দর্শন কোষ
সরদার ফজলুল করিম
ভূমিকা
(প্রথম বাংলা একাডেমী সংস্করণের)
কোনো এনসাইক্লোকডিয়া বা জ্ঞানকোষ একক প্রচেষ্টায় প্রস্তুত বরা সম্ভব নয়। এজন্য যৌথ প্রচেষ্ঠা আবশ্যক। ইংরেজী ভাষায় ছোটবড় আকারের নানা এনসাইক্লোপিডিয়ার প্রকাশ দেখা যায়। বাংলা ভাষায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে এরূপ জ্ঞানকোষ নাই। জ্ঞানকে সর্বজনীন করার জন্য জ্ঞানকোষ অপরিহার্য। এক্ষেত্রে আমাদের নিদারুণ দৈন্যই আমার মধ্য বর্তমান গ্রন্থ রচনার মানসিক তাগিদ সৃষ্টি করে। সে প্রায় ছ’বছর পূর্বের কথা। নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা আমরা জানি। তথাপি এক্ষেত্রে কিছু না করাকে নিজের মনে অপরাধ বলে বোধ হয়েছে। এই মানসিক বোধ থেকে এবং বন্ধুজনদের উৎসাহে কাজটি শুরু করি। বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ একাডেমীর গবেষণা পত্রিকাকে ‘দর্শনকোষ’ খানি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেন ১৯৬৮ সনে। একাডেমী পত্রিকাতে প্রকাশিত হতে থাকলে সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, ছাত্রবন্ধু এবং জ্ঞানানুরাগী বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আমি আন্তরিক উৎসাহজনক সাড়া পেতে থাকি। তাঁরা সবাই ‘দর্শনকোষ’খানি সমাপ্ত করার তাগিদ দেন। তাঁদের এই তাগিদ এবং পরামর্শ আমার এই কাজে বিশেষ অনুপ্ররেণা যোগায়।
‘দর্শনকোষ’ নামে বর্তমান গ্রন্থ প্রকাশিত হলেও দর্শনকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করে দর্শন, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইতিহাসের অত্যাবশ্যকীয় পদ, তত্ত্ব, তাত্ত্বিক, চিন্তাবিদ এবং ঐতিহাসিক ব্যাক্তির উপর রচিত ব্যাখ্যামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা চার শতের অধিক। জ্ঞানকোষের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নাই। বর্তমান কোষ আকারে খুব বৃহৎ নয়। কিন্তু এর অন্তর্ভক্ত বিষয়গুলিকে আমাদের জ্ঞান এবং শিক্ষাক্ষেত্রের দিকে সযত্ন লক্ষ্য রেখে নির্বাচন করা হয়েছে। ব্যাখ্যা কিংবা বিবরণের পরিধিও সীমাবদ্ধ। তার কারণ, আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই বিষয়গুলিকে প্রাথমিকভাবে বাংরা ভাষায় উপস্থিত করা এবং পাঠকদের মনে বিষয়গুলির প্রতি কিছুটা আগ্রহ সৃষ্টি করা যাতে তাঁরা বৃহত্তর কোষ কিংবা গ্রন্থের মধ্যে তাঁদের জ্ঞানের পিপাসা নিবৃত করার চেষ্টা করেন।
কাজটি অগ্রসর হচ্ছিল। এমন সময়ে দেশের উপর পাকস্থানি দখলদার বাহিনীর অপ্রত্যাশিত এবং অচিন্তনীয় বর্বর হামলা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রিতে। এরপর যে-বর্বরতার অন্ধকার যুগ বাংলাদেশের বুকে নেমে আসে তাতে কত জ্ঞানী, গুনী, কবি, শিক্ষাবিদ, ছাত্র, শিক্ষক নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন তাঁর সংখ্যা আজো নিদিষ্ট হয় নি। সেই অন্ধকার পর্যায়েও আপন শক্তি ও সাধ্যমতো ‘দর্শনকোষে’র কাজটি চালাবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পাকিস্থান সাময়িক বাহিনী আমাকে পরবর্তীকালে গ্রেফতার করে বন্দিনিবাসে নিক্ষেপ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বন্দিনিবাস থেকে মুক্ত হয়ে আমি আবার কাজ শুরু করি এবং গত বৎসরই কাজটি সমাপ্ত করে একাডেমীর কাছে পেশ করি।
