সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে এ পেশায় লোক নিয়োগ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিম্নের প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য-
সরকারি প্রতিষ্ঠান
ক) পাবলিক ইউনিভার্সিটি খ) সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অন্যান্য অফিসে গ) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহে ঘ) সামরিক বাহিনীর বেসামরিক পদে ঙ) লাইব্রেরি ইত্যাদি। |
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
ক) প্রাইভেট ইউনিভার্সিাট খ) প্রাইভেট কলেজ ও ইন্সটিটিউট গ) গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ঘ) বায়িং হাউজ ঙ) প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক চ) জাতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানী ছ) আন্তর্জাতিক সংস্থা জ) ব্যবসায়িক সংগঠনের অফিস ঝ) বিভিন্ন কারখানার অফিসে |
চাহিদা
পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, অনুষদ, হলসহ মূল প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগ যেমন একাডেমিক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সংস্থাপনসহ বিভিন্ন বিভাগের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, সকল প্রকার তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব প্রশাসনিক কর্মকর্তার। তিনি তার বিভাগের অধঃস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে তার কাজ সমাধা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অনান্য সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগকে দেখাশুনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিই Admin offcer হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এসব পদগুলো হলো-
(ক) জনসংযোগ কর্মকর্তা/ পরিচালক, জনসংযোগ বিভাগ।
(খ) মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা।
(গ) হিসাব কর্মকর্তা।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী দায়িত্বে অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। যেমন-
(ক) উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা
(খ) পল্লী-উন্নয়ন বোর্ড পরিচালক ইত্যাদি
যোগ্যতা
বিএ/ বিএসসি/ বিকম/ বিএসএস পাশ/ সম্মান। (সকল ক্ষেত্রে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ, তবে কখনও কখনও একটি তৃতীয় বিভাগকেও সুযোগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন একটিতে ১ম বিভাগ প্রয়োজন হতে পারে।)
কোন কোন ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।
অনেক সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে সম্পর্কিত Subject- এ স্নাতক/ স্নাতকোত্তর চাওয়া হতে পারে। লাইব্রেরিয়ানের ক্ষেত্রে লাইব্রেরি সায়েন্সএ স্নাতক/ স্নাতকোত্তর চাওয়া হতে পারে। সমাজসেবা অফিসারের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, সমাজকর্মকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
অগ্রাধিকার
Computer এ দক্ষতা। এক্ষেত্রে MS Word, Excel, Power Point এর Program জানাই যথেষ্ট।
English এ বলা, লেখাকে প্রাধান্য দেয়া হয় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে।
আজকাল এমবিএকে বেশ প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
অভিজ্ঞতা
কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১-৫ বছরের সংশ্লিষ্ট চাকুরির অভিজ্ঞতা চায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়াও চাকুরি করা সম্ভব।
বিষয়ভিত্তিক অবস্থান
এ পেশাকে ১ম ও ২য় শ্রেণীর মান দেয়া হলেও সিদ্ধন্ত গ্রহণকারী ক্ষমতা না থাকায় এ পেশাকে বোরিং লাগাতে পারে। ১ম শ্রেণীর পেশা হলেও বিসিএস ক্যাডারদের মত সমাজে তাদের সম্মান দেয়া হয় না।
মজা
নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ
পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট পেশা
