91- الْوَعْظُ وَالْاِقْتِصَادُ فِيْهِ
পরিচ্ছেদ – ৯১: ওয়ায-নসীহত এবং তাতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥]
অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।” (সূরা নাহ্ল ১২৫ আয়াত)
1/704 وَعَن أَبي وَائِلٍ شَقِيقِ بنِ سَلَمَةَ، قَالَ: كَانَ ابنُ مَسْعُودٍ رضي الله عنه يُذَكِّرُنَا في كُلِّ خَمِيسٍ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمانِ، لَوَدِدْتُ أنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ، فَقَالَ: أمَا إنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أنَّي أكْرَهُ أنْ أُمِلَّكُمْ، وَإنِّي أتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) يَتَخَوَّلُنَا بِهَا مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭০৪। আবূ ওয়ায়েল শাক্বীক্ব ইবনে সালামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আমাদেরকে নসীহত শুনাতেন। একটি লোক তাঁকে নিবেদন করল, ‘হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার বাসনা এই যে, আপনি আমাদেরকে যদি প্রত্যেক দিন নসীহত শুনাতেন (তো ভাল হত)।’ তিনি বললেন, ‘স্মরণে রাখবে, আমাকে এতে বাধা দিচ্ছে এই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপছন্দ করি। আমি নসীহতের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে লক্ষ্য রাখছি, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিরক্ত হবার আশংকায় উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।’ (অর্থাৎ মাঝে-মধ্যে বিশেষ প্রয়োজন মাফিক নসীহত শুনাতেন।) (বুখারী-মুসলিম)[1]
2/705 وَعَن أَبي اليَقَظَانِ عَمَّارِ بنِ يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ الله ِ(صلى الله عليه و سلم)، يَقُولُ: «إنَّ طُولَ صَلاَةِ الرَّجُلِ، وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ، مَئِنَّةٌ مِنْ فِقهِهِ، فَأَطِيلُوا الصَّلاَةَ وَأقْصِرُوا الْخُطْبَةَ ». رواه مسلم
২/৭০৫। আবুল ইয়াক্বাযান ‘আম্মার ইবনে ইয়াসের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘মানুষের (জুম‘আর) দীর্ঘ নামায ও তার সংক্ষিপ্ত খুতবা তার শরয়ী জ্ঞানের পরিচায়ক। অতএব তোমরা নামায লম্বা কর এবং খুতবা ছোট কর।’’ (মুসলিম)[2]
3/706 وَعَن مُعاوِيَةَ بنِ الحَكَمِ السُّلَمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: بَيْنَا أنَا أُصَلّي مَعَ رَسُولِ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، إذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ، فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَرَمَانِي القَوْمُ بِأبْصَارِهِمْ ! فَقُلْتُ: وَاثُكْلَ أُمِّيَاهُ، مَا شَأنُكُمْ تَنْظُرُونَ إلَيَّ ؟! فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيدِيهِم عَلَى أَفْخَاذِهِمْ ! فَلَمَّا رَأيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنّي سَكَتُّ، فَلَمَّا صَلّى رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، فَبِأبِي هُوَ وَأُمِّي، مَا رَأيْتُ مُعَلِّماً قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أحْسَنَ تَعْلِيماً مِنْهُ، فَوَاللهِ مَا كَهَرَني، وَلاَ ضَرَبَنِي، وَلاَ شَتَمَنِي . قَالَ: « إنَّ هذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلامِ النَّاسِ، إنَّمَا هِيَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ، وَقِراءةُ القُرْآنِ »، أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) . قلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالإسْلاَمِ، وَإنَّ مِنّا رِجَالاً يَأتُونَ الْكُهّانَ؟ قَالَ: « فَلاَ تَأتِهِمْ ». قُلْتُ: وَمِنّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ ؟ قَالَ: « ذَاكَ شَيْء يَجِدُونَهُ في صُدُورِهِمْ فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ ». رواه مسلم
