সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল
সরকার মোহাম্মদ রমজান আলী
প্রকাশনা বিভাগ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
৫০৫ বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
প্রকাশক : আবু তাহের মুহাম্মদ মা’তুম চেয়ারম্যান,
প্রকাশনা বিভাগ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৫০৫,
বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
ভূমিকা
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন কায়েমের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ গঠনের আন্দোলন চলছে। ইসলাহে মুয়াশারা তথা সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম এ আন্দোলনের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। আন্দোলনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে একটি অপরটির সম্পূরক। এরই মাধ্যমে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপন এবং একে ইসলামী বিপ্লবের সফল হাতিয়ারে পরিণত করা সহজ ও সম্ভব।
জনগণকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে সমাজকল্যাণমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ বিভাগ যে “সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল” প্রণয়ন করেছে তা পড়ে আমি অত্যন্ত উৎসাহ বোধ করছি। বেকার, দুঃস্থ, অসহায় ও অভাবগ্রস্তদের নিজেদের চেষ্টায় আয়-রোজগার করার সুযোগ সৃষ্টি করে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার মহান লক্ষ্য অর্জনে এ ম্যানুয়ালটি বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আশা করি প্রয়োজনের নিরিখে কর্মীদের উদ্ভাবনী শক্তি, সাংগঠনিক যোগ্যতা, সম্পদের যোগান ও সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি বিবেচনায় রেখে সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ ম্যানুয়ালটি বিশেষভাবে সাহায্য করবে। এমন চমৎকার একটি “সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল” রচনা ও সম্পাদনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক মুবারকবাদ জানাই।
ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত নারী, পুরুষ, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বস্তিবাসী ও গ্রামবাসী সবাইকে সমাজকল্যাণমূলক কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্য আমি আকুল আবেদন জানাই এবং এ ম্যানুয়ালটি ভালভাবে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।
আল্লাহ আমাদেরকে ম্যানুয়ালটির সফল বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করার তাওফিক দিন। আমীন।
তারিখ: জুলাই ১৯৯৪
অধ্যাপক গোলাম আযম
প্রকাশকের কথা
“সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল” বইটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ্। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে বইটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে এর পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করা হলো। সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল প্রকাশ জামায়াতে ইসলামীর ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বইটি ‘সরকার মুহাম্মদ রমজান আলী’ সহ কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিভাগের কিছু ভাইদের জীবনের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে রচিত।
বস্তুত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করে সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং একে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই ৪ দফা কর্মসূচির অন্যতম দফা হিসেবে ইসলাহে মুয়াশারা বা সমাজ সংশোধন তথা সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে।
ইসলাম সমাজকল্যাণমূলক কাজকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। তাই আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক অঙ্গনে বিরাজমান হাজারো সমস্যা মোকাবিলায় আধুনিক সমাজকল্যাণ ধারণার যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। এই বইটির মাধ্যমে সমাজের বেকার জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বি করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। আশা করি পাঠক সমাজ বইটিতে সমাজকল্যাণমূলক নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আত্ম কর্মসংস্থানের নানান দিক নির্দেশনা পাবেন।
বইটি প্রণয়ন ও পরিমার্জনে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বইটির ব্যাপারে সুধী পাঠক সমাজের যে কোনো সংশোধনী ও পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করবো ইন-শা আল্লাহ।
মহান আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন।
তারিখঃ অক্টোবর ২০২০
আবু তাহের মুহাম্মদ মা’হুম
প্রথম অধ্যায়
১.১ ইসলাম ও সমাজকল্যাণ
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, একটি ভারসাম্যপূর্ণ আন্দোলন। মানুষকে মানুষের প্রভুত্বের শিকল থেকে মুক্ত করে আল্লাহর প্রভুত্ব ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে সুখী সুন্দর জীবন যাপনের সুযোগ করে দেয় ইসলাম। মানুষের প্রকৃত কল্যাণ, মুক্তি ও প্রগতি ইসলামে নিহিত। মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব পালন (হক্কুল ইবাদ) এবং আল্লাহর প্রতি মানুষের যে কর্তব্য (হক্কুল্লাহ) এর পূর্ণতা বিধান ইসলামী জীবনব্যবস্থার মূলকথা। দুনিয়া এবং আখিরাতের সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন এই বিধানের লক্ষ্য। ইসলাম আখিরাতে জবাবদিহির ভিত্তিতে জাগতিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। বস্তুত মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ইহলৌকিক, পারলৌকিক-এক কথায় মানবজীবনের সকল দিক এবং বিভাগের যথার্থ কল্যাণ ও মুক্তির নামই হলো ইসলাম।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। সকল প্রকার শোষণ, জুলুম ও নির্যাতনের মূলোৎপাটন করে মহান আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত প্রন্থায় ইনসাফভিত্তিক সুখী সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ জামায়াতের লক্ষ্য। দুঃস্থ মানবতার সেবা, নিঃস্ব অসহায়ের সমস্যার সমাধান তথা সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণে সহায়তা প্রদান এর অন্তর্ভুক্ত।
নবুয়্যত প্রাপ্তির পূর্বেও রাসূলুল্লাহ (সা.) সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সেবা, যত্ন ও কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। তাই তো হেরা গুহায় প্রথম ওহী নাজিলের পর তিনি যখন ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে এলেন। তখন খাদিজা (রা.) তাকে অভয় দিয়ে বললেন, “আল্লাহর কসম। আল্লাহ কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। কারণ আপনি আত্মীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। সত্য কথা বলেন। অসহায় লোকদের বোঝা বহন করেন। আপনি আমানত রক্ষা করেন এবং বুঝিয়ে দেন। নিজে অর্থ উপার্জন করে অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। মেহমানদারী করেন। ভালো কাজে সাহায্য করেন।”
বস্তুত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করে সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং একে ইসলামী বিপ্লবের সফল হাতিয়ারে পরিণত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই ৪ দফা কর্মসূচির অন্যতম দফা হিসেবে ইসলাহে মুয়াশারা বা সমাজ সংশোধন তথা সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে। জামায়াত এদেশের মানুষের ঈমানী দায়িত্ববোধ সৃষ্টির পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, ত্রাণ, পুনর্বাসন, নৈতিকতা সৃষ্টি, যোগাযোগ, সমন্বয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে কল্যাণধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
১.২ বাংলাদেশের দারিদ্র্যাবস্থা
আমরা মহান আল্লাহর যে জমিনে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি তার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা খুবই জরুরি। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে এখনো আমরা কাঙ্খিতমানে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করার জন্য নিম্নে কয়েকটি বিষয় ও তথ্যের উল্লেখ করা হলো:
ক) বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের ফলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ সীমিত হয়ে আসছে। তার ওপর কৃষিজ জমি ক্রমাগতভাবে বিভক্তির ফলে ক্ষুদ্র চাষি পরিণত হচ্ছে প্রান্তিক চাষিতে বা ভূমিহীন কৃষকে।
খ) বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ যার অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের মধ্যে দারিদ্র অন্যতম। দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণের হিসাব থেকে দারিদ্র্যের অবস্থা বুঝা যায়। একটি হিসাব মতে জনপ্রতি দৈনিক ২১২২ ক্যালোরি খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকা অবস্থাকে পূর্ণ দারিদ্র্যাবস্থা এবং ১৮০৫ ক্যালোরি খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা না থাকার অবস্থাকে গুরুতর দারিদ্র্যাবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে মোতাবেক গুরুতর দারিদ্যাবস্থায় দিনাতিপাত করছে-আমাদের দেশে এমন জনসংখ্যা ২ কোটির ওপর।
গ)বাংলাদেশের কর্মজীবী জনসংখ্যার ৬০% এর ওপরে নিয়োজিত রয়েছেন কৃষিকাজে। কৃষিকাজ যেহেতু মৌসুমী সেজন্য কৃষিজীবীগণ বছরের বেশ কয়েকমাস কর্মহীন থাকেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকগণ মাঝে মাঝে প্রাপ্ত আয় হতে এক কেজি চাউলও ক্রয় করতে পারে না।
ঘ) দরিদ্র্যতা শুধুমাত্র কম আয় দ্বারাই ফুটে ওঠে না। এর সাথে রয়েছে অশিক্ষা, বিপন্ন পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানির অভাব, কুসংস্কার রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারহীনতা। সবকিছু মিলিয়ে দারিদ্র্য বাংলাদেশকে গ্রাস করে আছে।
বর্ণিত পরিস্থিতি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য একমাত্র পথ হলো ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠন।
১.৩ দারিদ্র্য বিমোচনে প্রচলিত পদক্ষেপ
ক) দারিদ্র্য বিমোচনে বা দারিদ্র্যের ভার লাঘবে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে বি, আর, ডি, বি-এর কার্যক্রম, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র্যদূরীকরণ ও খাদ্য বিনিয়োগ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। যদিও এ সকল কর্মকাণ্ড প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
খ) এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন সংস্থা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ঋণ ইত্যাদি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ সকল কর্মসূচির বেশির ভাগই বিদেশী সাহায্যপুষ্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা সহ বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী সংস্থা।
১.৪ বিদেশী সাহায্যপুষ্ট সংস্থার কার্যক্রমের কুফল
স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগই হয়ে থাকে পশ্চিমা দেশগুলোর দান অনুদান, ঋণ আর বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার ঋণের মাধ্যমে। যার ফলে এ সকল দেশ এবং সংস্থার চাপের মুখে সরকার কখনোই স্বাধীনভাবে নীতি নির্ধারণ করতে পারে না। তাদের কর্মসূচিই ভাল-মন্দ বিবেচনা না করে বাস্তবায়ন করতে হয়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ বিদেশী সংস্থা এবং সরকার আমাদের দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোকে অনুদান প্রদান করছে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অর্থ সরবরাহ করছে। এই অর্থের মূল উৎস হলো পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ। এসকল উৎসের অনেকগুলোই হলো পশ্চিমা রাষ্ট্রের খ্রিষ্টান চার্চ। যাদের উদ্দেশ্য হলো এদেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করা এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজনকে খ্রিষ্টান করা। অনেকগুলো বিদেশী সংস্থা আবার সরাসরি এ দেশে তাদের শাখা খুলে বিভিন্ন লেবাসে কাজ করে যাচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থাসমূহ দাতা দেশ/সংস্থাসমূহের মনমত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে প্রকারান্তরে বিদেশীদের কার্যক্রমই এ দেশে চালাচ্ছে। এ সকল বেসরকারি সংস্থার কর্ণধাররা অনেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িত ছিল বা আছে। অথচ এখন তারা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের অথবা পতিত সমাজবাদীদের অর্থ নিয়ে এদেশে বিভিন্ন কাজ করছে। দেশের উন্নয়নের চেয়ে বিদেশী অর্থ প্রাপ্তিই এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য।
এসকল বিদেশী সাহায্যসংস্থা শিশু-শিক্ষা ও বয়স্ক-শিক্ষার নামে ধর্ম নিরপেক্ষতা, ইসলামবিরোধী শিক্ষা ও চিন্তা এবং দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য বিরোধী ধ্যান-ধারণা শিক্ষা দিচ্ছে ও প্রচার করছে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে করে তুলছে ইসলাম ও ঐতিহ্যবিরোধী। এভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ সকল সংস্থার প্রধান টার্গেট হল এদেশের ইসলামপ্রিয় নারীসমাজ। নারী শিক্ষার নামে এরা ঘরে ঘরে প্রচার করছে পরিবারবিরোধী, পর্দাবিরোধী ধ্যান-ধারণা। যার ফলে নারীরা হচ্ছে বিপথগামী এবং তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও হবে ইসলামবিরোধী। পশ্চিমাদের এ সকল কাজের প্রধান এজেন্ট হলো কিছু বিভ্রান্ত শহুরে শিক্ষিতা নারী। রেডিও, টিভি এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যমও তাদের পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। গ্রামের সহজ সরল ইসলামপ্রিয় নারীদের মাঝে ছড়ানো হচ্ছে ইসলামবিরোধী ধারণা। ইসলামী সমাজের কেন্দ্রবিন্দু ‘পরিবারে’ নেমে আসছে অবক্ষয়।
বিভিন্ন নির্বাচনে এ সকল বেসরকারি সংস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষ তল্পিবাহক রাজনৈতিক দলের সমর্থনে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় এবং পল্লী অঞ্চলের জনসাধারণকে বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ভোট প্রদানে অনুপ্রাণিত করা হয়।
১.৫ ‘জাকাত’ দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের স্থায়ী ব্যবস্থা
জাকাত ইসলামের তৃতীয় বৃহৎ রুকন বা স্তম্ভ। বস্তুত কুরআন পাকে ঈমানের পরই নামাযের এবং নামাযের পরে জাকাতের উল্লেখ করা হয়েছে। যা থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, দ্বীনের মধ্যে নামায ও জাকাতের মর্যাদা কতখানি।
জাকাত দিলে সম্পদ পাক-পবিত্র হয়। তারপর মহান আল্লাহ সম্পদে বরকত দান করেন। তার জন্যে আখিরাতে জাকাত দানকারীকে এতো পরিমাণে প্রতিদান ও পুরস্কার দেবেন যে, মানুষ তা ধারণাও করতে পারে না। এ জন্যে এ ইবাদতকে জাকাত অর্থাৎ পরিচ্ছন্নকারী এবং বর্ধিতকারী আমল বলা হয়েছে।
জাকাত ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে মু’মিনের দিল থেকে দুনিয়ার মহব্বত ও তা থেকে সৃষ্ট যাবতীয় লোভ-লালসা দূর করে সেখানে আল্লাহর মহব্বত পয়দা করতে চায়। জাকাত ব্যবস্থা মূলত গোটা ইসলামী সমাজকে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ এবং শোষণ করার সূক্ষ্ম প্রবণতা থেকে পবিত্র করে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা, ত্যাগ, দয়া-দাক্ষিণ্য, নিষ্ঠা, শুভাকাংক্ষা, সহযোগিতা প্রভৃতি উন্নত ও পবিত্র প্রেরণার সঞ্চার করে। একারণেই যাকাত প্রত্যেক নবীর উম্মতের উপর ফরজ ছিল।
জাকাত-প্রদানের মাধ্যমে পরকালীন পুরস্কার প্রাপ্তি ছাড়াও জাকাতের বিরাট অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ব্যবস্থাকে ইসলামী সমাজে স্থায়ী দারিদ্রদ্র্য বিমোচন ব্যবস্থা বলা যেতে পারে। দারিদ্র্য কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবকে বলা যেতে পারে। ইসলামী সমাজে দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তদের দারিদ্র্যসীমার উপরে নিয়ে আসার এবং সম্পদের সঠিক বণ্টনের অন্যতম পদ্ধতি হলো জাকাত। জাকাত আদায় করা ফরজ। ইসলাম সমাজের ধনীদের নিকট হতে বাধ্যতামূলক জাকাত আদায় করে। জাকাতের টাকা খরচের আটটি খাতের মধ্যে ফকির, মিসকিন এবং ঋণগ্রস্ত- এই তিনটি খাত অন্যতম। এ ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকতো না, এত নিঃস্ব মানুষ চারিদিকে দেখা যেতো না। ইসলামী সমাজ কায়েমের মাধ্যমে জাকাতের প্রচলন করে অনাচার আর দুর্নীতি দূর করা ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব।
বাংলাদেশে বিরাজমান প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও পর্বতপ্রমাণ সমস্যার মোকাবিলায় আধুনিক সমাজকল্যাণ ধারণার নবমূল্যায়ন করা উচিত। গুরুত্ব দেয়া উচিত প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি। সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের চাহিদা পূরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এ দেশে ইসলামী বিপ্লবের পথকে সুগম করা সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের সকল জনশক্তিকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত পর্যায়ে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ‘সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল’ প্রণয়ন করা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের এ প্রচেষ্টাকে বরকতময় করুন। আমীন ।
দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মৌলিক নীতিমালা
