(খ) শাহ আবদুল গণী মুজাদ্দেদী
[১২৩৫-১২৯৬ হিঃ মোঃ ১৮১৯-১৮৭৮ ইং]
‘ওস্তাজুল আছাতেজা’ (গুরুগণের গুরু) শাহ আবদুল গণী মুজাদ্দেদী ১২৩৫ হিঃ দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন (রামপুর নহে)। তিনি হজরত মুজাদ্দেদে আলফে ছানীর পুত্র খাজা মা’ছুমের ৫ম অধঃস্তন পুরুষ। তিনি হাদীছ প্রথমে আপন পিতা খাজা আবু ছাঈদ মুজাদ্দেদী, শাহ মাখছূছুল্লাহ ইবনে শাহ রফীউদ্দীন দেহলবী ও শাহ ইছহাক দেহলবীর নিকট শিক্ষা করেন। ১২৪৯ হিঃ হজ্জ উপলক্ষে তিনি তাহার পিতার সহিত হারামাইন (মক্কা ও মদীনা) গমন করেন এবং তথায় শায়খ আবেদ সিন্ধী মদনীর নিকট হইতেও ‘এজাজত’ লাভ করেন। দেশে প্রত্যাবর্তন করিয়া সিপাহী যুদ্ধ পর্যন্ত (১২৭৪ হিঃ মোঃ ১৮৫৭ ইং) তিনি দিল্লীতে হাদীছ শিক্ষা দেন। অতঃপর তিনি মক্কায় হিজরত করেন। তথায় ১৩ বৎসরকাল হাদীছ শিক্ষাদানের পর ১২৯৬ হিঃ তথায় এন্তেকাল করেন।
বলাবাহুল্য যে, শাহ গনীতে আসিয়াই হাদীছের মুজাদ্দেদীয়া ধারা ও ওলীউল্লাহী ধারা একত্রে মিশিয়া এবং পরবর্তী দেওবন্দী ধারা তাহাতে যাইয়া বর্তায়।
হাদীছে তাহার ‘ইনজাহুল হাজাহ’ নামে ইবনে মাজাহ শরীফের একটি মূল্যবান শরাহ রহিয়াছে।
তাঁহার প্রসিদ্ধ শাগরিদগণঃ
শাহ আবদুল গণীর বহু শাগরিদ রহিয়াছে। নীচে কতিপয় প্রসিদ্ধ শাগরিদের নাম দেওয়া গেলঃ
১। মাওলানা কাছেম নানুতবী (মৃঃ ১২৯৭ হিঃ পূর্ণ পরিচয় পরে আসিবে)।
২। মাওলানা রশিদ আহমদ গঙ্গুহী (মৃঃ ১৩২৩ হিঃ পূর্ণ পরিচয় পরে দেওয়া হইয়াছে)।
৩। মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী (মৃঃ ১৩০২ হিঃ)। মাওলানা মামলুক আলী নানুতবীর পুত্র।
তিনি মাওলানা কাছেম নানুতবীর আমলে ‘দারুল উলুম’ দেওবন্দের প্রধান অধ্যাপক ছিলেন।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী তাহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
৪। মাওলানা খিজির ইবনে ছোলাইমান হায়দরাবাদী।
৫। শায়খ মানজুর আহমদ সিন্ধী।
৬। মাওলানা আবদুল হক এলাহাবাদী।
৭। শায়খ হাবীবুর রহমান রুদলবী।
৮। মাওলানা মোহাম্মদ হোছাইন মুজাদ্দেদী।
৯। শায়খ মোহাম্মদ মা’ছুম মুজাদ্দেদী।
১০। মাওলানা মোহাম্মদ জা’ফরী।
১১। মাওলানা আলীমুদ্দীন বলখী।
১২। শায়খ মাহমুদ ছিবগাতুল্লাহ।
১৩। শায়খ মোহাম্মদ মাজহার মুজাদ্দেদী।
১৪। শায়খ মোহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া ওরফে মুহছেন তরহাটি ইয়ামানী।
তিনি ‘আল ইয়ানিউল জনী’ নামে এক কিতাবে শাহ আবদুল গণী মুজাদ্দেদী হইতে শাহ ওলীউল্লাহ দেহলবী পর্যন্ত হাদীছের ছনদ বর্ণনা করেন এবং মধ্যস্থ সকল মোহাদ্দেছের পরিচয় দান করেন। ‘কাশফুল আছতার’-এর হাশিয়ায় প্রকাশিত।
(গ) মাওলানা আহমদ আলী সাহারনপুরী
