তৃতীয় যুগের
কতিপয় প্রসিদ্ধ কিতাব
এ যুগে এত অধিক হাদীছের কিতাব সংকলিত হইয়াছে যাহার পূর্ণ ফিহরিস্ত দেওয়া এখানে সম্ভবপর নহে। শুধু কতিপয় প্রসিদ্ধ কিতাবের আলোচনা এখানে করা গেল।
ছেহাহ ছেত্তা
ছহীহ বোখারী
ছেহাহ ছেত্তার কিতাবসমূহ উহাদের আসল নামে প্রসিদ্ধ না হইয়া উহাদের রচয়িতাদের নামেই প্রসিদ্ধ হইয়া গিয়াছে। যথা –বোখারী শরীফ, মোছলেম শরীফ প্রভৃতি। বোখারী শরীফের আসল ও পূর্ণ নাম আল জামেউছ্ছহীহুল মোছনাদু (আরবী********************)এবং সংক্ষিপ্ত নাম ‘ছহীহে বোখারী’ (ইমাম বোখারীর ছহীহ)। সাধারণ্যে ইহাকে ‘ছহীহ বোখার’ বলে।
ইমাম বোখারী একদিন তাঁহার ওস্তাদ ইমাম ইছহাক ইবনে রাহওয়াইহ্-এর হাদীছের দরছে উপস্থিত ছিলেন। ওস্তাদ বলিলেনঃ ‘আহা! কেহ যদি শুধু ছহীহ হাদীছগুলিকে একত্র করিয়া দিত!’ অতঃপর ইমাম বোখারী এক রাত্রে স্বপ্নে দেখিলেনঃ রছূলূল্লাহ (ছঃ) উপবিষ্ট আছেন; আর বোখারী তাঁহার গায়ে পাখা করিতেছেন এবং মাছি তাড়াইতেছেন। বিশেষজ্ঞগণ তা’বীর করিলেনঃ বোখারী রছুলুল্লাহর হাদীছ হইতে মিথ্যার জঞ্জালকে অপসারিত করিবেন। অতঃপর তিনি তাঁহার এই কিতাব সংকলনে আত্মনিয়োগ করেন এবং মক্কায় হেরেম শরীফে বসিয়া উহার মুসাবিদা পস্তুত করেন। অতঃপর মদীনার মসজিদে নববীতে বসিয়া উহার চূড়ান্তরূপ দান করেন। তিনি প্রথমে ‘এস্তেখারা’ এবং গোসল করিয়া দুই রাক’আত নফল নামাজ পড়া ব্যতীত কোন হাদীছই তাঁহার কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন নাই।
ইমাম বোখারী ৬ লক্ষ হাদীছ হইতে বাছাই করিয়া ‘তাকরার’ সহ ৭৩৯৭টি এবং ‘তাকরার’ বাদ মাত্র ২৭৬১টি হাদীছকে তাঁহার এ কিতাবে স্থান দিয়াছেন এবং দীর্ঘ (১৬) ষোল বৎসর ইহার যাচাই-বাছাই কার্যে ব্যয় করিয়াছেন। এ সকল কারণে ইমাম বোখারীর এই কিতাব বিশ্বজোড়া এত জনপ্রিয়তা লাভ করিয়াছে যে, কেবল তাঁহার নিকটস্থ ৯০ হাজার লোক ইহা শিক্ষা করেন। আর আজ মুসলিম জাহানের এমন কোন স্থান নাই যেখানে ইহা শিক্ষা দেওয়া হইতেছে না। জনসাধারণ ইহাকে আল্লাহর কিতাবের পরেই স্থান দিয়া থাকেন।
বোখারীর শরাহঃ
