কাদিয়ানীদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: কাদিয়ানী মুবাল্লিগরা তাদের সকল শক্তি দিয়ে নবুওয়াতের দরজা খোলা রয়েছে বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। নিম্নোক্ত দু’টি আয়াতকে তারা বিশেষভাবে দলিল হিসেবে পেশ করে এবং এগুলোকে দাবীর বুনিয়াদ স্থাপন করে।
(আরবী *************)
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে সেই সব লোকের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা নিয়ামত দান করেছেন। তারা হচ্ছেন, নবী, সিদ্দীক শহীদ ও সৎলোকগণ। এরা যাদের সঙ্গী-সাথী হবেন, তাদের পক্ষে এরা কতই না উত্তম সাথী।” (সূরা নিসা, আয়াত-৬৯)
তারা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলে, এখানে ধারাবাহিকভাবে চারটি জিনিসের উল্লেখ হয়েছে, নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সৎ লোকগণ। তাদের জানা মতে মুহাম্মদ (সা)-এর উম্মতের লোকেরা এর মধ্য থেকে তিনটি মর্যাদা লাভ করেছে। একটি মর্যাদা লাভ করা বাকী রয়েছে- আর সেটি হল নবুয়াত। সেটিই লাভ করেছেন মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তারা বলে, সঙ্গী-সাথী হওয়ার অর্থ যদি এই হয় যে, মুহাম্মদ (সা)-এর উম্মত কেবল কিয়ামতের দিনই উপরোক্ত কয়েক শ্রেণীর লোকদের সঙ্গী হবে তবে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে কোন সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎলোক নেই। আর যদি এরূপ না হয়ে থাকে তবে যেহেতু আয়াতে মর্যাদার চারটি স্তরের কথা উল্লেখ হয়েছে সেহেতু “আম্বীয়া” শ্রেণীকে উম্মতের মধ্যে বর্তমান থাকার ব্যাপারটিকে কোন্ দলিলের ভিত্তিতে বাদ রাখা যেতে পারে?
(আরবী ************)
“হে আদম সন্তান! স্মরণ রেখো, তোমাদের নিকট তোমাদরে মধ্যথেকে যদি এমন রসূল আসে যাঁরা তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনাবে, তখন সে কেউ নাফরমানী থেকে বিরত থাকবে এবং নিজের আচার-আচরণকে সংশোধন করে নেবে তার জন্যকোনো দুঃখ ও ভয়ের কারণ ঘটবে না।” (সূরা আরাফ, আয়াত ৩৫)
তারা এই আয়াত দ্বারা এই দলিল নিয়ে থাকে যে, এই আয়অতে সমগ্র মানব জাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে। আর আয়াতটি মুহাম্মদ (সা)-এর উপর নাজিল হয়েছে। তাদের বক্তব্য হল নবী আগমনের অবকাশই যদি না থাকত তাহলে মুহাম্মদ (সা)-এর উপর এই আয়াত নাজিল হবে কেন? তাছাড়া এখানে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, “অবশ্যই তোমাদের নিকট আমার নবী আসবে।” সুতরাং এই আয়াত থেকে প্রমাণ হলো মুহাম্মদ (সা)-এর আনুগত্যের অধীনে নবী আসতে পারে।
আপনার কাছে দাবী হলো, আপনার পত্রিকায় যুক্তি প্রমাণসহ এই বিষয়ে আলোকপাত করুন। যাতে করে সকলেই এ থেকে উপকৃত হতে পারে।
উত্তর: আল্লাহ ও তাঁর রসূল সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন বিধানের মাধ্যমে যখন কোনো বিষয়ের মীমাংসা করে দেন তখন সে সুস্পষ্ট বিধানকে দূরে সরিয়ে রেখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে অসম্পর্কিত আয়াত ও হাদীসথেকে নিজের প্রয়োজন মতো অর্থবের করা এবং কুরআন ও হাদীসেরসুস্পষ্ট বিধানের সম্পূর্ণ বিপরীত আকীদা পোষণ করা আর সেই অনুযায়ী কাজ করে যাওয়া চরম গোমরাহী, বরং আল্লাহ ও রসূলের বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম বিদ্রোহ। যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে আল্লাহ ও তাঁর বিধানের পরিপন্থী কোনো পথ অবলম্বন করে, সে অপেক্ষাকৃত ছোট ধরনের বিদ্রোহ করে। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁদের ঘোষণা ও বিধান বিকৃত করে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা কোনো ছোটখাটো বিদ্রোহ নয়। এ কাজ যারা করে তাদের সম্পর্কে আমরা কোনোক্রমেই এ কথা ভাবতে পারি না যে, তারা আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মেনে চলে। সাইয়্যেদুনা মুহাম্মদ (সা) শেষ নবী কি না এবং তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন কিনা- এ প্রশ্নের মীমাংসার জন্যে আমরা (আরবী ***********) এবং (********) প্রভৃতি আয়াতের দিকে মনোসংযোগ করতে পারতাম যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূল বিশেষ করে ঐ প্রশ্নের জবাব কুরআন ও হাদীসের কোথাও না দিয়েদিতেন। কিন্তু যখন আল্লাহর পক্ষথেকে ‘খাতামান নাবিয়্যীন’ আয়াতে এবং রসূলের পক্ষথেকে অসংখ্য নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হাদীসে আমরা বিশেষ করে এ প্রশ্নের দ্ব্যর্থহীন জবাব পেয়ে গেছি তখন (*****) এবং (*****) প্রভৃতি আয়াতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এবং সেগুলো থেকে কুরআনও হাদীসের সুস্পষ্ট বিধান বিরোধী অর্থ গ্রহণ করা একমাত্র সেই ব্যক্তিরই কাজ হতে পারে, যার দিলে বিন্দুমাত্রও আল্লাহরয় ভয় নেই এবং যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাসই করে না যে, মরার পরে একদিন তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে। এর দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে, যেমন দেশের দণ্ডবিধি আইনের একটি ধারায় একটি কাজকে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় অপরাধ গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু এক ব্যক্তি এ অপরাধটিকে বৈধ মকর্ম প্রমাণ করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। এ উদ্দেশ্যে সে ঐ বিশেষ ধারাটিকে বাদ দিয়ে আইনের অন্যান্য অসম্পর্কিত ধারার মধ্যে সামান্যতম কোনো ইঙ্গিত বা ছোটখাট কোনো অস্পষ্ট বক্তব্য অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়েছে। তারপর এগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে আইনের সুস্পষ্ট ধারা যে কাজটিকে অপরাধ গণ্য করেছে তাকে একটি বৈধ কর্ম প্রমাণ করতে উদ্যত হয়েছে। এ এ ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণ যদি দুনিয়ার পুলিশ কর্তৃপক্ষ ও আদালত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে আল্লাহর আদালতে তাকেমন করে গৃহীত হবার আশা করা যেতে পারে?
তারপর যে আয়াতগুলো থেকে কাদিয়ানীরা তাদের বক্তব্য প্রমাণ করতে চায় সেগুলো পড়ার পর অবাক হতে হয় তাদের প্রমাণ-কৌশল দেখে। দেখা যায় ঐ আয়াতগুলোর ঐ অর্থই নয়, যা তারা গায়ের জোরে টেনে-হেঁচড়ে করতে চায়। যেসব আয়াতের ওপর তারা কসরত চালিয়েছে সেগুলোর আসল অর্থ কি দেখা যাক।
সূরা নিসার ৬৯ নম্বর আয়াতে যে কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কেবল এতটুতু যে, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্যকারীরা নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীনদের (সৎ ব্যক্তিবর্গের) সহযোগী হবে। এ থেকে যারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করবে তারা হয় নবী হয়ে যাবে, নয়তো সিদ্দীক অথবা শহদি বাসালেহীন হবে- এ কথা কেমন করে বের হলো? তারপর সূরনা হাদীসের ১৯ নম্বর আয়াতটি একবার অনুধাবন করুন। সেখানে বলা হয়েছে,
(আরবী ************)
