জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

চল্লিশ হাদিস

অন্তর্গতঃ আল হাদিস, কর্মী সিলেবাস
Share on FacebookShare on Twitter

চল্লিশ হাদিস

ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


মূল : ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ : সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ
প্রকাশক : মো. ইসমাইল হোসেন
প্রকাশনায় : পথিক

সূচীপত্র

  1. ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহর কথা
  2. পরিশুদ্ধ নিয়তবিহীন আমল কবুল হয় না
  3. দীনের স্তর
  4. ইসলামের ভিত্তি
  5. জীবন, মরণ, রিজিক
  6. বিদআত প্রতাখ্যানযোগ্য আমল
  7. ইখলাস ও আল্লাহভীতি
  8. কল্যাণকামনাই দীন
  9. মুসলমানের জীবন ও ধন-সম্পদ (বিনষ্ট করা) হারাম
  10. নবিজির আনুগত্য মুক্তির পথ
  11. হালাল উপার্জন দুআ কবুলের মাধ্যম
  12. সন্দেহ থেকে দূরে থাকা
  13. ইসলামের সৌন্দর্য
  14. ইমানী বন্ধন
  15. মুসলমানের জীবন নিরাপদ রাখা
  16. মেহমান ও প্রতিবেশীর হক
  17. রাগ করো না, হাত বাড়ালেই জান্নাত
  18. ইহসান (সহানুভূতি)
  19. উত্তম আচরণ ও তাকওয়া
  20. আল্লাহর সাহায্য ও দুঃখের পরে সুখ
  21. লজ্জা-শরমের ফজিলত
  22. ইসলাম ও তার উপর দৃঢ়তা
  23. জান্নাতের পথ
  24. সব কল্যাণ
  25. আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ
  26. জিকিরের ফজিলত
  27. ভালো কাজের অনেক পথ
  28. পাপ ও পূণ্য
  29. আনুগত্য ও সুন্নাহর অনুসরণ
  30. ইসলামের স্তম্ভ ও ভিত্তি
  31. শরয়ি সীমারেখার কাছে পেশ করা
  32. যুহুদ বা দুনিয়াবিমুখতা
  33. ক্ষতিগ্রন্থ ও ক্ষতি করা যাবে না
  34. ইসলামী বিচারের মূল ভিত্তি
  35. অসৎ কাজের বাঁধা দেওয়া
  36. ইসলামে ভ্রাতৃত্বের অধিকার
  37. সহযোগীতা, ইলম ও আমল
  38. আল্লাহর মহা অনুগ্রহ ও দয়া
  39. আল্লাহর প্রিয়দেরকে ভালোবাসা
  40. ইসলাম সহজ, কঠিন বিষয় উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে
  41. দুনিয়াতে পথিকের মত থাকো
  42. শরিয়তের মূলনীতি ও নবিজির পদাঙ্ক অনুসরণ
  43. আল্লাহর অসীম ক্ষমা

ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহর কথা

সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের মহান প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য। যিনি আসমান এবং জমিনের তত্ত্বাবধায়ক। সমস্ত সৃষ্টিজীবকে পরিচালনাকারী। মানুষকে সু-পথে আনার জন্য যিনি নবি-রাসুলকে মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন। যারা অকাট্য দলিল ও সুস্পষ্ট প্রমাণাদির আলোকে বিধানবলী বর্ণনা করেছেন। আমি মহান রবের কাছে আমার উপর প্রদত্ত নিয়ামতের প্রশংসা আদায় করছি, ও তার দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি একক ও ক্ষমতাধর, অসীম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল, প্রিয়জন ও বন্ধু। যিনি সৃষ্টিজীবের শ্রেষ্ঠ মানব ও যুগ-যুগ ধরে মুজিজা সম্বলিত সম্মানিত কুরআনুল কারিমের মাধ্যমে সম্মানিত হয়েছেন, এবং সুন্নাহর মাধ্যমে সঠিক পথ প্রত্যাশীদের হিদায়াত করেছেন। এবং যাকে শব্দ অল্প কিন্তু বেশী ভাবার্থ প্রকাশ করার গুণে গুনান্বিত করা হয়েছে। দুরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবিজির ওপর, তার পরিবারবর্গের উপর এবং সমস্ত নেককারদের উপর৷ পর কথা হলো এই যে, আবু তালিব, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু, মুআজ ইবনু জাবাল, আবদুল্লাহ ইবনু উমার, আবু দারদা, আনাস ইবনু মালিক, ইবনু আব্বাস, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত আছে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উম্মাহর (উপকারের) জন্য দীনি বিষয়ে চল্লিশ হাদিস সংরক্ষণ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে ফকিহ ও আলিমদের দলে উঠাবেন। [টিকা: অনেকে এই বর্ণনাকে জয়িফ বলেছেন। যদিও বিভিন্ন সাহাবি থেকে এই বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা তাকে ফকিহ ও আলিম হিসেবে উঠাবেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হবো।” [টিকা: বাইহাকি: ১৭২৬। অনেকে এই হাদিসকে জয়িফ বলেছেন। সনদে আবদুল মালিক ইবনু হারুন ইবনু আনতারা জয়িফ। ইয়াহইয়া ইবনু মাইন তাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছেন। আলবানি রাহিমাহুল্লাহ এই হাদিসকে জয়িফ ও মাউজু বলেছেন।]
অন্য বর্ণনায় আছে, ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘(কিয়ামতের দিন) ঐ ব্যক্তিকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে মন চায়, প্রবেশ করো।’
ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তার নাম ফকিহদের কাতারে লিখা হবে ও তার হাশর হবে শহিদদের সাথে।’ [টিকা: আল মুহাদ্দিসুল ফাযিল : ১৭৩। এই হাদিসের ব্যাপারে সবাই একমত যে, তা জয়িফ। যদিওবা তা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।]
এই বিষয়ে আলিমদের অনেকেই বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। আমার জানামতে তন্মধ্যে প্রথম রচনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক রাহিমাহুল্লাহ। এরপরে প্রখ্যাত বুজুর্গ মুহাম্মাদ ইবনু আত তুসী। অতঃপর হাসান ইবনু সুফিয়ান আন- নাসাই, আবু বকর আল আজুররি, আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আল ইসবাহানি, দারাকুতনি, হাকিম, আবু নুআইম, আবু আবদুর রহমান আস সুলামি, আবু সাইদ, আবু উসমান, আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল আনসারি, আবু বকর আল বাইহাকি রাহিমাহুল্লাহুমসহ পূর্বের এবং পরের অনেক ওলামায়ে কেরাম এই ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করেছেন। আমি চল্লিশ হাদিস সংকলন করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত মহান আলিমগণ ও হাদিসের সংরক্ষণকারীদের অনুসরণের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা করেছি। (পরে ভালো ফলাফল পেয়েছি।) কেননা, সকল উম্মত ঐক্যমত যে, ফাজায়েলের উপর আমলের ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস বর্ণনা করার অবকাশ আছে। কিন্তু এরপরেও আমি জয়িফ হাদিসের উপর ভরসা না করে সহিহ হাদিসের ওপর ভরসা করেছি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘(আমার হাদিস) উপস্থিত জনরা যেন অনুপস্থিত জনদের কাছে পৌঁছে দেয়।” [টিকা: সহিহুল বুখারি: ৬৭; সহিহ মুসলিম: ১৬৭১]
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করুক, আমার কথা (হাদিস) শুনেছে এবং তা মুখস্থ রেখেছে। অতঃপর তা অন্যের কাছে শোনার মতই পৌঁছে দিয়েছে।”
[টিকা:জামিউত তিরমিজি : ২৬৫৮; সুনানু ইবনি মাজাহ: ২৩০। হাদিসের মান: সহিহ। তাহকিক : শাইখ শুআইব আরনাউত ও আলবানি রাহিমাহুল্লাহ।]
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অনেক আলিমরা দীনের মূলনীতি, শাখাগত বিষয়ে, কেউবা জিহাদের বিষয়ে, কেউ দুনিয়াবিমুখতা, কেউ আদব-আখলাক, কেউ বিভিন্ন আলোচনা বিষয়ে চল্লিশ হাদিস সংকলন করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের উপর সন্তুষ্ট হোন।
আর আমি দীনের সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে শামিল করবে ও প্রতিটি হাদিস একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হবে—তা বিবেচনা করে চল্লিশ হাদিস সংকলন করলাম। যেমন কোনো-কোনো হাদিসের ব্যাপারে আলিমরা বলেছেন, তা দীনের মূলভিত্তি, বা দীনের অর্ধেক, বা এক তৃতীয়াংশ। আর এই চল্লিশ হাদিস সংকলন করার ক্ষেত্রে আমি কেবল সহিহ হাদিসকেই নির্বাচন করেছি। এখানকার অধিকাংশ হাদিস সহিহুল বুখারি ও সহিহ মুসলিম থেকে সংকলন করেছি। আর আমি প্রতিটি হাদিস সনদবিহীন (ধারা বর্ণনা) উল্লেখ করেছি। যাতে তা সহজে মুখস্থ করা যায় ও ইনশা আল্লাহ এর মাধ্যমে অধিক উপকার হাসিল করা যায়। প্রতিটি অধ্যায়ে সহজ শব্দের হাদিস আনার চেষ্টা করেছি। সুতরাং প্রত্যেক আখিরাতমুখীর জন্য এই হাদিসগুলো অনুধাবন করা, এর গুরুত্ব ও মর্মার্থ জানা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলার সমস্ত আনুগত্যের উপর স্থির থাকা, বাহ্যিক বিষয়ে চিন্তা করা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী। পরিশেষে বলব, ভরসা কেবল আল্লাহর উপর। তার কাছেই সমর্পণ ও নির্ভরতা। প্রশংসা ও শুকরিয়া কেবল তাঁরই জন্য। (তাঁর) তাওফিক ও করুণায় নিরাপত্তা কামনা করছি।

ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ

পরিশুদ্ধ নিয়তবিহীন আমল কবুল হয় না

عن أمير المؤمنين أبي حَفْصٍ عمر بن الخطابِ بنِ نُفَيْلِ بنِ عبدِ العُزَّى بن رياح بنِ عبدِ اللهِ بن قُرْطِ بن رزاح بن عدي بن كعب بنِ لُوَيِّ بنِ غالب القُرشِيّ العدوي قالَ: سَمِعتُ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم يقُولُ: «إنّمَا الأَعْمَالُ بالنِّيَاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امرِىءٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هجرته إلى الله ورسوله، فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا
يُصيبُهَا، أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكَحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ

[১] আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, নবিজি বলেছেন, সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ যে নিয়ত করবে, সে তাই পাবে। সুতরাং—যে ব্যক্তির হিজরত আল্লাহর জন্য ও তাঁর রাসুলের (সন্তুষ্টির) জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত দুনিয়ার কোনো উদ্দেশ্যে কিংবা কোনো মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত সেটার জন্যই হবে। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ১; সহিহ মুসলিম: ৪৯২; মুসনাদু আহমাদ: ১৬৮]
এই হাদিসটি ইমামুল মুহাদ্দিসীন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল ইবনু ইবরাহিম ইবনুল মুগিরাহ ইবনু বারযাহ (ইমাম বুখারি) সহিহুল বুখারিতে এবং আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ ইবনু মুসলিম আল কুশাইরি আন নিশাপুরী তাঁর রচিত কিতাব সহিহ মুসলিমে এনেছেন। আর এই দুই কিতাব হাদিসের কিতাবের মধ্যে সবচে’ বিশুদ্ধ কিতাব।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা: এই হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষের পুরো জীবনের সব রকমের আমল এই হাদিসের উপর নির্ভর করে। যে ব্যক্তি এই হাদিসের উপর পূর্ণাঙ্গরূপে আমল করতে পারবে, আশা করা যায়; তার জীবন সফলকাম হবে। ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, হাদিসটি দীনের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধাংশ।
ইমাম শাফেরি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, এই হাদিসটি ফিকহের সত্তরটি অধ্যায়কে শামিল করে ৷
কিছু-কিছু আলিমরা বলেন, এই হাদিস ইসলামের তৃতীয়াংশ।

দীনের স্তর

عن عمر بن الخطاب :قَالَ: بَيْنَما نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَومٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَينا رَجُلٌ شَديدُ بَياضِ الرِّيابِ، شَديدُ سَوَادِ الشَّعْرِ، لا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبي صلى الله عليه وسلم فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضِعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيهِ ، وَقالَ: يَا مُحَمَّدُ، أخبرني عَنِ الإسلامِ، فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: الإسلام: أَنْ تَشْهد أن لا إله إلا الله وأن محمدًا رسول الله وتُقيمَ الصَّلاةَ، وَتُوْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ البَيتَ إِن اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا». قَالَ: صَدَقْتَ. فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقَهُ قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإيمَانِ. قَالَ: «أنْ تُؤمِنَ باللهِ، وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَاليَوْمِ الآخِر، وتُؤْمِنَ بالقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ». قَالَ: صدقت. قَالَ: فَأَخْبرني عَنِ الإِحْسَانِ. قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فإنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ». قَالَ: فَأَخْبِرنِي عَنِ السَّاعَةِ. قَالَ: «مَا المَسْؤُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ». قَالَ: فأخبرني عَنْ أَمَارَاتِهَا. قَالَ: أَنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا، وأنْ تَرَى الحُفَاةَ العُرَاةَ
العَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ في البُنْيَانِ». ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ: يَا عُمَرُ ، أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ
أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ أَمْرَ دِينِكُمْ

[২] উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। তখন সেখানে ধবধবে সাদা পোষাক পরিহিত একজন ব্যক্তি আসল। তার মাথার চুল ছিল খবুই কালো। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনে না আবার তার উপর সফরের কোনো আলামতও নেই। এক পর্যায়ে সে এসে নবিজির কাছে বসল। এরপরে তার দুই হাঁটু নবিজির হাঁটুর সাথে মিলালো এবং তার দুই হাতকে নিজ রানের উপরে রেখে বলল, হে মুহাম্মাদ, আপনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইসলাম হল –তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। তুমি সালাত কায়িম করবে, জাকাত আদায় করবে, রামাদানের সিয়াম পালন করবে। আর সামর্থ থাকলে বাইতুল্লাহর হজ্জ পালন করবে। আগত লোকটি বলল, আপনি সঠিক বলেছেন। আমরা তার কথায় আশ্চর্য হলাম যে, সে জানতে চাইল আবার সঠিক বলে সমর্থনও করল।
আগত লোকটি বলল, আপনি আমাকে ইমানের ব্যাপারে সংবাদ দিন। নবিজি বললেন, ইমান হলো— তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর নবি-রাসুলগণের প্রতি, পরকাল এবং তাকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। আগত লোকটি সমর্থন করে বলল, আপনি সঠিকটাই বলেছেন।
আগত লোকটি আবার বলল, আপনি আমাকে ইহসান সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করুন। তিনি বললেন, ইহসান হল এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে—যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন (এমন বিশ্বাস করবে)। সে বলল, আপনি আমাকে কিয়ামতের দিনের ব্যাপারে অবিহিত করুন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে ভালো জানেন না (কেউই ভালো করে জানে না)। সে বলল, তাহলে আপনি কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। নবিজি বললেন, কিয়ামতের আলামত হলো—দাসী তার মনিবের সন্তান প্রসব করবে। আর তুমি নগ্নপদ, বস্ত্রহীন ও দরিদ্র বকরির রাখালদেরকে বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা করতে দেখবে। এরপরে আগত লোকটি চলে গেল৷
(উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,) আমি দীর্ঘক্ষণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, হে উমর, তুমি, কি জানো যে, প্রশ্নকারী কে ছিল? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন৷ তিনি বললেন, তিনি ছিলেন জিবরিল আলাইহিস সালাম। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দীন শিক্ষাদানের জন্য এসেছিলেন।
সংক্ষিপ্ত নোট: এই হাদিসকে হাদিসে জিবরিল বলা হয়। দীন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মুসাফির বেশে জিবরিল আলাইহিস সালাম নবিজির কাছে এসেছিলেন। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ১৩; মুসনাদু আহমাদ: ৩৬৮]

ইসলামের ভিত্তি

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بني الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ.

