হাদীছ গ্রহণে ইমাম বোখারী ও মোছলেমের শর্তাবলী
হাদীছ বর্ণনাকারী রাবীগণকে সাধারণতঃ পাঁচ শ্রেণীতে ভাগ করা হইয়া থাকে; ১ম শ্রেণী –যাহাদের হেফজ বা লেখার দ্বারা হাদীছ রক্ষা করার ক্ষমতা (জবত) অত্যধিক এবং আপন শায়খ বা ওস্তাদের সহিত মোলাজামাত (সম্পর্ক) ঘনিষ্ঠতর ছিল।
২য় শ্রেণী –যাহাদের হাদীছ রক্ষা করার ক্ষমতা অত্যধিক বটে; কিন্তু শায়খের সহিত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর নহে।
৩য় শ্রেণী –যাহাদের হাদীছ রক্ষা করার ক্ষমতা অত্যধিক নহে। কিন্তু শায়খের সহিত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর।
৪র্থ শ্রেণী –যাহাদের হাদীছ রক্ষা করার ক্ষমতাও অত্যধিক নহে এবং শায়খের সহিত সম্পর্কও ঘনিষ্ঠতর নহে।
৫ম শ্রেণী –যাহাদের মধ্যে এই দুই গুণও স্বল্প, অধিকন্তু অন্যান্য ত্রুটিও রহিয়াছে।
ইমাম বোখারী সাধারণতঃ প্রথম শ্রেণীর রাবীদের হাদীছই গ্রহণ করিয়াছেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর রাবীদের হাদীছ কোথাও কোথাও শুধু প্রথম শ্রেণীর হাদীছের পোষকতার জন্যই উদ্ধৃত করিয়াছেন।
ইমাম মোছলেম প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর রাবীদের হাদীছ বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করিয়াছেন এবং তৃতীয় শ্রেণীর রাবীদের হাদীছ উহাদের সাহায্যের জন্য ব্যবহার করিয়াছেন।
ইমাম বোখারী বা মোছলেমের ‘শরায়েত’ বলিতে ইহাই বুঝায়।
কতিপয় প্রসিদ্ধ মোহাদ্দেছ
১। আবদুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম ছনআনী (মৃঃ ২১১ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার একটি ‘মোছান্নাফ’ রহিয়াছে।
২। আছাদ ইবনে মূছা মারওয়ানী (মৃঃ ২১২ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার কিতাব রহিয়াছে।
৩। ইছমাঈল ইবনে হাম্মাদ ইবনে ইমাম আবু হানীফা (মৃঃ ২১২ হিঃ)। তিনি ‘বাক্কা’র কাজী ছিলেন। হাদীছে তাঁহার কিতাব রহিয়াছে।
৪। আবু উবায়দ কাছেম ইবনে ছাল্লাম (মৃঃ ২২৪ হিঃ)। ‘কিতাবুল আমওয়াল’ নামক গ্রন্থে তিনি রাজস্ব সম্পর্কীয় সমস্ত হাদীছ একত্র করিয়াছেন। ইহা একখানি অতুলনীয় কিতাব। ইহা হালে মিছর হইতে প্রকাশিত হইয়াছে।
৫। আবু জা’ফর মোহাম্মদ ইবনে ছাব্বাহ ‘বাজজার’ (মৃঃ ২২৭ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার একটি ‘ছুনান’ রহিয়াছে।
৬। নোয়াইম ইবনে হাম্মাদ খোজায়ী (মৃঃ ২২৮ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার কিতাব রহিয়াছে।
৭। মুছাদ্দাদ ইবনে মুছারহাদ বছরী (মৃঃ ২২৮ হিঃ)। তিনি হাদীছে কিতাব লিখিয়াছেন।
৮। ইয়াইইয়া ইবনে মুঈন (মৃঃ ২৩৩ হিঃ)। তিনি ‘জারহ-তা’দীল’ ও হাদীছের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘ইমাম’ ও ‘হুজ্জাত’ ছিলেন। লোকে তাঁহার নিকট হইতে ১২লক্ষ হাদীছ লিখিয়া লইয়াছে।
৯। আলী ‘ইবনুল মাদীনী’ (মৃঃ ২৩৪ হিঃ)। তিনি হাদীছের একজন প্রসিদ্ধ ইমাম। বোখারী তাঁহার ‘আল জামেউছ্ছহীহ’ সমালোচনার উদ্দেশ্যে তাঁহাকে দেখাইয়াছিলেন।
১০। আবু বকর ইবনে আবি শায়বা (মৃঃ ২৩৫ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার একটি ‘মুছান্নাফ’ রহিয়াছে। তিনি ইমাম বোখারী ও মোছলেমের ওস্তাদ ছিলেন।
১১। ছাঈদ ইবনে মানছুর (মৃঃ ২৩৫ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার একটি ‘মোছান্নাফ’ রহিয়াছে।
