চারিত্রিক দোষত্রুটি অধ্যায়
অহংকার
অহংকার এবং সৌন্দর্য চর্চা দুটি পৃথক জিনিসঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- ইয়াদখুলু- প্রবেশ করবে না। (আরবী) মিসকাল যাবরাতিন- কণা পরিমাণ। (আরবী) কিবরুন- অহংকার। (আরবী) ইউহিব্বু- পছন্দ করে, ভালবাসে। (আরবী)হাসানান- সুন্দর। (আরবী) আলজামালু- সুন্দর।(আরবী) বাতরুল হাককি- অহংকারের অর্থ হলো আল্লাহর ইবাদতের হক আদায় করা।(আরবী) গামতুন্নাসি- আল্লাহর বান্দাদেরকে হেয় মনে করা।
২৩৬।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার অন্তরে কনা পরিমানও অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি প্রম্ন করলো, মানুষ চায় তার কাপড় চোপড় জুতা মোজা সুন্দর হোক। তাহলে এটাও কি অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। এ মানসিকতা পোষণকারীও কি জান্নাত হতে বঞ্চিত থাকবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না এটা অহংকার নয়। আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকারের অর্থ হলো আল্লাহর ইবাদতের হক আদায় না করা এবং তার বান্দাদেরকে হেয় মনে করা।–মুসলিম
অহংকারীর পরিণামঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলজাওয়াযু- অহংকারী। (আরবী)আলজাযারীইউ- অহংকারের মিথ্যা ভানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ মূল হাদীসে (আরবী) এবং (আরবী) শব্দদুটো ব্যবহৃত হয়েছে।(আরবী) শব্দের অর্থ অহংকারী, দাম্ভিকতা সহকারে চলাফেরাকারী, দুশ্চরিত্র, অসৎ সম্পদ সঞ্চয়কারী এবং কৃপণ। (আরবী) এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যার নিকট দম্ভ করার মতো কিছু নেই বটে। কিন্তু মানুষের নিকট নিজেকে অগাধ ধন সম্পদের অধিকারী বলে দাবী করে বেড়ায়।একথা কেবল ধন – দৌলতের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়। বরং তাকওয়া, পরহেজগারী এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতেও অহংকারী এবং মিথ্যা জ্ঞানের ভানকারী দেখা যায়।
অহংকারের চিহ্ন বর্ণাঢ্য পোশাকঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আযরাতুল মুমিনি-মুমিনের পরিধেয় বস্ত্র্।(আরবী) আনসাফি সাকাইহি- দুই পায়ের নলার মাঝামাঝি। (আরবী) আলকা বাইনি উভয় টাখনুর গিরা।(আরবী) বাতরান- আহংকারবশত।
৩৩৮।আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মুমিনের পরিধেয় বস্ত্র পায়ের নলার মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রলম্বিত থাকে। যদি তার নীচে এবং টাখনু গিরার উপরে থাকে তাহলেও কোন দোষ নেই। আর যদি টাগনু গিরার নীচে যায় তাহলে তা হবে জাহান্নামীর কাজ( গুনাহের কাজ)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা তিনবার বলেলেন। যাতে সকলের নিকট এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি কিয়ামতের দিন তাকাবেন না, যে অহংকার করে ভূমি স্পর্শকারী পোশাক পরিধান করে।– আবু দাউদ।
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) জাররা- টেনে চলে। (আরবী) খুয়ালাআ- অহংকার করে।(আরবী***)লা-ইয়ানযুরুল্লাহ- আল্লাহ দেখবেন না। (আরবী) ইযাবী- আমার লুঙ্গি। (আরবী) ইয়াসতারখী – ঢিলা হয়ে যায়।(আরবী) আন আতাআহাদাহু- আমার অনিচ্ছায়। (আরবী) ইন্নাকা লাসতা- নিশ্চয়ই আপনি নন।
২৩৯।আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকার ভরে নিজের পরিধেয় বস্ত্র (লুঙ্গি, প্যান্ট বা জামা) মাটির উপর দিয়ে টেনে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি তাকাবেন না(রহমতের দৃষ্টি দেবেন না।)আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, আমার লঙ্গি অসতর্ক অবস্থায় ঢিলা হয়ে পায়ের গিরার নীচে চলে যায় ডদি আমি তা ভালভাবে বেঁধে না রাখি। এ ক্ষেত্রেও কি আমি আমার প্রতিপালকের রহমতের দৃষ্টি হতে বঞ্চিত থাকবো?রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা অহংকার করে এরুপ করে তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত নও।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর লঙ্গি ঢিলা হওয়ার কারণ এ ছিলনা যে, তার পেট মোটা হয়ে গিয়েছিল বরং তার দেহ হালকা পাতলা হবার দরুন লুঙ্গি ঢিলা হয়ে যেতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যে ব্যক্তি অহমিকার কারণে গোড়ালীর নীচ পর্যন্ত লুঙ্গি বা পায়জামা ছেড়ে দেয় সে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হবে। আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু গোটা বক্তব্যই শুনেছিলেন এবং একথাও জানতেন, তাঁর কাপড় অহমিকার করণে গোড়ালীর নীচে যেতো না। কিন্তু যখন কোন ব্যূক্তির উপর পরকালীন মুক্তির চিন্তা প্রাধান্য বিস্তার করে তখন তিনি সামান্যতম গুনাহের সম্ভাবনা হতেও দূরে থাকেন। তাই তিনি এ ব্যাপারে মহানবীকে জিজ্ঞেস করে সন্দেহমুক্ত হলেন।
খাওয়া পরার অহংকার ও অপব্যয়ঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কুল – তুমি খাও।(আরবী) মা শিতা – তুমি যা চাও। (আরবী) আলবিস- তুমি পরো। (আরবী) সারাফুন- অপব্যয়। (আরবী) মাখীলাতুন- অহংকার।
২৪০। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা যা ইচ্ছা খাও এবং যা ইচ্ছা পরো কিন্তু অহংকার ও অপব্যায় করবে না। – বুখারী।
যুলুম ও নিপীড়ন
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আযযুলমু-অত্যাচার। (আরবী) যুলুমাতিন- অন্ধকার।(আরবী) ইয়াওমাল কিয়ামাতি- কিয়ামতের দিন।
২৪১।আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অত্যাচার ও নিপীড়ন কিয়ামতের দিন অত্যাচারীর জন্যে ভয়ানক অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।– বুখারী
অত্যাচারীকে সাহায্য করা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিলঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সামিআ – সে শুনেছে। (আরবী) মান মাশা – যে চলে। (আরবী) মাআ যালিমিন- যালেমের সাথে।(আরবী) লিইউকাওয়িযাহু- তার শক্তি বৃদ্ধির জন্য। (আরবী) ফাকাদ খারাজা- সে অবশ্যই বের হয়ে গেছে।
২৪২।আউস ইবন শুরাহবীল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে কোন যালিম ব্যক্তিকে সাহায্য ও সহযোগিতা করলো সে নিঃসন্দেহে দ্বীন হতে বেরিয়ে গেলো।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ মূল কথঅ হলো, জেনে শুনে কোন অত্যাচারী ও যালিমকে সাহায্য- সহযোগীতা করা ঈমান ও ইসলামের পরিপন্থী কাজ।
প্রকৃত কাংগালঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতাদরুনা- তোমরা কি জান? (আরবী) মালমুফলিসু- কাংগাল কে? (আরবী) মান লা- দিরহামা লাহু ওয়া লা মাতাউন – যার অর্থ সম্পদ নাই। (আরবী**) মিন উম্মাতী- আমার উম্মত থেকে । (আরবী) মাইইয়াতী- যে আসবে। (আরবী) কাদ শাতামা হাযা – নিমস্চয়ই সে একে গালি দিয়েছে। (আরবী) কাযাফা হাযা – একে অপবাদ দিয়েছে। (আরবী) সাফাফা দামা হাযা একে হত্যা করেছে। (আরবী) ফাইউতা হাযা – একে দেয়া হবে।(আরবী) মিন খাতায়াহুম- তাদের গুনাহখাতা হতে। (আরবী) ফাতুরিহাত আলাইহি- অতপর তার ওপর চেপে দেয়া হবে। (আরবী) সুম্মা তুরিহা- তারপর ফেলে দেয়া হবে।
২৪৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জানো কাংগাল কে? লোকেরা বললো, আমাদের মধ্যে সেই কাংগাল যার পয়সা ও ধনসম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে ব্যক্তিই প্রকৃত কাংগাল যে কিয়ামতের দিন সালাত, সওম এবং যাকাত সহ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে এবং তারই সাথে সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়ে থাকব্ েকাউকে হয় তো মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকবে। কারো মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষন করে থাকবে কাউকে হত্যা করে থাকবে। অথবা কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করে থাকবে। ফলে এসব মাযলুমের মধ্যে তার সব নেক আমলগুলো বন্টন করে দেয়া হবে। এভাবে যদি মাযলুমদের পাওনা পরিশেোধের পূ্র্বে তার সকল নেক আমল শেষ হয়ে যায়। তাহলে তাদের গুনাহসমূহ তার ভাগে ফেলে দিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।–মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ েএ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মানুষের অধিকারসমূহের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। সূতরাং আল্লাহর হক আদায়কারীকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো তার দ্বারা কোন ব্যক্তির হক বিনষ্ট না হয়।অন্যথায় এসব সালাত, সওম, যাকাত এবং অন্যান্য নেক আমল বেকার হয়ে যাবে।
মযলুমের ফরিয়াদঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়্যাকা- বেঁচে থাকা, সতর্ক থাকা। (আরবী) ওয়া দাওয়াতাল মাযলূমি- মাযলুমের ফরিয়াদ থেকে। (আরবী) ইয়াসআলু- সে কামনা করে, সে চায়। (আরবী) হাকাকাহু – তার অধিকার। (আরবী) লা- ইয়ামনাউ- তিনি বঞ্চিত করেন না।
২৪৪। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মযলুমের ফরিয়াদ হতে বেঁচে থেকো। কেননা মযলুম আল্লাহর নিকট তার অধিকার কামনা করে থাকে। আর আল্লাহ কোন হকদারকে তার অধিকার হতে বঞ্চিত করেন না।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে মাযলুমের আর্তনাদ হতে বেঁচে থাকার কথা বলা হয়েছে। মযলুম ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে তোমাদের অত্যাচারের হৃদয়বিদারক কাহিনী বর্ণনা করেন। আর আল্লাহ হলেন ন্যায়পরায়ন ও সুবিচারক। যেহেতু আল্লাহ কোন হকদারকে তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেন না। তাই তিনি যালিমকে নানাবিধ বিপদের আপদে এবং অস্থিরতায় নিমজ্জিত রাখেন।
ক্রোধ
ক্রোধের নিয়ন্ত্রনঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাইসাশশাদীদু- শক্তিশালী নয়।(আরবী) বিসসুরআতি- কুস্তি। (আরবী) ইয়ামলিকু নাফসাহু- নিজেকে সংযত রাখতে পারে।(আরবী) ইনদাল গাযাবি- ক্রোধের সময়।
২৪৫।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয় যে কুস্তিতে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে পারে। বরং প্রকৃতপক্ষে শক্তিশালী সেই ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে। অর্থাৎ ক্রোধান্বিত হয়ে এমন কিছু না করে বসে যা আল্লাহ ও তার রাসূল অপছন্দ করেন।–বুখারী
ক্রোধের প্রতিকারঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী*) আলগাযাবু- ক্রোধ, রাগ। (আরবী) মিনাশশাইতানি- শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। (আরবী) খুলিকা- সৃষ্টি করা হয়েছে। (আরবী) মিন্নারি- আগুন থেকে। (আরবী) তুতফাউ- নিবে থাকে। (আরবী) বিলমায়ি- পানির দ্বারা। (আরবী) ফালইয়াতাওয়াযুযা- সে যেন উযু করে।
২৪৬।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রোধ হলো শয়তানী কুমন্ত্রনার ফল এবং শয়তান আগুন হতে সৃষ্ট।আর আগুন একমাত্র পানি দ্বারাই নিবে থাকে। অতএব যে ব্যক্তির ক্রোধের উদ্রেক হয় সে যেনো অবশ্যই অযু করে নেয়।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীসে যে ক্রোধকে শয়তানী প্রভাব বলা হয়েছে তা হলো ব্যক্তিগত কারণে সৃষ্ট ক্রোধ। কিন্তু দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে মুমিনের অন্তরে যে ক্রোধের উদ্রেক হয় তা হলো এক বিশেষ গুণ। যদি কেউ দ্বীনের ক্ষতি সাধনে তৎপর হয় সে ক্ষেত্রে মুমিনের অন্তরে ক্রোধের অগ্নিশিলা প্রজ্বলিত না হওয়া ঈমানের দুর্বলতার পরিচায়ক।
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইযা গাযিবা- যখন ক্রোধান্বিত হয়।(আরবী) ফালইয়াজলিস- সে যেনো বসে পড়ে। (আরবী) ওয়া ইল্লা- নতুবা। (আরবী) ফালইয়াদ্বতাজি- শুয়ে পড়ে।
২৪৭।আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,দন্ডায়মান অবস্থায় যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির ক্রোধের উদ্রেক হয় তাহলে সে যেনো বসে পড়ে। এ পন্থায় যদি ক্রোধ দূরীভূত হয় তা হলে তো উত্তম।অন্যথায় শুয়ে পড়বে।– মিশকাত।
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস এবং উপরে বর্ণিত হাদীসে ক্রোধ নিবারণের যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, অভিজ্থায় একথা নিতান্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিশোধের শক্তি থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়ার পুরস্কারঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আআযযু- অধিক প্রিয়। (আরবী) ইন্দাকা- আপনার নিকট। (আরবী) কাদিরা – প্রতিশোধ শক্তি থাকা সত্ত্বেও। (আরবী) গাফারা- ক্ষমা করে।
২৪৮। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকটে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট আপনার কোন বান্দা অধিক প্রিয়? আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিশোধ শক্তি থাকা সত্বেও ক্ষমা করে দেয়।– মিশকাত।
ক্রোধ ও বাক নিয়ন্ত্রনঃ
(আরবী) শব্দের অর্থ ঃ (আরবী) খাযানা- সংযত রাখবে। (আরবী) লিসানাহু- তার জিবাকে। (আরবী) সাতারা –স তিনি ঢেকে রাখবেন। (আরবী) আওরাতাহু – তার দোষ- ত্রুটি। (আরবী) কাফফা- নিয়ন্ত্রন করবে। (আরবী) ইতাযারা – ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (আরবী) কাবিলা- কবুল করবেন। (আরবী) উযরাহু- তার আপত্তি।
২৪৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাষূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের জিহবাকে সংযত রাখবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ ত্রুটির উপর আবরণ ফেলে দেবেন। আর যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রন করবে। আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার উপর হতে আযাব সরিযে নিবেন। আর যে ব্যক্তিআল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।– মিশকাত।
মুমিনের চারিত্রিক গুণাবলীঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আখলাকুন- চরিত্র। (আরবী) বাতিলুন- অন্যায়।(আরবী) রাযিয়া- রাজি হয়। (আরবী) রিযাহু- তার সন্তুষ্টি। (আরবী) হাককুন – ন্যায়। (আরবী) কাদারা – ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও। (আরবী) লাম ইয়াতাআর্তি- হস্তক্ষেপ করে না।
২৫০। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বস্তু মুমিনের চারিত্রিক গুণাবলীর অন্তর্ভূক্ত। একটি হলে ক্রোধ তার দ্বারা কোন অবৈধ ও অন্যায় কাজ করাতে পারে না। দ্বিতীয় হলো, যখন সে খুশী হয় তখন খুশী তাকে হকের সীমা লংঘন করতে দেয় না। আর তৃতীয়টি হলো, অপরের জিনিস, যার উপর তার কোন অধিকার নেই, ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাতে হস্তক্ষেপ করে না। – মিশকাত
রাসূলের উপদেশ- রাগ করো নাঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আওসিনী- আমাকে উপদেশ দিন।(আরবী) লা- তাগযাব- রাগ করো না। (আরবী) ফারাদ্দাদা- বারবার বললেন। (আরবী) মিরারান- কয়েকবার।
২৫১।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (সে সম্ভবত উগ্র মেযাজের ছিলো।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিছু উপদেশ দানের জন্যে অনুরোধ জানালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগ করো না।সে ব্যক্তি উপদেশ দানের কথা বারবার বলতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকবার একই কথা বললেন, রাগ করো না। – বুখারী
কারো কথা ব্যাঙ্গার্থে নকল করাঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মা- উহিব্বু- অমি পসন্দ করি না। (আরবী) আন্নি- নিশ্চয়ই আমি। (আরবী) হাকাইতু- আমি নকল করবো। (আরবী) আহাদান- কারো। (আরবী) কাজা ওয়া কাজা- এতো, এতো।
২৫২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ব্যঙ্গ করার জন্যে কারো কথা নকল করা আমি মোটেই পছন্দ করি না। তার বিনিময়ে যদি আমার প্রচুর ধন সম্পত্তিও লাভ হয়।– তিরমিযি
অপরের বিপদের খুশি হওয়াঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- তাযহার- প্রকাশ কর না। (আরবী) আশশামাতাতু- আনন্দ প্রকাশ করো না। (আরবী) লিআখীকা- তোমার ভাইয়ের জন্য। (আরবী) ইয়াবতালীকা- তিনি তোমাকে বিপদে ফেলেদেবেন।
২৫৩।ওয়াসেলা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি তোমার ভাইয়ের বিপদ দেখে আনন্দ প্রকাশ করো না। তাহলে আল্লাহ তার উপর করুণা করবেন এবং বিপদ দূর করে দেবেন। তোমাকে বিপদে ফেলে দেবেন।– মিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ দু ব্যক্তির মধ্যে শত্রুতা থাকলে এবং এক জনের উপর কোন বিপদ দেখা দিলে অপর ব্যক্তি স্বভাবত খুবই খুশী হয় এটা ইসলামী চিন্তাধারার পরিপন্থি। মুমিন ব্যক্তি তার ভাইয়ের বিপদে আনন্দ প্রকাশ করতে পারে না।ল যদি উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যও বিরাজ করে।
মিথ্যা
মিথ্যা এবং কপটতাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মুনাফিকান- মুনাফিক। (আরবী) খালিসান- খাঁটি, পাক্কা। (আরবী) খাসলাতুন- অভ্যাস। (আরবী) ইয়াদাআহা- তা ত্যাগ করে। (আরবী) উতিমিনা- আমানত রাখা হয়।(আরবী) খানা- খিয়ানত করে। (আরবী) হাদ্দাসা- কথা বলে। (আরবী) কাযিবা- মিথ্যা বলে। (মিথ্যা বলে।(আরবী) ইযা ওয়াআদা- যখন ওয়াদা করে।(আরবী) আখলাফা- ভঙ্গ করে। (আরবী) ইযা খাসামা- যখন ঝগড়া করে। (আরবী) ফাজারা- গালি গালাজ করে।
২৫৪। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন। যার মধ্যে চারটি খাসলাত আছে সে পাক্কা মুনাফিক। আর যার মধ্যে উক্ত অভ্যাসগুলির কোন একটি থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি অভ্যাস আছে বলে বিবেচিত হবে। অভ্যাসগুলো হলোঃ(১) তার কাছে কোন আমানাত রাখলে তা খিয়ানত করে। (২) যখন কথাবার্তা বলে মিথ্যা বলে।(৩) ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে।(৪) আর যখন কারো সাথে ঝগড়া করে, গালি গালাজ করে।– বুখারী, মুসলিম
সবচেয়ে বড় মিথ্যাঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আফরাল ফিরা- সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা।(আরবী) আন – ইউরিয়ার রাজুলু- মানুষ দেখেছে। (আরবী) আইনাইহি – তার চোখ। (আরবী) মালাম তারা –যা সে দেখেনি।
২৫৫। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো, মানুষ তার দুচোখকে এমন জিনিস দেখাবে যা এ দুটো চোখ দেখেনি।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ সে স্বপ্নে তো কিছুই দেখেনি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে যতো সব আজগুবি ও কল্পিত কাহিনী শনিয়ে থাকে এবং বলে আমি স্বপ্নে এসব দেখেছি। এরুপ করা চোখ দ্বারা মিথ্যা বলানোর শামিল।
মিথ্যা বাহানাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) যাফফানা- আমরা কন্যার যাত্রী হিসেবে গেলাম। (আরবী) বা দ্বা নিসায়িহি- তাঁর কোন স্ত্রীর।(আরবী) আখরাজা- তিনি বের করলেন। (আরবী) ইসসান- এক পেয়ালা। (আরবী) নাওয়ালাহু- তা দিলেন। (আরবী) ইমরাআহাহু- তাঁর বিবিকে(আরবী) লা- আশতাহীহি- আমার খেতে ইচ্ছে করে না। (আরবী) লা- তাজমায়ী- একত্রিত করো না। (আরবী) জাওয়ান- ক্ষুধা।
২৫৬।আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের এক নবপরিণিতা স্ত্রীকে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলাম। আমরা মহানবীর ঘরে প্রবেশ করার পর তিনি এক পেয়ালা দুধ বের করলেন। তা থেকে কিছু দুধ পান করার পর বাকীটুকু তাঁর স্ত্রীকে পান করতে দিলেন। নবপরিণীতা বললেন, আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তুমি ক্ষুধা এবং মিথ্যাকে একত্রিত করো না।– মু জামে সাগিরে তিবরানী
ব্যাখ্যাঃ মহানবী স. উপলব্ধি করেছিলেন তাঁর ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু লজ্জার কারণে মিথ্যা বাহানা করছে। এ জন্যে এরুপ মিথ্যা বাহানা করা হতে নিষেধ করলেন।
মারাত্ন্যক বিশ্বাসঘাতকতাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কাবুরাত খিয়ানাতান- সবচেয়ে বিশ্বাসঘাতকতা। (আরবী) তুহাদ্দিসু- তুমি বলবে।(আরবী) মুসাদ্দিকুন- সত্যবাদি। (আরবী) কাযিবুন- মিথ্যাবাদী।
২৫৭। সুফিয়ান ইবনে উসাইদ আল হাদরামী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। সবচেয়ে মারাত্নক বিশ্বাসঘাতকতা বা খিয়ানত হলো তুমি তোমার ভাইকে কোন কথা বলবে আর সে তোমার কথা বিশ্বাস করবে। অতচ তোমার কথা ছিলো মিথ্যা।–আবু দাউদ
ছোটদের সাথে মিথ্যা বলাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) দা আতনী- আমাকে ডাকলো। (আরবী) কায়িদুন- উপস্থিত। (আরবী) ফি বাইতিনা- আমাদের বাড়ির। (আরবী) হা তা আলি- হে আসো। (আরবী) উতীকা- আমি তোমাকে দিবো। (আরবী) মা- আরাদতু তুমি কি ইচ্ছা করেছো। (আরবী) আন তু তীহি – তাকে দিতে। (আরবী) আম্মা- কিন্তু (আরবী) ইন্নাকা- নিশ্চয়ই তুমি। (আরবী) লাম তুতীহি- তাকে না দিতে। (আরবী) তুতিবাত- লিখা হতো। (আরবী) কাযিবাতুন- মিথ্যা।
২৫৮।আবুদল্লাহ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার আম্মা আমাকে ডাকলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়ীতে মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এদিকে এসো। আমি তোমাকে একটি জিনিস দেবো। এ সময় রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাও?আম্মা বললেন, আমি তাকে খেজুর দিতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে খেজুর দেবার জন্যে ডেকে এনে যদি না দিতে তাহলে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা রেকর্ড হযে যেতো।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো। সাধারণত পিতা মাতা ছোট সন্তানদের সাথে এরুপ ব্যবহার করে থাকে। তাদেরকে কিছু দেবার বাহানা করে ডেকে আনা হয়। কিন্তু তা তাকে দেয় না।আল্লাহর নিকট একাজ গুনাহ বলে গণ্য হয় এবং এগুলো আমলনামায় মিথ্যা হিসাবে লিখা হয়। অতএব এরুপ প্রতারণা এবং হালকা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হতে বিরত থাকা অপরিহায্যূ।
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (অরবী) লা- ইয়াসলাহু- ঠিক নয়।(আরবী) আরকাযিবু- মিথ্যা বলা।(আরবী) জাদ্দুন- স্বাভাবিক অবস্থা। (আরবী) হাযলুন- তামাসাচ্ছলে। (আরবী) আই ইয়ায়িদা- ওয়াদা করা। (আরবী) আহাদুকুম- তোমাদের কেউ। (আরবী) লা- ইউনজিয লাহু- তা পূরণ করবে না।
২৫৯।আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলা ঠিক নয়।না স্বাভাবিক অবস্থায় আর না হাসি তামাসাচ্ছলে। আর নিজ সন্তানকে কিছু ওয়াদা করে তা না দেয়া তোমাদের কারো জন্য জায়েয নয়।–আদাবুল মুফরাদ
হাসি- তামাসায় মিথ্যাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়াইলুন- ধ্বংস। (আরবী) ইউহাদ্দিসু- কথা বলে। (আরবী) ফাইয়াকযিবু- মিথ্যা বলে। (আরবী) লিইউদহিকা বিহি- এ দিয়ে হাসাবে। (আরবী)আলকওমা- লোকদেরকে।
২৬০। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধ্বংস, বিফলতা সে ব্যক্তির জন্যে, যে লোকদেরকে হাসাবার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। তার জন্যে রয়েছে ধ্বংস,তার জন্যে রয়েছে অমঙ্গল।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ িএ হাদীসে সে সব লোকদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যারা কোন মজলিসে গল্প করতে গিয়ে তা চমকপ্রদ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে থাকে।যেনো মজলিসের সৌন্দয্যূবৃদ্ধি পায়।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ মিথ্যা বলা হতে বেঁচে থঅকার জন্য হুশিয়ার করে দিয়েছেন।
জান্নাতের স্তরসমূহঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) যায়ীমুন- দায়িত্ব গ্রহণ করা। (আরবী)রাবযুল জান্নাতি- জান্নাতের সাধারণ কক্ষ(আরবী) ওয়াসাতুন- মধ্যম। (আরবী) আলা – উচ্চ শ্রেণী। (আরবী) হাসুনা খুলুকুহ- যার চরিত্র উত্তম।