আধুনিক যুগের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার
সুযোগ সুবিধা
পর্যপ্ত Bonus এর এর ব্যবস্থা
Promotion এর ব্যবস্থা
সেবার সুযোগ
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে কোন কোন কর্মকর্তা জণগণের সাথে অধিক সম্পর্কিত আবার অনেকেই অফিসের টেবিলেই বসে কাজ করে থাকেন।
নির্বাচন পদ্ধতি
Step-1
জাতীয় পত্র-পত্রিকা মারফত বিজ্ঞাপন দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়।
দরখাস্তের সাথে সাধারণত ফটো, বায়োডাটা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে) সত্যায়িতসহ ফটোকপি জমা দিতে হয়।
বিজ্ঞাপ্তির সাধারণত ৭-২০ দিনের মধ্যে দরখাস্ত জমা দিতে হয়।
Step-2
আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর তা ইস্যু করে প্রবেশপত্র তৈরি করে পরীক্ষার অন্তত ১ সপ্তাহ পূর্বে প্রার্থীর নিকট পাঠানো হয়।
Step-3
আবেদনপত্রসহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
পরীক্ষার বর্ণনামূলক বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হতে পারে। কখনও ৫০% বর্ণনামূলক এবং ৫০% সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন হয়ে থাকে।
পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ দক্ষতা, আইকিউ, দৈনন্দিন জ্ঞানের উপরই হয়ে থাকে।
পরীক্ষার একটা অংশকে বাছাইয়ের জন্য মূল্যায়ন করা হয়।
বাছাইকৃত প্রার্থীদেরকে তার ফলাফল পত্রিকা মারফত জেনে নিতে হয়।
Step-4
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।
এখানকার মৌখিক পরীক্ষায় তেমন কোন কঠিন প্রশ্ন থাকে না, মূলত প্রার্থীর মনোভাব যাচাই করা হয়।
মৌখিক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেই তার ঠিকানায় নিয়োগ পত্র পাঠানো হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কখনও কখনও অবশ্য PSC এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। আবার কিছু পদে ঐ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব সার্কুলারে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
ফার্মাসিস্ট
ফার্মাসিস্ট এর কাজ একটি মহৎ পেশা। ডাক্তারদের মত তারাও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে ডাক্তারদেরকে মানুষ যেভাবে চেনে, ফার্মাসিস্টরা সেভাবে পরিচিত নন। বলতে গেলে তারা অনেকটা নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। রোগী, ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্টকে একই ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়, অর্থাৎ একজন রোগীর চিকিৎসায় কারও অবদানই কম নয়, যেমনটি শিশুর জন্য মা-বাবার অবদান সমান। কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্রটি দেখা যায়না। দেখা যেত যদি উন্নত দেশের মত আমাদের দেশে hospital ও community pharmacy থাকতো। তারপরও আমরা আশা করি আমাদের দেশেও একসময় hospital ও community pharmacy হবে এবং ফার্মাসিস্টরাও পৌঁছে যাবেন সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায়।
এবার আসা যাক আমাদের দেশে ফার্মেসী পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায়।
ফার্মেসী কোথায় পড়ানো হয়
ফার্মেসী একসময় শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলোতে পড়ানো হলেও এখন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানো হচ্ছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক বেশী ব্যয়বহুল। বর্তমানে যেখানে ফার্মেসী পড়ানো হয় তার মোটামুটি একটি তালিকা তুলে দিচ্ছি।
সরকারি: ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাইভেট: North South South East, East-West, Stamford, UDA, Manarat, Eastern, Atish Diponkor, Northern, Asia Pacific, Dhaka International University, USTC
এখন পাবলিকি ও প্রাইভেট দুই ক্ষেত্রেই চারবছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে year ও semester system থাকলেও, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র semester system.
