মস্ত বড়ো এক ঐতিহাসিক
আমাদের প্রিয় নবী (সঃ)-এর ইনতিকালের পর ইসলাম ধর্ম বহু দূর ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার সব রকম ব্যবস্থা ইসলাম ধর্মে পাওয়া যায়। অন্য কোন ধর্ম এমন বাস্তব আর পরিপূর্ণ নয়। ইসলাম একটি সঠিক ধর্ম। সবচেয়ে বড়ো ও সত্য ধর্ম।
আমরা যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, ইসলাম ধর্মের নিয়ম কানুন পালন করি, তাদেরকে বলা হয় মুসলমান। মুসলমানরা সাহসী জাতি। কোন কিছুতেই তাঁরা ভয় পান না। বড়ো বড়ো সিপাহসালার ছিলেন মুসলমানদের মধ্যে। বড়ো হয়ে তোমরা তাঁদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। তাঁরা নানা দেশ জয় করে ইসলামের বিজয় অভিযান চালিয়ে যান। তাঁর রাজ্য বহু দূর প্রসারিত করেন। সুদুর স্পেন, আফ্রিকা তাঁরা জয় করেছিলেন।
খৃষ্টানরা ছিলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড়ো শত্রু। মুসলমানদের এরকম উন্নতিকে তারা মেনে নিতে পারছিলো না। মুসলমানদেরকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় সেরকম কাজে তারা সর্বদাই লিপ্ত ছিলো।
একাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর কথা। মুসলিম জাহানের অবস্থা তখন খুবই শোচনীয়। রাজা-বাদশাহ, উজির-নাজির থেকে শুরু করে সাধারণ মুসলমান পর্যন্ত সবাই তখন ইসলামের আদর্শ থেকৈ দূরে সরে গিয়েছিলেন। জ্ঞানের চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। রাজা-বাদশারা ক্ষমতা লাভের জন্য সর্বদাই যুদ্ধ করতেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ জায়গা বাগদাদ তখন নিস্তব্ধ। মুসলমানদের স্পেন তখন খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত। উত্তর আফ্রিকাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছিলো। খৃষ্টানরা এই সুযোগ গ্রহণ করার জন্য নান রকম চেষ্টা করতে লাগলো। তারা মুসলমানদের হাত থেকে দেশ উদ্ধার করতে তৎপর হয়ে উঠলো।
মুসলিম জাহানের যখন এমনি দুর্দিন, ঠিক সেই সময়ে উত্তর আফ্রিকার তিউনিস শহরে এক ছেলের জন্ম হয়। অনেক জ্ঞানের অধিকারী হন ছেলে। এই অসামান্য ছেলে পরে সারা দুনিয়ায় পরিচিত হন একজন বড়ো ঐতিহাসিক হিসেবে।
তাঁর কাছে জীবনের চেয়েও বেশী মূল্যবান ছিলো সত্য কথা। এ সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি যে কোন বিপদকেও তুছ্ছ মনে করেছেন। আমাদের এ যুগে এ রকম সাহসী মানুষের খুব অভাব। এখন তাঁর মতো ঐতিহাসিক ও সমাজবিদ বেঁচে থাকলে মানুষ সত্যকে জানতে পারতো। তাতে সমাজের অনেক ভালো হতো।
এই ছেলেটি জীবনে অনেক বড়ো হয়েছিলেন। তাই তো বর্তমান দুনিয়ার সবাই তাঁকে জানে। তাঁর নাম করে।
