কৃষ্ণদেবের হুকুম জারী
মতি, গোপাল, নেপাল, গোবর্ধনের টিপসই যুক্ত নালিশের পত্রটি পাওয়ার পর মুখ টিপে হাসলো অত্যাচারী চতুর জমিদার- কৃষ্ণদেব রায়। হাজার হোক নিজেরই ষড়যন্ত্রের ফসল। নিজেরই তৈরি করে দেয়া নালিশনামা।
অভিযোগপত্র কয়েকবার উল্টেপাল্টে পড়লো কৃষ্ণদেব। না, যা যা বলেীছলাম- সবই ঠিকঠাক আছে। কোনো কিছুই বাদ যায়নি।
সে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। ঠিক করে রেখেছিল কৃষ্ণদেব, নালিশের প্রেক্ষিতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্যাস। মতির নালিশটি পাবার পরপরই কৃষ্ণদেব বিচারের প্রহসন করলো। তারপর হুকুম জারী করলে:
১. যারা তিতুমীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ওহাবী হবে, দাড়ি রাখবে, গোঁ ছাটবে তাদেরকে ফি দাড়ির জন্য আড়াই টাকা ও ফি গোঁফের জন্যে পাঁচ শিকা করে খাজনা দিতে হবে।
২. মসজিদ তৈরি করলে প্রত্যেক কাঁচা মসজিদের জন্যে পাঁচশো টাকা এবং প্রতিটি পাকা মসজিদের জন্যে এক হাজার টাকা করে জমিদার সরকারে নজরানা দিতে হবে।
৩. বাপ দাদা সন্তানদের যে নাম রাখবে তা পরিবর্তন করে ওহাবী মতে আরবী নাম রাখলে প্রত্যেক নামের জন্যে খারিজানা ফিস পঞ্চাশ টাকা জমিদার সরকারে জমা দিতে হবে।
৪. গোহত্যা করলে তার ডান হাত কেটে দেয়া হবে- যাতে আর কোনোদিন সে গোহত্যা করতে না পারে।
৫. যে ওহাবী তিতুমীরকে বাড়িতে স্থান দেবে তাকে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হবে।
এই হুকুম জারীর পর তা পালন করার জন্যে অত্যাচারী কৃষ্ণদেব তার মুসলমান প্রজাদের ওপর নতুন মাত্রায় অত্যাচার আর নির্যাতন শুরু করে দিল।
শুধু কৃষ্ণদেব নয়। তার দেখাদেখি এবং তারই অনুরোধে এধরনের হুকুম জারী করলো আরও বেশ কয়েকজন জমিদার। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তারাগুনিয়ার জমিদার রাম নারায়ণ, গোবপর গোবিন্দপুরের জমিদার দেবনাথ রায়, গোবর ডাঙ্গার জমিদার কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, কুরগাছির জমিদারের নায়েব নাগরপুর নিবাসী গৌড় প্রসাদ চৌধুরী প্রমুখ জুলুমবাজ।
বারাসাতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে জমিদার রাম নারায়ণের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যাতে জনৈক মুসলমান অভিযোগ করেছিল, “উক্ত জমিদার বাড়ি রাখার জন্যে তাকে পঁচিশ টাকা জরিমানা করে এবং দাড়ি উপড়ে ফেলার আদেশ দেয়।”
কিন্তু এই মামলার কোনো বিচারই হয়নি।
এ কেবল একটি মামলার কথা।
এ কেবল একজন মুসলমানের আরজির কথা।
এরকম হাজার হাজার মুসলমানের আরজি, তাদের হৃদয়েল হাহাকার, তাদের ফরিয়াদ কেবল শূন্যে ভেসে গিয়েছিল।
জমিদারদের অত্যাচারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতৈ সাহস পেত না। আর যারা সাহস করে মুখ খুলতৈা, তাদের ভাগ্যে জুটতো কেবল শাস্তি আর শাস্তি।
তবুও জমিদারদের এসব রক্তচক্ষু আর জুলুম অত্যাচারের প্রাচীর টপকে সেদিন গর্জে উঠেছিলেন বাংলার দুঃসাহসিক অগ্রসনোনী- সাইয়েদ নিসার আলী।
আর তাঁর সাথে ছিল সেদিন নির্ভীক সৈনিকদের একটি সুশৃংখল বাহিনী। যাদের সম্বল ছিল একমাত্র-ঈমান।
সেই বলিষ্ঠ ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে সেদিন কৃষ্ণদেবের অন্যায় এবং অত্যাচার মূলক এই হুকুম জারীল প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর। পাশে ছিল তাঁর একদল দুঃসাহসী সাথী- আলোর পাখিরা।
