জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

হাদীসের আলোকে মানব জীবন – দ্বিতীয় খণ্ড

অন্তর্গতঃ আল হাদিস, কর্মী সিলেবাস
Share on FacebookShare on Twitter

হাদীসের আলোকে মানব জীবন

দ্বিতীয় খণ্ড

মাছায়েল অংশ


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


আবুল কালাম মুহাম্মাদ ইউসূফ
(মুমতাজুল মুহাদ্দেসীন)

খেলাফত পাবলিকেশন্স

চতুর্থ সংস্করণের ভূমিকা

ইসলামী শরীয়তের মূল উৎস হল দু’টি, একটি আল্লাহর কিতাব, অর্থাৎ কোরআনে কারিম। আর দ্বিতীয়তটি হল সুন্নাহ্ অর্থাৎ রসূলের হাদীস। আর এর প্রতি ইংগিত করেই রসূল (সঃ) তাঁর বিদায়ী হজের বিদায়ী বক্তব্যের বিদায়ী বাক্যে বলেছিলেন, “আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এ দু’টিকে যদি শক্ত করে ধারণ করে থাক, তাহলে তোমাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কোন আংশকা থাকবে না। তাহলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ বা তরীকা।” সুন্নাহর বিবরণ আমরা হাদীসের মাধ্যমেই পেয়ে থাকি। হাদীস একদিকে যেমন কোরআনের ব্যাখ্যা, অন্যদিকে শরীয়তের হুকুম আহকামের বিবরণও হাদীসের মাধ্যেমে পাওয়া যায়। ফেকাহবিদগণ হাদীসের মাধ্যমেই মাসয়ালার উৎস যেমন খুঁজে বের করেছেন, তেমনি গুরুত্বানুসারে ফরজ, ওয়াজিব, মুস্তাহাব ইত্যাদি প্রকারে শ্রেণী বিন্যাস করেছেন।

আমি আমার সংকলিত “হাদীসের আলোকে মানব জীবন” বইয়ের প্রথম খন্ডে ইবাদাত সমূহের ফজিলত সম্পর্কীয় হাদীস বর্ণনা করেছি। আর দ্বিতীয় খন্ডে ইবাদাতের উৎস অর্থাৎ মাসয়ালা সম্পর্কীয় হাদীস সমূহকে তুলে ধরেছি। ইতিমধ্যে “হাদীসের আলোকে মানব জীবন” বইয়ের ৩য় ও ৪র্থ খন্ডও আল্লাহর মেহেরবাণীতে প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের হাতে পৌঁছে গেছে। ৩য় খন্ডে আছে ‘নৈতিকতা সম্পর্কীয় রসূলের হাদীস” আর ৪র্থ খন্ডে আছে রসূলের অছীয়ত সম্পর্কীয় হাদীস।

সর্বশেষে আমি আমার ঐ মহান প্রভুর শুকরীয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে হাদীসের কিতাবের চার চারটি খন্ড সংকলন ও প্রকাশ করার তৌফিক দিলেন। তিনি যেন আমার এই ক্ষুদ্র খিদমত কবুল করেন এবং পরকালে যেন তিনি তার অনুগ্রহ ও নাজাতের জন্য ইহাকে আমার জন্য অছীলা হিসাবে গ্রহন করেন।

আবুল কালাম মুহাম্মাদ ইউসুফ

অধ্যায়: ১ পবিত্রতা

সূচীপত্র

  1. অধ্যায়: ১ পবিত্রতা
    1. পানি সম্পর্কীয় বিধি-নিষেধ
    2. পায়খানা-পেশাবের বিধি-নিষেধ
    3. ফরজ গোসল
    4. গোসল কখন ফরজ হয়
    5. ফরজ গোসলের নিয়ম
    6. সুন্নত গোসল সমূহ
    7. অযুর বর্ণনা
    8. অযুর ফজিলত
    9. অযুর নিয়ম
    10. যে যে কারণে অযু করতে হয়
    11. পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কিনা
    12. মেয়েদের স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কিনা
    13. মেসওয়াকের গুরুত্ব
    14. নাপাক অবস্থায় যেসব কাজ জায়েয
    15. হায়েয-নিফাসের বিবরণ
    16. মোজার উপরে মোছেহ করা
    17. তায়াম্মুমের বিবরণ
    18. তায়াম্মুমের নিয়ম
    19. ইস্তিহাযা রোগীনীর বিবরণ
  2. অধ্যায় ২: নামাজ
    1. আযান পর্ব
    2. আযানের বিবরণ
    3. নামাজের লেবাস
    4. নামাজের ওয়াক্ত সমূহের বিবরণ
    5. মসজিদ ও নামাজের স্থান সমূহের বিবরণ
    6. নামাজ সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু আলোচনা
    7. তাকবীর তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
    8. নামাজের মধ্যে সূরা ফাতিহা পড়া
    9. ইমামের পিছনে মুকতাদির কিরআত না পড়ার বর্ণনা
    10. রুকুর বিবরণ
    11. সিজদার বিবরণ
    12. তাশাহুদ পাঠে শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা
    13. নামাজে দরূদ পড়া
    14. শেষ বৈঠকে দরূদের পরে দোয়া পাঠ করা
    15. সালামের সাথে নামাজ শেষ করা
    16. নামাজ শেষে মুক্তাদীদের দিকে মুখ করে বসা
    17. নামাজ শেষে দোয়া পাঠ করা
    18. নামাজের পরে তসবীহ পাঠ
    19. নামাজে যে সব কাজ নিষিদ্ধ
    20. সিজদায়ে সোহোর বিবরণ
    21. নামাজের নিষিদ্ধ সময়সমূহ
    22. জামায়াতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব
    23. কে ইমাম হওয়ার অধিকারী
    24. ইমামের দায়িত্ব কর্তব্য
    25. মুকতাদীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
    26. ফরয নামাজের আগের ও পরের সুন্নত নামাজ
    27. বিতরের নামাজ
    28. তাহাজ্জুদের নামাজ (রাতের নামাজ)
    29. তারাবীর নামাজ
    30. সফরের নামাজ (কছর নামাজ)
    31. সফরে দুই নামাজ একত্রে পড়া
    32. নৌকা, লঞ্চ বা ইষ্টিমারে কিভাবে নামাজ পড়বে
    33. জুময়ার নামাজ
    34. জুময়ার ফরযের পরে সুন্নত নামাজ
    35. ঈদের নামাজ
    36. ঈদের নামাজে কয় তকবীর বলতে হবে
  3. অধ্যায় ৩: জাকাত
    1. জাকাতের বিবরণ
    2. জাকাতের গুরুত্ব
    3. জাকাতের অতিরিক্ত কিছু বিবরণ
    4. সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা
  4. অধ্যায় ৪: রোযা
    1. শরীয়তে রোযার গুরুত্ব
    2. চাঁদ দেখে রোযা রাখা ও চাঁদ দেখে রোযা ছাড়া
    3. সন্দেহের দিনে রোযা রাখা
    4. সেহরী ও ইফতারের বিবরণ
    5. যে সব কাজে রোযা ভঙ্গ হয় না
    6. সফরের অবস্থায় রোযা
  5. অধ্যায় ৫: হজ
    1. হজের বিবরণ
    2. আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ
    3. তাওয়াফ, তাওয়াফের নামাজ ও সাফা-মারওয়ার ছায়ী
    4. আরাফাত ও মুজদালেফায়ে অবস্থান ও মিনায়ে কোরবানী
    5. জামরায় পাথর মারা
    6. কোরবনীর বিবরণ
    7. মাথা মুন্ডানো

পানি সম্পর্কীয় বিধি-নিষেধ

পবিত্র কুরআনে পানির পবিত্রকারী বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,

وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُورًا (الفرقان: ٤٨)

“আমি আসমান হতে বিশুদ্ধকারী পানি অবতীর্ণ করেছি।”
(আল-ফুরকান-৪৮)

আল্লাহ আরও বলেন,

وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ (الأنفال: ۱۱)

“তিনি আসমান হতে পানি বর্ষাণ যাতে তা দ্বারা তোমাদেরকে পবিত্র করা
যায়।” (আল-আনফাল-১১)

পানি শুধু মানুষই নয় বরং জীব-জানোয়ার, কীট-পতঙ্গ, গাছ-গাছড়া সকলের জন্য মহান আল্লাহর একটি মহামূল্যবান নিয়ামত। স্বাস্থ্য রক্ষার্থে যেমন বিশুদ্ধ পানি পান করা অপরিহার্য, তেমনি পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তেও বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন। তাই হুজুর (সঃ) পবিত্র পানিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপবিত্র করতে বারণ করেছেন। কেননা এতে পানি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। অনুরূপভাবে তিনি পানির অপচয় ও অপব্যবহার হতেও আমাদেরকে নিষেধ করেছেন।

পানির রং, স্বাদ ও গন্ধ যে পর্যন্ত বহাল থাকবে সে পর্যন্ত পাক বলেই বিবেচিত হবে। কিন্তু উপরোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্যের কোন একটি নষ্ট হলে আর পানি পাক থাকে না। ঐ পানি পান করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি তার দ্বারা অজু-গোছলও বৈধ নয়।

(۱) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الْمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِي لَا يَجْرِي ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ (متفق عليه)

(১) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে পানি আবদ্ধ, প্রবাহমান নয়, এমন পানিতে তোমাদের কেউ যেন কিছুতেই পেশাব না করে। অতঃপর আবার সে তাতে গোসল করে।”
(বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ বদ্ধ পনিতে যেখানে পানির পরিমাণ প্রচুর নয়, পেশাব করা, আবার ঐ পানি দ্বারা অযু-গোছল করা বৈধ নয়।

(۲) وَعَنِ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُبَالَ فِي الْمَاءِ الرَّكِي (مسلم)

(২) “হজরত জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বদ্ধ পানিতে পেশাব
করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম)

(۳) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْمَاءِ يَكُوْنُ فِي الْفَلَاةِ مِنَ الْأَرْضِ وَمَا يَنُوبُهُ مِنَ الدَّوَابِ وَالسَّبَاعَ فَقَالَ إِذَا كَانَ الْمَاءُ قُلْتَيْنِ لَمْ يَحْمِلُ الْخَبَثَ
(أحمد – أبو داود – -ترمذي- نسائي- دارمي – ابن ماجة)

(৩) “হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, একদা হুজুরকে (সঃ) ঐ পানি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যা মাঠের মধ্যে খোলা জায়গায় জমে থাকে এবং তা হতে বন্য জীব-জানোয়ার ও হিংস্র পশু পান করে। জওয়াবে হুজুর (সঃ) বললেন, পানি যখন দুই কোল্লা (মটকা) পরিমাণ হবে, তখন আর তা নাপাক হবে না।”

(আহমদ, আবু দাউদ, তিরিমিজি, নাসাঈ, দারিমী, ইবনে মাযা)

ব্যাখ্যাঃ কোল্লা মটকাকে বলা হয়। এক কোল্লায় সাধারণত তিন মণের কিছু অধিক পানি ধরে। সুতরাং, দুই কোল্লায় সোয়া ছয় মণ সাড়ে ছয় মণ পানি হবে। উপরোক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম শাফয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল ছয় মণের অধিক পানি হলে তাকে مَاءٌ كَثِيرٌ প্রচুর পানি বলেছেন এবং তা নাপাক হবে না। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা উপরোক্ত মত সমর্থন করেন না। ইমাম আবু হানিফার মতে ১০ হাত লম্বা, ১০ হাত চওড়া হাউজ বা পুকুরে যদি কম পক্ষে এই পরিমাণ পানি থাকে যে, কোষ ভর্তি পানি উঠালে মাটি হাতে লাগে না, তাহলে তা مَاءً كَثِيرٌ প্রচুর পানি এবং এই ধরণের পানিতে কোন নাপাক বস্তু পড়লে পানি নাপাক হবে না।

(٤) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا تَرْكَبُ الْبَحْرَ وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيْلَ مِنَ الْمَاءِ فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِهِ عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَأُ بِمَاءِ الْبَحْرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الطُّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتَهُ
(موطأ إمام مالك، ترمذي، أبو داود، نسائي ، ابن ماجة ، دارمي)

(৪) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হুজুরের (সঃ) কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আমাদের সামুদ্রিক সফরে কখনও এমন হয় যে, আমাদের কাছে অল্প (মিষ্টি) পানি থাকে, এমতাবস্থায় যদি আমরা ঐ পানি দ্বারা অযু করি, তাহলে আমরা পিপাসায় ভুগব। ঐ অবস্থায় কি আমরা সাগরের পানি দ্বারা অযু করতে পারি? হুজুর (সঃ) বললেন, সাগরের পানি পবিত্র এবং তার মৃতও হালাল।” (মালিক, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজা, দারিমী)

ব্যাখ্যাঃ যদিও হুজুরের (সঃ) কাছে সাগরের পানির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিন্তু হুজুর সাগরের পানির অবস্থা বলতে গিয়ে সাগরের খাদ্যের অবস্থাও বলে দিলেন। অর্থাৎ সাগরের পানি যেমন পবিত্র, তেমনি সাগরের পানিতে বসবাসকারী যাবতীয় মৃত প্রাণীও হালাল। এই হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম মালিক, ইমাম শাস্ত্রী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল পানিতে বসবাসকারী যাবতীয় জীবকে হালাল বলেছেন, তা মাছ হোক বা অন্য কিছু। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রঃ) পানির মধ্যে বিচারণকারী জীবের মধ্যে শুধু মাছকেই হালাল বলেছেন। তিনি কুরআনের নিম্ন লিখিত আয়াতটিকে দলিল হিসেবে পেশ করেছেনঃ-

وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمَ عَلَيْهُمُ الْخَبَائِثَ (الأعراف: ١٥٧)

অর্থঃ “তাদের জন্য পবিত্র উত্তম খাদ্য হালাল করা হয়েছে। আর অপবিত্র খারাপ খাদ্য হারাম করা হয়েছে।” (আল আরাফ- ১৫৭)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ পবিত্র উত্তম বস্তু হালাল করেছেন আর অপবিত্র খারাপ বস্তু হারাম করেছেন, আর পানির মধ্যে বসবাসকারী মাছ ব্যতীত সকল জীবই খবিস অপবিত্র।

যদিও প্রশ্নকারী হুজুরকে (সঃ) শুধু পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু হুজুর (সঃ) সাগরের পানির অবস্থার সাথে সাথে খাদ্যের বর্ণনাও দিলেন। কেননা সাগরে যেমন পানির অভাব হয়, তেমনি খাদ্যের অভাবও হয়।

(٥) وَعَنْ كَبُشَةَ بِنْتِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَخَلَ عَلَيْهَا فَسَكَبَتْ لَهُ وَضُوءٌ، فَجَاءَتْ هِرَّةٌ تَشْرَبُ مِنْهُ، فَأَصْغَى لَهَا أَبُو قَتَادَةَ الإِنَاءَ حَتَّى شَرِبَتْ، قَالَتْ كَبْشَةُ فَرَآنِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَقَالَ: أَتَعْجَبِينَ يَا بِنْتَ أَخِي؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسِ، إِنَّمَا هِيَ مِنْ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ أَوَ الطَّوَّافَاتِ.
(مؤطا إمام مالك – أحمد – ترمذي – نسائي)

(৫) “কাবশা বিনতে কায়াব বিন মালিক হতে বর্ণিত, একদা আবু কাতাদাহ তার ঘরে আসলেন। তিনি তার জন্য অজুর পানির ব্যবস্থা করলেন। হঠাৎ একটি বিড়াল এসে উক্ত পানি হতে পান করা শুরু করলো, আবু কাতাদাহ্ বিড়ালের উদ্দেশ্যে পানির পাত্রটি কাত করে ধরলেন এমনকি সে শেষ পর্যন্ত পান করে নিল। আমি উক্ত দৃশ্য দেখতে ছিলাম। ফলে আমার শ্বশুর আবু কাতাদাহ্ বললেন, ভাতিজী, তুমি কি আশ্চর্য বোধ করছ? আমি বললাম হাঁ। তখন তিনি বললেন, হুজুর (সঃ) বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়। উহা তোমাদের আশে-পাশে ঘন ঘন বিচরণকারী।”
(মালেক, আহমদ, তিরমিজি, নাছাই)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস মর্মে ইমাম শাফয়ী ও আবু ইউসূফ বিড়ালে পান করা অবশিষ্ট পানিকে পবিত্র মনে করেন। অবশ্য আবু হানিফা (রঃ) বিড়ালের পান করা অবশিষ্ট পানি দ্বারা অজু করাকে মাকরূহ তানযিহ বলেছেন।

পায়খানা-পেশাবের বিধি-নিষেধ

(٦) وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبَلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِبُوا (متفق عليه)

(৬) “হজরত আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যখন তোমরা পায়খানায় যাবে তখন কিবলাকে সামনে রেখেও বসবে না এবং পিছনে রেখেও বসবে না। তোমরা হয় পূর্ব দিকে ফিরে বসবে নতুবা পশ্চিম দিকে।” (বুখারী মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ যেহেতু আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরীফকে সামনে রেখে ও কিবলা করে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা নামাজ আদায় করে, তাই আল্লাহর নবী আল্লাহর ঘরের সম্মান রক্ষার্থে তার দিকে ফিরে পায়খানা-পেশাব করতে বারণ করেছেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা একটি গর্হিত ও অপছন্দনীয় কাজ। সুতরাং আমাদের অবশ্যই পায়খানা-পেশাবে বসতে হুজুরের (সঃ) এ নির্দেশ পালন করতে হবে।

(۷) قَالَ الشَّيْخُ الإِمَامُ مُحِيُّ السُّنَّةِ بَغْوِي رَحِمَهُ اللَّهُ هَذَا الْحَدِيثُ فِي الصَّحْرَاءِ وَأَمَّا فِي الْبُنْيَانِ فَلَا بَأْسَ

لِمَا رُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: ارْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةً لِبَعْضٍ حَاجَتِي، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ، مُسْتَقِيلَ الشَّامِ (بخاري – مسلم)

(৭) “শেখ মহিউসুন্নাহ বগবী বলেন, (আবু আউয়ুব আনসারী বর্ণিত) উপরোক্ত হাদীসটি ছিল খোলা ময়দান সম্পর্কে। বেড়া ঘেরা বা দেয়াল ঘেরা (পায়খানা-পেশাবখানা) সম্পর্কে নয়। কেননা, হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি একবার কোন কাজ উপলক্ষে (আমার বোন) উম্মুল মুমেনীন হজরত হাফসার ঘরের ছাদে উঠেছিলাম, তখন হুজুরকে (সঃ) দেখলাম (এক ঘেরা জায়গায়) কিবলাকে পিছনে রেখে সামনের দিকে মুখ করে পায়খানা করছেন।” (বুখারী মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ খোলা জায়গায় কিবলাকে সামনে কিংবা পিছনে রেখে পায়খানা-পেশাব করা সর্বসম্মতভাবে হারাম। তবে ঘেরা জায়গায় কিবলাকে সামনে বা পিছনে রেখে বসা জায়েয আছে বলে কিছু সংখ্যক সাহাবী ও তাবিয়ী মনে করেন। ইবনে উমরের বর্ণিত হাদীসটি তাদের দলিল। ইমাম শাফয়ী অনুরূপ অবস্থায় কিবলাকে সামনে-পিছনে রেখে পায়খানা-পেশাব করা জায়েয মনে করেন। আর আবু আইয়ুব আনসারীর হাদীসে যেহেতু ঘেরা-অঘেরার উল্লেখ নেই। ইমাম আবু হানিফার মতে হুজুর (সঃ) কোন দিকে বাকা হয়ে হয়ত বসে ছিলেন, কিন্তু ইবনে উমর দেখতে ভুল করেছেন।

(۸)
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ يَقُولُ: أَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
(بخاري – مسلم)

(৮) “হজরত আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) যখন পায়খানায় যেতেন তখন তিনি এই দোয়া পড়তেন,
“হে আল্লাহ আমি নর-নারী উভয়রূপ শয়তান হতে তোমার আশ্রয় কামনা করছি।” (বুখারী, মুসলীম)

(۹) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ قَالُوا وَمَا اللَّاعِنَانِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ الَّذِي يَتَخَلَّى فِي طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ فِي ظِلِهِمْ (مسلم)

(৯) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, হুজুর (সঃ) বলেছেন, তোমরা দুই ধরনের লায়ানতের কারণ হতে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর, দুই ধরনের লায়ানতের কারণ কি বুঝলাম না।? হুজুর (সঃ) জওয়াবে বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের চলার পথে কিংবা ছায়ায় (যেখানে লোক বসে) সেখানে পায়খানা করে।” (মুসলিম)

ব্যাখাঃ মানুষ মানুষের কল্যাণ করবে এটাই ইসলাম ও মানবতার দাবী। মানুষের এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে মানুষের অপকার বা অকল্যাণ হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ ধরনের কাজ খুবই গর্হিত। সুতরাং যদি কেউ মানুষের চলার পথে পায়খানা করে, তাহলে অন্ধকারে কিংবা অজ্ঞাতে চলার সময় তা মানুষের পায় লেগে তার কষ্টের কারণ হতে পারে, অনুরূপভাবে গাছের ছায়ায় পায়খানা করলেও তা মানুষের কষ্টের কারণ হতে পারে, কেননা পথিক ক্লান্ত হয়ে চলার পথে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে ক্লান্তি দূর করে, সুতরাং এ ধরনের ছায়ায় পায়খানা করা নিষিদ্ধ।

(۱۰) وَعَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ نَهَانًا يَعْنِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِغَائِطِ أَوْ بَوْلٍ وَأَنْ لَا تَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِيْنِ أَوْ أَنْ لَا نَسْتَنْحِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ تَسْتَنْجِيَ بِرَجِيعِ أَوْ عَظْمٍ (مسلم)

(১০) “হজরত সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) আমাদেরকে কিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করতে, ডান হাত দ্বারা ইসতেনজা (সৌচ) করতে এবং পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্ত তিনটির কম কুলুখ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে হুজুর (সঃ) আমাদেরকে শুকনা গোবর ও হাড় কুলুখ হিসাবে ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন।” (মুসলিম)

(۱۱) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ الْخَلَاءَ فَاحْمِلُ أَنَا وَغُلَامٌ أَدَاوَةً مِّنْ مَّاءٍ وَعَنَزَةً يَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ (بخاري – مسلم)

(১১) “হজরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) যখন পায়খানায় যেতেন তখন আমি ও অপর একটি ছেলে পানির পাত্র এবং মাথায় বর্শাধারী একখানা ছড়ি নিয়ে যেতাম। হুজুর (সঃ) ঐ পানি দ্বারা ইসতেনজা করতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখাঃ আরব দেশে যেহেতু সাধারণভাবে পানির অভাব ছিল, তাই হুজুর (সঃ) পায়খানা-পেশাবের পরে তিনটি কুলুখ ব্যবহার দ্বারা উত্তমরূপে পবিত্র হতে বলেছেন। তবে যদি পানি পাওয়া যায়, তাহলে কুলুখ ব্যবহারের সাথে সাথে পানি ব্যবহার করাও উত্তম। উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনায় দেখা যায় হুজুর (সঃ) সাধারণভাবে পায়খানা-পেশাবের পর পানি ব্যবহারের মাধ্যমে পবিত্র হতেন।

“আনাজা” এক ধরনের ছড়ি যার মাথায় বর্শা থাকতো। হুজুর (সঃ) এর সাহায্যে মাটি খুঁড়ে ঢেলা সংগ্রহ করতেন। আবার ময়দানে নামাজ পড়ার সময় সামনে গেড়ে দিতেন।

ফরজ গোসল

আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে এরশাদ করেছেনঃ

وَإِنْ كُنتُمْ جُنُبًا فَاطْهَرُوا (المائدة – (٦)

“যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে।” (আল মায়েদা – ৬)

উপরোক্ত আয়াতে অপবিত্র লোককে পবিত্র হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে অপবিত্র লোকের জন্য গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ।

গোসল কখন ফরজ হয়

(۱۲)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَلَسَ أَحَدُكُمْ شُعَبِهَا

الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ وَإِنْ لَّمْ يُنْزِلْ (بخاري – مسلم)

(১২) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ স্ত্রীলোকের চারটি শাখার মুখোমুখি বসে এবং প্রয়াস পায় তখন সে অবস্থায় বীর্যপাত না হলেও গোসল ফরজ হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ স্ত্রীলোকের সাথে সঙ্গমে রত হলেই গোসল ওয়াজিব হবে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক।

(۱۳)
وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسِيَّبِ إِنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَعُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ وَعَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانُوا يَقُولُونَ إِذَا مَسَّ الْخِتَانُ الخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ (مؤطا إمام مالك)

(১৩) “হজরত সাঈদ ইবনে মুসিইয়াব হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত উমর ইবনে খাত্তাব, হজরত উসমান বিন আফ্ফান ও-রসূলের (সঃ) সহধর্মিনী হজরত আয়েশা (রাঃ) বলতেন যে, যৌনাঙ্গ যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে গোসল ওয়াজিব হবে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসে উল্লেখিত সাহাবায়ে কিরামের অভিমত ছিল যে, যখন পুরুষের পুরুষাঙ্গ মহিলাদের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করবে। অর্থাৎ মহিলাদের যৌনাঙ্গের মধ্যে পুরষাঙ্গের অগ্রভাগ, প্রবেশ করবে তখনই গোসল ওয়াজিব হবে। বীর্য বের হওয়া গোসলের জন্য প্রয়োজন বা শর্ত নয়।

(١٤) وَعَنْ نَافِعٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ يَقُولُ إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ (مؤطا إمام مالك)

(১৪) “হজরত নাফে (রাঃ) হতে এই মর্মে বর্ণিত আছে যে, হজরত আব্দুল্লহ বিন উমর (রাঃ) বলতেন যে যৌনাঙ্গ যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল ওয়াজিব হবে”। (মুয়াত্তা)

(١٥) وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ رَوَاهُ الْمُسْلِمُ)، قَالَ الشَّيْخُ الإِمَامُ مُحِيُّ السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللَّهِ هَذَا مَنْسُوخٌ وَقَالَ بْنُ عَبَّاسٍ إِنَّمَا الْمَاءُ مِنَ الْمَاءِ فِي الاحْتِلامِ رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَلَمْ أَجِدَهُ فِي الصَّحِيحَيْنِ

(১৫) “হজরত আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, অবশ্যই পানি পানিকে ফরজ করে।” (অর্থাৎ বীর্যপাত দ্বারা গোসল ফরজ হবে। (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ১২, ১৩, ও ১৪ নম্বর হাদীসের বর্ণনা মতে বুঝা যায় যে, সঙ্গমে রত হলেই গোসল ফরজ হবে, বীর্যপাত হোক আর নাই হোক। কিন্তু ১৫ নং হাদীসের বর্ণনায় গোসল ফরজ হওয়ার জন্য বীর্যপাত হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মীমাংসায় সায়েখ মহিউসুন্নাহ বলেছেন, আলোচ্য হাদীসটি উপরোক্ত হাদীসসমূহের দ্বারা মনসুখ হয়ে গিয়েছে। ইবনে আব্বাসের মতে এ হাদীসটি স্বপ্নদোষ সম্পর্কে প্রযোজ্য।

স্বপ্নদোষে বীর্যপাত না হলে গোসল ফরজ হয় না। ইবনে আব্বাসের এই উক্তিটি তিরমিজি শরীফে বর্ণিত আছে।

(١٦) وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحِي مِنَ الْحَقِّ فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ مِنَ الْغُسْلِ إِذَا احْتَمَلَتْ قَالَ نَعَمْ إِذَا رَأْتِ الْمَاءَ فَفَطَّتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَجْهَهَا وَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوَ تَحْتَلِمُ الْمَرأَةُ ؟ قَالَ نَعَمْ تَرِبَتْ يَمِينُكَ فَبِمَا يَشْبَهُهَا وَلَدُهَا (متفق عليه)

(১৬) “হজরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, একদা উম্মে সুলাইম আনসারী বলল, হে আল্লাহর রসূল, আল্লাহ্ কখনও হক কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (অতএব আমি লজ্জা ফেলে জিজ্ঞাসা করছি) স্ত্রীলোকের স্বপ্ন দোষ হলে কি গোসল ফরজ হবে? হুজুর (সঃ) বললেন হাঁ, যখন সে (ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে বা শরীরে) বীর্য দেখবে। একথা শুনে হজরত উম্মে সালমা লজ্জায় মুখ আবৃত করে ফেললেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল স্ত্রীলোকেরও কি স্বপ্ন দোষ হয়? হুজুর বললেন, হাঁ তুমি কেমন কথা বলছো, তা না হলে সন্তান কি করে মায়ের মত হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ পুরুষের ন্যায় স্ত্রীলোকেরও বীর্য আছে। পুরুষের বীর্য গাঢ় সাদা আর স্ত্রীলোকের বীর্য হলদে ও পাতলা, উভয়ের মধ্যে যেটিই জয়ী হয় সন্তান তার মত হয়।

ফরজ গোসলের নিয়ম

(۱۷) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ غَسَلَ يَدَيْهِ وَتَوَضَّأَ وَضُوْءَهُ لِلصَّلاةِ ثُمَّ يَغْتَسِلُ ثُمَّ يُخَلِّلُ بِيَدَيْهِ حَتَّى إِذَا ظَنَّ أَنَّهُ أَرْوَى بَشْرَتَهُ أَفَاضَ عَلَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ سَائِرَ جَسَدِهِ وَقَالَتْ كُنْتُ أَنَا وَرَسُولُ اللَّهِ اغْتَسِلُ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ نَغْتَرِفُ مِنْهُ جَمِيعًا
(بخاري – مسلم)

(১৭) “হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হুজুর যখন জানাবাতের (অপত্রিতা দূর করনার্থে) গোসল করতেন, প্রথমে তিনি দুই হাত ধুইতেন এবং নামাজের অযুর ন্যায় অযু করতেন। অতঃপর তিনি (নিম্নরূপে) গোসল করতেন। (প্রথমে দুই হাতের দ্বারা চুলগুলো খেলাল করতেন এবং যখন তিনি মনে করতেন (মাথার) চামড়া ভিজে গিয়েছে, তখন তিনি মাথার উপরে তিনবার পানি ঢালতেন। অতঃপর তিনি সমস্ত শরীর (পানি দিয়ে) ধুয়ে ফেলতেন। হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি এবং রসূল (সঃ) একই বরতন হতে গোসল করতাম এবং দু’হাত দ্বারা পানি নিয়ে (নিজ নিজ শরীরে) ঢালতাম।” (বুখারী, মুসলিম)।

(۱۸)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَتْ مَيْمُنَةُ زَوْجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى

اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَسَلاً فَسَتَرْتُهُ بِثَوْبٍ وَصَبَّ عَلَى يَدَيْهِ فَغَسَلَهُمَا ثُمَّ صَبَّ بِيَمِينِهِ عَلَى شَمَالِهِ فَغَسَلَ فَرْجَهُ فَضَرَبَ بِيَدِهِ الْأَرْضَ فَمَسَحَ ثُمَّ غَسَلَهَا فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَزِرَاعَيْهِ ثُمَّ صَبَّ عَلَى رَأْسِهِ وَأَفَاضَ عَلَى جَسَدِهِ ثُمَّ تَنَحَّى فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ فَنَاوَلْتُهُ تَوْبًا فَلَمْ يَأْخُذُهُ فَانْطَلَقَ وَهُوَ يَنْقُدُ يَدَيْهِ (بخاري – مسلم)

(১৮) “হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, (আমার খালা উম্মুল মুমেনীন) হজরত ময়মুনা বলেছেন, একবার আমি নবী করীমের (সঃ) জন্য গোসলের পানি রেখে দিলাম, অতঃপর একটা কাপড় দিয়ে পর্দা করে দিলাম। প্রথমে হুজুর (সঃ) দুই হাতের উপরে পানি ঢেলে (কজি পর্যন্ত) ধুয়ে নিলেন, অতঃপর ডান হাত দ্বারা কিছু পানি বাম হাতে ঢেলে নিলেন এবং তা দ্বারা পুরুষাঙ্গ ধুইলেন। অতঃপর হাত মাটিতে মারলেন এবং তা মুছে নিলেন, অতঃপর বাম হাত ধুইলেন ও গড়গড়ার সাথে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, মুখমন্ডল ধুইলেন এবং কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধুইলেন। অতঃপর মাথার উপরে পানি ঢাললেন এবং সমগ্র শরীরের উপরে। এর পরে দাঁড়ানোর জায়গা হতে কিছুটা সরে গিয়ে দুই পা ধুইলেন। আমি (পানি মোছার) জন্য হুজুরকে (সঃ) একখানা কাপড় দিলাম। তিনি তা গ্রহণ না করে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ রসূল (সঃ) স্ত্রীদের সাথে মিলামিশার পরে কিভাবে নাপাকী হতে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতেন উপরোক্ত হাদীস দু’টির মধ্যে তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রসূলের (সঃ) দাম্পত্য জীবনও উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। আর দাম্পত্য জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটি হুজুরের (সঃ) মহিয়সী বিবিদেরই জানা ছিল। উপরোক্ত হাদীস দু’টিতে রসূলের (সঃ) দু’জন মহিয়সী স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রাঃ) ও মাইমুনা (রাঃ) ফরজ গোসলের ব্যাপারে হুজুরের (সঃ) আমল চোখে দেখে তাই বর্ণনা করেছেন। ছাহাবায়ে কিরামগণ হজুরকে (সঃ) যেভাবে অযু করতে দেখেছেন এবং হুজুরের (সঃ) গোসলের বর্ণনা উম্মুল মুমেনীনদের কাছ থেকে যেভাবে শুনেছেন ঐভাবেই আমল করতেন। পরবর্তী পর্যায়ে মাযহাবের ইমামগণ অযু ও গোসলের মাসয়ালাগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে ফরজ, ওয়াজেব ও সুন্নতে বিভক্ত করেছেন।

ইমাম আযম হজরত আবু হানিফার মতে গোসলের ফরজ হল তিনটি (১) গড়গড়ার সাথে কুলি করা (২) নাকে পানি দেয়া (৩) সমস্ত শরীর ধোয়া। শরীরের কোন একটু অংশ শুকনা থাকলে গোসল হবে না। তাই চুলের নীচে, বোগলের অভ্যান্তরে ইত্যাদি সব জায়গায়ই পানি পৌছাতে হবে। ইমাম সাহেবের মতে উপরোক্ত তিনটি ফরজ ছাড়া গোসলের অন্যান্য কাজগুলো সুন্নত ও মোস্তাহাব। ইমাম মালিকের মতে গোসলের ফরজ ৫টি। তিনি নিয়ত ও সর্ব শরীর ভালভাবে ডলে ডলে ধোয়াকেও ফরজের মধ্যে শামিল করেছেন। ইমাম শাফয়ীর নিকট গোসলের ফরজ দুটি। (১) নিয়ত, (২) সমস্ত শরীর ধৌত করা। বাকী আমলগুলো সুন্নত ও মোস্তাহাব।

(۱۹)
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي امْرَأَةٌ أَشَدُّ صَفَرَ رَأْسِي أَفَأَنْقُضُهَ لِغُسْلِ الْجَنَابَةِ ۚ فَقَالَ لَا إِنَّمَا يَكْفِيْهِ أَنْ تَحْتِي عَلَى رَأْسِكَ ثَلَاثَ حَثِيَاتٍ ثُمَّ تُفِيضِيْنَ عَلَيْكِ الْمَاءَ فَتَطَهَّرِينَ (مسلم)

(১৯) “হজরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, আমি হুজুরকে (সঃ) প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল, আমি আমার মাথার চুলে শক্ত বেনী বাঁধি। ফরজ গোসলের জন্য আমি তা খুলে ফেলব? হুজুর বললেন, না, তুমি তোমার মাথার উপরে তিন অঞ্জল পানি ঢালবে এবং পবিত্রতা অর্জন করবে।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে গেলে মেয়েলোকের বেনী খোলার প্রয়োজন হবে না।

(۲۰)
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ إِنَّ امْرَأَةً مِّنَ الْأَنْصَارِ سَأَلَتْ النَّبِيَّ عَنْ غُسْلِهَا مِنَ الْمَحِيضِ فَأَمَرَهَا كَيْفَ تَغْتَسِلُ (بخاري – مسلم)

(২০) “হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসার গোত্রের একজন মহিলা নবী করীমকে (সঃ) জিজ্ঞাসা করলেন যে, সে কিভাবে হায়েযের গোসল করবে। হুজুর (সঃ) তাকে উহা বাতিয়ে দিলেন।” (অর্থাৎ কিভাবে হায়েয হতে পবিত্র হলে গোসল করবে)।
(বুখারী, মুসলিম)।

ব্যাখ্যাঃ স্ত্রী লোকেরা যখন হায়েয কিংবা নেফায হতে পবিত্র হয়, তখন তার জন্য গোসল করা ফরজ।

সুন্নত গোসল সমূহ

(۲۱)
وَعَن عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ الْجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ (بخاري – مسلم)

(২১) “হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুময়ার নামায আদায় করার জন্য যাবে, তখন সে যেন গোসল করে।” (বুখারী, মুসলিম)।

(۲۲) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ غَسَلَ مَيْتًا فَلْيَغْتَسِلْ
(ابن ماجة)

(২২) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে মুরদাকে গোসল করাবে সে যেন গোসল করে।”
(ইবনে মাযাহ্)।

(۲۳)
وَعَنْ قَيْسِ بْنِ عَاصِمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ أَسْلَمَ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَفْتَسِلَ بِمَاءٍ وسيدر (ترمذی – ابوداؤد – نسائی)

(২৩) “হজরত কায়েস ইবনে আসেম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন নবী (সঃ) তাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করতে বললেন।” (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাই)

ব্যাখ্যাঃ জুমায়ার দিনের গোসল, দুই ঈদের গোসল, ইহরাম বাধার পূর্বের গোসল ও আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ই জিলহজ্বের গোসল সুন্নাত। এ ছাড়া মুরদাকে গোসল করাবার পরে, সিঙ্গা নেবার পরে গোসল মোস্তাহাব। ইসলাম গ্রহণ করার পরে গোসল ওয়াজিব, যদি সে নাপাক থাকে।

অযুর বর্ণনা

আল্লাহ রব্বুল আলামীন নামাজের পূর্বে অযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাঁর পবিত্র কালামে বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ (المائدة – ٦)

“তোমরা যখন নামাজের এরাদা কর, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ধুইবে এবং দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুইবে। আর তোমরা তোমাদের মাথা ‘মুছেহ করবে এবং পা গোড়ালী পর্যন্ত ধুয়ে নিবে।” (আল মায়েদা – ৬)

উপরোক্ত আয়াত দৃষ্টে হজরত ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) অযুর মধ্যে চারটি ফরয বলেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ অযুর বর্ণনা দিতে গিয়ে যে চারটি অঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন মুখমন্ডল, হাত ও পা ধোয়া এবং মাথা মুছেহ্ করা ফরয। কিন্তু ইমাম শাফয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে অযুর ফরয হলো ছয়টি। উক্ত ইমামদ্বয় অযুর জন্য নিয়ত করাকেও অযুর ফরযের মধ্যে শামিল করেছেন। ইমাম শাফয়ী অঙ্গগুলো পরপর (বিরতি ছাড়া) ধোয়াকেও ফরয বলেছেন। ইমাম আবু হানিফার মতে মাথার এক চতুর্থাংশ মুছেহ করলেই ফরয আদায় হবে। কিন্তু ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে মাথা পুরাটাই মুছেহ করা ফরজ। ইমাম শাফয়ীর মতে মাথার সামান্য অংশ মুছেহ্ করলেই ফরয আদায় হয়ে যাবে।

অযু তিন ধরনের হয়ে থাকেঃ (১) ফরয (২) ওয়াজিব (৩) মুস্তাহাব

১। নামাজ, সিজদায়ে তিলাওয়াত ও জানাযার জন্য অযু করা ফরয।
২। বায়তুল্লাহ শরীফের তওয়াফের জন্য অযু করা ওয়াজিব।
৩। অযু থাকতে অযু করা মুস্তাহাব।

অযুর ফজিলত

(٢٤) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرَّا مُحَجَّلِيْنَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوْءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ (بخاري – مسلم)

(২৪) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতকে ডাকা হবে, তখন অযুর প্রভাবে তার হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল ও আলোকোদ্ভাসিত হবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ আছে সে যেন তার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নেয়।” (বুখারী মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ঈমানদার নামাজী লোকের মুখ-মন্ডল ও হাত-পা অযুর ফজিলতের কারণে কিয়ামতের দিন উজ্জ্বল ও চকচকে হবে। আর এই চিহ্ন দেখে হুজুর (সঃ) কিয়ামতের দিন অসংখ্য লোকের মধ্যে তাঁর উম্মতকে চিনতে পারবেন ও তাদের উদ্দেশ্যে সুপারিশ করবেন।

(٢٥) وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوَضُوْءَ

خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ (بخاري – مسلم)

(২৫) “হজরত উসমান (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তার সমস্ত শরীর হতে গুনাহসমূহ (সগীরা) ঝরে পড়ে এমনকি তার নখের নীচ হতেও।” (বুখারী মুসলিম)

(٢٦) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِفْتَاجُ الْجَنَّةِ الصَّلَاةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلاةِ الطُّهُورُ (أحمد)

(২৬) “হজরত জাবির (রাঃ) বলেন, হুজুর (সঃ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হলো নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা।” (আহম্মদ)

