ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
মুহাম্মদ আব্দুর রহীম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
পূর্বকথা
শ্রমিক-মালিক মানব সমাজের এক সুপ্রাচীন সমস্যা। যুগ যুগ ধরিয়া এই সমস্যাটি মানব সমাজকে নানাভাবে আলোড়িত করিয়াছে, অনাকাক্ষিতভাবে মেহনতী মানুষের রক্ত ঝরাইয়াছে। এমনকি, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) নামে একটি বিশ্বসংস্থা পর্যন্ত গঠন করা হইয়াছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও শ্রমিক-মালিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত হইয়াছে, একথা কোনক্রমেই দাবি করা চলে না। বরং এখনও দেশে দেশে শ্রমিক-মালিক সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা রূপে বিরাজ করিতেছে, শ্রমজীবি মানুষের রক্তে অহরহ রাজপথ রঞ্জিত হইতেছে। বলাবাহুল্য যে, বাংলাদেশেও কম-বেশি একই পরিস্থিতি বিরাজ করিতেছে।
মূলত শ্রমিক-মালিক সমস্যাটিকে অধূনা বিবেচনা করা হইতেছে নেহায়েত একটি শ্রেণীগত সমস্যা হিসাবে। এখানে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হইতেছে না। ফলে শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষই বিষয়টিকে বিবেচনা করিতেছে নেহায়েত শ্রেণীস্বার্থের দৃষ্টিতে। কিন্তু আল্লাহর মনোনীত জীবন-বিধান ইসলাম সমগ্র বিষয়টিকে বিবেচনা করিয়াছে মানবিক ও ন্যায়নুগ দৃষ্টিতে। শ্রমিক ও মালিক কোন পক্ষকেই সে বড় কিংবা ছোট করিয়া দেখে নাই; বরং উভয় পক্ষের স্বার্থকেই সে রক্ষা করিয়াছে পরিপূর্ণ ন্যায়পরতার দৃষ্টিতে। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম ও দার্শনিক মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) এই বিষয়টিকেই অত্যন্ত চমৎকার রূপে তুলিয়া ধরিয়াছেন ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার নামক বর্তমান পুস্তিকায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই পুস্তিকাটি রচিত হইয়াছে দীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে। তৎকালীন দুনিয়ার সামাজিক রাজনৈতিক ও অথনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে। তারপর দুনিয়ার উপর দিয়া অনেক পানি গড়াইয়া গিয়াছে; কমিউনিস্ট বিশ্বের মানচিত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। উপমহাদেশে পাকিস্তান ভাঙিয়া বাংলাদেশ হইয়াছে। ইহার ফলে দুনিয়ার শ্রমিক আন্দোলনেও কিছু কিছু পরিবর্তনের ছাপ পড়িয়াছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও বর্তমান শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন সূচিত হয় নাই। এই কারণেই বর্তমান পুস্তিকার সংশ্লিষ্ট অংশে আমরা কোন মৌলিক পরিবর্তন সাধনের প্রয়োজন বোধ করি নাই।
পুস্তিকার নিবন্ধসমূহ প্রথম প্রকাশিত হইয়াছিল পঞ্চাশের দশকের প্রথম ভাগে তৎকালীন দৈনিক আজাদসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এবং প্রায় একই সময়ে তাহা পুস্তকাকারেও আত্মপ্রকাশ করে। বিগত বৎসরগুলিতে ইহার অনেকগুলি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং পাঠক সমাজেও তাহা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পুস্তকটির বর্তমান সংস্করণও পাঠকদের নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত হইবে বলিয়া আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
মহান আল্লাহ পুস্তকটির লেখককে যথোচিত প্রতিফল দান করুন, ইহাই আমাদের বিনীত প্রার্থনা
মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
চেয়ারম্যান
মওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন
ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি, ২০০৩