ইমাম হাসান আল বান্নার ওযিফা
মু. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন
প্রকাশকের কথা
ইসলামি আন্দোলনের পথিকৃৎ ইমাম হাসান আল বান্না রহ. লিখেছেন খুব কম; আর যাও লিখেছেন তা খুবই সংক্ষিপ্ত, তবে সেই সংক্ষিপ্ত লেখাগুলোতে রয়েছে ইলমের প্রাচুর্য, ভারসাম্যের সৌন্দর্য ও প্রজ্ঞার ঝলক।
ইমাম হাসান আল বান্নার লেখাগুলো ‘রিসালা’ (প্রবন্ধ বা পুস্তিকা) হিসেবে পরিচিত। ইমাম বান্নার রিসালার সবগুলোই আমরা পর্যায়ক্রমে প্রকাশের কাজ হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে— ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি নসিহত (রিসালাতুত তায়ালিম), ওযিফা (রিসালাতুল মাছুরাত : ওযিফা অংশ)। মাস দুয়েকের ব্যবধানে প্রকাশিত হবে — ইসলামি আকিদা : ইলাহিয়্যাত (রিসালাতুল আকায়িদ), জিহাদের মর্মকথা (রিসালাতুল জিহাদ), দৈনন্দিন দুআ ও যিকির (রিসালাতুল মাছুরাত : দুআ অংশ), মুনাজাত (রিসালাতুল মুনাজাত) প্রভৃতি। বাকি রিসালাসমূহ প্রকাশের কাজ এগিয়ে চলছে। ইমামের লেখা তাফসিরবিষয়ক রিসালাসমূহ তাফসিরে হাসান আল বান্না শিরোনামে তিন খণ্ডে প্রকাশের কাজ প্রক্রিয়াধীন। বাংলাভাষী পাঠকদের হাতে এই রত্নসম রচনাবলি তুলে দিতে পেরে আমরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি—আলহামদুলিল্লাহ।–প্রকাশক
ইখওয়ানুল মুসলিমিন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইমাম হাসান আল বান্না ইখওয়ান সদস্যদের আধ্যাত্মিক, শারীরিক, জ্ঞানগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক তারবিয়াতের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আধ্যাত্মিক তারবিয়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে যিকির। এর মাধ্যমে মানুষের ঈমান বৃদ্ধি পায়, কলব পরিশুদ্ধ হয়। তাই ইমাম হাসান আল বান্না বিশেষত ইখওয়ান সদস্য এবং সামগ্রিকভাবে সকল মুসলিমের জন্য হাদিসের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো থেকে মাসনুন যিকিরের একটি সংকলন করেন।
সংকলনটি মাছুরাত’ শিরোনামে ১৩৫৫ হিজরিতে (১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ) ‘লাজনাতু নাশরি রাসায়িলিল ইখওয়ান থেকে প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির ‘ওযিফা’ অংশের তরজমাই হচ্ছে আমাদের এই ‘ওযিফা’ পুস্তিকাটি।
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللهِ
(۸) تَطْمَئِنُ القُلُوبُ .
যারা ঈমান আনে এবং যাদের হৃদয় আল্লাহর যিকিরে পরিতৃপ্ত হয়। জেনে রাখো- আল্লাহর যিকিরেই (মুমিনের) অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।(সূরা রাদ :২৮)
ভূমিকা
ঈমানের বিশুদ্ধি ও পরিচর্যার মাধ্যমে অন্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্তরের জন্য খোরাকেরও ব্যবস্থা করতে হয়। আর অন্তরের খোরাক হলো- আল্লাহ তায়ালার সাথে স্থায়ী ও পরিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তমরূপে আল্লাহর ইবাদত করা। ইবাদতের ক্ষেত্রে যে সকল মৌলিক উপাদানের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সেগুলোর একটি হলো আল্লাহর যিকির। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেন-
ياَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
হে ঈমানদারগণ, তোমরা বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করো এবং সকাল- সন্ধ্যা তাঁর তাসবিহ পাঠ করো।(সূরা আহযাব :৪১-৪২)
আর সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে কুরআনের তিলাওয়াত – যা আল্লাহ তায়ালার প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী। কুরআন তিলাওয়াতকারীকে প্রতিটি হরফের বিনিময়ে দশটি করে নেকি প্রদান করা হয়। তাজবিদ সহকারে সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াতে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের জনশক্তিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। সেই তিলাওয়াত যেন গভীর চিন্তা ও মনোযোগের সাথে হয়, তাতে দেওয়া হয় বিশেষ তাকিদ। যদি তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে পাহাড়কে গতিশীল করা যেত অথবা জমিনকে বিদীর্ণ করা যেত কিংবা মৃতদের সাথে কথা বলা যেত, তাহলে এই তিলাওয়াতই যেন হয় তার উপযুক্ত। যিকিরের বহু ধরন রয়েছে এবং তার শব্দাবলিও প্রচুর। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রকার দুআ, ইসতিগফার, নবিজি সা.-এর প্রতি দুরুদ পাঠ ইত্যাদি। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের শিক্ষানীতিতে হাদিসে বর্ণিত দুআ ও যিকিরসমূহের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা, হাদিসে বর্ণিত শব্দাবলির মাধ্যমে দুআ ও যিকির বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এর কয়েকটি দিক হলো-
১. হাদিসে বর্ণিত শব্দমালার মর্ম ও শৈলীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ও সমতুল্য কোনো শব্দমালা নেই। বস্তুত হাদিসের শব্দাবলি তার ব্যাপকতা, অলংকার, দ্ব্যর্থহীনতা ও প্রভাবক শক্তির দিক থেকে আল্লাহর তায়ালার একটি বিশেষ নিদর্শন। উপরন্তু এগুলো রাসূল সা.-এর মুখনিঃসৃত বাণী হিসেবে নববি বরকতে পূর্ণ।
২. নবি-রাসূলগণই একমাত্র মাসুম। অতএব, তাঁদের মুখনিঃসৃত শব্দাবলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অন্য সকল ব্যক্তিবর্গ যত উচ্চমর্যাসম্পন্নই হোন না কেন- মাসুম নন। সুতরাং যে ব্যক্তি নিষ্পাপ নন, তার কথা অনেক ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও শৈথিল্যের শিকার হওয়া স্বাভাবিক। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তাতে সমালোচনার সুযোগ থাকে। এজন্য বিতর্কযুক্ত কথা পরিহার করে বিতর্কমুক্ত কথাকেই গ্রহণ করা উচিত
৩. হাদিসে বর্ণিত দুআ পাঠে দুই ধরনের সওয়াব পাওয়া যায় :
এক. যিকিরের সওয়াব।
দুই. নবিজি সা.-এর অনুসরণের সওয়াব।
কাজেই কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই সংগত কারণ ছাড়া নবিজিকে অনুসরণের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে চাইবে না। এ কারণে ইমাম হাসান আল বান্না হাদিসের গ্রন্থাবলি হতে সংগৃহীত দুআ- যিকির নিয়ে একটি পুস্তিকা রচনা করেন; নামকরণ করেন আল-মাছুরাত। মূলত ইমাম নববি রচিত আল-আযকার এবং ইবনু তাইমিয়া রচিত আল- কালিমুত তাইয়িব-এর আলোকে তিনি এ পুস্তিকাটি রচনা করেন। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রায় সকল কর্মীর কাছেই এ পুস্তিকা রয়েছে। আর এই পুস্তিকাটি তাদের প্রায় সকলের মুখস্থও আছে। কারণ, তারা সকাল- সন্ধ্যা এ দুআ ও ওযিফাসমূহ পাঠ করে। –ড. ইউসুফ আল কারযাভী
মাছুরাত
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
সকল প্রশংসার একমাত্র হকদার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ যিকিরকারী, শোকরগুজারদের সর্দার, রাসূলদের ইমাম, খাতামুন নাবিয়্যিন—সর্বশেষ নবি ও রাসূল এবং শুভ্র কপালবিশিষ্ট মহৎপ্রাণ মানুষদের নেতা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর ওপর। আরও সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবি এবং কিয়ামত অবধি যারা তাঁর পথে চলবে, তাদের ওপর।
সার্বক্ষণিক যিকির
প্রিয় পাঠক, আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আপনাদেরকে ভালো কিছু করার তাওফিক দান করেছেন। তাই আমরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের জানা থাকা উচিত, প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটি মূল লক্ষ্য- উদ্দেশ্য থাকে। এই লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্যকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় তার গোটা জীবন, প্রবাহিত হয় তার চিন্তাধারা, এগিয়ে চলে তার কাজকর্ম। তার গোটা জীবনের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছুকেই ঘিরে থাকে এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এটাকেই বিজ্ঞজনেরা নাম দিয়েছেন ‘জীবনাদর্শ’। একজন মানুষের এই আদর্শ যতটা উন্নত হবে, তার থেকে ততটাই উন্নত নৈতিকতা ও মহত্তম কাজকর্ম প্রকাশ পেতে থাকবে। আর এভাবেই তার হৃদয় আলোকিত হবে রুহানি সৌন্দর্যে, সে পৌঁছে যাবে কামালিয়াতের সুউচ্চ দরজায় এবং লাভ করবে তার জন্য নির্ধারিত মর্যাদার নসিব অংশ। ইসলাম পৃথিবীতে এসেছে মানুষের ইসলাহ ও তাযকিয়া তথা সংশোধন ও পরিশুদ্ধির জন্য। ইসলাম মানুষকে পৌঁছে দিতে চায় সর্বোচ্চ কামালিয়াতে। তাই ইসলাম গোটা মানবজাতির সামনে পরিষ্কার করে বয়ান করেছে তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ইসলাম চায়, মানুষকে আদর্শের দিকে পরিচালিত করতে। ইসলামের ভাষায় সেই আদর্শ হচ্ছে— ‘সার্বক্ষণিক আল্লাহ তায়ালার স্মরণ ও পবিত্রতা বর্ণনায় নিবেদিত থাকা’। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
