মু’মিনের কর্তব্য
আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনে কেবল ব্যক্তি চরিত্র গঠনের তৎপরতা চালিয়েই কোন ব্যক্তি আল-ইসলামের পূর্ণাংগ দাবী পরিপূরণ করতে পারে না। ইসলাম শুধু মাত্র ব্যক্তি জীবন নিয়ন্ত্রণ করার কিছু নিয়ম কানুনের নাম নয়। এটি একটি সর্বব্যাপ্ত জীবন বিধান। জীবনের সকল বিভাগ সম্পর্কেই তাঁর রয়েছে সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ।
ব্যক্তি জীবনে ইসলামের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা যতোখানি সহজ, সমাজ জীবনে ইসলামের অনুশাসন প্রবর্তন করা ততোখানিই কঠিন।
পথের এই কঠিনতা দূর করেই আল্লাহর অনুগত বান্দাদেরকে সমাজের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। একেই বলা হয় ইকামাতে দ্বীন।
ইকামাতে দ্বীন কোন সহজসাধ্য কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত বিরামহীন সংগ্রাম। ইকামাতে দ্বীনের জন্য পরিচালিত সর্বাত্মক সংগ্রামকেই আল কুরআনে আল জিহাদু ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে জিহাদ নামে আখ্যায়িত করেছে। বাংলা ভাষায় একেই বলা হয় ইসলামী আন্দোলন।
ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে সর্বপ্রথম যেই বিষয়টির উপর স্বাভাবিক ভাবেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আদ-দাওয়াতু ইলাল্লাহ বা আল্লাহর দিকে আহবান।
ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য নিজে আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করাই যথেষ্ট নয়, সেই ঈমানের আলো অন্যদের মাঝে বিকশিত করাও একান্ত প্রয়োজন। প্রতি যুগেই ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীগণ নিষ্ঠার সাথে এই কর্তব্য পালনের চেষ্টা করেছেন।
আল্লাহর দিকে আহ্বান ও নবীগণ
মানুষকে যাবতীয় অনৈসলামিক ধ্যান ধারণা ও জীবন বিধান বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন নবী-রাসূলগণ।
আমরা এখানে কয়েকজন নবীর দাওয়াতী তৎপরতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
নূহ আলাইহিস সালাম
প্রাচীন ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে প্রেরিত হন নূহ আলাইহিস সালাম। দিন-রাত পরিশ্রম করে তিনি সেই অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে আল্লাহর দিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে থাকেন। তাঁর এই তৎপরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُبِينٌ
- أَنْ لَا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ ۖ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ
“আমি নূহকে তাঁর কওমের নিকট পাঠালাম। সে বললোঃ আমি তোমাদের জন্য সাবধানকারী। আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করোনা, অন্যথায় আমি আশংকা করছি তোমাদের উপর কষ্টদায়ক আযাব এসে পড়বে।” – হূদ: ২৫-২৬
ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম
পরবর্তীকালে এই ইরাকেরই উর নগর রাষ্ট্রে নমরুদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইবলীসী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। নমরূদ এবং তার রাষ্ট্রের অধিবাসীদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানোর জন্য প্রেরিত হন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম।
তাঁর আব্বাই ছিলেন সেখানকার ইবলীসী জীবন ব্যবস্থার প্রধান উপদেষ্টা। সেই জন্য তাঁর আব্বার নিকট তিনি সর্বপ্রথম দাওয়াতে হক পেশ করেন।
يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءَنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا
“হে আব্বাজান, আমার নিকট এমন ইলম এসেছে যা আপনার নিকট আসেনি। আপনি আমার অনুসরণ করুন। আমি আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবো”।
সূরা মারইয়ামঃ ৪৩
উরবাসীদেরকে সম্বোধন করে ইব্রাহীম (আঃ) আরো বলেন,
فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَا أَكْبَرُ ۖ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ
- إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
“হে আমার কাওম, তোমরা যাদেরকে শরীক বানাচ্ছো সেই সব থেকে আমি নিঃসম্পর্ক। আমি তো একমুখী হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করেছি, যিনি যমীন ও আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই”। –আল আন’আমঃ ৭৮-৭৯
তাঁর কাওমকে সম্বোধন করে ইব্রাহীম (আঃ) আরো বলেন,
وَإِبْرَاهِيمَ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ ۖ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় করে চল। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা তা বুঝ”। –আল আনকাবুতঃ ১৬
হূদ আলাইহিস সালাম
প্রাচীন আরবের এক প্রতাপশালী জাতি ছিলো আদ জাতি। কুফরী জীবনধারায় এই জাতি ছিলো অভ্যস্ত। এই জাতিকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানানোর জন্য প্রেরিত হন হূদ আলাইহিস সালাম। তাঁর দাওয়াতী তৎপরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا مُفْتَرُونَ
“আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে পাঠালাম। সে বললোঃ হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই”। –সূরা হূদঃ ৫০
সালিহ আলাইহিস সালাম
প্রাচীন আরবের এক অঞ্চলে ছিলো সামূদ জাতির বাস। এই জাতির লোকেরা ছিলো প্রতাপশালী। বিভিন্ন শিল্প-কর্মে বিশেষ করে ভাস্কর্য শিল্পে সারা দুনিয়ায় তাদের জুড়ি ছিলোনা। পাথরের পাহাড়-শ্রেণী খোদাই করে প্রাসাদ বানিয়ে তারা তাতে বসবাস করতো।
তারা ইবলীসের শাগরিদ ছিলো। এই পাপী কাওমকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানাবার জন্য প্রেরিত হন সালিহ আলাইহিস সালাম। তাঁর দাওয়াতী তৎপরতার বিবরণ রয়েছে আল কুরআনে।
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ
“সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালিহকে পাঠালাম। সে বললোঃ হে আমার কাওম,তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই”। –সূরা হূদঃ ৬১
শুয়াইব আলাইহিস সালাম
আরবের আরেক প্রাচীন জনগোষ্ঠীর নাম ছিলো মাদইয়ান জাতি। তাবুক এবং এর নিকটবর্তী বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছিলো এদের বাস। তারাও আল্লাহ্কে ভুলে নানা পাপাচারে ডুবে গিয়েছিলো। তাদেরকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানাবার জন্য প্রেরিত হন শুয়াইব আলাইহিস সালাম। তাঁর দাওয়াতী কাজ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ
“মাদইয়ান জাতির নিকট তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠালাম। সে বললোঃ হে আমার কওম, আল্লাহ্র ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই”। –সূরা হূদঃ ৮৪
ইউসুফ আলাইহিস সালাম
কানান বা ফিলিস্তিনের এক নেক সন্তান ছিলেন বালক ইউসু্ফ। ঈর্ষাপরায়ণ ভাইদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি বিজন মরুভূমির এক কূয়াতে নিক্ষিপ্ত হন, একটি ব্যবসায়ী কাফিলা পানির সন্ধানে সেই কূয়ার নিকটে এসে বালক ইউসুফকে উদ্ধার করে। কাবিলার লোকেরা মিসরে পৌঁছে সেখানকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নিকট তাঁকে বিক্রি করে দেয়। নির্বিঘ্নে কাটছিলো ইউসুফের দাস জীবন। কিন্তু তাঁর ক্রমবিকশিত দেহ সৌষ্ঠব ও সৌন্দর্য তাঁর মনিবের স্ত্রীকে প্রেমাসক্ত করে তোলে। স্ত্রীলোকটি তাঁকে তাঁর সঙ্গে যৌন অপরাধে লিপ্ত হতে আহ্বান জানায়।