বোখারীর কিতাবের যেরূপ আলোচনা-সমালোচনা হইয়াছে এবং যত টিকা-টিপ্পনী লেখা হইয়াছে আল্লাহর কিতাব ছাড়া অপর কোনো কিতাবেরই এত টিকা-টিপ্পনী লেখা হয় নাই। কেহ উহার সংক্ষেপ করিয়াছেন, কেহ উহার ছনদ বিচার করিয়াছেন, কেহ উহার বিশেষ অভিধান রচনা করিয়াছেন; আর কেহ উহার শরাহ বা ব্যাখ্যা করিয়াছেন। মোল্লা কাতেব চলপী (মৃঃ ১০৫২ হিঃ) তাহার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘কাশফুজ্জূনুনে’ ইহার প্রায় ৮০ খান শরাহ রহিয়াছে বলিয় উল্লেখ করিয়াছেন। পাক-ভারতের শরাহসহ এ তিন শতাব্দীর শরাহ উহাদের সহিত যোগ করিলে উহার শতের মত শরাহ রহিয়াছে বলিয়া মনে হয়। আমরা নীচে উহার কতিপয় প্রসিদ্ধ শরাহর নাম করিতেছিঃ
১। শরহে বোখারী –খাত্তাবী আবু ছোলাইমান (মৃঃ ৩৮৮ হিঃ)। ইহার নাম ‘এ’লামুছ ছুনান’ (আরবী******) ইহা একটি সংক্ষিপ্ত অথচ উত্তম শরাহ।
২। শরহে বোখারী –হাছান ছাগানী লাহোরী (মৃঃ ৬৫০ হিঃ)। ইহা একটি সংক্ষিপ্ত শরাহ।
৩। শরহে বোখারী –কিরমানী –শামছুদ্দীন মোহাম্মদ ইউছুফ (মৃঃ ৭৮৬ হিঃ)। ইহা একটি উত্তম শরাহ। হালে ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
৪। শরহে বোখারী –বদরুদ্দীন জরকাশী (মৃঃ ৪৯৪ হিঃ)। ইহার নাম ‘আততানকীহ’।
৫। শরহে বোখারী –হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী (মৃঃ ৮৫২ হিঃ)। ইহার নাম ‘ফাতহুল বারী’, ইহা বোখারী শরীফের একটি প্রসিদ্ধ ও মূল্যবান শরাহ। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
৬। শরহে বোখারী –বদরুদ্দীন আইনী (মৃঃ ৮৫৫ হিঃ)। ইহার নাম ‘উমদাতুল কারী’, ইহাও বোখারীর একটি প্রসিদ্ধ ও মূল্যবান শরাহ। ইহাও প্রকাশিত হইয়াছে।
৭। শরহে বোখারী –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ) ইহার নাম ‘তাওশীহ’। ইহা একটি সংক্ষিপ্ত শরাহ।
৮। শরহে বোখারী –কাস্তালানী (মৃঃ ৯৩২ হিঃ)। ইহার নাম ‘ইরশাদুছছারী’। ইহা মধ্যম কলেবরের একটি উত্তম শরাহ। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
৯। শরহে বোখারী –সৈয়দ আবদুল আউয়াল জৌনপুরী (মৃঃ ৯৮৬ হিঃ)। ইহার নাম ‘ফয়জুল বারী’।
১০। শরহে বোখারী –শায়খ ইয়াকুব ছরফী কাশ্মীরী (মৃঃ ৯৭৮ হিঃ)। ইহার নাম জানা যায় নাই।
১১। শরহে বোখারী –শায়খ নূরুল হক ইবনে শায়খ দেহলবী (মৃঃ ১০৭৩ হিঃ)। ইহার নাম জানা যায় নাই।
১২। শরহে বোখারী –শায়খুল ইসলাম দেহলবী (মৃঃ অনুমান ১১৮০ হিঃ)। তিনি শায়খ দেহলবীর ৬ষ্ঠ অধঃস্তন পুরুষ। ইহা ফারছী ভাষায় লিখিত ভাষায় লিখিত। ‘তাইছীরুল কারী’র হাশিয়ায় ইহা প্রকাশিত হইয়াছে। -Indias Contribution
১৩। শরহে বোখারী –শায়খ নূরুদ্দীন আহমদাবাদী (মৃঃ ১১৫৫ হিঃ)। ইহার নাম ‘নুরুল কারী’ (আরবী*******)
