সপ্তম স্তর
(ক) মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক বর্ধমানী
শামছুল ওলামা হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক বধর্মানী ১২৮৩ হিজরী পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জিলার কইথন নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথামিক শিক্ষা তিনি মৌলবী মমতাজ হোছাইন বর্ধমানী, মাওলানা মোহ্ম্মদ মঙ্গলকোটী ও মাওলানা মুমাইয়েজুল হক বর্ধমানীর নিকট লাভ করেন। হাদীছ তিনি কানপুর ‘জামেউল উলুম’ মাদ্রাছায় হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর নিকট্ শিক্ষা করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পরই তিনি জমেউল উলুমের অধ্যাপকের পদ লাভ করেন। এবং দীর্ঘদিন তথায় হাদীছ ও তফছীর শিক্ষা দেন। ১৩২৮ হিঃ মোঃ ১৯১০ ইং তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছায় অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন এবং১৯২০ সালে তথা হইতে ঢাকা ইছলামিক ইণ্টারমেডিয়েট কলেজে বদলী হন। তথা হইতে অবসর গ্রহণ করার পর জীবনের শেষ পযর্ন্ত তিনি ঢাকা ইছলামিয়া মাদ্রাছায়ও কিছুকাল হাদীছ শিক্ষা দেন। ১৯২৮ সালে তিনি কলিকাতা এক মটর দুর্ঘটনায় এন্তেকাল কারেন। এবং স্বীয় গ্রাম কইথনে সমাধিস্থ হন। তাঁহার কানপুরের শাগরিদগণের মধ্যে মাওলানা জফর আহমদ ওছমানীর নামে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। (বাংলা শাগরিদ
(খ) মাওলানা ছৈয় আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী
[১২৯২-১৩৫২ হিঃ মোঃ ১৮৭৫-১৯৩৩ ইং)
মাওলানা ছৈয়দ আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী ১২৯২ হিজরী কাশ্মীরের লাওলাবে এক প্রসিদ্ধ ছৈয়দ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। আরবী- ফারছীসহ সমস্ত ফানুনাতের প্রাথমিক কিতাব তিনি কাশ্মীরে তাঁহার পিতা ছৈয় মোআজ্জাম কাশ্মীরী, মাওলানা গোলাম মোহাম্মদ কাশ্মীরী এবং হাজারায় (সীমান্তে) তথাকার ওলামাদের নিকট শিক্ষা কেরন। ১৩১০ সালে তিনি দেওবন্দ আগমন করেন এবং তথাকার ওলামাদের নিকট সর্বষিয়ে উচ্চ জ্ঞান লাভ করেন। হাদীছ তিনি ‘শায়খুল হিন্দ’ মাওলানা মাহমুদুল হাছান ও মাওলানা খলীল আহমদ সাহারনপুরী প্রমুখের নিকট দেওবন্দেই শিক্ষা করেন। ‘এলমে বাতেন’ও হাদীছের ‘এজাজত’ তিনি মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী হইতে লাভ করেন।
