জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

রিয়াদুস সালেহীন – ২য় খন্ড

অন্তর্গতঃ আল হাদিস, বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত), বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত), রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত), রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
Share on FacebookShare on Twitter

রিয়াদুস সালেহীন – দ্বিতীয় খণ্ড

ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়াহ আন-নববী (রহ)


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


রিয়াদুস সালেহীন

দ্বিতীয় খণ্ড

ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া আন-নববী (র)

অনুবাদ

মাওলানা শামছুল আলম খান
মাওলানা সাঈদ আহমদ
মাওলানা আবদুল মান্নান তালিব

সম্পাদনা

মাওলানা আবদুল মান্নান তালিব
মাওলানা মোঃ আতিকুর রহমান
মাওলানা মুহাম্মাদ মূসা

প্রকাশক

ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া

প্রকাশকের কথা

ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া আন্-নববী (র) সপ্তম হিজরী শতকের একজন স্বনামধন্য হাদীসবিশারদ। তাঁর উন্নত চরিত্র ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন তাঁকে সে যুগের মুসলিম সমাজে মর্যাদার আসন দিয়েছিলো। আল্লাহর রাসূল (সা)-এর জীবনধারাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তিনি সাদাসিধা জীবন-যাপন করতেন। তিনি পদ, অর্থ-সম্পদ বা সুনামের জন্য লালায়িত ছিলেন না। তিনি কখনো সরকারী সাহায্য গ্রহণ করেননি। তিনি কারো কোন দানও গ্রহণ করেননি। আল্লাহর ইবাদাত এবং ইসলামের প্রচার ছিলো তাঁর জীবনের মিশন।

পঁয়তাল্লিশ বছরের জীবনে তিনি বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছেঃ (১) সহীহ বুখারীর শারহে কিতাবুল ঈমান, (২) আল-মিনহাজ ফী শারহে মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ, (৩) কিতাবুর রাওদা, (৪) শারহে মুহায্যাব, (৫) তাহযীবুল আসমা ওয়াস সিফাত, (৬) কিতাবুল আযকার, (৭) ইরশাদ ফী ‘উলুমিল হাদীস, (৮) কিতাবুল মুবহামাত, (৯) শারহে সহীহ বুখারী, (১০) শারহে সুনানে আবী দাউদ, (১১) তাবাকাতে ফুকাহায়ে শাফি’ঈয়া, (১২) রিসালাহ ফী কিসমাতিল গানাইম, (১৩) ফাতাওয়া, (১৪) জামিউস সুন্নাহ, (১৫) খুলাসাতুল আহকাম, (১৬) মানাকিবুশ শাফি’ঈ, (১৭) বুস্তানুল আরেফীন, (১৮) মুখতাসার উসুদুল গাবাহ, (১৯) রিসালাতুল ইসতিহবাবিল কিয়াম লিআহলিল ফাদল এবং (২০) রিয়াদুস সালেহীন।

রিয়াদুস সালেহীন সহীহ হাদীস গ্রন্থগুলো থেকে বাছাই করে নেয়া এক হাজার নয় শত তিনটি হাদীসের একটি সংকলন। দৈনন্দিন জীবনের পাথেয় হিসেবেই ইমাম নববী (র) এগুলো চয়ন করেন। নৈতিক চরিত্র গঠন থেকে শুরু করে জীবনের ব্যবহারিক দিকগুলো বিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা রয়েছে এই হাদীসগুলোতে। এই সংকলনটি একজন মুমিনকে খাঁটি মুসলিম জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া, চৌদ্দ শত পাঁচ হিজরী সনের রমযান মাসে আমরা রিয়াদুস সালেহীনের বাংলা অনুবাদের প্রথম খণ্ড প্রকাশ করতে পেরেছিলাম। তাঁরই অনুগ্রহে চৌদ্দ শত ছয় হিজরী সনের রমযান মাসে আমরা এই মূল্যবান গ্রন্থটির দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরেছি। এবার প্রকাশিত হচ্ছে এর পঞ্চদশ সংস্করণ। এই গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ, সম্পাদনা, প্রকাশনা এবং মুদ্রণে যার যতটুকু সময় ও শক্তি-সামর্থ্য নিয়োজিত হয়েছে আল্লাহ তা তাঁর দীনের খেদমত হিসেবে কবুল করুন, মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের দরবারে এটাই আমাদের আন্তরিক ফরিয়াদ।

কে কতটুকু অনুবাদ করেছেন:

১. মাওলানা মুহাম্মদ শামছুল আলম খান – ৩৯১-৫৪৩ নং হাদীস

২. মাওলানা সাঈদ আহমদ – ৫৪৪-৮১৬ নং হাদীস

৩. মাওলানা আবদুল মান্নান তালিব – ৮১৭-৮৯৩ নং হাদীস

بسم الله الرحمن الرحيم

সূচীপত্র

  1. অনুচ্ছেদ: ৪৯ – মানুষের বাহ্যিক কাজের উপর শরয়ী নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে; আর তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর উপর সমর্পিত
  2. অনুচ্ছেদ: ৫০ – আল্লাহর ভয়
  3. অনুচ্ছেদ: ৫১ – আল্লাহর উপর আশা-ভরসা
  4. অনুচ্ছেদ: ৫২ – আল্লাহর কাছে আশা ও সুধারণা করার ফযীলাত
  5. অনুচ্ছেদ: ৫৩ – ভয়ভীতি ও আশা ভরসা একত্র হওয়া
  6. অনুচ্ছেদ: ৫৪ – মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার ফযীলাত ও তাঁর প্রতি আগ্রহ
  7. অনুচ্ছেদ : ৫৫ – পার্থিব জীবনে কৃষ্ণসাধনার (যুহদ) ফযীলাত, অল্পে তুষ্ট থাকতে উৎসাহদান এবং দারিদ্র্যের ফযীলাত
  8. অনুচ্ছেদ: ৫৬ – অনাহারে থাকা, নিরাসক্ত জীবন যাপন, খাদ্য, পানীয় ও পোশাক-আশাকে অল্পে তুষ্টি এবং লালসা ত্যাগের ফযীলাত
  9. অনুচ্ছেদ : ৫৭ – অল্পে তুষ্টি, মুখাপেক্ষীহীনতা, জীবনযাত্রায় ও সংসার খরচে মিতব্যয়ী হওয়া, নিষ্প্রয়োজনে যাজ্ঞা করা নিন্দনীয়
  10. অনুচ্ছেদ: ৫৮ – বিনা প্রার্থনায় ও নির্লোভে কিছু গ্রহণ করা বৈধ
  11. অনুচ্ছেদ: ৫৯ – নিজ শ্রমে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহের প্রতি উৎসাহ প্রদান, যাজ্ঞা করা থেকে পবিত্র থাকা এবং দান করার জন্য অগ্রবর্তী হওয়া
  12. অনুচ্ছেদ: ৬০ – আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে কল্যাণকর উৎসসমূহে খরচ করা এবং দানশীলতা ও বদান্যতা
  13. অনুচ্ছেদ: ৬১ – কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা নিষিদ্ধ
  14. অনুচ্ছেদ: ৬২ – ত্যাগ স্বীকার, অন্যকে অগ্রাধিকার প্রদান ও সহমর্মিতা
  15. অনুচ্ছেদ: ৬৩ – পরকালীন জিনিসের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ এবং কল্যাণকর ও বরকতপূর্ণ জিনিস লাভের আগ্রহ পোষণ
  16. অনুচ্ছেদ : ৬৪ – কৃতজ্ঞ ধনীর মর্যাদা। তাঁর পরিচয় এই যে, তিনি ন্যায়সংগতভাবে মাল গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে তা ব্যয় করেন
  17. অনুচ্ছেদ: ৬৫ – মৃত্যু স্মরণ ও আশাকে ক্ষুদ্র রাখা
  18. অনুচ্ছেদ: ৬৬ – পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা উত্তম এবং যিয়ারতকারী যা বলবে
  19. অনুচ্ছেদ: ৬৭ – বিপদে পড়ে মৃত্যু কামনা করা নিষেধ। তবে দীনদারি বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা করলে তা কামনা করাতে দোষ নেই
  20. অনুচ্ছেদ: ৬৮ – ধার্মিকতা অবলম্বন এবং সন্দেহমূলক জিনিস পরিহার করা সম্পর্কে
  21. অনুচ্ছেদ : ৬৯ – যুগের বিপর্যয় ও মানুষের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে নিঃসংগ জীবন যাপন উত্তম। দীন পালনে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া, হারাম ও সন্দেহযুক্ত বিষয় ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ার আশংকা
  22. অনুচ্ছেদ: ৭০ – জনসাধারণের সাথে ওঠা-বসা ও মেলামেশা করা, তাদের সভা-সমিতিতে ও উত্তম বৈঠকাদিতে হাযির হওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া, অভাবীর সাহায্যে এগিয়ে আসা, অজ্ঞদের সঠিক পথ প্রদর্শন, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা, অন্যকে কষ্ট না দেয়া এবং কষ্ট পেয়েও ধৈর্যধারণ ইত্যাদির ফযীলাত।
  23. অনুচ্ছেদ: ৭১ – মুসলিমদের সাথে বিনয় ও নম্রতাপূর্ণ ব্যবহার করা
  24. অনুচ্ছেদঃ ৭২ – অহংকার ও অহমিকা হারাম
  25. অনুচ্ছেদ ৭৩ – সচ্চরিত্র সম্পর্কে
  26. অনুচ্ছেদ: ৭৪ – সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতা
  27. অনুচ্ছেদ: ৭৫ – ক্ষমা প্রদর্শন ও অজ্ঞ-মূর্খদের সযত্নে এড়িয়ে চলা
  28. অনুচ্ছেদ: ৭৬ – কষ্ট-যাতনার মুখে সহনশীল হওয়া
  29. অনুচ্ছেদঃ ৭৭ – শরী’আতের মর্যাদাপূর্ণ বিধান লংঘনের বেলায় অসন্তোষ প্রকাশ এবং আল্লাহর দীনের খাতিরে প্রতিশোধ গ্রহণ
  30. অনুচ্ছেদ: ৭৮ – জনগণের সাথে শাসক কাজেকর্মে নম্রতা অবলম্বন করবে, তাদেরকে ভালোবাসবে, তাদেরকে সদুপদেশ দেবে এবং তাদেরকে প্রতারিত করবে না, কঠোরতা করবে না, তাদের কল্যাণ সাধনে ও প্রয়োজনপূরণে অমনোযোগী হবে না
  31. অনুচ্ছেদ: ৭৯ – ন্যায়পরায়ণ শাসক
  32. অনুচ্ছেদ ৮০ – শাসকের পাপযুক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং তাদের পাপযুক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা হারাম
  33. অনুচ্ছেদ : ৮১ – রাষ্ট্রীয় পদ প্রার্থনা নিষিদ্ধ। উক্ত পদের জন্য মনোনীত না হলে বা তার প্রতি মুখাপেক্ষী না হলে তা পরিহার করা উচিৎ
  34. অনুচ্ছেদঃ ৮২ – শাসক ও বিচারক প্রমুখকে সরকারী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উত্তম সভাসদ নিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান এবং নিকৃষ্ট সভাসদ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কীকরণ
  35. অনুচ্ছেদ: ৮৩ – যে লোক কোন সরকারী পদ, বিচারকের পদ ইত্যাদির প্রার্থী বা আকাঙ্ক্ষী হয়ে নিজেকে পেশ করে, তাকে উক্ত পদে নিয়োগদান নিষিদ্ধ
  36. কিতাবুল আদাব (শিষ্টাচার)
    1. অনুচ্ছেদ : ১ – লজ্জাশীলতা ও তার মাহাত্ম্য এবং তা সৃষ্টির জন্য উৎসাহ প্রদান
    2. অনুচ্ছেদ: ২ – গোপন বিষয় প্রকাশ না করা
    3. অনুচ্ছেদ: ৩ – ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন করা
    4. অনুচ্ছেদ: ৪ – কোন উত্তম কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ না করে সব সময় করতে থাকা
    5. অনুচ্ছেদ: ৫ – সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা ও কোমল ব্যবহার করা
    6. অনুচ্ছেদ: ৬ – শ্রোতা সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে তার বুঝার সুবিধার্থে বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করা উত্তম
    7. অনুচ্ছেদ: ৭ – সংগীর কথা অপর সংগীগণ মনোযোগ দিয়ে শুনবে যদি তা গর্হিত কথা না হয় এবং উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে উপদেশদানকারী কর্তৃক উপস্থিত শ্রোতাদের নীরব করা
    8. অনুচ্ছেদ: ৮ – ওয়াজ-নসীহত করা ও তাতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা
    9. অনুচ্ছেদ: ৯ – ভাব-গাম্ভীর্য ও প্রশান্ত অবস্থা
    10. অনুচ্ছেদ: ১০ – নামায, জ্ঞানার্জন ও যাবতীয় ইবাদাতে ধীরে-সুস্থে ও গাম্ভীর্যের সাথে আসবে
    11. অনুচ্ছেদ: ১১ – মেহমানের তা’যীম ও সাদর অভ্যর্থনা
    12. অনুচ্ছেদ: ১২ – উত্তম কর্মের জন্য সুসংবাদ ও মুবারকবাদ দেয়া
    13. অনুচ্ছেদ: ১৩ – বন্ধুকে বিদায় দেয়া, বিদায়কালে তাকে উপদেশ দেয়া, তার জন্য দু’আ করা এবং তার কাছে দু’আ চাওয়া
    14. অনুচ্ছেদ: ১৪ – ইস্তিখারা ও পরামর্শ সম্পর্কে
    15. অনুচ্ছেদ: ১৫ – ঈদগাহ, রোগী দেখা, হজ্জ, জিহাদ, জানাযার নামায ও অনুরূপ কাজে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে প্রত্যাবর্তন মুস্তাহাব
    16. অনুচ্ছেদ: ১৬ – সকল উত্তম কাজ ডান থেকে শুরু করা মুস্তাহাব
  37. কিতাব আদাবিত তা’আম (পানাহারের নিয়ম-কানুন)
    1. অনুচ্ছেদ: ১ – পানাহারের শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা
    2. অনুচ্ছেদ: ২ – খাদ্যের মধ্যে ছিদ্রান্বেষণ না করা ও খাদ্যের প্রশংসা করা
    3. অনুচ্ছেদ: ৩ – রোযাদারের সামনে খাবার এলে এবং সে রোযা ভাংতে না চাইলে যা বলবে
    4. অনুচ্ছেদ: ৪ – যাকে দাওয়াত দেয়া হয় তার সাথে আরেকজন শামিল হলে যা বলতে হবে
    5. অনুচ্ছেদ: ৫ – নিজের সামনে থেকে খাওয়া এবং যে লোক আহারের নিয়ম-কানুন জানে না তাকে তা শেখানো
    6. অনুচ্ছেদ: ৬ – সংগীদের অনুমতি ছাড়া দুই খেজুর ইত্যাদি এক গ্রাসে খাওয়া নিষেধ
    7. অনুচ্ছেদ: ৭ – কোন ব্যক্তি আহার করে তৃপ্ত না হলে কি করবে বা কি বলবে
    8. অনুচ্ছেদ: ৮ – পাত্রের একপাশ থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ
    9. অনুচ্ছেদ: ৯ – হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ
    10. অনুচ্ছেদ: ১০ – তিন আঙ্গুলে খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যের পাত্র চেটে খাওয়া ইত্যাদি
    11. অনুচ্ছেদ: ১১ – আহারে অধিক সংখ্যক হাতের সমাবেশ হওয়া এবং সকলেই একত্রে খাওয়ার মাহাত্ম্য
    12. অনুচ্ছেদ: ১২ – পানি পান করার নিয়ম-কানুন
    13. অনুচ্ছেদ : ১৩ – মশক ইত্যাদির মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা মাকরূহ এবং তা মাকরূহ তানযীহী, মাকরূহ তাহরীমী নয়
    14. অনুচ্ছেদ: ১৪ – পানীয়তে নিঃশ্বাস ফেলা মাকরূহ
    15. অনুচ্ছেদ: ১৫ – দাঁড়িয়ে পানি পান করা জায়েয, তবে বসে পান করা উত্তম ও পূর্ণ (তৃপ্তিদায়ক)
    16. অনুচ্ছেদ : ১৬ – যে ব্যক্তি পান করায় তার সকলের শেষে পান করাই উত্তম
    17. অনুচ্ছেদ: ১৭ – সকল প্রকার পাক পাত্রে পান করা জায়েয
  38. কিতাবুল লিবাস (পোশাক-পরিচ্ছদ)
    1. অনুচ্ছেদ: ১ – সাদা কাপড় পরা উত্তম। লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রং-এর কাপড় পরাও জায়েয। রেশম ব্যতীত সূতী, উল, পশমী ইত্যাদি যাবতীয় কাপড় পরিধান করা জায়েয
    2. অনুচ্ছেদ: ২ – জামা পরা মুস্তাহাব
    3. অনুচ্ছেদ: ৩ – জামা ও আস্তিনের দৈর্ঘ্যের বর্ণনা
    4. অনুচ্ছেদ: ৪ – বিনয় ও নম্রতা প্রকাশার্থে উত্তম পোশাক পরা পরিহার করা মুস্তাহাব
    5. অনুচ্ছেদ: ৫ – পোশাক-পরিচ্ছদে মিতব্যয়িতা অবলম্বন করা মুস্তাহাব। প্রয়োজন ছাড়া ও শরী’আতের চাহিদা ব্যতীত তুচ্ছ পোশাক পরিধান করবে না
    6. অনুচ্ছেদ: ৬ – পুরুষের জন্য রেশমের কাপড় ব্যবহার এবং তাতে বসা বা হেলান দেয়া হারাম। মহিলাদের জন্য তা পরিধান করা বৈধ
    7. অনুচ্ছেদ: ৭ – চর্মরোগের কারণে রেশমী বস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি
    8. অনুচ্ছেদ: ৮ – বাঘের চামড়ায় বসা ও তার উপর সওয়ার হওয়া নিষেধ
    9. অনুচ্ছেদ: ৯ – নতুন কাপড়, জুতা ইত্যাদি পরিধান করার সময় যা বলবে
    10. অনুচ্ছেদ: ১০ – পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করা
  39. আদাবুন নাওম (ঘুমানোর আদব-কায়দা)
    1. অনুচ্ছেদ : ১ – ঘুম, কাত হয়ে শোয়া, বসা, বৈঠকাদিতে একত্রে বসার আদব-কায়দা ও স্বপ্ন
    2. অনুচ্ছেদ: ২ – সতর উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকলে এক পায়ের উপর অপর পা তুলে চিৎ হয়ে শোয়া বৈধ। চার জানু হয়ে বসা এবং দুই হাঁটু উঁচু করে বসাও বৈধ
    3. অনুচ্ছেদ: ৩ – মজলিস ও একত্রে বসার আদব
    4. অনুচ্ছেদ: ৪ – স্বপ্ন ও এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলী
  40. সালামের আদান-প্রদান
    1. অনুচ্ছেদ: ১ – সালামের মাহাত্ম্য এবং তার ব্যাপক প্রসারের নির্দেশ
    2. অনুচ্ছেদ: ২ – সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি
    3. অনুচ্ছেদ: ৩ – সালামের নিয়ম-পদ্ধতি
    4. অনুচ্ছেদ: ৪ – কারো সাথে বারবার সাক্ষাত হলে তাকে বারবার সালাম করা মুস্তাহাব। যেমন কারোর কাছে গিয়ে ফিরে আসা হল, সংগে সংগে আবার যাওয়া হল অথবা দু’জনের মধ্যে গাছের বা অন্য কিছুর আড়াল সৃষ্টি হল
    5. অনুচ্ছেদ: ৫ – ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম করা মুস্তাহাব
    6. অনুচ্ছেদ: ৬ – শিশু-কিশোরদের সালাম করা
    7. অনুচ্ছেদ: ৭ – স্বামীর স্ত্রীকে সালাম করা, মাহরাম নারীদের সালাম করা এবং অনাচারের আশংকা না থাকলে অপরিচিতা নারীদের সালাম করা। একই শর্তে নারীদের পুরুষদের সালাম করা
    8. অনুচ্ছেদ: ৮ – কাফিরকে প্রথমে সালাম করা হারাম এবং তাদেরকে জবাব দেবার পদ্ধতি। যে মজলিসে মুসলিম ও কাফির উভয়ই থাকে সেখানে সালাম করা মুস্তাহাব
    9. অনুচ্ছেদ: ৯ – কোন মজলিস বা সাথী থেকে বিদায় নেবার জন্য দাঁড়িয়ে সালাম করা মুস্তাহাব
    10. অনুচ্ছেদ: ১০ – অনুমতি প্রার্থনা ও তার নিয়ম
    11. অনুচ্ছেদ : ১১ – যদি অনুমতিপ্রার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কে, তবে সুন্নাত পদ্ধতি হচ্ছে- এর জবাবে যেন সে বলেঃ আমি অমুক, সে যেন নিজের নাম বা ডাকনাম ইত্যাদি বলে এবং যেন ‘আমি’ বা এ ধরনের অস্পষ্ট কিছু না বলে
    12. অনুচ্ছেদ: ১২ – হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া মুস্তাহাব এবং আলহামদু লিল্লাহ না বললে জবাব দেয়া মাকরূহ। হাঁচি দেয়া, হাঁচির জবাব দেয়া ও হাই তোলার নিয়ম
    13. অনুচ্ছেদ: ১৩ – কারো সাথে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করা এবং হাসিমুখে মিলিত হওয়া, নেক লোকের হাতে চুমো দেয়া, নিজের ছেলেকে সস্নেহে চুমো দেয়া এবং সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারীর সাথে গলাগলি করা মুস্তাহাব কিন্তু মাথা নোয়ানো মাকরূহ

অনুচ্ছেদ: ৪৯ – মানুষের বাহ্যিক কাজের উপর শরয়ী নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে; আর তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর উপর সমর্পিত

মানুষের বাহ্যিক কাজের উপর শরয়ী নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে; আর তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর উপর সমর্পিত।

قَالَ الله تَعَالَى : فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاة وأتوا الزَّكَاةَ فَخَلُوا سَبِيلَهم.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“অতঃপর তারা যদি তাওবা করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয়, তবে তোমরা তাদের পথ ছেড়ে দাও।” (সূরা আত-তাওবা : ৫)

٣٩٠- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال أمرت أن أقاتل النَّاسِ حَتَّى يَشْهَدُوا أن لا اله الا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ الله ويُقِيمُوا الصلاة ويؤتوا الزكاة فاذا فعلوا ذلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّ الْإِسْلامِ وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ تَعَالَى – متفق عليه.

৩৯০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত (আল্লাহর পক্ষ থেকে) লোকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে আদিষ্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আর তারা নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের হক (অপরাধের শাস্তি) তাদের উপর থাকবে। আর তাদের প্রকৃত ফায়সালা আল্লাহ তা’আলার উপর সমর্পিত।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

۳۹۱- وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ طارِقِ بْنِ أَشَيْم رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ قَالَ لا اله الا اللهُ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَكَفَرَ بمَا يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللهِ حَرَمَ مَا لَهُ وَدَمَهُ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ تَعَالى – مسلم .

৩৯১। আবু আবদুল্লাহ তারিক ইবনে উশায়েম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যেসব বস্তুর পূজা করা হয়, সে সেগুলোকে অস্বীকার করে, তার জান ও মাল নিরাপদ হয়ে গেল; আর তার হিসাব মহান আল্লাহর উপর সমর্পিত।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۳۹۲- وَعَنْ أَبِي مَعْبَدِ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْودِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَيْتَ إِنْ لَقِيتُ رَجُلًا مِنَ الْكُفَّارِ فَاقْتَتَلْنَا فَضَرَبَ إحْدَى يَدَى بِالسَّيْفِ فَقَطعَهَا ثُمَّ لَاذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ فَقَالَ أَسْلَمْتُ اللَّهِ أَقْتُلَهُ يَا رسُولَ اللهِ بَعْدَ أَنْ قَالَهَا فَقَالَ لَا تَقْتُلَهُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَطَعَ إِحْدَى بَدَى ثُمَّ قَالَ ذَلِكَ بَعْدَ ما قطعها فَقَالَ لا تَقْتُلَهُ فَإِنْ قَتَلْتَهُ فَإِنَّهُ بِمَنْزِلَتِكَ قَبْلَ أَنْ تَقْتُلَهُ وَإِنَّكَ بمنزلته قبل أن يقول كلمته التي قال متفق عليه

৩৯২। আবু মা’বাদ মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম: আপনি কি বলেন, যদি কোন কাফিরের সাথে আমার মুকাবিলা হয় এবং পারস্পরিক যুদ্ধে সে তরবারির আঘাতে আমার দুই হাতের একটি কেটে ফেলে, অতঃপর সে আমার পাল্টা আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য একটি গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে বলে, আমি আল্লাহর জন্য ইসলাম গ্রহণ করলাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার ঐ কথা বলার পর আমি কি তাকে হত্যা করব? তিনি বলেন: তাকে হত্যা করো না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। সে তো আমার দুই হাতের একটি কেটেছে, অতঃপর এ কথা বলেছে। তিনি বলেন: তাকে হত্যা করো না। কেননা তুমি যদি তাকে হত্যা কর, তাহলে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে যে মর্যাদায় ছিলে, সে সেই মর্যাদায় পৌঁছে যাবে; আর যে কালেমা সে পাঠ করেছে, সেই কালেমা পাঠের পূর্বে সে যে স্তরে ছিল, তুমি (তাকে হত্যা করলে) সেই স্তরে নেমে যাবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। انه بمنزلك কথার অর্থ হলো: ইসলাম গ্রহণ করার কারণে সে ব্যক্তির রক্তপাত হারাম হয়ে গেছে। আর এان بمنزلته কথার অর্থ হলো: তুমি তাকে হত্যা করার দরুন তার ওয়ারিসদের পক্ষ থেকে কিসাসস্বরূপ তোমার রক্ত প্রবাহিত করা তাদের জন্য বৈধ হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি তার মতো কাফির হয়ে যাবে না। আল্লাহই ভালো জানেন।

٣٩٣- وَعَنْ أَسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إلى الحرقَة مِنْ جُهَيْنَة فَصَبِّحْنَا الْقَوْمَ عَلَى مِيَاهِهِمْ وَلَحِقْتُ أَنَا وَرَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ رَجُلاً مِنْهُمْ فَلَمَّا غَشَيْنَاهُ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَكَفَّ عَنْهُ الأنصاري وطعنته برمحى حَتَّى قَتَلْتُهُ فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ بَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيِّ صلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِي يَا أَسَامَةُ أَقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قُلْتُيا رَسُولَ الله أَنَّمَا كَانَ مُتَعَوداً فَقَالَ اقْتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمَا زَالَ يُكرِّرُهَا عَلَى حَتَّى تَمَنَّبْتُ إِنِّي لَمْ أَكُنْ أَسْلَمْتُ قَبْلَ ذَلِكَ الْيَوْمِ متفق عليه.

৩৯৩। উসামা ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের খেজুরের বাগানে প্রেরণ করেন। আমরা প্রত্যুষে তাদের পানির ঝরণা ঘেরাও করি। অতঃপর আমি ও জনৈক আনসারী তাদের এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলি। যখন আমরা তার উপর চড়াও হই অমনি সে বলে উঠলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্। (এ কথা শুনেই) আনসারী থেমে যায়; আর আমি আমার বর্শার আঘাতে তাকে হত্যা করি। অতঃপর আমরা মদীনায় ফিরে এলে সেই হত্যার ঘটনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কানে পৌঁছল। তিনি আমাকে বলেনঃ হে উসামা। সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা তো ছিল জান বাঁচানোর জন্য। তিনি বলেনঃ সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? অতঃপর তিনি বারবার এ কথা বলতে লাগলেন, এমনকি আমি আক্ষেপ করতে লাগলাম যে, আমি যদি ইতিপূর্বে মুসলিম না হতাম (তাহলে এই গুনাহ আমার ভাগ্যে লেখা হতো না)।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

وفي رواية فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَقَتَلْتَهُ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّمَا قَالَهَا خَوْفًا مِنَ السَّلَاحِ قَالَ أَفَلَا شَقَقْتَ عَنْ قَلْبِهِ حَتَّى تَعْلَمَ أَقَالَهَا أَمْ لَا فَمَا زَالَ يُكَبِّرُهَا حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنِّي أَسْلَمْتُ يَوْمَئِذٍ .

অপর এক বর্ণনায় আছে: অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল, আর তুমি তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো তরবারির ভয়ে এ কথা বলেছে। তিনি বলেন: তুমি তার অন্তর ফেড়ে দেখলে না কেন, তাহলে জানতে পারতে সে তা তার অন্তর থেকে বলেছে কি না। তিনি বরাবর এ কথা বলতে লাগলেন, এমনকি আমি আক্ষেপ করতে লাগলাম, আমি যদি আজই মুসলিম হতাম।

الحرقة প্রসিদ্ধ জুহাইনা গোত্রের একটি উপত্যকার নাম। متعوذا অর্থ হলো হত্যা থেকে বাঁচার জন্য এ কালেমা পড়েছে; কালেমাতে বিশ্বাসী হয়ে নয়।

٣٩٤ – وَعَنْ جُنْدَبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بَعْثًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ إِلَى قَوْمٍ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَأَنَّهُمُ الْتَقَوْا فَكَانَ رَجُلٌ منَ الْمُشْرِكِينَ إِذا شَاءَ أَنْ يَقْصِدَ إِلى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ قَصَدَ لَهُ فَقَتَلَهُ وَأَنْرَجُلاً مِنَ الْمُسْلِمِينَ قَصَدَ غَفْلَتَهُ وَكُنَّا نَتَحَدِّثُ أَنَّهُ أَسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ فَلَمَّا رَفَعَ السيف قال لا اله الا اللهُ فَقَتَلَهُ فَجَاءَ الْبَشِيرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَالَهُ وَأَخْبَرَهُ حَتَّى أَخْبَرَهُ خَبَرَ الرَّجُلِ كَيْفَ صَنَعَ فَدَعَاهُ فَسَالَهُ فَقَالَ لِمَ قَتَلْتَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ الله أَوْجَعَ فِي الْمُسْلِمِينَ وَقَتَلَ فُلَانًا وَفُلَانًا وَسَمَّى لَهُ نَفْرًا وَإِنِّي حَمَلْتُ عَلَيْه فلما رأى السيف قال لا اله الا اللهُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقَتَلْتَهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَكَيْفَ تَصْنَعُ بِلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ اسْتَغْفِرْ لِي قَالَ وَكَيْفَ تَصْنَعُ بِلا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَجَعَلَ لَا يَزِيدُ عَلَى أَنْ يَقُولَ كَيْفَ تَصْنَعُ بِلا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ إِذَا جاءَتْ يَوْمَ القيامة – رواه مسلم .

৩৯৪। জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করলেন। তাদের মুকাবিলা হল। মুশরিকদের এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত সাহসী। সে মুসলিমদের যাকে পেতো তাকেই হত্যা করত। মুসলিমদের মধ্যে এক ব্যক্তি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, তিনি তো উসামা ইবনে যায়িদ। (সুযোগ পেয়ে) তিনি যখন তরবারি উঠান, সে বলে উঠলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। এতদসত্ত্বেও তিনি তাকে হত্যা করে ফেললেন। তারপর বিজয়ের সুসংবাদবাহক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলো। তিনি (পরিস্থিতি সম্পর্কে) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। সে সব অবহিত করলো, এমনকি সেই লোকটি কিরূপ করেছিল, তাও বললো। তিনি তাকে (উসামাকে) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। সে তো মুসলিমদের মাঝে সন্ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে। তিনি তাঁর নিকট কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন। (অতঃপর তিনি বললেন,) আমি (সুযোগ পেয়ে) যখন তাকে আক্রমণ করি সে তরবারি দেখে বলে উঠে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ। তিনি বলেন: কিয়ামাতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কী উত্তর দেবে? উসামা (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেন: কিয়ামাতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কী উত্তর দেবে? তিনি এর থেকে আর কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি (শুধু বলতে থাকলেন) যে, কিয়ামাতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কী জবাব দেবে?

ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٣٩٥ – وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُقْبَةَ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَابِ رَضِي اللهُ عَنْهُ يَقُولُ إِنْ نَاسًا كَانُوا يُؤْخَذُونَ بِالْوَحْيِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنَّ الْوَحْيَ قَدِ انْقَطَعَ وَإِنَّمَا تَأْخُذُكُمُ الْآنَ بِمَا ظَهَرَ لَنَا مِنْ أَعْمَالِكُمْ فَمَنْ أَظْهَرَ لَنَا خَيْرًا أمناء وَقَربْنَاهُ وَلَيْسَ لَنَا مِنْ سَرِيرَتِهِ شَى اللَّهُ يُحَاسِبُهُ فِي سريرته وَمَنْ أَظْهَرَ لَنَا سُوءًا لَمْ تَأْمَنْهُ وَلَمْ نُصَدِّقُهُ وَإِنْ قَالَ إِنَّ سَرِيرَتَهُ حَسَنَةٌ
رواه البخاري.

৩৯৫। আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মানুষকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করা হতো। আর এখন তো ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা এখন থেকে তোমাদের যাচাই করবো তোমাদের বাহ্যিক কাজ-কর্মের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভালো কাজের প্রকাশ ঘটাবে, আমরা তা বিশ্বাস করবো এবং তাকে নিকটবর্তী বলে গ্রহণ করে নেবো, আর তার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমাদের দেখার দরকার নেই। তার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আল্লাহ হিসাব নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ কাজের প্রকাশ ঘটাবে অর্থাৎ বাহ্যত মন্দ কাজ করবে, তবে সে যদিও বলে যে, তার আভ্যন্তরীণ অবস্থা খুবই ভালো, তবুও আমরা তার কথা মানবো না এবং তাকে বিশ্বাসও করবো না। [টিকা: যেমন কেউ কাউকে চপেটাঘাত করলো; কিন্তু মুখে বললো, আমি মনে মনে তাকে খুবই ভালোবাসি। তাকে তো বন্ধু বলা যায় না।]

ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৫০ – আল্লাহর ভয়

আল্লাহর ভয়।

মহান আল্লাহ বলেন:

قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ.

“আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।” (সূরা আল-বাকারাঃ ৪০)

وقَالَ تَعَالَى : إِنْ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ

“তোমার প্রতিপালকের মার বড়ই কঠোর।” (সূরা আল বুরূজঃ ১২)

وقَالَ تَعَالَى : وَيُحَذِرَكُمُ اللهُ نَفْسَهُ

“আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর সত্তার ভয় দেখান।” (অর্থাৎ আযাবের ভয় প্রদর্শন করেন) (সূরা আলে ইমরান: ৩০)

وقال تعالى : وكَذَلِكَ أَخُذُ رَبِّكَ إِذا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ الهُمَّ شَدِيدٌ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ذَلِكَ يَوْمَ مَجْمُوعٌ لَهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَشْهُودٌ، وَمَا نُؤَخِّرُهُ إِلَّا لِأَجَلٍ مَعْدُوهُ يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ فَمِنْهُمْ شَفِي وَسَعِيدٌ. فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ.

“তোমার রবের পাকড়াও এরূপই হয়ে থাকে; তিনি আঘাত করেন জনপদসমূহে যখন তারা সীমালংঘন করে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক, অতিশয় কঠোর। আর এসব ঘটনায় তাঁর জন্য বড় উপদেশ বিদ্যমান, যে আখিরাতের আযাবকে ভয় করে। সেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে; এবং তা হলো সকলের উপস্থিতির দিন। আর আমি তো অতি সামান্য কালের জন্য অবকাশ দিয়ে রেখেছি। সেদিন কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবে না। কাজেই তাদের মধ্যে কতক তো হবে দুর্ভাগা এবং কতক হবে সৌভাগ্যবান। আর যারা দুর্ভাগা হবে, তারা তো আগুনে পতিত হবে; তার মধ্যে তাদের চিৎকার ও আর্তনাদ (শ্রুত) হতে থাকবে।” (সূরা হুদঃ ১০২-১০৬)

وَقَالَ تَعَالَى : يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أخيه. وأمه وأبيه، وصاحبته وبنيه لكل امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنَ يُغْنِيهِ

“সেদিন মানুষ তার ভাই থেকে, তার মা-বাপ ও স্ত্রী-পুত্র- পরিজন থেকে পলায়ন করবে। তাদের প্রত্যেকেই সেদিন এমন ব্যতিব্যস্ত হবে যে, কেউ কারো দিকে মনোযোগী হতে পারবে না।” (সূরা আবাসাঃ ৩৪-৩৭)

وقال تعالى : يَأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِن زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْ عَظِيمٌ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيدٌ.

“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিঃসন্দেহে কিয়ামাতের কম্পন ভীষণ ব্যাপার হবে। সেদিন তোমরা দেখতে পাবে স্তন্যদায়িনী নারীরা তাদের স্তন্যপায়ী সন্তানদের ভুলে যাবে এবং সকল গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করবে, আর মানুষকে দেখতে পাবে নেশাগ্রস্ত মাতালের মতো, অথচ তারা মাতাল নয়; বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর।” (সূরা আল-হজ্জঃ ১-২)

وقال تعالى : وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ

“আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য দু’টি উদ্যান থাকবে।” (সূরা আর-রাহমান: ৪৬)

وقال تعالى : وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ قَالُوا إِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِي أَهْلِنَا مُشْفِقِينَ فَمَنْ اللَّهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُومِ إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوهُ إِنَّهُ هُوَ البر الرحيم

“তারা পরস্পরের প্রতি মনোনিবেশ করে (কুশলাদি) জিজ্ঞাসা করবে। তারা বলবে, আমরা তো ইতোপূর্বে নিজেদের পরিবারে বড়ই ভীত থাকতাম। আল্লাহ আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের উষ্ণ আযাব থেকে রক্ষা করেছেন। আমরা ইতোপূর্বে তাঁকে ডাকতাম। নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল ও বড়ই দয়ালু।” (সূরা আত্ তুরঃ ২৫-২৮)

এ বিষয়ে আল কুরআনে বহু সংখ্যক আয়াত আছে। তার কিছু সংখ্যকের প্রতি ইঙ্গিত করাই উদ্দেশ্য এবং তা অর্জিত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রচুর হাদীসও আছে। আল্লাহ তাওফীক দিলে তার কিছু এখানে পেশ করব।

٣٩٦- عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ إِنْ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقَهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا نُطْفَةً ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذلكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِارْبَعِ كَلِمات بكتب رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِي أَوْ سَعِيدٌ قوالذي لا إلهَ غَيْرُهُ إِنْ أَحَدَكُمْ لِيَعْمَلُ بِعَمَل أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَل أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُها . متفق عليه

৩৯৬। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বসমর্থিত সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিন্ডে পরিণত হয়ে এই পরিমাণ সময় থাকে এবং পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় জমা রাখা হয়। অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁকে দেন এবং চারটি বিষয় লেখার আদেশ করা হয়। তা হলোঃ তার রিযক, তার হায়াত, তার আমল ও সে দুর্ভাগা হবে অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।

۳۹۷- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ الْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زَمَامٍ سَبْعُونَ الْفَ مَلَكَ يَجُرُوْنَهَا – رواه مسلم

৩৯৭। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, আবার প্রতিটি লাগামের জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে এবং তারা এ লাগাম ধরে টানবে।

ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

۳۹۸- وعن النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَرَجُلٌ يُوْضَعُ فِي اخمص قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ يَغْلِى مِنْهُمَا دِمَاعَهُ مَا يَرَى أَنْ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لا هُوَنُهُمْ عَذَابًا – متفق عليه

৩৯৮। নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামাতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির শান্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের উপর আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

۳۹۹ – وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنْ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذَهُ إِلَى رَكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلَى حُجْزَتِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ إِلَى تَرْقُوتِهِ – رواه مسلم .

৩৯৯। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জাহান্নামের আগুনে জাহান্নামীদের কারো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো গলা পর্যন্ত পুড়তে থাকবে (প্রত্যেকে নিজ নিজ গুনাহ অনুযায়ী শান্তিতে পতিত হবে)।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।

٤٠٠- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ حَتَّى يَغِيبَ أَحَدُهُمْ فِي رَشهِهِ إِلَى أَنْصَافِ أذنيه – متفق عليه

৪০০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মানুষ যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে, সেদিন তাদের কেউ কেউ তার নিজের ঘামে কানের অর্ধাংশ পর্যন্ত ডুবে যাবে।

আর-রাহু অর্থ ঘাম।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٤٠١ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَة مَا سَمِعْتُ مِثْلَهَا قَط فَقَالَ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كثيرا فغطى أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُجُوهَهُمْ وَلَهُمْ خَيْنٌ متفق عليه

৪০১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন যার অনুরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে পারতে, তবে নিশ্চয়ই খুব কম হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কাপড়ে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

وفي رواية بَلَغَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَصْحَابِهِ شَيْ فَخَطَبَ فَقَالَ عُرِضَتْ عَلَى الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ فِي الْخَيْرِ وَالشَّرِّ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ الضَحِكْتُمُ قَليلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا فَمَا أتَى عَلى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أَشَدُّ مِنْهُ غَطَوْا رُؤُوسَهُمْ وَلَهُمْ خَيْنٌ

অপর এক বর্ণনায় আছে। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কিছু শুনতে পেয়ে একটি ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেন: আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। সেদিনের মতো ভালো ও মন্দ আর কখনো দেখিনি। আমি এ ব্যাপারে যা জানি, তোমরাও যদি তা জানতে পারতে তবে অবশ্যই হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের উপর এদিনের মতো কঠিন দিন আর আসেনি। তাই তাঁরা তাঁদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন।

আল-খানীন অর্থ নাকের বাঁশির শব্দসহ ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করা।

٤٠٢ – وعن المقداد رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ تُدنَى الشَّمْسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارٍ ميل قَالَ سُلَيمُ بْنُ عَامِر الراوى عَنِ الْمِقْدَادِ فَوَاللَّهِ مَا أَدْرِي مَا يَعْنِي بِالْمِيلِ امسافَةَ الْأَرْضِ أَمِ الْمِيلَ الَّذِي تَكْتَحَلُ بِهِ الْعَيْنُ فَيَكُوْنُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رَكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إلى حقوتِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْحِمُهُ الْعَرَقُ الْجَامًا وَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بيده الى فيه – رواه مسلم

৪০২। মিকদাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: কিয়ামাতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এতো কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে মাত্র এক মাইলের ব্যবধানে অবস্থান করবে। এ হাদীসের রাবী সুলাইম ইবনে আমের (র) মিকদাদ (রা) থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর শপথ। আমি জানি না, মাইল বলতে এটা কি যমীনের দূরত্ব বুঝানোর মাইল বলা হয়েছে নাকি চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা বুঝানো হয়েছে? (রাসূল সা. আরো বলেনঃ) অতঃপর মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামের ভেতর ডুবতে থাকবে। তাদের মধ্যে কেউ গোড়ালী পর্যন্ত, কেউ হাঁটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর তাদের মধ্যে কাউকে ঘামের লাগাম পরানো হবে। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত দিয়ে তাঁর মুখের দিকে ইশারা করেন (অর্থাৎ কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে)।

ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

٤٠٣ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقْهُمْ فِي الْأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا وَيُلْحِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ أَذَانَهُمْ – متفق عليه .

৪০৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। কিয়ামাতের দিন মানুষের এত ঘাম বেরুবে যে, তা যমীনে সত্তর গজ উঁচু হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদেরকে ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٤٠٤ – وَعَنْهُ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَمِعَ وَجْبَةٌ فَقَالَ هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ هَذَا حَجَرٌ رَمِي بِهِ فِي النَّارِ مُنْدُ سَبْعِينَ خَرِيفًا فَهُوَ يَهْوِي فِي النَّارِ الآنَ حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا فَسَمِعْتُمْ وجبتها – رواه مسلم.

৪০৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি কোন বস্তুর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটা কিসের শব্দ তা কি তোমরা জান? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন: এটা একটা পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অদ্যাবধি তা জাহান্নামেই গড়াচ্ছিল এবং এখন গিয়ে তার গর্তে পতিত হয়েছে। তোমরা এর পতনের শব্দই শুনতে পেলে।

ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

٤٠٥ – وَعَنْ عَدِي بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ فَيَنظُرُ أَيْمَنَ منه فلا يرى إلا ما قدم وينظر أشامَ مِنْهُ فلا يرى إِلَّا مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلَا يرى إِلا النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَاتَّقُوا النَّار ولو بشق تمرة – متفق عليه

৪০৫। আদী ইবনে হাতিম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের প্রত্যেকের সাথে তার রব কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডাইনে তাকিয়ে তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না এবং বাঁয়ে তাকিয়েও তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না, আর সামনে তাকিয়ে তার চোখের সামনে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। তাই তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٤٠٦- وَعَنْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اني أرى مَا لا تَرَوْنَ أَطْتِ السَّمَاء وَحُقِّ لَهَا أَنْ تَبْطُ مَا فِيهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أصابع الا وملك واضع جَبْهَتَهُ سَاجِدا لله تَعَالَى وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لضحكتم قليلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَمَا تَلأَذْتُمْ بِالسَّنَاءِ عَلَى الْفُرْشِ وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى الصعدات تَجارُونَ إلى الله تعالى – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ.

৪০৬। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছো না। আকাশ উচ্চস্বরে শব্দ করছে, আর এর উচ্চস্বরে শব্দ করার অধিকার আছে। কেননা তাতে চার আংগুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, বরং ফেরেশতারা তাতে আল্লাহর জন্য সিজদায় তাদের কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর শপথ। আমি যা জানি, যদি তোমরা তা জানতে পারতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম কাঁদতে বেশি; আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বিছানায় শুয়ে আমোদ-আহলাদও করতে না এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বনে-জংগলে বেরিয়ে যেতে।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান।

٤٠٧- وَعَنْ أَبِي بَرْزَةَ براء ثُمَّ رَأَى نَضْلَةَ بْنِ عُبَيْدِ الْأَسْلَمِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَزُولُ قَدَمًا عَبْدٍ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَ فَعَلَ فِيْهِ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَعَنْ جسمه فيم أبلاه – رواه الترمذى وقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح

৪০৭। আবু বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আল আসলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবে: তার জীবনকাল কিরূপে অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কোন্ খাতে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরোনো করেছে।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٤٠٨- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَرَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اخْبَارَهَا) ثُمَّ قَالَ اتَدْرُونَ مَا أَخْبَارُهَا قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنْ أَخْبَارَهَا أَنْ تَشْهَدَ عَلَى كُلِّ عَبْدِ أَوْ أَمَةٍ بِمَا عَمِلَ عَلَى ظهرها تَقُولُ عَمِلت كذا وكذا في يوم كذا وكذا فهذه أَخْبَارُهَا – رواه الترمذي وقال حديث حسن

৪০৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সেদিন তা (যমীন) তার সমস্ত বিষয় বর্ণনা করবে” (সূরা আয ফিল্যাল: ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তোমরা কি জানো সেদিন যমীন কী বর্ণনা করবে। উপস্থিত সবাই বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন: যমীন যে বিষয় বর্ণনা করবে তা এই যেঃ তার উপরে প্রত্যেক নর-নারী যে যে কাজ করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি এই এই দিন এই এই কাজ করেছো। এগুলো হলো তার বর্ণনা।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

٤٠٩- وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ انْعَمُ وَصَاحِبُ الْقَرْنِ قَدْ الْتَقَمَ الْقَرْنَ وَاسْتَمَعَ الْأَذْنَ مَتَى يُؤْمَرُ بِالنَّفْخِ فَيَنْفُخُ فَكَانَ ذَلِكَ ثَقُلَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُمْ قُولُوا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ – رواه الترمذي وقال حديث حسن

৪০৯। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি কিভাবে নিশ্চিত বসে থাকতে পারি, অথচ শিংগাধারী ফেরেশতা (ইসরাফীল) মুখে শিংগা লাগিয়ে কান খুলে অপেক্ষা করছেন কখন তাকে ফুঁ দেয়ার আদেশ করা হবে, আর তিনি তাতে ফুঁ দেবেন? মনে হলো যেন এ কথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ সন্ত্রস্ত ও আতংকিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি খুবই উত্তম অভিভাবক।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।

٤١٠- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ خَافَ أَدْلَجَ وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ الْمَنْزِلَ أَلا إِنَّ سِلْعَةَ اللَّهِ غَالِيَةٌ أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ الله الجنة – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ .

৪১০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (শেষ রাতে শত্রুর লুটতরাজকে) ভয় করে, সে সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয় এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয়, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখ, আল্লাহর সামগ্রী খুবই মূল্যবান। জেনো রাখ, আল্লাহর সামগ্রী হলো জান্নাত।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান হাদীস।

٤١١- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةٌ غُرُلا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالَ يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدَّ من أن يُهِمُهُمْ ذَلِكَ . وَفِي رِوَايَة الْأَمْرُ اهُم مِنْ أَنْ يَنظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ متفق عليه

৪১১। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। কিয়ামাতের দিন লোকদের খালি পায়ে, উলংগ শরীরে এবং খাতনাহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সমস্ত নারী-পুরুষ একসাথে হলে তো তারা একে অপরকে দেখবে? তিনি বলেনঃ হে আয়িশা। মানুষ যা কল্পনা করে সেদিনের পরিস্থিতি তার চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ একে অপরের দিকে তাকানোর চাইতেও সেদিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৫১ – আল্লাহর উপর আশা-ভরসা

আল্লাহর উপর আশা-ভরসা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

মহান আল্লাহ বলেন:

“(হে মুহাম্মাদ) আপনি বলে দিন। হে আমার (আল্লাহর) বান্দাগণ। যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” (সূরা আয-যুমার: ৫৩)

وَقَالَ تَعَالَى : وَهَلْ نُجَازِي إِلَّا الْكَفُورَ

“আর আমি অকৃতজ্ঞ লোকদেরই শাস্তি দিয়ে থাকি।” (সূরা সাবা: ১৭)

وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ قَدْ أُوحِيَ إِلَيْنَا أَنَّ الْعَذَابَ عَلَى مَنْ كَذَبَ وَتَوَلَّى

“আমাদের কাছে ওহী এসেছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করে এবং (সত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে-ই শাস্তি ভোগ করবে।” (সূরা তাহাঃ ৪৮)

وقال تعالى : وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلِّ شَيْءٍ

“আর আমার অনুগ্রহ সকল বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে।” (সূরা আল-আ’রাফ: ১৫৬)

٤١٢- وَعَنْ عُبَادَةَ بن الصامت رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ شَهِدَ أَنْ لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدَهُ وَرَسُولُهُ وَأنَّ عِيسَى عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ الْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوْحٌ مِنْهُ وَالْجَنَّةَ والنار حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ الْعَمَلِ متفق عليه ، وفي رواية لمُسْلِمِ مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ النَّارَ.

৪১২। উবাদা ইবনুস সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল এবং ঈসা আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল এবং তাঁরই একটি বাক্য (হুকুম) যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রদান করেন এবং তাঁরই পক্ষ থেকে দেয়া একটি আত্মা, জান্নাত সত্য, জাহান্নামও সত্য, তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, সে যে কোন আমলই করুক।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছেঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।

٤١٣ – فجزاء سيئة سَيِّئَة مثلها أو اغْفِرُ وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي شَيْرًا تَقَرَّبَتْ مِنْهُ ذِرَاعًا وَمَنْ تقرب مني ذراعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَمَنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرُوَلَةً وَمَنْ لَقِينِي بقراب الْأَرْضِ خَطِيئَةٌ لا يُشْرِكْ بِي شَيْئًا لقيته بمثلها مغفرة – رواه مسلم.

৪১৩। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করবে, সে এর দশ গুণ অথবা অধিক সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি একটি অন্যায় করবে, সে তেমনি একটি অন্যায়ের শান্তি পাবে অথবা আমি মাফ করে দেবো। যে ব্যক্তি আমার এক বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার এক হাত নিকটবর্তী হবো; যে ব্যক্তি আমার এক হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার দুই হাত নিকটবর্তী হবো। যে ব্যক্তি হেঁটে হেঁটে আমার দিকে আসবে আমি দৌড়ে তার দিকে যাবো। যে ব্যক্তি পৃথিবী সমান গুনাহ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করবে, অথচ সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক করেনি, আমি তার সাথে অনুরূপ (পৃথিবীভর্তি) ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাত করবো।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٤١٤- وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيُّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْمُوْجِبَتَانِ فَقَالَ مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ – رواه مسلم .

৪১৪। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ। অবধারিত বিষয় দু’টি কী কী? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে এবং যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা যায় সে জাহান্নামে যাবে। ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٤١٥ – وَعَنْ أَنَسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمُعَاذَ رَدِيقُهُ على الرحل قَالَ يَا مُعَادُ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ قَالَ يَا مُعَادُ قَالَ لبيك يا رسول الله وَسَعدَيْكَ قَالَ يَا مُعَادُ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ ثلاثا قَالَ مَا مِنْ عَبْدِ يَشْهَدُ أن لا اله الا الله وأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ صَدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلَا أُخْبِرُ بِهَا النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوا قَالَ إِذا يَتَكلُوا فَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذَ عِنْدَ مَوْتِهِ تَأْتُما – متفق عليه.وَعَنْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا أَوْ أَزْبَدُ وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ

৪১৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাহনে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন মু’আয (রা)। তিনি বলেনঃ হে মু’আয। মু’আয (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার খিদমতে উপস্থিত আছি। তিনি আবার বলেনঃ হে মু’আয। মু’আয (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি আপনার পাশেই, আপনার সৌভাগ্যবান পরশেই হাযির আছি। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে মু’আয। মু’আয (রা) এবারও বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার খিদমতে উপস্থিত। এরূপ তিনবার বলার পর তিনি বলেন: যে কোন ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি কি এ ব্যাপারে মানুষকে অবহিত করবো না যাতে তারা সুসংবাদ গ্রহণ করতে পারে? তিনি বলেনঃ (না) তাহলে তারা এটার উপর নির্ভর করেই বসে থাকবে। অতঃপর মু’আয (রা) জানা বিষয় গোপন করার গুনাহর ভয়ে তাঁর মৃত্যুর সময় এ ব্যাপারে জানিয়ে দেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

٤١٦- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَوْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِي شَكٍّ الراوي ولا يضُر الشك في عَيْنِ الصَّحَابِي لِأَنَّهُمْ كُلُّهُمْ عُدُولٌ قَالَ لَمَّا كَانَ غَزْوَةٌ تَبُوكَ أصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةً فَقَالُوا يَا رَسُولَ الله لَو أَنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَوَاضِحَنَا فَأَكَلْنَا وَادْهُنَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ افْعَلُوْا فَجَاءَ عُمَرُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِن فَعَلْتَ قَل الظهر ولكن أدْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ ثُمَّ ادْعُ اللَّهَ لَهُمْ عَلَيْهَا بالبركة لعل الله أنْ يُجْعَل في ذلك البركة فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمْ فَدَعَا ينطع فَبَسَطَهُ ثُمَّ دَعَا بِفَضْل أزوادهمْ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجي بكف ذرةٍ ويجى الْآخَرُ بِكَفِ نَصْرٍ وَيَجيُّ الْآخَرُ بِكَسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النطع من ذلِكَ شَيْ يَسِيرٌ فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرَكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِي أَوْعِيَتِكُمْ فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَرِ وَعَاء الا ملؤوه واكلوا حَتَّى شَبَعُوا وَفَضْلَ فَضْلَةً فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اشْهَدُ أن لا إله إلا الله وأنَّى رَسُولُ اللهِ لَا يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرُ
شَاكٍ فَيُحْجَبَ عَنِ الْجَنَّةِ – رواه مسلم.

৪১৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত অথবা আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। (রাবীর সন্দেহ, তবে সাহাবীদের মাঝে সন্দেহ থাকলে কোন ক্ষতি নেই, কেননা তাদের প্রত্যেকেই ন্যায়নিষ্ঠ।) তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের উট যবেহ করে খেতে পারি, চর্বি দিয়ে তেলও বানাতে পারি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ঠিক আছে, তাই কর। তখন উমার (রা) এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। আপনি যদি এরূপ করেন, তাহলে বাহন কমে যাবে, বরং আপনি তাদের অবশিষ্ট রসদ নিয়ে আসতে আহ্বান করুন। অতঃপর তাদের রসদে বরকত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ এতে বরকত দান করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হাঁ, তাই করব। অতঃপর তিনি চামড়ার একটি দস্তরখান আনিয়ে বিছালেন, অতঃপর তাদের অবশিষ্ট রসদ নিয়ে আসার জন্য ডাকলেন। সুতরাং তাদের কেউ এক মুঠি ভুট্টা নিয়ে আসলো, কেউবা এক মুঠি খেজুর, আবার কেউবা এক টুকরো রুটি নিয়ে হাযির করলো। অবশেষে দস্তরখানের উপর যৎসামান্য রসদ জমা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোর মধ্যে বরকতের জন্য দু’আ করার পর বলেন: এগুলো তোমাদের পাত্রে ভরে নিয়ে যাও। অতঃপর সকলেই তাদের পাত্র ভরে ভরে নিয়ে গেলো; এমনকি এ বাহিনীর সবগুলো পাত্রই ভরে গেলো এবং তারা তৃপ্তির সাথে খেয়েও আরো অবশিষ্ট রয়ে গেলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ দু’টি কালেমা নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, তাকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হবে না। (মুসলিম)

٤١٧ – وَعَنْ عِتْبَانَ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَهُوَ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا قَالَ كُنْتُ أصلي القومي بني سالم وكَانَ يَحُولُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ وَادٍ إِذَا جَاءَتِ الْأَمْطَارُ فَيَشقُ عَلَى اجتيازه قبل مسجدهمْ فَجِئْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ لَهُ إِنِّي أنكرت بصرى وأن الوادى الذي بيني وَبَيْنَ قَوْمِي يَسبُلُ إِذَا جَاءَت الأمطار فَيَسُقُ عَلَى اجْتِيَاؤُهُ فَوَدَدْتُ أَنَّكَ تَأْتِي فَتُصَلِّي فِي بَيْتِي مَكَانًا اتَّخِذُهُ مُصَلَّى فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَافْعَلُ فَغَدًا عَلَى رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ بَعْدَ مَا اشْتَدَّ النَّهَارُ وَاسْتَأْذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَنْتُ لَهُ فَلَمْ يَجْلِسُ حَتَّى قَالَ ابْنَ تُحِبُّ أَنْ أَصَلِّي مِنْ بَيْتِكَ فَأَشَرْتُ لَهُ إلى المكان الذي أحِبُّ أنْ يُصَلِّى فِيهِ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّىاللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَبُرَ وَصَفَفْنَا وَرَاءَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ وَسَلَّمْنَا حِيْنَ سَلَّمَ فَحَبَسْتُهُ عَلَى خَزِيرَةٍ تُصْنَعُ لَهُ فَسَمِعَ أَهْلُ الدَّارِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي فَتَابَ رِجَالٌ مِنْهُمْ حَتَّى كَثُرَ الرِّجَالُ فِي الْبَيْتِ فَقَالَ رَجُلٌ مَا فعل مالك لا أراهُ فَقَالَ رَجُلٌ ذلك منافق لا يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَالَ رَسُولُ الله صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُلْ ذَلِكَ إِلا تَرَاهُ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ الله تَعَالَى فَقَالَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ أَمَّا نَحْنُ فَوَاللَّهُ مَا تَرَى وُدُهُ وَلَا حَدِيثَهُ الا إلى المُنَافِقِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ يَبْتَغِي بذلك وجه الله – متفق عليه

৪১৭। ইতবান ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন বদরের যুদ্ধের শহীদদের অন্যতম। তিনি বলেন, আমি আমার বানু সালেম গোত্রের (মসজিদে) নামায পড়াতাম। তাদের ও আমার মাঝে একটি মাঠ ছিল প্রতিবন্ধক। বৃষ্টির সময় এটা অতিক্রম করে তাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়া আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়তো। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললাম, আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে এবং আমার ও আমার গোত্রের মধ্যখানে অবস্থিত মাঠ, বৃষ্টির দিনে প্লাবিত হয়ে গেলে তা পার হওয়া আমার পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই আমি চাই যে, আপনি এসে আমার বাড়ির একটি স্থানে নামায পড়বেন এবং আমি সেই স্থানকেই আমার নামায পড়ার জায়গা হিসাবে নির্দিষ্ট করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঠিক আছে, আমি তা করবো। পরদিন সূর্য বেশ উপরে উঠলে রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বাস্ত্র (আমার বাড়িতে) আসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলেন, আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি না বসেই বলেনঃ তুমি তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার নামায পড়া পছন্দ কর? অতএব যে জায়গায় আমি তাঁর নামায পড়া পছন্দ করি, সেদিকে ইশারা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করলেন এবং আমরা সারিবদ্ধ হয়ে তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি দুই রাক্সত নামায পড়ে সালাম ফিরালেন। আমরাও তাঁর সালাম ফিরানোর পর সালাম ফিরিয়ে তাঁর জন্যে তৈরি ‘খাযিরা’ (এক প্রকার খাদ্য) গ্রহণের জন্য তাঁকে আটকে রাখলাম। মহল্লার লোকেরা শুনতে পেলো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বাড়িতে আছেন; তাই তারা দলে দলে এসে সমবেত হল। ফলে ঘরে লোকসংখ্যা বেড়ে গেলো। জনৈক ব্যক্তি বললো, মালিক কোথায়, আমি তো তাকে দেখছি না? অপর ব্যক্তি বললো, সে তো মুনাফিক, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি এ কথা বলো না। তুমি কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না যে, সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে। ঐ ব্যক্তি বললো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। আল্লাহর শপথ। আমরা তো দেখছি মুনাফিক ছাড়া আর কারো সাথে তার বন্ধুত্ব নেই, কথাও নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)

٤١٨ – وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبَى فَإِذَا امْرَأَةٌ مِّنَ السَّبَني تَسْعَى إِذْ وَجَدَتْ صَبِيًّا فِي السَّبي احدَتْهُ فَالْزَقَتْهُ بِبَطْنِهَا فَأَرْضَعَتُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَرَوْنَ هذه المرأة طارحة وَلدَهَا فِي النَّارِ قُلْنَا لا وَاللَّهِ فَقَالَ اللَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ هَذِهِ بولدها – متفق عليه

৪১৮। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক বন্দীসহ আগমন করেন। তাদের মধ্যে জনৈকা বন্দিনী অস্থির হয়ে দৌড়াচ্ছিল আর বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলেই সে তাকে কোলে নিয়ে তার পেটের সাথে লাগিয়ে দুধ পান করাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি মনে করো এ মেয়েটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে? আমরা বললাম, আল্লাহর শপথ! কখনো নয়। তিনি বলেন: এ মেয়েটি তার সন্তানের প্রতি যেরূপ সদয়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এর চাইতেও অনেক বেশি সদয়। (বুখারী, মুসলিম)

٤١٩- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَما خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِي كِتَابٍ فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبِي. وفي رواية غَلَبَتْ غَضَبي وفي رواية سبقت غضبي – متفق عليه

৪১৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আল্লাহ যখন সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর কাছে আরশের উপর বিদ্যমান একটি কিতাবে লিখে রাখেন। আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী হবে। অপর বর্ণনায় আছেঃ (আমার দয়া-অনুগ্রহ) আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী হয়েছে। আরেক বর্ণনায় আছেঃ (আমার অনুকম্পা) আমার ক্রোধের উপর অগ্রগামী হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)

٤٢٠- وَعَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ جَعَلَ اللهُ الرحمة مائة جزء فَأَمْسَكَ عنده تسعة وتسعينَ وَانْزَلَ فِي الْأَرْضِ جُزْءاً واحداً فَمِنْ ذلك الجزء يَتَرَاحَمُ الخَلائِقُ حَتَّى تَرفَع الدابَّةَ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةً أَنْ تصيبه . وفي رواية ان الله تعالى مائة رحمة انزل منها رحمة واحدة بين الجن والإنس والبهائم والهوام فيها يتعاطفون وبِهَا يَتَرَاحَمُونَ وَبِهَا تَعْطِفُ الْوَحْشِ على ولدها وآخر الله تعالى تسعا وتسعينَ رَحْمَةً يَرْحَمُ بِهَا عِبَادَهُ يَوْمَ القيامة – متفق عليه . ورواه مسلم أيضا من رِوَايَةِ سَلْمَانَ الْفَارِسِي قَالَ قَالَ رسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الله تَعَالَى مِائَةَ رَحْمَةٍ فَمِنْهَا رَحْمَةٌ يَتَرَاحَمُ بِهَا الْخَلْقُ بَيْنَهُمْ وَتِسْع وَتِسْعُونَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ ، وَفِي رِوَايَةٍ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى خَلَقَ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ مِائَةَ رَحْمَةٍ كُلُّ رَحْمَةٍ طَبَاقُ مَا بَيْنَ السَّمَاء إِلى الْأَرْضِ فَجَعَلَ مِنْهَا فِي الْأَرْضِ رَحْمَةً فِيهَا تَعْطِفُ الْوَالِدَةُ عَلَى وَلَدِهَا وَالْوَحْشِ والطَّيْرُ بَعْضُهَا عَلَى بَعْضٍ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ أَكْمَلَهَا بِهَذِهِ الرَّحْمَةِ

৪২০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। আল্লাহ করুণাকে এক শত ভাগে বিভক্ত করেছেন, অতঃপর নিরানব্বই ভাগই তাঁর কাছে রেখেছেন এবং মাত্র একভাগ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই একটিমাত্র অংশের কারণে সমস্ত সৃষ্টি পরস্পরের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করে থাকে, এমনকি চতুস্পদ জন্তু তার বাচ্চার উপর থেকে এই ভয়ে পা সরিয়ে নেয়, যেন সে কোন কষ্ট না পায়। অপর এক বর্ণনায় আছে: মহান আল্লাহর এক শতটি রহমত (দয়া) আছে, তন্মধ্যে মাত্র একটি রহমত জিন, মানুষ, জীবজন্তু ও কীট-পতংগের মাঝে প্রেরণ করেছেন। এর কারণেই তারা পরস্পরের প্রতি দয়া, অনুগ্রহ ও প্রেম-প্রীতি প্রদর্শন করে এবং বন্য জন্তু তার বাচ্চাকে স্নেহ করে। আল্লাহ অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত আলাদা করে রেখেছেন, এগুলো দ্বারা তিনি কিয়ামাতের দিন তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। (বুখারী, মুসলিম)

এ প্রসংগে সালমান ফারসী (রা) থেকেও ইমাম মুসলিম (র) বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর একশোটি রহমত আছে। তন্মধ্যে একটিমাত্র রহমতের কারণে সৃষ্টিজগত পরস্পর স্নেহ-মমতা করে। আর নিরানব্বইটি রহমত কিয়ামাতের দিনের জন্য রয়ে গেছে।

অপর এক বর্ণনায় আছে: আল্লাহ তা’আলা যেদিন আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেন সেদিন একশোটি রহমতও সৃষ্টি করেন। প্রতিটি রহমতই আসমান যমিনের মাঝখানে মহাশূন্যের মত বড়। তন্মধ্যে একটি রহমত তিনি পৃথিবীতে দিয়েছেন। এরই মাধ্যমে মা তার সন্তানকে স্নেহ করে এবং জীবজন্তু ও পশুপাখি পরস্পরকে স্নেহ করে। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ পরিপূর্ণ রহমত প্রদর্শন করবেন।

٤٢١- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْمَا يَحْكَى عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ أَذْنَبَ عَبْد ذَنْبًا فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي فَقَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى اذنَبَ عَبْدِي ذَنْبًا فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ رَبَّا يَغْفِرُ الذُّنْبَ وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ ثُمَّ عَادَ فَأَذْنَبَ فَقَالَ أَي رَبِّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي فَقَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَذْنَبَ عَبْدِي ذَنْبًا فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ ربا يغفر الذنب ويَأْخُذُ بالذنب ثُمَّ عَادَ فَأَذْنَبَ فَقَالَ أَيْ رَبِّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي فَقَالَ تبارك وتعالى أذْنَبَ عَبْدِي ذَنْبًا فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ رَبَّا يُغْفِرُ الذُّنْبَ وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ قَدْ غَفَرْتُ العبدي فليفعل ما شاء متفق عليه

৪২১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান ও কল্যাণময় রবের কাছ থেকে বর্ণনা করে বলেন: কোন বান্দাহ একটি গুনাহ করে বললো, হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তখন বিপুল বরকতের অধিকারী আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ একটি গুনাহ করেছে। সে জানে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন, আবার এজন্য পাকড়াও করেন। সে পুনরায় গুনাহ করে বললো, হে আমার রব! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তখন মহান কল্যাণময় আল্লাহ বলেন: আমার বান্দাহ একটি গুনাহ করেছে। সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহর জন্য পাকড়াও করেন। সে আবারো একটি গুনাহ করলো এবং বললো, হে রব। আমার গুনাহ মাফ করে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন: আমার বান্দাহ একটি গুনাহ করেছে এবং সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন আবার এজন্য শাস্তিও দেন। সুতরাং আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতএব সে যা ইচ্ছা তাই করুক। (বুখারী, মুসলিম)

মহান আল্লাহর বাণীঃ “সে যা ইচ্ছা তাই করুক”-এর অর্থ হল- সে যতদিন এরূপ গুনাহ করবে এবং তাওবা করবে, আমি ততদিন তাকে মাফ করতে থাকবো। কেননা তাওবা তার আগের সমস্ত গুনাহ খতম করে দেয়। [টিকা: তাওবার ব্যাপারে কুরআন মজীদে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে وتوبوا إلى الله تونة نصوحঅর্থাৎ ‘খালিছ দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর’। এর মানে হচ্ছে, যে গুনাহ বা ভুলটা করা হয়েছে সেটার আর পুনরাবৃত্তি হবে না- এই দৃঢ় মনোভাব নিয়ে তাওবা করতে হবে। এহেন মনোভাবের পর নেহায়েত অনিবার্য কারণ ছাড়া কোনো গুনাহর পুনরাবৃত্তি হতে পারে না। তাছাড়া তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, অজ্ঞতাবশতঃ কোন গুনাহ বা অন্যায় হয়ে গেলে অনতিবিলম্বে তাওবা করতে হবে। কিন্তু কেউ গুনাহ করতেই থাকবে আর মৃত্যুলগ্নে বলবে আমি এখন তাওবা করছি, এমন তাওবা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। মোটকথা এ হাদীসে বান্দার গুনাহ করার জন্য ব্যাপক অনুমতি দেয়া হয়নি।]

٤٢٢ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ لم تذنبوا لذهَبَ اللهُ بِكُمْ وَلَجَاء بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ تَعَالَى فَيَغْفِرُ لهم – رواه مسلم .

৪২২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা যদি গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তোমাদের তুলে নিয়ে যেতেন এবং তোমাদের জায়গায় এমন এক কাউমকে আনতেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতো, অতঃপর আল্লাহ তাদের মাফ করে দিতেন। (মুসলিম) [টিকা: এখানে আসলে আল্লাহর অপার রহমতের কথা বর্ণনা করাই মূল উদ্দেশ্য]

٤٢٣ – وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ خَالِدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَوْ لا أَنَّكُمْ تُذَنْبُونَ لَخَلَقَ اللَّهُ خَلْقًا يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ فَيَغْفِرُ لَهُم رواه مسلم

৪২৩। আবু আইউব খালিদ ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ এমন জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে মাফ চাইতো এবং তিনি তাদের মাফ করে দিতেন। (মুসলিম)

٤٢٤- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا قُعُودًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَنَا أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فِي نَفَرٍ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ أَظْهُرِنَا فَأَبْطأَ عَلَيْنَا فَخَشِيْنَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا فَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنتُ أوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ ابْتَغِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى آتَيْتُ حَائِطا لِلْأَنْصَارِ وَذَكَرَ الْحَدِيث بطولِهِ إِلَى قَوْلِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اذْهَبْ فَمَنْ لقيت وراء هذا الحائط يَشْهَدُ أَنْ لا اله الا الله مستيقنا بها قَلْبُهُ فبشره بالجنة – رواه مسلم

৪২৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমাদের সাথে আবু বাক্স ও উমার (রা)-ও উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝ থেকে উঠে চলে গেলেন এবং ফিরে আসতে অনেক বিলম্ব করতে লাগলেন। এদিকে আমরা আশংকা করতে লাগলাম যে, আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না জানি তিনি আবার কোন বিপদে পড়েন। সুতরাং আমরা আতংকিত হয়ে উঠে পড়লাম। আতংকগ্রস্তদের মধ্যে আমিই ছিলাম প্রথম ব্যক্তি। তাই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম, অতঃপর জনৈক আনসারীর বাগানে উপস্থিত হলাম। তিনি এ দীর্ঘ হাদীস এ পর্যন্ত বর্ণনা করেন: অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি যাও, এ বাগানের বাইরে যার সাথে তোমার সাক্ষাত হবে, সে যদি তার আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর। (মুসলিম)

٤٢٥- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَلا قَوْلَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلٌ فِي إِبْرَاهِيمَ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنَى وَقَوْلَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عبَادِكَ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ) فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ اللَّهُمَّ أُمَّتِي أمنى وتكى فَقَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّدٍ وَرَبُّكَ أَعْلَمُ فَسَلْهُ مَا يبكيه فَآتَاهُ جِبْرِيلُ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا قَالَ وَهُوَ أَعْلَمُ فَقَالَ اللهُ تَعَالَى يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إِلَى مُحَمَّد فَقُلْ إِنَّا سَنُرْضِيكَ فِي أُمَّتِكَ وَلَا تسوءك – رواه مسلم

৪২৫। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম (আ) সম্পর্কিত মহান আল্লাহর এ বাণী তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “হে আমার রব। এ মূর্তিগুলো বহু মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। কাজেই যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, সে তো আমারই” (সূরা ইবরাহীমঃ ৩৬)। আর তিনি (নবী সা.) ঈসা (আ)-এর বাণী (যা কুরআনে আছে) তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে (তা দেবার অধিকার আপনার আছে, কারণ) তারা তো আপনারই বান্দাহ। আর আপনি যদি তাদের মাফ করে দেন, তাহলে (আপনি তাও করতে পারেন, কারণ) আপনি তো মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।” (সূরা আল মাইদা : ১১৮)

অতঃপর তিনি তাঁর দু’হাত উঠিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমার উন্মাত। আমার উম্মাত” এই বলে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহামহিম আল্লাহ জিবরাঈলকে ডেকে বলেনঃ তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাঁকে তাঁর কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস কর, তবে তোমার রব অবহিত আছেন। অতঃপর জিবরাঈল (আ) তাঁর কাছে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যা বলার ছিল বলে দিলেন। এ ব্যাপারে তিনি (আল্লাহ) তো সবই জানেন। সুতরাং মহান আল্লাহ জিবরাঈলকে বলেন: তুমি মুহাম্মাদের কাছে গিয়ে বল, আমি আপনাকে আপনার উম্মাতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করবো, চিন্তাযুক্ত করবো না। (মুসলিম)

٤٢٦ – وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمارٍ فَقَالَ يَا مُعَاذُ هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ وَمَا حَقٌّ العباد على الله قُلْتُ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنْ حَقَّ اللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ ولا يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَحَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يُعَذِّبَ مَنْ لَا يُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ الله أَفَلا أَبَشِّرُ النَّاسَ قَالَ لا تُبَشِّرُهُمْ فَيَتَّكلوا – متفق عليه

৪২৬। মু’আয ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে একটি গাধার পিঠে বসা ছিলাম। তিনি বলেনঃ হে মু’আয। তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন: বান্দার উপর আল্লাহর হক হল: তারা তাঁর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলঃ যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করে না, তিনি তাকে শাস্তি দেবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আমি কি মানুষকে এ সুসংবাদ দেবো না? তিনি বলেন: তুমি তাদেরকে এ সুসংবাদ দিয়ো না, তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)

٤٢٧- اللَّهِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى : يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدنيا وفي الآخرة . متفق عليه

৪২৭। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুসলিমকে যখন কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দেবেঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল। এভাবে সাক্ষ্য দেয়াটা মহান আল্লাহর এ বাণী প্রমাণ করেঃ “আল্লাহ ঈমানদার লোকদের সেই অটল বাক্যের (কালেমা তায়্যিবার) দরুন দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুদৃঢ় রাখেন।” (সূরা ইবরাহীম : ২৭; বুখারী, মুসলিম)

٤٢٨- وَعَنْ أَنَسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الكَافِرَ إِذَا عَمِلَ حَسَنَةً أَطْعِمَ بِهَا طَعْمَةً مِّنَ الدُّنْيَا وَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يدْخِرُ لَهُ حَسَنَاتَهُ فِي الْآخِرَةِ وَيُعْقِبُهُ رِزْقًا فِي الدُّنْيا على طاعته ، وفي رواية إن الله لا يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسَنَةً يُعْطَى بِهَا فِي الدُّنْيَا وَيُجْزِي بِهَا فِي الْآخِرَةِ وَأَما الْكَافِرُ فَيُطْعَمُ بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ الله تَعَالَى فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا أَقْضَى إِلَى الْآخِرَةِ لَمْ يَكُن لَهُ حَسَنَةٌ يُجْزَى بها – رواه مسلم

৪২৮। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কাফির ব্যক্তি কোনো সৎ কাজ করলে দুনিয়াতেই তাকে এর স্বাদ গ্রহণ করতে দেয়া হয়। আর ঈমানদারের সৎ কাজগুলো আল্লাহ তা’আলা আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন এবং তাঁর আনুগত্যের জন্য দুনিয়াতেও তাকে রিস্ক প্রদান করেন। অপর এক বর্ণনায় আছে: আল্লাহ ঈমানদার ব্যক্তির কোনো নেক আমলকে বিনষ্ট করবেন না। দুনিয়াতেও তাকে এর বিনিময় দেয়া হয়, আখিরাতেও তাকে এর প্রতিদান দেয়া হবে। কাফির আল্লাহর ওয়াস্তে (অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে) যে সৎ কাজ করে তাকে দুনিয়াতেই এর বিনিময় দেয়া হয়। আর সে যখন আখিরাতে পৌঁছবে, তখন তার কোনো সৎ কাজই থাকবে না, যার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান দেয়া যেতে পারে। (মুসলিম)

٤٢٩ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مثل الصلواتِ الْخَمْسِ كَمَثَلِ نَهَرٍ جَارٍ غَمْرِ عَلَى بَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلِّ يوم خمس مرات – رواه مسلم.وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ إِذَا سُئِلَ فِي الْقَبْرِ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ

৪২৯। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত হল: তোমাদের কারো বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি বড় নহর, সে তাতে রোজ পাঁচবার গোসল করে। (মুসলিম)

٤٣٠- وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَقُومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلاً لا يُشْرِكُونَ بالله شَيْئًا الا شفعهم الله فيه . رواه مسلم

৪৩০। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। কোনো মুসলিম মারা গেলে, তার জানাযায় এরূপ চল্লিশ ব্যক্তি যদি হাযির হয়, যারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকেই শরীক করেনি, তাহলে আল্লাহ মৃতের পক্ষে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করেন। (মুসলিম)
٤٣١- وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قُبة نحوا مِنْ أَرْبَعِينَ فَقَالَ أَتَرْضَوْنَ أَنْ تَكُونُوا رَبَّعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ قُلْنَا نَعَمْ قَالَ أَتَرْضَوْنَ أَنْ تَكُونُوا ثلث أهْلِ الْجَنَّةِ قُلْنَا نَعَمْ قَالَ وَالَّذِي نَفْسُ محمد بيده اني لأَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أهْلِ الْجَنَّةِ وَذَلِكَ أَنَّ الْجَنَّةَ لَا يَدْخُلُهَا إلا نفس مُسْلِمَةٌ وَمَا أَنْتُمْ فِي أَهْلِ الشِّرْكِ إِلا كَالشَّعْرَةِ الْبَيْضَاءِ فِي جَلْدِ الشَّورِ الأسود أو كالشعرة السوداء في جَلْدِ النُّورِ الْأَحْمَر – متفق عليه

৪৩১। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা প্রায় চল্লিশজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি তাঁবুতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের এক-চতুর্থাংশ লোক যদি জান্নাতবাসী হয় তাতে কি তোমরা খুশি হবে? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেন: তোমাদের এক-তৃতীয়াংশ লোক যদি জান্নাতবাসী হয় তাতে কি তোমরা খুশি হবে? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেন: মুহাম্মাদের আত্মা যাঁর হাতে সেই সত্তার শপথ! আমি আশা করি তোমরা (উম্মাতে মুহাম্মাদী) জান্নাতবাসীদের অর্ধেক সংখ্যক হবে। কেননা একমাত্র মুসলিম ব্যক্তিরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তোমরা হচ্ছো মুশরিকদের মাঝে কালো রংয়ের বলদের চামড়ায় কয়েকটি সাদা চুলের ন্যায় অথবা লাল বলদের চামড়ায় সামান্য কয়েক গাছি কালো চুলের ন্যায় (অর্থাৎ মুশরিকদের তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যা খুবই কম)। (বুখারী, মুসলিম)

٤٣٢ – وعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ دَفَعَ اللَّهُ إِلَى كُلِّ مُسْلِمٍ يَهُودِيًا أَوْ نَصَرَانِيًّا فَيَقُولُ هَذَا فَكَاكُكَ مِنَ النَّارِ وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَحِيُّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ بِذُنُوبِ أَمْثَالِ الْجِبَالِ يَغْفِرُهَا اللَّهُ لهم رواه مسلم.
قَوْلَهُ دَفعَ إِلى كُلِّ مُسْلِمٍ يَهُودِيًا أَوْ نَصَرَانِيًّا فَيَقُولُ هَذَا فَكَاكُكَ مِنَ النَّارِ مَعْنَاهُ مَا جَاءَ فِي حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةً لِكُلِّ أَحَدٍ مَنْزِلُ فِي الْجَنَّةِ وَمَنْزِلُ فِي النَّارِ فَالْمُؤْمِنُ إِذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ خَلَفَهُ الْكَافِرُ فِي النَّارِ لِأَنَّهُ مُسْتَحِقُّ لذلك بكفره وَمَعْنَى فَكَاكُكَ إِنَّكَ كُنتَ مُعَرِّضا لدخول النَّارِ وَهَذَا فَكَاكُكَ لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى قدر النَّارِ عَدَدًا يُمْلَؤُهَا فَإِذَا دَخَلَهَا الْكُفَّارُ بِذُنُوبِهِمْ وَكُفْرِهِمْ صَارُوا فِي مَعْنَى الْفَكَاكَ لِلْمُسْلِمِينَ – وَاللَّهُ أَعْلَمُ .