[মৃঃ ১২৯৭ হিঃ মোঃ ১৮৮০ ইং]
মাওলানা আহমদ আলী ইবনে লূতফুল্লাহ আনছারী সাহারনপুরী বাল্যকাল অতিক্রম করার পর এলম শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ১৭/১৮ বৎসর বয়সের সময় প্রথম কোরআন পাক হেফজ করেন। অতঃপর দিল্লীতে মাওলানা আলী নানুতবী (মৃঃ ১২৬৩ হিঃ) ও মাওলানা ওছিউদ্দীন সাহারনপুরীর নিকট সমস্ত ফনুনাত এবং মক্কা মোয়াজ্জামায় (১২৫৯-১২৬২ হিজরীর মধ্যে) মাওলানা শাহ ইছহাক দেহলবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। পরে ভূপালে শাহ আবদুল আজীজ দেহলবীর অপর দৌহিত্র মাওলানা আবদুল কায়উম ইবনে মাওলানা আবদুল হাই বুঢানবী (মৃঃ ১২৯৯ হিঃ) হইতেও উহার ‘এজাজত’ লাভ করেন।
তিনি প্রথমে কিছুদিন এলম শিক্ষাদানে আত্ননিয়োগ করেন। অতঃপর হাদীছ, তফছীর প্রভৃতি দ্বিনী এলম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীতে ‘মাতবায়ে আহমদী’ নামে এক লিথুগ্রাফি প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং তথা হইতে বহু হাদীছের কিতাব প্রকাশ করেন। ১২৭৪ হিঃ, মোঃ ১৮৫৭ খৃঃ সংঘটিত সিপাহী যুদ্ধের পর তিনি উহা বন্ধ করিতে বাধ্য হন এবং স্বীয় জন্মভূমি সাহারনপুর যাইয়া ১২৮৩ হিঃ এক আরবী মাদ্রাছার (মাজাহারে উলুম) ভিত্তি স্থাপন করেন। ১২৯৭ হিঃ তাহার এন্তেকাল মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাহাতে হাদীছ-তফছির শিক্ষা দেন।—আওয়াজ-৪৫ পৃঃ
হাদীছে তাঁহার রচনাঃ
(ক) ‘হাশিয়ায়ে বোখারী’ বোখারী শরীফের বহুল প্রচারিত ব্যাখ্যা। (খ) ‘হাশিয়ায়ে তিরমিজী’, দিল্লীর মোজতাবায়ী প্রেস হইতে ইহা প্রকাশিত। (গ) ‘আদ দলীলুল কাবী’—(আরবী…………………………)
শাগরিদগণঃ
দিল্লী ও সাহারনপুরে এবং প্রেসের মাল খরিদ উপলক্ষে কলিকাতা অবস্থানকালে কলিকাতায় অনেকেই তাহার নিকট শিক্ষা করিয়াছেন, কিন্তু আমরা তাহাদের সকলের নাম জানিতে পারি নাই। যে কয়েকজনের নাম জানিতে পারিয়াছি তাহাদের পরিচয় নীচে দেওয়া গেলঃ
১। মাওলানা মোহাম্মদ কাছেম নানুতবী (মৃঃ ১২৯৭ হিঃ)। তিনি দিল্লীতে মাওলানা সাহারনপুরীর নিকট আবু দাউদ শরীফ অধ্যয়ন করিয়াছেন। –ছাওয়ানেহ কাছেমী—মানাজির ১৫৬ পৃঃ
২। মাওলানা ইনায়েত ইলাহী সাহারনপুরী (মৃঃ ১৩৪৭ হিঃ)।তিনি ‘মাজাহেরে উলুমে’ মাওলানা সাহারনপুরী ও মাওলানা মাজহার নানুতবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর তথায় প্রথমে উহার অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং পরে উহার অধ্যাক্ষ পদ লাভ করেন। মাজাহারে উলুমের বর্তমান শায়খুল হাদীছ মাওলানা জাকারীয়া ছাহেব তাহার নিকট হইতে হাদীছের ‘এজাজত’ লাভ করেন। [কলিকাতার শাগরিদগণের নাম বাংলার বিবরণে আসিবে]
(ঘ) মাওলানা আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী
[১২৬৪-১৩০৪ হিঃ মোঃ ১৮৪৮-১৮৮৬ ইং]
আবুল হাছনাত মাওলানা আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী ১২৬৪ হিঃ লক্ষ্ণৌর ফিরিঙ্গী মহল্লার বিখ্যাত ‘এলমী খান্দানে’ (কুতবুদ্দীন শহীদ ছেহালবীর খানদানে *[মোল্লা কুতবুদ্দীন শহীদ শাহ ওলীউল্লাহ দেহলবীর পিতা শাহ আবদুর রহীম দেহলবীর সমসাময়িক ছিলেন। পাক-ভারতে প্রচলিত দরছে নেজামিয়ার আসল উদ্ভাবক তিনিই। তাহার সুযোগ্য পুত্র মোল্লা নেজামুদ্দীন কর্তৃক উহা বহুল প্রচারিত হয়। ফলে উহা তাহার নামেই প্রসিদ্ধ লাভ করে। (পাক-ভারতের দরছে নেজামিয়া যে, তৎকালে বাগদাদের দরছে নেজামিয়া এক নহে। উহার উদ্ভাবক ছিলেন নেজামুল মুলক তুছী।) বলাবাহুল্য যে, তৎকালে দিল্লী ও লক্ষ্ণৌ এই দুইটি কেন্দ্রই পাক-ভারতের শ্রেষ্ঠ এলমী কেন্দ্র ছিল দিল্লী কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাহ ওলীউল্লাহর পিতা শাহ আবদুর রহীম দেহলবী এবং লক্ষ্ণৌ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই মোল্লা কুতবুদ্দীন ছেহালবী। দিল্লী কেন্দ্রের বৈশিষ্ট্য ছিল হাদীছ-তফছীর প্রভৃতি ‘মানকুলাত’ শিক্ষাদান; আর লক্ষ্ণৌ কেন্দ্রের বৈশিষ্ট্য ছিল মান্তেক-হিকমত প্রভৃতি ‘মা’কুলাত’ শিক্ষাদান। এই দুই শিক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে বহুদিন যাবৎ এলমী প্রতিদ্বন্দ্ধিতা চলিয়াছিল।]) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যাবতিয় এলমই তাহার পিতা মাওলানা আবদুল হালীম লক্ষ্ণৌবীর নিকট শিক্ষা করেন। তাহার পিতা ১২৮৫ হিঃ আপন মৃত্যুকালে তাহাকে হাদীছের ‘এজাজত’ দান করেন। তাহার পিতা হাদীছ শাহ আবদুল আজীজ দেহলবীর শাগরিদ মির্জা হাছান আলী মোহাদ্দেছ লক্ষ্ণৌবী ও মাওলানা হোছাইন আহমদ মলীহাবাদীর নিকট শক্ষা করেন। ১৭ বৎসর বয়স হইতে তিনি শক্ষাদান ও কিতাব রচনা করেন এবং মাত্র ২২ বৎসর সময়ে শতের মত কিতাব রচনা করিয়া ৩৯ বৎসর বয়সে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাহার ছোট-বড় এক শতের উপর (১০৯) মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে।
হাদীছে তাহার রচনাঃ
১। ‘তা’লীকুল মুমাজজাদ’—মোয়াত্তা ইমাম মোহাম্মদের শরাহ। (খ) ‘জাজরুন নাছ আলা ইনকারে আছারে ইবনে আব্বাছ’ (আরবী……………………………….) (গ) ‘দাফিউল ওছওয়াছ ইনকারে আছারে ইবনে আব্বাছ’ (আরবী…………………………………..)। (ঘ) ‘আমামুল কালাম’ (আরবী…………………………………)। (ঙ) ‘রিছালাহ ফিল আহাদীছিল মাওজুয়াহ’। –মোকাদ্দমায়ে শরহে বেকায়াহ
তাহার প্রসিদ্ধ শাগরিদগণঃ
