রিয়াদুস সালেহীন – প্রথম খণ্ড
ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়াহ আন-নববী (রহ)
রিয়াদুস সালেহীন [প্রথম খণ্ড]
ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়াহ আন-নববী (রহ)
অনুবাদে
মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মাদ আলী
মাওলানা মুহাম্মদ মূসা
মাওলানা শামছুল আলম খান
সম্পাদনায়
মাওলানা আবদুল মান্নান তালিব
মাওলানা মোঃ আতিকুর রহমান
মাওলানা মুহাম্মদ মূসা
বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা ।
প্রকাশক
ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া
প্রসঙ্গ কথা
প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পরেও আল কুরআন সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত ও অবিকৃত অবস্থায় আমাদের সামনে রয়ে গেছে। ঠিক তেমনি হাদীসের ব্যাপারেও পরিপূর্ণ জোরের সাথে এ কথা বলা যায়।
হাদীস বিকৃত করার বহুতর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু উম্মাতে মুহাম্মাদী অসাধারণ পরিশ্রম, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও ত্যাগের বিনিময়ে সত্য, নির্ভুল ও যথার্থ হাদীসগুলোকে বাছাই করে সংরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়েছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাত ছাড়া অন্য কোনো নবীর উম্মাত তাদের নবীর সমগ্র জীবন প্রণালী, বাণী, কার্যক্রম, কর্মতৎপরতা এবং তাঁর প্রতি মুহূর্তের চলাফেরা, প্রতিটি পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত এমন নিষ্ঠা সহকারে নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেনি।
রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনকাল থেকে হাদীস লেখা হতে থাকে। তাঁর তিরোধানের দুই-তিন শত বছরের মধ্যেই সমস্ত হাদীস যাচাই হয়ে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে আসে। প্রথম দিকে তাবিঈ ও তাবে-তাবিঈগণ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিতে পৃথক পৃথক গ্রন্থাকারে হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। এগুলোকে জামে ও সুনান বলা হয়। এভাবে অনেকগুলো মৌলিক হাদীসগ্রন্থ রচিত হয়। এরপর একদল মুহাদ্দিস এগিয়ে আসেন। তাঁরা কেউ সাহাবীদের নাম অনুসারে হাদীসগুলোকে সাজান এবং এক একজন সাহাবী বর্ণিত হাদীসগুলোকে এক এক অধ্যায়ে স্থান দেন। আবার কেউ নিজের উস্তাদ অর্থাৎ সর্বশেষ রাবীর নাম অনুসারে হাদীসগুলো সাজান। আবার একদল মুহাদ্দিস এক এক বিষয়ের হাদীসগুলো এক একটি বিভাগে লিপিবদ্ধ করেন। এগুলোকে বলা হয় যথাক্রমে মুসনাদ, মু’জাম ও রিসালাহ। এগুলো সবই হাদীসের মৌলিক গ্রন্থ। অতঃপর একদল মুহাদ্দিস বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ থেকে বিষয় ভিত্তিক হাদীস সংকলন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এই সংকলনগুলির মধ্যে ইমাম নববীর রিয়াদুস সালেহীন অনন্য সাধারণ মর্যাদার অধিকারী।
রিয়াদুস সালেহীনের বৈশিষ্ট্য
ইমাম নববী (র) তাঁর দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন। সিহাহ সিত্তাহসহ আরো কয়েকটি প্রথম পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ থেকে তিনি এই হাদীসগুলো আহরণ করেছেন। রিয়াদুস সালেহীনে কোনো প্রকার ‘যঈফ’ হাদীসের স্থান নেই। এক একটি বিষয়ের হাদীসের জন্য এক একটি অনুচ্ছেদের শুরুতে প্রথমে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কিত আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াত সংযুক্ত করা হয়েছে, তারপর উদ্ধৃত হয়েছে সেই বিষয় সম্পর্কিত প্রামাণ্য হাদীসগুলো। হাদীসের শেষে হাদীসের নির্ভরযোগ্যতা কোন পর্যায়ের তা বর্ণনা করা হয়েছে এবং এই সংগে হাদীসের কিছুটা ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের জীবনের দৈনন্দিন বিষয়গুলো সম্পর্কিত চমকপ্রদ হাদীসগুলো এমন যাদুকরী পদ্ধতিতে এখানে সংযোজিত হয়েছে যার ফলে সেগুলো অধ্যয়ন করার সাথে সাথেই মনোযোগী পাঠকের মনের গভীরতম প্রদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং কোনো আগ্রহী পাঠক তার প্রভাব গ্রহণ না করে থাকতে পারেনা।
অধ্যায়ের শুরুতে আল কুরআনের আয়াত এবং তারপর বিষয় সংশ্লিষ্ট হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, আল কুরআনের সাথে হাদীসের সম্পর্ক কত গভীর। হাদীস যে আল কুরআনেরই ব্যাখ্যা এ কথা সুস্পষ্টভাবে এখানে প্রমাণিত হয়। হাদীসের সাহায্য ছাড়া আল কুরআনের সঠিক অর্থ অনুধাবন করা সম্ভব নয় এবং আল কুরআনের মৌল বিধানসমূহের প্রায়োগিক পদ্ধতি হাদীসেই বিধৃত হয়েছে। আল কুরআনের আয়াতের পরপরই হাদীসগুলোকে সাজাবার মাধ্যমে লেখক এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন। এটি এ কিতাবের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
এ গ্রন্থে ইমাম নববী (র) আল কুরআনের ৪২৩টি আয়াত এবং ১৯০৩টি হাদীস সংযোজিত করেছেন। বিষয়বস্তু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি বৈশিষ্ট্যের স্বাক্ষাত রেখেছেন। এমন সব বিষয়বস্তু সম্বলিত হাদীস এখানে সংযোজিত করেছেন, যার সাহায্যে একজন সাধারণ শিক্ষিত ও কম শিক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি পর্যন্ত সবাই এ থেকে সমভাবে লাভবান হতে পারেন। কারণ এখানে তিনি নৈতিক চরিত্র গঠন থেকে শুরু করে মুসলিম ও মুমিন জীবনের বহিকাঠামোর যাবতীয় দিক, তার সমস্ত আমল-কার্যাবলীর সঠিক দিক নির্ণয় ও সুষ্ঠু সম্পাদন এবং তার অন্তরের পবিত্রতা বিধান ও মানসিক পরিশুদ্ধ বিষয়গুলির সমাবেশ ঘটিয়েছেন। এ কিতাবটি একজন মানুষের মানবিক বৃত্তিগুলির লালন ও পরিচর্যা করে এ কিতাব অধ্যয়ন করার পর একজন পাঠক তা সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন। নিয়ত সম্পর্কিত হাদীসে জিবরীলে যে বিষয়ের প্রতি সূক্ষ্ম ইংগিত করা হয়েছে, একজন মুমিনের সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর সাথে পুংখানুপুংখু উপস্থাপনা এ হাদীস সংকলনটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন: মুরাকাবা, মুজাহাদা, মুহাসাবা, তাওবা, তাওয়াক্কুল, ইখলাস, সিল্ক, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার, নিকটাত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক, তাকওয়া, আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা, ঈমানের ব্যাপারে আশা-আকাংখা ইত্যাদি বিষয়গুলো স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। তাই বিজ্ঞ আলিমগণের মতে ইমাম নববীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলির মধ্যে সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থটির পর রিয়াদুস সালেহীনের স্থান।
হাদীসের কতপিয় পরিভাষা ও হাদীসের প্রকারভেদ
হাদীসের বিষয়বস্তু হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ নিঃসৃত কথা অথবা তাঁর সম্পর্কে কোনো সাহাবীর কথা, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাজ, যে কাজ তিনি নিজে করেছেন অথবা কোনো সাহাবী করেছেন এবং তিনি সমর্থন বা অসমর্থন করেছেন; রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কোনো অনুভূতি, অভ্যাস বা আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এই সমস্ত কিছু বর্ণনার মূল দায়িত্ব সাহাবায়ের কেরামের। সাহাবীগণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কিত কোন বিষয় লুকিয়ে রাখেননি। যেহেতু আল কুরআনে বলা হয়েছে:
ما أَنكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
“রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছে তা গ্রহণ কর এবং যা কিছু থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছে তা থেকে দূরে থাক”। এ বিধানের উপর সাহাবীগণ পুরোপুরি আমল করেছেন। তাঁরা যেমন তাঁর সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে জানার, বুঝার ও আয়ত্ত করার ব্যবস্থা করেন, তেমনি গুরুত্ব ও যত্ন সহকারে সেগুলো ভবিষ্যত বংশধরদের কাছে হস্তান্তরিত করারও দায়িত্ব নেন। এ ব্যাপারে তাঁরা একটুও গড়িমসি, বাড়াবাড়ি, গাফলতি বা কল্পনার আশ্রয় নেননি। কারণ তাঁরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ বাণীটি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিফহাল ছিলেন যাতে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি সজ্ঞানে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার আবাস ঠিক করে নেয়।” (সহীহ মুসলিম)
যে জিনিসটি তারা যে ভাবে জেনেছেন বা শুনেছেন সেটি ঠিক হুবহু সেভাবেই বর্ণনা করেন। হাদীসের ব্যাপারে এ ধরনের সত্য কথনকে হাদীসের পরিভাষায় বলা হয় ‘আদালত’। মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে একমত যে, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবীগণ কোন প্রকার মিথ্যার আশ্রয় নেননি। তাই তাঁদের সর্বস্বীকৃত মত হচ্ছে : الصَّحَابَةُ كَلَهُمْ عُدُوْلٌ “সকল সাহাবীই আদিল” অর্থাৎ সত্যবাদী।
সাহাবীদের পরে হাদীস বর্ণনা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন তাবিঈগণ (সাহাবীদরে অনুসারীগণ) এবং তাঁদের পরে তাবে-তাবিঈগণ (তাবিঈগণের অনুগামীগণ)। এভাবে এ সিলসিলাটি নিচের দিকে চলে এসেছে। সাহাবীদের পরবর্তী পর্যায়ে ‘আদিল’ ও ‘আদালত’ শব্দটি যখন কোন রাবী বা বর্ণনাকারীর সাথে লাগানো হয়েছে তখন তার মধ্যে পাঁচটি গুণ অবশ্যি পাওয়া গেছে। এ গুণগুলো হচ্ছে: এক. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস সম্পর্কে তিনি কখনো মিথ্যা বলেন নি। দুই. দুনিয়ার জীবনে সাধারণ কাজ-কারবারেও তিনি কখনো মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হন নি। তিন, তিনি এমন কোন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নন, যার জীবন সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি, যার ভিত্তিতে তাঁর জীবন ধারা পর্যালোচনা করা সম্ভব। চার, ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে তিনি ফাসিক নন। অর্থাৎ তিনি এমন ব্যক্তি যিনি মুসলিম এবং নিজের জীবনে ইসলামের অনুশাসনসমূহ তথা ফরয ও সুন্নাহর অনুসারী। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন প্রকার আকীদা অথবা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের জীবনে নেই, ইবাদাত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে এমন কোন ‘বিদআত’ তথা নতুন কথা ও কাজ উদ্ভাবন করে বা উদ্ভাবিত কথা ও কাজকে তিনি দীনের অংশ হিসেবে মেনে চলেন না।
বর্ণনাকারীদের মধ্যে আদালতের গুণের সাথে সাথে আর একটি গুণকে মুহাদ্দিসগণ অপরিহার্য গণ্য করেছেন, সেটি হচ্ছে: ‘য’। স্মৃতির ধারণক্ষমতাকেই যক্ত বলা হয়। অর্থাৎ বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তি এমন পর্যায়ের হতে হবে যাতে তিনি কোন দ্রুত বা লিখিত বিষয় যে কোন সময় হুবহু ও সঠিকভাবে স্মরণ করতে সক্ষম হন এবং তাঁর স্মৃতি থেকে তার কোন অংশ উধাও না হয়ে যায়। এই ধরণের স্মৃতিশক্তির অধিকারী রাবীকে বলা হয় যাবিত। যে রাবীর মধ্যে আদালত ও যক্ত গুণাবলী পূর্ণ মাত্রায় বিরাজমান থাকে তাকে বলা হয় ‘সিকাহ’ রাবী। হাদীস বর্ণনাকারীদের বলা হয় ‘রাবী’ এবং এই রাবীদের সিলসিলা অর্থাৎ সাহাবী এবং সাহাবী থেকে তাবিঈ, তাবিঈ থেকে তাবি-তাবিঈ, তারপর তাবে-তাবিঈদের থেকে তৎপরবর্তী বর্ণনাকারী- এই সমগ্র সিলসিলাটিকে (Chain) বলা হয় সনদ।
মুহাদ্দিসগণ হাদীসকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। এই সমস্ত বিভক্তি হয়েছে হাদীসের সনদ ও রাবীর ভিত্তিতে। যে হাদীসের সনদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং সেটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস হিসেবে গৃহীত হয়েছে তাকে বলা হয় ‘মারফ্’ হাদীস। যে হাদীসের সনদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেনি, বরং কোন সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং সেটি সাহাবীর হাদীস হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, তাকে ‘মওকৃষ্ণ’ হাদীস বলা হয়। এর অন্য নাম হচ্ছে- আসার। বলাবহুল্য দীন ও শরীয়াতের মৌলিক বিষয়ে কোন সাহাবী নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলতে পারেন না, অবশ্যি তিনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শুনেছেন কিন্তু যে কোন সংগত কারণে তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাথে সম্পর্কিত করেননি। এজন্য মওকুফ হাদীসকেও সহীহর মধ্যে গণ্য করা হয়। যে হাদীসের সনদ কোন তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছে শেষ হয়ে গেছে এবং সেটি তাবিঈর হাদীস হিসেবে গৃহীত হয়েছে, তাকে বলা হয় ‘মা’ হাদীস। মাক্ত গ্রহণ যোগ্য নয়।
যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি এবং প্রত্যেকের নাম যথাস্থানে উল্লেখিত হয়েছে তাকে বলা হয় ‘মুত্তাসিল’ হাদীস। আর যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন স্তরে কোন রাবীর নাম অনুল্লেখ থাকে তাকে বলা হয় ‘মুনকাতে’ হাদীস। মুনকাতে হাদীস আবার দুই প্রকারঃ ‘মুরসাল’ ও ‘মুআল্লাক’। যে হাদীসের সনদের শেষের দিকের রাবী অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়ে এবং তাবিঈ সারাসরি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন তাকে মুরসাল হাদীস বলা হয়। ইমাম আবু হানীফা (র) ও ইমাম মালিক (র) মুরসাল হাদীস নিঃসংশয়ে গ্রহণ করেছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-ও রায় এর মুকাবিলায় মুরসাল হাদীস গ্রহণ করেছেন এবং এর ভিত্তিতে ফতোয়া দিয়েছেন। যে হাদীসের সনদে সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়ে তাকে বলা হয় ‘মুআল্লাক’ হাদীস। মুআল্লাক হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। যে মুত্তসিল হাদীসের সনদের প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ ‘আদালত’ ও ‘যবত’ গুণের অদিকারী এবং যা বর্ণনার সকল প্রকার দোষ- ত্রুটিমুক্ত তাকে বলা হয় ‘সাহীহ’ হাদীস। যে হাদীসের রাবীর ‘যক্ত’ গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাকে বলা হয় ‘হাসান’ হাদীস। ফকীহগণ সাধারণত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই সাহীহ ও হাসান হাদীসের উপরই নির্ভর করে থাকেন।
যে হাদীরেস রাবী হাসান হাদীসের গুণসম্পন্ন নন অর্থাৎ যার মধ্যে ‘যক্ত’ গুণের অভাব রয়েছে তাকে বলা হয় ‘যঈফ হাদীস। যঈফ হাদীসের দুর্বলতা রাবীর দুর্বলতার ফল। অন্যথায় ‘মতন’ (মূল পাঠ)- এর কারণে তার মধ্যে কোন দুর্বলতা আসতে পারে না। যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে ইচ্ছা করে মিথ্যা বলেছে বা রচনা করেছে বলে স্বীকৃত হয়েছে তার বর্ণিত হাদীসকে বলা হয় ‘মওযু’ হাদীস। এ ধরনের হাদীস কোনক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়।
যে সাহীহ হাদীসটি প্রত্যেক যুগে এত বিপুল সংখ্যক রাবী রিওয়ায়াত করেছেন, যাদের পক্ষে একই সময় একই স্থানে সমবেত হয়ে কোন মিথ্যা রচনা করা অসম্ভব, তাকে বলা হয় ‘মুতাওয়াতির হাদীস। মুতাওয়াতির হাদীসের সাহায্যে ইলমে ইয়াকীন (পূর্ণ প্রত্যয়সূচক জ্ঞান) লাভ করা যায়, যার মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের লেশমাত্রও থাকে না। যে সাহীহ হাদীসটি প্রতি যুগে অন্তত তিনজন রাবী রিওয়ায়াত করেছেন তাকে বলা হয় ‘মশহুর’ হাদীস। যে সহীহ হাদীসকে প্রতি যুগে অন্তত দু’জন রাবী রিওয়ায়াত করেছেন তাকে বলা হয় ‘আযীয’ হাদীস। আর যে সহীহ হাদীসটি কোন যুগে মাত্র একজন রাবী রিওয়ায়াত করেছেন তাকে বলা হয় ‘গরীব’ হাদীস। এই শেষোক্ত তিন প্রকারের হাদীসকে একসাথে ‘খবরে ওয়াহিদ’ বলা হয়। খবরে ওয়াহিদের কোন পর্যায়ে বা স্তরে রাবীর সংখ্যা কম হবার কারণে তা মুতাওয়াতিরের সমপর্যায়ের ইলমে ইয়াকীন লাভে সাহায্য করে না। কিন্তু তাই বলে তার রাবীর মধ্যে ‘যক্ত’ গুণের কোন অভাব নেই। ফলে তা ‘যাঈফ’ হাদীসের পর্যায়ভুক্ত নয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একই হাদীসকে হাসান- সহীহও বলা হয়। এর কারণ কয়েকটি হতে পারে : এক. অনেকের মতে এটা কেবলমাত্র ইমাম তিরমিযীর নিজস্ব একটি পরিভাষা। দুই, হাদীসটি দুই সনদে বর্ণিত হয়েছে। এর একটি সনদ সহীহ এবং অন্যটি হাসান। তিন, হাদীসটি এখানে শাব্দিক অর্থে হাসান এবং পারিভাষিক অর্থে সহীহ। চার, হাদীসটি উচ্চতর গুণগত দিক দিয়ে (অর্থাৎ স্মৃতি ও সংরক্ষণ ক্ষমতা এবং প্রত্যয় গুণ) সহীহ এবং নিম্নতম গুণের (অর্থাৎ সত্যতার) দিক দিয়ে হাসান।
পাঁচ, হাদীসটির মধ্যে সহীহ ও হাসান গুণ সমপর্যায়ভূক্ত। হয়, হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে হাসান এবং বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে সহীহ। সাত, হাদীসটি হাসান লিযাতিহী এবং সহীহ লিগাইরিহী। অর্থাৎ হাদীসটি নিজের সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট গুণাবলীর কারণে হাসান এবং সত্তার বাইরের প্রভাবে সহীহ। যেমন ধরুন, হাদাসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু কোনটিই পূর্ণতার পর্যায়ভূক্ত না হবার কারণে তা হাসানের অন্তর্ভুক্ত আবার অসংখ্য সনদের কারণে তার মধ্যে বাইরে থেকে সহীহর গুণ সৃষ্টি হয়ে গেছে।
ইমাম নববী (র)-এর জীবন বৃত্তান্ত
ইমাম নববীর পুরো নাম ও বংশানুক্রম হচ্ছে: মুহীউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহ্ইয়া ইবনে শারাফ ইবনে মারী ইবনে হাসান ইবনে হুসাইন ইবনে মুহম্মাদ ইবনে জামাই ইবনে হিযাম আন্- নববী। তাঁর মূল নাম হচ্ছে: ইয়াহইয়া, ডাকনাম আবু যাকারিয়া এবং উপাধি মুহিউদ্দীন।
হিজরী ৬৩১ সনের মুহাররাম মাসে দামিশকের সন্নিকটে নবী নামক জনপদে তাঁর জন্ম। শৈশবকাল তাঁর নিজের পল্লীতে অতিবাহিত করেন। তাঁর লেখা-পড়ার শুরুও এখানেই হয়। আরবী বর্ণমালা শিক্ষা, আল কুরআন তিলাওয়াত ও হিফযুল কুরআনের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর শিক্ষা জীবনের উদ্বোধন করেন। শৈশব ও কৈশোরে খেলাধূলার প্রতি তাঁর কোন মনোযোগই ছিল না। সমবয়সী ছেলেরা তাঁকে খেলার জন্য আহবান করলে তিনি তাদের সাথে যেতেন না এবং তারা এজন্য পীড়াপীড়ি করলে তিনি কেঁদে ফেলতেন। যৌবনের প্রারম্ভে পিতা তাঁকে নিজের সাথে ব্যবসায়ে লাগাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পিতা অনুভব করেন পুত্র যাকারিয়ার মধ্যে জ্ঞানার্জনের ব্যাকুলতা। পুত্রের উন্নত মানসিক বৃত্তি ও অসাধারণ ধীশক্তি তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি পুত্রের উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তাকে নিয়ে তৎকালী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র দামিশকে চলে আসেন। এখানে ইমাম নববী প্রসিদ্ধ উস্তাদ কামাল ইবনে আহমাদের কাছে শিক্ষা লাভ করতে থাকেন।
এ সম্পর্কে ইমাম নববী (র) নিজেই লিখেছেনঃ “আমার বয়স যখন ১৯ বছর তখন আব্বাজান আমাকে দামিশকে নিয়ে গেলেন। সেখানে পৌঁছে আমি রওয়াহা মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। দুই বছর এখানেই অবস্থান করলাম। খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে”। জ্ঞানানুশীলনের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ উস্তাদদেরকেও তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে। ৬৫০ হিজরীতে তিনি পিতার সাথে হচ্ছে যান এবং দেড় মাস মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করেন। আতাউদ্দীন ইবনে আতা বর্ণনা করেন, শায়খ নববী তাঁকে বলেছেন যে, তিনি নিজের উস্তাদের কাছে প্রতিদিন ১২টি বিষয় পড়তেন। তার মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো ছিল: আল-জাস্ট বাইনাস সহীহাইন, সহীহ মুসলিম, নাহু, সরফ, মানতিক, উসূলে ফিক্ ও আসমাউর রিজাল। স্মরণশক্তিও তাঁর ছিল অসাধারণ। ফলে কোন বিষয় একবার পড়লে তা তাঁর স্মৃতিপটে অক্ষয় হয়ে থাকত। হাদীস ও ফিকহের জ্ঞানানুশীলনের মধ্যে তিনি আত্মার তৃপ্তি অনুভব করতেন। তিনি নিজের যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন এবং একই সাথে ফি উসূলে ফিক্হ্ন ও মানতিকেও পারদর্শিতা অর্জন করেন।
ইবাম নববী বহুসংখ্যক উস্তাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর কয়েকজন শ্রেষ্ঠ উস্তাদের নাম দেয়া হলঃ ১. আবু ইবরাহীম ইসহাক ইবনে আমহদ আল-মাগরিবী; ২. আবু মুহাম্মদ আবদুর রহমান ইবনে নূহ আল-মাকদিসী; ৩. আবু হাস উমার ইবনে আসআদুর রিবঈ; ৪. আবুল হাসান আরশিলী; ৫. আবু ইসহাক ইবরাহীম মুরাদী; ৬. আবুল বাকা খালিদ ইবনে ইউসুফ নাবিসী: ৭. দিয়া ইবনে তাম্মাম হানাফী: ৮. আবুল আব্বাস আহমাদ মিসরী; ৯. আবু আবদিল্লাহ জিয়ানী; ১০. আবুল ফাতহ উমার ইবনে বুন্দার; ১১. আবু ইসহাক ওয়াসিতী; ১২. আবুল আব্বাস মাকদিসী; ১৩. আবু মুহম্মাদ তানুখী; ১৪. আবু আবদির রহমান আনবারী; ১৫. আবুল ফারাজ মাকদিসী ও ১৬. আবু মুহম্মদ আনসারী।
৬৭৬ হিজরীতে বাইতুল মাকদিস সফরশেষে নিজ গ্রামে ফিরে এসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ১৪ রজব বুধবার রাতে ইস্তকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ইমাম নববী (র) তাঁর ৪৫ বছরের জীবনকালে অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটির নাম : ১. সহীহ বুখারীর শারহে কিতাবুল ঈমান অর্থাৎ সহীহ বুখারীর কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ের ব্যাখ্যা গ্রন্থ। ২. আল-মিনহাজ ফী শারহে মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ অর্থাৎ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা। এ গ্রন্থটি সম্পর্কে ইমাম নববী নিজেই বলেছেনঃ ‘যদি বই দীর্ঘায়িত করার ফলে আমার শক্তি হ্রাস ও পাঠকবৃন্দের সংখ্যাল্পতা দেখা দেবার আশংকা না থাকত তাহলে এ বইটি আমি একশো খণ্ডে শেষ করতাম। সবদিক বিবেচনা করে একে আমি মাঝামাঝি আকারেই রেখেছি। বর্তমানে আরবীতে গ্রন্থটি দুই খণ্ডে ছাপা হয়। ৩. রিয়াদুস সালেহীন। ৪. কিতাবুর রওদাহ। এটি শারহে কবীর রাফিঈ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ। ৫. শারহে মুহায্যাব। ৬. তাহযীবুল আসমা ওয়াস সিফাত। ৭. কিতাবুল আযকার। ৮. ইরশাদ ফী উলুমিল হাদীস। ৯. কিতাবুল মুবহামত। ১০. শারহে সহীহ বুখারী অর্থাৎ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা। ১১. শারহে সুনানে আবী দাউদ অর্থাৎ আবু দাউদের ব্যাখ্যা। ১২. তাবাকাতে ফুকাহায়ে শাফিঈয়া। ১৩. রিসালাহ ফী কিসমাতিল গানাইম। ১৪. ফাতাওয়া। ১৫. জামিউস সুন্নাহ। ১৬. বুলাসাতুল আহকাম। ১৭. মানাকিবুশ শাফিঈ। ১৮. বুস্তানুল আরিফীন। ১৯. মুখতাসার উসুদুল গাবাহ। ২০. রিসালাতু ইসতিত্ববাবিল কিয়াম লি আহলিল ফাল।
ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কেবল একজন আলিম ও মুহাদ্দিস হিসেবেই খ্যাত ছিলেন না, তাঁর উন্নত চরিত্র, তাকওয়া ও আনড়ম্বর জীবন যাপন সমকালীন ইসলামী সমাজে আদর্শ হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন-যাপন প্রণালীকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তিনি অত্যন্ত সাদামাটা আহার করতেন এবং মোটা কাপড় পরতেন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আমীর-গরীব সবাই তাকে সম্মান করতেন। কিন্তু দুনিয়ায় এত সম্মান লাভ করার পরও তিনি কখনো অর্থ, সম্মান, পদ ও ক্ষমতার পেছনে ছোটেননি। সারাজীবন তিনি কখনো সরকারী অর্থ ও সহায়তা গ্রহণ করেননি। কারো থেকে কোন দান গ্রহণ করেননি। সারা দিন কেবল ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ব্যয় করতেন অথবা ইবাদাত-বন্দেগী করতেন। সারা দিন-রাতের মধ্যে মাত্র একবার খেতেন, তখনি পানি খেতেন। তার ছাত্রসংখ্যা ছিল অসংখ্য। ইমামের ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী কালে খ্যাতি অর্জন করেন।
আবদুল মান্নান তালিব
প্রারম্ভিক কথা
ইমাম নববী (র)
আল্লাহ তাআলার জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, মহান পরাক্রমশালী ও অপরাধ মার্জনাকারী। তিনি রাত ও দিনের আবর্তনকারী। চিন্তাশীল ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লোক যেন তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে চান জাগ্রত করেন, উদ্যোগী বানিয়ে দেন। তিনি তাকে গভীর চিন্তা ও ধ্যানে মশগুল করেন, তাকে নসীহত গ্রহণ করার যোগ্যতা দান করেন, আনুগত্যের উপর অটল রাখেন এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতির সৌভাগ্য দান করেন। তিনি তাকে গযব ও জাহান্নামের পথ থেকে দূরে রাখেন এবং যে কোন অবস্থায় সত্য-ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার যোগ্যতা দান করেন।
আমি তাঁর সমস্ত গুণাবলীর পূর্ণ অর্থবোধক ও পবিত্রতম শব্দ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমাদের একমাত্র শ্রেষ্ঠ নেতা মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল, বন্ধু ও দাস। তিনি মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখিয়ে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা কায়েম করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর প্রতি অপরাপর নবীগণের প্রতি এবং সমস্ত সাহাবী ও সালেহীনের প্রতি আমার আন্তরিক সালাম।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং এ উদ্দেশ্য লাভের সঠিক পন্থা । মহান আল্লাহ বলেনঃ
ومَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلا لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِّن رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
“আমি মানুষ ও জিন জাতিকে শুধু আমার ইবাদাত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন রিযক চাই না এবং কোন কিছু খেতেও চাই না।” (সূরা আয যারিয়াত: ৫৬-৫৭)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিন ও মানুষকে শুধু আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা মানুষ ও জিন জাতির অপরিহার্য কর্তব্য। দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও ভোগবিলাসের পেছনে ছুটে চলা তাদের উচিত নয়। কারণ এ দুনিয়া অস্থায়ী। এটা চিরকাল থাকবার জায়গা নয়। এখান থেকে প্রত্যেককে চলে যেতে হবে। অতএব যারা নিজেদের জীবন আল্লাহর ইবাদাতে ও আনুগত্যে কাটিয়ে দেন তাঁরাই সতর্ক, যাঁরা সততা ও তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁরাই বুদ্ধিমান। দুনিয়ার অস্থায়িত্বের চিত্র আল কুরআনে এভাবে অংকিত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَا أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازْيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَدِرُونَ عَلَيْهَا أَنَّهَا أَمْرُنَا ليلا أو نهاراً فَجَعَلْنَهَا حَصِيدًا كَان لَمْ تَغْنَ
بِالْأَمْسِ كَذلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ (سورة يونس : ٢٤)
“দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত তো এরূপ যে, আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম। সেই পানির সাহায্যে জমির গাছপালা, যা মানুষ ও পশুরা খায়, বেশ ঘন হয়ে উঠল, এমনকি যখন সেই জমি পূর্ণ সজীবতাপ্রাপ্ত হয়ে বেশ সুসজ্জিত ও সুশোভিত হয়ে উঠল, আর জমির মালিকরা ভাবল যে, তারা এখন ঐ জমি নিজেদের আয়ত্তাধীন করে ফেলেছে, ঠিক এই সময় কোন রাত অথবা দিনে আমার কোন ধ্বংসত্মক হুকুম হল। তারপর আমি সেগুলো এমন শুকনো খড়ে পরিণত করলাম যেন তা গতকালও সেখানে ছিল না। এভাবে আমি চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনগুলো পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করছি।”
(সূরা ইউনুস: ২৪)
কবি বলেন:
“আল্লাহর অসংখ্য বান্দা তারা
দুনিয়ার সাথে ছিন্ন করেছেন সম্পর্ক
আর আশংকা করেছেন বিপর্যয়ের,
গভীর পর্যবেক্ষণের পর জানলেন,
এ জগত মানুষের চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়,
গভীর সমুদ্র জ্ঞানে ভাসালেন
জগতের বুকে তাদের সৎ ও সত্যনিষ্ঠ আমলের তরী।”
দুনিয়ার স্থায়িত্ব ও অস্থায়িত্বের এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য আমি বর্ণনা করেছি। এখন প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে নিজেকে সৎ লোকদের পথে চালিত করা এবং সঠিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিগণের পথ অবলম্বন করা। এছাড়া যে বিষয়গুলোর প্রতি আমি ইংগিত করেছি এবং যে উদ্দেশ্য আমি স্মরণ করিয়ে দিয়েছি তার জন্য গুরুত্ব সহকারে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণই হচ্ছে একমাত্র সঠিক পন্থা। মহান আল্লাহ বলেন:
وَ تَعَاوَنُوا عَلَى البر والتقوى (المائدة : ٢)
“সৎ কাজে ও আল্লাহ ভীতির ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর।” (সূরা আল মায়িদা: ২)
একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে:
وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ –
“যতক্ষণ একজন বান্দা তার অপর ভাইকে সাহায্য করতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সাহায্য করতে থাকেন।” (মুসলিম, নাসাঈ ও তিরমিযী)
রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেছেন:
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ –
“যে ব্যক্তি কোন কল্যাণের পথ দেখায়, তদনুযায়ী যে কাজ হবে তার সাওয়াব সেও পাবে।” (মুসলিম, আবু দাউদ)
তিনি আরও বলেছেন:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أَجُورٍ مَنْ تَبِعَهُ لا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجُورِهِمْ شَيْئًا .
“যে ব্যক্তি হিদায়াতের আহ্বান জানাবে, সে হিদায়াত অনুসরণকারীর সমান সাওয়াব পাবে। এ দু’জনের কারও সাওয়াবেই কমতি হবে না।”
তিনি আলী (রা)-কে বলেছেন:
فَوَاللَّهِ لَأَنْ يُهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ .
“আল্লাহর শপথ! যদি তোমার দ্বারা আল্লাহ এক ব্যক্তিকেও হিদায়াত দান করেন, তবে এটা তোমার জন্য লাল উট (এটা সবচেয়ে মূল্যবান) অপেক্ষা উত্তম।” (বুখারী, মুসলিম)
আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সহীহ হাদীসগুলো সংক্ষেপে সংকলন করার ইচ্ছা করলাম। পাঠকের জন্য এ সংকলনের মাধ্যমে আখিরাতের পথ সুগম হবে। এর দ্বারা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ গুণাবলী অর্জিত হবে। এতে থাকবে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিকারী হাদীস এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির সর্বপ্রকার নিয়ম, পদ্ধতি ও কর্মসূচীসহ কুপ্রবৃত্তি দমনের সাধনা ও চারিত্রিক সংশোধন সম্পর্কিত হাদীসসমূহ।
আমি এ গ্রন্থে বিশেষ সতর্কতার সাথে বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থগুলো থেকে কেবল সহীহ হাদীসসমূহই সন্নিবেশিত করেছি। এ গ্রন্থের অধ্যায় ও অনুচ্ছেদগুলো আল কুরআনের আয়াত দিয়ে শুরু করেছি। তারপর হাদীস বর্ণনা করেছি।
আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, এ গ্রন্থখানা পাঠককে সততা, নেক ও কল্যাণের দিকে ধাবিত করে তাকে গুনাহ ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে। যারা এই গ্রন্থ থেকে উপকৃত হবেন, তাঁদের কাছে আমার আবেদন, তাঁরা যেন আমার জন্য, আমার পিতা-মাতা, শিক্ষক, বন্ধু ও সমস্ত মুসলিমের জন্য দোয়া করেন। মেহেরবান আল্লাহর উপর আমার ভরসা। তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট। তাঁর প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তিনিই সর্বোত্তম সাহায্যকারী ও সমাধানকারী। মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ অসৎ পথ থেকে সরিয়ে সৎ পথে নিয়ে আসার শক্তি রাখে না। অতএব তাঁরই নিকট আমি সবকিছু সোপর্দ করছি।
কে কতটুকু অনুবাদ করেছেন:
মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মাদ আলী হাদীস নং ১-১৭৬
মাওলানা মুহাম্মদ মূসা হাদীস নং ১৭৭-৩৭৩
মাওলানা শামছুল আলম খান হাদীস নং ৩৭৪-৩৯০
بسم الله الرحمن الرحيم
অনুচ্ছেদ: ১ – ইখলাস (নিষ্ঠা) ও নিয়াত (অভিপ্রায়)
ইখলাস (নিষ্ঠা) ও নিয়াত (অভিপ্রায়)
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَا أُمِرُوا إِلا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصلوةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ القَيِّمَةِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে, তারা যেন একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর দীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করে, সালাত (নামায) কায়েম করে এবং যাকাত দান করে। এটাই হচ্ছে সরল ও মজবুত ব্যবস্থা।” (সূরা আল-বায়্যিনাহঃ ৫)
وَقَالَ تَعَالَى : لَنْ يُنَالَ اللهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يُنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ .
(২) “তোমাদের কুরবানীর পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট কখনই পৌঁছে না, বরং তোমাদের আল্লাহভীতিই তাঁর নিকট পৌঁছে।” (সূরা আল-হজ্জঃ ৩৭)
وَقَالَ تَعَالَى : قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمُهُ اللَّهُ .
(৩) “আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর তা সবই আল্লাহ জানেন।” (সূরা আলে ইমরান: ২৯)
– وَعَنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَبِي حَفْصِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ بْنِ نُفَيْلِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى ابْنِ رِيَاحِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُرْطِ بْنِ رَزَاحِ بْنِ عَدِي بْنِ كَعْبِ بْن لَزَيِّ بْنِ غَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْعَدَوِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى الله وَرَسُولِهِ فَهَجْرَتُهُ إلى الله وَرَسُولِهِ وَمَنْ كَانَتْ هَجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهَجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ مُتَّفَقٌ عَلَى
صِحْتِهِ –
১। আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়াত (অভিপ্রায়) অনুযায়ী হবে। প্রত্যেকেই যে নিয়াতে কাজ করবে সে তাই পাবে। কাজেই যার হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হয়েছে তার হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্যই হয়েছে (বলে পরিগণিত হবে)। আর যে ব্যক্তি কোন পার্থিব স্বার্থ লাভের অভিপ্রায়ে বা কোন নারীকে বিবাহের উদ্দেশে হিজরাত করে, তার হিজরাত উক্ত উদ্দেশেই হয়েছে বলে পরিগণিত হবে। (বুখারী, মুসলিম)
– وَعَنْ أَمِّ الْمُؤْمِنِينَ أَمْ عَبْدِ اللهِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْزُو جَيْشِ الْكَعْبَةَ فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ يُخْسَفُ بأولهم وأخرِهِمْ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ يُخْسَفُ بِأَوْلِهِمْ
وَأَخِرِهِمْ وَفِيهِمْ أَسْوَاقُهُمْ وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ قَالَ يُخْسَفُ بِأَوْلِهِمْ وَأَخِرِهِمْ ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَاتِهِمْ -مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
২। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একটি সৈন্যদল কাবার উপর হামলা করতে যাবে। যখন তারা সমতলভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদের পূর্বের ও পরের লোকজনসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেয়া হবে। আয়িশা (রা) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিভাবে তাদের পূর্বের ও পরের সব লোকসহ তা ধসিয়ে দেয়া হবে, অথচ তাদের মধ্যে বহু নগরবাসী ও এমন লোক থাকবে যারা হামলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তাদের পূর্বের ও পরের লোকজনসহ ভূমিকে ধসিয়ে দেয়া হবে, অতঃপর তাদের নিয়াত অনুযায়ী তাদের পুনরুত্থিত করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)
এখানে বুখারীর পাঠ উদ্ধৃত হয়েছে।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا هجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ وَلَكُنْ جِهَادُ وَنِيَّةٌ وَإِذَا اسْتَنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরাত নেই। তবে জিহাদ ও নিয়াত রয়েছে। যখনই তোমাদেরকে জিহাদের জন্য তলব করা হবে তখনই তোমরা বের হয়ে পড়বে। (বুখারী, মুসলিম)
ইমাম নববী (র) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, মক্কা থেকে হিজরাত করার হুকুম এ হাদীস বর্ণনাকালে ছিল না। কারণ তখন মক্কা ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল।
وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاةٍ فَقَالَ إِنَّ بِالْمَدِينَةِ لَرِجَالاً مَا سِرْتُمْ مسيرا وَلَا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ وَفِي رِوَايَةٍ إِلَّا
شَرِكُوكُمْ فِي الْأَجْرِ رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَرَوَاهُ الْبُخَارِيُّ عَنْ أَنَسِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَجَعْنَا مِنْ غَزْوَةٍ تَبُوكَ مَعَ النَّبِيِّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّ أَقْوَامًا خَلْفَنَا بِالْمَدِينَةِ مَا سَلَكْنَا شِعبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا حَبْسَهُمُ الْعُذْرُ.
৪। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আল-আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ মদীনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে, তোমরা যে সকল স্থানে সফর কর এবং যে ময়দান অতিক্রম কর সেখানে তারা তোমাদের সাথেই থাকে। তাদেরকে রোগ আটকে রেখেছে (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা সাওয়াবে তোমাদের সাথে শরীক আছে।
ইমাম বুখারী এই হাদীসটি আনাস (রা) থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাবুকের জিহাদ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ফিরে আসার পর তিনি বলেন: আমরা মদীনায় আমাদের পেছনে এমন একদল লোককে রেখে গিয়েছিলাম, আমরা যে গিরিপথ এবং যে ময়দানই অতিক্রম করেছি তারা (যেন) আমাদের সাথেই ছিল, তাদেরকে বিশেষ ওজর আটকে রেখেছে।
ه وَعَنْ أَبِي يَزِيدَ مَعْنِ بْنِ يَزِيدَ بْنِ الْأَخْنَسِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَهُوَ وَأَبُوهُ وَجَدهُ صَحَابِيُّونَ قَالَ كَانَ أَبِي يَزِيدُ أَخْرَجَ دَنَانِيْرَ يَتَصَدِّقُ بِهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَجُلٍ فِي الْمَسْجِدِ فَجِئْتُ فَأَخَذْتُهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا فَقَالَ وَاللَّهِ مَا إِيَّاكَ أَرَدْتُ
فَخَاصَمْتُهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَكَ مَا نَوَيْتَ يَا يَزِيدُ وَلَكَ مَا أَخَذْتَ يَا مَعْنُ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
৫। আবু ইয়াযীদ মা’ন ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আখনাছ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি, তাঁর পিতা ও তাঁর দাদা তিনজনই সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, আমার পিতা ইয়াযীদ (রা) কিছু দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) সাদাকা করার জন্য বের করলেন। তিনি মসজিদে এক লোকের কাছে তা রেখে দিলেন। আমি গিয়ে তা নিয়ে এলে আমার পিতা বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে দেয়ার ইচ্ছা করিনি। আমি তখন বিষয়টা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পেশ করলাম। তিনি বলেনঃ হে ইয়াযীদ! তুমি যা নিয়াত করেছো তা (সাওয়াব) তোমার। আর হে মা’ন! তুমি যা নিয়েছ তাও তোমার। (বুখারী)
٦- وَعَنْ أَبِي إِسْحَاقَ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاصِ مَالِكِ بْنِ وَهَيْبِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ ابْنِ زُهْرَةَ بْنِ كِلابِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُغَيِّ الْقُرَشِيِّ الزُّهْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَحَدِ الْعَشَرَةِ الْمَشْهُودِ لَهُمْ بِالْجَنَّةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ قَالَ جَاءَنِي
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ مِنْ وَجَعِ اشْتَدَّ بِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي قَدْ بَلَغَ بِي مِنَ الْوَجَعِ مَا تَرَى وَأَنَا ذُوْمَالٍ وَلَا يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَةً لِي أَفَا تَصَدِّقُ بِثُلُثَى مَالَي ؟ قَالَ “لا” قُلْتُ فَالشَّطْرُ يَا
رَسُولَ اللَّهِ ؟ فَقَالَ لَا قُلْتُ فَالثُّلْتُ يَا رَسُولَ الله ؟ اللهِ ؟ قَالَ الثلث كَثِيرٌ أَوْ كَبِيرٌ إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أَجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي
فِي امْرَأَتِكَ قَالَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخَلَّفُ بَعْدَ اصْحَابِي ؟ قَالَ إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعْمَلَ عَمَلا تَبْتَغِي بِهِ وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا ازْدَدْتَ بِهِ دَرَجَةً وَرَفْعَةٌ وَلَعَلَّكَ أَنْ تُخَلَّفَ حَتَّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقَوَامٌ وَيُضَرِّ بِكَ أَخَرُونَ اللَّهُمَّ أمْضِ لِأَصْحَابِي
هِجْرَتَهُمْ وَلَا تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ لَكِنِ الْبَائِسُ سَعْدُ بْنُ خَوْلَةَ يَرْنِي لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ مَاتَ بِمَكَّةَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৬। আবু ইসহাক সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর একজন। তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জের বছর খুব রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার রোগের অবস্থা তো আপনি দেখছেন। আর আমি একজন ধনবান লোক। আমার ওয়ারিস একমাত্র আমার কন্যাই। আমি কি আমার সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ সাদাকা করে দেব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: না। আমি আবার বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে অর্ধেক? তিনি বলেন: না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে তিন ভাগের এক ভাগ (দান করে দিই)? তিনি বলেন: তিন ভাগের এক ভাগই দান কর। আর এটা অনেক বেশি অথবা অনেক বড়। তোমার ওয়ারিসগণকে মানুষের নিকট হাত পাতার মত নিঃসম্বল অবস্থায় না রেখে তাদেরকে ধনবান রেখে যাওয়াই উত্তম। তুমি আল্লাহ্র সন্তোষ লাভের জন্য যাই ব্যয় কর না কেন, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দেবে তারও প্রতিদান তোমাকে নিশ্চয়ই দেয়া হবে। আবু ইসহাক (রা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সংগীগণের পেছনে (হিজরাতের পর মক্কায়) রয়ে যাব? তিনি বলেন: তুমি থেকে গিয়ে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য যে কাজই কর না কেন, তাতে তোমার মর্যাদা ও সম্মান অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। খুব সম্ভব তুমি থেকে যাবে। তখন অনেকে তোমার দ্বারা উপকৃত হবে, আবার অনেকে তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! আমার সাথীদের হিজরাত সম্পন্ন কর এবং তাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দিও না। তবে সা’দ ইবনে খাওলা কিন্তু সত্যিই কৃপার পাত্র। মক্কায় তার মৃত্যুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেদনা প্রকাশ করেন। (বুখারী, মুসলিম)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صَخْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى لَا يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَامِكُمْ وَلَا إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَكِنْ يَنظُرُ إِلى قُلُوْبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ .
৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তোমাদের শরীর ও চেহারার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেন না, বরং তোমাদের মনের ও কর্মের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। (মুসলিম)
وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسِ الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الرَّجُلِ يُقَاتِلُ شَجَاعَةً وَيُقَاتِلُ حَمِيةٌ وَيُقَاتِلُ رِبَاءٌ أَيُّ ذَلِكَ فِي سَبِيْلِ اللَّهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ )
৮। আবু মূসা আল-আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে, আর কেউ আত্মসম্মান ও বংশগত মর্যাদার জন্য লড়াই করে, আবার কোন লোক প্রদর্শনেচ্ছায় লড়াই করে, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে (লড়াই করে)? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর কালেমা সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে-ই আল্লাহর পথে। (বুখারী, মুসলিম)
– وَعَنْ أَبِي بَكْرَةً نُفَيْعِ بْنِ الْحَارِثِ الثَّقَفِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ هُذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِ؟ قَالَ إِنَّهُ كَانَ
حَرِيصًا عَلَى قَبْلِ صَاحِبِهِ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
৯। আবু বাকরা নুফাই ইবনুল হারিস আস-সাকাফী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দু’জন মুসলিম তাদের নিজ নিজ তরবারি নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী। আবু বাকরা (রা) জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো হত্যাকারী, নিহত ব্যক্তির কি হল (যে, সেও জাহান্নামী)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সেও তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করার আকাঙ্ক্ষী ছিল। (বুখারী, মুসলিম)
١٠- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاةُ الرَّجُلِ فِي جَمَاعَةٍ تَزِيدُ عَلَى صَلَاتِهِ فِى سُوقِهِ وَبَيْتِهِ بِضْعًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً وَذَلِكَ أَنْ أَحَدَهُمُ إِذَا تَوَضًا فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ آتَى
الْمَسْجِدَ لَا يُرِيدُ إِلا الصلاة لا يَنْهَرُهُ إِلا الصَّلاةُ لَمْ يَخْطُ خُطُوَةً إِلا رُفِعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةً وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ حَتَّى يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ فَإِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَ فِي الصَّلَاةِ مَا كَانَتِ الصَّلاةُ هِيَ تَحْبِسُهُ وَالْمَلَائِكَةُ يُصَلُّوْنَ عَلَى
أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيْهِ مَا لَمْ يُحْدِثُ فِيْهِ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَهُذَا لَفْظُ مُسْلِمٍ وَقَوْلُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَرُهُ هُوَ بِفَتْحِ الْيَاءِ وَالْهَاءِ
وَبِالزَّأَي أَي يُخْرِجُهُ وَيُنْهِضُهُ
১০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন ব্যক্তির জামা’আতে নামায পড়ার সাওয়াব তার বাজারে ও ঘরের নামায অপেক্ষা বিশ গুণেরও বেশি। কারণ কোন ব্যক্তি যখন ভালোভাবে উযু করে শুধু নামাযের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে এবং নামায ছাড়া অন্য কিছু তাকে উদ্বুদ্ধ করে না, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত তার প্রতি পদক্ষেপে তার এক ধাপ মর্যাদা বর্ধিত হয় এবং তার একটি করে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। সে যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন হতে তাকে নামাযের মধ্যে গণ্য করা হয়- যতক্ষণ পর্যন্ত নামায তাকে আটকে রাখে। তোমাদের কেউ
যতক্ষণ নামাযের জায়গায় অবস্থান করে এবং (মসজিদে) কাউকেও কষ্ট না দেয়া ও উন্মু ভঙ্গ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার জন্য এই বলে দু’আ করতে থাকেন; হে আল্লাহ। তার প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! তাকে মাফ কর, হে আল্লাহ! তাঁর তাওবা কবুল কর। (বুখারী, মুসলিম)
۱۱ – وَعَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلٌ قَالَ إِنَّ اللَّهَ كتب الحسناتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيْنَ ذَلِكَ فَمَنْ هُمْ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ
يَعْمَلُهَا كَتَبَهَا اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً وَإِنْ هَمْ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إلى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفَ إِلَى أَضْعَافَ كَثِيرَةٍ وَإِنْ هُمْ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلُهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ حَسَنَةٌ كَامِلَةً وَإِنْ هَمْ بِهَا فَعَمِلَهَا
كَتَبَهَا اللَّهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
১১। আবদুল্লাহ ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান ও পরাক্রমশালী প্রতিপালকের বরাতে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আল্লাহ সৎ কাজ ও অসৎ কাজ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তারপর তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব কোন ব্যক্তি কোন সৎ কাজের সংকল্প করে তা না করলেও তাকে আল্লাহ তাআলা একটি পূর্ণ নেকী দান করেন। আর যদি সে উক্ত কাজ করে, তবে আল্লাহ দশ থেকে সাত শত পর্যন্ত, এমনকি তার চেয়েও বেশি সাওয়াব তাকে দান করেন। আর কেউ কোন অসৎ কাজের সংকল্প করে তা না করলে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি পূর্ণ সাওয়াব দান করেন। আর সে সেই অসৎ কাজটি করলে আল্লাহ তার কারণে তার একটিমাত্র গুনাহ লেখেন। (বুখারী, মুসলিম)
وَعَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ انْطَلَقَ ثَلَاثَةٌ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُم حَتَّى أَوَاهُمُ الْمِبَيْتُ إِلى غَارِ فَدَخَلُوهُ فَاتُحَدَرَتْ صَخْرَةٌ ۱۲
مِنَ الْجَبَلِ فَسَدَتْ عَلَيْهِمُ الْغَارَ فَقَالُوا إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحٍ أَعْمَالِكُمْ قَالَ رَجُلٌ مِنْهُمُ اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبْوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلاً وَلَا مَالاً فَنَاى بِي طَلَبُ الشَّجَرِ يَوْمًا
فَلَمْ أُرِحٍ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا فَعَلَيْتْ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدتُهُمَا نَائِمَيْنِ فَكَرِهْتُ أَنْ أَوْقِظَهُمَا وَأَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا اهلا أَوْ مَالاً فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدِى انْتَظِرُ اسْتِيْقَاظَهُمَا حَتَّى بَرِقَ الْفَجْرُ والصَّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَمَى
فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهُ قَالَ الْآخَرُ اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَتْ لِي ابْنَةُ عَمَّ كَانَتْ أَحَبٌ النَّاسِ إِلَى وَفِي
رِوَايَةٍ كُنْتُ أَحِبُّهَا كَاشَدِ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النِّسَاءَ فَأَرَدْتُهَا عَلَى نَفْسِهَا فَامْتَنَعَتْ مِنِّى حَتَّى المُتْ بِهَا سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءَتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلَّى بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفَعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ
عَلَيْهَا وَفِي رِوَايَةٍ فَلَمَّا فَعَدْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا قَالَتْ اتَّقِ اللَّهَ وَلَا تَفْضُ الْخَاتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ فَانْصَرَفَتْ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا اللهم ان إِن كُنتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَاخْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ
فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهَا وَقَالَ الثَّالِثُ اللَّهُمَّ اسْتَأْجَرْتُ أجراء وأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ فَشَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الْأَمْوَالُ فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ
إِذِ إِلَى أَجْرِى فَقُلْتُ كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ مِنَ الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَمِ وَالرِّقِيقِ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ لَا تَسْتَهْزِئُ بِي فَقُلْتُ لَا أَسْتَهْزِئُ بِكَ فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فَاسْتَاقَهُ فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا اللهُم إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَاخْرُجْ
عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
১২। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তোমাদের পূর্বকালের তিনজন লোক কোথাও চলার পথে রাত কাটাবার উদ্দেশে এক পর্বত গুহায় আশ্রয় নিল। তারা সেখানে প্রবেশ করার পর একখানা পাথর খসে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তারা পরস্পর বলতে লাগল, “তোমরা একমাত্র আল্লাহর কাছে তোমাদের খাঁটি আমলকে অসীলা বানিয়ে দু’আ করলে কেবল এই পাথরের বিপদ থেকে মুক্তি পাবে।” তাদের একজন বললঃ হে আল্লাহ! আমার পিতামাতা ছিলেন অত্যধিক বৃদ্ধ। আমি তাঁদেরকে আমার পরিবার, সন্তান ও অধীনস্থদের পূর্বেই দুধ পান করিয়ে দিতাম। একদিন কাঠের সন্ধানে আমাকে বহুদূর যেতে হল এবং যথাসময়ে বাড়ী ফিরে আসতে পারলাম না, ফলে তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি তাঁদের রাতে খাওয়ার জন্য দুধ দোহন করে এনে দেখি তাঁরা ঘুমিয়ে রয়েছেন। তখন তাঁদেরকে জাগিয়ে তোলা আমি পছন্দ করলাম না। আবার তাঁদের পূর্বে পরিবারবর্গ ও অধীনস্থদের দুধ খাওয়াতেও পছন্দ করলাম না। কাজেই আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে তাঁদের জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। এদিকে আমার সন্তানগুলো আমার দুই পায়ের কাছে ক্ষুধায় কান্নাকাটি করছিল। এ অবস্থায় ভোর হয়ে গেল। তারপর তাঁরা জেগে উঠে দুধ পান করেন। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজটি তোমারই সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি তাহলে এই পাথরের দরুন আমরা যে বিপদে পড়েছি তা দূর করে দাও। এতে পাথরখানা কিছুটা সরে গেল, কিন্তু তার ফাঁক দিয়ে তারা বের হতে পারল না। অন্য একজন বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। অন্য বর্ণনায় আছে, পুরুষ নারীকে যত বেশি ভালোবাসতে পারে আমি তাকে তত বেশি ভালোবাসতাম। আমি তার সংগে মিলনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলাম, কিন্তু সে রাজী হল না। শেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে আমার নিকট এলে আমি তাকে আমার সাথে নির্জনে মিলনের শর্তে এক শত বিশটি স্বর্ণমুদ্রা দিলাম। এতে সে রাজী হয়ে গেল। আমি যখন তাকে পেলাম, অন্য এক বর্ণনায় আছে: যখন আমি তার দুই পায়ের মাঝখানে বসলাম, তখন সে বলল: “আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে আমার কৌমার্য নষ্ট করো না।” তখনই আমি তাকে ছেড়ে চলে গেলাম। অথচ মানুষের মধ্যে সে ছিল আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি তাকে যে স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমারই সন্তোষ লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের এই বিপদ দূর করে দাও। এতে পাথর আরও কিছুটা সরে গেল, কিন্তু তাতেও তারা বের হতে পারল না। তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাদের সবাইকে মজুরী দিলাম, কিন্তু একজন তার মজুরী রেখে চলে গেল। আমি তার মজুরীটা ব্যবসায়ে খাটালাম। তাতে ধন-দৌলত অনেক বেড়ে গেল। কিছুকাল পর সে ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা। আমার মজুরী দাও। আমি বললামঃ এই উট, গরু, ছাগল, চাকর যা তুমি দেখছ সবই তোমার। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সাথে উপহাস করো না। আমি তাকে বললাম: আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না। তারপর সে সবকিছু নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে যায়নি। হে আল্লাহ! আমি যদি তোমারই সন্তোষ লাভের জন্য এ কাজ করে থাকি, তবে আমাদের এ বিপদ থেকে মুক্তি দাও। তারপর ঐ পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং তারা সকলে হেঁটে বের হয়ে গেল। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদ: ২ – তাওবা
তাওবা
উলামায়ে কিরাম বলেন, প্রতিটি গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহ আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার বিষয় সংশ্লিষ্ট হয় এবং তার সাথে কোন লোকের হক জড়িত না থাকে তবে তা থেকে তাওবা করার তিনটি শর্ত রয়েছে। (এক) তাওবাকারীকে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। (দুই) সে তার কৃত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হবে। (তিন) তাকে আর কখনো গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। যদি কোন লোকের সাথে গুনাহর কাজটি সংশ্লিষ্ট থাকে তাহলে তা থেকে তাওবা করার জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্ত ছাড়া আরও একটি শর্ত আছে। এই চতুর্থ শর্তটি হচ্ছে: তাওবাকারীকে হকদার ব্যক্তির প্রাপ্য আদায় করতে হবে। যদি কারও ধন-সম্পত্তির হক থাকে অথবা এরূপ অন্য কিছু থাকে তবে তা তাকে ফেরত দিতে হবে। দোষারোপ (যেনার অপবাদ) বা এরূপ অন্য কোন বিষয় হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে তার শাস্তি ভোগ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। গীবাত বা পরনিন্দার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিতে হবে। সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। কতক গুনাহ থেকে তাওবা করলে তাও গ্রহণযোগ্য হবে এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে তাওবা বাকী রয়ে যাবে। কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাতের ইজমার মাধ্যমে তাওবা করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়েছে।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর, তাহলে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে।” (সূরা আন্ নূরঃ ৩১)
وَقَالَ تَعَالَى : اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ .
(খ) “তোমরা নিজ প্রভুর নিকট গুনাহ মাফ চাও, তারপর তাঁর নিকট তাওবা কর।” (সূরা হ্রদঃ ৩)
وَقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا
(গ) “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবা (তাওবা নাসুহা) কর [ তাওবা নাস্হা করার জন্য তিনটি বিষয় অপরিহার্য: (ক) সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবা করতে হবে, (খ) তাওবা করার ব্যাপারে সমস্ত প্রকার সন্দেহ, সংকোচ ও ইতস্ততভাব থেকে মুক্ত হতে হবে এবং (গ) তাওবা বহাল রাখার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। (অনুবাদক) ] । – (সূরা আত্ তাহরীম: ৮)
۱۳ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَاللَّهِ إِنِّي لَاسْتَغْفِرُ اللهَ وَآتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
১৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আল্লাহর শপথ! আমি একদিনে সত্তরবারের অধিক তাওবা করি এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।
ইমাম বুখারী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
١٤- وَعَنِ الْآخَرِ بْنِ يَسَارِ الْمُزَنِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ رَوَاهُ مُسْلِم
১৪। আল-আগার ইবনে ইয়াসার আল-মুযানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা আমি দৈনিক শতবার তাওবা করি। (মুসলিম)
١٥ – وَعَنْ أَبِي حَمْزَةَ أَنَسِ بْنِ مَالِكَ الْأَنْصَارِيِّ خَادِمٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرِهِ وَقَدْ أَضَلَّهُ فِي أَرْضِ
فَلَاةٍ – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ . وفي رواية لمسلم اللهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ على راحلته بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيْسَ مِنْهَا فَآتَى شَجَرَةٌ فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِهَا وَقَدْ أَيسَ
مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَا من شدة الفرح
১৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম আবু হামযা আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় তোমাদের ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন যার উট মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর সে তা ফিরে পেল। (বুখারী, মুসলিম)
ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছেঃ আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় তোমাদের ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন যার খাদ্য ও পানীয়সহ তার উট মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। সে নিরাশ হয়ে এক গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। এহেন নিরাশ অবস্থায় হঠাৎ তার নিকট সেই উটটিকে দাঁড়ানো দেখতে পেয়ে সে তার লাগাম ধরে ফেলল এবং আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার প্রভু! সে আনন্দের আতিশয্যেই ভুল করে ফেলেছে।
١٦ – وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسْئُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسْئُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ
مِنْ مَغْرِبِهَا رَوَاهُ مُسْلِمٌ .
১৬। আবু মূসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আল-আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (কিয়ামাত পর্যন্ত) আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতে তাঁর কুদরাতী হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে দিনের গুনাহগার তাওবা করে। আর তিনি প্রতিদিন তাঁর কুদরতী হাত প্রসারিত করতে থাকবেন, যাতে রাতের গুনাহগার তাওবা করে। (মুসলিম)
۱۷ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ .
১৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তাওবা করবে তার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন। (মুসলিম)
۱۸ – وَعَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلٌ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرغِرْ – رَوَاهُ التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثُ حَسَنٌ .
১৮। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বান্দার তাওবা কবুল করেন তার মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন এবং একে হাসান আখ্যায়িত করেছেন।
۱۹ – وَعَنْ زِرِ بْنِ حُبَيْشِ قَالَ أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ عَسَالٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَسْأَلُهُ عَنِ الْمَسْحِ عَلَى الْخُفَّيْنِ فَقَالَ مَا جَاءَ بِكَ يَا زِرِ؟ فَقُلْتُ ابْتِغَاءَ الْعِلْمِ فَقَالَ إِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَضَعُ اجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ الْعِلْمِ رِضَى بِمَا يَطْلُبُ فَقُلْتُ إِنَّهُ قَدْ
حَكَ فِي صَدْرِي الْمَسْحُ عَلَى الْخُفَّيْنِ بَعْدَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَكُنْتَ امْرُهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجِئْتُ أَسْأَلُكَ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذْكُرُ فِي ذَلِكَ شَيْئًا ؟ قَالَ نَعَمْ كَانَ يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفَرًا أَوْ مُسَافِرِينَ أَنْ لَا تَنْزِعَ
خِفَافَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهِنَّ الا مِنْ جَنَابَةٍ لَكِنْ مِنْ غَائِطِ وَيَوْلٍ وَنَوْمٍ فَقُلْتُ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذْكُرُ فِي الْهَوَى شَيئًا ؟ قَالَ نَعَمْ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَبَيْنَا نَحْنُ عِنْدَهُ إِذْ نَادَاهُ أَعْرَابِيُّ بِصَوْتٍ لَهُ
جَهْوَرِي يَا مُحَمَّدُ فَاجَابَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوًا مِنْ صَوْتِهِ هَاؤُمُ فَقُلْتُ لَهُ وَيْحَكَ أَغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ فَإِنَّكَ عِندَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ نُهِيتَ عَنْ هَذَا فَقَالَ وَاللَّهِ لَا أَغْضُضْ قَالَ الْأَعْرَابِيُّ الْمَرْءُ
يُحِبُّ الْقَوْمَ وَلَمَّا يَلْحَقِّ بِهِمْ؟ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبُّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَا زَالَ يُحَدِّثْنَا حَتَّى ذَكَرَ بَابًا مِنَ الْمَغْرِبِ مَسِيرَةُ عَرْضِهِ أَوْ يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي عَرْضِهِ أَرْبَعِينَ أَوْ سَبْعِينَ عَامًا قَالَ سُفْيَانُ أحَدُ
الرُّواةِ قِبَلَ الشَّامِ خَلَقَهُ اللهُ تَعَالَى يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ مَفْتُوحًا للتَّوْبَةِ لَا يُغْلَقُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْهُ – رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَغَيْرُهُ وَقَالَ حَدِيثٍ حَسَنٌ صَحِيح .
১৯। যির ইবনে হুবাইশ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাফওয়ান ইবনে আস্সাল (রা)-র নিকট মোজার উপর মাসেহ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। তিনি আমার আসার উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলে আমি বললাম, জ্ঞান লাভের জন্য এসেছি। তিনি বলেন, ফেরেশতাগণ জ্ঞান অন্বেষণকারীর জ্ঞানচর্চায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ডানা তার জন্য বিছিয়ে দেন। আমি বললাম, মলমূত্র ত্যাগের পর মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। আর আপনি হচ্ছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবী। তাই আমি আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে এসেছি, আপনি এ বিষয়ে তাঁর কোন বাণী শুনেছেন কি না। তিনি বলেন: হাঁ, যখন আমরা সফরে থাকতাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত জানাবাত (গোসল ফরয হয় যে অপবিত্র অবস্থায়) ছাড়া (উযুর সময় পা ধোয়ার জন্য) পা থেকে মোজা না খুলতে আদেশ করেছেন। তবে মলমূত্র ত্যাগ ও নিদ্রার পর উযু করতে গিয়ে মোজা খুলতে হবে না (অর্থাৎ পা ধুতে হবে না, মাসেহ করলেই চলবে)।
আমি বললাম, ভালোবাসা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বলেন, হাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা তাঁর নিকট থাকাকালীন হঠাৎ এক বেদুইন উচ্চস্বরে ‘হে মুহাম্মাদ’ বলে তাঁকে ডাক দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তার মত জোরে আওয়াজ দিয়ে বললেন, বস। আমি তাকে বললাম, আহ! তোমার আওয়াজ নিচু কর। কারণ তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রয়েছ এবং তোমাকে এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। লোকটি বলল, আমি আমার আওয়াজ নিচু করব না। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, অথচ সে এখনও তাদের সাথে মিলেনি। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে যাকে ভালোবাসে সে তারই সাথে কিয়ামাতের দিন থাকবে। এভাবে তিনি কথা বলতে বলতে শেষে পশ্চিম দিকের একটি দরজার কথা বলেন, যার প্রস্থের দূরত্ব পায়ে হেঁটে গেলে অথবা কোন যানবাহনে গেলে চল্লিশ অথবা সত্তর বছর।
সুফিয়ান নামে একজন হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশ ও পৃথিবী তৈরি করেছেন, সেই থেকে (সিরিয়ার দিকে) এই দরজা তাওবার জন্য খোলা রেখেছেন।
পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত এ দরজা বন্ধ করা হবে না।
ইমাম তিরমিযী প্রমুখ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি একে হাসান ও সহীহ হাদীস আখ্যায়িত করেছেন।
٢٠ – وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ سَعْدِ بْنِ مَالِكِ بْنِ سِنَانٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ نَبِيٍّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةٌ وَتِسْعِيْنَ نَفْسًا فَسَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الْأَرْضِ فَدَلَ عَلَى رَاهِبٍ فَآتَاهُ
فَقَالَ إِنَّهُ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِيْنَ نَفْسًا فَهَل لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ ؟ فَقَالَ لَا فَقَتَلَهُ فَكَمِّلَ بِهِ مِائَةً ثُمَّ سَأَلَ عَنْ أَعْلَم أهْلِ الْأَرْضِ قَدْلٌ عَلَى رَجُلٍ عَالِمٍ فَقَالَ إِنَّهُ قَتَلَ مِائَةَ نَفْسٍ فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ ؟ فَقَالَ نَعَمْ وَمَنْ يَحُولُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ
التَّوْبَةِ انْطَلِقُ إِلَى أَرْضِ كَذَا وَكَذَا فَإِنَّ بِهَا أَنَاسًا يَعْبُدُونَ اللهَ تَعَالَى فَاعْبُدِ اللَّهَ مَعَهُمْ وَلَا تَرْجِعُ إِلَى أَرْضِكَ فَإِنَّهَا أَرْضُ سُوءٍ فَانْطَلَقَ حَتَّى إِذَا نَصَفَ الطَّرِيقَ آتَاهُ الْمَوْتُ فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلَائِكَةُ الْعَذَابِ فَقَالَتْ
مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ جَاءَ تَائِبًا مُقْبلاً بِقَلْبِهِ إِلى الله تَعَالَى وَقَالَتْ مَلَائِكَةُ الْعَذَابِ إِنَّهُ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ فَأَتَاهُمْ مَلَكَ فِي صُورَةٍ أدَمِيٌّ فَجَعَلُوهُ بَيْنَهُمْ أَيُّ حَكَمًا فَقَالَ قِيْسُوا مَا بَيْنَ الْأَرْضَيْنِ فَالِى أَيْتِهِمَا كَانَ أَدْنَى فَهُوَ لَهُ فَقَاسُوا
فَوَجَدُوهُ أَدْنى إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي أَرَادَ فَقَبَضَتْهُ مَلَائِكَةُ الرحمة – متفق عليه. وَفِي رِوَايَة فِي الصَّحِيحِ فَكَانَ إِلَى الْقَرْيَةِ الصَّالِحَةِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أَهْلِهَا وَفِي رِوَايَةٍ فِي الصَّحِيحِ فَأَوْحَى اللَّهُ تَعَالَى إِلَى هُذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي
وَإِلَى هذهِ أَنْ تَقَرِّبَى وَقَالَ قِيْسُوا مَا بَيْنَهُمَا فَوَجَدُوهُ إِلَى هَذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغْفِرَ لَهُ وَفِي رِوَايَةٍ فَنَايَ بِصَدْرِهِ نَحْوَهَا
২০। আবু সাঈদ সা’দ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী কালে একজন লোক নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করার পর দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্ধান করল। তাকে একজন সংসারত্যাগী খৃস্টান দরবেশের সন্ধান দেয়া হল। সে তার নিকট গিয়ে বলল যে, সে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি? দরবেশ বলল, নেই। লোকটি দরবেশকে হত্যা করে এক শত সংখ্যা পূর্ণ করল। তারপর আবার সে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্ধান করায় তাকে এক আলিমের সন্ধান দেয়া হল। সে তার নিকট গিয়ে বলল যে, সে এক শত লোককে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি? আলিম বললেন, হাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। আর তাওবার অন্তরায় কে হতে পারে? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর ইবাদাত করছে। তুমিও তাদের সাথে ইবাদাত কর। আর তোমার দেশে ফিরে যেও না। কারণ ওটা খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল। অর্ধেক পথ গেলে তার মৃত্যুর সময় এসে পড়ল। তখন রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বলেন, এ লোকটি তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। কিন্তু আযাবের ফেরেশতারা বলেন, লোকটি কখনও কোনো ভালো কাজ করেনি। এমন সময় আর এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধরে তাদের নিকট এলেন। তারা তাকেই এ বিষয়ে তাদের মধ্যে শালিস মেনে নিলেন। শালিস বলেনঃ তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখ। যে দিকটি নিকটতর হবে সেটিরই সে অন্তর্ভুক্ত। কাজেই জায়গা পরিমাপের পর যে দিকের উদ্দেশে সে এসেছিল তাকে সে দিকটির নিকটবর্তী পাওয়া গেল। ফলে রহমতের ফেরেশতাগণ লোকটির প্রাণ নিলেন। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারীর অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ঐ ব্যক্তি সৎ লোকদের জনবসতির দিকে এক বিঘত বেশি নিকটবর্তী হয়েছিল। কাজেই তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বুখারীর অপর বর্ণনায় আছে: আল্লাহ তাআলা একদিকের জমিকে দূরে সরে যেতে এবং অন্যদিকের জমিকে নিকটে আসতে বলে ফেরেশতাদেরকে জমি মাপার হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই তারা সৎ লোকদের জমির দিকে লোকটিকে আধ হাত বেশি নিকটবর্তী দেখতে পেল। তাই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল। অন্য বর্ণনায় আছে: সে নিজের বুক ঘষে অসৎ লোকদের জমি থেকে দূরে সরে গেল।
۲۱- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بن کا بن كعب بن مالك وَكَانَ قَائِدُ كَعْبٍ رَضى ى اللهُ عَنْهُ مِنْ بَنِيهِ حِيْنَ عَمِيَ قَالَ سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُحَدِّثُ بِحَدِيثِهِ حِيْنَ تَخَلَّفَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ
تَبُوكَ قَالَ كَعْبٌ لَمْ اتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا قَطُّ إِلَّا فِي غَزْوَةٍ تَبُوكَ غَيْرَ أَنِّي قَدْ تَخَلَّفْتُ فِي غَزْوَةِ بَدْرٍ وَلَمْ يُعَاتَبْ أَحَدٌ تَخَلَّفَ عَنْهُ إِنَّمَا خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَالْمُسْلِمُونَ يُرِيدُونَ عَيْرَ قُرَيْشٍ حَتَّى جَمَعَ اللَّهُ تَعَالَى بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ عَدُوِّهِمْ عَلَى غَيْرِ مِبْعَادِ وَلَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الْعَقَبَةِ حِيْنَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَا أُحِبُّ أَنْ لِي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ وَإِنْ
كَانَتْ بَدْرٌ أَذْكَرَ فِي النَّاسِ مِنْهَا . وَكَانَ مِنْ خَبَرِي حِيْنَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ تَبُوكَ أَنِّي لَمْ أَكُنْ قَط أَقْوى وَلَا أَيْسَرَ مِنِّي حِيْنَ تَخَلَّفْتُ عَنْهُ فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ
قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ وَلَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ غَزْوَةً إِلَّا وَرَى بِغَيْرِهَا حَتَّى كَانَتْ تِلْكَ الْغَزْوَةُ فَغَزَاهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَرِّ شَدِيدٍ وَاسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيداً ومَفَارًا
وَاسْتَقْبَلَ عَدَداً كَثِيرًا فَجَلَى لِلْمُسْلِمِينَ أَمْرَهُمْ لِيَتَاهُبُوا أَهْبَةً غَزُوهِمْ فَأَخْبَرَهُمْ بِوَجْهِهِمُ الَّذِي يُرِيدُ وَالْمُسْلِمُونَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَثِيرٌ وَلَا يَجْمَعُهُمْ كِتَابٌ حَافِظ يُرِيدُ بذَلِكَ الدِّيوَانَ قَالَ كَعْبٌ فَقَلْ رَجُلٌ
يُرِيدُ أَنْ يَتَغَيْبَ إِلَّا ظَنَّ أَنَّ ذَلِكَ سَيَخْفَى بِهِ مَا لَمْ يَنْزِلُ فِيْهِ وَحْيٌ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى وَغَزَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ الْغَزْوَةَ حِيْنَ طَابَتِ الشِّمَارُ وَالظُّلَالُ فَأَنَا إِلَيْهَا أَصْعَرُ فَتَجَهُزَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَالْمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَطَفِقْتُ اغْدُو لِكَى أَتَجَهْزَ مَعَهُ فَارْجِعُ وَلَمْ أَقْضِ شَيْئًا وَأَقُولُ فِي نَفْسِي أَنَا قَادِرٌ عَلَى ذَلِكَ إِذَا أَرَدْتُ فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بِي حَتَّى اسْتَمَرُ بِالنَّاسِ الْجُدُّ فَأَصْبَحَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَادِيًا
وَالْمُسْلِمُونُ مَعَهُ وَلَمْ أَقْضِ مِنْ جِهَازِي شَيْئًا ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ اقْضِ شَيْئًا فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بِي حَتَّى أَسْرَعُوا وَتَفَارَطَ الْغَزِرُ فَهَمَمْتُ أَنْ أَرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ فَيَا لَيْتَنِي فَعَلْتُ ثُمَّ لَمْ يُقَدِّرُ ذَلِكَ لِي فَطَفِقْتُ إِذَا خَرَجْتُ فِي
النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَحْزُنُنِي أَنِّي لا أرى لِى أَسْوَةً إِلَّا رَجُلاً مَعْمُوصًا عَلَيْهِ فِي النِّفَاقِ أَوْ رَجُلاً مِمَّنْ عَذَرَ اللهُ تَعَالَى مِنَ الضُّعَفَاءِ وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَلَغَ
تَبُوكَ فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ فِي الْقَوْمِ بِتَبُوكَ مَا فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكَ؟ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يَا رَسُولَ اللهِ حَبَسَهُ بُرْدَاهُ وَالنَّظَرُ فِي عِطْفَيْهِ فَقَالَ لَهُ مُعَادُ بْنُ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِئْسَ مَا قُلْتَ وَاللهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلِمْنَا
عَلَيْهِ إِلَّا خَيْرًا فَسَكَتَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَيْنَا هُوَ عَلَى ذَلِكَ رَأَى رَجُلاً مبيضا يزولُ بِهِ السَّرَابُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ فَإِذَا هُوَ أَبُو خَيْثَمَةَ الْأَنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدِّقَ بِصَاعِ
الشَّمْرِ حِينَ لَمَزَهُ الْمُنَافِقُونَ قَالَ كَعْبٌ فَلَمَّا بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ تَوَجُهَ قَافِلاً مِّنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَنِى فَطَفَقْتُ أَتَذَكَّرُ الْكَذِبَ وَأَقُولُ بِمَا أَخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غدًا وَاسْتَعِينُ عَلَى ذلك بكُلِّ ذي رأى مِنْ
أَهْلي فَلَمَّا قَبْلَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَظَلَّ قَادِمًا زَاحَ عَنِّى الْبَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَمْ أَنْجُ مِنْهُ بِشَيْ أَبَدا فَأَجْمَعْتُ صِدْقَهُ وَأَصْبَحَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَادِمًا وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ
بِالْمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ فَلَمَّا فَعَلَ ذلِكَ جَاءَهُ الْمُخَلَّفُونَ يَعْتَذِرُونَ إِلَيْهِ وَيَحْلِفُونَ لَهُ وَكَانُوا بِضْعًا وَثَمَانِينَ رَجُلاً فَقَبِلَ مِنْهُمْ عَلَانِيَتَهُمْ وَتَابَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى حَتَّى جِئْتُ
فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسَّمَ الْمُغْضَبِ ثُمَّ قَالَ تَعَالَ فَجِئْتُ أَمْشِي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ لِي مَا خَلْفَكَ أَلَمْ تَكُنْ قَدِ ابْنَعْتَ ظَهْرَكَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي وَاللهِ لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا لَرَأَيْتُ إِنِّي
سَأَخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذر لَقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلاً ولكنني وَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ الْيَوْمَ حَدِيثَ كَذِبٍ تَرْضَى بِهِ عَنِّى لَيُوشِكَنَّ اللهُ يُسْخِطَكَ عَلَى وَإِنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صدق تَجِدُ عَلَى فِيْهِ إِنِّي لَأَرْجُو فِيْهِ عُقْبَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلٌ
وَاللَّهِ مَا كَانَ لِي مِنْ عُدْرٍ وَاللَّهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوى وَلَا أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ. قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا هُذَا فَقَدْ صَدَقَ فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ فِيكَ وَسَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ فَاتَّبَعُونِي فَقَالُوا
لِي وَاللَّهِ مَا عَلِمْنَاكَ اذْنَبْتَ ذَنْبًا قَبْلَ هَذَا لَقَدْ عَجَزَتَ فِي أَنْ لَا تَكُونَ اعْتَذَرْتَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا اعْتَذَرَ بِهِ إِلَيْهِ الْمُخَلَّفُونَ فَقَدْ كَانَ كَافِيَكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكَ قَالَ
فَوَاللَّهِ مَا زَالُوْا يُؤْنَبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُ أن أرجع إلى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَكَذَبَ نَفْسِي ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ هَلْ لقِي هَذَا مَعِيَ مِنْ أَحَدٍ ؟ قَالُوا نَعَمْ لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلَانِ قَالَا مِثْلَ مَا قُلْتَ وَقِبْلَ لَهُمَا مِثْلَ مَا قَبْلَ لَكَ قَالَ
قُلْتُ مَنْ هُمَا ؟ قَالُوا مُرَارَةُ بْنُ الرَّبِيعِ الْعَمْرِيُّ وَهِلَالُ بن أمية الواقفِيُّ قَالَ فَذَكَرُوا لِي رَجُلَيْنِ صَالِحَيْنِ قَدْ شَهِدًا بَدْرًا فِيْهِمَا أَسْوَةً قَالَ فَمَضَيْتُ حِيْنَ ذَكَرُوهُمَا لِي وَنَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كَلَامِنَا أيُّهَا
الثَّلَاثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ قَالَ فَاجْتَنَبَنَا النَّاسُ أَوْ قَالَ تَغَيَّرُوا لَنَا حَتَّى تَنَكَّرَتْ لِي فِي نَفْسِي الْأَرْضُ فَمَا هِيَ بِالْأَرْضِ الَّتِي أَعْرِفُ فَلَبِثْنَا عَلَى ذَلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً فَأَمَّا صَاحِبَايَ فَاسْتَكَانَا وَقَعَدَا فِي بُيُوتِهِمَا يَبْكِيَانِ وَأَمَّا
أَنَا فَكُنْتُ أَشَبِّ الْقَوْمِ وَأَجْلَدَهُمْ فَكُنتُ أَخْرُجُ فَأَشْهَدُ الصَّلَاةَ مَعَ الْمُسْلِمِينَ وَاطُوْفُ فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ وَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَأَقُولُ فِي نَفْسِي هَلْ
حَرَّكَ شَفَتَيْهِ بِرَدِ السلام أم لا ؟ ثُمَّ أَصَلَّى قَرِيبًا مِنْهُ وَأَسَارِقُهُ النَّظَرَ فَإِذَا أَقْبَلْتُ عَلَى صَلَاتِي نَظَرَ إِلَى وَإِذَا الْتَفَتْ نَحْوَهُ أَعْرَضَ عَنِّى حَتَّى إِذَا طَالَ ذَلِكَ عَلَى مِنْ جَفْوَةِ الْمُسْلِمِينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جدارَ حَائِط أَبِي
قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمَى وَأَحَبُّ النَّاسِ إِلَى فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَوَاللهِ مَا رَدَّ عَلَى السَّلَامَ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا قَتَادَةَ أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُنِي أُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَكَتَ فَعُدْتُ فَنَا شَدْتُهُ فَسَكَتَ فَعُدتُ فَنَاشَدْتُهُ
فَقَالَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَفَاضَتْ عَيْنَايَ وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَورْتُ الجِدَارَ فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي فِى سُوقِ المَدِينَةِ إِذَا نَبَطِيِّ مِّنْ نَبَطِ أَهْلِ الشَّامِ مِمَّنْ قَدِمَ بِالطَّعَامِ يَبِيعُهُ بِالْمَدِينَةِ يَقُولُ مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكَ؟ فَطَفِقَ النَّاسُ
يُشِيرُونَ لَهُ إِلَى حَتَّى جَاءَنِي فَدَفَعَ إِلَى كِتَابًا مِّنْ مَلِكِ غَسَّانَ وَكُنْتُ كَاتِبًا فَقَرَأْتُهُ فَإِذَا فِيْهِ : أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنَا أَنْ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلُكَ اللَّهُ بِدَارِ هَوَانٍ وَلَا مَضْيَعَةٍ فَالْحَقِّ بِنَا نُوَاسِكَ فَقُلْتُ حِيْنَ قَرَأْتُهَا وَهَذِهِ
أَيْضًا مِنَ الْبَلَاءِ فَتَيَمَّمْتُ بِهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُوْنَ مِنَ الْخَمْسِينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْيُ إِذَا رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِيْنِي فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَعْتَزِلَ امْرَأَتَكَ
فَقُلْتُ أَطَلَقُهَا أَمْ مَاذَا أَفْعَلُ؟ قَالَ لَا بَلْ اعْتَزِلُهَا فَلَا تَقْرَبَنَّهَا وَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَى بِمِثْلِ ذَلِكَ فَقُلْتُ الإِمْرَاتِي الْحَقِي بِأَهْلِكِ فَكُوْنِي عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللَّهُ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَجَاءَتْ امْرَأَةُ هِلَالِ بْنِ أُمَيَّةَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هِلَالَ بْنَ أُمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ فَهَلْ تَكْرَهُ أَنْ أَخْدُمَهُ؟ قَالَ لَا ولكن لا يَقْرَبَنَّكِ فَقَالَتْ إِنَّهُ وَاللَّهِ مَا بِهِ مِنْ حَرَكَةٍ إِلَى شَيْءٍ وَوَاللَّهِ مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أَمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى
يَوْمِهِ هذا فَقَالَ لِي بَعْضُ أَهْلِي لَوِ اسْتَأْذَنَتَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي امْرَأَتِكَ فَقَد أَذِنَ لِامْرَأَةِ هلال بْنِ أُمَيَّةَ أَن تَخْدُمَهُ ؟ فَقُلْتُ لَا أَسْتَأْذِنُ فِيهَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا يُدْرِيْنِي مَاذَا يَقُولُ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ فِيْهَا وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ فَلَبِثْتُ بِذلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمَلَ لَنَا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلَامِنَا . ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلَاةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِّنْ بُيُوتِنَا فَبَيْنَا أَنَا
جَالِسٌ عَلَى الْحَالِ الَّتِي ذَكَرَ اللهُ تَعَالَى مِنَّا قَدْ ضَاقَتْ عَلَى نَفْسِي وَضَاقَتْ عَلَى الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِحْ أَوْ فِى عَلَى سَلْعِ يَقُولُ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكِ أَبْشِرُ فَخَرَرْتُ سَاجِدًا وَعَرَفْتُ أَنَّهُ قَدْ جَاءَ
فَرَجٌ فَاذَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ بِتَوْبَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاةَ الْفَجْرِ فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَي مُبَشِّرُونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَى فَرَسًا وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أَسْلَمَ قِبَلِي وَأَوْفَى
عَلَى الْجَبَلِ وَكَانَ الصَّوْتُ أَشْرَعَ مِنَ الْفَرَسِ فَلَمَّا جَاءَنِي الَّذِي سَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُنِي نَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَى فَكَسَوْتُهُمَا إِيَّاهُ بِبَشَارَتِهِ وَاللهِ مَا أَمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ فَلَبِسْتُهُمَا وانْطَلَقْتُ أَتَاهُمُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَلَقَّانِي النَّاسُ فَوْجًا فَوْجًا يُهننونني بالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِي لِتَهْنِكَ تَوْبَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ حَوْلَهُ النَّاسُ فَقَامَ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
يُهَرُولُ حَتَّى صَافَحَنِي وَهَنَّانِي وَاللَّهِ مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ غَيْرُهُ فَكَانَ كَعْبُ لَا يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ قَالَ كَعْبٌ فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُورِ أَبْشِرْ بِخَيْرِ يَوْمِ مَرَّ
عَلَيْكَ مُذْ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ فَقُلْتُ مِنْ عِنْدَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمْ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ ؟ قَالَ لَا بَلْ مِنْ عِنْدِ اللهِ عَزَّ وَجَلٌ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سُرِّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ حَتَّى كَانْ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ وَكُنَّا نَعْرِفُ ذَلِكَ مِنْهُ . ذلكَ
مِنْهُ فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدِّقَةً إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْسِكَ عَلَيْكَ بَعْضٍ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ فَقُلْتُ إِنِّي أَمْسِكُ سَهْمِي
الَّذِي بِخَيْبَرَ وَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِنَّمَا أَنْجَانِي بِالصِّدْقِ وَإِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ لَا أُحَدِّثَ إِلَّا صِدْقًا مَا بَقِيْتُ فَوَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ أَحَدًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ أَبْلَاهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي صِدْقِ الْحَدِيثِ مُنْدُ ذكرت ذلك لِرَسُولِ الله صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ مِمَّا أَبْلَانِيَ اللَّهُ تَعَالَى وَاللَّهِ مَا تَعَمَّدْتُ كَذَّبَةٌ مُنْذُ قُلْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى يَوْمِي هَذَا وَإِنِّي لَأَرْجُو أَنْ يَحْفَظْنِيَ اللَّهُ تَعَالَى فِيْمَا بَقِي . قَالَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى القَدْ تَابَ اللَّهُ
عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ) حَتَّى بَلَغَ : (إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوْفٌ رَّحِيمٌ وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلَفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ) . حَتَّى بَلَغَ : (وَاتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ)
(التوبة : ۱۱۹-۱۱۷) قَالَ كَعْبٌ وَاللهِ مَا أَنْعَمَ اللهُ عَلَى مِنْ نِعْمَةٍ قَطُّ بَعْدَ إِذْ هَدَانِي اللهُ لِلْإِسْلَامِ أَعْظَمَ فِي نَفْسِي مِنْ صِدْقِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ لَا اكُوْنَ كَذَبْتُهُ فَأَهْلَكَ كَمَا هَلَكَ الَّذِينَ كَذَّبُوا إِنَّ اللَّهَ
تَعَالَى قَالَ لِلَّذِينَ كَذَبُوا حِيْنَ أَنْزَلَ الْوَحْيَ شَرِّ مَا قَالَ لِأَحَدٍ فَقَالَ اللهُ تَعَالَى سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَاعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَا وَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ . يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا
عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ) (التوبة : ٠٩٥ ٩٦) قَالَ كَعْبٌ كُنَّا خُلِفْنَا أَيُّهَا الثَّلاثَةُ عَنْ أَمْرِ أُولَئِكَ الَّذِينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ خَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ
وَأَرْجَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْرَنَا حَتَّى قَضَى اللَّهُ تَعَالَى فِيْهِ بِذَلِكَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى (وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِفُوا ) وَلَيْسَ الَّذِي ذَكَرَ مِمَّا خُلَّفْنَا تَخَلَّفْنَا عَنِ الْغَزْوِ وَأَنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ أَيَّانَا وَارْجَاؤُهُ أَمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ
وَاعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَبِلَ مِنْهُ -مَتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ فِي عَزْوَةٍ تَبُوكَ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يَخْرُجَ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَفِي رِوَايَةٍ وَكَانَ لَا يَقْدَمُ مِنْ سَفَرٍ الا نهاراً فِي الضُّحَى فَإِذَا قَدِمَ بَدَأَ
بِالْمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيْهِ.