নিসার আলীর পত্র
জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের হুকুম জারীর পর এতটুকু দমে গেলেন না সাইয়েদ নিসার আলী।
তিনি ভাবলে, এমনটি হওয়াই তো স্বাভাবিক। সুতরাং একটা কিছু তো করা উচিত। করতেই হয়।
কাল বিলম্ব না করে নিসার আলী কৃষ্ণদেবকে একটি পত্র লিখলেন। পত্রে তাকে জানালেন, তিনি কোনো অন্যায় কাজ করেননি।
তিনি কেবল মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের কাজ করচেন। এ কাজে হস্তক্ষেপ করা কোনোক্রমেই ন্যায়সঙ্গত নয়। নামায পড়া, রোযা রাখা, দাড়ি রাখা, গোঁফ ছাড়া প্রভৃতি মুসলমানের জন্যে ধর্মীয় নির্দেশ। এ কাজে বাধা দেয়া- অপর ধর্মের ওপর অন্যায়ভঅবে হস্তক্ষেপেরই শামিল। এটা সমর্থনযোগ্য নয়।
যথাসময়ে পত্রটি তিনি পাঠিয়ে দিলেন অত্যাচারী জমিদার কৃষ্ণদেবের কাছে।
আন্দোলনের প্রথম শহীদ
নিসার আলীর পত্রখানা কৃষ্ণদেবকে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিল তাঁর একজন সাথী। নাম- আমিন উল্লাহ।
যথা সময়ে কৃষ্ণদেবের কাছে পৌঁছে গেল সে। তারপর চিঠিখানা তাকে দিল।
চিঠি পড়েই রাকে ক্ষোভে ফেটে পড়লো জমিদার কৃষ্ণদেব।
খিস্তি খেউড় করতে করতে বললো, “সেই তিতু আমাকে চিঠি দিয়েছে? আর তুই ব্যাটা কে?”
খৃষ্ণদেবের ধারে কাছেই উপস্থিত ছিল মুচিরাম ভাণ্ডারী। সাথে সাথে মুচিরাম বললো, “ওর নাম আমন মণ্ডল। বাপের নাম কামন মণ্ডল। ও হুজুরে প্রজা। আগে দাড়ি কামাতো। আর এখন দাড়ি রেখেছে বলে হুজুর চিনতে পাছেন না।” হিঃ হিঃ করে হেসে উঠলো মুচিরাম।
পত্র বাহকের নাম বিকৃত কর বলায় তার আত্মসম্মান বাধলো। সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বললো, “না হুজুর, আমার নাম- আমিন উল্লাহ। বাপের নাম- কামালউদ্দিন। লোকে আমাদেরকে আমন-কামন বলে ডাকে। আর দাঁড়ি? দাঁড়ি রাখা আমাদের ধর্মের আদেশ। সেই আদেই আমি পালন করেছি।”
আমিন উল্লাহর জবাব শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো জমিদার কৃষ্ণদেব রায়। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো, “ব্যাটা! দাড়ি রেখেছিস, দাড়ির খাজনা দিয়েছিস? নাম বদলের খাজনা দিয়েছিস? ব্যাটা আমার সাথে তর্ক করিস, এতো বড়ো স্পর্ধা! এতা বড়ো সাহস! দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা।”
এই কথা বলেই কৃষ্ণদেব মুচিরামকে নির্দেশ দিল, যা! একে নিয়ে গারদে আটকে রাখ। ওরে উচিত মতো শাস্তির ব্যবস্থা কর।
তার নির্দেশে আমিন উল্লাহকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেল মুচিরাম। গরাদের ভেতর আবদ্ধ করে অত্যাচারী কৃষ্ণদেবের লোকেরা তার ওপর চালালো অকথ্য নির্যাতন। নির্মম-নিষ্ঠুর শারীরিক নির্যাতনের মুকেও এতোটুকু ভেংগে পড়েনি সে।
তখনো তোর চোখে জ্বল জ্বল করে যাচ্ছে স্বাধীনতা এবং মুক্তির স্বপ্ন। জ্বলে যাচ্ছে দেশ এবং জাতির কল্যাণের প্রদীপ।
তখনো তার সামনে ভাস্বরে উদ্দীপ্ত ঈমান এবং ইসলামের হুকম আহকাম।
জীবনের চেয়ে সে ঈমানকে বড়ো করে দেখলো।
বড়ো করে দেখলো দেশ এবং জাতির মুক্তি।
জমিদারের পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে গেল।
চলতে থাকলো তার ওপর একের পর এক নিপীড়ন।