[৩] আবদুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, নবিজি বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিষের ওপর রয়েছে। ১. আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল এর সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. বাইতুল্লাহর হজ্ব করা। ৫. রামাদানের রোজা রাখা। [ টিকা: সহিহ মুসলিম: ৯৩; মুসনাদে আহমাদ; ৩৬৮]

জীবন, মরণ, রিজিক

عن ابن مسعود رضي الله عنه قَالَ: حدثنا رَسُول الله صلى الله عليه وسلم وَهُوَ الصادق المصدوق: «إنَّ أحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ في بَطْنِ أُمِّهِ أربَعِينَ يَوْمًا نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةٌ مِثْلَ ذلك، ثُمَّ يُرْسَلُ المَلَكُ، فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ، وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ. فَوَالَّذِي لَا إِلَهَ غَيْرُهُ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الكِتابُ، فَيَعْمَلْ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ فَيدْخُلُهَا، وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلٍ أهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلا ذراعُ، فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الكِتَابُ فيعمل بعمل أهل الجنَّةِ فَيَدْخُلُهَا»

[৪] ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সত্যবাদী ও যার কথা সত্যায়িত করা হয়, সেই মহানবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, তোমাদের যে কেউ তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবত বীর্যকারে অবস্থান করতে থাকে। অতঃপর তা চল্লিশ দিন পরে জমাটবদ্ধ রক্ত- টুকরোতে পরিণত হয়। এরপরের চল্লিশ দিনে গোশতের টুকরোর মত হয়। এরপরে তার কাছে ফেরেশতা আগমন করে। ফেরেশতা তার মধ্যে রুহ ফুক দেন (স্থাপন করেন) এবং ঐ ব্যক্তির জন্য চারটি কথা লিখে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তা হলো ১. তার রিজিক, ২. তার মৃত্যু, ৩. তার আমল এবং ৪. পাপী নাকি সফলকাম। সেই সত্তার কসম করে বলছি, যিনি ব্যতিত আর কোনো সত্যবাদী ইলাহ নেই, তোমাদের কেউ কেউ জান্নাতীদের মত আমল করতে থাকবে, এবং তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে। অতঃপর তার লিপিবদ্ধ বিষয় তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসে, ফলে সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে থাকে, অবশেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ জাহান্নামীদের মত আমল করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে। অতঃপর সে তাকদিরের লিখন অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যায় ও জান্নাতীদের মত আমল করতে থাকে, অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ৩২০৮; সহিহ মুসলিম: ৬৭২৩; মুসনাদু আহমাদ: ৩১৩৪]

বিদআত প্রতাখ্যানযোগ্য আমল

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدُّ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدُّه
[৫] উম্মুল মুমিনিন উম্মু আবদিল্লাহ (আয়িশার উপাধি) আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের দীনে নেই এমন জিনিষ যে আবিস্কার করবে, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে—আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের দীনে নেই এমন আমল যে করবে, তা প্রত্যাক্ষিত হবে।” [টিকা: সহিহুল বুখারি: ২৪১১; সহিহ মুসলিম: ১৭]

ইখলাস ও আল্লাহভীতি

النعمان بن بشيرٍ رضي الله عنهما، قَالَ: سَمِعْتُ رسول الله صلى الله
عن عليه وسلم يقول: إنَّ الحَلالَ بَيِّنُ، وَإِنَّ الحَرامَ بَيَّنُ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبَهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرُ مِنَ النَّاسِ، فَمَن اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ في الحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ
الحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ، ألا وإنَّ لكُل مَلِكٍ حِمَى، ألا وإنَّ حِمَى اللهِ تَحَارِمُهُ، أَلاَ وَإِنَّ فِي الجسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَت صَلَحَ الجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كله، ألا وهي القَلْبُ
[৬] নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হালাল স্পষ্ট, হারামও স্পষ্ট। আর এর মাঝে রয়েছে সন্দেহ। যা অনেক মানুষ জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি সন্দেহ বিষয় থেকে দূরে থাকল, সে তার দীন ও সম্মানকে নিরাপদ করে নিল। আর যে ব্যক্তি সন্দেহ বিষয়ে পতিত হল, সে নিষিদ্ধ বিষয়ে পতিত হল। (এর দৃষ্টান্ত হলো) যেমন কোনো রাখাল নিষিদ্ধ চারণভূমিতে বকরি চরায়। তার ব্যাপারে সন্দেহ আছে যে, সে হয়ত অচিরেই নিষিদ্ধ চারণভূমিতে পতিত হবে। আর জেনে রাখো, প্রত্যেক বাদশাহের একটি নির্দিষ্ট চারণভূমি-সীমা আছে। আর আল্লাহর চারণভূমি হলো হারামকৃত জিনিষ আর জেনে রাখো, প্রত্যেকের শরীরে একটি গোশতের টুকরো আছে। যদি তা ঠিক হয়ে যায়, তাহলে পুরো শরীর ঠিক হয়ে যায়। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার পুরো শরীর নষ্ট হয়ে যায়। আর সেটাই হলো—হৃদয় বা অন্তর।” [টিকা:সহিহুল বুখারি: ৫০; সহিহ মুসলিম: ১০৭]

কল্যাণকামনাই দীন

عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِي أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الدِّينُ النَّصِيحَةُه قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: اللَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ

[৭] আবু রুকাইয়া তামিম ইবনু আউস আদ দারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দীন হলো কল্যাণ কামনার নাম। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ) কার জন্য কল্যাণ কামনা করবো? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের, রাসুলের এবং সমস্ত মুসলমানদের নেতা ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য কল্যাণ কামনা করবে। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ১৫, চল্লিশ হাদিস]

মুসলমানের জীবন ও ধন-সম্পদ (বিনষ্ট করা) হারাম

عَن ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا يحق الإِسْلامِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ

[৮] আবদুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি মানুষের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল’-এর কথার সাক্ষ্য দেয়। সালাত কায়িম করে, জাকাত আদায় করে। যদি তারা এ সমস্ত আমল করে, তাহলে তাদের জীবন, সম্পদ আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের হক ব্যতিত (যদি কোনো শরিয়তের বিধানে লঙ্ঘন করে তা ব্যতিত)। আর তাদের তাদের (অন্তরের) হিসাব আল্লাহর উপর বর্তাবে। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ২৪; সহিহ মুসলিম: ৩৪]

নবিজির আনুগত্য মুক্তির পথ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ، فَاجْتَنِبُوهُ وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَافْعَلُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، فَإِنَّمَا
أَهْلَكَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ كَثرَةٌ مَسَائِلِهِمْ، وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ

[৯] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি তোমাদের যে সমস্ত বিষয়ে বারণ করি, তা থেকে তোমরা দূরে থাকো। আর যেসব বিষয়ে তোমাদেরকে আদেশ করি, তা তোমরা সাধ্যমত পালন করো। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবিদের কাছে অতিরিক্ত প্রশ্ন এবং মতনৈক্য কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ১৩০]

হালাল উপার্জন দুআ কবুলের মাধ্যম

عَنْ أَبي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَيُّهَا النَّاسُ، إنَّ الله طيب لا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإنَّ الله أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) [المؤمنون: (٥١) وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ۱۷۲] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامُ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟

[১০] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে মানুষসকল, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পূত-পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিষ ছাড়া কবুল করেন না৷ আল্লাহ তাআলা নবিদেরকে যা আদেশ করেছেন, তা মুমিনদেরকেও আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুলগণ, তোমরা পবিত্র জিনিস আহার করো এবং নেক আমল করো।’ [সুরা মুমিনুন : ৫১] তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদেরকে আমি যেসব রিজিক দান করেছি, তার পবিত্র জিনিস থেকে তোমরা আহার করো।’ [সুরা বাকারা: ১৭২] এরপরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ব্যক্তির কথা বললেন, যে এলামেলো চুল ও ধুলোমলিন পায়ে অনেকখানি সফরের পথ অতিক্রম করার পর আসমানে হাত উঠিয়ে দুআ করে বলে, ইয়া রাবিব! ইয়া রাব্বি! (আমার দুআ কবুল করুন) অথচ তার খাবার-দাবার ও কাপড়-চোপড় হারাম, আর হারামে ভরে গেছে তার শরীর; এমন ব্যক্তির দুআ কি কবুল করা হবে? [টিকা: সহিহ মুসলিম: ২৩৪৬; মুসনাদু আহমাদ: ৮৩৪৮]

সন্দেহ থেকে দূরে থাকা

عن أبي محمد الحسن بن على بن أبي طالب رضي الله عنهما، قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ؛ فَإِنَّ
الصَّدْقَ طُمَانِينَةٌ، وَالكَذِبَ رِيبَةٌ

