জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

পলাশী থেকে বাংলাদেশ

অন্তর্গতঃ রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত), সীরাত ও ইতিহাস
Share on FacebookShare on Twitter

পলাশী থেকে বাংলাদেশ

অধ্যাপক গোলাম আযম


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


 

সূচীপত্র

  1. অধ্যায় ০১ : ইংরেজ রাজত্ব
    1. পলাশী থেকে বাংলাদেশ
    2. উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্ব
    3. বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব
  2. অধ্যায় ০২ : স্বাধীনতা আন্দোলন
  3. অধ্যায় ০৩ : পাকিস্তান আন্দোলন ও ইসলাম
    1. পাকিস্তান আন্দোলন ও ইসলাম
    2. আইয়ুব খানের যুগ
    3. মুসলিম জাতীয়তা পরিত্যাগের রাজনৈতিক পরিণাম
    4. নির্বাচনের পর
    5. এরপর যা ঘটল
    6. স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলন
  4. অধ্যায় ০৪ : ভারত বিরোধীদের পেরেশানী
    1. ভারতের ভূমিকা
    2. ভারত বিরোধীদের পেরেশানী
  5. অধ্যায় ০৫ : স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি
    1. স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি
    2. সরকারের ভ্রান্তনীতি
    3. রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে
    4. গণতন্ত্রের প্রশ্নে
    5. অর্থনৈতিক ময়দানে
    6. ভুট্টো-ইয়াহইয়া ষড়যন্ত্র
  6. অধ্যায় ০৬ : ইসলামপন্থীদের সংকট
    1. বাংলাদেশ আন্দোলনে ইসলামপন্থীদের সংকট
    2. ভারতবিরোধী ও ইসলামপন্থীদের ভূমিকা
  7. অধ্যায় ০৭ : ৭১-এ জামায়াতের ভূমিকা
    1. জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা
    2. ৭১-এ জামায়াতের ভূমিকা
    3. জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিতে পূর্বপাকিস্তানের সমস্যা কী ছিল?
  8. অধ্যায় ০৮ : বংগভংগ ও পূর্ব বাংলার উন্নয়ন
    1. বংগভংগ আন্দোলন
    2. বংগভংগ বাতিল আন্দোলন
    3. পূর্ব বাংলার উন্নয়ন
    4. কেন সার্বিক উন্নয়ন হলো না?
    5. নি:স্বার্থ নেতৃত্বের অভাব
  9. অধ্যায় ০৯ : এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্ষক কারা?
    1. শেষ কথা
  10. অধ্যায় ১০ : যারা বাংলাদেশ আন্দোলনে শরীক হয়নি তার কি স্বাধীনতা বিরোধী ছিল?
    1. রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও স্বাধীনতাবিরোধী হওয়া এক কথা নয়
    2. শেরে বাংলার উদাহরণ
    3. শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদাহরণ

অধ্যায় ০১ : ইংরেজ রাজত্ব

পলাশী থেকে বাংলাদেশ

অতীতকে বাদ দিয়ে যেমন বর্তমানকে বুঝতে পারা যায় যে, তেমনি বর্তমানের বিশ্লেষণের ছাড়াও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় না।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে যে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দুনিয়ার মানচিত্রে স্থান লাভ করল, তার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এখানে বিস্তারিত ইতিহাস আলোচনা উদ্দেশ্যে নয়। এজন্য প্রাচীন কাল থেকে আলোচনার অবকাশ এখানে নেই। তাই বৃটিশ শাসনের সূচনা থেকেই শুরু করছি।

উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্ব

১৭৫৭ সালে স্বাধীন বাংলার নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর ইংরেজের সহযোগিতায় নিজে নওয়াব যে কুমতলব করেছিল, তারই ফলে এদেশেই ইংরেজ রাজত্বের সূচনা হয়। যে ব্যক্তি নিজের ক্ষমতার জন্য আপন দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল, তাকে সংগত কারণেই ইংরেজারও বিশ্বাস করতে পারল না। এভাবেই মীর জাফরের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ রাজত্ব কায়েম করা হলো।

১৮৫৭ সালে দিল্লীর শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজ রাজত্ব গোটা ভারত উপমহাদেশে মযবুত করা হলো। এবাবে উপমহাদেশে বৃটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করতে একশ’ বছর লেগে গেল। এভাবেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে পরাধীনতার যে বীজ বপন করা হয়েছিল, তা একশ’ বছরে বিরাট মহীরুহে পরিণত হলো।