প্রথম অধ্যায়ে ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজকল্যাণমূলক কাজের গুরুত্ব এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে সমাজকল্যাণমূলক কাজের অপরিহার্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে পেশাগত মান বজায় রেখে দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তিতে টেকসই সমাজকল্যাণমূলক কাজ করার ক্ষেত্রে যে সকল মৌলিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে সেগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষভাবে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে বা কোনো কর্মসূচি প্রণয়নের সময় যে সকল মৌলিক ধারণাকে সামনে রাখতে হবে সেগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে এখানে।
২.১ সমাজকল্যাণমূলক কাজের মৌলিক নীতিমালা
দীর্ঘস্থায়ী ভিত্তিতে টেকসই সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অধিক সুফল প্রদান করতে হলে কতকগুলো মৌলিক নীতি মেনে চলা উত্তম। মৌলিক নীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে আলোচনার সুবিধার্থে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচির সুফলভোগী (Beneficiary) যেন কর্মসূচির মাধ্যমে আত্মমর্যাদাবান হতে পারেন;
খ) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সুফলভোগী যেন স্বনির্ভর হতে পারেন,
গ) বার বার যেন একই ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদানের প্রয়োজন না পড়ে,
ঘ) সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে অর্থ চাহিদাকে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা এবং
ঙ) সম্ভব হলে কোনো কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ যেন উঠিয়ে আনা সম্ভব হয় অর্থাৎ কার্যক্রমের খরচ উঠিয়ে আনার চেষ্টা করা, যার ফলে অধিক সংখ্যক ব্যক্তি সহায়তা করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়গুলোকে আরও একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
ক) সুফলভোগীকে আত্মমর্যাদাবান করা: সুফলভোগী বলতে আমরা বুঝাচ্ছি যাদের জন্য কোনো সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলো তাঁদেরকে। কোনো সমাজকল্যাণমূলক কাজ ডিজাইনের বা গ্রহণের পূর্বে এ বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে যে উক্ত কাজ সুফলভোগীদের আত্মমর্যাদাবান করবে কি না। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তিকে ভিক্ষা প্রদান করা হলে তার হয়তো সাময়িক উপকার হয়, কিন্তু এতে তার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয় এবং তার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না। এ ব্যাপারে রাসূলের (সা.) সেই বিখ্যাত কাহিনীর কথা উল্লেখ করা যায়, “তিনি একজন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দানের পরিবর্তে কুড়াল প্রদানের ব্যবস্থা করে তার মর্যাদাকে রক্ষা করেছেন।” এতে তার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়। একইভাবে অশিক্ষিতদের জন্য শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলে তা অশিক্ষিতদেরকে মর্যাদাবান করে তুলবে।
খ) সুফলভোগীদের আত্মনির্ভর করা: সমাজকল্যাণ কর্মসূচি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে করে একজন সুফলভোগী একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আত্মনির্ভর হতে পারেন। এ কথা বিশেষভাবে বিনিয়োগ কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একই ব্যক্তিকে যদি বছরের পর বছর বিনিয়োগ প্রদান করা হয় তাহলে তিনি পরনির্ভর হয়ে পড়বেন। এর ফলে অন্যরা বঞ্চিত হবে। সেজন্য বিনিয়োগ কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজস্ব পুঁজি গঠিত হয় এবং তাঁকে আর অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না।
গ) একই ব্যক্তিকে যেন বারবার সহায়তা করার প্রয়োজন না হয়: এটি একটি মৌলিক নীতি। সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য। কর্মসূচি গ্রহণের সময় নজর রাখতে হবে যাতে করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একজন ব্যক্তিকে স্বনির্ভর করা যায়। এর ফলে অনেক ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদান সম্ভব হবে। পুঁজি সরবরাহের মাধ্যমে স্বেচ্ছাকর্মসংস্থান, এমনকি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বেলায়ও একথা প্রযোজ্য। শিক্ষা কর্মসূচিতে একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস শেষ হওয়ার পর নতুন নতুন ব্যাচকে গ্রহণ করতে হবে।
ঘ)স্বল্পতম বাজেটের মাধ্যমে কর্মসূচি গ্রহণ করা: পেশাগত মান বজায় রেখে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতে হলে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে অর্থের প্রয়োজন কম হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সেগুলো সেখান থেকেই গ্রহণ করা। সেক্ষেত্রে সংগঠনের খরচ অনেক কমে যাবে।
ঙ) কর্মসূচির ব্যয় সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি থেকে নির্বাহ করার চেষ্টা করা: এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় এবং বৃহৎ সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি বিনামূল্যে বা সাবসিডি প্রদানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সেজন্য যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে সেগুলোর পরিচালন ব্যয় যতটা সম্ভব সুফলভোগীদের নিকট থেকে গ্রহণ করতে হবে। যেমন- স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ডাক্তারের ফি- সামান্য হলেও রোগীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা বা বিনিয়োগ কর্মসূচির পরিচালনা খরচ কর্মসূচির সার্ভিস চার্জ বা লাভ থেকে বহন করা।
২.২ সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী নির্ধারণ
সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম থেকে স্থায়ী সুফল পেতে হলে কার্যক্রমের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে কর্মসূচিকে সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য প্রণয়ন করতে হবে। না হলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে না। কিছু কিছু কর্মসূচি সর্বসাধারণের জন্য গ্রহণ করতে হবে, যেমন- ধনী এবং গরিবের সন্তান নির্বিশেষে সকলের জন্য টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে দরিদ্রদের জন্য বিনিয়োগ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। শিক্ষা কর্মসূচিকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়: যেমন, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, বয়স্কদের জন্য শিক্ষা। বয়স্ক শিক্ষাকে নারী ও পুরুষ দুই ভাগে ভাগ করে পরিচালনা করা যেতে পারে। একইভাবে স্বাস্থ্য কর্মসূচিও স্বল্পমূল্যে শুধুমাত্র দরিদ্রদের জন্য প্রদান করা যায়, অন্যদিকে অবস্থাসম্পন্নদের নিকট হতে স্বাস্থ্যসেবার পূর্ণমূল্য গ্রহণ করা যেতে পারে।
মোটকথা, প্রতিটি কর্মসূচিই সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য প্রণয়ন করতে হবে।
তৃতীয় অধ্যায় : সমাজকল্যাণমূলক কাজের কর্মকৌশল
পূর্বের অধ্যায়ে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে যে সকল মৌলিক নীতিমালা মেনে চলা উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচি গ্রহণের সময় ঐ সকল নীতিমালা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এর অর্থ এ নয় যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করা সম্ভব নয়। এ অধ্যায়ে সমাজকল্যাণমূলক কাজের কর্মকৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
৩.১ সমাজকল্যাণমূলক কাজের কর্মকৌশল
প্রথমতঃ সমাজকল্যাণমূলক কাজ করার কৌশলকে দুইভাগে ভাগ করা যায়ঃ
(১) ব্যক্তিগত এবং
(২) সামষ্টিক।
সামষ্টিক কাজকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
(১) অনানুষ্ঠানিক কাজ এবং
(২) আনুষ্ঠানিক দলগত।
৩.১.১ ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাজকল্যাণমূলক কাজ
নিজস্ব উদ্যোগে নিজের এলাকায় বা অন্যত্র স্থানীয় জনগণের জন্য সমাজকল্যাণমূলক কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে রোগীদের সেবা শুশ্রুষা করা, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সহায়তা করা, ব্যাংকঋণ পেতে সাহায্য করা, সরকারি অফিস আদালত থেকে কাজ পেতে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সহায়তা করা, নিজের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেয়া, দুঃস্থদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদি। রাসূল (সা.) এবং তাঁর মহান সাহাবাদের (রা.) জীবন-অন্যের কষ্ট লাঘব করা, দুঃস্থদের সেবা করা, ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্ত করা ইত্যাদি কাজের ঘটনায় পরিপূর্ণ। আল কুরআন এবং হাদীসে বেশি বেশি দান করার জন্য নির্দেশ রয়েছে। মহানবীর (সা.) অনুসারীগণ তা পালন করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “এবং তারা যা কিছু আল্লাহর পথে খরচ করে তা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং রাসূল (সা.) এর পক্ষ থেকে রহমতের দোয়া নেয়ার উপায় বানায়। মনে রেখো, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় এটিই এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে তাঁর রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আত তাওবা: ৯৯)
হযরত আদি বিন হাতিম (রা.) বলেন, “নবী (সা.) কে একথা বলতে শুনেছি-হে লোকেরা! খুরমা-খেজুরের এক টুকরা দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ।” (বুখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, “নবী (সা.) বলেছেন- কিয়ামতের দিনে শাল্লাহর আরশ ব্যতীত যখন কোথাও কোন ছায়া থাকবে না, তখন সাত রকমের লোক মহান আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি এমন হবে, যে এমন গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে যে, তার বাম হাত জানতে পারবে না যে ডান হাত কি খরচ করলো।” (বুখারী)
একবার নবী (সা.) আসরের নামাযের পরেই ঘরে চলে যান এবং কিছুক্ষণ পর বাইরে আসেন। সাহাবায়ে কেরাম কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “এক টুকরা সোনা ঘরে রয়ে গিয়েছিল। রাত পর্যন্ত তা ঘরে পড়ে থাকবে এটা আমি ঠিক মনে করলাম না। তাই তা অভাগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে এলাম।” (বুখারী)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রয়োজন মিটাবে মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটাবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে বিপদমুক্ত করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বিপদমুক্ত করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন।” (বুখারী, মুসলিম)
৩.২.১ অনানুষ্ঠানিক দলগত কাজ
উপরে উল্লিখিত কাজগুলো কয়েকজন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে দলবদ্ধভাবে করা যেতে পারে। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থ সংগ্রহ করে তা দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ, তাদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করা, নিজেদের এলাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেয়া ইত্যাদি কাজ দলগতভাবে করা হলে অধিক সুফল পাওয়া যাবে।
৩.২.২ আনুষ্ঠানিক দলগত কাজ
পেশাগত মান বজায় রেখে বড় আকারে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর, মহিলা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর বা এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধন গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়। তাছাড়া ট্রাস্টও গঠন করা যেতে পারে। সব ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম এসকল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা যেতে পারে। পঞ্চম অধ্যায়ে আনুষ্ঠানিক দলগত সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায় : ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা অনানুষ্ঠানিক দলের মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম
বর্তমান অধ্যায়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং অনানুষ্ঠানিক দলের মাধ্যমে সম্ভাব্য সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে একই কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও গ্রহণ করা যায়। পার্থক্য শুধু ব্যাপ্তি ও ব্যবস্থানায়। প্রথমেই সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমসমূহকে শ্রেণিবিন্যাস করা যাক।
৪.১ সমাজকল্যাণমূলক কাজের শ্রেণি বিভাগ
সমাজকল্যাণমূলক কাজসমূহের প্রকৃতি অনুযায়ী মোটামুটিভাবে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে বিন্যাস করা যায়:
১) শিক্ষা কার্যক্রম:
ক) শিশু শিক্ষা
খ) বয়স্ক শিক্ষা
* পুরুষদের জন্য
* নারীদের জন্য
২) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমঃ
ক) শিক্ষিত যুবকদের জন্য
খ) স্বল্প শিক্ষিতদের জন্য/বয়স্কদের জন্য
৩) স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন কার্যক্রমঃ
ক) চিকিৎসা সেবা
খ) স্বাস্থ্যশিক্ষা ও রোগ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম
গ) পুষ্টি কর্মসূচি
ঘ) বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাকরণ
ঙ) স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা প্রকল্প।
৪) আয় বৃদ্ধিমূলক কাজ:
ক) স্বেচ্ছা-কর্মসংস্থানের জন্য পুঁজি সরবরাহ
খ) শস্য উৎপাদন
গ) শাকসবজি ও ফল উৎপাদন
ঘ) মাছ চাষ
ঙ) হাঁস মুরগী গরু ছাগল পালন
চ) নার্সারী তৈরি
ছ) অকৃষিজ কাজে কর্মসংস্থান
৫) পরিবেশ উন্নয়ন:
ক) বনায়ন
খ) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
গ) মশক নিধন
৬) অবকাঠামোগত উন্নয়ন
৭) আইনগত সহায়তা দান
৮) ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম
৯) অন্যান্য
৪.২ সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন
উপরে উল্লিখিত শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এখন প্রত্যেক শ্রেণির সমাজ কল্যাণমূলক কাজে একজন ব্যক্তির এবং দলের কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করা হলো।
৪.২.১ শিক্ষা কার্যক্রম
উপরের অনুচ্ছেদে শিক্ষা কার্যক্রম প্রধানত: শিশু ও বয়স্কদের জন্য শিক্ষা কর্মসূচি দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। এখন শিক্ষা কর্মসূচি কীভাবে গ্রহণ করতে হবে তা বর্ণনা করা হলো।
ক) শিশু শিক্ষা
প্রথমত: স্থানীয় বালক/বালিকাদের স্কুল/মাদরাসায় প্রেরণে তাদের পিতা মাতাকে উৎসাহিত করতে হবে। তা সত্ত্বেও যে সকল ছেলেমেয়ে স্কুল/মাদরাসায় যায় না তাদের নিয়ে শিক্ষাকেন্দ্র চালু করতে হবে। শিক্ষাকেন্দ্র শুরুর পূর্বে ৩০-৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীর একটি করে দল বা ব্যাচ গঠন করতে হবে। প্রতি ব্যাচকে কমপক্ষে দু’বছর এক নগাড়ে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। এক ব্যাচ শেষ হলে নতুন ব্যাচ গঠন করতে হবে। এর জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে।
– কাচারী ঘর বা বাড়ির আঙ্গিনায় কেন্দ্র চালু করা
– শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ
– পাঠ্যসূচিতে মৌলিক ইসলামী শিক্ষা, বাংলা, অংক ও পরিবেশ পরিচিতি থাকা উচিত। এর জন্য এডুকেয়ার পাবলিকেশন প্রণীত পুস্তকসমূহ ব্যবহার করা যেতে পারে।
– প্রতি ব্যাচকে কমপক্ষে ২ বছর শিক্ষা দান করা উচিত।
– শিক্ষক/শিক্ষিকাদের ভাতা প্রদান করা উচিত।
– এর জন্য অনুদান পাওয়া না গেলে ছাত্রপ্রতি স্বল্প বেতন গ্রহণ করা যেতে পারে।
– প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ ঘন্টা পাঠদান করতে হবে।
খ) বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম
একইভাবে বয়স্কদের জন্যও শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। প্রতিটি ব্যাচকে একবছর শিক্ষাদান করা যেতে পারে।
– বয়স: ১৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত।
– সময়সীমা: বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির সময়সীমা থাকবে এক বছর।
– পাঠদানের সময়: পুরুষদের রাতে এবং মহিলাদের বিকেল বেলায়।
– স্থান: একজন কর্মী পাঠদানের জন্য নিম্নলিখিত স্থান বিবেচনা করতে পারে-
* কাচারী ঘর।
* বাড়ির আঙ্গিনা।
* পড়ুয়াদের উদ্যোগে তৈরি শিক্ষাকেন্দ্র।
এইসব জায়গায় স্থান না পাওয়া গেলে নিকটস্থ প্রাইমারি স্কুল, ক্লাবঘর ব্যবহারের চেষ্টা করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে পড়ুয়াদের কোনো প্রকার অসুবিধা না হয় এবং মহিলাদের পর্দার কোনো খেলাপ না হয়।
ধারাবাহিক পদক্ষেপ
বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করার জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন শিক্ষক নিয়োগ।
এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে:
– স্থানীয় শিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকা সংগ্রহ
– সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাথমিক নির্বাচন
– পর্যবেক্ষণ ও পড়ুয়াদের মতামতের ভিত্তিতে একটি অস্থায়ী নিয়োগপত্র দান।
– শিক্ষক-শিক্ষিকা বয়স্ক শিক্ষা পরিচালনার জন্য ২০০০/= মাসিক ভাতা হিসেবে পেতে পারেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় দিক:
– যিনি শিক্ষাসেবা প্রদান করবেন, তাকে অবশ্যই এলাকায়
– সামাজিকভাবে স্বীকৃত একজন সৎ, ভালো মানুষ হতে হবে।
– তাঁর সাধারণভাবে কমবেশি আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে।
– তাঁর মধ্যে সেবা প্রদানের আগ্রহ ও একাগ্রতা থাকতে হবে।
– তাঁকে অবশ্যই কমপক্ষে এস এস সি পাশ হতে হবে এবং বয়স ২০-৩৫ বছর হতে হবে।
শিক্ষক/শিক্ষিকার দায়িত্ব:
– প্রচার কার্য ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ৩৫ থেকে ৪০ জন পড়ুয়া নিয়ে কেন্দ্র গঠন করা।
– প্রশিক্ষণের নিয়মানুযায়ী পড়ুয়াদের সাথে আলোচনা করা।
– প্রতিদিন পড়ুয়াদের হাজিরা নেয়া এবং তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা।
– প্রতিদিন ৩ ঘন্টা ক্লাস পরিচালনা করা।