২৬১।আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও বিতর্কে অবতীর্ণ না হয়। আমি তার জন্যে জান্নাতের সাধারণ কক্ষমূহের একটির দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। আর যে ব্যক্তি হাসি তামাসাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্যে জান্নাতের মধ্যস্তরেরিএকটি কক্ষের দায়িত্ব নিলাম।আর যে ব্যক্তি নিজ চরিত্রকে সুন্দর ও উত্তমরুপে গঠন করেছে, আমি তার জন্যে জান্নাতের উচু স্তরে একটি কক্ষের জিম্মা গ্রহণ করলাম।
অশ্লীল কথাবার্তাও মুখ খারাপ করাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আসকালু- আধিক ভারী। (আরবী)ইদাউ- রাখা হবে। (আরবী)ফী মীযানিল মুমিনি- মুমিনের পাল্লায়। (আরবী) খুলুকুন হাসানুন – উত্তম চরিত্র। (আরবী) ইউবগিযু- ঘৃণা করেন। (আরবী) আলফাহিশু- নির্লজ্জ। (আরবী) আলবাযীউ- অশ্লীলভাষী।
২৬২। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় যে জিনিসটি অধিক ভারী হবে তাহলো তার উত্তম চরিত্র। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশ্লীল ভাষী ও নির্লজ্জ ব্যক্তির প্রতি শত্রুতা পোষণ করেন।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ উত্তম চরিত্রের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক বলেনঃ (আরবী*****)
অর্থাৎ কারো সাথে সাক্ষাতের সময় হাসিমুখে কথা বলা, আল্লাহর অভাবী বান্দাদের জন্যে সম্পদ ব্যয় করা ও কাউকে কষ্ট না দেয়া। এসব জিনিস উত্তম চরিত্রের মধ্যে পরিগণিত।
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী***) আলফাহিশাতু- অশ্লীল ভাষা উচ্চারণকারী(আরবী) েইয়াশীউ- প্রচার করে।(আরবী) ফীল ইসমি- গুনাহর ব্যাপারে।(আরবী) সাওয়াউন-সমান।
২৬৩।আলী ইবনে আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অশ্লীল কথা উচ্চারণকারী এবং অশ্লীল কথা প্রচারকারী উভয়ই সমান গুনাহগার।–মিশকাত
দুমুখো নীতি
নিকৃষ্টতম স্বভাব
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তাজিদূনা- তোমরা পাবে। (আরবী) শাররান্নাসি- দুষ্ট লোক। (আরবী) যালওয়াজাহিাইনি- দুমোখো। (আরবী) ইয়াতী- আসে। (আরবী) হাউলায়ি- এদের কাছে। (আরবী) বিওয়াজহিন- একমুখে।
২৬৪।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তিকে নিকৃষ্টতম হিসেবে দেখতে পাবে যার চেহারা দুনিয়াতে ছিলো দুরকমের। কিছু লোকের সাথে এক চেহারা নিয়ে মিলিত হতো। আবার কিছু লোকের সাথে মিশতো অন্য চেহারায়।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ দু ব্যক্তি অথবা দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন কোন বিরোধ ও মনোমালিন্যের উদ্ভব ঘটে। তখন কিছু লোক সব স্থানেই পাওয়িা যায়। এরা উভয় পক্ষের নিকট উপস্থিত হয়ে তাদের কথায় সায় দেয়। তাদের পরস্পরের শত্রতার দুমুখো নীতি দ্বারা ঘুতাহুতি দিয়ে থাকে। এটা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ।
এমনিভাবে এমন কিছু লোক আছে যারা সম্মুখে গভীর সম্পর্ক ও হৃদ্যতার ভাব প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু অবর্তমানে তার সম্বন্ধে নিন্দা ও কুৎসা রটনা করে বেড়ায়।এরুপ আচরণ দুমুখো নীতির অন্তর্ভুক্ত।
আগুনের দুটি জিহবাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ফীদ্দুনইয়া- পৃথিবীতে।(আরবী) কানা লাহু- তার জন্য হবে। (আরবী) লিসানানি- দুই জিহবা। (আরবী) মিন নারিন- আগুনের।
২৬৫। আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দুমুখো নীতি অবলম্বন করবে কিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনেরদুটি জিহবা থাকবে।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ কিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের দুটি জিহবা থাকার কারণ, দুনিয়াতে তার দুমুখি কথার আগুনে দু ব্যক্তির পারস্পরিক সম্পর্কে বিন্ট করে দিতো। তাই কিয়ামাতের তার এই অবস্থা হবে।
পরনিন্দা ও মিথ্যা অপবাদের মধ্যে পার্থক্যঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতাদরুনা- তোমরা কি জানো? (আরবী) মালগীবাতু- গীবত কি? (আরবী) আলামু – অধিক জ্ঞাত। (আরবী) যিকরুকা- তোমার আলোচনা।(আরবী) আখাকা- তোমার ভাইয়ের (আরবী) বিমা ইয়াকরাহু- যা সে অপছন্দ করে। (আরবী) আফারাআতা- আপনার কি মত? (আরবী) মা- আকুলু- আমি যা বলি। (আরবী) মা তাকূলু- যা তুমি বল। (আরবী) ফাকাদ ইগতাতাহু- তবে তার গীবত করেছো। (আরবী) ফাকাদ বাহাততাহু- তবে তাকে অপবাদ দিয়োছো।
২৬৬।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত বা পরনিন্দা কি তা কি তোমরা জানো? লোকেরা উত্তরে বললো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, গীবত হলো, তুমি তোমার ভাইয়ের এমন সমালোচনা করবে যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। তাহলেও কি এটা গীবত হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলেই সেটা হবে গীবত বা পরনিন্দা। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে সে ক্ষেত্রে তা হবে মিথ্যা অপবাদ। শরীয়তে একে বুহতান বলা হয়।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ মুমিনের কোন দোষ- ত্রুটির প্রতি যদি শুভাকাংখীর দৃষ্টি নিয়ে ইঙ্গিত করা হয় তা হলে স্বভাবত সে খারাপ মনে করবে না। এমনিভাবে তার ত্রুটি সম্পর্কে তার দায়িত্বশীলদের অবহিত করলে তাও সে অপছন্দ করবে না। কেনোনা তার সংশোধনের জন্যে এটাও একটা পদ্ধতি। কিন্তু আপনি যদি তাকে সমাজের নিকট হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার অনুপস্থিতিতে দোষ ত্রুটি বর্ণনা করেন। তা হলে এটা তার জন্যে দুঃখও মনোকষ্টের কারণ হবে। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানী করে এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বিধান না মানে। সে ক্ষেত্রে তার দোষত্রুটি প্রকাশ করা গীবতের মধ্যে গণ্য হবে না। বরং তা হবে ড় সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এ কাজেরই উপদেশ দিযেছেন।
পরনিন্দা ব্যভিচার হতেও জঘণ্যঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলগীবাতু- গীবত, পরনিন্দা। (আরবী) আশাদ্দু- কঠিনতম, জঘণ্য। (আরবী) আররাজুলু- মানুষ। (আরবী) লাইয়াযনী- অবশ্যই ব্যভিচার করে। (আরবী) ফাইয়াতূবুল্লাহু- আল্লাহ তওবাহ কবুল করেন।(আরবী) লাইউগফারু লাহু- তাকে ক্ষমা করা হয়না। (আরবী) ইয়াগফিরুহা- তা ক্ষমা করে।
২৬৭।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত বা পরনিন্দা ব্যাভিচার হতেও জঘন্য অপরাধ। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল!গীবত ব্যাভিচার হতে অধিক জঘণ্য কি করে হতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর নিকট তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। কিন্তু গীবতকারী ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত সে ব্যক্তি, যার গীবত করা হয়েছে, ক্ষমা না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে মাফ করবেন না।– মিশকাত
গীবত বা পরনিন্দার ক্ষতিপূরণঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) কাফফারাতুন – ক্ষতিপূরণ। (আরবী**)আনতাস্তাগফিরা লাহুম- তুমি ক্ষমা চাইবে। (আরবী) লিমান ইগতাবিতাহু- তুমি যার গীবত করো।
২৬৮।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে গীবতের একটি ক্ষতিপূরণ হলো, তমি যার গীবত বা কুৎসা রটনা করেছো তার জন্যে মাগফেরাত কামনা করা। আর তার জন্য দোয়া এভাবে করবে যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ অপরের কুৎসা বর্ণনা করা জঘন্যতম অপরাধ। এরুপ গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণের উপায় হলো, যদি সে ব্যক্তি জীবিত থাকে এবং তার নিকট হতে মাফ করিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। সেক্ষেত্রে তার নিকট হতে মাফ করিয়ে নিতে হবে। আর যদি তার মৃত্যু হয় বা দূল এলাকায় চলে যাবার কারণে মায়ফ করানো সম্ভব না হয়। সে ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট তার গুনাহ মাফের জন্যে দোয়া করা ছাড়া এ গুনাহের ক্ষতিপূরণের বিকল্প কিছু নেই।
মৃত ব্যক্তির কুৎসা বর্ণনাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা তাসুব্বূ- গালমন্দ করো না। (আরবী) আলআমওয়াতা- মৃত ব্যক্তিকে। (আরবী) কাদ আফাদ্দু- তারা অবশ্যই পৌছে গেছে। (আরবী) মা কাদ্দামূ- তারা তাদের করা আমলপত্র পর্যন্ত পৌছে গেছে।
২৬৯।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মৃত ব্যক্তিকে গালমন্দ করো না। কেনেোনা তারা তাদের কৃত আমল পর্যন্ত পৌছে গেছে।– বুখারী
অন্যায়ের সমর্থন ও পক্ষপাতিত্ব করা
অপরের পার্থিব স্বার্থে নিজের পরকাল বরবাদ করাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মিন শাররিন্নাসি- নিকৃষ্ট লোকদের মধ্যে। (আরবী) মাযিলাতান- মর্যাদার দিক থেকে। (আরবী) আযহাবা-স বরবাদ করেছে। (আরবী) আখিরাতাহু- তার পরকাল। (আরবী) বিদুনিয়া গাইরিহি- অন্যের পার্থিব স্বার্থে।
২৭০।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী নিকৃষ্ট অবস্থায় পতিত হবে। যে ব্যক্তি অপরের জাগাতিক স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে নিজের আখেরাত বরবাদ করেছে।– মিশাকাত
গোত্রীয় পক্ষপাতিত্ব করাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সাআলতু- আমি জিজ্ঞেস করলাম। (আরবী) আলআসাবিত্যাতু- স্বগোত্রীয় লোকদের প্রতি ভালোবাসা। (আরবী) আইইউহিব্বার রাজুলু- মানুষ ভালোবাসবে, পছন্দ করবে। (আরবী) কাওমাহু- নিজ গোত্রকে।(আরবী) আই ইয়ানসুরা- সাহয্য করা। (আরবী) আলাযযুলমি- যুলুমের ক্ষেত্রে।
২৭১। আবু ফুসাইলা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্বগোত্রীয় লোকদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করা কি জাতীয়তাবাদের অন্তর্ভূক্ত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, জাতীয়তাবাদ হলো যুলুমের ক্ষেত্রে স্বীয় গোত্রকে সমর্থন করা। – মিশকাত
অন্যায় সমর্থনে ধ্বংস অনিবার্যঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মান নাসারা- সাহায্য করে। (আরবী) কাওমাহু- তার জাতিকে, তার গোত্রকে। (আরবী) গাইরল হাককি- অন্যায়ভাবে। (আরবী) কালবায়ীরি- উটের মতো। (আরবী) আল্লাযী রাদা- যে কুয়ায় পতিত হচ্ছে। (আরবী) ইয়ানযাউ- সে টানছে। (আরবী) বিযাম্বিহী- তার লেজ ধরে।
২৭২।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোন অবৈধ ব্যাপারে স্বজাতির সাহায্য করে তার দৃষ্টান্ত হলো, যেমন কোন উট কুয়ায় পতিত হচ্ছে আর সে ব্যক্তি তার লেজ ধরে আছে।ফলে সেও উটের সাথে কুয়ায় পতিত হলো।– আবু দাউদ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী*) আসাবিয়াতুন- যে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের দিকে মানুষকে ডাকে। (আরবী) কাতালা- কলহ, বিবাদ, যুদ্ধ।
২৭৩।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের দিকে মানুষকে ডাকে। আর ওই ব্যক্তিও আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না, যে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের আদর্শের উপর পক্ষপাত করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ জাতীয়তাবাদের অর্থ হলো, স্বীয় গোত্র ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হোক বা অন্যায়ের উপর, সর্বদা তার প্রতি অন্ধ সমর্থন জানানো। এ আদর্শের প্রতি লোকদের আহবান করা। একই আদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এবং এই চিন্তাধারার উপর মৃত্যুবরণ করা মুসলমানের কাজ নয়।
সম্মুখে অহেতুক প্রশংসার নিন্দাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) ইযা রাআইতুম- তোমরা যখন দেখবে। (আরবী) আলমাদ্দাহীনা- প্রশংসাকারীদের।(আরবী) ফাহসূ- নিক্ষেপ করবে।(আরবী) ফী উজুহিহিম- তার চেহারা। (আরবী) আততুরাবু- মাটি।
২৭৪।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কোন প্রশংসাকারীকে প্রশংসা করতে দেখলে, তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।–মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ প্রশংসাকারী দ্বারা তাদের বুঝানো হয়েছে যাদের পেশাই হলো প্রশংসা করা। এরা বখশিশ ও দক্ষিনা পাবার আশায় লোকের স্তুতি গানে ও প্রশংসায় আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলে। এ স্তুতি বাক্য গদ্য পদ্য সংগীতে হতে পারে। জাহেলী যুগ হতে শুরু করে সকল যুগে এ ধরনের লোক পাওয়া যায়।এ সকল লোকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যখন এরা বখশিশ ও দক্ষিণা লাভের উদ্দেশ্যে সত্য মিথ্যা কবিতা ও গানসহ আগমন করে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করো। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দাও।
মুখের উপর প্রশংসাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আসনা- সে প্রশংসা করে। (আরবী) ওয়াইলাকা- তোমার জন্য আফসোস। (আরবী) কাতাতা – কেটে ফেললে। (আরবী) উনুকা আখীকা- তোমরা ভাইয়ের গলা।(আরবী) সালাছানা- তিনবার।
২৭৫।আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতেই অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করলো। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বললেন, আফসূস। তুমি তোমার ভাইয়ের গলা কেটে ফেললে। একথা তিনি তিনবার বললেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কারো প্রশংসা করা জরুরী মনে করলে, সে যেনো বলে। আমি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে এরুপ ধারণা পোষণকরি। অবশ্য আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত আছেন। অর্থাৎ সে লোক সম্পর্কে আমার ধারণা সঠিক কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন। আর আল্লাহর মোকাবিলায় কারো প্রশংসা করবে না।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ সা. এর মজলিসে এক ব্যক্তির তাওয়া এবং তার স্বচ্ছতার প্রশংসা করা হয়েছিলো। বলা বাহুল্য, এ অবস্থায় মানুষের মানুষের মধ্যে রিয়ার ভাব জাগার সম্ভাবনা থাকে বিধায় রাসূলুল্লাহ সা. সম্মুখ প্রশংসা করা হতে নিষেধ করেন এবং বলেন, তমি তোমার ভাইকে ধ্বংস করলে। এরপর তিনি উপদেশ দেন যে, ডদি কারো সম্পর্কে কিছু বলতেই হয় তাহলে যেনো বলা হয়, আমি অমুক ব্যক্তিকে সৎ বলে জানি। এভাবে বলা ঠিক নয় যে, অমুক ব্যক্তি আল্লাহর ওলী অথবা অমুক নিঃসন্দেহে জান্নাতী। এরুপ নিশ্চয়তার সাথে কথা বলার অধিকার কারো নেই। কেনোনা যাকে সে জান্নাতী বলছে আল্লাহর দৃষ্টিতে সে জান্নাতী কিনা তার কোন প্রমান নেই।
মানুষের এ জাগতিক জীবন প্রকৃতপক্ষে ঈমানের পরীক্ষা কেন্দ্র। কখন মানুষের পদস্থলন ঘটে। সত্য পথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই কোন নেক্কার জীবিত লোক সম্পর্কে নিশ্চিত করে কোন রায় প্রদান করা উচিত নয়। এমনিভাবে মৃত্যুর পর কাউকে জান্নাতী বলাও অনুচিত।
এ ব্যাপারে আলেমদের অভিমত হলো। যদি কোন ব্যক্তির বিভ্রান্তিতে পতিত হবার আশংকা না থাকে এবং প্রসঙ্গক্রমে তার প্রশংসা এসে পড়ে। সে ক্ষেত্রে তাঁর সামনে তাঁর জ্ঞান ও তাকওয়ার প্রশংসা করা য়ায়। কিন্তু দুর্বল লোকের বেলায় এরুপ না করাই উত্তম।কেনোনা ফেতনা ও বিভ্রান্তিতে পতিত হওয়া না হওয়ার ফয়সালা আল্লাহর হাতে। কোন ব্যক্তির আভ্যন্তরিণ অবস্থা সম্পর্কে সাধারণত কোন সঠিক অনুমান করা সম্ভব হয় না।
ফাসেকের প্রশংসাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইযা মুদিহা – যখন প্রশংসা করা হয়।(আরবী) আলফাসিকু- ফাসিক ব্যক্তি। (আরবী) গাযিবার রাব্বু- আল্লাহ ক্রুদ্ধহন। (আরবী) ইহতাযযা-কাঁপে।
২৭৬।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যখন কোন ফাসেক ব্যক্তির প্রশংসা করা হয় তখন আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন। আর এ কারণে আরশ প্রকম্পিত হয়ে উঠে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ এর কারণ হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধি নিষেধের মরযাদা প্রদান করে না। বরং প্রকাশ্যভাবে তা লংঘন করে। সে ব্যক্তি মান মর্যাদা পাবার যোগ্য নয়। সে তো হেয় ও অমর্যদাকর ব্যবহার পাবার যোগ্য। যদি মুসলিমসমাজে এমন লোকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় তাহলে বুঝতে হবে এ সমাজের লোকদের মধ্যে আল্লাহ, রাসূল এবং দীনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা- ভালবাসা অবশিষ্ট নেই। আর যদি কিছু থেকেও থাকে তা খবুই ক্ষীণ ও দুর্বল। বলা বাহুল্য, এ অবস্থায় আল্লাহর ক্রোধ সঞ্চার হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এমন সমাজে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে না।
মিথ্যা সাক্ষ্য
মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এবং শিরক করা সমান গুনাহঃ
(আরবী*****) শব্দের অর্থঃ (আরবী) সালাতাসসুবিহি- ফজরের নামায। (আরবী) লাম্মা ইনসারাফা- মুখ ফিরালেন। (আরবী)কামা কায়িশান-সোজা উঠে দাঁড়ালেন। (আরবী) উদিলাত- সম পর্যায়ের। (আরবী)শাহাদাতুযযূরি- মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। (আরবী) বিলইশরাকি বিল্লাহি – আল্লাহর সাথে শিরক করা। (আরবী) সালাসা মাররাতিন- তিনবার। অর্থাৎ একথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। (আরবী ) সুম্মা কারাআ- অতপর পড়লেন। (আরবী) ফাজতানিবু- দূরে থাকো। (আরবী) আররিজসা- অপবিত্রতা। (আরবী) আলআওসানি- মূর্তিসমূহ। (আরবী) কাওলাযযুরি- মিথ্যা বলা।(আরবী) হুনাফায়া- নিবিষ্টচিত্ত
২৭৭। খুরাইম ইবনে ফাতেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়ালেন। মানুষের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসার পরিবর্তেতিনি সেজা উঠে দাঁড়ালেন এবং তিনবার ঘোষণা দিলেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া েএবং শিরক করা উভয়ই সমপর্যায়ের গুনাহ। এরপর তিনি নিম্নলিখিত আয়াত পাঠ করলেনঃ(আরবী********) তোমরা অপবিত্রতা অর্থাৎ মূতির্তপূজা হতে ধূরে থাকো। মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকোএভং আল্লাহর জন্য নিবিষ্টচিত্ত হয়ে যাও। শিরক পরিহার করে তাওহীদকে আকড়ে ধরো(সূরায়ে হজ্জ আয়াত নং ৩০-৩১)- আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সূরা হজ্জের যে আয়াত পাঠ করেছেন তাতে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হলো মিথ্যা বলা সর্বক্ষেত্রেই অন্যায়। আদালতে হাকিমের সমানে হোক বা অন্যকোন স্থানে।
মিথ্যা সাক্ষ্য কত বড় গুনাহের কাজ তা লক্ষ করার ব্যপার। কিন্তু এখন মুসলমানের মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান একটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা এটাকে গুনাহর কাজ বলে গণ্যই করে না। বরং যারা ঈমানের তাগিদে আদালতে সত্য সাক্ষ্য প্রদানের সৎসাহস করেন তাঁদেরকে আহমক মনে করা হয়।
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- তুমারি- ঝগড়া করো না। (আরবী) লা- তুমাযিহহু- ঠাট্রা বিদ্রুপ করো না।(আরবী) লা তায়িদহু- তার সাথে কোন ওয়াদা করো না। (আরবী) ফাতুখলিফুহু- তারপর তুমি তা ভঙ্গ করবে।
২৭৮।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। তাকে ঠাট্রা বিদ্রুপ করো না। তার সাথে কোন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করো না।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ বিতর্কের মূল লক্ষ হলো প্রতিপক্ষকে যে কোন উপায়ে পরাভূত করা। বিতর্কের মধ্যে নম্রতা ও আন্তরিকতার সাথে কথা বলার মনোভাব খুব কমই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এখানে সে হাসি তামাশা হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে যা দ্বারা মানুষ মনেকষ্ট পায় এবং ঠাট্রাকারীর অভিসন্ধি প্রতিপক্ষের ব্যক্তিপক্ষের ব্যক্তিত্বকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়ে থাকে। ভদ্রতার সীমা লংঘন হয় না, এমন হাসি – ঠাট্রা ও অন্যায় হাসি তামাশার মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। অনেক সময় সামান্য কথাবার্তা হতেই বড় ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হয়। অতএব হাসি- তামাশার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
ওয়াদা পালনের নিয়তঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইযা ওয়াআদা- যখন ওয়াদা করে।(আরবী) আররাজুলু- লোকটি। (আরবী) আখাহু- তার ভাইয়ের সাথে।(আরবী) নিয়্যাতিহু- তার নিয়্যাত। (আরবী) আই ইয়াফীয়া- পালন করতে।(আরবী) ফালাম ইয়াফি- অতঃপর পালন করতে পারেনি।(আরবী) লাম িইয়াজিয়া- আসতে পারেনি। (আরবী) লিলমীআদ- ওয়াদা মতো। (আরবী) ফালা ইসমা আলাইহি – তার গুনাহ হবে না।
২৭৯।যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে ওয়াদা করে এবংয় তা পালনের সে নিয়তও করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পালন করতে সক্ষম হয়না। সে ব্যক্তি গুনাহরগার হবে না।– আবু দাউদ
দোষত্রুটি বর্ণনাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) হাসবুকা- তোমার জন্য যথেষ্ট।(আরবী) মিন সাফিয়াতা- সাফিয়্যার ব্যাপার। (আরব)ি তানী- অর্থাৎ। (আরবী) কাসীরাতুন- খাট, বেঁটে।(আরবী) লাকাদ কুলতি – অবশ্য তুমি বলেছো। (আরবী) কালিমাতান- এমন কথা। (আরবী) লাও মুযিজা বিহাল বাহরু- যদি তা সাগরের পানিতে মিশানো হয় (আরবী) লামাযাজাতহু- তবে তাও তিক্ত হয়ে যাবে।
২৮০।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (এক সুযোগে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলামঃ সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার এরুপ ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত হওয়াই যথেষ্ঠ। অর্থাৎ তিনি বেটে এবং তা বড় ত্রুটি। একথা শুনে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! তুমি এমন এক তিক্ত কথা বললে! যদি তা সাগরের পানিতে মিশিয়ে দেয়া হয় তাহলে গোটা সাগরই তিক্ত হয়ে যাবে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ সাধারণত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ পরস্পর সতীন হওয়া সত্বেও অত্যন্ত প্রীতি ও সৌহার্দের সাথে বসবাস করতেন। তথাপি কখনো কখনো অজ্ঞাতসরে কারো কোন ত্রুটি সংঘটিত হয়ে ই যেতো। এমন একটি ত্রুটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে সংঘটিত হয়ে গেলো। তিনি রাসূলের নজরে সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহাকে খাঁটো করার উদ্দেশ্যে তার বেঁটে হওয়ার কথা উল্লেখ করে বসেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম একথা শুনেই অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তুমি অত্যন্ত গর্হিত কথা বলে ফেললে। বস্তুত পরবর্তীকালে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে এরুপ ভূর আর কোনদিন হয়নি। সাহাবা কেরামেরও একই অবস্থা ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাদের কোন ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত করলে দ্বিতীয়বার উক্ত ত্রুটি তাদের থেকে প্রকাশ পেতো না।
এই হাদীসের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, মহানবী তাঁর প্রিয়তম স্ত্রীর অশোভন উক্তিতে নিশ্চুপ থাকেননি। বরং যথাযথভাবে ও ভাষায় তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এতে স্বামীদের জন্য এক বিরাট শিক্ষা নিহিত আছে।
যাচাই করা ছাড়া কথা রটানোঃ (আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাইয়াতাআম্মালু- কাজ করে থাকে।(আরবী) ফীসূরাতির রাজুলী- মানুষের ছবি ধারণ করে। (আরবী) ফাইয়াতীল কাওমা- মানুষের কাছে আসে। (আরবী)ফাইউহাদ্দিসুহুম- তারপর তাদের সাথে কথা বলে। (আরবী) বিলহাদীসিল কাযিবি- মিথ্যা কথা।(আরবী) ফাইয়াতাফাররাকুনা- অতঃপর সে সরে পড়ে। (আরবী) আরিফু ওয়াজহাহু- আমি তাকে চেহারায় চিনি। (আরবী) মা- আদরী- আমি জানি না। (আরবী) মা – ইসমুহু- তার নাম কি?
