জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন

অন্তর্গতঃ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
A A
Share on FacebookShare on Twitter

ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী

স্মৃতি প্রকাশনী

প্রকাশনায়
মোঃ নেছার উদ্দিন মাসুদ

পরিবেশনায়
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিভাগ

প্রকাশকের কথা

পরিবার গঠন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য পরিবার গঠন বিশেষভাবে জরুরী। লেখক বর্তমান পুস্তিকায় বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পুস্তিকাটি দ্বারা ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে ব্রতী জনশক্তি বিশেষভাবে উপকৃত হবে বিবেচনা করে আমরা পুস্তিকাটি ছাপাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চূড়ান্ত রায়ের দায়িত্ব পাঠকবর্গের। আশা করি পাঠকবর্গ পুস্তিকাটির যথার্থ মূল্যায়নে কার্পণ্য করবেন না। আল্লাহ হাফেজ।

প্রকাশক

লেখকের কথা

ইসলামী আন্দোলন সমাজে ইসলামী জীবনাদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা-প্রচেষ্টার নাম। ব্যক্তি যেমন ইসলামী আন্দোলনে নিয়োজিত তেমনি তিনি পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট। ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজন বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে আন্দোলনের সাথে জড়িত করা। ব্যক্তির প্রয়োজন পরিবারের সদস্যদেরকে আখেরাতের কামিয়াবীর জন্য তৈরী করা। আর সে জন্য তাদেরকে শরীক করা দরকার ইসলামী আন্দোলনে। পরিবারের সকল সদস্যই ব্যক্তি পর্যায়ে এক একটি ইউনিট। প্রত্যেককেই আখেরাতের কামিয়াবীর জন্য ইসলামী আন্দোলনে শরীক হওয়ার দরকার। তাই ইসলামী আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিকে তার পরিবারের সকল সদস্যকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছিল। এ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ইউনিট বৈঠকে “পরিবারের সদস্যদের আন্দোলনমুখী করা” -এ বিষয়ের উপর একটি পেপার পাঠের দায়িত্ব অর্পিত হয় আমার উপর। সে প্রেক্ষিতেই আমি একটি পেপার তৈরী করে কেন্দ্রীয় ইউনিট বৈঠকে তা পেশ করি। এর উপর আলোচনা-পর্যালোচন হয়। তার আলোকে সংশোধন করে তৈরী করি “ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন”।

আমাদের জনশক্তি তথা গোটা ইসলামী জনতা পরিবার ও পরিবার গঠন নিয়ে যে সমস্যায় রয়েছেন এ পুস্তিকাটি হয়ত তাতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে। সে লক্ষ্যেই পুস্তিকাটি ছাপিয়ে পাঠকবর্গের হাতে তুলে দেয়া হল। এতদসংক্রান্ত কোন পরামর্শ সহৃদয় পাঠকবর্গ আমার কাছে পাঠিয়ে দিলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের ইচ্ছা রইল। বাকী আল্লাহর মর্জি ও মেহেরবাণী। আল্লাহ হাফেজ।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী

ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন

ইসলামী আন্দোলন হলো ইসলামকে সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও সাধনার নাম। ব্যক্তি ও পরিবার হলো সমাজ জীবনের প্রধান ইউনিট। ইসলামকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে তাই ব্যক্তি ও পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি ও পরিবার যদি ব্যাপকভাবে ইসলামমুখী হয়ে উঠে তাহলে সমাজ জীবনে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের প্রাথমিক ভিত্তি মযবুত হয়। সে জন্যই ব্যক্তি ও পরিবারকে প্রথমে ইসলামী আন্দোলনমুখী করতে হবে। যত বেশী পরিবার ইসলামী আন্দোলনমুখী হবে, ইসলামী আন্দোলনমুখী ব্যক্তির সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনমুখী ব্যক্তি যদি তার পরিবারকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করার প্রয়াস পান, ভূমিকা রাখেন ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে ইসলামী আন্দোলনে গতি সঞ্চার হবে স্বাভাবিকভাবেই।

তাই ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে “ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন” এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী ব্যাপার। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজে আত্মনিয়োগ করা ইসলামী আন্দোলনে জড়িত প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে ইসলামী আন্দোলনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কতটুকু তৎপর তার উপর আন্দোলন নির্ভর করে অনেকখানি।

ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন করতে হলে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেই গঠনের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই আলোচ্য বিষয়ে (১) পরিবারের সদস্য, (২) পরিবারের সদস্যদের ইসলামী আন্দোলনমুখী করা ও – (৩) ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন-এ তিনটি বিষয় রয়েছে।

১। পরিবারের সদস্যঃ

পরিবারের সদস্যদেরকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজে যথার্থ গুরুত্ব প্রদান করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। ইসলামী আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এ ব্যাপারে অনেক সময় যথাযথ গুরুত্ব প্রদানে অবহেলা করেন কিনা তা তলিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টি নিয়ে অতীতে আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই, তবে ব্যক্তিগত রিপোর্টে এ ব্যাপারে হালকাভাবে হলেও উল্লেখ রয়েছে। রিপোর্টে পারিবারিক বৈঠক হয়েছে কিনা উল্লেখের উদ্দেশ্য পরিবারের সদস্যদের আন্দোলনমুখী করা বৈ অন্য কিছু নয়।

পরিবারের সদস্য বিষয়ে বিরাট গবেষণার প্রয়োজন নেই। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, কোরআন হাদীসে তার উল্লেখ ও ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার রূপ থেকে বিষয়টিকে পরিস্কার করা দরকার। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে এখানে বহু ক্ষেত্রে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা বর্তমান রয়েছে। সেই সব পরিবারে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, জামাই-বধু, নাতি-নাতনী মিলে এক পরিবার। কেবলমাত্র জামাই মেয়েকে নিয়ে তার পরিবারে চলে যায়। বাকীরা একই পরিবারভূক্ত থাকে। কোরআন শরীফে সূরা তাওবায় ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে:

