জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন

অন্তর্গতঃ কর্মী সিলেবাস, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
Share on FacebookShare on Twitter

মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন

আবদুল খালেক


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


বইটির অডিও শুনুন

http://bjilibrary.info/pdf/audio/lq/musolmander_doinondin_jibon.mp3

লো কোয়ালিটি ডাউনলোড

হাই কোয়ালিটি ডাউনলোড


লেখকের আরজ

মুসলমান কাকে বলে? কি কি বিষয়ের প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হতে হয়? মুসলমানের দিবা-রাত্রির জীবন কেমন? কীই বা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য? এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরী। অবশ্য এ বিষয়ে বাংলা সাহিত্যে জ্ঞানগর্ভ পুস্তকাদির অভাব নেই। তবে প্রচলিত বই-পুস্তকগুলো থেকে জ্ঞান আহরণ করার জন্য আরবী, ফারসী, ইংরেজী, বাংলা, উর্দু ইত্যাদি এক বা একাধিক ভাষায় গভীর জ্ঞান থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের মুসলমান ভাইদের অধিক সংখ্যকই অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত। তারা ঐসব মূল্যবান পুস্তকের ভাষা ও বিষয়বস্তু বুঝতে অক্ষম। তাদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখেই এ বইখানা রচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সে উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হয়েছে তার বিচারের ভার সুযোগ্য পাঠক ভাইদের উপরই রইল। তাদের মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত পেলে উপকৃত হব। যদি এ ক্ষুদ্র পুস্তিকা মুসলমান ভাইদের সামান্য মাত্রও উপকারে: আসে তাহলে আমি বিষয়টিকে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ মনে করবো।

এ বই লেখার প্রয়োজনীয়তার প্রতি আমার মনোযোগ আকর্ষণ ও নানা উপায়ে আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য তরুণ চরিত্রবান শিক্ষার্থী পরম স্নেহের মোঃ জয়নুল আবেদীনকে যথাযোগ্য পুরস্কার দানের জন্য আল্লাহর দরবারে আবেদন জানাচ্ছি।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন, তাঁর মহান দরবারে এ আমার আকুল আবেদন।
-লেখক

প্রথম পরিচ্ছেদ

সূচীপত্র

  1. মুসলমানের ঈমান
    1. আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান
    2. কিতাবের প্রতি ঈমান
    3. রসূল (স)-এর প্রতি ঈমান
    4. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
    5. আখেরাতের প্রতি ঈমান
    6. তাকদীরের প্রতি ঈমান
    7. মুসলমানের বুনিয়াদী আমল
      1. ১. কালেমায়ে তাইয়্যেবা
      2. ২. নামায
      3. ৩. রমযান শরীফের রোযা
      4. ৪. যাকাত
      5. ৫. হজ্জ
  2. মুসলমানের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য
  3. দিবারাত্রির দোয়া
  4. আত্মশুদ্ধির উপায়
  5. কিয়ামত
  6. হাশর ও বিচার
  7. দোযখ
  8. বেহেশত
  9. মুসলমান একটি উম্মত
  10. মুসলিম উম্মতের দায়িত্ব
  11. ইকামাতে দীন
  12. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ
  13. বর্তমান অবস্থা ও মুসলমানদের কর্তব্য

মুসলমানের ঈমান

ঈমানের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস। মানুষ যত কাজই করে-তার সবগুলোর মূলেই একটি বিশ্বাস থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, মানুষ খাবার খায়। কারণ, তার বিশ্বাস খাবার খেলে ক্ষুধা দূর হয়, শরীর গড়ে উঠে এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এ বিশ্বাস যার নেই, সে খাবে না। আবার রোগী ওষুধ খায়। তার বিশ্বাস, ওষুধ খেলে রোগ সেরে যাবে। এ বিশ্বাসের অবর্তমানে কোনো রোগীই ওষুধ ব্যবহার করবে না। এভাবেই অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যেতে পারে যে, মানুষ বিশ্বাস ছাড়া কোনো কাজই করে না। গাছের মূলে যেমন বীজ, তেমনি মানুষের সকল কাজের মূলেই রয়েছে একটা না একটা বিশ্বাস। স্বাভাবিকভাবেই মুসলমান হতে হলেও কতকগুলো বিষয়ে বিশ্বাস থাকা দরকার। দুনিয়ায় অসংখ্য মানুষ রয়েছে। তাদের কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ, কেউ খৃস্টান ইত্যাদি নামে পরিচিত। আবার আমরা মুসলমান নামে পরিচয় দেই। কাজেই অন্যান্য জাতির সাথে মুসলমানের পার্থক্য কি? তারাও মানুষ অথচ মুসলমান নয়। তারা কেন মুসলমান নয়, আর আমরাই বা কেন মুসলমান এটা সকলেরই জানা দরকার।

মূলত বিশ্বাসের দরুনই মানুষ পৃথক পৃথক পরিচয় দিয়ে থাকে। এ দুনিয়ার চলার পথে কিভাবে জীবন কাটাতে হবে, সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতাবলম্বীদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস রয়েছে। যেসব বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে মুসলমান হওয়া যায়, সেগুলোকেই একত্রে ঈমান বলা হয়। ঈমানই মুসলমানের জিন্দেগীর মূল। ঈমান দুর্বল হলে আমলও দুর্বল হয় এবং ঈমান মজবুত হলে মুসলমানের যাবতীয় আমলও সে অনুসারে মজবুত হয়। আমরা তাই পরবর্তী আলোচনায় ঈমানের বিষয়বস্তুগলো জেনে নিতে চেষ্টা করবো।

আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান

একজন মুসলমানকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান আনতে হয়। আল্লাহ তা’আলাই আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। আসমান, যমিন, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, গাছ, লতা-পাতা, জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, সাগর, নদী, পাহাড় ইত্যাদি সবকিছুই তাঁর সৃষ্টি। আর সকল সৃষ্টির সেরা হচ্ছে মানুষ।তাই চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আলো-বাতাস, জীব-জন্তু, সাগর নদী সবকিছুই মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে।
মানুষ সকল সৃষ্টির সেবা গ্রহণ করে আল্লাহর বন্দেগী করবে। বন্দেগী বা ইবাদাত অর্থ দাসত্ব বা গোলামী। গোলাম কখনও নিজের ইচ্ছা মাফিক কোনো কাজ করতে পারে না। সকল কাজই মনিবের মরজী মত করে। মানুষ যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন আল্লাহ তা’আলার হুকুম মুতাবেক সব কাজ করবে এবং তিনি যা যা করতে নিষেধ করেছেন সেসব কাজ থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদাত বা বন্দেগী।

আল্লাহই সকলের রিযিক দেন। তিনিই ভাল-মন্দের মালিক। জীবন ও মৃত্যু তাঁরই হাতে। তিনি ছাড়া অন্য কেউ কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না-কেউ কারো জীবন নিতে বা দিতে পারে না। তাই মানুষের যা কিছু চাওয়া দরকার তাঁরই কাছে চাইবে। তাঁরই কাছে সকল কল্যাণের আশা করবে। আল্লাহ তা’আলাকে দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে বেশী ভালবাসবে এবং শুধু তাঁকেই ভয় করবে। আর জীবিত থাকাকালে মানুষ যা যা করবে, সবই আল্লাহকে রাজী ও সন্তুষ্ট করার জন্যই করবে। আল্লাহ যদি রাজী থাকেন, তাহলে সারা দুনিয়া নারাজ হয়ে গেলেও কোনো ক্ষতি নেই, আর আল্লাহ নারাজ হয়ে গেলে সারা দুনিয়াকে সন্তুষ্ট রেখেও কোনো লাভ নেই। আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থই হচ্ছে, আল্লাহর বান্দাহ হয়ে জীবন-যাপন করা।

কিতাবের প্রতি ঈমান

কিতাব অর্থ বই বা গ্রন্থ। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পরই বান্দাহর জানা দরকার, আল্লাহ কি কি কাজ করতে হুকুম দিয়েছেন। আর তিনি কোন্ কোন্ কাজ করতে নিষেধ করেছেন তাও বান্দাহকে জানতে হবে। তাই আল্লাহ তা’আলা দয়া করে কিতাব নাযিল করেছেন। আমরা যে কিতাবের প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়েছি, সে কিতাবের নাম আল কুরআন। কুরআনের আগেও তাওরাত, ইঞ্জিল ও যবুর নামে তিনখানা কিতাব এবং ১০০ খানা সহিফা (ছোট ছোট কিতাব) নাযিল হয়েছিলো। তবে আল কুরআনই সকলের শেষে নাযিল হয়েছে এবং এ কিতাবেই

আল্লাহর হুকুম-আহকাম পুরোপুরি রয়েছে। আল কুরআন আল্লাহর কালাম। এ কিতাবে আল্লাহ তা’আলা যা যা বলেছেন, সবই বান্দাহর উপকারের জন্য বলেছেন। কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কথাই সত্য বলে মানতে হবে। এ কিতাবের একটি বর্ণও মিথ্যা নয়। আল্লাহর এ কালাম যারা ঠিক ঠিকভাবে মেনে চলবে, তারা দুনিয়াতেও সুখ-শান্তি ভোগ করবে এবং আখেরাতেও আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হিসাবে আল্লাহর নিকট থেকে পুরস্কার লাভ করবে। যারা এ কিতাবে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে এবং যারা এ কিতাবের কোনো হুকুম অমান্য করবে তারা শক্ত গুনাহগার হিসাবে আল্লাহর নিকট থেকে কঠোর সাজা পাবে।

রসূল (স)-এর প্রতি ঈমান

পরম দয়ালু আল্লাহ তা’আলা শুধু কিতাব নাযিল করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তাঁর বান্দাহগণকে অত্যন্ত মুহব্বত করেন এবং এজন্যই তাঁর বান্দাহদেরকে চলার পথ বাতলে দেবার জন্য হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স)-কে নবী ও রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ)-ও নবী ছিলেন। তিনি তাঁর সন্তানগণকে আল্লাহর মরজী মতো চলার পথ বাতলে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবার পর মানুষ গুমরাহ হয়ে গেল, তারা আল্লাহর নাফরমানী করতে শুরু করলো। তাদের পথ দেখানোর জন্য আবার আল্লাহ তা’আলা নবী পাঠালেন। এভাবে বার বার মানুষ ভুল পথে চলে গেলে বার বার আল্লাহর নবীগণ এসে তাদের হেদায়াত করেছেন। কত নবী এসেছিলেন, তা আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কেউ জানে না। সকলের শেষে এলেন। সব নবীদের নেতা ও শ্রেষ্ঠ রসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স)। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হতে পেরেছি।

হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স)-এর উপরই আল কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি মানুষকে কিতাবের জ্ঞান দান করেছেন। আল্লাহর বান্দাহ হয়ে জীবন যাপন করার তরীকা শিখিয়েছেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী আসবেন না। তাঁর আনীত কিতাবের পর আর কোনো কিতাব নাযিল হবে না। তাঁর দেখানো তরীকা ছাড়া অন্য কোনো তরীকায় আল্লাহকে রাজী বা খুশী করা যাবে না। তাই তিনি যা যা দিয়ে গেছেন তা আমাদের আঁকড়ে ধরতে হবে। এবং তিনি যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দিতে হবে। যে পথে তিনি নিজে চলেছেন এবং আমাদের চলতে বলেছেন সে পথই একমাত্র পথ। এ পথ ছাড়া অন্য পথে আল্লাহকে রাজী করা যাবে না। তাই রাসূল (স)-এর উপর ঈমান আনার পর তাঁরই তরীকা মত চলতে হবে এবং এ তরীকায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করলে ঈমান থাকবে না।

ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান

আল্লাহ তা’আলার এ বিশাল সৃষ্টির শুরু কোথা থেকে? কোথায় তার শেষ? এসব বিষয়ে আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। আল্লাহর কিতাব থেকেই আমরা জানতে পেরেছি যে, এ বিশাল সৃষ্টিজগত পরিচালনার কাজে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা নারী বা পুরুষ নয় তাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা বা ঘুম-নিদ্রার প্রয়োজন হয় না। ফেরেশতাদের আকৃতি ও সংখ্যা আমাদের জানা নেই। তবে তারা হর-হামেশা আল্লাহর হুকুম পালনে নিযুক্ত আছেন। ফেরেশতাকুলের মধ্যে চারজনের নাম খুবই প্রসিদ্ধ। তারা হচ্ছেন:

১. হযরত জিবরাঈল (আ):নবী ও রসূলগণের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া তাঁর কাজ।
২. হযরত মীকাঈল (আ):তিনি বৃষ্টি বর্ষণ ও রিযিক বিতরণের দায়িত্ব পালন করেন।
৩. হযরত ইসরাফীল (আ): তিনি একটি সিংগা হাতে নিয়ে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা করছেন। কেয়ামতের সময় হলে আল্লাহ তা’আলার হুকুমে তিনি সিংগায় ফুঁৎকার দিবেন এবং তা বেজে উঠবে। আর সাথে সাথে জগতে মহাপ্রলয় হয়ে যাবে।
৪. হযরত আজরাঈল (আ): যার আয়ু শেষ হয়ে যায় তার প্রাণহানি ঘটানোর দায়িত্ব ইনিই পালন করেন।
ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনাও অত্যাবশ্যক।

আখেরাতের প্রতি ঈমান

এ বিশাল সৃষ্টিজগত একদিন ভেঙ্গেচুরে শেষ হয়ে যাবে এবং তার জায়গায় আবার এক নতুন জগত সৃষ্টি করা হবে। সেখানে সকল মানুষকে জীবিত করে একত্র করা এবং দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে হিসাব-নিকাশ নিয়ে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা তাদের বিচার করবেন। বিচারে যারা আল্লাহর অনুগত বান্দাহ বলে প্রমাণিত হবে তারা চিরসুখময় স্থান বেহেশত লাভ করবে। আর যারা নাফরমান বলে প্রমাণিত হবে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। এ সমগ্র বিষয়গুলোই আখেরাতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এগুলো আবার কয়েকটি স্তরে বিভক্ত।
প্রথম স্তরে মৃত্যু। প্রত্যেক মুসলমানকেই বিশ্বাস করতে হবে যে, তার দুনিয়ার জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে এবং মৃত্যুর ভিতর দিয়ে তাকে পরকালের জীবনে প্রবেশ করতে হবে। মৃত্যুকে কিছুতেই এড়ানো যাবে না।

মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই কবরে যাবে। কতকাল কবরে থাকতে হবে তা একমাত্র আলিমুল গায়েব আল্লাহ তা’আলাই জানেন। কবরে দু’জন ফেরেশতচ এসে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন

১. তোমার রব কে?
২. তোমার দীন কি?
৩. ঐ ব্যক্তি (রসূল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে?

যারা ঠিক ঠিক উত্তর দিবে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে। আর যারা উত্তর দিতে অক্ষম হবে অথবা আবল-তাবল উত্তর দিবে তাদের কবর হবে দুঃখময়।
আল্লাহর হুকুমে হযরত ইসরাফীল (আ) সিংগায় প্রথম দফা ফুঁৎকার দিলে সৃষ্টজগত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক ও লা-শরীক আল্লাহ ছাড়া সেদিন আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এটিই হবে কেয়ামত।

এক নির্দিষ্ট সময় পর পুনরায় আল্লাহ তা’আলার হুকুমে সিংগা বেজে উঠবে। সকল মানুষ নিজ নিজ কবর থেকে পুনরায় জীবিত হয়ে একটি বিশাল ময়দানে জড়ো হবে। এ ময়দানের নাম হাশর ময়দান। মাথার উপর থাকবে প্রখর সূর্য কিরণ ও পায়ের নীচে উত্তপ্ত তামার যমীন। এ ময়দানে দাঁড়িয়ে সকলকেই দুনিয়ার জীবনে যাকিছু করে এসেছে তা হিসাব দিতে হবে।
যাদের নেক কাজের পরিমাণ বেশী হবে তারা বেহেশত নামক এক অতি সুখ-শান্তিপূর্ণ বাসস্থান লাভ করবে। আর যাদের নাফরমানীর পরিমাণ বেশী হবে তাদের দোযখ নামক অশেষ দুঃখ ও কঠোর শাস্তির স্থানে নিক্ষেপ করা হবে।

স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা বিচার করবেন। মানুষের জীবন সঙ্গী ফেরেশতাগণের লিখিত আমলনামায় সকলেই সেদিনই পূর্বের সকল ভাল-মন্দ কাজ সুরক্ষিত দেখতে পাবে। মানুষের হাত-পা, চোখ-মুখ ও চামড়া সেদিন আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দেবে।
সেদিন কারো কথা বলার সাহস থাকবে না। কেউ কারো সাহায্য করতে পারবে না। এই কঠিন দিনে শুধু ঈমান, আমল ও আল্লাহর মেহেরবানীই হবে সম্বল। যারা এ কঠিন দিনের প্রতি ঠিক ঠিকভাবে ঈমান আনবে তারা কখনও আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হতে পারে না।

তাকদীরের প্রতি ঈমান

প্রত্যেক মুসলমানকেই তাকদীরের প্রতি ঈমান আনতে হয়। তাকদীর অর্থ অদৃষ্ট। আল্লাহ তা’আলাই ভাল ও মন্দ ঠিক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলার মরজীর বিপরীত কোনো কিছুই হতে পারে না। মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্ট জীব ও গাছ-পালা, কীট-পতংগ ইত্যাদি কোথায় কখন কিভাবে জন্মগ্রহণ করবে, কিভাবে কার মরণ হবে, কি খাবে, কোন্ পথে চলবে, সৃষ্টজগতে কখন কি ঘটবে সবই আল্লাহ তা’আলা পূর্ব থেকে ঠিক করে দিয়েছেন।
একবার রসূল করীম (স)-কে জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (স)! আমরা দুঃখ ও ব্যথা দূর করার জন্য ঝাড় ফুঁক ব্যবহার করে থাকি, কিংবা যেসব ওষুধ পত্রাদি ব্যবহার করি অথবা বিপদ থেকে রক্ষা প্রাপ্তির জন্য আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা করি তা কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর বদলাতে পারে? রাসলে কারীম (স) বলেন, “এসব জিনিসও আল্লাহরই তাকদীর।”
-(মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)

এর অর্থ হলো এই যে, একদিকে যেমন সবকিছুই আল্লাহ তা’আলা ঠিক করে দিয়েছেন ঠিক তেমনি অপরদিকে বিপদ-আপদ ও অসুখ-বিসুখ ইত্যাদিতে মানুষ কি কি প্রতিকার করলে কি কি ফল লাভ করবে তাও ঠিক করে দিয়েছেন। মোদ্দাকথা, রোগও তিনি দিয়েছেন- ওষুধও তাঁরই। তাঁর ইচ্ছায়ই বিপদ-আপদ আসে। আবার তিনিই ওসব দূর করে দেন। সকল ক্ষমতা, তাঁরই হাতে নিহিত।

মানুষ তাকদীরের উপর বিশ্বাস রেখে সকল কাজ ঠিক ঠিকভাবে করে যাবে। কিন্তু ইষ্ট অনিষ্ট আল্লাহর হাতে। মানুষের চেষ্টা-যত্নই চূড়ান্ত নয়। আল্লাহর সিদ্ধান্তই আসল। এটাই তাকদীর সম্পর্কে মোটামুটি কথা। তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা অত্যন্ত জরুরী। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, তাকদীরে অবিশ্বাসকারী ব্যক্তি পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর পথে দান করলেও তা কবুল হবে না, বরং সে ব্যক্তি জাহান্নামেই যেতে বাধ্য হবে।

মুসলমানের বুনিয়াদী আমল

ঈমানের অধ্যায়ে আলোচিত বিষয়গুলো থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, মুসলমানের প্রতি পদেই হিসাব করে চলতে হবে। মুসলমান আল্লাহর বান্দাহ বা দাস। তাই আল্লাহ যে কাজ করতে হুকুম করেছেন, তা তাদের করতে হবে। আর যে যে কাজ করতে তিনি নিষেধ করেছেন, তা তারা কিছুতেই করবে না। যারা আল্লাহ ও রসূল (স)-এর প্রদর্শিত পথে জীবন যাপন করবে, তারাই আখেরাতে বেহেশত লাভ করবে। আর যারা বিপরীত পথে চলবে, তারা পরিণামে দোযখে গিয়ে অশেষ কষ্ট ও আযাব ভোগ করবে।

ঈমান ঠিক হলে আমলও সেরূপ হবে। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, বিষপানে মৃত্যু হবে, সে কখনও বিষপান করবে না। যে বিশ্বাস করে, খাবার খেলে ক্ষুধা দূর হয় সে ক্ষুধা পেলেই খাবে। অর্থাৎ মানুষের বিশ্বাস বা ঈমানের অনুরূপই হয় তার আমল বা কার্যকলাপ। তাই ঈমানের অধ্যায়ে বর্ণিত বিষয়গুলোর উপর যাদের মজবুত বিশ্বাস রয়েছে, তারা নিজেদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ ও রসূল (স)-এর অধীনে সঁপে দেয়। অন্য কথায় বলতে হয়, তারা আল্লাহ ও রসূল (স)-এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ করার নামই ইসলাম। আর এজন্যই তাদের বলা হয় মুসলিম অর্থাৎ আত্মসমর্পিত। মুমিন অর্থ ঈমানদার বা বিশ্বাসী। মুমিন হলেই তাকে মুসলিম হতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশ মুতাবিক জীবন যাপন করতে হবে। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও মুসলমান স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। এ স্বেচ্ছাচারহীন আত্মসমর্পিত জীবন (ইসলাম) পাঁচটি বুনিয়াদের উপর স্থাপিত। আমরা নিম্নে একটি একটি করে এ পাঁচটি বিষয় আলোচনা করছি।

১. কালেমায়ে তাইয়্যেবা

প্রত্যেক মুসলমানকেই একটি ছোট্ট কালেমা বা মূলমন্ত্র উচ্চারণ করে ইসলামী জীবন যাপনের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। একজন অমুসলমান এ কালেমা পড়েই ইসলামের সীমায় প্রবেশ করে। মুসলমানের সন্তান জন্মালেই তার কানে এ কালেমার আওয়াজ শোনানো হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম সন্তানকেও সেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এ কালেমা পড়তে হয়। কালেমাই মুসলমান ও কাফেরের মধ্যকার সীমারেখা। এ কালেমাকে যারা গ্রহণ করে তারা মুসলমান ও জান্নাতী। আর যারা অস্বীকার করে,

তারা কাফের ও জাহান্নামী। কালেমা তাইয়্যেবা নিম্নরূপ:

لا اله الا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ الله –

অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রসূল।”
এ কালেমায় দু’টি অংশ। একটি হচ্ছে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। এ অংশটির নাম তাওহীদ বা একত্ব ঘোষণা। দ্বিতীয় অংশটি হচ্ছে, “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রসূল। এ অংশটির নাম রিসালত।

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর” মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করে নেয়। সে ঘোষণা করে যে, “আল্লাহ ছাড়া তার আর কোনো মনিব বা প্রভু নেই।” অন্য কারো সামনে সে মাথা নত করবে না, শুধু আল্লাহরই কাছে নত করবে। শুধু আল্লাহরই হুকুম মেনে চলবে- অন্য কারো নয়। যা আশা করার তা আল্লাহর কাছেই করবে, অন্য কারো কাছে করবে না। শুধু আল্লাহকে ভয় করবে। দুনিয়ার অন্য কোনো শক্তির বিন্দুমাত্র ভয় তার মনে স্থান পাবে না। ভালমন্দ যাকিছু হয় সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয় বলে সে সকল বিষয়ে আল্লাহরই মুখাপেক্ষী হবে-আর কারো নয়। এবং সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই সকল কাজ করবে। আল্লাহকে নারাজ করে দুনিয়ার কোনো মানুষের সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য বিন্দুমাত্রও চেষ্টা করবে না।

কালেমার দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” উচ্চারণের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা পুনরায় ওয়াদা করে যে, হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার এবং তাঁর মরজী অনুসারে জীবন-যাপন করার যে পথ দেখিয়ে গেছেন শুধু সে পথ ধরেই সে চলবে। রসূলুল্লাহ (স)-এর শিক্ষার সাথে যে যে বিষয়ের মিল রয়েছে তা সে গ্রহণ করবে এবং যেসব বিষয়ে গরমিল দেখা দিবে তা সে বিনা দ্বিধায় পরিত্যাগ করবে।

