পঞ্চম অধ্যায়
ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
জিহাদঃ ইসলামী আন্দোলন
জিহাদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
জিহাদ নবীর শেখানো পথ
জিহাদ মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভাল কাজের উৎসাহ দান/তা’মরুরুনা বিল মারুফ
অন্যায় কাজের রোধ/নাহি আনিল মুনকার
জিহাদ ঈমানের পরীক্ষা
জিহাদ জীবনের সাফল্য
ইসলামী সংগঠন
ইসলামী সংগঠনের বৈশিষ্ট্য
ইসলামী জামায়াতঃ মুক্তিকামী মানবতার একমাত্র ভরসা
ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
জিহাদঃ ইসলামী
আল্লাহ, রাসূল, কিতাব, ফেরেশতা, আখিরাত, তকদীরের ভালমন্দ এবং শেষ বিচারের দিন এইসব কিছুকে ইসলাম বিশ্বাস করতে বলেছে। এই জিনিসগুলোর উপর ঈমান এনে যে কোন ব্যক্তি মুসলমানদের দলভুক্ত হয় কিন্তু এতেই সে পুরোপুরি মুসলিম হতে পারে না। পুরোপুরিবাবে মুসলমান সে তখনই হতে পারে যখন আল্লাহর কাছে নিজকে সে সম্পূর্ণভাবে বিলিয়ে দেয়। প্রতিটি কাজ আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলে খোদার (সা) দেকানো নিয়ম অনুযায়ী করে। প্রতিটি কাজ করে আল্লাহকে খুশী করার জন্য। প্রতিটি কাজে সে চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি। মনের এই অবস্থার জন্য কঠিন, কঠোর সাধনায় সে এগিয়ে আসে। প্রতিদিন আদায় করে নিষ্ঠার সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায, বছরে একটি মাস পালন করে রোযা। এমনিভাবে আদায় করে হজ্ব ও যাকাতের হুকুম আহকাম। এভাবে আল্লাহকে খুশী করার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের (স) নির্দেশমত কাজ করতে করতে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক হয় মজবুত। আল্লাহ যা পছন্দ করেন, তা সে পছন্দ করতে শুরু করে। আল্লাহ যা পছন্দ করেন না, তা সে নিজের জীবনের সবখান থেকে ধুয়ে মুছে ফেলে। এ সম্পর্ক যখন আরও মজবুত হয় তখন সে আল্লাহর পছন্দনীয় কাজকে শুধু নিজের জন্যই পছন্দ করে না –অন্যের জন্যও তা ভাল মনে করে। দুনিয়ার প্রতিটি লোক আল্লাহর পথে চলুক এটাই সে চায়। সে চায় দুনিয়াতে একমাত্র আল্লাহর হুকুম চলুক। এইজন্য সে আল্লাহর দ্বীন ইসলামের প্রচার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় সব কিছুর উপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালায়। নিজের জীবন, ধন, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রতিভা, যোগ্যতা সব কিছুকে সে এ কাজের জন্য খাটায়। শুধু তাই নয়, আল্লাহ যা ভালবাসেন না –আল্লাহ যা অপছন্দ করেন –তা সে নিজেই অপছন্দ করে ক্ষান্ত হয়না –দুনিয়ার বুক থেকে সব অন্যায় ও অসত্যকে দূর করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালায়। এইভাবে নিজেদের সবকিছু দিয়ে আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করার কাজে এগিয়ে আসে। এ লক্ষ্যেই ইসলাম ও মুসলমানদের সম্মানকে সে মনে করে নিজের সম্মান। তার প্রতিটি কাজ হয় ইসলাম ও মুসলিম জাতির কল্যাণ, সম্মান, উন্নতির জন্য। ইসলামী পরিভাষায় ইসলামকে প্রতিষ্ঠার এই কাজটিকে বলা হয় ‘জিহাদ’। এই পবিত্র কাজকে আমরা আধুনিক ভাষায় বলি ‘ইসলামী আন্দোলন’।
জিহাদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
‘জিহাদ’ শব্দের অর্থ হলো সকল শক্তি দিয়ে চেষ্টা চালানো। তাই আল্লাহর দ্বীনকে ধন দিয়ে, কথা দিয়ে, কলম দিয়ে সবকিছুর উপরে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাও এই অর্থে জিহাদ। আবার সকল অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে, ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও জিহাদ। আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার এই কাজ আল্লাহকে খুশী করার জন্য তাই জিহাদ আল্লাহর জন্যই। ইসলামী পরিভাষায় তাই একে বলা হয় “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ আল্লাহর জন্য জিহাদ।