قُلْ إِنْ كَانَ أَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَأَخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجِكُمْ وعشيرتكُمْ

“যদি তোমাদের বাপ-দাদা, সন্তান-সন্তুতি, তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন”।

এখানে পরিবারের অর্থ ব্যাপক করা হয়েছে। পরিবারের অর্থ ‘আহল’ ধরা হলে পরিবারকে সম্প্রসারিত করা যায়। যেভাবে বলা হয়েছে:

قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا

“দোজখের আগুন থেকে তুমি নিজে বাঁচ এবং তোমার আহলকে বাঁচাও।”

এক হাদীসে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বিবি ফাতেমা ও হযরত আলীকে (রাঃ) এক চাদরের নিচে রেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেছেন যে এরা তো আমার আহলে বাইত। এভাবে মেয়ে ও মেয়ে জামাইও আহলের অংশ হয়ে যায়।
আবার সূরা তাগাবুন ও সূরা ফুরকানে স্ত্রী ও সন্তানের মধ্যে পরিবারকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছেঃ

إِنَّ مِنْ أَزْوجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ .

“নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীগণ ও তোমাদের সন্তানাদির মধ্যে।” (তাগাবুন)

সূরা ফুরকানে বলা হয়েছে:

مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّتِنَا .

“আমাদের স্ত্রী ও সন্তানগণের মধ্য থেকে।”

আমার মনে হয় বিষয়টির মিমাংসা আমরা এভাবে করতে পারি যে, স্ত্রী ও সন্তানাদি সরাসরি আমাদের খোরপোষের অধীন, তাই তাদের দায়িত্ব সরাসরি আমাদের, আর বাকী সাধারণভাবে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট। যাদের ব্যাপারেও আমাদের কিছু ভূমিকা থাকা দরকার।

২। ইসলামী আন্দোলনমুখী করা:

সাধারণভাবে ইসলামী আন্দোলনমুখী করা মানে ইসলামী আন্দোলনের বিপরীত অবস্থান থেকে পরিবারের সদস্যদেরকে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে নিয়ে আসা, যেন বিরোধিতা না করে। কিন্তু গভীরভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করলে এতটুকুতে সন্তুষ্ট থাকা ঠিক হবে না। আমরা স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে আলাদা আলাদাভাবে বিষয়টির পর্যালোচনা করে দেখি।

ক) স্ত্রীকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করা:

আমি নিজে কেন জামায়াতে ইসলামীর রুকন হলাম? এ প্রশ্নের উত্তর যদি হয়-একামতে দ্বীনের ফরজ দায়িত্ব পালনের জন্য সংগঠনভুক্ত হয়ে বাইয়াত গ্রহণ করে রুকন হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাহলে বিচার্য ব্যাপার হলো আমার স্ত্রীর একামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন ও আল্লাহর সন্তুতি অর্জনের প্রয়োজন আছে কিনা। যদি থাকে তবে তাকে রুকন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই স্ত্রীকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করা মানে তাকে রুকন করা, কমপক্ষে রুকন করার টার্গেটে কর্মী মানে পৌছানো।

খ) ছেলেদেরকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করার অর্থঃ

শিবিরের বয়স থেকে নিয়ে ছাত্র জীবন পর্যন্ত শিবিরের বিভিন্ন স্তরে পৌছা ও সদস্য হওয়া এবং ছাত্র জীবনের পর কর্মজীবনের জামায়াতের রুকন হওয়া।

গ) মেয়েদেরকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করার অর্থঃ

ছাত্রী জীবনে ছাত্রী সংস্থার সদস্যা হওয়া এবং বিবাহিতা জীবনে জামায়াতের রুকন হওয়া।

৩। পরিবারের সদস্যদেরকে ইসলামী আন্দোলনমুখী করার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা:

ক) নবী রাসূলদের ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে তারা বংশ পরম্পরায় নবুয়তের দায়িত্ব পালন করেছেন। হযরত ইব্রাহিম, হযরত ইসমাইল, হযরত ইসহাক, হযরত ইয়াকুব, হযরত ইউসুফ, হযরত জাকারিয়া, হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিমুসসালাম। এই সব বিবরণ থেকে বুঝা যায় বাপ-দাদার দায়িত্ব নিতে হবে সন্তানদের। বরং সন্তান কামনার উদ্দেশ্যই ছিল সেই সময় তাই। বৃদ্ধ বয়সে হযরত জাকারিয়া (আঃ) সন্তান কামনা করতে গিয়ে যে দোয়া করেছিলেন তার দিকে আমরা লক্ষ্য করি। কোরআনে এসেছে:

وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِي مِنْ وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا – يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنْ آلِ يَعْقُوبَ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا.

“নিশ্চয়ই আমি আমার পর আমার দায়িত্ব পালনের জন্য অলীর আশংকা করি অথচ আমার স্ত্রী বন্ধা। অতএব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন স্থলাভিষিক্ত অলী দান করুন, যে আমার ওয়ারিশ হবে এবং ইয়াকুবের বংশের ওয়ারিশ হবে, এবং হে রব তাকে করুন সন্তুষ্টচিত্ত।” (সূরা মরিয়ম ৫-৬)

সূরা আম্বিয়ার ৮৯-৯০ আয়াতে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে এভাবেঃ

وَزَكَرِيَّا إِذْنَادَى رَبَّهُ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنْتَ خَيْرُ الوارثين – فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يُحْيِي وَأَصْلَحْنَا له زوجة ، إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَهَبًا ، وَكَانُوا لَنَا خُشَعِينَ .