فَفِرُوا إِلَى اللهِ اِنّى لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُّبِينٌ ﴿٥٠
‘তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও; নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।(সূরা যারিয়াত :৫০)
অতএব, প্রিয় ভাইয়েরা, জীবনাদর্শ (Ideal of life) সম্পৃক্ত এই মহাসত্যটি যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি, তাই কোনোভাবেই কোনো অবস্থাতেই মুসলিম হওয়ার পর আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল হওয়া আমাদের উচিত নয়। সমগ্র মাখলুকাতের মাঝে রব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী হচ্ছেন আমাদের নবিজি সা.। তিনিই আমাদের কাছে বর্ণনা করে গেছেন ছোটো বা বড়ো যেকোনো পরিস্থিতিতে কীভাবে, কোন আলংকারিক শব্দগুচ্ছ দিয়ে যিকির, দুআ, শুকর, তাসবিহ ও তাহমিদ আদায় করতে হবে। আমাদের নবিজি সা. সর্বক্ষণই আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকতেন। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যদের কাছে আমরা আহ্বান জানাই-তারা যেন নবিজির সুন্নাতি রঙে নিজেদের রাঙায় এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে। অতএব, আমরা যে দুআ ও যিকিরগুলো সামনে বর্ণনা করব, তাদের উচিত সেগুলো মুখস্থ করে নেওয়া এবং এর মাধ্যমে ক্ষমাশীল মহাপরাক্রম আল্লাহর কাছে ধরনা দেওয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللهِ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وذكر الله كَثِيرًا (ال)
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।(সূরা আহযাব :২১)
যিকির ও যিকিরকারীর ফযিলত
আল কুরআন ও হাদিসে আমাদের আদেশ করা হয়েছে বেশি বেশি যিকির করতে। যিকির ও যাকির (যিকিরকারী)-এর ফযিলত নিয়েও আলোচনা এসেছে কুরআন-হাদিসে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
اِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَتِ وَالْقُنِتِينَ وَالْقَنِيتِ وَالصَّدِقِينَ وَالصُّدِقتِ وَالصُّبِرِينَ وَالصُّبِرَاتِ وَالْخَشِعِينَ وَالْخَشِعَتِ وَالْمُتَصَدِقِينَ وَالْمُتَصَدِقَتِ وَالصَّائِمِيْنَ وَالطَّيِّمَتِ وَالْحَفِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَفِظتِ وَالذَّاكِرِينَ اللهَ كَثِيرًا وَالذّكِراتِ أَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرًا
عَظِيمًا (۳۵
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজাদার পুরুষ ও রোজাদার নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও আল্লাহর অধিক যিকিরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।(সূরা আহযাব :৩৫)
ঈমানদারদের যিকির করার আদেশ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন —
ياَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا ﴿۲۲﴾
হে ঈমানদারগণ, তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করো।(সূরা আহযাব :৪১-৪২)
যিকিরের ফযিলতের ব্যাপারে অসংখ্য হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসি এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন-
أَنَا عِنْدَ فَلَنْ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ في نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي في مَلا ذَكَرْتُهُ في مَلَا خَيْرٍ مِنْهُمْ.
আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা পোষণ করে। আমি বান্দার সাথে থাকি, যখন সে আমার যিকির করে, আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তারচেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি।
[টীকা-বুখারি, তাওহিদ : ৬৮৫৬, মুসলিম, আয যিকরু ওয়াদ দুআয়ু ওয়াত তাওবাতু ওয়াল ইসতিগফার : ৪৮৩২।]
আবদুল্লাহ ইবনু বুসর রা. থেকে বর্ণিত, এক লোক রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে বললেন—
يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ شَرَائِيعَ الْإِسْلَامِ قَدْ كَثُرَتْ عَلَيَّ، فَأَخْبِرْنِي
بِشَيْءٍ أَتَشَبَّتُ بِهِ. قَالَ: «لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْباً مِنْ ذِكْرِ اللهِ».
হে আল্লাহর রাসূল, ইসলামি বিধান আমার জন্য অনেক বেশি ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাকে এমন একটি কাজ বলে দিন, যেটাকে আমি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারি। রাসূল সা. বললেন- আল্লাহর যিকিরে তোমার রসনা যেন সর্বদা সিক্ত থাকে।
[টীকা-তিরমিযি, আদ দাওয়াতু আন রাসূলিল্লাহ : ৩২৯৭। ইমাম তিরমিযি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। ইবনু মাজাহ, আদাব : ৩৭৮৩, আহমাদ : ১৭০২০; আলবানি তাঁর সহিহ সুনানিত তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন (৩৩৭৫)।]
যিকিরের আদব
প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের জেনে রাখা উচিত, যিকির বলতে কেবল মৌখিক যিকির বোঝানো হচ্ছে না। তাওবা-ইসতিগফারও যিকির, (আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টিজগৎ নিয়ে) তাফাক্কুর-চিন্তাভাবনা করাও বড়ো ধরনের যিকির। জ্ঞান তালাশ করা, বিশুদ্ধ নিয়তে রিযিক তালাশ করাও যিকির। মোটকথা, এমন প্রতিটি কাজই যিকির হিসেবে বিবেচিত হবে—যা করার সময় আপনি এ কথা মনে রাখেন যে, আমার রব আমাকে দেখছেন, আমি তাঁর পর্যবেক্ষণের আওতায়ই আছি। এ কারণেই যারা আরিফ’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার যথার্থ মারিফাত হাসিল করেছেন, তারা সর্বাবস্থায় যিকিরে নিমগ্ন থাকেন। নিছক মৌখিক যিকিরের খুব একটা ফায়দা নেই, যদি তাতে অন্তরের সংযোগ না থাকে; বরং অতি অবশ্যই কলবে যিকিরের প্রভাব পড়তে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন যিকিরের আদব-কায়দাগুলো মেনে চলা। আমাদের আলিমগণ যিকিরের অনেকগুলো আদব-কায়দা বর্ণনা করেছেন। আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আদব তুলে ধরছি-
১. বিনয় ও আদব : যথার্থ বিনয় ও আদবের সাথে যিকির করতে হবে। যিকির করার সময় অতি অবশ্যই যিকিরের শব্দগুলো বুঝে বুঝে পড়তে হবে এবং এর মাধ্যমে অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়াও যিকিরের সময় এর শব্দগুলোর মূল মাকাসিদ বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মাথায় রাখতে হবে।
২. যথাসম্ভব নিচু আওয়াজে যিকির করা : সজাগ হৃদয় ও পরিপূর্ণ একাগ্রতা সহকারে যথাসম্ভব নিচু আওয়াজে যিকির করতে হবে, যাতে অন্য কারও সমস্যা বা বিরক্তির উদ্রেক না হয়। যিকিরের এই আদবটির কথা আল কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এভাবে বলেছেন-
وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيْفَةً وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُةِ وَالْأَصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَفِلِينَ ﴿۲۰۵
আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, সশঙ্কচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।(সূরা আরাফ :২০৫)
৩. সামষ্টিক যিকিরের আদব : কোনো জামায়াতের সাথে সামষ্টিকভাবে যিকির করলে ওই জামায়াতের সাথে সাযুজ্য বা সামঞ্জস্য রেখেই যিকির করতে হবে। যিকিরের ক্ষেত্রে তাদের থেকে আগ-পর করা যাবে না। কেউ যদি এমতাবস্থায় জামায়াতের সাথে এসে যিকিরে শামিল হয় যে, তারা সবে যিকির শুরু করেছে, তাহলে সে তাদের সাথেই যিকির এগিয়ে নেবে আর ছুটে যাওয়া যিকিরগুলো বৈঠক শেষে আদায় করে নেবে। আর কেউ যদি বিলম্বে এসে দেখে জামায়াত যিকিরে মশগুল, তাহলে সে ছুটে যাওয়া যিকিরগুলো প্রথমে আদায় করে নেবে, তারপর জামায়াতের সাথে সামষ্টিক যিকিরে শামিল হবে।
৪. পবিত্রতা : পবিত্র স্থানে পবিত্র পোশাক পরিধান করে যিকির করাও যিকিরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আদব। তাই যিকিরের জন্য পবিত্র স্থান ও উপযুক্ত সময় বাছাই করতে হবে; এতে অন্তরে যিকিরের প্রভাব পড়বে, একাগ্রতা বাড়বে, হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে এবং নিয়তও খালিস হবে।
৫. যিকির শেষের আদব : যিকির শেষে প্রস্থানের সময়ও বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখতে হবে। (যিকির শেষে) কোনো ধরনের হইচই বা গোলমাল করা যাবে না, অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না; কারণ এতে যিকিরের প্রভাব থাকে না এবং এই ধরনের যিকিরে কোনো ফায়দাও হয় না।
সামষ্টিক যিকির
হাদিসের বর্ণনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, জামায়াতে বা সামষ্টিকভাবে যিকির করা মুস্তাহাব। মুসলিম শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-
لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُوْنَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ
وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَة.
