1- بَابُ فِي الاِقْتِصَادِ فِي الْعِبَادَةِ
পরিচ্ছেদ -১৪ : ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ طه ١ مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ ٢ ﴾ [طه: ١، ٢]
অর্থাৎ “ত্বা-হা-। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।” (সূরা ত্বাহা ১-২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
অর্থাৎ “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা তাঁর কাম্য নয়।” (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াত)
1/146 وعن عائشة رضي الله عنها : أنَّ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم) دخل عَلَيْهَا وعِندها امرأةٌ، قَالَ: «مَنْ هذِهِ ؟»قَالَتْ: هذِهِ فُلاَنَةٌ تَذْكُرُ مِنْ صَلاتِهَا . قَالَ: «مَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ، فَواللهِ لاَ يَمَلُّ اللهُ حَتَّى تَمَلُّوا»وكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ صَاحِبُهُ عَلَيهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/১৪৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।[1]
‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে।
2/147 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : جَاءَ ثَلاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أزْوَاجِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، فَلَمَّا أُخْبِروا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا وَقَالُوا : أَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبيِّ (صلى الله عليه و سلم) وَقدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأخَّرَ. قَالَ أحدُهُم : أمَّا أنا فَأُصَلِّي اللَّيلَ أبداً . وَقالَ الآخَرُ : وَأَنَا أصُومُ الدَّهْرَ أَبَداً وَلا أُفْطِرُ . وَقالَ الآخَر : وَأَنا أعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أتَزَوَّجُ أبَداً . فَجَاءَ رَسُولُ الله (صلى الله عليه و سلم) إلَيهِم، فَقَالَ: «أنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا ؟ أَمَا واللهِ إنِّي لأخْشَاكُمْ للهِ، وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّي أصُومُ وَأُفْطِرُ، وأُصَلِّي وَأَرْقُدُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّساءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/১৪৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’[2]
3/148 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أنَّ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «هَلَكَ المُتَنَطِّعُونَ»قالها ثَلاثاً . رواه مسلم
৩/১৪৮। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দ্বীনের ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেল। (অথবা ধ্বংস হোক।)’’ এ কথা তিনি তিনবার বললেন।[3]
4/149 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «إنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّيْنُ إلاَّ غَلَبَهُ، فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأبْشِرُوا، وَاسْتَعِينُوا بِالغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ». رواه البخاري .
وفي رواية لَهُ: «سَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَاغْدُوا وَرُوحُوا، وَشَيءٌ مِنَ الدُّلْجَةِ، القَصْدَ القَصْدَ تَبْلُغُوا».
৪/১৪৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।’’[4]
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধ্যায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।’’
অর্থাৎ অবসর সময়ে উদ্যমশীল মনে আল্লাহর ইবাদত কর; যে সময়ে ইবাদত করে তৃপ্তি পাওয়া যায় এবং তা মনে ভারী বা বিরক্তিকর না হয়। আর তাহলেই অভীষ্টলাভ করতে পারবে। যেমন বুদ্ধিমান মুসাফির উক্ত সময়ে সফর করে এবং যথাসময়ে সে ও তার সওয়ারী বিশ্রাম গ্রহণ করে। (না ধীরে চলে এবং না তাড়াহুড়া করে।) ফলে সে বিনা কষ্টে যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়।
[1] সহীহুল বুখারী ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, ১১৫৬, ২৮১৮, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০
[2] সহীহুল বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১, নাসায়ী ৩২১৭, আহমাদ ১৩১২২, ১৩০১৬, ১৩৬৩১
[3] মুসলিম ২৬৭০, আবূ দাউদ ৪৬০৮, আহমাদ ৩৬৪৭
[4] সহীহুল বুখারী ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬, নাসয়ী ৫০৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩, ২৭৪৭০