জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

সংগঠন পদ্ধতি

অন্তর্গতঃ ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন, রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
Share on FacebookShare on Twitter

সংগঠন পদ্ধতি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


বইটির অডিও শুনুন

http://shibircloud.com/audio/lq/songgothon_poddhoti.mp3

লো কোয়ালিটি ডাউনলোড

হাই কোয়ালিটি ডাউনলোড


সংগঠন পদ্ধতি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

প্রকাশনা বিভাগ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
৫০৫ এলিফ্যান্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।

প্রকাশক
আবু তাহের মুহাম্মদ মা’ছুম
চেয়ারম্যান, প্রকাশনা বিভাগ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
প্রথম প্রকাশ: নভেম্বর ১৯৮৩

সূচীপত্র

  1. প্রকাশকের কথা
  2. ভূমিকা
  3. প্রথম দফা কর্মসূচি: দাওয়াত ও তাবলিগ
  4. দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি: সংগঠন ও প্রশিক্ষণ
  5. তৃতীয় দফা কর্মসূচি: সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা
  6. চতুর্থ দফা কর্মসূচি: রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন
  7. পরিশিষ্ট- ১
  8. পরিশিষ্ট-২
  9. পরিশিষ্ট-৩

প্রকাশকের কথা

ইসলামী আন্দোলনের বাহন হচ্ছে সংগঠন। সংগঠন বা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো আন্দোলনই সফলকাম হতে পারে না। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সংগঠনের মাধ্যমে একদল সৎ ও যোগ্য লোক তৈরি করেছেন, তেমনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নীতি অনুসরণে এ দেশের মানুষ থেকেই এক দল সৎ, যোগ্য ও দেশ প্রেমিক লোক তৈরি করতে চায়। এ কাজকে সুন্দর, সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সম্পাদন করার জন্য জামায়াতে ইসলামী যুগোপযোগী বিজ্ঞানসম্মত ০৪ (চার) দফা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সংগঠন পদ্ধতি বইটি মূলত জামায়াতের ৪ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত বিষয় সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সমষ্টি। নৈতিক ও গঠনতান্ত্রিক নীতিমালা ঠিক রেখে পরিবেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এসব পদ্ধতি ও কৌশলে পরিবর্তন আসতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ, জানুয়ারি ২০২১ মুদ্রণে কিছু বিষয় পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। আশা করি সংগঠন পরিচালনায় দায়িত্বশীলগণ বইটি থেকে উপকৃত হবেন।

সূচিপত্র

জামায়াতে ইসলামীর
*স্থায়ী কর্মনীতি
*দাওয়াত
*স্থায়ী কর্মসূচি

প্রথম দফা কর্মসূচি: দাওয়াত ও তাবলিগ
দাওয়াতের মাধ্যমে চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পুনর্গঠনের কাজ
১. ব্যক্তিগত যোগাযোগ
২. গ্রুপ ভিত্তিক যোগাযোগ
৩. ইসলামী সাহিত্য বিতরণ
৪. বই বিলি কেন্দ্ৰ স্থাপন
৫. পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
৬. বই বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন ও ব্যক্তিগতভাবে বই বিক্রয়
৭. পরিচিতি, বুকলেট, লিফলেট, স্টিকার বিলি ও পোস্টারিং
৮. মাসিক সাধারণ সভা
৯. দাওয়াতি জনসভা ও ইসলামী মাহফিল
১০. দাওয়াতি ইউনিট গঠন
১১. আলোচনা সভা, সুধী সমাবেশ
১২. সিরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল
১৩. আল-কুরআনের দারস ও তাফসির মাহফিল
১৪. ইসলামী দিবস পালন
১৫. মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতি কাজ ও মসজিদ সংগঠিতকরণ ১৬. পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দাওয়াত সম্প্রসারণ
১৭. দাওয়াতি সপ্তাহ/পক্ষ পালন ও দাওয়াতি/গণসংযোগ অভিযান ১৭
১৮. জুমআ’ বক্তৃতা ও ঈদগাহে আলোচনা
১৯. দাওয়াতি চিঠি, ফোন আলাপ ও ইন্টারনেট ব্যবহার
২০. দাওয়াতি বই উপহার প্রদান
২১. ইফতার মাহফিল
২২. সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম
২৩. চা-চক্র ও বনভোজন
২৪. হামদ, না’ত, কিরাআত ইত্যাদি চর্চা
২৫. দাওয়াতি ক্যাসেট তৈরি ও প্রচার
২৬. দাওয়াহ সেন্টার ভিত্তিক দাওয়াত
২৭. সাংস্কৃতিক টিমের মাধ্যমে দাওয়াত
২৮. তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াত

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি: সংগঠন ও প্রশিক্ষণ

ক. সংগঠন
জামায়াতের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য
জামায়াতের স্তর বিন্যাসের দু’টি দিক
ক) সাংগঠনিক জনশক্তির স্তরবিন্যাস
১। সহযোগী সদস্য
২। কর্মী
৩। সদস্য (রুকন)

খ) সাংগঠনিক কাঠামোর স্তরবিন্যাস
১. কেন্দ্ৰ

১) আমীরে জামায়াত
২) কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) সম্মেলন
৩) জাতীয় কাউন্সিল
৪) কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা
৫) কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ
৬) কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। ৭) অঞ্চল সংগঠন
৮) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি
৯) জেলা/মহানগরী আমীর সম্মেলন

২. জেলা/মহানগরী

১) জেলা/মহানগরী আমীর
২) জেলা/মহানগরী মজলিসে শূরা
৩) জেলা/মহানগরী কর্মপরিষদ
8) (ক) জেলা/মহানগরী সদস্য (রুকন) সম্মেলন
(খ) মাসিক সদস্য (রুকন) বৈঠক
৫) জেলা/মহানগরী বৈঠক
৬) জেলা/মহানগরী পর্যায়ে বিভাগ বণ্টন

৩. উপজেলা/থানা

১) উপজেলা/থানা আমীর বা সভাপতি
২) উপজেলা/থানা মজলিসে শূরা
৩) উপজেলা/থানা কর্মপরিষদ
৪) উপজেলা/থানা সদস্য (রুকন) বৈঠক
৫) উপজেলা/থানা বৈঠক
৬) সংগঠিত উপজেলা/থানা

৪. পৌরসভা/ইউনিয়ন

১) পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আমীর বা সভাপতি
২) পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড সদস্য (রুকন) বৈঠক
৩) পৌরসভা/ইউনিয়ন বৈঠক
৪) সংগঠিত ইউনিয়ন

৫. ওয়ার্ড

৬. ইউনিট
১) দাওয়াতি ইউনিট
২) ইউনিট
ইউনিটের কাজ
ইউনিট প্রোগ্রাম
i) কর্মী বৈঠক
ii) সাধারণ সভা বা দাওয়াতি সভা
iii) প্রশিক্ষণ (তারবিয়াতি) বৈঠক
iv) গ্রুপ দাওয়াত
৩) পারিবারিক ইউনিট
*মহিলা বিভাগ

দ্বিতীয় দফার অন্যান্য সাংগঠনিক কাজ
১। টার্গেট ভিত্তিক যোগাযোগ
ক) দাওয়াতি টার্গেট
খ) কর্মী টার্গেট
গ) সদস্য (রুকন) টার্গেট

২। কর্মী যোগাযোগ
৩। সফর
৪। পরিকল্পনা
৫। সাংগঠনিক পক্ষ/সপ্তাহ পালন
৬। নেতৃত্ব নির্বাচন
৭। বাইতুলমাল
ক) কর্মীদের আর্থিক কুরবানি
খ) শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে
গ) যাকাত ও উশর

৮। রেকর্ডিং
রেজিস্টার
ফাইল
৯। রিপোর্ট সংরক্ষণ
১০। অফিস

খ. প্রশিক্ষণ
ক) তারবিয়াত (নৈতিক শিক্ষা ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ)
১। পাঠ্যসূচি ভিত্তিক ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন
২। প্রশিক্ষণ বৈঠক
৩। সামষ্টিক পাঠ
৪। পাঠচক্র
৫। কুরআন স্টাডি সার্কেল
৬। আলোচনা চক্ৰ
৭। শিক্ষা বৈঠক
৮। শিক্ষা শিবির
৯। গণশিক্ষা বৈঠক
১০। গণনৈশ ইবাদত
১১। ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ
১২। মুহাসাবা
১৩। বক্তৃতা অনুশীলন
১৪। দুআ’, জিকির ও নফল ইবাদত
১৫। সামষ্টিক খাওয়া
১৬। আত্ম-সমালোচনা
খ) মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা

তৃতীয় দফা কর্মসূচি: সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা

সমাজ সংশোধন ও সংস্কার
১। প্রচলিত কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্কীকরণ
২। ইসলামী আচার অনুষ্ঠান চালুকরণ
৩। পেশাভিত্তিক দাওয়াতি কাজ
৪। গণশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন
৫। মসজিদ সংস্কার
৬। হাট-বাজার সংস্কার
৭। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
৮। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ
৯। ক্লাব, সমিতি, শরীর চর্চা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা
১০। সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা

অপসংস্কৃতি রোধ ও ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ
*অপসংস্কৃতি রোধ
*ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ
*দুঃস্থ মানবতার সেবার লক্ষ্যে সমাজ সেবা
১। দাতব্য চিকিৎসালয়
২। রোগীর পরিচর্যা
৩। পরিচ্ছন্নতা অভিযান
৪। রাস্তাঘাট মেরামত
৫। অফিস আদালতে কাজে সহযোগিতা
৬। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আকস্মিক দুর্ঘটনায় জনগণের পাশে দাঁড়ানো
৭। বৃক্ষ রোপণ
৮। দুর্দশাগ্রস্ত বিত্তহীন, ইয়াতীম ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা
৯। গরিব ছাত্রদের সহযোগিতা দান
১০। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান
১১। কর্জে হাসানা
১২। বন্দি মুক্তি
১৩। ভ্রাম্যমাণ দাতব্য চিকিৎসালয়
১৪। সালিশ
১৫। বিয়ে-শাদি
১৬। পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা প্রেরণ
১৭। মাইয়েতের কাফন-দাফন ও জানাজায় অংশগ্রহণ
১৮। প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের সহযোগিতা
১৯। সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সৃষ্টি

চতুর্থ দফা কর্মসূচি: রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন
১। সমাজ বিশ্লেষণ
২। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
৩। বিবৃতি প্রদান
৪। স্মারকলিপি পেশ
৫। দাওয়াতি জনসভা
৬। পথসভা, গণজমায়েত, মিছিল, জনসভা ও বিক্ষোভ
৭। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ
৮। রাজনৈতিক যোগাযো
৯। সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ ও সাংবাদিক সম্মেলন
১০। বার লাইব্রেরিতে যোগাযোগ
১১। ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ
১২। পত্র-পত্রিকা প্রকাশ
১৩। জনমত গঠন
১৪। নির্বাচন
১৫। রাজনৈতিক বিভাগ সৃষ্টি
১৬। যাকাত আদায়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি
১৭। সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক জুলুমের প্রতিবাদ ও সমাধান পেশ
১৮। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কাজ

পরিশিষ্ট-১
সদস্যের (রুকনদের) মান ও জরুরি জ্ঞাতব্য
পরিশিষ্ট-২
কর্মী গঠন ও কর্মীদের মানোন্নয়ন
পরিশিষ্ট-৩
সম্মেলন ও বৈঠকাদি পরিচালনা
পরিশিষ্ট-৪
বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও আলোচ্য বিষয়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ভূমিকা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের বুকে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েমের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানব জাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তি ও সমাজকে ইসলামের আলোকে গড়ে তোলা ও পরিচালনা করা জামায়াতের আশু লক্ষ্য। এটাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র পথ। জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ মহান লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন একটি মজবুত সংগঠন। আর মজবুত সংগঠন গড়ে তোলার জন্য সংগঠনের জনশক্তিকে সংগঠন পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও জ্ঞান দেয়া প্রয়োজন। সে প্রয়োজনকে সামনে রেখেই সংগঠন পদ্ধতি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ গ্রন্থটি রচিত।
সংগঠন পদ্ধতির ২টি দিক গুরুত্বপূর্ণ:
১। কর্মনীতি বা কৰ্ম কৌশল
২। কর্মসূচি বা আন্দোলনের বহুমুখী কাজের Index বা তালিকা।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি, দাওয়াত ও কর্মসূচি গঠনতন্ত্রে নিম্নরূপ বর্ণিত হয়েছে:

(ক) জামায়াতে ইসলামীর স্থায়ী কর্মনীতি

১। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোনো কর্মপন্থা গ্রহণের সময় জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁহার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিবে।
২। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন কোনো উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবে না যাহা সততা ও বিশ্বাসপরায়ণতার পরিপন্থী কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফ্যাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টি হয়।
৩। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উহার বাঞ্ছিত সংশোধন ও সংস্কার কার্যকর করিবার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করিবে। অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মানবিক, নৈতিক চরিত্রের সংশোধন এবং বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করিবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুকূলে জনমত গঠন করিবে।
জামায়াতের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে উল্লিখিত কর্মনীতি অনুসরণ করে চলার গুরুত্ব অপরিসীম।

(খ) জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত

ইসলাম মানব জাতির প্রতি চির সাফল্যের যে মহান দাওয়াত নিয়ে এসেছে, নবী-রাসূলগণ যে দাওয়াত মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন সে শাশ্বত দাওয়াত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে নিম্নরূপ বর্ণিত হয়েছে।
১। সাধারণভাবে সকল মানুষ ও বিশেষভাবে মুসলিমদের প্রতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার দাসত্ব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করিবার আহ্বান।
২। ইসলাম গ্রহণকারী ও ঈমানের দাবিদার সকল মানুষের প্রতি বাস্তব জীবনে কথা ও কাজের গরমিল পরিহার করিয়া খাঁটি ও পূর্ণ মুসলিম হওয়ার আহ্বান।
৩। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহ্বান।

(গ) জামায়াতের স্থায়ী কর্মসূচি:

রাসূল (সা.) যে কর্মসূচির মাধ্যমে একটি সফল সমাজ বিপ্লব সাধন করে তদানীন্তন বিশ্বে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন, সে বিপ্লবী কর্মসূচিকেই জামায়াতে ইসলামী তার কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছে যা গঠনতন্ত্রে নিম্নরূপ বর্ণিত হয়েছে:

১। দাওয়াত ও তাবলিগ: বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নিকট ইসলামের প্রকৃত রূপ বিশ্লেষণ করিয়া চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুভূতি জাগ্রত করা।
২। সংগঠন ও প্রশিক্ষণ: ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করিবার সংগ্রামে আগ্রহী সৎ ব্যক্তিদিগকে সংগঠিত করা এবং তাহাদিগকে ইসলাম কায়েম করিবার যোগ্যতাসম্পন্ন হিসাবে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দান করা।
৩। সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা: ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক সংশোধন, নৈতিক পুনর্গঠন ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন এবং দুঃস্থ মানবতার সেবা করা।
৪। রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন: নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে আল্লাহভীরু, চরিত্রবান, সৎ ও যোগ্য লোকের নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।

প্রথম দফা কর্মসূচি: দাওয়াত ও তাবলিগ

দাওয়াতের মাধ্যমে চিন্তার পরিশুদ্ধি ও পুনর্গঠনের কাজ
গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের প্রথম দফা কর্মসূচি হলো:
বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নিকট ইসলামের প্রকৃতরূপ বিশ্লেষণ করিয়া চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুভূতি জাগ্রত করা।

প্রথম দফার তিনটি দিক:
১। সকল নাগরিকের নিকট ইসলামের সঠিক ধারণা তুলে ধরা।
২। ব্যক্তি ও সমাজের ভেতর ইসলাম বিরোধী ধ্যান-ধারণার অবসান।
৩। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান।

এ দফার কাজগুলো নিম্নরূপ:
১। ব্যক্তিগত যোগাযোগ (টার্গেটভিত্তিক ও সাধারণ)
২। গ্রুপভিত্তিক যোগাযোগ
৩। ইসলামী সাহিত্য বিতরণ
৪। বই বিলিকেন্দ্র স্থাপন
৫। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
৬। বই বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও ব্যক্তিগতভাবে বই বিক্রয়
৭। পরিচিতি, বুকলেট, লিফলেট, স্টিকার বিলি ও পোস্টারিং
৮। মাসিক সাধারণ সভা
৯। দাওয়াতি জনসভা ও ইসলামী মাহফিল
১০। দাওয়াতি ইউনিট গঠন
১১। আলোচনা সভা ও সুধী সমাবেশ
১২। সিরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল
১৩। আল কুরআনের দারস ও তাফসির মাহফিল
১৪। ইসলামী দিবস পালন
১৫। মসজিদভিত্তিক দাওয়াতি কাজ ও মসজিদ সংগঠিতকরণ
১৬। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দাওয়াত সম্প্রসারণ
১৭। দাওয়াতি সপ্তাহ/পক্ষ পালন ও দাওয়াতি অভিযান/গণসংযোগ অভিযান
১৮। জুমআ’ বক্তৃতা ও ঈদগাহে আলোচনা
১৯। দাওয়াতি চিঠি/ফোন আলাপ ও ইন্টারনেট ব্যবহার
২০। দাওয়াতি বই উপহার প্রদান
২১। ইফতার মাহফিল
২২। সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম
২৩। চা-চক্র ও বনভোজন
২৪। হামদ-না’ত, কিরাআত ইত্যাদি চৰ্চা
২৫। দাওয়াতি ক্যাসেট তৈরি ও প্রচার
২৬। দাওয়াহ সেন্টারভিত্তিক দাওয়াত
২৭। সাংস্কৃতিক টিমের মাধ্যমে দাওয়াত
২৮। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াত

নিম্নে উপরি-উক্ত প্রত্যেকটি কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো:
১। ব্যক্তিগত যোগাযোগ
ক) টার্গেট ভিত্তিক দাওয়াত:
ব্যক্তিগতভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজন লোককে দ্বীন ইসলাম বুঝানো সহজ। কাছে বসে আলাপ করলে সহজেই একজন লোককে জানা বা বুঝা যায়। তার মন-মানসিকতা বুঝে কথা বলা যায়। শ্রোতাও তাতে ধীর-স্থিরভাবে তার কথাবার্তা মন দিয়ে শোনার সুযোগ পায়। ফলে ভাবের আদান-প্রদান সহজ হয়। একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ কারণেই এ দফা বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত যোগাযোগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যেক কর্মীর ব্যক্তিগত যোগাযোগের মানসিকতা থাকতে হবে। পরিকল্পনা ও নিষ্ঠার সাথে প্রচেষ্টাও চালু থাকতে হবে। এভাবেই দৈনন্দিন কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও দ্বীন ইসলামের দাওয়াত মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। টার্গেট নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ লোকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। (কর্মী রিপোর্ট বইতে টার্গেটভিত্তিক ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া আছে)।

খ) সাধারণ দাওয়াত: টার্গেটকৃত লোকজন ছাড়া সময় সুযোগ বুঝে ব্যক্তিগতভাবে যে কোন লোককেই দাওয়াত দেয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ মহান আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান জানানো মুমিনের ওপর আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব। তিনি যেখানেই যাবেন সেখানেই ব্যাপকভাবে এ কাজ করবেন।

২। গ্রুপভিত্তিক যোগাযোগ:
এটাও দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার একটা সুন্দর ব্যবস্থা। দাওয়াতি কাজকে ব্যাপক করার জন্য একাধিক কর্মীর সমন্বয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করতে হবে। এ গ্রুপের একজন পরিচালক থাকবেন। তারা একটা এলাকা বেছে নেবেন। নির্দিষ্ট দিন তারিখ ঠিক করে কোনো একটা জায়গায় মিলিত হবেন। তারপর উক্ত এলাকায় প্রতিটি ঘরে দাওয়াত পৌঁছে দেবেন।

৩। ইসলামী সাহিত্য বিতরণ:
কথায় সব কাজ হয় না। তা ছাড়া এক ব্যক্তির পক্ষে সব সময় সব কথা বলাও সম্ভব নয়। এ কারণে দাওয়াত সম্প্রসারণের জন্য ইসলামী সাহিত্যের সহযোগিতা নিতে হবে।

৪। বই বিলিকেন্দ্র স্থাপন:
প্রতিটি ইউনিটে দাওয়াতি বই সংবলিত একটি বই বিলিকেন্দ্র থাকা দরকার। কর্মীদের নিজেদেরও একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকা দরকার।