২৮১। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে ময়তান মানুষের বেশে কাজ করে থাকে। সে মানুষের কাছে মিথ্যা বর্ণনাসমূহ পেশ করে। ফলে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ কোন মজলিসে শয়তান এরুপ মিথ্যা বর্ণনা পেশ করার পর লোকেরা কোন ফয়সালায় পৌছার পূর্বেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অতঃপর তাদের কেউ একজন বলে । আমি একথা এক ব্যক্তির নিকট হতে শনেছি। যার চেহারা আমি চিনি। কিন্তু নাম জানি না।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে মুসলমাদেরকে কোন কথা যাচাই বাচাই ছাড়া শুনামাত্র প্রচার করা হতে নিষেধ করা হেয়ছে।মুসলমানেদেরকে কোন কথা যাচাই বাচাই ছঅড়া শুনামাত্রপ্রচার করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। হতে পারে, একথা পরিবেশনকারী মিথ্যাবাদী কিংবা শয়তান। যাচাই ছড়া যদি সমাজে বা সমাবেশে এরুপ কথাবার্তা ছড়ানোর রেওয়াজ প্রচলিত হয়ে পড়ে তাহলে অনেক ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্নক দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। অতএব সংবাদ পরিবেশনকারী সম্পর্কে অনুসন্ধান করা দরকার। যে লোকটি একথাটি বলেছে সে মিথ্যা কথাও বলতে পারে। অথবা তা শয়তানের কারসাজীও হতে পারে। অতএব সংবাদ প্রদানকারী বিশ্বস্তও নির্ভরশীল কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। তারপর বিশ্বস্ততার প্রমাণ পাওয়া না গেলে এ খবর প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
কুৎসা রটনা করা
পরনিন্দুক জান্নাত হতে বঞ্চিত থাকবেঃ
(আরবী***) শব্দের অর্থঃ (আরবরী) লা- ইয়াদখূলু- প্রবেশ করবে না।(আরবী) নাম্মামুন- চোগলখৈার, পরনিন্দুক।
২৮২। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরনিন্দুক জান্নাতে যেতে পারবে না।– বুখারী,মুসলিম
পরনিন্দুক শাস্তিতে নিমজ্জিত থাকবেঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মাররা- গমন করলেন। (আরবী) ইউআযযবিানি- উভয়কে আযাব দেয়া হচ্চিল। (আরবী) বালা ইন্নাহু কাবীরুন- অবশ্য তা বড়ো গুনাহ। (আরবী) কানা ইয়ামী- তার অভ্যাস ছিলো। (আরবী) বিন্নামীমাতি- চোগলখুরী করে, পরনিন্দা করে। (আরবী) ফাকানা লা- ইয়াসতাবরিউ- সে সতর্কতা অবলম্বন করতো না। (আরবী) মিন বাওলিহি – তার পেশাব থেকে।
২৮৩।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটো কবরের নিকট দিয়ে গমনকালে বললেন, উভয় কবরবাসীর উপর নিঃসন্দেহে আয়াব হচ্ছে।আর এ আযাব এমন কোন কঠিন কাজের জন্যে দেয়া হচ্ছে না যা পরিত্যাগ করা তাদের জন্য কষ্টকর ছিলো। অর্থাৎ ইচ্ছা করলে তারা সহজেই তা থেকে বেঁচে থাকতে পারতো। নিঃসন্দেহে তাদের অপরাধ ছিলো বড়ো। তাদের একজন চোগলখরী করে বেড়াতো। এবং অপরজন তার পেশাবের ছিটাফোটা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতো না।– বুখারী
পরনিন্দা এভং কুৎসা রটনা সম্পর্কে নিষেধজ্ঞাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) নাহা- তিনি নিষেধ করেছেণ। (আরবী) আন্নামীমাতু- চোগলখুরী, পরনিন্দা। (আরবী) আলগীবাতু- কুৎসা বর্ণনা করা। (আরবী) ওয়াল ইস্তিমাউ ইলালগীবাতি – কুৎসা রটনা করা।
২৮৪।আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরনিন্দা, কুৎসা রটনাও কুৎসা শোনা নিষেধ করেছেন।– মিশকাত
হিংসা সৎ কাজগুলোর জন্যে আগুনঃ
(আরবী*****) শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়্যাকুম – তোমারা রক্ষা করো। (আরবী) আলহাসাদু – হিয়সা হিংসা। (আরবী) ইয়াকুলু- খেয়ে ফেলে। (আরবী) আলাহাসানাতি – নেকগুলোকে। (আরবী) কামা- যেমন । (আরবী) তাকুলু- খেয়ে ফেলে(আরবী) আন্নারু- আগুন। (আরবী) আলহাত্বাবা- লাকড়িকে খড়িকে।
২৮৫। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,তোমরা নিজেদের হিয়সা হতে রক্ষা করো। কেনোনা হিংয়সা নেক কাজসমূহেকে এমনভাবে পড়িয়ে দেয় যেমন খড়ি পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়।– আবু দাউদ
কুদৃষ্টি
প্রথম দৃষ্টিঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সাআলতু- আমি জিজ্ঞেস করলাম।(আরবী) আন নাযরিল ফুজাআতি- হঠাৎ দৃষ্টি পড়া। (আরবী) আসরিফ- ফিরিয়ে নাও। (আরবী) বাসারাকা- তোমার চোখ।
২৮৬। জারীরর ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে একজন অপরিচিত মহিলার উপর হঠাৎ দৃষ্টিপাত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তুমি তোমার দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দেবে।– মুসলিম
দ্বিতীয় দৃষ্টিঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা তাত্তাবি- দ্বিতীয়বার দৃষ্টিপাত করবে না। (আরবী) আন্নাযরাতা আন্নাযারাতা- প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয় দৃষ্টি।
২৮৭।বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ করে বলেন, হে আলী! কোন অপরিচিতা মহিলার উপর হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে তা ফিরিয়ে নেবে। দ্বিতীয় বার তার প্রতি আর দৃষ্টিপাত করবে না। কেনোনা প্রথম দৃষ্টিটি তোমার আর দ্বিতীয়টি তোমার নয় বরং তা শয়তানের।–আবু দাউদ
নবী প্রেরণের উদ্দেশ্যঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) বুয়িসতু- আমি প্রেরিত হয়েছি। (আরবী) লিউতামমিমা- পরিপূর্ণ বিকাশ। (আরবী) হুসনাল আখলাকি- চারিত্রিক সৌন্দর্য্য।
২৮৮।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন। চারিত্রিক সৌন্দর্য্য ও গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি।– মুয়াত্তা ইমাম মালেক
ব্যাখ্যাঃ নবী প্রেরণের উদ্দেশ্য হলোঃ মানব চরিত্রকে সংশোধন করা। তাদের ব্যবহারকে মার্জিত করে সুন্দর ও মাধুর্যমন্ডিত করা। তাদের চারিত্রিক দোষসমূহকে সংশোধন করে সে স্থলে পূতপবিত্র চরিত্রের ভিত্তি স্থাপন করা। চারিত্রিক এই পবিত্রতাই চিলো মহানবীর প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহর রাসূল তাঁর কথা ও কাজের দ্বারা উন্নত ও উত্তম চরিত্রসমূহের এক তালিকা পেশ করেছেন। গোটা জীবন ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সকল অবস্থায় এসব গুণাবলীকে আকড়ে থাকার উপদেশ দান করেছেন।
উত্তম চরিত্রের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহ বলেনঃ (আরবী)
উত্তম চিরত্র হলো, হাসিমাখা চেহারা। আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচ করা এবং কাউকে কষ্ট না দেয়া উত্তম চরিত্রের পরিসীমা যে কত বিস্তৃত তা এ ব্যাখ্যা দ্বারাই প্রমাণিত হয়।
নবীর আদর্শঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ফাহিশান- আশালীন কথাবার্তা। (আরবী) মুতাফাহহিশান- অশ্লীল কাজে লিপ্ত। (আরবী) খিয়ারুকুম- তোমাদের মধ্যে।(আরবী) আহসানুকুম- তোমাদের মধ্যে উত্তম। (আরবী) আখলাকান- চারিত্রিক দিক দিয়ে।
২৮৯।আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন অশালীন কথাবার্তা মুখে আনতেন না। অশালীন কোন কাজও করতেন না এবং অপর কোন লোকের সাথে অসদারচণ করতেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যে চরিত্রের দিক থেকে উত্তম।– বুখারী, মুসলিম।
উত্তম চরিত্রের উপদেশঃ (আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মা ওয়াসসানী- যা আমাকে উপদেশ দিয়েছেন। (আরবী) ওয়াযাতু- আমি রাখলাম। (আরবী) রিজলী- আমার পা। (আরবী) ফীল গারযানি- ঘোড়ার জিনের উভয় পাদানীতে। (আরবী) আহসিন খুলুকাকা- উত্তম ব্যবহার করো। (আরবী) লিন্নাসি- লোকদের জন্য।
২৯০।মুআয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়েমেনে পাঠাবার সময় ঘোড়ার জিনে পা রাখার মুহুর্তে যে শেষ উপদেশ দিয়েছিলেন তা ছিলো হে মু আয! মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করো।– মুয়াত্তা ইমাম মালেক
চারিত্রিক বলিষ্ঠতাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লিআশাজ্জি- প্রতিনিধি প্রধানের নাম। (আরবী) লাখাসলাতাইনি- অবশ্য দুটি প্রশংনীয় সৌন্দর্য। (আরবী) ইউহিব্বমা উভয়কে পছন্দ করেন। (আরবী) আলহিলমু- ব্যক্তিত্ব, অবেগ উচ্চাসহীন। (আরবী) আলআনাতু- ব্যক্তিত্ব, মাহাত্ন্য।
২৯১।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি প্রধানকে (যার উপাধি ছিল আশাজ্জা) সম্বোধন করে বলেছিলেন, নিঃসন্দেহে তোমার মধ্যে এমন দুটি প্রশংসনীয় সৌন্দর্য বিদ্যমান যা আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয়। একটি হলো ব্যক্তিত্ব(আবেগ- উচ্ছাস নয়) আর দ্বিতীয়টি হলো শিষ্টাচার।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আবদুল কায়েস গোত্রের যে প্রতিনিধি দল রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নিকট এসেছিল। তাদের অন্যান্য সদ্স্যরা মদীনা পৌছেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাতে দৌড়ে আসে। অথচ তারা দূর দূরান্ত থেকে এসেছিল। ধূলাবালি তখনও তাদের চোখেমুখে। এ অবস্থায় তারা গোসল না সেরে এবং আসবাবপত্র না গুছিয়েই রাষূলের খেদমতে উপস্থিত হয়। পক্ষান্তরে তাদের নেতা এত তাড়াহুড়া করেননি। তিনি ধীর গতিতে সাওয়ারী হতে অবতরণ করে অসবাবপত্র যথাস্থানে রাখলেন। জানোয়ারগুলোকে খাবার দিলে। এরপর হাতমুখ ধুয়ে ধীরস্থিরভাবে রাসূলের খেদমতে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চারিত্রিক বলিষ্ঠতা ও ধীরস্থিরতার প্রশংসাই এ হাদীসে বর্ননা করেছেন।
সাদাসিদে সরল জীবনঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলবাদাওয়াতু- গ্রামীন সরল অনাড়ম্বর জীবন-যাপন।
২৯২।আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে সরল ও অনাড়ম্বর জীবন ঈমানের অঙ্গ।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ সাদাসিদে জীবন যাপন করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। মুমিন তো কেবল আখেরাতের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার চিন্তায় মগ্ন থাকে। ফলে ইহকালীন সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি তার কোন মোহ থাকে না।
পরিপাট্য ও পরিচ্ছন্নতাঃ (আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতানা- তিনি আমাদের কাছে এলেন। (আরবী) যায়িরান – দেখার জন্য।(আরবী) ফারায়া- তারপর দেখলেন (আরবী) শাসান- ধূলী মলীন, এলামেলো চুল বিশিষ্ট লোক। (আরবী) মা ইয়াসকুনু- যা দ্বারা ঠিক করতে পারে।(আরবী) রাসাহু- তার মাথঅ (আরবী) সিয়াবুন- পোশাক।(আরবী) ওয়াসিখাতুন- ময়লা। (আরবী) মা ইউগসিলু- যা দ্বারা ধুয়ে নিতো(আরবী) সাওবাহু- পোশাক।
২৯৩।জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আসেন। তিনি আমাদ েরনিকট এমন একজন লোককে দেখলেন যার শরীরে ছিলো ধূলাবালি। মাথার চুল ছিলো এলামেলো। তিনি বললেন, লোকটির কি কোন চিরুনী নেই যা দিয়ে সে তার মাথার চুলআচড়াতে পারে? তিনি আর একজন লোককে দেখলেন যার পরিধানে ছিলো ময়লা কাপড়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোকটির নিকট কি (সাবান জাতীয়) এমন কিছু নেই যা দিয়ে সে তার কাপড় – চোপড় পরিস্কার করতে পারে।– মিশকাত
অপরিপাটি চুল শয়তানী কাজঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সায়িরুররাসি ওয়াললিহয়াতি িএলামেলো মাথার চুল ও দাঁড়ি ওয়ালা। (আরবী) ফাআশারা- অতপর তিনি ইঙ্গি করলেন।(আরবী) কাআন্নাহু ইয়ামুরুহ- তিনি যেন তাকে নির্দেশ দিচ্ছেন। (আরবী) বিইসলাহি শারিহি ওয়া লিহয়াতিহি- তার চুল ও দাঁড়ি বিন্যাস করার জন্য।(আরবী) ফা ফাআলা- তারপর সে করলো। (আরবী) সুম্মা রাজাআ- তারপর সে ফিরে গেলো। (আরবী) আলাইসা হাযা খা্রান- এটা কি উত্তম নয়?(আরবী) আহাদুকুম- তোমাদের কেউ(আরবী) কাআন্নাহু শাইতানুন- সে যেন শয়তান।
২৯৪।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করলো। তার মাথার চুল ও দাড়ি ছিলো এলামেলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি হাত দ্বারা এমন ভাবে ইশারা করলেন যেনো তিনি তাকে চুল ও দাড়ি সুবিন্যস্ত করার নির্দেশ দেন। অতঃপর সে ব্যক্তি ফিরে দিয়ে দাড়ি চুল সুবিন্যস্ত করে ফিরে এলা। এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক ব্যক্তির উসকো খুশকো মাথা অপেক্ষা এ সুবিন্যস্ত অবস্থা কি উত্তম নয়?ইতিপূর্বে তো তাকে শয়তানের ন্যায় দেখাচ্ছিলো।– মিশকাত
ধন- সম্পদ ও মামুলি বেশভূষাঃ
(আরবী********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতাইতু- আমি হাজির হলাম। (আরবী) সাওবুন দূনুন- নিম্নমানের পোশাক। (আরবী) আলাকা মালুন- তোমার কি ধন সম্পদ আছে? (আরবী) মিন আইয়্যিলমালি- কোন ধরনের মাল। (আরবী) মিন কুল্লিলমালা-সব ধরনের মাল। (আরবী) কাদ আতানিয়াল্লাহু- আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। (আরবী) ফালইউরা- তুমি অবশ্যই তা দেখাও।(আরবী) আসারু নিমাতিল্লাহি- আল্লাহর নিআমতের নিদর্শন।
২৯৫।আবুল আহওয়াস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি িএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হলাম। তখন আমার পরিধেয় বস্ত্র অত্যন্ত নিম্নমানের ছিলো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার নিকট ধন সম্পদ আছেকি? আমি বললাম হ্যাঁ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি প্রকারের সম্পদ আছে? আমি জবাবে বললাম, সকল প্রকারের সম্পদ। যেমন উট, গাভী, বকরী, ঘোড়া এবংয় দাস দাসী ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্রাহ যখন তোমাকে ধন সম্পদ দান করেছেন তখন তার নেয়ামতের নিদর্শনও তোমার শরীরে প্রকাশ পাওয়া উচিত।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ আল্লাহ যখন তোমাকে সবকিছু দান করেছেন। অবস্থা অনুযায়ী খাবার খাও। উত্তম পোশাক পরিধান করো। এ কেমন কথা। মানুষের নিকট সবকিছু থাকবে অথচ সে এমনভাবে চলবে যেনো একেবারে নিঃস্ব ও গরীব। এ অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস। এতে আাল্লাহর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সালামের ব্যাপক চর্চা ইসলামের সর্বোত্তম আলামতঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আইয়্যুল ইসলামি খঅইরুন- ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? (আরবী) তুতয়িমুত্তোআমা- খাবার খাওয়ানো। (আরবী) তুকরিউসসালামা- সালাম দেবে। (আরবী) লাম তারিফ- তুমি চিননা।
২৯৬।এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.কে জিজ্ঞেস করেছিলো, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, গরীব মিসকীনদেরকে খাবার দেয়া। সকল মুসলমানদেরকে সালাম ধেয়া। তোমার সাথে তার পরিচয় থাকুক বা না থাকুক অর্থাৎ পূর্ব হতে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক।– বুখারী, মুসলিম
হৃদ্যতার চাবিকাঠিঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- তাদখুলুনা- তোমরা প্রবেশ করবে না। (আরবী) হাত্তা তুমিনূ- যে পর্যন্ত তোমরা ঈমান আনো। (আরবী) হাত্তা তাহাব্বূ- যে পর্যন্ত একে অপরকে ভালোবাসোনা। (আরবী) আওয়া লা আদুল্লুকুম আলা শাইয়ীন- আমি কি তোমাদেরকে এক বিষয়ের খবর দেবো না?(আরবী) আফশূসসালামা- সালামের ব্যাপক প্রচলন করবে। (আরবী) বাইনাকুম- তোমাদের পরস্পরের মধ্যে।
২৯৭।রাসূলুল্লাহ সাল্লাসাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালো না বাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন এক কাজের কথা বলবো? যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে। তোমরা পরস্পর ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় করো।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেলো। মুসলমানগণ একে অপরকে ভালোবাসবে এবং প্রীতি ও ভালোবাসায় উদ্ধূদ্ধ হয়ে পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে। এ হলো মুমিনের ঈমান ও িইসলামের দাবী। এর উপায় হলো তাদের পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন। সালামের এ প্রথাটি হলো উত্তম – পন্থা। তবে সালামের অর্থ এবং তার মূল উদ্দেশ্য জানা থাকতে হবে।
জিহবা এবং লজ্জাস্থানের হিফাযতঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মাই ইয়াযমানু লী – যে আমার কাছে যিম্মাদার হবে। (আরবী) মা বাইনা লাহইয়াইছি- তার মুখের (আরবী) পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের, লজ্জাস্থান। (আরবী) আযমানু- আমি যিম্মা থাকবো।
২৯৮।সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের জিহবা এবং লজ্জা স্থানের হিফাযতের জামিন হবে, আমি তার জান্নাতের জামিন হবো।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ মানব দেহের এ দুটো অঙ্গ অত্যন্ত দুর্বল ও বিপদজ্জনক। এ অঙ্গ দুটোর মাধ্যমে আক্রমন রচনা করতে শয়তানের বেশ সবিধা। এ দুটো অঙ্গ দ্বারাই সর্বাধিক গুনাহ সংঘটিত হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি উক্ত অঙ্গ দুটোকে হেফাযত করতে পারে তা হলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
দায়িত্বহীন কথাবার্তাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাইয়াতাকাল্লামু- অবশ্যই মানুষ এমন কথা বলে।(আরবী) বিলকালিমাতি- এমন কথা। (আরবী) মিন রিদওয়ানিল্লাহি- আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হয়ে থাকে। (আরবী) লা ইউলকী লাহা বালান – সে এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে না। (আরবী) মিন সাখাতিল্লাহি আল্লাহর অসন্তুষ্টি উৎপাদন করে ধরনের কথাও(আরবী) ইয়াহওয়ীবিহা- যা তাকে জাহান্নামে ঠেলে দিবে।
২৯৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। নিঃসন্দেহে মানুষ তার মুখ হতে এমন কথা প্রকাশ করে যা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু সে তার প্রতি গুরত্ব আরোপ করে না। অথচ উক্ত কথার দরুন আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। এভাবে মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টিজনক কথাও বেপরোয়াভাবে মুখ থেকে বের করে বসে যা তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।–বুখারী
ব্যাখ্যাঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ উক্তির উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেনো তার জিহবাকে লাগমহীনভাবে ছেড়ে না দেয়। যা কিছু বলবে চিন্তা ভাবনা করে বলবে। এমন কোন কথা কখনো বলবে না যা জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
দাওয়াত ও তাবলীগ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত কি ছিলো?