৪৩২। আবু মূসা আল আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইহুদী অথবা একজন খৃস্টান দিয়ে বলবেনঃ জাহান্নাম থেকে নাজাতের জন্য এই ব্যক্তি তোমার ফিদ্‌ইয়া বা বদলা। এই রাবী থেকে অপর একটি বর্ণনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কিয়ামাতের দিন মুসলিমদের মধ্যে কিছু লোক পাহাড়ের ন্যায় গুনাহর স্তূপ নিয়ে হাযির হবে। অতঃপর আল্লাহ তাদের এসব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম) ইমাম নববী (র) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এই বাণীঃ “প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইহুদী অথবা একজন খৃস্টান দিয়ে বলবেন, জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এই ব্যক্তি তোমার বদলা”, এর অর্থ হল: এ পর্যায়ে আবু হুরাইরা (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত আছে: প্রত্যেক মানুষের জন্যই জান্নাতে একটি স্থান এবং জাহান্নামে একটি স্থান আছে। কোন ঈমানদার যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার সাথে সাথেই একজন কাফিরও জাহান্নামে যাবে। কেননা কুফরের দরুন এটাই তার প্রাপ্য। আর হাদীসে উল্লেখিত ‘ফিকাকুকা’ শব্দের অর্থ হল, তোমাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর জন্য পেশ করা হতো, আর এ হল তোমার বদলা। কেননা আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের জন্য একটি সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যাদের দিয়ে জাহান্নাম পরিপূর্ণভাবে ভরবেন। সুতরাং কাফিররা যেহেতু তাদের গুনাহ ও কুফরের দরুন তাতে প্রবেশ করবে তাই মুসলিমদের জন্য এটাই হবে ফিদ্‌ইয়া বা বদলা। আল্লাহই ভালো জানেন।

٤٣٣ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يُدْنَى الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ عَلَيْهِ فَيُقَرِّرُهُ بذُنُوبِهِ فَيَقُولُ اتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا اتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا فَيَقُولَ رَبِّ أَعْرِفُ قَالَ فَإِنِّي قَدْ ستَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ فَيُعْطَى صَحِيفَةَ حَسَنَاتِهِ متفق عليه

৪৩৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: কিয়ামাতের দিন মুমিন ব্যক্তিকে তার রবের কাছে নিয়ে আসা হবে, এমনকি তিনি তাকে তাঁর রহমতের পর্দায় ঢেকে রাখবেন। অতঃপর তিনি তাকে তার সমস্ত গুনাহর কথা স্বীকার করাবেন এবং বলবেনঃ তুমি কি এই গুনাহ চিনতে পারছো, তুমি কি এই গুনাহ চিনতে পারছো? সে বলবে, হে আমার রব। আমি চিনতে পারছি। তিনি বলবেন: দুনিয়ায় আমি এটা তোমার পক্ষ থেকে ঢেকে রেখেছিলাম, আর আজ এটা তোমাকে মাফ করে দিচ্ছি। অতঃপর তাকে সৎ কাজসমূহের একটি আমলনামা দান করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)

٤٣٤ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا أَصَابَ مِنْ امْرَأَةٍ قُبْلَهُ فَأَتَى النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاخْبَرَهُ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى (وَأَقِمِ الصَّلاةَ طرقي النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ فَقَالَ الرَّجُلُ إِلَى هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ متفق عليه

৪৩৪। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি এক স্ত্রীলোককে চুমো দেয়। অতঃপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে তা অবহিত করে। এ সময় আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ): “আর তুমি দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে নামায কায়েম কর। নিশ্চয় সৎ কাজসমূহ গুনাহর কাজসমূহকে মুছে ফেলে” (সূরা হুদ: ১১৪)। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। এটা কি শুধু আমার জন্য? তিনি বলেন: আমার সমস্ত উম্মাতের জন্যই। (বুখারী, মুসলিম)

٤٣٥ -رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاةَ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي اصَبْتُ حَدَا فَاقِمْ فِي كِتَابَ اللهِ قَالَ هَلْ حَضَرْتَ مَعَنَا الصَّلَاةَ قَالَ نَعَمْ قَالَ قَدْ غفر لك، متفق عليه.

৪৩৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো হদ্দযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমার উপর সেই শাস্তি কার্যকর করুন। অতঃপর নামাযের সময় উপস্থিত হলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায পড়লো। নামায শেষ করে সে আবার বললো, হে আল্লাহর রাসূল। আমি হদ্দযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমার উপর আল্লাহর বিধান কার্যকর করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি আমাদের সাথে নামাযে উপস্থিত হয়েছিলে? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (এখানে হদ্ন্দযোগ্য অপরাধ বলতে যেনার অপরাধ নয়। কারণ যেনার অপরাধ নামায দ্বারা ক্ষমা হয় না, মূলতঃ লোকটি এক মহিলাকে চুমো দিয়েছিল)। (বুখারী, মুসলিম)

٤٣٦ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أن يأكل الأكلة فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا -رواه مسلم

৪৩৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ সেই বান্দার উপর অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকেন, যে এক গ্রাস খাদ্য গ্রহণ করেই তাঁর প্রশংসা করে এবং এক ঢোক পানীয় পান করেই তাঁর প্রশংসা করে (আলহামদু লিল্লাহ বলে)। (মুসলিম)

٤٣٧- وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيُّ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِئُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا – رواه مسلم

৪৩৭। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ দিনের গুনাহগারদের তাওবা কবুল করার জন্য রাতের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন এবং রাতের গুনাহগারদের তাওবা কবুল করার জন্য দিনের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এরূপ করতে থাকবেন। (মুসলিম)

٤٣٨ – وَعَنْ أَبِي نَجِيحِ عَمْرِو بْنِ عَبَسَهُ بِفَتْحِ الْعَيْنِ وَالْبَاءِ السُّلَمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنتُ وأنا في الجاهلية أظن أن النَّاسَ عَلَى ضَلَالَةٍ وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَعْبُدُونَ الْأَوْثَانَ فَسَمِعْتُ بِرَجُل بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أَخْبَارًا فَقَعَدَتْ عَلَى راحلتي فقدمتُ عَلَيْهِ فَإِذَا رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَخْفِيًا جُرَءًاء عَلَيْهِ قَوْمُهُ فَتَلَطَّفْتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَيْهِ بِمَكَّةَ فَقُلْتُ لَهُ مَا أَنْتَ قَالَ أَنَا نَبِيُّ قُلْتُ وَمَا نَبِي قَالَ أَرْسَلَنِي اللهُ قُلْتُ وَبِأَيِّ شَيْءٍ أَرْسَلَكَ قَالَ أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ الْأَرْحَامِ وكسر الأوْثَانِ وَأنْ يُوَحدَ اللهُ لا يُشْرَكَ بِهِ شَيْ قُلْتُ فَمَنْ مَعَكَ عَلَى هَذَا قَالَ حُرَّ وعبدٌ وَمَعَهُ يَوْمَئِذٍ أَبُو بَكْرٍ وَبِلال قُلْتُ إِنِّي مُتَّبِعُكَ قَالَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ ذَلِكَ يَوْمَكَ هذا الا تَرى حَالِي وَحَالَ النَّاسِ وَلَكِنِ ارْجِعُ إِلَى أَهْلِكَ فَإِذَا سَمِعْتَ بِي قَدْ ظهَرْتُ فَاتِنِي قَالَ فَذَهَبْتُ إلى أَهْلِي وَقَدِمَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المدينة وكُنتُ فِي أَهْلِى فَجَعَلْتُ اتَّخَيْرُ الْأَخْبَارَ وَاسْأَلُ النَّاسِ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ حَتَّى قَدِمَ نَفَرٌ مِنْ أَهْلِي الْمَدِينَةَ فَقُلْتُ مَا فَعَلَ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَقَالُوا النَّاسُ إِليه سراع وقد أَراد قَوْمُهُ قَتْلَهُ فَلَمْ يَسْتَطِيعُوا ذَلِكَ فَقَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ اتَعْرِفْنِي قَالَ نَعَمُ أَنْتَ الَّذِي لَقِيتَنِي بمكة قَالَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي عَمَّا عَلَّمَكَ اللَّهُ وَأَجْهَلُهُ أَخْبِرْنِي عَنِ الصلاةِ قَالَ صَلِّ صَلاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ اقْصُرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ قِيدَ رمح فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَى شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلاةَ مَشْهُودَةً مَحْضُورَةً حَتَّى يَسْتَقِلْ الظُّلُّ بِالرُّمْحِ ثُمَّ اقْصُرْ عَنِ الصَّلاةِ قانه حينئذ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ فَإِذَا أَقْبَلَ الْقَى فَصَلِّ فَإِنَّ الصَّلاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى تُصَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ اقْصُرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ قَالَ قُلْتُ يَا نَبِيُّ اللَّهِ فَالْوُضُوءُ حَدِّثْنِيعَنْهُ فَقَالَ مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُونَهُ فَيَتَمَضْمَضُ وَيَسْتَنشِقُ فَيَنْتَشِرُ إِلا خَرَتْ خَطَايَا وَجْهِهِ وَفِيهِ وَخَيَاشِبْمِهِ ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وجهه من أطراف لحيته مَعَ الْمَاء ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَينِ الأَخَرَتْ خَطَايَا يديه من أنامله مَعَ الْمَاء ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ الأخَرَّتْ خَطايا رأسه من اطراف شعره مَعَ الْمَاءَ ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْه إلى الكعبين الأخَرَتْ خَطَايَا رَجُلَيْهِ مِنْ أنامله مع الْمَاء فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى فَحَمِدَ الله تَعَالَى وَاثْنَى عَلَيْهِ وَمَجْدَهُ بِالَّذِي هُوَ لَهُ أهْل وَفَرْغَ قَلْبُهُ لِلَّهِ تَعَالَى إِلَّا انْصَرَفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ .
فَحَدَّثَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ بهذا الْحَدِيثِ أَبا أَمَامَةَ صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ أَبُو أَمَامَةً يَا عَمْرُو بنُ عَبَسَةَ أَنْظُرْ مَا تَقُولُ فِي مَقَامِ وَاحِدٍ يعطى هذا الرَّجُلُ فَقَالَ عَمْرُو يَا أَبَا أَمَامَةَ لَقَدْ كَبِرَتْ سَنِي وَرَقَ عَظْمِي وَاقْتَرَبَ أجَلِي وَمَا بِي حَاجَةٌ أَنْ اكْذِبَ عَلَى اللهِ تَعَالَى وَلَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ لَمْ أَسْمَعَهُ مِنْ رَسُولِ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ او ثلاثًا حَتَّى عَدَّ سَبْعَ مَرَاتِ مَا حَدَّثَتُ أَبَدًا بِهِ وَلَكِنِّي سَمِعْتُهُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ رواه مسلم .

৪৩৮। আবু নাজীহ আমর ইবনে আবাসা আস-সুলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলি যুগে আমি মনে করতাম, মানবজাতি পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত এবং তারা কোনো কিছুরই ধারক নয়। তারা মূর্তিপূজা করে। আমি শুনতে পেলাম, মক্কাতে এক ব্যক্তি নতুন নতুন কথা বলছে। আমি আমার বাহনে আরোহণ করে তাঁর কাছে গিয়ে দেখি তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি জনতার আড়ালে আড়ালে থাকেন। কেননা তাঁর সম্প্রদায় তাঁর উপর বাড়াবাড়ি করছে। সুতরাং আমি ফন্দি-ফিকির করে মক্কায় তাঁর কাছে পৌঁছলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বলেন: আমি একজন নবী। আমি বললাম, নবী কী? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম, আপনাকে কোন জিনিসসহ তিনি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন: তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক জুড়ে রাখতে, মূর্তিসমূহ ভেংগে ফেলতে, ‘আল্লাহ এক’ একথা প্রচার করতে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করতে বলতে পাঠিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম,আপনার সাথে (অনুসারী) এরা কারা? তিনি বলেন: আযাদ ও ক্রীতদাস। সেদিন আবু বাক্স ও বিলাল (রা) তাঁর সাথে ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী। তিনি বলেন: এ সময়ে তুমি আমাকে অনুসরণ করতে সক্ষম হবে না। তুমি কি আমার ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাচ্ছো না? বরং এখন তুমি তোমার বাড়ি ফিরে যাও। যখন তুমি শুনতে পাবে যে, আমি বিজয়ী হয়েছি, তখন আমার কাছে এসো।

তিনি বলেন, অতঃপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় চলে এলেন, আমি তখন আমার বাড়িতেই ছিলাম। তাঁর মদীনা আসার পর থেকে আমি যাবতীয় ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করতাম। অবশেষে একদা আমার এলাকাবাসীদের একটি দল মদীনায় গিয়ে ফিরে আসার পর আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, যে লোকটি মদীনায় এসেছেন, তিনি কি করেন? তারা বললো, মানুষ খুব দ্রুত তাঁর কাছে ভিড় জমাচ্ছে এবং তাঁর স্বজাতিরা তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল, কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি।
আমি মদীনায় উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল। আপনি কি আমাকে চেনেন? তিনি বলেন: হাঁ, তুমি তো আমার সাথে মক্কায় সাক্ষাত করেছিলে। তিনি (রাবী) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আপনাকে যে বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন, আমি তা জানি না, এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। আমাকে নামায সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেনঃ তুমি ফজরের নামায পড়ার পর এক বর্শী পরিমাণ উঁচুতে সূর্য না উঠা পর্যন্ত নামায থেকে বিরত থাক। কেননা এটা শয়তানের দু’টি শিং-এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং এ সময়ে কাফিররা একে সিজদা করে। অতঃপর (সূর্য উদয়ের সময় পেরিয়ে গেলে) তুমি আবার নামায পড়, কেননা এ নামাযে ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে নামাযীদের সাক্ষী হয়। আর এটা বর্শার ছায়ার সমান হয়ে যাওয়া (ঠিক দুপুরের পূর্ব) পর্যন্ত পড়তে পার। অতঃপর নামায থেকে বিরত হও। কেননা এ সময়ে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হয়। অতঃপর ছায়া যখন কিছুটা হেলে যায়, তখন নামায পড়। কেননা এ নামাযে ফেরেশতা হাযির হয়ে নামাযীদের জন্য সাক্ষী হয়। অতঃপর তুমি আসরের নামায পড়ে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত বিরত থাক। কেননা তা শয়তানের দু’টি শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফিররা একে সিজদা করে (সূর্য ডুবে গেলে মাগরিব পড়)। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নবী। উযূ সম্পর্কে কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ উযূর পানি নিয়ে কুলি করলে এবং নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করলে তার মুখ, মুখ-গহ্বর ও নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর হুকুম মুতাবিক তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমণ্ডলসহ দাড়ির পাশ থেকেও গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন কনুই পর্যন্ত দু’হাত ধৌত করে তখন পানির সাথে তার দু’হাতের গুনাহসমূহ আঙ্গুলসমূহ দিয়ে ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর সে যখন মাথা মাসেহ করে, তখন তার মাথার গুনাহসমূহ চুলের অগ্রভাগ দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর সে যখন তার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করে, তখন তার পায়ের ও দু’পায়ের আংগুলসমূহ থেকেও পানির সাথে গুনাহ ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর সে যদি নামাযে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করে এবং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে (যথারীতি নামায আদায় করে), যথোপযুক্ত মর্যাদা তাঁকে দান করে এবং একমাত্র আল্লাহর জন্য তার অন্তর খালি করে দেয়, তাহলে সে তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মত পবিত্র ও নিষ্পাপ হয়ে ফেরে।

অতঃপর এ হাদীসটি আমর ইবনে আবাসা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী আবু উমামা (রা)-র কাছে বর্ণনা করলে আবু উমামা তাকে বলেন, হে আমর ইবনে আবাসা। তুমি একটু চিন্তা করে কথাগুলো বল। তুমি বলছো যে, একজন লোককে একই সময়ে এতোসব দেয়া হবে। আমর (রা) বলেন, হে আবু উমামা। আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার হাড় পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে, আর আমার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। মহান আল্লাহর উপর এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা বলার আমার কোন প্রয়োজন নেই। আমি যদি এ হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একবার, দু’বার, তিনবার (এভাবে গণনা করেন), এমনকি সাতবার না শুনতাম, তাহলে আমি তা কখনো বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি এটি তাঁর কাছ থেকে এর চাইতেও বেশি সংখ্যক বার শুনেছি। (মুসলিম)

٤٣٩- وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم قال إذا أراد اللهُ تَعَالَى رَحْمَةً أُمَّةٍ قَبَضَ نَبِيَّهَا قَبْلَهَا فَجَعَلَهُ لَهَا فَرَطًا وسلما بَيْنَ يَدَيْهَا واذا أراد هَلَكَةً أُمَّةٍ عَذَبَها ونَبيُّهَا حَى فَأَهْلَكَهَا وَهُوَ حَى يَنْظُرُ فَأَقَر عَيْنَهُ بهلاكها حينَ كَذَّبُوهُ وَعَصَوا أمره – رواه مسلم .

৪৩৯। আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তা’আলা যখন কোনো জাতির উপর অনুগ্রহ করার ইচ্ছা করেন, তখন সে জাতির পূর্বেই তাদের নবীকে উঠিয়ে নেন এবং তাঁকে তাদের জন্য অগ্রিম প্রতিনিধি ও আখিরাতের সঞ্চয় বানিয়ে দেন। আর যখন তিনি কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে চান, তখন তাদের নবীর জীবদ্দশায়ই তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন এবং তাঁর জীবনকালেই তাদেরকে ধ্বংস করেন। আর তিনি তা দেখতে থাকেন এবং তাদের ধ্বংস দেখে তিনি নিজের চোখ জুড়ান। কেননা তারা তাঁকে মিথ্যা মনে করেছিল এবং তাঁর নির্দেশ অমান্য করেছিল। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৫২ – আল্লাহর কাছে আশা ও সুধারণা করার ফযীলাত

আল্লাহর কাছে আশা ও সুধারণা করার ফযীলাত।

قَالَ اللهُ تَعَالَى إِخْبَارًا عَنِ الْعَبْدِ الصَّالِحِ : وَأَفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بصير بالعباد . فَوَقَاهُ اللهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا

মহান আল্লাহ একজন নেক বান্দার কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (বান্দা বলে) “আমি আমার বিষয় আল্লাহর কাছে সমর্পণ করছি। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের অনিষ্টকর ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করলেন।” (সূরা আল-মুমিন :৪৪-৪৫)

٤٤٠- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكُرُنِي وَاللهُ اللهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ يَجِدُ ضَالَتَهُ بِالْفَلَاةِ وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَى شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَمَنْ تقرب إلى ذراعا تقربت اليه بَاعًا وَإِذَا أَقْبَلَ إِلَى يَمْشِي أَقْبَلْتُ اليه أهزول – متفق عليه. وهذا لفظ إحدى رِوَايَاتِ مُسْلِمٍ وَتَقَدِّمَ شَرْحُهُ فِي الْبَابِ قَبْلَهُ – وَرَوَى فِي الصَّحِيحَيْنِ وَأَنَا مَعَهُ حِيْنَ يَذْكُرُنِي بِالنُّونِ وَفِي هَذِهِ الرواية حيث بالثاء وكلاهما صحيح

৪৪০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ “আমি আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ীই আছি (অর্থাৎ যে আমার সম্পর্কে যেরূপ ধারণা রাখে, আমিও তার সাথে সেরূপ ব্যবহার করি)। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে, আমি সেখানেই তার সাথে আছি।” আল্লাহর শপথ। তোমাদের কেউ বৃক্ষলতাহীন মরু প্রান্তরে তার হারানো বন্ধু পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়, আল্লাহ তার বান্দার তাওবায় এর চাইতেও বেশি আনন্দিত হন। (আল্লাহ আরো বলেন) যে ব্যক্তি আমার কাছে আসতে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই; আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই। সে যখন আমার দিকে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই। (বুখারী, মুসলিম)

٤٤١ – عليه وسلم قبل موته بثلاثة أيام يقول لا يموتن أحدكم إلا وَهُوَ يُحسن الظن بالله عز وجل – رواه مسلم .

৪৪১। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ইস্তিকালের তিন দিন পূর্বে বলতে শুনেছেন: তোমাদের কেউ যেন মহামহিম আল্লাহর প্রতি সুধারণা না রেখে মারা না যায়। (মুসলিম)

٤٤٢- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ قَالَ اللهُ تَعَالَى يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنكَ وَلا أَبَالِي يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ آتَيْتَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا لَاتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةٌ – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيث حَسَنٌ .

৪৪২। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেনঃ হে আদম সন্তান। তুমি যতো দিন পর্যন্ত আমার কাছে দু’আ করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি ততো দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকবো, তা তুমি যাই করে থাকো, সেদিকে আমি ভ্রূক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান। তোমার গুনাহ যদি আকাশচুম্বি হয় অর্থাৎ আকাশেও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। হে আদম সন্তান! তুমি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও যদি আমার সাথে সাক্ষাত কর এবং আমার সাথে কিছু শরীক না করে থাকো, তাহলে আমিও এ পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসবো।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ৫৩ – ভয়ভীতি ও আশা ভরসা একত্র হওয়া

ভয়ভীতি ও আশা ভরসা একত্র হওয়া।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَلا يَأْمَنُ مَكْرَ الله إِلا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ .

মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ

“দুর্দশাগ্রস্ত জাতি ছাড়া আর কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয় না।” (সূরা আল-আ’রাফঃ ৯৯)

وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّهُ لَا يَيَاسُ مِنْ رَّوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ

“কাফিররা ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না।” (সূরা ইউসুফ: ৮৭)

وتشود وجوه وقال تعالى : يوم تبيض وجوه وتم

“সেদিন কতিপয় চেহারা হবে সাদা এবং কতিপয় চেহারা হবে কালো।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৬)

وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ وَأَنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

“নিশ্চয়ই আপনার রব খুব দ্রুত শাস্তি প্রদান করেন। আর তিনি অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।” (সূরা আল-আ’রাফ: ১৬৭)

وَقَالَ تَعَالَى : إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ وَإِنَّ الْفُجَارَ لَفِي جَحِيمِ

“সৎকর্মশীল লোকেরা সুখে (জান্নাতে) থাকবে এবং বদকার লোকেরা জাহান্নামে থাকবে।” (সূরা আল-ইনফিতার: ১৩-১৪)

وَقَالَ تَعَالَى : فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيةٍ ، وَأَمَّا مَنْ خَفْتُ مَوَازِينُهُ فَأُمَّهُ هَاوِيَةٌ .

“অতঃপর যার (আমল বা ঈমানের) পাল্লা ভারী হবে, সে তো আশানুরূপ সুখে অবস্থান করবে। আর যার পাল্লা ওযনে হাল্কা হবে, হাবিয়া (জাহান্নাম) হবে তার বাসস্থান।” (সূরা আল-কারি’আঃ ৬-৯)

٤٤٣ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ مَا عِندَ اللهِ مِنَ الْعُقُوبَةِ مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ وَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ مَا عِنْدَ اللَّهِ مِنَ الرَّحْمَةِ مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أَحَدٌ .

৪৪৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ঈমানদাররা যদি আল্লাহর আযাব সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত থাকতো, তবে কেউ তাঁর জান্নাতের লোভ করতো না। আর কাফিররা যদি আল্লাহর রহমত সম্পর্কে পুরোপুরি জানতো, তাহলে কেউ তাঁর জান্নাতে থেকে নিরাশ হতো না। (মুসলিম)

٤٤٤ – وعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا وُضِعَتِ الْجَنَازَةُ وَاحْتَمَلَهَا النَّاسُ أَوِ الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ فَإِنْكَانَتْ صَالِحَةٌ قَالَتْ قَدِمُونِي قَدِمُونِي وَإِن كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ يَا وَيْلَهَا أَيْنَ تَذْهَبُونَ بِهَا يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلَّ شَيْ إِلا الْإِنْسَانُ ولو سمعه صعق – رواه البخاري

৪৪৪। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জানাযার লাশ যখন রাখা হয় এবং লোকজন তাকে তাদের কাঁধে উঠিয়ে বহন করে নিয়ে যায়, এ লাশটি যদি হয় সৎকর্মশীল ব্যক্তির তাহলে সে বলতে থাকে, আমাকে নিয়ে এগিয়ে চল, আমাকে নিয়ে এগিয়ে চল। আর যদি এটি হয় কোন অসৎ ব্যক্তির লাশ তাহলে সে বলে, হায়। দুর্ভাগাকে নিয়ে কোথায় চলেছো? মানবজাতি ছাড়া আর সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষ যদি তা শুনতো, তাহলে (এ চিৎকারের তীব্রতায়) সে মারা যেতো। (বুখারী)

٤٤٥ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم الجنَّة أقرب إلى أحدكم من شراك نعله والنار مثل ذلك – رواه البخاري.

৪৪৫। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত তোমাদের প্রত্যেকের জুতার ফিতার চাইতেও নিকটবর্তী এবং জাহান্নামও অনুরূপ নিকটে।

অনুচ্ছেদ: ৫৪ – মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার ফযীলাত ও তাঁর প্রতি আগ্রহ

মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার ফযীলাত ও তাঁর প্রতি আগ্রহ।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَيَخِرُونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا

মহান আল্লাহ বলেনঃ
“আর যারা কাঁদতে কাঁদতে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় এবং (কুরআন) তাদের ভীতি ও নম্র ভাবকে আরো বৃদ্ধি করে।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ১৯৯)

وقَالَ تَعَالَى : أَفَمَنْ هذا الحديث تَعْجَبُونَ وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ

“তবে কি তোমরা এই কথায় বিস্মিত হচ্ছো এবং হাসছো কিন্তু কাঁদছো না?” (সূরা আন-নাজম : ৫৯-৬০)

٤٤٦ – أن اسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ سُورَةَ النِّسَاء حَتَّى جِئْتُ إلى هذه الآية (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٌ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هُؤُلاء شَهِيدًا ) قَالَ حَسْبُكَ الآن فَالْتَفَتْ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَدْرِفان متفق عليه.

৪৪৬। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: আমার সামনে আল কুরআন তিলাওয়াত কর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি আপনার সামনে পড়বো, অথচ আপনার উপর তা নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন: আমি অপরের তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি। সুতরাং আমি তাঁর সামনে সূরা আন্ নিসা পড়লাম। আমি যখন এই আয়াতে পৌঁছলাম: “তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করবো এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবো” (সূরা আন্ নিসা: ৪১)। তিনি বললেন: এখন যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (বুখারী, মুসলিম)

٤٤٧ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خطْبَة مَا سَمِعْتُ مِثْلَهَا قَط فَقَالَ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كثيرًا قَالَ فَغَطَى أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجُوهَهُمْ وَلَهُمْ حنين. متفق عليهِ وَسَبَقَ بَيَانُهُ فِي بَابِ الْخَوْفِ .

৪৪৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক (নসীহতপূর্ণ) ভাষণ দিলেন, যে ধরনের ভাষণ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বললেন: আমি যা জানি তোমরাও যদি তা জানতে তবে খুব কমই হাসতে এবং অধিক কাঁদতে। তিনি (রাবী) বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ কাপড়ে তাদের মুখ ঢাকলেন এবং ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। (বুখারী, মুসলিম)

٤٤٨- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ ولا يَجْتَمِعُ عُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ . رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح. وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ الله اقرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ إِنِّي أَحِبُّ وَسَلَّمَ اقْرَأْ عَلَى الْقُرْآنَ قُلْتُ يَا رَسُولَ الله

৪৪৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত দুধ স্তনে ফিরে না আসে। আর আল্লাহর পথে জিহাদে ধুলো মলিন (পদদ্বয়) এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে ধুলি মলিন হয়েছে, সে জান্নাতে যাবে)। (বুখারী, মুসলিম) [টিকা: অর্থাৎ দুধ শুনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাটাও সম্পূর্ণ অসম্ভব।]

٤٤٩ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظله يوم لا ظل الا ظله امام عادل وَشَابٌ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ تَعَالَى وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلِّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابًا فِي اللَّهِ اجْتَمَعًا عَلَيْهِ وَتَفَرِّنَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ دَعَشه اشراةٌ ذاتُ مَنْصَبٍ وجَمَالَ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدِّقَ بصدقة فَاخْفَاهَا حَتَّى لا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فقاضَتْ عَيْنَاهُ متفق عليه .

৪৪৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাত ধরনের লোককে আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়াই থাকবে না। তারা হল: (১) ন্যায়বিচারক শাসক বা নেতা, (২) মহান আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল যুবক, (৩) মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি, (৪) যে দু’জন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে এবং একতাবদ্ধ থাকে, আবার এজন্যই পুনরায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, (৫) এরূপ ব্যক্তি, যাকে কোনো অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী খারাপ কাজে আহ্বান করেছে, কিন্তু সে বলে দিয়েছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৬) যে ব্যক্তি এতো গোপনভাবে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করলো, তার বাঁ হাতও তা জানতে পারলো না এবং (৭) এরূপ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিক্র করে এবং তার দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। (বুখারী, মুসলিম)

٤٥٠ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الشَّخَيْرِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ آتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجوفه أزيز كازيرَ الْمِرْجَلِ مِنَ الْبُكَاءِ. حَدِيث صحيح رواه أبو داود والترمذي في الشمائل باسناد صحيح

৪৫০। আবদুল্লাহ ইবনুশ শিখীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে দেখি তিনি নামায পড়ছেন এবং আল্লাহর ভয়ে কাঁদার দরুন তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির মতো আওয়াজ বেরুচ্ছে।

٤٥١- وعن أنس رضي اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لأبي بن كعب إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا ) قَالَ وَسَعَانِي قال نعم فبكى أبى – متفق عليه . وَفِي رِوَايَةٍ فَجَعَلَ أَبَى يَبْكي.

৪৫১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনে কা’ব (রা)-কে বললেন: মহামহিম আল্লাহ আমাকে তোমার সামনে সূরা (আল বায়্যিনাহ) পড়তে আদেশ করেছেন। তিনি (উবাই) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি আমার নাম উল্লেখ করে বলেছেন? তিনি (নবী) বললেন: হাঁ। উবাই (রা) আবেগে কেঁদে ফেললেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে: তৎক্ষণাৎ উবাই (রা) কাঁদতে লাগলেন।

٤٥٢ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ أَبُو بَكْرَ لِعُمَرَ بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انطلق بنا إِلَى أَمْ أَيْمَنَ تَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزُورُهَا فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهَا بَكَتْ فَقَالاً لَهَا مَا يُبْكِيْكَ أَمَا تَعْلَمِينَ أَنَّ مَا عِنْدَ اللهِ تَعَالَى خَيْرٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ إِنِّي لَا أَبْكِي أَنِّي لَا اعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَكِنِّي ابْكِي أَنَّ الوحى قد انقطع مِنَ السَّمَاءِ فَهَيْجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ فَجَعَلا يَبْكِيَانِ مَعَهَا -رواه مسلم

৪৫২। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইস্তিকালের পর আবু বাক্স (রা) উমার (রা)-কে বললেন, চলো আমরা উন্মু আইমানকে দেখে আসি, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে যেতেন। অতঃপর তাঁরা যখন তাঁর কাছে পৌঁছলেন, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁরা তাকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি জানেন না যে, মহান আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কত কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কী অফুরন্ত কল্যাণ রয়েছে তা আমি জানি না, বরং আমি কাঁদছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী আসা যে বন্ধ হয়ে গেলো। তাঁর এ কথায় তাঁদের উভয়ের অন্তর প্রভাবিত হলো এবং তাঁর সাথে তাঁরাও কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম)

٤٥٣- وَعَن ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعَهُ قَبْلَ لَهُ فِي الصَّلاةِ فَقَالَ مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ فَقَالَتْ عَائِشَةُ إِن أبا بكر رَجُلٌ رَقِيقٌ إِذَا قَرَأَ الْقُرْآنَ غَلَبَهُ الْبُكَاءُ فَقَالَ مُرُوهُ فَلْيُصَلِّ. وَفِي رِوَايَةٍ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قُلْتُ إِنَّ أبا بكر إِذَا قَامَ مَقَامَكَ لَمْ يُسْمِعِ النَّاسِ من البكاء – متفق عليه.

৪৫৩। ইবনে উমার (রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোগ যখন তীব্র আকার ধারণ করলো, তখন তাঁকে নামাযের কথা বলা হলে তিনি বললেন: আবু বাঞ্ছ কে আদেশ করো, সে যেন লোকদের নামায পড়ায়। আয়িশা (রা) বললেন, আবু বাক্স তো অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ। যখন তিনি আল কুরআন তিলাওয়াত করবেন, তখন ক্রন্দন তাঁর উপর প্রভাব বিস্তার করবে। তিনি আবার বললেন: তাকে আদেশ কর সে যেন নামায পড়ায়। আয়িশা (রা) থেকে অপর এক বর্ণনায় আছেঃ তিনি (আয়িশা) বলেন, আমি বললাম, আবু বাক্র যগুলি আপনার জায়গায় দাঁড়াবেন কান্নার কারণে মুসল্লীদের (কুরআন) শুনাতে পারবেন না। (বুখারী, মুসলিম)

٤٥٤- وعن إبراهيمَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفِ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَتِي بِطَعَامٍ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ قُتِلَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي قلم يُوجَدْ لَهُ مَا يُكَفِّنُ فِيهِ إِلَّا بُرْدَةٌ إِنْ عُطَى بِهَا رَأْسُهُ بَدَتْ رِجْلَاهُ وَإِنْ عُطَى بها رجلاه بَدَا رَأسَهُ ثُمَّ بسط لنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ أَوْ قَالَ أَعْطَيْنَا مِنَ الدُّنْيَا ما أُعْطِينَا قَدْ خَشِيْنَا أَنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجْلتْ لَنَا ثُمَّ جَعَلَ يَبْكِي حَتَّى ترك الطعام – رواه البخاري.

৪৫৪। ইবরাহীম ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আওফ (র) থেকে বর্ণিত। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা)-র সামনে খাবার পেশ করা হলো, তিনি ছিলেন রোযাদার। তিনি বলেন: মুসআব ইবনে উমাইর (রা) শহীদ হয়েছেন এবং তিনি ছিলেন আমার চাইতে উত্তম লোক। তাঁকে কাফন দেয়ার মতো কোন কাপড়ের ব্যবস্থাই ছিল না একটি চাদর ছাড়া। তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকা হলে তাঁর পা দু’টি অনাবৃত হয়ে যেতো এবং পা ঢাকা হলে তাঁর মাথা অনাবৃত হয়ে যেতো। অতঃপর আমাদের পর্যাপ্ত পার্থিব প্রাচুর্য দেয়া হলো।

ফলে আমরা শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আমাদের সৎ কাজের বিনিময় দুনিয়াতেই দেয়া হচ্ছে কিনা। অতঃপর তিনি কেঁদে দিলেন, এমনকি খাবার ত্যাগ করলেন। (বুখারী)

٤٥٥ – وَعَنْ أَبِي أَمَامَةً صُدَيِّ بْنِ عَجْلانَ الْبَاهِلِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ شَيْ أَحَبُّ إِلى اللهِ تَعَالَى مِنْ قَطْرَتَيْنِ واثرين قطرة دموع مِنْ خَشْيَةِ الله وقطرة دم تُهَرَاقُ فِي سَبِيلِ اللهِ وَأَما الأثرانِ فَاثَرٌ فِي سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى وَاثَر فِي فَرِيضَةٍ مِّنْ فَرَائِضِ اللَّهِ تَعَالَى رواه الترمذي وقال حديثٌ حَسَنٌ .

৪৯৫। আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান আল-বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহর কাছে দু’টি বিন্দু (ফোঁটা) এবং দু’টি নিদর্শ চাইতে প্রিয় বন্ধু আর কিছু নেই। তার একটি হলো আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রুবিন্দু এবং অপরটি হলো আল্লাহর পথে (জিহাদে) প্রবাহিত রক্তবিন্দু। আর দু’টি নিদর্শন বা চিহ্ন হলো আল্লাহর পথে (জিহাদে আহত হওয়ার) চিহ্ন এবং আল্লাহর ফরযসমূহের মধ্য থেকে কোন ফরয আদায় করার চিহ্ন।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান। এই অনুচ্ছেদে আরো বহু হাদীস বর্ণিও হয়েছে। তন্মধ্যে। দআত থেকে দূরে থাকা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে ইতিপূর্বে একাধিক স্থানে তা বর্ণিতছি। যেমন ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা)-র হাদীসঃ

٤٥٦ – حدِيثُ الْعُرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ وَذَرَقَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ

৪৫৬। ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে এমন এক উপদেশপূর্ণ ভাষণ দেন যাতে আমাদের অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।

অনুচ্ছেদ : ৫৫ – পার্থিব জীবনে কৃষ্ণসাধনার (যুহদ) ফযীলাত, অল্পে তুষ্ট থাকতে উৎসাহদান এবং দারিদ্র্যের ফযীলাত

পার্থিব জীবনে কৃষ্ণসাধনার (যুহদ) ফযীলাত, অল্পে তুষ্ট থাকতে উৎসাহদান এবং দারিদ্র্যের ফযীলাত।

মহান আল্লাহ বলেন:

قَالَ اللهُ تَعَالَى : إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَا أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِنباتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّى إذا أَخَذَتْ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَأَزْيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أمرنا ليلا أو نهاراً فَجَعَلْنَاهَا حَصِيداً كَانَ لَمْ تَعْنَ بِالْأَمْسِ كَذلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ.

“বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের অবস্থা তো এরূপ, যেরূপ আমি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করলাম, অতঃপর এর সাহায্যে যমীনের সেসব উদ্ভিদ অত্যন্ত ঘন হয়ে উৎপন্ন হলো, যেগুলো মানুষ এবং পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যমীন যখন পরিপূর্ণ সুদৃশ্য রূপ পরিগ্রহ করলো এবং শোভনীয় হয়ে উঠলো, আর এর মালিকরা মনে করতে লাগলো যে, তারা এর পূর্ণ অধিকারী হয়ে গেছে, তখনি দিনে অথবা রাতে আমার পক্ষ থেকে কোন আপদ। এসে পড়লো, আর আমি এগুলোকে এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিলাম, যেনো গতকালও এগুলোর কোন অস্তিত্বই ছিলো না। চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনসমূহ আল্লি এরূপেই বিশদভাবে বর্ণনা করি।” (সূরা ইউনুসঃ ২৪)

وقال تعالى : واضْرِبْ لَهُمْ مَثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَا أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فاختلط به نباتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذَرُوهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مقْتَدِرًا الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَ حَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أملام

“আপনি তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন: তা হচ্ছে পানির ন্যায় যা আমি আসমান থেকে বর্ষণ করি। অতঃপর এর সাহায্যে যমীনের উদ্ভিদসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উৎপন্ন হলো এবং পরে তা শুকিয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো এবং বাতাস এগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভামাত্র। আর নেক কাজসমূহ অনন্তকাল ধরে থাকবে; আর এগুলোই আপনার রবের কাছে সাওয়াব হিসেবে এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে উত্তম।” (সূরা আল-কাহফঃ ৪৫-৪৬)

وَقَالَ تَعَالَى : اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيا لعب ولهو وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وتكاثر في الأموال والأولاد كَمَثَلِ غَيْثَ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًا ثُمَّ يَكُونُ حَطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

“জেনে রাখ, দুনিয়ার জীবন তো কেবল খেল-তামাশা, জাঁকজমক ও পরস্পর আত্মগর্ব করা, আর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি সম্বন্ধে একে অন্যের অপেক্ষা প্রাচুর্য বর্ণনা করা মাত্র। যেরূপ বৃষ্টি বর্ষিত হলে এর সাহায্যে উৎপাদিত ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, অতঃপর তা শুকিয়ে যায় এবং তুমি তাকে হরিদ্রা বর্ণের দেখতে পাও। অতঃপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে রয়েছে কঠোর শাস্তি এবং (ঈমানদারের জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন প্রতারণার উপকরণ মাত্র।” (সূরা আল-হাদীদঃ ২০)

وقال تعالى : زين للنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ المقنطرة من الذهَب وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعٌ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَابِ.

“নারী, সন্তান-সন্ততি, পুঞ্জিভূত সোনা-রূপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত-খামারের প্রতি-আকর্ষণ মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এগুলো দুনিয়ার জীবনের পকরণ। আর আল্লাহ, তাঁর নিকটই তো রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তন।” (সূরা আলে ইমরান ১১৪)

وقال تعالى : يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغْرِنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغْرَنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ

“হে মানবজাতি। আমাদ, বহু, নবশ্যই সত্য। সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না আর প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্বন্ধে ধোঁকায় না ফেলে।” (সূরা ফাতির: ৫)

وقال تعالى : الْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ ثُمَّ كَلا سوْفَ تَعْلَمُونَ كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ.

“ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য ও দাম্ভিকতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে পৌঁছে যাও। কখনো নয়, অতি শিগগির তোমরা জানতে পারবে। অতঃপর কখনো নয়, তোমরা অবিলম্বেই জানতে পারবে। কখনো নয়, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে পারতে।” (সূরা আত্-তাকাসুর: ১-৫)

وقال تعالى : وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إلا لهو ولعب وإن الدار الآخرة لهي الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ.

“দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানতো।” (সূরা আল-আনকাবূত: ৬৪)

٤٥٧- عَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفِ الْأَنْصَارِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ أَبا عبيدة بن الجراح إلى الْبَحْرَيْنِ يَأْتِي بِجِزْيَتِهَا فَقَدِمَ بِمَالٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ فَسَمِعَتِ الْأَنْصَارُ بِقُدُوْمٍ أَبِي عُبَيْدَةَ فَوَافَوْا صَلَاةَ الْفَجْرِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصَرَفَ فَتَعَرَّضُوا لَهُ فَتَبَسَّمَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ رَأَهُمْ ثُمَّ قَالَ أَظُنُّكُمْ سَمِعْتُمْ أَنَّ أَبَا عُبَيْدَةَ قَدِمَ بِشَيْءٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ فَقَالُوا أَجَلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ ابشروا وأملوا مَا يَسُرُّكُمْ فَوَالله مَا الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ وَلَكِنِّي أَخْشَى أَنْ ط الدُّنْيَا عَلَيْكُمْ كَمَا يُسطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا فَتُهْلِكَكُمْ كَما أهلكتهم متفق عليه .

৪৫৭। আমর ইবনে আওফ আল আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিযিয়া আদায় করে আনার জল আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা)-কে বাহরাইনে পাঠান। তিনি বাহরাইন থেকে খর্ণ-সম্পদীদায় ফিরে এলেন। আনসাররা আবু উবাইদা (রা)-র ফিরে আসার ২২ খেতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে ফজরের নামায পড়েন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করলে পর তারা তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন। তাঁদের দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে বলেন: আমার মনে হয়, তোমরা আবু উবাইদার বাহরাইন থেকে মাল নিয়ে ফিরে আসার সংবাদ শুনতে পেয়েছো? তাঁরা বলেন, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। অতঃপর তিনি বলেনঃ তোমরা আনন্দিত হও, আর যে বস্তু তোমাদের খুশির কারণ হয় তার আশা কর। আল্লাহর শপথ! তোমাদের জন্য আমি দারিদ্র্যের ভয় করছি না, বরং এই ভয় করছি যে, পার্থিব প্রাচুর্য তোমাদের সামনে প্রসারিত করা হবে, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য প্রসারিত করা হয়েছিল। অতঃপর তারা যেরূপ লালসা ও মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, তোমরাও সেরূপ লালসাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং এই পার্থিব প্রাচুর্য তাদেরকে যেরূপ ধ্বংস করেছে, তোমাদেরকেও সেরূপ ধ্বংস করবে। (বুখারী, মুসলিম)

٤٥٨- وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّىاللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ فَقَالَ إِنَّ مِمَّا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِى مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَة الدنيا وزينتها – متفق عليه .

৪৫৮। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে বসলেন এবং আমরা তাঁর চারপাশে বসলাম। তিনি বলেনঃ আমার পরে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে তোমাদের জন্য আমার ভয় হচ্ছে তা হলো, (বিভিন্ন দেশ জয়ের পর) তোমরা যে পার্থিব চাকচিক্য ও সৌন্দর্য লাভ করবে (অর্থাৎ বিভিন্ন দেশ জয়ের পর তোমাদের হাতে যখন প্রাচুর্য আসবে, তোমরা তখন পার্থিব বস্তুর পেছনে ধাবিত হবে, এটাই আমার বড় আশংকা)। (বুখারী, মুসলিম)

٤٥٩ – وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا حَلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى مُسْتَخْلِفَكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُوْنَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النساء – رواه مسلم.

৪৫৯। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুনিয়াটা একটা শ্যামল সবুজ সুমিষ্ট বস্তু। আল্লাহ এখানে তোমাদের প্রতিনিধি বানিয়ে পাঠিয়েছেন এবং তোমরা কী করছো তা দেখছেন। সুতরাং এ দুনিয়ার (লোভ-লালসা থেকে) আত্মরক্ষা কর এবং স্ত্রীলোকের (ফিতনা) সম্পর্কেও সতর্ক থাক। (মুসলিম)

٤٦٠ – وَعَنْ أَنَسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللَّهُمْ لَا عيش الأ عيش الآخرة – متفق عليه .

৪৬০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।” (বুখারী, মুসলিম)

٤٦١- وَعَنْهُ عَنْ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاثَةٌ أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ يَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عَمَلُهُ متفق عليه .

৪৬১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃতের পেছনে পেছনে (কবর পর্যন্ত) যায়: তার পরিজন, তার ধন-সম্পদ ও তার আমল (নেক বা বদ)। অতঃপর দু’টি ফিরে আসে এবং একটি (তার সাথে) থেকে যায়। তার পরিজন ও সম্পদ ফিরে আসে এবং তার আমল তার সাথে থেকে যায়।” (বুখারী, মুসলিম)

٤٦٢- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدنيا من أهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَعُ فِي النَّارِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ يَا ابْنَ آدَمَ هل رأيت خَيْرًا قَطُّ هَلْ مَرْ بِكَ نَعِيمٌ قَط فَيَقُولُ لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ الناس بوسا في الدُّنْيا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَعُ صَبْغَةً فِي الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ ادم هل رأيت بُوسًا قَط هَلْ مَرَّ بِكَ شدة قط؟ فَيَقُولُ لَا وَاللَّهِ مَا مَرَّ بِي يُؤْسٌ قط ولا رأيت شدة قط – رواه مسلم .

৪৬২। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে দুনিয়াতে সর্বাধিক প্রাচুর্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হাযির করা হবে এবং খুব জোরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে আদম সন্তান। তুমি কি কখনো কোনো কল্যাণ দেখেছো, তুমি কি কখনো প্রাচুর্যে দিন যাপন করেছো? সে বলবে, না, আল্লাহর শপথ। হে আমার রব। আবার জান্নাতীদের মধ্য থেকেও একজনকে হাযির করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুর্দশা ও অভাবগ্রস্ত ছিল। অতঃপর তাকে খুব দ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, অতঃপর জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো কোন অভাব দেখেছো, তুমি কি কখনো দুর্দশা ও অনটনের মধ্যে দিন যাপন করেছো? সে বলবে, “না, আল্লাহর শপথ। আমি কখনো অভাব-অনটন দেখিনি এবং আমার উপর দিয়ে তেমন কোনো দুর্দশাও অতিবাহিত হয়নি। (মুসলিম)

٤٦٣ – وَعَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَادٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَة الأمثلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ أَصْبُعَهُ فِي الْيَمِّ فَلْيَنظُرْ بِمَ يَرْجِعُ – رواه مسلم .

৪৬৩। মুসতাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হলো এরূপ যে, তোমাদের কেউ তার একটি আঙুল সমুদ্রে ডুবালে কতটুকু সাথে নিয়ে ফিরে তা দেখুক (অর্থাৎ আঙুলের অগ্রভাগে সমুদ্রের পানির যতটুকু পানি লেগে থাকে, সমুদ্রের তুলনায় তা যেমন কিছুই নয়, তেমনি আখিরাতের তুলনায় দুনিয়াও কিছুই নয়। (মুসলিম)

٤٦٤ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرُ بالسوق والنَّاسُ كَنَفَتَيْهِ فَمَرْ بِجَدَى أَسَك مَيْت فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ أَيُّكُمْيُحِبُّ أَنْ يَكُونَ هَذَا لَهُ بِدِرْهَم فَقَالُوا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ ثُمَّ قَالَ اتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ قَالُوا وَالله لَوْ كَانَ حَيًّا كَانَ عَيْبًا أَنَّهُ أَسَكُ فَكَيْفَ وَهُوَ مَيْت فَقَالَ فَوَاللَّهِ لِلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هذا عَلَيْكُمْ – رواه مسلم .

৪৬৪। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর দু’পাশে ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম। তিনি একটি কানকাটা মরা ছাগল ছানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এর কান ধরে তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটা কিনতে রাযি আছে? তারা বলেন, আমরা কোন কিছুর বিনিময়ে এটা কিনতে রাযি নই; আর আমরা এটা দিয়ে করবোই বা কি? তিনি পুনরায় বলেনঃ তোমরা কি বিনামূল্যে এটা নিতে রাযি আছো? তারা বলেন, আল্লাহর শপথ। এটা যদি জীবিতও থাকতো, তবুও ত্রুটিপূর্ণ; কেননা এটার কান কাটা। তাহলে মৃত অবস্থায় এর কী মূল্য হতে পারে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর কসম। তোমাদের কাছে এ ছাগল ছানাটা যেরূপ নিকৃষ্ট, দুনিয়াটা আল্লাহর কাছে এর চাইতেও বেশি নিকৃষ্ট। (মুসলিম)

٤٦٥- وَعَنْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَرَّةِ بِالْمَدِينَةِ فَاسْتَقْبَلَنَا أَحَدٌ فَقَالَ يَا أَبَا ذَرٍ قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ مَا يَسرني أن عندى مثل أحد هذا ذَهَبًا تَمْضَى عَلَى ثلاثة أيام وعندى مِنْهُ دِينَارُ إِلا شَيْ أَرْصُدُهُ لِدَيْنِ إِلا أن أقولَ بِهِ فِي عِبَادِ اللهِ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهُكَذَا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ وَعَنْ خَلْفِهِ ثُمَّ سَارَ فَقَالَ إِنَّ الْأَكْثَرِيْنَ هُمُ الْأَقَلُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَّا مَنْ قَالَ بِالْمَالِ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ وَمِنْ خَلْفَه وقَلِيلٌ مَا هُمْ ثُمَّ قَالَ لِي مَكَانَكَ لا تَبْرَحْ حَتَّى أَتِيَكَ ثُمَّ انْطَلَقَ فِي سواد الليل حتى تَوَارَى فَسَمِعْتُ صَوْتًا قَدِ ارْتَفَعَ فَتَخَوفْتُ أَنْ يَكُونَ أَحَدٌ عَرَضَ للنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَارَدْتُ أَنْ أَتِيَهُ فَذَكَرْتُ قَوْلَهُ لَا تَبْرَحْ حَتَّى أَتِيَكَ فَلَمْ أَبْرَحْ حَتَّى أَتَانِي فَقُلْتُ لَقَدْ سَمِعْتُ صَوْتًا تَخَوقْتُ مِنْهُ فَذَكَرْتُ لَهُ فَقَالَ وَهَلْ سَمِعْتَهُ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ ذَاكَ جِبْرِيلُ آتَانِى فَقَالَ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لَا يُشْرِكُ باللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ – متفق عليه وهذا لفظ البخاري .

৪৬৫। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদীনার কালো কংকরময় প্রান্তরে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বলেনঃ হে আবু যার। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি আপনার খিদমতে হাযির আছি। তিনি বলেন: এই উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও যদি আমার হয় এবং তিন দিন অতীত হওয়ার পরও আমার কাছে তা থেকে আমার ঋণ আদায়ের অংশ ছাড়া একটি দীনারও অবশিষ্ট থাকে তবে আমি তাতে মোটেও খুশি হতে পারব না, যাবত না তা আমি আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এভাবে, এভাবে ও এভাবে, ডানে-বাঁয়ে ও পেছনে খরচ করি। অতঃপর তিনি এগিয়ে চললেন এবং বললেন: বেশি সম্পদশালীরাই কিয়ামাতের দিন নিঃস্ব হবে; কিন্তু যারা সম্পদ এভাবে, এভাবে ও এভাবে ডানে-বাঁয়ে ও পেছনে খরচ করেছে তারা ব্যতীত। তবে তাদের মধ্যে এ ধরনের লোকের সংখ্যা খুবই কম। অতঃপর তিনি আমাকে বলেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি নিজের স্থান থেকে নড়বে না। অতঃপর তিনি রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আমি একটা বিকট শব্দ শুনে ভয় পেয়ে গেলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর কোন অস্বাভাবিক কিছু ঘটে গেলো কি না? কাজেই আমি তাঁর খোঁজে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, কিন্তু তাঁর এ আদেশঃ “আমি না আসা পর্যন্ত তুমি নিজের স্থান থেকে নড়বে না’ স্মরণ হয়ে গেলো এবং তাঁর ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত আমি স্থান ত্যাগ করলাম না। আমি বললাম, আমি একটা বিকট শব্দ শুনে তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি তাঁকে বললে তিনি বলেন: তুমি তাহলে সে শব্দ শুনেছো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন: এটা জিবরাঈলের শব্দ। তিনি আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলে গেলেনঃ তোমার উম্মাতের যে কেউ আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, সে যদি যেনা করে, সে যদি চুরি করে? তিনি বলেনঃ সে যদি যেনাও করে এবং চুরিও করে, তবুও।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে হাদীসের মূল পাঠ বুখারীর।

٤٦٦- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ كَانَ لِي مِثل أحد ذهبا لسرني أن لا تَمُرُ عَلَى ثَلَاثُ لِبَالٍ وَعِنْدِي مِنْهُ شي إلا شَيْ أَرْصدُهُ لدين متفق عليه .

৪৬৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে এবং আমার ঋণ পরিশোধের সম-পরিমাণ ব্যতীত তিন দিন যেতে না যেতেই আমার কাছে এর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এতেই আমি আনন্দিত হবো। (বুখারী, মুসলিম)

٤٦٧ – وعنه قَالَ قَالَ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ اسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ اجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عليكم – متفق عليه وهذا لفظ مسلم . وفي رِوَايَةِ الْبُخَارِي إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضْلَ عَلَيْهِ فِي الْمَالِ وَالْخَلْقِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ اسْفَلَ مِنْهُ .

৪৬৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের চাইতে নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির দিকে তাকাও এবং তোমাদের চাইতে উচ্চ মর্যাদাশীলের দিকে তাকিও না। তোমাদের উপর আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহকে নিকৃষ্ট মনে না করার জন্য এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ সহীহ মুসলিমের। বুখারীর অপর বর্ণনায় আছে: তোমাদের কেউ তার চাইতে ধনী ও দৈহিক গঠনে সৌন্দর্যমণ্ডিত কোন ব্যক্তির দিকে তাকালে সে যেনো তার চাইতে নিকৃষ্ট ব্যক্তির দিকেও তাকায় (তাহলে তাকে যা দেয়া হয়েছে তার মূল্য বুঝতে পারবে)।

٤٦٨- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدَّرْهَم والقطيفة والخميصة أن أعطى رضى وان لم يعط لم يَرْضَ – رواه البخاري.

৪৬৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দীনার, দিরহাম, কালো চাদর ও চওড়া পাড় পশমী চাদরের দাস ধ্বংস হোক। কেননা তাকে যদি দেয়া হয় তবে খুশি, কিন্তু না দেয়া হলেই বেজার। (বুখারী)

٤٦٩- وَعَنْهُ قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ سَبْعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَةِ مَا مِنْهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدا ..
اما ازار واما كسَاءٌ قَدْ رَبطوا فِي أَعْنَاقِهِمْ فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نَصْفَ السَّاقَيْنِ وَمِنْهَا ما يَبْلُغُ الكعبين فيجمعه بيده كراهية أن ترى عورته – رواه البخاري .

৪৬৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, যাদের কারো কোন চাদর ছিল না। কারো হয়তো একটি লুংগি এবং কারো একটি কম্বল ছিল। তারা এটাকে নিজেদের গলায় বেঁধে রাখতেন। কারোরটা হয়তো তার পায়ের গোছার অর্ধাংশ পর্যন্ত পৌঁছতো; কারোরটা হাঁটু পর্যন্ত। লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হওয়ার ভয়ে তাঁরা হাত দিয়ে তা ধরে রাখতেন। (বুখারী) [টিকা: ৬১. আস্হাবে সুফফা সেসব বিদ্যোৎসাহী সাহাবীদের বলা হয়, যাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে নবী (সা)-এর কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাঁরা মসজিদে নববীর আংগিনায় থাকতেন। যুদ্ধের ডাক দেয়া হলে অংশগ্রহণ করতেন। মোটা পশমী কম্বল পরতেন। তাদের ভরণপোষণের জন্য নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরই দায়িত্ব ছিল। অত্যন্ত দীনহীন ও পবিত্র জীবন যাপনের জন্য ইসলামের ইতিহাসে তাঁরা বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত।]

٤٧٠ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وجنة الكافر – رواه مسلم .

৪৭০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুনিয়াটা হলো মুমিনের জন্য কারাগার এবং কাফিরের জন্য জান্নাত। (মুসলিম) [টিকা: এর অর্থ এটা নয় যে মুমিনদেরকে শাস্তিস্বরূপ দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি কারাগারে যদি প্রথম শ্রেণীর সুযোগ-সুবিধাও লাভ করে তবুও সেখানে সে যেমন অবস্থান করতে চায় না বরং সবসময় সে তার আবাসস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য উন্মুখ থাকে, তেমনিভাবে একজন মুমিন দুনিয়ার জীবনে যত সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও অর্থ-বিত্তের মালিক হোক না কেন, সবসময় সে তার আসল নিবাস জান্নাতে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব থাকে।]

٤٧١ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَخَذَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبَى فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلِ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ إِذا أَمْسَيْت فلا تنتظر الصباح وإذا أصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صحتك المرضك ومن حياتك لموتك – رواه البخاري .

৪৭১। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেন: দুনিয়াতে তুমি মুসাফির অথবা পথচারী হয়ে থেকো। তাই ইবনে উমার (রা) বলতেন, তুমি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হও, তখন সকালের প্রতীক্ষা করো না, তুমি যখন সকালে উপনীত হও, তখন সন্ধ্যার প্রতীক্ষা কর না, সুস্থ থাকার সময় রোগের সময়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর এবং তোমার জীবনকালে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। (বুখারী)

ইমাম নববী (র) বলেন, মুহাদ্দিসগণ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ হাদীসের অর্থ এই যে, তোমরা দুনিয়ার জীবনের প্রতি নিশ্চিন্ত হয়ে তাকে প্রকৃত আবাস হিসাবে গ্রহণ করো না এবং এখানে দীর্ঘকাল ধরে থাকতে পারবে বলে আশা পোষণ করো না। দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক হবে একজন বিদেশী পর্যটকের মত। সে বিদেশে যথাসম্ভব দ্রুত নিজের প্রয়োজন সেরে তার নিজ দেশে চলে যায়, তার পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য।

٤٧٢ – وعَنْ أَبِي الْعَباسِ سَهْلِ بْن سَعْد السَّاعِدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رجل إلى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ دُلْنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ فَقَالَ ازْهَدَ فِي الدُّنْيَا يُحِبُّكَ اللَّهُ وَأَزْهَدْ فِيمَا عند الناس يحبك الناس – حديث حسن رواه ابن ماجة وغيره باسانيد حسنة.

৪৭২। আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ আস-সা’য়েদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল। আমাকে এমন কোন কাজ বলে দিন, যখন আমি তা করবো তখন আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষও আমাকে ভালোবাসবে। তিনি বলেন, তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হও, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষের কাছে যা আছে, তার প্রতিও অনাসক্ত হও তাহলে মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে।

হাদীসটি হাসান, ইমাম ইবনে মাজাহ প্রমুখ উত্তম সনদসহ বর্ণনা করেছেন।

٤٧٣ – وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا فَقَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم يَظُلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِي مَا يَجِدُ مِن الدقلِ مَا يَمْلأُ بِهِ بَطْنَهُ – رواه مسلم.

৪৭৩। নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেসব লোক পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও ধন-সম্পদ অর্জন করেছে, তাদের উল্লেখ করে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, দিনভর তাঁর (নাড়িভুঁড়ি) পেঁচিয়ে থাকতো, অথচ তাঁর পেটে দেয়ার মত নিকৃষ্ট খেজুরও মিলতো না। (মুসলিম)

٤٧٤- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالتْ تُوفِى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا فِي بَيْتِي مِنْ شَيْءٍ يَأْكُلُهُ ذُو كَبد إلا شَطْرُ شَعِيرٍ فِي رَبِّ لِي فَأَكَلْتُ مِنْهُ حَتَّى طَالَ عَلَى فَكِلْتُهُ فَفَنِي – متفق عليه .

৪৭৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের সময় আমার ঘরে এমন কোন বস্তু ছিল না যা কোন প্রাণী খেতে পারে। তবে আমার দেরাজে সামান্য কিছু যব মজুদ ছিল, অনেক দিন পর্যন্ত আমি তা থেকে খেতে থাকলাম। শেষে আমি তা ওজন করলাম এবং তা ফুরিয়ে গেলো। (বুখারী, মুসলিম)

٤٧٥ – وَعَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَخِي جُوَيْرِيَةً بِنْتِ الْحَارِثِ أَمْ الْمُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ موته ديناراً ولا درهما ولا عبداً ولا أمةً ولا شَيْئًا إِلَّا بَغْلَتَهُ الْبَيْضَاءَ الَّتِي كَانَ يركبها وسلاحه وأَرْضًا جَعَلَهَا لِابْنِ السبيل صدقة – رواه البخاري .

৪৭৫। উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া বিনতুল হারিস (রা)-র ভাই আমর ইবনুল হারিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তিকালের সময় কোন দীনার-দিরহাম, দাস-দাসী এবং অন্য সামগ্রী রেখে যাননি। তবে মাত্র তাঁর বাহন সাদা খচ্চরটি, তাঁর তরবারি এবং মুসাফিরদের জন্য দানকৃত কিছু ভূমি তিনি রেখে যান। (বুখারী)

٤٧٦ – وَعَنْ خَبَّابِ بْنِ الْأَرَبِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَلْتَمِسُ وَجْهَ الله تَعَالَى فَوَقَعَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ فَمِنَّا مَنْ مَاتَ ولم يَأْكُل مِنْ أَجْرِه شَيْئًا مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أَحُدٍ وَتَرَكَ نِمَرَةٌ فَكُنَّا إِذا عَطَيْنَا بِهَا رَأسَهُ بَدَتْ رِجَلاهُ وَإِذَا عَطَيْنَا بِهَا رِجْلَيْهِ بَدَأَ رَأْسُهُ قَامَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُعْطِيَ رَأْسَهُ وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ شَيْئًا مِّنَ الْإِذْخِرِ وَمِنَّا مَنْ ابْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يَهْدِبُهَا – متفق عليه .

৪৭৬। খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হিজরাত করেছি। কাজেই এর সাওয়াব আমরা আল্লাহর কাছে পাব। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এর বিনিময় ভোগ না করেই মারা গেছেন। তন্মধ্যে মুসআব ইবনে উমাইর (রা) উল্লেখযোগ্য। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর সম্পদের মধ্যে রেখে যান মাত্র একটি রঙীন পশমী চাদর। আমরা (কাফন দেবার জন্য চাদরটি দিয়ে) তাঁর মাথা ঢাকতে চাইলে তাঁর পা দু’টি অনাবৃত হয়ে যেতো এবং তাঁর পা দু’টি ঢাকতে চাইলে তাঁর মাথা অনাবৃত হয়ে যেতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথা ঢেকে দিতে এবং তাঁর পায়ে ‘ইযখির’ ঘাস রেখে দিতে আমাদের আদেশ করেন। এখন আমাদের কারো কারো অবস্থা এরূপ যে, তার ফল পেকে রয়েছে এবং তিনি তা কেটে ভোগ করছেন (অর্থাৎ ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের মধ্যে জীবন যাপন করছেন)। (বুখারী, মুসলিম)

٤٧٧ – وَعَنْ سَهْلِ بْن سَعْد السَّاعِدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِندَ اللهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا منها شربة ماء . رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

৪৭৭। সাহল ইবনে সা’দ আস-সা’য়েদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর কাছে পৃথিবীর মূল্য যদি মশার ডানার সমতুল্যও হতো, তাহলে তিনি কোন কাফিরকে এক চুমুক পানিও পান করতে দিতেন না।

এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٤٧٨- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الا ان الدُّنْيَا مَلْعُوْنَةٌ مَلْعُوْنَ مَا فِيهَا الأذكرَ اللَّهِ تَعَالَى وَمَا وَالاهُ وَعَالِمًا وَمُتَعَلما – رواه الترمذي وقال حديث حسن.

৪৭৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। জেনে রাখ, দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুই অভিশপ্ত। কিন্তু আল্লাহ তা’আলার যিক্র ও তিনি যা পছন্দ করেন এবং জ্ঞানী ও জ্ঞানার্জনকারী (অভিশপ্ত নয়)।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, এটি হাসান হাদীস।

٤٧٩ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تَتَّخِذُوا الضَّيْعَةَ فَتَرْغَبُوا في الدُّنْيا – رواه الترمذي وقال حَدِيثٌ حَسَنٌ.

৪৭৯। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা জমিজমা ও ক্ষেত-খামার অর্জনের পেছনে লেগে যেও না, তাহলে তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।

٤٨٠- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ مَرَّ عَلَيْنَا رسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَعَالِجُ خُصا لَنَا فَقَالَ مَا هُذَا فَقُلْنَا قَدْوَهَى فَنَحْنُ نُصْلِحُهُ فَقَالَ مَا أَرَى الْأمْرَ إِلا أَعْجَلَ مِنْ ذلك – رواه ابو داود والترمذى بِاسْنَادِ الْبُخَارِي وَمُسْلِمِ وَقَالَ التَّرْمِذِيُّ حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

৪৮০। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর মেরামত করছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কী করা হচ্ছে? আমরা বললাম, এটা নড়বড়ে বা ভগ্নপ্রায় হয়ে গেছে, তাই আমরা তা মেরামত করছি। তিনি বলেন: আমি তো দেখছি কিয়ামাত এর চাইতেও তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। [টিকা: অর্থাৎ কুঁড়েঘরটি ভেংগে পড়বে এবং তোমরা সেটি মেরামত করে তার মধ্যে থাকতে চাও। কিন্তু কুঁড়েঘরটি মেরামত করে তার মধ্যে অবস্থান করার আগেই কিয়ামাত এসে যাচ্ছে। এ থেকে বুঝানো হচ্ছে, কিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। কাজেই দুনিয়ার ঘর মেরামত করার আগে আখিরাতের ঘর মেরামত কর।]

আবু দাউদ ও তিরমিযী, বুখারী ও মুসলিমের সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٤٨١- وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عِبَاضٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ لِكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةٌ وَفِتْنَةٌ أُمَّتِي الْمَالُ – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

৪৮১। কা’ব ইবনে ইয়াদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: প্রত্যেক উম্মাতের জন্য একটা ফিতনা (পরীক্ষার
বন্ধু) আছে। আমার উম্মাতের ফিতনা হলো সম্পদ।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

٤٨٢ – وَعَنْ أَبِي عَمْرُو وَيُقَالُ أَبُو عَبْدِ اللهِ وَيُقَالُ أَبُو لَيْلَى عُثْمَانَ ابْنِ عَفَّانَ رضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ لِابْنِ آدَمَ حَقٌّ فِي سوى هذه الحَصَالِ بَيْت يَسْكُنُهُ وَتَوْبَ يُوَارِى عَوْرَتَهُ وَخَلْفُ الْخُبْزِ وَالْمَاءِ رواه الترمذي وقال حديث صحيح .

৪৮২। আবু আমর উসমান ইবনে আফফান (রা) (তাঁকে আবু আবদুল্লাহ ও আবু লায়লাও বলা হয়) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিনটি বস্তু ছাড়া আদম সন্তানের আর কিছুর অধিকার নেই। তা হলো: তার বসবাসের জন্য একটি ঘর; দেহ ঢাকার জন্য কিছু বস্ত্র এবং কিছু রুটি ও পানি।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, এটি সহীহ হাদীস।

٤٨٣ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الشَّخَيْرِ بِكَسْرِ الشَّيْنِ وَالْخَاءِ الْمَشَدَّدَةِ الْمُعْجَمَتَيْنِ رضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ آتَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْرَأُ الْهَاكُمُ التكاثر) قَالَ يَقُولُ ابْنُ آدَمَ مَالِي مَالِي وَهَلْ لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مِنْ مَالِكَ إِلَّا مَا اكلت فاقنيت او لبست قابلیت او تصدقت فأمضيت – رواه مسلم .

৪৮৩। আবদুল্লাহ ইবনুশ শিল্পীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে দেখি, তিনি সূরা “আলহাকুমুত-তাকাসুর” (ধন-ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য তোমাদেরকে আখিরাত ভুলিয়ে রেখেছে) পাঠ করছেন। অতঃপর তিনি বলেন: আদম সন্তানরা আমার সম্পদ, আমার ধন ইত্যাদি বলতে থাকে। অথচ হে বনী আদম। ততোটুকুই তোমার সম্পদ, যতোটুকু তুমি খেয়ে শেষ করেছো, পরিধান করে পুরনো করেছো এবং দান করে সঞ্চয় করেছো। (মুসলিম)

٤٨٤ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَل رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُولَ اللهِ وَاللهِ إِنِّي لَأَحِبُّكَ فَقَالَ انْظُرْ مَا ذَا تَقُوْلُ قَالَ وَاللَّهِ إِنِّي لأحبك ثلاث مرات فَقَالَ إِن كُنتَ تُحِبُّنِي فَاعِدُ لِلْفَقْرِ تَجْفَافًا فَإِنَّ الْفَقْرَ أَسْرَعُ الى من يحبني من السيل إلى منتهاه – رواه الترمذي وقال حديث حَسَنٌ.

৪৮৪। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চয়ই আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বলেনঃ তুমি কী বলছো তা ভেবে দেখ। সে বললো, আল্লাহর শপথ। নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ভালোবাসি, এরূপ সে তিনবার বললো। অতঃপর তিনি বলেনঃ তুমি যদি আমাকে ভালোবাস, তাহলে দারিদ্র্যের জন্য মোটা পোশাক তৈরি করে নাও। কেননা, বন্যার পানি যে গতিতে তার শেষ গন্তব্যের দিকে ধেয়ে যায়, আমাকে যে ভালোবাসে দারিদ্র্য তার চাইতেও দ্রুত গতিতে তার কাছে পৌঁছে যায়।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।

٤٨٥ – وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا ذَنْبَانِ جَائِعَانِ أَرْسِلَا فِي غَنَمِ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى المال والشرف لدينه – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح .

৪৮৫। কা’ব ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সম্পদ ও আভিজাত্যের প্রতি মানুষের লোভ তার দ্বীনের যে মারাত্মক ক্ষতি করে, বকরীর পালে ছেড়ে দেয়া দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়েও বকরীর পালের ততো ক্ষতি করতে পারে না।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٤٨٦ – وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ نَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حَصِيرٍ فَقَامَ وَقَدْ أَثْرَ فِي جَنْبِهِ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوِ اتَّخَذْنَا لَكَ وطاء فَقَالَ مَا لِي وَلِلدُّنيا ما أنا في الدُّنْيا الأكراكب اسْتَظْلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ راح وتركها – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح .

৪৮৬। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে ঘুমান। ঘুম থেকে উঠার পর আমরা তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমরা যদি আপনার জন্য একটি তোষক বানিয়ে দিতাম। তিনি বলেন: দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? আমি তো দুনিয়াতে এরূপ একজন মুসাফির, যে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নেয়, অতঃপর তা ত্যাগ করে চলে যায়।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٤٨٧ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ الفقراء الْجَنَّةَ قَبْلَ الأغنياء بخمس مائة عام رواه الترمذي وقال حديث صحيح.

৪৮৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দরিদ্ররা ধনীদের চাইতে পাঁচশো বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি সহীহ।

٤٨٨- وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَعِمْرَانَ بْنِ الْحُصَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاء وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ قرآيْتُ أكثر أهْلِهَا النِّسَاء – متفق عليه من رواية ابن عباس ورواه البخاري ايضا من رواية عمران بن الحصين .

৪৮৮। ইবনুল আব্বাস ও ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি জান্নাতের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই দরিদ্র। আর জাহান্নামের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই নারী।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়ে ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে হাদীসটি উদ্ধৃত করেন। ইমাম বুখারী ইমরান ইবনে হুসাইনের সূত্রেও এটি সংকলন করেন।

٤٨٩- وَعَنْ أَسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُمْتُ عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَكَانَ عَامَّةَ مَنْ دَخَلَهَا الْمَسَاكِينُ وَأَصْحَابُ الْجَدِّ مَحْبُوسُونَ غَيْرَ أَنْ أَصْحَابَ النَّارِ قَد أمر بهم إلى النار – متفق عليه والجد الْحَظُ وَالْعَنِى وَقَدْ سَبَقَ بَيَانُ هذا الحديث في باب فَضْلِ الضَّعَفَة .

