ছোটদের নবী-রসূল – ১
অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক
লেখকের কথা
একটি শিশু যখন ভূমিষ্ট হয় তখন সে থাকে নিষ্কলুষ ও পবিত্র। এ পৃথিবী সম্পর্ তখন তার কোন ধারণা থাকে না। ক্রমে সে বড় হতে থাকে এবং প্রথমে আশেপাশের ও পরে বৃহত্তর পরিবেশ থেকে জ্ঞান লাভ করতে থাকে। পরিবেশ যদি ভাল হয় তাহলে শিশুর মন-মানসের ওপর তার ভাল প্রভাব পড়ে এবং সেভাবেই সে গড়ে ওঠে। কিন্তু পরিবেশ খারাপ হলে শিশুও তা থেকে খারাভাবে প্রভাবান্বিত হয়।
আমরা আমাদের দেশের বর্তমান পারিপার্শ্বিক ও অন্যান্য পরিবেশকে মোটেই ভাল বলতে পারি না। তাই শিশুদের মধ্যে সুষ্ঠু মননশলতা, উন্নত নৈতিক বোধ এবং উদার ও মানবিক চরিত্র গড়ে তোলার জন্য কিছু উন্নত ও মহান চরিত্রের সাথে তাদেগর পরিচ করিয়ে দেয়া একান্ত প্রয়োজন। বলা বাহুল্য নবী-রসূলদের চরিত্র ছাড়া এরূপ চরিত্র আর কিছুই হতে পারে না। তাই সব রকম মাদরাসা ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ছোটদের নবী-রসূল নামের এ বই লেখার প্রয়াস। এ বইয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশের শিশুদের চরিত্র গঠনে সহায়তা হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আার তাহলে আমার এ শ্রম সার্থক হবে।
বইখানাতে তথ্যগত কোন ভুল থাকলে তা আমার ব্যক্তিগত দুর্বতলতা। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে তা দেখিয়ে দিলে কৃতঞ্চ থাকবো।
ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি বইখানির ১৯তম বর্ধিত সংস্করণও প্রকাশ করছে বলে আমি সোসাইটির কাছে কৃতজ্ঞ।
বিনীত
লেখক
তারিখ- জানুয়ারী ২০০৮
হযরত আদম আলাইহিস সালাম
তোমরা জান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুধু আমাদেরকেই সৃষ্টি করেননি সারা বিশ্ব-জাহানে যা কিছু আছে তা সবই তাঁর সৃষ্টি। তিনি গাছ-পালা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, আসমান-জমিন সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এ সব সৃষ্টি করতে তাঁর মোটেই কোন কষ্ট হয়নি। তিন িএমন ক্ষমতার অধিকারী যে কোন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলে শুধু আদেশ কনে “হয়ে যাও” আর সংগে সংগে ঐ বস্তুটি হয়ে যায়। যে বিশাল পৃথিবীতে আমরা বাস করছি তাও তিনি এভাবেই সৃষ্টি করেছেন।
আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি আজ থেকে শত শত কোটি বছর পূর্বে আল্লাহ তা’আলা সেটি সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সৃষ্টি করার পেছনে আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্য ছিল িএখঅনে মানুষকে আবাদ করা। তাই বলে কিন্তু তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করার পর পরই এখানে মানুষকে পাঠাননি বরং মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠালে তার জীবন ধারণ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন হবে সর্ব প্রথম এখঅনে সে সব জিনিস সৃষ্টি করেছেন। তাই সৃষ্টি করেছেন গাছ-পালা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, বন-উপবন, সাগর-মহাসাগর নানা রকমের জীব-জন্তু, পশু-পাখী এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনী সব জিনিস। এসবও কিন্তু আবার একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এ জন্যেও লেগেছে কোটি কোটি বছর।
মানুষ সৃষ্টি:
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের লক্ষ কোটি সৃষ্টি এ পৃথিবীতে আছে। এ সবের মধ্যে মানুষ সবার সেরা। মানুষের দেহের গঠন যেমন অনুপম তেমনি তার জ্ঞান বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা, চিন্তা-চেতনা এবং সৌন্দর্য ও রুচিবোধও অতুলনীয়। এছাড়াও তারা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়তম সৃষ্টি। আর কোন সৃষ্টিই তার সমকক্ষ নয়। পৃথিবীর সব কিছু তাই মানুষের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সব কিছু সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করণে মানুষ সৃষ্টি করার। একদিন ফেরেশতাদের ডেকে তিনি তাঁর এ ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, “হে ফেরেশতারা, আমি পৃথিবীতে মানুষ নামে এক নতুন মাখলুক সৃষ্টি করতে চাচ্ছি। তারা হবে আমার খলীফা বা প্রতিনিধি। আমি যে ভাবে চাই আমার পক্ষ থেকে তারা সেভাবে দুানিয়াটা চালাবে।”
ফেরেশতারা আল্লাহর এ উদ্দেশ্য বুঝতে পারলো না। তারা বললো: হে আল্লাহ, তোমার গুণগান ও প্রশংসা করার জন্য তো আমরাই আছি। রাত দিন সবচ সময় তোমার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছি। তোমার হুকুম তা’মীল করছি। এ সবের জন্য তো আর কোন মাখলুকের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া তোমার উদ্দেশ্য থেকে আমরা বুঝতে পারছি, এ নুতন সৃষ্টিকে তুমি অসংখ্য ক্ষমতা ও অধিকার প্রদান করবে। তাদের থাকবে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। যে কোন ব্যাপারে তারা তাদের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এরূপ স্বাধীনতা ও কর্মক্ষমতা কোন সৃষ্টিকে দেয়া হলে আমাদের ধারণায় তারা স্বেচ্ছাচারিতা চালাবে। পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ও খুনখারাবির মাধ্যমে এ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলবে। অতএব এ ধরনের নতুন মাখলুক সৃষ্টির কি কোন প্রয়োজ আছে? জবাবে আল্লাহ তা’আলা বললেন: হে ফেরেশতারা, আমি যা জানি তোমরা তা জান না।
এরপর আল্লাহ তা’আলা মাটি দিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালামের দেহ সৃষ্টি করলেন এবং পরে সেই দেহে প্রাণ দান করলেন। এভাবে হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হলো। তিনি হলেন দুনিয়ার সর্বপ্রথম মানুষ।
আদম (আ)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা’আলা তাঁকে প্রয়োজনীয় সব রকমের জ্ঞান দান করলেন। অতি যত্নে সব কিছু তাঁকে শিখিয়ে দেয়া হলো। কারণ আল্লাহর এই বিশাল পৃথিবীতে তাকে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ দায়িত্ব পালন করতে হলে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যাপক জ্ঞান। সকল জ্ঞানের উৎস হলেন মহান আল্লাহ। তাই তিনি নিজেই আদম (আ)কে এ জ্ঞান শিক্ষা দিলেন। পরে আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের ডেকে ঐ সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু ফেরেশতারা সে সব বিষয়ে কিছুই বলতে পারলো না। তাঁরা বললো: হে আল্লাহ, সব জ্ঞানের মালিক তো তুমি। তুমি যাকে যতটুকু জ্ঞান দান করো সে ততটুকুই জানতে পারে। সুতরাং তুমি আমাদের যতটুকু জ্ঞান দান করেছো তার বেশী আমরা কিছুই জানি না। ফেরেশতাদের এই জবাব শুনে আল্লাহ তা’আলা আদম (আ)-কে তাদের সামনে হাজির করলেন এবং ঐসব বিষয়ে বলতে আদেশ দিলেন। আতম (আ) একের পর এক সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিলেন। এবার ফেরেশতারা বুঝতে পারলো যে সিদ্ধান্ত ক্রমেই বিভিন্ন বিষয়ে আদম (আ-কে তাদের চেয়ে বেশী জ্ঞান দান করা হয়েছে। তারা এ কথাও বুঝতে পারলো যে, একটি বড় রকমের উদ্দেশ্য নিয়েই আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা’আলা সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আদম (আ)-কে সিজদা ক রার জন্য ফেরেশতাদের আদেশ করলেন। সব ফেরেশতাই তৎক্ষণাত আল্লাহর হুকুম তা’মীর করে হযরত আদম (আ)-কে সিজদা করলো। কিন্তু আযাযীল তাঁকে সিজদা করতে অস্বীকার করলো।
আযাযীল কে?
মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহ তা’আলা জিন জাতিকে সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে বসবাসের জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃত্ব ও স্বাধীনতা পাওয়ার পর তারা পৃথিবীতে মারামারি খুনখারাবি ও ফিতনা-ফাসাদ করে এর পরিবেশ বিষাক্ত ও কলুষিত করে তোলে। এ অবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কর্তৃত্ব থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এ উদ্দেশ্যে একদল ফেরেশতা প্রেরণ করেন। ফেরেশতারা তাদের অনেককে হত্যা করেন এবং অনেককে বনবাদা, মরুভূমি, পাহাড়-পর্বত ও বিজন এলাকায় ভাগিয়ে দেন। এ কর্মকান্ডের এক পর্যায়ে তারা একটি সুন্দর জিন শিশুর সামনাসামনি হন। তার নাম আযাযীল। শিশুটির চেহারা গতিবিধি তাদের বেশ আকৃষ্ট করে। তারা তাদের সাথে শিশুটিকে রাখার অনুমতি চেয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করে জিন-শিশুটিকে তাদের সাথে রাখার অনুমতি দিলেন। ফেরেশথাদের সাথে থেকে সে আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখায়। কিন্তু আদম (আ)-কে সিজদা করার ক্ষেত্রে সে চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। এভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে সে আদম (আ)-কে সিজদা করা থেকে বিরত থাকে আল্লাহর নাফরমানী করে বসলো।
তাই আল্লাহ তা’আলার কাছে সে লা’নতের যোগ্য হয়ে গেল। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি আদমকে সিজদা করলে না কেন? সে জবাব দিল হে আল্লাহ তুমি আগুন থেকে আমাকে সৃষ্টি করেছো। আর আদমকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে। তাই আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ট। এ কারণে আমি তাকে সিজদা করতে পারি না। তার এ জবাবে আল্লাহ তা’আলা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হলেন। কারণ একমাত্র আল্লাহই শ্রেষ্ট ও মর্যাদাবান। তাঁর হুকুম কেউ অমান্য করতে পারে না। তিনি আযাযীলকে ইবলিস ও শয়তান নামে আখ্যায়িত করে লা’নত দিয়ে তার দরবার থেকে বিতাড়িত করে দিলেন। তাকে জানিয়ে দিলেন ভয়ংকর শাস্তির স্থান জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত। সেখানে তাকে কল্পনাতীত শাস্তি অনন্তকাল ধরে ভোগ করতে হবে। আমার এ সিদ্ধান্তের কোন ব্যতিক্রম হবে না। আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হয়ে শয়তান চরমভাবে হতাশ হয়ে গেল। এবার সে চিন্তা করে দেখলো আদমের কারণেই সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হলো। সুতরাং যে করেই হোক আদম এবং তার বংশধরদের ক্ষতি করতে হবে। সে অত্যন্ত কাকুতি-মিনতি করে আল্লাহর কাছে কিয়ামত পর্যন্ত সময় প্রার্থনা করলো। সে বললো: হে আল্লাহ তুমি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দাও। আল্লাহ বললেন, তোমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেয়া হলো। আল্লাহর পক্ষ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ লাভের ঘোষণা শুনে সে বললো: আমি কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকার যে সুযোগ পেলাম তা পুরোপুরি কাজে লাগাবো। আমি তোমার সকল বান্দাকে পথভ্রষ্ট করবো। তাদেরকে গোমরাহ করার কোন সুযোগই আমি ছাড়বো না। আল্লাহ তা’আলাও শয়তানকে বললেন: যারা সত্য সত্যই আমার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে তাদেরকে তুমি গোমরাহ করতে পারবে না।
আল্লাহ তা’আলা এরপর আদমকে (আ)-কে বেহেশতের মধ্যে রেখে দিলেন। কিছুদিন পর হযরত হাওয়া আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে আদম (আ)-এর স্ত্রী হিসেবে বেহেশতে রেখে দিলেন। আল্লাহ আদম ও হাওয়া (আ) উভয়কে বললেন, তোমরা যেভাবে ইচ্ছা বেহেশতে বসবাব করো। তবে একটি গাছ দেখিয়ে বললেন: এ গাছটির কাছে যেওনা। আমার এ আদেশ না মেনে এ গাছের কাছে গেলে তোমরা আমার হুকুম অমান্যকারী জালেম বলে গণ্য হবে। আদম ও হাওয়া আল্লাহর হুকুম মেনে নিলে এবং মহাসুখে জান্নাতে বাস করতে থাকলেন।
এ দিকে শয়তান আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকেই আদম ও হাওয়ার (আ) ক্ষতি সাধন করার সুযোগ খুঁজতে লাগলো। সে চেষ্টা চালাতে থাকলো তাদের আস্থা ও সান্নিধ্য লাভের। অবশেষে একদিন সে তাঁদের সুপরামর্শ দাতা হিসাবে আস্থা লাভ করতে সক্ষম হলো। আদম ও হাওয়া (আ) কিন্তু শয়তানের মনোভাব মোটেও বুঝতে পারলেন না। এ সুযোগে শয়তান তাঁদেরকে বললো: আমি তোমার কল্যাণ কামনা করি। তোমাদের যে গাছের নিকট যেতে নিষেধ করা হয়েছে সে গাছের ফল খেলে তোমরা কখনোই মৃত্যুবরণ করবে না এবং এ বেহেশতেই চিরদিন থাকতে পারবে। শয়তানের এ ধোঁকায় পড়ে তাঁরা আল্লাহর নিষেধ ভুলে গেলেন িএবং ঐ গাছের ফল খেলেন।
ফল খাওয়ার সাথে সাথে হযরত আদম ও হযরত হাওয়া (আ) শরীর থেকে বেহেশতের পোশাক খসে পড়লো। তাদের লজ্জাস্থানসমূহ উন্মুক্ত হয়ে পড়লো। তারা গাছের পাতা ছিঁড়ে শরীর ঢাকতে শুরু করলেন। তখন আল্লাত তা’আলা তাঁদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা আমার হুকুম অমান্য করেছো। আমি তোমাদেরকে যা বলেছিলাম তা তোমরা মেনে চলেনি। একথা বুঝার সাথে সাথে আদম ও হাওয়া (আ) আল্লাহর কাছে ভুলের জন্য মাফ চাইলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁদের দোয়া কবুল করলেন এবং তাঁদেরকে মাফ করে দিলেন। আল্লাহ তা’আলা আদম ও হাওয়া (আ)-কে ডেকে বললেন: তোমরা দুনিয়াতে চলে যাও। পৃথিবী তোমাদের অবস্থান স্থল। মনে রেখো, শয়তান তোমাদের চিরশত্রু। সে বেহেশতের যেভাবে তোমাদের ধোঁকা দিয়ে আমার আদেশ অমান্য করালো দুনিয়াতেও তাই চেষ্টা করবে। পৃথিবীতে তোমরা কিভাবে জীবন যাপন করবে তা জানিয়ে তোমাদের কাছে আমার হুকুম পাঠানো হবে। আমার হুকুম মত চললে শয়তান তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