অর্থাৎ স‘আর যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের ওপর, তারাই হচ্ছে তাদের রবের কাছে সিদ্দীক ও শহীদ।’ এ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ঈমান লাভ করার ফলে এক ব্যক্তি কেবলমাত্র সিদ্দীক ও শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। আর নবীদের ব্যাপারে বলা যায়, নবীদের সহযোগী হওয়াই ঈমানদারদের জন্য যথেষ্ট। কোনো কাজের পুরস্কারস্বরূপ কোনো ব্যক্তির নবী হয়ে যাওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। তাই সূরা নিসার আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্যকারীরা নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে অবস্থান করবে। আর সূরা হাদীদের আয়অতে বলা হয়েছে, আল্লাহ ও রসূলের ওপর যারা ঈমান আনবে তারা নিজেরাই সিদ্দীক ও শহীদে পরিণত হবে।
আর সূরা আরাফের ৩৫ নম্বর আয়াত (আরবী ***********) সম্পর্কে বলা যায়, এটি একটি বর্ণনাধারার সাথে সম্পর্কিত। সূরা আরাফের ১১ থেকে ৩৬ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ বর্ণনা চলেছে। এ বর্ণনার পূর্বাপর বিষয়বস্তুর মধ্যে রেখে একে বিচার করলে পরিষ্কার জানা যায়, মানব জাতির সৃস্টির প্রথম পর্যায়ে বনী আদমকে এ সম্বোধন করা হয়েছিল। এ আয়াতগুলো পড়ে কেমন করে এ ধারণা লাভ করা যেতে পারে যে, এগুলোর মধ্যে নবী মুহাম্মদ (সা)-এর পর নবীদের আগমনের কথা বলা হয়েছে? এখানে তো হযরত আদম (আ) ও তাঁর স্ত্রীকে যখন বেহেশ্ত থেকে বহিষ্কার করে দুনিয়ায় আনা হয় সে সময়কার কথা বলা হয়েছে। (তরজুমানুল কুরআন, মে, ১৯৬২ ইং)।
খতমে নবুওয়াতের বিরুদ্ধে কাদিয়ানীদের দলিল
প্রশ্ন: কাদিয়ানীরা কুরআনের কোনো কোনো আয়অত এবং কোনো কোনো হাদীসকে খতমে নবুয়াতের দলিল হিসাবে চালাবার চেষ্টা করছে। যেমন তারা (আরবী **********) সূরা আরাফের এ আয়াতটির অর্থ এভাবে করে যে, মুহাম্মদের (সা) নবুয়াত লাভ এবং কুরআন অবতীর্ণের পর এ আয়অতের সম্বোধন কেবল উম্মতে মুহম্মদীই হতে পারে। এখানে “বনী আদম” দ্বারা এ উম্মতকেই বুঝানো হয়েছে। এদেরকে সম্বোধন করেই বলা হয়েছে, যদি “কখনো তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে রসূল আসেন।” এখানে কাদিয়ানীদের বক্তব্য অনুযায়ী কেবল উম্মতী নবীই নয়, বরঞ্চ উম্মতী রাসূলের আগমনই প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয় আয়াতটি হচ্ছে সূরা আল মুমিনূনের সেই আয়াত যার সূচনা হয়েছে (আরবী *****) দিয়ে। তাদের মতে এই আয়াতটিও রসূল আগমন প্রমাণ করে। একই ভাবে তারা (আরবী *******) [যদি রাসূলুল্লাহ্র (সা) পুত্র ইবরাহীম বেঁচে থাকতেন তবে তিনি নবী হতেন] হাদীসটির দ্বারা নবী আগমনের সম্ভাবনার পক্ষে দলিল গ্রহণ করে। মেহেরবানী করে এসব দলিলের হাকীকত উন্মোচন করবেন।
জবাব: কাদিয়ানীদের যেসব দলিল আপনি উল্লেখ করলেন সেগুলো তাদের অন্যান্য অধিকাংশ দলিলের মতোই বিভ্রান্তিকর প্রতারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা
(আরবী *******)
এই আয়াতটিকে তার পূর্বাপর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে যে অর্থ বের করে থাকে তা তাকে যথাস্থানে রেখে বিচার করলে যে অর্থ বের হয় তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আসলে যে বক্তব্য পরম্পরায় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে তা সূরা আরাফের দ্বিতীয় রুকূ’ থেকে চতুর্থ রুকূ’র মাঝামাঝি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে দ্বিতীয় রুকূ’তে আদম ও হাওয়ার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তারপর তৃতীয ও চতুর্থ রুকূ’তে এ কাহিনীর ফলাফলের ওপর মন্তব্য করা