৫। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা:
সর্বসাধারণের পড়ার জন্য এলাকার উৎসাহী লোকদের নিয়ে ইসলামী পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

৬। বই বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও ব্যক্তিগতভাবে বই বিক্রয়:
ইসলামী বই কেনার জন্য লোকদের উদ্বুদ্ধ করাও আমাদের দাওয়াতি কাজের একটা অংশ। এজন্য জায়গায় জায়গায় বই বিক্রয় কেন্দ্ৰ স্থাপন করাটা আমাদেরই কাজ।

৭। পরিচিতি, বুকলেট, লিফলেট, স্টিকার বিলি ও পোস্টারিং:
পরিচিতি বিতরণের কাজ নিয়মিত হওয়া দরকার। ব্যক্তিগত যোগাযোগ, গ্রুপভিত্তিক দাওয়াত, মাসিক সাধারণ সভা ইত্যাদি সময়ে জামায়াত পরিচিতি বিতরণ ফলপ্রসূ হয়। এছাড়া যখন যেখানে সুযোগ পাওয়া যাবে সেখানেই পরিচিতি বিতরণ করা উচিত। এ জন্য প্রত্যেক কর্মী সব সময় তাঁর সাথে জামায়াত পরিচিতি রাখবেন এবং বিতরণের রেকর্ড সংরক্ষণ করবেন। বুকলেট, লিফলেট, স্টিকার ইত্যাদি সাধারণত প্রয়োজনের মুহূর্তে বিতরণ করতে হয়। লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি হাতে পৌঁছার পর সংগঠনের দেয়া নির্ধারিত সময়ের ভেতরেই বিতরণ করতে হবে। যেন একটি লিফলেটও অপব্যবহার না হয় বা পড়ে না থাকে। এছাড়া প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করা যেতে পারে।

৮। মাসিক সাধারণ সভা:
পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ এবং ইউনিটের উদ্যোগে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে মাসিক সাধারণ সভা করতে হবে। সকল কর্মী তাঁদের টার্গেটকৃত লোকদের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দেবেন। এলাকার সকল সহযোগী সদস্যকে উক্ত বৈঠকে হাজির করার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করবেন। গ্রুপভিত্তিক দাওয়াতি কাজের সময়ও সাধারণ সভার দাওয়াত দেয়া যেতে পারে। মাসিক সাধারণ সভায় ইসলামী আদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবেন। সাধারণ সভার জন্য ভালো জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, যেন সবাই নিঃসংকোচে উপস্থিত থাকতে পারেন।
মাসিক সাধারণ সভায় উপস্থিত লোকদের সাথে পরবর্তী সময়ে পরিকল্পিত উপায়ে সাক্ষাৎ করা দরকার। তাদেরকে কর্মী হিসেবে গঠনের উদ্দেশ্যে এবং আন্দোলনে সক্রিয় করে তোলার জন্য এ সাক্ষাৎ চেষ্টা চালাতে হবে।
মাসিক সাধারণ সভায় দারসে কুরআন বা দারসে হাদিস এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য কোনো মেহমান হলে ভাল হয়। আগে থেকে চেষ্টা করলে এ ধরনের মেহমান পাওয়া যেতে পারে।

৯। দাওয়াতি জনসভা ও ইসলামী মাহফিল
ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, জামায়াতের দাওয়াত, দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে দাওয়াতি জনসভা ও ইসলামী মাহফিল করা যেতে পারে। ইসলামের পক্ষে জনমত সৃষ্টিই হবে এ ধরনের মাহফিলের লক্ষ্য।

১০। দাওয়াতি ইউনিট গঠন:
জামায়াতে ইসলামী ইসলামী সমাজ কায়েমের দাওয়াতকে গ্রামে-গঞ্জে, মহল্লা ও বস্তিতে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে দাওয়াতি ইউনিট গঠন করে থাকে। এরূপ দাওয়াতি ইউনিটের সহযোগী সদস্যগণকে নিয়ে মাঝে মধ্যে দাওয়াতি বৈঠক বা দারসে কুরআনের প্রোগ্রাম করা যায়।

১১। আলোচনা সভা ও সুধী সমাবেশ:
দাওয়াতের বিশেষ মাধ্যম হলো আলোচনা সভা ও সুধী সমাবেশ। স্থানীয় সংগঠন নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে এক বা একাধিক বক্তাকে নিয়ে পূর্বঘোষণা মোতাবেক এ ধরনের প্রোগ্রাম করতে পারে।

১২। সিরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী আলোচনা সিরাতুন্নবী মাহফিল নামে পরিচিত। প্রধানত রবিউল আউয়াল মাসে সিরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এ মাস ছাড়াও নবী জীবনের বিভিন্ন দিক আলোচনার জন্য সারা বছরই সময়-সুযোগ মত সিরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিল হতে পারে।

১৩। আল-কুরআনের দারস ও তাফসির মাহফিল:
আল-কুরআনের দারস ও তাফসিরের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত প্ৰদান দাওয়াতের একটি উত্তম মাধ্যম।

১৪। ইসলামী দিবস পালন:
মুসলিম সমাজে প্রচলিত ইসলামী দিবসসমূহে আলোচনা সভা ও মাহফিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে দাওয়াতি কাজ করা যায়।

১৫। মসজিদভিত্তিক দাওয়াতি কাজ ও মসজিদ সংগঠিতকরণ:
সম্ভব হলে মসজিদের নিকটবর্তী এলাকার লোকদের জন্য মাসিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠান ও মসজিদের নিকট ইসলামী বই প্রদর্শন ও বিক্রয় কেন্দ্ৰ স্থাপন, মসজিদে মুসল্লিদের নিয়ে দিনের যে কোন ওয়াক্তে নামাজ বাদ তাফহীমুল কুরআন অথবা সংকলিত হাদিস গ্রন্থ থেকে অংশ বিশেষ পাঠ করে শুনানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাছাড়া মসজিদ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কেন্দ্রিক শিশু ও বয়স্কদের জন্য সহিহ কুরআন শিক্ষার কর্মসূচি হাতে নেয়া।

১৬। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দাওয়াত সম্প্রসারণ:
আদর্শ প্রচারের জন্য পত্র-পত্রিকা এক গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম। তাই আদর্শের পতাকাবাহী দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্র-পত্রিকাগুলোর বহুল প্রচার দাওয়াত সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবে। কাজেই এগুলোর ব্যাপক প্রসারের জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৭। দাওয়াতি সপ্তাহ/পক্ষ পালন ও দাওয়াতি অভিযান/ গণসংযোগ অভিযান:
পরিকল্পনা মোতাবেক বছরে এক বা একাধিকবার দাওয়াতি সপ্তাহ/পক্ষ দাওয়াতি অভিযান বা গণসংযোগ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

১৮। জুমআ’ বক্তৃতা ও ঈদগাহে আলোচনা:
জুমআ’র খুতবার পূর্বে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আলোচনা পেশ করা যেতে পারে। ঈদের দিন ঈদগাহেও আলোচনা রাখার চেষ্টা করা উচিত।

১৯। দাওয়াতি চিঠি, ফোন আলাপ ও ইন্টারনেট ব্যবহার:
চিঠি, ফোন আলাপ ও ইন্টারনেট ব্যবহারকে দাওয়াত প্রদানের একটা ভাল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দাওয়াতের এ পদ্ধতি খুবই ফলপ্রসূ। নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব যাদেরকে দেশে ও প্রবাসে ব্যস্ত থাকার কারণে সরাসরি দাওয়াত প্রদান সম্ভব হয় না, তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের পথে ডাকার এ জাতীয় মাধ্যম কার্যকর পন্থা।

২০। দাওয়াতি বই উপহার প্রদান:
আমাদের দেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে-শাদি ইত্যাদিতে উপহার প্রদানের রেওয়াজ চালু রয়েছে এবং অনেকেই এ ধরনের উপহারগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করে থাকেন। এ সকল অনুষ্ঠানে গতানুগতিক উপহার সামগ্রী প্রদানের পরিবর্তে পবিত্র কুরআনের তাফসির, হাদিস সংকলন বিভিন্ন দাওয়াতি বই বা মানসম্পন্ন ইসলামী সাহিত্য প্রদান করা যেতে পারে।

২১। ইফতার মাহফিল:
আত্মশুদ্ধির মাস রমযান মাসে জামায়াত কর্মী ও দায়িত্বশীলগণ ব্যক্তিগতভাবে বা সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার লোকজনকে নিয়ে ইফতার মাহফিলের ব্যবস্থা করতে পারেন।

২২। সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম:
জামায়াতের দাওয়াতকে বিশিষ্ট লোকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করা যেতে পারে।

২৩। চা-চক্র ও বনভোজন:
সব মানুষকে একইভাবে আন্দোলনে আকৃষ্ট করা যায় না। বিভিন্ন রুচি ও প্রকৃতির মানুষ নিয়ে আমাদের কাজ। এর জন্য প্রয়োজন বৈচিত্র্যের। তাই মাঝে মধ্যে চা-চক্র, সামষ্টিক খাওয়া ও বনভোজন এর আয়োজন করা যেতে পারে।

২৪। হামদ, না’ত, কিরাআত ইত্যাদি চৰ্চা:
অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভেসে যাওয়া বর্তমান সমাজ জীবনে হামদ, না’ত ও কিরাআত চর্চা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লোকদের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য, ঈমানের দাবি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মহব্বত, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ইত্যাদির অনুভূতি জাগিয়ে দেয়া সম্ভব।

২৫। দাওয়াতি ক্যাসেট তৈরি ও প্রচার:
বর্তমান কালে রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট, ওয়েবসাইট, ই-মেইল ও ফিল্ম তৈরি ও প্রদর্শনী ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। এসবের মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত, হামদ, না’ত, ইসলামী গান ও দাওয়াতি বক্তৃতা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শিক্ষা ও জীবনী দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত জনগণের মধ্যে সহজে প্রচার করা যেতে পারে।

২৬। দাওয়াহ সেন্টারভিত্তিক দাওয়াত:
মসজিদের পাশাপাশি অন্য যে কোন স্থান/প্রতিষ্ঠান/ক্লাবকে দাওয়াহ সেন্টাররূপে গড়ে তোলা যেতে পারে। এ ধরনের দাওয়াহ সেন্টার স্থায়ী ও অস্থায়ী অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। দাওয়াহ সেন্টারগুলোতে প্রশিক্ষিত দা’ঈ নিয়োগ করে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক আলোচনা এবং বিশেষ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। এছাড়া সময়োপযোগী দাওয়াতি উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি কম্পিউটার স্থাপন করে দাওয়াহ সেন্টারগুলো থেকে তথ্যসেবা প্রদান করা যেতে পারে।

২৭। সাংস্কৃতিক টিমের মাধ্যমে দাওয়াত:
শিশু, কিশোরসহ সকল বয়সের মানুষ বিনোদন পছন্দ করে থাকে। আর তাইতো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলোতে প্রচুর লোক সমাগম হয়। সাংস্কৃতিক টিম গঠন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ঐ সকল লোকদের মাঝে দাওয়াত প্রদান করা যেতে পারে।

২৮। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দাওয়াত:
জেলা/মহানগরীসমূহের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ওয়েবসাইট, ভিডিও চ্যানেলসমূহ পরিচালনার জন্য আইটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি অনলাইন দাওয়াতি টিম গঠন করে শরিয়তের বিধি-বিধান অনুসরণ করে পরিকল্পিতভাবে অনলাইন দাওয়াতি কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে দাওয়াতি শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি তৈরি করে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার এবং ইসলাম ও জামায়াতের বিরুদ্ধে অনলাইন অপপ্রচার মোকাবেলায় ভূমিকা পালনসহ ভার্চুয়াল জগতের আসক্ততার অপকারিতা তুলে ধরা।

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি: সংগঠন ও প্রশিক্ষণ

গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি হলো:
ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করিবার সংগ্রামে আগ্রহী সৎ ব্যক্তিদিগকে সংগঠিত করা এবং তাহাদিগকে ইসলাম কায়েম করিবার যোগ্যতাসম্পন্ন হিসাবে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দান করা। দ্বিতীয় দফার প্রধানত দুটি দিক রয়েছে:
ক. সংগঠন
খ. প্ৰশিক্ষণ

ক. সংগঠন
জামায়াতের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, দাওয়াত ও কর্মসূচির সাথে যারা মনে-প্রাণে একমত হন তারাই জামায়াতে শামিল হতে পারেন। জামায়াতে শামিল কোনো ব্যক্তিকে প্রথমেই সদস্য করা হয় না। সহযোগী সদস্য হিসেবে শামিল হওয়ার পর কাজের মাধ্যমে সদস্যের মানে উন্নীত করা হয়। তাই সহযোগী সদস্য হওয়ার পর কর্মী মান অতিক্রম করে সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতে হয়।

জামায়াতের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য
জামায়াত ভারসাম্যপূর্ণ, বিজ্ঞানসম্মত, মানুষের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল, গতিশীল, বাস্তবধর্মী এবং দায়িত্বশীল একটি সংগঠন। নিম্নে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করলেই তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে:
১। জামায়াতের সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত হয়।
২। অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নত রাখার জন্য পারস্পরিক সংশোধনের সম্মানজনক পদক্ষেপ নেয়া হয়।
৩। সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষার নিরিখে গ্রহণ করা হয়।

জামায়াতের স্তর বিন্যাসের দু’টি দিক:
ক) সাংগঠনিক জনশক্তির স্তর বিন্যাস
খ) সাংগঠনিক কাঠামোর স্তর বিন্যাস

ক) সাংগঠনিক জনশক্তির স্তর বিন্যাস: জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে জনশক্তিকে সদস্য (রুকন) ও সহযোগী সদস্য ০২ (দুই) ভাগে ভাগ করা থাকলেও কার্যত জনশক্তি তিন ভাগে বিভক্ত। সহযোগী সদস্য, কর্মী ও সদস্য (রুকন)। নিম্নে তার পরিচয় দেয়া হলো:
১। সহযোগী সদস্য: জামায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে একমত হয়ে তিন দফা দাওয়াত মানসিকভাবে গ্রহণ করলে এবং চার দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে যে কোনো ব্যক্তি জামায়াতের সহযোগী সদস্য হতে পারেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির সাথে একমত পোষণ করলে বাংলাদেশের যে কোনো ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিক এ সংগঠনের সহযোগী সদস্য/ সদস্যা হতে পারবেন।

২। কর্মী: জামায়াতের সহযোগী সদস্যদের মধ্য থেকে যারা নিয়মিতভাবে বৈঠকে যোগদান করেন, ইয়ানত দেন, রিপোর্ট রাখেন ও বৈঠকে পেশ করেন এবং দাওয়াতি কাজ করেন ও সামাজিক কাজ করেন তাঁদেরকে জামায়াতের কর্মী বলা হয়।
অবশ্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন, ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা, জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলা, স্বতঃস্ফূর্তভাবে জামায়াতের কাজ করা, লেন-দেন ও ব্যবহারে নিষ্ঠা ও সততার পরিচয় দেয়া, তীব্ৰ দায়িত্বানুভূতি থাকা ইত্যাদিও কর্মীর গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত।

৩। সদস্য (রুকন): জামায়াতের গঠনতন্ত্রে বর্ণিত শর্তাবলি ও নিয়ম মেনে যে কোনো কর্মী জামায়াতের সদস্য (রুকন) হতে পারেন। জামায়াতের মূল জনশক্তি হচ্ছে সদস্য (রুকন)। সদস্যদের (রুকনদের) দ্বারা নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, কাজের অগ্রগতির তদারকও হয় এঁদের দ্বারাই। মোটকথা জামায়াতকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়া সদস্যগণেরই দায়িত্ব। সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে একজন লোক জামায়াতের সীমানায় আসে মাত্র। চিন্তায় ও চেতনায় জামায়াতের লক্ষ্যকেই নিজ জীবনের লক্ষ্য মনে করা, কর্মনীতি ও কর্মসূচি মুতাবিক সমস্ত কাজ করা, সঠিকভাবে জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও নীতিমালা মেনে চলা, আচার-ব্যবহার লেন-দেনে সতর্ক মুসলিমের পরিচয় দেয়া ইত্যাদি গুণাবলি একজন কর্মীর ভেতর বাস্তবভাবে দেখা না গেলে তাকে সদস্য (রুকন) করা হয় না।
আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান-মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। এছাড়া কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী একজন মুমিনের সালাত, সর্ব প্রকার ইবাদত অনুষ্ঠান, কাজ-কর্ম, জীবন-মৃত্যু সবকিছু একমাত্র বিশ্ব জগতের প্রভু আল্লাহরই জন্য। অর্থাৎ আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনে জান্নাত পেতে হলে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করে দেয়া জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ মোতাবেক মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করার পথ একটাই- তা হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত কোনো জামায়াতে একাত্ম হয়ে জীবন পরিচালনা করা। জামায়াত দ্বীন প্রতিষ্ঠার এ ধরনেরই একটি দল। জামায়াতের সদস্যগণের (রুকনগণের) দায়িত্ব সর্বাধিক, কারণ তাঁরাই আন্দোলন ও সংগঠনের মূলশক্তি। তাঁদের ভূমিকার উপরই লক্ষ লক্ষ সহযোগী সদস্য ও কর্মীর আরো মজবুতির সাথে আল্লাহর দ্বীনের পথে অগ্রসর হওয়া নির্ভর করে। তাঁদেরকে আখিরাতে মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে হবে।

খ) সাংগঠনিক কাঠামোর স্তরবিন্যাস:

জামায়াতের সাংগঠনিক স্তর নিম্নরূপ-
১. কেন্দ্ৰ
২. জেলা/মহানগরী
৩. উপজেলা/থানা
৪. পৌরসভা
৫. ইউনিয়ন
৬. ওয়ার্ড
৭. ইউনিট

১. কেন্দ্ৰ

১) আমীরে জামায়াত: সদস্যগণের (রুকনগণের) সরাসরি গোপন ভোটে আমীরে জামায়াত তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। জামায়াতের নেতৃত্ব তাঁরই হাতে। অধঃস্তন সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
২) কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) সম্মেলন: কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) সম্মেলন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি ফোরাম। আমীরে জামায়াত কিংবা কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিকাংশ সদস্য যখন প্রয়োজন মনে করবেন সদস্য (রুকন) সম্মেলন আহ্বান করতে পারবেন।
৩) জাতীয় কাউন্সিল: জাতীয় কাউন্সিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি ফোরাম। আমীরে জামায়াত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সকল সদস্য (পুরুষ-মহিলা), জেলা/মহানগরী আমীর, জেলা/মহানগরী মজলিসে শূরার সকল সদস্যগণের (পুরুষ-মহিলা) সমন্বয়ে জাতীয় কাউন্সিল গঠিত হয়। কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাথে আমীরে জামায়াতের মতানৈক্য হলে উক্ত বিষয় মীমাংসা করা জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।
৪) কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা: আমীরে জামায়াতকে তাঁর দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করার জন্য সদস্যগণের (রুকনগণের) ভোটে তিন বছরের জন্য কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা নির্বাচিত হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা জামায়াতের নীতি-নির্ধারণী পরিষদ।
কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের কাজের উন্নতিকল্পে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরা নির্বাচিত হয়। মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণ পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য হবেন।
৫) কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ: কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমীরে জামায়াতকে সহযোগিতা করার জন্য কেন্দ্ৰীয় কর্মপরিষদ দায়িত্ব পালন করে থাকে। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্যগণ কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগীয় কর্মপরিষদ সদস্যগণ কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য হবেন। বিভাগীয় সেক্রেটারিগণ আমীরে জামায়াত কর্তৃক অর্পিত নিজ নিজ বিভাগের কাজ পরিচালনা করবেন এবং আমীরে জামায়াতকে তা পূর্ণ ওয়াকিফহাল রাখবেন।
৬) কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ: কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্যগণের ভোটে অনধিক একুশ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী পরিষদ নির্বাচিত হয়।
৭) অঞ্চল সংগঠন: আমীরে জামায়াত সাংগঠনিক অঞ্চল সমূহে অঞ্চল পরিচালক ও টিম সদস্য নিযুক্ত করেন। সদস্যপদ (রুকনিয়াত) মঞ্জুরি, রিপোর্ট পর্যালোচনা, সফর ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন, সাংগঠনিক সমস্যা সমাধান, অঞ্চলের আয়-ব্যয় ও হিসাব সংরক্ষণসহ জেলা/মহানগরী সমূহের কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অঞ্চল সংগঠনের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সংগঠনকে আরো গতিশীল ও শাখা সমূহকে আত্মনির্ভরশীল করাই হবে অঞ্চল সংগঠনের প্রধান কাজ। তাছাড়া মহিলা বিভাগীয় অঞ্চলের কাজের খোজ-খবরও তদারকি অঞ্চল সংগঠনকেই করতে হবে। কমপক্ষে প্রতি ০২ (দুই) মাস অন্তর অন্তর অঞ্চল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অঞ্চল বৈঠকে জেলা/মহানগরী আমীরগণ বা তাদের প্রতিনিধি এবং অঞ্চল টিম সদস্যগণ উপস্থিত থাকবেন। প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামসহ প্রয়োজনীয় এজেন্ডা কাভার করে বৈঠক সম্পন্ন করতে হবে।
৮) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি: গঠনতন্ত্রের ৩২ ধারা মোতাবেক নিযুক্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারিগণ আমীরে জামায়াত কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
৯) জেলা/মহানগরী আমীর সম্মেলন: সাধারণত প্রতি বছর আমীরে জামায়াত পরিকল্পনার আলোকে জেলা/মহানগরী আমীর সম্মেলন ডেকে থাকেন।