খরচ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: অনেক কম এবং সাবার আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: Tution fee বাবদ খরচ ২ লক্ষ টাকা প্রায়। তবে North-South সহ আরো কয়েকটি University- তে খরচ আরো অনেক বেশি।
ভর্তি পরীক্ষা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে পরীক্ষার্থীকে কঠিন অগ্নি পরীক্ষার মত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। এজন্য আগে থেকে ভাল রকম প্রস্তুতির সাথে সাথে ভাল রেজাল্ট প্রয়োজন হয়। ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি MCQ এবং লিখিত উভয় পদ্ধতিই চালু আছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সবচেয়ে কঠিন এবং প্রশ্ন হয় MCQ পদ্ধতিতে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশাল Tution fee দেওয়ার মত আর্থিক ক্ষমতা।
প্রস্তুতি
এইচ এস সি পরীক্ষা পাসের পরপরই ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। থাকতে হবে বইয়ের উপর প্রচন্ড দখল। এজন্য কোচিং এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে, তবে মনে রাখবে কোচিং ছাড়াও চান্স পাওয়া সম্ভব। কারণ কোচিং অপরিহার্য নয় বরং প্রয়োজন। প্রশ্ন করা হয় সাধারণত পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও জীব বিজ্ঞান থেকে। তবে ফার্মেসীতে ভাল করতে হলে রসায়নে ভাল দখল থাকতে হবে।
বিষয়বস্তু
ফার্মেসীতে মূলত ঔষুধ নিয়েই পড়াশুনা। তবে একজন শিক্ষার্থীকে ঔষধ সম্বন্ধে দক্ষ করে তোলার জন্য যা প্রয়োজন সব শেখানো হয় এখানে। তাছাড়াও ঔষুধ প্রস্তুতি, বিপনন, নতুন ঔষুধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে hospital ও community pharmacy পড়ানো হয়।
চাহিদা ও চাকুরি সুবিধা
যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন রোগ ব্যাধি থাকবে এবং মানুষকে ঔষধ থেতে হবে। তাই আমাদের দেশে ফার্মেসী বিষয় খোলার পর থেকেই চাকুরির ক্ষেত্রটা সব সময়ই অবারিত। কারণ বাংলাদেশে ঔষূধ কোম্পানী ক্রমাগতভাবে বাড়ছে, বাড়ছে চাকুরি সুবিধা। ঔষুধ কোম্পানীতে চাকুরি ছাড়াও রয়েছে hospital ও community pharmacy তে নিজের career গড়ার সুবিধা। যদিও বাংলাদেশ এ দু’ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে কিন্তু বিদেশে রয়েছে hospital ও community pharmacist এর ব্যাপক চাহিদা। তবে আমাদের দেশে hospital ফার্মাসিস্ট হিসাবে নিয়োগ শুরু হলেও পরবর্তিতে যেকোন ভাবেই হোক তা বন্ধ রয়েছে। আরো রয়েছে শিক্ষকতার মত মহৎ পেশা ছাড়াও বিসিএস এর সুবিধা। যদিও ডাক্তারদের মত ফার্মাসিস্টদের জন্য কোন special বিসিএস নেই। সব মিলিয়ে বলা যায়- ফার্মেসী একটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়। তা আরো অনেকদিন চাকুরীর বাজারে ভালভাবেই রাজত্ব করবে।
সম্ভাবনা
বর্তমানে বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম তৈরি পোশাক, আর দ্বিতীয় ঔষধ। ধারণা করা হচ্ছে আর কয়েক বছরের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে ঔষধ শিল্প চলে আসবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস হিসাবে। বর্তমানে চাহিদার ৯৭% ঔষধ দেশেই তৈরি হয় এবং বাংলাদেশের ঔষধ পৃথিবীর প্রায় ৫৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যে কয়েক শতাংশ ঔষধ বাংলাদেশে তৈরি হয়না সেগুলো এশিয়ার কোন দেশে তৈরি হয়না। এমনকি আমাদের ঔষধ প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক বেশি মানসম্পন্ন। তবে এখনও আমরা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ঔষধ রপ্তানি করতে পারিনা। কারণ আমাদের কোন Reference Laboratory নেই। তবে এ অভাব পূরণ হলে ঔষধ শিল্প আরো সাফল্য লাভ করবে। আর এ কৃতিত্ব এদেশের ফার্মাস্টিদের, যাদের মেধা আর পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের আজ এ অবস্থান।
Scholarship
বর্তমান যুগ হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগ। যার কারণে ফার্মেসীর ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রয়েছে Scholarship এর অনেক সুযোগ। আমাদের দেশের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভাল করে উচ্চ শিক্ষার জন্য Scholarship নিয়ে যাওয়া যায় বিশ্বের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেখানে রয়েছে আকর্ষণীয় চাকুরি সুবিধা। তাছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও ভাল ফলাফলের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে Scholarship এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে রয়েছে Tution fee-র বিশাল ছাড়।
আত্ম কর্মসংস্থান/ ব্যবসা
আমাদের সমাজে রয়েছে অসংখ্য আলোক বর্তিকা, অসংখ্য সম্ভাবনা, অফুরন্ত সম্পদ ভান্ডার, শুধু দুই চক্ষু মেলে দেখতে হবে, আর দেখার মত চোখ থাকতে হবে। অমিত সম্ভাবনার দেম এই বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ২ কোটি উচ্চ শিক্ষিত তাগড়া জোয়ান যারা প্রতিদিন চাকুরি নামক সোনার হরিণ ধারার জন্য আবেদন পত্র লিখতে লিখতে কাগজ সম্পদ ধ্বংস করছে এবং সেই সাথে হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোথায়? এই সমস্যার সমাধান জানার জন্য নিচের অংশগুলো মনোযোগসহকারে পড়ুন এবং পড়া শেষে আপনিই মনের অজান্তে বলতে বাধ্য হবেন এতদিন কোথায় ছিল আলাদিনের এই চেরাগ?
