জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

পর্দার বিধান

অন্তর্গতঃ পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক, রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
Share on FacebookShare on Twitter

পর্দার বিধান

মূল
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী

অনুবাদ
আব্বাস আলী খান

বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল কুরআনে যে সকল বাণীতে পর্দার নির্দেশ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-

“(হে নবী), মুমিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যা কিছুই করে আল্লাহ সেই সম্পর্কে পরিজ্ঞাত এবং মুমিন নারীদের বলে দাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে, আর নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে ঐ সৌন্দর্য ছাড়া যা আপনাআপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং তারা যাতে স্বীয় বক্ষের ওপর তাদের উপরস্থিত চাদর টেনে দেয় এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে (অন্য কারো নিকট) এই সকল লোক ব্যতীত- স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, সৎপুত্র, আপন ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন স্ত্রীলোকগণ, স্বীয় দাস, নারীর প্রতি স্পৃহাহীন সেবক এবং ঐ সকল বালক যারা নারীর গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত নয়। তারা যেন পথ চলাকালে এমন পদধ্বনি না করে যাতে তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য পদধ্বনিতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।” ২৪: সূরা আন নূর ॥ ৩০-৩১

“ওহে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা তো সাধারণ নারীদের মতো নও। যদি পরহেজগারী অবলম্বনের ইচ্ছা থাকে তাহলে কোমলভাবে কথা বলো না। কারণ এতে যাদের অন্তরে খারাপ বাসনা আছে তারা তোমাদের ওপর এক ধরনের আশা পোষণ করে বসবে। সোজা সোজা ও স্পষ্ট কথা বল, আপন ঘরে অবস্থান কর এবং অতীত জাহিলিয়াত যুগের ন্যায় রূপ যৌবনের প্রদর্শনী করে বেড়িয়োনা।”
৩৩ : সূরা আল আহযাব ॥ ৩৩

“হে নবী, আপন স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের নিজেদের ওপর চাদর জড়িয়ে দেয়। এতে তাদের পরিচয় পাওয়া যাবে এবং তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা।” ৩৩ : সূরা আল আহযাব ॥ ৫৯

এ বাণীগুলো সম্পর্কে চিন্তা করে দেখুন। পুরুষকে তো এতখানি তাকিদ করা হয়েছে যে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত করে রাখে এবং যৌন অশ্লীলতা হতে আপন চরিত্র বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু নারীদের প্রতি উপরোক্ত আদেশ দুটো তো করা হয়েছেই, উপরন্তু সামাজিকতা ও আচার-আচরণ সম্পর্কেও অতিরিক্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পরিষ্কার অর্থ এই যে, তাদের চরিত্র সংরক্ষণের জন্য শুধু দৃষ্টি সংযত করা এবং গুপ্তাংগের রক্ষণাবেক্ষণই যথেষ্ট নয়, বরং আরও কতগুলো রীতিনীতির প্রয়োজন।

এখন আমাদেরকে দেখতে হবে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কিরাম (রা) এই নির্দেশগুলোকে কিভাবে ইসলামী সমাজে রূপায়িত করেছিলেন। এই সকল নির্দেশের প্রকৃত মর্ম কি এবং কিভাবে তা কার্যকর করা যায়- তাঁদের কথা ও কাজ এ সম্পর্কে কোন আলোকপাত করে কিনা তা আমাদেরকে দেখতে হবে।

সূচীপত্র

  1. দৃষ্টি সংযম
  2. সৌন্দর্য প্রকাশের সীমারেখা
  3. মুখমণ্ডল সম্পর্কে নির্দেশ

দৃষ্টি সংযম

প্রথমেই নারী ও পুরুষকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা এই যে, ‘দৃষ্টি অবনমিত কর’। অর্থাৎ কারো মুখমণ্ডলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে তা নিম্নমুখী করতে হবে। এটা আলকুরআনের ‘গাদ্দে বাছার’ শব্দের শাব্দিক অর্থ। কিন্তু এর দ্বারা পূর্ণ মর্ম পরিষ্কার হয় না। আল্লাহ তা’আলার আদেশের প্রকৃত উদ্দেশ্য এ নয় যে, মানুষ সকল সময় নীচের দিকে দেখবে এবং উপরের দিকে কখনো তাকাবে না। বরং প্রকৃত উদ্দেশ্য এই যে, মানুষ ঔ বস্তু হতে নিজেকে রক্ষা করুক যাকে আলহাদীসের পরিভাষায় ‘চোখের ব্যভিচার’ বলা হয়েছে। অপর নারীর রূপ সৌন্দর্য দর্শন করে আনন্দ উপভোগ করা পুরুষের জন্য যেমন অনাচার সৃষ্টিকারী তেমনি অপর পুরুষের প্রতি তাকিয়ে দেখাও নারীর জন্য অনাচার সৃষ্টিকারী। অনাচার-বিপর্যয়ের সূচনা স্বাভাবিক ও প্রকৃতিগতভাবে এখান থেকেই হয়। এজন্য সর্বপ্রথম এই পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দৃষ্টিসংযম বা দৃষ্টি অবনমিত করণের আসল উদ্দেশ্য এটাই।

এটা সত্য যে, চোখ খুলে দুনিয়ায় বাস করতে হলে সবকিছুর ওপরেই দৃষ্টি পড়বে। এটা সম্ভব নয় যে, কোন পুরুষ কোন নারীকে এবং কোন নারী কোন পুরুষকে কখনো দেখবে না। এজন্য শরীয়াতের ব্যবস্থা দানকারীর নির্দেশ এই যে, হঠাৎ কারো ওপর দৃষ্টি পড়লে তা উপেক্ষা করা হবে। কিন্তু দ্বিতীয়বার তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জারীর (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, “হঠাৎ যদি কারো ওপর নজর পড়ে যায় তাহলে কি করবো?” উত্তরে তিনি বললেন, “দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও”। সুনানু আবী দাউদ

বারীদাহ (রা) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীকে (রা) বললেন, “হে আলী, প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয়বার তাকাবে না। প্রথম দৃষ্টি তোমার, দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার নয় (অর্থাৎ তা ক্ষমা করা হবে না)।”
সুনানু আবী দাউদ।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি অপর নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিন তার চোখে তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেয়া হবে।” ফাতহুল কাদীর।

কিন্তু এমন অনেক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় যখন অপর নারীকে দেখা আবশ্যক হয়ে পড়ে। যেমন, কোন নারী ডাক্তারের চিকিৎসাধীন কিংবা কোন নারী মুকাদ্দামায় বিচারকের সামনে সাক্ষী অথবা বাদী-বিবাদী হিসেবে উপস্থিত, কিংবা কোন নারীর গায়ে আগুন লেগেছে কিংবা কোন নারী পানিতে ডুবে যাচ্ছে কিংবা কোন নারীর সতীত্ব-সম্ভ্রম বিপন্ন— এমতাবস্থায় শুধু তার মুখমণ্ডল নয় শরীরের অপর কোন অংশের ওপর নজর দেয়া যাবে, তার শরীরও স্পর্শ করা যাবে। বরং আগুনে পুড়ছে বা পানিতে ডুবে যাচ্ছে এমন নারীকে কোলে তুলে নিয়ে আসা কেবল জায়েযই নয়, ফরয হয়ে পড়ে। শরীয়াত প্রণেতার নির্দেশ এই যে, এরূপ অবস্থায় যথাসম্ভব নিয়াত পবিত্র রাখতে হবে। কিন্তু মানবসুলভ চাহিদার কারণে যদি কণামাত্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তাতেও কোন অপরাধ হবে না। কারণ, এরূপ দৃষ্টি এবং স্পর্শ জরুরী প্রয়োজনের তাকিদেই করা হয়েছে।

অনুরূপভাবে, অপরিচিত নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে দেখা তথা ভালোভাবে দেখা শুধু জায়েযই নয়, বরং আলহাদীসে এর নির্দেশই রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও এই উদ্দেশ্যে নারী দর্শন করেছেন।

মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) থেকে বর্ণিত। একবার তিনি এক নারীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, “তাকে দেখে লও। কারণ, এটা তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও ঐক্য সৃষ্টি করতে অধিকতর উপযোগী হবে।” জামে আত্ তিরমিযী।

সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। একদা এক নারী রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্য নিজকে পেশ করছি।” এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখে নিলেন। সহীহ আল বুখারী।

আবু হুরাইরা (রা) বলেন, আমি নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকটে বসে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, “আমি একজন আনসার নারীকে বিয়ে করতে চাই।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি তাঁকে দেখেছো?” সে ব্যক্তি বললো “না”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তাকে দেখে লও। সাধারণতঃ আনসারদের চোখে কিছু না কিছু দোষ থাকে।” সহীহ মুসলিম।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যদি তোমাদের কেউ কোন নারীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় তাহলে তাকে যথাসম্ভব দেখে নেয়া উচিত যে, তার মধ্যে এমন কিছু আছে কিনা যা উক্ত পুরুষকে বিয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।” সুনানু আবী দাউদ।

এ সকল ব্যতিক্রম সম্পর্কে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করাকে একেবারে বন্ধ করে দেয়া আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিতনা বা অনাচারের পথ বন্ধ করা। যে দেখার কোন প্রয়োজন নেই, যার দ্বারা কোন তামাদ্দুনিক উপকারও নেই এবং যার দ্বারা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হবার কারণ থাকে এরূপ দেখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ সকল নির্দেশ যেমন পুরুষের জন্য, তেমনি নারীর জন্যও। আলহাদীসে উম্মে সালামা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি এবং মাইমুনা (রা) নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) সেখানে আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তার জন্য পর্দা কর।” উম্মে সালামা (রা) বললেন, “উনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতেও পারবেন না, চিনতেও পারবেন না।” নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরাও কি অন্ধ যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না?”

কিন্তু পুরুষের চোখে নারীকে দেখা এবং নারীর চোখে পুরুষকে দেখার মধ্যে মনস্তত্বের দিক থেকে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পুরুষের প্রকৃতিতে অগ্রবর্তী হয়ে কাজ করার প্রবণতা আছে। কোন কিছু পছন্দ হলে তা অর্জন করার জন্য পুরুষ চেষ্টানুবর্তী হয়। কিন্তু নারী-প্রকৃতিতে আছে বাধাপ্রদান প্রবণতা ও পালায়নপরতা। যে পর্যন্ত তার প্রকৃতি পরিবর্তিত না হয় সে পর্যন্ত সে এতোখানি দুঃসাহসী হতে পারে না যে, কেউ তার মনঃপূত হলে সে তার দিকে ধাবিত হবে। শরীয়াত প্রণেতা এই পার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে নারীর জন্য পুরুষকে দেখার ব্যাপারে ততখানি কঠোরতা ঘোষণা করেননি, যতখানি করেছেন পুরুষের পক্ষে নারীকে দেখার ব্যাপারে। হাদীস গ্রন্থগুলোতে আয়িশার (রা) এই বর্ণনাটি প্রসিদ্ধ যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ঈদ উপলক্ষে হাবশীদের খেলা দেখিয়েছিলেন। এ থেকে জানা যায় যে, নারীদের পক্ষে পুরুষকে দেখা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু একই সমাবেশে উভয়ের মিলিত হয়ে বসা এবং অপলকনেত্রে দেখা নিষিদ্ধ। এমন দৃষ্টিও জায়েয নয় যার দ্বারা কোন অনাচার-অমংগল হতে পারে। যে অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতুম হতে পর্দা করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মে সালামাকে (রা) আদেশ করেছিলেন সেই সাহাবীর গৃহেই আবার ফাতিমা বিনতে কায়েসকে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন। কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী তাঁর আহকামুল কুরআনে ঘটনাটি এভাবে বিবৃত করেছেন। তিনি বলেন যে, ফাতিমা বিনতে কায়েস উম্মে শারীকের গৃহে ইদ্দত পালন করতে চেয়েছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এই বাড়ীতে লোক যাতায়াত করে। তুমি ইবনে উম্মে মাকতুমের বাড়ীতে থাক। কারণ, সে একজন অন্ধ এবং সেখানে তুমি বেপর্দাও থাকতে পার ৷ ”

এটা থেকে জানা যায় যে, আসল উদ্দেশ্য অনাচার-অমংগলের সম্ভাবনা কমানো। যেখানে অনাচারের আশংকা অধিক ছিলো সেখানেই থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। আর যেখানে অনাচারের আশংকা কম ছিলো সেখানে থাকতে বলা হয়েছে। সেই নারীকে কোথাও অবশ্যই থাকতে হতো। যাদের থাকার কোন আবশ্যকতা ছিলো না সেসব নারীদেরকে একজন বেগানা পুরুষের সঙ্গে একই স্থানে সমবেত হতে এবং সামনাসামনি তার সাথে দেখা সাক্ষাত করতে নিষেধ করা হলো।”
এই সকল বিষয় বিচার-বুদ্ধি সম্মত। শরীয়াতের মর্ম অনুধাবন করার যোগ্যতা যাঁর আছে তিনি সহজেই বুঝতে পারেন যে, দৃষ্টিসংযমের নির্দেশাবলী কেন যুক্তিসংগত এবং এসকল নির্দেশের কঠোরতা বা লাঘবতারই বা কারণ কি। শরীয়াত প্রণেতার উদ্দেশ্য দৃষ্টির খেলা বন্ধ করা। কারো চোখের সাথে তো শরীয়াত প্রণেতার কোন শত্রুতা নেই। চক্ষুদ্বয় প্রথমে নির্দোষ দৃষ্টি দিয়ে দেখে। পরে মনের শয়তান তার পক্ষে প্রতারণামূলক বড় বড় যুক্তি পেশ করে। সে বলে, “এটা তো সৌন্দর্য আস্বাদন এবং এটা প্রকৃতি প্রদত্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যান্য দৃশ্য এবং ঝলক যখন তুমি দেখ তা থেকে এক নির্দোষ পবিত্র আনন্দ উপভোগ করে থাক। অতএব মানবীয় সৌন্দর্যও অবলোকন কর এবং তা থেকে আধ্যাত্মিক আনন্দ উপভোগ কর।” ভিতরে ভিতরে শয়তান আনন্দ সম্ভোগে স্বাদ বাড়িয়ে চলে। অবশেষে সৌন্দর্য-স্বাদ মিলনাকাঙ্ক্ষায় উন্নীত হয়। জগতে এই পর্যন্ত যত পাপাচার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে এই চোখের দৃষ্টিই যে তার প্রথম ও প্রধান কারণ তা অস্বীকার করার সাধ্য কারো আছে কি? কোন্ ব্যক্তি এ দাবী করতে পারে যে, একটি ফুল দেখে মনের যে অবস্থা হয় কোন সুন্দর যুবক বা যুবতী দেখে মনের ঠিক সেই অবস্থায়ই হয়? যদি উভয় অবস্থার মধ্যে পার্থক্য থাকে এবং একটির তুলনায় অপর অবস্থাটি যৌন আবেদনমূলক হয়, তাহলে কেমন করে বলা যায় যে, প্রথমোক্ত সৌন্দর্য আস্বাদনে যে স্বাধীনতা থাকবে অপরটির বেলায়ও তাই থাকবে? শরীয়াত প্রণেতা কারো সৌন্দর্য- স্বাদ বন্ধ করতে চান না। তিনি তো বলেন, তোমার ইচ্ছামত জোড়া বাছাই করে লও এবং তাকে কেন্দ্র করেই তোমার মাঝে সৌন্দর্য আস্বাদনের যতোখানি বাসনা আছে তা মিটিয়ে লও। এই কেন্দ্র হতে সরে যদি অপরের রূপ-যৌবন দেখে বেড়াও তাহলে অনাচার-অশ্লীলতায় লিপ্ত হবে। আত্মসংযম ও অন্যান্য বাধা-নিষেধের কারণে প্রত্যক্ষ লাম্পট্যে লিপ্ত না হলেও চিন্তা-রাজ্যের লাম্পট্য হতে নিজকে রক্ষা করতে পারবে না। তোমার অনেক শক্তির অপচয় হবে চোখের উত্তেজনায়। অনেক অকৃত- পাপাকাঙ্ক্ষায় তোমার মন কলুষিত হবে। পুনঃ পুনঃ প্রতারণায় জর্জরিত হবে এবং বহু রাত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে কাটাবে। অনেক সুন্দর নাগ-নাগিনী তোমাকে দংশন করবে। হৃদপিণ্ডের কম্পন ও রক্তের উত্তেজনায় তোমার জীবনীশক্তি ক্ষয় হবে। এটা কি কম ক্ষতি?

অতএব আপন চোখ আয়ত্তে রাখ। বিনা কারণে দেখা এবং এমন দেখা যার ফলে অনাচার-অমঙ্গল সংঘটিত হতে পারে তা হতে বিরত থাক। যদি দেখার কোন প্রকৃত আবশ্যকতা থাকে এবং তার দ্বারা কোন তামাদ্দুনিক মঙ্গল হয় তাহলে তা ন্যায়সঙ্গত।

সৌন্দর্য প্রকাশের সীমারেখা

দৃষ্টি সংযমের নির্দেশাবলী নারী ও পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। আবার কতক নির্দেশ নারীদের জন্য নির্দিষ্ট। তার মধ্যে প্রথম নির্দেশ এই যে, একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে আপন সৌন্দর্য প্রদর্শন করা চলবে না।

এই নির্দেশের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে চিন্তা করার পূর্বে ঐ সকল নির্দেশ স্মরণ করা দরকার। মুখমণ্ডল ছাড়া নারীর সারা শরীর ‘সতর’ যা পিতা, চাচা, ভাই এবং পুত্রের নিকটও উন্মুক্ত রাখা জায়েয নয়। এমনকি কোন নারীর ‘সতর’ অপর নারীর সম্মুখে উন্মুক্ত করাও মাকরূহ। এটা সামনে রেখে সৌন্দর্য প্রকাশের সীমারেখা আলোচনা করা যাক।
১. নারীকে তার সৌন্দর্য স্বামী, পিতা, শ্বশুর, সৎপুত্র, ভাই, ভাইপো এবং বোনের ছেলের সম্মুখে প্রকাশ করার অনমুতি দেয়া হয়েছে।

২. তাকে আপন গোলামের সম্মুখে (অন্য কারো গোলামের সম্মুখে নয়) সৌন্দর্য প্রদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

৩. নারী এমন লোকের সামনেও সৌন্দর্য-শোভা সহকারে আসতে পারে যে তার অনুগত ও অধীন এবং নারীদের প্রতি তার কোন আগ্রহ-আকাঙ্ক্ষা নেই ৷

8. যে সকল বালকের মধ্যে এখনো যৌন অনুভূতির সঞ্চার হয়নি তাদের সম্মুখেও নারী সৌন্দয প্রদর্শন করতে পারে। আল কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, “(অর্থাৎ‍) এমন বালক যারা গোপন কথা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত হয়নি।”

৫. সকল সময় মেলামেশা করে এমন মেয়েদের সামনে নারীর সৌন্দর্য-শোভা প্রদর্শন জায়েয আছে। আলকুরআনে ‘সাধারণ নারীগণ’ শব্দের পরিবর্তে ‘আপন নারীগণ’ ব্যবহার করা হয়েছে। এর দ্বারা ‘সম্ভ্রান্ত মহিলাগণ’ অথবা ‘আপন মহিলা আত্মীয়-স্বজন’ অথবা ‘আপন শ্রেণীর মহিলাগণ কেই বুঝানো হয়েছে। অজ্ঞ-মূর্খ নারী, এমন নারী যাদের চালচলন সন্দেহযুক্ত অথবা যাদের চরিত্র কলংক ও লাম্পট্যের ছাপ আছে এই সকল নারীর সম্মুখে আলোচ্য নারীর সৌন্দর্য প্রদর্শনের অনুমতি নেই। কারণ এরাও অনাচার অমংগলের কারণ হতে পারে। মুসলিমগণ সিরিয়া যাওয়ার পর মুসলিম মহিলাগণ ইয়াহুদি-খৃস্টান মহিলাদের সাথে মেলামেশা আরম্ভ করলে উমার (রা) সিরিয়ার গভর্নর আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহকে (রা) লিখে জানালেন যাতে মুসলিম মহিলাগণকে আহলে কিতাব নারীদের সাথে হাম্মামে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়। তাফসীরে ইবনে জারীর।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ব্যাখ্যা করে বলেন যে, মুসলিম মহিলাগণ কাফির এবং জিম্মী নারীদের সামনে ততটুকু প্রকাশ করতে পারে যতটুকু অপরিচিত পুরুষের সামনে করতে পারে। (তাফসীরে কবীর)

কোন ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা এসবের উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং যে সকল নারীর স্বভাব-চরিত্র ও তাহযীব-তামাদ্দুন জানা ছিলো না অথবা ইসলামের দৃষ্টিতে আপত্তিকর বলে জানা ছিলো- এই ধরনের নারীর প্রভাব থেকে মুসলিম নারীদেরকে রক্ষা করা ছিলো এসবের উদ্দেশ্য। আবার অমুসলিম নারীদের মধ্যে যারা সম্ভ্রান্ত ও লজ্জাশীল তারা আল-কুরআনে নির্দেশিত ‘আপন মহিলাগণের’ মধ্যেই শামিল।

এ সকল সীমারেখা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১. যে সৌন্দর্য প্রকাশের অনুমতি এই সীমাবদ্ধ গন্ডীর মধ্যে দেয়া হয়েছে তা ‘সতর-আওরতের’ আওতা বহির্ভূত অংগাদির। অর্থাৎ অলংকারাদি পরিধান করা, সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত হওয়া, সুরমা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং অন্যান্য বেশভূষা যা নারীগণ নারীসুলভ চাহিদা অনুযায়ী আপন গৃহে পরতে
অভ্যস্ত হয়।

২. এ ধরনের বেশভূষা প্রদর্শনের অনুমতি ঐ সকল পুরুষের সম্মুখে দেয়া হয়েছে যাদেরকে নারীর জন্য চিরদিনের জন্য হারাম করা হয়েছে অথবা ঐ সকল লোকের সম্মুখে যাদের মধ্যে যৌন বাসনা নেই অথবা ঐ লোকের সম্মুখে যারা কোন অনাচার-অমংগলের কারণ হবে না।