১৪। শরহে বোখারী –মাওলানা আহমদ আলী ছাহারানপুরী (মৃঃ ১২৯৭ হিঃ)। ইহা বোখারীর অতি প্রচলিত শরাহ। বোখারীর হাশিয়ায় ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
১৫। শরহে বোখারী –ছৈয়দ আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী (মৃঃ ১৩৫২ হিঃ)। শাহ ছাহেব বোখারী শরীফ পড়াইবার কালে যে সকল ‘তাকরীর’ করিয়াছেন তাঁহার শাগরেদ মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী সে সকলকে একত্র করিয়া ‘ফয়জুল বারী’ নামে প্রকাশ করিয়াছেন।
অবশ্য ইহার মুসাবিদা তিনি একবার শাহ ছাহেবকে দেখাইয়অ তাঁহার দ্বারা তাছহীহ করাইয়াছেন। ইহা বোখারীর একটি উত্তম শরাহ! ইহা চারি খণ্ডে প্রকাশিত হইয়াছে।
সহীহ মোছলেম
ইমাম মোছলেম তিন লক্ষ হাদীছ হইতে বাছাই করিয়া মাত্র চারি হাজার হাদীছ (তাকরার বাদ) তাঁহার এ কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন এবং পনর বৎসর ইহার যাচাই কার্যে ব্যয় করেন। কোন কোন মোহাদ্দেছ (যথা –আবু আলী নিশাপুরী)বোখারী শরীফের স্থলে মোছলেমের এ কিতাবকেই ছোহর মধ্যে প্রথমে হাদীছসমূহের তুলনামূলক মান নির্ধারণ করিয়াছেন, অতঃপর প্রতিটি হাদীছকে যথাস্থানে সন্নিবেশিত করিয়াছেন।
বোখারী শরীফের যেরূপ আলোচনা-সমালোচনা হইয়াছে মোছলেম শরীফেরও প্রায় সেইরূপ আলোচনা-সমালোচনা হইয়াছে। ইহার শরাহর সংখ্যাও অনেক। নীচে আমরা উহার কতিপয় প্রসিদ্ধ শরাহর নাম উল্লেখ করিলামঃ
মোছলেম শরাহঃ
১। শরহে মোছলেম –শরফুদ্দীন নাওয়াবী (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ)। ইহার নাম ‘আল মিনহাজ’। ইহা মোছলেম শরীফের একটি প্রসিদ্ধ ও উত্তম শরাহ। ইহা প্রকাশিত হইয়াছে।
২। শরহে মোছলেম –ঈসা ইবনে মাছউদ জাওয়াবী (মৃঃ ৭৪৩ হিঃ)। ইহার নাম ‘ইকমাল’(?)
৩। শরহে মোছলেম –মোহাম্মদ ইবনে খেলফাহ মালেকী (মৃঃ ৮২৮ হিঃ)। ইহার নাম ‘ইকমালুল মু’লিম’, (আরবী**********) ইহা চারি খণ্ডে প্রকাশিত হইয়াছে।
৪। শরহে মোছলেম –কাস্তালানী (মৃঃ ৯২৩ হিঃ)। ইহার নাম ‘আল ইবতেহাজ’। ইহা অতি বিরাট শরাহ; ৮খণ্ডে অর্ধেক সমাপ্ত হইয়াছে।
৫। শরহে মোছলেম (ফারছী) –শায়খ নূরুর হক ইবনে শায়খ দেহলবী (মৃঃ ১০৭৩ হিঃ)। ডক্টর ইছহাক ছাহেব (এম,এ,এইচ,ডি) ইহাকে তাঁহার প্রপৌত্র হাফেজ ফখরুদ্দীন দেহলবীর কিতাব বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।
৬। শরহে মোছলেম –মোল্লা আলী কারী (মৃঃ ১১২২ হিঃ)। ইহা চারি খণ্ডে সমাপ্ত হইয়াছে।