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মাযা ইয়ামুরুকুম- সে তোমাদের কি নির্দেশ দেয়। (আরবী) উবুদূল্লাহা- তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। (আরবী) লা তুশরিকু- তোমরা শরীক করো না।(আরবী) ওয়াতরুকূ- আর ছেড়ে দাও। (আরবী) ওয়ালআফাফি- আর সৎজীবন যাপন করতে।(আরবী) ওয়াসাসিলাতি- আত্নীয়স্বজনের হক আদায় করতে।
৩০০।ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। (রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন) েএ ব্যক্তি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে বলেন, আল্লাহর ইবাদাত করো। তাঁর ক্ষমতা ও আনুগত্যে কাউকে শরীক করো না। তোমাদের পূর্বপূরুষদের যে আকীদা বিশ্বাস ছিলো এবং সে অনুযায়ী তারা যে সমস্ত কাজকর্ম করতো তা পরিত্যাগ করো। তিনি আমাদেরকে সালাত কায়েম করতে, সত্য কথা বলতে, পাবিত্র জীবন যাপন করতে এবং আত্নীয় স্বজনের হক আদায় করতে নির্দেশ দেন।–বুখারী
ব্যাখ্যাঃ এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। হাদীসে হিরাকল নামে প্রসিদ্ধ। হাদীসটির সংক্ষিপ্ত সার হলো।রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস বায়তুল মাকদাসে থাকাকালীন সময়ে রাসূলের দ্বীনের দাওয়াত স্মবলিত পত্র পেয়েছিলেন। রাসূল সম্পর্কে অবহিত হবার জন্যে তখন তিনি একজন আরব নাগরিকের সন্ধান করতে থাকেন। ঘটনাক্রমে হিরাক্লিয়াস আরবের এক সওদাগরী কাফেলার সন্ধান পেয়ে গেলেন। উক্ত কাফেলার প্রধান আবু সুফিয়ান তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। হিরাক্লিয়াস তাদেরকে দরবারে ডেকে অনেক প্রশ্নেই করেছিলেন। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিলো নবীর দাওয়াতের মূল বক্তব্য কি?আবু সুফিয়ান কাফেলার পক্ষ হতে জবাবে বলেন, তিনি একত্ববাদের দাওয়াত দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, তোমরা একমাত্র আল্লাহকে স্বীকার করো। তিনিই একমাত্র সত্তা যার ক্ষমতা আসমান ও যমীনে উভয় স্থানেই বিরাজমান। মহাশূন্যের নিয়ম শৃংখলার একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক তিনিই। এমনিভাবে পৃথিবীর ব্যবস্থাপনাও তাঁর হাতে। এ উভয় জগতের ব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতায় তিনি কাউকে তাঁর শরীক করেননি। আর কেউ স্বীয় শক্তি ও প্রভাব বলে আল্লাহর শরীক হতে পারেনি। প্রকৃত অবস্থা যখন এই তখন সিজদার অধিকারী কেবল তিনিই। সকল সমষ্যায় একমাত্র তাঁরই সাহায্য কামনা করা দরকার। ভালোবাসতে হবে তাঁকেই। কেবল তাঁরই আনুগত্য করতে হবে। পিতৃপুরুষগণ শিরকের ভিত্তিতে যে জীবনব্যবস্থা তৈরি করেছিলো তা পরিহার করতে হবে। আবু সুফিয়ান আরো বললেন, এমনিভাবে িএ ব্যক্তি আমাদেরকে বলেন, সালাত কায়েম করো, কথা ও কাজে সত্যবাদিতা অবলম্বন করো। পূতপবিত্র জীবন যাপন করো। মানবতা বিরোধী কোন কাজ করো না। ভাইদের সাথে ভাল ব্যবহার করো। সবাই এক পিতা মাতার সন্তান বিধায় তোমরা একে অপরের ভাই হিসাবে জীবন যাপন করো।
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) দাখালতু- আমি প্রবেশ করলাম। (আরবী) আলা নাবিয়্যিন- নবী করীমের (আরবী) আরসালানিয়াল্লাহু তাআলা- আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঠিয়েছেন।(আরবী) বিসিলাতিল আরহামি- আত্নীয় স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য। (আরবী) কাসরিল আওসানি- পৌত্তলিকতার বিলোপ সাধন। (আরবী)আইইউওয়াহহিদাল্লাহু- আল্লাহর একত্ববাদ কায়েম করা। (আরবী) লা ইউশারাকু বিহি শাইয়ুন- তার সাথে কাউকে শরীক না করা।
৩০১।আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার মক্কাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলাম(অর্থাৎ নবুয়তের প্রথম দিকে) এবং প্রশ্ন করলাম, আপনি কে? রাসূলুল্লাহ উত্তরে বললেন, আমি নবী। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, নবী কি? তিনি বললেন, আল।লাহ আমাকে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, কি দায়িত্ব সহকারে আল্লাহ আপনাকে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, মানুষকে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হৃদ্যতাপূর্ণ ম্পর্ক গড়ে তোলা। পৌত্তলিকতার বিলোপ সাধন করে আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক না করে একত্ববাদ কায়েম করার শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন।– মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতের বুনিয়াদী কথাগুলো বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে তাঁর দাওয়াতের মূল বিষয়গুলো বর্ণনা করেছেন। আমার আহবান হলো- আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যকার সম্পর্কের সঠিক ভিত্তি- তাওহীদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতায় কাউকে শরীক করা যাবে না িএবং ইবাদাত কেবল তাঁর উদ্দেশ্যেই করতে হবে। আনুগত্যও করতে হবে একমাত্র তাঁরই।
মানুষের মধ্যে সম্পর্কের সঠিক ভিত্তি হচ্চে পারস্পরিক ভালোবাসা এবং হৃদ্যতা। সকল মানুষ একই মাতা পিতার সন্তান। মূলত সকলে পরস্পর ভাই ভাই। সকল মানুষ একই মাতা পিতার সন্তান। মূলত সকলে পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তাদের সকলকে পরস্পরের প্রতি স্নেহ ও সংবেদশীল হতে হবে। অসহায় ও অভাবী ভাইদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। কারো উপর নিপীড়ন ও অত্যাচার করা হলে সকলে মিলে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কেউ হঠাৎ কোন বিপদের সম্মূখীন হলে প্রত্যেকের অন্তরে তার জন্যে সহানুভূতি সৃষি।ট হতে হবে। তাকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
নবী রাসূলগণের দাওয়াতের ভিত্তি দুটি। একটি হলো ওয়াহাদাতে ইলাহ- আল্লাহর একত্বাবাদ। আর দ্বিতীয়টি হলো ওয়াহদাতে বনী আদম। একই পিতা মাতার সন্তান। এখানে একটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষি।ট রাখতে হবে যে, মূল বস্তু হলো তাওহীদ এবং দ্বিতীয় বিষয়টি হলো তাওহীদেরই একান্ত দাবী। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে সে তাঁর বান্দাদেরকে ভালোবাসবে। কেনোনা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভালোবাসার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
বান্দার প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা প্রদর্শর্নের যে সকল দাবি আছে তন্মধ্যে ইরান সেনাপতির সম্মুখে মুগিরা ইবনে শোবা রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামী দাওয়াতের ব্যাখ্যা এবং নুবয়াতের মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে যা বলেছিলেন তাও একটা। তিনি ইরানী সেনাপতির ভূল ধঅরণা অপনোদন করতে গিয়ে বলেন, আমরা ব্যবসায়ী নই। ব্যবসা বাণিজ্যে পার্থিব লাভের উদ্দেশ্যে আমরা এখানে আসিনি। আমাদের একমাত্র লক্ষ ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আখেরাত। অমরা সত্য দ্বীনের পতাকাবাহী সৈনিক মাত্র। এ দ্বীনের প্রতি আহবান করাই আমাদের মূল উদ্দ্যেশ্য। এসব কথা শ্রবনের পর ইরান সেনাপতি জিজ্ঞেস করলেন। সে দ্বীন কি? তার পরিচয় দাও। মুগিরা রাদিয়াল্লাহ আনহু তখন বললেনঃ
(আরবী****)
অর্থাৎ আমাদের দ্বীনের ভিত্তি ও কেন্দ্রবিন্দু হলো- মানুষ এ মর্মে সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই(অর্থাৎ তাওহীদ) এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল(অর্থাৎ রিসালাত)।আর আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত বিধান আল কুরআনকেও মানতে হবে অর্থাৎ কিতাব।এ ছাড়া এ দ্বীনের কোন অংশই সুষ্ঠুভঅবে চলতে পারে না। ইরানী অধিনায়ক বললেন, এতো অতি উত্তম শিক্ষা। এ দ্বীনের আরও কিছু শিক্ষা আছে কি? মুগিরা জবাবে বললেনঃ
(আরবী)
মানুষকে মানুষের দাসত্ব ও বন্দেগীর শৃঙ্গল হতে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্ব ও বন্দেগীর নিগড়ে আবদ্ধ করাও এ দ্বীনের একটি শিক্ষা। ইরান সেনাপতি বললেন, এটাও তো উত্তম শিক্ষা।এ দ্বীন আর কি শিক্ষা দেয়? মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ
(আরবী***) সকল মানুষ আদম- সন্তান। তারা পরস্পর ভাই ভাই। এ হলো দ্বীনে হকের মৌলিক আহবান যা মুগিরা রাদিয়িাল্লাহু আনহু ইরানী সেনাপতির সামনে পেশ করেছিলেন। একই সেনাপতির সামনে ইসলামের আর এক বীর মুজাহিদ রাবী ইবনে আমীর নিম্নোক্ত ভাষায় ইসলামের ব্যাখ্যা পেশ করেছিলেনঃ
(আরবী***)
আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যারা চায় তাদেরকে যেনো আমরা মানুষের দাস্তব হতে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনি। সংকীর্ন জগত হতে বের করে প্রশস্ত ও বিস্তৃত জগতে এনে দেই। বাতিল ও নিপীড়নমূলক জীবনব্যবস্থার হাত হতে মুক্ত করে ইসলামের ইনসাফভিত্তিক সুন্দর জীবনবিধানের ছায়াতলে সমবেত করি। আল্লাহ তার দ্বীন সহকারে আমাদেরকে মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন। যেনো আমরা তাদের সকলকে আল্লাহর এ সত্য দ্বীনের প্রতি আহবান জানাই।
রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে দ্বীন
সফলতা-পরীক্ষার পথেঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) শাকাওনা- আমরা অভিযোগ করলাম। (আরবী) মুতাওয়াসসিদুন বুরদাতান লাহু – তার চাদর বালিশের ন্যায় মাথার নিচে রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। (আরবী) আলা তাসতানসিরুলানা- আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করছেন না? (আরবী) আলা তাদউল্লাহা লানা- আপনি কি আমাদের জন্য আল।লাহর নিকট দোয়া করেছেন না? (আরবী) ইউহফারু লাহু- তার জন্য গর্ত খনন করা হতো। (আরবী) ফাইউজাউ- আনা হতো। (আরবী) বিলমিনশারি- করাত সহ। (আরবী) ফাইউযাউ-অতপর রাখা হতো। (আরবী) ফা ইউশুককু বিইসনাইনি- অতপর দ্বিখন্ডিত করা হতো।(আরবী) মা ইয়াসুদ্দুহু- তাকে ফিরিয়ে রাখেনি। (আরবী) আন দীনিহি- লোহার চিরুনি দিয়ে আচড়ান হতো। (আরবী) মাদূনা লাহমিহি- গোশতের নিচে। (আরবী) লাইয়াতাম্মান্নাল্লাহ-অবশ্যই আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনকে, বিজয়ী, বিজয়ী করবেন। (আরবী) ওয়া লাকিন্নাকুম তাসতাজিলূনা- কিন্তু আফসুস তোমরা বড়ো তাড়াহুড়ো করছো।
৩০২।খাব্বার ইবনুল আরাত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল কাবা শরীফের ছায়াতলে আপন চাঁদর মাথার নিচে বালিশের ন্যায় রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সে সময় মক্কবাসাীরা অসহায় মুসলমানদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালাচ্ছিলো। এমন সময় আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!এ অত্যাচার ও নিপীড়ন অবসানের জন্যে আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্তনা করেছেন না? এ যুলুমের অবসানের জন্য দোয়অ করছেন না? অত্যাচারের এ নির্মম ধারা আর কতদিন চলবে? কখন এ বিপদের অবসান ঘটবে? একথা শোনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়অসাল্লাম বললেন, তোমাদের আগে েএমন অনেক লোক অতিবাহিত হয়েছেন যাদের কারো জন্যে গর্ত খনন করা হতো। অতঃপর তাঁকে গর্তে প্রবেশ করিয়ে দন্ডায়মান অবস্থায় করাত দিয়ে দ্বিখন্ডিত করা হতো। তথাপি তিনি দ্বীন হতে ফিরে যেতেন না। এমনিভাবে তাঁদের দেহেরে উপর দিয়ে চিরুনির ন্যায় লোহার আচড়া টানা হতো। এ আঁচড়া গোশত ভেদ করে হাড় পর্যন্ত গিয়ে পৌীছাতো। এরুপ নির্যাতন ও নিপীড়ন তাদেরকে আল্লাহর দ্বীন হতে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। আল্লাহর কসম এ দ্বীনকে তিনি বিজয়ী করবেনই। এমনকি কোন সফকারী সানআ(ইয়ামেন) হতে হাজারামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে অথচ আল্লাহ ছাড়া পথিমধ্যে আর কারুরই ভং থাকবে না। অবশ্য রাখাল তার মেষ পাল সম্পর্কে নেকড়ের ভং করবে। কখন মেষ মুখে নিয়ে নেকড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু(আফসুস) তোমরা বড় তাড়াহুড়া করছো।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ ইয়ামেন হতে বাহরাইন এবং হাজরা মাউত পর্যন্ত বিস্তীর্ন এলাকায় সত্যের দুশমনদের শক্তি লোপ পাবে এবং আল্লাহর বান্দাগণ নির্ভয়ে আল্লাহর হুকুম আহকাম প্রতিপালন করে চলবে। খা্ব্বার রাদিয়াল্লাহু আনহু তের বছরের মক্কী জীবনের দুঃসহ পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এ হাদীসে তুলে ধরেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় সাহাবীদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, ধৈর্যের সাথে কাজ করে যেতে সে সময় আর বেশী দূরে নয় যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ইসলামের পতাকাবাহীদের হাতে আসবে। আল্লাহর হুকুম প্রতিপালনকারীগণ সকল প্রকার ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নিয়ে সমাজকে যুলুম মুক্ত করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করবে।
হিজরত ও জিহাদঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) যুরতু- দেখা করলাম। (আরবী) ফাসাআলনাহা- আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। (আরবী***) আনিলহিজরাতি- হিজরত সম্পর্কে (আরবী) লা- হিজরাতাল ইয়াওমা- না এখন কোন হিজরত নেই। (আরবী) ওয়া লাকিন জিহাদুন ওয়া নিয়াতুন- কিন্তু জিহাদ ও নিয়ত আছে।
৩০৩।আতা ইবনে আবী রিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি উবাইদ ইবনে উমাইর লাইসী সহ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে দেখা করতে গেলাম। আমরা তাঁকে হিজরত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম।(হিজরত এখনও কি ফরয)? মানুষ কি এখনো নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ করে মদীনায় চলে আসবে?) আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, না এখন কোন হিজরত নেই( হিজরতের নির্দেশ রহিত হয়ে গেছে)ঈমান আনার অপরাধে মুমিনের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উটতো বলে তো হিজরাত করা হতো। ফলে মুমিনগণ নিজেদের দ্বীন ও ঈমান সহ আল।লাহ ও রাসূলের নিকট চলে আসতো। এখন আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। মুমিন এখন যেখানে খুশী স্বাধীনভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। অবশ্য জিহাদ এবং জিহাদের উদ্দেশ্যে এখনো কার্যকর রয়েছে।– বুখারী
জামায়াত গঠনের প্রয়োজনীয়তা
সফরে শৃংখলাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) ইযা কানা সালাতুন- যখন তিনজন হবে।(আরবী) ফালইউআম্মিরু আহাদাহুম- অবশ্যই একজনকে আমীর নির্বাচন করবে।
৩০৪।আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনজন লোক ভ্রমনের উদ্দেশ্যে কোথাও বের হলে তাদের একজনকেনেতা নির্বাচন করে নেয়া উচিত।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, মানুষের জন্যে প্রবাসে থাকা অবস্থায়ও যখন দল গঠনের অপরিহার্য্য্যতার কথা বলা হয়েছে। তখন মুমনিদের সংগঠন যেখানে ছিন্নভিন্ন সেখানে তাদের সংগঠিতভাবে জীবন যাপন করা নিঃসন্দেহে আরো জরুরী।
মুসলমানদের জন্যে বিচ্ছিন্নভাবে জীবন যাপন করা কোন অবস্থাতেই সঙ্গত নয়।
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা ইয়াহিল্লু লিসালাসতিন- তিনজন একত্র হলে তাদের জন্য জায়েয নয়। (আরবী) ফীল ফালাতি- কোন জঙ্গলে।(আরবী) আম্মারু- তারা আমীর বানিয়ে নিবে।(আরবী) আহাদাহুম- তাদের একজনকে।
৩০৫। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তি যদি কোন জঙ্গলেও বসবাস করে তুবও তাদের মধ্যে একজনকে নেতা নির্বাচন না করে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করা জায়েয নয়।– মুনতাকা
দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) যিবুল ইনসানি- মানুষের বাঘ।(আরবী) আশশাযযাতা- বিচ্ছিন্ন হয়ে একা চলাচলকারী। (আরবী) কাসিয়াতুন – দল থেকে সরে পড়া।(আরবী) নাহিয়াতুন- দলের একপাশে থাকা।
৩০৬।মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেচেন, নিশ্চয়্ই শয়তান মানুষের জন্যে নেকড়ে স্বরুপ। নেকড়ে বকরীর দল হতে বিচ্ছিন্ন ও একা চলাচলকারী বকরীকে শিকার করে নেয়।(মানুষ যদি দলবদ্ধভাবে নেতার হুকুম অনুযায়ী বসবাস না করে।একা একা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করে তাহলে শয়তান অতি সহজে তাকে হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলতে পারে।)সূতরাং হে লোক সকল! তোমরা দুর্গম ঝুঁকিপূর্ণ পথ পরিহার করে চলবে এবং সর্বসাধারণকে সাথে নিয়ে জামায়াতবদ্ধভাবে বসবাস করবে।– মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ জামায়াতবদ্ধভাবে জীবন যাপনের নির্দশ তখনকার জন্যে প্রযোজ্য যখন মুসলমানদের মধ্যে আল-জামায়াত বর্তমান থাকবে। আর যদি আল- জামায়াত বর্তমান না থাকে সেক্ষেত্রে কি করতে হবে এটা আজ এক বিরাট প্রশ্ন। এর সহজ ও স্পষ্ট জবাব হলো- জামায়াত গঠন করো। যাতে এ জামায়াতে সকলে শামিল হয়ে আল- জামায়াত এ পরিণত হয়।
জামায়াত ভুক্তির মাধ্যমে জান্নাত লাভঃ
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মান সাররাহু- যে ব্যক্তিকে আনন্দ দেয়। (আরবী) আই ইয়াসকুনা – সে বসবাস করবে।(আরবী) বুহবূহাতিল জান্নাতি- জান্নাতের মাঝখানে। (আরবী) ফালইয়ালযিমিল জামায়াতা- সে যোনো জামায়াতের সাথে লেগে থাকে। (আরবী) মাআল ওয়াহিদি- একজনের সাথে। (আরবী) আবআদু- বহুদূরে অবস্থান করে।
৩০৭।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জান্নাতের মাঝখানে নিজের ঘর বানাতে চায়, সে যেনো জামায়াতের সাথে লেগে থাকে। কেনোনা শয়তান বিচ্ছিন্ন এক ব্যক্তির সঙ্গে থাকে। সঙ্গবদ্ধ দু ব্যক্তি থেকে সে বহু দূরে অবস্থান করে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ মুসলমানদের যদি আল- জামায়াত বর্তমান থাকে তা হলে তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক অতীব প্রয়োজন। এ সময় জামায়াত হতে বিচ্ছিন্ন থাকা মোটেই বৈধ নয়।আল- জামায়াত বলতে এমন অবস্থা বুঝায় যখন ইসলাম বিজয়ীরুপে থাকেবে এবং ক্ষমতা মুমিনদের হাতে থাকবে। আর ঈমানদারগণ একজন আমীরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। কিন্তু যদি আল- জামায়াত প্রতিষ্ঠিত না থঅকে সে ক্ষেত্রে জামায়াতবদ্ধ হয়ে েএমন পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে যেন আল-জামায়াত বাস্তবে রুপ নিতে পারে।
নেতা ও অধীনস্থ ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের ধরন
জামায়াত প্রধানের দায়িত্বঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলা- সাবধান! (আরবী) কুল্লুকুম- তোমাদের প্রত্যেকেই। (আরবী) রায়িন- রক্ষক, দায়িত্বশীল। (আরবী) মাসউলুন-জবাবদিহিতা করতে হবে।(আরবী) রায়িয়াতিহি- অধীনস্থদের।(আরবী ফালিইমামু- অতএব একজন ইমাম।
৩০৮। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রেখো! তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক ও দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব একজন ইমাম যিনি অধীনস্থ লোকদের রক্ষক তাকে স্বীয় অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে জবাবগিহি করতে হবে। পুরুষ তার পরিবার- পরিজনের উপর কর্তৃত্ব করে। অতএব তিনি তার পরিবারের অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। এমনিভাবে স্ত্রী হচ্ছেন স্বামীর গৃহ ও সন্তানদের উপর দায়িত্বশীল। সূতরাং এদের সকলের সম্পর্কে তাকেও জবাবদিহি করতে হবে।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ রক্ষক ও দায়িত্বশীল এর অর্থ হলো অধীনস্থদের সুশিক্ষা ও সংশোধনের জিম্মাদার। অধীনস্থদের সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং বিপথ থেকে ফিরিয়ে রাখা হলো তার দায়িত্ব। যদি তাদের সংশোধন ও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করা হয় এবং তাদেরকে বিপথগামী হবার জন্যে ছেড়ে দেয়া হয়তাহলে আল্লাহর নিকট দায়িত্বশীলকেই জবাবদিহি করতে হবে।
বিশ্বাসঘাতক আমীরঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়ালিন- দায়িত্বশীল। (আরবী) ইয়ালী-দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে।(আরবী) গাশশুন- বিশ্বাসঘাতক। (আরবী) হাররাম- হারাম করবেন।
৩০৯।মাকেল ইবনে ইয়সার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। যে ব্যক্তি মুসলমানদের যাবতীয় সামষ্টিক ব্যাপারে দায়িত্বশীল হবার পরও তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেবেন।– বুখারী, মুসলিম
আলস ও কুটিল নেতাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়ালিয়া- দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। (আরবী) লাম ইয়ানসাহ- সে কল্যাণকর কিছু করেনি।(আরবী) লাম ইয়াজহাদ- সে চেষ্টা করেনি। (আরবী) কানুসহিহি- তার নিজের কল্যাণের মতো। (আরবী) কাব্বাহা- উপুড় করে ফেলবেন। (আরবী) ফীন্নারি- জাহান্নামে।(আরবী) ওয়া ফী রাওয়ায়াতিন- অপর বর্ণনায়। (আরবী) লাম ইয়াহফাযহুম – সে তাদের হেফাযত করেনি।
৩১০।মাকেল ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। অথচ সে তাদের জন্যে কল্যানকর কিছু করেনি। সে নিজের কল্যানের জন্যে যেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছে অপরের কল্যানের জন্যে যেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছে অপরের কল্যাণার্থে তা করেনি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে ব্যক্তিকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।ইবনে আব্বাসের অপরএক বর্ণনায় আছে।সেতাদের হিফাযতের দায়িত্ব এমনভাবে পালন করেনি যেমন নিজের ও নিজ পরিবার পরিজনের জন্যে করেছে।– তিবরানী, কিতাবুল খারাজ
স্বজন প্রিয় নেতাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী*) হীনুন- যখন। (আরবী) বাআসানী- আমাকে পাঠিয়েছেন। (আরবী) আশশামু- সিরিয়া। (আরবী) কারাবাতুন আত্নীয় স্বজন। (আরবী) আসাইতা-সম্ভবত। (আরবী) তুসিরাহুম- তুমি তাদের অগ্রাধিকার দেবে। (আরবী) বিল ইমারাতি- শাসন কাজে। (আরবী) আখাফু- আমি আশংকা করি। (আরবী) মুহাবাতান- ভালোবাসার খাতিরে। (আরবী) লানাতুল্লাহি- আল্লাহর অভিসম্পাত। (আরবী) সরফান- দান। (আরবী) আদলান-সৎকাজ।
৩১১।ইয়াযিদ ইবনে আবী সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে প্রধান সেনাপতি করে সিরয়া পাঠাবার কালে বললেন, হে ইয়াযিদ!তোমার কিছু আত্নীয়স্বজন আছে। বিচিত্র নয় যে তুমি দায়িত্ব অর্পনের ক্ষেত্রে তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে বসবে। আর তোমার ব্যাপারে আমি এ ভয়ই বেশী করছি। কেননা(এ ব্যাপারে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমানেদের কোন কাজের দায়িত্বশীল নিযুক্ত হবার পর ভালোবাসা বা আত্নীয়তার দরুন কাউকে তাদের শাসক বানায়। তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন দান দক্ষিনা গ্রহণ করবেন না। অবশেষে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।– কিতাবুল খারাজ
নেতার উদারতাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইসতাখলাফতুফা-আমি তোমাকে খলীফা নিযুক্ত করলাম।(আরবী) কাদ সাহিবতা- তুমি সাহচর্চ পেয়েছো।(আরবী) ফারাআ্ইতা- তুমি দেখেছো। (আরবী) আসারাতিহি- তাঁর প্রাধান্য দেয়ার রীতি। (আরবী) লানাযিল্লা লানাহদী- অবশ্য অবশ্যই আমরা হাদিয়া হিসেবে পাঠিয়ে দিতাম।