প্রতিদিনের ক্লাস পরিচালনার রুটিন
বিষয়:সময়
– ইসলামের মৌলিক বিষয়ে আলোচনা – ৩০ মিঃ
– নির্দিষ্ট বিষয়ে পাঠ – ৪৫ মিঃ
– হাতের লেখা চর্চা ও গণনা শিক্ষা – ৪৫ মিঃ
– স্বাস্থ্য, পশুপালন, শাকসবজি চাষ, রোগ প্রতিরোধ,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,মৎস চাষ ইত্যাদির যে কোনটির উপর আলোচনা – ৩০ মিঃ
– গল্প/গজল ইত্যাদি – ৩০ মিঃ
মোটঃ ১৮০ মিনিট বা ৩ ঘন্টা
উপকরণ
* ব্ল্যাকবোর্ড, চক ডাস্টার
* হাজিরা খাতা
* পরিদর্শন খাতা
* পাঠ্য বই
* অনুশীলন খাতা
* খাতা, পেন্সিল
* অক্ষর গুটি, সংখ্যা গুটি
* অক্ষর কার্ড, শব্দ কার্ড, বাক্য কার্ড
* চার্ট
* পাটি, চার্জ লাইট ও হারিকেন
* জারি, গজল ও গল্পের বই
* পড়ুয়াদের পাঠাভ্যাস বই
শিক্ষাকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা
বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট ১টি কমিটি গঠন করতে হবে।
কমিটিতে একজন সভাপতি, ১ জন সেক্রেটারি ও ৩ জন সদস্য/সদস্যা থাকবেন।
বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনার জন্য চার্জ লাইট/কেরোসিন তেল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী সম্ভব হলে পড়ুয়াদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে।
মূল্যায়ন
বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির অগ্রগতি যাচাইয়ের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ১ সেশনে ২ বার মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
গ) বয়স্কদের কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা
“তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।” (আল হাদীস)
মহাগ্রন্থ আল কুরআন আমাদের জীবন বিধান। গাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, ঠিক তেমনি মানুষ কুরআন ছাড়া চলতে পারে না, বাঁচতে পারে না। অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষ কুরআন পড়তে জানে না। তাই কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। এজন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে:
– একজন প্রশিক্ষক নিয়োগ করা।
– প্রশিক্ষকের থাকা, খাওয়া এবং মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা।
– এলাকা নির্ধারণ করে স্থানীয় মসজিদ, মক্তব্য, মাদরাসা, কাচারী বা বাড়ির আঙ্গিনায় – কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
– শিক্ষার্থীদের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছর হতে পারে।
– এক মাসের জন্যে লোক বাছাই করতে হবে।
– ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে আলোচনার মাধ্যমে কুরআন শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
– ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
– প্রতিদিন বাদ মাগরিব ক্লাস শুরু হবে এবং ২ ঘন্টা ক্লাস চলবে।
– প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের হাজিরা নেয়া।
– প্রশিক্ষককে অবশ্যই ক্বারী সার্টিফিকেটধারী, অভিজ্ঞ এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুসারী হতে হবে।
– উপকরণ:
* ব্ল্যাকবোর্ড, চক, ডাস্টার
* হাজিরা খাতা
* কায়দা ও আমপারা
– এজন্য একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা।
– কুরআন শিক্ষা ক্লাসের অগ্রগতি যাচাইয়ের জন্য ২ বার মূল্যায়ন করা।
– কুরআন সহীহভাবে পড়া হয়েছে কি না তা নিরীক্ষা করা।
– প্রত্যেক দিন বাদ ফজর কুরআন পড়ার তালিম দেয়া।
৪.২.২ স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন কার্যক্রম
শহর হোক, গ্রাম হোক আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্যের মান অত্যন্ত নীচু। অপর্যাপ্ত ও অসম খাদ্য গ্রহণ, অপরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ লোক প্রায়ই পেটের অসুখ, চিরকৃমিসহ অন্যান্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ভাল স্বাস্থ্যের জন্য যে পরিবেশ দরকার আমাদের সমাজে তা প্রায়ই অনুপস্থিত। অধিকাংশ লোক রাস্তা-ঘাট ও উন্মুক্ত জায়গায় পায়খানা-পেশাব করে এবং তাতে মাছি বসে। খাবার পানির অভাবে বহু লোক খোলা পুকুর, খাল-বিল, ডোবার পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। বদ্ধ জলাশয় ও ডোবা মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়। ফলে ম্যালেরিয়া রোগের প্রসার ঘটে।
স্বাস্থ্য রক্ষার্থে মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে গ্রামের অধিকাংশ লোকের ধারণা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। অপেক্ষাকৃত সচেতন ব্যক্তিরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মূল্য বোঝেন। কিন্তু রোগ-জীবাণু তৈরি ও তার বিস্তার রোধের পদ্ধতি হিসেবে স্যানিটেশনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন না। গ্রামের লোকদের রোগ-জীবাণুর উৎপত্তি ও তার বিস্তার এবং রোগ প্রতিরোধের পন্থাসমূহ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান পরিবেশন অপরিহার্য, অন্যথায় স্বাস্থ্যের অবস্থা কিছুতেই ভাল হতে পারে না।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সমন্বয়ই হচ্ছে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। একজন অসুস্থ ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে পারে না। এমনকি ব্যক্তিগত জীবনেও আল্লাহর বন্দেগীর দায়িত্বও ঠিকমত পালন করতে পারে না। কাজেই একামতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনের জন্য সুস্থতা একান্ত অপরিহার্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য রোগ নিরাময় করে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। সর্বোপরি স্বাভাবিক এবং কর্মঠ জীবন যাপনের জন্য চাই রোগমুক্ত সুস্থ-জীবন।
ক) অসুস্থতার সময় চিকিৎসা সেবা প্রদান
– রোগীর কাছে যাওয়া।
– রোগ নিরাময়ে পরামর্শ দেয়া।
– হাসপাতালে রোগীকে নেয়ার ব্যবস্থা করা এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দান।
– হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করা।
– ভর্তির পর সুবিধাজনক সিট এবং সু-চিকিৎসার প্রতি যত্নবান হওয়া।
– প্রয়োজনে রোগীকে সর্বদা দেখাশোনা, সেবা-শুশ্রুষা করার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক লোক নিয়োগ করা।
– সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে সম্ভব হলে বিনামূল্যে অথবা অল্প মূল্যে ওষুধপথ্যাদি সংগ্রহ করা। জটিল রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে উচ্চমানের হাসপাতালে রেফার করা।
– প্রয়োজনীয় পথ্য সাথে নিয়ে রোগীর কাছে যাওয়া।
– সব সময় আল্লাহর সাহায্য কামনার পরামর্শ দেয়া।
খ) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান
অপরিচ্ছন্ন নোংরা পুকুর, নালা, খাল, বিল ও নদীর পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন-
– প্রথমতঃ এ অভিযানের জন্য ৯-১১ জনের একটি দল তৈরি করতে হবে।
– দলের সদস্যরা কর্মক্ষম যুবক এবং কর্মোদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
– পরিচ্ছন্নতা অভিযানের জন্য স্থান নির্ধারণ করতে হবে।
– ছুটির দিনে সুবিধাজনক সময় নির্ধারণ করে সবাইকে পূর্বেই খবর দিয়ে একত্রিত করতে হবে।
– পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কোদাল, ঝুড়ি, দা, কাঁচি, দড়ি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।
– ব্যানার ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যানারটি উজ্জ্বল রং-এর সুন্দর ডিজাইনের হতে হবে এবং নিম্নরূপ হতে পারে-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী……………শাখা
– অভিযান শুরুর পূর্বে দলনেতা প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রদান করবেন।
– অভিযান team spirit নিয়ে শুরু করা এবং সবাইকে অংশগ্রহণ করানো।
– অভিযান দলীয় চেতনা নিয়ে শুরু করা এবং সবাই অংশগ্রহণ করা।
– অভিযানের সফল সমাপ্তির প্রতি নজর রাখা।
– এ অভিযানের জন্য স্থানীয় বেসরকারি এবং সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া।
– অভিযান শেষে পত্র-পত্রিকা অথবা রেডিও-টেলিভিশনে খবর প্রদান করা।
গ) মশক নিধন অভিযান
এ অভিযান সফল করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা এবং এ জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
– প্রথমতঃ এ কাজের উপযোগী যুবকদের নিয়ে ৫/৭ জনের একটি দল তৈরি করা।
– দলনেতা এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন স্প্রে মেশিন, কীটনাশক ওষুধ সংগ্রহের ব্যবস্থা করবেন।
– এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতা নেয়া।
– অভিযানের জন্য স্থান এবং এলাকা নির্ধারণ করা।
– নির্দিষ্ট দিন, সময় নির্ধারণ করে সবাইকে অভিযানের পূর্বেই একত্রিত করা।
– স্প্রে মেশিনে পরিমাণমত পানি এবং ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করার কৌশল সবাইকে শিখিয়ে দেয়া।
– অভিযানে দলনেতার প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা দেয়া।
– অভিযান পরিচালনার সময় প্রয়োজনে ব্যানার ব্যবহার করা যেতে পারে ব্যানারের ভাষা উপরের ব্যানারের মত হতে পারে: ‘মশক নিধন অভিযান’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, পরিচালনায়: শাখা।
ঘ) চিকিৎসালয় স্থাপন ও পরিচালনা
আদর্শ চিকিৎসালয় বলতে সহজ কথায় আমরা বুঝি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের রোগ-ব্যাধিতে ন্যায্যমূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য সহজ-সুলভ চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা।
এ জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা প্রয়োজন:
– আদর্শ চিকিৎসালয় পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা।
– সাধারণ কমিটিতে স্থানীয় প্রভাবশালী গণ্যমান্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা।
– আদর্শ চিকিৎসালয় স্থাপন করার জন্য একটা স্থান নির্বাচন করা, স্বল্পমূল্যে ভাড়া বা বিনামূল্যে ঘর করা।
– ২/১ জন স্থানীয় ডাক্তার নিয়োগ করা এবং ডাক্তারের নির্দিষ্ট দিন ও সময় নির্ধারণ করা।
– অথবা কয়েকজন সরকারি/বেসরকারি ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করে প্রত্যেকের সপ্তাহে একদনি করে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা।
– রোগী দেখার জন্য দিন সময় নির্ধারণ করা।
– সম্ভব হলে স্থানীয় ডাক্তারদের সামান্য সম্মানী ভাতা দিয়ে অথবা বিনা ভাতায় প্রত্যেককে সপ্তাহে ২/৩ ঘন্টা কাজ করার অনুরোধ করতে হবে।
– কমিটির বৈঠকে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, বাজেট প্রণয়ন, অনুমোদন এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা।
– প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সংগ্রহ করা।
– প্রাথমিক পরিচর্যা সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা।
– রোগীদের নিকট থেকে স্বল্প ফি গ্রহণ করা।
ঙ) টিকা দান কর্মসূচি চালু করা
– শিশুদের টিকাদানের মাধ্যমে ৬টি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিরোধ করা যায় টিকা দানের মাধ্যমে।
– সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বেসরকারি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপন করা।
– স্থানীয় জনগণকে নিয়মিত কেন্দ্রে উপস্থিত করানো।
– আগ্রহী একজনকে টিকাদানে প্রশিক্ষণ দান করা।
চ) দাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
দাইদের কারণে মাঝে মধ্যে সন্তান ও মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাইয়ের প্রয়োজন অপরিসীম।
এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়:
– দাই প্রশিক্ষণের জন্য গ্রাম/শহরের যোগ্য ও আগ্রহী মহিলাদের বাছাই করা।
– সরকারি সংস্থা বা স্থানীয় কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
– ইউনিয়ন/থানা/শহরে প্রশিক্ষণের জন্য স্থান ঠিক করা।
– প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা।
– প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের পর দাইদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পুনঃ প্রশিক্ষণ কোর্স করার ব্যবস্থা করা।
– দাইদেরকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং মা ও শিশুদের সে শিক্ষা প্রদানের জন্য উৎসাহিত করা।
– গর্ভপূর্ব এবং গর্ভপরবর্তী সময়ে মা ও শিশুদিগকে যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা করা।
ছ) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও রোগ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম
রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্য-শিক্ষার অভাবে অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগে শিশু ও বয়স্করা কষ্ট পান। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মূল উপায় হলো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জ্ঞানের বিস্তার। শিশু শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়।
এক্ষেত্রে করণীয় হলো-
* প্রতিটি বয়স্ক শিক্ষা ক্লাসে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক-একটি বিষয়ে আলোচনা করা।
* শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মায়েদের বুঝানো।
* পচা বাসী খাবার না খাওয়া।
* ডাইরিয়া হলে স্যালাইন তৈরি করে খাওয়ানোর শিক্ষা প্রদান।
* শিশুদের ছয়টি টিকা দানে মায়েদের উৎসাহিত করা।
* গর্ভবতী মায়েদের ধনুষ্টংকারের টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করা।
* বিশুদ্ধ পানি পান ও আবদ্ধ পায়খানা ব্যবহারের উৎসাহিত করা।
* সম্ভব হলে স্থানীয় ডাক্তারদের দিয়ে নিয়মিত স্কুল, মাদরাসায় উপরোক্ত বিষয়ে বক্তৃতা/আলোচনা সভার আয়োজন করা।
* ডাক্তার পাওয়া না গেলে আগ্রহী ব্যক্তিদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্কুল-মাদরাসা মসজিদে আলোচনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
* এ সকল বিষয়ে স্লাইড শো, ডকুমেন্টারী ফিল্ম দেখানোর ব্যবস্থা করা।
জ) বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা
যাবতীয় পেটের পীড়া এবং ডাইরিয়ার মূল কারণ হলো দূষিত পানি পান, ধোওয়া এবং রান্নার কাজে দূষিত পানির ব্যবহার। এজন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ কর্মসূচিতে করণীয় কাজ হলো:
* এলাকার অবস্থাসম্পন্নদের সবাইকে টিউবওয়েল স্থাপনে উৎসাহিত করা। তবে টিউবওয়েলের পানি আর্সেনিকমুক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
* দরিদ্রের জন্য অনুদান সংগ্রহ করে টিউবওয়েল স্থাপনের ব্যবস্থা করা। টিউবওয়েল এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে যাতে করে সকলে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে পারে।
* সরকারের জনস্বাস্থ্য বিভাগ বা বেসরকারি উদ্যোক্তদের নিকট হতে টিউবওয়েল সংগ্রহ করতে হবে।
* টিউবওয়েলের পানি পাওয়া না গেলে পানি ফুটিয়ে খাওয়া।
* সকল কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের জন্য প্রচার অভিযান চালানো।
* বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
ঝ) স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন
যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের কারণে এলাকায় রোগব্যাধি ছড়ায়। এজন্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য এলাকাবাসীদের উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে করণীয় হলো:
* রিং এবং স্লাব স্থাপন করে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরি করা।
* প্রয়োজনে রাজমিস্ত্রিগণকে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া।
* জনস্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হতে এ সকল পায়খানা ক্রয় ও স্থাপনে এলাকাবাসী বিশেষ করে দরিদ্রদের সহায়তা করা। অত্যন্ত অল্প মূল্যে এ ধরনের পায়খানা পাওয়া যায়।
* স্কুল, মাদরাসা, মসজিদে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো।
ঞ) পুষ্টি কর্মসূচি
এলাকাবাসীদের বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া যায়-
* আলু, শাক-সবজি, ডাল ইত্যাদি খাবারের পুষ্টিমান সম্পর্কে এলাকাবাসী, বিশেষভাবে মহিলাদের সচেতন করা।
* ভাতের ওপর খাদ্য-নির্ভরশীলতা কমানো।
* শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালোনা।
* শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাবার খাওয়ানোর পক্ষে প্রচারণা চালানো।
* স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ এবং এলাকায় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
* বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের পাঠ্যসূচিতে এ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৪.২.৩ আয় বৃদ্ধিমূলক কাজ
আমাদের দেশে ভূমিহীন এবং দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা অনেক। ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব এ দেশের লোকদের নিত্যসঙ্গী। সম্বলহীন বেকার জনশক্তিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত করে তাদের প্রত্যেকের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরিত করা যায়। সামান্য প্রশিক্ষণ ও কিছু অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করলে তারাও স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জনের পথ করে নিতে পারে। এ জাতীয় আয়বর্ধক সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে।
ক) অভাবী ঋণগ্রস্তকে কর্জে হাসানা প্রদান
অনেকে আর্থিক দৈন্যের কারণে সাময়িকভাবে ঋণ করতে বাধ্য হয়। তাদেরকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে কর্জে হাসানার প্রচলন করা যেতে পারে। এ প্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়-
– প্রকৃত অভাবী ঋণগ্রস্ত লোকদের খোঁজ-খবর নেয়া।
– সম্ভব হলে ব্যক্তিগতভাবে কর্জে হাসানা প্রদান করা।
– তবে এক্ষেত্রে লিখিত সুনির্দিষ্ট শর্ত অনুযায়ী কর্জে হাসানা প্রজান করা।
– গ্রহণের তারিখ, টাকার পরিমাণ ও পরিশোধের তারিখ লিপিবদ্ধ করা।