৭। শরহে মোছলেম –শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী (মৃঃ ১১২৯ হিঃ)।
৮। শরহে মোছলেম –ছৈয়দ মোরতাজা হাছান বিলগিরামী (মৃঃ ১২৫০ হিঃ) ইহার নামও ‘আল ইবতেহাজ’।
৯। শরহে মোছলেম –মাওলানা শিব্বীর আহমদ ওছমানী দেওবন্দী (মৃঃ ১৩৬৯ হিঃ)। ইহার নাম ‘ফতহুল মুলহিম’। ইহা একটি বিস্তৃত ও উত্তম শরাহ। ইহার প্রথমে একটি অতি মূল্যবান ভূমিকা রহিয়াছে।
ছুনানে নাছায়ী
ইমাম নাছায়ী প্রথমে ‘ছুনানে কুবরা’ নামে এক বিরাট কিতাব সংকলন করেন। কিন্তু উহার সমস্ত হাদীছ ‘ছহীহ’ ছিল না। অতঃপর উহা হইতে কেবল ছহীহ হাদীছ বাছাই করিয়া ‘আল মুজতানা’ বা ‘আল মুজতাবা’ নামে এই কিতাব লেখেন। ইহা সাধারণতঃ ‘ছুনানে নাছায়ী’ নামেই প্রসিদ্ধ। বাব (অধ্যায়) রচনায় ইহা ‘বোখারী’ এবং বিষয় বিন্যাসে ইহা ‘মোছলেমের’ বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন। বিশুদ্ধতায় ইহা ছেহাহ ছেত্তার তৃতীয় স্থানে আছে বলিয়া অনেক মোহাদ্দেছের অভিমত। ইহাতে মোট ৪৪৮২টি হাদিছ রহিয়াছে। ইহার অনেক শরাহও রহিয়াছে।
নাছায়ীর শরাহঃ
১। শরহে নাছায়ী –ইবনুল মুলাক্কেন (মৃ ৮০৪ হিঃ)।
২। শরহে নাছায়ী –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃ ৯১১ হিঃ)। ইহা একটি সংক্ষিপ্ত শরাহ।
৩। শরহে নাছায়ী –শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী (মৃ ১১২৯ হিঃ)। ইহা একটি সংক্ষিপ্ত শরাহ।
ইহা দিল্লির আনছারী প্রেস হইতে নাছায়ীর হাশিয়ায় প্রকাশিত হইয়াছে। -Indias Contribution
৪। হাশিয়ায়ে নাছায়ী –শামছুল ওলামা আহমদ দেহলবী ( ) ইহার নাম ‘হাশিয়ায়ে জাদীদাহ’ ইহাও হাশিয়ায়ে সিন্ধীর সহিত প্রকাশিত হইয়াছে।
ছুনানে আবু দাঊদ
ইমাম আবু দাঊদ (মৃ ২৭৫ হিঃ) ৫ লক্ষ হাদীছ হইতে বাছাই করিয়া তাঁহার এই কিতাব সংকলন করিয়াছেন। ইহাতে ‘ছহীহ’, ‘হাছান’ এবং কিছু তন্নিম্ন পর্যায়ের হাদীছও রহিয়াছে। তবে তিনি ইহাতে এমন কোন হাদীছকে স্থান দেন নাই যাহাকে ফেকাহর ইমামগণ আমলের অযোগ্য বলিয়া মনে করিয়াছেন। এছাড়া কোন হাদীছে কোনরূপ ছনদগত ত্রুটি তাকিলে তিনি তাহাও বলিয়া দিয়াছেন। ছুনানসমূহের মধ্যে ইহা একটি ব্যাপক ও বিস্তারিত কিতাব। ইমাম আবু দাঊদ তাঁহার এই কিতাব সংকলন করিয়া ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে দেখাইলে তিনি ইহার প্রশংসা করেন। ইহাতে প্রায় পাঁচ হাজার (৪৮০০) হাদিছ রহিয়াছে। ইহার বহু শরাহ হইয়াছে।