৩১২।আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দে্শ্য করে বলেন, হে খাত্তাবের পুত্র!মুসলমানদের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা আছে বলেই আমি তোমাকে এদের খলিফা নিয়ুক্ত করলাম। তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্রাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে আমাদিগকে তাঁর উপর এবং আমাদের পরিবার পরিজনকে তাঁর নিকট হতে যা পেতাম তার উদৃত্তটুকু শেষ পর্যন্ত তাঁর ঘরে হাদিয়া হিসাবে পাঠিয়ে দিতাম।– কিতাবুল খারাজ
ধৈর্য্যশীল নেতাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) হাককুন্নাসীহাতি- কল্যাণ কামনার অধিকার। (আরবী) আলমাউনাতু- সাহায্য। (আরবী) আররুআউ – দায়িত্বশীলগণ। (আরবী) হিলমুন- ধৈর্য্যূ। (আরবী) আআম্মু নাফআন – ব্যাপক কল্যাণকর। (আরবী) আবগাযু- অধিক অপছন্দনীয়। (আরবী) আআম্মু দারারান- ব্যাপক ক্ষতিকর। (আরবী) খারকিহি- তার অদূরদর্শিতা।
৩১৩। একদা উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বললেন, হে লোক সকল!তোমাদের উপর আমার হক হলো, তোমরা আমার অনুপস্থিতে আমার কল্যাণ কামনা করবেেএবং ভালো কাজে আমাকে সাহায্য করবে। অতঃপর বললেন, হে দায়িত্বশীলগণ! আল্লাহর নিকট নেতার ধৈর্য্য এবং নম্রতার চেয়ে অধিক প্রিয় ও ব্যাপক কল্যানকর আর কিছুই নেই। অনুরুপভাবে নেতার অজ্ঞতা ও অদূরদর্শিতার চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় ও ব্যাপক ক্ষতিকর বস্তু আল্লাহর নিকট আর কিছুই নেই।– কিতাবুল খারাজ
আনুগত্যের পরিসীমাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী***) আসসামাউ ওয়াততাআতু- কথা শুনা ও মানা। (আরবী) বিমা সিআতিন- নাফরমানী।
৩১৪।আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তির কথা শুনা ও মানা মুসলিম ব্যক্তির জন্যে অবশ্য কর্তব্য। সে হুকুম তার পছন্দমতো হকো বা না হোক। এ শর্তে যে, তা যেন নাফরমানী মূলক কাজের জন্যে না ঞয়।। আর যখন আল্লাহর নাফরমানীজনক কোন কাজের আদেশ তাকে দেয়া হবে তখন তা শূনা বা পালন করা যাবে না।– বুখারী ও মুসলিম
নেতা এবং জনগণের কল্যান কামনাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আদ্দীনু-দীন। (আরবী) আন্নাসীহাতু- শুভেচ্ছা, কল্যান।(আরবী) আয়িম্মাতুল মুসলিমীন- মুসলিম নেতৃবৃন্দ। (আরবী) আম্মাতুহুম- মুসলিম জনসাধারণের জন্য।(আরবী) আহিদনাকা আমরা আপনাকে দেখেছি।(আরবী) মুহম্মুন- কাজ। (আরবী) কাদ উল্লীতা- আপনার ওপর অর্পিত হয়েছে। (আরবী) আলওয়াদীউ- অভদ্র। (আরবী) আলআদুউন- শত্রু। (আরবী) আসসাদীকু- বন্ধু। (আরবী) আল আদলু-ইনসাফ। (আরবী) নুহাযাযিরুকা- আমরা আপনাকে সতর্ক করছি।(আরবী) তাজিফু- কাপবে। (আরবী) আলহুজাজু- দলীল, প্রমাণাদি। (আরবী) দাখিরুনা- নিরুপায়। (আরবী) আলআলানিয়্যাতু- প্রকাশ্য। (আরবী) আদাউন- শত্রুগণ। (আরবী) আসসারীরাতু- গোপন।
৩১৫।তামীম আদাদারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, শুভেচ্ছা ও কল্যান কামনার নামই হলো দ্বীন। একথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন।আমরা জিজ্ঞেস করলাম, শুভেচ্ছা ও কল্যাণ কামনা কার জন্যে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে, আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ ইসলামী জনতার জন্যে।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আরবী ভাষায় নসীহাত শব্দটি খিয়ানত, বেঈমানী ও ভেজালের বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার অর্থ হলো অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থভাবে কল্যান কামনা করা। নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর হুকুম পালন করার অর্থ সুস্পষ্ট। এ সম্পর্কে আমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনা অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
এমনিভাবে কিতাব এবং রাসূলের কল্যান কামনার অর্থ কুরআন ও রাসূল এর অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে এবং সাধারণ মুসলমানদের কল্যাণ কামনার ব্যাখ্যা সামাজিক জীবন অধ্যায়ে মুসলমানদের অধিকার শিরোনামে বর্ণিত হয়েছে। মুসলমানদের সামষ্টিক কাজের দায়িত্বশীলদের জন্যে কল্যাণ কামনার অর্থ হলোঃএদের সাথে হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাঁরা কোন কাজের নির্দেশ দিলে বিশ্বস্ততার সাথে তা পালন করা। দাওয়াত ও তানযীমের ব্যাপারে স্বতস্ফূর্তভাবে তাঁকে সাহায্য করা। তিনি কোন ভূল পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে মনে হলে আন্তরিকতার সাথে তা ধরিয়ে দেয়া ভূল পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে মনে হলে আন্তরিকতার সাথে তা ধরিয়ে দেয়া।ভূল পদক্ষেপ নিচ্ছেন দেখেও যদি তা ধরিয়ে দেয়া না হয় তা হলে দায়িত্বশীল ব্যক্তির অনিষ্ট ও অকল্যান কামনা করা হলো। এ ধরনের কাজ দলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকার শামিল।আর এটা তখনই সম্ভব যখন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কেবল গঠনমূলক সমালোচনা শুনার মতো মানসিকতার অধিকারীই হবেন না বরং তিনি লোকদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন। নেতার কোন ত্রুটি ধরিয়ে দিলে তিনি খুশি হবেন এবং তাদের জন্য দোয়া করবেন। কেবল এ অবস্থঅয়ই কোন শুভাকাঙ্খী স্বতস্ফূর্তভাবে নেতার ত্রুটির সমালোচনা করতে সাহসী হবে। আর যদি কেউ অশালীনভাবে নেতার ভূর সংশোধনের চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে নেতা সনম্রভাবে সমালোচনার পদ্ধতি শিখিয়ে দেবেন। এক ব্যক্তি এক সম্মেলনে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্যের বিরোধিতা করলে অন্য এক ব্যক্তি আমীরের প্রতি খেয়াল করে তাকে বিরত রাখতে চাইলে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেনঃ
(আরবী) তাকে বলতে দাও। যদি লোকেরা আমাকে এরুপ কথা বলতে না পরে তাহলে তাদের জন্যে কোন কল্যাণ নেই। আর আমি যদি এরুপ শুভাশীষ গ্রহণ না করি তাহলে আমার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।– কিতাবুল খারাজ
এ ধরনের অসংখ্য নমুনা আমাদের পূর্বসূরী মনীষীগণ আমাদের শিক্ষার জন্যে রেখে গেছেন। এর মধ্যে শাসক ও শাসিতের উভয়ের জন্যে নিহিত রযেছে হেদায়েত ও পথনির্দেশ। এখানে আমরা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর খিলাফতের দায়িত্বভার অর্পিত হলে আবু উবায়দা ও মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিকট এক যুক্ত পত্র লিখেন। এ পত্রের প্রতি শব্দে ও ছত্রে শুভেচ্ছা ও কল্যাণ নিংড়ে পড়েছিলো। পত্রটি ছিল নিম্নরুপঃ
(আরবী****)
এ পত্রটি আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ ও মুআয ইবনে জাবাল এর পক্ষ হতে উমর ইবনুল খাত্তাবের সমীপে।আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।ইতিপূর্বে আমরা আপনাকে দেখেছি, আপনি আপনার ব্যক্তি জীবনকে সুন্দর, সংশোধন ও সমুন্নত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। আর আজ আপনার উপর লাল কালো নির্বিশেষে গোটা জাতির প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বভার ন্যস্ত হয়েছে। আমীরুল মুমনিীন!আপনার, দরবারে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোক, সাধারণ লোক এবং শত্রু মিত্র নির্বিশেষে সকলেই আসবে। আপনার কাছে ইনসাফ পাওয়ার অধিকার এদের সকলেরই রয়েছে। অতএব আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি এর অবস্থায় কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করবেন। আমরা আপনাকে সে ভয়াবহ দিনের কথা স্মরন করিয়ে দিচ্চি যেদিন মানুষ মহাপরাক্রমশালী আল্রাহর সম্মুখে অবনত মস্তকে দন্ডায়মান আল্লাহর পেশকৃত দলীল প্রমানের সামনে অন্যদের প্রমাণসমূহ মূল্যহীন হয়ে পড়বে। গোটা সৃষি।ট অসহায় ও নিরুপায় হয়ে যাবে। সকলেই তার রহমতের প্রত্যাশা করবে এবংয় তাঁর কঠোর শাস্তি সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে।
আমাদের নিকট এরুপ হাদীস বর্ননা করা হয়েছে যে, এ উম্মতের লোকেরা শেষ যুগে বাহ্যত পরস্পরের বন্ধু হবে অথচ গোপনে একে অপরের শত্রু হবে। আপনি আমাদের এ পত্র সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা যাতে পোষণ না করেন সে জন্যে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।কেননা আমরা একমাত্রআপনার কল্যাণ কামনার্থেই পত্র লিখেছি। – ওয়াসসালামু আলায়কা।
এ চিঠি হযরত ওমরের নিকট পৌছার পর তিনি লিখেনঃ
(আরবী****)
ওমর ইবন খাত্তাবের নিকট হতে আবু উবায়দা ও মুআযের কাছে প্রেরিত হচ্ছেঃ আপনাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আপনাদের প্রেরিত চিঠি পেয়েছি। আপনারা উভয়ে লিখেছেন, ইতিপূর্বে আমি কেবল আত্নশুদ্ধি এবং আত্নপ্রশিক্ষণ ও সংরক্ষণের কাজেই নিজেকে নিয়োজিত রাখতাম। কিন্তু এখন আমার উপর গোটা জাতির দায়িত্বভার ন্যস্ত হয়েছে।আমার নিকট ভদ্র অভদ্র শত্রু মিত্র নির্বিশেষে সকলেই আগমন করবে এবং আমার নিকট ন্যায় বিচার লাভের প্রত্যেকেরেই অধিকার রয়েছে। অপনারা লিখেছেন, হে ওমর! এ অবস্থায় আাপনার কি করনীয় তা ভেবে দেখতে হবে। এর জবাবে আমি কেবল একথাই বলতে পারি যে, উমরের নিকট না আছে কোন কৌশল আর না আছে কোন শক্তি। যদি তার কোন শক্তি থেকেই থাকে তা কেবল আল্লাহর দেয়া শক্তি। যদি তার কোন শক্তি থেকেই থাকে তা কেবল আল্লাহর দেয়া শক্তি। অতঃপর আপনারা আমাকে যে পরিণাম সম্পর্কে ভয় দেখিয়েছেন সে সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তীদেরকেও ভয় দেখানো হয়েছিল। দিন ও রাতের এ আবর্তন মানব জীবনের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।প্রতিনিয়ত তা দূরের বস্তুকে পুরাতন করে দিচ্ছে। সকল ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবে রুপায়িত করছে।পরিশেষে মানুষ তাদের গন্তব্যস্থল জান্নাত অথবা জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে উপনীত হবে।
আপনারা চিঠিতে আরো ভয় দেখিয়েছেন যে, এ উম্মতের লোকেরা শেষ যমানায় বাহ্যত একে অপরের বন্ধু হবে কিন্তু গোপনে হবে পরস্পরের শত্রু। তবে মনে রাখা দরকার, আপনারা সে সকল লোক নন যাদের সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। আর এ যুগও সে যুগ নয় যে যুগে মুনাফেকী প্রকাশ পাবে। একথা সে যুগের জন্যে প্রযোজ্য যখন মানুষ স্বীয় পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসবে এবং পার্থিব স্বার্থ রক্ষার খাতিরেই একে অপরকে ভয় করবে।
অতঃপর আপনারা আমার ব্যাপারে আললাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আপনাদের চিঠি যেনো আমার মনে কোন ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না করে। নিঃসন্দেহে আপনারা আমার কল্যাণার্থে সত্য কথাই লিখেছেন। আগামীতে আপনারা এরুপ চিঠি লেখা হতে বিরত থাকবেন না। কেননা আমি সর্বদা আপনাদের এরুপ কল্যাণকর চিঠির মুখাপেক্ষী। আপনাদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। – আল মুসলিমুন, ফেব্রুয়ারি,১৯৫৪ ইং।
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
বিদআতীর প্রতি সম্মানঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়াকারা- সে সম্মান দেখালো। (আরবী) হাদামান- ধ্বংস করলো।
৩১৬।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে সম্মান দেখালো সে নিশ্চয়ই ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করলেঅ্- মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ বিদআতী বলতে সে ব্যক্তিকে বুঝায় যে ইসলামের মধ্যে এমন কোন মতবাদ বা কাজের অনুপ্রবেশ ঘটায় যা ইসলামের মূলনীতির সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং ইসলামের সাথে যার কোন মিল নেই। এরুপ ব্যক্তি ইসলামের ইমারত ধ্বংস করার কাজে সচেষ্ট। আর এসব ব্যক্তির প্রতি যে কেউ সম্মান দেখায় সে প্রকারান্তরে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য হলো, এ ধরনের লোকদেরকে মুসলিম সমাজে যেন সম্মানের চোখে দেখা না হয়। এদের মতবাদ যে েনা সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হয, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। এ হাদীসের প্রতি লক্ষ করলে এবং বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে প্রকৃত অবস্থা কি তা বুঝা যাবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিদআতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া মুমিনের কর্তব্য।
মুনাফিকের নেতৃত্বঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- কুলান্না- তোমরা কখনো বলবে না। (আরবী) সাইয়্যিদুন- নেতা।(আরবী) ফাকাদ অসখাততুম – তাহলে তোমরা অসন্তুষ্ট করলে।– মিশকাত।
ব্যাখ্যাঃ মুনাফিককে নেতা বলো না একথার অর্থ হলো, যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কথা ও কাজে গড়মিল করে। ইসলাম সত্য হবার ব্যাপারে যার বিশ্বাস নেই। ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে যার সন্দেহ আছে। িএরুপ ব্যক্তিকে কখনো নিজেদের নেতা মনোনীত করবে না। যদি এরুপ করো তা হলে তোমরা আল্লাহর অসন্তুষ্টির শিকারে পরিণত হবে।আর যার উপর আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন তার কোথাও আশ্রয় নেই। ইহকালে তার জন্যে রয়েছে লাঞ্চনা। আর পরনকালে তার ধ্বংস অনিবার্য্য।
মদ পানকারীর সেবাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা তাউদু-তোমরা দেখতে বা সেবা করতে যেয়োনা।(আরবী)শুররাবাল খামরি –মদ্যপায়ী।
৩১৮।আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদ্যপায়ী অসুস্থ হলে তাকে দেখতে ও সেবা করতে যেয়ো না। – আদাবুল মুফরাদ
দ্বীনের ব্যাপারে আপোষ করার পরিণামঃ
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী)ওয়অকাআত- লিপ্ত হলো, শরু করলো। (আরবী) আলমাআসী- নাফরমানী। (আরবী) নাহাতহুম- বিরত থাকতে বললো। (আরবী) লাম ইয়ানতাহু- তারা বিরত হলো না। (আরবী) কানু ইয়াতাদূনা- তারা নাফরমানীর রাস্তা অবলম্বন করেছিলো। (আরবী) ফাজালাসা- তারপর তিনি বসলেন। (আরবী) কানা মুত্তাকিআন- তিনি ঠেস দিয়ে বসেছিলেন। (আরবী) লাতানহাউন্না- তোমরা অবশ্যই ধরে রাখবে। (আরবী) আল মুনকারা- খারাপ কাজ। (আরবী) লাতাখুযান্না – অবশ্যই ধরে লাখবে। (আরবী) লাতাতিরান্নাহু- তোমরা অবশ্যই তাকে ফিরিয়ে দেবে। (আরবী) লাইয়ালআনান্নাকুম- তোমাদেরকে অবশ্যই অভিসম্পাত করবেন।
৩১৯।আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈল যখন আল্লাহর নায়ফরমানীর কাজ করতে শুরু করলো। আলেম সম্প্রদায় তাদেরকে এ কাজ হতে রিত থাকতে বললো। কিন্তু তারা এ কাজ হতে বিরত হলো না। অতঃপর আলেম সম্প্রদায় (তাদেরকে বয়কট করার পরিবর্তে) তাদের বৈঠকসমূহে উঠাবসা করতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে খাওয়া – দাওয়া শুরু করে দিলো। ফলে আল্লাহ তাদের সকলের অন্তরকে এক রকম করে দিলেন এবং দাউদ আলাইহে ওয়অসাল্লাম ও ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহে ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহ সকলের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করলেন। কেনোনা তারা নায়ফরমানীর রাস্তা অবলম্বন করেছিলো এবং এ কাজে তারা সীমাহীন বাড়াবাড়ি করছিলো।
এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠেস দিয়ে বসেছিলেন। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন,কখনো নয়!যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম খেয়ে বলছি। তোমরা মানুষকে ভাল কাজের জন্যে অবশ্যই নির্দেশ দিতে থাকবে এবং খারাপ কাজ হতে বিরত রাখবে। যালিমের হাতকে অবশ্যই ধরে রাখবে ও তাকে হকের দিকে উদ্ধুদ্ধ করবে। অন্যথায় আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের সকলের অন্তরকে এক করে দেবেন। অতঃপর বনী ইসরাঈলের ন্যায় তোমাদেরকে স্বীয় রহমত ও হিদায়াত হতে দূরে নিক্ষেপ করবেন।– বায়হাকী, মিশকাত
অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখা এবং অপুরিহার্য্য দায়িত্বঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলমুদহিনু- শৈথিল্য প্রদর্শনকারী। (আরবী) হুদূদুল্লাহি- আল্লাহর শাস্তি বিধান। (আরবী) ইসতাহামূ- তারা লটারী ধরেছে। (আরবী) আসফালাহা- তার তলদেশ, তার নিচের অংশ। (আরবী) আলাহা- এর ওপরের অংশেল। (আরবী) ফাসান- কুড়াল। (আরবী) জাআলা ইয়ানকুরু- ভাঙ্গতে শুরু করলো। (আরবী) আনজাওহু- তারা তাকে বাঁচাবে। (আরবী) আহলাকুহূ- তার তাকে ধ্বংস করবে।
৩২০।নোমান ইবনে বশীল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশাবলী লংঘন করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম লংঘিত হচ্ছে দেখেওে তার প্রতিকার করে না বরং লংঘনকারীর সঙ্গে সদ্ভাদ বজায় রেখে চলে। এ দু ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হলো যেমন একদল লোক একটি নৈাকা সংগ্রহ করে লটারীর মাধ্যমে ঠিক করলো যে, কিছু লোক উপরের তলায় ও কিছু লোক নিচের তলায় থাকবে।নীচের তলায় যারা অবস্থান নিয়েছিলো তাদেরকে পানির জন্যে উপর তলার লোকদের নিকট দিয়ে যেতে হতো। য়ফলে উপরেরেোকেরা অসুবিধা বোধ করতো। অবশেষে নীচের লোকগুলো পানির জন্যে কুঠার নিয়ে নৌকার তলদেশে ভাঙ্গতে শুরু করলো। উপরের লোকেরা এবার নিচে এসে জিজ্ঞেস করলো তোমরা এ কি করছো? জবাবে তারা বললো, আমাদের পানির প্রয়োজন। আর সমুদ্রের পানি উপরে গিয়েই সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু তোমরা আমাদের যাওয়া আসায় বিরক্তি বোধ করছো। সুতরাং এখন আমরা নৌকার তলদেশ ভেঙ্গে সমুদ্র হতে পানি সংগ্রহ করবো্
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উপমা বর্ণনা করে বলেলেন, যদি উপরের লোকেরা নীচের লোকদের হাত ধরে নৌকার তলদেশ ছিদ্র করা থেকে বিরত না রাখতো তাহলে তাদের নিজেদেরকেও সাগরে ডুবে মরতে হতো। কিন্তু তারা নিচের লোকদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রেখে নিজেরাও বাঁচলো তাঁদেরকে বাচাল।– বুখারী
প্রতিবেশীকে দ্বীনের শিক্ষা দেয়াঃ
(আরবী********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আছনা-তিনি প্রশংসা করলেন। (আরবী) তাওয়ায়িফুন-দলগুলো। (আরবী) আকওয়ামুন- গোত্রসমূহ।(আরবী) লা- ইউফাককিহূনা তারা বুঝছেনা। (আরবী) জীরানাহুম- তাদের প্রতিবেশীর। (আরবী) লা ইয়াত্তায়িযূনা- তারা উপদেশ গ্রহণ করে না। (আরবী) লাউআজিলান্নাহুমুল উকূবাতা- আমি তাদেরকে শীঘ্রই প্রদান করবো। (আরবী) জুফাতুন- মূর্খ। (আরবী) আলআরাবু- বেদুঈন। (আরবী) নুফাততিনু- আমরা শিক্ষা দিবো।
৩২১।একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দান কালে একদল মুসলমানদের প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, সে সব লোকের কি হলো। তারা স্বীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে দ্বীনের অনুভূতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে না। তাদেরকে দ্বীনের তালীম দিচ্ছেনা এবং দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ না করারা পরিণতি সম্পর্কে হুশিয়ার করছে না। তাদেরকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখছে না। আর সে সকল লোকের কি হয়েছে যারা স্বীয় প্রতিবেশীদের নিকট হতে দ্বীনের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করছে না।দ্বীনি জ্ঞান অর্জন না করার অশূভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক হচ্ছে না? আল্লাহর কসম!মানুষ যে েনা অবশ্যই নিজের প্রতিবেশীকে দ্বীনের শিক্ষা দান করে। তাদের মধ্যে দ্বীনের সঠিক অনুভূতি সৃষি।ট করে। তাদেরকে উপদেশ দান করে এবং তাদেরকে যেন ভালোকাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে রিত রাখে। এভাবে মানুষ যেনো স্বীয় প্রতিবেশীর কাছ থেকে অবশ্যই দ্বীনের শিক্ষা ও জ্ঞান হাসিল করে। তাদের উপদেশ ও নসীহত গ্রহণ করে। অন্যথায় আমি তাদেরকে শীঘ্রই শাস্তি প্রদান করবো। অতঃপর তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করলেন এবং বক্তৃতা শেষ করলেন।
শ্রোতাদের মধ্য হেত কিছু লোক জিজ্ঞস করলো, এসব লোক কারা যাদের বিরুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বক্তৃতা করলেন?অন্য লোকেরা জবাবে বললো, রাসূলের বক্তৃতা ছিলো আশআরী গোত্রের লোকদের উদ্দেশ্যে। কেনোনা এরা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতো। কিন্তু এদের প্রতিবেশীরা ছিলো ঝর্ণার অধিবাসী গ্রামীন মূর্খ লোক। আশআরী গোত্রের লোকদের নিকট এ বক্তৃতার খবর পৌছলে তারা রাসূলের দরবারে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল!আপনি আপনার ভাষণে কিছু লোকের প্রশংসা করেছেন এবং আমাদের উপর ক্রোধান্বিত হযেছেন। আমাদের কি ভুল ত্রুটি হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষ তার প্রতিবেশীকে অবশ্যই দ্বীনের শিক্ষা দেবে। তাদেরকে নসীহত করবে এবং ভাল কাজের নির্দেশ দেবে। অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। অনুরুপভাবে মানুষ নিজ প্রতিবেশীর নিকট হতে অবশ্যই দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। নসীহত গ্রহণ করবেএবং নিজেদের মধ্যে দঈনের সঠিক উপলদ্ধিসৃষ্টি করবে। অন্যথায় আমি অতি শীঘ্র তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবো। আশআরী গোত্রের লোকেরা আজ করলো, হে আল্রাহর রাসূল! আমরা কি অপরকে দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা দেবো? (অর্থাৎ শিক্ষাদান ও প্রচারকার্য ও কি আমাদের দায়িত্ব) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ দ্বীনের জ্ঞান প্রদান করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব। অতঃপর তারা নিবেদন করলো, আমাদেরকে এক বছরের সময় দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বছরের সময় দিলেন। যে সময়ে তারা প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বীনের জ্ঞান দান করবে এবং শরীয়তের হুকুম আহকাম সম্পর্কে অবহিত করবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াতটি পাট করলেনঃ
(আরবী)
সূরায়ে মায়েদার এ আয়াতটির অর্থ হলো, বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের উপর দাউদ আলাইহিস সালাম এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহি সালামের ভাষায় অভিসম্পাত করা হয়েছে। আর এ অভিসম্পাত এ জন্যে করা হয়েছে যে, তারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে এভং অব্যাহতভাবে আল্লাহর হুকুম লংঘন করে চলেছে। তারা পরস্পরকে অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখেনি। নিঃসন্দেহে তাদের এসব কাজ ছিলো অত্যন্ত গর্হিত ।- তিবরানী
আমলহীন আহবান
নিজে সংশোধিত না হয়ে অপরকে উপদেশ দানঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) েইউজাযু- আনা হবে।(আরবী) ফাতানদালিকু- অতপর বের হয়ে পড়বে। (আরবী) আকতাবুহু- তার নাড়ীভূঁড়ি। (আরবী) ফাইউতহানু- তারপর সে পিষবে। (আরবী) কাতাহনিলহিমারি – গাধার পিষার মত। (আরবী) রুহাহু- তার চাক্কি। (আরবী) মা শানুকা- তোমার কি অবস্থা?
৩২২।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেচেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তার নাড়ীভুড়ি আগুনের মাঝেই বেরিয়ে আসবে। অতৎপর সে এ নাড়ীভূড়ি সহ আগুনের মাঝে এমনভাবেচলাফেরা করবে যেমন পশু ঘানির চারিদিকে ঘুরাফেরা করে। এ অবস্থা দেখে অন্য জাহান্নামবাসী তার নিকট এসে জড়ো হবে এবং জিজ্ঞেস করবে, কিহে! তোমার এ অবস্থা কেনো? তুমি কি আমাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দান এবং অন্যায় কাজ করা হতে নিষেধ করোনি? (এরুপ নেক কাজ করা সত্ত্বেও তুমি এখানে এলে কি ভাবে?)