২১। কা’ব ইবনে মালিক (রা)-র পুত্র আবদুল্লাহ (র) থেকে বর্ণিত। কা’ব ইবনে মালিক (রা) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর পুত্রদের মধ্যে আবদুল্লাহ তাঁর পরিচালক ছিলেন। আবদুল্লাহ বলেন, তাবুকের জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে না গিয়ে পেছনে রয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমি কা’ব ইবনে মালিক (রা)-র বক্তব্য শুনেছি। কা’ব বলেন, তাবুকের জিহাদ ছাড়া আমি কোনো জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আলাদা ছিলাম না। তবে বদরের জিহাদ থেকেও আমি দূরে রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই জিহাদে যারা শরীক হননি তাদের কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমগণ কুরাইশদের ব্যবসায়ী কাফিলার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেবার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা (বাহ্যত) অসময়ে মুসলমানদেরকে তাদের দুশমনদের সাথে সংঘর্ষের সম্মুখীন করে দিলেন। আমরা আকাবার রাতে যখন ইসলামের উপর কায়েম থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। যদিও বদরের জিহাদ মানুষের মধ্যে বেশি স্মরণীয়, তবুও আমি আকাবায় উপস্থিতির বদলে বদরের উপস্থিতিকে অধিক প্রিয় মনে করি না।
তাবুকের জিহাদে আমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে না যাওয়ার বিবরণ এই যে, এই জিহাদের সময় আমি যতটা শক্তিশালী ও ধনবান ছিলাম এতটা আর কোন সময় ছিলাম না। আল্লাহর শপথ! এ জিহাদের সময় আমার দু’টি উট ছিল কিন্তু এর পূর্বে আমার দু’টি উট ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করলে (সরাসরি না বলে ইংগিতবহ শব্দ দ্বারা) অন্যভাবে তা প্রকাশ করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যধিক গরমের সময় তাবুকের জিহাদে যান। সফর ছিল অনেক দূরের। অঞ্চল ছিল খাদ্য ও পানিহীন। আর শত্রুসৈন্যের সংখ্যাও ছিল বেশি। তাই তিনি মুসলিমদের কাছে এই জিহাদের কথা খুলে বলে দিলেন, যাতে সবাই জিহাদের জন্য ঠিকমত প্রস্তুত হতে পারেন। তিনি তাঁদেরকে তাঁর ইচ্ছা জানিয়ে দিলেন। বহু মুসলিম মুজাহিদ এ জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। সে সময়ে তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য কোন রেজিস্ট্রি বই ছিল না। কা’ব (রা) বলেন, যে লোক জিহাদে যোগদান না করে আত্মগোপন করতে চাইতো সে অবশ্যই মনে করত যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার সম্পর্কে ওহী নাযিল না হবে ততক্ষণ তার ভূমিকা গোপন থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ জিহাদে যান তখন গাছে ফল পেকে গিয়েছিল এবং গাছপালার ছায়াও আরামদায়ক হয়ে উঠেছিল। আমি এসবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। যাহোক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথে মুসলিমগণ প্রস্তুতি শুরু করলেন। আমিও তাঁর সাথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতির উদ্দেশে সকাল বেলা যেতাম বটে, কিন্তু কোন কিছু না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে ভাবতাম যে, আমি ইচ্ছা করলেই এ কাজ করতে পারব। এভাবে গড়িমসি করতে করতে অনেক দিন চলে গেল, এমনকি লোকেরা সফরের জোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম মুজাহিদদের নিয়ে রওয়ানা হলেন, কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতিই নিলাম না। কিছু কাল আমার এই গড়িমসি চলতে লাগল। ওদিকে মুজাহিদগণ দ্রুত অগ্রসর হয়ে গিয়েছেন এবং জিহাদও সন্নিকটে। আমি তখন লক্ষ্য করলাম যে, রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর আমি যখন লোকদের মধ্যে চলাফেরা করতাম, তখন যাদেরকে মুনাফিক বলা হত এবং যাদেরকে আল্লাহ অক্ষম ও দুর্বল বলে গণ্য করেছিলেন সেই রকমের লোক ছাড়া আর কাউকে আমার মত ভূমিকায় দেখতে পেতাম না। এ অবস্থা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিত।
তাবুকে পৌঁছা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথা স্মরণ করেননি। তাবুকে তিনি লোকজনের মধ্যে বসা অবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, কা’ব ইবনে মালিক কি করল? বনু সালেমার একজন বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে তার চাদর ও শরীরের দুই পার্শ্বদেশ দর্শন আটকে রেখেছে। মু’আয ইবনে জাবাল রাদিআল্লাহু আনহু তাকে বলেন, তুমি যা বললে তা খারাপ কথা। আল্লাহর শপথ! ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো তার ব্যাপারে ভালো ছাড়া আর কিছু জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। এমন অবস্থায় তিনি সাদা পোশাক পরিহিত একজন লোককে মরুভূমির মরীচিকার মধ্য দিয়ে আসতে দেখে বলেন, তুমি আবু খাইসামা? দেখা গেল তিনি সত্যিই আবু খাইসামা আনসারী (রা)। আর আবু খাইসামা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি মুনাফিকরা যাঁকে টিকারি দিয়েছিল তিনি এক সা খেজুর দান করেছিলেন বলে। কা’ব (রা) বলেন, যখন তাবুক থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের ফিরে আসার খবর পেলাম তখন আমার খুব দুশ্চিন্তা হল। তাই মিথ্যা ওজর ভাবতে লাগলাম। (মনে মনে) বলতে লাগলাম, কিভাবে তাঁর অসন্তোষ থেকে বাঁচতে পারি। আমার পরিবারবর্গের বুদ্ধিমান লোকদের নিকট সাহায্য চাইলাম। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসছেন বলে খবর পাওয়া গেল, তখন মিথ্যা বলার ইচ্ছা দূর হয়ে গেল, এমনকি কোন কিছু দ্বারা মুক্তি পাব না বলে বুঝতে পারলাম, তাই সত্য কথা বলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। আর তিনি সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে গিয়ে দুই রাক’আত নামায আদায় করতেন, তারপর লোকজনের সামনে বসতেন। এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি যখন বসলেন, তখন যারা এ জিহাদে যোগদান করেনি, তারা শপথ করে ওজর পেশ করতে লাগল। এরূপ লোক ছিল আশিজনের বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রকাশ্য বক্তব্য গ্রহণ করলেন, তাদের বাইয়াত গ্রহণ করলেন এবং তাদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের গোপন অবস্থা আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলেন। অবশেষে আমি হাযির হয়ে যখন সালাম দিলাম, তিনি রাগের হাসি হাসলেন, তারপর কাছে ডাকলেন। আমি তাঁর সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন পেছনে রয়ে গেলে? তুমি তোমার বাহন কিনেছিলে না? কা’ব (রা) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমি যদি আপনি ছাড়া অন্য কোন দুনিয়াদার লোকের সামনে বসতাম, তাহলে কোন ওজর দ্বারা তার অসন্তোষ থেকে বাঁচবার পথ দেখতে পেতাম। যুক্তি প্রদর্শনের যোগ্যতা আমার আছে। আল্লাহর শপথ! আমি জানি, যদিও আজ আমি আপনার নিকট মিথ্যা কথা বললে তাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন, কিন্তু আল্লাহ আপনাকে আমার প্রতি অতি শীঘ্রই অসন্তুষ্ট করে দেবেন। আর সত্য কথা বলায় আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেও আমি আল্লাহর নিকট ভাল পরিণতির আশা করি। আল্লাহর শপথ! আমার কোন ওজর ছিল না। আল্লাহর শপথ! এ জিহাদে আপনার সাথে না গিয়ে পেছনে রয়ে যাওয়ার সময় আমি যতটা শক্তিমান ও অর্থশালী ছিলাম অতটা অন্য কোন সময় ছিলাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে সত্য কথাই বলেছে। আচ্ছা উঠে যাও। তোমার ব্যাপারে আল্লাহ কোন ফায়সালা করা পর্যন্ত দেখা যাক।
বনী সালেমার কয়েকজন লোক আমার পেছনে পেছনে এসে আমাকে বলতে লাগল, আল্লাহর শপথ। ইতিপূর্বে তুমি কোন অপরাধ করেছ বলে আমরা জানি না। তুমি কি অন্য লোকদের মত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওজর পেশ করতে পারলে না? তোমার গুমাহর জন্য আল্লাহ্র নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট হয়ে যেত। এরা আমাকে এত তিরস্কার করতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে গিয়ে নিজেকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার আমার ইচ্ছা হল। তারপর আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মত এরূপ ব্যাপার আর কারও ঘটেছে কি? তারা বলল, হাঁ আরও দু’জনের ব্যাপারও তোমার মতই ঘটেছে। তুমি যা বলেছ, তারাও সেই রকমই বলেছে। আর তোমাকে যা বলা হয়েছে, তাদেরকেও তাই বলা হয়েছে। কা’ব (রা) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে দু’জন কে কে? লোকেরা বলল, তারা হচ্ছেন মুরারা ইবনে রবীআ আমেরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকেফী (রা)।
কা’ব (রা) বলেন, লোকেরা আমাকে যে দু’জন লোকের নাম বলল, তারা ছিলেন খুবই সৎ ও আদর্শ পুরুষ এবং বদরের জিহাদে তারা যোগদান করেছিলেন। কা’ব বলেন, লোকেরা উক্ত দু’জনের খবর দিলে আমি আমার পূর্বের নীতির উপর অবিচল রইলাম।
যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে আমাদের তিনজনের সাথে লোকদেরকে কথা বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করে দিলেন। কাজেই সব লোক আমাদের নিকট থেকে দূরে থাকতে লাগল (অথবা তারা আমাদের জন্য পরিবর্তিত হয়ে গেল), এমনকি আমার জন্য দুনিয়া একেবারে অপরিচিত হয়ে গেল। পরিচিত দেশ আমার জন্য অপরিচিত হয়ে গেল। এভাবে আমরা পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত থাকলাম। আমার দু’জন সাথী ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়লেন এবং তারা ঘরে বসে বসে কাঁদতে থাকলেন। আমি নওজোয়ান ও শক্তিশালী ছিলাম। তাই আমি বাইরে বের হয়ে মুসলিমদের সাথে নামায পড়তাম এবং বাজারে চলাফেরা করতাম, কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলত না। নামাযের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্থানে বসলে আমি তাঁকে সালাম দিতাম এবং মনে মনে ভাবতাম দেখি তিনি সালামের জওয়াব দিতে ঠোঁট নাড়েন কি না। তারপর আমি তাঁর নিকটবর্তী স্থানে নামায পড়তাম এবং চুপে চুপে দেখতাম তিনি আমার দিকে তাকান কিনা। আমি যখন নামাযে মশগুল হতাম তখন তিনি আমার দিকে তাকাতেন। আবার আমি যখন তাঁর দিকে তাকাতাম, তখন তিনি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন।
এভাবে যখন মুসলিম সমাজের অসহযোগিতার দরুন আমার এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হল, তখন আমি (একদিন) আবু কাতাদা (রা)-র বাগানের দেওয়াল টপকে তাঁকে সালাম দিলাম। আল্লাহর শপথ। সে আমার সালামের জওয়াব দিল না। অথচ সে ছিল আমার চাচাত ভাই ও প্রিয়তম বন্ধু। আমি তাকে বললাম, আবু কাতাদা। আমি তোমাকে আল্লাহ্র শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি? সে চুপ রইল। আমি আবার তাকে শপথ করে জিজ্ঞেস করলাম। সে চুপ করে থাকল। আমি আবার শপথ করলে সে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। এ কথায় আমার দু’ চোখ ফেটে পানি বের হয়ে এলো। আমি দেওয়াল পার হয়ে ফিরে এলাম। এরপর আমি একদিন মদীনার বাজারে ঘুরছিলাম, এমন সময় মদীনায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করার জন্য আগত এক সিরিয়াবাসী কৃষক আমাকে খুঁজতে লাগলো। লোকেরা তাকে আমার দিকে ইঙ্গিত করতে লাগল। সে আমার কাছে এসে আমাকে গাস্সান বাদশাহের একটি পত্র দিল। আমি পত্রটি পড়লাম। তাতে লেখা ছিল, আমরা জানতে পারলাম, তোমার সাথী (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার উপর যুগ্ম করেছে। আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার স্থানে থাকবার জন্য সৃষ্টি করেননি। তুমি আমাদের সাথে মিলে যাও, আমরা তোমাকে সাহায্য করব। পত্র পড়ে আমি বললাম, এটাও আমার জন্য পরীক্ষা। আমি পত্রটি চুলায় নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে ফেললাম।
এভাবে পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন চলে গেল। আর কোন ওহীও নাযিল হল না। হঠাৎ একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সংবাদদাতা এসে আমাকে জানান, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে আমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বললাম, আমি কি তাকে তালাক দেব অথবা অন্য কিছু করব? সংবাদদাতা বলেন, না তুমি তার থেকে পৃথক থাকবে, তার সাথে থাকবে না। আমার অন্য দু’জন সাথীকেও উক্তরূপ খবর দেয়া হয়েছে। আমি স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও এবং আল্লাহ যতক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তাদের কাছেই থাক। হেলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল। হিলাল ইবনে উমাইয়া খুবই বুড়ো মানুষ, তার কোন খাদেম নেই। আমি তার খিদমত করলে আপনি কি অপছন্দ করবেন? তিনি বললেন, না। তবে সে যেন তোমার সাথে সহবাস না করে। উমাইয়ার স্ত্রী বলেন, আল্লাহ্র শপথ। এ ব্যাপারে তার কোন শক্তিই নেই। আল্লাহর শপথ! এই দিন পর্যন্ত তার ব্যাপারে যা কিছু হচ্ছে তাতে সে সর্বদা কাঁদছে। (কা’ব বলেন) আমার পরিবারের কেউ আমাকে বলল, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে তোমার স্ত্রীর (খিদমত নেয়ার) ব্যাপারে অনুমতি নিতে পারতে। তিনি তো হিলাল ইবনে উমাইয়ার খিদমত করার জন্য তার স্ত্রীকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে অনুমতি চাইব না। না জানি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইলে তিনি কি বলেন। আর আমি হচ্ছি একজন নওজোয়ান।
এভাবে (আরও) দশ দিন কাটালাম। আমাদের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে পূর্ণ পঞ্চাশ দিন গত হল। তারপর আমি আমার এক ঘরের ছাদে পঞ্চাশতম দিনের ভোরে ফজরের নামায আদায় করে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যে অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহ আল কুরআনে আমাদের সম্পর্কে বলেছেন: আমার মন ছোট হয়ে গেছে এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
আমি এ অবস্থায় বসে আছি, এমন সময় সাআ পাহাড়ের উপর থেকে একজন লোককে (আবু বাক্স আস্ সিদ্দীক) চিৎকার করতে শুনলাম। তিনি উচ্চস্বরে বলছিলেন, হে কা’ব! তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি এ কথা শুনে সিজদায় পড়ে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, মুক্তির বার্তা এসেছে। আল্লাহ যে আমাদের তাওবা কবুল করেছেন, এ খবর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায শেষে সমস্ত লোককে জানিয়ে দিলেন। এতে লোকেরা আমাদের সুখবর দিতে এলো। কতিপয় লোক আমার দু’জন সাথীকে সুখবর দিতে গেল। আর একজন লোক দৌড়ে গিয়ে পাহাড়ের উপর উঠল। ঘোড়ার চেয়ে শব্দের গতি ছিল বেশি দ্রুতগামী। যিনি আমাকে সুখবর দিচ্ছিলেন তার আওয়ায আমি যখন শুনতে পেলাম, তখন আমি তার সুখবর দেয়ার জন্য (আনন্দের আতিশয্যে) নিজের’ কাপড় দু’খানা খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আল্লাহর শপথ! সেদিন ঐ দু’খানা কাপড় ছাড়া আর কোন কাপড় আমার ছিল না। আমি অপর দু’খানা কাপড় ধার করে নিলাম এবং তা পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমার সাথে দেখা করে আমার তাওবা কবুলের জন্য আমাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করতে লাগল। তারা আমাকে বলতে লাগল, আল্লাহ তোমার তাওবা কবুল করায় তোমার প্রতি অভিনন্দন। অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন, আর লোকেরা তাঁর চারপাশে ছিল। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা) দ্রুতবেগে উঠে এসে সাদরে আমার সাথে মুসাফাহ করে আমাকে অভিনন্দন জানান। আল্লাহর শপথ! তালহা (রা) ছাড়া আর কোন মুহাজির উঠেননি। কা’ব (রা) তাল্হা (রা)-র এই ব্যবহার ভুলেননি। কা’ব (রা) বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলাম, তখন তাঁর চেহারা আনন্দে জ্যোতির্ময় হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেনঃ “তোমার জন্মদিন থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর।” আমি বললাম, এ খবর কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহর পক্ষ থেকে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ “না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে।” আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আনন্দিত হতেন, তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যেত এবং মনে হত যেন এক টুকরা চাঁদ। আমরা তা বুঝতে পারতাম। তারপর আমি তাঁর সামনে বসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমার তাওবা কবুল হওয়ায় আমার মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য সাদাকা করে দিতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কতক মাল রেখে দাও, সেটাই তোমার পক্ষে ভালো। আমি বললাম, তাহলে আমার খাইবারের মালের অংশটা রেখে দিলাম। আমি আরও বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আমাকে সত্য কথা বলার জন্য মুক্তি দিয়েছেন। কাজেই আমার তাওবার এটাও দাবি যে, আমি বাকী জীবনে সত্য কথাই বলে যাব। আল্লাহর শপথ! আমি যখন এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বলছিলাম তখন থেকে সত্য কথা বলার যে উত্তম নি’আমত আল্লাহ আমাকে দান করেছেন তা অন্য কোন মুসিলমকে দান করেছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহর শপথ! ঐ সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোন মিথ্যা বলার ইচ্ছা করিনি। বাকী জীবনেও আল্লাহ আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করবেন বলে আশা রাখি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করেছেন… তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান ও সদয়। তিনি সেই তিনজনের তাওবাও কবুল করেছেন যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল, এমনকি শেষ পর্যন্ত এ দুনিয়া প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল…।
আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” (সূরা আত্ তাওবা: ১১৭-১১৯ আয়াত)
কা’ব (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ! যখন থেকে আল্লাহ আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন তখন থেকে এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সত্য কথা বলাই আমার জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নি’আমত। যদি আমি তাঁর নিকট মিথ্যা বলতাম তাহলে অন্যান্য মিথ্যাবাদীদের ন্যায় আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম। যারা মিথ্যা ওজর পেশ করেছিল তাদের সম্পর্কে আল্লাহ যখন ওহী নাযিল করেন তখন এতটা তীব্র ভাষায় তাদের নিন্দা করেন যা (ইতিপূর্বে) অন্য কারো ব্যাপারে করেননি। আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা যখন তাদের নিকট ফিরে যাবে, তখন তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর শপথ করে ওজর পেশ করবে, যাতে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না কর। যাক, তাদেরকে ছেড়েই দাও। তারা অপবিত্র, আর তাদের স্থান হবে জাহান্নাম। এটা হচ্ছে তাদের কৃতকর্মের ফল। তারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের নিকট শপথ করে মিথ্যা ওজর পেশ করবে। তোমরা তাতে তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও আল্লাহ কিছুতেই এরূপ ফাসিক লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হন না।” (সূরা আত্ তাওবা: ৯৫-৯৬)
কা’ব (রা) বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শপথ করে মিথ্যা ওজর পেশ করেছিল, তিনি তাদের ওজর কবুল করে তাদের বাইয়াত নিয়েছিলেন এবং তাদের গুনাহ মাফের দোয়াও করেছিলেন, আর আমাদের তিনজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ এ ব্যাপারে মীমাংসা করে দিলেন। আল্লাহ যে বলেছেন “আর যে তিনজন পেছনে রয়ে গিয়েছিল” তার অর্থ জিহাদ থেকে আমাদের পেছনে থাকা নয়, বরং তার অর্থ এই যে, আমাদের ব্যাপারটা ঐসব লোকের পরে রাখা হয়েছিল যারা শপথ করে মিথ্যা ওজর পেশ করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কবুল করেছিলেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহস্পতিবার তাবুকের যুদ্ধে রওয়ানা হন। আর তিনি বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা আছে: তিনি দিনের বেলা দুপুরের পূর্বে ছাড়া সফর থেকে ফিরতেন না। আর সফর থেকে ফিরেই তিনি প্রথমে মসজিদে যেতেন, সেখানে দুই রাক’আত নামায পড়তেন, তারপর বসতেন।
۲۲- وَعَنْ أَبِي نُجَيْدِ عَمْرَانَ بْنِ الْحُصَيْنِ الْخُزَاعِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنْ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَة أَتَتْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَا فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ أَصَبْتُ حَداً فَاقِمُهُ عَلَى فَدَعَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِيْهَا فَقَالَ أَحْسِنُ إِلَيْهَا فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِي فَفَعَلَ فَأَمَرَ بِهَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَشُدَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا ثُمَّ أَمَرَتِهَا فَرَحِمَتْ ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا فَقَالَ لَهُ عُمَرُ تُصَلَّى عَلَيْهَا يَا رَسُولَ الله وَقَدْ زَنَتُ؟ قَالَ لَقَدْ
تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسَمَتْ بَيْنَ سَبْعِينَ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ لَوَسِعَتْهُمْ وَهَلْ وَجَدْتُ أَفْضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنَفْسِهَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: رَوَاهُ مُسْلِمٌ .
২২। ইমরান ইবনে হুসাইন আল-খুযাঈ (রা) থেকে বর্ণিত। জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা যিনার ফলে গর্ভবতী হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যিনার অপরাধ করেছি, আমাকে এর শাস্তি দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডেকে বলেনঃ এর সাথে সদ্ব্যবহার করবে। সন্তান প্রসব করার পর তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। এ লোকটি তাই করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যিনার শাস্তির হুকুম দিলেন। তার শরীরের কাপড় ভালো করে বেঁধে দেয়া হল এবং হুকুম অনুযায়ী তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার নামায পড়লেন। উমার (রা) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ তো যিনা করেছে, তবুও আপনি এর জানাযার নামায পড়ছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সে এমন তাওবা করেছে যা সত্তরজন মদীনাবাসীর মধ্যে ভাগ করে দিলেও তা তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত। যে মহিলা তার নিজের প্রাণকে আল্লাহর জন্য স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করে দেয় তার এরূপ তাওবার চেয়ে ভালো কোনো কাজ তোমার কাছে আছে কি? (মুসলিম)
وَعَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ وَادِيًا مَنْ ذَهَبٍ أَحَبَّ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَادِيَانِ وَلَنْ يُمْلَأُ فَاهُ إِلَّا التَّرابُ وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
২৩। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি কোন মানুষের এক উপত্যকা ভর্তি সোনা থাকে, তবে সে তার জন্য আরো দু’টি উপত্যকা (ভর্তি সোনা) হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করবে। তার মুখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরে না। আর যে ব্যক্তি তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। (বুখারী, মুসলিম)
٢٤- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَضْحَكُ اللَّهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُ هَذَا فِي سَبِيلِ اللهِ فَيُقْتَلُ ثُمَّ يَتُوبُ اللهُ عَلَى الْقَاتِلِ فَيُسْلِمُ
فَيُسْتَشْهَدُ – متفق عليه .
২৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ এমন দু’জন লোকের জন্য হাসবেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে এবং উভয়ই জান্নাতে যাবে। একজন আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে শহীদ হবে। তারপর আল্লাহ তার হত্যাকারীর তাওবা কবুল করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে (জিহাদে) শহীদ হয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদ: ৩ – সবর বা ধৈর্যধারণ
সবর বা ধৈর্যধারণ
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا .
মহান আল্লাহ বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর কর এবং সবরের প্রতিযোগিতা কর।” (সূরা আলে ইমরান: ২০০)
মহান আল্লাহ বলেন:
وَقَالَ تَعَالَى : وَلَنَبْلُونَكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ .
“আমি অবশ্যি তোমাদের ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে এবং তোমাদের জান, মাল ও শস্যের ক্ষতি সাধন করে পরীক্ষা করব। (এ পরীক্ষায়) ধৈর্যশীলদেরকে সুখবর দাও।” (সূরা আল বাকারা: ১৫৫)
মহান আল্লাহ বলেন:
وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى : إِنَّمَا يُوَفِّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ .
“ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে।” (সূরা আয যুমার: ১০)
তিনি আরো বলেন:
وَقَالَ تَعَالَى : وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنْ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ .
“যে ব্যক্তিই ধৈর্য ধারণ করে এবং মাফ করে দেয়, সেটা দৃঢ় মনোভাবেরই অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আশ্ শূরাঃ ৪৩)
মহান আল্লাহ বলেন:
وَقَالَ تَعَالَى : اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلوةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ .
“ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহ নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল বাকারা : ১৫৩)
وَقَالَ تَعَالَى : وَلَنَبْلُونَكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“আমি তোমাদের পরীক্ষা করব, যাতে তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে চিনে নিতে পারি।” (সূরা মুহাম্মাদ: ৩১)
সবর ও তার ফযীলাত সম্পর্কিত এ ধরনের আরো বহু প্রসিদ্ধ আয়াত আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।
٢٥ – وَعَنْ أَبِي مَالِكَ الْحَارِثِ بْنِ عَاصِمِ الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ الله وَالْحَمْدُ لله تَمْلَأَنْ أَوْ تَمْلَا مَا بَيْنَ السَّمواتِ وَالْأَرْضِ
وَالصَّلاةُ نُورٌ والصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةً لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعِتْقُهَا أَوْ مُؤْثِقُهَا رَوَاهُ مُسْلِمٌ .
২৫। আবু মালিক আল আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। আর আলহামদু লিল্লাহ (আমলের) পাল্লা পূর্ণ করে দেয় এবং সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনের মাঝখানের সবকিছুকে (সাওয়াবে) পরিপূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে আলোক এবং সাদাকা (ঈমানের) প্রমাণ, সবর বা ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতি এবং কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে একটি দলীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি সকালে উঠে নিজেকে বিক্রয় করে এবং তাতে সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে। – (মুসলিম) [ শেষোক্ত কথাটার অর্থ এই যে, মানুষ আল্লাহর নিকট নিজেকে পূর্ণভাবে সমর্পণ করে দিয়ে আখিরাতের জন্য কাজ করলে মুক্তি লাভ করবে এবং তা না করে নিজেকে নফসের কাছে অথবা অন্য কারও কাছে সমর্পণ করে দুনিয়ার স্বার্থের জন্য কাজ করলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। (অনুবাদক) ]
٢٦ – وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ سَعْدِ بْنِ مَالِكِ بْنِ سِنَانِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنْ نَاسًا مِنَ الْأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْطَاهُمْ ثُمَّ سَأَلَوْهُ فَأَعْطَاهُمْ حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُمْ حِيْنَ أَنْفَقَ كُلَّ شَيْ
بِيَدِهِ مَا يَكُنْ عِنْدِي مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ ادْخِرَهُ عَنْكُمْ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفُهُ اللَّهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ وَمَنْ يتصبر يُصَبَرْهُ اللهُ وَمَا أَعْطَى أَحَدٌ عَطَاءٌ خَيْراً وأَوْسَعَ مِنَ الصبر – متفق عليه.
২৬। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। আনসারদের কতিপয় লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সাহায্য চাইল। তিনি তাদের দান করলেন। আবার তারা চাইল। তিনি আবার তাদের দান করলেন, এমনকি তাঁর নিকট যা কিছু ছিল তা সবই শেষ হয়ে গেল। তাঁর হাতের সবকিছু দান করার পর তিনি তাদের বলেন: আমার নিকট যা মাল আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে জমা করে রাখি না। যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। যে ব্যক্তি কারও মুখাপেক্ষী হতে চায় না, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে ধৈর্য দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন কিছু কাউকে দেয়া হয়নি। (বুখারী, মুসলিম)
۲۷- وَعَنْ أَبِي يَحْيَى صُهَيْبِ بْنِ سَنَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ أَنْ أَمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَلِكَ لأحد الا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَاءُ
صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ .
২৭। সুহাইব ইবনে সিনান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুমিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্যের ব্যাপার এরূপ নয়। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে সে আল্লাহর শোকর করে। তাতে তার মংগল হয়। আবার ক্ষতিকর কোন কিছু হলে সে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম)
۲۸ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا ثَقُلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ يَتَغَشَاهُ الْكَرْبُ فَقَالَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا وَأَكَرْبَ أَبْنَاهُ فَقَالَ لَيْسَ عَلَى أَبِيكِ كَرْبُ بَعْدَ الْيَوْمِ فَلَمَّا مَاتَ قَالَتْ يَا ابْنَاهُ أَجَابَ رَبَّا دَعَاهُ يَا
آبَنَاهُ جَنَّةً الْفِرْدَوسُ مَأْوَاهُ يَا ابْنَاهُ إِلَى جِبْرِيلَ نَنْعَاهُ فَلَمَّا دُفِنَ قَالَتْ فَاطِمَةُ رَضِيا الله عَنْهَا أَطَابَتْ أَنْفُسُكُمْ أَنْ تَحْتُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّرَابَ؟ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
২৮। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুব বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন তখন রোগ যাতনা তাঁকে অজ্ঞান করতে লাগল। ফাতিমা (রা) বললেন, আহ আমার আব্বার কি কষ্ট! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কষ্ট হবে না। যখন তিনি ইন্তিকাল করলেন তখন ফাতিমা (রা) বলেন, হায় আব্বা। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। হে আব্বা! জান্নাতুল ফিরদাওস আপনার বাসস্থান! হায় আব্বা! জিবরীল (আ)-কে আপনার ইস্তিকালের খবর দিচ্ছি। তাঁর দাফন শেষ হলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মাটি নিক্ষেপ করতে কি তোমাদের মন চাইল? (বুখারী)
۲۹- وَعَنْ أَبِي زَيْدٍ أَسَامَةَ بْنِ زَيْدِ بْنِ حَارِثَةَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَبَّهِ وَابْنِ حِبَّهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَرْسَلَتْ بِنْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ ابْنِي قَدْ احْتُضِرَ فَشْهَدْنَا فَأَرْسَلَ يُقْرِئُ السَّلَامَ
وَيَقُولُ إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ وَلَهُ مَا أَعْطَى وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى فَلْتَصْبِرُ وَلْتَحْتَسِبُ فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيْهِ لَيَأْتِيَنَّهَا فَقَامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَمُعَادُ بْنُ جَبَلٍ وَأَبَيُّ بْنُ كَعْبٍ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ وَرِجَالٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ
فَرُفِعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّبِيُّ فَأَقْعَدَهُ فِي حِجْرِهِ وَنَفْسُهُ تَقَعْقَعُ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ فَقَالَ سَعْدٌ يَا رَسُولَ الله ه ما مَا هذا ؟ فَقَالَ هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللهُ تَعَالَى فِي قُلُوبِ عِبَادِهِ. وَفِي روايَةٍ فِي قُلُوبِ مَنْ
شَاءَ مِنْ عِبَادِهِ وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَمَعْنَى تَفَعَقَعُ تَتَحَرَكَ وَتَضْطَرِبُ .
২৯। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মুক্তদাস যায়িদ ইবনে হারিসার পুত্র উসামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা তাঁর ছেলের মৃত্যুর সময় এসেছে বলে খবর পাঠিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেখানে আসতে বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খবর বাহকের নিকট তাঁকে সালাম দিয়ে বলেন: আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন তা তাঁরই, আর যা কিছু দিয়েছেন তাও তাঁরই। তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। কাজেই তোমার ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর নিকট পুরস্কারের আশা করা উচিত। তিনি (কন্যা) তাঁকে লোক মারফত শপথ দিয়ে তাঁর নিকট আসতে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনে উবাদা, মু’আয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা’ব, যায়িদ ইবনে সাবিত ও আরও কয়েকজন লোকসহ উঠে গেলেন। তারপর বাচ্চাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেয়া হল। তিনি তাকে নিজের কোলে বসালেন। এ সময় তার প্রাণ (মৃত্যু যন্ত্রণায়) ছটফট করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগল। সা’দ (রা) জিজ্ঞেস করলেন, একি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন: এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হৃদয়ে দিয়েছেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে: আল্লাহ তাঁর যে বান্দার হৃদয়ে চান (উক্ত রহমত দেন)। আর আল্লাহ তাঁর দয়ালু বান্দাদেরকে রহমত দান করেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
٣٠- وَعَنْ صُهَيْبٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ مَلِكَ فِيمَنْ قَبْلَكُمْ وَكَانَ لَهُ سَاحِرٌ فَلَمَّا كَبِرَ قَالَ لِلْمَلِكِ إِنِّي قَدْ كَبِرْتُ فَابْعَثْ إِلَى غُلَامًا أَعَلِمُهُ السِّحْرَ فَبَعَثَ إِلَيْهِ غُلَامًا يُعَلِّمُهُ وَكَانَ فِي
طَرِيقِهِ إِذَا سَلَكَ راهِبٌ فَقَعَدَ إِلَيْهِ وَسَمِعَ كَلَامَهُ فَأَعْجَبَهُ وَكَانَ إِذَا أَتَى السَّاحِرَ مَرَّ بِالرَّاهِبِ وَقَعَدَ إِلَيْهِ فَإِذَا أَتَى السَّاحِرَ ضَرَبَهُ فَشَكَا ذَلِكَ إِلى الرَّاهِبِ فَقَالَ إِذَا خَشِيْتَ السَّاحِرَ فَقُل حَبَسَنِي أَهْلِي وَإِذَا خَشِيْتَ أَهْلَكَ فَقُلْ
حَبَسَنِي السَّاحِرُ. فَبَيْنَمَا هُوَ عَلَى ذلِكَ إِذْ أَتَى عَلَى دَابَّةٍ عَظِيمَةٍ قَدْ حَبَسَتِ النَّاسِ فَقَالَ الْيَوْمَ أعلمُ السَّاحِرُ أَفْضَلُ أم الرَّاهِبُ أَفْضَلُ؟ فَأَخَذَ حَجَرًا فَقَالَ اللَّهُمْ إِنْ كَانَ أَمْرُ الراهب أحب إِلَيْكَ مِنْ أَمْرِ السَّاحِرِ فَاقْتُلْ هَذِهِ
الدَّابَّةَ حَتَّى يَمْضِيَ النَّاسُ فَرَمَاهَا فَقَتَلَهَا وَمَضَى النَّاسُ فَأَتَى الرَّاهِبَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ لَهُ الرَّاهِبُ أَيْ بُنَيَّ أَنْتَ الْيَوْمَ أَفْضَلُ مِنِّي قَدْ بَلَغَ مِنْ أَمْرِكَ مَا أَرَى وَإِنَّكَ سَتُبْتَلَى فَإِنِ ابْتُلِيْتَ فَلَا تَدلُّ عَلَى وَكَانَ الْغُلامُ يُبْرِئُ الْأَكْمَهَ
وَالْأَبْرَصَ وَيُدَاوِي النَّاسَ مِنْ سَائِرِ الْأَدْوَاءِ فَسَمِعَ جَلِيْسَ لِلْمَلِكِ كَانَ قَدْ عَمِي فَآتَاهُ بِهَدَايَا كَثِيرَةٍ فَقَالَ مَا هُهُنَا لَكَ أَجْمَعُ إِنْ أَنْتَ شَفَيْتَنِي فَقَالَ إِنِّي لَا أَشْفِي أَحَدًا إِنَّمَا يَشْفِي اللَّهُ تَعَالَى فَإِنْ أَمَنْتَ بِاللَّهِ تَعَالَى
دَعَوْتُ اللَّهَ فَشَفَاكَ فَأَمَنَ بِاللَّهِ تَعَالَى فَشَفَاهُ اللَّهُ فَآتَى الْمَلِكَ فَجَلَسَ إِلَيْهِ كَمَا كَانَ يَجْلِسُ فَقَالَ لَهُ الْمَلِكُ مَنْ رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ ؟ قَالَ رَبِّي قَالَ أَولَكَ رَبِّ غَيْرِي ؟ قَالَ رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلْ عَلَى
الْغُلَامِ فَجِيَّ بِالْغُلامِ فَقَالَ لَهُ الْمَلِكُ أَي بُنَى قَدْ بَلَغَ مِنْ سِحْرِكَ مَا تُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَتَفْعَلُ وَتَفْعَلُ فَقَالَ إِنِّي لَا أَشْفِى أَحَدًا إِنَّمَا يَشْفِي اللَّهُ تَعَالَى فَأَخَذَهُ فَلَم يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَل عَلَى الرَّاهِبِ فَجِيَّ بِالرَّاهِبِ فَقِيلَ
لَهُ ارْجِعْ عَنْ دِينِكَ فَأَبَى فَدَعَا بِالْمِنْشَارِ فَوُضِعَ الْمِنْشَارُ فِي مُفْرَقِ رَأْسِهِ فَشَقَّهُ حَتَّى وَقَعَ شِقًّاهُ ثُمَّ جِيءَ بِجَلِيسِ الْمَلِكِ فَقِيلَ لَهُ ارْجِعُ عَنْ دِينِكَ فَأَبَى فَوُضِعَ الْمِنْشَارُ فِي مَفْرَقِ رَأْسِهِ فَشَقَّهُ بِهِ حَتَّى وَقَعَ شِقًّاهُ ثُمَّ
جِيءَ بِالْغُلَامِ فَقِيلَ لَهُ ارْجِعُ عَنْ دِينِكَ فَأَبِي فَدَفَعَهُ إلى نَفَرٍ مِّنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ اذْهَبُوا به الى جَبَلٍ كَذَا وَكَذَا فَاصْعَدُوا بِهِ الْجَبَلَ فَإِذَا بَلَغْتُمْ ذِرْوَتَهُ فَإِنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ وَإِلا فَاطْرَحُوهُ فَذَهَبُوا بِهِ فَصَعِدُوا بِهِ الْجَبْلَ فَقَالَ
اللَّهُمَّ اكْفِنِيْهِمْ بِمَا شِئْتَ فَرَجَفَ بِهِمُ الْجَبَلُ فَسَقَطُوا وَجَاءَ يَمْشِي إِلَى الْمَلِكِ فَقَالَ لَهُ الْمَلِكُ مَا فُعِلَ بِأَصْحَابِكَ؟ فَقَالَ كَفَانِيهِمُ اللَّهُ تَعَالَى فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ اذْهَبُوا بِهِ فَاحْمِلُوهُ فِي قُرْقُورٍ وَتَوَسَطُوا بِهِ
الْبَحْرَ فَإِنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ وَإِلَّا فَاقْذِفُوهُ فَذَهَبُوا بِهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ اكْفِنِيْهِمْ بِمَا شِئْتَ فَانْكَفَاتْ بِهِمُ السَّفِينَةُ فَغَرِقُوا وَجَاءَ يَمْشِي إِلَى الْمَلِكِ فَقَالَ لَهُ الْمَلِكُ مَا فُعِلَ بِأَصْحَابِكَ؟ فَقَالَ كَفَانِيْهِمُ اللَّهُ تَعَالَى فَقَالَ لِلْمَلِكِ إِنَّكَ لَسْتَ
بِقَاتِلِي حَتَّى تَفْعَلَ مَا أَمْرُكَ بِهِ قَالَ مَا هُوَ؟ قَالَ تَجْمَعُ النَّاسَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ وَتَصْلُبُنِي عَلَى جِذْعِ ثُمَّ خُذْ سَهُما مِنْ كِنَانَتِي ثُمَّ ضَعِ السَّهُم فِي كَبِدِ الْقَوْسِ ثُمَّ قُلْ بِسْمِ اللَّهِ رَبِّ الْغُلَامِ ثُمَّ ارْمنِي فَإِنَّكَ إِذا فَعَلْتَ ذَلِكَ
قَتَلْتَنِي فَجَمَعَ النَّاسَ فِي صَعِيدٍ واحدٍ وَصَلَبَُ عَلَى جَزْعٍ ثُمَّ أَخَذَ سَهُمَا مِنْ كِنَانَتِهِ ثُمَّ وَضَعَ السَّهُمْ فِي كَبِدِ الْقَوْسِ ثُمَّ قَالَ بسْمِ اللهِ رَبِّ الْغُلامِ ثُمَّ رَمَاهُ فَوَقَعَ السَّهُمُ فِي صُدْغِهِ فَوَضَعَ يَدَهُ فِي صُدْغِهِ فَمَاتَ فَقَالَ
النَّاسُ أَمَنَّا بِرَبِّ الْغُلَامِ فَأُتِيَ الْمَلِكُ فَقِيلَ لَهُ أَرَأَيْتَ مَا كُنْتَ تَحْذَرُ قَدْ وَالله نَزَلَ بِكَ حَذَرُكَ قَدْ أَمَنَ النَّاسُ فَأَمَرَ بِالْأَخْدُودِ بِأَفْوَاهِ السَّكَكَ فَخُدَّتْ وَأَضْرِمَ فِيهَا النَّيْرَانُ وَقَالَ مَنْ لَمْ يَرْجِعْ عَنْ دِيْنِهِ فَأَقْحِمُوهُ فِيهَا أَوْ قِيْلَ لَهُ اقْتَحِمْ
فَفَعَلُوا حَتَّى جَاءَتْ امْرَأَةً وَمَعَهَا صَبِي لَهَا فَتَقَاعَسَتْ أَنْ تَقَعَ فِيْهَا فَقَالَ لَهَا الْغُلَامُ يَا أُمَّهُ اصْبِرِى فَإِنَّكَ عَلَى الْحَقِّ رَوَاهُ مُسْلِمٌ ذِرْوَةُ الْجَبَلِ أَعْلاهُ هِيَ بِكَسْرِ الدَّالِ الْمُعْجَمَةِ وَضَمِهَا وَالْقُرْقُورُ بِضَمَ الْقَافَيْنِ نوع مِنَ السُّفْنِ
وَالصَّعِيدُ هُنَا الْأَرْضُ الْبَارِزَةُ وَالْأَخْدُودُ الشَّقُوقُ فِي الْأَرْضِ كالنهر الصغيرِ وَأَضْرِمَ أُوقَدَ وَانْكَفَاتُ أَي انْقَلَبَتْ وَتَقَاعَسَتْ تَوَقَّفَتْ وَجَنَتْ .
৩০। সুহাইব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক বাদশাহ্ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর। সে যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল, তখন বাদশাহকে বলল, আমি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, কাজেই একজন বালককে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে যাদু শিক্ষা দেব। বাদশাহ্ একজন বালককে যাদু শেখার জন্য তার কাছে পাঠায়। তার যাতায়াতের রাস্তায় ছিল এক খৃস্টান দরবেশ। সে তার কাছে বসে তার কথাবার্তা শুনে মুগ্ধ হল। এভাবে সে যাদুকরের কাছে আসার সময় পথে দরবেশের কাছে বসতে লাগল। যাদুকরের কাছে গেলে সে তাকে মারপিট করে। সে দরবেশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ পেশ করল। সে বলল, যখন তোমার যাদুকরের জিজ্ঞাসাবাদের ভয় হবে তখন তাকে বলবে, আমার পরিবারবর্গ আমাকে আটকে রেখেছিল। আর যখন তোমার পরিবারবর্গের ভয় হবে তখন তাদেরকে বলবে, যাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিল। এমতাবস্থায় একদিন একটা বিরাট হিংস্র পশু এসে লোকদের পথ আটকে দিল। বালকটি তখন (মনে মনে) বলল: আজ আমি জেনে নেব যে, দরবেশ শ্রেষ্ঠ না যাদুকর শ্রেষ্ঠ? তাই সে একটি পাথর খণ্ড নিয়ে বলল: হে আল্লাহ! দরবেশের কাজ যাদুকরের কাজ থেকে তোমার নিকট যদি বেশি পছন্দনীয় হয়, তবে এই পশুটাকে মেরে ফেল, যাতে লোকেরা পথ চলতে পারে। তারপর সে উক্ত পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করল এবং তাতে পশুটি মারা গেল। আর লোকেরাও চলে গেল। তারপর সে দরবেশের কাছে এসে তাকে এ খবর জানায়। দরবেশ তাকে বললঃ হে আমার প্রিয় ছেলে! আজ তুমি আমার চেয়ে উত্তম। তোমার ব্যাপারটা এখন আমার মতে একটি বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তুমি শীঘ্রই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি তুমি পরীক্ষায় পড়ে যাও, তবে আমার
সন্ধান দেবে না। বালকটি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিত এবং মানুষের সব রকম রোগের চিকিৎসা করত। বাদশাহের পারিষদবর্গের একজন অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে এ খবর শুনে বালকটির কাছে অনেক হাদিয়া নিয়ে এসে বলল, তুমি আমাকে আরোগ্য দান করবে এইজন্যই আমি তোমার এখানে এত হাদিয়া পেশ করছি। বালকটি বলল: আমি কাকেও আরোগ্য দান করি না, আল্লাহই আরোগ্য দান করেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আন তবে আমি আল্লাহর নিকট দোয়া করব। যাতে তোমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। সে তখন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করলেন।
তারপর সে বাদশাহের দরবারে পূর্ববৎ যোগদান করল। বাদশাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করল, কে তোমাকে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল? সে উত্তর দিল, আমার রব। বাদশাহ্ বলল, আমি ছাড়াও কি তোমার রব আছে? সে বলল, আল্লাহই তোমার ও আমার রব। এতে বাদশাহ্ তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে লাগল। অবশেষে সে বালকটির কথা বলে দিল। তখন বালকটিকে আনা হল। বাদশাহ্ তাকে বলল, হে ছেলে! তোমার যাদুবিদ্যার খবর পৌঁছেছে যে, তুমি নাকি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করে থাক এবং এটা-সেটা আরও কত কি করে থাক। বালকটি বলল: আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না।
আরোগ্য তো আল্লাহই দান করেন। বাদশাহ্ তাকেও গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে লাগল। অবশেষে সে খৃষ্টান দরবেশের কথা বলে দিল। দরবেশকে আনা হল এবং তাকে তার দীন ত্যাগ করতে বলা হল। কিন্তু সে অস্বীকার করল। তখন বাদশাহ্ করাত আনতে বলল। তারপর করাতটি তার মাথার মাঝখানে রাখা হল এবং করাতটি তাকে চিরে ফেলল, এমনকি সে দুই টুকরো হয়ে পড়ে গেল। তারপর বাদশাহর সেই পারিষদকে আনা হল। তাকেও তার দীন ত্যাগ করতে বলা হল। কিন্তু সে অস্বীকার করায় তার মাথার মাঝখানে করাত দিয়ে চিরে ফেলা হল, এমনকি সে দুই টুকরা হয়ে পড়ে গেল। তারপর বালকটিকে
আনা হল। তাকেও তার দীন ত্যাগ করতে বলা হল, কিন্তু সে অস্বীকার করল। তখন তাকে বাদশাহ্ তার কতিপয় সংগীর হাতে দিয়ে বলল: তোমরা তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে উঠাও। যখন পাহাড়ের উচ্চ শিখরে তাকে নিয়ে পৌঁছবে তখন যদি সে তার দীন ত্যাগ করে, তবে তো ভালো, নতুবা তাকে সেখান থেকে ফেলে দাও। তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ে উঠল। সে বলল, হে আল্লাহ! তুমি যেভাবে চাও এদের হাত থেকে আমাকে মুক্তি দান কর। তখন পাহাড়টি কেঁপে উঠল। এতে তারা নীচে পড়ে গেল এবং সে বাদশাহর কাছে চলে এলো। বাদশাহ তাকে বলল, তোমার সংগীদের কি হলো? সে বলল, তাদের ব্যাপারে আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তখন বাদশাহ্ তাকে তার কতিপয় সংগীর কাছে দিয়ে বলল: তাকে তোমরা একটি ছোট নৌকায় উঠিয়ে সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে যাও। তারপর সে যদি তার দীন ত্যাগ না করে, তবে তাকে সেখানে ফেলে দাও। তারা তাকে নিয়ে চলল। ছেলেটি বলল, হে আল্লাহ! তুমি যেভাবে চাও তাদের হাত থেকে আমাকে মুক্তি দাও। এতে নৌকা তাদেরকে নিয়ে উল্টে গেল এবং তারা সবাই ডুবে মরল। আর ছেলেটি বাদশাহর কাছে ফিরে এলো। বাদশাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সংগীদের কি হলো? সে বলল: আল্লাহই আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট হয়েছেন। তারপর সে বাদশাহকে বলতে লাগল, তুমি আমার হুকুম অনুযায়ী কাজ করলেই আমাকে হত্যা করতে পারবে। বাদশাহ্ জিজ্ঞেস করল, সেটা কি কাজ? সে বলল, একটি মাঠে লোকদেরকে একত্র কর। তারপর আমাকে শূলের উপর উঠাও এবং আমার তীরদানি থেকে একটি তীর নিয়ে ধনুকের মাঝখানে রেখে বল: বিস্মিল্লাহি রাব্বিল গোলাম (বালকটির রব সেই আল্লাহর নামে তীর মারছি), এই বলে তীর মার। এরূপ করলে তুমি আমাকে মারতে পারবে। বাদশাহ্ তখন এক মাঠে লোকদেরকে একত্র করে তাকে শূলের উপর উঠিয়ে তার তীরদানি থেকে একটি তীর ধনুকের মাঝখানে রেখে বলল, ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম’ এবং তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করল। তীরটি বালকটির কানের কাছে মাথায় লাগল এবং সে সেখানে তার হাত রাখল, তারপর মারা গেল। এতে লোকেরা বলতে লাগল, আমরা বালকটির রব আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। এ খবর বাদশাহর নিকট গেলে তাকে বলা হল, যে আশংকা তোমার ছিল তাই তো হয়ে গেল যে, সব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। বাদশাহ্ তখন রাস্তার পাশে গর্ত খনন হুকুম দিল। গর্ত খনন করে তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশাহ্ ঘোষণা দিল, যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে আসবে না তাকে তোমরা এতে নিক্ষেপ কর। যারা তাদের দীন থেকে ফিরে এল না তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করা হল। অবশেষে একজন মহিলা তার সন্তানসহ এল। সে আগুনের মধ্যে যেতে সংকোচ করায় সন্তান বলল, হে আম্মা! আপনি সবর করুন (আগুনে ঝাঁপ দিতে সংকোচ করবেন না)। কারণ আপনি তো সত্যের উপর আছেন। (মুসলিম)
٣١- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ تَبْكِي عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ اتَّقِى اللهَ وَاصْبِرِي فَقَالَتْ إِلَيْكَ عَنِّى فَإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيبَتِي وَلَمْ تَعْرِفْهُ فَقَبْلَ لَهَا إِنَّهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاتَتْ
بَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ تَجِدُ عِندَهُ بَوابِينَ فَقَالَتْ لَمْ أَعْرِفُكَ فَقَالَ إِنَّمَا الصبر عند الصدمة الأولى – متفق عليه وفي رِوَايَةٍ المُسلِمِ تَبْكِي عَلَى صَبِي لَهَا .
৩১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট দিয়ে যান। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বলেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং সবর কর। সে বলল, আপনি আমাকে ছেড়ে দিন (অর্থাৎ আমাকে কাঁদতে দিন)। আপনি আমার মত মুসীবাতে পড়েননি। সে তাঁকে চিনতে পারেনি। তাকে বলা হল, ইনি হচ্ছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ীর দরজার সামনে এল এবং সেখানে কোন দারোয়ান দেখতে পেল না। সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সবর তো প্রথম আঘাতেই (বুখারী, মুসলিম)। মুসলিমের এক বর্ণনায় বলা হয়েছে: সে তার এক শিশু পুত্রের জন্য কাঁদছিল।
٣٢- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءً إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ يَقُولُ اللهُ تَعَالَى مَا لِعَبْدِي الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلَّا الْجَنَّةَ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
৩২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, আমার মুমিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ছাড়া আর কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয়জনকে নিয়ে যাই আর সে সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করে। (বুখারী)
– وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الطَّاعُونِ فَأَخْبَرَهَا أَنَّهُ كَانَ عَذَابًا يَبْعَثُهُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مَن يَشَاءُ فَجَعَلَهُ اللهُ تَعَالَى رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِينَ فَلَيْسَ مِنْ عَبْدِ يَقَعُ فِي الطَّاعُوْنِ
فَيَمْكُثُ فِي بَلَدِهِ صابرا مُحْتَسِبًا يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا يُصِيبُهُ إِلا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ إِلَّا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ الشَّهِيدِ رَوَاهُ البُخَارِيُّ .
৩৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি মহামারি রোগ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন: এটা ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটা শাস্তি। আল্লাহ যাকে চান তার উপর এটা পাঠান। তিনি এটাকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিয়েছেন। কোন মুমিন বান্দা মহামারি রোগে আক্রান্ত হলে যদি সে তার এলাকায় সবর সহকারে সাওয়াবের নিয়াতে এ কথা জেনে-বুঝে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতেই সে আক্রান্ত হয়েছে, তবে সে শহীদের সাওয়াব পাবে। (বুখারী)
٣٤ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلٌ قَالَ إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِى بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوْضْتُهُ مِنْهُمَا الْجَنَّةَ يُرِيدُ عَيْنَيْهِ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
৩৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মহামহিম আল্লাহ বলেছেন: আমি যখন আমার বান্দাকে তার দু’টি প্রিয় বস্তুর মাধ্যমে পরীক্ষা করি (অর্থাৎ তার দু’টি চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দিই), আর সে তাতে সবর করে, তখন আমি তাকে তার বদলে জান্নাত দান করি। (বুখারী)
٣٥ – وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ رَبَاحٍ قَالَ قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَلَا أُرِيكَ امرأةً مِنْ أهْل الْجَنَّة ؟ فَقُلْتُ بَلَى قَالَ هذه الْمَرْأَةُ السوداء أنتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ أَنِّي أَصْرَعُ وَإِنِّي أَتَكَشَفُ فَادْعُ اللَّهَ تَعَالَى لِي
قَالَ إِنْ شِئْتِ صبرت ولكِ الْجَنَّةُ وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ تَعَالَى أَنْ يُعَافِيَكِ فَقَالَتْ أَصْبِرُ فَقَالَتْ إِنِّي أَتَكَشْفُ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ لَا أَتَكَشُفَ فَدَعَا لَهَا – متفق عليه .
৩৫। আতা ইবনে রাবাহ (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে ইবনুল আব্বাস (রা) বলেছেন, আমি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না কি? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, এই কালো মহিলাটি (ইংগিত করে দেখালেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি মৃগী রোগে ভুগছি এবং তাতে আমার শরীর বিবস্ত্র হয়ে যায়। আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন। তিনি বলেন, যদি তুমি চাও সবর করতে পার। তাতে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর যদি চাও তো আমি তোমার আরোগ্যের জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’আ করি। সে বলল, আমি সবর করব কিন্তু আমার শরীর যে বিবস্ত্র হয়ে যায় সেজন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, যাতে বিবস্ত্র না হই। তিনি তার জন্য দু’আ করলেন। (বুখারী, মুসলিম)
٣٦ – وَعَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَأَنِّي انْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَحْكِي نَبِيًّا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللَّهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِمْ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَادْمَوْهُ وَهُوَ يَمْسَحُ الدِّمَ عَنْ وَجْهِهِ
يَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ متفق عليه
৩৬। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখছি, তিনি নবীগণের মধ্যকার এক নবীর কাহিনী বলছিলেন যে, তাঁর জাতি তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল আর তিনি নিজের চেহারা থেকে রক্ত মুছে ফেলছিলেন এবং বলছিলেন: হে আল্লাহ। আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, কারণ তারা জানে না। (বুখারী, মুসলিম)
۳۷- وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَآبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبَ وَلَا وَصَبَ وَلَا هُمْ وَلَا حَزَنٍ وَلَا أَذًى وَلَا غَم حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إِلَّا كَفَرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ – متفق
عليه والْوَصَبُ الْمَرَضُ .
৩৭। আবু সা’ঈদ ও আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুসলিম বান্দার যে কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা হোক না কেন, এমনকি কোন কাঁটা বিঁধলেও, তার কারণে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। (বুখারী, মুসলিম)
۳۸- وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُوعَكَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّكَ تُوعَكُ وَعْكَاً شَدِيدًا قَالَ أَجَلْ إِنِّي أَوْعَكَ كَمَا يُوْعَكُ رَجُلانِ مِنْكُمْ قُلْتُ ذَلِكَ أَنْ لَكَ أَجْرَيْنِ ؟ قَالَ أَجَلُ
ذَلِكَ كَذَلِكَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى شَوْكَةً فَمَا فَوْقَهَا إِلَّا كَفْرَ اللَّهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ وَحُطَّتْ عَنْهُ ذُنُوبُهُ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا – متفق عليه وَالْوَعْكُ مَغْتُ الْحُمَّى وَقِيلَ الْحُمَى.
৩৮। ইবনে মাস’উদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো ভীষণ জ্বরে ভুগছেন। তিনি বলেন: হাঁ তোমাদের মতো দু’জনের সমান জ্বরে ভুগছি [ অর্থাৎ তোমাদের দু’জন লোকের জ্বর হলে যে পরিমাণ তাপ ওঠে আমার একার তাপ তার সমান ] ।
আমি বললাম, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব সেজন্য কি? তিনি বলেন: হাঁ, ঠিক তাই। যে কোন কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা, তা কাঁটা কিংবা অন্য কোন বেশি কষ্টদায়ক কিছু হোক না কেন, মুসলিম বান্দা কষ্ট পেলে আল্লাহ অবশ্যই সে কারণে তার গুনাহ মাফ করে দেন। আর তার ছোট গুনাহগুলো গাছের পাতার মত ঝরে পড়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম)
٣٩- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَضَبَطُوْا يُصَبْ بِفَتْحِ الصَّادِ وَكَسْرِهَا .
৩৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান তাকে বিপদে ফেলেন। (বুখারী)
٤٠ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا يَتَمَنَّيَنْ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ أَصَابَهُ فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ فَاعِلاً فَلْيَقُلُ اللَّهُمَّ أَحْيَنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْراً لِي – متفق
عليه .
৪০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কারো কোনো বিপদ বা কষ্ট হলে সে যেন মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি কেউ এরূপ করতেই চায় তবে সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর এবং যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর তখন আমাকে মৃত্যু দাও।” (বুখারী, মুসলিম)
٤١ – وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ خَبَّابِ بْنِ الْأَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِدُ بُرْدَةً لَهُ فِي ظِلِّ الْكَعْبَةِ فَقُلْنَا أَلَا تَسْتَنْصِرُ لَنَا أَلَا تَدْعُو لَنَا ؟ فَقَالَ قَدْ كَانَ مَنْ قَبْلَكُمْ يُؤْخَذُ الرَّجُلُ
فَيُحْفَرُ لَهُ فِي الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيهَا ثُمَّ يَؤْتَى بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُجْعَلُ نِصْفَيْنِ وَيُمْشَطَ بِامْشَاطَ الْحَدِيدِ مَا دُونَ لَحْمِهِ وَعَظْمِهِ مَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَاللَّهِ حَضْرَمُوْتَ لَا يَخَافُ ليُتِمَّنَّ اللَّهُ هَذَا الْأَمْرَ حَتَّى يَسِيرَ
الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى . إلا الله والذِّنْبَ عَلَى غَنَمِهِ وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُونَ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ وَهُوَ متوسد بُردَةً وَقَدْ لَقِينَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ شِدَّةٌ .
৪১। আবু আবদুল্লাহ খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট (মক্কার কাফিরদের বিরোধিতার ব্যাপারে) অভিযোগ করলাম। তিনি তখন তাঁর একটি চাদর মাথার নীচে রেখে কা’বার ছায়ায় শুয়েছিলেন। আমরা বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না এবং আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? তিনি বলেন: তোমাদের আগের যামানায় মানুষকে ধরে এনে মাটিতে গর্ত করে তাতে স্থাপন করা হত। তারপর করাত এনে তার মাথার উপর রাখা হত এবং তাকে দুই টুকরা করা হত, অতঃপর লোহার চিরুনী দিয়ে তার শরীরের গোশ্ত ও হাড় আঁচড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করা হত। তবুও কোন কিছু তাকে তার দীন ত্যাগ করাতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! এ দীনকে পূর্ণভাবে তিনি কায়েম করবেনই, এমনকি সে সময় একজন আরোহী সায়া থেকে হাদরামাওত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, কিন্তু আল্লাহ আর নিজের মেষপালের জন্য নেকড়ে ছাড়া আর কিছুর ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ।
অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: তিনি (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাদর রেখেছিলেন মাথার নীচে। আর মুশরিকদের পক্ষ থেকে আমাদের অনেক কষ্ট দেয়া হচ্ছে। (বুখারী)
٤٢ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ أَثَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاسًا فِي الْقِسْمَةِ فَاعْطَى الْأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ مِائَةٌ مِنَ الْإِبِلِ وأعطى عُيَيْنَةَ بْنَ حِصْنٍ مِثْلَ ذَلِكَ وَاعْطَى نَاسًا مِنْ أَشْرَافِ
الْعَرَبِ وَأَثَرَهُمْ يَوْمَئِذٍ فِي الْقِسْمَةِ فَقَالَ رَجُلٌ وَاللَّهِ إِنَّ هَذِهِ قِسْمَةٌ مَا عُدِلَ فِيْهَا وَمَا أُرِيدَ فِيْهَا وَجْهُ اللهِ فَقُلْتُ وَاللهِ لأَخْبِرَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَآتَيْتُهُ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا قَالَ فَتَغَيْرَ وَجْهُهُ حَتَّى كَانَ كَالصِرْفِ ثُمَّ قَالَ
فَمَنْ يُعْدِلُ إِذَا لَمْ يَعْدِلُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ثُمَّ قَالَ يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى قَدْ أَوَذِي بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ فَقُلْتُ لَا جَرَمَ لَا أَرْفَعُ إِلَيْهِ بَعْدَهَا حَدِيثًا – متفق عليه وَقُولُهُ كَالصِّرْفِ هُوَ بِكَسْرِ الصَّادِ الْمُهْمَلَةِ وَهُوَ صِبْغَ أَحْمَرُ .
৪২। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে গনীমাতের মালের অংশ বেশি দিয়েছিলেন (নও মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার জন্য)। তিনি আকরা ইবনে হাবিসকে এক শত উট এবং উয়াইনা ইবনে হিকেও উক্ত সংখ্যক উট দান করেছিলেন। আর আরবের সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে বেশি দিয়েছিলেন। তখন এক লোক বলল, আল্লাহর শপথ! এই বণ্টনে সুবিচার করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষের নিয়াত করা হয়নি। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি এ খবর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবশ্যই দেব। কাজেই আমি তাঁর নিকট এসে তাঁকে উক্ত ব্যক্তির মন্তব্য জানালাম। এতে তাঁর পবিত্র চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে লালবর্ণ ধারণ করল। তিনি বলেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যদি সুবিচার না করেন তাহলে আর কে সুবিচার করবে? তারপর তিনি বলেনঃ আল্লাহ মূসা (আ)-এর প্রতি রহম করুন। তাঁকে তো এর চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছে। তিনি সবর করেছেন। আমি মনে মনে বললাম, এরপর আমি কখনো তাঁর নিকট এরূপ কোন কথা পৌছাব না। (বুখারী, মুসলিম)
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ خَيْرًا عَجَلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ بِعَبْدِهِ الشَّرِّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِي بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ إِنْ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِذَا أَحَبٌ قَوْمًا إِبْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ ررَوَاهُ التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .
৪৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যখন তাঁর কোন বান্দার প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন দুনিয়াতেই তার (পাপের) শাস্তি ত্বরান্বিত করেন। আর তিনি যখন তাঁর কোন বান্দার প্রতি অমংগলের ইচ্ছা করেন, তখন তাকে (দুনিয়াতে) তার পাপের শাস্তি দান থেকে বিরত থাকেন, অবশেষে কিয়ামাতের দিন তার চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: কষ্ট বেশি হলে সাওয়াবও বেশি হয়। আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাকে পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি এ পরীক্ষায় সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
٤٤- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ ابْنُ لِأَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَشْتَكِي فَخَرَجَ أَبُو طَلْحَةَ فَقُبِضَ الصَّبِيُّ فَلَمَّا رَجَعَ أَبُو طَلْحَةَ قَالَ مَا فَعَلَ ابْنِي؟ قَالَتْ أَمْ سُلَيْمٍ وَهِيَ أُمُّ الصَّبِيِّ هُوَ أَسْكَنُ مَا كَانَ فَقَرَبَتْ إِلَيْهِ
الْعَشَاءَ فَتَعَشَى ثُمَّ أَصَابَ مِنْهَا فَلَمَّا فَرَغَ قَالَتْ وَارُوا الصَّبِيِّ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَبُو طَلْحَةَ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ أَعَرَّسْتُمُ اللَّيْلَةَ ۚ قَالَ نَعَمْ قَالَ اللهُمَّ بَارِكْ لَهُمَا فَوَلَدَتْ غُلَامًا فَقَالَ لِي أَبُو طَلْحَةَ
احْمِلُهُ حَتَّى تَأْتِيَ بِهِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَعَثَ مَعَهُ بِتَمَرَاتِ فَقَالَ آمَعَهُ شَيْ؟ قَالَ نَعَمْ تَمَرَاتُ فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَضَغَهَا ثُمَّ أَخَذَهَا مِنْ فِيْهِ فَجَعَلَهَا فِي فِي الصبي ثُمَّ حَنْكَهُ وَسَمَّاهُ عَبْدَ
اللَّهِ مَتَّفَقَ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَرَأَيْتُ تِسْعَةَ أَوْلاد. كُلُّهُمْ قَدْ قَرَمُوا الْقُرْآنَ يَعْنِي مِنْ أَوْلَادِ عَبْدِ اللَّهِ الْمَوْلُودِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمِ مَاتَ ابْنُ لِأَبِي طَلْحَةَ مِنْ أَمْ سُلَيْمٍ فَقَالَتْ لِأَهْلِهَا
لَا تُحَدِّثُوا آبَا طَلْحَةَ بِابْنِهِ حَتَّى أَكُونَ أَنَا أُحَدِثُهُ فَجَاءَ فَقَرِّبَتْ إِلَيْهِ عَشَاءُ فَأَكَلَ وَشَرِبَ ثُمَّ تَصَنْعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنْعُ قَبْلَ ذَلِكَ فَوَقَعَ بِهَا فَلَمَّا أَنْ رَآتُ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وَأَصَابَ مِنْهَا قَالَتْ يَا أَبَا طَلْحَةَ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنْ قَوْمًا أَعَارُوا
عَارِبَتَهُمْ أَهْلَ بَيْتِ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمُ الهُمْ أَنْ يَمْنَعُوهُمْ ؟ قَالَ لَا فَقَالَتْ فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ قَالَ فَغَضِبَ ثُمَّ قَالَ تَرَكْتُنِي حَتَّى إِذَا تَلَطَّحْتُ ثُمَّ أَخْبَرَتِنِي بِابْنِي؟ فَانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاخْبَرَهُ بِمَا كَانَ
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارَكَ اللَّهُ فِي لَيْلَتِكُمَا قَالَ فَحَمَلَتْ قَالَ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ وَهِيَ مَعَهُ وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا آتَى الْمَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لَا يَطْرُقُهَا
طَرُوقًا فَدَنَوْا مِنَ الْمَدِينَةِ فَضَرَبَهَا الْمَخَاضُ فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا ابو طَلْحَةَ وَانْطَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَقُولُ أَبُو طَلْحَةَ إِنَّكَ لتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أَنْ أَخْرُجَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ
وَادْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى تَقُوْلُ أَمُّ سُلَيْمٍ يَا أَبَا طَلْحَةَ مَا أَجِدُ الَّذِي كُنتُ أجدُ انْطَلِقُ فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا الْمَخَاضُ حِيْنَ قَدِمًا فَوَلَدَتْ غُلَامًا فَقَالَتْ لِى أُمِّي يَا أَنَسُ لَا يُرْضِعُهُ أَحَدٌ حَتَّى تَغْدُو بِهِ عَلَى رَسُولِ
الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبَحَ احْتَمَلَتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ .
৪৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু তালহা (রা)-র এক ছেলে রোগাক্রান্ত হল। আবু তালহা বাইরে কোথাও গেলেন। সে সময় ছেলেটির মৃত্যু হয়। আবু তালহা ফিরে এসে ছেলের অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। ছেলের আম্মা উম্মু সুলাইম (রা) বলেন, পূর্বের চেয়ে সে ভালো। তারপর তিনি আবু তালহাকে রাতের খানা দিলেন। আবু তালহা খানা খেলেন, তারপর স্ত্রী মিলন করলেন। শেষে উম্মু সুলাইম বলেন, ছেলেকে দাফন করুন। আবু তালহা (রা) সকালবেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাঁকে এ খবর দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি আজ রাতে স্ত্রী মিলন করেছ? আবু তালহা বলেন, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! তাদের দু’জনকে তুমি বরকত দাও। তারপর উম্মু সুলাইমের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
আনাস (রা) বলেন, আবু তালহা আমাকে এ বাচ্চা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যেতে বলেন এবং তার সাথে কিছু খেজুরও দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের সাথে কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন, হাঁ কিছু খেজুর আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই খেজুর নিয়ে চিবালেন, তারপর তাঁর মুখ থেকে বের করে তা বাচ্চার মুখে দিলেন, আর তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারীর এক বর্ণনায় আছে: ইবনে উয়াইনা (র) বলেন, আনসারদের একজন লোক বললেন, আমি আবদুল্লাহর নয়টি সন্তান দেখেছি। তাদের প্রত্যেকেই কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ আছে: আবু তালহার ছেলে ইন্তিকাল করলে তার মাতা উন্মু সুলাইম বাড়ীর লোকদেরকে বলেন যে, তারা যেন আবু তালহাকে ছেলে সম্পর্কে কিছু না বলে। তিনি নিজেই তাকে যা বলার বলবেন। আবু তালহা বাড়ী এলে পর উম্মু সুলাইম তাঁকে রাতের খানা দিলেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া করলেন। তারপর উম্মু সুলাইম নিজেকে স্বামীর জন্য পূর্বের চেয়ে বেশী সুন্দর করে সাজালেন। আবু তালহা তাঁর সাথে মিলন করলেন। উম্মু সুলাইম যখন দেখলেন, আবু তালহা তৃপ্তি লাভ করেছেন এবং তাঁর প্রয়োজন মিটে গেছে, তখন তাঁকে বললেন, হে আবু তালহা। দেখুন, যদি কোন কাওম কোন পরিবারকে কিছু ধার দেয়, তারপর সেই ধার ফেরত চায়, তবে কি সেই পরিবার তাদের ধার ফেরত না দেয়ার অধিকার রাখে? আবু তালহা বলেন, না। উম্মু সুলাইম বলেন, তাহলে আপনার ছেলের ব্যাপারে নাল্লাহর নিকট সাওয়াব প্রার্থনা করুন। আবু তাল্হা এ কথা শুনে রাগান্বিত হলেন এবং বলেন, তুমি আগে কিছু বললে না, এমনকি আমি মিলনও করে ফেললাম, তারপর আমার ছেলে সম্পর্কে খবর দিলে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে সব খবর বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, আল্লাহ তোমাদের দু’জনের রাতে বরকত দিন। তারপর উম্মু সুলাইম (রা) গর্ভবতী হলেন। কোন এক সফরে তিনি (আবু তালহাসহ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে মদীনায় সাধারণত রাতে ফিরে আসতেন না। যাহোক, তারা যখন মদীনার নিকটবর্তী হলেন, তখন উম্মু সুলাইমের প্রসব বেদনা শুরু হল। এজন্য আবু তাল্হা তার নিকট রয়ে গেলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। আনাস (রা) বলেন, আবু তালহা বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ। তুমি জান যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও যখন যান এবং কোথাও থেকে ফিরে আসেন তখন তাঁর সাথে থাকতে আমার ভালো লাগে। আর এখন তো আমি এখানে যে কারণে আটকে পড়লাম তা তুমি দেখছ। উম্মু সুলাইম (রা) বলতে লাগলেন, হে আবু তাল্হা। আমি যে বেদনা অনুভব করছিলাম, এখন আর তা বোধ করছি না, চলুন যাই। আমরা সেখান থেকে চলে এলাম। মদীনায় আসার পর তার প্রসব বেদনা শুরু হল এবং একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করল। আনাস (রা) বলেন, আমার আম্মা আমাকে বলেন, এ বাচ্চাকে সকালে কেউ দুধ পান করাবার আগে তুমি একে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাবে। সকাল বেলা আমি বাচ্চা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। এভাবে তিনি হাদীসের বাকী অংশ বর্ণনা করেন।
٤٥ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ليس الشديد بالصرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَب – متفق علي والصرعَةُ بِضَمِّ الصَّادِ وَفَتْحِ الرَّاءِ وَأَصْلُهُ عِنْدَ الْعَرَبِ مَن يُصْرَعُ
النَّاسَ كَثِيرًا .
৪৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি (মল্লযুদ্ধে) অন্যকে ধরাশায়ী করে সে শক্তিশালী নয়, বরং শক্তিশালী হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখে। (বুখারী, মুসলিম)
٤٦- وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَةٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَجُلانِ يَسْتَبَانِ وَأَحَدُهُمَا قَدِ احْمَرٌ وَجْهُهُ وَأَنْفَخَتْ أَوْدَاجُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا
لَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ لَوْ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ ذَهَبَ مِنْهُ مَا يَجِدُ فَقَالُوا لَهُ إِنَّ النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَعَوَّذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيم – متفق عليه .
৪৬। সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলাম। এ সময় দুই ব্যক্তি পরস্পর ঝগড়া ও গালমন্দ করছিল। একজনের চেহারা তো রাগে লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার ঘাড়ের শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি এমন একটি কথা জানি যা বললে তার এই অবস্থা অবশ্যই দূর হয়ে যাবে। সে যদি “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম” বলে তবে তার এ ক্রোধের ভাব চলে যাবে। সাহাবীগণ তাকে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আউযু বিল্লাহ কথাটা বলে তোমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। (বুখারী, মুসলিম)
٤٧- وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ دَعَاهُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنَ الْحُورِ الْعِيْنِ مَا شَاءَ رَوَاهُ
أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .
৪৭। মু’আয ইবনে আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ কার্যকর করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা দমিয়ে রাখে, তাকে আল্লাহ কিয়ামাতের দিন সব মানুষের উপর মর্যাদা দিয়ে ডাকবেন, এমনকি তাকে তার ইচ্ছামত বড় বড় চোখবিশিষ্ট হুরদের মধ্য থেকে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দেবেন। ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন এবং তিরমিযী একে হাসান আখ্যা দিয়েছেন।
٤٨- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصِنِي قَالَ لَا تَغْضَبُ فَرَدَّدَ مِرَارًا قَالَ لَا تَغْضَبْ – رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
৪৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন: রাগ করো না। সে ব্যক্তি বারবার একই কথা বলতে থাকল, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বারবার বলেন: রাগ করো না। (বুখারী)
٤٩- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يَزَالُ الْبَلاءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ تَعَالَى وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثُ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
৪৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন নর-নারীর জান, মাল ও সন্তানের উপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাত করে এমন অবস্থায় যে, তার আর কোন গুনাহ থাকে না। ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান ও সহীহ আখ্যায়িত করেছেন।
٥٠ – وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أَخِيهِ الْحَرِّ بْنِ قَيْسٍ وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيْهِمْ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَكَانَ الْقُرَاءُ أَصْحَابَ مَجْلِسِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَمُشَاوَرَتِهِ كُسُولًا
كَانُوا أَوْ شَبَانًا فَقَالَ عُبَيْنَةٌ لِابْنِ أَخِيهِ يَا ابْنَ أَخِي لَكَ وَجْهُ عِنْدَ هَذَا الْأَمِيرِ فَاسْتَأْذِنُ لِي عَلَيْهِ فَاسْتَأْذَنَ فَاذِنَ لَهُ عُمَرُ فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ هِي يَا ابْنَ الْخَطَابِ فَوَاللَّهُ مَا تُعْطَيْنَا الْجَزْلَ وَلَا تَحْكُمُ فِيْنَا بِالْعَدْلِ فَغَضِبَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ حَتَّى هَمْ أَنْ يُوقِعَ بِهِ فَقَالَ لَهُ الْحُرُّ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ لِنَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (خُذِ الْعَفْوَ وَأَمُرُ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ) (الاعراف : ۱۹۹) وان هذا مِنَ الْجَاهِلِينَ وَاللَّهِ مَا جَاوَزَهَا عُمَرُ حِينَ
تَلَاهَا وَكَانَ وَفَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللَّهِ تعالى رواه البخاري
৫০। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উয়াইনা ইবনে হিস্স্স মদীনায় তার ভাতিজা হুর ইবনে কায়েসের নিকট এসে মেহমান হলেন। উমার (রা) যাদেরকে নিজের সান্নিধ্যে রাখতেন, হুর ইবনে কায়েস তাদেরই একজন। আর উমার (রা)-এর পারিষদবর্গ ও তাঁর পরামর্শ সভার সদস্যবৃন্দ, তাঁরা যুবক হোন বা বৃদ্ধ সকলেই ছিলেন কুরআন বিশারদ। উয়াইনা তার ভাতিজাকে বললেন, হে ভাতিজা! আমীরুল মুমিনীনের কাছে যাওয়ার তোমার সুযোগ-সুবিধা আছে। কাজেই তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমার জন্য অনুমতি চাও। তিনি অনুমতি চাইলে উমার (রা) অনুমতি দিলেন। তিনি তাঁর নিকট গিয়ে বলেন, হে ইবনুল খাত্তাব। আল্লাহর শপথ! আপনি আমাদের বেশি বেশি দান করেন না এবং আমাদের ব্যাপারে সুবিচারের সাথে হুকুম করেন না। এতে উমার (রা) রাগান্বিত হন, এমনকি তাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হন। তখন হুর তাকে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন। আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন: “ক্ষমা প্রদর্শন কর, ভালো কাজের হুকুম দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আল আ’রাফ: ১৯৯) আর ইনি তো মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর শপথ! এ আয়াত তিলাওয়াত করার পর উমার কোনরূপ বাড়াবাড়ি করেননি। আর তিনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী খুব বেশি আমল
করতেন। (বুখারী)
٥١ – وَعَن ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِى أَثَرَةً وَأَمُورٌ تُنْكِرُونَهَا قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ قَالَ تُؤَدُّونَ الْحَقِّ الَّذِي عَلَيْكُمْ وَتَسْأَلُونَ اللهَ الَّذِي لَكُم متفق عليه
وَالْآثَرَةُ الْإِنْفَرَادُ بِالشَّيْ عَمْنُ لَهُ فِيهِ حَقٌّ.
৫১। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার পরে অনতিবিলম্বে কারও উপর কাউকে গুরুত্ব দেয়া হবে এবং এমন সব কাজ হবে যা তোমরা পছন্দ করবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে (এ অবস্থায়) আপনি আমাদের কি হুকুম করেন? তিনি বলেন: তোমাদের উপর যেসব অধিকার প্রাপ্য রয়েছে সেগুলো আদায় কর এবং তোমাদের পাওনা আল্লাহর কাছে চাও। (বুখারী, মুসলিম)
٥٢ – وَعَنْ أَبِي يَحْيَى أُسَيْدِ بْنِ حُضَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلًا مِّنَ الْأَنْصَارِ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلا تَسْتَعْمِلْنِي كَمَا اسْتَعْمَلْتَ فُلَانًا فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِى أَثَرَةٌ فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الْحَوْضِ – متفق عليه ، وَأُسَيْد
بِضَمِّ الْهَمْزَةِ وَحُضَير بِحَاءٍ مُهْمَلَةٍ مَضْمُومَةٍ وَضَادٍ مُعْجَمَةٍ مَفْتُوحَةٍ ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
৫২। আবু ইয়াহ্ইয়া উসাইদ ইবনে হুদাইর (রা) থেকে বর্ণিত। এক আনসারী বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে কর্মচারী নিযুক্ত করবেন না, যেমন অমুককে নিয়োগ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা অনতিবিলম্বে আমার পরে (তোমাদের নিজেদের উপর) অন্যের গুরুত্ব দেখতে পাবে। তখন আমার সাথে হাওযে কাওসারে দেখা না হওয়া পর্যন্ত সবর করবে। (বুখারী, মুসলিম)
٥٣ – وَعَنْ أَبِي إِبْرَاهِيمَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِي لَقِي فِيهَا الْعَدُوِّ انْتَظَرَ حَتَّى إِذَا مالَتِ الشَّمْسُ قَامَ فِيْهِمْ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ
وَاسْأَلُوا اللَّهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلالِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ مُنَزَّلَ الْكِتَابِ وَمُجْرِي السَّحَابِ وَهَازِمَ الْأَحْزَابِ اهْزِمُهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ – متفق عليه وبالله
التوفيق .
৫৩। আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুশমনদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং সূর্য হেলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। এমন অবস্থায় তিনি তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন: হে লোকেরা। তোমরা দুশমনদের সাথে সংঘর্ষের আকাঙ্ক্ষা করো না, আল্লাহর নিকট শান্তি চাও। তবে যখন তাদের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে তখন সবর করবে (অটল থাকবে)। জেনে রাখ, জান্নাত তরবারির ছায়াতলে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ চালনাকারী ও দুশমন বাহিনীকে পরাস্তকারী আল্লাহ!
তাদেরকে পরাস্ত কর এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয়ী কর। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদ: ৪ – সততা
সততা
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
১। “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যনিষ্ঠদের সাথে থাক।” (সূরা আত্ তাওবা: ১১৯)
وقَالَ تَعَالَى : والصادقين والصادقات .
২। “সত্যনিষ্ঠ পুরুষ ও নারীগণ… আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সূরা আল আহযাব: ৩৫)
وَقَالَ تَعَالَى : فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمُ .
৩। “যদি তারা আল্লাহর নিকট ওয়াদায় সত্যতার প্রমাণ দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের জন্য তা ভালো হত।” (সূরা মুহাম্মাদ: ২১)
٥٤ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الصدقَ يَهْدِى إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرِّ يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ عِندَ اللهِ صِدِّيقًا وَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِى إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُورَ
يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَابًا – متفق عليه .
৫৪। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সত্য পুণ্য ও কল্যাণের পথ দেখায়। আর পুণ্য ও কল্যাণ জন্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মানুষ সত্যের অনুসরণ করতে থাকলে অবশেষে আল্লাহর নিকট সিদ্দীক (পরম সত্যনিষ্ঠ) নামে অভিহিত হয়। আর মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায় এবং পাপাচার জাহান্নামের আগুনের দিকে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যার অনুসরণ করতে থাকলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট চরম মিথ্যাবাদী নামে অভিহিত হয়। (বুখারী, মুসলিম)
٥٥- وَعَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنْ الصَّدْقَ طَمَانِينَةٌ وَالْكَذِبَ رِيبَةً رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثُ صَحِيحٌ
قَوْلُهُ يَرِيبُكَ بِفَتْحِ الْيَاءِ وَضَمِّهَا وَمَعْنَاهُ أتْرُكْ مَا تَشْكُ فِي حِلِهِ وَاعْدِلُ إِلَى مَا لَا تَشْكُ فِيهِ .
৫৫। আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনে আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথাগুলো মুখস্থ করেছি: যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে দেয় তা ছেড়ে দিয়ে যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে না তাই গ্রহণ কর। সত্যনিষ্ঠা অবশ্যই প্রশান্তিদায়ক, আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে সহীহ বলেছেন।
٥٦ – وَعَنْ أَبِي سُفْيَانَ صَخْرِ بْنِ حَرْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ فِي قصة هرقل قَالَ هِرَقْلُ فَمَا ذَا يَأْمُرُكُمْ يَعْنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَبُو سُفْيَانَ قُلْتُ يَقُولُ اعْبُدُوا اللهَ وَحْدَهُ لا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
وَاتْرُكُوا مَا يَقُولُ أَبَاؤُكُمْ وَيَأْمُرُنَا بِالصَّلاةِ والصِدْقِ وَالْعَفَافِ والصلة – متفق عليه .
৫৬। আবু সুফিয়ান সাস্ত্র ইবনে হাব (রা) এক দীর্ঘ হাদীসে হিরাক্লিয়াসের কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, নবী (সা) তোমাদের কি কাজ করার হুকুম করেন? আবু সুফিয়ান বলেন, তিনি বলেন: তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করো না। তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা যা বলে তা ছেড়ে দাও। আর তিনি আমাদেরকে নামায, সত্যনিষ্ঠা, উদারতা ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার হুকুম করেন। (বুখারী, মুসলিম)
٥٧ – وَعَنْ أَبِي ثَابِتٍ وَقِيلَ أَبِي سَعِيدٍ وَقِيلَ أَبِي الْوَلِيدِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ وَهُوَ بَدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ سَأَلَ اللَّهَ تَعَالَى الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلْغَهُ اللَّهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى
فِرَاشِهِ – رواه مسلم .