১। মাওলানা জহীর আহছান, ‘শাওক’ নিমুবী। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দীর সমসাময়ীক। হাদীছে তাহার ‘আছারুছ ছুনাম’ নামে একটি কিতাব রহিয়াছে। ইহাতে হানাফী মাজহাব সম্পর্কীয় হাদীছ সংকলিত হইয়াছে। আল্লামা কাশ্মীরী ইহাকে একটি উত্তম কিতাব বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন।
২। মাওলানা আবদুল হাদী আজীমাবদী।
৩। মাওলানা মোহাম্মদ হোছাইন এলাহাবাদী।
৪। মাওলানা ইদ্রীছ ছাহছারামী বিহারী।
৫। মাওলানা আবদুল গফূর রমজানপুরী।
৬। মাওলানা আবদুল করীম পাঞ্জাবী।
৭। মাওলানা হাফীজুল্লাহ।
৮। মাওলানা আবদুল হাই (হুগলী নিবাসী)। প্রাথমিক শিক্ষা তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাছায় লাভ করেন। পরে উহার হেড মৌলবী হন।
৯। মাওলানা আবদুল ওহহাব বিহারী (মৃঃ ১৩৩৬ হিঃ মোঃ ১৯১৭ ইং)। তিনি কানপুর হিন্দুস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাছায় অধ্যাপনার পর ১৯০৯ ইং কলিকাতা আসিয়া মাদ্রাছার অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
১০। মাওলানা আবদুল বারী ফিরিঙ্গী মহল্লী (মৃঃ ১৩৪৪ হিঃ)।
১১। মাওলানা আবদুল আজীজ আজমগড়ী।
১২। মাওলানা বদীউজ্জামান লক্ষ্ণৌবী।
১৩। মাওলানা ওহীদুজ্জামান লক্ষ্ণৌবী।
১৪। মাওলানা আবদুল আহাদ এলাহাবাদী।
১৫। মাওলানা হায়দর খাঁ মলীহাবাদী।
১৬। মাওলানা আবদুল গণী বিহারী।
১৭। মাওলানা ফিদা হোছাইন বেহারী।
১৮। মাওলানা আবদুল আজীজ ফিরিঙ্গী মহল্লী।
১৯। মাওলানা ছৈয়দ আমীন নছীরাবাদী।
২০। মাওলানা লুতফুর রহমান আজীমাবাদী।
(ঙ) ‘মিঞা ছাহেব’ ছৈয়দ নজীর হোছাইন
[১২২০-১৩২০ হিঃ মোঃ ১৮০৫-১৯০২ ইং]
ছৈয়দ নজীর হোছাইন ওরফে ‘মিঞা ছাহেব’ ১২২০ হিঃ মোঙ্গের জিলান (বিহারে) বলথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং বাল্যকাল অতিক্রম করার পর এলম শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হন। নোহু, ছরফ, উছূলে ফেকাহ এবং মান্তেক, হিকমত ও হায়্যাত (খগোল) প্রভৃতি এলম তিনি মাওলানা আহমদ আলী চড়য়াকোটী, মাওলানা আবদুল খালেক দেহলবী (তাহার শ্বশুর), মাওলানা জালালুদ্দীন হারাবী ও মাওলানা কারামত আলী ইছরাইলী প্রমুখ প্রসিদ্ধ আলেমগণের নিকট শিক্ষা করেন। হাদীছ তিনি মাওলানা আবদুল খালেক ছাহেবের নিকট অধ্যায়ন করেন। কিন্তু ছহীহ বোখারী ও মোছলিম শরীফ তিনি হজরত শাহ ইছহাক ছাহেবের নিকটও শিক্ষা করেন। তিনি দিল্লীর আওরঙ্গাবাদী মসজীদে হাদীছ-তফছির শিক্ষাদান আরম্ভ করেন এবং পূর্ণ ৬০ বৎসরকাল হাদীছ-তফছীর শিক্ষাদানের পর একশত বৎসর বয়সে ১৩২০ হিঃ মোঃ ১৯০২ খৃঃ দিল্লীতে এন্তেকাল করেন। তিনি সমগ্র আহলে হাদীছ জামাআতের শীর্ষস্থানীয় এবং ‘ওস্তাদুল কুল’ (সকলের শিক্ষাগুরু) ছিলেন।
তাঁহার শাগরিদগণঃ
মিঞা ছাহেবের’ নিকট অসংখ্য লোক হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন। মাওলানা মুজাফফর ছাহেব ‘আল হায়াত বাদল মামাত’ কিতাব পাঁচশত জনের নাম উল্লেখ করিয়াছেন।