সে ব্যক্তি জবাবে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎকাজের দীক্ষা দিতাম ঠিকই।কিন্তু আমি নিজে তার ধারে কাছেও যেতাম না এবং পাপ কাজ হতে তোমাদেরকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু আমি নিজে তা করতাম।– বুখারী, মুসলিম
আগুনের কাঁচিঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) উসরিয়া বী- আমাকে রাতে ভ্রমণ করানো হয়। (আরবী) তুকরাযু- কাঁচি দিয়ে কাটা হবে। (আরবী) শিফাহুহুম- তাদের ঠোট। (আরবী) মাকারীযুন- কাঁচিসমূহ। (আরবী) খতাবাউ-বক্তা, ওয়ায়েজ।
৩২৩।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি মিরাজের রাতে এমন কিছু ব্যক্তিকে দেখেছি যাদের ঠোটগুলি আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে ফেলা হচ্ছিল। আমি জিবরীল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, এসব লোক কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের খতীব (বক্তা) যারা মানুষকে নেক কাজের নির্দেশ দিতো আর নিজেদের ব্যাপারে উদাসীন থাকতো। অর্থাৎ বাস্তবে জীবনে নিজেরা তা পালন করতো না। -মিশকাত
পালনীয় কাজঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইতি- তুমি করবে। (আরবী) আলমারুফা- ভাল কাজ (আরবী) ইজতানিব – তুমি ফিরে থাকবে। (আরবী) ইউজিবু- ভালো লাগে।(আরবী) ইতিহি- তা করো।
৩২৪।হারমালা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বললেন, তুমি ভালো কাজ করবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকবে। আর মনে রাখবে, যদি তুমি একথা কামনা করো যে, কোন সমাবেশ হতে চলে আসার পর লোকজন তোমার উত্তম গুণাবলীর প্রশংসা করুক। তাহলে তোমাকে সে সব উত্তম কার্যাবলী সম্পাদন করতে হবে। এমনিভাবে তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার কার্যাবলী সম্পর্কে যেসব কথা বলা তুমি অপছন্দ করো তুমি সে সব কাজ হতে বিরত থাকবে।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ মানুষ কামনা করে লোকেরা তাকে উত্তম লোক হিসাবে স্বরণ করুক। অতএব তার উত্তম কার্যাবলী সম্পাদন করা উচিত। এমনিভাবে কোন মানুষ এটা চায়না যে লোকেরা তার কুৎসা করুক। সূতরাং খারাপ কাজ হতে বিরত থাকা প্রত্যেকেরই কর্তব্য।
নিজেকে দিয়ে দাওয়াতের কাজ শুরু করাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলমানযিলাতু-মর্যাদা(আরবী) আন তুফাতদাহা- অপমানিত হওয়া। (আরবী) আহকামতা- তুমি হুকুম পালন করেছ। (আরবী) ফাবদা- অতএব তুমি শুরু কর।
৩২৫।একদা এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এসে বললেন, আমি দ্বীনের দাওয়াত অর্থাৎ আমর বিল মারুফ এবং নাহী আনিল মুনকারের কাজ করতে চাই। তিনি বললেন, তুমি কি উক্ত মর্যাদায় পৌছেছো? তিনি বললেনঃ হাঁ আশা তো করি। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যদি তুমি মনে করো যে কুরআন মজীদের তিনটি আয়াত কর্তৃক তোমার অপমানিত হবার কোন আশংকা নেই তাহলে অবশ্যই তুমি দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করবে।সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, আয়াত তিনটি কি? ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন-
প্রথম আয়াতটি হলোঃ
(আরবী***)
তোমরা কি লোকদেরকে ভাল কাজের নির্দেশ দিচ্ছো আর নিজেদের কথা বেমালমুম ভূলে যাচ্ছো? (বাকারাঃ৪৪) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনুহু বললেন, তুমি এ আয়াতের উপর ভালোভাবে আমল করছো? তিনি বললেন না।
দ্বিতীয় আয়াতটি হলোঃ
(আরবী)
তোমারা কোন এমন কথা বলো যা নিজেরা করো না? (সুরা সাফঃ ০২) এ আয়াতের ্পর কি তুমি যথাযথ আমল করেছো? তিনি বললেন, না করিনি।
আর তৃতীয় আয়াতটি হলোঃ
(আরবী***)
শুয়াইব আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আমি যেসব খারাপ কাজ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করছি সেসব কাজ আমি নিজে করবো এমন উদ্দেশ্য আমার নেই।বরং এমন কাজ হতে আমি অনেক দূরে থাকবো এবং তোমরা আমার কথা ও কাজে কোনরুপ বেমিল দেখতে পাবে না। (হুদঃ৮৮) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন, এ আয়াতের উপর তুমি ভালোভাবে আমল করছো? তিনি বললেন, না। তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যাও সর্বপ্রথম নিজেকে সৎকাজের আদেশ দাও এবং খারাপ কাজ হতে বিরত রাখো। এ হলো একজন মুবাল্লিগের জন্যে প্রথম সোপান।– আদ দাওয়াত।
ব্যাখ্যাঃ এ ব্যক্তি সৎকাজের প্রতি আমল করার ব্যাপারে নিজে ছিলেন উদাসীন এবং অপরকে দ্বীনের নসীহত করার ক্ষেত্রে ছিলেন অতি উৎসাহী। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সঠিক অবস্থা অনুধাবন করে তাকে উত্তম পরামর্শ দান করেছেন।
জ্ঞান ও কাজঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) নাফিউন- উপকারী।(আরবী) হুজ্জাতুন- দলীল, প্রমাণ।
৩২৬।হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জ্ঞান দুপ্রাকার ।এক প্রকার জ্ঞান হলো যা মুখ অতিক্রম করে অন্তরে গিয়ে স্থান নেয়।এ জ্ঞানই কিয়ামতের দিন কাজে আসবে। আর এক প্রকারের জ্ঞান আছে যা মুখ পর্যন্তই থাকে। অন্তরে পৌছে না। এ জ্ঞান মহামহিম আল্লাহর দরবারে বনী আদমের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড়াবে।– দারামী
ব্যাখ্যাঃ অর্থাঃ এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ এ বলে শাস্তি দেবেন যে, তুমি তো সবকিছু জানতে বুঝতে।তবু কেন আমলের দ্বারা পাথেয় সঞ্চয় করে আনলে না। যদি করতে, এখানে তোমার কাজে আসতো।
দ্বীনি শিক্ষা অর্জন
দ্বীনের সঠিক জ্ঞানঃ
(আরবী**)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) খাইরান- কল্যাণ। (আরবী) ইউফাককিহুহু- তাকে সঠিক জ্ঞান দান করেন।
৩২৭।মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যে ব্যক্তিকে বিশেষ কল্যাণ দান করতে চান তাকে তিনি দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ বলা বাহুল্য, দ্বীনের সঠিক জ্ঞান সকল কল্যানের উৎস। যিনি এ মূল্যবান বস্তু লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করেছেন। তিনি এ জ্ঞান দ্বারা নিজের জীবনকে যেমন সুন্দরভাবে গড়ে তুলবেন তেমনি আল্লাহর অন্য বান্দাদের জীবনকেও সুন্দর করে গড়ে তুলবার চেষ্টা করবেন।
বিদ্যা অর্জনের প্রতিদানঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সালাক- সে পথ অতিক্রম করেছে। (আরবী) ইয়ালতামিস- সে অন্বেষণ করে। (আরবী) সাহহালা- সহজ করে দেন। (আরবী) ইয়াতাদারাসূনাহু- তারা তা পর্যালোচনা করে। (আরবী) আসসাকিনাতু- প্রশান্তি। (আরবী) গাশিয়্যাতাহুম- তারে ঘিরে রাখে। (আরবী) হাফফাতহুম- তাদের ঘিরে রাখে। (আরবী) বাততাআ- পিছে পড়ে যায়।
৩২৮। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি রাস্তা অতিক্রম করে (সফর করে) আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতের রাস্তা সুগম করে দেন। আর যেসব লোক আল্লাহর ঘরসমূহের যে কোন একটিতে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতবা পাঠ এবং পর্যালোচনা করেন, তাদের উপর আল্লাহর তরফ হতে প্রশান্তি বর্ষিত হতে থাকে। তাদেরকে আল্লাহর রহমত বেষ্টন করে রাখে। আল্লাহর ফিরিশতাগণও তাদেরকে পরিবেষ্টিত করে রাখেন এবং আল্লাহ তার ফেরেশতাদের মজলিসে তাদে কথা আলোচনা করেন। আর যদি কোন ব্যক্তি নিজের আমল দ্বরা পেছনে পড়ে যায় তাহলে তার বংশ মর্যূাদা তাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবে না।– মুসলিম।
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিকে দ্বীনি ইলম শিক্ষার্থীদেরকে যেমন শুভ সংবাদ দান করেছেন। অপরদিকে তাদেরকে তেমনি সতর্কও করে দিয়েছেন যে, দ্বীন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো- এ মোতাবেক আমল করা। তা না হলে পেছনে পড়ে থাকবে। এ আমলহীন জ্ঞান তাকে সমমুখে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে না। আর জ্ঞানহীন ব্যক্তির বংশ মর্যাদাও কোন কাজে আসবে না। বস্তুত আমল ছাড়া অন্য কিছুতেই মানুষ উচ্চ মর্যাদায় আসীন হতে পারে না।
যিকর এবং ইলমের তুলনাঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়াদাউনা- তারা প্রার্থনা করে। (আরবী) ইয়ারগাবূনা- তারা অনুনয় করছে। (আরবী) ইয়াতাআল্লামূনা- তারা শিক্ষা লাভ করেছে।(আরবী) ইউ আল্লামুনা- তারা শিক্ষা দিচ্ছে। (আরবী) আলজাহিলু- মুর্খ, অজ্ঞান। (আরবী) আফযালু- বেশী উত্তম। (আরবী) মুআল্লামান- শিক্ষক।
৩২৯।আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেন। তখন সেখানে দুদল লোক বসা ছিলো। একদলযিকি, তাসবীহ ও তাহলীলে মগ্ন ছিলেন। অন্য দলটি দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ ও দানে লিপ্ত ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বললেন, দুটি দলই নেক কাজে লিপ্ত আছে। কিন্তু একটি দল অপরটি হতে উত্তম। এ দলের লোকগুলো তো আল্লাহর যিকির, দোয়া ও ইসতেগফারে ব্যস্ত। আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদেরকে কিছু দিতে পারেন। আবার ইচ্ছে করলে নাও দিতে পারেন। আর অপর দলের লোকেরা নিজেরা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করছে ও অন্য লোককে শিক্ষা দানে নিয়োজিত রয়েছে।আর তারাই উত্তম। আমাকে একমাত্র শিক্ষকরুপেই দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। একথা বলে তিনি এ দলটির সাথে বসে গেলেন।– মিশকাত
দাওয়াত এবং তাবলীগের গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা
সপ্তাহে একবার নসীহত
(আরবী*******************)
শব্দের অর্থঃ
(আরবী) ইউযাককিরু- ওয়াজ নসিহত করতেন। (আরবী) খামীসিন- বৃহস্পতিবার। (আরবী) লাওয়অদিদতু- আমরা চাই। (আরবী) যাক্কারতানা- আপনি আমাদের নসীহত করেন। (আরবী) ইয়ামনাউনী- আমাকে বিরত রাখে।(আরবী) উমিল্লাকুম –তোমাদের বিরক্তি। (আরবী) আতাখাওয়ালুকুম- আমি তোমাদের বিরতি দেই। (আরবী) আসসাম্মাতু – বিরক্তি।
৩৩০।আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রত্যেক বৃহস্পতিবার মানুষকে ওয়াযনসীহত করতেন। এক ব্যক্তি আরজ কলো। হে আবদুর রহমান! আমরা চাই আপনি প্রতিদিন নসীহত করুন। তিনি বললেন, প্রতিদিন নসীহত করা হতে যে জিনিস আমাকে বিরত রেখেছে তা হলো তোমাদের বিরক্তি। আর তোমরা বিরক্ত হও তা আমি পছন্দ করি না।
আমি বিরতি দিয়ে নসীহত করি যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরতি দিয়ে আমাদেরকে নসীহত করতেন। এ আশংকায় যেনো আমরা বিরক্ত না হয়ে পড়ি।– বুখারীও মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়ের আমল দ্বারা প্রমাণিত হলো দ্বীনের দাওয়াত প্রদানকারীর জন্যে কারো উপর বোঝা হয়ে (অর্থাৎ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে) ওয়অয নসীহত করা উচিত নয়। বরং স্থান , কাল , পাত্র বুঝে দাওয়াত পেশ করা উচিত। কৃষক যেমন সর্বদা বৃষ্টির অপেক্ষা করতে থাকে। বৃষ্টি তওয়অ মাত্র জমি প্রস্তুত করতে লেগে যায়। অনুরুপভাবে মুবাল্লিাগকে শ্রোতাদের মন মানসিকতা ও পরিবেশের অপেক্ষায় থাকতে হবে। প্রতিকূল পরিবেশে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করা মোটেই উচিত নয় এমনিভাবে দাওয়াত পেশ করার সেোগ হাতছাড়া করাও যক্তিযুক্ত নয়।
অধিক নসীহতের কুফলঃ
(আরবী*****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- তামুল্লানা- বিরক্ত করো না। (আরবী) লা- উলফিইয়ান্নাকা- আমি তোমাকে অবশ্যই পাবো না। (আরবী) তাকুসস- তুমি কাটবে।(আরবী) তাকতাউ- তুমি বন্ধ করবে।(আরবী) তুমিল্লাহুম – তুমি তাদেরকে বিরক্ত করবে।(আরবী) আনসিত- চুপ থাকবে। (আরবী) হাদ্দিসহুম- তাদের সাথে কথা বলবে। (আরবী) ইয়াশতাহূনাহু- তারা তার জন্য আগ্রহী।
৩৩১। ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন। প্রত্যেক সপ্তাহে একবার (জুমআর দিন) নসীহত করো। অধিক দুবার, এর অধিক তিনবার করতে পারো। তবে তিনবারের অধিক নসীহত করো না এবং মানুষকে এ কুরআন সম্পর্কে বিতৃঞ্চ করে তুলো না। আর কখনো এমনটি যেনো না হয় যে, তুমি একদল লোকের নিকট যাবে তখন তারা নিজেদের কথাবার্তায় লিপ্ত আছে। এরি মধ্যে তুমি তাদের কথার মাঝে কথা মূরু করে দেবে। তাদের আলোচনায় বিঘ্ন ঘটাবে। যদি এরুপ করো তাহলে তাদেরকে নসীহতের প্রতি বিতৃঞ্ করে তুলবে। বরং এমন অবস্থায় নীরব থাকা্ই উত্তম। অতঃপর যখন তারেদ মধ্যে আগ্রহ লক্ষ করবে এবং তোমাকে কথা বলার জন্যে অনুরোধ জানাবে কেবল তখনই তাদের নিকট নসীহতপূর্ণ বক্তৃতা পেশ করবে। লক্ষ রাখবে যেনো বক্তৃতায় তোমাদের ভাষা ছন্দযুক্ত ও দুর্বোধ্য না হয়। কেনোনা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে এরুপ ভাষা প্রয়োগ করতে দেখিনি।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ ইমাম সারাখাসী রাহমাতুল্লাহে আলাইহি মাবসুত গ্রন্থে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আরবী**)
এমন পন্থা অবলম্বন করো না যাতে মানুষ আল্লাহর ইবাদতের প্রতি বিতৃঞ্চ হয়ে উঠে।
অনুরোধ জানাবে কথার মর্ম এই যে, মুখে আগ্রহের কথা জানাবে কিংবা তাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারবে যে তারা এখন দ্বীনের কথা শুনতে মানসিকভাবে প্রস্তুত।
দ্বীনের সহজ পদ্ধতিঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) বা আসা- তিনি পাঠালেন, আদেশ দিলেন। (আরবী) হাযারাতুন- উত্তম অংশ। (আরবী) আনফুসি- প্রিয় বস্তু। (আরবী) আলবাদিয়াতু- বেদুঈন। (আরবী) আশশারিফু- বৃদ্ধা উটনী। (আরবী) আল বিকরু- অল্প বয়স্ক। (আরবী) যাতালআইবি- ত্রুটিযুক্ত। (আরবী) লাতাখতারান্না- অবশ্যই আপনাকে উত্তম উট নিতে হবে।
৩৩২।যাকাত ফরয করার পর যখন আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে মানুষের নিকট হতে যাকাত উসূল করার জন্যে আদেশ দিলেন। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্যে আদেশ দিলেন। তখন তিনি এক বক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত করলেন।তাকে এ মর্মে উপদেশে দিলেন, দেখো! যাকাত আদায়কালে মানুষের সর্বোত্তম মাল যার প্রতি তার আন্তরিক টান আছে তা গ্রহণ করো না।বৃদ্ধা উষ্ট্রীর বাচ্চা হয়নি এবং ত্রুটিযুক্ত উট ও এ ধরনের জানোয়ার উসূল করবে। সুতরাং যাকাত উসুলকারী ব্যক্তি মানুষের নিকট গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা্হু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মোতাবেক যাকাত উসূল উসূল করলেন। অবশেষে তিনি এক গ্রাম্য ব্যক্তির নিকট গেলেন এবং বললেন, আল্লাহ তার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানুষের নিকট হতে যাকাত উসুল করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এ যাকাত তাদেরকে পবিত্র করবে এবং তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেবে। সে ব্যক্তি বললো আপনি ইচ্ছে মতো আমার এ জানোয়ারসমূহ হতে যাকাত গ্রহণ করুন। তিনি গিয়ে সেখানে হতে বৃদ্ধ, বাচ্চাহীন এবং ত্রুটিযুক্ত কয়েকটি উট বেছে নিলেন।এ অবস্থা দেখে লোকটি বললো, আপনার পূর্বে আমার উট হতে আল্লাহর হক আদায় করার জন্যে কাউ আসেনি। আল্লাহর কসম! আপনাকে অবশ্যই উত্তম উট গ্রহন করতে হবে। (আল্লাহর দরবারে এরুপ খারাপ জিনিস কিভাবে উপস্থিত করা যায়?) – কিতাবুল খারাজ- আবু ইউসুফ
ব্যাখ্যাঃ যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দিনেই মানুষের উত্তম মালসমূহ যাকাত হিসেবে আদায়ের নির্দেশ দিতেন তা হলে এ নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ঘোষণার সমূহ সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে করলো। তখন শহর হতে অনেক দূরে বসবাসকারী লোকেরাও যাকাত আদায়কারীকে যাকাতের জন্যে উত্তম মাল গ্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করতো।
কথা বলার পদ্ধতিঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আআদাহা- তিনি তা দোহরাতেন। (আরবী)তাফহামা – বুঝতে পারে।
৩৩৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন তিনবার বলতেন (যখন প্রয়োজন বোধ করতেন) যেনো তা মানুষ ভালোভাবে বুঝতে পারে।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ প্রত্যেক ভাষায়ই কথা বলা, বক্তৃতা করার এক বিশেষ পদ্ধতি আছে। যা জানা থাকা অত্যন্ত জরুরু। কথা বলা বা বক্তৃতা দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্যে হচ্ছে মানুষের অন্তরে তা প্রবেশ করানো। শ্রোতার অবস্থাভেদে ভাষা ও ভাব অবলম্বন করতে হবে। কম শিক্সিত লোকের সামনে দর্শনভিত্তিক আলোচনা এবং দু্র্বোধ্য শব্দসমূহ ব্যবহার করা মূলত দাওয়াতকে বিফল করে তোলারই নামান্তর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তৃতা ও বর্ণনা অত্যন্ত পরিস্কার ও সাবলীল হতো। যে কেউ তা শুনামাত্র বুঝে ফেলতো।
আবেগ ও প্রবণতার প্রতি লক্ষঃ
(আরবীঁ*********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) শাহওয়াতুন-আগ্রহ, কামনা। (আরবী) িইকবালুন –প্রস্তুত। (আরবী) ইদবারুন- অপ্রস্তত, পিছুটান। (আরবী) উকরিহা- মন যা চায় না।(আরবী) উমিয়া- সে অন্ধ হয়ে যায়। অস্বীকৃতি জানায়।
৩৩৪।আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, অন্তরের কিছু আগ্রহ ও কামনা থাকে। কখনো সে কথা শুনার জন্যে প্রস্তুত থাকে এবং কখনো তার জন্যে প্রস্তুত থাকে না। অতএব মানুষের অন্তরে সে অবেগ ও অনুভুতির প্রতি লক্ষ রেখেই কথা বলবে। কেনোনা মনের অবস্থার বিরুদ্ধে কিছু শুনাতে গেলে অন্ধ হয়ে যায় এবং একথা কবুল করতে অস্বীকৃতি জানায়। – কিতাবুল খারাজ।
আশা ও নিরাশার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাম ইয়াকনিত- নিরাশ করে না। (আরবী) লাম ইউরাখখিছ- বেপরোয়া হতে দেয় না। (আরবী) লাম ইউআম্মিনহুম – তাদের নির্ভয় হতে দেয় না।
৩৩৫। আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন। সে ব্যক্তিই সবচেয়ে বিজ্ঞ আলেম। যে ব্যক্তি (তার বক্তৃতার মাধ্যমে) মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করেন না। এমনিভাবে আল্লাহর নাফরমানীর কাজেও তাদেরকে বেপরোয়া হতে দেন না। আল্লাহর শাস্তির প্রতি নির্ভয় করে তুলেন না। – কিতাবুল খারাজ
ব্যাখ্যাঃ মোটকথা এমনভাবে নসীহত করা ঠিক নয় যার ফলে মানুষ নিজের পরিত্রাণ এবং আল্লাহর রহমত সম্পর্কে নিরাশ হয়ে পড়ে। আবার তাকে আল্লাহর অশেষ দয়া ও করুণা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফাআত সংক্রান্ত ভূল ও অতিরঞ্চিত ব্যাখ্যা প্রদান করে আল্লাহর নায়ফরমানীর প্রতি বেপরোয়া করে তোলাও ঠিকনয়। সঠিক পদ্ধতি হলো, উভয় দিকই তার সামনে তুলে ধরতে হবে যেনো সে নিরাশ না হয়ে যায়। আবার বেপরোয়াও হয়ে না উঠে।
দ্বীনের খাদেমদের জন্যে সুসংবাদ
দ্বীনের রক্ষকগণ আল্লাহর আশ্রয়ে অবস্থান করেনঃ
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা ইয়াযালু- সবসময় থাকে। (আরবী) কায়িমাতুন- বর্তমান থাকে, প্রতিষ্ঠিত থাকে। (আরবী) বিআমরিল্লাহি- আল্লাহর হুকুমের।(আরবী) লা ইয়দুররুহুম- তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। (আরবী) খাযালুহুম- তাদের লাঞ্চিতকরেছে। (আরবী) খালাফাহুম – তাদের বিরোধীতা করেছে।
৩৩৬। মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেচেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। আমার উম্মতের মধ্যে সবসময় এমন একদল লোক বর্তমান থাকবে যারা হবে আল্লাহর হুকুমের বাহকও তাঁর দ্বীনের রক্ষক। যেসব লোক তাদের মত পোষণ করবে না কিংবা তাঁদের বিরোধিতা করবে তারা তাঁদেরকে ধ্বংস করতে কিংবা তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। অবশেষে আল্লাহর ফায়সালা এসে যাবে। আরএ দ্বীনের রক্ষকগণ এ অবস্থার উপর দৃঢ় থাকবে।– বুখারী, মুসলিম
রাসূলের প্রেমিকগণঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী)ইয়কূনূনা- তারা হবে। (আরবী) ইয়াওয়াদ্দা – সে ভালোভাসবে। (আরবী) রাআনী- আমাকে দেখে।
৩৩৭।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে সে সকল লোক আমাকে অধিক ভালোবাসবে যারা আমার পর আগমন করবে। তাদের প্রত্যেকেই কামনা করবে যদি তারা আমাকে তাদের পরিবার পরিজন ও সম্পদের সাথে দেখতে পেতো।– মুসলিম
দ্বীন ও দ্বীনের বাহকদের অপরিচিতি প্রসঙ্গেঃ
(আরবী********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) বাদাআ- শুরু করেছে। (আরবী) গারীবান- অপরিচিত। (আরবী) সােইয়াউদু- অচিরেই ফিরে আসবে। (আরবী) কামা বাদাআ- যেভাবে শুরু করেছিলো। (আরবী) ফাতূবা- সুসংবাদ। (আরবী) লিলগুরাবায়ি- অপরিচিতদের জন্য।
৩৩৮।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দ্বীন ইসলাম তার প্রথম অবস্থায় মানুষের কাচে অপরিচিত ছিলো। অচিরেই তা আবার প্রাথমিক অবস্থার ন্যায় অপরিচিত হয়ে যাবে। সূতরাং অপরিচিতদের জন্যে সুসংবাদ। তারা হলো ওই সব লোক যারা আমার পরে আমার সুন্নাত সমূহকে বিকৃত করে ফেলার পর আবার তা সঠিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্যে চেষ্টা করবে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ দ্বীন তার প্রাথমিক অবস্থায় লোকের নিকট অপরিচিত ছিলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সঙ্গীদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় তা বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। লোকেরা দলে দলে দ্বীন গ্রহণ করতে থাকে। এরপর দ্বীন ধীরে ধীরে আবার জগতের নিকট অপরিচিত হয়ে যাবে। সে যুগে যেসব লোক দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যে দন্ডায়মান হবে তারাও অপরিচিত হয়ে যাবে। এসব লোকের জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
দ্বীনের প্রতি আহবানকারীদের গুণগত বৈশিষ্ট্য
কৃতজ্ঞতাঃ
মুসলিম জাতির প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে কৃতজ্ঞতার ন্যায় মূল্যবান সদগুণ থাকা আবশ্যক। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি এ বিকৃত সমাজ ও পরিবেশে দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাদের মধ্যে এ গুণটি বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য্য।
কৃতজ্ঞতার মূল কথা হলো। মানুষ চিন্তা করবে, আল্লাহ তার সাথে কি ব্যবহার করেছেন। দুনিয়ায় আগমনের পূর্বে মাতৃগর্ভের গভীর অন্ধকারে আল্লাহ তাকে বাতাস ও খাদ্য সরবরাহ করেছেন। অতঃপর দুনিয়ায় আগমনের পর তিনি তার লালন পালনের সার্বিক ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছেন। মানুষ জন্মের পর সম্পূর্ণ অসহায় ছিলেঅ্ মুখে না ছিলো ভাষা। হাত পায়ে না ছিলো কোন শক্তি সামর্থ। অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে লালন পালন করেছেন। তিনিই তার দেহে শক্তি, মুখে ভাষা ও মস্তিস্কে চিন্তার শক্তি যুগিয়েছেন। অতঃপর আসমান ও যমীনের যাবতীয় বস্তু মানুষের খাদ্য ও বায়ুসহ সকল প্রকার প্রয়োজন মিটাবার জন্যে সর্বদা সক্রিয় রেখেছেন। একদিকে মানুষ নিজের অসহায়তা ও অপারগতা প্রত্যক্ষ করছে। অপরদিকে মানুষ নিজের অসহায়তা ও অপারগতা প্রত্যক্ষ করছে। অপরদিকে তার উপর আল্লাহর অগণিত করুণা ও রহমত দেখতে পাচ্ছে। আল্লাহর রহমত স্বরুপ যখন বৃষ্টি বর্ষিত হয় তখন এ নিয়ামতদানকারীর প্রতি তার মনে ভালবাসা জেগে উঠে। মুকে তাঁর প্রশংসার স্তুতি উঠে ফুটে। দেহের সকল শক্তি স্বীয় মালিককে খুশি করার জন্যে তৎপর হয়ে যায়।
এ অবস্থা ও আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের নাম হলো কৃতজ্ঞতা। আর এটাই হলো সকল কল্যাণের মূল উৎস।এ আবেগ অনুভূতিকে পুনরুজ্জীবিত ও প্রাণবন্ত করার জন্যেই আসমানী কিতাবসমূহ অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহর রাসূলগণ আগমন করেছেন। কৃতজ্ঞতার এ অনুভূতিকে ধ্বংস করাই হলো ইবলিসের মুখ্য উদ্দেশ্য(সূরায়ে আরাফ দ্বিতীয় রুকু দ্র.)।
প্রশ্ন হলো, আদম আলাইহে ওয়াসাল্লাম জানতেন, আল্লাহ তাঁকে বিশেষ একটি গাছের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন। এরপরও তিনি কেনো এ হুকুম অমান্য করলেন।? েএর জবাব হলো ইবলিস তাঁকে দীর্ঘদিন হতে প্ররোচিত করে আসছিলো এবং সকল প্রচেষ।টা চালিয়েছিলো যেনো আল্লাহর রুবুবিয়াত(প্রতিপালন) এবং তাঁর প্রদত্ত দান ও অনুগ্রহের অনুভূতি যা আদমের অন্তরে জীবন্ত ছিলো, তা দুর্বল হয়ে যায়। সূতরাং যখনই তাঁর এ অনুভূতি দুর্বল হয়ে পড়লো তখনই তিনি সে নিষিদ্ধ বৃক্ষের দিকে ধাবিত হলেন।
মোটকথা, কৃতজ্ঞতা ও অনুভূতি যতো বেশী করে মানুষের মনে জাগরুক থাকবে, ততই সে আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হবে। আর যখন এ অনুভূতি দুর্বল হয়ে পড়বে তখনই মানুষের জন্যে পাপের দিকে ধাবিত হওয়ুা সহজ হয়ে পড়বে। আল্লাহর নবী িইউসূফ আলাইহে ওয়াসাল্লাম মিশরে রমণীকুলের প্রলোভন ও প্ররোচনা হতে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন একমাত্র কৃতজ্ঞতার বদৌলতেই। কেনোনা তিনি সে সময় স্বীয় প্রতিপালকের রবুবিয়াত ও ইহসানের কথা স্মরণ করেছেন। বিপদাপদে যার সাহায্যে এ অবস্থায় উপনীত হয়েছেন তার নাফরমানী কিভাবে করা যায়?
কৃতজ্ঞতার অনুভূতি যখন মানুষের অন্তরে জেগে উঠে তখন তার জীবন আল্লাহর বন্দেগীর পথে অগ্রসর হয়।
গুনাহ এর কাফফারা হিসেবে কৃতজ্ঞতাঃ
(আরবী*****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতআমানী- খাবার দান করেছে। (আরবী) গাইরা হাওলিন- কোন কষ্ট ছাড়া।(আরবী) মা তাকাদ্দামা- যা অতীত হয়েছে অর্থাৎ পূর্বের।(আরবী) যামবিহি- তার গুনাহ।
৩৩৯। মুআয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে বলে আল্লাহর শুকর ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যিনি আমাকে আমার চেষ।টা ও শক্তির ব্যায় ছাড়াই খাবার দান করেছেন। তাহলে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।– আবু দাউদ।
ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি খাদ্য গ্রহণের পর বলে। আমার নিয়ামতদাতা আল্লাহ আমাকে খাবার দান করেচেন। এতে আমার চেষ্টা ও শারীরিক শক্তির কোন কৃতিত্ব নেই ।আমার শক্তি কোথায়? আমি তো এক অসহায প্রাণী। আমার নিকট যা কিছু আচে তাতো আমার প্রতিপালকেরই দান ও অনুগ্রহ। খাবার তো তাঁরই দান। তিনি দান না করলে আমি পেতাম কোথায়? যে মানুষের মনের অবস্থা এ রকম –যে প্রাণপাত কষ্ট করে রোজগার করবার পর কোন রিযিক সামনে আসলে বলে, এ আমার প্রতিপালকের দান। এ লোক কি কখনও জ্ঞাতসারে কোন পাপের কাজ করতে পারে? আর যদি কোন পাপ হয়েও যায় তাহলে সে কি তৎক্ষনাৎ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? এরুপ ব্যক্তির গুনাহ মাফ না হলে আর কার গুনাহ মাফ হবে?