তাদের পাশবিক নির্যাতনের ফলে এক সময় নিস্তেজ হয়ে গেল আমিন উল্লাহর দেহ।
শহীদ হলো সে।
নিসার আলীর সংগ্রামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। শহীদ আমিন উল্লাহ।
প্রথম সংঘর্ষ
আঠারো শো একত্রিশ সালের কথা।
এসময়ে খাসপুরের জমিদারের অত্যাচারের মাত্রা ছড়িয়ে গেল। অকারণে অন্যায়ভাবে সে মুসলমানদের ওপর অমানুষিক জুলুম আর উৎপীড়ন শুরু করে দিল।
এসবই ছিল পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের পরামর্শে।
খাসপুরে জমিদারের অত্যাচারে টিকতে পারছিল না মুসলমানরা। তারা ছুটি এলো তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা- নিসার আলীর কাছে।
নিসার আলী বললেন, এবার রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আরতেকা কোনো পথ দেখছি না। পিছতো দেয়ালে ঠেকেই গেছে।
সুতরাং রুছে দাঁড়াও!
নেতার আদেশ পেয়ে ক্রুদ্ধ এবং ক্ষত-বিক্ষত মুসলমানের একটি দল রুখে দাঁড়ালো।
শুধু রুখে দাঁড়ালো না।
আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে তারা জমিদারের লাঠিয়অল বাহিনীকে পরাস্ত করে ক্রমাগত সামনে অগ্রসর হতে লাগলো।
খাসপুরের প্রতাপশালী জমিদার!
এই প্রথম তার অত্যাচারের প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ উঠলো। অত্যাচারিত এবং নির্যাতিত মানুষের কাছে মাথা নত করলো এই সর্ব প্রথম একজন জমিদার। আর তো পেচনে ফেরা চলে না।!
ভাবলেন নিসার আলী।
ওদিকে পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেবও বাড়িয়ে দিয়েছে তার অত্যাচার আর জুলুম নির্যাতনের মাত্রা। তার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা।
নিসার আলী তার সাথীদেরকে নিয়ে এবার পুঁড়ার দিকে যাত্রা করলেন।
উদ্দেশ্য- কৃষ্ণদেবকে বুঝানো। যেন সে অন্যায়ভাবে তার প্রজদের ওপর অত্যাচার না করে।
ইছামতী নদী পার হয়ে নিসার আলী তাঁর সাথীদেরকে পুঁড়ার জমিদার বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলো।
কিন্তু বাধাপাপ্ত হলেণ কৃষ্ণদেবের বাহিনীর কাছে।
জমিদার বাড়িতে তখন ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মহা সমারোহে বারোয়ারী পূজা হচ্ছিল। নিসার আলীর সাথীদেরকে দেখে পূজায় অংশ গ্রহণকারীরা ভয়ে পালিয়ে গেল।
জমিদারের বাহিনীর সাথে নিসার আলীর এখানে সংঘর্ষ বেধে গেল। এই সংঘর্ষে কৃষ্ণদেবের পক্ষের একজন নিহত হলো।
পুরোহিতের নিহত হবার খবরটি সাথে সাথে পৌঁছে গেলে বারাসতের ম্যাজিস্ট্রেটের কানে। তিনি কদম গাছির দারোগারকে পাঠালেন তদন্তের জন্যে।
দারোগা ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ।
তিনি নিসার আলীকে গ্রেফতার এবং তাঁকে উচিত শিক্ষা দেবার জন্যে রওয়ানা হলেন।
তার সাথে ছিল দেড়শতাধিক বরকন্দাজ এবং চৌকিদার।
কিন্তু দারোগার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। দারোগার বাহিনীর সাথে আবারও নিসার আলীর সংঘর্ষ হলো। এই সংঘর্ষে দারোগাসহ তার বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো।
দিন যত এগিযে যাচ্ছে, ততোই ঘনীভূত হয়ে উঠছে নিসার আলীর সংগ্রামের সাহসী চিত্র।
সম্মিলিত ষড়যন্ত্র
সাইয়েদ নিসার আলী এবং তাঁর অনুসারীদের দমন করার জন্যে জমিদাররা উঠে পড়ে লেগে গেল। তারা পরামর্শের জন্য সকলে একত্রিত হলো।
নির্ধারিত সময়ে জমিদাররা একত্রত হলো কলকাতার জনৈক লাবু বাবুর বাড়িতে।
এই সভায় হাজির ছিল- কলকাতার লাটু বাবু, গোবর ডাঙ্গার জমিদার কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, গোবরা-গোবিন্দপুরের দেবনাথ রায়, নূর নগরের জমিদারের ম্যানেজার, টাকীর জমিদারের সদর নায়েব, রানা ঘাটের জমিদারের ম্যানেজার, পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়, বশীরহাট থানার দারোগা রাম রায় চক্রবর্তী, যদুর আটির দুর্গাচরণ চক্রবর্তী প্রমুখ।
সভায় তারা সিদ্ধান্ত নিল- যেহেতু নিসার আলীকে দমন করতে না পারলে আমাদের পতন অনিবার্য, সেই কারণে যে করেই হোক তাকে শায়েস্তা করতেই হবে। এ ব্যাপারে সকল জমিদার এক যোগে কাজ করবে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করবে।
তারা নীলকদের সাহায্যও নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। তাদেরকে বুঝানো হবে যে, নিসার আলী শুধু জমিদারদের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করছেন না, তিনি নীলকর এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম শুরু করেছেন। আর হিন্দু জনসাধারণের মধ্যে এ কথা ঢাউস করে প্রচার করে দিতে হবে যে, নিসার আলী গোমাংসের দ্বারা হিন্দুর দেবালয়াদি অপবিত্র করছেন। হিন্দুর মুখে কাঁচা গো-মাংস গুজে দিয়ে তাদের জাতি নাশ করছেন।
বশীর হাটের দারোগা চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে সর্বপ্রকার সাহায্য করার জন্যে অনুরোধ জানানো হলো।
জমিদার কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় দারোগাকে বললো, আপনি ব্রাহ্মণ। আমরাও ব্রাহ্মণ। তাছাড়া আপনি আমাদের অনেকেরই আত্মীয়। আমাদের এই বিপদে আপনাকে সাহায্য করতেই হবে।
দারোগা তাদেরকে অভয় দিযে বললো, আমি আমার প্রাণ দিয়ে হলেও সাহায্য করবো এবং তিতুমীরকে রাজদ্রোহী প্রমাণ করবো।
কলকাতার এই ষড়যন্ত্র সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল নিসার আলীর যাবতীয় তৎপরতাকে নস্যাৎ করা।
অথচ নিসার আলী ছিলেন একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ।
তিনি চেয়েছিলেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটাতে।
চেয়েছিলেন শান্তির পতে মুসলমানদের জাগরণ। চেয়েছিলেণ কুসংস্কার বর্জিত প্রকৃত ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে।
তিনি চেয়েছিলেন বিদেশী শাসক, নীলকর কুঠিয়াল এবং অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের হাত থেকে গরীব কৃষক শ্রেণীকে রক্ষা করতে।
কিন্তুতাঁর এই শান্তির পথে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালো তিনটি বৃহৎ শক্তি-
হিন্দু জমিদার, নীলকর কুঠিয়াল এবং ইংরেজ।
প্রতি পদে পদে এই ষড়যন্ত্রকারীদের মুকাবিলা করতে হলো সাইয়েদ নিসার আলীকে।
মসজিদটি পুড়িয়ে দিল
কলকাতার ষড়যন্ত্র সভার পর কৃষ্ণদেব আরও বেশি করে ক্ষেপে উঠলো। সে লোক পাঠালো সরফরাজপুরে। বললো, তাদের কাছ থেকে দাড়ি গোঁফের খাজনা এবং আরবী নামকরণের খারিজানা ফিস আদায করে আনো।
তার লোকেরা যথা সময়ে সরফরাজপুর গেল।
তারা খাজনার কথা বললে সেখানকার মুসলমানরা তা দিতে অস্বীকার করলো।
তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে কৃষ্ণদেবকে সকল ঘটনা খুলো বললো।
সব শুনে কৃষ্ণদেব জ্বলে উঠলো।