আবু দাঊদের শরাহঃ
১। শরহে আবু দাঊদ –খাত্তাবী (মৃ ৩৮৮ হিঃ)। ইহার নাম ‘মাআলিমুছ্ছুনান’। (আরবী*****)
২। শরহে আবু দাঊদ –কুতুবুদ্দীন আবু বকর ইয়ামানী (মৃ ৬৫২ হিঃ)। ইহা চারি খণ্ডে সমাপ্ত।
৩। শরহে আবু দাঊদ –ইবনুল মুলাক্কেন (মৃ ৮০৪ হিঃ)
৪। শরহে আবু দাঊদ –আবু জুরআ ইরাকী (মৃ ৮২৬ হিঃ)। ইহা প্রথমাংশের শরাহ; ৭ খণ্ডে সমাপ্ত।
৫। শরহে আবু দাঊদ –শায়খ শিহাবুদ্দীন রামরী (মৃ ৮৪৮ হিঃ)।
৬। শরহে আবু দাঊদ –শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী (মৃ ১১২৯ হিঃ)। ইহার নাম ‘ফতহুল ওয়াদুদ’।
৭। শরহে আবু দাঊদ –মাওলানা শামছুল হক ডয়ানবী (মৃ ১৩২৯ হিঃ)। ইহার নাম ‘গায়তুল মাকছুদ’। ইহা আবু দাঊদের একটি উত্তম ও বিস্তারিত শরাহ। ইহার এক খণ্ড প্রকাশিত হইয়াছে।
৮। শরহে আবু দাঊদ –মাওলানা মোহাম্মদ আশরাফ আজীমাবাদী। ইহার নাম ‘আওনুল মা’বুদ’।
৯। শরহে আবু দাঊদ –মাওলানা খলীল আহমদ ছাহারানপুরী (মৃ ১৩৪৬ হিঃ)। ইহার নাম ‘বজলুল মাজহুদ’। ইহা আবু দাঊদের একটি বিরাট ও উত্তম শরাহ। ইহা পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হইয়াছে।
জামেয়ে তিরমিজী
ইহা ‘ছুনানে তিরমিজী’ নামেও প্রসিদ্ধ। ব্যাপকতায় ইহা বোখারীর, বিন্যাসে মোছলেমের এবং আহকাম বর্ণনায় আবু দাঊদের স্থান অধিকার করিয়াছে। এছাড়া ইহাতে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্টসমূহও রহিয়াছেঃ
(ক) ইহাতে ‘তাকরার’ প্রায়ই নাই। ইহার বর্ণনা প্রাঞ্জল ও সংক্ষেপ।
(খ) ইহাতে আবশ্যকমত ফকীহদের মাজহাবের প্রতিও ইংগিত করা হইয়াছে এবং কীরূপে হাদীছ হইতে ফেকাহ গৃহীত হয় তাহার নিয়মও বাতলানো হইয়াছে।
(গ) ইহাতে হাদীছসমূহকে ‘ছহীহ’, ‘হাছান’, ‘জঈফ’, ‘গরীব’ ও ‘মোআল্লাল’ প্রভৃতি স্তর ও করমে ভাগ করা হইয়াছে এবং কোনটি কোন স্তর বা রকমের হাদীছ তাহা বলিয়া দেওয়া হইয়াছে।
(ঘ) ইহাতে রবীদের নাম, লকব, কুনিয়াত প্রভৃতি দ্বারা তাঁহাদের সুস্পষ্ট পরিচয় দেওয়া হইয়াছে।
ইহাতে মোট ৩৮১২টি হাদীছ রহিয়াছে। ইহারও বহু শরাহ হইয়াছে।
তিরমিজীর শরাহঃ
১। শরহে তিরমিজী –শায়খ ইবনুল আরবী (মৃ ৫৪৬ হিঃ)। ইহার নাম ‘আরেজাতুল আহওয়াজী’।
২। শরহে তিরমিজী –হাফেজ মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ (মৃ ৭৩৪ হিঃ)। ইহাতে তিনি ১০ খণ্ডে তিরমিজীর মাত্র দুই তৃতীয়াংশের শরাহ করিয়াছেন;বাকী অংশ হাফেজ জায়নুদ্দীন ইরাকী পূর্ণ করিয়াছেন।
৩। শরহে তিরমিজী –ইবনুল মুলাক্কেন (মৃ ৮০৪ হিঃ)।
৪। শরহে তিরমিজী –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃ ৯১১ হিঃ)।
৫। শরহে তিরমিজী –শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী (মৃ ১১২৯ হিঃ)।
৬। শরহে তিরমিজী –মাওলানা আবদুর রহমান মোবারকপুরী (মৃ ১৩৫১ হিঃ)। ইহার নাম ‘তোহফাতুল আহওয়াজী’।
৭। শরহে তিরমিজী –মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী দেওবন্দী (মৃ ১৩৫১ হিঃ)। ইহার নাম ‘আল আরফুল শাজী’। ইহাতে তাঁহার তাকরীর (বক্তৃতা) জমা হইয়াছে।
ছুনানে ইবনে মাজাহ
মোতাকাদ্দেমীনগণ ইহাকে ‘ছেহাহ ছেত্তা’র শামিল করিতেন না। আবুল ফজল ইবনে তাহির মাকদেছীই (মৃ ৬০০ হিঃ) প্রথমে ইহাকে ‘ছেহাহ ছেত্তা’র শামিল করেন। অতঃপর ইহা ছেহাহ ছেত্তার একটি কিতাব হিসাবেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। কিন্তু ইহার পরিবর্তে কেহ ‘মোআত্তা’কে আর কেহ ‘ছুনানে দারেমী’কেই ছেহাহ ছেত্তার শামিল করা সমীচীন বলিয়অ মনে করেন। ইহাতে মোট ৪৩৩৮টি হাদিছ রহিয়াছে। ইহার ৩০টি হাদীছ রহিয়াছে। ইহার ৩০টি হাদিছ সম্পর্কে ইমাম জাহবী ‘জঈফ’ বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন। ইমাম ইবনে জাওজীর মতে ইহাতে ১৩টি ‘মাওজু’ হাদিছ রহিয়াছে। হাফেজ ইবনে হাজার ইহার খণ্ডন করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে, ফজীলতে কাজবীন সম্পর্কীয় একটি মাত্র হাদীছ ব্যতীত ইহাতে কোন ‘মাওজু’ হাদীছ নাই। ইহার অনেক শরাহ রহিয়াছে।
ইবনে মাজাহর শরাহঃ
১। শরহে ইবনে মাজাহ –আলাউদ্দীন মোগলতায়ী (মৃঃ ৭৬২ হিঃ)। ইহা একটি বিস্তারিত শরাহ।
২। শরহে ইবনে মাজাহ –ইবনুল মুলাক্কেন (মৃঃ ৮০৪ হিঃ)।
৩। শরহে ইবনে মাজাহ –কামালুদ্দীন দামীরী (মৃঃ ৮০৮ হিঃ)। ইহার নাম ‘দীবাজাহ’। ইহা অসমাপ্ত রহিয়াছে।
৪। শরহে ইবনে মাজাহ –ইব্রাহীহ ইবনে মোহাম্মদ হালাবী (মৃঃ ৮৪১ হিঃ)।
৫। শরহে ইবনে মাজাহ –জালালুদ্দীন ছুয়ুতী (মৃঃ ৯১১ হিঃ)। ইহার নাম ‘মিছবাহুজ জুজাজাহ’ (আরবী******)
৬। শরহে ইবনে মাজাহ –শায়ক আবুল হাসান সিন্ধী (মৃঃ ১১২৯ হিঃ)।
৭। শরহে ইবনে মাজাহ –শাহ আবদুল গণী মুজাদ্দেদী দেহলবী (মৃঃ ১২৯২ হিঃ)। ইহার নাম ‘ইনজাহুল হাজাহ’ (আরবী*******)। ইহা ‘ইবনে মাজাহর’ একটি উত্তম শরাহ। ইহা হিন্দুস্তানে ইবনে মাজাহর হাশিয়ায় ছাপা হইয়াছে।