বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবন কথা
মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্যে আল্লাহ যুগে যুগে অনেক নবী- রাসূল নিযুক্ত করেছেন। নবীরা মানুষ ছিলেন। (সুরা ইবরাহীম-আয়াত ১১, সুরা আল কাহাফ-আয়াত ১১০)। তবে তাঁদেরকে নবী নিযুক্ত করে তাঁদের কাছে আল্লাহ নিজের বানী পাঠিয়েছেন। তাঁদেরকে তিনি সবকিছু সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দান করেছেন।
সুতরাং তাঁরা একদিকে ছিলেন সত্য ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। অন্নদিকে ছিলেন উন্নত চরিত্র ও নিষ্পাপ জীবনের অধিকারী। ছিলেন আদর্শ মানুষ। তাঁরা অহীর মাধ্যমে আল্লাহড় বাণী লাভ করতেন। তাঁরা কখনো আল্লাহর হুকুম অমান্য করতেন না।
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর দাসত্ব করার জন্যে। তাঁর হুকুম পালন করার জন্যে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন যাপন করার জন্যে। সেই সাথে পৃথিবীটাকে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালনা করার জন্যে। এই হল মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ নবীদের পাঠিয়েছেন মানুষকে তাঁদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানিয়ে দিতে এবং কথাটা বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে।
মহান আল্লাহ যাদের নবী নিযুক্ত করেছেন, তাঁরা সারা জীবন মানুষকে আল্লাহর পথে ডেকেছেন। মানুষকে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করতে বলেছেন। নফসের তাড়না এবং শয়তানের পথ পরিহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে তাঁদের অনুপ্রানিত করেছেন।
নবীরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষ যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তাঁর সন্তুষ্টির পথে জীবন যাপন করে, তবে মৃত্যুর পর যে চিরন্তন জীবন আছে, সেখানে তাঁরা মহা সুখে জান্নাত লাভ করবে। কিন্তু যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন ধারন করবেন না। মৃত্যুর পরের জীবনে তাঁদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি আর শাস্তি।
নবী শব্দের অর্থ হল ‘সংবাদ বাহক’। রাসুল শব্দের অর্থ ‘বানী বাহক’। নবী- রাসুল গন আল্লাহর বানী এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সঠিক পথের সংবাদ মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছেন বলেই তাঁদেরকে নবী ও রাসুল বলা হয়। সকল রাসুলই নবী ছিলেন। তবে সকল নবী রাসুল ছিলেন না। অনেক নবীর কাছে আল্লাহ তায়ালা শুধু অহী পাঠিয়েছেন। আবার অনেক নবীর কাছে অহী এবং কিতাবও পাঠিয়েছেন। যারা সাধারনভাবে অহী লাভ করা ছাড়াও কিতাব লাভ করেছেন, তারাই ছিলেন রাসুল।
প্রথম নবী ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ)। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসসালাম। তাঁর পরে পৃথিবীতে আল্লাহ আর কোন নবী নিযুক্ত করবেন না। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা ঠিক কত জন মানুষকে নবী নিযুক্ত করেছেন, তা মানুষের পক্ষে কখনোই জানা সম্ভব নয়। একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা এক লক্ষ বিশ হাজার নবী পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনশত পনের জন ছিলেন রাসুল। তবে তাঁদের প্রকৃত সংখ্যা মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
আল্লাহ কুরানে পচিশজন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁরা সকলেই রাসুল ছিলেন। কুরআনে উল্লেখিত নবী-রাসুলগন হলেনঃ ১। আদম, ২। নূহ, ৩। ইদ্রিস, ৪। হুদ, ৫। সালেহ, ৬। ইব্রাহীম, ৭। লুত, ৮। ইসমাঈল, ৯। ইসহাক, ১০। ইয়াকুব, ১১। ইউসুফ, ১২। শুয়াইব, ১৩। আইউব, ১৪। যুল কিফল, ১৫। মূসা, ১৬। হারূন, ১৭। দাউদ, ১৮। সুলাইমান, ১৯। ইলিয়াস, ২০। আল ইয়াসা, ২১। ইউনুস, ২২। জাকারিয়া, ২৩। ইয়াহিয়া, ২৪। ঈসা, ২৫। মুহাম্মদ (সাঃ)
বাকী নবী রাসুলগনের নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয় নি। তবে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি সকল জাতির কাছেই নবী পাঠিয়েছেন এবং প্রতিটি মানব বসতিতেই নবী পাঠিয়েছেন। (সুরা ফাতির – আয়াত ২৪, সুরা আর রায়াদ – আয়াত ৭)