“জাকারিয়া যখন তার রবকে এভাবে ডাকল যে, হে আমার রব আমাকে নিঃসন্তান লাওয়ারিশ করবেন না, আপনিতো শ্রেষ্ঠ ওয়ারিশ। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তার স্ত্রীকে সন্তান ধারণে উপযুক্তা বানিয়ে দিলাম। নিশ্চয়ই তারা ছিল কল্যাণের দিকে ধাবমান এবং আশা ও ভয় সহকারে আমাকে ডাকায় নিয়োজিত এবং আমাদের প্রতি ছিল ভীত-সন্ত্রস্ত্র।”

উপরোক্ত আয়াত দু’টো থেকে বুঝা যায় সন্তান নবীর মিশনের দায়িত্ব পালন করবে সে নিয়তেই সন্তান কামনা করা হয় এবং তারা কল্যাণের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসে, আল্লাহর দাসত্ব করে ও ভয় পোষণ করে। তাই সন্তানদেরকে আল্লাহমুখী, দ্বীনমুখী ও আন্দোলনমুখী করার কর্মসূচী এক ঐতিহাসিক কর্মসূচী।

খ) দোজখের কঠিন শাস্তি থেকে নিজেকে ও নিজের আহলকে রক্ষা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ব্যক্তিকে। বলা হয়েছে:

يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلئِكَةٌ غِلاظٌ شِدَادٌ لا يَعْصُونَ الله مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمِرُونَ .

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ও তোমাদের আহল (পরিবার-পরিজন) কে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা কর, যে দোজখের ইন্দন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে (নিয়োজিত) রয়েছে কঠোর স্বভাবের শক্তিশালী ফেরেশতা, তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তার অবাধ্যতা তারা করে না এবং তাদেরকে যাই আদেশ করা হয় তাই তারা করে” (সূরা তাহরীম-৬)

সূরা শোয়ারার ২১৪নং আয়াতে রাসূলকে নির্দেশ করা হয়েছে:

وَانْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ –
“আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।”

তাই আপনি আপনার নিজের জন্য যেমন জিম্মাদার, আপনার পরিবারের জন্যও তেমনি দায়িত্বশীল, এমনকি নিকটাত্মীয়দেরকেও সতর্ক করে যেতে হবে। পরিবারকে দ্বীনমুখী ও আন্দোলনমুখী করার মাধ্যমেই তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।

গ) পরিবারের ইহকালীন সমৃদ্ধিই চূড়ান্ত নয়, পরকালীন মুক্তিও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ পরিবারের দুনিয়াবী সমৃদ্ধির ব্যাপারে খুবই পেরেশান ও যত্নবান অথচ দুনিয়ার নয় আখেরাতই চূড়ান্ত। ব্যক্তিকে সাধ্যমত আয়-রোজগার করে পরিবারের ভরণ-পোষণের যেমন ব্যবস্থা করতে হবে তাদেরকে শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলা, একামতে দ্বীনের কাজে যথাযথ অংশগ্রহণেও তেমনি শরীক করতে হবে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ব্যক্তি যদি যথাযথ ভূমিকা রাখেন তবে তার অনেকখানি সাফল্য লাভ সম্ভব।

ঘ) এ পৃথিবীতে বাপ-দাদা-স্ত্রী-পরিজন ও ছেলেমেয়েরা দ্বীনের পথে চললে বেহেশতে একত্রে যাবে বলে কোরআনে পাকে বলা হয়েছে।

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعْتُهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيْمَانِ الْحَقْنَابِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا التَّنْهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ ، كُلُّ امْرِئٍ
بِمَا كَسَبَ رَهِينه

“যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানাদি ঈমানের পথ অনুসরণ করেছে আমরা তাদের সন্তানদেরকে শামিল করে দিব এবং তাদের আমলের কোন কমতি করা হবে না।” (সূরা তুর-২১)

جَنَّتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّتِهِمْ وَالْمَلَئِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِّنْ كُلِّ بَابٍ – سَلَّمٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ .

“চিরস্থায়ী জান্নাতে তারা নিজেরাও প্রবেশ করবে এবং তাদের বাপ-দাদা, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা নেক ও সৎ আমল করেছে, তারাও তাদের সঙ্গে সেখানে যাবে এবং ফেরেশতাগণ চারিদিক থেকে তাদের সম্বর্ধনার জন্য এসে বলবে তোমাদের প্রতি ছালাম যে জন্য তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ-কতই না উত্তম পরকালের এই বাড়ী।” (সূরা আর রায়াদ-২৩, ২৪)

বস্তুত যারা এ দুনিয়ায় দ্বীন মোতাবেক চলবে এবং একামতে দ্বীনের বাস্তবায়নে সাধ্যমত তাদের তৎপরতা চালাবে, তারাই এ ধরণের খোশ-কিসমতের অধিকারী হবে। এ জন্য পরিবারের সকল সদস্যকে যথার্থ মানে গড়ে তোমার জন্য বাড়ীর কর্তা ব্যক্তিকে যথার্থ ভূমিকা রাখতে হবে। বিষয়টির গুরুত্ব যথার্থভাবে উপলব্ধি করলেই এই কাজটি হতে পারে।

৪। পরিবারের সদস্যগণ ইসলামী আন্দোলনমুখী হয় না কেন?

পরিবারের সদস্যগণ ইসলামী আন্দোলনমুখী হোক এটা আমাদের সকলেরই কাম্য। কিন্তু তবু অনেক ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে হচ্ছে না-এর কারণ কি? তা খুব সতর্কতার সাথে তালাশ করে বের করতে হবে। তাহলেই প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

ক) একটা কারণ এ হতে পারে যে আন্দোলনের দায়িত্ব আসার কারণে এ দায়িত্বানুভূতি আমাদেরকে সংগঠনের প্রতি এত বেশী জড়িয়ে ফেলে যে পরিবারের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে আমরা সক্ষম হই না। এমনকি অনেক সময় পারিবারিক প্রয়োজন পূরণেও ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে পরিবারের সদস্যদের মনে ক্ষোভ ও বিক্ষোভের জন্ম নেয়, তাতে করে তারা আন্দোলন থেকে একটু একটু করে দূরে সরে দাঁড়ায়।