১২। ইমাম ইছহাক ইবনে রাহওয়াইহ (আরবী*************) (মৃঃ ২৩৮ হিঃ)। তিনি ইমাম বোখারীর ওস্তাদ এবং হাদীছের একজন ইমাম। একলক্ষ হাদীছ তাঁহার মুখস্থ ছিল। হাদীছে তাঁহার একটি ‘মোছনাদ’ রহিয়াছে। ইব্রাহীম ইবনে আবু তালেব বলেনঃ তিনি তাঁহার এই ‘মোছনাদ’ আমাদের একবার মুখস্থ এবং একবার দেখিয়া পড়াইয়াছিলেন।
১৩। ছাহনুন –আবদুছ ছালাম তনুখী (মৃঃ ২৪০ হিঃ)। ‘মুদাওওয়ানাহ’ (আরবী**********) তাঁহার ফেকাহর কিতাব হইলেও তাহাতে বহু হাদীছ রহিয়াছে।
১৪। আবদ ইবনে হোমাইদ (মৃঃ ২৪৯ হিঃ)। ‘মোছনাদে কবীর’ নামে হাদীছে তাঁহার একটি কিতাব রহিয়াছে।
১৫। বুন্দার –আবু বকর মোহাম্মদ ইবনে বাশশার বছরী (মৃঃ ২৫২ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার কিতাব রহিয়াছে।
১৬। আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান (মৃঃ ২৫৫ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার একখানি ‘মোছনাদ’ রহিয়াছে।
১৭। আবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ দারেমী ছমরকন্দী (মৃঃ ২৫৫ হিঃ)। ‘ছুনান’ তাঁহার কিতাব। ইহা সাধারণতঃ ‘মোছনাদ’ নামেই প্রসিদ্ধ। অনেকে ছুনানে ইবনে মাজাহর স্থলে ইহাকে ছেহাহ ছেত্তার অন্তর্ভূক্ত করেন। ইহা দুই খণ্ডে প্রকাশিত হইয়াছে।
১৮। আবু জা’ফর আহমদ ইবনে ছানান কাত্তান ওয়াছেতী (মৃঃ ২৫৮ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
১৯। ইবনে হানজার –আবু আবদুল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ ইবনে হানজার জুরজানী (মৃঃ ২৫৮ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
২০। ইয়াকুব ইবনে শায়বা (মৃঃ ২৬২ হিঃ)। তাঁহার ‘মোছনাদে কবীর’ একটি উত্তম কিতাব। কিন্তু ইহা অসমাপ্ত।
২১। মোহাম্মদ ইবনে মাহদী (মৃঃ ২৭২ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
২২। বাকী ইবনে মাখলাদ কোরতবী (কর্ডোভা মৃঃ ২৭৬ হিঃ)। ‘মোছনাদে কবীর’ তাঁহার কিতাব। ইহাতে তিন শতের অধিক ছাহাবীর হাদীছ একত্র করা হইয়াছে।
২৩। আহমদ ইবনে হাজেম (মৃঃ ২৭৬ হিঃ)। হাদীছে তাঁহার একটি ‘মোছনাদ’ রহিয়াছে।
২৪। ইব্রাহীম ইবনে ইছমাঈল তুছী (মৃঃ ২৮০ হিঃ) ‘মোছনাদে আম্বরী’ তাঁহার কিতাব। -মিফতাহ
২৫। হাফেজ আহমদ ইবনে মোহাম্মদ বূনী (মৃঃ ২৮০ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব। -দুওয়ালে ইছলাম
২৬। ইব্রাহীম ইবনুর আছকারী (মৃঃ ২৮২ হিঃ)। ‘মোছনাদে আবু হুরায়রা’ তাঁহার কিতাবের নাম। ইহাতে কেবল হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছসমূঞ একত্র করা হইয়াছে।
২৭। মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ রাজা (আরবী****) সিন্ধী (মৃঃ ২৮৬ হিঃ)। তাঁহার একটি ‘ছহীহ’ কিতাব রহিয়াছে বলিয়া জানা যায়। -তারীখে হাদীছ
২৮। আহমদ ইবনে আমর শায়বানী (মৃঃ ২৮৭ হিঃ)। তাঁহার কিতাব ‘আল মোছনাদ’-এ প্রায় ৫০ হাজার হাদীছ রহিয়াছে বলিয়া খাওলী তাঁহার ‘মিফতাহে’ উল্লেখ করিয়াছেন।
২৯। আবদুল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ ইস্পাহানী (মৃঃ ২৯১ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৩০। আবু মুসলিম কাশী (মৃঃ ২৯১ হিঃ)। ‘ছুনান’ তাঁহার কিতাব। -দুওয়ালে ইসলাম।
৩১। আবু বকর আহমদ ইবনে আমর ‘বাজ্জার’ (মৃঃ ২৯২ হিঃ)। ‘মোছনাদে বাজ্জার’ তাঁহার কিতাব।