নতুন পোশাক পরিধানের জন্যে কৃতজ্ঞতাঃ
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইসতাজাদ্দা সত্তবান- নতুন পোশাক পরতেন। (আরবী) সাম্মাহু- তার নাম নিতেন। (আরবী) আমামাতান- পাগড়ী। (আরবী) কাসাওতানীহি- আপনি আমাকে এটা পরিয়েছেন। (আরবী) আসআলুকা আমি আপনার কাছে চাই। (আরবী) খাইরাহু- এর কল্যাণ।
৩৪০। আবু সাঈদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন নতুন কাপড় , পাগড়ী, কোর্তা কিংবা চাদর পরিধান করতেন। তখন তার নাম ধরে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, আপনি আমাকে এ পরিধেয় দান করেছেন। আমি এর কল্যানকর দিক কামনা করছি এবং এর অকল্যাণের দিক হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।– আবু দাউদ।
ব্যাখ্যাঃ কাপড় হোক বা অন্য কোন বস্তু হোক এর ব্যবহারে যেমন কল্যাণ হতে পারে তেমনি অকল্যানও হতে পারে। একজন মুমিন কাপড়কে আল্লাহর দান বলে মনে করে এবং তা পেয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করে থাকে। সে আল্লাহর নিকট দোয়া করে। যেনো এ নিয়ামত ব্যবহারকালে কোন খারাপ কাজ না করে। কোন খারাপ উদ্দেশ্যে যেনো এ নিয়ামত ব্যবহৃত না হয়। বরং সে তা ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার জন্যে আল্লাহর নিকট তাওঢফীক কামনা করে। মুমিনের এ মানসিকতা কেবল কাপড়ের ক্ষেত্রেই নয় বরং প্রতিটি নিয়ামত পেয়েই সে এভাবে চিন্তা করে এবং এককভাবে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানায়।
আরোহনকালে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) শাহিদতু- আমি দেখেছি। (আরবী) িউতিয়া- আনা হলো। (আরবী) বিদাব্বাতিন – কোন জানোয়ার। (আরবী) ইসতাওয়া – স্থির হলেন। (আরবী) সাখখারা- অধীন করে দিয়েছেন। (আরবী) ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনীনা- আমি আমার শক্তি দিয়ে একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। (আরবী) মুনকালিবূনা- প্রত্যাবর্তনকারীগণ।
৩৪১।আলী ইবনে রাবীয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছি, তাঁর নিকট আরোহণের জন্য কোন জানোয়ার আনা হলে রেকাবে পা রাখার সময় তিনি বলতেন, বিসমিল্লাহ। অতঃপর পিঠের উপর বসে বলতেন, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যিনি এ জানোয়ারকে আমার অধীনস্থ করে দিয়েছেন। আমি আমার শক্তি দ্বারা একটাকে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যাবে।–সূরা আহাযাবঃ ১৩-১৪।–আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ যদি উট, ঘোড়া, মহিষ এবং অন্যান্য জানোয়ারকে মানুষের বশীভূত না করে দিতেন তাহলে মানুষের তুলনায় বিরাট দেহের ও শক্তির অধিকারী জন্তুকে কিভাবে আয়ত্বে আনতে সমর্থ হতো? কিন্তু আল্লাহ বিশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন নিয়ম – শৃংখলার ব্যবস্থা করেছেন যে, এ বিরাটকায় জানোয়ারগুলো অতিসহজে মানুষের নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। আল্লাহর এ ব্যবস্থা দেখে মুমিনগণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। আখেরাতের প্রতি তৎক্ষনাঃ তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। সে চিন্তা করে আল্লাহ আমাকে এতো সব নিয়ামত দান করেছেন তিনি একদিন এর হিসেব আমার কাছ থেকে অবশ্যই নেবেন। যিনি এভাবে চিন্তা করেন। তিনি আমলের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অগ্রবর্তী থাকবেন।
ঘুম ও ঘুম থেকে জাগার দোয়াঃ
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আখাযা মাদজাআহু- শয়ন করতেন। (আরবী) ওয়াদাআ- তিনি রাখতেন। (আরবী) খাদ্দিহি- তার গালের। (আরবী) আমূতু – আমি মৃত্যুবরণ করছি।(আরবী) আহইয়া- অআমি জীবিত হবো। (আরবী) ইস্তাইকাযা- তিনি জাগতেন। (আরবী) আহইয়ানা- তিনি আমাদের জীবিত করেন। (আরবী) আননুশূর- প্রত্যাবর্তন, ফিরে যাওয়া।
৩৪২। হুযাইয়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয়ন করতেন তখন তাঁর হাত গালের নীচে রেখে বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করছি এবং আপনার নামেই জীবিত হবো। যখনস তিনি ঞুম হতে জাগতেন তখন বলতেন, যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি মৃত্যু প্রদান করার পর আবার আমাদেরকে জীবিত করলেন এবং পুনরায় তাঁর নিকটই ফিরে যেতে হবে।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ মানুষের অন্তরে যখন পরকালের ভীতি বদ্ধমুল হয়। শয়নকালে সে আল্লাহর নাম স্মরণ করে এবং বলেঃ শয়নে, জাগরণে, জীবনে ও মরণে সর্বদা আল্লাহর নাম আমার সঙ্গী হয়ে থাকুক। ঘুম হতে জেগে উঠার পর সে আল্লাহর প্রশংসা করে এ জন্যে যে, আল্লাহ তাকে নেক আমল করার জন্যে আরো সময় দিলেন। যদি গতকাল আমি অবহেলা প্রদর্শন করে থাকি তাহলে আজ আর অবহেলা করা ঠিক হবে না। আজ একদিনের যে সুযোগ আসলো। তার সদ্ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে।
প্রতিদিনিই এ অবস্থায় সে কাটায়। সে যখন ঘুম হতে জাগে তখন তার মনে আখেরাত এবং হিসাব নিকাশের কথা ভেসে উঠে। একদিন তার মৃত্যু ঘটবে। অতঃপর জীবিত হয়ে হিসেবের জন্যে আল্লাহর নিকট হাজির হতে হবে। এ জীবনের সব সুযোগ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তাঁর কাচে কি জবাব দেয়া হবে।
নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাঃ
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) হালকাতুন- সমাবেশ। (আরবী) আজলাসাকুম- তোমাদের বসিয়েছেন। (আরবী) হাদানা-পথ দেখিয়েছেন। (আরবি) মান্না – তিনি তাওফিক দান করেছেন।
৩৪৩। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, িএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হতে বের হয়ে তার সাথীদের একটি সমাবেশ দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার সাথীরা! তোমরা এখানে একত্রিত হয়ে কি করছো? তার বললেন, আমরা এখানে বসে আল্লাহকে স্বরণ করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি।কারণ তিনি আমাদেরকে দ্বীন ইসলামের পথ দেখিয়েছেন এবং তা গ্রহণ করার তাওফীক দান করছেন।– মুসলিমি
বায়তুল হামদ বা প্রশংসার ঘরঃ
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়ালাদুল আবদি- বান্দাহর সন্তান। (আরবী) কাবাযতুম- তোমার জীবন কবয় করেছ। (আরবী) সামারাতা ফুয়াদিহি- তার কলিজার টুকরো।(আরবী)হামিদাকা- সে তোমার প্রশংসা করেছে। (আরবী) ইস্তারজাআ –সে ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলেছে। (আরবী) ইবনু- তোমরা তৈরী করো। (আরবী) সাম্মুহু- তার নাম রাখো।
৩৪৪। আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়। তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের রুহ কবয করেছো? তারা বলে, জী হ্যাঁ। অতঃপর আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি তার কলিজার টুকরোর জান কবয করে এনেছো? তারা বলেন, জী হ্যা এনেছি। অতঃপর আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, এ সময় আমার বান্দা কি বললো? তারা বলেন, এ বিপদে সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহে রাজেউন বলেছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করো এবং সে ঘরের নাম রাখো বায়তুল হামদ(প্রশংসার ঘর) –তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ মুমিন বান্দার প্রশংসার অর্থ হলো, সে নিজ সন্তানের মৃত্যুর ফলে শোকে ভেঙ্গে না পড়ে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং বলে, হে আল্লাহ! তুমি যা কিছু করো তা যুলুম বা বেইনসাফী নয়। তুমি তোমার প্রদত্ত জিনিস নিয়ে গেছো এতে আমার অসন্তুষ্টির কি আছে।
ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন হলো ধৈর্য্য ধারণের আয়াত। আয়াতটি মানুষকে ধৈর্যে্যর শিক্ষা দেয়। এর অর্থ হলো, আমরা আ্ল্লাহর গোলাম এবং বান্দা। আমাদের কাজ হলো তাঁর ইচ্ছা অনুসারে দুনিয়াতে জীবন যাপন করা এবং মৃত্যুর পর আমরা তারই নিকটে ফিরে যাবো। যদি আমরা বিপদে ধৈর্য ধারণ করি তাহলে উত্তম প্রতিদান পাবো। অন্যথায় আমাদেরকে খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। দুনিয়ার প্রতিটি জিনিসিই ক্ষনস্থায়ী। এরুপ চিন্তা মানুষের বিপদকে সহজ করে দেয়।
ধৈরর্য্য ও কৃতজ্ঞতায় রয়েছে প্রচুর কল্যাণঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আজাবান- অদ্ভূত। (আরবী) দ্বাবান- দুঃখ কষ্ট। (আরবী) সাররান-সুখ শান্তি, সচ্ছল। (আরবী) শাকারা- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
৩৪৫। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিনের অবস্থা অদ্ভূদ প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সকল অবস্থা ও কাজই কল্যানকর। আর এ সৌভাগ্য মুমিন ছাড়া আর কেউ লাভ করতে পারে না। সে যদি দারিদ্র, অসুস্থতা এবং দুঃখ কষ্টে পতিত হয় তাহলে ধৈর্য্য ধারণ করে। এমনিভাবে সচ্ছল অবস্থায়ও সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এ উভয় অবস্থাই তাঁর জন্যে কল্যাণের কারন হয়ে দাঁড়ায়।– মুসলিম
কৃতজ্হতায় অনুভূতি সৃষ্টির উপায়ঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) উনযুরু- তোমরা দেখো। (আরবী) আসফালা- কম নিচু। (আরবী) লা- তানযুরু- দৃষ্টিপাত করো না। (আরবী) লা- তাযদারু নগণ্য মনে কর না।
৩৪৬।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ধন সম্পদ এবং পার্থিব খ্যাতি ও মর্যাদায় তোমার তুলনায় কম তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করবে। (তাহলে তোমার মধ্যে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি সৃষ্টি হবে।) আর সে সকল লোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করো না যারা ধন সম্পদ এবং জাগতিক সাজ সরঞ্জামে তোমাদের থেকে অগ্রগামী। আর এ কারণে তোমার নিকট যে নেয়ামত আছে তাা যেনো নগণ্য মনে না হয় এাবং আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতার অনুভূতি সৃষ্টি না হয়।– মুসলিম
লজ্জাশীলতাঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- ইয়াতী- আনে না। (আরবী) খাইরুন- কল্যান। (আরবী) ইল্লা- ছাড়া, কেবল।
৩৪৭। ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লজ্জাশীলতা কেবল কল্যাণই বয়ে আনে।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ লজ্জা মুমিনের এমন একটি গুণ যা সকল কল্যাণের উৎস।এ গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে সে অন্যায়ের নিকটবর্তী না হয়ে শুধু কল্যাণের দিকেই ধাবিত হবে।
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহ আলাইহে রিয়াজুস সালেহীন গ্রন্থে লজ্জার রহস্যের কথা লিখতে গিয়ে বলেছেনঃ (আরবী***)
লজ্জা এমন একটি গুণ। যা মানুষকে অন্যায় কাজ পরিহারে জন্যে উদ্ধুদ্ধ করে। হকদার ব্যক্তির হক আদায়ে শিথিলতা প্রদর্শন করা হতে বিরত রাখে। জুনাইদ বোগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ লজ্জার প্রকৃত রহস্য হলো, মানুষ আল্লাহর নিয়ামতসমূহ দেখে চিন্তা করে। আমি এই নিয়ামত দানকারীর শুকরিয়া আদায়ে কতই না অবহেলা প্রদর্শন করেছি।এ অনুভূতির ফলে মানুষের অন্তরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তার নামই হলো লজ্জা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাদীসে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। এগুলো আখিরাতের চিন্তা নামক অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
ধৈর্য্য শ্রেষ্ঠ নেক কাজঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়াতাসাব্বারু- ধৈর্য্যধারণ করা। (আরবী) ইউসাব্বিরুহু- তাকে ধৈর্য্যধারনের শক্তি দেবেন। (আরবী) মা উতিয়া- দান করা হয়নি। (আরবী) আতাআন খাইরান- উত্তম দান। (আরবী) আওসাউ-ব্যাপক, বিস্তৃত।
৩৪৮। আবু সাঈদ কুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য্য ধারণের চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্যে্যর শক্তি প্রদান করবেন। আর ধৈর্য্য হতে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যানকর আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি।–বুখারী, মুসলিম।
ব্যাখ্যাঃ বিপদের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে না। এমনিভাবে সে ব্যক্তিও কখনো ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে না, যার মধ্যে কৃতজ্ঞতার গুণ বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে। ধৈর্য্যগুণ মানব চরিত্রে বিপুল সৌন্দর্যের সমাবেশ ঘটায়।
প্রকৃতিগত কষ্ট এবং ধৈর্য্যঃ
(আরবী**)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আরসালাত- পাঠালেন। (আরবী) কাদিহ তাদ্বারা- মৃত্যু পর্যন্ত। (আরবী) ফাশহাদনা- অতএব আপনি আসুন। (আরবী) আখাযা-নেন। (আরবী) আতা – যা দেন। (আরবী) বিআজালিন- নির্ধারিত সময়। (আরবী) ফালতাসবির-ধৈর্য্যধারণ করো। (আরবী) ওয়ালতাহতাসিব- আখিরাতের পুরস্কারের জন্য। (আরবী) ফাকআদাহু তাকে বসালেন। (আরবী) ফীহিজরিহি-তাঁর কোলে। (আরবী) তাকাকা- নিঃশ্বাস বের হয়ে যায়। (আরবী) ফাফাদ্বাত অইনাহু- চোখ দিয়ে পানি বইতে লাগলো।
৩৪৯।উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা সংবাদ পাঠালেন আমার পুত্র মৃত্যু শয্যায়। অতএব আপনি তাশরীফ আনুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম পাঠিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যা নিয়ে যান এবং যা দান করেন এসবই তাঁর নিকট প্রতিটি জিনিসই নির্ধারিত। অতএব আখেরাতের পুরস্কার লাভের উদ্দেশ্যে ধৈর্য্য ধারন করো। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা তাকীদ সহকারে আবার খবর পাঠালেন যেনো তিনি তাড়াতাড়ি তাশরীফ আনেন। এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ ইবনে উবাদা, মুআয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কায়াব, যায়েদ ইবনে ছাবিত এবং আরো কিছু সাহাবীদের সঙ্গে নিয়ে তথায় উপস্থিত হলেন। বাচ্চাটিকে রাসূলুল্লাহর নিকট আনা হলে তিনি কোলে উঠিয়ে নিলেন। এ সময় সন্তানটির প্রাণবায়ু বের হয়ে যাচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের চক্ষু দিয়ে অশ্রু বয়ে পড়তে লাগলো। সাদ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন এ কি (অর্থাৎ আপনি কাঁদছেন, একি ধৈর্যের পরিপন্থী নয়?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না এ ধৈর্যের পরিপন্থী নয়, বরং এ দয়া ও মায়ার অনুভূতি যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে নিহিত রেখেছেন।– বুখারী, মুসলিম
ধৈয্য কাফফারা স্বরুপঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মা ইয়াযলু- সবসময়। (আরবী) ইয়ালকা- মিলিত হয় ।(আরবী) খাতীয়াতুন- গোনাহ।
৩৫০।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন নর নারীর উপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে। কখনো সরাসরি তার উপর বিপদ আসে। কখনো তার সন্তান মারা যায়। আবার কখনো তার ধন সম্পদ বিনষ্ট হয়। (আর এ সকল মুসিবতে ধৈর্য্য ধারণ করার ফলে তার কালব পরিস্কার হতে থাকে। পাপ পংকিলতা হতে মুক্ত হতে থাকে। অবশেষে সে নিস্পাপ আমলনামা নিয়ে আল্লাহর সাথে মিলিত হয়।– তিরমিযি
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ
(আরবী) ইউসীবু- পৌছে। (আরবী) নাসাবুন- দুঃখ কষ্ট। (আরবী) ওয়াসাবুন- দুঃখ কষ্ট,শোক। (আরবী) হুনুন- চিন্তা। (আরবী) ইউশাকুহা- কাটা পায়ে বিঁধে। (আরবী) কাফফারা-ক্ষতিপূরণ করে দেন, গুনাহ মাফের কারণ হয়।
৩৫১।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি মানসিক বা শারীরিক কষ্ট, কোন শোক বা দুঃখ পেলে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে সে যদি ধৈর্য ধারণ করে তাহলে আল্লাহ প্রতিদানে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। এমন কি যদি সামান্য একটি কাঁটাও পায়ে বিধে তাও তার গুনাহ মাফের কারন হয়ে দাঁড়ায়।– বুখারী, মুসলিম
বিপদ ও পরীক্ষায় আত্নসমর্পন করা ও সন্তুষ্ট থাকাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) আযমাল জাযায়ি- বড় পুরস্কার। (আরবী) আযমিল বালা- বড় বিপদ, পরীক্ষা।(আরবী) আহাব্বা- রেশী প্রিয়, সন্তুষ্ট। (আরবী) কাওমান- কোন জাতিকে। (আরবী) ইবতালাহুম- তাদের পরীক্ষা করেন। (আরবী) রাযিয়া- খুশি হয়। (আরবী)সাখাতা- অসন্তুষ্ট হয়।
৩৫২।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিপদ ও পরীক্ষা যত কঠিন হবে তার প্রতিদানও হবে তত মূল্যবান। ( এ শর্তে যে মানুষ বিপদে ধৈয্যহারা হয়ে হক পথ হতে যেনো পালিয়ে না যায়।) আর আল্লাহ তাদেরকে বিপদ ও পরীক্ষার সম্মূখীন করেন। অতঃপর যারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে খুশি মনে মেনে নেয় েএবং ধৈর্য্য ধারণ করে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হন। আর যারা এ বিপদ ও পরীক্ষায় আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট হয় আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। – তিরমিযি
দৃঢ়তা-পূ্র্ণাঙ্গ উপদেশঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) লা- আসআলু- আমি জিঙ্গেস করবো না।(আরবী) ইস্তাকিম- স্থির সুদৃঢ় থাকো।
৩৫৩।সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল। ইসলাম সম্পর্কে আমাকে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ হেদায়াত প্রদান করুন যেনো এ সম্পর্কে আর কাউকে প্রশ্ন করার প্রয়োজন না হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, আমানতু বিল্লাহ বল এবং এর উপর সুদৃঢ় থাকো।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি দ্বীন ইসলামকে গ্রহণ করার এবং তাকে স্বীয় জীবনব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেবার পর যত প্রতিকূল অবস্থার সম্মূখীনেই হোক না কেনো সে সর্বদা দ্বীন ইসলামের উপর সুদৃঢ় থাকে। আর এটাই হলো দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার চাবিকাঠি।
ধৈর্য্যশীল এবং সৌভাগ্যবান ব্যক্তিঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) আসসায়ী দু- সৌভাগ্যবান। (আরবী) জুন্নিবা- মুক্ত আছে।(আরবী) উবতুলিয়া- পরীক্ষা করা হয়েছে। (আরবী) ফাসাবারা- তারপর ধৈর্য্যধারণ করেছে।(আরবী) ফাওয়াহান- ধন্যবাদ। (আরবী) সানাআ- করেছিলো। (আরবী) নুশিরু- তাদের চিরা হয়েছিল। (আরবী) আলমিনশারু- চিরুনী, করাত। (আরবী)হুমিলূ- উঠানো হয়েছিল। (আরবী) আলাল খাশাবি- ফাসি কাষ্ঠের ওপর। (আরবী) তাআতিল্লাহি – আল্লাহর ইতাআতে। (আরবী) মা সিয়াতিল্লাহি- আল্লাহর নাফরমানি।
৩৫৪।মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যে ফিতনা হতে মুক্ত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার একথাটি উচ্চারণ করলেন। আর যে ব্যক্তিকে পরীক্ষায় ফেলা সত্তেও সত্যের উপর অবিচল রয়েছে তার জন্যে তো অশেষ ধন্যবাদ।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ ফিতনা অর্থ সে সকল বিপদ ও পরীক্ষা। সকল যুগের মুমিনগনকে যার সম্মুখীন হতে হয়। শাসন যদি বাতিল শক্তির হাতে থাকে। অন্যায় যদি প্রতিষ্ঠিত এবং ন্যায় পরাজিত অবস্থায় থাকে। সে ক্ষেত্রে ন্যায়ের অনুসারীদের উপর কিরুপ নির্যাতন ও নিস্পেশণ নেমে আসে তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
এসব বাতিল সম্প্রদায়ের প্রতিরোধ এবং তাদের নিপীড়ন ও নিষ্পেষণ সত্ত্বেও যিনি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন। তিনিই কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া ও ধন্যবাদের অধিকারী হবেন।
তিবরানী মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন। যখন দ্বীনের রাষ্টীয় কাঠামো বিনষ্ট হয়ে যাবে মুসলমানদের উপর এমন শ্রেনীর শাসক নিযুক্ত হবে যারা সমাজকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করবে। এ ক্ষেত্রে যদি তাদের কথা মানা হয় তাহলে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। আর তাদের কথা না মানলে তারা অমান্যকারীদের হত্যা করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, এ সময় আমরা কোন পথ অবলম্বন করবো?রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
(আরবী***********)
এ সংকটময় অবস্থায় তোমাদের তাই করতে হবে যা ঈসা আলাইহিসসাল্লামের সঙ্গীরা করেছিলেন। তাদেরকে করাত দিয়ে চিরা হয়েছিল। কিন্তু তারা বাতিলের সামনে মাথা অবনত করেননি। আল্লাহর আনুগত্যে মৃত্যু বরণ করা আল্লাহর নাফরমানিতে জীবিত থাকার চেয়ে অধিক উত্তম।
ধৈর্যে্যর পথে বাধা বিপত্তিঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আসাসাবিরু- ধৈর্য্যধারণকারী। (আরবী) আলকাবিযু- ধারণকারী। (আরবী) আলজামারু- জ্বলন্ত অঙ্গার।
৩৫৫।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের উপর েএমন এক যুগ আসবে যখন দ্বীনদারের জন্যে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার মতো কঠিন হবে।– তিরমিযি, মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ তখনকার অবস্থা এমন নাজুক ও প্রতিকূল হবে যে, বাতিল শক্তি সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং হক পরাভূত থাকবে। সমাজের অধিকাংশ লোক অত্নকেন্দ্রিক ও দুনিয়া পূজারী হবে। এ অবস্থায় যারা দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন এ হাদীসে তাদের জন্যে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে খেলা করা নিঃসন্দেহে বাহাদুরীর কাজ। কাপুরুষ লোকেরা এরুপ করাজ করতে অক্ষম।
আল্লাহর উপর নির্ভরতা
তাওয়াক্কুলের মূল রহস্যঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তাতাওয়াক্কালূলনা- ভরসা করবে। (আরবী) রাযাকাকুম- রিযিক দান করবেন। (আরবী) তাগদূ- সকালে বের হয়। (আরবী) খিমাসান- খালিপেট। (আরবী) তারুহু- সন্ধায় ফিরে আসে। (আরবী) বিতানান- ভরা পেটে।
৩৫৬। উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথাযথভাবে ভরসা করো তাহলে তিনি তোমাদেরকে সেভাবে রিজিক দান করবেন। যেভাবে তিনি পাখীকে রিযিক প্রদান করতে থাকেন। তারা প্রত্যুষে বাসা হতে খালি পেটে বেরিয়ে পড়ে এবং বিকেলে ভরা পেটে বাসায় ফেরে।– তিরমিযি
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সাআদাতুন- সৌভাগ্য। (আরবী) রিদ্বাহু- তার সন্তুষ্টি। (আরবী) কাযা- ফায়সালা করেছেন। (আরবী) শাকাওয়াতুন- দুভার্গ্য। (আরবী) ইস্তিখারাতুন- কল্যাণ প্রার্থনা করা।(আরবী) সাখাতুহু- তার ক্রোধ, অসন্তুষ্টি।
৩৫৭।সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী আদমের সৌভাগ্য হলো, আল্লাহ তার জন্য যে ফয়সালা করেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। বনী আদমের দুর্ভাগ্য হলো, আল্লাহর নিকট কল্যানের জন্যে দোয়া না করা এবং আল্লাহর ফয়সালার উপর অসন্তুষ্ট হওয়া।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ তাওয়াক্কুলের অর্থ হলো, আল্লাহকে নিজের ওয়াকীল নিযুক্ত করা এবং তার উপর পূর্ণভাবে ভরসা করা। ওয়াকীল বলে অভিভাবককে। অভিভাবক তাকেই বলে যিনি তার অধিনস্থ লোকের কল্যাণের কথা চিন্তা করেন এবং অকল্যাণ হতে বাঁচিয়ে রাখেন।
মুমিনের ওয়াকীল হলো আল্লাহ। এর অর্থ হলো একথা সে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর তরফ হতে যা কিছু ঘটে তা একমাত্র কল্যাণের জন্যেই ঘটে।যেহেতু, তার প্রতিটি কাজের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে। তাই তিনি যে অবস্থায় রাখেন মুমনি তাতেই সন্তুষ্ট। মুমিন নিজে কাজের জন্যে প্রচেষ্টা চালায়। অতঃপর কাজের ফলাফলের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়। সে বলে, হে আমার প্রতিপালক। তোমার এ দুর্বল বান্দা এ কাজ করার পেছনে সকল প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমিতো দুর্বল এবং তুমি মহা পরাক্রমশালী। অতএব এ কাজে যে ত্রুটি ঘাটতি রয়েছে তা তুমি পূরণ করে দাও।
প্রচেষ্টা ও তাওয়াক্কুল