নারীদের বেলায় ‘আপন মহিলাগণ’ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। অধীনদের জন্য ‘যৌন বাসনাহীন’ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। বালকদের জন্য ‘নারীদের গোপন বিষয় সম্পর্কে অপরিজ্ঞাত’ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এ থেকে জানতে পারা গেল যে, শরীয়াত প্রণেতার উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর সৌন্দর্য প্রদর্শন এমন গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাতে তার সৌন্দর্য ও বেশভূষা দ্বারা কোন প্রকার অবৈধ উত্তেজনা সৃষ্টি এবং যৌন উচ্ছৃংখলতার আশংকা হতে না পারে।

এই গন্ডির বাইরে যত পুরুষ আছে তাদের সম্পর্কে এই আদেশ করা হয়েছে যে, তাদের সম্মুখে সৌন্দর্য ও বেশভূষা প্রদর্শন করা চলবে না। উপরন্তু পথ চলার সময় এমনভাবে পদক্ষেপ করা চলবে না যাতে গোপন সৌন্দর্য ও বেশভূষা পদধ্বনি দ্বারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং পুরুষের দৃষ্টি উক্ত নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই আদেশ দ্বারা যে সৌন্দর্য পর পুরুষ থেকে গোপন করতে বলা হয়েছে তা ঠিক তাই যা উপরে উল্লেখিত সীমাবদ্ধ গন্ডির মধ্যে প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য অতি স্পষ্ট। মহিলারা যদি বেশভূষা করে এমন লোকের সম্মুখে আসে যারা যৌন লালসা রাখে এবং মুহরেম না হওয়ার কারণে যাদের মনের যৌন লালসা পবিত্র নিষ্পাপ ভাবধারায় পরিবর্তিত হয়নি তাহলে অবশ্যম্ভাবীরূপে এর প্রতিক্রিয়া মানবসুলভ চাহিদা অনুসারেই হবে। এটা কেউ বলে না যে, এরূপ সৌন্দর্য প্রকাশের ফলে প্রতিটি নারী চরিত্রহীন হবে এবং প্রত্যেকটি পুরুষ কার্যতঃ পাপাচারী হয়ে পড়বে। কিন্তু এটাও কেউ অস্বীকার করতে পারেনা যে, সুন্দর বেশভূষা সহকারে নারীদের প্রকাশ্য চলাফেরা এবং জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করার ফলে অসংখ্য প্রকাশ্য ও গোপন, মানসিক ও বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। আজকের ইউরোপ ও আমেরিকার নারীসমাজ নিজেদের এবং স্বামীর উপার্জিত অর্থের অধিকাংশ বেশভূষায় ব্যয় করছে। তাদের এই ব্যয়ভার প্রতিদিন এতো বেড়ে যাচ্ছে যে, তা বহন করার আর্থিক সংগতিও তাদের নেই। যে সকল যৌন লালসাপূর্ণ দৃষ্টি বাজারে, অফিসে এবং জনসমাবেশে যোগদানকারী নারীদেরকে খোশ আমদেদ জানায় তা-ই কি এই উন্মাদনা সৃষ্টি করেনি? আবার চিন্তা করে দেখুন, নারীদের মাঝে সাজসজ্জার এই প্রবল আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হওয়ার ও তা বৃদ্ধি পেতে থাকার কারণ কি? এর কারণ কি এটাই নয় যে, তারা পুরুষের প্রশংসা লাভ করতে ও তাদের চোখে পছন্দনীয় হতে চায়? এটা কেন? তা কি একেবারে নিষ্পাপ আকাঙ্ক্ষা? এর মাঝে কি যৌন বাসনা লুক্কায়িত নেই যা নিজের স্বাভাবিক গণ্ডির বাইরে বিস্তার লাভ করতে চায় এবং যার দাবী পূরণের জন্য অপর প্রান্তেও অনুরূপ বাসনা রয়েছে? আপনি যদি এ সত্যকে অস্বীকার করেন তাহলে আগামীকাল হয়তো আপনি এটা দাবী করতে দ্বিধা করবেন না যে, যে আগ্নেয়গিরিতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে তার ভেতরের লাভা বাইরে ছুটে আসতে উন্মুখ নয়।
কাজ করার স্বাধীনতা আপনার আছে। যা আপনার ইচ্ছা তা করুন। কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করবেন না। এ সত্য এখন আর গোপনও নেই। দিনের আলোর মতোই এর ফল প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এই ফল আপনি জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে গ্রহণ করছেন। কিন্তু যেখান থেকে এর প্রকাশ সূচিত হয় ইসলাম ওখানেই একে বন্ধ করে দিতে চায়। কারণ ইসলামের দৃষ্টি সৌন্দর্য প্রকাশের বাহ্যতঃ নিষ্পাপ সূচনার ওপর নিবদ্ধ নয় বরং যে ভয়ানক পরিণাম কিয়ামতের অন্ধকারের মতো সমগ্র সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে তার ওপরই নিবদ্ধ।

“পর-পুরুষের সম্মুখে সাজসজ্জা সহকারে বিচরণকারী নারী আলোবিহীন কিয়ামতের অন্ধকারের মতো।” জামিউত তিরমিযী।

আলকুরআনে যে পর-পুরুষের সম্মুখে সৌন্দর্য প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে একটি ব্যতিক্রমও আছে। যথা, ‘ইল্লা মা জাহারা মিনহা’। এর অর্থ এই যে, যে সৌন্দর্য বা বেশভূষা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে, তাতে কোন দোষ নেই।

