আমার আব্বা আম্মা
[যে বৃক্ষরাজির ছায়ায় বেড়ে উঠি]
লেখকঃ সাইয়েদা হুমায়রা মওদূদী
প্রকাশনীঃ আধুনিক প্রকাশনী
(সাইয়েদ মওদূদী র. ও বেগম মওদূদী র. – এর অনবদ্য জীবনালেখ্য)
আব্বা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রহ. মুসলিম উম্মাহর এক বিশাল সম্পদ, তাই তার স্বরণ ও স্মারক উম্মাহর জন্য আমানত স্বরূপ। তাকে শৰণীয় করে রাখার জন্য ২০০৪ সালের মে মাসে লাহাের থেকে প্রকাশিত মাসিক সাময়িকী তারজুমানুল কুরআনের একটি বিশেষ সংখ্যায় আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে আমি কিছু স্মৃতিচারণ করেছিলাম, আব্বার অনশত বার্ষিকীতে তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য।
অপরকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেয়া খুব সহজ, কিন্তু নিজে ধৈর্যধারণ করা অত্যন্ত কঠিন। সবরের ঢােক সবচাইতে তিক্ত ডােক, যা হজম করা সত্যিই কঠিন। অথচ আমি জিন্দেগীভর দাদী, আব্বা ও আম্মাকে বিন্দু বিন্দু করে সবরের তিক্ত স্বাদ হজম করতে দেখেছি। সারা জীবন তারা ধৈর্যের
যে পরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে গেছেন এ কাহিনী তারই প্রতিচ্ছবি। বার * বার অশ্রু সজল হয়ে উঠতাে দৃষ্টি ; ভরা পানপাত্রের মতাে অশ্রু জমে থাকতাে অক্ষি কোটরে, ঝরে পড়েনি দৃষ্টিমানের সামনে। হয়তাে বা শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও অশ্রুগুলাে ঝরতে পারেনি। কারণ দাদী বলে দিয়েছিলেন, “ক্রন্দনরত ব্যক্তির সাথে কেউ কাঁদে না, কিন্তু যে হাসিখুশী। তার সাথে সবাই হাসে। সকলে ক্রন্দনরত ব্যক্তির তামাশা দেখে।”
আজ বলা হয় বিগত শতাব্দী ছিল মাওলানা মওদূদীর শতাব্দী। তিনি নিজ ক্ষুরধার লেখনী দ্বারা চিন্তার রাজ্যে এক ব্যাপক বিপ্লব সাধন করেন। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন আজ তার লেখনী ও সাহিত্য দ্বারা দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছে। তবে এখানে স্মর্তব্য যে, কোনাে চিন্তাবিদ বা লেখকের মহান সৃষ্টিসমূহ তখন সব যখন তার পরিবেশ ও প্রতিবেশ অনুকূল থাকে। পরিবারের সদস্যদের অটুট সহযােগিতা সে লাভ করে, বিশেষ করে সহধর্মিনীর সহযােগিতা ও শান্তিপূর্ণ সান্নিধ্য।
এটা শুধুমাত্র একটি স্মৃতিচারণ নয় বরং এক খ্যাতিমান ব্যক্তি, তাঁর। স্নেহময়ী জননী ও জীবন-সংগিনীর ধৈর্য ও দৃঢ়তার অনবদ্য আলেখ্য। আজ বিশ্বময় বিস্তৃত মহান এ ইসলামী আন্দোলন এমন একটি গৃহকোণ থেকে সূচিত হয়েছিল যে পরিবারে ছিল শিশু-কিশাের নয়জন সন্তান, ‘মা’ ছিলেন, আর ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল স্বাস্থ্য হাঁপানির রােগী জীবনসংগিনী। সেই পরিবারের সদস্যরা যদি গাফিলতি করতে কিংবা কোনাে বিষয়ে অধৈর্যের পরিচয় দিতাে তাহলে আজ আমরা আন্দোলনের যে সাজানাে বাগান দেখছি, তা হয়তাে এমন হতাে না। আন্দোলন-সংগঠনের সাথে নেতা-কর্মীর সম্পর্ক আসলে মানুষের আচরণ দ্বারা নির্ধারিত হয়। এ জন্যই কারাে স্থান হয় প্রথম সারিতে, আর কারাে অবস্থান হয় শেষের সারিতে। অনেকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজেদের ভূমিকা পালন করেন। এজন্যই এ কাহিনী সারা জীবনের ধৈর্য, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কুরবানী, স্বার্থত্যাগ ও আত্মত্যাগের এক মহান জীবনকাহিনী।
পর্দা সরিয়ে এই ঘরের এক ঝলক পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যেন পাঠক একটু বুঝতে পারেন। ঝড়-তুফান আর ডামাডােলের থাকার পরও কেমন করে চলতাে সেই ঘর সেই সংসার।
“কেয়া গুজাররতি হ্যায় কাতরে পে গােহর হােনে তাক” অর্থ : ‘মিশে যাবার পূর্বে অঝরা অশ্রুবিন্দুর কি অবস্থা হতাে।
সাময়িকী পত্রের নিবন্ধের সীমাবদ্ধতার কারণে শাজার হায়ে ছায়েদার” (দাদী, আব্বাজান ও আম্মা) তথা যে বৃক্ষরাজির ছায়ায় বেড়ে উঠি-সম্বন্ধে বেশী কিছু লিখতে পারলাম না। কিছু সংযােজনের পর পুস্তক আকারে আমার কাছে দেয়ার পর আবার দেখে দিয়েছি। আশা করি পুস্তিকায় পাতার পরতে পরতে পাঠকের হৃদয়ে সেই মহান ব্যক্তিদের জীবন আরও স্পষ্টতর হতে থাকবে যাদের জীবনী নিয়ে এ আলেখ্য।
হুমায়রা মওদূদী
লাহাের। পাকিস্তান