৪৮৯। উসামা ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখেছি, এতে প্রবেশকারীদের অধিকাংশই নিঃস্ব-দরিদ্র; আর সম্পদশালীদের আটকে রাখা হয়েছে (জান্নাতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না)। কিন্তু জাহান্নামীদের ইতিমধ্যেই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)

٤٩٠- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أصدق كلمة قالها شاعر كلمة لبيد : الا كُلَّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللَّهَ بَاطِلُ – متفق عليه.

৪৯০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কবিরা যা বলেছে তার মধ্যে কবি লাবীদ যা বলেছে, তা ধ্রুব সত্য: “জেনে রাখ, আল্লাহ
ছাড়া সব কিছুই মিথ্যা।” (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৫৬ – অনাহারে থাকা, নিরাসক্ত জীবন যাপন, খাদ্য, পানীয় ও পোশাক-আশাকে অল্পে তুষ্টি এবং লালসা ত্যাগের ফযীলাত

অনাহারে থাকা, নিরাসক্ত জীবন যাপন, খাদ্য, পানীয় ও পোশাক-আশাকে অল্পে তুষ্টি এবং লালসা ত্যাগের ফযীলাত।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلوةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيَّا إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ولا يُظْلَمُونَ شَيْئًا

মহান আল্লাহ বলেন:

“অতঃপর তাদের পরে এমন উত্তরসুরি আসলো, যারা নামায বিনষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। সুতরাং তারা অবিলম্বে শান্তির সাক্ষাত পাবে। কিন্তু যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে, তারা জান্নাতে যাবে, তাদের প্রতি কোন যুগ্ম করা হবে না।” (সূরা মারইয়াম: ৫৯-৬০)

وقال تعالى : فَخَرَجَ عَلَى قَوْمِهِ فِي زِينَتِهِ قَالَ الَّذِينَ يُرِيدُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا يَا ليت لنا مِثْلَ مَا أُوتِي قَارُونُ إِنَّهُ لَذُو حَظٍّ عَظِيمِ ، وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ ويلكُمْ ثَوَابُ اللهِ خَيْرٌ لِمَنْ أَمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا

“অতঃপর সে (কারন) আঁকজমকের সাথে তার সম্প্রদায়ের লোকদের সামনে বের হলো। (এ অবস্থা দেখে) পার্থিব জীবনের সম্পদ অভিলাষীরা বলতে লাগলো, আহা। কারনকে যেরূপ সম্পদ দেয়া হয়েছে, আমাদেরকেও যদি সেরূপ দেয়া হতো। বাস্তবিকই সে বড়ই ভাগ্যবান। আর জ্ঞানীরা বলতে লাগলো, তোমাদের জন্য আফসোস। (তোমরা এ কী বলছো?) ঈমানদার হয়ে যে সৎকাজ করবে, সে আল্লাহর কাছে এর চাইতে বহু গুণে উত্তম প্রতিদান পাবে।” (সূরা আল-কাসাস: ৭৯-৮০)

وَقَالَ تَعَالَى : ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ .

“তারপর সেদিন (দুনিয়ার সব) নিয়ামাত সম্বন্ধে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (সূরা আত-তাকাসুর ৪৮)

وقال تعالى : مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مُدْحُورًا .

“কেউ দুনিয়ার অভিলাষী হলে, আমি যাকে যতটুকু ইচ্ছা, সত্বরই প্রদান করি। অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি। সে তাতে লাঞ্ছিত ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবে।”
(সূরা বনী ইসরাঈল: ১৮)

٤٩١ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا شَبِعَ أَنْ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ خُيْرٍ شَعِيْرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قبض – متفق عليه. وفي رواية ما شيعَ ال مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِّنْدُ قَدِمَ الْمَدِينَةَ مِنْ طَعَامِ الْبَرِّ ثَلاثَ ليالٍ تَبَاعًا حَتَّى قُبض .

৪৯১। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর পরিবার কোন দিন একনাগাড়ে দু’দিন পেটপুরে যবের রুটিও খেতে পায়নি। (বুখারী, মুসলিম)

অপর বর্ণনায় আছেঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনা আসার পর থেকে তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত তাঁর পরিবারের লোকজন একনাগাড়ে তিন দিন পেট ভরে গমের রুটিও খেতে পায়নি।

٤٩٢- وَعَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ وَاللَّهِ يَا ابْنَ أختى إِن كُنا لننظر إلى الهلال ثم الهلال ثلاثةَ أَهْلَةٍ فِي شَهْرَيْنِ وَمَا أَوْقَدَ فِي ابيات رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَارٌ قُلْتُ يَا خَالَةٌ فَمَا كَانَ يُعِيدُكُمْ قالت الأسودان التمر والماء الا أنه قد كان الرسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جيران مِنَ الْأَنْصَارِ وَكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ وَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ الْبَانِهَا فَيَسْقِينَا – متفق عليه .

৪৯২। উরওয়া (র) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রা) বলতেন, আল্লাহর শপথ। হে ভাগ্নে! আমরা একটা নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আর একটা নতুন চাঁদ দেখতাম, তারপর আর একটা নতুন চাঁদ দেখতাম, এভাবে দু’মাসে তিন তিনটা নতুন চাঁদ দেখতাম। অথচ এ দীর্ঘ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন ঘরের চুলায় আগুন জ্বলত না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে খালাম্মা। তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন-যাপন করতেন। তিনি বলেন, দু’টি কালো বস্তু, খেজুর ও পানি (পান করে কাটাতাম)। তবে হাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন আনসার প্রতিবেশী ছিলেন। তাঁদের কাছে দুগ্ধবতী উটনী ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু দুধ পাঠাতেন এবং তিনি তা আমাদের পান করাতেন। (বুখারী, মুসলিম)

٤٩٣- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَرْ بِقَوْمٍ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيةٌ قَدَعَوْهُ فَأَبَى أَنْ يَاكُل وَقَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الدُّنْيَا ولم يشبع من خبز الشعير – رواه البخاري.

৪৯৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি দলের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের সামনে তখন তাজা একটি আস্ত বকরী ছিলো। তারা তাকে দাওয়াত করলে তিনি তা খেতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন, অথচ তিনি কখনো পেট ভরে যবের রুটিও খেতে পাননি। (বুখারী)

٤٩٤- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمْ يَأْكُلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ على خوَانٍ حَتَّى مَاتَ وَمَا أَكَلَ خُبْرًا مَرَفَقًا حَتَّى مَاتَ – رواه البخاري. وفي رواية لهُ وَلَا رَأَى شَاةٌ سَمِيطًا بِعَيْنِهِ قَط.

৪৯৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো রকমারি খাদ্যের দস্তরখানে আহার করেননি এবং তিনি কখনো মিহি রুটিও খাননি।
ইমাম বুখারী এটি রিওয়ায়াত করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছেঃ তিনি স্বচক্ষে কখনো আন্ত ভাজা বকরীও দেখেননি।

٤٩٥ – وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا يَجِدُ مِنَ الدِّقْلِ مَا يَمْلَأُ بِهِ بَطْنَهُ . رواه مسلم.

৪৯৫। নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি তাঁর পেট ভরার জন্য রদ্দি (নিম্ন মানের) খেজুরও পেতেন না। (মুসলিম)

٤٩٦ – وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَا رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّقِيُّ مَنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ تَعَالَى حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ تَعَالَى فَقِيلَ لَهُ هَلْ كَانَ لَكُمْ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنَاخِلُ قَالَ مَا رَأَىرسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْخُلاً مِنْ حِينَ ابْتَعَتَهُ اللَّهُ تَعَالَى حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ تَعَالَى فَقِيلَ لَهُ كَيْفَ كُنتُمْ تَأْكُلُونَ الشعيْرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ قَالَ كُنَّا نَطْحَتُهُ وتنفُخُهُ فَيَطِيْرُ مَا طَارَ وَمَا بَقِيَ تَرَيْنَاهُ.

৪৯৬। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানবজাতির জন্য নবী বানিয়ে পাঠানোর পর থেকে তাঁকে তুলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কখনো মিহি আটার রুটি দেখেননি। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কি আপনাদের কাছে চালুনি ছিলো না? তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানবজাতির জন্য নবী বানিয়ে পাঠানোর পর থেকে তাকে ওফাতের মাধ্যমে উঠিয়ে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কখনো চালুনি দেখেননি। তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আপনারা না ঝাড়া যব খেতেন কিরূপে? তিনি বলেন, আমরা তা পিষে তাতে ফুঁ দিতাম, যা কিছু উড়ে যাওয়ার উড়ে যেতো, অতঃপর অবশিষ্ট আটা বা ময়দা পানি মিশিয়ে খামীর বানাতাম। (বুখারী)

٤٩٧ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم ذات يوم أوْ لَيْلَةٍ فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمْ هذه الساعة؟ قالا الجوعُ يَا رَسُولَ الله قَالَ وَآنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَخْرَجَنِي الذي اخْرَجَكُمَا قَوْمًا فَقَامَا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلاً مِّنَ الْأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِي بَيْتِهِ فلما رأتهُ الْمَرْأةُ قَالَتْ مَرْحَبًا وأهلاً فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اين فلان قالَتْ ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا الْمَاء إِذْ جَاءَ الْأَنْصَارِيُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدُ الْيَوْمَ أَكْرَمَ أَضْيَافًا مِنِّي فَانْطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقَ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ كُلُوا وَآخَدَ الْمُدْيَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِيَّاكَ وَالْحَلُوبَ فَذَبَحَ لَهُمْ فَاكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِدْقِ وَشَرِبُوا فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوا وَرَوُوْا قَالَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هُذَاالنَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هذا النعيم – رواه مسلم.

৪৯৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দিনে অথবা রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীর বাইরে বের হতেই আবু বাক্স ও উমার (রা)-র সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন: এ মুহূর্তে কোন জিনিস তোমাদেরকে বাড়ির বাইরে বের করে এনেছে? তারা বলেন, ক্ষুধার জ্বালা, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বলেন: যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ। যে জিনিসটা তোমাদেরকে ঘরের বাইরে এনেছে, সেটি আমাকেও বের করে ছেড়েছে। তোমরা উঠো। সুতরাং তারা দু’জন তাঁর সাথে উঠলেন। এরপর তাঁরা (চলতে চলতে) এক আনসারীর বাড়িতে এসে উপস্থিত হন। দেখা গেলো, তিনি বাড়ি নেই। তাঁর স্ত্রী তাঁকে দেখতে পেয়ে বলেন: মারহাবা, স্বাগতম। তিনি (নবী সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন: অমুক কোথায়? তিনি বলেন, উনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গেছেন। ইতিমধ্যে আনসারী এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদ্বয়কে দেখে বলেনঃ আলহামদু লিল্লাহ, আজ কারো কাছে আমার মেহমানের চেয়ে সম্মানিত মেহমান উপস্থিত নেই। অতঃপর তিনি বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন এবং পাকা-তাজা খেজুরের একটি গুচ্ছ এনে তাঁদের সামনে রেখে বলেন, এগুলো খেতে থাকুন। অতঃপর তিনি একটি ছুরি নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: সাবধান! দুগ্ধবতী বকরী যবেহ করবে না। অতঃপর তিনি তাঁদের জন্য একটি বকরী যবেহ করে রান্না করে নিয়ে এলেন। তাঁরা সে বকরী থেকে ও খেজুর গুচ্ছ থেকে খেলেন এবং পানি পান করলেন। সকলেই যখন পেট ভরে খেলেন ও তৃপ্তি সহকারে পান করলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বাক্স ও উমারকে বলেন: যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ। কিয়ামাতের দিন তোমাদের এ নিয়ামাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্ষুধা তোমাদের বাড়ি থেকে বের করেছে, অতঃপর এ নিয়ামাত পেয়ে তোমরা বাড়ি ফিরছো। [টিকা: রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর দুই সাথী যে মহান আনসারী সাহাবীর ঘরে গিয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত আবুল হাইসাম ইবনুত তায়্যিহান (রা)। ইমাম তিরমিযী তাঁর হাদীস গ্রন্থে এই সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন।] (মুসলিম)

٤٩٨- وعن خالد بن عُمَرَ الْعَدَوِي قَالَ خَطَبَنَا عُتْبَةُ بْنُ عَزَوَانَ وَكَانَ أميرًا عَلَى الْبَصْرَة فَحَمِدَ الله واثنى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ أَذنَتْ بِصُرُم وولت حذاء ولم بَيْقَ مِنْهَا إِلا صُبَابَة كَصَبَابَةِ الْآنَاءِ يَتَصَابُهَا صَاحِبُهَا وَأَنَّكُمْ مُنتَقِلُونَ مِنْهَا إلى دار لا زوال لَهَا فَانْتَقِلُوا بِخَيْرِ مَا بِحَضْرَتِكُمْ فَإِنَّهُ قَدْ ذَكَرَ لنا أن الحَجَرَ يُلقى من شفير جَهَنَّمَ فَيَهْوى فِيْهَا سَبْعِينَ عَامًا لَا يُدْرِكُ لَهَا قرا والله لتُمْلَانُ أَفَعَجِبْتُمْ ؟ ولقد ذكر لنا أَنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الجنة مسيرة أَرْبَعِينَ عَامًا وَلَيَأْتِيَنَّ عَلَيْهِ يَوْمَ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الرِّحَامِ وَلَقَدْ رايتني سابع سَبْعَة مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَنَا طَعَامُ إِلَّا وَرَقُ الشَّجَرِ حَتَّى قَرِحت أشداقنا فالتقطت بردَةً فَشَفَقْتُهَا بَيْنِي وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ مَالِك فَاتُزَرْتُ بنصفها وانزر سعد بنصفها فَمَا أَصْبَحَ الْيَوْمَ مِنَّا أَحَدٌ إِلَّا أَصْبَحَ أميرا على مصر مِنَ الْأَمْصَارِ وَإِنِّي أَعُوذُ بِاللهِ أَنْ أَكُونَ فِي نَفْسِي عَظِيمًا وَعِنْدَ اللَّهِ صغيرا – رواه مسلم .

৪৯৮। খালিদ ইবনে উমার আল-আদাবী (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বসরার গভর্ণর উতবা ইবনে গাযওয়ান (রা) আমাদের সামনে ভাষণ দেন। তিনি হাম্দ ও সানা পাঠ করার পর বলেন, দুনিয়া তো ধ্বংসের ঘোষণা দিচ্ছে এবং খুব দ্রুত পালাচ্ছে। আর পানি পান করার পর পাত্রের তলদেশে যতটুকু পানি অবশিষ্ট থাকে, দুনিয়াটা শুধু ততটুকুই অবশিষ্ট আছে, আর দুনিয়াদাররা তা থেকেই পান করছে। তোমাদেরকে এই অস্থায়ী জগত ত্যাগ করে এক স্থায়ী জগতের দিকে পাড়ি জমাতে হবে। সুতরাং তোমাদের কাছে যে উত্তম জিনিস আছে তা সাথে নিয়ে যাও। আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, জাহান্নামের এক পার্শ্ব থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হবে এবং তা সত্তর বছর পর্যন্ত এর গভীরে নিচের দিকে পতিত হতে থাকবে, তবুও এটা গর্ভের তলদেশে পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর শপথ। তবু এটা পূর্ণ করা হবে। তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছো? আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের দরজাসমূহের দুই কপাটের মধ্যখান চল্লিশ বছরের দূরত্বের সমান প্রশস্ত। অথচ এমন একটি দিন আসবে, যখন তা ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। আমি নিজেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাত ব্যক্তির মধ্যে সপ্তমজন হিসেবে দেখেছি। গাছের পাতা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন খাদ্যই ছিলো না। তা খেতে খেতে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে গিয়েছিল। আমি একটি চাদর পেয়েছিলাম। তা দুই টুকরা করে ফেড়ে আমি ও সা’দ ইবনে মালিক (রা) ভাগ করে নিলাম। এর অর্ধেকটা দিয়ে আমি লুঙ্গি বানালাম এবং বাকী অর্ধেকটা দিয়ে সা’দ লুঙ্গি বানালেন। কিন্তু বর্তমানের অবস্থা এই যে, আমাদের প্রায় (সাতজনের) প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরে (প্রদেশের) গভর্নর হয়েছেন। আমি নিজের কাছে বড় হওয়া ও আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া থেকে মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। (মুসলিম)

٤٩٩- وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَخْرَجَتْ لَنَا عَائِشَهُ كساء و إزاراً غليظا قَالَتْ قُبض رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَدَيْنِ متفق عليه

৪৯৯। আবু মূসা আল আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রা) আমাদের সামনে একটি চাদর ও একটি মোটা লুংগি বের করে এনে বললেন, এ দু’টি পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন। (বুখারী, মুসলিম)

٥٠٠ وعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ إِنِّي لَأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى يسهم في سَبِيلِ اللهِ وَلَقَدْ كُنَّا نَعْزُو مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَنَا طعام إلا ورق الحبلة وهذا السَّمَرُ حَتَّى إِنْ كَانَ أَحَدُنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ ما له خلط – متفق عليه

৫০০। সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমিই ছিলাম আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপকারী প্রথম আরব। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের কাছে বাবলা এবং এই ঝাউ গাছের পাতা ছাড়া আর কোন খাদ্যই ছিল না, এমনকি আমাদের লোকেরা ছাগলের বিষ্ঠার ন্যায় পায়খানা করতো, একটা আরেকটার সাথে মিশতো না। (বুখারী, মুসলিম)

٥٠١ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللهُمَّ اجْعَلَ رِزْق آلِ مُحَمَّدٍ قُوْتًا – متفق عليه.

৫০১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সা)-এর পরিবারকে জীবন ধারণ উপযোগী ন্যূনতম রিযক দান করুন। (বুখারী, মুসলিম)

٥٠٢ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ وَاللَّهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ إِن كُنتُ لاعتمد بكيدِي عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْجُوعِ وَإِن كُنتُ لَأَشَدُّ الْحَجَرَ عَلَى بَطْنِي مِنَ الجوع ولقد قَعَدتُ يَوْمًا على طريقهم الذي يَخْرُجُونَ مِنْهُ فَمَرَّ بِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَبَسَّمَ حِيْنَ رَأْنِي وَعَرَفَ مَا فِي وَجْهِي وَمَا فِي نَفْسِي ثُمَّ قَالَابا هر قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الْحَقِّ وَمَضَى فَاتَّبَعْتُهُ فَدَخَلَ فَاسْتَأْذَنَ فَاذِنَ لِي فَدَخَلْتُ فَوَجَدَ لَبَنَا فِي قَدَح فَقَالَ مِنْ أَيْنَ هَذَا اللَّبَنُ قَالُوا أَهْدَاهُ لَكَ فلان أو فلانَةٌ قَالَ أَبَا هُوَ قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الْحَقِّ إِلى أَهْلِ الصفة فَادْعُهُمْ لِى قال وأهل الصفة أضياف الاسلام لَا يَأْوُونَ عَلَى أَهْلِ وَلا مَالٍ وَلَا على احد وكانَ إِذا أَتَتَهُ صَدَقَةٌ بَعَثَ بِهَا إِلَيْهِمْ وَلَمْ يَتَنَاوَلُ مِنْهَا شَيْئًا وَإِذَا أَتَتْهُ هَدِيَّة أَرْسَلَ اليهِم وَأَصَابَ مِنْهَا وَأَشْرَكَهُمْ فِيهَا فَسَاءَ نِي ذَلِكَ فَقُلْتُ وَمَا هَذَا اللبن في أهل الصفة كُنتُ أحق أن أصيب من هذا اللَّبَنِ شَرْبَةَ اتَّقَوَّى بِهَا فَإِذَا جاؤُوا وأمرني فكنتُ أنا أعطيهِمْ وَمَا عَسَى أَن يَبْلُغَنِي مِنْ هَذَا الدِّينِ وَلَمْ يَكُنْ من طاعة الله وطاعة رسوله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُدْ فَآتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ فَأَقْبَلُوا وَاسْتَأْذَنُوا فَاذَنَ لَهُمْ وَأَخَذُوا مَجَالِسَهُمْ مِنَ الْبَيْتِ قَالَ يَا أَبَا هُرَ قُلْتُ لبيكَ يَا رَسُولَ الله قَالَ خُذْ فأعطهم قَالَ فَأَخَذْتُ القَدَحَ فَجَعَلْتُ أَعطيه الرَّجُلَ فَيَشرَبُ حَتَّى يَرْوَى ثُمَّ يَرُدُّ عَلَى الْقَدَحَ فَأَعْطِيهِ الْآخَرَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى ثُمَّ برد عَلَى القَدَحَ حَتَّى انْتَهَيْتُ إلى النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ رُوِيَ الْقَوْمُ كُلُّهُم فَأَخَذَ القَدَحَ فَوَضَعَهُ عَلَى يَدِهِ فَنَظَرَ إِلَى فَتَبَسَّمَ فَقَالَ أَبَا هُوَ قُلْتُ لَبِّيكَ يَا رَسُولَ الله قَالَ بَقيتُ أنا وأنتَ قُلْتُ صَدَقْتَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ اقْعُدَ فَاشْرَبْ فَقَعَدتُ فَشَرِبْتُ فَقَالَ اشْرَبْ فَشَرِبْتُ فَمَا زَالَ يَقُولُ اشْرَبْ حَتَّى قُلْتُ لَا وَالَّذِي بعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أَجِدُ لَهُ مَسْلَكًا قَالَ فَارِنِي فَاعْطَيْتُهُ الْقَدَحَ فَحَمِدَ اللَّهَ تَعَالَى وَسَمَّى وَشَرِبَ الْفَضْلَة – رواه البخاري.

৫০২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ক্ষুধার কারণে আমি আমার পেট মাটির সাথে লাগিয়ে রাখতাম, আবার কখনো ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি লোক চলাচলের পথের উপর বসে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পথে আমার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন এবং আমার মুখমণ্ডলের অবস্থা ও অন্তরের কথা বুঝে ফেললেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আবু হুরাইরা! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার খিদমতে উপস্থিত। তিনি বলেনঃ আমার সাথে এসো। তিনি রওয়ানা দিলেন। আমিও তাঁর পিছে পিছে গেলাম। অতঃপর তিনি অনুমতি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলেন এবং আমাকে অনুমতি প্রদান করলে আমিও প্রবেশ করলাম। তিনি এক পেয়ালা দুধ দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন: এ দুধ কোথেকে এসেছে? পরিবারের লোকেরা বলল, অমুক ব্যক্তি বা অমুক মেয়েলোক আপনার জন্য হাদিয়া পাঠিয়েছে।

তিনি বলেনঃ হে আবু হুরাইরা! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমি আপনার খিদমতে হাযির। তিনি বলেন: যাও, আসহাবে সুফফাকে ডেকে নিয়ে এসো। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, আসহাবে সুফ্ফা হল ইসলামের মেহমান। তাদের বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। এমন কোন বন্ধুবান্ধবও তাদের ছিল না যাদের বাড়িতে গিয়ে তারা থাকতে পারতো। তাঁর (রাসূলের) কাছে সাদাকার মাল আসলে তা তিনি তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন, তিনি তাতে হাত দিতেন না। আর যখন হাদিয়া বা উপহার আসতো, তখন তিনি তাদের কাছে কিছু পাঠিয়ে দিতেন এবং নিজেও তা থেকে গ্রহণ করতেন। সেদিন তিনি আমাকে তাদের ডেকে আনার কথা বলাতে আমার খুব খারাপ লাগলো। আমি মনে মনে বললাম, আসহাবে সুফ্ফার এইটুকু দুধে কি হবে? আমি তো বেশি হকদার ছিলাম, এ দুধের কিছু পান করে শক্তি অনুভব করতাম। আর তারা যখন আসবে, তাদেরকে এ দুধ পরিবেশন করার জন্য তিনি তো আমাকেই আদেশ দেবেন। তাদের সবাইকে দেয়ার পর এ থেকে আমি কিছু পাব বলে তো মনে হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ মান্য করা ছাড়া কোন উপায়ও ছিল না। কাজেই আমি তাঁদের কাছে গিয়ে তাদের ডাকলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। তাঁরা ঘরের ভেতরে নিজ নিজ জায়গায় বসে পড়লেন। তিনি (নবী) আমাকে বলেনঃ হে আবু হুরাইরা! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার কাছেই উপস্থিত। তিনি বলেন: দুধের পেয়ালাটি নিয়ে তাদের পরিবেশন কর। তিনি (আবু হুরাইরা) বলেন, আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তির সাথে পান করে আমাকে পেয়ালা ফেরত দিলেন। অতঃপর আমি আরেকজনকে দিলাম, তিনিও পূর্ণ তৃপ্তির সাথে পান করে আমাকে পেয়ালাটা ফেরত দিলেন। এভাবে সবার শেষে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেয়ালা নিয়ে হাযির করলাম। অথচ উপস্থিত সকলেই তৃপ্তির সাথে তা পান করেছেন। তিনি পেয়ালাটা নিয়ে নিজের হাতে রেখে মুচকি হেসে বলেনঃ হে আবু হুরাইরা। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ। আমি আপনার খিদমতে হাযির। তিনি বলেনঃ আমি আর তুমি বাকি রয়ে গেছি। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আপনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেনঃ বস এবং (দুধ) পান কর। আমি বসে পান করলাম। আবার তিনি বললেনঃ পান কর। আমি পান করলাম। এভাবে তিনি আমাকে পান করার কথা বলতেই থাকলেন। অবশেষে আমি বললাম, না আর পারবো না। সেই সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন। এর জন্য আমার পেটে আর খালি জায়গা নেই। তিনি বলেন: আমাকে এবার তৃপ্ত কর। আমি তাঁকে পেয়ালা দিলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন। (বুখারী)

٥٠٣ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَإِنِّي لَآخِرُ فِيْمَا بَيْنَ منبر رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلى حُجْرَةِ عَائِشَةَ مَغْشِيًّا عَلَى فَيَجِيُّ الْجَانِي فَيَضَعُ رِجْلَهُ عَلَى عُنُقِي وَيَرَى إِنِّي مَجْنُونٌ وَمَا بِي مِنْ جُنُونِ مَا بِي إِلَّا الجوع – رواه البخاري.

৫০৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নিজেকে এমন অবস্থায়ও দেখেছি যে, যখন আমি ক্ষুধার তাড়নায় বেহুঁশ হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বার ও আয়িশা (রা)-র কক্ষের মাঝখানে পড়ে থাকতাম, কেউ কেউ এসে আমাকে পাগল মনে করে আমার ঘাড় পদদলিত করতো। অথচ আমার মধ্যে পাগলামি ছিল না, বরং ছিল ক্ষুধার তীব্রতা। (বুখারী)

٥٠٤- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ تُوقِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدِرْعَهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِي فِي ثَلاثِينَ صَاعًا مِنْ شَعِير – متفق عليه.

৫০৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের সময় অবস্থা এমন ছিল যে, তাঁর বর্মটি জনৈক ইহুদীর কাছে ত্রিশ সা’ যবের বিনিময়ে বন্ধক রাখা ছিল।” [টিকা: এক সা-এর ওযন প্রায় তিন সের সাড়ে বার ছটাক।] (বুখারী, মুসলিম)

٥٠٥- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَهْنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دِرْعَهُ يشعِيرِ وَمَشَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخُبْرٍ شَعِيرٍ وَاهَالَةٍ سَنِخَةٍ ولَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ مَا أَصْبَحَ لِآلِ مُحَمَّدٍ صَاعٌ وَلَا أَمْسَى وَأَنَّهُمْ لَتَسْعَةُ أَبْيَاتٍ رواه البخاري.

৫০৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বর্মটি কিছু যবের বিনিময়ে বন্ধক রেখেছিলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যবের রুটি এবং দুর্গন্ধযুক্ত ময়দার রুটি নিয়ে গিয়েছিলাম।

(অধস্তন রাবী) আমি আনাস (রা)-কে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের জন্য সকাল-সন্ধ্যায় এক সা’ গমও মিলতো না, অথচ তাঁরা নয় ঘর ছিলেন। (বুখারী)

٥٠٦ وعن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ سَبْعِينَ مِنْ أَهْلِ الصفةِ مَا مِنهُم رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدا . اما ازار وإِما كَسَاءٌ قَدْ رَبَطُوا فِي أَعْنَاقِهِمْ مِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْنِ وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الْكَعْبَينِ فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَرَاهِيَة أن ترى عورته – رواه البخاري ..

৫০৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অবশ্যি সত্তরজন এমন আসহাবে সুফ্ফাকে দেখেছি, যাদের কারো কাছেই কোন চাদর ছিল না। কারো কাছে হয়তো একটি লুংগি ছিল, আবার কারো কাছে ছিল একটি কম্বল। আর তাঁরা তাঁদের কাঁধের সাথে বেঁধে রাখতেন। তাঁদের মধ্যে কারো লুংগি পায়ের দু’গোছা পর্যন্ত পড়তো, কারোটা দু’হাঁটু পর্যন্ত। লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁরা লুংগি হাতে ধরে রাখতেন। (বুখারী)

٥٠٧ وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ فِرَاسُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أدم حشوه ليف – رواه البخاري

৫০৭। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চামড়ার একটি বিছানা ছিল, এর ভেতরে ভরা ছিল খেজুরের ছাল। (বুখারী)

٥٠ وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا جُلُوسًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَدْبَرَ الْأَنْصَارِيُّ فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَنَا الْأَنْصَارِ كَيْفَ أَخِي سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ فَقَالَ صَالِحٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَعُودُهُ مِنْكُمْ فَقَامَ وَقُمْنَا مَعَهُ وَنَحْنُ بِضْعَةَ عَشَرَ مَا عَلَيْنَا نعال ولا خفاف ولا فلانس ولا قمس تمشى فِي تِلْكَ السَّبَاحَ حَتَّى جِئْنَاهُ فَاسْتَأْخَرَ قَوْمُهُ مِنْ حَوْلِهِ حَتَّى دَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ الَّذِينَ مَعَهُ – رواه مسلم .

৫০৮। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলাম। এমন সময় জনৈক আনসারী এসে তাঁকে সালাম দিলেন, অতঃপর ফিরে যেতে রওয়ানা হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আনসারী ভাই। আমার ভাই সা’দ ইবনে উবাদা কেমন আছে? তিনি বলেন, ভালোই আছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: তোমাদের মধ্যে কে তাকে দেখতে যাবে? তিনি উঠে রওয়ানা দিলেন। আমরাও তাঁর সাথে চললাম। আমরা ছিলাম সংখ্যায় দশের চেয়ে কিছু বেশি। কিন্তু আমাদের কারো পরিধানে জুতা, মোজা, টুপি এবং জামা ছিল না। এমতাবস্থায় আমরা অনাবাদী প্রান্তর পেরিয়ে তাঁর কাছে এসে পৌছলাম। তাঁর (সা’দের) চারপাশ থেকে তাঁর গোত্রের লোকেরা সরে গেলো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীরা তাঁর নিকটবর্তী হলেন। (মুসলিম)

٥٠٩- وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ الْحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ خَيْرُكُمْ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُوْنَهُمْ قَالَ عِمْرَانُ فَمَا أدرى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ وَيَخُونُونَ وَلَا يُؤْتَمَنُونَ وَيَنْذِرُونَ وَلَا يُؤْقُوْنَ وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السمن متفق عليه .

৫০৯। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার যুগের লোকেরাই (সাহাবীরা) তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম, অতঃপর যারা এর পরবর্তী যুগে আসবে (তাবিঈন), এরপর যারা তাদের পরবর্তী যুগে আসবে (তাবে তাবিঈন, পর্যায়ক্রমে তারাই উত্তম লোক)। ইমরান (রা) বলেন, এটা আমার স্মরণ নেই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা দু’বার বলেছেন নাকি তিনবার। তাদের পরে এমন এক জাতির উদ্ভব হবে, যারা সাক্ষ্য দেবে কিন্তু তাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানত করবে, আমানতদারি করবে না; তারা মানত করবে, কিন্তু পূর্ণ করবে না এবং তাদের শরীরে মেদ পরিলক্ষিত হবে। (বুখারী, মুসলিম)

٥١٠ – وَعَنْ أَبِي أَمَامَةً رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا ابْنَ أدَمَ إِنَّكَ أَنْ تَبْدُلَ الْفَضْلَ خَيْرٌ لَكَ وَأَنْ تُمْسِكَهُ شَرُّ لَكَ وَلَا تُلَامُ على كفاف وابدأ بِمَنْ تَعُولُ – رواه الترمذى وقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح

৫১০। আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আদম সন্তান। তুমি যদি তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ সৎ কাজে ব্যয় কর, তাহলে তোমার কল্যাণ হবে, আর যদি তা আটকে রাখ, তাহলে তোমার অমঙ্গল হবে। তবে তোমার প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ রেখে দিলে তুমি তিরষ্কৃত হবে না। সর্বপ্রথম তোমার পোষ্যদের থেকে ব্যয় করা শুরু কর।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٥١١ – وَعَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ مِحْصَنِ الْأَنْصَارِي الْخَطْمِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ أَمِنَّا فِي سَرْبِهِ مُعَافَى في جسده عنده قوت يومه فكأنما حيزت له الدنيا بحذافيرها – رواه الترمذي وقَالَ حَدِيث حَسَنٌ.

৫১১। উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহসান আল-আনসারী আল-খাত্মী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শারীরিক নিরাপদ অবস্থায় ও সুস্থ দেহে সকালে উপনীত হলো এবং তার কাছে ক্ষুধা নিবারণের মতো ঐ দিনের খোরাক আছে, তাকে যেনো দুনিয়ার যাবতীয় কিছুই দান করা হয়েছে।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।

٥١٢ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا أتاه – رواه مسلم

৫১২। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার কাছে প্রয়োজন পরিমাণ রিযক আছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতেই তাকে তুষ্ট রেখেছেন। (মুসলিম)

٥١٣ – وَعَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ طُوبَى لِمَنْ هُدِى إِلَى الْإِسْلَامِ وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافًا وقنع – رواه الترمذي وقال حديثٌ حَسَنٌ صَحِيح

৫১৩। আবু মুহাম্মাদ ফাদালা ইবনে উবাইদ আল-আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন। যাকে ইসলামের হিদায়াত দান করা হয়েছে, তার প্রয়োজন মাফিক জীবনোপকরণ আছে এবং তাতেই সে তুষ্ট থাকে তার জন্য সুসংবাদ।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٥١٤ – وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم ببيت الليالي المتتابعة طاويا وأهله لا يَجِدُونَ عَشَاءُ وَكَانَ أَكْثَرُ خُبْزِهِمْ خبز الشعير – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح .

৫১৪। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একনাগাড়ে কয়েক দিন পর্যন্ত ভুখা থাকতেন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের রাতের খাবার জুটতো না। প্রায়শই তাদের খাদ্য ছিল যবের রুটি।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

٥١٥ – وَعَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذا صلى بالنَّاسِ يَخرُ رِجَالٌ مِنْ قَامَتِهِمْ فِي الصَّلاةِ مِنَ الْخَصَاصَةِ وَهُمْ أَصْحَابُ الصَّفَةِ حَتَّى يَقُولَ الْأَعْرَابُ هَؤُلا ، مَجَانِيْنَ فَإِذَا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصَرَفَ إِلَيْهِمْ فَقَالَ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا لَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى لأَحْبَبْتُمْ أَن تَزْدَادُوا فَاقَةً وحَاجَة – رواه الترمذي وقال حديث صحيح .

৫১৫। ফাদালা ইবনে উবাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবীদেরকে নিয়ে নামায পড়তেন, তখন তাঁর পেছনে দাঁড়ানো আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কতক লোক ক্ষুধার তীব্রতায় (অজ্ঞান হয়ে) মাটিতে ঢলে পড়ে যেতেন, এমনকি বেদুঈনরা তাদের পাগল বলে আখ্যায়িত করতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন: তোমরা যদি জানতে পারতে যে, আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য কী মর্যাদা ও সামগ্রী মজুদ আছে, তাহলে ক্ষুধা ও অভাব আরো বৃদ্ধি হওয়ার কামনা করতে।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি সহীহ।

٥١٦ – وَعَنْ أَبِي كَرِيمَة الْمِقْدَادِ بْنِ مَعْدِ يُكَرِبَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا مَلا أَدَمِيُّ وَعَاءً شَرَا مِنْ بَطْنِ بِحَسْبٍابن ادم اكلات يُقِمَن صُلْبَهُ فَإِنْ كَانَ لا مَحالَهُ فَلَتْ لِطَعَامِهِ وَثَلَتْ لِشَرَابِهِ وثلث لنفسه – رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৫১৬। আবু কারীমা মিকদাদ ইবনে মা’দীকারিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। কোন মানুষ পেটের চাইতে খারাপ কোন পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের মেরুদণ্ড সোজা রাখার মত কয়েক গ্রাস খাদ্যই তার জন্য যথেষ্ট। এর চাইতেও যদি বেশি প্রয়োজন হয়, তবে পেটকে এক-তৃতীয়াংশ তার খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ তার পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ তার শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভাগ করে নেবে।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, এটি হাসান হাদীস।

٥١٧ – وَعَنْ أَبِي أَمَامَة إِياس بن تَعْلَبَةَ الأَنْصَارِي الْحَارِثِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ ذكر أصْحَابُ رَسُول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا عِنْدَهُ الدُّنْيَا فَقَالَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلا تَسْمَعُونَ إِلا تَسْمَعُونَ إِنَّ الْبَدَادَةَ مِنَ الْإِيْمَانِ إِنَّ الْبَدَادَةَ مِنَ الْإِيْمَانِ يَعْنِي التَّفَحُلَ – رواه أبو داود.

৫১৭। আবু উমামা ইয়াস ইবনে সালাবা আল-আনসারী আল-হারিসী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ তাঁর কাছে দুনিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি শুনছো না, তোমরা কি শুনছো না? আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা ত্যাগ করা ঈমানের লক্ষণ, আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা ত্যাগ করা ঈমানের নিদর্শন অর্থাৎ সাদাসিধা ও অনাড়ম্বর জীবন-যাপন। (আবু দাউদ)

٥١٨ – وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ بَعَثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمْرَ عَلَيْنَا أَبَا عُبَيْدَةَ نَتَلَقَّى عِيْرًا لِقُرَيْشِ وَزَودَنَا جرابًا من تمر لمْ يَجِدُ لنا غَيْرَهُ فَكَانَ أَبُو عُبَيْدَةَ يُعْطِينَا تَمْرَةٌ تَمْرَةٌ فَقِيلَ كَيْفَ كُنتُمْ تَصْنَعُونَ بِهَا قَالَ نَمَضُهَا كَمَا يَمَصُ الصَّبِيُّ ثُمَّ تَشْرَبُ عَلَيْهَا مِنَ الْمَاءِ فَتَكْفِينَا يَوْمَنَا إلى الليل وكنا تضرب بعصينا الْخَبَطَ ثُمَّ نَبْلُهُ بِالْمَاءِ فَتَأْكُلُهُ ققَالَ وَانْطَلَقْنَا عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ فَرَفَعَ لَنَا عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ كَهَيْئَةِ الْكَثِيبِالضَّخْمِ فَأَتَيْنَاهُ فَإِذَا هِيَ تُدْعَى الْعَنْبَرَ فَقَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ مَيْتَةٌ ثُمَّ قَالَ لَا بَلْ نَحْنُ رسُلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدِ اضْطُرِرْتُمْ فَكُلُوا فَأَقَمْنَا عَلَيْهِ شَهْرًا وَنَحْنُ ثَلاثُ مِائَةٍ حَتَّى سَمِنًا وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا نَعْتَرِفُ مِنْ وَقْبِ عينه بالقلال الدهن وتقطع مِنْهُ القدر كالثور أوْ كَقَدْرِ الشَّوْرِ وَلَقَدْ أَخَذَ مِنَّا أَبُو عبيدة ثلاثة عشر رَجُلاً فَأَقْعَدَهُمْ في وقب عَيْنِهِ وَأَخَذَ ضلعا من أضلاعه فَأَقَامَهَا ثُمَّ رَحَلَ أعظم بعير مَعَنَا قَمَرُ مِنْ تَحْتِهَا وَتَزودنا من لحمه وشائق فَلَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ آتَيْنَا رَسُولَ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ هُوَ رِزْقٌ أَخْرَجَهُ اللَّهُ لَكُمْ فَهَلْ مَعَكُمْ مِنْ لَحْمِهِ شَيْ فَتُطْعِمُونَا فَأَرْسَلْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُ فَأَكَلَهُ – رواه مسلم .

৫১৮। আবু আবদুল্লাহ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু উবাইদা (রা)-র নেতৃত্বে আমাদেরকে কুরাইশদের একটি কাফিলার মুকাবিলার জন্য প্রেরণ করেন এবং আমাদের মাত্র এক বস্তা খেজুর দান করেন, এছাড়া আর কিছুই দেননি। আবু উবাইদা (রা) আমাদের একেকজনকে রোজ একটি করে খেজুর দিতেন। তাঁকে (জাবের) জিজ্ঞেস করা হল, একটি খেজুর আপনারা কি করতেন? তিনি বলেন, শিশুরা যেরূপ চোষে, আমরাও সেরূপ চুষতে থাকতাম, অতঃপর পানি পান করতাম, এভাবে সারাদিনের জন্য আমাদের যথেষ্ট হয়ে যেতো। আর আমরা লাঠি দিয়ে গাছের পাতা পেড়ে পানিতে ভিজিয়ে খেতাম। তিনি (রাবী) বলেন, অতঃপর আমরা সমুদ্রের উপকূলে পৌঁছে গেলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম সমুদ্র উপকূলে বিরাট টিলার মত মস্তবড় একটি বস্তু পড়ে আছে। আমরা এর কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, ইয়া বড় এক সামুদ্রিক জীব। একে আম্বর বা তিমি বলা হয়। আবু উবাইদা (রা) বলেন, এটা তো মৃত। পুনরায় তিনি বলেন, না, আমরা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরিত বাহিনী এবং আল্লাহর পথের মুজাহিদ, আর তোমরা তো দুর্দশাগ্রস্ত। সুতরাং তোমরা খেতে পার। অতঃপর আমরা এক মাস পর্যন্ত এটা খেয়েই অতিবাহিত করলাম। আমরা সংখ্যায় তিন শত লোক ছিলাম। এটা খেয়ে আমরা মোটাতাজা হয়ে গেলাম। আমরা এও দেখেছি যে, মশক ভর্তি করে এর চোখের বৃত্ত থেকে আমরা তেল বের করতাম এবং বলদের গোশতের টুকরার মত টুকরা কেটে বের করতাম। আবু উবাইদা (রা) আমাদের তেরোজনকে এর চোখের কোটরে বসিয়ে দিলেন। তিনি এর একটি পাঁজরের হাড় নিয়ে তা দাঁড় করালেন এবং আমাদের সাথের সবচেয়ে উঁচু একটি উটের উপর হাওদা রেখে এর নিচে দিয়ে চালিয়ে নিলেন। এর কিছু গোশত আমরা রসদের জন্য পাকিয়ে রেখে দিলাম। অতঃপর আমরা মদীনায় এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করলে তিনি বলেন: আল্লাহ তোমাদের রিযক হিসেবে এটা দান করেছেন। তোমাদের কাছে এর গোশত থাকলে আমাদেরকে খাওয়াও। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু গোশত পাঠিয়ে দিলাম এবং তিনি তা খেলেন। (মুসলিম)

٥١٩ – وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ كُمُ قَمِيصِ رَسُولِ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلى الرضع – رواه أبو داود والترمذي وقال حديث حسن.

৫১৯। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামার আস্তিন ছিলো কব্জি পর্যন্ত।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং ইমাম তিরমিযী বলেন,এটি হাসান হাদীস।

٥٢٠ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّا كُنَّا يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْفِرُ فَعَرَضَتْ كُذِيَةٌ شَدِيدَةٌ فَجَاؤُوا إلى النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا هذه كُدْيَةٌ عَرَضَتْ فِي الْخَنْدَقِ فَقَالَ أَنَا نَازِلَ ثُمَّ قَامَ وَيَطْنُهُ مَعْصُوبٌ بِحَجَرٍ وَلَبِثَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ لَا نَذُوقُ ذوافًا فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المعول فَضَرَبَ فَعَادَ كَثِيْبًا أَهْيَل أو اهيمَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ الله الذن لي إلى البيت فقُلتُ لامراتي رأيت بالنبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا ما في ذلك صبر فَعِندَكَ شَيْ فَقَالَتْ عندي شعير وعناق فَذَبَحْتُ العَنَاقَ وَطَعَنْتُ الشعير حَتَّى جَعَلْنَا اللَّحْمَ فِي الْبُرْمَةِ ثُمَّ جِئْتُ النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْعَجِينُ قَدِ الكَسَرَ وَالْبُرْمَةُ بَيْنَ الْأَثَانِي قَدْ كَادَتْ تَنضج فَقُلْتُ طَعَيمٌ لِي فَقُمْ أَنتَ يَا رَسُولَ الله وَرَجُلٌ أَوْ رَجُلانِ قَالَ كَمْ هُوَ فَذَكَرْتُ لَهُ فَقَالَ كَثِيرٌ طيب قُل لها لا تنزع البرمة ولا الْخُبْرُ مِنَ التَّنُّورِ حَتَّى أَتِي فَقَالَ قومُوا فَقَامَ الْمُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ فَدَخَلْتُ عَلَيْهَا فَقُلْتُ وَيْحَكَ جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْمُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ وَمَنْ مَعَهُمْ قَالَتْ هَلْ سَأَلُكَ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ ادْخُلُوا وَلَا تَضَاغَطُوا فَجَعَلَ بَكْسِرُ الْخُبْزَ وَيَجْعَلُ عَلَيْهِ اللَّحْمَ وَيُخَفِّرُ الْبُرْمَةَ والتنور اذا أخذ مِنْهُ وَيُقَرِّبُ إِلى أَصْحَابه ثُمَّ يَنزِعُ فَلَمْ يَزْلُ يَكْسِرُ وَيَغْرِفُ حَتَّى شبِعُوا وَبَقِيَ مِنْهُ فَقَالَ كُلى هذا واهْدِى فَإِنَّ النَّاسَ أَصَابَتْهُمْ مَجَاعَةٌ متفق عليه.
وفي رواية قَالَ جَابِرٌ لما حُفِرَ الْخَنْدَقُ رَأَيْتُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمَصا فَانْكَفَأْتُ إِلَى امْرَأَتِي فَقُلْتُ هَلْ عِنْدَكَ شَيْ فَإِنِّي رَأَيْتُ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْصًا شَدِيدًا فَاخْرَجَتْ إِلَى جِرَابًا فِيهِ صَاعٌ مِنْ شَعَيْرٍ ولنا بهيمةٌ داجِن فَذَبَحْتُها وطحنت الشعير فَفَرَغَتْ إِلَى فَرَاغِي وَقَطَّعْتُهَا فِي بُرْمَتِهَا ثُمَّ وَلَيْتُ إلى رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ لَا تَفْضَحْنى برسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ مَعَهُ فَجِئْتُهُ فَسَارَرْتُهُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ذبحنا بهيمة لنا وطحنت صاعا من شعير فَتَعَالَ أَنتَ وَنَفَرٌ مَعَكَ فَصَاحَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا أَهْلَ الْخَنْدَقِ إِنْ جَابِرًا قَدْ صَنَعَ سُوْرًا فَحَيْهَلا بِكُمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تُنزِلُنَّ بُرْمَتَكُمْ وَلَا تَخْبِرُنَّ عَجِيْنَكُمْ حتَّى أَجِي فَجِئْتُ وَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْدُمُ النَّاسَ حَتَّى جِئْتُ امراتي فقالت بك وبكَ فَقُلْتُ قَدْ فَعَلْتُ الذي قُلْت فَأَخْرَجَتْ عَجِيْنًا فَبَصَقَ فِيهِ وبارك ثُمَّ عَمَدَ إِلى بُرْمَتِنَا فَبَصَقَ وَبَارَكَ ثُمَّ قَالَ أَدْعُ خَابِرَةٌ فَلْتَخْبِرْ مَعَكَ واقْدَحى مِنْ بُرْمَتِكُمْ وَلَا تُنزِلُوهَا وَهُمُ الفُ فَأَقْسِمُ بِاللَّهِ لَأَكَلُوا حَتَّى تَرَكُوهُ وَانْحَرَقُوا وَإِنْ بُرْمَتَنَا لَتَغِطْ كَمَا هِيَ وَإِنْ عَجِيْنَنَا لَيُخْبَرُ كَمَا هُوَ

৫২০। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পরিখার যুদ্ধে আমরা খন্দক খনন করতে করতে একটি কঠিন পাথর বের হল। সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললেন, খন্দকে একটি কঠিন পাথর বেরিয়েছে। তিনি বলেনঃ আমি নামছি, অতঃপর তিনি উঠে দাঁড়ান এবং ক্ষুধার কারণে তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। তিন দিন পর্যন্ত আমরা কিছুই মুখে দেইনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কোদাল হাতে নিয়ে পাথরে আঘাত করলেন, অমনি পাথরটি টুকরা টুকরা হয়ে বালিতে পরিণত হলো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে একটু বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিন। অতঃপর আমি বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বললাম, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে যে অবস্থায় দেখে এসেছি, তাতে আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে বলল, আমার কাছে কিছু যব ও একটি ছাগল ছানা আছে। আমি ছাগল ছানাটি যবেহ করলাম এবং যব পিষলাম। অতঃপর ডেকচিতে গোশত চড়িয়ে দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে উপস্থিত হলাম। ইতোমধ্যে আটা রুটি তৈরির উপযুক্ত হয়ে গেল এবং উনুনের ডেকচিতে গোশত রান্না হয়ে গেল। আমি তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অল্প কিছু খাবারের ব্যবস্থা করেছি। দয়া করে আপনি এবং সাথে এক অথবা দু’জন লোক নিয়ে চলুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: আমরা কতোজন যাবো? আমি তাকে পরিমাণ খুলে বললাম। তিনি বলেনঃ বেশি সংখ্যকই উত্তম। তুমি তোমার স্ত্রীকে বলো, আমি না আসা পর্যন্ত ডেকচি নামিও না এবং উনুন থেকে রুটি বের করো না। অতঃপর তিনি সবাইকে সম্বোধন করে বলেন: সকলেই চল। অতএব মুহাজির ও আনসার সকলেই রওয়ানা দিলেন। আমি স্ত্রীর কাছে এসে বললাম, তোমার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আনসার, মুহাজির ও তাঁর সাথের সবাই এসে গেছেন। সে বলল, তিনি কি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছেন? আমি বললাম, হাঁ। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা প্রবেশ কর; কিন্তু ভিড় করো না। তারপর তিনি রুটি টুকরা টুকরা করে তার উপর গোশত দিতে লাগলেন এবং ডেকচি ও উনুন ঢেকে দিলেন। তিনি তা থেকে সাহাবীদের কাছে এনে ঢেলে দিতেন। এভাবে তিনি রুটি টুকরা করতেই থাকলেন এবং তাতে তরকারি ঢেলে দিতে থাকলেন। অবশেষে সকলেই পূর্ণ তৃপ্তি সহকারে পেট ভরে খেলেন এবং কিছু অবশিষ্টও থাকলো। তিনি বলেন: এগুলো তুমি (জাবিরের স্ত্রী) খাও এবং অন্যদের হাদিয়া দাও। (বুখারী, মুসলিম)

অপর বর্ণনায় আছে: জাবির (রা) বলেন, পরিখা খননের সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে ক্ষুধার লক্ষণ দেখতে পেয়ে আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে এলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুবই ক্ষুধার্ত দেখেছি। সে আমাকে এক সা যব ভর্তি একটি থলে বের করে দিলো। আমাদের পালিত একটি ভেড়ার বাচ্চা ছিল, আমি তা যবেহ করলাম। সে যব পিষে ফেললো। আমি অবসর হয়ে গোশত টুকরা করে ডেকচিতে চড়িয়ে দিলাম। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে যেতে উদ্যত হতেই সে বলল, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের সামনে লজ্জিত করো না। আমি তাঁর কাছে হাযির হয়ে তাঁকে চুপে চুপে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমাদের একটি ভেড়ার বাচ্চা ছিল, আমি তা যবেহ করেছি এবং সে এক সা’ যব পিষে আটা তৈরি করেছে। সুতরাং দয়া করে আপনি কয়েকজন লোকসহ চলুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে বললেনঃ হে খন্দক বাহিনী। জাবির তোমাদের জন্য মেহমানী (বড় খানা) প্রস্তুত করেছে, সুতরাং সবাই চল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন: আমি না আসা পর্যন্ত উনুন থেকে ডেকচি নামিও না এবং রুটিও পাকিও না। আমি চলে আসলাম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নিয়ে আসলেন। আমি আমার স্ত্রীর কাছে এসে সব বললে সে বললো, তুমিই লজ্জিত হবে, তুমিই অপমানিত হবে। আমি বললাম, তুমি যা বলে দিয়েছিলে, আমি তো তাই করেছি। অতঃপর সে খামীর করা আটা বের করে দিল। তিনি (নবী) তাতে মুখের লালা মিশিয়ে বরকতের দু’আ করলেন এবং ডেকচির কাছে এসেও মুখের লালা দিয়ে বরকতের দু’আ করলেন, অতঃপর বললেন: রাঁধুনীকে ডাক। সে তোমাদের সাথে রুটি পাকাবে এবং ডেকচি থেকে গোশত বের করবে, কিন্তু উনুন থেকে তা নামাবে না। লোকসংখ্যা ছিল এক হাজার। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তারা সবাই পেট ভরে খেলেন এবং অবশিষ্ট রেখে চলে গেলেন। এদিকে আমাদের ডেকচিতে জোশ মারার শব্দ হচ্ছিল এবং একইভাবে রুটিও পাকানো হচ্ছিল।

٥٢١ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لِأم سُلَيْمٍ قَدْ سَمِعْتُ
صوت رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَعِيفًا أَعْرِفُ فِيهِ الْجُوعِ فَهَلْ عِندَكَ مِنْ شَيْءٍ فَقَالَتْ نَعَمْ فَأَخْرَجَتْ أقراصا من شعيرٍ ثُمَّ أَخَذَتْ خَسَارًا لَهَا فَلَت الْخُبْزَ بِبَعْضه ثُمَّ دَسته تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَتْني بِبَعْضِهِ ثُمَّ أَرْسَلَتْنِي إِلَى رَسُول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَهَبْتُ بِهِ فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا فِي الْمَسْجِدِ وَمَعَهُ النَّاسُ فَقُمْتُ عَلَيْهِمْ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ فَقُلْتُ نَعَمْ فَقَالَ الطَعَامِ فَقُلْتُ نَعَمْ فَقَالَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمُوا فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طلحة فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ يَا أَم سُلَيْمٍ قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ بِالنَّاسِ وليس عندنا ما نُطْعِمُهُمْ فقالت اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ فَانْطَلَقَ أَبُو طلحة حتى لقى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُ حَتَّى دَخَلا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلَمَى مَا عندكِ يَا أَمِّ سُلَيْم قَاتَتْ بِذَلِكَ الْخُبْزِ قَامَرَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقت وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أم سُلَيْمٍ عُكَةٌ فَأَدَمَتْهُ ثُمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُولَ ثُمَّ قَالَ انْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ الذَن لِعَشَرَةٍ فَاذَنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ الذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ حَتَّى أَكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالْقَوْمُ سَبْعُونَ رجلاً أو ثَمَانُونَ متفق عليه .
i وفي روايةٍ فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشَرَةٌ وَيَخْرُجُ عَشَرَةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أَحَدَّ إِلَّا دَخَلَ فَأَكَلَ حَتَّى شَبِعَ ثُمَّ هَيَّاهَا فَإِذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أَكَلُوا مِنْهَا وَفِي رِوَايَةٍ فَأَكَلُوا عشرَةٌ عَشَرَةً حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلًا ثُمَّ أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذلِكَ وَاهْلُ الْبَيْتِ وَتَرَكُوا سُورًا وَفِي رِوَايَةٍ ثُمَّ أَفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جِيرَانَهُمْ وفي رواية عن انس قَالَ جِئْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَوَجَدْتُهُ جَالِسًا مَعَ أَصْحَابه وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَقُلْتُ لِبَعْضِ أَصْحَابِهِ لِمَ عَصْبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَطْنَهُ فَقَالُوا مِنَ الْجُوعِ فَذَهَبْتُ إِلَى أَبِي طَلْحَةَ وَهُوَ زَوج أم سليم بنتِ مِلْحَانَ فَقُلْتُ يَا ابْنَاهُ قَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَسَأَلْتُ بَعْضَ أَصْحَابِهِ فَقَالُوا مِنَ الْجُوعِ فَدَخَلَ أَبو طلحة على أمى فَقَالَ هَلْ مِنْ شَيْءٍ قَالَتْ نَعَمْ عِنْدِى كَسَرٌ مِّنْ خُبْرٍ وتمرات فَإِنْ جَاءَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحْدَهُ أَشْبَعْنَاهُ وَإِنْ جَاءَ أَخَرُ مَعَهُ قُلْ عَنْهُمْ وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيْثِ .

৫২১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু তালহা (রা) উম্মু সুলাইম (রা)-কে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুর্বল কণ্ঠস্বর শুনলাম। আমি লক্ষ্য করলাম তিনি ক্ষুধার্ত আছেন। তোমার কাছে কিছু আছে কি? তিনি বলেন, হাঁ। অতঃপর তিনি কয়েক টুকরা যবের রুটি বের করে আনলেন এবং তার ওড়নার কতক অংশ দিয়ে রুটি পেঁচিয়ে দিলেন, অতঃপর পুটুলিটি আমার কাপড়ের নীচে ঢেকে দিয়ে ওড়নার কতকাংশ আমার উপর উড়িয়ে দিলেন, অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে পাঠান। আমি তা নিয়ে উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে আরো লোক ছিল। আমি তাদের কাছে দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলেনঃ তোমাকে কি আবু তালহা পাঠিয়েছে। আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ আহারের জন্য? আমি বললাম, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা উঠে চল। সুতরাং সবাই রওয়ানা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে এসে আবু ভালহা (রা)-কে এ ব্যাপারে অবহিত করলাম। আবু তালহা (রা) বলেন, হে উম্মু সুলাইম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সাহাবীদের নিয়ে এসে পড়েছেন, অথচ তাঁদের খাওয়ানোর মত কিছুই আমাদের কাছে নেই। উম্মু সুলাইম (রা) বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। অতঃপর আবু তালহা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে আগমন করে বাড়িতে প্রবেশ করে ডাক দিয়ে বলেনঃ হে উম্মু সুলাইম। তোমার কাছে যা আছে নিয়ে এসো। তিনি সেই রুটিগুলো হাযির করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুটিগুলোকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ দিলে এগুলো টুকরা করা হলো। উম্মু সুলাইম তাতে ঘি ঢেলে তরকারি তৈরি করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর মর্জি মাফিক বরকতের দু’আ করলেন, অতঃপর বলেন: দশজনকে ভেতরে আসার অনুমতি দাও। তিনি (আবু তালহা) তাদের অনুমতি দিলেন। তারা ভেতরে এসে তৃপ্তির সাথে খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি আরো দশজনকে অনুমতি দেয়ার আদেশ দিলেন এবং তিনি তাদের অনুমতি দিলে, তারাও তৃপ্তিসহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। পুনরায় আরো দশজনের অনুমতির আদেশ দিলেন। এভাবে এ দলের সবাই পূর্ণ তৃপ্তির সাথে খেয়ে গেলেন। এ দলে সত্তরজন অথবা আশিজন লোক ছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)

অপর বর্ণনায় আছে। অতঃপর দশজন করে ভেতরে আসতে থাকলেন এবং দশজন বেরিয়ে যেতে থাকলেন, এমনকি তাদের কেউ বাকি রইল না; বরং প্রত্যেকেই ভেতরে প্রবেশ করে পেট ভরে খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। অতঃপর বাকি খাবার একত্র করে দেখা গেলো যে, খাওয়ার শুরুতে যে পরিমাণ খাদ্য ছিলো, তৎপরিমাণই আছে। আরেক বর্ণনায় আছে: তারা দশজন দশজন করে খেলেন। এভাবে আশিজনের খাওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বাড়ির লোক খাওয়া-দাওয়া সারলেন এবং অতিরিক্তগুলো রেখে চলে গেলেন। অপর বর্ণনায় আছে: তাদের খাওয়ার পরও এতো খাবার বেঁচে গিয়েছিলো যে, তা প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হলো।

আরেক বর্ণনায় আছে: আনাস (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সাহাবীদের সাথে বসে আছেন এবং পট্টি দিয়ে তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন। আমি সাহাবীদের কাউকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন কেন? তারা বলেন, ক্ষুধার কারণে। আমি আবু তালহার কাছে গেলাম। তিনি উম্মু সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী। আমি তাঁকে বললাম, হে পিত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তিনি পট্টি দিয়ে তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন। আমি কতক সাহাবীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, ক্ষুধার কারণে (তিনি পেট বেঁধে রেখেছেন)। আবু তালহা (রা) তৎক্ষণাৎ আমার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু আছে কি? তিনি বলেন, আমার কাছে কিছু রুটির টুকরা ও কিছু খেজুর আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাদের এখানে একাকী আসেন, তবে তাঁকে পেটপুরে খাইয়ে দিতে পারবো, আর যদি তাঁর সাথে আরো একজন আসে, তবে তাঁদের জন্য পরিমাণে অল্প হয়ে যাবে। অতঃপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন।

অনুচ্ছেদ : ৫৭ – অল্পে তুষ্টি, মুখাপেক্ষীহীনতা, জীবনযাত্রায় ও সংসার খরচে মিতব্যয়ী হওয়া, নিষ্প্রয়োজনে যাজ্ঞা করা নিন্দনীয়

অল্পে তুষ্টি, মুখাপেক্ষীহীনতা, জীবনযাত্রায় ও সংসার খরচে মিতব্যয়ী হওয়া, নিষ্প্রয়োজনে যাজ্ঞা করা নিন্দনীয়।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا .

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল প্রাণীর রিযক দেয়া আল্লাহরই দায়িত্ব।” (সূরা হুদঃ ৬)

وقال تعالى : وَمَا خَلَقْتُ الْجِنِّ وَالْإِنسَ إِلا لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ ومَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُون.

“আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে। আমি তাদের কাছে রিযকও চাই না এবং তারা আমাকে আহার দেবে, এটাও চাই না।” (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬-৫৭)

وَقَالَ تَعَالَى : للفقراء الذين أحْصِرُوا في سبيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الأَرْضِ يَحْسَبَهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاء مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ الناس الحافا.

“এটা প্রাপ্য সেই অভাবীদের, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, তাদের পক্ষে দেশের কোথাও বিচরণ করা সম্ভবপর হয় না। চাওয়া থেকে বিরত থাকার দরুন নির্বোধেরা তাদের ধনী মনে করে। তোমরা এদের লক্ষণ দেখেই চিনতে পারবে, তারা লোকদের কাছে নাছোড় হয়ে যাজ্ঞা করে না।” (সূরা আল-বাকারা: ২৭৩)

قال تعالى : وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلم يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا.

“তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয়ও করে না এবং কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।” (সূরা আল-ফুরকান: ৬৭)

٥٢٢- عن أبي هريرة رضى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ليس الغنى عن كثرة العرض ولكن الغنى غنى النفس – متفق عليه.

৫২২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অঢেল সম্পদ থাকলেই ঐশ্বর্যশালী হওয়া যায় না, বরং মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য।
(বুখারী, মুসলিম)

٥٢٣ – وَعَنْ عَبْدِ الله بن عمرو رضى اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزْقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا أَتَاهُ – رواه مسلم.

৫২৩। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি কৃতকার্য হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, প্রয়োজন মাফিক রিযকপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকার তাওফীকও দিয়েছেন। (মুসলিম)

٥٢٤ – وَعَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزام رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاعْطَانِي ثُمَّ سَالَتُهُ فَاعْطَانِي ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي ثُمَّ قَالَ يَا حَكِيمُ إن هذا المَالَ خَضْرٌ حُلُو فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ وَمَنْ أَخَذَهُ باشراف نفس لم يُبَارَكَ لَهُ فِيهِ وَكَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ منَ الْيَدِ السُّفْلَى قَالَ حَكِيمٌ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَرْزَاً احدا بعدَكَ شَيْئًا حَتَّى أَفَارِقَ الدُّنْيَا فَكَانَ أَبُو بَكْرِ يَدْعُو حَكِيمًا لِيُعْطِيَهُ فَيَابي أن يُقيلَ مِنْهُ شَيْئًا ثُمَّ إِنْ عُمَرَ دَعَاهُ لِيُعْطِيَهُ فَأَبِي أَنْ يُقْبَلُهُ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ المسلمين أشهدكُمْ على حكيم إني أعرضُ عَلَيْهِ حَقَّهُ الَّذِي قَسَمَهُ اللَّهُ لَهُ فِي هذا الْفَي فَيَابِي أَنْ يَأْخُذَهُ فَلمَ يَرْزَا حَكِيمٌ أَحَدًا مِّنَ النَّاسِ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى تُوفى – متفق عليه

৫২৪। হাকীম ইবনে হিযাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু চাইলাম। তিনি আমাকে দান করলেন। আমি পুনরায় তাঁর কাছে চাইলাম। তিনি এবারো আমাকে দান করলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আমাকে দান করেন এবং বলেনঃ হে হাকীম। এ সম্পদ সবুজ-শ্যামল ও মিষ্ট। যে ব্যক্তি নির্লোভ চিত্তে এ সম্পদ গ্রহণ করে, তার জন্য তাতে বরকত প্রদান করা হয়। আর যে ব্যক্তি লোভ-লালসার মন নিয়ে তা অর্জন করে, তার জন্য তাতে বরকত দেয়া হয় না। তার অবস্থা এরূপ হয় যে, কোন লোক খাবার খেলো; কিন্তু তৃপ্তি পেল না। উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম (অর্থাৎ দানকারী গ্রহণকারীর চাইতে উত্তম)। হাকীম (রা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ! এর পর থেকে দুনিয়া ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি কারো কাছে কিছু চাইব না। অতঃপর আবু বাক্স (রা) হাকীমকে ডেকে কিছু (দান) গ্রহণ করতে বললেন। তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর উমার (রা) তাকে কিছু দেয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। তখন উমার বলেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়। আমি তোমাদেরকে হাকীমের বিষয়ে সাক্ষী রাখছি যে, ‘ফাই’ সম্পদে আল্লাহ তার জন্য যে প্রাপ্য নির্ধারণ করেছেন, সেই প্রাপ্য অংশ আমি তার সামনে পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। ৬৪ অতঃপর হাকীম (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত আর কারো কাছে কিছু চাননি। [টিকা: “ফাই” বলা হয় যুদ্ধলব্ধ মালকে। তবে সাধারণত সামরিক পরিশ্রম ছাড়াই যে মাল পাওয়া যায় অর্থাৎ যুদ্ধে ঘোড়াও চালাতে হয়নি, অস্ত্রও ধারণ করতে হয়নি, অথচ শত্রুরা তাদের মাল ফেলে পালিয়ে গেছে বা সন্ধি করেছে। এরূপ অবস্থায় শত্রুপক্ষের যে মাল হস্তগত হয় তাকে ফাই বলে।] (বুখারী, মুসলিম)

٥٢٥ – عن أبي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاءً وَنَحْنُ سِنَةٌ نَفَر بَيْنَنَا بَعِيْرٌ نَعْتَقِبُهُ فَنَقَبَتْ أَقْدَامَنَا ونقبت قدمي وسَقَطَتْ أَظْفَارِي فَكُنا تلفُ عَلَى أَرْجُلِنَا الْحَرَقَ فَسُمِّيَتْ غَزْوة ذات الرقاع لما كُنَّا نَعْصِبُ عَلَى أَرْجُلُنَا مِنَ الْخِرَقِ قَالَ أَبُو بُرْدَةً فَحَدَّثَ أَبُو موسى بهذا الحديث ثُمَّ كَرِهَ ذلكَ وَقَالَ مَا كُنتُ أَصْنَعُ بِأَنْ اذْكُرَهُ قَالَ كَأَنَّهُ كَرِهَ أن يَكُونَ شَيْئًا من عمله أفشاه – متفق عليه .

৫২৫। আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধে রওয়ানা হলাম। আমাদের প্রতি ছয়জনের মাত্র একটি করে উট ছিল। আমরা পালাক্রমে এতে আরোহণ করতাম। ফলে আমাদের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আমাদের পা তো ক্ষতবিক্ষত হলোই, পায়ের নখগুলোও পড়ে গেলো। কাজেই আমরা পায়ে কাপড়ের পট্টি বেঁধে নিলাম। এজন্যই এ যুদ্ধের নাম হয়েছে ‘জাতুর-রিকা’ (পট্টির যুদ্ধ)। কেননা আমাদের পা পদব্রজে ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় তাতে পট্টি বেঁধেছিলাম। আবু বুরদা বলেন, আবু মূসা (রা) এ হাদীস বর্ণনা করার পর তা অপছন্দ করলেন এবং বলেন, হায়! আমি যদি তা বর্ণনা না করতাম। আবু বুরদা বলেন, সম্ভবত তাঁর আমল প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার ভয়েই তিনি এটাকে খারাপ মনে করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)

٥٢٦ – وَعَنْ عَمْرِو بْنِ تَغْلِبَ يفتح الناءِ الْمُثَنَاةِ فَوْقَ وَإِسْكَانِ الْغَيْنِ الْمُعْجَمَةِ وَكَسْرِ اللام رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتِي بمال أو سني فَقَسْمَهُ فأعطى رجالاً وترك رجالاً فَبَلَغَهُ أَنَّ الَّذِينَ تَرَكَ عَتَبُوا محمد الله ثُمَّ اثْنى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَوَاللهِ إِنِّي لَأَعْطِي الرَّجُلَ وَادَعُ الرَّجُلَ والذي أدعُ أَحَبُّ إِلى مِنَ الذي أعطى ولكنى إِنَّمَا أَعْطَى أَقْوَامًا لِمَا أَرَى فِي قُلُوبِهِمْ مِنَ الْجَزَعِ وَالْهَلَعِ وَاكِلُ أَقْوَامًا إِلَى مَا جَعَلَ اللَّهُ فِي قُلُوبِهِمْ مِنَ الْغَنِي وَالْخَيْرِ مِنْهُمْ عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ قَالَ عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ فَوَاللَّهِ مَا أَحِبُّ أَنَّ لِي بِكَلِمَةٍ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُمْرَ النَّعَم – رواه البخاري .

৫২৬। আমর ইবনে তাগলিব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু মাল অথবা বন্দী হাযির করা হলো। তিনি সেগুলো বণ্টন করতে গিয়ে কতক লোককে দিলেন এবং কতক লোককে দিলেন না। তাঁর কানে এলো যে, তিনি যাদেরকে দেননি তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। সুতরাং তিনি আল্লাহর হাম্দ ও সানা পাঠ করার পর বলেন: আল্লাহর শপথ। আমি কাউকে দিয়ে থাকি আর কাউকে দেই না। আমি যাকে দেই না সে আমার কাছে সেই ব্যক্তির চাইতে বেশি প্রিয় যাকে আমি দিয়ে থাকি। আমি তো এমন এক ধরনের লোককে দিয়ে থাকি- যাদের অন্তরে অস্থিরতা ও বিহ্বলতা দেখতে পাই। আর যাদের দিলে আল্লাহ প্রশস্ততা ও কল্যাণকামিতা দান করেছেন তাদেরকে তার উপর সোপর্দ করি। এই ধরনের লোকদের মধ্যে আমর ইবনে তাগলিব একজন। আমর ইবনে তালিব (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ। আমার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণী এতই মূল্যবান যে, এর বিনিময়ে লাল রংয়ের উট গ্রহণ করতেও আমি প্রস্তুত নই। (বুখারী)

٥٢٧ – وَعَنْ حَكِيمِ بْنِ حِرَام رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْيَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِّنَ البَدِ السفلى وابدأ بِمَنْ تَعُولُ وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ عَنْ ظَهْرِ عَنِّى وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفُهُ اللهُ وَمَنْ يُسْتَغْنِ يُغْنِهِ الله متفق عليه .

৫২৭। হাকীম ইবনে হিযাম (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম? তোমার পোষ্যদের থেকেই দান শুরু কর। সচ্ছলতা বজায় রেখে যে দান করা হয় সেটাই উত্তম। যে ব্যক্তি পবিত্র ও সংযমী হতে চায় আল্লাহ তাকে সংযমী ও পবিত্র বানিয়ে দেন। যে ব্যক্তি স্বনির্ভর হতে চায় আল্লাহ তাকে স্বনির্ভর হতে দেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ বুখারীর এবং মুসলিমের পাঠ আরো সংক্ষিপ্ত।

٥٢٨ – وعَنْ أَبِي سُفْيَانَ صَخْرِ بْنِ حَرْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تُلْحِقُوا فِي المَسئلةِ فَوَاللَّهِ لَا يَسْأَلُنِي أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا فَتُخْرِجُ لَهُ مَسْأَلْتُهُ مِنَى شَيْئًا وَأَنَا لَهُ كَارِهُ فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أَعْطَبْتُهُ رواه مسلم.

৫২৮। আবু সুফিয়ান সাগ্র ইবনে হারব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নাছোড়বান্দা হয়ে যাজ্ঞা করবে না। আল্লাহর শপথ। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার কাছে কিছু চায় এবং তার চাওয়া আমাকে অসন্তুষ্ট করে কিছু আদায় করে নেয়, সে আমার প্রদত্ত মালে বরকত পাবে না। (মুসলিম)

٥٢٩ – وعَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَوْفِ بْنِ مَالِكَ الْأَشْجَعِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا عِندَ رَسُول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تسعة أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةٌ فَقَالَ إِلا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكُنَّا حَدِيثِ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ فَقُلْنَا قَدْ بَا يَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ ثُمَّ قَالَ إِلا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فبسطنا أيدينا وَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ قَالَ عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا الله ولا تشركوا به شَيْئًا والصلوات الْخَمْسِ وَتُطِيعُوا اللَّهَ وَأَسْرُ كَلِمَةً خفية ولا تسألُوا النَّاسَ شَيْئًا فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعض أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ فما يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ – رواه مسلم

৫২৯। আবু আবদুর রহমান আওফ ইবনে মালিক আল-আশজা’ঈ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নয়জন অথবা আটজন অথবা সাতজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেন: ‘তোমরা আল্লাহর রাসূলের কাছে আনুগত্যের বাইআত করছ না কেন?’ অথচ আমরা কিছুদিন পূর্বেই তাঁর হাতে বাইআত করেছি। সুতরাং আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো আপনার হাতে বাইআত করেছি। তিনি পুনরায় বলেনঃ ‘তোমরা আল্লাহর রাসূলের কাছে বাইআত করছ না কেন?’ অতঃপর আমরা আমাদের হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো আপনার হাতে বাইআত করেছি, এখন আবার কিসের বাইআত করব। তিনি বলেন: এই বিষয়ের বাইআত যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে। আরেকটি কথা তিনি চুপিসারে বলেনঃ তোমরা মানুষের কাছে কিছুই চাইবে না। সুতরাং আমি নিজে এ দলের কয়েকজনকে দেখেছি যে, এমনকি তাদের কারো চাবুক মাটিতে পড়ে গেলেও তারা অন্য কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না। (মুসলিম)

٥٣٠ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تزالُ الْمَسْأَلَة بِأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةٌ لحم متفق عليه.

৫৩০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের যে ব্যক্তি সর্বদা চেয়েচিন্তে বেড়ায়, আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাতকালে তার মুখমণ্ডলে এক টুকরা গোশতও থাকবে না। (বুখারী, মুসলিম)

٥٣١ – وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ وَذَكَر الصدقة والتعقَّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ الْبَدِ الْعُليا خَيْرٌ مِّنَ الْيَدِ السُّفْلَى وَالْيَدُ الْعُليا هي المنفقة والسفلى هي السائلة – متفق عليه .

৫৩১। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে দান সম্পর্কে এবং কারো কাছে কোন কিছু না চাওয়া সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন: উপরের হাত নিচের হাতের চাইতে উত্তম। উপরের হাত হলো দানকারীর হাত এবং নিচের হাত হলো ভিক্ষুকের হাত। (বুখারী, মুসলিম)

٥٣٢ – وعن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَأَلَ النَّاسَ تكثرا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِل أو ليستكثير – رواه مسلم.

৫৩২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লোকদের কাছে ভিক্ষা করে, প্রকৃতপক্ষে সে জ্বলন্ত অঙ্গার ভিক্ষা করে। অতএব সে তার ভিক্ষা মেগে বেড়ানো বাড়াতেও পারে বা কমাতেও পারে। (মুসলিম)

٥٣٣ – وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْمَسْأَلَة كَلٌّ يَكُدُّ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ إِلَّا أَنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطَانًا أَوْ في أمر لا بد منه – رواه الترمذى وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

৫৩৩। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ভিক্ষা চাওয়াটাই হচ্ছে একটি ক্ষতবিশেষ। এর দ্বারা ভিক্ষাকারী তার মুখমণ্ডলকে ক্ষত-বিক্ষত করে। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে কিছু চাওয়া বা যা না হলেই নয়, এরূপ ক্ষেত্রে চাওয়া যেতে পারে।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٥٣٤ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنزَلَها بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدُ فَاقْتُهُ وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللَّهِ فَيُوْشِكُ الله له يرزق عاجل أو أجل رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حَسَنٌ.

৫৩৪। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অভাব-অনটন যার উপর হানা দেয়, অতঃপর সে যদি তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে তবে তার এ অভাব দূরীভূত হবে না। আর যে ব্যক্তি তার অভাব সম্পর্কে আল্লাহর শরণাপন্ন হয়; শিগগির হোক কি বিলম্বে হোক আল্লাহ তাকে রিযক দেবেনই।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেন এবং ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান।

٥٣٥ وَعَنْ تَوْبَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من تكفل لي أن لا يَسْأَلُ النَّاسَ شَيْئًا وَاتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ فَقُلْتُ أَنَا فَكَانَ لا يسأل أحدا شَيْئًا – رواه ابو داود باسناد صحيح

৫৩৫। সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার সাথে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে কারো কাছে কোন কিছুই চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হবো। আমি বললাম, আমি অঙ্গীকার করছি। (রাবী বলেন) এরপর থেকে তিনি (সাওবান) কারো কাছে কিছু চাননি।
ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।

٥٣٦ – وَعَنْ أَبِي بِشَرِ قَبِيصَةَ بْنِ الْمُخَارِقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ تَحَمِّلْتُ حَمَالَهُ فاتَيْتُ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْأَلُهُ فِيهَا فَقَالَ أَقِمْ حَتَّى تَأْتِينَا الصدَقَةُ فَنَامُرَ لَكَ بِهَا ثُمَّ قَالَ يَا قَبِيصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَحِلُّ إِلَّا لِأَحَدٍ ثلاثة رَجُلٌ تَحَمَلَ حَمَالَهُ فَعَلَتْ لَهُ الْمَسْأَلَة حَتَّى يُصِيبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ جائحة اجتاحت ماله فحلت له المسألة حتى يُصيب قَوَامًا مِنْ عَيْشِ أَوْ قَالَ سدادا من عَيْشِ وَرَجُلٌ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُولَ ثَلَاثَةٌ مِّنْ ذَوِي الْحِجَى مِنْ قَوْمِهِ لقد أصابت فلانًا فَاقَةٌ فَحَلَّت له المسألةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشِ أَوْ قال سدادا من عيش فما سواهُنَّ مِنَ المَسأَلَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْت يَا كُلُهَا صاحبها سحنا – رواه مسلم .

৫৩৬। আৰু বিশর কাবীসা ইবনুল মুখ্যরিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (ঋণ বা দিয়াতের) যামিনদার হয়ে অপারগ হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে কিছু সাহায্য চাইতে আসলাম। তিনি বলেন, অপেক্ষা কর, এরি মধ্যে আমাদের কাছে সাদাকার মাল এসে গেলে তোমাকে তা দেয়ার আদেশ দেবো। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে কাবীসা। তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া (ভিক্ষা করা) বৈধ নয়ঃ (১) যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত চাইতে পারে, অতঃপর তাকে বিরত থাকতে হবে। (২) যে ব্যক্তি এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়লো যা তার মালসম্পদ ধ্বংস করে দিল, সেও তার প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজন পরিমাণ চাইতে পারে অথবা তিনি বলেনঃ তার অভাব দূর হওয়া পর্যন্ত চাইতে পারে। (৩) যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে এবং তার গোত্রের তিনজন সচেতন ব্যক্তি সত্যায়ন করেছে যে, অমুকের উপর দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে, তার জন্যও প্রয়োজন মেটানো পরিমাণ সওয়াল করা বৈধ অথবা তিনি বলেন: অভাব দূর হওয়া পর্যন্ত চাওয়া বৈধ। হে কাবীসা। এই তিন প্রকারের লোক ছাড়া আর সবার জন্য কারো কাছে হাত পাতা হারাম এবং যে ব্যক্তি হাত পাতে সে হারাম খায়।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।

٥٣٧ – والثمرتان ولكن المسكين الذي لا يَجِدُ عَنِّى يُغْنِيهِ وَلَا يُفْتَنُ لَهُ فَيُتَصَدَّقَ عليه ولا يقوم فيسأل الناس متفق عليه

৫৩৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই ব্যক্তি দরিদ্র নয় যে একটি গ্রাস ও দু’টি গ্রাস এবং একটি খেজুর বা দু’টি খেজুরের জন্য লোকের দ্বারে দ্বারে ঘোরে; বরং সে-ই প্রকৃত দরিদ্র, যার কাছে পরমুখাপেক্ষী না হয়ে থাকার মত সম্পদ নেই এবং তার দারিদ্র্য সম্পর্কে কারো জানাও নেই যে, তাকে কিছু দান করা যায়, আর সেও স্বেচ্ছায় কারো কাছে কিছু চায় না। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৫৮ – বিনা প্রার্থনায় ও নির্লোভে কিছু গ্রহণ করা বৈধ

বিনা প্রার্থনায় ও নির্লোভে কিছু গ্রহণ করা বৈধ।

٥٣٨ عن عمر رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يعطيني العطاء فَأَقُولُ أَعطه مَنْ هُوَ أفقر اليه منِّى فَقَالَ خُذْهُ إِذَا جَاءَكَ مِنْ هُذَا الْمَالِ شَيْ وأنت غَيْرُ مُشْرِف وَلا سَائِلٍ فَخُذَهُ فَتَمَولُهُ فَإِنْ شِئْتَ كُلَّهُ وَإِنْ شِئْتَ تصدِّقَ بِهِ وَمَا لَا فَلَا تُتَّبِعَهُ نَفْسَكَ قَالَ سَالِمٌ فَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لَا يَسْأَلُ أَحَدًا شَيْئًا وَلا يَرُدُّ شَيْئًا أَعطيه متفق عليه.

৫৩৮। উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করলে আমি বলতাম, যে ব্যক্তি আমার চাইতে এর বেশি মুখাপেক্ষী তাকে এটা দিন। তিনি বলেন: বিনা লোডে ও বিনা চাওয়ায় এ ধরনের মাল তোমার হাতে এলে তা গ্রহণ কর এবং নিজের মালিকানাভুক্ত কর। অতঃপর তা তুমি নিজেও ব্যবহার করতে পার কিংবা ইচ্ছা করলে দান করে দিতে পার। আর যে মাল এভাবে আসে না তার পেছনে মন দিও না। সালেম (র) বলেন, এজন্যই আবদুল্লাহ (রা) কারো কাছে কোনো কিছু চাইতেন না এবং (বিনা চাওয়ায়) তাকে কিছু দান করা হলে তা ফেরতও দিতেন না। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৫৯ – নিজ শ্রমে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহের প্রতি উৎসাহ প্রদান, যাজ্ঞা করা থেকে পবিত্র থাকা এবং দান করার জন্য অগ্রবর্তী হওয়া

নিজ শ্রমে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহের প্রতি উৎসাহ প্রদান, যাজ্ঞা করা থেকে পবিত্র থাকা এবং দান করার জন্য অগ্রবর্তী হওয়া।

قَالَ الله تعالى : فَإِذَا قُضيت الصَّلاةُ فَانتَشرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فضل الله.وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ليس الْمِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرَدَّهُ اللُّقَمَةُ وَاللُّقَمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“অতএব নামায যখন সমাপ্ত হয়, তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অন্বেষণ কর।” (সূরা আল-জুমু’আঃ ১০)

٥٣٩ – عن أبي عبد الله الزبير بن العوام رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لأن يأخذ أحدكم أحبلَهُ ثُمَّ يَأْتِي الْجَبَلَ فَيَأْتِي بِحُزْمَةٍ مِنْ حطب على ظهره يبيعها فَيَكُفَ اللهُ بِهَا وَجَهَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يُسْأَلَ النَّاسِ اعطوه أو منعوه – رواه البخاري

৫৩৯। আবু আবদুল্লাহ যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে পাহাড়ে চলে যাক, নিজের পিঠে করে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বাজারে বিক্রয় করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করুক। এটা তার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে ঘুরে বেড়ানোর চাইতে উত্তম এবং মানুষ তাকে ভিক্ষা দিতেও পারে বা নাও দিতে পারে। (বুখারী)

٥٤٠- وَعَنْ أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم لأن يحتطب أحدكم حزمة على ظهره خَيْرٌ لَهُ مِنْ أن يُسأل أحدا فيُعطيه او يمنعه متفق عليه.

৫৪০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে বিক্রয় করাটা কারো কাছে কিছু ভিক্ষা করার চাইতে উত্তম, সে তাকে দিতেও পারে বা নাও দিতে পারে। (বুখারী, মুসলিম)

٥٤١ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ دَاوُدُ عَلَيْهِ السَّلامُ لَا يأكل الا من عمل يده – رواه البخاري .

৫৪১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দাউদ আলাইহিস সাল্লাম নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। (বুখারী)
٥٤٢ – وعنه أن رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كَانَ زَكَرِيَّا عَلَيْهِ السَّلَامُ نجارا رواه مسلم

৫৪২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন জুতার। (মুসলিম)

٥٤٣ – وعن المقداد بن معد يكرب رضى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا أَكل أَحَدٌ طَعَامًا قَط خَيْراً مِن أَن يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ وَإِنَّ نَبِيُّ اللَّهِ داود صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَل يده – رواه البخاري .

৫৪৩। মিকদাদ ইবনে মা’দীকারিব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিজ হাতে উপার্জন করে খাওয়ার চাইতে উত্তম খাদ্য কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

ইমাম বুখারী এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৬০ – আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে কল্যাণকর উৎসসমূহে খরচ করা এবং দানশীলতা ও বদান্যতা

আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে কল্যাণকর উৎসসমূহে খরচ করা এবং দানশীলতা ও বদান্যতা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার প্রতিদান দেবেন।” (সূরা সাবা: ৩৯)

وقال تعالى : وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلأَنفُسِكُمْ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوفُ اليَكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ.

“যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদের জন্য। তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থেই ব্যয় করে থাক। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, তার পুরস্কার তোমাদের পুরোপুরিভাবে দান করা হবে। তোমাদের প্রতি যুল্য করা হবে না।” (সূরা আল-বাকারা: ২৭২)

وَقَالَ تَعَالَى : وَمَا تُنفِقُوا مِن خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ.

“যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।” (সুরা আল-বাকারাঃ ২৭৩)

٥٤٤ وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ

لا حسد الا في اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلطهُ عَلَى هَلكته فِي الْحَقِّ وَرَجُلٌ أَتَاهُ الله حكمةً فَهُوَ يَقْضى بها ويُعْلَمُها – متفق عليه

৫৪৪। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জন লোক ছাড়া আর কারো প্রতি হিংসা পোষণ করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার যোগ্যতা ও ক্ষমতাও দান করেছেন। আরেক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ জ্ঞান ও বিচক্ষণতা দান করেছেন এবং সে তার সাহায্যে ফায়সালা করে ও (অপরকে) তা শিক্ষা দেয়। [টিকা: ৬৫. অন্যের সুখ-সমৃদ্ধি ধ্বংস হয়ে যাক এরূপ কামনা করাকে বলা হয় হাসাদ বা হিংসা। পক্ষান্তরে অন্যের সুখ-সমৃদ্ধির ধ্বংস কামনা না করে তার মত আমারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক- এরূপ কামনা করাকে বলা হয় গিৰতাহ বা ঈর্ষা। প্রথমটি পরিত্যাজ্য, দ্বিতীয়টি নির্দোষ ও গ্রহণযোগ্য।]

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম নববী (র) বলেন, হাদীসটির অর্থ হচ্ছে, উপরোক্ত গুণ দু’টির অধিকারী ছাড়া আর কারো প্রতি ঈর্ষা বা ‘গিবতাহ করা সমীচীন নয়।

٥٤٥ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّكُمْ مَالٌ وَارِثَهُ أَحَبُّ اليه من ماله قالُوا يَا رَسُولَ الله ما منا أحد الا مَالُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ قَالَ فَإِنَّ مَالَهُ ما قدم ومال وارثه ما أخر – رواه البخاري .

৫৪৫। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যার কাছে তার নিজের ধন-সম্পদের চাইতে তার ওয়ারিসের ধন-সম্পদ অধিকতর প্রিয়? সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের মধ্যে এমন তো কেউ নেই, বরং নিজের সম্পদই তার নিকট অধিকতর প্রিয়। তিনি বলেন: তাহলে জেনে রাখ, তার সম্পদ তা-ই যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে। ৩৬ আর ওয়ারিসের সম্পদ হল যা সে পেছনে রেখে গেছে। [টিকা: ৬৬. দান-খয়রাত করা ও পরিমিত খাওয়া-পরার মাধ্যমেই সম্পদ আগে পাঠানো সম্ভব। হাদীসে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সম্পদ কল্যাণকর খাতে ব্যয় করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে আখিরাতে তার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।] (বুখারী)

٥٤٦ – وَعَنْ عَدِي بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتَّقُوا النار ولو بشق تمرة – متفق عليه .

৫৪৬। আদী ইবনে হাতিম (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

বলেছেন: তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা কর, এক টুকরা খেজুর দ্বারা হলেও। (বুখারী, মুসলিম)

٥٤٧ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَا سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا قَط فَقَالَ لا – متفق عليه

৫৪৭। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোন জিনিস চাওয়া হলে জবাবে তিনি কখনো “না” বলেননি। (বুখারী, মুসলিম)

٥٤٨ – وعن أبي هريرة رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ يَوْمِ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيهِ إِلا مَلكَان يَنزِلَانِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمُ اعْطِ مُنفِقًا خَلْفًا وَيَقُولُ الْآخَرُ اللهم أعط ممسكا تلفا – متفق عليه .

৫৪৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা প্রতিদিন সকালে উপনীত হলেই দু’জন ফেরেশতা আসমান থেকে অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! (তোমার পথে) খরচকারীকে তার প্রতিদান দাও। আরেকজন বলেন, হে আল্লাহ! (সম্পদ আটককারী) কৃপণকে ক্ষতিগ্রস্ত কর। (বুখারী, মুসলিম)

٥٤٩ – وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ اللهُ تَعَالَى انْفِقَ يَا ابن ادم ينفق عليك متفق عليه .

৫৪৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মহান আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান। খরচ কর, তোমার জন্যও খরচ করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম)

٥٥٠ وَعَن عبد الله بن عمرو بن العاص رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ رسول الله صلى الله عليه وسلم أي الإسلام خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْراً السلام عَلَى مَنْ عَرَفتَ وَمَن لم تعرف متفق عليه ..

৫৫০। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি লোকদেরকে আহার করাবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেবে। (বুখারী, মুসলিম)

٥٥١ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعُونَ خَصْلَهُ أَعْلَاهَا منيحة العنز ما مِنْ عَامِل يَعْمَلُ بِخَصْلَة مِنْهَا رَجَاءَ ثَوَابِهَا وَتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا إلا أَدْخَلَهُ اللهُ تَعَالَى بِهَا الْجَنَّةَ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَقَدْ سَبَقَ بَيَانُ هَذَا الْحَدِيثِ في باب بيان كثرة طرق الخير .

৫৫১। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: চল্লিশটি (উত্তম) স্বভাব রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে উন্নত স্বভাব হল, দুধেল পশু দান করা। যে কোন আমলকারী ঐ স্বভাবগুলোর কোনটির উপর সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে এবং তার জন্য প্রতিশ্রুত প্রতিদানের বিষয়কে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে অবশ্যই মহান আল্লাহ জান্নাতে দাখিল করবেন। (বুখারী)

٥٥٢ – وعن أبي أَمَامَةً صُدَى بْنِ عَجْلانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا ابْنَ آدَمَ أَنَّكَ أَنْ تَبْدَلَ الْفَضْلَ خَيْرٌ لَكَ وَأَنْ تُمْسِكَهُ شَرٌّ لك ولا تُلامُ عَلَى كَفَافٍ وَابْدَأَ بِمَنْ تَعُولُ وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى رواه مسلم .

৫৫২। আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আদম সন্তান। তুমি যদি তোমার প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ খরচ কর, তাহলে এটা তোমার জন্য কল্যাণকর। আর যদি তা ধরে রাখ তাহলে সেটা হবে তোমার জন্য অনিষ্টকর। তোমার জন্য যে পরিমাণ (সম্পদ) আবশ্যক, তা ধরে রাখাতে অবশ্য তোমাকে ভর্ৎসনা করা হবে না। আর (দান) শুরু করবে তোমার নিকটাত্মীয়দের থেকে। দাতার হাত গ্রহীতার হাতের চাইতে উৎকৃষ্ট। (মুসলিম)

٥٥٣ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَا سُبُلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ على الإسلام شَيْئًا إلا أعطاه ولقد جَاءَهُ رَجُلٌ فَأَعْطَاهُ عَنْمًا بَيْنَ جَبَلِينِ فَرَجَعَ إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ أَسْلِمُوا فَإِنْ مُحَمَّدًا يُعْطِي عَطَاءٌ مَنْ لَا يَخْشَى الْفَقْرَ وَإِنْ كَانَ الرَّجُلُ لِيُسْلِمُ مَا يُرِيدُ إِلا الدُّنْيَا فَمَا يَلْبَثُ إِلا يَسِيرًا حَتَّى يَكُونَ الإِسْلَامُ أَحَبُّ اليه من الدُّنيا وما عليها – رواه مسلم .

৫৫৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ইসলামের নাম নিয়ে কিছু চাওয়া হলে তিনি অবশ্যই প্রার্থনাকারীকে কিছু দান করতেন। এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝখানে বিচরণরত ছাগলগুলো দান করেন। লোকটি তার গোত্রের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, হে আমার কাওম! ইসলাম গ্রহণ কর। কারণ মুহাম্মাদ (সা) এত বিপুল পরিমাণে দান করেন যে, তার পরে আর দারিদ্র্যের ভয় থাকে না। কোন লোক শুধু পার্থিব স্বার্থে ইসলাম গ্রহণ করলে, সে এ অবস্থার উপর স্বল্পকালই স্থির থাকত এবং অচিরেই তার কাছে ইসলাম দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুর চাইতে অধিক প্রিয় হয়ে যেত।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٥٥٤ – وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَسَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قسمًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ لَغَيْرُ هُؤُلاء كَانُوا أَحَقُّ بِهِ مِنْهُمْ قَالَ إِنَّهُمْ خَيْرُونِي أَنْ يسألوني بالفحش أو يبخلوني ولستُ باخل – رواه مسلم .

৫৫৪। উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু মাল বণ্টন করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এদের চাইতে তো যাদের দেয়া হয়নি তারাই বেশি হকদার ছিল। তিনি বলেন: তারা আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছে, আমার কাছে পর্যাপ্ত চাইবে অথবা আমাকে কৃপণতা দোষে দোষী করবে। অথচ আমি কৃপণ নই (তাই আমি তাদের দিচ্ছি)।
٥٥٥ – وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ بَيْنَمَا هُوَ يَسِيرُ مَعَ النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقْفَلَهُ مِن حنين فَعَلقَهُ الْأَعْرَابُ يَسْأَلُونَهُ حَتَّى أَضْطَرُّوهُ إلى سمرَةٍ فَخَطفَتْ رِدا مه فوقف النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَعْطُونِي رداني فلو كَانَ لِي عَدَدُ هذه العِضَاءِ نَعَمًا لقسمتُهُ بَيْنَكُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُونِي بَخِيْلاً ولا كذابا ولا جبانا – رواه البخاري.

৫৫৫। জুবাইর ইবনে মুত’ইম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। কিছু সংখ্যক বেদুঈন তাঁর সাথে সাক্ষাত করে তাঁর নিকট কিছু চাইল, এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের কাছে ঘেরাও করে ফেলল। এক বেদুঈন তাঁর চাদর ছিনিয়ে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন: আমার চাদর আমাকে দিয়ে দাও। আমার নিকট যদি এই গাছের কাঁটার সম-সংখ্যক মালও থাকত, তাহলে আমি তার সবই তোমাদের দান করতাম, তারপর তোমরা আমাকে না কৃপণ, না মিথ্যুক, না ভীরু পেতে। (বুখারী)

٥٥٦ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ما نقصت صدقة من مالٍ وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدا بعفو إلا عزاً وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لله الا رَفَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ – رواه مسلم .

৫৫৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দানে সম্পদ কমে না। আল্লাহ যাকে ক্ষমার গুণে সমৃদ্ধ করেন, তাকে অবশ্যই সম্মান দ্বারা ধন্য করেন। যে লোক শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করে, মহামহিম আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করেন। (মুসলিম)

٥٥٧- وَعَنْ أَبِي كَيْشَةَ عُمَرَ بْنِ سعد الأَنْصَارِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ثلاثة أقسمُ عَلَيْهِنَّ وَأَحَدَثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدِ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَا ظُلِمَ عَبْدَ مَظْلِمَةٌ صَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ عِزَّا ولا فَتَحَ عَبْدٌ بَاب مَسَالَة إِلا فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقَرٍ أَوْ كَلِمَةٌ نَحْوَهَا وَأَحَدِّثُكُم حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ إِنَّمَا الدُّنْيا لأربعة نفر . عَبدِ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالاً وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقى فيه رَبَّهُ وَيَصلُ فِيهِ رَحِمَهُ وتعلم لله فِيهِ حَقًّا فَهَذَا بِأَفْضَلَ الْمَنَازِلَ . وَعَبْدِ رَزْقَهُ اللهُ علما وَلَمْ يَرْزُقَهُ مَالاً فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِي مَالاً العملتُ بِعَمَلٍ فُلانٍ فَهُوَ بِنَيتِهِ فَاجْرُهُمَا سَوَاءٌ ، وَعَبْدِ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالَا وَلَمْ يَرْزُقَهُ علما فَهُوَ يَخبط في ماله بغير علم لا يتقى فيه رَبَّهُ وَلا يَصلُ فِيهِ رَحمهُ وَلا يعْلَمُ الله فيه حَقًّا فَهذا باحب المنازل ، وَعَبْدِ لَمْ يَرْزُقَهُ اللَّهُ مَالاً وَلَا عِلْمًا فَهُوَ يَقُولُ لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لعملتُ فِيهِ يَعْمَل فلان فَهُوَ بَيْتُهُ فَوزَرُهُمَا سَواء – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح .

৫৫৭। আবু কাবশা উমার ইবনে সা’দ আল-আনমারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: তিনটি বিষয় রয়েছে যে সম্পর্কে আমি তোমাদের শপথ করে বলছি এবং তোমরা তা মনে গেঁথে নাওঃ দান করার কারণে (আল্লাহর) কোন বান্দার সম্পদ কমে না। এমন কোন মাযলুম নেই, যে অত্যাচারিত হয়ে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তার সম্মান বৃদ্ধি করেন না। কোন লোক ভিক্ষার দ্বার খুললে আল্লাহ তার জন্য দারিদ্র্যের দ্বার খুলে দেন অথবা অনুরূপ কথা বলেছেন। আরেকটি কথা আমি তোমাদের বলছি, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে রাখ। দুনিয়া চার ধরনের লোকের জন্য: (১) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। সে এগুলোর ব্যাপারে তার রবকে ভয় করে, এগুলোর সাহায্যে তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে এবং এর সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহর হক সম্পর্কে সজাগ থাকে। এ লোক উৎকৃষ্টতম মর্যাদার অধিকারী।

(২) ঐ বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান বা প্রজ্ঞা দান করেছেন কিন্তু তাকে ধন-সম্পদ দান করেননি। সে সাচ্চা নিয়াতের অধিকারী। সে বলে, আমার কাছে যদি ধন-সম্পদ থাকত, তাহলে আমি অমুকের ন্যায় আমল করতাম এবং এটাই তার নিয়াত। এরা দু’জনই সাওয়াবের দিক থেকে বরাবর।

(৩) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে জ্ঞান ছাড়াই যত্রতত্র সম্পদ বিনষ্ট করে। এ ব্যাপারে সে তার রবকে ভয় করে না, আত্মীয়তার বন্ধনও রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হক সম্পর্কেও সজাগ নয়। এ লোক রয়েছে নিকৃষ্টতম স্তরে।

(৪) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ সম্পদ ও জ্ঞান কোনটিই দান করেননি। সে বলে, আমাকে যদি আল্লাহ সম্পদ দান করতেন তাহলে তা দ্বারা আমি অমুকের ন্যায় আমল করতাম।
এটাই তার নিয়াত। এ (শেষোক্ত) দু’জনের গুনাহর বোঝা সমান।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٥٥٨- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهُمْ ذَبِّحُوا شَاةً فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا بَقِى مِنْهَا قَالَتْ مَا بَقِيَ مِنهَا إِلَّا كَتِفُهَا قَالَ بَقِى كُلُّهَا غَيْرَ كتفها – رواه الترمذي وقال حديث صحيح.

৫৫৮। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তারা একটি বকরী যবেহ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তা থেকে কী অবশিষ্ট থাকল? আয়িশা (রা) বলেন, কাঁধ ছাড়া তার কিছু অবশিষ্ট নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বরং কাঁধ ছাড়া সবটুকুই অবশিষ্ট আছে।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

হাদীসটির মর্ম হল: যে পরিমাণ গোশত আল্লাহর রাস্তায় দান করা হয়েছে, তার সাওয়াব আল্লাহর নিকট আখিরাতে আমাদের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে, শুধু ঐ কাঁধের গোশুটুকু ব্যাতীত।

٥٥٩- وَعَنْ أَسماء بنت أبي بكر الصديق رضي اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تُوكِى فَيُوكي عليك . وفي رواية أنفقي أو الفحي أو انضحى ولا تُحصى فَيُحْصى اللهُ عَلَيْكَ وَلَا تُوْعِى فَيُوْعِي اللهُ عليك متفق عليه .

৫৫৯। আসমা বিনতে আবু বাকর আস্ সিদ্দীক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: সম্পদ আটকে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে আটকে রাখবেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে: খরচ কর বা দান কর অথবা ছড়িয়ে দাও, হিসাব করে পুঞ্জীভূত করে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমাকে গুণে গুণে দেবেন। উদ্বৃত্ত সম্পদ আটকে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে আটকে রাখবেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٥٦٠ – وعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَثَلُ الْبَحْيل والمُتفقِ كَمَثَلِ رَجُلييْن عَلَيْهِمَا جُنَّتَانِ مِنْ حَدِيدٍ مِنْ تديهما إلى تراقيهما فَأَما المُنْفِقُ فَلا يُنفِقُ إِلا سَبَغَتْ أَوْ وَفَرَتْ عَلَى جِلده حَتَّى تُخْفِي بَنَانَهُ وَتَعْفُو أَثَرَهُ وَأَمَّا الْبَخِيلُ فَلا يُرِيدُ أَنْ يُنْفِقَ شَيْئًا إِلَّا لَزِقَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ مَكَانَهَا فَهُوَ يُوَسِعُها فلا تتسع متفق عليه .

৫৬০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: কৃপণ ও খরচকারীর দৃষ্টান্ত এমন দু’জন লোকের ন্যায় যাদের পরনে রয়েছে দু’টি লৌহবর্ম যা তাদের বুক থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে রয়েছে। খরচকারী যখনই কিছু খরচ করে তখনি ঐ বর্মটি প্রসারিত হয়ে তার (শরীরের) পুরো চামড়াকে ঢেকে নেয়, এমনকি তার আংগুলসমূহকেও আবৃত করে ফেলে এবং পায়ের তলা পর্যন্ত ঢেকে যেতে থাকে। পক্ষান্তরে কৃপণ যখনই কিছু খরচ করতে চায় তখন ঐ লৌহবর্মের প্রতিটি বৃত্ত স্ব স্ব স্থানে এঁটে যায়। সে তাকে প্রশস্ত করতে চায় কিন্তু তা প্রশস্ত হয় না। (বুখারী, মুসলিম)

٥٦١ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَصَدِّقَ بعدل تمرة من كسب طيب وَلَا يَقْبَلُ اللهُ إِلَّا الطَّيِّبَ فَإِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيْهَا لصاحبها كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ قُلُوهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ – متفق عليه .

৫৬১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার হালাল রোজগার থেকে একটি খেজুরের মূল্য পরিমাণ দান করে, বলা বাহুল্য আল্লাহ পাক হালাল বস্তু ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না, তবে ইমাম রাযী এ হাদীস এবং এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস সম্পর্কে বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে বোঝাবার জন্যই এরূপ উপমা দিয়েছেন এবং আল্লাহর ডান হাতে দান গ্রহণ করার কথা বলেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন। এ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বক্তব্য হল: আমরা এসব হাদীসের উপর ঈমান পোষণ করি। এতে কোন প্রকার উপমার ধারণা রাখি না এবং এও বলি না যে, কেন বা কিভাবে এ সকল হাদীসে আল্লাহ তা’আলার উপমা দেয়া হয়েছে। আর এ ধরনের প্রশ্ন তোলাও নিন্দনীয়। [টিকা: অতঃপর তাকে দানকারীর জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার অশ্বশাবক লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে তা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।] (বুখারী, মুসলিম)

আল্লাহ তা তাঁর (কুদরতী) ডান হাতে গ্রহণ করেন,

٥٦٢ – وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِفَلَاةٍ مِنْ الْأَرْضِ فَسَمِعَ صَوْتًا فِي سَحابة أسق حديقة فلان فَتَنَحَى ذَلِكَ السَّحَابُ فَأَفَرَغَ مامه في حرة فاذا شرجة من تلك الشراج قد استَوَعَبَتْ ذَلِكَ الْمَاءَ كُلَّهُ فَتَتَبَّعَ الْمَاءَ فَإِذَا رَجُلٌ قَائِمٌ فِي حَدِيقَتِهِ يُحْوِلُ المَاءَ بِمِسْحَاتِهِ فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللَّهِ مَا اسْمُكَ قَالَ فُلانٌ للاسم الذي سمع في السَّحَابَة فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللهِ لَمْ تَسْأَلُنِي عَنْ اسْمِي فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ صَوْتًا فِي السَّحَابِ الَّذِي هَذَا مَاؤُهُ يَقُولُ اسْقِ حديقة فلان لاسْمِكَ فَمَا تَصْنَعُ فِيهَا فَقَالَ أَمَّا إِذْ قُلْتَ هَذَا فَإِنِّي أَنظُرُ إلى مَا يَخْرُجُ مِنْهَا فَاتَصدِّقُ بِسُلْثِهِ وَأكُلُ أَنَا وَعِبَالِي ثُلُثًا وَارَدُّ فِيهَا ثلثه – رواه مسلم.

৫৬২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একদা এক লোক পানিবিহীন এক প্রান্তর দিয়ে যাচ্ছিল। সে মেঘখণ্ডের মধ্য থেকে একটি ডাক শুনতে পেল: অমুকের বাগানে পানি দাও। ফলে মেঘখণ্ডটি একদিকে এগিয়ে গেল এবং একটি প্রস্তরময় ভূখণ্ডে পানি বর্ষণ করল। এই পানি ছোট ছোট নালাসমূহ থেকে বড় একটি নালার দিকে প্রবাহিত হয়ে পুরো বাগানকে বেষ্টন করে নিল। পথিক উক্ত পানির পেছনে পেছনে যেতে থাকল। সে দেখতে পেল, একজন লোক তার বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বেলচা দিয়ে এদিক সেদিক পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। পথিক তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! আপনার নাম কি? সে বলল, আমার নাম অমুক। অর্থাৎ সে ঐ নামই বলল, যা পথিক মেঘখণ্ড থেকে শুনতে পেয়েছিল। বাগানের মালিক বলল, হে আল্লাহ্র বান্দা! তুমি আমার নাম কেন জানতে চাচ্ছ? সে বলল, যে মেঘখণ্ড থেকে এ পানি বর্ষিত হয়েছে, তা থেকে আমি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। আপনার নামোল্লেখ করে উক্ত আওয়াজে বলা হয়: অমুকের বাগানে গিয়ে পানি বর্ষাও। তা এ বাগানে আপনি এমন কি আমল করেন? সে বলল, তা তুমি যখন আমার কাছে জানতেই চাইলে তাই বলছি, এ বাগানে যা কিছু উৎপন্ন হয়, আমি তার তত্ত্বাবধান করি। উৎপাদিত ফসলের এক-তৃতীয়াংশ দান করি। আমি ও আমার পরিবার-পরিজনের জীবিকার জন্য এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করি এবং এক-তৃতীয়াংশ পুনরায় এতে লাগিয়ে দিই। (মুসলিম)এক-তৃতীয়াংশ পুনরায় এতে লাগিয়ে দিই। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৬১ – কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা নিষিদ্ধ

কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা নিষিদ্ধ।

قَالَ اللهُ تعالى : وأَما مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنى، وكذبَ بِالْحُسْنى، فَسَنيسره العشرى، وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“যে কৃপণতা করল, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করল এবং যা উৎকৃষ্ট তা (ইসলাম) অস্বীকার করল, তার জন্য আমরা কষ্টদায়ক বস্তু সহজলভ্য করে দেব। তার মাল তার কোন উপকারে আসবে না যখন সে ধ্বংস হবে।” (সূরা আল-লাইল: ৮-১১)

وَقَالَ تَعَالَى : وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.

“যারা প্রবৃত্তির লালসা ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত রয়েছে, তারাই সফলকাম হবে।” (সুরা আত্-তাগাবুনঃ ১৮)

এ সম্পর্কিত অধিকাংশ হাদীস ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

٥٦٣ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتقوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشَّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَن سَفَكُوا دِمَانَهُمْ وَاسْتَحَلُوا مَحَارِمَهُمْ – رواه مسلم .

৫৬৩। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা যুলুম করা থেকে দূরে থাক। কারণ যুলুম ও অত্যাচার কিয়ামাতের দিন অন্ধকারে পরিণত হবে এবং কৃপণতা থেকেও দূরে থাক। কারণ কৃপণতা ও সংকীর্ণতাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতাই তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করতে ও হারামকে হালাল করতে প্ররোচিত করেছে। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৬২ – ত্যাগ স্বীকার, অন্যকে অগ্রাধিকার প্রদান ও সহমর্মিতা

ত্যাগ স্বীকার, অন্যকে অগ্রাধিকার প্রদান ও সহমর্মিতা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ.

৬৮. কৃপণতা এক প্রকার যুলম। কারণ এটা পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করার কারণ হয়ে থাকে। এর দ্বারা শত্রুতারও বীজ উপ্ত হয়। ফলে অনেক সময় এটা রক্তপাতের কারণ হয়। শত্রুদের সম্পদ ও মেয়েদের হালাল গণ্য করা হয়। তাদের শ্লীলতা হানি করতে দ্বিধা করা হয় না। এক কথায়, যেহেতু এটি একটি নিকৃষ্ট দোষ, তাই এ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ

“আর তারা নিজেদের উপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা নিজেরা অভুক্ত থাকে।” (সূরা আল হাশর: ৯)

وقَالَ تَعَالَى : وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حبه مسكينا ويتيما وأسيرا.

“আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা তা অভাবগ্রস্ত, পিতৃহীন ও বন্দীকে দান করে।” (সূরা আদ্‌-দাহর : ৮)

٥٦٤ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي مَجْهُودٌ فَأَرْسَلَ إِلَى بَعْضٍ نِسَائِهِ فَقَالَتْ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا عِنْدِي إِلَّا مَاءٌ ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُخْرَى فَقَالَتْ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى قُلْنَ كُلُّهُنَّ مثل ذلك لا وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ ما عندي الا مَاءً فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يُضِيفُ هذا اللَّيْلَةَ فَقَالَ رَجُلٌ مِّنَ الْأَنْصَارِ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَانطَلَقَ به إلى رحله فَقَالَ لامراته اكرمى ضَيْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَفِي رواية قال لامرأته هل عندك شي فقالت لا الا قوتَ صِبْيَانِي قَالَ عَلَيْهِمْ بَشَيْ وَإِذَا أَرَادُوا الْعَشَاءَ فَنُومِيْهِمْ وَإِذَا دَخَلَ ضَيْفْنَا فَاطْفِنِي السَّرَاجَ وَآرِيْهِ أَنَّا تَأْكُلُ فَقَعَدُوا واكل الضيف وبانا طاوِبَيْنِ فَلَمَّا أَصْبَحَ غَدًا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَقَدْ عَجِبَ اللهُ مِنْ صنيعكما يضيفكما الليلة – متفق عليه

৫৬৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক লোক এসে বলল, আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালেন। তাঁর স্ত্রী বললেন, শপথ সেই সত্তার যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন। আমার নিকট পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। আরেক স্ত্রীর কাছে পাঠালে তিনিও অনুরূপ জওয়াব দিলেন, এমনকি একে একে প্রত্যেকে একই রকম জওয়াব দিলেন, বললেন, শপথ সেই সত্তার যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন। আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বলেন: আজ রাতে কে এই লোকের মেহমানদারি করবে? এক আনসারী বলেন, আমি, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি তাকে সাথে নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমানের যথাযথ খাতির-সমাদর কর।

আরেক রিওয়ায়াতে আছে: আনসারী তাঁর স্ত্রীকে বললেন, তোমার কাছে (খাবার) কিছু আছে কি? তিনি বললেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আর কিছু নেই। আনসারী বললেন, বাচ্চাদের কিছু একটা দিয়ে ভুলিয়ে রাখ এবং ওরা সন্ধ্যার খানা চাইলে ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ো। আমাদের মেহমান (ও খানা) যখন এসে যাবে, তখন বাতি নিভিয়ে দিও, আর তাকে এটাই বোঝাবে যে, আমরাও খানা খাচ্ছি। তারা সবাই বসে গেলেন। এদিকে মেহমান খানা খেলেন এবং তারা উভয়ে সারারাত উপোস কাটিয়ে দিলেন। পরদিন প্রত্যুষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। তখন নবী (সা) বলেনঃ এ রাতে মেহমানের সাথে তোমরা যে আচরণ করেছো, তাতে আল্লাহ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٥٦٥ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامُ الْاثْنَيْنِ كَافِي الثلاثة وطَعَامُ الثلاثة كافي الأربعة – متفق عليه . وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمِ عَنْ جَابِرٍ عنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ طَعَامُ الْوَاحِدِ يَكْفِي الْاثْنَيْنِ وَطَعَامُ الْأَثْنَيْنِ يكفي الأربعة وطعام الأربعة يكفي الثمانية .

৫৬৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জনের খাদ্য তিনজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে, তিনজনের খাবার
চারজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে: জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

٥٦٦ – وعن أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ فِي سَفَرٍ مَعَ النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ عَلَى رَاحِلَةٍ لَهُ فَجَعَلَ يَصْرِفُ بَصَرَهُ يَمِينًا وَشِمَالاً فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ مَعَهُ فَضْلُ ظَهْرٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لا ظهر لَهُ وَمَنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ مِنْ زَادٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لَا زاد له فذكر مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ مَا ذَكَرَ حَتَّى رَأَيْنَا أَنَّهُ لَا حَقَّ لِأَحَدٍ مِنَّا فِي فضل رواه مسلم.

৫৬৬। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। তখন একটি লোক তার সওয়ারীতে চড়ে এসে ডানে ও বাঁয়ে তাকাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যার কাছে অতিরিক্ত সওয়ারী রয়েছে, সে যেন তা এমন লোককে দান করে যার সওয়ারী নেই। যার কাছে অতিরিক্ত রসদ আছে, সে যেন তা এমন লোককে দান করে যার নিকট কোন রসদ নেই। এভাবে তিনি বিভিন্ন প্রকার মালের নামোল্লেখ করলেন। তাতে আমাদের মনে হল যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস রাখার আমাদের কারো অধিকার নেই। (মুসলিম)

٥٦٧ – وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ امْرَأَةً جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبُرْدَةٍ مَنسُوجَةٍ فَقَالَتْ نَسَجْتُهَا بِيَدَى لِأَكْسُوكَهَا فَأَخَذَهَا النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْتَاجًا إِلَيْهَا فَخَرَجَ إِلَيْنَا وَإِنَّهَا لَازَارَهُ فَقَالَ فُلَانٌ اكسنيهَا مَا أَحْسَنَهَا فَقَالَ نَعَمْ فَجَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَجْلِسِ ثُمَّ رَجَعَ فَطَوَاهَا ثُمَّ أَرْسَلَ بِهَا إِلَيْهِ فَقَالَ لَهُ الْقَوْمُ مَا أَحْسَنْتَ لَبِسَهَا النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْتَاجًا إِلَيْهَا ثُمَّ سَأَلْتَهُ وَعَلِمْتَ أَنَّهُ لَا يَرُدُّ سَائِلاً فَقَالَ إِنِّي وَاللهِ مَا سَأَلْتُهُ لِأَلْبَسَهَا إِنَّمَا سَأَلْتُهُ لِتَكُونَ كَفَنِي قَالَ سَهْل فكانت گفته رواه البخاري

৫৬৭। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি (হাতে) বোনা চাদর নিয়ে এসে বলল, আমি নিজ হাতে এই চাদর বুনেছি আপনাকে পরাবার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজন অনুভব করে চাদরটি গ্রহণ করলেন। তিনি সেটিকে তহবন্দ হিসেবে পরিধান করে আমাদের নিকট এলেন। এক লোক বলল, এটি আমাকে দিয়ে দিন, কী চমৎকার চাদরটি। তিনি বলেনঃ আচ্ছা। কিছুক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে বসা ছিলেন, তারপর ফিরে গিয়ে চাদরটি ভাঁজ করে ঐ লোকটিকে পাঠিয়ে দিলেন। লোকেরা তাকে বলল, তুমি কাজটা ভালো করনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রয়োজনের তাকিদে চাদরটি পরেছিলেন, আর তুমি তা চেয়ে বসলে? অথচ তুমি জান যে, তিনি কোন প্রার্থীকে বঞ্চিত করেন না। সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি এটি পরিধান করার জন্য চাইনি, বরং মৃত্যুর পর আমার কাফন দেয়ার জন্য চেয়েছি। সাহল (রা) বলেন, সেটি তার কাফন হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছিলো। (বুখারী)

٥٦٨- وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ إِنَّ الأشعريينَ إِذا أَرْمَلُوا في الغزو أو قَلْ طَعَامُ عِبَالِهِمْ بِالْمَدِينَةِ جَمَعُوا مَا كَانَ عِندَهُمْ فِي ثَوْبِ وَاحِدٍ ثُمَّ اقْتَسَمُوهُ بَيْنَهُمْ فِي إِنَّا وَاحِدٍ بِالسَّوِيَّةِ فَهُمْ مني وأنا منهم متفق عليه

৫৬৮। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল আশআরীদের নিয়ম হল: জিহাদে তাদের রসদ ফুরিয়ে এলে বা মদীনায় তাদের পরিবার-পরিজনদের খাবার ফুরিয়ে এলে, তারা তাদের নিকট মজুদ অবশিষ্ট খাদ্য সামগ্রী একটি কাপড়ের মধ্যে একত্র করে। তারপর একটি পাত্র দ্বারা তা সকলের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করে নেয়। জেনে রাখ, এরা আমার এবং আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। [টিকা: নিজের চাইতে অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া একটি উৎকৃষ্ট গুণ। উদারতার অতি উন্নত ও চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত এটি। নিজে অভুক্ত থেকে অন্যকে খাদ্য দান করা, নিজে কষ্ট স্বীকার করে অন্যকে আরাম দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বস্তুত এসবই হল সুমহান আদর্শ। এগুলো শুধু কথার কথা নয়। ইতিহাসের কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ সত্য। উপরোক্ত হাদীসসমূহেও তার বর্ণনা সুস্পষ্ট।] (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৬৩ – পরকালীন জিনিসের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ এবং কল্যাণকর ও বরকতপূর্ণ জিনিস লাভের আগ্রহ পোষণ

পরকালীন জিনিসের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ এবং কল্যাণকর ও বরকতপূর্ণ জিনিস লাভের আগ্রহ পোষণ।

قال الله تعالى : وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ .

মহান আল্লাহ বলেন:

“লোভাতুর লোকদের এমন জিনিসেরই লোভ করা উচিত।” (সূরা আল মুতাফফিফীন: ২৬)

٥٦٩ – وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أتي بشراب فَشَرِبَ مِنْهُ وَعَنْ يَمِينِهِ غُلَامٌ وَعَنْ يَسَارِهِ الْأَشْيَاخُ فَقَالَ لِلغُلام أَتَاذَن لي أن أعطى هؤلاء فَقَالَ الغُلامُ لا والله يَا رَسُولَ اللهِ لَا أُوْثَرُ بِنَصِيبي منك أحدا فَتَلَهُ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ في يده – متفق عليه .

৫৬৯। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু পানীয় পরিবেশন করা হলে তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন। তাঁর ডান দিকে ছিল একজন বালক এবং বাম দিকে ছিল কয়েকজন বৃদ্ধ। তিনি বালকটিকে বলেনঃ তুমি কি আমাকে বৃদ্ধদের আগে দিতে অনুমতি দেবে? বালকটি বলল, না, আল্লাহর শপথ। হে আল্লাহর রাসূল। আপনার নিকট থেকে প্রাপ্ত আমার অংশের উপর কাউকে আমি অগ্রাধিকার দেবো না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তার হাতে দিলেন। [টিকা: এ বালক ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল আব্বাস (রা)।] (বুখারী, মুসলিম)

٥٧٠ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَيْنَا أَيُّوبُ عَلَيْهِ السَّلامُ يَغْتَسِلُ عُرْبَانًا فَخَرُ عَلَيْهِ جَرَادٌ مِنْ ذَهَبٍ فَجَعَلَ أَيُّوبُ يَحْتِي فِي تَوْبِهِ فَنَادَاهُ رَبُّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَا أَيُّوبُ المَ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى قَالَ بَلَى وعزتك ولكن لا غنى بي عن بركتك – رواه البخاري .

৫৭০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একদা আইউব আলাইহিস সালাম বিবস্ত্র অবস্থায় গোসল করছিলেন। একটি সোনার ফড়িং তাঁর উপর পতিত হলে তিনি সেটিকে তাঁর কাপড়ে জড়াতে লাগলেন। তাঁর মহাসম্মানিত প্রভু তাঁকে ডেকে বলেনঃ হে আইউব। আমি কি তোমাকে ওসব জিনিস থেকে মুখাপেক্ষীহীন করিনি, যার প্রতি তোমার দৃষ্টি নিবদ্ধ? আইউব (আ) বলেন, হাঁ, আপনার ইয্যাতের শপথ। কিন্তু আপনার বরকতের প্রতি আমার উপেক্ষা নেই (বরং আকাঙ্ক্ষাই রয়েছে)। (বুখারী)

অনুচ্ছেদ : ৬৪ – কৃতজ্ঞ ধনীর মর্যাদা। তাঁর পরিচয় এই যে, তিনি ন্যায়সংগতভাবে মাল গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে তা ব্যয় করেন

কৃতজ্ঞ ধনীর মর্যাদা। তাঁর পরিচয় এই যে, তিনি ন্যায়সংগতভাবে মাল গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে তা ব্যয় করেন।

قَالَ اللهُ تعالى : فأَما مَنْ أعطى واثقى، وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنيَسرُهُ لِلْيُسْرَى

মহান আল্লাহ বলেন:

“যে লোক আল্লাহর রাস্তায় দান করল, আল্লাহ-ভীতির নীতি অবলম্বন করল এবং ভালো কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করল, তার জন্যই আমরা আরামদায়ক জিনিস সহজলভ্য করে দেব।” (সূরা আল-লাইল: ৫-৭)

وقال تعالى : وَسَيُجَنِّبُهَا الأتْقَى الذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّى، وَمَا لِأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نعمة تُجرى. الا ابْتِغَاء وَجْهِ رَبِّه الأعلى، وَلسَوْفَ يَرْضَى.

“আর সেই অগ্নিকুণ্ডলী থেকে দূরে রাখা হবে সেই অতিশয় পরহেযগার ব্যক্তিকে যে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশে নিজের ধনমাল দান করে। তার উপর কারও এমন কোন অনুগ্রহ নেই, যার বদলা তাকে দিতে হবে। সে তো শুধু নিজের মহান প্রভুর সন্তোষ লাভের জন্য কাজ করে। তিনি অবশ্যই (তার প্রতি) সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরা আল-লাইল : ১৭-২১)

وقَالَ تَعَالَى : إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِما هِيَ وَإِنْ تُخْفُرُهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ.

“তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা ভালো এবং যদি তা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরো ভালো। আর তিনি তোমাদের পাপ মোচন করেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আল বাকারা: ২৭১)

وقال تعالى : لن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنْ الله بِهِ عَلِيمٌ.

“তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পার না, যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর পথে তোমাদের পছন্দনীয় জিনিস ব্যয় করবে। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ ওয়াকিফহাল।” (সূরা আলে ইমরান: ১২)

আল্লাহর আনুগত্যসূচক কাজে অর্থ ব্যয় করার ফযীলাত সম্পর্কিত বহু আয়াত আল কুরআনে বিবৃত হয়েছে।

٥٧١ – وعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا حَسَدَ إِلا فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ أَتَاهُ اللَّهُ مَالَا فَسَلْطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ في الحَقِّ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً فَهُوَ يَقْضَى بِهَا وَيُعَلِّمُهَا – متفق عليه وَتَقَدِّمَ شَرْحُهُ قَرِيبًا .

৫৭১। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দু’জন ছাড়া আর কারো সাথে ঈর্ষা করা যায় না। (এক) যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে হক পথে তা ব্যয় করারও ক্ষমতা দান করেছেন। (দুই) যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন, যা দিয়ে সে (সঠিক) ফায়সালা করে এবং যা অন্যকে শিক্ষা দেয়।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٥٧٢ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَلا حَسَدَ إِلا فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ أَتَاهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ أَنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَهُوَ يُنفِقُهُ إِناءَ اللَّيْلِ وَأَنَاءَ النَّهَارِ – متفق عليه .

৫৭২। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দু’জন লোক ছাড়া আর কারো প্রতি ঈর্ষা করা যায় না। (এক) যাকে আল্লাহ আল কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন, সে রাত দিন সর্বদা তার চর্চায় রত থাকে। (দুই) যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং রাত ও দিনের প্রতি মুহূর্তে সে তা (আল্লাহর পথে) খরচ করতে থাকে। (বুখারী, মুসলিম)

٥٧٣ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا ذَهَبَ أَهْلُ الدُّنور بالدرجات العلى والنعيم الْمُقِيمِ فَقَالَ وَمَا ذَاكَ فَقَالُوا يُصَلُّونَ كَمَا تُصَلَّى وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ ويتصدقون ولا تَتَصَدِّقُ وَيَعْتَقُوْنَ وَلا تَعْتِقُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفَلا أُعَلِّمُكُمْ شَيْئًا تُدْرِكُونَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ وَتَسْبِقُونَ بِهِ مَنْ بَعْدِكُمْ وَلَا يكونُ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِنْكُمْ إِلَّا مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ تُسَبِّحُونَ وَتَحْمِدُونَ وَتُكْبَرُونَ دبر كل صلاة ثَلاثًا وَثَلاثِينَ مَرَّةً فَرَجَعَ فُقَرَاء الْمُهَاجِرِينَ إِلى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا سَمِعَ إِخْوَانُنَا أَهْلُ الأموال بما فعَلْنَا فَفَعَلُوا مِثْلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَلِكَ فضل الله يؤتيه من يُشَاءُ متفق عليه وهذا لفظ رواية مسلم الدثر الأموال الكثيرة والله أعلم .

৫৭৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিঃসম্বল মুহাজিরগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেন, সম্পদশালীগণ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামতের অধিকারী হয়ে গেল। তিনি বলেন: তা কি করে? তারা বলেন, তারা নামায পড়ে যেমন আমরা নামায পড়ি, তারা রোযা রাখে যেমন আমরা রোযা রাখি। তারা দান-সাদাকা করে, অথচ আমরা (গরীব হওয়ার দরুন) দান-সাদাকা করতে পারি না। তারা গোলাম আযাদ করে, কিন্তু আমরা গোলাম আযাদ করতে পারি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় জানাব না, যার সাহায্যে তোমরা তাদের মর্যাদা লাভ করতে পারবে যারা তোমাদের চাইতে অগ্রবর্তী হয়ে গেছে এবং তোমাদের পরবর্তীদেরও অতিক্রম করে যেতে সক্ষম হবে, আর তোমাদের চাইতে উত্তম কেউ হবে না, একমাত্র তাদের ছাড়া যারা তোমাদেরই ন্যায় আমল করবে? তারা বলেন, হাঁ অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পরে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার (করে) পড়বে। পরে আবার ঐ দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে এসে বলেন, আমরা যে আমল করতাম, আমাদের সম্পদশালী ভাইয়েরা তা শুনে ফেলেছে। এক্ষণে তারাও অনুরূপ (আমল) করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এটা হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি দান করেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এখানে ইমাম মুসলিম বর্ণিত হাদীসের মূল পাঠ উদ্ধৃত করা হয়েছে।

অনুচ্ছেদ: ৬৫ – মৃত্যু স্মরণ ও আশাকে ক্ষুদ্র রাখা

মৃত্যু স্মরণ ও আশাকে ক্ষুদ্র রাখা।

قَالَ اللهُ تعالى : كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

মহান আল্লাহ বলেন:

“প্রত্যেক ব্যক্তিকেই অবশেষে মরতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ প্রতিফল কিয়ামাতের দিন পুরাপুরিভাবেই পাবে। সফল হবে সেই ব্যক্তি যে সেদিন জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে দাখিল করা হবে। বস্তুত এ দুনিয়ার জীবন একটি প্রতারণাময় জিনিস।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)

وقال تعالى : وَمَا تَدْري نَفْسٌ ماذا تكسب غَدًا وَمَا تَدْري نَفْسٌ بأي أرض تموت.

“কোন প্রাণীই জানে না যে, আগামী কাল সে কি উপার্জন করবে, না কেউ জানে তার মৃত্যু হবে কোন যমিনে।” (সূরা লুকমান: ৩৪)

وقَالَ تَعَالَى : فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةٌ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ.

“যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহূর্তকাল অগ্রবর্তী বা পশ্চাতবর্তী হতে পারে না।” (সূরা আন্ নাহল : ৬১)

وقال تعالى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يُفْعَلُ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ . وَأَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَّاتِيأحدكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْ لا أخرتني إلى أجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصْدَقَ وَأَكُن مِّنَ الصالحين ، ولَنْ يُؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ.

“হে লোকেরা, যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না দেয়। যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। যে রিযুক আমি তোমাদেরকে দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। তখন সে বলবে, হে আমার রব, তুমি আমাকে আরো একটু সময় অবকাশ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সাদাকা করতাম ও নেক চরিত্রবান লোকদের মধ্যে গণ্য হয়ে যেতাম? অথচ যখন কারো নির্ধারিত সময় এসে পড়ে, তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দেন না। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিফহাল।” (সূরা আল মুনাফিকূনঃ ৯-১১)

وقال تعالى : حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ . لَعَلَى أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كلاً إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ. فاذا نفخ في الصُّورِ فَلا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ . فَمَنْ ثَقُلَتُ موَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ، وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ. تلفح وجوههم النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ . أَلَمْ تَكُن آيَاتِي تُتْلَى عَلَيْكُمْ فَكُنتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ إلى قَوْله تَعَالَى : كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ . قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَادِيْنَ ، قَالَ إِنْ لبنتم إلا قليلاً لَوْ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ . الحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ الَيْنَا لا تُرْجَعُونَ.

“যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক। আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাও যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি পূর্বে করিনি। না, তা হবার নয়। এতো তার একটি উক্তিমাত্র। তাদের সামনে যবনিকা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, একে অপরের খোঁজ-খবরও নেবে না। যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তথায় তাদের মুখমণ্ডল হবে বীভৎস। তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হত না?

তোমরা তো সেসব অস্বীকার করতে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক। দুর্ভাগ্য আমাদের পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক। এ আগুন থেকে আমাদের উদ্ধার কর। এরপর আমরা যদি পুনরায় সত্য প্রত্যাখ্যান করি তবে তো আমরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী হব। আল্লাহ বলবেন, তোরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলিস না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা ঈমান এনেছি, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই তো শ্রেষ্ঠতম দয়ালু। কিন্তু তাদের নিয়ে তোমরা এতো হাসিঠাট্টা করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে। আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরষ্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম। আল্লাহ বলবেন: তোমরা পৃথিবীতে ক’বছর অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে, আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা দিনের কিছু সময়। আপনি না হয় গণনাকারীদের জিজ্ঞেস করুন। তিনি বলবেনঃ তোমরা অল্প কালই অবস্থান করেছিলে যদি তোমরা জানতে। তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে না।” (সূরা আল মুমিনূনঃ ৯৯-১১৫)

وقال تعالى : الم بأن للذينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الحقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْآمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ فَاسِقُونَ .

“ঈমানদার লোকদের জন্য এখনো কি সে সময় আসেনি যে, তাদের দিল আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হবে এবং তার নাযিল করা মহাসত্যের সম্মুখে অবনত হবে? আর তারা যেন সেই লোকদের মত না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, অতঃপর একটা দীর্ঘকাল তাদের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর তাদের দিল শক্ত হয়ে যায়। তাদের অধিকাংশই ফাসিক।” (সূরা আল-হাদীদ : ১৬)

٥٧٤ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِينَ فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلِ. وَكَانَ بْنُ عُمْرٌ يَقُولُ إِذا أَمْسَيْتَ فَلا تنتظر الصباح وإذا أصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صحتك المرضك ومن حياتك الموتك – رواه البخاري .

৫৭৪। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেনঃ দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক। ইবনে উমার (রা) বলতেন: তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা (আশা) করো না এবং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যা বেলার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির (দিনগুলোর) জন্য প্রস্তুতি নাও এবং জীবদ্দশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। (বুখারী)

٥٧٥ – وعَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شي يوصى فيه يبيتُ ليلتين الا ووصيته مكتوبة عنده – متفق عليه. هذا لفظ البخاري . وفي رواية لمسلم ببيت ثلاث ليال قَالَ ابْنُ عُمَرَ مَا مَرَّتْ عَلَى لَيْلَةٌ منذ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ذلك الا وعندي وصيتي .

৫৭৫। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে মুসলিম ব্যক্তির নিকট ওসিয়াত করার মত কিছু আছে, তার দুই রাতও ওসিয়াতনামা তার নিকট লিখিত আকারে না রেখে কাটানোর অধিকার নেই।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তবে মূলপাঠ বুখারীর। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে: তিন রাতও কাটানো উচিত নয়। ইবনে উমার (রা) বলেন, যেদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার এমন একটি রাতও অতিবাহিত হয়নি, যখন আমার সাথে আমার (লিখিত) ওসিয়াতনামা ছিল না।

٥٧٦ – وَعَنْ أَنَسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطُوطًا فَقَالَ هذا الإِنسَانُ وَهَذَا أَجَلُهُ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذ جَاءَ الْخَطُ الْأَقْرَبُ رواه البخاري

৫৭৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা টানলেন, তারপর বলেন: এটা হচ্ছে মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু। মানুষ এভাবেই থাকা অবস্থায় নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে উপস্থিত হয়। (বুখারী)

٥٧٧ وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خطا مربعا وخط خطا في الوسط خَارِجًا مِنْهُ وَخَط خططًا صِغَارًا إلى هذا الَّذِي في الوسط من جانبه الذي في الوسط فقال هذا الْإِنسَانُ وَهَذَا أَجَلُهُ مُحِيطًا بِهِ أَوْ قَدْ أَحَاطَ بِهِ وَهَذَا الَّذِي هُوَ خَارِج أَمَلُهُ وَهَذِهِ الخُطط الصَّغَارُ الْأَعْرَاضُ فَإِنْ أخطاء هذا نهشه هذا وإن أخطاء هذا نهشه هذا – رواه البخاري وهذه صورته

৫৭৭। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বর্গক্ষেত্র আঁকলেন, তার মাঝ বরাবর আরেকটি সরল রেখা টানলেন যা বর্গক্ষেত্র ভেদ করে বাইরে চলে গেছে। তিনি মধ্যবর্তী এ রেখাটির সাথে যুক্ত আরো কতগুলো ছোট ছোট সরল রেখা (আড়াআড়ি ভাবে) টানলেন, তারপর বলেন: এটা হল মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু যা তাকে বেষ্টন করে আছে। (বর্গক্ষেত্র ভেদ করে) বাইরে বেরিয়ে যাওয়া রেখাটুকু হচ্ছে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। ছোট ছোট রেখাগুলো হল তার জীবনের বিপদাপদ। একটি বিপদ থেকে ছুটতে পারলে অপর বিপদ এসে তাকে থামচাতে থাকে। আবার দ্বিতীয়টি থেকে রেহাই পেলে তৃতীয়টি তাকে নিষ্পেষিত করে। (বুখারী)

٥٧٨ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سَبْعًا هَلْ تَنتَظِرُونَ إِلا فَقْراً مُنْسِيًّا أَوْ عَنِّى مُطْغَيًا أَوْ مَرَضًا مفسداً أَوْ هَرَمًا مُفيداً أَوْ مَوْنًا مُجهزا أو الدَّجَّالَ فَشَرِّ غَائِبِ يُنتَظِرُ أَوِ السَّاعَةَ والساعة أدهى وأمر – رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৫৭৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তোমরা নেক কাজের দিকে সত্বর অগ্রসর হওঃ (১) তোমরা কি অপেক্ষা করছ এমন দারিদ্র্যের যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, (২) অথবা এমন প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানায়, (৩) অথবা এরূপ রোগ-ব্যাধির যা (দৈহিক সামর্থ্যকে) তছনছ করে দেয়, (৪) অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে লোপ করে দেয়, (৫) অথবা এমন মৃত্যুর যা অলক্ষ্যেই উপস্থিত হয়, (৬) কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষমান নিকৃষ্ট অনুপস্থিত বস্তু, (৭) অথবা কিয়ামাতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও ভীষণ তিক্ত।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি হাসান হাদীস।

٥٧٩ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اكْثَرُوا ذَكَرَ هَادَمٍ اللذات يعني الموت رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৫৭৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা (দুনিয়ার) স্বাদ-আহলাদ নিঃশেষকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

٥٨٠ – وَعَنْ أَبِي بْنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ

وَسَلَّمَ إِذَا ذَهَبَ ثُلُثَ اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللَّهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تتبعها الرادفة جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِمَا فِيهِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أكثر الصلاة عليك فَكَمْ اجْعَلُ لك من صلاتي قَالَ مَا شِئْتَ قُلْتُ الربع قَالَ مَا شئت فَإِن زدت فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قُلْتُ فَالنِّصْفُ قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لك قُلْتُ فَالثلثين قَالَ مَا شِئتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ قُلْتُ اجْعَلُ لَكَ صَلَاتِي كلها قَالَ اذا تكفى همك ويغفر لك ذنبك – رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৫৮০। উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল: রাতের এক-তৃতীয়াংশ পার হয়ে গেলে তিনি (ঘুম থেকে) উঠে বলতেনঃ হে মানুষ। আল্লাহকে স্মরণ কর। প্রথম ফুৎকার তো এসেই গেছে। তার পরপরই আসছে দ্বিতীয় ফুৎকার। তার সাথেই আসছে মৃত্যু। তার সাথেই আসছে মৃত্যু। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমি আপনার উপর খুব বেশি বেশি দরূদ পড়ে থাকি। আপনি আমাকে বলুন, আপনার প্রতি দরূদের জন্য আমি কতটুকু সময় নির্দিষ্ট করব। তিনি বলেন: তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বলেন: তুমি যতটুকু সমীচীন মনে কর। তবে তুমি যদি এর চাইতেও বৃদ্ধি কর, তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে দুই ভাগের এক ভাগ? তিনি বলেন: সেটা তোমার ইচ্ছা। তবে এর চাইতেও বেশি করলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তবে দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেনঃ তুমি যেটা ভালো মনে কর। তবে এর চাইতেও বেশি করতে পারলে তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, আচ্ছা, দরূদ পড়ার জন্য পুরো সময়কেই যদি আমি নির্দিষ্ট করে নিই, তাহলে কিরূপ হয়? তিনি বলেনঃ এরূপ করতে পারলে, এ দরূদ তোমার যাবতীয় দুশ্চিন্তাকে দূরীভূত করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহরাশিকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। [টিকা: মৃত্যু অতি ভয়ানক বিষয়। মৃত্যুর পরবর্তী অধ্যায়গুলো আরো বেশি বিভীষিকাময়। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্বরণ করা ও তা স্মৃতিপটে জাগরুক রাখার দ্বারা এ নম্বর জগতের প্রতি মানুষের মোহ ধীরে ধীরে কমে যায়। দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসাই যাবতীয় গুনাহের ভিত্তি ও উৎসস্থল। পার্থিব লোভ-লালসা থেকে আত্মরক্ষা করে আখিরাতের চিন্তায় নিজেকে সদা নিমগ্ন রাখা প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য। এর দ্বারাই গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব এবং পরকালীন নাজাত ও কল্যাণ লাভের আশা করা যায়। এজন্য কুরআন-হাদীসে এর প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।]

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান।

অনুচ্ছেদ: ৬৬ – পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা উত্তম এবং যিয়ারতকারী যা বলবে

পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা উত্তম এবং যিয়ারতকারী যা বলবে।

٥٨١ – عن بريدةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زيارَةِ القُبُورِ فَزُورُوهَا – رواه مسلم . وَفِي رِوَايَةٍ فَمَنْ أَرَادَ أَن يَزُورَ الْقُبُورَ فَلْيَرُرُ فَإِنَّهَا تُذكرنا الآخرة .

৫৮১। বুরাইদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি ইতিপূর্বে তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন) তোমরা কবর যিয়ারত কর।

এটি ইমাম মুসলিমের বর্ণনা। অপর রিওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অতএব কেউ কবর যিয়ারত করতে চাইলে সে যেন তা করে। কারণ এটা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

٥٨٢ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلَّمَا كَانَ لَيْلَتُهَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ مِنْ آخِرِ الليل إلى البقيع فَيَقُولُ السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَآتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ عدًا مُوْجُلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاحِقُوْنَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ رواه مسلم .

৫৮২। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাত তাঁর ঘরে কাটাতেন, সেই রাতের শেষ দিকে উঠে তিনি (মদীনার কবরস্থান) জান্নাতুল বাকী’তে চলে যেতেন এবং বলতেন: “হে মুমিনদের বাসস্থানের অধিবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। কাল কিয়ামাতের দিন তোমরা লাভ করবে ঐসব জিনিস, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সাথে করা হয়েছে। তোমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হয়েছে। আমরাও আল্লাহর ইচ্ছায় অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ! বাকী’ আল-গারকাদ-এর বাসিন্দাদেরকে ক্ষমা করে দাও। [অর্থাৎ সোনাদানা ও টাকা পয়সা যা হিফাযাতের জন্য মাটির নিচে রাখতে হয় যাতে চুরি হতে না পারে। ইমাম তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছেঃ খাব্বাব (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে থাকাকালীন একটি দিরহামের মালিকও ছিলাম না। আর বর্তমানে আমার নিকট চল্লিশ হাজার দিরহাম মজুদ রয়েছে।] (মুসলিম)

٥٨٣ – وعن بريدة رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إلى المقابر أن يقول قائلهم السَّلامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ

৭২. বাকী’ আল-গারকাদ মসজিদে নববীর নিকটবর্তী একটি জায়গার নাম। এখানে মদীনা-বাসীদের কবরসমূহ রয়েছে।

الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاحِقُونَ أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ العافية – رواه مسلم .

৫৮৩। বুরাইদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে কবর যিয়ারতে গিয়ে এ কথা বলতে শিক্ষা দিতেন: “হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ। তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।” (মুসলিম)

٥٨٤ – وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ مَنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ بِالْمَدِينَةِ فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ الله لنا ولكم أنتم سلفنا ونَحْنُ بالآثر – رواه الترمذي وقال حديث حسن.

৫৮৪। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার কতক কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেদিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন: “হে কবরবাসীরা! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, ক্ষমা করুন আল্লাহ আমাদেরকে ও তোমাদেরকে। তোমরা তো আমাদের পূর্বসূরী। আমরা তোমাদের উত্তরসূরী”।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ৬৭ – বিপদে পড়ে মৃত্যু কামনা করা নিষেধ। তবে দীনদারি বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা করলে তা কামনা করাতে দোষ নেই

বিপদে পড়ে মৃত্যু কামনা করা নিষেধ। তবে দীনদারি বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা করলে তা কামনা করাতে দোষ নেই।

٥٨٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَتَمَنْ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ امّا مُحْسِنًا فَلَعَلَهُ يَزْدَادُ وَأَمَّا مُسَيْئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ متفق عليه وهذا لفظ البخاري. وفي رواية لِمُسْلِمِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَتَمَنْ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ وَلَا يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَهُ إِنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلَهُ وَأَنَّهُ لَا يَزِيدُ الْمُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلا خَيْرًا .

৫৮৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেক বান্দা হলে হয়ত তার নেক কাজের পরিমাণ বেড়ে যাবে। আর সে গুনাহগার হলে হয়ত সে তার কৃত পাপের সংশোধনের সুযোগ পাবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ বুখারীর। মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে: আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগেই যেন মৃত্যুর জন্য দু’আ না করে। কারণ মানুষ যখন মরে যায় তার আমলও বন্ধ হয়ে যায়। মুমিনের জীবনকাল তার কল্যাণই বৃদ্ধি করে।

٥٨٦ – وعن أنس رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يتمنينَ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضْرٍ أَصَابَهُ فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ فَاعِلاً فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْراً لِي وَتَوَفَّنِي إِذا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي – متفق عليه .

৫৮৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন বিপদে পতিত হওয়ার দরুন মৃত্যু কামনা না করে। সে যদি একান্ত বাধ্য হয়ে কিছু বলতে চায় তাহলে যেন (এরূপ) বলেঃ “হে আল্লাহ! আমাকে ঐ সময় পর্যন্ত জীবিত রাখ, যতক্ষণ আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

٥٨٧ – وَعَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى خَبَابِ بْنِ الْأَرَبِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ نَعُودُهُ وَقَدِ اكْتَوى سَبْعَ كَيَّاتٍ فَقَالَ إِنْ أَصْحَابَنَا الَّذِينَ سَلَفُوا مَضَوْا وَلَمْ تنقصهم الدُّنْيَا وَإِنَّا أَصَبْنَا مَا لا نَجِدُ لَهُ مَوْضِعًا إِلا التَّرَابِ وَلَوْ لَا أَنَّ النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَانَا أَنْ نَدْعُو بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ ثُمَّ أَتَيْنَاهُ مَرَّةً أُخْرَى وَهُوَ يَبْنِي حَائِطا لَهُ فَقَالَ إِنَّ الْمُسْلِمَ لِيُؤْجَرُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُنْفِقُهُ إِلَّا فِي شَيْءٍ يجعله في هذا التراب متفق عليه وهذا لفظ رواية البخاري .

৫৮৭। কায়েস ইবনে আবী হাযিম (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা অসুস্থ খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা)-কে দেখতে গিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি তখন সাতটি দাগ লাগিয়েছেন। তিনি বললেন, আমাদের সংগীদের যারা ইতিপূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন তারা তো চলে গেছেন। দুনিয়া তাদের কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। পক্ষান্তরে আমরা এমন সব জিনিস লাভ করেছি ও অর্জন করেছি যার সংরক্ষণের স্থান মাটি ছাড়া আর কোথাও নেই। ৭৩ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাদের মৃত্যুর কামনা করতে নিষেধ না করতেন তাহলে আমি অবশ্যই তা কামনা করতাম। কায়েস (র) বলেন : আমরা আরেকবার তাঁর নিকট গিয়ে দেখি তিনি তাঁর একটি দেয়াল মেরামত করছেন। তখন তিনি বললেন, মুসলিম তার কৃত প্রতিটি কাজের (বা খরচের) জন্য প্রতিদান পেয়ে থাকে, একমাত্র এ মাটি ছাড়া (অর্থাৎ ঘর-বাড়ি নির্মাণ ইত্যাদিতেই কেবল সে প্রতিদান পায় না)।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ বুখারীর।

অনুচ্ছেদ: ৬৮ – ধার্মিকতা অবলম্বন এবং সন্দেহমূলক জিনিস পরিহার করা সম্পর্কে

ধার্মিকতা অবলম্বন এবং সন্দেহমূলক জিনিস পরিহার করা সম্পর্কে।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তোমরা তো এটাকে খুব হালকা ভাবছো কিন্তু আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত মারাত্মক ব্যাপার।” (সূরা আন্ নূর ৪১৫)

وقَالَ تَعَالَى : إِنَّ رَبَّكَ لبالمرصاد.

“নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক (নাফরমান লোকদের পাকড়াও করার জন্য) ওঁৎ পেতে আছেন।” (সূরা আল ফাজর: ১৪)

٥٨٨ – وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ الْحَلالَ بَيْنَ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيْنَ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ في الشبهات وقع فِي الْحَرَامِ كَالراعى يرعى حول الحمى يُوشِكُ أَنْ يُرْتَعَ فِيهِ الا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلك حتى الآ وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحارِمُهُ إِلا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إذا صلحتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ متفق عليه وروباه من طرق بالفاظ متقاربة .

৫৮৮। নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। হালালও সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট এবং এ দু’টির মাঝে রয়েছে কিছু সংশয়পূর্ণ জিনিস, (যেগুলোর হালাল ও হারাম হওয়ার বিষয়টি প্রচ্ছন্ন), যেগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ লোকই জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহপূর্ণ জিনিস থেকে দূরে থাকবে সে তার দীন ও ইযযাতকে নিরাপদ করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে জড়িয়ে পড়লো, সে হারামের মধ্যে পতিত হলো। তার দৃষ্টান্ত ঐ রাখালের ন্যায় যে চারণভূমির আশেপাশে তার মেষপাল চরায়। এরূপ অবস্থায় মেষপালের তাতে ঢুকে পড়ার আশংকা থাকে। জেনে রাখ, প্রতি সরকারের জন্য একটি নির্দিষ্ট চারণভূমি রয়েছে। আল্লাহর নির্ধারিত চারণভূমি হচ্ছে তার হারাম করা জিনিসসমূহ। আরো জেনে রাখ, মানুষের শরীরে এক টুকরা গোশত রয়েছে। সেটি সুস্থ ও দোষমুক্ত থাকলে সমগ্র শরীরও সুস্থ ও দোষমুক্ত থাকে এবং সেটি দূষিত ও অসুস্থ হলে সমগ্র শরীরই দূষিত ও অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সেটা হচ্ছে দিল বা অন্তঃকরণ।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তাঁরা উভয়ে অন্যান্য সূত্রেও প্রায় একই শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٥٨٩ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَدَ تَمْرَةً فِي الطريق فَقَالَ لَوْ لا أَنِّي أَخَافُ أَن تَكُونَ مِنَ الصدقة لأكلتها – متفق عليه .

৫৮৯। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তায় পতিত একটি খেজুর পেলেন। তখন তিনি বলেন: এটি যদি যাকাতের খেজুর হওয়ার আশংকা না হত তাহলে অবশ্যই আমি এটি খেতাম। (বুখারী, মুসলিম)

٥٩٠ – وعَنِ النَّواسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْبِرُّحُسْنُ الْخُلْقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يُطْلِعَ عَلَيْهِ الناس – رواه مسلم .

৫৯০। নাওয়াস ইবনে সাম’আন (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: পুণ্য ও সততা সচ্চরিত্রেরই অপর নাম। গুনাহ হল সেই জিনিস যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং লোকে সেটি জেনে ফেলুক তা তুমি অপছন্দ কর। (মুসলিম)

٥٩١ – وَعَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ آتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ جِئْتَ تَسْأَلُ عَنِ الْبَرِّ قُلْتُ نَعَمْ فَقَالَ اسْتَفْتِ قَلْبَكَ الْبِرُّ مَا اطمأنت اليه النَّفْسُ وَاطْمَانُ اليه القلب والاثمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصدر وإن أفتاكَ النَّاسُ وأفتوك – حديث حسن رواه احمد والدارمي في
مسنديهما .

৫৯১। ওয়াবিসা ইবনে মা’বাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম। তিনি বলেন: তুমি কি নেক (ও গুনাহ্) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমার অন্তরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস কর (তোমার অন্তরই তার সাক্ষ্য দেবে)। নেক ও সৎ স্বভাব হল। যার উপর আত্মা তৃপ্ত থাকে এবং হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। আর গুনাহ হল যা মনে খটকা ও সংশয়ের সৃষ্টি করে এবং অন্তরে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার উদ্রেক করে- যদি লোকে তোমাকে ফতোয়া দেয় বা তোমাকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করে।
হাদীসটি হাসান। আহমাদ ও আদ-দারিমী তাঁদের নিজ নিজ মুসনাদে এটি বর্ণনা করেছেন।

٥٩٢ – وَعَنْ أَبِي سِرُوعَة بِكَسْرِ السِّينِ الْمُهْمَلَةِ وَنَصْبِهَا عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ تَزَوْجَ ابْنَةً لِأَبِي اِهَابِ بْنِ عَزِيزِ فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ إِنِّي قَدْ ارْضَعْتُ عُقبة والتي قد تَزَوجَ بِهَا فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكَ أَرْضَعْتَنِي وَلَا اخبرتني فركب إلى رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ وَقَدْ قَبْلَ فَفَارَقَهَا عُقْبَةٌ وَنَكَحَتْ زَوْجًا غيره – رواه البخاري .

৫৯২। আবু সিরওয়া’আহ উকবা ইবনুল হারিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি আবু ইহাব ইবনে আযীযের কন্যাকে বিবাহ করেন। তারপর তাঁর নিকট এক মহিলা এসে বলল, উকবা ও আবু ইহাবের কন্যা, যার সাথে সে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছে, উভয়কে আমি দুধ পান করিয়েছি। উকবা (রা) বলেন, আমার তো জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন এবং আপনিও তা আমাকে জানাননি। এরপর উকবা (রা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মদীনার উদ্দেশে চলে গেলেন এবং এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তাহলে তুমি কিভাবে তাকে (নিজের বিবাহে) রাখবে? অথচ বলা হয়েছে (যে, সে তোমার দুধবোন)। তখন উকবা (রা) তাকে পৃথক করে দিলেন। সে মহিলা পরে আরেকজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। (বুখারী)

٥٩٣ – وَعَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْ مَا يُرِيبُكَ إِلَى مَا لا يَرِيبك – رواه الترمذي وقال حديث
حسن صحيح.

৫৯৩। আল হাসান ইবনে আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি একথাটি স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করেছি: যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে তা ছেড়ে দাও এবং যা তোমাকে কোনরূপ সন্দেহে ফেলে না তা গ্রহণ কর।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি হাসান ও সহীহ। এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে সন্দেহপূর্ণ জিনিসের পরিবর্তে সন্দেহমুক্ত জিনিস গ্রহণ কর।

٥٩٤ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ لِأَبِي بَكْرِ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ غُلامٌ يُخْرِجُ لَهُ الْخَرَاجَ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيْءٍ فَأَكَلَ مِنْهُ أَبو بَكْرٍ فَقَالَ لَهُ الْغُلَامُ تَدْرِى مَا هَذا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَمَا هُوَ قَالَ كُنتُ تَكَهَنتُ الإنسان في الجاهليةِ وَمَا أَحْسِنُ الكهانة إلا أنِّي خَدَعْتُهُ فَلَقِيَنِي فَأَعْطَانِي لِذلِكَ هذا الذي اكلت مِنْهُ فَأَدْخَلَ أَبُو بَكْرِ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنه – رواه البخاري.

৫৯৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বাক্ত আস্ সিদ্দীক (রা)-এর একজন গোলাম ছিল। সে তাকে নিজ উপার্জনের খাজনা দিত। আবু বাক্স (রা) তার প্রদত্ত খাজনা ভোগ করতেন। একদিন সে কিছু একটা নিয়ে এলো। আবু বাক্স (রা) তা থেকে কিছু খেলেন। গোলামটি তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন এটা কি? আবু বাক্স (রা) বলেন: কি এটা? গোলামটি বলল, আমি জাহিলিয়াতের যুগে এক লোকের হাত গুনেছিলাম। আর গণনাও আমি তেমন জানতাম না। আমি বরং তাকে ধোঁকাই দিয়েছিলাম। সে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমাকে এ জিনিসটি দিয়েছিল (অর্থাৎ আগের গণনার বিনিময়)। আপনি তাই খেলেন। আবু বাক্স (রা) মুখে হাত ঢুকিয়ে তার পেটে যা ছিল সব বমি করে ফেলে দিলেন। (বুখারী)

٥٩٥ – وَعَنْ نَافِع أنْ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ فَرَضَ لِلْمُهَاجِرِينَ الأولين اربعة الاف وفرض لابنه ثلاثة الآف وخَمْسَ مِائَةٍ فَقِيلَ لَهُ هُوَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ فَلِمَ نَقَصْتَهُ فَقَالَ إِنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أَبُوهُ يَقُولُ لَيْسَ هُوَ كَمَنْ هَاجَرَ بنفسه – رواه البخاري.

৫৯৫। নাফে’ (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) প্রথম স্তরের হিজরাতকারীদের মাথাপিছু (বাৎসরিক) চার হাজার দিরহাম ভাতা নির্ধারণ করেন, কিন্তু তাঁর নিজ পুত্রের জন্য নির্ধারণ করেন তিন হাজার পাঁচ শত দিরহাম। তাঁকে বলা হল, আপনার পুত্রও তো মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর ভাতা কম করলেন কেন? তিনি বলেন, তার সাথে তার পিতাও হিজরাত করেছে অর্থাৎ যারা সরাসরি একাকী হিজরাত করেছে সে তাদের সমান (মর্যাদাসম্পন্ন) নয়। (বুখারী)

٥٩٦ – وَعَنْ عَطِيَّةَ بْنِ عُرْوَةَ السعدي الصحابي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَبْلُغُ الْعَبْدُ أَنْ يَكُونَ مِنَ الْمُتَّقِينَ حَتَّى بَدَعَ مَا لا بأس به حذراً لما به باس – رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৫৯৬। আতিয়্যা ইবনে উরওয়া আস-সা’দী সাহাবী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের মর্যাদায় উন্নীত হতে পারে না, যতক্ষণ না সে অবাঞ্ছিত জিনিস থেকে বাঁচার জন্য নির্দোষ জিনিস ত্যাগ করে।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, হাদীসটি হাসান। [উপরের হাদীসগুলোর সারকথা হল, প্রকাশ্য আমলের যথাযথ মূল্যায়ন আন্তরিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার উপরই নির্ভরশীল। অন্তর যদি যাবতীয় পার্থিব লালসা-বাসনা থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে সন্দেহপূর্ণ জিনিস থেকে বেঁচে থাকা অতি সহজ। ভীতির অনিবার্য ফল হল, বান্দা কোন প্রকারেই শরীয়াত নির্ধারিত সীমার বাইরে যাবে না। কিন্তু আল্লাহভীতিই যদি না থাকল, তাহলে সে যে কোন অন্যায় কাজ যথেচ্ছভাবে করে যেতে পারে।]

অনুচ্ছেদ : ৬৯ – যুগের বিপর্যয় ও মানুষের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে নিঃসংগ জীবন যাপন উত্তম। দীন পালনে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া, হারাম ও সন্দেহযুক্ত বিষয় ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ার আশংকা

যুগের বিপর্যয় ও মানুষের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে নিঃসংগ জীবন যাপন উত্তম। দীন পালনে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া, হারাম ও সন্দেহযুক্ত বিষয় ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ার আশংকা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُّبِينٌ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি হচ্ছি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য ভয় প্রদর্শনকারী।” (সূরা আয যারিয়াত: ৫০)

٥٩٧ – وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيُّ الْغَنِيُّ الْخَفِيُّ – رواه مسلم.

৫৯৭। সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ মুত্তাকী, প্রশস্ত অন্তরের অধিকারী ও প্রচারবিমুখ বান্দাকে ভালোবাসেন। (মুসলিম) টিকা: এখানে প্রচারবিমুখতার অর্থ হচ্ছে নিজের নেকী ও সৎ কর্মগুলোকে লোকসমাজ থেকে লুকিয়ে রাখা। নিজেকে জাহির করে না বেড়ানো।]

٥٩٨ – وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ يا رَسُولَ اللهِ قَالَ مُؤْمِنٌ مُجَاهِدٌ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ رجُلٌ مُعْتَزِلُ فِي شِعبٍ مِنَ العَابِ يَعْبُدُ رَبَّهُ وَفِي رِوَايَةٍ يَتَّقِي اللَّهَ وَبَدَعَ الناس من شره – متفق عليه.

৫৯৮। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলঃ কোন্ লোক সবচে’ ভালো, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেন: ঐ সংগ্রামী মুমিন যে তার মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বলেন: তারপর ঐ লোক যে কোন গিরিসংকটে নির্জনে (বসে) তার প্রতিপালকের ইবাদাতে নিমগ্ন থাকে। অন্য এক রিওয়ায়াতে রয়েছে। যে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে এবং লোকদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকে। [টিকা: অর্থাৎ আল্লাহর দীনের প্রতিষ্ঠার জন্য ধনপ্রাণ দিয়ে জিহাদ মুমিনকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদায় উন্নীত করে। তবে কোথাও যদি এর সুযোগ না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে নীরবেই বন্দেগী করে সব ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পরিপূর্ণরূপে মেনে তাকওয়ার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াই মুমিনের কর্তব্য।] (বুখারী, মুসলিম)

٥٩٩ – وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوْشِكُ أَنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالَ الجبال ومَوَاقِعَ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدينِهِ مِنَ الْفِتَنِ نَ يَتَّبِعُ بِهَا عَفَ الْجِبَالِ رواه البخاري

৫৯৯। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে মুসলিমের উৎকৃষ্ট মাল হবে মেষ-বকরী, যেগুলোকে নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় বা বৃষ্টি বহুল এলাকায় চলে যাবে বিপর্যয় থেকে তার দীনকে রক্ষা করার জন্য। (বুখারী)

٦٠٠- وعن أبي هريرة رضى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أَصْحَابُهُ وَأَنْتَ؟ قَالَ نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَاهَا على قراريط لأهل مكة – رواه البخاري

৬০০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি ছাগল চরাননি। সাহাবায়ে কিরাম (রা) বললেন, আপনিও কি? তিনি বলেন: হাঁ, আমিও কয়েক কিরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরিয়েছি। [টিকা: ৭৭. হাফিয তুরপুশৃতি বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করা কিছুতেই নবুওয়াতের মর্যাদা বিরোধী নয়, বরং কামাই-রোজগারের নীতি নবীদের সুন্নাত ও আমলেরই অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে তাওয়াক্কুল করা তাঁদের বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর এ কাজ ছিল নবুওয়াত পূর্বকালের।] (বুখারী)

١-٦- وَعَنْهُ عَنْ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ مِنْ خَيْرٍ مَعَاشِ النَّاسِ لَهُمْ رَجُلٌ مُمسك عنان فرسه في سبيل الله يَطِيرُ عَلَى مَتَنهُ كُلَّمَا سَمِعَ هيعة أو فزعة طار عَلَيْهِ يَبْتَغِي القَتْلَ أو الموت مَظَانُهُ أَوْ رَجُلٌ فِي غُنَيْمَةٍ فِي رأس شعقة من هذه الشعف أو بطن واد من هذه الأودية يُقِيمُ الصَّلاةَ وَيُؤْتِي الزَّكَاةَ وَيَعْبُدُ رَبَّهُ حَتَّى يَأْتِيَهُ الْيَقِينُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ إِلا في خير – رواه مسلم.

৬০১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: লোকদের মধ্যে উৎকৃষ্ট জিন্দেগীর অধিকারী সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধারণ করে তার পিঠে চড়ে অভিযানরত থাকে। যেখানেই সে শত্রুর আক্রমণ ধ্বনি বা ভীতিপ্রদ আওয়ায শুনতে পায়, সেদিকেই সে বিদ্যুৎ গতিতে চলে যায় এবং রণক্ষেত্রে শাহাদাত লাভ বা মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষারত থাকে। অথবা এমন লোকের জিন্দেগী (উৎকৃষ্ট), যে গুটিকয়েক ছাগল নিয়ে পর্বতমালার কোন একটির চূড়ায় অথবা এ উপত্যকাগুলোর কোন এক উপত্যকায় অবস্থান করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, আমৃত্যু তার প্রতিপালকের ইবাদাতে নিমগ্ন থাকে এবং মানুষের সাথে সদাচরণ ছাড়া অন্য কিছুকে প্রশ্রয় দেয় না। [টিকা: ৭৮. ফিতনা, অন্যায় ও পাপাচার আপনা থেকেই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার জন্য বিশেষ কোন চেষ্টা যত্নের প্রয়োজন হয় না। বাতিল খোদ সম্প্রসারণশীল। ফলে ক্রমান্বয়ে দীনদার লোকেরাও তাতে জড়িয়ে পড়তে থাকে। বিশেষত হকের নিশান বর্দাররা তাদের দায়িত্ব পালন থেকে হাত-পা গুটিয়ে বসলে তার গতি হয় আরো প্রচণ্ড। তখন দীনে হকের মুষ্টিমেয় অনুসারীদের পক্ষে নির্জন পাহাড় ও উপত্যকায় গিয়ে তাদের ঈমান রক্ষা করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এতে অন্ততপক্ষে ভালো লোকদের মন্দে পরিণত হওয়ার আশংকা দূরীভূত হয় এবং ফিতনা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করতে পারে না। কিয়ামাতের পূর্বে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।] (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৭০ – জনসাধারণের সাথে ওঠা-বসা ও মেলামেশা করা, তাদের সভা-সমিতিতে ও উত্তম বৈঠকাদিতে হাযির হওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া, অভাবীর সাহায্যে এগিয়ে আসা, অজ্ঞদের সঠিক পথ প্রদর্শন, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা, অন্যকে কষ্ট না দেয়া এবং কষ্ট পেয়েও ধৈর্যধারণ ইত্যাদির ফযীলাত।

জনসাধারণের সাথে ওঠা-বসা ও মেলামেশা করা, তাদের সভা-সমিতিতে ও উত্তম বৈঠকাদিতে হাযির হওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া, অভাবীর সাহায্যে এগিয়ে আসা, অজ্ঞদের সঠিক পথ প্রদর্শন, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা, অন্যকে কষ্ট না দেয়া এবং কষ্ট পেয়েও ধৈর্যধারণ ইত্যাদির ফযীলাত।

ইমাম নববী (র) বলেন, জনসাধারণের সাথে উপরোল্লিখিত বৈঠক ও অনুষ্ঠানাদিতে মেলামেশা ও উঠা-বসা করা উত্তম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আম্বিয়ায়ে কিরাম, খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কিরাম ও শ্রেষ্ঠ তাবিঈগণের প্রত্যেকের এই নীতি ও আদর্শ ছিল। পরবর্তী কালের উলামায়ে কিরাম ও উম্মাতের উৎকৃষ্ট মনীষীরাও একই আদর্শের অনুসরণ করেছেন। ইমাম শাফিঈ ও আহ্মাদ (র)-সহ ফিক্হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমামগণ ও অপরাপর ইসলামী চিন্তাবিদ সকলেই সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করা এবং সামাজিক ও সাংসারিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকেই ইসলামী জিন্দেগীর ক্ষেত্রে সফলতার পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: وتَعَاوَنُوا عَلَى البر والتقرى ৎ কর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করো।” (সূরা আল মা-ইদাঃ ২) এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে আরো বহু আয়াত রয়েছে।

অনুচ্ছেদ: ৭১ – মুসলিমদের সাথে বিনয় ও নম্রতাপূর্ণ ব্যবহার করা

মুসলিমদের সাথে বিনয় ও নম্রতাপূর্ণ ব্যবহার করা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“যারা তোমার অনুসরণ করে, সেই সব মুমিনদের প্রতি সদয় হও।” (সূরা আশ শুআরা: ২১৫)

وقال تعالى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يُرِيدُ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ.

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ তার দীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক কাউম সৃষ্টি করবেন, যারা হবে আল্লাহর প্রিয় এবং আল্লাহ হবেন তাদের প্রিয়, তারা মুমিনদের প্রতি নম্র ও বিনয়ী হবে এবং কাফিরদের প্রতি হবে অত্যন্ত কঠোর।” (সূরা আল মা-ইদা : ৫৪)

وقال تعالى : بَأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ.

“হে মানুষ। আমিই তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করেছি, এরপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। বস্তুত আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশি আল্লাহকে ভয় করে।” (সূরা আল হুজুরাতঃ ১৩)

وقال تعالى : فَلا تُرَكُوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى.

“কাজেই তোমরা তোমাদের আত্ম-পবিত্রতার দাবি করো না। প্রকৃত মুত্তাকী কে তা তিনিই ভালো জানেন।” (সূরা আন নাজমঃ ৩২)

وقال تعالى : ونادى أصْحَابُ الأعراف رجالاً يُعْرِفُونَهُمْ بِسِيمَاهُمْ قَالُوا مَا اغْنى عَنْكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ . أهولا – الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ اللَّهُ برَحْمَةٍ أَدْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَا انْتُمْ تَحْزَنُونَ.

“এই আ’রাফের লোকেরা জাহান্নামের কয়েকজন বড় বড় লোককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনতে পেরে ডেকে বলবে: তোমাদের বাহিনী ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসল না। আর এ জান্নাতবাসীরা কি সেসব লোক নয়, যাদের সম্পর্কে তোমরা শপথ করে বলতে যে, এ লোকদেরকে আল্লাহ নিজের রাহমাত থেকে কোন অংশই দান করবেন না? তাদেরকেই বলা হবে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাদের জন্য না ভয় আছে, না মর্মবেদনা।” (সূরা আল আ’রাফ: ৪৮-৪৯)

٦٠٢ – وَعَنْ عِبَاضِ بْنِ حِمَارٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ أَوْحَى إِلَى أَنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لَا يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ وَلَا يبغى أحد على أحد – رواه مسلم.

৬০২। ইয়াদ ইবনে হিমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা পরস্পরের সাথে বিনয় ও নম্র আচরণ কর, এমনকি কেউ কারো উপর গৌরব করবে না এবং একজন আরেকজনের উপর বাড়াবাড়ি করবে না। (মুসলিম)

٦٠٣- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْو الا عزاً وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إلا رفعه الله – رواه مسلم .

৬০৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দানের দ্বারা সম্পদ কমে না। বান্দার ক্ষমার গুণ দ্বারা আল্লাহ তার ইযযাত- সম্মানই বৃদ্ধি করেন। কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করলে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম)

٦٠٤- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَرْ عَلَى صِبْيَانِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ كَانَ النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُ – متفق عليه.

৬০৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক বালকের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই করতেন। (বুখারী, মুসলিম)

٦٠٥ – وَعَنْهُ قَالَ إِنْ كَانَتِ الأمة من اما – المَدِينَةِ لِتَأْخُذُ بِيدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فتنطلق به حيث شاءت رواه البخاري .

৬০৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনার কোন বাঁদী (অনেক সময় তার কোনো প্রয়োজনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ধরে যেখানে ইচ্ছা তাঁকে নিয়ে যেত। (বুখারী)

٦٠٦- وَعَنِ الْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ سُئِلَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا مَا كَانَ النَّبِيُّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ فِي بَيْتِهِ؟ قَالَتْ كَانَ يَكُونُ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ يَعْنِي خدمة أهله فاذا حضرت الصلاة خرج إلى الصلاة – رواه البخاري .

৬০৬। আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে থাকাকালে কাজ করতেন অর্থাৎ নিজ পরিবার-পরিজনের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। নামাযের সময় হলে তিনি নামাযের জন্য চলে যেতেন। (বুখারী)

٦٠٧- وَعَنْ أَبِي رِفَاعَةً تَمِيمِ بْنِ أُسَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ انْتَهَيْتُ إِلَى رَسُولِ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَخْطُبُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ رَجُلٌ غَرِيبٌ جَاءَ يسأل عن دينه لا يدرى ما دينهُ؟ فَأَقْبَلَ عَلَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وترك خُطبَتَهُ حَتَّى انْتَهَى إِلى فَأْتِيَ بِكُرْسِي فَقَعَدَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ ثُم أتى خُطْبَتَهُ قائم آخرها – رواه مسلم.

৬০৭। আবু রিফা’আ তামীম ইবনে উসাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম। তিনি তখন ভাষণ দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। (আমি) এক মুসাফির দীন সম্পর্কে জানতে এসেছে। সে জানে না তার দীন কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ভাষণ বন্ধ করে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে আমার নিকট এলেন। একটি চেয়ার আনা হলে তিনি তাতে বসলেন এবং আমাকে ঐসব বিধান শেখাতে লাগলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিখিয়েছেন, তারপর ভাষণ দিতে ফিরে এসে তা সমাপ্ত করলেন। (মুসলিম)

٦٠٨- وعن انس رضى اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا اكل طعاما لعن أَصَابِعَهُ الثلاثَ قَالَ وَقَالَ إِذا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمْطَ عَنْهَا الأذى وَلْيَأْكُلها ولا يَدَعُها للشيطان وأمر أن تُسْلَتِ الْقَصْعَةُ قَالَ فَإِنَّكُمْ لَا تدرون في أي طعامكم البركة – رواه مسلم .

৬০৮। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার শেষে তাঁর তিন আংগুল (বৃদ্ধাঙ্গুলী, তর্জনী, মধ্যমা) চাটতেন। আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদ্যের গ্রাস পড়ে গেলে তার ময়লা ছাড়িয়ে সে যেন তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে। তিনি আহারের পাত্র চেটে খাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: কারণ তোমাদের জানা নেই, তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম)

٦٠٩- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا بعث اللهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ قَالَ أَصْحَابُهُ وَانْتَ؟ فَقَالَ نَعَمْ كُنتُ أَرْعَاهَا عَلَى قراريط لأهل مكة – رواه البخاري .

৬০৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠাননি, যিনি বকরী চরাননি। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, আপনিও কি? তিনি বলেন: হাঁ, আমিও কয়েক কিরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম। (বুখারী)

٦١٠- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ دُعِيتُ إِلى كُراع أو ذراع لأَجَبْتُ ولو أهدى إلى ذراع أو كراع لقبلت – رواه البخاري .

৬১০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমাকে যদি একটি বাহু বা পায়ার জন্যও দাওয়াত করা হয় তাহলে অবশ্যই আমি সাড়া দেব। আমাকে একটি পায়া অথবা বাহু হাদিয়া দেয়া হলে আমি তাও গ্রহণ করব। (বুখারী)

٦١١- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ نَاقَةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العَضَيَاء لا تُسْبَقُ أو لا تَكَادُ تُسبَقُ فَجَاءَ أَعْرَابِي عَلَى فَعُودٍ لَهُ فَسَبَقَهَا فشق ذلك عَلَى الْمُسْلِمِينَ حَتَّى عَرَفَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ حَقٌّ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يُرْتَفِعَ شَيْ مِنَ الدُّنْيَا إِلا وضعه – رواه البخاري .

৬১১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদবা নামক একটি উটনী ছিল। দৌড় প্রতিযোগিতায় সেটিকে অতিক্রম করা যেতো না বা পরাভূত করা যেতো না। অবশেষে এক বেদুঈন তার উঠতি বয়সের এক উটে চড়ে আসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় সেটি আগে চলে গেল। মুসলিমদের নিকট বিষয়টি বেশ কষ্টদায়ক অনুভূত হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা অনুভব করতে পারলেন। তিনি বলেন: আল্লাহর বিধান হল, দুনিয়ার বুকে কোন জিনিস উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করার পর আল্লাহ সেটিকে অবনমিত করেন। (বুখারী)

অনুচ্ছেদঃ ৭২ – অহংকার ও অহমিকা হারাম

অহংকার ও অহমিকা হারাম।

قَالَ اللهُ تعالى : تِلْكَ الدار الآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوا فِي الْأَرْضِ ولا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“এটা আখিরাতের সেই আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না, শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।” (সূরা আল কাসাস-৮৩)

وقال تعالى : ولا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الجبال طولاً.

“ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি কখনো পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনো পর্বত-প্রমাণও হতে পারবে না।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৭)

وقال تعالى : وَلا تُصْعِرْ خَدكَ للنَّاسِ وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلِّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ

“অবজ্ঞাভরে তুমি লোকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলো না এবং পৃথিবীতে দম্ভভরে বিচরণ করো না। আল্লাহ কোন অহংকারী দাম্ভিককে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান: ১৮)
ইমাম নববী (র) বলেন, “লা তুসায়্যির খাদ্দাকা লিন্নাস” অর্থ গর্বভরে লোকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। “মারাহ” অর্থ গৌরব, অহংকার।

وَقَالَ تَعَالَى : إِنْ قَارُونَ كَانَ مِنْ قَوْمٍ مُوسَى فَبَغَى عَلَيْهِمْ وَأَتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ لتَنُوهُ بِالْعُصْبَةِ أولى القوة إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ إلى قوله تعالى : فَخَسَفْنَا بِهِ وَبَدَارِهِ الْأَرْضَ.

“কারূন ছিল মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি যুগ্ম করেছিল। আমি তাকে দান করেছিলাম ধন-ভাণ্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দ্বারা আখিরাতের কল্যাণ অনুসন্ধান কর এবং দুনিয়ায় তোমার বৈধ সম্ভোগ তুমি উপেক্ষা করো না। তুমি সদাশয় হও, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি সদাশয় এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না। সে বলল, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে লাভকরেছি। সে কি জানে না, আল্লাহ তার পূর্বে ধ্বংস করেছেন এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে, যারা তার চাইতে শক্তিতে ছিল প্রবল, সম্পদে ছিল প্রাচুর্যশালী?

অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে (জানার জন্য) কোন প্রশ্ন করা হবে না? কারুন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমক সহকারে। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, ‘আহা, কাজনকে যা দেয়া হয়েছে, আমাদেরকে যদি তা দেয়া হত। প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান।’ যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলল, ‘ধিক তোমাদের, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীল ছাড়া কেউ তা পাবে না। এরপর আমি কাজনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে তলিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না, যে আল্লাহর শান্তির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।” (সূরা আল কাসাস: ৭৬-৮১)

٦١٢- وَعَنْ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ مِنْ كَبْرِ فَقَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرجل يُحِبُّ أن يكون ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلَهُ حَسَنَةً قَالَ إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الكبرُ بَطرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ رواه مسلم.

৬১২। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন বলল, যে কোন লোক তো চায় যে, তার কাপড়টা সুন্দর হোক, জুতাটা আকর্ষণীয় হোক (এটাও কি অহংকারের অন্তর্ভুক্ত)। তিনি বলেন: আল্লাহ নিজে সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হল, গর্বভরে সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। (মুসলিম)

٦١٣ – وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَخْوَعِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ فَقَالَ كُلِّ بِيَمِينِكَ قَالَ لَا أَسْتَطِيعُ قَالَ لَا استطعت ما مَنَعَهُ الا الكبر قَالَ فَمَا رَفعها إلى فيه رواه مسلم .

৬১৩। সালামা ইবনুল আকওয়া (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাম হাতে আহার করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি পারছি না। তিনি বলেন: তুমি যেন না পার। অহংকারই তার প্রতিবন্ধক ছিল। সে আর কখনো মুখ পর্যন্ত হাত তুলতে পারেনি। (মুসলিম)

٦١٤ – وَعَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِلا أَخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ كُلُّ عُثْل جواظ مُسْتَكْبر – متفق عليه وتَقَدِّمَ شَرْحُهُ فِي بَابِ ضَعْفَةِ الْمُسْلِمِينَ .

৬১৪। হারিসা ইবনে ওয়াহব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের বিষয়ে জনাব না? তারা হলঃ প্রত্যেক অহংকারী, সীমালংঘনকারী, বদবখত ও উদ্ধত লোক।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٦١٥- وعن أبي سَعِيدٍ الْخُدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ احتجت الجنة والنار فقالت النار في الْجَبَّارُونَ وَالْمُتَكَبِّرُونَ وَقَالَت الْجَنَّةُ فِي ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُمْ فَقَضَى اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّكِ الْجَنَّةُ رَحْمَتِي ارْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ وَإِنَّكِ النَّارُ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَن أَشَاءُ وَلَكِلَيْكُمَا عَلَى ملوها – رواه مسلم.

৬১৫। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে বিতর্ক হল। জাহান্নাম বলল, অহংকারী ও উদ্ধত যারা, তারাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। জান্নাত বলল, আমার মধ্যে আসবে ঐসব লোক, যারা দুর্বল মিসকীন ও অসহায়। আল্লাহ উভয়ের মাঝে ফায়সালা করে দিলেনঃ জান্নাত! তুমি আমার রাহমাত। যে বান্দার প্রতি রহম করার আমার ইচ্ছা হবে, তোমার সাহায্যে আমি তার প্রতি রহম করব। আর জাহান্নাম। তুমি আমার শাস্তি। যাকে আমি ইচ্ছা করব, তোমার দ্বারা তাকে শান্তি দেব। তোমাদের উভয়কে পূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। (মুসলিম)

٦١٦- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَنْظُرُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إلى من جر إزاره بطرا – متفق عليه .

৬১৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আল্লাহ ঐ লোকের প্রতি ফিরে তাকাবেন না, যে অহংকারবশে তার তত্ববন্দ (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে দিল। (বুখারী, মুসলিম)

٦١٧- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يومَ القِيَامَةِ وَلا يُزَكِّيهِمْ وَلا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكَ كَذَابٌ وَعَائِلٌ مُستكبر – رواه مسلم.

৬১৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন ধরনের লোকের সাথে আল্লাহ কিয়ামাতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেনও না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তিঃ (১) বৃদ্ধ যেনাকারী, (২) মিথ্যাবাদী শাসক ও (৩) অহংকারী দরিদ্র। (মুসলিম)

٦١٨- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْعِزَّ ازارِى وَالْكَبْرِيَاءُ رِدَائِي فَمَنْ يُنَازِعُنِي فِي وَاحِدٍ مِنْهُمَا فَقَدْ عَذَبْتُهُ .

৬১৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সম্মানিত মহান আল্লাহ বলেন, “ইয়্যাত ও মাহাত্ম্য হচ্ছে আমার ইযার এবং অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্ব আমার চাদর। যে ব্যক্তি এ দু’টির কোন একটিতে আমার সাথে সংঘর্ষ ও বিবাদে লিপ্ত হয় তাকে আমি অবশ্যই শান্তি দেব।” (মুসলিম)

٦١٩- وَعَنْهُ أَنْ رَسُولَ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي فِي حلة تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ مُرَجَلٌ رَأْسَهُ يَخْتَالُ فِي مِشْيَتِهِ إِذْ خَسَفَ اللَّهُ بِهِ فَهُوَ يَتَجَلَجَلُ في الأرض إلى يوم القيامة – متفق عليه

৬১৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (অতীত কালে) এক লোক মূল্যবান পোশাক পরে মাথায় (বা চুলে) সিথি কেটে ও চালচলনে অহংকারী ভাব প্রকাশ করে হেঁটে যাচ্ছিল। এতে সে নিজেকে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত অনুভব করছিল। হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির নিচে দাবিয়ে দিলেন। কিয়ামাত পর্যন্ত সে ভূগর্ভে দেবে যেতে থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)

٦٢٠- وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَذْهَبُ بِنَفْسِهِ حَتَّى يُكْتَبَ فِي الْجَبَّارِينَ فَيُصِيبُهُ مَا أصابهم – رواه الترمذي وقال حديث حسن .
৬২০। সালামা ইবনুল আকওয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মানুষ এমনভাবে আত্মগর্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে যে, অবশেষে তার নাম অহংকারী ও উদ্ধতদের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়, ফলে সে অহংকারী ও উদ্ধত লোকদের অনুরূপ আযাবে পতিত হয়।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ ৭৩ – সচ্চরিত্র সম্পর্কে

সচ্চরিত্র সম্পর্কে।

قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ
মহান আল্লাহ বলেনঃ

“নিশ্চয়ই (হে মুহাম্মাদ) তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত আছ।” (সূরা আল কালাম: ৪) وَقَالَ تَعَالَى : وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ.

“তারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৪) ٦٢١ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أحسنَ النَّاسِ خُلُقًا – متفق عليه

৬২১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানবজাতির মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (বুখারী, মুসলিম)

٦٢٢- وَعَنْهُ قَالَ مَا مَسَسْتُ ديباجا ولا حريراً الينَ مِنْ كَفَ رَسُول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلا شَمَمْتُ رَائِحَةُ قط أطيب مِنْ رَائِحَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُعلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَقَدْ خَدَمْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ سِنِينَ فَمَا قَالَ لي قط أن ولا قَالَ لشي فعلته لما فعلته ولا يشير لم افعله الا فعلت كذا – متفق عليه.

৬২২। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের তালুর চাইতে অধিক নরম ও মোলায়েম কোন পশমী ও রেশমী কাপড় স্পর্শ করিনি। কোন সুগন্ধিও আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (শরীরের) সুগন্ধির চাইতে অধিকতর সুগন্ধিময় পাইনি। আমি দীর্ঘ দশ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি উহ্ শব্দও উচ্চারণ করেননি। আমার কোন কৃতকর্মের জন্য তিনি কখনো বলেননি যে, কেন তুমি এটা করলে এবং কোন কর্তব্যকর্ম না করার জন্যও বলেননি, কেন তুমি এটা করলে না। (বুখারী, মুসলিম)

٦٢٣ – وَعَنِ الصَّعْبِ بْنِ جَنَّامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَهْدَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِماراً وحشيا فرده على فلما رأَى مَا فِي وَجْهِي قَالَ إِنَّا لَمْ تردهُ عَلَيْكَ الا لأن حرم – متفق عليه .

৬২৩। সা’ব ইবনে জাস্স্সামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি একটি জংলি গাধা হাদিয়াস্বরূপ দিলাম। তিনি সেটি আমাকে ফেরত দিলেন। তিনি আমার চেহারায় মলিনতার ছাপ লক্ষ্য করে বলেন: আমরা ইহরাম অবস্থায় রয়েছি বলেই গাধাটি ফেরত দিয়েছি। (বুখারী, মুসলিম)

٦٢٤- وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْبَرِّ وَالْإِثْمِ فَقَالَ الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلْقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي نفسك وكرهت أن يطلع عليه الناس – رواه مسلم .

৬২৪। নাওয়াস ইবনে সাম’আন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেনঃ পুণ্য হচ্ছে উত্তম চরিত্র এবং গুনাহ হচ্ছে, যা তোমার অন্তরে সন্দেহের উদ্রেক করে এবং লোকে তা জেনে ফেলুক এটা তুমি অপছন্দ কর। (মুসলিম)

٦٢٥- وَعَنْ عَبْدِ الله بن عمرو بن العاص رضى اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمْ يَكُنْ رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاحِشًا وَلَا مُتَفَحِّشًا وَكَانَ يَقُولُ إِنَّ مِنْ خيارِكُمْ أَحْسَنُكُمْ أخلاقا – متفق عليه

৬২৫। আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃতিগতভাবে অশ্লীলতা পছন্দ করতেন না এবং তিনি অশ্লীলভাষীও ছিলেন না। তিনি বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে উৎকৃষ্ট লোক তারাই, যাদের চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট। (বুখারী, মুসলিম)

٦٢٦- وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاء رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ شَيْءٍ أَثْقَل في ميزان المُؤْمِن يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ حُسْنِ الْخُلْقِ وَإِنَّ اللهَ بعض الفاحش البذي رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح .

৬২৬। আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন মুমিন বান্দার আমলনামায় সচ্চরিত্রের চাইতে অধিকতর ভারি আর কোন আমলই হবে না। বস্তুত আল্লাহ অশ্লীলভাষী ও নিরর্থক বাক্য ব্যয়কারী বাচালকে ঘৃণা করেন।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٦٢٧ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ قَالَ تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الخُلْقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسِ النَّارَ فَقَالَ الْغَمُ وَالْفَرْجُ – رواه الترمذي وقال حديث
حسن صحيح.

৬২৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন জিনিস লোকদেরকে অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন: তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র। তাঁকে আরো জিজ্ঞেস করা হল, কোন্ জিনিস লোকদেরকে অধিক হারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন: মুখ ও লজ্জাস্থান।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٦٢٨- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيْمَانًا احْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخَيَارُكُمْ خياركم لنسائهم – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৬২৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঈমানের দিক থেকে সর্বাধিক কামিল মুমিন সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম লোক তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে সর্বোত্তম আচরণকারী।

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٦٢٩- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلْقِهِ دَرجة الصائم القائم – رواه أبو داود.

৬২৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ মুমিন ব্যক্তি অবশ্যই তার সুন্দর স্বভাব ও সচ্চরিত্র দ্বারা দিনে রোযা পালনকারী ও রাত জেগে ইবাদাতকারীর মর্যাদা হাসিল করতে পারে। -(আবু দাউদ)

٦٣٠ – وعَنْ أَبِي أَمَامَةَ الْبَاهِلِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْت فِي رَبِّضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًا ويبيت في وسط الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الكذب وإن كان مازحًا ويبيت في أعلى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسُنَ خُلُقَهُ حديث صحيح رواه ابو داود باسناد صحيح .

৬৩০। আবু উমামা আল-বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এমন লোকের জন্য জান্নাতের পার্শ্ববর্তী এক ঘরের যামিন যে প্রদর্শনী ও প্রসিদ্ধি লাভ পরিত্যাগ করে, যদিও সে তার হকদার। আমি এমন লোকের জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে অবস্থিত ঘরের যামিন যে ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা ও মিথ্যাচারকে পরিহার করে। আমি জান্নাতের শীর্ষস্থানে অবস্থিত একটি ঘরের যামিন এমন লোকের জন্য যে তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে।

এ হাদীসটি সহীহ। ইমাম আবু দাউদ এটিকে সহীহ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।

٦٣١ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَى وَأَقْرَيْكُمْ مِنَى مَجْلِسًا يُوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنُكُمْ أَخْلَاقًا وَإِنْ ابعضَكُم إلى وابْعَدكُمْ مِنِّى يَوْمَ القِيَامَةِ الشَّرْتَارُونَ وَالْمُتَشَدِقُونَ وَالْمُتَفَيْهِقُونَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْتَارُونَ وَالْمُتَشَدِقُونَ فَمَا الْمُتَفَيْهِقُوْنَ قَالَ المتكبرون – رواه الترمذي وقال حديث حسن

৬৩১। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন তোমাদের মধ্য থেকে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও সবচেয়ে নিকটে উপবিষ্ট হবে সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো। কিয়ামাতের দিন তোমাদের মধ্য থেকে আমার নিকট সবচেয়ে ঘৃণ্য ও আমার থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী হবে সেইসব লোক যারা কথাবার্তায় কৃত্রিমতার আশ্রয় নেয়, কথার মাধ্যমে অহংকার প্রকাশ করে এবং যারা মুতাফাইহিকুন। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। কৃত্রিমভাবে বাক্যালাপকারী ও কথার মাধ্যমে অহংকার প্রকাশকারীর অর্থ তো বুঝলাম, কিন্তু ‘মুতাফাইহিকুন’ কারা? তিনি বলেন: অহংকারী ব্যক্তিরা।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি হাসান হাদীস। আস-সারসারু বলতে ঐ লোককে বুঝায়, যে অত্যধিক কৃত্রিমভাবে কথাবার্তা বলে থাকে। আল্-মুতাশাদ্দিক ঐ লোককে বলে যে নিজের কথার দ্বারা অন্যের উপর নিজের প্রাধান্য ও বড়াই প্রকাশ করে এবং কথাবার্তা বলার সময় নিজের কথার বিশুদ্ধতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করে থাকে। ফাইহাকু শব্দটি ‘ফাহকুন’ ধাতু থেকে নির্গত। এর অর্থ মুখ ভর্তি করা বা পূর্ণ করা। কাজেই ‘আল-মুতাফাইহিক’ বলতে ঐ লোককে বুঝায় যে মুখ ভর্তি করে কথা বলে এবং তাতে বাড়াবাড়ি করে, চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে এবং নিজের অহংকার ও আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশের উদ্দেশ্যে লম্বা কথা বলে।

ইমাম তিরমিযী (র) আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (র) থেকে সচ্চরিত্রের ব্যাখ্যা নকল করেছেন। তাতে তিনি বলেন, সচ্চরিত্র হল, হাসি-খুশি মুখ, সত্য-ন্যায়কে অবলম্বন করা এবং অন্যকে কোনরূপ কষ্ট দেয়া থেকে বেঁচে থাকা ইত্যাদি।

অনুচ্ছেদ: ৭৪ – সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতা

সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“তারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)

وَقَالَ تَعَالَى : خُذِ الْعَفْوَ وَآمُرُ بِالْعُرْفِ وَاعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ.

“ক্ষমাশীলতা অবলম্বন কর, সৎ কাজের নির্দেশ দান কর এবং মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চল।” (সূরা আল আ’রাফ: ১৯৯)

وقال تعالى : ولا تستوى الحسنة ولا السيئة ادفع بالتي هي أحسن فاذا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ، وَمَا يُلْقَاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلا ذُو حَظٍّ عَظِيم

“ভালো ও মন্দ বরাবর নয়। তুমি ভালো দ্বারা মন্দকে প্রতিহত কর। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে তোমার পরম বন্ধুর মত। আর এহেন সুফল তার ভাগ্যেই জোটে যে ধৈর্য ও সহনশীলতার অধিকারী এবং যে বিরাট সৌভাগ্যশালী।” (সূরা হা-মীমুস্ সাজদা: ৩৪-৩৫)

وقَالَ تَعَالَى : وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزم الأمور.

“অবশ্য যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিঃসন্দেহে এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।” -(সূরা আশ শূরাঃ ৪৩)

٦٣٢ – وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَشَجِّ عَبْدِ الْقَيْسِ إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ الْحِلْمُ وَالْآنَاةُ رواه مسلم.

৬৩২। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল কায়েস গোত্রের আশাজ্জকে বললেন: তোমার মধ্যে এমন দু’টি গুণ বা অভ্যাস রয়েছে যা আল্লাহও পছন্দ করেন: সহনশীলতা ও ধীর-স্থিরতা। (মুসলিম)

٦٣٣- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلَّمَ إِنَّ الله رفيق يحب الرفق في الأمر كله – متفق عليه

৬৩৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ কোমল। তাই তিনি প্রতিটি কাজে কোমলতা পছন্দ করেন। (বুখারী, মুসলিম)

٦٣٤ – وَعَنْهَا أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْق ويعطى على الرفق ما لا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ رواه مسلم

৬৩৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ নিজে কোমল। তিনি কোমলতা ভালোবাসেন। তিনি কোমলতা দ্বারা ঐ জিনিস দান করেন যা কঠোরতা দ্বারা দেন না। তথা কোমলতা ছাড়া অন্য কিছু দ্বারাই তিনি তা দেন না। (মুসলিম)

٦٣٥ – وَعَنْهَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إلا زانه ولا ينزع مِنْ شَيْءٍ إِلا شَانَهُ – رواه مسلم .

৬৩৫। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জিনিসে কোমলতা থাকে, কোমলতা সেটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। যে জিনিস থেকে কোমলতা ছিনিয়ে নেয়া হয় সেটাই দোষদুষ্ট ও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। (মুসলিম)

٦٣٦ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَالَ أَعْرَابِي فِي الْمَسْجِدِ فَقَامَ النَّاسُ إِليهِ لِيَقَعُوا فِيهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعُوهُ وَارِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ سَجُلاً مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوبًا مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُبَشِّرِينَ وَلَمْ تُبْعَثُوا معسرين – رواه البخاري .

৬৩৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুইন মসজিদে পেশাব করলে লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়তে উঠে দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ছাড় তাকে। তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমাদেরকে সহজ নীতি অবলম্বনকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, কঠোর নীতির ধারক হিসেবে নয়। (বুখারী)

٦٣٧- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَسِرُوا ولا تعسروا وتشروا ولا تنفروا – متفق عليه .

৬৩৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সহজ নীতি ও আচরণ অবলম্বন কর, কঠোর নীতি অবলম্বন করো না। সুসংবাদ শুনাতে থাক এবং পরস্পর ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িও না। (বুখারী, মুসলিম)

۱۳۸ – وَعَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ الله رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ يُحْرَمُ الرِّفْقَ يُحْرَمُ الْخَيْرَ كله – رواه مسلم .

৬৩৮। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। যাকে কোমলতা বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে সব রকমের কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। (মুসলিম)

٦٣٩ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم أوصني قَالَ لا تَغْضَبْ فَرَدَّد مراراً قَالَ لا تغضب – رواه البخاري .

৬৩৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ রাগ করো না। লোকটি (এটাকে যথেষ্ট মনে না করে) কথাটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার বলেন: রাগ করো না। (বুখারী)

٦٤٠ – وَعَنْ أَبِي يَعلَى شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسَنُوا القتلة وإذا ذيَحْتُمْ فَأَحْسَنُوا الذبحة وليُحِدُ أَحَدُكُمْ شَفَرَتَهُ وَلْيُرِح ذَبِيحَتَهُ – رواه مسلم.

৬৪০। আবু ইয়া’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের প্রতি দয়া-মায়াপূর্ণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছেন। অতএব তোমরা কোন প্রাণীকে হত্যা করলে, উত্তমভাবে হত্যা করবে এবং কোন প্রাণীকে যবেহ করলে উত্তমভাবে যবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকেই যেন তার ছুরিকে শানিত করে নেয় এবং যবেহ করার প্রাণীকে আরাম দেয়। (মুসলিম)

٦٤١ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا خَيْرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أمرين قط الا أخَذَ أَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِنَفْسِهِ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا أن تُنتهك حرمة الله فينتقم الله تعالى – متفق عليه .

৬৪১। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দু’টি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দেয়া হলে তিনি সর্বদাই অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহণ করতেন, যদি না তা গুনাহর বিষয় হত। তা গুনাহর বিষয় হলে তা থেকে তিনি সকলের চাইতে বেশি দূরে অবস্থানকারী হতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর বিধান লংঘিত হলে তিনি শুধু মহান আল্লাহর জন্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)

٦٤٢ – وسلم الا أخبركُم بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُ عَلَيْهِ النَّارُ؟ تَحْرُمُ عَلَى كُلِّ قريب هين لين سهل – رواه الترمذي وقال حديث حسن

৬৪২। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি কি তোমাদের জানাব না যে, কোন্ লোক জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা কার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? জাহান্নামের আগুন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হারাম যে লোকদের নিকটে বা তাদের সাথে মিলেমিশে থাকে, যে কোমলমতি, নরম মেজাজ ও বিনম্র স্বভাববিশিষ্ট।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ৭৫ – ক্ষমা প্রদর্শন ও অজ্ঞ-মূর্খদের সযত্নে এড়িয়ে চলা

ক্ষমা প্রদর্শন ও অজ্ঞ-মূর্খদের সযত্নে এড়িয়ে চলা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“ক্ষমাশীলতা অবলম্বন কর, সৎ কাজের আদেশ দান কর এবং মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চল।” (সূরা আল আ’রাফ: ১৯৯)

وقَالَ تَعَالَى : فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ.

“অতএব তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদের ক্ষমা করে দাও।” (সূরা আল হিজরঃ ৮৫)

وقال تعالى : وَلَيَعْفُوا وَلَيَصْفَحُوا الا تَحِبُّونَ أَنْ يُغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَاللَّهُ غفور رحيم.

“তারা যেন ওদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়ালু।” (সূরা আন্ নূরঃ ২২)

وَقَالَ تَعَالَى : وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ.

“তারা লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৪)

وقال تعالى : وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ.

“যে লোক ধৈর্য ধারণ করে ও ক্ষমা করে, নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।” (সূরা আশ শূরাঃ ৪৩)

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ

١٤٣ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هل أتى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمٍ أَحد قَالَ لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكَ وَكَانَ أَشَدُّ مَا لقيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقْبَةِ إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِى عَلَى ابْنِ عَبْدِ بَالِيْلَ بْنِ عَبْدِ كَلَالٍ فَلَمُ يُحبني إلى ما أردتُ فانطلقت وأنا مهموم عَلَى وَجْهِي فَلَمْ أَسْتَفِقْ الا وانا يقرن الثعالب فرفعت رأسي فإذا أنا بسحابة قَدْ أَظلَّتْنِي فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جبريل عليه السَّلامُ فَنَادَانِي فَقَالَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ ملك الجبال لتأمرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيْهِمْ فَنَادَانِي مَلَكُ الجبال فسلم عَلَى ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لكَ وَأَنَا مَلَكُ الجبال وقَدْ بَعَثَنِي رَبِّي إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرِكَ فَمَا شِئْتَ إِنْ شِئْتَ أَطْبَقْتُ عَلَيْهِمُ الْأَحْسَبَيْنَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللَّهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لا يُشرك به شيئًا – متفق عليه .

৬৪৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিনের চাইতেও বেশি কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে? তিনি বলেন: হাঁ, আকাবার দিন আমি তোমার জাতির কাছ থেকে এমন আচরণের সম্মুখীন হয়েছি, যা উহুদের দিনের চাইতেও অধিকতর কঠিন ছিল, যখন আমি (তাওহীদের বাণী পেশ করার উদ্দেশে) ইবনে আবদ ইয়ালীল ইবনে আবৃন্দ কুলালের নিকট নিজেকে পেশ করলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার কোন জবাব দিল না। আমি তাই সেখান থেকে চিন্তাক্লিষ্ট মন নিয়ে চললাম, এমনকি কারনুস সাআলিব নামক স্থানে পৌঁছার আগ পর্যন্ত যেন আমার হুঁশই ছিল না। এখানে আমি মাথা তুলতেই দেখলাম, এক খণ্ড মেঘ আমার উপর ছায়া বিস্তার করে আছে। তাতে আমি জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলাম। জিবরীল আমাকে ডেকে বলেন, মহান আল্লাহ আপনার কাউমের কথা ও আপনাকে তারা যে জবাব দিয়েছে তা শুনেছেন। আল্লাহ আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে আপনি তাকে আপনার ইচ্ছামত নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডেকে সালাম দিয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ আপনার সাথে আপনার কাউমের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছেন। আমি হচ্ছি পাহাড়ের ফেরেশতা। আমাকে আমার রব আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। আপনি নিজ ইচ্ছামত আমাকে যে কোন কাজের হুকুম করতে পারেন। আপনি যদি চান, আখশাবাইন ৭৯-এর উভয় পাহাড়কে আমি তাদেরসহ একত্রে মিলিয়ে দিই এবং কাফিরদের সমূলে ধ্বংস করে দিই)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : (আমি তাদের ধ্বংস কামনা করি না) আমি বরং আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ এদের ঔরসে এমন সব লোক পয়দা করবেন যারা এক আল্লাহর দাসত্বকে কবুল করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। [টিকা: ‘আল আৎশাব’ হল মক্কাকে বেষ্টনকারী দু’টি পাহাড়। খুব বড় পাহাড়কে আল-আপশাব বলা হয়।] (বুখারী, মুসলিম)

٦٤٤- وَعَنْهَا قَالَتْ مَا ضَرَبَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا قَط بيده ولا امْرَأَةً وَلَا خَادِمًا إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا نَيْلَ مِنْهُ شَيْ قَطَ فَيَنْتَقِمُ مِنْ صَاحِبِهِ إِلا أَن يُنْتَهَكَ شَيْ مِنْ مَحَارِمِ اللَّهِ تَعَالَى فَيَنْتَقِمُ لِلَّهِ تعالى- رواه مسلم.

৬৪৪। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত কখনো কাউকে মারেননি, না কোন স্ত্রীলোককে না কোন খাদিমকে। তাঁকে কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। অবশ্য আল্লাহর নির্ধারিত কোন হারামকে লংঘন করা হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম)

٦٤٥- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ أَمْشِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ بُرْد نَجْرَانِي غَلَيْظُ الْحَاشِيَةِ فَأَدْرَكَهُ أَعْرَابِي فَجَبَدَهُ بردائه جيدة شديدة فنظرت الى صفحة عاتق النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ أَثْرَتْ بها حاشية الرداء مِنْ شِدَّةِ جَبْدَتِهِ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ مُرْ لِي مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي عِندَكَ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ فَضَحِكَ ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِعَطا ء – متفق عليه .

৬৪৫। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাঁটছিলাম। তাঁর গায়ে ছিল মোটা বা চেপ্টা পাড়বিশিষ্ট একটি নাজরানী চাদর। এক বেদুইন তাঁর নিকট এসে তাঁর চাদরটি ধরে ভীষণ সজোরে টান দিল। আমি লক্ষ্য করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘাড়ের পার্শ্বদেশে সজোরে চাদর টানার দরুন চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। বেদুইন বলল, হে মুহাম্মাদ। আপনার নিকট আল্লাহর দেয়া যে মাল-সম্পদ রয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু দেয়ার ব্যবস্থা করুন। তিনি লোকটির প্রতি তাকিয়ে হেলে দিলেন, তারপর তাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)

٦٤٦ – وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَأَنَّى أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَحْكِي نَبِيًّا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِمْ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأَدْمَوهُ وَهُوَ يَمْسَحُ الدم عن وجهه وَيَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لَا يعْلَمُونَ متفق عليه.

৬৪৬। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাতু ওয়াসসালামের মধ্যকার একজন সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তাঁকে তাঁর কাউম আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। তিনি নিজের চেহারা থেকে রক্ত মুছছিলেন আর বলছিলেনঃ হে আল্লাহ। আমার কাউমকে ক্ষমা করুন। কারণ এরা তো অবুঝ। (বুখারী, মুসলিম)

٦٤٧- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال ليسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ متفق عليه.

৬৪৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কুস্তিতে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জয়লাভ করাতে বীরত্ব নেই, বরং ক্রোধের মুহূর্তে নিজকে সংবরণ করতে পারাই প্রকৃত বীরত্বের পরিচায়ক। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৭৬ – কষ্ট-যাতনার মুখে সহনশীল হওয়া

কষ্ট-যাতনার মুখে সহনশীল হওয়া।

قَالَ اللهُ تعالى : وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)

وقَالَ تَعَالَى : وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ.

“আর যে ধৈর্য ধারণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ।” -(সূরা আশ শূরা: ৪৩)

এ সম্পর্কিত অনেক হাদীস ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এখানে আরো একটি হাদীস উল্লেখ করা হলো।

٦٤٨ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَهُ اصلهم وتقطعني وأحسنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِينُونَ إلى وَاحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَى فَقَالَ لئِنْ كُنتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُهُمُ الْمَل وَلا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى ظَهِير عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ على ذلك – رواه مسلم وقد سبق شَرحُهُ فِي بَابِ صِلَةِ الْأَرْحَامِ.

৬৪৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। আমার কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করি, কিন্তু তারা তা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সাথে মন্দ ব্যবহার করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীলতা দেখাই, কিন্তু তারা আমার সাথে অজ্ঞতাসুলভআচরণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যদি তুমি এরূপই হয়ে থাক যেরূপ তুমি বললে, তবে যেন তুমি তাদেরকে গরম ছাই খাওয়াচ্ছ। যতক্ষণ তুমি এ নীতির উপর অবিচল থাকবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সাহায্যকারী (ফেরেশতা) তাদের মুকাবিলায় তোমাকে সাহায্য করতে থাকবে।

ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে ‘আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে।

অনুচ্ছেদঃ ৭৭ – শরী’আতের মর্যাদাপূর্ণ বিধান লংঘনের বেলায় অসন্তোষ প্রকাশ এবং আল্লাহর দীনের খাতিরে প্রতিশোধ গ্রহণ

শরী’আতের মর্যাদাপূর্ণ বিধান লংঘনের বেলায় অসন্তোষ প্রকাশ এবং আল্লাহর দীনের খাতিরে প্রতিশোধ গ্রহণ।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“এটাই বিধান এবং কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিধানকে যথাযথ মর্যাদা দান করলে, তার জন্য এটা তার রবের নিকট কল্যাণকর হবে।” (সূরা আল হজ্জঃ ৩০)

وقَالَ تَعَالَى : إِن تَنصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ.

“তোমরা যদি আল্লাহ্র দীনকে সাহায্য কর তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদযুগলকে মজবুত ও অনড় রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ: ৭)
এ সম্পর্কে আয়িশা (রা) বর্ণিত হাদীস ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।

٦٤٩ – وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرُو الْبَدْرِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إلى النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي لَا تَأْخُرُ عَنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فلان مما يطيل بنا فَمَا رَأَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَضِبَ فِي مَوْعِظَةٌ قط أَشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئِذٍ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ مِنْكُمْ مُنْفَرِينَ فَأَيُّكُمْ أَمْ الناس فليوجز فان من ورائه الكبير والصغير وذا الحاجة – متفق عليه .

৬৪৯। আবু মাসউদ উত্তা ইবনে আমর আল-বদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, অমুক ব্যক্তির কারণে আমার ফজরের নামাযে বিলম্ব হয়ে যায়, কেননা সে আমাদের নিয়ে খুব দীর্ঘ নামায পড়ে। সেদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত অসন্তোষ সহকারে ওয়াজ করলেন, যেরূপ ইতিপূর্বে আমি আর কখনো তাঁকে অসন্তুষ্ট হতে দেখিনি। তিনি বলেনঃ হে লোকেরা। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে লোকদের ঘৃণা সৃষ্টিকারী। তোমাদের যে কেউ লোকদের ইমামতি করে, সে যেন নামাযকে সংক্ষিপ্ত করে। কারণ তার পেছনে (নামাযীদের মধ্যে) থাকে বৃদ্ধ, বালক, দুর্বল এবং হাজতমদ্দ ব্যক্তিবর্গ। (বুখারী, মুসলিম)

٦٥٠ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ سَفَرٍ وقَدْ سَتَرْتُ سَهْوَةٌ لي بقرام فيهِ تَمَاثِيلُ فَلَمَّا رَأَهُ رَسُولُ اللهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَتَكَهُ وَتَلُونَ وَجْهُهُ وَقَالَ يَا عَائِشَةُ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ الله – متفق عليه

৬৫০। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে এলেন। আমি আমার ঘরের আঙিনায় ছবিযুক্ত একটি পর্দা টাঙিয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দাটি দেখামাত্র সেটি ছিঁড়ে ফেললেন এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ হে সায়িশা। কিয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকট সবচাইতে কঠোর শান্তিপ্রাপ্ত হবে ঐসব লোক, যারা (ছবি তুলে বা বানিয়ে) আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করে। (বুখারী, মুসলিম)

٦٥١- وَعَنْهَا أَنْ قُرَيْشًا أهمهم شأن المراة المحرومية التي سَرَقَتْ فَقَالُوا مَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا مَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أَسَامَةً بن زيد حِب رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَلَّمَهُ أَسَامَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَشفَعُ فِي حَدٌ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ تَعَالَى ثُمَّ قَامَ فَاخْتَطَبَ ثُمَّ قَالَ إِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ قَبْلَكُم أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفَ تَرَكُوهُ وَإِذَا سَرَقَ فيهم الضعيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الحد وأيم الله لو أن فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لقطعت يدها – متفق عليه .

৬৫১। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। কুরাইশরা মাখযুম গোত্রের এক (সম্ভ্রান্ত) মহিলার ব্যাপারে খুবই চিন্তায় পড়ে গেল। কারণ সে চুরি করেছিল। তারা পরস্পর বলাবলি করল, তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কে আলাপ করবে। তারাই আবার বলল, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রিয়ভাজন উসামা ইবনে যায়িদ ছাড়া আর কে-ই বা তাঁর সামনে এ ব্যাপারে মুখ খোলার হিম্মত রাখে? অবশেষে উসামা (রা) এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তুমি কি আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দ (শাস্তি) সম্পর্কে সুপারিশ করছ? একথা বলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন, তারপর বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগুলো এজন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যকার কোন অভিজাত ব্যক্তি চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত এবং কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করলে তার উপর হদ্দ কার্যকর করত। আল্লাহর শপথ। মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করত, তাহলে নিশ্চয় আমি তার হাত কেটে দিতাম। (বুখারী, মুসলিম)

٦٥٢- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ ) عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى نُخَامَةٌ في القبلة فشق ذلكَ عَلَيْهِ حَتَّى رُؤى في وجهه فَقَامَ فَحَكَهُ بِيَدِهِ فَقَالَ إِنْ أَحَدَكُمْ اذا قام في صلاته فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ وَإِنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ فَلَا يَبْزُقَنُ أَحَدُكُمْ قبل القبلة ولكن عن يساره أو تحت قدمه ثم أخذ طرف ردائه فَبَصَقَ فِيهِ ثُمَّ رَد بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ فَقَالَ أَوْ يَفْعَلُ هَكَذَا – متفق عليه .

৬৫২। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, মসজিদে কিবলার দিকে কফ লেগে রয়েছে। বিষয়টি তাঁর নিকট খুবই খারাপ লাগল, এমনকি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ লক্ষ্য করা গেল। তৎক্ষণাত তিনি উঠে গিয়ে নিজ হাতে তা আঁচড়ে ফেলে দিলেন, তারপর বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। তার রব তার ও কিবলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান-করেন। অতএব তোমাদের কেউ যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক কোণ ধরলেন এবং তাতে থুথু নিক্ষেপ করে তার একাংশ দ্বারা অপর অংশ রগড়ে দিলেন, তারপর বললেন: অথবা সে এরূপ করবে। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৭৮ – জনগণের সাথে শাসক কাজেকর্মে নম্রতা অবলম্বন করবে, তাদেরকে ভালোবাসবে, তাদেরকে সদুপদেশ দেবে এবং তাদেরকে প্রতারিত করবে না, কঠোরতা করবে না, তাদের কল্যাণ সাধনে ও প্রয়োজনপূরণে অমনোযোগী হবে না

জনগণের সাথে শাসক কাজেকর্মে নম্রতা অবলম্বন করবে, তাদেরকে ভালোবাসবে, তাদেরকে সদুপদেশ দেবে এবং তাদেরকে প্রতারিত করবে না, কঠোরতা করবে না, তাদের কল্যাণ সাধনে ও প্রয়োজনপূরণে অমনোযোগী হবে না।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ.
মহান আল্লাহ বলেনঃ

“যে সকল মুমিন তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তুমি বিনম্র হও।” (সূরা আশ্ শুআরা: ২১৫)

وقَالَ تَعَالَى : إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الفحشاء والمنكر وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ.

“বস্তুত আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দিচ্ছেন। আর তিনি নিষেধ করছেন অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ ও সীমালংঘন। আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” (সূরা আন নাহল: ৯০)

٦٥٣- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كلكم راع وكلكم مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ الْإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ والرجل راع في أهله ومسئول عن رعيته والمرأة راعية في بيت زوجها وَمَسْئُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَكُلُّكُمْ راع ومسئول عن رعيته – متفق عليه

৬৫৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী (বা দায়িত্বশীল) এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরুষ তার পরিবার ও সংসারের জন্য দায়িত্বশীল এবং তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীলোক তার স্বামীর মরের রক্ষণাবেক্ষণকারিণী এবং তাকে সে সম্পর্কে জওয়াবদিহি করতে হবে। খাদিম তার মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তাকে তার সে দায়িত্বপালন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জওয়াবদিহি করতে হবে। (বুখারী, মুসলিম)

١٥٤ – وَعَنْ أَبِي يَعْلَى مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا مِنْ عَبْدِ يَسْتَرْعِيْهِ اللَّهُ رَعِيَّةً يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوْتُ وَهُوَ غَاشِ لِرَعِيَّتِهِ إِلا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّة – متفق عليه ، وفي رواية فلم يَحْطِهَا بِنُصْحه لم يجد رائحة الجنة ، وفي رواية لِمُسْلِمِ مَا مِنْ أمير يلى أمورَ الْمُسْلِمِينَ ثُمَّ لَا يَجْهَدُ لَهُمْ وَيَنْصَح لهم إلا لم يدخل معهم الجنة .

৬৫৪। আবু ইয়ালা মা’কিল ইবনে ইয়াসার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে প্রজাসাধারণের তত্ত্বাবধায়ক বানাবার পর সে যদি তাদের সাথে প্রতারণা করে থাকে, তবে সে যেদিনই মরুক, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে: সেই ব্যক্তি যদি তার প্রজাদের কল্যাণ সাধনে আত্মনিয়োগ না করে, তাহলে সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছেঃ যে শাসক মুসলিমদের যাবতীয় বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হয়; তারপর তাদের উপকারের জন্য কোনরূপ চেষ্টা যত্ন করে না এবং তাদের কল্যাণ সাধনে এগিয়ে আসে না, সে মুসলিমদের সাথে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

٦٥٥ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي بَيْتِي هذا اللهُم مَنْ وَلِي مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقٌ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِى مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفق به رواه مسلم

৬৫৫। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ ঘরেই বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ। যে ব্যক্তি আমার উত্থাতের কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করলে তুমিও তার প্রতি কঠোরতা কর। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি নরম ও কোমল আচরণ করে তুমিও তার প্রতি কোমল আচরণ কর। (মুসলিম)

9 ٦٥٦- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ ا كلمَا هَلَكَ نَبِي خَلَقَهُ نَبِي وَإِنَّهُ لَا وَسَلَّمَ كَانَتْ بَنو اسرائيلَ تَسُوسُهُمُ الأنبياء كا نَبِي بَعْدِي وَسَيَكُونُ بَعْدِي خُلَفَاء فَيَكْثُرُونَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ أوْفُوا بِبَيْعَةِ الأَول فَالْأول ثُمَّ أَعْطَوْهُمْ حَقَّهُمْ وَاسْأَلُوا اللَّهَ الَّذِي لَكُمْ فَإِنَّ اللَّهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ متفق عليه .

৬৫৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বনী ইসরাঈলের রাজনৈতিক কার্যক্রমের পরিচালক ছিলেন তাদের নবীগণ। এক নবীর ওফাতের পর পরবর্তী নবী তাঁর স্থান পূরণ করতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী নেই। অচিরেই আমার পরে বেশ কিছু সংখ্যক খলীফা হবে। সাহাবীগণ বলেন: তখনকার জন্য আমাদের প্রতি আপনার কি নির্দেশ? তিনি বলেনঃ তোমরা পর্যায়ক্রমে একজনের পর আরেকজনের বাইয়াত পূর্ণ করবে, অতঃপর তাদের প্রাপ্য তাদের প্রদান করবে এবং তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। কারণ আল্লাহ তাদের উপর জনসাধারণের তত্ত্বাবধানের যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি নিজেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। (বুখারী, মুসলিম)

٦٥٧- وَعَنْ عَائِدَ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُبَيْدِ اللهِ بْنِ زِيَادٍ فَقَالَ لَهُ أَي بُنَى إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ شَرَّ الرعاء الخطمَة فَإِيَّاكَ أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ – متفق عليه .

৬৫৭। আয়েয ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে বৎস। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: নিকৃষ্ট শাসক সেই ব্যক্তি যে জনগণের প্রতি কঠোর ও অত্যাচারী। কাজেই সতর্ক থেকো তুমি যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত না হও। (বুখারী, মুসলিম)

٦٥٨- وَعَنْ أَبِي مَرْيَمَ الْأَزْدِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ لِمُعَاوِيَةَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ وَلاهُ اللهُ شَيْئًا مِنْ أَمُورِ الْمُسْلِمِينَ فَاحْتَجَبَ دُونَ حَاجَتِهِمْ وَخَلْتِهِمْ وَفَقْرِهِمْ احْتَجَبَ اللَّهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلْتِهِ وَفَقْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَجَعَلَ مُعَاوِيَةُ رَجُلاً على حوائج الناس – رواه ابو داود والترمذي.

৬৫৮। আবু মারইয়াম আল-আব্দী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি মু’আবিয়া (রা)-কে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। যাকে আল্লাহ মুসলিমদের শাসক নিযুক্ত করেন এবং সে তাদের প্রয়োজন, চাহিদা ও দরিদ্রাবস্থা দূর করার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, আল্লাহও কিয়ামাতের দিন তার প্রয়োজন, চাহিদা ও দারিদ্র্য পূরণের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না। অতঃপর মু’আবিয়া (রা) জনগণের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য একজনকে নিয়োগ করেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

অনুচ্ছেদ: ৭৯ – ন্যায়পরায়ণ শাসক

ন্যায়পরায়ণ শাসক।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচরণের নির্দেশ দিচ্ছেন।” (সূরা আন্ নাহল: ৯০)।

وقال تعالى : وأَقْسِطُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ.

“তোমরা সুবিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন।” (সূরা আল হুজুরাত : ৯)

٦٥٩- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌ نَشَأَ فِي عِبَادَة الله تَعَالَى وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلى فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابًا فِي اللَّهِ اجْتَمَعًا عَلَيْهِ وَتَفَرِّنَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةً ذات منصب وجَمَالَ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تصدق بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تَنْفِقُ يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ – متفق عليه

৬৫৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ সেই কঠিন দিনে তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়াই থাকবে না। তারা হচ্ছেঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক; (২) যে যুবক আল্লাহ তাআলার ইবাদাতে মশগুল; (৩) যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদের সাথে সংযুক্ত থাকে; (৪) যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে, আল্লাহরই জন্য তারা মিলিত হয় এবং আল্লাহর জন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়; (৫) ঐ লোক যাকে অভিজাত বংশীয় কোন সুন্দরী রমণী আহ্বান করে (খারাপ কাজের), কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি; (৬) ঐ লোক যে গোপনে দান করে, এমনকি তার ডান হাত কী দান করেছে তা তার বাম হাত জানে না এবং (৭) যে লোক একাকী নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করে দু’চোখে অশ্রু ঝরায়। (বুখারী)

٦٦٠ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ المُقْسِطِينَ عِندَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُوْرِ الَّذِينَ يَعْدِلُونَ في حكمهم وأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلوا – رواه مسلم .

৬৬০। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয় ন্যায়বিচারকগণ আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বারে আসন গ্রহণ করবে, যারা তাদের বিচার-ফায়সালার ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে এবং যেসব দায়দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত করা হয় সেসব বিষয়ে সুবিচার করে। (মুসলিম)

٦٦١ – وَعَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ خِيَارُ المَتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ وَتُصَلُّوْنَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ وَشِرَارُ أَيْمَتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ الله أَفَلا تُنَابِدُهُمْ قَالَ لَا مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاةَ لا ما أقاموا فيكم الصلاة – رواه مسلم.

৬৬১। আওফ ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমাদের মধ্যে উত্তম শাসক ও ইমাম তারা যাদেরকে তোমরা ভালোবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালোবাসে। তোমরা তাদের জন্য দু’আ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দু’আ করে। অপরদিকে তোমাদের মধ্যে মন্দ ও নিকৃষ্ট শাসক তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে, তোমরা তাদের প্রতি অভিসম্পাত কর এবং তারাও তোমাদের প্রতি অভিসম্পাত করে। রাবী বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকব না। তিনি বলেন: না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে। (মুসলিম)

٦٦٢ – وَعَنْ عِبَاضِ بْنِ حِمَارٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ أَهْلُ الْجَنَّة ثلاثة ذو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُوَفِّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقٌ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمِ وَعَفِيفٌ مُتَعَقِّفٌ ذُو عيال- رواه مسلم .

৬৬২। ইয়াদ ইবনে হিমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: জান্নাতের অধিকারী হবে তিন শ্রেণীর লোকঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, যাকে তাওফিক দান করা হয়েছে (দান-খয়রাত করার ও জনগণের কল্যাণ সাধন করার); (২) দয়ার্দ্র হৃদয় ও রহমদিল ব্যক্তি যার অন্তর প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অতিশয় কোমল ও নরম এবং (৩) যে ব্যক্তি শরীর ও মনের দিক থেকে পূতপবিত্র, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী ও পরিবার বেষ্টিত। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ ৮০ – শাসকের পাপযুক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং তাদের পাপযুক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা হারাম

শাসকের পাপযুক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং তাদের পাপযুক্ত নির্দেশের আনুগত্য করা হারাম।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا الله وأطيعوا الرسول وأولى الأمر منكم

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“হে ঈমানদারগণ। তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের।” (সূরা আন্ নিসা : ৫৯)

٦٦٣ – وَعَنِ ابْنِ عَمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ على المرء المُسلِم السمع والطاعَةُ فِيمَا أَحَبٌ وَكَرِهَ إِلَّا أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَإِذَا أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة – متفق عليه

৬৬৩। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক মুসলিমের উপর (শাসকের নির্দেশ) শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা অবশ্যকর্তব্য, চাই তা তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাপাচারের আদেশ দেয়া হয়। পাপাচারের আদেশ দেয়া হলে তা শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করার কোনও অবকাশ নেই। (বুখারী, মুসলিম)

٦٦٤ – وَعَنْهُ قَالَ كُنَّا إِذَا بَابَعْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى السَّمْعِ والطَّاعَةِ يَقُولُ لَنَا فِيمَا اسْتَطَعْتُمْ – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.

৬৬৪। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের নিকট শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার উপর বাইয়াত (শপথ) করতাম, তখন তিনি আমাদের বলতেন: যথাসাধ্য আনুগত্য তোমাদের জন্য ফরয। (বুখারী, মুসলিম)

٦٦٥ – وَعَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ خَلَعَ يَدَا مِنْ طاعة لقى الله يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ ميتة جَاهِلِيَّة رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَهُوَ مُفَارِقٌ لِلْجَمَاعَةِ فَإِنَّهُ يَمُوتُ مِيتَة جاهلية.

৬৬৫। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেয়, কিয়ামাতের দিন সে আল্লাহর সাথে এরূপ অবস্থায় মিলিত হবে যে, তার পক্ষে কোন যুক্তি থাকবে না। যে লোক এরূপ অবস্থায় মারা যাবে যে, তার ঘাড়ে আনুগত্যের বন্ধন নেই, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।

ইমাম মুসলিম এটি বর্ণনা করেছেন। তার অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু।

٦٦٦ – وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسمعوا وَأَطِيعُوا وَإِنِ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ كَانْ رَأْسَهُ رَبِيبَةً رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.

৬৬৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শ্রবণ কর ও আনুগত্য কর, যদিও আঙ্গুরের মত (ক্ষুদ্র) মাথাবিশিষ্ট কোন হাবশী গোলামকে তোমাদের শাসক নিয়োগ করা হয়। (বুখারী)

٦٦٧ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ عَلَيْكَ السَّنعُ والطَّاعَةُ فِي عُشركَ وَيُسْرِكَ وَمَنْشَطَكَ وَمَكْرَهكَ وأثرة عليك رواه مسلم.

৬৬৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদিনে ও দুর্দিনে, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে এবং তোমার অধিকার খর্ব হওয়ার ক্ষেত্রেও (বা তোমার উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও, শাসকের নির্দেশ) শ্রবণ করা ও আনুগত্য করা তোমার জন্য অপরিহার্য। (মুসলিম)

٦٦٨ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَتَزَلْنا منزلاً فَمِنَّا مَنْ يُصْلِحُ حَيَانَهُ وَمِنَّا مَنْ يُنْتَضِلُ وَمِنَّا مَنْ هُوَ في حشره إذ نادى منادى رسولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصلاة جامعة فَاجْتَمَعنا إلى رَسُولِ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَنَّهُ لَمْ قَبْلِي إِلا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يُدلُّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ يَكُن بِي قَبْ شَرِّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَإِنْ أَمْتَكُمْ هذه جُعِلَ عَافِيَتُهَا فِي أُولُهَا وَسَيُصِيبُ أَخْرَهَا بلاء وأمور تنكرونها وتجىء فَتَنَّ يُرقِّقُ بَعْدُهَا بَعْضًا وَتَجِيءُ الْفِتْنَةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ هذه مهلكني ثم تنكشف وتجيء الفتنةُ فَيَقُولُ الْمُؤْمِنُ هَذِهِ هَذِهِ فَمَنْ احب أَنْ يُرْحَزَحَ عَنِ النَّارِ وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخر وليات الى الناس الذي يُحِبُّ أن يوتى اليْهِ وَمَنْ بَايَعَ إِمَامًا فَأَعْطَاهُ صفقَهُ يَدِهِ وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ فَلْيُطِعْهُ إِنِ اسْتَطَاعَ فَإِنْ جَاءَ أَخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنُقَ الآخر – رواه مسلم.

৬৬৮। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলাম। আমাদের কেউ তার তাঁবু ঠিকঠাক করছিলাম, কেউ বা তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা করছিল, কেউ তার চতুষ্পদ জন্তুর দেখাশুনায় ব্যস্ত ছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষক ডেকে বলেন, নামাযের জন্য জমায়েত হোন। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সমবেত হলাম। তিনি বলেন: আমার পূর্বে যে কোন নবীই অতিক্রান্ত হয়েছেন তাঁর জ্ঞান অনুযায়ী নিজের উন্মাতকে কল্যাণের পথ প্রদর্শন করা এবং যা তাঁর দৃষ্টিতে মন্দ বা অন্যায় তা থেকে তাদেরকে সতর্ক করা ছিল তার অপরিহার্য কর্তব্য। আর তোমাদের এ উম্মাতের অবস্থা এই যে, এ উম্মাতের প্রথম দিকে রয়েছে শান্তি ও সুস্থিরতা এবং শেষ দিকে রয়েছে বিপদ-মুসিবাতের ঘনঘটা। তখন তোমরা এমন সব বিষয় ও ঘটনাবলীর সম্মুখীন হবে যা হবে তোমাদের অপছন্দনীয়। এমন সব ফিতনার উদ্ভব হবে যার একাংশ অপর অংশকে করবে দুর্বল (আগেরটির তুলনায় পরেরটি হবে আরো ভয়াবহ)। একেকটি মুসিবাত আসবে আর মুমিন বলবে, এটাই বুঝি আমাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। তারপর সে বিপদ কেটে যাবে। পুনরায় বিপদ-মুসিবাত আসবে। তখন মুমিন বলবে, এটাই হয়তো আমার ধ্বংসের কারণ হবে। এহেন কঠিন মুহূর্তে যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক তার জন্য অপরিহার্য হল আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমানদার হিসেবে মৃত্যুবরণ করা। আর যেরূপ ব্যবহার সে পেতে আগ্রহী সেরূপ ব্যবহারই যেন লোকদের সাথে করে। কেউ যদি ইমামের নিকট বাইআত করে, তার হাতে হাত রাখে এবং তার নিকট অন্তরের অর্থ নিবেদন করে তাহলে যেন যথাসাধ্য তার আনুগত্য করে। যদি অপর কোন লোক ইমামের মুকাবিলায় আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তোমরা তার ঘাড় মটকে দেবে। (মুসলিম)

٦٦٩- وَعَنْ أَبِي هُنَيْدَةَ وَايْلِ بْنِ حُجْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلَ سَلَمَةُ ابْنُ يَزِيدَ الجعفي رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا نَبِيِّ اللهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أمراء يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْتَعُونَا حَقْنَا فَمَا تَأْمُرُنَا فَأَعْرَضَ عَنْهُ ثُمَّ سَأَلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ – رواه مسلم .

৬৬৯। আবু হুনাইদা ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালামা ইবনে ইয়াযীদ আল-জুফী (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী। আমাদের উপর যদি এরূপ শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হয় যারা তাদের অধিকার আমাদের নিকট থেকে পুরোপুরি আদায় করে নেবে, কিন্তু আমাদের প্রাপ্য অধিকার দেবে না, তখন আমাদের জন্য আপনার নির্দেশ কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সালামা পুনরায় জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা শ্রবণ করবে ও আনুগত্য করে যাবে। কারণ তাদের (পাপের) বোঝা তাদের উপর, তোমাদের বোঝা তোমাদের উপর। (মুসলিম)

٦٧٠- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِى اثرة وأمور تُنْكِرُونَهَا قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تَأْمُرُ مَنْ أَدْرَكَ مِنا ذلكَ قَالَ تُوَدُّونَ الْحَقِّ الَّذِينَ عَلَيْكُمْ وَتَسْأَلُونَ اللهَ الذي لكم متفق عليه

৬৭০। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার পরে তোমরা অধিকার হরণ ও বহু অপছন্দনীয় জিনিসের সম্মুখীন হবে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তার জন্য আপনার নির্দেশ কী? তিনি বলেন: এরূপ অবস্থায় তোমরা তোমাদের নিকট প্রাপ্য যথারীতি পরিশোধ করবে এবং তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। (বুখারী, মুসলিম)

٦٧١- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أطاعَنِى فَقَدْ أَطاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَمَنْ يُطِعِ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ يَعْصِ الأمير فَقَدْ عَصَانِي – متفق عليه

৬৭১। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। যে আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। অনুরূপ যে আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল এবং যে আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল। (বুখারী, মুসলিম)

٦٧٢- وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال من كرة من أميره شَيْئًا فَلْيَصْبِرُ فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلْطَانِ شِبْرًا مَاتَ ميتة جاهلية – متفق عليه.