সাথে সাথে বারোজন সশস্ত্র বরকন্দাজকে পাঠালো সেখানে। বললো, ওদেরকে এই মুহূর্তে আমার সামনে হাজির করতে হবে। তারপর মজাটা দেখিয়ে ছাড়বো তাদের।
কিন্তু বরকন্দাজরা ব্যর্থ হলো। তারা সাহস করেনি কাউকে গ্রেফতার করতে।
তাদের ব্যর্থতায় কৃষ্ণদেব রেগে দেল ভীষণভাবে। কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে কিছুই করতে পারলো না।
কৃষ্ণদেব এবার পরামর্শের জন্যে বিভিন্ন জায়গায় তার লোক পাঠালো।
অনুকূল চন্দ্র গেল গোবর ডাঙ্গায়।
খড়েশ্বর গেল গোবরা-গোবিন্দপুর।
লাল বিহারী গেল শেরপুর নীল কুঠির মনিঃ বেনজামিনের কাছে।
বনমালী গেল হুগলী নীল কুঠিতে এবং লোকনাথ গেল বশীর হাট থানায়।
কৃষ্ণদেবের অনুরোধে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্যের জন্যে সহস্রাধিক লাঠি ঢাল শুড়কী ও তলোয়ারধারী সশস্ত্র যোদ্ধারা তার বাড়িতে এসে জমা হলো।
পরদিন শুক্রবার।
নিসার আলীর জুমআর নামায আদায় করছেন।
তাঁর সাথে আছে মসজিদ ভরা মুসল্লী।
খুতবা শেষে তারা যখন নামাযে দাঁড়িয়েছেন, তখনি তাদেরকে আক্রমণ করলো কৃষ্ণদেবের বাহিনী।
তারা মসজিদটিকে ঘিরে ফেলে আগুন লাগিয়ে দিল।
অগ্নি-দগ্ধ অবস্থায় মুসল্লীরা মসজিদের বাইরে এলে তাদের ওপর আক্রমণ করলো।
তাদের শড়কী বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন মুসল্লী শহীদ হলেন এবং আহত হলেন অনেকেই।
কৃষ্ণবেদের তখনো রক্ত পিপাসা মেটেনি।
সে উন্মাদের মতো আশ-পাশের মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল।
তাদের ওপর চালালো অকথ্য নির্যাতন। চলতেই থাকলো।
মিথ্যা মামলা
মসজিদটি পুড়িয়ে দেবার আঠারো দিন পরের ঘটনা।
নিসার আলী এবং তাঁর সাথীদেরকে নির্মূল করার জন্যে কৃষ্ণদেব রায় এবার নিজেই তাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করলো।
ইজাহারে সে বললো, “নিসার আলীর লোকেরা তার লোকজনকে মারপিট করেছে। তাকে ফাঁসানোর জন্যে তারা নিজেরাই তাদের মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।”
ইজহারে কৃষ্ণদেব তার গা বাঁচানোর জন্যে আরও বললো:
“নীল চাষদ্রোহী, জমিদারদ্রোহী ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীদ্রোহী তিতুমীর নাম ভীষণ প্রকৃতির এক ওহাবী মুসলমান এবং তার সহস্রাধিক শিষ্য পুঁড়ার জমিদার শ্রীযুক্ত কৃষ্ণদেব রায় মহাশয়ের দুজন বরকন্দাজ ও একজন গোমস্তাকে অন্যায় ও বেআইনিভাবে কয়েদ করে গুম করেছে। বহু অনুসন্ধানেও আমরা তাদের পাচ্ছিনা। আমাদের উক্ত পাইক ও গোমস্তা সরফরাজপুর মহলের প্রজাদের নিকট খাজনা আদায়ের জন্যে মহলে গিয়েছিলেন। খাজনার টাকা লেনদেনে ও ওয়াশীল সম্বন্ধে প্রজাদের সাথে বচসা হওয়ায় তিতুমীরের হুকুম মতে তার দলের লোকেরা আমাদের গোমস্তা পাইকদেরকে জবরদস্তি করে কোথায় কয়েদ করেছে তা জানা যাচ্ছে না। তিতুমীর দম্ভভরে প্রচার করছে যে, সে এ দেশের রাজা। সুতরাং খাজনা আর জমিদারকে দিতে হবে না।”
অপর দিকে মুসলমানরা কলিঙ্গার পুলিশ ফাঁড়িতে কৃষ্ণদেব রায় ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে খুন জখম মারপিট প্রভৃতি মামলা দায়ের করলো।
পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী ইজাহার গ্রহণ করলো এক প্রকার বাধ্য হয়ে। কিন্তু এই ইজাহারের প্রতি তার কোনা আগ্রহ এবং শ্রদ্ধাবোধ ছিল না।
থাকবে কেন? সেটা যে ছিল মজলুমের ইজাহার!