ইউসুফ আলাইহিস সালাম ছিলেন নবীর পুত্র। তিনি নিজেও ছিলেন আল্লাহ্র একজন একান্ত অনুগত বান্দা। আবার তিনি ভাবী নবীও ছিলেন। তিনি তাঁর মনিবের স্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দিলেন না।
এতে স্ত্রীলোকটি ভীষণ ক্ষেপে যায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে মেতে উঠে। সে ইউসুফের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়। ক্রীতদাসের জবানবন্দীর দাম কেউ দিলো না। ইউসুফ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।
ইতিমধ্যে ইউসুফ আলাইহিস সালাম নবুওয়াত লাভ করেন। কারাগারে কয়েদীরাই তখন তাঁর সঙ্গী। এরা মোটেই ভালো লোক ছিলো না। যেই সমাজের উপর তলা ও নীচ তলার সবাই পাপী, সেই সমাজ থেকে অপরাধী গণ্য হয়ে যারা কারাগারে আসে তারা যে কি জঘন্য চরিত্রের লোক তা সহজেই অনুমেয়।
ইউসুফ আলাইহিস সালাম এই অধঃপতিত আদম-সন্তানগুলোকে টার্গেট বানিয়ে দাওয়াতী কাজ শুরু করেন।দু’জন কয়েদীর উদ্দেশ্যে তিনি যেই দাওয়াতী ভাষণ পেশ করেন তা আল-কুরআনে পরিবেশিত হয়েছে। ভাষণের একাংশে তিনি বলেন-
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো নয়। তাঁর নির্দেশ, তাঁকে বাদে তোমরা আর কারো ইবাদাত করবে না। এটাই মজবুত জীবন ব্যবস্থা অথচ অধিকাংশ লোকই তা জানেনা”। –সূরা ইউসুফঃ ৪০
ইউসুফ আলাইহিস সালাম পরবর্তী সময়ে মিসরের শাসক হন। তাঁর শাসনামলে বনী ইসরাইল কানান বা ফিলিস্তিন থেকে মিসরে এসে বসবাস শুরু করে।
মূসা আলাইহিস সালাম
দেখতে না দেখতে কেটে গেল কয়েক শতাব্দী। ইতিমধ্যে বনী ইসরাইল পাপাচারী জাতিতে পরিণত হয়। মিসরের যালিম ফিরাউনের সাথেও তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠে।
এই সময়ে মূসা আলাইহিস সালাম মিসরে প্রেরিত হন। তাঁর সামনে এক দিকে ছিলো বনী ইসরাইল। অন্যদিকে ছিলো ফিরাউন ও তাঁর সম্প্রদায়। উভয় সম্প্রদায়কে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানানোর দায়িত্ব অর্পিত হলো তাঁর উপর।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
“আমি নিদর্শনাদিসহ মূসাকে পাঠালাম। তাঁকে নির্দেশ দিলামঃ তোমার কাওমকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আস” –সূরা ইব্রাহীমঃ ৫
اذْهَبْ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ
“ফিরাউনের নিকট যাও। নিশ্চয়ই সে অবাধ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে”। –সূরা ত্বা-হাঃ ২৪
মূসা (আঃ) ফিরাউনকে সম্বোধন করে বলেন-
أَنْ أَدُّوا إِلَيَّ عِبَادَ اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ
- وَأَنْ لَا تَعْلُوا عَلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي آتِيكُمْ بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ
(মূসা বললো), “আল্লাহ্র বান্দাদেরকে আমার হাতে সঁপে দাও। আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত রাসূল। আল্লাহ্র উপর নিজের প্রাধান্য জাহির করতে যেয়োনা। আমি তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট সনদ পেশ করছি”। — আদদুখানঃ ১৮-১৯
ঈসা আলাইহিস সালাম
ফিলিস্তিনে আবির্ভূত হন ঈসা (আঃ)। তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানাতে গিয়ে বলেন-
وَإِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। অতএব তাঁরই ইবাদাত কর এবং এটাই সরল-সঠিক পথ”। –সূরা মারইয়ামঃ ৩৬
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)