৩২। মোহাম্মদ ইবনে নাছর মারওয়াজী (মৃঃ ২৯৪ হিঃ)। ‘কিতাবে মোহাম্মদ ইবনে নাছর’ নামে তাঁহার কিতাব প্রসিদ্ধ।
৩৩। ইব্রাহীম ইবনে মা’কাল নাছাফী (মৃঃ ২৯৫ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৩৪। কাজী ইউসুফ ইবনে ইমাম আবু ইউসুফ (মৃঃ ২৯৭ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘ছুনান’। -দুওয়ালে ইছলাম
৩৫। ইব্রাহীম ইবনে ইউসুফ হানজাবী (মৃঃ ৩০১ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৩৬। হাছান ইবনে ছুফইয়ান (মৃঃ ৩০৩ হিঃ)। ‘মুছনাদে কবীর’ তাঁহার কিতাব।
৩৭। ইবনুল জারূদ আবদুল্লাহ (মৃঃ ৩০৭ হিঃ)। ‘আল মোন্তাকা’ তাঁহার কিতাব। শায়খ দেহলবী ইহাকে একটি ছহীহ কিতাব বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন।
৩৮। আবু ইয়া’লা মুছেলী (মৃঃ ৩০৭ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৩৯। ইবনে জরীর তাবারী (মৃঃ ৩১০ হিঃ)। ‘তাহজীরুল আছার’ হাদীছে তাঁহার অভিনব ও উত্তম কিতাব বলিয়া আবদুল আজীজ খাওলী মন্তব্য করিয়াছেন।
৪০। আবু হাফছ ওমর ইবনে মোহাম্মদ ইবনে বাহর (মৃঃ ৩১১ হিঃ)। ‘আছছহীহ’ তাঁহার কিতাব। -দুওয়ালে ইছলাম
৪১। ইবনে খোজাইমা মোহাম্মদ ইবনে ইছহাক (মৃঃ ৩১১ হিঃ) ‘আছছহীহ’ তাঁহার কিতাব।
৪২। মোহাম্মদ ইবনে ইছহাক (মৃঃ ৩১৩ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৪৩। আবু আওয়ানা ইয়াকুব বিন ইছহাক ইস্পাহানী (মৃঃ ৩১৬ হিঃ)। ‘আছছহীহ’ তাঁহার কিতাব।
৪৪। আবু জা’ফর তাহাবী মিছরী (মৃঃ ৩২১ হিঃ)। ‘শরহে মাআনীল আছান’ (আরবী*****) ও ‘শরহে মুশকিলুল আছার’ (আরবী*******) তাঁহার দুইটি অতি মূল্যবান কিতাব।
৪৫। কাছেম ইবনে আছবাগ আন্দালুছী (মৃঃ ৩৫৩ হিঃ)। ‘ছহীহ মোস্তাকা’ তাঁহার কিতাব।
৪৬। ইবনে ছাফফান ছাঈদ ইবনে ওছমান বছরী (মৃঃ ৩৫৩ হিঃ)। ‘ছহীহ মোস্তাকা’ তাঁহার কিতাব।
৪৭। আবু হাতেম ইবনে হিব্বান বুস্তী (মৃঃ ৩০৭ হিঃ)। ‘আছছহীহ’ তাঁহার কিতাব।
৪৮। তযরানী ছোলাইমান ইবনে আহমদ (মৃঃ ৩৬০ হিঃ)। ‘মোজামে কবীর’, ‘মোজামে ছগীর’ ও ‘মোজামে আওছাত’ তাঁহার কিতাব। ‘মোজামে কবীরে’ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হাদীছ রহিয়াছে।
৪৯। হাছান ইবনে মোহাম্মদ মাছেরজাছ (আরবী*****) খোরাছানী (মৃঃ ৩৬৫ হিঃ)। ‘মোছনাদে কবীর’ নামে ৭০ খণ্ডে তাঁহার একটি হাদিছের কিতাব রহিয়াছে বলিয়া জাহবী উল্রেক করিয়াছেন। -দুওয়ালে ইছলাম।
৫০। আবু ইছহাক ইবনে নাছর রাজী (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৫১। ইবনে শাহীন –দারাকুতনী –আবুল হাছান আলী (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)। ‘ছুনানে কুবরা’ প্রভৃতি হাদীছে তাঁহার অনেক কিতাব রহিয়াছে।
৫২। ইবনে শাহীন –আবু হাফছ ওমর (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ মো’জাম’ ‘তারগীব’ প্রভৃতি তাঁহার কিতাব।
৫৩। খাত্তাবী –আবু ছোলাইমান আহমদ ইবনে মোহাম্মদ বুস্তী (মৃঃ ৩৮৮ হিঃ)। ‘মাআলে মুছছুনান’ (আরবী******) তাঁহার কিতাবের নাম।
৫৪। ইবনে জুমাই –মোহাম্মদ ইবনে আহমদ (মৃঃ ৪০২ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৫৫। হাকেম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরী (মৃঃ ৪০৫ হিঃ)। ‘মুস্তাদরাক’ তাঁহার কিতাব। ইহা তিনি বোখারী ও মোছলেমের পরিশিষ্ট হিসাবে লিখিয়াছেন।