ব্যাখ্যাঃ পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ হবে না। সুতরাং নামাজের জন্য অযু এবং শরীর অপবিত্র হলে গোসল অপরিহার্য। নামাজের ফরয সমূহের মধ্যে শরীর পবিত্র হওয়া একটি ফরয।

অযুর নিয়ম

(۲۷)
وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ تَوَضَّأَ فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ ثَلاثًا ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْتَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا ثُمَّ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرَى

إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلَاثًا ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى ثَلاثًا ثُمَّ الْيُسْرَى ثَلاثًا ثُمَّ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ وَضُوئِي هَذَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ نَفْسَهُ فِيْهَا بِشَيْءٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ (بخاري – مسلم)

(২৭) “হজরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, যে একবার তিনি অযু করতে গিয়ে তিনবার হাতের উপরে পানি ঢেলে হাত ধুইলেন। অতঃপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। অতঃপর আপন মুখমন্ডল তিনবার করে ধুইলেন। তৎপর আপন ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন এবং অনুরূপভাবে বাম হাতও তিনবার করে ধুইলেন। অতঃপর আপন মাথা মুসেহ করলেন। তৎপরে নিজ ডান পা তিনবার ধুইলেন। এবং অনুরূপভাবে বাম পাও তিনবার ধুইলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর রসূলকে (সঃ) আমি এভাবে যেভাবে আমি অযু করলাম অযু করতে দেখেছি, অতঃপর তিনি (হুজুর) বললেন, যে ব্যক্তি আমার অযুর ন্যায় অযু করে দুই রাকায়াত নামাজ এমনভাবে আদায় করবে যে (আল্লাহর ধ্যান ছাড়া) তার মনে কোন খেয়াল আসবে না। তার পূর্ববর্তী সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (বুখারী, মুসলিম)।

ব্যাখাঃ উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, হুজুর (সঃ) অযুর অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো তিনবার করে ধুইতেন। এ জন্য ইমামগণের মতে তিনবার করে ধোয়া সুন্নাত। বর্ণিত হাদীসে অযু কিভাবে করতে হবে তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

যে যে কারণে অযু করতে হয়

যে যে কারণে অযু করতে হয় তাকে “মুজেবাতে অযু” বলে। আর যে যে কারণে অযু নষ্ট হয় তাকে “নাওয়াকেজে অযু” বলে। আসলে উভয়টাই এক। কেননা, যে কারণে অযু করতে হয় ঐ কারণই অযু নষ্টকারী।

(۲۸) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ (بخاري – مسلم)

(২৮) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তির অযু ভঙ্গ হয়েছে, অযু না করা পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না” (বুখারী, মুসলিম)

(۲۹) وَعَن عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بَغَيْرِ طَهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غَلُوْلٍ (مسلم)

(২৯) “হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন, হুজুর (সঃ) বলেছেন, পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল করা হয় না, আর খিয়ানতকারীর দান গ্রহণ করা হয় না” (মুসলিম)

(۳۰)
وَعَنْ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ رُجُلًا مَّذَاءً فَكُنْتُ أَسْتَحِي أَنْ أَسْأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

لِمَكَانِ ابْنَتِهِ فَأَمَرْتُ الْمِقْدَادَ فَسَأَلَهُ فَقَالَ يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ (بخاري – مسلم)

(৩০) “হজরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অত্যাধিক “মজি” বের হতো। কিন্তু নবী করীমের কন্যা (ফাতিমা) আমার ঘরে থাকার কারণে হুজুরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে আমার লজ্জা হতো। সুতরাং আমি মেকদাদকে (রাঃ) এ বিষয় জিজ্ঞাসা করার জন্য বললাম। সে হুজুরকে জিজ্ঞাসা করায় হুজুর বললেন, এ ধরনের লোক প্রথমতঃ তাহার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে, অতঃপর অযু করবে।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ কামভাব উদয় হলে শুক্র ব্যতীত যে তরল পদার্থ পানিবৎ বের হয় তাকেই মজি বলে। এটা সজোরে বের হয় না। এতে অযু ওয়াজিব হয়। গোসল ওয়াজিব হয় না।

(۳۱) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا وَجَدَ أَحَدٌ فِي بَطْنِهِ شَيْئًا فَأَشْكَلَ عَلَيْهِ أَخْرَجَ مِنْهُ شَيْءٌ أَمْ لَا فَلَا يَخْرُجُنَّ مِنَ الْمَسْجِدِ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا (مسلم)

(৩১) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি পেটের মধ্যে কিছু অনুভব করে, আর তার সন্দেহ হয় যে পেট হতে কিছু বের হলো কিনা, তাহলে সে যেন মসজিদ থেকে বের না হয় যে পর্যন্ত না কোন শব্দ শুনে অথবা গন্ধ অনুভব করে।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ পেট থেকে হাওয়া বের হল কিনা এটুকু সন্দেহই অযু ভঙ্গের কারণ হয় না। যে পর্যন্ত না তার হাওয়া গুহ্যদ্বার হতে বের হওয়া সম্পর্কে পাক্কা ধারণা না হবে।

(۳۲) وَعَن عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْوَضُوْءَ عَلَى مَنْ نَامَ مُضْطَجِعًا فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُهُ
(ترمذي، ابوداؤد)

(৩২) “হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে কাত হয়ে ঘুমিয়েছে তার প্রতি অযু ওয়াজিব। কেননা কাত
হয়ে ঘুমালে শরীরের বন্ধনীসমূহ শিথিল হয়ে যায়।” (তিরমিজি, আবুদাউদ)

ব্যাখ্যাঃ কাত হয়ে অথবা কিছু অবলম্বন করে হেলান দিয়ে ঘুমালে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা উপরোক্তভাবে ঘুমালে শরীরের বন্ধনীসমূহ ও গুহ্যদ্বার শিথিল হয়ে যায়, ফলে পেট হতে বায়ু বের হওয়ায় কোন বাধা থাকে না। পক্ষান্তরে বসে দাঁড়িয়ে ঘুমালে তাতে গভীর ঘুম আসে না এবং হাওয়া বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, ফলে অযু নষ্ট হয় না।

পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কিনা

(۳۳)
وَعَنْ بُسْرَةً بِنْتِ صَفْوَانَ بْنِ نَوْفَلٍ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا مَسَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّا
(مالك ، أحمد ، أبو داود ، ترمذي، نسائي، ابن ماجة

(৩৩) “হজরত বুসরা বিনতে সাফওয়ান ইবনে নওফল হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে অযু করতে হবে।” (মুসলিম, আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে মাযা)

ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসের কারণে, ইমাম মালিক, শাফয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেছেন যে, পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে।

(٣٤) وَعَنْ طَلَقِ بْنِ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ مَسَ الرَّجُلِ ذَكَرَهُ بَعْدَ مَا يَتَوَضَّأُ قَالَ وَهَلْ هُوَ إِلَّا بَضْعَةٌ مِنْهُ
أبو داود، ترمذي، نسائي

(৩৪) “হজরত তালক ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি অযু করার পর নিজ পুরষাঙ্গ স্পর্শ করলে কি হবে? এ ব্যাপারে হুজুরকে (সঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। হুজুর (সঃ) জওয়াবে বললেন, ওটাতো শরীরের একটা অংশ মাত্র। সুতরাং তা স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কেন?” (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু হানিফা উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে বলেছেন যে, পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে না। ছাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও এ ব্যাপারে দ্বিমত পাওয়া যায়।

মেয়েদের স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কিনা

(٣٥) وَعَن عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ يَقُولُ قُبْلَةُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَجَسَّهَا بِيَدِهِ مِنَ الْمُلَامَسَةِ وَمَنْ قَبَّلَ امْرَأَتَهُ أَوْ جَسَهَا بِيَدِهِ فَعَلَيْهِ الْوَضُوْءُ
(مالك ، شافعي)

(৩৫) “হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলতেন, কোন ব্যক্তির আপন স্ত্রীকে চুম্বন করা অথবা তার শরীর হাত দ্বারা স্পর্শ করাই হলো “লামস” সুতরাং যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে চুম্বন করবে কিংবা স্পর্শ করবে তাকে অবশ্যই অযু করতে হবে।” (মালিক, শাফয়ী)

(٣٦) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ بَعْضَ أَزْوَاجِهِ ثُمَّ يُصَلِّي وَلَا يَتَوَضَّأُ (أبو داود ، ترمذي، نسائي، ابن ماجة)

(৩৬) “হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সঃ) তাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুম্বন করতেন, অতঃপর অযু না করেই নামাজ পড়তেন।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাছাই, ইবনে মাযাহ্)

ব্যাখাঃ অযু করার পরে নারী স্পর্শ করলে অযু ভঙ্গ হবে কিনা এ ব্যাপারে ছাহাবায়ে কিরাম ও ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) মতে নিছক নারী স্পর্শ কিংবা চুম্বন দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইমাম শাফয়ী ও ইমাম মালিকের (রঃ) মতে অযু ভঙ্গ হবে। কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়েই এই মতভেদ দেখা দিয়েছে। আয়াতটি হলঃ

أَوْ لَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا
(النساء – ٤٣)

“তোমরা যখন নারী স্পর্শ করার পরে পানি পাবে না তখন পবিত্র মাটি দিয়ে তাইম্মুম করে নিবে।” (নিসা-৪৩)
ইমাম মালিক ও শাফয়ীর মতে এখানে নারী স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে নারীর কোন অঙ্গ ছোয়া, আর ইমাম আবু হানিফার মতে নারী স্পর্শ করা এখানে রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এর প্রকৃত অর্থ হলো নারীর সাথে মিলন করা।

(۳۷)
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدُ الْعَزِيزِ عَنْ تَمِيمِ الدَّارِي قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْوَضُوْءُ مِنْ كُلِّ دَمٍ سَائِلٍ (دار قطني)

(৩৭) “হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ তমিমদারী হতে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, প্রত্যেক প্রবাহমান রক্তের কারণে অযু করতে হবে।” (দারকুতনী)

ব্যাখ্যাঃ শরীর হতে রক্ত বের হয়ে প্রবাহিত হলে অযু ভঙ্গ হবে। এটাই ইমাম আবু হানিফার মত। উপরোক্ত হাদীসটি হলো তাঁর দলিল। অন্যদিকে ইমাম শাফয়ী প্রমূখ ইমামগণের মতে প্রবাহিত রক্ত দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে না। তাঁরা উপরোক্ত হাদীসটির বিশ্বস্ততার উপরে সন্দেহ পোষণ করেন।

(۳۸) وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي بِالنَّاسِ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَتَرَدَّى فِي حُفْرَةٍ كَانَتْ فِي الْمَسْجِدِ وَكَانَ فِي بَصَرِهِ ضَرَرٌ فَضَحِكَ كَثِيرٌ مِّنَ الْقَوْمِ وَهُمْ فِي الصَّلَاةِ فَأَمَرَ رَسُوْلُ اللَّهِ مَنْ ضَحِكَ أَنْ يُعِيدَ الْوَضُوءَ (طبراني)

(৩৮) “হজরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসূল (সঃ) লোকদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় একজন লোক প্রবেশ করে মসজিদের গর্তে পড়ে গেলেন, কেননা তার চোখে ত্রুটি ছিল। ফলে অধিকাংশ নামাজী (শব্দ করে) হেসে ফেললেন। অতঃপর হুজুর (সঃ) (যারা নামাজরত অবস্থায় হেসেছিলেন) তাদেরকে অযু করার নির্দেশ দিলেন।” (তিরমিজি)।

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু হানিফার মতে নামাজরত অবস্থায় কেউ যদি শব্দ করে হাসে আর শব্দ পাশের দাঁড়ান লোক শুনতে পায় তাতে অযু ভঙ্গ হবে। কিন্তু অন্য ইমামদের মতে অযু নষ্ট হবে না। উপরে উল্লেখিত হাদীস হতে ইমাম আবু হানিফা দলিল গ্রহণ করেছেন।

মেসওয়াকের গুরুত্ব

(۳۹) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِتَاخِيْرِ الْعِشَاءِ وَبِالسَّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ (متفق عليه)

(৩৯) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের উপরে মাত্রারিক্ত কষ্ট চাপিয়ে দেয়ার নিয়ত যদি আমার না হতো, তাহলে আমি তাদেরকে নির্দেশ দিতাম এশার নামাজ বিলম্ব করে পড়ার এবং প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মেসওয়াক করার।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ প্রতি নামাজের অযুতে মেসওয়াক করা সুন্নত। অন্য সময় মেসওয়াক মোস্তাহাব। মুখের পবিত্রতা রক্ষা এবং দাঁত ও পেটের পীড়া হতে বাচার জন্য দাঁত, দাঁতের গোড়ালী এবং জিহ্বা ও গলা পরিষ্কার রাখা অপরিহার্য। মেসওয়াক করার উপরে হুজুর (সঃ) অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিতা গাছের ডালের মেসওয়াকই উত্তম। মেসওয়াক মোটায় শাহাদাত আঙ্গুলের মত এবং লম্বায় এক বিঘাত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পবিত্র লোমের বা নাইলনের ব্রাস এবং পাক বস্তুর টুথ পেষ্ট বা পাউডার ব্যবহারেরও কোন দোষ নেই।

(٤٠) وَعَنْ شَرِيحٍ بْنِ هَانِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ يَبْدَأُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ قَالَتْ بِالسَّوَاكِ (مسلم)

(৪০) “হজরত শুরাই বিন হানি (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত আয়েশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হুজুর (সঃ) ঘরে ঢুকে প্রথম কোন কাজটি করতেন? হজরত আয়েশা উত্তর দিলেন যে, তিনি প্রথম মেসওয়াক করতেন।” (মুসলিম)

(٤١) وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشْوصُ فاه بالسواك (متفق عليه)

(৪১) “হজরত হুজাইফা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) যখনই তাহাজ্জুদের জন্য রাত্রে জাগতেন, তখন প্রথমেই তিনি মেসওয়াক দ্বারা মুখ পরিষ্কার করে নিতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

নাপাক অবস্থায় যেসব কাজ জায়েয

(٤٢) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ ذَكَرَ عُمَرَ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ تُصِيبُهُ الْجَنَابَةُ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللَّهُ تَوَضَّأْ وَأَغْسِلْ ذَكَرَكَ ثُمَّ نَمْ (بخاري – مسلم)

(৪২) “হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (তাঁর পিতা) উমর বিন খাত্তাব রসূলের (সঃ) কাছে আরজ করলেন যে, রাতে সে (যখন) নাপাক অবস্থায় পতিত হয় (তখন সে কি করবে)। হুজুর (সঃ) বললেন, তুমি অযু কর এবং পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেল, অতঃপর ঘুমিয়ে যাও।” (বুখারী, মুসলিম)

(٤٣) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ جُنُبًا فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ تَوَضَّأَ وَضُوْءَهُ لِلصَّلاةِ (بخاري – مسلم)

(৪৩) “হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করিম (সঃ) যখন নাপাক অবস্থায় খাবার অথবা ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি নামাজের অযুর ন্যায় অযু করে নিতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

(٤٤) وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا (مسلم)

(৪৪) “হজরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন স্বীয় স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করে, অতঃপর যখন আবার অনুরূপ করার ইচ্ছা করে, তখন যেন সে দুই মিলনের মাঝখানে অযু করে নেয়।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস হতে জানা গেল যে, নাপাক অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো কোনটাই নিষিদ্ধ নয়। তবে মোস্তাহাব হলো যৌনাঙ্গ ধুয়ে নেয়া ও অযু করা। এমনকি নাপাক অবস্থায় একাধিকবার যৌন মিলন এবং একাধিক স্ত্রীর কাছে গমনও জায়েয। তবে উত্তম হলো এর
মাঝখানে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে নেয়া ও অযু করা। (মুসলিম)

(٤٥) وَعَنِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِّنَ الْقُرْآنِ (ترمذي)

(৪৫) “হজরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, হায়েয অবস্থায় এবং নাপাক অবস্থায় কেউ যেন কোরআন পাঠ না করে।”
(তিরমিযি)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু হানিফা এবং শাফয়ীর মতে হায়েযা মহিলা এবং যার উপরে গোসল ফরয তাদের জন্য কোরআন পাঠ ঐ অবস্থায় নিষিদ্ধ। তবে কারো কারো মতে পূর্ণ আয়াত না হলে তা পাঠ করা য়ায়।

(٤٦) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَهُوْا هَذِهِ الْبُيُوتَ عَنِ الْمَسْجِدِ فَإِنِّي لَا أُحِلُّ الْمَسْجِدَ لِحَائِضِ وَلَا جُنُب (أبو داود)

(৪৬) “হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) বললেন, তোমরা মসজিদের দিক হতে তোমাদের ঘরের দরজা ফিরিয়ে নাও, কেননা আমি ঋতুবর্তী স্ত্রী লোকের জন্য ও নাপাক ব্যক্তির জন্য মসজিদকে হালাল বা জায়েয মনে করি না।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় যে, ছাহাবাদের কারও কারও ঘরের দরজা মসজিদে নববীর দিকে ছিল। ইমাম আবু হানিফার মতে নাপাক ব্যক্তি কোন অবস্থায়ই মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ইমাম মালিক ও শাফয়ীর মতে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে জায়েয।

হায়েয-নিফাসের বিবরণ

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ (البقرة : ۲۲۲)

অর্থঃ (হে নবী) “তারা আপনাকে হায়েয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, তা নাপাকী। সুতরাং হায়েয অবস্থায় মেয়েদের থেকে সরে থাকবে। আর তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে যাবে না।” (অর্থাৎ যৌন মিলনে লিপ্ত হবে না।) (সুরায়ে বাকারা – ২২২)

সাবালিগা মহিলাদের জরায়ু হতে প্রতিমাসে যে রক্তস্রাব হয়। তাকে হায়েয বলে। এর কমপক্ষে মুদ্দত হলো তিন দিন তিন রাত। আর উপরের দিকে হলো দশ দিন দশ রাত। সন্তান প্রসবের পরে যে রক্তস্রাব হয় তাকে বলা হয় নিফার্স। নিফাসের নীচের মুদ্দত কোন নির্দিষ্ট নাই। অল্প সময়ের মধ্যেও পবিত্র হতে পারে। আর উপরের মুদ্দত হলো চল্লিশ দিন। হায়েয নিফাসের মধ্যে রোযা-নামাজ নিষেধ। তবে নামাজের কাজা করতে হবে না। রোযার কাজা করতে হবে। হায়েয-নিফাসের মধ্যে যৌন-মিলন নিষিদ্ধ। তবে একত্রে বসবাস করা, খানাপিনা কিম্বা একই বিছানায় শোয়া নিষিদ্ধ নয়।

(٤٧) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ كِلانَا جُنُبٌ وَكَانَ يَأْمُرُنِي فَاتَّزِرُ فَيُبَاشِرُونِ وَأَنَا حَائِضِ وَكَانَ يُخْرِجُ رَأْسَهُ إِلَيَّ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فَأَغْسِلُهُ وَأَنَا حَائِضِ (بخاري – مسلم)

(৪৭) “হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং নবী করীম (সঃ) নাপাক অবস্থায় দু’জনই একই পাত্র হতে গোসল করতাম। আর আমার হায়েয অবস্থায় তিনি আমাকে নির্দেশ দিতেন, আমি শক্ত করে তহবন্ধ (লজ্জাস্থানের উপরে কাপড়) বেঁধে নিতাম এবং হুজুর (সঃ) আমার সঙ্গে (গায়ে লাগিয়ে) একত্রে শুইতেন।” (বুখারী মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাকৃত উপরোক্ত হাদীস হতে বুঝা যায়, হায়েযা স্ত্রীর সাথে একত্রে শোয়া, তাকে স্পর্শ করা এবং এতেকাফ অবস্থায় শরীরের কোন অংশ মসজিদ হতে বাহির করে হায়েযা স্ত্রীর দ্বারা খেদমত নিলে তাতে এতেকাফ নষ্ট হয় না।

(٤٨) وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ مَا يَحِلُّ لِي مِنْ امْرَأَتِي وَهِيَ حَائِضٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهُ لِتَشَدَّ عَلَيْهَا إِزَارَهَا ثُمَّ شَانَكَ بِأَعْلَاهَا
(مؤطأ إمام مالك)

(৪৮) যায়িদ ইবনে আসলাম হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি হুজুরকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার স্ত্রী যখন ঋতুবর্তী থাকে তখন আমার তার সাথে কি ধরনের কাজ জায়েয হবে। হুজুর (সঃ) বললেন, তার (লজ্জাস্থানের) উপরে কাপড় বেঁধে নাও। অতপর তোমার জন্য কাপড়ের উপরে (কামনা পূর্ণ করা) জায়েয আছে।” (মুয়াত্তা ইবনে মালেক)

(٤٩) وَعَنْ نَافِعٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ عُبَيْدَ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَرْسَلَ إِلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا زَوْجُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُهَا هَلْ يُبَاشِرُ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ وَهِيَ حَائِضِ فَقَالَتْ لِتَشُدَّ إِزَارَهَا إِلَى أَسْفَلِهَا ثُمَّ يُبَاشِرُهَا إِنْ شَاءَ (مؤطا إمام مالك)

(৪৯) “হজরত নাফে (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা উবায়দুল্লাহ্ বিন আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হজরত আয়েশার (রাঃ) কাছে একথা জিজ্ঞেস করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠালেন যে, হায়েয অবস্থায় পুরুষ কি তার স্ত্রীর সাথে মুবাসারাত করতে পারে? হজরত আয়েশা বললেন, সে যেন (স্ত্রী লোকটি) তার নীচের দিকে শক্ত করে কাপড় বেঁধে নেয়। অতঃপর যেন পুরুষ লোকটি তার সাথে মুবাসারাত করে। (মোয়াত্তা ইমাম মালেক)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস হতে বুঝা যায়, যদি হায়েয অবস্থায় পুরুষের পক্ষে সংযম সম্ভব না হয়, তা হলে যেন লজ্জাস্থানকে ভাল করে কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়ে স্ত্রীর সাথ মুবাসারাতের মাধ্যমে কামনা পূর্ণ করে।

মোজার উপরে মোছেহ করা

(٥٠) وَعَنْ شُرَيْحٍ بْنِ هَانِي قَالَ سَأَلْتُ عَلِيَّ بْنِ أَبِي طالِبٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ الْمَسْحِ عَلَى الْخُفْيْنِ فَقَالَ جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهِنَّ لِلْمُسَافِرِ وَيَوْمًا وَلَيْلَةٌ لِلْمُقِيمِ (مسلم)

(৫০) “হজরত সুরাইয়া বিন হানী বলেন, আমি হজরত আলী বিন আবু তালিবকে (রাঃ) মোজার উপরে মোছেহ্ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। (কত দিন যাবত করা যাবে) তিনি জওয়াব দিলেন, হুজুর (সঃ) মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য একদিন একরাত নির্ধারণ করেছেন।” (অর্থাৎ মুসাফির ব্যক্তি সফরের অবস্থায় মোজার উপরে তিন দিন তিন রাত মোছেহ্ করতে পারবে এবং মুকিম একদিন এক রাত মোছেহ্ করতে পারবে) (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ মোজার উপরে মোছেহ্ করার ব্যাপারে প্রায় আশি জন ছাহাবী হতে হাদীস বর্ণিত আছে। সুতরাং একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মুসাফির ব্যক্তি এক সঙ্গে তিন দিন তিন রাত (৭২ ঘন্টা) এবং মুকিম এক দিন এক রাত (২৪ ঘন্টা) পর্যন্ত মোছেহ্ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো এই যে, প্রথম অযুর পরে পা ধুয়ে মোজা পরবে। অর্থাৎ পূর্ণ অযুর পরে মোজা পরে নিয়ে পরবর্তী সময় যখন অযু করবে তখন মোজা না খুলে তার উপরে মোছেহ্ করলে চলবে।

(٥١) وَعَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ أَنَّهُ رَأَى أَبَاهُ يَمْسَحُ عَلَى الْخُفْيْنِ وَكَانَ لَا يَزِيدُ إِذَا مَسَحَ عَلَى الْخُفْيْنِ عَلَى أَنْ يَمْسَحَ ظُهُورَهُمَا وَلَا يَمْسَحُ بُطُونَهُمَا (مؤطا إمام مالك)

(৫১) “হজরত হিশাম বিন উরওয়া হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতাকে দেখেছেন, তিনি যখন মোজার উপরে মোছেহ্ করতেন, তখন শুধু উপরের দিকে মোছেহ্ করতেন নীচের দিকে নয়।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

ব্যাখ্যাঃ মোজার উপরে মোছেহ্ করার নিয়ম হলো হাতের আঙ্গুলের মাথা ফাঁকা করে পায়ের আঙ্গুলের মাথায় রেখে উপরে দিকে টেনে পায়ের পাতার গোড়ালী পর্যন্ত নিয়ে আসবে। প্রথমে ডান পা, অতঃপর বাম পা মোছেহ্ করবে। ইমাম আবু হানিফার মতে চামড়ার মোজার উপরেই কেবল মোছেহ্ জায়েয, কিন্তু অন্য ইমামগণ কাপড়ের মোজার উপরও মোছেহ্ করাকে জায়েয মনে করেন।

তায়াম্মুমের বিবরণ

وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَأَمْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ
(النساء : ٤٣)

“যদি তোমরা রোগগ্রস্ত কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা করে আসে কিংবা তোমরা নারী স্পর্শ কর এবং পানি না পাও, তাহলে তোমরা পাক-পবিত্র মাটির সংকল্প করবে। তা দ্বারা তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মোছেহ্ করবে” (সূরা নিসা-৪৩)

(٥٢) وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُضَلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلَاثِ جُعِلَتْ

صَفُوفَنَا كَصُفُوفِ الْمَلَائِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الْأَرْضُ كَلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُورًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ (مسلم)

(৫২) “হজরত হুজাইফা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তিনটি বিষয় সমগ্র মানবজাতির উপরে আমাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। (নামাজে) আমাদের সারি বেঁধে দাঁড়ানোকে ফিরিশতাদের সারির ন্যায় করা হয়েছে। আর সমগ্র ধরাপৃষ্ঠকে আমাদের জন্য মসজিদতুল্য করা হয়েছে। আর যখন পানি না পাওয়া যাবে তখন মাটিই আমাদের জন্য পবিত্রতাকারী হবে।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ অন্যান্য নবীর উম্মতদের নামাজ বা ইবাদাত সারিবদ্ধভাবে হতো না। আর অন্য নবীর উম্মতদের আনুষ্ঠানিক ইবাদাত বিশেষভাবে নামাজ মসজিদ ছাড়া অন্যত্র হতো না। আর তাদের পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি অপরিহার্য ছিল। হুজুর (সঃ) বলেন, আল্লাহ আমার উম্মতের ক্ষেত্রে উদারতা প্রদর্শন করে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। (১) আমাদের নামাজ সারিবদ্ধভাবে ফিরিশতার ন্যায় দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয় (২) আর নামাজ আদায়ের জন্য আমাদের ক্ষেত্রে মসজিদকে শর্ত করা হয়নি, বরং ধরা পৃষ্ঠের যে মাটিতেই আমরা নামাজ আদায় করবো আমাদের জন্য তাই মসজিদ (৩) আর পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানির অভাব কিংবা পানি ব্যবহারে সক্ষম না হলে আমাদের জন্য মাটিকেই পবিত্রতাকারী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ তায়াম্মুমের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। যা অন্য উম্মতের জন্য ছিল না।

হুজুর (সঃ) বলেন, উপরে বর্ণিত তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা আমার উম্মতকে মর্যাদাবান করা হয়েছে।

(٥٣) وَعَنْ عِمْرَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا فِي سَفَرٍ مَعَ النَّبِيُّ فَصَلَّى بِالنَّاسِ فَلَمَّا انْفَتَلَ مِنْ صَلَاتِهِ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مُّعْتَزِلٍ لَّمْ يُصَلِّ مَعَ الْقَوْمِ فَقَالَ مَا مَنَعَكَ يَا فُلَانُ أَنْ تُصَلِّي مَعَ الْقَوْمِ قَالَ أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلَا مَاءً قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّعِيدِ فَإِنَّهُ يَكْفِيكَ (بخاري، مسلم)

(৫৩) “হজরত ইমরান (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে হুজুরের (সঃ) সাথে ছিলাম, তিনি লোকদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। অতঃপর হুজুর (সঃ) যখন নামাজ শেষ করলেন তখন একজন লোককে একাকী এক দিকে বসে থাকতে দেখলেন। যে অন্যদের সাথে মিলে নামাজ পড়েনি। হুজুর (সঃ) বললেন, ওহে কেন তুমি লোকদের সাথে মিলে নামাজ আদায় করলে না? সে বলল, আমি নাপাক হয়েছি। অথচ পানি পাইনি। হুজুর (সঃ) বললেন, তোমার জন্য মাটি ব্যবহার করা উচিত ছিল, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।” (বুখারী মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, তায়াম্মুমের মাধ্যমে অযু-গোসল উভয় কাজই সমাধা করা যায়। তবে ইমাম আবু হানিফার মত হলো অজুর জন্য একবার তায়াম্মুম করতে হবে আর গোসলের জন্য আর একবার।

তায়াম্মুমের নিয়ম

(٥٤) وَعَنْ نَافِعٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ أَقْبَلَ هُوَ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مِنَ الْجُرُفِ حَتَّى إِذَا كَانَا فِي

الْمِرْبَدِ نَزَلَ عَبْدُ اللَّهِ فَتَيَمَّمَ صَعِيدًا طَيِّبًا فَمَسَحَ
بِوَجْهِهِ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ ثُمَّ صَلِّيَ
(مؤطا إمام مالك)

(৫৪) “হযরত নাফে (রাঃ) বলেন, সে এবং আবদুল্লাহ্ বিন উমর একদা জুরুফ নামক স্থান হতে আসতে ছিলেন, যখন তারা মিরবাদ নামক স্থানে পৌঁছালেন, আবদুল্লাহ বিন উমর ওখানে নেমে পবিত্র মাটি দ্বারা তাইয়াম্মুম করলেন। তিনি তার মুখমন্ডল মোছেহ্ করলেন এবং কনুই পর্যন্ত দুই হাত মোছেহ্ করলেন। অতঃপর নামাজ পড়লেন।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)

ব্যাখ্যাঃ এই হাদিসটিতে তায়াম্মুমের নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। তায়াম্মুমের নিয়ম হলো প্রথমতঃ নিয়ত করবে, অতঃপর পবিত্র মাটিতে দুই হাত স্থাপন করে তুলে দুই হাত দ্বারা প্রথমবার মুখমন্ডল মোছেহ্ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় বার মাটিতে হাত স্থাপন করে তুলে দুই হাত কনুই পর্যন্ত মোছেহ্ করবে। ইমাম আবু হানিফার মতে মাটি এবং মাটি জাতীয় যাবতীয় বস্তু যেমন পাথর, বালি, চুনা পাথর ইত্যাদি দ্বারাও তায়াম্মুম হবে। কিন্তু ইমাম শাফয়ীর মতে মাটি ব্যতীত কিছু দ্বারা তায়াম্মুম হবে না।

بَابُ الْمُسْتَحَاضَةِ

ইস্তিহাযা রোগীনীর বিবরণ

মহিলাদের রক্তস্রাব সাধারণত: তিন দিন তিন রাতের কম অথবা দশ দিন দশ রাতের বেশী হলে তাকে ইস্তিহাযা বলে। অনুরূপভাবে সন্তান প্রসবের পরে যদি ৪০ দিনের বেশি রক্ত যায় তাকেও ইস্তিহাযা বলে।

ইহা হায়েয কিংবা নিফাস নয়। এটা এক ধরনের রোগ। এ ধরণের রোগীনি মহিলাকে অবশ্যই রোযা নামাজ করতে হবে। তবে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে নতুনভাবে অযু করতে হবে।

(٥٥) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ جَاءَتْ فَاطِمَةُ بنْتِ أَبِي حُبَيْشَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي امْرَأَةُ اسْتَحَاضُ فَلَا أَطْهَرُ أَفَادَعُ الصَّلاةَ فَقَالَ لَا إِنَّمَا ذَالِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِحَيْضِ فَإِذَا أَقْبَلَتْ حَيْضَتُكِ فَدُعِيَ الصَّلَاةَ وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ ثُمَّ صَلِّي (بخاري – مسلم)

(৫৫) “হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রসূলের (সঃ) কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল, (সঃ) আমি এমন একজন স্ত্রীলোক হামেশা ইস্তহাযা রোগে ভুগী। কখনও পবিত্র হই না। এমতাবস্থায় আমি কি নামাজ ছেড়ে দিব? হুজুর (সঃ) বললেন, না এটা একটি শিরার রক্ত, হায়েয নয়। সুতরাং তোমার যখন হায়েয হবে তখন তুমি নামাজ ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়েযের মুদ্দত শেষ হয়ে যাবে তুমি রক্ত ধুয়ে ফেলবে। (গোসল করবে) অতঃপর নামাজ আদায় করবে।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ রোগীনী মহিলা যার হায়েয নিফাসের বাইরেও রক্তস্রাব হয়। তার জন্য শরীয়তের নির্দেশ হলো এই যে, সে তার হায়েযের যে নির্দিষ্ট মুদ্দত আছে তা অতিক্রম হলেই গোসল করে নিবে। অতঃপর রোযা-নামাজ যথা নিয়মে পালন করবে। তবে তাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে রক্ত ধুয়ে অযু করে নিতে হবে। আর নিফাসের বেলায় চল্লিশ দিন অতিক্রম হওয়ার পরে যথা নিয়মে রোযা-নামাজ ও স্বামী সহবাস করবে।

অধ্যায় ২: নামাজ

بَابُ الْآذَانِ

আযান পর্ব

আযানের আভিধানিক অর্থ হলো খবর দেয়া, আহবান করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় আযান বলা হয় নামাজ সমবেতভাবে আদায় করার নিমিত্ত বিশেষ ধ্বনি সহকারে উচ্চ শব্দে নামাজীদেরকে আহবান করা বা ডাকা।

মক্কা শরীফে আযান দেয়ার রেওয়াজ ছিল না, যেহেতু সেখানে মুসলমানরা কাফিরের ভয়ে প্রায়ই গোপনে নামাজ আদায় করতেন, হিজরতের পরে মদীনা শরীফে মসজিদ তৈরী করে যখন মুসলমানরা জামায়াতের সাথে প্রকাশ্যে নামাজ পড়া শুরু করলেন, তখনই আযানের মাধ্যমে নামাজীদেরকে মসজিদের দিকে আহবান করার ব্যবস্থা হলো।

আযানের বিবরণ

(٥٦) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ ذَكَرُوا النَّارَ والنَّاقُوسَ فَذَكَرُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى فَأُمِرَ بِلاَلٌ أَنْ يَشْفَعَ الْآذَانَ وَأَنْ يُؤْتِرَ الْإِقَامَةَ قَالَ إِسْمَاعِيلُ فَذَكَرْتُهُ لأَيُّوبَ فَقَالَ إِلَّا الْإِقَامَةَ (بخاري – مسلم)

(৫৬) “হজরত আনাস (রাঃ) বলেন, (নামাজে আহবানের জন্য) ছাহাবীগণ আগুন ও শিংগার পরামর্শ হুজুরকে (সঃ) দিলেন। ফলে কোন কোন ছাহাবী একে ইয়াহুদ-নাছারার প্রথা বলে উল্লেখ করলেন। অতঃপর হজরত বেলালকে (রাঃ) আযান জোড়া জোড়া করে এবং ইকামত বেজোড় করে বলতে নির্দেশ দেয়া হলো। রাবী ইসমাইল বলেন, (ইকামত বেজোড় সম্পর্কে) আমি আইয়ুবকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন হাঁ, তবে “কাদকামাতিছালাত” নয়।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি আযান সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর কর্তৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের সংক্ষিপ্তসার। জোড়া জোড়া অর্থ একটি শব্দ দুইবার বলা আর বেজোড় অর্থ একবার বলা। এই হাদীস অনুসারেই ইমামগণ আযান জোড়া জোড়া এবং ইকামত বেজোড় দিতে বলেন। তবে ইকামতে ‘কাদকামাতিসসালাত’ জোড়া অর্থাৎ দুবার বলতে হবে।

(٥٧) وَعَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَرَادَ أَنْ يَتَّخِذَ خَشَبَتَيْنِ يُضْرَبُ بِهِمَا لِيَجْتَمِعَ النَّاسُ لِلصَّلَاةِ فَأَرِيَ عَبْدُ اللَّهِ بْنَ زَيرِ الْأَنْصَارِي خَشَبَتَيْنِ فِي النَّوْمِ فَقَالَ إِنَّ هَاتَيْنِ لَنَحْرٌ مِمَّا يُرِيدُ رَسُولُ اللَّهِ فَقِيلَ أَلَا تُؤَذِّنُوْنَ لِلصَّلَاةِ؟ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حينَ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ لَهُ ذَالِكَ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْآذَانِ (مؤطا إمام مالك)

(৫৭) “হজরত ইয়াহিয়া বিন সাঈদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে করীম (সঃ) ইচ্ছা করেছিলেন যে, দু’খানা কাষ্ঠখন্ড তৈরী করে তা দ্বারা আওয়াজ দেয়া হবে যাতে লোকেরা নামাজের জন্য একত্রিত হতে পারে। অতঃপর আবদুল্লাহ্ বিন জায়িদ আনসারীকে অনুরূপ দুখানা কাষ্টখন্ড স্বপ্নে দেখান হলো আর বলল, এই ধরনের দুইখানা কাষ্ঠখন্ডের ব্যাপারেই রসূল (সঃ) ইচ্ছা করেছিলেন। তবে কেন তোমরা নামাজের জন্য আযান দিবেনা? ঘুম থেকে উঠে আবদুল্লাহ সোজা রসূলের (সঃ) কাছে এসে স্বপ্নের বিবরণ জানালেন। অতঃপর রসূল (সঃ) (নামাজের জন্য) আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন।” (মোয়াত্তা ইমাম মালিক)

ব্যাখ্যাঃ হুজুর (সঃ) নামাজে কিভাবে লোককে আহবান করে একত্রিত করা হবে এ নিয়ে ছাহাবাদের সাথে পরামর্শ করলে পরে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিলেন। কেউ বললেন, নাকাড়া বাজিয়ে ডাকা হোক, আবার কেউ বললেন, আগুন জেলে ডাকা হোক, ছাহাবাদের মধ্যে হতে কেউ বললেন নাকাড়া ও ঘন্টা বাজানো নাছারাদের তরীকা। আর আগুন জ্বালানো বা শিঙ্গা ফুকান ইয়াহুদী ও অগ্নিপুজকদের পন্থা, এর কোনটাই করা ঠিক হবে না। অতঃপর হুজুর (সঃ) মনস্থ করলেন দু’খানা কাষ্ঠখন্ড এমন করে তৈরী করবেন যাতে করে একখানা দ্বারা অন্য খানার উপরে আঘাত হেনে শব্দ করে লোকদের ডাকবেন। ঠিক এমতাবস্থায় রাতে ঘুমের ঘোরে আবদুল্লাহ বিন জায়িদ আনসারী, উমর বিন খাত্তাব প্রমুখ ছাহাবীগণ আজানের শব্দগুলো শুনে রসূলের (সঃ) কাছে আরজ করলেন। অতঃপর হুজুর (সঃ) আযান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইমাম গাজ্জালীর মতে রসূলের (সঃ) দশজন ছাহাবী আযান দেয়ার ব্যাপারে একই ধরনের খাব দেখেছিলেন। কারও কারও মতে খাব দর্শনকারী ছাহাবীদের সংখ্যা চৌদ্দ জন। এক বর্ণনা মতে হুজুর মেরাযের সময় অনুরূপ আযানের ধ্বনি সিদরাতুল মুনতাহায়ে একজন ফিরিশতার মুখে শুনেছিলেন।

যদিও হুজুর (সঃ) ছাহাবীদের খাব মোতাবেক ইজতেহাদের মাধ্যমে আযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী পর্যায় ওয়াহীর মাধ্যমে এর অনুমোদন আসে। আযান সুন্নাত বটে, তবে ইসলামের শেয়ার (নিদর্শন)। সম্মিলিতভাবে আযান তরককারীদের বিরুদ্ধে ফকিহগণ জিহাদের হুকুম দিয়েছেন।

(٥٨) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ الْمُسْلِمُونَ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ يَجْتَمِعُونَ فَيَتَحَيَّنُونَ للصَّلَاةِ وَلَيْسَ يُنَادِي بِهَا أَحَدٌ فَتَكَلِّمُوا يَوْمًا فِي ذَلِكَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ اتَّخَذُوا مِثْلَ نَاقُوْسِ النَّصَارَى وَقَالَ بَعْضُهُمْ قَرْنًا مِثْلَ قَرْنِ الْيَهُودِ فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَوَلَا تَبْعَثُوْنَ رَجُلًا يُنَادِي بِالصَّلَاةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا بِلالُ قُمْ فَنَادِ بِالصَّلَاةِ
(بخاري – مسلم)