মামলার রিপোর্ট
কৃষ্ণদেবের মিথ্যা মামলার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে কলিঙ্গা পুলিশ ফঅঁড়ির জমাদার।
জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের নায়েব তিতুমীর ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে যে মোকদ্দমা দায়ের করেছে সে সম্পর্কে জমাদার একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। তিনি রিপোর্টে উল্লেখ করেন:
“তদন্ত করে জানা গেল যে, যেসব কর্মচারীর অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে তারা সকলেই নায়েবের সঙ্গেই আছে।…. আমার মতে এ জটিল মামলা দুটির তদন্ত ও ফাইনাল রিপোর্টের ভার বশীর হাটের অভিজ্ঞ দারোগা রাম রাম চক্রবর্তীর ওপর অর্পণ করা হোক।”
বারাসাতে জয়েন্ট ম্যাটিস্ট্রেট কৃষ্ণদেবরায়কে কোর্টে তলব করে জামিন দেন। আর মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার আদেশ দেন রাম রাম চক্রবর্তীকে।
এই চক্রবর্তী ছিল কৃষ্ণদেবের একান্ত আস্থাভাজন অসৎ ব্যক্তি।
মামলার তদন্তের ভার পাওয়ায় সে খুব খুশি হলো। ছুটে চলে গেল সরফরাজপুর। কৃষ্ণদেবের বাড়িতে আরাম আয়েশে কাটিয়ে দিল কয়েকদিন। তারপর সে রিপোর্ট দিল। রিপোর্ট সে জানালো:
১. “জমিদার কৃষ্ণদেব রায়েল গোমস্তা ও পাইকদেরকে তিতু ও তার লোকেরা বেআইনীভাবে কয়েদ করে রেখেছিল। পরে তারা কৌশলে পলায়ন করে আত্মগোপন করেছিল। পুলিশৈর আগমনের পর তারা আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং এ মামলা অচল ও বরখাস্তের যোগ্য।”
২. তিতুমীর ও তার লাঠিয়ালেরা জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ও তার পাইক বরকন্দাজের বিরুদ্ধে খুন জখম, লুট, অগ্নিসংযোগ প্রবৃতি মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।
৩. তিতু ও তার লোকেরা নিজেরাই নামাযঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতিএব এ মামলা চলতে পারে না।”
এই মামলায় নিসার আলীকে নিয়ে রাম রাম চক্র বর্তীর মনগড়া সাজানো রিপোর্টের কারণে জমিদার কৃষ্ণদেব রায় জয়লাভ করলো।
শুধু জয়লাভই নয়- সে এরপর থেকে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার আর শোষণের মাত্রা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিল।
আঠারো শো একত্রিশ সালের পঁচিশে সেপ্টেম্বর।
মামলার রায়ের নকলসহ মুসলমানরা কমিশনারের কোর্টে আপিল করার জন্যে কলকাতা গেল।
কিন্তু কমিশনারের অনুপস্থিতির জন্যে তারা আর আপত্তিওি করতে পারলো না।
দ্বিতীয় সংঘর্ষ
সতেরই অক্টোবর, আঠারো শো একত্রিশ সাল।
নিসার আলী তাঁর পাঁচজন গৃহহারা, সম্পদহারা সাথীসহ সরফরাজপুর থেকে নারিকেল বাড়িয়ায় চলে এলেন।
সিদ্ধান্ত নিলেন, এখন থেকে নারিকেল বাড়িয়াতেই তিনি অবস্থঅন করবেন। জমিদার কৃষ্ণদেব রায় সরফরাজপুরে গ্রামের মসজিদটি ধ্বংস করলো।
বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল।
অনেক মানুষকে সে হতাহত করলো। হাবিবুল্লাহ, হাফিজুল্লাহ, গোলাম নবী, রমজান আলী ও রহমান বখশের ঘরবাড়িও জ্বালিয়ৈ দিল। মুসলমানদের ধনসম্পদ ভস্মিভূত ও লুণ্ঠন করলো।