৫৬। খাওয়ারেজমী (মৃঃ ৪২৫ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৫৭। আবু নোয়াইম ইস্পাহানী (মৃঃ ৪৩০ হিঃ)। ‘হিলয়াতুল আওলিয়া’ প্রভৃতি তাঁহার কিতাব।
৫৮। বায়হাকী –আবু বকর খোরাছানী (মৃঃ ৪৫৮ হিঃ)। ‘ছুনানে কুবরা’, ‘শোআবুল ঈমান’ প্রভৃতি তাঁহার প্রসিদ্ধ কিতাব। উভয় কিতাব প্রকাশিয় হইয়াছে।
৫৯। ইবনে হাজম –আবু মোহাম্মদ আলী জাহেরী আন্দালুছী (স্পেনী মৃঃ ৪৬৫ হিঃ)। ‘জামেয়ে ছহীহ’ ও ‘মাহাল্লা’ তাঁহার প্রসিদ্ধ কিতাব।
৬০। জাঞ্জালী –ছা’দ ইবনে আলী (মৃঃ ৪৭১ হিঃ)। ‘মোছনাদ’ তাঁহার কিতাব।
৬১। হোমাইদী –মোহাম্মদ ইবনে নছর (মৃঃ ৪৮৮ হিঃ)। তিনি ‘আল জামউ বাইনাছ্ছহীহাইন’ কিতাবে বোখারী ও মোছলিমের হাদীছসমূহ তাকরার বাদ একত্রিত করিয়াছেন।
৬২। আবুল ওয়ালীদ ছোলাইমান বাজী আন্দালুছী (মৃঃ ৪৭৬ হিঃ)। ‘আল-মোস্তাক’ তাঁহার কিতাব।
৬৩। হাকিম তিরমিজী –আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ (মৃঃ ৫০৫ হিঃ)। ‘নাওয়াদেরুল উছুল’ তাঁহার কিতাব।
৬৪। হাফেজ আবু মোহাম্মদ হাছান ইবনে আহমদ ছমরকন্দী হানাফী (মৃঃ ৪৯১ হিঃ)। ‘বাহরুল আছানীদ’ (আরবী**********) তাঁহার কিতাব।আবদুল আজীজ খাওলী বলেনঃ ইহাতে এক লক্ষ হাদীছের সমাবেশ করা হইয়াছে। ইহা অতি বিরাট ও উত্তম কিতাব। ইহার ন্যায় কিতাব এ যাবৎ লেখা হয় নাই।
এছাড়া এ যুগে আরো বহু মোহাদ্দেছ বহু কিতাব লেখেন।
চতুর্থ যুগ
এ যুগ হিজরী ৫ম শতাব্দীর পর হইতে আরম্ভ হইয়া এ যাবৎ চলিতেছে। এ যুগে হাদীছের মোতাবেক আমলকরণ, হাদীছ শিক্ষাকরণ ও শিক্ষাদান এবং হাদীছের লিখন পূর্বের ন্যায়ই চলিতে আছে, কিন্তু হেফজকরণ প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কারণ, পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, তৃতীয় যুগ পর্যন্তই সমস্ত হাদীছ রাবীদের নিকট হইতে সংগৃহীত হইয়া কিতাবে লিপিবদ্ধ হইয়া গিয়াছে। অতঃপর হেফাজতের উদ্দেশ্যে ছনদ সহকারে হাদীছ মুখস্ত রাখার কোন প্রয়োজন নাই। অতএব, এ যুগের লোকেরা পূর্ববর্তীদের কিতাবের আলোচনা-সমালোচনার প্রতিই মনোনিবেশ করেন। কেহ কাহারো কোন কিতাবের ছনদ বিচার করেন, কেহ উহার সংক্ষেপ করেন, আর কেহ উহার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন। কেহ বা বিভিন্ন কিতাবের হাদীছসমূহ একত্র করিয়া হাদিছের বিশ্বকোষ রচনা করেন, আর কেহ বিভিন্ন কিতাব হইতে হাদীছ নির্বাচন করিয়া সংকলন তৈয়ার করেন। কেহ হাদীছের দুর্বোদ্য শব্দসমূহের অভিধান রচনা করেন এবং কেহ হাদীছ সংশ্লিষ্ট অপরাপর এরমের উৎকর্ষ সাধনের প্রতি মনোযোগ দেন। এক কথায় লিখনের ধারা মূল হাদীছ সংকলন হইতে এদিকে মোড় পরিবর্তন করে এবং হাদীছ সম্পর্কীয় বহু শাখা এলমের সৃষ্টি করে।
ছহীহাইনের একত্রকরণঃ
অনেকে তাকরার বাদ দিয়া ছহীহাইন অর্থাৎ, বোখারী ও মোছলেম শরীফের হাদীছসমূহকে একত্রিত করিয়াছেন, যথা-
১। মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ জাওজাকী (মৃঃ ৩৮৮ হিঃ)।
২। ইবনুল ফারাত –ইছমাঈল ইবনে আহমদ (মৃঃ ৪১৪ হিঃ)।
৩। বার্কানী –আহমদ খাওয়ারেজমী (মৃঃ ৪৩৫ হিঃ)।
৪। মোহাম্মদ ইবনে আবু নছর হোমাইদী (মৃঃ ৪৮৮ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘আল জামউ বাইনাছ্ছহীহাইন’। ইহা অতি প্রসিদ্ধ কিতাব।
৫। মুহীউছ্ছুন্নাহ বাগাবী (মৃঃ ৫১৬ হিঃ)।
৬। মোহাম্মদ ইবনে আবদুল হক ইশবেলী (মৃঃ ৫৮২ হিঃ)।