৬৭২। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যদি তার নেতার মধ্যে কোন অপ্রীতিকর কিছু লক্ষ্য করে, তাহলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কারণ যে ইসলামী রাষ্ট্রশক্তি থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গিয়ে মারা যায়, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। (বুখারী, মুসলিম)

٦٧٣- وعن أبي بُكْرَةً رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ أَمَانَ السُّلْطَانَ أَهَانَهُ الله رَوَاهُ التَّرْمِذِي وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ.

৬৭৩। আবু বাকরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: যে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধানকে লাঞ্ছিত করবে, আল্লাহও তাকে লাঞ্ছিত করবেন।
ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ : ৮১ – রাষ্ট্রীয় পদ প্রার্থনা নিষিদ্ধ। উক্ত পদের জন্য মনোনীত না হলে বা তার প্রতি মুখাপেক্ষী না হলে তা পরিহার করা উচিৎ

রাষ্ট্রীয় পদ প্রার্থনা নিষিদ্ধ। উক্ত পদের জন্য মনোনীত না হলে বা তার প্রতি মুখাপেক্ষী না হলে তা পরিহার করা উচিৎ।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“এটা পরকালের সেই আবাস যা আমরা এমন সব লোকদের জন্য নির্দিষ্ট করি মারা যমিনের বুকে উদ্ধত হতে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য নির্ধারিত।” (সূরা আল কাসাস: ৮৩)

٦٧٤ – وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْن سَمُرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ لَا تَسْأَلِ الْإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أَعْطَيْتَهَا عَنْ غَيْرِ مَسْأَلَة أعنْتَ عَلَيْهَا وَإِنْ أَعْطَيْتُهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وكُلْتَ إِلَيْهَا وَإِذَا خَلَقْتَ عَلَى يَمِينِ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وكَفِّرْ عَن يمينك – متفق عليه.

৬৭৪। আবু সাঈদ আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা। নেতৃত্বপ্রার্থী হয়ো না। কারণ প্রার্থী না হয়ে নেতৃত্ব প্রাপ্ত হলে তুমি এ ব্যাপারে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। পক্ষান্তরে প্রার্থী হয়ে নেতৃত্ব লাভ করলে তোমার উপরই যাবতীয় দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে। তুমি কোন বিষয়ে শপথ করার পর তার বিপরীতে কল্যাণ লক্ষ্য করলে তখন যেটা ভালো সেটাই করবে এবং শপথের কাফ্ফারা আদায় করবে। (বুখারী, মুসলিম)

٦٧٥ – وَعَنْ أَبِي ذَرِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَبَا ذَرَ إِنِّي أَرَاكَ ضَعِيفًا وَإِنِّي أَحِبُّ لَكَ مَا أَحِبُّ لِنَفْسِي لَا تَأْمُرَنَّ علَى اثْنَيْنِ وَلا تَوَلين مال يتيم – رواه مسلم .

৬৭৫। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবু যার। আমি তোমাকে দুর্বল ও কমজোর দেখতে পাচ্ছি। আমি তোমার জন্য তাই পছন্দ করি, যা আমার নিজের জন্য পছন্দ করি। তুমি দু’জনেরও নেতা হয়ো না এবং ইয়াতীমের সম্পদের তত্ত্বাবধায়কও হয়ো না। (মুসলিম)

٦٧٦ – وَعَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ الله الا تَسْتَعملني فَضَرَبَ بيده على منكبي ثُمَّ قَالَ يَا أَبَا ذَرَ إِنَّكَ ضَعِيفٌ وَأَنَّهَا أَمَانَةٌ وَأَنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةً إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا وادى الذي عَلَيْهِ فِيهَا – رواه مسلم .

৬৭৬। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল। আপনি কি আমাকে সরকারী পদে নিয়োগ করবেন না? তিনি আমার কাঁধে হাত মেরে বলেনঃ হে আবু যার। তুমি দুর্বল মানুষ এবং এটা হচ্ছে এক (বিরাট) আমানাত। এটা (নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব) কিয়ামাতের দিন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও অনুতাপের কারণ হবে। অবশ্য যে ব্যক্তি এটাকে যথার্থভাবে গ্রহণ করে এবং এটা গ্রহণের ফলে তার উপর অর্পিত দায়দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তার কথা স্বতন্ত্র। (মুসলিম)

٦٧٧- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّكُمْ سَتَحْرِصُونَ عَلَى الْإِمَارَةِ وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ – رواه البخاري.

৬৭৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অচিরেই তোমরা নেতৃত্ব লাভের অভিলাষী হবে। (মনে রেখ) কিয়ামাতের দিন এটা তোমাদের জন্য লজ্জা ও অনুতাপের কারণ হবে। (বুখারী)

অনুচ্ছেদঃ ৮২ – শাসক ও বিচারক প্রমুখকে সরকারী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উত্তম সভাসদ নিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান এবং নিকৃষ্ট সভাসদ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কীকরণ

শাসক ও বিচারক প্রমুখকে সরকারী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উত্তম সভাসদ নিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান এবং নিকৃষ্ট সভাসদ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কীকরণ।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : الأخلاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلا الْمُتَّقِينَ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“সেদিন বন্ধুরা হয়ে যাবে পরস্পরের শত্রু, একমাত্র আল্লাহভীরু লোকেরা ছাড়া।” (সূরা আয যুখরুফ: ৬৭)

أبي سعيد وأبي هريرة رضى ا ريرة رضي الله عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِي وَلا اسْتَخْلَفَ مِنْ خَلِيفَةِ إِلَّا كَانَتْ لَهُ بطانتان بطانة تأمرُهُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَحْضُهُ عَلَيْهِ وَ بِطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالشَّرِّ وَتَحْضُهُ عَلَيْهِ وَالْمَعْصُومُ مَنْ عَصَمَ الله – رواه البخاري.

৬৭৮। আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যে নবীকেই পাঠিয়েছেন এবং যে খলীফাই নিযুক্ত করেছেন, তার দুই সাথী থাকে, একজন তাকে ভালোর নির্দেশ দেয় এবং ভালোর প্রতি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করে। পক্ষান্তরে আরেকজন তাকে মন্দের নির্দেশ দেয় এবং মন্দের প্রতি উৎসাহিত করে। গুনাহমুক্ত সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। (বুখারী)

٦٧٩- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذا أَرادَ اللهُ بِالْأَمِيرِ خَيْراً جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ صِدْقٍ إِنْ نَسِي ذَكَرَهُ وَإِنْ ذَكَرَ أعانه وإذا أراد بِهِ غَيْرَ ذَلِكَ جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ سُوءٍ إِنْ نَسِيَ لَمْ يُذكِّرُهُ وَإِنْ ذَكَرَ لَمْ بعنه رواه ابو داود باسناد جيد على شرط مسلم.

৬৭৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ যখন কোন শাসকের কল্যাণ সাধনের ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্য সত্যের মন্ত্রণাদানকারী নিযুক্ত করে দেন। শাসক কোন বিষয় ভুলে গেলে সে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তা তার স্মরণে থাকলে সে তাকে সাহায্য ও সহায়তা করে। আল্লাহ যদি কোন শাসকের ভালো ছাড়া অন্য কিছুর ইচ্ছা করেন, তাহলে তার জন্য একজন খারাপ মন্ত্রণাদানকারী নিযুক্ত করে দেন। শাসক কোন বিষয় ভুলে গেলে সে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় না এবং তার স্বরণ থাকলে সে তাকে কোনরূপ সাহায্য করে না। (আবু দাউদ)

অনুচ্ছেদ: ৮৩ – যে লোক কোন সরকারী পদ, বিচারকের পদ ইত্যাদির প্রার্থী বা আকাঙ্ক্ষী হয়ে নিজেকে পেশ করে, তাকে উক্ত পদে নিয়োগদান নিষিদ্ধ

যে লোক কোন সরকারী পদ, বিচারকের পদ ইত্যাদির প্রার্থী বা আকাঙ্ক্ষী হয়ে নিজেকে পেশ করে, তাকে উক্ত পদে নিয়োগদান নিষিদ্ধ।

٦٨٠- عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَرَجُلانِ مِنْ بَنِي عَلَى فَقَالَ أَحَدُهُمَا يَا رَسُولَ اللَّهَ أَمْرُنَا علَى بَعْضٍ مَا وَلاكَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَقَالَ الْآخَرُ مِثْلَ ذَلِكَ فَقَالَ إِنَّا وَاللَّهِ لَا نُوَلَّى هذا الْعَمَلَ أَحَدًا سَأَلَهُ أَوْ أَحداً حرص عليه متفق عليه.

৬৮০। আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার দুই চাচাতো ভাইসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাযির হলাম। তাদের একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল। মহান আল্লাহ আপনাকে যে রাষ্ট্র দান করেছেন, তার কোন পদে আমাকে নিয়োগ করুন। অপরজনও অনেকটা এরূপই আবেদন করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহর শপথ। আমরা এমন কোন লোকের উপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না যে তার জন্য প্রার্থী হয় অথবা তার আকাঙ্ক্ষা করে। (বুখারী, মুসলিম)

অধ্যায় : ১

কিতাবুল আদাব (শিষ্টাচার)

অনুচ্ছেদ : ১ – লজ্জাশীলতা ও তার মাহাত্ম্য এবং তা সৃষ্টির জন্য উৎসাহ প্রদান

লজ্জাশীলতা ও তার মাহাত্ম্য এবং তা সৃষ্টির জন্য উৎসাহ প্রদান।

٦٨١- عن ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرْ على رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِي الْحَيَاءِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَهُ فَإِنَّ الْحَيَاء مِنَ الْإِيمَانِ متفق عليه.

৬৮১। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আনসারী তখন তার ভাইকে লজ্জাশীলতার জন্য উপদেশ দিচ্ছিল (ভর্ৎসনা করছিল)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছাড় তাকে। লজ্জাশীলতা ঈমানেরই অংগবিশেষ। (বুখারী, মুসলিম)

٦٨٢ – وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَيَاء لا يأتي إلا بخير – متفق عليه، وفي رواية لمسلم الحياء خَيْر كُلُّهُ أَوْ قَالَ الْحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ.

৬৮২। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এই হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ রয়েছেঃ লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণকর।

٦٨٣- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الإِيمَانُ بِضْعُ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعَ وَسِتُونَ شُعْبَةٌ فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وادُنَاهَا اماطة الأذى عن الطريق والحياء شُعْبَةٌ مِّنَ الْإِيمَانِ متفق عليه.

৬৮৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈমানের সত্তরের অধিক অথবা ঘাটের অধিক শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তমটি
হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) কথাটি এবং সর্বনিম্নটি হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। লজ্জাশীলতাও ঈমানের অন্যতম শাখা। (বুখারী, মুসলিম)

٦٨٤ – وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدَّ حَيَاءٌ مِّنَ الْعَدْرَاء في خدرها فَإِذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ فِي وجهه – متفق عليه.

৬৮৪। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চাইতেও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। কোন বিষয় তাঁর দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় হলে তাঁর চেহারা দেখেই আমরা তা (তাঁর অসন্তুষ্টি) আঁচ করে নিতাম।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ লজ্জাশীলতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন: এটি এমন একটি গুণ যা ঘৃণিত ও বর্জনীয় জিনিস পরিহার করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এবং প্রাপকের প্রাপ্য যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে বাধ্য করে। আবুল কাসিম জুনাইদ (র) লজ্জাশীলতার নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দিয়েছেনঃ

লজ্জাশীলতা হল, মানুষ প্রথমত আল্লাহর অপরিসীম দয়া, অনুগ্রহ ও ইহসানের প্রতি লক্ষ্য করবে, তারপর নিজের ত্রুটি ও অক্ষমতা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করবে। এ উভয়বিধ চিন্তার ফলে মানসপটে যে ভাবের উদয় হয়, তাকেই বলা হয় লজ্জাশীলতা।

অনুচ্ছেদ: ২ – গোপন বিষয় প্রকাশ না করা

গোপন বিষয় প্রকাশ না করা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولاً.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর। নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৪)

٦٨٥ – عَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ مِنْ أَشَرُ النَّاسِ عِندَ اللهِ مَنْزِلَةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلُ يُقْضِي إِلى المراة وتقضى إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرهَا – رواه مسلم.

৬৮৫। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্টতম হবে ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে শয্যা গ্রহণ করে এবং তার স্ত্রীও তার সাথে শয্যা গ্রহণ করে, তারপর তাদের পরস্পরের মিলন ও সহবাসের গোপন কথা লোকদের নিকট প্রকাশ করে। [টিকা: ৮০. অর্থাৎ সহবাস পূর্ব অবস্থা, সহবাসকালীন বিষয়াদি ও তার পরের কথাবার্তা ইত্যাদি অন্যের নিকট বলে দেয়। বস্তুত এররূপ গর্হিত কাজ কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।] (মুসলিম)

٦٨٦ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حِيْنَ تَأَيُّمَتْ بِنْتُهُ حَفْصَةٌ قَالَ لَقِيتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حفصة فَقُلْتُ أن شئتَ الكَحْتُكَ حَفْصَةَ بنت عُمَرَ قَالَ سَانْظُرُ فِي أَمْرِي فَلَبِثْتُ ليالي ثُمَّ لقيني فقال قد بدا لي أن لا اتزوج يومي هذا فلقيت أبا بكر الصديق رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَقُلْتُ إِنْ شِئتَ الكَحْتُكَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ فَصَمَتَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فَلَمْ يَرْجِعُ إِلَى شَيْئًا فَكُنتُ عَلَيْهِ أَوْجَدَ مِنِّي عَلَى عُثْمَانَ فَلَبِثْتُ لَيَالِي ثُمَّ خَطبَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْكَحْتُهَا إِيَّاهُ فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لعلك وجدت على حِينَ عَرَضْتَ عَلَى حفصه فلم أَرْجِعُ إِلَيْكَ شَيْئًا فَقُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أن أرجع إليكَ فِيمَا عَرَضْتَ عَلَى إِلَّا أَنِّي كُنْتُ عَلِمْتُ أَنَّ النَّبِي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَهَا فَلَمْ أَكُن لأنسى سِرِّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَوْ تَرَكَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَبِلْتُهَا – رواه البخاري.

৬৮৬। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রা)-র কন্যা হাফসা (রা) বিধবা হওয়ার পর তিনি (উমার) বলেন, আমি উসমান ইবনে আফ্ফানের সাথে সাক্ষাত করলাম। তাঁর সাথে হাফসার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলাম এবং বললাম, যদি আপনি চান তাহলে উমারের কন্যা হাফসাকে আপনার নিকট বিবাহ দিই। উসমান (রা) বলেন, আচ্ছা, আমি এ ব্যাপারে ভেবে দেখছি। উমার (রা) বলেন, আমি কয়েক দিন অপেক্ষা করলাম। তারপর উসমানের সাথে সাক্ষাত হলে তিনি বলেন, আমি উপলব্ধি করলাম যে, এখন আমি বিবাহ করব না। উমার (রা) বলেন, আমি আবু বাক্স আস্ সিদ্দীক (রা)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তাকে বললাম, আপনি যদি চান তাহলে উমারের কন্যা হাফসাকে আপনার সাথে বিবাহ দিই। আবু বাক্স (রা) নীরব রইলেন, আমাকে কোন জবাব দিলেন না। উসমানের জওয়াবের চাইতে আবু বাক্সের এ আচরণে আমি নিজেকে বেশি আহত বোধ করলাম। কয়েক দিন অপেক্ষা করার পর অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে বিবাহ করার পয়গাম পাঠান। আমি তাঁর সাথেই হাফসার বিয়ে সম্পন্ন করলাম। এরপর আবু বাক্স (রা) আমার সাথে সাক্ষাতকালে বলেন, সম্ভবত সেদিন আমার তরফ থেকে আপনি ব্যথা পেয়েছেন, যেদিন আপনি হাফসাকে বিয়ে করার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, আমি তার কোন জবাব দিইনি। আমি বললাম, হাঁ। আবু বাক্স (রা) বলেন, আপনি হাফসাকে আমার জন্য পেশ করার পর তার জবাব দেয়ার পথে একমাত্র প্রতিবন্ধক এটাই ছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং তা আমার জানা ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ গোপন বিষয়টি প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। অবশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে গ্রহণ না করতেন, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে কবুল করতাম। (বুখারী)

٦٨٧- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كُنْ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وسلم عِندَهُ فَاقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي مَا تَخْطِئُ مِشْيَتُهَا مِنْ مِشْيَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا فَلَمَّا رَأهَا رَحبَ بِهَا وَقَالَ مَرْحَبًا بِابْنَتِي ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ سَارُهَا فَبَكَتْ بُكَاءً شَدِيدًا فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا سَارِهَا الثانية فَضَحِكَتْ فَقُلْتُ لَهَا خَصْكِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ نسانه بالسرارِ ثُمَّ انْتِ تَبْكِينَ؟ فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سالتها ما قَالَ لك رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ مَا كُنْتُ لِأَفْشَى عَلَى رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِرَّهُ فَلَمَّا تُوفَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ عَزَمْتُ عَلَيْكَ بِمَا لِي عَلَيْكَ مِنَ الْحَقِّ لَمَا حَدَّثْتِنِي مَا قَالَ لَكَ رسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ أما الآن فَنَعَمْ أَمَّا حِينَ سَارِنِي فِي المرة الأولى فَأَخْبَرَنِي أَن جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُهُ الْقُرْآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ وَأَنَّهُ عَارَضَهُ الآن مَرَّتَيْنِ وَإِنِّي لا أرى الأجل الا قَدِ اقْتَرَبَ فَاتَّقِي اللَّهَ وَأَصْبِرِي فَإِنَّهُ نعم السلف أنا لك فبكيت بكاني الذي رايت فَلَمَّا رَأَى جَزَعِي سَارِنِيالثانية فَقَالَ يَا فَاطِمَةُ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ أَوْ سَيِّدَةَ نساء هذه الأمة فضحكت ضحكي الذي رايت – متفق عليه وهذا لفظ مسلم .

৬৮৭। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল স্ত্রী তাঁর নিকটেই ছিলেন। এমন সময় ফাতিমা (রা) হাঁটতে হাঁটতে সেখানে এসে উপস্থিত। বলা বাহুল্য ফাতিমার চলার ভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলার ভঙ্গির অনুরূপ ছিল। ফাতিমাকে দেখে তিনি (তার বসার জন্য) জায়গা প্রশস্ত করে দিলেন এবং বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে স্নেহের কন্যা। তিনি তাকে নিজের ডানে বা বামে বসালেন, তারপর চুপি চুপি তাকে কিছু একটা বললেন। এতে ফাতিমা (রা) ভীষণভাবে কাঁদলেন। তার পেরেশানী লক্ষ্য করে নবী (সা) দ্বিতীয়বার চুপি চুপি তাকে কী যেন বললেন। এবার ফাতিমা হাসলেন। তখন আমি তাকে বললাম, রাসূল (সা) তাঁর স্ত্রীদের সামনে একমাত্র তোমাকে চুপি চুপি কিছু বললেন তারপরও তুমি কাঁদলে? অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিস থেকে উঠে গেলে আমি ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার নিকট কী বলেছিলেন। ফাতিমা বলেন, দেখুন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন কথা প্রকাশ করতে চাই না। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করলে আমি ফাতিমাকে বললাম, তোমার উপর আমার যে হক রয়েছে আমি সেই হকের দোহাই দিয়ে বলছিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন, তা আমার কাছে বর্ণনা কর। ফাতিমা বলেন: হাঁ, এখন তাহলে বলছি। প্রথমবারে তিনি আমার কাছে চুপি চুপি যা বলেছিলেন: জিবরীল (আ) গোটা বছরে আমার কাছে আল কুরআন একবার বা দু’বার (আদ্যোপান্ত) পেশ করতেন, কিন্তু এবার তিনি একই সময়ে দু’বার পেশ করেন। তাই আমার মনে হচ্ছে আমার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে, মৃত্যু আমার নিকটবর্তী। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর, সবর ইখতিয়ার কর, আমি তোমার জন্য উত্তম পূর্বসূরী। একথা শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম যা আপনি দেখতে পেয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পেরেশানী লক্ষ্য করে দ্বিতীয়বার আমার কাছে চুপি চুপি বললেনঃ হে ফাতিমা। তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমিই হবে সকল মুমিন মেয়েদের নেত্রী বা এ উম্মাতের নারীকূলের নেত্রী? এ কথা শুনে আমি হাসলাম, যা আপনি দেখেছেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ মুসলিম থেকে গৃহীত।

٦٨٨- أمي فلما جِئْتُ قَالَتْ مَا حَبَسَكَ فَقُلْتُ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الحاجة قالت ما حَاجَتُهُ قُلْتُ أَنَّهَا سِرَّ قَالَتْ لا تُخْبَرَنَ بِسرِّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَدًا قَالَ انس والله لو حدثت به احدا لحدثتك به يا ثابت رواه مسلم وروى البخاري بَعْضَهُ مُختصراً .

৬৮৮। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। আমি তখন ছেলেদের সাথে খেলছিলাম। তিনি আমাদের বালকদের সালাম দিলেন এবং আমাকে তাঁর এক প্রয়োজনে পাঠালেন। (এর ফলে) আমার মায়ের নিকট ফিরে যেতে আমার দেরি হলো। আমি আমার মায়ের নিকট ফিরে এলে তিনি বলেন, তোমাকে কিসে আটকে রেখেছিল? আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর কী কাজ ছিল? আমি বললাম, সেটা গোপন বিষয়। আমার মা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন বিষয় সম্পর্কে কাউকে যেন অবহিত না কর। আনাস (রা) বলেন, হে সাবিত, আল্লাহর শপথ! আমি যদি উক্ত বিষয় সম্পর্কে কাউকে বলতাম, তাহলে তোমাকে অবশ্যই বলতাম।

ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী এর কিছু কিছু অংশ সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৩ – ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন করা

ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন করা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولاً.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তোমরা ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর। নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে (তোমাদেরকে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৪)

وقال تعالى : وأَوْفُوا بِعَهْدِ اللهِ إِذَا عَاهَدُتُمْ.

“তোমরা আল্লাহর নামে যখন ওয়াদা কর তা যেন পূর্ণ কর।” (সূরা আন্ নাহল: ৯১)

وقال تعالى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের চুক্তিসমূহ পালন কর।” (সূরা আল মা-ইদাঃ ১)

وقَالَ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ . كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ.

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না তা কেন বল। তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত অসন্তোষজনক।” (সূরা আস সাফঃ ২-৩)

٦٨٩ – عنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاثَ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا أَوْ تُمِنَ خَانَ مشفق عليه زاد في رواية المسلم وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ .

৬৮৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুনাফিকের আলামত তিনটিঃ (১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার নিকট যখন আমানাত রাখা হয় সে তার খিয়ানাত করে। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের এক বর্ণনায় আরো রয়েছে: যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে।

٦٩٠ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَرْبَعَ مَنْ كُنْ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ حصلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِّنَ النِّفَاقِ حَتَّى بَدَعَهَا إِذَا أَوْ تُمِنَ خَانَ وَإِذَا حدث كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذا خاصم فجر – متفق عليه

৬৯০। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যার মধ্যে চারটি দোষ পাওয়া যাবে সে নিরেট মুনাফিক। যার মাঝে চারটির কোন একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি খাত আছে, যেই পর্যন্ত না সে তা বর্জন করে। সেগুলো হলঃ (১) তার নিকট আমানাত রাখা হলে সে তার খিয়ানাত করে; (২) সে কথা বললে মিথ্যা বলে (৩) সে ওয়াদা করলে তা ভংগ করে এবং (৪) সে ঝগড়ায় লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি-গালাজ করে। (বুখারী, মুসলিম)

٦٩١ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ قَدْ جَاءَ مَالُ الْبَحْرَيْنِ أَعْطَيْتُكَ هكَذَا وَهُكَذَا وَهُكَذَا فَلَمْ يَجِيُّ مَالُ الْبَحْرَيْنِ حَتَّى قبض النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا جَاءَ مَالُ الْبَحْرَيْنِ أَمَرَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَاللهُ عَنْهُ فَنَادَى مَنْ كَانَ لَهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِدَةٌ أَوْ دَيْنٌ فَلْيَأْتِنَا فَاتَيْتُهُ وَقُلْتُ لَهُ إِنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِي كَذَا وَكَذَا فَحَثَى لي حشبة فَعَدَدْتُهَا فَإِذَا هِي خَمْسُ مِائَةٍ فَقَالَ لِي خُذْ مِثْلبها – متفق عليه.

৬৯১। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: বাহরাইন থেকে মাল এসে গেলে আমি তোমাকে এই পরিমাণ এই পরিমাণ ও এই পরিমাণ দেব। কিন্তু বাহরাইন থেকে মাল আসার আগেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন। অতঃপর বাহরাইন থেকে মাল এসে গেলে আবু বাক্ (রা) নির্দেশ দিলে ঘোষণাকারী ডেকে বলেন, যার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন ওয়াদা রয়েছে অথবা তার নিকট ঋণের পাওনা রয়েছে সে যেন আমাদের নিকট আসে। আমি আবু বাক্ (রা)-এর নিকট এসে বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এই এই (দেবেন) বলেছিলেন। তখন আবু বাক্স (রা) আমাকে হাতের আঁজলা ভর্তি করে দিলেন। আমি তা গুণে দেখি পাঁচশ’ (দিরহাম)।
তারপর আবু বাক্স (রা) আমাকে বললেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে নাও। [টিকা: ৮১. অর্থাৎ তিনবার সওয়ার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ইমাম বুখারীর এক রিওয়ায়াতে রয়েছে: তিনবার হাত প্রসারিত করেছিলেন।] (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৪ – কোন উত্তম কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ না করে সব সময় করতে থাকা

কোন উত্তম কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ না করে সব সময় করতে থাকা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যেই পর্যন্ত না তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্রতী হয়। [টিকা: চাই তা ভালোর জন্যই হোক অথবা মন্দের জন্য অর্থাৎ তাদের কর্মের ধরন যা হবে, ভাগ্যও সে অনুসারেই পরিবর্তিত হবে।] (সূরা আর রাদঃ ১১)

وَقَالَ تَعَالَى : وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزَلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا.

“তোমরা ঐ মহিলার ন্যায় হয়ো না যে তার সূতা শক্ত করে পাকানোর পর টুকরা টুকরা করে তা ছিঁড়ে ফেলেছে।” (সূরা আন-নাহল: ৯২)

وقال تعالى : ولا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ.

“তারা যেন ঐসব লোকের ন্যায় না হয় যাদের ইতিপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, এমতাবস্থায় তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল।” (সূরা আল হাদীদ : ১৬)
وقال تعالى : فَمَا رَعَوْهَا حَقٍّ رِعَابَتِهَا .

“তারা তার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করেনি।” (সূরা আল হাদীদ: ২৭)

٦٩٢ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَبْدَ اللهِ لَا تَكُنْ مِثْلَ فُلانٍ كَانَ يَقُوْمُ اللَّيْلَ فترك قيام الليل – متفق عليه

৬৯২। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ। অমুক ব্যক্তির ন্যায় হয়ো না যে নিয়মিত রাত্রি জাগরণ করতো (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায পড়তো) কিন্তু পরে রাত্রি জাগরণ ছেড়ে দিয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৫ – সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা ও কোমল ব্যবহার করা

সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা ও কোমল ব্যবহার করা।

قال الله تعالى : واخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তুমি মুমিনদের প্রতি সহানুভূতি পূর্ণ আচরণ কর।” (সূরা আল হিজরঃ ৮৮)

٦٩٣- عَنْ عَدِي بْنِ حَاتِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّقُوا النار ولو بشق تمرة فمن لم يجد فبكلمة طيبة – متفق عليه.

৬৯৩। আদী ইবনে হাতিম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও। যে তাও (দান) করতে সক্ষম না হয় সে যেন অন্তত ভালো কথার দ্বারা নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচায়। (বুখারী, মুসলিম)

٦٩٤ – وَعَن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ والكلمة الطيبة صدقة – متفق عليه وَهُوَ بَعْضُ حديث تقدم بطوله .

৬৯৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ভালো কথাও একটি সাদাকা বা দানবিশেষ।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এটি একটি হাদীসের অংশবিশেষ। পূর্ণ হাদীস ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

٦٩٥- وَعَنْ أَبِي ذَر رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تحقرن مِنَ المَعْرُوفِ شَيْئًا ولو أن تلقى أخاك بوجه طليق رواه مسلم.

৬৯৫। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: কোন ভালো কাজই অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে মুলাকাত হয়। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৬ – শ্রোতা সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে তার বুঝার সুবিধার্থে বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করা উত্তম

শ্রোতা সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে তার বুঝার সুবিধার্থে বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করা উত্তম।

٦٩٦- عن أنس رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بكَلِمَةٍ أَعَادَها ثَلاثًا حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ وَإِذَا أَتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ علَيْهِم ثلاثا – رواه البخاري .

৬৯৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা কলতেন, তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করতেন, যাতে শ্রোতা তাঁর থেকে তা বুঝে নিতে পারে। যখন তিনি কোন কাউমের (গোত্র) নিকট আসতেন, তাদের সালাম করতেন এবং তিনি তিনবার তাদের সালাম করতেন। [টিকা: বিশেষজ্ঞদের মতেঃ তিনবার সালাম দেয়ার তাৎপর্য হচ্ছে: প্রথম সালাম অনুমতি লওয়ার সময়, দ্বিতীয় সালাম সাক্ষাতের সময় এবং তৃতীয় সালাম দিতেন বিদায়ের সময়। কেউ কেউ বলেন, কোন মজলিসের বেলায় প্রথম সালাম মজলিসের প্রথম ভাগের জন্য, দ্বিতীয় সালাম মধ্যবর্তী সময়ে আগত লোকদের জন্য। আর তৃতীয় সালাম মজলিস সমাপ্তির জন্য দেয়া হত।] (বুখারী)

٦٩٧- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ كَلَامُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ كَلامًا فَضْلاً يَفْهَمُهُ كُلُّ مَنْ يَسْمَعُهُ رواه أبو داود

৬৯৭। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, খুব স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে বলতেন। শ্রোতাদের সবাই তা হৃদয়ংগম করে নিতে পারত। (আবু দাউদ)

অনুচ্ছেদ: ৭ – সংগীর কথা অপর সংগীগণ মনোযোগ দিয়ে শুনবে যদি তা গর্হিত কথা না হয় এবং উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে উপদেশদানকারী কর্তৃক উপস্থিত শ্রোতাদের নীরব করা

সংগীর কথা অপর সংগীগণ মনোযোগ দিয়ে শুনবে যদি তা গর্হিত কথা না হয় এবং উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে উপদেশদানকারী কর্তৃক উপস্থিত শ্রোতাদের নীরব করা।

٦٩٨- عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ اسْتَنصت النَّاسَ ثُمَّ قَالَ لَا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يُضرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعض متفق عليه .

৬৯৮। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে আমাকে বললেন: লোকদের চুপ করতে বল। তারপর তিনি বলেন: দেখ, আমার পরে তোমরা পরস্পর হানাহানি করে কুফরে ফিরে যেও না। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৮ – ওয়াজ-নসীহত করা ও তাতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা

ওয়াজ-নসীহত করা ও তাতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : أَدْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحَكَمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তুমি তোমার রবের পথে লোকদের ডাক বিজ্ঞতার সাথে এবং আকর্ষণীয় উপদেশের মাধ্যমে।” (সূরা আন নাহল: ১২৫)

٦٩٩- عَنْ أَبِي وَائِلٍ شَقِيقٍ بَن سَلَمَةَ قَالَ كَانَ ابْنُ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُذكرنا كلُّ خَمِيْس فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذَكرتَنَا كُلِّيوم فقال أما أنه يمنعني من ذلك أني أكره أن أملكُمْ وَإِنِّي اتخولكم بالموعظة كما كَانَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَولُنَا بِهَا مَخَافَةً السامة علينا – متفق عليه.

৬৯৯। আবু ওয়াইল শাকীক ইবনে সালামা (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ (রা) প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসীহত করতেন। এক ব্যক্তি তাকে বলল, হে আবু আবদুর রহমান। আমরা আশা করি যে, আপনি প্রতিদিন আমাদের ওয়াজ-নসীহত করবেন। তিনি বলেন, দেখ, প্রতিদিন ওয়াজ করার পথে আমার জন্য এটাই একমাত্র বাধা যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপছন্দ করি। আমি তোমাদের উপদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সেই নীতিই অনুসরণ করি যে নীতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বেলায় অনুসরণ করতেন। (তিনি লক্ষ্য রাখতেন,) পাছে আমরা যেন বিরক্ত না হয়ে পড়ি। (বুখারী, মুসলিম)

٧٠٠ وَعَنْ أَبِي الْيَقْطَانِ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ طول صلاة الرَّجُلِ وَقَصَرَ خُطْبَتِه مَتَنهُ مِنْ فقهه فأطيلوا الصلوة واقْصِرُوا الخُطبة – رواه مسلم.

৭০০। আবুল ইয়াকযান আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ একজন লোকের দীর্ঘ নামায ও সংক্ষিপ্ত ভাষণ দীন সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক। কাজেই তোমরা নামাযকে দীর্ঘ কর এবং বক্তৃতা-ভাষণকে সংক্ষিপ্ত কর। (মুসলিম)

۷۰۱- وَعَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ السلمي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَا أَنَا أَصَلِّي مَعَ رسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فَقُلْتُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ فَرَمَانِي القَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ فَقُلْتُ وَأَنكُلَ أَصْيَاهُ مَا شَانَّكُمْ تَنظُرُونَ إِلَى فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَادِهِمْ فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنِّي سَكَتُ فَلَمَّا صلى رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبِأَبِى هُوَ وَأُمِّى مَا رَأَيْتُ مُعَلَّمًا قَبْلَهُ وَلَا بعْدَهُ أَحْسَنَ تعليما منه فوالله ما كهرني ولا ضربني ولا شَتَمَنِي قَالَ إِنَّ هذه الصلاة لا يصلح فِيهَا شَيْ مِنْ كَلام النَّاسِ إِنَّما هي التسبيح والتكبير وقراءةالْقُرْآنِ أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالْإِسْلامِ وَإِنَّ مِنَّا رِجَالًا يَأْتُونَ الْكُهَانَ قَالَ فَلا تَأْتِهِمْ قُلْتُ وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطيرُونَ قَالَ ذَاكَ شَيْ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ فَلَا يصدنهم – رواه مسلم.

৭০১। মু’আবিয়া ইবনুল হাকাম আস-সুলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায পড়ছিলাম। তখন এক নামাযী হাঁচি দিলে আমি বললাম, ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন)। এতে মুসল্লীরা আমার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল। আমি বললাম, তোমরা মাতৃহারা হও। তোমাদের কি হল? তোমরা আমার প্রতি এভাবে তাকাচ্ছো কেন? তারা তাদের উরুতে হাত চাপড়াতে লাগল। আমি যখন বুঝলাম, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, (তখন আমার রাগ হলো।) কিন্তু আমি চুপ হয়ে গেলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সমাপন করলেন। তাঁর প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আমি তাঁর পূর্বে ও পরে তাঁর চাইতে উৎকৃষ্ট শিক্ষক আর দেখিনি। আল্লাহর শপথ। তিনি আমাকে তিরস্কারও করলেন না, মারলেনও না এবং মন্দও বললেন না। তিনি (শুধু এতটুকু) বলেন: এই নামাযের মধ্যে মানবীয় কথাবার্তা সংগত নয়। নামায হচ্ছে তাস্বীহ, তাকবীর ও আল কুরআন তিলাওয়াতের সমষ্টি অথবা অনুরূপ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। সবেমাত্র আমি জাহিলিয়াতের যুগ ছেড়ে এসেছি এবং আল্লাহ আমাদের ইসলাম কবুলের তাওফীক দিয়েছেন। আমাদের অনেকে (এখনো) ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট যায়। তিনি বলেনঃ না, তাদের নিকট যেয়ো না। আমি বললাম, আমাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা শুভ-অশুভের নিদর্শনে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন: এটা এমন জিনিস যা তারা তাদের অন্তরে অনুভব করে। তবে এটা যেন তাদেরকে (কোন কাজ করা বা না করা থেকে) বিরত না রাখে। (মুসলিম)

۷۰۲- وَعَنِ العرباض بن سارية رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ موعظة وجلت منها القلوب وذرِفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَذَكَرَ الْحَدِيث وقد سبق بكماله في باب الأمر بالمحافظة على السُّنَّةِ وَذَكَرْنَا أَنَّ التَّرْمِذِي قَالَ إِنَّهُ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

৭০২। ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে এমন বক্তৃতা করলেন যে, তাতে অন্তর কেঁপে গেল এবং চোখ অশ্রুসিক্ত হল… এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। এ হাদীস সুন্নাতের রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ শীর্ষক অনুচ্ছেদে ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী বর্ণিত উক্ত হাদীসটি তাঁর মতে হাসান ও সহীহ।

অনুচ্ছেদ: ৯ – ভাব-গাম্ভীর্য ও প্রশান্ত অবস্থা

ভাব-গাম্ভীর্য ও প্রশান্ত অবস্থা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا.

মহান আল্লাহ বলেন:

“দয়াময় আল্লাহর বান্দা তারা, যারা যমিনের বুকে বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ-মূর্খেরা তাদের সম্বোধন করলে তারা বলে, সালাম।” (সূরা আল ফুরকান: ৬৩)

٧٠ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَجمعا قط ضاحكا حتى ترى منه لهوَاتُهُ إِنَّمَا كَانَ يُتبسم – متفق عليه.

৭০৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো অট্টহাসি দিতে দেখিনি যাতে তাঁর মুখ গহ্বর প্রকাশ পায়। তিনি সাধারণত মুচকি হাসি দিতেন। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ১০ – নামায, জ্ঞানার্জন ও যাবতীয় ইবাদাতে ধীরে-সুস্থে ও গাম্ভীর্যের সাথে আসবে

নামায, জ্ঞানার্জন ও যাবতীয় ইবাদাতে ধীরে-সুস্থে ও গাম্ভীর্যের সাথে আসবে।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَنْ يُعَظِمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের নিদর্শনসমূহের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো অন্তরের তাকওয়া।” (সূরা আল হজ্জঃ ৩২)

٧٠٤- وَعَلَيْكُمُ السَّكينة فما أدركتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُم فأتموا – متفق عليه. زاد مسلم في روايةٍ لَهُ فَإِنْ أَحَدَكُم إِذا كَانَ يَعْمِدُ إِلى الصَّلاةِ فَهُوَ فِي صَلاة .

৭০৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। নামাযের ইকামাত হয়ে গেলে তোমরা নামাযের জামা’আতে শামিল হওয়ার উদ্দেশ্যে দৌড়ে এসো না, বরং ধীরস্থিরভাবে নিশ্চিন্তে হেঁটে এসো। (জামা’আতের সাথে) তোমরা যত রাজ্জত পাও তা পড়ে নাও এবং যেটুকু না পাও তা শেষে পূর্ণ করে নাও।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আরো আছে: তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ার সংকল্প করে, তখন থেকেই সে নামাযের মধ্যে আছে।

٧٠٥ وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ دَفَعَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَرَفَةَ فَسَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَانَهُ زَجْرًا شَدِيدًا وَضَرْبًا وصوتا للايلِ فَأَشَارَ بِسَوْطِهِ إِلَيْهِمْ وَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةَ فَإِنَّ الْبِرِّ ليس بالإيضاع – رواه البخاري وروى مسلم بعضه .

৭০৫। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। আরাফাতের দিন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যাচ্ছিলেন। পেছনের দিকে নবী (সা) উটকে সজোরে হাঁকানোর ও মারার উচ্চ আওয়ায এবং শোরগোল শুনতে পেলেন। তিনি তাদের প্রতি নিজের চাবুক নেড়ে ইশারায় বলেনঃ হে লোকেরা। তোমাদের জন্য শান্তশিষ্টভাবে চলা অপরিহার্য। তাড়াহুড়া করা ও দ্রুত চলাতে কোন কল্যাণ নেই।

ইমাম বুখারী এটা রিওয়ায়াত করেছেন। এর অংশবিশেষ ইমাম মুসলিমও বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ১১ – মেহমানের তা’যীম ও সাদর অভ্যর্থনা

মেহমানের তা’যীম ও সাদর অভ্যর্থনা।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْف ابراهيمَ الْمُكْرَمِينَ . إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْل سمين فَقَرِّبُهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ.وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذا أَقِيمَتِ الصَّلاةُ فَلا تَأْتُوهَا وَأنتُمْ تَسْعَوْنَ وَآتُوهَا وَأَنتُمْ تَمْشُونَ

মহান আল্লাহ বলেন:

“ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত তোমার নিকট পৌঁছেছে কি? তারা যখন তার নিকট এসে বলল, আপনাকে সালাম, সে বলল, আপনাদেরও সালাম। অপরিচিত লোক এরা। পরে সে চুপচাপ তার স্ত্রীর নিকট চলে গেল এবং একটা মোটাতাজা ভুনা বাছুর নিয়ে এসে মেহমানদের সামনে পেশ করল। সে বলল, আপনারা খাচ্ছেন না কেন?” (সূরা আয যারিয়াত: ২৪-২৭)

وقَالَ تَعَالَى : وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ قَالَ يا قوم هؤلاء بَنَاتِي هُن أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونَ فِي ضَيْفِى اليْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيد.

“তার সম্প্রদায় তার নিকট উদভ্রান্ত হয়ে ছুটে এল এবং পূর্ব থেকে তারা কুকর্মে লিপ্ত ছিল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়। এরা আমার কন্যা। তোমাদের জন্য এরা পবিত্র। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালো মানুষ নেই?” (সূরা হুদ: ৭৮)

٧٠٦- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكَرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَصِل رَحِمَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ متفق عليه.

৭০৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি আস্থা রাখে, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে। (বুখারী, মুসলিম)

۷۰۷- وَعَنْ أَبِي شُرَيْحٍ خُوَيْلِدِ بْنِ عَمْرُو الْخُزَاعِيُّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكَرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ قَالُوا وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ يَوْمُهُ وَلَيْلَقُهُ والضيافة ثلاثة أَيَّامٍ فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ – متفق عليه. وفيرواية المسلم لا يحل لمسلم أن يُقيم عند أخيه حَتَّى يُؤْثِمَهُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وكَيْفَ يُؤْثِمُهُ قَالَ يُقِيمُ عِندَهُ وَلَا شَيْءَ لَهُ يَقْرِيهِ بِهِ.

৭০৭। আবু শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবনে আমর আল-খুযাঈ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার হক আদায় সহকারে। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তার হক কী? তিনি বলেন: তার একদিন ও একরাত (তাকে সমাদর ও যত্ন করবে)। মেহমানদারির সীমা হল তিন দিন। এর চাইতে অতিরিক্ত করা দানস্বরূপ।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে: মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট সে পরিমাণ সময় (মেহমান হিসেবে) অবস্থান করা হালাল নয় যা তাকে গুনাহগার বানিয়ে দেয়। সাহাবীগণ বলেন, সে তাকে গুনাহগার বানাবে কিরূপে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সে তার নিকট অবস্থান করতে থাকবে। অথচ তার নিকট এমন কোন জিনিস নেই, যা দিয়ে সে তার মেহমানদারি করবে। [টিকা: ৮৪. তিন দিন মেহমানদারি করবে। প্রথমদিন যথাসম্ভব আয়োজন করবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন স্বাভাবিক খাবার পরিবেশন করবে। আর জায়িযাহ-এর অর্থও তা-ই। মূল হাদীসে জায়িযাহ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। জায়িযাহর অর্থ পুরস্কার, তোহফা ও স্বাদ ইত্যাদি। এখানে এর অর্থ শুধুমাত্র একদিন। মেহমানের সমাদর ও যত্ন করা একটি চারিত্রিক গুণ বা বৈশিষ্ট্য। হাদীসে তার প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। ইমাম জাফর সাদিক বলেন, যখন আপন ভাইদের সাথে দস্তরখানে বসবে, দীর্ঘক্ষণ বসবে। কারণ এটা এমন একটা মুহূর্ত যে, তোমার জীবনের এ সময়টির কোন হিসাব গ্রহণ করা হবে না।]

অনুচ্ছেদ: ১২ – উত্তম কর্মের জন্য সুসংবাদ ও মুবারকবাদ দেয়া

উত্তম কর্মের জন্য সুসংবাদ ও মুবারকবাদ দেয়া।

قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : فَبَشِّرْ عِبَادِ الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদের যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে।” (সূরা আয যুমার: ১৭-১৮)

وقَالَ تَعَالَى : يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانِ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ.

“তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত ও সন্তোষ এবং এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী সুবিন্যস্ত রয়েছে।” (সূরা আত্ তাওবা: ২১)

وقال تعالى : وابْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ.

“তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর জান্নাতের যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সাথে করা হয়েছে।” (সূরা হা-মীমুস্ সাজদাঃ ৭৩)

وقال تعالى : فَبَشِّرْنَاهُ بِغُلام حليم

“আমরা তাকে সুসংবাদ দিলাম এক পরম ধৈর্যশীল সন্তানের।” (সূরা আস সাফ্ফাত: ১০১)

وقال تعالى : ولَقَدْ جَاءَ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالبشرى.

“আমার দূতগণ ইবরাহীমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে এলো।” (সূরা হুদ: ৬৯)

وقَالَ تَعَالَى : فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلَّى فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يبشرك بيحى.

“ফেরেশতারা তাকে আওয়ায দিল, যখন সে (যাকারিয়া) মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহ্ইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন।” (সূরা আলে ইমরানঃ ৩৯)

وقال تعالى : إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسمه المسيح.

“যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম। আল্লাহ তোমাকে তাঁর নিজের এক বাণীর সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম…।” (সূরা আলে ইমরান: ৪৪)

وقال تعالى : وامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشِّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ اسحاق يعقوب.

“ইব্রাহীমের স্ত্রী দণ্ডায়মান ছিল। সে হেসে ফেলল। আমরা তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবের।” (সূরা হুদ: ৭১)

এ সম্পর্কে বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে। সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহে সেসব হাদীস ছড়িয়ে আছে। তার মধ্য থেকে কতক হাদীসের উল্লেখ করা যাচ্ছে।

۷۰۸- أو في رضي اللهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشِّرَ خَدِيجَةَ بِبَيْت فِي الْجَنَّةِ مِن قصب فيه لا صخب ولا نصب متفق عليه .

৭০৮। আবু ইব্রাহীম অথবা আবু মুহাম্মাদ অথবা আবু মু’আবিয়া আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা (রা)-কে জান্নাতে মুক্তা নির্মিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন যাতে কোনরূপ প্রতিধ্বনি, শোরগোল বা ক্লেশ থাকবে না। (বুখারী, মুসলিম)

۷۰۹- وعن أبي موسى الأشعري رضى اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ تَوَضَّأَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ خَرَجَ فَقَالَ الزَمَنْ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا كُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِي هَذَا فَجَاءَ المسجد فسألَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا وَجْهَ هَهُنَا قَالَ فَخَرَجْتُ على اثره اسأل عَنْهُ حَتَّى دَخَلَ بِئر أريس فجلستُ عِندَ الْبَابِ حَتَّى قَضَى رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَاجَتَهُ وَتَوَضَّأَ فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَإِذَا هُوَ قَدْ جَلَسَ عَلَى بِئرٍ اريس وتوسط تُفْهَا وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ وَدَلَأَهُمَا فِي الْبَحْرِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ انصرفت فجلستُ عِندَ الْبَابِ فَقُلْتُ لَا كُونَن بَوَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيَوْمَ فَجاءَ أبو بكر فَدَفَعَ البَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ فَقُلْتُ عَلَى رسُلِكَ ثُمَّ ذَهَبَتُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ الله هذا أبو بكر يَسْتَأْذِنُ فَقَالَ انْذَنَ لَهُ وَبَشَرَهُ بالْجَنَّةِ فَأَقْبَلَتُ حَتَّى قُلْتُ لأبي بكر ادخل وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يبشرك بالْجَنَّةِ فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى جَلَسَ عَنْ يَمِينِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُ فِي الْقُفْ وَدَلَّى رجليه في البشر كَمَا صَنَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ ثُمَّ رَجَعَتْ وَجَلَسْتُ وَقَدْ تَرَكَتْ أَخِي يَتَوَفَّا وَيَلْحَقْنِي فَقُلْتُ ان يرد الله بفلان يُرِيدُ أَخَاهُ – خَيْراً يَأْت به فَإِذَا انْسَانَ يُحْرِكُ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هذا فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَابِ فَقُلْتُ عَلَى رَسُلِكَ ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلَتْ هذا عُمَرُ يَسْتَأْذِنُ فَقَالَ انْذَنَ لَهُ وَبَشِّرُهُعن أبي إِبْرَاهِيمَ وَيُقَالُ أَبُو مُحَمَّدٍ وَيُقَالُ أَبُو مُعَاوِيَةَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِيبالجنة فجئتُ عُمَرَ فَقُلْتُ أَذنَ وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بالْجَنَّةِ فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي القُفَ عَنْ يَسَارِهِ ودلى رجليه في البئرِ ثُمَّ رَجَعَت فَجَلَسَت فَقُلْتُ إِن يُرِدِ اللَّهِ بِفُلان خَيْرًا يَعْنِي به فجاء انسان فَحَرَّكَ الْبَابَ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا فَقَالَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ أَخَاهُ يَأْت به فجاء ا فَقُلْتُ عَلَى رِسْلكَ وَجِئْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ الذَنَ لَهُ وبشره بالجنة مع بلوى تُصيبه فجئتُ فَقُلْتُ أدخل وَيُبَشِّرُكَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عليه وسلم بالجنَّة مع بلوى تُصِيبُكَ فَدَخَلَ فَوَجَدَ الْقُفُ قَدْ مُلَى فَجَلَسَ وِجَاهَهُمْ من الشق الآخرِ قَالَ سَعيد بن المسيب فأولتها قبورهم – متفق عليه . وزاد في رواية وأمرني رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بحفظ البَابِ وَفِيهَا أَنْ عُثْمَانَ حِينَ بَشَرَهُ حَمدَ الله تَعَالَى ثُمَّ قَالَ اللهُ الْمُسْتَعَانُ .

৭০৯। আবু মুসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নিজের ঘরে উষু করে বেরিয়ে পড়লেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগ নেব এবং আমার পুরা দিনটি তাঁর সাথেই কাটাষ। তিনি মসজিদে এসে সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ ইশারায় বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওদিকে গেছেন। আবু মূসা (রা) বলেন, আমি তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করে রওনা করলাম এবং তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে করতে সামনে অগ্রসর হলাম। ততক্ষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বীরে আরীসে (একটি কূপের নাম) প্রবেশ করেছেন। আমি দরজার কাছে বসে পড়লাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রয়োজন সেরে উযু করলেন। আমি উঠে তাঁর দিকে গিয়ে দেখি তিনি আরীস কূপের উপর বসা। তিনি কূপের চত্বরে তাঁর উভয় হাঁটুর নিম্নদেশ অনাবৃত করে পা দু’টি কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিয়ে বসে রয়েছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তারপর ফিরে এসে দরজায় বসে পড়লাম। আমি মনে মনে বললাম, আজ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বাররক্ষী হব। এমন সময় আবু বাক্স (রা) এসে দরজায় টোকা দিলেন। আমি বললাম, কে? তিনি বলেন, (আমি) আবু বাক্স। আমি বললাম, থামুন। আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। এই যে আবু বাক্স আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন: তাকে অনুমতি দাও, সেই সাথে তাকে জান্নাতের সুসংবাদও জানিয়ে দাও। আমি ফিরে এসে আবু বাক্ককে বললাম, আসুন, আর হাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবু বাক্স (রা) প্রবেশ করলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর ডান পাশে বসে পড়লেন। তিনিও তার উভয় হাঁটুর নিম্নদেশ অনাবৃত করে কূপের গহ্বরে পা-দু’টি ঝুলিয়ে দিলেন, যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে ছেড়ে এসেছিলাম, তিনি তখন উযু করছিলেন এবং আমার পরপরই তার আসার কথা ছিল। আমি মনে মনে বললাম, যদি আল্লাহ তার মংগল চান তাহলে এ মুহূর্তে তাকে নিয়ে আসবেন। এমন সময় কে যেন দরজা নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? আগন্তুক বললেন, উমার ইবনুল খাত্তাব। আমি বললাম, থামুন। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে সালাম জানালাম এবং বললাম, এই যে উমার আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন: তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। আমি উমারের নিকট এসে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন এবং আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। উমার (রা) প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম পাশে বসলেন। তিনিও কূপের চত্বরে বসে কূপের ভেতর পা-দু’টি ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম আর মনে মনে বললাম, আল্লাহ যদি অমুকের অর্থাৎ তার ভাইয়ের কল্যাণ চান, তাহলে তাকে পাঠিয়েই দেবেন। এমন সময় এক লোক এসে দরজা নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? তিনি বলেন, উসমান ইবনে আফফান। আমি বললাম, থামুন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাঁকে উসমানের সংবাদ দিলাম। তিনি বলেন: তাকে অনুমতি দাও এবং কিছু বিপদ-মুসিবাতের সাথে জান্নাতেরও সুসংবাদ দাও। আমি এসে বললাম, ভেতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে কিছু বিপদ-মুসিবাতের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনিও প্রবেশ করলেন। তিনি দেখলেন চত্বর পূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি অপর অংশের সামনের দিকে বসে পড়লেন। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) বলেন, তিন জনের এক জায়গায় বসার তাৎপর্য হলঃ তাঁদের কবর একই জায়গায় হবে, এটা ছিল তারই ইংগিত।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক রিওয়ায়াতে আরো আছে: আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বার রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দিলেন। তাতে এও রয়েছে: উসমানকে সুসংবাদ দেয়া হলে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন এবং বললেন, আল্লাহ মদদগার ও সাহায্যকারী।

۷۱۰- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا قُعُودًا حَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَنَا أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ فِي نَفَرٍ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ أَظْهُرِنَا فَأَبْطأَ عَلَيْنَا وَخَشِيْنَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فكنتُ أول مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ ابْتَغِي رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَيْتُحائطا للأنصار لبنى النجار قدرت به هَل أجِدُ لَهُ بَابًا فَلَمْ أَجِدٌ فَإِذَا رَبِيعٌ يَدْخُلُ فِي جَوْفِ حَائِط من بشر خارجه والربيعُ الْجَدُولُ الصَّغِيرُ فَاحْتَفَرْتُ فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ نَعْمُ يَا رسُولَ اللهِ قَالَ مَا شَانُكَ قُلْتُ كُنتَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَأَبْطَأْتَ عَلَيْنَا فَخَشِيْنَا أن تقتطع دونَنَا فَفَزِعَنَا فَكُنتُ أوَّلَ مَنْ فَرْعَ فَاتَيْتُ هَذَا الْحَائِطَ فَاحْتَفَرْتُ كَمَا يَحْتَفِرُ الشُّعْلَبُ وَهُؤلاء النَّاسُ وَرَائِي فَقَالَ يَا أَبَا هُرَيْرَةً وَأَعْطَانِي نَعْلَيْهِ فَقَالَ اذْهَبْ بِتَعْلَى هَاتَيْنِ فَمَنْ لقيت من وراء هذا الحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ مستيقنا بها قلبه فبشره بالجنة وذكر الحديث بطوله – رواه مسلم.

৭১০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারপাশে বসা ছিলাম। আবু বাক্ ও উমার (রা) আমাদের সাথে একই মজলিসে বসা ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে থেকে উঠলেন এবং বাইরে চলে গেলেন। আমাদের নিকট তাঁর ফিরতে বেশ বিলম্ব হল। আমাদের আশংকা হল, আমাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর কোন বিপদ ঘটে না যায়। আমরা ঘাবড়ে গেলাম এবং সবাই উঠে পড়লাম। আমিই প্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। খুঁজতে খুঁজতে আমি বনী নাজ্জারের এক আনসারীর বাগানের বেষ্টনীর নিকট এসে পৌঁছলাম। দরজার সন্ধানে আমি তার চতুর্দিকে ঘুরলাম, কিন্তু কোন দরজা পেলাম না। একটি ক্ষুদ্র মালা আমার চোখে পড়ল, যেটি বাইরের একটি কূপ থেকে বাগানের মধ্যে চলে গেছে। আমি সংকুচিত হলাম এবং (ঐ নালার মধ্য দিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আবু হুরাইরা? আমি বললাম, হাঁ হে আল্লাহর রাসূল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তা কী খবর তোমার? আমি বললাম, আপনি আমাদের সাথে ছিলেন, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে এলেন। আমাদের নিকট ফিরতে আপনার দেরি হতে থাকে। আমরা শংকিত হলাম যে, পাছে আমাদের অনুপস্থিতিতে অপনার কোন বিপদ ঘটে না যায়। আমরা তাই ঘাবড়ে গেলাম এবং আমিই সবার আগে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি এ বাগানের বেষ্টনী পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। আমি সংকুচিত হলাম, যেরূপ শৃগাল সংকুচিত হয়, তারপর বাগানে ঢুকলাম। অবশিষ্ট লোক আমার পেছনে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বলেনঃ হে আবু হুরাইরা! আমার জুতা জোড়া নিয়ে যাও। এ বাগানের বাইরে গিয়ে যার সাথেই তোমার সাক্ষাত হবে সে যদি সাচ্চা দিলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) একখার সাক্ষ্য দেয়, তাহলে ডাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (মুসলিম)

۷۱۱- وَعَنِ ابْنِ شُمَاسَةَ قَالَ حَضَرْنَا عَمْرُو بْنَ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَهُوَ فِي سياقَةِ الْمَوْتِ فبكى طويلاً وحول وجهه إلى الجِدَارِ فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُولُ يَا أَبْنَاهُ أما بشركَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا ؟ أَمَا بَشْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذا ؟ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ فَقَالَ إِنْ أَفْضَلَ مَا تُعِدُّ شَهَادَةً أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ إِنِّي قَدْ كُنتُ عَلَى اطْبَاقٍ ثَلَاثَ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَمَا أَحَدٌ اشد بعضًا لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنِّي وَلَا أَحَبُّ إِلَى مِنْ أَنْ أَكُونَ قَدِ استمكَنتُ مِنْهُ فَقَتَلْتُهُ فَلَوْ مُت عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَكُنتُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلَمَّا جَعَلَ اللَّهُ الْإِسْلَامَ فِي قَلْبِي أَتَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ ابْسُطُ يمينك فلا با بعكَ فَبَسَطَ يَمِينَهُ فَقَبَضْتُ يَدِى فَقَالَ مَا لَكَ يَا عَمْرُو قُلْتُ أَرَدْتُ ان اشترط قَالَ تَشْتَرِطُ مَاذَا ؟ قُلْتُ أَنْ يُغفَرَ لِي قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهَجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجِّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَمَا كان أحدٌ أَحَبُّ إِلَى مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا أَجَلٌ فِي عَيْنِي مِنْهُ ومَا كُنتُ أطيق أن أملاً عَيْنِي مِنْهُ اجلالاً لهُ وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطقَتُ لِأَنِّي لم اكن أملاً عَيْنِي مِنْهُ وَلَوْ مُت عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لِرَجَوْتُ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ ثُمَّ وَلَيْنَا أَشْيَاءَ مَا أَدْرِي مَا خَالِي فِيهَا ؟ فَإِذَا أَنَا مِّن فَلَا تَصْحَبَنِي نَائِحَةٌ وَلَا نَارٌ فَإِذَا دَفَنَتُمُونِي فَسُنُوا عَلَى التَّرَابَ شَنَّا ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قدر ر ما مَا تُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا حَتَّى اسْتَانِسَ بِكُمْ وَأَنْظُرَ مَا أَرَاجِعُ بِهِ رُسُلٌ ربی- رواه مسلم.

৭১১। ইবনে শুমাসা (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনুল আস (রা)-র নিকট হাযির হলাম। তিনি ছিলেন তখন মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। তিনি বহুক্ষণ কাঁদলেন এবং তাঁর চেহারা দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে নিলেন। তাঁর পুত্র তাঁর উদ্দেশে বলতে লাগলেন, আব্বাজান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি। অতঃপর তিনি মুখ ফিরিয়ে বলেন, আমাদের জন্য সর্বোত্তম পুঁজি হলঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল) একথার সাক্ষ্যদান। বস্তুত জীবনে আমি তিন তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছি। আমার জীবনের এমন একটি পর্যায়ও ছিল যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাইতে আর কারো প্রতি আমার এতো বেশি কঠোর বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছিল না এবং সুযোগমত পেলে তাঁকে হত্যা করার চাইতে বেশি প্রিয় আর কিছু আমার নিকট ছিল না। ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আমি নিশ্চিত জাহান্নামী হতাম। আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের আকর্ষণ জাগ্রত করে দিলেন তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললাম, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি অবশ্যই আপনার নিকট বাইআত গ্রহণ করতে চাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত দরায করে দিলেন। আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। তিনি বলেন: কী ব্যাপার, হে আমর? আমি বললাম, আমি একটি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেন: তা কী শর্ত করতে চাও তুমি? আমি বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বলেন: তোমার কি জানা নেই যে, ইসলাম তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরাত তার পূর্বেকার সকল গুনাহকে ধ্বংস করে দেয় এবং হজ্জ তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ বিলীন করে দেয়? (যাই হোক, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাইআত গ্রহণ করলাম)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাইতে অধিক প্রিয় আমার নিকট আর কেউ রইল না। আমার চোখে তাঁর চাইতে মর্যাদাবানও আর কেউ থাকল না। তাঁর অপরিসীম মর্যাদা-গাম্ভীর্যের দরুন আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁর প্রতি তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। ফলে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তার বর্ণনা দিতেও আমি অক্ষম। কারণ আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে কখনো তাঁর দিকে তাকাইনি। এ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তবে আমার জান্নাতী হবার নিশ্চিত আশা ছিল। এরপর আমাদের অনেক যিম্মাদারি মাথায় নিতে হয়। জানি না, সেসব ব্যাপারে আমার অবস্থা কী দাঁড়ায়? যাই হোক, আমি মৃত্যুবরণ করলে আমার জানাযায় যেন কোন বিলাপকারিণীও না থাকে এবং মশাল মিছিলও না হয়। তোমরা আমাকে যখন দাফন করবে, আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি ফেলবে, এরপর আমার কবরের চারপাশে এতটুকু সময় অবস্থান করবে, যে সময়ের মধ্যে উট যবাই করে তার গোশ্ত বণ্টন করা যায়, যাতে আমি তোমাদের ভালোবাসা ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং দেখি আমার প্রভুর দূতগণের সাথে কি ধরনের বাক্য বিনিময় করি। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ১৩ – বন্ধুকে বিদায় দেয়া, বিদায়কালে তাকে উপদেশ দেয়া, তার জন্য দু’আ করা এবং তার কাছে দু’আ চাওয়া

বন্ধুকে বিদায় দেয়া, বিদায়কালে তাকে উপদেশ দেয়া, তার জন্য দু’আ করা এবং তার কাছে দু’আ চাওয়া।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِي إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ، أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ الْهَكَ وَاللَّهَ أَبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَهَا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ.

মহান আল্লাহ বলেনঃ

“ইবরাহীম ও ইয়াকূব এ সম্বন্ধে তাদের পুত্রদের নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, হে আমার পুত্ররা। আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যুবরণ করো না। ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু এসেছিল, তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে যখন তার পুত্রদের জিজ্ঞেস করেছিল, আমার পরে তোমরা কিসের ইবাদাত করবে? তারা তখন বলেছিল, আমরা আপনার আল্লাহর এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের আল্লাহরই ইবাদাত করব। তিনি একমাত্র ইলাহ এবং আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী।” (সূরা আল বাকারা: ১৩২-৩৩)

۷۱۲- فَمِنْهَا حَدِيثُ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ الَّذِي سَبَقَ فِي بَابِ إِكْرَامِ أَهْلِ بيت رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فينَا خَطِيبًا فحمد الله وأثنى عَلَيْهِ وَوَعظ وذكرَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِي رَسُولُ رَبِّي فَاجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ تَقَلَيْنِ أولهما كِتَابُ اللهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَتْ عَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغْبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ وَاهْلُ بَيْتِي أَذْكَرُكُمُ اللَّهَ فِي أَهْلِ بيتي رواه مسلم .

৭১২। যায়িদ ইবনে আরকাম (রা)-এর হাদীস যা ইতিপূর্বে আহলে বাইতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন অধ্যায়ে উল্লেখিত হয়েছে, তাতে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তারপর লোকদের উপদেশ দিলেন এবং সাওয়াব ও আযাবের ব্যাপারটি স্মরণ করিয়ে দিলেন, অতঃপর বললেনঃ হে লোকেরা! জেনে রাখ, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। অচিরেই আমার রবের পক্ষ থেকে মৃত্যুদূত এসে হাযির হবে এবং আমিও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যাব। আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি। একটি হল আল্লাহর কিতাব (আল কুরআন), যার মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে হিদায়াত ও সঠিক পথের দিশা এবং নূর ও আলোকবর্তিকা। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে মযবুতভাবে ধারণ করবে এবং তার বিধানকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। এরপর তিনি আল্লাহর কিতাবের প্রতি লোকদের উদ্বুদ্ধ করলেন এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করলেন। তারপর তিনি বলেন: দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার আহলে বাইত্ (পরিবারের লোকজন)। আমার আহলে বাইত্ সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। [টিকা: আল কুরআনেও উক্ত হয়েছেঃ “বল, আমি তোমাদেরই মত মানুষ। তবে আমার নিকট ওহী আসে”। আল কুরআন ও হাদীসের এসব উদ্ধৃতির সাহায্যে আমরা মানুষ নবী ও মানুষের নবীর প্রকৃত মর্যাদা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি।]

ইমাম মুসলিম এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতকে সম্মান করা শীর্ষক অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত হাদীসে বিস্তারিতভাবে ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

۷۱۳- وَعَنْ أَبِي سُلَيْمَانَ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ آتَيْنَا رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ شَبَبَةٌ مُتَقَارِبُونَ فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً وكَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِيمًا رَفِيقًا فَظَنَّ أَنَّا قَدِ اشْتَقْنَا أَهْلَنَا فَسَأَلْنَا عَمَّنْ تَرَكْنَا مِنْ أَهْلِنَا فَأَخْبَرْنَاهُ فَقَالَ ارْجِعُوا إِلَى أَهْلِيْكُمْ فَأَقِيمُوا فِيهِمْ وَعَلِمُوهُمْ وَمُرُوهُمْ وَصَلُّوا صَلاةَ كَذَا فِي حِيْنِ كَذَا وَصَلُّوا كَذَا فِي حِيْنٍ كَذَا فَإِذَا حضرت الصلاة فَلْيُؤَذَنَ لَكُمْ أَحَدُكُمْ وَلَيَؤُمَكُمْ أَكْبَرُكُم – متفق عليه . زاد الْبُخَارِي فِي رِوَايَةٍ لَهُ وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أَصَلِّي.

৭১৩। আবু সুলাইমান মালিক ইবনুল হুয়াইরিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম। আমরা সবাই ছিলাম সমবয়সী যুবক। আমরা বিশ দিন যাবত তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অতিশয় রহমদিল ও স্নেহশীল। তিনি ভাবলেন, আপনজনদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য আমরা আগ্রহী। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন যে, পরিবারে আমরা কাদের ছেড়ে এসেছি এবং তাদের হাল-অবস্থা কী? আমরা সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জানালাম। তিনি বলেনঃ তোমরা ফিরে গিয়ে তোমাদের পরিবার-পরিজনদের সাথে অবস্থান কর, তাদেরকে দীনের তালিম দাও, তার উপর আমল করার জন্য তাদের আদেশ কর এবং নামায পড় এই এই সময়ে। নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইমামতি করবে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী তার এক রিওয়ায়াতে আরো বর্ণনা করেছেনঃ তোমরা নামায পড়ো যেরূপ আমাকে নামায পড়তে দেখেছ।

٧١٤- وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اسْتَأْذَنَتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ وَقَالَ لا تَنْسَنَا يَا أَخَى مِنْ دُعَائِكَ فَقَالَ كَلِمَةٌ مَا يسرني أنَّ لِي بِهَا الدُّنْيَا وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ أَشْرِكْنَا يَا أَخَى فِي دُعَائِكَ – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح

৭১৪। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমরাহ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলেন এবং বললেন: প্রিয় ভাইটি আমার, তোমার দু’আর সময় আমাদেরকে ভুলো না যেন। তিনি এমন বাক্য উচ্চারণ করলেন, যার বিনিময়ে সমগ্র দুনিয়াটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার নিকট আনন্দদায়ক (বিবেচিত) হতো না। অন্য এক রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন। ভাইয়া! আমাদেরকেও তোমার দু’আয় শরীক রেখো।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٧١٥ – وَعَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عَبَدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُولُ للرَّجُلِ إِذا أَرَادَ سَفَراً أذن منى حَتَّى أَوَدَعَكَ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوَدِعُنَا فَيَقُولُ اسْتَودِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عملك – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح .

৭১৫। সালিম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) ভ্রমণেচ্ছু লোকের উদ্দেশে বলতেন, আমার নিকটবর্তী হও, যাতে আমি তোমাকে বিদায় দিতে পারি, যেরূপে আমাদের বিদায় দিতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাদের বিদায় দেয়ার সময় বলতেন: “আমি তোমার দীন, তোমার আমানাত ও তোমার শেষ আমলকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি।”

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٧١٦- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيدَ الْخَطَمِي الصَّحَابِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذا أَرَادَ أَنْ يُوَدَعَ الْجَيْشِ قَالَ اسْتَودِعُ اللَّهَ دينَكُمْ وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِمَ أَعْمَالِكُمْ حديث صحيح رواه ابو داود وغيره باسناد صحيح.

৭১৬। আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ খাঙ্ক্ষী সাহাবী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সৈন্যবাহিনীকে বিদায় দেয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন: “আমি তোমাদের দীন, তোমাদের আমানাত ও তোমাদের আখেরী আমলসমূহকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি।”

এটি সহীহ হাদীস। ইমাম আবু দাউদ প্রমুখ সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۷۱۷- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي أَرِيدُ سَفَرًا فَزَوَّدَنِي فَقَالَ زَوْدَكَ اللَّهُ التَّقْوَى قَالَ زِدْنِي قَالَ وَغَفَرَ ذَنْبَكَ قَالَ زِدْنِي قَالَ وَيَسْرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنتَ رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৭১৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল। আমি সফরে যেতে চাই, আমাকে কিছু পাথেয় দিন। তিনি বলেন: আল্লাহ তোমাকে আল্লাহভীতির পাথেয় দান করুন। সে বলল, আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বলেন: আল্লাহ তোমার গুনাহ মাফ করুন। সে বলল, আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বলেন: তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণপ্রাপ্তিকে সহজ করুন।

হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ১৪ – ইস্তিখারা ও পরামর্শ সম্পর্কে

ইস্তিখারা ও পরামর্শ সম্পর্কে।

قَالَ اللَّهُ تَعَالَى : وَشَاوِرُهُمْ فِي الْأَمْرِ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুমি তাদের সাথে পরামর্শ কর।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৫৯)

وقال تَعَالَى : وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ.

“তাদের কাজকর্ম পরিচালিত হয় পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে।” (সূরা আশ শূরাঃ ৩৮)

۷۱۸- عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الْاسْتِخَارَة فِي الْأُمُورِ كُلِّهَا كَالسُّورَةِ مِنَ الْقُرْآنِ يَقُولُ إِذَا هُمْ أَحَدُكُمْ بالأمر فليركع ركعتين من غيرِ الفَرِيضَةِ ثُمَّ لِيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ واستقدرك بقدرتك وأسألك من فضلك العظيم فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أعلم وأنت عَلامُ الْغُيُوبِ اللَّهُم إِن كُنتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِى أَوْ قَالَ عَاجِلِ أمْرِى وَأجَلِهِ فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِن كُنتَ تَعْلَمُ أن هذا الأمر شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَأَجَلِهِ فَاصْرِقْهُ عَنِّى وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ . قَالَ وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ – رواه البخاري .

৭১৮। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য যাবতীয় বিষয়ের মধ্যে আমাদেরকে ইস্তিখারাও শেখাতেন, যেমন তিনি আল কুরআনের কোন সূরা আমাদেরকে শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার সংকল্প করে সে যেন দুই রাআত নফল নামায পড়ে, তারপর বলে, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণ চাই তোমার ইলমের সাহায্যে। তোমার নিকট শক্তি কামনা করি তোমার কুদরাতের সাহায্যে। তোমার নিকট অনুগ্রহ চাই তোমার মহা অনুগ্রহ থেকে। তুমি সর্বোপরি ক্ষমতাবান। আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি সর্বজ্ঞ। আমি কিছু জানি না। তুমি সকল গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞানে যদি এ কাজ, যা আমি করতে চাই, আমার দীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কর্মফলের দিক থেকে অথবা তিনি বলেছেন, উক্ত কাজ দুনিয়া ও আখিরাতের দিক থেকে ভালো হয়, তাহলে তা করার শক্তি আমাকে দাও, সে কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও এবং তাতে আমার জন্য বরকত দাও। পক্ষান্তরে তোমার জ্ঞানে উক্ত কাজ যদি আমার দীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কর্মফলের দিক থেকে (অথবা বলেছেন) দুনিয়া অথবা আখিরাতের দিক থেকে মন্দ হয়, তাহলে আমার ধ্যান-কল্পনা উক্ত কাজ থেকে ফিরিয়ে নাও, তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দাও, আমার জন্য যেখানেই কল্যাণ রয়েছে তার ফায়সালা করে দাও এবং আমাকে তারই উপর সন্তুষ্ট করে দাও”। এরপর নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করবে। [টিকা:৮৬. কোন মুবাহ কাজের ইচ্ছা বা সংকল্প করলে এবং তা করা বা না করার ব্যাপারে সন্দেহ ও দ্বিধা দেখা দিলে এ ক্ষেত্রে ইস্তিখারা করা মুস্তাহাব। যেমন ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য সফর করা, বিবাহ করা ইত্যাদি। যেসব কাজ শরী’আতে ওয়াজিব বা ফরয, মাকরূহ বা হারাম তাতে ইস্তিখারা করা জায়েয নেই। ভালো কাজের বেলায় সময় নির্ধারণের জন্যও ইস্তিখারা করা যেতে পারে। ইস্তিখারার ভালো নিয়ম হল, প্রথমে দুই রাকআত নফল নামায পড়বে। তাতে সূরা আল কাফিরুন ও সূরা আল ইখলাস পড়ার বিষয় উল্লেখিত হয়েছে,তাতে সূরা আল কাফিরুন ও সূরা আল ইখলাস পড়ার বিষয় উল্লেখিত হয়েছে, তবে কোন বিশেষ সূরা নির্দিষ্ট করা জরুরী নয়। দিন রাতের তিনটি নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ই ইস্তিখারা করা যায়। ইস্তিখারার সুফল অনস্বীকার্য। ইস্তিখারার দ্বারা প্রকাশ্যে, ইংগিতে বা স্বপ্নযোগে কোন নির্দেশ লাভ অপরিহার্য নয়। যথানিয়মে ইস্তিখারা করে মনের ঝোঁক অনুযায়ী যে কোন মুবাহ ও ভালো কাজে অগ্রসর হওয়াই যথেষ্ট। এতে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত পাওয়া যায় এবং কাজে সুফল অর্জিত হয়।] (বুখারী)

অনুচ্ছেদ: ১৫ – ঈদগাহ, রোগী দেখা, হজ্জ, জিহাদ, জানাযার নামায ও অনুরূপ কাজে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে প্রত্যাবর্তন মুস্তাহাব

ঈদগাহ, রোগী দেখা, হজ্জ, জিহাদ, জানাযার নামায ও অনুরূপ কাজে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে প্রত্যাবর্তন মুস্তাহাব।

۷۱۹- عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يوم عيد خالف الطريق – رواه البخاري.

৭১৯। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাস্তায় ঈদগাহে যেতেন এবং আরেক রাস্তায় সেখান থেকে ফিরতেন। (বুখারী)

۷۲۰- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَخْرُجُ مِنْ طَرِيقِ الشَّجَرَةِ وَيَدْخُلُ مِنْ طَرِيقِ الْمُعَرِّسِ وَإِذَا دَخَلَ مَكَّةَ دَخَلَ مِنَ الثَّنِيَّةِ الْعُلْيَا وَيَخْرُجُ مِنَ الثنية السفلى – متفق عليه.