৫৭। বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী সাহল ইবনে হুনাইফ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সত্যিই শাহাদাতের মৃত্যু চায়, সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন। (মুসলিম)
٥٨ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزَا نَبِي مِنَ الْأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِمْ فَقَالَ لِقَوْمِهِ لَا يَتْبَعَنِي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأَةٍ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُبْنَى بِهَا وَلَمَّا يَيْنِ بِهَا وَلَا أَحَدٌ بَنَى
بُيُوتًا لَمْ يَرْفَعُ سُقُوفَهَا وَلَا أَحَدٌ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ أَوْلَادَهَا فَغَزَا فَدَنَا مِنَ الْقَرْيَةِ صَلَاةَ الْعَصْرِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ فَقَالَ لِلشَّمْسِ إِنَّكَ مَا مُورَةٌ وَأَنَا مَا مُورَ اللَّهُمَّ احْبِشهَا عَلَيْنَا فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَجَمَعَ
الْغَنَائِمَ فَجَاءَتْ يَعْنِي النَّارَ لِتَأْكُلَهَا فَلَمْ تَطْعَمُهَا فَقَالَ إِنَّ فِيكُمْ غُلُوْلاً فَلْيُبَايِعْنِي مِنْ كُلِّ قَبِيلَةٍ رَجُلٌ فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلٍ بِيَدِهِ فَقَالَ فِيكُمُ الْغُلُولُ فَلْيُبَايِعْنِي قَبِيلَتُكَ فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةٍ بِيَدِهِ فَقَالَ فِيكُمُ الْغُلُولُ فَجَاءُوا بِرَأْسٍ
مِثْلِ رَأْسِ بَقَرَةٍ مِّنَ الذَّهَبِ فَوَضَعَهَا فَجَاءَتِ النَّارُ فَأَكَلَتْهَا فَلَمْ تَحِلُّ الْغَنَائِمُ لِأَحَدٍ قَبْلَنَا ثُمَّ أَحَلَّ اللهُ لَنَا الْغَنَائِمَ لَمَّا رَأَى ضَعْفَنَا وَعَجْزَنَا فَأَحَلَّهَا لَنَا – متفق عليه الخَلِفَاتُ بِفَتْحِ الْخَاءِ الْمُعْجَمَةِ وَكَسْرِ اللام جَمْعُ خَلِفَةٍ وَهِيَ
النَّاقَةُ الْحَامِلُ.
৫৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন একজন নবী (ইউশা ইবনে নূন) জিহাদ করতে গিয়ে তাঁর জাতিকে বলেন, যে ব্যক্তি অচিরেই বিবাহ করে তার স্ত্রীর সাথে মিলন করতে চায়, কিন্তু এখনও সে তা করেনি; যে ব্যক্তি ঘর তৈরি করেছে বটে কিন্তু এখনও তার ছাদ তৈরি করেনি এবং যে ব্যক্তি গর্ভবতী ছাগল বা উটনী খরিদ করে তার, বাচ্চার অপেক্ষায় আছে তারা যেন জিহাদে আমার সাথে না যায়। তারপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের নামাযের সময় অথবা তার কাছাকাছি সময় যে জনপদে যুদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল সেখানে পৌছে গেলেন। তখন তিনি সূর্যকে বলেন: তুমিও আল্লাহর হুকুমের অধীন আর আমিও তাঁর হুকুমের অধীন। হে আল্লাহ। তুমি সূর্যকে আটকে রাখ। অতঃপর জিহাদে জয়লাভকরা পর্যন্ত তা আটকে রাখা হল। তিনি গনীমাতের মাল একত্র করে রাখলে আগুন সেগুলোকে খেয়ে (জ্বালিয়ে) ফেলার জন্য এল, কিন্তু আগুন তা খেলোনা। তখন তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ গনীমাতের মালে খিয়ানত করেছে। কাজেই প্রত্যেক গোত্রের একজনকে আমার হাতে বাইয়াত করতে হবে। বাইয়াত করতে গিয়ে একজনের হাত তাঁর হাতের সাথে আটকে গেল। তিনি (তাকে) বলেন, তোমাদের মধ্যেই খিয়ানতকারী রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের সব লোককে আমার হাতে বাইয়াত করতে হবে। এভাবে বাইয়াত করতে গিয়ে দু’জন কি তিনজনের হাত তাঁর হাতের সাথে আটকে গেল। তখন তিনি বলেন, তোমাদের দ্বারাই এ খিয়ানত হয়েছে। তারা তখন একটি গরুর মাথার সমান একটি সোনার মাথা নিয়ে এল। তারপর সেটাকে তিনি মালের সাথে রেখে দিলেন এবং আগুন এসে তা সব খেয়ে ফেলল। আমাদের পূর্বে কারও জন্য গনীমাতের মাল হালাল করা হয়নি। আল্লাহ আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতার দিকে লক্ষ্য করে আমাদের জন্য এটা হালাল করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)
٥٩- وَعَنْ أَبِي خَالِدٍ حَكِيمِ بْنِ حَزَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرِّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيْنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِي بيعهما وَإِنْ كَتَمَا وَكَذبًا مُحقَّتْ بَرَكَةُ بَيْعهما – متفق عليه .
৫৯। আবু খালিদ হাকিম ইবনে হিযাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেনা-বেচা বাতিল করে দেওয়ার অধিকার বা ইখতিয়ার রাখে। যদি তারা উভয়ে সত্য ও স্পষ্ট কথা বলে, তাহলে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয় এবং যদি (কোনো কিছু) গোপন করে ও মিথ্যা বলে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত নষ্ট করে দেয়া হয় – (বুখারী, মুসলিম) [ মূল আরবী ভাষার ‘সিদকুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দটির অর্থ সাধারণত সততা মনে করা হয়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। সত্যবাদিতা, সত্যনিষ্ঠা, সত্য পথে থাকা, সত্যের অনুসরণ করা, কথায় ও কাজে এবং চিন্তা ও মনের সামঞ্জস্য, সত্যপরায়ণতা ইত্যাদি সবই এ শব্দটির অর্থের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম গাযালী এর ছয় প্রকার অর্থ তার এহইয়াউল উলূম গ্রন্থে লিখেছেন: (১) সত্যবাদিতা, (২) সত্য নিয়াত করা, (৩) সত্য প্রতিজ্ঞা করা (৪) প্রতিজ্ঞা পালনে সত্যের প্রমাণ দেয়া (৫) কাজে সত্যের অনুসরণ করা ও (৬) দীনের পথের সর্বস্তরে সত্যের নমুনা পেশ করা। এসব অর্থই উল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহে পাওয়া যায়। (অনুবাদক) ] ।
অনচ্ছেদ : ৫ – মুরাকাবা বা আত্মপর্যবেক্ষণ।
মুরাকাবা [ মুরাকাবা শব্দের অর্থ দৃষ্টি রাখা, পরিদর্শন করা, আত্মসমালোচনা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং গভীর মনোনিবেশ সহকারে আত্মপর্যবেক্ষণ করা ও আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়া। এ সম্পর্কে অনেক আয়াত ও হাদীস রয়েছে। (অনুবাদক) ] বা আত্মপর্যবেক্ষণ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “তুমি যখন নামাযে দাঁড়াও তখন তিনি তোমাকে এবং নামাযীদের মধ্যে তোমার নড়ন চড়ন প্রত্যক্ষ করেন।” (সূরা আশ্ শু’আরা: ২১৯ ও ২২০)
وَقَالَ تَعَالَى : وَهُوَ مَعَكُم أَيْنَمَا كُنْتُمْ .
(২) “তোমরা যেখানেই থাক আল্লাহ তোমাদের সাথে থাকেন।” (সূরা আল হাদীদ: ৪)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ .
(৩)” আল্লাহর নিকট আসমান ও যমীনে কোন কিছুই গোপন থাকে না।” (সূরা আলে ইমরান : ৫)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ رَبِّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
(৪) “নিশ্চয়ই তোমার প্রভু (তাঁর বিরোধীদের প্রতি) কড়া দৃষ্টি রাখছেন।” (সূরা আল-ফাজর: ১৪)
وَقَالَ تَعَالَى : يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ وَالْآيَاتُ فِي الْبَابِ كثيرة معلومة.
(৫) “আল্লাহ চোখের খিয়ানত (অর্থাৎ অবৈধ দৃষ্টি) ও মনের গোপন কথা জানেন।” (সূরা গাফির : ১৯)
٦٠ – عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمِ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الشَّيَابِ شَدِيدُ سواد الشعر لا يُرى عَلَيْهِ أثر السفر ولا يعرفه منا أَحَدٌ
أحمد حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْنَدَ رَكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ وَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْإِسْلامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ وتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً قَالَ صَدَقْتَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيْمَانِ قَالَ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدْرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ قَالَ صَدَقَتَ قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ قَالَ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَانَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ قَالَ مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنْ
أَمَارَاتِهَا قَالَ أَن تَلِدَ الْآمَةُ رَبَّتَهَا وَأَن تَرَى الْحُفَاةَ العرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُوْنَ فِي الْبُنْيَانِ ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا ثُمَّ قَالَ يَا عُمَرُ اتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ: قُلْتُ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ آتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ – رواه
مسلم. وَمَعْنَى تَلِدَ الْآمَةُ رَبَّتَهَا أَى سَيِّدَتَهَا وَمَعْنَاهُ أَنْ تَكْثُرَ السَّرَارِي حَتَّى تَلِدَ الْآمَةُ السرية بنتًا لِسَيِّدِهَا وَبَنْتُ السَّيِّدِ فِي مَعْنَى السَّيِّدِ وَقِيلَ غَيْرُ ذَلِكَ وَالْعَالَةُ الْفُقَرَاءُ وَقَوْلُهُ مَلِيًّا أَيُّ زَمَنًا طَوِيلاً وَكَانَ ذَلِكَ ثَلَاثًا .
৬০। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের সামনে আবির্ভূত হল। লোকটির পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল খুবই ধবধবে সাদা, তার চুলগুলো ছিল গাঢ় কালো এবং তার উপর সফরের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। আর আমাদের কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। সে সোজা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে বসল। তারপর তার হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাঁটুর সাথে লাগিয়ে দিয়ে নিজের হাত দু’খানা তাঁর উরুর উপর রেখে বলল, হে মুহাম্মাদ! ইসলামের পরিচয় আমাকে বলে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ইসলাম এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর তুমি নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন। আমরা তার এরূপ আচরণে বিস্ময় বোধ করলাম যে, সে তাঁকে জিজ্ঞেসও করছে আবার তাঁর কথা সত্য বলে মন্তব্যও করছে। সে আবার জিজ্ঞেস করল, আপনি আমাকে ঈমানের পরিচয় বলে দিন। তিনি বলেন: ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, কিয়ামাতের দিন এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন। সে আবার জিজ্ঞেস করল, আপনি আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তা এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদাত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে না দেখ, তবে নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন। সে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামাতের ব্যাপারে আমাকে কিছু বলুন। তিনি বলেন: যাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হল সে প্রশ্নকারী থেকে বেশি কিছু জানে না। সে বলল, তাহলে তার আলামতগুলো অবহিত করুন। তিনি বলেন: দাসী তার কর্তীকে প্রসব করবে। আর (এক কালের) খালি পা ও উলংগ শরীরবিশিষ্ট গরীব মেষের রাখালদেরকে (পরবর্তীকালে) সুউচ্চ দালান-কোঠা নিয়ে পরস্পর গর্ব করতে দেখবে। তারপর লোকটি চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে উমার! তুমি কি জান, প্রশ্নকারী কে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন: তিনি হচ্ছেন জিব্রীল। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দীন শেখাতে এসেছিলেন। (মুসলিম)
٦١ – عَنْ أَبِي ذَرٍ جُنْدَبِ بْنِ جَنَادَةً وَأَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَاتَّبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةِ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَن رَوَاهُ التَّرْمِذِى
وَقَالَ حَدِيْثٌ حَسَنٌ .
৬১। আবু যার ও মু’আয ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং অসৎ কাজ করলে তার পরপর সৎ কাজ কর। তাহলে ভালো কাজ মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আর মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদীস বলেছেন।
٦٢- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنْتُ خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ يَا غُلَامُ إِنِّي أَعَلِّمُكَ كَلِمَاتِ احْفَظُ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظُ اللَّهَ تَجِدُهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ
وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمِّةَ لو اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يُنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَإِنِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رفَعَتِ الْأَقْلَامُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ
حَدِيثُ حَسَنٌ صَحِيحٌ وفِي رِوَايَةٍ غَيْرِ التَّرْمِذِي احْفَظُ اللَّهَ تَجِدُهُ أَمَامَكَ تَعَرَّفْ إِلَى اللَّهِ فِي الرِّخَاءِ يعرفك في الشدَّةِ وَاعْلَمُ أَنَّ مَا أَخْطَاكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ وَمَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ ليُخْطِئَكَ وَاعْلَمُ أَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَأَنَّ الْفَرَجَ مَعَ
الْكَرْبِ وَأَنْ مَعَ الْعُسْرِ يُسْراً.
৬২। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ ওহে যুবক! আমি অবশ্যই তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি: আল্লাহর (নির্দেশাবলীর) রক্ষণাবেক্ষণ ও অনুসরণ কর, আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। আল্লাহর হক আদায় কর, তাহলে তাঁকে তোমার সাথে পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তো আল্লাহ্র কাছে চাও। আর যখন তুমি সাহায্য চাইবে তা আল্লাহর কাছেই চাও। জেনে রাখ, সমস্ত সৃষ্টজীব একসাথে মিলেও যদি তোমার কোন উপকার করতে চায়, তবে আল্লাহ যা তোমার ভাগ্যে নির্ধারিত করে রেখেছেন, তাছাড়া তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না। আর তারা যদি একসাথে মিলে তোমার কোন অপকার করতে চায়, তবে আল্লাহ যা তোমার ভাগ্যে নির্ধারিত করে রেখেছেন তাছাড়া তোমার কোন অপকার তারা করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে এবং কিতাবাদি শুকিয়ে গেছে [ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষের বাক্যটি দ্বারা অতীব সুন্দরভাবে তাকদীরের অকাট্যতা ব্যক্ত করেছেন। লেখা শেষ করে কলম উঠিয়ে রাখলে এবং লেখা শুকিয়ে গেলে আর নতুন করে কোন কিছু লেখা হয় না এবং কোন কাটাকাটিও হয় না। তাকদীরের লিখন এরূপ অকাট্য যে, এতে আর কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হওয়ার নেই। এ কথাই এখানে বুঝানো হয়েছে। (অনুবাদক) ]
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান ও সহীহ হাদীস আখ্যা দিয়েছেন। তিরমিযী ছাড়া অন্য হাদীস গ্রন্থসমূহে আরো আছে: আল্লাহর অধিকার সংরক্ষণ কর, তাহলে তাঁকে পাবে নিজের সামনে। সুদিনে আল্লাহকে স্মরণ রাখ, তাহলে দুর্দিনে তিনি তোমাকে স্মরণ করবেন। জেনে রাখ, যে জিনিস তুমি লাভ করনি তা তুমি (আসলে) পেতে না। আর যা (অসুবিধা) তুমি লাভ করেছ তা তোমার কাছে পৌঁছতে ভুল হত না। (অর্থাৎ ভাগ্যে যা লিখা আছে তা হবেই)। আরো জেনে রাখ, (আল্লাহর) মদদ আছে সবরের সাথে, (আর্থিক) সচ্ছলতা আছে কষ্ট ও ক্লেশের সাথে, আর অবশ্যই দুঃখের সাথে আছে সুখ।
٦٣ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أَعْمَالَا هِيَ آدَقُّ فِي أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعْرِ كُنَّا نَعُدُهَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْمُوْبِقَاتِ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَقَالَ الْمُوْبِقَاتُ المُهْلِكَاتٌ .
৬৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা (বর্তমানে) এমন অনেক কাজ করে থাক যেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও বেশি হালকা। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সেগুলোকে ধ্বংসাত্মক (কাজ) গণ্য করতাম। (বুখারী)
٦٤- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَغَارُ وَغَيْرَةُ الله تَعَالَى أَنْ يَأْتِيَ الْمَرْءُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ – متفق عليه والْغَيْرَةُ بِفَتْحِ الْغَيْنِ وَأَصْلُهَا الْأَنْفَةُ .
৬৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’আলা (বান্দার ব্যাপারে) আত্মমর্যাদা বোধ করেন। মানুষের জন্য আল্লাহ যা হারাম করেছেন যখন সে তাতে লিপ্ত হয় তখনই আল্লাহর আত্মমর্যাদাবোধ জেগে উঠে – (বুখারী, মুসলিম) [ এ হাদীসের অর্থ এই যে, মানুষের হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া আল্লাহর মর্যাদা হানি করার নামান্তর। কাজেই নিষিদ্ধ কাজ করা তাঁর জন্য মর্যাদা হানিকর। এ অর্থে আল্লাহ তাঁর জন্য শোভনীয় আত্মমর্যাদা বোধ করেন। (অনুবাদক) ] ।
٦٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ ثَلَاثَةَ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يُبْتَلِيَهُمْ فَبَعَثَ إِلَيْهِمُ مَلَكًا فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ لَوْنَ
حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّى الَّذِي قَدْ قَدْرَنِي النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ قَذَرُهُ وَأَعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ الْإِبِلُ أَوْ قَالَ الْبَقَرُ شَكُ الرَّاوِيُّ) فَأَعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِيْهَا .
فَأَتَى الْأَقْرَعَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّى هُذَا الَّذِي قَذِرَنِي النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ وَأَعْطِيَ شَعْرًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ الَيْكَ؟ قَالَ الْبَقَرُ فَأَعْطَى بَقَرَةً حَامِلاً وَقَالَ بَارَكَ اللهُ لَكَ
فِيهَا .قَاتَى الْأَعْمَى فَقَالَ أَيُّ شَيْرَ احَبَّ إِلَيْكَ؟ قَالَ أَنْ يُرَدَّ اللَّهُ إِلَى بَصَرِي فَأَبْصِرَ النَّاسَ فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرَهُ قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ الْغَنَمُ فَأَعْطِيَ شَاةٌ وَالِدَا فَانْتَجَ هَذَانِ وَوَلَدَ هَذَا فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِّنَ الْإِبِلِ
وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْبَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِّنَ الْغَنَمِ. ثُمَّ إِنَّهُ أَتَى الْأَبْرَصَ فِى صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينَ قَدِ انْقَطَعَتْ بِي الْجِبَالُ فِي سَفَرِي فَلا بَلاغَ لِي الْيَوْمَ إِلا بِاللهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِي أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحَسَنَ وَالْجِلْدَ الْحَسَنَ
وَالْمَالَ بَعِيرًا اتبَلغُ بِهِ فِي سَفَرِى فَقَالَ الْحُقُوقُ كَثِيرَةٌ فَقَالَ كَانَي أَعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْدُرُكَ النَّاسُ فَقِيرًا فَأَعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا الْمَالَ كَابِرًا عَنْ كَابِرٍ فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيْرَكَ اللَّهُ إِلَى مَا كُنتَ .
وَآتَى الْأَقْرَعَ فِى صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذَا وَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ هَذَا فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيْرَكَ اللَّهُ إِلَى مَا كُنْتَ. وآتَى الْأَعْمَى فِى صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ وَابْنُ سَبِيلِ انْقَطَعَتْ بِيَ الْجِبَالُ فِي
سَفَرِى فَلا بَلاغَ لِي الْيَوْمَ إِلا بِاللَّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِي رَبِّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ شَاةَ اتَبْلُغُ بِهَا فِي سَفَرِى ؟ فَقَالَ قَدْ كُنْتُ أَعْمَى فَرَدَّ اللَّهُ إِلَى بَصَرِي فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللَّهِ مَا أَجْهَدُكَ الْيَوْمَ بِشَيْءٍ أَخَذْتَهُ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلٌ
فَقَالَ أَمْسِكَ مَالَكَ فَإِنَّمَا ابْتُلِيْتُمْ فَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَسَخط على صاحبيك – متفق عليه.
৬৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: বনী ইসরাঈলের মধ্যে তিনজন লোক ছিল: কুষ্ঠরোগী, টেকো ও অন্ধ। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন এবং একজন ফেরেশতাকে তাদের নিকট পাঠালেন। তিনি কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোন্টি? সে বলল, সুন্দর ত্বক এবং সেই রোগ থেকে মুক্তি যার কারণে লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। ফেরেস্তা তার গায়ে হাত বুলালেন। এতে তার রোগ নিরাময় হল এবং তাকে সুন্দর রং দান করা হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন সম্পদ তোমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? সে বলল, উট অথবা গরু (বর্ণনাকারীর সন্দেহ)। তখন তাকে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উট দেয়া হল। ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দিন। তারপর তিনি টেকো লোকটির নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোনটি? সে বলল, সুন্দর চুল এবং এই টাক থেকে মুক্তি, যার কারণে লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। তিনি তার মাথায় হাত বুলালেন। এতে তার টাক সেরে গেল এবং তাকে সুন্দর চুল দান করা
হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন সম্পদ তোমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? সে বলল, গরু। তখন তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হল। তিনি বললেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দিন। তারপর তিনি অন্ধ লোকটির নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কি? সে বলল, আল্লাহ আমার চোখ ফিরিয়ে দিন, যাতে আমি মানুষকে দেখতে পাই। তিনি তার চোখে হাত বুলালেন। এতে আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন সম্পদ তোমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? সে বলল, ছাগল। তাকে তখন এমন ছাগী দেয়া হল যা বেশি বাচ্চা দেয়। তারপর উট, গাভী ও ছাগলের বাচ্চা হল এবং উট দ্বারা একটি ময়দান, গরু দ্বারা আর একটি ময়দান এবং ছাগল দ্বারা অন্য একটি ময়দান ভরে গেল।
তারপর ফেরেশতা কুষ্ঠ রোগীর নিকট তার প্রথম আকৃতি ধারণ করে এসে বলেন, আমি একজন মিসকীন। সফরে আমার সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে। আজ আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই যার সাহায্যে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছতে পারি, অতঃপর তোমার উসীলায়। সেই আল্লাহর নামে আমি তোমার কাছে একটা উট সাহায্য চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং, সুন্দর ত্বক ও সম্পদ দিয়েছেন, যাতে আমি তার সাহায্যে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি। সে বলল, (আমার উপর) অনেকের হক রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বোধহয় তোমাকে চিনি। তুমি কুষ্ঠ রোগী ছিলে না? তোমাকে লোকেরা কি ঘৃণা করত না? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? তোমাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। সে বলল, আমি তো এ সম্পদ পূর্বপুরুষ থেকে ওয়ারিশী সূত্রে পেয়েছি। তিনি বলেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তাহলে আল্লাহ তোমাকে যেন পূর্বের মত করে দেন।
এরপর তিনি টেকো লোকটির নিকট তার প্রথম আকৃতি ধারণ করে এসে ঐ কথাই বলেন, যা প্রথম ব্যক্তিকে বলেছিলেন এবং সে সেই উত্তরই দিল, যা পূর্বোক্ত লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বলেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে আবার পূর্বের মত করে দেন।
তারপর তিনি অন্ধ লোকটির নিকট তার পূর্বের আকৃতি ধারণ করে এসে বলেন, আমি একজন মিস্কীন ও পথিক। আমার সবকিছু সফরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছতে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপায় নেই, অতঃপর তোমার উসীলায়। তোমার কাছে সেই আল্লাহর নামে একটি ছাগল সাহায্য চাচ্ছি, যিনি তোমাকে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। লোকটি বলল, আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ আমাকে আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। কাজেই তুমি তোমার যত ইচ্ছা মাল নিয়ে যাও, আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর শপথ! আজ তুমি মহান আল্লাহর ওয়াস্তে যা কিছু নেবে আমি তাতে তোমাকে বাধা দেব না। ফেরেশতা বলেন, তোমার মাল তোমার কাছেই রাখ। তোমাদের শুধু পরীক্ষা করা হয়েছে। আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার অপর দু’জন সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)
٦٦ – عَنْ أَبِي يَعْلَى شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْكَيْسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا وَتَمَنَّى عَلَى اللهِ رَوَاهُ التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيْثٌ حَسَنٌ
قَالَ التَّرْمِذِيُّ وَغَيْرُهُ مِنَ الْعُلَمَاءِ مَعْنَى دَانَ نَفْسَهُ حَاسَبَهَا .
৬৬। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার নফসের হিসাব নেয় (আত্ম-সমালোচনা করে) এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করে। আর দুর্বল ঐ ব্যক্তি যে নিজেকে কুপ্রবৃত্তির গোলাম বানায়, আবার আল্লাহর কাছেও প্রত্যাশা করে।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান আখ্যা দিয়েছেন।
٦٧ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيْهِ – حَدِيثٌ حَسَنٌ رَوَاهُ التَّرْمِذِيُّ وَغَيْرُهُ .
৬৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অশোভনীয় (অনর্থক) কাজ পরিহার করা মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিযী)
٦٨ – عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يُسْأَلُ الرَّجُلُ فِيمَ ضَرَبَ امْرَأَتَهُ – رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَغَيْرُهُ .
৬৮। উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কোন সঙ্গত কারণে স্ত্রীকে প্রহার করলে সেজন্য স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। (আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদ: ৬ – তাক্ওয়া
তাকওয়া [ আরবী ভাষায় তাওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ ভয় করা, বেঁচে চলা, সতর্কতা অবলম্বন করা, বিরত থাকা ইত্যাদি। এসব অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কুরআন ও হাদীসে তাকওয়া শব্দটি মূলত একটি বিশেষ ও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহর উপর সব সময় দৃঢ় ঈমান রেখে জীবনের সর্বস্তরে কাজ করতে থাকলে মানুষ ভালো ও মন্দের মধ্যে সঠিক পার্থক্য করার যোগ্যতা ও প্রবণতা লাভ করে। আর এতে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ এবং মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। মনের এরূপ অবস্থা অনুযায়ী পবিত্র ভূমিকা পালন করাকেই ইসলামের পরিভাষায় ‘তাকওয়া’ বলা হয়। এ সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে। (অনুবাদক)] ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تَقَاتِهِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেমন তাঁকে ভয় করা উচিত।” (সূরা আলে ইমরান: ১০২)
وَقَالَ تَعَالَى : فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ.
(২) “তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর।” (সূরা আত্ তাগাবুন: ১৬)
وَقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيدًا .
(৩) “হে ঈমানদারগণ। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (সূরা আল আহযাব: ৭০)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَنْ يُتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ.
(৪) “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তার কল্পনাতীত উৎস থেকে তিনি তাকে রিযক দেন।” (সূরা আত্ তালাকঃ ২ও৩)
وقَالَ تَعَالَى : إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرُ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ .
(৫) “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে (ভালো মন্দের মধ্যে) পার্থক্যকারী (যোগ্যতা ও শক্তি) দান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের গুনাহসমূহ দূর করে দেবেন এবং তোমাদেরকে মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ বড়ই মহান।” (সূরা আল আনফাল : ২৯)
٦٩- عن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَبْلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ ؟ قَالَ أَتْقَاهُمْ فَقَالُوا لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ قَالَ فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ ابْنُ نَبِيِّ اللَّهِ بْنِ نَبِيِّ اللَّهِ بْنِ خَلِيلِ اللهِ قَالُوا لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ قَالَ فَعَنْ
مَعَادِنِ الْعَرَبِ تَسْأَلُونِي؟ خَيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خَيَارُهُمْ فِي الْإِسْلامِ إِذَا فَقُهُوا – متفق عليه . وَفَقَهُوا بِضَمَ الْقَافِ عَلَى الْمَشْهُورِ وَحُكِى كَسْرُهَا أَي عَلِمُوا أَحْكَامَ الشرع .
৬৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল: সবচেয়ে সম্মানার্হ ব্যক্তি কে? তিনি বলেন: সকলের চেয়ে যে বেশি আল্লাহভীরু। সাহাবীগণ বলেন, আমরা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছি না। তিনি বলেন, তাহলে আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ), যাঁর পিতা আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা আল্লাহর নবী এবং তাঁর পিতা ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)। সাহাবীগণ বলেন, আমরা আপনাকে এটাও জিজ্ঞেস করছি না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তাহলে তোমরা আরবের বিভিন্ন বংশের কথা জিজ্ঞেস করছ? (জেনে রেখ) জাহিলিয়াতের যুগে তাদের মধ্যে যারা ভালো ছিল তারাই ইসলামের যুগেও ভালো, যদি তারা দীন-শরীয়াতের জ্ঞান লাভ করে। (বুখারী, মুসলিম)
عن أبي سَعِيدٍ الْخُدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدنيا واتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنْ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاء –
رواه مسلم.
৭০। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দুনিয়া অবশ্যই মিষ্ট ও আকর্ষণীয়। আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি করেছেন, যাতে তিনি দেখে নেন তোমরা কেমন কাজ কর। কাজেই তোমরা দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের (ফিতনা) থেকেও সতর্ক থাক। কারণ বনী ইসরাঈলের প্রথম ফিতনা নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল। (মুসলিম)
۷۱- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقى والعفاف والغنى – رواه مسلم .
৭১। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ হে আল্লাহ। আমি তোমার কাছে হিদায়াত, তাওয়া, পবিত্রতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা চাই। (মুসলিম)
۷۲- عَنْ أَبِي طَرِيفِ عَدِي بْنِ حَاتِمِ الطَّائِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِيْنِ ثُمَّ رَأَى أَتْقَى لِلَّهِ مِنْهَا قليات التقوى – رواه مسلم .
৭২। আদী ইবনে হাতিম তাঈ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি কোন ব্যাপারে শপথ করার পর অধিকতর আল্লাহভীতির (তাকওয়া) কোন কাজ দেখলো, এ অবস্থায় তাকে তাকওয়ার কাজটি করতে হবে। (মুসলিম)
عَنْ أَبِي أَمَامَة صُدَى بْنِ عَجْلانَ الْبَاهِلِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَقَالَ اتَّقُوا اللهَ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُوْمُوا شَهْرَكُمْ وَادُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا أَمْرَاءَكُمْ تَدْخُلُوا
جَنَّةَ رَبِّكُمْ – رَوَاهُ التَّرْمِذِي فِي آخِرِ كِتَابِ الصَّلاةِ وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
৭৩। আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছিঃ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় কর, রমযানের রোযা রাখ, নিজেদের মালের যাকাত দাও এবং নিজেদের আমীরদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম তিরমিযী কিতাবুস সালাতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান ও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
অনুচ্ছেদ: ৭ – ইয়াকীন ও তাওয়াক্কুল
ইয়াকীন ও তাওয়াক্কুল [ আরবী ভাষায় ইয়াকীন শব্দের অর্থ: নিশ্চিত ও দৃঢ় বিশ্বাস যাতে কোন প্রকার সন্দেহ, দ্বিধা, সংকোচ ও সংশয় নেই। আল কুরআনে তিন প্রকার ইয়াকীন বর্ণিত হয়েছে। (১) ইলমুল ইয়াকীন অর্থাৎ যুক্তি ও জ্ঞান ভিত্তিক বিশ্বাস; (২) আইনুল ইয়াকীন অর্থাৎ চোখে দেখা ভিত্তিক বিশ্বাস; (৩) হাক্কুল ইয়াকীন অর্থাৎ বাস্তব বোধ ভিত্তিক বিশ্বাস।
দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কেউ সঠিকভাবে জানতে পারল কোথাও আগুন লেগেছে। এ ক্ষেত্রে তার এ কথা বিশ্বাস করার নাম হচ্ছে ইস্কুল ইয়াকীন। অতঃপর স্বচক্ষে ঐ আগুন দেখে তার যে বিশ্বাস জাগলো তার নাম হচ্ছে আইনুল ইয়াকীন। তারপর নিজের হাত দিয়ে উক্ত আগুন স্পর্শ করে তার যে বিশ্বাস হল তার নাম হচ্ছে হাক্কুল ইয়াকীন।
তাওয়াক্কুল শব্দের অর্থ আস্থা স্থাপন করা, ভরসা ও নির্ভর করা। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় ইসলামের বিধান অনুযায়ী পূর্ণ উদ্যমে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে কোন কাজ করার সাথে সাথে তার সাফল্যের জন্য আল্লাহর উপর আস্থা সহকারে ভরসা ও নির্ভর করার নাম তাওয়াক্কুল।
কাজ ও তাওকূলের মধ্যে কোন দ্বন্দু নেই। উভয়ে একে অপরের পরিপূরক। কাজ করতে ও চেষ্টা করতে আল্লাহ্ই হুকুম দিয়েছেন। কাজেই তাঁর হুকুম অমান্য করে তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করা যাবে কি করে? কাজ করা এ দুনিয়ার নিয়ম। কাজের জন্যই আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এজন্য কাজ মানুষকে করতেই হয় এবং করতেই হবে। আর কাজ করতে গিয়েই তো সাফল্যের জন্য তাওয়াক্কুলের দরকার হয়। কাজ না করলে তাওয়াক্কুলের প্রশ্নই উঠে না। যোগ্যতা, জ্ঞান ও কর্মক্ষমতা অবশ্যই পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে, কিন্তু সাফল্যের জন্য ভরসা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর উপর। কারণ সবকিছুর চাবিকাঠি ও সাফল্য তাঁরই হাতে। (অনুবাদক) ] ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُونَ الْأَحْزَابَ قَالُوا هُذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَمَا زَادَهُمُ الأَ إِيْمَانًا وَتَسْلِيمًا
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “আর মুমিনগণ (আক্রমণকারী) সৈন্যদেরকে দেখতে পেয়ে বলল, এই তো সেই জিনিস যার ওয়াদা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল আমাদের নিকট করেছেন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সত্যিই বলেছেন। এ ঘটনা তাদের ঈমান ও (আল্লাহর নিকট) আত্মসমর্পণের মাত্রা বৃদ্ধি করে দিল।” (সূরা আল আহযাবঃ ২২)
وَقَالَ تَعَالَى : الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ فَانْقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللهِ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٌ .
(২) “আর যাদের নিকট লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সৈন্যবাহিনী সমবেত হয়েছে, কাজেই তাদেরকে ভয় কর, (একথা শুনে) তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেল। আর তারা উত্তরে বলল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই অতি চমৎকার কর্মসম্পাদনকারী। অবশেষে তারা আল্লাহর নিয়ামত ও দানসহ এমন অবস্থায় ফিরে এল যে, তাদের কোন ক্ষতি হল না। আর তারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির অনুসরণ করল। আর আল্লাহ বিরাট অনুগ্রহের মালিক।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৩, ১৭৪)
وَقَالَ تَعَالَى : وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ .
(৩) “আর সেই চিরঞ্জীব আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর যিনি অমর।” (সূরা আল ফুক্বান: ৫৮)
وَقَالَ تَعَالَى : وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ .
(৪) “আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।” (সূরা ইবরাহীম: ১১)
وَقَالَ تَعَالَى : فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى الله
(৫) “তুমি যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَنْ يُتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ .
(৬) “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা আত্ তালাক: ৩)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ .
(৭) “ঈমানদার তারাই যাদের দিল আল্লাহকে স্মরণকালে কেঁপে উঠে এবং আল্লাহর আয়াতসমূহ যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রভুর উপরই ভরসা রাখে।” (সূরা আল আনফালঃ ২)
এ ছাড়াও কুরআনে তাওয়াক্কুল সম্পর্কে আরো বহু আয়াত রয়েছে।
وأما الْأَحَادِيثُ :
٧٤- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرِضَتْ عَلَى الْأَمَمُ فَرَأَيْتُ النَّبِي وَمَعَهُ الرُّهَيْطُ وَالنَّبِيِّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ والرجلان والنَّبِي وَلَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذ رَفَعَ لِى سَوَادٌ عَظِيمٌ فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ
أُمَّتِي فَقِيلَ لي هذا مُوسَى وَقَوْمُهُ ولكن انظر إلى الأفُقِ فَنَظَرْتُ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ فَقِيلَ لِي أَنْظُرُ إِلَى الْأُفُقِ الْآخَرِ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ فَقِيلَ لِي هَذِهِ أُمْتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ الْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ ثُمَّ
نَهَضَ فَدَخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ فِي أُولئِكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ صَحِبُوا رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ بَعْضُهُمْ فَلَعَلَّهُمُ الَّذِين ولدوا في الإِسْلامِ فَلَمْ يُشْرِكُوا
بِاللَّهِ شَيْئًا وَذَكَرُوا أَشْيَاءَ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ؟ فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ هُمُ الَّذِينَ لا يَرْقُونَ وَلَا يَسْتَرْقُوْنَ وَلَا يَتَطيرُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ فَقَامَ عكاشة بنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ أَدْعُ
اللهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ فَقَالَ أَنْتَ مِنْهُمْ ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ ادْعُ اللهَ أَنْ يُجْعَلْنِي مِنْهُمْ فَقَالَ سَبَقَكَ بِهَا عُكاشة. متفق عليه الرهيط بضم الراء تَصْغِيرُ رَهْطٍ وَهُمْ دُونَ عَشَرَةِ أَنْفُسِ وَالْأُفُقُ النَّاحِيَةُ وَالْجَانِبُ وَعُكَاشَةُ بِضَمِّ
الْعَيْنِ وَتَشْدِيدِ الْكَافِ وَيَتَخْفِيفِهَا وَالتَّشْدِيدُ أَفْصَحُ .
৭৪। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার নিকট (স্বপ্নে অথবা মিরাজে) উম্মাতদের পেশ করা হল। আমি একজন নবীকে একটি ছোট দলসহ দেখলাম, আরেকজন নবীকে একজন-দুইজন লোকসহ দেখলাম আর এক নবীকে দেখলাম যে, তাঁর সাথে কেউ নেই। হঠাৎ করে আমাকে একটি বিরাট দল দেখানো হল। আমি ভাবলাম, এরা আমার উম্মাত। আমাকে বলা হল, এরা মূসা (আ) ও তাঁর উম্মাত। তবে আপনি আসমানের দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন। আমি দেখলাম, সেখানে বিরাট একটি দল। আবার আমাকে আসমানের অন্য দিগন্তে তাকিয়ে দেখতে বলা হল। আমি দেখলাম, সেখানেও বিরাট দল। তারপর আমাকে বলা হল, এসব আপনার উম্মাত। আর তাদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে যাবে। ইবনুল আব্বাস (রা) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে তাঁর হুজরায় গেলেন। এ সময় সাহাবীগণ ঐসব লোকের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন যারা বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে যাবেন। কেউ বলেন, বোধ হয় তারা ঐ সব লোক যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন। কেউ বলেন, মনে হয় তারা ইসলাম-যুগে জন্মগ্রহণকারী ঐসব লোক যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করেননি। এভাবে সাহাবীগণ বিভিন্ন কথা বলাবলি করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে বলেনঃ তোমরা কোন্ বিষয় আলোচনা করছ? তাঁরা তাঁকে বিষয়টা সম্পর্কে জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তারা হচ্ছে ঐসব লোক যারা তাবীজ-তুমারের কারবার করে না এবং করায়ও না। আর তারা কোন কিছুকে শুভ ও অশুভ লক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করে না এবং তারা একমাত্র তাদের প্রভু আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করে। উক্কাশা ইবনে মিহসান (রা) দাঁড়িয়ে বলেন, আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যাতে তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেন: তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর আর একজন উঠে বলেন, আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যাতে আমাকেও তিনি তাদের মধ্যে গণ্য করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: উল্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে। (বুখারী, মুসলিম)
ى اللهُ عَنْهُمَا أَيْضًا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ ٧٥ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيا وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ اللهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ أمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبَكَ خَاصَمْتُ اللَّهُمَّ أَعُوذُ بِعِزَّتِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَنْ تُضِلَّنِي أَنْتَ الْحَيُّ
الَّذِي لَا تَمُوتُ والجنَّ وَالْإِنسُ يَمُوتُونَ – متفق عليه وهذا لفظ مُسْلِمِ وَاخْتَصَرَهُ الْبُخَارِيُّ .
৭৫। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য ইসলাম গ্রহণ অর্থাৎ আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমার দিকে ধাবিত হয়েছি এবং তোমার নিকট ফায়সালাপ্রার্থী হয়েছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার সম্মানের আশ্রয় চাই, যাতে তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট না কর। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি চিরঞ্জীব। তুমি মরবে না। আর জিন ও মানুষ সবাই মরে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)
হাদীসের মূল শব্দগুলো ইমাম মুসলিমের। ইমাম বুখারী একে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
٧٦- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَيْضًا قَالَ حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ قَالَهَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلامُ حِينَ أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَقَالَهَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ قَالُوا إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيْمَانًا
وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ – رَوَاهُ الْبُخَارِيُّوَفِي رِوَايَةٍ لَهُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ أُخِرَ قَوْلِ إِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ الْقِيَ فِي النَّارِ حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ .
৭৬। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি চমৎকার দায়িত্ব গ্রহণকারী। আর লোকেরা যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথীদেরকে বলেছিল, মুশরিকরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে, তোমরা তাদেরকে ভয় কর, তখন এতে তাদের ঈমান বেড়ে গেল এবং তারা বলে যে, আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি চমৎকার দায়িত্ব গ্রহণকারী। (বুখারী)
বুখারীর অপর বর্ণনায় আছে, ইবনুল আব্বাস (রা) বলেন: ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আগুনে নিক্ষেপ করার পর তাঁর সর্বশেষ কথা ছিল, আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম বন্ধু।
۷۷- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقوَامٌ أَفْئِدَتُهُم مِثلُ أَفْئِدَةِ الطير. رواه مسلم قبْلَ مَعْنَاهُ مُتَوَكَّلُونَ وَقِيلَ قُلُوبُهُمْ رَقِيقَةٌ.
৭৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাতে এমন অনেক লোক যাবে যাদের দিল পাখির দিলের মত হবে (অর্থাৎ তাদের দিল নরম এবং তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে)। (মুসলিম)
۷۸- عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ غَزَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَلَ نَجْدٍ فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَفَلَ مَعَهُمْ فَأَدْرَكَتْهُمُ الْقَائِلَةُ في وَادٍ كَثِيرِ الْعِضَاءِ فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَتَفَرِّقَ النَّاسُ يَسْتَظُلُّونَ بالشَّجَرِ وَنَزَلَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحْتَ سَمُرَةٍ فَعَلَّقَ بِهَا سَيْفَهُ وَنَمَّنَا نَوْمَةً فَإِذَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُونَا وَإِذَا عِنْدَهُ أَعْرَابِي فَقَالَ إِنْ هَذَا اخْتَرَطَ عَلَى سَيْفِي وَأَنَا
نَائِمٌ فَاسْتَيْقَظْتُ وَهُوَ فِي يَدِهِ صَلْنَا قَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مِنَى ؟ قُلْتُ اللهُ ثَلاثًا وَلَمْ يُعَاقِبُهُ وَجَلَسَ. متفق عليهوفِي رِوَايَةٍ قَالَ جَابِرٌ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِذَاتِ الرِّقَاعِ فَإِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظليلَةٍ تَرَكْنَاهَا
لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَسَيْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعَلِّقٌ بِالشَّجَرَةِ فَاخْتَرَطَهُ فَقَالَ تَخَافُنِي؟ قَالَ لَا قَالَ فَمَنْ يُمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ اللَّهُ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي بَكْرِ الْإِسْمَاعِيلِي
فِي صَحِيحِهِ قَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي؟ قَالَ اللَّهُ قَالَ فَسَقَطَ السَّيْفُ مِنْ يَدِهِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّيْفَ فَقَالَ مَنْ يُمْنَعُكَ مِنِّي فَقَالَ كُنْ خَيْرَ أَخِرٍ فَقَالَ تَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَآتِي رَسُولُ اللهِ ؟ قَالَ لا
وَلَكِنِّي أَعَاهِدُكَ أَنْ لا أَقَاتِلَكَ وَلَا أَكُونَ مَعَ قَوْمٍ يُقَاتِلُونَكَ فَخَلَى سَبِيلَهُ فَأَتَى أَصْحَابَهُ فَقَالَ جِئْتُكُمْ مِنْ عِنْدِ خَيْرِ النَّاسِ . قَولُهُ قَفَلَ أَى رَجَعَ وَالْعِضَاهُ الشَّجَرُ الَّذِي لَهُ شَوْكَ وَالسَّمَرَةُ بِفَتْحِ السِّينِ وَضَمَ الْمِيمِ الشَّجَرَةُ مِنَ
الطَّلْحِ وَهِيَ الْعِظَامُ مِنْ شَجَرِ الْعِضَاءِ وَاخْتَرَطَ السَّيْفَ أَي سَلَهُ وَهُوَ فِي يَدِهِ صَلْنَا أَيْ مَسْلُولاً وَهُوَ بِفَتْحِ الصَّادِ وَضَمِّهَا .
৭৮। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নাজদ এলাকায় জিহাদ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফিরে এলেন তখন তিনিও তাঁর সাথে ফিরে এলেন। দুপুরে তাঁরা সকলেই এমন এক ময়দানে এসে হাযির হলেন যেখানে অনেক কাঁটাওয়ালা গাছপালা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নামলেন এবং অন্যান্য লোক গাছের ছায়ার সন্ধানে ছড়িয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলা গাছের ছায়ায় গেলেন এবং তাঁর তলোয়ারখানি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখলেন। আমরা সকলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ডাকতে লাগলেন। তাঁর নিকট এক বেদুইন। তিনি বলেন: এই লোকটি আমার ঘুমন্ত অবস্থায় আমার উপর আমার তলোয়ারের আঘাত হানতে উদ্যত হয়। আমি জেগে দেখি তার হাতে উলংগ তলোয়ার। সে আমাকে বলল, কে তোমাকে এখন আমার হাত থেকে বাঁচাবে? আমি তিনবার বললাম, আল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে লোকটিকে কোন শাস্তি দিলেন না এবং বসে পড়লেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
জাবির (রা) থেকে বর্ণিত অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: আমরা ‘যাতুর রিকা’ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি ছায়াদানকারী গাছের কাছে পৌছে এ গাছটিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরামের জন্য ছেড়ে দিলাম। মুশরিকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি এলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তলোয়ারটি গাছের সাথে ঝুলানো ছিল। সে তলোয়ারটি খুলে নিয়ে বললো, আপনি আমাকে ভয় করেন? তিনি জবাব দিলেন, না। সে আবার বলল, তাহলে আমার হাত থেকে আপনাকে কে রক্ষা করবে? তিনি জবাব দিলেন, “আল্লাহ”।
আর আবু বাক্স ইসমাঈলী তার সহীহ গ্রন্থে যে রিওয়ায়াতটি উল্লেখ করেছেন তাতে আছে, মুশরিক বলল, কে আপনাকে আমার হাত থেকে বাঁচাবে? তিনি জবাবে বলেন, “আল্লাহ”। এতে তার হাত থেকে তলোয়ার পড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তলোয়ারটি তুলে নিয়ে তাকে বলেনঃ কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে? সে জবাব দিল, আপনি সর্বোত্তম গ্রেপ্তারকারী হয়ে যান। তিনি বলেন: তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? সে জবাব দিল, না। তবে আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমি আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করব না এবং যারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরও সহযোগিতা করবো না। (এ কথায়) তিনি তার পথ ছেড়ে দিলেন। এরপর মুশরিকটি তার সাথীদের কাছে এসে তাদেরকে বলল, আমি সর্বোত্তম মানুষটির সাথে সাক্ষাত করে তোমাদের কাছে এসেছি।
۷۹- عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكَّلِه لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُو خمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا . رَوَاهُ التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .
مَعْنَاهُ تَذْهَبُ أَوَّلَ النَّهَارِ خِمَاصًا أَى ضَامِرَةَ البُطُونِ مِنَ الْجُوعِ وَتَرْجِعُ آخِرَ النَّهَارِ بطانًا أَي مُمْتَلَثَةَ الْبُطُون .
৭৯। উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: যদি তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করার মত ভরসা করতে, তবে তিনি পাখিকে রিযক দেওয়ার মতই তোমাদেরকেও দিতেন। পাখি তো সকালে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান আখ্যা দিয়েছেন।
عَنْ أَبِي عِمَارَةَ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا فُلانُ إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَقُلْ اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَوَجْهُتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِى إِلَيْكَ وَالْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ
رَغْبَةً ورَهْبَةً إِلَيْكَ لا مَلْجَاءَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلا إِلَيْكَ أَمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ فَإِنَّكَ إِنْ مِنْ مِنْ لَيُلَتِكَ مِنْ عَلَى الْفِطْرَةِ وَإِنْ أَصْبَحْتَ أصبت خيرا – متفق عليه وفي رواية في الصَّحِيحَيْنِ عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ
قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا آتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّا وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ اضطجع عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ وَقُلْ وَذَكَرَ نَحْوَهُ ثُمَّ قَالَ وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَقُولُ .
৮০। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে অমুক! যখন তুমি তোমার বিছানায় শয়ন করতে যাও তখন বল, “হে আল্লাহ! আমি নিজেকে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম, আমি আমার চেহারাকে তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার ব্যাপারটা তোমার নিকট সোপর্দ করলাম এবং আমার পিঠখানা তোমার দিকে লাগিয়ে দিলাম। আর এসব কিছুই করেছি তোমার ভয়ে এবং তোমার পুরস্কারের আশায়। তুমি ছাড়া কোথাও আশ্রয়ের জায়গা নেই, তুমি ছাড়া বাঁচবার কোন স্থান নেই। আমি তোমার কিতাবের উপর ঈমান এনেছি, যা তুমি নাযিল করেছ, তোমার প্রেরিত নবীর প্রতিও ঈমান এনেছি।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যদি তুমি ঐ রাতেই মারা যাও তাহলে ইসলামের অবস্থায় তোমার মৃত্যু হবে, আর যদি সকাল পর্যন্ত জীবিত থাক তাহলে কল্যাণ লাভ করবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: বারাআ (রা) বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যখন তুমি ঘুমাতে যাও তখন উযু কর যেমন নামাযের জন্য উযু করে থাক, তারপর ডান কাতে শুয়ে পড়ো এবং এই দু’আটি পড়। এই বলে তিনি উপরের দু’আটি পড়েন। তিনি বলেন, এই দু’আটি একেবারে সবশেষে পড়বে।
اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ عَامِرِ بْنِ اللهُ عَنْهُ عَبد الله ۱- عَنْ أَبِي بَكْرِ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ . عُمَرَ بْنِ كَعْبِ ابْنِ سَعْدِ بْنِ تَيْمِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُغَيِّ بْنِ غَالِبِ الْقُرَيْشِي التَّيْمِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَهُوَ وَآبُوهُ وَأُمُّهُ صَحَابَةٌ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُمْ قَالَ نَظَرْتُ إِلَى اقدام الْمُشْرِكِينَ وَنَحْنُ فِي الْغَارِ وَهُمْ عَلَى رُؤُوسِنَا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيْهِ لَأَبْصَرْنَا فَقَالَ مَا ظَنُّكَ يَا أَبَا بَكْرِ بِاثْنَيْنِ اللَّهُ ثالثهما – متفق عليه .
৮১। আবু বাক্স আস্ সিদ্দীক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে (সাওর পাহাড়ের) গুহায় থাকাকালীন মুশরিকদের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। তারা তখন আমাদের মাথার উপরে ছিল (এটা হিজরাতের ঘটনা)। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। যদি এখন তাদের কেউ তার দুই পায়ের নীচ দিয়ে তাকায়, তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবু বাক্স। এমন দু’জন ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের সাথে তৃতীয়জন হচ্ছেন আল্লাহ? (বুখারী, মুসলিম)
۲- عَنْ أَمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ وَاسْمُهَا هِندُ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ حُذَيْفَةَ الْمَخْزُومِيَّةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ قَالَ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أَضَلَّ أَوْ
أَزِلَ أَوْ أَزَلَ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أَظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَى – (حَدِيث صَحِيح)رواه أبو داودَ وَالتَّرْمِذِى وَغَيْرُهُمَا بِأَسَانِيدَ صَحِيحَةٍ قَالَ التَّرْمِذِى حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَهَذَا لَفْظُ أَبِي دَاوُدَ .
৮২। উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর বাড়ী থেকে বের হতেন তখন বলতেন: “আল্লাহর নামে বের হচ্ছি এবং তাঁর উপর ভরসা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেন আমি গোমরাহ্ না হই অথবা আমাকে গোমরাহ্ না করা হয়। আমি যেন দীন থেকে সরে না যাই অথবা আমাকে সরিয়ে না দেয়া হয়। আমি যেন কারও উপর যুগ্ম না করি অথবা আমার উপর যুগ্ম না করা হয়। আমি যেন মূর্খতা অবলম্বন না করি অথবা আমি মূর্খতার শিকার না হয়ে যাই”।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এবং অন্য ইমামগণ সহীহ সনদ সহকারে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী একে হাসান ও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। তবে হাদীসের শব্দাবলী এখানে আবু দাউদ থেকে গৃহীত হয়েছে।
– عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَالَ يَعْنِي إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ يُقَالُ لَهُ هُدِيَّتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيْتَ وَتَنَحَى عَنْهُ الشَّيْطَانُ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
والترمذي وَالنِّسَائِيُّ وَغَيْرُهُمْ وَقَالَ التِرْمِذِى حَدِيْثٌ حَسَنٌ زَادَ أَبُو دَاوُدَ فَيَقُولُ يَعْنِي الشَّيْطَانَ لِشَيْطَانِ أَخَرَ كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِى وَكُفِي وَوُقِي؟
৮৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় বলেঃ “আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছ থেকে কোন কৌশল এবং কোন শক্তি পাওয়া যায় না।” (এরূপ দু’আ করলে) তাকে বলা হয়, তোমাকে হিদায়াত দেয়া হয়েছে, তোমাকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছে এবং তোমাকে হিফাযতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায়।
আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে এবং তিরমিযী একে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন। তবে আবু দাউদে আরো আছে: শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, তুমি এর উপর কেমন করে নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে যাকে হিদায়াত দান করা হয়েছে, যথেষ্ট দেয়া হয়েছে ও হিফাযত করা হয়েছে।
٨٤- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ أَخَوَانِ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ أَحْدُهُمَا يَأْتِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخَرُ يَحْتَرِفُ فَشَكَا الْمُحْتَرِفُ أَخَاهُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَعَلَّكَ تُرْزَقُ
بِهِ – رَوَاهُ التَّرْمِذِي بِاسْنَادِ صَحِيحِ عَلَى شَرْطِ مُسْلِمٍ يَحْتَرِفُ يَكْتَسِبُ وَيَتَسَبِّبُ .
৮৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে দুই ভাই ছিল। তাদের একজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসত, অপরজন নিজ পেশায় ব্যস্ত থাকত। (একদা) কর্মব্যস্ত ভাই তার ভাই-এর বিরুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে অভিযোগ করল। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: খুব সম্ভব তোমাকে তার উসীলায় রিস্ক দেয়া হয়। (তিরমিযী)
অনুচ্ছেদ : ৮ – ইস্তিকামাত বা অবিচল নিষ্ঠা
ইস্তিকামাত বা অবিচল নিষ্ঠা [ ইসতিকামাত শব্দটির অর্থ প্রধানত দৃঢ়তা ও সরলতা। মুমিনকে আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে আপোষহীনভাবে সব বাধাবিপত্তির মুকাবিলা করে অগ্রসর হওয়ার জন্য বিশ্বাস, চিন্তা, কাজ ও চরিত্রে অটল, অনড় ও দৃঢ় থাকতে হয় এবং আঁকাবাঁকা চিন্তা ও পথ ত্যাগ করে সর্বদা সরলভাবে এ পথে চলতে হয়। ইসলামের পরিভাষায় এরূপ দৃঢ়তা ও সরলতার নাম ইসতিকামাত। (অনুবাদক) ]
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “তোমাকে যেমন হুকুম করা হয়েছে তেমনই (দীনের পথে) অবিচল থাক।” (সূরা হুদ: ১১২)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَنْ لا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُم فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا
مَا تَدْعُونَ نُزُلاً مِنْ غَفُورٍ رَّحِيم .
(২) “যারা (আন্তরিকভাবে) বলে, আল্লাহ আমাদের রব এবং তারা এ কথার উপর অটল থাকে, তাদের নিকট ফেরেস্তা নাযিল হয়ে বলতে থাকে, ভয় করো না, দুশ্চিন্তাও করো না, আর সেই জান্নাতের সুখবর গ্রহণ কর, যার ওয়াদা তোমাদের নিকট করা হয়েছে। আমরা এই দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু, আর আখিরাতেও। সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের মন যা আকাঙ্ক্ষা করবে এবং যা কিছু চাইবে তা সবই পাবে। এসব সেই আল্লাহর তরফ থেকে মেহমানদারি হিসেবে পাবে যিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।” (সূরা হা-মীমুস-সাজদাহ্ : ৩০, ৩১, ৩২)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ .
(৩) “যারা (আন্তরিকভাবে) বলে, আল্লাহ আমাদের রব এবং তারা এ কথার উপর অটল থাকে, তাদের কোন ভয়ও নেই, তারা দুশ্চিন্তাও করবে না। তারা দুনিয়ায় যে কাজ করেছিল তার প্রতিদানস্বরূপ জান্নাতবাসী হয়ে চিরকাল সেখানে থাকবে।” (সূরা আল আহকাফ: ১৩, ১৪)
٨٥ عَنْ أَبِي عَمْرُو وَقَبْلَ أَبِي عَمْرَةَ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ قُلْ لِي فِي الْإِسْلامِ قَوْلاً لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا غَيْرَكَ قَالَ قُلْ أمَنْتُ بِاللهِ ثُمَّ اسْتَقِمْ – رواه مسلم .
৮৫। সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে ইসলামের ব্যাপারে এমন কথা বলে দিন যাতে আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আর সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে না হয়। তিনি বলেন: বল, “আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি”, তারপর এর উপর অবিচল থাক। (মুসলিম)
٨٦- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَارِبُوا وَسَدِّدُوا وَاعْلَمُوا أَنَّهُ لَنْ يُنْجُوَ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِعَمَلِهِ قَالُوا وَلَا أَنْتَ يَا رَسُولَ الله؟ قَالَ وَلَا أَنَا إِلا أَن يَتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْل – رواه
مسلم . وَالْمُقَارَبَةُ الْقَصْدُ الذى لا غُلُو فِيهِ وَلَا تَقْصِيرَ وَالسَّدَادُ الْاسْتَقَامَةُ وَالْأَصَابَةُ وَيَتَعَمَّدُنِي يُلْبِسُنِي وَيَسْتُرُنِي. قَالَ الْعُلَمَاءُ مَعْنَى الْإِسْتِقَامَةِ لُزُوْمُ طَاعَةِ اللَّهِ تَعَالَى قَالُوا وَهِيَ مِنْ جَوَامِعِ الكَلِم وَهِيَ نِظَامُ الْأُمُورِ وَبِاللَّهِ
التَّوْفِيقِ.
৮৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (দীনের ব্যাপারে) ভারসাম্য বজায় রাখ এবং এর উপর মজবুতভাবে স্থির থাক। আর জেনে রাখ! তোমাদের কেউ তার আমলের সাহায্যে মুক্তি পাবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিও কি? তিনি বলেন: আমিও পাব না, তবে যদি আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহের মধ্যে নিয়ে নেন। (মুসলিম)
অনুচ্ছেদ : ৯ – আল্লাহর মহান সৃষ্টি, পার্থিব জীবনের অস্থায়িত্ব ও আখিরাতের অবস্থাদি এবং এতদুভয়ের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা, নফসের ত্রুটির প্রতিকার এবং দীনের উপর অবিচল থাকার প্রতি আকৃষ্ট করার পন্থা
আল্লাহর মহান সৃষ্টি, পার্থিব জীবনের অস্থায়িত্ব ও আখিরাতের অবস্থাদি এবং এতদুভয়ের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা, নফসের ত্রুটির প্রতিকার এবং দীনের উপর অবিচল থাকার প্রতি আকৃষ্ট করার পন্থা [ আল্লাহ হলেন একমাত্র স্রষ্টা এবং অবশিষ্ট সবই তাঁর সৃষ্টি। সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণার দ্বারা স্রষ্টার পরিচয় লাভের সাথে সাথে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও অসীম ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়। মানুষ এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। একদিকে সে তাঁর বান্দা এবং অপরদিকে তাঁর প্রতিনিধি। স্রষ্টার সাথে মানুষের এই উভয়বিধ সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক সঠিকভাবে অনুধাবন করা ও বজায় রাখার মাধ্যমেই মানুষ তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে দুনিয়া ও আখিরাতে সত্যিকার কল্যাণ ও উন্নতি এবং মুক্তি ও শাস্তি লাভ করতে পারে। কাজেই মানুষের স্বকীয় সত্তাসহ যাবতীয় সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করা অপরিহার্য। (অনুবাদক)]
قَالَ اللهُ تَعَالَى : قُلْ إِنَّمَا أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ أَنْ تَقُومُوا لِلَّهِ مَثْنَى وَفُرَادَى ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “বলে দাওঃ আমি তোমাদের শুধু একটা নসীহত করছি। (তা এই যে) আল্লায় জন্য তোমরা এককভাবে ও দুই দুইজন গভীরভাবে চিন্তা করতে প্রস্তুত হয়ে যাও।” (সূরা সাষাঃ ৪৬)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلافِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لأولى الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِم وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خلق السمواتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
(২) “আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে বুদ্ধিমান লোফদের জন্য অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান-যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (অতঃপর বলে) হে আমাদের প্রভু। তুমি এসব বৃথা সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। অতএব তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে বাঁচাও।” (সূরা আলে ইমরান: ১৯০, ১৯১)
وَقَالَ تَعَالَى : أَفَلا يَنْظُرُونَ إِلى الابلِ كَيْفَ خُلِقَتْ وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ وإلى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ فَذَكِّرُ إِنَّمَا أَنْتَ مُذَكِّر .
(৩) “তারা কি উটগুলো দেখে না যে, সেগুলো কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। আসমানকে দেখে না কিভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে। পাহাড়গুলোকে দেখে না কিভাবে সেগুলোকে মজবুতভাবে দাঁড় করানো হয়েছে? আর যমীনকে দেখে না কিভাবে তা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে? অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক। কেননা তুমি তো একজন উপদেশ দানকারী মাত্র।” (সূরা আল গাশিয়াহঃ ১৭-২১)
وَقَالَ تَعَالَى : أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا ….. الآيَةَ .
“তারা কি পৃথিবীর বুকে পরিভ্রমণ করে না আর দেখে না (পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে?)” (সূরা ইউসুফ: ১০৯)
এই অধ্যায়ে আরো অসংখ্য আয়াত রয়েছে।
وَمِنَ الْأَحَادِيثِ الْحَدِيثُ السَّابِقُ الْكَيْسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ .
আর ইতিপূর্বে উল্লেখিত ৬৬ নম্বর হাদীসটি “বুদ্ধিমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে আত্মপর্যালোচনা করে…” এই অধ্যায়ের উপযোগী।
অনুচ্ছেদ: ১০ – উত্তম কাজে অগ্রগামী হওয়া এবং অগ্রগামী ব্যক্তিকে উৎসাহ দেয়া, যাতে সে তাড়াহুড়া ত্যাগ করে চেষ্টা-তদবীর করা
উত্তম কাজে অগ্রগামী হওয়া এবং অগ্রগামী ব্যক্তিকে উৎসাহ দেয়া, যাতে সে তাড়াহুড়া ত্যাগ করে চেষ্টা-তদবীর করে [ মূল আরবী ভাষায় “মুবাদারা” শব্দ রয়েছে। এর অর্থ প্রতিযোগিতা ও তাৎক্ষণিক কর্মতৎপরতা। অর্থাৎ গড়িমসি না করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অবিলম্বে কাজ করা। আল্ল্সে, কুঁড়ে ও কাজে ঢিলা না হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মতৎপর থাকাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। নিছক পার্থিব উন্নতি লাভের জন্য ব্যস্ত ও অস্থির না হয়ে দীনী কাজে এবং দীনের জন্য ত্যাগ ও কুরবানীর ক্ষেত্রে পরস্পর প্রতিযোগিতা করার জন্য আল কুরআন ও হাদীসে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তাই ইকামাতে দীনের সংগ্রামে ও যাবতীয় দীনী কাজে প্রতিযোগিতা ও তাৎক্ষণিক তৎপরতা অপরিহার্য। (অনুবাদক) ] ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “তোমরা উত্তম কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অগ্রসর হও।” (সূরা আল বাকারাঃ ১৪৮)
وَقَالَ تَعَالَى : وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أعدت للمتقين .
(২) “তোমরা ধাবিত হও তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে এবং আসমান ও যমীনের সমান প্রশন্ত জান্নাতের দিকে, যা আল্লাহভীরু লোকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)
۸۷ ۷- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فَسَتَكُونُ فِتَنَا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا ويُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بَعَرَضَ مِنَ
الدُّنْيَا – رواه مسلم.
৮৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা ক্ষণকাল বিলম্ব না করে সৎ কাজের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যাও। কারণ শীঘ্রই অন্ধকার রাতের অংশের মত বিপদ-বিশৃংখলার বিস্তার ঘটবে। তখন মানুষ সকাল বেলা মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে, আবার সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফির হয়ে যাবে। সে তার দীনকে পার্থিব স্বার্থের বদলে বিক্রয় করবে। (মুসলিম)
۸۸- عَنْ أَبِي سِرْوَعَةَ بِكَسْرِ السِّينِ الْمُهْمَلَةِ وَفَتْحِهَا عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّيْتُ وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ الْعَصْرَ فَسَلَّمَ ثُمَّ قَامَ مُشْرِعًا فَتَخَطَى رِقَابَ النَّاسِ إِلَى بَعْضٍ حُجَرٍ نِسَائِهِ
فَفَزِعَ النَّاسُ مِنْ سُرْعَتِهِ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ فَرَأَى أَنَّهُمْ قَدْ عَجِبُوا مِنْ سُرْعَتِهِ قَالَ ذَكَرْتُ شَيْئًا مِنْ تَبْرُ عِنْدِنَا فَكَرِهْتُ أَنْ يُحْبِسَنِي فَأَمَرْتُ بِقِسْمَتِهِ – رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ كُنْتُ خَلَقْتُ فِي الْبَيْتِ تَبْرًا مِنَ الصَّدَقَةِ فَكَرِهْتُ
أَنْ أَبَيْتَهُ. التبر” قطعُ ذَهَبٍ أو فضة.
৮৮। উকবা ইবনুল হারিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে মদীনায় আসরের নামায আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে তড়িঘড়ি উঠে পড়লেন এবং লোকদের ডিঙ্গিয়ে তাঁর স্ত্রীদের কামরার দিকে গেলেন। লোকেরা তাঁর এই তড়িঘড়ি দেখে ঘাবড়ে গেল। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে দেখলেন যে, লোকেরা তাঁর তড়িঘড়ির কারণে হতবাক হয়ে গেছে। তিনি বলেন: এক টুকরা সোনা বা রূপার কথা মনে পড়েছিল, যা আমাদের নিকট ছিল। আমার নিকট তা জমা থাকা পছন্দ করছিলাম না। তাই তা বিতরণ করে দেয়ার হুকুম দিয়ে এলাম। (বুখারী)
বুখারীর অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: সাদাকার এক টুকরা সোনা ঘরে রয়ে গিয়েছিল। তার সাথে রাত কাটানো আমার কাছে অপছন্দনীয় ছিল।
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُل لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أحد أرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فَأَيْنَ أَنَا ؟ قَالَ فِي الْجَنَّةِ فَالْقَى تَمَرَاتٍ كُنْ فِي يَدِهِ ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتل متفق عليه .
৮৯। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উহুদ যুদ্ধের দিন জিজ্ঞেস করল, আমি যদি নিহত হই তবে আমি কোথায় থাকব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “জান্নাতে”। তখন সে তার হাতের খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে লড়াই করল, অবশেষে শহীদ হয়ে গেল। (বুখারী, মুসলিম)
– عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ الصَّدَقَةِ أَعْظَمُ أَجْرًا ؟ قَالَ أَن تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَعِيحٌ تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَى وَلَا تُمْهِلُ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ
الْخَلْقُوْمَ قُلْتَ لِفُلَانِ كَذَا وَلِفُلان كَذَا وَقَدْ كَانَ لِفُلان متفق عليه. الْخَلقُومُ مَجْرَى النَّفَسِ وَالْمَرِئُ مَجْرَى الطَّعَامِ والشراب .
৯০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন্ সাদাকায় (দানে) সবচেয়ে বেশি সাওয়াব? তিনি বলেন: তুমি এমন অবস্থায় দান করবে যে, তুমি সুস্থ আছ, মালের প্রতি লোভী আছ, অভাব-অনটনকে ভয় করছ এবং সম্পদের আশাও করছ। তুমি দান করার ব্যাপারে এমনভাবে কার্পণ্য করো না যে, শেষে মৃত্যুর মুহূর্ত এসে যায় এবং তখন তুমি বলবে যে, এ পরিমাণ অমুকের এবং সে পরিমাণ অমুকের। অথচ অমুকের জন্য সে মাল নির্ধারিত হয়েই গেছে অর্থাৎ মৃত্যুলগ্ন আসার আগেই দান কর। কারণ মৃত্যুর পর এমনিতেই এ সম্পদ অন্যদের হয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম)
۹۱- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ سَبْعًا يَوْمَ أَحُدٍ فَقَالَ مَنْ يَأْخُذُ مِنَى هَذَا ؟ فَبَسَطُوا أَيْدِيَهُمْ كُلُّ إِنْسَانِ مِنْهُمْ يَقُولُ أَنَا أنَا قَالَ فَمَنْ يَأْخُذُهُ بِحَقِّهِ؟ فَاحْجَمَ الْقَوْمُ فَقَالَ أَبُو دُجَانَةَ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ أَنَا أَخُذُهُ بِحَقِّهِ فَأَخَذَهُ فَفَلَقَ بِهِ هَامَ الْمُشْرِكِينَ – رواه مسلم. اسْمُ أَبِي دُجَانَةَ سِمَاكُ بْنُ خَرَشَةَ قَولُهُ احْجَمَ الْقَوْمُ أَي تَوَقَّفُوا وَفَلَقَ بِه أَي شَقِّ هَامَ الْمُشْرِكِينَ أَي رُءُوسَهُمْ.
৯১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধের দিন একখানা তলোয়ার নিয়ে বলেন: কে আমার কাছ থেকে এটা নেবে? লোকদের প্রত্যেকেই হাত বাড়িয়ে বলতে লাগল, আমি, আমি। তিনি বলেন: কে এটার হক আদায় করার জন্য নেবে? এ কথায় সব লোক থেমে গেল। তখন আবু দুজানা (রা) বলেন, আমি এর হক আদায় করার জন্য তা নেব। তিনি সেটা নিয়ে মুশরিকদের শিরশ্ছেদ করলেন। (মুসলিম)
٩٢- عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِي قَالَ آتَيْنَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ مَا تَلْقَى مِنَ الْحَجاجِ فَقَالَ اصْبِرُوا فَإِنَّهُ لا يَأْتِي زَمَانٌ إِلَّا وَالَّذِي بَعْدَهُ شَرٌّ مِنْهُ حَتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رواه
البخاري .
৯২। যুবাইর ইবনে আদী (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রা)-র নিকট এসে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের তরফ থেকে আমরা যে নির্যাতিত হচ্ছিলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বলেন, সবর কর, কারণ যে যুগই আসুক, তার পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে অধিকতর খারাপ। এ অবস্থা তুমি তোমার রবের সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত চলতে থাকবে। আমি এ কথা তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে শুনেছি। (বুখারী)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سَبْعًا هَلْ تَنْتَظِرُونَ إِلا فَقْراً مُنْسَبًا أَوْ عَنِّي مُطْغَيًا أَوْ مَرَضًا مُفْسِدُ أَوْ هَرَمًا مُفْئِداً أَوْ مَوْتًا مُجهزاً أو الدجالَ فَشَرُّ غَائِبِ يُنْتَظِرُ أَوِ
السَّاعَةَ فَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَآمَرُ – رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .
৯৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা সাতটি জিনিসের পূর্বেই অবিলম্বে সব কাজ করে ফেল। তোমরা কি অপেক্ষায় থাকবে যে, এমন দারিদ্র্য আসুক যা ইসলামের নির্দেশ পালন থেকে ভুলিয়ে রাখে? অথবা এমন ঐশ্বর্য আসুক যা ইসলাম বিরোধিতার দিকে ঠেলে দেয়? অথবা এমন রোগ হোক যা শরীরকে খারাপ করে দেয়? অথবা এমন বার্ধক্য আসুক যা বুদ্ধিকে নষ্ট করে দেয়? অথবা হঠাৎ মৃত্যু এসে পড়ুক অথবা অদৃশ্য দুষ্ট দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করুক অথবা কিয়ামাত এসে যাক? আর কিয়ামাত তো খুবই ভীষণ ও তিক্ত।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন এবং তিনি একে হাসান হাদীস বলেছেন।
٩٤ – وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ خَيْبَرَ لَأُعْطِيَنٌ هَذِهِ الراية رَجُلًا يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ يَفْتَحُ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَا أحْبَبْتُ الإِمَارَةَ الأ يَوْمَئِذٍ فَتَسَاوَرْتُ لَهَا رَجَاءَ أَنْ أَدْعَى لَهَا فَدَعَا
رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِب رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهَا وَقَالَ امش ولا تَلْتَفِتُ حَتَّى يَفْتَحَ اللهُ عَلَيْكَ فَسَارَ عَلِيٌّ شَيْئًا ثُمَّ وَقَفَ وَلَمْ يَلْتَفِتْ فَصَرَخَ يَا رَسُولَ اللَّهِ عَلَى مَاذَا أَقَاتِلُ النَّاسَ قَالَ قَاتِلُهُمْ
حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ فَقَدْ مَنَعُوا مِنْكَ دِمَاءَهُمْ وأموالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّهَا وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ – رواه مسلم. قَوْلُهُ فَتَسَاوَرْتُ هُوَ بالسِّينِ الْمُهَمَلَةِ أَيْ وَتَبْتُ مُتَطَلَعًا
৯৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের যুদ্ধের দিন বলেন: আমি এই ঝাণ্ডা এমন একজনকে দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে। তার হাতে আল্লাহ বিজয় দেবেন। উমার (রা) বলেন, আমি নেতৃত্ব লাভ পছন্দ করতাম না, কিন্তু সেই দিন তা পেতে আগ্রহী হলাম। তাই আমার সেজন্য আকাঙ্ক্ষা হল যে, আমাকে ডাকা হোক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীকে (রা) ডেকে তাকেই সে ঝাণ্ডা দিলেন এবং বললেনঃ চলে যাও, কোনদিকে তাকাবে না যতক্ষণ না তোমাকে আল্লাহ বিজয় দেন। আলী (রা) একটু অগ্রসর হয়েই দাঁড়ালেন, কিন্তু কোন দিকে তাকালেন না এবং চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিসের ভিত্তিতে (এবং কতক্ষণ পর্যন্ত) লোকদের সাথে লড়াই করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তারা এই কথা সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত লড়াই করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তারা এ সাক্ষ্য দিলে তোমার থেকে তারা তাদের জান-মাল রক্ষা করতে পারবে। তবে ইসলামের হক তাদের আদায় করতে হবে। আর তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর দায়িত্বে।
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করছেন।
অনুচ্ছেদ: ১১ – মুজাহাদা (সাধনা)
মুজাহাদা (সাধনা) [ মুজাহাদা শব্দের অর্থ সর্বশক্তি নিয়োগ করে চরম মেহনত ও চেষ্টা করা। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন এবং এটাকে বাস্তবে কায়েম ও বিজয়ী করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে দাওয়াত, সংগঠন, প্রশিক্ষণ এবং নিজের, সমাজের ও রাষ্ট্রের সংশোধনের মাধ্যমে আপোষহীন প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও সাধনা করার নাম হচ্ছে মুজাহাদা। আর এই মুজাহাদার মাধ্যমেই মানবজীবনের চরম লক্ষ্য আল্লাহর সন্তোষ ও নৈকট্য লাভ সম্ভবপর। (অনুবাদক) ] ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ).
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “যারা আমার জন্য চেষ্টা-সাধনা করে, তাদেরকে আমি আমার পথ দেখাব। আর আল্লাহ নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল লোকদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা আল আনকাবৃত: ৬৯)
وقَالَ تَعَالَى : وَاعْبُدْ رَبِّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ .
(২) “তুমি তোমার রবের ইবাদাত কর সেই (মৃত্যুর) মুহূর্ত পর্যন্ত যা তোমার নিকট সুনিশ্চিতভাবে আসবে।” (সূরা আল হিজর: ৯৯)
وَقَالَ تَعَالَى : واذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلاً.
(৩) “তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ করতে থাক এবং সবার সম্পর্ক ছিন্ন করে একমাত্র তাঁরই দিকে মনোনিবেশ কর।” (সূরা আল মুয্যাম্মিল: ৮)
وَقَالَ تَعَالَى : فَمَنْ يُعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ .
(৪) “অতএব কোনো ব্যক্তি বিন্দু পরিমাণ ভালো কাজ করলেও তা সে দেখতে পাবে।” (সূরা আয যিলযাল: ৭)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وأعظم أجرا .
(৫) “তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু ভাল আমল অগ্রিম পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম ও বিরাট বিনিময়রূপে পাবে।” (সূরা আল মুয্যাম্মিল: ২০)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ .
(৬) “তোমরা যা কিছু দান কর তা আল্লাহ খুব ভালো করে জানেন।” (সূরা আল বাকারাঃ ২৭৩)
٩٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ أَذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرِّبَ إِلَى عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ
إِلَى بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبُّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِسُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي أَعْطَيْتُهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأَعِيدَنَّهُ. رواه البخاري – أذَنْتُهُ اعْلَمْتُهُ بِأَنِّي
مُحَارِبٌ لَهُ اسْتَعَاذَنِي رُوِيَ بِالنُّوْنِ وَبِالْبَاءِ.
৯৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুকে [ আল্লাহ্র বন্ধু হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনুগত হয় এবং পরিপূর্ণ তাওয়ার জীবন যাপন করে, আল্লাহর হুকুম বিরোধী কোন কাজ করে না, তাঁর হুকুমের বিপরীত কাজে বাধা দেয় এবং তাঁর হুকুমকেই জীবনের একমাত্র নিয়ামক মনে করে। (সম্পাদক) ] কষ্ট দেয়, আমি তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিই। আমার বান্দা আমার আরোপিত ফরয কাজের মাধ্যমে যা আমার নিকট প্রিয় এবং নফল কাজের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এভাবে (এক স্তরে) আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। (অর্থাৎ ফরয ও নফল কাজের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর এতটা নৈকট্য লাভ করে এবং তাকে এত বেশি ভালবাসে যে, তিনি ঐ বান্দাহর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তাঁর খুশী ও রেজামন্দির পথে পরিচালিত করেন। ফলে আল্লাহর নারাজি বা অসন্তুষ্টিমূলক কোন কাজ তার দ্বারা সংঘটিত হয় না।) যদি সে আমার নিকট কিছু চায়, আমি তাকে দিই এবং যদি আমার নিকট আশ্রয় চায় তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দিই। (বুখারী)
٩٦- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْمَا يَرْوِثِهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلٌ قَالَ إِذَا تَقَرَّبَ الْعَبْدُ إِلَى شِبْرًا تَقَرِّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِذَا تَقَرَّبَ إِلَى ذراعا تقربْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِذَا أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرُولَةً – رواه
البخاري .
৯৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ বলেন: বান্দা আধ হাত আমার দিকে এগিয়ে এলে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়িয়ে যাই – (বুখারী) [ এ হাদীসের অর্থ এই যে, বান্দা যত বেশি আল্লাহর পছন্দনীয় কাজ করে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি ও মহব্বত লাভের চেষ্টা করে তার চেয়ে অনেক বেশি আল্লাহ তাকে ভালোবাসার স্তরে নিয়ে এসে তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিজের খুশি ও মর্জি অনুযায়ী পরিচালিত করেন। (অনুবাদক) ] ।
۹۷- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصحة والفراغ – رواه البخاري .
৯৭। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দু’টি নি’আমাত (আল্লাহর দান) যার ব্যাপারে বহু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়। (বুখারী) (অর্থাৎ মানব জীবনে স্বাস্থ্য ও অবসর সময় আল্লাহ তা’আলার বিরাট নি’আমত। কিন্তু অধিকাংশ লোক প্রবৃত্তির তাড়নায় আমোদ প্রমোদে লিপ্ত হয়ে সময় মত এ নি’আমতকে কাজে লাগায় না। ফলে পরবর্তীতে তাদের আফসোসের সীমা থাকে না। কারণ স্বাস্থ্য সব সময় একরকম থাকে না। যে কোন সময় রোগাক্রান্ত হতে পারে। অনুরূপভাবে অবসরের পর ব্যস্ততা আসতে পারে। তখন মানুষ ইবাদাত-বন্দেগী করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।)
ى اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُومُ مِنَ ۹۸- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيا اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ فَقُلْتُ لَهُ لِمَ تَصْنَعُ هُذَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ أَفَلَا أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا
شَكُورًا ؟ متفق عليه هذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ وَنَحْوَهُ فِي الصَّحِيحَيْنِ مِنْ رِوَايَةِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ .
৯৮। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত বেশি ইবাদাত করতেন যে, তাতে এমনকি তাঁর পা দু’খানা ফুলে ফেটে যেত। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এরূপ করছেন কেন, আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত গুনাহ তো আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বলেনঃ আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করব না? (বুখারী, মুসলিম)
হাদীসের মূল শব্দগুলো বুখারীর, বুখারী ও মুসলিমে মুগীরা ইবনে শোবা (রা)-র সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
٩٩- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ أَحْيَا اللَّيْلَ وَايْقَظَ أَهْلَهُ وَجَدٌ وَشَدَّ الْمِنْزَرَ – متفق عليه . وَالْمُرَادُ الْعَشْرُ الْأَوَاخِرُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ وَالْمِنْزَرُ الْإِزارُ وَهُوَ كِنَايَةً
عَنْ اعْتِزَالِ النِّسَاءِ وَقِيلَ الْمُرَادُ تَشْمِيرُهُ لِلْعِبَادَةِ يُقَالُ شَدَاتٌ لِهَذَا الْأَمْرِ مِنْزَرِي أَيْ تَشَمَّرْتُ وَتَفَرَّعْتُ لَهُ .
৯৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের শেষ দশক এলে সারা রাত জেগে ইবাদাত করতেন এবং নিজের পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন। এ সময় তিনি কোমর বেঁধে ইবাদাতে লেগে যেতেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
١٠٠ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفَ وَفِي كُلِّ خَيْرٌ احْرِصُ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنُ بِاللهِ وَلَا تَعْجَرُ وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْ فَلَا
تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وكَذَا وَلكِنْ قُلْ قَدْرَ اللهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنْ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ – رواه مسلم.
১০০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মুমিনের চেয়ে বেশি ভালো ও বেশি প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। যা তোমার জন্য উপকারী তার প্রতি লোভ কর এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, দুর্বল হয়ো না। যদি তোমার কোন বিপদ আসে তবে এ কথা বলো না, যদি আমি এরূপ করতাম তাহলে ঐরূপ হতো। বরং এ কথা বল যে, আল্লাহ তাকদীরে এটাই রেখেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের দরজা খুলে দেয়। (মুসলিম)
١٠١ – وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حُجِبَتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُجِبَتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ – متفق عليه وفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمِ حُقَّتْ بَدَلَ حُجِبَتْ وَهُوَ بِمَعْنَاهُ أَي بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا هُذَا الْحِجَابُ فَإِذَا فَعَلَهُ دَخَلَهَا
১০১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জাহান্নামকে লোভনীয় জিনিস দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে এবং জান্নাতকে দুঃখ-কষ্টের আড়ালে রাখা হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম) [ এ হাদীসের অর্থ এই যে, লোভ-লালসা ও ভোগবিলাসে যে ব্যক্তি মগ্ন থাকে সে জাহান্নামে যাওয়ার যোগ্য হয়। আর যে ব্যক্তি বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করে দীনের উপর কায়েম থাকে সে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য হয়। (অনুবাদক) ] ।
۱۰۲ – عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَافْتَتَحَ الْبَقَرَةَ فَقُلْتُ يَرْكَعُ عِنْدَ الْمِائَةِ ثُمَّ مَضَى فَقُلْتُ يُصَلِّى بِهَا فِي رَكْعَةٍ فَمَضَى فَقُلْتُ يَرْكَعُ بِهَا ثُمَّ
افْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا يَقْرَأُ مُتَرَسِلاً إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسْبِيحَ سَبْحَ وَإِذَا مَرَّ بِسُؤالٍ سَأَلَ وَإِذَا مَرْ بِتَعَودَ تَعَوَّذَ ثُمَّ رَكَعَ فَجَعَلَ يَقُولُ سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ فَكَانَ رَكُوْعُهُ نَحُوا مِنْ قِيَامِهِ ثُمَّ قَالَ سَمِعَ اللَّهُ
لِمَنْ حَمِدَهُ رَبُّنَا لَكَ الْحَمْدُ ثُمَّ قَامَ قِيَامًا طويلاً قَرِيبًا مِمَّا رَكَعَ ثُمَّ سَجَدَ فَقَالَ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى فَكَانَ سُجُودُهُ قَرِيبًا مِنْ قِيَامِهِ – رواه مسلم .
১০২। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক রাতে নামায পড়েছি। তিনি সূরা আল বাকারা তিলাওয়াত শুরু করলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়ত এক শত আয়াত পড়ে রুকু করবেন। কিন্তু তিনি তারপরও পড়তে লাগলেন। ভাবলাম, তিনি হয়ত এ সূরা এক রাকাতেই পড়ে শেষ করবেন। তিনি একাধারে পড়তে থাকলেন। ভাবলাম, তিনি এরপরই রুকু করবেন। কিন্তু তিনি সূরা আন্ নিসা শুরু করে দিলেন। এটা পড়ে শেষ করে তিনি সূরা আলে ইমরান শুরু করলেন। তিনি ধীরে ধীরে তাবীলের সাথে পড়ছিলেন। যখন এমন কোন আয়াত পড়তেন যাতে আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে তিনি তাসবীহ পড়তেন। আর যেখানে কোন কিছু চাওয়ার আয়াত পড়তেন সেখানে তিনি আল্লাহর নিকট চাইতেন। আবার যেখানে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত পড়তেন সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তারপর তিনি রুকূতে গিয়ে বলেন, “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” (আমার মহান প্রভু পবিত্র)। তাঁর রুকূও কিয়ামের মত দীর্ঘ ছিল। তারপর তিনি “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, তিনি তার প্রশংসা শুনেন) বলেন। তারপর প্রায় রুকুর মত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর সিজদায় গিয়ে বলেন: “সুবহানা রব্বিয়াল আলা” (আমার রব পবিত্র যিনি সর্বোচ্চ)। তাঁর সিজদাও দাঁড়ানোর মত দীর্ঘ ছিল। (মুসলিম)
۱۰۳ – عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ حَتَّى هَمَمْتُ بِأَمْرِ سُوءٍ قَبْلَ وَمَا هَمَمْتَ بِهِ؟ قَالَ هَمَمْتُ أَنْ أَجْلِسَ وَآدَعَهُ – متفق عليه.
১০৩। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক রাতে নামায আদায় করেছি। তিনি নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন, এমনকি আমি একটা খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম। ইবনে মাসউদকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কিরূপ খারাপ কাজের ইচ্ছা করেছিলেন? তিনি বলেন, আমি তাঁকে নামাযে দাঁড়ানোরত রেখে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম। (বুখারী, মুসলিম)
١٠٤ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلَاثَةُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ يَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ ويبقى عمله – متفق عليه .