তাঁর নাম ইবনে খালদুন। নামটা খুবই সুন্দর। তাঁর পুরো নাম আবূ জায়েদ ওয়ালী উদ্দীন ইবনে খালদুন। পিতার নাম মুহাম্মদ ইবনে খালদুন। পিতার বংশ মর্যাদা ছিলো খুব উচ্চ। পূর্বপুরুষেরা ছিলো দক্ষিণ আরবের কিন্দা গোত্রের লোক। খালদুন তাদের বংশগত খেতাব। খালদুনরা অভিজাত বংশের লোক ছিলেন। শিক্ষা, সম্পদ ও সামাজিক মর্যাদা ছিলো তাদের অনেক। দেশের খুবই নামকরা পরিবার বলে সবাই তাঁদেরকে সম্মান করতো। উচ্চ শিক্ষা ও জ্ঞান সাধনা করা ছিলো খালদুন বংশের ঐতিহ্য।
ইবনে খালদুন ৭৩২ হিজরীতে ১লা রমযান তিউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা তিউনিসে এসে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর পূর্বপুরুষের নাম ওয়ালীউদ্দীন আবদুর রহমান। তিউনিসের বাদশাহ তাঁকে উজিরের পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। বাদশার অনুরোধে তিনি উজিরের পদ গ্রহন করেন। তাঁর ইনতিকালের পর বাদশাহ খালদুনের পিতাকে উজিরের পদ নিতে বলেন। খালদুনের পিতা তাতে রাজি হলেন না। কারণ তিনি খুবই শান্তি প্রিয় লোক ছিলেন। অন্যায় কাজকে তিনি ঘৃণা করতেন। কোন রকম ঝামেলা তাঁর সহ্য হতো না। তাই রাজনীতির ঝামেলাকে তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। তাঁর জ্ঞান পিপাসা ছিলো খুব বেশী। পড়াশোনা করাকে তিনি অনেক বেশী ভালবাসতেন। সব সময় নীরবে বসে বসে তনি পড়াশোনা করতেন।
ইবনে খালদুনেরও পড়াশোনায় ছিলো খুবই আগ্রহ। তিনি সহজেই অনেক কিছু মনে রাখতে পারতেন। কোন বিষয় একবারের বেশী পড়তে হতো না তাঁর।
শুধুমাত্র পড়াশোনায় তিনি ভালো ছিলেন তা নয় –তাঁর স্বভাব চরিত্র ছিলো খুব ভালো। কখনো মিথ্যে কথা বলতেন না তিনি। সত্য কথা বলা ছিলো তাঁর অভ্যাস। ছোটদেরকে স্নেহ, বড়দেরকে সম্মান করতেন তিনি। নিজের সুখের কথা ভাবতেন না। তিনি মিথ্যে ও অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করতেন না। অন্যায়কে খুবই ঘৃণা করতেন তিনি। সত্য কথা বলতে ও প্রচার করতে তিনি কাউকে ভয় করতেন না। গরীব লোকদের তিনি ভালোবাসতেন –মেলামেশা করতেন। গরীব লোকেরা তাঁকে তাদের বন্ধু ভাবতো। তাঁদের দুঃখ কষ্টের কতা তাঁর কাছে বলতো।
ইবনে খালদুনের পিতা একজন নামকরা আলেম ছিলেন। তিনি ছোটবেলায় পিতার নিকট লেখাপড়া শুরু করেন। খালদুন যে জীবনে বড়ো জ্ঞানী হবেন তার পরিচয় ছোটবেলাতেই পাওয়া গিয়েছিলো। কুরআনের পড়া দিয়ে তাঁর জীবন শুরু হয়। অল্প সমেয়র মধ্যে তিনি কুরআন মুখস্থ করে ফেললেন।
এবার শুরু উচ্চ শিক্ষার পালা। জন্মস্থান তিউনিসেই ইবনে খালদুন জ্ঞানের চর্চা শুরু করলেন। তিউনিস ছিলো তখন উত্তর আফ্রিকার জ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। দেশ বিদেশ থেকে বহু পণ্ডিত ব্যক্তিরা এখানে আসতেন। আগত জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিকট তিনি না বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