মুসলমানরা জিহাদ করে নিজেদের স্বার্থে নয়। নিজের ধন, মাল ও সম্মানকে বৃদ্ধি করার জন্য নয়। মুসলমানদের সকল ত্যাগ, কোরবানী, চেষ্টা-সাধনার উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ায় সকল মানুষের জন্য এক সুন্দর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। আর এক কাজ করলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। নামাজ, রোযা, হজ্ব ও যাকাত আমাদেরকে আল্লাহর হুকুম মানায় অভ্যস্ত করে।
নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত আমাদেরকে ইসলামের জন্য বেঁচে থাকতে নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত আমাদেরকে ইসরামের জন্য বেঁচে থাকতে এবং এরই জন্য মৃত্যুবরণ করতে উৎসাহিত করে। মোটকথা নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাতের মূল লক্ষ্যই হলো ‘জিহাদ’। জিহাদ ছাড়া ইসলামকে কল্পনা করা যায় না। কে না চায় দুনিয়ায় সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক অসত্য পরাজিত হোক, বন্ধ হোক সকল অনাচার-অত্যাচার, জুলুম! কিন্তু তা তো আপনা আপনি হবে না। এজন্য চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। ইসলামের প্রতিটি কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি না তার উদ্দেশ্য হয় ‘জিহাদ’ আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করা।
জিহাদ নবীর শেখানো পথ
নবী রাসূলগণ একাজই করেছেন। তাঁরা নিজেরা আল্লহার হুকুম মেনে চলেছেন। অন্যদের সামনে এ আদর্শ তুলে ধরেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) সমাজে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার এক সুন্দর পথ তুলে ধরেছেন আমাদের জন্য। আমাদেরকে রাসূলের দেখানো সেই জিহাদের পথে আমাদের নিজেদের জীবনে এবং সমাজ জীবনে ইসলামকে কায়েম করতে হবে।
রাসূলের (সঃ) শেখানো নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত যেমন আমাদের জন্য ফরয, আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করার কাজে অংশ গ্রহণ করাও তেমন ফরয। বরং বলা যায় সব ফরজের বড় ফরয। কেননা কে সমাজে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত নেই, যে সমাজে আল্লাহর আইন নেই, সেই সমাজে প্রকৃতপক্ষে নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত পালন কঠিন হয়ে পড়ে। নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত যা আমাদের শেখায় তা বাস্তবে প্রয়োগ করাও কঠিত হয়ে পড়ে। তাই জিহাদ বা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠার কাজে নিজের জান মাল সব কিছু নিয়ে প্রচেষ্টা চালানো একটা গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবাদাত।
জিহাদ মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে আমরা বলি ইসলামী আন্দোলন। কোরআনে এই কাজটিকে মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলা হয়েছে।
এখন দুণিয়ার সর্বোত্তম জাতি তোমরা যাদেরকে মানুষের হেদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর, অন্যায় এবং পাপ কাজ থেকে লোকদেরদে বিরত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চলো।
সূরা আল-ইমরান-১১০
তোমাদের মধ্যে এমন কিচু লোক থাকতেই হবে যারা নেকী ও মঙ্গরের দিকে ডাকবে। ভাল ও সত্য কাজের নির্দেশ দেবে এবং পাপ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই সার্থকতা পাবে।
সূরা আল-ইমরান-১০৪
নিজে আল্লাহর হুকুম মত চলা, অন্যকে আল্লাহর হুকুম মানতে বলা এবং দুনিয়া থেকে অন্যায়, অসত্য দূর করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার কাজে নিজকে ব্যস্ত রাখা মুসলমানদের দায়িথ্ব ও কর্তব্য। ভাল কাজে উৎসাহ দান (তা’মুরুনা বিল মারুফ) এবং অন্যায়কে রোধ করা (নাহি আনিল মুনকার) মুসলমানদের দুটি বিরাট দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ভাল কাজে উৎসাহ দান/তা’মুরুনা বিল মারুফ