২. নামায

প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলমান নর-নারীর উপর দৈনিক পাঁচবার নামায পড়া ফরয। কুরআন শরীফে আল্লাহ তা’আলা বার বার নামায আদায় করার জন্য তাকিদ করেছেন। হযরত রসূলে করীম (স) বলেছেন, “নামায দীন ইসলামের ভিত্তি। যারা নামায কায়েম করে তারা দীনকেই কায়েম রাখে। আর যারা নামায ছেড়ে দেয় তারা দীনের ভিত্তি চূর্ণ করে দেয়।” নবী (স) আরও এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ছেড়ে দেয় সে কুফরী করে।”
নামাযের সময় বান্দাহ দুনিয়ার সকল কাজ ছেড়ে দিয়ে খোদার দরবারে হাজির হয়ে ঘোষণা করে যে, সে আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহরই হুকুম মুতাবিক সহজ-সরল পথে সে চলতে চায়। রুকু, সিজদা, কেয়াম, তাসবীহ, কেরাত ইত্যাদির ভিতর দিয়ে বান্দাহ আল্লাহর সাথে বারবার ওয়াদা করে যে, সে দুনিয়াতে আল্লাহর ফরমান মেনে চলবে এবং আল্লাহর নাফরমান লোকদের সাথে কোনো সম্পর্কই রাখবে না।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে, দ্বিপ্রহরের সামান্য পরেই, কর্মব্যস্ত বিকাল বেলা, সূর্যাস্তের পরপরই এবং রাতের কিছু অংশ পার হয়ে গেলে আল্লাহর বান্দাহ মহান মনিবের সাথে তার চুক্তি ও ওয়াদার পুনরাবৃত্তি করে। এর ফলে সে কখনও আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হতে পারে না।
নবী করীম (স) সাহাবাদের প্রশ্ন করলেন, “তোমাদের কারো বাড়ীর নিকটে যদি নদী থাকে আর সে যদি তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তাহ-লে তার গায়ে ময়লা থাকতে পারে কি?” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, “না: কখনই থাকতে পারে না।” নবী করীম (স) পুনরায় বললেন, ঠিক এভাবেই যে ব্যক্তি দৈনিক পাঁচবার ঠিক ঠিক মত নামায আদায় করে তার মধ্যে গুনাহ্ থাকতে পারে না।”

বস্তুত নামাযের মধ্য দিয়েই বান্দার মনে আল্লাহর ভয় ও মহব্বত পয়দা হয়। নামাযের মাধ্যমেই বান্দাহ সৎ পথে চলার প্রেরণা পায়। তাই নামাযী ব্যক্তির জীবন পাক-পবিত্র ও দোষমুক্ত হয়ে উঠে। নামায ছাড়া কেউ মুসলমান হতে পারে না এবং বে-নামাযীর জীবন কখনও পাক-পবিত্র হয় না।

৩. রমযান শরীফের রোযা

রমযান মাসে পূর্ণ এক মাস রোযা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। কালেমা পড়ে যারা আল্লাহ ও রসূল (স)-এর প্রদর্শিত পথে জীবন যাপনের ওয়াদা করেছে। যারা দৈনিক পাঁচবার করে নামায আদায় করে আল্লাহর বান্দাহ হয়ে চলার কোশেষ করছে; তাদের প্রতি বছরে পূর্ণ এক মাস সর্বক্ষণ আল্লাহ তা’আলার হুকুম মুতাবিক চলার এক বাস্তব অভ্যাস করানো হয় রোযার মাধ্যমে।
একজন রোযাদার মুসলমান সুবেহ সাদেকের পূর্ব থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে পানাহার ও স্ত্রী সংগমাদি থেকে বিরত থাকে। এ সময় তার ক্ষুধা

৪. যাকাত

নিজেদের প্রয়োজনীয় খরচ বাদে যাদের হাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ উদ্বৃত্ত থাকে তাদের প্রতি বছরে একবার ঐ সম্পদের এক অংশ যাকাত হিসাবে দান করতে হয়। নগদ টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, গৃহপালিত পশু, কল-কারখানা, দোকান-পাট, পণ্য দ্রব্য, জমির উৎপন্ন ফসল, খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি সকল সম্পদেরই যাকাত দিতে হয়।
ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালকগণ ধনীদের নিকট থেকে হিসাব মুতাবেক যাকাত আদায় করবে এবং যাকাতের অর্থ দরিদ্র, অক্ষম, অভাবগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, বেকার, এতীম ও অন্যবিধ দুর্দশাগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করবে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন ধনীদের সম্পদে অভাবগ্রস্ত লোকদের অংশ রয়েছে। এ অংশ শোধ না করা পর্যন্ত সম্পদ নাপাক থাকে। যাকাত প্রথার মাধ্যমেই সমাজে ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য দূর হয় এবং সকলেরই সচ্ছলতা আসে।
ইসলামী শাসন যে দেশে নেই সে দেশও মুসলমানগণ জামায়াত বদ্ধ হয়ে যাকাত আদায় এবং বণ্টনের কাজ করে থাকে।

হযরত আবু বকর (রা)-এর খিলাফতের সময় কিছু সংখ্যক লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অর্থাৎ কাফেরদের বিরুদ্ধে যেভাবে মুসলমান দীনের জন্য লড়াই করে; ঠিক সেভাবেই যাকাত দিতে যারা অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তাই যাকাত ধনী মুসলমানদের জন্য অবশ্যই দেয়।

৫. হজ্জ

নিজ নিজ বাসস্থান হতে রওয়ানা হয়ে কা’বা শরীফে তাওয়াফ করতে যাওয়া ও ফিরে আসার আর্থিক সংগতি যে সকল মুসলমানের রয়েছে তাদের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয।
আত্মীয়-স্বজন, বাড়ী-ঘর ও সংসার সম্পত্তির মায়া কাটিয়ে আল্লাহর বান্দাহগণ আল্লাহর ডাকে কা’বা ঘরে হাজির হয়ে বলে, “আয় আল্লাহ! তোমার ডাকে হাজির হয়েছি।” হজ্জের মধ্য দিয়ে হাজীরা প্রমাণ করে দেয় যে, মুসলমান আল্লাহর আদেশে দুনিয়ার সবকিছু ত্যাগ করতে সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে।

দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী, বিভিন্ন রংয়ের লোক কা’বা শরীফ ও আরাফাতের ময়দানে জড় হয়ে একটি বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করেন। প্রতি বছরই দুনিয়ার মুসলমান প্রমাণ করে যে, তারা যে দেশেই থাকুক, আর যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন, মুসলমান পরস্পরের ভাই। তারা একই আল্লাহর বান্দাহ, একই রসূল (স)-এর অনুসারী এবং একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। ভাষা বা অঞ্চলের দূরত্ব মুসলমানদেরকে পৃথক করতে পারে না।হযরত রসূলে করিম (স) বলেছেন, “যাকে বিশেষ কোনো শরয়ী প্রয়োজন হজ্জ থেকে বিরত রাখেনি, কোনো অত্যাচারী শাসক হজ্জ করতে বাধা দেয়নি অথবা কোনো রোগের কারণে যে হজ্জ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়নি; সে ব্যক্তি যদি শক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করে মারা যায় তাহলে সে খৃস্টান বা ইহুদীদের মরণের মতই (বেদ্বীন অবস্থায়) মরুক।”
বুঝা গেল প্রতিটি সক্ষম মুসলমানেরই জন্য হজ্জ করা ফরয এবং শক্তি-সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করবে না, তাদের শক্ত গোনাহগার হতে হবে।

মুসলমানের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য

পূর্বের দু’ অধ্যয়ে যা যা আলোচনা করা হয়েছে, তা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, মুসলমানদের চরিত্র অন্যান্য জাতির চরিত্র থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। তারা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মুসলমান সকল কাজেই আল্লাহ ও রসূলের অনুগত থাকে। পক্ষান্তরে অমুসলমান আল্লাহ ও রসূলের আদেশ-নিষেধের কোনো পরোয়াই করে না। তারা নিজেদেরই নফসের খাহেশ অনুসারে জীবন যাপন করে, অথবা তাদেরই মত অপর মানুষের অন্ধ অনুসরণ করে চলে। মুসলমানের শ্রেষ্ঠত্বই তার চরিত্রের দরুন। তাই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের চরিত্র উন্নত করার প্রতি বিশেষ জোর দিয়েছেন এবং হযরত রসূল (স) আমাদের জন্য আদর্শ পুরুষ হিসাবে জীবন-যাপন করে চরিত্রের এক উজ্জ্বল নমুনা কায়েম করে গেছেন। আমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহ ও রসূলের পসন্দনীয় চরিত্র গঠন করার জন্য সর্বদা যত্নবান থাকতে হবে। নিম্নে আমরা চরিত্রের কয়েকটি বিশেষ বিশেষ দিক উল্লেখ করছি:

১. আল্লাহ ও রসূল (স)-এর আনুগত্য করবে
মুসলমানদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তারা সর্বদাই আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হয়ে জীবন যাপন করবে। আল্লাহ ও রসূল (স) যে কাজ ভাল বলে ঘোষণা করেছেন, তারাও সে কাজকেই ভাল বিবেচনা করবে। আর আল্লাহ ও রসূল (স) যা মন্দ আখ্যা দিয়েছেন সেগুলোকে মন্দই মনে করবে। তাদের চাল-চলন ও উঠা-বসা দেখেই যে কোনো লোক বুঝতে পারবে যে, তারা আল্লাহ ও রসূলের অনুগত। আল্লাহ ও রসূল (স)-এর আনুগত্য করার দরুন যদি তাদের পার্থিব স্বার্থ নষ্ট হতে দেখা যায় বা দুনিয়ার কোনো শক্তিশালী মানুষ কিংবা মানব গোষ্ঠীর বিরাগভাজন হবার আশংকা দেখা দেয়; তবু তারা আল্লাহ তা’আলারই অনুগত থাকবে। পার্থিব স্বার্থহানি বা কোনো ক্ষমতাশালী মানুষ বা দলের অসন্তুষ্টিকে সে হাসিমুখে বরণ করে নিতে পারবে। সংক্ষেপে বলতে হয় আল্লাহ ও রসূল (স)-এর আনুগত্যে মুসলমান সর্বদাই অটল ও অবিচল মনোভাব গ্রহণ করবে।

২. আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবে না
মুসলমান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ মানুষের কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না।

একথার উপর অটল ঈমান যাদের আছে তাদের অন্য মানুষকে ভয় করার কোনো সঙ্গত কারণই থাকতে পারে না। মুসলমানদের বিশ্বাস নির্ধারিত সময়ের আগে কারো মরণ হবে না। আর সে সময় যখন এসে যাবে, তখন মৃত্যুর হাত থেকে কিছুতে রেহাই পাওয়া যাবে না। তাই মরণকে ভয় করার কথাই উঠতে পারে না। কেননা, মৃত্যু একদিন হবেই। এবং সে নির্দিষ্ট দিনটির আগে কেউ কাউকে হত্যা করতে পারবে না। সুতরাং ভয় করে লাভ কি? তাই মুসলমান নির্ভীক ও মরণ জয়ী।

৩. সর্বদা ন্যায়ের পথে থাকবে
মুসলমানের দায়িত্বই হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও যুলুম-শোষণের উচ্ছেদ সাধন করে আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহরই আইন-বিধান মুতাবেক ন্যায়-নীতি, সুবিচার ও সকলের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কাজেই মুসলমান থাকা অবস্থায় কিছুতেই অন্যায় করা, অন্যায়ের সমর্থন অথবা অন্যায়কে বরদাশত করা সম্ভব নয়। মুসলমান মাত্রই ন্যায়পরায়ণ।

৪. সদা সত্য কথা বলবে
মুসলমান সর্বদা সত্য কথা বলতে বাধ্য। কেননা, মিথ্যা বলা মহাপাপ বা কবীরা গুনাহ। আল্লাহ ও রসূল (স) হুকুম করেছেন যে, মুসলমানকে সর্বদা সত্যভাষী হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সে মিথ্যার আশ্রয় নিবে না। যে মুখ দিয়ে আল্লাহর যিকির করা হয়, যে মুখ দিয়ে নামায-বন্দেগী আদায় করা হয়, সে মুখকে কখনও মিথ্যা দ্বারা কলুষিত করা যায় না। তাই মুসলমান সদা সত্যভাষী।

৫. বাজে কাজ থেকে বিমুখ থাকবে
মুসলমানের জীবন উদ্দেশ্যপূর্ণ। তারা নিজেরা আল্লাহর বান্দা হয়ে চলতে ও অপরকে এ পথে চালাতে দৃঢ় সংকল্প। তাই তার হাত-পা, চোখ-মুখ, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাকশক্তি, চলৎশক্তি, জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক ইত্যাদি আল্লাহর দেয়া সম্পদগুলোকে তার মহান উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজে নিয়োজিত করবে। জীবনের একটি মুহূর্তকেও সে অপ্রয়োজনীয় কাজে বা বাজে কথাবার্তায় নষ্ট হতে দিবে না। তার দেহের কোনো অংশকেই সে অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্যবিহীন কাজে নিয়োগ করবে না। এজন্যই নাচ-গান, অশ্লীল গল্প-গুজবাদি থেকে মুসলমান বিরত থাকে এবং নিজের সকল সময়, যোগ্যতা ও গুণাবলীকে আল্লাহর পথে নিয়োজিত করার চিন্তায় সর্বদা মশগুল থাকে।

৬. যৌন বিষয়ে সংযমী হবে
মানুষের বংশ বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তা’আলা মানুষকে নর ও নারী এ দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। এবং বংশ বৃদ্ধির ধারা জারী রাখার জন্যই আল্লাহ তা’আলা পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিশেষ এক আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সে আকর্ষণের মধ্যেও শালীনতা পবিত্রতা থাকবে, কোনো অবস্থাতেই তা’ জন্তু-জানোয়ারের মত খোলামেলা হবে না। মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য এবং মানুষের বংশ বৃদ্ধির ধারাকে পূত-পবিত্র রাখার জন্য আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিয়ে ছাড়া নারী-পুরুষের মিলন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শুধু মিলনই নিষিদ্ধ করেননি উপরন্তু অবৈধ মিলন থেকে সমাজকে পবিত্র রাখার জন্য নর-নারীর অবাধ মেলামেশাও বন্ধ করে দিয়েছেন।
মুসলমান পবিত্র জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক। সে সমাজে অপবিত্র ও উচ্ছৃংখলতার প্রসার পসন্দ করে না। তাই তাকে যৌন বিষয়ে অত্যন্ত সংযমী জীবন যাপন করতে হয়। তাই মুসলমান নর-নারী ও যুবক-যুবতী কঠোর যৌন সংযমী হয়।

৭. আমানতদার হবে
মুসলমান স্বভাবতঃই আমানতদার। তার নিকট টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, জিনিস-পত্র, জনসধারণের সম্পত্তি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যা কিছু গচ্ছিত রাখা হবে, তা-ই সে পূর্ণ ঈমানদারীর সাথে সংরক্ষণ করবে। যার আমানত তার নিকট চাওয়া মাত্র অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে। হযরত রসূল করিম (স) বলেছেন, আমানত খেয়ানতকারী মুনাফিক। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স)-এর প্রাণের দুশমন যারা ছিল, তারাও বিনাদ্বিধায় তাঁর কাছে তাদের আমানত জমা রাখতো। এজন্যই তিনি হিজরতের রাতে জনসাধারণের আমানত ফিরিয়ে দেবার জন্য হযরত আলী (রা)-কে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। আমানতদারী মুসলমানের ঈমানের চিহ্ন। আল্লাহ তা’আলাও কুরআন শরীফে মুমিনদের পরিচয় বর্ণনা করার সময় তাদের আমানতদারীর বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।

৮. ওয়াদা পালনকারী হবে
মুসলমানের চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ এই যে, তারা ওয়াদা পালন করে। ঈমানদার ব্যক্তি কখনও ওয়াদা লংঘন করে না। ব্যক্তিগতভাবে মুসলমান যার সাথে যে ওয়াদা করবে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। মুসলমানের জামায়াতের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি অন্য দল বা জাতির সাথে যে ওয়াদা করবে, সকল মুসলমানই ঐ ওয়াদা পালন করতে সচেষ্ট থাকবে। ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালকগণ অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে যেসব চুক্তি সম্পাদন করেন তাও পালন করা তাদের দ্বীনি দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। ওয়াদা লংঘন বা চুক্তি ভংগ করা মুসলমানের জন্য শক্ত গুনাহ। মুসলমান যদি কারো সাথে কোনো কথা দেয় তাহলে সকলেই বিশ্বাস করবে যে, ঐ কথার আর কোনো নড়চড় হবে না। তাহলেই দুনিয়ার মানুষ নির্ভয়ে মুসলমানদের উপর আস্থা স্থাপন করবে এবং তাদের অনুসৃত পথে চলতে আগ্রাহান্বিত হবে।

৯. সাদাসিদা জীবন যাপনকারী হবে
হযরত রসূলে করীম (স) বলেছেন, “সরল ও সাদাসিদা জীবন যাপন ঈমানেরই অংশ।”-(আবু দাউদ)
মুসলমানের চরিত্র উচ্চ এবং জীবন যাপন হবে খুবই সাদাসিদা। অযথা জাঁকজমক ও বিলাসী জীবন যাপন আল্লাহ ও রসূলের নিকট অপসন্দনীয়।

১০. জিহ্বার সংযম পালন করবে
হযরত রসূলে করীম (স) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা ও লজ্জাস্থল হেফাজত করে রাখার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে; আমি তার বেহেশত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারি।”(বুখারী)
অর্থাৎ মুসলমান কখনও অসংযতভাবে কথাবার্তা বলতে পারে না। কেননা, তার মুখ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের জন্য তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। অনুরূপভাবে সে তার লজ্জাস্থলকে সযত্নে সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রকারেই সে উচ্ছৃংখল আচরণে লিপ্ত হবে না।

১১. নম্র স্বভাবের অধিকারী হবে
মুসলমান স্বভাবতঃই নম্র ও ভদ্র। হযরত রসূলে করীম (স) অত্যন্ত নম্র, ভদ্র স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি অহংকার, কঠোরতা ও দুর্ব্যবহার পসন্দ করতেন না। মাটির উপর দিয়ে দুপ-দাপ করে হাটা, মানুষের দিকে গাল ফুলিয়ে রাখা এবং অহেতুক উচ্চৈস্বরে কথা বলা আল্লাহ ও রসূল (স) কখনও পসন্দ করেন না। তাই রসূলুল্লাহ (স)-এর আদর্শ অনুসরণ করে প্রতিটি মুসলমানকেই নম্র ও ভদ্র হতে হবে।

১২. ধৈর্যশীল হবে
দুনিয়ার জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অভিযোগ থাকা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষত অন্যান্য মানুষ যখন ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে বিচার-বিবেচনা না করেই চলতে পারে, অথচ মুসলমানকে ভাল-মন্দ ও বৈধ-অবৈধের পার্থক্য করতে হয়, তাই দুঃখ-কষ্ট স্বাভাবিক। তাছাড়া স্বার্থপর খোদাদ্রোহী মানুষ যখন দ্বীনদারের সাথে দুশমনী শুরু করে তখন দুঃখ-কষ্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে ধৈর্যের প্রয়োজন অপরিসীম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তিনি সর্বদাই ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন।

হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে, শেষ জামানায় মানুষের নাফরমানীর মাত্রা এতবেশী হবে যে, সে সময় ঈমানের উপর কায়েম থাকা জলন্ত অঙ্গার খণ্ড হাতের মুঠোয় ধরে রাখার মতই কষ্টকর হবে। এজন্যই ঈমানদারদের ধৈর্য বা সবর থাকা খুবই জরুরী।

১৩. একে অপরের প্রতি দয়াশীল হবে
আল্লাহ তা’আলা কুরআন পাকে মুমিনদের গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “তারা পরস্পরের প্রতি দয়াশীল।” মুসলমান একে অপরের ভাই। একের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট সকলের জন্যই বিপদ ও দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা কখনও একে অপরের অনিষ্ট চিন্তা করে না। বরং সর্বদা পরস্পরের প্রতি দয়াশীল হয়। একজনের বিপদ হলে সকলেই তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। হযরত রসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন, “একের প্রতি অপরের দয়া, মুহব্বত ও আকর্ষণে মুসলমানকে একটি মানব দেহের মত দেখা যাবে। শরীরের কোনো অংগে রোগের আক্রমণ হলে যেমন পূর্ণ শরীরে অনিদ্রা ও জ্বর দেখা দেয় (তেমনি মুসলমানদের একজন বিপদগ্রস্ত হলে সকল মুসলমানই ব্যথা অনুভব করে)।”
-(বুখারী, মুসলিম)

১৪. হালাল উপার্জনকারী হবে
হযরত রসূলে করিম (স) বলেছেন, “নিজের হাতে উপার্জনের চেয়ে উত্তম খাদ্য কেউ খায়নি। আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ) নিজের হাতে শ্রম করে (সে পয়সায়) খাদ্য গ্রহণ করতেন।”
নবী করীম (স) অন্য হাদীসে এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে সে তা থেকে সদকা করলে তা কবুল হবে না এবং নিজের ও পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণে ঐ অর্থ ব্যয় করলে তাতে বরকত হবে না। আর ঐ সম্পদ রেখে মারা গেলে তা তার দোযখের সম্বল হবে।
তাই মুসলমান সর্বদা সদুপায়ে উপার্জন করবে। আল্লাহ ও রসূল যা যা নিষেধ করেছেন সেসব উপার্জনের প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণই থাকবে না। কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে দুনিয়াতে যাকিছু উপার্জন ও ব্যয় করে আল্লাহর নিকট তার সম্পূর্ণ হিসাব দিতে হবে।

১৫. দুর্নীতি বিরোধী হবে
স্বাভাবিকভাবেই মুসলমান কখনও অবৈধ পথে উপার্জন, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-রিশওয়াত ইত্যাদি ধরনের অনাচার সহ্য করতে পারে না। তারা শুধু যে এসব দুর্নীতি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখবে তাই নয়; উপরন্তু তারা সমাজ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি উচ্ছেদ করার জন্য সচেষ্ট হবে। মুসলমানের কাজই হচ্ছে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের উচ্ছেদ করা। তাই তারা নিজেরা তো অন্যায় ও দুর্নীতির সাথে নিজেদের জড়িত করতে পারেই না, উপরন্তু সকল দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে তাদের জীবনভর আপোষহীন সংগ্রাম চালাতে হয়।

১৬. আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল থাকবে
মুসলমান হালাল রুজী করবে, ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে থাকবে। দুনিয়ায় পাক-পবিত্র জীবন যাপন করবে এবং সর্বদা সকল বিষয়ে আল্লাহ তা’আলার উপর নির্ভর করবে। তারা বিশ্বাস করে, আল্লাহই রিযিকের মালিক -তাই তাঁর উপর নির্ভর করে সৎপথে উপার্জনের চেষ্টা করলে তিনিই অভাব পূরণ করতে পারেন। অনুরূপভাবে সকল বিপদ-আপদ ও প্রতিকূল অবস্থায় একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সাহায্য করতে পারেন। এজন্য মুসলমান ধন-ধৌলত, দৈহিক শক্তি, রাজশক্তি ইত্যাদির উপর ভরসা না করে শুধু আল্লাহরই উপর নির্ভর করে জীবনের সকল কঠিন স্তর অতিক্রম করে।

১৭. দ্বীনে হকের সাক্ষ্যদানকারী হবে
দুনিয়ার সকল মানুষকে ইসলামের সুখ-শান্তিময় পথ দেখানো মুসলমানের দায়িত্ব। তাই তারা যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিনই দুনিয়ার মানুষের উদ্দেশ্যে এ সাক্ষ্যদান করবে যে, একমাত্র আল্লাহর দ্বীনই সকল মানুষের ইহ ও পরকালের সুখ-শান্তি দিতে পারে। অন্য কোনো দ্বীন বা জীবন বিধান মানুষকে সুখ-শান্তি দান করতে পারে না। এ সাক্ষ্যদান করার দু’টি পথ রয়েছে। একটি হচ্ছে মৌখিক আর অপরটি হচ্ছে বাস্তব আদর্শ স্থাপন করে। অর্থাৎ মুসলমান মুখের ও লেখনীর সাহায্যে দুনিয়ার মানুষকে বুঝিয়ে দেবে যে, আল্লাহর দীন মেনে চলার মধ্যেই মানব জাতির কল্যাণ নিহিত। দ্বিতীয়ত, তারা নিজেরা আল্লাহর দীন মুতাবিক জীবন যাপন করে দুনিয়ার মানুষের নিকট এক উজ্জ্বল নমুনা তুলে ধরবে। তাহলে মুসলমানদের মৌখিক প্রচার বা তাবলীগ থেকে যারা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে অক্ষম তারা মুসলমানদের জিন্দেগীতে বাস্তব নমুনা দেখে ইসলামের কল্যাণকারিতা উপলব্ধি করতে পারবে। মুসলমান যদি এ কাজ থেকে বিরত হয় কিংবা তাদের বাস্তব জীবন যদি ইসলামের বিপরীত পথে পরিচালিত হয় তাহলে অন্যান্য মানুষকে গুমরাহীর পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দরুন মুসলমানদের আল্লাহর কাছে অপরাধী হিসেবে হাজির হতে হবে। তাই প্রতিটি মুসলমানকেই দীনের সাক্ষ্য দান করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
আগুন নিজে অত্যন্ত গরম। তার নিকটে যে যায় তাকেও সে গরম করে দিতে পারে। অনুরূপভাবে মুসলমান নিজে ইসলামের হুকুম-আহকামে পূর্ণরূপে মেনে চলে। যে তার সাথে মেলামেশা করবে তারই উপর ঈমানের প্রভাব পড়বে।

দিবারাত্রির দোয়া

মুসলমান দিবারাত্রি চব্বিশ ঘণ্টাই আল্লাহর বান্দা। এক মুহূর্তও এ বন্দেগী থেকে তার ছুটি নেই। এজন্য সদা সর্বদাই আল্লাহকে স্মরণ রাখা এবং তারই মরজী মত কাজ করা দরকার। হযরত রসূলে করীম (স) মুসলমানদের অনেক দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। এসব দোয়ার মাধ্যমেই বান্দাহ সর্বদা আল্লাহ তা’আলাকে উত্তমরূপে স্মরণ করতে পারে। নিম্নে জরুরী দোয়াগুলো দেয়া হলো। প্রতিদিনের ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতাদি কর্তব্য পালন করার সাথে সাথে এসব দোয়ার অভ্যাস করা খুবই জরুরী।

১. ঘুম থেকে জাগার পর

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانًا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورِ

“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবিত করেছেন। আর তাঁর দিকেই আমরা ফিরে যাবো।”

২. পায়খানায় যাবার সময়

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُبِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

“হে আল্লাহ! সকল প্রকারের নোংরামী ও নোংরা বিষয়গুলো থেকে তোমার আশ্রয় চাই।”

৩. বাড়ী থেকে বের হবার সময়

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَاحَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ –

“আল্লাহর নাম নিয়ে বের হচ্ছি। আল্লাহর উপরই ভরসা করছি। আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোনো শক্তি নেই।”

৪. সাক্ষাতের সময়

السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ .
“আপনাদের প্রতি শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।”

৫. মসজিদে প্রবেশ করার সময়

اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ .

“হে আল্লাহ, তোমার রহমতের দরজাগুলো আমার জন্য খুলে দাও।”

৬. আযান শুনলে

أشهد أن لا اله الا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ ورسوله – رَضِيتُ بِالله ربا وبالإسلام دينًا وَبِمُحَمَّدٍ من رَسُولاً ونَبِيًّا .

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক ও তাঁর কোনো শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স) তাঁর বান্দা ও রসূল। আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মদ (স)-কে রসূল হিসাবে আমি মেনে নিয়েছি।”

৭. ওজু করার সময়

بسم الله الرَّحْمَنِ الرَّحِيمُ – نويت أن أتوضاء الِاسْتِبَاحَةِ الصلوةِ تَقَربا إِلَى اللهِ تَعَالَى .

“আল্লাহর নামে শুরু করছি। তিনি রহমান ও রহীম। নামায ঠিকভাবে আদায় করার জন্য এবং আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার উদ্দেশ্যে ওজু করছি।”

৮. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ .

“হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার অনুগ্রহ ভিক্ষা করছি।”

৯. ঘরে প্রবেশের সময়

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِهِ خَيْرَ الْمَخْرَجِ ، بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا –

“হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঘরে প্রবেশ করার ও ঘর থেকে বের হবার কল্যাণ কামনা করছি। আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আমাদের একমাত্র রব আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করছি।”

১০. হাঁচি এলে

الْحَمْدُ لله

“সকল প্রশংসা আল্লাহর।”

১১. অন্যের হাঁচি শুনলে

يرحمكُمُ اللهُ.

“আল্লাহ তোমাদের রহম করুন।”

১২. খাবার শুরু করতে

بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ –

“আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি এবং আল্লাহর বরকত কামনা করছি।”

১৩. খাবার শেষ হলে

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি আমাদের পানাহার করিয়েছেন এবং মুসলমানদের মধ্যে শামিল করেছেন।”

১৪. আনন্দের সময়

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِعِزَّتِهِ وَجَلَالِهِ تَتِمُ الصَّالِحَتِ .

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। একমাত্র তাঁরই বিক্রম ও প্রতিপত্তিতে সকল ভাল কাজ সম্পন্ন হয়।”

১৫. শোক বা দুঃখের সময়

يا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ اسْتَغِيْثُ

“হে চিরঞ্জীব। হে চিরস্থায়ী! আমি তোমার রহমতের প্রত্যাশী।”

১৬. রাগের সময়

أعوذُ بِالله مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ

“বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।”

১৭. ভয়ের সময়

حَسَبِي اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তমভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করেন।”

১৮. অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا –

“আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদানে পুরষ্কৃত করুন।”

১৯. বিপদের সময়

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ – اللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِي مُصِيبَتِي هَذِهِ وَاخْلُفْنِي خيرا منه .

“আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তারই দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ আমাকে এ মসিবতে প্রতিদান দান করুন এবং আমার ক্ষতিসমূহ উত্তমরূপে পূরণ করুন।”

২০. বৃষ্টির জন্য

اللَّهُمَّ أَغِثْنَا –

“হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান কর।”

২১. বজ্র-বিদ্যু হলে

اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ .

“হে আল্লাহ! আমাদের গযবের দ্বারা হত্যা করো না ও আযাবের দ্বারা ধ্বংস করো না বরং তা নাযিল করার আগেই আমাদের উদ্ধার করো।”

২২. সফরে রওনা হবার সময়

اللهم هون عَلَيْنَا هُذَا السَّفَرَ وَأَطْرِ عَنَّا بُعْدَهُ اللَّهُمَّ أَنْتَ صَاحِبُ فِي السفرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُبِكَ مِنْ وَعَنَائِ السَّفَرِ وَكَابَةِ المنظر وسوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالْوَلَدِ .

“হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এ সফর সহজ কর এবং এর দূরত্বকে কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই সফরের সাথী ও পরিবার পরিজনের মধ্যে প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট অবাঞ্ছিত দৃশ্য ও ঘরে ফিরারকালে মালপত্র ও সন্তানাদির দূরবস্থা দর্শন থেকে তোমার আশ্রয় চাই।”

২৩. ভারবাহী জন্তু অথবা যানবাহনে আরোহণ করার পর

سبحانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبَّنَا لَمُنْقَلِبُونَ .

“আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি একে (যানবাহন বা সওয়ারী) আমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অন্যথায় আমরা একে অধীন করতে অসমর্থ ছিলাম। আর আমাদেরকে অবশ্যই মহান প্রভুর কাছে ফিরে যেতে হবে।”

২৪. সফর থেকে নিজের বাড়ীতে ফিরে এসে

أَسْبُونَ تَائِبُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ .

“আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী ও আল্লাহর প্রশংসাকারী।”

২৫. নৌকায় বা পুলে আরোহণ করে

بِسْمِ اللهِ مَجْرِهَا وَمُرْسَهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورُ الرَّحِيمُ
.
“এর চলা ও থামা আল্লাহরই নামে। অবশ্যই আমার মাওলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

২৬. রোগীর আরোগ্যের জন্য

اللَّهُمَّ رَبُّ النَّاسِ إِذْ هَبِ الْبَاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي الأَشِفَاءُ إِلَّا شِفَاءُ كَ شفاء لايُغَادِرُ سَقَمًا –

“হে আল্লাহ! মানুষের রব। রোগ দূর কর ও আরোগ্য দান কর। কেননা, তুমিই একমাত্র আরোগ্যকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া আরোগ্য নেই। আর এমন আরোগ্য যা রোগকে থাকতে দেয় না।”

২৭. কবরস্থানে গিয়ে

السَّلامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ وَأَنتُمْ سُلَفْنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ .

“হে কবরের বাসিন্দাগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদের ও আমাদের সকলেরই গুনাহ মাফ করুন। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আর আমরা তোমাদের অনুসরণকারী।”

২৮. মৃতকে কবরে নামানোর সময়

بسمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ .

“আল্লাহর নামে ও রসূলুল্লাহ (স)-এর তরীকা মুতাবিক এখানে নামাচ্ছি।”

২৯. কবরের উপরে মাটি দেয়ার সময়

مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُ كُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخرى .

“এ মাটি থেকেই তোমাদের (প্রথমবারে) সৃষ্টি করেছি, এ মাটিতেই তোমাদের ফিরিয়ে এনেছি আর এ মাটি থেকেই তোমাদের পুনরায় বের করবো।”

৩০. সন্ধ্যা আগমনে

أمسينا وأمسى الْمُلْكُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ .

“আমরা এবং সমগ্র সৃষ্টি বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সন্ধ্যা অতিবাহিত করছি।”

৩১. নতুন চাঁদ দেখার পর

اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ .

“আয় আল্লাহ! এ চাঁদকে আমাদের জন্য শাস্তি, ঈমান, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে উদয় কর। হে চাঁদ! তোমার ও আমার রব আল্লাহ।”

৩২. ঘুমানোর সময়

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَاءُ .

“হে আল্লাহ! তোমারই নাম উচ্চারণ করে মরি ও পুনরায় জীবিত হই।”

৩৩. খারাপ স্বপ্ন দেখে

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ وَشَرِّ هذه الرؤيا .

“আমি বিতাড়িত শয়তান ও স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।”

আত্মশুদ্ধির উপায়

দুনিয়ার আরাম-আয়েশ মানুষকে অবিরাম অন্যায় ও আল্লাহর নাফরমানীর পথে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে মুসলমান তাঁর মনিবের নিকট বিশেষ আবেদন জানায় এবং সর্বদাই আত্মসংশোধনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। নিম্নে আমরা আত্মশুদ্ধির দু’ একটি উপায় আলোচনা করছি:

১. জামায়াতে নামায পড়া
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায জামায়াতের সাথে পড়া আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষ ফলদায়ক। এতে অসংখ্য উপকার রয়েছে। আযান শুনে মসজিদের দিকে রওনা হওয়া এবং অনেক মুসল্লী একত্রে একজন ইমামের নেতৃত্বে ফরয নামায আদায় করার অভ্যাস ক্রমেই বান্দার মনে আল্লাহর মুহব্বত ও ভয় বাড়িয়ে দেয়। তাই সর্বদা জামায়াতের সাথে ফরয নামায পড়ার জন্য সচেষ্ট থাকা। দরকার।

২. সুন্নত ও নফল নামায পড়া
সুন্নত ও নফল নামায বেশী বেশী করে পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। অন্তর থেকে পাপচিন্তা ও পার্থিব লোভ-লালসা দূর হয়।

৩. তাহাজ্জুদ নামায পড়া
রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদ নামায পড়া আত্মশুদ্ধির জন্য খুবই কার্যকরী।

৪. কুরআন অধ্যয়ন করা
অর্থ সহকারে কুরআন অধ্যয়ন আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষ ফলদায়ক। অধুনা বাংলা তরজমাসহ কুরআন শরীফ পাওয়া যায়। ঐসব তরজমা এক পারা এক পারা করে খরিদ করাও সহজ। অর্থ সহকারে কুরআন অধ্যয়ন করলে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয়।

৫. রোযা রাখা
রমযান শরীফের ফরয রোযা তো অবশ্য পালনীয়, তাছাড়া মাঝে মাঝে নফল রোযা করার ভিতর দিয়েও আত্মশুদ্ধির কাজ অগ্রসর হয়। প্রতি চান্দ্র মাসের মধ্যভাগে তিনটি রোযা রাখা খুবই ফলদায়ক।

৬. দান-খয়রাত করা
আল্লাহর পথে দান খয়রাত করা আত্মার পরিশুদ্ধির কাজে খুবই সহায়ক। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সাধ্যানুসারে প্রতি মাসেই আল্লাহর পথে কিছু দান খয়রাত করা উচিত।

৭. মাগফেরাতের জন্য মুনাজাত করা
দুনিয়ার পাপ ও কলুষতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য আল্লাহর নিকট আহাজারী করে মুনাজাত করা

আত্মশুদ্ধির জন্য খুবই জরুরী।

আত্মশুদ্ধির জন্য কয়েকটি জরুরী মুনাজাত

فاطر السموت والأَرضِ أنت ولي في الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا والحقني بالصالحين .

“আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা! তুমিই আমার দুনিয়া ও আখেরাতের মুরুব্বী-মুসলমান হিসাবে আমার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাও এবং আমাকে নেক লোকদের মধ্যে শামিল কর।”

رب اجعلني مقيم الصلوة ومن ذريتي ربنا وتقبل دعاء – رَبَّنَا اغْفِرْ لِي ولوالدي وللمؤمنين يوم يقوم الحساب .

“পরোয়ারদেগার! আমাকে নামায কায়েমকারী বানাও, আর আমার বংশধরগণকেও। আয় রব। আমার দোয়া কবুল কর। প্রভু হে! আমাকে, আমার মাতা-পিতা ও সকল মুসলমানদেরকে হিসাবের দিন মাফ করে দিও।”

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَا مِنَ الْخُسِرِينَ

“হে আমাদের রব। আমরা নিজেদের উপর নিজেরাই যুলুম করেছি। যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না কর-তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।”

اللَّهُمَّ أَعِنَّا عَلَى ذِكْرِكَ وَشَكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ .

“আল্লাহ! তোমাকে স্মরণ করা, তোমার শুকরিয়া আদায় করা ও উত্তমরূপে তোমার বন্দেগী করার কাজে আমাকে সাহায্য কর।”

ربَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ .

“আয় পরোয়ারদেগার! আমাকে সবর দান কর এবং মুসলমান থাকা অবস্থায় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাও।”

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلْكَ حُبك وحب من يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبْلُغَنِي إِلَى حَبِكَ . اللهُمَّ اجْعَلْ حُبُّكَ أَحَبُّ إِلَى مِنْ نَفْسِي وَمَا لِي وَأَهْلِي وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ .

“আয় আল্লাহ! আমি তোমার ও তোমার সাথে যাদের মুহব্বতের সম্পর্ক তাদের মুহব্বত চাই। আর এমন আমলের মুহব্বত, যেন তা তোমার মুহব্বত পর্যন্ত পৌছায়। আয় আল্লাহ! তোমার মুহব্বতকে আমার নিকট আমার নিজের প্রাণ, ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন এবং ঠাণ্ডা পানির চেয়েও অধিক প্রিয় করে দাও।”

يا مقلب الْقُلُوبِ ثَبِّت قَلْبِي عَلَى دِينِكَ .

“হে অন্তরের পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দীনের উপর কায়েম রাখো।”

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ .

“হে প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে কল্যাণ দান কর এবং দোযখের আগুন থেকে আমাদের মাফ কর।”

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا –

“আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রীগণ ও সন্তানদেরকে আমাদের চোখ শীতল রাখার উপযোগী কর এবং আমাদের পরহেজগারগণের ইমাম হতে দাও।”

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ صحة فِي إِيمَانٍ وَإِيْمَانًا في صحة .

“হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে স্বাস্থ্যের সাথে ঈমান ও ঈমানের সাথে উত্তম চরিত্রের জন্য আবেদন জানাই।”

ربَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي للايمن أَنْ أُمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَأَمَنَّا – رَبَّنَا فَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

“হে প্রতিপালক। আমরা শুনতে পেয়েছি যে, একজন আহ্বানকারী ডেকে বলছেন, তোমাদের রবের উপর ঈমান আনয়ন কর। তাই আমরা ঈমান এনেছি। আমাদের মনিব। আমাদের গুনাহ মাফ কর, আমাদের অপরাধ মিটিয়ে দাও আর নেক লোকদের সাথে আমাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাও।”

ربَّنَا لا تزغ قلوبنا بعدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابِ

“হে আমাদের রব! আমাদেরকে তুমি হেদায়াত দান করার পর আমাদের অন্তরগুলোকে আর বক্র পথে যেতে দিও না। আর নিজের পক্ষ থেকে আমাদের উপর রহমত বর্ষণ কর। তুমি অবশ্যই মহান দাতা।”

ربَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا – رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حملته على الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لأَطَاقَةَ لَنَا بِهِ ، وَعْفُ عَنَّا الله وَاغْفِرْ لَنَا الله وَارْحَمْنَا اللهُ أَنْتَ مَوْلُنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَفِرِينَ –

“হে প্রভু। যদি ভুল কিংবা অপরাধ করে ফেলি, তাহলে সে জন্য আমাদের পাকড়াও করো না। মনিব। আমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি যে ধরনের বোঝা চাপিয়েছিলে আমাদের প্রতি তা চাপিও না। আয় পরোয়ারদেগার! যে ভার বইবার শক্তি আমাদের নেই-তা আমাদের উপর অর্পণ করো না। আমাদের দোষ-ত্রুটি থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নাও, আমাদের অপরাধ মাফ কর। আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তুমি কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য কর।”

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ اسْتَغِيثُ أَصْلِحُ لِي شَانِي كُلُّهُ وَلَا تَكِلْنِي إِلَى نفسي طرفة عين.

“হে চিরঞ্জীব। হে চিরস্থায়ী। আমি তোমার রহমতের জন্য আবেদন করছি। আমার সম্পূর্ণ অবস্থা সংশোধন করে দাও এবং এক পলকের জন্যও আমাকে স্বেচ্ছাচারী হতে দিও না।”

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلْكَ عَيْشَةً نَّقِيَّةٌ وَمَيْتَةً شَوِيَّةٌ .

“আয় আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উত্তম জীবন ও উত্তম মরণের জন্য আবেদন করছি।”

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُبِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالكَسْلِ وَالجُبْنِ وَالبُخْلِ وَالكُفْرِ وَالفُسُوقِ والشقاق والسمحة والرياء.

“আয় আল্লাহ! আমি দুর্বলতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, কুফরী, গুনাহ, ঝগড়া-বিবাদ, যশ-খ্যাতির লোভ ও লোক দেখানোর প্রবণতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكَّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّهَا وَأَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلُهَا .

“আয় আল্লাহ! আমার অন্তরে তোমার ভয় ও পরহেজগারীর মনোভাব দান কর এবং তাকে পাক-পবিত্র করে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই উত্তম পবিত্রকারী এবং তুমিই অন্তরের অভিভাবক ও মনিব।”

اسْئَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَكَلِمَةَ الْإِخْلَاصِ فِي الرَّضَا وَالغَضَبِ

“আল্লাহ! তোমার নিকট প্রকাশ্য ও গোপনে আমার অন্তরে তোমার ভয় চাই। আর আনন্দ অথবা ক্রোধ সকল অবস্থায় নিষ্ঠা চাই।”

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَاعْطِنِي نُورًا وَاجْعَلْنِي نُورًا –

“আয় আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর ভরে দাও। আর আমাকে নূর দান কর এবং আমাকে মূর্তিমান নূরে পরিণত কর।”

ক্ষমা প্রার্থনার উত্তম দোয়া

হযরত রসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনার উত্তম উপায় এ দোয়া:

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُبِكَ مِنْ شَرِّمًا صَنَعتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَى وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ .

“হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তুমিই আমাকে পয়দা করেছ। আর আমি তোমার বান্দাহ। আমি বন্দেগী ও ফরমাবরদারী করার জন্য তোমার সাথে যে ওয়াদা করেছি, তা পালন করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাব। আমি যে গুনাহ করেছি, তার মন্দ ফল থেকে রেহাই পাবার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি যেসব করুণা করেছ, তা আমি স্বীকার করি এবং নিজের অপরাধও স্বীকার করছি। হে আমার প্রতিপালক! আমার অপরাধ মাফ কর। তুমি ছাড়া আমার গুনাহ আর কে মাফ করতে পারে!”-(বুখারী)

কিয়ামত

এ দুনিয়া, আসমান, চাঁদ, সুরুজ, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি আল্লাহ তা’আলাই সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। আবার একদিন আল্লাহ তা’আলারই হুকুমে এসব ভেঙ্গে-চুরে মহাপ্রলয় হয়ে যাবে।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের নাম হায়াত। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে ঐ সময়ের মধ্যে সুপথে অথবা কুপথে চলার স্বাধীনতা দিয়েছেন। মানুষ আল্লাহর বান্দাহ হয়ে চলার অথবা নাফরমানীর জীবন যাপনের ফায়সালা করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। যদি সে আল্লাহর বান্দাহ হয়ে চলতে চায় তাহলে আল্লাহই তাকে সে পথে চলার তাওফীক দেন। আর যদি নাফরমানীর পথে জীবন যাপনের ফায়সালা করে তাহলে সে পথেই তাকে চলতে দেন। কিন্তু ফায়সালা করার জন্যই তার বিচার হবে। বিচারের জন্যই হায়াত শেষ হলে মওতের ভিতর দিয়ে তার জীবন শেষ হয়। জীবন শেষ হলে আলমে বরজখ বা অদৃশ্য জগতে বিচার দিনের জন্য সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে।
বিচারের জন্য মানুষের জীবন যেমন শেষ হওয়া দরকার, তেমনি এজগতেরও একদিন পরিসামিপ্ত হওয়া দরকার। তাই একদিন আল্লাহ তা’আলারই হুকুমে হযরত ইসরাফিল (আ) সিঙ্গায় ফুঁৎকার দিবেন। বিকট শব্দে সিঙ্গা বেজে উঠলে বিশাল সৃষ্টিজগতে এক মহাপ্রলয় ঘটবে। সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র সব খসে পড়বে। পাহাড় উড়ে যাবে। এ সাজানো-গোছানো সুন্দর ভূবন তছনছ হয়ে যাবে।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এবং হযরত রসূলে করীম (স) ঐদিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আমরা নিম্নে কুরআন ও হাদীস থেকে কেয়ামতের কিছু বর্ণনা পেশ করছি।

ভূমিকম্প হবে

إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا ، يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا (الزلزال : ١-٤)

“যখন পৃথিবীতে ভূমিকম্প শুরু হবে, আর মাটি তার পেটের ভিতর থেকে সকল বোঝা (মৃত ব্যক্তিদের লাশ) বের করে দেবে, (তখন) মানুষ বলাবলি করবে, পৃথিবীটার কি হলো? সেদিন ধরিত্রী নিজেই নিজের অবস্থা প্রকাশ করে দেবে।”-(সূরা যিলযাল: ১-৪)

আসমান ফেটে যাবে

إذا السَّمَاء انْشَقَّتْ ، وَانَنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْهُ وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتَ ، وَالْقَتْ
ما فيها وَتَخَلَّت (الانشقاق : (٤١)

“যখন আসমান ফেটে যাবে এবং আল্লাহর ফরমাদারী করবে। ফরমারদারী করাই তার কাজ। যখন জমিনকে বিস্তৃত করা হবে এবং তার ভিতরে যাকিছু আছে সব বাইরে নিক্ষেপ করা হবে। আর মাটির গর্ভসেদিন খালি হয়ে যাবে।”-(সূরা ইনশিকাক: ১-৪)

নক্ষত্র ঝরে পড়বে

إذا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ ، وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْهُ وَإِذَا الْبِحَارُ فُجَرَتْ هُ واذا القبور بعثرت و علمت نفس ما قدمت وآخرَتْ (الانفطار : ١-٥)

“যখন আসমান ফেটে যাবে। নক্ষত্র ঝরে পড়বে। সকল নদীই (তীরের)
সীমাতিক্রম করবে এবং কবরের মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে। তখন প্রত্যেকেই জানতে পারবে যে, আগে কি কি প্রেরণ করেছিল এবং
কি কি পেছনে ফেলে এসেছে।”-(সূরা ইনফিতার: ১-৫)

পাহাড়গুলো তুলার স্তূপে পরিণত হবে

الْقَارِعَةُ ، مَا الْقَارِعَةٌ وَمَا أَدْرَكَ مَا الْقَارِعَةُ ، يَوْمَ يَكُونُ النَّاسِ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِةُ وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ المنفوش – (القارعة : ١-٥)

“মহাপ্রলয়! মহাপ্রলয় কি? আপনি কি জানেন, মহাপ্রলয় কি? সেদিন মানুষ দিশেহারা পতঙ্গের মত হবে। আর পাহাড়গুলো তুলোর স্তূপের মত উড়ে বেড়াবে।”
(সূরা আল ক্বারিয়া : ১-৫)

সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে

إذا الشمس كورت ، وإذا النجوم الكدرت ، وَإِذَا الْجِبَالُ سيرت

“যখন সূর্যকে অন্ধকার করা হবে। যখন তারাগুলো আলো বিহীন হয়ে যাবে। আর পাহাড়গুলো উড়তে শুরু করবে।” (সূরা তাকভীর: ১-৩)

তারকা জ্যোতিহীন হয়ে যাবে

إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَاقِعَ ، فَإِذَا النُّجُومُ طُمِسَتْهُ وَإِذَا السَّمَاءُ فَرِجَتْ . وَإِذَا الْجِبَالُ نُسفت : (المرسلت : ۱۰۷)

“তোমাদের সাথে যে বিষয়ে ওয়াদা করা হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকাগুলোকে জ্যোতি বিহীন করে দেয়া হবে, যখন আসমান খুলে দেয়া হবে এবং যখন পাহাড়গুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে।” -(মুরসালাত: ৭-১০)

চাঁদ আলো বিহীন হয়ে যাবে

فَإِذَا بَرِقَ الْبَصَرُهُ وَخَسَفَ الْقَمَرُهُ وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالقَمَرُهُ

“যখন দৃষ্টিশক্তি নিষ্প্রভ হবে। যখন চাঁদ আলো বিহীন হবে এবং চন্দ্র-সূর্যকে একত্রিত করা হবে।” (সূরা কিয়ামাহঃ ৭-১)