হয়েছে। এ পূর্বাপর আলোচনা সামনে রেখে ৩৫ নম্বর আয়াতটি পড়লে পরিষ্কার জানা যায় যে, এর মাধ্যমে সম্বোধন করে যে কথা বলা হয়েছে তা সৃষ্টির সূচনা পর্বের সাথে সম্পর্কিত, কুরআন অবতরণকালের সাথে সম্পর্কিত নয়। অন্য কথায়ব লা যায়, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সৃষ্টির সূচনা পর্বেই আদম সন্তানদেরকে এই বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্যে যে হেদায়াত পাঠানো হবে তার আনুগত্যের ওপর তোমাদের নাযাত নির্ভর করবে।
এ বিষয়বস্তু সম্বলিত আয়াত কুরআনের তিনটি স্থানে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রত্যেকটি স্থানে হযরত আদম ও হযরত হাওয়া (আ)-এর কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে এর অবতারণা করা হয়েছে। প্রথম আয়াতটি এসেছে সূরা বাকারায় (৩৮ নম্বর আয়অত), দ্বিতীয় আয়াতটি সূরা আ’রাফে (৩৫ নম্বর আয়াত)। এ তিনটি আয়াতের বিষয়বস্তুর মধ্যে গভীর সাদৃশ্যের সাথে সাথে তাদের স্থান-কালের সাদৃশ্যও লক্ষণীয়।
কুরআনের মুফাস্সিরগণ অন্যান্য আয়াতের ন্যায় সূরা আরাফের এ আয়াতটিকেও হযরত আদম ও হাওয়া (আ)-এর কাহিনীর সাথে সম্পর্কিত গণ্য করেন। আল্লামা ইবনে জারীর (র) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে এ আয়াতটি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হযরত আবু সাইয়ার আস-সুলামীর বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন: “আল্লাহ তায়ালা এখানে হযরত আদম (আ) ও তাঁর পরিজনদেরকে একই সঙ্গে ও একই সময়ে সম্বোধন করেছেন।” ইমাম রাযী ৯র) তাঁর তাফসকীরে কাবীর গ্রন্থে এ আয়াতটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন: “যদি নবী করীম (সা)-কে সম্বোধন করা হয়ে থাকে, অথচ তিনি শেষ নবী, তাহলে এর অর্থ হবে আল্লাহ তায়ালা এখানে উম্মতদের ব্যাপারে নিজের নীতি বর্ণনা করেছেন।” আল্লামা আলুসী তাঁর তাফসীরে রুহুল মাআনী গ্রন্থে বলেছৈন: “প্রত্যেক জাতির সাথে যে ব্যাপারটি ঘটে গেছে সেটাই এখানে কাহিনী আকারে বর্ণনা করা হয়েছে। েএখানে নবী মুহাম্মদ (সা)-এর উম্মতকে বনী আদম অর্থে গ্রহণ করলে মারাত্মক ভুল ও সুস্পষ্ট অর্থের বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। কারণ রসূল শব্দটি একবচনে না বলে বহুবচনে ‘রুসুল” (******) বলা হয়েছে।” আল্লামা আলুসীর বক্তব্যের শেষাংশের অর্থ হচ্ছে, যদি এখানে উম্মতে মুহাম্মদীয়াকে সম্বোধন করা হতো, তাহলে তাদেরকে কখনো একথা বলা যেতো না যে, “তোমাদের মধ্যে কখনো রসূলগণ আসবেন।” কারণ এ উম্মতের মধ্যে একজন রসূল [মুহাম্মদ (সা)] ছাড়া অন্য কোনো রসূল আসার প্রশ্নই ওঠে না।
(আরবী *******)
[অর্থাৎ “হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র খাদ্য খাও এবং ভালো করে কাজ করো, অবশ্রি তোমরা যা কিছু করো আমি তা সব জানি।” (মুমেনুন-৫১)]
এ আয়াতটিকে এর পূর্বাপর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন না করলে, কাদিয়ানীরা এর যে অর্থ করেথে তা করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। যে বক্তব্য প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে তা দ্বিতীয় রুকূ’ থেকে শুরু হয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে চলে এসেছে। এসব আয়াতে হযরত নূহ (আ) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আ) পর্যন্ত সমস্ত নবী ও তাঁদের জাতির কথা আলোচনা করে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক দেশে ও প্রত্যেক যুগে নবীগণ মানুষদেরকে একটি শিক্ষাই দিয়ে