(৫৮) “হজরত আবদুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) বলেন, মুসলমানেরা যখন মদীনা শরীফে আসলেন তখন তারা অনুমান করে নামাজের জন্য একত্রিত হতেন। কেউ কাকে ডাকতেন না। অতঃপর একদিন এ প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হলো। কেউ বললেন, নাছারাদের মত ঘন্টার ব্যবস্থা করা হোক। আবার কেউ বললেন ইয়াহুদীদের মত শিঙ্গার ব্যবস্থা করা হোক, তখন হজরত উমর বললেন, তোমরা কি একজন লোককে পাঠাতে পারনা যে নামাজের জন্য লোকদেরকে আহবান করবে। অতঃপর হুজুর (সঃ) বেলালকে বললেন, হে বেলাল তুমি উঠ এবং নামাজের জন্য ডাক।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ মক্কা শরীফে বিনা আযানেই নামাজ পড়া হতো। অতঃপর যখন মুসলমানেরা মদীনা শরীফে আসলেন তখনও প্রথম দিকে অনুমান করেই নামাজের জন্য লোকেরা মসজিদে সমবেত হতো। মুসল্লির সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাওয়ায় এতে অসুবিধা হতো। ফলে সকলে মিলে একদিন পরামর্শে বসলেন যে, এ ব্যাপারে কি করা যায়? কেউ বললেন, নাছারাদের ন্যায় ঘন্টা বাজিয়ে লোকদেরকে ডাকা হোক। হজরত উমর বললেন, কেন আমরা একজন লোক পাঠিয়ে কি লোকদেরকে ডেকে নিতে পারি না। হুজুর (সঃ) হজরত উমরের কথা মোতাবেক বেলালকে (রাঃ) লোকদেরকে নামাজের সময় ডেকে আনার হুকুম দিলেন। তখন থেকে হজরত বেলাল (রাঃ) নামাজের সময় হলে الصلوة جامعة বলে লোকদেরকে নামাজের জন্য আহবান করতেন। আলোচ্য হাদীসে এই ঘটনার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর রসূলের কতিপয় ছাহাবী স্বপ্নে বর্তমান আযানের শব্দসমূহ শুনে তা হুজুরের (সঃ) কাছে বর্ণনা করলেন। একাধিক ছাহাবী এই স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সকলে এসে হুজুরের (সঃ) কাছে একই রকম বিবরণ দিলেন। ইয়াহিয়া বিন সাইদের উপরে বর্ণিত হাদীসে আবদুল্লাহ্ বিন জায়িদ আনসারী যে আযান সম্পর্কে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরে হুজুর (সঃ) শব্দ ও বাক্য ঠিক করে দিয়ে বর্তমানে প্রচলিত আযানের ন্যায় আযান দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন।

আযান সুন্নাত ও শেয়ারে ইসলাম। কোন এলাকার মুসলমানেরা সমবেতভাবে আযান ত্যাগ করলে তাদের বিরুদ্ধে ফকিহগণ জিহাদ করা জায়েজ বলে ফতওয়া দিয়েছেন। মহল্লার মসজিদের আযান মহল্লাবাসীদের জন্য যথেষ্ট। ঘরে ঘরে আযানের প্রয়োজন হয় না।

(٥٩) وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ
(مؤطا إمام مالك)

(৫৯) “হজরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা যখন আযান শুনবে তখন মুয়াজ্জিন যা যা বলে তোমরা তাই তাই বলবে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)।

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসে হুজুর (সঃ) মুয়াজ্জিনের অনুরূপ শব্দ উচ্চারণ করে আজানের জওয়াব দেয়ার জন্য বলেছেন। তবে বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে “মুয়াজ্জিন যখন حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ও حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ বলবে তখন শ্রবণকারী لا حَوْلاً وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ বলে জওয়াব দিবে। তবে قَدْ قَامَتِ الصَّلاةُ এর স্থলে أَقَامَهَا اللَّهُ أَبَدًا আযানের জওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটাই সলফে সালেহীন ও হানাফী ইমামদের মত। তবে জমহুরের (বেশীর ভাগ ইমামদের) মত হলো আযানের জওয়াব দান সুন্নাত। তবে কোন কোন ইমামদের বলিষ্ঠ মত হলো যে, আজানের মৌখিক জওয়াবই যথেষ্ট নয়। কার্যত নামাজের জামায়াতে হাজির হয়ে জওয়াব দানই ওয়াজিব। আযানের ন্যায় ইকামতেরও জওয়াব দিতে হবে।

(٦٠) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تُوِّبَ بِالصَّلَاةِ فَلَا تَأْتُوْهَا وَأَنتُمْ تَسْعُوْنَ وَأَتَوْهَا وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا وَمَا فَأْتَكُمْ فَأَتِمُّوا فَإِنَّ أَحَدَكُمْ فِي الصَّلَاةِ مَا كَانَ يَعْمِدُ إِلَى الصَّلاة (مؤطا إمام مالك)

(৬০) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যখন নামাজের জন্য তাকবীর দেয়া হয়, তখন তোমরা পেরেশান হয়ে ধাবমান হয়ো না। বরং প্রশান্তি সহকারে আসো, অতঃপর নামাজের যতটুকু (জামায়াতের সাথে) পাও তা আদায় কর আর যেটুকু পাওনি তা পরে আদায় কর। কেননা যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নাও তখন থেকেই নামাজে আছো ধরে নেয়া হয়”
(মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি নামাজের জামায়াতের শরীক হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়, সে যেন নামাজে শরীক হয়েছে ধরে নেয়া হয়। সুতরাং নামাজীকে নামাজের মধ্যে যে ভাবে ধীরস্থির থাকতে হয়। তেমনি নামাজে যাওয়ার পথেও তাকে ধীরস্থিরভাবে যেতে হবে।

(٦١) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنَّ اللَّهُمَّ أَرْشِدِ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرِ لِلْمُؤَذِّنِيْنَ
أحمد – أبو داود – ترمذي)

(৬১) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, ইমাম হলো (মুকতাদীদের) ন।খাজের জামিন এবং মুয়ায্যিন হলো আমানতদার। অতঃপর (হুজুর (সঃ) উভয়ের জন্য দোয়া করলেন)। হে আল্লাহ্ তুমি ইমামদের সঠিক পথে চালাও আর মুয়াযয্যিনদেরকে মাফ কর” (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম হলো জামিন, অর্থাৎ ইমাম মুকতাদীদের নামাজের দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। আর মুয়াযযিন হলো নামাজীদের ঠিক সময় নামাজ আদায়ের ব্যাপারে আমানতদার। অর্থাৎ মুয়াযযিন ঠিক সময় আজান দিলেই নামাজীরা ঠিক সময় নামাজ আদায় করতে পারে।
সুতরাং মুয়াযয্যিনের ঠিক সময় আজান না দেয়া আমানতের খিয়ানত।

(٦٢) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَذَّنَ سَبْعَ سِنِينَ مُحْتَسِبًا كُتِبَ لَهُ بَرَأَةٌ مِّنَ النَّارِ (ترمذي أبو داود – ابن ماجه)

(৬২) “হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছওয়াব পাওয়ার নিয়তে সাত বৎসরকাল আযান দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি লিখিত হয়ে যাবে।” (তিরমিজি, আবুদাউদ, ইবনে মাযাহ)

নামাজের লেবাস

আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন কুরআন পাকে এরশাদ করেছেন,

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
(الأعراف : ۳۱)

অর্থাৎ “হে আদম সন্তানেরা তোমরা প্রতি নামাজের সময় তোমাদের ভূষণ গ্রহণ কর”। সুতরাং ছতর আবৃত পরিমাণ লেবাস অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত আচ্ছাদনও গ্রহণ করা উত্তম। কেননা আয়াতে যে ভূষণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এর অর্থ হলো পরিপূর্ণ পোশাক, অর্থাৎ আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার সময় এমন পোশাক নিয়ে দাঁড়াবে যাতে সতরও ঢাকে শোভাও বৃদ্ধি পায়।

মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদীর তাফসীরে উপরোক্ত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ইবনে কাছিরে উপরোক্ত আয়াতের নিম্নরূপ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

الزِّينَةُ الرِّبَاسُ وَهُوَ مَا يُوَارِيُّ السَّوأَةَ وَمَا سَوَى ذَلِكَ مِنْ جَيْدِ الْبَرِّ وَالْمَتَاعِ فَأُمِرُوا أَنْ يَأْخُذُوا زِينَتَهُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِد وَلِهَذِهِ الْآيَةِ وَمَا وَرَدَ فِي مَعْنَاهَا مِنَ السَّنَةِ يَسْتَحِبُّ التَّجَمَّلَ عِنْدَ الصَّلَاةِ لَأَسِيَّمَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَوْمِ الْعِيدِ
(تفسير ابن قصير)

“আয়াতে জিনাত অর্থে ঐ ভূষণ বা লেবাসকে বুঝানো হয়েছে যা শুধু ছতরই আবৃত করেনা বরং শরীরের শোভা ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে। আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে তার বান্দাহদেরকে নামাজে উত্তম পরিচ্ছদ গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আয়াত এবং এ ধরনের আরও যেসব আয়াত এ প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে এর অর্থ হলো প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় নামাজী ব্যক্তির উত্তম পোশাক পরা সুন্নত। বিশেষ
করে জুময়া ও ঈদের নামাজে।” (তাফসিরে ইবনে কাছির)

(٦٣) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُصَلِّيَنَّ أَحَدُكُمْ فِي التَّوْبِ الْوَاحِدِ لَيْسَ عَلَى عَائِقَيْهِ مِنْهُ شَيْءٌ
(بخاري – مسلم)

(৬৩) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন এক কাপড়ে এমন ভাবে নামাজ না পড়ে যার কোন অংশ তার কাঁধের উপরে থাকবে না।” (বুখারী, মুসলিম)

(٦٤) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ صَلَّى فِي ثَوْبِ وَاحِدٍ فَلْيُخَالِفْ بَيْنَ طَرْفَيْهِ (بخاري)

(৬৪) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি রসূল করীমকে (সঃ) বলতে শুনেছি, “যে এক কাপড়ে নামাজ পড়বে সে যেন কাপড়ের দুই মাথাকে বিপরীত দিক হতে জড়িয়ে নেয়।” (বুখারী)

ব্যাখ্যাঃ নামাজের ফরজ সমূহের মধ্যে ছতর আবৃত করা একটি ফরজ। সুতরাং পুরুষ-মহিলা প্রত্যেককেই এমন লেবাসসহ নামাজ পড়া উচিত যাতে তার ছতর আবৃত থাকে এবং নামাজের মধ্যে ছতর খুলে যাওয়ার কোন আশংকা না থাকে।

مَوَاقِيْتُ الصَّلاةِ

নামাজের ওয়াক্ত সমূহের বিবরণ

إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِيْنِنَ كِتَبَا مَّوْقُوْتًا
(النساء – ١٠٣)

অর্থঃ অবশ্য নামাজ মুমেনদের উপরে ওয়াক্তসহ ফরজ করা হয়েছে।
(নিসা-১০৩)

(٦٥) وَعَنْ أَبِي عَمْرِ الشَّيْبَانِي وَاسْمُهُ سَعَدُ بْنُ إِيَاسٍ قَالَ حَدَّثَنِي صَاحِبُ هَذِهِ الدَّارِ وَأَشَارَ إِلَى دَارِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ؟ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ؟ قَالَ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنِي بِهِنَّ رَسُولُ اللَّهِ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي
(بخاري – مسلم)

(৬৫) “আবু আমর সাইবানী যার নাম হলো সায়াদ ইবনে আইয়াজ, তিনি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদের ঘরের দিকে ঈশারা করে বললেন, আমাকে এই ঘরের মালিক হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, আমি হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আল্লাহর কাছে (বান্দার) কোন কাজটি সবচেয়ে প্রিয়? হুজুর বললেন, “নামাজ ওয়াক্ত মত আদায় করা।” আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোনটি? হুজুর বললেন, পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আবার জিজ্ঞেস করলাম অতঃপর কোনটি? হুজুর বললেন, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা, ইবনে মাসউদ বলেন, হুজুর আমাকে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন, (আমার ধারণা) আমি যদি হুজুরকে আরও প্রশ্ন করতাম, তাহলে তিনি আরও বলতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ নামাজ ওয়াক্তের সাথে ফরজ হয়েছে, সুতরাং নামাজের মোট তেরটি ফরজের মধ্যে একটি হল নামাজ তার ওয়াক্তে আদায় করা। বর্ণিত হাদীসে ওয়াক্ত মোতাবেক নামাজ আদায় করাকে আল্লাহর রসূল (সঃ) আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে প্রিয় আমল বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফয়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাকে আফজল অর্থাৎ উত্তম বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা ইশার নামাজ গভীর রাতে এবং ফজর দিনের আলো রওশান হওয়ার পরে অর্থাৎ শেষ ওয়াক্তে এবং গরমের দিনে জোহরের নামাজ কিছু বিলম্ব করে আদায় করা উত্তম বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা বিভিন্ন হাদীস থেকে এর পক্ষে দলিল গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অন্য ইমামদের মতে বিলম্ব করে নামাজ পড়ার এ হাদীস যে একাকি নামাজ আদায় করে তার জন্য। জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়কারীদের জন্য নয়।

(٦٦) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّنِي جِبْرَيْلُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِيْنَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ قَدْرَ الشَّرَاكِ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِيْنَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِيْنَ افْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِيَ الْعِشَاءَ حِيْنَ غَابَ الشَّفَقُ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ حِيْنَ حَرُمَ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ عَلَى الصَّائِمِ فَلَمَّا كَانَ الْقَدُ وَصَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِيْنَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِيْنَ كَانَ مِثْلَيْهِ وَصَلَّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِيْنَ افْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِي الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَصَلَّى بِي الْفَجْرَ فَاسْفَرَ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ هَذَا وَقْتُ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ
(أبو داود – ترمذي)

(৬৬) “হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, কা’বা ঘরের নিকটে জিবরাঈল (আঃ) দুবার আমার ইমামতী করেছেন। (প্রথম বারে) সূর্য (সামান্য) ঢলার সাথে সাথেই তিনি আমাকে জোহরের নামাজ পড়ালেন। আর এর পরিমাণ ছিল (প্রস্থে) জুতার ফিতার ন্যায়। আর তিনি আমাকে আছর পড়ালেন যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হয়েছিল। মাগরিব পড়ালেন যখন রোজাদার ইফতার করে এবং এশা পড়ালেন যখন শফক (পশ্চিমাকাশের লালিমা) অদৃশ্য হলো। আর ফজর পড়ালেন ঐ সময় যখন রোজাদারের উপরে খানাপিনা হারাম হয়ে যায়। যখন দ্বিতীয় দিন আসল, তিনি আমাকে নিয়ে জোহর পড়ালেন যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া একগুণ হলো, আর আছর পড়ালেন যখন দ্বিগুণ হলো। মাগরিব পড়ালেন যখন রোজাদার ইফতার করে এবং এশা পড়ালেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পূর্ণ হলো। আর ফজর পড়ালেন এমন সময় যখন উষার আলো বের হয়ে আসল। অতঃপর তিনি আমার দিকে লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মদ (সঃ) এটা হলো আপনার পূর্বেকার নবীদের নামাজের সময়। নামাজের সময় এই দুই সময়-সীমার মধ্যে।” (আবু দাউদ, তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ বর্ণিত হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, পাঁচ ওয়াকত নামাজ ফরজ হওয়ার পরে এই নামাজ কিভাবে আদায় করতে হবে, অর্থাৎ নামাজের ওয়াকত কখন, কোন ওয়াকতে কয় রাকায়াত নামাজ, নামাজের রুকু, সিজদা ইত্যাদি কিভাবে আদায় করতে হবে এ ব্যাপারে হুজুরকে (সঃ) সঠিক তালিম দেয়ার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীন স্বয়ং জিবরাঈলকে (আঃ) পাঠিয়েছিলেন। তিনি পর পর দু’দিন এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াকতে এবং দ্বিতীয় দিন আখেরী ওয়াকতে হুজুরকে (সঃ) নামাজ পড়ায়ে বললেন, নামাজের ওয়াকত শুরু হবে প্রথম দিন যে ওয়াকতে পড়ানো হয়েছে ওখান থেকে এবং শেষ হবে দ্বিতীয় দিন যখন নামাজ পড়ানো শেষ করেছি তখন।

যেহেতু দু’দিনই মাগরিবের নামাজ জিবরাইল (আঃ) হুজুরকে একই সময়ে পড়ায়েছিলেন তাই মাগরিবের নামাজের সময় স্বল্পস্থায়ী। ইমাম শাফয়ীর মতে মাগরিবের নামাজের সময় শুধু আজান, ইকামত ও পাঁচ রাকয়াত নামাজ আদায় করা পর্যন্ত থাকে। তবে রোজাদারের ইফতারের সময়ও এর মধ্যে সামিল হবে। ইমাম আবু হানিফার মতে পশ্চিমাকাশের লালিমা অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময় থাকে।
উভয় দিনই জিবরাইল (আঃ) একই সময় মাগরিবের নামাজ হুজুরকে পড়ায়েছেন তাই হুজুরের সময় হতে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত যদিও অন্যান্য নামাজে আজানের পরে মুসল্লিদেরকে বেশ খানিকটা সময় প্রস্তুতির জন্য দেয়া হয়, কিন্তু মাগরিবের নামাজে তা দেয়া হয় না, আর কিয়ামত পর্যন্ত তা দেয়া হবে না। যদি জিবরাইল (আঃ) দিতেন তাহলে অবশ্যই দেয়া হতো, এ হাদিস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, নামাজ যে রকম আল্লাহর পক্ষ হতে ফরজ হয়ে এসেছে তেমনি নামাজ আদায়ের তরীকাও আল্লাহর পক্ষ হতে আগত। হুজুরের নিজের পক্ষ থেকে ইজতেহাদের মাধ্যমে এই তরীকা বা নিয়ম ঠিক করা হয়নি।

(٦٧) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرُّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبُ الشَّفَقُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ الْأَوْسَطِ وَوَقْتُ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاةِ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنِي الشَّيْطَانِ (مسلم)

(৬৭) “হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, জোহরের নামাজের সময়ের শুরু যখন সূর্য ঢলে এবং শেষ যখন মানুষের ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, অর্থাৎ যে পর্যন্ত না আছরের সময় উপস্থিত হয়, আর আছরের সময় যে পর্যন্ত না (এর পর হতে) সূর্য হলদে রং ধারণ করে এবং মাগরিবের নামাজের সময় হল (সূর্যাস্ত হতে) যে পর্যন্ত না (পশ্চিমাকাশের) লালিমা অদৃশ্য হয়ে যায়। আর এশার নামাজের সময় মধ্যে রাত্রি পর্যন্ত এবং ফজরের সময় ঊষার উদয় হতে যে পর্যন্ত না সূর্যোদয় আরম্ভ হয়। যখন সূর্যোদয় শুরু হবে তখন নামাজ হতে বিরত থাকবে, কেননা উহা শয়তানের দুই সিংয়ের মাঝ খান থেকে উদয় হয়।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস অনুসারে ইমাম মালেক, শাফয়ী, আহমদ বিন হাম্বল, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ ও জাফর প্রমুখ ইমামগণ জোহরের নামাজের সময় ছায়া আছলী বাদে একগুণ অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার একগুণ হওয়া পর্যন্ত থাকে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার মতে ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময় অবশিষ্ট থাকে, “ছায়া আছলী” বলা হয় ঠিক দ্বিপ্রহরে অর্থাৎ সূর্য যখন একেবারেই মাথার উপরে অবস্থান করে, তখন বস্তুর যে ছায়া পার্শ্বে বিস্তারিত হয়ে থাকে তাই ছায়া আছলী। সূর্য হলদে রং ধারণ করার অর্থ সূর্যের কিরণের তীক্ষ্ণতা কমে তা যখন থালার আকার ধারণ করে ঐ পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত, তবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসরের নামাজ কেরাহাতের সঙ্গে আদায় হবে। এশার নামাজের উত্তম সময় হলো মধ্যরাত পর্যন্ত। মধ্য রাতের পর হতে উষার উদয় পর্যন্ত মাকরুহ সময়।

যেহেতু সূর্য পূজারী মুশরিকগণ সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় সূর্যের পূজা করে থাকে, আর ঐ সময় শয়তান তাদের পূজা গ্রহণ করার জন্য সূর্যের সামনে দাঁড়ায় তাই শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য হতে সূর্য উদয়ের কথা হাদীসে বলা হয়েছে।

মসজিদ ও নামাজের স্থান সমূহের বিবরণ

(٦٨) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ الْبِلادِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلادِ إِلَى اللَّهِ أَسْوَاقُهَا (مسلم)

(৬৮) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, স্থানসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক প্রিয় হলো মসজিদ এবং সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত হলো বাজার।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ নামাজের জন্য যখন কোন স্থানকে চিহ্নিত ও নির্দিষ্ট করে নেয়া হয় তখন ঐ চিহ্নিত স্থানকে মসজিদ বলা হয়, যেহেতু মসজিদকে আল্লাহর ইবাদত ও নামাজের জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়, ফলে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সাথে সাথেই মানুষের মন আল্লাহর দিকে রুজু হয়, এ জন্যই আল্লাহর নিকটে মসজিদ অধিক প্রিয়, আর বাজারমুখী লোক যেহেতু দুনিয়ার প্রয়োজন পূরণ করার নিমিত্ত বাজারে যায়, বাজারের ব্যস্ততা সাময়িকভাবে হলেও তাকে আল্লাহ থেকে গাফিল করে, সে জন্যই বাজার আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট। তবে প্রয়োজনে বাজার স্থাপন ও বাজারে যাওয়া দোষণীয় নয়। অকারণে বাজারে অধিক্ষণ কাটানো মুনাসিব নয়।

মসজিদের জমি অবশ্যই ওয়াকফকৃত হতে হবে এবং মসজিদে সাধারণভাবে সকল মুসলমানের প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। মসজিদের নামাজ সওয়াবের দিক দিয়ে বাইরের নামাজের চেয়ে ২৫ গুণ অধিক।

(٦٩) وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ
(بخاري – مسلم)

(৬৯) “হজরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যদি কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে একখানা মসজিদ তৈরী করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একখানা ঘর তৈরী করবেন।” (বুখারী, মুসলিম)

(۷۰) وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذْ دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ (بخاري – مسلم)

(৭০) “হজরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে বসার পূর্বে দু’রাকায়াত নামাজ আদায় করে।”

ব্যাখ্যাঃ মসজিদে ঢুকেই যে দু’রাকায়াত নামাজ পড়া হয়। তাকে দুখুলুল মসজিদ বলা হয়। কারো কারো মতে এটা ওয়াযিব, তবে ইমাম আবু
হানিফা (রাঃ) একে মুস্তাহাব বলেছেন।

(۷۱)
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَقْدِمُ مِنْ سَفَرٍ إِلَّا نَهَارًا

فِي الضُّحَى فَإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيْهِ (بخاري – مسلم)

(৭১) “হজরত কায়াব ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) সব সময়ই দিনে প্রথম ভাগে সফর হতে বাড়ি ফিরতেন। প্রথমেই তিনি মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দু’রাকায়াত নামাজ পড়তেন। অতঃপর তথায় বসতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ সফর হতে আগমনকারী ব্যক্তির উপরোক্ত হাদীস মোতাবেক আমল করা মুস্তাহাব।

(۷۲) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أَكَلَ التَّوْمَ وَالْبَصَلَ وَالكُرَّثَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَتَأَدَّى مِمَّا يَتَأَنَّى مِنْهُ بَنُوْ آدَمَ
(بخاري – مسلم)

(৭২) “হজরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, রসুন, পিয়াজ ও কোররাস ভক্ষন করে যেন কেউ আমার মসজিদে প্রবেশ না করে, কেননা মানব সন্তানের যাতে কষ্ট হয়, তাতে ফিরিস্তাদেরও কষ্ট হয়।” (বুখারী মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ পিয়াজ, রসুন এবং অনুরূপ গন্ধযুক্ত কাঁচা কোন বস্তু খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে রসূল (সঃ) নিষেধ করেছেন, কেননা মসজিদে নামাজের জন্যে লোক একত্রিত হয় এবং কাঁচা গন্ধযুক্ত পিয়াজ, রসুন ও তরকারী ভক্ষণ কারীর মুখের গন্ধে যেমন উপস্থিত লোকজনের তকলীফ হয়, তেমনি মসজিদে উপস্থিত ফিরিশতাদেরও তকলীফ হয়। পিয়াজ-রসুন খাওয়া নিষেধ নয়। তবে খেয়ে মসজিদ, ঈদগাহ কিংবা ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি স্থানে যাওয়া নিষেধ।

(۷۳) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي لَمْ يَقُمْ مِنْهُ لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخِذُوا قَبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
(بخاري – مسلم)

(৭৩) “হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) তার মৃত্যুকালীন রোগ অবস্থায় বলেছেন, আল্লাহ ইয়াহুদী ও নাছারাদের প্রতি লায়ানত অবতীর্ণ করুক, (যেহেতু) তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ কবরকে দুটি উদ্দেশ্যে সিজদার স্থান বা মসজিদে পরিণত করা হতো, এক কবরে যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে, তাদেরকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে সিজদা করা। এটা স্পষ্ট শিরক বা শিরকে জলি। আর দ্বিতীয় হলো নামাজ বা মোরাকাবায় এদের কবর হতে তায়াজ্জুহ হাসিল করা। যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। এটাও শিরক তবে শিরকে খফি, অর্থাৎ অস্পষ্ট শিরক। প্রিয়নবী (সঃ) তার মৃত্যুকালীন রোগযন্ত্রণার সময় ইয়াহুদ ও নাছারাদের কৃত পাপের পুনরাবৃত্তি যাতে তাঁর উম্মতরা না করে তার জন্যেই তিনি এ সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন।

(٧٤) وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ فُرِضَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَوَاتُ لَيْلَةً أُسْرِيَ

بِهِ خَمْسِيْنَ ثُمَّ نَقَصَتْ حَتَّى جُعِلَتْ خَمْسًا ثُمَّ نُوْدِيَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُ لَا يُبَدِّلُ الْقَوْلَ لَدَيَّ وَإِنَّ لَكَ بِهَذِهِ الْخَمْسِ خَمْسِينَ (أحمد – نسائي – ترمذي)

(৭৪) “হজরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করিমের (সঃ) প্রতি মেরাজের রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ (দিবা-রাত্রিতে) ফরজ করা হয়েছিল। অতঃপর ঘোষিত হলো হে মুহাম্মাদ (সঃ) অবশ্যই আমার সিদ্ধান্ত কখনও পরিবর্তন হয় না, আর তোমার জন্যে এই পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াকতের সমান।” (আহমদ, নাসাঈ, তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসটি মিরাজ সংক্রান্ত হাদীসের অংশবিশেষ। মিরাজের রাতেই রসূল (সঃ) উপরে নামাজ ওয়াক্তসহ ফরজ করা হয়, এর পূর্বে রসূল (সঃ) শুধু রাতে নামাজ পড়তেন। যার বর্ণনা সূরায়ে মুয্যাম্মিলের মধ্যে পাওয়া যায়। উপরোক্ত হাদীস থেকে জানা যায় যে, মিরাজে প্রথমতঃ মুহাম্মাদ (সঃ) এবং তার উম্মতের উপরে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর মহান আল্লাহ রসূলের (সঃ) আবেদনে দয়াপরবশ হয়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের পরিবর্তে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন কিন্তু সওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই বহাল রাখলেন।

(٧٥) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي ناحِيَةِ الْمَسْجِدِ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ

رَسُولُ اللَّهِ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا عَلِمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَاسْبِغِ الْوَضُوءَ ثُمَّ اسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنَ ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا وَفِي رِوَايَةٍ ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلَاتِكَ كُلِّهَا
(بخاري – مسلم)

(৭৫) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রসূল (সঃ) মসজিদে নববীর এক পাশে বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন ও নামাজ পড়লেন, অতঃপর এসে হুজুরকে সালাম করলেন। হুজুর (সঃ) তার উদ্দেশ্যে সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, তুমি যাও এবং পুনরায় নামাজ পড়ে এস। কেননা তোমার নামাজ হয়নি”। লোকটি ফিরে গিয়ে পুনরায় নামাজ পড়ে এসে আবার হুজুরকে (সঃ) সালাম করলেন। হুজুর সালামের জওয়াব দিয়ে আবার তাকে বললেন, “তুমি ফিরে গিয়ে নামাজ পড়। কেননা তোমার নামাজ হয়নি”। লোকটি আবার গিয়ে নামাজ আদায় করে পুনরায় হুজুরকে (সঃ) এসে সালাম করলেন। হুজুর (সঃ) আবার তার সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, “তোমার নামাজ হয়নি, তুমি পুনরায় নামাজ পড়”। পরে তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারে লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি

আমাকে নামাজের তালিম দিন। হুজুর তাকে বললেন, তুমি যখন নামাজের ইচ্ছা করবে তখন উত্তমরূপে অজু করে নিবে, অতঃপর কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে এবং তাকবীর তাহরীমা বলবে। অতঃপর কুরআন হতে যেটুকু সম্ভব পাঠ করবে, রুকু করবে এবং রুকুতে পূর্ণ মুতমাইন (প্রশান্ত) হবে, অতঃপর মাথা তুলে একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তারপর সিজদা করবে এবং সেজদায় পূর্ণভাবে প্রশান্ত হবে। অতঃপর মাথা তুলে একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এভাবেই তুমি ধীরস্থির ভাবে তোমার পূর্ণ নামাজটা আদায় করবে।”
(বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে যে ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইনি ছিলেন রসূলের (সঃ) প্রসিদ্ধ সাহাবি রাফায়া বিন রাফের ভাই খাল্লাদ বিন রাফে (রাঃ)। বুখারী মুসলিম ও নাসাঈ শরীফের বর্ণনা সমূহকে একত্র করলে জানা যায় যে, ইনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে প্রথমত দু’রাকায়াত তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আদায় করলেন যা কোন কোন মাযহাবে ওয়াযিব। অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশ করে অবশ্যই দু’রাকায়াত নামাজ আদায় করতে হবে। হজরত রাফা ব্যস্ততার সাথে নামাজ এমনভাবে আদায় করছিলেন যাতে রুকু-সিজদা এবং রুকু-সিজদার মাঝখানে (কওমা ও জলসা) সোজা হয়ে বসা ঠিকমত হয়নি, ফলে হুজুর (সঃ) তাকে বার বার নামাজ দোহরাবার হুকুম দিয়েছিলেন। কয়েকবার নামাজ পড়ার পরেও লোকটি যখন তার নামাজের প্রকৃত ত্রুটি অনুধাবন করতে পারলেন না, তখন তার ইচ্ছানুসারে হুজুর (সঃ) তাকে কিভাবে পূর্ণতা সহকারে নামাজ আদায় করতে হবে তা বলে দিলেন, বিশেষ করে যে বিষয় নামাজ আদায়কারী সাহাবীর ত্রুটি ছিল। অর্থাৎ প্রশান্তি সহকারে রুকু ও সিজদা করা ও রুকু হতে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং দুই সিজদার মাঝখানে পূর্ণভাবে সোজা হয়ে বসা, বরং একবার তাসবিহ (সোবহানা রাব্বিয়াল আয়ালা) পড়ার সময়কাল অবস্থান করা একে তায়াদিলে আরকান বলা হয়। অধিকাংশ ইমামদের মতে “তায়াদিলে আরাকান” উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনানুযায়ী ফরজ, তবে ইমাম আবু হানিফার মতে ওয়াজিব।

(٧٦) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَفْتِحُ الصَّلَاةَ بِالتَّكْبِيرِ وَالْقِرَاءَةِ بِالْحَمْدِ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَكَانَ إِذَا رَكَعَ لَمْ يُشْخِصَ رَأْسَهُ وَلَمْ يُصَوِّبُهُ وَلَكِنْ بَيْنَ ذَلِكَ وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ لَمْ يَسْجُدْ حَتَّى يَسْتَوِيَ قَائِمًا وَكَانَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ السَّجْدَةِ لَمْ يَسْجُدْ حَتَّى يَسْتَوِيَ جَالِسًا وَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ وَكَانَ يَفْتَرِشُ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَيَنْصَبُ رِجْلَهُ الْيُمْنَى وَكَانَ يَنْهَى عَنْ عَقْبَةِ الشَّيْطَانِ وَيَنْهَى أَنْ يَفْتَرِشَ الرَّجُلُ ذِرَاعَيْهِ افْتِرَاشَ السَّبْعِ وَكَانَ يَخْتِمُ الصَّلَاةَ بالتسليم (رواه مسلم)

(৭৬) “হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) নামাজ শুরু করতেন আল্লাহু আকবার দ্বারা এবং কিরআত শুরু করতেন আলহাম্দু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন দ্বারা। আর হুজুর (সঃ) যখন রুকু করতেন মাথা উপরেও করতেন না নীচেও করতেন না বরং মাঝামাঝি রাখতেন। যখন তিনি রুকু হতে মাথা তুলতেন সিজদায় যেতেন না। যে পর্যন্ত না একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন সিজদা হতে মাথা উঠাতেন পুনরায় সিজদায় যেতেন না, যে পর্যন্ত না একেবারে সোজা হয়ে বসতেন। আর প্রত্যেক দু’রাকায়াত পর পর “আত্তাহিয়াতু পড়তেন”। বসার সময় হুজুর (সঃ) বাম পা বিছিয়ে দিতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন। তিনি শয়তানের ন্যায় বসতে যেমন নিষেধ করতেন, তেমনি জানোয়ারের ন্যায় দু’হাত মাটিতে বিছিয়ে দিতেও নিষেধ করতেন। হুজুর (সঃ) নামাজ সালামের সাথে শেষ করতেন।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে রসূল (সঃ) কিভাবে নামাজ পড়তেন তার একটা বিবরণ দেয়া হয়েছে। বর্ণিত হাদীস এবং তার পূর্ববর্তী হাদীসের মর্মানুসারে ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ইমাম আবু ইউসুফ কওমা ও জলসাকে অর্থাৎ রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এক তছবিহ পরিমাণ দাঁড়িয়ে থাকা এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে এক তছবিহ পরিমাণ বসে থাকা ফরজ বলেছেন। এটাকেই তায়াদিলে আরকান বলা হয়। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদের নিকট এটা ওয়াজিব। কওমা-জলছা ঠিকমত না হলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। আর এ কারণেই রসূল (সঃ) একজন সাহাবীকে বার বার নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেননা, তার কওমা-জলছা ঠিকমত আদায় হচ্ছিল না। হাদীস দ্বারা এটাও জানা গেল যে রসূল (সঃ) তাকবীর দ্বারা নামাজ শুরু করতেন এবং সালাম দ্বারা নামাজ শেষ করতেন। আর হুজুর (সঃ) প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতেহা পড়তেন।

(۷۷) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهَ حَدْوَ مِنْكَبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاةَ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَهُمَا كَذَالِكَ وَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذَالِكَ في السُّجُودِ (بخاري – مسلم)

(৭৭) “হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) যখন নামাজ আরম্ভ করতেন তখন দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর উঠাতেন, অতঃপর যখন রুকুর তাকবীর বলতেন এবং রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও দুই হাত আগের মত (কাঁধ বরাবর) উঠাতেন এবং বলতেন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা লাকাল হামদ” কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ হাত উঠাতেন না।” (বুখারী, মুসলিম)

(۷۸) وَعَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَامَ مِنَ الرَّكَعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَفَعَ ذَالِكَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (بخاري)

(৭৮) “হজরত নাফে হতে বর্ণিত, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যখন নামাজ শুরু করতেন, তাকবীর বলতেন এবং দু’হাত উঠাতেন। অতঃপর যখন রুকুতে যেতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। যখন “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। অতঃপর যখন দু’রাকায়াত পড়ে দাঁড়াতেন, তখনও দু’হাত উঠাতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) রসূলের (সঃ) নাম করেই একথা বলতেন।”
(বুখারী)

ব্যাখ্যাঃ উপরে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, রসূল (সঃ) রুকুতে যেতে এবং রুকু হতে উঠতে দু’হাত উঠাতেন, অর্থাৎ “রফে ইয়াদাইন” করতেন। এসব হাদীসের মর্মানুসারে ইমাম আহমদ, ইমাম শাফয়ী প্রমুখ অধিকাংশ ইমাম নামাজে “রফে ইয়াদাইনের” পক্ষে মত দিয়েছেন। আহলে হাদীসরাও এই মতের অনুসারী। অন্যদিকে ইমাম আবু হানিফা তাকবীর তাহরীমা ব্যতীত আর কোথাও হাত উঠাবার “রফে ইয়াদাইন” করার পক্ষপাতি নন।

হজরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত তিরমিজি শরীফের নিম্নোক্ত হাদীসটি হল ইমাম আবু হানিফা এবং তার অনুসারীদের দলিলঃ

(۷۹) وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ لَأُصَلِّيَنَّ لَكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا مَرَّةً وَّاحِدَةً
ترمذي – نسائي – أبو داود )

(৭৯) “হজরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলের (সঃ) ন্যায় নামাজ পড়ে দেখাব? অতঃপর তিনি নামাজ পড়লেন এবং একবারের অধিক (তাকবীর তাহরীমা ব্যতীত) হাত উঠালেন না।” (তিরমিজি, আবুদাউদ, নাসাঈ)
ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও অন্য এক বর্ণনায় আছে, হজরত ইবনে মাসউদ বলেন, রসূল (সঃ) নামাজে হাত উঠাতেন এবং আমরাও উঠাতাম। পরে তিনি তা ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমরাও ছেড়ে দিয়েছি। (নিহায়া সরহে হেদায়া)। ইমাম তাহাবী বর্ণিত এক হাদীসে আছে, হজরত উমর (রাঃ) এবং হজরত আলী (রাঃ) তাকবীর তাহরীমাতেই হাত উঠাতেন।

শাহ অলিউল্লা দেহলবীর মতে, “নবী করীম (সঃ) কখনও হাত উঠাতেন আবার কখনও উঠাননি। হাদীসে উভয়টাই পাওয়া যায়। সুতরাং উভয়টাই সুন্নত। সাহাবী এবং তাবেয়ীনদের এক জামায়াত রফে ইয়াদাইন করতেন আর এক জামায়াত করতেন না। উভয়ের পক্ষেই দলিল আছে। সুতরাং কোন পক্ষেরই বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়” ‘রফে ইয়াদাইন’ তাকবীর তাহরীমা (ব্যতীত) অন্যত্র যারা সাবেত করেন তারাও একে নামাজের সুন্নত বলেছেন, ফরজ ওয়াজিব নয়।

(۸۰) وَعَنْ قَبِيْصَةَ بْنِ حُلْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَؤُمُّنَا فَيَأْخُذُ شِمَالَهُ بِيَمِينِهِ (ترمذي – ابن ماجة)
(৮০) “হজরত কবিসাহ বিন হুলব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁর পিতা বলেন, রসূল (সঃ) আমাদের ইমামতি করতেন এবং (নামাজে) তিনি বাম হাতকে ডান হাত দ্বারা ধরতেন।” (তিরমিজি, ইবনে মাযা)

(۸۱) وَعَنْ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ مُرْسَلاً قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي الصَّلَاةِ كُلِّمَا خَفَضَ وَرَفَعَ فَلَمْ تَزِلْ تِلْكَ صَلَاتُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى لَقِيَ الله (مؤطا امام مالك)

(৮১) “হজরত আলী ইবনে হুসাইন (জয়নাল আবেদীন) মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করছেন, রসূল (সঃ) নামাজের মধ্যে (প্রতিবার) মাথা নীচু ও উঁচু করার সময় তাকবীর বলতেন, আর এভাবে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত নামাজ আদায় করেছেন।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)

ব্যাখ্যাঃ প্রথমোক্ত হাদীসে হুজুর (সঃ) কিভাবে নামাজে হাত বাঁধতেন তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন। দ্বিতীয় হাদীসে হুজুর (সঃ) প্রতি রাকায়াত নামাজে উঠা বসার সময় যে তাকবীর বলতেন তার বিবরণ দেয়া হয়েছে। তবে হাদীসে এও আছে যে, কেবলমাত্র রুকু হতে মাথা উঠাবার সময় سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন।

নামাজ সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু আলোচনা

নামাজের গুরুত্বঃ

শরীয়তে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের মধ্যে নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ। কিয়ামতের দিন প্রথমেই বান্দাকে নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। কুরআন পাকে বার বার নামাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হুজুর (সঃ) নামাজকে ইসলামের খুঁটি (পিলার) বলে অভিহিত করেছেন। তিরমিজি শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে, হজরত আব্দুল্লাহ বিন শফীকুল উকাইলী বর্ণনা করেছেন, রসূলের ছাহাবীগণ নামাজ ব্যতীত অন্য কোন আমল তরক করাকে কুফরী মনে করতেন না। হজরত বুরাইদাহ্ বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজ তরক করলো সে কুফরী করলো। উপরোক্ত হাদীস দৃষ্টে কেউ কেউ নামাজ তরককারীকে কাফের মনে করেন। ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও শাফয়ীর মতে নামাজ তরককারী কাফের নয়, তবে ফাসেক। তাকে ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ হতে তওবা করতে বলা হবে। যদি সে তওবা করতে অস্বীকার করে, তাহলে ইমাম মালেক ও শাফয়ীর মতে তাকে শাস্তিস্বরূপ কতল করতে হবে। আর ইমাম আবু হানিফার মতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হবে। হাঁসে যদি তওবা করে এবং নামাজ পড়ার অঙ্গীকার করে, তাহলে তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে, নতুবা কয়েদ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা শরীয়তে নামাজের গুরুত্বের বিষয় পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।

নামাজের ফরজসমূহঃ

নামাজের অঙ্গসমূহের মধ্যে কতক হলো ফরজ, যাহা ছুটে গেলে নামাজ হবে না। কতক ওয়াজিব যাহা তরক হলে সোহ সিজদার মাধ্যমে সংশোধন করা যায়। আর কতক হলো সুন্নাত যা তরক হলে নামাজ ভঙ্গ হয় না। নামাজে মোট ১৩ টি ফরজ। ছয়টি বাইরে যা নামাজের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন হয়, একে শর্ত বলা হয়। আর ৭টি হলো ভিতরে যাকে রুকন বলা হয়।