১২/১৩ বৎসরকাল তিনি দিল্লী আমীনিয়া মাদ্রাছায় হাদীছ-তফছীর শিক্ষা দেন। অতঃপর ১৩২৭ হিঃ তিনি দেওবন্দের অধ্যাপক হইয়া আসেন। শায়খুল হিন্দের মক্কা শরীফ রওনা সঙ্গে সঙ্গে তিনি ১৩৩৩ হিঃ ‘দারুল উলুমে’র প্রধান অধ্যাপক ও ‘শায়খুল হাদীছ’ নিযুক্ত হন এবং ১৩৪৫ হিঃ পর্যন্ত তথায় হাদীছের দরছ’ দেন। অতঃপর মাওলানা শিব্বীর আহমদ ওছামানী, মুফতী আজীজুর রহমান ওছামানী, মাওলানা হিফজুর রহামান সিহরবী প্রমুখসহ তিনি বোম্বাই প্রদেশের ডাবিলে যাইয়া ‘জামেয়ায়ে ইছলমিয়াহ’ নামে এক নূতন মাদ্রাছা কায়েক করেন। এবং ১৩৫১ হিঃ পর্যন্ত তথায় হাদীছ শিক্ষা দিতে থাকেন। ৩৬ বৎসর শিক্ষাদানের পর ১৩৫২ হিজরীর প্রথম দিকে তিনি ৬০ বৎসর বয়সে দেওবন্দ এন্তেকাল করেন। মাওলানা কাশ্মীরী একজন আসাধারণ স্মৃতিশক্তিস্পন্ন ও প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একবার যে কিতাব দেখিতেন বিশ বৎসর পরেও উহার কোন কোন বিষয় কোন পৃষ্ঠায় কোন লাইনে আছে তাহা বলিতে পারিতেন। হায়াতে আনওয়ার-২৭০ পৃঃ
হাদীছে তাঁহার রচনাঃ
১। ‘ফাছলুল খিতাব’ ( আরবী)
২। ‘খাতেমাতুল খিতাব (ফারছী)
৩। ‘নাইলুলু ফারকাদাইন’।
৪। ‘বাছতুল ইয়াদাইন।
৫। ‘ফয়জুল বারী’ বোখারী শরীফে উপর ‘তাঁহার ‘তাকরীর’ বা বক্তৃতার সমষ্টি। মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী ইহা সম্পাদন করিয়াছেন। ইহা বোখারী শরীফের একটি উত্তম শরাহ । ৪খণ্ডে প্রকাশিত
৬। ‘আল আরফুশ শাজী’ তিরমিজী শরীফের উপর তাঁহার বক্তৃতার সমষ্টি। মাওলান মোহাম্মদ চেরাগ গুজরাটী ইহা সংগ্রত ও সম্পাদন করিয়াছেন।– অপ্রকাশিত
৭। ‘আনওয়ারুল মাহমুদ’ আবু দাউদ শরীফের উপর তাঁহার ও শায়খুল হিন্দের বক্তৃতার সমষ্টি। মাওলানা মোহাম্মদ ছিদ্দীক নজীবাবাদী ইহা সম্পাদন করিয়াছেন।–প্রকাশিত
৮। ‘শরহে ছহীহ মোছলেম’।মোছলেম শরীফের উপর তাঁহার বক্তৃতার সমষ্টি। মাওলানা মানাজির আহছান গিলানী ইহা সংগ্রহ করিয়াছেন।অপ্রকাশিত
৯। ‘হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ। স্বরচিত। অপ্রকাশিত
এতদ্ব্যতীত ‘রদ্দে কাদিয়ানী প্রভৃতি বিষয়ে তাঁহার আরও বহু মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে।
-হায়াতে আনওয়ার-১৭৮ পৃঃ
তাঁহার শাগরিদগণঃ
তাঁহার শাগরিদদের সংখ্যা অনেক। পাক-ভারত, আফগানিস্তান, ইরান ও তুর্কিস্তা প্রভৃতি নানা দেশে তাঁহার শাগরিদ ছড়াইয়া রহিয়াছে। এখানে শুধু তাঁহার কতিপয় প্রসিদ্ধ পাক-ভারতীয় শাগরিদের নাম দেওয়া গেলঃ
১। মাওলানা হিফজুর রহমান সিহারবী। দেওন্দ ও ডাবিলের সাবেক অধ্যাপক, ‘জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের প্রধান সম্পাদক ও ভারতীয় লোকসভার সদস্য। ‘কাছাছুল কোরআন’ তাঁহার একটি মূল্যবান কিতাব।
২। মাওলানা তৈয়ব ছাহেব দেওবন্দী। মাওলানা হাফেজ আহমদ দেওবন্দীর পুত্র ও মাওলানা কাছেম নানুতবীর পৌত্র। বর্তমানে দেওবন্দ দারুল উলুমের প্রধান পরিচালক (মোহতামেমে আলা)
৩। মাওলানা আতীকুর রহমান ছাহেব। দিল্লী ‘নুদওয়াতুল ওলামা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক।
৪। মাওলানা হাবীবুর রহমান ছাহেব। আ’জমগড় মেওনাথ ভজন মাদ্রাছার শায়খুল হাদীছ।
৫। মাওলানা মোহাম্মদ মূছা মিঞা সমলকী (দক্ষিণ আফ্রিকা)। ‘মজলিসে এলমী’র প্রতিষ্ঠাতা। এই মজলিসে এলমীই শাহ ছাহেবের গ্রন্থাবলী প্রকাশের ব্যবস্থা করিয়াছে।