জ্ঞানকোষ মাত্রেরই সংযোজন এবং সংশোধনের অবকাশ থাকে। নতুন বিষয় সংযোজনের কাজটি চালিয়ে যাব। সম্ভব হলে নতুন সংস্করণের পূর্বেই কোষের নতুন সংযোজন প্রকাশ করা হবে। ‘দর্শনকোষ’ রচনার ক্ষেত্রে যে সমস্ত গ্রন্থ এবং বিশ্বকোষের উপর নির্ভর করা হয়েছে তার নাম অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠকবৃন্দ এবং সুহৃদজনের বাছে অনুরোধ, তথ্য কিংবা তত্ত্বগত কোনো গুরুতর ভূল নজরে পড়লে তাঁরা যেন লেখককে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন।
‘দর্শনকোষ’ রচনার ও প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা মনে পড়েছে। তাঁদের সকলের নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ‘দর্শনকোষ’ প্রকাশের ব্যাপারে যে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সেজন্য তাঁকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রকাশন দপ্তরের পরিচালক জনাব ফজলে রাব্বি সহ-পরিচালক জনাব আবুল হাসনাত, গ্রন্থাগারিক জনাব শামসুল হক এবং বাংলা একাডেমীর অপরাপর বন্ধুরা এই ‘দর্শনকোষ’-এর সঙ্গে গোড়া থেকে এর উৎসাহদাতা এবং পরামর্শদাতা হিসাবে সংযুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ভাষা বিভাগের প্রধান জনাব আব্দুল হাই বাংলা একাডেমীতে নিযুক্ত থাকাকালে এই দর্শনকোষ রচনার ব্যাপারে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। বাংলা একাডেমীর মুদ্রণালয়ের কর্মীদের আগ্রহ এবং যত্ন ব্যতীত দর্শনকোষ প্রকাশে অধিকতর বিলম্ব ঘটত। তাঁদের মধ্যে মুদ্রণালয়ের অফিসার জনাব চৌধুরী আব্দুর রহমান, জনাব শামসুদ্দীন, জনাব মোহাম্মদ আফজাল হোসেন এবং অন্যান্য কর্মী তাঁদের যত্ন ও পরিশ্রম দ্বারা আমার কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন ‘দর্শনকোষ’কে মুদ্রণপ্রমাদ মুক্ত রাখতে। তথাপি অনিবার্যভাবে মুদ্রণপ্রমাদ কিছু রয়ে গেছে। আশা করি ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ অধিতকত শুদ্ধ এবং পূর্ণতরভাবে প্রকাশিত হবে।
গ্রন্থের মধ্যে বিষয়ের ইংরেজি নাম এবং বর্ণক্রম অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ, আমাদের শিক্ষিত মহলে এর বেশিরভাগ বিষয়ের ইংরেজি নাম এখনো পরিচিত এবং প্রচলিত। বর্তমানে প্রয়োজন এই বিষয়গুলির বাংলা ভাষায় ব্যাখ্যা। গ্রন্থেশেষে ইংরেজি এবং বংলা বর্ণক্রমের ভিত্তিতে বিষয়সূচি সংযুক্ত করা হয়েছে।
পরিশেষে আবার বলি কোন জ্ঞানকোষই সম্পূর্ণ নয়। কারণ, জ্ঞানের শেষে নাই। জ্ঞানকোষ মাত্রই আমাদের মনে কিছু তৃপ্তি এবং অনেক অতৃপ্তি এবং অশ্বেষার সৃষ্টি করে। আমার এ প্রচেষ্টা জ্ঞানপিপাসুর মনে কিছু তৃপ্তি এবং অনেক অতৃপ্তি এবং অন্বেষার সঞ্চার করতে পারে তা হলেই নিজের শ্রমকে সার্থক মনে করব।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সরদার ফজলুল করিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৮ই ভাদ্র, ১৩৮০
২৫শে আগষ্ট, ১৯৭৩
।।২।।
যে ব্যক্তিক সীমাবদ্ধতা নিয়েই ‘দর্শনকোষ’ রচনার দুঃসাহস দেখাতে হয়েছিল সে সীমাবদ্ধতাকে এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণেও যে অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি, তা এই গ্রন্থের অনুরাগী পাঠকবৃন্দের কাছে উল্লেখের প্রয়োজন হবে না। ‘দর্শনকোষ’ যে বহুদিন যাবৎ বই-এর দোকানে, এমনকি সড়কের উপরে কিংবা দুস্প্রাপ্য বস্তুর আধারেও অপ্রাপ্য হয়ে রয়েছে, এটি পাঠকদের প্রীতিরই স্মারক। ‘দর্শনকোষ’কে তাঁরা বর্জনীয় পদার্থ বলে গণ্য করেন নি, তাকে সংরক্ষণের বিষয় বলে বিবেচনা করেছেন। পথে ঘাটে তরুণ ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষার্থী, বন্ধুজন, সুহৃদ, শিক্ষাবিদ এবং পাঠকবৃন্দের তাগিত এবং দাবি ছিল, ‘দর্শনকোষ’-এর নতুন একটি সংস্করণের প্রধান কৃতিত্ব বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব মনজুরে মওলার, যিনি গ্রন্থখানির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সংকট সত্ত্বেও এর নতুন সংস্করণ প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