এমন ছেলেকে কে না জ্ঞানী বলবে? তিনি লেখাপড়া করার সময় শিক্ষকদের জীবনী ও গুণাবলী লিখে ফেলতেন।
শুধু কী তাই? কোন কোন বই তিনি পড়লেন তারও তালিকা লিখে গেছেন। মাত্র আঠারো বছর বয়স তখন। তিনি জ্ঞানের রাজ্য জয় করে ফেললেন। ফলে পরিচিত হয়ে উঠলেন জ্ঞানের জগতে।
সেই সময় তাঁর জন্মস্থান তিউনিসিয়াতে মহামারি দেখা দিয়েছিলো। হাজার হাজার লোক মারা গেলো। কার কান্না কে শোনে? কেউ কারো দিকে দেখে না। মরা মানুষের কবর দেওয়া তো দূরের কথা –পথে ঘাটে মরা মানুষের লাশ। আল্লাহর এই গজবকে ইবনে খালদুন নাম দিয়েছেন “একশা করা প্লেগ”। এই মহামারীর হাত থেকে তাঁর মাতাপিতা বাঁচতে পারলেন না। মাতা-পিতাকে হারিয়ে তিনি এতিম হলেন। এই বয়সে এমন অবস্থায় অনেকেই ভেংগে পড়ে। কিন্তু তিনি ভেংগে পড়লেন না।
ইবনে খালদুন? না, তিনি রাজা-বাদশা হতে চান নি। তিনি সাধারণ মানুষের ইতিহাস রচনা করেছেন। বিচিত্র তাঁর জীবন। তিনি অবাধে মানুষের সংগে মেলামেশা করেছেন। সাধারণ মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে অনেক দুঃখ-কষ্ট তিনি পেয়েছেন। সব ধরনের লোকেরা তাঁকে ভালোবাসতো। মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে তিনি শান্তি পেতেন –সুখ পেতেন। রাজা-বাদশাহর যুদ্ধ জয় ও হত্যাকাণ্ডের কাহিনী তাঁর ইতিহাস নয়। তার ইতিহাস মানব সমাজের উত্থান-পতনের গতিধারার ইতিহাস।
বড়ো হয়ে তিনি বহু গ্রন্থ লিখেছেন। তাঁর মধ্যে যে গ্রন্থটি লিখে তিনি সারা দুনিয়ায় পরিচিত হয়েছেন তার নাম কি জানো? বিশ্ব ইতিহাসের মুখবন্ধ। এর নাম আরবীতে “মুকাদ্দিমা”।
শহরে যারা বাস করে, তাদের নিয়ে তাঁর লেখা, গ্রামের মানুষকে নিয়ে তাঁর লেখা। অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস বুঝি মরা মানুষের কথা বলে। ইতিহাস শুধু রাজা-বাদশহার কাহিনী।
ইবনে খালদুনের ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। তিনি পালটে দিলেন আগের সব ধারণা। আগের সব মত-সব কথা। নতুন কথা বললেন তিনি। ইতিহাস ও মানুষ সম্পর্কে একটি নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার আগে কেউ এ ধারণা দিতে পারেন নি।
ইবনে খালদুন নিজের দেশকে খুব ভালবাসতেন। জন্মভূমি তাঁর কাছে ছিলো খুবই আদরের। নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোন দেশে চলে যাওয়াকে তিনি পছন্দ করতেন না। বলতে পারো? বিপদে না পড়লে কেউ কি কখন নিজের দেশ ছেড়ে চলে যায়? কখখনো না।
একবার সম্রাট তাঁর উপর খারাপ ধারণা নেন। কারণ জ্ঞানী লোকদের কদর অনেকে করতে পারেন না। মূর্খ সম্রাট কিছু কিছু খারাপ লোকের কথা কানে নিলেন। তারা খালদুনের নামে সম্রাটের নিকট অভিযোগ করেছিলো।
তখনকার সময়ে কেউ কোন সম্রাটের কুনজরে পড়লে তাকে অনকে শাস্তি পেতে হতো।