আসমান বিগলিত তামার ন্যায় হবে

يَوْمَ تَكُونُ السَّمَاءُ كَالْمُهْلِ وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ

“যখন আসমান বিগলিত তামার ন্যায় এবং পাহাড়গুলো তুলার স্তূপের মত হবে।”
-(সূরা আল মাআরিজ: ৮-৯)

পাহাড় ও জমিন টুকরো টুকরো হয়ে যাবে

فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ نَفْخَةُ وَاحِدَةٌ ، وَحُمِلَتِ الْأَرْضِ وَالْجِبَالُ فَدَكْنَا دكة واحِدَةً ، فَيَوْمَئِذٍ وَقَعَتِ الْوَاقِعَةَ ، وَانْشَقَّتِ السَّمَاءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ واهية (الحاقة : ١٦١٣)

“যখন সিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। যখন জমিন ও পাহাড়কে শূন্যে উঠানো হবে। এবং উভয়টিকেই টুকরো টুকরো করা হবে। সেদিন যা হবার তা হবেই হবে। আসমান ফেটে যাবে এবং সেদিন সে তার শক্তি হারিয়ে ফেলবে।”-(সূরা আল হাক্কাহ:১৩-১৬)

শিশু বুড়ো হয়ে যাবে

فَكَيْفَ تَتَّقُونَ إِنْ كَفَرْتُم يَوْمًا يُجْعَلُ الْوِلْدَانَ شَيْبَانَ السَّمَاءُ مُنْفَطِرُ بِهِ .
كان وعده مفعولاً (المزمل : (۱۸۱۷)

“তোমরা কি করে পরহেজগার হতে পার। তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর যেদিন শিশু বুড়ো হয়ে যাবে। সেদিন আসমান ফেটে যাবে এবং আল্লাহ তা’আলার ওয়াদা পূরণ করা হবে।” -(সূরা মুযাম্মিলঃ ১৭-১৮)

সবকিছু অণু-পরমাণুতে পরিণত হবে

إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ لَيسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةً خَافِضَةٌ رَافِعَةٌ هُ إِذَا رَجْتِ الْأَرْضِ رَجا وَيُسْتِ الْجِبَالُ بَسًّا فَكَانَتْ هَبَاءُ مُنْبَنَاه

“যখন যা হবার তা হয়ে যাবে। যার সম্পর্কে কোনো কিছুই মিথ্যা নয়। (যখন) কাউকে উন্নত এবং কাউকে অধঃপতিত করা হবে। যখন জমিনকে খুব বেশী করে কম্পিত করা হবে। এবং পাহাড় বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। তখন সবকিছুই ইতস্ততঃ ছড়ানো অণু-পরমাণুতে পরিণত হবে।”
-(সূরা আল ওয়াকিয়া: ১-৬)

আসমানের অসংখ্য দরজা হবে

وفُتِحَتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ أَبْوَابًا وَسَيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا

“আর আসমান খুলে দেয়া হবে। তাতে অসংখ্য দরজা সৃষ্টি হবে। আর পাহাড়গুলো চলতে শুরু করবে এবং তা মরীচিকায় পরিণত হবে।”
-(সূরা আন নাবা: ১৯-২০)

চন্দ্র ও সূর্য একত্রিত হবে

يسئل أيَّانَ يَوْمَ الْقِيمَةِ ، فَإِذَا بَرِقَ الْبَصَرُهُ وَخَسَفَ الْقَمَرُهُ وَجُمِعَ الشمس وَالْقَمَرُهُ يَقُولُ الإِنسَانُ يَومَئِذٍ أينَ الْمَفَرُّةَ كَلَّا لَا وَزَرَهُ إِلَى ربك يومئذنِ الْمُسْتَقَرة يُنبُوا الإِنسانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخْرَهُ بَلِ الإنسان على نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ ، ولو ألقى معانيرة القيمة : ٦-١٥)

“তারা জিজ্ঞেস করে, ‘কিয়ামত কবে হবে?’ যেদিন দৃষ্টি ঘোর হয়ে আসবে। চাঁদ আলোবিহীন হবে এবং চাঁদ-সুরুজ একত্রিত হয়ে যাবে। মানুষ সেদিন বলবে, ‘এখন পালাবার জায়গা কোথায়? আজ আর কোনো উপায় নেই-রেহাই নেই। আজ তোমাদের রবের নিকট দাঁড়াতে হবে। মানুষ যাকিছু আমল আগে পাঠিয়েছে এবং যাকিছু দুনিয়াতে ছেড়ে এসেছে!
সব তাকে বলে দেয়া হবে। মানুষ নিজের অবস্থা নিজেই দেখছে-যদিও নানা প্রকার অজুহাতের আশ্রয় নেয়।”-(সূরা কিয়ামাহঃ ৬-১৫)

দুনিয়ার পিঠ সমতল হয়ে যাবে

وَيَسْتَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ بِنْسِفَهَا رَبِّي نَسْفَاهُ فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفَاهُ الأترى فيها عوجاً ولا أمتان يومَئِذٍ يُتَّبِعُونَ الدَّاعِي لأعوج لَهُ ، وَخَشَعَت الأصوات للرحمنِ فَلا تَسْمَعُ إِلا همسان (طه : ۱۰۸۱۰۵)

“আয় মুহাম্মদ। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, কিয়ামতের দিন পাহাড়গুলোর কি অবস্থা হবে? বলে দিন। আমার মনিব পাহাড়গুলোকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ছড়িয়ে দেবেন এবং কিছু অংশ উড়িয়ে দেবেন। আর দুনিয়ার পিঠকে সম্পূর্ণ সমতল করা হবে। কোথাও উঁচু নীচু থাকবে না। সেদিন সকলেই এক আহ্বানকারীর পেছনে পেছনে ছুটবে। ভয়ে কেউ এদিক-ওদিক তাকাতে সাহস করবে না। রহমানের সামনে সকলের স্বরই স্তব্ধ হয়ে যাবে। (সেদিন) ফিস্ফিস ছাড়া অন্য কোনো শব্দই শোনা যাবে না।” (সূরা ত্ব-হাঃ ১০৫-১০৮)

মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে

بَلْ تَأْتِيهِم بَغْتَةً فَتَبهتهم فلا يستطيعُونَ رَدْهَا وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ .

“তাদের উপর হঠাৎ কিয়ামত এসে যাবে। আর তা তাদের দিশেহারা করে দেবে। তারপর কিয়ামতকে তারা হটিয়ে দিতেও পারবে না। আর তা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথও তাদের থাকবে না।”-(সূরা আল আম্বিয়া: ৪০)

নেশা না করেও মাতালের মত হয়ে পড়বে

يأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِن زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْ عَظِيمٌ يَوْمَ تَرَوْنَها تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضَعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمَلَهَا وَتَرَى النَّاسِ سكرى وَمَا هُمْ بِسُكْرَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدُه (الحج : ١-٢)

“হে মানুষ। তোমাদের রবকে ভয় কর। অবশ্যই কিয়ামতের ভূমিকম্প এক সাংঘাতিক ব্যাপার। সেদিন তুমি দেখতে পাবে যে, প্রত্যেক দুগ্ধবতী মা তার দুগ্ধপায়ী সন্তানকে ভুলে যাবে। আর গর্ভবতীর গর্ভপাত ঘটে যাবে। আর মানুষকে নেশায় মাতাল মনে হবে। প্রকৃতপক্ষে কিন্তু তারা মাতাল হবে না বরং আল্লাহর আযাবের কঠোরতাই তাদেরকে ঐরূপ করে দেবে।”
-(সূরা আল হাজ্জ ১-২)

সেদিন পাহাড় গতিশীল হবে

وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَوتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاء الله ، وَكُلُّ أَتَوهُ دُخرِينَ وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُر السحاب ، صُنْعَ اللهِ الَّذِي اتْقَنَ كُلُّ شَيْءٍ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ .

“যেদিন সিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। আসমান ও জমিনে যে যেখানেই থাকুক না কেন, ভীত হয়ে পড়বে। অবশ্য আল্লাহ যাদের (নিরাপদে রাখতে) চাইবেন তারা ছাড়া। সকলেই নত মস্তকে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। আর তুমি কেয়ামতের দিন পাহাড়গুলোকে দেখবে। তোমার মনে হবে, তারা যেন নিজের জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা মেঘমালার মত গতিশীল হবে। এগুলো আল্লাহর সৃষ্টি। যিনি সব বন্ধুকেই উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা যা কিছু কর তিনি সবই ভালভাবে জানেন।”
-(সূরা আন নামল: ৮৭-৮৮)

প্রাণ ভয়ে কণ্ঠাগত হবে

وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْأرْفَةِ إِذِ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كُظِمِينَ ، مَا لِلظَّلِمِينَ مِنْ حميم ولا شفيع يُطَاعُ (المؤمن : (۱۸)

“হে নবী! মানুষদেরকে ঐদিন সম্পর্কে সতর্ক করে দিন, যেদিন তাদের প্রাণ ভয়ে কণ্ঠাগত হবে। যালিমগণ সেদিন কোনো বন্ধু বা সুপারিশকারী খুঁজে পাবে না, যার সুপারিশ কবুল হতে পারে।” (সূরা আল মুমিন: ১৮)

আসমান কাঁপতে থাকবে

يوم تمور السَّمَاءُ مَوْرًا وَتَسِيرُ الْجِبَالُ سَيْران

“যেদিন আসমান কাঁপতে থাকবে এবং পাহাড়গুলো উড়ে বেড়াবে।”-(সূরা তুর: ৯-১০)

চোখ বড় হয়ে যাবে

ولا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّلِمُونَهُ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارَ مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُوسِهِمْ لَا يَرَتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفَهُم ، وَأَفْئِدَتُهُمْ هواء ( ابرهيم : ٤٢-٤٣)

“যালিমরা যা কিছু করছে, সে সম্পর্কে তারা যেন আল্লাহ তা’আলাকে বে-খবর মনে না করে। তিনি তাদের অবকাশ দিচ্ছেন সেই দিনের পূর্ব পর্যন্ত যেদিন (ভয়ে) চোখ বড় বড় হয়ে যাবে এবং মাথা ও চোখ নীচের দিকে নত হয়ে থাকবে। চোখের ভুরু নড়াচড়া করবে না আর তাদের অন্তর (ভয়ে) উড়তে শুরু করবে।”-(সূরা ইবরাহীম ৪২-৪৩)

কাফেরদের চেহারা মলিন হবে

فَإِذَا جَاءَتِ الصَّاحَةُ يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِنَّ وَأُمِّهِ وَآبِيْهِ . وصاحبته وبنيه لكلِّ أمرى منهم يومئذ شأن يغنيه، وجوه يومند مسفرة مضاحكة مستبشرة ووجوه يومئذ عَلَيْهَا غَيْرَةٌ تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ هُ أولئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ (عبس : ٣٣-٤٢)

“তারপর যখন কান বিদীর্ণকারী কিয়ামত আসবে এবং মানুষ নিজ নিজ ভাই, মা, বাপ, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিকট থেকে পলায়ন করবে, সেদিন প্রতিটি মানুষই এমনভাবে হাজির হবে যে, অন্য কারো সম্পর্কে চিন্তাও করতে পারবে না। ঐদিন কতক লোকের চেহারা হাসি-খুশীতে উজ্জ্বল দেখাবে। আর কতক লোকের চেহারা ধূলাবালিতে মলিন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখাবে। তারাই কাফের ও দুশ্চরিত্র।”-(সূরা আবাসা : ৩৩-৪০)

সমুদ্র আগুনে পরিণত হবে

وإِذا الشمس كُورَت وَإِذَا النُّجُومُ انْكَدَرَتْ وَإِذَا الْجِبَالُ سَيِّرَتْهُ وَإِذَا العشار عُمِلَتْ ، وَإِذَا الْوُحُوشِ حُشِرَتْ لَا وَإِذَا الْبِحَارُ سُجَرَتْ ، وَإِذَا النفوس نُتِجَتْ وَإِذَا الْمُؤدَةُ سُئِلَتْ بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ وَإِذَا
الصُّحُفُ نُشِرَتْ وَإِذَا السَّمَاءُ كُشِطَتْ وَإِذَا الْجَحِيمُ سُعَرَتْهُ وَإِذَا الْجَنَّةُ ارْلِفَتْ عَلِمَتْ نَفْسٌ مَا أَحْضَرَتْ : (التكوير : (١٤١)

“যখন সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে। যখন তারা ঝরে পড়বে। যখন পাহাড়গুলোকে উড়িয়ে দেয়া হবে। আর যখন গর্ভবর্তী উট ছুটাছুটি করবে। আর যখন (সকল প্রকারের) বন্যজন্তু একত্রিত করা হবে। যখন সমুদ্র আগুনে পরিণত হবে। মৃত দেহগুলোতে প্রাণ ফিরে আসবে। আর জীবন্ত পুঁতে ফেলা কন্যা সন্তানদের জিজ্ঞেস করা হবে, কেন তাদের হত্যা করা হয়েছিল। যখন আমলনামা খোলা হবে। যখন আসমানের পর্দা তুলে নেয়া হবে। যখন জাহান্নামকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, আর জান্নাতকে নিকটে আনা হবে, তখন প্রত্যেকেই জানতে পারবে- তারা সাথে করে কি কি সম্বল নিয়ে এসেছে।” -(সূরা আত তাকভীর: ১-১৪)

কিয়ামত ফায়সালার দিন হবে

والمرسلت عُرْفًا فَالْعُصِفْتِ عَصْفَاهُ وَالنَّشْرَتِ نَشْرَاهُ فَالْفُرِقْتِ فَرْقَانِ فالملقيت ذِكْراهُ عُذرًا أَوْ نُذرًا إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَاقِعُ هُ فَإِذَا النُّجُومُ طمست وَإِذَا السَّمَاءُ فَرِجَتْ وَإِذَا الْجِبَالُ نُسِفَتْ وَإِذَا الرُّسُلُ أَفَتَتْه لاي يوم أجلَتْ لِيَوْمِ الْفَصْلِ وَمَا أَدْرَكَ مَا يَوْمَ الْفَصْلِ ، وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ للْمُكَذِّبِينَ (المرسلت : ١-١٥)

“মৃদুমন্দ সমীরণের শপথ। যে সমীরণ শক্তিশালী হয়ে তুফানে পরিণত হয়। তারপরে মেঘমালাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তারপর তাদের পরস্পর থেকে দূরে নিক্ষেপ করে। তারপর ত্রুটি সংশোধিত হয় অথবা সতর্কবাণী শুনিয়ে দেয়া হয়। যে বিষয়ে তোমাদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকারাজীর আলো থাকবে না, যখন আসমান ফেটে যাবে, যখন পাহাড়গুলো উড়ে বেড়াবে এবং যখন সকল রসূলগণকে একত্র করা হবে। এসব বিষয়ে বিলম্ব কোন্ দিনের জন্য? ফায়সালা করার দিনের জন্য। তুমি কি জান, ফায়সালা করার দিনটি কি? সেদিন মিথ্যাচারীদের জন্য ধ্বংস।” (সূরা মুরসালাত: ১-১৫)

সেদিন তছনছকারী ভূমিকম্প হবে

“হযরত আবি বিন কাব (রা) বর্ণনা করেছেনঃ রাসূল (স) রাতের দু’-তৃতীয়াংশ কেটে যাবার পর জেগে উঠতেন এবং বলতেন, ‘হে লোকগণ! তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর, স্মরণ কর। তছনছকারী কিয়ামতের ভূমিকম্প অতি নিকটে।”-(তিরমিযী

হাশর ও বিচার

পবিত্র কুরআন ও হাদীস থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা’আলার হুকুমে হযরত ইসরাফিল (আ) সিংগায় ফুঁক দেবেন এবং সাথে সাথে এ সাজানো-গোছানো সৃষ্টিজগত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। ওটারই নাম কিয়ামত। শুধু আল্লাহ ছাড়া সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কতকাল উত্তীর্ণ হয়ে যাবে তা কেউ জানে না। তারপর আল্লাহ ফেরেশতাকে পুনরায় সিংগায় ফুঁক দেবার নির্দেশ দিবেন। এ দ্বিতীয় ফুঁৎকারে সকল মৃত মানুষ জীবিত হয়ে এক নতুন জগত দেখতে পাবে। সে জগতে নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত কিছুই থাকবে না। কবর থেকে উঠে সকলেই এক সীমাহীন বিশাল ময়দানে উপনিত হবে। এরই নাম হাশর ময়দান।
এখানেই সকলের পার্থিব জীবনের আমলের হিসাব-নিকাশ হবে। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা বিচারক হয়ে সেদিন ভাল-মন্দের রায় দান করবেন। যাদের নেকীর ওজন বেশী হবে তারাই জান্নাতী হবে। আর যাদের নেকী কম ও গুনাহ বেশী হবে, তারাই চরম দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণার জায়গা দোযখে স্থান লাভ করবে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ দিনের যে চিত্র উল্লেখ আছে তা এখানে পেশ করছি।

সকলেই কবর থেকে উঠে আসবে

ونفخ في الصور فَإِذَا هُم مِّنَ الأحداث إلى رَبِّهِمْ يَنْسِلُونَ قَالُوا يُويْلَنَا من بعثنا من مرقدنا من هذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ إِن كانت الا صيحة واحدةً فَإِذَا هُم جميع لدينا مُحْضَرُونَ فَالْيَوْمَ لا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَلَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ (يس : ٥٤٥١)

“যখন (দ্বিতীয়বার) সিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, তখন সকলেই নিজ নিজ কবর থেকে বের হয়ে তাদের প্রভুর দিকে প্রাণপণ শক্তিতে দৌড়ে যাবে। আর তারা বলবে “হায়! সর্ননাশ। কে আমাদের গভীর নিদ্রা ভেঙ্গে দিল?” (ফেরেশতাগণ বলবেন), “এই তো সেদিন। যা আসবে বলে তোমাদেরকে বলা হয়েছিল। আর নবী-রাসূলগণের কথা তো সত্যিই ছিল।” ঐদিন একটি বিকট শব্দ হবে এবং তারপর আমার দিকে সকলের ছুটে আসা ছাড়া আর কিছুই নয়। সেদিন তোমাদের কারো প্রতি কোনো যুলুম করা হবে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আমলের যথাযোগ্য ফল লাভ করবে।”-(সূরা ইয়াসীন: ৫১-৫৪)

সেদিন ন্যায় বিচার করা হবে

ونفخ في الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمواتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ . ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخرى فَإِذَا هُم قِيَام ينظرُونَ وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضِ بِنُورِ رَبِّهَا ووضع الكتب وجاء بِالنَّبِيِّنَ وَالشُّهَدَاء وَقُضَى بَيْنَهُمْ بِالحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ وووَفَّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَا يَفْعَلُونَ وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا ، حَتَّى إِذَا جَاءَ وَمَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رسُلٌ مِّنكُم يتلون عليكم آيت رَبِّكُم وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا ، قَالُوا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكُفِرِينَ ( الزمر : ٦٨-٧١)

“আর যখন সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন আসমান ও যমীনে যারাই থাকবে, তারা অজ্ঞান হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ যাদের রেহাই দিতে চান (তাদের কথা স্বতন্ত্র)। যখন দ্বিতীয় দফা সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন দেখতে দেখতেই সকলে (মৃত মানুষ জীবিত হয়ে) উঠে দাঁড়াবে। যমীন তার মনিবের নূরে আলোকিত হবে এবং কিতাব (আমলনামা) উপস্থিত করা হবে। সাথে সাথে পয়গম্বর ও সাক্ষীগণকে ডাকা হবে। তারপর পরিপূর্ণ ন্যায়নীতিতে বিচার করা হবে। কারো প্রতি বিন্দুমাত্র অন্যায় করা হবে না। আর মানুষ যাকিছু করে, আল্লাহ তা’আলা তা ভালভাবেই জানেন। কাফেরদেরকে দলে দলে দোযখের দিকে হাকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা সেখানে পৌঁছলে, দোযখের দারোগা তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আসেননি? আর তিনি কি তোমাদের রবের আয়াতগুলো পাঠ করে আজকের এ দিন সম্পর্কে সতর্ক করেননি। তারা জবাবে বলবে, ‘হ্যাঁ’। কিন্তু কাফেরদের জন্য শাস্তির হুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে।”-(সূরা আয যুমার: ৬৮-৭১)

সেদিন কেউ কারো সাহায্য করতে পারবে না

واتَّقُوا يوما لا تَجْزِى نَفْس عَن نَّفْسٍ شَيْئًا ولا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ منها عدل ولا هُمْ يُنصَرُونَ (البقرة : (٤٨)

“ভয় কর সেদিনকে যেদিন একজন অপরজনের কোনো উপকারে আসবে না। কারো পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ গৃহীত হবে না এবং অন্য কোনো ধরনের সাহায্যই পাওয়া যাবে না।”
-(সূরা আল বাকারা: ৪৮)

কিয়ামতের দিন হাত ও পা সাক্ষ্য দিবে

اليومَ نَحْتم على أفواههم وتُكَلِّمنا أيديهم وتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يكسبون (يس : ٦٥)

“আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিয়েছি। আমার সাথে তাদের হাত কথা বলবে এবং তারা যা কিছু করেছে সে সম্পর্কে তাদের পা-গুলোও সাক্ষ্য দেবে।”-(সূরা ইয়াসিন: ৬৫)
কিয়ামত শাস্তির দিন হবে

ونفخ في الصور ، ذلك يوم الوعيد ، وَجَاءَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَعَهَا سَائِقٌ وَشَهِيدٌ لَقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَاءَ كَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدُه وقَالَ قَرِينه هذا ما لدى عتيدة القِيا في جَهَنَّمَ كُلُّ كَفَّارٍ عَنِيدِهُ مَنَّاعٍ للخير مُعْتَدٍ مُرِيبٍ نِ الَّذِي جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلَهَا أَخَرَ فَالْقِيْهُ فِي الْعَذَابِ الشديده قَالَ قَرِينَهُ رَبَّنَا مَا أَطْغَيْتُهُ وَلَكِنْ كَانَ فِي ضَلَلْ بَعِيدِهِ قَالَ لَا تَختَصِمُوا لَدَى وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُم بِالْوَعِيدِهِ مَا يُبَدِّلُ الْقَوْلُ لَدَى وَمَا أَنَا بظلام للعبيدة يومَ نَقُولُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْثَلَاتِ وَتَقُولُ هَلْ مِنْ مُزيد . وارْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدِهِ هُذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٌةٌ

এবং (যখন) সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। সাথে সাথে ঘোষণা করা হবে যে, এটিই শাস্তির দিন। প্রত্যেকেই আসবে, একজন ফেরেশতা হাঁকিয়ে নিয়ে আসবে এবং অপর একজন ফেরেশতা (সে ব্যক্তির) অপরাধ সম্পর্কে প্রমাণাদি বহন করবে। (তাদেরকে বলা হবে) তুমি আজকের দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। আজ আমি তোমার চোখের পরদা অপসারণ করেছি। তাই তোমার দৃষ্টিশক্তি আজ খুবই তীক্ষ্ণ হয়ে গেছে। তার সাথী ফেরেশতা বলবে, এটা (আমলনামা) সর্বদাই আমার নিকট মওজুদ ছিল। (ফেরেশতাদেরকে আদেশ দেয়া হবে) তোমরা প্রতিটি নাফরমানকে দোযখে নিক্ষেপ কর, যারা নেক কাজে বাধা প্রদান, সীমাতিক্রম এবং সন্দেহ সৃষ্টি করতো। তারা আল্লাহর সাথে অন্যকেও শরীক করতো। তাই তাদেরকে আজ কঠোর আযাবে নিক্ষেপ কর। তার সাথী (শয়তান) বলবে, প্রভ হে। আমি তো তাকে পথভ্রষ্ট করিনি বরং সে নিজেই ভ্রান্ত পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। (আল্লাহ তা’আলা) বলবেন, আমার সামনে আজ বাক-বিতণ্ডা করো না। আমিতো পূর্বেই সতর্কবাণী পাঠিয়েছিলাম। আমার সামনে কোনো বিষয়ের পরিবর্তন হয় না আর আমি নিজের বান্দাহদের উপর যুলুম করি না। সেদিন আমরা দোযখকে জিজ্ঞেস করবো, “তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ?” দোযখ পাল্টা প্রশ্ন করবে, “আরও কিছু (অপরাধী) আছে নাকি? আর পরহেজগারদের জন্য বেহেশতকে নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। আর তা মোটেই দূরে থাকবে না। বলা হবে, “এটিই সেই জান্নাত যে সম্পর্কে রুজুকারী ও হেফাজতকারীদের সাথে ওয়াদা করা হয়েছিল।”-(সূরা কাফ: ২০-৩২)

গুনাহগারদের চেহারা দেখে চেনা যাবে

يعرف المجرمون بسيمهم فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِي وَالْأَقْدَامِ .