‘দর্শনকোষ’ প্রকাশিত হওয়ার পরে স্বতঃস্ফুর্তভাবে গ্রন্থকারকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক। তাঁর এমন উৎসাহদানে আমি অনুপ্রাণিত বোধ করেছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বন্ধুবর মোহাম্মদ আবু জাফর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ‘বই’ মাসিকে ‘দর্শনকোষ’-এর একটি বিস্তারিত আলোচনা প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে এই গ্রন্থের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে তিনি বেশ কয়েকটি পরামর্শও প্রদান করেছিলেন। আমি সকৃতজ্ঞভাবে তাঁর আলোচনা পাঠ করেছি এবং তাঁর সুপরামর্শের দিকে খেয়াল রেখে যথাসাধ্য একে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। এ গ্রন্থের গুণগ্রাহী আলোচনা করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তরুণ শিক্ষক মোকাররম হোসেনও। তিনি আমার ধন্যবাদের পাত্র। চট্রগামের এক তরুণ পাঠক সাগ্রহে চিঠি লিখে গ্রন্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। এরূপ জানা অজানা পাঠকবর্গের অকৃপণ উৎসাহদান আমার মধ্যে ‘দর্শনকোষ’ রচনার একটা সতর্কতাবোধ সৃষ্টি করেছে। আমার জীবনকালে ‘দর্শনকোষ’-এর নতুনতর কোনো সংস্করণ হবে, এমন আশা করা, বিরাজমান পরিস্থিতিতে, কিছুটা দুরাশা। কিন্তু এ বিশ্বাস আমি পোষণ করি যে, ‘দর্শনকোষ’-এর উত্তরপুরুষরা জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে নানা জ্ঞানকোষ তৈরি দ্বারা এর সূচনার ধারাটি সমৃদ্ধ করে চলবেন। ইতিমধ্যে ‘সমাজবিজ্ঞান শব্দকোষ’, ‘ইতিহাসকোষ’, ‘জ্ঞানের কথা’, ‘চরিতাভিধান’ প্রভৃতি শিরোনামে ক্ষুদ্র বৃহৎ আকারের বিভিন্ন গ্রন্থ যে বাংলাদেশে রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে এবং নতুনতর উদ্যোগে যে আরো নানা ক্ষেত্রে গ্রহণ করা হচ্ছে, এটি জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের জীবনের লক্ষণ।
বর্তমান ‘দর্শনকোষ’ কেবল দর্শনশাস্ত্রের পদ কিংবা সমস্যার আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়। সাধারণভাবে এ গ্রন্থ একটি ক্ষুদ্র জ্ঞানকোষ। সে কারণে ক্ষমতানুযায়ী এবং গ্রন্থের আকারের সীমাবদ্ধতার মধ্যে এর বর্তমান পরিবর্ধিত সংস্করণে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় এক শত নতুন অন্তর্ভূক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তথাপি এ কোনো সুসম্পূর্ণ বিশ্বকোষ নয়। নতুন সংস্করণ প্রকাশের সিদ্ধান্তের পরে ’৮৫ সালের মহান একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকাশনা সমাপ্ত করার লক্ষ্যে গ্রন্থের সর্বদিকে দৃষ্টিপাতের সময় খুবই সংকীর্ণ ছিল। সে কারণে ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিমাণ হয়তো কম নয়। তথাপি যথাসাধ্য শুদ্ধ মুদ্রণ এবং অন্যান্য পরিপাট্যের প্রতি বাংলা একাডেমির পাঠ্য পুস্তক ডিভিশনের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ ইবরাহিম, তাঁর সহকর্মী জনাব ফজলুল হক সরকার, জনাব আবদুল ওয়াহাব এবং আহছানিয়া মিশন প্রেসের কর্মী জনাব মোহসীন যে সাগ্রহ তত্ত্বাবধান প্রদান এবং পরিশ্রম স্বীকার করেছেন তার জন্য তাঁরা সকলেই আমার কৃতজ্ঞতাভাজন। ‘হিপোক্রাটিসের শপথ’টি সংগ্রহ করে দিয়েছেন স্নেহভাজন ডা. এস. এ. মাহমুদ। তাঁকে আমার স্নেহাশীর্বাদ।
