মানব জাতির জন্য চিরন্তন সত্য ও একমাত্র পথ বলিয়া মনে করেন, সেই ইসলামকে পৃথিবীর অন্যান্য সমগ্র দ্বীন, ও জীবন ব্যবস্হার বিপর্যয় ও ধ্বংসমূলক রীতি-নীতি হইতে মানবতাকে মুক্তি দিয়া সত্য দ্বীন এবং অপরিসীম কল্যাণের বন্যা প্লাবনে সিক্ত ও প্লাবিত করিবার জন্য চেষ্টা সাধনা করার অপরিহার্য কর্তব্য হইতেছে আপনার প্রতি সেই দ্বীন ইসলামীর অন্যতম প্রধান দাবী। বর্তমান দুনিয়ার বাতিল সমাজ ব্যবস্হার অনুগামীগণ নিজ নিজ মিথ্যা ও বিপর্যয়কারী মতের সমর্থনে যতখানি নিষ্ঠা ও আত্মোৎসর্গী ভাব দেখাইয়া থাকে তদপেক্ষা অনেক বেশী আপনাদের দেখাইতে হইবে ইসলামের জন্য। আপনাদের চোখের সম্মুখেই অসংখ্য লোক কঠিনতম বিপদ, ধন-সম্পত্তি বিরাট অপচয়, জান-প্রাণের অপূরণীয় ক্ষতি, দেশের পর দেশের ধ্বংস এবং নিজের সন্তানদের ও নিজ আত্মীয়-স্বজনদের কুরবানী অবলীলাক্রমে সহ্য করিতেছে- শুধু এইজন্য যে, তাহারা যে জীবন-পদ্ধতিকে নির্ভুল মনে করে, যে ব্যবস্হায় নিজেদের কল্যাণ নিহিত বলিয়া বিশ্বাস করে, তাহারা উহাকে কেবল নিজেদের দেশেই নহে, সমগ্র পৃথিবীতেই জয়ী করিয়া তুলিতে চায়। তাহাদের ধৈর্য, আত্মদান, শ্রম-সাধনা, দুঃখ-মুসীবত, সহিষ্ণুতা এবং তাহাদের জীবনোদ্দেশ্যের জন্য প্রেম-ভালবাসার সহিত আপনারা তাহাদেরকে অতিক্রম করিয়া যাইবেন। কিন্তু বর্তমানে আপনাদের অর্থদান, সময় ও শ্রম ব্যয় করা, নিজেদের উদ্দেশ্যের প্রতি প্রেম এবং সেই জন্য কুরবানীর যে হার রহিয়াছে, তাহার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের হস্তে এই ঝান্ডা উম্মীলিত হইবার আশাটুকু পোষণ করারও কোন অধিকার আপনাদের নাই। দ্বিতীয়ত, আমি বরাবর আপনাদেরকে যে কথা বলিবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি, তাহা এই যে, আপনারা দ্বীন ইসলামের নীতিগত ও বুনিয়াদী ব্যাপারে গুরুত্ব অনুধাবন করিবেন। খুঁটিনাটি ব্যাপারের দিকে আজ পর্যন্ত বেশী দুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। সমগ্র ধার্মিক সমাজ যদি রোগে আক্রান্ত হইয়া জরাজীর্ণ হইয়াছে, তাহা আপনারা পরিত্যাগ করুন। আমি অনুভব করিতেছি যে, আমার এবং জামায়াতের আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রাণপন চেষ্টা সত্ত্বেও খুঁটিনাটি ব্যাপারের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করার রোগ আমাদের জামায়াতে এখনো বর্তমান রহিয়াছে। এই রোগ মাঝে মাঝে এত তীব্র হইয়া দেখা দেয় যে, আমাদের উপদেশ অনুযায়ী উহা পরিত্যাগ করিবার পরিবর্তে স্বয়ং আমাদেরকেই খুঁটিনাটি ব্যাপারে জড়াইবার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। ব্যাপারটি গভীরভাবে