৭। ইবনে আবিল হু্জ্জাহ্ –আহমদ ইবনে মোহাম্মদ কোরতবী (কর্ডোভা) (মৃঃ ৬৪২ হিঃ)।
ছেহাহ ছেত্তার একত্রকরণঃ
ছেহাহ ছেত্তা অর্থাৎ, বোখারী, মোছলেম, আবু দাঊদ, তিরমিজী ও মোআত্তা-এর হাদীছ সমূহকে তাকরার বাদ দিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোক একত্র করিয়াছেন; যথা-
১। ‘রজীন’ –আবুল হাছান আহমদ ইবনে মুআবিয়া আবদারী (মৃঃ ৫৩৫ হিঃ অথবা ৫২৫ হিঃ)। তিনি ইহার নাম দিয়াছেন ‘তাজরীদুছ ছেহাহ’। ইহাতে তিনি এমন কতক হাদীছকেও স্থান দিয়াছেন যাহা এ সকল কিতাবে পাওয়া যায় না। অধিকন্তু তাঁহার কিতাবের তারতীব (বিন্যাস)ও উত্তম নহে। ইহাকে উত্তমরূপে তারতীব দিয়াছেন মাজদুদ্দীন ইবনুল আছীর জজরী মূছেলী (মৃঃ ৬০৬ হিঃ) এবং তাহার নাম করিয়াছেন ‘জামেউল উছুল’ (আরবী*******) [ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার লাইব্রেরীতে ইহার একটি হস্তলিখিত কটি বিদ্যমান আছে।] কিন্তু ইহাতে অনেক হাদীছের একাধিক জায়গায় তাকরার রহিয়াছে। এছাড়া তিনি কোনো কোনো হাদীছের সহিত তাঁহার ব্যাখ্যা ও ব্যাকরণকেও জুড়িয়া দিয়াছেন। ফলে কিতাব বিরাট আকার ধারণ করিয়াছেন। এ কারণে অনেকে ইহার সংক্ষেপ করার প্রয়াস পাইয়াছেন। যথা-
(ক) মোহাম্মদ মারওজী (আরবী***) (মৃঃ ৬৮২ হিঃ)।
(খ) কাজী হিবাতুল্লাহ বারেজী (মৃঃ ৭১৮ হিঃ)। বারেজী একদিকে যেমন, জজরীর ব্যাখ্যা ও ব্যাকরণকে বাদ দিয়াছেন, অপর দিকে তেমনি রজীন কর্তৃক সংযোজিত ছেহাহ ছেত্তার বাহিরের হাদীছসমূহকেও ছাঁটাই করিয়াছেন। কিন্তু হাদীছের রাবীদের নাম এবং মূল কিতাবের হাওয়ালা (বরাত) পূর্ববৎ কিতাবের হাশিয়াতেই (মার্জিনে) রাখিয়া দিয়াছেন –যাহাতে পাঠকগণ অনেক সময় ভুলে পতিত হইতে বাধ্য না হয়। বারেজীর এ কিতাবের নাম ‘তাজরীদুল উছুল’- (আরবী***) ইহার কটি কোথাও বিদ্যমান আছে কিনা আমার জানা নাই।
(গ) ইবনুদ দীবা শায়বাণী (ইবনুর রবী নহে)। আবদুর রহমান ইবনে আলী (মৃঃ ৯৪৪ হিঃ)। তিনি ‘জামেউল উছুল’কে উত্তমরূপে সাজাইয়া নাম দিয়াছেন ‘তাইছীরুল উছুল’- (আরবী******)
ইহাতে তিনি প্রত্যেক হাদীছের প্রথম দিকে রাবী ছাহাবীর নাম এবং শেষের দিকে মূল কিতাবের বরাত জুড়িয়া দিয়াছেন। অবশ্য কোনো কোনো হাদীছের অত্যাবশ্যক ব্যাখ্যাকেও পূর্ববৎ বহাল রাখিয়অছেন। এছাড়া তিনি রজীনের অতিরিক্ত হাদীছসমূহকেও বাদ না দিয়া রজীনের নামেই উহার উল্লেখ করিয়াছেন। ইহা একটি অতি উত্তম কিতাব। ইহাতে ছেহাহ ছেত্তার সমস্ত হাদীছই এক সঙ্গে পাওয়া যায়। অবশ্য অধ্যায়ের তারতীব বর্ণনানুক্রমিক হওয়ায় বিষয় তালাশে কিছুটা অসুবিধা ঘটে। (মিছরের ছালাফিরা প্রেস হইতে ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।)
আমি ইহার প্রথম দুই খণ্ডের হাদীছসমূহ গুনিয়া দেখিয়াছি। ইহাতে রজীনের ৬৫টি হাদীছসহ মোট ২৮৪১টি হাদীছ রহিয়াছে। এ অনুপাতে হিসাব করিলে পূর্ণ চারি খণ্ড কিতাবে পৌণে ছয় হাজারের মত হাদীছ রহিয়াছে বলিয়া মনে হয়।
২। ইবনুল খারাত –আবদুল হক ইশবেলী (ইশবেলীয়া মৃঃ ৫৮২ হিঃ)। ইনিও ছেহাহ ছেত্তার হাদীছসমূহকে তাকরার বাদ দিয়া এক কিতাবে একত্র করিয়াছেন।
৩। কুতবুদ্দীন নহরওয়ালী সিন্ধী, মক্কী (মৃঃ ৯৯০ হিঃ)। তাঁহার ‘জামেউছ ছেহাহ’ একটি উত্তম কিতাব বলিয়া খাওলী মত প্রকাশ করিয়াছেন। -মিফতাহ-১১০পৃঃ