কোনো সম্প্রদায় আল্লাহ তায়ালার যিকির করতে বসলে একদল ফিরিশতা তাদের পরিবেষ্টন করে নেয় এবং রহমত তাদের আচ্ছাদন করে নেয়। আর তাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তার কাছের ফিরিশতাদের মাঝে তাদের আলোচনা করতে থাকেন।[টীকা-মুসলিম, আয যিকরু ওয়াদ দুআয়ু ওয়াত তাওবাতু ওয়াল ইসতিগফার : ৪৮৬৭]
এ ছাড়াও আরও বহু হাদিস আছে, যেখানে আমরা দেখি, রাসুলুল্লাহ সা. কোনো জামায়াত বা সমষ্টিকে মসজিদে যিকির করতে দেখলে তাদের সুসংবাদ প্রদান করতেন; কখনোই তিরস্কার করেননি। এমনিতে সামষ্টিকভাবে যেকোনো ভালো কাজ করাই মুস্তাহাব। এ ছাড়াও সামষ্টিক ভালো কাজের রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। যেমন-আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয়, উপকারী কাজে সময় কাটানো যায়, যারা নিরক্ষর বা পড়তে পারেন না, তাদের শেখানো যায় এবং আল্লাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রকাশ ঘটে। তবে হ্যাঁ, এমনভাবে সামষ্টিক যিকির করা বৈধ নয়, যার ফলে কোনো শরিয়তবিরোধী কাজকর্ম ঘটে। যেমন—উচ্চৈঃস্বরে যিকির করে কোনো মুসল্লির নামাজে বিঘ্ন ঘটানো, অনর্থক হাসি-ঠাট্টা করা, যিকিরের শব্দ বিকৃত করা কিংবা অন্য কোনো শরিয়তবিরোধী কাজ করা। এই ধরনের কাজকর্ম ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে সামষ্টিক যিকির অবৈধ হবে; নতুবা মূলত সামষ্টিক যিকির অবৈধ কোনো বিষয় নয়। বিশেষত, এই সামষ্টিক যিকির যদি হাদিসবর্ণিত বিশুদ্ধ শব্দগুচ্ছের [আরবি] মাধ্যমে হয়—যেমনটি আমরা এই ওযিফায় বর্ণনা করেছি, তাহলে তা তো অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই। অতএব, ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যরা সকল বা সন্ধ্যায় কোনো অফিস বা মসজিদে একত্রিত হয়ে যদি উপর্যুক্ত শরিয়তবিরোধী কার্যক্রমগুলো পরিহার করে সামষ্টিকভাবে এই যিকিরগুলো পাঠ করে, তাহলে আমরা মনে করি, এটা খুবই ভালো একটি আমল ও চর্চা হবে। তবে কেউ যদি জামায়াতে শামিল না হতে পারে, তাহলে সে একা একা হলেও ওযিফাগুলো পাঠ করে নেবে; যিকির করা থেকে যেন সে বাদ না পড়ে, সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত।
উপসংহার
এখন আমি ওযিফার এই সংকলনটি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করছি। এটি কেবলই ইখওয়ানের জনশক্তিদের জন্য খাস নয়; বরং যেকোনো সাধারণ মুসলিমও এ থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারবে। আমরা আশা করছি, ওযিফার এই সংকলনটি আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলতে তাদের রসদ জোগাবে। এই সংকলনে বর্ণিত ওযিফাগুলো একাকি বা সামষ্টিকভাবে পড়তে হবে সকালে (অর্থাৎ, ফজর থেকে যোহরের আগ পর্যন্ত সময়ে) এবং বিকালে বা সন্ধ্যায় (অর্থাৎ, আসর থেকে এশার পর পর্যন্ত)। কেউ যদি পুরোটা পড়তে না পারে, তাহলে অবশ্যই কিছু অংশ পড়ে নেবে; কোনোভাবেই ওযিফার ব্যাপারে অবহেলার অভ্যাস গড়ে তুলবে না। দিনে ও রাতে উপযুক্ত সময় বেছে নিয়ে অবশ্যই কুরআন পাঠ করতে হবে। কুরআন পাঠের পর ওই সময়ে যদি কোনো মাসনুন দুআ বা যিকির থাকে, তা পড়ে নেবে। আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের জন্য এবং সকল পাঠকদের জন্য ভালো কাজ করার এবং পূর্ণাঙ্গ হিদায়াতের পথে চলার তাওফিক কামনা করছি। আমরা পাঠকদের কাছে অনুরোধ রাখছি, তারা যেন তাদের নির্জন কিংবা বৈঠকি দুআয় আমাদের কথা স্মরণ করতে ভুলে না যান।
শত-সহস্র সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সা.-এর ওপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর।
—–হাসান আল বান্না
রমজান, ১৩৫৫ হিজরি
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
বড়ো ওযিফা
أَعُوْذُ بِاللَّهِ السَّبِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ ﴿ا﴾ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِيْنَ ﴿٢﴾ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ﴿۳﴾ مُلِكِ يَوْمِ الدِّينِ ﴿٢﴾ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٥﴾ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿1﴾ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ )
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। (যিনি) বিচার দিনের মালিক। আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই। আমাদের সরল-সঠিক পথ দেখাও। তাদের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দিয়েছ; যাদের ওপর তোমার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।(সূরা ফাতিহা :১-৭)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
الم الم ذَلِكَ الْكِتَبُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ ﴿۲﴾ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلوةَ وَ مِمَّا رَزَقْنَهُمْ يُنْفِقُونَ ﴿٣﴾ وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا
أنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ م ) أو لَيْكَ عَلَى هُدًى
من رَّبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (د)
আলিফ লাম মিম। এটা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকিদের জন্য এ (গ্রন্থ) পথনির্দেশক। যারা গাইবের প্রতি বিশ্বাস করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের আমি যা কিছু দান করেছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যা আপনার ওপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, তার প্রতি যারা ঈমান আনে। আর যারা আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী। মূলত তারাই তাদের রবের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।(সূরা বাকারা :১-৫)
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَواتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَةً إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَواتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ﴿٢٥٥﴾ لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ . قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى * لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿٢٥٢﴾ اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوْا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَتِ إِلَى النُّوْرِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَتُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُوْنَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ إِلَى الظُّلُمَتِ أُولَئِكَ أَصْحَبُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خُلِدُوْنَ لا لا ۲۵۷
‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছু তাঁরই। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত আছেন। যা তিনি ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহামহিম। দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোরজবরদস্তি নেই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। অতএব, যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রজ্জু ধারণ করল- যা কখনও ছিন্ন হবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। আল্লাহ তাদের অভিভাবক, যারা ঈমান আনে। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরি করে, তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। এরা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। আর এরাই হচ্ছে আগুনের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।(সূরা বাকারা : ২৫৫-২৫৭)
لِلَّهِ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَ إِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوْهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللهُ فَيَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿۲۸﴾ أَمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهِ وَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا * * غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ ﴿۲۸۵﴾ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَ عَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا اَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَفِرِينَ ﴿٢٨﴾
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তার সবকিছুই আল্লাহর। বস্তুত তোমাদের মনে যা আছে, তা প্রকাশ করো কিংবা গোপন রাখো-আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। রাসূল তাঁর রবের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে যা নাযিল করা হয়েছে তার ওপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও ঈমান এনেছে। তারা প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের ওপর। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব, আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর তোমারই দিকে (আমাদের) প্রত্যাবর্তন হবে। আল্লাহ কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভালো কিছু উপার্জন করবে, সে তার (প্রতিদান পাবে); আর যে মন্দ উপার্জন করবে, সে তার (প্রতিফল পাবে)। হে আমাদের রব, আমরা যদি বিস্মৃত হই কিংবা ভুল করি, তাহলে তুমি আমাদের অপরাধী করো না। হে আমাদের রব, আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন ভারী বোঝা অৰ্পণ করেছিলে, আমাদের ওপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না। হে আমাদের রব, এমন ভার আমাদের ওপর চাপিয়ো না-যা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। তুমি আমাদের ক্ষমা করো, আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমিই আমাদের অভিভাবক। অতএব, সত্য প্রত্যাখ্যানকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য (ও বিজয়ী) করো।(সূরা বাকারা : ২৮৪-২৮৬)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ال اللهُ لا إلهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ا