লোকেরা এই ব্যতিক্রম থেকে কিছু সুবিধা লাভ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আসলে এই শব্দগুলো থেকে বেশী সুবিধা লাভের কোন অবকাশ নেই। শরীয়াত প্রণেতা এই কথা বলেন যে, স্বেচ্ছায় অপরের সম্মুখে সৌন্দর্য প্রকাশ করো না। কিন্তু যে বেশভূষা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে, অথবা প্রকাশ হতে বাধ্য তার জন্য কেউ দায়ী হবে না। এর অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কার। তোমার নিয়াত যেন সৌন্দর্য ও বেশভূষা প্রকাশের না হয়। তোমার মনে এই ইচ্ছা ও প্রেরণা কিছুতেই হওয়া উচিত নয় যে, নিজের সাজসজ্জা অপরকে দেখাবে কিংবা কিছু না হলেও অন্তত অলংকারাদির লুপ্ত ঝংকার শুনিয়ে তোমার প্রতি অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তোমাকে তো আপন সৌন্দৰ্য- শোভা গোপন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। এরপর যদি কোন কিছু অনিচ্ছাসত্বেও প্রকাশ হয়ে পড়ে এর জন্য আল্লাহ তোমাকে দায়ী করবেন না। তুমি যে বস্ত্র দ্বারা তোমার সৌন্দর্য ঢেকে রাখবে তা তো প্রকাশ পাবেই। তোমার দেহের গঠন ও উচ্চতা, শারীরিক সৌষ্ঠব ও আকার-আকৃতি তো এতে ধরা যাবে। কাজ- কর্মের জন্য আবশ্যক মতো তোমার হাত দুটো ও মুখমণ্ডলের কিয়দংশ তো উন্মুক্ত করতেই হবে। এরূপ হলে কোন দোষ নেই। তোমার ইচ্ছা তা প্রকাশ করা নয়, বাধ্য হয়েই তুমি তা করছো। এতে যদি কোন অসৎ ব্যক্তি আনন্দ-স্বাদ উপভোগ করে তো করুক। সে তার অসৎ অভিলাষের শাস্তি ভোগ করবে। তামাদ্দুন ও নৈতিকতা যতোখানি দায়িত্ব তোমার উপর অর্পণ করেছিলো তুমি তা সাধ্যানুযায়ী পালন করেছো। উপরোক্ত আয়াতের মর্ম এটাই।

তাফসীরকারগণের মধ্যে এই আয়াতের মর্ম নিয়ে যত প্রকার মতভেদ আছে তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে জানতে পারা যাবে যে, যাবতীয় মত-পার্থক্য সত্বেও আয়াতের মর্ম তা-ই দাঁড়াবে যা উপরে বলা হলো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা), ইবরাহীম নাখয়ী এবং হাসান বসরীর (রহ) মতে, প্রকাশ্য সৌন্দর্যের অর্থ সকল বস্ত্রাদি যার মধ্যে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য ঢেকে রাখা যায়; যেমন, বোরকা, চাদর ইত্যাদি।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা ইবনে উমার, আনাস, জাহহাক, সাঈদ, ইবনে যুবাইর, আওযায়ী এবং হানাফী মতাবলম্বী ইমামদের মতে এর অর্থ মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় এবং এতে ব্যবহৃত সৌন্দর্য উপাদানসমূহ, যেমন, হাতের মেহেদি, আংটি, চোখের সুরমা প্রভৃতি।

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েবের মতে ব্যতিক্রম শুধু মুখমণ্ডল এবং অন্য এক বর্ণনাতে হাসান বসরীও এই মত সমর্থন করেন।

আয়িশার (রা) মতে প্রকাশ্য সৌন্দর্যের অর্থ হস্তদ্বয়, হাতের চুড়ি, আংটি, কংকন ইত্যাদি। তিনি মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার পক্ষে।

মিসওয়ার ইবনে মাখরামা এবং কাতাদাহ অলংকারাদিসহ হাত খুলবার অনুমতি দেন এবং তাঁর উক্তিতে মনে হয় যে, তিনি সমগ্র মুখমণ্ডলের পরিবর্তে শুধু দু’চোখ খুলে রাখা জায়েয রাখেন। ইবনে জারীর ও আহকামুল কুরআন।

এই সকল মতভেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা করে দেখুন। এই সকল মুফাসসির “ইল্লা মা জাহারা মিনহা” সম্পর্কে এটাই বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা এমন সৌন্দর্য প্রকাশের অনুমতি দেন যা আবশ্যিকভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে অথবা যা প্রকাশ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। হাতের প্রদর্শনী অথবা একে কারো দৃষ্টির বিষয়বস্তু বানানো এদের কারো উদ্দেশ্য নয়। প্রত্যেকে আপন আপন বোধশক্তি অনুযায়ী নারীদের প্রয়োজনকে সামনে রেখে এটা বুঝবার চেষ্টা করেছেন যে, প্রয়োজন হলে কোন্ বিষয়ে কতখানি পর্দার বাইরে যাওয়া যায় অথবা কোন্ অংগ আবশ্যিকভাবে উন্মুক্ত করা যায় কিংবা স্বভাবতই উন্মুক্ত হয়। আমরা বলি যে, ‘ইল্লা মা জাহারা মিনহা’-কে এর কোন একটিতেও সীমাবদ্ধ রাখবেন না। যে মুমিন নারী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশাবলীর অনুগত থাকতে চায় এবং অনাচার-অমংগলে লিপ্ত হওয়া যার ইচ্ছা নয় সে নিজেই নিজের অবস্থা ও প্রয়োজন অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, সে মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় উন্মুক্ত করবে কি করবে না, করতে চাইলে কোন্ সময়ে করবে, কতটুকু উন্মুক্ত এবং কতটুকু আবৃত রাখবে। এই ব্যাপারে শরীয়াত প্রণেতা কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ দেননি। অবস্থার বিভিন্নতা ও প্রয়োজন দেখে নির্দেশ নির্ধারণ করতে হবে। যে নারী আপন প্রয়োজনে বাইরে যেতে ও কাজকর্ম করতে বাধ্য তার হাত এবং কখনো মুখমণ্ডল খোলার প্রয়োজন হবে। এইরূপ নারীর জন্যে প্রয়োজন অনুসারে অনুমতি রয়েছে। কিন্তু যে নারীর অবস্থা এইরূপ নয় তার বিনাকারণে স্বেচ্ছায় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় অনাবৃত করা দুরস্ত নয়।