‘দর্শনকোষ’-এর অবশ্যই একটি দর্শন আছে। বলা চলে রচনাকার বা সংকলকের দর্শন। সেটি জটিল কোনো দর্শন নয়। সে কেবল এই সহজ বিশ্বাস যে, মানুষের সামাজিক জীবন নিয়ত বিকাশশীল। প্রবাহমান।কেবল যান্ত্রিকভাবে নয়। সচেতন, সংঘবদ্ধ, সমাজগত যৌথ প্রচেষ্টায় উত্তম থেকে অধিকতর উত্তম জীবন সৃষ্টির লক্ষ্যে বিকাশমান প্রয়াস। মানুষের সমাজ জীবনের এমন বিকাশে শতবৎসরও কোনো হিসাবের কাল নয়। আসলে যেমন স্থান অসীম, তেমনি কাল অসীম। তাতে বর্তমানের কোনো সংকট, প্রতিবন্ধক কিংবা আশাভঙ্গ সেই অনিবার্য বিকাশের পরিচয়সূচক ব্যতীত তাকে রুদ্ধ করে দেওয়ার কোনো শক্তির প্রকাশ নয়। সেই বিশ্বাসে স্থির থেকেই বর্তমান নিবেদনের ইতি টানছি। এ গ্রন্থ বাংলা ভাষাভাষী জ্ঞানানুরাগী পাঠকবৃন্দের্ তাঁদের উদ্দেশ্যেই এ গ্রন্থ উৎসর্গিত।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সরদার ফজলুল করিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৬
।।৩ ।।
‘দর্শনকোষ’-এর পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণটি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সনে। বেশ কিছুদিন ধরে এ সংস্করণের কপি আর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। একাডেমীর বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মীরাই ‘দর্শনকোষ’-এর নতুন সংস্করণের জন্য আমাকে তাগিদ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্য পাঠকবর্গ ‘দর্শনকোষ’খানি ক্রয়ের জন্য প্রায়শই একাডেমীর বিক্রয়কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু কপি নিঃশেষিত হওয়ার কারণে ‘দর্শনকোষ’ তাঁরা ক্রয় করতে পারেন না বলে তাঁদের উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিকগণ ব্যক্তিগতভাবেও আমাকে ‘দর্শনকোষ’ পুনর্মুদ্রণের কথা বলেছেন। তাঁদের তাগিদ এবং বাংলা একাডেমীর অনুকূল সিদ্ধান্তে ‘দর্শনকোষ’-এর তৃতীয় সংস্করণটি এখন প্রকাশিত হলো। এ জন্যে আমি উভয়ের নিকট কৃতজ্ঞ।
বর্তমান সংস্করণে গ্রন্থের কলেবন তেমন বৃদ্ধি করা না গেলেও পূর্বতন সংস্করণের ক্রটি-বিচ্যুতি যথাসাধ্য সংশোধনের চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের অসামান্য লোকদার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর সাহেব আজ প্রয়াত। তাঁর পরিচয়দানের দায়বদ্ধতা থেকে ‘দর্শনকোষ’-এর বর্তমান সংস্করণের উপযুক্ত স্থানে তাঁর উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা আমি যুক্ত করেছি।
যথাসাধ্য সংশোধনের মাধ্যমে সময়বোধক আলোচনাকে সমকালীন পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। সব ্বালোচনাতে তা হয়তো সম্ভব হয় নি। পাঠকবৃন্দ আশা করি সে দিকটি খেয়ালে রেখে আলোচনার বিষয়কে অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।
শব্দের বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী গৃহীত বানান পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে যে এই নিয়ম রক্ষিত হয়েছে এমন হয়তো বলা যাবে না।
বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জ্ঞানানুরাগী পাঠকদের উদ্দেশে এই সংস্করণ উৎসর্গিত হলো্
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরদার ফজলুল করিম
ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