৭২০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাজারার পথ দিয়ে বের হতেন এবং মুআররাস (মসজিদের) পথ দিয়ে প্রবেশ করতেন। তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন, তখন সানিয়ায়ে উলিয়া দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং সানিয়ায়ে সুফলা দিয়ে বের হতেন। [টিকা: সানিয়্যাহ দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী সরু পথকে সানিয়‍্যাহ বলা হয়। সানিয়্যায়ে উলিয়া পাহাড়ের উচ্চ ভূমির হুজুন নামক স্থান দিয়ে চলে গেছে, আর সানিয়ায়ে সুফলা পাহাড়ের নিম্নভূমির শাবীকা নামক স্থান দিয়ে অতিক্রম করেছে।] (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ১৬ – সকল উত্তম কাজ ডান থেকে শুরু করা মুস্তাহাব

সকল উত্তম কাজ ডান থেকে শুরু করা মুস্তাহাব।

ইমাম নববী (র) বলেন, নিম্নোক্ত কাজগুলো ডান হাতে বা ডান দিক থেকে শুরু করা ভালো। যেমন উযু করা, গোসল করা, কাপড় পরা, জুতা, মোযা ও পাজামা ইত্যাদি পরা, মসজিদে প্রবেশ করা, মিসওয়াক করা, সুরমা লাগানো, নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা, বগল পরিষ্কার করা, মাথা মুড়ানো, নামাযে সালাম ফেরানো, পানাহার করা, মুসাফাহা করা, হাজরে আসওয়াদে চুমো খাওয়া, পায়খানা থেকে বের হওয়া, উপহার সামগ্রী গ্রহণ করা এবং এ জাতীয় অন্যান্য যাবতীয় কাজ। পক্ষান্তরে নিম্নোক্ত কাজগুলো বাম হাতে বা বাম দিক থেকে শুরু করা বাঞ্ছনীয়। যেমন নাক পরিষ্কার করা, থুথু ফেলা, পায়খানায় প্রবেশ করা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, মোযা, জুতা, কাপড় ও পাজামা খোলা, শৌচ করা এবং এ জাতীয় অন্যান্য সকল তুচ্ছ কাজ।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَوْا كِتَابِيَة.

মহান আল্লাহ বলেন:

“যাকে ভার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে সে (আনন্দে পাশের লোকদেরকে) বলবে, নাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ।” (সূরা আল হাক্কাহ: ১৯)

وَقَالَ تَعَالَى : فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ، وَأَصْحَابُ الْمَشْتَمَة مَا أَصْحَابُ الْمَشْتَعة.

“ডান দিকের দল; কতই ভাগ্যবান ডান দিকের দল। আর বাম দিকের দল; কতই হতভাগ্য বাম দিকের দল।” (সূরা আল ওয়াকিয়া : ৮-৯)

۷۲۱- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُنُ فِي شَانِهِ فِي ظُهوره وترجله وتنعله متفق عليه.

৭২১। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল (উত্তম) কাজ ডান থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন, যেমনঃ উযু, চুল-দাড়ি আঁচড়ানো ও জুতা পরা। (বুখারী, মুসলিম)

۷۲۲- وَعَنْهَا قَالَتْ كَانَتْ يَدُ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اليُمْنَى لِطَهُورِهِ وطعامه وكَانَتِ الْيُسْرَى لِخَلائِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى حَدِيثٌ صَحِيحٌ رَوَاهُ أَبُو
داود وغيره باسناد صحيح .

৭২২। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান হাত পবিত্রতা অর্জন ও খাবার গ্রহণে ব্যবহৃত হত এবং বাম হাতের ব্যবহার হত শৌচ ও নাপাক জাতীয় তুচ্ছ কাজে।

হাদীসটি সহীহ। এটি ইমাম আবু দাউদ প্রমুখ সহীহ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।

۷۲۳- وَعَنْ أَمْ عَطِبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُنَّ فِي غُسْلِ ابْنَتِهِ زَيْنَبَ ابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الْوُضُوءِ مِنْهَا – متفق عليه .

৭২৩। উম্মু আতিয়্যা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যায়নাব (রা)-কে গোসল দেয়ার সময় গোসল দানকারিণীদের বলেন: তার ডান দিক থেকে এবং উযুর অংগসমূহ থেকে গোসল দেয়া শুরু কর। (বুখারী, মুসলিম)

٧٢٤ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذا انْتَعَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأُ بِالْيُمنى وإذا نَزَعَ فَلْيَبْدَأُ بِالشِّمَالِ لِتَكُنِ الْيُمْنَى أولهما تُنْعَلُ وَآخِرَهُمَا تُنزع متفق عليه.

৭২৪। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন জুতা পরে তখন ডান পা থেকে যেন শুরু করে এবং জুতা খুলতে চাইলে যেন বাম পা থেকে খোলা শুরু করে, যাতে জুতা পরতে ডান পা প্রথম এবং খুলতে শেষে হয়। (বুখারী, মুসলিম)

٧٢٥ – وَعَنْ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْعَلْ يَمِينَهُ لطعامه وشرابه وثيابه ويَجْعَلُ يَسَارَهُ لما سوى ذلك – رواه ابو داود والترمذي وغيره.

৭২৫। হাফসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য গ্রহণ, পানি পান ও পোশাক পরিধানে তাঁর ডান হাত ব্যবহার করতেন, এছাড়া অন্যান্য কাজে তাঁর বাম হাত ব্যবহার করতেন।

ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী প্রমুখ এটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٧٢٦ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إذا لبسْتُمْ وَإِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَوْا بِآيَامِنِكُمْ – حَدِيثٌ صَحِيح رواه ابو داود والترمذى باسناد صحيح
৭২৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন পোশাক পরবে ও উদ্বু করবে, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে। এটি সহীহ হাদীস, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদে তা রিওয়ায়াত করেছেন।

۷۲۷- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى مِنِّى فاتي الجمرة فرماها ثم أتى منزله بمنى ونحر ثُمَّ قَالَ لِلْحَلاقِ خُذْ وَأَشَارَ إِلى جانبه الأيمن ثُمَّ الأيسر ثُمَّ جَعَلَ يُعطيه الناس متفق عليه. وفي رواية لما رمى الْجَمْرَة ونَحرَ نُسُكَهُ وَخَلَقَ ناول الحلاق شقَّهُ الْأَيْمَنَ فَحَلَقَهُ ثُمَّ دَعَا أَبَا طلحة الأنصارى فَاعْطَاهُ إِيَّاهُ ثُمَّ نَاوَلَهُ الشقِّ الْأَيْسَرَ فَقَالَ احْلِقُ فَحَلَقَهُ فَأَعْطَاهُ ابا طَلْحَةَ فَقَالَ اقْسِمُهُ بَيْنَ النَّاسِ

৭২৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় এলেন, অতঃপর জামরায় এসে পাথর নিক্ষেপ করলেন, তারপর মিনায় তাঁর অবস্থান স্থলে ফিরে এলেন এবং কুরবানী করলেন। তিনি মাথা মুণ্ডনকারীকে বললেনঃ লও (এখান থেকে শুরু কর), তিনি ডান দিকে ইশারা করলেন, অতঃপর বাম দিকে ইশারা করলেন, তারপর লোকদের মধ্যে চুল বিতরণ করে দিতে লাগলেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে রয়েছে: পাথর নিক্ষেপের পর তিনি কুরবানীর পশু যবেহ করলেন, মাথা মুণ্ডাবার ইচ্ছা করলে ক্ষৌরকারকে মাথার ডান অংশ ইশারায় দেখালেন। সে তা মুণ্ডন শেষ করলে তিনি আবু তালহা আনসারী (রা)-কে ডাকলেন এবং চুলগুলো তাকে দিলেন। তারপর তিনি ক্ষৌরকারকে মাথার বাম দিকে ইশারা করে বলেন। (এবারে) এগুলো মুক্তিয়ে দাও। সে তা মুত্তিয়ে দিল। চুলগুলো রাসূলুল্লাহ আবু তালহাকে দিলেন এবং বললেন: এগুলো লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। [ টিকা:সকল ভালো কাজে ডান হাত ব্যবহার করা নবী (সা)-এর সুন্নাতের অন্তর্গত যার প্রমাণ সহীহ হাদীসসমূহে সুস্পষ্ট। পানাহারের বেলায় ডান হাতের ব্যবহারের উপর উলামায়ে কিরাম বিশেষ গুরুত্ব দান করেছেন। তারা এতদূর পর্যন্ত বলেছেন: ডান হাতে পানাহার করা ওয়াজিব। যেহেতু বিভিন্ন হাদীসে এর উপর সবিশেষ জোর দেয়া হয়েছে এবং এর উপর আমল না করার জন্য বিশেষ শান্তিরও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। কাজেই এনদের প্রেক্ষিতে সুন্নাতে নববীর উপর আমল করা ও এ ব্যাপারে যাতে সীমালংঘিত না হয় সে সম্পর্কে একান্তভাবে সচেতন থাকা অপরিহার্য।]

অধ্যায়: ২

কিতাব আদাবিত তা’আম (পানাহারের নিয়ম-কানুন)

অনুচ্ছেদ: ১ – পানাহারের শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা

পানাহারের শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আলহামদু লিল্লাহ বলা।

۷۲۸- عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمَ اللهَ وَكُل بيمينك وكل مما يليك متفق عليه.

৭২৮। উমার ইবনে আবু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: বিস্মিল্লাহ বল, ডান হাতে খানা খাও এবং তোমার নিকটের খাবার থেকে খাও। (বুখারী, মুসলিম)

۷۲۹- وَعَنْ عَائِشَةَ رضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم إذا أكل أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُر اسم الله تَعَالَى فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يُذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى في أوله فَلْيَقُلْ بِسْم الله أوله وآخره – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৭২৯। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন খানা খায়, তখন শুরুতে যেন আল্লাহ তা’আলার নাম নেয়। সে শুরুতে আল্লাহ তা’আলার নাম নিতে ভুলে গেলে যেন বলে: বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু (প্রথমে ও শেষে আল্লাহর নামে)।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

۷۳۰- وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقولُ إِذا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فذكر الله تعالى عند دخوله وَعِندَ طَعَامِه قَالَ الشَّيْطَانُ لِأَصْحَابِهِ لا مَبِيْتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ تَعَالَىعِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أدْرَكْتُمُ المَبيت وإذا لَمْ يَذْكُرِ الله تَعَالَى عِنْدَ طَعامه قالَ أَدْرَكْتُمُ المبيت والعشاء – رواه مسلم .

৭৩০। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। যখন কোন লোক তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহ তা’আলার নাম স্বরণ করে এবং খানা খেতে আল্লাহর নাম নেয়, তখন শয়তান তার সাথীদের বলেঃ তোমাদের জন্য (এ ঘরে) রাত কাটাবার অবকাশ নেই এবং রাতের খাবারও নেই। আর যখন সে আল্লাহ তা’আলার নাম না নিয়েই তার ঘরে প্রবেশ করে, তখন শয়তান বলেঃ তোমাদের রাত কাটাবার ব্যবস্থা হয়ে গেল। সে খানা খাওয়ার সময়ও আল্লাহ তা’আলার নাম না নিলে শয়তান বলে: তোমাদের রাত কাটাবার ও রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেল। (মুসলিম)

۷۳۱- وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا لَمْ نَضَعْ أَيْدِينَا حَتَّى يَبْدَأُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعَ يَدَهُ وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَامًا فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لتضع يدها في الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهَا ثُمَّ جَاءَ اعرابیي كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الشيطان يستحل الطعام أن لا يُذكر اسم الله تعالى عَلَيْهِ وَأَنَّهُ جَاءَ بهذه الجارية ليَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذَتْ بِيَدِهَا فَجَاءَ بهذا الأعْرَابِي لِيَسْتَحِلُ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ والذي نفسي بيده ان يده في يدى مع يديهما ثُمَّ ذَكَرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى وَأَكل رواه مسلم.

৭৩১। হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা কখনো আহারের জন্য একত্রিত হলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতক্ষণ পর্যন্ত খানা শুরু না করতেন, আমরা খানায় হাত দিতাম না। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খানা খেতে উপস্থিত হলাম। এমন সময় একটি মেয়ে এসে (এমনভাবে) খাদ্যের উপর ঝুঁকে পড়ল (যেন সে ক্ষুধায় অত্যন্ত কাতর)। সে খাবারে হাত রাখতে যাচ্ছিল, অমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর আসে এক বেদুঈন। সেও যেন খাবারের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারও হাত ধরে ফেললেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে খাদ্যে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, শয়তান তাকে (নিজের জন্য) হালাল করে নেয়। শয়তান এ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিল এর দ্বারা তার নিজের জন্য খাদ্যকে হালাল করার জন্য। আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর শয়তান এ বেদুঈনকে নিয়ে আসে এর সাহায্যে তার নিজের জন্য খাদ্য হালাল করার উদ্দেশে। আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। যেই সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! এ দুইজনের হাতের সাথে শয়তানের হাতও আমার হাতের মধ্যে (মুষ্টিবদ্ধ) আছে। তারপর তিনি আল্লাহর নাম নিলেন (বিসমিল্লাহ পড়লেন) এবং খানা খেলেন। (মুসলিম)

۷۳۲- وَعَنْ أُمَيَّةَ بْنِ مَخْشِي الصَّحَابِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَرَجُلٌ يَأْكُلُ فَلَمْ يُسَمَ اللَّهَ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْ طَعَامِهِ الا لُقْمَةٌ فَلَمَّا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ قَالَ بِسْمِ اللهِ أُولهُ وَآخِرَهُ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ مَا زَالَ الشَّيْطَانُ يَأْكُلُ مَعَهُ فَلَمَّا ذَكَرَ اسْمَ اللَّهِ اسْتَقَاء مَا
في بطنه – رواه ابو داود والنسائي.

৭৩২। উমাইয়্যা ইবনে মার্শী সাহাবী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন এবং এক লোক আল্লাহর নাম না নিয়েই খানা খাচ্ছিল। তার খানা শেষ হতে তখন মাত্র এক লোকমা বাকি। এ শেষ লোকমাটি মুখে তুলতে সে বলল, “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাছ” (আল্লাহর নাম নিচ্ছি আমি খানার শুরু এবং শেষভাগে)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। তিনি বলেন: শয়তান বরাবর তার সাথে খানা খাচ্ছিল। সে আল্লাহর নাম লওয়া মাত্র, যা কিছু শয়তানের পেটে ছিল, সব বমি করে ফেলে দিল। (আবু দাউদ, নাসাঈ)

۷۳۳- وَعَنْ عَائِشَةَ رضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ طَعَامًا فِي سِتَّةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ أَعْرَابِي فَأَكَلَهُ بِلقْمَتَيْنِ فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَا إِنَّهُ لَوْ سَمَّى لكفاكم – رواه الترمذي وقال
حدیث حسن صحيح

৭৩৩। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছয়জন সাহাবীর সাথে খানা খাচ্ছিলেন। এক বেদুঈন এসে দুই লোকমাতেই সব খানা শেষ করে ফেলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: লোকটি যদি আল্লাহর নাম নিয়ে খেত, তাহলে এ খানা তোমাদের সকলের জন্য যথেষ্ট হত। [টিকা: খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ ও শেষে হামদ ও সানা পড়া মুস্তাহাব। অনেকে একত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকেই পৃথক পৃথকভাবে বিসমিল্লাহ বলতে হবে। এটাই জমহুর উলামার মত। কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, একজনের পড়াই যথেষ্ট।]

ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٧٣٤- وَعَنْ أَبِي أَمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا رفَعَ مَائِدَتَهُ قَالَ الْحَمْدُ لِلهِ حَمْداً كثيراً طيباً مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِي وَلَا مُوَدِّع ولا مستغنى عنه ربنا – رواه البخاري .

৭৩৪। আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দস্তরখান উঠাতেন তখন বলতেন: “আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসীরান তায়্যিবান মুবারাকান ফীহি গায়রা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রাব্বানা” (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, প্রচুর প্রশংসা, পাক পবিত্র, বরকতময় সব সময়ের জন্যই প্রশংসা, এমন প্রশংসা যা যথেষ্ট হবার নয়, যা থেকে অমুখাপেক্ষী হওয়াও যায় না)। (বুখারী)

٧٣٥- وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَكَلَ طَعَامًا فَقَالَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حول مني ولا قوة غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّم من ذنبه رواه ابو داود والترمذي وقال حدیث حسن.

৭৩৫। মু’আয ইবনে আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আহার শেষে বলল, “আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিন মিন্ত্রী ওয়ালা কুওয়াতিন” (সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন, আমাকে রিযক দিলেন আমার কোনরূপ চেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই), তার পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ২ – খাদ্যের মধ্যে ছিদ্রান্বেষণ না করা ও খাদ্যের প্রশংসা করা

খাদ্যের মধ্যে ছিদ্রান্বেষণ না করা ও খাদ্যের প্রশংসা করা।

٧٣٦- عن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَا عَابَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ إِن اشْتَهَاهُ أَكَلهُ وَإِنْ كَرِهَهُ تركه – متفق عليه .

৭৩৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাদ্যে ছিদ্রান্বেষণ করেননি। খাদ্য তাঁর রুচিসম্মত হলে খেতেন এবং রুচিসম্মত না হলে খেতেন না। (বুখারী, মুসলিম)

۷۳۷- وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ أَهْلَهُ الْآدَمَ فَقَالُوا مَا عِنْدَنَا إِلا خَلٌّ فَدَعَا بِهِ فَجَعَلَ يَأْكُلُ وَيَقُولُ نِعْمَ الْأَدْمُ الْخَلُّ نِعْمَ الأدم الخل- رواه مسلم.

৭৩৭। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার-পরিজনের নিকট সালুন চাইলেন। তাঁরা বলেন, আমাদের নিকট সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকাই আনিয়ে খেতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন: কী উৎকৃষ্ট সালুন সিরকা, কী উৎকৃষ্ট সালুন সিরকা। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৩ – রোযাদারের সামনে খাবার এলে এবং সে রোযা ভাংতে না চাইলে যা বলবে

রোযাদারের সামনে খাবার এলে এবং সে রোযা ভাংতে না চাইলে যা বলবে।

۷۳۸- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجِبُ فَإِن كَانَ صَائِمًا فَلْيُصَلِّ وَإِنْ كَانَ مُقْطَراً فَلْيَطْعم – رواه مسلم.

৭৩৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তা কবুল করে। যদি সে রোযাদার হয় তাহলে যেন তার (দাওয়াতকারীর) জন্য দু’আ করে। সে যদি রোযাদার না হয় তাহলে যেন আহার করে। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৪ – যাকে দাওয়াত দেয়া হয় তার সাথে আরেকজন শামিল হলে যা বলতে হবে

যাকে দাওয়াত দেয়া হয় তার সাথে আরেকজন শামিল হলে যা বলতে হবে।

۷۳۹- عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْبَدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ دَعَا رَجُلُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامِ صَنَعَهُ لَهُ خَامِسَ خَمْسَةٍ فَتَبِعَهُمْ رَجُلٌ فَلَمَّا بَلَغَ الْبَابَ قَالَ النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ هَذَا تَبِعَنَا فَإِنْ شِئْتَ أَنْ تَأْذَنَ لَهُ وَإِنْ شِئْتَ رَجَعَ قَالَ بَلَى أَذَنُ لَهُ يَا رَسُولَ الله – متفق عليه .

৭৩৯। আবু মাসউদ আল বদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য বিশেষভাবে খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত। দিল। তিনি ছিলেন (খাবারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে) পঞ্চম। কিন্তু তাদের সাথে আরো একজন এসে শামিল হল। দরজায় পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেজবানকে বলেন: এ ব্যক্তি আমাদের সাথে এসেছে। তোমার ইচ্ছা হলে তাকে অনুমতি দিতে পার নতুবা তুমি চাইলে সে চলে যাবে। মেজবান বলল, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাকে অনুমতি দিচ্ছি। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৫ – নিজের সামনে থেকে খাওয়া এবং যে লোক আহারের নিয়ম-কানুন জানে না তাকে তা শেখানো

নিজের সামনে থেকে খাওয়া এবং যে লোক আহারের নিয়ম-কানুন জানে না তাকে তা শেখানো।

٧٤٠- عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنْتُ غُلَامًا فِي حِجْرٍ رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ يَدِى تَطِيسُ فِي الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا غُلامُ سَمَّ اللَّهَ تَعَالَى وَكُلَّ بِيَمِينِكَ وَكُلِّ مِمَّا يليك – متفق عليه.

৭৪০। উমার ইবনে আবী সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তত্ত্বাবধানাধীন বালক ছিলাম। খাওয়ার সময় আমার হাত খাবার পাত্রের চতুর্দিকে বিচরণ করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন: বেটা! আল্লাহর নাম লও (বিসমিল্লাহ পড়), ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও। (বুখারী, মুসলিম)

٧٤١- وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلًا أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِمَالِهِ فَقَالَ كُلِّ بِيَمِينِكَ قَالَ لَا أَسْتَطِيعُ قَالَ لَا اسْتَطَعْتَ مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ – رَوَاهُ مُسلم .

৭৪১। সালামা ইবনুল আকওয়া (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাম হাতে খানা খায়। তিনি বলেন: ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি অপারগ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি যেন আয় নাই পার। অহংকার ছাড়া আর কিছুই তাকে (ডান হাতে খেতে) বাধা দেয়নি। সে আর কখনো মুখ অবধি তার হাত তুলতে পারেনি। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৬ – সংগীদের অনুমতি ছাড়া দুই খেজুর ইত্যাদি এক গ্রাসে খাওয়া নিষেধ

সংগীদের অনুমতি ছাড়া দুই খেজুর ইত্যাদি এক গ্রাসে খাওয়া নিষেধ।

٧٤٢ – عَنْ جَبَلَةَ بْنِ سُحَيمِ قَالَ أَصَابَنَا عَامُ سَنَةٍ مَعَ ابْنِ الزُّبَيْرِ فَرُزِقْنَا تَمْرًا وكَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَمُرُّ بَنَا وَنَحْنُ نَأْكُلُ فَيَقُولُ لَا تقارنوا فَإِنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهى عَنِ الْأَقْرَانِ ثُمَّ يَقُولُ إِلَّا أَنْ يستَأْذَنَ الرَّجُلُ أَخَاهُ – متفق عليه.

৭৪২। জাবালা ইবনে সুহাইম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক বছর আমরা আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইরের সাথে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত হয়ে পড়লাম। আমাদেরকে দেয়া হত একটি করে খেজুর। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) আমাদের নিকট দিয়ে যেতেন এবং আমরা তখন আহাররত থাকলে তিনি বলতেন, একত্রে দুই খেজুর খেয়ো না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক গ্রাসে দু’টি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। তারপর তিনি বলেন: অবশ্য’ অপর ভাইর অনুমতি নিয়ে খাওয়া যায়। [টিকা: বন্ধু বা সাথীরা সন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি দিলে একত্রে দু’টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে অন্যথায় এরূপ খাওয়া নিষেধ।] (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৭ – কোন ব্যক্তি আহার করে তৃপ্ত না হলে কি করবে বা কি বলবে

কোন ব্যক্তি আহার করে তৃপ্ত না হলে কি করবে বা কি বলবে।

٧٤٣- عَنْ وَحْشِيِّ بْنِ حَرْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ أَصْحَابَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا نَأْكُلُ وَلَا نَشْبَعُ قَالَ فَلَعَلَّكُمْ تَفْتَرِقُونَ قَالُوا نَعَمْ قَالَ فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ يُبَارَكَ لَكُمْ فِيهِ رواه أبو داود.

৭৪৩। ওয়াহ্শী ইবনে হারব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমরা আহার করি অথচ তৃপ্ত হই না (এর প্রতিকার কী)। তিনি বলেন: সম্ভবত তোমরা বিচ্ছিন্নভাবে খেয়ে থাক। তারা বলেনঃ হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমরা একত্রে তোমাদের খানা খাও এবং আল্লাহর নাম লও, তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে। (আবু দাউদ)

অনুচ্ছেদ: ৮ – পাত্রের একপাশ থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ

পাত্রের একপাশ থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ।

এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

وكل مما يليك – متفق عليه كما سبق

“খাও তোমার সামনে থেকে”। বুখারী ও মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।

٧٤٤- وَعَنِ ابْن عباس رضى اللهُ عَنْهُما عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ البركة تنزل وسط الطعام فكلوا من حافتيه ولا تَأْكُلُوا مِن وسطه رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح .

৭৪৪। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বরকত খাবারের মধ্যস্থলে অবতীর্ণ হয়। কাজেই খাদ্যের যে কোন একপাশ থেকে খাও, মধ্যস্থল থেকে খেয়ো না।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

٧٤٥- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَصْعَةٌ يُقَالُ لَهَا الْغَرَاءُ يَحْمِلُهَا أَرْبَعَةُ رِجَالٍ فَلَمَّا أَضْحَوْا وَسَجَدُوا الضُّحى أتي بتلك القصعة يعني وقد ترد فيها فالتقوا عَلَيْهَا فَلَمَّا كَثُرُوا جَنَا رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَعْرَابِي مَا هَذِهِ الْجَلْسَةُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ جَعَلَنِي عَبْداً كَرِيمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيْدًا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى الله عليه وسلم كلوا من حواليهَا وَدَعُوا ذِرْوَنَهَا يُبَارَكَ فِيهَا -رواه أبو داود باسناد جيد.

৭৪৫। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি (বড় ও ভারী) পাত্র ছিল। সেটিকে গাররা বলা হত। চারজন লোক সেটি বহন করত। যখন চাশতের সময় হত এবং লোকজন চাশতের নামায সমাপন করত, তখন উক্ত পাত্র আনা হত। তাতে সারীদ তৈরীকৃত থাকত। ১২ লোকজন পাত্রের চারপাশে বসে যেত। লোকসংখ্যা যখন বেড়ে যেত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দুই জানু হয়ে বসতেন। এক বেদুঈন বলল এ আবার কেমন বসা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ আমাকে বিনয়ী বান্দা বানিয়েছেন। আমাকে উদ্ধত ও সত্যের সীমালংঘনকারী বানাননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: তোমরা পাত্রের চারপাশ থেকে খাও, মধ্যের উচু স্থান থেকে খেয়ো না। কারণ তাতেই বরকত নাযিল হয়। [টিকা: গাররা মানে সাদা-উজ্জ্বল। পাত্রের রং এরূপ ছিল অথবা তাতে সজ্জিত খাবার বা দুধের রং অনুসারে এ নামে অভিহিত করা হত।] [টিকা: গোশতের সুরুয়া ও রুটি মেশানো এক প্রকার উপাদেয় খাবার।]

ইমাম আবু দাউদ এটি সহীহ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৯ – হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ

হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ।

٧٤٦ – عن أبي جحيفة وهب بن عبد الله رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا أكل متكنا – رواه البخاري.

৭৪৬। আবু জুহাইফা ওয়াত্বব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি হেলান দিয়ে আহার করি না।

ইমাম বুখারী এ হাদীস্ট্রি উদ্ধৃত করেছেন।

খাত্তাবী (র) বলেন, এখানে হেলান দেয়া অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যে জিনিসের উপর বসা আছে তাতে হেলান দেয়া বা ঠেস্ দেয়া। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বেশি খাওয়ার ইচ্ছায় শয্যা বা বালিশে ঠেস্ দিয়ে বলে, তার মত ঐভাবে রসে খাওয়া থেকে নিষেধ করাই রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উদ্দেশ্য, বরং এক সাথে বসা বাঞ্ছনীয়, কোনরূপ ঠেস লাগানো উচিত নয় এবং পরিমিত আহার করবে। কেউ কেউ বলেছেন, হেলান দেয়া বলতে এক পাশে ঝুঁকে আহার করা বুঝানো হয়েছে।

٧٤٧- وعن أنس رضي اللهُ عَنْهُ قَالَ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَقَلَم جالسًا مقعيًا يَأْكُل تمرا – رواه مسلم.

৭৪৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর উভয় হাঁটু খাড়া অবস্থায় বসে খেজুর খেতে দেখেছি। (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ১০ – তিন আঙ্গুলে খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যের পাত্র চেটে খাওয়া ইত্যাদি

তিন আঙ্গুলে খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যের পাত্র চেটে খাওয়া ইত্যাদি।

ইমাম নববী (র) বলেন, আহার শেষে আঙ্গুল চেটে খাওয়া উত্তম এবং চাটার আগে তা মোছা মাকরূহ। আহারের পাত্র চেটে খাওয়া ও পতিত খানা তুলে খাওয়া মুস্তাহাব। চাটার পর আঙ্গুলগুলো কোন কিছু দিয়ে মোছা যেতে পারে।

٧٤٨- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم إذا أكل أحدُكُمْ طَعَامًا فَلا يَمْسَحْ أَصَابِعَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَهَا متفق عليه .

৭৪৮। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আহার শেষে তার আঙ্গুলগুলো না চাটা বা না চাটানো পর্যন্ত মুছে না ফেলে। (বুখারী, মুসলিম)

٧٤٩- وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ بِثَلاث اصابع فَإِذَا فَرَغَ لعقها – رواه مسلم.

৭৪৯। কা’ব ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিন আংগুলে আহার করতে দেখেছি এবং তিনি আহার শেষে আংগুল চেটেছেন। (মুসলিম)

٧٥٠- وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِلَعْقِ الأصابع والصحفَةِ وَقَالَ إِنَّكُمْ لا تَدْرُونَ في أي طعامِكُمُ البركة – رواه مسلم.

৭৫০। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আংগুল ও খাওয়ার পাত্র লেহন করে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: তোমাদের জানা নেই, তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম)

٧٥١- وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا وَقَعَتْ لَقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذَهَا فَلْيُمط مَا كَانَ بِهَا مِن أذى وَلَيَأْكُلَهَا وَلا يَدَعَهَا لِلشَّيْطَانِ ولا يمسح يده بالمنديل حتى يلعق أصابعه فإنه لا يدري في أي طعامه البركة رواه مسلم.

৭৫১। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদ্যের গ্রাস পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়, তাতে লেগে থাকা ময়লা ছাড়িয়ে নিয়ে তা খায় এবং শয়তানের জন্য রেখে না দেয়। সে যেন তার আঙ্গুলগুলো না চাটা পর্যন্ত তার হাত রুমাল দিয়ে না মোছে। কারণ তার জানা নেই যে, তার খাবারের কোন্ অংশে বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম)

٧٥٢ – وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ احدكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْءٍ مِنْ شَأْنِهِ حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ فَإِذَا سَقَطَتْ لَقَمَةٌ أَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا فَلْيُمط مَا كَانَ بِهَا مِن أذى ثُمَّ لِيَأْكُلَهَا وَلَا يَدَعَهَا لِلشَّيْطَانِ فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعق أصابعَهُ فَإِنَّهُ لا يَدْرِي في أي طعامه البركة – رواه مسلم.

৭৫২। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি কাজের সময় হাযির হয়, এমনকি খাওয়ার সময়ও সে উপস্থিত হয়। কাজেই তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয় এবং তাতে লেগে থাকা ময়লা মুছে ফেলে তা খেয়ে নেয়, শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। সে আহার শেষে যেন আংগুল লেহন করে। কারণ তার জানা নেই, তার খাবারের কোন অংশে বরকত লুকিয়ে আছে। (মুসলিম)

٧٥٣- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اكل طعاما لعق أصابعه الثلاث وقال اذا سقطت لُقْمَةُ أَحَدَكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا وَلِيُمط عنها الأذى وليا كلها ولا يدعها للشيطان وامرنَا أَنْ نَسْلُتَ الْقَصْعَةَ وَقَالَ إِنَّكُمْ لا تَدْرُونَ فِي أي طعامكم البركة – رواه مسلم .

৭৫৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার শেষে তাঁর তিনটি আংগুল চেটে খেতেন এবং বলতেন: তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা উঠিয়ে নেয় এবং তাতে লেগে যাওয়া ময়লা দূর করে খেয়ে ফেলে, শয়তানের জন্য যেন তা ছেড়ে না দেয়। তিনি আমাদেরকে পাত্র মুছে খাওয়ারও নির্দেশ দেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের জানা নেই, তোমাদের কোন্ খানাতে বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম)

٧٥٤- وعن سعيد بن الحارث أنه سأل جابرا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ الْوَضُوءِ مِمَّا مستِ النَّارُ فَقَالَ لا قَدْ كُنَّا زَمَنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَجِدُ مِثْلَ ذَلِكَ الطعام الأ قليلاً فَإِذَا نَحْنُ وَجَدْنَاهُ لَمْ يَكُن لَنَا مَنَادِيلُ إِلَّا اكُفْنَا وَسَوَاعَدَنَا وَاقْدَامَنَا ثُمَّ نُصَلِّي ولا تتوضا – رواه البخاري.

৭৫৪। সাঈদ ইবনুল হারিস (র) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির (রা)-কে জিজ্ঞেস করেন, আগুনে পাকানো জিনিস খেলে উযু করতে হবে কি না। তিনি বলেন, না। আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় এ জাতীয় খানা খুব কমই পেতাম। যখন তা পেতাম (এবং খেয়ে নিতাম), তখন আমাদের নিকট রুমাল ছিল না, ছিল হাতের তালু, বায়ু, আর পা। (আমরা তাতেই হাত মুছে নিতাম) তারপর নামায পড়তাম, কিন্তু (নতুনভাবে) উষু করতাম না। (বুখারী)

অনুচ্ছেদ: ১১ – আহারে অধিক সংখ্যক হাতের সমাবেশ হওয়া এবং সকলেই একত্রে খাওয়ার মাহাত্ম্য

আহারে অধিক সংখ্যক হাতের সমাবেশ হওয়া এবং সকলেই একত্রে খাওয়ার মাহাত্ম্য।

٧٥٥ – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طعام الاثنين كافي الثلاثة وطعام الثلاثة كافي الأربعة متفق عليه.

৭৫৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (বুখারী, মুসলিম)

٧٥٦ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقولُ طَعَامُ الواحد يكفى الاثنين وطَعَامُ الاثْنَيْنِ يَكْفِي الْأَرْبَعَةَ وَطَعَامُ الْأَرْبَعَةِ يكفى الثمانية رواه مسلم

৭৫৬। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। [টিকা: ৯৩. উপরোক্ত হাদীস দু’টির তাৎপর্য হল, যে খাবার একজনের উদর পূর্তির জন্য যথেষ্ট, তা দ্বারা সাময়িকভাবে দু’জনের আহার সম্পন্ন হতে পারে। এতে তাদের ক্ষুধা মিটে যাবে। এতে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যের শক্তি অর্জিত হয়ে যাবে। হাদীসের মর্ম এটাই। হাদীসের অর্থ এটা নয় যে, একজনের খাবারে দু’জনের পূর্ণ উদরপূর্তি হবে, বরং তাদের প্রয়োজন পূর্ণ হবে।] (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ১২ – পানি পান করার নিয়ম-কানুন

পানি পান করার নিয়ম-কানুন।

٧٥٧- عنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يتنفس في الشراب ثلاثا – متفق عليه.

৭৫৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করতে (পান-পাত্রের বাইরে) তিনরার নিঃশ্বাস ফেরতেন। (বুখারী, মুসলিম)

٧٥٨ وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم لا تشربوا واحداً كشرب البعير ولكن اشْرَبُوا مَثْنَى وَثُلَاثَ وَسَمَّوا إِذَا أنتم شربْتُمْ واحْمَدُوا اذا أنتم رفعتُم. رواه الترمذي وقال حديث حسن.

৭৫৮। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা উটের ন্যায় এক নিঃশ্বাসে পানি পান করো না, বরং দুই তিনবার (শ্বাস নিয়ে) পান কর। আর বিস্মিল্লাহ পড় যখন তোমরা পানি পান শুরু কর এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বল, যখন পান শেষ কর।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

٧٥٩- وعن أبي قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ يتنفس في الاناء متفق عليه .

৭৫৯। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)

٧٦٠- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتِي بِلَيْنِ قد شَيْبَ بِمَاءٍ وَعَنْ يَمِينِهِ أَعْرَابِي وَعَنْ يُسَارِهِ أَبُو بَكْرٍ فَشَرِبَ ثُمَّ أَعْطَى الأعرابي وَقَالَ الأيمن فالأيمن متفق عليه .
৭৬০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দুধ আনা হল, যাতে কিছু পানিও মেশানো ছিল। তাঁর ডান দিকে ছিল এক বেদুঈন এবং বামে ছিলেন আবু বাক্স (রা)। তিনি কিছু দুধ পান করলেন, তারপর ঐ বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃ ডান দিক থেকে ডান দিক থেকে। (বুখারী, মুসলিম)

٧٦١- وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أتي بشراب فَشَرِبَ مِنْهُ وَعَنْ يَمِينِهِ غُلامٌ وَعَن يُسَارِهِ أَشْبَاحَ فَقَالَ لِلْغُلَامِ تَأْذَنُ لي أن أعطى هؤلا . فقال الغلام لا والله لا أوثرُ بِنَصِيبَي مِنْكَ أَحَدًا قَتَلَهُ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ في يده – متفق عليه

৭৬১। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পানীয় আনা হলে তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন। তাঁর ডানে ছিল একজন বালক এবং বামে ছিলেন কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি বালকটিকে বললেনঃ তুমি কি আমাকে এদের আগে দেয়ার অনুমতি দেবে? বালকটি বলল, না, আল্লাহর শপথ। আপনার তরফ থেকে আমার জন্য নির্ধারিত অংশের ব্যাপারে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দিতে পারি না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিয়ালাটি বালকটির হাতে দিলেন। [টিকা: এ বালকটি ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল আব্বাস (রা)। এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, ডান দিক থেকে বণ্টন শুরু করতে হবে।] (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ : ১৩ – মশক ইত্যাদির মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা মাকরূহ এবং তা মাকরূহ তানযীহী, মাকরূহ তাহরীমী নয়

মশক ইত্যাদির মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা মাকরূহ এবং তা মাকরূহ তানযীহী, মাকরূহ তাহরীমী নয়।

٧٦٢- عن أبي سعيد الْخُدْرِي رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ اخْتناث الأسقية يعنى أن تكسر أفواهها ويُشرب منها -متفق عليه.

৭৬২। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখ উল্টে ধরে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন অর্থাৎ মশকের মুখ বাঁকিয়ে পানি পান করা। (বুখারী, মুসলিম)

٧٦٣- وعن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن يُشْرَبَ مِنْ في السقاء أو القربة – متفق عليه .

৭৬৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)

٧٦٤ – وَعَنْ أَمْ ثَابِت كَيْشَة بنت ثابت أُخْتِ حَسَّانِ بْنِ ثَابِتٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَتْ دَخَلَ عَلَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَشَرِبَ مِنْ فِي قِرْبَةٍ مُعَلَّقَةٍ قَائِمًا فَقُمتُ إلى فيها فقطعته – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح .

৭৬৪। হাসসান ইবনে সাবিত (রা)-র বোন উন্মু সাবিত কাবশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে এলেন। তারপর তিনি একটি ঝুলন্ত মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন। আমি উঠে গিয়ে মশকের মুখটি কেটে নিলাম (বরকতের জন্য)।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস। ইমাম নববী বলেন, উম্মু সাবিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ লাগানো স্থানটুকু হিফাযত করা, তার বরকত হাসিল করা ও তার কোনরূপ বেইজ্জতি না হয় তার জন্যই কেটে নেন। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা জায়েয। এর আগে বর্ণিত হাদীস দু’টো মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা ভালো ও উত্তম, তারই দলীল। আল্লাহই সঠিক জানেন।

অনুচ্ছেদ: ১৪ – পানীয়তে নিঃশ্বাস ফেলা মাকরূহ

পানীয়তে নিঃশ্বাস ফেলা মাকরূহ।

٧٦٥- عن أبي سَعِيدِ الْخُدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عن النفخ في الشراب فَقَالَ رَجُلٌ الْقَناةُ آرَاهَا فِي الْآنَاء فَقَالَ أَهْرِقُهَا قَالَ اني لا أروى من نفس واحد قال فابن القدح اذا عن فيك رواه الترمذي وقال حدیث حسن صحيح .

৭৬৫। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় দ্রব্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। একজন বলল, পাত্রে যদি ময়লা দেখতে পাই? তিনি বলেন: তা ঢেলে ফেলে দাও। লোকটি বলল, আমি এক নিঃশ্বাসে পান করে তৃপ্ত হই না? তিনি বলেন: নিঃশ্বাস ফেলার সময় তোমার মুখ থেকে পাত্র সরিয়ে নেবে।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

٧٦٦- وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ يتنفس في الاناء أو ينفخ فيه رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৭৬৬। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে অথবা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ১৫ – দাঁড়িয়ে পানি পান করা জায়েয, তবে বসে পান করা উত্তম ও পূর্ণ (তৃপ্তিদায়ক)

দাঁড়িয়ে পানি পান করা জায়েয, তবে বসে পান করা উত্তম ও পূর্ণ (তৃপ্তিদায়ক)।

٧٦٧- وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَقَيْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم من زمزم فشرب وهو قائم متفق عليه.

৭৬৭। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যমযমের পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়িয়েই তা পান করেছেন। (বুখারী, মুসলিম)

٧٦٨- وَعَنِ النزالِ بْنِ سَبْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَتَى عَلَى بَابَ الرَّحْمَةِ فَشَرِبَ قائما وقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فعلت – رواه البخاري

৭৬৮। নাযযাল ইবনে সাবরা (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রা) (কুফার) বাবুর রাহবাহ নামক স্থানে এলেন এবং দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপই করতে দেখেছি, যেরূপ তোমরা আমাকে করতে দেখলে। (বুখারী)

٧٦٩ – وعن ابْنِ عَمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَمْشي وتشرب وَنَحْنُ قيام – رواه الترمذي وقال حدیث حسن صحيح.

৭৬৯। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় হাঁটতে হাঁটতে আহার করতাম এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করতাম।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

۷۷۰- وَعَنْ عَمْرُو بْن شَعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْرَبُ قائما وقاعداً – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৭৭০। আমর ইবনে শুআইব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (কখনো) দাঁড়িয়ে আবার (কখনো) বসে পানি পান করতে দেখেছি।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

۷۷۱- وعن أنس رضى اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ نَهَى أَنْ يُشرب الرَّجُلُ قَائِمًا قَالَ قَتَادَةُ فَقُلْنَا لأني فَالْأَكلُ قَالَ ذلك أشر أو أحبت رواه مسلم. وفي رواية له أن النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَجَرَ عَنِ الشرب قائما .

৭৭১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদা (র) বলেন, আমি আনাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তা (দাঁড়িয়ে) খানা খাওয়ার ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি বলেন, এটা অধিকতর খারাপ অথবা (বলেন, এটা) নিকৃষ্টতর কাজ।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে তিরস্কার করেছেন।

۷۷۲- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم لا يَشْرِينَ أَحَدٌ مِنْكُمْ قَائِمًا فَمَنْ نَسِي فَلْيَسْتَقى – رواه مسلم.

৭৭২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। যে ভুলবশত এরূপ করে সে যেন বমি করে দেয়। [টিকা: ৯৫. দাঁড়িয়ে পান না করাই উত্তম। হাদীসের নিষেধাজ্ঞা মাকরূহ তানযিহী পর্যায়ের। কারণ বহু সংখ্যক সহীহ হাদীসে দাঁড়িয়ে পান করার কথাও ব্যক্ত হয়েছে। তবে বসে পান করাই উত্তম।] (মুসলিম)

অনুচ্ছেদ : ১৬ – যে ব্যক্তি পান করায় তার সকলের শেষে পান করাই উত্তম

যে ব্যক্তি পান করায় তার সকলের শেষে পান করাই উত্তম।

۷۷۳- عَنْ أَبِي فَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ساقي الْقَوْمِ آخِرُهُمْ شُربا – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৭৭৩। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: লোকদের পানীয় পরিবেশনকারী সকলের শেষে পান করবে।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

অনুচ্ছেদ: ১৭ – সকল প্রকার পাক পাত্রে পান করা জায়েয

সকল প্রকার পাক পাত্রে পান করা জায়েয।

সোনা-রূপার পাত্র ছাড়া সকল প্রকার পাক পাত্রে পান করার অনুমতি আছে। পাত্র বা হাত ছাড়া নহর ও ঝর্ণায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করা জায়েয। সোনা ও রূপার পাত্রে পানাহার করা বা এগুলোর যে কোন প্রকার ব্যবহার হারাম।

٧٧٤- عن أنس رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ حضرت الصَّلاةُ فَقَامَ مَنْ كَانَ قَرِيبَ الدار إلى أهله وبَقِي قَوْمٌ فَأَتِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَغْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ فَصَغُرَ الْمِخْضَبُ أن يُبْسُطُ فِيهِ كَفَهُ فَتَوَضَّأُ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ قَالُوا كَمْ كُنتُمْ قَالَ ثمانين وزيادة متفق عليه هذه رواية البخاري ، وفي رواية لَهُ وَلِمُسلم أن النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَا بِإِنَا مِنْ مَاءٍ فَأَتِي بِقَدَحٍ رَحْرَاحٍ فِيهِ شَيْءٌ مِن ما ، فَوَضَعَ أصابعه فيهِ قَالَ انس فَجَعَلْتُ أنظر إلى الماء ينبع من بين أصابعه فَحَزَرْتُ مَنْ تَوَضَّأَ مَا بَيْنَ السَّبعين إلى الثَّمَانِينَ

৭৭৪। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নামাযের ওয়াক্ত নিকটবর্তী হল। যাদের ঘর নিকটে ছিল তারা তাদের পরিজনদের নিকট (উযু করতে) চলে গেল। কিছু সংখ্যক লোক বাকি রয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি পাথরের বাটি আনা হল। পাত্রটি এতো ছোট ছিল যে, তাতে তাঁর হাত সম্প্রসারিত করাও সম্ভব ছিল না। সবাই সেই পাত্রের পানি দিয়ে উযু করে নিল। লোকেরা বলল, আপনারা সংখ্যায় কতজন ছিলেন? বলা হল: আশিজন বা তার চাইতে কিছু বেশি।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তবে এটা ইমাম বুখারীর বর্ণনা। তাঁর ও ইমাম মুসলিমের আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির পাত্র আনার জন্য ডেকে পাঠালেন। একটি বড় অথচ অগভীর পাত্র আনা হল। তাতে সামান্য পানি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে তাঁর আংগুল রাখলেন। আনাস (রা) বলেন, আমি দেখলাম যে, তাঁর আংগুলগুলো ফুটে পানি বেরিয়ে আসছে। আনাস বলেন, আমি অনুমান করলাম, যারা উচু করলেন, তাদের সংখ্যা সত্তর থেকে আশিজনের মধ্যে ছিল।

٧٧٥ – وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَتَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْرَجْنَا لَهُ مَاءٌ فِي تَوْرِ مِن صفر فتوضا – رواه البخاري.

৭৭৫। আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন। আমরা তাঁর জন্য পিতলের একটি পাত্রে করে পানি নিয়ে এলাম এবং তিনি উযু করলেন। (বুখারী)

٧٧٦ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ وَمَعَهُ صَاحِبٌ لَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ان كَانَ عِندَكَ مَاء بَاتَ هذه الليلة في سنة والا كرعنا – رواه البخاري .

৭৭৬। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর নিকট এলেন। তাঁর সংগে তাঁর এক সাথীও (আবু বাক্স) ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমার মশকে যদি রাতের বাসি পানি মজুদ থাকে, তাহলে দাও। অন্যথায় আমরা কোন নহর ইত্যাদিতে মুখ লাগিয়ে পানি পান করে নেব। (বুখারী)

۷۷۷- وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَانَا عن الحرير والديباج والشرب في أنية الذهَب وَالْفِضَّةِ وَقَالَ هِيَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وهي لكم في الآخرة – متفق عليه

৭৭৭। হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে রেশমী ও রেশম সূতি মিশেল কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। তিনি সোনা ও রূপার পাত্রে পান করতেও আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন: এসব জিনিস দুনিয়াতে তাদের (কাফিরদের) জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের জন্য। (বুখারী, মুসলিম)

۷۷۸- وَعَنْ أَمْ سَلَمَةَ رَضى اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الذي يَشْرَبُ في أنية الفضة إِنَّمَا يُجرجر في بطنه نارَ جَهَنَّمَ – متفق عليه، وفي رواية المسلم إن الذي يَأْكُلُ أَوْ يَشْرَبُ فِي أنيةِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ مَنْ شَرِبَ فِي إِنَاءٍ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ فَإِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارًا مِنْ جَهَنَّمَ

৭৭৮। উন্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে, সে তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই প্রজ্বলিত করে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি রূপা ও সোনার পাত্রে খাবে অথবা পান করবে। তার আরেক বর্ণনায় রয়েছে। যে লোক সোনার অথবা রূপার পাত্রে পান করলো, সে তার পেটে জাহান্নামেরই আগুন প্রজ্জ্বলিত করলো। [টিকা: এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত মত হল: সোনা অথবা রূপার পাত্রে খাওয়া বা পান করা সকল পুরুষ ও নারীর জন্যই হারাম। অনুরূপ অন্য যে কোন কাজেও এসব পাত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে হারাম। তবে মহিলাদের জন্য সোনা-রূপার অলংকার ব্যবহার করা জায়েয।]
অধ্যায়: ৩

কিতাবুল লিবাস (পোশাক-পরিচ্ছদ)

অনুচ্ছেদ: ১ – সাদা কাপড় পরা উত্তম। লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রং-এর কাপড় পরাও জায়েয। রেশম ব্যতীত সূতী, উল, পশমী ইত্যাদি যাবতীয় কাপড় পরিধান করা জায়েয

সাদা কাপড় পরা উত্তম। লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রং-এর কাপড় পরাও জায়েয। রেশম ব্যতীত সূতী, উল, পশমী ইত্যাদি যাবতীয় কাপড় পরিধান করা জায়েয।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْاتِكُمْ وَرَيْشًا ولباس التقوى ذلك خَيْرٌ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“হে আদম সন্তান। তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার এবং বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি, আর সর্বোত্তম হচ্ছে তাকওয়ার পোশাক।” (সূরা আল আ’রাফ: ২৬)

وقال تعالى : وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرِّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأْسَكُمْ

“তিনি তোমাদের জন্য ববস্থা করেন বন্ত্রের, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের যা তোমাদেরকে যুদ্ধের সময় রক্ষা করে।” (সূরা আন্ নাহল: ৮১)

۷۷۹- وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمُ الْبَيَاضُ فَإِنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ وَكَفَنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৭৭৯। ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাদা রং-এর কাপড় পরিধান কর। কারণ তেছমাদের কাপড়গুলোর মধ্যে এটাই সর্বোত্তম। সাদা কাপড়ই তোমাদের মৃতদের কাফন দেবে।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম শিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

۷۸۰- وَعَن سَمُرَةَ رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبَسُوا البَياضِ فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وأَطيبُ وكَفَنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ – رواه النسائي والحاكم وقال حديث صحيح.

৭৮০। সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা সাদা পোশাক পর। কারণ এটাই পবিত্র ও উৎকৃষ্টতর। সাদা কাপড়েই তোমাদের মৃতদের কাফন দেবে।

ইমাম নাসাঈ ও হাকেম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। হাকেম বলেন, এ হাদীসটি সহীহ।

۷۸۱- وَعَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرْفُوعًا ولقد رايته في حلة حمراء ما رأيتُ شَيْئًا قَط أَحْسَنَ مِنه متفق عليه.

৭৮১। বারাআ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গঠনাকৃতি ছিল মধ্যম গোছের। আমি তাঁকে লাল চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় দেখেছি। আমি (দুনিয়াতে) তাঁর চাইতে আর কোন সুন্দর জিনিস দেখিনি। (বুখারী, মুসলিম)

۷۸۲- وَعَنْ أَبِي جُحَيْفَة وَهْبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ رَأَيْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ وَهُوَ بِالأبطح في قبة لَهُ حَمْراء مِنْ آدَمَ فَخَرَجَ بِلال بوضُونِهِ فَمِنْ نَاضِح وَنَائِلِ فَخَرَجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ حُلَةً حَمْراء كَانِي أَنْظُرُ إِلى بَيَاضِ سَاقَيْهِ فَتَوَضَاً وَاذْنَ بِلال فَجَعَلْتُ أَتَتَبَّعُ فَاهُ هُهُنَا وَهُهُنَا يَقُولُ يَمِينًا وَشِمَالاً حَى عَلَى الصَّلاةِ حَى عَلَى الْفَلَاحِ ثُمَّ رَكِرَتْ لَهُ عَنَزَةٌ فَتَقَدِّمُ فَصَلَّى يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ الْكَلْبُ والحمار لا يمنع متفق عليه.

৭৮২। আবু জুহাইফা ওয়াহ্ব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কায় আবৃতাহ্ নামক স্থানে চামড়ার একটি লাল তাঁবুতে দেখেছি। বিলাল (রা) তাঁর উযুর পানি নিয়ে এলেন। কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পানির কিছু অংশ তো পেয়ে গেলেন এবং কেউ শুধু অন্যদের ভিজা হাতের স্পর্শ লাভ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় (তাঁবু থেকে) বেরিয়ে এলেন। আমি যেন তাঁর উভয় হাঁটুর নিম্নদেশের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি। তিনি উযু করলেন। বিলাল আযান দিলেন। আমি তার মুখ এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। তিনি তখন ডানে ও বাঁয়ে ‘হাইয়্যা ‘আলাস্ সালাহ্, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ’ বলছিলেন। এরপর তাঁর সামনে একটি বর্শা ফলক গেড়ে দেয়া হল। তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে নামায পড়ালেন এবং তাঁর সামনে দিয়ে কুকুর ও গাধা অতিক্রম করল কিন্তু বাধা প্রদান করা হয়নি। (বুখারী, মুসলিম)

۷۸۳- وَعَنْ أَبِي رَمْشَةَ رفَاعَة التَّيْمِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عليه وسلم ثوبان اخضران رواه ابو داود والترمذى باسناد صحيح.

৭৮৩। আবু রিমসা রিফা’আ আত-তাইমী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দু’টি সবুজ কাপড় পরিহিত দেখেছি।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী সহীন সনদে এটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٧٨٤ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ يَوْمَ فتح مكة وعليه عمامة سوادا – – رواه مسلم.

৭৮৪। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কালো রং-এর পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। (মুসলিম)
٧٨٥- وعن أبي سعيد عمرو بن حريث رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ كَأَنَّى أَنْظُرُ إِلَى رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ عَمَامَةٌ سَوْداءُ قَدْ أَرْحَى طَرَفَيْهَا بَيْنَ كتفيه رواه مسلم. وفي رواية له أن رسول اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ الناس وعليه عمامة سودا ..

৭৮৫। আবু সাঈদ আমর ইবনে হুরাইস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর মাথায় কালো রং-এর পাগড়ী পরিহিত দেখতে পাচ্ছি, যার উভয় কিনারা তাঁর দুই কাঁধে ঝুলে রয়েছে।

ইমাম মুসলিমএ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর আরেক বর্ণনায় রয়েছে: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি কালো রং-এর পাগড়ী পরিহিত ছিলেন।

٧٨٦- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كُفَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ثلاثة أثواب بيض سحولية مِنْ كُرْسَفَ لَيْسَ فِيهَا قَمِيصُ وَلَا عِمَامَةٌ متفق عليه.

৭৮৬। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি সাদা সূতী ইয়ামনী কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছে। তাতে কামিস
ও পাগড়ী ছিল না। (বুখারী, মুসলিম)

۷۸۷- وَعَنْهَا قَالَتْ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاةٍ وَعَلَيْهِ مرط مرحل من شعر أسود – رواه مسلم.

৭৮৭। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ভোরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো পশমে তৈরী চাদর গায়ে জড়িয়ে বের হলেন। তাতে উটের পিঠের হাওদার নকশা অংকিত ছিল। (মুসলিম)

۷۸۸- وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذاتَ لَيْلَةٍ فِي مَسِيرٍ فَقَالَ لِي أَمَعَكَ مَاءٌ قُلْتُ نَعَمْ فَنَزَلَ عَنْ راحلته فمشى حتى توارى في سواد الليل ثُمَّ جَاءَ فَأَفَرَعْتُ عَلَيْهِ مِنَ الْإِدَاوَةِ فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفَ فَلم يستطع أن يخرج ذراعيه منها حَتَّى أَخْرَجَهُمَا مِنْ أَسْفَلِ الْجَنَّةِ فَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ ثُمَّ أَهْوَيْتُ لِأَنْزِعَ خُفْيْهِ فَقَالَ دَعْهُمَا فَإِنِّي أدخلتهما طاهرتين ومسح عليهما – متفق عليه. وفي رواية وعليه جبةٌ شَامِيةٌ ضَيِّقَةُ الكمين وفي رِوَايَةٍ أَنَّ هَذِهِ الْقَضِيَّةَ كَانَتْ فِي غزوة تبوك .

৭৮৮। মুগীরা ইবনে শোবা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফরসংগী ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন: তোমার সাথে কি পানি আছে? আমি বললাম, হাঁ (আছে)। তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং একদিকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা করলেন, এমনকি তিনি রাতের আঁধারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি মুখমণ্ডল ধুলেন। তিনি একটি পশমী জুব্বা পরিহিত ছিলেন। তিনি তার মধ্য থেকে তাঁর হাত দু’টি বের করতে পারলেন না, অবশেষে জুব্বার নিচ দিয়ে হাত বের করলেন, তারপর উভয় হাত ধুলেন ও মাথা মসেহ করলেন। আমি তাঁর মোজাদ্বয় খোলার জন্য হাত বাড়ালাম। তিনি বলেন: ওগুলো ছেড়ে দাও। আমি ওগুলো পাক অবস্থায় পরেছি। তারপর তিনি উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। আরেক বর্ণনায় আছে: তাঁর পরনে ছিল চিপা হাতাযুক্ত সিরীয় জুব্বা। আরেক বর্ণনায় রয়েছে। এ ঘটনা ছিল তাবুক যুদ্ধের সময়কার।

অনুচ্ছেদ: ২ – জামা পরা মুস্তাহাব

জামা পরা মুস্তাহাব।

۷۸۹- عَنْ أَمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ أَحَبُّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلم القميص – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن.

৭৮৯। উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দীয় পোশাক ছিল জামা। [টিকা: এ হাদীস দ্বারা জামার উৎকৃষ্ট পোশাক হওয়ার প্রমাণ মেলে। কারণ জামা দ্বারা শরীর ভালোরূপে আচ্ছাদিত করা যায় এবং এর মাধ্যমে বিনয় প্রকাশ পায়। যাই হোক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে কোন আমলই অনুকরণযোগ্য।]

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান।

অনুচ্ছেদ: ৩ – জামা ও আস্তিনের দৈর্ঘ্যের বর্ণনা

জামা ও আস্তিনের দৈর্ঘ্যের বর্ণনা।

কষ্কর্তা ও আস্তিনের পরিমাণ। লুঙ্গি ও পাথড়ীর সীমা। অহংকার বশত কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম, তবে অহংকারমুক্ত হলে তা জায়েয।

٧٩٠- عنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ الأَنصَارِيَّةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ كُمْ قَمِيصِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إلى الرسغ – رواه ابو داود والترمذي وقال حدیث حسن.

৭৯০। আসমা বিনতে ইয়াযীদ আনসারীরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামার আস্তিন ছিল হাতের কব্জি পর্যন্ত।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান।

۷۹۱- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ جَرِّ ثَوْبَهُ خيلاء لم ينظر اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ أَبُو بَكْرِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ ازارِى يَسْتَرْخي إلا أن أتعَاهَدَهُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّكَ لشت مِمَّنْ يَفْعَلُهُ خيلاء – رواه البخاري وروى مسلم بعضه.

৭৯১। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় (গোছার নিচে) ঝুলিয়ে দেয়, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার প্রতি তাকাবেন না। আর বাক্স (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার তহবন্দ তো প্রায়ই ঝুলে যায়, যদি না আমি সচেতন থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ তুমি তাদের মধ্যে শামিল নও, যারা অহংকারবশে কাপড় ঝুলিয়ে থাকে। ইমাম বুখারী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন এবং ইমাম মুসলিম এর অংশবিশেষ বর্ণনা করেছেন।

۷۹۲- وعن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَنظُرُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إلى من جر إزاره بطرا – متفق عليه.

৫৯২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ কিয়ামাতের দিন সেই ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না যে০ অহংকারবশে তার তহবন্দ বা পাজামা (গোছার নিচে) ঝুলিয়ে দেয়। (বুখারী)

۷۹۳- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا أَسْفَلَ الْكَعْمَيْنِ مِنَ الْإِزارِ ففي النار – رواه البخاري .

৭৯৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুই পায়ের টাখনুর নীচে তহবন্দ যে পরিমাণ স্থান ঢেকে রাখবে তা জাহান্নামে যাবে। (বুখারী)

٧٩٤- وَعَنْ أَبِي ذَرِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثلاثَةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ التم قالَ فَقَرَأَها رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثلاث مرارٍ قَالَ أَبُو ذَرَ خَابُوا وخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْخَلْفِ الكاذب رواه مسلم. وفي رواية له المسبل إزاره .

৭৯৪। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিনজন লোকের সাথে আল্লাহ কিয়ামাতের দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ফিরে তাকাবেন না এবং তাদের (গুনাহ থেকে) পাকও করবেন না। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শান্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিন তিনবার বলেন। আবু যার (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল। এসব বিফল মনোরথ ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক কারা? তিনি বলেন: (১) যে ব্যক্তি অহংকারবশে কাপড় (গোছার নিচে) ঝুলিয়ে দেয়, (২) যে ব্যক্তি উপকার করে খোঁটা দেয় বা বলে বেড়ায় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে তার পণ্য বিক্রয় করে।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তাঁর আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি তার লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে।

٧٩٥- وعن ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الاسبال في الازار والقميص والعِمَامَةِ مَنْ جَرِّ شَيْئًا خُيْلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يوم القيامة – رواه ابو داود والنسائي باسناد صحيح.

৭৯৫। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তহবন্দ বা পাজামা, জামা ও পাগড়ীই ঝুলিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি অহংকারবশে এরূপ কিছু ঝুলিয়ে দেবে, কিয়ামাতের দিন। আল্লাহ তার প্রতি তাকাবেন না।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসাঈ সহীহ সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٧٩٦ – وعَنْ أَبِي جُرَي جَابِرِ بْنِ سُلَيْمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَجُلًا يَصْدُرُ النَّاسُ عَن رايه لا يَقُولُ شَيْئًا الأصْدَرُوا عَنْهُ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ عَلَيْكَ السَّلامُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَرَّتَيْنِ قَالَ لَا تَقُلْ علَيْكَ السلامُ، عَلَيْكَ السلام تحية الموتى قلِ السَّلامُ عَلَيْكَ قَالَ قُلْتُ أَنْتَ رَسُولُ اللهِ ؟ قَالَ أَنَا رَسُولُ اللهِ الَّذِي إِذَا أَصَابَكَ ضُرٍّ فَدَعَوْنَهُ كَشَفَهُ عَنْكَ وَإِذَا أَصَابَكَ عَامُ سَنَةٍ فَدَعَوْتَهُ أَنْبَتَهَا لَكَ وَإِذَا كُنْتَ بِأَرْضِ قَفْرٍ أَوْ فَلَاةٍ فَضَلْتُ راحلتكَ فَدَعَوْتَهُ رَدَّهَا عَلَيْكَ قَالَ قُلْتُ اعْهد الى قَالَ لَا تَسُبُّنُ أَحَدًا قَالَ فَمَا سببت بعده حراً ولا عبداً ولا بعيراً ولا شاة ولا تَحْفَرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَأَنْ تُكَلِّمَ أَخَاكَ وأنتَ منبسط اليه وجهكَ إِنَّ ذلِكَ مِنَ الْمَعْرُوفِ وَأَرْفَعُ إِزَارَكَ إلى نصف الساق فان ابيت قالى الكعبين وأياكَ وَأَسْبَالَ الْآزار فَانَّهَا مِن المخيلة وان الله لا يُحِبُّ المَخيلة وان امْرُوا شَتَمَكَ وَعَبْرَكَ بِمَا يَعْلَمُ فِيْكَ فَلَا تغيره بِمَا تَعْلَمُ فِيهِ فَإِنَّمَا وَبَالُ ذلِكَ عَلَيْهِ – رواه ابو داود والترمذى باسناد صحيح وقال الترمذي حديث حسن صحيح .

৭৯৬। আবু জুরাই জাবির ইবনে সুলাইম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একজনকে দেখলাম, লোকেরা তার মতামতের অনুসরণ করছে। তিনি যাই বলেন, লোকজন তাই গ্রহণ করছে। আমি বললাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি বললাম, আলাইকাস্ সালামু ইয়া রাসূলাল্লাহ। এভাবে দু’বার বললাম। তিনি বলেন: আলাইকাস সালাম বলো না। কারণ আলাইকাস সালাম হল মৃতের সালাম, বরং বলঃ আসসালামু আলাইকা। আমি বললাম, আপনি কি আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেনঃ (হাঁ) আমি সেই আল্লাহর রাসূল, তুমি কোন বিপদ-মুসিবাতে পড়ে যাঁর নিকট দু’আ কর এবং যিনি তা দূর করেন, তুমি দুর্ভিক্ষে পড়ে যার নিকট দু’আ কর এবং যিনি তোমার জন্য শস্য উৎপন্ন করেন, তুমি জনমানবহীন অথবা পানিবিহীন প্রান্তরে তোমার সওয়ারী হারিয়ে যাঁর নিকট দু’আ কর এবং যিনি তোমাকে তা ফিরিয়ে দেন। জাবির ইবনে সুলাইম বলেন, আমি বললাম, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ কাউকে কখনো গালি-গালাজ করো না। জাবির বলেন, এরপর আমি কখনো আযাদ, গোলাম, উট, বকরীকেও গালি দিইনি। ভালো ও নেকির কোন কাজকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না। তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলবে। এটিও একটি নেকির কাজ। ইযার বা তহবন্দ তোমার হাঁটুর নীচে অর্ধেক পর্যন্ত তুলে রাখবে। এত দূর যদি ওঠাতে তোমার বাধা থাকে তাহলে অন্তত টাখনু পর্যন্ত তুলে রাখবে। লুঙ্গি ঝুলিয়ে দেয়া থেকে দূরে থাকবে। কারণ এটা হচ্ছে অহংকারের অন্তর্গত। আর আল্লাহ অহংকার পছন্দ করেন না। কেউ যদি তোমাকে গালি দেয় অথবা তোমার সম্পর্কে সে যা জানে সে বিষয়ে তোমার দুর্নাম করে, তুমি তার সম্পর্কে যা জান, সে বিষয়ে তার দুর্নাম করো না। কারণ এয় খারাপ পরিণাম তারই উপর বর্তাবে।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

۷۹۷- وَعَن أبي هريرة رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ يُصَلِّى مُسْبِلُ إِزَارَهُ قَالَ لهُ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اذْهَبْ فَتَوَضَّاً فَذَهَبَ فَتَوَضَّا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ اذْهَبْ فَتَوَضَّاً فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ يَا رَسُولَ الله مَا لَكَ أَمَرْتَهُ أَنْ يَتَوَضَّا ثُمَّ سَكَتْ عَنْهُ قَالَ إِنَّهُ كَانَ يُصَلِّى وَهُوَ مُسْئِلَ إِزَارَهُ وَإِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ صَلَاةَ رَجُلٍ مُسْبِل – رواه ابو داود باسناد صحيح على شرط مسلم

৭৯৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি (টাখনুর নিচে) তহবন্দ ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল। সূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, যাও, আবার উযু কর। সে গিয়ে পুনরায় উযু করে এল। তিনি আবার বলেন: যাও, আবার উযু কর। সে গেল ও পুনরায় উযু করে এল। একজন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কে তাকে উযু করার নির্দেশ দিচ্ছেন, অতঃপর তার ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করছেন। তিনি বলেন: এ ব্যক্তি তার তহবন্দ (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল। অথচ আল্লাহ এমন লোকের নামায কবুল করেন না, যে তার তহবন্দ ঝুলিয়ে দিয়ে নামায পড়ে।

ইমাম আবু দাউদ ইমাম মুসলিমের শর্তে এ হাদীস সহীহ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।

۷۹۸- وَعَن قيس بن بشر التغلبي قال أخبرني أَبِي وَكَانَ جَلِيسًا لِأَبِي الدردا ، قَالَ كَانَ بدمشق رَجُلٌ مِنْ أَصْحَاب النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لَهُ سهل بن الحنظلية وَكَانَ رَجُلاً مُتَوَجِداً فَلْمَا يُجَالِسُ النَّاسِ إِنَّمَا هُوَ صَلَاةٌ فَإِذَا فَرَغَ فَإِنَّمَا هُوَ تشبيح وتكبير حَتَّى يَأْتِي أَهْلَهُ فَمَرُ بِنَا وَنَحْنُ عِنْدَ أَبي الدردا .
فقال له أبو الدرداء كلمة تنفعنا ولا تَضُرُّك قَالَ بَعَثَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عليه وسلم سرية فَقَدِمَتْ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَجَلَسَ فِي الْمَجْلِسِ الَّذِي يَجْلِسُ فِيهِ رسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِرَجُل إِلى جَنْبِهِ لَوْ رَأَيْتَنَا حِينَ الْتَقَيْنَا نَحْنُ وَالْعَدُو فَحَمَلَ فُلانٌ وَطَعَنَ فَقَالَ خُذْهَا مِنِّي وَأَنَا الْغُلَامُ الْغَفَارِيُّ كَيْفَ تَرَى في قَوْله قَالَ مَا آراء الأ قد بطل أجره فسمع بذلكَ أَخَرُ فَقَالَ مَا أَرَى بِذلِكَ بَأْسًا فتنازعا ا حتى حَتَّى سَمِعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ سُبْحَانَ الله لا : بأس أن يُؤْجَرَ وَيُحْمَدَ فَرَأَيْتُ أَبا الدرداء سُر بذلك وَجَعَلَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ اليْهِ وَيَقُولُ أَنْتَ سمعت ذلك مِن رَّسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ نَعَمْ فَمَا زَالَ يُعِيدُ عَلَيْهِ حَتَّى إِنِّي لَأَقُولُ لِيَبْرُكَنُ عَلَى رَكْبَتَيْهِ قَالَ فَمَرَّ بِنَا يَوْمًا أَخَرَ فَقَالَ لَهُ أَبُو الدردا ، كلمة تَنْفَعْنَا وَلا تَضُرُّكَ قَالَ قَالَ لَنَا رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المنفق على الخيل كالباسط بده بالصدقة لا يقبِضُهَا ثُمَّ مَرَّ بِنَا يَوْمًا أَخَرَ فَقَالَ له أبو الدردا ، كلمة تنفعنا ولا تَضُرُّك قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِعْمَ الرَّجُلُ حريم الأسيدي لو لا طول جمته وَاسْبَالُ ازاره فَبَلَغَ خُرَيْمًا فَعَجَلَ فَاخَدَ شَفْرَةً فَقَطعَ بِهَا جُمْتَهُ إلى أذنيه ورفع ازاره إلى انصاف ساقيه. ثُمَّ مَرَّ بِنَا يَوْمًا آخَرَ فَقَالَ لَهُ أبو الدرد) ، كَلِمَةً تَنْفَعْنَا وَلَا تَضُرُّكَ قَالَ سَمِعْتُ رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّكُمْ قَادِمُونَ عَلَى اخْوَانِكُمْ فَأَصْلِحُوا رِجَالِكُمْ وَأَصْلِحُوا لِبَاسَكُمْ حَتَّى تَكُونُوا كَانَّكُمْ شَامَةٌ فِي النَّاسِ فَإِنَّ اللَّهَ لَايُحِبُّ الفُحش ولا التفحش – رواه ابو داود بإسناد حسن إلا قيس بن بشر فَاخْتَلَفُوا فِي توثيقه وتضعيفه وقد روى له مسلم .

৭৯৮। কায়েস ইবনে বিশ্ব আত-তাগলিবী (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে আমার পিতা অবহিত করেন যে, তিনি ছিলেন আবুদ দারদা (রা)-এর সাথী। তিনি (বিশ্বর) বলেন, দামিশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবী ছিলেন। তাঁসে সাহল ইবনে হানযালিয়্যা বলা হত। তিনি নির্জনতা বেশি পছন্দ করতেন, লোকদের সাথে মেলামেশা খুব কমই করতেন, নামাযেই অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিতেন, নামায থেকে অবসর হয়ে তাসবীহ ও তাকবীরে মশগুল থাকতেন তার পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত। (একদা) তিনি আমাদের নিকট দিয়ে গেলেন। আমরা তখন আবুদ দারদা (রা)-এর নিকট বসা ছিলাম। আবুদ দারদা (রা) তাঁকে বলেন, এমন কোন কথা আমাদের বলে দিন, যা আমাদের উপকারে আসবে অথচ আপনারও কোন ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ষুদ্র বাহিনী পাঠালেন। বাহিনী ফিরে আসার পর তাদের একজন এসে ঐ মজলিসে বসল যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বসা ছিলেন। আগত লোকটি তাঁর পাশে বসা লোকটিকে বলল, যদি তুমি আমাদের তখন দেখতে পেতে যখন জিহাদের ময়দানে আমরা শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, অমুক (কাফির) বর্শা উঠিয়ে আক্রমণ করলো এবং খোঁটা দিলো। জবাবে (আক্রান্ত মুসলিমটি) বলর, এই নে আমার পক্ষ থেকে, আর আমি হচ্ছি গিফার গোত্রের যুবক। তার এই বক্তব্য সম্পর্কে আপনি কী বলেন? লোকটি বলল, আমার মতে (অহংকারের কারণে) তার সাওয়াব নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যজন একথা শুনে বলল, আমি তো এতে কোন দোষ দেখি না। তারা বিতর্কে লিপ্ত হল, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তা শুনে ফেলেন। তিনি বলেন: সুবহানাল্লাহ! এতে কোন দোষ নেই, সে (আখিরাতে) পুরস্কৃত হবে এবং (দুনিয়ায়) প্রশংসিত হবে। কায়েস ইবনে বিশ্বর বলেন, আমি আবুদ্ দারদা (রা)-কে দেখলাম, তিনি এতে খুশি হয়েছেন এবং তাঁর দিকে নিজের মাথা তুলে বলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একথা শুনেছেন? ইবনে হানযালীয়া (রা) বলেণ, হাঁ শুনেছি। আবদু দারদা (রা) বারবার এ কথাটি ইবনে হানযালীয়ার সামনে বলতে লাগলেন। আমি শেষে বলেই ফেললাম, আপনি কি ইবনে হানযালীয়ার হাঁটুর উপর চড়ে বসতে চান?

বিশ্র (র) বলেন, অন্য একদিন ইবনে হানযালীয়া (রা) আবার আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবুদ দারদা (রা) তাকে বলেন, এমন কিছু কথা বলুন যা আমাদের কাজে লাগে এবং আপনারও ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন: যে বক্তি তার ঘোড়ার খাবারের জন্য অর্থ ব্যয় করে সে এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যে সাদাকা দেয়ার জন্য নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং তা আর টেনে নেয় না। তারপর আর একদিন ইবনে হানযালীয়া (রা) আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবুদ দারণা (রা) তাঁকে বলেন, এমন কিছু কথা আমাদেরকে বলুন, যাতে আমরা লাভবান হই এবং আপনার ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খুরাইম আল-উসাইদী কী চমৎকার ব্যক্তি যদি তার চুল বেশি লম্বা না হত এবং তার ইযার টাখনুর নিচে না পড়ত। কথাটি খুরাইমের কানে পৌঁছে গেলো। তিনি দ্রুত ছুরি নিয়ে নিজের চুল কান পর্যন্ত কেটে ফেললেন এবং নিজের ইযারটি হাঁটু ও টাখনুর মাঝখানে অর্ধাংশ পর্যন্ত উঠিয়ে নিলেন। তারপর আর একদিন ইবনে হানযালীয়া (রা) আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবুদ দারদা (রা) তাঁকে বলেন, এমন কিছু কথা আমাদের শুনান যাতে আমাদের লাভ হয় এবং আপনার কোন ক্ষতি না হয়। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা নিজেদের ভাইদের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তোমরা নিজেদের হাওদাগুলো ঠিক কের নাও এবং নিজেদের পোশাকগুলোও ঠিক করে নাও, এমনকি তোমরা লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম পোশাকধারী ও সর্বোত্তম চেহারার অধিকারী হয়ে যাও। কারণ আল্লাহ অশ্লীলতার ধারক ও নিঃসংকোচে অশ্লীল কার্য সম্পাদনকারীকে ভালোবাসেন না।

ইমাম আবু দাউদ উত্তম সনদে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তবে কায়েস ইবনে বিশ্বরের হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম মুসলিমও তার থেকে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।

۷۹۹- وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِزْرَةُ المسلم إلى نصف الساق ولا خرَجَ أَوْ لَا جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ فَمَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَمَنْ جَرِّ إِزَارَهُ بَطَراً لَمْ يَنظُرِ الله الله – رواه ابو داود باسناد صحيح.

৭৯৯। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মুসলিমের লুংগি বা পাজামা পায়ের গোছার মাঝামাঝি স্থান পর্যন্ত লম্বা হবে। অবশ্য টাখনু গিরা ও পায়ের গোছার মাঝামাঝি স্থানে থাকাও দোষের নয়। টাখনু গিরার নিচে যেটুকু থাকবে, তা জাহান্নামে যাবে। যে লোক অহংকারের বশবর্তী হয়ে লুংগি বা পাজামা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়, (কিয়ামাতের দিন) আল্লাহ তার প্রতি ফিরেও তাকাবেন না।

۸۰۰- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ مَرَرْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي إِزارِي اسْتِرْخَاءُ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ ارْفَعْ إِزَارَكَ فَرَفَعْتُهُ ثُمَّ قَالَ زِدْفردت فَمَا زِلْتُ الحَراهَا بَعْدُ فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ إِلَى ابْنَ فَقَالَ إِلَى أَنْصاف الساقين رواه مسلم.