অতএব শরীয়াত প্রণেতার উদ্দেশ্য এই যে, যদি নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোন অংগ-অংশ অনাবৃত করা হয় তাতে পাপ হবে। অনিচ্ছায় আপনাআপনিই কিছু প্রকাশিত হয়ে পড়লে তাতে কোন পাপ হবে না। প্রকৃত প্রয়োজন যদি অনাবৃত করতে বাধ্য করে তাহলে তা জায়েয হবে।

এখন প্রশ্ন এই যে, অবস্থার বিভিন্নতা হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে শুধু মুখমণ্ডল সম্পর্কে কি নির্দেশ রয়েছে? শরীয়াত প্রণেতা একে পছন্দ করেন, না অপছন্দ করেন? শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময় একে অনাবৃত করা যায়, না অপরের দৃষ্টি থেকে এটি লুকিয়ে রাখার বস্তুই নয়?
সূরা আহযাবের আয়াতগুলোতে এসব প্রশ্নের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

মুখমণ্ডল সম্পর্কে নির্দেশ

“হে নবী, তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুসলিম মহিলাগণকে বলে দাও তারা যেন চাদর দ্বারা নিজেদের ঘোমটা টেনে দেয়। এই ব্যবস্থার দ্বারা আশা করা যায় যে, তাদেরকে চিনতে পারা যাবে এবং তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।”
৩৩ : আল আহযাব ॥ ৫৯

বিশেষ করে মুখমণ্ডল আবৃত করার নির্দেশ নিয়েই এই আয়াত নাযিল হয়েছে। “জিলবাব” শব্দের বহুবচন “জালাবীব”। এর অর্থ চাদর। ‘এদনা’ শব্দের অর্থ লটকান। “ইউদনীনা আলাইহিন্না মিন জালাবীৰে হিন্না” অর্থ নিজেদের ওপরে চাদরের খানিক অংশ যেন লটকিয়ে দেয়। ঘোমটা দেয়ার অর্থও এটাই। কিন্তু এই আয়াতের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধারণভাবে পরিচিত ‘ঘোমটা” নয়। এর উদ্দেশ্য মুখমণ্ডল আবৃতকরণ। তা ঘোমটার দ্বারা হোক, চাদর অথবা অন্য যে কোন উপায়ে হোক। এর উপকারিতা এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন মুসলিম নারী এভাবে আবৃত অবস্থায় ঘরের বাইরে যাবে তখন লোকেরা বুঝতে পারবে যে, এ এক সম্ভ্রান্ত মহিলা- নির্লজ্জ ও শ্লীলতা বর্জিত মহিলা নয়। এ কারণে কেউ তার শ্লীলতার প্রতিবন্ধক হবে না।

আল কুরআনের সকল মুফাসসির এই আয়াতের এই মর্মই ব্যক্ত করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, “আল্লাহ তা’আলা মুসলিম নারীদেরকে আদেশ করেছেন যে, তারা যখন কোন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাবে তখন যেন তারা মাথার ওপর থেকে চাদরের অংশ ঝুলিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে নেয়।” তাফসীরে ইবনে জারীর।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে শিরীন উবাইদা ইবনে সুফিয়ান ইবনে আলহারেস আলহাযরামীর নিকট জানতে চাইলেন, এই নির্দেশের ওপর কিভাবে আমল করতে হবে। এর উত্তরে তিনি নিজের ওপর চাদর ঝুলিয়ে দেখিয়ে দিলেন। কপাল, নাক ও একটি চোখ ঢেকে ফেললেন। শুধু একটি চোখ অনাবৃত রাখলেন। তাফসীরে ইবনে জারীর।

আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী এই আয়াতের তাফসীরে লিখেন, “হে নবী, আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুসলিম মহিলাগণকে বলে দিন, যখন কোন প্রয়োজনে আপন ঘর থেকে বাইরে যায় তখন যেন ক্রীতদাসীদের পোশাক না পরে- যে পোশাকে মাথা ও মুখমণ্ডল অনাবৃত থাকে এবং তারা যেন নিজেদের ওপরে চাদরের ঘোমটা টানিয়ে দেয় যাতে ফাসিক লোকেরা তাদের শ্রীলতার অন্তরায় না হয় এবং জানতে পারে এরা সম্ভ্রান্ত মহিলা।” তাফসীরে ইবনে জারীর।
আল্লামা আবু বকর জাসসাস বলেন, “এই আয়াতের দ্বারা এই কথা প্রমাণিত হয় যে, যুবতী নারীকে পরপুরুষ হতে তার মুখমণ্ডল আবৃত রাখার আদেশ করা হয়েছে এবং ঘর থেকে বাইরে যাবার সময় পর্দা পালন ও সম্ভ্রমশীলতা প্রদর্শন করা উচিত যাতে অসৎ অভিপ্রায় পোষণকারী তার প্রতি প্রলুব্ধ হতে না পারে।” আহকামুল কুরআন।

আল্লামা নিশাপুরী তাঁর ‘তাফসীরে গারায়েবুল কুরআনে’ লিখেন, “ইসলামের প্রাথমিক যুগে মেয়েরা জাহিলিয়াত যুগের মতো কামিস ও দোপাট্টা পরে বাইরে যেতো। সম্ভ্রান্ত মহিলাদের পোশাকও নিম্নশ্রেণীর মেয়েদের পোশাক থেকে পৃথক ছিলো না। অতঃপর আদেশ হলো যে, তারা যেন চাদর টেনে তাদের মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলে যাতে লোকেরা মনে করতে পারে যে, এরা সম্ভ্রান্ত মহিলা, শ্লীলতাবর্জিত মহিলা নয়।”