৪। হাফেজ জিয়াউদ্দীন মাকদেছী (মৃঃ ৭৪৩ হিঃ)। তিনি তিরমিজী ব্যতীত বাকী পাঁচ কিতাবের মোত্তাফাকাহ (একমতে বর্ণিত) হাদীছসমূহকে একত্র করিয়া নাম দিয়াছেন ‘আল মুয়াফিকাত’।
৫। শায়খ মানছুর আলী নাছীফ মিছরী। তিনি হাল জমানার লোক। তিনি ‘ইবনে মাজাহ’কে বাদ দিয়া অপর পাঁচ কিতাবের হাদীছসমূহকে ফেকাহর তারতীব অনুসারে সাজাইয়াছেন এবং নাম দিয়াছেন ‘আততাজুল জামে’ (আরবী*******) ইহা মিছরের হালাবিলা লাইব্রেরী হইতে প্রকাশিত হইয়াছে। ইহাতে বিষয় অনুসারে হাদীছ তালাশ করিতে বেশ সুবিধা হয়।
সাধারণ জামেঃ
অতেকে আবার বিভিন্ন কিতাবের হাদীছসমূহকে ব্যাপকভাবে সংগ্রহ করিয়া হাদীছের বিশ্বকোষ রচনার চেষ্টা করিয়াছেন। এ সকল কিতাবকে সাধারণতঃ ‘জামে’ বা ‘জাওয়ামে’ বলা হইয়া থাকে। নীচে এরূপ কতিপয় প্রসিদ্ধ জামে’র নাম দেওয়া গেলঃ
১। ‘বাহরুল আছানীদ’ –আবু মোহাম্মদ হাছান ইবনে আহমদ ছমরকন্দী (মৃঃ ৪৯১ হিঃ)। তাঁহার কিতাবে তিনি এক লক্ষ হাদীছের সমাবেশ করিয়অছেন বলিয়া আবদুল আজীজ খাওলী উল্লেখ করিয়াছেন। ইহা যদি সত্য হয় তাহা হইলে ইহাকেই হাদীছের সর্ববৃহৎ কিতাব বলা যাইবে। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে কিনা তাহা আমার জানা নাই।
২। ‘জামেউল মাছানীদ’ (আরবী******) –ইবনুল জাওজী (মৃঃ ৫৯৭ হিঃ)। ইহাতে তিনি ছহীহাইনের সহিত তিরমিজী ও মোছনাদে আহমদের হাদীছকে একত্র করিয়াছেন। আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ মক্কী (মৃঃ ৯৬৪ হিঃ) ইহাকে উত্তমরূপে সাজাইয়াছেন।
৩। ‘জামেউল মাছানীদ’ –ইবনে কাছীর –হাফেজ ইছমাঈল ইবনে কাছীর দেমাশকী (মৃঃ ৭৭৪ হিঃ)। ইহাতে তিনি ছেহাহ ছেত্তার হাদীছের সহিত মোছনাদে আহমদ, মোছনাদে আবু ইয়ারা, মোছনাদে বাজ্জার ও তবরানীর তিনটি মো’জামের হাদীছকে একত্র করিয়াছেন।
৪। ‘মাজমাউজ জাওয়ায়েদ’ (আরবী*******) –নূরুদ্দীন আবুল হাছান আলী ইবনে আবু বকর ইবনে ছোলাইমান হায়ছমী (৮০৭ হিঃ)। ইহাতে তিনি ইবনুল আছীরের ‘জামেউল উছুলের’ সহিত মোছনাদে আহমদ, মোছনাদে আবু ইয়ালা, মোছনাদে বাজ্জার ও তবরানীর তিনটি মো’জম অর্থাৎ, মোট ১২টি কিতাবের হাদীছকে একত্র করিয়াছেন। ইহা দশ খণ্ডে প্রকামিত হইয়াছে।
৫। ‘তাছহীলুল-উছুল’ (আরবী****) –মাজদুদ্দীন ফিরোজাবাদী (মৃঃ ৮১৭ হিঃ)। ইহাতে তিনি জজরীর ‘জামেউল উছুল’কে উত্তমরূপে সাজাইয়া উহার সহিত আরো কতিপয় কিতাবের হাদীছকে একত্র করিয়াছেন।
৬। ‘ইতহাফুল খেয়ারাহ’ (আরবী*****) –আহমদ ইবনে আবু বকর বুছীরী (মৃঃ ৮৪০ হিঃ)। ইহাতে ছেহাহ ছেত্তার হাদীছের সহিত মোছনাদে তায়ালছী, মোছনাদে হোমাইদী, মোছনাদে মোহাম্মদ, মোছনাদে ইবনে আবু আমর, মোছনাদে ইছহাক ইবনে রাহওয়াইহ, মোছনাদে ইবনে আবু শায়বা, মোছননাদে আহমদ ইবনে মুনীর, মোছনাদে আবদ ইবনে হোমাইদ, মোছনাদে হারেছ ইবনে আবু ওছামা, মোছনাদে আবু ইয়ালা –মোট ১৬টি কিতাবের হাদীছ একত্র করা হইয়াছে। ইহা একমত ‘বাব’ বা অধ্যায়ে বিভক্ত।
৭। ‘জামউল জাওয়ামে’ (আরবী******) –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী মিছরী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)। ইহাতে তিনি সমস্ত হাদীছকে একত্র করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, কিন্তু সমাপ্ত করার পূর্বেই তিনি এন্তেকাল করেন। শায়খ আলী মোত্তাকী জৌনপুরী মক্কী (মৃঃ ৯৫৫ হিঃ) ‘জামউল জাওয়ামে’কে উত্তমরূপে সাজাইয়া ‘কানজুল উম্মাল’ (আরবী*****) নাম করিয়াছেন। ‘কানজুল উম্মাল’কে সংক্ষেপ করিয়া নাম করিয়াছেন ‘মোন্তাখাবে কানজুল উম্মাল’। ইহাতে মোট ৩০ হাজার হাদীছ রহিয়াছে, মোত্তাকীর উভয় কিতাব প্রকাশিত হইয়াছে।