– বিনিয়োগ গ্রহণকারী ব্যক্তি যেন সময়মত বিনিয়োজিত অর্থ ফেরত দেয় তার জন্য উৎসাহিত করা।
– সমাজের অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কর্জে হাসানা প্রদানে উৎসাহিত করা।
খ) মুষ্টি চালের প্রবর্তন
মুষ্টি চাল জমা করা আমাদের সমাজের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা। এটিকে আয়বর্ধক কার্যক্রমে পরিণত করার উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
– মুষ্টি চালের জন্য একটি পাত্র নির্দিষ্ট করা।
– প্রতি ওয়াক্ত রান্নার সময় উক্ত পাত্রে এক মুষ্টি করে চাল জমা রাখা।
– রান্নার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ঠিকমত চাল জমা রাখছে কি না তা মাঝে মাঝে খোঁজ নেয়া।
– সপ্তাহ শেষে জমা চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা।
– বিক্রয়লব্ধ অর্থ পরিকল্পিতভাবে আয়বর্ধক কাজে অথবা শিক্ষার কাজে লাগানো।
গ) আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা
প্রশিক্ষণ ও পুঁজি সরবাহের মাধ্যমে কর্মসংস্থান করা সহজ হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অধিক পুঁজি সরবরাহের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কি করে ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে পঞ্চম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। পুঁজি সরবরাহ না করেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ, দরিদ্র পরিবারসমূহের নিজস্ব সম্পদ, স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে সব ধরনের পরিবারেই আয় বৃদ্ধি সম্ভব।
যেমন:
– স্থানীয় পতিত জমিতে মালিকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করা। মালিক চাষ না করলে দরিদ্রগণ ব্যক্তিগতভাবে বা দলবদ্ধভাবে বর্গাচাষ শুরু করতে পারে।
– পুকুর-ডোবায় মাছ চাষ।
– দরিদ্র মহিলাদের হাঁস-মুরগী পালন।
– ঘরের আঙ্গিনায় সামান্য খরচে শাক-সবজি ও ফলের চাষ।
– দরিদ্র মজুর শ্রেণির পুরুষ মহিলাগণও দৈনিক আয় হতে কিছু অর্থ সঞ্চয়, চা-সিগারেট-পানের মত খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে সঞ্চয় করে ক্ষুদ্র ব্যবসা আরম্ভ করা।
– একটু অবস্থাসম্পন্ন কৃষক বা বেকার যুবকগণ নার্সারী তৈরি, মাছ চাষ, গরু- ছাগল পালন, অন্যান্য অকৃষিজ ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে পারে। এ ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের তালিকা পরিশিষ্ট-১ এ প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়া শাক-সবজি, ফলের চাষ, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালনের নিয়মাবলী পরিশিষ্ট-২-এ সংযোজিত হয়েছে।
৪.২.৪ পরিবেশ উন্নয়ন
বিভিন্ন কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো নির্বিচারে গাছ কাটা, গাছ না লাগানো, গৃহের চারপাশ অপরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি। এর জন্য বনায়ন, বৃক্ষরোপণ অভিযান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ইত্যাদি পরিচালনা করা যেতে পারে।
সামাজিক বনায়ন
সামাজিক বনায়নের জন্য স্থানীয় স্কুল, মাদরাসা, সড়ক ও রেলপথের এপাশ-ওপাশ প্রকৃতি ব্যবহার করা যায়। এ জন্য বাঁধের পাশের জায়গাও ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। ইউনিট পর্যায়ে, ইউনিয়ন পর্যায়ে, থানা পর্যায়ে আগ্রহী কর্মীর সহযোগিতার তা করা সম্ভব। বৃক্ষরোপণ মওসুমে উক্ত কাজের পদক্ষেপ নেয়া যায়।
এর জন্য:
– স্থান নির্দিষ্ট করা।
– অভিযানের সফল সমাপ্তির প্রতি নজর রাখা।
– এ অভিযানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া।
– অভিযানের খবর পত্রিকায় দেয়া।
ক) বৃক্ষ রোপণ অভিযান
আমাদের দেশে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছে, এর ফলে দেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃক্ষ রোপণ করা খুবই প্রয়োজন। জনগণকে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপারে সচেতন করার মাধ্যমে তাদেরকে বৃক্ষ সম্পদের অধিকারী করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত। বৃক্ষ একটি দীর্ঘ মেয়াদী সঞ্চয়-একথা জনসাধারণকে বুঝাতে হবে। রাসূল (সা.) নিজে বৃক্ষ রোপণ করেছেন।
– অভিযানের জন্য এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। যেমন: রাস্তার পার্শ্ব, স্কুল, মাদরাসা, অব্যবহৃত এলাকা ইত্যাদি।
– সুনির্দিষ্ট দিনে সুবিধাজনক সময় নির্ধারণ করে সবাইকে পূর্বেই খবর দিয়ে একত্রিত করতে হবে।
– অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ- যেমন গাছ, কোদাল, ঝুড়ি, শাবল, দা ইত্যাদি সংগ্রহ করা।
– ব্যানারও ব্যবহার করা যায়। ভাষা হবে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী …….. শাখার উদ্যোগে ‘বৃক্ষ রোপণ অভিযান।’
– অভিযান শুরুর পূর্বে দলনেতা একটা গাছ রোপণ করে ব্যবহারিক পদ্ধতি সবাইকে দেখিয়ে দেবেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা প্রদান করবেন।
– অভিযান একযোগে শুরু করে সবাই অংশগ্রহণ করা।
– গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
– এছাড়া প্রত্যেক বাড়িতে পতিত জায়গায় গাছ লাগানোর জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করা।
৪.২.৫ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম
গ্রামাঞ্চলে অবকাঠামোগত দুরবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অন্যতম অন্তরায়। রাস্তাঘাট, হাট-বাজারের উন্নয়ন, বৈদ্যুতিক সুবিধা প্রদান অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম কার্যক্রম হতে পারে। স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়:
ক) বাঁশের সাঁকো তৈরি
– এজন্য নিম্নোক্ত কাজ করা যেতে পারে:
– স্থান নির্বাচিত করতে হবে।
– সাঁকোর প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে।
– সাঁকো তৈরির বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ।
– গ্রাম থেকে বাঁশ সংগ্রহ করা।
– স্থানীয় জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সাঁকো তৈরি করা।
– প্রয়োজনে এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস-আদালতে যোগাযোগ করতে হবে।
খ) খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা
– খেয়া নৌকা সংগ্রহ করা/ক্রয় করা।
– এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামের লোকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ।
– নৌকার সাথে সাথে একজন মাঝি ঠিক করা।
– এক্ষেত্রে গ্রামের লোকেরা ধানের মওসুমে মাঝিকে ধান দেবে এই শর্তে নিয়োগ করতে পারে। অথবা সবাইকে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পারাপারের জন্য দিতে পারে।
গ) রাস্তা/পুল/হাটবাজারের উন্নয়ন
– এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে স্থানীয় রাস্তা উন্নয়ন করা।
– সরকারি উদ্যোগে রাস্তা/পুল ইত্যাদি সংস্কারের চেষ্টা করা।
– হাট-বাজারের প্রয়োজনীয় অংশ পাকা করা, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
– হাট-বাজারে গণশৌচাগার প্রতিষ্ঠা করা।
ঘ) অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন
– বাস স্ট্যান্ড/লঞ্চ ঘাট/ রেল স্টেশন স্থাপনের চেষ্টা করা।
– পোস্ট অফিস স্থাপনের চেষ্টা করা।
৪.২.৬ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। এ দেশে প্রতি বছরই বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, খরা, শৈত্যপ্রবাহ ও নদী ভাঙনের মাধ্যমে লাখ লাখ লোক গৃহহীন হচ্ছে- কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া খরায় দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। দেশ আজ ক্ষুধা-দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। এ সমস্ত কারণে দরিদ্র-অসচ্ছলতা ও দুঃস্থ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এদের সাহায্যে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা যেতে পারে:
অসহায় দুঃস্থদের এককালীন সাহায্য দান
আমাদের আশে পাশে প্রচুর অসহায় ও দুঃস্থ লোক অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। অনেকের রোগে শোকে ওষুধ নেই, এক টুকরা কাপড় নেই, এমনকি মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই।
– এলাকার অসহায় ও দুঃস্থদের চিহ্নিত করা।
– ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে এককালীন সাহায্য-সহযোগিতা করা।
– সচ্ছল ব্যক্তিদের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করার জন্য আবেদন করা। এককালীন এমন সাহায্য করা যাতে দুঃস্থ পরিবার স্বনির্ভর হতে পারে।
– জাকাত, ফেৎরা, সদকা অসহায় দুঃস্থদের দেয়া।
পুরাতন জামা কাপড় সংগ্রহ ও বিতরণ
প্রথমতঃ দলবদ্ধভাবে এলাকার সচ্ছল ধর্মী লোকদের পুরাতন জামাকাপড় সংগ্রহ করতে হবে।
– এক্ষেত্রে ধনীদের কাছ থেকে অর্থও সংগ্রহ করা যায়।
– সে অর্থ দিয়ে শহর থেকে পুরাতন জামাকাপড় কেনা যায়।
– সংগৃহীত এ সমস্ত পুরাতন জামাকাপড় এলাকায় যারা সত্যিকার অসহায়-দুঃস্থ তাদের মধ্যে বিতরণ করা।
– বিতরণকালে খেয়াল রাখতে হবে সত্যিকারের অভাবী লোকেরা যাতে প্রয়োজনমত কাপড় পায়।
এতিমদের প্রতিপালন ও পুনর্বাসন
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, অসুখ বিসুখে অনেক লোক মারা যায়। সংসারের কর্মক্ষম অভিভাবক মারা যাওয়ায় দেশে হাজার হাজার এতিম আছে যাদের প্রতিপালন এবং পুনর্বাসন একান্ত প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে দু’ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
১) এ সমস্ত এতিমদের প্রতিপালনের জন্য স্থানীয় সম্পদশালী লোকদের সহযোগিতায় এতিমখানা তৈরি করা।
– এতিমখানা তৈরি সম্ভব না হলে নিকটস্থ এতিমখানায় যোগাযোগ করে তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করা।
– স্থানীয় এতিমখানার জন্য ঘর নির্মাণে সক্ষম হলে সেখানে এতিমদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
– এজন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করতে হবে।
– এতিমখানা পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করতে হবে।
– এতিমদের লেখাপড়া যাতে হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
– এতিমদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে হবে।
– বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে এতিম প্রতিপালন এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২) এছাড়া স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষক সংগ্রহ করার চেষ্টা কল্প। এক একজন ব্যক্তি যদি একজন করে এতিম শিশুর শিক্ষা ও অন্যান্য খরচের দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে এ ধরনের শিশুদের সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়ে যায়।
আইনগত সহায়তা কার্যক্রম
দেশে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, দরিদ্র ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের প্রচলিত আইন না জানার কারণে এবং অর্থাভাবে নিজের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত। মামলাবাজ, টাউট-বাটপাড় ও স্থানীয় অসৎ প্রভাবশালী শ্রেণি দরিদ্রদের বিভিন্নভাবে, বিশেষ করে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে হয়রানি করে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আইনগত সহায়তা গ্রহণে সাহায্য করা যেতে পারে।
এর জন্য নিম্নলিখিত কাজ করা যেতে পারে:
– উকিল ঠিক করে দেয়া।
– আদালতের কাজে সহায়তা করা।
– নৈতিক ও আর্থিক সমর্থন দেয়া।
৪.২.৭ বিবিধ
উপরে বর্ণিত বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজ করা যেতে পারে। নিম্নে কিছু উদাহরণ প্রদান করা হলো।
ক) টেকনিক্যাল সেবা প্রদান
টেকনিক্যাল সেবা টিমের মাধ্যমে এলাকার বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র/ব্যবহার সামগ্রী (এসি, ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ইত্যাদি) সার্ভিস ও রিপেয়ারিং সেবা প্রদান করা। যার মাধ্যমে সংগঠনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য নিম্নলিখিত কাজ করা যেতে পারে :
– ৮/১০ সদস্য বিশিষ্ট টেকনিক্যাল সেবা টীম গঠন করা;
– টিম সদস্যদের কারিগরী ট্রেড কোর্স প্রশিক্ষণ থাকবে।
খ) জনসচেতনা তৈরির লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন পরিচালনা
একবিংশ শতাব্দির সূচনা লগ্ন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার পথ চলা শুরু। বর্তমানে এর প্রভাব উপেক্ষা করার মতো নয়। সোশ্যাল মিডিয়া বলতে ফেসবুক, টুইট্যার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটস এপ ইত্যাদি বুঝায়। কোটি কোটি মানুষের বন্ধন ঘটেছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তি তার অনুভূতি, উপলব্ধি, মতামত সব কিছু একে অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারছে। সেদিক থেকে বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া একটি সামাজিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। অতএব সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মাদকাশক্তি, ইভটিজিং, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, মানবাধিকার, জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ সংরক্ষণ, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, শিশুশ্রম বন্ধ ও শ্রম অধিকার আদায়, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার সম্পর্কেও জনসচেতনা তৈরির লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যেতে পারে।
এর জন্য নিম্নলিখিত কাজ করা যেতে পারে:
– অনলাইনে কাজ করার লক্ষ্যে আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১২/১৫ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করা;
– বছরের বিশেষ দিবসগুলোকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।
গ) জমাজমির ঝগড়া মীমাংসা করা
গ্রাম বাংলায় সাধারণত জমিজমা নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। অনেক সময় ঝগড়া চরম পর্যায়ে পৌঁছে। এমনকি এর পরিণতি স্বরূপ মারামারি-সংঘর্ষ, নৃশংস হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত সংঘটিত হয়। তাই এ অবস্থায় জমিজমার ঝগড়া মীমাংসার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে:
– সমষ্টিগত উদ্যোগ নিয়ে বাদী ও বিবাদী পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সমস্ত বক্তব্য ও অভিযোগ শোনা।
– এরপর বাদী-বিবাদীকে নিরপেক্ষ স্থানে একত্রিত করা। সেখানে এলাকার গণ্যমান্য প্রভাবশালী লোকদের মধ্যে থেকে ৫/৭ জনকে বাছাই করে হাজির করা। তবে কোন কোন সময় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরও রাখা যেতে পারে।
– সেখানে একজন সৎ চরিত্রবান মুরুব্বীকে সভাপতি করে ৫/৭ জন সম্মানিত ব্যক্তির উপস্থিতিতে ইনসাফভিত্তিক সালিশের ব্যবস্থা করতে হবে।
– বিবাদ বিচ্ছেদ, পারিবারিক ঝগড়া মীমাংসার ব্যাপারে অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
ঘ) অফিস-আদালতের কাজে সহায়তা দান
আমাদের দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে এবং তাদের অধিকাংশ লোকই অশিক্ষিত। তাদের অনেকে শহরে অফিস-আদালত চেনে না। এজন্য দালাল এবং প্রতারকদের খপ্পরে তারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে। গ্রাম্যরাজনীতির কারণেও অনেক নির্দোষ লোক জুলুম-নির্যাতন, শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে। শোষক, দালাল-প্রতারকদের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করার জন্য অফিস-আদালতের কাজে তাদেরকে সহায়তা দান করা প্রয়োজন।
ঙ) সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা আদায়
সরকারিভাবে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষতঃ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থ যোগান দিয়ে থাকেন। কিন্তু দেখা যায় মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগ-সুবিধাগুলো নিজেরা ভোগ করে। এ ব্যাপারে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে।
– এলাকার সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।
– কখন কি সুযোগ-সুবিধা সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেয়া হয় তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা এবং আদায় করা।
– পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টিভির মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধার কথা জানা।
– এলাকায় রাস্তা নির্মাণ, স্বাস্থকেন্দ্র নির্মাণ এবং চিকিৎসা সহযোগিতার সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা।
– অনেক সময় প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্দোলন করেও
– সরকারি সুযোগ-সুবিধা আদায় করা।
– স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেয়া।
চ) শরিয়ত মোতাবেক যৌতুকবিহীন বিবাহ অনুষ্ঠান
আধুনিক জাহেলিয়াতের গড়া এ সমাজ ব্যবস্থা ইসলামবিরোধী রসম-রেওয়াজে পরিপূর্ণ। আজকাল মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে পিতা ঋণগ্রস্ত হচ্ছে, এমনকি জমাজমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এহেন অবস্থা থেকে পরিবারকে মুক্ত করার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা প্রয়োজন।
– প্রথমত বিবাহযোগ্য কন্যার খোঁজ খবর নিতে হবে। কন্যার সার্বিক অবস্থা জানতে হবে।
– চিন্তাভাবনা করে ঐ কন্যার উপযোগী ছেলে খুঁজতে হবে এবং এক্ষেত্রে সহকর্মীদের সহযোগিতা নিতে হবে।
– দুই পক্ষের (ছেলে ও মেয়ে) অভিভাবকদের সাথে প্রাথমিক আলাপ আলোচনা করতে হবে।
– দেখা ছাড়া সার্বিক বর্ণনায় উভয় পক্ষ আত্মীয়তা করতে সম্মত হলে ছেলে মেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
– আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা সাক্ষাতের পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে সুনির্দিষ্ট দিনে যৌতুক ছাড়া শরিয়ত নির্ধারিত নিয়মানুযায়ী বিবাহকার্য সম্পাদিত হবে।