ভাল কাজ অর্থাৎ সব ধরনের ভাল কাজ নিজে করা এবং অন্যকে করতে আহবান করা উৎসাহিত করা মুসলমানদের কাজ। তুমি নিজে ইসলামকে জানার চেষ্টা করো। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগাও। তোমার বন্ধুদেরকে, আত্মীয়দেরকে ইসরাম মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করো। তাদের সাথে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করো। কেউ ইসলাম সম্পর্কে ভুল বললে বা বুঝলে তাকে বুঝাও –এসব কিছু কাজ –এসব কিচুই ইবাদত। অন্যকে ন্যায়ের পথে সত্যের পথে ইসলামের দিকে আনতে হলে শুধু মুখে মুখে ইসলামের কথা বলা নয় তোমার নিজের জীবনটাকেও ইসলামের আলোকে সুন্দর করতে হবে। তোমার কথা হবে মধুর, তোমার ব্যবাহর হবে আকর্ষণীয়, তুমি যা কিছু বলো সে রকম নিজে হবার চেষ্টা করবে –তবেই না তোমাকে দেখে অন্যেরা উৎসাহিত হবে।
হে ঈমানদাররা, তোমরা কেন তা বলো যা তোমরা করনা। আল্লাহর কাছে এটি খুব ঘৃণার কাজ যে তোমরা যা বলো তা করো না।
সূরা আস সফ-২-৩
কোরআনের এই বাণী স্পষ্ট করে আমাদের কাজকে আমাদের কথার সাথে মিল রখার জন্য বলেছে। এজন্য আমাদেরকে নিজেদের ভাল করার চেষ্টা করতে হবে এবং সেই সাথে অন্যকে উৎসাহিত করতে হবে। এভাবেই আমাদের চরিত্রের দুর্বলতা এবং আমাদের কমতিগুলো দূর হবে। আমাদের মধ্যে কেউই একবোরে খাঁটি নয়। কিন্তু আমাদের ত্রুটিগুলো আস্তে আস্তে দূর হবে যদি আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে জিহাদের দায়িত্ব পালন করি।
অন্যায় কাজের রোধ/নাহি আনিল মুনকার
শুধু ভাল কথা বলা এবং ভাল কাজ করলেই চলবে না। সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। এজন্য আল্লাহ মুসলমানদের প্রয়োজনে যুদ্ধ করার হুকুম দিয়েছেন। অন্যায়কে প্রতিরোধ করার জন্য জীবন বাজি রাখার আহবান জানিয়েছে কোরআন।
সব ধরনের অন্যায়, জুলুম ও অসত্যকে ঘৃণা করা, তার বিরুদ্ধে কথা বলা, তাকে দুনিয়ার বুক থেকে নির্মূল করার জন্য যুদ্ধ করা পবিত্র ইবাদত। এ কাজ করতে গিয়ে জীবন বিলিয়ে দেয়া আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ। পবিত্র এই এবাদতের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া সাধারণ কোন মৃত্যু নয় –এটাকে বলা হয় ‘শাহাদাত’।
শাহাদাত সকলের ভাগ্যে হয় না কিন্তু শাহাদাত প্রতিটি মুসলমানের জীবনের কামনা। আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবন বিলিয়ে শাহাদাতের সৌভাগ্য অর্জন করার চেয়ে বড় কাজ কি হতে পারে? অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করার বিষয়ে নবী (স) খুব জোরালোভাবে বলেছেনঃ
তোমাদেরকে সৎ ও ন্যায় কজা করতে হবে। অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে লোকদের বিরত রাখতে হবে এবং পাপী ও অন্যায়কারীর হাত ধরে, প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে সত্যের দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে, খোদার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পাপী ও খারাপ লোকদের প্রভাব তোমাদের মনের উপরে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত তোমরা অভিশপ্ত হবে।
প্রিয় নবী এতদূর পর্যন্ত বলেছেন,
তোমরা যদি দুর্বল হও তা হলে অন্তত অন্যায়কে মনে মনে ঘৃনা কর, আর এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল জিহাদ।
জিহাদ ঈমানের পরীক্ষা
প্রকৃতপক্ষে জিহাদ হলো ঈমানের বাস্তব পরীক্ষা। শুধু মুখে মুখে ঈমান আনলেই চলে না। বাস্তব জীবনে তার প্রমাণ দিতে হবে। বাস্তব জীবনে ইসলামের পথে চলতে প্রতি পদে পদে আসে বাধা। এই বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রামইতো জিহাদ। সত্য প্রচারের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে লাগে ধৈর্য এবং সাহস। ত্যাগ করতে হয় জীবনের অনেক আরাম-আয়েশ। বরণ করতে হয় অনেক দুঃখ, কষ্ট, লাঞ্ছনা, অপবাদ। পড়তে হয় ষড়যন্ত্রের শিকারে। মাথা পেতে নিতে হয় জুলুম, অত্যাচার। দাঁড়াতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাই জিহাদের মাধ্যমেই বুঝা যায় কে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভালবাসে আর কে ভালবাসে জীবনের আরাম-আয়েশ।