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশকৃত ছেলেকে বাবা বলছে, “বাবা! তোমার পড়াশুনা তো শেষ হলো, এবার একটি চাকুরি যোগাড় করে নাও।” ছেলে পত্যুত্তরে বলল, “ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমার অর্জন করেছি স্বাধীনতা। আর চাকুরি মানে হচ্ছে পরাধীনতা। আমি পরাধীন থাকতে পারবে না।” তাই আপনাকেই বলছি যদি অন্যের অধীনে থেকে চাকুরি করতে না চান তাহলে নিজেই এমন কোন পেশা পছন্দ করুন যাতে আপনিই হতে পারেন অন্যের চাকুরিদাতা। আর এজন্যই প্রয়োজন সমাজে ব্যাপকহারে চালু করা সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট বা আত্ম-কর্মসংস্থান পদ্ধতি। আর দেরি না করে আজই নেমে পড়ুন আত্ম-কর্মসংস্থানে।
Allah helps those who help themselves । যারা নিজে চেষ্টা করে আল্লাহ তাদের সহায় হন। প্রবাদটি চরম সত্য এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে চেষ্টার কোন বিকল্প নেই। আত্ম কর্মসংস্থান বা Self Employment বলতে আমরা বুঝি পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজের কর্মসংস্থান নিজেই প্রস্তুত করা। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অন্যের অধীনে কাজ করতে অপছন্দ করেন। তাদের জন্য উত্তম পদ্ধতি হলো আত্ম কর্মসংস্থান পদ্ধতি। এজন্য প্রয়োজন আত্মপ্রত্যয়, উদ্যম, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা এবং সর্বোপরি অধ্যবসায়।
কেন আত্মকর্মসংস্থান?
মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক কেন আমি আত্মকর্মসংস্থান করব বা আত্মকর্মসংস্থানে লাভই বা কি? একটু ভেবে দেখুন সমাজে কদর করা বেশি, যিনি চাকুরিদাতা নাকি যিনি চাকুরি গ্রহীতা। নিশ্চয়ই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, যিনি চাকুরি দেন। তাহলে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে হতে পারবেন চাকুরিদাতাদের একজন এবং সেই সাথে পেয়ে যাবেন সামাজিক মর্যাদার উচ্চ আসনটি। ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চিত ভাব চলে আসে মনে। ১৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি দেশ বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ বেকারত্বের হার দিন দিন যে হারে বেড়েই চলেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই শিক্ষিত যুবকদের ঘরে বসে চাকুরির আবেদনপত্র লিখে লিখে দেউলিয়া হওয়ার মত ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বেছে না নিয়ে আত্ম কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসা উচিত। নিম্নবর্ণিত কারণে আত্মকর্মসংস্থান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার।
ক. সরাকারি চাকুরির উপর চাপ কমানো।
খ. বেকার সমস্যার সমাধান।
গ. জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর এবং এর সুষম ব্যবহার।
ঘ. সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি।
ঙ. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন ও ব্যাপকহারে দেশিয় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখা।
চ. সর্বোপরি পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা কমিয়ে আত্মতৃপ্তি অর্জন।
আত্মকর্মসংস্থান চ্যারেঞ্জ গ্রহণে যোগ্যতা
মানুষ যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি পৃথিবীতে জন্মগহণ করে না। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে দিনে দিনে মানুষ যোগ্যতা অর্জন করে। তেমনিভাবে আত্মকর্মসংস্থানে আত্মনিয়োগ করার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা।
ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা
পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও পেশা সম্পর্কে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ন্যূনতম স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনা করা উচিত। তাছাড়া সমাজের লোকদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি হওয়াই বাঞ্চনীয় অন্যথায় মূর্খতা হতে পারে বিষফোঁড়ের মত যন্ত্রণাদায়ক।