– এক্ষেত্রে বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে ম্যারিজ ব্যারো ভূমিকা পালন করছে।
ছ) জামায়াতে নামাজের প্রচলন
আমাদের সমাজে বিশেষতঃ গ্রামবাংলায় জামারাতে নামাজের প্রচলন কম। গ্রামে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে নামাজ আদায় করেন। অথচ কুরআন সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী জামায়াতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।
তাই আমাদেরকে জামায়াতে নামাজের প্রচলনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে।
– প্রথমত যে মল্লায় জামায়াতে নামাজের প্রচলন নেই সেখানকার ঈমানদার বয়স্ক লোকদের একত্রিত করে জামায়াতে নামাজের গুরুত্ব বুঝানো।
– আলোচনার মাধ্যমে জামায়াতে নামাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা।
– আগ্রহী লোকদের নিয়ে স্থানীয় মসজিদ অথবা কারো বাড়ির কাচারিতে জামায়াতে নামাজের প্রচলন করা।
– একজন ইমাম এবং একজন মুয়াজ্জিন ঠিক করা।
– এ পর্যায়ে কুরআন শিক্ষার আসর এবং মাসলা-মাসায়েল শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে স্থানীয়ভাবে জামায়াতে নামাজ চালু থাকবে।
– মসজিদ স্থাপন করা।
জ) লাশ দাফন-কাফনে উদ্যোগী ভূমিকা
মানুষ মরণশীল। প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে। মৃত মানুষের আত্মীয়-স্বজনরা শোকে মুহ্যমান থাকে। এহেন পরিস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদেরকে সান্ত্বনা দান এবং লাশ দাফন-কাফন করা সবচেয়ে জরুরি কাজ। এ কাজে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে করণীয় কাজঃ
– মৃত ব্যক্তির বাড়িতে উপস্থিত হওয়া।
– আত্মীয়-স্বজনদের সান্ত্বনা দান করা।
– লাশ দেখা।
– লাশের গোসলের ব্যবস্থা করা।
– জানাজা শেষে কবরস্থানে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
– কবরস্থানে কবর খোড়া, সেখানে সমাহিত করা এবং কবরে মাটি দেয়া।
– এসব ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা, প্রয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা।
– অত্যন্ত পরিব মাইয়েত হলে ছেলে-মেয়েদেরকে সামাজিকভাবে কিছু আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা।
– এতিম শিশুদের দেখাশুনার ব্যবস্থা করা।
– প্রাথমিক কয়েক দিন খাবার দাবারের দায়-দায়িত্ব বহন করা।
ঝ) মাদকাসক্তি রোধে ভূমিকা পালন
বেকার হতাশাগ্রস্ত যুবকেরা আজ মাদকাসক্তিতে লিপ্ত, সিমজ্জিত। মাদকাসক্তি মানুষের জীবনী শক্তিকে শেষ করে দেয়। মাদকাসক্তি চরম নেশা। এ নেশা সর্বনাশা। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে মাদকাসক্তি রোধে ভূমিকা পালন করতে হবে। এ পর্যায়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে।
– মাদকাসক্তির অপকারিতা ও কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
– মাদকদ্রব্য যাতে নাগালের মধ্যে না পায় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে।
– মাদকাসক্ত রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
– মাদকদ্রব্যের প্রতি তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি করতে হবে।
ঞ) নির্মল সামাজিক বিনোদনের ব্যবস্থা করা
সুন্দর পুত-পবিত্র পরিবেশে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করে আদর্শ চরিত্রবান লোকদের মধ্যে তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা। সামাজিক বিনোদনের ব্যবস্থা করা। অপসংস্কৃতির সয়লাবে গোটা যুবসমাজ আজ ভেসে যাচ্ছে। তার মোকাবিলায় ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা তাই আজ সময়ে দাবি। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজ করা যেতে পারে:
– ইসলামী মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে রচিত জারি গান, ইসলামী সংগীত, নাটক ইত্যাদি শোনানোর ব্যবস্থা করা।
– বিভিন্ন দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা করা ও নির্মল সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা করা।
ট) ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করা
আল্লাহর মেহেরবানিতে এখন দেশে বহু ওয়ায়েজীন আলেমের সৃষ্টি হয়েছে। যারা ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে। এমনি ধরনের ওয়াজ মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সর্বত্র হওয়া দরকার।
এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে:
– প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ওয়ায়েজীনের সাথে আলাপ করে আপনার এলাকার জন্য একটা তারিখ নেবেন।
– এলাকার যুবকদের সমন্বয়ে ওয়াজ মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি করে যাবতীয় প্রচার ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের ওপর ন্যাস্ত করতে হবে।
– এজন্য পোস্টার, লিফলেট ছাপানো এবং লাগানো, মাইকিং করা।
– নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট দিনে মঞ্চ তৈরি করা, সামিয়ানা টানানো এবং জনগণের বসার ব্যবস্থা করা।
– বক্তাকে আনা নেয়ার ও মেহমানদারীর ব্যবস্থা করা।
– ওয়াজ মাহফিলে কিছু লোককে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব দেয়া।
– বিভিন্ন বিভাগ করে সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া।
– মাহফিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ।
– মাহফিল শেষে পর্যালোচনা বৈঠক করে ভুলত্রুটি সংশোধন করে আগামীতে আরো ভাল ও সার্থক মাহফিল করার প্রস্তুতি নেয়া।
ঠ) মানবিক সহযোগিতা প্রদান
সমাজে বসবাসরত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, দরিদ্র ও কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবার, এতিম, মিসকিন, বিধবা, দুস্থ ও অসহায় মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করা।
পঞ্চম অধ্যায় : প্রাতিষ্ঠানিভাবে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা
পূর্ববর্তী অধ্যায়ে ব্যক্তিগত ও অনানুষ্ঠানিক দলের মাধ্যমে যে সকল সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় এবং তাদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি কি সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বর্তমান অধ্যায়ে প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির মাধ্যমে কীভাবে সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। উল্লেখ্য যে, চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত সকল কার্যক্রমই সুসংগঠিতভাবে পেশাধারী মান বজায় রেখে বড় আকারে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রহণ করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি কর্মসূচিই দেশের সর্বত্র গ্রহণ করা নাও যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল, আর্থিক সংগতি ইত্যাদির ওপর নির্ভর করেই কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়।
৫.১ সমাজকল্যাণমূলক কাজের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
বর্তমানে দেশে সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন সংস্থার প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নিবন্ধন লাভের মাধ্যমে এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়:
– সরকারের সমাজকল্যাণমূলক অধিদপ্তর হতে নিবন্ধন লাভের মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হয়।
– শুধু মাত্র মহিলাদের মধ্যে সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর হতে নিবন্ধন লাভের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যায়।
– সমবায় সমিতি গঠন- জেলা সমবায় অফিস হতে নিবন্ধন লাভকরতে হবে।
– ট্রাষ্ট গঠন-ট্রাষ্ট চুক্তি রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে করা যায়।
– বিদেশী অনুদানের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে।
– কোম্পানী আইনের আওতায় “লাভের জন্য নহে” (Not for profit) কোম্পানী গঠন করা যায়। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর কার্যালয় হতে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে।
উল্লিখিত প্রতিটি ধরনের নিবন্ধন লাভের জন্য পদ্ধতি আলাদা। সংশ্লিষ্ট অফিস হতে নিয়মাবলী জেনে নিয়ে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। তবে সাধারণভাবে যে বিষয়গুলো প্রয়োজন হয় তাহলো:
ক) প্রস্তাবিত সংস্থার গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করা।
খ) মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা।
গ) সুষ্ঠু হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ঘ) এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনের জন্য বিদেশী দাতা সংস্থার অনুদান প্রদানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পত্র।
ঙ) প্রাথমিক নিবন্ধন হিসেবে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধন গ্রহণ।
৫.২ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের যাস্তবায়ন
চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত কার্যক্রমসমূহের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়নপদ্ধতি নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো। উল্লেখ্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজকল্যাণমূলক কাজের কেন্দ্রবিন্দু হলো অভীষ্ট জনগোষ্ঠী, যাদের উদ্দেশ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে তাদের দলবন্ধ করা। যেমন শিশুদের দলবন্ধ করা, নারী ও পুরুষদের দলবন্ধ করা, দরিদ্রদের দলবন্ধ করা বা পেশাজীবীদের দলবদ্ধ করা ইত্যাদি। আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন লাভের পূর্বেও একাজ করা যেতে পারে।
৫.২.১ শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন
ক) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন সময়ের দাবি। সৎ ও যোগ্য নাগরিক সৃষ্টির লক্ষ্যে তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে।
– প্রথমতঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার জন্য একটা স্থান নির্ধারণ করতে হবে।
– ছাত্র সংগ্রহের জন্য প্রচারকার্য চালাতে হবে।
– প্রাথমিকভাবে দুইটি ক্লাস এবং পরে প্রতি বছর ১টি করে ক্লাস খুলতে হবে।
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ১ জন সভাপতি, ১ জন সেক্রেটারি, ১ জন কোষাধ্যক্ষ ও ৪ জন সদস্য-সদস্যা নিয়োগ করতে হবে।
– স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে।
– কমিটির বৈঠক ৩ মাসে কমপক্ষে একবার অনুষ্ঠিত হবে। কমিটির বৈঠকে পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন, অনুমোদন, বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
– শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে সরকারি অনুমোদন ও সহযোগিতা পেতে পারে তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা।
খ) উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা
চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত শিশু বয়স্কশিক্ষা কার্যক্রমের মতই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একই কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। এক্ষেত্রে মূল কাজ হলোঃ
– শিক্ষা কার্যক্রম শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদাভাবে দলবদ্ধ করা।
– অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করে সময় নির্ধারণ করা।
– শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ করা।
– শিক্ষক/শিক্ষিকার ভাতার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।
– অনুদান সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে অল্প বেতন গ্রহণ করা যেতে পারে। গ্রামাঞ্চলে এসএসসি/এইচএসসি পাশ শিক্ষককে মাসিক ৩০০০-৪০০০ টাকা ভাতা প্রদান করা হলে দৈনিক তিন ঘণ্টা পড়াবে বলে আশা করা যায়। সেক্ষেত্রে ছাত্রসংখ্যা যদি ৩০ জন হয়, জনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা বেতন প্রদান করলেই শিক্ষক/শিক্ষিকার ভাতার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
৫.২.২ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
ইসলামী সমাজ হবে কর্মমুখর সমাজ। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। এ পরিস্থিতিতে স্ব-কর্মসংস্থানই একমাত্র বিকল্প। আর স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী। তাছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ব্যক্তি সহজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত/স্বল্প শিক্ষিত, এমনকি অশিক্ষিত নারী-পুরুষদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় বা প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়তা করা যায়।
প্রশিক্ষণের কিছু ক্ষেত্রের উদাহরণ প্রদান করা হলো:
– মাছ চাষ
– হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন
– নার্সারী তৈরি
– শাক-সবজি ও ফলের চাষ
– মৌচাষ
– কাঠ, বেত, বাঁশের কাজ, পাটজাত দ্রব্য তৈরি
– হস্তশিল্প, মৃৎ শিল্প
– রন্ধন শিল্প
– ঢালাই, ওয়েলডিং, ড্রাইভিং
– কম্পিউটারের ব্যবহার
– ইলেক্ট্রনিকস
বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। প্রশিক্ষণের বিষয় নির্ধারণ করতে হবে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর কর্মসংস্থানের সুযোগের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষকও আমন্ত্রণ করা যেতে পারে।
– শিক্ষা কর্মসূচির মত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও দলভিত্তিক হতে হবে।
– বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
– কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।
– এছাড়া সংস্থা নিজস্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রথমে প্রশিক্ষিত করে তাদের মাধ্যমে অভীষ্ট জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে।
৫.২.৩ স্বাস্থ্য স্যানিটেশন কার্যক্রম
ক) চিকিৎসা সেবা প্রদান
– সংস্থার উদ্যোগে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসালয় স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব। গ্রামাঞ্চলে অনেক এলাকায় ফি প্রদান করেও ডাক্তার পাওয়া যায় না।
– এ অবস্থায় সংস্থা ডাক্তার নিয়োগ করতে পারে। একজন সদ্য পাশ করা ডাক্তারকে ২০,০০০/২৫,০০০ টাকা বেতন প্রদান করা প্রয়োজন হতে পারে।
– ডাক্তারের বেতন ভাতা রোগীদের প্রদত্ত সেবামূল্য থেকে প্রদান করা সম্ভব।
– সহজ একটি হিসাব প্রদান করা হলো। ডাক্তারের মাসিক বেতন যদি ২০,০০০ টাকা হয় এবং তিনি যদি ২৫ দিন রোগীদেরকে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন তাহলে প্রতিদিন রুগীদের সেবামূল্য বাবদ মাত্র ১,০০০ টাকা আয় হওয়া প্রয়োজন।
– দরিদ্র রোগীদের নিকট হতে ৫০ টাকা ফি গ্রহণ করা হলে প্রতিদিন মাত্র ২০ জন রোগী হলেই ডাক্তারের বেতনের খরচ আয় করা যায়। তবে অবস্থাসম্পন্ন রোগীদের নিকট হতে ১০০ টাকা হারে সেবামূল্য গ্রহণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দরিদ্র রোগীদের সেবামূল্য আরও কমানো যেতে পারে।
– এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা হতে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে তা দরিদ্র রোগীদের বিতরণ করা যায়।
– অবস্থাসম্পন্ন রোগীদের নিকট ক্রয়মূল্যে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ওষুধ প্রদান করা যায়।
– নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার শুধু ব্যবস্থাপত্রই দেবেন না, বরং স্বাস্থ্য বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত জ্ঞানও রোগীদের এবং অভীষ্ট জনগোষ্ঠীকে প্রদান করবেন।
খ) স্যানিটেশন কর্মসূচি
– বিভিন্ন সংস্থা টিউবওয়েল ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা প্রকল্পের জন্য অনুদান প্রদান করে।
– উক্ত অনুদানের মাধ্যমে টিউবওয়েল ক্রয় এবং পায়খানা প্রস্তুত করে বিক্রয় করা যেতে পারে।
– টিউবওয়েল এবং স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ঋণের ভিত্তিতেও প্রদান করা যায়। সাপ্তাহিক কিস্তিতে দাম আদায় করা যেতে পারে।
৫.২.৪ স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ কর্মসূচি
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য পুঁজি সরবরাহ করা একান্ত জরুরি।
এর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে:
– দরিদ্রদের ২০ জনের দলে সংগঠিত করতে হবে।
– দলীয় সদস্যগণ নিয়মিত সাপ্তাহিক সভা করবে।
– সাপ্তাহিক সভায় সচেতনমূলক বিষয়াদি নিয়ে সংস্থার কর্মী আলোচনা করবেন।
– দলীয় সদস্যগণ প্রতি সপ্তাহে অল্প হলেও সঞ্চয় করবে।
– দলীয় সঞ্চয় দলের ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখতে হবে।
– সঞ্চয়ের সঠিক হিসাব রাখার জন্য সদস্যদের পাশ বই প্রদান করতে হবে; দলে ক্যাশ বই এবং সঞ্চয় হিসাব বই চালু করতে হবে।
– সদস্যগণ নিয়মিত ৬ মাস হতে ১ বছর সঞ্চয় করার পর ও সাপ্তাহিক সভায় যোগদানের পর ঋণ সরবরাহ করা যায়।
– বিনিয়োগ অবশ্যই সুনির্দিষ্ট লাভজনক কর্মকাণ্ডে (পরিশিষ্ট-১ দেখুন) প্রদান করতে হবে।
– বিনিয়োগ সাপ্তাহিক কিস্তিতে আদায় করতে হবে।
– সংস্থার নিজস্ব তহবিল হতে ঋণ প্রদান করতে হবে। নিজস্ব তহবিল না থাকলে সদস্যদের সঞ্চয় হতে তাদের মধ্যে ঋণ প্রদান করা যায়।
– বিনিয়োগ ন্যায্য সার্ভিস চার্জ বা লাভের ভিত্তিতে প্রদান করতে হবে।
– সংস্থার মাঠকর্মীদের নিয়মিত বিনিয়োগ কর্মসূচি তত্ত্বাবধান করতে হবে।
– সর্বোপরি বিনিয়োগ কর্মসূচি শুরুর পূর্বে সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অবশ্যই বিনিয়োগ কর্মসূচি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। নচেৎ বিনিয়োগ কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়া এবং বিনিয়োগ আদায় না হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বিনিয়োগ কর্মসূচি ছাড়াও আয়বৃদ্ধির জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বা এলাকাবাসীদের তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা এবং আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে পরামর্শ প্রদান করা যেতে পারে। সংস্থা এবং অভীষ্ট জনগোষ্ঠী যৌথভাবে বিভিন্ন আয় বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প যেমন: মাছ চাষ, কৃষিকাজ, পোশাক প্রস্তুত করা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়মাবলী পরিশিষ্ট-২ এ উল্লেখ করা হয়েছে।