কৃষ্ণদেবের অত্যাচারে সরফরাজপুরের মানুষের জীবন হয়ে উঠলো বিপন্ন।
এই বিপন্ন গ্রাম- সরফরাজপুর থেকে নিসা আলী তাঁর পাঁচজন অসহায় সাথীকে নিয়ে নারিকেল বাড়িয়ায় চলে এলেন।
কিন্তু এখানেও স্বস্তিতে থাকতে দিল না অত্যাচারী কৃষ্ণদেব রায়।
উনত্রিশে অক্টোবর আঠারো শো একত্রিশ সাল।
কৃষ্ণদেব রায় সহস্রাধিক লাঠিয়াল ও বিবিন্ন অস্ত্রসাজে সজ্জিত একটি বাহিনী নিয়ে অকস্মাৎ আক্রমণ ক রলো নারিকেল বাড়িয়া গ্রাম।
তারা গ্রামে প্রবেশ করে বহু মানুষকে হতাহত করলো।
জ্বালিয়ে দিল অসংখ্য ঘরবাড়ি।
ত্রিশে অক্টোবর, আঠারো শো একত্রিশ সাল।
পুলিশ ফাঁড়িতে একটি ইজাহার দায়ের করা হলো। কিন্তু কোনো প্রকার তদন্তের জন্যেও পুলিশ এলো না।
আঠারো শো একত্রিশ সালের ছয়ই নভেম্বর।
জমিদার কৃষ্ণদেব তার বাহিনী নিয়ে পুনরায় নারিকেল বাড়িয়ার মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করলো।
ধূর্থ কৃষ্ণদেব চার দিকে প্রচার করে দিল যে, অকারণে মুসলমানরা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
এই সংবাদ শুনে গোবর ডাঙ্গার প্রতাপশালী জমিদার কালী প্রসন্ন তার একটি বিশাল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হলো নাড়িকেল বাড়িয়ায়।
মোল্লা অলি নীল কুঠির ম্যানেজার মিঃ ডেভিস চারশো হাবশী যোদ্ধাসহ সেখানে উপস্থিত হলো।
এই সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীটি হঠাৎ করে নিসার আলীদের ওপর আক্রমণ করলো।
আত্মরক্ষার জন্যে নিসার আলী তাঁর সাথীদেরকে পূর্ব থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তারাও ছিলেন প্রস্তুত।
মুহূর্তে নারিকেল বাড়িয়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে উঠলো।
ভীষণ যুদ্ধ!
এই যুদ্ধে ডেভিড প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করলো। জমিদারদের বহু লাঠিয়াল হতাহত হলো। বিক্ষুব্ধ মুসলমান নদী থেকে ডেভিডের বজরা ডাঙ্গায় তুলে খণ্ড খণ্ড কেটে ফেললো।
এই ঘটনার কিছুদিন পর।
গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার দেবনাথ রায় পুনরায় বিরাট এক সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করলো নিসার আলীর গ্রাম- নারিকেল বাড়িয়া।
এবারও মুসলমানরা সাহসিকতার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো তাদের ওপর।
পরাস্ত হলো তারা।
এই সংঘর্ষে নিহত হলো অত্যাচরী আর এক জমিদার-দেবনাথ রায়।
মনোহরের প্রতিক্রিয়া
কৃষ্ণদেবের এসব অত্যাচার আর অন্যায় বাড়াবাড়ির কথা জানতো অন্য এক জমিদার। সে হলো- চতুনার জমিদার মনোহর রায়।
মনোহর রায় কৃষ্ণদেবের এইসব ঘৃণ্য পদক্ষেপে খুবই মর্মাহত হলো।
তাকে ফেরানোর জন্যে সে একটি চিঠি দিল।
পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেবের কাছে লেখা মনোহর রায়ের চিঠির ভাষা ছিল এরকম:
“নীলচাষের মোহ আপনাদেরকে পেয়ে বসেছে। তার ফলেই আজ আমরা দেবনাথ রায়ের ন্যায একজন বীর পুরুষকে হারালাম। এখনো সময় আছে। আর বাড়াবাড়ি না করে তিতুমীরকে তার কাজ করতে দিন। আর আপনারা আপনাদের কাজ করুন।
তিতুমীর তার ধর্ম প্রচার করছে। তাতে আপনারা জোট পাকিয়ে বাধা দিচ্ছেন কেন?