২. জেলা/মহানগরী

১) জেলা/মহানগরী আমীর: আমীরে জামায়াতের পক্ষ থেকে জেলা/মহানগরী আমীর জেলা/মহানগরীর প্রতিনিধিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট জেলা/মহানগরী সদস্যদের (রুকনদের) প্রত্যক্ষ ভোটে ০২ (দুই) বছরের জন্য জেলা/মহানগরী আমীর নির্বাচিত হন।
২) জেলা/মহানগরী মজলিসে শূরা: জেলা/মহানগরী আমীরকে সহযোগিতা করার জন্য গঠনতন্ত্রের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট জেলা/মহানগরীর সদস্যগণের (রুকনগণের) প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা/মহানগরী মজলিসে শূরা নির্বাচিত হয়।
জেলা/মহানগরী মহিলা বিভাগের কাজ তদারক করার জন্য জেলা/মহানগরী মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরা নির্বাচন করা হয়। মহিলা বিভাগীয় মজলিসে শূরার সদস্যগণ পদাধিকার বলে জেলা/মহানগরী মজলিসে শূরার সদস্য হবেন।
৩) জেলা/মহানগরী কর্মপরিষদ: জেলা/মহানগরী আমীরের কাজে সহযোগিতা দানের উদ্দেশ্যে জেলা/মহানগরী কর্মপরিষদ নির্বাচন করা হয়। মহিলা বিভাগীয় কর্মপরিষদ সদস্যগণ পদাধিকার বলে জেলা/মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য হবেন।
৪) (ক) জেলা/মহানগরী সদস্য (রুকন) সম্মেলন: জেলা/মহানগরীর সদস্যগণকে (রুকনগণকে) নিয়ে প্রতি ০৬ (ছয়) মাসে একবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংগঠনিক বিষয়াদি ছাড়াও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম শামিল থাকে।
(খ) মাসিক সদস্য (রুকন) বৈঠক: জেলা/মহানগরীর সদস্যগণকে (রুকনগণকে) প্রতি মাসে কোন না কোন স্তরে একবার মাসিক বৈঠকে বসতে হয়।

৫) জেলা/মহানগরী বৈঠক: জেলা/মহানগরী আমীরের সভাপতিত্বে উপজেলা/থানা আমীর/ সভাপতিগণকে নিয়ে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তাকে জেলা/মহানগরী বৈঠক বলে। এ বৈঠক প্রতিমাসে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়।
৬) জেলা/মহানগরী পর্যায়ে বিভাগ বন্টন: জেলা/মহানগরী আমীর, সেক্রেটারি এবং কর্মপরিষদের সদস্যগণের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ বণ্টন করা হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক দায়িত্বশীল পাওয়া সম্ভব না হলে এক ব্যক্তির ওপর একাধিক দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। কাজের সুবিধার জন্য প্রয়োজনে বিভাগীয় দায়িত্বশীলকে আহ্বায়ক করে বিভাগীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

৩. উপজেলা/থানা:

১) উপজেলা/থানা আমীর বা সভাপতি: উপজেলা/থানার সদস্যগণের (রুকনগণের) ভোটে ০২ (দুই) বছরের জন্য উপজেলা/থানা আমীর নির্বাচিত হন। যদি উপজেলা/থানা আমীর নির্বাচন করার মত প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য (রুকন) না থাকেন তাহলে জেলা/মহানগরী আমীর জেলা/মহানগরী মজলিসে শূরার পরামর্শের ভিত্তিতে উপজেলা/থানায় সভাপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
২) উপজেলা/থানা মজলিসে শূরা: সেসব উপজেলা/থানায় মজলিসে শূরা গঠন করা যাবে যেখানে সদস্য (রুকন) সংখ্যা কমপক্ষে ১৫ (পনেরো) জন হবে। উপজেলা/থানা মজলিসে শূরা ০২ (দুই) বৎসরের জন্য নির্বাচিত হবে। উপজেলা/থানা আমীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শের জন্য মজলিসে শূরার বৈঠক ডাকবেন।
কোন উপজেলা/থানায় কমপক্ষে ১৫ (পনেরো) জন মহিলা সদস্য (রুকন) থাকলে থানা আমীরকে সহযোগিতা ও পরামর্শদানের জন্য উপজেলা/থানা মহিলা মজলিসে শূরা ০২ (দুই) বছরের জন্য নির্বাচিত হবে। মহিলা মজলিসে শূরার সদস্যগণ পদাধিকার বলে উপজেলা/থানা শূরার সদস্য হবেন।
৩) উপজেলা/থানা কর্মপরিষদ: উপজেলা/থানার বিভিন্ন বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য (রুকন) থাকলে, উপজেলা/থানা কর্মপরিষদ নির্বাচিত হবে। কর্মপরিষদ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য (রুকন) না থাকলে উপজেলা/থানা আমীর/সভাপতিকে সহযোগিতা দানের জন্য একটি উপজেলা/থানা টিম গঠিত হবে।
৪) উপজেলা/থানা সদস্য (রুকন) বৈঠক: সদস্য (রুকন) বৈঠক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ বৈঠক প্রতি মাসেই করতে হবে।
৫) উপজেলা/থানা বৈঠক: উপজেলা/থানার ইউনিয়ন/ওয়ার্ডসমূহের আমীর/সভাপতিগণদের নিয়ে প্রতিমাসে একটি বৈঠক হবে। এ বৈঠককে উপজেলা/থানা বৈঠক বলা হয়। এ বৈঠকে কাজের পর্যালোচনা ও আগামী মাসের কাজের পরিকল্পনা প্রণীত হবে।
৬) সংগঠিত উপজেলা/ থানা: পৌরসভাসহ কমপক্ষে অর্ধেক সংখ্যক ইউনিয়ন/ওয়ার্ড সংগঠিত হলে উপজেলা/থানা সংগঠিত বলে গণ্য হবে।

৪. পৌরসভা/ইউনিয়ন:

গঠনতন্ত্রে ইউনিয়ন ও পৌরসভা সমপর্যায়ের দেখানো হলেও কার্যত পৌরসভার গুরুত্ব অনেক বেশি। জেলা/মহানগরী সদরে ও গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভায় এমারত প্রতিষ্ঠা হলেও প্রয়োজন বোধে জেলা/মহানগরী শূরার সিদ্ধান্তানুসারে উক্ত পৌরসভাকে সদর উপজেলা/ থানা থেকে আলাদা সাংগঠনিক থানায় মর্যাদা দেয়া যাবে, তবে কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠানোর সময় আলাদা উপজেলা/থানা দেখানো যাবে না। সাংগঠনিক থানার মর্যাদা প্রাপ্ত পৌরসভা গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত উপজেলা/থানার বিধি অনুসরণে কাজ করবে।
সংগঠিত পৌরসভা: কমপক্ষে অর্ধেক সংখ্যক ওয়ার্ড সংগঠিত হলে পৌরসভা সংগঠিত বলে গণ্য হবে।

পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড: প্রশাসনিকভাবে পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এখানে কাজ মজবুত হলেই সাংগঠনিক কাজ মানে পৌঁছেছে বলে ধরা যায়। পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে নিম্নরূপ কাজ থাকবে:

১) পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আমীর বা সভাপতি: কোনো পৌরসভা/ ইউনিয়নে/ওয়ার্ডে অন্তত ০৫ (পাঁচ) বা ততোধিক সদস্য (রুকন) থাকলে তাঁদের ভোটে পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আমীর নির্বাচিত হবেন। অন্যথায় উপজেলা/থানা আমীর জেলা আমীরের সাথে পরামর্শ করে একজন সভাপতি নিয়োগ করবেন এবং কাজের সুবিধার্থে টিম গঠন করবেন।
পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আমীর বা সভাপতি পৌরসভা/ ইউনিয়নে/ওয়ার্ডে জামায়াতের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। কোনো পৌরসভা/ইউনিয়নে/ওয়ার্ডে সদস্য (রুকন) সংখ্যা ১৫ (পনেরো) বা তার অধিক হলে পৌরসভা/ ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে শূরা ও কর্মপরিষদ গঠন করা যাবে।
২) পৌরসভা/ ইউনিয়ন/ ওয়ার্ড সদস্য (রুকন) বৈঠক: পৌরসভা/ ইউনিয়নে/ ওয়ার্ডে জামায়াতের শাখা কায়েম হলে অর্থাৎ পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড আমীর থাকলে পৌরসভা/ ইউনিয়ন/ ওয়ার্ডের সদস্যগণদের (রুকনগণদের) নিয়ে প্রতি মাসে বৈঠক হবে।
৩) পৌরসভা/ইউনিয়ন বৈঠক: পৌরসভা/ ইউনিয়নের অধীন ওয়ার্ডসমূহের আমীর/ সভাপতিগণদের নিয়ে প্রতি মাসে পৌরসভা/ ইউনিয়ন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
৪) সংগঠিত ইউনিয়ন: কমপক্ষে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক ওয়ার্ড সংগঠিত হলে ইউনিয়ন সংগঠিত বলে গণ্য হবে।

৫. ওয়ার্ড:

গঠনতান্ত্রিকভাবে ওয়ার্ড জামায়াতের সর্বশেষ স্তর। প্রশাসনিকভাবে ইউনিয়নসমূহকে ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে ওয়ার্ডভিত্তিক কাজের সম্প্রসারণ সাংগঠনিক মজবুতির জন্য অপরিহার্য। সুতরাং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং বিভিন্ন গ্রামে সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন। পৌরসভা ও ইউনিয়নের ওয়ার্ডে একজন সক্রিয় সভাপতিসহ তিন জনের টিম ও একটি ইউনিট থাকলে তাকে সংগঠিত ওয়ার্ড বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু মহানগরীসমূহে ওয়ার্ডে একজন সক্রিয় সভাপতিসহ তিন জনের টিম ও দু’টি পুরুষ ইউনিট এবং একটি মহিলা ইউনিট থাকলে তাকে সংগঠিত ওয়ার্ড গণ্য করা হবে।

৬. ইউনিট:

১) দাওয়াতি ইউনিট: দাওয়াতি ইউনিট গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইউনিট গঠনের কাজটি এভাবে হতে পারে:
ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল অথবা পার্শ্ববর্তী ইউনিটের কোনো কর্মী যেখানে জামায়াতের কাজ নেই সে এলাকার কোনো শিক্ষিত ব্যক্তিকে টার্গেট নিয়ে, বই পত্র পড়িয়ে কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। উক্ত কর্মীর মাধ্যমে আরো কিছু লোককে বই পত্র পড়িয়ে আন্দোলনে অগ্রসর করে তাদের মধ্য থেকে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি করে একটি প্রাথমিক বা দাওয়াতি ইউনিট গড়ে তোলা যায়। এ ধরনের দাওয়াতি ইউনিটে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি প্রোগ্রাম হতে হবে। ইউনিট গঠনের ব্যাপারে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, একজন সক্রিয় সভাপতি পাওয়া একান্তভাবে জরুরি। আর সক্রিয় সভাপতি হতে হলে তাকে অবশ্যই ভাল মানের কর্মী হতে হবে। সাধারণত বাজার কেন্দ্রিক ইউনিট গঠন সহজ। গ্রাম ও পাড়া ভিত্তিক বা মসজিদ কেন্দ্রিক ইউনিটও গঠন করা যেতে পারে। মাদরাসা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষক বা বাজারে কোনো শিক্ষিত ব্যক্তিকে কর্মী হিসেবে গড়ে তুলে সভাপতি করা যায়।

২) ইউনিট: ইউনিট হলো সংগঠনের কাজের সূচনা পর্ব। ইউনিটের জনশক্তির মাধ্যমেই জামায়াত জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। লোক সংগ্রহ এবং কর্মী গঠনের জন্য ইউনিটই হচ্ছে জামায়াতের মূল সাংগঠনিক স্তর। উপজেলা/থানা বা ইউনিয়ন/ওয়ার্ড সংগঠনের অধীনে ছোট ছোট এলাকাকে কেন্দ্র করে চার বা তার অধিক কৰ্মী নিয়ে ইউনিট গঠিত হয়। ইউনিটে একজন সভাপতি থাকেন।
নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হলে তাকে ইউনিট গণ্য করা হবে:
(ক) কমপক্ষে চারজন কর্মী থাকা ও একজন সক্রিয় সভাপতি কর্তৃক কাজ পরিচালিত হওয়া;
(খ) নিয়মিত বৈঠকাদি হওয়া;
(গ) মাসে কমপক্ষে একবার দাওয়াতি গ্রুপ বের করা;
(ঘ) মাসিক রিপোর্ট ও নিছাব যথারীতি আদায় করা;
(ঙ) সামাজিক কাজ করা।

ইউনিটের কাজ:
উপরে বর্ণিত শর্ত রক্ষা করাও ইউনিটের কাজ। এছাড়াও জামায়াতের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মূল ক্ষেত্র হিসেবে ইউনিট সাধারণত নিম্নোক্ত কাজগুলো করে থাকে-
ক) জামায়াতের বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া;
খ) দাওয়াত, কর্মী গঠন ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান;
গ) জামায়াতের চারদফা কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ বাস্তবায়ন;
ঘ) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশ পালন।

উপরোক্ত কাজগুলো ইউনিটকে যত্নশীলতার সাথে আঞ্জাম দিতে হবে এবং নিয়মিত জনশক্তি বৃদ্ধি ও বছরে কমপক্ষে একটি দাওয়াতি ইউনিট বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। এ ধরনের একটি ইউনিটে দাওয়াতি বইয়ের একটি বিলি কেন্দ্র এবং এক কপি সোনার বাংলা রাখার ব্যবস্থা করা।

ইউনিট প্রোগ্রাম
ইউনিটে প্রতিমাসে কমপক্ষে নিম্নোক্ত ৪টি প্রোগ্রাম করতে হবে:
i) কর্মী বৈঠক। ইউনিট সভাপতি কর্মী বৈঠক পরিচালনা করবেন।
ii) সাধারণ সভা ;
iii) প্রশিক্ষণ (তারবিয়াতি) বৈঠক ;
iv) গ্রুপ দাওয়াত।

i) কর্মী বৈঠক:
কর্মী বৈঠকে সকল কর্মী উপস্থিত থাকবেন। ইউনিটের যাবতীয় কাজকর্ম কর্মী বৈঠকের ফায়সালা অনুযায়ী হবে। কর্মী বৈঠকে চলমান মাসের ইউনিটের কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করে কর্মীদেরকে যথারীতি কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
ii) সাধারণ সভা:
সাধারণ সভা বা দাওয়াতি সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার নুতন লোকসহ ইউনিটের প্রত্যেকের দাওয়াতি টার্গেট, সুধী ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিত রাখার চেষ্টা করতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে ধারণা প্রদান এবং জামায়াতের দাওয়াত ব্যক্তির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌঁছে দেয়াই এ বৈঠকের আসল উদ্দেশ্যে।
iii) প্রশিক্ষণ (তারবিয়াতি) বৈঠক:
এ বৈঠকে ইউনিটের সকল স্তরের জনশক্তি উপস্থিত থাকবে। জনশক্তির আত্মগঠন ও মানোন্নয়নে এ বৈঠকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
iv) গ্রুপ দাওয়াত:
প্রতি ইউনিট থেকে মাসে কমপক্ষে একটি দাওয়াতি গ্রুপ বের করতে হবে। গ্রুপে ইউনিটের প্রত্যেক কর্মী অংশগ্রহণ করবেন। যেসকল এলাকায় এখনো সংগঠন কায়েম করা যায়নি সেসকল এলাকা চিহ্নিত করে নিয়মিত এ ধরনের দাওয়াতি গ্রুপ পরিচালনা করতে হবে। [পরিশিষ্ট ৩ এ ৪টি প্রোগ্রামের কর্মসূচি দেয়া আছে।]

৩) পারিবারিক ইউনিট
অপসংস্কৃতির সয়লাব রোধকল্পে প্রত্যেক জনশক্তির পরিবারকে দ্বীন চর্চার কেন্দ্ৰ (প্রদীপ) হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরিবারে দ্বীনি ও তাক্বওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পারিবারিক ইউনিট গঠন করা অপরিহার্য। এটি নিয়মিত সাংগঠনিক ইউনিটের অনুরূপ নয়, তবে পরিবারভিত্তিক দ্বীন প্রচার, সাংগঠনিক জীবন-যাপন ও সেবাকর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
পরিবারের সদস্যগণের পরামর্শক্রমে একজন সভাপতির নেতৃত্বে পরিবারের সদস্যগণদের নিয়ে পারিবারিক ইউনিট গঠিত হবে। পারিবারিক ইউনিটের কোনো মাসিক নিছাব এবং মাসিক রিপোর্ট প্রদান করতে হবে না। তবে পারিবারিক ইউনিট সংখ্যা ও বৃদ্ধির রিপোর্ট ইউনিট সংগঠনের রিপোর্টে যোগ করতে হবে। পারিবারিক ইউনিটের কাজের ক্ষেত্র হবে ৩টি-
ক) পরিবারের সকল সদস্য;
খ) আত্মীয়-স্বজন এবং
গ) প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব ৷

প্রতিমাসে নিয়মিত ২টি বৈঠক এবং প্রতি ৩ মাস অন্তর ১টি নৈশ ইবাদত প্রোগ্রাম করা হবে। পারিবারিক বৈঠকে পরিবারের সদস্যগণের ব্যক্তিগত মানোন্নয়নের খোঁজ-খবর, দাওয়াতি টার্গেট নির্ধারণ, পারিবারিক বিষয় নিয়ে পরামর্শ করা যেতে পারে। তারবিয়াতি বৈঠকে কুরআন/হাদিস, মাসয়ালা- মাসায়িল ও নির্দিষ্ট বই বা বিষয়ের ওপর আলোচনা করা এবং পারিবারিক পরিমণ্ডলে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে দাওয়াতি সভা করা যেতে পারে।

*মহিলা বিভাগ

গঠনতন্ত্রের ৫৮, ৫৯, ৬০ ও ৬১ ধারা মোতাবেক সর্বস্তরের মহিলাদের মাঝে দাওয়াতের বিস্তৃতি ঘটানো, সংগঠন প্রতিষ্ঠা, সাংগঠনিক মজবুতী অর্জন এবং এর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নেতৃত্বের যোগ্য টিম গড়ে তুলে এ বিভাগে নেতৃত্বের সংকট দূর করা। মনে রাখতে হবে নারী সমাজে ইসলামের সঠিক ধারণা দানের কাজ ইসলাম প্রিয় দক্ষতাসম্পন্ন নারীরাই ফলপ্রসূভাবে করতে পারে।

দ্বিতীয় দফার অন্যান্য সাংগঠনিক কাজ নিম্নরূপ
১। টার্গেট ভিত্তিক যোগাযোগ:
প্রত্যেক সদস্য (রুকন) ও কর্মীকে তার আশে-পাশে, সক্রিয় সহযোগী, সহযোগী ও জনগণের মধ্য থেকে কিছু লোককে টার্গেট করে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা দরকার। এসব টার্গেট হবে ৩ (তিন) ধরনের।