৫.২.৫ অন্যান্য কার্যক্রম
উপরে বর্ণিত কর্মসূচি ছাড়াও সংস্থাপর্যায়ে চতুর্থ অধ্যায়ে উল্লিখিত কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:
– আইনগত সহায়তা প্রদান কর্মসূচি।
– অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
– সামাজিক বনায়ন ও রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ।
– নৈতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম।
– পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
– কৃষি প্রযুক্তির প্রসার ও কৃষি উন্নয়ন।
– ত্রাণ ও পুনর্বাসন।
– দরিদ্যদের জন্য গৃহায়ন কার্যক্রম।
৫.২.৬ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাস আমাদের নিত্য সঙ্গী। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর উপর ভরসা করে মোকাবিলা করতে হয়। এ ধরনের দুর্যোগের সময় পারস্পরিক সহযোগিতা, কিছু পূর্বসতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো সম্ভব।
দুর্যোগপূর্ব সতর্কতা
– অনেক সময়েই দেখা গেছে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পূর্বে সাবধানবাণী রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হওয়া সত্ত্বেও জনসাধারণ এসবের গুরুত্ব না দেয়াতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এজন্য এ ধরনের খবর জানার সাথে সাথে চারিদিকে প্রচার করা এবং নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
– আশ্রয় হিসাবে পাকা স্কুলঘর, মসজিদ, পাকা দালান ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
– নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অক্ষমদের পূর্বে নিরাপদ আশ্রয়ে প্রেরণ করতে হবে।
– স্থানীয় যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা, যারা উপরিউক্ত কাজগুলো সুশৃংখলভাবে করবে।
– সম্ভব হলে প্রত্যেক এলাকাতেই শুষ্ক মৌসুমে এ ধরনের যুবকদের দল গঠন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা ভাল।
– উপযুক্ত পাত্রে শুকনো খাবার, ম্যাচ ইত্যাদি মাটির গভীরে পুঁতে রাখতে হবে। দুর্যোগ, বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসের পরে এ ধরনের খাবার অতীব কাজে লাগে। এছাড়া খাবার পানি ও কলসীর মুখ ভালভাবে বন্ধ করে মাটির নীচে পুতে রাখতে হবে।
– টিউবওয়েলের উপরের অংশ খুলে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে এবং পাইপের মুখ ভালভাবে পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হবে যাতে করে ময়লা বা নোনা পানি না ঢুকতে পারে। দুর্যোগ কেটে গেলে পুনরায় টিওবওয়েল স্থাপন করতে হবে।
– প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার (First aid) জিনিসপত্র সব এলাকাতেই মজুদ রাখা বাঞ্ছনীয়।
দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে করণীয়
– দুর্যোগ চলাকালীন সময় সাধারণতঃ বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। এসময়ে আশ্রয় কেন্দ্রে শৃংখলা রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীর উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
– এ সময়ে বেশি বেশি আল্লাহর রহমত কামনা করতে হবে। নামাযের ব্যবস্থা করতে হবে।
দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে করণীয়
– কোন কারণে কেউ আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা করা। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা।
– শুকনো খাবার বিতরণ করা।
– বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা। দুর্যোগের পরবর্তীতে মহামারি প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার সবচেয়ে কার্যকর।
– বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা প্রস্তুত করা।
– পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসস্থল পুনঃনির্মাণ করা।
– সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় দ্রুত জলাশয় ইত্যাদির আবর্জনা, লোনা পানি মুক্ত করা।
– সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথম সহায়তা প্রদান করা।
– ধীরে ধীরে দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
ষষ্ঠ অধ্যায় : সমাজকল্যাণমূলক কাজের অর্থায়ন
ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংগতি বিশেষভাবে প্রয়োজন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে অর্থের তেমন প্রয়োজন হবে না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে অর্থ অত্যন্ত জরুরি। এখানে কার্যক্রমসমূহের জন্য অর্থায়নের সম্ভাব্য কিছু উৎস ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি পরিচালনা করতে হলে মূলতঃ দুই ধরনের খরচ প্রয়োজনঃ
১) প্রশাসনিক খরচ এবং
২) কার্যক্রমের খরচ।
৬. কার্যক্রম পরিচালনার অর্থায়নের সম্ভাব্য উৎস
– জাকাত ও ওশর।
– ব্যক্তিগতদান সংগ্রহ।
– সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুদান।
– সংস্থা কর্তৃক গৃহীত আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম হতে আয়। যেমন: মাছ চাষ, নার্সারী ইত্যাদি।
– বিনিয়োগ কর্মসূচি হতে লাভ।
– সরকারি বেসরকারি সংস্থা হতে বিনিয়োগ গ্রহণ।
– কার্যক্রমের জন্য খরচের ন্যায্য দাম অভীষ্ট জনগোষ্ঠী হতে গ্রহণ; যেমন- স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের জন্য ন্যূনতম ফি গ্রহণ, শিক্ষকের ভাতার জন্য ছাত্রদের নিকট হতে স্বল্প বেতন গ্রহণ, ঋণ কর্মসূচি হতে লাভ গ্রহণ ইত্যাদি।
সপ্তম অধ্যায় : কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়ন
৭.১. কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়ন
যে কোনো প্রকল্প ব্যবস্থাপনাকে আমরা চারটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি:
ক) পরিকল্পনা গ্রহণ,
খ) বাস্তবায়ন,
গ) মনিটরিং ও
ঘ) মূল্যায়ন।
ক) কোনো প্রকল্প যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনা পর্যায়ে কয়েকটি মৌলিক কাজ করতে হবে:
– কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ
– অভীষ্ট জনগোষ্ঠী সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ
– কর্মসূচি সংক্রান্ত নীতিমালা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ
– বাস্তবায়নের জন্য প্রমিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল সংগ্রহ/নির্বাচন
– অর্থ সংগ্রহ
– অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধাদি সংগ্রহ
– কার্যক্রমের সময়কাল নির্ধারণ
খ) পরবর্তী পদক্ষেপ হলো প্রকল্প শুরু করা বা বাস্তবায়ন করা। এ পর্যায়ে মূলকাজ হলো:
– পরিকল্পনা মোতাবেক বাস্তবায়ন করা
গ) যে কোনো প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তার জন্য নিয়মিত নিরবচ্ছিন্নভাবে মনিটরিং করতে হবে। মনিটরিং হলো কার্যক্রমটি পরিকল্পনা মোতাবেক বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা সবসময় যাচাই-বাছাই করা। এর পদ্ধতি হলো:
– অভীষ্ট জনগোষ্ঠী সঠিকভাবে নির্ধারিত করা হয়েছে কিনা যাচাই করা।
– কার্যক্রম নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী হচ্ছে কিনা যাচাই করা।
– সংস্থার জনশক্তি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা যাচাই করা।
– আয় ব্যয়ের সমন্বয় আছে কিনা যাচাই করা।
– এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য/উপাত্ত নিয়মিত সংগ্রহ করা।
– সংস্থার পরিচালনা পরিষদ তথ্যের ভিত্তিতে কার্যক্রম বিশ্লেষণ করবেন।
ঘ) মনিটরিং এর পরবর্তী পদক্ষেপ হলো কার্যক্রমের মূল্যায়ন। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর, যেমন: একবছর বা কার্যক্রমের মেয়াদ শেষে কর্মসূচি মূল্যায়ন করতে হবে।
– মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম তার লক্ষ্য হাসিল করতে পেরেছে কিনা যাচাই করা।
– উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে শিক্ষা কার্যক্রমের মেয়াদ শেষে যাচাই করতে হবে ছাত্ররা সঠিক মান পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে কিনা বা
– ঋণের মাধ্যমে ঋণ গ্রহীতার স্ব-কর্মসংস্থান হয়েছে কিনা এবং তিনি নিজের আয় দ্বারা চলতে পারছেন কিনা বা
– স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রচার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা জনপ্রিয় করার ফলে রোগব্যাধি কমেছে কি না।
মূল্যায়নের মাধ্যমে সফলতার বা ব্যর্থতার সঠিক কারণ নির্ধাবণ করতে হবে এবং সে মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অষ্টম অধ্যায় : পরিকল্পনা
প্রাথমিক পর্যায়
১। প্রাথমিক পর্যায়ে সেলাইকাজের অভিজ্ঞতা বা আগ্রহ আছে এমন পর্যায়ের একজন দ্বীনি ভাই ও একজন বোনকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে এর জন্য উপযুক্ত হবেন একজোড়া স্বামী-স্ত্রী, যারা উভয়ে সেলাই-এর ব্যাপারে পারদর্শী। এতে করে পুরুষকর্মী ও মহিলাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের সুবিধা হবে।
২। কোন দ্বীনি ভাইয়ের বাসায় একটা রুম ‘আল হিজাব’ প্রকল্পের ষ্টোর রুম হিসাবে ভাড়া নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়।
৩। একজন ভাল কাটিং মাষ্টার খুঁজে বের করতে হবে। যিনি ডিজাইন অনুযায়ী কাপড় কাটাতে পারেন। তাঁকে প্রতি পিচ পোশাকের জন্য পূর্ব নির্ধারিত কাটিং-এর মূল্য অনুযায়ী মজুরি দেয়া হবে। চেষ্টা করতে হবে যেন কাটিং মাস্টার ইসলামী চরিত্রের অধিকারী হন, তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। কেননা তিনি আমাদের পছন্দসই নমুনা অনুযায়ী কাপড় কাটবেন।
৪। এবার আমাদের জনশক্তির মধ্য থেকে সেলাই জানা ও সেলাই করতে সক্ষম পর্দানশীল মহিলাদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে এবং তাদের কাজের মানের বাস্তব ভিত্তিক মূল্যায়ন করতে হবে।
৫। প্রয়োজন মতো মহিলা জনশক্তির ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে। কোনক্রমে নিম্নমানের সেলাই করা পোশাক বাজারজাত করা যাবে না।
৬। যিনি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবেন, তাকে অবশ্যই কাপড় বাজারজাত, কাপড় কাটা ও সেলাইয়ের ভাল জ্ঞান রাখতে হবে। তাছাড়া পোশাক তৈরির জন্য কাপড় কেনার ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞ হতে হবে।
৭। প্রথমে স্বল্প সংখ্যক পোশাক তৈরির পরিকল্পনা নিতে হবে। যেমন কয়েক প্রকার বোরকা, ব্লাউজ, বাচ্চাদের জামা ইত্যাদি। বাজার যাচাই করে এই সব পোশাকের ডিজাইন ঠিক করে নমুনা তৈরি করতে হবে। নমুনায় নতুনত্ব ও শালীনতা থাকতে হবে।
৯। বাজারের প্রচলিত দামের ধারণা নিয়ে নিজেদের লাভ রেখে পোশাকের বিক্রয় মূল্য ঠিক করতে হবে। কাপড়ের দাম পোশাক তৈরির যাবতীয় খরচ যোগ করে তার ওপর ২৫% থেকে ৩০% দাম বাড়িয়ে বিক্রয় মূল্য ঠিক করতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাজার মূল্য, বিক্রয় করার পদ্ধতি ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে।
১০। মার্কেটে পাইকারী বিক্রি ছাড়াও নিজস্ব জনশক্তির মধ্যে “আল-হিজাব” পরিচিত করে তোলার লক্ষ্যে জেলা/মানগরী সংগঠনের নিয়মিত প্রোগ্রামে বিক্রয় করতে হবে। অথবা ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১। একবার একই ধরনের পোশাক বেশি তৈরি করে চলতি মূলধন আটকানো যাবে না। চলতি মূলধন সব সময়েই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যয় এবং আয় করতে হবে। এতে করে অল্প পুঁজিতেই ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে। আয় অনুযায়ী ব্যয় করে আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়ানো যেতে পারে।
জনগণের অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা
জনগণের অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা একটি মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধের কারণে জনগণ যৌথভাবে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। যাদের জন্য উন্নয়ন তারা নিজেরাই এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। এই পরিকল্পনা শূ’রায়ী (পরামর্শভিত্তিক) সিদ্ধান্তকে মূল্য দিয়ে থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা এতে যথাযথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই পরিকল্পনা ১২টি মডিউলের মাধ্যমে কার্যকরী হয়ে থাকে। নিম্নে মডিউলগুলো যথাযথ উল্লেখ করা হল-
ধাপ/মডিউল নং-১
জনগণের পরিকল্পনা (পিপিপি) অবহিতকরণ
কি : জনগণের অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা প্রক্রিয়া (পিপিপি) বিষয়ে বিস্তারিত জানানো।
কেন : জনগণের পরিকল্পনা বা পিপিপি করতে জনগণ রাজী আছে কি না তা জানা।
: জনগণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে বুঝানো।
: জনগণের পরিকল্পনা বা পিপিপি ধারণাটি কেন যোগ করা হলো
: জনগণ এ মূল্যবোধে বিশ্বাস করে কি না তা জানা
: আহ্বায়ক, চালক ও লেখক নির্বাচন করা।
ধাপ/মডিউল নং- ২
উদ্বোধনী/চালুকরণ
কি : সমিতির জনগণ বা সদস্য/সদস্যা দ্বারা আয়োজিত একটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। তাদের সবার এবং গ্রামের গণ্যমান্য ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে একটি স্মরণীয় দিন তৈরি করা। এলাকার ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্য ও সুরা ভিত্তিক বিষয়াবলী অবহিতকরণ।
কেন : জনগণের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করা
: জনগণের পরিকল্পনার গুরুত্বটি আরও অধিকতর মর্যাদাশীল করে তোলা
: জনগণের জীবনে নতুন ধারণাটিকে স্মরণীয় করে রাখা
: জনগণের পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা, সুবিধা ও অসুবিধা তুলে ধরা
: এলাকাবাসীর মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে সাড়া জাগানো।
ধাপ/মডিউল নং- ৩
আমাদের অতীত আলোচনা ও উন্নয়ন যাত্রা
কি : নিজেদের গ্রামের ও পাশের এলাকার মনে রাখার মতো অতীতের ঘটনাগুলোর ভাল-মন্দ দিক ও এর ফলাফল জানবার একটি ধাপ। (অতীতের সময় বা ঘটনাগুলোকে কয়েকটি বছরে বা খণ্ডকালে ভাগ করে ভাল-মন্দ দিক ও ফলাফল দেখা ও জানা)।
কেন : অতীতে জনগণ তাদের সমস্যাকে যে জ্ঞান, দক্ষতা ও শক্তি দ্বারা মোকাবিলা করেছে সে জ্ঞানের বিষয়ে আবার জানা ও ভবিষ্যতে তাদের সব রকম উন্নতির জন্য তা কাজে লাগানো।
: অতীতের ঘটনাগুলোর কারণে সমাজের কারা বেশি কষ্ট পেয়েছিল ও কারা বেশি সুখ (সুফল) পেয়েছিল তা জানা।
: জনগণ যাতে তাদের অতীতের অবস্থাকে মনে করে নিজেদের বর্তমান অবস্থাকে সঠিকভাবে যাচাই করতে পারে।
: অতীতে বিভিন্ন সময়ে কি কি সামাজিক পরিবর্তন ও তা কতবার ঘটেছিল এবং তার ফল কি হয়েছিল তা জানা।
ধাপ/মডিউল নং- ৪
আমাদের আজকের গ্রাম
কি :আমাদের গ্রামের বিভিন্ন সম্পদ কেথায় কি অবস্থায় আছে তা জানা। অর্থাৎ জমি, পুকুর, খাল, বিল রাস্তাঘাট, গাছপালা, নদী, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ইত্যাদি কোথায়, কতটি আছে তা বিস্তারিতভাবে জানা।
কেন : গ্রামের একটি নমুনা তৈরি করা এবং সেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করা।
: আমাদের গ্রামের নৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত অবস্থা চিহ্নিত করা।
: গ্রামের বর্তমান অবস্থা সঠিকভাবে জানা যাতে করে গ্রামের সঠিক ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।
ধাপ/মডিউল নং- ৫
গ্রামের সমাজ কাঠামো বিশ্লেষণ
কি : গ্রামে বিভিন্ন সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ জমি, পুকুর, রাস্তা, খাল-বিল, গাছ-পালা, নদী, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, মক্তব-মাদরাসা, হাসপাতাল, ডাক্তারখানা, ক্লাব, চাউলের কল, স’মিল, তহশিল অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদির মালিকানা কার কাছে তা খতিয়ে দেখা।
: কয়জন মানুষের কাছে কত (পাখি/কানি/বিঘা/শতাংশ/হাড়ি) জমি আছে তা দেখা। গ্রামের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, গাছ-পালা, পুকুর কাদের হাতে বেশি আছে তা দেখা।
: হাসপাতাল বা ডাক্তারখানায় কারা দাম ছাড়া ঔষধ পায় আর কারা একেবারেই পায় না।
: স্কুল-মাদরাসা, মক্তবগুলোতে কারা লেখাপড়া করার সুযোগ পায়, কারা পায় না তা দেখা।
: গ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সুবিধা কে কতটুকু ভোগ করে তা খতিয়ে দেখা।
: গ্রামের মাতব্বর/মেম্বার/চেয়ারম্যান কারা হয়।
: বাড়িঘর কাদের কেমন- এগুলো খুঁজে বের করা ও গ্রামে কতজন ধনী, কতজন মাঝারী ও কতজন গরিব তা হিসাব করে কে কতটুকু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে আর কে পাচ্ছে না তা বের করা। গ্রামের বিচার সালিশ কে করে, কীভাবে করে, কারা বেশি ক্ষমতাবান, কাদের হাতে ক্ষমতা নাই- কেন নেই ইত্যাদি খতিয়ে দেখা।
কেন : কেন ধনী আরো ধনী হয় এবং গরিব আরো গরিব হয় তা খুঁজে বের করা। কেন গরিব মানুষ ঠকছে, সুযোগ-সুবিধা থেকে বাদ পড়ছে, কাজের উচিৎ দাম পাচ্ছে না, পদে পদে মার খাচ্ছে এবং কেন গরিবদের উন্নতির কাজে বাধা আসছে তা জানা।
: গরিবের জন্য আসা বিভিন্ন রিলিফ (টাকা, চাউল, গম, পোষাক ইত্যাদি) গরিবরাই পাচ্ছে- না কি ধনীরা আত্মসাৎ করছে তা খতিয়ে দেখা।
: প্রত্যেক সমাজের একটা কাঠামো আছে এবং প্রত্যেক মানুষই এই কাঠামোর কোথাও না কোথাও আছে। এই কাঠামোগত অবস্থানের ওপরেই তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত অবস্থা নির্ভর করে। সমাজে কোথায় কার অবস্থান-কেন তার এ অবস্থান ইত্যাদি সকল দিক খতিয়ে দেখা, যাতে জনগণ তাদের সঠিক সমস্যা বের করতে পারে এবং তা সমাধানের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে পারে।
ধাপ/মডিউল নং- ৬
ছোট থেকে বড় স্তরে সম্পর্ক (Micro-Macro Relation)