শর্তসমূহঃ

(১) অজু-গোসলের মাধ্যমে শরীর পবিত্র করা (২) পবিত্র কাপড়ে নামাজ আদায় করা (৩) নামাজের স্থান পাক হওয়া (৪) সতর আবৃত করা (৫) নিয়ত করা (৬) কেবলামুখী হওয়া।

রোকনসমূহঃ

(১) তাকবীর তাহরীমা (২) ক্বিয়াম অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া (৩) কিরআত অর্থাৎ কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ করা (৪) রুকু করা (৫) সিজদা করা (৬) কায়েদায়ে আখিরা অর্থাৎ নামাজের শেষ বৈঠক (৭) কোন কার্য দ্বারা নামাজ হতে বের হয়ে আসা। কোন কোন ইমামের মতে প্রতি রাকায়াতে সূরায়ে ফাতেহা পড়া ও রুকু-সিজদা হতে সোজা হয়ে দাঁড়ান ও বসা অর্থাৎ তাদিলে আরকানও নামাজের ফরজ সমূহের মধ্যে সামিল।

নামাজের ওয়াজিবসমূহ

(১) সূরা ফাতেহা পড়া, অন্য ইমামের মতে এটা ফরজ (২) সূরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য কোন সূরা বা উহার অংশবিশেষ পাঠ করা (৩) প্রথম দু’রাকায়াতে কিরআত পড়া (৪) নামাজ তারতীবের সাথে আদায় করা (৫) তায়াদিলে আরকান অর্থাৎ রুকু-সিজদা ঠিকঠাকমত আদায় করা। অন্য ইমামদের মতে এটা ফরজ (৬) চার বা তিন রাকায়াত ওয়ালা নামাজের দু’রাকায়াতের পরে বসা (৭) আত্তাহিয়াতু পড়া (৮) সালামের সহিত নামাজ শেষ করা (৯) জোহর-আসরে কিরয়াত চুপে চুপে পড়া (১০) মাগরিব, এশা ও ফজরে কিরআত সরবে পড়া (১১) বিতরে দোয়া কুনুত পড়া (১২) ঈদের নামাজ সমূহে অতিরিক্ত তাকবীর বলা।

তাকবীর তাহরীমার পর যা পড়তে হয়

(۸۲)
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ قَالَ

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ (ترمذي – أبو داود)

(৮২) হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) যখন নামাজ শুরু করতেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

(۸۳)
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ بَعْدَ تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ” (مسلم – دار قطني)

(৮৩) “হজরত উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাকবীর তাহরীমার পর

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

এই দোয়া পড়তেন।” (মুসলিম, দারেকুতনি)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস হতে জানা যায়, হুজুর (সঃ) তাকবীর তাহরিমার পর

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

এই দোয়া পড়তেন, ৮২ নম্বর হাদীসে দেখা যায়, হজরত উমর (রাঃ) তাকবীর তাহরীমার পর সবসময়ই এই দোয়া পড়তেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং বহু সংখ্যক তাবেয়ীনও এই দোয়া পড়তেন। উপরোক্ত হাদীস দৃষ্টে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইসহাক বিন রাহওয়া এই দোয়া পড়তে বলেছেন। অবশ্য হুজুর (সঃ) কখনও কখনও অন্য দোয়াও পড়েছেন।

নামাজের মধ্যে সূরা ফাতিহা পড়া

(٨٤) وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتْ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ (بخاري – مسلم)

(৮৪) “হজরত উবাদা বিন সামিত (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতেহা পড়লো না তার নামাজ হয়নি।” (বুখারী, মুসলিম)

(٨٥) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى صَلَاةٌ لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ ثَلَاثًا غَيْرَ تَمَامٍ
بخاري – مسلم – أحمد )

(৮৫) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতেহা না পড়ে নামাজ পড়বে তার নামাজ অসম্পূর্ণ, এ কথা রসূল (সঃ) তিন বার বললেন।” (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)

(٨٦) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا كَانُوْا يَفْتَتِحُونَ الصَّلاةَ بِالْحَمْدِ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (مسلم)

(৮৬) “হজরত আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) হজরত আবু বকর ও উমর (রাঃ) সকলেই আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন (অর্থাৎ সূরা ফাতেহা) দ্বারা নামাজ আরম্ভ করতেন।” (মুসলিম)

(۸۷) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُجْزِئُ صَلَاةٌ لَا يُقْرَأُ فِيهَا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ابن خزيمة – ابن حبان)
(৮৭) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে নামাজে সূরায়ে ফাতেহা পড়া হয় না সে নামাজ বৈধ নয়।” (ইবনে খুজায়মা, ইবনে হাব্বান)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসসমূহের ভিত্তিতে ইমাম শাফয়ী এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল সর্বাবস্থায় প্রতি রাকায়াত নামাজে সূরায়ে ফাতেহা পাঠ করাকে ফরজ বলেছেন। নামাজ জামায়াতের সাথে পড়া হোক কিংবা একাকি, ইমাম কিরআত প্রকাশ্য পড়ুক কিংবা গোপনে। পক্ষান্তরে ইমাম মালেক বলেছেন শুধু জাহিরি নামাজ অর্থাৎ যে নামাজে ইমাম প্রকাশ্যে কিরআত পড়বে সেই নামাজেই কেবল মুকতাদীকে সুরায়ে ফাতেহা পড়তে হবে না। ইমাম আবু হানিফা বলেন, সাধারণভাবে কুরআনের যে কোন অংশ নামাজে পাঠ করা ফরয।

فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنَ

এখানে আল্লাহ কোরআনের যে কোন অংশ নামাজির জন্যে পড়া সহজ তাই পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। আবার হুজুর বেদুইনকে যখন নামাজের তালিম দিয়েছিলেন তখন তাকে বলেছিলেন, অতঃপর তোমার পক্ষে কোরআনের যা কিছু পড়া সহজ তাই পড়বে। সুতরাং সুরায়ে ফাতেহা হোক কিংবা অন্য কোন সুরা বা সুরার অংশ হোক উহা পড়া নামাজে ফরজ, আর সুরায়ে ফাতেহা পড়া ওয়াজিব।

ইমামের পিছনে মুকতাদির কিরআত না পড়ার বর্ণনা

(۸۸) وَعَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا سُئِلَ هَلْ يَقْرَأُ أَحَدٌ خَلْفَ الْإِمَامِ قَالَ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ خَلْفَ الْإِمَامِ فَحَسْبُهُ قِرَاءَةُ الْإِمَامِ وَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيَقْرَأْ قَالَ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لَا يَقْرَأُ خَلْفَ الإِمَامِ (مؤطا إمام مالك)

(৮৮) “হজরত নাফে বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে (রাঃ) যখন কেউ প্রশ্ন করতেন যে, ইমামের পিছনে কিরআত পড়তে হবে কি হবে না? জওয়াবে তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পিছনে নামাজ পড়বে তখন ইমামের কিরআত পাঠই তার জন্যে যথেষ্ট। (তাকে কিরআত পাঠ করতে হবে না) তবে হাঁ যদি একাকি নামাজ পড়ে তাহলে তাকে কিরআত পড়তে হবে। আর আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) ইমামের পিছনে কিরআত পড়তেন না।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

(۸۹) وَعَنْ أَبِي نَعِيمٍ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدَ اللَّهِ يَقُولُ مَنْ صَلَّى رَكْعَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيْهَا بِأُمِّ الْقُرْآنَ فَلَمْ يُصَلِّ إِلَّا وَرَاءَ الْإِمَامِ (مؤطا إمام مالك)

(৮৯) “আবু নাঈম ওহাব বিন কায়সান হতে বর্ণিত, তিনি জাবের বিন আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি এক রাকায়াত নামাজও সূরা ফাতেহা ব্যতিত পড়লো সে যেন নামাজ পড়লো না। তবে হাঁ যদি ইমামের পিছনে নামাজ পড়ে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)

ব্যাখ্যাঃ কিরআত শব্দের অর্থ পাঠ করা। শরীয়তের পরিভাষায় নামাজে দাঁড়িয়ে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কুরআনের অংশ বিশেষ পাঠ করার নাম কিরআত। নামাজে কিরআত পাঠ করা ফরজ। ইমাম শাফরীর মতে চার রাকায়াতেই কিরাআত পাঠ করতে হবে। ইমাম মালেকের মতে, প্রথম রাকায়াতে কিরআত পাঠ করলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে। আর ইমাম আবু হানিফার মতে প্রথম দু’রাকায়াতে কিরআত পাঠ করা অপরিহার্য। নামাজে কিরআত পাঠের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হল,

فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنَ

(নামাজে) “তোমাদের পক্ষে কোরআন হতে যা সহজ ও সম্ভব তা পাঠ কর”

(۹۰) وعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَرَأَ فَانْصِتُوا
أبو داود – نسائي – ابن ماجة)

(৯০) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, ইমাম এই জন্যই নির্ধারণ করা হয় যাতে তাকে অনুসরণ করা হবে, সুতরাং ইমাম যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে এবং যখন তিনি কিরআত পড়বে তোমরা চুপ থাকবে।”
(আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযা)

(۹۱)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَدَّادٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَةُ الإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ (دار قطني)

(৯১) “হজরত আব্দুল্লাহ বিন সাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, যিনি ইমামের পিছনে নামাজ পড়েন, ইমামের কিরআতই তার জন্য যথেষ্ট।” (অর্থাৎ মুকতাদিকে কিরআত পড়তে হবে না।) (দার কুতনী)

ব্যাখ্যাঃ ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ না করার জন্য উপরোক্ত বর্ণিত হাদীস দুটি ইমাম আবু হানিফার পক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তি।

(۹۲) وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ رِضْوَانُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ فَلَمْ أَسْمَعُ أَحَدًا مِنْهُمْ يَقْرَأُ بسمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَفِي رِوَايَةٍ فَكَانُوا لَا يَجْهَرُونَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
أحمد – مسلم – نسائي)

(৯২) “হজরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সঃ), হজরত আবু বকর, হজরত উমর ও হজরত উসমানের (রাঃ) পিছনে নামাজ পড়েছি, কিন্তু কাউকেই “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়তে শুনিনি। অন্য এক বর্ণনা মতে, তাদের কাউকেই শব্দ করে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়তে শুনিনি। (আহমদ, মুসলিম, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ নামাজে কিরআত পাঠ করার পূর্বে জোরে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম না পড়ার পক্ষে উপরোক্ত হাদীস ইমাম আবু হানিফার পক্ষে দলিল।

(۹۳) وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَمَرَنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ (أبو داود)

(৯৩) “হজরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে (নামাজে) আমরা যেন সূরায়ে ফাতেহা এবং সুবিধা মত (কুরআনের) আরও কিছু অংশ পড়ি।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসসমূহের ভিত্তিতে ইমাম শাফয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল নামাজে সূরায়ে ফাতেহা পাঠ করাকে ফরয বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ওয়াযিব বলেছেন। ইমাম আবু হানিফার মতে কুরআনের যে কোন অংশ পড়া ফরয। সূরায়ে ফাতেহা বা কুরআনের অন্য কোন অংশ পড়লে ফরয আদায় হয়ে যাবে, তবে সূরায়ে ফাতেহা যদি নামাজে না পড়া হয়, তাহলে ওয়াজিব তরক হবে এবং নামাজ পূর্ণাঙ্গ হবে না। হাদীসে “তার নামাজ অপূর্ণাঙ্গ” এ-কথারই প্রমাণ বহন করে।

(٩٤) وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ كُنَّا خَلْفَ النَّبِيِّ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ فَتَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ لَعَلَّكُمْ تَقْرَؤُوْنَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ قُلْنَا نَعَمْ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
أبو داود – ترمذي – نسائي)

(৯৪) “হজরত উবাদা বিন সামেত বলেন, একদিন আমরা ফজরের নামাজে নবী করীম (সঃ) পিছনে ছিলাম, হুজুর কিরআত পড়ছিলেন কিন্তু কিরআত তার নিকট ভারী বোধ হচ্ছিল। অতঃপর হুজুর (সঃ) নামাজ শেষ করে বললেন, মনে হয় তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কিরআত পড়। আমরা বললাম হাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ। তিনি বললেন, না তোমরা এরূপ করবেনা, তবে সূরায়ে ফাতেহা পড়বে। কেননা যে সূরায়ে ফাতেহা পড়ে না তার নামাজ হয় না।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমামের পিছনেও সূরায়ে ফাতেহা পড়তে হবে। এটাই ইমাম আহমদ বিন হামবলের মত। ইমাম আবু হানিফার মতে কোন অবস্থায়ই ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতেহা পড়বে না, কেননা আল্লাহ বলেন,

وَإِذَا قُرِأَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهُ وَانْصِتُوا
(الْأَعْرَاف – ٢٠٤)

অর্থঃ “যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা উহা মনোনিবেশ
সহকারে শোন।” (আল আ’রাফ ২০৪)

তাছাড়া হাদীসে আছে, وَإِذَا قَرَءَ فَانْصِتُوا

অর্থাৎ “(ইমাম) যখন কিরআত পড়বে, তখন তোমরা চুপ থাকবে”

হজরত ইমাম মালেক বলেন, যে নামাজে ইমাম কিরআত আওয়াজ সহকারে পড়বে সে নামাজে মুকতাদি সূরায়ে ফাতেহা পড়বে না। ইমামের কিরআত শুনবে। আর যে নামাজে ইমাম চুপে কিরআত পড়ে সে নামাজে মুকতাদি সূরায়ে ফাতেহা পড়বে। শাহ অলিউল্লাহ (রঃ) এই মতকেই সমর্থন করেছেন এবং মাওলানা মওদূদী (রঃ) এটার উপরেই আমল করতেন। এতে উভয় হাদীসের উপরেই আমল হয়।

(٩٥) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصَرَفَ مِنْ صَلَاةٍ جَهَرَ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ فَقَالَ هَلْ قَرَأَ مَعِي أَحَدٌ مِنْكُمْ آئِفًا فَقَالَ رَجُلٌ نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنِّي أَقُولُ مَا لِي أُنَازِعُ الْقُرْآنَ قَالَ فَانْتَهَى النَّاسُ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْمَا جَهَرَ فِيْهِ بِالْقِرَاءَةِ مِنَ الصَّلَوَاتِ حِيْنَ سَمِعُوا ذَالِكَ مِنْ رَّسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
(رواه مالك – أحمد – أبو داود – الترمذي – والنسائي)

(৯৫) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার হুজুর (সঃ) এমন এক নামাজ শেষ করে অবসর নিলেন যে নামাজে তিনি প্রকাশ্যে কিরআত পড়েছিলেন। অতঃপর হুজুর (সঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ এখনই আমার সাথে (নামাজে) কিরআত পড়েছে? এক ব্যক্তি জওয়াবে বললেন হাঁ, ইয়া রসূলুল্লাহ, এ কথা শুনে রসূল (সঃ) বললেন, আমি মনে মনে ভাবছিলাম কেন আমার নামাজে কোরআন পড়তে অসুবিধা হচ্ছে। আবু হুরাইরা বলেন, এরপর হতে লোকেরা জাহিরি নামাজে রসূলের (সঃ) পিছনে কিরআত পাঠ হতে বিরত হলো।”
(মালেক, আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু হানিফার মতে উক্ত হাদীস দ্বারা ইমামের পিছনে কিআত পড়ার যাবতীয় হাদীস ‘মানসুখ’ হয়ে গিয়েছে।

রুকুর বিবরণ

রুকু অর্থ অর্ধনমিত হওয়া, ঝুঁকে যাওয়া। শরীয়তের পরিভাষায় রুকূ বলা হয় নামাজে আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশের উদ্দেশ্যে হাঁটুর উপরে ভর করে ঝোঁকা। এটা সর্বসম্মতভাবে নামাজের একটি ফরজ। আল্লাহ কুরআনে বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا (سورة الحج – (۷۷)

অর্থাৎ “হে ঈমানদারেরা তোমরা রুকু ও সিজদা কর।” (সুরা হজ্জ-৭৭)

রুকুর হালতে অবস্থান করে কিছু তাসবীহ পড়তে হবে এবং রুকূ হতে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ (এক তসবীহ পড়া পরিমাণ)
অবস্থান করতে হবে। তাহলেই রুকুর ফরজ আদায় হবে।

(٩٦) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقِيمُوا الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ فَوَاللَّهِ
إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ بَعْدِي (بخاري – مسلم)

(৯৬) “হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা রুকু ও সিজদা ঠিকভাবে আদায় করবে। আল্লাহর কসম আমি অবশ্য তোমাদেরকে পিছন দিক হতেও দেখি।” (বুখারী মুসলিম)

(۹۷) وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْعَلُوْهَا فِي رُكُوعِكُمْ فَلَمَّا نَزَلَتْ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْعَلُوْهَا فِي سُجُودِكُمْ
أبو داود – ابن ماجة – دارمي)

(৯৭) “হজরত উকবা বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন “ফাসাব্বিহ বি-ইসমি রব্বিকাল আজীম” নাজিল হলো, তখন হুজুর (সঃ) বললেন, একে তোমরা তোমাদের রুকূতে স্থান দাও। আর যখন “সাব্বিহ-ইসমা রব্বিকাল আলা” নাজিল হল, তখন হুজুর (সঃ) বললেন, একে তোমরা তোমাদের সিজদায় স্থান দাও।” (আবু দাউদ, ইবনে মাযা, দারেমী)

ব্যাখ্যাঃ হুজুর পর্যায়ক্রমে উপরোক্ত দুটি তাসবীহ রুকু ও সিজদায় পাঠ করার নির্দেশ দিলেন।

সিজদার বিবরণ

সিজদাহ অর্থ দন্ডবৎ হওয়া, যমিনে কপাল রাখা। আর শরীয়তের পরিভাষায় সিজদাহ্ বলা হয় চরম বিনয় প্রকাশার্থে নামাজের মধ্যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাটিতে কপাল রাখা। সিজদাহ্ নামাজের ফরজসমূহের মধ্যে একটি ফরজ। প্রতি রাকয়াতে দুটো করে সিজদাহ্ করতে হবে। আর দুটো সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে এক তসবীহ পরিমাণ অপেক্ষা করতে হবে, যাতে শরীর একেবারেই সোজা হয়ে যায়। এটাকে শরীয়তের পরিভাষায় “তাদিলে আরকান” বলা হয়। আর তাদিলে আরকান অধিকাংশ ইমামদের মতে ফরজ। তরক হলে নামাজই বাতিল হয়ে যাবে।

(۹۸) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةٍ أَعْظَمِ عَلَى الْجَبْهَةِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَأَطْرَافِ الْقَدَمَيْنِ وَلَا نَكْفِتَ التَّيَابَ وَلَا الْشَّعْرَ
(بخاري – مسلم)

(৯৮) “হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি সাতটি হাড় (অঙ্গ) দ্বারা সিজদাহ করি। কপাল, দু’হাত, দু’হাটু এবং দু’পায়ের অগ্রভাগ। আর কাপড় ও চুল যেন (সিজদাহ্ করতে গিয়ে) না গোছাই।”
(বুখারী মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ অধিকাংশ ইমামের মত হলো নাক ও কপাল উভয়কেই মাটিতে রাখা ফরয। ইমাম আবু হানিফার মতে শুধু কপাল রাখলেও সিজদাহ্ হয়ে যাবে, তবে নামাজ মাকরূহ হবে। সিজদার সময় দুপা মাটির সাথে রাখতে হবে। উভয় পা যদি এক সঙ্গে মাটি হতে উঠে যায় তাহলে নামাজই বাতিল হয়ে যাবে। এক পা উঠে গেলে নামাজ মাকরূহ হবে। সিজদায় কাপড় গোছান ও চুল সামলানো মাকরূহ। দুই সিজদার মাঝখানে এক তাসবীহ পরিমাণ অবস্থান অপরিহার্য।

(۹۹) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اعْتَدِلُوا فِي السُّجُودِ وَلَا يَبْسُطُ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ الْيَسَاطَ الْكَلب (بخاري – مسلم)

(৯৯) “হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, সিজদাহ্ ঠিকমত (হক আদায় করে) করবে এবং তোমাদের কেউ যেন (সিজদায়) কুকুরের ন্যায় মাটিতে হাত বিছায়ে না দেয়।” (বুখারী, মুসলিম)

(۱۰۰) وَعَنْ عَلِيِّ بْنِ شَيْبَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يُقِمْ صُلْبَهُ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ أحمد – ابن ماجة)

(১০০) “হজরত আলী ইবনে সায়বান (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, রুক্ এবং সিজদায়ে যার পিঠ সোজা হলো না তার নামাজ হবে না।” (আহমদ, ইবনে মাযাহ)

ব্যাখ্যাঃ রুকু এবং সিজদার মাঝখানে পিঠ একেবারে সোজা করে দাঁড়াতে হবে। অনুরূপ দুই সিজদার মাঝখানে পিঠ একেবারেই সোজা করে বসতে হবে। এটাকে শরীয়তের পরিভাষায় “তামানিনাত” বলা হয়। এর পরিমাণ হল কমপক্ষে এক তাসবীহ পাঠের সময়। অধিকাংশ ইমামের মতে এটা ফরয।

(۱۰۱) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
(أبو داود – ترمذي)

(১০১) “হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) দুই সিজদার মাঝখানে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেন। “আল্লাহুম্মাগফিরলি, অরহামনি, অআহদিনি, অআফিনি, অরঝুকনি।” (আবু দাউদ, তিরমিজি)

(۱۰۲) وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ رَبِّ اغْفِرْ لِي
(نسائي – دارمي)

(১০২) “হজরত হুজাইফা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) দুই সিজদার মাঝখানে বলতেন رَبِّ اغْفِرْلِي “রব্বিগফিরলি।” (নাসাঈ, দারেমি)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসদ্বয় প্রমাণ করে যে, রসূল (সঃ) দুই সিজদার মাঝখানে যখন বসতেন তখন তিনি বসা অবস্থায় একটা দোয়া পড়তেন। কখনও তিনি দোয়া দীর্ঘ করতেন কখনও সংক্ষেপ। যারা দুই সিজদার মাঝখানে দোয়া পাঠ করে এবং রুকূতে মাথা তুলে “রব্বানা লাকাল্ হামদ” পড়ে তাদের “তাদিলে আরকান” ঠিকমত আদায় হয়। সেজন্য দোয়া পড়াই উত্তম।

(۱۰۳) وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ عَلِّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّشَهُدَ كَمَا يُعَلِّمُنِي السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنَ التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَتُهُ، السَّلامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ (بخاري – مسلم)

(১০৩) “হজরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) আমাদেরকে তাশাহুদ তালিম দিয়েছেন, যেমন করে তিনি শিখিয়েছিলেন আমাদেরকে কুরআনের সূরা পাঠ করা।” (হুজুর বলতেন)

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ وَالسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ (بخاري – مسلم)

ব্যাখ্যাঃ হুজুর (সঃ) নামাজে কি তাশাহুদ পাঠ করতেন এ প্রসঙ্গে ইবনে মাসউদ ছাড়াও হজরত ইবনে আব্বাস ও হজরত জাবের (রাঃ) হতে অন্য রকম তাশাহুদ পড়ার কথা বর্ণিত আছে। তবে মুহাদ্দেসীনের অধিকাংশেরই সর্বসম্মত মত যে, তাশাহুদের ব্যাপারে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের রেওয়াতটি অধিকতর বিশ্বস্ত ও গ্রহনযোগ্য। ইমাম আবু হানিফা ইবনে মাসউদের তাশাহুদকেই গ্রহন করেছেন।

(١٠٤) وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ يَقُولُ مِنَ السُّنَّةِ إِخْفَاءُ التَّشَهر (أبو داود – ترمذي)

(১০৪) “হজরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলতেন, তাশাহুদ চুপে চুপে পড়াই সুন্নত।” (আবু দাউদ, তিরমিজি)

(١٠٥) وَعَنِ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا نَقُولُ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ عَلَيْنَا التَّشْهَدُ السَّلَامُ عَلَى اللهِ السَّلَامُ عَلَى جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيْلَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُولُ هَكَذَا وَلَكِنْ قُولُوا التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ (دار قطني)

(১০৫) “হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমাদের উপরে তাশাহুদ ফরয হওয়ার আগে আমরা বলতাম,

السَّلَامُ عَلَى اللَّهِ السَّلَامُ عَلَى جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيْلَ

হুজুর আমাদেরকে বললেন, “তোমরা আর এভাবে পড়বে না বরং পড়বে التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ … إلى آخر الدعاء (দারে কুতনী)

ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ হুজুর (সঃ) আমাদেরকে তাশাহুদ পড়ার নিয়ম বাতিয়ে দিলেন।

(١٠٦) وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لَا تُجْزِي صَلاةٌ إِلَّا بِتَشَهُرٍ (بخاري)

(১০৬) “হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাশাহুদ পাঠ ব্যতীত নামাজ হবে না। (বুখারী)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস দৃষ্টে ইমাম শাফয়ী এবং আহমদ ইবনে হাম্বল নামাজে তাশাহুদ পড়াকে ফরজ বলেছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) তাশাহুদ পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন। অবশ্য নামাজের “কায়েদায় আখিরী” অর্থাৎ শেষ বৈঠক সকলের নিকটই ফরয।

তাশাহুদ পাঠে শাহাদত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা

(۱۰۷) وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَعَدَ فِي التَّشَهُدِ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَعَقَدَ ثَلَاثَةٌ وَخَمْسِينَ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِي تَلِيَ الْإِبْهَامَ يَدْعُوْنِهَا وَيَدُهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ بَاسِطُهَا عَلَيْهَا
(مسلم – نيل الأوطار)

(১০৭) “হজরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেন, বাম হাতকে বাম জানুর উপর এবং ডান হাতকে ডান জানুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের গণনার জন্য আঙ্গুল বন্ধ করার ন্যায় আঙ্গুল বন্ধ করতেন এবং শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, রসূল (সঃ) যখন নামাজের জন্য বসতেন দুই হাত দুই জানুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের সাথে যে আঙ্গুল রয়েছে সেটা উঠাতেন ও তাদ্বারা দোয়া করতেন। আর তার বাম হাত বাম জানুর উপর বিছানো থাকত।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ আরবের লোকেরা আঙ্গুলের সাহায্যে গণনা করার সময় ৫৩ গণনার সময় কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমাকে বন্ধ করে তর্জনীকে খাড়া করতো। হাদীসে এরই উল্লেখ করা হয়েছে।

এই হাদীস এবং আরও কতিপয় হাদীসের বর্ণনায় জানা যায় যে, হুজুর (সঃ) তাশাহুদ পড়ার সময় শাহাদত আঙ্গুল খাড়া করে আল্লাহ এক লা-শরীক এ কথার প্রতি ইশারা করতেন, এটা সুন্নত। তবে তিনি কখনও আঙ্গুল বন্ধ করে শাহাদত দ্বারা ইশারা করতেন আবার কখনও আঙ্গুল বিছিয়ে রেখে ইশারা করতেন। লা-ইলাহা বলার সময় আঙ্গুল উঠাতেন এবং ইল্লাল্লাহ বলার সময় নামাতেন।

নামাজে দরূদ পড়া

(۱۰۸) وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى قَالَ لَقِيَنِي كعْبُ بْنُ عُجْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ أَلَا أُهْدِي لَكَ هدِيَّةٌ سَمِعْتُهَا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ

بَلَى فَأَهْدِهَا لِي فَقَالَ سَأَلْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ الصَّلَاةُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ قَالَ قُوْلُوْا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
(بخاري – مسلم)

(১০৮) “হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবি লায়লা বলেন, এক সময় আমি হজরত কাব বিন উজরার সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি বললেন, হে আবদুর রহমান, আমি কি তোমাকে এমন একটি হাদীয়া দিব যা আমি নবী করীম (সঃ) থেকে শুনেছি? আমি বললাম, হাঁ আপনি আমাকে তা দিন। তখন তিনি বললেন, আমরা একবার রসূলকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল, আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পড়ব তা আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। বলুন, আমরা আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করবো। হুজুর বললেন, তোমরা এরূপ বলবে,

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ

بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
(بخاري – مسلم)

ব্যাখ্যাঃ দরুদ ফারসী শব্দ। এর আরবী হলো “সালাত” রসূলের (সঃ) উপরে দরূদ পাঠ জীবনে একবার হলেও ফরয। তবে নামাযের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়‍্যাতুর পরে দরূদ পাঠ সুন্নত। ইমাম শাফয়ীর মতে নামাযে দরূদ পাঠ ফরয।

(۱۰۹) وَعَنْ فُضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يَدْعُوْ فِي صَلَاتِهِ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عَجَّلَ هَذَا ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأَ بِتَحْمِيدِ اللَّهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ ثُمَّ لِيُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لِيَدْعُ بَعْدُ مَا شَاءَ (ترمذي)

(১০৯) “হজরত ফুযালা বিন ওবায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সঃ) এক ব্যক্তিকে নামাজের মধ্যে দোয়া করতে শুনলেন, কিন্তু সে নবী করীমের (সঃ) উপরে দরূদ পড়লো না। হুজুর বললেন, এ ব্যক্তি জলদি করে ফেলেছে। অতঃপর হুজুর (সঃ) তাকে ডেকে বললেন, অথবা (তাকে ডেকে হাজির করে তার সামনে) অন্যকে বললেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়বে সে যেন “আল্লাহর হামদ্‌ ও ছানা”

সহকারে শুরু করে। অতঃপর যেন নবীর পরে দরূদ পাঠ করে। দরূদের পরে যেন সে ইচ্ছামত দোয়া করে।” (তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, দোয়ার আগে দরূদ পড়তে হবে। হাদীস দ্বারা এও প্রমাণ হয় যে, দরূদ নামাজে সুন্নত, ফরয নয়। কেননা যদি ফরয হতো তাহলে উপরোক্ত ব্যক্তিকে নামাজ পুনরায় পড়তে বলতেন।

শেষ বৈঠকে দরূদের পরে দোয়া পাঠ করা

(۱۱۰) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُرِ الْآخِرِ فَلْيَتَعَوَّذَ بِاللَّهِ مِنْ أَرْبَعٍ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَاءِ وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ (مسلم)

(১১০) “হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন (শেষ রাকাতে) তাশাহুদ পড়া শেষ করে, তখন যেন সে চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। দোজখের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, জীবন মৃত্যুর ফিতনা হতে এবং কানা দাজ্জালের মন্দ প্রভাব হতে।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসে রসূল (সঃ) দরূদের পরে নামাজে দোয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তবে নামাজে দরূদের পরে দোয়া করা মুস্তাহাব।

সালামের সাথে নামাজ শেষ করা

(۱۱۱)
وَعَنْ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ
(أحمد – أبو داود – ابن ماجة – ترمذي)

(১১১) “হজরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, নামাজের চাবি হলো পবিত্রতা, আর নামাজের তাহরীম (প্রবেশ দ্বার) হলো তাকবীর, আর নামাজের সমাপ্তি হলো সালাম।” (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাযা তিরমিজি)

(۱۱۲) وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ حَتَّى يُرَى بِيَاضُ خَدِهِ
(أحمد – مسلم – نسائي – ابن ماجة)

(১১২) “হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) তার ডান ও বাম উভয় দিকেই (নামাজে) সালাম করতেন। (তিনি বলতেন) আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ্, আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ্ (আর হুজুর সালামের সাথে ডানে বামে) এতখানি ফিরতেন যে, তার গালের শুভ্রতা দেখা যেত।” (আহমদ, মুসলিম নাসাঈ, ইবনে মাযাহ)

ব্যাখ্যাঃ ইমামদের সকলেরই অভিমত যে, সালামের সাথে নামাজ শেষ করা ফরয। তবে উভয় দিকে সালাম ফিরান ফরজ না শুধু এক দিকে এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে।

নামাজ শেষে মুক্তাদীদের দিকে মুখ করে বসা

(۱۱۳) وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى صَلَاةٌ أَقْبَلَ
عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ (بخاري)

(১১৩) “হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) যখন নামাজ শেষ করতেন, তখন আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন।” (বুখারী)

(١١٤) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْصَرِفُ عَنْ يَمِينِهِ (مسلم)

(১১৪) “হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সঃ) (নামাজ শেষে) ডান দিকে মুখ করে বসতেন।” (মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ যে সব নামাজে ফরযের পরে সুন্নত নামাজ নেই সে সব নামাজ শেষেই হুজুর (সঃ) মোক্তাদিদের মুখোমুখী হয়ে, কখনও বাম দিকে এবং কখনও ডান দিকে মুখ করে বসতেন। কিন্তু যে সব ফরয নামাজের পরে সুন্নত আছে, তাতে তিনি নামাজ শেষে অন্যত্র সরে গিয়ে সুন্নত নামাজ পড়তেন।

(١١٥) وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ الْخُرَاسَانِي عَنِ الْمُغِيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُصَلِّي الْإِمَامُ فِي الْمَوَضَعِ الَّذِي صَلَّى فِيْهِ حَتَّى يَتَحَوَّلَ
(أبو داود)

(১১৫) “আতা বিন খুরাসানী হজরত মুগিরা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রসূল (সঃ) বলেছেন, ইমাম যে জায়গায় দাঁড়িয়ে (ফরজ) নামাজ পড়েছে সেখানে যেন অন্য নামাজ না পড়ে বরং সেখান থেকে সরে যাবে। (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ ফরয নামাজ যেভাবে আদায় করেছে সুন্নত নামাজ সেভাবে আদায় না করে তার রূপ পরিবর্তন করে দিবে। অর্থাৎ জায়গা হতে সরে গিয়ে সুন্নত পড়বে, যাতে নবাগত কোন লোক বুঝতে পারে যে, ইমাম এখন আর ইমামতি করছেন না বরং সুন্নত নামাজ পড়ছে।

নামাজ শেষে দোয়া পাঠ করা

(١١٦) وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَخَذَ بِيَدِي رَسُولُ اللَّهِ فَقَالَ إِنِّي لَأُحِبُّكَ يَا مُعَادُ فَقُلْتُ أَنَا أُحِبُّكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَلَا تَدَعْ أَنْ تَقُوْلَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ رَبِّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ (أحمد أبو داود – نسائي)

(১১৬) “হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, একদা হুজুর (সঃ) আমার হাত ধরে বললেন, হে মুয়ায, আমি তোমাকে মহব্বত করি। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সঃ) আমিও আপনাকে মহব্বত করি। অতঃপর হুজুর (সঃ) বললেন, হে মুয়ায, তুমি অবশ্যই প্রতি নামাজ বাদে এই দোয়া পড়বে।”

رَبِّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
(আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ)

(۱۱۷) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ لَمْ يَقْعُدْ إِلَّا مِقْدَارَ مَا يَقُولُ اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ” (مسلم)

(১১৭) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) (নামাজের) সালাম ফিরাবার পর নিম্নের দোয়া পড়া পরিমাণই বসতেন।”

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

অর্থঃ “হে আল্লাহ্ তুমি শান্তিময় এবং তোমা হতেই শান্তি। তুমি বরকতময়, হে প্রতাপ ও সম্মানের অধিকারী।”

(۱۱۸)
وَعَنْ مُغِيرَةَ بْنِ شُعْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ

مَكْتُوبَةٍ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ أَللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ (بخاري – مسلم)

(১১৮) “হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত, “নবী করীম (সঃ) প্রত্যেক ফরয নামাজের পরে বলতেন,

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ … إلى آخر

“আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নাই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তারই এবং তিনি হলেন সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ্ তুমি যা দিতে চাও তা কেউ রোধ করতে পারে না। আবার তুমি যা রোধ করতে চাও তা কেউ দিতে পারে না। আর কোন সম্পদশালীকে তার সম্পদ তোমা হতে বাঁচাতে পারে না।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ নবী করীম (সঃ) ফরজ নামাজের পরে কিছু দোয়া-কালাম পড়তেন। উপরোক্ত হাদীসসমূহের বর্ণনায় তাই প্রমাণ হয়। যে ফরয নামাজের পরে সুন্নত নামাজ থাকতোনা তাতে বড় দোয়া পড়তেন। তবে নামাজান্তে তিনি মোকতাদিদেরকে নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত বা দোয়া নিয়মিত করতেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অবশ্য ফিকাহবিদদের কেউ কেউ পরবর্তীকালে একে উত্তম বলেছেন, তবে এটাকে জরুরী মনে করা ঠিক নয়।

নামাজের পরে তসবীহ পাঠ

(۱۱۹) وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعَقِبَاتٌ لَا يَخِيْبُ قَائِلُهُنَّ أَوْ فَائِلُهُنَّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ ثَلاثُ وَثَلاثُونَ تَسْبِيحَةٌ وَثَلاثُ وَثَلاتُوْنَ تَحْمِيدَةً وَأَرْبَعُ وَثَلاتُوْنَ تَكْبِيرَةً (مسلم)

(১১৯) “হযরত কাব ইবনে উজরা বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, প্রতি ফরয নামাজ শেষে কিছু কালাম আছে যা যে কেউ বলবে সে কখনো নিরাশ হবে না। তাহলো ৩৩ বার “সুবহানাল্লাহ”, ৩৩ বার “আলহামদুলিল্লাহ”, ৩৪ বার “আল্লাহু আকবার।” (মুসলিম)

(۱۲۰) وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قِيْلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ قَالَ جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ وَدُبُرِ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَةِ (ترمذي)

(১২০) “হযরত আবু উমামাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলকে (সঃ) কেউ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লার রসূল! কোন দোয়া জলদী কবুল হয়? হুজুর বললেন, শেষ রাতের এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া।” (তিরমিজি)

(۱۲۱)
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوَّذَاتِ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاة (أحمد – أبو داود – نسائي)

(১২১) “হযরত উকবা বিন আমের (রাঃ) বলেন, আমাকে রসূল (সঃ) প্রত্যেক নামাজ শেষে “মুয়াব্বাযাতান” পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”
(আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ সূরা “ফালাক” ও সূরা “নাস” কে “মুয়াব্বাযাতান” বলা হয়। এ সূরা দুটিও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর কাছে বিশেষ ধরণের দোয়া যার মাধ্যমে জিন ও ইনসানের অনিষ্টকারিতা হতে আল্লাহর দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। এই সূরা দুটি রসূলের (সঃ) উপরে তখন নাজিল করা হয়েছিল যখন লবীদ নামক ইহুদী রসূলের (সঃ) উপরে জাদু করেছিল। রসূল (সঃ) এ দুটি সূরা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে জাদুর প্রভাব হতে নিজেকে মুক্ত করেছিলেন। হযরত উকবা বিন আমেরের বিশেষ কোন অবস্থার কারণে হয়ত রসূল (সঃ) তাকে নামাজ বাদ এ দুটি সূরা পাঠ করতে বলেছেন। যে ফরজ নামাজের পরে সুন্নত নামাজ নেই তার শেষে অন্যান্য দোয়ার সাথে “মোয়াব্বাযাতান” পড়া উত্তম।

নামাজে যে সব কাজ নিষিদ্ধ

(۱۲۲)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي الصَّلاةِ فَيَرُدُّ عَلَيْنَا فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ عِنْدِ النَّجَاشِي سَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْنَا فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَيْكَ فِي الصَّلَاةِ فَتَرُدُّ
عَلَيْنَا فَقَالَ إِنَّ فِي الصَّلَاةِ لَشْغُلا (بخاري – مسلم)

(১২২) “হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, নামাজে আছেন এমন অবস্থায় আমরা নবী করীমকে (সঃ) সালাম দিতাম এবং তিনি তার জওয়াব দিতেন। অতঃপর নাজাশির নিকট হতে (হাবশায় হিজরত শেষে) যখন আমরা ফিরে আসলাম তখন হুজুরকে (সঃ) (নামাজের অবস্থায়) সালাম দিলাম। কিন্তু তিনি তার জওয়াব দিলেন না। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল (সঃ) আগে আমরা নামাজে আপনাকে সালাম করতাম আর আপনি তার জওয়াব দিতেন! (এখন) জওয়াব দেন না কেন? হুজুর (সঃ) বললেন, নামাজের মধ্যে কিছু মহৎ কাজ আছে।” (যার ফলে অন্য কথা বলা চলে না)। (বুখারী, মুসলিম)

(۱۲۳)
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي الصَّلَاةِ يُكَلِّمُ الرَّجُلُ مِنَّا صَاحِبَهُ وَهُوَ إِلَى جَنْبِهِ فِي الصَّلَاةِ حَتَّى نَزَلَتْ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ فَأُمِرْنَا بالسُّكُوتِ وَنُهِينَا عَنِ الْكَلَامِ
بخاري – مسلم – ترمذي)

(১২৩) “হযরত জায়িদ ইবনে আরকাম (রাঃ) বলেন, এক সময় আমরা নামাজরত অবস্থায় কথা বলতাম, নামাজী ব্যক্তি অনেক সময় তার পাশে দাঁড়ান নামাজী ব্যক্তির সাথে কথা বলতেন। অতঃপর

وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ

“আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর আমাদেরকে নামাজে চুপ থাকার ও কথা-বার্তা না বলার নির্দেশ দেয়া হলো।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ প্রথম দিকে নামাজে সালাম দেয়া এবং কিছু কথা-বার্তা বলার এজাজত ছিল। পরবর্তীতে তা একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়। সুতরাং নামাজরত অবস্থায় যদি কেউ কথা বলে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে।

(١٢٤) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَا أَنَسُ اجْعَلْ بَصَرَكَ حَيْثُ تَسْجُدُ
(بيهقي)