৬। মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী। শাহ ছাহেবের বোখারী শরীফের শরাহ ‘ফয়জুল বারীর সম্পাদক ও ‘তরজমানুছ ছুন্নাহ’ নামক বিরাট হাদীছ গ্রন্থ প্রণেতা। বর্তমানে মক্কার মুহাজির।
৭। মাওলানা মানাজির আহছান গিলানী (মৃঃ ১৩৭৫ হিঃ)। তিনি হায়দরাবাদ ওছমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বীতিয়াত বিভাগের অধ্যক্ষ এবং একজন নামজাদা লেখক ও গ্রন্থকার ছিলেন। ‘হিন্দুস্তান কা নেজামে তা’লীম’, ‘তাদবীনে হাদীছ’, ‘ইমাম আবু হানীফাহ কী ছিয়াছী জিন্দেগী’, ‘ছাওয়ানেহে মাওলানা কাছেম নানুতবী’ ও ‘নিজামে মলুক ও তাছাওফ’ (?) প্রভৃতি তাঁহার বহু গ্রন্থ রহিয়াছে।
৮। মাওলানা ইদ্রীছ কান্দলবী। লাহোর ‘জামেয়ায়ে আশরাফিয়া’র প্রধান পরিচালক। ‘আত-তালীকুচ্ছবীহ’ নামে আবরীতে তাঁহার মিশকাত শরীফের এক শরাহ রহিয়াছে। -প্রকাশিত
৯। মুফতী মোহাম্মদ শফী। তিনি প্রথমে দেওবন্দ মাদ্রাছার অধ্যাপক ও প্রধান মুফতী ছিলেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানের প্রধান মুফতী ও ‘জমিয়তে ওলামায়ে ইছলামের’ সভাপতি। ভারত বিভাগের পর তিনি পাকিস্তানে হিজরত করেন এবং করাচীতে ‘দারুল উলুম’ নামে এক বিরাট আরবী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কায়েম করেন। ‘আল এজদিয়াদুছ ছনী’ (আরবী****************) নামে ছনদ সম্পর্কে তাঁহার একটি রেছালাহ রহিয়াছে। এছাড়াও তাঁহার বহু মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে।
১০। মাওলানা মোহাম্মদ ছিদ্দীক ছাহেব নজীবাবাদী। ‘আনওয়ারুল মাহমুদ’-এর সম্পাদক।
১১। মাওলানা ছাঈদ আহমদ আকবরাবাদী এম,এ। বর্তমানে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছার অধ্যক্ষ। দিল্লীর নুদওয়াহ হইতে প্রকাশিত গবেষণা বিষয়ক সাময়িকী ‘আল বুরহান’ এর সম্পাদক। ‘ওহীদে ইলাহী’ ও ‘ফাহমে কোরআন’ প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণেতা।
১২। মাওলানা ইউছুফ বুন্নৌরী। প্রথমে তিনি ডাবিল মাদ্রাছার প্রদান অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে করাচী ইছলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাছার শায়খুল হাদীছ।
১৩। মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রীছ সকরুডবী। দিল্লী হোছাইন বখশ মাদ্রাছার শিক্ষক।
১৪। মাওলানা মোহাম্মদ হামীদুদ্দীন ফয়জআবাদী। বর্তমানে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাছার অধ্যাপক।
১৫। মাওলানা মানজুর আহমদ নানুতবী। মধ্য ভারতের মুফতী।
১৬। মাওলানা মানজুর আহমদ নো’মানী। প্রসিদ্ধ উর্দু সাময়িকী ‘আল ফোরকান’-এর সম্পাদক।
১৭। মাওলানা আছগর আলী ছাহেব। দেওবন্দ মাদ্রাছার অধ্যাপক।
১৮। মাওলানা আবদুল হক ছাহেব। দেওবন্দ মাদ্রাছার প্রক্তন অধ্যাপক।