খ. মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতা
যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জকে সহজেই মোকাবেলা করার জন্য থাকতে হবে অদম্য স্পৃহা। আর মানসিক শক্তি তো আসবে শরীর থেকেই। তাই শরীরকে রোগমুক্ত রাখার যাবতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করা, যাতে অসুস্থতা কোন কাজেই বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
গ. অন্যকে Convince/pursue করার ক্ষমতা
এজন্য দরকার লোকসমাজে নিয়মিত উঠাবসা করা, সবার সাথে ভাল ব্যবহার করা, নিজেকে অন্যের জন্য প্রয়োজনীয়/আকর্ষণীয় করে তোলা। এছাড়া সামাজিক কর্মকাণ্ডে স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ. নেতৃত্বের যোগ্যতা
নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের পরিচালনার জন্য ও তাদের সব সময় চাঙ্গা রাখার জন্য প্রয়োজন নেতৃত্বের গুণাবলী। এজন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত আবশ্যকীয় কাজের মধ্যে একটি।
ঙ. Innovativeness
নিজেকে ছোট্টগন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না রেখে ভিন্ন মাত্রার ও ভিন্ন স্বাদের কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে কখনই বোরিং/একঘেয়েমি আসবে না।
চ. Forecasting Ability
বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় এবং এরই প্রেক্ষিতে কিভাবে ভবিষ্যতে লাভবান হওয়া যায় তা অনুমানের যোগ্যতা থাকতে হবে। এর ফলে যে কোন সমস্য উদ্ভুত হওয়ার আগেই সমাধান করা সম্ভব হবে।
ছ. ধৈর্য
সব সময় মনে রাখতে হবে- ইন্নালাহা মা’আস সবেরীন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। কোন কাজে তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্যের সাথে ধীরে সুস্থে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। সাফল্য লাভের জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
জ. সততা
সততা হলো এমন একটি গুণ যা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা আসবেই। ব্যক্তি কেন্দ্রিক সততা যেমন গুরত্বপূর্ণ তেমনি ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য সামষ্টিক সততা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোন ধরণের পেমা পছন্দ করবেন?
পেশা হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান বলতে আমরা মূলত ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিতে চাই। এক্ষেত্রে ব্যবসা হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে পণ্য অথবা সেবা উৎপাদন, বিপনন এবং ক্রয় বিক্রয়কেই বুঝায়। ব্যবসা মানব সভ্যতার সমবয়েসি। সময়ের বিবর্তনে মানুষের চাহিদার ধরন এবং মাত্রাতেও এসেছে নানা বৈচিত্র। এসব বৈচিত্রময় চাহিদার অনিবার্য ফলাফল ব্যবসা জগতের সীমাহীন বিস্তৃতি। ব্যবসা এখন ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে সমানতালে। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী এবং প্রভাবশালী পেশাজীবী গোষ্ঠী এখন ব্যবসায়ী সমাজ। ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্রও এখন বড় ব্যবসায়ী সংগঠন।
ব্যবসার ধরন
ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য সর্ব প্রথম যেটা দরকার সেটা হলো অর্থ। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এককভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তাই ব্যবসাকে আমরা অত্র টেক্সটে দুইটি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করব।
১. অর্থভিত্তিক:
ক. ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, খ. মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, গ. বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান
২. মালিকানাভিত্তিক:
ক. একক মালিকানা, খ. অংশীদারী, গ. কোম্পানী, ঘ. সমবায় সমিাত
ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আর্থিক দিক দিয়ে তেমন কোন বেগ পেতে হয় না। এক্ষেত্রে নিজের অল্পকিছু মূলধন দিয়ে এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনমত ঋণ গ্রহণ করলেই এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে মুনাফার হার যেমন কম তেমনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সহজ। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান একক মালিকানায় হওয়া ভাল তাতে নিজেকে অন্তত প্রতিষ্ঠানের একক অধিপতি মনে হবে এবং সেই সঙ্গে উঠে আসবে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর।
মাঝারি মানের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য একক মালিকানায় না গিয়ে যৌথ বা অংশীদারী হওয়ার যুক্তিযুক্ত। তাতে ঝুঁকি অনেক হ্রাস পায় এবং যৌথ সিদ্ধান্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য মূলধন বা অর্থ সংগ্রহ কষ্টকর হয় বলে যৌথভাবে কাজ শুরু করলে ব্যংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহজে ঋণ দিয়ে থাকে। তাই তো কথায় বলে দশের লাঠি একের বোঝা। আমাদের দেশে যৌথ বা অংশীদারী মালিকানায় ব্যবসায় সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা অনেক বড়। তাই মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বে এসকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
বড় ধরনের শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের আওতায় গঠন করাই উত্তম। এক্ষেত্রে দরকার প্রচুর অর্থ, উচচ শিক্ষিত লোকবল, বিশ্বস্ত পার্টনার এবং সর্বোপরি অনুকূল পরিবেশ। যেহেতেু এখানে এককভাবে অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব হয় না তাই প্রয়োজনে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
সমবায় সমিতির মাধ্যমেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে গড়ে তুলতে পারেন মিল্ক ভিটার মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। কেননা মিল্ক ভিটা তার কার্যক্রম শুরু থেকেই সমবায় সমিতির মাধ্যমেই পরিচালনা করে আসছে। সমবায় মানেই সম অধিকার। তাই সফলতা লাভের জন্য সকল সদস্যকে সৎ হতে হবে এবং সাম্য ও মৈত্রীর অনুশীলন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা কুরআনে ঘোষনা করেছেন, ‘তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না।’ সমবায়ে সফলতা লাভের জন্য অবশ্যই সংঘবদ্ধভাবে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে।
নিম্নবর্ণিত যে কোন ধরনের ব্যবসা আপনি আপনার পছন্দমত নির্বাচন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আত্ম প্রত্যয়, বলিষ্ঠ মনোভাব এবং নিজের যোগ্যতা যাচাই করেই এগিয়ে আসা উচিত।
আত্মকর্মসংস্থান | ||
ক. উৎপাদনমূলক – | ১. কৃষি ভিত্তিক :
হাঁস-মুরগী পালন পশুপালন মৎস্য চাষ (পুকুর) চিংড়ি চাষ মাশরুম চাষ নার্সারী (গাছের চারা) হ্যাচারী (মাছের পোনা) |
২. শিল্পভিত্তিক :
পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস) হিমায়িত খাদ্য শিল্প (কোল্ড স্টোরেজ, চিংড়ি রপ্তানি) ফুড প্রসেসিং (দুধ, জুস, আইসক্রিম) প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন |
খ. সেবামূলক – | Transportation Business (পরিবহন)
রিয়েল এস্টেট ডিজাইন এ্যাড ফার্ম ভ্যারাইটি স্টোর/ দোকান কনসালটেন্সি ফার্ম এজেন্সী/ ডিলারসীপ শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) হোটেল, রেস্টুরেন্ট স্থাপন ট্যুর আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান টেইলারিং প্রেস (ছাপাখানা) হাসপাতাল নিরাপত্তা প্রদানকারী ফার্ম |
এছাড়াও আরও এমন পেশা নিজের ইচ্ছেমত নির্বাচন করতে পারবেন যা আপনার সামর্থ্যের মধ্যে।
যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন?