নীল চাষের মোহে আপনারা ইংরেজ নীলকরদের সাথে এবং পাদ্রীদের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে দেশবাসী ওপর গায়ে পড়ে অত্যাচার চালাতে থাকেন তাহলে বাধ্য হয়ে আমি তিতুমীরের সাহায্যের জন্যে অগ্রসর হবো।
আমি পুনরায় বলীছ নীলচাষের জন্যে আপনারা দেশবাসীর অভিসম্পাদ কুড়াবেন না।”
শ্রী মনোহর রায় ভূষণ।
কোনো প্রভাবশালী হিন্দুর পক্ষ থেকে এটাই ছিল নিসার আলীর জন্যে প্রথম সমবেদনামূলক চিঠি। চিঠিটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম।
তৃতীয় সংঘর্ষ
একটি দুষ্ট মহল গুজব ছড়িয়ে দিল চারদিকে। তারা প্রচার করতে থাকলো যে, শেরপুর নীলকুঠির ম্যানেজার বেনজামিন বহু লাঠিয়াল ও শড়কিওয়ালাসহ নাড়িকেল বাড়িয়া আক্রমণের জন্যে নদী পথে যাত্রা করেছে।
এই গুজবটি শুনার পর চিন্তায় পড়লেন নিসার আলী।
একের পর এক আক্রমণ আসছে তাদের ওপর। আর তারা তা মুকাবিলা করে যাচ্ছেন।
এখন কি করা যায়?
তিনি তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন।
তাঁর বিশ্বস্ত সাথী গোলাম মাসুমকে বললেন ইছামতী নদীর দিকে এগিযে যেতে।
গোলাম মাসুম কিছু সাহসী সঙ্গী নিয়ে বেনজামিনের বাহিনীকে বাধা দেবার জন্যে এগিয়ে গেলেন।
নদীর কিছুটা দূরে বারঘরিয়া গ্রামের ঝোপঝাড় এবং জঙ্গলের ভেতর তারা লুকিয়ে থাকলেন এবং নদীর ঘাটের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখলেন।
এক সময় বজরা এসে নদীর ঘাটে ভিড়লো।
নিসার আলীর লোকেরা দেখতে পেলেন বজরায় দুজন ইংরেজ এবং জমিদার কৃষ্ণদেব আছে।
ইংরেজ দুজনকে তারা বেনজামিন আর ডেভিস বলে ধারণা করে তাদের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন।
কৃষ্ণদেব তাদেকে দেখতে পেল। সে বললো, ঐ দেখুন হুজুর! তিতুমীরের প্রধান সেনাপতি গোলাম মাসুম বজরা আক্রমণ করার জন্যে এতোদূর পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে!
কৃষ্ণদেবের কথা শেষ না হতেই সাহেব সাথে সাথে গুলি চালাবার নির্দেশ দিল।
অপরপক্ষেও তর শড়কী চালাতে লাগলেন।
উভয় পক্ষের বেশ কিছু মানুষ হতাহত হলো।
কালেক্টর তখন যুদ্ধ বন্ধ রেখে নদীর মাঝখানে গিয়ে আত্মরক্ষা করলো। কিন্তু কপাল মন্দ কৃষ্ণদেবের।
সে দ্রুত বজরায় উঠে নদীর মাঝখানে গিয়ে প্রাণে বাঁচতে চাইছিলো।
কিন্তু পারলো না।
নদীতে পড়ে গেল এবং সেই বারঘরিয়ার নদীতে পানিতে ডুবে কৃষ্ণদেব মারা গেল।
তাকে কোনো মুসলমান হত্যা করেনি।
এই সংঘর্ষে যদিও নিসা আলীর দলের বিজয় হয়েছিল, তবুও তাঁদের এই সংঘর্ষটি ছিল সম্পূর্ণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে। অনভিপ্রেত।
যারা তাদের ধোঁকার মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে ক্ষেপিয়েতুলতে চেয়েছিল- মূলত তারাই সফল হলো। কারণ এই সংঘর্ষের ফলে ইংরেজরাও ক্ষেপে উঠলো নিসার আলীর বিরুদ্ধে।