৩/৭০৬। মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায পড়ছিলাম। ইত্যবসরে হঠাৎ একজন মুক্তাদীর হাঁচি হলে আমি (তার জবাবে) ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমাকে রহম করুন) বললাম। তখন অন্য মুক্তাদীরা আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগল। আমি বললাম, ‘হায়! হায়! আমার মা আমাকে হারিয়ে ফেলুক! তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আমার দিকে তাকিয়ে দেখছো?’ (এ কথা শুনে) তারা তাদের নিজ নিজ হাত দিয়ে নিজ নিজ উরুতে আঘাত করতে লাগল। তাদেরকে যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে (তখন তো আমার অত্যন্ত রাগ হয়েছিল); কিন্তু আমি চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায সমাপ্ত করলেন—আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য কুরবান হোক, আমি তাঁর চেয়ে উত্তম শিক্ষাদাতা না আগে দেখেছি আর না এর পরে। আল্লাহর শপথ! তিনি না আমাকে তিরস্কার করলেন, আর না আমাকে মারধর করলেন, আর না আমাকে গালি দিলেন —তখন তিনি বললেন, ‘‘এই নামাযে লোকদের কোন কথা বলা বৈধ নয়। (এতে যা বলতে হয়,) তা হল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ।’’ অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মত কোন কথা বললেন। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি জাহেলিয়াতের লাগোয়া সময়ের (নও মুসলিম)। আল্লাহ ইসলাম আনয়ন করেছেন। আমাদের মধ্যে কিছু লোক গণকের কাছে (অদৃষ্ট ও ভবিষ্যৎ জানতে) যায়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের কাছে যাবে না।’’ আমি বললাম, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে থাকে।’ তিনি বললেন, ‘‘এটা এমন একটি অনুভূতি যা লোকে তাদের অন্তরে উপলব্ধি করে থাকে। সুতরাং এই অনুভূতি তাদেরকে যেন (বাঞ্ছিত কর্ম সম্পাদনে) বাধা না দেয়।’’ (মুসলিম)[3]
4/707 وَعَن العِرْبَاضِ بنِ سَارِيَةَ رضي الله عنه، قَالَ: وَعَظَنَا رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ … وَذَكَرَ الحَدِيثَ وَقَدْ سَبَقَ بِكَمَالِهِ في باب الأمْر بِالمُحَافَظَةِ عَلَى السُّنَّة، وَذَكَرْنَا أنَّ التَّرْمِذِيَّ، قَالَ: «إنّه حديث حسن صحيح »
৪/৭০৭। ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন এক মর্মস্পর্শী ভাষণ শুনালেন, যার দ্বারা আমাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে উঠল এবং চক্ষুসমূহ অশ্রু বিগলিত করতে লাগল।…. অতঃপর ইরবাদ্ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাকী হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব পরিচ্ছেদে (১৬১ নম্বরে) পূর্ণরূপে গত হয়েছে। আর আমরা সেখানে উল্লেখ করেছি যে, তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।[4]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৮, ৭০, ৬৪১১, মুসলিম ২৮২১, তিরমিযী ২৮৫৫, আহমাদ ৩৫৭১, ৪০৩১, ৪০৫০, ৪১৭৭, ৪২১৬, ৪৩৯৫, ৪৪২৫
[2] মুসলিম ৮৬৯, আহমাদ ১৭৮৫৩, ১৮৪১০, দারেমী ১৫৫৬
[3] মুসলিম ৫৩৭, নাসায়ী ১২১৮, আবূ দাউদ ৯৩০, ৯৩১, ৩২৮২, ৩৯০৯, আহমাদ ২৩২৫০, ২৩২৫৩, ২৩২৫৬, দারেমী ১৫০২
[4] ইবনু মাজাহ ৪২, ৪৪, তিরমিযী ২৬৭৬, আবূ দাউদ ৪৬০৭, আহমাদ ১৬৬৯২, দারেমী ৯৫