ক) দাওয়াতি টার্গেট: ইসলাম ও আন্দোলনের প্রতি জনগণকে দাওয়াত প্রদান ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের একটি স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন কাজ। অবশ্য সাধারণভাবে দাওয়াতের চেয়ে টার্গেটভিত্তিক দাওয়াত প্রদান বেশি ফলপ্রসূ। তাই এক একজন সদস্য (রুকন) ও কর্মী (তার পরিচিত মহল থেকে) জনসাধারণ বিশেষ করে আলিম, শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে দাওয়াতি টার্গেট নিয়ে যোগাযোগ রাখবেন। এমনকি এক্ষেত্রে জামায়াতের বিরোধী মহল, অন্য কোন আদর্শের ধারক ও কর্মীদের মধ্যে যারা সত্যপ্রিয় তাদেরকেও টার্গেট নিয়ে দাওয়াতি কাজ করতে হবে। দাওয়াতি কাজের ব্যাপারে ব্যক্তির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, আলাপ- আলোচনা, ইসলামী সাহিত্য, পত্র-পত্রিকা ও নেতৃবৃন্দের চিঠিপত্র, লিফলেট ইত্যাদি পড়ানোর সাথে সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এমনিভাবে প্রত্যেক কর্মীর ২/৪ জন লোকের সাথে দাওয়াতি যোগাযোগ থাকা দরকার। দাওয়াতি কাজ করার জন্য প্রত্যেক সদস্য (রুকন) ও কর্মীর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকা বিশেষভাবে প্রয়োজন। এ ধরনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে পাঠ্যপুস্তকের তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যের (রুকনদের কমপক্ষে ৬০টি ও প্রত্যেক কর্মীর কমপক্ষে ৪০টি বই থাকতে হবে। দাওয়াতি টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে যথাযথভাবে ৩ মাস কাজ করেও কোনো ফল পাওয়া না গেলে উক্ত ব্যক্তিকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে টার্গেটভুক্ত করা দরকার।

খ) কর্মী টার্গেট: যারা সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে জামায়াতে শামিল হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যোগাযোগের সুবিধার দৃষ্টিতে এক একজন কর্মী বা সদস্য (রুকন) ২/৩ জনকে কর্মী বানানোর উদ্দেশ্যে টার্গেট নেবেন। কর্মীগণ হলেন জামায়াতের সক্রিয় জনশক্তি। জনশক্তি বৃদ্ধির ওপরই নির্ভর করে জামায়াতের অগ্রগতি। কিন্তু সমাজের সবাইকে কর্মী বানানো যাবে না। তাই বেশ বুঝে শুনে টার্গেট নিতে হবে। টার্গেট নেয়ার সময় নিম্নলিখিত গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি বাছাই করা দরকার।
* যিনি কর্মঠ:
* যিনি বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ;
* যিনি সামাজিক ;
* যিনি সৎ ও সত্যপ্রিয়;
*যিনি নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পন্ন।

এমনিভাবে দেখে শুনে টার্গেট নেয়ার পর সে ব্যক্তির সাথে গভীরভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে সেই ব্যক্তির কাছে বন্ধু ও পরমাত্মীয় হিসাবে পেশ করতে হবে। নিয়মিত যোগাযোগ করে কর্মী হিসেবে তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো তাকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ধরনের টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে যথাযথভাবে ৬ মাস কাজ করেও কোনো ফল পাওয়া না গেলে তাকে পরিবর্তন করে অন্য কাউকে টার্গেটভুক্ত করতে হবে।

গ) সদস্য (রুকন) টার্গেট: সদস্য (রুকন) হলো জামায়াতের মূল জনশক্তি। প্রত্যেক সদস্য (রুকন) ও সদস্য (রুকন) প্রার্থী এক বা একাধিক সদস্য (রুকন) টার্গেট নেবেন। ইসলামী আদর্শ, আন্দোলন ও জামায়াতী জিন্দেগীর গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম এবং নিজেকে জামায়াতের নিকট সোপর্দ করতে প্রস্তুত এমন ধরনের লোককেই সদস্য (রুকন) টার্গেট নিতে হবে। সদস্য (রুকন) টার্গেটকৃত ব্যক্তির কর্মীমান বৃদ্ধি করতে হবে, পাঠ্যসূচি নির্দেশিত বইগুলো পড়াতে হবে এবং এভাবে সদস্য (রুকন) হওয়ার জন্য আগ্রহী হয়েছে বলে মনে হলে ও শর্তাদি পূরণ হচ্ছে বলে মনে করলে সদস্য (রুকন) প্রার্থী ফরম সংগ্রহ করে দিতে হবে। সদস্য (রুকন) টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে ১ (এক) বছর পর্যন্ত যথাযথ যোগাযোগ রক্ষা করে চেষ্টা চালাতে হবে। ১ (এক) বছরেও এগিয়ে না এলে টার্গেট পরিবর্তন করতে হবে।
২। কর্মী যোগাযোগ:
বিচিত্র এ মানব সমাজ। অসংখ্য তার সমস্যা। সর্বোপরি রয়েছে জাহেলিয়াতের চতুর্মুখী আক্রমণ। ফলে একজন কর্মীর পক্ষে তার নিজস্ব মানে টিকে থাকা বা সামনে অগ্রসর হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। প্রতিনিয়ত জাহেলিয়াতের বিষাক্ত ছোবল তাকে ক্ষত বিক্ষত করতে চায়। দুনিয়াবী লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি তাকে নিস্তেজ করে ফেলতে চায়। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য তার প্রয়োজন উপযুক্ত আশ্রয়স্থল। জামায়াত কর্মীগণই হচ্ছে এ ব্যাপারে পরস্পরের আশ্রয়। এক কর্মী অপর কর্মীকে তার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করবে। তার সমস্যা জানবে এবং তা সমাধানে এগিয়ে আসবে। দুর্বলতা অনুধাবন করবে এবং তা প্রতিকারে তৎপর হবে। এভাবে এক কর্মী অপর কর্মীকে ঈমানে, আমলে ও কর্মতৎপরতায় সহযোগিতা দিয়ে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বা তার দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে যোগাযোগ করার নামই কর্মী যোগাযোগ।

ক) কর্মী যোগাযোগের উদ্দেশ্য
মান উন্নয়ন, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, দুর্বলতা দূর করা, কাজে আরো উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা, সম্পর্ক আরো মধুর করা, সমস্যা অবগত হওয়া এবং সমাধান বের করা ইত্যাদি লক্ষ্য নিয়ে দায়িত্বশীলদের কর্মী যোগাযোগ করতে হবে।
খ) কর্মী যোগাযোগের পদ্ধতি
i) পূর্বেই পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে স্থান ও সময় নির্ধারণ; ii) সাক্ষাতের শুরুতে সালাম বিনিময়ের পর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানার চেষ্টা;
iii) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার খোঁজ-খবর নেয়া ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান;
iv) সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা;
v) আন্দোলন সংগঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য অবহিতকরণ;
vi) কর্মীর দুর্বলতাগুলো দরদ ভরা মন দিয়ে ধরিয়ে দেয়া;
vii) মান উন্নয়নের জন্য উৎসাহিত করা;
viii) সময় ও অর্থ ব্যয়ের ফজিলতগুলো কুরআন ও হাদিস থেকে বর্ণনা করা;
ix) কুরআন হাদিসের বর্ণনা অনুসারে ব্যক্তিগত গুণাবলি অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা ; [সূরা মুমিনুন এর ১-১১, ফুরকান শেষ রুকু, মুজাম্মিল ১-৭ আয়াত) পারস্পরিক দুআ’ কামনা করে শেষ করা।

উপরি-উক্ত লক্ষ্য অর্জনে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার অধঃস্তন সংগঠনের ব্যক্তিদের সাথে কর্মী যোগাযোগ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, কর্মী যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগকারীরও মান উন্নত হয়, সংগঠনের ভেতর প্রাণ সঞ্চার হয়, চিন্তার ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে সকলে একযোগে একমুখী হয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া সম্ভব হয়। কর্মীদের পরস্পরের মধ্যেও এমনিভাবে যোগাযোগ হওয়া দরকার। তাদের সমস্যাবলি ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলকে অবহিত করবে। এভাবে সাংগঠনিক সাক্ষাতের মাধ্যমে সংগঠনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে এবং সংগঠনের অভ্যন্তরে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রয়াস চালাতে থাকবে।

৩। সফর:
সংগঠনের দায়িত্বশীলগণ বিভিন্ন পর্যায়ে সফর করতে হয়। এ সফর ঊর্ধ্বতন সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অধঃস্তন সংগঠনগুলোতে হয়ে থাকে।

৪। পরিকল্পনা:
জামায়াতের গোটা কাজই পরিকল্পনার ভিত্তিতে হয়। এজন্য সংগঠনের সর্বস্তরে পরিকল্পনামাফিক কাজ হওয়া প্রয়োজন। পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে হবে, যেন সকলের চিন্তা একত্র হতে পারে। পরিকল্পনা যথাক্রমে ইউনিট, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা/থানা, জেলা/মহানগরী ও কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে হবে। অধঃস্তন সংগঠনগুলোর পরিকল্পনা ঊর্ধ্বতন স্তরের পরিকল্পনার ভিত্তিতে এবং ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট বৈঠকে গৃহীত হবে। পরিকল্পনা অবশ্যই বাস্তবসম্মত হতে হবে। অবাস্তব বড় পরিকল্পনার চেয়ে সংক্ষিপ্ত বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনাই ফলপ্রসূ। অবশ্য গৃহীত পরিকল্পনা ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।এজন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নিম্নোক্ত বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখতে হবে:
* জনশক্তি (সংগঠনের জনশক্তি)
* নেতৃত্বের মান
* কাজের পরিধি বা এলাকা
* বিভিন্ন দিকের পরিসংখ্যানমূলক জ্ঞান (জনসংখ্যা, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাট-বাজার ইত্যাদি)
* কর্মীদের মান
* অর্থনৈতিক অবস্থা
* পরিবেশ
* বিরোধী মহলের শক্তি ও তৎপরতা
* বিগত সময়ের কাজের অগ্রগতির হার।
জেলা/মহানগরী, উপজেলা/থানা ও পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পরিকল্পনা বাৎসরিক হবে, পরে বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার সুবিধার্থে তাকে ত্রৈমাসিক বা মাসিক ভাগ করে নিতে হবে। পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক সঠিক ও সময়মত বাস্তবায়নের জন্যে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও সময় নির্দেশিকা সামনে রেখে জেলা/মহানগরী, উপজেলা/থানা, পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড সময় নির্দেশিকা তৈরি করে নিতে হবে।

পরিকল্পনা পর্যালোচনা বৈঠক: পরিকল্পনার আলোকে জেলা/মহানগরী ও অধস্তন সংগঠন যথাযথভাবে ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক কাজের পর্যালোচনা করতে হবে। কোনো ব্যাপারে কমতি থাকলে পরবর্তী পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের পুনঃপরিকল্পনা নিতে হবে। মাসিক রিপোর্টের সাথে প্রতিমাসেই পরিকল্পনার আলোকে প্রয়োজনীয় আলাদা রিপোর্ট রাখতে হবে।

৫। সাংগঠনিক পক্ষ/সপ্তাহ পালন:
পরিকল্পনায় কোনো কোনো বছর সাংগঠনিক পক্ষ বা সপ্তাহ পালনের টার্গেট থাকে। সাংগঠনিক পক্ষ বা সপ্তাহ দেশভিত্তিকও পালিত হতে পারে। আবার জেলা/মহানগরীভিত্তিকও হতে পারে। উক্ত পক্ষে বা সপ্তাহে ঊর্ধ্বতন সংগঠনের পক্ষ থেকে অধঃস্তন সংগঠনের সার্বিক তদারক প্রয়োজন। সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ফাইলপত্র ও রেকর্ড সংরক্ষণ, সাংগঠনিক বৈঠকাদি এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ইত্যাদির সার্বিক তদারক উক্ত সময়ে পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। এ জন্য পূর্বাহ্নে প্রোগ্রাম করে সংশ্লিষ্ট স্তরে প্রস্তুতি নিতে হবে।

৬। নেতৃত্ব নির্বাচন:
জামায়াতের নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি ব্যতিক্রমধর্মী। কেন্দ্র থেকে ইউনিট পর্যন্ত সর্ব পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করা হয়। কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই পক্ষে বিপক্ষে ক্যানভাস চলে না। পদের প্রতি লোভ অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। ফলে নেতৃত্ব নির্বাচনের একদিকে যেমন গণতান্ত্রিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টির সুযোগও থাকে না। সামাজিক সংস্কার ও সংশোধনের লক্ষ্যে একটি আদর্শবাদী আন্দোলনের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনের এ প্রক্রিয়া একদিকে যেমন যুক্তিসম্মত অপরদিকে ভারসাম্যপূর্ণ ও বলিষ্ঠ। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সততা, যোগ্যতা ও আল্লাহ ভীরুতা হচ্ছে নেতৃত্ব নির্বাচনের মূল ভিত্তি।

৭। বাইতুলমাল:
আল কুরআনে বর্ণিত ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জামায়াত তার সর্ব পর্যায়ে যে ফান্ড গঠন করে থাকে তাকেই বলা হয় বাইতুলমাল ৷ বাইতুলমাল সংগঠনের মেরুদণ্ড। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী বাইতুলমালের প্রয়োজন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের প্রত্যেক স্তরে বাইতুলমাল থাকবে। প্রত্যেক স্তরের সংগঠন সরাসরি সেই বাইতুলমাল থেকে খরচ করবে। প্রতি বছরই অডিট কমিটির মাধ্যমে বাইতুলমালের হিসাব অডিট করাতে হবে এবং অডিট রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট শূরা কর্মপরিষদ/টিমে পর্যালোচনা করতে হবে।
সংগঠনের সব বাইতুলমালের দায়-দায়িত্ব আমীরে জামায়াতের। এ জন্য তাঁর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়। তিনি প্রত্যেক স্তরের আমীরের মাধ্যমে অধঃস্তন সংগঠনগুলোর বাইতুলমাল তদারক করে থাকেন। জেলা/মহানগরী আমীর সংশ্লিষ্ট জেলা/মহানগরীতে বাইতুলমালের সার্বিক দায়িত্বশীল। প্রত্যেক শাখায় কমপক্ষে ০৩ (তিন) সদস্যের বাইতুলমাল কমিটি এবং একজন বাইতুলমাল সেক্রেটারি থাকবে। বাইতুলমাল সেক্রেটারি বাইতুলমালের তহবিল সংরক্ষণ করবেন এবং তিনি জেলা/মহানগরী আমীরের অনুমোদনের ভিত্তিতে অর্থ ছাড় এবং হিসাব সংরক্ষণ করবেন। অধস্তন সংগঠনের জন্যেও উক্ত নীতি প্রযোজ্য হবে।

জামায়াতের বাইতুলমালের আয়ের উৎস নিম্নরূপ:
ক) কর্মীদের আর্থিক কুরবানি: জামায়াতের প্রত্যেক স্তরের কর্মী তাঁর আয় থেকে একটি অংশ প্রত্যেক মাসে জামায়াতের বাইতুলমালে জমা দেন ৷ এ ইয়ানতই হবে তাঁর জন্য মাসের প্রথম খরচ। উল্লেখ্য জামায়াতের প্রত্যেক সদস্য (রুকন) সাধারণত তাঁর মাসিক আয়ের ৫% জামায়াতের বাইতুলমালে দিয়ে থাকেন।এক্ষেত্রে মাসিক কুরবানির পরিমাণ কর্মী নিজেই নির্ধারণ করবেন। তবে পরিমাণটা এমন হওয়া উচিত যেন তিনি কুরবানি অনুভব করেন। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ঐ মাসের ইয়ানত প্ৰত্যেক কর্মী নিজ উদ্যোগে দায়িত্বশীলের নিকট পৌঁছাবেন। আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের বাইতুলমালের আর্থিক কুরবানিও বাড়া উচিত। সক্রিয় সহযোগী সদস্যদের নিকট থেকেও নিয়মিত ইয়ানত নিতে হবে।
খ) শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে: অনেক লোক আছেন যারা জামায়াতকে ভালবাসেন কিন্তু ময়দানে কাজ করার সুযোগ পান না। এ ধরনের লোকদের থেকেও আর্থিক কুরবানি আদায় করতে হবে। এ জন্য তাঁদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। আর্থিক কুরবানির গুরুত্ব বুঝাতে হবে, আরও বেশি বেশি কুরবানির জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যথাসময়ে ওয়াদাকৃত টাকা নিয়ে আসতে হবে। সাথে সাথে নতুন নতুন শুভাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধির জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনবোধে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের সাথে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
গ) যাকাত ও উশর: যাকাত ও উশর হতে প্রাপ্ত অর্থ জামায়াতের কল্যাণ তহবিলে জমা হবে এবং শরিয়াহ নির্ধারিত পন্থায় ব্যয় হবে।

৮। রেকর্ডিং:
সব জায়গাতে জামায়াতের নিজস্ব অফিস থাকা প্রয়োজন। অফিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ তথ্য ও ইতিহাস সংরক্ষণ (রেকর্ডিং)। এ জন্যে প্রয়োজনে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে নিম্নোক্ত জিনিসগুলো সংরক্ষণ করতে হয়:
i) কর্মী ও সদস্যদের (রুকনদের) তালিকা (ঠিকানাসহ)
ii) দায়িত্বশীলদের ঠিকানা ও টেলিফোন নাম্বার
iii) রিপোর্ট (সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত)
iv) বইয়ের তালিকা
v) সহযোগী সদস্যদের ফরম ও ফরমের মুড়ি
vi) সদস্যপ্রার্থী (রুকন প্রার্থী) আবেদনপত্র
vii) রশিদ বই-এর মুড়ি
viii) ক্যাশ বই
ix) লেজার
x) বিভিন্ন পরামর্শ ফাইল
xi) বিভিন্ন বৈঠকের কার্যবিবরণী (শূরা/কর্মপরিষদ/ টিম, ষান্মাসিক সদস্য (রুকন) সম্মেলন, মাসিক সদস্য (রুকন) বৈঠক, কর্মী সম্মেলন, সভাপতি সম্মেলন, কেন্দ্রীয় সফর ইত্যাদি)।
xii) ছাপানো পোস্টার ও লিফেলেটের নমুনা কপি।
xiii) প্রকাশিত সংবাদ কাটিং, প্রেরিত সংবাদ কপি।
xiv) প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের তৎপরতা (নেতৃবৃন্দের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার)।
xv) চিঠি ও সার্কুলার: (ক) ঊর্ধ্বতন থেকে প্রাপ্ত, (খ) অধঃস্তনে প্রেরিত।
xvi) বিশিষ্ট লোকদের তালিকা প্রণয়ন ও নিয়মিত যোগাযোগ। যেমন রাজনৈতিক, উলামা-মাশায়েখ, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিবৃন্দ।
উপরি-উক্ত তথ্য সংরক্ষণের জন্য কমপক্ষে নিম্নলিখিত রেজিস্টার ও ফাইলের প্রয়োজন:

রেজিস্টার:
i) কর্মী তালিকা (উপজেলা/থানায়)
ii) বই তালিকা ও ইস্যু রেজিস্টার
iii) সদস্য (রুকন) তালিকা
iv) বিভিন্ন বৈঠকের কার্যবিবরণী
v) ক্যাশবুক ও লেজার বুক
vi) হাজিরা রেজিস্টার (বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিতি)
vii) সদস্য (রুকন) টার্গেট তালিকা ও প্রার্থী রেজিস্টার
viii) সাংগঠনিক রিপোর্ট রেকর্ড রেজিস্টার
ix) সদস্যদের (রুকনদের) ব্যক্তিগত রিপোর্ট রেজিস্টার
x) দায়িত্বশীলদের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার
xi) বিশিষ্ট লোকদের তালিকা
xii) রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের নাম ও ঠিকানা

ফাইল:
i) সহযোগী সদস্য ফাইল (মুড়ি)
ii) ভাউচার ফাইল
iii) রিপোর্ট ফাইল (উপরে পাঠানো, অধঃস্তনের কপি)
iv) সার্কুলার ফাইল (উপর থেকে প্রাপ্ত, নিচে প্রেরিত)
v) চিঠির ফাইল (ঐ)
vi) পরিকল্পনা ফাইল (কেন্দ্রীয়, জেলা/মহানগরী, উপজেলা/থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড)
vii) সদস্যদের (রুকনদের) ব্যক্তিগত রিপোর্ট ফাইল
viii) সদস্য প্রার্থী (রুকন প্রার্থী) আবেদনপত্র ফাইল
ix) রশিদ বই-এর মুড়ি
x) পরামর্শ ফাইল।
xi) সফর প্রোগ্রাম ফাইল।
উল্লেখ্য যে, অধঃস্তন সংগঠনগুলো কাজ অনুপাতে তথ্য সংগ্রহের আইটেম কমিয়ে নিতে পারে। আবার ঊর্ধ্বতন সংগঠন কাজের পরিধি অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের বিষয় বাড়িয়ে নেবে ৷