কি : আমাদের সাথে পাশের গ্রামের সমস্যা মিলিয়ে দেখা। অর্থাৎ আমাদের গ্রামের যে সকল সমস্যা আছে সেগুলো পাশের গ্রামের রয়েছে কি-না। এভাবে সমস্যার আলোকে গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ভাবতে হবে এবং ইউনিয়ন থেকে থানা, জেলা এবং দেশের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে যে, এরূপ সম্পর্ক সেখানেও রয়েছে কি-না অর্থাৎ আমাদের গ্রামে সে সমস্যা রয়েছে সেই রকম সমস্যা সারা দেশে আছে কি-না।
কেন : আমাদের গ্রামের মত খারাপ অবস্থা এ দেশের আরও অনেক গ্রামেই আছে কি না তা দেখা।
: বাইরের সমস্যাগুলো আমাদের গ্রামের সমস্যাকে প্রভাবিত করছে কি না তা দেখা বা জানা।
: এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য গ্রামের লোকদের কতটুকু সাড়া দেয়া সম্ভব আর কতটুকু সম্ভব নয় তা দেখা।
: নিজেকে বা নিজেদেরকে বর্তমান অবস্থায় বিচ্ছিন্ন না ভেবে গোটা দেশের বা একটা সমস্যায় জর্জরিত জনগোষ্ঠীর সংগে সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে খতিয়ে দেখা, কে কীভাবে গোটা অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করছে কোথায় সমস্যার শিকড় বিরাজমান তা খুঁজে বের করা।
: নিজেদের অবস্থা বোঝা এবং সারা দেশের অবস্থার সাথে তুলনা করা।
ধাপ/মডিউল নং- ৭
সমস্যার কারণসমূহ বিশ্লেষণ
কি : সমস্যার কারণ, কারণের কারণ (কাঠামোগত সমস্যা) ও মূল কারণ খুঁজে বের করা বা খতিয়ে দেখা।
কেন : আমরা সব সময় কোন সমস্যা দেখলেই সে সমস্যাকে সমাধান করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করি না। ফলে সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়। সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে এবং মূল কারণের সমাধান না করলে সমস্যার সমাধান কোন দিন সম্ভব হবে না। এই ধাপে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করাই এর উদ্দেশ্য।
ধাপ/মডিউল নং- ৮
জবাব বা সমস্যা সমাধানে সাড়া
কি : বিভিন্ন সমাধানের জন্য জনগণ, সংস্থা ও সরকার কতটুকু কাজ করেছে তা দেখা বা খুঁজে বের করা।
কেন : সমস্যার ওপর জবাব কি ছিল
: সমস্যা মিটেছে কি-না
: মস্যার জন্য জনগণ, সংস্থা ও সরকার কতটুকু কাজ করেছে তা খুব ভালভাবে দেখা বা জানা।
: সরকার, সংস্থা ও জনগণের পূর্বের সাড়াগুলো সমস্যা সমাধানে কতটুকু সহায়ক হয়েছে তা দেখা এবং কোন ইতিবাচক সাড়াগুলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় চলমান রাখা প্রয়োজন তা খুঁজে বের করা।
ধাপ/মডিউল নং- ৯
জনগণের নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্য নিরূপণ
কি : জনগণের সম্পদ ও সামর্থ্য নিরূপণ করা এবং তাদের নিজেদের উন্নয়নে কি পরিমাণ সম্পদ ব্যবহার করতে পারে তা বের করা।
কেন : জনগণ কোনদিনই সম্পদহীন ছিল না তা ভালভাবে বুঝা ও জানা।
: নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থের সাথে পরিচয় ঘটানো।
: নিজস্ব সম্পদকে আর্থিক মানদণ্ডে মূল্যায়ন বা গুরুত্ব দেয়া।
: তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় নিজেদের সম্পদ/টাকার পরিমাণ নিরূপণ করা।
: সমিতি অনুযায়ী নিজেদের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
: সরকার, সংস্থা ও অন্যান্য উৎস থেকে কেমন সাহায্য/সহযোগিতা পাওয়া যাবে তা জানা।
ধাপ/মডিউল নং- ১০
আমাদের সমাজের প্রত্যাশিত রূপ
কি : আমাদের গ্রামকে ভবিষ্যতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিকে আমরা কীভাবে দেখতে চাই তা নিরূপণ করা।
কেন : ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা জানা।
: জনগণের স্বাধীন চিন্তা চেতনা অনুযায়ী গ্রামের নৈতিকভিত্তিক ভবিষ্যৎ মডেল তৈরি করা।
ধাপ/মডিউল নং- ১১
জনগণের পরিকল্পনা
কি : জনগণের অংশগ্রহণমূলক মূল্যবোধের ভিত্তিতে তাদের প্রয়োজন, সম্পদ ও সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাজেট তৈরি করার মাধ্যমে টেকসই এবং অর্জনযোগ্য উন্নয়ন চিন্তা ভাবনাই হলো “জনগণের পরিকল্পনা”
কেন : টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন করা।
: কর্মসূচি বাছাই করা।
: পরিকল্পনা তৈরির পর প্রতিটি কর্মসূচির সম্ভাব্যতা (Feasibility), স্বনির্ভরতা (Viability) এবং সামঞ্জস্যতা বা মিল (CONGRUENCY) ইত্যাদি দিক যাচাই করা, যাতে করে এ পরিকল্পনায় জনগণের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
ধাপ/মডিউল নং- ১২
মনিটরিং ও মূল্যায়ন
কি : জনগণের উন্নয়নের জন্য তাদের গৃহীত পদক্ষেপ সঠিকপথে অগ্রসর হচ্ছে কি-না তা তাদের দ্বারাই সার্বক্ষণিকভাবে দেখা ও পর্যায়ক্রমিক ভাবে মূল্যায়ন করা।
কেন : কর্মসূচি সঠিক পথে ও সঠিক সময়ে সম্পন্ন করা।
: সম্পদ ও সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
: কর্মসূচির ফলাফলের ভাল-মন্দ দিক যাচাই করে দেখা এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
: ফলাফল থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন ও পুনরায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ (কাজের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা এবং পুনরায় কাজ করা।
পরিশিষ্ট- ১
পল্লী এলাকার বিত্তহীন-ভূমিহীনদের যে সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থসংস্থান করা যেতে পারে তার একটি সম্ভাব্য তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো:
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ম্যানুফেকচারিং
বাঁশের কাজ
বেতের কাজ
মৃৎ শিল্পজাত দ্রব্যাদি তৈরিকরণ
মুড়ি প্রস্তুতকরণ
হালকা খাবার প্রস্তুতকরণ
আখ মাড়াইকরণ
রিকশা তৈরি ও মেরামতকরণ
সরবত প্রস্তুতকরণ
ঝাড়ু তৈরিকরণ
মিষ্টি প্রস্তুতকরণ
আসবাবপত্র তৈরিকরণ
ছাতা তৈরিকরণ
ঘড়ি মেরামতকরণ
ধান ভাঙ্গা
ডাল ভাঙ্গা
সাইকেল মেরামতকরণ
কসাইখানা
হাত পাখা তৈরিকরণ
রেডিও মেরামতকরণ
লেপ/তোষক তৈরিকরণ
কাঠ চেরাইকরণ
সরিষার তেল প্রস্তুকরণ
চুন প্রস্তুকরণ
পাটি তৈরিকরণ
নৌকা তৈরি ও মেরামতকরণ
চিড়া প্রস্তুকরণ
তাঁতের কাজ
কামারের কাজ
জ্বালানি কাঠ কাটা
মসলা তৈরিকণ
মাছ ধরার জাল তৈরিকরণ
পাটের খুচরা যন্ত্রাংশ
বাদাম ভাজা
বই বাঁধাইকরণ
গুড় প্রস্তুতকরণ
ঘি প্রস্তুতকরণ
চানাচুর প্রস্তুতকরণ
পাটজাত দ্রব্যাদি
জুতা তৈরিকরণ
স্বর্ণের কাজ
রাজমিস্ত্রির কাজ
বিড়ি প্রস্তুকরণ
শাঁখার দ্রব্যাদি প্রস্তুকরণ
সুতা রংকরণ
সুপারি প্রক্রিয়াজাতকরণ
চশমার কাঁচ তৈরি ও মেরামতকরণ
বাঁশের চাটাই তৈরিকরণ
সস্তা গহনা তৈরিকরণ
ছবি বাঁধাইকরণ
পানের খয়ের প্রস্তুকরণ
পিঠা প্রস্তুতকরণ
প্লাস্টিকের কাজ
সুতার কাজ
কাগজের আধার তৈরিকরণ
টুপি তৈরিকরণ
হোগলা তৈরিকরণ
ইটের কাজ
কৃষি ও বন
শাক সবজির চাষাবাদ
তরমুজের চাষাবাদ
ধানের চাষাবাদ
রবি শস্যের চাষাবাদ
জমি তৈরিকরণ
জলার চাষাবাদ
সেচের জন্য কূপ খনন
আনারসের চাষাবাদ
আলুর চাষ
আখের চাষাবাদ
সেচের জন্য হস্তচালিত পাম্প
জমি ইজারা
কাঁঠালের বাগান
পেয়ারার বাগান
পশু পালন ও মৎস্য চাষ
গাভী পালন
বলদ পালন
গরু মোটাতাজাকরণ
ছাগল পালন
হাঁস-মুরগী পালন
মাছ শুটকিকরণ
ভেড়া পালন
মাছ ধরার জন্য নৌকা
কবুতর পালন
মাছের চাষ
সেবাসমূহ
রিকশা চালনা
নাপিতের দোকান
সেচযন্ত্র ভাড়াকরণ
সংবাদপত্র বিতরণ
ঠেলা গাড়ি চালনা
গরুর গাড়ি চালনা
নদী পারাপারের খেয়ানৌকা চালনা
লন্ড্রী
মহিষের গাড়ি চালনা
যাতায়াতের জন্য নৌকা
সেলাই মেশিন ক্রয়
ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র
কাঠ মিস্ত্রি
ভ্যানগাড়ি চালনা
দড়ি তৈরি করার যন্ত্র
ব্যবসা
চাল/ধানের ব্যবসা
ডালের ব্যবসা
লবণের ব্যবসা
শাক-সবজির ব্যবসা
গুড়ের ব্যবসা
জ্বালানি কাঠের ব্যবসা
কাঠের মিস্ত্রীর কার্যোপযোগী কাঠের ব্যবসা
মুরগীর ব্যবসা
মাছের ব্যবসা
শুটকি মাছের ব্যবসা
গরুর ব্যবসা
শস্য বীজের ব্যবসা
কলার ব্যবসা
খড়ের ব্যবসা
পেঁয়াজের ব্যবসা
তামাকের ব্যবসা
সুপারির ব্যবসা
পানের ব্যবসা
মওসুমী ফলের ব্যবসা
কাপড়ের ব্যবসা
দুধের ব্যবসা
বাঁশের ব্যবসা
সারের ব্যবসা
চায়ের ব্যবসা
আলুর ব্যবসা
মশলার ব্যবসা
স্টেশনারি দ্রব্যাদির ব্যবসা
লুঙ্গির ব্যবসা
গেঞ্জির ব্যবসা
সরিষা তেলের ব্যবসা
আদার ব্যবসা
পাটের ব্যবসা
বেতের পাটি বানানোর ব্যবসা
সরিষা বীজের ব্যবসা
ডিমের ব্যবসা
বিড়ির ব্যবসা
গামছার ব্যবসা
খৈলের ব্যবসা
চামড়ার ব্যবসা
পাটের ব্যাগের ব্যবসা
বাঁশের ঝুড়ির ব্যবসা
বাদামের ব্যবসা
পুরানো কাপড়ের ব্যবসা
বিস্কুটের ব্যবসা
চটের বস্তার ব্যবসা
বইয়ের ব্যবসা
হলুদের ব্যবসা
বাঁশের তৈরি দ্রব্যাদির ব্যবসা
চটি জুতা ও জুতার ব্যবসা
মিষ্টান্নের ব্যবসা
কেরোসিন তেলের ব্যবসা
চুড়ির ব্যবসা
মুড়ি ও চিড়ার ব্যবসা
মওসুমী কৃষিজাত ও দ্রব্যাদির ব্যবসা
মৃৎ শিল্পজাত দ্রব্যাদির ব্যবসা
তৈজষপত্রের ব্যবসা
মুদিখানার দ্রব্যাদির ব্যবসা
লোহা লক্কড়ের ব্যবসা
ভাজা বাদামের ব্যবসা
চানাচুরের ব্যবসা
কয়লার ব্যবসা
সাইকেল যন্ত্রাংশের ব্যবসা
গুড়া চালের ব্যবসা
দধি/ছানার ব্যবসা
মাছ জালের ব্যবসা
খাবারের দোকানের ব্যবসা
রুপার তৈরি দ্রব্যাদির ব্যবসা
কাঁচের ব্যবসা
ভুসির ব্যবসা
আটার ব্যবসা
ফেরিকরণ
বাঁশের ঝুড়ি ফেরিকরণ
শুটকি মাছ ফেরিকরণ
কাপড় ফেরিকরণ
তামাক ও পান ফেরিকরণ
তৈজষপত্র ফেরিকরণ
মুদি দ্রব্যাদি ফেরিকরণ
স্টেশনারী দ্রব্যাদি ফেরিকরণ
শাড়ী ফেরিকরণ
চুড়ি ফেরিকরণ
শাক-সবজি ফেরিকরণ
মিষ্টান্ন ফেরিকরণ
বাদাম ফেরিকরণ
তেল ফেরিকরণ
দোকানদারী
মুদি দোকান
স্টেশনারী দোকান
ওষুধের দোকান
চায়ের দোকান
লোহা লক্কড়ের দোকান
পান-বিড়ির দোকান
পত্র-পত্রিকার দোকান
কাপড়ের দোকান
জুতার দোকান
মিষ্টান্নের দোকান
ফলের দোকান
সাইকেল যন্ত্রাংশের দোকান
পরিশিষ্ট – ২
দরিদ্র মানুষের জন্য যথোপযুক্ত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হরটিকালচার, শাক সবজি চাষ, গাছ রোপণ ইত্যাদির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকতে হবে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণ তাদের বাড়ির আঙ্গিনা বা পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প সময়ে বাড়তি আয় করতে পারবে। এছাড়া জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবৃদ্ধিতে এই কর্মসূচি গুরুত্ব বহন করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো এবং তাদের আয় বৃদ্ধি করা। এই কর্মকাণ্ডটির মাধ্যমে জনগণের বাড়ির আঙ্গিনায় বা পতিত জমিতে দ্রুতবর্ধনশীল ফল যেমন- কলা, পেঁপে আনারস, লেবু ইত্যাদি চাষের ব্যবস্থা করা যায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জনগণের বসতবাড়ির আঙ্গিনায় উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক কলাকৌশল সহযোগে শাক-সবজি চাষের ব্যবস্থা করা।
শাক-সবজি চাষ
সবজিতে প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও এমাইনো এসিড বিদ্যমান থাকায় আমাদের দেহের পুষ্টিবিধান এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর অবদান অনস্বীকার্য। তাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণ সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে আবাদযোগ্য মোট জমির খুব সামান্য অংশই (৩%) সবজি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তাই এই উৎপাদিত সবজি দিয়ে গড়ে প্রতিটি পরিবারের বাৎসরিক প্রয়োজনের এক-তৃতীয়াংশও মেটে না। একজন পুষ্টিবিজ্ঞানীর মতে, যেখানে জনপ্রতি দৈনিক ২০০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন সেখানে আমরা মাত্র ২৫ গ্রাম গ্রহণ করতে পারি।
সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নিবিড় সবজি চাষ কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার। অল্প পরিমাণ জমিতে অনেক প্রকারের এবং বহু সংখ্যক শাক-সবজি চাষ করতে হবে। ব্যাপক আকারে মাঠে সবজি চাষ করার পাশাপাশি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও সবজির আবাদ করা যায়। বসতবাড়ির আশে পাশে খালি জায়গা না ফেলে রেখে সেখানে শাক-সবজির উৎপাদন করতে পারলে প্রতিদিন যেমন টাটকা শাক-সবজি খাওয়া যায়, তেমনি প্রয়োজনে বোধে বিক্রি করেও পরিবারের বাড়তি আয় করা যায়।
শাক-সবজি উৎপাদন কোনো কঠিন কাজ নয়। পরিবারের লোকেরা নিজেরাই বসত বাড়ির বাগানে চাষ করে আয় বাড়াতে পারেন। সাথে সাথে এখানে উৎপাদিত সবজি যখন প্রয়োজন, ঠিক তখনই খেতে পারেন এ পর্যায়ে নিম্নলিখিত উদ্যোগ নেয়া যায়:
১। শাক-সবজি ফলের চাষ।
২। লেবু, পেয়ারা, পেঁপের চাষ ও কলার চাষ।
৩। ঘরের ডোয়ায় মরিচের চাষ।
৪। ফলের গাছের কলম করা ও তা ব্যবহার ও বিক্রয়ে সামষ্টিক পর্যায়ে কাজ।
৫। সেগুন, মেহগণি, গজারী প্রভৃতি গাছ রোপণ।
প. ২.১ চাষাবাদ পদ্ধতি
১। শাক-সবজি ফলের চাষ
শাক-সবজি চাষের মৌলিক নিয়মাবলী:
– সূর্যের আলো, উন্মুক্ত বায়ু, পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উর্বর দোঁয়াশ মাটি শাক-সবজি চাষের জন্য বেছে নেয়া ভাল।
– কোন জমিতে কোন সবজি করা হবে বা বাগানের কোন অংশে কি করা হবে তার একটা বর্ষপঞ্জি থাকা দরকার।
– মাটি ঝুরঝুরে ও মিহি করার জন্য গভীরভাবে কয়েকবার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিতে হবে।
– উন্নতজাতের শাক-সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য উদ্যান/নার্সারি/প্রসিদ্ধ খামার বা বিশ্বস্ত চাষির কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত। নিজের বীজ নিজে সংরক্ষণ করা ভাল।
– সময়মত এবং সঠিক দূরত্বে বীজ-চারা লাগাতে হয়। সারিতে খুব ছোট আকারের চারা রোপণ করা। বীজের সাথে বগি/ছাই মিশিয়ে বুনতে হয়।
– প্রচুর জৈব সারসহ রাসায়নিক সার মাত্রানুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
– অনেক সবজির চারা উৎপন্ন করে নিতে হয়। আরো অনেক প্রকার সবজির বীজ সরাসরি বপন করতে হয়। ভাল চারা উৎপন্ন করতে হলে-
– বীজতলা একটু উঁচু করে তৈরি করতে হয়।
– মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়।
– মাটিতে রস না থাকলে বীজতলা পানিতে ভিজিয়ে নিতে হয়। ‘জো’আসার পর বীজ ফেলে কিছু গুড়ো মাটি দিয়ে চেপে দিতে হয়।
– কড়া রোদ, ঝড় বৃষ্টি থেকে চারাকে রক্ষা করার জন্য চাটাই দিয়ে ঢাকনা দেয়া ভাল।
– মাঝে মধ্যে বিকেলে ঝাঝরি দিয়ে পানি দিতে হয়।
– যথাসম্ভব মাটিসহ চারা লাগানো ভাল। লাগানোর সময় চারার গোড়া আলতোভাবে চেপে দিতে হবে।
– চারা লাগিয়ে ২-৩ দিন পর্যন্ত কলার খোলা-পাতা বা অন্যান্য কোনো আচ্ছাদনের সাহায্যে (দিনের বেলায়) ঢাকনা দিতে হয়।
– অতিরিক্ত পানি সরে যাওয়ার জন্য নালা আবশ্যক।
– পারিবারিক বাগানে একেবারে না বুনে কয়েক দিন পরপর শাক-সবজির চাষ করলে মওসুম ভরে খাওয়া যায়।
– কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করার ৭ দিনের মধ্যে শাক-সবজি খেতে নেই।
– পুষ্টি অপচয় রোধ করার জন্য- যা দরকার:
ক) শাক-সবজি তাজা বা টাটকা অবস্থায় খাওয়া
খ)কেটে না ধুয়ে, ধুয়ে কাটা
গ) যথাসম্ভব বড় টুকরা করে কাটা
ঘ) যথাসম্ভব ছাল বাকল কম ফেলা
ঙ) ঢেকে রান্না করা
চ)বেশি সিদ্ধ না করা
ছ) তেল মসলা কম দেয়া।
লেবু, পেঁপে ও পেয়ারা চাষ
ক) লেবু
ফল হিসেবে সব রকম লেবুই ভালো। তবে আমরা পাতি কাগজি লেবু এক টুকরো ভাতের সঙ্গে খেতে পেলেই খুশী। বাতাবি লেবু অন্য ফলের মতো ব্যবহৃত হয়। লেবু খুবই উপকারী।
– মাটি, বাতাস: বাংলাদেশের সব জায়গাতেই লেবু লাগানো চলে। জমি উঁচু হওয়া দরকার। মাটিতে যথেষ্ট রস থাকতে হবে তবে পানি যাতে জমা না হয়ে যায়। এটেল মাটিতে লেবু বাগান না করা ভালো। বাড়িতে ৮/১০টি পাতি লেবুর গাছ লাগালে পানি বের হওয়ার উপর নজর রাখতে হবে।
コ বীজের চারা: কলম লাগানো
– কাগজি লেবুর বীজের চারা বেশ লাগানো চলে। বীজের চারার গাছ বড় হবে। ফলন বেশি হবে।
– বাতাবি লেবু কলম লাগানো ভালো।
コ গাছ লাগানোর সময়
– আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে লেবু গাছ লাগানোর ভালো সময়।
– পাতি কাগজি লেবুর জন্য ১৫ ফুট বা ১০ হাত ফাঁক আর বাতাবি লেবুর জন্য ২০ ফুট বা ১৩/১৪ হাত ফাঁক ফাঁক গর্ত খুঁড়তে হবে। গর্ত হবে ২ ফুট বা ১১/৪ হাত লম্বা ২ ফুট চওড়া আর ২ ফুট গভীর।
– মাটির সঙ্গে ২০ কেজি জৈব সার আর ১ কেজি সুপার ফসপেট ভালো করে মেশাতে হবে।
– সার মিশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভর্তি করে লেবুর গাছ লাগাতে হবে।
– লেবু বাগানে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
– বাড়িতে ৮/১০ টা গাছ লাগালে নিয়মিত পানি দিতে হবে।
– প্রতি বাড়িতে ৮/১০টি লেবু গাছ লাগাতে হবে।
– এতে বাড়তি আয় হবে।
– গাছের যত্ন নিতে হবে।
– অকেজো বা জোলো ডাল কেটে ফেলা দরকার।
– সার সেচ সময়মত দিতে হবে।
– পানি বের করতে হবে।
– রোগ ও পোকার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
খ) পেঁপে
পেঁপে একটি অতি পরিচিত ফল। আমরা কাঁচা পেঁপের তরকারী খাই। পাকা পেঁপে মিষ্টি ফলের মত খাই। পেঁপে পেটের পক্ষে খুব ভালো। কাঁচা পেঁপে প্রতিদিন বাজারজাত করা হয়। পেঁপের খুব চাহিদা। তাই পেঁপে খুব লাভজনক। বাড়িতে ৮/১০টা পেঁপে গাছ অনেকের থাকে। কিন্তু যত্ন হয় না বলে তার থেকে আয় হয় না।
– মাটিঃ সুনিষ্কাশিত প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা দোআঁশ বা পলি মাটি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী। পেঁপে গাছ জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। গোড়ায় ৪৮ ঘণ্টা পানি জমে থাকলে গাছ মারা যায়।
– চারা রোপণ: চৈত্র বৈশাখ মাস পেঁপের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। সাধারণ বীজতলায় চারা উৎপাদন করে তা রোপণ করা হয়। বীজ বোনার দেড় থেকে ২ মাস পর রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় তাদের উচ্চতা ১৫-২০ সেঃ মিটার হয়। বাগান আকারে পেঁপের চাষ করতে হলে প্রথমে জমি ভালো করে কর্ষণ করে গভীর নালা কেটে ভূমিখণ্ডকে কয়েকটিট ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পূর্বে ৫০ সেঃ মিঃ ও ৬০ সেঃ মিঃ ব্যাসবিশিষ্ট গর্ত করে তাতে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ভরাট করতে হবে।
– সার ব্যবহার: চারা রোপণের বছর প্রতিটি গাছে নিম্ন মাত্রায় সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোবর – ২০ কেজি
টি এস পি – ৫০০-৬০০ গ্রাম
এম পি – ২৫০-৪০০ গ্রাম
খৈল – ১৫০-২৫০ গ্রাম