অনুধাবন করা বাঞ্ছনীয়। যে সব খুঁটিনাটি ব্যাপার লইয়া আপনারা বিতর্ক করেন, তাহা যতই গুরুত্বপূর্ণ হউক না কেন, মূলত ইহার একটি জিনিসকেও কায়েম করিবার জন্য আল্লাহ তাআলা নবী প্রেরণ করেন নাই। নবীদের আগমন এবং খোদার কিতাব নাযিল হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল খোদার সত্য দ্বীনকে কায়েম করা। তাহাদের সকল চেষ্টা সাধনার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ব-মানবকে এক খোদার অনুগত ও অধীন করিয়া অন্যান্য সকল প্রকার গোলামী হইতে মানবতাকে নিষ্কৃতি দান করা। তাহারা সকলেই যেন একমাত্র আল্লাহরই আইন মানিয়া চলিতে বাধ্য হয়। ভয় যেন কেবল খোদাকেই করে, কেবল খোদার হুকুম যেন মানিয়া চলে। হক ও বাতিলের পার্থক্য, জীবনে সত্য পথের নির্দেশ কেবল তাহাই গ্রহণযোগ্য, আল্লাহ দিয়াছেন। খোদার নীতি-বিরোধী সকল অন্যায় ও পাপ ব্যবস্হাকে নির্মূল করা এবং খোদার মনোনীত সকল কল্যাণ ব্যবস্হার প্রতিষ্ঠা করাও তাওহিদের অপরিহার্য কর্তব্য। এই দ্বীন ইসলাম কায়েম করাই আমাদের উদ্দেশ্য। মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে এই কাজের আদেশই দেওয়া হইয়াছে। এই কাজের গুরুত্ব গভীরভাবে অনুধাবন করিতে চেষ্টা করুন। এই কাজ বন্ধ হইয়া গেলে দুনিয়াতে বাতিল জীবন ব্যবস্হা জয়ী হইবে এবং তাহার ফলেই বিশ্ববাসীর উপর খোদায়ী গযব আসিতে পারে, নিশ্চিতরুপে বুঝিয়া লউন। সেই সঙ্গে এই কথাও জানিয়া লউন যে, সেই গযব হইতে আত্মরক্ষা করা এবং খোদার সন্তোষ লাভের একমাত্র উপায় হইতেছে খোদার দ্বীন ইসলাম কায়েম করিবার জন্য শক্তি, ধন, সময়, জান-প্রাণ, মস্তিষ্ক, ভাষা- সককিছুই উৎসর্গ করা। বস্তুত আপনারা যদি এই কথা হৃদয়-মনে অনুভব করিতে পারেন, তবে আপনারা কখনই এইসব বৃথা তর্কে জড়িত হইবেন না। আমার মনে হয়, দ্বীন ইসলামের নিগূঢ় তত্ত্ব এবং উহার দাবী সঠিকভাবে উপলব্ধি করিতে না পারাই এইসব বিতর্ক ও কু-তর্কে জড়াইয়া পড়িবার মূল কারণ।
আমাদের কর্মীদের মধ্যে আর একটি ত্রুটি পরিলক্ষিত হইতেছে। আদর্শ, উদ্দেশ্য ও মতবাদের দিক দিয়া তাহারা জামায়াতকে হয়তো ভালো করিযা বুঝিতে পারিয়াছে, কিন্তু কর্মনীতি আদৌ বুঝিতে পারে নাই। এই জন্য বারবার তাহাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইতেছে এবং টানা-হেঁচড়া করিয়া আমাদের উদ্দেশ্য ও অন্যান্য দলের কর্মনীতি মিলাইয়া একটা অভিনব জগাখিচুড়ি সৃষ্টি করিতে বিশেষভাবে চেষ্টা করে। তাহাদেরকে এই কাজ করিতে নিষেধ করিলে তাহারা মনে করে, একটি গতিবান কর্মনীতিকে অনর্থক উপেক্ষা করা হইতেছে। মনে করে হয়তো বা শুধু হিংসার বশবর্তী হইয়াই ইহা করা হইতেছে। অনেকের প্রগলভতা এতদূর দেখা গিয়াছে যে, তাহাদের এই ধরনের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক করিয়া দিলে তাহারা অমনি বলিয়া বসে, “নাম জামায়াতেরই লওয়া হইবে, অপরের নহে।’’ ইহারা হয়তো ধারণা করিয়াছে যে, জামায়াতের একটি রেজিস্ট্রী করা ট্রেড মার্ক চালু করাই এই চেষ্টা ও সাধনার উদ্দেশ্য। আরো আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ইহা বুঝিয়াও তাহারা আমাদের সঙ্গে এখনো পর্যন্ত জড়িত হইয়া আছে। আমাদের কোন কোন শাখা জামায়াত এই রোগে মারাত্মক আক্রান্ত হইয়াছে। আরো অনেক লোকের মধ্যে একটি তীব্র গতিশীল কর্মনীতি গ্রহণ করিয়া অবিলম্বে বিরাট কিছু করিয়া দেখাইবার আকাঙ্খা ও চিন্তা দেখা দেয়। বস্তুত ইহা চিন্তাহীন কর্মের প্রাচীন রোগ ছাড়া আর কিছুই নহে। ইহা যুগ যুগ ধরিয়া মুসলমানদের মধ্যে সংক্রামিত হইয়া রহিয়াছে। কাজেই ইহাও কর্মহীন চিন্তা অপেক্ষা কম মারাত্মক নহে। আমি নিশ্চিত করিয়া বলিতে চাই, বর্তমান ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলসমূহে বস্তুত যদি ‘প্রাণবন্তু’ বলিতে কিছু থাকিত, তবে আমরা নতুন একটি দল গঠনের ব্যাপারে হয়তো ইতস্তত করিতাম। কিন্তু আল্লাহ যাহা কিছু বুদ্ধি-জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি আমাকে দান করিয়াছেন, তাহার উপর নির্ভর করিয়া আমি সুস্পষ্ট ভাষায় বলিতে পারি যে, বর্তমানে প্রচলিত অন্যান্য আন্দোলন ও নেতৃত্বের কোন একটির মধ্যেও মুসলমানদের মারাত্মক রোগের চিকিৎসা করার প্রকৃত ক্ষমতা নাই। ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও দাবী পূরণ তো দূরের কথা, মুসলমানদের সমস্যা ও রোগ সম্পর্কে এই সব দলের পক্ষ হইতে যাহা কিছু বলা হইতেছে, তাহা অত্যন্ত স্হূল। ইসলামের প্রকৃত দাবী সম্পর্কে ইহাদের কোন ধারণা নাই। কাফিরী ও ফাসিকীর এই দিগ্বিজয় এবং দ্বীন ইসলামের এই শক্তিহীনতার প্রকৃত কারণও সঠিকভাবে ধরিতে পারে নাই। উপরন্তু এই অবস্হার পরিবর্তনের জন্য কোন ক্রমিক গতিতে কোন কোন ক্ষেত্রে কি কাজ করিতে হইবে, তাহা গভীরভাবে অনুধাবন করিয়া স্হূলদৃষ্টিতে যেসব আন্দোলন পরিচালিত হইতেছে এবং সেই জন্য যে তীব্র গতিশীল কর্মনীতি প্রয়োগ করা হইয়াছে আমরা তাহাকে ভুল না বলিলেও, উহার দোষ-ত্রুটির সমালোচনা না করিলেও এবং উহার অন্তর্নিহিতর প্রতি শ্রদ্ধা জানাইলেও উহার ব্যর্থতা সম্পর্কে আদৌ কোন সন্দেহ নাই। এই ধরনের আন্দোলন পূর্ণ সফলতা ও আলোড়নের সহিত কয়েক শতাব্দী কাল পর্যন্ত একাধারে চলিতে থাকিলেও মানুষের জীবন-ব্যবস্হার ক্ষেত্রে যে সামান্যতম বিপ্লবও সৃষ্টি হইতে পারে না, তাহা আমি নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। প্রকৃত বিপ্লব যদি সৃষ্টি হয়ই, তবে তাহা ইসলামের এই আন্দোলনের ফলেই হইবে এবং সেই জন্য আমাদের গৃহীত কর্মনীতিই একমাত্র স্বাভাবিক ও কার্যকরি হইতে পারে। কারণ দ্বীন ইসলামের প্রকৃত এবং উহার ইতিহাসের গভীরতর অধ্যয়ন যাচাই করার পরেই ইহা গৃহীত হইয়াছে। তবে আমাদের কর্মনীতি যে অত্যন্ত ধৈর্য সাপেক্ষ, মন্হর এবং অচিরেই তাহাতে কোন অনুভবযোগ্য ফল লাভের আশা করা যায় না-বরং তাহাতে দীর্ঘকাল পর্যন্ত অবিশ্রান্তভাবে সাধনা করিয়া যাইতে হয়। তাহাতে একটুও সন্দেহ নাই। কিন্তু ইহাতেও সন্দেহ নাই যে, এই কাজে সাফল্য লাভের একমাত্র পন্হা ইহাই, এতদ্ব্যতীত অন্য কোন পথেই এই উদ্দেশ্য লাভ হইতে পারে না। আমাদের ইদ্দেশ্য ও কর্মনীতি কোন একটিও যাহাদের পছন্দ নহে, তাহারা জামায়াতের এই দুইটির মধ্যে কোন একটিরও নিজেদের ইচ্ছামত সংশোধন কি পরিবর্তন-পরিবর্ধন করিতে চেষ্টা করিলে তাহা মোটেই বরদাশত করা যাইবে না। আমাদের সহিত চলিতে চাহিলে আমাদের আদর্শ ও কর্মনীতিকে মনে ঐকান্তিক সমর্থনের সহিত অনুসরণ করিতে হইবে। আর অন্যান্য আন্দোলনের প্রতি যাহাদের মনের যোগ রহিয়াছে, তাহারা সেই পথ ও মতের যাচাই করিয়া দেখিতে কারেন।
স্হূলদর্শিতা, প্রদর্শনীমূলক মনোবৃত্তি এবং দ্রুততার যে মারাত্মক দুর্বলতা মুসলমানদের মধ্যে বর্তমানে সাধারনত দেখা যায়, সম্প্রতি তাহার একটি প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। কয়েকমাস পূর্বে আমি বয়স্কদের শিক্ষাদান সম্পর্কে একটি পদ্ধতি পেশ করিয়াছিলাম। কিন্তু তাহা কাহারও মনকে আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করিতে পারে নাই। কিন্তু দল বাধিয়া গ্রামে গ্রামে গলিতে গলিতে ঘুরিয়া বেড়ান এবং অবিলম্বে বিরাট ফলদানের উপযোগী কোন কর্মনীতি গ্রহণের জন্য বিভিন্ন স্হান হইতে অনেকেই দাবী জানাইতেছে। অথচ এই ধরনের কর্মনীতি স্হূলদৃষ্টিতে যত বড় ফলই দিক না কেন, তাহা যে ক্ষণস্হায়ী, তাহাতে এতটুকু সন্দেহ নাই। কিন্তু তাহাদের বারবার বুঝাইয়া দেওয়া সত্ত্বেও তাহারা এই আশ্চর্য ধরনের প্রচেষ্টা হইতে বিরত হইতেছে না। এক প্রকারের কর্মনিহিত হইতেছে, কিছু সংখ্যক অশিক্ষিত লোককে একত্রিত করিয়া এক বৎসর কি ততোধিকাল পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া এবং ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী তাহাদেরকে তৈরি করা। তাহাদের আকীদা- বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র, দৈনন্দিন কাজকর্ম, জীবনোদ্দেশ্য, ভাল-মন্দের মাপকাঠি-প্রত্যেকটি দিক দিয়াই তাহাদেরকে ইসলামের বিধান অনুসারে পরিবর্তিত করা এবং তাহাদেরকে জামায়াতের কর্মী হিসাবে নিযুক্ত করা। এই ধরনের বয়স্কদের শিক্ষা পদ্বতির মারফতে তৈরি কর্মীদেরকে মজুর, কৃষক এবং গণফ্রন্টের ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে অনায়সেই নিযুক্ত করা যাইতে পারে।