“চেহারা দেখামাত্রই গুনাহগারদের চেনা যাবে। তাদের মাথার সামনের অংশের চুল এবং পা ধরে টেনে নেয়া হবে।” (সূরা আর রহমান: ৪১)

গাফেল লোকেরা সেদিন অনুতাপ করবে

كلا إذا دعت الأرض دكا دَعاهُ وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّاةٌ وَجَاى يومَئِذٍ بِجَهَنَّمَ ، يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى ، يَقُولُ يُلَيْتَنِي قَدَّمْتُ لِحَيَاتِي : (الفجر : ٢١-٢٤)

“পৃথিবীর উঁচু জায়গাগুলোকে সেদিন পিটিয়ে সমতল করা হবে। তোমার রব আত্মপ্রকাশ করবেন এবং ফেরেশতারা কাতারে কাতারে হাজির হবেন। দোযখকে সকলের সামনে হাজির করা হবে। মানুষ সেদিন (তার ভুল) বুঝতে পারবে। কিন্তু তখন বুঝতে পেরেও কোনো লাভ হবে না। তারা (হাত কচলিয়ে) বলবে, “হায় নিজের (পরকালীন) জীবনের জন্য যদি আগেই কিছু সম্বল পাঠাতাম!”-(সূরা আল ফাজর: ২১-২৪)

সেদিন গোপন বিষয় প্রকাশ করা হবে

يومنذ تعرضون لا تخفى مِنكُمْ خَافِيَةٌ فَأَما مَنْ أُوتِي كَتَبَهُ بِيَمِينِهِ ، فَيَقُولُ ها زم اقره وا كتبيه إِنِّي ظَنَنتُ أني ملقٍ حِسَابِيهُ ، فَهُوَ فِي عِيْشَةٍ راضِيَةٍ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَمْتُمْ في الأيام الخَالِيةِ ، وَأَمَّا مَنْ أُوتِي كتبهُ بِشمَالِهِ ، فَيَقُولُ يُلَيْتَنِي لَمْ أُوت كتبي وَلَمْ أَدرِ مَا حِسَابِيَةٌ قَيْلَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ مَا أَغْنَى عَنِّى ماليه هَلَكَ عَنِى سُلْطَنِيَهُ خُنُوهُ فَخُلُوهُ ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ ثُمَّ فِي سلسلة ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ إِنَّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمُ وَلَا يَحْضُ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ فَلَيسَ لَهُ الْيَوْمَ هُهُنَّا حَمِيمٌ وَلَا طَعَامُ إِلَّا مِنْ غِسْلِينَ لا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ (الحاقة : ١٨-٣٧)

“সেদিন সকল গোপন বিষয় প্রকাশ করে দেয়া হবে। তোমাদের কোনো কথাই গোপন থাকবে না। যার আমলনামা ডান হাতে পৌঁছবে সে বলবে,
“এই নিন, আমার আমলনামা পড়ে দেখুন। (দুনিয়াতেও) আমার এ ধারণা ছিল যে, হিসাব-নিকাশের কিতাব এভাবেই আমার হাতে আসবে।” এ ব্যক্তি আনন্দের জীবন যাপন করবে। একটি উঁচু বাগানে বাস করবে। আর ঐ বাগানের বৃক্ষশাখাগুলো ফলের ভারে নত হয়ে থাকবে। (বলা হবে) খুশী মনে খাও ও পান কর। আগেই তুমি এরূপ পুরস্কারের উপযোগী আমল পাঠিয়েছিলে।” আর যার আমলনামা বাম হাতে পৌঁছবে, সে বলবে, “হায়! এ আমলনামা আমাকে না দিলেই ভালো হতো।তাহলে আমার আমলের হিসাব আমি জানতেই পারতাম না। হায়। যদি মরণ এসে আমার জীবন আবার শেষ করে দিতো, তাহলে কতই না ভাল হতো। আমার ধন-সম্পদ কোনো কাজেই এলো না। আমার রাজ্যও ধ্বংস হয়ে গেল।” ফেরেশতাদের প্রতি আদেশ হবে, তাকে ধর এবং তার গলায় বেড়ী (তওক) পরিয়ে দাও। তারপর তাকে আগুনে নিক্ষেপ কর এবং শিকলে বেঁধে দাও। ঐ শিকল সত্ত্বর হাত লম্বা হবে। এ ব্যক্তি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ছিলো না। দরিদ্রদের খাদ্যদানে উৎসাহ বোধ করতো না।
তাই আজ এখানে তাকে সান্ত্বনা দেবার মত তার কোনো বন্ধুও নেই। আর ঘা থেকে নির্গত পুঁজ ছাড়া তার জন্য অন্য কোনো খাদ্যও নেই। এ খাদ্য শুধুমাত্র নাফরমান গুনাহগারদের জন্য, অন্য কারো জন্য নয়। (সূরা আল হাক্কা: ১৮-৩৭)

সেদিন ধুয়ার ছায়া হবে

واصحَبُ الشَّمَالِ مَا أَصْحُبُ الشِّمَالِهِ فِي سَمُومٍ وَحَمِيرَهُ وَظَلٍ مِّنْ يحمون الأبارد ولا كريم (الواقعة : ٤٤٤١)

“আর বাম পাশের লোকদের কি অবস্থা হবে। বাম পাশের লোকদের কি
অবস্থা! তারা গরম বাষ্প ও ফুটন্ত পানির মধ্যে থাকবে। (সেখানে) ধুয়ার
ছায়া হবে। আর ঐ ছায়া ঠাণ্ডাও হবে না। ওর মধ্যে সম্মানজনক অবস্থাও
হবে না।”-(সূরা আল ওয়াকিয়া: ৪১-৪৪)

গুনাহগার মওতকে ডাকবে

إذا السماء انشقت وأذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْهُ وَإِذَا الْأَرْضِ مُدَّتْ وَالقَتْ مَا
فيها وتخلت واننَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ يَأَيُّهَا الْإِنسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَى رَبِّكَ
كَدْحًا فَمُلْقِيهِ ، فَأَمَّا مَنْ أُوتِي كتبهُ بِيَمِينِهِ ، فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا
يسيران ويَنقَلِبُ إِلى أَهْلِهِ مسروران وأمَّا مَنْ أُوتِي كِتْبَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ فَسَوْفَ يَدعوا بوران ويصلى سعيران انَّهُ كَانَ فِي أَهْلِهِ مَسْرُورًا وَ إِنَّهُ ظَنَّ
أن لَّن يَحُورَه بَلَى ، إِنَّ رَبَّهُ كَانَ بِهِ بَصِيرًا ( الانسقاق : ١-١٥)

“যখন আসমান ফেটে যাবে এবং তার রবের হুকুম পালন করবে। আর হুকুম পালনই তার কর্তব্য। যখন পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হবে আর তার ভিতরে যাকিছু আছে সব বের করে দিয়ে সম্পূর্ণ খালি হয়ে যাবে। সে নিজের প্রতিপালকের হুকুম শুনবে। হুকুম শুনাই তার কাজ। হে মানুষ! তোমার প্রভুর সামনে হাজির হবার পথে তোমাকে অনেক যন্ত্রণা সইতে হবে। তারপর তাঁর নিকটে পৌঁছবে। যার আমলনামা ডান হাতে আসবে, তার হিসাব সহজ হয়ে যাবে। সে আনন্দে নিজের পরিজনদের কাছে ফিরে যাবে। আর যার আমলনামা পেছনে দেয়া হবে, সে মওতকে ডাকবে। আর আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। (কারণ) সে নিজের ঘরবাড়ীতে নিশ্চিন্তে দিন কাটিয়েছিল। সে মনে করেছিল, তাঁর খোদার নিকট তাকে কখনও হাজির হতে হবে না। হ্যাঁ, হ্যাঁ, তার রব তাকে দেখছিল।”-(সূরা ইনশিকাক: ১-১৫)

কাফেরগণ মাটি হয়ে যেতে কামনা করবে

ة لا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَئِكَةُ صَفًّا . صوابا ذَلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ ، فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَابًا إِنَّا أَنْذَرْنَكُمْ عَذَابًا قَرِيبًا ، يوم ينظر المرء ما قدمت يَدَهُ وَيَقُولُ الْكُفْرِ يلَيتَنِي كُنتُتريان (النبا : ٣٨-٤٠)

“যেদিন রুহুল কুদ্দুস (জিবরাঈল ফেরেশতা) ও সকল ফেরেশতাগণ কাতার বন্দি হয়ে দাঁড়াবে, সেদিন কেউ কথা বলতে পারবে না, তবে যাদের স্বয়ং রাহমানুর রাহীমই কথা বলার অনুমতি দিবেন। আর তারাও শুধু ন্যায্য ও সত্য কথাই বলতে পারবেন। সেটা হবে সত্যের দিন। যারা ইচ্ছা করে তারা নিজেদের প্রভুর নিকট (ঐদিনের জন্য) সঠিক স্থান নির্ণয় করে নিতে পারে। আমরা তোমাদের এক নিকটবর্তী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। সেদিন প্রত্যেকেই নিজ হাতে যে আমল করে পাঠিয়েছিল তা দেখতে পাবে, আর কাফেরগণ বলবে, “হায়! আজ যদি
মাটি হয়ে যেতাম।”-(সূরা নাবাঃ ৩৮-৪০)

ভাল-মন্দ সব আমল দেখতে পাবে

يوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا ، وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تودُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا ، وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسُهُ ، وَاللَّهُ رَءُوفٌ بالعبادة (ال عمران : ۲۰)

“যেদিন প্রত্যেকেই ভাল-মন্দ যাকিছু আমল করেছিল, সব দেখতে পাবে; সেদিন তারা আকাঙ্ক্ষা করবে, ঐ দিনটি যদি অনেক দূরে হতো (তাহলে) তারা কিছুকাল এ মহাবিপদ থেকে রেহাই লাভ করতো। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান: ৩০)

সেদিন কল্পিত সুপারিশকারীরা থাকবে না

ولَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَّا خَوَلْنَكُمْ وَرَاء ظُهُورِكُمْ ، وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَ كُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكُوا . لَقَد تُقطع بينكم وصل عنكم ما كُنتُمْ تَزْعُمُونَ (الانعام : ٩٤)

“আর তোমরা আমার নিকট সঙ্গিহীন অবস্থায় ফিরে আসবে, যেভাবে আমি তোমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলাম। তোমাদেরকে আমি পৃথিবীতে যত ধন-সম্পদ দিয়েছিলাম তা তোমরা সেখানেই ছেড়ে এসেছ। এখন তোমাদের সুপারিশকারী লোকেরা কোথায়? তাদেরকে তোমরা আমাদের অংশীদার বিবেচনা করতে। আজ তারা কোথায়? এখন তোমাদের সকল পারস্পরিক সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ছিন্ন হয়ে গেছে। আর তোমরা যা মনে করতে তা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।”(সূরা আল আনআম: ৯৪)

সেদিন সকল মানুষকে জড় করা হবে

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ، ذلك يوم مجموع ، له الناس وذلك يوم مشهود ، وَمَا نُؤَخِّرُهُ إِلا لأجل مُعْدُودٍ لَّا يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ ، فَمِنْهُمْ شَقِي وَسَعِيدُه (هود :١٠٣-١٠٥)

“এসব ঘটনাবলীর মধ্যে তাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যারা আখেরাতের আযাবকে ভয় করে। আর আখেরাতের দিন সকল মানুষই জড় হবে। সেটা হবে একটা দেখার মত দিন। আমরা শুধু নির্ধারিত সময় পূর্ণ করার জন্য দেরী করছি। সে দিনটি এসে যাবার পর, কোনো মানুষই কথা বলতে পারবে না। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক হবে দুষ্কৃতিকারী আর কিছু সংখ্যক সুকৃতিকারী।”-(সূরা হুদ: ১০৩-১০৫)

গুনাহগারদের গায়ে গন্ধকের জামা থাকবে

يوم تبدل الأرض غير الأرض والسموتِ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِه وتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الأَصْفَادِةُ سَرَابِيلُهُم مِّنْ قَطِرَانٍ وتَغْشَى وُجُوهَهُمُ النَّارُ لِيَجْزِي اللَّهُ كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ ، إِنَّ اللَّهَ سريع الحساب (ابرهيم : ٤٨-٥١)

“যেদিন এ পৃথিবীর মাটি পরিবর্তিত হয়ে অন্য ধরনের হয়ে যাবে এবং আসমানও বদলে যাবে, সেদিন সকল মানুষই নিজ নিজ কবর থেকে বের হয়ে আল্লাহ তা’আলার সামনে হাজির হবে। আল্লাহ তা’আলা সেদিন তার পূর্ণ ক্ষমতায় আত্মপ্রকাশ করবেন। আর গুনাহগারদের সেদিন শিকলে বাঁধা দেখা যাবে। তাদের পরিধানে গন্ধকের তৈরী জামা থাকবে। আর তাদের মুখগুলো আগুনে জ্বলবে। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেকের কর্মফল দান করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অতি তাড়াতাড়ি হিসাব মিটিয়ে দিতে সক্ষম।”-(সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮-৫১)

সেদিন অনেকে অন্ধ হবে

يَوْمَ نَدْعُوا كُلُّ أُناسٍ بِإِمَامِهِمْ ، فَمَنْ أُوتِي كَتَبَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَئِكَ يَقْرَهُ ونَ كتبَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلاً وَمَنْ كَانَ فِي هَذِهِ أَعْمَى فَهُوَ فِي الْآخِرَةِ أَعْمَى واصل سَبِيلاً (بنی اسرائیل : (۷۱-۷۲)

“আমি সকল মানুষকে তাদের নেতাগণসহ ডাকবো। সেদিন যাদের
কিতাব ডান হাতে দেয়া হবে তারা সানন্দে তা পড়তে শুরু করবে। কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবে না। আর এ দুনিয়াতে যে অন্ধ ছিল (আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনের প্রতি চোখ তুলে তাকায়নি) তারা আখেরাতেও অন্ধ হয়েই থাকবে। সহজ-সরল পথ থেকে ভ্রষ্ট এসব লোক হেদায়াতের পথ পাবে না।” -(সূরা বনী ইসরাঈল:৭১-৭২)

অনেক অন্ধ, বোবা ও কালা হবে

ونحشرهم يوم القيمة على وجوههم عمياً وبكُمَا وَصَمًا ، مَا وَهُمْ جَهَنَّمُ . كلما حبت زدنهم سعيرا (بنی اسرائیل : (۹۷)

“আর আমরা কেয়ামতের দিন তাদেরকে উপুড় করে অন্ধ, বোবা ও কালা অবস্থায় উঠাবো। তাদের গন্তব্য স্থল হবে দোযখ। প্রতিবার যখন আগুনের তেজ কিছু কম হয়ে আসবে, তখন আমরা ওকে আরও প্রজ্জ্বলিত করবো।”-(সূরা বনী ইসরাঈল:৯৭)

মানুষ উলঙ্গ হয়ে হাজির হবে

ويوم نسير الجبال وترى الأرض بارزة ، وحشَرْنَهُمْ فَلَمْ تُغَادِرٍ مِنْهُمْ أَحَدًا وعرضوا على رَبِّكَ صَفًّا ، لَقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ رَ بَلْ زَعَمْتُمْ الَّن نَّجْعَلَ لَكُم موعداً ، ووضع الكتب فترى المجرمين مشفقين مما فيه ويقولون يويْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَبِ لايُغَادِرُ صَغِيرَةً ولا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَهَا : ووجدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِراً ، وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا ( الكهف : ٤٩٤٧)

“(আর হে রসূল!) সে দিনটির কথা স্মরণ করুন! যেদিন আমি পাহাড়গুলোকে স্থানচ্যুত করবো। আর পৃথিবীর পিঠ সমতল দেখা যাবে। সকল মানুষকেই আমি একত্রিত করবো। তাদের মধ্য থেকে কাউকেও রেহাই দেয়া হবে না। আর সকলকে সারিবদ্ধ অবস্থায় আপনার মনিবের সামনে হাজির করা হবে। (তাদের লক্ষ্য করে বলবো,) “তোমরা তো আজ উলংগ হয়ে হাজির হয়েছ, যেভাবে আমি তোমাদের প্রথমবার দুনিয়াতে সৃষ্টি করেছিলাম। তোমরা তো মনে করেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করিনি।” আর মানুষের আমলনামা তাদের হাতে দেয়া হবে। তখন আপনি দেখতে পাবেন, গুনাহগারেরা তাদের আমলনামা দেখে কিরূপ ভীত হয়। তারা বলবে, “হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য! এটা কি ধরনের আমলনামা! ছোট বড় যা কিছু করেছিলাম সবকিছুই এতে লেখা রয়েছে, কিছুই তো বাদ পড়েনি।” আর দুনিয়াতে যে যা করেছিল সবকিছুই সামনে হাজির হবে। আপনার মনিব কারো প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করবেন না।”-(সূরা আল কাহাফ: ৪৭-৪৯)

অপরাধীরা বলবে দুনিয়াতে মাত্র এক ঘণ্টা ছিলাম

وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ وَلَمْ يَكُن لَّهُم مِّنْ شُرَكَائِهِمْ شُفَعُوا وكانوا بشركائهم كفرين ويوم تقومُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَتَفَرَّقُونَ

“কিয়ামতের দিন অপরাধীরা নিজেদের সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়বে। যাদের তারা আল্লাহ তা’আলার সাথে শরীক বিবেচনা করতো তারা কেউ সেদিন সুপারিশ করতে এগিয়ে আসবে না। তারা সেদিন তাদের কল্পিত খোদাদের প্রতি নারাজ হয়ে তাদের পরিত্যাগ করবে।”
-(সূরা আর রূম: ১২-১৪)

ويوم تقومُ السَّاعَةُ يُقسِمُ الْمُجْرِمُونَ : مَا لَبِثُوا غَيْرَ سَاعَةٍ ، كَذَلِكَ كَانُوا يُؤْفَكُونَ وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَالْإِيمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِي كِتَبِ اللَّهِ إِلَى يوم البعث ، فهذا يوم البعث ولكنكُم كُنتُمْ لا تَعْلَمُونَ فَيَومَئِذٍ لا يَنْفَعُ الَّذِينَ ظلموا معذرتهم ولا هم يستعبيون (الروم : ٥٧.٥٥)

“সেদিন অপরাধীগণ শপথ করবে। তারা বলবে, “আমরা দুনিয়াতে এক ঘন্টার বেশী সময় থাকিনি।” এটা হবে তাদের মিথ্যা ভাষণ। যাদের জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে তারা বলবে, “তোমরা তো কিয়ামত পর্যন্ত সেখানে ছিলে। আর এটাই সে মহা দিন। কিন্তু তোমরা এ দিনকে বিশ্বাস করতে না।” তাই সেদিন গুনাহগারদের কোনো ওজরই কবুল করা হবে
না।” (সূরা রূম: ৫৫-৫৭)

শুধু নেক আমলেরই ওজন হবে

فَلَنَقْصُنْ عَلَيْهِم بِعِلْمٍ ومَا كُنَّا غَائِبِينَ وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ نِ الْحَقُّ ، فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ خَفْتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُم بِمَا كَانُوا بِأَيْتِنَا يَظْلِمُونَ (الاعراف : (۹۷)

“তারপর আমরা তাদের সকল বিষয়ে অবগত করাব। আর আমরা তো কখনও অনুপস্থিত ছিলাম না (তাই তাদের সমুদয় আমল আমাদের জানা)। সেদিন একমাত্র নেক আমলেরই ওজন হবে। তাই যাদের ওজনের পাল্লা ভারী হবে, তারাই কল্যাণ লাভ করবে। আর যাদের ওজন হালকা হবে, তারাই আমাদের আয়াতগুলোর প্রতি যুলুম করে নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।-(সূরা আল আরাফ: ৭-৯)

ডানে ও বামে নিজেরই আমল দেখতে পাবে

“আদি বিন হাতীম রসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণনা করেছেন, হাশরের দিন তোমাদের প্রত্যেকের সাথে পরোয়ারদিগার সরাসরি কথা বলবেন। মধ্যস্থলে কোনো ভাষ্যকার বা অন্য কোনো বাধা থাকবে না। বান্দাহ যখন ডান দিকে তাকাবে তখন নিজের আমল ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। আর যখন বাম দিকে তাকাবে, তখনও নিজেরই আমল দেখতে পাবে। আর সামনের দিকে তাকালে দেখবে শুধুই আগুন। সুতরাং হে লোকগণ! দোযখের আগুন থেকে আত্মরক্ষা কর। অন্ততঃ শুকনো খেজুরের একটি টুকরোকে উপলক্ষ্য করে হলেও দোযখের আগুন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা কর।”-(বুখারী ও মুসলিম)

দোযখ

যারা আল্লাহর দুনিয়ায় বাস করে, আল্লাহ তা’আলার অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করার পরও আল্লাহরই অবাধ্য হয়; আল্লাহ তা’আলা যেসব কাজ করার হুকুম দিয়েছেন তা করে না এবং যা যা করতে নিষেধ করেছেন সেসব কাজে খুব তৎপর থাকে; যারা আল্লাহর কথা অমান্য করে এবং আল্লাহর নাফরমান শয়তান ও অন্যান্য খোদাদ্রোহী মানুষের কথামত জীবন যাপন করে, তাদেরই শান্তির জন্য দোযখ তৈরী করা হয়েছে। দোযখের শাস্তি ও কষ্ট কি পরিমাণ যন্ত্রণাদায়ক হবে, তা আমাদের পক্ষে সম্যক বুঝে উঠা সম্ভব নয়। যেমন শৈশবে যৌবনের আনন্দ ও যৌবনে বার্ধক্যের কষ্ট বুঝা যায় না। তেমনি দুনিয়ার জীবনে দোযখের আযাব ও তীব্রতা অনুভব করা যায় না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা মেহেরবানী করে আমাদের বোধশক্তির উপযোগী ভাষায় দোযখের কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন। রসূলুল্লাহ (স)-ও এ বিষয়ে অনেক কথা বলে গেছেন। আমরা এখানে পবিত্র কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু কিছু নমুনা তুলে ধরছি:

মানুষ ও পাথর দোযখের ইন্ধন হবে

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ : أعِدَّتْ لِلْكَفِرِينَ (البقرة : (٢٤)

“দোযখের আগুনকে ভয় কর। ঐ আগুনের ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর। আর তা কাফেরদের জন্য প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে।” – (সূরা বাকারা: ২৪)

গায়ের চামড়া আগুনে জ্বলবে

ير إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بايتنا سوف تصليهم نَارًا ، كُلَّمَا نَضِجَت جُلُودُهُم بدلنهم جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا العَذَابَ ، إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا

“যারা আমার আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, তাদের আমি অবশ্যই আগুনে নিক্ষেপ করবো। তাদের গায়ের চামড়া আগুনে বিগলিত হয়ে যাবার পর আমি নতুন চামড়া সৃষ্টি করে দেব যেন তারা খুব বেশী করে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ পরাক্রমশালী এবং তিনি তার সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করার উত্তম পন্থা জানেন।” – (সূরা নিসাঃ ৫৬)

অপরাধীরা আবার দুনিয়ায় আসতে চাইবে

ولَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يُلَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا تُكَذِّبَ بِآيَتِ رَبِّنَا وَتَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ بَلْ بَدَا لَهُم مَّا كَانُوا يُخْفُونَ مِنْ قَبْلُ ، وَلَوْ رُدُّوا لَعَادُوا لِمَا تهُوا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَذِبُونَ وَقَالُوا إِنْ هِي إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ ولو ترى إِذْ وَقِفُوا عَلَى رَبِّهِمْ ، قَالَ الَيسَ هُذَا بِالْحَقِّ ، قَالُوا بَلَى وَرَبِّنَا ، قَالَ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَهُ قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّهِ ، حَتَّى إِذَا جَاءَ تهمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوا يحسرَتَنَا عَلَى مَا فَرَّطْنَا فِيهَا ، وَهُمْ يَحْمِلُونَ أَوْزَارَهُمْ عَلَى ظُهُورِهِمْ ، أَلا سَاءَ مَا يَزِيونَ (الانعام : ۲۷-۳۱)

“(হে রাসূল!) আপনি যদি তাদের সে সময় দেখেন যখন তাদের দোযখের কিনারায় দাঁড় করানো হবে। তারা তখন বলবে, “হায়। যদি কোনো উপায়ে দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম। তাহলে আল্লাহর আয়াতকে আর কখনও ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিতাম না এবং ঈমানদারদের সাথে শামিল হয়ে যেতাম। যে সত্যকে এতদিন তারা চাপা দিয়ে রেখেছিল তা বাস্তবে রূপ ধারণ করে সামনে হাজির হবার দরুনই তারা এরূপ বলবে। নতুবা তাদের আবার আগের জীবনে ফিরিয়ে দিলে আবার তারা সেসব কাজই করবে যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। তারা তো মিথ্যাবাদী। আজ তারা বলছে যে, দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন, মৃত্যুর পরে আর কখনও জীবিত হবো না। আপনি যদি তখনকার দৃশ্য ও দেখেন যখন তারা তাদের রবের সামনে খাড়া হবে। তাদের রব তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “এসব কি বাস্তব সত্য নয়?” তারা জবাবে বলবে,