“আলিফ লাম মিম। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক।(সূরা আলে ইমরান :১-২)
وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّوْمِ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا ﴿ا﴾ وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ
الصّلِحَتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخْفُ ظُلْمًا وَلَا هَضْبًا ﴿١١٣
চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সর্বসত্তার ধারকের কাছে সবাই হবে নিম্নমুখী। সে- ই ব্যর্থ হবে, যে জুলুমের ভার বহন করবে। যে বিশ্বাসী হয়ে সৎকাজ করে, তার অবিচারের মুখোমুখি হওয়ার কিংবা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।(সূরা ত্বহা :১১১-১১২)
সাতবার এই আয়াত পড়বে :
حَسْبِيَ اللهُ ” لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَ هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (۱۳۹)
আমার জন্য তো আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া অন্য কোনো (সত্য) উপাস্য নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করেছি, আর তিনিই মহান আরশের মালিক।(সূরা তাওবা :১২৯)[টীকা-কেউ সকাল-সন্ধ্যা সাতবার এই আয়াত পাঠ করলে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার সকল দুশ্চিন্তা সমাধানের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। আবু দাউদ :৪৪১৭]
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيَّا مَا تَدْعُوْا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى وَلَا تَجْهَرْ بِصَلاتِكَ وَلا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذلِكَ سَبِيلًا ﴿١٠﴾ وَ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِلُ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكَ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنَ الدُّلِ وَ
كبره تكبيرا وا
‘বলো, তোমরা ‘আল্লাহ’ কিংবা ‘রহমান’ যে নামেই ডাকো না কেন, সকল সুন্দর নাম তো তাঁরই। নামাজে তুমি তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এই দুইয়ের মাঝামাঝিতে থাকো। বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি সন্তান গ্রহণ করেননি। যার সার্বভৌমত্বে কোনো অংশীদার নেই। তাঁর কোনো অভিভাবকের প্রয়োজন নেই। কারণ, তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না। আর সসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো।(সূরা ইসরা :১১০-১১১)
.
اَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ ﴿۱۵﴾ فَتَعَلَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ ﴿11﴾ مَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَها أخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَفِرُونَ ﴿1﴾ وَ قُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّحِمِينَ ﴿۱۱۸)
তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদের অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং আমার কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে না? আল্লাহ মহিমান্বিত, প্রকৃত মালিক। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; তিনি সম্মানিত আরশের রব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকে, অথচ এ বিষয়ে তার নিকট কোনো প্রমাণ নেই, তার হিসাব তো তার রবের কাছেই। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না। বলো- হে আমার রব, তুমি ক্ষমা করো ও দয়া করো। আর তুমিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু।(সূরা মুমিনুন :১১৫-১১৮)
فَسُبْحَنَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُونَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ﴿١﴾ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيّا وَحِيْنَ تُظهِرُوْنَ ﴿١٨﴾ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيْتِ وَيُخْرِجُ الْمَيْتَ مِنَ الْحَقِّ وَيُحْيِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَكَذَلِكَ تُخْرَجُوْنَ ﴿١٩﴾ وَمِنْ أَيْتِه أَنْ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ إِذَا اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ ﴿۲۰﴾ وَ مِنْ أَيْتِهَ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ اَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذلك لايت لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ﴿٢١﴾ وَمِنْ آيَتِهِ خَلْقُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ اَلْسِنَتِكُمْ وَالْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذلِكَ لَأيَةٍ لِلعَلِمِينَ ﴿٢٢﴾ وَمِنْ آيَتِهِ مَنَامُكُمْ بِالَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاؤُكُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةٍ لِقَوْمٍ يَسْمَعُوْنَ ﴿۲۳﴾ وَ مِن أيتِهِ يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيُحْيِ بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ فِي ذلِكَ لأيتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ ﴿٢٣) وَ مِنْ ايته أن تَقُومَ السَّمَاءُ وَ الْأَرْضُ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةٌ * مِنَ الْأَرْضِ إِذَا أَنْتُمْ تَخْرُجُوْنَ (٢٥) وَلَهُ مَنْ فِي السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ كُلٌّ لَهُ فنِتُونَ (٣٦)
অতএব, তোমরা যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে, তখন আল্লাহর তাসবিহ করো। আর প্রশংসা করো, যখন বিকালে ও দুপুরে উপনীত হবে তখনও। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সকল প্রশংসা তো তাঁরই। তিনিই মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং তিনিই বের করেন জীবিত থেকে মৃতকে। আর জমিনকে জীবিত করেন তা প্রাণশূন্য হয়ে যাওয়ার পরও। এভাবেই তোমাদের বের করে আনা হবে। তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর এখন তোমরা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছ। আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরেকটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরও রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি, ভাষা ও বর্ণের বিচিত্রতা। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন রয়েছে। তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরও রয়েছে—রাতে ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণে। এতে অবশ্যই শ্রবণশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে। তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরও রয়েছে–তিনি তোমাদের আশঙ্কা ও আশাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান এবং আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তা দিয়ে ভূমিকে ঊষর হয়ে যাওয়ার পর পুনর্জীবিত করেন। এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরও রয়েছে—তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি। অতঃপর আল্লাহ যখন তোমাদের মাটি হতে ওঠার জন্য ডাক দেবেন, তখন তোমরা উঠে আসবে। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা তাঁরই। সকলেই তাঁর হুকুমের অধীন।(সূরা রুম :১৭-২৬)
بسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
حموا تَنْزِيلُ الْكِتَبِ مِنَ اللهِ الْعَزِيزِ الْعَلِيْمِ ﴿٢﴾ غَافِرِ الذَّنْبِ وَقَابِلِ
التَّوْبِ شَدِيْدِ الْعِقَابِ ذِي القَوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ إِلَيْهِ الْمَصِيرُ (٣)
হা-মিম। এ গ্রন্থ পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট থেকে নাযিল হয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা ও অনুগ্রহকারী। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।(সূরা গাফির :১-৩)
هُوَ الله الذى لا إلهَ إِلَّا هُوَ عَلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ (٢٣) هُوَ اللهُ الَّذِئ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكَ الْقُدُّوسُ السَّلامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيز الجَبَّارُ المُتَكَبِّرُ سُبْحَنَ اللهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿٢٣) هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَ الْاَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনিই জানেন দৃশ্য – অদৃশ্যের সবকিছু। তিনিই পরম করুণাময় ও দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই অধিপতি, পবিত্র, শান্তি বিধানকারী, নিরাপত্তা বিধায়ক, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, গর্বের অধিকারী। যারা তাঁর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান। তিনিই আল্লাহ-সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা। সকল উত্তম নাম তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(সূরা হাশর :২২-২৪)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
اِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا ا وَ اَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا ﴿٢﴾ وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ) بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْلى لَهَا وه) يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ اَشْتَانَا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ ﴿1﴾ فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يّرَةُ ﴿ع﴾ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ و۸