আর এক প্রকারের কর্মনীতি হইতেছে- অত্যল্প সময়ের মধ্য সহস্র লোক জমা করিয়া ইসলামের কয়েকটি প্রাথমিক বিষয়ের প্রচার করা এবং অবিলম্বে তাহাদের মধ্যে এক প্রকারের কর্মতৎপরতার সৃষ্টি করা। কিন্তু এইরূপ আকস্মিক উচ্ছ্বাস-সৃষ্ট কর্মতৎপরতা কিছুতেই স্হায়ী লাভ করিতে পারে না। এই দুইটি কর্মপন্হার মধ্যে- আমি দেখিতেছি প্রথমটির দিকে লোকদের উৎসাহ খুবই কম। আর শেষোক্তটির দিকে লোক দলে দলে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে। প্রথম প্রকারের কর্মনীতি মূলত স্হায়ী ফলপ্রদ, কিন্তু সময় সাপেক্ষ, সাধনা এবং ধৈর্য-নির্ভর। এই অবস্হার কথা চিন্তা করিলে মুসলমানদের দুইটি দুর্বলতা সুস্পষ্ট হইয়া উঠে, বস্তুত এই দুর্বলতাই তাহাদেরকে আবহমানকাল হইতে সাময়িক উচ্ছ্বাসমূলক কাজে নিজের শক্তি, শ্রম, সময়-সম্পত্তি অপচয় করিতে বাধ্য করিয়াছে। এই সম্পর্কে আমি শুধু এতটুকুই বলিতে পারি যে, জামায়াতে ইসলামীর পরিচালনা-ভার যতদিন আমার উপর ন্যস্ত থাকিবে, আমি আমার সহকর্মীদেরকে নির্ভুল, প্রকৃত ও সঠিক ফলপ্রদ কাজেই নিযুক্ত করিতে চেষ্টা করিব, সচেতনভাবে তাহাদেরকে কখনও নিষ্ফল প্রচেষ্টায় নিযুক্ত করিব না।
বক্তব্য শেষ করিবার পূর্বে একটি সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনাদেরকে বলিতে চাই। আমাদের জামায়াতের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক এমন আছেন যাহারা তাবলীগ ও প্রচারণামূলক কাজে অত্যন্ত কঠোর ও নির্মম অচরণ অবলম্বন করিয়া থকেন। আমার নিকট যেসব প্রশ্ন পেশ করা হইতেছে, তাহা হইতে সহজেই অনুমান করা যায় যে, পথভ্রষ্ট লোকদের ইসলামের দিকে টানিয়া আনার এবং তাহাদের সঠিক পথে পরিচালিত করার চিন্তা যতখানি না আছে, তদপেক্ষা অধিক চিন্তা হইয়াছে নিজেদের ভিতরের লোকদের বিচ্ছিন্ন করা সম্পর্কে। ধার্মিকতার উচ্ছ্বাস তাহাদের মধ্যে সহানুভূতির কল্যাণ কামনার ভাবধারা যত না জাগাইয়াছে, তাহা অপেক্ষা অনেক বেশী জাগাইয়াছে ঘৃণা, উপেক্ষা এবং ক্রোধ। এই জন্যই তাহারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, যাহাদের মধ্যে অমুক দুর্বলতা রহিয়াছে, তাহারা জামায়াতের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করে না কেন? তাহাদের সহিত মিলিয়া নামায পড়িব কেন? কিংবা তাহাদেরকে কাফির, মুশরিক বলা হইবে না কেন? কিন্তু এই প্রশ্নকারীরা