“হে আমাদের রব! এসবই বাস্তব সত্য।” আল্লাহ তখন বলবেন, “তাহলে আজ অস্বীকার করার আযাব ভোগ কর।” আল্লাহর সামনে হাজির হবার খবরটিকে যারা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা আজ ক্ষতির সম্মুখীন। অতর্কিতে নির্দিষ্ট সময়টি যখন এসে যাবে তখন তারা বলবে, “বড়ই দুঃখের কথা। আমাদের বিরাট ভুল হয়ে গেছে।” নিজেদের পিঠে (সেদিন) তারা গুনাহর বোঝা বয়ে নিয়ে চলবে। দেখ, কেমন মন্দ বোঝা এরা বইছে। -(সূরা আল আনআমঃ ২৭-৩১)

প্রত্যেক জাহান্নামী দল পূর্ববর্তী দলকে দোষারোপ করবে

قَالَ ادْخُلُوا فِي أَمْرٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُم مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ فِي النَّارِ ، كَلَّمَا دخلت أمة لعنت أُخْتَهَا ، حَتَّى إِذَا أَدارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا ، قَالَتْ أُخْرَهُمْ لأولهُم رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَاتِهِمْ عَذَابًا ضَعْفًا مِّنَ النَّارِ ، قَالَ لِكُلِّ ضَعْفٌ ولكن لا تَعْلَمُونَ ، وَقَالَتْ أولهم لأخرهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لا تفتح لهم أبواب السماء ولا يدخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجُ الْجَمَلُ فِي سَم الخياط ، وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ لَهُمْ مِّنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِنْ فَوْقِهِمْ غواشٍ ، وَكَذلِكَ نَجْزِي الظلمين (الاعراف : ٣٨-٤١)

আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “তোমরাও ঐ জাহান্নামে যাও, যেখানে তোমাদের পূর্ববর্তী জ্বিন ও মানুষ গিয়েছে।” প্রত্যেক দল জাহান্নামে প্রবেশ করার সময় তাদের পূর্ববর্তী দলের উপর লানত বর্ষণ করবে। সকলে যখন এক জায়গায় জড় হবে তখন প্রত্যেক দল তাদের পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, “হে রব! এ লোকেরাই আমাদের বিপথগামী করেছিল। তাই এখন তাদের দ্বিগুণ সাজা দাও।” উত্তরে বলা হবে, “প্রত্যেকের জন্যই দ্বিগুণ সাজা রয়েছে অথচ তোমরা তা জানো না।” আর প্রথম দল দ্বিতীয় দলকে বলবে, “আমরা যদি অপরাধী হয়েই থাকি তাহলে, তোমরাই বা কোন্ দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলে?” এখন নিজেরা যাকিছু অর্জন করেছ তারই প্রতিফল স্বরূপ আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই জেনে রাখ, যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছে এবং হঠকারিতা করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরযা খোলা হবে না। সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করার মতই তাদের জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব। আমার নিকট অপরাধীদের জন্য এরূপ শাস্তি রয়েছে। জাহান্নামই তাদের বিছানা এবং জাহান্নামই তাদের গায়ের আবরণ। জালিমদের আমি এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।”
-(সূরা আল আরাফ: ৩৮-৪১)

সেদিন দোষ স্বীকার করেও রেহাই পাবে না

فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ فَمَنْ ثَقُلَتْ
مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ خَفْتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَلِدُونَ تَلْفَح وجوههم النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَلِحُونَ أَلَمْ تكن ايتي تلى عَلَيْكُمْ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ قَالُوا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وكُنَّا قَوْمًا صَالِّينَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظُلِمُونَ قَالَ اخْسَنُوا فيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ إِنَّهُ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَا أَمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّحِمِينَ فَاتَّخَذْتُمُوهُمْ سِخْرِيًّا حَتَّى أَنْسُوكُمْ ذِكْرِي وَكُنتُم مِّنْهُمْ تَضْحَكُونَ إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا وَ أَنَّهُمْ هُمُ
الفائزون (المؤمنون : ۱۰۱-۱۱۱)

“যখন সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন বংশ, গোত্র ও জাতির পার্থক্য মিটে যাবে। মানুষ পরস্পরের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ ভুলে যাবে। যাদের নেক আমল ভারী হবে, তারাই কৃতকার্য। আর যাদের নেক আমল হালকা হবে, তারাই হচ্ছে ঐসব লোক যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল। তারা চিরকাল দোযখে বাস করবে। সেখানে তাদের মুখমণ্ডল আগুনে ঝলসে যাবে এবং তাদের অবস্থা হবে খুবই শোচনীয়। (প্রশ্ন করা হবে) আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদেরকে পড়ে শোনানো হয়নি? আর তোমরা কি ওগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করনি?” তারা বলবে, “হে আমাদের মনিব। আমরা দুষ্কর্মে লিপ্ত ছিলাম এবং একটি গুমরাহ দলে শামিল হয়ে গিয়েছিলাম। হে আমাদের রব। এ আযাব থেকে আমাদের একবার বের করে দাও। আমরা যদি পুনরায় আগের মতই কাজ করি, তাহলে অবশ্যই আমরা যালিম হিসাবে পরিগণিত হবো।” আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “তোমরা অভিশপ্ত হয়ে এ আযাবের মধ্যে থাক। আমার সাথে কোনো কথা বলো না।” আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একটি দলও ছিল যারা বলতো, “হে রব! আমরা ঈমান এনেছি। আমাদের ক্ষমা করুন। এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ার আধার।” তোমরা তাদের বিদ্রূপ করতে। এমনকি দুনিয়ায় মত্ত হয়ে তোমরা আমার কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে গিয়েছিলে। আর তোমরা নেক লোকদের প্রতি হাসি-তামাশা করতে। আজ আমি তাদের সবরের প্রতিদান দিয়েছি। আর তারা তাদের বাঞ্ছিত স্থানে পৌঁছে গেছে।”-(সূরা মুমিনূনঃ ১০১-১১১)

সবর করা ও না করা সমানই হবে

لى نَارِ جَهَنَّمَ دَعَا هَذِهِ النَّارُ الَّتِي كُنتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ أَفَسِحر يوم يدعون إلى نار جهنم هذا أمْ أَنتُمْ لَا تُبْصِرُونَ اصْلَوهَا فَاصْبِرُوا أَولَا تَصْبِرُوا ، سَوَاءٌ عَلَيْكُمْ ، إِنَّمَا تُجْزَونَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ (الطور : (١٦١٣)

“যেদিন তাদের দোযখের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে (বলা হবে) এই সেই জাহান্নাম যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। এটা কি যাদু অথবা তোমরা কি কিছুই দেখতে পাচ্ছ না? এর ভিতরে প্রবেশ কর। আজ সবর করা বা না করা সমান কথা। তোমরা যাকিছু করে এসেছ তার প্রতিফল অবশ্যই দেয়া হবে।”-(সূরা আত তুর: ১৩-১৬)

দোযখবাসীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে

ونادى أصحب النَّارِ أَصْحَب الْجَنَّةِ أن أفيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ ، قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَفِرِينَ الَّذِينَ اتَّخَذُوا بَيْنَهُمْ لَهُوا ولعِبًا وَغَرْتْهُمُ الْحَيَوةُ الدُّنْيَا ، فَالْيَوْمَ تَنْسُهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَذَا لَا وَمَا كَانُوا بِأَيتِنَا يَجْحَدُونَ (الاعراف : ٥١٥٠)

“আর দোযখবাসীগণ জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, “আমাদের দিকে কিছু পানি ছুঁড়ে দাও অথবা আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়েছেন তার কিছু অংশ আমাদের জন্য পাঠাও।” তারা জবাবে বলবে, “যারা দীনকে খেলা ও তামাশার বিষয়ে পরিণত করেছিল, তাদের জন্য আল্লাহ এ রিযিক হারাম করে দিয়েছেন।” আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে ধোঁকায় নিক্ষেপ করেছিল। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “আজ আমি তাদেরকে ঠিক সেভাবেই ভুলে গেছি যেভাবে তারা এ দিনকে ভুলে গিয়েছিল এবং আমার আয়াতগুলোকে বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণত করেছিল।
“(সূরা আল আরাফ: ৫০-৫১)

দোযখবাসীরা আফসোস করবে

وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ ، وَبِئْسَ الْمَصِيرُ إِذَا الْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَها شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُه تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْطِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ
سَالَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَ نَا نَذِيرٌ، فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنتُم إِلَّا فِي ضَلَلٍ كَبِيرٍ وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحْبِ السَّعِيرِ فَاعْتَرَفُوا بِذَنْبِهِمْ ، فَسُحْقًا لِأَصْحُبِ السعيرة (الملك : ٦-١١)

“আর কাফেরদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে দোযখের আযাব এবং ওটা খুবই মন্দ জায়গা। যখন তাদের তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা দোযখের গর্জন শুনতে পাবে এবং দোযখের তেজ ক্রমেই বাড়তে থাকবে। মনে হবে যেন দোযখ রাগে ফেটে পড়বে। যখন কোনো দলকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে তখন দোযখের দারোগা জিজ্ঞেস করবেন, “তোমাদের নিকট কি কোনো সতর্ককারী আসেনি?” তারা বলবে, “হ্যাঁ, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল। আমরা তাদের মিথ্যাবাদী বলেছি এবং জবাব দিয়েছি, ‘আল্লাহ কিছুই নাযিল করেনি। বরং তোমরাই গোমরাহীর মধ্যে রয়েছ।” তারা আরও বলবে, “হায়! যদি তাদের কথা শুনতাম। এবং নিজেদের বুদ্ধি খাটাতাম তাহলে আজ আমরা দোযখীদের মধ্যে শামিল হতাম না।” তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করবে। তাই দোযখবাসীদের জন্য (আল্লাহর রহমত থেকে) দূরত্ব।”
-(সূরা মুলক: ৬-১১)

নেতাদের অন্ধ অনুসরণের ফলে

يومَ تُقلب وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَانَ رَبَّنَا أَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًان (الاحزاب : ٨٦٦٦)

“যেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে উলট-পালট (করে জ্বালানো) হবে, সেদিন তারা বলবে, ‘হায়, আফসোস! আমরা যদি আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করতাম (তবে কতই না ভাল হতো)!’ তারা আরো বলবে, ‘আমরা আমাদের নেতা ও বড় বড় লোকদের অনুসরণ করেছিলাম। তারাই আমাদের গোমরাহ করে দিয়েছিল। হে আমাদের রব। তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দান করুন এবং তাদের উপর কঠোর লানত বর্ষণ করুন’।”-(সূরা আহযাব: ৬৬-৬৮)

ফুটন্ত ডেকচি

হযরত নোমান বিন বশীর (রা) থেকে বর্ণিত। হযরত রসূলে করীম (স)
এরশাদ করেছেনঃ
“দোযখী লোকদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে হালকা সাজা পাবে সে ব্যক্তির জুতা ও জুতার ফিতা আগুনের তৈরী হবে। এ আগুনের তাপে জ্বলন্ত উনুনের উপর বসানো ডেকচিতে যেভাবে তরল পদার্থ টগবগ করে ঠিক সেভাবে তার মাথার মগজ ফুটবে। সে ব্যক্তি কল্পনাও করতে পারে না যে, তার চেয়ে বেশী সাজাও অন্য কেউ ভোগ করতে পারে। অথচ এ ব্যক্তি সকলের চেয়ে কম সাজা ভোগ করবে।”-(বুখারী ও মুসলিম)

বেহেশত

বান্দাহর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ অসীম। মা নিজের সন্তানকে যেরূপ মুহব্বত করেন তার চেয়ে অনেক গুণে বেশী মুহব্বত করেন আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় বান্দাহদেরকে। বান্দাহ যদি আল্লাহর দিকে পায়ে হেঁটে চলতে শুরু করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা দৌড়ে এগিয়ে এসে বান্দাহকে নিজের অপার দয়ায় বেষ্টন করে দেন।

এহেন বান্দাহ যদি আল্লাহর মরজী মত জীবন যাপন করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি যে কি পরিমাণ খুশী হন তা বলে শেষ করা যায় না। তাই তিনি তাঁর নেক বান্দাদের জন্য পরকালে অফুরন্ত নেয়ামত ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। এ নেয়ামত ভরা স্থানের নাম বেহেশত।

আল্লাহ তা’আলা বেহেশতে মুমিনদের জন্য যেসব নেয়ামত সাজিয়ে রেখেছেন তা কোনো চোখ কোনো দিন দেখেনি এবং এ সম্পর্কে কোনো ধারণা করাও মানুষের সাধ্য শক্তির অতীত। কুরআন পাকে এবং হাদীস শরীফে বেহেশতের যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে আমরা কিছু নিম্নে উল্লেখ করছি।

বেহেশত চিরস্থায়ী সুখের স্থান হবে

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ خلِدِينَ فِيهَا أَبَدًا – (النساء : (۱۲۲)

“যারা ঈমান ও নেক আমল নিয়ে এসেছে তাদের আমি অবশ্যই এমন বাগানে প্রবেশ করতে দিব যার নীচ দিয়ে নহর প্রবাহিত রয়েছে। আর তারা সেখানে চিরকাল (সুখে) বাস করবে।
“(সূরা আন নিসাঃ ১২২)

مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وَعِدَ الْمُتَّقُونَ ، تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَرُ ، أَكْلُهَا لَلَّهِ وَظِلُّهَا . تلك عقبى الَّذِينَ اتَّقَوْا ، (الرعد : (٣٥)

“পরহেজগারদের জন্য যেসব বাগানের ওয়াদা করা হয়েছে, সেগুলোর নীচ দিয়ে নহর প্রবাহিত আছে। তার খাদ্য ও ছায়া চিরস্থায়ী। যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে জীবন কাটায় তাদের জন্যই এ বাসস্থান।”-(সূরা আর রাদ: ৩৫)

وَإِنَّ الْمُتَّقِينَ لَحْسَنَ مَابِ جَنَّتِ عَدْنٍ مُفَتَّحَةٌ لَهُمُ الْأَبْوَابُ ، مُتَّكِثِينَ فِيهَا يدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَة وشَرَابٍ وَعِندَ هم قصرت الطرف اتراب هذا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ إِنْ هَذَا لَرِزْقُنَا مَالَهُ مِنْ نُفَادِه

এবং আল্লাহ ভীরুদের জন্য উত্তম স্থান নির্দিষ্ট আছে। চিরস্থায়ী বাগান-যেগুলোর দরযা সর্বদাই নেক লোকদের জন্য খোলা থাকবে। তারা সেখানে ঠেস দিয়ে বসবে এবং নানা জাতীয় ফল ও পানীয় সরবরাহ করার জন্য আদেশ দিবে। (ঘোষণা করা হবে) বিচারের পর তোমাদের যা যা দেবার ওয়াদা করা হয়েছিল তা এই। নিশ্চয়ই আমাদের দেয়া এ রিযিক
কখনও শেষ হবে না। (সূরা সোয়াদ: ৪৯-৫৪)

বেহেশতে দ্বিতীয়বার মৃত্যু হবে না

إن المتقين في مقام آمين في جنت وَعُيُونَهُ يُلْبَسُونَ مِنْ سُندُسٍ واستبرق متقبلينة كذلك من وزوجتهم بِحُورٍ عَيْنٍ لَّا يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فاكهة أمنينَ لا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوتَ إِلا الموتة الأولى ، ووَقَهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ (الدخان : ٥٦٥١)

নিশ্চয়ই পরহেজগারগণ শান্তিপূর্ণ স্থানে থাকবে। সেখানে রয়েছে বাগান ও প্রস্রবন। তারা মিহিন ও মজবুত সুতার কাপড় পরে মুখোমুখি বসবে। আর বড় বড় চোখওয়ালী গৌর বর্ণের স্ত্রীগণ তাদের নিকটে থাকবে। অত্যন্ত শান্ত পরিবেশে তারা নাবাবিধ ফল খাবে। প্রথম মৃত্যুর পর আর তাদের মৃতুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে না। দোযখের আগুন থেকে তারা সুরক্ষিত থাকবে।
– (সূরা দুখান: ৫১-৫৬)

বেহেশতে দুঃখ থাকবে না

لا مَسْهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِّنْهَا بِمُخْرَجِينَ ( الحجر : ٤٨)

সেখানে (বেহেশতে) তাদের কোনো দুঃখই স্পর্শ করবে না এবং সেখান থেকে তাদের বের করাও হবে না। (সূরা আল হাজর: ৪৮)

সুখ-শান্তি ও আনন্দের পরিবেশ হবে

وفَوقَهُمُ اللهُ شَرِّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا وَجَزَهُمْ بِمَا صَبَرُوا جنَّة وحريرا ، مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ ، لَآيَرُونَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمُهْرِيرَانُ ودانية عليهم ظللها وذللت قطوفها تذليلاً ويُطافُ عليهم بانية من فضة وأكواب كانت قواريراه قواريراً مِنْ فِضَّةٍ قَدْرُوهَا تَقْدِيرًا وَيَسْقُونَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُها زنجبيلان عينا فيها تُسمى سلسبيلا ويَطُوفُ عَلَيْهِم ولدَانٌ مُخَلَّدُونَ ، إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا منثورًا وَإِذَا رَأَيْتَ ثُمَّ رَأَيْتَ نعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا عَلِيَهُمْ ثِيَابٌ سُنْدُسٍ خُضْرُ وَاسْتَبْرَقٌ ، وَحَلُّوا أَسَاوِرَ من فضة ، وسقهم ربهم شرابا طهوران (الدهر : ۱۱-۲۱)

“আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঐদিনের কঠোরতা থেকে রক্ষা করবেন। তারা সুখের জীবন ও মনের আনন্দ উপভোগ করবে। (পৃথিবীতে) ধৈর্যশীল জীবন যাপনের পুরস্কার স্বরূপ বসবাসের জন্য বাগান ও পরিধানের জন্য তাদের রেশমী পোশাক দেয়া হবে। তারা গদীর উপর ঠেস দিয়ে বসবে। সেখানে সূর্যের তাপ অথবা ঠাণ্ডা থাকবে না। (ফলন্ত গাছের) ছায়াময় শাখাগুলো নত হয়ে থাকবে এবং ফলের গুচ্ছগুলো তাদের সামনে ঝুলবে। রূপার তৈরী বাসন এবং স্বচ্ছ কাঁচের পানপাত্র নিয়ে (সেবকগণ) তাদের চারপাশে চলাফেরা করবে। ঐসব কাঁচও বিশেষ মাপ অনুসারে রূপারই তৈরী হবে। সেখানে তারা শুকনো আদা মেশানো পানপাত্র থেকে পান করবে। বেহেশতের একটি প্রস্রবনের নাম ছালছাবিল। স্থায়ী আকৃতি ও প্রকৃতি বিশিষ্ট সেবকগণ তাদের সেবা-যত্নে নিয়োজিত থাকবে। সেবকদের দিকে তাকালে তাদের মুক্তার মত দেখা যাবে। বেহেশতের যেদিকেই তারা দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে, অসংখ্য নেয়ামত, বিলাস দ্রব্য ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবে। তাদের সবুজ, নরম ও ভারী রেশমের তৈরী পোশাক দেয়া হবে। আর তারা রূপার তৈরী কংকন পরিধান করবে এবং তাদের রব তাদেরকে পবিত্র শরাব পান করাবেন।”
-(সূরা আদ দাহর: ১১-২১)

দুনিয়ার ফলের মত ফল থাকবে

كلما رُزِقُوا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِزْقًا ، قَالُوا هَذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ ، وَأَتُوَابِهِ
متشابها – (البقرة : ٢٥)

“(জান্নাতের) বাগান থেকে তাদের কোনো ফল খেতে দেয়া হলে তারা বলবে, ‘আগে (দুনিয়াতে) আমাদের যেসব ফল দেয়া হয়েছিল, এগুলো তো হুবহু সেগুলোরই মত।’ অবশ্যই তাদের (দুনিয়ার ফলের) সদৃশ্য ফল দেয়া হবে।”-(সূরা আল বাকারাঃ ২৫)

যা পেতে ইচ্ছা হবে তাই পাওয়া যাবে

وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسِكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدْعُونَ

“সেখানে (জান্নাতে) তোমরা মনে মনে যা পেতে ইচ্ছা করবে অথবা প্রকাশ্য যা চাইবে তা-ই মওজুদ থাকবে।” (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩১)

ফেরেশতারা বেহেশতবাসীদেরকে সালাম জানাবে

جنَّتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّتِهِمْ وَالْمَلَئِكَةُ يدخلون عليهِم مِّن كُلِّ بَابٍ سلم عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِه .

“তারা চিরস্থায়ী বাগানগুলোতে প্রবেশ করবে। তাদের মাতা-পিতা, পূর্বপুরুষ এবং তাদের মধ্য থেকে যারা সৎকাজ করেছিল তারাও তাদের সাথে থাকবে। ফেরেশতাগণ সকল দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, আর বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। (শান্তি বর্ষিত হোক) তোমরা (দুনিয়াতে) সবর করেছিলে, তাই উত্তম বাসস্থান লাভ করেছ।”-(সূরা আর রাদ: ২৩-২৪)

অকল্পনীয় পুরস্কার দেয়া হবে

হযরত রসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন: “আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমি আমার, নেক বান্দাদের জন্য যাকিছু রেখেছি তা কোনো চোখ কোনোদিন দেখেনি, কোনো কান কোনো দিন এ বিষয়ে কিছু শুনেনি এবং কোনো অন্তর কোনোদিন তা ধারণা করতে পারেনি। জান্নাতে যাকিছু আছে তা দুনিয়ার দ্রব্যাদির সাথে নাম ছাড়া অন্য কোনো দিক থেকেই একরূপ হবে না।”
-(বুখারী, মুসলিম, হাদীসে কুদসী)

কেউ বৃদ্ধ, অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর সম্মুখীন হবে না

“জান্নাতে ঘোষণা করা হবে, তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনও রুগ্ন হবে না। তোমরা চিরকাল বেঁচে থাকবে। কখনও মরবে না। তোমরা সর্বদা যুবক থাকবে কখনও বুড়ো হবে না। সদা-সর্বদা খুশী থাকবে কখনও শোকগ্রস্থ হবে না।”-(বুখারী)

নিম্নতম মর্যাদার বেহেশতী যা পাবে

হযরত মূসা (আ) আল্লাহ তা’আলাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আয় আল্লাহ তা’আলা! বেহেশতীদের মধ্যে নিম্নতম মর্যাদার ব্যক্তি কে? জবাব দেয়া হয়েছিল, “যে ব্যক্তি সকলের শেষে বেহেশতে আসবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে বলা হবে।” সে ব্যক্তি বলবে, “হে আল্লাহ! আমি কোথায় যাব? সকল বেহেশতীগণই নিজ নিজ জায়গায় পৌঁছে গেছে এবং তোমার সকল নেয়ামত দখল করে নিয়েছে।” জিজ্ঞেস করা হবে, “দুনিয়ার বাদশাহদের নিকট যা ছিলো না তা তোমাকে দান করলে কি তুমি খুশী হবে?” সে আরজ করবে, “মাবুদ! আমি সন্তুষ্ট হব।” আল্লাহ বলবেন, “তোমাকে এর দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণ দেয়া হলো।” সে ব্যক্তি বলবে, “পরোয়ারদিগার আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।” আল্লাহ বলবেন, “তোমার জন্য ওসব তো আছেই। এখন তারও দ্বিগুণ। সে ব্যক্তি আবার বলবে, “মাবুদ! আমি রাজী হয়েছি।” আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “এতদসঙ্গে তোমার অন্তরে যেসব বাসনা রয়েছে এবং তোমার চোখ যা যা দেখে শান্তি পায় তা সবই তোমার জন্য বরাদ্দ হলো।”-(তিরমিযী)

দীদারে ইলাহী হবে সব থেকে পসন্দনীয়
হযরত হাবিব (রা) বর্ণনা করেছেন, রসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন, “আল্লাহর কসম জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর দীদার (দর্শন) লাভ করার চেয়ে অধিক প্রিয় ও পসন্দনীয় কিছুই দান করবেন না।”-(তিরমিযী)

বেহেশত ও দোযখের বেষ্টনী

আল্লাহ তা’আলা বেহশত ও দোযখ সৃষ্টি করে হযরত জিবরাঈল (আ)-কে বেহেশত দেখে আসার হুকুম দেন। হযরত জিবরাঈল (আ) বেহেশত ও তার সমুদ-সম্ভার দেখে আরজ করেন, “আপনার ইজ্জতের কসম! এসব সুখ-সম্পদের খবর যারা শুনবে তারাই এখানে আসার জন্য প্রাণপণ শক্তিতে চেষ্টা করবে।” আল্লাহ তা’আলা হুকুম করলেন, “বেহেশতকে দুঃখ-কষ্ট দিয়ে ঘিরে দাও।” এরপর হযরত জিবরাঈল (আ) বেহেশত দেখে আরজ করলেন, “আপনার ইজ্জতের কসম! আমার ভয় হচ্ছে যে, আপনার একজন বান্দাও বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।”

আল্লাহ তা’আলা পুনরায় আদেশ করলেন, “এবার দোযখ দেখে এসো।” হযরত জিবরাঈল (আ) গিয়ে দেখতে পেলেন,দোযখের এক অংশ অপর অংশকে গিলে খাচ্ছে। তিনি আরজ করলেন, আপনার ইজ্জতের কসম, যে ব্যক্তি এ দোযখের বিবরণ শুনবে, সেই দোযখ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করবে।” আল্লাহ তা’আলা হুকুম করলেন, “দোযখকে লোভও যৌন আকাঙ্ক্ষা দিয়ে ঘিরে দাও।” তারপর হযরত জিবরাঈল পুনরায় দোযখ দেখে আরজ করলেন, “আপনার ইজ্জতের কসম। আমার আশংকা হয় যে, দোযখের কবল থেকে একজন মানুষও রেহাই পাবে না।”-(তিরমিযী)

মুসলমান একটি উম্মত

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানে এরশাদ করেছেন:

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ .

“তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের দাঁড় করানো হয়েছে।”
(সূরা আলে ইমরান: ১১০)

পুনরায় সূরা আল বাকারার ১৪৩ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ .

“এবং এরূপেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যমপন্থী উম্মতে পরিণত করেছি যেন তোমরা মানবজাতির উপর সাক্ষী হতে পার।

উপরের আয়াত দু’টিতে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে উম্মত বলে আখ্যায়িত করেছেন। উম্মত অর্থ দল, মণ্ডলী ইত্যাদি।

উম্মত এবং প্রচলিত জাতির পার্থক্য এই যে, জন্ম থেকে জাতি। অর্থাৎ মানুষ ইংরেজী ভাষাভাষীর ঘরে জন্মালেই সে ইংরেজ জাতির মধ্যে শামিল। আর ব্রাহ্মণের ঘরে যে জন্মগ্রহণ করে সে-ই ব্রাহ্মণ। এ ধরনের জাতির মধ্যে শামিল হবার জন্য জ্ঞান বা চরিত্রের কোনো শর্ত নেই। কোনো বিশেষ গুণ থাকারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু উম্মত সেরূপ নয়। তাই আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের একটি উম্মত বলে ঘোষণা করার সাথে সাথেই তার গুণাবলী বলে দিয়েছেন। ইসলামকে যারা স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে কবুল করে নেয় তারাই মুসলমান। আজ যে ব্যক্তি ইসলামের ঘোর বিরোধী, কাল সে ইসলাম কবুল করে নেবার পর এ দীনের হেফাজতের জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে তৈরী হয়ে যায়। আবার শুধু মুসলমানই নয় নবীদের সন্তান হয়েও যদি কেউ ইসলাম কবুল করতে অস্বীকার করে তাহলে সে মুসলমান উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যায়।

হযরত নূহ (আ)-এর পুত্র কেনান ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় তাকে কাফেরদের সাথেই ধ্বংস করে দেয়া হয়। নবীর পুত্র বলে তাকে মোটেই রেহাই দেয়া হয়নি। বরং তার জন্য দোয়া করতে গিয়ে হযরত নূহ (আ)-কে আল্লাহর নিকট থেকে ধমক খেতে হয়। অপরদিকে খোদাদ্রোহী নমরূদ বাদশাহর প্রধান পৌত্তলিক পুরোহিতের পুত্র হযরত ইবরাহীম খলিলুল্লাহ শিরক ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করেন এবং আল্লাহর নবী হয়ে যান।

তাহলে প্রমাণিত হলো যে, মুসলমানী কোনো স্থায়ী ইজারাদারী নয়। যারা ইসলামকে কবুল করে না, তারা মুসলমানের ঘরে জন্মালেও উম্মত থেকে বের হয়ে যায়। আর যারা ইসলামকে কবুল করে তাদের ভাষা ও গায়ের রং, বংশ ও দেশ যাই হোক না কেন, তারা মুসলমানদের উম্মতে শামিল হয়ে যায়। শুধু শামিলই নয়, এলেম ও আমল-আখলাকের উৎকর্ষ সাধন করে তারা উম্মতের ইমাম বা নেতাও হয়ে যেতে পারে। তাই মুসলমানকে আল্লাহ উম্মত আখ্যা দিয়েছেন।

উম্মতের বৈশিষ্ট্য

মুসলমান উম্মতে শামিল হবার প্রথম শর্ত ইসলামকে বুঝে-শুনে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে গ্রহণ করতে হবে। যে ব্যক্তি না জেনে ইসলামকে কবুল করে সে যে কোনো সময় গুমরাহ হয়ে যেতে পারে। ইসলামের কালেমা পড়ে সে আল্লাহর সাথে কি ওয়াদা করেছে, এবং ইসলাম কবুল করার পর তাকে কি কি ছাড়তে হবে ও কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে যারা ইসলাম কবুল করে তাদের গুমরাহ হবার কোনো ভয় থাকে না।

দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, নিজের উঠা-বসা, চাল-চলন ও যাবতীয় কার্যকলাপে ইসলামী রীতিনীতি মেনে চলা। মুসলমানের কথা-বার্তা, চাল-চলন ও কার্যকলাপ দেখেই বুঝা যাবে যে, তারা আল্লাহ ও রসূলের পথে জীবন যাপনকারী। অমুসলমান ও আল্লাহর নাফরমানদের জীবনের সাথে তাদের জীবনের কোনোই মিল থাকবে না।

তৃতীয়তঃ মুসলমানগণ তাদের সন্তান সন্ততিকে আল্লাহ ও রসূলের পথে জীবন যাপন করার শিক্ষাদান করবে। তারা যেমন মুখে মুখে তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে মুসলমান হয়ে জীবন যাপনের শিক্ষা দিবেন তেমনি নিজেরা ইসলামের মুতাবিক জীবন যাপন করার ভিতর দিয়ে সন্তানদের সামনে ইসলামের নমুনা তুলে ধরবেন।

মুসলমানগণ ঘরে, সমাজে, স্কুলে-কলেজে, আদালতে, হাট-বাজারে, সরকারী অফিসে-সকল স্থানে আল্লাহ ও রসূলের শিক্ষা ও হুকুম মুতাবিক যাবতীয় কাজ আনজাম দিয়ে এমন পরিবেশ কায়েম করবে যেন মুসলমানের সন্তান সর্বত্র আল্লাহর ইসলামেরই বাস্তব নমুনা দেখতে পায়। তাহলে ভবিষ্যত বংশধরগণ কখনও বিপথগামী হতে পারবে না। সন্তান-সন্ততিকে খাঁটি মুসলমান বানানোর শত চেষ্টা স্বত্ত্বেও দু’-এক ক্ষেত্রে সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। ঐসব বিপথগামী সন্তানদের সংশোধনের জন্য তাদের বুঝানো এবং এ চেষ্টা ফলবতী না হলে হাত কাটা, বেত্রাঘাত, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড ইত্যাদি ধরনের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা কার্যকরী থাকলে উম্মতের ভিতরে ইসলাম বিরোধী মহল গজিয়ে উঠতে পারবে না এবং যদি গজায়, তাহলে উম্মতের দেহ থেকে ওটাকে দুষ্টক্ষতের মত অস্ত্রোপচার করে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। কারণ, দুনিয়াতে যারা ন্যায়-নীতি ও শান্তির বাণী বহন করবে, তারা নিজেরাই যদি পথভ্রষ্ট হয় তাহলে, চলবে কি করে? শরীরের কোনো অংশে বিষফোঁড়া হলে যেমন সমগ্র শরীরের নিরাপত্তার জন্য দূষিত অংশ কেটে ফেলতে হয়। তেমনিভাবে উম্মতের ভিতরে ইসলাম বিরোধী মহল গজিয়ে উঠলে তাকেও উম্মতের কল্যাণের খাতিরে শাস্তি, এমন কি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেয়া জরুরী হয়ে দেখা দেয়।

চতুর্থতঃ তাবলীগ ও প্রচারের মাধ্যমে ভিন্ন মতাবলম্বীদের উম্মতে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টি। একদিকে উম্মতের মধ্যে যেমন ইসলাম বিরোধী গজানো সম্ভব তেমনি উম্মতের বাইরে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করার উপযোগী থাকতে পারে। তাদের নিকট ঠিক ঠিকভাবে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরলে তারাও ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম উম্মতে শামিল হতে পারবে। শুধু শামিলই নয়-আল্লাহর দীনকে দুনিয়ায় প্রচার করার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
মানুষের শরীর থেকে প্রস্রাব, পায়খানা, ঘাম, বমি ইত্যাদির মাধ্যমে সকল দূষিত বস্তু বের হয়ে যায়। আবার শরীরের ক্ষয় পূরণ ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তাজা খাদ্য গ্রহণও দরকার। যদি কোনো ব্যক্তির প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায় অথবা সে যদি খেতে না পারে, তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। মুসলমান উম্মতের ভিতর থেকে ইসলাম বিরোধীদের বের করা এবং দাওয়াতের মাধ্যমে বাইরের লোককে উম্মতে শামিল করার ব্যবস্থা বিকল হলেও উম্মতের মৃত্যু হয়ে যায়। যা বাকী থাকে তা হচ্ছে উন্মতের লাশ। শুধু লাশ যখন থাকে তখন উম্মতের নাম ব্যবহার করে একটি নিছক জাতি। অর্থাৎ মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েই মুসলমান। খোদার নাফরমানী করে, চুরি, ডাকাতি, কুফরী, শিরক ও সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী কাজে রাত-দিন লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও মুসলমানী যায় না। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ডাক্তারের ছেলে ডাক্তারী না জেনে ডাক্তারের সন্তান হবার কারণেই চিকিৎসক হতে পারে না। যদি কেউ তাকে চিকিৎসক নিয়োগ করে, তাহলে তার দ্বারা রোগের আরোগ্য সাধন কিছুতেই সম্ভব হয় না। অনুরূপভাবেই ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে শুধু পিতৃ পরিচয়ের দরুন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বিবেচিত হয় না’। দুনিয়ার কোনো পেশাতেই উত্তরাধিকার নেই। প্রত্যেককেই সে কাজ শিখতে ও জানতে হয়। কিন্তু উম্মত বা জাতিতে পরিণত হলে তাদের এমন হাস্যকর অবস্থা হয় যে, তারা উম্মতের নামে পরিচিত হলেও তাদের মধ্যে উন্মতের কোনো গুণাবলীই থাকে না। এ ধরনের উম্মত দুনিয়ায়ও তাদের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয় এবং আখেরাতেও তাদের কঠোর আযাবে ভুগতে হবে।

মুসলিম উম্মতের দায়িত্ব

পবিত্র কুরআন ও হাদীস থেকে জানা যায় যে, দুনিয়ার অসংখ্য জাতির মত অসংখ্য মুসলমানও নিছক একটি জাতি নয় বরং সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য এ দলের সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেনঃ

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ، (ال عمران : ۱۱۰)

“তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উত্থান। তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখ, আর তোমরা আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী।” -(সূরা আলে ইমরানঃ ১১০)

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لَتَكُونُوا شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ
عَلَيْكُمْ شَهِيدًا – – (البقرة : ١٤٣)

“এভাবে তোমাদেরকে একটি মধ্যমপন্থী উম্মতে পরিণত করা হয়েছে। যেন তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হতে পার এবং রসূল (স) তোমাদের উপর সাক্ষী হতে পারেন।” (সূরা আল বাকারা: ১৪৩)

উপরের দু’টি আয়াতের প্রথমটিতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, মুসলমান একটি শ্রেষ্ঠ উম্মত, তারা মানবজাতির কল্যাণ সাধন করবে। আর সে কল্যাণ হচ্ছে এই যে, তারা মানবজাতিকে সৎ পথে চলার আদেশ দিবে এবং অসৎ পথ থেকে বিরত রাখবে। অর্থাৎ তারা অন্যান্য জাতির মত দুনিয়ার বুকে নিজেদের ধন-সম্পদ, ভোগ-বিলাস ও সন্তান-সন্ততি বাড়ানোর চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে না। বরং দুনিয়াতে যত অমুসলমান রয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ ও রসূল (স)-এর প্রদর্শিত পথে চলার আদেশ দিবে এবং নাফরমানীর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখবে।

দ্বিতীয় আয়াতটিতে মুসলমানদের একটি মধ্যবর্তী উম্মত আখ্যা দিয়ে মানবজাতির প্রতি সাক্ষী বলে ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ তারা তাদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, উঠা-বসা, লেন-দেন, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদির মারফত দুনিয়ার মানুষকে বুঝিয়ে দেবে যে,ইসলামই একমাত্র সত্য পথ। সকল কাজেই আল্লাহ ও রসূল (স)-এর হুকুম মেনে চলার ফলে মুসলমানদের সমাজে সুখ, শান্তি ও কল্যাণ নাযিল হবে। আর তা দেখে দুনিয়ার অন্যান্য জাতিও ইসলামের পথে চলার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে। এটাই সাক্ষী হবার অর্থ। আল্লাহর রসূল (স) সমগ্র জীবন ধরে এ সত্যেরই সাক্ষ্যদান করে গেছেন। পিতা, স্বামী, ভাই, প্রতিবেশী, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, সত্যের প্রচারক ইত্যাদি বিভিন্ন ভূমিকায় তিনি মানুষের জন্য উজ্জ্বল আদর্শ স্থাপন করে সাক্ষ্য রেখে গেছেন। মুসলমানেরা রসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করে ইসলাম কবুল করেছে এবং দুনিয়ার অমুসলমানদের সামনে সাক্ষ্য পেশ করা তাদের দায়িত্ব। তাই তারা মধ্যবর্তী উত্থত।

এ দু’টি আয়াত থেকে স্পষ্টভাবেই বুঝা গেল যে, দুনিয়ার মানুষকে ইসলামের কল্যাণকর পথ দেখানো, সে পথে চলার নির্দেশ দান করা এবং ইসলাম বিরোধী পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার দায়িত্ব মুসলমানের। আর এ দায়িত্ব পালন করতে হলে তাদেরকেই আগে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হতে হবে। এটাই হলো মুসলমান উম্মতের মূল দায়িত্ব।

এ দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে হবে তা স্বয়ং রসূলুল্লাহ (স) আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তিনি সর্বপ্রথম মক্কার বুকে সত্যের বাণী প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি নির্ভীকভাবেই ঘোষণা করেন যে, লা-শরীক আল্লাহর পথ ছেড়ে দিয়ে মানুষ যেভাবে জীবন যাপন করছে, তা ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর। এ গুমরাহীর পথ মানুষের সৃষ্টি। সমাজের ধূর্ত লোকেরা সাধারণ মানুষের উপর যুলুম ও শোষণ জারী রাখার জন্যই গুমরাহীর পথ তৈরী করেছে। তিনি বলেন, সকল মানুষের জন্য কল্যাণের পথ হচ্ছে আল্লাহর বন্দেগী কবুল করে তাঁরই আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন যাপন করা।
স্বাভাবিকভাবেই সমাজের মুরুব্বি ও নেতাগণ তাঁর বিরোধিতা শুরু করে। প্রথমে ঠাট্টা, তামাসা, উপেক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁকে দমিয়ে দেবার প্রয়াস পায়। তারপর অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু আল্লাহর রসূল (স) বিন্দুমাত্র শংকিত হননি। তিনি অটল মনোভাব নিয়ে সত্যের বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করেন। ক্রমে সমাজ থেকে একজন দু’জন করে চিন্তাশীল মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দেন এবং মক্কার প্রায় সকল পরিবারেই দু’ একজন করে মানুষ আল্লাহর দীনের উপর ঈমান আনে। এ সময় বিরোধী মহল অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং স্বয়ং রসূলুল্লাহকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আল্লাহর অনুমতি ক্রমে রসূলে করিম (স) ও তাঁর সাথীগণ মদীনায় হিজরত করে চলে যান। সেখানে রসূলুল্লাহ (স) একটি ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন করেন। অত্যাচারী দুশমনেরা এ নবগঠিত রাষ্ট্রটিকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য বারবার আক্রমণ চালায়। রসূলে খোদা ও তাঁর প্রিয় সহচরগণ দুশমনদের সশস্ত্র আক্রমণের মুকাবিলা করেন। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় শুধু মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র টিকে থাকেনি উপরন্তু সমগ্র আরব ভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হয়ে যায়। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স) রাষ্ট্রের আইনের মাধ্যমে নেক কাজের আদেশ জারী ও অন্যায় কাজ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমাদর জন্য তোমাদের রসূলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।” তাই মুসলমান উম্মতকেও কেয়ামত পর্যন্ত রসূলে খোদারই পদাংক অনুসরণ করে তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।

প্রতিটি মুসলমানই ব্যক্তিগতভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য। হযরত রসূলে খোদা (স) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে তাহলে তার কর্তব্য শক্তির সাহায্যে বাধাদান করা। যদি শক্তি না থাকে তাহলে মুখের সাহায্যে নিষেধ করা। এ শক্তির অভাবে অন্তরের সাথে ঘৃণা করা। আর এটিই হচ্ছে মুসলমানদের দুর্বলতম অবস্থা।”
হযরত রসূলে করীম (স) মুসলমানদের শিক্ষক ও নেতা। আল্লাহ তাআলা তাঁকেই মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক, শিক্ষক ও ইমাম হিসাবে প্রেরণ করেছেন। যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহর আদর্শ সবচেয়ে বেশী অনুসরণ করবেন তাঁকেই ইমাম বা নেতা নির্ধারিত করে মুসলমান উম্মত দুনিয়ার মানুষকে নেকীর পথ দেখানো ও অন্যায় পথ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করে যাবে।

ইকামাতে দীন

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

هُوَ الَّذِي أَرسل رسوله بالهدى ودين الحق لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى
بِاللهِ شَهِيدًا –

“তিনিই সেই আল্লাহ যিনি তার রসূল (স)-কে হেদায়াত এবং দীনে হক সহকারে পাঠিয়েছেন যেন তিনি (রসূল) এ দীনকে সকল (বাতিল) দীনের উপর বিজয়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আর এ বিষয়ে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।”-(সূরা আল ফাতাহ : ২৮)

দীন শব্দের অর্থ জীবন যাপনের পথ। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রসূলকে দু’টি বিষয়সহ পাঠিয়েছেন। একটি হচ্ছে, জীবন যাপনের সত্য ও সঠিক পথ। এপথ ছাড়া আর যত পথ মানুষ তৈরী করে নিয়েছে সবগুলো মিথ্যা ও বাতিল। এ আয়াতে তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তিনি তাঁর রসূলের মাধ্যমে যে দীন নাযিল করেছেন তা-ই একমাত্র সত্য। আর এ দীন মুতাবিক জীবন যাপন করার উপযোগী হেদায়াতও ঐ সাথেই দেয়া হয়েছে। এটি হলো রসূলের আনীত দ্বিতীয় বিষয়। এখন রসূল এ দীনকে কি করবেন? আল্লাহ তাআলা নিজেই বলে দিচ্ছেন যে, রসূল এ দীনকে মানুষের রচিত সকল বাতিল ও অসত্য দীনের উপর বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তাহলে রসূল ও দীন নাযিল করার খোদায়ী উদ্দেশ্যই হচ্ছে, দীনে হক বা সত্য জীবন ব্যবস্থাকে সকল অসত্য পথ ও মতের উপর বিজয়ী করা।

হযরত রসূলে করীম (স) এ দায়িত্ব কিভাবে পালন করেছিলেন। রাসূলের নবুওয়াতের ২৩ বছরের জিন্দেগীই আমাদের এ প্রশ্নের জবাব। তিনি দীনে হকের শুধু দাওয়াত বা প্রচার করেই নিজের কর্তব্য শেষ হয়েছে বলে মনে করেননি। বরং দাওয়াতের মাধ্যমে একজন দু’জন করে খাঁটি মুমিন সংগ্রহ করে তিনি একটি জামায়াত, দল বা উম্মত গঠন করেন। পরে উম্মতের সহযোগিতায় বাতিল পন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বা জিহাদ চালিয়ে তাদের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করেন এবং আল্লাহর দীন বিজয়ী হিসাবে সমগ্র আরব ভূ-খণ্ডে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এভাবে দীন প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রতিটি মানুষই আল্লাহর মরজী মুতাবিক চলার সুযোগ পায়। তারা তখন শুধু হুকুম মাফিক নামায রোযাই করেনি। পরন্তু স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ব্যবহার, মাতা-পিতার সাথে সন্তানের আচরণ, প্রতিবেশীর সাথে উঠা-বসা, বেচা-কেনা, লেন-দেন, বিয়ে-শাদী, মামলা মোকদ্দমা, বিচার-শাসন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম জারী করে দেন এবং বাতিল দীন ঘরের কোণে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে সকলেই বুঝতে পারে যে, দীনকে কায়েম করার অন্য কোনো অর্থই হতে পারে না। কারণ, আল্লাহর দেয়া সত্য দীন মানুষের আইনের অধীনে থাকতে পারে না। বা তা শুধু নামায, রোযা ও বিয়ে-শাদীর মতো কয়েকটা অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। আল্লাহর দীন যদি শ্রেষ্ঠই হয়ে থাকে, তাহলে তা জীবনের সকল ক্ষেত্রে কার্যকর থাকতে হবে। আল্লাহর আইন থাকবে শুধু মসজিদে আর বাতিল আইন দখল করে থাকবে সুপ্রীম কোর্ট, আইন পরিষদ ও রাষ্ট্রভবন, এটা কি করে সম্ভব হতে পারে? আল্লাহ এ ধরনের ভাগ-বাটোয়ারায় রাজী নন। তাঁর আদেশ হচ্ছে, তারই দীন মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে বিজয়ী থাকবে। অন্যথায় সত্যিকারভাবে কখনও এ দীন মানা হবে না।

মনে করুন, একজন বিচারপতি ব্যক্তি জীবনে খুবই ধার্মিক, তিনি প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করেন। কুরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে তিনি পান যে, আল্লাহ সুদের ভিত্তিতে সকল প্রকার লেন-দেন হারাম করেছেন। বিচারপতি আল্লাহর এ আদেশকে কল্যাণকর বলে বিশ্বাসও করেন। কুরআন তেলাওয়াত শেষ করে বিচারপতি সাহেব আদালতে যান। সেখানে দেশের প্রচলিত আইনে সুদখোরের পক্ষে রায় দিতে বাধ্য হন। তিনি ব্যক্তি জীবনে সুদকে শোষণ, যুলুম ও হারাম বলে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও মামলার রায় দিতে গিয়ে আল্লাহর হুকুমের বিপরীত রায় দেন। কারণ, দেশের আইন মাফিক রায় দিতে তিনি বাধ্য। তাঁর ব্যক্তি জীবনের আকিদা-বিশ্বাস আইনের নীচে চাপা পড়ে যায়। তাই শুধু ব্যক্তি জীবনে বা সামাজিক জীবনে আল্লাহর আইন পূর্ণাঙ্গভাবে মানা যায় না, যদি দেশের আইনও আল্লাহর আইন মুতাবিক না হয়।

এজন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর রসূলকে দীনে হকের প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং রসূলুল্লাহ (স) এ দায়িত্ব উত্তমরূপে পালন করে গেছেন। মুসলমান উম্মতকেও আল্লাহ তাআলা ঐ একই দায়িত্ব দিয়েছেন। রসূল (স) যতদিন দুনিয়াতে ছিলেন ততদিন তাঁরই পরিচালনায় মুমিনেরা এ দায়িত্ব পালন করেছেন। রসূল (স) দুনিয়া ত্যাগ করার পর এ দায়িত্ব সরাসরি মুসলমান উম্মতের উপর এসে পড়েছে। সূরা আলে ইমরানের পূর্বোল্লেখিত আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা “তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত নেকীর আদেশ জারী কর ও অন্যায় থেকে বিরত রাখ” এবং সূরা আল বাকারার যে আয়াতটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে মুসলমানদেরকে ‘মধ্যবর্তী উম্মত’ আখ্যা দিয়ে ঐ দায়িত্বই অর্পণ করেছেন।

একামতে দীন বা দীনকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ নয়। কেননা, যারা বাতিল দীন প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে তাদের কায়েমী স্বার্থ এ ব্যবস্থার সাথেই জড়িত। তাই তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে দীন প্রতিষ্ঠার পথে বাঁধা ও ফেতনা সৃষ্টি করে থাকে। তাদের বাঁধা দান ও ফেতনা ফাসাদের ভয়ে ভীত হয়ে গেলে দীন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

قتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ –

“আর তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাও যতক্ষণ পর্যন্ত না ফেতনা সম্পূর্ণভাবে মিটে যায় এবং একমাত্র আল্লাহর দীনই অবশিষ্ট থাকে।” -(সূরা আল বাকারা: ১৯৩)

সূরা আত তাওবার ২৯নং আয়াতে আরও স্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেনঃ

قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحْرِمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ ورسوله ولا يَدِينُونَ دِينَ الحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَبَ حَتَّى يَعْطُوا الْجِزْيَةَ عن يد وهم صغرون (التوبه : ( ٢٩

