রমাদান নসীহাহ
এ. টি. এম. মাছুম
সার্কুলার নং : ০২/২০২২
তারিখ : ০১/০৩/২০২২
সদস্য (রুকন) ও কর্মী ভাই-বোনদের উদ্দেশে
বিষয়: রামাদানুল মুবারক [১৪৪৩ হিজরী, ২০২২ ঈসায়ী]
প্রিয় ভাই ও বােনেরা, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি আল্লাহ রাব্বল আলামীনের অশেষ মেহেরবাণীতে সুস্থতার সাথে দ্বীনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্ষপরিক্রমায় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে সিয়ামের মাস রামাদান আবারও আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের জন্য মাহে রামাদান মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কল্যাণের সকল দরজা খুলে দেয়া হয় এবং অকল্যাণের পথসমূহ সংকুচিত করে দেয়া হয়। গােটা সৃষ্টিকূলে আল্লাহ রাব্বল আলামীনের আনুগত্যের অনুকূল ভাবধারা গড়ে উঠে।
রামাদান তাকওয়ার মাস, ধৈর্যেরও মাস, ত্যাগের মাস, গরীব-দুঃখী ও ক্ষুধা কাতর মানুষের কষ্ট অনুভব করার মাস, বেশি বেশি সাদাকাহ করে আত্মশুদ্ধি ও সম্পদকে পরিশুদ্ধ করার মাস। আল্লাহ রাব্বল আলামীন বিশ্ববাসীর হেদায়াতের জন্য এ মাসেই নাযিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এ মাসের মধ্যেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত। ‘লাইলাতুল ক্বদর’। মাহে রামাদানের প্রতিটি আমলের বিনিময় অন্য মাসের চেয়ে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।
সংগ্রামী ভাই ও বােনেরা,
মাহে রামাদান মুসলমানদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরী সনে ১৭ই রামাদান সংগঠিত হয়। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ’। তিনগুণের অধিক সৈন্যের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিজয় দান করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ইসলামের বিজয় সংখ্যা নয় বরং নৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভরশীল। তাই এ মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে, বর্তমান প্রতিকূল অবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নত নৈতিক গুণাবলী অর্জন করে ঈমানের পরিপূর্ণতা লাভে অগ্রগামী হতে হবে। সম্মানিত ভাই ও বােনেরা, মাহে রামাদানের একটি মাস মুমিনদের জন্য আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের এক সুবর্ণ সুযােগ।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে ঘােষণা করেছেন:
১। “হে ঈমানদারগণ! তােমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিলাে তােমাদের পূর্ববতা লােকদের উপর, যেন তােমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারাে” – (সুরা আল বাকারা – ১৮৩)।
২। “রামাদান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন-মানবজাতির পথপ্রদর্শকরূপে, হেদায়াতের সুস্পষ্ট দলিলপ্রমাণরূপে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী হিসেবে”- (সুরা আল বাকারা – ১৮৫)।
৩। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি (সিয়ামরত অবস্থায়) মিথ্যা কথা এবং সান ফাস ও আচরণ পিরহার করে না, তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহর কোনাে প্রয়ােজন নেই” -(সহীহ আল বুখারী)। এ বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ।
প্রিয় ভাই ও বােনেরা, ফজিলতপূর্ণ মহিমান্বিত মাহে রামাদানের আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত করনীয় বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-
(ক) অধ্যয়নমূলক
১. আল কুরআন: তাফহীমুল কুরআন ১৮ ও ১৯ তম খণ্ড এবং সরা আল বাকারা-১৮৩ ও ১৮৫ আয়াত অধ্যয়ন।
সম্ভব হলে পুরাে কুরআন অন্তত একবার অর্থসহ তেলাওয়াত করার চেষ্টা করা।২. আল হাদিস : তাহারাত, সালাত, সিয়াম, জিহাদ, আখেরাত ও চরিত্র গঠন সংক্ৰন্তি অধ্যায়।