নিন্মে ইহাদের কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম দেওয়া গেলঃ
১। মাওলানা হাফেজ আবু মোহাম্মদ ইব্রাহিম আরাবী। আরা জিলার আহমদিয়া মাদ্রাছার প্রতিষ্ঠাতা।
২। শাহ আইনুল হক (ফুলওয়ারী) বিহারী।
৩। মাওলানা শামছুল হক ডয়ানবী (মৃঃ ১৩২৯ হিঃ)। (পরিচয় পরে আসিতেছে।)
৪। মাওলানা আবদুল আজীজ রহীমাবাদী।
৫। হাফেজ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (মৃঃ ১৩৩৭ হিঃ মোঃ ১৯১৮ ইং)। তিনি হাদীছের একজন বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন। আরা আহমদিয়া মাদ্রাছায় হাদীছ এবং দিল্লীতে তফছির শিক্ষা দিয়াছেন।
৬। মাওলানা আবদুর রহমান মোবারকপুরী (মৃঃ ১৩৫৩ হিঃ)। (পরিচয় পরে আসিতেছে)।
৭। মাওলানা হাফেঝ আবদুল মান্নান মোবারকপুরী (মৃঃ ১৩৫৩ হিঃ)। তিনি হাদীছের একজন বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন। তাঁহার দ্বারা পাঞ্জাবে হাদীছের বহুল প্রচার হয়।
৮। ছৈয়দ আবদুল্লাহ গজনবী (মৃঃ ১২৯৮ হিঃ)। তিনি একজন বিশিষ্ট ওলীউল্লাহ ছিলেন। বেদআতের বিরুদ্ধাচরণের দরুন আফগানিস্তান হইতে নির্বাসিত হইয়া তিনি পাঞ্জাবে আগমন করেন এবং তথায় অমৃতসরে বসবাস এখতেয়ার করেন।
৯। মাওলানা গোলাম রছুল গুজরানাওলাবী (মৃঃ ১২৯১ হিঃ)। তিনি হাদীছের একজন প্রসিদ্ধ ওস্তাদ ছিলেন।
১০। মাওলানা ছৈয়দ আমীর হাছান মোহাদ্দেছ ছাহছওয়ানী (মৃঃ ১৩৫৩ হিঃ)।
১১। মাওলানা ছৈয়দ আমীর হাছান মোহাদ্দেছ ছাহছওয়ানী (মৃঃ ১২৯২ হিঃ)।
১২। মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল বারী খাঁ (মৃঃ ১২৯৬ বাং)।
১৩। মাওলানা মোহাম্মদ বশীর মোহাদ্দেছ ছাহছাওয়ানী (মৃঃ ১৩২৬ হিঃ)। (পরিচয় পরে আসিতেছে।)
১৪। মাওলানা নওয়াব ওহীদুজ্জামান খাঁ ছাহেব। তিনি ছেহাহ ছেত্তার ছয়খানা হাদীছের কিতাবেরই উর্দুতে তরজমা করিয়াছেন। কোরআনেরও তিনি তরজমা করিয়াছেন এবং ‘তবভীবুল কোরআন’ (আরবী********) নামে কোরআন মজীদের একখানা বিষয়-সূচীও লেখিয়াছেন।
১৫। মাওলানা মোহাম্মদ তাহের ছাহেব সিলেটী। তিনি একজন বিখ্যাত মোহাদ্দেছ ছিলেন।
১৬। মাওলানা আহমদুল্লা প্রতাবগড়ী দেহলবী। তিনি হাদীছের একজন বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন। দিল্লীর দারুল হাদীছ রহমানিয়া মাদ্রাছায় দীর্ঘ দিন হাদীছের অধ্যাপনা করেন।
১৭। শামছুল ওলামা মাওলানা নজীর আহমদ দেহলবী।
১৮। ফাতেহে কাদিয়ান আবুল ওফা মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (মৃঃ ১৯৪৮ হিঃ)। তিনি বিখ্যাত মুনাজের এবং বহু কেতাবের মোছান্নেফ ছিলেন। দেওবন্দের বিখ্যাত দারুল উলুমেও তিনি শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলেন।