নবুওয়াতের তাসবীহমালার সর্বশেষ দানা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)। তিনি শেষ নবী, আবার বিশ্বনবীও। আজকের পৃথিবীর সব মানুষের জন্যই তাঁকে রাসূল করে পাঠানো হয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) ২৩ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে প্রথমেই যেই বুনিয়াদী বিষয়টি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হচ্ছে আদদাওয়াতু ইলাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ্র দিকে আহ্বান।
এই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ্ তাঁর প্রতি অনেকগুলো আয়াত নাযিল করেন।
প্রথম অহী প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া সামলাতে গিয়ে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) চাদর মুড়ে দিয়ে রয়েছিলেন। সেই সময়টিতে গুরুগম্ভীর নির্দেশ এলো-
- يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ
- قُمْ فَأَنْذِرْ
- وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ
“হে আবৃত ব্যক্তি,উঠ,লোকদেরকে সাবধান কর। তোমার রবের বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্য প্রকাশ কর”। –আল মুদ্দাচ্ছিরঃ ১-৩
অন্যত্র বলা হচ্ছে—
مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَٰكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
“হে রাসূল, তোমার রবের নিকট থেকে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তা লোকদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও। যদি তুমি তা না কর, তবে তো রিসালাতের দায়িত্বই পালন করলে না”। –আল ইমরান ৬৭
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
“তোমার রবের পথে (লোকদেরকে) ডাক হিকমাহ ও উত্তম বক্তব্য সহকারে। আর যু্ক্তি-প্রদর্শন কর সর্বোত্তম পদ্ধতিতে”। –সূরা আনফালঃ ১২৫
فَلِذَٰلِكَ فَادْعُ ۖ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ
“এমতাবস্থায় তুমি আহ্বান জানাতে থাক। আর দৃঢ় থাক যেমনটি তোমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে। ওসব লোকের ইচ্ছা-বাসনার অনুসরণ করো না”। –সূরা আশশূরাঃ ১৫
قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ “বল, আমার পথ তো এই যে, আমি আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানাই”। –সূরা ইউসুফঃ ১০৮
আল্লাহ্র রাসূলের গোটা জীবন আমাদের সামনে। আদদাওয়াতু ইলাল্লাহর দায়িত্ব তিনি কিভাবে পালন করেছেন ইতিহাস তাঁর বিবরণ পেশ করেছে। মক্কার এমন কোন ঘর ছিলো না যেখানে তিনি দাওয়াত নিয়ে যাননি। শুধু মক্কা শহরই নয়,এর নিকটবর্তী জনপদগুলোতেও তিনি ছুটে গেছেন সেখানকার লোকগুলোকে আল্লাহ্র দিকে আহ্বান জানাতে।
এই চিন্তাতেই তিনি সদা মশগুল থাকতেন। প্রতিটি সুযোগেরই তিনি সদ্ব্যবহার করতেন। একাজে তিনি এতো বেশী একাগ্রচিত্ত ছিলেন যে, লোকেরা তাঁর এই অবস্থাকে স্বাভাবিক অবস্থা বলে ভাবতেই পারতো না। তাই তাদের কেউ কেউ তাঁকে বলতো মাজনূন বা পাগল। তিনি পাগল ছিলেন না, ছিলেন কর্তব্য পালনে পাগলপারা। তাঁর দাওয়াতের মোদ্দা কথা ছিলো-
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
- إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করোনা। আমি তাঁরই তরফ থেকে তোমাদের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী এবং সুসংবাদদাতা রূপে আবির্ভূত। তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাঁরই দিকে ফিরে আস। তিনি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তোমাদেরকে উত্তম জীবনসামগ্রী দেবেন। অনুগ্রহ পাবার মতো প্রত্যেক ব্যক্তিকে অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি তোমাদের জন্য এক বড়ো ভীষণ দিনের আযাব সম্পর্কে ভয় করছি। তোমাদেরকে আল্লাহ্র দিকে ফিরে যেতে হবে। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। –সূ্রা হুদঃ ২-৪