জিহাদই জীবনের সাফল্য
জিহাদের এই কাজ একদিন দু’দিনের কাজ নয়। এটি আমাদের প্রতিটি মুহুর্তের, প্রতিটি দিনের কাজ। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এ কাজ করে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ত্যাগের। প্রয়োজন ধৈর্য এবং ছবরের। এজন্য নিজের জীবনের সব কিছুকে আর্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মুমিনদের জান মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মরে এবং মারে।
সূরা-আত তওবা-১১১
ইসলামী সংগঠন
মানুষের সমাজের সকল স্তরে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার কাজটি কখনও একা করা সম্ভব নয়। এ কাজ করার জন্য অন্যকে সাথে নিতে হবে। নবী-রাসূলগণও আল্লাহর দ্বীনের এই কাজের প্রচার ও প্রসারের জন্য সমাজ থেকেই লোক বেছে নিয়েছেন। আস্তে আস্তে নবী-রাসূলদেরকে দিয়েগড়ে উঠেছে মুমীনদের এক দল-একটি জামায়াত। তাই জামায়াত বা সংগঠন ছাড়া আল্লাহর দ্বীনের এই কাজ ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ বা ইসলামী আন্দেলন সম্ভব নয়। ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্যে যেমন আন্দোলন বা জিহাদের প্রয়োজন তেমন আন্দোলন বা জিহাদ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটি মজবুত সংগঠন বা দল। আর এই সংগঠনকে অবশ্যই হতে হবে ইসলামের বিশ্বাস, শিক্ষা, আদর্শ, মূলনীতি অনুযায়ী। এই সংগঠন হবে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে।
ইসলামী জামায়াতের বৈশিষ্ট্য
ইসলামী জামায়াতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
১। ইসলামী জামায়াতের আদর্শ, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি হবে কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক।
২। ইসলামী জামায়াতের নেতা ও কর্মী সকলেই হবেন কোরআন ও সুন্নাহর অনুসারী। আদেশ দেয়া, আদেশ পালন, সমালোচনা করা, সমালোচনা গ্রহণ, পরামর্শ গ্রহণ সকল ক্ষেত্রে নেতা ও কর্মী সকলেই মেনে নিবেন কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পথ।
৩। ইসলামী জামায়াতের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কর্মপন্থা একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের (স) নির্দেশ অনুযায়ী হবে।
৪। ইসলামী জামায়াত ইসলামকে বিঝয় করার আন্দোলন কিন্তু তা কোন অন্যায় পথে নয়। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে, সততা ও বিশ্বস্ততার পথে ইসলামী বিপ্লবের কাজ পরিচালনা করে ইসলামী জামায়াত। রাতারাতি বিপ্লবের জন্য কোন চোরাগুপ্ত পথ খুঁজে না ইসলামী জামায়াত।
৫। ইসলামী জামায়াত তার প্রচার কাজ করে সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে। কোন বিশেষ শ্রেণী, সম্পদ্রায়, এলাকা, বর্ণ, গোত্র বা ভাষার লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ইসলামী সংগঠনের কাজ।
৬। ইসলামী জামায়াত মানুষকে জানায় আল্লাহর পথে। আর দাওয়াত মানুষের কাছে পেশ করা হয় সুন্দরভাবে। কোন তর্ক-বিতর্কের মধ্যে কিংবা ফেতনা-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়া ইসলামী জামায়াতের কাজ নয়।
৭। ইসলামী জামায়াত ইসলামের কোন এক বিশেষ দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। ইসলামী জামায়াত পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলামের প্রচার করে। কালেমা, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত থেকে শুরু করে ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক মোটকথা ইসলামের পূর্ণাঙ্গরূপ তুলে ধরা সকলের সামনে।