১৯। মাওলানা মোহাম্মদ মঙ্গলকোটী বর্দ্ধমানী। তাঁহার বিরাট লাইব্রেরী তাঁহার এন্তেকালের পর কলিকাতার (বর্তমান ঢাকার) আলিয়া মাদ্রাছায় স্থানান্তরিত হইয়াছে।
২০। মাওলানা ছাআদাত হোছাইন (মৃঃ ১৩৬১ হিঃ)।তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছার অধ্যাপক ছিলেন।
২১। মাওলানা ইব্রাহীম মীর সিয়ালকোটী (মৃঃ ১৩৭৮ হিঃ)।
২২। মাওলানা মোহাম্মদ ছাঈদ বেনারসী (মৃঃ ১৩২২ হিঃ মোঃ ১৯০৪ ইং)
২৩। ছৈয়দ নজিরুদ্দীন আহমদ জা’ফরী বেনারসী (মৃঃ ১৩৫২ হিঃ মোঃ ১৯৩৪ ইং)
২৪। মাওলানা বদীউজ্জামান হায়দারাবাদী।
২৫। মাওলানা আবু ইয়াহইয়া শাহজাহানপুরী।
২৬। মাওলানা মোহাম্মদ ইবনে হাশেম সামরুদী।
২৭। হাফেজ ওবাইদুর রহমান ওমরপুরী দেহলবী।
২৮। মাওলানা আবদুল হালীম ‘শরর’ লক্ষ্মৌবী (মৃঃ ১৩৪৫ হিঃ)।
পঞ্চম স্তর
(ক) মাওলানা মোহাম্মদ কাছেম নানুতবী
[১২৪৮-১২৯৭ হিঃ মোঃ ১৮৩২-১৮৭৯ ইং]
মাওলানা মোহাম্মদ কাছেম ইবনে শায়খ আজাদ নানুতবী ১২৪৮ হিঃ সাহারানপুর জিলার নানুতায় জন্মগ্রহণ করেন। আরবী, ফারছী, ফেকাহ, উছুলে ফেকাহ এবং মান্তেক-হিকমত প্রভৃতি বিষয় তিনি দিল্লীতে মাওলানা মামলুক আলী নানুতবীর নিকট এবং (বোখারী ব্যতীত) হাদীছ তিনি মাওলানা আবদুল গনী মুজাদ্দেদীর নিকট শিক্ষা করেন। বোখারী শরীফ তিনি মাওলানা আহমদ আলী সাহারনপুরীর নিকট অধ্যয়ন করেন। -ছাওয়ানেহ কাছেমী। ‘এলমে তাছাওফ’ তিনি হজরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী (মৃঃ ১৩১৭ হিঃ) হইতে লাভ করেন। তিনি ‘মাতবায়ে আহমদী’ বিদ্যমান থাকা পর্যণ্ত তথায় কিতাব সংশোধনের (তছহীহ-এর) কাজ করেন। অতঃপর (শায়খুল হিন্দ), ছৈয়দ আবেদ হোছাইন দেওবন্দী, মাওলানা ফজলুর রহমান দেওবন্দী ও শায়খ নেহাল আহমদ দেওবন্দী প্রমুখ মনীষীগণের তিনি ১৮৬৬ ইং সাহারণপুরের দেওবন্দে ‘দারুল উলুম’ মাদ্রাছা প্রতিষ্ঠা করেন (দারুল উলুম ও মাজাহেরে উলুমের ইতিহাস অধ্যায়ের শেষের দিকে দেখুন)। তিনি একাধানে ছুফী, দার্শনিক, তার্কিক ও মোহাদ্দেছ ছিলেন। তিনি মাত্র ৫০ বৎসর বয়সে ১২৯৭ হিঃ দেওবন্দে এন্তেকাল করেন।
তাঁহার রচনাঃ
মাওলানা আহমদ আলী সাহারণপুরী স্বীয় বোখারী শরীফের শরাহর শেষাংশ তাঁহারই দ্বারা রচনা করান। এতদ্ব্যতীত ইসলামী দর্শন ও তর্কশাস্ত্র বিষয়ে তাঁহার আরও কতিপয় মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে।
তাঁহার প্রসিদ্ধ শাগরিদগণঃ
১। মাওলানা আহমদ হাছান আমরুহী।
২। মাওলানা মানছুর আলী।
৩। মাওলানা ফখরুল হাছান গঙ্গুহী।
৪। হাকীম মাওলানা রহীমুল্লাহ বিজনৌরী।
৫। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাছান দেওবন্দী (মৃঃ ১৩৩৯ হিঃ)। (পূর্ণ পরিচয় পরে আসিবে।)