ইউরিয়া – ২৫০-৩০০ গ্রাম
গোবর, খৈল ও টি,এস,পি চারা রোপণের পূর্বে গর্তের মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়।
ফলন: রোপণের ২-৩ বছর পর্যন্ত ফলন ভালো পাওয়া যায়। ভাল জাতের চাষ করলে বছরে প্রতিগাছ থেকে ৫০ কেজি পেঁপে পাওয়। যায়।
– পেঁপের রোগ ও প্রতিকার
১। মোজাইক: এ রোগের আক্রমণে গাছের পাতা কুকড়ে যায়। পাতায় সাদা ও হলদে দাগ দেখা যায় এবং গাছ ফল ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ রোগের প্রতিকার করতে হলে আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তা ধ্বংস করতে হবে। ডায়াজিনন ৫০ ইসি ১১.৫ সিসি ১২ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রের দ্বারা এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২। গোড়া পচা: আদ্র মাটির খুব কাছাকাছি মূল ও কাণ্ডের সন্ধিস্থলে পচন রোগ দেখা দেয়। বাকল ফেটে সেখান থেকে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা দ্বারা এ রোগের প্রতিকার করা যায়।
৩। পাতা পচা ও ফল পচা পাতা ও ফলের আক্রান্ত স্থানগুলো প্রথমে ঈষৎ হলুদ হয়, ধীরে ধীরে এ স্থানগুলো বাদামী রং ধারণ করে। এ রোগের প্রতিকারের জন্য ফল ও কাণ্ডকে প্রখর সূর্যালোক থেকে ঘিরে আড়াল করে রাখতে হবে।
৪। পাতা মোড়ানো: এ রোগের কারণে পাতা মুড়িয়ে যায়, মচকে যায় ও পাতা ছোট হয়ে যায়। এ রোগের প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রয়োগ করা যায়।
৫। ফলের মাছি কচি কচি পেঁপের মধ্যে ডিম পাড়ে। ফলে পেঁপে নষ্ট হয়ে যায়। এ পোকা দমন করতে হলে আক্রান্ত ফল ধ্বংস করতে হবে। ১ আউন্স দিবা টেবেক্স ৮০ এসপি ১২ কেজি পানিতে মিশিয়ে ৮ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
গ) পেয়ারা
লেবুতে যতটা ভিটামিন সি আছে পেয়ারাতে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। অথচ পেয়ারাকে আমরা ভালো ফল বলে মনে করি না। পেয়ারা আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান ফল। পেয়ারা চাষ খুবই লাভজনক।
– মাটি: বাংলাদেশের সব জায়াগাতেই হয়। সব রকম মাটিতে হয়। তবে সুনিষ্কাষিত ভারি পলি মাটিতে পেয়ারা ভালো জন্মে। ভাল ফলনের জন্য মাটিতে সব সময় রস থাকা দরকার।
– চারা রোপণ: অন্যান্য ফলের মতই জমি তৈরি করে বর্ষার পূর্বে ৫-৬ মিটার দূরে দূরে ৫০×৫০×৫০ সেঃ মিঃ আকারে গর্ত করে সার মিশ্রিত মাটি দ্বারা ভরাট করতে হবে। প্রতি গর্তে ২০-২৫ কেজি খামারজাত সার দিতে হবে। রোপণের সময় প্রতিগর্তে ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০ গ্রাম করে ইউরিয়া এসপি প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার পরপরই গর্তে চারা কলম রোপণ করা উচিত। পেয়ারার চারার তুলনায় কলমেও ভাল ফলন দেয়।
– সার ব্যবহার: চারা রোপণের পর থেকে প্রতি বছর প্রত্যেক গাছে পরিমিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
ঘরের পাশে মরিচের চাষ
মরিচ নিত্য প্রয়োজনীয় মশলা। আমাদের ঘরের ডোয়ায় মরিচের চাষ করে নিজেদের অভাব পূরণ করে বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা করা যায়। নিম্নে ঘরের ডোয়ায় মরিচের চাষের নিয়মবাবলী প্রদত্ত হলো।
– মাটি: পানি নিষ্কাষণযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে মরিচ ভালো হয়।
– বপন/রোপণের সময়: সারা বছরই মরিচের চাষ করা যায়। তবে প্রধানত: দুই মওসুমে এর চাষ হয়ে থাকে।
রবি: ভাদ্র-কার্তিক
খরিফ: ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ
– বীজের হার (প্রতি শতাংশ): ছিটিয়ে বুনলে ৪/৬ গ্রাম বীজ লাগে। আর চারা লাগালে ১০০-১১০টি চারা লাগে।
– দূরত্বঃ ছিটিয়ে বীজ বোনা যায়। আবার বীজ তলায় চারা উৎপাদন করে চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে ১৮-২৪ ইঞ্চি দূরত্বে সারি করে ১৫-১৮ ইঞ্চি দূরে দূরে চারা রোপণ করা যায়।
– ফসল সংগ্রহের সময়: চারা লাগানোর দেড় থেকে ২ মাসের মধ্যে মরিচ ধরা শুরু করে। ঘন ঘন মরিচ তুললে ফলন বাড়ে। ফলন (প্রতি শতাংশ): কাঁচা মরিচ ২৪-৩২ কেজি, শুকনা মরিচ ৪-৬ কেজি।
জৈব সার তৈরি
জীবদেহ থেকে প্রাপ্ত বা প্রস্তুতকৃত সারকে জৈব সার বলে। খামারজাত সার, গোবর, গোচনা, গরুর বাছুরের উচ্ছিষ্ট, কম্পোষ্ট, হাঁসমুরগীর বিষ্ঠা, খৈল, সবুজ সার, কচুরিপানা প্রভৃতি জৈব সারের উৎস।
জৈব সারের প্রয়োজনীয়তা:
১। জৈব পদার্থ হচ্ছে মাটির প্রাণ। জৈব সার ব্যবহারে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে।
২। এটা গাছের খাদ্য ভাণ্ডার হিসাবে ভূমিকা পালন করে যা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত গাছ ব্যবহার করতে পারে।
৩। জৈব সার ব্যবহারের ফলে জমিতে সেচ কম লাগে। অর্থাৎ মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এ ছাড়া মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৪। এটা যে কেউ সহজে এবং স্বল্প খরচে তৈরি করতে পারে।
৫।এটা মাটির বিষাক্ততা দূর করে।
বিভিন্ন প্রকার জৈব সারের প্রস্তুত প্রণালী:
ক) গোবর
গোবর বলতে গরু মহিষ ভেড়া ঘোড়া প্রভৃতির মলমূত্র এবং হাঁস মুরগীর বিষ্ঠাকে বুঝায়।
গোবর সংরক্ষণ পদ্ধতি:
১। গোবর সংরক্ষণের জন্য প্রথমত একটি গর্তের প্রয়োজন। গর্তটি গভীর এবং প্রশস্ত হওয়া দরকার। গোয়াল ঘরের নিকটে এমনভাবে গর্ত করা দরকার যাতে বাইরের পানি ঢুকতে না পারে।
২। গর্তের উপর একটি চালা বা ছাউনীর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। গর্তের তলা ও পার্শ্বে এটেল মাটির প্রলেপ দিলে আর সহজে চুইয়ে নষ্ট হতে পারে না।
৪। গোবর সংগ্রহের সময় মলের সাথে মূত্র মিশিয়ে নেয়া উত্তম।
৫। সার ফেলার ফাঁকে ফাঁকে গর্তে অল্প পরিমাণ করে পুরান পুকুর বা ডোবার তলার মাটির আস্তরণ দিলে সারে স্তর ভাল হয়।
৬। গোবর শুকিয়ে যেতে থাকলে গো-চনা, পানি ছিটিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
৭। মাঝে মধ্যে গোবরে কিছু পরিমাণ টিএসপি সার ব্যবহার করলে সারের মান ভালো হয় এবং নাইট্রোজেন অপচয় রোধ হয়। উপরিউক্ত উপায়ে সংরক্ষিত গোবর তিন মাস পরে ব্যবহারযোগ্য হয়।
খ) আবর্জনা সারঃ
আমাদের দেশে আবর্জনা সারের সহজলভ্য উপাদানগুলোর মধ্যে কচুরিপানা, বিচালী, আখের মরা পাতা ও ছোবড়া, চিনিকলের পরিত্যক্ত বস্তু, অন্যান্য মরা পাতা, জলজ, আগাছা, করাতের গুড়া, কাঁচা বাজারের আবর্জনা, চামড়ার আবর্জনা, ময়লা প্রভৃতি প্রধান।
গ) সবুজ সার:
কোন জমিতে দ্রুতপচনশীল উদ্ভিদ জমিয়ে বা অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করে একটা বিশেষ পর্যায়ে সবুজ অবস্থায় মাটির সাথে মিশিয়ে ও পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে সবুজ সার বলে।
পশু পালন ও হাঁস মুরগী পালন
আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার দরিদ্র মানুষ হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন করে আসছে। হাঁস-মুরগী বা গরু-ছাগল পালনের মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ ভাগ আয়ের যোগান দিয়ে থাকে এ দেশের গ্রামের মানুষ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগল সম্পর্কে সচেতন করতে পাররলে জনগণ তাদের আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এই কর্মসূচি থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।
আমাদের স্বাস্থ্য গঠনে আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হাঁস-মুরগীর গোশত ও ডিম আমাদের শরীরের আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব পূরণ করে প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়তা দান করে। আমাদের দেশে আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব। দুধ, মাছ ও গোস্তের উৎপাদন বাড়ছে না। অথচ লোকসংখ্যা বেড়ে চলেছে প্রতি বছর। এক দিকে যেমন ধান-পাট, আলু প্রভৃতি ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে তেমনি করে মাছ, দুধ, গোস্ত, ডিম ইত্যাদির উৎপাদন অনেক গুণ বাড়ানো যেতে পারে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা কাজের সমষ্টিগত ব্যবস্থা।
আমাদের কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের নৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের পথকে সুগম করা। এই লক্ষ্যের ভিত্তিতে দরিদ্র মানুষের নৈতিক উন্নয়নের ফলে তারা যেমন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও আর্থিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সক্ষম হবে। এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে দরিদ্র জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে এবং তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো হাঁস, মুরগী ও গবাদি পশু প্রতিপালন এবং এর যত্ন সম্পর্কে জনশক্তির সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা, মৃত্যুহার কমানো, পুষ্টি ও বাড়তি আয় পেতে সহায়তা করা।
হাঁস মুরগী পালন
১) জাত
– দেশী জাত
– বিদেশী জাত/ উন্নত জাত
– শংকর জাত
২) ডিম
– হাঁস মুরগীর ডিমের বৈশিষ্ট্য
– তা দেয়ার জন্য ডিম বাছাই
– ডিম পরিবহনে সতর্কতা
– উন্নত ব্যবস্থাপনার অংশ হিসাবে মুরগীর জন্য খাঁচা ব্যবহার করা। খাঁচায় মুরগী পালন করলে ব্যবস্থাপনার সুবিধা, কম অপচয়, কম অসুখ বিসুখ, ভালো মানের ডিম ইত্যাদি সুবিদাসহ ১০% থেকে ২০% বেশি ডিম পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।
এক্ষেত্রে এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ট্রাস্ট (এ আই টি) ১২টি, ৭২টি, ৫৭৬টি এবং ১০০৮টি মুরগীর খাঁচা ও ঘর তৈরির বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে লাভজনক ব্যবসায়ে নিয়োজিত আয়বর্ধক সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
৩) বাচ্চার যত্ন: বাচ্চাকে টিকা দেয়া, খাবার দেয়া-কমপক্ষে দু’বেলা খাবার দেয়া উচিত।
বয়স্ক হাঁস-মুরগীর খাবারে ছয়টি উপকরণ সব মিশিয়ে সুষম খাবার তৈরি করতে হয়। একটি মুরগীকে দিনে ২/৩ বার খাদ্য দিতে হয়।
৪) বাসস্থান: স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান প্রস্তুতকরণ।
৫) রোগ: সংক্রামক রোগ/ অসংক্রামক রোগ।
৬) রোগের বিস্তার খাবার, পানীয়, বাতাস, পোকামাকড়, পাখী, জীবজন্তু, মশা, মাছি, আঠালি।
৭)রোগ দমনঃ বিভিন্ন রোগে টিকা প্রদান, সম্মত স্বাস্থ্যবিধি পালন।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে গৃহীত কার্যাবলী:
– প্রতিটি কর্মীর বাড়িতে কমপক্ষে ৯টি মুরগী ও একটি মোরগের সমন্বয়ে পারিবারিক খামার সৃষ্টি করা।
– মুরগীর চাষের জন্য শংকর জাত অথবা উন্নত জাতের মুরগী পছন্দ করা।
– ঝিনুক, শামুক, শুটকি মাছ, ভুট্টা/গমের গুড়া দিয়ে খাবার তৈরির ব্যবস্থা করা।
– মুরগীর মড়ক ঠেকানোর জন্য টিকা দানের ব্যবস্থা করা।
মৎস্য চাষ
মৎস্য চাষের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী: মৎস্য চাষকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়-
১) রেনুপোনা চাষ,
২) মিশ্র মৎস্য চাষ ও
৩) প্রজননক্ষম মৎস্য চাষ।
এই তিন প্রকার মৎস্য চাষ করতে হলে কয়েকটি বিষয়ের ওপর একান্তভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১) রেনুপোনা চাষ: এই চাষে একটা ছোট আতুড় পুকুরের প্রয়োজন হয়। ৩৩ শতাংশ পুকুর প্রথমে শুকিয়ে নিতে হবে এবং লাঙ্গল দিয়ে দুখানা চাষ করে ঐ চাষের সাথে ৩০ কেজি কলিচুন দিতে হবে। তারপরই ১০/১২ মণ কাঁচা গোবর ছড়িয়ে দিতে হবে। এইবার ঐ পুকুরে চার ফুট পানি দিয়ে ভরে দিয়ে ৭/৮ দিন রেখে ভাল করে চটজাল দিয়ে পোকা মারতে হবে এবং প্রতি ৩৩ শতাংশ জলাশয়ের জন্য ২/২.৫০ কেজি কাপড় কাঁচার সাবান ও এর সাথে ৩.৫০ কেজি সরিষার তেল দ্রবণীয় করে রেনুপোনা ফেলার ২৪ ঘন্টা আগে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
প্রতি ৩৩ শতাংশ বা তিন ভাগের এক ভাগ জলাশয়ের জন্য ২ কেজি রেনু পোনা দেওয়া যেতে পারে। এই পুকুরে রেনুপোনা ৭/৮ দিন থাকবে, যার পরিপূরক খাবার হিসাবে ৮ কেজি কুড়া এবং ঐ সঙ্গে ৬ কেজি সরিষার খৈল একত্রে পরপর তিন দিন ব্যবহার করতে হবে। তিন দিন পর থেকে খাবারের পরিমাণ ৩% করে বাড়াতে হবে।
পালন পুকুরঃ আতুড় পুকুর থেকে ৭/৮ দিন পরে ধানী পোনা যে পুকুরে এনে মজুদ করা হয় তাকে পালন পুকুর বলে। এই পুকুর আতুড় পুকুরের ২/৩ গুণ বড় হওয়া উচিত।
পালন পুকুরও আতুড় পুকুরের মত আগে থেকে পোনা পালনের উপযোগী করে রাখতে হবে। এজন্য প্রথমে আগাছা, শামুক ও ঝিনুককে দমন করার জন্য প্রতি ৩৩ শতাংশে বা ১/৩ ভাগ থায়োডান ৩৫ ই, সি, ২৫০ মিঃ লিঃ ব্যবহার করতে হবে এবং ৭ দিন পর ৬০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৭ দিন পরে টিএসপি ১০০ কেজি, ইউরিয়া ৫০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যহ হররা টেনে গ্যাস তুলে দিতে হবে। প্রতি ৩৩ শতাংশ বা ১/৩ ভাগ পালন পুকুরে আধা ইঞ্চি লম্বা ধানী পোনা এক লক্ষের মত মজুদ করা যায়। পরিপূরক খাদ্য হিসাবে সরিষার খৈল, কুড়া, বাদাম খৈল ও গমের ভুসি ব্যবহার করতে হবে। এর অনুপাত হবে- সরিষার খৈল বাদাম খৈল: কুড়া: গমের ভুসি = ২:১:১:২।
২) মিশ্র মৎস্য চাষঃ মিশ্র মৎস্য চাষ অর্থাৎ সকল প্রকার মাছ একত্রে চাষ করা, এটাও একটি লাভজনক চাষ। প্রতি ৩৩ শতাংশে চার ইঞ্চি লম্বা পোনা ১২০০ থেকে ১৫০০ টি ছাড়া যাবে। যেমন কাতলা- ১৫০০, রুই-২৫০, মৃগেল-১৫০, সিলভার কার্প-৮০, গ্রাস কার্প-৭০, থাই পুটি-১০০, মিরর কার্প-১০০, কার্পিও-১০০ এবং দুই ইঞ্চি সাইজের ২০০ গলদা চিংড়ি।
মিশ্র মৎস্য চাষের পুকুরে গড়ে পাঁচ ফুট পানি থাকার প্রয়োজন। প্রতি ৩৩ শতাংশ জলাশয় তৈরি করার সময় টিএসপি ১০০ কেজি, ইউরিয়া ৬০ কেজি ব্যবহার করতে হবে। সার ব্যবহারের সাতদিন পূর্বে ৬০/৭০ কেজি চুন ব্যবহার করতে হবে এবং সেই সাথে সার ব্যবহারের আগে ১২০ কেজি কাঁচা গোবর ব্যবহার করতে হবে। সাপ্তাহিক রুটিন অনুযায়ী মাছের দৈহিক ওজনের ৫% হারে পরিপূরক খাবার ব্যবহার করতে হবে।
পরিপূরক খাবার: সরিষার খৈল ১ কেজি, চিও মাছের গুড়া ১ কেজি, গমের ভুসি ২ কেজি, বাদাম খৈল ১ কেজি, নারিকেল খৈল ১ কেজি, এমবাভিট জি, এস, ২০০ গ্রাম, এই আনুপাতিক হারে তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে। প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই বার জাল টানুন ও মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। এছাড়া প্রতি মাসে ১০/১৫ কেজি চুন ব্যবহার করুন।
৩) প্রজননক্ষম মৎস্য চাষ: এই চাষ অত্যন্ত লাভজনক চাষ। দীর্ঘ দিন চার বছর ধরে এই চাষ করতে হয়। মিশ্র মৎস্য চাষের ন্যায়ই এই চাষ করতে হয়, কিন্তু মাছের সংখ্যা কম রাখতে হবে।
মাছের রোগসমূহ:
১) ছোট ধানী পোনার ফুলকার মধ্যে আলপিনের মাথার ন্যায় ছোট এক কোষী প্রাণী থাকে এবং মাছকে দুর্বল করে দেয়।
২) দুই তিন ইঞ্চি রুই জাতীয় মাছের লেজে পচন ধরে পুকুরের মাছ সমুদয় মরে উজাড় হয়ে যায়।
৩) মাছের পাখা ও লেজ পচে পচে পড়ে যায়।
৪) মাছের আঁশগুলো উঁচু হয়ে ওঠে এবং মাছ ফুলে যায়, মাছ কাটলে পানি বের হয়।
৫) মাছের বিশেষ করে বড় মাছের ফুলকা পচে মাছ মরে ভেসে ওঠে।
৬) বাংলাদেশে কয়েক বছরের গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য রোগ যা “ক্ষত রোগ” নামে পরিচিত। এর প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে।
জেলা/মহানগরী ভিত্তিক “আল-হিজাব” প্রকল্প চালু করা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “হে নবী! তোমার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদরের অংশ তাদের উপর টেনে নেয়। এতে করে তাদের পরিচয় জানতে সহজতর হবে এবং তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।” (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)
“তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করো। তোমরা পূর্বের জাহেলি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবেনা, সালাত কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে হে আহলে বাইত (নবীর পরিবার) এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পাক পবিত্র করতে।” (সূরা আল-আহযাব: ৩৩)
“যারা মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রচার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব দুনিয়া এবং আখিরাতে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানোনা।” (সূরা আন নূর: ১৯)
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম নারীদেরকে তাদের ঘরে ও বাহিরে গায়রে মাহররম পুরুষদের থেকে পর্দা করার কথা বলেছেন। বিশেষ করে মুসলিম নারীগণ যখন কোন প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে যাবেন তখন বড় চাদর দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে বের হবার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশেরই আধুনিক রূপ বোরকা পরিধান, এতে করে সমাজ অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে মুক্ত থাকবে। আর নারীরাও তাদের সম্ভ্রম ও মর্যাদা রক্ষা করে স্বচ্ছন্দের সাথে চলতে পারবে। বর্তমানে প্রচলিত হিজাব বা বোরকার প্রচলন সারা দুনিয়ার আলেম সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত। অবশ্য বোরকার উপর কোন নকশা করা শরীয়ত সম্মত নয়। তাই নারীদেরকে হিজাব পালনে আগ্রহী করে তোলা ও এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে জেলা/মহানগরী পর্যায়ে ‘আল-হিজাব’ নামে একটি প্রকল্প খোলা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মেয়েরা ঘরে পর্দার ভেতরে থেকেই সংসারে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবে। যা হবে মূলত সমাজকল্যাণমূলক একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে পর্দানশীল মহিলারা সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পোশাক তৈরি করবে।
“আল-হিজাব” বোরকার পাশাপাশি ব্লাউজ, পেটিকোট, মেক্সি, সেলোয়ার, কামিজ, পাজামা-পাঞ্জাবী, মহিলাদের টুপি ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করবে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে সামর্থবান লোকদের সহযোগিতা নিয়ে সমাজের অসহায় মা-বোনদের স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে বোরকা সরবরাহ করা যেতে পারে।