এসেছেন, তাঁদের পদ্ধতিও ছিল এক ও অভিন্ন এবং তাঁদের ওপর আল্লাহ তায়ালা একই ধরনের অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন। বিপরীতপক্ষে পথভ্রষ্ট জাতিরা হামেশা আল্লাহর পথ ত্যাগ করে দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়েছে।” এ বর্ণনা প্রসঙ্গে এ আয়াতটি কোনোক্রমেই নিম্নোক্ত অর্থে নাযিল হয়নি, “হে রসূলগণ! তোমরা যারা মুহাম্মদ (সা)-এর পরে আসবে, তোমরা পাক-পবিত্র খাদ্য খাও এবং ভালো কাজ করো।” বরং এ আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, নূহ (আ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত যত নবী এসেছিলেন তাঁদের সবাকে আল্লাহ তায়ালা এই নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তোমরা পাক-পবিত্র খাদ্য খাও ও ভালো কাজ করো।
এ আয়াতটি থেকেও মুফাসসিরগণ কখনো নবী মুহাম্মদ (সা)-এর পর নবুয়তের দরজা খুলে যাওয়ার অর্থ নেননি। আরো বেশী অনুসন্ধান ও মানসিক নিশ্চিন্ততা লাভ করতে চাইলে বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে এ স্থানটির আলোচনা পাঠ করতে পারেন। (আরবী *******) অর্থাৎ ইবরাহীম [রাসূলে করীম (সা)-এর পুত্র] বেঁচে থাকলে অবশ্যি নবী হতো। -এ হাদীসটি থেকেও কাদিয়ানীগণ যে প্রমাণ উপস্থাপন করেন তা চারটি কারণে ভুল।
এক, যে রেওয়ায়েতে এটিকে নবী করীম (সা) এর উক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে তার সনদ দুর্বল এবং কোনো মুহাদ্দিসও এই সনদেক শক্তিশালী বলেননি।
দুই, নববী ও ইবনে আবদুল বারের ন্যায় শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসের বিষয়বস্তুকে অনির্ভরযোগ্য গণ্য করেছেন। ইমাম নববী তাঁর “তাহযীবুল আস্মা ওয়াল্ লুগাত” গ্রন্থে লিখেছেন:
(আরবী *******)
অর্থাৎ “আর কোনো কোনো পূর্ববর্তী আলেমযে কথা লিখে গেছেন যে, যদি ইবরাহীম [মুহাম্মদ (সা)-এর পুত্র] জীবিত থাকতো, তাহলে সে নবী হতো- এ কথাটি সত্য নয়। কারণ এটি গায়েব সম্পর্কে কথা বলার দুঃসাহস এবং মুখ থেকে না ভেবে-চিন্তে একটি কথা বলে ফেলার মতো।”
আল্লামা ইবনে আবদুল বার ‘তামহীদ’ গ্রন্থে লিখেছেন:
(আরবী *******)
অর্থাৎ আমি জানি না এটি কেমন বিষয়বস্তু। নূহ (আ)-এর পরিবারে এমন সন্তান জন্ম নিয়েছে, যে নবী ছিল না। অথচ যদি নবরি পুত্রের জন্যে নবী হওয়া অপরিহার্য হতো, তাহলে আজ দুনিয়াতে সবাই নবী হতো। কারণ সবাই নূহ (আ)-এর আওলাদ।”
তিন, অধিকাংশ রেওয়ায়েতে এ হাদীসকে নবী (সা)-এর উক্তির পরিবর্তে সাহাবাগণের উক্তি হিসেবে পেশ করা হয়েছে। আবার তাঁরা এই সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যেহেতু নবী (সা)-এর পর আর কোনো নবী নেইতাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর পুত্রকে উঠিয়ে নিয়েছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ বোখারীর রেওয়াতে বলা হয়েছে:
(আরবী *******)
“ইসমাইল ইবনে আবী খালেদ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফঅ (রা)কে (সাহাবা) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি নবী (সা)-এর পুত্র ইবরাহীমকে দেখেচিলেন? তিনিবলেন, সে শৈশবেই মারাযায়। যদি আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মদ (সা)-এর পর কোনো নবী পাঠাবার ফয়সালা করতেন তাহলে তার পুত্রকে জীবিত রাখতেন। কিন্তু রসূলে করীম (সা)-এর পর আর কোনো নবী নেই।”
হযরত আনাস (রা) প্রায় এরই সাথে সামঞ্জস্যশীল একটি রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন:
(আরবী *******)