[১১] আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনু আলি ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই কথা মুখস্থ করে রেখেছি। তিনি (নবিজি) বলেছেন, যেসব বিষয় তোমাকে সন্দেহে নিপতিত করে, সেগুলো থেকে তুমি বেঁচে থাকো। আর যেসব বিষয়ে সন্দেহ নেই, তা তুমি গ্রহণ করো। কেননা সত্য সুখ ও প্রশান্তি বয়ে আনে এবং মিথ্যা সন্দেহ ঢেলে দেয়। [টিকা: জামিউত তিরমিজি: ২৫১৮। হাদিসের মানঃ সহিহ। সনদও সহিহ। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদিস হাসান-সহিহ। তাহকিক: শাইখ আলবানি ও শুআইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহুমা]

ইসলামের সৌন্দর্য

عن أبي هريرة رضي الله عنهقَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: مِنْ حُسْنِ إِسْلامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ

[১২] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হলো—অনর্থক বিষয় (কাজ বা কথা) ছেড়ে দেয়া।” [টিকা:জামিউত তিরমিজি : ২৩১৭, সুনানু ইবনি মাজাহ: ৩৯৭৬। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদিস হাসান। হাদিসের মানঃ সহিহ। কারণে হাদিসের অনেক শাওয়াহিদ পাওয়া যায়]

ইমানী বন্ধন

عن أنس رضي الله عنه عن النَّبي صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لاَ يُؤْمِنُ
أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لنَفْسِهِ

[১৩] নবিজির খাদিম আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের থেকে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করবে।

মুসলমানের জীবন নিরাপদ রাখা

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: الطَّيِّبُ
الزَّانِي، وَالنَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالنَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ

[১৪] আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে মুসলমান সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই ও আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল তাহলে তার জন্য অন্য মুসলমানের রক্ত হালাল নয় (অন্য কাউকে হত্যা করা হালাল নয়)। তবে তিন কারণ ছাড়া। (তিন কারণ হলো) ১. যুবক যিনাকারী।
মুসনাদু আহমাদ ও তাবরানিতে হাসান ইবনু আলি থেকে বর্ণিত হয়েছে। আরো বিভিন্ন সহিহ সনদে এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাহকিক: শাইখ শুআইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ১৩; সহিহ মুসলিম: ১৭০; মুসনাদু আহমাদ: ১২৮০১] ২. জীবনের বিনিময়ে জীবন (কিসাস)। ৩. নিজ দীন ত্যাগ ও জামাতকে পরিত্যাগ কারী (মুরতাদ)।’ [টিকা:সহিহুল বুখারি: ৬৩৭০; সহিহ মুসলিম: ২৫]

মেহমান ও প্রতিবেশীর হক

عنه: أن رَسُول الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بالله وَاليَومِ الآخر، فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمُ ضَيْفَهُ
وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُت

[১৫] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে লোক আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপরে ইমান রাখে, সে যেন মেহমানকে সম্মান করে। (মেহমানদারী করে) আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন সুন্দর/ভালো কথা বলে, নয়ত যেন চুপ থাকে। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ৬০১৮; সহিহ মুসলিম: ১৭৪; মুসনাদু আহমাদ: ৭৬৩৬]
অন্য বর্ণনায় আছে–

عن أبي شُرَيْح الخزاعي رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُحْسِنُ إِلَى جَارِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِر، فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُت

আবু শুরাইহ আল খুজাই রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। (মেহমানদারী করে) আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, নয়ত যেন চুপ থাকে ।

রাগ করো না, হাত বাড়ালেই জান্নাত

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوْصِنِي، قَالَ: «لَا تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ: «لَا تَغْضَبْ

[১৬] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, (ইয়া রাসুলাল্লাহ ) আমাকে উপদেশ দিন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি (বিনা কারণে) রাগ কোরো না। লোকটি বারবার উপদেশ চাইলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই কথা বললেন, (বিনা কারণে) রাগ করো না।” [টিকা: সহিহুল বুখারি: ৫৬৫১]

ইহসান (সহানুভূতি)

عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ: ثِنْتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الدَّبْحَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ

অন্য বর্ণনায় আছে,

عن أبي الدرداء قال: قلت: يا رسول الله، دلني على عمل يدخلني الجنة قال: «لا تغضب ولك الجنة

আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যে আমল করলে আমি জান্নাতে যেতে পারবো। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি রাগ কোরো না। তোমার জন্য জান্নাত। [মুজামুল আউসাত: ২৩৫৩]

[১৭] আবু ইয়ালা শাদ্দাদ ইবনু আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুটি বিষয় মুখস্থ রেখেছি। নবিজি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রতিটি জিনিষের উপর ইহসানকে লিখে দিয়েছেন। তাই তোমরা যখন হত্যা করো, তখন উত্তমভাবে হত্যা করো। আর যখন কোনো পশু জবাই করো, তখন উত্তমভাবে জবাই করো। আর তোমাদের কেউ যখন (পশু) জবাই করতে চায়, তখন যেন ছুরি ধার দেয় এবং পশুকে আরাম দেয়। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ৫৭]

উত্তম আচরণ ও তাকওয়া

عن أبي ذر جُندب بنِ جُنادَةَ وأبي عبد الرحمان معاذ بن جبل رضي الله عنهما، عن رسولِ الله صلى الله عليه وسلم قَالَاتَّقِ الله حَيْتُمَا كُنْتَ
وأتبع السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ

[১৮] আবু জর জুনদুব ও মুআজ ইবনু জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি যেখানেই থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে। আর গুনাহের পরে নেক কাজ করো, যা তোমার গুনাহকে মুছে দিবে। আর তুমি মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করবে। [টিকা: জামিউত তিরমিজি: ১৯৮৭; মুসনাদু আহমাদ: ২১৩৫৪। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদিসটি হাসান। হাদিসের মানঃ সহিহ। তাহকিক: শাইখ শুআইব আরনাউত ও আলবানি রাহিমাহুল্লাহুমা]

আল্লাহর সাহায্য ও দুঃখের পরে সুখ

عن ابن عباس رضي الله عنهما، قَالَ: كنت خلف النبي صلى الله عليه وسلم يومًا، فَقَالَ: يَا غُلامُ، إنّي أعلَمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ الله تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا يشَيءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ، وَإِن اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إلا
بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلَامُ وَجَفَّتِ الصُّحفُ )
وفي رواية غير الترمذي: «احْفَظ الله تَجِدْهُ أَمَامَكَ، تَعَرَّفْ إِلَى اللهِ في الرَّخَاءِ يَعْرِفكَ في الشَّدَّةِ، وَاعْلَمْ أَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبكَ، وَمَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَاعْلَمْ أَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنَّ الفَرَجَ مَعَ الكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ العُسْرِ يُسْرًا».

[১৯] ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি নবিজির সাওয়ারীর পিছনে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, হে ছেলে, আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাক্য শিক্ষা দিবো। তুমি সেগুলো হিফাজত রাখলে, আল্লাহ তোমাকে হিফাজতে রাখবেন। তুমি আল্লাহর বিধানসমূহের সংরক্ষণ করো, তাহলে তুমিও তাঁকে কাছে পাবে। আর যখন চাওয়ার কিছু থাকবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাবে। আর যখন তুমি প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো ।
মনে রেখো, সমস্ত উম্মত যদি তোমার উপকারের জন্য সমবেত হয়, তাহলে আল্লাহর তাকদিরের লিখন ব্যতিত বেশী উপকার করতে পারবে না। আর যদি সমগ্র উম্মত তোমার ক্ষতির জন্য সমবেত হয়, তাহলে ততটুকুর বেশী করতে পারবে না, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। (শোনো, তাকদিরের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং খাতা শুকিয়ে গেছে (আর তাকদির লিখা হবে না, যা হবার হয়ে গেছে)। [টিকা: জামিউত তিরমিজি: ২৫১৬। মুসনাদু আহমাদ: ২৬৬৯। হাদিসের মানঃ সহিহ। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদিস হাসান -সহিহ। তাহকিক: শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ]
অন্য বর্ণনায় আছে—আল্লাহর বিধান হিফাজত করলে তুমি তাকে তোমার সম্মুখে পাবে। আর আনন্দের সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখলে তুমি তাকে দুঃখের সময় কাছে পাবে। জেনে রাখো, যেসব বিষয় তুমি পাবে না, সেগুলো ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর যা তোমার কপালে আছে, তুমি তা ভুলে যাবে না। জেনে রাখো, সাহায্য সবরের সাথে আছে। আর সমস্যার পরেই সমাধান আসে। আর নিশ্চয় দুঃখের পরে সুখ আসে।