খ) পারিবারিক প্রয়োজন পূরণ করলেও পরিবারের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তাদেরকে গড়ে তোলার জন্য যে সময় ও দৃষ্টি দানের প্রয়োজন-অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দায়িত্বশীলগণ তা পারেন না। ফলে সারা দেশে বা বিরাট এলাকায় তিনি ইসলামী আন্দোলনের কাজ করে বেড়ান ঠিকই কিন্তু নিজের ঘরে তার কোন প্রভাব পড়ে না। আসলে এতে করে পরিবার গঠনে কোন, কাজই হয় না- না দাওয়াতী কাজ, না মনমানসিকতা তৈরীর কাজ, এমনকি পারিবারিক বৈঠক নিয়মিত করণের সময়টুকুও আমাদের হয় না।

গ) কারো কারো ক্ষেত্রে হয়ত একটা মনস্তাত্বিক কারণ থাকতে পারে। তা হলো আমি নিজেও সংগঠনের কাজে বাহিরে সময় দিচ্ছি, স্ত্রীও যদি জামায়াতের রুকন হয়ে বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করে তাহলে পরিবার দেখবে কে? অথবা শিবিরের কাজে আত্মনিয়োগ করলে, লেখাপড়ার ক্ষতি হবে-যাতে Carrier Building এর কাজ ব্যাহত হবে। এ ধরণের মনমানসিকতা পরিত্যাজ্য। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই রুকন এমন অনেকে রয়েছেন; তাদের পরিবার ভেঙ্গে পড়েনি বা শিবির ও পড়ালেখার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করা যায়-এভাবেই তৈরী করতে হবে। কোন দিকেই একমুখী করে ফেলা ঠিক হবেনা।

ঘ) স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের মধ্যে কতক কিছুটা বেয়ারা-উল্টোমুখী হতে পারে। এদের নিয়ে বিরাট সমস্যা। এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদীসে কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে সেদিকে খেয়াল রেখে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ ব্যাপারে আমি প্রথমে ২টি হাদীস উল্লেখ করছি:

عن عبد الله بن عمرو قال قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدُّنْيَا كُلَّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا المرأة الصالحة . ( متفق عليه )

(১) “হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: গোটা দুনিয়াটাই হলো সম্পদ, আর সতীসাধবী স্ত্রী হলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।” (বুখারী, মুসলিম)

عن أسامة بن زيد قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم ما أدعُ بَعْدِى فِتْنَةً أَضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النساء

২) “হযরত উসামা বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, পুরুষের পক্ষে নারী অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর বিপদের জিনিষ আমি আমার পর আর কিছুই রেখে যাচ্ছি না।” (বুখারী ও মুসলিম)

সম্পূর্ণ দুই চরিত্রের নারীর চিত্র হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। আপনার স্ত্রীকে আপনি কি শ্রেষ্ঠ সম্পদ মনে করেন অথবা ক্ষতিকর বিপদের জিনিষ মনে করেন সেই হিসাবে বিচার ফায়সালা হবে। যদি আপনার স্ত্রী প্রথম ধরণের হয়ে থাকে তবে আপনি তাকে গড়ে তুলতে পেরে না থাকলে সে জন্য আপনি দায়ী। আর দ্বিতীয় প্রকারের স্ত্রী আপনার ভাগ্যে জুটে থাকলে কোরআনের শিক্ষা মোতাবেক ক্ষমা ও সংশোধনের নীতি চালু করতে হবে।

সূরা তাগাবুনে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

يُأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوٌّ الكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ ، وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غفور رحيم

“নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে কতক রয়েছে তোমাদের শত্রু, তাই তাদের ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক হও। যদি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং ক্ষমা ও সংশোধনের নীতি অবলম্বন কর তাহলে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”(সূরা তাগাবুন-১৪)

যদি স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে দ্বীন ও আন্দোলন বিরোধী কোন রূপ কার্যক্রম প্রকাশ পায় তাহলে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ নয় ক্ষমার পথে আসার জন্য মহান আল্লাহ সুপারিশ করেছেন। তবে ক্ষমার সাথে সাথে সংশোধন প্রচেষ্টা জারী রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাকিদ প্রদান করেছেন। এভাবে নছীহত, শাসন, ক্ষমা ও সংশোধন প্রচেষ্টা জারী থাকলে কিছুটা ফল পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। অবশ্য কোরআন স্ত্রীর অবাধ্যতার কারণে আরো কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেবারও অনুমতি প্রদান করেছে। ধীর-স্থির ভাবে চিন্তা-ভাবনা করেই সে সব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَالَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي المضاجع وَاضْرِبُوهُنَّ ، فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سبيلا

“যে সব স্ত্রীর অবাধ্যতার আশংকা কর, তাদেরকে নছীহত কর, অতঃপর তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং এরপর তাদেরকে হালকাভাবে মার, অতঃপর যদি তারা আনুগত্যের পথে আসে তাহলে তাদের জন্য অন্য পথ তালাশ করো না।” (সূরা নেছা-৩৪)

এরপর উভয় পক্ষের সালিশির ভিত্তিতেই সন্ধির কথা বলা হয়েছে। পুরুষদের ব্যাপারেও তেমনি বলা হয়েছে:

وان امْرَأَةً خَافَتْ مِنْ بَعْلِهَا نُشُورًا أَوْ أَعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صَلْحًا ، وَالصَّلْحُ خير ، وأحضرت الأنفسُ السُّحَّ ، وَإِنْ تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا لَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

“যদি কোন নারী তার স্বামী হতে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশংকা করে তবে এতে কোন পাপ নেই যে উভয়ে পরস্পরে এক বিশেষ পদ্ধতিতে মিমাংসা করে নেয় এবং মিমাংসাই অধিক কল্যাণকর, এতে সংকীর্ণতার অন্তরসমূহ একত্রিত হয়। যদি তোমরা সন্ধ্যবহার কর ও তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আমলের পূর্ণ খবর রাখেন।” (সূরা নিসা: ১২৮)