জমিন যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে কম্পিত হবে। জমিন যখন তার ভারসমূহ বের করে দেবে। মানুষ বলবে—’এর কী হলো?’ সেদিন জমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ, তোমার রব তাকে আদেশ করবেন। সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে তাও সে দেখতে পাবে।(সূরা যিলযাল :১-৮)
তিনবার সূরা কাফিরুন পড়বে :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
قُلْ يَأَيُّهَا الْكَفِرُونَ ﴿١﴾ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ ﴿٢﴾ وَلَا أَنْتُمْ عُبِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُمْ ﴿٢﴾ وَلَا أَنْتُمْ عُبِدُوْنَ مَا أَعْبُدُ ﴿٥﴾ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ ﴾
বলে দিন—হে কাফিররা, আমি তার ইবাদত করি না, যার ইবাদত তোমরা করো। তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। আর আমি ইবাদতকারী নই তার, যার ইবাদত তোমরা করো। তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। অতএব, তোমাদের দ্বীন (শিরক) তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন (ইসলাম) আমার জন্য।(সূরা কাফিরুন :১-৬০
তিনবার সূরা নাসর পড়বে :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
إذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَ الْفَتْحُ ا َ وَ رَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِيْنِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
ط فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (۳)
যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তোমার রবের সপ্রশংস পবিত্ৰতা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি বড়োই তাওবা কবুলকারী।(সূরা নাসর :১-৩)
তিনবার সূরা ইখলাস পড়বে :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَد ان اللهُ الصَّمَدُ و لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ﴿٣﴾ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ
كُفُوًا أَحَدٌ و
বলো—তিনিই আল্লাহ একক (অদ্বিতীয়)। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন। আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।(সূরা ইখলাস :১-৪)[টীকা-কেউ যদি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সূরা ইখলাস পাঠ করে, তাহলে তার সকল কিছুর জন্য এই সূরা ইখলাসই যথেষ্ট হয়ে যাবে। আবু দাউদ : ৪৪১৯, তিরমিযি : ৩৪৯৯, নাসায়ি : ৫৩৩৩]
তিনবার সূরা ফালাক পড়বে :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ا مِن شَرِّ مَا خَلَقَ (٢) وَ مِنْ شَرِ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ (۳) وَمِن شَرِّ النَّقْتُتِ فِي الْعُقَدِ (م) وَ مِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ (۵)
বলো—আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি উষার রবের কাছে। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট হতে। আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট হতে—যখন তা গভীর হয়। আর ওইসব আত্মার অনিষ্ট হতে—যারা (জাদু করার উদ্দেশ্যে) গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের- যখন সে হিংসা করে।(সূরা ফালাক :১-৬)
তিনবার সূরা নাস পড়বে :
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ (1) مَلِكِ النَّاسِ (٢) إِلَهِ النَّاسِ (۳) مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ
۰۲
الْخَنَّاسِ ) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ وَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ (1)
বলো- আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের কাছে। মানুষের মালিকের কাছে। মানুষের ইলাহর কাছে। আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে-যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। (কুমন্ত্রণাদাতা হয়ে থাকে) জিন ও মানুষের মধ্য হতে।(সূরা নাস :১-৬)
ওযিফা যদি সকালে পাঠ করে, তাহলে তিনবার এই দুআ পড়বে :
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ كُلُّهُ لِلَّهِ ، لَا شَرِيكَ لَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ.
আমরা ভোরে উপনীত হলাম এবং জগৎসমূহের রব আল্লাহর রাজ্যও ভোরে উপনীত হলো। আর সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই নিবেদিত, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তাঁর দিকেই আমাদের পুনরুত্থান। [টীকা-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি : ৬২৩, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নি :৮২]
আর যদি সন্ধ্যায় ওযিফা পাঠ করে, তাহলে তিনবার এই দুআ পড়বে :
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلهِ، وَالْحَمْدُ كُلُّه لِلهِ، لَا شَرِيكَ لَه لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَإِلَيْهِ
আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হলাম এবং জগৎসমূহের রব আল্লাহর রাজ্যও সন্ধ্যায় উপনীত হলো। আর সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই নিবেদিত, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন ৷ [টীকা-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি : ৬২৩, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নি :৮২]
তারপর তিনবার পড়বে (যদি ওযিফা সকালে পাঠ করে) :
أَصْبَحْنَا عَلَى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَعَلَى دِيْنِ نَبِيْنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلى مِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ.
আমরা ইসলামের ফিতরাতের ওপর ও কালিমায়ে তাওহিদের সাথে ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। আমাদের নবি মুহাম্মাদ সা.-এর দ্বীনের ওপর ও আমাদের পিতা ইবরাহিম আ.-এর একনিষ্ঠ মিল্লাতের ওপর সকালে জাগ্রত হয়েছি। আর ইবরাহিম আ. মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
ওযিফা যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে, তাহলে তিনবার পড়বে :
أمسيْنَا عَلَى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَعَلَى دِيْنِ نَبِيْنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلى مِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ.
আমরা ইসলামের ফিতরাতের ওপর ও কালিমায়ে তাওহিদের সাথে সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। আমাদের নবি মুহাম্মাদ সা.-এর দ্বীনের ওপর এবং আমাদের পিতা ইবরাহিম আ.-এর একনিষ্ঠ মিল্লাতের ওপর সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। আর ইবরাহিম আ. মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। [টীকা-মুসনাদুল মাক্কিয়্যিন, আহমাদ : ১৪৮২৫, আস সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ি : ৪/৬ ৯. মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ১০/১১৯]
তারপর তিনবার পড়বে (যদি ওযিফা সকালে পাঠ করে) :
اللّهُمَّ إِنِّى أَصْبَحْتُ مِنْكَ فِي نِعْمَةٍ وَعَافِيَةٍ وَسِتْرٍ، فَأَتْمِمْ عَلَى نِعْمَتَكَ وَعَافِيَتَكَ وستوكَ فِي الدُّنْيا والأخرة.
হে আল্লাহ, আপনার নিয়ামত, নিরাপত্তা ও আচ্ছাদনে সকালে উপনীত হয়েছি। অতএব, দুনিয়া-আখিরাতে আমার ওপর আপনার নিয়ামত, নিরাপত্তা ও আচ্ছাদনকে পূর্ণতা দিন।[টীকা-যাদুল মাআদ : ২/৩৪২]
ওযিফা যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে, তাহলে তিনবার পড়বে :
اللَّهُمَّ إِنِّى أَمْسَيْتُ مِنْكَ فِي نِعْمَةٍ وَعَافِيَةٍ وَسِتْرٍ، فَأَتْمِمْ عَلَى نِعْمَتَكَ وَعَافِيَتَكَ
হে আল্লাহ, আমি আপনার নিয়ামত, নিরাপত্তা ও আচ্ছাদনে সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। অতএব, দুনিয়া-আখিরাতে আমার ওপর আপনার নিয়ামত, নিরাপত্তা ও আচ্ছাদনকে পূর্ণতা দিন। [টীকা-সকাল ও সন্ধ্যায় উপর্যুক্ত দুআ যারা তিনবার করে পড়বে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের ওপর নিজ নিয়ামত পূর্ণ করে দেবেন। আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নি :৫৫]
তারপর তিনবার পড়বে (যদি ওযিফা সকালে পাঠ করে) :
اللهُمَّ مَا أَصْبَحَ بي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ
হে আল্লাহ, সকালে আমার কাছে যে নিয়ামত পৌঁছেছে কিংবা আপনার কোনো সৃষ্টির পক্ষে থেকে আমার কাছে যা এসেছে, তা কেবল আপনার পক্ষ থেকেই পৌঁছেছে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য। [টীকা-সকালবেলায় যারা এই দুআ পড়বে, তারা সেই দিনের জন্য আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে ফেলবে। আবু দাউদ : ৪৪১১, আস সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসায়ি :৫/৬]
ওযিফা যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে, তাহলে তিনবার পড়বে :
اللَّهُمَّ مَا أَمْسِين بي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ ولك الشكر
হে আল্লাহ, সন্ধ্যায় আমার কাছে যে নিয়ামত পৌঁছেছে কিংবা আপনার কোনো সৃষ্টির পক্ষ থেকে আমার কাছে যা এসেছে, তা কেবল আপনার পক্ষ থেকেই পৌঁছেছে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য। [টীকা-সন্ধ্যায় যারা এই দুআ পড়বে, তারা সেই রাতের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া যথাযথরূপে আদায় করেছে গণ্য হবে। আবু দাউদ : ৪৪১১, আস সুনানুল কুবরা, নাসায়ি :৫/৬]
তারপর তিনবার পড়বে :
يَا رَبِّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا يَنْبَغِي لِجَلَالِ وَجْهِكَ وَعَظِيْمِ سُلْطَانِكَ.