“যদি সে জীবিত থাকতো তাহলে নবী হতো। কিন্তু সে জীবিত থাকেনি। কারণ তোমাদের নবী হচ্ছেন শেষ নবী।” (তাফসীরে রুহুল মাআনী: ২২ খণ্ড, ৩ পৃঃ)
চার, যে রেওয়ায়েতে এ উক্তিটিকে নবী করীম (সা)-এর উক্তি বলা হয়েছে এবং যাকে দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য গণ্য করা হয়েছে যদি তাতে সাহাবায়ে কেরামের এ ব্যাখ্যা না থাকতো এবং মুহাদ্দিসগণের এ উক্তিগুলো সেখানে সংযুক্ত নাও হতো তবুও তা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতো না। কারণ হাদীস শাস্ত্রের সর্বসম্মত নীতি হচ্ছে, কোনো একটি রেওয়ায়েতের বিষয়বস্তু যদি বহু সংখ্যক নির্ভুল হাদীসের সাথে সাংঘর্ষশীল হয়, তাহলে তাকে কোনোক্রমেই গ্রহণ করা যেতে পারে না। তাহলে এখন দেখা যাক, একদিকে অসংখ্য নির্ভুল ও শক্তিশালী সনদ সম্বলিত হাদীস, যাতে পরিষ্কারভাবে এ কথা বলে দেয়া হয়েছে যে, নবী মুহাম্মদ (সা)-এর পর নবুয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে আর অন্যদিকে এই একটি মাত্র রেওয়ায়াত, যা নবুয়াতের দরজা খোলা থাকার সম্ভাবনা প্রকাশ করে- এই দু’টি অবস্থা পর্যালোচনা করলে এই একটিমাত্র রেওয়ায়েতের মোকাবিলায় অসংখ্য রেওয়ায়াতকে কেমন করে প্রত্যাখ্যান করা যায়? (তরজমানুল কুরআন, নভেম্বর, ১৯৫৪ ইং)
খতমে নবুয়াতক প্রসঙ্গ
প্রশ্ন: এতে সন্দেহ নেই, মুসলমানদের সর্বসম্মত আকীদা হচ্ছে মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে নতুন কোনো নবী আসবে না। তা সত্ত্বেও মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে এবং কাদিয়ানী জামাতের কোনো কোনো বক্তব্য আমার কাছে ভাল মনে হয়।
যেমন, মির্জা সাহেবের মুখমণ্ডল আমার দৃষ্টিতে নিষ্পাপ এবং শিশুদের মতো দেখায়। একজন মিথ্যা প্রতারক ব্যক্তির মুখমণ্ডল কি এমনটি হতে পারে? আসমানী বিয়ে ব্যতীত তার প্রায় সকল ভবিষ্যত বাণীই বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। তাঁর দলও দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং তাদের মধ্যে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিরাট জজবা এবং ত্যাগ ও কুরবানী পরিলক্ষিত হয়।
এসব জিনিস আমাকে ভাবনায় ফেলেছে। আমি চাই আমার হৃদয় মনকে আশ্বস্ত করার জন্য এ বিষয়ে আপনি আমাকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলুন, যাতে করে আমার ভাবনা ও পেরেশানি দূর হয় এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য উন্মোচিত হয়ে যায়।
জবাব: মির্জা গোলাম আহমদের ব্যাপারে যে কারণগুলো আপনাকে ভাবিয়ে তুলেছে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোর মৌলিক কোনো গুরুত্ব নেই। আর একজন নবী হবার দাবীদারের দাবীকেও এসব জিনিসের ভিত্তিতে কখনো যাচাই-বাছাই করা যেতে পারে না। কিন্তু তার দাবীকে চিন্তাযোগ্য মনে করার জন্যে এর চাইতে মজবুত কারণ বর্তমান থাকলেও তা ভ্রুক্ষেপযোগ্য ছিল না। এর কারণ হলো, কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ উভয়ের দৃষ্টিতে নবুয়ত দীনের একটি মৌলিক বিষয়। অর্থাৎ মানুষের ঈমান ও কুফরীর ভিত্তি এরই ওপর স্থাপিত এবং এরই ভিত্তিতে তার আখেরাতে সাফল্য ও ব্যর্থতার ফায়সালা হবে। কোনো সাচ্চা নবীকে না মানলে মানুষ কাফের হয়ে যাবে। আবার মিথ্যা নবীকে মেনে নিলেও কাফের হয়ে যাবে। এই ধরনের মৌলিক গুরুত্বের অধিকারী কোনো বিষয়কে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা) কখনো অস্পষ্ট, জটিল ও সন্দেহযুক্ত করে রাখেননি। বরং এ ব্যাপারে আল্লাহ ও রসূল (সা) সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন পদ্ধতিতে পথ দেখিয়েছেন। মানুষের