১০৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মৃত ব্যক্তিকে তিনটি জিনিস অনুসরণ করে তার পরিবার, তার মাল এবং তার আমল। তারপর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি থেকে যায়। ফিরে আসে তার পরিবার ও মাল, আর থেকে যায় তার আমল। (বুখারী, মুসলিম)
١٠٥ – عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الجنَّةُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكَ نَعْلِهِ وَالنَّارُ مِثْلُ ذَلِكَ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
১০৫। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাত তোমাদের প্রত্যেকের জন্য তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে, আর জাহান্নামও। (বুখারী)
١٠٦ – عَنْ أَبِي فِرَاسٍ رَبِيعَةَ بْنِ كَعْبِ الْأَسْلَمِي خَادِمٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمِنْ أَهْلِ الصَّفَةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنتُ أَبِيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاتِهِ بِوَضُوْنِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ سَلْنِي فَقُلْتُ
أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ فَقَالَ أَوَ غَيْرَ ذَلِكَ ؟ قُلْتُ هُوَ ذَاكَ قَالَ فَأَعِنِّى عَلَى نَفْسِكَ بكثرة السجود . رواه مسلم.
১০৬। আবু ফিরাস রবী’আ ইবনে কা’ব আসলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম এবং আসহাবে সুফফার সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রাত যাপন করতাম এবং তাঁকে উযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। (একদা) তিনি আমাকে বলেন: আমার নিকট (তোমার যা ইচ্ছা) চাও। আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। তিনি বলেন: এছাড়া আর কিছু? আমি বললাম, ওটাই চাই। তিনি বলেন: তাহলে তুমি তোমার নিজের জন্য বেশি বেশি সিজদা (অর্থাৎ নামায) দ্বারা
আমাকে সাহায্য কর। (মুসলিম)
١٠٧ – عَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ وَيُقَالُ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ عَلَيْكَ بكثَرَةِ السُّجُودِ فَإِنَّكَ لَنْ تَسْجُدَ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلَّا رَفَعَكَ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً
وَحَطَّ عَنْكَ بهَا خَطِيئَة – رواه مسلم .
১০৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত দাস সাওবান (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমার বেশি বেশি সিজদা (অর্থাৎ নামায) করা উচিত। কেননা তুমি আল্লাহর জন্য একটা সিজদা করলেই তা দ্বারা আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে একটা উচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দেন। (মুসলিম)
١٠٨ عَنْ أَبِي صَفْوَانَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُشِّرِ الْأَسْلَمِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ النَّاسِ مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلَهُ – رواه الترمذى وَقَالَ حَديثُ حَسَنٌ .
১০৮। আবু সাফওয়ান আবদুল্লাহ ইবনে বুস্থ আসলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই ব্যক্তি উত্তম যে দীর্ঘ জীবন লাভকরেছে এবং উত্তম কাজ করেছে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
۱۰۹ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ غَابَ عَمِّى أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ قِتَالِ بَدْرٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ غَيْتُ عَنْ أُولِ قِتَالٍ قَاتَلْتَ الْمُشْرِكِينَ لَئِنِ اللَّهُ اشْهَدَنِي قِتَالَ الْمُشْرِكِينَ لِيُرِيَنَّ اللهُ مَا أَصْنَعُ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ
أَحُدٍ انْكَشَفَ الْمُسْلِمُونَ فَقَالَ اللَّهُمَّ اعْتَذِرُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلَاءِ يَعْنِي أَصْحَابَهُ وَأَبْرَا إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هولاء يَعْنِي الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ تَقَدِّمَ فَاسْتَقْبَلَهُ سَعْدُ بْنُ مُعَادٍ فَقَالَ يَا سَعْدُ بْنُ مُعَادَ الْجَنَّةُ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ إِنِّي أَجِدُ رِيحَهَا مِنْ
دُونِ أَحُدٍ فَقَالَ سَعْدُ فَمَا اسْتَطَعْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا صَنَعَ قَالَ أَنَسُ فَوَجَدْنَا بِهِ بِضُعًا وَثَمَانِينَ ضَرْبَةً بالسيف أو طعْنَةً بِرُمْح أَوْ رَحْيَةٌ بِسَهُم وَوَجَدْنَاهُ قَدْ قُتِلَ وَمَثْلَ بِهِ الْمُشْرِكُونَ فَمَا عَرَقَهُ أَحَدٌ إِلَّا أَخْتُهُ بِبَنَانِهِ قَالَ أَنَسُ كُنَّا
نَرَى أَوْ نَظَنَّ أَنْ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ فِيهِ وَفِي أَشْبَاهِهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ) … إِلى أخرها – متفق عليه. قَوْلُهُ لَيُرِيَنَّ اللهُ رُوِيَ بِضَمِّ الْيَاءِ وَكَسْرِ الرَّاءِ أَي لِيُظْهِرَنَّ اللَّهُ ذَلِكَ لِلنَّاسِ وَرُوِيَ بِفَتْحِهِمَا
وَمَعْنَاهُ ظَاهِرُ وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
১০৯। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নান্দ্র (রা) বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি প্রথম যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলাম যা আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করেছিলেন। যদি আল্লাহ আমাকে এখন মুশরিকদের সাথে কোন যুদ্ধে হাযির করে দেন তাহলে আমি কি করি তা নিশ্চয়ই আল্লাহ (মানুষকে) দেখিয়ে দেবেন। তারপর উহুদের যুদ্ধের দিন এলে মুসলিমগণ কাফিরদের আক্রমণের সম্মুখীন হলেন (অর্থাৎ বাহ্যত তাদের পরাজয় হল)। তখন আনাস ইবনে নাদ্র বললেন, হে আল্লাহ! আমার সাথীরা যা করেছে, আমি সেজন্য তোমার নিকট ওযর পেশ করছি এবং মুশরিকদের কার্যকলাপ থেকে আমার সকল প্রকার সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি। তারপর তিনি অগ্রসর হলে তার সাথে সা’দ ইবনে মু’আযের দেখা হল। তাকে তিনি বলেন, হে সা’দ ইবনে মু’আয। কা’বার রবের কসম, আমি উহুদের পেছন থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। সা’দ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে যে কি করেছে তা বর্ণনা করতে পারছি না। আনাস (রা) বলেন, আমরা তার শরীরে তলোয়ারের অথবা বর্শার অথবা তীরের ৮০টির বেশি আঘাত দেখতে পেয়েছি। আরও দেখলাম, সে শহীদ হয়ে গেছে, আর মুশরিকরা তার শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে দিয়েছে। তাই আমরা কেউ তাকে চিনতেই পারলাম না। তবে তার বোন তার আঙুলের ডগা দেখে তাকে চিনতে পেরেছে। আনাস বলেন, আমরা ধারণা করতাম যে, তার ও তার মত লোকদের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল হয়েছে: “ঈমানদারদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যারা আল্লাহর নিকট কৃত ওয়াদাকে সত্য প্রমাণ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে, আর কেউ অপেক্ষায় আছে।” (বুখারী, মুসলিম)
١١٠ – عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرُو الْأَنْصَارِي الْبَدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لمَّا نَزَلَتْ آيَةُ الصَّدَقَةِ كُنَّا نُحَامِلُ عَلَى ظُهُورِنَا فَجَاءَ رَجُلٌ فَتَصَدَّقَ بِشَيْءٍ كَثِيرٍ فَقَالُوا مُرَاء وَجَاءَ رَجُلٌ أَخَرُ فَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ فَقَالُوا إِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ عَنْ
صَاعِ هَذَا فَنَزَلَتْ الَّذِينَ يَلْمِزُونَ المُطوَعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلا جُهْدَهُمْ) الآية – متفق عليه . وَنُحَامِلُ بِضَمِّ النُّونِ وَبِالْحَاءِ الْمُهْمَلَةِ أَي يَحْمِلُ أَحَدُنَا عَلَى ظَهْرِهِ بِالْأَجْرَةِ وَيَتَصَدِّقُ بِهَا .
১১০। আবু মাসউদ উব্বা ইবনে আম্র আনসারী বদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাদাকা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হল তখন আমরা পিঠে বোঝা বহন করতাম (এ কাজের মজুরী থেকে দান করতাম)। এক লোক এসে বেশি পরিমাণে দান করল। মুনাফিকরা বলল, এ ব্যক্তি রিয়াকার (লোক দেখানো কাজ করে)। এরপর আর এক লোক এসে এক সা’ পরিমাণ দান করল। মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ এই এক সা’ পরিমাণ দানের মুখাপেক্ষী নন। তখন এই আয়াত নাযিল হলঃ “মুমিনদের মধ্যে যারা আন্তরিক সন্তোষ সহকারে দান করে এবং যাদের নিকট শুধু তাই আছে যা তারা নিজেদের অপরিসীম কষ্ট স্বীকার করেই দান করে তাদেরকে যারা বিদ্রূপ করে, তাদের (বিদ্রূপকারীদের) প্রতি আল্লাহ বিদ্রূপ করেন এবং তাদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম)
۱۱۱ – عَنْ أَبِي ذَرٍ جُنْدُبِ بْنِ جُنَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَرْوِى عَنِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرِّمًا فَلا تَظَالَمُوا يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ
ضَالُّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِي أَطْعِمُكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ عَارِ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا اغْفِرُ الذُّنُوبَ
جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضُرِى فَتَضُرُونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنفَعُونِي يَا عِبَادِي لَوْ أَنْ أَوْلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى اتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذلِكَ فِي مُلْكِى شَيْئًا يَا
عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَأَنْسَكُمْ وَجِنَّكُم كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنْ أَوْلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَاعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانِ
مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أَحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أَوَفِّيْكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ قَالَ سَعِيدٌ كَانَ أَبُو
إِدْرِيسَ إِذَا حَدَّثَ بِهَذَا الْحَدِيثِ جَنَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ – رواه مسلم وَرَوَيْنَا عَنِ الْإِمَامِ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ رَحِمَهُ اللَّهُ قَالَ لَيْسَ لِأَهْلِ الشَّامِ حَدِيثُ أشرفُ مِنْ هذَا الْحَدِيثِ .
১১১। আবু যার জুনদুব ইবনে জুনাদা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ হে আমার বান্দারা! আমি নিজের উপর যুগ্মকে হারাম করে রেখেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। কাজেই তোমরা পরস্পর যুগ্ম করো না। হে আমার বান্দারা। আমি যাকে হিদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট। কাজেই তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও, আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দেব। হে আমার বান্দারা। আমি যাকে খাদ্য দিয়েছি সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত। কাজেই তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি তোমাদেরকে খাদ্য দেব। হে আমার বান্দারা! আমি যাকে বস্ত্র দিয়েছি সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই বিবস্ত্র। কাজেই তোমরা আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দেব। হে আমার বান্দারা। তোমরা রাত-দিন ভুল করে থাক, আর আমি সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিই। কাজেই তোমরা আমার কাছে গুনাহ মাফ চাও, আমি তোমাদেরকে মাফ করে দেব। হে আমার বান্দারা। তোমরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আমার কোন উপকারও করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা। যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত জিন ও মানুষ তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে মুত্তাকী লোকের দিলের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বের কিছুই শ্রীবৃদ্ধি করবে না। হে আমার বান্দারা। যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত জিন ও মানুষ তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে খারাপ মানুষের দিলের মত দিলসম্পন্ন হয়ে যায়, তবুও তাতে আমার রাজত্বের এতটুকু মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত জিন ও মানুষ এক ময়দানে দাঁড়িয়ে একত্রে আমার কাছে চায় এবং আমি তাদের প্রত্যেককে তার চাহিদা পূরণ করে দিই, তাহলে তাতে আমার কাছে যে ভাণ্ডার রয়েছে তার অতটুকু কমে যায় যতটুকু সমুদ্রে একটি সূঁচ ফেললে তার পানি কমে যায় (অর্থাৎ সমুদ্রের মধ্যে একটি সূঁচ ফেলে দিলে যেমন তাতে সমুদ্রের পানির কিছুই কমে না, তেমনি আল্লাহর অসীম ভাণ্ডার থেকে প্রত্যেকের চাহিদা পূরণ করে দিলেও তার কিছুমাত্র কমে না)। হে আমার বান্দারা। আমি তোমাদের নেক আমলকে তোমাদের জন্য জমা করে রাখছি, তারপর আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ বিনিময় দেব। কাজেই যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ পায়, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু পায়, সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।
সাঈদ (র) বলেন, আবু ইদরীস যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন হাঁটু ভাঁজ করে পড়ে যেতেন। ইমাম মুসলিম এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র) বলেন: সিরিয়াবাসীদের কাছে এর চাইতে বেশি মর্যাদাপূর্ণ আর কোন হাদীস নেই।
অনুচ্ছেদ: ১২ – জীবনের শেষভাগে বেশি বেশি উত্তম কাজ করার প্রতি উৎসাহদান
জীবনের শেষভাগে বেশি বেশি উত্তম কাজ করার প্রতি উৎসাহদান [ মানুষ দুনিয়ায় সীমিত সময়ের জন্য আসে, তারপর এখান থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু কোথায় যায়? এ দুনিয়ায় কৃত ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান পাওয়ার জন্যই প্রত্যেককে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে চলে যেতে হয়। সেখানে আর কোন কাজ করার সুযোগ থাকে না। সেখানে শুধু
হিসাব ও প্রতিদান।এদিকে অনেকেরই প্রথম জীবনটা আল্লাহর দীনের জন্য কাজে লাগেনি। অনেকে আবার প্রথমজীবনে দীনের বহু কাজ ও খিদমাত করার পর শেষকালে দীনের পথে থাকতে পারে না। এই উভয় প্রকার লোকের জন্য জীবনের শেষকালে দীনের কাজে মগ্ন থাকা ছাড়া মুক্তির কোন পথ নেই। তাছাড়া সকলেরই তো জীবনের সময় চলে যাচ্ছে এবং বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। কাজেই এ সময় যথাসাধ্য সৎ কাজে মগ্ন থাকা একান্ত কর্তব্য। নবী (সা) তাঁর জীবনের শেষকালে বেশি বেশি ইবাদাত করে কাটিয়েছেন। যার শেষ ভালো তার সব ভালো। এ কারণেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এ সময় বিশেষভাবে আখিরাতের জন্য বেশি বেশি উত্তম কাজের মাধ্যমে প্রস্তুত হতে উৎসাহ দিয়েছেন। (অনুবাদক) ] ।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : أَوَلَمْ نُعَمِّرُكُمْ مَا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَاءَكُمُ النَّذِيرُ.
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “আমি কি তোমাদেরকে এমন বয়স দান করিনি যাতে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাছে সতর্ককারীও তো এসেছিল।” (সূরা ফাতির: ৩৭)
আবদুল্লাহ ইবনুল আব্বাস (রা) ও বিশেষজ্ঞ আলিমগণ বলেন: ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন’ এ বাক্যটিতে ষাট বছর বয়সের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই মতের সমর্থন পরবর্তী হাদীসেও পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কেউ কেউ আঠার বছরের কথাও বলেছেন। ইমাম হাসান, ইমাম কাল্বী ও মাসরূক (র) চল্লিশ বছরের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। ইবনুল আব্বাস (রা)-র দ্বিতীয় একটি বক্তব্যও এই চল্লিশ বছরের সমর্থনে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মদীনাবাসীদের একটি আমল উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, তাদের কেউ চল্লিশ বছরে পৌঁছে গেলে সে নিজের সময়কে ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। আবার কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন নিছক বালেগ হওয়া। আর দ্বিতীয় অংশ যাতে বলা হয়েছে, “তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসেছিল”, এ সম্পর্কে ইবনুল আব্বাস (রা) ও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ আলিমের মতে এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হচ্ছে বার্ধক্য। ইকরামা, ইবনে উয়াইনা প্রমুখ ইমাম এ অর্থ বর্ণনা করেছেন।
وَأَمَّا الْأَحَادِيثُ : ۱۱۲ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَعْدَرَ اللهُ إِلَى امْرِئٍ أَخْرَ أَجَلَهُ حَتَّى بَلَغَ سِيِّينَ سَنَةً – رواه البخاري . قَالَ الْعُلَمَاءُ مَعْنَاهُ لَمْ يَتْرُكْ لَهُ عُدْرًا إِذْ أَمْهَلَهُ هَذِهِ الْمُدَّةَ
يُقَالُ أَعْذَرَ الرَّجُلُ إِذَا بَلَغَ الْغَايَةَ فِي الْعُذرِ .
১১২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ যে ব্যক্তির মৃত্যুকে পিছিয়ে দেন তার বয়সের ৬০ বছর পর্যন্ত তার ওজর কবুল করতে থাকেন। (বুখারী)
۱۱۳ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُدْخِلْنِي مَعَ أَشْيَاحَ بَدْرٍ فَكَانُ بَعْضَهُمْ وَجَدَ فِي نَفْسِهِ فَقَالَ لِمَ يَدْخُلُ هُذَا مَعَنَا وَلَنَا أَبْنَاءُ مِثْلُهُ؟ فَقَالَ عُمَرُ إِنَّهُ مِنْ حَيْثُ عَلِمْتُمْ فَدَعَانِي ذَاتَ يَوْمٍ
فَأَدْخَلَنِي مَعَهُمْ فَمَا رَأَيْتُ أَنَّهُ دَعَانِي يَوْمَئِذٍ إِلَّا لِيُرِيَهُمْ قَالَ مَا تَقُولُونَ فِي قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ) فَقَالَ بَعْضُهُمْ أَمِرْنَا نَحْمَدُ اللَّهَ وَنَسْتَغْفِرُهُ إِذَا نَصَرَنَا وَفَتَحَ عَلَيْنَا وَسَكَتَ بَعْضُهُمْ فَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا فَقَالَ لِي
أَكَذَلِكَ تَقُولُ يَا ابْن عَبَّاسٍ؟ فَقُلْتُ لَا قَالَ فَمَا تَقُولُ ؟ قُلْتُ هُوَ أَجَلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْلَمَهُ لَهُ قَالَ (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ) وَذَلِكَ عَلامَةُ أَجَلِكَ ) علامَةُ أَجَلِكَ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا )
فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَا ى اللَّهُ عَنْهُ مَا مَا أَعْلَمُ مِنْهَا إِلَّا مَا تَقُوْلُ رواه البخاري .
১১৩। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রা) আমাকে বদরের যুদ্ধে যোগদানকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের সাথে মজলিসে বসাতেন। এতে তাদের কেউ কেউ যেন মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেন এবং বলেন, এ ছেলেটি আমাদের সাথে কেন মজলিসে বসে? অথচ আমাদেরও তো তার বয়েসী ছেলেপেলে রয়েছে। উমার (রা) বলেন, এ ছেলেটি কোথাকার (অর্থাৎ নবী পরিবারের) তা তোমরা জান। একদিন তিনি আমাকে তাদের সাথে ডেকে আনলেন। আমার ধারণা হল, নিশ্চয়ই সেদিন তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই তিনি আমাকে ডেকে এনেছেন। তিনি বলেন, “ইযা জাআ নাসরুল্লাহ”-এর সম্পর্কে তোমাদের বক্তব্য কি? কেউ উত্তরে বলেন, আল্লাহ যেহেতু আমাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং বিজয় দান করেছেন, কাজেই তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আমাদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছে। আর কেউ কেউ চুপ থাকলেন, কিছুই বললেন না। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে ইবনুল আব্বাস! তুমিও কি এরূপ কথাই বল? আমি বললাম, না। তিনি বলেন, তুমি কি বল? আমি বললাম, এটার অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকাল, যা আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ এরূপ বলেছেন যে, যেহেতু আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং সেটা তোমার ইন্তিকালের লক্ষণ, কাজেই তুমি তোমার রবের প্রশংসা কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাও। তিনি তাওবা কবুলকারী। এরপর উমার (রা) বলেন, এ ব্যাপারে তুমি যা বলছ সেটা ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। (বুখারী)
١١٤ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةٌ بَعْدَ أَنْ نَزَلَتْ عَلَيْهِ إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ) إِلَّا يَقُولُ فِيهَا سُبْحَانَكَ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ . وفي رواية فِي
الصَّحِيحَيْنِ عَنْهَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ فِي رَكُوعِهِ وَسُجُودِهِ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي يَتَاوَلُ الْقُرْآنَ. معنى يَتَأَوَّلُ الْقُرْآنَ أَي : يَعْمَلُ مَا أُمِرَ بِهِ فِي الْقُرْآنِ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى :
(فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرُهُ) . وفي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ قَبْلَ أَنْ يمُوتَ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ قَالَتْ عَائِشَةُ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مَا هَذِهِ الْكَلِمَاتُ
الَّتِي أَرَاكَ أَحْدَثْتَهَا تَقُولُهَا ؟ قَالَ جُعِلَتْ لِي عَلَامَةٌ في أُمَّتِي إِذَا رَأَيْتُهَا قُلْتُهَا إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ) إِلَى آخِرِ السُّورَةِ . وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ مِنْ قَوْلِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ اللهَ
وَآتُوبُ إِلَيْهِ قَا وقالت قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَاكَ تُكْثِرُ مِنْ قَوْلِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَاتُوبُ إِلَيْهِ؟ فَقَالَ أَخْبَرَنِي رَبِّي أَنِّي سَارَى علَامَةً فِي أُمَّتِي فَإِذَا رَأَيْتُهَا اكْثَرْتُ مِنْ قَوْلِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحمدِهِ اسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَاتُوبُ
إِلَيْهِ فَقَدْ رَأَيْتُهَا إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ (فَتْحُ مَكَّةَ) وَرَأَيْتَ النَّاسِ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللهِ أَفْوَاجًا فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا .) مَعَنَى يَتَاوَلُ الْقُرْآنَ أَنْ يَعْمَلُ مَا أَمِرَ بِهِ فِي الْقُرْآنِ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى : فَسَبِّحْ بِحَمْدِ
رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرُهُ.
১১৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ” সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাযেই “সুবহানাকা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী” অবশ্যই বলতেন। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমের অপর রিওয়ায়াতে আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় বেশি বেশি করে বলতেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”। অর্থাৎ আল কুরআনে আল্লাহ “ফাসাব্বিহ বিহাম্মদ রাব্বিকা ওয়াস্তাফিহু”-এর মধ্যে যে তাসবীহ ও ইস্তিগফারের হুকুম দিয়েছেন তার উপর তিনি আমল করতেন।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তিকালের পূর্বে বেশি বেশি করে বলতেনঃ “সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।” আয়িশা (রা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই নতুন কথাগুলো কী যা আপনাকে বলতে দেখছি? তিনি বলেন: আমার জন্য আমার উম্মাতের মধ্যে একটি আলামত সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি, এ কথাগুলো বলি। তারপর তিনি সূরা আন্ নাস্ত্র শেষ পর্যন্ত পড়লেন।
মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি” এ দু’আটি খুব বেশি করে পড়তেন। আয়িশা (রা) বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল। আমি দেখছি আপনি এ কালেমাগুলো খুব বেশি বেশি পড়ছেনঃ “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি”। তিনি বলেন: আমার রব আমাকে জানিয়েছেন, তুমি শীঘ্রই তোমার উম্মাতের মধ্যে একটি আলামত দেখতে পাবে। কাজেই যখন তা দেখতে পাই তখন আমি এই বাক্যগুলো বেশি বেশি করে বলি: “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।” আর আমি এই আলামত দেখতে পেয়েছি। আল্লাহ বলেছেনঃ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসে এবং বিজয় সম্পন্ন হয়”
অর্থাৎ মক্কা বিজয় “এবং তুমি লোকদেরকে দেখ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে, তখন নিজের রবের তাসবীহ ও তাহমীদ করো এবং তাঁর কাছে ইসতিগফার করো। তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী।”
١١٥ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلٌ تَابَعَ الْوَحْيَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ وَقَاتِه حَتَّى تُوفَّى أَكْثَرَ مَا كَانَ الْوَحْى. متفق عليه.
১১৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর তাঁর ইন্তিকালের কাছাকাছি সময় থেকে তাঁর ইস্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত একাধারে পূর্বের চেয়ে বেশি ওহী নাযিল করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)
١١٦ – عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدِ عَلَى مَا مَاتَ عَلَيْهِ – رواه مسلم.
১১৬। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক বান্দাকে ঐ অবস্থায় পুনর্জীবিত করা হবে যে অবস্থায় সে মারা গেছে। (মুসলিম)
অনুচ্ছেদ : ১৩ – উত্তম কাজের বিবিধ পন্থা
উত্তম কাজের বিবিধ পন্থা [ উত্তম কাজ বহু প্রকার এবং অনেক ব্যাপক। কতকগুলো বিশেষ ধর্মীয় কাজকেই কেবল উত্তম ও সৎ কাজ বলা হয় না। আল কুরআন ও হাদীসে আমলে সালেহ্ ও খায়ের (সৎ কাজ)-এর গুরুত্ব ঈমানের মতই। মূল ঈমানের সাথে সামঞ্জস্য রাখে এবং তার দাবি পূরণ করে এমন যে কোন কাজকেই আমলে সালেহ, উত্তম কাজ বলা হয়েছে। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমষ্টিগত জীবনের সর্বস্তরের এরূপ ছোট-বড় কল্যাণকর কাজকেই দীনী কাজ বলা হয়। সমাজকল্যাণমূলক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক ইত্যাদি সব রকমের কাজই ইসলামের অনুশাসন অনুযায়ী হলে তা আমলে সালেহ, উত্তম ও দীনী কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এসব কাজের মাধ্যমেই প্রকৃত ঈমানের পরিচয় ও প্রমাণ পাওয়া যায়। (অনুবাদক) ] ।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “তোমরা যে কোন উত্তম কাজ কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণভাবে অবগত।” (সূরা আল বাকারা: ২১৫)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يُعْلَمُهُ اللهُ .
(২) “তোমরা যে কোন উত্তম কাজ কর তা আল্লাহ জানেন।” (সূরা আল বাকারা: ১৯৭)
وَقَالَ تَعَالَى : فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ .
(৩) “কোন ব্যক্তি বিন্দু পরিমাণ আমলে সালেহ করলেও তা সে দেখতে পাবে।” (সূরা আয যিলযালঃ ৭)
وقَالَ تَعَالَى : مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ .
(৪) “যে ব্যক্তি আমলে সালেহ করে তা তার নিজের জন্যই।” (সূরা আল জাসিয়া: ১৫)
وَالْآيَاتُ فِي الْبَابِ كَثِيرَةً وَأَمَّا الْأَحَادِيثُ فَكَثِيرَةٌ جِداً وَهِيَ غَيْرُ مُنْحَصِرَةٍ فَتَذْكُرُ طَرَفًا مِنْهَا : ۱۱۷ – عَنْ أَبِي ذَرٍ جُنْدُبِ بْنِ جُنَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ الْإِيْمَانُ بِاللَّهِ وَالْجِهَادُ فِي
سَبِيلِهِ قُلْتُ أَيُّ الرِّقَابِ أَفْضَلُ؟ قَالَ أَنْفَسُهَا عِنْدَ أَهْلِهَا وَأَكْثَرُهَا ثَمَنًا قُلْتُ فَإِنْ لَمْ أَفْعَلُ قَالَ تُعِينُ صَانِعًا أَوْ تَصْنَعُ لِأَخْرَقَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِن ضَعُفَتُ عَنْ بَعْضِ الْعَمَلِ قَالَ تَكْفُ شركَ عَنِ النَّاسِ فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ مِنْكَ
عَلَى نَفْسِكَ – متفق عليه . الصَّانِعُ بِالصَّادِ الْمُهْمَلَةِ هذا هُوَ الْمَشْهُورُ وَرُوِيَ ضَائِعًا بِالْمُعْجَمَةِ أَيْ ذَا ضَبَاعِ مِنْ فَقْرِ أَوْ عِبَالٍ وَنَحْو ذَلِكَ وَالْأَخْرَقُ الَّذِي لَا يُتْقِنُ مَا يُحَاوِلُ فَعْلَهُ .
১১৭। আবু যার জুনদুব ইবনে জুনাদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন: আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাঁর পথে জিহাদ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ গোলাম আযাদ করা উত্তম? তিনি বলেন: যে গোলাম তার মালিকের নিকট বেশি প্রিয় এবং যার মূল্য বেশি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি যদি (দারিদ্র্যের কারণে) এ কাজ না করতে পারি? তিনি বলেন: কোন কারিগরকে সাহায্য করবে অথবা এমন কোন লোককে কাজ শিখিয়ে দেবে যে জানে না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনি কি মনে করেন আমি যদি এই কাজও না করতে পারি? তিনি বলেন: মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাক। তা তোমার পক্ষ থেকে তোমার জন্যই সাদাকা। (বুখারী, মুসলিম)
۱۱۸ – عَنْ أَبِي ذَرٍ أَيْضًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَامْرُ بِالْمَعْرُوفِ
صَدَقَةٌ وَنَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةً وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحى – رواه مسلم. السلامى بِضَمِّ السِّينِ الْمُهْمَلَةِ وَتَخْفِيفِ اللَّامِ وَفَتْحِ الْمِيمِ الْمَفْصِلُ.
১১৮। আবু যার জুনদুব ইবনে জুনাদা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের যে কোন লোকেরই শরীরের প্রতিটি সংযোগস্থলের উপর সাদাকা (ওয়াজিব) হয়। সুবহানাল্লাহ্, আলহামদু লিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার- এসবের প্রতিটি এক একটি সাদাকা। সৎ কাজের হুকুম দেয়া এবং অসৎ কাজে নিষেধ করাও সাদাকা। আর এসব চাশত্-এর (দুপুরের পূর্বেকার) দুই রাক’আত নামায পড়লে পূরণ হয়ে যায়। (মুসলিম)
۱۱۹ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرِضَتْ عَلَى أَعْمَالُ أُمَّتِي حَسَنُهَا وَسَيِّنُهَا فَوَجَدْتُ فِي مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الْأَذِى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيقِ وَوَجَدْتُ فِي مَسَاوِي أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ تَكُونُ فِي الْمَسْجِدِ لَا
تُدْفَنُ – رواه مسلم .
১১৯। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার নিকট আমার উম্মাতের ভালো ও মন্দ কাজ পেশ করা হয়েছে। তাতে আমি পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেয়া ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত দেখলাম এবং মসজিদে পতিত থুথু মাটিতে পুঁতে না ফেলা মন্দ কাজের অন্তর্ভুক্ত পেলাম। (মুসলিম)
۱۲۰ – وَعَنْهُ أَنْ نَاسًا قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالْأَجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا تُصَلَّى وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدِّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ قَالَ أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ مَا تَصَدِّقُونَ بِهِ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةً
وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةً قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ آيَاتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرُ ؟ قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامِ أَكَانَ عَلَيْهِ وَزْرُ؟
فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ – رواه مسلم. الدُّثُورُ بِالنَّاءِ الْمُثَلَثَةِ الْأَمْوَالُ واحدها دثر.
১২০। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। কতিপয় লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। ধনীরা তো সব সাওয়াব নিয়ে গেল। আমরা যেমন নামায পড়ি তারাও তেমনি নামায পড়ে। আমরা যেমন রোযা রাখি তারাও তেমনি রোযা রাখে। (কিন্তু) তারা তাদের উদ্বৃত্ত মাল থেকে দান করে (যা আমরা করতে পারি না)। তিনি বলেন: আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করেননি যার মাধ্যমে তোমরা দান করতে পার? (জেনে রাখ) প্রতিবার সুবহানাল্লাহ্ বলা সাদাকা (দান), আল্লাহু আকবার বলা সাদাকা, আলহামদু লিল্লাহ্ বলা সাদাকা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সাদাকা, সৎ কাজের হুকুম করা সাদাকা, অসৎ কাজ করতে নিষেধ করা সাদাকা এবং তোমাদের স্ত্রীর সাথে মিলনও সাদাকা। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ তার যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করলে তাতেও সাওয়াব হয়? তিনি বলেনঃ আচ্ছা বলত, যদি কেউ হারাম উপায়ে যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তবে তার গুনাহ হবে কি না? এভাবে হালাল পন্থায় এ কাজ করলে তার সাওয়াব হবে। (মুসলিম)
۱۲۱ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهِ طليق رواه مسلم .
১২১। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন সৎ কাজকে তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করার কাজ হয়। (মুসলিম)
۱۲۲ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ سُلامَى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيْهِ الشَّمْسُ تَعْدِلُ بَيْنَ الْأَثْنَيْنِ صَدَقَةٌ وَتُعِينُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَيَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ
عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةً والكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ وَبِكُلِّ خُطْوَةٍ تَمْشِيهَا إِلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ وَيُمِيطُ الْآذِى عن الطريق صَدَقَةٌ – متفق عليه. وَرَوَاهُ مُسْلِمُ أَيْضًا مِنْ رِوَايَةِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ إِنَّهُ خُلِقَ كُلُّ إِنْسَانِ مِنْ بَنِي آدَمَ عَلَى سِيِّينَ وَثَلَاثَ مِائَةٍ مَفْصَلٍ فَمَنْ كَبُرَ اللهَ وَحَمِدَ اللهَ وَهَلَلَ اللهَ وَسَبِّحَ اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ اللَّهَ وَعَزَلَ حَجَرًا عَنْ طريق النَّاسِ أَوْ شَوْكَةً أَوْ عَظْمًا عَنْ طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ أَمَرَ بِمَعْرُوفِ أَوْ
نَهَى عَنْ مُنْكَر عَدَدَ السَّيِّينَ وَالثَّلاثَ مَائَةٍ فَإِنَّهُ يُمْشِي يَوْمَئِذٍ وَقَدْ زَحْزَحَ نَفْسَهُ عَنِ النَّارِ.
১২২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সূর্যোদয় হয় এমন প্রতিটি দিন মানুষের শরীরের প্রতিটি সংযোগস্থলের জন্য সাদাকা ওয়াজিব হয়। তুমি দু’জনের মধ্যে যে সুবিচার কর তা সাদাকা। তুমি মানুষকে তার বাহনে তুলে দিয়ে অথবা তার উপর তার আসবাবপত্র উঠিয়ে দিয়ে যে সাহায্য কর তাও সাদাকা। ভালো কথা বলাও সাদাকা। নামাযের দিকে যাওয়ার সময় তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা। রাস্তা থেকে তুমি যে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেল তাও সাদাকা। (বুখারী, মুসলিম)
ইমাম মুসলিম এই একই হাদীস আয়িশা (রা)-র সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রতিটি আদম সন্তানকে তিন শত ষাটটি গ্রন্থির সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করে, তাঁর প্রশংসা করে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, সুবহানাল্লাহ বলে, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, লোকদের যাতায়াতের পথ থেকে পাথর অথবা কাঁটা অথবা হাড় সরিয়ে দেয় অথবা সৎ কাজের আদেশ করে অথবা খারাপ কাজ করতে নিষেধ করে- এসব কিছু সংখ্যায় তিন শত ষাট হয়ে যায়। আর এ লোকটির সারাটা দিন এভাবে কাটে যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখল।
۱۲۳ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ غَدًا إِلَى الْمَسْجِدِ أَوْ راح أَعَدَّ اللهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ نُزُلاً كُلَّمَا غَدًا أَوْ راح – متفق عليه. النُّزلُ الْقُوتُ وَالرِّزْقُ وَمَا يُهَيَّا لِلضَّيْفِ .
১২৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি সকালে কিংবা সন্ধ্যায় মসজিদে আসে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। (বুখারী, মুসলিম)
١٢٤ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةً لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاءَ – متفق عليه قَالَ الْجَوْهَرِي الْفِرْسِنُ مِنَ الْبَعِيرِ كَالْحَافِرِ مِنَ الدَّابَّةِ قَالَ وَرَبِّمَا اسْتَعِيْرَ فِي الشَّاةِ .
১২৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মুসলিম নারীগণ! কোন মহিলা যেন তার প্রতিবেশী মহিলাকে ছাগলের খুর হলেও তা দিতে অবজ্ঞা না করে (অর্থাৎ দানের পরিমাণ নগণ্য হলেও তা দিতে বা নিতে সংকোচবোধ করা উচিত নয়)। (বুখারী, মুসলিম)
١٢٥ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْإِيْمَانُ بِضْعُ وَسَبْعُونَ أَوْ بضْعُ وَستُونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذِى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةً مِنَ الْإِيْمَانِ متفق عليه الْبَضْعُ مِنْ ثَلاثَةِ إِلى
تِسْعَة بِكَسْرِ الْبَاءِ وَقَدْ تُفْتَحُ وَالشُّعْبَةُ القِطْعَةُ .
১২৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ঈমানের সত্তরের কিছু বেশি অথবা ঘাটের কিছু বেশি শাখা আছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আর সাধারণ শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা। (বুখারী, মুসলিম)
١٢٦ – وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِطَرِيق اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْعَطَسُ فَوَجَدَ بِتْرًا فَنَزَلَ فِيهَا فَشَرِبَ ثُمَّ خَرَجَ فَإِذَا كَلْبٌ يُلْهَثْ يَأْكُلُ الشرى مِنَ الْعَطَشِ فَقَالَ الرَّجُلُ لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الْكَلْبَ مِنَ
الْعَطَشِ مِثْلُ الَّذِي كَانَ قَدْ بَلَغَ مِنِّي فَنَزَلَ الْبِئْرَ فَمَلَا خُفْهُ مَاءٌ ثُمَّ أَمْسَكَهُ بِفِيْهِ حَتَّى رَقِيَ فَسَقَى الْكَلْبَ فَشَكَرَ اللهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لَنَا فِي الْبَهَائِمِ أَجْرًا ؟ فَقَالَ فِي كُلِّ كَبِدِ رَطْبَةٍ أَجْرُ – متفق عليه.
وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ فَأَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا بَيْنَمَا كَلْبٌ يُطِيفُ بِرَكِيَّةٍ قَدْ كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَسُ إِذْ رَاتُهُ بَغِي مِنْ بَغَايَا بَنِي إِسْرَائِيلَ فَنَزَعَتْ مُوْقَهَا فَاسْتَقَتْ لَهُ بِهِ فَسَقَتْهُ فَغُفِرَ لَهَا بِهِ الْمُوْقُ الْخُفُ
وَيُطِيفُ يَدُورُ حَوْلَ رَكِيَّةٍ وَهِيَ الْبثْرُ .
১২৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক ব্যক্তি একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তার খুব পিপাসা পেল। সে একটি কূয়া দেখতে পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করে বেরিয়ে এসে দেখল, একটি কুকুর পিপাসায় কাতর হয়ে জিহ্বা বের করছে এবং কাদা চাটছে। লোকটি ভাবল, আমি যেমন পিপাসার্ত হয়েছিলাম তেমনি এ কুকুরটি পিপাসার্ত। তাই সে পুনরায় কুয়াতে নেমে তার মোজায় পানি ভরে নিজের মুখ দিয়ে ধরে কুয়া থেকে উঠে এল, তারপর কুকুরটিকে পানি পান করাল। এতে আল্লাহ তার প্রতি রহম করলেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পশুদের উপকার করলেও কি আমাদের সাওয়াব হবে?
তিনি বলেন: প্রতিটি প্রাণীর ব্যাপারেই সাওয়াব আছে। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারীর অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: আল্লাহ তার প্রতি রহম করলেন, তাকে ক্ষমা করলেন এবং তাকে জান্নাতে স্থান দিলেন। আর বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে: একদা একটি কুকুর চারদিকে ঘুরছিল। কুকুরটি পিপাসায় মরে যাবার উপক্রম হয়েছিল। বনী ইসরাঈলের জনৈকা বেশ্যা নারী তাকে দেখতে পেয়ে নিজের মোজা খুলে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে তাকে পান করায় এবং এজন্য তাকে ক্ষমা করা হয়।
۱۲۷ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلًا يَتَقَلُّبُ فِي الْجَنَّةِ فِي شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَّرِيقِ كَانَتْ تُؤْذِي الْمُسْلِمِينَ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ مَنْ رَجُلٌ بِغُصْنِ شَجَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ طَرِيق فَقَالَ وَاللَّهِ لِأُنَحِيَنَّ هَذَا عَنِ الْمُسْلِمِينَ لَا يُؤْذِيهِمْ فَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ . وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِطَرِيق وَجَدَ غُصْنَ شَوْكَ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخْرَهُ فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ .
১২৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি (স্বপ্নে বা মি’রাজে গিয়ে) এক ব্যক্তিকে পথের উপর থেকে একটি গাছ কেটে ফেলার কারণে জান্নাতে চলাফেরা করতে দেখেছি। গাছটি (যাতায়াতের পথে) মুসলিমদেরকে কষ্ট দিত। ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: এক ব্যক্তি একটি গাছের ডালের পাশ দিয়ে গেল। ডালটি ছিল পথের মাঝখানে। সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি একে মুসলিমদের পথের উপর থেকে দূর করে দেব যাতে এটা তাদের কষ্ট দিতে না পারে। এজন্য তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।
বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: একটি লোক রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় একটি কাঁটা গাছের ডাল পথের উপর থেকে সরিয়ে দিল। ফলে আল্লাহ তার উপর রহম করলেন এবং তাকে ক্ষমা করলেন।
۱۲۸ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوَضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَانْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةٌ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَ الْحَصَا فَقَدْ لغا – رواه مسلم .
১২৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খুব ভালোভাবে উযু করে তারপর মসজিদে এসে চুপ থেকে খুতবা শুনে, তার এক জুমু’আ থেকে পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত এবং তারপরের তিন দিনের গুনাহও মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (খুতবার সময়) পাথরের টুকরা নাড়াচাড়া করে সে অন্যায় কাজ করে। (মুসলিম)
۱۲۹ – وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا تَوَضًا الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ أُخرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ
كَانَ بَطْشَتُهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ أَخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجَلاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ أَخِرِ قَطْرَ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيَّا مِنَ الذُّنُوبِ رواه مسلم.
১২৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুসলিম বা মুমিন বান্দা উযু করতে গিয়ে যখন তার চেহারা ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে তার চেহারা থেকে এমন প্রতিটি গুনাহ ঝরে যায় যা সে তার দুই চোখের দৃষ্টির দ্বারা করেছে। তারপর যখন সে তার দুই হাত ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে তার দুই হাত থেকে এমন প্রতিটি গুনাহ ঝরে যায় যা সে তার দুই হাত দিয়ে করেছে। তারপর যখন সে তার দুই পা ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে তার দুই পায়ের এমন প্রতিটি গুনাহ ঝরে যায় যা সে তার দুই পা দ্বারা করেছে। এমনকি সে সমস্ত (সগীরা) গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম)
۱۳۰ – وَعَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ والْجُمُعَة إلى الجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتُ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنِبَتِ الكَبَائِرُ – رواه مسلم .
১৩০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: পাঁচ ওয়াক্তের নামায, এক জুমু’আ থেকে আর এক জুমু’আ এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান পযস্ত মধ্যবর্তী দিনগুলোর ছোট ছোট গুনাহের কাফ্ফারা হয়, যদি কবীরা গুনাহসমূহ পরিহার করা হয়। (মুসলিম)
۱۳۱ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أَدْلُكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرْجَاتِ ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثَرَةُ الخُطا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذلِكُمُ الرباط – رواه مسلم .
১৩১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে, সেই কাজ বলে দেব না যা দ্বারা আল্লাহ (মানুষের) গুনাহসমূহ মুছে দেন এবং (তার) মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। অবশ্যই বলুন। তিনি বলেনঃ কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণভাবে উযু করা, মসজিদসমূহের দিকে বেশি বেশি হেঁটে যাওয়া এবং এক নামাযের পর পরবর্তী নামাযের অপেক্ষায় থাকা। আর এটাই তোমাদের রিবাত বা জিহাদ – (মুসলিম) [ পবিত্রতা অর্জন করা, নামায ও আল্লাহর ইবাদাতে নিয়মিতভাবে লেগে থাকা এবং এতে পরিপক্কতা অর্জন করা জিহাদের মত। রিবাত্ শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে সীমান্ত রক্ষার জন্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকা। হাদীসে এক নামাযের পর অপর নামাযের অপেক্ষায় থাকাকে এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সীমান্ত পাহারা দেয়ার সাওয়াব এতে তারা লাভ করবে। (অনুবাদক)] ।
۱۳۲ – عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ الْبَرْدَانِ الصُّبْحُ وَالْعَصْرُ .
১৩২। আবু মূসা আল আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা সময়ের নামায পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামায। (বুখারী, মুসলিম)
۱۳۳ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحا – رواه البخاري .
১৩৩। আবু মূসা আল আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর বান্দা যখন অসুস্থ হয় অথবা সফর করে, তখন সুস্থ ও মুকীম অবস্থায় সে যে পরিমাণ নেক কাজ করত সেই পরিমাণ কাজের সাওয়াব তার জন্য লেখা হয়। (বুখারী)
١٣٤ – عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ مَعْرُوفِ صَدَقَةٌ . رواه البخاري وَرَوَاهُ مُسْلِمٌ مِنْ رِوَايَةٍ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ .
১৩৪। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রতিটি সৎ কাজই সাদাকা। (বুখারী)
ইমাম মুসলিম হুযাইফা (রা)-র সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
١٣٥ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلَّا كَانَ مَا أَكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةً وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةً وَلَا يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلا كَانَ لَهُ صَدَقَةً رَوَاهُ مُسْلِمُ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ فَلا يَعْرِسُ الْمُسْلِمُ
غَرْسًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ إِنْسَانٌ وَلَا دَابَّةً وَلَا طَيْر إِلا كَانَ لَهُ صَدَقَةً إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ . وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ لَا يَغْرِسُ مُسْلِمٌ غَرْسًا وَلَا يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ إِنْسَانٌ وَلَا دَابَّةٌ ولا شَيْ إِلَّا كَانَتْ لَهُ صَدَقَةً وَرَوَيَاهُ جَمِيعًا مِنْ رِوَايَةِ أَنَسٍ رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ قَوْلُهُ يَرْزَؤُهُ أَي يَنْقُصُهُ .
১৩৫। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কোন মুসলিম ব্যক্তিই কোন গাছ লাগালে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয়, সেটা তার জন্য সাদাকা হবে; আর তা থেকে কিছু চুরি হলে এবং কেউ তার কোন ক্ষতি করলে সেটাও তার জন্য সাদাকা হবে। ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: মুসলিম কোনো গাছ লাগালে তা থেকে মানুষ, পশু ও পাখিরা যা কিছু খায়, কিয়ামাত পর্যন্ত তা তার জন্য সাদাকা হিসেবে জারি থাকে। মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: মুসলিম কোন গাছ লাগালে ও কোনো চাষাবাদ করলে তা থেকে মানুষ, পশু ও অন্য কিছু যা খেয়ে ফেলে, তা তার জন্য সাদাকা বিবেচিত হয়। শেষোক্ত রিওয়ায়াত দুটো আনাস (রা) থেকে বর্ণিত।
١٣٦ – وَعَنْهُ قَالَ أَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَن يُنْتَقِلُوا قُرْبَ الْمَسْجِدِ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُمْ إِنَّهُ قَدْ بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تُرِيدُونَ أَن تَنْتَقِلُوْا قُرْبَ الْمَسْجِدِ ؟ فَقَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ أَرَدْنَا ذَلِكَ فَقَالَ بَنِي
سَلِمَةً دِيَارِكُمْ تُكتَبْ أَثَارَكُمْ دِيَارَكُمْ تُكْتَبُ أَثَارُكُمْ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ إِنَّ بِكُلِّ خَطْوَةٍ
درجة. رواه مسلم ورواه البخاري أيضًا بِمَعْنَاهُ مِنْ رِوَايَةِ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ. وَبَنُو سَلِمَةٌ بِكَسْرِ اللام قَبِيلَةٌ مَعْرُوفَةٌ مِّنَ الْأَنْصَارِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَأَثَارُهُمْ خُطَاهُمْ .
১৩৬। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনু সালেমা মসজিদের (মসজিদে নববী) নিকটে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করল। এ খবর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছলে তিনি তাদেরকে বলেন: আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, তোমরা নাকি মসজিদের নিকট স্থানান্তরিত হতে চাও? তারা বলল, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এরূপ ইচ্ছা করেছি। তিনি বলেন: বনু সালেমা। তোমরা ঘরেই থাক (অর্থাৎ বর্তমান বাসস্থানে), তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হয়, তোমরা ঘরেই থাক, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হয়।
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: প্রতিটি পদক্ষেপে একটি মর্যাদা উন্নত হয়। ইমাম বুখারী (র) আনাস (রা)-র মাধ্যমে এরই সমার্থক একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
۱۳۷ – عَنْ أَبِي الْمُنْذِرِ أَبي بْنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَجُلٌ لَا أَعْلَمُ رَجُلاً أَبْعَدَ مِنَ الْمَسْجِدِ مِنْهُ وَكَانَ لا تُخْطِئُهُ صَلَاةٌ فَقِيلَ لَهُ أَوْ فَقُلْتُ لَهُ لَوِ اشْتَرَيْتَ حِماراً تَرْكَبُهُ فِي الظُّلْمَاءِ وَفِي الرَّمْضَاءِ فَقَالَ مَا يَسُرُّنِي أَنَّ
مَنْزِلِي إِلَى جَنْبِ الْمَسْجِدِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ يُكْتَبَ لِي مَمْشَاء إِلَى الْمَسْجِدِ وَرُجُوعِي إِذَا رَجَعْتُ إِلَى أَهْلِي فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ جَمَعَ اللَّهَ ذَلِكَ كُلَّهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ إِنَّ لَكَ مَا احْتَسَبْتَ الرَّمْضَاءُ
الْأَرْضُ الَّتِي أَصَابَهَا الْحَرُّ الشَّدِيدُ .
১৩৭। উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সম্পর্কে আমি জানতাম যে, তার চেয়ে আর কেউ মসজিদ থেকে অতদূরে ছিল না। সে কখনো জামা’আত (অর্থাৎ জামা’আতের সাথে নামায) হারাত না। তাকে বলা হল অথবা আমি তাকে বললাম, তুমি একটি গাধা খরিদ করে তাতে চড়ে দিনে ও রাতে, অন্ধকার ও গরমে মসজিদে আসতে পার। সে বলল, মসজিদের নিকটে আমার বাড়ি হওয়া আমার ভালো লাগে না। আমি তো চাই যে, মসজিদে আমার আসা এবং পরিবারবর্গের নিকট ফিরে যাওয়া- এসবই আমার আমলনামায় লিখিত হোক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তোমার জন্য এসবই জমা করে রেখেছেন। ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: তুমি যে সাওয়াবের আশা করেছ তা তোমার জন্য আছে।
۱۳۸ – عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعُونَ خَصْلَةً أَعْلَاهَا مَنِيْحَةُ الْعَنْزِ مَا مِنْ عَامِل يَعْمَلُ بِخَصْلَةٍ مِنْهَا رَجَاءَ ثَوَابِهَا وَتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا إِلَّا أَدْخَلَهُ
اللَّهُ بِهَا الجنَّةَ رَوَاهُ الْبُخَارِي المَنِيحَةُ أَنْ يُعْطِيَهُ إِيَّاهَا لِيَأْكُلَ لَبَنَهَا ثُمَّ يَرُدَّهَا إِلَيْهِ .
১৩৮। আবদুল্লাহ ইবনে আম্ ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: চল্লিশটি সৎ কাজের মধ্যে উচ্চতম কাজ হচ্ছে দুধ পান করার জন্য কাউকে উন্নী ধার দেয়া। যে ব্যক্তি এ চল্লিশটি কাজের কোনটি সাওয়াবের আশায় করে এবং তাতে (প্রতিদানের) যে ওয়াদা আছে তা বিশ্বাস করে, তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
ইমাম বুখারী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
۱۳۹ – عَنْ عَدِي بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ – متفق عليه وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلا
سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلَا يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ وَيَنظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلا يَرَى إِلا مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلَا يَرَى إِلَّا النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمَرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدُ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ .
১৩৯। আদী ইবনে হাতিম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আগুন থেকে বাঁচ, একটা খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের প্রত্যেকের সাথে অচিরেই তার রব কথা বলবেন এমন অবস্থায় যে, উভয়ের মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। মানুষ তার ডান দিকে তাকাবে তো নিজের কৃতকর্মই দেখতে পাবে, বাম দিকে তাকাবে তো নিজের কৃতকর্মই দেখতে পাবে, সামনে তাকাবে তো তার মুখের সামনে আগুন দেখতে পাবে। কাজেই তোমরা একটা খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও আগুন থেকে বাঁচ। যে ব্যক্তি তাও না পায় সে উত্তম কথা দ্বারা (আগুন থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে)।
١٤٠ – عَن أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأكْلَةَ فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا – رواه مسلم والأكلةُ بِفَتْحِ الْهَمْزَةِ وَهِيَ الْغَدْوَةُ أَوِ
الْعَشْوَةُ .
১৪০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ অবশ্যই তাঁর বান্দার প্রতি এজন্য সন্তুষ্ট হন যে, সে কোন কিছু খেয়ে তাঁর প্রশংসা করে অথবা কোন কিছু পান করে তাঁর প্রশংসা করে। (মুসলিম)
١٤١ – عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةً قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَجِدْ ؟ قَالَ يَعْمَلُ بِيَدَيْهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدِّقُ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ ؟ قَالَ يُعِينُ ذَا الْحَاجَةِ
الْمَلْهُوفَ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ قَالَ يَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ أَوِ الْخَيْرِ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَفْعَلُ قَالَ يُمْسِكُ عَنِ الشَّرِّ فَانَّهَا صَدَقَةٌ متفق عليه ..
১৪১। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: প্রত্যেক মুসলিমের উপর দান করা ওয়াজিব। এক সাহাবী বলেন, তবে যদি সে (সাদাকা বা দান করার মত) কোন কিছু না পায়? তিনি বলেন: তাহলে সে নিজ হাতে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং সাদাকাও দেবে। সাহাবী বলেন, সে যদি তা না পারে? তিনি বলেন: তাহলে সে দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করবে। সাহাবী বলেন, সে যদি তাও না পারে? তিনি বলেন: তাহলে সে সৎ অথবা উত্তম কাজের হুকুম করবে। সাহাবী বলেন, যদি সে এটাও না করতে পারে? তিনি বলেন: তাহলে সে (অন্তত) নিজেকে মন্দ কাজ
থেকে বিরত রাখবে। আর এটা তার জন্য সাদাকাস্বরূপ। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদ : ১৪ – ইবাদাত-বন্দেগীতে ভারসাম্য বজায় রাখা
ইবাদাত-বন্দেগীতে ভারসাম্য বজায় রাখা [ মূল আরবী “ইক্তিসাদ” শব্দের অর্থ হচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ ও মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করা। কোন কাজে সীমা লংঘন না করা, বাড়াবাড়ি না করা এবং মাত্রাতিরিক্ত না করা ] ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : طَهُ مَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لِتَشْقَى .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “তা-হা-। আমি তোমার উপর আল কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি কষ্ট ভোগ করবে।” (সূরা তা-হাঃ ১)
وَقَالَ تَعَالَى : يُرِيدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ .
(২) “আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা চান না।” (সূরা আল বাকারা: ১৮৫)
١٤٣ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا إِمْرَأَةً قَالَ مَنْ هَذِهِ ؟ قَالَتْ هَذِهِ فَلَانَةٌ تَذْكُرُ مِنْ صَلَاتِهَا قَالَ مَهُ عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ فَوَاللَّهِ لَا يَمَلُّ اللَّهُ حَتَّى تَمَلُّوْا وَكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ
إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ صَاحِبُهُ عَلَيْهِ – متفق عليه وَمَهُ كَلِمَةٌ نَهْي وَزَجْرٍ وَمَعْنَى لَا يَمَلُّ اللَّهُ أَنْ لَا يَقْطَعُ ثَوَابَهُ عَنْكُمْ وَجَزَاءَ أَعْمَالِكُمْ وَيُعَامِلُكُمْ مُعَامَلَةَ الْمَالِ حَتَّى تَمَلُّوا فَتَتْرَكُوا فَيَنْبَغِي لَكُمْ أَنْ تَاخُذُوا مَا تُطِيقُونَ الدَّوامَ عَلَيْهِ لِيَدُومَ
ثَوَابُهُ لَكُمْ وَفَضْلُهُ عَلَيْكُمْ.
১৪২। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন। তখন এক মহিলা তাঁর নিকট বসা ছিল। নবী (স) জিজ্ঞেস করলেন: মহিলাটি কে? আয়িশা (রা) বলেন, এ হচ্ছে অমুক মহিলা, সে তার নামায সম্পর্কে আলোচনা করছে। তিনি বলেন: থাম, সব কাজ তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তোমাদের উপর ওয়াজিব। আল্লাহর শপথ! তোমরা ক্লান্ত হলেও আল্লাহ (সাওয়াব দিতে) ক্লান্ত হন না। আর আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় দীনী কাজ তা-ই যার কর্তা সে কাজ নিয়মিত করে। (বুখারী, মুসলিম
١٤٣ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا
أخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُوْهَا وَقَالُوا أَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَأَصَلَّى اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ أَخَرُ وَأَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أَفْطِرُ وَقَالَ أَخَرُ وَأَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوْجُ
أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا ؟ أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمُ لِلَّهِ وَاتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأَفْطِرُ وَأَصَلَّى وَأَرْقُدُ وَاتَزَوْجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي – متفق عليه .
****[ মুমিনের জীবনের সব কাজের মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা দরকার। কোন একদিকে বেশি ঝুঁকে পড়লে অন্যদিকের কাজের অবশ্যই ক্ষতি হবে। এজন্য প্রতিটি কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী সময়, অর্থ ও শ্রম দান করা অপরিহার্য। যে কোন কাজ নিয়মিত করলে তাতে বরকত হয় এবং তাতে যোগ্যতাও বাড়ে। নিয়মিত কাজ অল্প হলেও সেটা স্থায়ী হয় এবং তাতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কোন ব্যাপারে সীমা লংঘন করে বাড়াবাড়ি করলে বা মাত্রাতিরিক্ত করলে তাতে যেমন বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়, তেমনি তাতে ক্লান্তও হয়ে যেতে হয় এবং এতে যোগ্যতার বিকাশও হয় না। কারণ জীবনের কাজ তো অনেক। আল্লাহর হক আদায় করার সাথে সাথে বিভিন্ন বান্দার হকও আদায় করতে হয়। আবার নিজের জরুরী ও প্রয়োজনীয় হকও আদায় করতে হয়। ভারসাম্য না থাকলে কোন হকই ঠিকমত আদায় করা সম্ভব হয় না। হঠাৎ করে জন্মায় এসে অনেক কাজ করে ফেলা এবং তারপর আর কোন তৎপরতা না থাকা ইসলামের মেজাজ নয়। তাই প্রত্যেকের পূর্ণ শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় সব কাজ নিয়মিতভাবে করতে থাকা আল কুরআন ও হাদীসের দাবি। (অনুবাদক)]।
১৪৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনজন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণের বাড়িতে আসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদাত সম্পর্কে জানার জন্য। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হল, তারা যেন এটাকে (নিজেদের জন্য) কম মনে করল এবং বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমাদের তুলনা কোথায়? তাঁর পূর্বাপর সব গুনাহ তো মাফ করে দেয়া হয়েছে। তাদের একজন বলল, আমি অনবরত সারা রাত নামাযে মগ্ন থাকব। আরেকজন বলল, আমি অনবরত রোযা থাকব, কখনও রোযাহীন থাকব না। একজন বলল, আমি নারীদের থেকে দূরে থাকব এবং কখনও বিয়ে করব না। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ তোমরা কি এরূপ এরূপ কথা বলেছ? আল্লাহর শপথ। তোমাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশি ভয় করি এবং বেশি তাওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু আমি তো রোযা রাখি আবার খাই, নামায পড়ি আবার ঘুমাই এবং বিয়ে-শাদীও করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত (জীবন পদ্ধতি) পালন থেকে বিরত থাকবে সে আমার (দলভুক্ত) নয়। (বুখারী, মুসলিম)
١٤٤ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ هَلَكَ الْمُتَنَطِعُونَ قَالَهَا ثَلَاثًا – رواه مسلم الْمُتَنَطِعُونَ الْمُتَعَمِّقُونَ الْمُشَدِّدُونَ فِي غَيْرِ مَوْضِعِ التَّشْدِيدِ.
১৪৪। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়েছে। তিনি এ কথা তিনবার বলেন। (মুসলিম)
١٤٥ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنْ الدِّينَ يُسرِّ وَلَنْ يُشَادُ الدِّينُ إِلَّا غَلَبَهُ فَسَدِدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا وَاسْتَعِينُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرُّوْحَةِ وَشَيْ مِنَ الدُّلجة – رواه البخاري وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ
سَدِدُوا وَقَارِبُوا وَاغْدُوا وَرُوحُوا وَشَيْ مِنَ الدُّلْجَةِ الْقَصْدَ الْقَصْدَ تَبْلُغُوا – قَوْلُهُ الدِّينُ هُوَ مَرْفُوعَ عَلَى مَا لَمْ يُسَمٌ فَاعِلُهُ وَرُوِيَ مَنْصُوبًا وَرُوِيَ لَنْ يُشَادُ الدِّينَ أَحَدٌ وَقَوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلا غَلَبَهُ أَي غَلَبَهُ الدِّينُ وَعَجَزَ
ذَلِكَ الْمُشَادُ عَنْ مُقَاوَمَةِ الدِّينِ لِكَثْرَةِ طَرُقِهِ وَالْغَدْوَةُ سَيْرُ أُولِ النَّهَارِ وَالرُّوْحَةُ أَخِرِ النهار والدلجة آخر اللَّيْلِ وَهذَا اسْتِعَارَةً وَتَمْثِيلٌ وَمَعْنَاهُ اسْتَعِينُوا عَلَى طَاعَة اللهِ عَزَّ وَجَلَّ بِالْأَعْمَالِ فِي وَقْتِ نَشَاطِكُمْ وَفَرَاغِ قُلُوْبِكُمْ بِحَيْثُ
تَسْتَلِدُونَ العِبَادَةَ وَلَا تَشَامُونَ وَتَبْلُغُونَ مَقْصُودَكُمْ كَمَا أَنَّ الْمُسَافِرَ الْحَاذِقَ يَسِيرُ فِي هَذِهِ الأوقاتِ وَيَسْتَرِيحُ هُوَ وَدَابَّتُهُ فِي غَيْرِهَا فَيَصِلُ الْمَقْصُودَ بِغَيْرِ تَعَب وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
১৪৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দীন সহজ। কোন ব্যক্তি এ দীনকে কঠিন বানালে তা তাকে পরাভূত করবে। কাজেই তোমরা ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন কর, সামর্থ্য অনুযায়ী আমল কর এবং সুখবর গ্রহণ কর। আর সকাল, সন্ধ্যা ও শেষ রাতের কিছু অংশে (ইবাদাত করে) আল্লাহর সাহায্য চাও।
ইমাম বুখারী এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। আর বুখারীর অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর ও সামর্থ্য অনুযায়ী আমল কর এবং সকালে চল (ইবাদাত করার উদ্দেশে), রাতে চল এবং শেষ রাতের কিছু অংশে, ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন কর, মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। [ এ হাদীসের অর্থ এটা নয় যে, দীনের শুধু ঐ সমস্ত সহজ কাজ করতে হবে যাতে কোন ঝুঁকি নেই, ত্যাগ নেই, বিপদ নেই এবং দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দে কোনরূপ ব্যাঘাত ঘটে না। বরং এর তাৎপর্য এই যে, দীনের কাজ বহু রয়েছে। আল্লাহ ও বান্দার হকও অনেক। এসব কাজ করা ও হক আদায় করা অবশ্যকর্তব্য। সেজন্য সবগুলো কাজই যথাযথ গুরুত্ব সহকারে নিয়মিতভাবে যথাসাধ্য সরল ও সহজভাবে করে যেতে হবে। সব কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে হবে। এরূপ করলে দীনের জন্য জান-মাল কোনবানী করাও সহজ হয়ে যায়। নতুবা অযথা কঠোরতা অবলম্বন করলে দীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বভারের চাপে আল্লাহর পথে টিকে থাকাই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। (অনুবাদক) ] ।
١٤٦ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَسْجِدَ فَإِذَا حَبْلٌ مَمْدُودٌ بَيْنَ السَّارِيَتَيْنِ فَقَالَ مَا هُذَا الْحَبْلُ؟ قَالُوا هَذَا حَبْلٌ لزَيْنَبَ فَإِذَا فَتَرَتْ تَعَلَّقَتْ بِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُلُوهُ
لِيُصَلِّ أَحَدُكُمْ نَشَاطَهُ فَإِذَا فَتَرَ فَلْيَرْقُدْ – متفق عليه .
১৪৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে দেখতে পেলেন একটি রশি দু’টি খুঁটির মাঝখানে বাঁধা রয়েছে। তিনি বলেন: এ রশিটা কিসের? সাহাবীগণ বলেন, এটা যায়নাবের রশি। তিনি যখন নামায পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যান তখন এ রশিতে ঝুলে পড়েন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এটা খুলে ফেল। তোমাদের প্রত্যেকের পক্ষে তার শক্তি ও সতেজ থাকা অবস্থায় নামায পড়া উচিত এবং সে যখন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন ঘুমানো উচিত। (বুখারী, মুসলিম)
١٤٧ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلَّى فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ فَإِنْ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ لَا يَدْرِي لَعَلَّهُ يَذْهَبُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبُّ نَفْسَهُ –
متفق عليه .
১৪৭। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের কারো নামাযরত অবস্থায় ঘুম এলে সে যেন শুয়ে পড়ে, যাবত না তার ঘুম চলে যায়। কেননা তন্দ্রা অবস্থায় নামায পড়লে সে হয়ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিতে থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)
١٤٨ – وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنْتُ أَصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَوَاتِ فَكَانَتْ صَلَاتُهُ قَصُدًا وَخُطْبَتُهُ قَصْدا -رواه مسلم قولُهُ قَصْداً أَي بَيْنَ الطُّولِ وَالْقِصَرِ .
১৪৮। জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায আদায় করতাম। তাঁর নামায ও খুতবা ছিল নাতিদীর্ঘ। (মুসলিম)
١٤٩ – وَعَنْ أَبِي جُحَيْفَةً وَهْبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ أَخَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ سَلْمَانَ وَآبِي الدَّرْدَاءِ فَزَارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرْدَاءِ فَرَأَى أَمْ الدرداء مُتَبَدِّلَةً فَقَالَ مَا شَأْنُكَ ؟ قَالَتْ أَخُوكَ أَبُو الدَّرْدَاءِ لَيْسَ لَهُ
حَاجَةٌ فِي الدُّنْيَا فَجَاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَامًا فَقَالَ لَهُ كُلَّ فَإِنِّي صَائِمٌ قَالَ مَا أَنَا بأكل حَتَّى تَأْكُلَ فَأَكَلَ فَلَمَّا كَانَ اللَّيْلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّرْدَاءِ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ نَمْ فَنَامَ ثُمَّ ذَهَبَ يَقُوْمُ فَقَالَ لَهُ نَمْ فَلَمَّا كَانَ أُخِرُ اللَّيْلِ قَالَ
سَلْمَانُ قُمِ الْآنَ فَصَلِّيَا جَمِيعًا فَقَالَ لَهُ سَلْمَانُ إِنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَلِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا فَاعْطِ كُلِّ ذِي حَقٌّ حَقَّهُ فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
صَدَقَ سَلْمَانُ – رواه البخاري .
১৪৯। আবু জুহাইফা ওয়াহব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ও আবুদ্ দারদা (রা)-এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন। সালমান (রা) আবু দারদার সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে উন্মুদ্ দাদাকে (আবুদ্ দাদার স্ত্রী) পুরোনো খারাপ কাপড় পরিহিতা অবস্থায় দেখতে পান। তিনি তার অবস্থা জিজ্ঞেস করলে উন্মুদ্ দাদা বলেন, তোমার ভাই আবুদ্ দাদার দুনিয়ায় কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। এরপর আবুদ্ দাদা (রা) এসে সালমানের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করে তাকে বলেন, ‘তুমি খাও, আমি রোযা রেখেছি’। সালমান (রা) বলেন, তুমি না খেলে আমি খাব না। তখন আবুদ্ দাদাও খেলেন। এরপর রাতে আবুদ্ দাদা নামায পড়তে উঠতে গেলে সালমান (রা) তাকে ঘুমাতে বলেন। তিনি ঘুমালেন। পরে আবার উঠতে গেলে সালমান এবারও তাকে ঘুমাতে বলেন। শেষ রাতে সালমান (রা) তাকে উঠতে বলেন এবং দু’জনে একত্রে নামায পড়লেন। তারপর সালমান (রা) তাকে বলেন, তোমার উপর তোমার রবের (আল্লাহর) হক আছে, তোমার উপর তোমার নফসের হক আছে, তোমার উপর তোমার পরিবারের হক আছে। কাজেই প্রত্যেক হকদারের হক আদায় কর। তারপর আবুদ দারদা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সব কথা বললে তিনি বলেন: সালমান ঠিক কথা বলেছে। (বুখারী)
١٥٠ وَعَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ أخْبِرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي أَقُولُ وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ وَلَاقُوْمَنْ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْتَ الَّذِي تَقُولُ
ذَلِكَ؟ فَقُلْتُ لَهُ قَدْ قُلْتُهُ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّكَ لَا تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ قصم وَاقْطِرْ وَلَمْ وَقُمْ وَصُمَّ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنَّ الْحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ قُلْتُ فَإِنِّي أَطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ قَالَ
فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرُ يَوْمَيْنِ قُلْتُ فَإِنِّي أَطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ قَالَ فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرُ يَوْمًا فَذَلِكَ صِيَامُ داودَ عَلَيْهِ السَّلامُ وَهُوَ أَعْدَلُ الصِّيَامِ وَفِي رِوَايَةٍ هُوَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ فَقُلْتُ فَإِنِّي أطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ وَلَأَنْ أَكُونَ قَبِلْتُ الثَّلَاثَةَ الْأَيَّامِ الَّتِي قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ إِلَى مِنْ أَهْلِي وَمَالِي . وفي رواية أَلَمْ أَخْبَرُ أَنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وَتَقُومُ اللَّيْلَ: قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَلَا
تَفْعَلْ صُمْ وَأَفْطِرُ وَنَمْ وَقُمْ فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنْ لِعَيْنَيْكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ بِحَسْبِكَ أَنْ تَصُومَ فِي كُلِّ شهر ثلاثةَ أَيَّامٍ فَإِنْ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أَمْثَالِهَا فَإِنَّ ذَلِكَ صِيَامُ
الدِّهْرِ فَشَدَدْتُ فَشُدِّدَ عَلَى قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أَجِدُ قُوَّةً قَالَ صُمْ صِيَامَ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ وَلَا تَزِدْ عَلَيْهِ قُلْتُ وَمَا كَانَ صِيَامُ دَاوُدَ ؟ قَالَ نِصْفُ الدَّهْرِ فَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ يَقُولُ بَعْدَ مَا كَبِرَ يَا لَيْتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَةَ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . وفي رواية الم أَخْبَرُ أَنَّكَ تَصُومُ الدَّهْرَ وَتَقْرَأُ الْقُرْآنَ كُلَّ لَيْلَةٍ فَقُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلَمْ أَرِدْ بِذَلِكَ إِلَّا الْخَيْرَ قَالَ فَصُ صَوْمَ نَبِيِّ الله الله دَاوُدَ فَإِنَّهُ كَانَ أَعْبَدَ النَّاسِ وَاقْرًا الْقُرْآنَ فِي كُلِّ شَهْرٍ قُلْتُ يَا نَبِيُّ
اللَّهِ إِنِّي أَطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ؟ قَالَ فَاقْرَاهُ فِي كُلِّ عِشْرِينَ قُلْتُ يَا نَبِيُّ اللَّهِ إِنِّي أَطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ؟ قَالَ فَاقْرَاهُ فِي كُلِّ عَشْرٍ قُلْتُ يَا نَبِيُّ اللَّهِ إِنِّي أَطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ؟ قَالَ فَاقْرَأَهُ فِي كُلِّ سَبْعِ وَلَا تَزِدُ عَلَى ذَلِكَ
فَشَدَدْتُ فَشُدِّدَ عَلَى وَقَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّكَ لَا تَدْرِي لَعَلَّكَ يَطولُ بِكَ عُمُر قَالَ فَصِرْتُ إِلَى الَّذِي قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ إِنِّي كُنْتُ قَبِلْتُ رُخْصَةً نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وفي روايةٍ وَإِنَّ لِوَلَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا . وَفِي رِوَايَةٍ لَا صَامَ مَنْ صَامَ الْأَبَدَ ثَلَاثًا وَفِي رِوَايَةٍ أَحَبُّ الصِّيَامِ إِلى اللهِ صِيَامُ دَاوُدَ وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلى اللهِ صَلَاةُ دَاوُدَ كَانَ يَنَامُ نِصْفَ اللَّيْلِ وَيَقُوْمُ ثُلُثَهُ وَيَنَامُ سُدُسَهُ وَكَانَ يَصُومُ
يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا ولا يفر اذا لاقى. وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ أَنْكَحَنِي أَبِي امْرَأَةً ذَاتَ حَسَبٍ وَكَانَ يَتَعَاهَدُ كَنْتَهُ أَيْ امْرَأَةً وَلَدِهِ فَيَسْأَلُهَا عَنْ بَعْلِهَا فَتَقُولُ لَهُ نِعْمَ الرَّجُلُ مِنْ رَجُلٍ لَمْ يَطَأَ لَنَا فِرَاشًا وَلَمْ يُفَبِّشُ لَنَا كَنَفًا مُنْدُ آتَيْنَاهُ فَلَمَّا
طَالَ ذَلِكَ عَلَيْهِ ذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ الْقَنِي بِهِ فَلَقِيتُهُ بَعد ذلِكَ فَقَالَ كَيْفَ تَصُومُ؟ قُلْتُ كُلِّ يَوْمٍ قَالَ وَكَيْفَ تَخْتِمُ؟ قُلْتُ كُلَّ لَيْلَةٍ وَذَكَرَ نَحْوَ مَا سَبَقَ وَكَانَ يَقْرَأُ عَلَى بَعْضٍ أَهْلِهِ السَّبْعَ الَّذِي يَقْرَؤُهُ
يَعْرِضُهُ مِنَ النَّهَارِ لِيَكُونَ أَخَفْ عَلَيْهِ بِاللَّيْلِ وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يتقوى أفطرَ أَيَّامًا وَأَحْصَى وَصَامَ مِثْلَهُنَّ كَرَاهِيَةَ أَنْ يُتْرُكَ شَيْئًا فَارَقَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. كُلِّ هذهِ الرِّوَايَاتِ صَحِيحَةٌ مُعْظَمُهَا فِي الصَّحِيحَيْنِ وَقَلِيلٌ
مِنْهَا فِي أَحَدِهِمَا .
১৫০। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবহিত করা হল যে, আমি বলে থাকি: আল্লাহর শপথ। যত দিন জীবিত থাকব তত দিন আমি রোযা রাখব এবং রাতে নামায পড়তে থাকব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: তুমি নাকি এরূপ কথা বলে থাক? আমি বললাম, আমার মা-বাপ আপনার জন্য উৎসর্গীত। ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি ঠিকই এ কথা বলেছি। তিনি বলেন: তুমি তা করতে সক্ষম হবে না, কাজেই রোযাও রাখ আবার রোযা ছেড়েও দাও, তেমনি নিদ্রাও যাও আবার রাত জেগে নামাযও পড়, আর প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখ। কারণ সৎ কাজে দশ গুণ সাওয়াব পাওয়া যায় এবং এটা হামেশা রোযা রাখার সমতুল্য হবে। আমি বললাম, আমি এর চাইতে বেশি শক্তি রাখি। তিনি বলেন: তাহলে তুমি একদিন রোযা রাখ ও দু’দিন খাও। আমি বললাম, আমি এর চাইতেও বেশি শক্তি রাখি। তিনি বলেন: তাহলে একদিন রোযা রাখ ও একদিন খাও এবং এটি হচ্ছে দাউদ আলাইহিস সালামের রোযা, আর এটিই হচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ রোযা। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে, আর এটিই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ রোযা। আমি বললাম, আমি এর চাইতেও বেশি শক্তি রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এছাড়া আর কোনো শ্রেষ্ঠ রোযা নেই। (আবদুল্লাহ বুড়ো বয়সে বলতেনঃ) হায়! আমি যদি সেই তিন দিনের রোযা কবুল করে নিতাম যার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তাহলে তা আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চাইতে আমার কাছে বেশি প্রিয় হতো।
অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি কি অবহিত হইনি, তুমি দিনে রোযা রাখ ও রাতে নফল নামায পড়? আমি জবাব দিলাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন: এমনটি কর না, রোযা রাখ, আবার ইফতারও কর, ঘুমাও আবার ঘুম থেকে উঠে নামাযও পড়। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার দুই চোখের উপর তোমার হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার উপর তোমার মেহমানেরও হক আছে। আর প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কারণ প্রতিটি নেকীর বদলে তুমি দশ গুণ সাওয়াব পাবে। আর এটা সারা বছর বা সর্বক্ষণ রোযা রাখার সমান হয়ে যায়। আমি (আবদুল্লাহ) নিজে আমার উপর কঠোরতা আরোপ করার ফলে আমার উপর কঠোরতা চেপেছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি শক্তি অনুভব করছি। তিনি জবাব দিলেন: আল্লাহর নবী দাউদের রোযা রাখ এবং তার উপর বৃদ্ধি করো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, দাউদের রোযা কেমন ছিল। জবাব দিলেন: অর্থ বছর (অর্থাৎ একদিন রোযা রাখা একদিন ইফতার করা)। আবদুল্লাহ (রা) বুড়ো হবার পর বলতেন: হায়, আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করতাম।
অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমাকে কি খবর দেয়া হয়নি, তুমি সারা বছর রোযা রাখ এবং প্রত্যেক রাতে আল কুরআন খতম কর? আমি বললাম, হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তবে আমি এ থেকে কল্যাণ লাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি। তিনি বলেন: তাহলে আল্লাহর নবী দাউদের (নিয়মে) রোযা রাখ। কারণ তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইবাদাতগুজার, আর প্রতি মাসে একবার আল কুরআন খতম কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী। আমি এর চাইতে বেশি করার ক্ষমতা রাখি। তিনি বলেন: তাহলে বিশ দিনে খতম কর। বললাম, হে আল্লাহর নবী।
আমি এর চাইতেও বেশি ক্ষমতা রাখি। তিনি বলেন: তাহলে দশ দিনে খতম কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এর চাইতেও বেশি শক্তি রাখি। তিনি বলেন: তাহলে এক সপ্তাহে আল কুরআন খতম কর এবং এর বেশি নয়। এভাবে আমি নিজেই কঠোরতা আরোপ করেছি এবং তা আমার উপর আরোপিত হয়েই গেছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন: তুমি জানো না, সম্ভবত তোমার বয়স দীর্ঘায়িত হবে। আবদুল্লাহ (রা) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন আমি সেখানে পৌঁছে গেছি। কাজেই যখন আমি বার্ধক্যে পৌঁছে গেলাম তখন আমার আফসোস হল- যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুবিধা গ্রহণ করতাম!
অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: তোমার ছেলেরও তোমার উপর হক আছে। আর এক রিওয়ায়াতে আছে: যে হামেশা রোযা রাখে সে রোযাই রাখে না। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: আল্লাহর কাছে সবচাইতে পছন্দনীয় রোযা হচ্ছে দাউদের রোযা এবং সবচাইতে পছন্দনীয় নামায হচ্ছে দাউদের নামায। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, রাতের এক-তৃতীয়াংশের সময় ইবাদাত করতেন এবং ষষ্ঠাংশে (আবার) ঘুমাতেন। আর তিনি একদিন রোযা রাখতেন, একদিন ইফতার করতেন এবং দুশমনের মুকাবিলায় আসলে পেছনে হটতেন না।
অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, আবদুল্লাহ (র) বলেন, আমার পিতা একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেন। আমার পিতা তাঁর পুত্রের স্ত্রীকে শপথ দিয়ে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। আমার স্ত্রী তাকে জবাবে বলত: খুব ভালো লোক, এমন লোক যে, এখনো আমার সাথে বিছানায় শয়ন করেনি, পরদাও খোলেনি যখন থেকে আমি তার কাছে এসেছি। ব্যাপারটি দীর্ঘায়িত হলে আমার পিতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রসংগটি উত্থাপন করলেন। তিনি বলেন: তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। অতঃপর আমি তাঁর সাথে মুলাকাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কিভাবে রোযা রাখ? আমি বললাম, প্রতিদিন। তুমি আল কুরআন কিভাবে খতম কর? জবাব দিলাম, প্রতি রাতে। হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্ববৎ। আর আবদুল্লাহ (রা) তার পরিবারের কাউকে এক-সপ্তমাংশ শুনিয়ে দিতেন, যা তিনি পড়তেন, যাতে রাতে তার বোঝা হালকা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ যখন আরাম করতে চাইতেন তখন কয়েকটা দিন গণনা করে ইফতার করতেন এবং পরে সে দিনগুলোর রোযা কাযা করে নিতেন। কারণ তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে কথাসহ পৃথক হয়েছেন তার খেলাপ করাকে তিনি অপছন্দ করতেন।
ইমাম নববী (র) বলেন, এই বর্ণনাগুলির সবই সহীহ, এদের অধিকাংশই বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে এবং মাত্র সামান্য অংশ এ দু’টি গ্রন্থের কোন একটি থেকে গৃহীত হয়েছে।
١٥١ – وَعَنْ أَبِي رِجْعِي حَنْظَلَةَ بْنِ الرَّبِيعِ الْأَسَيْدِي الْكَاتِبِ أَحَدٍ كُتَابِ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ؟ قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ مَا تَقُولُ: قُلْتُ
نَكُوْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُذكِّرْنَا بِالْجَنَّةِ وَالنَّارِ كَأَنَّا رَأَى عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِندِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ والضَّيِّعَاتِ نَسِينَا كَثِيرًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَوَاللَّهِ إِنَّا
لَتَلْقَى مِثْلَ هَذَا فَانْطَلَقْتُ أنا وَأَبُو بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا ذَاكَ؟ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ تَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرْنَا بِالنَّارِ
وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأَى الْعَيْنِ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَشَنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ والضَّيِّعَاتِ نَسِينَا كَثِيرًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِكرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ
عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ثَلاث مرات . رواه مسلم قوله ربعي بِكَسْرِ الرَّاءِ وَالْأَسَيِّدِي بِضَمَ الْهَمْزَةِ وَفَتْحِ السِّيْنِ وَبَعْدَهَا يَاءُ مُشَدَّدَةٌ مَكْسُورَةٌ وَقَوْلُهُ عَافَسْنَا هَوَ بِالْعَيْنِ وَالسَّيْنِ الْمُهْمَلَتَيْنِ
أَي عَالَجْنَا وَلَا عَبْنَا وَالضَّيِّعَاتُ الْمَعَابِسُ .
১৫১। আবু রিয়ী ইবনে হানযালা ইবনে রিবৃঙ্গ উসাইয়েদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সচিব ছিলেন। তিনি বলেন, আবু বাকর (রা) একদিন আমার সাথে সাক্ষাত করে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছ হানযালা? আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। আবু বাকর (রা) বিস্মিত হয়ে বলেন, সুবহানাল্লাহ্, তুমি কি বলছ? আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যে থাকলে তিনি আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের কথা বলে উপদেশ দেন। তখন আমরা যেন তা চোখের সামনে দেখতে পাই। কিন্তু যখন তাঁর কাছ থেকে চলে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও ধন-সম্পত্তির ঝামেলায় পড়ি, তখন অনেক কথাই ভুলে যাই। আবু বাকর (রা) বলেন, আমার অবস্থাও এইরূপ। তারপর আমি ও আবু বাকর (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, সে আবার কি? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমরা আপনার কাছে থাকলে আপনি আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের কথা বলে উপদেশ দিয়ে থাকেন। তখন আমরা যেন তা চোখের সামনে দেখতে পাই। কিন্তু যখন আপনার কাছ থেকে চলে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও ধন-সম্পত্তির ঝামেলায় পড়ি, তখন অনেক কথাই ভুলে যাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সেই আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরা আমার কাছে থাকাকালীন অবস্থায় যেরূপ হয় সব সময় তদ্রূপ থাকতে এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকতে, তাহলে ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় অর্থাৎ শায়িত অবস্থায় এবং তোমাদের চলার পথে তোমাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করত। কিন্তু হানযালা! (মানুষের অবস্থা) এক সময় এক রকম আরেক সময় আরেক রকম (স্বভাবতই) হয়ে থাকে। (তাই একে নিফাকের লক্ষণ মনে করা ঠিক নয়) তিনি এ কথা তিনবার বলেন। (মুসলিম)
١٥٢ – وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ فَسَأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا أَبُو إِسْرَائِيلَ نَذَرَ أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْسِ وَلَا يَقْعُدَ وَلَا يَسْتَظِلُّ وَلَا يَتَكَلَّمَ وَيَصُوْمَ فَقَالَ النَّبِيُّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلُّ وَلْيَقْعُدُ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ – رواه البخاري .
১৫২। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাদানকালে এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবীগণ বলেন, এ ব্যক্তি আবু ইসরাঈল। সে মানত করেছে যে, সে রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়ায় যাবে না এবং কারও সাথে কথা বলবে না, আর রোযা রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তাকে হুকুম দাও যেন সে কথা বলে, ছায়ায় যায়, বসে এবং তার রোযা পূর্ণ করে। (বুখারী)
অনুচ্ছেদ : ১৫ – সৎ কাজে সদা সক্রিয় ও তৎপর থাকতে হবে
সৎ কাজে সদা সক্রিয় ও তৎপর থাকতে হবে।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْآمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “ঈমানদার লোকদের জন্য এখনও কি সেই সময় আসেনি যে, তাদের দিল আল্লাহর যিক্র বিগলিত হবে, তাঁর নাযিল করা মহাসত্যের সামনে অবনত হবে? তারা সেই লোকদের মত যেন না হয় যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, পরে দীর্ঘকাল তাদের উপর দিয়ে চলে গেলে তাদের দিল শক্ত হয়ে যায়।” (সূরা আল হাদীদঃ ১৬)
وَقَالَ تَعَالَى : ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلَى أَثَارِهِمْ بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ وَجَعَلْنَا فِي قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَافَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةٌ ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقٍّ رِعَايَتِهَا .
(২) “অতঃপর আমি তাদের পশ্চাতে অনুগামী করেছিলাম আমার রাসূলগণকে এবং আমি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে পাঠিয়েছি এবং তাকে ইনজীল কিতাব দিয়েছি এবং তার অনুসারীদের দিলে আমি দয়া ও সহানুভূতি সৃষ্টি করে দিয়েছি। আর ‘রাহবানিয়াত’ তারা নিজেরা উদ্ভাবন করে নিয়েছে। আমি ওটা তাদের উপর ফরয করিনি। কিন্তু আল্লাহর সন্তোষ সন্ধানে তারা নিজেরাই এই বিদআত বানিয়ে নিয়েছে। আর তারা তা যথার্থভাবে পালন করেনি।” (সূরা আল হাদীদ: ২৭)
وَقَالَ تَعَالَى : وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا .
(৩) “আর তোমরা সেই নারীর মত হয়ে যেও না যে মজবুত করে সূতা কাটার পরে নিজেই সেটাকে টুকরা টুকরা করে ফেলে।” (সূরা আন্ নাহল: ৯২)
وَقَالَ تَعَالَى : وَاعْبُدُ رَبِّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ .
(৪) “তোমার মৃত্যু পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক।” (সূরা আল-হিজরঃ ৯৯)
وَأَمَّا الْأَحَادِيثُ فَمِنْهَا حَدِيثُ عَائِشَةَ وَكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ صَاحِبُهُ عَلَيْهِ وَقَدْ سَبَقَ فِي الْبَابِ قَبْلَهُ .