১৮৩১ সালে পাঞ্জাব ও সীমান্ত প্রদেশের সীমানায় বালাকোটের যুদ্ধে সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী (র) ও শাহ ইসলামঈল (রা) এর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতের প্রথম সত্যিকার ইসলামী আন্দোলনের পরাজয়ের পর ইংরেজদের শক্তি আরও বেড়ে গেল। কিন্তু এ ইসলামী আন্দোলনেরই ফলেই ১৮৫৭ সালে ইংরেজ বাহিনীতে নিযুক্ত মুসলমান সিপাহীরা বিদ্রোহ করার প্রেরণা লাভ করেছিল।

এর পরের ইতিহাস মুসলিম জাতিকে চিরতরে গোলমা বানাবার জন্যে ইংরেজদের জঘন্য ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। এ উপমহাদেশে প্রায় ৬০০ বছর মুসলিম শাসন চলেছে। তাদের হাত থেকে পূর্ণ ক্ষমতা কেড়ে নিতে ইংরেজদের ১০ বছর লেগেছে। তাই দিল্লী দখলের পর এদেশে ইংরেজ রাজত্ব স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ইংরেজরা মুসলামানদেরকে সকল ময়দান থেকে উৎখাত করে অমুসলিম জাতিগুলোকে শিক্ষা, সরকারি চাকরি, ব্যাবসা-বাণিজ্য ও জমিদারীতে এগিয়ে দিল। ফলে ৫০ বছরের মধ্যে এদেশের মুসলিম শাসক জাতি, দাস জাতিতে পরিণত হয়ে গেল। ইংরেজ লেখক উইলিয়াম হান্টারের “দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস” বইটি এ কথার বিশ্বস্ত সাক্ষী।

বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব

বাংলাদেশ থেকে ইংরেজ রাজত্ব শুরু হওয়ায় বাংগালী মুসলমানরা প্রায় দু’শ’ বছর ইংরেজের গোলামী করতে বাধ্য হয়। ইংরেজর মুসলিম দমন নীতির ফলে বাংগালী মুসলমানরা দু’ধরনের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একদিকে তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক দিয়ে ইংরেজের অধীন হয়ে পড়ল, অপরদিকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এদেশেরই ঐ সব অমুসলিমের পদানত হতে বাধ্য হলো যারা ইত:পূর্বে মুসলমানদের প্রাধান্য মেনে চলত। অমুসলিম জমিদারদের অত্যাচারের ও সুদে টাকা লগ্নিকারীদের শোষণে মুসলমানদের যে কী দুর্দশা হয়েছিল। সে কথা একালের মুসলমানরা ধারণা করতেও অক্ষম।

অধ্যায় ০২ : স্বাধীনতা আন্দোলন

শিক্ষায়-দীক্ষায়, ধনে-দৌলতে, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে অমুসলিম জাতিগুলো অগ্রসর হবার পর ইন্ডয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্ররিচালনায় ও অমুসলিম নেতৃত্বে যখন দেশকে ইংরেজের গোলামী থেকে স্বাধীন করার আন্দোলন শুরু হলো তখন অর্ধমৃত অবস্থায়ও মুসলিম জাতি তাতে সাড়া দিল। ইংরেজ বিদ্বেষ তাদের মজ্জাগত ছিল। কারণ তাদের হাত থেকেই ইংরেজরা ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল।

কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই মুসলিম নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারলেন যে, এ স্বাধীনতা দ্বারা ইংরেজের অধীনতা থেকে মুক্তি পেলেও মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের অধীন হয়েই থাকতে হবে। গোটা ভারত তখন ৪০ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ১০ কোটি মুসলমান ছিল। তাই গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হলেও সংখ্যালুঘু মুসলমানরা চিরদিনই অমুসলিমদের অধীন হয়েই থাকতে বাধ্য হতো।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে বৃটিশ সরকার যখন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা কায়েম করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে স্বায়ত্ব শাসনের নামে আংশিক ক্ষমতা তুলে দেবার ব্যবস্থা করল, তখন মুসলমারা পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা আদায় করে কিছুটা আত্মরক্ষার বন্দোবস্ত করল। মুসলিম জনগণের প্রতিনিধি যাতে শুধু মুসলিমদের ভোটেনিবর্বাচিত হতে পারে, সে ব্যবস্থার নামই পৃথক নির্বাচন। যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্তায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মিলিত ভোটে নির্বাচন হলে কংগ্রেসের অমুসলিম নেতাদের মরযী অনুযায়ী কিছু সংখ্যক মুসলিম আইনসভায় নির্বাচিত হলেও জাতি হিসাবে মুসলিমদের কোন পৃথক সত্তা থাকবে না আশংকা করেই মুসলমনার পৃথক নির্বাচন দাবি করেছিল।