দীন ও ঈমান যাতে বিপদগ্রস্ত না হয় এবং তার গোমরাহীর জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা) দায়ী না হন এর ব্যবস্থা তাঁরা আগেই করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আরো একটি প্রণিধানযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ (সা)-এর আগে কখনো কোনো নবীর যুগে এ কথা বলা হয়নি যে, নবুয়াদের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে গেছে আর কোনো নবী আসবেন না। এর অর্থ হচ্ছে, নবীদের আসার দরজা তখন খোলা ছিল এবংতখন আর কোনো নবী আসবেন না এ কথা বলে কোনো ব্যক্তি কোনো নবুয়াদের দাবীদারের দাবী অস্বীকার করর অধিকার রাখতো না। আবার সে যুগে নবীগণ তাঁদের পরবর্তীকালে আগমনকারী নবীদের আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে থাকতেন। তাঁরা নিজেদের অনুসারীদের নিকট থেকে পরবর্তীকালে আগমনকারী নবীদের আনুগত্য করার শপথ নিতেন। এসব কার্যক্রমও কথাটিকে আরো শক্তিশালী করতো যে, কোনো ব্যক্তি নিজেকে নবী হিসেবে পেশ করলে কোনো প্রকর ভাবনা-চিন্তা না করে এক কথায় তাকে নাকচ করা চলতো না। বরং তার দাওয়াত, ব্যক্তিত্ব, কার্যাবলী ও অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তিনি যথার্থ আল্লাহর নবী না মিথ্যা নবুয়াতের দাবীদার তা জানার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা)-এর আগমনের পর এ ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। েএখন ব্যাপারটি শুধু এখানেই শেষ হয়ে যায়নি যে, মুহাম্মদ (সা) তাঁর পরে আর কোনো নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেননি এবং উম্মতের কিনট থেকে তার প্রতি আনুগত্যের শপথও নেননি, বর্র বিপরীত পক্ষে কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, মুহাম্মদ (সা) শেষ নবী এবং তিনি একটু দু’টা নয়, অসংখ্য নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হাদীসে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যার্থহীন ভাষায় এ কথা বলে দিয়েছেন যে, তাঁর পরে নবুয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, এখন আর কোনো নবী আসবেন না। এখন যে নবুয়াতের দাবী নিয়ে দাঁড়াবে সে হবে দাজ্জাল। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর নবীর দৃষ্টিতে কি বর্তমান মানুষের ইসলাম ও কুফরীর ব্যাপারটি নাজুক ও গুরুত্বপূর্ণ নয়? রসূলুল্লাহ (সা)-এর পরবর্তী মুমিনগণই কি শুধুমাত্র কুফরীর ফিতনা থেকে বাঁচার অধিকারী ছিল? এ জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণ কি শুধু তাদেরকেই নবুয়াতের দরজা খোলা থাকার এবং নবীদের আগমনের সিলসিলা জারি থাকার কথা দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে জানাবার ব্যবস্থা করেছিলেন? কিন্তু এখন তাঁরা জেনে-বুঝেই কি আমাদেরকে এ বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন? অর্থাৎ একদিকে থাকছে নবী আসার সম্ভাবনা, যাকে মানা না মানার কারণে আমরা ঈমানদার বা কাফের হয়ে যেতে পারি। আবার অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল কেবল নবীর আগমনের খবর থেকে আমাদেরকে অনবহিত রেখেই ক্ষান্ত হননি, বরং এর থেকেও এগিয়ে এসে তাঁরা অনবরত এমন সব কথা বলে যাচ্ছেন যার ফলে আমরা মনে করছি নবুয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে এবং এজন্যে নবুয়াতের দাবীদারকে মেনে নিতে পারছি না। আপনাদের বিবেক-বুদ্ধি সত্যিই কি এ কথা বলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা) আমাদের সাথে এ ধরনের প্রতারণা করতে পারেন?