এ অনুচ্ছেদের হাদীসগুলোর মধ্যে আয়িশা (রা) বর্ণিত এ হাদীসও শামিল করা যায়, যা ১৪২ ক্রমিকে বর্ণিত হয়েছে, যার বিষয়বস্তু হল: “আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে প্রিয় দীনী কাজ সেটা যার কর্তা সে কাজ নিয়মিত করে”।
١٥٣ – وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ مِنَ اللَّيْلِ أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِّنْهُ فَقَرَاهُ مَا بَيْنَ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الظُّهْرِ كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَآهُ مِنَ اللَّيْلِ – رواه مسلم .
১৫৩। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে তার ওযীফা না পড়েই ঘুমায় অথবা কিছু বাকি রয়ে যায়, তারপর তা ফজর ও যোহরের নামাযের মাঝখানে পড়ে নেয়, তার জন্য (ঐ সাওয়াবই) লিখে দেয়া হয় যে, সে যেন তা রাতেই পড়েছে। (মুসলিম)
١٥٤ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَبْدَ اللهِ لَا تَكُنْ مِثْلَ فُلانٍ كَانَ يَقُوْمُ اللَّيْلَ فتَرَكَ قِيَامَ اللَّيْلِ – متفق عليه .
১৫৪। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে আবদুল্লাহ! অমুক লোকের মত হয়ো না- সে রাতে ইবাদাত করত, তারপর তা ছেড়ে দিয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)
١٥٥ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَاتَتْهُ الصَّلاةُ مِنَ اللَّيْلِ مِنْ وَجَعِ أَوْ غَيْرِهِ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ ركعة – رواه مسلم .
১৫৫। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামায কোন যন্ত্রণা অথবা অন্য কোন কারণে ছুটে গেলে তিনি তার পরিবর্তে দিনে বার রাক’আত নামায পড়তেন (মুসলিম)।
অনুচ্ছেদ: ১৬ – সুন্নাতের হিফাযাত ও তদনুযায়ী আমল করা
সুন্নাতের হিফাযাত ও তদনুযায়ী আমল করা [ সুন্নাত শব্দটির অর্থ পথ, মত, আদর্শ, পন্থা, নিয়ম ইত্যাদি। এখানে ফিক্হ্ন শাস্ত্রের সুন্নাতের কথা বলা হয়নি। ফিক্হ্ন শাস্ত্রে শরীয়াতের বিভিন্ন নির্দেশকে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। ইসলামের সামগ্রিক পরিভাষায় সুন্নাতের মূল অর্থ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ, নিয়ম ও জীবন পদ্ধতি, যা তাঁর কথা, কাজ এবং তাঁর অনুমোদন দ্বারা জানা যায়। এই সুন্নাত পালনের কথাই এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এবং এ সুন্নাত পালনের প্রতি আল কুরআন ও হাদীসে জোর তাকিদ দেয়া হয়েছে। এটাই ঈমানের দাবি। (অনুবাদক) ] ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَا أَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে সে তোমাদেরকে বিরত থাকতে বলে তা থেকে বিরত থাক।” (সূরা আল হাশর: ৭)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى .
(২) “আর সে (রাসূল) মনগড়া কথা বলে না। এ তো ওহী যা তার প্রতি নাযিল করা হয়।” (সূরা আন্ নাজমঃ ৩-৪)
وَقَالَ تَعَالَى : قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ .
(৩) “বল, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা পোষণ কর, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১)
وَقَالَ تَعَالَى : لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ .
(৪) “প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি আশাবাদী তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল আহযাব: ২১)
وَقَالَ تَعَالَى : فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا .
(৫) “না, তোমার রবের শপথ! এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের পারস্পরিক মতভেদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক হিসাবে মেনে না নেবে। তারপর তুমি যে ফায়সালা দেবে সে সম্পর্কে তারা নিজেদের মনে কোন দ্বিধা বোধ করবে না, বরং তার নিকট নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সোপর্দ করে দেবে।” (সূরা আন্ নিসা: ৬৫)
وَقَالَ تَعَالَى : فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ.
(৬) “তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যাপারে মতপার্থক্য হয় তবে তাকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক।” (সূরা আন্ নিসা: ৫৯)। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ বলেন, অর্থাৎ আল কুরআন ও সুন্নাহর দিকে রুজু কর।
وَقَالَ تَعَالَى : مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ .
(৭) “যে রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল।” (সূরা আন্ নিসাঃ ৮০)
وَقَالَ تَعَالَى : وَإِنَّكَ لَتَهْدِى إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ صِرَاط الله .
(৮) “আর তুমি সঠিক পথ দেখিয়ে থাক, আল্লাহর পথ।” (সূরা আশ্ শূরা: ৬৩)
وَقَالَ تَعَالَى : فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ اليم.
(৯) “যারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, তাদের উপর কোন বিপর্যয় অথবা কষ্টদায়ক শান্তি আপতিত হবে।” (সূরা আন্ নূর : ৬৩)
وَقَالَ تَعَالَى : وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنْ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ .
(১০) “(হে নবীর স্ত্রীগণ।) তোমাদের ঘরে আল্লাহর যেসব আয়াত ও জ্ঞানের কথা পঠিত হয় তা তোমরা মনে রাখ।” (সূরা আল আহযাবঃ ৩৪)
وَالْآيَاتُ فِي الْبَابِ كَثِيرَةٌ. وَأَمَّا الْأَحَادِيثُ : ١٥٦ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ دَعُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ إِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَثَرَةٌ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ
شَيْءٍ فَاجْتَنِبُوهُ وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا استطعتم متفق عليه .
১৫৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি যেসব বিষয় তোমাদের নিকট বর্ণনা ত্যাগ করেছি, সেসব ব্যাপারে আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কোনো প্রশ্ন করো না)। তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের অত্যধিক প্রশ্ন ও নবীদের ব্যাপারে মতভেদের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। কাজেই আমি যখন কোন কিছু নিষেধ করি তখন তোমরা সেটা থেকে বিরত থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কিছুর হুকুম করি, তখন সেটা যথাসাধ্য পালন কর। (বুখারী, মুসলিম)
١٥٧ – عَنْ أَبِي نَجِيحِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ وَعَظَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْعِظَةٌ بَلِيغَهُ وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ كَأَنَّهَا مَوْعِظَةٌ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا قَالَ أَوْصِيكُمْ
بِتَقْوَى الله والسمع والطَّاعَةِ وَإِنْ تَأمُرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ وَإِنَّهُ مَنْ يُعِشُ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختلافا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِدِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأَمُورِ فَإِنْ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالة – رواه
ابو داود والترمذي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحُ النَّوَاجِدُ بِالنَّالِ الْمُعْجَمَةِ الْأَنْيَابُ وَقِيلَ الْأَضْرَاسُ .
১৫৭। আবু নাজীহ ইবায ইবনে সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় আমাদের উপদেশ দিলেন, যাতে আমাদের সকলের মন গলে গেল এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল।
আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা তো বিদায়ী উপদেশের মত। কাজেই আমাদের আরও উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহকে ভয় করার জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আর তোমাদের উপর হাবশী গোলাম শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেও তার কথা শুনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি। আর তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত অনুসরণ করা হবে তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। এ সুন্নাতকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং (দ্বীনের ব্যাপারে) সমস্ত নব উদ্ভাবিত বিষয় (বিদ’আত) থেকে বিরত থাকবে। কেননা প্রতিটি ‘বিদআত’ই পথভ্রষ্টতা।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী একে হাসান ও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
١٥٨ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قِيلَ وَمَنْ يُأْبَى يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبى – رواه البخاري .
১৫৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমার সব উম্মাত জান্নাতে যাবে, সে ব্যতীত যে (জান্নাতে যেতে) অসম্মত। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে অসম্মত? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল সে জান্নাতে যেতে অসম্মত। (বুখারী)
١٥٩ – عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ وَقِيلَ أَبِي إِيَّاسِ سَلَمَةَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ فَقَالَ كُلِّ بِيَمِينِكَ قَالَ لا أَسْتَطِيعُ قَالَ لَا اسْتَطَعْتَ مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ فَمَا
رَفَعَهَا إِلَى فيه رواه مسلم .
১৫৯। আবু মুসলিম অথবা আবু ইয়াস সালামা ইবনে আমর ইবনে আকওয়া (রা) থেকে বর্ণিত। এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বাম হাতে খেতে লাগল। তিনি বলেন: ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি পারি না। তিনি বলেন: তুমি যেন না পার। (মূলতঃ) অহংকারই তাকে এ হুকুম পালনে বাধা দিয়েছিল। তারপর সে তার হাত মুখের কাছে উঠাতে পারেনি। (মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, বাম হাতে পানাহার করা অহংকার প্রকাশের লক্ষণ। আর অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অথচ বর্তমান যুগে বাম হাতে পানাহার করাটাই যেন আভিজাত্যের পরিচায়ক।
অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে: “তোমরা ডান হাতে পানাহার কর। কেননা শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।”
١٦٠ – عَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ النَّعْمَانِ بْن بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَتُسَوَّنُ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وَجُوهِكُمْ – متفق عليه وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوِى صُفُوفَنَا حَتَّى كَأَنَّمَا يُسَوَى بِهَا الْقِدَاحَ حَتَّى إِذَا رَأَى أَنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمَّ خَرَجَ يَوْمًا فَقَامَ حَتَّى كَادَ أَنْ يُكَبِّرَ فَرَأَى رَجُلًا بَادِيًا صَدْرُهُ فَقَالَ عِبَادَ اللَّهِ لَتُسَوَّنُ صُفُوقَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وَجُوهِكُمْ .
১৬০। আবু আবদুল্লাহ নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা নামাযের কাতার সোজা কর, নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারাগুলোর মধ্যে বিভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন। (বুখারী, মুসলিম)
মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলো সোজা করে দিতেন, এমনকি (মনে হতো) তিনি যেন এর দ্বারা তীর সোজা করছেন। আমরা তার কাছ থেকে বিষয়টা পূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পেরেছি কিনা তা না বুঝা পর্যন্ত তিনি তাকিদ দিতেন। তারপর একদিন তিনি (হুজরা থেকে) বেরিয়ে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতে যাবেন এমন সময় এক লোককে দেখলেন যে, তার বুকটা কাতারের বাইরে রয়েছে। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর বান্দারা। তোমাদের কাতার সোজা কর, নয়তো আল্লাহ তোমাদের চেহারাগুলোর মধ্যে বিভিন্নতা (অথবা মনের অমিল) সৃষ্টি করে দেবেন।
١٦١ – عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ احْتَرَقَ بَيْتٌ بِالْمَدِينَةِ عَلَى أَهْلِهِ مِنَ اللَّيْلِ فَلَمَّا حُدِثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَأْنِهِمْ قَالَ إِنَّ هَذِهِ النَّارَ عَدُوٌّ لَكُمْ فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ متفق عليه .
১৬১। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনায় এক রাতে একটি বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বলা হলে তিনি বলেন: এই আগুন তোমাদের শত্রু। কাজেই তোমরা ঘুমাবার সময় এটাকে নিভিয়ে দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)
١٦٢ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ مَثَلَ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ مِنَ الْهُدَى وَالْعِلْمِ كَمَثَلِ غَيْثَ أَصَابَ أَرْضًا فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفَةٌ طَيِّبَةً قَبِلَتِ الْمَاءَ فَأَنْبَتَتِ الْكَلَّا وَالْعُشَبَ الْكَثِيرَ وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ
الْمَاءَ فَنَفَعَ اللَّهُ بِهَا النَّاسَ فَشَرِبُوا مِنْهَا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا وَأَصَابَ طَائِفَةٌ مِنْهَا أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِبْعَانٌ لَا تُمْسِكُ مَاءً وَلَا تُنْبِتُ كَلَّا فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللَّهِ وَنَفَعَهُ بِمَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعُ بِذَلِكَ
رَأْسًا وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى الله الذي أُرْسِلْتُ به متفق عليهفَقُهَ بِضَمِّ الْقَافِ عَلَى الْمَشْهُورِ وَقِيلَ بَكَسْرِهَا أَوْ صَارَ فَقِيْهَا
১৬২। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমাকে আল্লাহ যে জ্ঞান ও সঠিক পথসহ পাঠিয়েছেন, তার উদাহরণ বৃষ্টির মত। বৃষ্টির পানি কোনো জমিতে পড়লে জমির ভালো অংশ তা চুষে নেয় এবং বহু নতুন ও তাজা ঘাস জন্মায়। জমির আর এক অংশ যাতে বৃষ্টির পানি আটকে থাকে এবং আল্লাহ তা দ্বারা মানুষের উপকার করেন। তারা সেখান থেকে পানি পান করে এবং তা দিয়ে জমিতে সেচ দেয় ও ফসল উৎপন্ন করে। জমির আর এক অংশ ঘাসহীন অনুর্বর এলাকা, যেখানে পানিও আটকায় না, ঘাসও হয় না। এটা (প্রথমটি) হচ্ছে সেই লোকের উদাহরণ যে, আল্লাহর দীনের গভীর জ্ঞান লাভ করেছে এবং আল্লাহ যা কিছু দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হয়েছে। সে নিজেও জ্ঞান লাভ করেছে এবং অপরকেও জ্ঞান দান করেছে। আর শেষোক্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে সেই ব্যক্তির যে দীনের জ্ঞানের দিকে ফিরেও তাকায়নি এবং আল্লাহর যে বিধানসহ আমাকে পাঠান হয়েছে তা সে গ্রহণও করেনি। (বুখারী, মুসলিম)
١٦٣ – عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلِى وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاسُ يَقَعْنَ فِيهَا وَهُوَ يَدُبُّهُنَّ عَنْهَا وَأَنَا أَحَدٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَانْتُمْ تُفْلِتُوْنَ مِنْ بَدَى – رواه
مسلم الْجَنَادِبُ نَحْوُ الْجَرَادِ وَالْفَرَاسُ هَذَا الْمَعْرُوفَ الَّذِي يَقَعُ فِي النَّارِ وَالْحُجَزُ جَمْعُ حجْزَةٍ وَهِيَ مَعْقِدُ الْإِزارِ وَالسَّرَاوِيلِ.
১৬৩। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার ও তোমাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালানোর পর ফড়িং ও অন্যান্য পতঙ্গ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সে ওগুলোকে বাধা দিতে থাকে। আর আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে আগুনে পড়া থেকে বাধা দিচ্ছি, কিন্তু তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে তাতে পড়ে যাচ্ছ। (মুসলিম)
١٦٤ – وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِلَعْقِ الْأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ وَقَالَ إِنَّكُمْ لَا تَدْرُوْنَ فِي أَيُّهَا الْبَرَكَةُ . رواه مسلم وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةٌ أَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا فَلْيُمِطُ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى وَلِيَأْكُلُهَا وَلَا
يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ وَلَا يَمْسَحُ يَدَهُ بِالْمِنْدِيلِ حَتَّى يَلْعَقَ أَصَابِعَهُ فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي فِي أَي طَعَامِهِ الْبَرَكَةُ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْ مِنْ شَأْنِهِ حَتَّى يَحْضُرَهُ عِندَ طَعَامِهِ فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمُ
اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطُ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى فَلْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ .
১৬৪। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল ও থালা চেটে খেতে হুকুম করেছেন এবং বলেছেন: তোমরা জান না তার কোন্ স্থানে বরকত রয়েছে। (মুসলিম)
মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, তোমাদের কারও খাবারের লোকক্কা পড়ে গেলে সে যেন তা উঠিয়ে নেয় এবং তার ময়লা পরিষ্কার করে তা খায়, শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। আর আঙুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে তার হাত যেন রুমাল দিয়ে না মোছে। কারণ সে জানে না যে, তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে।
মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের নিকট প্রতিটি ব্যাপারে হাযির হয়, এমনকি তার খাওয়ার সময়ও সে হাযির হয়। কাজেই তোমাদের কারও লোক্কা পড়ে গেলে সে যেন তার ময়লা পরিষ্কার করে তা খায় এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে।
١٦٥ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَامَ فِيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَوْعِظَةٍ فَقَالَ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى حُفَاةً عُرَاةً غُوْلاً كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَا أَلَا
وَإِنْ أَوَّلَ الْخَلائِقِ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلامِ أَلَا وَإِنَّهُ سَيُجَاءُ بِرِجَالٍ مِنْ أُمَّتِي فَيُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أَصْحَابِي فَيُقَالُ إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا أحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ
شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيْهِمْ إِلَى قَوْلِهِ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ فَيُقَالُ لِي إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوْا مُرْتَدِيْنَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ – متفق عليه غزلاً أَي غَيْرَ مَخْتُونِينَ .
১৬৫। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেনঃ হে লোকেরা! তোমাদেরকে আল্লাহর সামনে খালি পায়ে, উলংগ শরীরে এবং খাতনাহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আল্লাহ বলেন: “যেমন আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছি, তেমন আবার সৃষ্টি করব। এটা আমার ওয়াদা। আমি ওয়াদা পূরণ করবই (সূরা আল আম্বিয়া: ১০৩)। জেনে রাখ, কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আ)-কে কাপড় পরানো হবে। সাবধান! আমার উম্মাতের কিছু লোককে এনে বাম দিকে (জাহান্নামের দিকে) ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, হে আমার রব। এরাতো আমার সাহাবী। তখন বলা হবে, তুমি জান না যে, তোমার পর এরা কি কি নতুন নতুন কাজ করেছে। আমি তখন ঈসা (আ)-এর মত বলব, “আমি যতকাল তাদের মধ্যে ছিলাম তাদের উপর সাক্ষ্যদানকারী হয়েই ছিলাম…” (সূরা আল মায়িদা: ১১৭-১১৮)। তখন আমাকে বলা হবে, তাদের কাছ থেকে তুমি যখন বিদায় নিয়েছ তখন তারা তোমার দীন ছেড়ে দূরে সরে গেছে। (বুখারী, মুসলিম)
١٦٦ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّل رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَذْفِ وَقَالَ إِنَّهُ لَا يَقْتُلُ الصَّيْدَ وَلَا يَنْكَأُ الْعَدُوِّ وَإِنَّهُ يَفْقَأُ الْعَيْنَ وَيَكْسِرُ السِّن متفق عليه
وَفِي رِوَايَةٍ أَنْ قَرِيبًا لِابْنِ مُغَفَّلٍ خَذَفَ فَنَهَاهُ وَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْخَذْفِ وَقَالَ إِنَّهَا لا تَصِيدُ صَيْدًا ثُمَّ عَادَ فَقَالَ أَحَدِّثُكَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْهُ ثُمَّ عُدَّتْ تَخْذِفُ لَا
أَكَلِّمُكَ أَبَدًا
১৬৬। আবু সাঈদ আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথরের টুকরা শাহাদাত আঙুল ও বৃদ্ধাঙুলের মাঝখানে রেখে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: এতে কোন শিকারও মারা পড়ে না এবং দুশমনও শেষ হয় না, বরং এটা চোখ ফুঁড়ে দেয় এবং দাঁত ভেঙ্গে দেয়। (বুখারী, মুসলিম)
অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফালের এক নিকটাত্মীয় পাথর মেরেছিল। আবদুল্লাহ (রা) নিষেধ করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে পাথর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: এতে শিকার মরে না। ঐ ব্যক্তি পুনর্বার একই কাজ করে। এতে আবদুল্লাহ (রা) বলেন, আমি তোমাকে বলছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন তবুও তুমি মারছো। আমি তোমার সাথে কখনো কথা বলব না।
١٦٧ – عَنْ عَابِسِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُقَبِّلُ الْحَجَرَ يَعْنِي الْأَسْوَدَ وَيَقُولُ إِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلَا تَضُرُّ وَلَوْ لَا أَنِّي رايْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبْلَتُكَ – متفق
عليه .
১৬৭। আবেস ইবনে রাবী’আ (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-কে হাজরে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি। তিনি বলেন, আমি জানি যে, তুমি একখণ্ড পাথর মাত্র, তুমি কোন উপকারও করতে পার না, অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমাকে চুমো দিতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুমো দিতাম না। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদ : ১৭ – আল্লাহর হুকুম পালন করা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি তা পালনের জন্য আহ্বান জানায়, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ থেকে বারণ করে তার যা বলা উচিৎ
আল্লাহর হুকুম পালন করা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি তা পালনের জন্য আহ্বান জানায়, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ থেকে বারণ করে তার যা বলা উচিৎ।
اللهُ تَعَالَى : فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا قَالَ الله يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “না, তোমার রবের শপথ! তারা ঈমানদার হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাকে তাদের পারস্পরিক বিরোধের মীমাংসাকারী হিসাবে মেনে না নেয়, তারপর তুমি যে রায় দেবে তারা সে সম্পর্কে মনে কোন প্রকার দ্বিধা-সংকোচ বোধ না করে পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তা মেনে নেয়।” (সূরা আন্ নিসা: ৬৫)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُوْلِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ .
(২) “মুমিনদের মধ্যে কোন ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে (কুরআন ও সুন্নাহর দিকে) আহ্বান জানানো হয়, তখন তারা এই কথাই বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আর এসব লোকই কল্যাণপ্রাপ্ত।” (সূরা আন্ নূরঃ ৫১) এই অনুচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্যশীল হাদীসমূহের মধ্যে আবু হুরাইরা (রা)-র হাদীসটি ইতিপূর্বে (১৫৬ নং হাদীস) উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়াও আরো বহু হাদীস এ প্রসঙ্গে পাওয়া যায়। যেমন:
١٦٨ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبُكُمْ بِهِ اللهُ الْآيَةَ اشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَوْا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ فَقَالُوا أَي رَسُولَ اللهِ كَلِفْنَا مِنَ الْأَعْمَالِ مَا تُطِيقُ الصَّلاةَ وَالصِّيَامَ وَالْجِهَادَ وَالصَّدَقَةَ وَقَدْ أُنزِلَتْ عَلَيْكَ هذه الْآيَةُ وَلَا تُطِيقُهَا قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتُرِيدُونَ أَنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا ؟ بَلْ قُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرَ فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا الْقَوْمُ وَذَلَّتْ بِهَا الْسِنَتُهُمْ أَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى فِي اثْرِهَا أَمَنَ
الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلُّ أَمَنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رُّسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ) فَلَمَّا فَعَلُوْا ذَلِكَ نَسَخَهَا اللهُ تَعَالَى فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلٌ لا يُكَلِّفُ
اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبُّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا) قَالَ نَعَمُ (رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْراً كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا ) قَالَ نَعَمْ (رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ) قَالَ نَعَمْ
وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ) قَالَ نَعَمْ – رواه مسلم .
১৬৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হল: “আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর। তোমাদের মনের কথা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন” (সূরা আল বাকারা: ২৮৪), তা সাহাবীগণের নিকট খুব কঠিন মনে হল। সাহাবীগণ তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে নতজানু হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের সাধ্যানুযায়ী নামায, জিহাদ, রোযা, সাদাকা ইত্যাদি কাজগুলো আমাদের উপর চাপানো হয়েছে, অথচ আপনার উপর এই আয়াত নাযিল হয়েছে, আর আমরা তা করার ক্ষমতা রাখি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: পূর্বে ইহুদী ও খৃস্টানরা যেমন বলেছিল, আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম, তোমরাও কি তেমনি বলতে চাও? তোমরা বরং বল, “শুনলাম, মেনে নিলাম, তোমার কাছে ক্ষমা চাই, হে প্রভু! আর তোমারই নিকট ফিরে যেতে হবে।” লোকেরা যখন এ আয়াতটি পড়ল এবং তাদের জিহ্বা আনুগত্য করল, তখন আল্লাহ উক্ত আয়াতের পর নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করলেন: “রাসূলের নিকট তাঁর রবের কাছ থেকে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি রাসূল ও মুমিনগণ ঈমান এনেছে। তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আর তোমার নিকটেই তো ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল বাকারা: ১৮৫)
যখন সাহাবীগণ এসব করলেন তখন আল্লাহ উক্ত আয়াতের হুকুম পরিবর্তন করে দিয়ে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করলেন: “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কষ্ট দেন না। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার (ভাল) কাজের সাওয়াব রয়েছে এবং (মন্দের জন্য) শাস্তিও রয়েছে। (তারা বলে) “হে আমাদের প্রভু! আমরা ভুলত্রুটি করে থাকলে সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না।” আল্লাহ বলেন, আচ্ছা তাই হবে। তারা বলে, “হে আমাদের প্রভু! আমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর যেমন তুমি (কঠিন হুকুমের) বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলে তেমন কোন বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না।” আল্লাহ বলেন, আচ্ছা তাই হবে। তারা বলে, “হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর এমন কোন দায়িত্বভার দিয়ো না যা পালন করার শক্তি আমাদের নেই, আর আমাদের গুনাহর কালিমা মুছে দাও, আমাদের গুনাহ মাফ করে দাও, আমাদের উপর দয়া কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক, কাজেই কাফিরদের উপর আমাদেরকে বিজয়ী কর” (সূরা আল বাকারা: ২৮৬)। আল্লাহ বলেন, “আচ্ছা তাই হবে।” (মুসলিম)
অনুচ্ছেদ : ১৮ – বিদ’আত নিষিদ্ধ
বিদ’আত (দীনের মধ্যে নতুন নতুন বিষয়ের উদ্ভাবন ও প্রচলন) নিষিদ্ধ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَمَا ذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ .
মহান আল্লাহ বলেন:
১। “হক কথার পর আর সবই ভ্রান্তি।” (সূরা ইউনুস: ২২)
وَقَالَ تَعَالَى : مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ .
২। “আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ দিইনি।” (সূরা আল আন’আম: ৮)
وَقَالَ تَعَالَى : فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ .
৩। “যদি তোমরা কোন ব্যাপারে পরস্পর মতবিরোধ কর তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে রুজু কর” (সূরা আন্ নিসা: ৫৯) অর্থাৎ কিতাব ও সুন্নাতের দিকে।
وَقَالَ تَعَالَى : وَإِنَّ هَذَا صِرَاطِئ مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السَّبُلَ فَتَفَرِّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ .
৪। “আর আমার এই রাস্তা সরল ও মজবুত। কাজেই তোমরা এই রাস্তায়ই চল। এছাড়া অন্য সব রাস্তায় চলো না, তা তোমাদেরকে তাঁর রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।” (সূরা আল আন’আম : ১৫৩)
وَقَالَ تَعَالَى : قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ.
৫। “তুমি বলে দাওঃ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১)
এ অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তুর সমর্থনে আরো বহু প্রসিদ্ধ আয়াত আছে।
١٦٩ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رد متفق عليه وفي رواية المسلم 4. مَنْ أَحْدَثَ في أمرنا هذا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدُّ . مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدُّ.
১৬৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে এমন নতুন কিছু প্রবর্তন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী, মুসলিম)
সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: কোন ব্যক্তি আমাদের দীনের নির্দেশ বহির্ভূত কোন কাজ করলে তা প্রত্যাখ্যাত।
۱۷۰ – عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ إِحْمَرْتُ عَيْنَاهُ وَعَلَا صَوْتُهُ وَاشْتَدْ غَضَبُهُ حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشِ يَقُولُ صَبْحَكُمْ وَمَسَاكُمْ وَيَقُولُ بُعِثْتُ أنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ وَيَقْرِنُ بَيْنَ
أَصْبَعَيْهِ السَّبَابَةِ والوُسْطَى وَيَقُولُ أَمَّا بَعْدُ فَإِنْ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدَى هَدَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَشَرِّ الْأَمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلِّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا أولى بِكُلِّ مُؤْمِن مِنْ نَفْسِهِ مَنْ تَرَكَ مَالاً فَلِأَهْلِهِ
وَمَنْ تَرَكَ دَيْنَا أَوْ ضِيَاعًا فَإِلَى وعلى – رواه مسلم .
১৭০। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বক্তৃতা দিতেন তখন তাঁর চোখ দু’টি লাল হয়ে যেত, তাঁর কণ্ঠস্বর বড় হয়ে যেত এবং তাঁর রাগ বৃদ্ধি পেত, যেন তিনি কোন সেনাবাহিনীকে সতর্ক করছেন। তিনি বলতেন: আল্লাহ তোমাদের সকাল-সন্ধ্যায় ভালো রাখুন। তিনি আরও বলতেন: আমাকে কিয়ামাতসহ এভাবে পাঠানো হয়েছে। এ কথা বলে তিনি তাঁর মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল মেশাতেন। তিনি আরও বলতেন: অতঃপর সবচেয়ে ভালো কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ। (দীনের ব্যাপারে) নতুন বিষয়গুলো (অর্থাৎ নতুন বিষয় সৃষ্টি করা) সবচেয়ে খারাপ। এবং সব বিদআতই ভ্রান্তি। তারপর তিনি বলতেন: আমি প্রত্যেক মুমিনের জন্য তার নিজের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে যায় তা তার পরিবারবর্গের জন্য। আর যে ব্যক্তি কোন ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে যায় তার দায়িত্ব আমারই উপর।” (মুসলিম)
এই প্রসংগে ইরবায ইবনে সারিয়া (রা) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর হাদীসটি ইতিপূর্বে সুন্নাতের হিফাযত শীর্ষক অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত হয়েছে (হাদীস নং ১৫৭)।
অনুচ্ছেদ : ১৯ – যে ব্যক্তি উত্তম পন্থা অথবা কুপন্থার প্রচলন করল
যে ব্যক্তি উত্তম পন্থা অথবা কুপন্থার প্রচলন করল।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا .
মহান আল্লাহ বলেন:
১। “আর যারা বলে, আমাদের প্রভু। তুমি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর যাদেরকে দেখে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায় এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানাও।” (সূরা আল ফুরকানঃ ৭৪)
وَقَالَ تَعَالَى : وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا
২। “আমি তাদেরকে (নবীগণকে) নেতা হিসেবে নিযুক্ত করেছি, তারা আমার হুকুম অনুযায়ী সৎপথে পরিচালিত করে।” (সূরা আল আম্বিয়া: ৭৩)
۱۷۱ – عَنْ أَبِي عَمْرٍو جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا فِي صَدْرِ النَّهَارِ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَهُ قَوْمٌ عُرَاةٌ مُجْتَابِي النِّمَارِ أَوِ الْعَبَاءِ مُتَقَلِدِي السَّيُوفِ عَامُتُهُمْ مِنْ مُضَرَ بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ فَتَمَعْرَ
وَجْهُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَا رَأَى بِهِمْ مِنَ الْفَاقَةِ فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ فَأَمَرَ بِلالا فَاذْنَ وَأَقَامَ فَصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ فَقَالَ (يَأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِّنْ نفس واحدة) إلى آخِرِ الْآيَةِ (إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)
وَالْآيَةُ الْأُخْرَى الَّتِي فِي أَخِرِ الْخَشْرِ (بَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدَا تَصَدِّقَ رَجُلٌ مِّنْ دِينَارِهِ مِنْ دِرْهَمِهِ مِنْ تَوْبِهِ مِنْ صَاعِ بُرِّهِ مِنْ صَاعِ تَمْرِهِ حَتَّى قَالَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ بِصُرْةٍ
كَادَتْ كَفَّهُ تَعْجِرُ عَنْهَا بَلْ قَدْ عَجَزَتْ ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأَيْتُ كَوْمَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ حَتَّى رَأَيْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَهَلَلُ كَانَّهُ مُذْهَبَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَنْ فِي
الْإِسْلامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنقُصُ مِنْ أَجُورِهِمْ شَيْءٍ وَمَنْ سَنْ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوَزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْ
رواه مسلمقَولُهُ مُجْتَابِي النَّمَارِ هُوَ بِالْجَيْمِ وَبَعْدِ الْأَلِفِ بَاءٌ مُؤَحَدَةً وَالنَّمَارُ جَمْعُ نَمِرَةٍ وَهِيَ كِسَاء مِنْ صُوفَ مُخَطَّطِ وَمَعْنَى مُجْتَابِيهَا أَى لَابِسِيْهَا قَدْ خَرَقُوهَا فِي رُوسِهِمْ وَالْجَوبُ الْقَطْعُ وَمِنْهُ قَوْلُ اللهِ تَعَالَى وَتَمَوْدَ الَّذِينَ
جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ) أَيْ نَحَتُوهُ وَقَطَعُوهُ وَقَوْلُهُ تَمَعْرَ هُوَ بِالْعَيْنِ الْمُهْمَلَةِ أَي تَغَيَّرَ وَقَوْلُهُ رَأَيْتُ كَوْمَيْنِ بِفَتْحِ الْكَافِ وَضَمِهَا أَى صُبْرَتَيْنِ وَقَوْلُهُ كَأَنَّهُ مُذْهَبَةٌ هُوَ بِالنَّالِ الْمُعْجَمَةِ وَفَتْحِ الْهَاءِ وَالْبَاءِ الْمُوَحِدَةِ قَالَهُ الْقَاضِي عِبَاضُ
وَغَيْرُهُ وَصَحْفَهُ بَعْضُهُمْ فَقَالَ مُدْهُنَةٌ بدال مُهْمَلَةٍ وَضَمَ الْهَاءِ وَبِالنُّونِ وكَذَا ضَبَطَهُ الْحُمَيْدِي وَالصَّحِيحُ الْمَشْهُورُ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْمُرَادُ بِهِ عَلَى الْوَجْهَيْنِ الصَّفَاءُ وَالْاسْتَنَارَةُ .
১৭১। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তখন একদল লোক তাঁর কাছে এল। তাদের শরীর ছিল অনাবৃত, চট কিংবা আবা পরিহিত ছিল তারা। তরবারিও তাদের সাথে ঝুলানো ছিল। তাদের অধিকাংশ বরং সবাই ছিল মুদার গোত্রের লোক। তাদের দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি ঘরের ভেতর গেলেন, তারপর বের হয়ে এসে বিলাল (রা)-কে আযান দিতে বলেন। বিলাল (রা) আযান ও ইকামাত দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে বক্তৃতায় বলেনঃ “হে জনগণ! তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, আর উভয় থেকে অনেক পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পর নিজ নিজ অধিকার দাবি কর। আর তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা থেকে বিরত থাক। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের উপর কড়া দৃষ্টি রাখেন” (সূরা আন্ নিসা, আয়াত: ১)। তিনি সূরা আল হাশরের শেষের দিকের নিম্নোক্ত আয়াতটিও পড়লেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য রাখে যে, সে আগামী দিনের (আখিরাতের) জন্য কি ব্যবস্থা করে রেখেছে। তোমরা আল্লাহকেই ভয় কর। তোমরা যা করছ আল্লাহ তার খবর রাখেন” (সূরা আল হাশর, আয়াত: ১৮)। (তারপর তিনি বলেন) প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত সে যেন তার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা), তার দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা), তার কাপড়, তার গম এবং তার খেজুর থেকে দান করে। তিনি এমনকি এ কথাও বলেন যে, এক টুকরা খেজুর হলেও তা দান কর। এরপর একজন আনসারী এক থলি খেজুর নিয়ে এল। থলিটি বয়ে আনতে তার হাত অক্ষম হওয়ার উপক্রম, বরং অক্ষম হয়েই পড়েছিল। তারপর লোকেরা একের পর এক দান করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত আমি কাপড় ও খাদ্যের দু’টি স্তূপ দেখতে পেলাম। দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার নূর উজ্জ্বল হয়ে তা যেন সোনালী রংয়ে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেন: যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভালো নিয়মের প্রচলন করবে, সে তার প্রতিদান পাবে এবং পরে যারা তদনুযায়ী আমল করবে তাদের সমপরিমাণ সাওয়াবও সে পাবে। কিন্তু এতে তাদের বিনিময় কিছুমাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ নিয়ম চালু করে তার উপর এর (গুনাহর) বোঝা চেপে বসবে এবং তারপর যারা সে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে তাদের বোঝাও তার উপর গিয়ে পড়বে। কিন্তু তাদের বোঝা কিছুমাত্র হ্রাসপ্রাপ্ত হবে না। (মুসলিম)
۱۷۲ – عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تُقْتَلُ ظُلْمًا إِلا كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا لِأَنَّهُ كَانَ أول مَنْ سَنُ الْقَتْلَ – متفق عليه .
১৭২। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তিই অন্যায়ভাবে নিহত হবে তার রক্তপাতের দায়ভাগ আদম (আ)-এর প্রথম হত্যাকারী সন্তানের (কাবীল) উপরও পড়বে। কারণ সেই প্রথম ব্যক্তি যে হত্যার নিয়ম চালু করে। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদ: ২০ – কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎপথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকার ফল
কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎপথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকার ফল।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَأَدْعُ إِلَى رَبِّكَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
(১) “তুমি তোমার রবের দিকে ডাক।” (সূরা আল কাসাস : ৮৭)
وَقَالَ تَعَالَى : أَدْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ .
(২) “তুমি তোমার রবের পথের দিকে বিজ্ঞতা সহকারে ও সদুপদেশের মাধ্যমে ডাক।” (সূরা আন্ নাহল: ১২৫)
وقَالَ تَعَالَى : وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوى
(৩) “তোমরা সৎ কাজ ও আল্লাহভীতির ব্যাপারে পরস্পর সহযোগিতা কর।” (সূরা আল মা-ইদা ঃ ২)
وَقَالَ تَعَالَى : وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةً يُدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ .
(৪) “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকবে যারা কল্যাণের দিকে ডাকবে।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)
۱۷۳ – وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرُو الْأَنْصَارِيِّ الْبَدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرٍ فَاعِلِهِ رواه مسلم
১৭৩। আবু মাসউদ উকবা ইবনে আমর আনসারী বদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন ভালো পথ দেখায় সে ঠিক ততটা বিনিময় পায় যতটা বিনিময় ঐ কাজ সম্পাদনকারী নিজে পায়। (মুসলিম)
١٧٤ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَن دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ أَيَّامٍ
مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَيَّامِهِمْ شَيْئًا – رواه مسلم .
১৭৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য এ পথের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময় কিছুমাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার উক্ত পথের অনুসারীদের গুনাহর সমান গুনাহ হবে। এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র কম হবে না। (মুসলিম)
١٧٥ – عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ سَهْلِ بْنِ سَعْدِ السَّاعِدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ خَيْبَرَ لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ فَبَاتَ النَّاسُ
يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا فَقَالَ ابْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ ۚ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هُوَ يَشْتَكِيْ عَيْنَيْهِ قَالَ فَارْسِلُوا إِلَيْهِ فَأْتِيَ بِهِ فَبَصَقَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَجَعَ فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ فَقَالَ وَسَلَّمَ فِي عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَهُ فَبَراً حَتَّى كَانَ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَع . عَلَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَا رَسُولَ اللهِ أَقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا ؟ فَقَالَ انْقُدْ عَلَى رسُلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ
ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ وَاخْبِرُهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ تَعَالَى فِيْهِ فَوَاللَّهِ لِأَنْ يُهْدِى اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حمر النعم – متفق عليه قَوْلُهُ يَدُوكُونَ أَي يَخُوضُونَ وَيَتَحَدِّثُونَ وَقَوْلُهُ رِسُلِكَ بكسر الراء وَبِفَتْحِهَا
لُغَتَانِ وَالْكَسْرُ أَفْصَحُ .
১৭৫। আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সাদ আস্ সায়েদী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবার যুদ্ধের দিন বলেন: আমি নিশ্চয়ই আগামীকাল এই পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব যার হাতে আল্লাহ বিজয় দেবেন। সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। লোকেরা রাতভর চিন্তাভাবনা ও আলাপ-আলোচনা করতে লাগল যে, কাকে এই পতাকা দেয়া হবে। সকালবেলা তারা সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সেই পতাকা পাওয়ার আশায় এল। তিনি বলেনঃ আলী ইবনে আবী তালিব কোথায়? বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি চোখের রোগে ভুগছেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন: তার কাছে লোক পাঠাও। তারপর তাকে আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই চোখে থুথু দিলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন। তিনি এতে এমন আরোগ্য লাভকরলেন যেন কোন রোগই তাঁর ছিল না। আলী (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! দুশমনরা আমাদের মত (মুসলিম) না হওয়া পর্যন্ত কি আমি তাদের সাথে লড়াই করব? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: তুমি তাদের এলাকায় না পৌঁছা পর্যন্ত অগ্রসর হতে থাকবে, তারপর তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবে এবং আল্লাহর হক আদায় করার ব্যাপারে তাদের করণীয় কাজ জানিয়ে দেবে। আল্লাহর শপথ! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ কোন একজন লোককে হিদায়াত দিলে সেটা তোমার জন্য (মূল্যবান) লাল উটের [ লাল উট আরবদের নিকট অতি প্রিয় ও মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত ]
চেয়েও কল্যাণকর। (বুখারী, মুসলিম)।
١٧٦ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ فَتَى مِنْ أَسْلَمَ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَرِيدُ الْغَزْوَ وَلَيْسَ مَعِى مَا أَتَجَهَرُ بِهِ ؟ قَالَ انْتِ فُلَانًا فَإِنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهْزَ فَمَرِضَ فَآتَاهُ فَقَالَ إِنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقْرِئُكَ السَّلَامَ
وَيَقُولُ أَعْطِنِي الَّذِي تَجَهَّرْتَ بِهِ فَقَالَ يَا فُلانَةُ أَعْطِيهِ الَّذِي تَجَهَّرْتُ بِهِ وَلَا تَحْبِسِي مِنْهُ شَيْئًا فَوَاللَّهِ لَا تَحْبِسِينَ مِنْهُ شَيْئًا فَيُبَارَكَ لَنَا فِيهِ – رواه مسلم .
১৭৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে চাই, কিন্তু প্রস্তুতি নেবার মত আমার কোন সম্পদ নেই। তিনি বলেন: তুমি অমুক লোকের নিকট যাও। সে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যুবকটি তার কাছে গিয়ে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলছেন যে, তুমি যা কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছ তা আমাকে দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি বলল, হে অমুক (মহিলা)! একে আমার সব কিছু সরঞ্জাম দিয়ে দাও এবং কিছুই রেখে দিও না। আল্লাহর শপথ! তোমরা তার কিছুই রেখে না দিলে এতে আল্লাহ আমাদের জন্য বরকত দেবেন। (মুসলিম)
অনুচ্ছেদ: ২১ – পুণ্য ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা
পুণ্য ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوى …..
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা পুণ্য ও আল্লাহভীতিমূলক কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর; কিন্তু গুনাহ ও সীমালংঘনমূলক কাজে পরস্পরের সহযোগী হয়ো না; আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর দণ্ড অত্যন্ত কঠিন।” (সূরা আল মা-ইদা: ২)
وقَالَ تَعَالَى : وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوا بالصبر .
“মহাকালের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, কিন্তু ঐসব লোক ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে এবং একে অপরকে হকের উপদেশ দেয় ও একে অপরকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেয়।” (সূরা আল-আসর: ১, ২, ৩)
ইমাম শাফিঈ (র) বলেন, মানুষ অথবা অধিকাংশ মানুষ সূরাটি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে না। এ ব্যাপারে তারা আত্মভোলা হয়ে রয়েছে।
۱۷۷ – عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ جَهْزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِي أَهْلِهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا – متفق عليه
১৭৭। আবু আবদুর রহমান যায়িদ ইবনে খালিদ আল-জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদকে জিহাদের সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে দিল, সে যেন নিজেই জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদের পরিবার-পরিজনের সাথে তার অনুপস্থিতিতে কল্যাণকর ব্যবহার করল, সেও যেন জিহাদ করল।
হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
۱۷۸ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْثًا إِلَى بَنِي لِحْيَانَ مِنْ هُذَيْلٍ فَقَالَ لِيَنْبَعِثُ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا وَالْأَجْرُ بَيْنَهُمَا – رواه مسلم .
১৭৮। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হোযাইল গোত্রের শাখা লেহিয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। তিনি বলেন: প্রত্যেক (পরিবারের) দুই ব্যক্তির মধ্যে অন্তত এক ব্যক্তি যেন জিহাদে যোগদান করে এবং তাদের উভয়কেই প্রতিদান দেয়া হবে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۷۹ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَ ركبا بالروحَاءِ فَقَالَ مَنِ الْقَوْمُ ؟ قَالُوا الْمُسْلِمُونَ فَقَالُوا مَنْ أَنْتَ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ فَرَفَعَتْ إِلَيْهِ امْرَأَةً صَبِيًّا فَقَالَتْ الهُذَا حَج؟ قَالَ نَعَمْ وَلَكِ
أَجْرُ” رواه مسلم.
১৭৯। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাওহা নামক স্থানে একদল অশ্বারোহীর সাক্ষাত পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল। অতঃপর জনৈকা মহিলা একটি শিশুকে তাঁর সামনে উঁচু করে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, এ শিশুও কি হজ্জ করতে পারবে? তিনি বলেন: হাঁ এবং সাওয়াবটা তুমি পাবে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۸۰ – عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ الْخَازِنُ الْمُسْلِمُ الْآمِينُ الَّذِي يُنْفِدُ مَا أَمرَ بِهِ فَيُعْطِيهِ كَامِلاً مُوَفِّرًا طيبة بهِ نَفْسُهُ فَيَدْفَعُهُ إِلَى الَّذِي أَمرَ لَهُ بِهِ أَحَدُ الْمُتَصَدِّقِينَ
متفق عليه وَفِي رواية الذي يُعْطِي مَا أَمِرَ بِهِ وَضَبَطُوا الْمُتَصَدِّقِيْنَ بِفَتْحِ الْقَافِ مَعَ كَسْرِ النُّونِ عَلَى التَّثْنِيَةِ وَعَكْسُهُ عَلَى الْجَمْعِ وَكِلاهُمَا صَحِيح
১৮০। আবু মূসা আল-আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুসলিম কোষাধ্যক্ষ হচ্ছে একজন আমানাতদার ব্যক্তি, তাকে যা নির্দেশ দেয়া হয় সে তা কার্যকর করে, অতঃপর সে স্বেচ্ছায় ও সন্তোষ সহকারে তা (সাদাকা-যাকাত) পূর্ণরূপে আদায় করে, তারপর তা যার কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ তাকে দেয়া হয় তার কাছে অর্পণ করে। এ ব্যক্তিও (তার কর্তব্য পালনের জন্য) সাদাকাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। অপর এক বর্ণনায় আছে: সেও দু’জন সাদাকাকারীর একজন।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ : ২২ – নসীহত (উপদেশ ও কল্যাণ কামনা)
নসীহত (উপদেশ ও কল্যাণ কামনা)।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ اخْوَةً ….
মহান আল্লাহ বলেন:
“মুসলিমগণ পরস্পরের ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযথভাবে সুসংগঠিত করে নাও।” (সূরা আল হুজুরাতঃ ১০)
اخْبَارًا عَنْ نُوحٍ عَلَيْهِ السَّلامِ : وَأَنْصَحُ لَكُمْ…..
আল্লাহ তা’আলা নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন:
“আমি (নূহ) তোমাদের কাছে আমার প্রভুর পয়গামসমূহ পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকি। আমি তোমাদের কল্যাণকামী এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি এমন সব বিষয় জানি যা তোমাদের জানা নেই।” (সূরা আল-আ’রাফ: ৬২)
وَعَنْ هُودٍ عَلَيْهِ السَّلام : وَأَنَا لَكُمْ نَاصِحُ أَمِينُ .
তিনি হৃদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘটনা প্রসংগে বলেন:
“আমি তোমাদের বিশ্বস্ত কল্যাণকামী। (সূরা আল-আ’রাফ: ৬৮)
وَأَمَّا الْأَحَادِيثُ : ۱۸۱ – عَنْ أَبِي رُقَيَّةَ تَمِيمِ بْنِ أَوْسِ الدَّارِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الدِّينُ النَّصِيحَةُ قُلْنَا لِمَنْ ؟ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلَآئِمَةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامِّتِهِمْ – رواه مسلم .
১৮১। আবু রুকাইয়া তামীম ইবনে আওস আদ-দারী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দীন (ইসলামের মূল ও স্তম্ভ) হচ্ছে উপদেশ ও কল্যাণ কামনা। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বলেন: আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিমদের ইমাম (নেতা) এবং সকল মুসলিমের জন্য [ পারস্পরিক কল্যাণ কামনা ও হকের উপদেশ দেয়া ইসলামের মূল ভিত্তির সাথে তুলনীয়। আল্লাহর জন্য নসীহতের (কল্যাণ কামনার) অর্থ হলঃ তাঁর যাবতীয় আদেশ-নিষেধকে মেনে নেয়া। কিতাবকে (কুরআন) নসীহত করার অর্থ হল: তা থেকে জ্ঞানার্জন ও সেই অনুযায়ী কাজ করা। নবীকে (সা) নসীহত করার অর্থ হল: তাঁর আনুগত্য, দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। মুসলিমদের নেতাদের নসীহত করার অর্থ হল: তাদেরকে সঠিক পরামর্শ প্রদান, ভুলগুলোকে ধরিয়ে দেয়া এবং সার্বিক পর্যায়ে ইসলামী মূল্যবোধগুলি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো। (অনুবাদক) ] ।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۸۲ – عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَأَبْنَاءِ الزكوة والنَّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِم. متفق عليه.
১৮২। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা এবং সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করা ও সঠিক উপদেশ দেয়ার শপথ (বাই’আত) গ্রহণ করেছি। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۸۳ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبُّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ – متفق عليه .
১৮৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউই পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ না করবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ২৩ – ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের প্রতিরোধ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَلْتَكُنْ مِنْكُمُ أُمَّةً يُدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা (মানুষকে) কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে ডাকবে; ন্যায় ও সৎ কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই কৃতকার্য হবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)
وَقَالَ تَعَالَى : كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
“তোমরা সর্বোত্তম উম্মাত, তোমাদেরকে মানুষের (হিদায়াত ও সংস্কারের) জন্য (কর্মক্ষেত্রে) উপস্থিত করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১১০)
وَقَالَ تَعَالَى : خُذِ الْعَفْوَ وَأَمُرُ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ .
“নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর; সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ লোকদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ো না।” (সূরা আল-আ’রাফ: ১৯৯)
وَقَالَ تَعَالَى : وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُم أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ……
“মুমিন পুরুষ ও মুমিন স্ত্রীলোক পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা যাবতীয় ভালো কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে।” (সূরা আত্ তাওবা: ৭১)
وَقَالَ تَعَالَى : لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
“বনী ইসরাঈলের মধ্য থেকে যারা কুফরের পথ অবলম্বন করেছে তাদেরকে দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মুখ দিয়ে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। কেননা তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল। তারা পরস্পরকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখা পরিহার করেছিল। অত্যন্ত জঘন্য কর্মনীতিই তারা অবলম্বন করেছিল।” (সূরা আল মা-ইদা: ৭৮, ৭৯)
وَقَالَ تَعَالَى : وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنُ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرُ .
“বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে এসেছে। সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক।” (সূরা আল কাহফঃ ২৯)
وَقَالَ تَعَالَى : فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ .
“কাজেই হে নবী! যে জিনিসের হুকুম তোমাকে দেয়া হচ্ছে তা জোরেশোরে উচ্চকণ্ঠে বলে দাও, মুশরিকদের বিন্দুমাত্র পরোয়া করো না।” (সূরা আল-হিজরঃ ৯৪)
وَقَالَ تَعَالَى : انْجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابِ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ .
“আমরা এমন লোকদের মুক্তি দিলাম যারা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকত এবং যারা যালিম ছিল তাদেরকে তাদেরই বিপর্যয়মূলক কাজের জন্য কঠিন আযাব দিয়ে পাকড়াও করলাম।” (সূরা আল-আ’রাফ: ১৬৫)
এ অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যশীল বহু সংখ্যক আয়াত কুরআন মজীদে মওজুদ রয়েছে।
وأما الأحاديث : ١٨٤ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرُهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ
الْإِيْمَانِ – رواه مسلم .
১৮৪। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে সে যেন তা হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগে) প্রতিরোধ করে। যদি সে এ ক্ষমতা না রাখে তবে যেন মুখের (কথার) দ্বারা (জনমত গঠন করে) তা প্রতিরোধ করে। যদি সে এ ক্ষমতাটুকুও না রাখে তবে যেন অন্তরের দ্বারা (পরিকল্পিত উপায়ে) এটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে (বা এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে)। আর এটা হল ঈমানের দুর্বলতম (নিম্নতম) স্তর।
١٨٥ – عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ نَبِي بَعَثَهُ اللهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِبُونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوْفٌ
يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيْمَانِ حَبَّةُ خردل رواه مسلم.
১৮৫। ইবনে মাস’ঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমার পূর্বে কোন জাতির কাছে যে নবীকেই পাঠানো হয়েছে, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাঁর উম্মাতের মধ্যে একদল সাহায্যকারী ও সাহাবী থাকত। তারা তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। এদের পরে এমন লোকের উদ্ভব হল যে, তারা যা বলত তা নিজেরা করত না এবং এমন কাজ করত যা করার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়নি। অতএব এ ধরনের লোকের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে) জিহাদ করবে, সে মুমিন। যে অন্তর দিয়ে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন। যে মুখ দিয়ে (মানুষকে বুঝানোর মাধ্যমে) এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমানের স্তর নেই।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
١٨٦ – عَنْ أَبِي الْوَلِيدِ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَه وَعَلَى آثَرَةٍ عَلَيْنَا وَعَلَى أَنْ لَا تُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا
كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِّنَ اللَّهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ وَعَلَى أَنْ نَقُولَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا لَا تَخَافُ فِي اللَّهِ لومة لائم – متفق عليه المَنْشَطُ والمَكْرَهُ بِفَتْحِ مِيْمَيْهِمَا أَيْ فِي السَّهْلِ والصعبِ وَالْآثَرَةُ الْاخْتِصَاصُ بِالْمُشْتَرِكِ وَقَدْ سَبَقَ بَيَانُهَا
بَوَاحًا بِفَتْحِ الْبَاءِ الْمُوَحَدَةِ وَبَعْدَهَا وَأَوْ ثُمَّ أَلِفُ ثُمَّ حَاءُ مُهْمَلَةٌ أَوْ ظَاهِراً لا يَحْتَمِلُ تَاوِيلاً .
১৮৬। আবুল ওয়ালীদ উবাদা ইবনুস সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করার, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক সর্বাবস্থায় আনুগত্য করার এবং নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রাধিকার প্রদানের শপথ (বাই’আত) গ্রহণ করেছি। আমরা আরো শপথ গ্রহণ করেছি: আমরা যোগ্য ও উপযুক্ত শাসকের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হব না। (নবী সা. বলেন): হাঁ, যদি তোমরা তাকে স্পষ্টভাবে ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত দেখ, যে সম্পর্কে তোমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া কোন দলীল-প্রমাণ রয়েছে (তবে তোমরা তার বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পার)। আমরা আরো শপথ গ্রহণ করেছি: আমরা যেখানেই থাকি, সর্বাবস্থায় হকের (সত্য-ন্যায়ের) কথা বলব এবং আল্লাহর (বিধানমত জীবন যাপনের) ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দা ও তিরস্কারের পরোয়া করব না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
শব্দার্থ : الْمَنْشَطُ وَالْمُكْرَهُ সহজ ও কঠিন, অনায়াস ও আয়াসসাধ্য। الأثَرَةُ সুস্পষ্ট,কোন জিনিসকে অন্য শরীকের জন্য বিশেষিত করা। যার কোন ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই।
۱۸۷ – عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَثَلُ الْقَائِمِ فِي حُدُودِ اللهِ وَالْوَاقِعِ فِيْهَا كَمَثَلِ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا عَلَى سَفِينَةٍ فَصَارَ بَعْضُهُمْ أَعْلَاهَا وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا وَكَانَ الَّذِينَ فِي
أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوْا مِنَ الْمَاءِ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقَهُمْ فَقَالُوا لَوْ أَنَّا خَرَقْنَا فِي نَصِيبِنَا خَرُقًا وَلَمْ نُوذِ مَنْ فَوْقَنَا فَإِنْ تَرْكُوهُمْ وَمَا أَرَادُوا هَلَكُوا جَمِيعًا وَإِنْ أَخَذُوا عَلَى أَيْدِيهِمْ نَجَوْا وَنَجَوْا جَمِيعًا – رواه البخاري الْقَائِمُ فِي حُدُودِ اللَّهِ
مَعْنَاهُ الْمُنْكِرُ لَهَا الْقَائِمُ فِي دَفْعِهَا وَإِزَالَتِهَا وَالْمُرَادُ بِالْحُدُودِ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ اسْتَهَمُوا اقْتَرَعُوا
১৮৭। নুমান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে অবস্থানকারী ও সীমালংঘনকারীর দৃষ্টান্ত হল: একদল লোক লটারী করে একটি সমুদ্রযানে উঠলো। তাদের কতক নীচের তলায় আর কতক উপরের তলায় স্থান পেল। নীচের তলার লোকদের পানির প্রয়োজন হলে তারা তাদের উপরের তলার লোকদের কাছ দিয়ে পানি আনতে যায়। তারা (নীচের তলার লোকেরা) পরস্পর বলল, আমরা যদি আমাদের এখান দিয়ে একটি ফুটো করে নিই, তবে উপর তলার লোকদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে বাঁচা যেত। এখন যদি তারা (উপর তলার লোকেরা) তাদেরকে এ কাজ করতে দেয় তবে সবাই ধ্বংস হবে। আর যদি তারা তাদেরকে বাধা দেয় (ছিদ্র করা থেকে বিরত রাখে) তবে নিজেরাও বাঁচতে পারবে এবং সবাইকেও বাঁচাতে পারবে।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۸۸ – عَنْ أَمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ هِنْدِ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنِ النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أَمْرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ وَلَكِنْ مِنْ رَضِيَ
تَابَعَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ إِلا تُقَاتِلُهُمْ قَالَ لا مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاةَ – رواه مسلم مَعْنَاهُ مَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ وَلَمْ يَسْتَطِعْ إِنْكَارًا بِيَدٍ وَلَا لِسَانٍ فَقَدْ بَرِي مِنَ الْإِثْمِ وَأَدَّى وَظِيفَتَهُ وَمَنْ أَنْكَرَ بِحَسَبِ طَاقَتِهِ فَقَدْ سَلِمَ مِنْ هَذِهِ الْمَعْصِيَةِ
وَمَنْ رَضِيَ بفِعْلِهِمْ وَتَابَعَهُمْ فَهُوَ الْعَاصِي .
১৮৮। উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের উপর কতক শাসক নিযুক্ত করা হবে। তোমরা তাদের কিছু কার্যকলাপের সাথে (ইসলামী শরী’আত অনুযায়ী হওয়ার কারণে) পরিচিত থাকবে আর কিছু কার্যকলাপ তোমাদের কাছে (শরী’আত বিরোধী হওয়ার কারণে) অপরিচিত থাকবে। এরূপ অবস্থায় যে ব্যক্তি এগুলোকে খারাপ জানবে সে (গুনাহ থেকে) বেঁচে গেল। আর যে ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করবে সে (জবাবদিহির ব্যাপারে) নিরাপদ। কিন্তু’ যে ব্যক্তি এরূপ কাজের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করল এবং এর সাথে সহযোগিতা করল (সে নাফরমানী করল)। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের (এরূপ স্বৈরাচারী শাসকদের) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবো না? তিনি বলেন: না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মাঝে নামায কায়েম করে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۸۹ – عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ الْحَكَمِ زَيْنَبَ بِئْتِ جَحْشِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُولُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيْلُ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرِّ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ وَخَلَقَ
بِأَصْبُعَيْهِ الْإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيْهَا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَتَهْلِكُ وَفِيْنَا الصَّالِحُونَ؟ قَالَ نَعَمُ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ متفق عليه .
১৮৯। উন্মুল মুমিনীন যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রা) থেকে বর্ণিত। (একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর কাছে আসলেন। তিনি বলছিলেন: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ধ্বংস আরবের সেই মন্দ ও অনিষ্টের কারণে যা নিকটে এসে গেছে। আজ ইয়াজুজ-মাজুজের (বন্দীশালার) দরজা এতদূর খুলে দেয়া হয়েছে। তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী দিয়ে বৃত্ত বানিয়ে তা দেখালেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে নেক্কার-আল্লাহভীরু লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বলেন: হাঁ, যখন মন্দ ও অনিষ্টের অত্যধিক প্রসার ঘটবে।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
١٩٠ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِيَّاكُمُ وَالْجُلُوسَ فِي الطَّرْقَاتِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدَّ نَتَحَدِّثُ فِيهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا الْمَجْلِسَ
فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ قَالُوا وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ غَضُ الْبَصَرِ وَكَفَّ الْأَذَى وَرَدُّ السَّلَامِ وَالْأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهَى عَنِ الْمُنْكَرِ – متفق عليه .
১৯০। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা রাস্তার উপর বসা থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় বসা ছাড়া তো আমাদের কোন উপায় নেই। আমরা সেখানে বসে (পারস্পরিক প্রয়োজন সম্পর্কিত) আলাপ-আলোচনা করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা যখন রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকতে অস্বীকার করছ, তাহলে রাস্তার হক আদায় কর। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক আবার কি? তিনি বলেন: রাস্তার হক হল, দৃষ্টি সংযত রাখা, (রাস্তা থেকে) কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা, সালামের জবাব দেয়া, সৎ কাজের নির্দেশ দেয়া এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۱۹۱ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ وَقَالَ يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعْدَ مَا ذَهَبَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعُ بِهِ قَالَ لا وَاللَّهِ لَا أَخُذُهُ أَبَدًا وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – رواه مسلم .
১৯১। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে একটি সোনার আংটি দেখতে পেলেন। তিনি আংটিটি তার হাত থেকে খুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বলেনঃ তোমাদের কেউ কি নিজের হাতে জ্বলন্ত অংগার রাখতে পছন্দ করে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখান থেকে) চলে যাওয়ার পর লোকটিকে বলা হল, আংটিটি উঠিয়ে নিয়ে কোন উপকারী কাজে লাগাও। সে বলল, আল্লাহর শপথ! যে জিনিসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন তা আমি কখনও নেব না।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
١٩٢ – عَنْ أَبِي سَعِيدِ الْحَسَنِ الْبَصَرِي أَنْ عَائِدَ بْنَ عَمْرُو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَخَلَ عَلَى عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ زِيَادٍ فَقَالَ أَيْ بُنَى إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ شَرِّ الرِّعَاءِ الْحُطَمَةُ فَإِيَّاكَ أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ فَقَالَ
لَهُ اجْلِسُ فَإِنَّمَا أنتَ مِنْ نُخَالَةِ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ وَهَلْ كَانَتْ لَهُمُ نُخَالَةً إِنَّمَا كَانَتِ النُّخَالَةُ بَعْدَهُمْ وَفِي غَيْرِهِمْ – رواه مسلم .
১৯২। আবু সাঈদ হাসান আল-বসরী (র) থেকে বর্ণিত। আয়েয ইবনে আমর (রা) একদা উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের কাছে গেলেন। তিনি (আয়েয) বলেন, হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: নিকৃষ্ট রাখাল (প্রশাসক) হল সেই ব্যক্তি যে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে নম্রতা ও সহনশীলতা অবলম্বন করে না। তুমি সতর্ক থাক যেন এর অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাও। সে তাকে বলল, থাম। কেননা তুমি তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে অপদার্থদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি (আয়েয) বলেন, তাদের (সাহাবীদের) মধ্যে কি এরূপ অপদার্থ লোক ছিল? নীচ ও অপদার্থ লোক তো ছিল তাদের পরের স্তরে এবং তারা ছাড়া অন্যদের মধ্যে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
١٩٣ – عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوْشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يُبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلا يُسْتَجَابُ لَكُمْ – رواه الترمذى
وَقَالَ حَدِيثُ حَسَنُ.
১৯৩। হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই সত্য-ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতিরোধ করবে। অন্যথায় অচিরেই আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন। (গযবে নিপতিত হয়ে) তোমরা দু’আ করবে কিন্তু তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবে না (দু’আ কবুল হবে না)।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা হাসান হাদীস।
١٩٤ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائر – رواه ابو داود والترمذي وقال حَدِيثٌ حَسَنٌ .
১৯৪। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায়সঙ্গত কথা বলা উত্তম জিহাদ।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটাকে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
١٩٥ – عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ الْبَجَلِي الْأَحْمَسِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الْغَرْزِ أَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ قَالَ كَلِمَةٌ حَقِّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ – رواه النِّسَائِيُّ
بِإِسْنَادِ صَحِيحِ الْغَرْزُ بِغَيْنِ مُعْجَمَةٍ مَفْتُوحَةٍ ثُمَّ رَاءٍ سَاكِنَةٍ ثُمَّ رَأَى وَهُوَ رِكَابَ كَيْرِ الْجَمَلِ إِذَا كَانَ مِنْ جلد أَوْ خَشَبٍ وَقِيلَ لَا يَخْتَصُّ بِجِلْدٌ وَخَشَبٍ .
১৯৫। আবু আবদুল্লাহ তারিক ইবনে শিহাব (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমন সময় প্রশ্ন করল, যখন তিনি সওয়ারীর রেকাবে পা রেখেছেন মাত্র: সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি? তিনি বলেন: অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা (সর্বোত্তম জিহাদ)।
١٩٦ – عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ أَوَّلَ مَا دَخَلَ النَّقْصُ عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ كَانَ الرَّجُلُ يَلْقَى الرَّجُلَ فَيَقُولُ يَا هَذَا اتَّقِ اللهَ وَدَعْ مَا تَصْنَعُ فَإِنَّهُ لا يَحِلُّ لَكَ ثُمَّ يَلْقَاهُ مِنَ
الْغَدِ وَهُوَ عَلَى حَالِهِ فَلَا يَمْنَعُهُ ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ أَكِيلَهُ وَشَرِيبَهُ وَقَعِيدَهُ فَلَمَّا فَعَلُوا ذَلِكَ ضَرَبَ اللهُ قُلُوبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ ثُمَّ قَالَ الْعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوا وَكَانُوا
يَعْتَدُونَ . كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ . تَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ إِلَى قَوْلِهِ (فَاسِقُونَ) ثُمَّ قَالَ كَلا وَاللَّهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَلَتَأْخُذَنَّ
عَلَى يَدِ الظَّالِمِ وَلتَأْطِرْتُهُ عَلَى الْحَقِّ أَطْرًا وَلَتَقْصُرْتُهُ عَلَى الْحَقِّ قَصْرًا أَوْ لَيَضْرِبَنَّ اللَّهُ بِقُلُوبِ بَعْضِكُمْ عَلَى بَعْضٍ ثُمَّ لَيَلْعَنَنَّكُمْ كَمَا لَعَنَهُمْ – رواه ابو داود والترمذي وقال حَديثُ حَسَنٌ هذا لفظ أَبِي دَاوُدَ وَلَفظُ التَّرْمِذِي قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا وَقَعَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ فِي الْمَعَاصِي نَهَتُهُمْ عُلَمَاؤُهُمْ فَلَمْ يَنْتَهُوا فَجَالَسُوهُمْ فِي مَجَالِسِهِمْ وَوَاكَلُوهُمْ وَشَارَبُوهُمْ فَضَرَبَ اللهُ قُلُوبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ وَلَعَنَهُمْ عَلَى لسَان دَاوُدَ وَعِيسَى
بْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ مُتَكَنَّا فَقَالَ لَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ حَتَّى تَأْطِرُوهُمْ عَلَى الْحَقِّ أَطْرًا – قَوْلُهُ تَأْطِرُوهُمْ أَى تَعْطِفُوهُمْ وَلَتَقْصُرُنَّهُ أَى لَتَحْبِسُنَّهُ .
১৯৬। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : বনী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথমে এভাবে দুষ্কৃতি ও অনিষ্টকারিতা অনুপ্রবেশ করে: এক (আলিম) ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে মিলিত হত এবং তাকে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর এবং যা করছ তা পরিত্যাগ কর, কেননা এ কাজ তোমার জন্য বৈধ নয়। পরদিনও সে তার সাথে মিলিত হয়ে তাকে পূর্বাবস্থায় দেখতে পেত কিন্তু সে আর তাকে নিষেধ করত না। এভাবে সেও তার পানাহার ও উঠা-বসায় শরীক হয়ে পড়ে। যখন তারা এ অবস্থায় পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহ তাদের একের অন্তরের (কালিমা) দ্বারা অপরের অন্তরকে অন্ধকার করে দিলেন। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন: “বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরের পথ অবলম্বন করল তাদের প্রতি দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মুখ দিয়ে অভিসম্পাত করা হল। কেননা তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করেছিল। তারা পরস্পরকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখা পরিত্যাগ করেছিল। অতি জঘন্য কর্মনীতিই তারা অবলম্বন করেছিল। তোমরা তাদের অনেক লোককে দেখতে পাচ্ছ, যারা (মুমিনদের বিপরীতে) কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা করতে ব্যস্ত। নিশ্চয় অত্যন্ত খারাপ পরিণামই সম্মুখে রয়েছে, যার ব্যবস্থা তাদের প্রবৃত্তিসমূহ তাদের জন্য করেছে। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন। তাদের শাস্তিভোগ স্থায়ী হবে। তারা যদি বাস্তবিকই আল্লাহ, রাসূল এবং সেই জিনিসের প্রতি ঈমান আনত, যা তাঁর (নবীর) প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তবে তারা কখনও (ঈমানদার লোকদের বিরুদ্ধে) কাফিরদেরকে নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই ফাসিক” (সূরা আল মা-ইদা: ৭৮-৮১)। অতঃপর তিনি (মহানবী) বলেন: কখনও নয়! আল্লাহর শপথ! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করতে থাক এবং অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখ, যালিমের হাত শক্ত করে ধর এবং তাকে টেনে তুলে সত্য-ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের (নেক্কার ও গুনাহগার) পরস্পরের অন্তরকে মিলিয়ে (অন্ধকার করে) দেবেন, অতঃপর বনী ইসরাঈলের মত তোমাদেরকেও অভিশপ্ত করবেন।
ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, এটা হাসান হাদীস। হাদীসের মূল শব্দগুলো আবু দাউদের। তিরমিযীর মূল হাদীসের অর্থ নিম্নরূপ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: বনী ইসরাঈল যখন পাপ কাজে লিপ্ত হল, তাদের আলিমগণ তাদেরকে তা থেকে বিরত থাকতে বলল, কিন্তু তারা বিরত হল না। (এক পর্যায়ে) আলিমগণও তাদের সাথে উঠা-বসা ও পানাহার করতে থাকল। অতঃপর আল্লাহ তাদের অন্তরকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে দিলেন (ফলে আলিমরাও পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ল)। আল্লাহ তাদেরকে দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মুখ দিয়ে অভিশাপ দিলেন। কেননা তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন এবং বলেন: কখনও নয়, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা তাদেরকে (যালিমদেরকে) হাত ধরে টেনে এনে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত ছাড়বে না।
۱۹۷ – عَنْ أَبِي بَكْرِ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ لَتَقْرَؤُوْنَ هذِهِ الْآيَةَ (يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ….. وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ النَّاسَ
إذا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يُعْمُهُمُ اللَّهُ بِعِقَابِ مِنْهُ – رَوَاهُ ابو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ بِأَسَانِيدِ صَحِيحَة .
১৯৭। আবু বাক্স আস্ সিদ্দীক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোকসকল! তোমরা এ আয়াত পাঠ করে থাকঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের কথা চিন্তা কর, কারো পথভ্রষ্ট হওয়ায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না, যদি তোমরা সঠিক পথে থাকতে পার। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। অতঃপর তিনি তোমাদের বলে দেবেন, তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) কি করছিলে” (সূরা আল মা-ইদা: ১০৫)। অথচ আমি (আবু বাক্স) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: লোকেরা যখন দেখে, যালিম যুগ্ম করছে, কিন্তু তারা তা প্রতিরোধ করে না, এরূপ লোকদের উপর আল্লাহ অচিরেই শাস্তি পাঠাবেন।
ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ২৪ – যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে; কিন্তু সে তার কথা অনুযায়ী কাজ করে না, তার শাস্তি
যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে; কিন্তু সে তার কথা অনুযায়ী কাজ করে না, তার শাস্তি।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلا تَعْقِلُونَ
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা জনগণকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল, কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর, তোমরা কি তোমাদের বুদ্ধিকে কোন কাজেই লাগাও না?”(সূরা আল-বাকারা: ৪৪)
وَقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ . كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা কেন এমন কথা বল যা নিজেরা কর না? তোমাদের এমন কথা বলা যা তোমরা কর না, আল্লাহর কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর বিষয়।” (সূরা আস-সাফ: ২,৩)
وَقَالَ تَعَالَى إِخْبَارًا عَنْ شُعَيْبٍ عَلَيْهِ السَّلامِ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ ..
আল্লাহ তা’আলা শু’আইব আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসংগে বলেন: “আমি (শু’আইব) কিছুতেই চাই না যে, আমি তোমাদেরকে যা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করি, তা আমি নিজে করি। আমি তো যথাসাধ্য সংশোধন করতে চাই।” (সূরা হুদ ৪৮৮)
۱۹۸ – عَنْ أَبِي زَيْدٍ أَسَامَةَ بْنِ زَيْدِ بْنِ حَارِثَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يُؤْتَى بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ اقْتَابُ بَطْنِهِ فَيَدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ فِي الرِّحَا
فَيَجْتَمِعُ إِلَيْهِ أهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلانُ مَا لَكَ؟ أَلَمْ تَكُ تَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ ؟ فَيَقُولُ بَلَى كُنْتُ أَمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَلَا أُتِيْهِ وَأَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ وَأَتِيهِ متفق عليه قَوْلُهُ تَنْدَلِقُ هُوَ بالدال الْمُهْمَلَةِ وَمَعْنَاهُ تَخْرُجُ وَالْأَقْتَابُ
الْأَمْعَاءُ واحدها قتب .
১৯৮। উসামা ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: কিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বেরিয়ে আসবে। সে এটা নিয়ে এমনভাবে চক্কর দিতে থাকবে যেভাবে গাধা চক্রের মধ্যে ঘুরে থাকে। জাহান্নামীরা তার চারপাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ কাজের নির্দেশ দিতে না এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখতে না? সে বলবে, হাঁ আমি সৎ কাজের নির্দেশ দিতাম, কিন্তু নিজে তা করতাম না। আমি অন্যদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতাম, কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম।
হাদীসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ২৫ – আমানাত আদায় করার নির্দেশ
আমানাত আদায় করার নির্দেশ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا .
মহান আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ তোমাদেরকে যাবতীয় আমানাত তার প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।” (সূরা আন-নিসা: ৫৮)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولا .
“আমরা এ আমানাত আসমানসমূহ, যমীন ও পাহাড়-পর্বতের সামনে পেশ করলাম। তারা এটা বহন করতে প্রস্তুত হল না, বরং তারা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু মানুষ তা নিজের ঘাড়ে তুলে নিল। নিশ্চয় মানুষ বড় যালিম ও মূর্খ।” (সূরা আল-আহযাবঃ ৭২)
۱۹۹ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَيَةُ الْمُنَافِقِ ثلاث إِذا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ متفق عليه وَفِي رِوَايَةٍ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ .
১৯৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ওয়াদা-চুক্তি করে তার বিপরীত কাজ করে এবং তার কাছে কোন কিছু আমানাত রাখলে খিয়ানত করে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য বর্ণনায় আরো আছে: সে যদি রোযা-নামায করে এবং নিজেকে মুসলিম বলে ধারণা করে (তবুও সে মুনাফিক)।
٢٠٠ – عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ قَدْ رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا انْتَظِرُ الْآخَرَ حَدَّثَنَا أَنَّ الْأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ ثُمَّ نَزَلَ الْقُرْآنُ فَعَلِمُوا مِنَ الْقُرْآنِ وَعَلِمُوا
مِنَ السُّنَّةِ ثُمَّ حَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِ الْأَمَانَةِ فَقَالَ يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الْأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ فَيَظُلُّ أثرها مثل الوكت ثُمَّ يَنَامُ القَوْمَةَ فَتُقْبَضُ الْأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ فَيَظُلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الْمَجْلِ كَجَمْرٍ دَخَرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ فَتَرَاهُ
مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيْهِ شَيْ ثُمَّ أَخَذَ حَصَاةً فَدَخَرَجَهُ عَلَى رِجْلِهِ فَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُوْنَ فَلَا يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الْأَمَانَةَ حَتَّى يُقَالَ إِنَّ فِي بَنِي فَلَانٍ رَجُلًا آمِينًا حَتَّى يُقَالَ لِلرَّجُلِ مَا أَجْلَدَهُ مَا أَظْرَفَهُ مَا أَعْقَلَهُ وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ
حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيْمَانٍ وَلَقَدْ أَتَى عَلَى زَمَانٌ وَمَا أَبَالِي أَيُّكُمْ بَايَعْتُ لَئِنْ كَانَ مُسْلِمًا لَيَرُدُّنَّهُ عَلَى دِينُهُ وَلَئِنْ كَانَ نَصْرَانِيًّا أَوْ يَهُودِيَّا لَيَرُدُّتُّهُ عَلَى سَاعِيْهِ وَأَمَّا الْيَوْمَ فَمَا كُنْتُ أَبَايِعُ مِنْكُمْ إِلَّا فَلَانًا وَفُلَانًا -متفق عليه قَوْلُهُ
جَذْرٌ بِفَتْحِ الْجِيمِ وَإِشْكَانِ النَّالِ الْمُعْجَمَةِ وَهُوَ أَصْلُ الشَّيْ والوكتُ بِالتَّاءِ الْمُثَنَّاةِ مِنْ فَوْقَ الْأَثَرُ الْيَسِيرُ وَالْمَجْلُ بِفَتْحِ الْمِيمِ وَإِشْكَانِ الْجِيمِ وَهُوَ تَنَفَّطُ فِي الْيَدِ وَنَحْوِهَا مِنْ أَثَرِ عَمَلٍ وَغَيْرِهِ قَوْلُهُ مُنْتَبِرًا مُرْتَفِعًا قَوْلُهُ ساعيه
الوالي عليه.
২০০। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দু’টি কথা বলেন। তার মধ্যে একটি তো আমি দেখেই নিয়েছি আর দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি (মহানবী) আমাদেরকে বলেন: প্রথমত মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে আমানাত (বিশ্বস্ততা) ঢেলে দেয়া হল, অতঃপর কুরআন নাযিল করা হল। তারা কুরআনকে জানল এবং হাদীসকেও চিনল। অতঃপর তিনি (সা) আমাদের কাছে আমানাত ও বিশ্বস্ততাকে তুলে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। তিনি বলেন: মানুষ চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী ঘুমিয়ে পড়বে, আর তার অন্তর থেকে আমানাত ও বিশ্বস্ততা তুলে নেয়া হবে। অতঃপর তার মধ্যে এর ক্ষীণ প্রভাব অবশিষ্ট থাকবে। সে পুনরায় স্বাভাবিক অভ্যাস অনুযায়ী ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তার অন্তর থেকে বিশ্বস্ততার বাকি প্রভাবটুকুও তুলে নেয়া হবে। অতঃপর অন্তরের মধ্যে একটি ফোস্কার মত চিহ্ন বাকি থাকবে। যেমন তুমি তোমার পায়ের উপর আগুনের স্কুলিংগ রাখলে এবং তাতে চামড়া পুড়ে ফোস্কা পড়ল। ব্যাহ্যত স্থানটি ফোলা দেখাবে, কিন্তু এর মধ্যে কিছুই নেই। (রাবী বলেন) অতঃপর তিনি একটি কাঁকর উঠিয়ে নিজের পায়ের উপর মারলেন। (রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ) এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে এবং তারা ক্রয়-বিক্রয়ে লিপ্ত হবে। তাদের মধ্যে আমানাত রক্ষা করার মত একটি লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না, এমনকি বলা হবে, অমুক বংশে একজন বিশ্বস্ত লোক আছে। এমনকি একটি লোককে (পার্থিব বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার কারণে) বলা হবে, লোকটি কত হুঁশিয়ার, চালাক, স্বাস্থ্যবান, সুন্দর ও বুদ্ধিমান। অথচ তার মধ্যে সরিষার দানার পরিমাণ ঈমানও থাকবে না। (রাবী হুযাইফা (রা) বলেন) আজ আমি এমন এক যুগে এসে পড়েছি যে, কার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করছি তার কোন বাছবিচার নেই। কেননা যদি সে মুসলিম হয় তবে আমার পাওনা তার দীন ও ঈমানের কারণে আদায় করবে। যদি সে খৃস্টান অথবা ইহুদী হয় তবে তার দায়িত্ব আমার পাওনা তার কাছ থেকে আদায় করে দেবে। আজ আমি তোমাদের কারো সাথে ক্রয়-বিক্রয় করব না, শুধু অমুক অমুক ব্যক্তির সাথে করব।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। শব্দার্থ: جذر কোন বস্তুর আসল ও মূল। لرکت। সাধারণ চিহ্ন। المجل কাজকর্ম করার কারণে হাত-পা ইত্যাদিতে যে দাগ পড়ে। ( منتبر ) উচ্চতা, উন্নত। ساعی মুতাওয়াল্লী ও তত্ত্বাবধায়ক।
٢٠١ – عَنْ حُذَيْفَةً وَأَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَا قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجْمَعُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ فَيَقُومُ الْمُؤْمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ لَهُمُ الْجَنَّةُ فَيَأْتُونَ أَدَمَ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِ فَيَقُولُونَ يَا أَبَانَا اسْتَفْتِحُ لَنَا
الْجَنَّةَ فَيَقُولُ وَهَلْ أَخْرَجَكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلا خَطِيئَةُ أَبِيكُمْ لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ اذْهَبُوا إِلَى ابْنِي إِبْرَاهِيمَ خَلِيلِ اللَّهِ قَالَ فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ لَسْتُ بِصَاحِبِ ذَلِكَ إِنَّمَا كُنْتُ خَلِيْلًا مِنْ وَرَاءَ وَرَاءَ اعْمَدُوا إِلَى مُوسَى
الَّذِي كَلَّمَهُ اللَّهِ تَكْلِيمًا فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ لَسْتُ بِصَاحِب ذَلِكَ اذْهَبُوا إِلى عِيسَى كَلِمَةِ اللَّهِ وَرُوحِهِ فَيَقُولُ عيسى لشت بِصَاحِبِ ذَلِكَ فَيَأْتُونَ مُحَمَّداً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُوْمُ فَيُؤْذَنُ لَهُ وَتَرْسَلُ الْأَمَانَةُ وَالرَّحِمُ
فَتَقُوْمَانِ جَنَّبَتَي الصِّرَاطِ يَمِينًا وَشِمَالاً فَيَمُرُّ أَوَلَكُمْ كَالْبَرْقِ قُلْتُ بِأَبِي وَأَمِّي أَيُّ شَيْءٍ كَمَرِ الْبَرْقِ ؟ قَالَ أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ يَمُرُّ وَيَرْجِعُ فِي طَرْفَةِ عَيْنٍ ثُمَّ كَمَرَ الرِّيحِ ثُمَّ كَمَرِ الطَّيْرِ وَشَدِ الرِّجَالِ تَجْرِي بِهِمْ أَعْمَالُهُمْ وَنَبِيُّكُمْ قَائِمٌ
عَلَى الصِّرَاطِ يَقُولُ رَبِّ سَلِّمُ سَلِّمْ حَتَّى تَعْجِزَ أَعْمَالُ الْعِبَادِ حَتَّى يجى الرَّجُلُ لا يَسْتَطِيعُ السَّيْرَ إِلا زَحْفًا وَفِي حَافَتَي الصِّرَاطِ كَلَالِيْبُ مُعَلَّقَةٌ مَأْمُورَةٌ بِأَخْذِ مَنْ أُمِرَتْ بِهِ فَمَخْدُوسٌ نَاجِ وَمُكَرْدَسَ فِي النَّارِ وَالَّذِي نَفْسُ أَبِي
هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ إِنْ قَعْرَ جَهَنَّمَ لَسَبْعُونَ خَرِيفًا – رَوَاهُ مُسْلِمُ قَوْلُهُ وَرَاءَ وَرَاءَ هُوَ بِالْفَتْحِ فِيهِمَا وَقِيلَ بِالضَّمِّ بِلا تَنْوِينِ وَمَعْنَاهُ لَسْتُ بِتِلْكَ الدَّرَجَةِ الرَّفِيعَةِ وَهِيَ كَلِمَةٌ تُذْكَرُ عَلَى سَبِيلِ التَّواضُعِ وَقَدْ بَسَطْتُ مَعْنَاهَا فِي شَرْحِ
صَحِيحِ مُسْلِمٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
২০১। হুযাইফা ও আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মহান ও প্রাচুর্যময় আল্লাহ (হাশরের দিন) সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। তখন ঈমানদার লোকেরা উঠে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় তাদের সন্নিকটে জান্নাত আনা হবে। তখন তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে গিয়ে বলবে, হে আমাদের পিতা। আমাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিন। তিনি বলবেন: তোমাদের পিতার অপরাধই তো তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত করেছে। আমি এর দরজা খোলার উপযুক্ত নই। তোমরা আমার ছেলে ইবরাহীম খলীলুল্লাহর কাছে যাও। নবী (সা) বলেন: অতঃপর তারা ইবরাহীম (আ)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এ কাজের উপযুক্ত নই। আমি তো শুধু বিনয়ী খলীল ছিলাম (আমি এ মহান গৌরবের উপযুক্ত নই)। তোমরা বরং মূসা (আ)-এর কাছে যাও। আল্লাহ তাঁর সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই ছুটে মূসা (আ)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। তোমরা ঈসা (আ)-এর কাছে যাও। তিনি তো আল্লাহর কালেমা এবং রূহুল্লাহ। ঈসা (আ) বলবেন, জান্নাতের দরজা খোলার মত যোগ্যতা আমার নেই। পরিশেষে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছুটে আসবে। তিনি উঠে দাঁড়াবেন। তাঁকে (শাফাআত করার) অনুমতি দেয়া হবে। আমানাত এবং আত্মীয়তার সম্পর্ককেও ছেড়ে দেয়া হবে। এরা পুল-সিরাতের ডানে-বাঁয়ে দু’দিকে দাঁড়িয়ে যাবে। তোমাদের প্রথম দলটি বিদ্যুৎবেগে পুল-সিরাত পার হয়ে যাবে। আমি (হুযাইফা অথবা আবু হুরাইরা) বললাম, (হে আল্লাহর রাসূল): আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীত হোক। বিদ্যুৎবেগে পার হওয়ার তাৎপর্য কি? তিনি বলেন: তোমরা কি বিদ্যুৎ দেখনি যে, পলকের মধ্যে তা চলে যেতে-আসতে পারে? অতঃপর তারা বাতাসের গতিতে, অতঃপর পাখির গতিতে এবং দ্রুত দৌড়ের গতিতে পর্যায়ক্রমে পুল-সিরাত পার হবে। এ পার্থক্য তাদের কৃতকর্মের কারণেই হবে। এ সময় তোমাদের নবী (সা) পুল-সিরাতের উপর দাঁড়িয়ে বলতে থাকবেনঃ প্রভু হে! শাস্তি বর্ষণ করুন, শান্তি বর্ষণ করুন। এভাবে বান্দাদের সৎ কাজের পরিমাণ কম হওয়াতে তারা অগ্রসর হতে অক্ষম হয়ে পড়বে। ফলে তারা পাছা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকবে। পুল-সিরাতের উভয় দিকে কিছু লোহার আঁকড়া লটকানো থাকবে। যাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেয়া হবে এগুলো তাকে গ্রেপ্তার করবে। যার গায়ে শুধু আঁচড় লাগবে সে মুক্তি পাবে। আর অন্য সব লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। বর্ণনাকারী (আবু হুরাইরা) বলেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আবু হুরাইরার প্রাণ। জাহান্নামের গভীরতা সত্তর বছরের পথের দূরত্বের সমান।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। শব্দার্থ: وراء وراء শব্দটির অর্থ হল, আমি উচ্চ মর্যাদার উপযুক্ত নই। শব্দটি বিনয়, নম্রতা ও ভদ্রতা প্রকাশার্থে ব্যবহৃত হয়।
۲۰۲ – عَنْ أَبِي خُبَيْبٍ بِضَمَ الْخَاءِ الْمُعْجَمَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا وَقَفَ الزُّبَيْرُ يَوْمَ الْجَمَلِ دَعَانِي فَقُمْتُ إِلَى جَنْبِهِ فَقَالَ يَا بُنَى إِنَّهُ لا يُقْتَلُ الْيَوْمَ الأَظَالِم أَوْ مَظْلُومٌ وَإِنِّي لَا أَرَانِي إِلَّا سَأَقْتَلُ الْيَوْمَ
مَظْلُومًا وَإِنَّ مِنْ أَكْبَرِ هَمِّي لَدَيْنِي أَفَتَرَى دَيْنَنَا يُبْقَى مِنْ مَالِنَا شَيْئًا ؟ ثُمَّ قَالَ يَا بُنَى بِعْ مَالَنَا وَاقْضِ دَيْنِي وَأَوْصَى بِالثُّلْثِ وَتُلْتُهُ لِبَنِيْهِ يَعْنِي لِبَنِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ ثلث الثلث قَالَ فَإِنْ فَضَلَ مِنْ مَالِنَا بَعْدَ قَضَاءِ الدِّينِ
شَيْ فَثُلُثُهُ لَبَنِيْكَ قَالَ هِشَامُ وَكَانَ بَعْضُ وَلَدِ عَبْدِ اللهِ قَدْ وَارَى بَعْضَ بَنِي الزُّبَيْرِ خُبَيْبٍ وَعَبَّادِ وَلَهُ يَوْمَئِذٍ تِسْعَةُ بَنِينَ وَتِسْعُ بَنَاتٍ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ فَجَعَلَ يُوصِينِي بِدَيْنِهِ وَيَقُولُ يَا بُنَى إِنْ عَجَرْتَ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ
بِمَوْلايَ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا دَرَيْتُ مَا أَرَادَ حَتَّى قُلْتُ يَا آبَت مَنْ مَوْلاكَ ؟ قَالَ اللهُ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا وَقَعْتُ فِي كُرْبَةٍ مِنْ دَيْنِهِ إِلا قُلْتُ يَا مَوْلَى الزُّبَيْرِ اقْضِ عَنْهُ دَيْنَهُ فَيَقْضِيَهُ قَالَ فَقُتِلَ الزُّبَيْرُ وَلَمْ يَدَعُ ديناراً ولا دِرْهَمًا إِلَّا أَرَضِينَ مِنْهَا
الْغَابَةُ وَإِحْدَى عَشَرَةَ دَارًا بِالْمَدِينَةِ وَدَارَيْنِ بِالْبَصْرَةِ وَدَاراً بِالْكُوفَةِ وَدَاراً بِمِصْرَ قَالَ وَإِنَّمَا كَانَ دَيْنُهُ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ أَنْ الرَّجُلَ كَانَ يَأْتِيْهِ بِالْمَالِ فَيَسْتَوْدِعُهُ إِيَّاهُ فَيَقُولُ الزُّبَيْرُ لَا وَلَكِنْ هُوَ سَلَفَ إِنِّي أَخْشَى عَلَيْهِ الضَّيْعَةَ وَمَا
وَلِى إِمَارَةً قَط وَلَا حِبَايَةً وَلَا خَرَاجًا وَلَا شَيْئًا إِلَّا أَنْ يكُونَ فِي غَزُو مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى ا اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ مَعَ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ قَالَ عَبْدُ اللهِ فَحَسَبْتُ مَا كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الدِّيْنِ فَوَجَدتُهُ
الْقَى الْفِ وَمِائَتَيْ أَلْفِ فَلَقِيَ حَكِيمُ بْنُ حِزَامٍ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ فَقَالَ يَا ابْنَ أخِي كَمْ عَلَى أَخِي مِنَ الدِّينِ ؟ فَكَتَمْتُهُ وَقُلْتُ مِائَةُ أَلْفِ فَقَالَ حَكِيمُ وَاللَّهِ مَا أرى أموالَكُمْ تَسِعُ هَذِهِ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ أَرَأَيْتَكَ إِنْ كَانَتْ الْقَى الْفِ ۚ
وَمِائَتَيْ الف؟ قَالَ مَا أَرَاكُمْ تُطِيقُونَ هَذَا فَإِنْ عَجَزْتُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِينُوا بِي قَالَ وكَانَ الزُّبَيْرُ قَدِ اشْتَرَى الْغَابَةَ بِسَبْعِينَ وَمِائَةَ أَلْفِ فَبَاعَهَا عَبْدُ اللَّهِ بِالْفِ أَلْفِ وست مائة ألف ثُمَّ قَامَ فَقَالَ مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ
شَيْ فَلْيُوافِنَا بِالْغَابَةِ فَآتَاهُ عَبْدُ اللَّهِ ابْنُ جَعْفَرٍ وَكَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ أَرْبَعُ مِائَةِ أَلْفِ فَقَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ إِنْ شِئْتُمْ تَرَكْتُهَا لَكُمْ ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ لا قَالَ فَإِنْ شِئْتُمْ جَعَلْتُمُوهَا فِيْمَا تُؤَخِّرُونَ إِنْ أَخَّرْتُمْ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ لا قَالَ فَاقْطَعُوا لِي
قِطْعَةٌ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ لَكَ مِنْ هُهُنَا إِلَى هُهُنَا فَبَاعَ عَبْدُ اللَّهِ مِنْهَا فَقَضَى عَنْهُ دَيْنَهُ وَأَوْفَاهُ وَبَقِيَ مِنْهَا أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ وَنِصْفٌ فَقَدِمَ عَلَى مُعَاوِيَةً وَعِنْدَهُ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ وَالْمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ وَابْنُ زَمْعَةَ فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ كَمْ قُومَتِ
الْغَابَةُ؟ قَالَ كُلُّ سَهُم بِمَائَةِ أَلْفِ قَالَ كَمْ بَقِيَ مِنْهَا ؟ قَالَ أَرْبَعَةُ أَسْهُم وَنِصْفُ فَقَالَ الْمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ قَدْ أَخَذْتُ مِنْهَا سَهُمَا بِمَائَةِ أَلْفِ وَقَالَ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ قَدْ أَخَذْتُ سَهُما بِمَائَةِ أَلْفِ وَقَالَ ابْنُ زَمْعَةَ قَدْ أَخَذْتُ سَهُما
بِمَائَةِ أَلْفِ فَقَالَ مُعَاوِيَةٌ كَمْ بَقِيَ مِنْهَا ؟ قَالَ سَهُمْ وَنِصْفٌ قَالَ قَدْ أَخَذْتُهُ بِخَمْسِينَ وَمِائَةِ أَلْفِ قَالَ وَبَاعَ عَبْدُ اللهُ بْنُ جَعْفَرٍ نَصِيبَهُ مِنْ مُعَاوِيَةَ بِسِتِ مِائَةِ أَلْفِ فَلَمَّا فَرَغَ ابْنُ الزُّبَيْرِ مِنْ قَضَاءِ دَيْنِهِ قَالَ بَنُو الزُّبَيْرِ أَقْسِمْ بَيْنَنَا
مِيْرَاثَنَا قَالَ وَاللَّهِ لَا أُقْسِمُ بَيْنَكُمْ حَتَّى أَنَادِي بِالْمَوْسِمِ أَرْبَعَ سِنِينَ عَلَى مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ دَيْنِ فَلْيَاتِنَا فَلْنَقْضِهِ فَجَعَلَ كُلِّ سَنَةٍ يُنَادِي فِي الْمَوْسِمِ فَلَمَّا مَضَى أَرْبَعُ سِنِينَ قَسَمَ بَيْنَهُمْ وَدَفَعَ الثلث وَكَانَ لِلزُّبَيْرِ أَرْبَعُ
نِسْوَةٍ فَأَصَابَ كُلِّ امْرَأَةٍ أَلْفُ الف وَمِائَنَا الْفِ فَجَمِيعُ مَالِهِ خَمْسُونَ أَلْفَ أَلْفِ وَمِائَنَا الْف رواه البخاري .