৯। রিপোর্ট সংরক্ষণ:
পরিকল্পনার লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজের পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বিগত কাজের রিপোর্ট প্রণয়ন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে পর্যালোচনা সম্ভব নয়। অতএব প্রত্যেক ইউনিটে প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে বিগত মাসের রিপোর্ট প্রণীত হয়ে ওয়ার্ডে এবং ওয়ার্ড সংগঠনের রিপোর্ট পৌরসভা/ইউনিয়নের মাধ্যমে উপজেলা/থানায় পৌঁছাতে হবে। এভাবে উপজেলা/থানা রিপোর্ট তৈরি করে ১০ তারিখের ভেতর জেলা/মহানগরীতে পৌঁছাবে। উপজেলা/থানা মাসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে জেলা/মহানগরী মাসিক রিপোর্ট তৈরি করে ফাইলে যথারীতি সংরক্ষণ করবে এবং ষান্মাষিক ও বার্ষিক রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠাবে। উল্লেখ্য যে, অধঃস্তন সংগঠন থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন সংগঠনের পক্ষ থেকে রিপোর্টের ওপর নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে।

১০। অফিস:
সংগঠনের প্রতি স্তরেই অফিস থাকা প্রয়োজন। রেকর্ড ও কাগজপত্র সাধারণত অফিসেই থাকে। সাংগঠনিক বৈঠকাদিও প্রধানত অফিসেই হয়ে থাকে। অফিস ছোট বা বড় যাই হোক তা সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা দরকার। কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে হবে। আঙ্গিনায় ছোট-বড় গাছ এবং বারান্দায় ফুলের টব সাজিয়ে রাখা যেতে পারে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে নির্দিষ্ট অফিস ঘর না থাকলে কাগজপত্র সভাপতির জিম্মায় থাকতে পারে। তবে তাও নির্দিষ্ট আলমারি বা ট্রাংকে রাখতে হবে।

খ. প্ৰশিক্ষণ:

দ্বিতীয় দফা কর্মসূচির অপর গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের দুটি পর্যায় রয়েছে নিম্নে তার বিশদ বিবরণ দেয়া হল:
ক) তারবিয়াত (নৈতিক শিক্ষা ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ):
আখিরাতের সাফল্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সর্বস্তরের দায়িত্বশীলসহ জনশক্তিকে ইসলামের যথার্থ জ্ঞান, বিশুদ্ধ চিন্তা, উন্নত আমল-আখলাক ও তাক্বওয়া সম্পন্ন করে গড়ে তোলা। আত্মগঠন, মান উন্নয়ন এবং সংগঠন পরিচালনায় যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ গাইড লাইনের আলোকে সকল জনশক্তির জন্য মান সম্পন্ন ও সময় উপযোগী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে অনলাইন কার্যক্রমের সুযোগ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কাজে লাগানো। অর্থনৈতিক পরিশুদ্ধি লাভের জন্য উপার্জনের ক্ষেত্রে শরিয়নীতি মেনে চলার গুরুত্ব জনশক্তির নিকট তুলে ধরা এবং বৈষয়িক চাহিদার ভিত্তিতে জীবন মান উন্নত করার প্রবণতা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখার ও ভারসাম্যপূর্ণ, সহজ-সরল জীবন মানের দিকে মটিভেশন অব্যাহত রাখা।

১। পাঠ্যসূচিভিত্তিক ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন: ইসলামের সঠিক ধারণা লাভের জন্য প্রয়োজন কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য জামায়াত একদিকে ব্যাপক ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি ও প্রকাশনার পদক্ষেপ নিয়েছে, অপরদিকে ইসলামী সাহিত্য যথাযথভাবে অধ্যয়নের জন্য একটি পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করেছে। এ পাঠ্যসূচি একদিকে যেমন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য, অপরদিকে তেমনি স্বল্প শিক্ষিতদেরও উপযোগী। জামায়াতের সদস্য (রুকন) ও কর্মীগণকে নিয়মিত কুরআন-হাদিস অধ্যয়নসহ এমনভাবে ইসলামী সাহিত্য পড়াশুনা করা দরকার যাতে গড়ে দৈনিক ১০ পৃষ্ঠার কম পড়া না হয়। হাতে সময় থাকলে আরো বেশি পড়ার চেষ্টা করা উচিত। দায়িত্বশীলগণের এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া ও উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

২। প্রশিক্ষণ (তারবিয়াতি) বৈঠক: ইউনিটে মাসে ৩টি বৈঠকের ১টি প্রশিক্ষণ বৈঠক। এ বৈঠকে কুরআন, হাদিস ও গুরুত্বপূর্ণ বই এবং বিষয়ের ওপর সামষ্টিক পাঠ হতে পারে ও পর্যায়ক্রমে মাসয়ালা- মাসায়িল, দোয়া ও কিরাআতের তা’লিম হতে পারে। এ বৈঠকে সকল স্তরের জনশক্তিকে উপস্থিত রাখার চেষ্টা চালাতে হবে।

৩। সামষ্টিক পাঠ: একা একা বই পড়ে অনেক সময় অনেক কিছু বুঝা যায় না। এছাড়া কোনো কিছুর গভীরে যেতে হলে পরস্পরের আলোচনা প্রয়োজন। এ জন্যই সামষ্টিক পাঠের আয়োজন করতে হয়। কোনো একটি বই-এর অংশ বিশেষ, একটি শিক্ষণীয় প্রবন্ধ, কুরআনের একটি বা দুইটি আয়াত, একটি হাদিস ইত্যাদি যে কোনো একটি বিষয়ের ওপর সামষ্টিক পাঠ হতে পারে। এতে একজন পরিচালক থাকবেন। ৭ থেকে ১০ জন সদস্য থাকবেন। পরিচালকের নির্দেশে একজন পাঠ করবেন এবং অপর সকলে শুনবেন। অংশ বিশেষ পাঠ হয়ে গেলে কে কতটুকু বুঝলো আলোচনা করবেন। পরিচালক সামষ্টিক পাঠকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করবেন। এভাবে চক্রাকারে কিছু পড়ার নামই সামষ্টিক পাঠ। সামষ্টিক পাঠ এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হওয়া ঠিক নয়।

৪। পাঠচক্র: একজন পরিচালক ও ৮/১০ জন সদস্য নিয়ে পাঠচক্র গঠিত হয়। চক্র সদস্যগণের সাংগঠনিক মান উন্নয়ন, রুকনিয়াতের মান সৃষ্টি, নেতৃত্ব সৃষ্টি ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে পাঠচক্রের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়। সকলে উক্ত নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ব্যাপক পড়াশুনা ও চিন্তাভাবনা করে আসবেন। এরপর পরিচালক পয়েন্ট ভিত্তিক বিষয়বস্তুর ওপর আলোচনা চালাবেন। এভাবে কয়েকটি অধিবেশনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ব্যাপক ও স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা সহজ হয়। পাঠচক্রের অধিবেশন মাসে কমপক্ষে ১টি হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রতি অধিবেশন ২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হবে না। পাঠচক্রকে ফলপ্রসূ করতে হলে নিম্নোক্ত দিকগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার।
i) পাঠচক্রের সদস্যগণ সমমানের হবে।
ii) পরিচালককে অবশ্যই অভিজ্ঞ ও যোগ্য হতে হবে।
iii) পরিচালক পড়াশুনা ও চিন্তাভাবনার জন্য প্রথম অধিবেশনেই প্রয়োজনীয় গাইড লাইন দেবেন।
iv) সকল সদস্যই বিষয়বস্তুর ওপর পড়াশুনা করে আসবেন এবং আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নোট সাথে রাখবেন।
v) অধিবেশনে সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে।
vi) যথাসময়ে উপস্থিত হতে হবে।
vii) যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। পূর্ণ আন্তরিকতা ও একাগ্রতা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে হবে।
viii) পরিচালক আলোচনাকে একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করবেন এবং প্রতিটি পয়েন্টের উপসংহার পেশ করবেন।
ix) প্রতিটি পয়েন্টের মূল কথাগুলোকে সকলে নোট করবেন।

৫। কুরআন স্টাডি সার্কেল: পবিত্র কুরআনের নির্দিষ্ট কোন সূরা বা আয়াতের উপর কুরআন স্টাডি সার্কেল করা যেতে পারে। কুরআন স্টাডি সার্কেল এর ক্ষেত্রে পাঠচক্রে বর্ণিত নিয়মাবলি অনুসরণ করা এবং একে ফলপ্রসূ করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া-
i) নির্ধারিত সূরা বা আয়াত সহিহ করে তিলাওয়াত;
ii) সকল সদস্যগণ কর্তৃক স্টাডি সার্কেলের জন্য নির্ধারিত সূরা বা আয়াত মুখস্ত করে আসা;
iii) ব্যাপক স্টাডির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সূরা বা আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট, সঠিক ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ।

৬। আলোচনা চক্র: ১০ থেকে ১৫ জন নিয়ে ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে আলোচনা চক্র হতে পারে। আলোচনা চক্রের পরিচালক কোনো বিষয় বা বইয়ের সারসংক্ষেপ সহজ ভাষায় অংশগ্রহণকারীদের সামনে তুলে ধরবেন। এর পর বাকিরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন।

৭। শিক্ষা বৈঠক: কর্মীদের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বৈঠক একটি সুন্দর ব্যবস্থা। জামায়াতের দাওয়াত, কর্মসূচি, দ্বীনি মেজাজ, রাজনৈতিক চিন্তাধারা ইত্যাদি এক বা একাধিক বিষয়ে কর্মীদের আরো শিক্ষিত করে তোলাই শিক্ষা বৈঠকের লক্ষ্য। এতে একজন পরিচালক থাকবেন। গোটা সময় কাজে লাগানোর জন্য একটি সুন্দর কার্যসূচি থাকবে। অংশগ্রহণকারীগণ নোট বই, কলম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আসবেন। বৈঠকের কাজ যথাসময়ে শুরু করে যথাসময়েই শেষ করা উচিৎ। বৈঠককে ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য সকলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন এবং নিয়ম কানুন মেনে চলবেন।

৮। শিক্ষা শিবির: আমরা ইসলামী সমাজ গড়তে চাই। এজন্য একদল লোকের দুনিয়া, বাড়ি-ঘর ইত্যাদি যাবতীয় চিন্তামুক্ত হয়ে খালেছ নিয়াতে আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার। এ ছাড়া দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ থাকা দরকার। শিক্ষা শিবিরের মাধ্যমে আমরা উপরি-উক্ত ফায়দা হাছিল করতে পারি। শিক্ষা শিবির থানা, জেলা ও কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে হতে পারে। বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকেই তা হবে। জনশক্তির মান ও সাংগঠনিক যোগ্যতা বৃদ্ধি, বিশেষ দিকে পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি যে কোনো একটি দিকে শিবিরের লক্ষ্য থাকবে। লক্ষ্যকে সামনে রেখেই উপযুক্ত কর্মী বাছাই করে নিতে হবে এবং যথাসময়ে তাদের (প্রোগ্রামের নমুনাসহ) অবহিত করতে হবে। থাকার জন্য হালকা বিছানা, ডেলিগেট ফি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে শিবির শুরু হওয়ার পূর্বেই পৌঁছতে হবে। শিবিরের একজন পরিচালক থাকবেন। শিবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে পরিচালকের নির্দেশ মেনে চলবেন। এখানে এসে বাইরের কোনো কাজ করা চলবে না। খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম ইত্যাদি নির্ধারিত সময়ের ভেতর সমাধা করতে হবে। গোটা পরিবেশকে ইসলামী সমাজের নমুনা হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। শিবির থেকে শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের অনুশীলন চালাতে হবে। শিবির থেকে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে দ্বীনি ইল্‌ম, সাংগঠনিক জ্ঞান, কাজ করার দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির সাথে সাথে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যের আমেজ যেন অনুভব করা যায়। ইসলামী সমাজের প্রয়োজনীয়তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেন ফুটে উঠে।

৯। গণশিক্ষা বৈঠক: এলাকার সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণশিক্ষা বৈঠক আয়োজন করা যেতে পারে। এ ধরনের প্রোগ্রামে কুরআন-হাদিস, মাসয়ালা-মাসায়িল ও দ্বীনি বিষয়াদি আলোচনা প্রাধান্য পাবে।

১০। গণ নৈশ ইবাদত: রাতের শেষভাগে মাগফিরাতের জন্য ইবাদত, তাসবিহ, তিলাওয়াত ও কান্নাকাটি করা মুমিনের এক বিশেষ গুণ – এর মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে। ফলে বিভিন্ন মৌলিক গুণাবলি তাঁর মধ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ কারণে জামায়াত নৈশ ইবাদতের ব্যবস্থা রেখেছে। মহল্লার সাধারণ মুসল্লিগণকেও তাতে শামিল করা যেতে পারে। মূলত নৈশ ইবাদত ব্যক্তিগতভাবে করাই উত্তম। এতে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য মাঝে মাঝে রাত জাগার এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১১। ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ: ব্যক্তির উন্নতি নিজের কাছে। ভুল ও দুর্বলতা জানা এবং তা দূর করার অনুভূতি এ ক্ষেত্রে আসল। এ অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে নিজেই নিজের কাজের হিসেবে নেয়ার মাধ্যমে। এ জন্য জামায়াত ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আন্দোলনের দৃষ্টিকোণ থেকে সারাদিন যে সব কাজ করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট ছকে সংরক্ষণ করতে হয়। সংরক্ষণ করতে গেলে দৈনন্দিন কাজের একটি নিখুঁত চিত্র ফুটে উঠে। ফলে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি হয়। এভাবে ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে একজন কর্মী দুর্বলতা থেকে মুক্ত হতে পারে। সাথে সাথে গুণাবলী বৃদ্ধি পেতে পারে। দায়িত্বশীলগণ মাঝে মাঝে কর্মীদের ব্যক্তিগত রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় লিখিত পরামর্শ দেবেন। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ব্যক্তিগত রিপোর্ট বই-এ রয়েছে।

১২। মুহাসাবা: ইসলামী আন্দোলনের এক কর্মী অন্য কর্মীর আয়না স্বরূপ। আয়না নীরবে ব্যক্তির সঠিক চেহারাটা ফুটিয়ে তোলে। এ নিয়ে শোরগোল বা চিৎকার করে বেড়ায় না। সামনে থেকে সরে গেলে আয়না সেটা ধরে রাখে না। আবার নিখুঁত ছবিটি তুলে ধরে, কমবেশি করে না। ত্রুটি বা দাগ মুছে ফেলার পর সেটাকে জিইয়ে রাখে না। এরূপ এক কর্মী আয়না স্বরূপ নীরবে আর একজন কর্মীর ভুল তুলে ধরতে পারেন। এদিক সেদিক বলাবলি না করে শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলবেন। বলবেন আন্তরিকতার সাথে তাঁর কল্যাণকামী হয়ে। ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করার পর কোনো কর্মীর দুর্বলতা যদি দূর না হয় তাহলে ইউনিট, থানা বা যে কোনো সাংগঠনিক বৈঠকে খুবই মোলায়েম ভাষায় এবং বাড়াবাড়ি না করে পেশ করবেন। অবশ্য পেশ করার পূর্বে দায়িত্বশীলের সাথে আলাপ করে নেবেন। যিনি পেশ করবেন, তিনি কাউকে হেয় করার জন্য পেশ করবেন না। যার ব্যাপারে পেশ করা হবে তিনি নিজের ত্রুটি স্বীকার করে নেবেন এবং সবার দোয়া কামনা করবেন। অথবা অভিযোগ যথার্থ না হলে তিনি সুন্দরভাবে তার বক্তব্য পেশ করবেন। তবে উভয়কে বৈঠকের রায় মেনে নিতে হবে। এভাবে নেহায়েত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে পরস্পর দুর্বলতা দূর করার প্রচেষ্টার নাম মুহাসাবা বা গঠনমূলক সমালোচনা। সংগঠনের সুস্থতার জন্য এ কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংগঠনের সুস্থতা ও সজীবতা মুহাসাবার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

১৩। বক্তৃতা অনুশীলন: যে কোনো বক্তব্য সঠিকভাবে ও গুছিয়ে বলতে সক্ষম হলেই বক্তার কথা লোকদেরকে ভালভাবে বুঝানো সম্ভব। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করাও জামায়াত পছন্দ করে না। অল্প কথায় সুন্দরভাবে জামায়াতের বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সকলের সুবক্তা হওয়া প্রয়োজন। আর আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে এটা খুবই সম্ভব। এর জন্য দশ বা পনেরো জন কর্মীর একটি গ্রুপ বাছাই করে একজন ভাল বক্তাকে উক্ত গ্রুপের পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। পরিচালকের পরিচালনায় নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর গ্রুপের সকলে বক্তব্য রাখবেন। পরিচালক অত্যন্ত মনোনিবেশ সহকারে তাদের বক্তব্য, বক্তব্যের ধরন, ভাষা, অঙ্গ পরিচালনা ইত্যাদি লক্ষ্য করবেন। তারপর দুর্বলতাগুলো তাদের বুঝিয়ে দেবেন। এভাবে আমরা বহু সংখ্যক সুবক্তা গড়ে তুলতে পারি। অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে একবারের প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। মাঝে মাঝে এ ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

১৪। দুআ, জিকির ও নফল ইবাদত: আমরা এক কঠিন পরিবেশে আন্দোলন করছি। দুনিয়াবি লোভ লালসা, দারিদ্র্যের নির্মম কশাঘাত, বাতিলের কঠিন আক্রমণ ইত্যাদি আমাদেরকে মাঝে মাঝে দুর্বল করে ফেলে। এহেন অবস্থায় একমাত্র মহান আল্লাহর ভয়ই আমাদের বাঁচার পথ। মনে সব সময় মহান আল্লাহর ভয় জাগরুক রেখে আমরা এ বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারি। আর আল্লাহর ভয় সব সময় জাগ্রত রাখার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের পথ দেখিয়েছেন। বিভিন্ন কাজ-কর্মে তাঁর শেখানো দুআ’ অর্থ বুঝে মন দিয়ে পড়লে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। এজন্য আমাদের সকল কর্মীকে বিভিন্ন দুআ’ ও জিকির শিখে নিতে হবে। তারপর বিভিন্ন কাজে ব্যস্ততার মুহূর্তে তা পড়তে হবে। নফল কাজ হলেও প্রয়োজনের দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহর সাথে নিবিড়তম সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নফল নামাজ ও নফল রোজা খুবই ফলপ্রসূ। যখনই সম্ভব তখনই নফল নামাজ ও নফল রোজা আদায় করা উচিত। বিশেষ করে প্রতি চন্দ্ৰমাসে একাধিক রোজা রাখা যেতে পারে। তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে উৎকৃষ্টতম নফল ইবাদত। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ ফলদায়ক। সারা পৃথিবীর মানুষ যখন ঘুমে আচ্ছন্ন থাকবে, গোটা পরিবেশ যখন নীরব নিথর ও স্তব্ধ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জিন্দা দিল সৈনিক আরামের ঘুম কুরবানি করে তার প্রভুর সাথে কথাবার্তা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে বিছানা ত্যাগ করবে ও পড়বে:
(আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়াইলাইকা আনাবতু, ওয়া বিকা খাছামতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু।)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই অনুগত হলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকে আমি নিবিষ্ট হলাম, তোমার জন্যই আমি লড়াই করছি এবং তোমার দরবারেই আমি ফরিয়াদ জানাচ্ছি।
তারপর অজু করবে। জায়নামায বিছিয়ে দাঁড়াবে, নিষ্ঠার সাথে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবে, কুরআন তিলাওয়াত করবে। সালাত শেষে হাত তুলে প্রভুর দরবারে মুনাজাত করবে। মাগফিরাতের জন্য ফরিয়াদ করবে, উত্তম গুণাবলি বিকাশের জন্য সাহায্য চাইবে, আন্দোলনের উন্নতির জন্য দুআ’ করবে। ব্যাকুলভাবে কান্নাকাটি করবে। এভাবে মহান আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের সুযোগ পাবে।