লজ্জা-শরমের ফজিলত

عن أبي مسعود الأنصاري رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم
إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلامِ النُّبُوَّةِ الأولى : إِذَا لَمْ تَسْتَجِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ

[২০] আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় পূর্ববর্তী নবুয়াতি কথা থেকে মানুষ যা লাভ করতে পেরেছে, তার মধ্য থেকে (অন্যতম কথা) একটি হলো—যখন তুমি লজ্জা হারিয়ে ফেলবে, তখন যা ইচ্ছে তুমি করো (পারবে)। [টিকা: সহিহুল বুখারি: ৩৪৮৩; মুসনাদু আহমাদ: ১৭০৯০]

ইসলাম ও তার উপর দৃঢ়তা

عن أبي عمرو، وقيل: أبي عمرة سفيان بن عبد الله قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُول الله، قُلْ لي في الإسْلامِ قَولًا لاَ أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا غَيْرَكَ. قَالَ: «قُلْ: آمَنْتُ
بِاللهِ، ثُمَّ اسْتَقِمْ

[২১] আবু আমর বা আবু আমরাহ সুফিয়ান ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, ইসলামের ব্যাপারে আমাকে এমন একটি কথা বলুন, যা আপনার পরে আমি আর কাউকে জিজ্ঞেস করবো না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তুমি বলো—’আমি আল্লাহর উপর ইমান এনেছি।’ অতঃপর এর উপর দৃঢ় থাকো। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ১৫১; মুসনাদু আহমাদ: ১৫৪১]

জান্নাতের পথ

عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَرَأَيْتَ إِذَا صَلَّيْتُ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ، وَصُمْتُ رَمَضَانَ، وَأَحْلَلْتُ الخَلَالَ، وَحَرَّمُتُ الحَرَامَ، وَلَمْ أَزِدْ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا، أَأَدْخُلُ الجنَّةَ؟ قَالَ: «نَعَمْ، قَالَ:
وَاللهِ لَا أَزِيدُ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا.

[২২] জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবিজির কাছে এসে বলল, (ইয়া রাসুলাল্লাহ) আমি যদি ফরজ সালাত আদায় করি, রামাদানের রোজা রাখি, হালালকে হালাল মনে করে আমল করি, হারামকে হারাম মনে করি; আর যদি এর চেয়ে বেশী কিছু না করি, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। লোকটি তখন বলল, তাহলে আমি এর উপর কোনো কিছু বৃদ্ধি করবো না। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ১৭]

সব কল্যাণ

عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الظهورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآنِ – أَوْ تَمْلَأُ – مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءُ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعُ نَفْسَهُ فَمُعْتِقَهَا أَوْ مُوبِقُهَا

[23] আবু মালেক আল হারেস ইবনু আসেম আল আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। আর আলহামদুলিল্লাহ মিজানের পাল্লাকে ভারী করে দিবে। এমনইভাবে সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান- জমিনের মাঝামাঝি যা আছে, সবকিছুকে ভারী করে দেবে। সালাত হলো নূর। সাদাকাহ/জাকাত হলো—দলিল। সবর আলো। কুরআন তোমার পক্ষে বা তোমার বিপক্ষে দলিল। প্রতিটি মানুষ সকালবেলায় নিজের সাথে বেচাকেনা করে, তখন হয়ত নিজেকে ধ্বংস করে বা জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে। [টিকা:সহিহ মুসলিম: ৫৩৪; মুসনাদু আহমাদ: ২২১০২]

আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ

عن سعيد بن عبد العزيز، عن ربيعة بن يزيد، عن أبي إدريس الخولاني، أبي ذر جندب بن جنادة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم فيما يروي عن الله تبارك وتعالى، أنَّهُ قَالَ: «يَا عِبَادِي، إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسي وَجَعَلْتُهُ بيْنَكم مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَمُوا يَا عِبَادِي، كُلُّكُمْ ضَالَ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاستَهدُونِي أَهْدِكُمْ. يَا عِبَادِي، كُلُّكُمْ جَائِعُ إِلا مَنْ أطْعَمْتُهُ فَاسْتَطِعِمُونِي أَطْعِمْكُمْ يَا عِبَادِي، كُلُّكُمْ عَارٍ إِلا مَنْ كَسَوْتُهُ فاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ يَا عِبَادي، إنَّكُمْ تُخْطِئُونَ باللَّيلِ وَالنَّهارِ وَأَنَا أغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ. يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضُرِّي فَتَضُرُّوني، وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفعِي فَتَنْفَعُوني يَا عِبَادِي، لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زادَ ذلِكَ في مُلكي شيئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجَنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذلِكَ من ملكي شيئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجَنَّكُمْ قَامُوا في صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَألوني فَأعْطَيتُ كُلَّ إنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذلِكَ مِمَّا عِنْدِي إلا كما ينقصُ المِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ البَحْرَ يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أَوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا، فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ الله وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ

[২৪] আবু জর জুনদুব ইবনু জুনাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রব থেকে বর্ণনা করেন। মহান রব বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ, আমি জুলুমকে আমার নিজের জন্য হারাম করেছি, তাই তা তোমাদের উপরও হারাম করে দিলাম। তাই তোমরা জুলুম করো না। হে আমার বান্দা, তোমরা সবাই ভ্রষ্ট, তবে যাদেরকে আমি সুপথ দিয়েছি, তারা ব্যতিত। তোমরা আমার কাছে সুপথ কামনা করো, আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। হে আমার বান্দাগণ, তোমরা সবাই ছিলে ক্ষুদার্ত, তবে আমি যাকে আহার করিয়েছি, সে ব্যতিত। অতএব, তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদেরকে খাবার দেবো। হে আমার বান্দাগণ, তোমরা ছিলে বস্ত্রহীন। সে ব্যতিত, যাকে আমি বস্ত্র দান করেছি। তাই তোমরা আমার কাছে বস্ত্ৰ চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দেবো।
হে আমার বান্দারা, তোমরা দিন-রাতে গুনাহ করে থাকো, আর আমি সব গুনাহ ক্ষমা করি, তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও। আমি ক্ষমা করে দেবো। হে আমার বান্দাগণ, তোমরা কখনো আমার অপকার-উপকার কোনোকিছুই করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা, যদি তোমাদের আগে- পরের মানুষ ও জিন জাতির সবাই নেককার ব্যক্তির অন্তরের মত সবার অন্তর হয়ে যায়, তবুও এতে আমার রাজত্বের কোনো কিছু বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ, যদি তোমাদের আগে-পরের মানুষ ও জিন জাতির সবাই বদকার ব্যক্তির অন্তরের মত সবার অন্তর হয়ে যায়, তবুও এতে আমার রাজত্বের কোনো হ্রাস করতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ, যদি তোমাদের আগে-পরের মানুষ ও জিন জাতির সবাই যদি কোনো বিশাল ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে কোনো কিছু চাও, আর আমি যদি তা দান করি, তাহলে তা আমার বিশাল ভান্ডার থেকে ততটুকুই কমতি হবে, যতটুকু কম হয়ে থাকে, কোনো সমুদ্রে সুইচ ডুবিয়ে পানি উঠালে। হে আমার বান্দারা, আমি তোমাদের আমলসমূহ গণনা করে রাখছি। আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ সওয়াব দান করবো। সুতরাং যে কল্যাণ লাভ করে, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণ লাভ করে, সে যেন নিজেকে ব্যতিত অন্য কাউকে তিরস্কার না করে। [টিকা:সহিহ মুসলিম: ৬৫৭২; মুসনাদু আহমাদ: ২১৪২০]

জিকিরের ফজিলত

عن أبي ذر أنَّ ناسا قالوا: يَا رَسُولَ الله ذَهَبَ أهل الدُّثور بالأُجُورِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ، قَالَ: «أَوَلَيسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ مَا تَصَدَّقُونَ بِهِ: إِنَّ بِكُل تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلّ تكبيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلَّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وأمْرُ بالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيُ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وفي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قالوا: يا رسولَ اللهِ، أَيَاتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرُ؟ قَالَ: «أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا في حَرامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ وِزْرُ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الخلالِ كَانَ لَهُ أَجْرُه