এরপর হযরত আদম ও হযরত হাওয়া (আ)-কে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। দুনিয়ায় পাঠানোর সময় হযরত আদম ও হাওয়াকে (আ) একই জায়গায় না পাঠিয়ে দু’জনকে দু’ জায়গায় পাঠানো হলো। দীর্ঘদিন পরে আরবের আরাফাত নামক স্থানে তাঁরা উভয়ে পরস্পরের সাক্ষাত লাভ করেন। দীর্ঘ দিন পর তারা একে অপরের সাক্ষাত পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং একত্রে বসবাস করতে আরম্ভ করলেন। এভাবে শুরু হলো এ পৃথিবীতে মানুষের পদচারণা এবং সভ্যতার ঊষাকাল।
সৃষ্টির পর আল্লাহ তা’আলা আদম (আ)কে যে সব জ্ঞান দান করেন তা ছিল মূলতঃ বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান। এক কথায় যাকে আমরা বস্তুবিজ্ঞান বলতে পারি। এ জ্ঞানের ভিত্তিতেই হযরত আদম এবং হযরত হাওয়া (আ) দুনিয়ায় জীবন যাপন শুরু করলেন। হযরত আদম (আ) ছিলেন এ পৃথিবীতে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী। হযরত হাওয়া (আ)-এর গর্ভে হযরত আদমের বিশ বারে বিশ জোড়া অর্থাৎ মোট চল্লিশ জন ছেলে মেয়ে জন্মলাভ করলো। প্রত্যেকবারের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করতো। তাঁদের গর্ভের সন্তান-সন্ততি দ্বারা পরবর্তীকালে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
হযরত আদম (আ) ছিলেন পৃথিবীতে প্রথম নবী। তাঁর কাছে আল্লাহর অহী আসতো। অহী হচ্ছে আল্লাহর বাণী বা আল্লাহর হুকুম। ফেরেশতা আল্লাহর হুকুম বহন করে এনে হযরত আদম (আ)-এর কাছে পৌঁছে দিয়ে যেতেন। অথবা কখনো আল্লাহ সরাসরি হযরত আদম (আ)-এর মনের মধ্যে তাঁর অহী পৌঁছে দিতেন। তিনি এই অহীর নির্দেশ মত নিজের জীবন যাপন করতেন। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদেরকেও সেভাবে জীবন যাপন করতে আদেশ করতেন। তাঁর ছেলেমেয়ে ও নাতী-নাতনীরা যাতে আল্লাহকে ভুলে না যায় এবং সবাই আল্লাহর হুকুম মত চলে তিনি সেদিকে খেয়াল রাখতেন। তাদেরকে আল্লাহর হুকুম বুঝাতেন এবং তিনি সে অনুযায়ী জীবন যাপন করতে সাহায্য করতেন।
কুরআন ও হাদীস থেকে জানা যায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম নয়শত ষাট বছর পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে তার অধঃস্থন সন্তান-সন্ততিদের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
অনুশীলনী
১। সারা বিশ্ব-জাহানে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন?
২। আল্লাহ কত বছর পূর্বে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? তিনি কিভাবে সৃষ্টি করেন?
৩। আল্লাহ ফেরেশতাদের ডেকে কি বললেন?
৪। সর্বপ্রথম মানুষ কে?
৫। আল্লাহ ফেরেশতাদের কি আদেশ করলেন?
৬। কে আল্লাহর আদেশ মানলো না?
৭। আযাযীল কি বললো? সে বিতাড়িত হলো কেন?
৮। কিয়ামত পর্যন্ত আয়ু লাভ করার পর শয়তান কি ঘোষণা করলো?
৯। বেহেশতের মধ্যে আদম ও হাওয়া (আ) আল্লাহর নাফরমানী করলেন কেন?
১০। দুনিয়ায় আসার সময় আল্লাহ আদম ও হাওয়া (আ)-কে কি বললেন?
১১। আদম ও হাওয়া (আ) এর মোট কত জন ছেলে মেয়ে ছিল?
১২। অহী কি? অহী কিভাবে হযরত আদমের (আ) কাছে আসতো?
১৩। আজকের পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে যদি ভাই ভাই বলা তাহলে কি ভুল হবে? কেন?