১৯৩৫ সালের ঐ আইন অনুযায়ী ১৯৩৬ সালে যে নির্বাচন হয়, তাতে ভারতের ৭টি প্রদেশে কংগ্রেসের শাসন কায়েম হয়। পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ছিল ৭টি প্রদেশে কংগ্রেসের শাসন কায়েম হয়। পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু ছিল বলে অবিভক্ত বাংলাসহ ৪টি প্রদেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি থাকায় আনুপাতিক হারে এ চারটি আইনসভায় মুসলিশ সদস্য সংখ্যা অমুসলিমদের চেয়ে বেশি হয়।

মি. জিন্নহ মুসলিম জাতির নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মুসলমানরা তাঁকে কায়েদে আযম (শ্রেষ্ঠ নেতা) হিসাবে বরণ করে নেয়। তাঁরই নেতৃত্বে এবং মুসলিম লীগের উদ্যোগে ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে লাহোরে ঐতিহাসিক মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেরে বাংলা ফজলুল হকই ঐ সম্মেলনে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগুরু প্রদেশগুলো নিয়ে ভারত থেকে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন, যা সর্বসম্মতভাবেই গৃহীত হয। ঐ প্রস্তাবটিই ইতিহাসে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে বিখ্যাত হয়ে আছে।

১৯৪৫ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা ও ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক আইন সভাসমূহের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে, তাতে মুসলিম লীগ ঐ পাকিস্তান প্রস্তাবকেই নির্বাচনী ইস্যু বানায়। সারা ভারত মুসলিমগণ একটি পৃথক জাতিসত্তার মর্যাদা সহকারে ঐ নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় লাভ করে। পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি না থাকলে এ বিজয় কিছুতেই সম্ভবপর হতো না। এ বিজয়ের ফলে বাধ্য হয়ে ইংরেজ সরকার পাকিস্তান দাবী মেনে নেয় এবং ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারত ও মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম হয়।

অধ্যায় ০৩ : পাকিস্তান আন্দোলন ও ইসলাম

পাকিস্তান আন্দোলন ও ইসলাম

পাকিস্তানের অর্থ কী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এ শ্লোগানই মুসলমানদের এ আন্দোলনে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। এমন কি ভারতের যে ৭টি প্রদেশে ভারতের অন্তর্ভূক্ত থাকবে বলে জানাই ছিল, সেখানেও মুসলমানরা ইসলামের আকর্ষণে পাকিস্তানের দাবীকে নিরংকুশভাবে সমর্থন করেছে। এর পরিণামে লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলমান শহীদ হয়েছে এবং জন্মভূমি ও সহায়-সম্পদ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। ভারতে বসবাসকারী মুসলমানরা তাদের ঐ অন্যায়ের কঠোর শাস্তি এখনও ভোগ করে চলেছে।

কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে, পাকিস্তান আন্দোলন ইসলামের নামে চলা সত্ত্বেও তা ইসলামী আন্দোলন হিসাবে গড়ে ওঠেনি। পাকিস্তান কায়েম হবার পর স্বাধীন মুসলিম দেশটিতে ইসলামী আইন, ইসলামী শিক্ষা, ইসলামী অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা চালু করার কোন পরিকল্পনাই আন্দোলনের নেতারা করেননি। এর ফল যা হবার তাই হয়েছে। যারা ইসলামকে জানেন না বা যারা নিজের জীবনেই ইসলাম মেনে চলেন না, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে কী করে ইসলাম কায়েম করবেন? ইসলামের ব্যাপারে এ ধোকাবাজি করার ফলে নেতারা অল্প দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা হারালেন। সেনাপতি আইয়ুব খান সে সুযোগে ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা দখল করলেন।

আইয়ুব খানের যুগ

আইয়ুব খান জাঁদরেল শাসক ছিলেন। মুসলিম লীগের নামেই তিনি রাজত্ব করেছেন। অথচ তিনি তাঁর শাসনকালে মৌলিক গণতন্ত্রের নামে একনায়কত্বই চালিয়ে গেছেন। গণতান্ত্রকামী সব দলের সাথে মিলে জামায়াতে ইসলামী আইয়ুব আমলের দশ বছর একনায়কত্বের বিরুদ্ধে আগা-গোড়াই সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাস থেকে জামায়াতের এ বলিষ্ঠ ভূমিকা মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই।