“আহলে কিতাবের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি পূর্ণ ঈমান আনেনি। আল্লাহ ও রসূল যা যা হারাম ঘোষণা করেছেন সেগুলোকে হারাম বিবেচনা করে না এবং দীনে হককেই জীবন যাপনের একমাত্র পথ হিসাবে গ্রহণ করেনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজ হাতে জিযিয়া কর দিয়ে রাষ্ট্রের অধীনতা স্বীকার করে নেয়।”

এ আয়াতে যাদের বিরুদ্ধে লড়তে বলা হয়েছে তারা হলোঃ

(ক) যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি পূর্ণরূপে ঈমান আনেনি।
(খ) আল্লাহ ও রসূল (স) যা যা হারাম ঘোষণা করেছেন সেগুলোকে হারাম বিবেচনা করে না, অর্থাৎ হালাল করে নিয়েছে।
(গ) দীনে হক বা ইসলামকে যারা জীবনের একমাত্র চলার পথ হিসাবে গ্রহণ করেনি।

আল্লাহ ও পরকালে পূর্ণ বিশ্বাসী ব্যক্তি, দল বা উম্মত দুনিয়াতে যত কাজই করে, তা করার আগে আল্লাহ ঐসব কাজ সম্পর্কে কি কি হুকুম দিয়েছেন তা জেনে নেয় এবং তদনুসারেই করে। কেননা আল্লাহর নাফরমানীর প্রতিফল স্বরূপ পরকালের কঠোর শাস্তিকে তারা ভয় করে। যারা আল্লাহ ও পরকালে ঠিকভাবে বিশ্বাস করে তারা কখনও খোদার নাফরমানী ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে পারে না। যে ব্যক্তি বা দল অন্যায় কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর আদেশ লংঘন করে তারা পরকালের কঠোর সাজার ভয় করে না বা পরকালে বিশ্বাস করে না।

আল্লাহ ও রসূল (স) চুরি, ডাকাতি, খুন, লুণ্ঠন, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, শরাব ইত্যাদি যা যা হারাম করেছেন, ঈমানদারগণ তা হারাম বিবেচনা করে। কিন্তু যারা ওসব হারাম কাজে লিপ্ত হয়,তারাই আল্লাহ ও রসূলের সীমালংঘন করে।

দীনে হক বা ইসলামকে জীবনের চলার পথ হিসাবে গ্রহণ না করার অর্থ এই যে, তারা দীনের মৌখিক প্রশংসা করে, দীনের তাবলীগও করে কিন্তু তাদের বাস্তব জীবনে এ দীনের বিধি-নিষেধ মেনে চলে না। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, আইন-আদালত ইত্যাদি ক্ষেত্র থেকে দীনে হক নির্বাসিত।

এসব লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না তারা রাষ্ট্রের অধীনতা স্বীকার করে নেয় এবং জিযিয়া কর প্রদান করে ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত নাগরিক হয়ে বাস করতে রাজী হয়। তারা ইসলাম গ্রহণ করলে মুসলমান উম্মতের মধ্যে শামিল হয়ে সত্য দীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-তৎপরতায় শামিল হয়ে যেতে পারে। আর যদি ইসলাম কবুল না করে অন্য ধর্ম পালন করতে চায়, তাহলে জিযিয়া কর দিয়ে আনুগত্য স্বীকার করে নেবে। তাহলে এ আয়াত থেকে পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, দীনে হককে বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম বা জিহাদ করা ফরয। তাই মুসলমান যে দেশেই বাস করবে, সেখানে আল্লাহর দীনকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে কায়েম করার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। আর এ সংগ্রামে ব্যর্থ হলে অথবা ইসলামী আইন-কানুনকে রাষ্ট্রের মাধ্যমে জারী করার সম্ভাবনা সম্পর্কে নিরাশ হলে সে দেশ থেকে হিজরত করবে।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّهُمُ الْمَلَئِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ ، قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ ، قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا . فَأُولَئِكَ مَا وَهُمْ جَهَنَّمُ ، وَسَاءَتْ مَصِيرًا (النساء : (۹۷)

“যারা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করছিল, তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করবে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা জবাবে বলবে, আমরা এ দেশে দুর্বল ও অবনত অবস্থায় ছিলাম। (ফেরেশতারা) বলবে, আল্লাহর দুনিয়া কি এ পরিমাণ প্রশস্ত ছিলো না যে, তোমরা অন্যত্র হিজরত করতে পার। এদের ঠিকানা জাহান্নাম। আর তা খুবই মন্দ স্থান।”
-(সূরা আন নিসাঃ ৯৭)

এখানে আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, মুসলমান যদি তার ঈমানের কারণে কোনো দেশে দুর্বল ও অসহায় অবস্থায় অবনত জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়, তাহলে তাদের সে দেশ থেকে হিজরত করতে হবে। অন্যথায় দীনকে এভাবে দুর্বল ও কোণঠাসা করে রাখার খোদাদ্রোহী প্রচেষ্টাকে প্রশ্রয় দান করার কারণে তারা দোযখের বাসিন্দা হবে, যদিও তারা ঈমানদার ছিল। কারণ, তারা ঈমানের দাবী পূরণ করেনি। ঈমানের দাবী হলো এই যে, মুসলমান আল্লাহর দীনকে বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করবে। দীনে হককে নিয়ে দুর্বল ও বাতিলের পদানত হয়ে জীবন যাপন করবে না। আর তা যদি করতে অক্ষম হয় তাহলে এমন কোনো স্থানে হিজরত করে চলে যাবে যেখানে গিয়ে আল্লাহর বিধি-নিষেধ মুতাবিক জীবন যাপনে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না।

জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ

জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য প্রাণপণ শক্তিতে চেষ্টা করা। ইসলামী জিহাদকে কুরআনের পরিভাষায় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর পথে জিহাদ বলা হয়েছে।

প্রতিটি মুসলমানই এক একজন মুজাহিদ। তাওহীদের বিপ্লবী বাণীর মাধ্যমে মুসলমান ঘোষণা করে, “আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো প্রভুত্ব মানি না।” মানুষের উপর যারা প্রভুত্ব কায়েম করার খায়েশ রাখে, তারা এ ঘোষণা শোনা মাত্রই ক্ষেপে যায়। কারণ কালেমায়ে তাওহীদের বাণী প্রচারিত হলে এবং মানুষ শুধু আল্লাহর বন্দেগী করতে প্রস্তুত হয়ে গেলে স্বার্থপর মহলের সকল কারসাজি ধরা পড়ে যাবে। তারা নানা ছল ছুঁতা ও মুখরোচক বুলির আড়ালে মানুষকে শোষণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। কখনও দেশ ও জাতির সেবার নাম নিয়ে, কখনও গরীব ও শ্রমিকদের বন্ধু সেজে আর কখনও বিশেষ ভাষা ও গোত্রবর্ণের পক্ষাবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে শোষণ করার ফাঁদ পেতে রাখে সমাজের ধূর্ত শ্রেণীর তথাকথিত জনদরদী নেতারা। আল্লাহর দেয়া নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নাম শোনামাত্রই তারা ঘাবড়ে যায়। এজন্য এ আন্দোলনের পথে অন্তরায় সৃষ্টির ঘৃণ্য কলা-কৌশল অবলম্বন করে। প্রথমতঃ এসব ঠাট্টা বিদ্রূপ করে উড়িয়ে দেয়ার ব্যর্থ প্রয়াস পায়। যদি এ. পন্থায় কালেমায়ে তাওহীদের প্রচার ও প্রসার বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ঈমানদার লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলে এবং নানাবিধ জঘন্য উপায়ে তাদের উপর নির্যাতন চালায়। এদিকে ইসলামের কল্যাণকারিতা বুঝতে পেরে দু’ একজন করে সমাজ সচেতন ব্যক্তি এ আন্দোলনে যোগদান করতে থাকে। ফলে বিরোধী মহলের ক্রোধ আরও বেড়ে যায়। তারা অত্যাচারের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। একজন মুমিন তখন দেখতে পায় যে, তার চারিদিকে বাতিল শক্তির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল সম্পূর্ণরূপে তাকে ঘিরে ফেলেছে। তাই মুমিনের পক্ষে এ জাল ছিন্ন করে সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

এজন্যই তাকে জিহাদ শুরু করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ
وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ( الحجرت : ١٥)

“মুমিনের পরিচয় হচ্ছে এই যে, তারা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান আনে তারপর কোনো প্রকারের সন্দেহে লিপ্ত হয় না। এবং তারা তাদের জান-প্রাণ ও ধন-সম্পদ নিয়োজিত করে (আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার পথে) জিহাদ করে। তারাই খাঁটি ঈমানদার।”
-(সূরা আল হুজুরাতঃ ১৫)

এ আয়াতে খাঁটি ঈমানদারদের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ তিনটি হলো

(ক) আল্লাহ ও রসূল (স)-এর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান।
(খ) আল্লাহ ও রসূল (স)-এর দেয়া দীন মুতাবিক জীবন যাপন করেই ইহ ও পরকালের কল্যাণ লাভ করা যাবে, এ বিষয়ে মনে কখনও কোনো সন্দেহ প্রবেশ করতে না দেয়া। আর
(গ) ধন-সম্পদ ও জান-প্রাণ নিয়োগ করে আল্লাহর দীন কায়েম করার জন্য জিহাদ চালিয়ে যাওয়া।

এ তিনটি কাজ যারা করে, তারাই খাঁটি ঈমানদার। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই তা ঘোষণা করেছেন। কাজেই এ তিনটির কোনো একটি কাজও যারা করে না তারা খাঁটি ঈমানদার নয়।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

إِنَّ اللهَ اشْتَرى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ، يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ من (التوبه : (۱۱۱)

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বেহেশতের বিনিময়ে মুমিনদের জান-প্রাণ ও ধন-সম্পদ খরিদ করে নিয়েছেন। তাই মুমিনেরা আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং এ জিহাদ করতে গিয়ে হত্যা করে অথবা নিজেদেরই প্রাণ বিলিয়ে দেয়।”-(সূরা আত তাওবা: ১১১)

মুমিন পরকালে বেহেশত লাভ করার জন্য আগ্রহী। আর বেহেশত লাভকরতে হলে ঈমান আনার পর থেকে নিজের দেহ ও ধন-দৌলত নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার না করে, আল্লাহর মরজী মুতাবিক ব্যবহার করতে হয়। আল্লাহ চান যে, তাঁর দেয়া জান-প্রাণ ও ধন-সম্পদ তাঁরই দীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত হোক। আল্লাহর এ মরজী পূরণ করার জন্য মুমিন দীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে জিহাদ শুরু করে। জিহাদে যদি প্রাণ চলে যায় তাহলে মুমিন মনে করে তার জীবন সার্থক। কেননা, আল্লাহরই দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন দান করা হলো। আর জীবন দান করতে গিয়ে জীবন সংহার করার দরকার হলে তাও করবে।

হযরত রসূলে করীম (স) এরশাদ করেছেন:

ما مِنْ نَبِي بَعَثَهُ اللهُ تَعَالَى فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّةٍ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابَ يَأْخُذُونَ لِسنة ويَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ أَنَّهَا تَخْلِفُ مِنْ بَعْدِ هِمْ خَلْفٌ يقولون مالا تفعلون ويفعلون مالا يؤمرون – فَمَنْ جَاهَدَ هُم بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ ومَن جَاهَدَ هُم بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَ هُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاء ذَالِكَ مِنَ الْإِيمَانِ حَبَّةٍ خَرْدَلٍ –

“আমার পূর্বে যে নবীগণ কোনো উম্মতের প্রতি উত্থিত হয়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেকেরই কিছু যোগ্য সাথী ও সহকর্মী ছিলেন। তাঁরা নবীদের প্রদর্শিত পথে চলতেন এবং তাঁদের হুকুম পালন করতেন। তারপর অযোগ্য উত্তরাধিকারীগণ তাঁদের স্থান দখল করে। তারা মুখে যা দাবী করতো সে অনুযায়ী কাজ করতো না আর যে কাজ করতে তাদের আদেশ দেয়া হয়নি সেসব কাজ করতো। যারা এসব লোকদের বিরুদ্ধে হাতের (শক্তির) সাহায্যে সংগ্রাম করেছে তারাও মুমিন আর যারা তাদের বিরুদ্ধে মুখের সাহায্যে সংগ্রাম করেছে তারাও মুমিন আর যারা অন্তরের সাহায্যে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তাঁরাও মুমিন। কিন্তু এতটুকু কাজও যারা করে না তাদের বিন্দুমাত্রও ঈমান নেই।”-(মুসলিম)

নবীর উম্মত যখন পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, তখন তারা মুখে ইসলাম মেনে চলার দাবী করে কিন্তু কাজ করে ইসলামের উলটা। আর যেসব কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে সেসব কাজে তাদের উৎসাহ বেড়ে যায়। এ ধরনের লোকেরাই ইসলামের বেশী ক্ষতি সাধন করে। তাই রাসূল (স) নির্দেশ দিয়েছেন যে, এ জাতীয় লোকদের বিরুদ্ধে খাঁটি ঈমানদারগণ সংগ্রাম করবে। কখনও তাদের সাথে আপোষ করবে না। এ কাজে সর্বপ্রথম প্রয়োজন হচ্ছে অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি করা। মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি ব্যতিরেকে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা যেতে পারে না। অস্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হলে মুখ খুলে যায়। তখন মুমিন মুখের সাহায্যে ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার প্রয়াস পায়। এভাবে প্রচার কার্য চালানোর ফলে মুমিনদের পারস্পরিক যোগাযোগ, ঐক্য স্থাপন ও শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব হয়। অবশেষে শক্তি প্রয়োগ করে ইসলামের বিরোধিতা প্রতিরোধ করা যায়।

মোদ্দাকথা ইসলাম বিরোধিতার মুখে নিষ্ক্রীয়তা ও নীরবতা অবলম্বন করে ঈমান রাখা যায় না। নবী করীম (স) বলেছেন, এ জাতীয় লোকদের অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমানও থাকে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন জিহাদের জন্য এত কড়াকড়ি আদেশ? এর উত্তর হচ্ছে এই যে,খোদাদ্রোহী শোষক ও যালিমেরা যুগে যুগে নানা ফন্দী এঁটে সাধারণ মানুষের উপর তাদের কায়েমী স্বার্থ বহাল রাখার প্রয়াস পায়। তাদের বিনা বাধায় শোষণ ও যুলুম চালিয়ে যেতে দিলে মানব সমাজে কোনোদিনই সুখ ও শান্তি আসতে পারে না। সাধারণ মানুষকে গোলামীর জিঞ্জিরে আষ্টে-পিষ্টে বেঁধে তারা প্রভুত্বের গদীতে চড়ে বসে। অতীত ইতিহাসে এ জাতীয় লোকদের ঘৃণ্য কার্যকলাপের উল্লেখ রয়েছে। সত্য কথা এই যে, মানব সমাজে যত অশান্তি,ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার মূলে রয়েছে আল্লাহর না-ফরমান স্বৈরাচারী সমাজপতি,নেতা ও শাসক গোষ্ঠী।

আল্লাহ তাআলা তাই এরশাদ করেছেন:

إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ (الانفال : (۷۳)

“যদি তা (জিহাদ) না কর, তাহলে সমগ্র পৃথিবীতে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠবে এবং বিরাট ভাঙ্গন ও বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।”-(সূরা আনফালঃ ৭৩)

এ আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে, মানব সমাজকে অত্যাচারী, শোষক ও প্রভুত্ব স্থাপনাভিলাষীদের হাত থেকে নিরাপদ সুখ-শান্তিতে বাস করার সুযোগদানের জন্যই জিহাদের প্রয়োজন।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

وَمَا لَكُمْ لا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ لِلَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا :-

“তোমরা কেন আল্লাহর পথে দুর্বল মানুষদের রক্ষার জন্য জিহাদ করছো না? (অথচ) তাদের পুরুষ, স্ত্রীলোক ও ছোট ছোট সন্তানেরা বলছে, হে আল্লাহ। আমাদের এ স্থান থেকে বের করে নিয়ে যাও। এখানকার শাসকেরা যালিম।” (সূরা আন নিসা: ৭৫)

এ আয়াতে অত্যাচারী শাসকদের দ্বারা নির্যাতিত ঈমানদারদের উদ্ধার করার জন্য আল্লাহ তাআলা তাকিদ করেছেন।

মোদ্দাকথা, দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জিহাদ অপরিহার্য। আর ইনসাফ, শাস্তি, সুখ ও কল্যাণ লাভ করার জন্য দীনের প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মানুষ ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্যবিধ পন্থায় মানব সমস্যা সমাধানের যেসব পন্থা ও মতবাদের জন্ম দিয়েছে, সেগুলো অশান্তি ও দুঃখ-কষ্টের মাত্রা বাড়িয়েছে মাত্র। একমাত্র ইসলামই মানুষের ইহকাল ও পরকালের পূর্ণ সুখ ও শান্তি বিধান করতে পারে।

বর্তমান অবস্থা ও মুসলমানদের কর্তব্য

বর্তমান দুনিয়ায় মুসলমানরা সংখ্যায় নগণ্য নয়। অনেকগুলো স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রও রয়েছে। তৈল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য সবগুলোই মুসলিম দেশ এবং সেগুলো পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অঞ্চল দখল করে রয়েছে। তথাপি মুসলমানদের আজ চরম দুরাবস্থা। দুনিয়ায় তাদের কোথাও কোনো গুরুত্ব নেই। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান দেশগুলোর বুকে অভিশপ্ত ইহুদীরা জবরদস্তি ইসরাঈল রাষ্ট্র কায়েম করে মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য মুসলমান বে-দ্বীন ইহুদীদের হাতে নিহত হয়েছে। প্যালেষ্টাইনের লক্ষ লক্ষ মুসলমান অধিবাসী নিজেদের ঘরবাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বছরের পর বছর আশ্রয় প্রার্থীর জীবন যাপন করছে।
ইথিওপিয়ার ইরিত্রিয়ায় মুসলমানদের উপর অমানসিক নির্যাতন চলছে।

আজ মুসলমানদের খাদ্যাভাব। তাদের পরিধানের বস্ত্র নেই-নেই থাকার মত বাসস্থান। রোগে তাদের চিকিৎসা নেই, সন্তান-সন্ততিদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার বন্দোবস্ত নেই। তারা আজ ইরানী, তুরানী, পাঞ্জাবী, সিন্ধি প্রভৃতি জাতিতে বিভক্ত হয়ে শতধা বিচ্ছিন্ন। তাদের মধ্যে শুধু ঐক্যেরই অভাব নয়, সদ্ভাবের অভাবও রয়েছে। ইসলাম ও মুসলমানদের ঘোর শত্রুদের ইঙ্গিতে আজ তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে দুর্বল থেকে অধিকতর দুর্বল ও পরাশ্রয়ী হতে বাধ্য হচ্ছে। আর ইসলামের দুশমনেরা দিব্যি সুখে মুসলমানদের মাথার উপর ক্ষমতার ডাণ্ডা ঘুরাচ্ছে। এক কথায়, বর্তমান দুনিয়ায় মুসলমানদের মত লাঞ্ছিত ও দুর্দশাগ্রস্ত কোনো জাতি নেই অথচ তাদেরই ঘরে রয়েছে আল্লাহর পবিত্র কালাম। প্রতিদিন তারা এ কালাম তেলাওয়াত করে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স) তাদেরই পথপ্রদর্শক। সকল মুসলমানই দাবী করে যে তারা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং কুরআন ও সুন্নাতকেই হেদায়াতের উৎস বলে স্বীকার করে।

তবু তাদের দুর্দশা কেন? আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের তিনি দুনিয়ার খেলাফত দান করবেন। এই কি খেলাফতের নমুনা? দুনিয়ার মানুষকে নেকী ও কল্যাণের পথ দেখানোর দায়িত্ব যাদের তারা অন্যকে পথ দেখানো তো দূরের কথা নিজেরাই ইসলাম বিরোধীদের পক্ষপুটে আশ্রিত কেন? তাহলে আল্লাহর ওয়াদা গেল কোথায়?
একটু গভীরভাবে নিজেদের বর্তমান অবস্থা যাঁচাই করলেই আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাব। আজ বিপুল সংখ্যক মুসলমান কালেমায়ে তাইয়্যেবা পর্যন্ত জানে না। এমনকি নামায-রোযা ও আল্লাহর বন্দেগী করার কোনো তাগিদও তাদের মনে নেই। মুসলমান হিসাবে তারা যে অন্যান্য মানুষের চেয়ে একটা পৃথক উম্মত, একথা তারা ভুলে গেছে। হালাল-হারাম সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, চুরি, ডাকাতি, লেন-দেনে ছল-চাতুরী, মালপত্র বিক্রির সময় ওজনে কম দেয়া ইত্যাদি সকল প্রকারের অপরাধেই মুসলমানদের লিপ্ত দেখতে পাওয়া যায়। জেলখানায় মুসলমান চোর, মুসলমান ডাকাত ইত্যাদি রয়েছে। অথচ মুসলমান চুরি করতে পারে না। চুরি বন্ধ করা তার কাজ। মুসলমানের নাম ধারণ করে আমরা ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছি। মুসলমান হয়ে এসব অপরাধমূলক কাজ করা যে শক্ত গুনাহ তা আমরা ভুলেই গেছি।

এটাতো গেল সাধারণ অশিক্ষিত লোকদের কথা। শিক্ষিত ও নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের অবস্থা আরও দুঃখজনক। তাদের সাজ-পোশাক, উঠা-বসা, চলা-ফেরা, শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি সবকিছুই বিজাতীয় ও বিধর্মীদের নিকট থেকে ধার করা। তাদের মধ্যে এমন অনেক লোকও আছেন যারা ইসলামের নামে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। অথচ তারা মুসলমান সমাজের গণ্য-মান্য ব্যক্তি। সুদ ও ঘুষের ভিত্তিতে লেন-দেন করাকে তারা কোনো অন্যায় বিবেচনা করে না। তারা শরাব পানে অভ্যস্ত। এক শ্রেণীর শিক্ষিত লোকেরা তাদের স্ত্রী-কন্যাদের সম্পূর্ণরূপে বেপর্দা করে দিয়েছে। মুসলমান যুবতীগণ প্রকাশ্য মঞ্চে নাচ গান করে। যুবক যুবতীগণ প্রকাশ্য ও অবাধে মেলা-মেশা করার ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ইসলামের সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, শাসননীতি সবই বাদ। তদস্থলে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ইত্যাদি দেশের অনুকরণ করেও মুসলমানী বহাল আছে। মুসলমানকে আল্লাহ তাআলা দায়িত্ব দিয়েছিলেন দুনিয়ার মানুষকে ইসলামের সরল ও শাস্তির পথ দেখানোর। অথচ আমরা ইসলামকে দুনিয়ার লোকদের নিকট তুলে ধরার কোনো চেষ্টাই করছি না। নিজেরা ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে বিশ্ববাসীকে যেন ডেকে বলছি, “এ যুগে ইসলাম অচল, তাই আমরা মুসলমান হয়েও ইসলাম মুতাবিক জীবন যাপন করছি না।” অর্থাৎ আমরা ইসলামের বিপক্ষে সাক্ষী দিচ্ছি।

এমতাবস্থায় আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে কি আশা করতে পারি? একদিকে আমরা দাবী করি যে, কুরআন আল্লাহর কিতাব এবং হযরত মুহাম্মদ (স) আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল অথচ আমরা নিজেরাই জানি না বা জানার চেষ্টাও করি না যে, আল্লাহ ও রসূল আমাদের কি কি কাজ করতে বলেছেন। কোন্ কোন্ কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তাও আমাদের জেনে নেয়ার আগ্রহ নেই।

আমরা কিছুটা মুসলমানের মত আচরণ করি। আবার কোনো কোনো বিষয়ে হিন্দু, খৃস্টান ও নাস্তিকদেরও অনুকরণ করি। একই সাথে দু’টি বিপরীত মুখে চলার চেষ্টা করার মত বোকামী আর কিছুই নেই। অথচ এ বোকামীই আমরা করে যাচ্ছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আল্লাহর ঘোষণা মুতাবিক দুনিয়ার জীবনে আমাদের লাঞ্ছনা, অপমান ও দারিদ্রের আযাব ভোগ করতে হবে এবং আখেরাতে কঠোর শাস্তি তো রয়েছেই।

তাই আজ আমাদের চিন্তা করা দরকার। যদি আমরা মুসলমান হয়ে বেঁচে থাকতে ও মুসলমানরূপেই মরতে চাই, তাহলে ইসলামকে জানতে হবে এবং আল্লাহ ও রসূল (স)-এর নির্দেশ মুতাবিক জীবন যাপন করতে হবে। নিজেরা মুসলমান হয়ে নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে মুসলমান হবার সুযোগদান এবং নিজেদের সমাজ ও দেশকে আল্লাহ ও রসূলের মরজী মুতাবিক পরিচালনার জন্য কঠোর শপথ গ্রহণ করতে হবে। আসুন, আমরা আল্লাহর নিকট দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের এবং আমাদের বংশধরদের মুসলমান হয়ে বাঁচার ও মুসলমান রূপে মৃত্যুবরণ করার তাওফীক দান করেন। আমীন।

সমাপ্ত

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South