[২৫] আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কয়েকজন সাহাবি নবিজির কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, ধনীরা তো অনেক সাওয়াব অর্জন করে ফেলছে। আমরা যেমন সালাত পড়ি, তারাও তেমন সালাত পড়ে। আমরা যেমন রোজা রাখি, তারাও তেমন রোজা রাখছে। কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদাকাহ করতে পারছে। কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা কি তোমাদেরকে সাদাকাহ করার মত কিছু নির্ধারণ করে দেননি? শোনো-অবশ্যই প্রতিটি তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বলা সাদাকাহ, প্রত্যেক তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা সাদাকাহ, প্রত্যেক তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বলা সাদাকাহ, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের বাঁধা প্রদান, এমনকি তোমাদের স্ত্রী-সহবাস করাও সাদাকাহ। তখন সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করলেও সাদাকাহ হবে? তিনি বললেন, যদি কেউ জিনার মাধ্যমে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করে, তাহলে কি তার গুনাহ হবে? এ ব্যাপারে তোমরা কি বলো? (নিশ্চয় গুনাহ হবে)। অতএব, সে যখন হালালভাবে নিজের চাহিদা পূরণ করে, তাহলে তাতে তার সওয়াব হবে। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ২৩২১; মুসনাদু আহমাদ: ২১৪৭৩]

ভালো কাজের অনেক পথ

عن أبي هريرة رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: كل سُلامَى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَومٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ تَعْدِلُ بَينَ الاثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وتُعِينُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ، فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَهُ، وَالكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وبكلِّ خَطْوَةٍ تَمْشِيهَا إِلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ، وتُمِيطُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ».

[২৬] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন সূর্য উঠার সাথে-সাথে মানুষের প্রতিটি জোড়ায় একটি করে সাদাকাহ আবশ্যক হয়ে যায়। দু’জন মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া সাদাকাহ, কাউকে নিজ সাওয়ারীর উপর আরোহন করানো সাদাকাহ, বা নিজ সাওয়ারীর উপর কারো জিনিসপত্র উঠিয়ে সহযোগীতা করাও সাদাকাহ, ভালো কথা বলা সাদাকাহ, সালাতের জন্য প্রতিটি কদম পায়ে হাঁটাও সাদাকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলাও সাদাকাহর অন্তর্ভুক্ত। [টিকা: সহিহুল বুখারি : ২৮১১; সহিহ মুসলিম: ২৩৩৫; মুসনাদু আহমাদ: ৮১৮৩। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে—আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বনি আদমকে ৩৬০ জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। আর প্রত্যেক জোড়ার উপর সাদাকাহ আছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল-হামদু লিল্লাহ” ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ” বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড্ডি সরিয়ে ফেলল, সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করল, তাহলে সে পূর্ণ ৩৬০ জোড়ার সাদাকাহ পূর্ণ করল। ও সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে সন্ধ্যায় উপনীত হল।]

পাপ ও পূণ্য

عن النواس بن سمعان رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلمقالَ: «البر: حُسْنُ الخُلُقِ، وَالإِثْمُ: مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ، وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ
عن وابصة بن معبدٍ رضي الله عنه قَالَ: أَتَيْتُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم فقال: جئتَ تَسْأَلُ عَنِ البِرِّ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: اسْتَفْتِ قَلْبَكَ، البر: مَا اطْمَأَنَّت إِلَيْهِ النَّفْسُ، وَاطْمَأَنَّ إِلَيْهِ القَلْبُ، وَالإِثْمُ: مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ، وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإِنْ أَفْتَاكَ النَّاسُ وَأَفْتُوكَ

[২৭] নাওয়াস ইবনু সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নেক কাজ হলো সুন্দর ভালো আচরণের নাম। আর তোমার অন্তরে যা উদিত হয়, এবং তা মানুষরা জেনে ফেলুক তা তুমি অপছন্দ করো—এটাই পাপ/অপরাধ। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ৬৫১৬; মুসনাদু আহমাদ: ১৭৬৩১]
অন্য বর্ণনায় আছে—ওয়াবিসাহ ইবনু মাবাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আগমন করলাম, তখন তিনি বললেন, তুমি কি নেক কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করতে এসেছ? আমি বললাম, জি। তিনি বললেন, এ বিষয়ে তুমি তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস করো। নেক কাজ হলো, যার মাধ্যমে তোমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে এবং শীতলতা অনুভব করে। আর অপরাধ হলো, যা তোমার অন্তরে দোদুল্যমানতা সৃষ্টি করে এবং অন্তরে সংকোচ বোধ হয়; যদিও মানুষ তোমাকে সঠিকটারই ফায়সালা দেয়। [টিকা: মুসনাদু আহমাদ: ১৭৯৯৯। হাদিসের মান: হাসান। তাহকিক: শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ। সনদ: জয়িফ। সনদে আইয়ুব ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মুকরিজ মাজহুল রাবি । তাহকিক: শাইখ শুআইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ]

আনুগত্য ও সুন্নাহর অনুসরণ

أبي نجيح العرباض بنِ سَارية رضي الله عنه قَالَ: وَعَظَنَا رسولُ اللهِ
عن صلى الله عليه وسلم موعظة بليفَةً وَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رسولَ اللهِ، كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدَّعٍ فَأَوْصِنَا، قَالَ: أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدُ حَبَشِي، وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختِلافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وسُنَّةِ الخلفاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِبِيِّنَ، عَضُوا عَلَيْهَا بِالنَّواجِدِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمور؛ فإنَّ كل بدعةٍ ضَلالَة».

[২৮] আবু নাজিহ আল-ইরবায ইবনু সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার আমাদেরকে হৃদয়বিগলিত নসিহত করলেন। তাতে আমাদের অন্তর নরম হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বইতে লাগল। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এ যেন বিদায়ী নাসিহা। তাই আপনি আমাদেরকে কিছু উপদেশ দিন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে তাকওয়ার ব্যাপারে ওসিয়ত করছি। এবং (শরিয়াহ সম্মত আমিরের) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোনো হাবশী গোলাম আমির হয়। আর আমার পরে তোমাদের থেকে যারা হায়াত পাবে, তারা অনেক মতনৈক্যর বিষয় দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা তখন আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের বাতলানো পথকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে রাখবে। আর তোমরা দীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। [টিকা: সুনানু আবি দাউদ: ৪৬০৭; জামিউত তিরমিজি: ২৬৭৬; মুসনাদু আহমাদ: ১৭১৪২। হাদিসের মান: হাসান। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদিস হাসান-সহিহ। তাহকিক : শাইখ শুআইব আরনাউত ও শাইখ আলবানি রাহিমাহুমাল্লাহ।]

ইসলামের স্তম্ভ ও ভিত্তি

عن مُعَادٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُني مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: «لَقَدْ سَألتَ عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرُ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ: تَعْبُدُ اللهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاةَ، وتؤتي الزكاة، وتَصُومُ رَمَضَانَ ، وتَحْجُ البَيْتَ» ثُمَّ قَالَ: «ألا أدُلُّكَ عَلَى أبواب الخير؟ ؟ الصَّوْمُ جُنَّةُ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَما يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ، وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ ثُمَّ تَلا: (تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ المَضَاجِعِ) حَتَّى بَلَغَ يَعْمَلُونَ) [النور: ١٦] ثُمَّ قَالَ: «أَلا أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ، وَعَمُودِهِ، وَذِرْوَةِ سِنَامِهِ قُلْتُ: بَلَى يَا رسولَ اللهِ، قَالَ: «رأسُ الأمر الإسلامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلاةُ، وَذِرْوَةِ سِنَامِهِ الجِهَادُ ثُمَّ قَالَ: «أَلَا أُخْبِرُكَ بِمِلاكِ ذَلِكَ كُلَّهِ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسولَ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسانِهِ وقال: «كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا قُلْتُ: يَا رسول الله وإِنَّا لَمُؤاخَذُونَ بِما نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فقالَ:
ثَكِلَتْكَ أُمُّكَا وَهَلْ يَحُبُّ الناسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ُ