(১২৪) “হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করীম (সঃ) বলেছেন, হে আনাস, তুমি যেখানে সিজদা করবে সেখানে তোমার দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখবে।” (বায়হাকী)

সিজদায়ে সোহোর বিবরণ

(١٢٥) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ يُصَلِّي جَاءَهُ الشَّيْطَانُ فَلَبَّسَ عَلَيْهِ حَتَّى لَا يَدْرِيَ كَمْ صَلَّى فَإِذَا وَجَدَ ذَالِكَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جالِس (بخاري – مسلم)

(১২৫) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন শয়তান এসে তার নামাজে সন্দেহ সৃষ্টি করে দেয়। এমনকি সে কয় রাকায়াত নামাজ পড়লো তা বলতে পারেনা। তোমাদের কেউ যখন এ অবস্থায় পড়বে সে যেন তখন বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করে নেয়।” (বুখারী, মুসলীম)

(١٢٦) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَسَلَّمَ فِي رَكْعَتَيْنِ فَقَامَ ذُو الْيَدَيْنِ فَقَالَ أَقَصُرَتِ الصَّلَاةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمْ نَسِيْتَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ ذَالِكَ لَمْ يَكُنْ فَقَالَ قَدْ كَانَ بَعْضُ ذَالِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ أَصَدَقَ ذُوالْيَدَيْنِ فَقَالُوا نَعَمْ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ فَأَتَمَّ مَا بَقِيَ مِنَ الصَّلَاةِ ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ بَعْدَ التَّسْلِيمِ وَهُوَ جَالِسٌ (مؤطا إمام مالك)

(১২৬) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদিন রসূল (সঃ) আছরের নামাজ দু’রাকায়াত পড়ে সালাম ফিরালেন। জুলইয়াদাইন নামক (একজন সাহাবী) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল, নামাজ কি কম করা হয়েছে, না আপনি ভুলে গেলেন? হুজুর বললেন, না এর কোনটাই হয়নি। জুলইয়াদাইন বললেন, হুজুর, এরকম কিছু ঘটেছে। অতঃপর হুজুর (সঃ) লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কিহে, জুলইয়াদাইন কি ঠিক বলছে? সবাই বললেন হাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ। অতঃপর হুজুর (সঃ) দাঁড়ালেন ও অবশিষ্ট নামাজ পূর্ণ করলেন। অতঃপর বসা অবস্থায়ই সালাম ফিরাবার পরে দুটি (সোহ) সিজদা করলেন।” (মোয়াত্তা ইমাম মালেক)

ব্যাখ্যাঃ নামাজে অনিচ্ছাকৃত যদি কোন ভুল হয় এবং নামাজের মধ্যেই তা মনে পড়ে, তাহলে দুটি অতিরিক্ত সিজদা দিলে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। ইমাম আবু হানিফার মতে কেবলমাত্র ভুলে ওয়াযিব তরক করলেই এই ব্যবস্থা দ্বারা উহার ক্ষতিপূরণ হবে। তবে ফরযের বেলায় নয়। ফরয তরক হলে নতুন করে নামাজ দোহরায়ে পড়বে। ইমাম আবু হানিফার মতে আত্তাহিয়াতু পড়া শেষ করে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে দুটি সিজদা করবে। অতঃপর তাশাহুদ, দরূদ ও দোয়া পাঠ করে দু’দিকে সালাম ফিরাবে। ইমাম শাফয়ীর মতে, দুই দিকে সালাম ফিরাবার পরে দুটি সিজদা করবে। হাদীসের বর্ণনায় দেখা যায় যে, হুজুর (সঃ) মোকতাদীদের সাথে কথা বলার পরে বাকী নামাজ পড়লেন, এদ্বারা প্রমাণ হয় যে, কথা দ্বারা নামাজ নষ্ট হয় না। এর ব্যাখ্যায় অবশ্যই বলা হয়েছে যে, নামাজে যখন কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল না এ ঘটনাটা সেই সময় ঘটেছিল। সুতরাং এখন ঐরূপ কথা বলার পরে পূর্ণ নামাজই আদায় করতে হবে।

নামাজের নিষিদ্ধ সময়সমূহ

(۱۲۷)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدِنِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَأَصَلَاةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ وَلَا صَلَاةَ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغِيبَ الشَّمْسُ (بخاري – مسلم)

(১২৭) “হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, ফজরের নামাজের পরে সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত কোন নামাজ নেই এবং আছরের নামাজের পরে সূর্য একেবারে অস্ত না যাওয়া পর্যন্তও কোন নামাজ নেই।” (বুখারী, মুসলীম)

(۱۲۸)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الصَّلَاةِ نِصْفَ النَّهَارِ حَتَّى تَزُولَ الشَّمْسُ إِلَّا يَوْمَ الْجُمُعَةِ (الشافعي)

(১২৮) “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) মধ্যাহ্নে (সূর্য যখন মাথার উপরে স্থির হয়) নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন, যাবৎ সূর্য ঢলে না যায়। তবে জুময়ার দিনের নামাজ ব্যতীত।” (শাফয়ী)

ব্যাখ্যাঃ সাধারণভাবে তিন সময় নামাজ পড়া নিষেধ। তা হলো ফজরের নামাজের পরে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত, আর আছরের নামাজের পরে সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত এবং সূর্য যখন মাথার উপরে মধ্যাহ্নে স্থির হয়। কোন রকম ব্যতিক্রম ছাড়া ইহাই আবু হানিফার মত। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামদের মত হলো জুময়ার দিনে মধ্যহ্নের নামাজ নিষিদ্ধ নয়। আবার কারো কারো মতে ফজরের সুন্নত যদি কেহ ফজরের জামায়াত শুরু হওয়ার কারণে আদায় করতে না পারে তাহলে ফরযের পরে সূর্য উদয়ের আগেও আদায় করতে পারে। আহলে হাদীসের এটাই আমল।

(۱۲۹)
وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ لَا تَمْنَعُوا أَحَدًا طَافَ بِهَذَا الْبَيْتِ وَصَلَّى أَيَّةَ سَاعَةٍ شَاءَ مِنْ لَيْلٍ أو نهار (ترمذي – أبو داود – نسائي)

(১২৯) “জুবাইর ইবনে মুতয়িম (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, হে বনি আব্‌ব্দে মানাফ, যে ব্যক্তি এই (কাবা) ঘরের তাওয়াফ করবে এবং দিবা-রাত্রির যে কোন সময় এখানে নামাজ পড়তে চায় তাকে বাধা দিবে না।” (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ কাবা ঘরের তওয়াফ দিবা-রাত্রি, উদয়-অস্ত সব সময়ই চলে। এটাই সকলের মত। অনুরূপভাবে হারাম শরীফে সব সময়ই নামাজ পড়া চলে। এ হাদীস মর্মে ইমাম শাফয়ীর এটাই অভিমত। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন, এ হাদীসটি তওয়াফের দু’রাকায়াত নামাজের ব্যাপারে প্রযোজ্য। অর্থাৎ তওয়াফ যেমন উদয়-অস্ত সব সময়ই জায়েয তেমনি সালাতুত্ তাওয়াফের নামাজও সব সময়ই পড়া চলে। অন্য নামাজ নিষিদ্ধ সময় পড়া চলবে না। ইমাম আবু হানিফা তওয়াফের নামাজও নিষিদ্ধ সময় জায়েয মনে করেন না।

(۱۳۰) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ فَلْيُصَلِهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشَّمْسُ (رواه الترمذي) وَقَدْ ثَبَتَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَضَاهُمَا مَعَ الْفَرِيضَةِ لَمَّا نَامَ (نيل الأوطار)

(১৩০) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ফযরের দু’রাকয়াত (ফজরের পূর্বে) পড়তে পারেনি, সে যেন ঐ দু’রাকয়াত সূর্য উদয়ের পরে পড়ে নেয়। (তিরমিযি শরীফে) বর্ণিত আছে, এক সময় হুজুর (সঃ) ফজরে ঘুমিয়ে ছিলেন, পরে তিনি (সুন্নাতসহ) চার রাকয়াতই সূর্য উদয়ের পরে কাজা হিসাবে পড়েছিলেন।” (নায়লুল আওতার)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস ফজরের সুন্নতের বিশেষ গুরুত্বের প্রতি ইংগিত দান করে। কেননা অন্য কোন সুন্নত নামাজের কাজা নেই। ওয়াকত চলে গেলে কেবলমাত্র ফরয নামাজেরই কাজা করতে হবে। অবশ্য হুজুর (সঃ) যদি কখনও জোহরের ফরযের পূর্বের চার রাকয়ার সুন্নত নামাজ ফরজের আগে আদায় করতে না পারতেন, তাহলে ওয়াকতের মধ্যেই ফরযের পরবর্তী দু’রাকয়াত সুন্নত আদায় করার পরে তা পড়ে নিতেন।

জামায়াতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব

(۱۳۱) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبُ ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَيُؤَذَنَ لَهَا ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيَؤُمَّ النَّاسَ ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ (بخاري)

(১৩১) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম, আমার ইচ্ছা হয় আমি কিছু জ্বালানি কাঠ একত্রে করার আদেশ দিব এবং তা একত্র করা হবে। অতঃপর নামাজের জন্য নির্দেশ দিব। ফলে এর নিমিত্ত আযান দেয়া হবে। তৎপর কেউকে হুকুম করব সে লোকদের ইমামতি করবে। অতঃপর আমি সেই সব লোকের বাড়ী যাবো যারা নামাজে আসেনি এবং তাদেরসহ তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিব।” (বুখারী)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস এবং রসূল (সঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের জামায়াতের প্রতি অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া দ্বারা ইমামদের কেউ কেউ ফরয নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করাকে ফরযে আইন বলেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রঃ) জামায়াতকে সুন্নতে মোয়াক্কাদা বলেছেন। তবে অধিকাংশ হানাফী আলেমের মতে জামায়াতের সাথে ফরজ নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। প্রসিদ্ধ কিতাব নূরুল আনোয়ারের লেখক আল্লামা মোল্লা জিউন হানাফী তদীয় গ্রন্থে লিখেছেন যে, ফরয নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করলেই কেবল প্রকৃত ও কামিলরূপে আদায় হবে। আর একা একা ফরয নামাজ আদায় করলে তা কামিলরূপে আদায় হবে না বরং কাজার সাথে মোশাবাহা হবে।

(۱۳۲) وَعَنِ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ أَذَّنَ بِالصَّلَاةِ فِي لَيْلَةٍ ذَاتِ بَرْدٍ وَرِيْحٍ ثُمَّ قَالَ أَلَا صَلُّوْا فِي الرِّحَالِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ أَلَا صَلُّوْا
في الرِّحَالِ (بخاري – مسلم)

(১৩২) “হযরত আবদুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, ঝড়ো হাওয়া বিশিষ্ট এক শীতের রাত্রে তিনি আজান দিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষনা দিলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ীতে নামাজ আদায় করে নাও। তারপর তিনি বললেন, রসূল (সঃ) যখন শীত ও বর্ষার রাত্রি হত তখন মোয়াযয্যিনকে বলতেন, সে যেন বলে দেয়, ওহে, তোমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থানে নামাজ পড়ে নাও।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ আরব দেশে বৃষ্টি প্রধান দেশ নয়। সব সময়ই শুষ্ক থাকে। ফলে পানি নিষ্কাশনের তেমন ব্যবস্থা থাকেনা। এমতাবস্থায় শীত মৌসুমে কখনও কখনও যখন প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি হতো, তখন যেমন প্রচন্ড শীত নামতো তেমনি রাস্তাঘাট ও অলিগলি পানি জমে চলার অনুপোযুক্ত হয়ে যেতো। ফলে এমতাবস্থায় হুজুর (সঃ) সাহাবাদেরকে যার যার ঘরে নামাজ পড়ে নিতে বলতেন। এখন অবশ্য আরব দেশসমূহের রাস্তাঘাট খুবই উত্তম। এ হাদীস দ্বারা ওজর বশতঃ জামায়াতে হাজির না হওয়ার অবকাশ দেয়া হয়েছে।

(۱۳۳)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ فَلَا صلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ (مسلم)

(১৩৩) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যখন নামাজের জন্য ইকামত দেয়া হয় তখন ফরয ছাড়া আর কোন নামাজ নেই।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস দৃষ্টে ইমাম শাফয়ী বলেন, ফরয শুরু হওয়ার পরে কেউ সুন্নত নামাজের নিয়ত করবে না বরং ফরযে শামিল হবে। ফজরের সুন্নতসহ সব সুন্নত নামাজের ব্যাপারেই ইমাম শাফয়ীর এই অভিমত। তবে ইমাম আবু হানিফার মত হলো জামায়াত যদি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ফজরের সুন্নত কাতার থেকে বেশ দুরে দাঁড়িয়ে আদায় করে নিলে ভাল হয়। কেউ যদি জোহরের সুন্নতের নিয়ত করে পড়া শুরু করে এমতাবস্থায় ইকামত হয়, তাহলে সে দু’রাকাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফরয নামাজে শামিল হবে এটাই ইমামদের মত।

(١٣٤) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا أَعْمَى قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ فَسَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرَخّصَ لَهُ فَيُصَلِى فِي بَيْتِهِ فَرَخَّصَ لَهُ فَلَمَّا وَلَّى دَعَاهُ فَقَالَ هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ فَقَالَ نَعَمْ قَالَ فَأَجِبْ (مسلم – نسائي)

(১৩৪) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একজন অন্ধ সাহাবী হুজুরকে (সঃ) বললেন, হুজুর, আমার কোন পথ প্রদর্শক নেই যে আমাকে পথ দেখিয়ে মসজিদের দিকে নিয়ে আসবে। সে হুজুরের (সঃ) কাছে (মসজিদে জামায়াতে শরীক না হয়ে) ঘরে নামাজ পড়ার জন্য রুখসাত চাইতে ছিল। হুজুর (সঃ) তাকে রুখসত দিলেন। সে যখন ফিরে যাচ্ছিল হুজুর (সঃ) তখন আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন তুমি কি (ঘরে বসে) আযানের শব্দ শুনতে পাও? সে বলল হাঁ, তখন হুজুর বললেন, তাহলে তোমাকে মসজিদে হাজির হতে হবে।” (মুসলিম, নাসাঈ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসও জামায়াতের অপরিহার্যতার একটি অকাট্য প্রমাণ। কেননা মসজিদের নিকটে বসবাসকারী একজন অন্ধ সাহাবীকেও হুজুর (সঃ) জামায়াত তরক করার এজাজাত দেননি।

(١٣٥) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلَا هُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَتَانِ (مسلم)

(১৩৫) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলকে (সঃ) এ কথা বলতে শুনেছি যে, খানা সামনে নিয়ে যেমন নামাজ পড়তে নাই, তেমনি পায়খানা-পেশাবের বেগ নিয়েও নামাজ পড়তে নাই।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ নামাজের সময় যদি খানা হাজির হয়, তাহলে সে প্রথমে খানা খাবে, তারপরে নামাজ পড়বে। অনুরূপভাবে পায়খানা-পেশাবের বেগ দেখা দিলে প্রথমে তা সামাধা করবে, তারপরে নামাজ আদায় করবে। কেননা খানার উপস্থিতিতে পেটে ক্ষুধা নিয়ে যেমন নামাজে একাগ্রতা আসেনা, তেমনি পায়খানা-পেশাবের বেগও নামাজে মনোনিবেশে বাধার সৃষ্টি করে। তাই জামায়াত চলে যাওয়ার আশংকা থাকলেও এ দুটি কাজ আগে সারবে তারপরে নামাজ পড়বে।

(١٣٦) وَعَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَتْ دَخَلَ عَلَيَّ أَبُو الدَّرْدَاءِ وَهُوَ مُغْضَبٌ فَقُلْتُ مَا أَغْضَبَكَ قَالَ وَاللَّهِ مَا أَعْرِفُ مِنْ أَمْرِ أُمَّةٍ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا إِلَّا أَنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ جَمِيعًا (بخاري)

(১৩৬) “উম্মে দারদাহ্ (রাঃ) বলেন, একদিন (আমার স্বামী) আবু দারদাহ্ বেশ রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট উপস্থিত হলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপানার এ রাগের কারণ কি? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম আমি উম্মতে মুহাম্মাদীর পরিচয় এটাই জানি যে, তারা একসঙ্গে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করে। (অথচ আজ আমি তাতে কিছু কিছু ব্যতিক্রম দেখছি)।” (বুখারী)

(۱۳۷)
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِثْنَانِ فَمَا فَوْقَهُمَا جَمَاعَةٌ (ابن ماجة)

(১৩৭) “হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, দুই অথবা দুজনের অধিক হলেই জামায়াত হবে।” (ইবনে মাযা)

ব্যাখ্যাঃ কমপক্ষে ইমামের সাথে দু’জন হলেই জামায়াত হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইমামের সাথে একজন হলেই জামায়াত হবে। হজরত আবু সাঈদ বর্ণিত নিম্নের হাদীসটি এর জন্য দলিল।

(۱۳۸)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَنَّ رَجُلاً دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَقَدْ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَصْحَابِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَتَصَدَّقَ عَلَى فَيُصْلِى مَعَهُ فَقَامَ رَجُلٌ مِّنَ الْقَوْمِ فَصَلَّى مَعَهُ (أحمد – أبو داود – ترمذي)

(১৩৮) “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি এসে এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করলেন যখন হুজুর (সঃ) তাঁর ছাহাবাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করে ফেলেছিলেন। হুজুর (সঃ) বললেন, এমনকি কেউ আছে যে, এই লোকটির প্রতি অনুগ্রহ (সাদকা) করবে, অর্থাৎ তার সাথে (মুকতাদি হয়ে) পুনরায় নামাজ পড়বে। একথা শুনে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে নামাজ পড়লেন।” (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)

(۱۳۹) وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوَّى صُفُوفَنَا حَتَّى كَأَنَّمَا يُسَوِّى بِهَا الْقِدَاحَ حَتَّى رَأَى أَنَّ قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمَّ خَرَجَ يَوْمًا فَقَامَ حَتَّى كَادَ يُكَبِّرَ فَرَأَى رَجُلاً بَادِيًا صَدْرَهُ مِنَ الصَّفْ فَقَالَ عِبَادَ اللَّهِ لَتُسَوَّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ (مسلم)

(১৩৯) “হযরত নোমান বিন বশির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) (নামাজে) আমাদের কাতারসমূহ সোজা করতেন, যেন কাতারের সাথে তিনি তীর সোজা করতেছেন। আর এই (কাতার সোজার) কাজ ঐ পর্যন্ত করতেন যখন তিনি বুঝতে পারতেন যে, আমরা ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছি। পরে একদিন তিনি ঘর হতে বের হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবীর (তাহরীমা) বলতে উদ্যত হলেন, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তির সিনা কাতারের সামনে বেড়ে গিয়েছে, হুজুর (সঃ) বললেন, আল্লাহর বান্দাহ হয়ে তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ ঠিক করবে নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারাসমূহে বিভিন্নতা সৃষ্টি করে দিবে।” (মুসলিম)

(١٤٠) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَصْفِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاةِ (بخاري – مسلم)

(১৪০) “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা নামাজের কাতারসমূহ ঠিক করবে। কেননা নামাজের কাতার ঠিক করা নামাজ কায়েম করার শামিল।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখাঃ মুসলমানদের প্রতিটি সম্মিলিত কাজ সুশৃংখলভাবে সমাধা হোক এটাই শরীয়তের কাম্য। নামাজের কাতার ঠিক করা থেকে আরম্ভ করে যাবতীয় অনুষ্ঠান আমাদেরকে এটাই তালিম দেয়। কাতার সোজা করাকে হুজুর (সঃ) নামাজ কায়েম করার শামিল বলে আখ্যায়িত করেছেন।

(١٤١) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَلَنِي مِنْكُمْ أُولُوْ الأَحْلامِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُونَهُمْ ثَلَاثًا وَإِيَّاكُمْ وَهَبْشَاتِ الْأَسْوَاقِ (مسلم)

(১৪১) “হযরত আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা স্থিরচিত্ত ও জ্ঞানী তারা যেন নামাজে আমার কাছে দাঁড়ায়। অতঃপর অন্যরা। একথা হুজুর (সঃ) তিনবার বললেন, তৎপর বললেন, সাবধান তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ আলেম ও যোগ্য লোকদের ইমামের কাছাকাছি দাঁড়ান উচিৎ, হাদীসে এটাই বলা হয়েছে।

কে ইমাম হওয়ার অধিকারী

(١٤٢) وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانُوا ثَلَاثَةٌ فَلْيُؤَمَّهُمْ أَحَدُهُمْ وَأَحَقُّهُمْ بِالْإِمَامَةِ أَقْرَأُهُمْ
أحمد – مسلم – نسائي – نيل الأوطار)

(১৪২) “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যখন তিনজন লোক হবে তখন একজন ইমামতি করবে। আর ইমামতির অধিকারী হবে তিনি যিনি কুরআন সবচেয়ে ভাল পড়েন।” (আহমদ, মুসলিম, নাসাঈ, নায়লুল আওতার)

(١٤٣) وَعَنْ أَبِي مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَؤُمُ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءٌ فَأَقْدَمُهُمْ هجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِنَّا وَلَا يَؤْمَنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ (مسلم)

(১৪৩) “হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, লোকদের ইমামতি করবেন তিনি যিনি কুরআন উত্তমরূপে পড়েন, হাঁ, যদি কুরআন পড়ায় সবাই সমান হন, তাহলে যিনি সুন্নাহ (হাদীসের ইলম) ভাল জানেন। যদি সুন্নাহর ইলমে সকলে সমান হন, তাহলে যিনি প্রথমে হিজরত করেছেন। হিজরতের ব্যাপারে সবাই সম মর্যাদার হলে যার বয়স বেশী। কেউ যেন অন্যের অধিকার ও ক্ষমতাস্থলে ইমামতি না করেন এবং কেহ যেন অন্যের বাড়ীতে তার অনুমতি ছাড়া তার সম্মানের স্থলে না বসেন।”

(١٤٤) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُؤَذِّنُ لَكُمْ خِيَارُكُمْ وَلِيُؤَمِّكُمْ قُرَّاكُمْ (أبو داود)

(১৪৪) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের আজান যেন তোমাদের উত্তম লোকেরা দেয় এবং তোমাদের ইমামতি যেন তোমাদের কারীগণ করেন।” (আবু দাউদ)

(١٤٥) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْعَلُوا أَئِمَّنَّكُمْ خِيَارَكُمْ فَإِنَّهُمْ وَقْدُكُمْ فِيْمَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ (دار قطني)

(১৪৫) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ইমাম তোমাদের উত্তম লোকদেরকে করবে। এরাই তোমাদের এবং তোমাদের রবের মাঝখানে যোগসূত্র।” (দারে কুতনী)

(١٤٦) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَؤُمَنَّ اِمْرَأَةً رَجُلًا وَلَا أَعْرَابِي مُهَاجِرًا وَلَا يَؤْمَنَّ فَاجِرٌ مُّؤْمِنًا إِلَّا أَنْ يَقْهَرَهُ بِسُلْطَانٍ يَخَافُ سَيْفَهُ أَوْ سَوْطَهُ (ابن ماجة)

(১৪৬) “হযরত জাবির (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, কোন মহিলা যেন পুরুষের ইমামতি না করে, কোন আরবী (বেদুইন) যেন মোহাজিরের ইমামতি না করে, আর কোন ফাসিক ব্যক্তি যেন মুমিন ব্যক্তির ইমাম না হয়। তবে হাঁ, যদি অস্ত্র ও কোরার ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা হয়।” (তাহলে বাধ্য হয়ে তাকে মানতে হবে) (ইবনে মাযাহ্)

ব্যাখ্যাঃ মহিলাদের ইমামতি যে না জায়েয এ ব্যাপারে সকলেই একমত। আর যেহেতু মদীনার আশ-পাশে যে সব আরাবী অর্থাৎ বেদুইনরা বাস করত তাদের অধিকাংশই ছিল অজ্ঞ। নতুন নতুন ইসলামে কেবল প্রবেশ করেছিল, সুতরাং এধরনের শরীয়তের ইলমে অজ্ঞ লোক মুহাজেরদের মত পরীক্ষিত ঈমানদার ও আলিমদের ইমাম হতে পারে না। এটাই এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মুমিন ব্যক্তি বাধ্য না হলে ফাসেকের ইমামতি মেনে নিতে পারেনা, এটাই হাদীসের ভাষ্য।

(١٤٧) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجِهَادُ وَاجِبٌ عَلَيْكُمْ مَعَ كُلِّ أَمِيْرٍ بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ وَالصَّلَاةُ وَاحِبَةٌ عَلَيْكُمْ خَلْفَ كُلِّ مُسْلِمٍ بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ (أبو داود – ونيل الأوطار)

(১৪৭) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আমির ভাল হোক কি মন্দ হোক তার অধীনে তোমাদের জিহাদে শামিল হওয়া ওয়াজিব, এমনকি সে যদি কবিরাহ গুনাহও করে। অনুরূপ প্রতিটি মুসলমানের পিছনে তোমাদের নামাজ পড়া ফরয এমনকি সে যদি কবিরাহ্ গুনাহও করে।” (আবু দাউদ, নায়লুল আওতার)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম অর্থ মুসলমানের নেতা। নেতা সব সময়ই উত্তম লোককে বানান উচিত। রসূল (সঃ) ও সাহাবাদের সময় রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে ও নামাজের নেতৃত্বে কোন পার্থক্য করা হতো না। সুতরাং সাহাবাদের যুগে মুসলমানদের উত্তম ব্যক্তিই উভয় নেতৃত্ব করতেন। কিন্তু হাঁ, মুসলমানদের দুর্ভাগ্য যদি এমন পর্যায় পৌঁছে যায় যে, রাষ্ট্রের কর্ণধার কোন ফাসিক ব্যক্তি হয়েছে, তাহলেও মুসলমানরা জিহাদ হতে ফিরে থাকতে পারে না। বরং মুসলিম উম্মার সামগ্রিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে ঐ ফাসিকের অধীনে জিহাদে শরীক হতে হবে, অনুরূপ হুকুম নামাজের বেলায়ও প্রজোয্য। ফাসিক ইমামতি করছে বলে জামায়াত হতে ফিরে থাকতে পারবে না, অবশ্য মুসলিম সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব হলো নামাজের জন্য উত্তম ইমাম নিয়োগ করা, আর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যও নিজেদের মধ্যে হতে উত্তম ব্যক্তিকে বাছাই করা, যারা আল্লাহকে ভয় করে স্বীয় দায়িত্ব আল্লাহর ইচ্ছানুসারে আনজাম দিবে।

(١٤٨) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَلَاثَةٌ لَا تُرْفَعُ صَلَاتُهُمْ فَوْقَ رؤُوسِهِمْ شِبْرًا رَجُلٌ أَمَّ قَوْمًا وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَأَخَوَانِ مُتَصَارِمَانِ
(ابن ماجة)

(১৪৮) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদের নামাজ তাদের মাথার উপরে এক বিঘাত পরিমাণ উপরে উঠানো হয় না। (১) যে ব্যক্তি ইমামতি করছে অথচ লোকেরা তাকে পছন্দ করছে না। (২) যে মহিলা রাত্রি যাপন করছে এই অবস্থায় যে তার স্বামী তার উপরে নাখোশ। (৩) দুই সহোদর যারা পরস্পর (ঝগড়া করে) বিচ্ছিন্ন হয়েছে।” (ইবনে মাযাহ)

ইমামের দায়িত্ব কর্তব্য

(١٤٩) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِلنَّاسِ

فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ مِنْهُمُ السَّقِيمُ وَالضَّعِيفُ وَالْكَبِيرُ وَإِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّلْ مَا شَاءَ (بخاري – مسلم)

(১৪৯) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেহ যখন লোকদের নামাজ পড়াবে তখন যেন সে নামাজ সংক্ষেপ করে। কেননা লোকদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত রোগী, দূর্বল এবং বয়স্ক হবে। তবে যখন সে একা নামাজ পড়বে তখন যেন সে তার ইচ্ছামত নামাজকে দীর্ঘ করে।” (বুখারী, মুসলিম)

(١٥٠) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ إِمَامٍ قَطُّ أَخَفَّ صَلَاةً وَلَا أَتَمَّ صَلَاةٌ مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنْ كَانَ لَيَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ فَيُخَفِّفُ مَخَافَةً أَنْ تُفْتَنَ أُمُّهُ (بخاري – مسلم)

(১৫০) “হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সঃ) ব্যতীত আর কারও পিছনে এত সংক্ষেপ অথচ পূর্ণাঙ্গ নামাজ পড়িনি। যদি তিনি (নামাজের মধ্যে) কোন শিশুর কান্না শুনতেন, তাহলে তার মায়ের উদ্বেগের প্রতি লক্ষ্য রেখে নামাজ সংক্ষেপ করে দিতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ যখন কেউ ইমামতি করবে, তখন তার উচিত নামাজ দীর্ঘ না করা। কেননা মুকতাদীদের মধ্যে দুর্বল, রোগা ও বৃদ্ধ লোকও থাকে। বিশেষ করে জামায়াত যখন বড় হয় তখন সাধারণ লোকদের নানা ধরনের অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে নামাজ দীর্ঘ না করা উচিত।

মুকতাদীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

(١٥١) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي إِمَامُكُمْ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ وَلَا بِالْقِيَامِ وَلَا بِالْإِنْصِرَافِ فَإِنِّي أَرَاكُمْ أَمَامِي وَمِنْ خَلْفِي (مسلم)

(১৫১) “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন রসূল (সঃ) আমাদের নামাজ পড়ালেন। অতঃপর নামাজ শেষ করে আমাদের দিকে ফিরে বসলেন ও বললেন ওহে, আমি তোমাদের ইমাম, সুতরাং তোমরা রুকু, সিজদা, কিয়াম ও সালাম আমার আগে করবে না, আমি কিন্তু তোমাদেরকে সম্মুখ দিক থেকেও দেখি এবং পিছন দিক থেকেও দেখি।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ মুকতাদীর জন্য প্রতিটি বিষয় ইমামের অনুসরণ করা ফরয। নামাজের কোন একটা অঙ্গ মুকতাদী ইমামের আগে সমাধা করলে ঐ মুকতাদীর নামাজই বাতিল হয়ে যাবে। তাই রুকু, সিজদা, কিয়াম ও সালাম আদায় করার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা উচিত যাতে ইমামের আগে আদায় না হয়ে যায়। হুজুরের (সঃ) মুকতাদীদেরকে উভয় দিক থেকে দেখা হুজুরের (সঃ) মোযেযা ছিল।

(١٥٢) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ إِذَا كَبَّرَ

فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَالَ وَلَا الضَّالِّينَ . فَقُولُوا آمِينَ. وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ. فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (بخاري – مسلم)

(১৫২) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা ইমামের আগে যাবে না। ইমাম যখন তাকবীর বলে তোমরা তখন (আওয়াজ না করে) তাকবীর বলবে, ইমাম যখন ‘ওয়ালাদ্দাল্লীন’ বলবে তখন তোমরা বলবে আমীন, ইমাম যখন রুকু করবে তোমরাও সাথে সাথে রুকু করবে, আর ইমাম যখন ‘সামি আল্লাহুলিমান হামিদা’ বলবে তোমরা তখন বলবে ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।” (বুখারী, মুসলিম)

(١٥٣) وَعَنْ عَلِيٌّ وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ الصَّلَاةَ وَالْإِمَامَ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ
(ترمذي)

(১৫৩) “হযরত আলী ও মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যখন নামাজে আসবে তখন সে ইমামকে যে অবস্থায় যা করতে দেখবে তাই করবে।” (তিরমিজি)

(١٥٤) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ

سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلَا تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً
فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاةَ (أبو داود )

(১৫৪) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা নামাজে এসে যদি আমাদেরকে সিজদায় পাও, তাহলে তোমরাও সিজদা করবে, তবে এটাকে হিসাবে ধরবে না, অবশ্য যে পূর্ণ এক রাকায়াত পেয়েছে, সে পূর্ণ নামাজই পেয়েছে।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত দুটি হাদীসে মসবুক সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। উপরের হাদীস বলা হয়েছে, নামাজ শুরু হওয়ার পর যে বিলম্বে আসবে সে এসেই ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সেই অবস্থায়ই নামাজে শরীক হবে, অবশ্য রুকুতে শরীক না হতে পারলে রাকায়াত ধরা হবে না। ২য় হাদীসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে অন্ততঃ এক রাকায়াত পাবে সে পূর্ণ নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করার সওয়াব পাবে।

(١٥٥) وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جِئْتُ وَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ فَجَلَسْتُ وَلَمْ أَدْخُلْ مَعَهُ فِي الصَّلَاةِ فَلَمَّا انْصَرَفَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَنِي جَالِسًا فَقَالَ أَلَمْ تُسْلِمْ يَا يَزِيدُ قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَسْلَمْتُ قَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَدْخُلَ مَعَ النَّاسِ فِي صَلَاتِهِمْ قَالَ إِنِّي كُنْتُ قَدْ صَلَّيْتُ فِي مَنْزِلِي وَأَنَا

أَحْسَبُ أَنْ قَدْ صَلَّيْتُمْ فَقَالَ إِذَا جِئْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَوَجَدْتَ النَّاسِ يُصَلُّوْنَ فَصَلِّ مَعَهُمْ وَإِنْ كُنْتَ قَدْ صَلَّيْتَ تَكُنْ لَكَ نَافِلَةٌ وَهَذِهِ مَكْتُوبَةٌ (أبو داود)

(১৫৫) “হযরত ইয়াযিদ ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) নামাজে ছিলেন, এমন সময় একদিন আমি তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। আমি নামাজে শরীক না হয়ে বসে থাকলাম। রসূল (সঃ) নামাজ শেষে ফিরে আমাকে দেখলেন এবং বললেন, ইয়াযিদ তুমি ইসলাম কবুল করনি? আমি জওয়াব দিলাম হে আল্লাহর রসূল (সঃ) আমি অবশ্যই মুসলমান হয়েছি, হুজুর (সঃ) বললেন, তাহলে কেন তুমি লোকদের সাথে নামাজে শামিল হলে না? আমি বললাম, হুজুর আমি আমার ঘরে নামাজ পড়ে এসেছি। আমি ধারনা করেছিলাম আপনারা পড়ে ফেলেছেন। তখন হুজুর (সঃ) বললেন, তুমি যখন কোথাও উপস্থিত হয়ে লোকদেরকে নামাজ পড়তে দেখবে তখন তুমিও তাদের সাথে নামাজ পড়বে। তোমার এ নামাজ হবে নফল এবং পূর্ববর্তী নামাজ হবে ফরজ।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসের দুই অর্থ করা যায়, অর্থাৎ পূর্ববর্তী নামাজ ফরয হিসাবে ফরয মনে করে আদায় করার কারণে ফরয হবে, আর দ্বিতীয় নামাজ হবে নফল। ইমাম আবু হানিফার (রঃ) মতে এটাই ঠিক। পক্ষান্তরে ইমাম মালেক, শাফয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মত হল ফরয নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করাই ফরয। সুতরাং তাদের মতে দ্বিতীয় ব্যাখ্যাই যথাযথ। অর্থাৎ প্রথম নামাজ একা পড়ার কারণে নফল হবে আর দ্বিতীয় বারের নামাজ জামায়াতে আদায় করার কারণে ফরয হবে। ইমাম আবু হানিফার মতে কেবল মাত্র জোহর ও এশার ফরযই দু’বার পড়া যাবে। অন্য ওয়াক্তের নামাজ দু’বার পড়া যাবে না। কিন্তু অন্যান্য ইমামদের মতে সব ফরজই ২য় বার পড়া যাবে।

(١٥٦) وَعَنْ نَافِعٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُولُ مَنْ صَلَّى الْمَغْرِبَ أَوِ الصُّبْحَ ثُمَّ أَدْرَكَهُمَا مَعَ الْإِمَامِ فَلَا يَعُدْ لَهُمَا (مالك)

(১৫৬) “হযরত নাফে (রাঃ) বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি মাগরিব অথবা ফজরে নামাজ পড়ার পরে তা ইমামের সাথে পেল, সে যেন তা পুনরায় না পড়ে।” (মালেক)

ব্যাখ্যাঃ দ্বিতীয় বারের নামাজ যেহেতু নফল হবে, আর নফল তিন রাকাত হয় না, তাই মাগরিবের ফরয নামাজ দ্বিতীয় বার ইমামের সাথে পড়া যাবে না। আর ফজরের পরে সূর্য উদয় পর্যন্ত কোন নফল নেই। তাই ফজরের ফরযও দ্বিতীয় বার পড়া যাবে না। আছরের নামাজের হুকুমও ফজরের ন্যায়।

ফরয নামাজের আগের ও পরের সুন্নত নামাজ

(١٥٧) وَعَنْ أَمْ حَبِيبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةٌ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاةِ الْفَجْرِ (ترمذي)

(১৫৭) “হযরত উম্মি হাবিবা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে লোক প্রতি দিনে ও রাতে বারো রাকায়াত নামাজ পড়বে, তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর তৈরী করা হবে। জোহরের (ফরয নামাজের) আগে চার রাকায়াত ও পরে দুই রাকায়াত, মাগরিবের (ফরযের) পরে দুই রাকায়াত, এশার (ফরয নামাজের) পরে দুই রাকায়াত এবং ফজরের (ফরযের) আগে দুই রাকায়াত।” (তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ ফরয নামাজের আগে এবং পরে হুজুর (সঃ) যে নামাজ পড়েছেন এবং আমাদেরকে পড়তে বলেছেন তা-ই সুন্নত নামাজ। সুন্নত দুই প্রকারের, (১) হুজুর (সঃ) যা নিয়মিত পড়েছেন এবং আমাদেরকেও পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন, তাকে বলা হয় “সুন্নতে মুয়াক্কাদা” (২) দ্বিতীয় হলো ঐ নামাজ যা হুজুর (সঃ) নিয়মিত পড়েননি এবং আমাদেরকেও পড়ার জন্য তাগিদ দেননি, তাকে বলা হয় সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদা।” বর্ণিত হাদীসে ফরযের আগে এবং পরে যে নামাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো “সুন্নতে মুয়াক্কাদা”।

(١٥٨) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِهِ قَالَ وَ حَدَّثَنِي حَفْصَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ حِيْنَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ
(بخاري – مسلم)

(১৫৮) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমি রসূল (সঃ) এর সাথে জোহরের (ফরয নামাজের) পূর্বে দু’রাকায়াত এবং পরে দু’রাকায়াত পড়েছি। আর মাগরিবের (ফরয নামাজের) পরে দু’রাকায়াত এবং এশার ফরয নামাজের পরে দু’রাকায়াত হুজুরের (সঃ) ঘরে পড়েছি। আবদুল্লাহ বিন উমর আরো বলেছেন যে, আমাকে হযরত হাফসা (রাঃ) বলেছেন যে, হুজুর (সঃ) সুবহে সাদেক প্রকাশ হওয়ার পরে দু’রাকায়াত সংক্ষিপ্ত নামাজ পড়তেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস অনুসারে ইমাম শাফয়ী জোহরের ফরযের পূর্বে সুন্নত দু’রাকায়াত পড়তে হবে বলেছেন, আর পূর্বের হাদীস অনুসারে ইমাম আবু হানিফা চার রাকায়াত বলেছেন। আসলে হুজুর (সঃ) কখনও দু’রাকায়াত পড়েছেন আবার কখনও চার রাকায়াতও পড়েছেন।

হাদীসের রাবী হযরত হাফসা বিনতে উমর হযরত আবদুল্লাহ বিন্ উমরের বোন ছিলেন। ফলে তিনি কোন একদিনি হুজুরের (সঃ) সাথে ফরয নামাজের পরে এশা ও মাগরিবে তার বোনের ঘরে প্রবেশ করে দু’রাকায়াত করে সুন্নত পড়েছেন। হাদীসে তারই উল্লেখ রয়েছে।

(١٥٩) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا (أحمد – مسلم – ترمذي)

(১৫৯) “হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, ফজরের দু’রাকায়াত ‘সুন্নত’ নামাজ দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদ হতে মূল্যবান।” (আহমদ, মুসলিম, তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ ইমামদের অভিমত হলো, সুন্নত নামাজের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে প্রথম নম্বরে হলো ফজরের দু’রাকায়াত। তারপরে মাগরিবের সুন্নত, তারপরে জোহরের শেষের দু’রাকায়াত, তারপরে হলো এশার সুন্নত। অন্যান্য সুন্নতের মর্যাদা এর পরে।” (আশেয়াতুল লুময়াত)

(١٦٠) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَيْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدُّ مُعَاهَدَةٌ مِّنَ الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الصُّبْحِ
بخاري – مسلم – أحمد – أبو داود)

(১৬০) “হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নফল নামাজসমূহের মধ্যে হুজুর (সঃ) ফজরের পূর্বের দু’রাকায়াত নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়মিত আদায় করতেন।” (বুখারী, মুসলিম, আহমদ, আবু দাউদ)

(١٦١) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيْ الْفَجْرِ فَلْيُصْلِهُمَا بَعْدَ أَنْ تَطْلِعَ الشَّمْسُ (ترمذی)

(১৬১) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, যে ফজরের দু’রাকায়াত সুন্নত পড়েনি সে সূর্য উদয়ের পরে তা পড়ে নিবে।” (তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আবু হনিফার মতে ফজরের ফরযের পূর্বে যদি কেউ সুন্নত না পড়ে থাকে, তাহলে সূর্য উদয়ের পরে উহা পড়ে নিবে। অবশ্য হাদীসে এমতাবস্থায় সূর্য উঠার আগে পড়ার কথাও উল্লেখ আছে।