পথভ্রষ্ট লোকদেরকে সত্যের পথে টানিয়া আনিবার উপায় ও পন্হা কি হইতে পারে, সেই সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞাসা করার দরকার বোধ করে নাই। ইহাদের অবসাদ, অবজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা মর্মান্তিক, তাহাদেরকে ইসলামের আলোকে আলোকমন্ডিত করিতে চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য। আমার মনে হয়, যাহারা খোদার অনুগ্রহে সত্য পথের সন্ধান পাইয়াছে, তাহাদের মনে এই সত্যপ্রাপ্তি কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে অহঙ্কার সৃষ্টি করিয়াছে। আমার ধারণা ভুল হইলেই মঙ্গল। কিন্তু প্রসঙ্গত আমি সুস্পষ্ট ভাষায় বলিতে চাই যে, জামায়াতের প্রত্যেক ব্যক্তিরই সূক্ষ্মভাবে নিজের মন যাচাই করা কর্তব্য। এই ব্যাপারে প্রত্যেকেরই মনে খোদার ভয় সক্রিয় থাকা উচিত এবং শয়তানের প্রতারণা হইতে নিজেকে প্রতি মুহূর্তে সতর্ক রাখা কর্তব্য। মহামারী-আক্রান্ত কোন লোকালয়ে কয়েকজন স্বাস্হ্যবান ব্যক্তির অবস্হা যাহা হয়, বর্তমান বিপর্যস্ত সমাজে কিছু সংখ্যক লোকের সঠিক জ্ঞান ও সৎকাজ করার সৌভাগ্য লাভও ঠিক তদ্রূপ। উক্ত লোকালয়ে মুষ্টিমেয় স্বাস্হ্যবান ব্যক্তি কোন চিকিৎসার ব্যাপারে যদি কিছুমাত্র দক্ষতা রাখেন এবং তাহাদের কিছু ঔষধ বর্তমান থাকে, তবে তাহাদের প্রকৃত কর্তব্য কি? তাহারা তাহাদের মহামারী রোগীর প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করিবে? কিংবা তাহাদেরকে দূর বিতাড়িত করিবে বা তাহাদেরকে তদবস্হায় রাখিয়া তাহারা নিজেরা পলায়ন করিবার চেষ্টা করিবে? অথবা তাহারা নিজেদেরকে বিপদের মুখে নিক্ষেপ করিয়া রোগাক্রান্ত লোকদের চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য যত্নবান হইবে? এই প্রচেষ্টায় কিছু ময়লা তাহাদের শরীর স্পর্শ করিলেও তাহাদের আকুষ্ঠচিত্তে তাহা সহ্য করা কর্তব্য। আমি দৃঢ়তার সহিত বলিতে পারি যে, প্রথম প্রকার পন্হা গ্রহণ করিলে তাহারা খোদার নিকট অপরাধী সাব্যস্ত হইবে এবং তাহাদের স্বাস্হ্য, চিকিৎসা সম্পর্কে তাহাদের অভিজ্ঞতা এবং তাহাদের নিকট প্রয়োজনীয় ঔষধ বর্তমান থাকায় তাহাদেরকে আরো অধিক অপরাধী প্রমাণ করিবে। এই উদাহরণকে গভীরভাবে বুঝিয়া লইয়া এই কথাও চিন্তা করুন যে, যাহারা দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্হ্য সম্পন্ন,যাহাদের নিকট দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান বর্তমান এবং সমাজকে সত্যের আদর্শে সংশোধনের কার্যকরী পন্হাও যাহাদের নিকট বর্তমান, তাহাদের জন্য খোদার সন্তোষ লাভের জন্য পন্হা কোন সঠিক ও হইতে পারে।
— সমাপ্ত —