১৫। সামষ্টিক খাওয়া: মাঝে মাঝে সবাই মিলে একত্রে খাওয়ার প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। এতে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয়। অপরকে জানার সুযোগ হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে বাহুল্য করা যাবে না। বরং অপরের জন্য কুরবানির নজির স্থাপন করতে হবে।

১৬। আত্ম-সমালোচনা: নিজেকে গড়ে তোলার জন্য আত্ম-সমালোচনা উপযুক্ত মাধ্যম। অতএব জামায়াত কর্মীদের জন্য নিয়মিত আত্ম-সমালোচনা অপরিহার্য। দিনের কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে আত্ম-সমালোচনা ছাড়াও প্রতিটি কাজের সমাপ্তির সাথে সাথে পর্যালোচনার অভ্যাস করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে, আত্ম-সমালোচনার সঠিক পদ্ধতি ব্যক্তিগত রিপোর্ট বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে।

খ) মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা:
মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো- সাধারণত উৎপাদন কর্মে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে মানুষের কারিগরি দক্ষতা বা ব্যবহারের উপযোগিতা বৃদ্ধিকরণের নাম। এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি দেশের জনগোষ্ঠী বিশাল সম্পদে পরিণত হতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষের সুপ্ত প্রতিভা ও যোগ্যতার প্রসার ঘটে। আধুনিক বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত কথা হলো- মানবসম্পদ উন্নয়ন। ইসলাম মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। তাই আমাদের সংগঠন ও সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে ভূমিকা রাখার উপযোগী নৈতিক মান সম্পন্ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এ জন্যে জেলা/মহানগরী, উপজেলা/থানায় মানব সম্পদ বিভাগ চালু ও সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এ বিভাগের কর্ম পরিকল্পনায় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে উপযুক্ত জনশক্তিকে স্ব-স্ব পেশায় যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। জনশক্তির বাইরেও সমাজের মেধাবী শ্রেণি থেকে বাছাইকৃতদেরকে সামর্থ অনুযায়ী প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যেতে পারে।

তৃতীয় দফা কর্মসূচি: সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা

গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের তৃতীয় দফা কর্মসূচি হলো:
ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক সংশোধন, নৈতিক পুনর্গঠন ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন ও দুস্থ মানবতার সেবা করা।
কেবলমাত্র কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন বা কিছু দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কাজ করলেই পুরাপুরি ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলিম হিসেবে দায়িত্ব পালনের কাজ সম্পূর্ণ হয় না। সাথে সাথে সামাজিক সংস্কার ও সমাজ সেবামূলক প্রয়োজনীয় কিছু কাজেও হাত দেয়া দরকার। এর আলোকে এ দফায় তিনটি প্রধান সামাজিক কাজ রয়েছে:
ক) সমাজ সংশোধন ও সমাজ সংস্কার
খ) অপসংস্কৃতি রোধ ও ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ
গ) দুস্থ মানবতার সেবার লক্ষ্যে সমাজ সেবা
বর্তমানে সমাজ সংস্কার, সাংস্কৃতিক কাজ-কর্ম ও সমাজ সেবামূলক কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কাজ শুধু কেন্দ্রের মাধ্যমে নয়, জেলা/মহানগরী ও উপজেলা/থানা এমনকি পৌরসভা/ইউনিয়ন পর্যায়েও আঞ্জাম দেয়া যেতে পারে।

ক) সমাজ সংশোধন ও সংস্কার
১। প্রচলিত কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্কীকরণ:
আমাদের দেশে অনেক কুসংস্কার চালু আছে। এমনকি ইসলামের নামেও এমন সব কুসংস্কার চালু আছে যেগুলোর মাধ্যমে অনেকেই না বুঝে শিরক ও বিদ’আতে জড়িত হয়ে পড়ে। এগুলো তাওহীদ ও রিসালাতের ব্যাপারে ইসলামের সঠিক ধারণা নষ্ট করে দেয়। ফলে জাতীয় জীবনে এগুলো অনেক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। অতএব একদিকে তাওহীদ ও রিসালাত সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে, অন্যদিকে শিরক ও বিদ’আত সম্পর্কে সতর্ক করার কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। মনে রাখতে হবে এ কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কাজ। যিনি এ কাজ করবেন দ্বীন সম্পর্কে তাঁর নিজেরও সহিহ ধারণা লাভ করতে হবে। তবে এ কাজ করতে গিয়ে অযথা বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ঠিক হবে না।

২। ইসলামী আচার অনুষ্ঠান চালুকরণ:
আমাদের সমাজে অনেক ধরনের আচার অনুষ্ঠান চালু আছে। কিন্তু তার সবগুলোতে ইসলামী ভাবধারা পরিলক্ষিত হয় না। বিবাহ-শাদি, খাতনা, বিভিন্ন দিবস পালন, জন্মদিন, সফরে বের হওয়া, কবর জিয়ারত, শবেবরাত, দিনকাল নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজাতীয় প্রভাব স্পষ্ট। এ সব ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি করা হয় এবং শরিয়তের বিধান স্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়। আবার এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোকে শরিয়ত গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু আমরা গুরুত্ব দেই না। যেমন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, রমজানের রোজা, শবেকদর ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয় না। এক্ষেত্রে জামায়াত কর্মীদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান পালনে নজির স্থাপন করতে হবে। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কিরামের (রা) আদর্শ ফুটিয়ে তুলতে হবে।

৩। পেশাভিত্তিক দাওয়াতি কাজ:
সমাজের অধিকাংশ লোক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। চাষি, শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী প্রভৃতি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত লোকদের বিভিন্নমুখী সুবিধা-অসুবিধা ও প্রয়োজন থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পেশাগত স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পেশার লোকদের সমিতি গড়ে উঠে। এসব পেশাভিত্তিক সমিতি ও সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণ ও সামাজিক প্রভাব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো যায়।

৪। গণশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন:
শিশু ও বয়স্কসহ সর্বস্তরের জনগণকে শিক্ষিত করার প্রচেষ্টা আমাদের দেশে খুবই কম। যা আছে আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে তা খুবই দুর্বল ও বিকৃত। এ কারণে সংগঠনকে দ্বিমুখী তৎপরতা চালাতে হবে।
(ক) প্রতিটি মক্তব, মাদরাসা, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, স্কুল ইত্যাদিতে নিজস্ব প্রভাব সৃষ্টি করা।
(খ) নিজেদের উদ্যোগে মক্তব, মাদরাসা, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, কিন্ডার গার্টেন ইত্যাদি চালু করার পদক্ষেপ নেয়া। অবশ্য এলাকার সাংগঠনিক শক্তি অনুপাতে এ কাজগুলো হাতে নেয়া উচিত।
(গ) নিরক্ষরতা দূরিকরণে আমাদের জনশক্তির সাধ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখা।

৫। মসজিদ সংস্কার:
যেখানে আমরা কাজ করি সেখানে এক বা একাধিক মসজিদ আছে। অধিকাংশ মসজিদে দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
(ক) অজু-এস্তেঞ্জার অব্যবস্থা, জায়গার অভাব, চলাচলের কষ্টকর পথ, মেরামতের অভাব, ইমাম মুয়াজ্জিনের অল্প বেতন ও থাকার সমস্যা ইত্যাদি।
(খ) অযোগ্য ও দুর্বল লোকদের পরিচালনা।
সংগঠনকে উভয়বিধ দুর্বলতা দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এলাকার লোকদেরকে সাথে নিয়ে সংগঠন এ কাজগুলো করবে। এভাবে এগিয়ে আসলে মসজিদগুলোকে আল্লাহর দ্বীনের সত্যিকার কেন্দ্রে রূপান্ত রিত করা যাবে। সমাজ পরিবর্তনে মসজিদগুলো জীবন্ত ভূমিকা রাখতে পারবে।

৬। হাট-বাজার সংস্কার:
আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে হাট-বাজারের গুরুত্ব অনেক। সেখানে সপ্তাহে এক বা একাধিক দিনে এলাকার অসংখ্য লোকের সমাবেশ ঘটে। ফলে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ, আদান-প্রদান, ভাব বিনিময় সাধারণত হাটগুলোতেই হয়। এখানকার পরিবেশ, কথা-বার্তা এলাকাবাসীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। সত্যিকার অর্থে হাট-বাজারগুলোতে দ্বীনি পরিবেশ সৃষ্টি করা, দ্বীনের প্রচারের ব্যবস্থা করা, নানাবিধ জুলুম অত্যাচার থেকে জনগণকে বাঁচানোর উদ্যোগও জামায়াত কর্মীদেরকে নিতে হবে। প্রত্যেক বাজারেই মসজিদ থাকে। মসজিদের প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। বাজার কমিটি ও মসজিদ কমিটি গঠনে আমাদেরকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

৭। পাঠাগার প্রতিষ্ঠা:
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে জ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এবং লেখাপড়ার ব্যাপক প্রচলন করার জন্য এলাকায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সব পাঠাগারে ইসলামী আন্দোলনের সাহিত্য যাতে প্রাধান্য পায় তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। থানা কেন্দ্রে ভাল মানের একটি পাঠাগার আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই থানা কেন্দ্রে একটি উন্নতমানের পাঠাগার কায়েমের উদ্যোগ নিতে হবে।

৮। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ:
আমাদের জনশক্তিকে সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ-কর্মে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে সদস্য হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া মসজিদ, ফোরকানিয়া মাদরাসা ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে অংশগ্রহণে আমাদের নির্লিপ্ত থাকা ঠিক হবে না। জনশক্তি ও সাংগঠনিক মজবুতি অনুযায়ী এগুলোতে ভূমিকা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে জনশক্তির ব্যক্তিগতভাবে যেমন ভূমিকা থাকবে, সংগঠনও তদ্রুপ খোঁজ-খবর রাখবে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দান করবে।

৯। ক্লাব, সমিতি, শরীর চর্চা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা:
দেশের যুব সমাজকে আমাদের আন্দোলনে উৎসাহী করার জন্য এ কাজগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা অবসরে এসব কাজে সময় ব্যয় করে থাকে। অথচ এগুলোতে আমাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই। অতএব এলাকার ক্লাব, সমিতি, শরীরচর্চা কেন্দ্রগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। আর সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে এলাকার যুবকদের নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে ক্লাব, সমিতি স্থাপন ও পরিচালনা করতে হবে।

১০। সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা:
জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। যারা অসামাজিক কাজে লিপ্ত তাদেরকে বুঝাতে হবে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজনকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করাটাই আসল প্রতিরোধ। সচেতন জনগণকে সক্রিয় জনশক্তিতে পরিণত করে সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং তা বন্ধ করে দিতে হবে।

খ) অপসংস্কৃতি রোধ ও ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ
অপসংস্কৃতি রোধ:
অপসংস্কৃতি রোধের জন্য জনমত সৃষ্টি করাই বড় কাজ। এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে জনগণকে আকৃষ্ট করতে হবে।
(১) সিনেমা, টিভি, ভিসিআর ইত্যাদির প্রোগ্রাম কীভাবে ও কোন পথে আমাদের ক্ষতি করছে তা জনগণকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এগুলো যে নৈতিক মান ধ্বংস করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে তাও জানিয়ে দিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার ও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও সতর্ক করতে হবে।
(২) অশ্লীল পত্র-পত্রিকা যে বিশেষ করে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা জনগণের দৃষ্টিতে আনতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে বেকার যুবকদের অর্থ কীভাবে লুটে নেয়া হচ্ছে সে দিকেও জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। এগুলো যে একশ্রেণির অর্থলোলুপ ব্যক্তিদের কারসাজি তাও জনগণকে জানিয়ে দিতে হবে।
(৩) বিদেশী গণমাধ্যমগুলো খবর বিকৃত করে মিথ্যা প্রচার করে। এগুলোর মাধ্যমে তারা আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখতে চায়। শুধু তাই নয় বিদেশী শক্তি আমাদের জাতীয় চরিত্র ধ্বংস করার জন্য আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোকেও ব্যবহার করে। আমাদের জনগণকে এ ব্যাপারে ওয়াকিফহাল করতে হবে।
(৪) বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, নাচ-গান ইত্যাদি আমাদের নৈতিক সত্তাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে, পত্র-পত্রিকায় লিখে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে জনগণের ভেতরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
(৫) মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য, হাউজি, জুয়া, প্রদর্শনী ইত্যাদি একদিকে মুষ্টিমেয় লোকদেরকে টাকার কুমির বানিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে চরিত্র ধ্বংস করে সবদিক দিয়ে জাতিকে দেউলিয়া করছে। এর বিরুদ্ধে এলাকার লোকদের নিয়ে কার্যকর ও গঠনমূলক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
(৬) অশ্লীল বিজ্ঞাপন, জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ, নৈতিকতা বিরোধী হোটেল ব্যবসা ইত্যাদি ব্যভিচারকে উৎসাহিত করছে। যা ক্রমান্বয়ে দেশটাকে ছেয়ে ফেলছে। হাটে-বাজারে, পথে-ঘাটে, অলিতে- গলিতে, এহেন কার্যকলাপের পরিধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি জাতিকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য এর চেয়ে বড় মাধ্যম আর নেই। অতএব এর বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিবাদী করে তুলতে হবে। একদিকে পর্দার বিধান উপেক্ষা করে অর্ধ-উলঙ্গ নর্তকীদের নাচিয়ে আনন্দফূর্তির মাধ্যমে যুবকদের চরিত্র নষ্ট করবে, অপরদিকে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেবে এটা হাস্যকর। এ অবস্থায় মুসলিমদেরকে পর্দার পবিত্র বিধান মানার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে এবং অন্যদেরকেও শালীন পোশাকের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।

ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ:
(১) পত্র-পত্রিকা প্রকাশ: অধস্তন সংগঠনগুলো ঊর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন সময় সাময়িক পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খরচের বাহুল্য করা যাবে না।
(২) ইসলামী গান রচনা ও প্রচলন: ক্রমান্বয়ে সর্বস্তরে সংগঠন অনুমোদিত ইসলামী গানের প্রচলন করা যেতে পারে।
(৩) কিরাআত, ইসলামী গানের রেকর্ড: ব্যাপকভাবে বাজানোর উদ্দেশ্যে কিরাআত, হামদ-না’ত ও ইসলামী গানের রেকর্ড তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে প্রাপ্ত ভাল ক্যাসেট সংগ্রহ করে প্রচার করতে হবে।
(৪) প্রদর্শনী: সংগঠনের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তথ্যভিত্তিক প্রদর্শনী চালু করা যেতে পারে।
(৫) জ্ঞানচর্চার অভ্যাস: জনগণের মধ্যে পড়াশুনা ও জ্ঞানচর্চার অভ্যাস ও প্রচলন খুবই কম। কাজেই জনগণের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক জ্ঞানচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বাজে আড্ডা, সময় নষ্টকারী খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যাপারে জনগণকে নিরুৎসাহিতকরণ এবং সাথে সাথে কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য পাঠে অনুপ্রাণিত ও অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
(৬) ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালুকরণ: ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করে তোলে। ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একটি সুসভ্য জনগোষ্ঠী তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে।