কাদিয়ানীরা ‘খাতামান নাবিয়্যীন’ শব্দের ব্যাখা যা খুশী করতে পারে। কিন্তু কমপক্ষে এতটুকু কথা তো তারা অস্বীকার করতে পারবে না যে, নবুয়াতের সিলসিলা খতম করাও এর অর্থ হতে পারে এবং উম্মতের ওলামা ও জনগণের কোটির মধ্যে নিরানব্বই লক্ষ্য নিরানব্বই হাজার নয় শ’ নিরানব্বই জন এ শব্দের এই অর্থ করে। প্রশ্ন হচ্ছে, নবুয়াতের মতো এমন একটি নাজুক বিষয়ে, যার ওপর মুসলমানদের ঈমান ও কুফরী নির্ভর করে, আল্লাহর কি এমন একটি ভাষা ব্যবহার করা উচিত ছিল, যা থেকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন কাদিয়ানী ছাড়া সমগ্র উম্মতে মুহাম্মদী এই মনে করেছে যে, এখন আর কোনো নবী আসবেন না? আর নবী মুহাম্মদ (সা)-এর উক্তিগুলো তো এ ব্যাপারে কোনো প্রকার ভিন্নতর ব্রাখ্রার অবকাশই রাখে না। এ উক্তিগুলোতে দ্ব্যার্থহীনভাবে এ কথা ব্যক্ত করা হয়েছে যে, তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর নবীর কি আমাদের সাথে এমন কোনো শত্রুতা ছিল যার জন্যে তাঁর পরে নবী আসবেন অথচ তিনি উল্টো আমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়ে গেলেন যাতে করে আমরা তাকে না মানি এবং কাফের হয়ে জাহানানামে চলে যাই?
এ অবস্থায় কোনো ব্যক্তি যতই আকর্ষণীয় চেহারা-সুরাতের অধিকারী হোক না কেন, তার ভবিষ্যদ্বাণী শতকরা একশো ভাগ সত্যি প্রমাণিত হলেও এবং তার হাজারো কৃতিত্ব সত্ত্বেও আমরা তার নবুয়াতের দাবীকে বিবেচনাযোগ্যই মনে করি না। কারণ নবী আসার সম্ভাবনা থাকলে তবেই তো এটা বিবেচনাযোগ্য হতো। আমরা তো প্রত্যেক নবুয়াতের দাবীদারের কথা শুনামাত্রই পূর্ণ নিশ্চিন্ততার সাথে তাকে মিথ্যুক অভিহিত করবো এবং নবুয়াতের সপক্ষে আনা তার যুক্তি-প্রমাণের ওপর কোনোই গুরুত্বারোপ করবো না। এটা যদি কুফরী হয়ে থাকে তাহলে এর কোনো দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তাবে না। কারণ কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সাফাই পেশ করার জন্যে আমাদের কাছে কুরআন ও রসূলের হাদীস রয়ে গেছে। [উদাহরণস্বরূপ নবী পাকের সেইবাণীটি দেখুন, যাতে তিনি নবুয়াতের ধারাবাকিতাকে একটা অট্টালিকার সাথে তুলনা করেছেন। প্রত্যেক নবীকে সেই অট্টালিকার একটি ইট বলে আখ্যায়িত করেছেন। অবশেষে বলেছেন, অট্টালিকায় এখন একটিমাত্র ইট স্থাপনের জায়গা বাকী ছিলো আর “সেই সর্বশেষ ইটটি হলাম আমি।”] তরজমানুল কুরআন, ডিসেম্বর, ১৯৫৯ ইং)।
খতমে নবুয়াত সম্পর্কে জানতে হলে পড়ুন আমাদের প্রকাশিত-
১. সুরা আল আহযাবের পরিষিষ্ট (তাফহীমুল কুরআন, ১২শ খণ্ড)
২. সীরাতে সরওয়ারে আলম
-সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী
৩. খতমে নবুয়াত
-সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী
সমাপ্ত