ইবনে খালদুন বাধ্য হয়ে জন্মভূমি তিউনিস ছেড়ে মিসরে চলে আসেন। এখানে জ্ঞান সাধনা করে তিনি খুব সুনাম অর্জন করেন।
তিনি এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না, যত বড়ো ক্ষমতাশালীই তিনি হোন না কেন। রাজা-বাদশাহদের তিনি সম্মান করতেন। কিন্তু তাঁদের কোন সময় ভয় করতেন না।
একটি ঘটনা বলছি শোনো।
তোমরা অনেকেই বাদশাহ তৈমুর লঙ্গের নাম শুনেছো। তিনি তুর্কিস্তানের বাদশাহ ছিলেন। তুর্কীস্তান বর্তমানে সোভিয়েত রাশিয়ার দখলে। সেই সময়ে তুর্কীস্তান আমাদের দেশের মত স্বাধীন ছিলো। দেশটি ছিলো মুসলমানদের। দেশটির রাজধানী ছিলো সমরকন্দ। সমরকন্দ তখন অত্যন্ত উন্নত শহর ছিলো শিক্ষা, সভ্যতা ও ধনসম্পদে তখন বিশ্বে এর তুলনা ছিলো না।
দেশের পর দেশ জয় করে বাদশাহ তৈমুর তাঁর রাজ্যের সীমা অনেক বৃদ্ধি করেন। লোকেরা তাঁকে বলতো দিগ্বিজয়ী বাদশাহ। ভারত থেকে তুরস্ক পর্যন্ত প্রায় সব কয়টি দেশই তিনি জয় করেন।
৮০২ হিজরীতে তৈমুর লঙ্গ সিরিয়া আক্রমণ করে বসেন। মিসরের বাদশাহ তখন দেশটি শাসন করতেন। তাই তৈমুরকে বাঁধা দেওয়ার জন্য বাদশাহ সৈন্যসামন্ত নিয়ে সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হলেন। তখন ইবনে খালদুন মিসরে ছিলেন। বাদশাহ ভাবলেন, ইবনে খালদুনের মতো একজন জ্ঞানী লোক সংগে থাকা ভালো। কখন কি পরামর্শের দরকার হয় তা কে জানে? তাই তাঁকেও সংগে নিলেন বাদশাহ।
পায়ে হেঁটে বাদশাহর সৈন্যসামন্তের সিরিয়া পৌঁছুতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে গেলো। এরই মধ্যে তৈমুর সিরিয়া দখল করে ফেললেন। মিসরের বাদশাহ সৈন্যদল নিয়ে হাজির হলেন সত্যি, কিন্তু যুদ্ধ করার মত সাহস আর তার রইলো না। তৈমুর ছিলেন খুবই সাহসী বাদশাহ। সারা দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা তাঁকে ভয় পেতেন। মিসরের বাদশাহকে বললেনঃ আমাদের সৈন্যবাহিনী কম, শক্তিও কম। যুদ্ধ করে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশী। তাই তিনি তৈমুরের সাথে আপোষ করার জন্য বাদশহাকে বললেন। বাদশাহ খালদুনের কথায় রাজি হলেন; কিন্তু আপোষের কথা নিয়ে তৈমুর লঙ্গের সামনে যাবেন কে? কে করবেন এ কাজ? কার এতো বড়ো সাহস তৈমুরের সামনে গিয়ে কথা বলেন? বাদশাহ ভাবলেন, ইবনে খালদুনই এ কাজের উপযুক্ত লোক। কারণ ইবনে খালদুন খুবই সাহসী। সত্য কথা বলতে তিনি ভয় পান না। আর কাউকে দিয়ে এ কাজ হবে না। কেউ তৈমুরের সামনে যেতে রাজী হবেন না। বাদশাহর কথায় ইবনে খালদুন রাজী হলেন।