এভাবে চরম অশান্তির মাঝেও সমাধানের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। তাই একান্তই যদি স্ত্রী উল্টোমুখো হয় তবে এভাবে নছীহত শাসন ক্ষমা, সংশোধন ও মিমাংসার পথ তালাশ করা ভিন্ন অন্য কোন উপায়ে নেই। তবে এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর (সঃ) ঐ হাদিসটি সব সময়ই খেয়াল রাখলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

عنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ استوصوا بالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّهُنَّ خَلَقْنَ مِنْ ضِلْعِ وَإِنْ أَعْوَجَ شيي في الضلع أعلاه فإن ذهبت تُقيمه كسرته وان تَرَكْتُهُ لَمْ يَزَلْ أَعُوجَ فَاسْتَوْصُوا بالنساء خيرا

“হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আমার-নিকট হতে নারীদের সাথে ভাল ব্যবহারের উপদেশ গ্রহণ কর, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজড়ের হাড় হতে, আর হাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হল উপরেরটা (নারীকে তা থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে)। অতএব তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও ভেঙ্গে ফেলবে, আর যদি ফেলে রাখ তবে সর্বদা তা বাঁকাই থেকে যাবে। অতএব নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।” (মিশকাত, ৬ষ্ট জিলদ, হাদীস নং-৪০০০)

৫। পরিবারের কোন সদস্য বিরোধী শিবিরে যোগদান করে থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

কোরআনের ঘোষণা:

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا أَبَاءَكُمْ وَاخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ ان استحبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الإِيْمَانِ ..

“হে ঈমানদারগণ তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা ও তোমাদের ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের উপর কুফরকে বেশী ভালোবাসে।” (সূরা তওবা-২৩)

উক্ত আয়াতের দৃষ্টিতে নিজের ভাই, স্ত্রী বা স্বামী, ছেলে-মেয়েরা যদি আদর্শ বিরোধী দলকে ইসলামী দলের উপর প্রাধান্য দেয় এবং সম্পর্ক রাখে তাহলে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবে না। সংশোধন প্রচেষ্টা হয়ত চালু রাখ যেতে পারে কিন্তু Confidence-এ নিয়ে একত্রে চলা যাবে না।

৬। ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠন:

ইসলামী আন্দোলনমুখী করার অর্থ হলো একামতে দ্বীনের কাজে লাগানো। একামতে দ্বীনের কাজের ২টি দিকঃ (ক) দ্বীনের শরিয়তি বিধি-বিধানগুলো পরিবারের সদস্যদের পালন; (খ) দ্বীনের বাস্তবায়নে আন্দোলনে শরীক হওয়া।

ক) পরিবারে দ্বীনের (শরীয়তের) বিধান সমূহ চালু হওয়া:

ইসলামী আন্দোলনমুখী পরিবার গঠনে সূচনাপর্ব থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বিয়ের সময়েই ছেলে-মেয়ের দুনিয়াবী দৃষ্টিভঙ্গীর চেয়ে দ্বীনি দৃষ্টিভঙ্গীকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বিবাহের মাধ্যমে সম্পদ লাভ ও সৌন্দর্য প্রীতির অগ্রাধিকার না দিয়ে দ্বীনি ও চারিত্রিক মানের দিকে গুরুত্ব দিলে পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ বৃদ্ধি পাবে। ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের বিবাহ করলে ছাত্রী সংস্থার অনেক মেয়ে ঘরমুখী না হয়ে আন্দোলনমুখী থেকে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর প্রতিকার করতে হবে অর্থাৎ ছাত্রী সংস্থার কাজ ও পারিবারিক কাজে ভারসাম্য স্থাপন করতে হবে। স্বামী সেবা ও শ্বশুর-শাশুড়ীর মনোরঞ্জন করেই ছাত্রী সংস্থার কাজ যতটুকু সম্ভব চালিয়ে যেতে হবে। পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যাওয়া কতটুকু ঠিক হবে তা ভালভাবে বিবেচনা করে দেখতে হবে।

একটি ইসলামী পরিবারের বৈশিষ্ট্যানুযায়ী পরিবারে কোন নতুন অতিথি আসলে জন্মের পর পরই আজান-একামত দিয়ে শিশুকে ইসলামী সংস্কৃতির আহ্বান জানাতে হবে। শিশুর একটি সুন্দর ইসলামী নাম রেখে আকিকা করতে হবে। সে যখন ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠবে তাকে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন দিতে হবে। আরবী, বাংলা, ইংরেজি বর্ণমালার ইসলামী সংস্করণ ও ইসলামী ছড়া শিখাতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শরীয়তের বিধান সমূহ চালু আছে কিনা সেদিকে নজর দিতে হবে। স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা নামাজের পাবন্দ কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারো মধ্যে ত্রুটি ধরা পড়লে সাথে সাথে সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবারে শরীয়তের বিধান মোতাবেক পর্দার ব্যবস্থা আছে কিনা সেদিকেও নজর দিতে হবে এবং ত্রুটি থাকলে সংশোধন করতে হবে। এর সাথে সাথে পরিবারে একটি ইসলামী পরিবেশ চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সালাম বিনিময়ের, অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢোকা ইত্যাদি ইসলামী রীতি চালু করতে হবে।