আইয়ুব খান জামায়াতে ইসলামীর উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষেপা ছিলেন। কারণ জামায়াত গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার সাথে সাথে আইয়ুব খাঁর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতো। তাই ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলাকালে ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে একমাত্র জামায়াতে ইসলামীকেই বেআইণী ঘোষণা করা হয় এবং ৬০ জন জামায়াত নেতাকে জেলে আটক করা হয়। ৯ মাস পর সুপ্রীম কোর্ট রায় দেয় যে, জামায়াতকে বে-আইনী ঘোষণা করাটাই বে-আইনী হয়েছে।

সরকারি অবহেলার ফলে ইসলামী চেতনা ও মুসলিম জাতীয়তাবোধ তো আইয়ুব আমলের পূর্ব থেকেই লোপ পাচ্ছিল। আইয়ুব আমলে ভাষা ও এলাকা ভিত্তিক জাতীয়তা শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে এলো। পশ্চিমাঞ্চলে পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের ভাষার পার্থক্য সত্ত্বেও ভৌগলিক দিক দিয়ে এক সাথে থাকায় এবং ভারতের সাথে কয়েক দফা যুদ্ধ হওয়ায় সেখানে মুসলিম ঐক্যবোধ কোন রকমে বেঁচে রইল। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। ভৌগলিক দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কিসের ভিত্তিতে এখানকার মানুষ পশ্চিমের সাথে একত্মতা বোধ করবে? ইসলামই একমাত্র সেতুবন্ধন হতে পারতো। কিন্তু সরকারি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে কোন স্থানই দেয়া হলো না। যে মুসলিম জাতীয়তা চেতনা গোটা উপমহাদেশের মুসলিমদেরকে ১৯৪৬ সালে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, সে চেতনা বাঁচিয়ে রাখারও কোন প্রচেষ্টা দেখা গেল না। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কায়েম হবার মাত্র ১০/১৫ বছর পর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একথা জানারও সুযোগ রইল না যে, ভারতবর্ষ দুভাগ কেন হলো? পশ্চিম বাংলা ও পূর্ব বাংলার মাতৃভাষা এক হওয়া সত্ত্বেও বাংলা কেন দুভাগ হলো? বাংলাভাসী অমুসলিমের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে কেন বেশি আপন মনে করতে হবে? ফলে ঈমানভিত্তিক জাতীয়তাবোধ বিনষ্ট হয়ে এলাকা ও ভাষাভিত্তিক ঐক্যবোধ জন্ম নিল এবং বাংলাভাষী অঞ্চলে স্বাতন্ত্র্যবোধের বিকাশ অবধারিত হয়ে উঠল।

রাজনৈতিক ময়দানে যে আদর্শিক শূন্যতা সৃষ্টি হলো সেখানে সমাজতন্ত্রে এগিয়ে আসার সুযোগ পেল। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে যাতে ইসলামের কোন প্রভাব না পড়ে, সেজন্য ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ময়দান দখল করতে এগিয়ে এলো। এভাবে এলাকা ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্র রাজনৈতিক অংগনে মুসলিম জাতীয়তার স্থান দখল করতে লাগল।

মুসলিম জাতীয়তা পরিত্যাগের রাজনৈতিক পরিণাম

মুসলিম জাতীয়তাবোধ চল্লিশের দশকে অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষী দশ কোটি মুসলমানকে এক বলিষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছিল। এরই সুফল হিসাবে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ঐ জাতীয়তাবোধকে লালন না করার ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধ এসে পূরণ করল।

যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ মুসলিম জাতীয়তার চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকেই রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে গ্রহণ করলেন, তারা স্বাভাবিক কারণেই নিখিল পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতি করার অযোগ্য হয়ে পড়লেন। কারণ, পাঠান জাতীয়তার পতাকাবাহী নেতা বাংলাভাষীদের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সিন্ধী জাতীয়তাবাদী নেতা পাঠানদের নেতা বলে গণ্য হওয়া সম্ভব নয়।

তেমনি বাংগালী জাতীয়তাবাদ পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্তে রাজনৈতিক আদর্শ বলে গণ্য হওয়া অসম্ভব।