৮০০। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দিয়ে গেলাম। আমার তহবন্দ তখন (গোছার) নিচে ঝুলন্ত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবদুল্লাহ। তোমার তহবন্দ উপরে উঠাও। আমি তা উপরে উঠালাম। তিনি আবার বললেন: আরো উঠাও। আমি তা আরো উঠালাম। এভাবে তাঁর নির্দেশক্রমে আমি তা উঠাতেই থাকলাম। লোকদের একজন বলল, তা কতদূর উঠাতে হবে। তিনি বলেন: দু’পায়ের গোছার মাঝামাঝি পর্যন্ত। (মুসলিম)

۸-۱- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيْلا لَمْ ينظر الله إليه يَوْمَ القِيامَةِ فَقَالَتْ أم سَلَمَةَ فَكَيْفَ تَصْنَعُ النِّسَاءُ بِدْيُولِهِنَّ قَالَ برخين شيراً قالت إذا تَنْكَشِفُ اقْدَامُهُنَّ قَالَ فَيُرْخِينَهُ ذِرَاعًا لَا يَزِدْنَ- رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح

৮০১। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে চলবে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার প্রতি ফিরেও তাকাবেন না। উম্মু সালামা (রা) বলেন, তাহলে মহিলারা তাদের আঁচলের ব্যাপারে কি করবে? তিনি বলেন: তারা (গোছা থেকে) এক বিঘত পরিমাণ ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মু সালামা (রা) বলেন, এতে তো তাদের পা উন্মুক্ত হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তাহলে তারা এক হাত পরিমাণ নিচে পর্যন্ত ঝুলাতে পারে, এর চাইতে যেন বেশি না কুলায়।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

অনুচ্ছেদ: ৪ – বিনয় ও নম্রতা প্রকাশার্থে উত্তম পোশাক পরা পরিহার করা মুস্তাহাব

বিনয় ও নম্রতা প্রকাশার্থে উত্তম পোশাক পরা পরিহার করা মুস্তাহাব।

ইমাম নববী (র) বলেন, এই অনুচ্ছেদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু হাদীস “অনাহারে থাকার ফযীলাত ও পার্থিব জীবনে অনাসক্তি” (৫৬ নং) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে।

۰۲ وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال من ترك اللباس تواضعا الله وهو يقدر عَلَيْهِ دَعَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى
رؤوس الخَلائِقِ حَتَّى يُخْبَرَهُ مِنْ أَي حُللِ الْإِيْمَانِ شَاءَ يَلْبَسُهَا – رواه الترمذى وقال حديث حسن

৮০২। মু’আয ইবনে আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই বিনয়-নম্রতা স্বরূপ উৎকৃষ্ট পোশাক পরিহার করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ সকল সৃষ্টির সামনে তাকে ডাকবেন, এমনকি তাকে ঈমানের (পোশাক বা) অলংকারসমূহ থেকে যেটি ইচ্ছা পরিধান করার ইখতিয়ার দেবেন।

ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান।

অনুচ্ছেদ: ৫ – পোশাক-পরিচ্ছদে মিতব্যয়িতা অবলম্বন করা মুস্তাহাব। প্রয়োজন ছাড়া ও শরী’আতের চাহিদা ব্যতীত তুচ্ছ পোশাক পরিধান করবে না

পোশাক-পরিচ্ছদে মিতব্যয়িতা অবলম্বন করা মুস্তাহাব। প্রয়োজন ছাড়া ও শরী’আতের চাহিদা ব্যতীত তুচ্ছ পোশাক পরিধান করবে না।

۸۰۳- عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جدهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ أن يرى اثر نِعْمَتِهِ عَلَى عَبْدِهِ – رواه الترمذي وقال حديث حسن.

৮০৩। আমর ইবনে শু’আইব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ বান্দার উপর তাঁর নিয়ামাত ও অনুগ্রহের নিদর্শন দেখতে পছন্দ করেন।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি হাসান।

অনুচ্ছেদ: ৬ – পুরুষের জন্য রেশমের কাপড় ব্যবহার এবং তাতে বসা বা হেলান দেয়া হারাম। মহিলাদের জন্য তা পরিধান করা বৈধ

পুরুষের জন্য রেশমের কাপড় ব্যবহার এবং তাতে বসা বা হেলান দেয়া হারাম। মহিলাদের জন্য তা পরিধান করা বৈধ।

٨٠٤- عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلم لا تَلْبَسُوا الحرير فإن من لبسه في الدنيا لم يلبسه في الآخرة – متفق عليه.

৮০৪। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা রেশমী বস্ত্র পরিধান করো না। কারণ দুনিয়াতে। যে রেশমী বস্ত্র পরল, আখিরাতে সে তা পরা থেকে বঞ্চিত হল। (বুখারী, মুসলিম)

٨٠٥ وَعَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّمَا يَلْبَسُ الحرير من لا لا . خلاق له متفق عليه. وفي رواية للبخاري من لا خلاق له في الآخرة.

৮০৫। উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ (দুনিয়াতে) রেশমী বস্তু সেই পরে থাকে যার জন্য (আখিরাতে) কোন অংশ নেই।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম বুখারীর এক বর্ণনায় রয়েছে: যার জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই। [টিকা: এমন পোশাক পরিধান করা উচিত নয়, যার প্রতি মানুষ অংগুলি সংকেত করে বা চোখ তুলে চায়। এ ধরনের পোশাকের উদ্দেশ্য নিজের অহংকার ও বাহাদুরী প্রকাশ করা এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করা ছাড়া আর কিছু হয় না।]

٨- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَن ليس الحرير في الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسُهُ فِي الآخرة – متفق عليه.

৮০৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী বস্ত্র পরিধান করলো, আখিরাতে সে তা পরতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)

۸۰۷- وَعَنْ عَلى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ حَرِيرًا فَجَعَلَهُ فِي يَمِينِهِ وَذَهَبًا فَجَعَلَهُ فِي شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ إِنْ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذكور أمني رواه ابو داود باسناد حسن .

৮০৭। আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি একটি রেশমী বস্ত্র নিয়ে তা তাঁর ডান হাতে রাখলেন এবং এক টুকরা সোনা নিয়ে তা তাঁর বাম হাতে রাখলেন, তারপর বলেন: এ দু’টো জিনিস আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য হারাম।

ইমাম আবু দাউদ উত্তম সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۰۸- وعن أبي مُوسَى الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حُرِّمَ لِبَاسُ الْحَرِيرِ وَالذَّهَبِ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي وَأَحِلَّ لِأَنَائِهِمْ رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৮০৮। আবু মূসা আল আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: রেশমের পোশাক ও সোনার জিনিস আমার উম্মাতের পুরুষের জন্য। হারাম করা হয়েছে এবং তাদের নারীদের জন্য হালাল করা হয়েছে।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

۸۰۹- وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ نَهَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تشرب في آنية الذهب والفضة وأن تأكل فِيهَا وَعَنْ لَيْسِ الْحَرِيرِ وَالدِّيباج وَأَنْ تجلس عليه رواه البخاري

৮০৯। হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সোনা ও রূপার পাত্রে পানাহার করতে এবং রেশমী ও রেশম-সূতী মিশেল পোশাক পরিধান করতে ও তাতে বসতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী)

অনুচ্ছেদ: ৭ – চর্মরোগের কারণে রেশমী বস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি

চর্মরোগের কারণে রেশমী বস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি।

۸۱۰- عن انس قَالَ رَخَّصَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلزُّبَيْرِ وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفَ فِي لبس الحرير لحكة بهما – متفق عليه .

৮১০। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর ও আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা)-কে তাঁদের পাঁচড়া বা চুলকানি হওয়ার কারণে রেশমী বস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন। [টিকা: তাঁদের শরীরের পাঁচড়া বা চুলকানি ছিল উকুন জাতীয় পোকার দরুন। রেশম গরম জাতীয় পোশাক। এর ব্যবহারে উকুন দূরীভূত হয়। এজন্য প্রতিষেধক হিসেবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে রেশমী বস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন।] (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৮ – বাঘের চামড়ায় বসা ও তার উপর সওয়ার হওয়া নিষেধ

বাঘের চামড়ায় বসা ও তার উপর সওয়ার হওয়া নিষেধ।

۸۱۱- عَنْ مُعَاوِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تركبوا الحر ولا النمار – حديث حسن رواه ابو داود وغیره باسناد حسن

৮১১। মুআবিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রেশমী বস্ত্র ও চিতাবাঘের চামড়ার জিন বা গদিতে সওয়ার হয়ো না।

হাদীসটি হাসান। ইমাম আবু দাউদ প্রমুখ উত্তম সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।

۸۱۲- وَعَنْ أَبِي الْمَلِيْحِ عَنْ أَبِيْهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ

وسلم نهى عن جلود السباع رواه ابو داود والترمذي والنسائي باسانيد صحاح وفي رواية الترمذي نهى عَنْ جُلُود السباع أن تُفْتَرَش .

৮১২। আবুল মালীহ্ (র) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিংস্র বন্য জন্তুর চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী ও ইমাম নাসাঈ সহীহ সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। ইমাম তিরমিযীর এক বর্ণনায় রয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্য জন্তুর চামড়াকে ফরাশ হিসাবে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৯ – নতুন কাপড়, জুতা ইত্যাদি পরিধান করার সময় যা বলবে

নতুন কাপড়, জুতা ইত্যাদি পরিধান করার সময় যা বলবে।

ى اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ ۱۳- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِي ) عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اسْتَجَدٌ ثَوْبًا سَمَاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةَ أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاء يَقُولُ اللهُم لكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْنَنِيْهِ أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وشَرِّ ما صنع له – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن .

৮১৩। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন নতুন কাপড় পরতেন, তখন প্রথমে তার নামকরণ করতেন। যেমন বলতেন, এটি পাগড়ী, কুর্তা অথবা চাদর। তারপর বলতেন: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা কাসাওতানীহি….। অর্থাৎ “হে আল্লাহ তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমিই এ কাপড় আমাকে পরিয়েছ। আমি তোমার নিকট এর মধ্যে নিহিত কল্যাণের প্রত্যাশী এবং ঐ কল্যাণেরও প্রত্যাশী যার জন্য এটি তৈরীকৃত হয়েছে। পক্ষান্তরে আমি এ কাপড়ের অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয়প্রার্থী এবং ঐ অনিষ্ট ও অকল্যাণ থেকেও আশ্রয়প্রার্থী, যার জন্য এটি তৈরীকৃত হয়েছে।”

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

অনুচ্ছেদ: ১০ – পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করা

পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করা।

এ অনুচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত সহীহ হাদীস ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে (৯৫ নং অনুচ্ছেদ দেখা যেতে পারে)।

অধ্যায়: ৪

আদাবুন নাওম (ঘুমানোর আদব-কায়দা)

অনুচ্ছেদ : ১ – ঘুম, কাত হয়ে শোয়া, বসা, বৈঠকাদিতে একত্রে বসার আদব-কায়দা ও স্বপ্ন

ঘুম, কাত হয়ে শোয়া, বসা, বৈঠকাদিতে একত্রে বসার আদব-কায়দা ও স্বপ্ন।

٨١٤- عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَوَى إِلى فِرَاشِهِ نَامَ عَلَى شَقِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ اسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَوَجْهَتُ وَجْهِي اليك وفوضت أمرى اليك والجات ظهري اليك رغبة ورهبة إليكَ لا ملجا ولا منجى مِنكَ إِلا إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنزَلْتَ ونبيك الذي أرسلت رواه البخاري بهذا اللفظ في كتاب الادب من صحيحه.

৮১৪। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় শয়ন করতে গিয়ে ডান কাতে শুয়ে বলতেন: “হে আল্লাহ! আমি আমার নক্সকে তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আমার সত্তাকে তোমার দিকে ফেরালাম। আমার কাজ তোমার উপর সোপর্দ করলাম, আমার পিঠ তোমার আশ্রয়ে ঠেকালাম তোমার কাছে আশা ও আশংকা সহকারে। তুমি ছাড়া কোথাও (তোমার আযাব ও শাস্তি থেকে) আশ্রয় ও মুক্তি নেই। আমি ঈমান আনলাম তোমার কিতাবের উপর, যা তুমি নাযিল করেছ এবং ঐ নবীর উপর, যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ।”

ইমাম বুখারী তাঁর সহীহুল বুখারীর কিতাবুল আদাবে এই একই শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [ টিকা: হাদীসটি ইমাম বুখারীর কিতাবুল আদাব-এ নয়, বরং কিতাবুদ দাওয়াত-এর “বাবুন নাওম আলা শিক্কিল আইমান” অনুচ্ছেদে আছে। (সম্পাদক)]

٨١٥- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا آتَيْتَ مَضْجَعَكَ فتوضأ وضوءك للصلاة ثم اضطجع على شقكَ الْأَيْمَنِ وَقُل ….. وَذَكَرَ نَحْوَهُ وفيه وَاجْعَلْهُنَّ آخَرَ مَا تَقُولُ – متفق عليه .

৮১৫। বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবার ইচ্ছা করবে, তখন নামাযের উযুর ন্যায় উযু করো, তারপর ডান কাতে শুয়ে পড়ো, এরপর বলো…. পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে এও রয়েছে যে, এ দু’আকেই তোমার শেষ কথা হিসেবে উচ্চারণ করবে। (বুখারী, মুসলিম)

٨١٦- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ احدى عشرة ركعة فاذا طلعَ الْفَجْرُ صَلَّى رَكَعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَى شَقِهِ الْأَيْمَنِ حَتَّى يَجِيَّ الْمُؤَذِّنُ فَيُؤْذِنْهُ – متفق عليه

৮১৬। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগার রাআত নামায পড়তেন। যখন সুবহে সাদিক হয়ে যেত তখন তিনি হালকাভাবে দুই রাআত নামায পড়তেন, তারপর ডান কাতে শুয়ে পড়তেন। তারপর মুয়াযযিন এসে তাঁকে (জাম’আত প্রস্তুত আছে বলে) অবহিত করত। (বুখারী, মুসলিম)

۸۱۷- وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ مِنَ اللَّيْلِ وَضَعَ يَدَهُ تَحْتَ خَدِهِ ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُم بِاسْمِكَ أَمُوتُ وآخيا وإذا اسْتَيْقَظَ قَالَ الْحَمْدُ لله الذي أَحْيَانًا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ رواه البخاري.

৮১৭। হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন শয্যা গ্রহণ করতেন, তখন গালের নিচে হাত রাখতেন, তারপর বলতেনঃ “হে আল্লাহ্। তোমার নামে আমি মরছি ও জিন্দা হচ্ছি”। তিনি ঘুম থেকে যখন জাগতেন তখন বলতেন: “আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহ্ইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর”-সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যু দান করার পর পুনরায় জীবন দান করেছেন। তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে। (বুখারী)

۸۱۸- وَعَنْ يَعِيش بن طحفَة الغَفَارِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ أَبِي بَيْنَمَا أنا مضطجع في المسجد على بطنى إِذا رَجُلٌ يُحرِكْنِي بِرِجْلِهِ فَقَالَ إِنَّ هَذه ضجعة ببغضها اللهُ قَالَ فَنَظَرْتُ فَاذَا رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رواه ابو داود باسناد صحیح

৮১৮। ইয়াঈশ ইবনে তিখফা আল-গিফারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমি একদা মসজিদে উপুড় হয়ে শোয়া ছিলাম। হঠাৎ কে একজন তাঁর পা দিয়ে আমাকে নাড়া দিলেন, তারপর বলেন: এ ধরনের শোয়াকে আল্লাহ অপছন্দ (ও ঘৃণা) করেন। আমার পিতা বলেন, আমি চেয়ে দেখি, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইমাম আবু দাউদ সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।

۸۱۹- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ قَعَدَ مَقْعَدا لم يذكر الله تعالى فيه كانتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تَعَالَى تَرَةٌ وَمَن اضْطَجَعَ مَضْجَعًا لا يَذْكُرُ اللهَ تَعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ الله ترة – رواه ابو داود باستاد حسن

৮১৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বৈঠকে বা মজলিসে বসলো এবং সেখানে মহান আল্লাহর স্মরণ করলো না, এটা তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতি ও ভর্ৎসনার কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি কোন বিছানায় শুইলো এবং মহান আল্লাহ্র স্মরণ করলো না, এটাও তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতি ও ভর্ৎসনার কারণ হবে।

ইমাম আবু দাউদ উত্তম সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। “তিরাতুন” শব্দের অর্থ ক্ষতি, মন্দ পরিণতি।

অনুচ্ছেদ: ২ – সতর উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকলে এক পায়ের উপর অপর পা তুলে চিৎ হয়ে শোয়া বৈধ। চার জানু হয়ে বসা এবং দুই হাঁটু উঁচু করে বসাও বৈধ

সতর উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকলে এক পায়ের উপর অপর পা তুলে চিৎ হয়ে শোয়া বৈধ। চার জানু হয়ে বসা এবং দুই হাঁটু উঁচু করে বসাও বৈধ।

۸۲۰- عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيدِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم مُسْتَلْقِيا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعا احدى رجليه على الأخرى متفق عليه.

৮২০। আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۲۱- وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذا صلى الْفَجْرَ تَربَّع في مجلسه حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَسنَاء – حديث صحيح رواه ابو داود وغيره باسانيد صحيحة .

৮২১। জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর চার জানু হয়ে তাঁর স্থানে বসে থাকতেন, যেই পর্যন্ত না সূর্য উঠে ভালোভাবে উজ্জ্বল হয়ে যেত।

এটি সহীহ হাদীস। ইমাম আবু দাউদ প্রমুখ হাদীসটি সহীহ সনদ সহকারে রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۲۲- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِفَناء الكعبة محتبيا بيديه هكذا ووصف بِيَدَيْهِ الْاحْتِيَاء وَهُوَ الْقُرْقُصَاءُ
رواه البخاري.

৮২২। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কা’বার আঙিনায় এভাবে তাঁর দু’হাত দিয়ে ইহতিবা করে বসে থাকতে দেখেছি। ইবনে উমার (রা) নিজের দু’হাত দিয়ে বসার ভঙ্গিটা বুঝিয়ে দেন। এটা কুরফুসা কায়দায় বসা। [টিকা: অর্থাৎ উবু হয়ে এমনভাবে বসা যাতে দুই হাঁটু খাড়া থাকে এবং পাছার উপর বসে সামনের দিক দিয়ে হাঁটু দুই হাতে গোল করে ধরা থাকে।]

ইমাম বুখারী এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۲۳- وَعَنْ قَبلة بنت مَخْرَمَةً رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ رَأَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ قَاعِدُ الْقُرْ فُصَاءَ فَلَمَّا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَخَشِعَ فِي الْجِلْسَةِ أَرْعَدْتُ من الفرق – رواه ابو داود والترمذي .

৮২৩। কাইলা বিনতে মাখরামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরফুসা অবস্থায় বসে থাকতে দেখেছি। যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এহেন বিনয়ী ও বিনম্র অবস্থায় দেখলাম, তখন আমার হৃদয় ভয়ে কেঁপে উঠল।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٢٤- وَعَنِ الشَّدِيدِ بْنِ سُوَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ بِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا جَالِسٌ هكذا وَقَدْ وَضَعْتُ يَدِيَ الْيُسْرَى خَلْفَ ظَهْرِي وانكاتُ عَلَى اليَةِ بَدِي فَقَالَ أَتَقْعُدُ فَعْدَةَ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ – رواه ابو داود باستاد صحيح.

৮২৪। শারীদ ইবনে সুওয়াইদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি আমার বাম হাতটি আমার পিঠের উপর রেখে আমার ডান হাতের বুড়ো আঙুলের নরম গোশতের উপর ভর দিয়ে বসা ছিলাম। তিনি বলেন: তুমি অভিশপ্তদের বসার ন্যায় বসলে? [টিকা: এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘অভিশপ্তদের’ বলে যাদের প্রতি ইংগিত করেছেন তারা হচ্ছে ইহুদী জাতি।]

ইমাম আবু দাউদ সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৩ – মজলিস ও একত্রে বসার আদব

মজলিস ও একত্রে বসার আদব।

٨٢٥- عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا يُقِيمَنْ أَحَدُكُمْ رَجُلاً مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يَجْلِسُ فِيْهِ وَلَكِنْ تَوَسُعُوا وَتَفَسَحُوا وكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا قَامَ لَهُ رَجُلٌ مِنْ مَجْلِسِهِ لَمْ يَجْلِسُ فيهِ – متفق عليه.

৮২৫। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে। বরং তোমরা জায়গা বিস্তৃত করে দাও এবং ছড়িয়ে বস। ইবনে উমার (রা)-র জন্য কোন ব্যক্তি নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তার ছেড়ে দেয়া জায়গায় বসতেন না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٢٦- وعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَجْلِسٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ – رواه مسلم.

৮২৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি তার জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর আবার ফিরে আসে, তাহলে সেই জায়গায় বসার হক তারই সবচেয়ে বেশি। (মুসলিম)

۸۲۷- وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا إِذَا آتَيْنَا النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ أَحَدُنَا حَيْثُ يَنتَهى – رواه أبو داود والترمذي وقال حديث حسن.

৮২৭। জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যে হাযির হতাম তখন আমাদের প্রত্যেকে সেখানে বসে পড়তো যেখানে মজলিসের লোকজনের বসা শেষ হয়েছে।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।

۸۲۸- وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ سَلْمَانَ الْفَارِسِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَتَطَهُرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طهر ويدهن مِنْ دُهْنِهِ أَوْ يَمَسُ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ فَلَا يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ ثُمَّ يُنْصِتُ إِذا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ إِلا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجمعة الأخرى رواه البخاري.

৮২৮। আবু আবদুল্লাহ সালমান আল ফারসী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করে, তার সামর্থ্য অনুযায়ী পাক-পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার ঘরে মজুদ তেল মাখে বা খোশবু লাগায়, তারপর ঘর থেকে নামাযের জন্য বের হয় এবং দু’জন লোককে সরিয়ে তার মধ্যে বসে পড়ে না, তারপর নামায পড়ে, যা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন, অতঃপর ইমামের খুতবা পড়ার সময় চুপ করে বসে থাকে, আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ, যা সে এক জুমু’আ থেকে অপর জুমু’আর মধ্যবর্তী সময়ে করেছে, মাফ করে দেন।

ইমাম বুখারী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۲۹- وَعَنْ عَمْرُو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَ اثْنَيْنِ إِلَّا بِإِذْنِهِمَا – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن، وفي روايةٍ لِأَبِي دَاوُدَ لَا يَجْلِسُ بَيْنَ رجلين الا باذنهما .

৮২৯। আমর ইবনে শু’আইব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং তাঁর প্রপিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দুই ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তাদের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করা বৈধ নয়।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি হাসান হাদীস। ইমাম আবু দাউদের অপর বর্ণনায় আছেঃ দু’জনের মাঝখানে বসো না, তাদের অনুমতি না নিয়ে।

وَعَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَنَ مَنْ جَلسَ وَسَط الحلقة – رواه ابو داود بإسناد حسن ، وروى الترمذي عَنْ أَبِي مِجاز أَنْ رَجُلاً فَعَدَ وَسَطَ حَلْقَةٍ فَقَالَ حُذَيْفَةٌ مَلْعُوْنَ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ لَعَنَ اللهُ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ جَلَسَ وَسَط الْحَلْقَةِ – قَالَ التَّرْمِذِى حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.

৮৩০। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন যে মজলিসের মাঝখানে গিয়ে বসে পড়ে।

ইমাম আবু দাউদ উত্তম সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। ইমাম তিরমিযী আবু মিজলায (র) থেকে বর্ণনা করেছেন: এক ব্যক্তি মজলিসের মাঝখানে বসে পড়লে হুযাইফা (র) বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কাজটির উপর) লানত বর্ষণ করেছেন অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ দিয়ে আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন সেই ব্যক্তির উপর যে বসে পড়ে মজলিসের মাঝখানে।

ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি হাসান হাদীস।

۸۳۱- وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ خَيْرُ الْمَجَالِسِ أَوْسَعُها – رواه ابو داود بإسناد صحيح على شرط البخاري

৮৩১। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। বেশি বিস্তৃত ও ছড়ানো মজলিসই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো মজলিস।
ইমাম আবু দাউদ ইমাম বুখারীর শর্ত অনুযায়ী সহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۳۲ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ جَلسَ فِي مَجلس فَكَثرَ فيه لغطهُ فَقَالَ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ مِنْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ سبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ إِلَّا غفِرَ لَهُ مَا كَانَ فِي مَجْلِسِهِ ذلك – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح

৮৩২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসে এবং তাতে যদি অনেক বেশি অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কথা বলা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে মজলিস থেকে উঠার আগে সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, প্রশংসা তোমার জন্য, আমি সাক্ষ্য দিই যে, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার কাছে তাওবা করি।” তাহলে ঐ মজলিসে যা কিছু হয়েছিল সব মাফ করে দেয়া হয়।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।

۸۳۳- وَعَنْ أَبِي بَرْزَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ بِأخرة إذا أراد أن يقوم مِنَ الْمَجْلِسِ (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أشْهَدُ أن لا اله الا انت استغفرك واتوب اليك فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ لتَقُولُ قَوْلاً مَا كُنتَ تَقُولُهُ فِيمَا مَضَى قَالَ ذلكَ كَفَّارَةٌ لِمَا يَكُونُ فِي المجلس – رواه أبو داود. وراه الحاكم ابو عبد الله في المستدرك من رواية عائشة وقال صحيح الاسناد.

৮৩৩। আবু বারযা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শেষ বয়সে মজলিস থেকে ওঠার সময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার কাছে তাওবা করছি।” এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল। আপনি এখন এমন কথা বললেন যা এর আগে কখনো বলেননি। তিনি বলেন: এ কথাগুলো হচ্ছে এ মজলিসে (অপ্রয়োজনীয়) যা কিছু হয়েছে তার কাফফারা (প্রতিকার) স্বরূপ।

ইমাম আবু দাউদ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর হাকেম আবু আবদুল্লাহ তাঁর মুসতাদ্রাক গ্রন্থে হযরত আয়িশা (রা) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এর সনদ সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।

٨٣٤- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ مِنْ مَجْلِسَ حَتَّى يَدْعُو بِهَؤُلَاءِ الدَّعَوَاتِ اللَّهُمَّ اقْسِمُ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبْلِغْنَا بِهِ جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِيْنِ مَا تُهَوِّنُ عَلَيْنَا مَصَائِبَ الدُّنْيَا اللَّهُمَّ مَتَّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَاوقُوتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَارَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا على من عادانا ولا تَجْعَلْ مُصيبتنا في ديننا ولا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلا مبلغ علمنا ولا تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لا يَرْحَمُنَا ) رواه الترمذي وقال حديث حسن.

৮৩৪। ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন মজলিস খুব কমই ছিল যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন এবং এই দু’আগুলো পড়তেন নাঃ “হে আল্লাহ। আমাদের মধ্যে তোমার এতটা ভীতি বণ্টন কর যা আমাদের ও তোমার নামফরমানির মাঝখানে অন্তরাল হয়, আমাদেরকে তোমার এতটা আনুগত্য দান কর যা আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছাবে এবং আমাদেরকে এতটা প্রত্যয় দান কর যা দুনিয়ার বালা-মুসিবাতকে আমাদের জন্য সহজ করে দেয়। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে যতদিন জীবিত রাখ ততদিন আমাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্যান্য শক্তিকে আমাদের ওয়ারিস বানিয়ে দাও। আমাদের হিংসা ও প্রতিশোধ স্পৃহাকে সেই ব্যক্তি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখ যে আমাদের উপর যুলুম করেছে। যে আমাদের সাথে শত্রুতা করে তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর, দীনের বিপদের মধ্যে আমাদেরকে ফেলে দিয়ো না, দুনিয়াকে আমাদের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করো না এবং যারা আমাদের প্রতি সদয় নয় তাদেরকে আমাদের উপর প্রভাবশালী করো না”।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

ى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ ٨٣٥ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيا وَسَلَّمَ مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُوْنَ مِنْ مَجْلِسِ لا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَعَالَى فِيهِ إِلَّا قَامُوا عَنْ مثل جيفة حمار وكان لهم حسرة – رواه ابو داود باسناد صحيح

৮৩৫। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন দলই কোন মজলিস থেকে উঠে যায় এবং তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে না, তারা উঠে যায় মরা গাধার মতো এবং তাদের জন্য আক্ষেপ ও লজ্জাই থাকে।

ইমাম আবু দাউদ সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٣٦- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ تَعَالَى فِيْهِ وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ فِيْهِ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ تَرَةٌ فَإِنْ شَاءَ عَذَبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ – رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৮৩৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন দল যদি কোন মজলিসে বসে সেখানে মহান আল্লাহর নাম না নেয় এবং নিজেদের নবীর উপর দরূদ না পড়ে তাহলে এটা তাদের ক্ষতির কারণ হবে। কাজেই আল্লাহ চাইলে তাদের শাস্তি দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

۸۳۷- وَعَنْهُ عَنْ رَسُولِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ قَعَدَ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُر الله تَعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ الله تَرَةٌ وَمَنِ اضْطَجَعَ مَضْجَعًا لَا يَذْكُرُ اللَّهَ تعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ الله ترة – رواه ابو داود وقَدْ سَبَقَ قَرِيبًا وَشَرَحْنَا الترة فيه.

৮৩৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করে না সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আর যে ব্যক্তি কোন স্থানে শয়ন করে আল্লাহর নাম স্মরণ করে না সেও আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। [টিকা: এ হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, উঠা-বসায়, শয়নে-জাগরণে, চলা-ফেরায়, যে কোন কাজে, যে কোন সময়ে, যে কোন স্থানে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। মুসলিম যে একমাত্র আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ যে তার সমস্ত কর্ম ও প্রাণচাঞ্চল্যের কেন্দ্র একথা তাকে মনে রাখতে হবে। কাজ শুরুর আগে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। কাজের মাঝখানে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। কাজের শেষে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। একটি হাদীসে যে কোন মজলিসে নবীর প্রতি দরূদ পাঠের কথাও বলা হয়েছে। আল্লাহর স্মরণ ছাড়া যে কাজটি সে করল বা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে তার যে সময়টি অতিবাহিত হলো সেটা আসলে তার জন্য আক্ষেপ, লজ্জা ও ক্ষতির পসরা বয়ে আনলো। এর সঠিক অর্থ আল্লাহ ভালো জানেন।]

ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। ইতিপূর্বে একটু আগেই হাদীসটির আলোচনা এসেছে এবং সেখানেই আমরা “তিরাতুন” শব্দটির ব্যাখ্যা করেছি। [টিকা: এ প্রসংগে ৮১৯ নম্বর হাদীস দেখুন।]

অনুচ্ছেদ: ৪ – স্বপ্ন ও এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলী

স্বপ্ন ও এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলী।

قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ.

মহান আল্লাহ বলেন:

“আর তাঁর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তোমাদের দিনের ও রাতের ঘুম।” (আর-রুম: ২৩)

۸۳۸- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَمْ يَبْقَ مِنَ النبوة إلا المُبَشِّرَاتُ قَالُوا وَمَا الْمُبَشِّرَاتُ قَالَ الرؤيا الصالحة – رواه البخاري.

৮৩৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ নবুওয়াতের কিছুই অবশিষ্ট নেই সুসংবাদসমূহ ছাড়া। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, সুসংবাদসমূহ কি? তিনি জবাব দিলেন: ভালো স্বপ্ন।

ইমাম বুখারী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۳۹- وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدُ رُؤْيَا الْمُؤْمِنِ تَكْذِبُ وَرُؤْيَا الْمُؤْمِنِ جُزء من سنة وَارْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النبوة متفق عليه . وفي روايةٍ أَصْدَقُكُمْ رُؤْيَا أَصْدَقُكُمْ حَدِيثًا

৮৩৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাত নিকটবর্তী হলে মুমিনের স্বপ্ন খুব কমই মিথ্যা হবে। মুমিনের স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। [টিকাঃ: দুনিয়ায় নবুওয়াতই হচ্ছে জ্ঞানের একমাত্র নির্ভুল মাধ্যম। শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর জ্ঞানের এ মাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মুবাশশিরাত (সুসংবাদ) হিসেবে মুমিনের সত্য স্বপ্ন রয়ে গেছে। তার মাধ্যমে সঠিক জ্ঞানের সামান্যতম জানা যাবে। তবে এ সত্য স্বপ্ন যাচাই করার মানদণ্ড হচ্ছে আল কুরআন ও সুন্নাহ। অর্থাৎ মুমিনের স্বপ্ন আল কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য বিরোধী হলে তা সত্য বা ভালো স্বপ্ন হিসেবে গৃহীত হবে না।]

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে কথায় যে সবচেয়ে বেশি সত্যবাদী তার স্বপ্নও সবচেয়ে বেশি সত্য হবে।

٨٤٠- وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ رَأَنِي فِي الْمَنَامِ فَسَيَرَانِي فِي الْيَقظَةِ أَوْ كَانَّمَا رَأَنِي فِي الْيَقْظَةِ لَا يَتَمَثَلُ الشَّيْطَانُ بِي متفق عليه.

৮৪০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। যে ব্যক্তি স্বপ্নের মধ্যে আমাকে দেখল, সে শীঘ্রই জাগ্রত অবস্থায় আমাকে দেখবে অথবা সে যেন জাগ্রত অবস্থায় আমাকে দেখলো। শয়তান আমার স্বরূপ ধারণ করতে পারে না। [টিকা: অবশ্যি এজন্য স্বপ্ন দ্রষ্টার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শারীরিক অবয়ব, চেহারা-সুরাত ও সীরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অন্যথায় শয়তান নিজেকে রাসূল বলে ঘোষণা করলে সে যে রাসূল নয় তা চেনার কি উপায় থাকবে? শয়তান সাসূলের সুরাত বা চেহারা ধারণ করতে পারবে না, কিন্তু অন্যের চেহারা ধারণ করে নিজেকে রাসূল বলে পরিচয় দিতে পারবে না, এ কথা এখানে বলা হয়নি।] (বুখারী, মুসলিম)

٨٤١- وَعَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذا رأى أَحَدُكُمْ رُؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى فَلْيَحْمَد الله عَلَيْهَا وَلْيُحَدِّثْ بِهَا وَفِي رِوَايَةٍ فَلا يُحَدِّثُ بِهَا إِلَّا مَنْ يُحِبُّ وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ فَإِنَّمَا هِي مِنَ الشَّيْطَانِ فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا وَلَا يَذْكُرُهَا لِأَحَدٍ فانها لا تضره – متفق عليه.

৮৪১। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: তোমাদের কেউ তার পছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সেটা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করা এবং (বন্ধুদের) কাছে তা বিবৃত করা উচিত। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে। তখন সে যাকে ভালোবাসে তাকে ছাড়া আর কাউকে সেটা না বলা উচিত। আর সে যদি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তাহলে এটা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। তার ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং কারো কাছে তা বর্ণনা না করা উচিত। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٤٢- وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرؤيا الصالحة وفي رواية الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ اللهِ وَالْحَلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ فَمَنْ رأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَنْقُتُ عَن شماله ثلاثًا وَلِيَتَعَوَّذُ مِنَ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهَا لا تضره – متفق عليه.

৮৪২। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সৎ স্বপ্ন এবং অন্য রিওয়ায়াত অনুযায়ী ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কাজেই কোন ব্যক্তি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে।

যেন তার বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে এবং শয়তানের (ক্ষতি) থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসে বর্ণিত ‘আন-নাফাসু’ শব্দটির অর্থ এমন হালকা বা সূক্ষ্ম ফুৎকার যাতে সামান্য থুথুও নির্গত হয় না।

٨٤٣ – وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا رأى أحدكم الرؤيا يَكْرَهُهَا فَلْيَبْصُ عَن يساره ثلاثا وَلْيَسْتَعِذْ بِالله مِن الشَّيْطَانِ ثَلاثًا وَلْيَتَحَولَ عَنْ جَنبه الذي كَانَ عَلَيْهِ – رواه مسلم.

৮৪৩। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে যেন তার বাঁ দিকে তিনবার থুথু ফেলে, তিনবার শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং সে যে কাতে শুয়েছিল তার পরিবর্তন করে।

ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٤٤ – وَعَنْ أَبِي الْأَسْفَعِ وَايْلَةَ بْنِ الْأَسْفَعِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ أعظم القرى أن يُدْعِيَ الرَّجُلُ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ أَوْ يُرى عَيْنَهُ مَا لَمْ تَرَ أَوْ يَقُولَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ يَقُلْ رواه البخاري.

৮৪৪। আবুল আসকা’ ওয়াসিলা ইবনুল আসকা’ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সবচেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার হচ্ছে অন্য ব্যক্তিকে নিজের বাপ বলে দাবি করা অথবা তার চোখকে এমন জিনিস দেখানো যা সে দেখেনি (অর্থাৎ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা) অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে এমন কথা বলা যা তিনি বলেননি।
ইমাম বুখারী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

অধ্যায় : ৫

সালামের আদান-প্রদান

অনুচ্ছেদ: ১ – সালামের মাহাত্ম্য এবং তার ব্যাপক প্রসারের নির্দেশ

সালামের মাহাত্ম্য এবং তার ব্যাপক প্রসারের নির্দেশ।

قالَ اللهُ تَعَالَى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا .

মহান আল্লাহ বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তার বাসিন্দাদের থেকে অনুমতি নাও এবং তাদেরকে সালাম কর।” (সূরা আন-নূরঃ ২৮)

وَقَالَ تَعَالَى : فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مباركة طيبة.

“যখন তোমরা নিজেদের ঘরে প্রবেশ করবে, তখন নিজেদের লোকদেরকে সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় ও পবিত্র।” (সূরা আন-নূরঃ ৬১)

وقال تعالى : وإذا حبيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا .

“যখন তোমাদেরকে সালাম করা হয়, তখন তোমরাও ভালো কথায় সালাম কর অথবা সেই কথাগুলোই বলে দাও।” (সূরা আন নিসাঃ ৮৬)

وقال تعالى : هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيف إبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ ، إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ.

“ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের খবর কি তোমার কাছে পৌছেছে? যখন তারা তার কাছে এলো, তারপর তাকে সালাম করল, সেও তাদের সালাম করল।” (আয-যারিয়াত: ২৪)

٨٤٥- وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْإِسْلامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْراً السلام عَلَى مَنْ عَرَفتَ ومَنْ لم تعرف متفق عليه

৮৪৫। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কোন কাজ ইসলামে সবচেয়ে ভালো? তিনি বলেনঃ অভুক্তদের আহার করানো এবং সালাম করা চেনা-অচেনা নির্বিশেষে সবাইকে। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٤٦- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لما خَلَقَ اللهُ تَعَالَى أَدَمَ عَلَيْهِ السَّلامُ قَالَ اذْهَبْ فَسَلَّمْ عَلَى أُولَئِكَ نَفَرٍ مِنَ المَلائِكَةِ جُلُوسٌ فَاسْتَمِعُ مَا يُحَبُّونَكَ فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَقَالُوا السّلامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ الله فَزَادُوهُ وَرَحْمَةُ الله متفق عليه.

৮৪৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে বললেনঃ যাও, ফেরেশতাদের ঐ যে দলটি বসে আছে তাদের সালাম কর এবং তারা তোমাকে কী জবাব দেয় তা শুন। তারা যা জবাব দেবে তাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের জবাব। কাজেই আদম আলাইহিস সালাম গেলেন (এবং ফেরেশতাদের দলকে সম্বোধন করে) বললেনঃ আসসালামু আলাইকুম (তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতারা বলল, আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ (তোমার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রাহমতও)। তারা ওয়া রাহমাতুল্লাহ বাক্যটি বৃদ্ধি করেছিল।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

٨٤٧- وَعَنْ أَبِي عُمَارَةَ الْبَراء بن عازب رضى اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَمْرِنَا رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْع بعيادَةِ الْمَرِيضِ وَاتَّبَاعِ الْجَنَائِزِ وَتَشْمِيْت العاطي ونَصْرِ الضَّعِيفَ وَعَوْنِ الْمَظْلُوم وافشاء السلام وإبْرارِ المقسم – متفق عليه هذا لفظ احدى روايات البخاري .

৮৪৭। আবু উমারা বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সাতটি বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন: (১) রোগীকে দেখতে যাওয়া; (২) জানাযায় শরীক হওয়া; (৩) হাঁচি দানকারীর আলহামদু লিল্লাহ বলার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা; (৪) দুর্বল ও বৃদ্ধকে সাহায্য করা; (৫) মাযলুমকে সহায়তা করা; (৬) সালামের প্রচলন করা এবং (৭) শপথ পূর্ণ করা।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের মূল পাঠ ইমাম বুখারীর একটি রিওয়ায়াত থেকে গৃহীত।

٨٤٨- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَقْسُوا السَّلام بَيْنَكُم – رواه مسلم.

৮৪৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং পরস্পরকে না ভালোবাসা পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণতা লাভ করবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা বলব না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন কর।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।

٨٤٩ – وَعَنْ أَبِي يُوسُفَ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَام رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَقْسُوا السَّلَامَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وصلوا الْأَرْحَامَ وَصَلُّوا وَالنَّاسُ نِيَام تَدْخُلُوا الجَنَّة بسلام – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৮৪৯। আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ হে লোকেরা। সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাও, (অভুক্তদের) আহার করাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়। তাহলে তোমরা শাস্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

٨٥٠ وَعَنِ الطَّفَيْلِ بْنِ أَبِي بْنِ كَعْبٍ أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي عَبْدِ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ قَالَ فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرُ عَبْدُ اللَّهِ عَلَى سَقَاطِ وَلَا صاحب بيعة ولا مسكين ولا أحد الأسلم عَلَيْهِ قَالَ الطَّفَيْلُ فَجِئْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ مَا نَصْنَعُ بِالسُّوقِ وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيْعِ وَلَا تَسْأَلُ عَنِ السَّلْمِ وَلَا تَسُوْمُ بِهَا وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ وأقولُ اجْلِسُ بِنَا هَاهُنَا نَتَحَدِّثُ فَقَالَ يَا أَبَا بَطْنٍ وَكَانَ الطَّفَيْلُ ذَابَطنِإِنَّمَا نَعْدُو مِنْ أجل السلام فَتُسَلِّم على من لقيناه – رواه مالك في الموطأ
باستاد صحيح.

৮৫০। তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব (র) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-এর কাছে যাতায়াত করতেন। তিনি ইবনে উমারের সংগে সকাল সকাল বাজারে যেতেন। তিনি বলেন, যখন সকালে আমরা বাজারে যেতাম, যে কোন উঠো দোকানদার, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন বা যে কোন লোকের পাশ দিয়ে তিনি যেতেন, তাকেই সালাম দিতেন। তুফাইল বলেন, একদিন আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমারের কাছে এলাম। তিনি যথারীতি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি বাজারে গিয়ে কী করবেন? কোন জিনিস বেচা-কেনার জন্য আপনি দাঁড়ান না, কোন দ্রব্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদও করেন না এবং তার দর-দামও করেন না, আবার বাজারের কোন মজলিসেও বসেন না? আমি বলছি, আসুন। আমরা এখানে বসে কিছু কথাবার্তা বলি। ইবনে উমার (রা) বলেন, হে ভুঁড়িওয়ালা (আর তুফাইলের ভুঁড়িটা ছিল বেশ বড়)। আমরা সকাল সকাল বাজারে আসি স্রেফ সালাম দেবার উদ্দেশে, যার সাথে দেখা হয় তাকে সালাম করি। [টিকা: এ হাদীসটিতে এবং সালাম সম্পর্কিত অন্যান্য হাদীসে যে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে তা হচ্ছে, ইসলামী সমাজে ব্যক্তির নিরাপত্তা, পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধের ব্যাপক পরিধি রয়েছে। সালাম এখানে অভয় বাণী হিসেবে দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ এ সমাজে কারোর প্রতি কারো হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা নেই। জানা-অজানা সবার জন্য সবাই শান্তি ও নিরাপত্তার গভীর অনুভূতি হৃদয়ে বহন করে চলেছে। তাই পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে সব মুসলিমকে যে কোন জায়গায় যে কোন সময় সালাম করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। মুসলিমদের প্রতিটি সমাজের জন্য, বিশেষ করে কোন নতুন মুসলিম সমাজের জন্য বা এমন কোন সমাজের জন্য যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের শত্রুতে পরিণত হয়েছে, অন্তত এমনি একটি আতংকজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে, সেখানে এ ধরনের সালামের ব্যাপক প্রচলনের গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়।]

ইমাম মালিক সহীহ সনদ সহকারে এ হাদীসটি তাঁর মুআত্তায় বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ২ – সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি

সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি।

সালামের মুস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে, যিনি প্রথমে সালাম দেবেন তিনি বলবেন, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ” (তোমাদের উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)। যাকে সালাম করা হল সেই মুসলমান ব্যক্তি একজন (একবচন) হলেও তাকে সম্বোধন করার জন্য যে সর্বনামটি ব্যবহার করা হবে তা হতে হবে

বহুবচলেয়। আয় এর ভাওয়াবে জাওয়াবদানকারী বলবে, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ” (তোমাদের উপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)। জওয়াবে ওয়াও (এবং বা আর) সংযোগ অব্যয়টি প্রথমেই ব্যবহৃত হবে। [টিকা: এ বহুবচন ব্যবহারের দু’টো কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে। এক: এই একজন মুসলিমকে তার পেছনের সমস্ত মুসলিমের বা সেখানকার মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি বিবেচনা করা যেতে পারে। দুইঃ ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী ব্যক্তির সাথে নিযুক্ত আল্লাহর যে ফেরেশতারা থাকেন তাঁদের প্রতিও থাকে এ সালামের লক্ষ্য।]

٨٥١ عَنْ عِمْرَانَ بْنِ الْحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ السَّلامُ عَلَيْكُمْ فَرَدَّ عَلَيْهِ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (عَشْرٌ) ثُمَّ جَاءَ أَخَرُ فَقَالَ السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ فَرَدَّ عَلَيْهِ مجلس فَقَالَ (عشْرُونَ) ثُمَّ جَاءَ أَخَرُ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ فرَد عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ (ثَلاثون) – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن .

৮৫১। ইমরান ইবনুল হুসাইন (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, আস্সালামু আলাইকুম। তিনি তার সালামের জবাব দিলেন। সে ব্যক্তি বসে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: দশটি নেকী লেখা হয়েছে। এরপর আর এক ব্যক্তি এসে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তিনি তার জবাব দিলেন। সে ব্যক্তি বসে পড়লে তিনি বলেনঃ বিশটি নেকী লেখা হয়েছে। তারপর আর এক ব্যক্তি এল এবং বলল, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। তিনি তার জবাব দিলেন। সে লোকটিও বসে পড়লে তিনি বলেন: ত্রিশটি নেকী লেখা হয়েছে।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।

٨٥٢ – وَعَنْ عَائِشَةَ رَضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ لِي رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم هذا جِبْرِيلُ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلام قَالتْ قُلْتُ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وبركاته متفق عليه . وهكذا وقع في بعض روايَاتِ الصَّحِيحَيْنِ (وبركاته) وفِي بَعْضِهَا بِحَذْفِهَا وَزِيَادَةُ الثَّقَةِ مَقْبُولَةٌ .

৮৫২। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: এই যে জিবরীল, তোমাকে সালাম বলছেন। আয়িশা (রা) বলেন,

আমি বললাম, ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ (তার উপর সালাম বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত)।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের এ সম্পর্কিত কোন রিওয়ায়াতে ‘বারাকাতুহ’ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে, আবার কোন রিওয়ায়াতে উল্লেখিত হয়নি। তবে সিকাহ রাবীর (প্রখর স্মরণশক্তির অধিকারী ও পরম নির্ভরযোগ্য রাবীর) যোগকৃত বাড়তি বক্তব্য গ্রহণীয়।

٨٥٣ – وعن أنس رضي اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بكلمة أعادها ثلاثًا حَتَّى تُفهَم عَنْهُ وإذا أتى على قوم فَسَلَّمَ عَلَيْهِم سَلم عليهم ثلاثا – رواه البخاري وهذا محمول عَلَى مَا إِذَا كَانَ الجَمع كَثِيراً .

৮৫৩। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন, যাতে তাঁর কথা বুঝা যায়। আর যখন তিনি কোন গোত্রের কাছে আসতেন তাদেরকে সালাম করতেন, তিনবার সালাম করতেন।

ইমাম বুখারী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। আর তিনবার সালাম করার ব্যাপারটি ঘটত তখন, যখন জমায়েতটি হত খুব বেশি বড় ও বিরাট।

٨٥٤- وعن المقداد رضى الله عنه في حديثه الطويل قَالَ كُنَّا ترفع للنبي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم نصيبه من اللبن فيجي من الليل فيُسلم تسليما لا يُوقِظُ نَائِمًا وَيُسْمِعُ اليَقظَانَ فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يسلم – رواه مسلم.

৮৫৪। মিকদাদ (রা) তাঁর বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে বলেনঃ আমরা দুধ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাঁর অংশ তুলে রেখে দিতাম। তিনি আসতেন রাত্রিবেলা। তখন তিনি এমনভাবে সালাম করতেন যা নিদ্রিত লোকদের জাগাতো না কিন্তু জাগ্রত লোকেরা তাঁর সালাম শুনে নিত। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং যথারীতি সালাম করলেন। (মুসলিম)

٨٥٥- وعن أسماء بنت يزيد رضي الله عنها أنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ فِي الْمَسْجِدِ يَوْمًا وَعُصْبَةٌ مِنَ النِّسَاء قُعود فالوى بيده بالتسليم رواه الترمذي وقال حديث حسن وهذا محمول عَلَى أَنَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جمع بين اللفظ والاشارة ويؤيده أن في رواية أبي داود (فَسَلَّمَ عَلَيْنَا )

৮৫৫। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে যাচ্ছিলেন। সেখানে একদল মহিলা বসা ছিল। তিনি নিজের হাতের ইশারায় (তাদেরকে) সালাম করলেন।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস। আর এটি আসলে এমন একটি ব্যাপার যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শব্দ ও ইশারা উভয়টি একত্রিত করেন। এর প্রতি সমর্থন পাওয়া যায় ইমাম আবু দাউদের রিওয়ায়াত থেকেঃ “তারপর তিনি আমাদেরকে সালাম করলেন”।

٨٥٦- وعن أبي جرى الهجيمي رضي الله عنه قَالَ أَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ عَلَيْكَ السَّلامُ يَا رَسُولَ اللهُ قَالَ لَا تَقُل عَلَيْكَ السَّلَامُ فَإِنَّ عليك السلام تحية الموتى رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح وقد سبق بطوله.

৮৫৬। আবু জুরাই আল-হুজাইমী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম, আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। তিনি বলেন: ‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। কারণ ‘আলাইকাস সালাম’ হচ্ছে মৃতদের সালাম।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। ইতিপূর্বে এ হাদীসটি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

অনুচ্ছেদ: ৩ – সালামের নিয়ম-পদ্ধতি

সালামের নিয়ম-পদ্ধতি।

٨٥٧- عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يسلم الراكب على الماشي والماشي على القاعد والقليل على الكثير – متفق عليه، وفي رواية البخاري والصغير على الكبير.

৮৫৭। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আরোহী ব্যক্তি পদচারীকে সালাম করবে, পদচারী সালাম করবে উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক লোকেরা সালাম করবে বেশি সংখ্যক লোককে।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। আর ইমাম বুখারীর এক বর্ণনায় আছেঃ ‘ছোট সালাম করবে বড়কে’।

٨٥٨- وَعَنْ أَبِي أَمَامَهُ صُدَى بن عجلان الجَاهِلِي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رسول الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ أولى النَّاسِ بِاللهِ مَن بَدَأَهُم بِالسلام رواه ابو داود باسناد جيد . ورواه الترمذى عَنْ أَبِي أَمَامَهُ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ الرجُلانِ يَلْتَقِيَانِ أَيُّهُمَا يبدأ بالسلام قَالَ أَوْلاهُمَا بِاللهِ تعالى – قال الترمذي هذا حديث حسن.

৮৫৮। আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান আল-বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: লোকদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী যে আগে সালাম করে।

ইমাম আবু দাউদ উৎকৃষ্ট সনদ সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন: বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল। দু’জন লোক পরস্পর সাক্ষাত করল। তাদের মধ্যে কে প্রথমে সালাম করবে? তিনি বলেন: তাদের মধ্যে যে আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী সে (প্রথমে সালাম করবে)।

ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৪ – কারো সাথে বারবার সাক্ষাত হলে তাকে বারবার সালাম করা মুস্তাহাব। যেমন কারোর কাছে গিয়ে ফিরে আসা হল, সংগে সংগে আবার যাওয়া হল অথবা দু’জনের মধ্যে গাছের বা অন্য কিছুর আড়াল সৃষ্টি হল

কারো সাথে বারবার সাক্ষাত হলে তাকে বারবার সালাম করা মুস্তাহাব। যেমন কারোর কাছে গিয়ে ফিরে আসা হল, সংগে সংগে আবার যাওয়া হল অথবা দু’জনের মধ্যে গাছের বা অন্য কিছুর আড়াল সৃষ্টি হল।

٨٥٩- عن أبي هريرة رضي الله عنه في حديث المُسَى صَلَاتُهُ أَنَّهُ جَاءَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ إلى النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلامَ فَقَالَ ارجع فصل فَإِنَّكَ لَم تُصَلِّ فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى فَعَلَ ذلك ثلاث مرات متفق عليه.

৮৫৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি মুসিউস সালাত (নামাযে গড়বড়কারী এক ব্যক্তি) সংক্রান্ত এক হাদীস বর্ণনা প্রসংগে বলেন, এক ব্যক্তি এসে নামায পড়ল, তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাযির হয়ে তাঁকে সালাম করল। তিনি তাঁর সালামের জবাব দিলেন, তারপর বললেন: চলে যাও, আবার নামায পড়, কারণ তুমি নামায পড়োনি। কাজেই লোকটি ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ল, তারপর ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করল। এভাবে সে তিনবার করল। (বুখারী, মুসলিম)

٨٦٠- وعنه عن رسول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا لَقِي أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلَّمَ عَلَيْهِ فَان حالت بينهما شجرة أو جدار أو حجر ثم لقيه فليسلم عليه رواه ابو داود .

৮৬০। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতকালে যেন তাকে সালাম করে। তারপর যদি তাদের দু’জনের মধ্যে কোন গাছ, দেয়াল বা পাথর অন্তরাল হয় এবং এরপর আবার তারা মুখোমুখি হয় তাহলে যেন আবার তাকে সালাম করে। (আবু দাউদ)

অনুচ্ছেদ: ৫ – ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম করা মুস্তাহাব

ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম করা মুস্তাহাব।

قَالَ اللهُ تعالى : فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُم تحية من عند الله مباركة طيبة.

মহান আল্লাহ বলেন:

“যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর তখন নিজেদের লোকদেরকে সালাম কর অভিবাদনস্বরূপ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় ও পবিত্র।” (সূরা আন-নূরঃ ৬১)

٨٦١- وعن أنس رضي اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا بُنَى إِذا دخلت على أهلك فسلم يكن بركة عَلَيْكَ وَعَلَى أهل بيتك – رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح

৮৬১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: হে বৎস! তুমি নিজের ঘরের লোকজনদের কাছে প্রবেশকালে তাদের সালাম কর। এ সালাম তোমার ও তোমার ঘরের লোকজনদের জন্য বরকতের কারণ হবে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন এবং একে হাসান ও সহীহ বলেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৬ – শিশু-কিশোরদের সালাম করা

শিশু-কিশোরদের সালাম করা।

٨٦٢- عن أنس رضي اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَر عَلى صِبيانِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ كَانَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم يفعله متفق عليه

৮৬২। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি শিশু-কিশোরদের কাছ দিয়ে গেলেন এবং তাদের সালাম করলেন। তারপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ৭ – স্বামীর স্ত্রীকে সালাম করা, মাহরাম নারীদের সালাম করা এবং অনাচারের আশংকা না থাকলে অপরিচিতা নারীদের সালাম করা। একই শর্তে নারীদের পুরুষদের সালাম করা

স্বামীর স্ত্রীকে সালাম করা, মাহরাম নারীদের সালাম করা এবং অনাচারের আশংকা না থাকলে অপরিচিতা নারীদের সালাম করা। একই শর্তে নারীদের পুরুষদের সালাম করা।

٨٦٣ – عن سهل بن سعد رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ فِينَا امْرَأَةٌ وَفِي رواية كانت لنا عَجُورٌ تَأخُذُ مِن أصول السلقِ فَتَطْرَحُهُ فِي القَدْرِ وَتُكَرَكِرُ حَبَّاتٍ مِنْ شعير فاذا صلينا الجمعة وانصرفنا تُسَلِّمُ عَلَيْهَا فَتُقَدِّمُهُ الينا – رواه البخاري.

৮৬৩। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এক মহিলা ছিল, অন্য এক বর্ণনায় আমাদের মধ্যে এক বৃদ্ধা মহিলা ছিল, সে বীটের শিকড় নিয়ে হাঁড়িতে রান্না করত, তারপর যবের দানা পিষে তার মধ্যে ঢেলে দিত। আমরা জুমু’আর নামায পড়ে ফেরার পথে তাকে সালাম করতাম। সে এগুলো আমাদেরকে পরিবেশন করত। ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। قوله تكركر أي تطحن অর্থ যব, গম ইত্যাদি পিষা।

٨٦٤- وَعَنْ أم هاني فاختة بنت أبي طالب رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَتْ آتَيْتُ النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَهُوَ يَغْسِلُ وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ بِشَوْب تسلمت وذكرت الحديث رواه مسلم .

৮৬৪। উম্মু হানী ফাখিতা বিনতে আবী তালিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। তিনি গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা একটি কাপড় দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٨٦٥- وعن أسماء بنت يزيد رضى اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَرَّ عَلَيْنَا النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ في نسوة فَسَلم علينا . رواه أبو داود والترمذي وقال حديث حسن
وهذا لفظ ابي داود ولفظ الترمذى، ان رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ فِي الْمَسْجِدِ يَوْمًا وَعُصْبَةٌ مِنَ النِّسَاءِ قُعود قالوى بيده التسليم

৮৬৫। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মেয়েদের একটি দলের কাছ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাদেরকে সালাম করলেন।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন। হাদীসটির মূল পাঠ আবু দাউদের। আর তিরমিযীর মূল পাঠ হল: একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন।

একদল মহিলা উপবিষ্ট ছিল। তিনি হাতের ইশারায় তাদেরকে সালাম করেন।

অনুচ্ছেদ: ৮ – কাফিরকে প্রথমে সালাম করা হারাম এবং তাদেরকে জবাব দেবার পদ্ধতি। যে মজলিসে মুসলিম ও কাফির উভয়ই থাকে সেখানে সালাম করা মুস্তাহাব

কাফিরকে প্রথমে সালাম করা হারাম এবং তাদেরকে জবাব দেবার পদ্ধতি। যে মজলিসে মুসলিম ও কাফির উভয়ই থাকে সেখানে সালাম করা মুস্তাহাব।

٨٦٦- عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لا تبدوا اليهود ولا النصارى بالسلام فإذا لقيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طَرِيق فَاضْطَرُّوهُ الى أضيقه رواه مسلم.

৮৬৬। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদেরকে আগে সালাম করো না। পথে তাদের কারো সাথে তোমাদের দেখা হলে তাকে সংকীর্ণ পথের দিকে (যেতে) বাধ্য কর। (মুসলিম)

٨٦٧- وعن أنس رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْل الكتاب فَقُولُوا وَعَلَيْكُم – متفق عليه

৮৬৭। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ইহুদী ও খৃস্টানরা তোমাদেরকে সালাম করলে তাদের জবাবে তোমরা কেবল ওয়া আলাইকুম বল।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٨٦٨- وَعَنْ أَسَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى

مجلس فيه اخلاط من المسلمين والمشركين عبدة الأوثان واليَهُودِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمُ النَّبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم – متفق عليه.

৮৬৮। উসামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মজলিস অতিক্রম করেন, যেখানে মুসলিম, মূর্তিপূজারী, মুশরিক ও ইহুদী সব ধরনের লোকের সমাবেশ ছিল। তিনি তাদেরকে সালাম করলেন। (বুখারী, মুসলিম)

অনুচ্ছেদ: ৯ – কোন মজলিস বা সাথী থেকে বিদায় নেবার জন্য দাঁড়িয়ে সালাম করা মুস্তাহাব

কোন মজলিস বা সাথী থেকে বিদায় নেবার জন্য দাঁড়িয়ে সালাম করা মুস্তাহাব।

٨٦٩- عنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذا انتهى أحَدُكُمْ إِلَى الْمَجْلِسِ فَلْيُسَلَّمْ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقُومَ فَلْيُسَلِم فليست الأولى بأحق من الآخرة – رواه أبو داود والترمذي وقال حديث حسن.

৮৬৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন মজলিসে আসলে তার সালাম করা উচিত। তারপর যখন সে মজলিস থেকে উঠে যেতে চাইবে তখনও তার সালাম করা উচিত। কারণ তার প্রথম সালামটির তুলনায় দ্বিতীয় ও শেষ সালামটি কম মর্যাদার নয়।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।

অনুচ্ছেদ: ১০ – অনুমতি প্রার্থনা ও তার নিয়ম

অনুমতি প্রার্থনা ও তার নিয়ম।

قالَ اللهُ تعالى : يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تستانسوا وتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلها.

মহান আল্লাহ বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তাদের অনুমতি নাও এবং তাদের ঘরের লোকজনদেরকে সালাম কর।” (সূর আন-নূর: ২৭)

وقال تعالى : وَإِذَا بَلَغَ الأَطْفَالُ مِنكُمُ الحُلْمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ من قبلهم

“আর তোমাদের কিশোররা সাবালকত্বে পৌঁছলে, তাদেরকেও তেমনি অনুমতি প্রার্থনা করতে হবে যেমন তাদের পূর্ববর্তীরা অনুমতি নিয়ে আসে।” (সূরা আন-নূরঃ ৫৯)

۸۷۰- وَعَنْ أَبِي مُوسى الأشعرى رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْاسْتِبْدَانُ ثَلاثَ فَإِن أَذن لك والا فارجع – متفق عليه.

৮৭০। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিনবার অনুমতি চাইতে হবে। তোমাকে অনুমতি দেয়া হলে তো ভালো, অন্যথায় ফিরে যাও।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۷۱- وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا جُعِلَ الْاسْتِبْدَانُ من أجل البصر – متفق عليه.

৮৭১। সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দৃষ্টিশক্তির কারণেই অনুমতি প্রার্থনার নিয়ম করা হয়েছে। ১০৯
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [টিকা: এ হাদীসটি অন্যত্র বিস্তারিতভাবে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে উঁকি মারে। সে সময় তিনি কিছু দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছিলেন। সে ব্যক্তিকে দেখে তিনি বলেন: যদি আমি জানতে পারতাম তুমি উঁকি মারছ, তাহলে এটা তোমার চোখের মধ্যে গেঁথে দিতাম। তারপর তিনি বলেন: দৃষ্টিশক্তির কারণেই তো অনুমতি নেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।]

۸۷۲- وَعَنْ رِبَعِي بن حراش قَالَ حَدَّثَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي عَامِرٍ اسْتَأْذَنَ عَلَى النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي بَيْتِ فَقَالَ آلِجُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ الخادمه أخرج إلى هذا فعلمه الاستندانَ فَقُل لَهُ السَّلامُ عَلَيْكُمْ أدْخُلُ فَسَمِعَهُ الرَّجُلُ فَقَالَ السّلامُ عَلَيْكُمْ ادْخُلُ فَأَذِنَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عليه وسلم فدخل – رواه ابو داود باسناد صحيح.

৮৭২। রিব’ঈ ইবনে হিরাশ (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমের গোত্রের এক ব্যক্তি আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি ঘরের মধ্যে ছিলেন। লোকটি বললো, আমি কি প্রবেশ করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খাদিমকে বলেনঃ এ লোকটির কাছে যাও এবং তাকে অনুমতি নেবার পদ্ধতি শিখিয়ে দাও। তাকে বলতে বলঃ আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? লোকটি তা শুনে বললো, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ভেতরে প্রবেশ করল।

ইমাম আবু দাউদ এ হাদীসটি সহীহ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۷۳- عَنْ كِلْدَةَ بْنِ الْحَنْبَلِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ آتَيْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ وَلَم أَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ارْجِعْ فَقُلْ السلامُ عَلَيْكُمْ ادْخُلُ – رواه أبو داود والترمذي وقال حديث حسن.
৮৭৩। কিলদা ইবনুল হাম্বল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাযির হলাম এবং সালাম না করে তাঁর কাছে পৌঁছে গেলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ফিরে যাও, তারপর বলঃ আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি?

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।

অনুচ্ছেদ : ১১ – যদি অনুমতিপ্রার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কে, তবে সুন্নাত পদ্ধতি হচ্ছে- এর জবাবে যেন সে বলেঃ আমি অমুক, সে যেন নিজের নাম বা ডাকনাম ইত্যাদি বলে এবং যেন ‘আমি’ বা এ ধরনের অস্পষ্ট কিছু না বলে

যদি অনুমতিপ্রার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কে, তবে সুন্নাত পদ্ধতি হচ্ছে- এর জবাবে যেন সে বলেঃ আমি অমুক, সে যেন নিজের নাম বা ডাকনাম ইত্যাদি বলে এবং যেন ‘আমি’ বা এ ধরনের অস্পষ্ট কিছু না বলে।

٨٧٤- عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي حَدِيثِهِ الْمَشْهُورِ فِي الْإِسْرَاءِ قَالَ قَالَ ررَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ صَعِدَ بِي جِبْرِيلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ فَقَبْلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ ثُمَّ صَعِدَ إِلَى السماء الثانية والثالثة والرابعة وسائرهن ويُقَالُ فِي بَابٍ كُلِّ سَمَاء مَنْ هَذَا فَيَقُولُ جِبْرِيلُ – متفق عليه.

৮৭৪। আনাস (রা) তাঁর মিরাজ সম্পর্কিত মশহুর হাদীসে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তারপর জিবরীল (আ) আমাকে নিয়ে দুনিয়ার (বা নিকটবর্তী) আকাশের দিকে উঠলেন এবং দরজা খুলতে বলেন। তখন জিজ্ঞেস করা হলঃ কে? তিনি বলেন: জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল: আপনার সাথে কে? তিনি জবাব দিলেনঃ মুহাম্মাদ (সা)। তারপর তিনি (আমাকে নিয়ে) উঠলেন দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও সমস্ত আকাশে এবং প্রত্যেক আকাশের দরজায় জিজ্ঞেস করা হল: কে এবং জবাবে তিনি বলেন: জিবরীল।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٨٧٥ – وَعَنْ أَبِي ذَرِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجْتُ لَيْلَهُ مِنَ اللَّيَالِي فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي وَحْدَهُ فَجَعَلْتُ امْشِي فِي ظِلِّ الْقَمَرِ فَالْتَفَتَ قَرَأْنِي فَقَالَ مَنْ هُذَا فَقُلْتُ أَبو ذر – متفق عليه .

৮৭৫। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে বাইরে বের হয়ে দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী হাঁটছেন। আমিও চাঁদের ছায়ায় চলতে লাগলাম। তিনি ফিরে আমাকে দেখে বললেনঃ কে? আমি জবাব দিলামঃ আবু যার।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٨٧٦- وَعَنْ أُمِّ هَانِي رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ آتَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَهُ تَسْتُرُهُ فَقَالَ مَنْ هذه فَقُلْتُ أنا أم هاني متفق عليه.

৮৭৬। উম্মু হানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। তিনি গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা তাঁকে আড়াল করে রাখছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কে এল? আমি জরাব দিলাম, আমি উম্মু হানী।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۷۷- وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ آتَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَفَقْتُ الْبَابَ فَقَالَ مَنْ ذا فَقُلْتُ أَنَا فَقَالَ أنا أنا كأنه كرهها – متفق عليه.

৮৭৭। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে দরজায় টোকা দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কে? আমি জবাব দিলাম, আমি। তিনি বলেন: ‘আমি আমি।’ যেন তিনি এ জবাব অপছন্দ করলেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ১২ – হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া মুস্তাহাব এবং আলহামদু লিল্লাহ না বললে জবাব দেয়া মাকরূহ। হাঁচি দেয়া, হাঁচির জবাব দেয়া ও হাই তোলার নিয়ম

হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া মুস্তাহাব এবং আলহামদু লিল্লাহ না বললে জবাব দেয়া মাকরূহ। হাঁচি দেয়া, হাঁচির জবাব দেয়া ও হাই তোলার নিয়ম।

۸۷۸- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الله يُحِبُّ العطاس ويَكْرَهُ التَّناوُبَ فَإِذَا عَطسَ أَحَدُكُمْ وَحَمِدَ اللهَ تَعَالَى كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ يَقُولَ لَهُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ وَأَمَّا التَّشَاؤُبَ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ فَإِذَا تَشَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْبَرُدَهُ مَا اسْتَطَاعَ فَإِنْ أَحَدَكُمْ إِذَا تَتَاءَبَ ضَحِكَ منه الشيطان – رواه البخاري.

৮৭৮। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। কাজেই যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয় এবং আলহামদু লিল্লাহ বলে, যে মুসলিমই তা শুনে তার উপর ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা জরুরী হয়ে যায়। আর হাই উঠার ব্যাপারটি হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কাজেই তোমাদের কারো হাই উঠার উপক্রম হলে সে যেন তা সাধ্যমত চেপে রাখার চেষ্টা করে। কারণ কেউ হাই তুললে তাতে শয়তান হাসে।

ইমাম বুখারী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۷۹- وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقْلِ الْحَمْدُ لِلهِ وَلْيَقُلْ لَهُ أَخُوهُ أَو صَاحِبُهُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ فَإِذَا قَالَ لَهُ يَرْحَمُكَ اللَّهُ فَلْيَقُلْ يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بالكُم رواه البخاري.

৮৭৯। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে বলবেঃ আলহামদু লিল্লাহ এবং তার ভাই বা সাথী বলবেঃ ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন)। তার জন্য সে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে সে যেন বলে, “ইয়াহসীকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম।”

ইমাম বুখারী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۸۰- وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَحَمِدَ اللهَ فَشَمِتُوهُ فَإِنْ لَمْ يَحْمَدِ اللَّهَ فَلَا تشمتوه – رواه مسلم

৮৮০। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাবে তোমরা ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে এবং যদি সে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ না বলে তাহলে তোমরাও ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে না।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۸۱- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ عَطَسَ رَجُلَانِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ قسمت أَحَدَهُمَا وَلَمْ يُشَمِّتِ الْآخَرَ فَقَالَ الَّذِي لَمْ يُشَمِّتُهُ عَطَسَ فلان قَسَمْتُهُ وَعَطَمْتُ فَلَمْ تُشَمِّتْنِي فَقَالَ هَذَا حَمِدَ اللَّهَ وَإِنَّكَ لَمْ تَحْمَدِ اللَّهَ متفق عليه

৮৮১। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’জন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে হাঁচি দিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনের জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললেন এবং অপরজনের জবাবে কিছুই বললেন না। যে ব্যক্তিকে তিনি কিছুই বললেন না, সে বলল, অমুক হাঁচি দিলে তার জবাবে আপনি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললেন, আর আমার হাঁচির জবাবে কিছুই বললেন না? তিনি বলেনঃ এ ব্যক্তি (হাঁচি দিয়ে) ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলেছে কিন্তু তুমি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলনি।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۸۲- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا عَطَسَ وَضَعَ يَدَهُ أَوْ تَوْبَهُ عَلَى فِيهِ وَخَفَضَ أَوْ غَضَ بِهَا صَوْتَهُ شَكٍّ الراوي – رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح.

৮৮২। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন, মুখের উপর নিজের হাত বা কাপড় রাখতেন এবং হাঁচির আওয়াজ নিচু বা নিম্নগামী করতেন।

ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান ও সহীহ হাদীস বলেছেন।

۸۸۳- وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ الْيَهُودُ يَتَعَاطَسُونَ عِنْدَ رَسُولِ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُونَ أَن يَقُولَ لَهُمْ يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ فَيَقُولُ يَهْدِيكُمُ اللَّهُ ويُصْلِحُ بالكم رواه ابو دواد والترمذي وقال حديث حسن صحيح .

৮৮৩। আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে হাঁচি দিত এবং আশা করত, তাদের হাঁচির জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলবেন: ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। তিনি বলতেন: ‘ইয়াহ্দীকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’ (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করুন)।
ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান ও সহীহ হাদীস বলেছেন।

٨٨٤- وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تَشَاحَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكَ بيده عَلَى فِيْهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ رواه مسلم.
৮৮৪। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে, সে যেন তার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। কারণ (মুখ খোলা পেলে তাতে) শয়তান প্রবেশ করে।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

অনুচ্ছেদ: ১৩ – কারো সাথে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করা এবং হাসিমুখে মিলিত হওয়া, নেক লোকের হাতে চুমো দেয়া, নিজের ছেলেকে সস্নেহে চুমো দেয়া এবং সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারীর সাথে গলাগলি করা মুস্তাহাব কিন্তু মাথা নোয়ানো মাকরূহ

কারো সাথে সাক্ষাতের সময় মুসাফাহা করা এবং হাসিমুখে মিলিত হওয়া, নেক লোকের হাতে চুমো দেয়া, নিজের ছেলেকে সস্নেহে চুমো দেয়া এবং সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারীর সাথে গলাগলি করা মুস্তাহাব কিন্তু মাথা নোয়ানো মাকরূহ।

٨٨٥- عن أبي الْخَطَابِ قَتَادَةَ قَالَ قُلْتُ لِإِنسِ أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي اصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَعَم رواه البخاري.

৮৮৫। আবুল খাত্তাব কাতাদা (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মধ্যে কি মুসাফাহার প্রচলন ছিল? তিনি বলেন, হাঁ।

ইমাম বুখারী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

٨٨٦- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا جَاءَ أَهْلُ الْيَمَنِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ جَاءَكُمْ أَهْلُ الْيَمَنِ وَهُمْ أَوَّلُ مَنْ جَاءَ بِالْمُصَافَحَةِ رواه ابو داود باسناد صحیح
৮৮৬। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে এবং মুসাফাহা সহকারে তারাই প্রথমে এসেছে।

ইমাম আবু দাউদ সহীহ সনদসহকারে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۸۷- وَعَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ الأَغْفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَن يُفْتَرِقَا -رواه ابو داود.

৮৮৭। বারাআ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দু’জন মুসলিম পরস্পর সাক্ষাতকালে মুসাফাহা করলে তারা আলাদা হবার আগেই তাদের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

۸۸۸- وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ ايَنْحَنِي لَهُ قَالَ لا قَالَ أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ قَالَ لَا قَالَ فَيَأْخُذُ بِيَدِهِ ويُصافحه قال نعم – رواه الترمذي وقال حديث حسن .

৮৮৮। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের মধ্যে কেউ যখন তার ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে, সে কি তার প্রতি মাথা নোয়াবে? তিনি বলেনঃ না। সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, সে কি তাকে জড়িয়ে ধরবে এবং চুমো খাবে? তিনি বলেনঃ না। সে জিজ্ঞেস করল, সে কি তার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মুসাফাহা করবে? তিনি বলেনঃ হাঁ।

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন এবং তিনি একে হাসান হাদীস বলেছেন।

۸۸۹- وَعَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمَّالٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ يَهُودِي لِصَاحِبِهِ اذْهَبْ بنا إلى هذا النَّبِيِّ فَأَتَيَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَاهُ عَنْ تِسْعِ آيات بَيِّنَاتٍ فَذَكَرَ الْحَدِيث إِلى قَوْلِهِ فَقَبُلا يَدَهُ وَرِجْلَهُ وَقَالَا نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِي رواه الترمذي وغيره بأسانيد صحيحة

৮৮৯। সাফওয়ান ইবনে আসসাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ইহুদী তার সাথীকে বলল: চলো আমরা এই নবীর কাছে যাই। কাজেই তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল এবং তাঁকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। রাবী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন যে, অতঃপর তারা দু’জন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে ও পায়ে চুমো দিল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি নিঃসন্দেহে আপনি নবী।

ইমাম তিরমিযী প্রমুখ এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন সহীহ সনদ সহকারে।

۸۹۰- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قِصَّةٌ قَالَ فِيهَا فَدَنَوْنَا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى الله عليه وسلم فقبلنا يده – رواه ابو داود .

৮৯০। ইবনে উমার (রা) থেকে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, তারপর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হলাম এবং তাঁর হাতে চুমো খেলাম।
ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۹۱- وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْمَدِينَةَ وَرَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي فَآتَاهُ فَقَرَعَ الْبَابَ فَقَامَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَجُرُّ ثَوْبَهُ فَاعْتَنَقَهُ وَقَبْلَهُ – رواه الترمذي وقال حديث حسن.

৮৯১। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়িদ ইবনে হারিসা (রা) মদীনায় এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমার ঘরে অবস্থান করছিলেন। যায়িদ (মুলাকাত করার জন্য) তাঁর কাছে এলেন এবং দরজায় টোকা দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় টানতে টানতে উঠে গিয়ে তার সাথে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমো খেলেন।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।

۸۹۲- وَعَنْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا تحقرن مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أنْ تلقى أخاك بوجه طليق – رواه مسلم.

৮৯২। আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: নেকীর সামান্য কাজকেও নগণ্য মনে করো না, যদি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে মুলাকাত করার নেকীটিও হয় (তাও তুচ্ছ মনে করো না)।

ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

۸۹۳- وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَبْلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الحَسَنَ ابْنَ عَلِي فَقَالَ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ إِنَّ لِي عَشْرَةٌ مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبْلَتُ مِنْهُمْ احدا فقالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لا يَرْحَمُ لَا يُرْحَمُ – متفق عليه.

৮৯৩। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলীকে চুমো খেলেন। (তা দেখে) আকরা ইবনে হাবিস বললেন, আমার ডো দশটি সন্তান আছে, কিন্তু তাদের একজনকেও চুমো খাইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে অন্যের প্রতি স্নেহ-মমতা করে না, তার প্রতিও স্নেহ-মমতা করা হয় না।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

দ্বিতীয় খণ্ড সমাপ্ত

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South