৮।‘জামউল ফাওয়ায়েদ’ (আরবী****) –মোহাম্মদ ইবনে ছোলাইমান ইবনুল ফাছী (মৃঃ ১০৯৪ হিঃ)। ইহাতে ‘মাজমাউজ জাওয়ায়েদের’ হাদীছের সহিত ইবনে মাজাহ ও ছুনানে দারেমীর হাদীছসমূহকে একত্র করা হইয়াছে। এ হিসাবে ইহা ১৪টি কিতাবের সমষ্টি। ইহা অতি ক্ষুদ্র লিথো অক্ষরে মাত্র এক জিলদে হিন্দুস্থানে প্রকাশিত হইয়াছে।
এখানে একটি কথা প্রণিধানযোগ্য যে সকল হাদীছ গৃহীত হইয়াছে কেবল সে সকল হাদীছই ছহীহ। অপরাপর কিতাব বিশেষ করিয়া মোছনাদসমূহ হইতে যে সকল হাদীছ গৃহীত হইয়াছে সে সকল হাদীছ বিচারসাপেক্ষ। মোহাদ্দেছগণের বিচারে যে যে হাদীছ ছহীহ বলিয়া সাব্যস্ত হইবে কেবল সে সে হাদীছই গ্রহণযোগ্য। মোছনাদসমূহের মধ্যে এক মোছনাদে আহমদই নির্ভরযোগ্য কিতাব।
সংকলনঃ
কেহ কেহ হাদীছের মূল কিতাব হইতে আবশ্যক হাদীছ নির্বাচন করিয়া সংকলন (ইস্তেখাব) তৈয়ার করিয়াছেন। কতিপয় মশহুর সংকলনের নাম নীচে দেওয়া গেলঃ
১। মাছাবীহুছছুন্নাহ –মুহীউছ্ছুন্নাহ বাগাবী (মৃ ৫১৬ হিঃ)। ইহাতে তিনি মোট ৪৪৩৪টি হাদীছ সংকলন করিয়াছেন। তিনি ইহার প্রত্যেক অধ্যায়কে দুইটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করিয়া প্রথম পরিচ্ছেদে বোখারী ও মোছলেমের এবং দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ‘হেছান’ নামে অপরাপর কিতাবের হাদীছসমূহকে স্থান দিয়াছেন। কিন্তু প্রত্যেক হাদীছের প্রথম দিকে বর্ণনাকারী ছাহাবীর নাম এবং শেষের দিকে মূল কিতাবের বরাত না দেওয়ায় পরবর্তী লোকগণ ইহার বিরূপ সমালোচনা করিতে থাকেন। হিজরী অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে খতীব তাবরেজী মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ প্রত্যেক হাদীছের প্রথম দিকে বর্ণনাকারী ছাহাবীর নাম এবং শেষের দিকে মূল কিতাবের বরাত জুড়িয়া দেন। অধিকন্তু তিনি প্রায় সকল অধ্যায়ের শেষ ভাগেই তৃতীয় একটি পরিচ্ছেদ (ফছল) বাড়াইয়া উহাতে অধ্যায় সংশ্লিষ্ট আরো বহু হাদীছের সমাবেশ করেন। অতঃপর ইহার নাম করেন ‘মেশকাতুল মাছাবীহ’ (ইহাই আমাদের আলোচ্য কিতাব)। উভয় কিতাব প্রকাশিত।
২। মাশারেকুল আনওয়ার –শায়খ হাছান ছাগানী লাহোরী (মৃ ৬৫০ হিঃ)। ইহাতে তিনি ‘ছহীহাইন’ হইতে মোট ২২৪৬টি শুধু রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর কাওলী হাদীছকে নির্বাচন করিয়াছেন। ইহার তারতীব এন নূতন ধরনের বর্ণনানুক্রমিক। ইহা হাদীছের একটি অতি মূল্যবান ও মকবুল কিতাব। বহু শতাব্দীব্যাপী বিভাগপূর্ব ভারত ও অন্যান্য দেশের পাঠ্য তালিকাভুক্ত ছিল। ইহার বহু শরাহ রহিয়াছে। ছৈয়দ আহমদ শহীদের খলীফা মাওলানা খুররম আলী বালহুরী ইহার উর্দু তরজমা ও সংক্ষিপ্ত শরাহ লেখেন। মাওলানা আবদুল হালীম চিশতী ইহাকে ছুনানের তারতীব অনুসারে সাজাইয়া বালহুরীর তরজমা ও শরাহসহ হালে করাচী হইতে প্রকাশ করিয়াছেন।
৩। ‘আল লু’লুউ ওয়াল মারজান’ (আরবী******) –ওস্তাদ মোহাম্মদ ফুয়াদ আবুদল বাকী মিছরী। ইহাতে কেবল ছহীহাইনের ‘মোত্তাফাকুন আলাইহে’ হাদীছ সমূহ একত্র করা হইয়াছে। ইহা মিছরের হালাবিয়া লাইব্রেরী হইতে প্রকাশিত হইয়াছে।