ইমাম রাজী লিখেন, “জাহিলিয়াত যুগে সম্ভ্রান্ত মহিলাগণ এবং ক্রীতদাসীগণ বেপর্দা চলাফেরা করতো এবং অসৎ লোক তাদের পিছু নিতো। আল্লাহ তা’আলা সম্ভ্রান্ত নারীদের প্রতি আদেশ করলেন তারা যেন চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করে। ‘যালিকা আদনা আঁইউরাফনা ফালা ইউযাইনা”- আয়াতাংশের দু’প্রকার মর্ম হতে পারে। এক. এই পোশাক থেকে বুঝা যাবে যে, এরা সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং এদের পিছু নেয়া হবে না। দুই. এর দ্বারা বুঝা যাবে যে, এরা চরিত্রহীনা নয়। কারণ যে নারী
তার মুখমণ্ডল ঢেকে রাখে তার কাছ থেকে কেউ এ আশা পোষণ করতে পারে না যে, সে আওরত (শরীরের যে অংশ স্বামী-স্ত্রী ছাড়া সকলের নিকট আবৃত রাখতে হয়) অনাবৃত করতে রাজী হবে। এই পোশাক এটাই প্রমাণ করবে যে, সে একজন পর্দানশীন নারী এবং তার দ্বারা কোন অসৎ কাজের আশা করা বৃথা।” তাফসীরে কবীর

কাযী বায়জাবী লিখেন, “ইউদনীনা আলাইহিন্না মিন জালাবীবে হিন্না’-র অর্থ এই যে, যখন তারা আপন প্রয়োজনে বাইরে যাবে তখন চাদর দ্বারা শরীর ও মুখমণ্ডল ঢেকে নেবে। এখানে ‘মিন’ শব্দটি ‘তাব’য়ীদ’-এর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ চাদরের একাংশ দিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত করতে হবে এবং একাংশ শরীরের ওপর জড়িয়ে দিতে হবে। ‘যালিকা আদনা আঁইউরাফনা’ দ্বারা সম্ভ্রান্ত নারী এবং ক্রীতদাসী ও গায়িকাদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। ‘ফালা ইউযাইনা’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে, সন্দেহভাজন লোক তাদের শ্লীলতাহানির দুঃসাহস করবে না।” তাফসীরে বায়জাবী।

এ সকল উক্তি থেকে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কিরামের (রা) পবিত্র যুগ থেকে শুরু করে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত প্রত্যেক যুগে উক্ত আয়াতের একই মর্ম করা হয়েছে।

হাদীসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর নবী করীমের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে সাধারণভাবে মুসলিম নারীগণ মুখমণ্ডলের ওপর আবরণ দেয়া শুরু করেন এবং অনাবৃত মুখমণ্ডল নিয়ে চলাফেরার প্রচলন বন্ধ হয়ে যায়।

সুনানু আবী দাউদ, জামিউত তিরমিযী, মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থগুলিতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের মুখে আবরণ এবং হাতে দস্তানা পরিধান করা নিষেধ করে দিয়েছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সেই পবিত্র যুগেই মুখমণ্ডল আবৃত করার জন্য আবরণ এবং হস্তদ্বয় ঢাকবার জন্য দস্তানা ব্যবহারের প্রচলন ছিলো। শুধু ইহরামের অবস্থায় তা ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছিলো। কিন্তু হজ্জের সময় নারীর মুখমণ্ডল জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর করা এর উদ্দেশ্য ছিলো না। এর উদ্দেশ্য ছিলো, ইহরামের দীনবেশে মুখের আবরণ যেন নারীদের পোশাকের কোন অংশবিশেষ না হতে পারে যা অন্য সময়ে সাধারণভাবে হয়ে থাকে।

অন্যান্য হাদীসে রয়েছে যে, ইহরাম অবস্থায়ও নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীগণ ও অন্যান্য মুসলিম মহিলাগণ আবরণহীন মুখমণ্ডল পর-পুরুষের দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে রাখতেন। আয়িশা (রা) বলেন, “যানবাহন আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলো এবং আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংগে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। যখন লোক আমাদের সম্মুখে আসতো, আমরা আমাদের চাদর মাথার ওপর থেকে মুখমণ্ডলের ওপর টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার মুখমণ্ডল খুলে দিতাম।” সুনানু আবী দাউদ।

ফাতিমা বিনতে মানযার বলেন, “আমরা ইহরাম অবস্থায় কাপড় দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতাম। আমাদের সাথে আসমা বিনতে আবু বকর (রা)ও ছিলেন।”

কিতাবুল হজ্জে আয়িশার (রা) এই উক্তি উদ্ধৃত রয়েছে : “নারীগণ যেন ইহরাম অবস্থায় নিজেদের চাদর মাথা থেকে মুখমণ্ডলের ওপর ঝুলিয়ে দেয়।”

আলকুরআনের সংশ্লিষ্ট শব্দাবলী ও জনসাধারণ্যে তার স্বীকৃতি, সর্বসম্মত তাফসীর এবং রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে তার বাস্তবায়নের দিকে যে ব্যক্তি লক্ষ্য করবে তার পক্ষে এ সত্যকে অস্বীকার করা সম্ভব হবে না যে, ইসলামী শরীয়াতে পর-পুরুষের সামনে নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার নির্দেশ রয়েছে এবং স্বয়ং রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগেই এ নির্দেশ প্রতিপালিত হয়েছে। যে পবিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি আলকুরআন নাযিল হয়েছিলো তাঁর চোখের সামনেই মুসলিম মহিলাগণ একে বহির্বাটিস্থ পোশাকের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং সেকালেও এর নাম ছিলো ‘নিকাব’ বা আবরণ।

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South