সুতরাং স্বাভাবিক রাজনৈতিক বিবর্তনেই আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ হয়ে যাবার পর তাদের রাজনীতি পাকিস্তানভিত্তিক না হয়ে শুধু পূর্ব পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। গোটা পাকিস্তানকে একটি রাষ্ট্র হিসাবে চিন্তা করার পরিবর্তে তাদের সকল পরিকল্পনা শুধু বর্তমান বাংলাদেশ এলাকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠল।

কিন্তু যারা রাজনীতি করেন, তারা অবশ্যই ক্ষমতায় যেতে চান। ক্ষমতাসীন না হয়ে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিই বাস্তবায়ন করা যায় না। সুতরাং যারা শুধু পূর্ব পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতি করার সদ্ধিান্ত নিলেন, তাদের ক্ষমতায় যেতে হলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া আর কোন পথ ছিল না।

ওদিকে মি. ভুট্টোও ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে একই দেশে দু;মেজরিটি দলের অদ্ভুত দাবি তুললেন। দেশ ভাগ না হলে ভুট্টোরও ক্ষমতাসীন হবার কোন উপায় ছিল না। ভুট্টো ক্ষমতায় যাবার জন্য জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে যে ষড়যন্ত্র করলেন, তাতে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়া ত্বরান্বিত হয়ে গেল।

বাংলাদেশে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, সিন্ধু, ও পাঞ্জাবে মি. ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টি এবং বাকী দুটো প্রদেশে অন্য দুটো দলের নিরংকুশ বিজয় একথা প্রমাণ করল যে, পাকিস্তানের ঐক্যের ভিত্তিতে আর বেঁচে নেই। যে ভিত্তিতে নির্বাচনের ফলে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, সে ভিত্তি না থাকায় নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের ভিত্তি ভেংগে গেল।

নির্বাচনের পর

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভায় আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হওয়ায় শেখ মুজিবকে ইয়াহইয়া খান পাকিস্তানের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী বলে মন্তব্য করা সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকলেন। ওদিকে ভুট্টো এধার হাম, ওধার তুম বলে এক দেশ দুটো মেজরিটি পার্টির অদ্ভুত শ্লোগান তুললেন। বুঝা গেল যে, ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের বাদশাহ হতে চান। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান আলাদা না হলে সে সুযোগ তার হয় না। তাই ইয়াহইয়া খানের সাথে যোগসাজাশ করে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে বাধা সৃষ্টি করতে লাগলেন।

সে সময় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বারবার জোর দাবি জানানো হলো যে, ব্যালটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংখ্যাগুরু দলের হাতে ক্ষমতা হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হোক। কারণ, জামায়াত আশাংকা করেছিলো যে, ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব হলে রাজনৈতিক সংকটের সাথে সাথে দেশে চরম বিশৃংখলা দেখা দেবে। সে সময়কার দৈনিক পত্রিকাগুলো জামায়াতের এ দাবির ঐতিহাসিক সাক্ষী।

নির্বাচনের পর ১৯৭১ এর জানুয়ারিতে লাহোরে মাওলানা মওদূদীর সভাপতিত্বে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যদি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যেতে থাকে, তাহলে জামায়াত এর বিরোধিতা করবে না। এ বিষয়ে এখানকার প্রাদেশিক জামায়াতকে যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার জন্য পূর্ণ ইখতিয়ার দেয়া হলো। এরপর এ সম্পর্কে যাবতীয় সিদ্ধান্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক জামায়াতই নিতে থাকে।

এরপর যা ঘটল

১লা মার্চ ঢাকায় কেন্দ্রীয় আইনসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ অধিবেশনে ভুট্টো আসতে অস্বীকার করলেন। ভুট্টোর মরযী মত ইয়াহইয়া খান এ অধিবেশন মুলতবী ঘোষণা করলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় শেখ মুজিব কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলেন। প্রাদেশিক সরকার সম্পূর্ণ অচল হয়ে গের। বাধ্য হয়ে ইয়াহইয়া খান শেখ মুজিবের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় পৌঁছার কথা ঘোষণা করলেন। ১৯ থেকে ২৩শে মার্চ আলোচনা চলে। শেষ পর্যন্ত কোন মীমাংসা না হওয়ায় আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়।

২৫ শে মার্চ দিবাগত রাতে টিক্কা খানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ঢাকা শহরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং ব্যাপক হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে চরম সন্ত্রাস সৃষ্টি করে অসহযোগ আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করল। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হলো। কয়েক রাতের সামরিক অপারেশনে ঢাকা মহানগরী স্তব্ধ হয়ে গেল এবং রাজধানী তাদের পুনর্দখলে এলো।