গ) দুস্থ মানবতার সেবার লক্ষ্যে সমাজসেবা:
(১) দাতব্য চিকিৎসালয়: অর্থের অভাবে সমাজের অনেক লোক চিকিৎসা পায় না, ফলে নিজেরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে, সমাজ ও ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে যায়। অতএব এদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা মানবিক কাজ। আমাদের ভূমিকা হবে এক্ষেত্রে অগ্রণী। যেখানে সম্ভব সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে এ্যালোপ্যাথ অথবা হোমিওপ্যাথ দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চিকিৎসালয়ের স্থান, ডাক্তার এবং প্রয়োজনীয় ঔষধের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই এ কাজে হাত দেয়া উচিত। উল্লেখ্য, স্থানীয় লোকদের সহযোগিতা নিয়ে এ কাজগুলো করতে হবে।
(২) রোগীর পরিচর্যা: ডাক্তার ডেকে আনা, প্রয়োজনে এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা ঔষধ এনে দেয়া বা কিনে দেয়া, মাথায় পানি ঢালা, রোগীর পার্শ্বে বসা ও সান্ত্বনামূলক কথা বলা ইত্যাদি কাজ আঞ্জাম দেয়া খুবই জরুরি। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহরও শিক্ষা এটা। তাই এ কাজে আমাদেরকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
(৩) পরিচ্ছন্নতা অভিযান: খাল, নালা, ড্রেন ইত্যাদিতে ময়লা জমে মাঝে মাঝে এলাকার জনবসতিকে অচল করে দেয়। পুকুরের কচুরিপানা মশার উপদ্রব বাড়িয়ে দেয়। স্থানীয় সংগঠন মাঝে মাঝে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে এক্ষেত্রে জনগণের যথার্থ খেদমত করতে পারে।
(৪) রাস্তাঘাট মেরামত: এলাকায় মাঝে মাঝে রাস্তা-ঘাট চলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে সাঁকো বা পুলের অভাবে জনগণের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খেয়া নৌকার অভাবে অনেক সময় সাঁতরিয়ে পার হতে হয়। আমাদের স্থানীয় সংগঠনকে এ সব সমস্যা সমাধানে তৎপর হতে হবে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনবোধে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে রাস্তাঘাট মেরামত, সাঁকো স্থাপন, খেয়া নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৫) অফিস-আদালতে কাজের সহযোগিতা: অফিস-আদালতে জনগণের বিভিন্নমুখী কাজ থাকে। কিন্তু সে কাজ অনেকের দ্বারা আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয় না। যেমন: চিঠিতে ঠিকানা লেখা, ফরম পূরণ করা, নোটিশ বুঝিয়ে দেয়া, দরখাস্ত লেখা ও পেশ করা সার, ঋণ ইত্যাদি সংগ্রহ করা, খাজনা, ট্যাক্স প্রদান এ জাতীয় কাজগুলোতে জনগণকে সহায়তা করার জন্য জামায়াত কর্মীদেরকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এ কাজ করতে এগিয়ে আসলে সুদ, ঘুষ, দালালের জুলুম কমে আসবে। মানুষের হয়রানি কমবে।
(৬) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আকস্মিক দুর্ঘটনায় জনগণের পাশে দাঁড়ানো:
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে পড়েছে। টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদি প্রায়ই হয়ে থাকে। এছাড়া আগুন লেগে বা যানবাহনের আকস্মিক দুর্ঘটনায় সচ্ছল মানুষ ও আকস্মিকভাবে হয়ে পড়ে অসহায়। এসব অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত বনী আদমের পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি। এ দাবি পূরণে জামায়াতে ইসলামী সর্বদাই এগিয়ে এসেছে এবং সামনেও আসবে ইনশাআল্লাহ। জনশক্তিকে এসব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবে নিয়োজিত করতে হবে।
(৭) বৃক্ষ রোপণ: মানব জীবনে বৃক্ষলতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গাছপালা মহান আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। গাছ মানুষের পরিত্যক্ত দূষিত গ্যাস (কার্বনডাই অক্সাইড) শোষণ করে নিয়ে পরিবেশকে নির্মল ও বিশুদ্ধ রাখে এবং মানুষকে জীবন ধারণের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, গৃহস্থালী আসবাবপত্র তৈরি ও সারা বছরে বিভিন্ন সময়ে উপাদেয় ফল মূল সরবরাহ করে থাকে গাছপালা। এ জন্য প্রতি বছর স্থানীয় সংগঠনের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ অভিযানে ভূমিকা
রাখা প্রয়োজন।
(৮) দুর্দশাগ্রস্ত, বিত্তহীন, ইয়াতীম ও অন্যান্য ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আকস্মিক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাময়িক সহযোগিতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন স্থায়ী পুনর্বাসনের। তেমনি বিত্তহীন ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের স্থায়ী পুনর্বাসন ও বিভিন্ন উৎসব পালনে সহযোগিতা করা দরকার। জামায়াত যতটুকু তহবিল সংগ্রহ করতে পারে তা নিয়েই এ ধরনের কাজে হাত দিতে হবে।
(৯) গরিব ছাত্রদের সহযোগিতা দান: এলাকার গরিব ছাত্রদের লেখাপড়া চালু রাখার ব্যাপারে সহযোগিতা করা যেতে পারে। গরিব ছাত্রদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে বৃত্তি প্রদান, বই-পত্র সরবরাহ এবং লজিং ও টিউশনি ঠিক করে দেয়ার প্রয়াস চালানো যেতে পারে।
(১০) বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান: প্রত্যেক এলাকায় বহু সংখ্যক বেকার যুবক আছে যারা হতাশায় ভুগছে। কেউ লেখাপড়া ও কাজ না জানার কারণে এবং কেউ চাকরির অভাবে করুণ অবস্থায় জীবন যাপন করছে। এদের কর্মসংস্থানের জন্য দায়িত্বশীলগণকে তৎপর হতে হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বেকার যুবকদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। বিভিন্নধর্মী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সরকারের অফিস আদালতে কর্মসংস্থানের খোঁজ নিতে হবে। এরপর যেখানে যাকে সম্ভব সেখানে তাকে নিয়োগ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাদের উপযুক্ত বৃত্তিমূলক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থার মাধ্যমে সক্ষম করে তুলেও সহযোগিতা করা যেতে পারে।
(১১) কর্জে হাসানা: সমাজে অভাবগ্রস্ত লোকের ভিড়। কয়েকটি টাকা ঋণের জন্য অনেকেই অস্থিরভাবে ঘুরে, অনেকে ঋণের বিনিময়ে চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণে জড়িয়ে পড়ে। ঋণদান একটা বড় মানবিক কাজ। জামায়াত কর্মীগণ ব্যক্তিগতভাবে ও সমষ্টিগতভাবে কর্জে হাসানার মাধ্যমে এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।
(১২) বন্দি মুক্তি: নানা কারণে কখনো কখনো মানুষ কলহ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে গ্রেফতার করানো হয়। নিরীহ ও গরিব মানুষেরাই সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকে। কারাগারে আটক থাকায় আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাদের পরিবারকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। মিথ্যা মামলায় আটককৃত এ সকল বন্দিদেরকে মুক্ত করার জন্য আমাদের স্থানীয় সংগঠনকে আইনী সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
(১৩) ভ্রাম্যমাণ দাতব্য চিকিৎসালয়: চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত লোকদের সংখ্যা এত বেশি যে, স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে গরিব এলাকার জন্য এটা খুবই কঠিন কাজ। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ দাতব্য চিকিৎসালয় এক্ষেত্রে কিছুটা অভাব পূরণ করতে পারে। তবে কেবল খুব মজবুত সংগঠনই এ কাজ করতে পারে।
(১৪) সালিশ: বহু ব্যক্তির সমষ্টি সমাজ। সমাজের নানান ধরনের মানুষ একত্রে বাস করার কারণে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ হওয়া স্বাভাবিক। মেজাজ-প্রকৃতি, আচার-আচরণ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে অনেক সময় পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়ে থাকে। কোন কারণে ঝগড়া-বিবাদ লেগে গেলে তা দ্রুত সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করে দেয়া সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যক। বিবাদ মিটিয়ে পরস্পরের সম্পর্ক স্বাভাবিক করে দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জনশক্তিকে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
(১৫) বিয়ে-শাদি: সমাজের অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের বিয়ে-শাদির ব্যবস্থা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কাজ। আমাদের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলসহ জনশক্তির মধ্যে যাদের পক্ষে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা সম্ভব তাদের এ ব্যাপারে সাধ্যমত ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
(১৬) পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা প্রেরণ: এলাকার অনেক সমস্যা আছে যেগুলো স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যায় না। এ সব ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ ও চাপ সৃষ্টির জন্য জামায়াত কর্মীদেরকে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে হবে।
(১৭) মাইয়েতের কাফন-দাফন ও জানাযায় অংশগ্রহণ: মাইয়েতের কাফন- দাফন ও জানাজা ফরজে কিফায়া। কোন লোক মারা গেলে সেই এলাকার জামায়াত দায়িত্বশীল বা কর্মীর জন্য উক্ত মাইয়েতের গোসল দেয়া, কাফন পরানো, কবর খোঁড়া ও জানাজায় শরীক হওয়া অপরিহার্য দায়িত্ব হয়ে পড়ে। কোন প্রোগ্রামকে মুলতবি করে হলেও মাইয়েতের কাফন-দাফন ও জানাজায় শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
(১৮) প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের সহযোগিতা: ক্লাব বা সমিতির নামে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে। সমাজ সচেতন কর্মী ও যুবকদের এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকতে দেখা যায়। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট নিয়ে ক্লাব বা সমিতির ভাল কাজগুলোর সহায়তা করে অথবা অন্য কোনোভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে প্রভাব সৃষ্টি করা দরকার। এভাবে প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে ভাল কাজের দিকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা এবং খারাপ কাজ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানো যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করে ইসলামী দিবসসমূহ পালন করা যেতে পারে।
(১৯) সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সৃষ্টি: দাওয়াতি কাজ করার জন্য এগুলো অত্যন্ত ভালো মাধ্যম। অবশ্য এর মাধ্যমে বিলম্বে ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে ফেলা যাবে না। কারণ ফল বিলম্বে পাওয়া গেলেও এ প্রক্রিয়ায় দাওয়াত খুবই সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে। এজন্য প্রত্যেকটি ইউনিটের কর্মীদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে রাস্তাঘাট, মসজিদ গড়া ও সংস্কার এবং ক্লাব, সমিতি গঠন ইত্যাদি কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এসব ক্লাব বা সমিতির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগও নেয়া যেতে পারে। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের লোকদের সাথে পরিচিতি ঘটে যা দাওয়াতি কাজের জন্য সহায়ক। [বিঃ দ্রঃ সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমের ব্যাপারে আরো জানার জন্য প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত সমাজকল্যাণ ম্যানুয়াল বইয়ের সহযোগিতা নেয়া
যেতে পারে।]

চতুর্থ দফা কর্মসূচি: রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও সংশোধন

গঠনতন্ত্রের ভাষায় জামায়াতের চতুর্থ দফা কর্মসূচি হলো:
নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে আল্লাহভীরু, চরিত্রবান, সৎ ও যোগ্য লোকের নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা সরকারের সংশোধনই হচ্ছে এ দফার মূল কাজ। এসব কাজের মাধ্যমেই আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন কায়েম হবে। নিম্নোক্ত কাজগুলো এ দফার অন্তর্ভুক্ত:
১। সমাজ বিশ্লেষণ:
আমাদের সমাজকে জানতে হলে এর কাঠামো, পরিবেশ, গতিধারা, পরিধি ইত্যাদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এর দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে। ভাল দিকগুলো উপলব্ধি করতে হবে। আর অনুসন্ধান ও মূল্যায়নের মাধ্যমে আমাদের কর্তব্য, কৌশল ও পদক্ষেপ নিরূপণ করতে হবে। উল্লেখ্য যে, সামাজিক মূল্যায়নে ভুল করে বসলে সমূহ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। ঊর্ধ্বতন সংগঠনেরই দায়িত্ব সামাজিক মূল্যায়ন করা। অধঃস্তন সংগঠনগুলো সে মূল্যায়নকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করে কাজ করবে।
২। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ:
এটাও মূলত ঊর্ধ্বতন সংগঠনের কাজ। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গতিধারা ও চরিত্র নিরূপণ করে নিতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শক্তির তৎপরতার যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক দর্শন, লক্ষ্য ও চরিত্র যথাযথভাবে বুঝতে হবে। বৈদেশিক শক্তির প্রভাব-প্রতিপত্তি, দেশের অভ্যন্তরে তাদের কর্মকৌশল ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। জনগণের রাজনৈতিক চেতনা, চিন্তার বিন্যাস ও উপলব্ধির ক্ষমতা আঁচ করতে হবে। তাদের মন- মানসিকতা, চাওয়া-পাওয়া ও ঝোঁক প্রবনতা ভাল করে বুঝতে হবে। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক গতিপ্রবাহ ও সার্বিকভাবে নৈতিক মান ইত্যাদির বাস্তবধর্মী মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকৌশল, বক্তব্যের ধরন, পদক্ষেপ ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করতে হবে। দলীয় উপায়-উপকরণ ও জনশক্তির যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষণের আলোকে সংগঠনের সর্বপর্যায়ে গোটা জনশক্তিকে ধারণ ক্ষমতানুযায়ী সচেতন ও শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
৩। বিবৃতি প্রদান:
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনবোধে জনমত সৃষ্টি ও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিবৃতি প্রদান করতে হবে। কারণ আধুনিক রাজনীতিতে বিবৃতিও আন্দোলনের অংশ।
অধঃস্তন সংগঠনগুলো এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য মাঝে মধ্যে বিবৃতি প্রদান করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে জামায়াত কোনো বিবৃতি সর্বস্ব দল নয়।
৪। স্মারকলিপি পেশ:
জামায়াত নীতিগতভাবে গঠনমূলক আন্দোলন করে। সমস্যা যেমন তুলে ধরে তেমনি সমাধানও পেশ করে। অযথা হৈ চৈ বাধাঁনোর চেয়ে কাজ আদায় করাই জামায়াতের নিকট পছন্দনীয়। এ জন্য স্থানীয় ও জাতীয় সমস্যা ও তার সমাধানের দিক নির্দেশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা যেতে পারে। স্মারকলিপি খুবই স্পষ্ট, মার্জিত ও সরল ভাষায় হওয়া দরকার। কোথাও স্মারকলিপি পেশ করতে হলে অধঃস্তন সংগঠন পূর্বাহ্নে ঊর্ধ্বতন সংগঠনের সাথে কথা বলে নেবে।
৫। দাওয়াতি জনসভা:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে একটি দুর্নীতিমুক্ত, শোষণহীন স্বাধীন-সার্বভৌম ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেখানে থাকবে পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা এবং প্রতিটি নর-নারী পাবে পরিপূর্ণ মানবিক অধিকার ও মর্যাদা। জামায়াত বিশ্বাস করে জনগণের আস্থা, সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই ক্রমান্বয়ে এ ধরনের একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এজন্যে সর্বস্তরের গণমানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ কাজ মুসলিমদের নৈতিক, মানবিক ও ঈমানী কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা/থানা বা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক নিয়মিত জনসভার আয়োজন করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় যাবতীয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা পূর্বেই গ্রহণ করতে হবে যাতে জনসভাকে পূর্ণ সফল ও সার্থক করে তোলা যায়।
৬। পথসভা, গণজমায়েত, মিছিল, জনসভা ও বিক্ষোভ:
জনগণের দাবি আদায়ে তাদেরকে সচেতন করা, অন্যায় জুলুমের প্রতিরোধ সৃষ্টি করা, ক্ষমতাসীন মহলের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য অবস্থা, পরিবেশ ও প্রয়োজনীয়তা বুঝে জামায়াত পথসভা, গণ জমায়েত, মিছিল, জনসভা ও বিক্ষোভের আয়োজন করে থাকে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও নিয়ম- শৃঙ্খলা মেনে চলেই এ কাজগুলো করা হয়।
৭। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ:
প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত দায়িত্বশীলদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব দায়িত্বশীলগণ দেশের আইন-শৃংখলা তথা সার্বিক পরিস্থিতির জন্য নিয়োজিত। তাদের সাথে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দ্বীনের দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোচনা করা যেতে পারে। তাদেরকে বই-পত্র উপহার দেয়া যেতে পারে। এভাবে প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা লাভ করা যেতে পারে।
৮। রাজনৈতিক যোগাযোগ:
জামায়াত বিশ্বাস করে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা দেশের ও মানুষের কল্যাণ চান। এ জন্য জাতীয় কল্যাণের স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মত ও পথের পার্থক্য সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। ইসলামী আদর্শের নিরিখে দেশ ও জাতির কল্যাণের দিকে সকলকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে। দলীয়ভাবে চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও যেন ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকে সেরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৯। সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ ও সাংবাদিক সম্মেলন:
জামায়াত নেতৃবৃন্দকে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় প্রেস ক্লাবগুলোতে যাতায়াত করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুতে সাংবাদিক সম্মেলন করা যেতে পারে।
১০। বার লাইব্রেরিতে যোগাযোগ:
রাজনৈতিক ময়দানে আইনজীবীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকেন। আইনজীবীদের সমাবেশ স্থল হলো বার লাইব্রেরি। জামায়াত নেতৃবৃন্দকে বার লাইব্রেরির মাধ্যমে আইনজীবীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। সময় সময় আইনজীবীদের সমাবেশে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখতে পারেন।
১১। ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ:
মুক্তবিশ্বে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ই প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে চেম্বার অব কমার্সও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চেম্বার অব কমার্সের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি করে আদর্শের দাওয়াত দিতে হবে। এলাকায় এলাকায় আদর্শের অনুসারী ব্যবসায়ীদের সমিতি বা সংস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।
১২। পত্র-পত্রিকা প্রকাশ:
জামায়াতের বক্তব্য, চিন্তাধারা ও ভূমিকা সম্পর্কে জনগণকে জ্ঞাত করানোর জন্য পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করতে হবে। অধঃস্তন সংগঠন এ ধরনের কিছু প্রকাশ করতে চাইলে পূর্বাহ্নে ঊর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতি নিতে হবে।
১৩। জনমত গঠন:
আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি হয়। এ সকল ইস্যুতে সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি কী- আমাদের এখন কী করণীয়- জাতিকে কোনদিকে উদ্বুদ্ধ করা দরকার- এসব ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে মত প্রকাশ করা দরকার এবং জামায়াতের মতই যেন জনমতে পরিণত হয় এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো দরকার। ব্যক্তিগত যোগাযোগ, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার লাগানো, বই-পুস্তক বিতরণ, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়। ঊর্ধ্বতন সংগঠন থেকে সরবরাহকৃত উপকরণ কাজে লাগানো ও জনমত সৃষ্টির জন্য অন্যান্য নির্দেশাবলী যথাযথভাবে মেনে চলাই এক্ষেত্রে অধঃস্তন সংগঠনগুলোর কাজ। এসব কাজ নিখুঁতভাবে এবং দক্ষতার সাথে আঞ্জাম দিতে হবে।
১৪। নির্বাচন:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী এবং নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সৎ ও যোগ্য লোককে নেতৃত্বে বসাতে চায়। সর্বস্তরের গণ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়েই তা করা সম্ভব বলে জামায়াত মনে করে। সুতরাং এ লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে ভাল করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমাদের জনশক্তিকে আদর্শ সমাজ নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাই জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনকেও সমপরিমাণে গুরুত্ব দিতে হবে। যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে ভাল করতে হলে ৪টি বিষয়ে সময় হাতে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে-
i) আদর্শিক সমর্থক বলয় সৃষ্টি;
ii) তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠন;
iii) নির্বাচনী কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার যোগ্যতা সম্পন্ন প্রয়োজনীয় জনশক্তি;
iv) গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব।

উপরি-উক্ত ৪টি বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য পরিকল্পিতভাবে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে:
ক. ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় প্রকৃত ভোটারদের ভোটার হওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা চালানো।
খ. নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ে পুরুষ, মহিলা, শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
গ. ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক পরিসরে ইসলামী চিন্তা ও চেতনা সৃষ্টির জন্য বিভিন্নমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
ঘ. নির্বাচনী এলাকার ব্যক্তিগত ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে প্রার্থীকে অধিকতর সম্পৃক্ত হতে হবে।
ঙ. সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও যুবশক্তিকে আন্দোলনে শামিল করার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে।
এ সকল কাজ বাস্তবায়নের জন্য জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে দায়িত্বশীল নিয়োগ এবং সম্ভব হলে কমিটি গঠন করতে হবে।

১৫। রাজনৈতিক বিভাগ সৃষ্টি:
জেলা/মহানগরীর রাজনৈতিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য একটি রাজনৈতিক বিভাগ থাকবে। এ রাজনৈতিক বিভাগের কাজ দুটি:
(ক) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশ কার্যকরকরণ
(খ) স্থানীয় রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ ও কেন্দ্রীয় নীতিমালার আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণ।

১৬। যাকাত আদায়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি:
এটাও এ দফার কাজ। কারণ অর্থনীতি ও রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জুলুম-শোষণ বন্ধ করে সম্পদের সুষম বন্টনের জন্য যাকাত ব্যবস্থা অন্যতম পথ। এ জন্য জামায়াতকে যাকাত আদায়ের পরিবেশ সৃষ্টিতে তৎপর হতে হবে। যাকাত দিতে সামর্থ্যবান লোকদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সাথে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত যোগাযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও আদায়ের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় সম্বলিত হ্যান্ডবিল বা পুস্তিকা জনগণের নিকট পৌঁছাতে হবে। তাছাড়া আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদির মাধ্যমেও এ বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জামায়াতের যাকাত ফান্ড শরিয়ত নির্ধারিত খাতেই যে ব্যবহৃত হয় তা যাকাত দাতা ভাই-বোনদের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে।

১৭। সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক জুলুমের প্রতিবাদ ও সমাধান পেশ:
অর্থনৈতিক জুলুম ও শোষণে জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কালোবাজারী, মুনাফাখোরী, চোরাকারবারি ইত্যাদিতে দেশ ছেয়ে গেছে। ফলে গরিব আরো গরিব হচ্ছে, ধনী আরও ধনী হচ্ছে। তাই স্থানীয়ভাবে ও জাতীয় পর্যায়ে যাবতীয় অর্থনৈতিক জুলুম ও শোষণের প্রতিবাদ করতে হবে ও তার সমাধান পেশ করতে হবে।

১৮। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কাজ:
ইসলাম সর্বজনীন এক জীবনাদর্শ। শান্তি ও নিরাপত্তার সুমহান আদর্শ ইসলাম। ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে প্রবর্তিত আদর্শ। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষায় ইসলাম জোর তাকিদ দিয়েছে। ইসলাম তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। মুসলিম সমাজে অমুসলিমরা অবাধে বসবাস করবে এটিই মহান আল্লাহ তা’য়ালার অমোঘ বিধান। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ইনসাফভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। জামায়াত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাই জামায়াতের এ আন্দোলনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের শামিল করার জন্যে দাওয়াত প্রদান করতে হবে।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন দফার কাজ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো যথাযথভাবে বুঝার ওপরে সঠিক অর্থে কাজের অগ্রগতি নির্ভর করে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সহিহ বুঝ এবং সে অনুযায়ী কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন ॥

পরিশিষ্ট- ১

সদস্যপদের (রুকনিয়াতের) মান সংরক্ষণ ও সদস্যদের (রুকনদের) জন্য জরুরি কতিপয় জ্ঞাতব্য:

বিষয় – মান – সাধারণ মান – বিপদসীমা

০১. কুরআন অধ্যয়ন – ৩০ – ২৫ – ২০
০২. হাদিস অধ্যয়ন – ৩০ – ২৫ – ২০
০৩. ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন – ৩০০ – ২০০ – ১০০
০৪. জামায়াতে নামাজ – ১৫০ – ১২৫ – ১০০
০৫. দাওয়াতি টার্গেট সাক্ষাত – ৫ – ৩ – ২
০৬. কর্মী টার্গেট সাক্ষাত – ৪ – ৩ – ২
০৭. সদস্য (রুকন) টার্গেট সাক্ষাত – ৬ – ৩ – ২
০৮. কর্মী যোগাযোগ – ৩ – ২ – ১
০৯. পারিবারিক বৈঠক – ৪ – ২ – ১
১০. সামাজিক কাজ – ২০ – ১০ – ৫
১১. সময় দান – ৯০ ঘণ্টা – ৭৫ ঘণ্টা – ৬০ ঘণ্টা
১২. সাংগঠনিক বৈঠকাদিতে যোগদান – ১০০% – ৭৫% – ৫০%
১৩. ময়দানের কর্মসূচিতে উপস্থিতি – ১০০% – ৭৫% – ৫০%
১৪. রিপোর্ট সংরক্ষণ – ৩০ – ২৫ – ২০
১৫. আত্ম-সমালোচনা – ৩০ – ২৫ – ২০
১৬. মাসিক ইয়ানত প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে নিয়মিত আদায় করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ৩ মাস বাকি রাখা যাবে না। ইয়ানত আয়ের অন্তত ৫% হওয়া উচিত।
১৭. ৪৮ ঘণ্টার জন্য জেলা/মহানগরীর বাইরে যেতে হলে উপজেলা/থানা আমীর থেকে ছুটি নিতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য বাইরে যেতে হলে জেলা/ মহানগরীকে জানাতে হবে।
১৮. ব্যক্তিগত রিপোর্ট বিপদসীমা অতিক্রম করলে নির্দিষ্ট কারণ রিপোর্টের সাথে লিখিতভাবে জানাতে হবে। সাংগঠনিক বৈঠকাদি ও ময়দানের কর্মসূচি হতে ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে।
১৯. সংগঠনের যে কোনো সিদ্ধান্ত এবং যে কোনো পর্যায়ের দায়িত্বশীলের ব্যাপারে মন্তব্য বা সমালোচনা সাংগঠনিকভাবেই করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অসাংগঠনিক ও অসাংবিধানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না।