১৯। মাওলান আবদুল ওহহাব ইছলামাবাদী। চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাছার বর্তমান অধ্যক্ষ।
২০। মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াকুব মরহুম। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাছার মোহাদ্দেছ ও প্রধান অধ্যাপক ছিলেন।
২১। মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ ছাহেব। হাটহাজারী মাদ্রাছার মোহাদ্দেছ ও প্রধান পরিচালক। ‘ফয়জুল কালাম’ নামে হাদীছে তাঁহার একটি কিতাব রহিয়াছে।
২২। মাওলানা মোহাম্মদ মিঞা ছাহেব। জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারী। তিনি প্রথমে আরা হানাফিয়াহ মাদ্রাছা প্রভৃতিতে অধ্যাপনা করিয়াছেন। বর্তমানে তিনি গ্রন্থ রচনায় ব্যাপৃত আছেন। ‘ওলামা কী শানদার মাজী’, ও ‘ওলামায়ে হক’ প্রভৃতি তাঁহার বহু মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ রহিয়াছে।
২৩। মাওলানা আখতার হোছাইন ছাহেব। দেওবন্দ মাদ্রাছার অধ্যাপক।
২৪। মাওলানা ফয়েজুর রহমান ছাহেব। লাহোর ওরিয়েন্টাল কলেজের অধ্যাপক।
২৫। মাওলানা মোস্তফা হাছান আলাবী। লক্ষ্মৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
২৬। মাওলানা হামেদ আনছারী গাঝী। ‘মদীনা’ (বিজনৌর) ও ‘জমহুরিয়ত’ (বোম্বাই) প্রভৃতি প্রসিদ্ধ পত্রিকা সম্পাদক। মাওলানা মানছুর আনছারী গাজীর পুত্র। -হায়াতে আনওয়ার-২৯৫পৃঃ
২৭। মাওলানা তাজুল ইছলাম ছাহেব। ত্রিপুরা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া মাদ্রাছার শায়খুল হাদীছ ও প্রধান পরিচালক।
২৮। মাওলানা রিয়াছত আলী ছাহেব। পরিচালক ‘হোছাইনিয়া আরাবিয়া’ মাদ্রাছা, রানাপিং সিলেট।
২৯। মাওলানা ফজলুর রহমান ছাহেব চাটগামী। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম ‘দারুল উলুম’ টাইটেল মাদ্রাছার শায়খুল হাদীছ ও অধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে তিনি পটিয়া জীরিয়া মাদ্রাছার ‘শায়খুল হাদীছ’ ও প্রধান পরিচালক। -এ অধীনের ওস্তাদ।
৩০। মাওলান আতহার আলী ছাহেব। কিশোরগঞ্জ ‘জামেয়া এমদাদিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা। পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে ওলাময়ে ইছলামের প্রাক্তন সভাপতি। প্রাক্তন এম, এল, এ ও এম, পি, এ।
৩১। হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ ছাহেব। ঢাকা –‘জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া’র মোহাদ্দেছ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর খলীফা।
৩২। মাওলানা শামছূল হক ছাহেব। ‘জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া’র অধ্যক্ষ। তিনি বেশীর ভাগ মাওলানা মদনীর নিকট হাদীছ অধ্যয়ন করিয়াছেন।
(গ) মাওলানা শিব্বীর আহমদ ওছমানী
[১৩০৫-১৩৬৯ হিঃ ১৮৮৭-১৯৪৯ ইং]