২০২। আবু খুবাইব আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উটের যুদ্ধের (৩৬ হি.) দিন আয যুবাইর (রা) যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন আমাকে কাছে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। তিনি বলেন, হে বৎস! আজ যালিম অথবা মযলুমের কেউ না কেউ মারা যাবেই। আমার মনে হয় আজ আমি নির্যাতিত অবস্থায় মারা যাব। আমি আমার দেনা সম্পর্কে বড়ই দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে আছি। তুমি কি মনে কর, আমার দেনা পরিশোধ করার পর কিছু মাল অবশিষ্ট থাকবে? অতঃপর তিনি বলেন, হে আমার সন্তান! তুমি আমার মাল-সম্পদ বিক্রয় করে আমার দেনা পরিশোধ করে দেবে। অতঃপর তিনি এক-তৃতীয়াংশ মালের ওসিয়াত করলেন এবং তার তৃতীয়াংশ তার পুত্রদের জন্য অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইরের পুত্রদের জন্য এক-তৃতীয়াংশের তৃতীয়াংশ (১/৯ অংশ)। তিনি (আয যুবাইর) বলেন, দেনা পরিশোধ করার পর যদি কিছু মাল বেঁচে যায়, তবে তার এক-তৃতীয়াংশ তোমার ছেলেদের জন্য। হিশাম বলেন, আবদুল্লাহর কোন কোন ছেলে আয় যুবাইরের পুত্র খুবাইব ও ‘আব্বাদের সমবয়সী ছিল। আয যুবাইরের ৯ পুত্র ও ৯ কন্যা বর্তমান ছিল।
আবদুল্লাহ বলেন, তিনি (পিতা আয যুবাইর) বরাবরই আমাকে তাঁর ঋণের কথা বলতে থাকলেন। তিনি বলছিলেন, হে পুত্র! তুমি যদি এ ঋণ পরিশোধে অক্ষম হও তবে তুমি আমার মনিবের কাছে এ দেনা পরিশোধ করার জন্য প্রার্থনা করবে। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি বুঝতেই পারছিলাম না তিনি মনিব বলে কাকে বুঝাতে চেয়েছেন। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, আব্বাজান! আপনার মনিব কে? তিনি বলেন, আল্লাহ। আবদুল্লাহ বলেন, আমি যখনই তাঁর দেনা পরিশোধ করতে অসুবিধায় পড়ে যেতাম তখনই বলতাম, হে আয যুবাইরের মনিব (আল্লাহ)। তাঁর দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন। মহান আল্লাহ এ দোয়া কবুল করলেন এবং পিতার দেনা পরিশোধ করার সুযোগ করে দিলেন। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আয যুবাইর (রা) নিহত হলেন, কিন্তু তিনি কোন নগদ অর্থ (দীনার ও দিরহাম) রেখে যাননি। তিনি কিছু স্থাবর সম্পত্তি রেখে গেলেন। তা হল: গাবা নামক স্থানের কিছু জমি, মদীনায় এগারটি ঘর, বসরায় দু’টি ঘর, কুফায় একটি ঘর এবং মিসরে একটি ঘর।
আবদুল্লাহ বলেন, তার ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণ ছিল: কোন লোক তাঁর কাছে কিছু গচ্ছিত (আমানাত) রাখতে আসলে তিনি বলতেন, আমি আমানাত রাখি না তবে এটা তোমার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিয়ে নিলাম। কেননা আমানাত হিসেবে রাখলে হয়ত এটা আমার হাতে বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি (আয যুবাইর) কখনও কোন প্রশাসনিক পদে অথবা কর আদায়ের জন্য বা অন্য কোন পদে নিযুক্ত হননি। তিনি কোন পদ পছন্দ করতেন না। কিন্তু তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এবং আবু বাক্স (রা), উমার (রা) ও উসমান (রা)-র সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ বলেন, আমি তাঁর সমস্ত দেনার হিসাব করলাম। তার পরিমাণ দাঁড়াল বাইশ লাখ (দিরহাম)। হাকীম ইবনে হিযাম (রা) আবদুল্লাহ ইবনুষ যুবাইরের সাথে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমার ভাইয়ের ঋণের পরিমাণ কত? আমি (আবদুল্লাহ) আসল পরিমাণটা গোপন করে বললাম, এক লাখ (দিরহাম)। হাকীম (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ! তোমার এতো পরিমাণ মাল নেই যা দিয়ে এ দেনা পরিশোধ করতে পার। আবদুল্লাহ বলেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয় তবে কি অবস্থা হবে? হাকীম (রা) বলেন, তাহলে আমার ধারণা অনুযায়ী এটা পরিশোধ করতে তুমি মোটেই সক্ষম হবে না। ঋণ পরিশোধে কোনরূপ অসুবিধার সম্মুখীন হলে আমার সাহায্য চেয়ো। আবদুল্লাহ বলেন, আয যুবাইর (রা) গাবা নামক স্থানের সম্পত্তি এক লাখ সত্তর হাজার দিরহামে ক্রয় করেছিলেন। আবদুল্লাহ তা ষোল লাখ দিরহামে বিক্রয় করেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন: আয যুবাইরের কাছে যার পাওনা রয়েছে, সে যেন গাবা নামক স্থানে এসে আমাদের সাথে সাক্ষাত করে। ঘোষণার পর আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা) এসে বলেন, আয যুবাইরের কাছে আমার চার লাখ (দিরহাম) পাওনা আছে। যদি তোমরা চাও তবে আমি তা ছেড়ে দিতে পারি। আবদুল্লাহ বলেন, না। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর বলেন, যদি তোমরা এটা পরিশোধের জন্য সময় চাও, আমি তা দিতে প্রস্তুত। আবদুল্লাহ বলেন, না। তিনি (ইবনে জাফর) বলেন, তবে জমির একটা অংশ আমাকে পৃথক করে দাও। আবদুল্লাহ বলেন, তুমি এখান থেকে ঐ পর্যন্ত জমি নিয়ে নাও।
তিনি জমি বিক্রয় করে তাঁর (আয যুবাইরের) ঋণ পরিশোধ করলেন। এরপরও জমির সাড়ে চারটা খণ্ড অবশিষ্ট ছিল। অতঃপর তিনি (আবদুল্লাহ) মু’আবিয়া (রা)-র কাছে আসলেন। তাঁর কাছে আমর ইবনে উসমান, মুনযির ইবনুষ যুবাইর ও ইবনে যাম’আ উপস্থিত ছিলেন। মু’আবিয়া (রা) তাঁকে বলেন, তুমি গাবার জমির কি মূল্য নির্ধারণ করেছ? তিনি বলেন, প্রতি খণ্ড এক লাখ (দিরহাম)। তিনি বলেন, কয় খণ্ড অবশিষ্ট আছে? তিনি বলেন, সাড়ে চার খণ্ড। মুনযির ইবনুয যুবাইর বলেন, আমি এক খণ্ড এক লাখ (দিরহামে) নিয়ে নিলাম। আমর ইবনে উসমান বলেন, আমি এক লাখ (দিরহামে) এক খণ্ড নিয়ে নিলাম। ইবনে যাম’আ বলেন, আমি এক লাখ (দিরহামে) এক খণ্ড নিয়ে নিলাম। মু’আবিয়া (রা) জিজ্ঞেস করেন, এখন আর কতটুকু বাকী আছে? তিনি বলেন, দেড় খণ্ড (অবশিষ্ট আছে)। তিনি বলেন, আমি তা দেড় লাখ (দিরহামে) নিয়ে নিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জাফর তাঁর পাওনা বাবদ যে অংশটুকু কিনেছিলেন, তা পুনরায় তিনি মু’আবিয়ার কাছে চার লাখ (দিরহামে) বিক্রয় করেন।
আবদুল্লাহ ঋণ পরিশোধ করে অবসর হলে আয যুবাইরের অন্য ছেলেরা তাকে বলেন, আমাদের মীরাস আমাদের মধ্যে বণ্টন করুন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! একাধারে চার বছর হজ্জের মৌসুমে এই ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের মধ্যে মীরাস বণ্টন করব না: “আয যুবাইরের কাছে যে ব্যক্তির পাওনা রয়েছে সে যেন আমাদের কাছে আসে। আমরা তা পরিশোধ করে দেব।” তিনি একাধারে চার বছর হজ্জের সমাবেশে এ ঘোষণা দিলেন। চার বছর পূর্ণ হলে তিনি তাদের মধ্যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন করলেন এবং এক-তৃতীয়াংশ (ওসিয়াতের মাল হিসেবে) পৃথক করে রাখলেন। আয যুবাইরের চারজন স্ত্রী ছিলেন। প্রত্যেক স্ত্রীর অংশে বার লাখ (দিরহাম) করে পড়লো। সম্ভবত আয যুবাইরের ধন-সম্পদের পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটি দুই লাখ (দিরহাম)।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ২৬ – যুল্ম করা হারাম এবং যুল্মের প্রতিরোধ করার নির্দেশ
যুল্ম করা হারাম এবং যুল্মের প্রতিরোধ করার নির্দেশ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“যালিমদের জন্য কেউ দরদী বন্ধু হবে না, আর না এমন কোন শাফা’আতকারী হবে যার কথা মেনে নেয়া হবে।” (সূরা আল-মুমিন: ১৮)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ .
“যালিমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।” (সূরা আল-হজ্জঃ ৭৯)
وأما الْأَحَادِيثُ فَمِنْهَا حَدِيثُ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ الْمُتَقَدِّمُ فِي آخِرِ بَابِ الْمُجَاهَدَةِ . ٢٠ – عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشَّحَّ فَإِنَّ
الشَّحْ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَا ءَهُمْ وَاتَحَلُّوْا مَحَارِمَهُمْ – رواه مسلم .
২০৩। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা যুলুম করা থেকে দূরে থাক। কেননা যুগ্ম কিয়ামাতের দিন অন্ধকারাচ্ছন্ন ধোঁয়ায় পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতার কলুষতা থেকেও দূরে থাক। কেননা কৃপণতাই তোমাদের পূর্বের অনেক লোককে (জাতিকে) ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদেরকে রক্তপাত ও মারামারি করতে প্ররোচিত করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উস্কানি দিয়েছে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٠٤ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لتُؤَدُّنُ الْحَقُوق إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ القرناء – رواه مسلم.
২০৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: (মহান আল্লাহ) কিয়ামাতের দিন অবশ্যই পাওনাদারের পাওনা আদায় করাবেন, এমনকি শিংযুক্ত বকরী থেকে শিংবিহীন বকরীর প্রতিশোধ নেয়া হবে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٠٥ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا نَتَحَدِّثُ عَنْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا وَلَا تَدْرِي مَا حَجَّةُ الْوَدَاعِ حَتَّى حَمِدَ اللهَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ ذَكَرَ الْمَسِيحَ
الدَّجَّالَ فَاطْنَبَ فِي ذِكْرِهِ وَقَالَ مَا بَعَثَ اللَّهُ مِنْ نَبِي إِلَّا أَنْذَرَهُ أَمْتَهُ أَنْدَرَهُ نُوْحُ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ بَعْدِهِ وَإِنَّهُ إِنْ يُخْرُجُ فِيكُمْ فَمَا خَفِى عَلَيْكُمْ مِنْ شَانِهِ فَلَيْسَ يَخْفَى عَلَيْكُمْ إِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ وَإِنَّهُ أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ
عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ أَلَا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ كَحُرمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هذا الا هَلْ بَلَغْتُ؟ قَالُوا نَعَمْ قَالَ اللهُمَّ اشْهَدُ ثَلَاثًا وَيْلَكُمْ أَوْ وَتَحَكُمْ أَنْظُرُوا لا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ
بعض رواه البخاري وروى مسلم بعضه .
২০৫। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা জানতাম না, বিদায় হজ্জ কি বা বিদায় হজ্জ কাকে বলে? অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর মসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করলেন। তিনি বলেন: আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠাননি, যিনি নিজের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখাননি। নূহ (আ) এবং তাঁর পরে আগত নবীগণ নিজ নিজ উম্মাতকে এর ভয় দেখিয়েছেন, সাবধান করেছেন। সে তোমাদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করবে। এর ব্যাপারটা তোমাদের কাছে গোপন থাকবে না। এটাও তোমাদের অজানা নয় যে, তোমাদের প্রভু এক চোখবিশিষ্ট বা অন্ধ নন। দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে এবং তা আঙুর ফলের মত ফোলা হবে। তোমরা সাবধান হও! তোমাদের পরস্পরের রক্ত (জীবন) ও ধন-সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম এবং সম্মানের বস্তু, যেমন তোমাদের এ দিনটি হারাম (সম্মানিত) এবং তোমাদের এ মাসটি হারাম (সম্মানিত)। সাবধান! আমি কি (আল্লাহর বিধান তোমাদের কাছে) পৌঁছে দিয়েছি? উপস্থিত সবাই বলেন, হাঁ (আপনি পৌঁছে দিয়েছেন)। অতঃপর তিনি তিনবার বলেন: হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (তিনি পুনরায় বলেন): ধ্বংস হোক অথবা আফসোস হোক, খুব মনোযোগ দিয়ে শোন, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা পরস্পর রক্তারক্তি করে কুফরে প্রত্যাবর্তন করো না।
সম্পূর্ণ হাদীসটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মুসলিম এর কোন কোন অংশ বর্ণনা করেছেন।
٢٠٦ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ – متفق عليه .
২০৬। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমিতে যুগ্ম করল (জবরদখল করে নিল; কিয়ামাতের দিন) সাত তবক যমিন তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۰۷ – عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَيُمْلِيُّ لِلظَّالِمِ فَإِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ ثُمَّ قَرَأَ وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ اليم شَدِيدٌ) – متفق عليه .
২০৭। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন তিনি তাকে গ্রেপ্তার করেন তখন আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি (মহানবী) এ আয়াত পাঠ করলেন: “আর তোমার রব যখন কোন যালিম জনবসতিকে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এমনিই হয়ে থাকে। তাঁর পাকড়াও বড়ই কঠিন, নির্মম ও পীড়াদায়ক।” (সূরা হৃদঃ ১০২)
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۰۸ – عَنْ مُعَادٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ
عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمُهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لذلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ
بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حجاب متفق عليه .
২০৮। মু’আয (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (ইয়ামানের শাসক করে) পাঠানোর সময় বলেন: তুমি আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। তুমি তাদেরকে এরূপ সাক্ষ্য দিতে আহ্বান করবে: “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল।” যদি তারা এ আহ্বান মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে প্রত্যেক দিন-রাতের সময়সীমার মধ্যে আল্লাহ তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। তারা যদি তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে তুমি তাদেরকে জানিয়ে দেবেঃ আল্লাহ তাদের উপর সাদাকা (যাকাত) ফরয করেছেন। এটা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে বেছে বেছে তাদের উত্তম মালগুলো (গ্রহণ করা) থেকে বিরত থাকবে। আর মযলুম বা নির্যাতিতের দু’আকে (অভিশাপকে) ভয় কর। কেননা তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল থাকে না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۰۹ – عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدِ السَّاعِدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلاً مِنَ الْأَزْدِ يُقَالُ لَهُ ابْنُ اللَّتْبِيَّةِ عَلَى الصدقَةِ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ هذا لَكُمْ وَهَذَا أَهْدِى إِلَى فَقَامَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَحَمِدَ اللهَ وَاثْنى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي اسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلَى الْعَمَلِ مِمَّا وَلأَنِي اللهُ فَيَأْتِي فَيَقُولُ هُذَا لَكُمْ وَهُذَا هَدِيَّةً أَهْدِيَتْ إلى أَفَلا جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ أُمِّهِ حَتَّى
تَأْتِيَهُ هَدِيَّتُهُ إِنْ كَانَ صَادِقًا وَاللَّهَ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِهِ إِلا لَقِيَ اللَّهَ تَعَالَى يَحْمِلُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَلا أَعْرِفَنَّ أَحَدًا مِنْكُمْ لَقِيَ اللَّهَ يَحْمِلُ بَعِيرًا لَهُ رُغَاء أَوْ بَقَرَةً لَهَا خَوَارٌ أَوْ شَاةٌ تَبْعَرُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رُؤيَ بَيَاضُ
ابْطَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَغْتُ ثَلَاثًا متفق عليه .
২০৯। আবু হুমাইদ আবদুর রহমান ইবনে সা’দ আস্-সায়েদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দ গোত্রের এক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োগ করলেন। তার
ডাকনাম ছিল ইবনুল লুতবিয়্যা। সে (যাকাত আদায় করে) ফিরে এসে (মহানবীকে) বলল, এই মাল আপনাদের আর এই মাল আমাকে উপঢৌকন দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেন: অতঃপর, যেসব পদের অভিভাবক আল্লাহ আমাকে করেছেন, তার মধ্য থেকে কোন পদে আমি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ
করি। সে আমার কাছে ফিরে এসে বলে, এগুলো আপনাদের, আর এগুলো আমাকে উপঢৌকন দেয়া হয়েছে। এ ব্যক্তি তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থাকে না কেন? যদি সে সত্যবাদী হয় তবে সেখানেই তো তার
উপঢৌকন পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কোন ব্যক্তি অনধিকারে (বা অবৈধভাবে) কোন কিছু গ্রহণ করলে, কিয়ামাতের দিন সে তা বহন করতে করতে আল্লাহর সামনে হাযির হবে। অতএব
আমি তোমাদের কাউকে আল্লাহর দরবারে এই অবস্থায় উপস্থিত হতে দেখতে চাই না যে, সে উট বহন করবে আর তা আওয়াজ করতে থাকবে অথবা গাভী (বহন করে নিয়ে আসবে আর তা) হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে অথবা বকরী (বহন করে নিয়ে আসবে আর তা) ভ্যা ভ্যা করতে থাকবে। (রাবী বলেন), অতঃপর তিনি তাঁর দু’হাত এত উপরে উঠালেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা দৃষ্টিগোচর হল। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি (তোমার হুকুম) পৌছে দিয়েছি? তিনবার তিনি এ কথা বলেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
ى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ ۲۱۰ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضى كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلَهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لا يَكُونَ دِينَارٍ وَلَا دِرْهَمْ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلَ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ
بِقَدْرِ مَظْلِمَتِهِ وَإِنْ لَمْ يَكُن لَهُ حَسَنَاتٌ أَخذ مِنْ سَيِّئَاتِ صاحبه فَحُمِلَ عَلَيْه – رواه البخاري.
২১০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কোন ব্যক্তির উপর তার অপর ভাইয়ের যদি কোন দাবি থাকে, তা যদি তার মান-ইযযতের উপর অথবা অন্য কিছুর উপর যুগ্ম সম্পর্কিত হয়, তবে সে যেন আজই কপর্দকহীন-নিঃস্ব হওয়ার পূর্বে তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে নেয়। অন্যথায় (কিয়ামাতের দিন) তার যুগ্মের সমপরিমাণ নেকী তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হবে। যদি তার কোন নেকী না থাকে তবে তার প্রতিপক্ষের (নির্যাতিতের) গুনাহ থেকে (যুল্মের সমপরিমাণ) তার হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হবে।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى ۲۱۱ – عَنْ عَبْد الله بن اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ – متفق عليه .
২১১। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার মুখের ও হাতের অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। মুহাজির সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ্র নিষিদ্ধ জিনিস পরিত্যাগ করে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۱۲ – وَعَنْهُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ عَلَى ثَقَلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كِرْكِرَةً فَمَاتَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ فِي النَّارِ فَذَهَبُوا يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ فَوَجَدُوا عَبَاءَةً قَدْ غَلَهَا – رواه البخاري .
২১২। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মালপত্রের দায়িত্বে ছিল। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ সে জাহান্নামে। তারা (সাহাবীগণ) তার বাসস্থানে খোঁজ-খবর নিতে গেলেন (কেন সে জাহান্নামী হল)। তারা সেখানে একটি ‘আবা (এক প্রকারের পোশাক) পেলেন। সে এটা আত্মসাত করেছিল।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۱۳ – عَنْ أَبِي بَكْرَةً نُفَيْعِ بْنِ الْحَارِثِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاثُ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ
وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرِّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ أَيُّ شَهْرٍ هَذَا ؟ قُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيْهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ قَالَ أَلَيْسَ ذَا الْحَجَّةِ قُلْنَا بَلَى قَالَ فَأَيُّ بَلَدٍ هَذَا ؟ قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ
فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيْهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ قَالَ الَيْسَ الْبَلْدَةَ؛ قُلْنَا بَلَى قَالَ فَأَيُّ يَوْمٍ هُذَا ؟ قُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِيْهِ بِغَيْرِ اسْمه قَالَ اليْسَ يَوْمَ النَّحْرِ ؟ قُلْنَا بَلَى قَالَ فَإِنْ دِمَاءَكُمْ
وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كُحُرُمَةِ يَوْمِكُمْ هذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا وَسَتَلْقَوْنَ رَبُّكُمْ فَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ أَلَا فَلَا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يُضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ إِلَّا لِيُبَلِّغَ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ
يُبَلِّغُهُ أَنْ يَكُونَ أَوْعَى لَهُ مِنْ بَعْضٍ مَنْ سَمِعَهُ ثُمَّ قَالَ أَلَا هَلْ بَلَغَتُ إِلا هَلْ بَلَغَتُ؟ قُلْنَا نَعَمْ قَالَ اللَّهُمُ اشْهَدْ – متفق عليه .
২১৩। আবু বাক্সা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেন সেদিন থেকে যুগ বা কাল তার নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তন করছে। এক বছরে বার মাস, এর মধ্যে চারটি হল নিষিদ্ধ মাস; এর তিনটি পরপর আসে। যেমন যিলকাদ, যিলহজ্জ ও মুহাররম এবং মুদার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদাস-সানী ও শাবান মাসের মাঝখানে অবস্থিত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি নিশ্চুপ থাকলেন। আমরা ধারণা করলাম, তিনি হয়ত এর নতুন নামকরণ করবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটা কি যিলহজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটা কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি চুপ থাকলেন। আমরা মনে মনে ভাবলাম, হয়ত তিনি এর নতুন নামকরণ করবেন। তিনি বলেন: এটা কি (মক্কা) শহর নয়? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটি কোন্ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক অবগত। তিনি চুপ রইলেন। আমরা ভাবলাম, হয়ত তিনি এর অন্য নামকরণ করবেন। তিনি বলেন: এটা কি কোয়বানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমাদের আজকের এ দিনটি যেমন পবিত্র, তোমাদের এ শহরটি যেমন পবিত্র এবং তোমাদের এ মাসটি যেমন পবিত্র, তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের মান-সম্মানও পবিত্র এবং শ্রদ্ধার বস্তু। তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রভুর সাথে মিলিত হবে। তিনি তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান। আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা পরস্পর রক্তারক্তি করে কুফরে লিপ্ত হয়ো না। সতর্ক হও! উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দেয়। কেননা এটা অসম্ভব নয় যে, যে ব্যক্তি এটা পৌঁছে দেবে তার চেয়ে যার কাছে পৌঁছোনো হবে সে অধিক সংরক্ষণকারী হবে। অতঃপর তিনি বলেন: আমি কি পৌছে দিয়েছি? আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! সাক্ষী থাকুন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢١٤ – عَنْ أَبِي أَمَامَةَ إِيَاسِ بْنِ ثَعْلَبَةَ الْحَارِثِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِم بِيَمِينِهِ فَقَدْ أَوْجَبَ اللَّهُ لَهُ النَّارَ وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ فَقَالَ رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا يَا
رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ وَإِنْ كَانَ قَضِيبًا مِنْ أراك – رواه مسلم .
২১৪। আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি (মিথ্যা) শপথের মাধ্যমে কোন মুসলিমের হক আত্মসাত করল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন অনিবার্য করে দেবেন এবং জান্নাত হারাম করে দেবেন। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। যদি সেটা তুচ্ছ জিনিস হয়? তিনি বলেনঃ তা পিলু গাছের একটা শাখাই হোক না কেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢١٥ – عَنْ عَدِي بْنِ عُمَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنِ اسْتَعْمَلَنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ فَكَتَمَنَا مِخْيَطًا فَمَا فَوْقَهُ كَانَ غُلُوْلا يَأْتِي بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ أَسْوَدُ مِنَ الْأَنْصَارِ
كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ اقْبَلْ عَنِّى عَمَلَكَ قَالَ وَمَا لَكَ؟ قَالَ سَمِعْتُكَ تَقُولُ كَذَا وَكَذَا قَالَ وَأَنَا أَقُولُهُ الْآنَ مَنِ اسْتَعْمَلَنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَلْيَجِيْ بِقَلِيْلِهِ وَكَثِيْرِهِ فَمَا أُوتِيَ مِنْهُ أَخَذَ وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهى – رواه مسلم .
২১৫। আদী ইবনে উমাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আমরা তোমাদের কোন ব্যক্তিকে কোন সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। অতঃপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশি আমাদের থেকে গোপন করল। সে খিয়ানাতকারী গণ্য হবে। সে কিয়ামাতের দিন তা নিয়ে হাযির হবে। আনসার সম্প্রদায়ের এক কৃষ্ণকায় ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহ্ রাসূল! আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন। (রাবী বলেন), আমি যেন এ দৃশ্যটা এখনও দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন: তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছি। তিনি বলেন: আমি এখনও তাই বলবো। আমরা তোমাদের কোন ব্যক্তিকে কোন পদে নিয়োগ করলাম। সে কম-বেশি সবকিছু নিয়ে আসবে। তা থেকে তাকে যা দেয়া হবে তা-ই সে নেবে এবং যা থেকে তাকে বারণ করা হবে তা থেকে সে বিরত থাকবে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢١٦ – عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمَ خَيْبَرَ أَقْبَلَ نَفَرٌ مِّنْ اصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا فُلَانٌ شَهِيدٌ وَفُلَانٌ شَهِيدٌ حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ فَقَالُوا فُلانٌ شَهِيدٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ كَلَا إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِي بُرْدَةٍ عَلَهَا أَوْ عَبَاءَة – رواه مسلم .
২১৬। উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাইবারের যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবী এলেন। তারা বলেন, অমুক ব্যক্তি শহীদ, অমুক ব্যক্তি শহীদ। এভাবে তারা এক ব্যক্তির কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, অমুক ব্যক্তি শহীদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কখনও নয়, আমি তাকে একটি চাদর অথবা একটি ‘আবার [ আবা হচ্ছে এক ধরনের আরবীয় পোশাক, যা শেরওয়ানীর চাইতে লম্বা, গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা থাকে ] ।জন্য জাহান্নামে দেখতে পাচ্ছি। এটা সে আত্মসাত করেছিল।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۱۷ – عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْحَارِثِ بْنِ رَبَعِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَامَ فِيْهِمْ فَذَكَرَ لَهُمُ أَنَّ الْجِهَادَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْإِيْمَانَ بِاللَّهِ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ تُكَفِّرُ عَنِّي خَطَايَايَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمْ إِنْ قُتِلْتَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلَ غَيْرُ مُدْبِرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ قُلْتَ ؟ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ اتَّكَفُرُ عَنِّى خَطَايَايَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمُ وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ مُقْبِلُ غَيْرَ مُدْبِرِ إِلَّا الدِّينَ فَإِنَّ جِبْرِيلَ قَالَ لِي ذَلِكَ – رواه مسلم .
২১৭। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মাঝে দাঁড়ালেন। তিনি তাঁদেরকে বলেন: আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনা সবচেয়ে ভালো কাজ। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই তাহলে আমার গুনাহসমূহের ক্ষতিপূরণ হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেন: হাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশা পোষণকারী ও সামনে অগ্রগামী হও এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী না হও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি কিভাবে বললে? লোকটি পুনরায় বলেন, আপনার কি মত, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই তবে আমার গুনাহসমূহের ক্ষতিপূরণ হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশা পোষণকারী ও সামনে অগ্রগামী হও এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী না হও। কিন্তু ঋণ মাফ হবে না। জিবরীল (আ) আমাকে এ কথা বলেছেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۱۸ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ فَقَالَ إِنَّ الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةَ
وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هذا وَقَذَفَ هذا وأَكَلَ مَالَ هذا وَسَفَكَ دَمَ هذا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهُذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطَرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طَرِحَ فِي النَّارِ –
رواه مسلم .
২১৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কি জান কোন্ ব্যক্তি নিঃস্ব-গরীব? সাহাবীগণ বলেন, আমাদের মধ্যে গরীব হচ্ছে যার কোন অর্থ-সম্পদ নেই। তিনি বলেন: আমার উম্মাতের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস্ব-গরীব ব্যক্তি হবে সে, যে কিয়ামাতের দিন নামায-রোযা-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদাতসহ হাযির হবে। কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল আত্মসাত করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মেরেছে (সে এসব গুনাহও সাথে করে নিয়ে আসবে)। তখন এদেরকে তার নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিসমূহ পূরণ করার পূর্বেই যদি তার নেক আমল শেষ হয়ে যায় তবে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۱۹ – عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إِلَى وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُونَ الْحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ فَاقْضِي لَهُ بِنَحْوِ مَا أَسْمَعُ فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ بِحَقِّ أَخِيهِ فَإِنَّمَا
أَقْطَعُ لَهُ قطعة مِنَ النَّار – متفق عليه. الْحَنَ أَي أَعْلَم.
২১৯। উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি একজন মানুষই। তোমরা তোমাদের ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসার জন্য আমার কাছে এসে থাক। হয়ত তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অপর পক্ষের তুলনায় দলীল-প্রমাণ উত্থাপনে অধিক পারদর্শী। আমি তার কাছ থেকে শুনে সেই অনুযায়ী হয়ত ফায়সালা দিতে পারি। এভাবে আমি যদি (অজ্ঞাতে) তার ভাইয়ের প্রাপ্য তাকে দেয়ার ফায়সালা করি, তবে আমি তাকে জাহান্নামের একটি টুকরাই দিলাম।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۲۰ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَنْ يزَالَ الْمُؤْمِنُ فِي فُسْحَةٍ مِنْ دِينِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَما حَرَامًا – رواه البخاري .
২২০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুসলিম সব সময় হিফাযত ও নিরাপত্তার মধ্যে অবস্থান করে যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্ত প্রবাহিত না করে (কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে)।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۲۱ – عَنْ خَوْلَةَ بِنْتِ عَامِرِ الْأَنْصَارِيَّةِ وَهِيَ امْرَأَةُ حَمْزَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ رِجَالاً يَتَخَوضُونَ فِي مَالِ اللَّهِ بِغَيْرِ حَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ – رواه البخاري .
২২১। খাওলা বিনতে আমের আল-আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি হামযা (রা)-র স্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: এমন অনেক লোক আছে যারা আল্লাহর মাল (সরকারী অর্থ-সম্পদ) অবৈধভাবে খরচ করে, অপচয় করে। কিয়ামাতের দিন তাদের শাস্তির জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত রয়েছে। ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ২৭ – মুসলমানদের মান-ইযযতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাদের অধিকারসমূহ এবং তাদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ ও ভালোবাসা পোষণ
মুসলমানদের মান-ইযযতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাদের অধিকারসমূহ এবং তাদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ ও ভালোবাসা পোষণ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَنْ يُعَظِمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কায়েম করা সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে, এটা তার নিজের জন্যই তার প্রভুর নিকট খুবই কল্যাণকর হবে।” (সূরা আল-হজ্জ: ৩০)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَنْ يُعَظِمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ .
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে; আর তা (সম্মান প্রদর্শন) দিলের তাকওয়ার ফল।” (সূরা আল-হজ্জঃ ৩২)
وَقَالَ تَعَالَى : وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ
“মুমিনদের প্রতি তোমার বিনয় ও নম্রতার ডানা প্রসারিত কর।” (সূরা আল-হিজরঃ ৮৮)
وَقَالَ تَعَالَى : مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
“যদি কেউ কোন ব্যক্তিকে হত্যার অপরাধ অথবা যমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে, তবে সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল। আর যদি কোন ব্যক্তি কাউকে জীবন দান করে (অন্যায়ভাবে নিহত হওয়া থেকে রক্ষা করে) তবে সে যেন সকল মানুষকে জীবন দান করল।” (সূরা আল মা-ইদাঃ ৩২)
۲۲۲ – عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا وَشَبِّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ – متفق عليه.
২২২। আবু মূসা আল আশ্’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ। এর এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। (এ কথা বলার সময়) তিনি তাঁর এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে দেখান।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۲۳ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَرَّ فِي شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنَا أَوْ أَسْواقِنَا وَمَعَهُ نَبْلٌ فَلْيُمْسِكَ أَوْ لِيُقْبِضُ عَلَى نِصَالِهَا بِكَفِّهِ أَنْ يُصِيبَ أَحَدًا مِّنَ الْمُسْلِمِينَ مِنْهَا بِشَيْءٍ متفق عليه .
২২৩। আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন ব্যক্তি আমাদের কোন মসজিদ অথবা বাজার অতিক্রমকালে তার সাথে যদি তীর থাকে, তবে সে যেন তার অগ্রভাগ সাবধানে রাখে অথবা হাতের মুঠোর মধ্যে রাখে। তাহলে কোন মুসলিমের গায়ে আঘাত লাগার আশংকা থাকবে না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٢٤ – عَنِ النَّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطَفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشتكى منه عضو تداعى لَهُ سَائِرُ الْجَسَد بالسهر والحمى –
متفق عليه .
২২৪। নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগও তা অনুভব করে। সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরের অবস্থায় (সর্বাবস্থায় একে অপরের সুখ-দুঃখের ভাগী হয়)।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٢٥ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَبْلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَنَ بْنَ عَلِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا وَعِنْدَهُ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسِ فَقَالَ الْأَقْرَعُ إِنَّ لِي عَشَرَةٌ مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَنْ لا يَرْحَمُ لا يُرْحَمُ – متفق عليه .
২২৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী (রা)-কে চুমো দিলেন। আকরা ইবনে হাবেস (রা) তাঁর কাছেই উপস্থিত ছিলেন। আকরা বলেন, আমার দশটি সন্তান আছে কিন্তু আমি কখনও তাদের কাউকে চুমো দিইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন এবং বলেন: যে ব্যক্তি দয়া প্রদর্শন করে না সে দয়ার পাত্র হতে পারে না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٢٦ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَدِمَ نَاسٌ مِنَ الْأَعْرَابِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا اتَّقَبِّلُوْنَ صِبْيَانَكُمْ؟ فَقَالَ نَعَمْ قَالُوا لَكِنَّا وَاللَّهِ مَا نُقَبِّلُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ أَمْلِكُ إِنْ كَانَ
اللَّهُ نَزَعَ مِنْ قُلُوبِكُمُ الرَّحْمَةَ؟ متفق عليه.
২২৬। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কতিপয় আরব বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি আপনাদের ছোট্ট শিশুদের চুমো দেন? তিনি বলেন: হাঁ। তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আমরা কিন্তু চুমো দিই না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি কি এর মালিক বা জিম্মাদার হতে পারি, যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তর থেকে রহমত ও অনুগ্রহকে তুলে নেন? ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۲۷ – عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ لَا يَرْحَمُهُ اللهُ – متفق عليه .
২২৭। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষকে দয়া করে না, আল্লাহ তাকে দয়া করেন না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۲۸- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِلنَّاسِ فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ فِيهِمُ الضَّعِيفَ وَالسَّقِيمَ وَالْكَبِيرَ وَإِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيَطُولُ مَا شَاءَ – متفق عليه وَفِي رِوَايَةٍ
وَذَا الْحَاجَةِ .
২২৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের কেউ যখন নামাযে লোকদের ইমামতি করে, সে যেন নামায সংক্ষেপ করে। কেননা তাদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন ও বৃদ্ধ লোক থাকতে পারে। যখন তোমাদের কেউ একাকী নামায পড়ে, তখন সে ইচ্ছামত নামায দীর্ঘায়িত করতে পারে।
ইমাম বুখারী ও ইয়াম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় “ব্যস্ত বা অভাবী লোকের” কথাও উল্লেখ আছে।
۲۲۹ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ إِنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَدْعُ الْعَمَلَ وَهُوَ يُحِبُّ أَنْ يُعْمَلَ بِهِ خَشْيَةَ أَنْ يُعْمَلَ بِهِ النَّاسُ فَيُفْرَضَ عليهم. متفق عليه.
২২৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন কাজ (ইবাদাত) করার ঐকান্তিক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তা পরিত্যাগ করতেন এই ভয়ে যে, লোকেরা (তাঁর দেখাদেখি) তা নিয়মিত করতে থাকলে হয়ত এটা তাদের উপর ফরয করে দেয়া হবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۳۰ – وَعَنْهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَتْ نَهَاهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْوِصَالِ رَحْمَةً لَهُمْ فَقَالُوا إِنَّكَ تُوَاصِلُ؟ قَالَ إِنِّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ إِنِّي أَبِيْتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِي – متفق عليه مَعْنَاهُ يَجْعَلُ فِي قُوَّةً مَنْ أَكَلَ
وَشَرِبَ .
২৩০। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে ‘সাওমে বিসাল [ যৎসামান্য পানাহার করে একাধারে দীর্ঘদিন যে রোযা রাখা হয়, তাকে সাওমে বিসাল বলে ] । করতে নিষেধ করেছেন। তারা আবেদন করলেন, আপনি যে (সাওমে বিসাল) করেন? তিনি বলেন: আমি তোমাদের মত নই। আমি রাত্রিযাপন করি আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান (অর্থাৎ পানাহারকারী ব্যক্তির ন্যায় আমাকে শক্তি দান করেন)।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۳۱ – عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْحَارِثِ بْنِ رِبْعِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي لَأَقُومُ إِلَى الصَّلاةِ وَأُرِيدُ أَنْ أَطُولَ فِيْهَا فَأَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ فَاتَجُوزُ فِي صَلَاتِي كَرَاهِيَةً أَنْ أَشُقِّ عَلَى أُمِّهِ – رواه
البخاري .
২৩১। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি নামাযকে দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা নিয়ে নামায পড়তে দাঁড়াই। আমি শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাই এবং তা তার মাকে বিচলিত করতে পারে এই আশংকায় আমি আমার নামায সংক্ষিপ্ত করি।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۳۲ – عَنْ جُنْدَبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ يُطْلَبُهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْ مُدْرِكَهُ ثُمَّ يَكُبُهُ عَلَى
وَجْهِهِ فِي نَارِ جهَنَّمَ – رواه مسلم.
২৩২। জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি সকালের (ফজরের) নামায পড়ল, সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল (তোমাদের এরূপ অবস্থার মধ্যেই থাকা উচিত)। আল্লাহ যেন তোমাদের কাছ থেকে তাঁর যিম্মার ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব না চান। কেননা তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তিনি কাউকে পাকড়াও করতে চাইলে করতে পারবেন, তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۳۳ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ مَنْ كَانَ فِي حَاجَةٍ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرِّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةٌ فَرَجَ اللهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةٌ
مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ – متفق عليه .
২৩৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর যুগ্ম করতে পারে এবং না তাকে শত্রুর হাতে সোপর্দ করতে পারে। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন কষ্ট বা অসুবিধা দূর করে দেয়, এর বিনিময়ে আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তার কষ্ট ও বিপদ থেকে অংশবিশেষ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٣٤ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَخُونُهُ وَلَا يَكْذِبُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالُهُ وَدَمُهُ التَّقوى هُهُنَا بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ
الشَّرِّ أَنْ يُحْفِرَ أَخَاهُ المسلم – رواه الترمذى. وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ.
২৩৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না; তাকে মিথ্যা বলবে না এবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন করবে না। প্রত্যেক মুসলিমের মান-ইযযত, ধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য সব মুসলিমের উপর হারাম। (তিনি বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করে বলেন): তাকওয়া এখানে। কোন ব্যক্তির অধম হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা করে, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা হাসান হাদীস।
٢٣٥ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَحَاسَدُوا وَلَا تَنَاجَشُوا وَلَا تَبَاغَضُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ
التَّقْوَى هُهُنَا وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يُحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ – رواه مسلم النَّجَسُ أَنْ يُزِيدَ فِي ثَمَن سِلْعَةٍ يُنَادَى عَلَيْهَا فِي السُّوقِ
وَنَحوه وَلَا رَغْبَةً لَهُ فِي شرَائِهَا بَلْ يَقْصِدُ أَنْ يَغُرَّ غَيْرَهُ وَهَذَا حَرَامٌ وَالتَّدَابُرُ أَنْ يُعْرِضَ عَنِ الْإِنْسَانِ وَيَهْجَرَهُ وَيَجْعَلَهُ كَالشئ الذي وراء الظهر والدبر .
২৩৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা পোষণ করো না, তানাজুশ করো না,[ নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতার সামনে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বলাকে ‘তানাজুশ’ বলে। এতে প্রকৃত ক্রেতা, ধোঁকা খেয়ে অধিক মূল্যে তা ক্রয় করতে বাধ্য হয়। এরূপ করা হারাম ] । ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, কেউ অপর কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করো না। আল্লাহয় বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে থাক। মুসলিম
মুসলিমের ভাই। সে তাকে যুগ্ম করতে পারে না, হীন জ্ঞান করতে পারে না এবং অপমান-অপদস্থও করতে পারে না। তাকওয়া এখানে। এ কথাটা তিনি তিনবার বলেন এবং নিজের বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করেন। কোন ব্যক্তির খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা করে, হীন মনে করে। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত (জীবন), ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য সব মুসলিমের জন্য হারাম।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٣٦ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبُّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ – متفق عليه .
২৩৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউই ঈমানদার হতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۳۷ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْصُرُ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أَنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أَنْصُرُهُ؟ قَالَ تَحْجُرُهُ أَوْ تَمْنَعُهُ مِنَ الظَّلْمِ فَإِنَّ ذَلِكَ نَصْرُهُ – رواه
البخاري .
২৩৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমার ভাইকে সাহায্য কর, চাই যালিম হোক অথবা মাযলুম। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। সে যদি মালুম হয়, আমি তাকে সাহায্য করব। যদি সে যালিম হয় তবে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করবো? তিনি বলেন: তাকে যুগ্ম করা থেকে বিরত রাখ, বাধা দাও। এটাই তাকে সাহায্য করা।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۳۸- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتَّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَأَجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيْتُ الْعَاطِس – متفق عليه
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمِ حَقُّ الْمُسْلِمِ مِنْ إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبُهُ وَإِذَا اسْتَنضَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشَمِتْهُ وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعُهُ .
২৩৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক (অধিকার) রয়েছে। সালামের জবাব দেয়া, রুগ্নকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা)।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: মুসলিমদের পরস্পরের উপর ছ’টি অধিকার রয়েছে। তুমি তার সাথে সাক্ষাতকালে তাকে সালাম দেবে; সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করবে; তোমার কাছে উপদেশ (অথবা পরামর্শ) চাইলে উপদেশ দেবে; হাঁচি দিয়ে সে আলহামদু লিল্লাহ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বললে তুমি তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমাকে রহম করুন) বলবে; সে রোগাক্রান্ত হলে তাকে দেখতে যাবে এবং সে মারা গেলে তার জানাযায় শরীক হবে।
۲۳۹ – عَنْ أَبِي عُمَارَةَ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ آمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ وَنَهَانَا عَنْ سَبْعِ أَمَرَنَا بِعِبَادَةِ الْمَرِيضِ وَاتَّبَاعِ الْجَنَازَةِ وَتَشْمِيْتِ الْعَاطِسِ وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ وَنَصْرِ الْمَظْلُومِ وَإِجَابَةِ
الدَّاعِي وانشاء السلامِ وَنَهَانَا عَنْ خَوَاتِيمِ أَوْ تَخَتُم بِالذَّهَبِ وَعَنْ شُرْبِ بِالْفِضَّةِ وَعَنِ الْمَيَائِرِ الْحُمْرِ وَعَنِ الْقَسِيِّ وَعَن لَبْسُ الْخَرِيرِ وَالْاسْتَبْرَقِ وَالدِّيباج متفق عليه وفي رواية وإِنْشَادِ الضَّالَّةِ فِي السَّبْعِ الأولِ الْمَيَائِرُ بِيَاء
مُثَنَّاةٍ قَبْلَ الْأَلِفِ وَثَاء مُثَلَّثَةٍ بَعْدَهَا وَهِيَ جَمْعُ مَبْشَرَةٍ وَهِيَ شَيْ يُتَّخَذُ مِنْ حَرِيْرٍ وَيُحْشَى قُطْنًا أَوْ غَيْرَهُ وَيُجْعَلُ فِي السَّرْجِ وَكُورِ الْبَعِيرِ يَجْلِسُ عَلَيْهِ الرَّاكِبُ وَالْقَسِي بِفَتْحِ الْقَافِ وكشرِ السِّينِ الْمُهْمَلَةَ الْمُشَدِّدَةِ وَهِيَ
ثِيَابٌ تُنْسَجُ مِنْ حَرِيْرٍ وَكَتَانٍ مُخْتَلِطَيْنِ وَإِنْشَادُ الضَّالَّةِ تَعْرِيقُهَا .
২৩৯। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয় করতে এবং সাতটি বিষয় না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন: রোগীর খোঁজখবর নিতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, হাঁচির জবাব দিতে, শপথ বা প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে, মাযলুমের সাহায্য করতে, দাওয়াতকারীর দাওয়াত কবুল করতে এবং সালামের বহুল প্রচলন করতে। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন: স্বর্ণের আংটি পরিধান করতে ও তৈরি করতে, রূপার পাত্রে পান করতে, লাল রং-এর রেশমের গদিতে [ আরবে এ ধরনের গদি বানিয়ে ঘোড়া ও উটের পিঠে বসবার বহুল প্রচলন ছিল ] । বসতে; কাচ্ছি (কাপড়), রেশমী বস্ত্র এবং দীবাজ পরিধান করতে।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায়, প্রথম সাতটির মধ্যে ‘শপথ পূর্ণ করার’ স্থলে ‘হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা’ দেয়ার হুকুম রয়েছে।
শব্দার্থ : المياثر রেশম ও সূতার সংমিশ্রণে তৈরী কাপড় যা উট অথবা ঘোড়ার জিনের উপর বিছানো হয়। نسى রেশম ও তুলার সংমিশ্রণে তৈরী কাপড়। دیباج এক প্রকার রেশমী বস্ত্র।
অনুচ্ছেদ: ২৮ – মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা এবং প্রয়োজন ব্যতীত তা প্রকাশ না করা
মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা এবং প্রয়োজন ব্যতীত তা প্রকাশ না করা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“যেসব লোক চায়, ঈমানদার লোকদের মধ্যে নির্লজ্জতা-বেহায়াপনা বিস্তার লাভ করুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা আন-নূরঃ ১৯)
٢٤٠ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْدًا فِي الدُّنْيَا إِلا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ – رواه مسلم .
২৪০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে বান্দাই অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি এ পার্থিব জগতে গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٤١ – وَعَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كُلُّ أُمَّتِي مُعَافَى إِلا الْمُجَاهِرِينَ وَإِنَّ مِنَ الْمُجَاهَرَةِ أَنْ يُعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ فَيَقُولُ يَا فُلانُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ
بَاتَ الله عنه يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ الله . – متفق عليه .
২৪১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আমার উম্মাতের সবার গুনাহ মাফ হবে, কিন্তু দোষ-ত্রুটি প্রকাশকারীদের গুনাহ মাফ হবে না। দোষ-ত্রুটি এভাবে প্রকাশ করা হয়: কোন ব্যক্তি রাতের বেলা কোন (খারাপ) কাজ করলো। আল্লাহ তার এ কাজ গোপন রাখলেন। সে (সকাল বেলা) নিজেই বলবে, হে অমুক! আমি গতরাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাত যাপন করেছিল এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার কাজগুলো গোপন রেখেছিলেন আর সকাল বেলা আল্লাহ্র এ আড়ালকে সে সরিয়ে দিল।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٤٢ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا زَنَتِ الْآمَةُ فَتَبَيِّنَ زِنَاهَا فَلْيَجْلِدُهَا الْحَد وَلا يُشَرِبْ عَلَيْهَا ثُمَّ إِنْ زَنَتِ الثَّانِيَةَ فَلْيَجْلِدُهَا الْحَدِّ وَلَا يُشَرِّبُ عَلَيْهَا ثُمَّ إِنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَلْيَبِعُهَا وَلَوْ بِحَبْلٍ مِنْ شَعْر – متفق
عليه التقريب التوبيخ.
২৪২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কোন বাঁদী যেনা করলে এবং তা প্রমাণিত হলে, তার উপর হদ্দ কার্যকর করতে হবে, কিন্তু তাকে ভীতি প্রদর্শন বা ভর্ৎসনা করা যাবে না। সে দ্বিতীয়বার যেনা করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তার উপর হদ্দ কার্যকর করতে হবে, কিন্তু তাকে ভীতি প্রদর্শন বা ভর্ৎসনা করা যাবে না। সে যদি তৃতীয়বার ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তাকে যেন বিক্রয় করে দেয়া হয়; তা একটি পশমের দড়ির বিনিময়ে হলেও [ ক্রীতদাসী যেনা করলে তার হদ্দ (দণ্ড) হল পঞ্চাশ বেত্রাঘাত, দ্বিতীয়বার যেনা করলেও তাকে এরূপ দণ্ডই দিতে হবে। বিক্রয়ের সময়ে ক্রেতাকে তার চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করতে হবে ] ।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٤٣ – وَعَنْهُ قَالَ أَتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ خَمْرًا قَالَ اضْرِبُوهُ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَمِنَّا الضَّارِبُ بِيَدِهِ وَالضَّارِبُ بِنَعْلِم والضَّارِبُ بِشَوْبِهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ أَخْزَاكَ اللَّهُ قَالَ لَا تَقُوْلُوْا
هَكَذَا ولا تُعينُوا عَلَيْه الشيطان – رواه البخاري .
২৪৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ধরে নিয়ে আসা হল। সে শরাব পান করেছিল। তিনি হুকুম দিলেন: তাকে মারধর কর। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ তাকে হাত দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে এবং কেউ কাপড় দিয়ে মারপিট করল। যখন সে ফিরে যাচ্ছিল তখন কতিপয় লোক বলল, আল্লাহ তোমাকে অপদস্থ করেছেন। মহানবী (সা) বলেন: এরূপ বলো না, শয়তানকে তার উপর বিজয়ী করো না।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ২৯ – মুসলিমের প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করা
মুসলিমের প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা কল্যাণকর কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।” (সূরা আল-হজ্জঃ ৭৭)
٢٤٤ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ مَنْ كَانَ فِي حَاجَةٍ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرِّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرْجَ اللهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةً
مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ – متفق عليه .
২৪৪। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর যুগ্ম করবে, আর না তাকে শত্রুর হাতে সোপর্দ করবে। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন অসুবিধা (বা বিপদ) দূর করে দেয়, আল্লাহ এর বিনিময়ে কিয়ামাতের দিন তার কষ্ট ও বিপদের অংশবিশেষ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٤٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ نَفْسَ عَنْ مُؤْمِن كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفْسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ يَسْرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسْرَ اللهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهْلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ في بَيْتِ مِنْ بُيُوتِ اللهِ تَعَالَى يَتْلُونَ
كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِبَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفْتُهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَأَ بِهِ عَمَلَهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ – رواه مسلم .
২৪৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পার্থিব কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামাতের দিন তার একটি (বড়) কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহ্ও ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তা করতে থাকেন। যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সুগম করে দেন। যখন কোন একদল লোক আল্লাহ তা’আলার ঘরসমূহের মধ্যে কোন একটি ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং পরস্পর এর আলোচনা করতে থাকে; তখন তাদের উপর শাস্তি ও স্বস্তি নাযিল হতে থাকে, রহমত ও অনুগ্রহ তাদেরকে ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ তাঁর সামনে উপস্থিতদের (ফেরেশতাদের) কাছে তাদের উল্লেখ করেন। যার কার্যকলাপ (আমল) তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩০ – শাফা’আত বা সুপারিশ
শাফা’আত বা সুপারিশ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : مَنْ يُشْفَعْ شَفَاعَةٌ حَسَنَةٌ يُكُنْ لَهُ نَصِيبٌ مِنْهَا
মহান আল্লাহ বলেন:
“যে ব্যক্তি ভালো কাজের সুপারিশ করবে সে তা থেকে অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি খারাপ কাজের সুপারিশ করবে সেও তা থেকে অংশ পাবে।” (সূরা আন নিসাঃ ৮৫)
٢٤٦ – عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا آتَاهُ طَالِبُ حَاجَةٍ أَقْبَلَ عَلَى جُلَسَائِهِ فَقَالَ اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا وَيَقْضِيَ اللَّهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ مَا أَحَبِّ – متفق عليه وفي رواية ما
شاء .
২৪৬। আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোন অভাবী লোক আসলে তিনি উপস্থিত লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতেনঃ তোমরা সুপারিশ কর, প্রতিদান পাবে। আল্লাহ যা পছন্দ করেন, তা তাঁর নবীর মুখ দিয়ে প্রকাশ করান।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায় ‘যা ইচ্ছা করেন’ কথা উল্লেখ আছে।
٢٤٧ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فِي قِصَّةِ بَرِيرَةً وَزَوْجِهَا قَالَ قَالَ لَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ رَاجَعْتِهِ؟ قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ تَأْمُرُنِي؟ قَالَ إِنَّمَا اشْفَعُ قَالَتْ لَا حَاجَةً لِي فِيهِ – رواه البخاري .
২৪৭। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বারীরাহ ও তার স্বামীর ঘটনা প্রসংগে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (বারীরাকে) বললেন: তুমি যদি তাকে (স্বামীকে) পুনরায় গ্রহণ করতে [ বারীরাহ ও তাঁর স্বামী মুগীস উভয়েই ক্রীতদাস ছিলেন। আয়িশা (রা) বারীরাহকে ক্রয় করে আযাদ করে দেন, কিন্তু তাঁর স্বামী তখনও ক্রীতদাস ছিলেন। ফলে বারীরাহ বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার অধিকার (Option) লাভ করেন এবং মুগীসকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বেচারা মুগীস ছিলেন তার প্রেমে পাগল ] বারীরাহ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি আমার প্রতি আপনার নির্দেশ? তিনি বললেন: আমি সুপারিশ করছি, তোমাকে অনুরোধ করছি [ রাসূলের (সা) দু’টি সত্তা। একটি তাঁর নববীসত্তা, অপরটি তাঁর ব্যক্তিসত্তা। নবী হিসাবে তিনি যেসব নির্দেশ দিয়েছেন তা অলংঘনীয়, বাধ্যতামূলক এবং শিরোধার্য। এগুলো মেনে নেয়া বা নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিবেচনার কোন স্থান নেই। রাসূল (সা) যখন মুগীসকে পুনরায় গ্রহণ করার জন্য বারীরাহকে বললেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা তার প্রতি রাসূলের নির্দেশ কি না। কেননা নির্দেশ হলে অবশ্যই তাকে এটা মেনে নিতে হবে।
সমাজের একজন ব্যক্তি হিসাবে তিনি নিজেও মানবীয় অভিজ্ঞতা থেকে যেসব পরামর্শ, প্রস্তাব, অভিপ্রায় ও সুপারিশ ব্যক্ত করেছেন, যার সাথে ওহীর কোন সম্পর্ক নেই, তা বিবেচনা করে গ্রহণ করা বা না করার অধিকার উম্মাতের রয়েছে। তাই ব্যক্তিগত প্রসংগে মহানবী (সা) বলতেন: “আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ।” স্বামীকে পুনরায় গ্রহণ করার জন্য বারীরাহর প্রতি রাসূলের (সা) নির্দেশ ছিল না; ছিল ব্যক্তিগত অনুরোধ, যা বারীরাহ বিবেচনা করেননি ] । বারীরাহ বললেন, তাকে (স্বামীকে) আমার প্রয়োজন নেই। ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩১ – লোকদের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন
লোকদের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفِ أَوْ اصلاح بَيْنَ النَّاسِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“লোকদের গোপন সলাপরামর্শে প্রায়ই কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না। অবশ্য কেউ যদি গোপনে কাউকে দান করার জন্য উপদেশ দেয় অথবা কোন ভালো কাজের জন্য অথবা লোকদের পরস্পরের কাজকর্মের সংশোধন করার জন্য কাউকে কিছু বলে তবে তা নিশ্চয়ই ভালো।” (সূরা আন-নিসা: ১১৪)
وَقَالَ تَعَالَى : وَالصُّلْحُ خَيْرٌ .
“সন্ধি সর্বাবস্থায়ই উত্তম।” (সূরা আন-নিসা: ১২৮)
وَقَالَ تَعَالَى : فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ .
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক সংশোধন কর।” (সূরা আল-আনফালঃ ১)
وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ .
“মুমিনরা পরস্পর ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযথভাবে পুনর্গঠিত করে দাও।” (সূরা আল-হুজুরাতঃ ১০)
٢٤٨- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ سلامى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ تَعْدِلُ بَيْنَ الْإِثْنَيْنِ صَدَقَةً وَتُعِينُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَيَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ
عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةً وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ وَبِكُلِّ خَطْوَةٍ يَمْشِيْهَا إِلى الصَّلاةِ صَدَقَةٌ وَيُمِيطُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ متفق عليه ومعنى وَتَعْدِلُ بَيْنَهُمَا تُصْلِحُ بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ .
২৪৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রতি দিন, যেদিন সূর্য উদিত হয়, মানব দেহের প্রতিটি গ্রন্থির (জোড়া) সাদাকা আদায় করা প্রয়োজন। দুই ব্যক্তির মাঝখানে সুবিচার সহকারে সমঝোতা স্থাপন করে দেয়া সাদাকা হিসেবে গণ্য। কোন ব্যক্তিকে সওয়ারীতে আরোহণ করতে সহায়তা করা অথবা তার মাল-সামান তার সওয়ারীর পিঠে তুলে দেয়া সাদাকারূপে গণ্য। পবিত্র ও উত্তম কথাবার্তা সাদাকা হিসেবে পরিগণিত। নামাযে যাওয়ার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা হিসেবে গণ্য, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করাও সাদাকারূপে গণ্য।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٤٩ – عَنْ أُمِّ كُلْثُومٍ بِنْتِ عُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعِيطٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَيْسَ الْكَذَابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ فَيَنْمِي خَيْرًا أَوْ يَقُولُ خَيْرًا – متفق عليه
وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمِ زِيَادَةً قَالَتْ وَلَمْ أَسْمَعْهُ يُرَخِّصُ فِي شَيْءٍ مِمَّا يَقُولُهُ النَّاسُ إِلَّا في ثلاث تَعْنِي الْحَرْبَ وَالْإِصْلاحَ بَيْنَ النَّاسِ وَحَدِيثَ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَحَدِيثَ الْمَرْأَة زَوْجَهَا
২৪৯। উম্মু কুলসুম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কল্যাণ লাভ করার উদ্দেশে যে ব্যক্তি মিথ্যা কথার মাধ্যমে পরস্পর বিরোধী দুই ব্যক্তির মধ্যে সন্ধি স্থাপন করে সে মিথ্যুক নয়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের এক বর্ণনায় আরো আছে: তিনি (উন্মু কুলসূম) বলেন, আমি তাঁকে (মহানবীকে) কেবলমাত্র তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছি। তা হল: দুই বিবদমান দলের মধ্যে মিথ্যা কথার মাধ্যমে সন্ধি স্থাপন করে দেয়া; যুদ্ধের ব্যাপারে মিথ্যা বলা এবং স্ত্রীর সাথে স্বামীর কথাবার্তায় ও স্বামীর সাথে স্ত্রীর কথাবার্তায় মিথ্যার আশ্রয় নেয়া [ স্বামী-স্ত্রীর প্রতিটি ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেবার অনুমতি এখানে দেয়া হয়নি। তাহলে তো তাদের সম্পর্কের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহ প্রবেশ করবে এবং তা তাদের জন্য হবে মারাত্মক ক্ষতিকর। বরং স্বামী-স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যা তাদের সম্পর্ককে গভীর করে, যা তাদের সম্পর্ককে ভাঙন থেকে রক্ষা করে, এমনি আরো বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া দোষের নয় ] ।
٢٥٠ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَوْتَ خُصُومٍ بِالْبَابِ عَالِيَةُ أَصْوَاتُهُمَا وَإِذَا أَحَدُهُمَا يَسْتَوْضِعُ الْآخَرَ وَيَسْتَرْفِقُهُ فِي شَيْءٍ وَهُوَ يَقُولُ وَاللهِ لا أَفْعَلُ فَخَرَجَ عَلَيْهِمَا رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَيْنَ الْمُتَالِى عَلَى اللهِ لا يَفْعَلُ الْمَعْرُوفَ فَقَالَ أَنَا يَا رَسُولَ اللهِ فَلَهُ أَى ذلك أحب متفق عليه مَعنَى يَسْتَوْضِعُهُ يَسْأَلُهُ أَنْ يَضَعَ عَنْهُ بَعْضَ دَيْنِهِ وَيَسْتَرْفِقُهُ يَسْأَلُهُ الرِّفْقَ وَالْمُتَالِي الْخَالِفُ .
২৫০। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের দরজার বাইরে ঝগড়া-ঝাটির শব্দ শুনতে পেলেন। তাদের গলার শব্দ চরমে উঠেছিল। তাদের একজন (ধার গ্রহণকারী) ঋণের কিছু অংশ মওকুফ করার জন্য এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করার জন্য অনুনয়-বিনয় করছিল। অপরজন (ঋণদাতা) বলছিল, আল্লাহর শপথ। আমি তা করতে পারব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে বেরিয়ে এসে বলেন: আল্লাহর নামে শপথকারী কে, যে কল্যাণের কথা বলতে রাজি নয়? সে বলল, আমি, হে আল্লাহর রাসূল! সে যেমন পছন্দ করবে তেমনই করা হবে (অর্থাৎ ঋণ গ্রহিতা যা বলবে তাই আমি মেনে নেবো)।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥١ – عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ سَهْلِ بْنِ سَعْدِ السَّاعِدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَلَغَهُ أَنْ بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ كَانَ بَيْنَهُمْ شَرِّ فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْلِحُ بَيْنَهُمْ فِي أَنَاسِ مَعَهُ
فَحُبِسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَانَتِ الصَّلاةُ فَجَاءَ بِلال إلى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فَقَالَ يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ حُبِسَ وَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَهَلْ لكَ أَنْ تَوْمُ النَّاسَ ؟ قَالَ نَعَمْ إِنْ شِئْتَ
فَأَقَامَ بِلالُ الصَّلوةَ وَتَقَدِّمَ أَبُو بَكْرٍ فَكَبَرَ وَكَبَّرَ النَّاسُ وَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي فِي الصُّفُوفِ حَتَّى قَامَ فِي الصَّفِ فَأَخَذَ النَّاسُ فِي التَّصْفِيقِ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لَا يَلْتَفِتُ فِي صَلَاتِهِ فَلَمَّا أَكْثَرَ
النَّاسُ التَّصْفِيقَ الْتَفَتَ فَإِذَا رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَفَعَ أَبُو بَكْرٍ رَضِي اللهُ عَنْهُ يَدَهُ فَحَمِدَ اللهَ وَرَجَعَ الْقَهْقَرَى وَرَاءَهُ حَتَّى قَامَ فِي الصَّفِ فَتَقَدَّمَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى لِلنَّاسِ فَلَمَّا فَرَغَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ يَأَيُّهَا النَّاسُ مَا لَكُمْ حِيْنَ نَابَكُمْ شَيْ فِي الصَّلاةِ أَخَذْتُمْ فِي التَّصْفِيقِ إِنَّمَا التَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ مَنْ نَابَهُ شَيْءٍ فِي صَلَاتِهِ فَلْيَقُلْ سُبْحَانَ اللَّهِ فَإِنَّهُ
لَا يَسْمَعُهُ أَحَدٌ حِيْنَ يَقُوْلُ سُبْحَانَ اللهِ إِلَّا الْتَفَتَ يَا أَبَا بَكْرٍ مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّي بِالنَّاسِ حِيْنَ أَشَرْتُ إِلَيْكَ؟ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ مَا كَانَ يَنْبَغِي لِابْنِ أَبِي قُحَافَةَ أَنْ يُصَلِّي بِالنَّاسِ بَيْنَ يَدَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – متفق
عليه مَعنى حُبِسَ أَمْسَكُوهُ لِيُضِيفُوهُ .
২৫১। সাহল ইবনে সা’দ আস-সায়েদী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে খবর পৌঁছল যে, বনী আওফ ইবনে আমরের লোকদের মধ্যে ঝগড়া চলছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সাহাবীকে নিয়ে তাদের বিবাদ মীমাংসা করার জন্য সেখানে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেখানে বিলম্ব হয়ে গেল। এদিকে নামাযের সময়ও ঘনিয়ে এল। বিলাল (রা) আবু বাক্র (রা)-এর কাছে এসে বলেন, হে আবু বাক্স। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তো ফিরতে দেরি হয়ে গেল। এদিকে নামাযের সময়ও হয়ে গেছে। আপনি কি লোকদের ইমামতি করে নামাযটা পড়াবেন? তিনি বললেন, ঠিক আছে, যদি তুমি চাও। বিলাল (রা) নামাযের জন্য ইকামাত দিলেন এবং আবু বাক্স (নামায পড়াতে) সামনে অগ্রসর হলেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমা বাঁধলেন; অতঃপর মুক্তাদীরাও তাঁর অনুসরণ করলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এসে গেলেন। তিনি কাতার ভেদ করে একেবারে সামনের সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। মুক্তাদীরা তালি বাজিয়ে সংকেত দিতে লাগলেন। কিন্তু আবু বাক্সের (রা) এদিকে কোন খেয়াল নেই। তারা যখন আরো জোরে তালি বাজাতে লাগলেন, তখন আবু বাক্স দৃষ্টিপাত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেলেন। তিনি ইশারা করে তাকে (আবু বাক্সকে) নিজ স্থানে থাকতে বললেন। আবু বাক্স নিজের দুই হাত উঁচু করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন, পায়ের গোড়ালি ঘুরিয়ে পেছনে চলে আসলেন এবং প্রথম কাতারে এসে দাঁড়ালেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে লোকদের নামায পড়ান। নামায শেষ করে তিনি সাহাবীদের দিকে মুখ করে বলেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের কি হল যখন নামাযের মধ্যে কোন কিছু ঘটতে যায় তখন তোমরা তালি বাজাতে শুরু করে দাও। উরুতে হাত মেরে তালি বাজানো তো মেয়েদের বেলায় প্রযোজ্য। কাজেই যে ব্যক্তি নামাযের মধ্যে কোন কিছু ঘটতে দেখে সে যেন “সুবহানাল্লাহ” (আল্লাহ অতি পবিত্র) বলে। কেননা কোন ব্যক্তি যখনই “সুবহানাল্লাহ” বলে তা শোনামাত্র লোকেরা তার প্রতি মনোনিবেশ করে। হে আবু বাক্স। আমি ইশারা করা সত্ত্বেও কোন্ জিনিস তোমাকে লোকদের নামায পড়াতে বাধা দিল? আবু বাক্স (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে আবু কুহাফার পুত্র (আবু বাক্স) লোকদের নামাযে ইমামতি করার মোটেই উপযুক্ত নয়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩২ – দুর্বল ও নিঃস্ব-গরীব মুসলিমদের ফযীলাত
দুর্বল ও নিঃস্ব-গরীব মুসলিমদের ফযীলাত
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমার দিলকে এমন লোকদের সংস্পর্শে স্থিতিশীল রাখ যারা নিজেদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে। আর তাদের দিক থেকে কখনও অন্যদিকে তোমার দৃষ্টি নিবন্ধ করো না।” (সূরা আল-কাহফঃ ২৮)
٢٥٢ – عَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِلا أَخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ ؟ كُلُّ ضَعِيفَ مُتَضَعُفَ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى الله لأبره إِلا أَخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍ جواظ مُسْتَكْبر متفق
عليه . الْعُتُلُ الْغَلِيظَ الْجَافِي وَالْجَواظُ بِفَتْحِ الْجِيمِ وَتَشْدِيدِ الْوَاوِ وَبِالظَّاءِ الْمُعْجَمَةِ وَهُوَ الْجَمُوعُ الْمَنُوعُ وَقِيلَ الضَّخْمُ الْمُخْتَالُ فِي مِشْيَتِهِ وَقِيلَ الْقَصِيرُ الْبَطِينُ .
২৫২। হারিসা ইবনে ওয়াত্ব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কোন্ ধরনের লোক জান্নাতী হবে আমি কি তা তোমাদেরকে বলব না? প্রত্যেক দুর্বল (বিনয়ী) ব্যক্তি যাকে লোকেরা শক্তিহীন ও তুচ্ছ জ্ঞান করে। সে যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে শপথ করে, আল্লাহ তা অবশ্যই পূর্ণ করার সুযোগ দেন। কোন্ প্রকৃতির লোক জাহান্নামে যাবে আমি কি তা তোমাদেরকে বলব না? প্রত্যেক নাদান-মূর্খ, উদ্ধত-অবাধ্য ও অহংকারী ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٣ – عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ سَهْلِ بْنِ سَعْدِ السَّاعِدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسَ مَا رَأَيْكَ فِي هَذَا ؟ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِ النَّاسِ هَذَا وَاللهِ حَرِى إِنْ خَطَبَ أَنْ
يُنْكَحَ وَإِنْ شَفَعَ أَنْ يُشَفَعَ فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ مَنْ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَأَيْكَ فِي هَذَا ؟ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هُذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَرَاءِ الْمُسْلِمِينَ هَذَا حَرِى إِنْ خَطَبَ
أَنْ لَا يُنْكَحَ وَإِنْ شَفَعَ أَنْ لَا يُشَفَعَ وَإِنْ قَالَ أن لا يُسْمَعَ لِقَوْلِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذَا خَيْرٌ مِنْ مِلْ الْأَرْضِ مِثْلَ هَذا – متفق عليه. قَوْلُهُ حَرِيٌّ هُوَ بِفَتْحِ الْحَاءِ وَكَسْرِ الرَّاءِ وَتَشْدِيدِ الْيَاءِ أَي حَقِيقٌ وَقَوْلُهُ
شَفَعَ بِفَتْحِ الْقَاءِ ..
২৫৩। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তাঁর নিকটে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি মত? সে বলল, ইনি তো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য। আল্লাহর শপথ! তিনি খুবই যোগ্য লোক, বিবাহের প্রস্তাব দিলে তা কবুল করা হয় এবং কোন ব্যাপারে সুপারিশ করলে তা গ্রহণ করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি তাঁর সামনে দিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (বসা লোকটিকে) জিজ্ঞেস করলেন: এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এতো নিঃস্ব-গরীব মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। সে এতটুকু উপযুক্ত যে, সে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়, তার সুপারিশ কবুল করা হয় না এবং কোন কথা বললে তাতে কেউ আমল দেয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এ (নিঃস্ব মুসলিম) ব্যক্তি দুনিয়াভর্তি ঐসব (তথাকথিত সন্ত্রান্ত) ব্যক্তিদের চেয়ে অনেক উত্তম।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٤ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ احْتَجَتِ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ النَّارُ فِي الْجَبَّارُونَ وَالْمُتَكَبِّرُونَ وَقَالَتِ الْجَنَّةُ فِي ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُمْ فَقَضَى اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّكِ الْجَنَّةُ
رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ وَإِنَّكِ النَّارُ عَذَابِي أَعَذِّبُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ وَلَكِلَيْكُمَا عَلَى مِلْؤُهَا – رواه مسلم.
২৫৪। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের মধ্যে বিতর্ক হল। জাহান্নাম বলল, আমার অভ্যন্তরে বড় বড় স্বৈরাচারী, দাম্ভিক ও অহংকারী ব্যক্তিরা রয়েছে। জান্নাত বলল, আমার মাঝে অসহায়, দরিদ্র ও দুর্বল লোকেরা রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা উভয়ের মধ্যে ফায়সালা দিলেন: জান্নাত! তুমি আমার রহমত ও অনুগ্রহের আধার। তোমার সাহায্যে যাকে ইচ্ছা আমি অনুগ্রহ করব। আর হে জাহান্নাম। তুমি আমার শাস্তির আধার। তোমার সাহায্যে যাকে ইচ্ছা আমি শাস্তি দেব। তোমাদের উভয়কে পরিপূর্ণ করা আমারই দায়িত্ব।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّهُ لِيَأْتِي الرُّجُلُ الْعَظِيمُ السَّمِينُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَزِنُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ متفق عليه.
২৫৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কিয়ামতের দিন এক মোটা-তাজা ও দীর্ঘকায় ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা ও মূল্য একটি মাছির ডানার সমানও হবে না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٦ – وَعَنْهُ أَنْ امْرَأَةٌ سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُ الْمَسْجِدَ أَوْ شَابًّا فَفَقَدَهَا أَوْ فَقَدَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَ عَنْهَا أَوْ عَنْهُ فَقَالُوا مَاتَ قَالَ أَفَلَا كُنتُمْ أَذَنْتُمُونِي بِهِ فَكَأَنَّهُمْ صَغْرُوا أَمْرَهَا أَوْ أَمْرَهُ فَقَالَ دُلُّونِي عَلَى قَبْرِهِ
فَدَلُّوهُ فَصَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ قَالَ إِنَّ هذه الْقُبُورَ مَمْلُوعَةٌ ظُلْمَةً عَلَى أَهْلِهَا وَإِنَّ اللَّهَ يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلَاتِي عَلَيْهِمْ – متفق عليه قَوْلُهُ تَقُمُّ هُوَ بِفَتْحِ النَّاءِ وَضَمِّ الْقَافِ أَن تَكْنُسُ وَالْقَمَامَةُ الْكُنَاسَةُ وَأَذَنْتُمُونِي بِمَدِ الْهَمْزَةِ
أَعْلَمْتُمُونِي .
২৫৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। এক কৃষ্ণকায় মহিলা অথবা যুবক মসজিদে নববীতে ঝাড়ু দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে না দেখতে পেয়ে (সাহাবীদেরকে) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা বলেন, সে মারা গেছে। তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সম্ভবত তাঁরা এটাকে মামুলি ব্যাপার মনে করেছিলেন। তিনি বললেন: আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। তাঁরা তাঁকে তার কবরের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তার জানাযা পড়েন এবং বলেন: এই কবরবাসীদের কবরগুলো অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকত। আমার দু’আ করার বদৌলতে আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য তাদের কবরগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٧ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبِّ اشْعَتَ أَغْبَرَ مَدْفُوع بِالْأَبْوَابِ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لأبره – رواه مسلم .
২৫৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এরূপ অনেক লোক আছে যাদের (মাথার চুল) উস্কো খুস্কা এবং (পা দু’টি) ধূলি ধূসরিত, তাদেরকে (মানুষের) দরজাসমূহ থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যদি তারা আল্লাহর নামে শপথ করে তবে আল্লাহ তাদের তা পূরণের তাওফীক দেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٨ – عَنْ أَسَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُمْتُ عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَإِذَا عَامَّةٌ مَنْ دَخَلَهَا الْمَسَاكِينُ وَأَصْحَابُ الْجَدِ مَحْبُوسُونَ غَيْرَ أَنْ أَصْحَابَ النَّارِ قَدْ أَمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ وَقُمْتُ عَلَى بَابِ النَّارِ
فَإِذَا عَامَّةٌ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ – متفق عليه. والجد بفتح الجيمِ الْحَظُ وَالْغَنِي وَقَوْلُهُ مَحْبُوسُونَ أَي لَمْ يُؤْذَنَ لَهُمْ بَعْدُ فِي دَخُولِ الْجَنَّةِ .