হে আমার রব, আপনার জন্য তেমন প্রশংসা, যেমনটি আপনার সত্তার মাহাত্ম্য এবং আপনার ক্ষমতার বিশালতার সাথে মানানসই। [টীকা-নবিজি সা. বলেছেন, একবার এক বান্দা এই শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেছিল। এই বাক্য শুনে ফিরিশতারা বিস্মিত হয়ে যান। তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি, কীভাবে এর নেকি লিখবেন। তাই তাঁরা আল্লাহর কাছে জানতে চান। আল্লাহ তায়ালা বলে দেন—’আমার বান্দা যেভাবে বলেছে, তোমরা ঠিক সেভাবেই লিখে রাখো। আমার সাথে সাক্ষাতের সময় আমি নিজে এর বিনিময় তাকে প্ৰদান করব।’ ইবনে মাজাহ ; ৩৭৯১]
তারপর তিনবার পড়বে :
رَضِيْتُ بِاللهِ رَبِّاً وَ بِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَّسُوْلًا.
আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সা.-কে রাসূল হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। [টীকা-যারা এই দুআ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। মুসলিম: ৭৩৭, তিরমিযি : ৩৩১১, ইবনে মাজাহ : ৩৮৬০, আহমাদ : ১৮১৯৯]
তারপর তিনবার পড়বে :
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ . وَرِضَا نَفْسِهِ ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ.
আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি, যা তাঁর সৃষ্টিসমূহের সংখ্যার সমান, যা তাঁর রেজামন্দির সমান, যা তাঁর আরশের ওজনের সমান, যা তাঁর বাণীসমূহ লেখার কালির সমান। [টীকা-সারাদিনে যা কিছু বলা হয়, তার থেকে এই চারটি কালিমার ওজনই অনেক অনেক বেশি। মুসলিম : ৪০৯৫]
তারপর তিনবার পড়বে :
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْبِه شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ
আমি সে আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও জমিনের কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ তো সবকিছু শোনেন ও দেখেন। [টীকা-সকালবেলা কেউ এই দুআ পড়লে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত তার ওপর কোনো আকস্মিক বিপদ আপতিত হবে না। আবার সন্ধ্যায় কেউ এই দুআ পড়লে সকালের আগ পর্যন্ত তার ওপর কোনো আকস্মিক বিপদ আপতিত হবে না। আবু দাউদ : ৪৪২৫, তিরমিযি : ৩৩১০, ইবনে মাজাহ : ৩৮৫৯, আহমাদ : ৮১৪]
তারপর তিনবার পড়বে :
اللَّهُمَّ إِنَّا نُعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ نُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ، وَنَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا نَعْلَمُهُ.
‘হে আল্লাহ, আমার জানা অবস্থায় তোমার সঙ্গে শিরক করা হতে তোমারই কাছে আশ্রয় চাই। আর অজানা অবস্থায়ও তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে ক্ষমা চাই। [শিরক থেকে বেঁচে থাকতে রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবিদের এই দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। মুসনাদে আহমাদ : ১৮৭৮১, মুসনাদে আবি ইয়ালা আল মুসিলি : ৫২]
তারপর তিনবার পড়বে :
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرْ مَا خَلَقَ .
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের সাহায্যে তাঁর সৃষ্ট বস্তুর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। [টীকা-এই দুআ পড়লে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু, কাঁটা, রোগ-শোক ইত্যাদি থেকে নিরাপদ থাকা যায়। মুসলিম : ৪৮৮৩, তিরমিযি :৩৫২৯, আহমাদ : ৭৫৫৭]
তারপর তিনবার পড়বে :
اللّهُمَّ إنّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَةِ وَالْحَزَنِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوْذُ
بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدِّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ .
হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও হতাশা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট দুর্বলতা ও অলসতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তোমার নিকট কাপুরুষতা ও কৃপণতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এবং আমি তোমার নিকট ঋণভার ও মানুষের দুষ্ট প্রভাব হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি। [টীকা-দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্ত থাকতে নবিজি সা. আবু উমামা রা.-কে এই দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। আবু দাউদ : ১৩৩০]
তারপর তিনবার পড়বে :
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِيَ اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي .
হে আল্লাহ, আমার দেহকে রোগমুক্ত রাখুন, আমার কানকে রোগমুক্ত রাখুন, আমার চোখকে রোগমুক্ত রাখুন। [টীকা-আবু দাউদ : ৪৪২৬]
তারপর তিনবার পড়বে :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ.
ইয়া আল্লাহ, আমি তোমার কাছে কুফরি ও দরিদ্রতা থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাই। (হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।
তারপর তিনবার সাইয়িদুল ইসতিগফার পড়বে :
اللهُمَّ أَنْتَ رَنِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ لَكَ بِذَنْبِي
فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ .
“হে আল্লাহ, তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার গোলাম। আমি তোমার সাথে ওয়াদায় আবদ্ধ, আমার সাধ্য অনুযায়ী (তোমার বন্দেগি করতে)। আমি আমার কৃত অপরাধের ক্ষতি থেকে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি। আমার ওপর তোমার বেশুমার নিয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি। আমি আমার সকল গুনাহর স্বীকারোক্তি দিচ্ছি। আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা রাখে না ৷ [টীকা- কেউ যদি একিনের সাথে দিনের বেলায় এই দুআ পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগে মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবার কেউ যদি একিনের সাথে সন্ধ্যায় এই দুআ পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বুখারি : ৫৮৩১]
তারপর তিনবার পড়বে :
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ .
আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি অবিনশ্বর। আমি তাঁর কাছেই তাওবা করছি। আবু দাউদ : ১২৯৬ [কেউ এই দুআ পড়লে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আবু দাউদ : ১২৯৬]
তারপর দশবার পড়বে :
اللهُمَّ صَلَّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى الِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ وَ عَلَى الِ سَيّدِنَا إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ سَيِّدِنَا
مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيْمَ فِي الْعَالَمِينَ
إنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
হে আল্লাহ, তুমি আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সা. ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছ আমাদের নেতা ইবরাহিম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ, তুমি বরকত নাযিল করো আমাদের নেতা মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর, যেভাবে তুমি আমাদের নেতা ইবরাহিম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর এই বিশ্বজগতে বরকত নাযিল করেছ। নিশ্চয় তুমি বড়োই প্রশংসিত ও সম্মানিত। [টীকা-বুখারি : ৩১১৯, মুসলিম : ৬১৪]
তারপর একশোবার পড়বে :
سُبْحَانَ اللهِ والحمد له ولا إله إلا الله والله أكبر.
আল্লাহ মহাপবিত্র। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে মহান। [এই চারটি বাক্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় বাক্য। মুসলিম : ৩৯৮৫। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে একশতবার সুবহানাল্লাহ পড়া একশত উট থেকে উত্তম, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে একশতবার আলহামদুলিল্লাহ পড়া একশত ভারবাহী ঘোড়া থেকে উত্তম, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে একশতবার আল্লাহু আকবার পড়া একশত দাস আজাদ করা থেকে উত্তম। আস সুনানুল কুবরা, নাসায়ি : ৬/২০৫, মুসনাদুশ শামিয়্যিন, তাবারানি : ২/১৯০, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নি : ১/৪৭৭]
তারপর দশবার পড়বে :
ا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ .
এক আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য; তিনি সবকিছুর ওপরই ক্ষমতাশীল। [টীকা-দৈনিক একশতবার এই দুআটি পড়লে চারটি দাস আজাদ করার সমান নেকি পাওয়া যায়, একশত সওয়াব লেখা হয়, একশত গুনাহ মাফ করা হয় এবং ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের কবল থেকে রক্ষা করা হয়। বুখারি : ৩০৫০। এই দুআ দশবার পড়লে ইসমাইলের সন্তানদের মধ্য থেকে চারজন দাস আজাদ করার সমান নেকি পাওয়া যায়। মুসলিম : ৪৮৫৯]
তারপর তিনবার পড়বে :
سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ.