৩. ইসলামী সাহিত্য : (১) নামাজ-রােযার হাকিকত (২) যাকাতের হাকিকত (৩) হেদায়াত (৪) ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী (৫) ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি (৬) ইসলাম পরিচিতি (7) ইনফকি ফি সাবিলিল্লাহ।
৪. তা’লিমুল কুরআন ও সহীহ তেলাওয়াত শিক্ষার ব্যবস্থাকে পারিবারিকভাবে, মসজিদভিত্তিক, পাড়া-মহল্লা কেন্দ্রিক
ব্যাপক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা।৫. মৌলিক বিষয়ে বাছাইকৃত আয়াত ও হাদিসসমূহ মুখস্থ করা। (খ) অনুশীলনমূলক ও ১. মাহে রামাদানে পরিবার-পরিজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে নিয়ে ভাবগম্ভীর পরিবেশে যথাযথভাবে সিয়াম পালন করা। ২. জামায়াতের সাথে ফরয সালাত ও তারাবীহ আদায় করা। শেষ দশকে এতেকাফ পালনের চেষ্টা করা। ৩. কিয়ামুল লাইল বা সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায়ের মাধ্যমে তিলাওয়াতে কুরআনের দুর্লভ সুযােগ কাজে লাগানাে। ৪, আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা ও তাঁর সাহায্য লাভে কাতর কণ্ঠে দোয়া করা।
৫. নেতৃবৃন্দসহ সকল মজলুম মানুষের মুক্তির জন্য এ সময়ে বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে ধরণা দেয়া।
৬. সদস্য (রুকন), কর্মী, সহযােগী বৃদ্ধির কাজ এ মাসে অন্য মাসের তুলনায় ব্যক্তিকে অধিক সাওয়াবের অধিকারী করবে, তাই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপায় এবং অধিক পুরস্কার লাভের আশায় এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে যত্নশীল হওয়া।
৭. পারিবারিকভাবে বা পারিবারিক ইউনিটের উদ্যোগে পরিস্থিতির আলােকে পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে
ইফতারের আয়ােজন করা।৮. পরিস্থিতির আলােকে সাংগঠনিকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়ােজন করা।
৯. বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করা। এ ক্ষেত্রে মজলুম ভাই-বােন, করােনা ভাইরাসের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ ও নিকট আত্মীয়দের প্রতি খেয়াল রাখা।
১০. হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, জিঘাংসা ও নৈরাজ্যের বিষ ছড়ানাের মােকাবিলায় ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের
জান্নাতি আবহ তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা।১১. সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়াসহ যাবতীয় ধ্বংসাত্মক পাপাচার থেকে বাঁচার জন্য জনসচেতনতা তৈরি করা।
সম্মানিত ভাই ও বােনেরা, মাহে রামাদানে ধনীদের জন্য বাড়তি আর একটি ইবাদত হলাে যাকাত। যাকাত হলাে ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদাত ও দারিদ্র নিরসনে অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম উৎস। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাকাতের অর্থ নির্ধারিত ৮ টি খাতে যথাযথভাবে ব্যয় করে থাকে। সাহিবে নিসাবগণ যাকাতের অর্থ (রুকনগণ তাদের ব্যক্তিগত যাকাতের ৫০%) সংশ্লিষ্ট শাখার ফাণ্ডে জমা দিবেন। মাহে রামাদান মুমিনের জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার। সুতরাং এ মাসে প্রতিটি মুহুর্ত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করার পূর্ণ প্রস্তুতি এখন থেকে গ্রহণ করা প্রয়ােজন। আসুন, উল্লেখিত নির্দেশনার। আলােকে কাজগুলাে বাস্তবায়নে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন, সকল নেক আমল কবুল করুন। মাহে রামাদান থেকে যথার্থ ফায়দা হাসিলের তৌফিক দান করুন, আমীন ।
—
এ. টি. এম. মাছুম
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বি. দ্র.: নিজে পড়ুন এবং অন্য জনশক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দিন। নির্দেশিকার আলোকে যথাযথভাবে আমল করুন।