ঢাকার বাইরে সব জেলায়ই এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ জেলা ও মাহকুমা শহরে অসহযোগ আন্দোলন জারি রাখলেন। ঢাকার বাইরে সেনাবাহিনী এবং পুলিশেও বিদ্রোহ দেখা দিলো। যেসব শহরে অবাংগালী (বহিার নামে) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিল, সেখানে বিহারীদেরকে হত্যা করে ঢাকার প্রতিশোধ নেয়া হলো।

এর প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী ঐ সব এলাকায় বাংগালী হত্যা করল এবং সরকারিী ক্ষমতা বহাল করল। এভাবে দুদিকের আক্রমণে নিরপরাধ সাধারণ মানুষ নিহত ও অত্যাচারিত হতে থাকল। এক মাসের মধ্যে মোটামুটি দেশে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো বটে, কিন্তু দেশটিকে নিশ্চিতভাবে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়া হলো।

স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলন

আওয়াশী লীগ নেতৃবৃন্দ ভারতে আশ্রয় নিলেন। অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দলের অধিকাংশ নেতাও তাই করলেন। পাক সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে ও অন্যান্য স্থানে হিন্দু বস্তির উপর আক্রমণ করায় তারাও দলে দলে ভারতে পাড়ি জমালেন। পাক সেনাবাহিনীর ভ্রান্তনীতির ফলে দেশের গোটা হিন্দু সম্প্রদায় পাকিস্তান বিরোধী হয়ে গেল। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও অধিকাংশ সমাজতন্ত্রী দল পাকিস্তান থেকে হওয়ার জন্য সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো।

মেহেরপুর জেলার মফস্বলে (যে স্থানের বর্তমান নাম মুজিব নগর) আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কায়েম করার পর স্বাধীনতা আন্দোলন যে রূপ পরিগ্রহ করল, তা কোন বিদেশী সরকারের সাহায্য ছাড়া চলা সম্ভ ছিল না। তাই কোলকাতা থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত হয়।

অধ্যায় ০৪ : ভারত বিরোধীদের পেরেশানী

ভারতের ভূমিকা

পাকিস্তানের চির দুশমন ভারতের সম্প্রসারণবাদী কংগ্রেস সরকার এ মহাসুযোগ গ্রহণ করল। প্রবাসী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে কোলকাতায় প্রতিষ্ঠিত করা হলো। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের গেরিলা ট্রেনিং দেয়া, তাদেরকে অস্ত্র ও গ্রেনেড দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠাবার ব্যবস্থা করা, রেডিও যোগে প্রবাসী সরকারের বক্তব্য বাংলাদেশের ভেতরে প্রচার করা ইত্যাদি সবই ভারত সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ ও সহযোগিতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বয়ং বহু দেশ সফর করে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন যোগানোর চেষ্টা করেন। নি:সন্দেহে এ সবই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু ভারত সরকার তার স্বার্থেই এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে সবাই স্বীকার করতে বাধ্য।

ভারত বিরোধীদের পেরেশানী

পাকিস্তান আন্দোলনের সময় থেকে যারা ভারতীয় কংগ্রেসের আচরণ লক্ষ্য করে এসেছে, পাকিস্তান কায়েম হবার পর ভারতের নেহেরু সরকার হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর নিয়ে যে হিংস্র খেলা দেখিয়েছেন, মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমিকে পংগু করার জন্য যত রকম প্রচেষ্টা ভারতের পক্ষ থেকে হয়েছে, পূর্ব বাংলার সীমান্ত নিয়ে ভারত বার বার যে ধোঁকাবাজি করেছে, সর্বোপরি ফারাক্কা বাঁদ দিয়ে গংগার পানি আটকে রেখে উত্তরবংগকে মরুভূমি বানাবার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে এদেশের কোন সচেতন মুসলিমের পক্ষে ভারত সরকার এদেশের বন্দু মনে করা কিছুতেই সম্ভব ছিল না।

যেসব রাজনৈতিক দল ও নেতা ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাবের দরুন আতংকগ্রস্ত ছিল, তারা মহা-সংকটে পড়ে গেল। তারা সংগত কারণেই আশাংকা করল যে, বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সাহায্য করে বারত একদিকে মুসলমাদের উপর ভারত মাতাকে বিভক্ত করার প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে, কোলকাতার একাকালের অর্থনৈতিক পশ্চাদভূমি বাংলাদেশ অঞ্চলকে পুনরায় হাতের মুঠোয় আনার মহাসুযোগ গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় ভারতের নেতৃত্বে ও সাহায্য বাংলাদেশ কায়েম হলে ভারতের আধিপত্য থেকে আত্মরক্ষার কোন উপায় হয়তো থাকবে না। বাংলাদেশের চারদিকে ভারতের যে অবস্থান তাতে এ আশাংকাই স্বাভাবিক ছিল।