এছাড়া আহকাম সম্পর্কীয় কিতাবসমূহও আসলে এ জাতীয় সংকলনই। পরবর্তী অধ্যায়ে এ জাতীয় কতিপয় প্রসিদ্ধ কিতাবের নাম দেওয়া গেল।
আহকাম বিষয়ক হাদীছসমূহের একত্রকরণঃ
অনেকে আবার শুধু আহকামের হাদীছসমূহকে একত্র করিয়াছেন। যথা-
১।ইবনুল খারাত –আবু মোহাম্মদ আবদুল হক ইশবেলী (মৃঃ ৫৮১ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘আহকামে কুবরা’ ও ‘আহকামে ছুগরা’।
২। হাফেজ আবদুল গনী মাকদেছী (মৃঃ ৬০০ হিঃ)। ‘উমদাতুল আহকাম’ তাঁহার কিতাবরে নামা। ইহাতে তিনি ‘ছহীহাইনের’ আহকাম বিষয়ক হাদীছসমূঞ একত্র করিয়াছেন। ইবনে দাকীকুল ঈদ ইহার এক সংক্ষিপ্ত শরাহ করিয়াছেন। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
৩। ইবনে শাদ্দাদ হালাবী (মৃঃ ৬৩৬ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘দালায়েলুল আহকাম’।
৪। শায়খুল ইছলাম মাজদুদ্দীন ইবনে তাইমিয়া হাম্বলী (মৃঃ ৬৫২ হিঃ)। (ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দাদা)। তাঁহার মোছনাদে আহমদের আহকাম সম্পর্কীয় হাদীছসমূহকে একত্র করিয়াছেন। ইহা একটি উত্তম কিতাব। কাজী শাওকানী (মৃঃ ১২৫০ হিঃ) ‘নায়লুল আওতার’ (আরবী*******) নামে ইহার এক বিস্তারিত শরাহ করিয়াছেন।
৫। শায়খ মুহেব্ব তাবারী (মৃঃ ৬৯৪ হিঃ)। ‘আহকামে কুবরা’, ‘আহকামে ছুগরা’ ও আহকামে উছতা’ নামে তাঁহার তিনটি কিতাব রহিয়াছে।
৬। ইবনে দাকীকুল ঈদ (মৃঃ ৭০২ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘আল ইলমাম’ তিনি নিজে ইহার এক শরাহও করিয়াছেন।
৭। ইবনে কাছীর –ইমামদুদ্দীন (মৃঃ ৭৪৪ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘আহকামে ছুগরা’।
৮। শায়খ ইমাদুদ্দীন ইবনে কোদামামহ হাম্বলী (মৃঃ ৭৪৪ হিঃ)। তাঁহার ‘আল মোহাররার’ –(আরবী****) একটি উত্তম কিতাব। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
৯। জায়নুদ্দীন ইরাকী (মৃঃ ৮০৬ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘তাকরীবুল আছানীদ’ – (আরবী*******)। তাঁহার পুত্র আবু জুরআ (আরবী****) ইরাকী ইহার এক শরাহ করিয়াছেন। ৮ জিলকদে ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
১০। হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘বুলগুল মারাম’। ইহাতে ১৪০০ শত হাদীছ রহিয়াছে। ইহার বহু শরাহ হইয়াছে। ইছমাঈল ছাগানী লাহোরী কৃত ‘ছবুলুছ ছালাম’ (আরবী*****) ইহার একটি উত্তম শরাহ।
১১। জহীর আহছান শাওক নিমুবী (মৃঃ ১৩২৯ হিঃ)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘এ’লাউছছুনান’- (আরবী********)। মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর আদেশক্রমে ইহাতে তিনি হানাফী মাজহাব সম্পর্কীয় হাদীছসমূহ একত্র করিয়াছেন এবং তাহার বিশদ ব্যাখ্যা করিয়াছেন। ইহা ২০ খণ্ডে সমাপ্ত একটি বিরাট কিতাব। পূর্ণ প্রকাশিত হইয়াছে।
১৩। মাওলানা জাফরুদ্দীন রেজাবী। তাঁহার কিতাবের নাম ‘জামেয়ে রেজাবী’ –(আরবী**************) ইহাতেও কেবল হানাফী মাজহাব বিষয়ক হাদীছসমূঞই একত্র করা হইয়াছে। ইহা দুই জিলদে সমাপ্ত।
১৪। মুফতী ছৈয়দ আমীমূল এহছান (হেড মৌলবী ঢাকা আলিয়অ মাদ্রাসা)। তাঁহার কিতাবের নাম ‘ফেকহুছছুনানে ওয়াল আছার’ (আরবী*********)। ইহাতেও শুধু হানাফী মাজহাব সম্পর্কীয় হাদীছসমূহের সমাবেশ করা হইয়াছে। সংক্ষিপ্ত হইলেও ইহা একটি উত্তম কিতাব। ইহা এক জিলদে প্রকাশিত হইয়াছে।