তৈমুরকে সংবাদ দেওয়া হলো, মিসরের বাদশাহর পক্ষ থেকে একজন লোক তাঁর সাথে দেখা করতে চান। তৈমুর অনুমতি দিলেন। সৈন্যরা পাহারা দিয়ে ইবনে খালদুনকে তৈমুরের তাঁবুতে নিয়ে গেলো। তৈমুরকে সালাম জানালেন খালদুন। তৈমুর ইবনে খালদুনকে ভালো করে দেখলেন এবং জানতে চাইলেন তিনি কি বলতে চান। খালদুন তৈমুরের সাথে আদবের সাথে কথাবার্তা শুরু করলেন। তিনি বললেন, তাঁরা যুদ্ধ করবেন না যদি তৈমুর এখানকার লোকের জানমালের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। বাদমাহ তৈমুরকে সিরিয়া ছেড়ে দিয়ে তাঁর সাথে আপোষ করতেও রাজী আছেন যদি তিনি আর কোন রাজ্য আক্রমণ না করেন। বাদশাহ শান্তি চান। ইবনে খালদুন এসব কথা তৈমুরকে আদবের সাথে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন।
ইবনে খালদুনের সাহস ও জ্ঞানবুদ্ধি দেখে তৈমুর লঙ্গ অবাক হয়ে গেলেন। তিনি ইবনে খালদুনকে অনেক সম্মান ও সমাদর করলেন। তৈমুর খুব খুশী হলেন খালদুনের মতো জ্ঞানী লোকের দেখা পেয়ে। তিনি ইবনে খালদুনের সকল কথা মেনে নিলেন এবং সসম্মানে ইবনে খালদুনকে বিদায় দিলেন।
তৈমুরের ইচ্ছে ছিলো সারা আরব জয় করার। কিন্তু ইবনে খালদুনের কথায় তৈমুর এত খুশী হলেন যে, তিনি তাঁর সে সংকল্প ত্যাগ করলেন। সিরিয়ার লোকরা আবার তাঁদের জীবন যাত্রা শুরু করলো। ইবনে খালদুন তাদের কাছ থেকে ভালবাসা শুরু করলো। ইবনে খালদুন তাদের কাছ থেকে ভালবাসা পেলেন। সবাই তাঁকে খুব ভালবাসতো। কারণ তিনি তাদের অনেক উপকার করেছেন। ইবনে খালদুন জানতেন যুদ্ধ করে শান্তি আসে না, বরং মানুষের দুঃখ-কষ্ট বাড়ে। সুখ শান্তি নষ্ট হয়। মারামারি কাটাকাটি করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না। আলাপ-আলোচনা ও আপোষের দ্বারা এ শান্তি স্থাপন সম্ভব।
তাঁর লেখা “আল মুকাদ্দিমা” গ্রন্থটি তাঁকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে। এতে যে জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় দুনিয়াতে এটি প্রথম। ইতিহাস কি? ঐতিহাসিকের কাজই বা কি? মানব জাতির উত্থান ও পতনের কারণও কোন জাতির উত্থান কত বছর স্থায়ী হয় ইত্যাদি বর্ণণা করেছেন তাঁর লেখা এই বইতে। পৃথিবীতে এত বড়ো ইতিহাস আর কেউ রচনা করেন নি। তাঁর ইতিহাস থেকে তখনকার দুনিয়ার অনেক মূল্যবান কথা জানা যায়।
ইতিহাস! না, শুধুমাত্র ইতিহাস নয়। আইনের চুলচেরা হিসেবেও তাঁর জুড়ি নেই। কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা কেউ তাঁর মত এত সুন্দর করে দিতে পারেন নি। সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র-বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, মানব বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি-এসব বিষয়েও তাঁর জ্ঞান ছিলো অগাধ।
মানব জাতিকে যে জ্ঞান তিনি দান করে গেছেন, জ্ঞানের রাজ্যে যে চিন্তাধারা তিনি রেখে গেছেন, তার জন্য মানব জাতির ইতিহাসে চিরদিন ইবনে খালদুন অমর হয়ে থাকবেন।
জ্ঞান সাধনার ফলে ইবনে খালদুন হলেন সে যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষী ও মস্ত বড়ো এক ঐতিহাসিক।
##সমাপ্ত##