শায়খুল ইছলাম মাওলানা শিব্বীর আহমদ ওছমানী ১৩০৫ হিঃ এক সম্ভ্রান্ত শায়খ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দের প্রধান মুফতী মাওলানা আজীজুর রহমান ওছমানী ও উহার প্রধান অধ্যক্ষ (ছদরে মোহতামেম) মাওলানা হাবীবুর রহমান ওছমানী তাঁহার বড় ভাই। তাঁহার পিতা স্কুল ইনসপেকটর ছিলেন।
যাবতীয় এলম তিনি দেওবন্দেই শিক্ষা করেন। শায়খুল হিন্দ মরহুম তাঁহার হাদীছের বিশিষ্ট ওস্তাদ। তিনি দিল্লী ফতহেপুর মাদ্রাছায়, ডাবিল ও দেওবন্দে ৪৫ বৎসরকাল প্রধান অধ্যক্ষ ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পাকিস্তান আগমন করেন এবং করাচীতে বসতি স্থাপন করেন। ১৩৬৯ হিঃ তিনি ভাওয়ালপুরে এন্তেকাল করেন এবং করাচীতে সমাধিস্থ হন।
তিনি একাধারে মোহাদ্দেছ, মোফাছছের, সুবক্তা, লেখন ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। পাকিস্তান অর্জতে তাঁহার বিরাট দান রহিয়াছে। তিনি এ যুগে এলমে হাদীছের এক বিরাট স্তম্ভ ছিলেন।
হাদীছে তাঁহার রচনাঃ
ক) ‘ফতহুল মুলহিম’ –মোছলেম শরীফের বিরাট শরাহ। ইহার ভূমিকা বহু মূল্যবান তথ্যে পরিপূর্ণ। আল্লামা জাহিদুল কাওছারী ইহার ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছেন। ইহা ৪ খণ্ডে প্রকাশিত হইয়াছে।
খ) ‘লাতায়িফুল হাদীছ’।
এতদ্ব্যতীত অন্যান্য বিষয়েও তাঁহার বহু মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে। তাঁহার কোরআন পাকের তফছীর একটি সুচিন্তিত ও প্রামাণ্য তফছীর।
তাঁহার শাগরিদঃ
তাঁহার শাগরিদের সংখ্যা বহু। যাঁহারা মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরীর নিকট বোখারী শরীফ পাঠ করিয়াছেন তাঁহাদের প্রায় সকলই মাওলানা ওছমানীর নিকট মোছলেম শরীফ শিক্ষা করিয়াছেন। এছাড়া তাঁহার ফতহেপুরের কিছুসংখ্যক পৃথক ছাত্রও রহিয়াছে। -তাজাল্লিয়াতে ওছমানী।
(ঘ) মুফতী কিফায়েতুল্লাহ দেহলবী
[১২৯২-১৩৭৩ হিঃ মোঃ ১৮৭৫-১৯৫৩ ইং]
মুফতী কিফায়েতুল্লাহ শাহজাহানপুরী দেহলবী ১২৯২ হিঃ শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাদীছ দেওবন্দে শায়খুল হিন্দ মরহুম ও অন্যান্য ওস্তাদগনের নিকট শিক্ষা করেন। প্রথমে তিনি শাহজাহানপুর ‘আইনুল এলম’ মাদ্রাছায় অধ্যাপনা করেন। মাওলানা এ’জাজ আলী দেওবন্দী প্রথমে এখানেই তাঁহার নিকট অধ্যয়ন করেন। ১৩২৭ হিঃ মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরীর ‘আমীনিয়াহ’ মাদ্রাছা ত্যাগ ও দেওবন্দে আগমনের পর তিনি তাঁহার স্থলে দিল্লী ‘আমীনিয়াহ’ মাদ্রাছার প্রধান অধ্যাপক ও শায়খুল হাধীছ নিযুক্ত হন। ১৯৩৮ ইং তিনি আরবে অনুষ্ঠিত ‘মু’তামিরে আলমে ইছলামী’ (মুসলিম বিশ্ব সম্মেলন) –এ-তে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৩৯ ইং ‘জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দে’র সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত ভারতে প্রধান মুফতী ছিলেন।