পরিশিষ্ট-২

কর্মী গঠন ও কর্মীদের মানোন্নয়ন

কৰ্মী:
কর্মী সংগঠনের অন্যতম মৌলিক উপাদান। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক তৎপরতায় লিপ্ত সংগঠনের আওতাভুক্ত সকল জনশক্তিই আমাদের কর্মী। মান উন্নয়নের সুবিধার্থে জনশক্তির স্তর বিন্যাস করা হয়েছে: সহযোগী সদস্য, কর্মী, সদস্য (রুকন)।

কর্মী হওয়ার শর্ত:
১। ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখা।
২। বৈঠকে উপস্থিত হওয়া।
৩। নিয়মিত ইয়ানত দেয়া।
৪। দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণ।
৫ ৷ সামাজিক কাজ করন।

কর্মী গঠনের পদ্ধতি:
১। কর্মী গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
২। সম্পর্ক স্থাপন ও সাহচর্যদান।
৩। পরিকল্পিতভাবে বই পড়ানো। এ জন্য লাইব্রেরিগুলোতে পর্যাপ্ত পাঠ্যসূচিভুক্ত বই থাকতে হবে।
৪। অন্তর্দ্বন্দ নিরসন ও উৎসাহ দান, অন্য মতবাদের অসারতা তুলে ধরা, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা।
৫। সাংগঠনিক পরিবেশে আনয়ন।
৬। মৌলিক ইবাদত সমূহের প্রতি মনোযোগী করা এবং কাছে থেকে বা রেখে ত্রুটি সংশোধন করা।
৭। কাজ দেয়া ও রিপোর্ট নেয়া।
৮। ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহে উদ্বুদ্ধ করা।
৯। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দান।
১০। দাওয়াতি কাজে নিয়োগ করা, গ্রুপ দাওয়াতি কাজে সাথে নেয়া।
১১। নিয়মিত তত্ত্বাবধানে রাখা।
১২। আন্তরিকতার সাথে দোয়া করা।

কর্মীদের মানোন্নয়ন:
১। পরিকল্পনা গ্রহণ (কর্মীদের সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে)
২। পাঠ্যসূচি অনুযায়ী অধ্যয়নের তদারকি, পাঠ দেয়া তা দেখা, কুরআন হাদিস সাহিত্য পাঠাগারে না থাকলে সংগ্রহ করে দেয়া।
৩। ইবাদতে নিষ্ঠা সৃষ্টি, জামায়াতে সালাতের প্রতি গুরুত্ব দান, ফজরে ডেকে দেয়া ইত্যাদি।
৪। আখলাক ও মুয়ামালাত সুন্দর করা।
৫। দায়িত্ব প্রদান ও তত্ত্বাবধান।
৬। ত্যাগ ও কুরবানির মনোভাব সৃষ্টি।
৭। প্রয়োজনীয় প্ৰশিক্ষণ দান।
৮। ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের সাহচর্যে আনয়ন।

পরিশিষ্ট-৩

সম্মেলন ও বৈঠকাদি পরিচালনা

বৈঠকাদি ও সম্মেলনের নমুনা
১. ইউনিটে মাসে ৪টি প্রোগ্রাম নিম্নরূপ:

প্রথম সপ্তাহে কর্মী বৈঠক:
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত/হাদিস পাঠ
iii) ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, মন্তব্য ও পরামর্শ
iv) ইউনিটের মাসিক রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
v) পরিকল্পনা গ্রহণ
vi) কর্ম বণ্টন
vii) সমাপনী বক্তব্য

দ্বিতীয় সপ্তাহে সাধারণ সভা:
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) ব্যাখ্যাসহ কুরআন তিলাওয়াত/হাদিস পাঠ
iii) নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বক্তৃতা
iv) জামায়াতের পরিচয়ভিত্তিক বক্তব্য
v) সভাপতির ভাষণ
vi) পরিচিতি/পুস্তক বিতরণ
নোট: সাধারণ সভায় মহল্লার নতুন লোকদের অধিক হারে উপস্থিত করানোই কর্মীদের দায়িত্ব হবে। সম্ভব হলে সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করা।

তৃতীয় সপ্তাহে প্রশিক্ষণ (তারবিয়াতি) বৈঠক:
i) অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত
ii) সহিহ করে আল কুরআন পড়তে শেখা
iii) জরুরি দুআ /মাসায়িল শেখা
iv) সামষ্টিক পাঠ (বই, কুরআনের বিশেষ অংশ, হাদিস, কোন বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদি)
v) সমাপনী বক্তব্য

চতুর্থ সপ্তাহে দাওয়াতি অভিযান
আল্লাহ তা’য়ালার দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য ইউনিটের সকল কর্মী গ্রুপ ভিত্তিক দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণ করবেন। ইউনিট সভাপতির নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হবে। গ্রুপের সাথে সহযোগী সদস্য ফরমসহ প্রয়োজনীয় দাওয়াতি উপকরণ রাখতে হবে।

২. ওয়ার্ড বৈঠক:
i) দারসুল কুরআন/ দারসুল হাদিস
ii) বিগত বৈঠকের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iii) রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
iv) নিছাব আদায়
v) মাসিক পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ
vi) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশাবলি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ
vii) বিবিধ
viii) মুহাসাবা
ix) সমাপনী বক্তব্য।

৩. পৌরসভা/ইউনিয়ন বৈঠক:
i) দারসুল কুরআন/ দারসুল হাদিস
ii) বিগত বৈঠকের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iii) ওয়ার্ড রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
iv) নিছাব আদায়
v) ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
vi) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশাবলি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ
vii) সফর প্রোগ্রামসহ মাসিক পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ
viii) বিবিধ
ix) মুহাসাবা
x) সমাপনী বক্তব্য।

৪. মাসিক সদস্য (রুকন) বৈঠক: উপজেলা/থানা/পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড
i) সংক্ষিপ্ত দারসুল কুরআন/দারসুল হাদিস
ii) বিগত বৈঠকের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iii) ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা (টার্গেট পর্যালোচনাসহ)
iv) সাংগঠনিক সমস্যা পর্যালোচনা
v) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের ব্যাপারে পরামর্শ
vi) সদস্য (রুকন) প্রার্থী সম্পর্কে আলোচনা (যদি শূরা না থাকে)
vii) মুহাসাবা
viii) বিবিধ
ix) সমাপনী বক্তব্য।

৫. উপজেলা/থানা বৈঠক:
i) দারসুল কুরআন/ দারসুল হাদিস
ii) বিগত বৈঠকের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iii) পৌরসভা/ইউনিয়ন/ইউনিট রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
iv) নিছাব আদায়
v) ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
vi) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশাবলি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ
vii) সফর প্রোগ্রামসহ মাসিক পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ
viii) মুহাসাবা
ix) সমাপনী বক্তব্য।

৬. উপজেলা/থানা কর্মপরিষদ/টিম বৈঠক:
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) বিগত বৈঠকের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iii) সাংগঠনিক দায়িত্বশীলের সফর প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন, রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
iv) বিভাগীয় কাজের রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
v) পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা (প্রতি ৩ মাসে)
vi) সফর প্রোগ্রামসহ মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ
vii) ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশাবলি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ
viii) মুহাসাবা
ix) সমাপনী বক্তব্য।

৭. উপজেলা/থানা সম্মেলন:
(সর্বস্তরের জনশক্তি নিয়ে)
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) দারসুল কুরআন
iii) সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পেশ
iv) বিষয়ভিত্তিক আলোচনা
v) সাধারণ প্রশ্নোত্তর
vi) সমাপনী বক্তব্য।

৮. ষান্মাসিক সদস্য (রুকন) সম্মেলন (জেলা/মহানগরী):
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) দারসুল কুরআন/ দারসুল হাদিস
iii) বিগত সদস্য (রুকন) সম্মেলনের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iv) ব্যক্তিগত রিপোর্ট পর্যালোচনা (গ্রুপ ভিত্তিক)
v) সদস্য (রুকন) টার্গেট পর্যালোচনা (গ্রুপ ভিত্তিক)
vi) জেলা/মহানগরী সাংগঠনিক ও বাইতুলমাল রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
vii) সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা আলোচনা
viii) মুহাসাবা
ix)বিষয়ভিত্তিক আলোচনা
x) সাধারণ প্রশ্নোত্তর
xi) সমাপনী বক্তব্য।

৯. জেলা/মহানগরী বৈঠক:
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) দারসুল কুরআন
iii) কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iv) উপজেলা/থানাসমূহের রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
v) নিছাব আদায়
vi) পরিকল্পনার আলোকে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ
vii) সফর প্রোগ্রাম চূড়ান্তকরণ
viii) কেন্দ্ৰীয় নির্দেশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ
ix) মুহাসাবা
x) সমাপনী বক্তব্য।

১০. জেলা/মহানগরী শূরা: সাধারণ অধিবেশন
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iii) বিগত কর্মপরিষদ বৈঠকসমূহের কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন
iv) পরিকল্পনা ও বাজেট গ্রহণ/ পর্যালোচনা
v) জেলা/মহানগরী বার্ষিক রিপোর্ট অনুমোদন (সাংগঠনিক ও বাইতুলমাল)
vi) সদস্য (রুকন) প্রার্থী বিবেচনা
vii) বিভাগীয় ও সাংগঠনিক দায়িত্বশীল নিয়োগ
viii) সমস্যা আলোচনা
ix) মুহাসাবা
x) সমাপনী বক্তব্য।

১১. প্রশিক্ষণ (তারবিয়াত) প্রোগ্রামসহ কর্মী সম্মেলন (জেলা/মহানগরী): কর্মসময় ৫-৬ ঘণ্টা (কেবল মাত্র তালিকাভুক্ত কর্মীদেরকে নিয়ে)
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) সংক্ষিপ্ত দারসুল কুরআন
iii) উপজেলা/থানাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
iv) কর্মীদের ব্যক্তিগত কার্যক্রম পর্যালোচনা (গ্রুপ ভিত্তিক)
v) জেলা/মহানগরী সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পেশ ও পর্যালোচনা
vi) বিষয়ভিত্তিক আলোচনা
vii) সাধারণ প্রশ্নোত্তর
viii) সমাপনী বক্তব্য।

পরিশিষ্ট- ৪
বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও আলোচ্য বিষয়

(ক) কার্যসূচি
১। শিক্ষা বৈঠক: ৬-১৮ ঘণ্টা
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) দারসুল কুরআন/ দারসুল হাদিস
iii) এক বা একাধিক বক্তৃতা
iv) অনুশীলনী বক্তৃতা
v) সামষ্টিক আলোচনা
vi) সমাপনী বক্তব্য
[বি: দ্র: একটি শিক্ষা বৈঠকে দু’টির বেশি বক্তৃতা থাকা উচিত নয়। প্রোগ্রামে মাঝে মাঝে বিরতি থাকা দরকার।]

২। শিক্ষা শিবির: ২৪ ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন
i) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) দারসুল কুরআন/ দারসুল হাদিস
iii) বই, বিষয় ভিত্তিক আলোচনা
iv) সামষ্টিক আলোচনা
v) নিয়মিত কাজের পদ্ধতি আলোচনা
vi) হাতে কলমে শিক্ষা
vii) বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা
viii) প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা
ix) সমাপনী বক্তব্য

৩। নৈশ ইবাদত (এশা থেকে ফজর পর্যন্ত):
Ꭵ) উদ্বোধনী বক্তব্য
ii) দারসুল কুরআন/দারসুল হাদিস
iii) বক্তৃতা/ আলোচনা
iv) নিদ্রা
v) ব্যক্তিগত ইবাদত
vi) কুরআন তিলাওয়াত প্ৰশিক্ষণ
vii) মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা
viii) সমাপনী বক্তব্য
নোট: শববেদারী অর্থ সারারাত জেগে থাকাও নয় আবার শিক্ষা বৈঠকও নয় বরং নিদ্রা, ইবাদত-বন্দেগি ও দারস-আলোচনার মাধ্যমে রাত কাটানো। শববেদারীতে সাংগঠনিক বা অন্য কোনো প্রোগ্রাম থাকা ঠিক নয়। এতে ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।

৪। বক্তৃতা অনুশীলন:
অগণিত মানব গোষ্ঠীর নিকট ইসলামী আদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠনের বক্তব্য পৌঁছানোর জন্য সুবক্তার কোনো বিকল্প নেই। সুবক্তা সৃষ্টির জন্যই এই অনুশীলন।
পদ্ধতি:
i) কয়েকজন কর্মী বাছাইকরণ;
ii) বিষয়বস্তু নির্ধারণ;
iii) আগেই বাছাইকৃত কর্মীদেরকে বিষয়বস্তু অবহিত করণ;
iv) নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে সকলের উপস্থিতি নিশ্চিত করণ;
v) পরিচালক বক্তৃতার যে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও নোট করবেন তা হল;
*সম্বোধন পদ্ধতি
*বক্তব্য বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা
*শব্দ চয়নের মান
*ভাষার শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা
*বোধগম্যভাবে বক্তব্য উপস্থাপন ব্যর্থতা, সফলতা
*বক্তব্য উপস্থাপনে ধীরতা-দ্রুততা
*বক্তার অঙ্গভঙ্গি
*বক্তৃতার আংগিক (প্রারম্ভিক, মধ্যভাগ, সমাপ্তি)
vi) পর্যবেক্ষণ ও নোটের ভিত্তিতে পরিচালক কর্তৃক বক্তৃতা পর্যালোচনা ও সমাপ্তি ঘোষণা।

(খ) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আলোচ্য বিষয়সমূহ:
১। সদস্য (রুকন) প্রশিক্ষণ
i) শপথের আলোকে সদস্যপদ (রুকনিয়াত)
ii) সদস্যের (রুকনের) দায়িত্বানুভূতি ও কর্তব্য নিষ্ঠা
iii) সদস্যের (রুকনের) চারিত্রিক মান
iv) জানমালের কুরবানি-ঈমানের দাবি
v) শাহাদাত মুমিন জীবনের কাম্য
vi) আদর্শ মুসলিম: ব্যক্তি ও পরিবার
vii) আম্বিয়ায়ে কিরামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
viii) সাহাবায়ে কিরামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ix) ঈমান ও আক্বীদা
x) ইত্তেবায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
xi) ইসলামের পারিবারিক জীবন
xii)সমাজ পরিবর্তনে সামাজিক কার্যক্রমের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
xiii) মু’মিনের জেলখানা
xiv) আনুগত্য, পরামর্শ ও মুহাসাবা
xv) তাক্বওয়া ও ইহসান
xvi) আখিরাতের জবাবদিহি

২। দায়িত্বশীলদের শিক্ষাশিবির
i) সংগঠন পরিচালনায় ইসলামী নীতি
ii) সদস্য (রুকন) প্রার্থী পরিচর্যা পদ্ধতি
iii) ইসলামী আন্দোলনের গণভিত্তি রচনার উপায়
iv) আমাদের কর্মনীতি
v) জনশক্তির মানোন্নয়ন ও সংগঠন মজবুতকরণ
vi) আদর্শ সংগঠকের গুণাবলি
vii) ব্যক্তি ও সমাজের ইসলাহ: উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও পদ্ধতি
viii) রিপোর্ট প্রণয়ন ও রেকর্ড সংরক্ষণ
ix) গণসংযোগের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
x) নেতৃত্বের গুণাবলি
xi) ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার
xii) বাংলাদেশে ইসলামের কাজ: সমস্যা ও সম্ভাবনা
xiii) পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
xiv) প্রোগ্রাম প্লানিং ও বাস্তবায়ন
xv) ইসলামী সংগঠন: অন্তর্ভুক্তি, উন্নয়ন, পরিচালনা পদ্ধতি
xvi) ব্যক্তিগত জীবনে পারিপাট্য ও সাংগঠনিক জীবনে শৃঙ্খলা
xvii) আত্মগঠন, কর্মীগঠন ও নেতৃত্বদান
xviii) উপজেলা/থানা সংগঠনকে মজবুত করার উপায়
xix) চরিত্র ইসলামী আন্দোলনের আসল পুঁজি
xx) ইসলাম বনাম সন্ত্রাসবাদ
xxi) মু’মিনের জেলখানা
xxii) গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ইসলাম
xxiii) আমাদের সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও বিদ’আত।
xxiv) ইন্টারনেট/বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াত প্রদানের কৌশল।

৩। অগ্রসর কর্মীদের শিক্ষাশিবির
i) দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
ii) ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের গুণাবলী
iii) ইউনিটের চারটি প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন ও পরিচালনা পদ্ধতি
iv) সাংগঠনিক দুর্বলতা: কারণ ও প্রতিকার
v) সদস্য (রুকন) পদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
vi) আম্বিয়ায়ে কিরামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
vii) সাহাবায়ে কিরামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
viii) যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অগ্নিপরীক্ষা
ix) আল কুরআনের আলোকে মুমিনের জীবন
x) উলূমুল কুরআন: আল কুরআনের পরিচয়
xi) ইকামাতে দ্বীন: গুরুত্ব ও পদ্ধতি
xii) সালাত: জান্নাতের চাবিকাঠি
xiii) ইসলামী শরিয়তে হাদিসের গুরুত্ব
xiv) ফিকাহ শাস্ত্রের ক্রমবিকাশ
xv) ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহবস্থান
xvi) জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস
xvii) সামাজিক কাজের বাস্তবায়ন পদ্ধতি
xviii) ইসলামী আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার
xix) সহিহভাবে সালাত আদায় পদ্ধতি
xx) তাযকিয়ায়ে নাফস
xxi) আনুগত্য, পরামর্শ ও মুহাসাবা
xxii) বর্তমান বিশ্বে ইসলামী আন্দোলন
xxiii) মু’মিনের জেলখানা
xxiv) অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানে ইসলাম
xxv) আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামী আন্দোলন
xxvi) মানব রচিত মতবাদ বনাম ইসলাম
xxvii) আধুনিক জাহিলিয়াতের রূপ ও প্রকৃতি
xxviii) গণসংযোগ: গুরুত্ব ও পদ্ধতি
xxviv) ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ
xxx) ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ব্যবহারিক জীবন
xxxi) ইসলামী রাষ্ট্রই সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র
xxxii) মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্বই সব জুলুমের মূল কারণ
xxxiii) ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও রাজনীতি
xxxiv) ইন্টারনেটে দাওয়াতি কাজ।

৪। কর্মীদের শিক্ষাশিবির
i) জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য, লক্ষ্য,কর্মসূচি ও কর্মনীতি
ii) জামায়াতে ইসলামীর ৩ দফা দাওয়াত
iii) জামায়াতে ইসলামীর ৪ দফা কর্মসূচি
iv) জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য
v) দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
vi) সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে বাংলাদেশ
vii) ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
viii) ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুণাবলি
ix) পূর্নাঙ্গ অনুসরণীয় নেতা মুহাম্মদ (সা.)
x) ঈমান ও ইসলাম
xi) আখিরাতই মুমিনের প্রকৃত মানজিল
xii) আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায়
xiii) ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক
xiv) ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ
xv) দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়
xvi) মু’মিনের জেলখানা
xvii) ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান
xviii) ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান
xix) ইসলামী জ্ঞান অর্জন ও অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা
xx) তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত
xxi) আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ ও তার প্রতিকার
xxii) আদর্শ নাগরিক গঠনের প্রকৃত উপায়-ইসলাম
xxiii) মুসলিম জাতির উন্নতির প্রকৃত পথ
xxiv) মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের মূল সূত্র-ইসলাম
xxv) ইন্টারনেটে দাওয়াতি কাজ।

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • দাওয়াত ও তাবলিগ
    • ঈমান ও আক্বীদাহ
    • আমল-আখলাক ও মুয়ামালাত
    • ইসলাম ও ইবাদাত
    • পারিবারিক ও সামাজিক জীবন
    • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • নারী
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • কর্মী সিলেবাস
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South