‘হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র। সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। [টীকা-এই দুআটি হচ্ছে কোনো বৈঠক শেষ করার দুআ। দুআটি মজলিসের কাফফারা-স্বরূপ। আবু দাউদ : ৪২১৭, তিরমিযি : ৩৪৩৩]
তারপর পড়বে :
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيّدِنَا مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الْأُمِّي وَ عَلَى الِه وَصَحْبِهِ وَسَلَّمْ تَسْلِيْمًا عَدَدَ مَا أَحَاطَ بِهِ عِلْمُكَ، وَخَطَ بِهِ قَلَمُكَ، وَأَحْصَاهُ كِتَابُكَ، وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنْ سَادَتِنَا أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِي، وَعَنِ
الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ، وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَتَابِعِيْهِمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ .
আল্লাহ, আপনি আমাদের নেতা মুহাম্মাদের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। যিনি আপনার বান্দা, নবি, রাসূল ও উম্মি নবি। তাঁর ওপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। আপনার জ্ঞান, আপনার কলমের লেখনী ও আপনার কিতাবের গণনা পরিমাণ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের নেতা আবু বকর, উমর, উসমান ও আলীসহ সকল সাহাবির ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। আপনি তাঁদের অনুসারী এবং কিয়ামত অবধি যারা একনিষ্ঠতার সাথে তাদের অনুসরণ করবে, তাদের ওপরও সন্তুষ্ট হয়ে যান।
তারপর পড়বে :
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ
তারা যা বলে থাকে, তা থেকে আপনার রব অতি পবিত্র। তিনি মহা মহিমান্বিত। সালাম বর্ষিত হোক রাসূলদের প্রতি। সকল প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। (সূরা সাফফাত : ১৮০) [টীকা-ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘এই দুআটি পড়লে আমরা বুঝতে পারতাম রাসূলুল্লাহ সা. বৈঠক শেষ করে চলে যাবেন।’ আল কাবির, তাবারানি : ১১০৫৮]
সংক্ষিপ্ত ওযিফা
ইখওয়ানের কোনো কর্মীর যদি বড়ো ওযিফা পাঠ করার মতো সময় না থাকে কিংবা তা পাঠ করতে তার যদি অসুবিধা হয় অথবা সে যদি ইখওয়ানের কর্মীদের কোনো সম্মেলনে তাদের নিয়ে একসাথে ওযিফা পাঠ করে, তাহলে সে ওযিফাকে সংক্ষিপ্ত করে নেবে। সে তখন নিম্নোক্ত পন্থায় ওযিফা পাঠ করবে।
প্রথমে তাআউয (আউযুবিল্লাহ) পড়ে নেবে। তারপর সে (একবার করে) সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা বাকারার শেষের আয়াতগুলো এবং তিনবার করে সূরা ইখলাস, সূরা নাস ও সূরা ফালাক পড়বে। তারপর (বড়ো ওযিফায় উল্লেখিত) যিকিরগুলো পড়বে এবং পড়তে পড়তে ওপরে বর্ণিত এই ইসতিগফার পর্যন্ত পৌঁছবে-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ .
আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর এবং আমি তাঁর কাছেই তাওবা করছি।আবু দাউদ : ১৫১৭
তারপর সরাসরি চলে আসবে এই দুআয়
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ.
হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তোমার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। তিরমিযি : ৩৪৩৩
তারপর (বড়ো ওযিফায়) বর্ণিত দুআগুলো শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে।
ভ্ৰাতৃত্বনামা
(ভ্রাতৃত্বনামার শুরুতে) ইখওয়ানের একজন কর্মী পরিপূর্ণ মনোযোগ ও গভীর চিন্তাভাবনার সাথে এই আয়াত তিলাওয়াত করবে-
قُلِ اللّهُمَّ مَلِكَ الْمُلْكِ تُؤْنِ الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿٢٢﴾ تُولِجُ الَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي الَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيْتَ
مِنَ الْحَقِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿۲۷﴾
বলো—হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ, আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। সূরা আলে ইমরান :২৬-২৭
তারপর এই মাসনুন দুআ তিনবার পড়বে—
اللَّهُمَّ هَذَا إِقْبَالُ لَيْلِكَ . وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ، وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ، فَاغْفِرْلي .
হে আল্লাহ, এটা হচ্ছে আপনার রাত আগমনের, আপনার দিন বিদায়ের এবং আপনাকে আহ্বানকারীর ডাক শোনার সময়। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।আবু দাউদ : ৫৩০
তারপর সে তার পরিচিত ইখওয়ানুল মুসলিমিনের কোনো কর্মীর চেহারা মনে করবে এবং তার এই পরিচিত ভাই তথা ইখওয়ান-কর্মীর সাথে অপরিচিত কোনো ইখওয়ান-কর্মীর সৌহার্দ্যপূর্ণ আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করার চেষ্টা করবে। তারপর তাদের জন্য এভাবে দুআ করবে-
اللّهُمَّ إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذِهِ الْقُلُوْبَ قَدِ اجْتَمَعَتْ عَلَى مُحَبَّتِكَ وَالْتَقَتْ عَلَى طَاعَتِكَ، وَتَوَخَدَتْ عَلى دَعْوَتِكَ، وَتَعَاهَدَتْ عَلى نُصْرَةِ شَرِيْعَتِكَ فَوَيْقُ اللَّهُمَّ رَابِطَتَهَا وَأَذِمْ وُدَّهَا وَاهْدِهَا سُبُلُهَا، وَامْلَأَهَا بِنُوْرِكَ الَّذِي لَا يَخْبُرُ، وَاشْرَحْ صُدُورَهَا بِفَيْضِ الْإِيْمَانِ بِكَ، وَجَمِيْلِ التَّوَكُلِ عَلَيْكَ، وَأَحْيِهَا بِمَعْرِفَتِكَ، وَأَمِتْهَا عَلَى الشَّهَادَةِ في سَبِيْلِكَ إِنَّكَ نِعْمَ الْمَوْلى وَنِعْمَ النَّصِيرُ. اللهم امين.
وَصَلَّى اللهُ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَ عَلَى الِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ .
“হে আল্লাহ, আপনি তো জানেনই—এই হৃদয়গুলো আপনার ভালোবাসায় একত্র হয়েছে, আপনার আনুগত্যের ওপর মিলিত হয়েছে, আপনার দাওয়াতের ওপর একমত হয়েছে এবং আপনার শরিয়তের বিজয়ের জন্য শপথ করেছে। অতএব হে আল্লাহ, আপনি এই হৃদয়গুলোর বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে দিন, তাদের সম্প্রীতিকে দীর্ঘস্থায়ী করে দিন, তাদের সুপথ দেখান এবং অশেষ নূর দিয়ে তাদের ভরপুর করে দিন। আপনি তাদের বক্ষগুলোকে আপনার ওপর একনিষ্ঠ ঈমান ও সুন্দর তাওয়াক্কুলের প্রাচুর্যতা দিয়ে প্রশস্ত করে দিন, আপনি তাদেরকে আপনার মারিফাতের ওপর বাঁচিয়ে রাখুন এবং আপনার রাস্তায় শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন। আপনিই তো উত্তম অভিভাবক, উত্তম সাহায্যকারী। হে আল্লাহ! আপনি (আমাদের এই দুআ) কবুল করুন এবং মুহাম্মাদ সা., তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবিদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।”
এই ভ্রাতৃত্বনামা পাঠ করার সময় হচ্ছে প্রতি রাতের মাগরিব ওয়াক্ত (অর্থাৎ মাগরিবের আগে বা পরে)।
আত্মসমালোচনা
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا ﴿r﴾
“আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাবের জন্য যথেষ্ট।” সূরা ইসরা: ১৪
নিজেকে নিজেই পর্যালোচনায় আনুন-
নামাজ পড়েছেন? না পড়লে এখনই উঠে পড়ে নিন। কারণ, মৃত্যু যেকোনো সময় আপনার দুয়ারে চলে আসতে পারে।
আজ কত ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করেছেন? আল্লাহর রাসূল সা. যুদ্ধের সময়ও জামায়াতের সাথে নামাজ পড়তেন। আর নিরাপদ অবস্থায় থেকে আপনার (নামাজের) অবস্থা কী?