যেকোন কাজের পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে তার ফলাফল কাঙ্ক্ষিত মানের হয় না। তাই আত্মকর্মসংস্থানের মত চ্যালেঞ্জিং পেশা প্রহণ করার পূর্বে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
ক. পড়াশুনা
সমাজে শিক্ষিত লোকের কদর অশিক্ষিত লোকের চেয়ে অনেক বেশি। তাই কমপক্ষে স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনা করা ভাল যাতে সামাজিক মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে।
খ. পেশা পছন্দকরণ
পড়াশুনা শেষ করার পর উপরোল্লিখিত পেশাসমূহের মধ্য হতে যে কোন পেশা বা নিজের ইচ্ছেমত লাভজনক পেশা নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে একাধিক পেশা নির্বাচন করে তার সুযোগ-সুবিধা, ঝুঁকি, সম্ভাবনা ইত্যাদি মূল্যায়ন করে র্যাংকিং করা যেতে পারে। র্যাংকিংকৃত পেশা হতে সম্ভাবনাময় লাভজনক পেশা পছন্দ করাই যুক্তিসংগত।
গ. ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ
বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেগুলো আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং পাশাপাশি শহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত যুব উন্নয়নে ট্রেনিং গ্রহণ করা যেতে পারে।
ঘ. স্থান নির্বাচন
পেশা নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একেবারে নির্বোধ না হলে যেমন কেউ মরুভূমিতে জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন করে না তেমনি বুদ্ধিমান লোকেরাও অলাভজনক জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন না। এক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের জন্য গ্রামের কাছাকাছি যেখানে প্রচুর কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবস্থা আছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এমন স্থান নির্বাচন করা যেতে পারে। আবার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান শহরের সন্নিকটে উপশহর এলাকায় হলে ভাল। কিন্তু হোটেল বা রেস্টুরেন্ট স্থাপন করতে হবে এমন স্থানে যেখানে কাঁচা টাকার লোকের উঠাবসা বেশি এবং ব্যস্তময় এলাকা।
ঙ. অর্থ সংগ্রহ
এমন এক সময় ছিল যখন ব্যবসা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ ছিল কলিন্সের চন্দ্র অভিযানের মতই দু:সাহসিক। কিন্তু বর্তমানে অনেক ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে বসে আছে বিনিয়োগের সুযোগকে সহজ করে দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী উন্সুরেন্স কোম্পানি, ও অনেক ইসলামি এনজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসকল প্রতিষ্ঠন দিচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ। তাই চাকুরী খুঁজতে গিয়ে দামী জুতার তলা ক্ষয় না করে আজই নেমে পড়ুন সহজ শর্তে ঋণের খোঁজে। আর নিজের গাঁটে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলে তো কোন কথাই নেই।
চ. কর্মী নির্বাচন
প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য অবশ্যই সৎ, দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মীর কোন বিকল্প নেই। তাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী সংগ্রহ করার জন্য তাদের উপরোক্ত গুণাবলীর প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
ছ. অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ
নির্বাচিত পেশা অনুযায়ী সরকারি অনুমতিপত্র/ লাইসেন্স, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং, মেশিনারী, আসবাপত্র, কাঁচামাল প্রভৃতি সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য অবশ্যই কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জ. চুড়ান্তভাবে কাজ শুরু
সবকিছু গুছিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আত্মকর্মসংস্থানে সফলতার পূর্বশর্ত
যে কোন কাজে সাফল্য লাভের জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। আত্মকর্মসংস্থানও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে পরিশ্রমটা অবশ্যই হতে হবে পরিকল্পনা মাফিক, অন্যথায় পরিশ্রম হবে পান্ত ভাতে ঘি ঢালার মত। অন্যদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রতিষ্ঠন এমন স্থানে স্থাপন করা দরকার যেখানে সহজে ও স্বল্পমূল্যে জনশক্তি পাওয়া যায় এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজার ভাল। পণ্যের বিজ্ঞাপন/ প্রচার এমনভাবে দিতে হবে যাতে অল্প খরচে অধিক সংখ্যক ক্রেতার নিকট তথ্য উপস্থাপন করা যায়।
প্রতিদিনের সূচি কাজের আগের দিন তৈরি করা এবং সূচি অনুসারে কাজ করলে সাফল্য হাতের মুঠোয় ধরা দিতে বাধ্য। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের ঠিকমত পরিচালনা করলে এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ ও অপচয় রোধ করলে আপনিও হতে পারবেন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের গর্বিত মালিক।