হাদীছে তাঁহার রচনাঃ
ক) ‘হাশিয়ায়ে তাহাবী শরীফ’ । খ) ‘হাশিয়ায়ে মুছাওয়া’ –শাহ ওলীওল্লাহ। গ) ‘হাশিয়ায়ে হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ’ (মিছরের মুনীরিয়া প্রেস হইতে প্রকাশিত হুজ্জাতুল্লাহর সহিত জনৈক হিন্দী আলেম কর্তৃক সম্পাদিত ‘হাশিয়া’ নামে যে হাশিয়াটি রহিয়াছে সম্ভবতঃ উহা তাঁহারাই হাশিয়া)। -হায়াতে এ’জাজ
(ঙ) মাওলানা হোছাইন আহমদ মদনী
[১২৯৬-১৩৭৭ হিঃ মোঃ ১৮৭৮-১৯৫৭ ইং]
শায়খুল ইছলাম মাওলানা ছৈয়দ হোছাইন আহমদ মদনী ১২৯৬ হিঃ ফয়েজাবাদ জিলার এক সম্ভ্রান্ত ছৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রাথমিক সাধারণ শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ১৩০৯ হিঃ দেওবন্দে প্রবেশ করেন এবং শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাছান দেওবন্দীর নিকট হাদীছের বোখারী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ ও ‘মোআত্তা’ –ইমাম মালেক এবং মাওলানা আবদুল আলী ছাহেবের নিকট মোছলেম শরীফ, নাছায়ী শরীফ ও ইবনে মাজাহ অধ্যয়ন করেন এবং অন্যান্য এলম অন্যান্য ওস্তাদের নিকট শিক্ষা করেন। ‘তাছাওফ’ তিনি মাওলানা গঙ্গুহীর নিকট হাছিল করেন। ১৩১৬ হিঃ তাঁহার পিতা মাষ্টার ছৈয়দ হাবীবুল্লাহ সপরিবারে মদীনায় হিজরত করেন। মাওলানা মদনী (হিজরতের নিয়ত ব্যতিরেকে) তাঁহাদের সঙ্গী হন।
তিনি মোট ১৩ বৎসরকাল মদীনার মসজিদে নববীতে, ২ বৎসর (৩৮-৩৯ হিঃ) কলিকাতার কওমী মাদ্রাছায়, ৫ বৎসর (৪১-৪৬ হিঃ) সিলেটের কওমী মাদ্রাছায় এবং ৩১ বৎসর (৪৬-৭৭ হিঃ) দেওবন্দের ‘দারুল উলুমে’ হাদীছ শিক্ষা দেন। তিনি দারুল উলুমের প্রধান অধ্যাপক ও শায়খুল হাদীছ ছিলেন। সুদীর্ঘ ৫০ বৎসরকাল হাদীছ শিক্ষা দেওয়ার পর ৮২ বৎসর বয়সে ১৩৭৭ হিঃ তিনি দেওবন্দে এন্তেকাল করেন।
তিনি একদিকে যেমন ছিলেন একজন মোহাদ্দেছ ও ছূফী অপর দিকে ছিলেন তেমন একজন মুজাহিদ ও রাজনীতিবিদ। এ যুগে তাঁহার নমুনা সত্যই বিরল। তিনি ছলফে ছালেহীনেরই নমুনা ছিলেন। ব্রিটিশের হাতে তিনি বহু নির্যাতন ভোগ করিয়াছেন। তাঁহার জীবনের এক বিরাট অংশই জেলখানায় কাটিয়াছে।
হাদিছে তাঁহার কিতাবঃ
ক) তাকরীরে বোখারী –ইহা তাঁহার বোখারী শিক্ষাদান কালের তাকরীর (বক্তৃতা)। মাওলান কফীলুদ্দীন আহমদ কিরানবী উহা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করিয়াছেন। খ) তাকরীরে বোখারী –ইহাও সেইরূপ তাকরীর। মাওলানা ক্বারী ফখরুদ্দীন গয়াবী কর্তৃক উহা সংগৃহীত ও সম্পাদিত। গ) তাকরীরে বোখারী –ইহাও তাঁহার তাকরীর। মাওলানা ওয়াজদী ভূপালী ইহার সংগ্রাহক ও সম্পাদক। -অপ্রকাশিত ঘ) তাকরীরে তিরমিজী –ঐ।
তাঁহার শাগরিদঃ