[২৯] মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি নবিজিকে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি একটি কঠিন প্রশ্ন করেছ, এটা সবার জন্য সহজ নয়, তবে আল্লাহ যার জন্য সহজ করেন সে ব্যতিত। আর সেটা হলো—তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, সালাত কায়িম করবে, জাকাত আদায় করবে, রামাদানের সিয়াম পালন করবে, বায়তুল্লাহর হজ পালন করবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, আমি তোমাকে কি সব কল্যাণময় দরজার কথা বলব? রোজা হলো ঢালের মতো। আর সাদাকাহ গুনাহকে সেভাবে মুছে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। আরেকটি হলো শেষরাত্রের সালাত। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন:
‘তারা বিছানা ত্যাগ করে, আশা ও ভয়মিশ্রিত অবস্থায় তাদের রবকে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যেসব জীবিকা দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। তাদের সৎকর্মের পুরস্কারস্বরূপ তাদের জন্য নয়ন-প্রীতিকর যা কিছু লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তার ব্যাপারে কেউ জানে না।’ [সুরা সিজদা: ১৬-১৭]
এরপরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বললেন, আমি কি তোমাকে দীনের সব বিষয়ের মূল, তার স্তম্ভ ও চূড়ার ব্যাপারে জানিয়ে দেবো কি? আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, অবশ্যই জানিয়ে দিন। তিনি বললেন, সব বিষয়ের মূল হচ্ছে ইসলাম, আর তার খুঁটি হচ্ছে—সালাত এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো—জিহাদ। এরপরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, আমি তোমাকে এগুলোর মূলের ব্যাপারে অবহিত করব? আমি বললাম, জি, ইয়া রাসুলাল্লাহ, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন স্বীয় জিহ্বা ধরে বললেন, তোমরা এটাকে ঠিক রাখো। মুআজ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা যেসব কথাবার্তা বলি, এটারও কি হিসাব দিতে হবে? তিনি বললেন, হে মুআজ, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে তার জিহ্বার কর্তিত গুনাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছু কি জাহান্নামে ফেলবে? [টিকা: জামিউত তিরমিজি: ২৬১৬। হাদিসের মান: সহিহ। ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এই হাদিস হাসান-সহিহ। তাহকিক: শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ। বিভিন্ন সনদে এই হাদিস বর্ণিত আছে। তবে সনদে ত্রুটি আছে। সনদে আবু উয়াইল মুআজ থেকে শোনেনি। তাহকিক শাইখ শুআইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ।]

শরয়ি সীমারেখার কাছে পেশ করা

عن أبي ثعلبة الخشَنِيّ جُرثومِ بنِ ناشر رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إِنَّ اللهَ تَعَالَى فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيَّعُوهَا، وَحَدَّ حُدُودًا فَلاَ تَعْتَدُوهَا، وَحَرَّمَ أَشْيَاءَ فَلاَ تَنْتَهِكُوهَا، وَسَكَتَ عَنْأَشْيَاءَ رَحْمَةً لَكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ فَلَا تَبْحَثُوا عَنْهَا

[৩০] আবু সালাবাহ খুশানি জুরসুম ইবনু নাশের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ফরজ বিধানকে বিনষ্ট কোরো না। আর আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম কোরো না। আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহে পতিত হোয়ো না। আর তোমাদের প্রতি দয়া করে বহু জিনিসের ব্যাপারে তিনি চুপ থেকেছেন, ভুল করে নয়, অতএব ওইসব বিষয়ে তোমরা অনুসন্ধান চালিয়ো না। [টিকা: সুনানু দারাকুতুনি : ৪/১৮৪। হাদিসের মান: হাসান। মুস্তাদরাকে হাকিমের বর্ণনায় এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সই সনদে মাকহুল আবু সালাবা আল খুশানি থেকে বর্ণনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা সঠিক নয়। সেই হিসেবে জয়িফ। কিন্তু বিভিন্ন শাওয়াহেদের কারণে হাসান। তাহকিক: শাইখ শুআইব আরনাউত রাহিমাহুমাল্লাহ। আলবানি রাহিমাহুল্লাহর তালিককৃত নুসখায় জয়িফ বলা হয়েছে। শাইখ সাইয়্যিদ ইমরান বলেন, হাদিস হাসান। হাইছামি, তাবারানি এই হাদিস উল্লেখ করেছেন। হাইছামি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সব রাবিই সহিহ। – (অনুবাদক)]

যুহুদ বা দুনিয়াবিমুখতা

عن أبي العباس سهل بن سعد الساعدي رضي الله عنه قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ، فقال: «ازْهَدُ في الدُّنْيَا يُحِبك الله وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبّك النَّاسُ

[৩১] আবুল আব্বাস সাহল ইবনু সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক লোক নবিজির নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষও ভালোবাসবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি দুনিয়াবিমুখ হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর লোকদের কাছে যা আছে (ধন-সম্পদ) তার প্রতি বিমুখ হও, তাহলে লোকেরাও তোমাকে ভালোবাসবে। [টিকা: সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪১০২। হাদিসের মান: হাসান। মুস্তাদরাকে হাকিম, বাইহাকি প্রমুখ সহিহ বলেছেন। তাহকিক: শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ। তবে সনদে সমস্যা আছে। সনদে খালেদ ইবনু আমর আল কুরাশি—তার ব্যাপারে হাফিয ইবনু হাজার রাহিমাহুল্লাহ তাকরিবের মধ্যে বলেছেন, তাঁর ব্যাপারে ইবনু মাইন মিথ্যার অভিযোগ করেছেন। অন্য সনদটি জয়িফ । মুরসাল হিসেবে এর শাওয়াহিদ পাওয়া যায়। তাহকিক: শাইখ শুআইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ]

ক্ষতিগ্রন্থ ও ক্ষতি করা যাবে না

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا ضَرَرَ وَلَاضرار

[৩২] ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (নিজে কারো) ক্ষতি করবে না। এবং (অন্যের) থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না ৷ [টিকা: সুনানু ইবনি মাজাহ: ২৩৩১]

ইসলামী বিচারের মূল ভিত্তি

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, قَالَ: ” لَوْ يُعْطَى النَّاسُ بِدَعْوَاهُمْ لَادَّعَى نَاسُ دِمَاءَ قَوْمٍ، وَأَمْوَالَهُمْ وَلَكِنَّ الْيَمِينَ عَلَى الْمُدَّعَى عَلَيْهِ

[৩৩] ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের দাবী অনুযায়ী যদি ফায়সালা করে কোনো কিছু দেওয়া হয়, তাহলে কতক লোক অন্যের সম্পদ ও জীবন (মৃত্যুদন্ড) দাবী করে বসবে। তাই দাবীদারের প্রমাণ পেশ করতে হবে আর বিবাদীর উপর হলো কসম। [টিকা: সুনানু বাইহাকি : ১/২৫২]

অসৎ কাজের বাঁধা দেওয়া

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قَالَ: سَمِعت رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يقول: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيَّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ

[৩৪] আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ অন্যায় কাজ দেখলে সে যেন হাতের মাধ্যমে তা পরিবর্তন/প্রতিরোধ করে। তা না পারলে জবানের মাধ্যমে যেন প্রতিরোধ করে। আর যদি তাও না পারে, তাহলে মনের মাধ্যমে যেন প্রতিরোধ করে (ঘৃণার মাধ্যমে)। আর এটাই হলো—দুর্বল ইমান। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ১৭৭; মুসনাদু আহমাদ: ১১১৫০]

ইসলামে ভ্রাতৃত্বের অধিকার

عنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلا تَدَابَرُوا وَلاَ يَبعُ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعٌ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ الله إخْوَانًا، المُسْلِمُ أخو المُسلم: لا يَظْلِمُهُ، وَلا يَحْقِرُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، التَّقْوَى هاهُنَا – ويشير إلى صدره ثلاث مرات بحسب امرىءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحقِرَ أَخَاهُ المُسْلِمَ، كُلُّ المُسْلم عَلَى المُسْلم حَرَامٌ، دَمُهُ ومَالُهُ وعرضه