৮। ইসলামী জামায়াত ইসরামকে প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের সৃষ্টির জন্য গ্রহণ করে এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। আল্লাহর দ্বীনকে এই যুগে প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের বিপ্লবী, যোগ্য, সৎ ও ঈমানদার লোকের প্রয়োজন তা একদিনে তৈরী হয় না। বিপ্লবী এই কর্মী বাহিনী তিলে তিলে গড়ে উঠে ইসলামী জামায়াতের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে। তাই ইসলামী জামায়াতে অবশ্যই থাকতে হবে ব্যক্তি গঠনের এক বাস্তব ও কার্যকর কর্মসূচী।
৯। ইসলামী জামায়াত কাজ করে এমন একটি সমাজে যেখানে ইসলাম পুরোপুরি ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। সমাজের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য তাই ইসলামী জামায়াত গ্রহণ করে সমাজসেবা এবং সমাজ সংস্কারের কাজ। সমাজের জামায়াত তুলে সোচ্চার আওয়াজ। আর সেই সাথে নিজের সীমাবদ্ধ পরিসরে গড়ে তোলে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা, ভালবাসার ভিত্তিতে ন্যায়, ইনসাফপূর্ণ এক রুচিশীল সাংস্কৃতিক পরিবেশ।
১০। ইসলামী জামায়াত ব্যাপক অর্থে সারা বিশ্বের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে কিন্তু এর প্রাথমিক কাজের ক্ষেত্রে হচ্ছে জামায়াতে অংশগ্রহণকারীদের জন্মস্থান-নিজ দেশ।
১১। ইসলামী জামায়াত নিজ জন্মস্থানে-নিজ দেশে কায়েম করতে চায় ইসামী শাসন ব্যবস্থা। তাই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামী জামায়াত থাকে সজাগ এবং সতর্ক। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় এগিয়ে আসে ইসলামী জামায়াত। তেমনি সমাজের সকল ক্ষেত্রে অসৎ, দুর্নীতিবাজ লোকদের সরিয়ে সৎ ও খোদাভীরু লোকদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এক আপোষহীন আন্দোলন পরিচালনা করে ইসলামী জামায়াত।
ইসলামী জামায়াতঃ মুক্তিকামী মানবতার একমাত্র ভরসা
আজ সারা বিশ্বের মানুষ শান্তির সন্ধানে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। দুর্ভাগ্য মুসলিম দেশগুলোতেও নেই ইসলাম আদর্শের সঠিক বাস্তবায়ন। দেশে দেশে মুসলমানদের মধ্যে যতটুকু ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শ বেঁচে আছে তাও ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে মুসলমান সামজের ভিতরে কিছু দল ও গোষ্ঠী। সারা বিশ্বের মুসলমানেরা আজ বিভ্রান্ত। যারা মুসলমান দেশ ও জাতির ক্ষমতার আসনে বসে আছেন তারা নিজেরা যেমন পাশ্চাত্যের চমকে ভুলে গেছেন ইসলামের আসল রূপ তেমনি বিভ্রান্ত করছেন জনগণকে ইসলামের সুমহান আদর্শ থেকে।
কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী এমনি অবস্থাতেও প্রতিটি মুসলিম দেশে দানা বেঁধে উঠছে ইসলামী আন্দোলন। শুধু মুসলিম দেশ নয় যে সব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু সেখানেও মুসলমানরা গড়ে তুলছে ইসলামী সংগঠন। মুসলমান যুবকদের মধ্যে এসেছে চেতনা।
ইসলামে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দেশে দেশে মুসলিম যুবকরা গড়ে তুলছে ইসলামী জামায়াত। পরিচালনা করছে ইসলামী আন্দোলন সাহসের সাথে। মোকাবিলা করছে ইসলাম বিরোধী শক্তির। বরণ করছে জুলুম, নির্যাতন। শিকার হচ্ছে নানান মিথ্যা অপপ্রচার এবং নিন্দাবাদের। নৈতিক ভাবে হেরে যাওয়া আদর্শচ্যুত হায়নাদরে শিকার হচ্ছে সেসব মর্দেমুমীন মুসলিম যুবকরা। আর তারই পরিণতিতে কাতারে কাতারে যুবক বিলিয়ে দিচ্ছে নিজের অমূল্য জীবন আল্লাহর পথে –শাহাদাতের পথে। তাদের শাহাদাতের রক্ত রাঙ্গা পথে আবার দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহর দ্বীন। উড়বে আবার ন্যায়, নীতি, সাম্য, হক ও ইনসাফের পতাকা। শাহাদাতের রক্ত রাঙ্গা এই সব ইসলামী সংগঠন আজ সারা বিশ্বে মুসলমানদের আশা-মুক্তিকামী মানবতার একমাত্র ভরসাস্থল।
#########০০০০০০০০০############