আমাদের সমাজে সমালোচনা করার মত অনেক বিকৃত মস্তিষ্কসম্পন্ন লোক বাস করে যাদের কাজই শুধু অন্যের সমালোচনা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা। যেমন আপনি যদি বিএ, এমএ পাশ করে গ্রামে এসে মৎস চাষের মত লাভজনক মহৎ পেশায় জড়িয়ে পড়েন তাহলে অনেকেই বলবে বিএ পাশ করে হয়েছে জেলে। এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। কেননা আত্মকর্মসংস্থান একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। তাই সমালোচকদের খোড়াই কেয়ার করে আপনি যখন সাফল্যলাভ করতে শুরু করবেন তখন তারাই তাদের ভুল বুঝতে পেরে আপনার প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করবে। বর্তমানে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে তাগড়া জোয়ানদের। তাই তো কবি কাজী নজরুল বলেছিলেন, আমি সবসময় তরুণদের দলে কেননা তরুণরাই পারে জরাজীর্ণ পৃথিবীটাকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়তে।
চারুকলা
বর্তমান সময়ে উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও ফাইনআর্টস (Fine Arts) বা চারুকলা শুধুমাত্র সাজ-সজ্জার বিষয় হিসেবে কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে আর গণ্য করা হচ্ছে না। এখন এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নানাবিধ এবং দিন দিন উত্তরোত্তর তা বেড়েই চলেছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা নানামুখী কর্মক্ষেত্রে তাদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যেভাবে শুরু করবেন
ছবি আঁকা, নকশা, ডিজাইন ইত্যাদি বিষয়ে যারা আগ্রহী, কিংবা সৃজনশীল বিষয় নিয়ে ভাবতে যারা ভালোবাসেন তারা এদিকে এগুতে পারেন।
যেখানে পড়বেন
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু চারুকলা মহাবিদ্যালয় ও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক অর্থাৎ বিএফএ (ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস) এবং স্নাতকোত্তর অর্থাৎ এসএফএ (মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস) এই দুই পর্বের ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
আগ্রহ ও ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা চিত্রকলা, ডিজাইন, সিরামিকস, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে তাদের মেধার বিকাশ ঘটচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে নানাবিধ সরকারি, বেসরকারি, প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন।
১। ফ্রিল্যান্স শিল্পী
চারুশিল্পীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা নিজেদেরকে স্বাধীন রেখে তাদের কাজ পরিচালনা করে। এরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বাধিনভাবে ইচ্ছামত শিল্পকর্মের কাজ করে। বিনিময়ে ভাল অংকের আর্থিক সম্মানী লাভ করে।
২। মিডিয়াতে
প্রিন্টিং মিডিয়ায় ডিজাইনার হিসেবে কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন নির্মাণ থেকে শুরু করে সেট ডিজাইন, অলংকরণ, ক্যামেরার পেছনে চারুকলার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সাফল্য দেখাতে সক্ষস হচ্ছেন। চলচ্চিত্র শিল্পেও একজন চারুকলার শিক্ষার্থীর অনেক ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রাইভেট চ্যানেল টিভি ও রেডিও এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহে চারুকলার শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি কদর। বিভিন্ন পত্রিকার কার্টুন তৈরি, বইয়ের প্রচ্ছদ অংকনের মাধ্যমেও শিল্পীদের রয়েছে দেশ জোড়া সুনাম।
৩। শিক্ষাক্ষেত্রে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে – হাইস্কুল, প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (PTI) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে।
৪। ড্রেস ডিজাইন কিংবা ফ্যাশন শিল্পে
এই সেক্টরে বর্তমান সময়ে দেশে ও বিদেশে চারুশিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষণীয়। নিত্য নতুন ও অভিনব ড্রেস ডিজাইনসহ পোশাকের শৈল্পিক সৌন্দর্যের অন্বেষণ ও বিকাশ আমাদের নজর কাড়ে।
৫। সিরামিকস, টেরাকোটাশিল্পসহ গিফট আইটেম
এখানেও শিল্পী তার মনকে গড়ে তোলে সৌন্দর্যের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি। সর্বোপরি বর্তমান সময়ে চারুকলা (Fine Arts) শুধুমাত্র সাজ-সজ্জা কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশই নয় বরং নানাবিধ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।