আপনার নামাজকে খুশু-খুজুর অলংকার দিয়ে সাজিয়েছেন কি? আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ﴿ا﴾ الَّذِيْنَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خُشِعُوْنَ ﴿٢﴾
“অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে; যারা তাদের নামাজে ভীত-অবনত।” সূরা মুমিনুন: ১-২
আপনি কি আপনার পিতা-মাতার সাথে সদাচার করতে পেরেছেন, হোক তারা জীবিত বা মৃত? আল্লাহ তায়ালা বলেন-
أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَى الْمَصِيرُ ﴿١٣﴾
“আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমারই নিকট (সকলের) প্রত্যাবর্তন।” সূরা লুকমান: ১৪
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا … )
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং কোনো কিছুকে তাঁর সাথে শরিক করো না। আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।” সূরা নিসা: ৩৬
আপনি কি একনিষ্ঠ তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পেরেছেন? আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا تُوْبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَلَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيَاتِكُمْ …
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো-বিশুদ্ধ তাওবা। সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন।” সূরা তাহরিম : ৮
দশটি উপদেশ
উপদেশগুলো পড়ুন, চিন্তা করুন এবং বাস্তবায়ন করুন :
এক
পরিবেশ-পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আজান শোনামাত্রই নামাজের প্রস্তুতি নেবেন।
দুই.
কুরআন তিলাওয়াত করবেন, কুরআন অধ্যয়ন করবেন, মনোযোগের সাথে কুরআন শুনবেন অথবা আল্লাহ তায়ালার যিকির করবেন। সাবধান! আপনার সামান্য সময়ও নিরর্থক কাজে ব্যয় করবেন না।
তিন-
বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় কথা বলতে চেষ্টা করবেন। কারণ, বিশুদ্ধ আরবি ইসলামের একটি নিদর্শন।
চার.
কোনো বিষয়েই অতিমাত্রায় বিতর্কে জড়াবেন না। কারণ, কল্যাণ বয়ে আনে না।
পাঁচ.
বিতর্ক সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত হাসাহাসি করবেন না। কারণ, সাধারণত আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অন্তর নীরব ও গাম্ভীর্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
ছয়.
বেশি হাসি-ঠাট্টা করবেন না। কারণ, পরিশ্রমী জাতি একাগ্রতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য আর কিছুই বোঝে না। (অর্থাৎ তারা চেষ্টা, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম বাদ দিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকে না।)
সাত.
শ্রোতার প্রয়োজনের চেয়ে উচ্চ আওয়াজে কথা বলবেন না। কারণ, এটা নির্বুদ্ধিতা এবং অন্যকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর।
আট.
মানুষের গিবত করবেন না, কোনো দল বা সংগঠনের নিন্দা করবেন না এবং কখনোই ভালো ছাড়া অন্য কোনো কথা বলবেন না।
নয়,
ইখওয়ানের কোনো কর্মীর সাথে সাক্ষাৎ হলে পরিচিত হবেন; যদি সে এমনটি কামনা না করেও। কারণ, আমাদের দাওয়াতের মূলভিত্তিই হচ্ছে পারস্পরিক পরিচিতি, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য।
দশ.
সময় কম, কিন্তু দায়িত্ব ও কাজ অনেক বেশি। তাই অন্যকে তার সময় থেকে উপকৃত হতে সহযোগিতা করুন। তার সাথে যদি আপনার কোনো কাজ থাকে, তাহলে তা সংক্ষেপে সেরে নিন, যাতে সে তার কাজের সুযোগ পায়।
এই আমার পথ
আমি বিশ্বাস করি, বিধিবিধান দেওয়ার সমস্ত অধিকার একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সা. দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল। আমি আরও বিশ্বাস করি, (আখিরাতের) প্রতিদান সত্য, কুরআন আল্লাহর কিতাব এবং ইসলাম দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।
আমি শপথ করছি, কুরআনের অনুসারী একদল মানুষ গড়ে তুলব এবং রাসূলুল্লাহ সা.-এর পবিত্র সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে থাকব। আমি আরও শপথ করছি, নবি সা.-এর সিরাত ও সাহাবিদের ইতিহাস অধ্যয়ন করব।
আমি বিশ্বাস করি, ইসতিকামাত (অবিচলতা), উত্তম আখলাক ও জ্ঞান হচ্ছে ইসলামের মূলভিত্তি।
আমি শপথ করছি, যথাযথভাবে ইবাদতগুলো পালন করব এবং মন্দ ও গর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকব। আমি আরও শপথ করছি, উত্তম আখলাক লালন করব, মন্দ আখলাক থেকে দূরে থাকব এবং যথাসম্ভব ইসলামি অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করব।
আমি শপথ করছি, বিচার-ফয়সালার ওপর ভালোবাসা ও সম্প্রীতির নীতি প্রাধান্য দেবো। তাই একেবারে অপারগ না হলে বিচারকের দ্বারস্থ হব না।
আমি শপথ করছি, আমি ইসলামের নিদর্শন ও ভাষা নিয়ে গৌরববোধ করব এবং উপকারী জ্ঞান-বিজ্ঞান উম্মাহর সকল স্তরে ছড়িয়ে দিতে প্রচেষ্টা চালাব।
আমি বিশ্বাস করি, মুসলিমদের কর্ম ও উপার্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন মুসলিমের উপার্জিত সম্পদে অভাবী ও বঞ্চিতদের নির্ধারিত অধিকার রয়েছে।
আমি শপথ করছি, নিজ জীবিকা উপার্জনের জন্য পরিশ্রম করব। ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার নীতি অনুসরণ করব। সম্পদের যাকাত আদায় করব এবং আমার আয়ের একটি অংশ ভালো ও কল্যাণকর কাজের জন্য নির্ধারিত রাখব।
আমি আরও শপথ করছি, সকল উপকারী ইসলামি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাব। আমার দেশ ও জাতি কর্তৃক উৎপাদিত বিষয়গুলো এবং আমার দ্বীনের সৌন্দর্যসমূহ মানুষের সামনে তুলে ধরব। কখনোই সুদের সাথে জড়িত হব না এবং নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে বিলাসিতায় লিপ্ত হব না।
আমি বিশ্বাস করি, একজন মুসলিম তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তার দায়িত্ব হচ্ছে স্বীয় পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের আকিদা-বিশ্বাস ও আখলাক রক্ষা করা।
আমি শপথ করছি, আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, তাদের আকিদা-বিশ্বাস ও আখলাক রক্ষা করতে এবং তাদের মাঝে ইসলামি জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। আমি শপথ করছি, আমার সন্তানদের এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাব না, যা তাদের আকিদা-বিশ্বাস ও আখলাক রক্ষা করবে না। আমি আরও শপথ করছি, ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধবিরোধী সকল পত্রিকা, প্রকাশনী, গ্রন্থ, সংস্থা, সংগঠন ও ক্লাবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।
আমি বিশ্বাস করি, মুসলিমদের দায়িত্ব হচ্ছে এই উম্মাহকে পুনর্জাগরিত করা এবং শরিয়তের শাসন ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ইসলামের হারানো মর্যাদা সমুন্নত করা। আমি বিশ্বাস করি, একমাত্র ইসলামই গোটা দুনিয়ার মানুষকে শাসন করার উপযুক্ত। আর তাই প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববাসীকে ইসলামি অনুশাসনের আলোকে প্রশিক্ষিত করা।
আমি শপথ করছি, যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন এই মিশন বাস্তবায়ন করতে সংগ্রাম করে যাব এবং আমার যা কিছু আছে, তার সবই এই পথে কুরবানি করব।
আমি বিশ্বাস করি, সমস্ত মুসলিম এক উম্মাহ। ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস, তাদের মাঝে গড়েছে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী এক বন্ধন। ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছে—’তোমরা সবার সাথে সদাচার করবে।’
আমি শপথ করছি, মুসলিমদের মধ্যকার এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা এবং তাদের বিভিন্ন দল ও সংগঠনগুলোর মাঝে বিদ্যমান মতপার্থক্য, বৈরী ও রূঢ় সম্পর্ক দূর করতে আমি আমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব।
আমি বিশ্বাস করি, মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া। তাই উম্মাহর সংশোধনের মূলভিত্তি হচ্ছে ইসলামি শিক্ষা ও অনুশাসনের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। মুসলিমরা যদি এজন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যায়, তাহলে নতুন করে পুনর্জাগরিত হওয়া তাদের জন্য অবশ্যই সম্ভব।
সমাপ্ত