[৩৫] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পরে হিংসা কোরো না, দাম দরাদরি করে মূল্য বাড়িয়ে দিও না, পরস্পরে ক্রোধান্বিত হয়ো না। পরস্পরে পিছনে লাগবে না। একজনের বেচাকেনার উপর ক্রয়-বিক্রয় কোরো না। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে কারো উপর জুলুম করবে না। তুচ্ছজ্ঞান করবে না। অসহায় অবস্থায় কাউকে ছেড়ে যাবে না। আর তাকওয়া এখানে (অন্তরে)। তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা তিনবার বললেন। (নবিজি আরো বলেন) কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে তুচ্ছজ্ঞান করা তার মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর প্রতিটি মুসলমানের ধন-সম্পদ, সম্মান, রক্ত অপর মুসলমানের জন্য হারাম। [টিকা: সহিহ মুসলিম; ৬৫৪১; মুসনাদু আহমাদ: ৭৭২৭]

সহযোগীতা, ইলম ও আমল

عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النَّبي صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةٌ مِنْ كُرَبِ الدُّنيَا، نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرَبَةٌ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، واللهُ في عَونِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أَخِيهِ، وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الجَنَّةِ. وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيت مِنْ بُيُوتِ اللهِ تَعَالَى، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَا رَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ، وَغَشِيتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَحَفَّتْهُمُ المَلائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ الله فِيمَنْ عِندَهُ وَمَنْ بَطَاْ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِع بِهِ نَسَبُهُ)

[৩৬] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের দুনিয়াবী কোনো সমস্যা লাঘব করে দিবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলাও তার কষ্ট থেকে কোনো কষ্ট লাঘব করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির উপর সহজ করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার উপর সহজ করবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার মুসলমান ভাইয়ের সহযোগীতায় লিপ্ত থাকে, আল্লাহও তার সহযোগীতায় থাকেন। আর যে ব্যক্তি ইলমের উদ্দেশ্যে পথ চলে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আর যখন কোনো কওম আল্লাহর কুরআন পাঠ করার জন্য ও শিখানোর জন্য আল্লাহর কোনো এক ঘরে সমবেত হয়, তখন আল্লাহ তাদের উপর প্রশান্তি নাজিল করেন। ও আল্লাহর রহমত তাদেরকে আবৃত করে নেয়। এবং আল্লাহর ফেরেশতাও তাদেরকে বেষ্টন করে রাখেন। আল্লাহ তাআলাও নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সাথে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করতে থাকেন। (আর শোনো) যাকে তার আমল পিছনে ফেলে রেখেছে, তার বংশ তাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবে না। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ৬৮৫৩; মুসনাদু আহমাদ: ৭৪২৭]

আল্লাহর মহা অনুগ্রহ ও দয়া

عن أبي العباس عبدِ اللهِ بنِ عباس بن عبد المطلب رضي الله عنهما، عن رَسُول الله صلى الله عليه وسلم فيما يروي عن ربه، تبارك وتعالى، قَالَ: «إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ، فَمَنْ همَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةٌ كَامِلَةٌ، وَإِنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمئةِ ضِعْفِ إِلى أَضعَافٍ كَثيرة، وإنْ همَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةٌ كَامِلَةٌ، وَإِنْ هَمَ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةٌ وَاحِدَةً»

[৩৮] আবুল আব্বাস আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মহান রব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা গুনাহ ও সাওয়াবকে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। অতঃপর তিনি তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এভাবে—যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে; কিন্তু সে তা করতে পারেনি, আল্লাহ তাআলা তার জন্য (কেবল নিয়ত করার বিনিময়ে একটি পূর্ণ সাওয়াব লিখে রাখেন। আর যদি সে তার ইচ্ছানুযায়ী কাজটি করতে সক্ষম হয়, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতাশ গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ সাওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেন। আর যদি কোনো বান্দা একটি গুনাহ করার ইচ্ছা করার পরেও তা সম্পাদন না করে; তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি পূর্ণ সাওয়াব লিখেন, আর সে যদি গুনাহের কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে ও তা করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি গুনাহ লিখে রাখেন। [টিকা: সহিহ মুসলিম: ৬৪৯১; সহিহ মুসলিম: ১৩১; মুসনাদু আহমাদ: ২৭২৭]

আল্লাহর প্রিয়দেরকে ভালোবাসা

عن أبي هريرة رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: إنَّ الله تَعَالَى قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا، فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ، كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا، وَرَجُلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي
أعْطَيْتُهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأعِيدَنَّهُ»

[৩৮] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিলাম। আর বান্দা আমার যে সমস্ত কাজের মাধ্যমে নিকটবর্তী (প্রিয়) হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো—আমি তার উপর যা কিছু ফরজ করেছি, তা (ফরজ ইবাদাত) আর আমার বান্দা নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করে, অবশেষে আমি তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে শ্রবণ করে থাকে। আমি তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে দেখে৷ আমি তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে স্পর্শ করে। আমি তার ঐ পা হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে হাঁটা-চলা করে। তখন যদি সে আমার কাছে কোনো কিছু চায়, আমি তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দান করি।'[টিকা: সহিহুল বুখারি: ৬৫০২]

ইসলাম সহজ, কঠিন বিষয় উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে

عَنْ أَبِي ذَرِّ الْغِفَارِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ قَدْ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الخطأ، وَالنِّسْيَانَ، وَمَا اسْتَكْرِهُوا عَلَيْهِ

[৩৯] আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের থেকে ভুল-ত্রুটি ও বাধ্য করা কাজ থেকে এড়িয়ে গেছেন। (ক্ষমা করে দিয়েছেন।) [টিকা: সুনানু ইবনি মাজাহ: ২০৩৩। হাদিসের মানঃ সহিহ। তাহকিক: শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ।]

দুনিয়াতে পথিকের মত থাকো

عن ابن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبَي، فقال: «كن في الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَو عَابِرُ سَبيل
وَكَانَ ابن عُمَرَ رضي الله عنهما، يقول: إِذَا أَمْسَيتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلا تَنْتَظِرِ المَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ.

[৪০] ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার দুই কাঁধ স্পর্শ করে বললেন, তুমি দুনিয়াতে একজন মুসাফির বা পথিকের মত থাকো।
আর ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলতেন, যখন তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হবে, তখন আর সকালের আশা করো না। আর যখন সকালে উপনীত হবে, তখন আর সন্ধ্যার প্রতীক্ষা কোরো না। সুস্থ অবস্থায় অসুস্থ সময়ের জন্য কিছু জোগাড় করে রাখো এবং হায়াতের জীবনে পরকালিন জীবনের জন্য পাথেয় জোগাড় করে রাখো। [৪৬] সহিহুল বুখারি: ৬৪১৬; মুসনাদু আহমাদ: ৪৭৬৪]

শরিয়তের মূলনীতি ও নবিজির পদাঙ্ক অনুসরণ

عن عبد الله بن عمرو بن العاص، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواء تبعا لما جئت به

[৪১] আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি যা নিয়ে আগমন করেছি, তা পালন করার ইচ্ছা করবে। [টিকা: মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৬৭; শারহুস সুন্নাহ: ১/২৩১]

আল্লাহর অসীম ক্ষমা

عن أنس رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ ولا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَت ذُنُوبُكَ عَنَّانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلَا أُبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقَيْتَنِي لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا، لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةٌ

[৪২] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বনি আদম, যদি তুমি আমাকে ডাকো ও আমার কাছে ক্ষমার আশা করো, তাহলে আমি তোমার সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবো। এতে আমি কোনো পরওয়া করবো না। হে বনি আদম, তোমার পাপরাশি যদি আকাশ অবধি হয়ে যায়, আর তুমি যদি আমার কাছে মাফ চাও, তাহলে আমি তোমাকে মাফ করে দিবো। এতে আমি কোনো পরওয়া করবো না। হে বনি আদম, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ পাপরাশি নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও; আর যদি তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক না করো, তাহলে আমি এক পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে হাজির হবো।” [টিকা: জামিউত তিরমিজি: ৩৫৪০; মুসনাদু আহমাদ: ১২৪০৫। হাদিসের মানঃ সহিহ। তাহকিক শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ। শাইখ শুআইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সনদ জয়িফ । সনদে কাছির ইবনু ফায়িদ জয়িফ। তাকে ইবনু হিব্বান ছাড়া আর কেউ সিকাহ বলেননি। কিন্তু এমন হাদিস মুসনাদু আহমাদে আছে। শাইখ আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক ইবনু মাজাহর তাহকিকে হাসান বলা হয়েছে।]

সমাপ্ত

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South