তাঁহার শাগরিদগণের নামের তালিকা প্রদানের জন্য এক স্বতন্ত্র কিতাবের প্রয়োজন। পাক –ভারত, চীন, আরব, আফগানিস্তান, তুর্কিস্তান প্রভৃতি সকল মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই তাঁহার শাগরিদান ছড়াইয়া রহিয়াছে। এক দেওবন্দেই প্রায় চারি হাজার ব্যক্তি (৩৮৫৬) তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন। এভাবে তাঁহার মুরীদানের সংখ্যাও অগণিত। কেবল খালীফার সংখ্যাই ১৬৭।
নিম্নে তাঁহার কতিপয় শাগরিদের নাম দেওয়া গেলঃ
১। মাওলানা ছৈয়দ ফখরুল হাছান ছাহেব। দারুল উলুম দেওবন্দের ওস্তাদ ও হজরত মাওলানা আবদুল কাদের রায়পুরীর খলীফা।
২। মাওলানা মোহাম্মদ হাছান বিহারী। দারুল উলুমের হাদীছ প্রভৃতির ওস্তাদ।
৩। মাওলানা আবদুল আহাদ ইবনে মাওলানা আবদুছ ছামী দেওবন্দী। দারুল উলুমের হাদীছের ওস্তাদ।
৪। মাওলানা মেরাজুল হক দেওবন্দী। দারুল উলুমের ফেকাহ প্রভৃতির ওস্তাদ।
৫। মাওলানা মোহাম্মদ নায়ীম দেওবন্দী। দারুল উলুমের ওস্তাদ।
৭। মাওলানা মোহাম্মদ ছালেম দেওবন্দী। মাওলানা মোহাম্মদ তৈয়ব দেওবন্দীর পুত্র ও দারুল উলুমের ওস্তাদ।
৮। মাওলানা আনজার শাহ কাশ্মীরী। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরীর পুত্র ও দারুল উলুমের ওস্তাদ।
৯। মাওলানা মোহাম্মদ আছআদ মিঞা দেওবন্দী। মাওলানা মদনীর পুত্র ও দারুল উলুমের ওস্তাদ।
১০। মাওলানা হামেদ মিঞা। মাওলানা এ’জাজ আলী ছাহেবের পুত্র ও দারুল উলুমের ওস্তাদ।
১২। মাওলানা কাজী ছাজ্জাদ হোছাইন করতপুরী। দিল্লী ফতহেপুর মাদ্রাছার ছদরে মোদাররেছ।
১৩। মাওলানা আবদুছ ছামী সরুনজী। ফতহেপুর মাদ্রাছার ওস্তাদ।
১৪। মাওলানা মছীহুল্লাহ খাঁ। জালালাবাদে মেফতাহুল উলুম মাদ্রাছার শায়খুল হাদীছ ও প্রধান পরিচালক। হজরত থানবীর খলীফা।
১৫। মাওলানা আদুল কায়উম আ’জমী। বায়তুল উলুম মাদ্রাছার ওস্তাদ।
১৬। মাওলানা আবদুল হক ছাহেব। আকুড়া, খটক দারুল উলুম হক্কানিয়ার শায়খুল হাদীছ ও হজরত মদনীর খলীফা।
১৭। মাওলানা মোহাম্মদ ছরফরাজ খাঁ ছফদর হাজারবী।
১৮। মাওলানা লায়েক আলী ছম্ভলী। মাদ্রাছায়ে আরাবিয়ার শায়খুল হাদীছ।
আনন্দ –গুজরাট।
১৯। মাওলানা আবদুছ্ ছালাম ইবনে আবদুশ শাকুর লক্ষৌবী। লক্ষৌ দারুল মোবাল্লেগীন মাদ্রাছার ওস্তাদ।
২০। মাওলানা মুফতী আজীজুর রহমান নহটুরী। মাদ্রাছায়ে আরাবিয়ার ওস্তাদ ও মদনী দারুল এফতা-এর মুফতী।
২১। মাওলানা ছৈয়দ আবুল হাছান আলী নদবী। লক্ষৌ নুদওয়াতুল ওলামা-এর সেক্রেটারী। বিখ্যাত আরবী-উর্দু সাহিত্যিক ও মোহাদ্দেছ।
২২। মাওলানা মোহাম্মদ শরীফ দেওবন্দী। ডাবীল জামেয়া-এর শায়খুল হাদীছ।
২৩। মাওলানা ছৈয়দ হামেদ মিঞা। ‘জামেয়ায়ে মদীনা’- এর প্রধান শিক্ষক ও প্রধান পরিচালক। মাওলানা মদনীর ভ্রাতুষ্পুত্র।
২৪। মাওলানা মিন্নতুল্লাহ ছাহেব। আমীরে শরীয়ত –বিহার।
২৫। মাওলানা ইহতেশামুল হক থানবী।
২৬। মাওলানা আবদুল আহাদ কাছেমী মুঙ্গেরী। ‘জামেয়া এমদাদিয়া’, কিশোরগঞ্জের সাবেক প্রধান শিক্ষক।
[বাঙ্গালী শাগরিদগণের নাম পরবর্তী অধ্যায়ে দেওয়া হইবে।]