(١٦٢) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا لَمْ يُصَلِّ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ صَلَاهُنَّ

بَعْدَهَا (ترمذي) وَرَوَى ابْنُ مَاجَةَ عَنْهَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَاتَتْهُ الْأَرْبَعُ قَبْلَ الظُّهْرِ صَلَاهُنَّ بَعْدَ الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ (ابن ماجة)

(১৬২) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) যদি জোহরের চার রাকায়াত (সুন্নত) আগে না পড়তে পারতেন, তাহলে তা পরে পড়ে নিতেন।” (তিরমিজি)

ইবনে মাযাহ্ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হুজুর (সঃ) যদি কখনও জোহরের চার রাকায়াত (সুন্নত) আগে না পড়তে পারতেন, তাহলে জোহরের শেষের দু’রাকায়াত পড়ে তা পড়তেন।” (ইবনে মাযা) ব্যাখ্যাঃ জোহরের চার রাকায়াত সুন্নত যদি কেহ কোন কারণে ফরযের আগে আদায় করতে না পারে, তাহলে ফরযের পরের সুন্নত দু’রাকায়াত আদায় করার পরে ওয়াক্তের মধ্যেই উহা আদায় করে নিবে।

বিতরের নামাজ

(١٦٣) وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةٌ وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى (بخاري – مسلم)

(১৬৩) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, রাতের নামাজ জোড়া, জোড়া। (দু’রাকায়াত দু’রাকায়াত) অতঃপর নামাজ শেষে তোমাদের কেউ যখন সুবহে সাদিক হওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাকায়াত পড়বে। এতে তার পূর্বের পড়া নামাজ বিতর (বেজোড়) হয়ে যাবে।” (বুখারী, মুসলিম)

(١٦٤) وَعَنِ عَبْدُ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْعَلُوْا آخِرَ صَلَاتِكُمْ باللَّيْلِ وِتْرًا (مسلم)

(১৬৪) “আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, তোমাদের রাতের শেষ নামাজকে বিতর করবে।” (মুসলিম)

(١٦٥) وَعَنْ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ إِنَّ الْوَتْرَ لَيْسَ بِحَثْمِ كَصَلَاتِكُمِ الْمَكْتُوبَةِ وَلَكِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْثَرَ ثُمَّ قَالَ يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ أَوْتِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ (أحمد)

(১৬৫) “হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বিতর ফরয নামাজের ন্যায় বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু রসূল (সঃ) নিয়তই বিতর পড়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন, হে কুরআন ধারণকারীরা, তোমরা বিতর পড়বে, কেননা আল্লাহ বিতর (বিজোড়) এবং বিতরকে ভালবাসেন।” (আহমদ)

ব্যাখ্যাঃ বিতর নামাজ সম্পর্কীয় হাদীসমূহ পর্যালোচনা করে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ফরজ ও সুন্নতে মুয়াক্কাদার মাঝামাঝি। অন্য দিকে অন্য সকল ইমামদের মত হলো বিতর সুন্নত। ফিকহুসুন্নাহ নামক কিতাবে বিতরকে সুন্নতে মোয়াক্কাদা বলা হয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটিও বিতরের সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়ার প্রমাণ বহন করে। বিতরের নামাজ কয় রাকায়াত এ নিয়েও ইমামদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। ইমাম আবু হানিফার মতে বিতর তিন রাকায়াত এবং ইমাম শাফয়ী প্রমুখের মতে বিতর এক রাকায়াত। প্রকৃত ব্যাপার হলো হুজুর (সঃ) তাহাজ্জুদ জোড়া জোড়া পড়েছেন এবং বিতর শেষ দিকে গিয়ে কখনও তিন রাকায়াত পড়েছেন আবার কখনও এক রাকায়াত পড়েছেন। সুতরাং তিন রাকায়াত পড়া হোক কিংবা এক রাকায়াত পড়া হোক উভয়টাই হাদীস মোতাবেক হবে।

(١٦٦) وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْوِتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلاثِ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ (أبو داود – نسائي – ابن ماجة)

(১৬৬) “হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, বিতর পড়া প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। সুতরাং যে বিতর পাঁচ রাকায়াত পড়া পছন্দ করে সে যেন তাই করে, যে তিন রাকায়াত পড়তে চায় সে তাই পড়বে, আর যে এক রাকায়াত পড়া পছন্দ করে সে যেন এক রাকায়াতই পড়ে।”
(আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসে প্রমাণ হয় যে, বিতর পাঁচ, তিন ও এক রাকায়াত এই তিন প্রকারই পড়া চলে। ইমাম সুফিয়ান সওরী বিতর পাঁচ রাকায়াত পছন্দ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা তিন রাকায়াত ও ইমাম শাফয়ী এক রাকায়াত পছন্দ করেছেন।

(١٦٧) وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ نَامَ عَنِ الْوِتْرِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَ وَإِذَا اسْتَيْقَظَ
ترمذي – أبو داود – ابن ماجة)

(১৬৭) “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যদি কেউ বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা তা পড়া ভুলে যায় সে যেন স্মরণ হওয়ার পর তা পড়ে নেয়।” (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ)

ব্যাখ্যাঃ বিতর সময়মত না পড়তে পারলে কিংবা ভুলে গেলে তা স্মরণ হওয়ার পরে পড়ে নিতে হবে। অর্থাৎ ফরয নামাজের ন্যায় বিতর কাজা করতে হবে। এই হাদীস এবং বিতর সম্পর্কে বর্ণিত হযরত আলী ও হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর হাদীস ইমাম আবু হানিফার মতকেই শক্তিশালী করে, কেননা বিতর যদি অন্যান্য সুন্নত নামাজের ন্যায় সুন্নত হতো তাহলে হুজুর (সঃ) এ কথা বলতেন না এবং বিতর কাজার নির্দেশ দিতেন না।

(١٦٨) وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي بَعْدَ الْوِتْرِ رَكْعَتَيْنِ (ترمذي) وَزَادَ ابْنُ مَاجَةُ خَفِيفَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ

(১৬৮) “উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন হুজুর (সঃ) বিতরের পর দু’রাকায়াত নামাজ পড়তেন। (তিরমিজি, ইবনে মাযা)
অবশ্য ইবনে মাযাহ উপরোক্ত বর্ণনার সাথে এও বলেছেন, “হুজুর (সঃ) উহাকে সংক্ষিপ্ত করতেন এবং বসে পড়তেন।”

ব্যাখ্যাঃ বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল নামাজকে ইমাম মালেক ঠিক মনে করেন না, ইমাম আহমদ বলেন, আমি তা পড়ি না এবং কাউকে নিষেধও করি না। তবে কোন কোন ইমাম একে জায়েয মনে করেন।

তাহাজ্জুদের নামাজ (রাতের নামাজ)

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةٌ لَكَ عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا ( بني إسرائيل : (۷۹)

“আর রাতে আপনি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ুন, এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত। আচিরেই আপনার রব আপনাকে “মাকামে মাহমুদায়” পৌছে দিবেন।” (বনি ইসরাইল-৭৯)

এশার নামাজ ও ফজরের মাঝখানে যে নামাজ পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। নফল নামাজসমূহের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ সবচেয়ে উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজ এশার নামাজের পর এবং ফজরের নামাজের পূর্বে যে কোন সময় পড়লেই চলবে, তবে এর উত্তম সময় হলো মধ্য রাতের পরে। কুরআনে কারীমে শেষ রাতের (তাহাজ্জুদ) নামাজের যথেষ্ট ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন কুরআনে আছেঃ

كَانُوا قَلِيْلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ، وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ (الذاريات : ۱۸-۱۹)

“এসব লোকেরা (মোত্তাকীনরা) রাতে কম ঘুমায়ে এবং আল্লাহর কাছে শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (সূরা জারিয়াত-১৮-১৯)

وَالَّذِيْنَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا (الفرقان : ٦٤)

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াতে বলেন, “আর তারা রাত কাটায় (নামাজে) সিজদারত অবস্থায় ও দাঁড়ানো অবস্থায়।” (আল ফুরকান- ৬৪)

প্রকৃত মুমিনদের প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র বলছেন

تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا
وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ (السجدة : ١٦)

“তাদের পাঁজরসমূহ (রাতে) বিছানা হতে আলাদা থাকে, তারা আল্লাহকে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকে, আর আমার দেয়া মাল হতে তারা (আল্লাহর রাহে) খরচ করে।” (সূরা সাজদা-১৬)

আল্লাহ হুজুরকে (সঃ) লক্ষ্য করে কুরআনে অন্য এক জায়গায় বলেন,

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ ( بني إسرائيل : ٧٩)

“আর রাতে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন, এটা আপনার জন্য (ফরযের) অতিরিক্ত।” (সূরা বনি ইসরাইল-৭৯)

উপরোক্ত আয়াতসমূহ তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব বহন করে। প্রথম দিকে যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়নি, তখন তাহাজ্জুদ নামাজ হুজুর (সঃ) এবং তাঁর উম্মত সকলের উপরই ফরয ছিল। অতঃপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয হওয়ায় তাহাজ্জুদ উম্মতের জন্য নফল হলেও হুজুরের (সঃ) জন্য ফরযই রয়ে গেছে। ফলে হুজুর (সঃ) কখনও জিন্দিগীতে তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়েননি। তবে হুজুরের (সঃ) জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ নফল কি ফরয এ ব্যাপারে মুফাস্সীরীন ও ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে।

হুজুর (সঃ) বিতরসহ তাহাজ্জুদ কখনও নয় রাকায়াত পড়েছেন, আবার কখনও এগার রাকায়াত পড়েছেন। কখনও তের রাকায়াত পড়েছেন, আবার কখনও সাত রাকায়াতও পড়েছেন। প্রকৃত পক্ষে তাহাজ্জুদের

নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। সময় না থাকলে বিতর সহ পাঁচ রাকায়াতও পড়া চলে।

(١٦٩) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الْأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ
(حاكم – ابن ماجة – ترمذي)

(১৬৯) “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, হে লোকেরা, তোমরা পরস্পরকে সালাম দাও, খানা খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, আর রাতে এমন অবস্থায় নামাজ পড় যখন অন্য লোকেরা ঘুমিয়ে যায়। তাহলে নিরাপত্তা সহকারে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।”

(হাকেম, ইবনে মাযাহ, তিরমিজি)

(۱۷۰) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيَّ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّى فِيْمَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُسَلِّمُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَيُؤْتِرُ بِوَاحِدَةٍ (بخاري – مسلم)

(১৭০) “হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (সঃ) ইশার নামাজ সমাধা করার পর ফজর পর্যন্ত এগার রাকায়াত নামাজ পড়তেন। প্রতি দু’রাকায়াতের শেষে তিনি সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকায়াত দ্বারা তাকে বেজোড় করতেন।” (বুখারী, মুসলীম)

(۱۷۱) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشَرَةَ رَكْعَةً مِنْهَا الْوَتْرَ وَرَكْعَتَا الْفَجْرِ (مسلم)

(১৭১) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) রাতে তের রাকায়াত নামাজ পড়তেন, বিতর ও ফজরের (সুন্নত) দু’রাকায়াতও তার মধ্যে সামিল ছিল।” (মুসলিম)

(۱۷۲) وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُصَلِّيَ مِنَ اللَّيْلِ مَا قَلَّ أَوْ كَثُرَ وَنَجْعَلَ آخِرَ ذَالِكَ وِتْرًا (طبراني – بزار)

(১৭২) “হযরত সামুরাতা বিন (রাঃ) জুনদুব বলেন, রসূল (সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রাতের নামাজ পড়ার জন্য। কম পড়ি কি বেশী পড়ি। আর সর্বশেষ নামাজকে আমরা বিতর (বিজোড়) করবো।” (তিবরানী, বাজ্জার)

তারাবীর নামাজ

তারাবীর নামাজ সুন্নত। তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ কিনা এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে ইখতিলাফ পাওয়া যায়। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফয়ী এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের নিকট তারাবী পুরুষ নারী উভয়ের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কদাহ্।

তারাবীর রাকায়াতের ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ হাদীসে দেখা যায় রসূল (সঃ) বিতরসহ এগার রাকায়াত পড়েছেন।

ইমাম বায়হাকীর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত উমর, হযরত ওসমান, হযরত আলীর (রাঃ) সময় তারাবী জামায়াতের সাথে বিশ রাকায়াত পড়া হতো। হযরত ইবনে আব্বাসের এক বর্ণনায় আছে রসূল (সঃ) তারাবী বিশ রাকায়াতও পড়েছেন। অবশ্যই হুজুর (সঃ) হতে বিশ রাকায়াতের যদি কোন অনুমোদন নাই থাকে তাহলে হযরত উমর (রাঃ) এটা কি করে চালু করতে পারেন। আর অন্য সাহাবীরাই বা তা মেনে নিবেন কি করে? হুজুর (সঃ) হতে তারাবী যেমন জামায়াতে পড়া সাবেত আছে তেমনি একা একা পড়াও সাবেত আছে।

আমি (লেখক) বেশ কয়েকবার রমযান মাসে উমরা আদায় উপলক্ষ্যে মক্কা-মদীনা সফর করেছি এবং ক্বাবা শরীফে ও মসজিদে নববীতে তারাবী নামাজ পড়েছি। এ উভয় মসজিদেই তারাবী জামায়াতের সাথে বিশ রাকায়াত আদায় করা হয়। এ ছাড়াও আরব দেশসমূহের অধিকাংশ মসজিদে তারাবী জামায়াতের সাথে বিশ রাকায়াতই পড়া হয়। তবে কোন কোন সালাফী মসজিদে আট রাকায়াতও পড়ে।

(۱۷۳) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرَغَبُ فِي قِيَامٍ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ فِيْهِ بِعَزِيمَةٍ فَيَقُولُ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْأَمْرُ عَلَى

ذَالِكَ ثُمَّ كَانَ الْأَمْرُ عَلَى ذَالِكَ فِي خِلَافَةِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَصَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى ذَالِكَ (مسلم)

(১৭৩) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) রমযান মাসের নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে অত্যধিক তাকিদ করতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসে নামাজ পড়বে আল্লাহ তার কৃত যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবেন। অতঃপর রসূল (সঃ) ইন্তিকাল করলেন এই আদেশ বলবৎ থাকা অবস্থায়। হযরত আবু বকর সিদ্দিকের খিলাফত আমলেও এই অবস্থা বহাল থাকলো, এমন কি হযরত উমরের খিলাফতের প্রথমাবস্থায়ও।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস হতে বুঝা যায় যে, হুজুর (সঃ) তারাবীর জন্য উৎসাহ দিতেন। তবে অত্যধিক পীড়া-পীড়ি করতেন না। অর্থাৎ তারাবী বাধ্যতামূলকভাবে জামায়াতের সাথে পড়ার ব্যাপারে হুজুর (সঃ) নির্দেশ দিতেন না। আর এই অবস্থাটাই হযরত উমরের খিলাফতের প্রথম কাল পর্যন্ত বহাল ছিল। অতঃপর হযরত উমর (রাঃ) সাহাবায়ে কিরামকে জামায়াতের সাথে বিশ রাকায়াত পড়ার জন্য পরামর্শ দেন এবং সাহাবায়ে কিরামগণ তাঁর এ পরামর্শ উত্তম ভেবে গ্রহণ করেন।

(١٧٤) وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ الْقَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لَيْلَةٌ إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ فَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلَاتِهِ

الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنِّي لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلَاءِ عَلَى قَارِي وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى وَالنَّاسُ يُصَلُّوْنَ بِصَلَاةِ قَارِئِهِمْ قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ وَالَّتِي يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُوْمُوْنَ يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ (بخاري)

(১৭৪) “হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবদুল কারী (রাঃ) বলেন, (রমযান মাসের) এক রাতে আমি হযরত উমর বিন খাত্তাবের সাথে মসজিদে নববীতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত, কেউবা একা নিজের নামাজ পড়ছে আবার কারো পিছনে ক্ষুদ্র একটি দল নামাজ পড়ছে। এ অবস্থা দেখে হযরত উমর বললেন, যদি আমি এদের সকলকে একজন কারীর পিছনে একত্র করে দেই, তাহলে তা উত্তম হবে। অতঃপর তিনি দৃঢ় ইচ্ছা গ্রহণ করে এদের সকলকে উবাই বিন কায়াবের পিছনে একত্র করে দেন। আবদুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় রাতে আবার আমি খলিফা হযরত উমরের (রাঃ) সাথে মসজিদে গেলাম, আর লোকেরা তাদের ইমামের পিছনে নামাজ পড়ছিল। এ অবস্থা দেখে হযরত উমর বললেন, এ নতুন ব্যবস্থাটা কতই না সুন্দর! তোমরা যে সময় (শেষ রাতে) ঘুমিয়ে থাক সে সময়টা হলো ঐ সময় (প্রথম রাত) হতে উত্তম যখন তোমরা নামাজ পড়।” একথা দ্বারা তিনি শেষ রাত্রের দিকে ইংগিত করেছিলেন। অথচ লোকেরা রাতের ১ম দিকে নামাজ পড়েছিলেন।

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস হতে বুঝা যায় যে, নিয়মিত তারাবিতে জামায়াত হযরত উমরের (রাঃ) সময় হতে শুরু হয়েছে। আর এটাকেই হযরত উমর (রাঃ) নতুন ব্যবস্থা বলেছেন। এখানে “বিদয়াত” শরয়ী পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার হয়নি। কেননা হুজুর (সঃ) নিজেও তারাবী জামায়াতের সাথে পড়েছেন, তবে অনিয়মিত, একাধারে নয়।

(١٧٥) وَعَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ أَنَّهُ قَالَ كَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةٌ (مؤطا إمام مالك)

(১৭৫) “ইয়াযিদ বিন রুমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উমর বিন খাত্তাবের (রাঃ) সময় লোকেরা রমযানের রাতে তেইশ রাকায়াত নামাজ পড়তেন।” (অর্থাৎ বিশ রাকায়াত তারাবী এবং তিন রাকায়াত বিতর) (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

(١٧٦) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَصَلَّى بِصَلَاتِهِ نَاسٌ ثُمَّ صلَّى مِنَ الْقَابِلَةِ فَكَثُرَ النَّاسُ ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ فَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيْتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَالِكَ فِي رَمَضَانَ (مؤطا إمام مالك)

(১৭৬) “উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক (রমযানে) রাত্রে হুজুর (সঃ) মসজিদে নববীতে নামাজ পড়লেন, লোকেরা হুজুর (সঃ) এর পিছনে হুজুরের সাথে নামাজ পড়লেন। দ্বিতীয় রাতেও হুজুর অনুরূপ নামাজ পড়লেন তো লোক আরো বেশী হলো। অতঃপর তৃতীয় কিম্বা চতুর্থ রাতে এসে আরো বেশী লোক জড়ো হলো। কিন্তু হুজুর (সঃ) সে রাতে আর বের হলেন না। সকালে হুজুর (সঃ) বললেন, “রাতে তোমাদের একত্র হওয়ার ও নামাজের জন্য অপেক্ষাটা আমি দেখেছিলাম। কিন্তু তোমাদের উপরে তারাবীর এ নামাজ ফরয হয়ে যাওয়ার আশংকায় আমি বের হইনি।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

সফরের নামাজ (কছর নামাজ)

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ
تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلاة (سورة النساء – ١٠١)

“তোমরা যখন জমিনে ভ্রমন করবে তখন তোমাদের নামাজ কছর (সংক্ষিপ্ত) করায় কোন দোষ নাই।” (সূরা নিসা: ১০১)

(۱۷۷) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا قَالَتْ فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ
رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ
(مؤطا إمام مالك)

(১৭৭) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, (প্রথম দিকে) বাড়ীতে অবস্থানকালে কিম্বা সফরে (সর্বাবস্থায়) নামাজ দু’রাকায়াত করে ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর সফরের নামাজ পূর্বাবস্থায় ঠিক রেখে অবস্থানের নামাজকে বাড়ানো হয়েছে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

ব্যাখ্যাঃ উপরে হাদীস হতে জানা যায় যে, প্রথম দিকে নামাজ প্রতি ওয়াক্তে দু’রাকায়াত করে ফরয করা হয়েছিল। বুখারী শরীফের বর্ণনায় আছে যে, নামাজ দু’রাকায়াত করেই ফরজ হয়েছিল। হুজুর (সঃ) যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন রাকায়াত বাড়ানো হয়েছে। বায়হাকী, ইবনে হাববান, ইবনে খুযায়মা প্রমূখ রাবীগণ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, সফরে এবং বাড়ীতে প্রথম দিকে নামাজ দুই রাকায়াত করেই ফরয ছিল। পরবর্তীতে হুজুর (সঃ) যখন মদীনায় হিজরত করে আসলেন এবং কিছুটা নিরাপদ হলেন, তখন জোহর, আছর এবং এশায় দু’রাকায়াত করে বাড়ান হলো এবং ফজর ও মাগরিবকে তার অবস্থায় রাখা হলো। সফরের নামাজ যেহেতু আসলেই দু’রাকায়াত তাই সফরে চার রাকায়াত পড়া ঠিক নয়। এটাই ইমাম আবু হানিফার মত।

(۱۷۸) وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الظُّهْرَ بِالْمَدِينَةِ أَرْبَعًا وَصَلَّى الْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ (بخاري – مسلم)

(১৭৮) “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) মদীনায় জোহর চার রাকায়াত পড়েছেন, আর আছর জুলহোলাইফায় দু’রাকায়াত পড়েছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ জুলহোলাইফা মদীনা শরীফ হতে ছয় মাইল দূরে অবস্থিত। এ জায়গাটাকে “বীরে আলীও” বলে। অর্থঃ হযরত আলীর কূপ। মদীনার লোকেরা হজ্জ উপলক্ষে এখানেই ইহরাম বাঁধে, এটাই হলো মদীনা ও উত্তর দিকের মুসলমানদের জন্য মিকাত। বর্ণিত হাদীসে হুজুরের (সঃ) হজ্জ উপলক্ষ্যে মক্কা রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে মদীনা শরীফে জোহর চার রাকায়াত পড়েছেন এবং আছর জুলহোলাইফায় দু’রাকায়াত পড়েছেন।

এ হাদীস প্রমাণ করে যে, সফর আরম্ভকালে বাসস্থানে পুরাই পড়বে। কিছুদুর গেলে কছর করবে।

(۱۷۹) وَعَنِ عَبْدِ اللَّهِ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَحِبْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ لَا يَزِيدُ فِي السَّفَرِ عَلَى رَكْعَتَيْنِ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ رِضْوَانِ اللَّهِ تَعَلَى عَلَيْهِمْ كَذَالِكَ (بخاري – مسلم)

(১৭৯) “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমি হুজুরের (সঃ) সফর সঙ্গী ছিলাম। হুজুর (সঃ) সফরে নিয়তই দু’রাকায়াত (ফরয) নামাজ পড়তেন। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর, উমর এবং উসমানও (রাঃ) দু’রাকায়াত পড়তেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আমি হুজুরের (সঃ) ইন্তিকাল পর্যন্ত বহুবার তাঁর সাথে সফর করেছি। তিনি সব সময়ই সফরে ফরয নামাজ দু’রাকায়াত করে পড়তেন। ঠিক অনুরূপভাবে আমি হযরত আবু বকর, উমর ও উসমানের (রাঃ) সাথে তাঁদের মৃত্যু পর্যন্ত বহুবার সফর করেছি তাঁরাও সব সময়ই সফরে দু’রাকায়াত নামাজ পড়তেন।

(۱۸۰)
وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنَّمَا قَالَ اللَّهُ تَعَالَى

أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَقَدْ أَمِنَ النَّاسُ قَالَ عَجِبْتُ مِمَّا عَجِبْتَ مِنْهُ فَسَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ صَدَقَةٌ تَصَدَّقَ اللَّهُ بِهَا عَلَيْكُمْ فَاقْبَلُوا صَدَقَتَهُ (مسلم)

(১৮০) “হযতর ইয়ালা বিন উমাইয়া (রাঃ) বলেন, আমি, হযরত উমর বিন খাত্তাবকে (রাঃ) বললাম, (ব্যাপার কি?) আল্লাহ বলেছেন, “যদি তোমরা ভয় কর কাফিরেরা তোমাদিগকে কোন বিপদে ফেলবে তাহলে তোমরা নামাজে কছর করতে পার।” আর এখন তো লোকেরা সম্পূর্ণ নিরাপদ, (এখন আমরা কছর করব কেন?) হযরত উমর (রাঃ) বললেন, আপনি যেভাবে আশ্চর্যবোধ করছেন আমিও আশ্চর্যবোধ করছিলাম। ফলে আমি হুজুরকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হুজুর (সঃ) বললেন, এটা আল্লাহর একটি অনুগ্রহ (দান) যা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্ করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহকে গ্রহণ কর।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসে প্রামাণ করে যে, সফরে সর্বাবস্থায়ই কছর পড়তে হবে। কুরআন শরীফে যে, “যদি তোমাদের ভয় হয়” বলা হয়েছে তা কছরের জন্য কোন শর্ত নয়। অনুরূপভাবে সফরে অবশ্যই কছর পড়তে হবে, এটাই ইমাম আবু হানিফাসহ অধিকাংশ ইমামের মত। ইমাম খাত্তাবী তাঁর (মুয়ালিম) নামক কিতাবে লিখেছেন, সলফে ছালেহীন এবং অধিকাংশ ফকিহদের মত হলো যে, কছর সফরে ওয়াজিব। হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত ইবনে আব্বাস প্রমুখ সাহাবীর মত এটাই। হযরত উমর বিন আব্দুল আজিজও ওয়াজিব হওয়ার মত পোষণ করতেন। (নায়লুল আওতার)

(۱۸۱)
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ بِمَكَّةَ فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ زَادَ مَعَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ إِلَّا الْمَغْرِبَ فَإِنَّهَا وِتْرُ النَّهَارِ وَصَلَاةَ الْفَجْرِ لِطُولِ قِرَاءَتِها
أحمد – بيهقي – ابن حبان – ابن خزيمة)

(১৮১) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, মক্কায় নামাজ দু’রাকায়ত করে ফরজ করা হয়েছিল। অতঃপর হুজুর (সঃ) যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন (এর উপরে) দু’রাকায়াত করে বাড়ানো হলো। তবে মাগরিব দিবাভাগের বিতর হওয়ার কারণে এবং ফজরে কিরয়াত লম্বা হওয়ার কারণে বাড়ানো হয়নি।” (বরং মাগরিব ও ফজরকে পূর্বাবস্থায়
বহাল রাখা হয়েছে)। (আহমদ, বায়হাকী, ইবনে হাববান, ইবনে খোযায়মা)

(۱۸۲)
وَعَنْ يَحْيَى بْنِ يَزِيدٍ قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ عَنْ قَصْرِ الصَّلَاةِ فَقَالَ أَنَسٌ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةً ثَلَاثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلَاثَةِ فَرَاسِخَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ

أحمد – مسلم – أبو داود – بيهقي)

(১৮২) ইয়া বিন ইয়াযিদ বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিককে নামাজ কছর করা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। আনাস (রাঃ) বললেন, হুজুর (সঃ) তিন মাইল অথবা তিন ফরসখ সফরে দু’রাকায়াত পড়তেন।” (আহমদ, মুসলিম, আবু দাউদ, বায়হাকী)

ব্যাখ্যাঃ কতদিন বা কত মাইলের সফরে নামাজ কছর করতে হবে এ ব্যাপারে ইমাম ও ফকিহদের মধ্যে বেশ মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানিফার মত হলো তিন দিনের সফরে নামাজ কছর করতে হবে। ইমাম মালিক, সাফয়ী লাইস ও আওজায়ী এবং তাদের অনুসারীদের মত, ৪৮ মাইলে কছর নামাজ পড়তে হবে। অবশ্য কেউ কেউ বর্ণিত হাদীসের মর্মানুসারে তিন মাইল দূরত্বের সফরে কছর পড়তে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (নাইলুল আওতার)

সফরের মাঝখানে যদি কোথাও অবস্থান করে, তাহলে কতদিন অবস্থানের নিয়ত করলে পূর্ণ নামাজ পড়বে এ ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্য বিভিন্ন হওয়ার কারণে ইমামদের মধ্যে বিভিন্ন মত আছে, ইমাম আবু হানিফার মত হলো কম পক্ষে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে চার রাকায়াত পড়তে হবে। এর সমর্থনে তিনি ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমর হতে বর্ণিত হাদীস যা তাহাবী শরীফেও নেয়া হয়েছে, পেশ করেছেন। ঐ হাদীসে পূর্ণ নামাজ পড়ার জন্য ১৫ দিনের কথা বলা হয়েছে। ইমাম মালিক ও ইমাম শাফয়ীর মত হলো কোথাও একাধারে চার দিন অবস্থানের নিয়ত করলে পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে। হযরত আলী ও ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় পূর্ণ নামাজ পড়ার জন্য দশ দিনের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য অবস্থানের নিয়ত ব্যতিরেকে অধিককাল অবস্থান করলেও কছর করতে হবে। হুজুর (সঃ) বিশ দিন পর্যন্ত তাবুকে দুশমনদের অপেক্ষায় অবস্থান করেও কছর পড়ছিলেন। কেননা তারা যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আর যে কোন মুহূর্তে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, তার কোন নির্দিষ্ট সময় ছিল না।
(নায়লুল আওতার, আশিয়াতুল লুময়াত, ফিকহুসসুন্নাহ)

(۱۸۳) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَبُوكَ عِشْرِيْنَ يَوْمًا يَقْصُرُ الصَّلَاةَ
(أحمد – أبو داود)

(১৮৩) “হযরত জাবির (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) তাবুকে বিশ দিন অবস্থানরত অবস্থায় কছর পড়েছে।” (আহমদ, আবু দাউদ)

সফরে দুই নামাজ একত্রে পড়া

(١٨٤) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْمَعُ بَيْنَ صَلَاةِ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ إِذَا كَانَ عَلَى ظَهْرِ سَيْرٍ وَيَجْمَعُ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ (بخاري)

(১৮৪) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) যখন সফরে থাকতেন তখন জোহর ও আছর একত্রে পড়তেন। অনুরূপভাবে (সফরে) মাগরিব ও এশা একত্রে পড়তেন।” (বুখারী)

(١٨٥) وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ إِذَا ارْتَحَلَ قَبْلَ أَنْ تَزِيعَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى يَجْمَعَهَا إِلَى الْعَصْرِ فَيُصَلِّيْهِمَا جَمِيعًا وَإِذَا ارْتَحَلَ بَعْدَ زَيْعُ الشَّمْسِ

صَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا ثُمَّ سَارَ وَكَانَ إِذَا ارْتَحَلَ قَبْلَ الْمَغْرِبِ أَخَّرَ الْمَغْرِبَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْعِشَاءِ وَإِذَا ارْتَحَلَ بَعْدَ الْمَغْرِبِ عَجَلَ الْعِشَاءَ فَصَلَاهَا مَعَ الْمَغْرِبِ
أحمد – أبو داود – ترمذي)

(১৮৫) “হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) তাবুক অভিযানকালে যদি সূর্য ঢলার আগে সফর করতেন, তাহলে জোহরের নামাজ বিলম্বিত করে আছর পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। অতঃপর দুই ওয়াকতই একত্রে পড়তেন। আর যদি সূর্য ঢলার পর সফর শুরু করতেন, তাহলে জোহর-আছর (জোহরের ওয়াকতে) একত্রে পড়তেন। অতঃপর সফর শুরু করতেন। আর যদি তিনি মাগরিবের আগে সফর শুরু করতেন তাহলে মাগরিব বিলম্বিত করে (এশার ওয়াকতে) এশার সাথে একত্রে পড়তেন। যদি হুজুর (সঃ) মাগরিবের পরে সফর শুরু করতেন, তাহলে এশাকে এগিয়ে এনে মাগরিবের সাথে একত্রে পড়তেন।” (আহম্মদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস সফরে দুই নামাজ একত্রে পড়ার ব্যাপারে বলিষ্ঠ প্রমাণ বহন করে। সফরে থাকুক, কিম্বা সফর অবস্থায় অবস্থানে থাকুক দুই নামাজ আগে কিম্বা পরে একত্রে পড়ার অনুমতি এই হাদীস হতে পাওয়া যায়। ছাহাবী এবং তাবেয়ীনদের অনেকেই এই মত পোষণ করেন। ইমামদের মধ্যে ইমাম শাফয়ী, আহমদ বিন হাম্বল, সাওরী, ইসহাক ও সাহাব প্রমূখ ফকিহগণও উপরোক্ত মতের সমর্থন করেন। অবশ্য ইমাম আবু হানিফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ হাসান ও নখয়ীর মত হলো, আরাফা ও মুজদালেফা ছাড়া অন্যত্র দুই নামাজ একত্রে পড়া যাবে না। কিন্তু প্রথমোক্ত মতই বেশী মজবুত এবং আরব আলিমগণ সাধারণত এর উপরে আমল করে থাকেন। সুতরাং হাদীসের ভিত্তিতে সফরে দুই নামাজ একত্রে পড়া শুধু জায়েযই নয় বরং কখনও কখনও উত্তম।

নৌকা, লঞ্চ বা ইষ্টিমারে কিভাবে নামাজ পড়বে

(١٨٦) وَعَنْ مَيْمُونِ بْنِ مِهْرَانَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سُئِلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ أُصَلِّي فِي السَّفِينَةِ قَالَ صَلِّ فِيهَا قَائِمًا إِلَّا أَنْ تَخَافَ الْغَرَقَ (دار قطني – حاكم)

(১৮৬) “মাইমুনা বিন মিহরান আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হুজুরকে (সঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, নৌকায় আমি কিভাবে নামাজ পড়ব? হুজুর (সঃ) বললেন, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে, তাবে হাঁ, নৌকা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অন্যথা হবে।” অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে গেলে যদি নৌকা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে বসে বসে নামাজ পড়বে।” (দারে কুতনি, হাকিম)

(۱۸۷) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي عُتَبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَحِبْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ وَأَبَا سَعِيدِ الْخُدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَأَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي سَفِينَةٍ فَصَلُّوا قِيَامًا فِي جَمَاعَةٍ أَمَّهُمْ بَعْضُهُمْ وَهُمْ يَقْدِرُونَ عَلَى الْجُدِّ (رواه سعيد في سننه)

(১৮৭) “আবদুল্লাহ বিন আবু উতাবা (রাঃ) বলেন, আমি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ, আবু সাইদ খুদরী ও আবু হুরাইরার (রাঃ) সাথে নৌকায় সফর করেছি, তাঁরা সকলেই জামায়াতের সাথে দাঁড়িয়ে নৌকায় নামাজ পড়তেন এবং তাদের কেউ কেউ ইমামতি করতেন, অথচ তারা ইচ্ছা করলে তীরে উঠেও নামাজ পড়তে পারতেন।”
(সাঈদ, নায়লুল আওতার)

ব্যাখ্যাঃ তীরে উঠে নামাজ পড়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নৌকায় নামাজ পড়া জায়েয, তবে নৌকায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হবে এবং সম্ভব হলে জামায়াতের সাথে। হাঁ, যদি এক সাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে গেলে নৌকা ডুবে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে বসে নামাজ পড়বে। তবে তীরে উঠে দাঁড়িয়ে জামায়াতে নামাজ পড়াই উত্তম।

জুময়ার নামাজ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إلى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَالِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
(الجمعة : (۹)

“হে ঈমানদারেরা জুময়ার দিনে যখন নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা বেচা-কেনা বন্ধ করে আল্লাহর স্মরনের দিকে ধাবিত হও। এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম যদি তোমরা জ্ঞান রাখ। আল জুময়া-৯

কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ভিত্তিতে জুময়ার নামাজ ফরজে আইন। এই কিতাবের প্রথম খন্ডে বর্ণনা করা হয়েছে যে, হুজুর (সঃ) মক্কা হতে মদীনা হিজরত করার পরপর জুময়ার নামাজ ফরজ করে আয়াত অবতীর্ণ হয়। অবশ্য কারও মতে হিজরতের পূর্বক্ষণে মক্কায় তা ফরয করা হয়। তবে প্রথম পড়া হয় মদীনায়।

(۱۸۸) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَعَلَيْهِ الْجُمُعَةُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلَّا مَرِيضٌ أَوْ مُسَافِرٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَو صَبِيٌّ أَوْ مَجْنُونٌ أَوْ مَمْلُوْكٌ فَمَنِ اسْتَغْنَى بِلَهْوِ أَوْ تِجَارَةِ اسْتَغْنَى اللَّهُ عَنْهُ وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَمِيدٌ (دار قطني)

(১৮৮) “হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রসূল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপরে ঈমান এনেছে তার উপরে জুময়ার দিনে জুময়ার নামাজ ফরজ। রোগী, মুসাফির, নারী, শিশু, পাগল ও কৃতদাস ব্যতীত। যে ব্যক্তি খেলাধুলা ও ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে জুময়া হতে বিমুখ থাকবে আল্লাহতায়ালাও তার দিক হতে বিমুখ থাকবেন। আল্লাহ মুখাপেক্ষীহীন ও প্রশংসিত।” (দারে কুতনী)

ব্যাখ্যাঃ চারজন ইমামের মতে জুময়ার নামাজ ফরজে-আইন। হাদাসে যাদের উপরে ফরজ নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে তারাও যদি জুময়ার নামাজ পড়ে আদায় হয়ে যাবে। জোহর পড়তে হবে না।

(۱۸۹) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِقَوْمٍ يَتَخَلَّفُوْنَ عَنِ الْجُمُعَةِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ يُصَلِّي بِالنَّاسِ ثُمَّ أُحَرِّقَ عَلَى رِجَالٍ يَتَخَلَّفُونَ عَنِ الْجُمُعَةِ بُيُوتَهُمْ
(أحمد – مسلم)

(১৮৯) “হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, যারা জুময়ার নামাজ হতে বিরত থাকতো তাদের সম্পর্কে হুজুর (সঃ) বলেছেন, “আমার ইচ্ছা হয় আমি যদি কাউকে আমার স্থলে ইমামতি করার নির্দেশ দেই, অতঃপর আমি গিয়ে তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেই, যারা জুময়ার নামাজ হতে সরে থাকে।” (আহমদ, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীসও জুময়া ফরয হওয়ার দলিল। হাদীসে যাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সম্ভবত এরা মুনাফিক ছিল।

(۱۹۰) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَّسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدْرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّي مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى وَفَضْلَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ (مسلم)

(১৯০) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি গোসল করবে অতঃপর জুময়ায় যাবে এবং তার পক্ষে যা সম্ভব (নফল) নামাজ পড়বে, অতঃপর ইমাম খুত্বা হতে ফারিগ না হওয়া পর্যন্ত চুপ করে থাকবে, তৎপর ইমামের সাথে জুময়ার নামাজ পড়বে, তার এ জুময়া এবং পূর্ববর্তী জুময়ার মাঝখানে যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। অধিকন্তু আরো তিন দিনের।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ জুময়ার দিনের গোসল সুন্নত, হাদীসে ঐ সুন্নত গোসলের কথাই বলা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকায়াত দুখুলুল মসজিদ এবং চার রাকায়াত কাবলাল জুময়া পড়বে। অতঃপর ইমাম যখন খুতবা দিবে তখন চুপ করে শুনবে। খুতবা শুনা ওয়াজেব এবং খুতবার সময় কথা বলা হারাম।

(۱۹۱) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَكَلَّمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَهُوَ كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا وَالَّذِي قَالَ لَهُ أَنْصِتْ لَا جُمُعَةً لَهُ
أحمد – أبي شيبة – بزار – طبراني) .