অপরদিকে পরিবার থেকে ইসলামী সংস্কৃতি বিরোধী ভূমিকা দূর করতে হবে। ঘরে প্রাণীর নক্সা, রেডিও-টিভিতে শরীয়ত বিরোধী প্রোগ্রাম যাতে না চলে সে ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের মনমানসিকতা তৈরী করতে হবে। টিভি একটি সমস্যা হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে আসছে, কারণ টিভি বাসায় না রাখলে ছোট-বড় ছেলে-মেয়েরা বাড়ীর বাইরে গিয়ে আরো বেশী নষ্ট হবার আশংকা, আবার বাসায় টিভি রাখলে তাকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অসুবিধা। কারণ বাড়ীর কর্তা বা নিয়ন্ত্রক তো সব সময় টিভির কাছে থাকে না। তাই সাধ্যমত টিভি নিয়ন্ত্রণ অন্ততঃ অশ্লীল ছায়াছবি ও শরীয়ত বিরোধী প্রোগ্রাম যেন চালু না থাকে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ছেলে-মেয়েদের ইসলামী শিক্ষার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। ছোটকাল থেকেই ছহীহ করে কোরআন শিক্ষা ও নামাজ শিক্ষা যেন হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। এরপরও শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ছেলে-মেয়েদেরকে একেবারে Secular শিক্ষা-দীক্ষায় গড়ে তুললে দ্বীনের পথে টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে পিতার সাহচর্য দান ছেলে মেয়েদের জন্য উৎসাহের কারণ হতে পারে। পিতা তাকে সাধ্যমত দ্বীনের পথে গড়ে তোলবার প্রয়াস পেলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

তবে পরিবার গঠনে মায়ের ভূমিকাই প্রধান। ছেলে-মেয়েরা মায়ের কাছেই থাকে বেশী সময়। তাই একটি আদর্শ ইসলামী পরিবার গঠনে প্রয়োজন একজন আদর্শ ইসলামী মা। মা থেকেই ছেলে-মেয়েরা শিখে বেশী। এ জন্যই নিজের ভাষাকেও বলা হয় মাতৃভাষা অথবা মায়ের ভাষা। মা যদি হন আদর্শ চরিত্রের অধিকারী, রোজা নামাজের পাবন্দ, পর্দানশীল, মিষ্টভাষী, সদাচারিনী, সদালাপী ও খোদাভীরু, তবে তার প্রভাব সন্তানদের উপর কম-বেশী না পড়ে পারে না।

তেমনিভাবে বাপ-মা দুজনকেই হতে হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শবান, যাতে তাদের সন্তানদের উপর তার ছাপ পড়ে। বাবা-মায়ের জীবনে কোন Contradiction (বৈপরীত্ব) থাকলে সন্তানগণ আদর্শ চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠবে এটা আশা করা যায় না। তাই বাবা-মা দুজনকেই হতে হবে খাঁটি মুসলমান, মুমেন ও মুত্তাকী।

ছেলে-মেয়েদের সুপ্ত মেধা ও প্রতিভার বিকাশ সাধনে শিক্ষা প্রশিক্ষণের সাধ্যমত ব্যবস্থা পিতা-মাতা নেবেন। কিন্তু তাদেরকে উচ্চাভিলাষী করে তোলা, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো- এভাবে দুনিয়াবী আশা-আকাংখায় বেশী বেশী জড়িয়ে ফেলা কতটুকু বিবেচনাপ্রসূত তা মূল্যায়ন করে দেখতে হবে। আসলে পরিবার হলো প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও মায়া-মমতায় ভরা একটি আবাসস্থল। এ ব্যাপারে কোরআন বলেঃ

وَمِنْ آيَتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مُوَدَّةً وَرَحْمَةً طَ إِنَّ فِي ذلك لايت لقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ .

“আল্লাহর নিদর্শনের মধ্যে একটি হলো তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করা যাতে তোমরা একত্রে বসবাস করতে পার এবং আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেন ভালবাসা ও রহমত, নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সুরা রুম-২১)

এ ভালোবাসার বন্ধনে রেখেই স্ত্রীকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে উপদেশ দান ও শাসন করতে হবে এবং একই পদ্ধতিতে ছেলে-মেয়েদেরকেও দ্বীনের পথে চালাতে হবে, শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। এভাবে পরিবার চলবে দ্বীনের পথে।

খ) পরিবারের সদস্যদেরকে আন্দোলনমুখী করাঃ

পরিবারকে দ্বীনের পথে পরিচালিত করতে পারলে তাকে আন্দোলনমুখী করা সহজ হবে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ব্যক্তির টার্গেট গ্রহণ। স্ত্রীকে আন্দোলনমুখী করার জন্য যেমন টার্গেট প্রয়োজন, ছেলেমেয়েদেরকে আন্দোলনমুখী করতেও তেমনি দরকার টার্গেট গ্রহণের।

খ.১. স্ত্রীকে আন্দোলনমুখী করা:

স্ত্রীর সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক খুবই গভীর। ব্যক্তি তাকে ভালবাসে, তার প্রয়োজন পূরণ করে, তার সন্তানদের প্রয়োজন পূরণ করে। তাই ব্যক্তির তার উপর প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। সে প্রভাবকে কাজে লাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে রাসূলুল্লাহ অহীর পয়গাম নিয়ে নিজ স্ত্রীর নিকট গেলে স্ত্রীই হন প্রথম মুসলমান। স্ত্রীর সাথে ইসলামী আন্দোলনমুখী আলাপ-আলোচনা, আখেরাতমুখী কথাবার্তা বলতে হবে, তার উপযোগী বই-পত্র পড়তে দিতে হবে। তাকে নিকটস্থ ইউনিটে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। পার্শ্ববর্তী মহিলা দায়িত্বশীলার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। নিকটে ইউনিট না থাকলে স্ত্রীর মাধ্যমে আরো ২/৪ জন মহিলা সহ ইউনিট গঠন করতে হবে। সংগঠনের কাজে তাকে উৎসাহিত করে এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রয়োজনে আপনি বাসায় থেকে তাকে বৈঠকে যাবার সুযোগ করে দিতে হবে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ পরিবারিক বৈঠক করতে হবে। কোরআন হাদীস থেকে উপদেশ দান অব্যাহত রাখতে হবে। এভাবে আন্দোলনের প্রতি তার মন-মানসিকতা তৈরী করতে হবে। সাংসারিক কাজে সহযোগিতা প্রদানের জন্য লোক জোগাড় করে দিতে হবে। এভাবে তাকে সক্রীয় সহযোগী, কর্মী ও রুকন বানাতে হবে।

খ.২. সন্তানদেরকে আন্দোলনমুখী করা:

ছোট বয়সে দ্বীনি এলেমের ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিবিরের বয়স হলেই ছেলেদেরকে শিবিরের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে হবে। শিবিরের জনশক্তিকে খায়-খাতির করে তাদের সাথে আপনার ছেলের বন্ধুত্ব তৈরী করে দিতে হবে। ফুলকুঁড়ি কাছে থাকলে তাতেও শামিল করা যেতে পারে। কিশোর কন্ঠ সংগ্রহের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ পর্যায়ে শিবিরের সাথে কাজ করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে। অবশ্য শিবিরের কাজ ও লেখাপড়ায় ভারসাম্য রক্ষা পায় কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এসব ব্যাপারে পারিবারিক বৈঠকে খোঁজ-খবর নিতে হবে। তেমনিভাবে মেয়েদেরকে ছাত্রী সংস্থার কাজে লাগিয়ে দিতে হবে। আপনার আশেপাশে ছাত্রীসংস্থার কাজ না থাকলে ছাত্রীসংস্থার কাগজপত্র জোগাড় করে আপনার মেয়েকেই ছাত্রীসংস্থার কাজে এগিয়ে নিতে হবে।

খ.৩. ছেলে-মেয়েরা কর্মজীবনে পদার্পন করলে আন্দোলনমুখী করা:

ছেলেরা কর্মজীবনে প্রবেশ করলে আপনার টার্গেট অব্যাহত রাখতে হবে। পার্শ্ববর্তী জামায়াত দায়িত্বশীলের সাথে যোগাযোগ করে আপনার ছেলেরা যেন জামায়াতের জনশক্তিভুক্ত হয়ে যায় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। পারিবারিক বৈঠকে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। ছেলেদের বৈষয়িক উন্নতির সাথে আন্দোলনের ক্ষেত্রেও যেন অগ্রগতি হয় তার প্রতি নজর দিতে হবে। মেয়েদের বিয়ে শাদির পরও যেন আন্দোলনের পথে টিকে থাকে, যেন অগ্রসর হয় সেজন্য তাকিদ প্রদান করতে হবে। সময় সময় মেয়েদের বাড়ীতে গিয়ে মেয়ে-জামাইকে দ্বীন ও আন্দোলনের পথে হেদায়াত দান করতে হবে। ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে দান প্রসংগে মনে রাখতে হবে কেবলমাত্র বৈষয়িক উন্নতির দিকে খেয়াল রেখে বিয়ের ব্যবস্থা করা ঠিক হবে না। দ্বীনি আন্দোলনের মানের দিকেও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। তাই আপনার ছেলের বউ যেন আন্দোলনে অগ্রসর হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মোট কথা আপনার পরিবারকে একটি আদর্শ ইসলামী পরিবার বানানো হবে-এ টার্গেটে প্রথম থেকে কাজ শুরু করে শেষ পর্যন্ত এই টার্গেটেই কাজ করে যেতে হবে। এখানে টার্গেটে কোন রদবদল নেই, আজীবন টার্গেট, সব সময়ই খেয়াল রাখতে হবে, আবার কেউ পিছিয়ে যায় কিনা। কারণ দুনিয়ার আকর্ষণ, প্রবৃত্তির অনুসরণ ও শয়তানের ধোঁকা-প্রতারণা সর্বদা কার্যকর রয়েছে।

৭। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও প্রতিবেশীর অধিকার আদায়:

একটি আদর্শ ইসলামী পরিবারের বৈশিষ্ট্য হলো উক্ত পরিবারে পিতা-মাতার হক পুরাপুরি আদায় হয়, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার রক্ষিত হয় এবং প্রতিবেশীর সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে প্রতিবেশীর হক পালিত হয়।
পিতা-মাতার হক আদায়ের ব্যাপারে কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাকিদ প্রদান করেছেন। কোরআনে এসেছে:

وَقَضَى رَبُّكَ أَلا تَعْبُدُوا الأَ أَيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ احْسَنًا امَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كُلَّهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَا أَفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا –
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَّبِّ ارحمهما كَمَا رَبَّيني صغيراً –

“তোমার রব আদেশ করেছেন একমাত্র তাকে ছাড়া আর কারো গোলামী করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, যদি তাদের মধ্যে একজন অথবা দুইজনই তোমার সামনে বার্ধক্যে উপস্থিত হয় তবে তাদেরকে উহ্ পর্যন্ত বলোনা অথবা তাদেরকে ধমক দিওনা বরং তাদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলো এবং তাদের সাথে বিনীতভাবে রহমতের ডানা নত কর আর বল হে পরোয়ারদিগার তাদের উভয়ের প্রতি মেহেরবাণী করুন যেভাবে তারা শৈশব কালে আমাকে লালন পালন করেছিলেন” (সূরা বনী ইসরাইল ২৩, ২৪)

তাই কোরআনেরর আলোকে পিতা-মাতা ও শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে, হতে হবে তাদের একান্ত অনুগত ও বাধ্য। তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে হবে, মনোরঞ্জন করতে হবে। এমন ব্যবহার ও আচরণ করতে হবে যেন তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সন্তানের জন্য দোয়া করে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কে হবে মধুর ও ভালবাসার। তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঝগড়া-ঝাটি ও মনোমালিন্য থাকবে না। অন্ততঃপক্ষে সন্তানের সামনে ঝগড়া-ঝাটি করা ঠিক হবে না। পারস্পরিক মিমাংসা করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের শরিয়ত সম্মত অধিকার পূরণ হতে হবে। স্বামী স্ত্রীর খোরপোশের ব্যবস্থা করবেন, স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া দিবে এবং তার প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আদান-প্রদানে বিরত থাকবে না। প্রতিবেশীর কেউ অভাব অনটনে বা অসুস্থ আছে কিনা তার খোঁজ-খবর নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

৮। পরিবারের সদস্যদের সংশোধনে আল-কোরআন:

পিতা-মাতার হক আদায় করার জন্য কোরআন পাকে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, সূরা বনী ইসরাইল ২৩-২৮ আয়াত ও সূরা আহকাফের ১৫-১৭ আয়াতে কিন্তু পিতামাতা যদি শেরক করার তাকিদ দেয় তাহলে তাদেরকে মানা যাবে না। এ সম্পর্কে সূরা আনকাবুত ও সূরা লোকমানের কথা এসেছে। সূরা লোকমানে বলা হয়েছেঃ

وَإِنْ جَاهَدُكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكْ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبُهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا
(لقمان: ١٥)

“যদি তারা আমার সাথে শেরক করার চেষ্টা করে যে ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তাদেরকে মান্য করো না তবে তাদের দুজনেরই সাথে দুনিয়াতে ভাল ব্যবহার করবে।”

পিতা-মাতা এক বা দুইজন গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়লে, পিতা-মাতাকে সংশোধন করার প্রচেষ্টা চালানোর দায়িত্ব রয়েছে পুত্রের। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তার পিতাকে তার গোমরাহীর কথা বলেছিলেন বলে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে:

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ أَزْرَ أَتَتَّخِرُ أَصْنَامًا أَلِهَةً إِنِّي ارك وقَوْمَكَ فِي ضَللٍ مُّبِين .

“যখন ইব্রাহীম (আঃ) তার পিতা আজরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহ্ রূপে গ্রহণ করলেন, আমি আপনাকে ও আপনার কাওমকে সুষ্পষ্ট গোমরাহীতে দেখতে পাচ্ছি।” (সূরা আনয়াম-৭৪)

বিজ্ঞ লোকমান কর্তৃক তার ছেলেকে উপদেশ দানের কথা বলা হয়েছে সূরা লোকমানের ১২-১৯ আয়াতে। এখানে যেসব বিষয়ে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে তা হলো:

১. আল্লাহর সাথে যেন শেরক করা না হয় কারণ শেরক হলো বড় যুলুম।
২. আল্লাহ ও পিতা-মাতার শোকর আদায় করতে বলা হয়েছে।
৩. পিতা-মাতা শেরকের পক্ষে থাকলে শেরক করা যাবে না। তবে দুনিয়াতে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে।
৪. আল্লাহর দিকে রুজু ব্যক্তির পথে চলতে হবে।
৫. আল্লাহর দিকেই সকলকে ফিরে যেতে হবে এবং অতঃপর নিজেদের আমল জানিয়ে দেয়া হবে।
৬. আখেরাতে সামান্যতম গোপন কাজও যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ এনে তা হাজির করবেন।
৭. নামাজ কায়েম করতে হবে।
৮. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করে যেতে হবে।
৯. বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
১০. লোকসমাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা যাবে না।
১১. যমীনে গর্ব ভরে চলবে না-আল্লাহ অহংকারকারীকে পছন্দ করেন না।
১২. চাল-চলনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে।
১৩. স্বরকে অনুচ্চ রাখতে হবে কারণ উচ্চস্বর গাধার।

৯। আখেরাতে নিজে নাজাত না পেলে কেউ কোন উপকার করতে আসবে না:

আল কোরআনের বহু জায়গায় এ কথা পরিস্কার করে বলা হয়েছে আখেরাতে নিজের আমলনামা খারাপ হলে আত্মীয়-স্বজন কেউই কোন উপকারে আসবেনা।

يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ
“সেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি কোন উপকারে আসবে না।” (সূরা শুয়ারা-৮৮)

অতএব প্রথমে নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপযোগী করার জন্য নিজের মান বৃদ্ধির জন্য সাধ্যমত চেষ্টা চালাতে হবে। সাথে সাথে পরিবারের সদস্যদের আখেরাতে কামিয়াবির উপযোগী করে গড়ে তোলার আপ্রাণ প্রয়াস চালাতে হবে।

১০। পরিবারের সদস্যদের আন্দোলনমুখী করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ও সাংগঠনিক পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কতিপয় সুপারিশঃ

ব্যক্তিগত ভাবেঃ

– শত কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও পারিবারিক সংশোধন ও পরিবার গঠনের জন্য কিছু সময় বের করতে হবে। সম্ভব হলে পারিবারিক দিবস হিসাবে মাস/সপ্তাহে সময় দিতে হবে।

– পারিবারিক বৈঠক নিয়মিত করতে হবে।

– স্বাভাবিক ধরণের পারিবারিক প্রয়োজন পূরণে ত্রুটি করা যাবে না।

– টার্গেট ও বুঝানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সাংগঠনিকভাবেঃ

– বিভিন্ন পর্যায়ের সাংগঠনিক বৈঠকে পারিবারিক খোঁজ-খবর নিতে হবে।

-জনশক্তির/দায়িত্বশীলদের স্ত্রীদের সম্মেলন করে আন্দোলনে উৎসাহিত করতে হবে।

-জনশক্তির/দায়িত্বশীলদের সন্তানদের স্তরে স্তরে সম্মেলন করে আন্দোলনে উৎসাহিত করতে হবে।

-পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।

১১। উপসংহার:

বিষয়টি বাস্তবমুখী ও ব্যক্তি ভিত্তিক। ঠিক কোন ফর্মুলা প্রয়োগ এ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এক একজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম অবস্থা ও ভিন্ন রকম ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে। তাই প্রত্যেককে তার নিজস্ব পরিবার নিয়েই চিন্তা-গবেষণা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের কেউ বা কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের প্রতি বেশী কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে আবার কেউ বা খুবই ঢিল ছেড়ে দেয়। এর কোনটাই ঠিক নয়। মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উচিৎ। এই পুস্তিকা পাঠের মাধ্যমে কিছুটা অনুভূতি সৃষ্টি হলে, পরিবারের প্রতি আরেকটু মনোযোগী হলে আমার শ্রমকে স্বার্থক মনে করব। আল্লাহ তায়ালা সকলকে খায়ের ও বরকত দান করুন। আমীন।

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South