২৫৮। উসামা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি (মি’রাজের রাতে) জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। (দেখলাম), জান্নাতে প্রবেশকারী অধিকাংশ লোকই হচ্ছে নিঃস্ব-দরিদ্র। ধনী লোকদের তখনো জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছিল। আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়ালাম। (দেখলাম), জাহান্নামে প্রবেশকারীদের অধিকাংশই হচ্ছে স্ত্রীলোক।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٥٩ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَمْ يَتَكَلَّمُ فِي الْمَهْدِ إِلا ثَلَاثَةٌ عِيسَى بْنُ مَرْيَمَ وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ وَكَانَ جُرَيْجٍ رَجُلاً عَابِدا فَاتَّخَذَ صَوَمَعَةً فَكَانَ فِيهَا فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ يَا
جُرَيْجُ فَقَالَ يَا رَبِّ أَمِّي وَصَلَاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلَاتِهِ فَانْصَرَفَتْ فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ أَتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّى فَقَالَتْ يَا جُرَيْجُ فَقَالَ أَيْ رَبِّ أَمِّي وَصَلَاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلَاتِهِ فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ أَتَتْهُ وَهُوَ يُصَلَّى فَقَالَتْ يَا جُرَيْجُ فَقَالَ أَيْ
رَبِّ أَمِّي وَصَلَاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلاتِه فَقَالَتْ اللهم لا تُمِتَهُ حَتَّى يَنْظُرَ إِلَى وُجُوهِ الْمُؤْمِسَاتِ فَتَذَاكَرَ بَنُو إِسْرَائِيلَ جُرَيْجًا وَعِبَادَتَهُ وَكَانَتِ امْرَأَةً بَغِى يَتَمَثْلُ بِحُسْنِهَا فَقَالَتْ إِنْ شِئْتُمْ لَأَفْتِنَنَّهُ فَتَعَرَّضَتْ لَهُ فَلَمْ يَلْتَفِتْ إِلَيْهَا
فَأَتَتْ رَاعِيًا كَانَ يَأْوِى إِلَى صَوْمَعَتِهِ فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوَقَعَ عَلَيْهَا فَحَمَلَتْ فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَتْ هُوَ مِنْ جُرَيْجٍ فَاتَوُهُ فَاسْتَنْزَلُوهُ وَهَدَمُوا صَوْمَعَتَهُ وَجَعَلُوا يَضْرِبُونَهُ فَقَالَ مَا شَأْنُكُمْ؟ قَالُوا زَنَيْتَ بِهَذِهِ الْبَغِيِّ فَوَلَدَتْ مِنْكَ قَالَ أَيْنَ
الصَّبِيُّ؟ فَجَامُوا بِهِ فَقَالَ دَعُونِي حَتَّى أُصَلِّي فَصَلَّى فَلَمَّا انْصَرَفَ أتَى الصَّبِيُّ فَطَعَنَ فِي بَطْنِهِ وَقَالَ يَا غُلَامُ مَنْ أبُوكَ؟ قَالَ فُلأَنَّ الرَّاعِي فَأَقْبَلُوا عَلَى جُرَيْجٍ يُقَبِّلُونَهُ وَيَتَمَسْحُونَ بِهِ وَقَالُوا نَبْنِي لكَ صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ
لَا أَعِيدُوهَا مِنْ طِينٍ كَمَا كَانَتْ فَفَعَلُوا وَبَيْنَا صَبِي يَرْضَعُ مِنْ أُمِّهِ فَمَرَّ رَجُلٌ رَاكِبٌ عَلَى دَابَّةٍ قَارِهَةٍ وَشَارَةٍ حَسَنَةٍ فَقَالَتْ أُمُّهُ اللَّهُمْ اجْعَلِ ابْنِي مِثْلَ هَذَا فَتَرَكَ النَّدَى وَأَقْبَلَ إِلَيْهِ فَنَظَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمْ لَا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ ثُمَّ
أَقْبَلَ عَلَى ثَدْيِهِ فَجَعَلَ يَرْتَضِعُ فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَحْكى ارْتَضَاعَهُ بِأَصْبَعِهِ السَّبَابَةِ فِي فِيهِ فَجَعَلَ يَمُصُّهَا قَالَ وَمَرُّوا بِحَارِيَةٍ وَهُمْ يَضْرِبُونَهَا وَيَقُولُونَ زَنَيْتِ سَرَقْتِ وَهِيَ تَقُولُ حَسْبِيَ
اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ فَقَالَتْ أُمُّهُ اللهُمْ لَا تَجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهَا فَتَرَكَ الرَّضَاعَ وَنَظَرَ إِلَيْهَا فَقَالَ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا فَهُنَالِكَ تَرَاجَعَا الْحَدِيث فَقَالَتْ مَرَّ رَجُلٌ حَسَنُ الْهَيْئَةِ فَقُلْتُ اللَّهُمَّ اجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهُ فَقُلْتَ اللهُمُ لا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ
وَمَرُّوا بِهَذِهِ الْآمَةِ وَهُمْ يَضْرِبُونَهَا وَيَقُولُونَ زَنَيْتِ سَرَقْتِ فَقُلْتُ اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهَا فَقُلْتَ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا ؟ قَالَ إِنَّ ذَلِكَ الرَّجُلَ كَانَ جَبَّارًا فَقُلْتُ اللَّهُمْ لَا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ وَإِنَّ هَذِهِ يَقُولُونَ لَهَا زَنَيْتِ وَلَمْ تَزْنِ
وَسَرَقْتِ وَلَمْ تَسْرِقُ فَقُلْتُ اللَّهُم اجْعَلْنِي مِثْلَهَا – متفق عليه الْمُؤْمِسَاتُ بِضَمِّ الْمِيمِ الْأُولَى وَإِسْكَانِ الْوَاوِ وكسر المِيمِ الثَّانِيَةِ وَبِالسِّينِ الْمُهْمَلَةِ وَهُنَّ الزَّوَانِي وَالْمُؤْمِسَةُ الزَّانِيَةُ وَقَوْلُهُ دَابَّةٌ فَارِهَةٌ بِالْقَاءِ أَي حَاذِقَةٌ
نَفِيسَةٌ وَالشَّارَةُ بِالشَّيْنِ الْمُعْجَمَةِ وَتَخْفِيفِ الرَّاءِ وَهِيَ الْجَمَالُ الظَّاهِرُ فِي الْهَيْئَةِ وَالْمَلْبَسِ وَمَعْنَى تَرَاجَعَا الْحَدِيثَ أَيْ حَدَّثَتِ الصَّبِيِّ وَحَدَّثَهَا وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
২৫৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (বনী ইসরাঈলের মধ্যে) তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই দোলনায় কথা বলেনি। (এক) ঈসা ইবনে মারইয়াম এবং (দুই) সাহেবে জুরাইজ [ অর্থাৎ জুরাইজের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বাচ্চা ] । জুরাইজ একজন আবেদ বান্দা ছিলেন। তিনি নিজের জন্য একটি খানকাহ্ তৈরি করে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। সেখানে তার মা আসলেন। এ সময় তিনি নামাযে রত ছিলেন। তার মা বললেন, হে জুরাইজ! তখন তিনি (মনে মনে) বলেন, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায। জুরাইজ নামাযেই রত থাকলেন। তার মা চলে গেলেন। পরবর্তী দিন তার মা আসলেন। এবারও তিনি নামাযে মগ্ন ছিলেন। তার মা তাকে ডাকলেন, হে জুরাইজ! তিনি (মনে মনে) বলেন, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায। তিনি নামাযেই রত থাকলেন। পরবর্তী দিন এসেও মা তাকে নামাযে রত অবস্থায় দেখলেন। তিনি ডাকলেন, হে জুরাইজ! জুরাইজ বলেন, হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায। তিনি তার নামাযেই ব্যস্ত থাকলেন। তার মা বললেন, হে আল্লাহ! একে তুমি যেনাকারী নারীর মুখ না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু দিও না।
বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ ও তার ইবাদাতের চর্চা হতে লাগল। এক ব্যভিচারী নারী ছিল। সে বেশ রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ছিল। সে বলল, তোমরা যদি চাও আমি তাকে (জুরাইজকে) বিভ্রান্ত করতে পারি। সে তাকে ফুসলাতে লাগল, কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রূক্ষেপই করলেন না। অতঃপর সে তার খানকাহর কাছাকাছি এলাকায় এক রাখালের কাছে আসল। সে নিজের উপর তাকে অধিকার দিল এবং উভয়ে যেনায় লিপ্ত হল। এতে সে গর্ভবতী হল। সে বাচ্চা প্রসব করে বলল, এটা জুরাইজের ফসল। বনী ইসরাঈল (ক্ষিপ্ত হয়ে) তার কাছে এসে তাকে খানকাহ থেকে বের করে আনল, খানকাহটি ধূলিসাৎ করে দিল এবং তাকে মারধর করতে লাগল। জুরাইজ বলেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, তুমি এই বেশ্যার সাথে যেনা করেছ। ফলে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তিনি বলেন, শিশুটি কোথায়? তারা বাচ্চাটিকে নিয়ে আসল। জুরাইজ বলেন, আমাকে একটু সুযোগ দাও, নামায পড়ে নিই। কাজেই তিনি নামায পড়লেন। নামায শেষ করে তিনি শিশুটির নিকট এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করলেন, হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে বলল, আমার পিতা অমুক রাখাল। উপস্থিত লোকেরা তখন জুরাইজের দিকে আকৃষ্ট হল এবং তাকে চুমো দিতে লাগল। তারা বলল, এখন আমরা তোমার খানকাহটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, দরকার নেই, বরং পূর্বের মত মাটি দিয়েই তৈরি করে দাও। অতঃপর তারা তার খানকাহটি পুনর্নির্মাণ করে দিল।
(তিন) একটি শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় একটি লোক দ্রুতগামী ও উন্নত মানের একটি পশুতে সওয়ার হয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তার পোশাক-পরিচ্ছদও ছিল উন্নত। শিশুটির মা বলল, হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে এই ব্যক্তির মত যোগ্য করো। শিশুটি দুধপান ছেড়ে দিয়ে লোকটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, অতঃপর বলল, হে আল্লাহ! আমাকে এ ব্যক্তির মত করো না?। (রাবী বলেন), আমি যেন এখনও দেখছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটির দুধ পানের চিত্র তুলে ধরছেন এবং নিজের তর্জনী মুখে দিয়ে চুষছেন। তিনি (নবী) বলেন: লোকেরা একটি বাঁদীকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল, তুমি যেনা করেছ এবং চুরি করেছ। মেয়েলোকটি বলছিল, আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক। শিশুটির মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার সন্তানকে এ ভ্রষ্টা নারীর মত করো না। শিশুটি দুধপান ছেড়ে দিয়ে মেয়েলোকটির দিকে তাকাল, অতঃপর বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এই নারীর মত বানাও।
এ সময় মা ও শিশুর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। মা বলল, একটি সুঠাম ও সুন্দর লোক চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এরূপ যোগ্য করে দাও। তুমি প্রতিউত্তরে বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এর মত করো না। আবার এই ক্রীতদাসীকে লোকেরা মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে, তুমি যেনা করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এরূপ করো না। আর তুমি বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এরূপ করো। শিশুটি এবার জবাব দিল, প্রথম ব্যক্তি ছিল স্বৈরাচারী যালিম। সেজন্যই আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এ ব্যক্তির মত করো না। আর এই মেয়েলোকটিকে তারা বলল, তুমি যেনা করেছ। প্রকৃতপক্ষে সে যেনা করেনি। তারা বলল, তুমি চুরি করেছ; আসলে সে চুরি করেনি। এজন্যই আমি বললাম, হে আল্লাহ। আমাকে এই মেয়েলোকটির মত কর।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩৩ – ইয়াতীম, কন্যা সন্তান এবং দুর্বল, নিঃস্ব ও পর্যুদস্ত লোকদের সাথে ভদ্র ও সদয় ব্যবহার করা
ইয়াতীম, কন্যা সন্তান এবং দুর্বল, নিঃস্ব ও পর্যুদস্ত লোকদের সাথে ভদ্র ও সদয় ব্যবহার করা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : لا تَمُدْنٌ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ .
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“তুমি এ দুনিয়ার দ্রব্যসামগ্রির প্রতি দু’ চোখ তুলে তাকাবেও না, যা আমরা এদের মধ্যে বিভিন্ন লোককে দিয়ে রেখেছি, আর না এদের অবস্থার জন্য নিজের দিলে কষ্ট অনুভব করবে। তুমি ঈমানদার লোকদের প্রতি তোমার অনুগ্রহের ডানা বিস্তার করে রাখবে।” (সূরা আল হিজর : ৮৮)
وَقَالَ تَعَالَى: وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
“তুমি তোমার অন্তরকে এমন লোকদের সংস্পর্শে স্থিতিশীল রাখবে যারা নিজেদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় সকাল-সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে। আর পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের দিক থেকে কখনও অন্যদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করো না।” (সূরা আল-কাহফঃ ২৮)
وَقَالَ تَعَالَى : فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرُ . وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ .
“অতএব তুমি ইয়াতীমদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করো না এবং যাঞ্চাকারীকে ধমক দিও না।” (সূরা আদ দুহা: ৯, ১০)
وَقَالَ تَعَالَى : أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ . فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُ الْيَتِيمَ ، وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ .
“তুমি কি তাদের দেখেছ যারা কিয়ামাতের পৃতিফলকে মিথ্যা মনে করে? তারা হল ঐসব লোক, যারা ইয়াতীমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় এবং তারা মিসকীনকে খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না।”
(সূরা আল মাউন: ১-৩)
٢٦٠ – عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةَ نَفَرٍ فَقَالَ الْمُشْرِكُونَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَطْرُهُ هَؤُلَاءِ لا يَجْتَرِئُونَ عَلَيْنَا وَكُنْتُ أَنَا وَابْنُ مَسْعُودٍ وَرَجُلٌ مِنْ هُذَيْلٍ
وَبِلَالٌ وَرَجُلَانِ لَسْتُ أسَمِّيْهِمَا فَوَقَعَ فِي نَفْسٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يُقَعَ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبُّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ… رواه مسلم .
২৬০। সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ছয়জন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, এই লোকদেরকে আপনার নিকট থেকে তাড়িয়ে দিন। তাহলে তারা আমাদের উপর বাহাদুরি করতে পারবে না। আমরা (ছ’জন) ছিলাম: আমি, ইবনে মাসউদ, হুযাইল গোত্রের এক ব্যক্তি, বিলাল এবং অন্য দুই ব্যক্তি যাদের নাম আমার মনে নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে (এ বিষয়ে) আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু (কথার) উদয় হল। তাই তিনি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন। ইতোমধ্যে আল্লাহ তা’আলা ওহী নাযিল করলেনঃ “যারা তাদের প্রতিপালককে দিন-রাত ডাকতে থাকে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যস্ত থাকে তাদেরকে তোমার নিকট থেকে দূরে ঠেলে দিও না।
কোন কিছুতে তাদের হিসাবের দায়িত্ব তোমার নেই এবং কোন কিছুতে তোমার হিসাবের দায়িত্ব তাদের উপর নেই। এতদসত্ত্বেও যদি তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও তবে তুমি যালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।” (সূরা আল আন’আম: ৫২)
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٦١ – عَنْ أَبِي هُبَيْرَةَ عَائِدِ بْنِ عَمْرٍو الْمُزَنِي وَهُوَ مِنْ أَهْلِ بَيْعَةِ الرِّضْوَانِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ أَبَا سُفْيَانَ أَتَى عَلَى سَلْمَانَ وَصُهَيْبٌ وَبِلَالٍ فِي نَفَرٍ فَقَالُوا مَا أَخَذَتْ سُيُوفُ اللَّهِ مِنْ عَدُوٌّ اللَّهِ مَأْخَذَهَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ أَتَقُوْلُوْنَ هذَا لِشَيْخِ قُرَيْشٍ وَسَيِّدِهِمْ ؟ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ يَا أَبَا بَكْرٍ لَعَلَّكَ أَغْضَبْتَهُمْ لَئِنْ كُنْتَ أَغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أَغْضَبْتَ رَبِّكَ فَأَتَاهُمْ فَقَالَ يَا اخْوَتَاهُ أَغْضَبْتُكُمْ ؟ قَالُوا لَا يَغْفِرُ اللهُ لَكَ يَا أَخَى –
رواه مسلم. قَوْلُهُ مَأْخَذَهَا أَي لَمْ تَسْتَوْفِ حَقَّهَا مِنْهُ وَقَوْلُهُ يَا أَخَى روى بِفَتْحِ الْهَمْزَةِ وَكَسْرِ الْخَاءِ وَتَخْفِيفِ الْيَاءِ وَرُوِيَ بِضَمِّ الْهَمْزَةِ وَفَتْحِ الْخَاءِ وَتَشْدِيدِ الْيَاءِ …
২৬১। আবু হুবাইরা আয়েয ইবনে আমর আল-মুযানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বাইআতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবী ছিলেন। একদা আবু সুফিয়ান কতিপয় লোকের সাথে সালমান ফারসী (রা), সুহাইব রূমী (রা) ও বিলাল (রা)-র কাছে আসলেন। তারা বলেন, আল্লাহর তরবারি আল্লাহর দুশমনদের কাছ থেকে প্রাপ্য হক আদায় করেনি? আবু বাক্ (রা) বলেন, তোমরা কুরাইশ শেখ এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে এই কথা বলছ? তিনি (আবু বাক্স) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করলেন। তিনি বলেনঃ হে আবু বাক্স। তুমি সম্ভবত তাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছ। যদি তুমি তাদেরকে (বিলাল, সালমান ও সুহাইবকে) অসন্তুষ্ট করে থাক তবে তুমি তোমার প্রভুকেই অসন্তুষ্ট করলে! তিনি (আবু বাক্স) তাদের কাছে ফিরে এসে বলেন, হে ভাইয়েরা! আমি কি তোমাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছি? তারা বলেন, না হে ভাই! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।’
٢٦٢ – عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرِّجَ بَيْنَهُما – رواه البخارى كَافِلُ الْيَتِيمِ الْقَائِمُ بِأَمُورِهِ .
২৬২। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি ও ইয়াতীমদের লালন-পালনকারী জান্নাতে এভাবে একত্রিত থাকব। (এই বলে) তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে ইশারা করলেন এবং দুটোর মাঝখানে ফাঁক করলেন।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٦٣ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ وَأَشَارَ الرَّاوِي وَهُوَ مَالِكُ بْنُ انس بالسبابة والوسطى – رواه مسلم . قَوْلُهُ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيَتِيمُ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ مَعْنَاهُ قَرِيبُهُ أَوِ الْأَجْنَبِيُّ مِنْهُ فَالْقَرِيبُ مِثْلُ أَنْ تَكْفُلَهُ أُمُّهُ أَوْ جَدُّهُ أَوْ أَخُوهُ أَوْ غَيْرُهُمْ مِنْ قَرَابَتِهِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
২৬৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ইয়াতীমের লালন-পালনকারী তার নিকটাত্মীয় কিংবা অন্য কেউ হোক, আমি ও তারা জান্নাতে এভাবে পাশাপাশি থাকব। আনাস ইবনে মালিক (রা)
হাদীসটি বর্ণনা করার সময় তার নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে ইশারা কর (বিষয়টি বুঝালেন)।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٦٤ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ الْمِسْكِينُ الَّذِي تردُّهُ التَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَا اللَّقْمَةُ واللُّقَمَتَانِ إِنَّمَا المِسْكِينُ الَّذِي يَتَعَفَّفُ متفق عليه وفي رواية في الصَّحِيحَيْنِ لَيْسَ الْمِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ
عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللقْمَةُ وَالتَّقْمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ وَلَكِنَّ الْمِسْكِينُ الَّذِي لَا يَجِدُ عَنِّى يُغْنِيهِ وَلَا يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدِّقَ عَلَيْهِ وَلَا يَقُوْمُ فَيَسْأَلَ النَّاسَ .
২৬৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন ব্যক্তি মিসকীন নয় যাকে একটি অথবা দু’টি খেজুর দেয়া হয়, এক লোকমা (গ্রাস) বা দুই লোকমা খাদ্য দেয়া হয় (অর্থাৎ যে খুবই সামান্য পাওয়ার জন্য মানুষের নিকট হাত পাতে)। বস্তুত যে-ব্যক্তি দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও অন্যের কাছে হাত পাতে না সেই হচ্ছে মিসকীন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। উল্লেখিত সহীহ হাদীস গ্রন্থদ্বয়ের অপর বর্ণনায় আছেঃ এমন ব্যক্তি মিসকীন নয়, যে এক-দুই মুঠো খাবারের জন্য বা দুই-একটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং তা দেয়া হলে সে প্রত্যাবর্তন করে। প্রকৃত মিসকীন ঐ ব্যক্তি, যার প্রয়োজন পূরণ করার মত যথেষ্ট সংগতি নেই; অথচ (তার নীরবতার কারণে) তাকে চেনাও যায় না যাতে লোকে তাকে সাহায্য করতে পারে এবং লোকদের নিকট গিয়েও সে হাত পাতে না।
٢٦٥ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ السَّاعِى عَلَى الْأَرْمَلَةِ والْمِسْكِينِ كَالْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَحْسَبُهُ قَالَ وَكَالْقَائِمِ الَّذِي لَا يَفْتُرُ وكالصائم الذي لا يُقطر – متفق عليه .
২৬৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: বিধবা, বৃদ্ধ ও মিসকীনদের (সাহায্যের) জন্য চেষ্টা-সাধনাকারী আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মত। (রাবী বলেন), আমার ধারণা, তিনি (নবী) এ কথাও বলেছেন: সে অবিরাম নামায পাঠকারী ও অনবরত রোযা রাখা ব্যক্তির মত।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٦٦ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ يُمْنَعُهَا مَنْ يَأْتِيْهَا وَيُدْعَى إِلَيْهَا مَنْ يَأْبَاهَا وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ – رواه مسلم وفي رواية في الصَّحِيحَيْنِ عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ مِنْ قَوْلِهِ بِئْسَ الطَّعَامُ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ يُدعى اليْهَا الْأَغْنِيَاء وَيُتْرَكَ الْفُقَرَاء .
২৬৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এমন ওয়ালীমা (বিবাহভোজ) নিকৃষ্ট, যে ওয়ালীমায় আগতদেরকে (গরীব) বাধা দেয়া হয় এবং যারা আসতে রাজী নয় (ধনী) তাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয়। যে ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করল না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ হাদীস গ্রন্থদ্বয়ে আবু হুরাইরা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে: সবচে’ নিকৃষ্ট ওয়ালীমা হচ্ছে সেটি যাতে ধনীদের দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদের পরিত্যাগ করা হয়।
٢٦٧ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ وَضَمْ أَصَابِعَهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَجَارِيَتَيْنِ أَي بِنْتَيْنِ.
২৬৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দু’টি মেয়েকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল, সে কিয়ামাতের দিন এরূপ অবস্থায় আসবে যে, আমি ও সে এরকম একত্রিত থাকব। তিনি তাঁর আঙুলগুলো মিলিয়ে দেখালেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٦٨ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ دَخَلَتْ عَلَى امْرَأَةٌ وَمَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُ فَلَمْ تَجِدُ عِنْدِي شَيْئًا غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلَ مِنْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا فَاخْبَرْتُهُ فَقَالَ مَنِ ابْتُلِيَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَيْءٍ فَأَحْسَنَ اليْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِّنَ النار – متفق عليه.
২৬৮। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে এক মহিলা আসল এবং তার সাথে তার দু’টি মেয়েও ছিল। সে কিছু চাইল কিন্তু আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি খেজুরটা তাকে দিলাম। সে খেজুরটি তার দুই কন্যার মধ্যে বণ্টন করল, সে নিজে তা থেকে খেল না, অতঃপর উঠে চলে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলে আমি তাঁকে ব্যাপারটা অবহিত করলাম। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তিই এরূপ কন্যা সন্তানদের নিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে এবং তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে, তারা (কিয়ামাতের দিন) তার জন্য জাহান্নামের আগুনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٦٩ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَتْ جَاءَتْنِي مِسْكِينَةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا فَأَطْعَمْتُهَا ثَلاثَ تَمَرَاتِ فَأَعْطَتْ كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً وَرَفَعَتْ إِلَى فِيْهَا تَمْرَةٌ لِتَأْكُلَهَا فَاسْتَطْعَمَتُهَا ابْنَتَاهَا فَشَقَت التَّمْرَةَ الَّتِي كَانَتْ تُرِيدُ أَنْ
تَأْكُلَهَا بَيْنَهُمَا فَاعْجَبَنِي شَأْنُهَا فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَوْجَبَ لَهَا بِهَا الْجَنَّةَ أَوْ أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ. رَوَاهُ مُسْلِمٍ
২৬৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক দরিদ্র স্ত্রীলোক তার দু’টি কন্যাসহ আমার কাছে আসল। আমি তাদেরকে তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে তাঁর মেয়ে দুটোকে একটি করে খেজুর দিল এবং একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য তাঁর মুখের দিকে তুলল। কিন্তু এটিও তাঁর মেয়েরা খেতে চাইল। যে খেজুরটি সে নিজে খাওয়ার ইচ্ছা করল তাও দু’ভাগ করে তার মেয়ে দু’টিকে দিল। (আয়িশা রা. বলেন), ব্যাপারটি আমাকে অবাক করল। সে যা করল আমি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম। তিনি বলেন: এর বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন অথবা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۷۰ – عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ خُوَيْلِدِ بْنِ عَمْرُو الْخَزَاعِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَحَرِّجُ حَقَّ الضَّعِيفَيْنِ الْيَتِيمِ وَالْمَرْأَةِ حَدِيثُ حَسَن رَوَاهُ النِّسَائِي بِإِسْنَادِ جَيْدٍ وَمَعْنَى أَحَرِّجُ الْحَقُّ الْحَرَجَ
وَهُوَ الْإِثْمُ بِمَنْ ضَيْعَ حَقَّهُمَا وَأَحَذِرُ مِنْ ذَلِكَ تَحْذِيرًا بَلِيْنَا وَأَزْجُرُ عَنْهُ زَجْرًا اكيداً .
২৭০। আবু শুরাইহ্ খুয়াইলিদ ইবনে আমর আল-খুযাঈ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! দুই দুর্বল অর্থাৎ ইয়াতীম ও নারীদের প্রাপ্য ও অধিকার যে ব্যক্তি নষ্ট করে আমি তার জন্য অন্যায় ও গুনাহ নির্দিষ্ট করে দিলাম।
এটা হাসান হাদীস। ইমাম নাসাঈ উত্তম সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۷۱ – عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَى سَعْدٌ أَنْ لَهُ فَضْلاً عَلَى مَنْ دُونَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُوْنَ الا بِضُعَفَائِكُمْ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ هَكَذَا مُرْسَلاً فَإِنْ مُصْعَبَ بْنَ
سَعْدٍ تَابِعِي رَوَاهُ الْحَافِظُ أَبُو بَكْرِ الْبَرْقَانِيُّ فِي صَحِيحِهِ مُتصلاً عَنْ مُصْعَبٍ عَنْ أَبِيْهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.
২৭১। মুস’আব ইবনে সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ (রা) দেখলেন অন্যদের উপর তার একটা শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কেবল তোমাদের দুর্বলদের উসীলায়ই সাহায্য ও রিযক পেয়ে থাক।
ইমাম বুখারী মুস’আব ইবনে সা’দ সূত্রে এটি মুরসাল হাদীসরূপে বর্ণনা করেছেন। কেননা তিনি (মুস’আব) তাবিঈ ছিলেন। হাফেজ আবু বাক্স আল-বুরকানী তার সহীহ গ্রন্থে এটিকে মুত্তাসিল হাদীসরূপে বর্ণনা করেছেন অর্থাৎ মুস’আব তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
۲۷۲ – عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ عُوَيْمَرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ابْغُونِي فِي الضُّعَفَاءِ فَإِنَّمَا تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ بِضُعَفَائِكُمْ – رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ بِإِسْنَادِ جَيْدٌ .
২৭২। আবুদ দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তোমরা আমার সন্তুষ্টি নিঃস্ব-দুর্বলদের মধ্যে অন্বেষণ কর। কেননা তোমরা তাদের উসীলায় সাহায্য ও রিযক পেয়ে থাক।
ইমাম আবু দাউদ উত্তম সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩৪ – মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করা
মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“এবং তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলেমিশে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর।” (সূরা আন-নিসা: ১৯)
وَقَالَ تَعَالَى: وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاء وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا .
“স্ত্রীদের মধ্যে পুরোপুরি সুবিচার ও ইনসাফ বজায় রাখা তোমাদের সাধ্যের অতীত। তোমরা অন্তর দিয়ে চাইলেও তা করতে সমর্থ হবে না। অতএব (আল্লাহর আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে) একজন স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অপরজনের দিকে একেবারে ঝুঁকে পড়বে না। তোমরা যদি নিজেদের কাজকর্ম সঠিকরূপে সম্পন্ন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তবে আল্লাহ তো ক্ষমাকারী ও দয়াময়।” (সূরা আন-নিসা : ১২৯)
۲۷۳ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعِ وَإِنْ أَعْوَجَ مَا فِي الضَّلَعِ أَعْلاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِن تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلَ أَعْوَجَ
فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ. متفق عليهوفِي رِوَايَةٍ فِي الصَّحِيحَيْنِ الْمَرْأَةُ كَالضَّلَعِ إِنْ أَقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا وَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ وَفِيهَا عَوَجٌ. وَفِي رِوَايَة لِمُسْلِمِ إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضلع لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ فَانِ
اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفِيْهَا عَوَجٌ وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طلاقها – قَوْلُهُ عَوَجٌ هُوَ بِفَتْحِ الْعَيْنِ وَالْوَاوِ .
২৭৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তবে ভেংগে ফেলার আশংকা রয়েছে এবং যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকা হতেই থাকবে। অতএব তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাদের সহীহ হাদীস গ্রন্থদ্বয়ের অপর বর্ণনায় আছে: মেয়েরা পাঁজরের বাঁকা হাড়ের সমতুল্য। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও ভেংগে ফেলবে। অতএব তুমি যদি তার থেকে কাজ আদায় করতে চাও তবে তার এ বাঁকা অবস্থায়ই কাজ আদায় কর। মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: মহিলাদেরকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনও এবং কিছুতেই তোমার জন্য সোজা হবে না। যদি তুমি তার থেকে কাজ আদায় করতে চাও, তবে এ বাঁকা অবস্থায়ই কাজ আদায় কর, আর যদি সোজা করতে যাও ভেংগে ফেলবে। ভাংগার অর্থ হল তাকে তালাক প্রদান।
٢٧٤ – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِي عَقَرَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزِيزٌ عَارِمٌ مَنِيعٌ فِي رَهْطِهِ
ثُمَّ ذَكَرَ النِّسَاءَ فَوَعَظَ فِيهِنَّ فَقَالَ يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ فَيَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ الْعَبْدِ فَلَعَلَهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ أَخِرٍ يَوْمِهِ ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِي ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ وَقَالَ لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ؟ متفق عليه. وَالْعَارِمُ بِالْعَيْنِ الْمُهْمَلَةِ وَالرَّاءِ
هُوَ الشَّرِيرُ الْمُفْسِدُ وَقَوْلُهُ اتَّبَعَثَ أَى قَامَ بِسُرْعَةٍ .
২৭৪। আবদুল্লাহ ইবনে যাম’আ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবা দিতে শুনলেন। তিনি সেই উস্ত্রী এবং তার হত্যাকারীর কথা উল্লেখ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “যখন তারা তাদের হতভাগা দুষ্ট লোকটাকে পাঠালো।” অর্থাৎ (সামূদ জাতির) এক বড় সরদার, নিকৃষ্ট দুষ্ট ও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি স্ফূর্তি ও উন্মত্ততার সাথে (উস্ত্রীকে হত্যা করার জন্য) দাঁড়িয়ে গেল [ এখানে সামূদ জাতির নবী সালিহ আলাইহিস সালামের উস্ত্রীর দিকে ইংগিত করা হয়েছে। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য একটি মুজিযা। আল কুরআনে একে ‘আল্লাহ্র উন্ত্রী’ বলা হয়েছে। তিনি তাঁর জাতিকে পূর্বেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন: যদি এর কোন ক্ষতি সাধন করা হয় তবে কঠিন শাস্তিতে তারা ধ্বংস হবে। তারা যখন এ সতর্কবাণী উপেক্ষা করে উষ্ট্রীটিকে হত্যা করে তখন তাদেরকে একটি প্রচণ্ড ও বিকট শব্দ দ্বারা ধ্বংস করা হয় ] । (নবী সা. তাঁর বক্তৃতায়) মেয়েদের কথা উল্লেখ করলেন, তিনি তাদের সম্পর্কে উপদেশ দিলেন। তিনি বলেন: তোমাদের কেউ তার স্ত্রীকে মারতে উদ্যত হয় এবং তাকে গোলাম-বাঁদীর ন্যায় মারে। দিনের শেষে সে আবার তার সাথে শোয় (সংগম করে, কত অকৃতজ্ঞ)। অতঃপর তিনি বাতকর্মের কারণে তাদের হাসি সম্পর্কে উপদেশ দিলেন। তিনি বলেন: যে কাজ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি করে সে কাজের জন্য সে নিজেই কেন হাসবে।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٧٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا يَفْرَكُ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةٌ إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلْقًا رَضِيَ مِنْهَا أَخَرَ أَوْ قَالَ غَيْرَهُ – رواه مسلم. وَقَوْلُهُ يَفْرَكْ هُوَ بِفَتْحِ الْيَاءِ وَإِسْكَانِ الْفَاءِ وَفَتْحِ الرَّاءِ مَعْنَاهُ
يُبْغِضُ يُقَالُ فَرَكَتِ الْمَرأَةُ زَوْجَهَا وَفَرَكَهَا زَوْجُهَا بِكَسْرِ الرَّاءِ يَفْرَكُهَا بِفَتْحِهَا أَوْ أَبْغَضَهَا -والله اعلم .
২৭৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন মুসলিম পুরুষ যেন কোন মুসলিম মহিলার প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ না করে। কেননা তার কোন একটি দিক তার কাছে খারাপ লাগলেও অন্য একটি দিক তার পছন্দ হবে (অর্থাৎ দোষ থাকলে গুণও আছে) অথবা তিনি (নবী) অনুরূপ কথা বলেছেন [ হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে অধিকতর আল্লাহভীতি ও দায়িত্ব সচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে হাদীস বর্ণনাকারীগণ এ ধরনের বাক্য উচ্চারণ করে থাকেন ] ।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٧٦ – عَنْ عَمْرِو بْنِ الْأَحْوَصِ الْجُسْمِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ يَقُولُ بَعْدَ أَنْ حَمِدَ اللَّهَ تَعَالَى وَاثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَرَ وَوَعَظَ ثُمَّ قَالَ أَلَا وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٌ
عِنْدَكُمْ لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئًا غَيْرَ ذَلِكَ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ فَإِنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سبيلاً أَلا إِنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقًّا وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ
حَقًّا فَحَقُكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لا يُوطِينَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُونَ وَلَا يَأْذَنْ فِي بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ أَلَا وَحَقَّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثُ حَسَنٌ صَحِيحٌ قَوْلُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
عَوَانٌ أَنْ أَسِيْرَاتٌ جَمْعُ عَانِيَةٍ بِالْعَيْنِ الْمُهْمَلَةِ وَهِيَ الْأَسِيرَةُ وَالْعَانِي الْأَسِيرُ شَبَّهَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْأَةَ فِي دُخُولِهَا تَحْتَ حُكم الزوج بِالْأَسِيرِ وَالضَّرْبُ المُبَرِّحُ هُوَ الشَّاقُ الشَّدِيدُ وَقَوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً أَي لَا تَطْلُبُوا وَاللَّهُ أَعْلَمُ . طرِيقًا تَحْتَجُوْنَ بِهِ عَلَيْهِنَّ وَتُؤْذُونَهُنَّ بِهِ وَا
২৭৬। আমর ইবনুল আহওয়াস আল-জুশামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায় হজ্জের খুত্বায় বলতে শুনেছেন: তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, লোকদেরকে ওয়াজ-নসীহত করলেন এবং বললেনঃ তোমরা মেয়েদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। কেননা তারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ (সহবাস ও সংসারের তত্ত্বাবধান) ছাড়া অন্য কিছুর মালিক নও, কিন্তু হাঁ, যদি তারা প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়। যদি তারা এরূপ করে তবে তোমাদের বিছানা থেকে তাদেরকে পৃথক করে দাও এবং তাদেরকে মারধর কর কিন্তু কঠোরভাবে নয়। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের (কষ্ট দেয়ার) জন্য বিকল্প পথ অনুসন্ধান করো না। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও তাদের তেমন অধিকার রয়েছে। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হল: তারা তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিদের দ্বারা তোমাদের বিছানা কলুষিত করবে না এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ব্যক্তিকে তোমাদের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেবে না। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হল: তোমরা তাদের খাওয়া-পরার উত্তম ব্যবস্থা করবে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
শব্দার্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা: عوان বহুবচনের শব্দ, অর্থ কয়েদ বা বন্দী। তিনি স্ত্রীকে স্বামীর অধীনে থাকার অবস্থাকে বন্দীর অবস্থার সাথে তুলনা করেছেন। الضرب المبرح অর্থ: কঠিন প্রহার। فلا تبغوا عليهن سبيلاً অর্থাৎ এমন পঃ বা পন্থা অবলম্বন করো না যাতে তারা কষ্ট ভোগ করবে বা দুর্ভোগ পোহাতে থাকবে।
۲۷۷- عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ حَيْدَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ زَوْجَة أَحَدَنَا عَلَيْهِ ؟ قَالَ أنْ تُطعمها اذا طعمت وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحُ وَلَا تَهْجُرُ إِلا فِي الْبَيْتِ حَدِيثٌ حَسَنٌ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَقَالَ مَعْنَى لَا تُقَبِّحُ لَا تَقُلْ قَبْحَكِ اللَّهُ .
২৭৭। মু’আবিয়া ইবনে হাইদাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের কোন ব্যক্তির উপর তাঁর স্ত্রীর কি অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন: তুমি যখন আহার কর তাকেও আহার করাও, তুমি যখন পরিধান কর, তাকেও পরিধান করাও, কখনও মুখমণ্ডলে প্রহার করো না, কখনও অশ্লীল ভাষায় গালি দিও না এবং ঘরের মধ্যে ছাড়া তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না [ ঘরের মধ্যে বলতে এখানে বিছানা বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ কখনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্দেশে আলাদা বিছানার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ] ।
এটি হাসান হাদীস এবং ইমাম আবু দাউদ এটি বর্ণনা করেছেন।
۲۷۸ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيْمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلْقًا وَخِيَارُكُمْ خَيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ – رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثُ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
২৭৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির চরিত্র ও ব্যবহার সবচেয়ে উত্তম, ঈমানের দিক দিয়ে সে-ই পরিপূর্ণ মুমিন। তোমাদের মধ্যে সেইসব লোক উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য ভালো।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
۲۷۹ – عَنْ آيَاسِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي ذُبَابٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللهِ فَجَاءَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أَزْوَاجِهِنَّ
فَرَخْصَ فِي ضَرْبِهِنَّ فَأَطَافَ بال رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ أَطَافَ بِالِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أُولَئِكَ بِخِيَارِكُمْ – رواه ابو
داود باشنَادٍ صَحِيحِ ، قَوْلُهُ ذَئِرْنَ هُوَ بذال مُعْجَمَةٍ مَفْتُوحَةٍ ثُمَّ هَمْزَةٍ مَكْسُورَةٍ ثُمَّ رَاء سَاكِنَةٍ ثُمَّ نُونٍ أَى اجْتَرَانَ وَقَوْلُهُ أطاف أي أحاط.
২৭৯। ইয়াস ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা আল্লাহর বাঁদীদেরকে (স্ত্রীলোকদেরকে) মারপিট করো না। উমার (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেন, স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের উপর চড়াও হয়েছে (ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে)। অতঃপর তিনি তাদেরকে মারতে অনুমতি দিলেন। ফলে অনেক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজনদের কাছে এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের অনেক মহিলা এসে মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এরা (স্বামীরা) কিছুতেই উত্তম লোক নয়।
ইমাম আবু দাউদ সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۸۰ – عَنْ عَبْدِ اللَّهُ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِهَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ – رواه مسلم .
২৮০। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদ। আর পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ হল সৎকর্মপরায়ণা স্ত্রী।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩৫ – স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضْلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“পুরুষরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল, কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং আরো এজন্য যে, পুরুষরা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। অতএব সতী নারীরা আনুগত্যপরায়ণা হয়ে থাকে এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হিফাযাত ব্যবস্থার অধীনে তাদের অধিকার রক্ষা করে। (সূরা আন-নিসাঃ ৩৪)
وأما الْأَحَادِيثُ فَمِنْهَا حَدِيثُ عَمْرِو بْنِ الْأَحْوَصِ السَّابِقُ فِي الْبَابِ قَبْلَهُ : ۲۸۱ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَلَمْ تَأْتِهِ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا
لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ متفق عليه. وفي رِوَايَةٍ لَهُمَا إِذَا بَاتَتِ الْمَرْأَةُ هَاجِرَةٌ فراش زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ، وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رُجُلٍ يَدْعُو إِمْرَأَتَهُ
إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ الأَ كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا
২৮১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন কোন লোক তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে কিন্তু সে আসে না, ফলে স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, ফেরেশতাগণ তাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
তাদের উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে: কোন স্ত্রীলোক যখন তার স্বামীর বিছানা পরিত্যাগ করে রাত কাটায়, তখন ফেরেশতাগণ সকাল হওয়া পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে আর সে তা অস্বীকার করে, এ অবস্থায় তার প্রতি তার স্বামী খুশি না হওয়া পর্যন্ত যিনি আসমানে আছেন তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন।
۲۸۲ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ وَلَا تَأْذَنَ فِي بَيْتِهِ الا باذنه متفق عليه وَهُذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ .
২৮২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে (নফল) রোযা রাখা হালাল নয়। তার অনুমতি ছাড়া অন্য লোককে তার ঘরে আসার অনুমতি দেয়াও তার জন্য হালাল নয়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে মূল পাঠ বুখারী শরীফের।
۲۸۳ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كلكم راع وكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْأَمِيرُ رَاعٍ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ والْمَرْأَةُ رَعِيَّةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ
عَنْ رَعِيَّتِهِ متفق عليه .
২৮৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমীর বা শাসক একজন রক্ষণাবেক্ষণকারী (তাকেও তার রক্ষণাবেক্ষণের পুংখানুপুংখ হিসাব দিতে হবে)। পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের রক্ষণাবেক্ষণকারী, স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের এবং সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٨٤ – عَنْ أَبِي عَلِيَّ طَلْقٍ بْنِ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا دَعَا الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ لِحَاجَتِهِ فَلْتَأْتِهِ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّورِ. رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَالنِّسَائِي وَقَالَ التَّرْمِذِى حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
২৮৪। আবু আলী তাল্ল্ফ ইবনে আলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: স্বামী যখন তার কোন প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন সাথে সাথে তার কাছে চলে আসে; এমনকি চুলার উপর রুটি থাকলেও।
ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আন্ নাসাঈ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
٢٨٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ كنتُ أمرا احدا أنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
২৮৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম তবে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
٢٨٦ – عَنْ أَمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضِ دَخَلَتِ الْجَنَّةَ . رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .
২৮৬। উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন স্ত্রীলোক তার প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা হাসান হাদীস।
۲۸۷ – عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا تُؤْذِي امْرَأَةً زَوْجَهَا فِي الدُّنْيَا إِلَّا قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الْحُورِ الْعَيْنِ لَا تُؤْذِيهِ قَاتَلَكَ اللهُ فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكَ دَخِيلٌ يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكَ الَيْنَا – رَوَاهُ
التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ.
২৮৭। মু’আয ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যখনই কোন স্ত্রীলোক তার স্বামীকে দুনিয়ায় কষ্ট দিতে থাকে তখনই (জান্নাতের) আয়তলোচনা হুরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, (হে অভাগিনী) তুমি তাকে কষ্ট দিয়ো না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তোমার কাছে মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।
۲۸۸ – عَنْ أَسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا تَرَكْتُ بَعْدِى فِتْنَةٌ هِيَ أَضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاء – متفق عليه .
২৮৮। উসামা ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমার পরে আমি পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিকতর ক্ষতিকর ফিৎনা রেখে যাইনি।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩৬ – পরিবার-পরিজনদের ভরণ-পোষণ
পরিবার-পরিজনদের ভরণ-পোষণ।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“সন্তানের পিতাকে ন্যায়সংগতভাবে মায়েদের ভরণ-পোষণ করতে হবে।” (সূরা আল-বাকারা: ২৩৩)
وَقَالَ تَعَالَى : لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا أَتَاهَا
“সচ্ছল লোক নিজের সচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয়ভার বহন করবে। আর যাকে কম রিযক দেয়া হয়েছে, সে তার সেই সম্পদ থেকে ব্যয় করবে যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে যতটা দিয়েছেন, তার বেশি ব্যয় করার দায়িত্ব তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। এটা অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ অসচ্ছলতার পর প্রাচুর্য দান করবেন।” (সূরা আত-তালাক: ৭)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ.
তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা: ৩৯)
۲۸۹ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِيْنَارٌ انْفَقْتَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدِيْنَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي رَقَبَةٍ وَدِيْنَارٌ تَصَدِّقْتَ بِهِ على مشكين وَدِيْنَارٌ انْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِي أَنْفَقْتَهُ
عَلَى أَهْلِكَ. رواه مسلم.
২৮৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তুমি একটি দীনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দীনার দাস মুক্তির জন্য ব্যয় করেছ, একটি দীনার মিসকীনকে দান করেছ এবং একটি দীনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করেছ। এ দীনারগুলোর মধ্যে যেটি তুমি নিজ পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করেছ, প্রতিদান লাভের দিক দিয়ে সেটিই সর্বোত্তম।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۹۰ – عَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ وَيُقَالُ لَهُ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ ثَوْبَانَ بْنِ بُجُدُدَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ دِينَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِبَالِهِ وَدِيْنَارُ يُنْفِقُهُ عَلَى
دَابَّتِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدِيْنَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى أَصْحَابه في سبيل الله . رواه مسلم.
২৯০। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুক্তদাস আবু আবদুল্লাহ অথবা আবু আবদুর রহমান সাওবান ইবনে বুজদুদ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন ব্যক্তির খরচকৃত দীনারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দীনার হল: যেটা সে তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে; যে সীসায়টি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে পোষা ঘোড়ার জন্য খরচ করে এবং যে দীনারটি আল্লাহর পথে স্বীয় সাথীদের জন্য খরচ করে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۹۱ – عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِي أَجْرٌ فِي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أَنْفِقَ عَلَيْهِمْ وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هُكَذَا وَهُكَذَ إِنَّمَا هُمْ بَنِي؟ فَقَالَ نَعَمْ لَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ – متفق عليه.
২১৯। উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে আবু সালামার সন্তানদের জন্য খরচ করি তাতে কি আমার সাওয়াব হবে? আমি তাদেরকে কোন রকমই ত্যাগ করতে পারছি না। কেননা তারা আমারও সন্তান। তিনি বলেন: হাঁ তুমি তাদের যে ব্যয়ভার বহন করছ তাতে তোমার জন্য প্রতিদান রয়েছে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۹۲ – عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ الَّذِي قَدَّمْنَاهُ فِي أَوَّلِ الْكِتَابِ فِي بَابِ النِّيَّةِ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لهُ وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أَجِرْتَ بِهَا حَتَّى مَا
تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ – متفق عليه.
২৯২। সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তুমি যা-ই খরচ করবে তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে; এমনকি যে গ্রাসটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۲۹۳ – عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْبَدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا أَنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً يَحْتَسِبُهَا فَهِيَ لَهُ صَدَقَةٌ – متفق عليه.
২৯৩। আবু মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কোন লোক সাওয়াব লাভের আশায় নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য যা খরচ করে তা তার জন্য সাদাকা (দান) সমতুল্য।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٩٤ – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَفَى بِالْمَرْءِ أَثِمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوْتُ حَدِيثُ صَحِيحٌ روَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَغَيْرُهُ وَرَوَاهُ مُسْلِمٌ فِي صَحِيحِهِ بِمَعْنَاهُ قَالَ كَفَى
بِالْمَرْءِ أَثْمًا أَنْ يَحْبِسَ عَمَّنْ يُمْلِكُ قُوْتَهُ
২৯৪। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন ব্যক্তি যার রিযকের মালিক হয় তার রিযক নষ্ট করে দেয়াই তার গুনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এটা সহীহ হাদীস, ইমাম আবু দাউদ ও অন্যরা এটি বর্ণনা করেছেন।
ইমাম মুসলিমও একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি (নবী) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির গুনাহগার হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যার রিযকের মালিক হয় তার এ রিযক সে আটকে রাখে।
٢٩٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ يَوْمِ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلا مَلَكَان يَنزِلَانِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُولُ الْآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطَ مُمْسكًا تَلَفًا – متفق عليه .
২৯৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: বান্দা প্রতিদিন ভোরে উপনীত হতেই দু’জন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন: হে আল্লাহ! খরচকারীকে তার বিনিময় দান কর এবং অপরজন বলেন: হে আল্লাহ! কৃপণের ধন বিনষ্ট কর।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٢٩٦ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْبَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِّنَ الْيَدِ السفلي وابْدَأَ بِمَنْ تَعُولُ وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ عَنِّى وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفُهُ اللَّهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِه الله – رواه البخاري .
২৯৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নীচের হাতের চেয়ে উপরের হাত উত্তম [ অর্থাৎ দান গ্রহণকারীর চেয়ে দাতা উত্তম ] । তোমার পোষ্যদের থেকে দান শুরু কর। আর্থিক প্রাচুর্য বজায় রেখে কৃত দানই উত্তম [ অর্থাৎ নিজের পরিবার-পরিজনদের জন্য খরচ করার পর যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে দান করা ] । যে ব্যক্তি পবিত্র ও সংযমী হতে চায় আল্লাহ তাকে পবিত্র ও সংযমী হওয়ার তাওফীক দেন। যে ব্যক্তি স্বনির্ভর হতে চায় আল্লাহ তাকে স্বনির্ভর করেন।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৩৭ – উত্তম ও প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করা
উত্তম ও প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমাদের প্রিয় ও পছন্দনীয় জিনিস (আল্লাহর পথে) ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। আর যা কিছুই তোমরা খরচ করবে আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত।” (সূরা আলে ইমরান : ৯২)
وَقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمِّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ .
“হে ঈমানদারগণ। তোমরা যে সম্পদ উপার্জন করেছ এবং আমরা যা কিছু তোমাদের জন্য জমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে খরচ কর। তোমাদের এরূপ করা উচিত নয় যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য তোমরা নিকৃষ্টতম জিনিসগুলো বেছে নেবে।” (সূরা আল বাকারাঃ ২৬৭)
۲۹۷ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ أَبُو طَلْحَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَكْثَرَ الْأَنْصَارِ بِالْمَدِينَةِ مَالاً مِنْ نَخْلِ وَكَانَ أَحَبُّ أَمْوَالِهِ إِلَيْهِ بَيْرَحَاءُ وَكَانَتْ مستقبلة المسجد وَكَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ
مَاء فِيهَا طَيِّبٍ قَالَ أَنَسٌ فَلَمَّا نَزَلَتْ هُذِهِ الْآيَةُ لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ قَامَ أَبُو طَلْعَةَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى انْزَلَ عَلَيْكَ لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ
وَإِنْ أَحَبٌ مَالِي إِلَى بَيْرَ حَاءُ وَأَنَّهَا صَدَقَةً لِلَّهِ تَعَالَى أَرْجُو بِرْهَا وَذُخْرَهَا عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى فَضَعْهَا يَا رَسُولَ اللهِ حَيْثُ أَرَاكَ اللهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَحْ ذَلِكَ مَالَ رَابِحٌ ذَالِكَ مَالٌ رَابِحٌ وَقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ وَإِنِّي
أَرَى أَنْ تَجْعَلَهَا فِي الْأَقْرِبَيْنَ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ أَفْعَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَسْمَهَا أَبُو طَلْحَةَ فِي أَقَارِيهِ وبَنِي عَمِّهِ – متفق عليه. قَوْلُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَالٌ رَابِحٌ رُوِيَ فِي الصحيحين رابع ورايح بِالْبَاءِ الْمُوَحْدَةِ وَبِالْيَاءِ الْمُثَنَّاةِ
أَيْ رَابِحٌ عَلَيْكَ نَفْعُهُ وَبَيْرَحَاءُ حَدِيقَةُ نَخْلِ وَرُوِيَ بِكَسْرِ الْبَاءِ وَفَتْحِهَا .
২৯৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনার আনসারদের মধ্যে আবু তালহা (রা) খেজুর বাগানের কারণে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী ছিলেন। তার সমস্ত সম্পদের মধ্যে ‘বাইরাহা’ নামক বাগানটি তার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল। এ বাগানটি মসজিদে নববীর সামনেই ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে যাতায়াত করতেন এবং বাগানের মিঠা পানি পান করতেন। আনাস (রা) বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হলঃ “তোমাদের প্রিয় ও পছন্দনীয় জিনিস (আল্লাহর পথে) খরচ না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না” (সূরা আলে ইমরান: ৯২),
তখন আবু তালহা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর নাযিল করেছেন: “তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহর পথে) খরচ না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না”। ‘বাইরাহা’ নামক বাগানটি আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ। আমি এটা আল্লাহর জন্য দান করে দিলাম। এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও প্রতিদানের আশা রাখি। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর মর্জি মাফিক আপনি এটা কাজে লাগান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আচ্ছা! এটা তো লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ আমি তা শুনেছি। এটা তোমার নিকটাত্মীয়দের দেয়াটাই আমি সমীচীন মনে করি। আবু তালহা (রা) বলেন, আমি তাই করব, হে আল্লাহর রাসূল! অতঃপর আবু তালহা বাগানটি তার নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ : ৩৮ – নিজের সন্তান, পরিবার-পরিজন এবং অধীনস্থ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া, এর বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করা, তাদেরকে ভদ্রতা ও সৌজন্য শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত রাখা
নিজের সন্তান, পরিবার-পরিজন এবং অধীনস্থ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া, এর বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করা, তাদেরকে ভদ্রতা ও সৌজন্য শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত রাখা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَأَمر أَهْلَكَ بِالصَّلاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমার পরিবার-পরিজনকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও এবং নিজেও এর উপর অবিচল থাক।” (সূরা তাহা: ১৩২)
وَقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও।” (সূরা আত-তাহরীম: ৬)
۲۹۸- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ أَخَذَ الحَسَنُ بْنُ عَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا تَمْرَةٌ مِنْ تَشرِ الصَّدَقَةِ فَجَعَلَهَا فِي فِيهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْ كَنْ إِرْمِ بِهَا أَمَا عَلِمْتَ إِنَّا لَا تَأْكُلُ الصَّدَقَةَ؟ متفق عليه
وَفِي رِوَايَةٍ أَنَّا لَا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ وَقَوْلُهُ كَنْ كَنْ يُقَالُ بِإِسْكَانِ الْخَاءِ وَيُقَالُ بِكَسْرِهَا مَعَ التَّنْوِينِ وَهِيَ كَلِمَةُ زَجْرٍ لِلصَّبِيِّ عَنِ الْمُسْتَقَذَرَاتِ وَكَانَ الْحَسَنُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ صَبِيًّا .
২৯৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ইবনে আলী (রা) সাদাকার (যাকাতের) খেজুর থেকে একটি খেজুর তুলে নিয়ে তা মুখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিরস্কারের সুরে বলেন: কাখ! কাখ! এটা ফেলে দাও। তুমি কি জান না যে, আমরা সাদাকা খাই না?
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: আমাদের জন্য সাদাকার জিনিস হালাল নয়। [ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের লোকদের জন্য সাদাকা-যাকাত ইত্যাদি খাওয়া নিষেধ ] ।
শব্দার্থ: ইমাম নববী বলেন, کخ کخ অথবা کخ کخ শব্দটি অপছন্দনীয় জিনিসের বেলায় বাচ্চাদেরকে উপদেশ দান, সতর্কীকরণ, তিরস্কার-ভর্ৎসনা ইত্যাদি করার জন্য ব্যবহৃত হয় [ যেমন কোন একটি অপছন্দনীয় জিনিস কেউ দিলে আমরা বাংলায় “দুহ। খুহ!” বলে থাকি ] । আর হাসান (রা) তখন অল্প বয়স্ক ছিলেন।
٢٩٩ – عَنْ أَبِي حَفْصِ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْأَسَدِ رَبِيبِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كُنْتُ غُلَامًا فِي حَجْرٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ يَدِى تَطِيسُ فِي الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِي رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا غُلَامُ سَمَّ اللَّهَ تَعَالَى وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلُّ مِمَّا يَلِيْكَ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طعْمَتِي بَعْدُ . متفق عليه وتَطِيسُ تَدُورُ فِي نَوَاحِي الصَّحْفَةِ .
২৯৯। আবু হাফস উমার ইবনে আবু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তত্ত্বাবধানাধীন বালক ছিলাম [ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উন্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার পূর্ব স্বামী আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদের ঔরসজাত সন্তান ছিলেন। তিনি রাসূল-পরিবারে লালিত-পালিত হন ] । আমার হাত (খাবারের) পাত্রের এদিক-সেদিক যেত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন: খোকা! আল্লাহর নাম লও, ডান হাতে খাবার গ্রহণ কর এবং নিকটস্থ খাবার খাও। এরপর থেকে আমি সর্বদা তাঁর শেখানো পদ্ধতিতেই খাবার খাই।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٠٠- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ الْإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رعيته والرَّجُلُ راعٍ فِي أَهْلِهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي
بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْئُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَكُلُّكُمْ راعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ – متفق عليه .
৩০০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার এ রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। ইমাম একজন রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। খাদেম তার মনিবের ধন- সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কাজেই তোমরা সবাই রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٠١- عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرُوا أَوْلادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ حَدِيْثٌ
حَسَنٌ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ بِاشْنَادٍ حَسَن .
৩০১। আমর ইবনে শু’আইব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাত বছরে পদার্পণ করলেই তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামায পড়ার নির্দেশ দাও, দশ বছরে পদার্পণ করলে (তখনও যদি নামায পড়ার অভ্যাস না হয়ে থাকে তবে) তাদেরকে নামায পড়ার জন্য দৈহিক শাস্তি দাও এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।
এটি হাসান হাদীস। ইমাম আবু দাউদ উত্তম সনদ সূত্রে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।
٣٠٢ – عَنْ أَبِي ثُرَيَّةَ سَبْرَةَ بْنِ مَعْبَدِ الْجُهَنِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِمُوا الصَّبِيُّ الصَّلاةَ لِسَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُ عَلَيْهَا ابْنَ عَشْرِ سِنِينَ – حَدِيثٌ حَسَنٌ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِي وَقَالَ
حَدِيثٌ حَسَنٌ وَلَفْظُ أَبِي داود مُرُوا الصَّبِيِّ بِالصَّلاةِ إِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِينَ .
৩০২। আবু সুরাইয়্যা সাবরা ইবনে মা’বাদ আল-জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সেই নামায শিক্ষা দাও, দশ বছর বয়সে (যদি নামায না পড়ে তবে) তাকে মারধর কর।
এটি হাসান হাদীস। ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আবু দাউদের শাব্দিক বর্ণনা এইরূপ: শিশু যখন সাত বছরে পদার্পণ করে তখন তাকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও।
অনুচ্ছেদ: ৩৯ – প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব
প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وابن السبيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ……
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না; পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর; নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকীনদের প্রতিও এবং নিকট প্রতিবেশীর প্রতি, দূর প্রতিবেশীর প্রতি, পাশাপাশি চলার সাথী [ পাশাপাশি চলার সাথী মূল শব্দ রয়েছে- ‘ওয়াসসাহিবে বিল জানি’। এর অর্থঃ একত্রে বসবাসকারী বন্ধু হতে পারে; কোথাও কোন সময় সাময়িকভাবে যে ব্যক্তি একজনের সংগী হয় সেও হতে পারে। বাজার ইত্যাদিতে যাওয়ার সময় একসংগে পথ চলার সাথীও হতে পারে ] ও পথিকদের প্রতি এবং তোমাদের অধীনস্থ ক্রীতদাস ও দাসীদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন কর। আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে কখনও পছন্দ করেন না যে নিজ ধারণায় অহংকারী এবং নিজেকে বড় মনে করে আত্মগৌরবে বিভ্রান্ত।” (সূরা আন-নিসাঃ ৩৬)
٣٠٣ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُورَثُهُ – متفق عليه.
৩০৩। ইবনে উমার ও আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জিবরীল (আ) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকলেন, এমনকি আমার মনে হল, হয়ত তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দেবেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٠٤ – عَنْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا آبًا ذَرٍ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةٌ فَأَكْثِرُ مَا مَهَا وَتَعَاهَدْ حِيْرَانَكَ رَوَاهُ مُسْلِمُ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ عَنْ أَبِي ذَرٍ قَالَ إِنَّ خَلِيلِى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانِي إِذَا
طَبَخْتَ مَرَقًا فَأَكْثِرْ مَاءَهُ ثُمَّ انْظُرْ أَهْلَ بَيْتِ مِنْ حِيْرَانِكَ فَأَصْبِهُمْ مِنْهَا بِمَعْرُوفَ.
৩০৪। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবু যার! যখন তুমি তরকারী পাকাও, তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশীকে পৌছাও।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার অপর বর্ণনায় আবু যার (রা) বলেন, আমার বন্ধু (মহানবী) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিলেনঃ যখন তুমি ঝোল পাকাও তাতে বেশি পানি দাও, অতঃপর নিজের প্রতিবেশীর ঘরের খোঁজ-খবর নাও এবং তাদেরকে এই ঝোল থেকে ভালোভাবে দাও।
٣٠٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَاللَّهِ لا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ الَّذِي لَا يَأْمَنُ جَارَهُ بَوَائِقَهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمِ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ
لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بوَائِقَهُ الْبَوَائِقُ الْغَوَائِلُ والسُّرُورُ .
৩০৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; আল্লাহর শপথ। সে মুমিন নয়; আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল। কে সেই ব্যক্তি? তিনি বলেনঃ যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছেঃ যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
শব্দার্থ : البوائق ধোঁকাবাজ অথবা দুষ্ট।
٣٠٦- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةً لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاءَ متفق عليه .
৩০৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীকে তুচ্ছ জ্ঞান না করে, এমনকি (সে তাকে) বকরীর পায়ের একটি ক্ষুর উপঢৌকন পাঠালেও।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٠٧- وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَمْنَعُ جَارُ جَارَهُ أَنْ يُغْرِزَ خَشَبَةٌ فِي جِدَارِهِ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ مَا لِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ وَاللَّهِ لأَرْمِينَ بَيْنَ اكْتَافِكُمْ – متفق عليه . رُوِيَ خَشَبَهُ بِالْإِضَافَةِ وَالْجَمْعِ
وَرُوِيَ خَشَبَةٌ بِالتَّنْوِيْنِ عَلَى الْإِفْرَادِ وَقَوْلُهُ مَا لِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ يَعْنِي عَنْ هَذِهِ السَّنَّةِ .
৩০৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক প্রতিবেশী যেন নিজের দেয়ালের সাথে অপর প্রতিবেশীকে খুঁটি গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবু হুরাইরা (রা) বলতেন, আমি তোমাদেরকে এ হাদীস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি। আল্লাহর শপথ। আমি তোমাদের সামনে এ হাদীস অবশ্যই প্রকাশ করব।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٠٨- وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَشْكُتْ – متفق عليه .
৩০৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের আদর-আপ্যায়ন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٠٩ – عَنْ أَبِي شُرَيْحِ الْخَزَاعِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنَ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمُ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَشكُتُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ بِهذا اللفظ وَرَوَى الْبُخَارِيُّ بَعْضَهُ .
৩০৯। আবু শুরাইহ আল-খুযাঈ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানের আদর-আপ্যায়ন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।
ইমাম মুসলিম উল্লেখিত শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারীও এই হাদীসের অংশবিশেষ বর্ণনা করেছেন।
٣١٠ – عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي جَارَيْنِ قَالَى أَيْهِمَا أَهْدِي ؟ قَالَ إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا – رواه البخاري .
৩১০। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দুই ঘর প্রতিবেশী রয়েছে। এদের মধ্যে কাকে আমি হাদিয়া দেব? তিনি বলেনঃ তাদের উভয়ের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশি নিকটে তাকে।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۱۱ – عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْخَيْرَانِ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ – رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ.
৩১১। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বন্ধুদের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম বন্ধু ঐ ব্যক্তি যে তার সংগীর কল্যাণকামী (যে বন্ধুদের কাছে উত্তম সেই উত্তম)। প্রতিবেশীদের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিবেশী ঐ ব্যক্তি যে তার প্রতিবেশীর কল্যাণকামী (প্রতিবেশীদের দৃষ্টিতে উত্তম প্রতিবেশীই উত্তম)।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।
অনুচ্ছেদ: ৪০ – পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং নিকটাত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং নিকটাত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وابنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তাঁর সাথ কাউকে শরীক করো না, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পাশাপাশি চলার সাথী, পথিক-মুসাফির এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদের প্রতিও সদয় ব্যবহার কর।” (সূরা আন্ নিসা : ৩৬)
وَقَالَ تَعَالَى : وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ .
“তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর যাঁর দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের নিকট থেকে যার যার হক দাবি কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে সতর্ক থাক।” (সূরা আন্ নিসাঃ ১)
وَقَالَ تَعَالَى : وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهِ بِهِ أَنْ يُوصَلَ الْآيَةَ .
“(বুদ্ধিমান লোক তারাই) যারা আল্লাহ যেসব সম্পর্ক বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা বহাল রাখে।” (সূরা আর-রাদ ২১)
وَقَالَ تَعَالَى : وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا.
“আমরা মানুষকে নিজেদের পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা আল-আনকাবূত: ৮)
وَقَالَ تَعَالَى: وَقَضَى رَبُّكَ أَلا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أَن وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا ، وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا
رَبَّيَانِي صَغِيرًا.
“তোমার প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের কাছে যদি তাদের কোন একজন অথবা উভয়ে বৃদ্ধাবস্থায় থাকে তবে তোমরা তাদেরকে ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না, তাদেরকে ভর্ৎসনা করবে না; বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদা সহকারে কথা বলবে, বিনয় ও নম্রতা সহকারে তাদের সামনে নত হয়ে থাকবে এবং এ দু’আ করতে থাকবে: প্রভু হে। তাদের প্রতি রহম কর, যেমন তারা বাল্যকালে আমাকে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বনী ইসরাঈল ৪.২৩, ২৪)
وَقَالَ تَعَالَى: وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“আমরা মানুষকে তাদের পিতা-মাতার অধিকার বুঝবার জন্য নিজ থেকেই তাকিদ করেছি। তার মা কষ্ট ও দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের পেটে বহন করেছে, অতঃপর তাকে একাধারে দুই বছর দুধ পান করিয়েছে [ ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে, শিশুর দুধপান করার মেয়াদ দুই বছর। এই সময়সীমার মধ্যে কোন শিশু যদি অপর কোন নারীর দুধ পান করে, তবে দুধ পানজনিত ‘হুরমাত’ কার্যকর হবে। অর্থাৎ ঐ স্ত্রীলোকটি তার দুধ মা হবে এবং তার সন্তান-সন্ততির সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম সাব্যস্ত হবে, কিন্তু এ সময়সীমার পর দুধ পান করলে ছরমাত কার্যকর হবে না। ইমাম মালিক থেকেও এরূপ একটি মত ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার মতে, দুধ পানের মেয়াদ আড়াই বছর। তিনি আরো বলেন, দুই বছর বা তার পূর্বেই যদি শিশু দুধ ছেড়ে অন্য খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায় তবে এরপর সে কোন নারীর দুধপান করলে তাতে বিশেষ বিধান বলবৎ হবে না ] । অতএব তুমি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাক এবং পিতা-মাতার প্রতিও।”
(সূরা লোকমান: ১৪)
۳۱۲- عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلْتُ اللهِ ؟ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلى الله ؟ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ؟ قَالَ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ ؟ قَالَ الْجِهَادُ
فِي سَبِيلِ اللهِ – متفق عليه.
৩১২। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন: ওয়াক্তমত নামায পড়া। আমি আবার বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: আল্লাহর পথে জিহাদ করা।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣١٣- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا يجزى ولد والدا الا أن يُجدَهُ مَمْلُوكًا فَيَشْتَرِيَهُ فَيُعْتَقَهُ – رواه مسلم .
৩১৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোন সন্তানই তার পিতার প্রতিদান আদায় করতে সক্ষম নয়। কিন্তু সে যদি তাকে (পিতাকে) দাস অবস্থায় পেয়ে ক্রয় করে আযাদ করে দেয় (তবে কিছুটা প্রতিদান আদায় হবে)।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣١٤ – وَعَنْهُ أَيْضًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَصِلُ رَحِمَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ
لِيَعْمُتُ متفق عليه.
৩১৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣١٥ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى خَلَقَ الخلقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْهُمْ قَامَتِ الرَّحِمُ فَقَالَتْ هَذَا مَقَامُ الْعَائِدِ بِكَ مِنَ الْقَطِيعَةِ قَالَ نَعَمُ أَمَا تَرْضَيْنَ أَن أَصِلَ مَنْ وَصَلَكَ وَاقْطَعَ مَنْ قَطَعَكَ؟
قَالَتْ بَلَى قَالَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اقْرَمُوا إِنْ شِئْتُمْ فَهَلْ فذلك لك ثُمَّ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى ا عَسَبْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِعُوا أَرْحَامَكُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمْهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ) . مُتَّفَقٌ
عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِي فَقَالَ اللهُ تَعَالَى مَنْ وَصَلَكَ وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَكَ قَطَعْتُهُ
১১৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকর্ম শেষ করে তাদের থেকে অবসর হলে ‘রাহেম’ (আত্মীয়তার সম্পর্ক) দাঁড়িয়ে বলল, এ স্থানটি কি ঐ ব্যক্তির জন্য যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চায়? তিনি (আল্লাহ) বলেনঃ হাঁ। তুমি কি এ কথায় সন্তুষ্ট হবে: যে তোমাকে বজায় রাখবে আমি তার প্রতি অনুগ্রহ করব এবং যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমিও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করব? রাহেম বলল, হাঁ আমি সন্তুষ্ট হব। আল্লাহ বললেন: এ স্থানটি তোমার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদেরকে) বলেনঃ যদি তোমরা (অটল থাকতে) চাও তবে এই আয়াত পাঠ করঃ “তবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেছেন এবং তাদেরকে অন্ধ ও বধির করে দিয়েছেন” (সূরা মুহাম্মাদ: ২২, ২৩) [ ইসলামে নিকটত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম ] ।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে: আল্লাহ তাআলা বলেন, যে তোমাকে বজায় রাখবে আমি তাকে অনুগ্রহ করব এবং যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমিও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করব।
٣١٦ – وَعَنْهُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي؟ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أَمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أَمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أَبُوكَ –
مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ الصُّحْبَةِ؟ قَالَ أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أَبَاكَ ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاكَ . وَالصَّحَابَةُ بِمَعْنَى الصُّحْبَةِ وَقَوْلُهُ ثُمَّ أَبَاكَ هَكَذَا هُوَ مَنْصُوبُ بِفِعْلِ مَحْذُوفَ أَى ثُمَّ بِرِّ أَبَاكَ وَفِي رِوَايَةٍ ثُمَّ
أَبُوكَ وَهُذَا وَاضِحُ .
৩১৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার ও সৎসংগ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা? সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বলেন: তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার ও সৎসঙ্গ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বলেন: তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার পিতা, অতঃপর তোমার নিকটাত্মীয়, অতঃপর তোমার নিকটাত্মীয়। অপর এক বর্ণনায় এثم بر -এর পরিবর্তে ثُمَّ أبوك আছে।
۳۱۷- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ انْفُ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكَبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ – رواه مسلم.
৩১৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি-মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি-মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি-মলিন হোক, যে তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে যেতে পারল না।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۱۸- وَعَنْهُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي وَأَحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيتُونَ إِلَى وَاحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُوْنَ عَلَى فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُهُمُ الْمَل وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ ظَهِيرٌ
عَلَيْهِمْ مَا دمْتَ عَلَى ذَلِكَ – رواه مسلم . وَتُسِفُهُمْ بِضَمِّ النَّاءِ وَكَسْرِ السِّينِ الْمُهْمَلَةِ وَتَشْدِيدِ الْفَاءِ وَالْمَلُّ بِفَتْحِ الْمِيمِ وَتَشْدِيدِ اللَّامِ وَهُوَ الرِّمَادُ الْحَارُ أَيْ كَأَنَّمَا تُطْعِمُهُمُ الرِّمَادَ الْخَارُ وَهُوَ تَشْبِيَّةٌ لِمَا يَلْحَقُهُمْ مِنَ الْإِثْمِ بِمَا
يَلْحَقُ أَكِلَ الرِّمَادِ الْخَارِ مِنَ الْآلَمِ وَلَا شَيْ عَلَى هُذَا الْمُحْسِنِ إِلَيْهِمْ لَكِنْ يَنَالُهُمْ إِثْمٌ عَظِيمٌ بِتَقْصِيرِهِمْ فِي حَقَّهِ وَإِذْ خَالِهِمُ الْأَذَى عَلَيْهِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
৩১৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এরূপ আত্মীয় রয়েছে, আমি তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করি, কিন্তু তারা সর্বদাই মূর্খতার পরিচয় দেয়। তিনি (নবী) বলেন: তুমি যেমন বলেছ সত্যিই যদি তেমনটি হয়ে থাকে, তবে তুমি যেন তাদেরকে গরম ছাই খাওয়াচ্ছ। তুমি যতক্ষণ তোমার উল্লেখিত কর্মনীতির উপর কায়েম থাকবে, আল্লাহর সাহায্য সর্বদা তোমার সাথে থাকবে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম নববী বলেন, হাদীসে গরম ছাইকে গুনাহর সাথে তুলনা করা হয়েছে। গরম ছাই ভক্ষণকারী যেমন কষ্ট ভোগ করে ঠিক তদ্রূপ গুনাহগার ব্যক্তিও দুঃখ-কষ্ট ও শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিন্তু নেককার ব্যক্তিকে এরূপ কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না, বরং তাকে কষ্ট দেয়ার জন্য এবং তার প্রাপ্য হক নষ্ট করার জন্য তার প্রতিপক্ষই কষ্ট ভোগ করবে।
۳۱۹- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أحَبُّ أَن يُبْسُطُ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلُ رَحِمَهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَمَعْنَى يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ أَنْ يُؤَخِّرَ لَهُ فِي أَجَلِهِ وَعُمْرِهِ .
৩১৯। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের রিযক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۲۰- وَعَنْهُ قَالَ كَانَ أَبُو طَلْحَةَ اكْثَرَ الْأَنْصَارِ بِالْمَدِينَةِ مَالَا مِنْ نَخْلٍ وَكَانَ احب أمواله اليه بَيْرَحَاءَ وَكَانَتْ مُسْتَقَبلَة الْمَسْجِد وَكَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّب فَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ قَامَ أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ الَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَإِنْ أَحَبُّ مَالِى إِلَى بَيْرَحَاءُ وَإِنَّهَا صَدَقَةً لِلَّهِ
تَعَالَى أَرْجُو بِرْهَا وَذُخْرَهَا عِنْدَ اللهِ فَضَعْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ حَيْثُ أَرَاكَ اللَّهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَحْ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ وَقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ واني أرى أَنْ تَجْعَلَهَا فِي الْأَقْرَبِينَ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ افْعَلُ يَا
رَسُولَ اللَّهِ فَقَسْمَهَا أبو طلحةَ فِي أَقَارِبِهِ وَبَنِي عَمِّهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَسَبَقَ بَيَانُ الْفَاظِهِ فِي بَابِ الْأَنْفَاقِ مِمَّا يُحِبُّ .
৩২০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খেজুর বাগান সম্পদে সমৃদ্ধ আবু তালহা (রা) মদীনার আনসারদের মধ্যে সর্বাধিক ধনবান ব্যক্তি ছিলেন। তার সমস্ত মালের মধ্যে “বাইরাহা” নামক বাগানটি তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিল। বাগানটি মসজিদে নববীর সামনেই ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ বাগানে প্রবেশ করে বাগানের মধ্যস্থিত মিঠা পানি পান করতেন। যখন এই আয়াত নাযিল হলঃ “তোমাদের প্রিয় ও পছন্দনীয় জিনিস (আল্লাহর পথে) খরচ না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভকরতে পারবে না” (সূরা আলে ইমরান: ৯২), তখন আবু তালহা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর নাযিল করেছেন: “তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না”। ‘বাইরাহা’ নামক বাগানটি আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ। আমি এটা আল্লাহর জন্য সাদাকা করে দিলাম। এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও প্রতিদানের আশা রাখি। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র মর্জি মাফিক আপনি এটা কাজে লাগান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আচ্ছা, আচ্ছা এটা তো লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ আমি শুনেছি। এটা তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে দেয়াটাই আমি সংগত মনে করি। আবু তালহা (রা) বলেন, আমি তাই করব, হে আল্লাহ্র রাসূল! অতঃপর আবু তালহা (রা) বাগানটি তার নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۲۱- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبَا بِعَكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ ابْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى قَالَ فَهَلْ لَكَ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَيٍّ؟ قَالَ نَعَمْ بَلْ
كِلاهُمَا قَالَ فَتَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللهِ تَعَالَى ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَارْجِعُ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنُ صُحْبَتَهُمَا – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَهُذَا لَفْظُ مُسْلِم وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا جَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَأْذَنَهُ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ أَحَى وَالِدَاكَ ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَفِيْهِمَا
فَجَاهِدٌ .
৩২১। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে বলল, আমি আপনার কাছে জিহাদ ও হিজরাত করার বাই’আত করতে চাই এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রতিদানের আশা রাখি। তিনি বলেন : তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছে? সে বলল, হাঁ, বরং উভয়ই (জীবিত আছেন)। তিনি বলেন: এরপরও তুমি আল্লাহ্র কাছে প্রতিদান আশা কর? সে বলল, হাঁ। তিনি বলেন: পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সাথে সম্ভাবে বসবাস কর।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
তাঁদের অপর বর্ণনায় আছে: এক ব্যক্তি এসে তাঁর (নবী সা.) নিকট জিহাদে যোগদানের অনুমতি চায়। তিনি বলেন: তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছে? সে বলল, হাঁ। তিনি বলেন: তাহলে তাদের (সন্তুষ্টির) ব্যাপারে চেষ্টা-সাধনা কর।
۳۲۲- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِي وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا . رَوَاهُ الْبُخَارِي وَقَطَعَتْ بِفَتْحِ الْقَافِ وَالطَّاءِ وَرَحِمُهُ مَرْفُوعُ .
৩২২। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সদ্ব্যবহার প্রাপ্তির বিনিময়ে সদ্ব্যবহারকারী আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী নয়। বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর সে পুনরায় তা স্থাপন করে।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٢٣- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَتْ قَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّحِمُ مُعَلَّقَةُ بِالْعَرْشِ تَقُولُ مَنْ وَصَلَنِي وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَنِي قَطْعَهُ اللَّهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
৩২৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘রাহেম’ (আত্মীয়তার সম্পর্ক) আরশের সাথে ঝুলানো রয়েছে। সে (দু’আর ছলে) বলে, যে আমাকে জুড়ে দেবে আল্লাহ তাকে জুড়ে দেবেন এবং যে আমাকে ছিন্ন করবে আল্লাহ তাকে ছিন্ন করবেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٢٤- عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا أَعْتَقَتْ وَلِيدَةٌ وَلَمْ تَسْتَأْذِنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُهَا الَّذِي يَدُورُ عَلَيْهَا فِيهِ قَالَتْ أَشَعَرْتَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أَعْتَقْتُ وَلِيْدَنِي؟ قَالَ أَوْ
فَعَلْت ؟ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَعْطَيْتِهَا أَخْوَالَكَ كَانَ أعظم الأجرك – متفق عليه .
৩২৪। উম্মুল মুমিনীন মাইমুনা বিনতুল হারিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি ক্রীতদাসী আযাদ করলেন; কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি নিলেন না। তিনি পালাক্রমে যেদিন তার (মাইমূনার) ঘরে গেলেন, সেদিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। আপনি কি জানেন, আমি আমার বাঁদীটা আযাদ করে দিয়েছি? তিনি বলেন: তুমি কি তাকে আযাদ করে দিয়েছ? তিনি বলেন, হাঁ। নবী (সা) বলেন: যদি তুমি এ বাঁদীটা তোমার মামাদের দিতে তবে আরো অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٢٥ – عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرِ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَتْ قَدِمَتْ عَلَى أُمِّي وَهِيَ مُشْرِكَةً فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ قَدِمَتْ عَلَى أُمِّي وَهِيَ
رَاغِبَةً أَفَاصِلُ أُمِّي ؟ قَالَ نَعَمْ صلى أمك – متفق عليه. وَقَوْلُهَا رَاغِبَةً أَنْ طَامِعَةً فِيْمَا عِنْدِي تَسْأَلْنِي شَيْئًا قَبْلَ كَانَتْ أُمِّهَا مِنَ النَّسَبِ وَقِيلَ مِنَ الرَّضَاعَةِ وَالصَّحِيحُ الْأَوَّلُ .
৩২৫। আসমা বিনতে আবু বাক্স (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মুশরিকদের সাথে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (হুদাইবিয়ার) সন্ধি স্থাপনের পর আমার মা আমার কাছে (মক্কা থেকে মদীনায়) আসলেন। তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য এসেছেন; আমি কি আমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বলেন: হাঁ, তার সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার কর।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٢٦ – عَنْ زَيْنَبَ الثَّقَفِيَّةِ امْرَأَةِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَعَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَصَدِّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ وَلَوْ مِنْ حُلِيكُنَّ قَالَتْ فَرَجَعْتُ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ فَقُلْتُ لَهُ إِنَّكَ رَجُلٌ
خَفِيفٌ ذَاتِ الْيَدِ وَإِنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَمَرَنَا بِالصَّدَقَةِ فَأْتِهِ فَاسْأَلْهُ فَإِنْ كَانَ ذلِكَ يُجْزِئُ عَنِّى وَإِلا صَدَقْتُهَا إِلَى غَيْرِكُمْ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهُ بَلِ انْتِيْهِ انْتِ فَانْطَلَقْتُ فَإِذَا امْرَأَةً مِنَ الْأَنْصَارِ بِبَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجَتِي حَاجَتُهَا وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ الْقِيَتْ عَلَيْهِ الْمَهَابَةُ فَخَرَجَ عَلَيْنَا بِلال فَقُلْنَا لَهُ اثْتِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبِرُهُ أَنْ امْرَأَتَيْنِ بِالْبَابِ تَسْأَلَائِكَ اتَّجْزِئُ الصَّدَقَةُ عَنْهُمَا
عَلَى أَزْوَاجِهِمَا وَعَلَى أَيْتَامٍ فِي حُجُورِهِمَا ؟ وَلَا تُخْبِرُهُ مَنْ نَحْنُ فَدَخَلَ بِلال عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ هُمَا ؟ قَالَ إِمْرَأَةٌ مِّنَ
الْأَنْصَارِ وَزَيْنَبُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الرِّيَانِبِ هِيَ؟ قَالَ امْرَأَةُ عَبْدِ اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَهُمَا أَجْرَانِ أَجْرُ الْقَرَابَةِ وأَجْرُ الصَّدَقَة . مُتَّفَقٌ عَلَيْه .
৩২৬। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-র স্ত্রী ও সাকাফী গোত্রের কন্যা যায়নাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মহিলা সম্প্রদায়! তোমরা সাদাকা কর, এমনকি গহনাপত্র দিয়ে হলেও। যায়নাব (রা) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের কাছে ফিরে এসে তাকে বললাম, আপনি গরীব এবং সামান্য ধন-সম্পদের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের স্ত্রীলোকদেরকে সাদাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন, আমার সাদাকা আপনাকে দিলে যথার্থ হবে কি না, অন্যথায় অন্য লোকদেরকে দেব। আবদুল্লাহ (রা) বলেন: বরং তুমি গিয়েই তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করে এসো। তাই আমি বের হয়ে পড়লাম। গিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরজায় আরো একজন আনসার মহিলা অপেক্ষা করছে এবং তার ও আমার একই প্রসংগ। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এক মহান ও অলৌকিক অবস্থা বিরাজ করছিল।
বিলাল (রা) আমাদের কাছে বেরিয়ে আসলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গিয়ে খবর দিন, দু’জন মহিলা দরজায় অপেক্ষা করছে। তারা আপনার কাছে জানতে চাচ্ছে, “তারা যদি তাদের স্বামীদের ও তাদের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত ইয়াতীমদের দান করে তবে তা কি তাদের জন্য যথার্থ হবে”? কিন্তু আমরা কে, এ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করবেন না। অতএব বিলাল (রা) ভেতরে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে প্রবেশ করে তাঁকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তারা দু’জন কে? তিনি বললেন, এক আনসার মহিলা এবং যায়নাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ কোন্ যায়নাব? বিলাল (রা) বললেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-র স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের উভয়ের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছেঃ (এক), নিকটাত্মীয়তার সাওয়াব (দুই), দানের সাওয়াব।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۲۷- عن أبي سُفْيَانَ صَحْرِ بنِ حَرب رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ فِي قِصَّةِ هِرَقْلَ أَنْ هِرَقْلَ قَالَ لِأَبِي سُفْيَانَ فَمَاذَا يَأْمُرُكُمْ بِهِ ۚ يَعْنِي النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُلْتُ يَقُولُ اعْبُدُوا اللهَ وَحْدَهُ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ
شَيْئًا وَاتْرُكُوا مَا يَقُولُ أَبَاؤُكُمْ وَيَأْمُرُنَا بِالصَّلاةِ وَالصِّدْقِ وَالْعَفَافِ وَالصِّلة – متفق عليه .
৩২৭। আবু সুফিয়ান (রা) থেকে বর্ণিত। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করল, তিনি (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে কি হুকুম করেন? আবু সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, তিনি (নবী) বলেনঃ তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত কর; তাঁর সাথে অন্য কিছু শরীক করো না এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা বলেছে তা পরিত্যাগ কর। তিনি আমাদের নামায, সত্যবাদিতা, পবিত্র জীবন যাপন এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা ইত্যাদির নির্দেশ দেন। (বুখারী, মুসলিম)
۳۲۸- عَنْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أَرْضًا يُذْكَرُ فِيهَا الْقِبْرَاطُ وَفِي رِوَايَةٍ سَتَفْتَحُونَ مِصْرَ وَهِيَ أَرْضِ يُسَمَّى فِيهَا الْقِبْرَاطُ فَاسْتَوْصُوا بِأَهْلِهَا خَيْرًا فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً
وَرَحِمًا – وَفِي رِوَايَةٍ فَإِذَا فَتَحْتُمُوهَا فَأَحْسِنُوا إِلَى أَهْلِهَا فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا أَوْ قَالَ ذِمَّةً وصهرا . رواه مسلم . قَالَ الْعُلَمَاءُ الرَّحِمُ التِي لَهُمْ كَوْنُ هَاجَرَ أَمْ إِسْمَاعِيلَ منهم وَالصَّهْرُ كَوْنُ مَارِيَةَ أَمْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ رَسُوْلِ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُمْ.
৩২৮। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদেরকে) বলেন: অচিরেই তোমরা এমন এক ভূখণ্ড জয় করবে, যেখানে কীরাতের আলোচনা হয়ে থাকে [ কীরাত একটা পরিভাষা, সাওয়াবের একটা বিশেষ পরিমাণ বুঝানোর জন্য শব্দটি ব্যবহৃত হয় ] ।
অপর এক বর্ণনায় আছে: অচিরেই তোমরা মিসর জয় করবে, যেখানে কীরাতের নাম করা হয়। অতএব তোমরা সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা তাদের জন্য যিম্মাদারি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে: যখন এটা তোমরা জয় করবে তখন সেখানকার অধিবাসীদের প্রতি দয়া পরবশ হবে। কেননা তাদের ব্যাপারে যিম্মাদারি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। অথবা তিনি ذمة ورحماً এর স্থলে ذمة وصهراً শব্দ বলেছেন। অর্থাৎ যিম্মাদারি ও শ্বশুর পক্ষীয় আত্মীয়তা রয়েছে।
٣٢٩- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ وَانْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبَيْنَ دَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُرَيْشًا فَاجْتَمَعُوا فَعَمْ وَخَصَّ وَقَالَ يَا بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ يَا بَنِي كَعْبِ بْنِ لُغَيِّ انْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ
النَّارِ يَا بَنِي مُرَّةَ بْنِ كَعْبٍ انْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافِ انْقُذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِي هَاشِمِ انْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ انْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا فَاطِمَةُ انْقِذِى نَفْسَكَ مِنَ النَّارِ فَإِنِّي لَا
أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَابُلُهَا بِلالِهَا – رواه مسلم. قَوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِلالِهَا هُوَ بِفَتْحِ الْبَاءِ الثَّانِيَةِ وَكَسْرِهَا وَالْبَلالُ الْمَاءُ وَمَعْنَى الحديث سَاصِلُهَا شَبَّهَ قَطِيعَتَهَا بِالْحَرَارَةِ تُطْفَأُ بِالْمَاءِ وَهُذِهِ
تُبَرِّدُ بِالصَّلَةِ .
৩২৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল: “তোমার নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে ভয় দেখাও” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের ডাকলেন। ইতর-ভদ্র-উচ্চ-নীচ সাধারণ-বিশেষ সবাই একত্রিত হল। তিনি বলেন: হে আবদে শামসের বংশধর, হে কা’ব ইবনে লুয়াইর বংশধর। নিজেদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও। হে আবদে মানাফের বংশধর। নিজেদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও। হে হাশেম বংশীয়রা। নিজেদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর। নিজেদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও। হে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ (সা) নিজেকে আগুন থেকে বাঁচাও। আল্লাহর পাকড়াও থেকে তোমাদের রক্ষা করার মালিক আমি নই। শুধু এটুকুই যে, তোমাদের সাথে (আমার) আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে, আমি (দুনিয়াতে) তা সজীব (বজায়) রাখার চেষ্টা করব।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٣٠- عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيِّ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِهَارًا غَيْرَ سِرَ يَقُولُ إِنْ أَلَ بَنِي فُلانٍ لَيْسُوا بِأَوْلِيَائِي إِنَّمَا وَلِيَّى اللهُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنْ لَهُمْ رَحِمٌ أَبْلُهَا بِبِلَالِهَا .
مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ واللفظ لِلْبُخَارِي.
৩৩০। আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গোপনে নয়, প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি: অমুকের বংশধররা আমার বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক নয়। আমার বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক হলেন আল্লাহ এবং সৎকর্মশীল মুমিনগণ। তবে তাদের সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে, আমি তা সজীব রাখার চেষ্টা করব।
হাদীসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, তবে মূল পাঠ বুখারীর।
۳۳۱ – عَنْ أَبِي أَيُّوبَ خَالِدِ بْنِ زَيْدِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلْنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعْبُدُ اللهَ وَلَا تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِي
الزَّكَاةَ وَتَصِلُ الرَّحِمَ – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৩১। আবু আইউব খালিদ ইবনে যায়িদ আল-আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহর ইবাদাত কর, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করো না, নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٣٢ – عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا أَقْطَرَ أَحَدُكُمْ فَلْيُفْطِرُ عَلَى تَمْرٍ فَإِنَّهُ بَرَكَةً فَإِنْ لَمْ يَجِدُ تَمْرًا فَالْمَاءُ فَإِنَّهُ طَهُورَ وَقَالَ الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ
ثِنْتَانِ صَدَقَةً وصلة – رَوَاهُ التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .
৩৩২। সালমান ইবনে আমের (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। কেননা এতে বরকত আছে। যদি সে খেজুর না পায়, তবে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা এটা পবিত্র বা পবিত্রকারী। তিনি আরো বলেন: মিসকীনকে দান করা কেবল দান হিসাবেই গণ্য, কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের বেলায় তা একই সঙ্গে দান এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা দুটোই হয়।
হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা হাসান হাদীস।
٣٣٣- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَتْ تَحْتِي امْرَأَةً وَكُنْتُ أَحِبُّهَا وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُهَا فَقَالَ لِي طَلِقْهَا فَأَبَيْتُ فَأَتَى عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ النَّبِيُّ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
طَلِقُهَا . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
৩৩৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার এক স্ত্রী ছিল। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু উমার (রা) তাকে পছন্দ করতেন না। তিনি আমাকে বলেন, তাকে তালাক দাও। আমি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। উমার (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে এটা জানালেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বলেন: তাকে তালাক দাও।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
٣٣٤- عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا آتَاهُ فَقَالَ إِنَّ لِي امْرَأَةً وَإِنْ أُمِّي تَأْمُرُنِي بِطَلَاقِهَا ؟ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الْوَالِدُ أوسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَإِنْ شِئْتَ فَاضِعُ ذَلِكَ الْبَابَ أَوِ احْفَظْهُ . رَوَاهُ
التَّرْمِذِيُّ وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
৩৩৪। আবুদ্ দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, আমার একজন স্ত্রী আছে। আমার মা তাকে তালাক দেয়ার জন্য আমাকে হুকুম করেছেন। তিনি (আবুদ্ দারদা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ পিতা-মাতা জান্নাতের দরজাগুলোর মধ্যে একটি মজবুত দরজা। এখন তুমি ইচ্ছা করলে দরজাটি ভেংগেও দিতে পার অথবা হিফাযাতও করতে পার।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
٣٣٥- عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْحَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الْأُمِّ . رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
৩৩৫। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: খালা মাতৃস্থানীয়।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা সহীহ হাদীস।
এ অনুচ্ছেদের সাথে সম্পৃক্ত বহু সংখ্যক নির্ভরযোগ্য হাদীস সহীহ গ্রন্থে রয়েছে। অনুচ্ছেদটি দীর্ঘায়িত হওয়ার ভয়ে সেগুলো উদ্ধৃত করা হল না। আমর ইবনে আবাসা (রা) কর্তৃক বর্ণিত একটি সুদীর্ঘ হাদীসও আছে। তার অংশবিশেষ এখানে উল্লেখ করা হল:
دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ يَعْنِي فِي أَوَّلِ النُّبُوَّةِ فَقُلْتُ لَهُ مَا انْتَ؟ قَالَ نَبِيُّ فَقُلْتُ وَمَا نَبِيُّ ؟ قَالَ أَرْسَلَنِي اللَّهُ فَقُلْتُ بِأَيِّ شَيْءٍ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ ارسلني بصِلَةِ الْأَرْحَامِ وَكَسْرِ الْأَوْثَانِ وَأَنْ يُوَحْدَ اللَّهَ لَا
يُشْرَكَ بِهِ شَيْ وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
“আমর ইবনে আবাসা (রা) বলেন, নবুয়াতের প্রথম দিকে আমি মক্কায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করলাম। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বলেন: নবী। আমি বললাম, নবী কাকে বলে? তিনি বলেন: আল্লাহ তা’আলা আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম, কি জিনিসসহ তিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন: আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, পৌত্তলিকতার অবসান, আল্লাহর একত্বের প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করার নির্দেশসহ পাঠিয়েছেন।
অনুচ্ছেদ: ৪১ – পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া, তাদের অবাধ্য হওয়া এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম
পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া, তাদের অবাধ্য হওয়া এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِعُوا أَرْحَامَكُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمْهُم وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তোমরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে হয়ত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এরা এমন লোক, যাদের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং এদেরকে অন্ধ ও বধির করে দিয়েছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ২২-২৩)
وَقَالَ تَعَالَى: وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ الله من بَعدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ .
“যেসব লোক আল্লাহর প্রতিশ্রুতিকে শক্ত করে বেঁধে নেয়ার পর তা ভংগ করে, যারা এমন সব সম্পর্ক ছিন্ন করে যা অটুট রাখার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, আর যারা যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে তাদের প্রতি অভিশাপ এবং তাদের জন্য আখিরাতে থাকবে অত্যন্ত খারাপ জায়গা।” (সূরা আর-রাদ: ২৫)
وَقَالَ تَعَالَى: وَقَضَى رَبُّكَ أَلا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا أَمَّا يَبْلُغَنَّ عندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أَنَّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي
صَغِيرًا.
“তোমাদের প্রতিপালক ফায়সালা দিয়েছেন, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করবে এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তোমাদের কাছে যদি তাদের কোন একজন কিংবা উভয়ে বৃদ্ধাবস্থায় থাকে তবে তুমি তাদেরকে “উহ” পর্যন্ত বলবে না, তাদেরকে ভর্ৎসনা করবে না এবং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদা সহকারে কথা বলবে। তুমি বিনয় ও নম্রতা সহকারে তাদের সামনে নত হয়ে থাকবে এবং বলবেঃ “হে আল্লাহ! তাদের প্রতি রহম কর, যেমন তারা ছোটবেলা আমাকে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ২৩, ২৪)
٣٣٦- عَنْ أَبِي بَكْرَةَ نُفَيْعِ بْنِ الْحَارِثِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ ثَلَاثًا قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الإشراك باللهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَكَانَ مُتَكنَّا فَجَلَسَ فَقَالَ أَلَا وَقَوْلُ
الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ فَمَا زَالَ يُكَبِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৩৬। আবু বাক্কাহ নুফাই ইবনুল হারিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি কি তোমাদেরকে সর্বাপেক্ষা মারাত্মক গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? কথাটা তিনি তিনবার বলেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলে দিন। তিনি বলেন: আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া। তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন এবং সোজা হয়ে বসে আবার বলেন: সাবধান! মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। তিনি কথাগুলো বারবার বলছিলেন, এমনকি আমরা (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আহা। তিনি যদি থামতেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۳۷- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْكَبَائِرُ الْإِشْرَاكَ بِاللهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَالْيَمِينُ الْغَمُوسُ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ الْيَمِينُ الْغُمُوسُ الَّتِي يَحْلِفُهَا كَاذِبًا عَامِداً
سُمِّيَتْ غَمُوسًا لِأَنَّهَا تَعْمِسُ الْخَالِفَ فِي الْإِثْمِ .
৩৩৭। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কবীরা গুনাহসমূহ হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কোন মানুষকে হত্যা করা এবং মিথ্যা শপথ করা।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۳۸ – وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُ آبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُ أمَّهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ
إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ يَسُبُّ أبا الرَّجُلِ فَيَسُبُ آبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّهُ .
৩৩৮। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কবীরা গুনাহগুলোর একটি হল, পিতা-মাতাকে গালি দেয়া। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন লোক কি তার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে? তিনি বলেনঃ হাঁ। একজন অন্যজনের পিতাকে গালি দেয়, আর সে প্রতিউত্তরে তার পিতাকে গালি দেয়। একজন অন্যজনের মাকে গালি দেয় আর (জবাবে) দ্বিতীয়জন প্রথমজনের মাকে গালি দেয়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: মারাত্মক কবীরা গুনাহের মধ্যে একটি হল: কোন ব্যক্তির তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়া। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল। কোন ব্যক্তি কি তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিতে পারে? তিনি বলেন: এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয়, আর সে আবার তার পিতাকে গালি দেয়। এ ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, প্রতিউত্তরে ঐ ব্যক্তি এ ব্যক্তির মাকে গালি দেয়।
٣٣٩ – عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِع قَالَ سُفْيَانُ فِي رِوَايَتِهِ يَعْنِي قَاطِعُ رَحِمِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৩৯। আবু মুহাম্মাদ জুবাইর ইবনে মুতইম (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ছেদনকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সুফিয়ান (র) তার বর্ণনায় বলেন, অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদনকারী।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٤٠- عَنْ أَبِي عِيسَى الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوْقَ الْأُمَّهَاتِ وَمَنْعًا وَهَاتِ وَوَادَ الْبَنَاتِ وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
قَوْلُهُ مَنْعًا لهُ وَوَادَ الْبَنَاتِ مَعْنَاهُ دَفْتُهُنَّ فِي مَعْنَاهُ مَنْعُ مَا وَجَبَ عَلَيْهِ وَهَاتِ طَلَبُ مَا لَيْسَ لَهُ الحَيَاةِ وَقِيلَ وَقَالَ مَعْنَاهُ الْحَدِيثُ بِكُلِّ مَا يَسْمَعُهُ فَيَقُولُ قَبْلَ كَذَا وَقَالَ فُلَانٌ كذا مما لا يَعْلَمُ صِحْتَهُ وَلَا يَظُنُّهَا وَكَفَى بِالْمَرْءِ
كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ وَإِضَاعَةُ الْمَالِ تَبْذِيرُهُ وَصَرْفُهُ فِي غَيْرِ الْوُجُوهِ الْمَأْذُونِ فِيْهَا مِنْ مَقَاصِدِ الْآخِرَةِ وَالدُّنْيَا وَتَرْكُ حفظه مَعَ امْكَانِ الحفظ وكَثَرَةُ السُّؤالِ الْأَلْحَاحُ فِيْمَا لَا حاجة اليه.
৩৪০। মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’আলা পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া, কৃপণতা করা, অবৈধভাবে অন্যের মাল দাবি করা এবং কন্যা সন্তানদের জীবন্ত প্রোথিত করা তোমাদের প্রতি হারাম করেছেন। নিরর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, অতিরিক্ত যাঞ্চা করা এবং সম্পদ বিনষ্ট করা তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম নববী (র) বলেন: منعاً যে জিনিস কারো উপর ওয়াজিব তা প্রতিরোধ করে রাখা। وهات যে জিনিসের মালিক সে নয় তা দাবি করা। واد البنات কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া। قبل وقال কোন কিছু শুনে তার যথার্থতা যাচাই না করেই বলে বেড়ানো যে, অমুক ব্যক্তি এটা বলেছে বা করেছে, অথচ এ সম্পর্কে তার কোন সঠিক জ্ঞান নেই। কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়। اضاعة المال শরী’আতের পরিপন্থী কাজে অর্থ-সম্পদ অপচয় করা যার মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ নিহিত নেই। ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের শক্তি ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার হিফাজাত না করা। كثرة السؤال যে জিনিস না হলেও চলে তা ইনিয়ে বিনিয়ে চাওয়া।
অনুচ্ছেদ: ৪২ – পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও অন্য যাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মুস্তাহাব তাদের সাথে সদাচারের ফযীলাত
পিতা-মাতার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও অন্য যাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মুস্তাহাব তাদের সাথে সদাচারের ফযীলাত।
٣٤١ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ أَبَرُ الْبِرِّ أَنْ يُصِلَ الرَّجُلُ وُدَ أَبِيْهِ.
৩৪১। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সৎ কাজগুলোর মধ্যে বড় সৎকাজ হল: কোন ব্যক্তির পিতার বন্ধুদের সাথে সদাচরণ করা।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٤٢ – وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنْ رَجُلاً مِنَ الْأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارِ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةٌ كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ ابْنُ دِينَارٍ
فَقُلْنَا لَهُ أصْلَحَكَ اللهُ إِنَّهُمُ الْأَعْرَابُ وَهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ إِنْ أَبَا هُذَا كَانَ وُدًا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ أَبَرُ الْبِرِّ صِلَةُ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدَ
أَبِيْهِ . وَفِي رِوَايَةٍ عَنِ ابْنِ دِينَارٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوْحُ عَلَيْهِ إِذا مَنْ رُكُوبَ الرَّاحِلَةِ وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأْسَهُ فَبَيْنَا هُوَ يَوْمًا عَلَى ذلِكَ الْحِمَارِ إِذْ مَرَّ بِهِ أَعْرَابِي فَقَالَ السَّتَ بْنَ فُلَانِ بْنِ
فُلانٍ ۚ قَالَ بَلَى فَأَعْطَاهُ الْحِمَارَ فَقَالَ أَرْكَبُ هَذَا وَأَعْطَاهُ وَالْعِمَامَةَ وَقَالَ اشْدُدْ بِهَا رَأْسَكَ فَقَالَ لَهُ بَعْضُ اصْحَابه غَفَرَ اللهُ لَكَ أَعْطَيْتَ هذا الأَعْرَابِي حِمَارًا كُنْتَ تَرَوْحُ عَلَيْهِ وَعِمَامَةً كُنتَ تَشَدُّ بِهَا رَأْسَكَ فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ مِنْ أَبَرِّ الْبَرِّ أَنْ يُصِلَ الرَّجُلُ أَهْلَ وُدَ أَبِيْهِ بَعْدَ أَنْ يُوَلِى وَإِنْ آبَاهُ كَانَ صَدِيقًا لِعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ – رَوَى هَذِهِ الرِّوَايَاتِ كُلَّهَا مُسْلِمٌ.
৩৪২। আবদুল্লাহ ইবনে দীনার (র) থেকে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-র সূত্রে বর্ণিত। জনৈক বেদুঈন তার সাথে মক্কার পথে মিলিত হল। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) তাকে সালাম করলেন এবং যে গাধার পিঠে তিনি সওয়ার ছিলেন তাকেও তাতে তুলে নিলেন। তিনি নিজের মাথার পাগড়িও তাকে দিলেন। ইবনে দীনার বলেন, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনাকে কল্যাণ দান করুন, বেদুঈনরা তো অল্প কিছু পেলেই সন্তুষ্ট হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বলেন, এই ব্যক্তির পিতা উমার (র) এর বন্ধু ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: সৎ কাজগুলোর মধ্যে বড় সৎ কাজ হল, কোন ব্যক্তির পিতার বন্ধুদের সাথে তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
ইবনে দীনার (র) থেকে ইবনে উমার (রা) কর্তৃক অপর এক সূত্রে বর্ণিত। তার একটি গাধা ছিল। তিনি যখন মক্কায় যেতেন এবং উটে আরোহণ করতে বিরক্তি বোধ করতেন তখন বিশ্রামের জন্য এ গাধার পিঠে সওয়ার হতেন এবং নিজের পাগড়িটা মাথায় বেঁধে নিতেন। চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী তিনি একদিন এ গাধার পিঠে সওয়ার ছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন এসে ইবনে উমারকে বলে, তুমি কি অমুকের ছেলে অমুক না? তিনি বলেন, হাঁ। ইবনে উমার (রা) তাকে গাধাটা দিয়ে দিলেন এবং বলেন, এর পিঠে সওয়ার হও। তিনি তার পাগড়িটাও তাকে দিয়ে বলেন, এটা তোমার মাথায় বাঁধো। তার অপর সংগীরা তাকে বলেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। গাধাটা এ বেদুঈনকে দিয়ে দিলেন, অথচ এটার উপর আপনি সওয়ার হতেন এবং পাগড়িটাও তাকে দিলেন, অথচ এটা আপনি মাথায় বাঁধতেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ সৎ কাজগুলোর মধ্যে বড় সৎ কাজ হল: পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুর পরিবারবর্গের সাথে সদ্ব্যবহার করা। এ ব্যক্তির পিতা উমার (রা) এর বন্ধু ছিল।
সম্পূর্ণ হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
٣٤٣ – عَنْ أَبِي أُسَيْدِ بِضَمِّ الْهَمْزَةِ وَفَتْحِ السِّينِ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ السَّاعِدِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ
أَبَوَى شَيْ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا ؟ فَقَالَ نَعَمُ الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا وَالْاسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا وَصلَةُ الرَّحِمِ التِي لا تُوصَلُ إِلا بِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ.
৩৪৩। আবু উসাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় বানু সালামা নামক গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব আমার উপর রয়েছে কি, তা কিভাবে সদ্ব্যবহার করব? তিনি বলেন, হাঁ, তুমি তাদের জন্য দু’আ করবে, তাদের গুনাহর ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করবে একারণে যে, এরা তাদেরই আত্মীয় এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।
ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٤٤- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا غِرْتُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا غَرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا وَمَا رَأَيْتُهَا قَطُّ وَلَكِنْ كَانَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا وَرَبِّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ ثُمَّ يُقَطِعُهَا أَعْضَاءٌ ثُمَّ يَبْعَثُهَا
فِي صَدَائِقِ خَدِيجَةَ فَرَبِّمَا قُلْتُ لَهُ كَانْ لَّمْ يَكُنْ فِي الدُّنْيَا امْرَأَةً إِلَّا خَدِيجَةُ فَيَقُولُ إِنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ وَكَانَ لِي مِنْهَا وَلَدٌ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيُهْدِي فِي خَلَائِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ وَفِي رِوَايَةٍ كَانَ إِذَا
ذَبَحَ الشَّاةَ يَقُولُ ارْسِلُوا بِهَا إِلَى أصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَتْ اسْتَأْذَنَتْ هَالَةٌ بِنْتُ خويلد أُخْتُ خَديجَةً عَلَى رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَرَفَ اسْتَنْدَانَ خَدِيجَةَ فَارْتَاحَ لِذَلِكَ فَقَالَ اللَّهُمَّ هَالَةُ بِنْتُ خَوَيْلِدٍ قَوْلُهَا
فَارْتَاحَ هُوَ بِالْحَاءِ وَفِي الْجَمْعِ بَيْنَ الصَّحِيحَيْنِ لِلْحُمَيْدِي فَارْتَاعَ بِالْعَيْنِ وَمَعْنَاهُ اهْتَمْ بِهِ .
৩৪৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি আমার যে পরিমাণ ঈর্ষা হত অন্য কারো প্রতি তদ্রূপ হত না। অথচ আমি তাকে কখনও দেখিনি। কিন্তু তিনি (নবী) তাঁর কথা প্রায়ই বলতেন। কখনও তিনি বকরী যবেহ করতেন, এর গোস্ত টুকরা টুকরা করতেন, অতঃপর তা খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠাতেন। আমি মাঝেমধ্যে তাঁকে বলতাম, খুব সম্ভব খাদীজা ছাড়া দুনিয়াতে আর কোন নারী ছিল না। তিনি বলতেন: সে এরূপ ছিল এবং এরূপ ছিল (অর্থাৎ বিভিন্নভাবে তার প্রশংসা করতেন), তার গর্ভে আমার কয়েকটি সন্তান জন্মেছিল।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: যখনই তিনি বকরী যবেহ করতেন, তার গোশত খাদীজার বান্ধবীদের কাছে যথাসাধ্য পাঠাতে চেষ্টা করতেন। অপর বর্ণনায় আছে: যখন তিনি বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেনঃ খাদীজার বান্ধবীদের বাড়িতে গোশত পাঠাও। অন্য এক বর্ণনায় আছে: আয়িশা (রা) বলেন, বুয়াইলিদের কন্যা এবং খাদীজার বোন হালাহ (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন। তখন খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা তাঁর মনে পড়ল। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! হালাহ বিনতে খুয়াইলিদ (এসেছে)।
٣٤٥ – عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي سَفَرٍ فَكَانَ يَخْدُمُنِي فَقُلْتُ لَهُ لَا تَفْعَلُ فَقَالَ إِنِّي قَدْ رايت الْأَنْصَارَ تَصْنَعُ بِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا أَلَيْتُ
عَلَى نَفْسِي أن لا أَصْحَب أَحَدًا مِنْهُمْ إِلَّا خَدَمْتُهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
৩৪৫। আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-র সাথে সফরে বের হলাম। তিনি আমার সেবাযত্ন করতে লাগলেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি এরূপ করবেন না। তিনি (জারীর) বলেন, আমি আনসারদের দেখতাম যে, তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক কিছু করে দিতেন। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, আমিও তাঁদের মধ্যে যারই সাথে থাকি তাঁর সেবাযত্ন করব।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৪৩ – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজনের মর্যাদা ও তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজনের মর্যাদা ও তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا.
মহান আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ এটাই চান যে, তিনি তোমাদের নবীর ঘরের লোকদের থেকে অপরিচ্ছন্নতা দূর করবেন এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করবেন।” (সূরা আল-আহযাব: ৩৩)
وَقَالَ تَعَالَى : وَمَنْ يُعَظِمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ .
“যে লোক আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, কারণ এটা অন্তরের তাকওয়ার ব্যাপার।” (সূরা আল-হজ্জঃ ৩২)
٣٤٦ – عَنْ يَزِيدِ بْنِ حِبَّانَ قَالَ انْطَلَقْتُ أَنَا وَحُصَيْنُ بْنُ سَبْرَةً وَعَمْرُو بْنُ مُسْلِمٍ إلى زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ فَلَمَّا جَلَسْنَا إِلَيْهِ قَالَ لَهُ حُصَيْنٌ لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْرًا كَثِيرًا رَأَيْتَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَسَمِعْتَ حَدِيثَهُ وَغَزَوْتَ مَعَهُ وَصَلَّيْتَ خَلْفَهُ لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْرًا كَثِيرًا حَدِثْنَا يَا زَيْدُ مَا سَمِعْتَ مِنْ رسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَا ابْنَ أَخِي وَاللَّهِ لَقَدْ كَبِرَتْ سِنِي وَقَدَمَ عَهْدِي وَنَسِيتُ بَعْضَ الَّذِي كُنْتُ أَعِى
مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا حَدَّثْتُكُمْ فَاقْبَلُوا وَمَا لا فَلَا تُكَلِّفُونِيهِ ثُمَّ قَالَ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِيْنَا خَطِيبًا بِمَاءٍ يُدْعَى خُمَّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَاثْنَى عَلَيْهِ وَوَعَظَ وَذَكِّرَ ثُمَّ قَالَ
أَمَّا بَعْدُ أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأَجِيْبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَولُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيْهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بكتاب الله وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَتْ عَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغْبَ فِيْهِ ثُمَّ قَالَ واهْلُ بَيْتِي
أُذكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذكِّرُكُمُ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي فَقَالَ لَهُ حُصَيْنُ وَمَنْ أَهْلُ بَيْتِهِ يَا زَيْدُ الَيْسَ نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ؟ قَالَ نِسَاؤُهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ وَلَكِنْ أَهْلُ بَيْتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعْدَهُ قَالَ وَمَنْ هُمْ؟ قَالَ هُمْ أَلْ عَلِيٌّ
وَأَلْ عقيل وَال جَعْفَرٍ وَأَنَّ عَبَّاس قَالَ كُلُّ هؤلاء حُرِمَ الصَّدَقَةَ قَالَ نَعَمْ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ وفي روايةٍ أَلَا وَإِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَحَدُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ وَهُوَ حَبْلُ اللَّهِ مَنِ اتَّبَعَهُ كَانَ عَلَى الْهُدَى وَمَنْ تَرَكَهُ كَانَ عَلَى ضَلَالَةٍ .
৩৪৬। ইয়াযীদ ইবনে হিব্বান (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি, হুসাইন ইবনে সাবরা ও আমর ইবনে মুসলিম (র) যায়িদ ইবনে আরকাম (রা)-এর কাছে গেলাম। আমরা তাঁর কাছে বসলে হুসাইন তাঁকে বলেন, হে যায়িদ! আপনি অশেষ কল্যাণ লাভকরেছেন। আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, যুদ্ধে তাঁর সাথী হয়েছেন এবং তাঁর পেছনে নামায পড়েছেন। হে যায়িদ! আপনি অশেষ কল্যাণ লাভ করেছেন। হে যায়িদ। আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যা শুনেছেন তা আমাদেরকে বলুন। তিনি বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আল্লাহর শপথ! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আমার অনেক বয়স হয়েছে এবং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যা মুখস্থ করেছিলাম তার কতক ভুলে গেছি। কাজেই আমি তোমাদেরকে যা বলব তা গ্রহণ করবে এবং যা না বলব তার জন্য আমাকে তকলিফ দেবে না। অতঃপর তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগ্মা নামক কূপের কাছে আমাদের সামনে বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেন। স্থানটি মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি অবস্থিত। তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, লোকদের নসীহত করলেন এবং (শান্তি ও শাস্তির কথা) স্মরণ করালেন, অতঃপর বলেন: “হে লোকেরা! সতর্ক হয়ে যাও। আমি একজন মানুষ, হয়ত অচিরেই আমার প্রতিপালকের দূত এসে যাবে এবং আমাকে আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিতে হবে। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হল আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে রয়েছে হিদায়াত ও আলো। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন কর এবং তাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ। (যায়িদ বলেন) তিনি আল্লাহর কিতাবের প্রতি আমাদের অনুপ্রাণিত করলেন এবং তদনুযায়ী কাজ করার জন্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ (দ্বিতীয়টি হল) আমার আহলে বাইত (পরিবারবর্গ)। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (তাদেরকে ভুলে যাবে না)। হুসাইন (র) তাকে বলেন, হে যায়িদ, তাঁর আহলে বাইত কারা? তাঁর স্ত্রীগণ কি তাঁর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত নয়? তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীগণও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। ব্যাপকভাবে বলতে গেলে তাঁর ইন্তিকালের পর, যাদের প্রতি সাদাকা খাওয়া হারাম করা হয়েছে তারাও তাঁর পরিবারবর্গের অন্তর্ভুক্ত। তিনি (হুসাইন) বলেন, তারা কে কে? তিনি (যায়িদ) বলেন, তারা হলেন: আলী (রা), আকীল (রা), জাফর (রা) ও আব্বাস (রা) এর বংশধরগণ। তিনি বলেন, এদের সবার প্রতি সাদাকা হারাম ছিল? তিনি (যায়িদ) বলেন, হাঁ।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: সাবধান! আমি তোমাদের মাঝে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর একটি হল আল্লাহর কিতাব- আর এটা হল আল্লাহর রজ্জু (তাঁর সাথে বান্দার যোগসূত্র)। যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে সে হিদায়াতের নির্ভুল পথেই থাকবে। যে ব্যক্তি একে ছেড়ে দেবে সে পথভ্রষ্ট হবে।
٣٤٧ – عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ أَبِي بَكْرِ الصِّدِيقِ مَوْقُوفًا عَلَيْهِ أَنَّهُ قَالَ ارْقُبُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَهْلِ بَيْتِهِ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ ، مَعْنَى ار قُبُوهُ رَاعُوهُ وَاحْتَرِمُوهُ وَأَكْرِمُوهُ وَاللَّهُ أَعْلَمُ .
৩৪৭। ইবনে উমার (রা) থেকে আবু বাক্স আস্ সিদ্দীক (রা) এর সূত্রে মওকূফরূপে বর্ণিত। তিনি (আবু বাক্স) বলেন, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ রাখ।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৪৪ – আলিম, বয়স্ক ও সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা; অন্যদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া; তাদের মজলিস ও বৈঠকাদির গুরুত্ব এবং তাদের সম্মান ও প্রতিপত্তি বর্ণনা করা
আলিম, বয়স্ক ও সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা; অন্যদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া; তাদের মজলিস ও বৈঠকাদির গুরুত্ব এবং তাদের সম্মান ও প্রতিপত্তি বর্ণনা করা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أولُوا الْأَلْبَابِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“এদেরকে জিজ্ঞেস কর, যে জানে এবং যে জানে না, এরা উভয়ে কি কখনও সমান হতে পারে? বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন লোকেরাই তো উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা আয-যুমার: ৯)
٣٤٨- عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرُو الْبَدْرِي الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمُ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا في الْقِرَاءَةِ سَوَاءٌ فَاعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءٌ
فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاء فَأَقْدَمُهُمْ سِنًا وَلَا يَؤْمِنُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدُ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلا بِإِذْنِهِ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ فَأَقْدَمُهُمْ سلمًا بَدَلَ سِنَّا أَي إِسْلَامًا وَفِي رِوَايَةٍ يَؤُمُ
الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ وَأَقْدَمُهُمْ قِرَاءَةٌ فَإِنْ كَانَتْ قِرَاءَتُهُمْ سَوَاءٌ فَيَوْمُهُمْ أَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءٌ فَلْيَوْمُهُمْ أَكْبَرُهُمْ سِنًا ، وَالْمُرَادُ بِسُلْطَانِهِ مَحَلُّ وَلَآيَتِهِ أَوِ الْمَوْضِعُ الَّذِي يَخْتَصُّ بِهِ وَتَكْرِمَتُهُ بِفَتْحِ النَّاءِ
وَكَسْرِ الرَّاءِ وَهِيَ مَا يَنْفَرِدُ بِهِ مِنْ فِرَاشِ وسرير ونحوهما .
৩৪৮। আবু মাসউদ উকবা ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: লোকদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কুরআন অপেক্ষাকৃত ভালো পড়ে সে তাদের ইমামতি করবে। যদি কুরআন পড়ায় তারা সমান হয় তবে তাদের মধ্যে যে সুন্নাহ (হাদীস) অধিক জানে [ যে ব্যক্তি অধিক মাসলা-মাসায়েল জানে অর্থাৎ ইসলামী শরীয়াত সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী সে-ই জামা’আতে ইমামতি করবে। এ ব্যাপারে সবাই সমকক্ষ হলে তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সুন্দরভাবে আল কুরআন পাঠ করতে পারে সে-ই ইমামতি করবে। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শাফিঈর মতে এটাই হাদীসের তাৎপর্য ] । যদি সুন্নায়ও তারা সমান হয় তবে তাদের মধ্যে যে প্রথমে হিজরাত করেছে। যদি হিজরাতেও তারা সমান হয় তবে অপেক্ষাকৃত অধিক বয়স্ক ব্যক্তি (ইমামতি করবে)। তাদের মধ্যে কোন লোক যেন অপর কোন লোকের অধিকার ও ক্ষমতাস্থলে (প্রভাবাধীন এলাকায়) তার সম্মতি ছাড়া ইমামতি না করে এবং তার বাড়িতে তার অনুমতি ছাড়া তার সম্মানের স্থলে (নির্দিষ্ট চেয়ারে বা আসনে) না বসে।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার অপর বর্ণনায় বয়সের দিক থেকে অগ্রগামী কথার স্থলে ইসলাম গ্রহণের দিক থেকে অগ্রগামী কথাটির উল্লেখ আছে। অপর বর্ণনায় আছে: লোকদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব অপেক্ষাকৃত ভালো পড়ে এবং কিরাআতের (মুখস্থের) দিক থেকেও অগ্রগামী সে তাদের ইমামতি করবে। যদি কিরাআতের দিক থেকে তারা সমকক্ষ হয়, তবে তাদের মধ্যে হিজরাতের দিক থেকে যে অগ্রগামী সে তাদের ইমামতি করবে। যদি তারা হিজরাতেও সমান হয়, তবে তাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তি তাদের ইমামতি করবে।
٣٤٩ – وَعَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلاةِ وَيَقُولُ اسْتَوُوا وَلَا تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ لِيَلِنِي مِنْكُمْ أَوْلُو الْأَحْلامِ والنهى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُوْنَهُمْ – رَوَاهُ مُسْلِمُ . وَقَوْلُهُ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَلِنِي هُوَ بِتَخْفِيفِ النُّونِ وَلَيْسَ قَبْلَهَا يَاءُ وَرُوِيَ بِتَشْدِيدِ النُّوْنِ مَعَ يَاء قَبْلَهَا وَالنُّهَى الْعَقُولُ وَأُولُو الْأَحْلامِ هُمُ الْبَالِغُوْنَ وَقِيلَ أَهْلُ الْحِلْمِ وَالْفَضْلِ .
৩৪৯। আবু মাসউদ উকবা ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের কাতারে আমাদের কাঁধে হাত রাখতেন এবং বলতেন: সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং অসমান হয়ে (কাতার বাঁকা করে) দাঁড়াবে না, অন্যথায় তোমাদের অন্তরসমূহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে (অর্থাৎ অন্তরে মতবিরোধ সৃষ্টি হবে)।
তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও জ্ঞানী তারা যেন আমার কাছে (প্রথম কাতারে) থাকে, অতঃপর যারা (বয়স ও জ্ঞানে) তাদের কাছাকাছি তারা, অতঃপর (উভয় বিষয়ে) যারা তাদের নিকটবর্তী তারা।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥٠- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الْأَحْلامِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُوْنَهُمْ ثَلَاثًا وَأَيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الْأَسْوَاقِ رَوَاهُ مُسْلِمٌ.
৩৫০। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও জ্ঞানী তারা যেন আমার কাছে (প্রথম কাতারে) থাকে, অতঃপর যারা (বয়সে ও জ্ঞানে) তাদের কাছাকাছি তারা। তিনি তিনবার এ কথা বলেছেন। তোমরা মসজিদকে বাজারে পরিণত করা থেকে সাবধান থাক (বাজারের মত মসজিদে শোরগোল করো না)।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥١ – عَنْ أَبِي يَحْى وَقِيلَ أَبِي مُحَمَّدٍ سَهْلِ بْنِ أَبِي حَثَمَةً بِفَتْحِ الْحَاءِ الْمُهْمَلَةِ وَاسْكَانِ الشَّاءِ الْمُثَلَثَةِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ انْطَلَقَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَهْلِ وَمُحَبِّصَةُ بْنُ مَسْعُودٍ إِلَى خَيْبَرَ وَهِيَ يَوْمَئِذٍ صُلْحٌ فَتَفَرِّقَا
فَأَتَى مُحَبِّصَةُ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَهْلِ وَهُوَ يَتَشَحْطُ فِي دَمِهِ قَتِيلاً فَدَفَنَهُ ثُمَّ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَهْلِ وَمُحَبِّصَةً وَحُوَيْصَةُ ابْنَا مَسْعُودٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَهَبَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ يَتَكَلَّمُ فَقَالَ
كَبِّرُ كَبِرُ وَهُوَ أَحْدَثُ الْقَوْمِ فَسَكَتَ فَتَكَلَّمَا فَقَالَ اتَحْلِفُونَ وَتَسْتَحِقُونَ قَاتِلَكُمْ ؟ وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيْثِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَقَوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبِرُ كَيْرٌ مَعْنَاهُ يَتَكَلَّمُ الْأَكْبَرُ.
৩৫১। আবু ইয়াহ্ইয়া অথবা আবু মুহাম্মাদ সাহল ইবনে আবু হাসমা আল-আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সাহল ও মুহাইয়্যাসা ইবনে মাসউদ খাইবার এলাকায় গেলেন। এ সময় খাইবারবাসীরা মুসলমানদের সাথে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ ছিল। অতঃপর দু’জন যার যার কাজে পৃথক হয়ে গেলেন। পরে মুহাইয়্যাসা (রা) আবদুল্লাহ ইবনে সাহলের কাছে এসে দেখেন, তিনি সাংঘাতিকভাবে আহত হয়ে রক্তাক্ত শরীরে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি তাকে দাফন করলেন, অতঃপর মদীনায় ফিরে এলেন। আবদুর রহমান ইবনে সাহল এবং মাসউদের দুই পুত্র মুহাইয়্যাসা ও হুয়াইয়্যাসা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। আবদুর রহমান কথা বলতে উদ্যত হলে মহানবী (সা) বলেন: বড়কে বলতে দাও, বড়কে বলতে দাও। আবদুর রহমান ছিলেন দলের মধ্যে বয়ঃকনিষ্ঠ, তাই তিনি চুপ করলেন। অতঃপর মুহাইয়্যাসা ও হুয়াইয়্যাসা উভয়ে কথা বললেন। মহানবী (সা) বললেনঃ তোমরা কি শপথ করে বলতে পারবে হত্যাকারী কে? তাহলে তোমরা দিয়াতের (রক্তপণের) অধিকারী হবে। অতঃপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥٢ – عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى أَحَدٍ يَعْنِي فِي الْقَبْرِ ثُمَّ يَقُولُ أَيُّهُمَا أَكْثَرُ أَخِدًا لِلْقُرْآنِ؟ فَإِذَا أَشِيْرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
৩৫২। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধে নিহত দুই দুইজন শহীদকে একই কবরে দাফনের জন্য একত্রিত করছিলেন, অতঃপর জিজ্ঞাসা করছিলেন: এ দু’জনের মধ্যে কে অধিক কুরআনে হাফিজ? যখন তাদের একজনের প্রতি ইশারা করা হত তিনি তাকে কবরে আগে (ডান পাশে) রাখতেন।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥٣- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أراني فِي الْمَنَامِ أَتَسَولُ بِسِوَاكَ فَجَا عَنِي رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ فَنَاوَلْتُ السواكَ الْأَصْغَرَ فَقِيلَ لِى كَبِّرُ فَدَفَعْتُهُ إِلَى الْأَكْبَرِ مِنْهُمَا – رَوَاهُ
مُسْلِمٌ مُشْنَدًا وَالْبُخَارِي تَعْلِيقا .
৩৫৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একটি মিসওয়াক দিয়ে দাতন করছি। দুই ব্যক্তি আমার কাছে এল। তাদের মধ্যে একজন বয়সে অপরজনের বড় ছিল। আমি (বয়সে) ছোট ব্যক্তিকে মিসওয়াকটি দিতে গেলে আমাকে বলা হল, বড়কে দিন। অতএব আমি তাদের মধ্যে বয়জ্যেষ্ঠকে মিসওয়াকটি দিলাম।
হাদীসটি ইমাম মুসলিম পূর্ণ সনদসহ উল্লেখ করেছেন এবং হামাম বুখারী সনদ বাদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন।
٣٥٤ – عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ اجْلاَلِ اللهِ تَعَالَى إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِي فِيْهِ وَالْجَافِى عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ حَدِيْثٌ
حَسَنٌ رواه أبو داود
৩৫৪। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের বাহক (কুরআনের বিশেষজ্ঞ), যদি তাতে অতিরঞ্জিত কিছু না করে তাকে সম্মান করা এবং ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত।
এটা হাসান হাদীস। ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥٥ – عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَن أَبِيْهِ عَنْ جَدِهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمُ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفُ شَرَفَ كَبِيرِنَا – حَدِيثٌ صَحِيحٌ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِيُّ وَقَالَ التَّرْمِذِيُّ حَدِيثٌ
حَسَنٌ صحيح وفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ حَقٌّ كَبِيرِنَا
৩৫৫। আমর ইবনে শু’আইব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ ও দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান ও মর্যাদা দেয় না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
এটা সহীহ হাদীস। ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এটা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ। আবু দাউদের অপর বর্ণনায় আছে: যে ব্যক্তি আমাদের বড়দের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় (সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়)।
٣٥٦ – عَنْ مَيْمُونِ بْنِ أَبِي شَبِيبٍ أَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا مَرَّ بِهَا سَائِلٌ فاعطتُهُ كِسْرَةً وَمَرْ بِهَا رَجُلٌ عَلَيْهِ ثِيَابٌ وَهَيْئَةٌ فَأَقْعَدَتْهُ فَأَكَلَ فَقِيلَ لَهَا فِي ذلِكَ ؟ فَقَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْزِلُوا النَّاسَ
مَنَازِلَهُمْ – رَوَاهُ أبو داود لكنْ قَالَ مَيْمُونُ لَمْ يُدْرِكْ عَائِشَةَ وَقَدْ ذَكَرَهُ مُسْلِمٌ فِي أَوَّلِ صَحِيحِهِ تَعْلِيْقًا فَقَالَ وَذُكِرَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُنْزِلَ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ وَذَكَرَهُ
الْحَاكِمُ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ فِي كِتَابِهِ مَعْرِفَةِ عُلُومِ الْحَدِيثِ وَقَالَ هُوَ حَدِيثٌ صَحِيحٌ .
৩৫৬। মাইমূন ইবনে আবু শু’আইব (র) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রা)-র সামনে দিয়ে একটি ভিক্ষুক যাচ্ছিল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি দিলেন। আবার তার সামনে দিয়ে সুসজ্জিত পোশাকে একটি লোক যাচ্ছিল। তিনি তাকে বসালেন এবং আহার করালেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।
ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু বলেছেন, আয়িশা (রা)-র সাথে মাইমূনের সাক্ষাত হয়নি। ইমাম মুসলিম তার সহীহ হাদীস গ্রন্থে এটাকে মু’আল্লাক হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন”। ইমাম হাকেম আবু আবদুল্লাহ (র) এ হাদীসটি তার “মারিফাতু উলূমিল হাদীস” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি সহীহ হাদীস।
٣٥٧- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أَخِيهِ الْحُرِّ بْنِ قَيْسٍ وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيْهِمْ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَكَانَ الْقُراءُ أَصْحَابَ مَجْلِسٍ عُمَرَ وَمُشَاوَرَتِهِ كُهُوْلاً كَانُوا أَوْ شُبَّانًا فَقَالَ
عُيَيْنَةٌ لِابْنِ آخِيْهِ يَا ابْنَ أَخِي لَكَ وَجْهُ عِنْدَ هَذَا الْأَمِيرِ فَاسْتَأْذِنُ لِيْ عَلَيْهِ فَاسْتَأْذَنَ لَهُ فَأَذِنَ لَهُ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ هِي يَا ابْنَ الْخَطَّابِ فَوَاللَّهِ مَا تُعْطِينَا الجزلَ وَلَا تَحْكُمُ فِينَا بِالْعَدْلِ فَغَضِبَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ حَتَّى هَمْ أَنْ يُوقِعَ بِهِ فَقَالَ لَهُ الْحُرُّ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ لِنَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الخُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ) وَإِنَّ هَذَا مِنَ الْجَاهِلِينَ وَاللَّهِ مَا جَاوَزَهَا عُمَرُ حِينَ تَلاهَا عَلَيْهِ وَكَانَ
وَفَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
৩৫৭। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উয়াইনা ইবনে হিস্স্স (মদীনায়) আসল। সে তার ভ্রাতুষ্পুত্র হুর ইবনে কায়েসের মেহমান হল। হুর ইবনে কায়েস উমার (রা) এর নিকটতম ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কুরআনবিদগণও (কুররাআ) উমারের পারিষদবর্গের এবং পরামর্শ সভার অন্তর্ভুক্ত হতেন, চাই তিনি যুবক হোন অথবা বৃদ্ধ। উয়াইনা তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে বলল, হে ভাইপো! এই আমীরের (উমার) নিকট তোমার অবাধ প্রবেশাধিকার আছে। তার সাথে দেখা করার জন্য আমাকে একটু অনুমতি নিয়ে দাও। সে তার কাছে অনুমতি চাইল। উমার (রা) তাকে অনুমতি দিলেন। সে (উয়াইনা) তার কাছে প্রবেশ করে বলল, হে খাত্তাবের পুত্র, আল্লাহর শপথ! তুমি না আমাদের পর্যাপ্ত দাও আর না আমাদের মধ্যে ইনসাফ সহকারে ফায়সালা কর। উমার (রা) খুব রাগান্বিত হলেন, এমনকি তাকে কিছু উত্তম-মধ্যম দেয়ারও ইচ্ছা করলেন। হুর তাকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন: “হে নবী! নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ লোকদের সাথে জড়িয়ে পড়ো না বা তাদেরকে এড়িয়ে চল” (সূরা আল-আরাফ: ১৯৯)। এ ব্যক্তি মূর্খ লোকদেরই একজন। আল্লাহর শপথ! উমার (রা) এ আয়াত শুনে তার স্থান ছেড়ে মোটেই অগ্রসর হননি। তিনি আল্লাহর কিতাবের সর্বাপেক্ষা বেশি অনুসরণকারী ছিলেন।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥٨ – عَنْ أَبِي سَعِيدِ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لَقَدْ كُنْتُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُلَامًا فَكُنْتُ أَحْفَظُ عَنْهُ فَمَا يَمْنَعُنِي مِنَ الْقَوْلِ إِلا أَنْ هُهُنَا رِجَالاً هُمْ أَسَنُ مِنَى مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৫৮। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমি অল্প বয়স্ক বালক ছিলাম। আমি তাঁর কাছে হাদীস মুখস্থ করতাম। এসব হাদীস বর্ণনা করার ব্যাপারে আমার কোন প্রতিবন্ধক ছিল না, শুধু একটি প্রতিবন্ধকই ছিল। আর তা হল, এখানে এমন কতক লোক ছিলেন যারা বয়সে আমার চেয়ে প্রবীণ (তাদের সামনে হাদীস বর্ণনাকে অসমীচীন মনে করতাম)।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٥٩- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا اكْرَمَ شَابٌ شَيْئًا لِسَبِّهِ إِلا قَبْضَ اللهُ لَهُ مَنْ يُكْرِمُهُ عِنْدَ سِنَهِ رَوَاهُ التَّرْمِنِي وَقَالَ حَدِيْثٌ غَرِيبٌ.
৩৫৯। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি কোন যুবক কোন প্রবীণ ব্যক্তিকে তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান প্রদর্শন করে, তবে আল্লাহ তার বৃদ্ধাবস্থায় এমন লোক নির্দিষ্ট করে দেবেন, যে তাকে সম্মান প্রদর্শন করবে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা গরীব হাদীস।
অনুচ্ছেদ: ৪৫ – সৎকর্মপরায়ণ লোকদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা, তাদের বৈঠকসমূহে অংশগ্রহণ করা, তাদের সংস্পর্শে থাকা, তাদেরকে মহব্বত করা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদেরকে দিয়ে দু’আ করানো এবং বরকতময় ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থানসমূহ যিয়ারত করা
সৎকর্মপরায়ণ লোকদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা, তাদের বৈঠকসমূহে অংশগ্রহণ করা, তাদের সংস্পর্শে থাকা, তাদেরকে মহব্বত করা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদেরকে দিয়ে দু’আ করানো এবং বরকতময় ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থানসমূহ যিয়ারত করা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لا أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا إِلَى قَوْلِهِ تَعَالَى قَالَ لَهُ مُوسَى هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا علمت رشدا .
মহান আল্লাহ বলেন:
“যখন মূসা তার সফরসংগীকে বলল, দুই নদীর সংগমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি আমার সফর শেষ করব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব। তারা দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌঁছে নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল। আর তা ছুটে গিয়ে এমনভাবে নদীতে পথ ধরল যেন কোন সুড়ংগ রয়েছে। আরও সামনে অগ্রসর হয়ে মুসা তার সংগীকে বলল, আমাদের নাশতা পেশ কর। আমাদের এই সফরে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সংগী বলল, আমরা যখন সেই প্রস্তর খণ্ডে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন কি ঘটনা ঘটেছিল তা কি আপনি লক্ষ্য করেছেন? মাছের কথা আমি ভুলে গেছি। আর শয়তান আমাকে এমনভাবে বেখেয়াল করে দিয়েছে যে, আমি তার উল্লেখ করতেও ভুলে গেছি। মাছ তো আশ্চর্যরকমভাবে তার পথ ধরে নদীতে চলে গেছে। মুসা বলল, আমরা তো ওটাই চাচ্ছিলাম। অতঃপর তারা দু’জন নিজেদের পায়ের চিহ্ন ধরে পুনরায় ফিরে আসল। আর সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে একজন বান্দাকে পেল। তাকে আমরা আপন রহমত দিয়ে ধন্য করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে এক বিশেষ জ্ঞানও দান করেছিলাম। মূসা তাকে বলল, আমি কি আপনার সংগে থাকতে পারি, যাতে আপনি আমাকেও সেই জ্ঞান শিক্ষা দেন যা আপনাকে শেখানো হয়েছে?” (সূরা আল-কাহফঃ ৬০-৬৬)
وَقَالَ تَعَالَى : وَاصْبِرُ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ .
“তুমি তোমার দিলকে এসব লোকের সংস্পর্শে স্থিতিশীল রাখ, যারা নিজেদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে এবং তাদের থেকে কখনও অন্যদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করো না।” (সূরা আল-কাহফঃ ২৮)
٣٦٠ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ أَبُو بَكْرٍ لِعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْطَلِقِ بِنَا إِلَى أُمِّ أَيْمَنَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا نَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُورُهَا فَلَمَّا
انْتَهَيَا إِلَيْهَا بَكَتْ فَقَالاً لَهَا مَا يُبْكِيْكِ أَمَا تَعْلَمِينَ أَنَّ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ فَقَالَتْ إِنِّي لَا أَبْكِي أَنِّي لَا أَعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى خَيْرٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَكِنْ أَبْكِي أَنَّ
الْوَحَى قَدْ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ فَهَيْجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ فَجَعَلا يَبْكِيَانِ مَعَهَا – رواه مسلم.
৩৬০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের পর আবু বাক্স (রা) উমার (রা)-কে বলেন, আমাদের সাথে উম্মু আইমানের কাছে চলুন [ উন্মু আইমান (রা) শিশুকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লালন-পালন করেছিলেন এবং কৈশোরে তাঁর খিদমত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে আযাদ করে, যায়িদ ইবনে হারিসার সাথে বিবাহ দেন। তিনি উন্মু আইমানকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন এবং বলতেন: উন্মু আইমান আমার মায়ের মত ] । রাসূলুল্লাহ (সা) যেমন তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন, আমরাও তেমন তাঁর সাথে সাক্ষাত করব। তাঁরা উভয়ে তাঁর নিকট পৌঁছতেই তিনি কাঁদতে লাগলেন। তাঁরা তাঁকে বলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি জানেন না যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্য আল্লাহর কাছে অফুরন্ত কল্যাণ রয়েছে? তিনি বলেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আল্লাহ তা’আলার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কি মওজুদ রয়েছে তা আমি জ্ঞাত নই, বরং আমি এজন্য কাঁদছি যে, আসমান থেকে আর কখনও ওহী অবতীর্ণ হবে না। তাঁর এ কথায় তাঁরা উভয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সাথে তাঁরাও কাঁদতে লাগলেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٦١ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَجُلًا زَارَ أَذًا لَهُ فِي قَرْيَةٍ أُخْرَى فَأَرْصَدَ اللهُ تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ أَرِيدُ أَذًا لِي فِي هَذِهِ الْقَرْيَةِ قَالَ هَلْ لَكَ
عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرَبُّهَا عَلَيْهِ ؟ قَالَ لَا غَيْرَ أَنِّي أَحْبَبْتُهُ فِي اللَّهِ قَالَ فَإِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ – رَوَاهُ مُسْلِمُ . يُقَالُ أَرْصَدَهُ لِكَذَا إِذَا وَكُلَهُ بحِفْظِهِ وَالْمَدْرَجَةُ بِفَتْحِ الْمِيم والراءِ الطَّرِيقُ وَمَعْنَى تَرَبُّهَا
تَقُومُ بِهَا وَتَسْعَى في صلاحها .
৩৬১। আবু হুরাইরা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন: এক ব্যক্তি অন্য শহরে বসবাসরত তার এক ভাইকে দেখতে গেল। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য রাস্তায় একজন ফেরেশতা নির্দিষ্ট করে দিলেন। যখন সে এ রাস্তায় আসল, ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন? লোকটি বলল, এ শহরে আমার এক ভাই থাকে, তাকে দেখার জন্য এসেছি। ফেরেশতা বলল, তার কাছে আপনার কি কোন আকর্ষণীয় প্রাপ্য আছে, যার জন্য আপনি চেষ্টা করছেন? সে বলল, আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশেই আমি তাকে ভালোবাসি, অন্য কোন স্বার্থ নেই। ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহর দূতরূপে আপনার কাছে এসেছি এটুকু জানানোর জন্য যে, আপনি যেমন (আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে) ঐ ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, আল্লাহ্ও তদ্রূপ আপনাকে ভালোবাসেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٦٢ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ أَنَّا لَهُ فِي اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ بِأَنْ طَبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً -رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ وَفِي بَعْضِ النُّسَخِ غَرِيبٌ .
৩৬২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রুগ্নকে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে যায়, একজন ঘোষক তাকে ডেকে বলে, তুমি আনন্দিত হও, তোমার পথচলা কল্যাণময় হোক এবং জান্নাতে তোমার উচ্চ মর্যাদা হোক।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি হাসান হাদীস, কোন কোন পাণ্ডুলিপিতে গরীব বলা হয়েছে।
٣٦٣ – عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخَ الْكِيْرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ
مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكَيْرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا مُنْتِنَةً مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ يُحْذِيَكَ يُعْطِيكَ.
৩৬৩। আবু মূসা আল-আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সৎ সহকর্মী ও পাপী সহযোগীর দৃষ্টান্ত হল: একজন কস্তুরীর ব্যবসায়ী, অপরজন হাপর চালনাকারী (কামার)। কস্তুরীর ব্যবসায়ী হয় তোমাকে বিনামূল্যে কস্তুরী দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে তা কিনে নেবে। যদি এ দু’টোর একটিও না হয়, তবে অন্তত তুমি তার কাছে এর সুঘ্রাণ পাবে। আর হাপর চালনাকারী হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٦٤ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأةُ لِأَرْبَعِ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرُ بِذَاتِ الدِّينِ تربَتْ يَدَاكَ – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَمَعْنَى ذَلِكَ أَنَّ النَّاسِ يَقْصِدُونَ فِي الْعَادَةِ مِنَ
الْمَرْأَةِ هذِهِ الْخِصَالِ الْأَرْبَعِ فَاحْرِضُ أَنْتَ عَلَى ذَاتِ الدِّينِ وَأَظْفَرُ بِهَا وَأَخْرِصُ عَلَى صُحْبَتِهَا .
৩৬৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে কোন মেয়েকে বিয়ে করা হয়: তার ধন-সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। তুমি দীনদার স্ত্রী লাভে বিজয়ী হও; তোমার হাত কল্যাণে পরিপূর্ণ হবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের তাৎপর্য এই যে, পুরুষরা স্বভাবতই পাত্রী নির্বাচনে উক্ত চারটি বিষয় বিবেচনায় রাখে। অতএব তোমার দীনদার স্ত্রী লাভে আগ্রহী হওয়া উচিৎ, তাকে লাভ করার জন্য প্রবল চেষ্টা করবে এবং তাকে জীবন সংগিনী করবে।
٣٦٥ – عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لجِبْرِيلَ مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَزُورَنَا أَكْثَرَ مِمَّا تَزُورُنَا ؟ فَنَزَلَتْ وَمَا نَتَنَزِّلُ إِلَّا بِأَمْرِ رَبِّكَ لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذَلِكَ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ .
৩৬৫। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আ)-কে বললেন: আপনি যতবার আমাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন তার চেয়ে অধিকবার সাক্ষাত করতে আপনাকে কিসে বাধা দেয়? তখন এ আয়াত নাযিল হল: “আমরা তোমার প্রতিপালকের হুকুম ছাড়া অবতীর্ণ হতে পারি না। যা কিছু আমাদের সামনে রয়েছে এবং যা কিছু আমাদের পেছনে অতীত হয়েছে আর যা কিছু এর মাঝখানে রয়েছে, সবকিছুর মালিক তিনিই। তোমার প্রতিপালক কখনও ভুলে যান না।”
(সূরা মারইয়াম: ৬৪)
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٦٦ – عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تُصَاحِبُ إِلا مُؤْمِنًا وَلَا يَأْكُل طَعَامَكَ إِلا تَقِيُّ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِي باسْنَادِ لا بَأْسَ بِه.
৩৬৬। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সংগী হয়ো না এবং তোমার খাবার যেন মুত্তাকী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ না খায়।
ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী ত্রুটিমুক্ত সনদসূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٦٧ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُر أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِي بِإِسْنَادِ صحِيحِ وَقَالَ التَّرْمِذِى حَدِيثٌ حَسَنٌ .
৩৬৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কোন ব্যক্তি তার বন্ধুর দীনের অনুসারী হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কি ধরনের বন্ধু নির্বাচন করছে [ দীন শব্দটি এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে এর অর্থ জীবনবিধান ছাড়াও আচার-ব্যবহার তথা জীবনাচারের সার্বিক বিষয়াবলীও ] ।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
তিরমিযী বলেছেন, এটা হাসান হাদীস।
٣٦٨- عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبِّ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ قِيلَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلُ يُحِبُّ الْقَوْمَ وَلَمَّا يَلْحَقُ بِهِمْ ؟ قَالَ الْمَرْءُ مَعَ
مَنْ أَحَبُّ .
৩৬৮। আবু মূসা আল-আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কোন লোক যাকে পছন্দ করে সে তার সাথী গণ্য হবে। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, এক ব্যক্তি এক সম্প্রদায়কে ভালোবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না। তিনি বলেন: কোন ব্যক্তি যাদের পছন্দ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।
٣٦٩ – عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ أَعْرَابِيا قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَتَى السَّاعَةُ ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَعْدَدْتُ لَهَا ؟ قَالَ حُبُّ اللَّهِ وَرَسُولِهِ قَالَ أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَهُذَا
لَفْظُ مُسْلِمٍ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا مَا أَعْدَدْتُ لَهَا مِنْ كَثِيرِ صَوْمٍ وَلا صَلَاةٍ ولا صَدَقَةٍ وَلَكِنِّي أُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ .
৩৬৯। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামাত কবে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এজন্য তুমি কি সামগ্রী সংগ্রহ করেছ? সে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা। তিনি বলেনঃ তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই থাকবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মূল পাঠ মুসলিমের। তাদের উভয়ের অপর বর্ণনায় আছেঃ সে বলল, রোযা, নামায, সাদাকা ইত্যাদিসহ খুব বেশি কিছু সংগ্রহ করতে পারিনি, কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি।
۳۷۰- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تَقُولُ فِي رَجُلٍ أَحَبٌ قَوْمًا وَلَمْ يَلْحَقُ بِهِمْ؟ فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبٌ
مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৭০। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না, এ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে সে (কিয়ামাতের দিন) তার সাথেই থাকবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۷۱- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ النَّاسُ مَعَادِنُ كَمَعَادَنِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خَيَارُهُمْ فِي الْإِسْلَامِ إِذا فَقَهُوا وَالْأَرْوَاحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةً فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا اخْتَلَفَ وَمَا
تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَرَوَى الْبُخَارِيُّ قَوْلُهُ الْأَرْوَاحُ إِلَى آخِرِهِ مِنْ رِوَايَةِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا .
৩৭১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সোনা-রূপার খনির মত মানুষও এক ধরনের খনি। তোমাদের মধ্যে যারা জাহিলী যুগে শ্রেষ্ঠ ছিল, ইসলামী যুগেও তারাই হবে শ্রেষ্ঠ, যখন তারা (দীন ইসলাম সম্পর্কে) সম্যক জ্ঞান লাভ করবে। রূহসমূহ সম্মিলিত সেনাবাহিনী। এদের মধ্যে গুণ-বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যেগুলো একে অপরের থেকে পৃথক ছিল তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী “আরওয়াহ” শব্দ থেকে শুরু করে হাদীসের শেষ পর্যন্ত আয়িশা (রা)-র সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
فكان بك برص ۳۷۲- عَنْ أَسَيْرِ بْنِ عَمْرٍو وَيُقَالُ ابْنُ جَابِرٍ وَهُوَ بِضَمِّ الْهَمْزَةِ وَفَتْحِ السِّينِ الْمُهْمَلَةِ قَالَ كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ إِذَا أَتَى عَلَيْهِ أَمْدَادُ أَهْلِ الْيَمَنِ سَأَلَهُمْ أَفِيكُمْ أَوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ ؟ حَتَّى أَتَى
عَلَى أَوَيْسُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ لَهُ أَنْتَ أَوَيْسُ ابْنُ عَامِرٍ قَالَ نَعَمْ قَالَ مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرْنٍ ۚ قَالَ نَعَمْ قَالَ برص فَبَرَاتَ مِنْهُ إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَم ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ لَكَ وَالِدَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ يَأْتِي عَلَيْكُم أَوَيْنُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَشدَادٍ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرْن كَانَ بِهِ بَرَصَ فَبَرًا مِنْهُ إِلَّا مَوْطِعَ درهم لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرَ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَا بَرِّهُ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَن يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ فَاسْتَغْفِرْ لِي فَاسْتَغْفَرَ
لَهُ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ الْكُوفَةَ قَالَ أَلَا اكتُبُ لَكَ إِلى عَامِلهَا ؟ قَالَ أَكُونُ فِي غَيْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَى فَلَمَّا كَانَ مِنَ العامِ الْمُقْبِلِ حَجٌ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَائِهِمْ فَوَافَى عُمَرَ فَسَأَلَهُ عَنْ أَوَشٍ فَقَالَ تَرَكْتُهُ رَبِّ الْبَيْتِ قَلِيْلَ
الْمَتَاعِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَأْتِي عَلَيْكُمْ أَوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادٍ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرْنٍ كَانَ بِهِ بَرَصَ فَبَرَا مِنْهُ إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَم لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرَ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَهُ
فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ فَأَتَى أَوَيْسًا فَقَالَ اسْتَغْفِرْ لِي قَالَ أَنْتَ أحْدَثُ عَهْدًا بِسَفَرٍ صَالِحٍ فَاسْتَغْفِرْ لِي قَالَ لَقِيتَ عُمَرَ قَالَ نَعَمْ فَاسْتَغْفَرَ لَهُ فَقَطِنَ لَهُ النَّاسُ فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسلِم أَيْضًا عَنْ أَسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ أَهْلَ الْكُوفَةِ وَقَدُوا عَلَى عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَفِيهِمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأَوَيْشِ فَقَالَ عُمَرُ هَل فَهُنَا أَحَدٌ مِّنَ الْقَرَنِيِّينَ فَجَاءَ ذَلِكَ الرَّجُلُ فَقَالَ عُمَرُ إِنْ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ قَالَ إِنَّ رَجُلًا يَأْتِيْكُمْ مِنَ الْيَمَنِ يُقَالُ لَهُ أَوَيْسٌ لَا يَدَعُ بِالْيَمَنِ غَيْرَ أَمْ لَهُ قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا اللَّهَ تَعَالَى فَاذْهَبَهُ إِلَّا مَوْضِعَ الدِّيْنَارِ أَوِ الدرْهَم فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ.
وفي روايَةٍ لَهُ عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أَوَيْسَ وَلَهُ وَالِدَةً وَكَانَ بِهِ بَيَاضِ فَصُرُوهُ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ . قَوْلَهُ غَيْرَاءِ النَّاسِ بِفَتْحِ الْغَيْنِ
الْمُعْجَمَةِ وَاشْكَانِ الْبَاءِ وَبِالْمَدِ وَهُمْ فُقَرَاؤُهُمْ وَصَعَالِيْكُهُمْ وَمَنْ لَا تُعْرَفُ عَيْنُهُ مِنْ أَخْلاطِهِمْ وَالْأَمْدَادُ جَمْعُ مَدَدٍ وَهُمُ الْأَعْوَانُ وَالنَّاصِرُونَ الَّذِينَ كَانُوا يُمِدُونَ الْمُسْلِمِينَ فِي الْجِهَادِ .
৩৭২। উসাইর ইবনে আমর (র) থেকে বর্ণিত। তাকে ইবনে জাবিরও বলা হয়। তিনি বলেন, উমার (রা) এর কাছে ইয়ামানের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে উয়াইস ইবনে আমের আছে কি? অবশেষে (একসময়) তিনি উয়াইস (রা)-এর নিকট এলেন। তিনি (উমার) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ‘মুরাদ’ গোত্রের উপগোত্র ‘কানের’ লোক? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, আপনার কি কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, তা থেকে সুস্থ হয়েছেন এবং মাত্র এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা অবশিষ্ট আছে? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, আপনার মা বেঁচে আছেন কি? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি (উমার) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে উয়াইস ইবনে আমের নামক এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের উপগোত্র ‘কারনের’ লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধু এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ব্যতীত। তার মা জীবিত আছে, সে তার খুবই অনুগত। সে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। যদি তুমি তাকে দিয়ে তোমার গুনাহ ক্ষমার জন্য দু’আ করাবার সুযোগ পাও তবে তাই করবে”। (উমার বলেন) কাজেই আপনি আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য দু’আ করুন। অতএব তিনি (উয়াইস) তাঁর (উমারের) পাপের ক্ষমা চেয়ে দু’আ করলেন। উমার (রা) তাঁকে বলেন, আপনি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন? তিনি বলেন, কৃষ্ণা (যাওয়ার আশা আছে)। তিনি বলেন, আমি সেখানকার গভর্ণরকে আপনার (সাহায্যের) জন্য লিখে দিই? তিনি বলেন, গরীব-মিসকীনদের মাঝে বসবাস করাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। পরবর্তী বছর কৃষ্ণার এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হজ্জে এল। তার সাথে উমারের সাক্ষাত হলে তিনি উয়াইস সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, তাঁকে আমি এমন অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তার ঘরটা অত্যন্ত জীর্ণ অবস্থায় আছে এবং তাঁর জীবনোপকরণ খুবই নগণ্য। উমার (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে উয়াইস ইবনে আমের নামক এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের উপগোত্র কারন বংশের লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধু এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ব্যতীত। তার মা জীবিত আছে এবং সে তার খুবই অনুগত। সে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তিনি তা পূরণ করে দেন। যদি তুমি তোমার অপরাধ ক্ষমার জন্য তাকে দিয়ে দু’আ করানোর সুযোগ পাও, তবে তাই করবে”। লোকটি প্রত্যাবর্তন করে এসে উয়াইসের কাছে গিয়ে বলল, আপনি আমার গুনাহ মাফের জন্য দু’আ করুন। তিনি (উয়াইস) বলেন, আপনি এইমাত্র কল্যাণময় সফর থেকে ফিরে এসেছেন, বরং আপনি আমার গুনাহ মাফের জন্য দু’আ করুন। তিনি বলেন, আপনি কি উমারের সাথে সাক্ষাত করেছেন? সে বলল, হাঁ। উয়াইস তার জন্য দু’আ করলেন। লোকেরা উয়াইসের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হলে উয়াইস সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেলেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর বর্ণনায় উসাইর ইবনে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে। কৃষ্ণার অধিবাসীরা উমার (রা) এর কাছে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। দলের এক ব্যক্তি উয়াইসকে বিদ্রূপ করত। উমার (রা) বলেন, এখানে কারন বংশের কেউ আছে কি? ঐ লোকটি উঠে আসলে উমার (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইয়ামান থেকে উয়াইস নামে এক ব্যক্তি তোমার কাছে আসবে। সে তার মাকে ইয়ামানে একাকী রেখে আসবে। তার কুষ্ঠরোগ হবে। সে আল্লাহ্র কাছে দু’আ করবে, তিনি তার রোগমুক্তি দান করবেন, শুধু এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ব্যতীত। তোমাদের যে কেউ তার সাক্ষাত লাভ করবে, সে যেন তাকে দিয়ে তার অপরাধ ক্ষমার জন্য দু’আ করায়।”
মুসলিমের অপর বর্ণনায় উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “পরবর্তীদের (তাবিঈ) মধ্যে উয়াইস নামে একজন উত্তম লোক হবে। তার মা জীবিত আছে। তার দেহে কুন্ঠের দাগ থাকবে। তোমরা যেন তার কাছে গিয়ে নিজেদের অপরাধ ক্ষমার জন্য তাকে দিয়ে দু’আ করাও।”
۳۷۳- عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ لِي وَقَالَ لا تَنْسَانَا يَا أَخَى مِنْ دُعَائِكَ فَقَالَ كَلِمَةً ما يَسُرُّنِي أَنَّ لِي بِهَا الدُّنْيَا وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ أَشْرِكْنَا يَا أَخَى فِي
دُعَائِكَ حَدِيثُ صَحِيحَ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
৩৭৩। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরা করার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ হে ছোট ভাই! তোমার দু’আর মধ্যে আমাদেরকে ভুলে যেও না। (উমার বলেন), তিনি এমন একটি কথা বললেন, যার পরিবর্তে সমস্ত দুনিয়াটা আমার হয়ে গেলেও আমি খুশি হতাম না। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেনঃ হে ছোট ভাই! তোমার দু’আর মধ্যে আমাদেরকেও শরীক করবে।
এটা সহীহ হাদীস। ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, এটা হাসান ও সহীহ হাদীস।
٣٧٤- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزُورُ قُبَاءَ رَاكِبًا وَمَاشِيًا فَيُصَلِّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي مَسْجِدَ قُبَاءَ كُلِّ سَبْتِ رَاكِبًا وَمَاشِيًا
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ.
৩৭৪। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মযানে অথবা পদব্রজে কুবা পল্লীতে যেতেন এবং সেখানকার মসজিদে দুই রাক’আত নামায পড়তেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর বর্ণনায় আছে: প্রতি শনিবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনুযানে অথবা পদব্রজে কুবা মসজিদে আসতেন। ইবনে উমার (রা)-ও তাই করতেন।
অনুচ্ছেদ: ৪৬ – আল্লাহর উদ্দেশে ভালোবাসার ফযীলাত এবং তার জন্য প্রেরণাদান। কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে তা অবহিত করা এবং অবহিত করার পন্থা
আল্লাহর উদ্দেশে ভালোবাসার ফযীলাত এবং তার জন্য প্রেরণাদান। কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে তা অবহিত করা এবং অবহিত করার পন্থা।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ إِلَى آخِرِ السُّورَةِ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; (কিন্তু) নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি রহমদিল। তুমি তাদের দেখতে পাবে আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় রুকু ও সিজদাবনত অবস্থায়। সিজদার কারণে এসব বন্দেগীর চিহ্ন তাদের মুখমণ্ডলে পরিস্ফুট থাকবে। তাদের গুণাবলীর কথা তাওরাতে ও ইনজীলে বিদ্যমান। তাদের দৃষ্টান্ত: একটি চারাগাছ, প্রথমে সে তার অংকুর বের করলো, অতঃপর তাকে শক্তিশালী করলো, অতঃপর হৃষ্টপুষ্ট হলো, অতঃপর নিজের কাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে গেলো। যেন তাদের (এই উন্নতির) দ্বারা কাফিরদের (হিংসার আগুনে) পুড়িয়ে দেয়। যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে আল্লাহ তাদের ক্ষমা ও মহা প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।” (সূরা আল-ফাতহ: ২৯)
وَقَالَ تَعَالَى : وَالَّذِينَ تَبَوَّمُوا الدَّارَ وَالْإِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ.
“আর যারা দারুল ইসলামে (মদীনায়) ও ঈমানের মধ্যে তাদের (মুহাজিরদের আসার) পূর্ব থেকেই অটল রয়েছে, যারা তাদের কাছে হিজরাত করে আসা লোকদেরকে ভালোবাসে।” (সূরা আল-হাশর: ৯)
٣٧٥- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَلَاثَ مَنْ كُنْ فِيْهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الْإِيْمَانِ أَنْ يُكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبُّ الْمَرْء لا يُحِبُّهُ إِلا لِلهِ وَأَنْ يُكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ
أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৭৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে, যে কোন ব্যক্তিকে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে এবং আল্লাহ তাকে কুফরের যে অন্ধকার থেকে বের করেছেন, সেই কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এরূপ অপছন্দ করে, যেরূপ অপছন্দ করে আগুনের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হতে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
٣٧٦- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِهِ يَوْمَ لا ظل الا ظلهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابًا فِي
اللَّهِ اجْتَمَعًا عَلَيْهِ وَتَفَرِّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةُ ذَاتُ حُسْنٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدِّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৭৬। আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সাত শ্রেণীর লোককে সেদিন আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়াই থাকবে না: (১) ন্যায়পরায়ণ ইমাম বা শাসক; (২) মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল যুবক; (৩) মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি; (৪) এমন দু’জন লোক যারা একমাত্র আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে তারা বন্ধুত্বে আবদ্ধ হয় আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়; (৫) এরূপ লোক, যাকে কোন রূপসী-সুন্দরী নারী ব্যভিচারের প্রতি আহ্বান করে, কিন্তু সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি; (৬) যে ব্যক্তি অত্যন্ত গোপনভাবে দান করে, এমনকি তার ডান হাত যা কিছু দান করে, তার বাম হাতও তা জানতে পারে না; (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু’চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।
۳۷۷- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلالِي ؟ الْيَوْمَ أَظِلُّهُمْ فِي ظِلِى يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلَى رَوَاهُ مُسْلِمٌ.
৩৭৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ কিয়ামাতের দিন বলবেন: কোথায় তারা যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করেছিল, আজ আমি তাদেরকে আমার সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেব, আজ আমার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া নেই।
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
۲۷۸ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدْلُكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفشوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ – رَوَاهُ مُسلِم .
৩৭৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলে দেব না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۷۹- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَجُلًا زَارَ أَنَّا لَهُ فِي قَرْيَةٍ أخرى فَأَرْصَدَ اللهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا وَذَكَرَ الْحَدِيثَ إِلَى قَوْلِهِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبُّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَقَدْ سَبَقَ بِالْبَابِ قَبْلَهُ .
৩৭৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জনৈক ব্যক্তি তার এক (মুসলিম) ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য অন্য গ্রামে রওয়ানা হয়। পথে আল্লাহ তার জন্য অপেক্ষা করার উদ্দেশে একজন ফেরেশতা বসিয়ে দেন। অতঃপর তিনি এই কথা পর্যন্ত হাদীস বর্ণনা করেন: (ফেরেশতা তাকে বলেন) “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে এরূপ ভালোবাসেন, যেরূপ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাস।”
ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۸۰- عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ فِي الْأَنْصَارِ لا يُحِبُّهُمْ إِلا مُؤْمِنٌ وَلَا يُبْغِضُهُمْ إِلَّا مُنَافِقٌ مَنْ احَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللَّهُ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ اللَّهُ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
৩৮০। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে বলেন: ঈমানদাররাই তাদেরকে (আনসারদেরকে) ভালোবাসে; আর মুনাফিকরাই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসে আল্লাহ্ও তাকে ভালোবাসেন এবং যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আল্লাহ্ও তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন (অর্থাৎ এর শাস্তি দেন)।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
۳۸۱- عَنْ مُعَادٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْمُتَحَابُّونَ فِي جَلَالِي لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاءُ – رَوَاهُ التَّرْمِذِى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
৩৮১। মু’আয (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মহা সম্মানিত পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন: আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য (আখিরাতে) থাকবে নূরের মিম্বার (মঞ্চ) এবং নবীগণ ও শহীদগণ তাদের প্রতি ঈর্ষা করবেন [ গিবতা অর্থ ঈর্ষা অর্থাৎ অপরের ভালো বা সদগুণ দেখে নিজের মধ্যে তা সৃষ্টি হওয়ার কামনা করা। এ ধরনের গিবতা বৈধ ] ।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
۳۸۲- عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلَانِي رَحِمَهُ اللهُ قَالَ دَخَلْتُ مَسْجِدَ دِمَشْقَ فَإِذَا فَتًى بَرَاقُ الثَّنَايَا وَإِذَا النَّاسُ مَعَهُ فَإِذَا اخْتَلَفُوا فِي شَيْ أَسْنَدُوهُ إِلَيْهِ وَصَدَرُوا عَنْ رَابِهِ فَسَأَلْتُ عَنْهُ فَقِيلَ هَذَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْغَدِ هَجَرْتُ فَوَجَدْتُهُ قَدْ سَبَقَنِي بِالتَّهْجِيرِ وَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي فَانْتَظَرْتُهُ حَتَّى قَضَى صَلَاتَهُ ثُمَّ جِئْتُهُ مِنْ قِبَلِ وَجْهِهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ قُلْتُ وَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ لِلَّهِ فَقَالَ اللهِ ؟ فَقُلْتُ اللهِ فَقَالَ اللَّهِ ؟ فَقُلْتُ اللَّهِ
فَأَخَذَنِي بِحَبْوَةِ رِدَانِي فَجَبَدَنِي إِلَيْهِ فَقَالَ ابشِرْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى وَجَبَتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَحَابِيْنَ فِي وَالْمُتَجَالِسِيْنَ فِي وَالْمُتَزَاوِرِينَ فِي وَالْمُتَبَادَلِيْنَ فِي حَدِيثٌ صَحِيحٌ رَوَاهُ
مَالِكٌ فِي الْمُوَطَأَ بِإِسْنَادِهِ الصَّحِيحِ ، قَوْلُهُ هَجْرَتُ أَيْ بكَرْتُ وَهُوَ بِتَشْدِيدِ الْحِيمِ قَوْلُهُ اللهِ فَقُلْتُ اللهِ الْأَوَّلُ بِهَمْزَةٍ مَمْدُودَةٍ لِلْاسْتَفْهَامِ والثاني بلا مد.
৩৮২। আবু ইদরীস আল-খাওলানী (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দামিশকের মসজিদে প্রবেশ করে দেখি চক্চকে দাঁতের অধিকারী (হাসি মুখ) জনৈক যুবক এবং তাঁর পাশে বহু লোকের সমাবেশ। যখনি তারা কোন ব্যাপারে মতভেদ করছে, তা তাঁর দিকে (সমাধানের জন্য) রুজু করছে এবং তাঁর রায় অনুযায়ী কাজ করছে। আমি তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে উত্তরে বলা হলো, তিনি মু’আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। পরদিন খুব সকালে আমি (মসজিদে) উপস্থিত হলাম, দেখলাম তিনি আমার পূর্বেই উপস্থিত হয়েছেন। আমি তাঁকে নামাযরত অবস্থায় পেলাম। আমি তাঁর অপেক্ষা করতে লাগলাম। তাঁর নামায শেষ হলে আমি তাঁর সামনে হাযির হয়ে সালাম করে বললাম, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ভালোবাসি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তা কি আল্লাহর জন্য? আমি বললাম, হাঁ আল্লাহর জন্য। তিনি পুনরায় বলেন, আল্লাহর জন্য? আমি বললাম, আল্লাহর জন্য। অতঃপর তিনি আমার চাদরের একপাশ ধরে তাঁর কাছে টেনে নিয়ে বলেন, সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেছেন: যারা আমার সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টি কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাত করে এবং আমার জন্যই নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তাদেরকে ভালোবাসা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
এ হাদীসটি সহীহ। ইমাম মালিক (র) সহীহ সনদ সহকারে এটি তার মুওয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন। শব্দার্থ: হাজ্জারতু অর্থাৎ ‘বাক্কারতু’ অর্থ: সকাল-সকাল, তাড়াতাড়ি আসা।
۳۸۳- عَنْ أَبِي كَرِيمَة الْمِقْدَادِ بْنِ مَعْدِي كَرَبَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا أَحَبُّ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَلْيُخْبِرَهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
৩৮৩। আবু কারীমা মিকদাদ ইবনে মাদীকারাব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যখন কোন ব্যক্তি তার এক মুসলিম ভাইকে ভালোবাসে, তখন তাকে অবহিত করা উচিত যে, সে তাকে ভালোবাসে।
এ হাদীসটি আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেন। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
٣٨٤ – عَنْ مُعَادٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِهِ وَقَالَ يَا مُعَادُ وَاللَّهِ إِنِّي لَأَحِبُّكَ ثُمَّ أَوْصِيْكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنْ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُولُ اللَّهُمَّ أَعِنِّى عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ حَدِيثُ
صَحِيحٌ رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنِّسَائِي بِإِسْنَادِ صَحِيح .
৩৮৪। মু’আয (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বলেনঃ হে মু’আয। আল্লাহর শপথ, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, হে মু’আয। তুমি প্রত্যেক নামাযের পর অবশ্যি এ দো’আ পড়বে: “আল্লাহুম্মা আইন্নী আলা যিকরিকা ওয়া শুক্রিকা ওয়া হুস্স্সি ইবাদাতিকা” (হে আল্লাহ! তোমার স্মরণে, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে ও উত্তমরূপে তোমার ইবাদাত করণে আমাকে সাহায্য কর)।”
এটি সহীহ হাদীস, আবু দাউদ ও নাসাঈ সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।
٣٨٥- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلاً كَانَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَرٌ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّ هَذَا فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْلَمْتَهُ ؟ قَالَ لا قَالَ أَعْلِمُهُ فَلَحِقَهُ فَقَالَ إِنِّي أَحِبُّكَ فِي
اللَّهِ فَقَالَ أَحَبَّكَ الَّذِي أَحْبَبْتَنِي لَهُ – رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ بِإِسْنَادِ صَحِيح .
৩৮৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে উপস্থিত ছিল। এমন সময় আর এক ব্যক্তি তাঁকে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি লোকটাকে ভালোবাসি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি তাকে তা অবহিত করেছ? সে বলল, না। তিনি বলেন: তাকে অবহিত কর। সুতরাং সে তার সাথে সাক্ষাত করে বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ভালোবাসি। সে বলল, তিনি (আল্লাহ) তোমাকে ভালোবাসুন, যাঁর জন্য তুমি আমাকে ভালোবাসো।
সহীহ সনদসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেন।
অনুচ্ছেদ: ৪৭ – বান্দাকে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসার আলামত এবং সেই আলামত সৃষ্টি করার জন্য উৎসাহ দান ও তা অর্জনের চেষ্টা করা
বান্দাকে আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসার আলামত এবং সেই আলামত সৃষ্টি করার জন্য উৎসাহ দান ও তা অর্জনের চেষ্টা করা।
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرُ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ .
মহান আল্লাহ বলেন:
“তুমি বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করবেন। আল্লাহ মহাক্ষমাশীল ও করুণাময়।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১)
وَقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يُرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لائِم ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يُشَاءُ وَاللَّهُ
واسع عليم .
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজের দীন ত্যাগ করে, (তার জেনে রাখা উচিত) অতি সত্বর আল্লাহ এমন এক কাওম সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি অত্যন্ত সদয় এবং কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।” (সূরা আল মা-ইদা: ৫৪)
٣٨٦ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ أَذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرِّبَ إِلَى عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرُبُ
إِلَى بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أحِبُّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنتُ سَمِعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِسُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي أَعْطَيْتُهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لا عِيدَنَّهُ – رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ ، مَعْنى أذَنْتُهُ أَعْلَمْتُهُ
بِأَنِّي مُحَارِبُ لَهُ وَقَوْلُهُ اسْتَعَاذَنِي رُوِيَ بِالْبَاءِ وَرُوِيَ بِالنُّوْنِ.
৩৮৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর সাথে দুশমনি রাখে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমি আমার বান্দার উপর যা ফরয করেছি, এর চাইতে বেশি প্রিয় কোন কিছু নিয়ে সে আমার নিকটবর্তী হয় না। আমার বান্দা সব সময় নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, অবশেষে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আমি যখন তাকে ভালোবাসি, তখন সে যে কানে শ্রবণ করে আমিই তার সেই কান হয়ে যাই, সে যে চোখে দেখে, আমিই তার সেই চোখ হয়ে যাই, সে যে হাতে ধরে আমিই তার সেই হাত হয়ে যাই এবং সে যে পায়ে হাঁটে আমিই তার সেই পা হয়ে যাই। সে যখন আমার কাছে কিছু চায়, তাকে আমি তা দান করি এবং সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি তাকে আশ্রয় দান করি।
ইমাম বুখারী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ذنته। অর্থ: اعلمته আমি তাকে জানিয়ে দিই বা ঘোষণা করি যে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। استعاذنی অর্থ: সে আমার কাছে আশ্রয় চায়।
۳۸۷- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا أَحَبُّ اللَّهُ تَعَالَى الْعَبْدَ نادى جبْرِيلَ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحْبِبْهُ فَيُحِبُهُ جِبْرِيلُ فَيُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلانَا فَاحِبُّوْهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوْضَعُ لَهُ
الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِذَا أَحَبٌ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ إِنِّي أُحِبُّ فُلَانًا فَأَحْبِبُهُ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي السَّمَاءِ فَيَقُولُ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلَانًا
فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوْضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَيَقُولُ إِنِّي أَبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضُهُ فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِى في أهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضُوهُ فَيُبْغِضُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ تُوضَعُ
لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الْأَرْضِ .
৩৮৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরীল (আ)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাস। অতঃপর জিবরীল (আ) তাকে ভালোবাসেন এবং আসমানবাসীদের মাঝে ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, সুতরাং তোমরাও তাকে ভালোবাস। অতঃপর সে পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে যায়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের আর একটি বর্ণনায় আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন: আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাস। অতঃপর জিবরীল (আ) তাকে ভালোবাসেন এবং আসমানবাসীদের মাঝে ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, সুতরাং তোমরাও তাকে ভালোবাস। অতঃপর পৃথিবীতে সে জনপ্রিয় হয়ে যায়। আর যখন তিনি (আল্লাহ) কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ঘৃণা করি, সুতরাং তুমিও তাকে ঘৃণা কর। অতঃপর জিবরীল তাকে ঘৃণা করেন এবং আসমানবাসীদের মাঝে ঘোষণা করে বলেন: আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, কাজেই তোমরাও তাকে ঘৃণা কর, অতঃপর আসমানবাসীরা তাকে ঘৃণা করতে থাকে এবং পৃথিবীতেও তাকে ঘৃণিত লাঞ্ছিত বানিয়ে দেয়া হয়।
۳۸۸- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلاً عَلَى سَرِيَّةٍ فَكَانَ يَقْرَأُ لِأَصْحَابِهِ فِي صَلَاتِهِمْ فَيَخْتِمُ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذَلِكَ لِرَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ
سَلُوهُ لِأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذَلِكَ؟ فَسَأَلُوهُ فَقَالَ لِأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمَنِ فَأَنَا أَحِبُّ أَنْ أَقْرَأَ بِهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْبِرُوهُ أَنَّ اللهَ تَعَالَى يُحِبُّهُ – متفق عليه .
৩৮৮। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে একটি ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর অধিনায়ক বানিয়ে পাঠান। সে তার সাথীদের নামাযে কিরাআত পড়ত এবং প্রতিটি কিরাআতে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ (সূরা আল ইখলাস) পড়ে শেষ করত। অতঃপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ ব্যাপারটা জানাল। তিনি বলেন: তোমরা তাকে জিজ্ঞেস কর, কেন সে এরূপ করত? তারা তাকে জিজ্ঞেস করল। সে বলল, এ সূরাতে আল্লাহর গুণগান ও মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আমি তা পড়তে ভালোবাসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তাকে জানিয়ে দাও, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ও তাকে ভালোবাসেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অনুচ্ছেদ: ৪৮ – সৎ লোক, দুর্বল ও মিসকীনদের কষ্ট দেয়ার বিরুদ্ধে সতর্কীকরণ
সৎ লোক, দুর্বল ও মিসকীনদের কষ্ট দেয়ার বিরুদ্ধে সতর্কীকরণ।
قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا.
মহান আল্লাহ বলেন:
“যারা ঈমানদার নর-নারীদের কষ্ট দেয় এমন কোন অপরাধের জন্য যা তারা করেনি, তারা মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।” (সূরা আল-আহযাব: ৫৮)
وَقَالَ تَعَالَى : فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلا تَقْهَرُ وَأَما السَّائِلَ فَلا تَنْهَرْ .
“কাজেই আপনি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবেন না এবং ভিক্ষুককে ভর্ৎসনা করবেন না।” (সূরা আদ্দুহা: ৯, ১০)
এ পর্যায়ে বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে পূর্ব অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত হাদীস। তাতে বলা হয়েছেঃ “যে আমার বন্ধুর সাথে দুশমনি করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।” এ পর্যায়ে সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) বর্ণিত হাদীস “মুলাতাফাতিল ইয়াতীম” অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “হে আবু বাক্স! তুমি যদি তাদের (ইয়াতীমদের) অসন্তুষ্ট কর, তাহলে তুমি তোমার রবকে অসন্তুষ্ট করলে”।
۳۸۹ – عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ يُطْلُبُهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكْبُهُ عَلَى
وَجْهِهِ فِي نَارِ جهنم رواه مسلم .
৩৮৯। জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল, সে আল্লাহর দায়িত্বে এসে গেল। অতঃপর আল্লাহ যেন তাঁর দায়িত্বের ব্যাপারে তোমাদের কোন কিছু (অসদ্ব্যবহারের) দাবি না করেন। কেননা তিনি যখন কাউকে তাঁর দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং তাকে যদি এর বিপরীত পান, তাহলে তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
প্রথম খণ্ড সমাপ্ত