(১৯১) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, ইমাম খুতবা দিচ্ছে এই অবস্থায় যে কথা বলল সে হলো গাধার ন্যায়, যে কেবল বোঝা বহন করে। আর যে (চুপ করার জন্য) বলবে চুপ থাক, তারও জুময়া হবে না।” (অর্থাৎ পূর্ণঙ্গ হবে না।)
(আহমদ, ইবনে আবিশায়বা, বাজজার, তিবরানী)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস হতে জানা গেল যে, খুতবার সময় কথা বলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি কাউকে ‘চুপ করুন’-এ কথাও বলা যাবে না। অঙ্গুলী ঈশারা করবে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, আজকাল এ ব্যাপারটার প্রতি খুবই উদাসীনতা দেখান হচ্ছে। ইমাম খুতবার জন্য মিম্বরে উঠার পর হতে নামাজ শুরু পর্যন্ত কথা বলা হারাম। এমনকি নামাজ পড়াও চলবে না।

(۱۹۲) وَعَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النِّدَاءُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوَّلُهُ إِذَا جَلَسَ الْإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ

وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فَلَمَّا كَانَ عُثْمَانُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَكَثُرَ النَّاسُ زَادَ النِّدَاءَ الثَّالِثَ عَلَى الزَّوْرَاءِ
(بخاري)

(১৯২) “হযরত সায়িব বিন ইয়াযিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ), আবুবকর ও উমরের (রাঃ) জামানায় জুময়ার দিনের প্রথম আযান হতো যখন ইমাম মিম্বরে বসতেন। অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ) যখন খলিফা হলেন এবং (জুময়ার নামাজে) লোকসংখ্যা বেড়ে গেল, তখন তিনি জওরার উপরে তৃতীয় আযান বাড়িয়ে দিলেন।”
(বুখারী)

ব্যাখ্যাঃ জওরা মসজিদে নববীর সামনে একটি উচু জায়গার নাম ছিল। প্রথম দিকে হুজুর (সঃ) এবং প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার সময় জুময়ার জন্য একটি আযানই দেয়া হতো। আর তা দেয়া হতো যখন ইমাম মিম্বরে বসতেন। অতঃপর তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের সময় যখন নামাজীর সংখ্যা বেড়ে গেল আর দূর দূরান্ত হতে লোক আসা শুরু হলো তখন তিনি আর একটি আযান বাড়িয়ে দিলেন যা চৌরাস্তায় একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে দেয়া হতো। রাবী তৃতীয় আযান এই জন্য বলেছেন যে, তিনি ইকামতকেও একটি আযান হিসাবে গন্য করেছেন।

(۱۹۳) وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ
لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَتَانِ يَجْلِسُ بَيْنَهُمَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيُذَكِّرُ النَّاسَ فَكَانَتْ صَلَاتُهُ قَصْدًا وَخُطْبَتُهُ قَصْدًا (مسلم)

(১৯৩) “হযরত জাবির বিন সামুরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) দু’টি খুতবা দিতেন এবং খুতবার মাঝখানে বসতেন। তিনি (ঐ খুতবায়) কিছু কুরআন পাঠ করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। আর হুজুরের (সঃ) নামাজ ও খুতবা উভয়ই মধ্যম হতো।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ জুময়ার নামাজে খুতবা শর্ত। অর্থাৎ ফরয। খুতবা ব্যতীত জুময়ার নামাজ হবে না। খুতবার দু’টি অংশ, প্রথম অংশে উপদেশ এবং দ্বিতীয় অংশে থাকে দোয়া। অধিকাংশ ইমামের মত হলো খুতবা আরবীতে দিতে হবে। কেউ কেউ মাতৃভাষাতেও খুতবা জায়েয রাখেন। হুজুর (সঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীন খুতবা দাঁড়িয়ে দিতেন। তাই খুতবা দাঁড়িয়ে দিতে হবে। অধিকাংশ ইমামের মত ইহাই। কোন কোন ইমাম দাঁড়ানকে খোতবায়ে ছহি হওয়ার জন্য শর্ত করেছেন। ইমাম মালিক এবং শাফয়ী দাঁড়ানকে ওয়াজিব বলেছেন। (আশিয়াতুল লুময়াত)

(١٩٤) وَعَنْ أَبِي الْجَعْدِ الضَّمْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ
قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ
جُمَع تَهَاوُنَا بِهَا طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ
(أبو داود – ترمذي – نسائي – ابن ماجة – دارمي – مالك – أحمد )

(১৯৪) “হযরত আবুল জায়াদ দামিরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি গাফলতি করে পরপর তিন জুময়ার নামাজ ছেড়ে দেয় আল্লাহ তার দিলের উপর মোহর মেরে দিবেন।”
(আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, দারেমী, মালিক, আহম্মদ)

জুময়ার ফরযের পরে সুন্নত নামাজ

(١٩٥) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمُ الْجُمُعَةَ فَلْيُصَلِّ بَعْدَهَا أَرْبَعَ رَكْعَاتٍ

أبو داود – ترمذي نسائي ابن ماجة)

(১৯৫) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন জুময়ার (ফরজ) নামাজ পড়বে, সে যেন তার পর চার রাকায়াত নামাজ পড়ে।”

(আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে মাযাহ)

(١٩٦) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي بَعْدَ الْجُمُعَةِ رَكْعَتَيْنِ
فِي بَيْتِهِ (بخاري – أبو داود – ترمذي – نسائي)

(১৯৬) “অবদুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) জুময়ার (ফরযের) পর ঘরে গিয়ে দু’রাকায়াত সুন্নত পড়তেন।” (বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাযাহ)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত দু’টি হাদীসে দেখা যায় যে, রসূল (সঃ) জুময়ার ফরযের পরে “বাদাল্ জুময়া” সুন্নত চার রাকায়াত পড়েছেন আবার দু’রাকায়াতও পড়েছেন। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর মসজিদে পড়লে চার রাকায়াত পড়তেন এবং বাড়ীতে পড়লে দু’রাকায়াত পড়তেন। ইবনে তাইমিয়ার মতে সুন্নত হলো মসজিদে পড়লে চার রাকায়াত পড়বে এবং বাড়ীতে এসে পড়লে দু’রাকায়াত পড়বে।

ঈদের নামাজ

(۱۹۷) وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلَاةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَيَقُوْمُ مُقَابِلَ النَّاسِ وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ وَيُوصِيْهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْنَا قَطَعَهُ أَوْ يَأْمُرَ بِشَيْءٍ أَمَرَ بِهِ ثُمَّ يَنْصَرِفُ (بخاري – مسلم)

(১৯৭) “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হয়ে যেতেন এবং সর্ব প্রথম তিনি নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে জনতার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন আর জনতা তাদের কাতারে বসা থাকতো। তিনি তাদেরকে নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন ও নির্দেশ দিতেন, কোথাও সৈন্য পাঠাবার ইচ্ছা করলে তাদেরকে বাছাই করে নিতেন অথবা কাউকে কোন নির্দেশ দেয়ার থাকলে দিতেন। অতঃপর তিনি বাড়ী ফিরতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ঈদের নামাজ ইমাম আবু হানিফার মতে ওয়াজিব। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলও ওয়াজিবই মনে করেন। কেউ কেউ বলেছেন, ইমাম আহমদ ঈদের নামাজকে ফরযে কিফায়া মনে করেন। ইমাম মালিক ও ইমাম শাফয়ীর নিকট ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আহলেহাদীসরাও ঈদের নামাজকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা মনে করেন। ঈদের নামাজ দু’রাকায়াত জামায়াতের সাথে আযান-ইকামত ছাড়াই আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজের আগে-পরে কোন নামাজ নেই। ঈদের নামাজের ওয়াকত ইশরাকের পর পরই এবং সূর্য একেবারে মাথার উপরে আসার আগ পর্যন্ত থাকে। আমি (লেখক) একাধিকবার ক্বাবা শরীফে আল্লাহর মেহেরবানীতে ঈদের নামাজ পড়েছি। ঈদের দিনে হারামে ফজরের নামাজ পড়ার পরে জায়গা না ছেড়ে ঈদের নামাজের জন্য লোকেরা অপেক্ষা করতে থাকে। অতঃপর সূর্য খানিকটা উপরে উঠলে ঈদের নামাজ আদায় করে যার যার গন্তব্য স্থলে চলে যায়।

(۱۹۸) وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِيدَيْنِ غَيْرَ مَرَّةٍ وَلَا مَرَّتَيْنِ بِغَيْرِ آذَانِ وَلَا إِقَامَةٍ (مسلم)

(১৯৮) “হযরত জাবির বিন সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি দুই ঈদের নামাজ রসূলের (সঃ) সাথে এক দুইবার নয় বহুবার পড়েছি আযান-ইকামত ব্যতীত।” (মুসলিম)

(۱۹۹) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يُصَلُّوْنَ الْعِيدَيْنِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ (بخاري – مسلم)

(১৯৯) “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ), আবু বকর ও উমর (রাঃ) ঈদের নামাজ খুতবার আগে পড়তেন।” (বুখারী, মুসলিম)

(۲۰۰) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى يَوْمَ الْفِطْرِ رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهُمَا وَلَا بَعْدَهُمَا (بخاري – مسلم)

(২০০) “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে মাত্র দু’রাকায়াত নামাজ পড়েছেন। আগে-পরে কোন নামাজ পড়েননি।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত তিনটি হাদীস হতে তিনটি বিষয় জানা গেল। (১) রসূল (সঃ) আজান-ইকামত ছাড়া ঈদের নামাজ পড়তেন। সুতরাং ঈদের নামাজে আযান-ইকামত নেই। (২) রসূল (সঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীন দুই ঈদেই খুতবার আগে নামাজ পড়ে নিতেন। (৩) ঈদের নামাজের আগে বা পরে কোন নামাজ নাই।

(۲۰۱) سُئِلَ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَشْهِدْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِيدَ قَالَ نَعَمْ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ وَلَمْ يَذْكُرْ آذَانًا وَلَا إِقَامَةً ثُمَّ أَتَى النِّسَاءَ فَوَعَظَهُنَّ وَذَكْرَهُنَّ وَأَمَرَهُنَّ بِالصَّدَقَةِ فَرَأَيْتُهُنَّ يَهْوِيْنَ إِلَى آذَانِهِنَّ وَحُلُوْقِهِنَّ يَدْفَعْنَ إِلَى بِلَالٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ثُمَّ ارْتَفَعَ هُوَ وَبِلَالٌ إِلَى بَيْتِهِ (بخاري – مسلم)

(২০১) “হযরত ইবনে আব্বাসকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আপনি রসূলের (সঃ) সাথে কখনও ঈদের নামাজে হাজির ছিলেন কি? তিনি বললেন হাঁ, (দেখলাম) হুজুর (সঃ) (ঘর হতে) বের হলেন, নামাজ পড়লেন, অতঃপর খুতবা দিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) ইবনে আব্বাস (তার বর্ণনায়) আযান-ইকামতের কথা বলেননি। খুতবা শেষে হুজুর (সঃ) মহিলাদের দিকে আসলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে ওয়াজ নছিহত করলেন, আর তাদেরকে ছদকা করার উপদেশ দিলেন। অতঃপর আমি দেখলাম মহিলাগণ তাদের কান ও গলার দিকে হাত বাড়ালেন আর গহনা খুলে খুলে বেলালের নিকট দিতে লাগলেন। এর পর হুজুর (সঃ) ও বেলাল উঠে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, ঈদের নামাজে আযান-ইকামত নেই এবং খুতবা নামাজের পরে। তাছাড়া হাদীসে দেখা যায় যে, হুজুরের (সঃ) সময় মহিলারাও ঈদের নামাজে শরীক হয়েছে। সুতরাং এখনও যদি পর্দা রক্ষা করে মহিলাদেরকে ঈদের নামাজে শরীক করান যায় তাহলে তা হুজুরের (সঃ) সুন্নতের অনুসরণই হবে।

(۲۰۲) وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَإِنَّمَا يَذْبَحُ لِنَفْسِهِ وَمَنْ ذَبَحَ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ وَأَصَابَ سُنَّةَ الْمُسْلِمِينَ (بخاري – مسلم)

(২০২) “হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি (ঈদুল আযহার দিনে) নামাজের আগে জবেহ করলো সে নিজের খাওয়ার জন্য জবেহ করলো। আর যে নামাজ বাদ জবেহ করলো তার কুরবানী পূর্ণ হলো এবং সে মুসলমানদের তরীকার অনুসরণ করলো।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ঈদুল আযহায় ঈদের নামাজ আদায় করার পর কুরবানী করতে হবে, অর্থাৎ কুরবানীর প্রকৃত সময় শুরু হয় নামাজের পর। নামাজের আগে জবেহ করলে কুরবানী হবে না।

ঈদের নামাজে কয় তকবীর বলতে হবে

(۲۰۳) وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِهِ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ فِي عِيدٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةً تَكْبِيرَةً سَبْعًا فِي الْأُولَى وَخَمْسًا فِي الْآخِرَةِ وَلَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلَا بَعْدَهَا (أحمد – ابن ماجة)

(২০৩) “আমর ইবনে শুয়ায়িব (রাঃ) তার পিতা হতে এবং তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সঃ) দুই ঈদে প্রথম রাকায়াতে কিআতের পূর্বে সাতবার তাকবীর বলেছেন এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে পাঁচ বার তাকবীর বলেছেন। আর ঈদের নামাজের আগে বা পরে তিনি কোন নামাজ পড়েননি।” (আহমদ, ইবনে মাযাহ্)

(٢٠٤) وَعَنْ سَعِيدَ بْنَ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَأَلْتُ أَبَا مُوسَى الْأَشْعَرِيَّ وَحُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي الأَضْحَى وَالْفِطْرِ فَقَالَ أَبُوْ مُوسَى كَانَ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا تَكْبِيرَهُ عَلَى الْجَنَائِزِ، فَقَالَ حُذَيْفَةُ صَدَقَ (أبو داود)

(২০৪) “হযরত সাইদ বিন আস (রাঃ) বলেন, আমি আবু মূসা আশয়ারী ও হুযাইফা বিন ইয়ামানকে জিজ্ঞাসা করলাম, হুজুর (সঃ) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে কিভাবে (কত) তাকবীর বলতেন? আবু মূসা জওয়াবে বললেন, চার তাকবীর বলতেন, যেরূপ জানাযায় বলা হয়। হুযাইফা বললেন, আবু মূসা ঠিকই বলেছে।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ ঈদের নামাজে কয় তাকবীর বলতে হবে এ ব্যাপারে হাদীস বিভিন্ন থাকার কারণে ইমামদের মধ্যে বিভিন্ন মত হয়েছে। ইমাম মালিক, শাফয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল প্রথম হাদীসের ভিত্তিতে ঈদের নামাজে প্রথম রাকায়াতে তাকবীর তাহরীমা বাদে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর তাকবীর বাদে পাঁচ তাকবীর দিতে হবে বলেছেন। উপমহাদেশে আহলে হাদীসরাও ঈদের নামাজে বার তাকবীরের উপর আমল করে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া এবং শাহ অলিউল্লাহ দেহলভীও বার তাকরীরের মতকে বেশী গ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন। আমি (লেখক) বহুবার মক্কা-মদীনাসহ আরব দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঈদের নামাজ পড়েছি। সর্বত্র বার তাকবীরসহ ঈদের নামাজ আদায় করেছি। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম সওরী ঈদের নামাজে তাকবীর তাহরিমা ও দ্বিতীয় রাতে রুকুর তাকবীরসহ আট তাকবীর দিতে হবে বলেছেন। এতে প্রকৃত পক্ষে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর হয়। উপমহাদেশ, মিসর ও তুর্কীর সর্বত্রই হানাফী ফিকাহ্ মতে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। তবে অধিকাংশ ইমাম ও মুহাদ্দিসীনের মতে ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর সুন্নত। ভুলে কিম্বা ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি তাকবীর ছেড়েও দেয় তাতে নামাজ বাতিল হবে না। ইমাম আবু হানিফার মতে তাকবীর ছুটে গেলে সোহ্ সিজদা দিতে হবে।

অধ্যায় ৩: জাকাত

জাকাতের বিবরণ

ইসলামের মূল পাঁচটি রুকনের মধ্যে জাকাত একটি। গুরুত্বের দিক দিয়ে নামাজের পরেই জাকাতের স্থান। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআনে বহুবার নামাজের সাথে সাথে জাকাতের কথা বলেছেন। উম্মতে মুহাম্মদীর ন্যায় পূর্ববর্তী উম্মতের উপরেও জাকাত ফরয ছিল। জাকাত দ্বিতীয় হিজরীতে মদীনা শরীফে ফরয হয়।

আল্লাহ তাআ’লা জাকাতের হুকুম দিতে গিয়ে কুরআনে বলেনঃ

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوْ لَأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ (البقرة – ١١٠)

“আর তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত দাও, আর যেসব নেক কাজ তোমরা নিজেদের কল্যাণার্থে এখানে (দুনিয়ার জিন্দেগীতে) করবে তার সবটুকুর প্রতিফলই আল্লাহর কাছে পাবে।”
(সূরা আল বাকারা, আয়াত-১১০)

আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আরও বলেনঃ

وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ
وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ (التوبة : (۷۱)

“মুমিন পুরুষগণ ও মহিলাগণ পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তারা উত্তম কাজের নির্দেশ দেয় আর অন্যায় কাজ হতে লোককে বিরত রাখে। তারা নামাজ কায়েম করে ও জাকাত দেয়।” (সূরা তওবা ৭১)

আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে (সঃ) উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ

خُدْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا (التوبة – ١٠٣)

“আপনি তাদের মাল হতে জাকাত গ্রহণ করে তাদেরকে পবিত্র করুন”
(সূরা তওবা, আয়াত-১০৩)

এভাবে আল্লাহ্ তাঁর কুরআনের অসংখ্য জায়গায় জাকাতের কথা উল্লেখ করে আয়াত নাযিল করেছেন।

জাকাতের গুরুত্ব

(٢٠٥) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجَّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ (بخاري – مسلم)

(২০৫) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, পাঁচটি বস্তুর উপরে ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে। প্রথম হলো- ‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই, আর মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দাহ্ ও রসূল’ এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, দ্বিতীয় হলো- নামাজ কায়েম করা, তৃতীয় হলো- জাকাত দেয়া, চতুর্থ হলো- বায়তুল্লাহর হজ করা, আর পঞ্চম হলো- রমযান মাসের রোযা রাখা।” (বুখারী, মুসলীম)

(٢٠٦) وَعَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ (بخاري – مسلم)

(২০৬) “হজরত যারির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীমের (সঃ) কছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করার জন্য, জাকাত দেয়ার জন্য এবং প্রতিটি মুসলমানের কল্যাণ কামনার জন্য।” (বুখারী, মুসলীম)

ব্যখ্যাঃ উপরোক্ত দু’টি হাদীসই শরীয়তে জাকাতের অত্যধিক গুরুত্বের প্রমান বহন করে।

(۲۰۷) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اسْتَفَادَ مَالاً فَلَا زَكَاةً فِيْهِ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الحَوْلُ (ترمذي)

(২০৭) “হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মাল লাভ করেছে, তার সে মালের উপর হতে এক বছর অতিবাহিত না হলে জাকাত ফরয হবে না।” (তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ জাকাতযোগ্য মালে জাকাত ফরয হওয়ার জন্য কমপক্ষে এক বছর মালিকের কাছে থাকতে হবে। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যদি মাল খরচ হয়ে যায় তাহলে সে মালের জাকাত দিতে হবে না।

(۲۰۸) وَعَنْ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ الْعَبَّاسَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ فَرَخَّصَ لَهُ فِي ذَالِكَ
(أبو داود – ترمذي – ابن ماجة – والدارمي)

(২০৮) “হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার হযরত আব্বাস (রাঃ) রসূলকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেছিলেন, বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তার জাকাত দেয়ার ব্যাপারে, হুজুর (সঃ) তাকে এর ইজাজত দিয়েছিলেন।”
(আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাযাহ, দারেমী)

ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই প্রয়োজনে জাকাত দিয়ে দেয়, তাহলে তার জাকাত আদায় হয়ে যাবে।

(۲۰۹) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِيْمَا سَقَتِ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ أَوْ كَانَ عَشَرِيًّا الْعُشْرُ وَمَا سُقِيَ بِالنَّصْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ (بخاري)

(২০৯) “হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) নবী করীম (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, বর্ষার পানি, প্রবাহমান কূপের পানি কিম্বা খালের পানি দ্বারা যা সিক্ত হয় তাতে ওশর (দশমাংশ) দিতে হবে, আর যা সেচ দ্বারা সিক্ত হয় তাতে অর্ধ ওশর (বিশ ভাগের একভাগ) দিতে হবে।” (বুখারী)

ব্যাখ্যাঃ যেসব জমি সেচ ব্যতীত স্বাভাবিক পানি দ্বারা যেমন বর্ষার পানি, প্রবাহমান পানি, কূপ, ঝর্ণা বা খালের পানি দ্বারা চাষ হয়, সে সব জমিকে ওশরী জমি বলা হয়। অর্থাৎ এসব জমির উৎপাদিত ফসলের দশ ভাগের একভাগ জাকাত বা ওশর হিসাবে আদায় করতে হবে। তবে ফসলের পরিমাণ সাড়ে ছাব্বিশ মণ হতে হবে। অর্থাৎ ফসলের উপর ওশর বা জাকাত ফরয হওয়ার জন্য জমির মালিকের উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ পাঁচ ওসাক অর্থাৎ সাড়ে ২৬ (ছাব্বিশ) মণ হতে হবে। এর কমে ওশর ওয়াযিব হবে না। আর যদি জমিতে সেচের মাধ্যমে (কৃত্রিম উপায়) পানি সরবরাহ করে চাষ করতে হয়, তাহলে উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের একভাগ জাকাত হিসাবে দিতে হবে। ফসলের জাকাত সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআনে নিম্নোক্ত নির্দেশ দিয়েছেনঃ

كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَتْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ
(الأنعام: ١٤١)

“গাছে যখন ফল ধরে তখন তা হাতে তোমরা খাও। আর আদায় কর আল্লাহর হক ফসল কাটার সময়।” (সূরা আনয়াম ১৪১)

আল্লাহ কোরআনে অন্যত্র বলেছেন;

وَأَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَالَكُمْ مِنَ
الْأَرْضِ (البقرة : ٢٦٧)

“দান কর তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল মালের কিছু অংশ এবং যা আমি তোমাদের জন্য মাটি হতে বের করেছি।”
(সূরা আল ইমরান ২৬৭)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ আমাদেরকে উৎপন্ন শস্যের জাকাত দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

ইমাম আবু হানিফার মতে ধান, গম, যব, ডাল, খেজুর ইত্যাদিসহ ফলমূল ও তরিতরকারি সবটারই জাকাত দিতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “আমি যা কিছু মাটি হতে তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেছি।” কিন্তু ইমাম মালিক ও শাফয়ী বলেন, খাদ্য জাতীয় ফসল যা মানুষ ওজন করে ও মওজুদ করে রাখতে পারে তার উপরে জাকাত ফরয। তরিতরকারি ও ফলমূলের জাকাত দিতে হবে না।

(۲۱۰) وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْوَسْقُ سِتُّوْنَ صَاعًا
أحمد – أبو داود)

(২১০) “আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, ‘ওসাক’ হয় ষাট সায়াতে।” (আহমদ, আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ আরবীতে এক সায়া হয় আমাদের দেশের তিন সের নয় ছটাকে। এই রকমের ষাট সায়াতে এক ওসাক হয় আর পাঁচ ওসাক হলে তাতে জাকাত ফরজ হবে। এটা আমাদের দেশের ওজনের সাড়ে ২৬ ছাব্বিশ মণ প্রায়, কি তার চেয়ে সামান্য বেশী।

(۲۱۱) وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ فِيْمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنَ التَّمْرِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيْمَا دُونَ خَمْسٍ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيْمَا دُونَ خَمْسٍ ذَوْدٍ مِنَ الإِبل صَدَقَةٌ (بخاري – مسلم)

(২১১) “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, পাঁচ ওসাকের কম খেজুরে জাকাত নেই, পাঁচ উকিয়ার কম রুপাতে জাকাত নেই, আর পাঁচ জওদের কম উটে জাকাত নেই।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ওসাকের বিবরণ পূর্বে দেয়া হয়েছে। চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া, এক দিরহাম চার আনার সামান্য বেশি। এ হিসাবে পাঁচ উকিয়া দুইশ’ দিরহাম বা আমাদের হিসাবের সাড়ে বায়ান্ন তোলা, অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলার কম রুপার জাকাত নেই। “জওদ” বলা হয় ক্ষুদ্র উটের পালকে, পাঁচ জওদে প্রায় পঁচিশটা উট হবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন পনেরটি।

(۲۱۲) وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا وَجْهَهُ إِلَى الْيَمَنِ أَمَرَهُ أَنْ

يَأْخُذَ مِنَ الْبَقَرِ مِنْ كُلِّ ثَلَاثِيْنِ تَبِيْعًا أَوْ تَبِيْعَةً وَّمِنْ كُلِّ أَرْبَعِينَ مُسِنَّةٌ
أبو داود – ترمذي – نسائي – دارمي)

(২১২) “হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) যখন তাকে ইয়ামেনের দিকে পাঠালেন, তখন তাকে নির্দেশ দিলেন গরুর জাকাতে প্রতি তিরিশে একটি এক বছরী নর বা মাদা গরুর বাচ্চা যেন গ্রহণ করে আর প্রতি চল্লিশ গরুতে একটি দুই বছরী গরু যেন গ্রহণ করে।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, দারেমী)

ব্যাখ্যাঃ যে গরু চাষবাস বা গাড়ী টানা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হয়, এর উপরে কোন জাকাত ধার্য হবে না। হাঁ, যদি গরু মাঠে চড়ে বেড়ায় এবং উন্মুক্ত মাঠের ঘাস পানি খেয়ে প্রতিপালিত হয, তাহলে ৩০টি গরুতে ১টি এক বছরী বাচ্চা, ৪০টিতে ১টি দু’বছরী বাচ্চা আর ছাগল-ভেড়া প্রতি ৪০টিতে ১টি দিতে হবে।

(۲۱۳) وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كُنْتُ أَلْبَسُ أَوْضَاحًا مِنْ ذَهَبٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَنْزٌ هُوَ فَقَالَ مَا بَلَغَ أَنْ تُؤَدَّى زَكَاتُهُ فَزُكِّي فَلَيْسَ بكنز (مالك – أبو داود)

(২১৩) “হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, আমি স্বর্ণের আওজাহ্ (বিশেষ ধরনের গহনা) পরতাম, আমি হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল, এটা কি কানজ? (যার ব্যাপারে আল্লাহ্ কুরআনে সতর্ক করেছেন) হুজুর (সঃ) বললেন, যা জাকাত দানের পরিমাণে পৌঁছে এবং তার জাকাত দেয়া হয় তা কানজ নয়।” (মালেক, আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ স্বর্ণের অলঙ্কার হোক বা গচ্ছিত স্বর্ণ হোক সাড়ে সাত তোলা সোনার কেউ যদি মালিক হয় এবং এক বছর মালিকের কাছে থাকে, তাহলে তাকে এর জাকাত দিতে হবে। স্বর্ণের মূল্য ধরে শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে জাকাত আদায় করবে। সোনার জাকাত আদায় করে দিলে পরিমাণ যাই হোক তা কান্জ হবে না। অবশ্য কোন কোন ইমামের মতে ব্যবহারী সোনায় জাকাত দিতে হবে না। ইমাম আজম আবু হানিফার মতে ব্যবহারিক হোক আর না-ই হোক সোনার পরিমাণ সাড়ে সাত তোলা হলে জাকাত দিতে হবে।

জাকাত মোট আটটি খাতে ব্যয় করা চলে, এ খাতগুলো কুরআন দ্বারাই নির্ধারিত। যেমন আল্লাহ্ বলেন,

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينَ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ (التوبة : ٦٠)

“অবশ্য জাকাত পাবে তারা যারা (১) ফকির (২) মিসকীন (৩) জাকাত উত্তলকারী কর্মচারী (৪) মুয়াল্লাফাতুল কুলুব (ইসলামের পক্ষে যাদের মন জয় করা প্রয়োজন) (৫) জাকাত ব্যয় হবে দাসদের দাসত্ব মোচনে (৬) ব্যয় হবে দায়গ্রস্তদের দায় পরিশোধে (৭) ব্যয় হবে আল্লাহর রাহে এবং (৮) মুসাফিরদের জন্য” (সূরা তওবা: ৬০)

উপরোক্ত আটটি খাতে জাকাত ব্যয় করা বৈধ, এর বাইরে নয়। সাত নম্বর খাত আল্লাহর রাহে অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের জন্য যারা জিহাদ করে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা চলে।

জাকাতের অতিরিক্ত কিছু বিবরণ

(১) জাকাত জাকাতযোগ্য মালের উপরে ফরয, না মালিকের উপরে ফরয, এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালিকের মতে জাকাত জাকাতযোগ্য মালের উপরেই ফরয। অন্যদিকে ইমাম শাফয়ী ও ইমাম আহমদ হাম্বলের মত হলো, জাকাত মালের মালিকের উপরে ফরয। সুতরাং সে যদি তার জাকাতযোগ্য মাল হতে জাকাত আদায় না করে অন্য মাল দিয়ে জাকাত দিয়ে দেয় তাহলেও তার জাকাত আদায় হয়ে যাবে।

ইবনে হাজম বলেন, জাকাত মালিকের জিম্মায় ওয়াযিব সুতরাং সোনা-রুপা, ধান-গম ইত্যাদির জাকাত ঐ নির্দিষ্ট সোনা-রুপা বা ধান-গম হতে না দিয়ে মালিক যদি তার অন্য মাল হতে আদায় করে দেয় তাহলেও আদায় হবে। ইবনে হাজম বলেন, রসূলের (সঃ) সময়কাল হতে এ পর্যন্ত এভাবেই লোকেরা জাকাত আদায় করেছে। সুতরাং জাকাত জাকাতযোগ্য নির্দিষ্ট মালের উপরে নয়, বরং মালিকের উপরে ফরয।

(২) যে জমি খেরাজি অর্থাৎ যে জমির খাজনা দেয়া হয়, ঐ জমির ফসলের ওশর দিতে হবে কিনা। এ ব্যাপারেও ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে।

সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা

ফিতরা বলা হয় রোযাদার স্বচ্ছল ব্যক্তি রমযান শেষে ঈদের পূর্বে রোযাকে পবিত্র করার জন্য অভাবী লোককে নিজের ও নিজের পোষ্যদের পক্ষ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য, কিম্বা তার যে মূল্য ওয়াযিব দান হিসাবে দেয় তাকে। প্রকৃত পক্ষে ফিতরা হলো রোযার জাকাত। মালের জাকাত যে রকম মালকে পবিত্র করে তেমনি ফিতরা, ফিতরা দানকারীর রোযাকে পবিত্র করে। ফিতরা দ্বিতীয় হিজরীতে ফরজ করা হয়।

(٢١٤) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ وَالذَّكَرِ وَالْأُنْثَى وَالصَّغِيرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلَاةِ
(بخاري – مسلم)

(২১৪) “হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) দাস, আজাদ নারী-পুরুষ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল মুসলমানের জন্য এক ছা’ খেজুর কিম্বা যব ফিতরা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। হুজুর (সঃ) আরো নির্দেশ দিয়েছেন যে, লোকেরা ঈদগাহে রওনা হওয়ার আগে যেন উহা আদায় করে।” (বুখারী, মুসলিম)

(٢١٥) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَتْ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ فَمَنْ أَيَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ

أبو داود – ابن ماجة)

(২১৫) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) রোযাদারের বেহুদা কথা ও অশ্লীল কাজ হতে রোযাকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদেরকে অন্ন দেয়ার জন্য ছদকায়ে ফিতর বাধ্যতামূলক করেছেন। সুতরাং যে উহা ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করবে উহা ছদকায়ে ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর যে ঈদের নামাজের পরে আদায় করবে উহা হবে সাধারণ দানের মধ্যে হতে একটি দান মাত্র।” (আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ)

ব্যাখ্যাঃ ফিতরার হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করে ইমাম শাফয়ী ও ইমাম আহমদ রায় দিয়েছে যে ফিতরা ফরজ। ইমাম আবু হানিফা বলেছেন ওয়াযিব এবং ইমাম মালেক বলেছেন সুন্নাতে মোয়াক্কাদা।

ফিতরা ঈদগাহে রওয়ানা হওয়ার আগেই আদায় করতে হবে, তবে ঈদের দু’ একদিন আগে আদায় করলে বেশি উত্তম হয়। কেননা আল্লাহর ইচ্ছা মুসলমানদের অভাবী লোকেরাও যেন ঈদের আনন্দে ফিতরা অর্জিত সম্পদ দিয়ে শরীক হতে পারে। ফিতরা ওয়াযিব হওয়ার জন্য ঈদের দিনের স্বচ্ছলতা শর্ত। অর্থাৎ ঈদের দিনে যিনি মোটামুটি স্বচ্ছল থাকবেন তাকেই ফিতরা আদায় করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন ঈদের দিন জাকাত ফরজ হওয়া পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তাকে ফিতরা দিতে হবে।

এক ‘ছা’ তিনসের নয় ছটাকে হয়। ইমাম আবু হানিফার মত হল-গম দিয়ে যদি কেউ ফিতরা দেয়া তাহলে তাকে অর্ধ ছা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বারো ছটাক দিতে হবে, অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য দিয়ে দিলে পূর্ণ এক ছা’ অর্থাৎ তিন সের নয় ছটাক দিতে হবে।

সমস্ত ফিকাহবিদরা এ ব্যাপারে একমত যে ফিতরা শেষ রোযায় ফরজ হয়।

(٢١٦) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ فِي آخِرِ رَمَضَانَ أَخْرِجُوا صَدَقَةَ صَوْمِكُمْ فَرَضَ

رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ شَعِيرٍ أَوْ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ قَمْحٍ عَلَى كُلِّ حُرٍ أَوْ مَمْلُوكٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى صَغِيْرٍ أَوْ كَبِيرٍ
(أبو داود – نسائي)

(২১৬) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি রমযানের শেষের দিকে লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা তোমাদের রোযার ছদকা আদায় কর, রসূল (সঃ) প্রতিটি মুসলমানের পরে সে মুক্ত হোক কি দাস হোক, পুরুষ হোক কি নারী হোক, ছোট হোক বি বড় হোক, ইহা এক ছা’ পরিমাণ খেজুর কিম্বা যব এবং অর্ধ ছা’ পরিমাণ গম নির্ধারণ করেছেন।” (আবু দাউদ, নাছাই) ব্যাখ্যাঃ গমের ফেতরা যে অর্ধ ছা’ উপরোক্ত হাদীস হলো ইমাম আবু হানিফার এ ব্যাপারে দলিল।

অধ্যায় ৪: রোযা

শরীয়তে রোযার গুরুত্ব

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
(البقرة: ۱۸۳)

“হে ঈমানদারেরা, তোমাদের উপরে রোযা ফরজ করা হল যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে, যাতে করে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” (সূরা বাকারা- ১৮৩)

কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা রোযা ফরজ হওয়া প্রমাণিত। ‘ছওম’ বা রোযা একটি অতি পুরাতন আনুষ্ঠানিক ইবাদত যা উম্মতে মুহাম্মদীর পূর্ববর্তী উম্মতের উপরেও ফরয বা বাধ্যতামূলক ছিল।

রোযা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে সুন্নার দলিল হল নিম্নরূপঃ

(۲۱۷) وَعَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصِيَامٍ رَمَضَانَ وَحِجّ الْبَيْتِ (بخاري – مسلم)

(২১৭) “হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ের উপরে ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে। (১) আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই এবং মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দাহ্ এবং রসূল (২) নামাজ কায়েম করা (৪) রমযান মাসের রোযা রাখা এবং (৫) বায়তুল্লাহর হজ করা।

রোজা ফরয হওয়ার ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামের জামানা হতে আজ পর্যন্ত পুরা উম্মতের ইজমা (ঐক্যমত) আছে। সুতরাং উম্মতের ইজমার দ্বারাও রোযার ফরজিয়াত প্রমাণিত। রোযার ফরজিয়াতকে অস্বীকার করা কুফুরী, আর রোযাকে ফরয মেনে পালন না করা ফাসেকী।

রোযা দ্বারা মানুষের আত্মার যেমন কল্যাণ হয়, তেমনি দেহেরও উপকার হয়। রোযা দ্বারা মানুষের আত্মার পবিত্রতা ও চিন্তা শক্তির প্রখরতা বাড়ে। এ জন্যই আবহমান কাল হতে ছুফী-সাধক ও ধর্মভীরু লোকেরা রোযা পালন করে আসছে।

চাঁদ দেখে রোযা রাখা ও চাঁদ দেখে রোযা ছাড়া

(۲۱۸) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ جَاءَ أَعْرَابِي إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ الْهِلَالَ يَعْنِي هِلَالَ رَمَضَانَ فَقَالَ أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ أَتَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ قَالَ نَعَمْ قَالَ يَا بِلالُ أَذَّنْ فِي النَّاسِ أَنْ يَصُوْمُوا غَدًا
(بخاري – مسلم – ترمذي – نسائي)

(২১৮) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন আরাবী বেদুইন নবী করীমের (সঃ) কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, যে আমি রমজানের চাঁদ দেখেছি। হুজুর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই” এর সাক্ষ্য দিচ্ছ? সে বলল হাঁ, হুজুর পূণরায় জিজ্ঞেস করলেন, মুহম্মাদ (সঃ) যে আল্লাহর ‘রসূল’ তুমি কি একথার সাক্ষ্য দাও? সে বলল হাঁ, তখন হুজুর (সঃ) বেলালকে বললেন, লোকদের কাছে ঘোষনা করে দাও আগামীকাল থেকে তারা যেন রোযা রাখে।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি, নিসাঈ)

(۲۱۹) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ تَرَايَ النَّاسُ الْهِلَالَ فَأَخْبَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي رَأَيْتُهُ فَصَامَ وَأَمَرَ النَّاسَ بِصِيَامِهِ
أبو داود – دارمي)

(২১৯) হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন, একদিন লোকেরা রমজানের চাঁদ দেখা দেখি করছিল। আমি গিয়ে রসূলকে (সঃ) খবর দিলাম যে, আমি রোযার চাঁদ দেখেছি, (এ খবর শুনে) হুজুর নিজেও রোযা রাখলেন এবং লোকদেরকে রোযা রাখার হুকুম দিলেন।” (আবু দাউদ, দারেমী)

ব্যাখ্যাঃ রোযার চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজন মুসলমানের সাক্ষ্যই যথেষ্ট, অর্থাৎ একজন মুসলমান যদি এ সাক্ষ্য দেয় যে সে নিজে চাঁদ দেখেছে, তাহলে তার সাক্ষীর উপরে নির্ভর করে রোযা রাখতে হবে ইহাই উপরোক্ত হাদীসের ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়। আর ইহাই ইমামদের অভিমত। তবে আকাশ যদি একেবারেই পরিষ্কার থাকে তবে একজনের সাক্ষী যথেষ্ট হবে না। অবশ্য ঈদের চাঁদের ব্যাপারে ইমামদের মত হলো অন্ততঃ দু’জন বিশ্বস্ত মুসলমানের সাক্ষী প্রয়োজন যদি ২৯শে রমজানে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। যদি আকাশ পরিস্কার থাকে তবে অধিক লোকের সাক্ষ্য ছাড়া চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে না।

(۲۲۰) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَصُوْمُوا حَتَّى تَرَوُا الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً فَلَا تَصُوْمُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاكْمِلُوا
الْعِدَّةَ ثَلاثِينَ (بخاري – مسلم)

(২২০) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা চাঁদ না দেখে যেমন রোযা রাখবে না, তেমনি চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বে না। যদি (মেঘের কারনে) চাঁদ লুকায়িত থাকে, তাহলে (শা’বান মাস) পূর্ণ করবে। অন্য বর্ণনায় আছে হুজুর বলেন, মাস উনত্রিশ রাত্রেও হয় সুতরাং তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবে না। যদি মেঘের কারনে না দেখা যায় তাহলে তোমরা শা’বানের ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।” (বুখারী, মুসলিম)

(۲۲۱) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاثِينَ (بخاري – مسلم)

(২২১) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখবে এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়বে। হাঁ যদি. মেঘাবৃত থাকার কারনে চাঁদ দেখা না যায় তাহলে শা’বান মাসের ত্রিশ দিন পুরা করবে।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ আরবী মাস (চন্দ্র মাস) ২৯ দিনেও হয় আবার ৩০ দিনেও হয়। তাই হুজুর বলেছেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে যদি ২৯শে শা’বান কিম্বা ২৯শে রমজান চাঁদ কেউ না দেখে, তাহলে তোমরা শা’বানের তিরিশ পূর্ণ করে রোযা রাখবে। আর ২৯শে রমজান যদি শাওয়ালের চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে তোমরা রমজান ৩০ দিন পূর্ণ করে ঈদ করবে।

সন্দেহের দিনে রোযা রাখা

(۲۲۲) وَعَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ مَنْ صَامَ الْيَوْمَ الَّذِي يُشَكُ فِيْهِ فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (ابوداؤد – ترمذي)

(২২২) “হযরত আম্মার বিন ইয়াসের (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে রোযা রাখবে সে অবশ্যই আবুল কাশেমের (রসূলের) নাফারমানি করবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযি)

(۲۲۳) وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُوْمُوا لِرُؤْيَتِهِ وَافْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ حَالَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ سَحَابٌ فَكَمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ وَلَا تَسْتَقْبَلُوا الشَّهْرَ اسْتَقْبَالاً (أحمد – نسائي – ترمذي)

(২২৩) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখবে আর চাঁদ দেখে রোযা ছাড়বে। হাঁ যদি তোমাদের ও চাঁদের মাঝখানে মেঘ বাধা হয় (আর মেঘের কারণে চাঁদ না দেখা যায়) তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। আর অহেতুক তোমরা মাসকে এগিয়ে আনবে না।” (আহমদ, নাছাই, তিরমিযি)

ব্যাখ্যা: আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে যদি চাঁদ না দেখা যায় তাহলে ঐ দিনকে يَوْمُ الشَّكِ অর্থাৎ সন্দেহের দিন বলা হয়। কেননা চাঁদ উঠা না উঠার ব্যাপারে ঐ দিনটি সন্দেহযুক্ত হয়ে যায়। এই ধরনের সন্দেহযুক্ত দিনে হুজুর (সঃ) রমজানের রোযা রাখতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। আবার এই ধরনের সন্দেহযুক্ত দিনে চাঁদ উঠেছে ধরে নিয়ে ঈদ করতে নিষেধ করেছেন। এ ধরনের দিন সব সময় চাঁদ মাসের ২৯ তারিখে হয়, কেননা ৩০ দিন পূর্ণ হয়ে গেলে মাস পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকে না।

সেহরী ও ইফতারের বিবরণ

(٢٢٤) وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسَخَّرُوا فَإِنَّ فِي السُّحُوْرِ بَرَكَةٌ
(بخاري – مسلم)

(২২৪) “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাবে কেননা সেহরীতে বরকত রয়েছে।” (বুখারী মুসলিম)

(٢٢٥) وَعَنْ عَمْرِ وَبْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامٍ أَهْلِ الْكِتَابِ أُكْلَةُ السَّحَرِ (أبو داود)