বিশেষ করে ভারতের সংখ্যালুঘু মুসলিমদের উপর যে হিংস্র আচরণ অব্যাহতভাবে চলছিল, তাতে প্রত্যেক সচেতন মুসলিমদের অন্তরেই পেরেশানী সৃষ্টি হলো। ভারেতর সম্প্রসারণবাদী মনোভাব সম্পর্কে ওয়াকিফহাল কারো পক্ষে আতংকগ্রস্ত না হয়ে উপায় ছিল না।

অধ্যায় ০৫ : স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি

স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি

স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্ব যারা ছিলেন, তারা সবাই পাকিস্তান আন্দোলনে বিশিষ্ট অবদান রেখেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজুদ্দীনের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আন্দোলন পরিচালিত হয়। ছাত্র জীবনে আমি তাদের সমসমায়িক ছিলাম।

পাকিস্তান আন্দোলনে তাদের ভূমিকা কত বলিষ্ঠ ছি আমি এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুসলিম জাতীয়তা পতাকাবাহী হিসাবেই তারা ভারতীয় কংগ্রেসের ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। গান্ধী ও নেহেরুর নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভিত্তিতে অখন্ড ভারতে আকটিমাত্র রাষ্ট্র কায়েমের কংগ্রেসী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পাকিস্তান কায়েমের আন্দোলনে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

তাঁরা ছিলেন তখন তরুণ ছাত্রনেতা। তাঁরা মুসলিম লীগ নেতা শহীদ সোহরায়ওয়ার্দীর ভক্ত ও অনুরুক্ত হিসাবে পাকিস্তান আন্দোলনে সাক্রিয় ছিলেন। গোটা বংগদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এবং কংগ্রেসের দাবি মেনে নিয়ে বৃটিশ শাসকরা পশ্চিম বংগকে পূর্ববংগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতে শামিল করার ফলে পূর্ববংগে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কায়েম হতে পারেনি।

অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম লীগে দুটো গ্রুপ ছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জনাব আবুল হাশেম এবং অপর গ্রুপের নেতা ছিলেন মাওলানা আকরাম খাঁ, খাজা নাজিমুদ্দীন ও জনাব নুরুল আমীন। বংগদেশ বিভক্ত না হলে হয়ত সোহরাওয়ার্দীই পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন। পশ্চিম বংগ আলাদা হবার ফলে পূর্ববংগে খাজা নাজিমুদ্দীন গ্রুপের হাতেই ক্ষমতা আসে। শেখ মুজিব ও জনাব তাজুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের অন্তুর্ভুক্ত ছিলেন বলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন নাজিমুদ্দীন গ্রুপের প্রতি বিরূপ ছিলেন।

সোহরাওয়ার্দী সাহেব কোলকাতায়ই রয়ে গেলেন বলে তারা নেতৃত্বহীন অবস্থায় পড়ে গেলেন। আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এসে এ গ্রুপের নেতৃত্বের অভাব পূরণ করেন এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে মুসলিম লীগের বিকল্প দল গঠন করেন। এভাবে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দ্বারাই সরকার বিরোধী দল গঠিত হয়।

সরকারের ভ্রান্তনীতি

পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবাহনী সরকারি ও বিরোধী দলে বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লীগ সরকার যদি ইসলামী আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার পরিচয় দিতেন, মুসলিম জাতীয়তাকে শুধু শ্লোগান হিসাবে ব্যবহার না করতেন, গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলতেন এবং অর্থনৈতিক ময়দানে ইনসাফের পরিচয় দিতেন, তাহলে জাতিকে যে ধরনের সংকটের মুকাবিলা করতে হয়েছে তা সৃষ্টি হত না। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার সকল ক্ষেত্রেই ভ্রান্তনীতি অবলম্বন করে দেশকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেন।

রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে

পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশ পূর্ববংগের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করতে অস্বীকার করা এবং বাংলাভাষীদের উপর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেবার ভ্রান্তনীতিই সর্বপ্রথম বিভেদের বীজ বপন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষীরা বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষার দাবি তুলেনি। তারা উর্দু ও বাংলা উভয় ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেবার দাবি জানিয়েছিল।