নবী-রাসুলগনের প্রতি অবশ্যি ঈমান আনতে হবে। কুরআনে যে পঁচিশজনের নাম উল্লাখ আছে, তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি পৃথকভাবে ঈমান আনতে হবে। তাঁদের কারো প্রতি ঘৃনা বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না। আর যেসব নবী রাসুলের নাম কুরানে উল্লেখ করা হয় নি, তাঁদের প্রতি সামগ্রিকভাবে ঈমান আনতে হবে।
সকল নবী একই দ্বীনের বাহক ছিলেন। তাঁরা সকলেই আল্লাহর নিযুক্ত ছিলেন। তাঁরা মানুষকে-
১। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিয়েছেন।
২। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেছেন।
৩। এক আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্ব করতে বলেছেন।
৪। আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করতে বলেছেন।
৫। আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী সমাজ জীবন পরিচালনা করতে বলেছেন। সুবিচার করতে বলেছেন।
৬। ঈমানের ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্ব গড়তে ও হানাহানি পরিহার করতে বলেছেন।
৭। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে আত্নরক্ষা করতে বলেছেন।
৮। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং জান্নাতের পথে চলতে বলেছেন।
নবীগন মানুষকে কল্যাণের পথে ডেকেছেন। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার অন্ধ মোহে লিপ্ত হয়ে নবীদের বিরোধিতা করেছে। তাঁদের অনেক দুঃখ কষ্ট দিয়েছে। অত্যাচার নির্যাতন করেছে। অনেক নবীকে লোকেরা নিজের মাতভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। আল্লাহর এই মহান নবীগণকে মানুষ হত্যা করার কূট কৌশল করেছে। অগনিত নবীকে তাঁরা হত্যা করেছে। কাউকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেছে। কাউকে তারা হত্যা করার জন্যে তাড়া করেছে। কাউকে হত্যা করার জন্যে বাড়ী ঘেরাও করেছে।
এত চরম বিরোধিতা স্বত্তেও নবীগন সত্য পথের দিকে দাওয়াত দান থেকে কখনই বিরত থাকেন নি। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত তাঁরা প্রত্যেকেই মানুষকে সত্য পোঠে আসার আহবাণ জানিয়ে গেছেণ। তাঁরা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সমাজ গরার জন্য আজীবোণ সংগ্রাম কোড়ে গেছেণ। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর পরে আর কোন নবী রাসুল আসবেন না। সুতরাং আল্লাহ তাঁর অনুসারীদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবার। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের জ্ঞানী লোকেরা নবীর সত্যিকার উত্তরাধিকারী। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব করার, আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন যাপন করার এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করার এবং আল্লাহর বিধান মাফিক পৃথিবীকে সুন্দর করে গড়ার ও পরিচালিত করার দায়িত্ব পালন করবে।
এখন আমাদের কাছে এ কথা স্পস্ট হল যে, পৃথিবীতে মানুষের চলার পথ দুটি। একটি হল নবীদের দেখানো পথ। এটিই বিশ্ব জগতের স্রস্টা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ। এ পথের প্রতিদান হল জান্নাত বা বেহেশত।
অপরটি হল আল্লাহদ্রোহীতার পথ। এটি আল্লাহকে অমান্য করার পথ। আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথ। নবীদের অমান্য করার পথ। শয়তানের পথ। আত্নার দাসত্বের পথ। এ পথের পরিনাম হল জাহান্নাম, চির শাস্তি, চির লাঞ্ছনা, চির অকল্যান আর ধংস। আমাদেরকে চলতে হবে আল্লাহর পথে। চলতে হবে নবীদের পথে। নবীদের দেখানো পথই হল আল্লাহর সন্তুস্টির পথ। নবীদের পথই দুনিয়ার কল্যানের পথ।
নবীদের পথই জান্নাতের পথ। নবীদের পথ শান্তির পথ। নবীদের দেখানো পথ সুন্দর পৃথিবী গড়ার পথ। নবীদের দেখানো পথ আদর্শ মানুষ হবার পথ। নবীদের পথ উন্নতির পথ, শ্রেষ্ঠত্বের পথ। তাই আসুন আমরা নবীদের জীবনী পড়ি। তাঁদের আদর্শকে জানি। তাঁদের ভালোবাসি। তাঁদের আদর্শের অনুসরন করি এবং তাঁদের দেখানো পথে চলি।