(২২৫) “হযরত আমর বিন আ’স (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আমাদের ও আহলে কিতাবের (ইহুদী, নাছারা) রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো “সেহরী” (অর্থাৎ আমরা উম্মতে মুহাম্মাদীরা সেহরী খেয়ে রোযা রাখি আর আহলে কিতাবরা তাদের রোযায় সেহরী খায় না।)” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ সোবেহ সাদেকের পূর্ব মুহূর্তে রোযা রাখার নিয়তে যা খাওয়া হয় উহাকে সেহরী বলা হয়। প্রকৃত পক্ষে সেহরী খাওয়ার পর সোবেহ সাদেকের পূর্ব মুহূর্ত হতে রোখা শুরু হয়। ইমামরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে সেহরী না খেলে রোযা হয়ে যাবে তবে সুন্নত তরক হবে এবং আহলে কিতাবের রোযার সাথে মোশাবাহা হবে, তাই ক্ষুদা না থাকলেও সামান্য কিছু সেহরী খেয়ে নিবে।

(٢٢٦) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ أَحَدُكُمْ وَالْإِنَاءُ فِي يَدِهِ فَلَا يَضَعُهُ حَتَّى يَقْضِي حَاجَتَهُ مِنْهُ (أبو داود)

(২২৬) “আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যদি এ অবস্থায় আযান শুনে যে খাওয়ার বর্তন তার হাতে, তাহলে সে সেন তার প্রয়োজন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত উহা ছেড়ে না দেয়।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ রসূল (সঃ) সেহরী বিলম্ব করে খেতে বলেছেন, যাতে রোযাদারের রোযা অহেতুক দীর্ঘ না হয়। এমন কি হুজুর বলেছেন আযান কানে আসার পরেও যদি তোমাদের বর্তনে কিছু খানা অবশিষ্ট থাকে তাহলে তোমরা উহা খেয়ে নিবে। অবশ্য সোবেহ সাদেকের একিন হওয়ার পরে আর খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না। অন্য এক হাদীসে আছে রসূল (সঃ) বলেছেন, বেলালের আযান শুনেই তোমরা খানা-পিনা বন্দ করবে না। কেননা বেলাল (সোবহে সাদেকের পূর্বে) রাত্রে ফজরের আযান দেয়। ইবনে উম্মে মাকতুমের আযান পর্যন্ত তোমরা খেতে পার।

(۲۲۷)
وَعَنْ سَهْلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَّا عَجَّلُوا الْفِطْرَ (بخاري – مسلم)

(২২৭) “হযরত সাহল (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যতদিন লোকেরা শীঘ্র ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের সাথে থাকবে।” (বুখারী, মুসলিম)

(۲۲۸) وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَاهُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَاهُنَا وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ (بخاري – مسلم)

(২২৮) “হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যখন এই (পূর্ব) দিক হতে রাত এসে যাবে আর ঐ দিক (পশ্চিম) হতে দিন চলে যাবে এবং সূর্য অস্ত যাবে তখনই রোযাদার ইফতার করবে।” (বুখারী, মুসলীম)

(۲۲۹) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى أَحَبُّ عِبَادِي إِلَيَّ أَعْجَلُهُمْ فِطْرًا (ترمذي)

(২২৯) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে তারাই আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় যারা শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করে।” (তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ সেহরী বিলম্ব করে শেষ ওয়াক্তে খাওয়া এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে আদৌ বিলম্ব না করে ইফতার করা সুন্নত। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরও অহেতুক বিলম্ব না করে ইফতার করার জন্য হুজুর তাকিদ করেছেন, সূর্যাস্তের আগেই ইফতারী সামনে নিয়ে বসবে এবং আযানের ধ্বনি কানে আসার সাথে সাথে ইফতার করবে। আর যেহেতু ইহুদী নাছারারা তাদের রোযায় সেহরী খায়না এবং ইফতার বিলম্ব ক’রে তাই হুজুর সেহরী নিয়মিত খেয়ে এবং জলদী জলদী ইফতার করে আমাদের রোযাকে ইহুদী-নাছারার রোযা হতে পৃথক করতে বলেছেন।

শেষোক্ত হাদীসটি হাদীসে কুদসী, কেননা এতে হুজুর (সঃ) আল্লাহর বাণী উদ্ধৃত করেছেন।

(۲۳۰) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَزَالُ الدِّيْنُ ظَاهِرًا مَا عَجَلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ
أبو داود ابن ماجة

(২৩০) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যতক্ষণ লোকেরা ইফতার শীঘ্র শীঘ্র করবে ততক্ষন দ্বীন বিজয়ী থাকবে। কেননা ইহুদী ও নাছারারা বিলম্ব করে ইফতার করে।” (আবু দাউদ, ইবনে মাযা)

ব্যাখ্যাঃ হাদীসের মর্ম হল এই যে, যে পর্যন্ত আমার উম্মতরা বিজাতীর অনুসরণ করা হতে পরহেজ করবে এবং নিজেদের দ্বীনের উপরে যথাযথ আমল করবে ততক্ষন দ্বীন বিজয়ী থাকবে।

(۲۳۱) وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ زُهْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَفْطَرَ قَالَ اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ (أبو داود)

(২৩১) “হযরত মুয়ায বিন জুহরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, হে আল্লাহ্ আমি তোমার জন্যই রোযা রেখেছি আর তোমার দেয়া রিজিক দ্বারাই ইফতার করছি।” (আবু দাউদ)

(۲۳۲) وَعَنْ حَفْصَةً رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ
ترمذي – أبو داود – نسائي – دارمي)

(২৩২) “হযরত হাফছা (রাঃ) বলেছেন, যে ফজর হওয়ার পূর্বে রোযার নিয়ত করে নাই তার রোযা হবে না।”
(তিরমিজি, আবু দাউদ, নাছাই, দারেমী)

ব্যাখ্যাঃ রোযার ফরজ (রোকন) হল দু’টি- (১) নিয়ত করা, (২) খানা-পিনা ও স্ত্রী সহবাস ত্যাগ করা। এই হাদীস অনুসারে ইমাম মালেক, শাফয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন যে, সোবেহ সাদেকের পূর্বেই রোযাদারকে রোযার নিয়ত করতে হবে। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা আশুরা সম্পর্কীয় এক হাদীসকে অবলম্বন করে বলেন যে, সূর্য ঢলে যাওয়ার আগে নিয়ত করলেও চলবে। (যদি নিয়ত ভুলে যায় এমতাবস্থায়)

যে সব কাজে রোযা ভঙ্গ হয় না

(۲۳۳) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُدْرِكُهُ الْفَجْرُ فِي رَمَضَانَ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ غَيْرِ حُلْمٍ فَيَغْتَسِلُ وَيَصُوْمُ (بخاري – مسلم)

(২৩৩) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, স্বপ্ন দোষ ছাড়াই কখনও কখনও হুজুরের নাপাক থাকা অবস্থায় ফজর হয়ে যেত, অতঃপর হুজুর গোসল করতেন এবং রোযা রাখতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ রোযার রাত্রে স্বামী-স্ত্রী মিলনের (সঙ্গম) পরে সেহরী খাওয়ার আগেই গোসল করে পবিত্র হওয়া উচিত। তবে যদি কেউ সেহরীর আগে গোসল না করতে পারে আর এই অবস্থায় ছোবহে ছাদেক হয়ে যায় তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। তবে জলদি গোসল করে নিবে।

(٢٣٤) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ وَكَانَ أَمْلَكُكُمْ لأَرَيهِ (بخاري – مسلم)

(২৩৪) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন হুজুর (সঃ) রোযা অবস্থায় চুম্বন করতেন এবং (স্ত্রীর) দেহের সাথে দেহ মিলাতেন। আর তিনি ছিলেন তোমাদের চেয়ে অধিক সংযমি।” (বুখারী, মুসলিম)

(٢٣٥) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْمُبَاشَرَةِ لِلصَّائِمِ فَرَخَّصَ لَهُ وَأَتَاهُ آخَرُ فَسَأَلَهُ فَنَهَاهُ فَإِذَا الَّذِي رُخْصَ لَهُ شَيْخٌ وَالَّذِي نَهَاهُ شَابٌ (أبو داود)

(২৩৫) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক সময় একজন লোক রোযাদর ব্যক্তির (আপন স্ত্রীর) শরীরের সাথে শরীর লাগানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর (সঃ) তাকে উহা করার অনুমতি দিলেন, অপর আর এক ব্যক্তি এসে অনুরূপ প্রশ্ন করলেন, হুজুর (সঃ) তাকে নিষেধ করলেন। পরে দেখা গেল যাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে সে বৃদ্ধ আর যাকে নিষেধ করা হয়েছে সে যুবক।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ রোযাদারের জন্য স্ত্রী সঙ্গম রোযা অবস্থায় একেবারেই নিষিদ্ধ। সুতরাং রোযা রাখা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী এমন কোন আচরণ করবে না যাতে বীর্যস্খলন হয়। কিম্বা ধৈর্যচ্যূত হয়ে সঙ্গমে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় হুজুরের একই কাজ অর্থাৎ রোযা রাখা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মোবাসারাতে (কাপড় ছাড়া যৌনাঙ্গ মিলিয়ে শোয়া) বৃদ্ধকে এজাজত দেয়া এবং যুবককে নিষেধ করা এ কারণে যে, বৃদ্ধের যৌন আবেগ স্তিমিত। মোবাসারাতে সে ধৈর্য হারা হবে না। আর যুবকের যৌন আবেগ স্তিমিত নয়, সুতরাং তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনা আছে। হুজুর (সঃ) যেহেতু সবচেয়ে অধিক সংযমী ছিলেন তাই তার রোযা অবস্থায় চুম্বনে বা আলিঙ্গনে ধৈর্যচ্যুতির কোন প্রশ্নই উঠে না, যে কথা হজরত আয়েশা উল্লেখ করেছেন।

(٢٣٦) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ (بخاري – مسلم)

(২৩৬) “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, যদি কেহ রোযা অবস্থায় ভুলে কিছু খায় বা পান করে তার উচিত রোযা পূর্ণ করা, কেননা আল্লাহ্ তাকে খাওয়াইছেন এবং পান করাইয়ছেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ভুলে কিছু খেলে এমনকি পেট ভরে খেলেও রোযা নষ্ট হবে না, সুতরাং কেহ ভুলে খেয়ে ফেললেও সে তার রোযা পূর্ণ করবে।

(۲۳۷) وَعَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَا أُحْصِي يَتَسَوَّكُ وَهُوَ صائم (ترمذي – أبو داود )

(২৩৭) “হযরত আমের বিন রাবিয়া (রাঃ) বলেন, আমি নবী করিমকে (সঃ) রোযা অবস্থায় অসংখ্য বার মেছওয়াক করতে দেখেছি।” (তিরমিজি, আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ রোযা অবস্থায় শুকনা ডাল দিয়ে মেছওয়াক করুক কিম্বা কাঁচা ডাল দিয়ে মেছওয়াক করুক রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে রোযা রেখে কোন রকম গুড়া জাতীয় মাজন বা পেষ্ট দ্বারা দাঁত মাজা মাকরূহ।

(۲۳۸) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ وَهُوَ صَائِمٌ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمَدًا فَلْيَقْضِ
(ترمذي – أبو داود – ابن ماجة)

(২৩৮) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) বলেছেন, রোযা অবস্থায় যার বমি হবে তার রোযা কাজা করতে হবে না, তবে যদি কেহ ইচ্ছা করে বমি করে তাহলে রোযা কাজা করতে হবে।” (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ্)

সফরের অবস্থায় রোযা

(۲۳۹) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَمْرٍو الْأَسْلَمِي قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَأَصُومُ فِي السَّفَرِ قَالَ إِنْ شِئْتَ فَصُمْ وَإِنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْ
بخاري – مسلم – ترمذي)

(২৩৯) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদিন হামজা বিন আমর নবী করীমকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর আমি কি সফরে রেযা রাখবো? হামজা এমন একজন ছাহাবী ছিলেন যিনি বেশী বেশী রোযা রাখতেন। হুজুর জওয়াবে বললেন, সফর অবস্থায় তুমি ইচ্ছা করলে রোযা রাখতে পার আবার নাও রাখতে পার।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি)

(٢٤٠) وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِسِتَّ عَشْرَةَ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ فَمِنَّا مَنْ صَامَ وَمِنَّا مَنْ أَفْطَرَ فَلَمْ يَعِبِ الصَّائِمُ عَلَى الْمُفْطِرِ وَلَا الْمُفْطِرُ عَلَى الصَّائِمِ (مسلم)

(২৪০) “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একবার রোযার ১৬ তারিখে আমরা রসূলের (সঃ) সাথে এক যুদ্ধাভিযানে ছিলাম, ঐ সময় আমাদের মধ্যে কেহ কেহ রোযা রেখেছিল আবার কেহ রোযা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের মধ্যের রোযাদাররা যেমন বে রোযাদারদের দোষ ধরেনি তেমনি বে বেরোযাদাররা রোযাদারকে দোষারোপ করেনি। (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ উপরে উল্লেখিত হাদীস হতে জানা যায় যে, সফরে রোযা রাখা না রাখা মুসাফিরের ইচ্ছা, ইচ্ছা করলে সে রোযা রাখতে পারে আবার নাও রাখতে পারে। তবে যদি সফরে রোযা না রাখে তাহলে অন্য সময় উহার কাজা আদায় করতে হবে।

(٢٤١) وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَرَأَى زِحَامًا وَرَجُلاً قَدْ ظُلِلَ عَلَيْهِ فَقَالَ مَا هَذَا فَقَالُوْا صَائِمٌ فَقَالَ لَيْسَ مِنَ الْبَرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ (بخاري – مسلم)

(২৪১) “হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, একবার রসূল (সঃ) এক সফরে ছিলেন, (মনজিলে অবস্থানের সময়) একস্থানে লোকের ভীড় দেখলেন এবং দেখলেন এক ব্যক্তির উপরে ছায়া দেয়া হয়েছে। হুজুর (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার? লোকেরা বলল এ রোযাদার, হুজুর (সঃ) বললেন সফরে এ অবস্থায় রোযা রাখা কোন নেক কাজ নয়।” (বুখারী, মুসলীম)
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের মর্মানুসারে যে সফরে রোযাদারের অতিরিক্ত কষ্ট হয় তাতে রোযা না রাখা ভাল। কেননা এক সফরে শেষ বেলায় কয়েজকজন ছাহাবী রোজা রেখে বেহুস হয়ে পড়লে হুজুর (সঃ) বললেন, এরা গুনাহর কাজ করেছে, প্রকৃতপক্ষে যার সফরে রোযা রাখা কষ্টকর, সমস্ত ইমামগণ তার ব্যাপারে একমত যে তার রোযা না রাখা উত্তম। তবে যার সফরে রোযা রাখা কষ্টকর নয়, তার সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ও ইমাম শাফয়ীর মত হল তার রোযা রাখা উত্তম। পক্ষান্তরে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম আওযায়ী ও ইমাম ইসহাকের মত হল, রোযা না রাখা উত্তম। (নায়লুল আওতার)

অধ্যায় ৫: হজ

হজের বিবরণ

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً
آل عمران (۹۷)

“যার পথের সামর্থ আছে তার পক্ষে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লার হজ করা ফরজ।” (আল ইমরান- ৯৭)

وَأَتِمُوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ (البقرة : ١٩٦)

“আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও উমরা পূর্ণ কর।” (বাকারা – ১৯৬)

হজ ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে একটি। রসূল (সঃ) মদীনা হিজরত করার পরে হিজরী ষষ্ঠ সনে হজ ফরয হয়। আবার কারো কারো মতে নবম হিজরীতে হজ ফরজ হয়। হজ জিন্দেগীতে একবার করাই ফরয। নিম্নোক্ত পাঁচটি শর্ত হজের জন্য পাওয়া জরুরী। (১) মুসলমান হওয়া, (২) বালেগ হওয়া, (৩) বুদ্ধি ঠিক থাকা, (৪) স্বাধীন হওয়া (কৃতদাস না হওয়া), (৫) সামর্থবান হওয়া (আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে)। ইমাম আবু হানিফা, মালেক এবং আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে হজ ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা অপরিহার্য্য। অবশ্য বিলম্বে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। ইমাম শাফয়ী, আওযায়ী ও ছাওরীর মত হল হজ বিলম্বিত ফরয। সুতরাং বিলম্ব করে আদায় করলেও ক্ষতি নাই। উপরোক্ত পাঁচটি শর্ত পাওয়া গেলে পুরুষ মহিলা উভয়ের উপরেই হজ ফরয হবে। অবশ্য মহিলাদের জন্য একটি অতিরিক্ত শর্ত হল এই যে, মোহরেম সফর সঙ্গী হতে হবে।

(٢٤٢) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرِضَ عَلَيْكُمُ الْحَجُّ فَحَجُّوا فَقَالَ رَجُلٌ أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللهِ فَسَكَتَ حَتَّى قَالَهَا ثَلَاثًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ ثُمَّ قَالَ ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوهُ (مسلم)

(২৪২) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদিন রসূল (সঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষন দিতে গিয়ে বললেন, হে মানব মণ্ডলী, তোমাদের উপরে হজ ফরজ করা হয়েছে; সুতরাং তোমরা হজ কর। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল (সঃ) ইহা কি প্রতি বছরের জন্য? হুজুর চুপ থাকলেন এমনকি লোকটি তিনবার ঐ একই প্রশ্ন করল, তখন হুজুর (সঃ) বললেন, দেখ আমি যদি হাঁ বলতাম, তাহলে উহা তোমাদের উপরে প্রতি বছরের জন্য ফরয হয়ে যেত। কিন্তু তখন তোমাদের জন্য উহা আদায় করার সাধ্য হত না। অতঃপর হুজুর বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা বেশী বেশী প্রশ্ন করার এবং তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারণে ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং আমি যখন কোন বিষয়ের নির্দেশ দেই তোমরা তোমাদের সাধ্যমত উহা করবে আর যা নিষেধ করি তা ত্যাগ করবে। (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ অন্য হাদীসে আছে প্রশ্নকারী ছাহাবী ছিলেন হজরত আক্রা বিন হাবিস। হাদীসে হজ ফরজ হওয়ার প্রসঙ্গ ছাড়াও কয়েকটি বিষয় অবহিত হওয়া যায়, প্রথমত: হলো নবী করীমকে (সঃ) আল্লাহ্ শরীয়তের ব্যাপারে কোন কোন ক্ষেত্রে মৌলিক নির্দেশ দেওয়ার অধিকারও দিয়েছিলেন। সুতরাং হুজুরের নির্দেশও শরীয়তের উৎস। দ্বিতীয়ত: দ্বীন শরীয়তের ব্যাপারে অহেতুক খুঁটে খুঁটে অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে নাই।
কারণ, এতে জটিলতা বাড়ে। যেমন, আল্লাহ্ বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا لَا تَسلُّلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسْؤُكُمْ (المائدة – ١٠١)

“হে ঈমানদারেরা অহেতুক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করবে না কেননা জওয়াব দিলে তোমাদের অসুবিধা হবে।” (আল মায়েদা- ১০১)

(٢٤٣) وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ خَرَجْنَا مَعَ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِحَجٍ وَعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ وَأَهَلَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْحَجِّ فَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ فَحَلَّ وَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ أَوْ جَمَعَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لَمْ يَحِلُّوا حَتَّى كَانَ يَوْمُ النَّحْرِ
(بخاري – مسلم)

(২৪৩) “হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা বিদায়ী হজের বছর রসূলের (সঃ) সাথে সফরে বের হয়ে পড়লাম, আমাদের মধ্যে কেহ কেহ শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। আবার কেহ কেহ হজ ও উমরাহ্ উভয়ের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। কিন্তু রসূল (সঃ) শুধু হজের ইহ্রাম বেঁধেছিলেন। সুতরাং যারা শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা (তওয়াফ ও ছায়ীর পর) ইহরাম খুলে ফেললেন। আর যারা শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধেছিলেন এবং হজ ও উমরার ইহরাম একত্রে বেঁধেছিলেন তাঁরা কোরবানীর দিন (১০ই জিলহজ্ব) পর্যন্ত ইহ্রাম খুললেন না।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ এটা ছিল দশম হিজরীর ঘটনা। কেননা রসূলের (সঃ) বিদায়ী হজ ছিল দশম হিজরীতে। আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, হজ তিন প্রকারের হয়ে থাকে। (১) কেরান, কেরান হজ বলা হয় ঐ হজকে যে হজে হাজী যে
যে হজে হাজী মিকাত হতে হজ ও উমরা উভয়ের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধে আর বলে,
اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ بِحَجِّ وَعُمْرَةٍ

আল্লাহ আমি হজ ও উমরার জন্য হাজির হয়েছি।” (২) ইফরাদ, ইফরাদ ঐ হজকে বলা হয় যে হজে হাজী মিকাত হতে শুধু মাত্র হজের নিয়তে ইহ্রাম বাঁধে। উপরোক্ত উভয় হাজীকে ১০ই জিলহজ অর্থাৎ কোরবানীর দিন পর্যন্ত ইহ্রাম পরা অবস্থায় থাকতে হবে। তবে প্রথমোক্ত অর্থাৎ কেরান হাজী মক্কায় পৌছে উমরা হজের আগেই সমাধা করবে। আর ইফরাদের নিয়তকারী ব্যক্তি হজ সমাধা করে তার পরে উমরা করবে। এবং তার জন্য নুতন করে ইহরাম বাঁধবে। (৩) ‘তামাতু’ হজ, যে হাজী তামাতু হজের নিয়ত করেছে সে মিকাত হতে শুধু উমরার নিয়তে ইহ্রাম বাঁধবে এবং মক্কায় পৌঁছে তওয়াফ-ছায়ীর মাধ্যমে উমরা সমাধা করে মাথা মুন্ডন বা চুল কেটে ইহ্রাম খুলে হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর ৮ই জিলহজ হজের নিয়তে নূতন করে (মক্কা শরীফে) ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওয়ানা হয়ে যাবে।

(٢٤٤) وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ وَقْتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلِأَهْلِ الشَّامِ الْجُحْفَةَ وَلِأَهْلِ نَجْرٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلِأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ فَهُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُهُ مِنْ أَهْلِهِ وَكَذَاكَ وَكَذَاكَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ يُهِلُّونَ مِنْهَا (بخاري – مسلم)

(২৪৪) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) মদীনা বাসীদের জন্য “জুলহুলাইফা” শামবাসীদের জন্য “জুহফা” (রাবেগ) নাজদ বাসীদের জন্য “কারনুল-মানজিল” এবং ইয়ামেন বাসীদের জন্য “ইয়ালামলামকে” মিকাত নির্ধারণ করেছেন। এসব স্থান (মিকাত হল) উপরে বর্ণিত লোকদের জন্য। আর এ সব জায়গার লোক ব্যতীত যারাই ঐ সব জায়গা অতিক্রম করে আসবে হজ ও উমরার নিয়তে তাদের জন্যও। আর যারা মিকাতের ভিতরে (মক্কার কাছে) অবস্থান করে তাদের ইহরামের স্থান তাদের বাড়ী। এভাবে হতে হতে মক্কাবাসীরা মক্কা শরীফ হতে ইহরাম বাঁধবে।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ মিকাত বলা হয় ঐ নির্দিষ্ট স্থানকে যেখানে থেকে ইহ্রাম না পরে মক্কার দিকে যাওয়া নিষেধ। হজরত ইমাম আবু হানিফার মতে মিকাতের ভিতরের অধিবাসীদের ছাড়া আর সকলকেই ইহ্রাম বেঁধে মিকাত অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু ইমাম শাফয়ীর মত হল উমরা ও হজের নিয়ত কারীকেই মিকাতে ইহরাম বাঁধতে হবে অন্যকে নয়।

আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ

(٢٤٥) وَعَنْ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَدْ حَجَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ أَوَّلَ شَيْءٍ بَدَأَ بِهِ حِيْنَ قَدِمَ مَكَّةَ أَنَّهُ تَوَضَّأَ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةٌ ثُمَّ حَجَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَكَانَ أَوَّلُ شَيْءٍ بَدَأَ بِهِ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ ثُمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةٌ ثُمَّ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ثُمَّ عُثْمَانُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مِثْلَ ذَالِكَ
(بخاري – مسلم)

(২৪৫) “হযরত উরওয়া বিন জুবায়ের (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) হজ করেছিলেন, আর সে ব্যাপারে হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, হুজুর যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন তখন প্রথম যে কাজটি তিনি করলেন তা হল তিনি অজু করলেন। অতঃপর বায়তুল্লার তাওয়াফ করলেন, তবে উহাকে উমরায় পরিণত করলেন না। (অর্থাৎ ইহ্রাম খুললেন না) অতঃপর হজরত আবু বকর হজ করলেন তিনিও প্রথমে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন তবে উহাকে তিনিও উমরায় পরিণত করলেন না। অতঃপর হজরত উমর ও হজরত উসমান (রাঃ) অনুরূপ করেছেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ইহরামের সহিত মক্কায় প্রবেশের পর সর্ব প্রথম যে কাজ করতে হয় উহা আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ। এই তাওয়াফ সুন্নাত। তবে উমরার নিয়তে যিনি প্রবেশ করবেন তার জন্য এ তাওয়াফ ওয়াযিব। “তওয়াফ” বলা হয় আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে তার চারদিক হতে সাতবার চক্কর লাগানোকে। এই তওয়াফ হজরে আসওয়াদ হতে আরম্ভ করতে হবে এবং ডান দিকে ঘুরতে হবে। প্রথম তিন চক্করে জোরে চলতে হবে এবং পরবর্তী চার চক্কর আস্তে। হাজীরা মক্কা পৌছেই প্রথম যে তাওয়াফ করে উহাকে “তাওয়াফে কুদুম” বলে, ইহা সুন্নত। অতঃপর জিলহজের দশ তারিখে (হজের সময়) যে তাওয়াফ করে ইহাকে “তাওয়াফে জিয়ারত” বা তাওয়াফে ইফাদা বলা হয়, ইহা ফরজ। এরপর বিদায় কালে যে তাওয়াফ করা হয়ে থাকে উহাকে “তাওয়াফুল বিদায়া” বলে, উহা ওয়াজিব। মক্কায় অবস্থানকালে অন্যান্য নফল ইবাদতের চেয়ে তাওয়াফে ছওয়াব বেশী।

তাওয়াফ, তাওয়াফের নামাজ ও সাফা-মারওয়ার ছায়ী

(٢٤٦) عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا طَافَ فِي الْحَجِّ أَوِ الْعُمْرَةِ أَوَّلَ مَا يَقْدِمُ سَعَى ثَلَاثَةَ أَطْوَافٍ وَمَشَى أَرْبَعَةٌ ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ يَطُوفُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ (بخاري – مسلم)

(২৪৬) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, হুজুর (সঃ) হজ বা উমরা উপলক্ষে মক্কায় প্রথমে পৌছিয়াই তিন পাক জোরে চলতেন এবং চার পাক স্বাভাবিক ভাবে চলতেন। অতঃপর (মাকামে ইব্রাহিমে) দু’রাকায়াত নামাজ পড়তেন। এরপর সাফা-মারওয়ার মধ্যে ছায়ী করতেন।” (বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ তাওয়াফ কারীর জন্য তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমে দাঁড়িয়ে দু’রাকায়াত নামাজ পড়া ওয়াযিব। ইমামদের মতে এ নামাজ সব সময়ই পড়া চলে। তবে ইমাম আবু হানিফার মত হল, হারাম ওয়াক্তে পড়া চলবে না। অপেক্ষা করতে হবে। হাজীদের জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে সাতবার ছায়ী করা ফরজ। তবে ইমাম আবু হানিফার মতে ইহা ওয়াযিব।

(٢٤٧) وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَخَلَ مَكْةً فَأَقْبَلَ إِلَى الْحَجَرِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ أَتَى الصَّفَا فَعَلَاهُ حَتَّى يَنْظُرَ إِلَى الْبَيْتِ فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَجَعَلَ يَذْكُرُ اللَّهَ مَا شَاءَ وَيَدْعُوهُ (أبو داود)

(২৪৭) “হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) (মদীনা হতে) রওয়ানা হয়ে মক্কায় পৌঁছালেন, অতঃপর “হাজরে আসওয়াদের” দিকে অগ্রসর হয়ে উহাকে চুমু দিলেন, অত:পর তিনি কাবা ঘরের তাওয়াফ করলেন, এর পর তিনি ছাফা পাহাড়ে চড়লেন যেখান থেকে তিনি বায়তুল্লাহ দেখতে ছিলেন, আর হাত উঠিয়ে নিজের ইচ্ছা মত আল্লাহর জিকির ও দোয়া করতে ছিলেন।” (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসেও দেখা যায় যে রসূল (সঃ) মক্কায় পৌঁছে প্রথম তাওয়াফ করতেন। অতঃপর সাফা-মারওয়া ছায়ী করতেন এবং তাওয়াফে ও ছায়ীতে তিনি জেকের ও দোয়া করতেন। তবে নির্দিষ্ট কোন জেকের কিম্বা দোয়া নয়। সুতরাং তাওয়াফ ও ছায়ীতে যে কোন দোয়া পড়তে পারে।

আরাফাত ও মুজদালেফায়ে অবস্থান ও মিনায়ে কোরবানী

(٢٤٨) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَحَرْتُ هَاهُنَا وَمِنَى كُلُّهَا مَنْحَرٌ فَانْحَرُوا فِي رِجَالِكُمْ وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَالْمُزْدَلِفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ (مسلم)

(২৪৮) “হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল (সঃ) বলেছেন, আমি এখানে কোরবানী করেছি আর মিনার সর্বত্রই কোরবানীর জায়গা। সুতরাং তোমরা (মিনায়) তোমাদের অবস্থানের জায়গায় কোরবানী করতে পার। আমি (আরাফাতে) এখানে অবস্থান করেছি আর আরাফাত সবটাই অবস্থান স্থল। আর আমি (মুজদালেফায়ে) এখানে অবস্থান করেছি আর মুজদালেফার পুরোটাই অবস্থানের জায়গা।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ ১০ই জিলহজ হাজী সাহেবানরা প্রত্যুশে মুজদালেফা হতে রওয়ানা হয়ে এসে “জামরায়” শয়তানকে পাথর মারার পরে কোরবানী করে। এই কোরবনী ইমাম আবু হানিফার মতে ওয়াযিব ও হজের একটি অংগ। এ কোরবানী মিনার যে কোন জায়গায় করলেই হবে। এ কথাই রসূল (সঃ) বলেছেন। হজের ফরজ বা রোকন সমূহের মধ্যে প্রধান রোকন হল ৯ই জিলহজ সূর্য ঢলার পরে রাত পর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য আরাফাতে অবস্থান। এখানে এক আযানে এবং পৃথক পৃথক ইকামতে প্রথমে জামায়াতের সহিত দুই রাকায়াত জোহরের ফরজ নামাজ এবং সাথে সাথে ইকামত দিয়ে দুই রাকায়াত আছরের নামাজ একত্রে পড়তে হবে। হুজুর (সঃ) এভাবেই পড়েছেন। হাদীসে হুজুর বলেছেন যে, পুরা আরাফাতের ময়দানটাই উকুফ বা অবস্থান স্থল, সুতরাং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এর যে কোন খানেই অবস্থান করুক ফরজ আদায় হয়ে যাবে। অনুরূপ ভাবে ৯ই জিলহজ সূর্যাস্তের পর আরাফাত হতে রওয়ানা হয়ে (মক্কা ও মিনার পথে) মুজদালেফায়ে এসে হাজীরা একত্রে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে মুজদালেফায় সোবেহ সাদেক হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করে। ইমাম আবু হানিফার মতে এ অবস্থান ওয়াযিব এবং হজের একটা অঙ্গ। হাদীসে হুজুর বলেছেন মুজদালেফা পুরাটাই অবস্থানের জায়গা এবং হাজীরা এর যেকোন খানে অবস্থান করবে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

(٢٤٩) وَعَنْ نَافِعٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُولُ مَنْ لَمْ يَقِفْ بِعَرَفَةَ مِنْ لَيْلَةِ الْمُزْدَلِفَةِ قَبْلَ أَنْ يَطْلَعَ الْفَجْرُ فَقَدْ فَاتَهُ الْحَجُّ وَمَنْ وَقَفَ بِعَرَفَةً مِنْ لَيْلَةِ الْمُزْدَلِفَةِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَطْلَعَ الْفَجْرُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ (مؤطا إمام مالك)

(২৪৯) “হযরত নাফে (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর বলতেন, মুজদালেফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে কেহ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে পারল না তার হজ হয়নি। হাঁ যে সোবেহ সাদেকের পূর্বে মুজদালেফার রাত্রে আরাফাতে অবস্থান করল সে হজ পেয়ে গেল।” (মুয়াত্তা, ইমাম, মালেক)

ব্যাখ্যাঃ যদি কেউ কোন কারণে ৯ই জিলহজ দিনে অর্থাৎ সূর্য ঢলার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে না পৌঁছাতে পারে তাহলে মুজদালেফার (৯ই জিলহজ দিবাগত) রাতের যে কোন অংশেও যদি আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে অবস্থান করতে পারে তাহলে তার হজ আদায় হবে। সূর্য ঢলার পরে যে আরাফাতে অবস্থান করবে তাকে সূর্য অস্ত পর্যন্ত অবস্থানসময় দীর্ঘ করতে হবে এবং সূর্য অস্তের পরে মুজদালেফার দিকে রওয়ানা হবে। কিন্তু যে দিনে অবস্থান করতে সক্ষম হল না তার পক্ষে ১০ই জিলহজ রাত্রে কিছুক্ষন অবস্থান করলেও “উকুফ” হয়ে যাবে।

জামরায় পাথর মারা

(٢٥٠) وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَمَى الْجَمْرَةَ بمِثْلِ حَصَى الْخَذَفِ (مسلم)

(২৫০) “হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রসূলকে (সঃ) খজফের (খেজুর দানার) ন্যায় কঙ্কর জামরায় মারতে দেখেছি।” (মুসলিম)

(٢٥١) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَمَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَمْرَةَ يَوْمَ النَّحْرِ ضُحًى وَأَمَّا بَعْدَ ذَالِكَ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ (بخاري – مسلم)

(২৫১) “হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) ঈদুল আজহার দিনে দুপুরের আগে জামরায় কঙ্কর মেরেছেন, আর পরে (দু’দিন) মেরেছেন যখন সূর্য ঢলে পড়েছে।” (বুখারী, মুসলিম)

(٢٥٢) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى فَجَعَلَ الْبَيْتَ عَنْ يَسَارِهِ وَمِنِّي عَنْ يَمِينِهِ وَرَمَى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا رَمَى الَّذِي أُنْزِلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ (بخاري – مسلم)

(২৫২) “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি জামরাতুল কুবরার নিকট উপস্থিত হলেন এবং বায়তুল্লাহকে বাম দিকে এবং মিনাকে ডান দিকে রেখে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন আর প্রতি কঙ্কর নিক্ষেপে আল্লাহু আকবার বলতেন। এরপর বললেন, যাঁর উপরে সুরা বাকারা নাজিল হয়েছে তিনি এরূপ কঙ্কর মেরেছেন।”
(বুখারী, মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ হাজিরা ১০ই জিলহজ্জ রাত্রে মুজদালেফায় অবস্থান করে ভোরে মিনায় এসে ১০ই জিলহজ সকাল বেলায় “জামরাতুল কুবরা” বা বড় জামরায় সাতটি কঙ্কর মেরে এসে কোরবানী করে, অতঃপর মস্তক মুড়িয়ে চুল কেটে ইহরাম খুলে ফেলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। অর্থাৎ হালাল হয়ে যায়। অতঃপর পরবর্তী দু’দিন কিম্বা তিন দিন মিনায় অবস্থান করে সূর্য ঢলার পর তিনটি জামরায়ই দৈনিক সাতটি করে কঙ্কর মারতে হয়, কিন্তু ১০ই জিলহজ্জ শুধু একটি জামরায় পাথর মারতে হয়। হাদীসে ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রথম দিনের কঙ্কর মারার কথা বলেছেন। জামরায় পর পর তিন দিন কিম্বা চার দিন কঙ্কর মারা ওয়াযিব।

কোরবনীর বিবরণ

(٢٥٣) وَعَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ نَحَرَ بَعْضَ هَدْيهِ وَنَحَرَ غَيْرُهُ بَعْضَهُ
(مؤطا إمام مالك)

(২৫৩) “হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূল তার হাদীর (কোরবানীর জানোয়ারের) কতক নিজে জবাই করেছেন আর কতক অন্যরা জবাই করেছেন।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)

(٢٥٤) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ ذَبَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا بَقَرَةً يَوْمَ النَّحْرِ (مسلم)

(২৫৪) “হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রসূল (সঃ) কোরবানীর দিনে (মিনায়) হযরত আয়েশার (রাঃ) পক্ষ হতে একটি গরু জবেহ করেছিলেন।” (মুসলিম)

(٢٥٥) وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ نَحَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَّةِ الْبُدْنَةَ عَنْ سَبْعَةِ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ (مسلم)

(২৫৫) “হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, আমরা হুদায়বীয়ার বছর রসূলের (সঃ) সাথে সাত জনের পক্ষ হতে একটি উট এবং অনুরূপ ভাবে সাতজনের পক্ষ হতে একটি গরু কোরবানী করেছি।” (মুসলিম)

ব্যাখ্যাঃ “হাদী” বলা হয় কোরবানীর ঐ জানোয়ারকে যাকে হাজীরা মিনায় কোরবানীর করার জন্য হজের সময় সাথে নিয়ে আসে। সাধারনভাবে ছাহেবে নেছাব স্বচ্ছল লোকের উপরে কোরবানী করা ওয়াযিব। কেরাবানীর পরই হজ সম্পাদনকারী মাথা মুন্ডাবে।

মাথা মুন্ডানো

(٢٥٦) وَعَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَلَقَ رَأْسَهُ فِي حُجَّةِ الْوِدَاعِ وأُنَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ وَقَصَّرَ بَعْضُهُمْ (بخاري – مسلم)

(২৫৮) “হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রসুল (সঃ) এবং তার কতক ছাহাবী বিদায়ী হজে মাথা মুড়িয়ে ফেলেছিলেন আর কতকে চুল ছাঁটিয়ে ফেলেছিলেন।” (বুখারী, মুসলীম)

(٢٥٧) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ الْحَلْقُ إِنَّمَا عَلَى النِّسَاءِ التَّقْصِيرُ
أبو داود – ترمذي – الدارمي)

(২৫৭) “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসুল (সঃ) বলেছেন (হজ বা উমরায়) স্ত্রীলোকেরা মাথা মুন্ডাবে না বরং সামান্য চুল কাটবে।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, দারেমী)

ব্যাখ্যাঃ হজের করনীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে কেরাবানীর পরে মাথার চুল কামিয়ে ফেলা কিম্বা কেটে ফেলা ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য মাথা মুড়ানো প্রয়োজন নেই তারা চুলের অগ্রভাগ হতে সামান্য কাটলেই ওয়জিব আদায় হয়ে যাবে।

(٢٥٨) وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمَرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَفَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِمِنِّى لِلنَّاسِ يَسْأَلُونَهُ فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ لَمْ أَشْعُرْ فَحَلَقْتُ قَبْلَ أَنْ أَدْبَحَ فَقَالَ إِذْبَحْ وَلَا حَرَجَ فَجَاءَ آخَرُ فَقَالَ لَمْ أَشْعُرْ فَنَحَرْتُ قَبْلَ أَنْ أَرْمِيَ فَقَالَ ارْمٍ وَلَا

حَرَجَ فَمَا سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ قُدَمَ وَلَا أُخْرَ إِلَّا قَالَ افْعَلْ وَلَا حَرَجَ (بخاري – مسلم)

(২৫৮) “হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসুল (সঃ) বিদায় হজে মিনায় এসে এক জায়গায় অবস্থান করলেন যাতে লোকেরা তাকে মাছয়ালা জিজ্ঞেস করতে পারে। ফলে এক ব্যক্তি এসে বলল, হুজুর আমি না জেনে কোরবানী করার আগে মাথা মুড়িয়ে ফেলেছি। হুজুর বললেন, কোন অসুবিধা (গোনাহ) নাই এখন তুমি কোরবানী কর। অন্য একজন এসে বলল, হুজুর আমি না জেনে কঙ্কর মারার আগে কোরবানী করে ফেলেছি, হুজুর বললেন কোন অসুবিধা (গোনাহ) হয়নি। এখন তুমি গিয়ে কঙ্কর মারো। মোট কথা ঐদিন হুজুরকে কোনটা আগে কোনটা পরে করা হয়েছে বলে যত প্রশ্ন করা হয়েছিল হুজুর সবটার ব্যাপারে একই জওয়াব দিয়েছেন, “কোন সমস্যা নাই এখন গিয়ে বাকীটা কর।” (বুখারী, মুসলীম)

ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত হাদীস মর্মে ইমাম শাফয়ী বলেন হজের উপরোক্ত ওয়াযিব কাজ সমূহের মধ্যে তরতীব রক্ষা করা সুন্নত। সুতরাং তরতীব রক্ষা না করার সুন্নত তরক হয়েছে, হজ হয়ে যাবে, দম দিতে হবে না। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা ও মালেক বলেন তরতীব রক্ষা করা ওয়াযিব। সুতরাং গুনাহ না হলেও ওয়াযিব তরকের জন্য দম দিতে হবে।

-: সমাপ্ত :-

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South