এ দাবি জানাবার আগেই জনসংখ্যার বিচারে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা করা সমরকারের কত্যব্য ছিল। অথচ দাবি জানাবার পর এটাকে ‘প্রাদেশিকতা’ বলে গালি দিয়ে সরকার সংগত কারণেই বাংলাভাষীদের আস্থা হারালেন। ভাষার দাবীটিকে সরকার এমন রাষ্ট্রবিরোধী মনে করলেন যে, গুলি করে ভাষা আন্দোলনকে দাবিয়ে দিতে চাইলেন এ ভ্রান্ত সিদ্ধান্তই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার জন্ম দেয়।

গণতন্ত্রের প্রশ্নে

গণতান্ত্রিক পন্থায় পাকিস্তান কায়েম হওয়া সত্ত্বেও সরকার অগণতান্ত্রিক পদ্ধটিতে টিকে থাকার ষড়যন্ত্র করলেন। শাসনতন্ত্র রচনায় গড়িমসি করে নির্বাচন বিলম্বিত করতে থাকলেন। ১৯৫৪ সালে পুর্বাঞ্চলে প্রাদেশিক নির্বাচনে সরকারি মুসলিম লীগ দলের ভরাডুবির পর কেন্দ্রে ষড়যন্ত্র আরও গভীর হয়। পরিণামে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারী হয়।

আইয়ুব খান গণতন্ত্র হত্যা করার এক অভিনব উপায় আবিষ্কার করলেন। মৌলিক গণতন্ত্রের নামে জনগণকে সরকার গঠনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত থাকায় এবং আসল ক্ষমতা আইয়ুব খানের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকায় পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে, আইয়ুব বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার হয় এবং এর পরিণামে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। আইয়ুব খানের দশ বছরের শাসনকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব দ্রুত বেড়ে যায়।

অর্থনৈতিক ময়দানে

শাসন ক্ষমতায় জনগণের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এবং ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার দরুন শিল্প ও বাণিজ্য নীতি প্রণয়নে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সুবিচার হওয়া স্বাভাবিক ছিল না। মন্ত্রিসভায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে গণপ্রতিনিধি গ্রহণ করার পরিবর্তে সুবিধাবাদীদেরকেই গ্রহণ করা হতো। এর ফলে অর্থনৈতিক ময়দানে পুর্ব পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে তারা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে অক্ষম হতেন। এভাবে গণতান্ত্রিক সরকারের অভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অর্থনৈতিক দিক থেকেও আস্থা হারাতে থাকে।

ভুট্টো-ইয়াহইয়া ষড়যন্ত্র

উপর্যুক্ত কারণসমূহ স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করলেও ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি এবং অবশেষে দমনমূলক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণই এ আন্দোলনের জন্ম দেয়। নির্বাচনের পর জামায়অতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমি বার বার সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার দাবী জানিয়েছি। জেনারেল ইয়াহইয়া ভুট্টোর দাবী মেনে নিয়ে ১লা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ড অধিবেশন মুলতবী করায় চরম রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়।

১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় ইয়াহইয়া-মুজিব সংলাপে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমার মহল্লায় তাঁর এক আত্মীয়েরে বাড়িতে অবস্থান করতেন। ছাত্রজীবনের বন্ধু হিসাবে তাঁর সাথে যে ঘনিষ্ঠতা ছিল এর সুযোগে তার কাছ থেকে সংলাপের যেটুকু রিপোর্ট পেতাম, তাতে আমার এ ধারণাই হয়েছে যে, সংলাপ ব্যর্থ হবার জন্য ভুট্টোই প্রধানত দায়ী এবং ইয়াহইয়া খান দ্বিতীয় নম্বর দোষী।

নির্বাচনের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে আওয়ামী লীগের হাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব অর্পিত হতো। সে অবস্থায় পরিস্থিতির চিত্র ভিন্নরূপ হতো। আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকায় রাজনৈতিক সমস্যা অবশ্যই দেখা দিত। কিন্তু ৭১-এ যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হলো তা থেকে অবশ্যই রক্ষা পাওয়া যেত। শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের মাধ্যমেই হয়ত এক সময় দেশ বিভক্ত হবার প্রয়োজন হয়ে পড়ত। ঐ অবস্থায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তার প্রয়োজন হতো না।

 

Page 1 of 2
12Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South