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ(আরবী) আকিলুহা- তাকে বাঁধবো। (আরবী)আতাওয়াক্কালু- তাত্তাক্কুল ভরসা। (আরবী) আতলাকুহা- তাকে ছেড়ে দিবো।
৩৫৮।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল!আমি আমার উট বাঁধবো এরপর কি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবো? না তাকে ছেড়ে দেবো এরপর তাওয়াক্কুল করবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথমে উটকে বাঁধো এরপর তাওয়াক্কুল করো।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ কোন বস্তু লাভের জন্যে যে প্রচেষ্টা হওয়া দরকার তা যথাযথভাবে করতে হবে। অতঃপর আল্লাহর নিকট এ মর্মে দোয়া করতে হবে যে, আমি আমার ক্ষমতা অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এখন তুমি আমাকে সাহায্য করো। এটাই হলো তাওয়াক্কুল।
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কূলই হলো প্রশান্তির উপায়ঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ওয়াদিন- প্রান্তর, মাঠ। (আরবী) শুবাতুন- উদভ্রান্তভাবে বিচরণ করা। (আরবী) আহলাকাহু – তাকে ধ্বংস করা হলো। (আরবী) তাওয়াক্কালা- ভরসা করলো। (আরবী) কাফাহু- তার জন্য যথেষ্ট।
৩৫৯।আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের অন্তর প্রত্যেক প্রান্তরে উদভ্রান্তভাবে বিচরণ করতে থাকে। যে ব্যক্তি স্বীয় অন্তরকে উদ্দেশ্যহীনভাবে বিচরন করার জন্যে ছেড়ে দেয় সে কোন প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে গেলো আল্লাহ তাঁর জন্যে কোন পরোয়া করবেন না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে আল্লাহ তাকে সকল প্রান্তরের বিভ্রান্তি ও ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করবে।– ইবনে মাজা
ব্যাখ্যাঃ যদি মানুষ আল্লাহকে স্বীয় ওয়াকীল এবং অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ না করে তাহলে তার অন্তর সর্বদা পেরেশান ও অস্থির থাকবে। মনে মনে নানা প্রকার রঙ্গীন স্বপ্ন কল্পনা করবে। কিন্তু যে ব্যূুক্তি নিজের মনকে আল্লাহর দিকে রুজু রাখবে তার মনে সর্বদা প্রশান্তি বিরাজ করবে।
তাওবা এবং ইস্তেগফার
তাওবার উপর আল্লাহর পাকের সন্তুষ্টি
তাওবার উপর আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টিঃ
(আরবী)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আফারাহা- খুশি হয়। (আরবী) সাকাতা- তা পেয়ে গেলে। (আরবী) বায়ীরুন- উট।(আরবী) আদাল্লাহু- হারিয়ে। (আরবী) ফালাতিন- ময়দানে, প্রান্তরে।
৩৬০।আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা গুনাহ করার পর তাওবা করলে আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি নিজের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উট কোন ময়দানে হারিয়ে যাবার পর হঠাৎ তা পেয়ে গেলে যে খুশী হয়।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ ঐ ব্যক্তি উট প্রাপ্তির পর কত যে খুশী হবে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। ঠিক এভাবে বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ খুশি হন। বরং আল্লাহর খুশি বান্দার খুশীর মোকাবিলায় আরো অধিক হয়ে থাকে। কেনোনা তিনি হলেন দয়া ও করুণার মূল উৎস।
(আরবী**)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়াবসুতু-প্রসারতি করেন। (আরবী) লিইয়াতূবা- যেন তাওবা করে।(আরবী) মুসিয়ূ- নাফরমান। (আরবী) তাতলুআ- উদিত হবে। (আরবী) মিন মাগরিবিহা- তার পশ্চিম দিগন্ত হতে।
৩৬১। আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ রাতের বেলা তার হাত প্রসারিত করে রাখেন। যাতে দ্বীনের বেলায় যে নাফরমানী করেছে সে যেনো রাতের বেলায় তাঁর কাজে ফিরে আসতে পারে। এমনিভাবে আল্লাহ দিনের বেলায় তার হাত প্রসারিত করে দেন যেনো রাতে যদি কোন ব্যক্তি পাপ কাজ করে ফেলে যে যেনো দিনে তাঁর নিকট ফিরে আসতে পারে। আর এ অবস্থা পশ্চিমাকাশে সূর্য্য উদয় হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত) বিরাজ করবে।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ হাত প্রসারিত করার অর্থ হলো। তিনি তাঁর গুনাহগার বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,তুমি আমার দিকে ফিরে এসো। আমার রহমত তোমাকে আলিঙ্গন করার জন্যে প্রস্তুত আছে। তুমি যদি সাময়িকভাবে কুপ্রবৃত্তির নিকট পরাজিত হয়ে রাতের অন্ধকারে কোন পাপে কাজ করে ফেলো। তাহলে দিন শুরু হবার পূর্বেই ক্ষমা প্রার্থনা করো। যদি বিলম্ব করো তাহলে শয়তান তোমাকে আমার রহমত হতে আরো দূরে সরিয়ে নেবে। আল্লাহর রহমত হতে দূরে সরে যাওয়া ধ্বংসেরই নামান্তর।
তওবার সময়সীমা
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) ইয়াকবালু- কবুল করবেন।(আরবী) ইউগারগির-মৃত্যুকালীন কষ্ট- সাকরাতুল মাউত।(আরবী)মা-লাম ইউগরগির –গরগর শব্দ না করা পর্যন্ত অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।
৩৬২।আবদুল্লা্হ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা মৃত্যুকালীন কষ্ট শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কবুল করে থাকেন।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি সারাটি জীবন গুনাহ ও পাপের মধ্যে অতিবাহিত করে।কিন্তু মৃত্যুকালীন মুমুর্ষতার পূর্বেই যদি সে সঠিকভাবে তওবা করে নেয় তাহলে তার গুনাহরাশি মাফ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি মৃত্যু যন্ত্রনা(সাকারাতুল মউত) শুরু হবার পর তওবা করে তাহলে গুনাহ মাফ হবে না। অতএব মৃত্যুলক্ষণ প্রকাশ পাবার পূর্বেই তওবা করা একান্ত জরুরী।
ইসতেগফারের সীমাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তূবু- তোমরা তাওবাহ করো। (আরবী) ইসতাগফিরুহু- তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। (আরবী) ফাইন্নী- কারণ আমি। (আরবী) অতুবু- আমি তাওবাহ করি। (আরবী) মিআতা মাররাতিন- একশ বার।
৩৬৩।আগার ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,হে মানব মন্ডলী! তোমরা আল্লাহর নিকট তোমাদের গুনাহের জন্যে তাওবা করো এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমার প্রতি লক্ষ করো। আমি প্রত্যহ শতবার করে আল্লাহর নিকট তাওবা করে থাকি।– মুসলিম
কেবল আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করোঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) হাররামতু- হারাম করেছি।(আরবী) নাফসী- আমার জীবন। (আরবী) জাআলতুহু- আমি করেছি। (আরবী) মুহাররামান- হারাম করা হয়েছে। (আরবী) লা- তাযলামূ- তোমরা পরস্পর যুলুম করো না। (আরবী) কুল্লুকুম- তোমাদের প্রত্যেকেই।(আরবী) দ্বাল্লুন- পথভ্রষ্ট, পথহারা। (আরবী) মান হাদাইতুহু- আমি যাকে হেদায়েত করেছি। (আরবী) ফাসতাহদূনী- তাই তোমরা হেদায়াত কামনা করো।(আরবী) জায়িউন-ভূখা। (আরবী) ফাসতাতইমূনী- তাই তোমরা আমার কাছে খাবার চাও।(আরবী) আরিন- উলঙ্গ। (আরবী) কাসাওতুহু- আমি তাকে পরিধান করিয়েছি। (আরবী) ফাসতাকসুওনী- তাই তোমরা আমার কাছে কাপড় চাও। (আরবী) আকসুকুম- আমি তোমাদের কাপড় দান করবো। (আরবী) তাখতাউনা- তোমরা গুনাহ করে থাকো।(আরবী) ফাসতাগফিরুনী- তাই আমার কাছে ক্ষমা চাও। (আরবী) আগফিরু- আমি ক্ষমা করবো।
৩৬৪।আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের লক্ষ করে বলেন, আমি যুলুমকে আমার উপর হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মাঝেও যুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি।অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ!তোমাদের যাকে আমি হেদায়াত প্রদান করেছি সে ছঅড়া তোমাদের সকলেই পথভ্রষ্ট। অতএব তোমরা আমার নিকট হেদায়াত প্রাপ্তির জন্য দোয়া করো। আমি তোমাদেরকে হেদায়াত দান করবো। হে আমার বান্দাগণ! যাকে আমি খাদ্য দান করেছি, সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেইক্ষুর্ধার্ত। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করো আমি তোমাদেরকে খাদ্য দান করবো। হে আমার বান্দাগণ!তোমাদের মধ্যে যাকে আমি বস্ত্র পরিধান করিয়েছি সে ছাড়া আর সকলেই উলঙ্গ। অতএব তোমরা আমার নিকট বস্ত্র পরিধানের জন্য দোয়া করো। আমি তোমাদের পরিধান করাবো। হে আমার বান্দাগণ!তোমরা রাতে ও দিনে গুনাহ করে থাকো। আমি সকল গুনাহ ক্ষমা করতে পারি। অতএব তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো।– মুসলিম
সৃষ্টির প্রতি প্রেম
সর্বোত্তম আমলঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সাআলতু- আমি জিজ্ঞেস করলাম। (আরবী) আইয্যু- কোন (আরবী) আফযালু- সর্বোত্তম। (আরবী) আররিকাবু- গোলাম। (আরবী) আগলা- ভারি, বেশি।(আরবী) আনফুসু- উত্তম। (আরবী) তুঈনু,- তুমি সাহায্য করবে।(আরবী) লিআখরাকা- কাজ সম্পন্ন করতে অসমর্থকে। (আরবী) তাদাউ- তুমি বারণ করে রাখবে।
৩৬৫।আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোন আমল সর্বোত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, আল্লাহর উপর ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা সর্বোত্তম আমল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন প্রকারের দাস আযাদ করা অধিক উত্তম।তিনি বলেন, যে দাসের মূল্য অীধক এবং মালিকের দৃষ্টিতে উত্তম।তিনি বলেন, যে দাসের মূল্যূ অধিক এবং মালিকের দৃষ্টিতে উত্তম। আমি বললাম যদি এ কাজ করতে না পারি তাহলে কি করবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি কোন কাজ সম্পা্দনকারীকে সাহায্য করবে অথবা সে ব্যক্তির কাজ করে দেবে যে নিজের কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারছে না। আমি আরজ করলাম, যদি আমি এ কাজটিও করতে না পারি? তিনি বললেন, মানুষের অনিষ্ট হতে বিরত থাকবে। কেনোনা তা হবে তোমার জন্য সদকা স্বরুপ যার প্রতিদান তুমি লাভ করবে।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থ হলো। তাওহীদ তথা দ্বীন ইসলাম কবুল করা। জিহাদের অর্থ হলো যারা আল্লাহর দেয়া ইসলাম মিটিয়ে ফেলার জন্যে প্রস্তুত হবে তাদের মুকাবিলা করা যদি তারা দ্বীনইসলাম এবং দ্বীনের অনুসারীদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ধারণ করে সে ক্ষেত্রে মুমিনের জন্যেও অস্ত্রধারণ অপরিহার্য্য হয়ে পড়ে। তখন ঘোষণা করবে েএদ্বীন আমাদের নিকট আমাদের জীবন হতে অধিক প্রিয়। তোমরা যদি এ দ্বীনকে ধবংস করার জন্যে অগ্রসর হও, তাহলে আমরাও তোমাদেরকে হত্যা করবো। আর না হয় আমরা দ্বীনের পথে জীবনদান দেবো।
আরব দেশে সে যুগে দাস প্রথার প্রচলন ছিলো। কেবল আরব দেশেই নয় বরং তৎকালীন বিশ্বে সকল সভ্য দেশেই এই অভিশপ্ত প্রথার প্রচলন ছিলো।ইসলামের আগমনের পর সে মানুষকে উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করা এবং মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে দাস দাসীদের মুক্তির ব্যাপারটা নিজ পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত করে নেয়। এ কাজটিকে অত্যন্ত নেকের কাজ বলে ঘোষণা করে। সমাজের দুস্রথ ও অভাবী লোকদের সাহায্য করা, কোন অপারগ লোকের কাজে অথবা সুচারুরুপে কাজ করতে পারে না এমন লোকের কাজে সাহায্য করা খুবই নেকের কাজ।
দাসমুক্ত করাঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতাকা- মুক্ত করবে। (আরবী) রাকাবাতান মুসলিমাতান- কোন মুসলিম দাসকে। (আরবী) উদওয়ুন- অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।
৩৬৬।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করবে। আল্লাহ তার এক একটি অঙ্গের পরিবর্তে মুক্তকারীর এক একটি অঙ্গ জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত করে দেবেন।– বুখারী, মুসলিম।
নেকের ধারণা ও মানদন্ডঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- তাহকিরান্না- নগণ্য মনে করো না। (আরবী) তালকা- তুমি মিলিত হবে। (আরবী) ওয়াজহিন তালাকিন- হাসি মুখে। (আরবী) তাফরাগা- ঢালা। (আরবী) ইনাউন- বালতি, পাত্র।
৩৬৭।জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কোন নেক কাজকেই নগণ্য মনে করো না। তোমার কোন ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে মিলিত হওয়াও একটি নেকের কাজ। এমনিভাবে নিজ বালতির পানি অপরের পাত্রে ঢেলে দেওয়াও নেকের কাজ।– তিরমিযি।
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তাদিলু- ন্যায় বিচার করবে।(আরবী) তুঈনু- সাহায্য করবে। (আরবী) তারফাউ- উঠিয়ে দিবে।(আরবী) মাতাআহু-মাল, বোঝা। (আরবী) আলকালিমাতুত তাইয়্যিবাতু- উত্তম কথা। (আরবী)খুতওয়াতুন-কদম। (আরবী) তামশীহা- যে পথ চলে। (আরবী) তুমীতু – তুমি সরিয়ে দিয়েছো। (আরবী) আযা- কষ্টদায়ক বস্তু।
৩৬৮।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু ব্যক্তির মাঝে সন্ধ্যি ও সমঝোতা সৃষ্টি করে দাও। এটাও একটি নেকীর কাজ। কাউকে অরোহণের ব্যাপারে সাহায্য করা। এভাবে তাকে তোমার সওয়ারীর উপর উঠিয়ে নেয়া অথবা তার বোঝা তার সওয়ারীর উপর উঠিয়ে দেয়া এটাও সদকা বা নেকীর কাজ। এমনিভাবে ভালো কথা বলাও নেকীর কাজ। নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলার জন্যে তোমার যে প্রতিটি কদম উঠে তাও সদকা বা নেক কাজ। পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু যেমন কাটা ও পাথর সরিয়ে দেয়াও নেকের কাজ।– বুখারী।
ব্যাখ্যাঃ অন্য এক হাদীসে ইরাশাদ হয়েছে, তোমার মর্যাদা প্রতিপত্তি দ্বারা কারো উপকার সাধণ করাও নেকীর কাজ। এক ব্যক্তি তার বক্তব্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারছে না। অথচ তোমাকে সুন্দরভাবে বক্তব্য পেশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ অবস্থায় তোমার ভাইয়ের বক্তব্য পেশ করার ব্যাপারে সাহায্য করাও নেকীর কাজ।তোমাকে শক্তি প্রদান করা হয়েছে। এ শক্তি দিয়ে তুমি কোন দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তির সাহায্য করো। এটাও নেকীর কাজ। তোমাকে জ্ঞান ও বিদ্যা দান করা হয়েছে। এ অবস্থায় অপরকে সঠিক জ্ঞান দান করা নেকীর কাজ।
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আরাআইতা- তুমি কি দেখেছো? (আরবী**) লাম ইয়াজিদ- না পায়। (আরবী) ইয়ামালু- সে কাজ করবে। (আরবী) ইয়ানফাউ – উপকার করবে। (আরবী) ইয়াতাসাদ্দাকু- সদকা করবে। (আরবী) লাম ইয়াসতাতি- সমর্থ না হয়।(আরবী) আলমালহূফু- বিপন্ন ব্যক্তি। (আরবী) ইউমসিকু- বিরত থাকবে। (আরবী) আশশাররু- অনিষ্ট।
৩৬৯।আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সদকা প্রদান করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপরিহার্য্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি কারো নিকট ধন সম্পদ না থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, সে নিজ হাতে উপার্জন করবে। তা হতে নিজে খাবে এবং গরীবকে দান করবে। আমি বললাম, যদি সে উপার্জনে অক্ষম হয়? তিনি বললেন, কোন অসহায় ও বিপন্ন ব্যক্তিকে সাহায্য করবে। আমি বললাম, যদি এতেও সে সমর্থ না হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সৎ ও নেক কাজে লোককে উৎসাহিত করবে। আমি পুনরায় আরজ করলাম, যদি এ কাজও সে করতে না পারে? তিনি জবাবে বললেন, তাহলে সে মানুষের অনিষ।ট হতে রিত থাকবে। কেনোনা এটাও নেকীর কাজ।–মুসলিম।
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) হাজাতি আখীহি- তার ভাইয়ের প্রয়োজনে। (আরবী) ফী হাজাতিহী- তার প্রয়োজনে।
৩৭০। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনের সময় সাহায্য করবে আল্লাহ তার প্রয়োজনের সময় সাহায্য করবেন।– বুখারী, মুসলিম।
ব্যাখ্যাঃ অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাঁর কিছু বান্দাকে মানুষের সাহায্য ও উপকার সাধনের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ নিজ প্রয়োজনের কথঅ তাদের নিকট পৌছিয়ে দেয়া মাত্র তারা তা পূরণ করে দেন। এ সকল লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তি হতে নিরাপদ থাকবে।
বিশুদ্ধ আমল
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আগনা- অধিক মুক্ত। (আরবী) আশশরাকাউ- শরীকদের।(আরবী) অশরাকা- শরীক করেছে।(আরবী) বারিয়্যুন-মুক্ত।
৬৭১।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, আমি অন্যান্য শরীকদের মুকাবিলায় শিরক হতে অধিক মুক্ত।অর্থাৎ শিরক- এর মুখাপেক্ষী নই।কোন ব্যক্তি তার কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করলে তার কাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না। আমি তার কাজ হতে মুক্ত।উক্ত আমল বা কাজ কেবল তার জন্যেই হবে। যাকে সে আমার সাথে শরীক করলো।–মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ যে সকল দ্বীনি ভাইদের নেক আমল করার তওফীক হয়েছে, বিশেষ করে যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত। তাদেরকে এ হাদীস সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে। এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নেকের যে কোন কাজ তা ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত হোক বা ব্যবহারিক জীবনের সাথে। সেটা নামায হোক কিংবা আল্লাহর বান্দাদের সেবামূলক কাজ হোক। যদি সে কাজ দ্বারা নাম ও প্রতিপত্তি লাভ, কিংবা কোন সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বিশেষের ধন্যবাদ গ্রহণ করা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আল্লাহর নিকট এ ব্যক্তির আমলের কোন মূল্য নেই। আর যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং মানুষের ধন্যবাদ লাভ দুটোই । উদ্দেশ্য হয় তাহলে সে আমল বিফল বলে গণ্য হবে। যদি শুরুতে আল্লাহর সন্তুষ্টি তাকে নেক আমলের প্রতি উৎসাহিত করে থাকে, পরবর্তীতে অপরের সন্তুষ্টি অর্জন উক্ত স্থান দখল করে নেয় তাহলে এ আমলও বিফলে যাবে। কাজেই এসব ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। শয়তান প্রবেশের জন্যে হাজার দুয়ার খোলা আছে। এরুপ অদৃশ্য শত্রুর হাত হতে বাঁচার একটি পথই আছে। তাহলো আল্লাহর আত্নসমর্পন করা। তাঁর নিকট নিজের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করা। কেনোনা আল্লাহ সাহায্য না করলে দুর্বল মানুষ শয়তানের আক্রমন হতে কোনভাবেই রক্ষা পেতে পারে না।
সংশোধন ও প্রশিক্ষণের উপাদানসমূহ
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের বিবরণঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) তিসআতুও ওয়া তিসউনা- নিরানব্বই। (আরবী) মান আহসাহা- যে তা মনে রেখেছে। (আরবী) দাখালাল জান্নাতা- সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩৭২।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর একশত হতে এক কম নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ মনে রাখার অর্থ হলো নামগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য্য ভাল করে জানা। বাস্তব জীবনে এগুলোর চাহিদা ও দাবীসমূহ পূরণ করা। অন্যভাবে এটা বলা যায় যে, আল্লাহর গুণাবলী দ্বারা নিজেকে রঞ্জিত করে বাস্তব জীবনে তার চাহিদা ও দাবী অনুযায়ী আমল করাই হলো মনে রাখার প্রকৃত অর্থ।
এ হাদীসে আল্লাহর সবগুলো গুণবাচক নামের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি। এগুলো জানা এবং এগুলোর তাৎপর্য এবং চাহিদা হৃদয়ঙ্গম করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।কারণ পবিত্র কুরআনের মধ্যেই আল্লাহ তাঁর যাবতীয় গুণবাচক নাম, এদের চাহিদা ও এগুলো থেকে উপকৃত হাবার প্রকৃত পন্থা বর্ণনা করে দিয়েছেন। তবে একথা সত্য যে, এগুলো থেকে ঐ ব্যক্তিই পূর্ণ মাত্রায় উপকৃত হতে পারবে। যে ব্যক্তি কুরআন অর্থসহ বুঝে শুনে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বিভিন্ন হাদীসে চাহিদাসহ এ নামগুলো বর্ণনা করেছেন। পবিত্র হাদীস ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমেই এটা বুঝা যাবে। আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোকে কিভাবে স্মরণ ও আত্নস্থ করা যায়। আমরা এখানে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে এমন কয়েকটি জরুরী গুণবাচক নামের আলোচনা করলাম, যেগুলো বার বার পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।মুমিনগণের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও এগুলো অত্যন্ত জরুরী ও ফলপ্রদ।
১।(আরবী) (আল্লাহ) হলো সেই মহান সত্ত্বার মূল নাম যিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা। একমাত্র স্রষ্টা ব্যতীত অন্য কারো জন্যে কখনো এ নামটি ব্যবহৃত হয়নি। যে ধাতু হতে এ শব্দটি বের হয়েছে তার দুটো অর্থ আছে। প্রথমটি হলো প্রেমের আকর্ষণে কারো প্রতি ঝোঁকে যাওয়া, অগ্রসর হওয়া। দ্বিতীয়টি, হলো, বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবার আশায় কারো কাছে দৌড়ে আসা ও তার নিকট আত্নসমর্পন করা। সুতরাং আল্লাহ আমাদের ইলাহ।অতএব এর দাবী হলো, তাঁর প্রেমেই আমাদের অন্তর পরিপূর্ণ থাকবে। আমাদের অন্তরে তার আকর্ষণ ব্যতীত আর কারো প্রতি কোন আকর্ষণ থঅকবে না। আমাদের দেহ ও প্রাণের যাবতীয় শক্তি ও যোগ্যতা তারই জন্যে নিবেদিত।তারই আনুগত্য ও দাসত্ব করবে এবং একমাত্র তারই সামনে মাথা নত করবে। তারই উদ্দেশ্যে মানত ও কুরবানী পেশ করবে। তার উপরই সব অবস্থায় নির্ভর করবে। তাঁর কাছেই নিজেকে পূর্ণমাত্রায় উৎসর্গ করে দেবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট বিপদাপদ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য চাইবে না। উপরোল্লিখিত সবগুলো বিষয়ই আল্লাহর ইলাহ হবার প্রকাশ্য ও জাজ্জ্বল্যমান দাবী।
২।(আরবী) (আর-রব) এ শব্দটি যে মূল শব্দ হতে নির্গত হয়েছে তার অর্থ হলো লালন পালন করা। দেখাশুনা করা।রক্ষণাবেক্ষণ করা। সকল সংকট থেকে রক্ষা করে উন্নতির যাবতীয় উপায় উপাদান সরবরাহ করা। উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দেয়া। আল্লাহর রুবুবিয়াতের বিষয়টি একটি অত্যন্ত প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট বিষয়।মাতৃগর্ভের গভীর অন্ধকারে খঅদ্য ও আলো বাতাস সরবরাহ করে কে? দুনিয়ায় আগমনের পূর্বেই সন্তানের জন্যে মায়ের বুকে খাদ্যের সংস্থান করে রাখে কে? কে সে সত্তবা যে পিতা মাতা ও অন্যান্য আত্নীয়স্বজনের অনতএর সন্তানের জন্যে স্নেহ মমতা লুকিয়ে রাখেেএরুপ করা না হলে সন্তান যখন কেবলমাত্র একটি মাংসপিন্ডের ন্যায় ভূমিষ্ট হয় তখন কে তাকে কোলে তুলে নিতো? কে তার অভাব পূরণ করতো? ধীরে ধীরে কে তার দৈহিক ও মানসিক শক্তির শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতো? এ দুর্বার যৌবন, এ নিটোল স্বাথ্য ও সবলতা কার দান?এ আসমান জমীনের বিচিত্র কারখানা কিভাবে ও কার জন্যে সতত চলমান? এসব কি তার রুবুবিয়াতের অকাট্য দলীল নয়? তিনি ব্যতীত এমন অন্য কোন সত্ত্বা কে আছে যে তাঁর এ রুবুবিয়াতের অংশীদার হতে পারে?
যদি একমাত্র তিনিই আমাদের মুরুব্বী ও মহা উপকারী বন্ধু হয়ে থাকেন। তাহলে এর সুস্পষ্ট দাবী হলো আমাদের জিহবা, হাত, পা, দেহও প্রাণের যাবতীয় শক্তি সামর্থ একমাত্র তার জন্য নিবেদিত ও উৎসর্গকৃত হবে। তিনি শুধু সৃষ্টির জন্যে খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থাই করেননি বরং তাঁর রুবুবিয়াতের অনুপম নিদর্শন হিসাবে আমাদের সামগ্রিক জীবযাত্রাকে সটিক পথে পরিচালিত করেছেন এ লক্ষে আমাদের আত্নার উপযুক্ত খোরাক দানের জন্যে তিনি কিতাবও পাঠিয়েছেন। আর এটাই হলো মানব জাতির প্রতি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ইহসান। এ কিতাবের মর্যাদা রক্ষা করে এটাকে আত্না ও প্রাণের খোরাক বানিয়ে নিতে হবে। নিজের জীবনে একে বাস্তবায়িত করে একজন অনুগত ও কৃতজ্ঞ বান্দাহর ন্যায় বিশ্বব্যাপী এর প্রচার ও চর্চা করার জন্যে জীবনপণ করতে হবে। যেসব লোক এ কিতাবের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন থেকে এখনো বঞ্চিত তাদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এসব কিছুই আল্লাহর এ মহান দান ইহসানের দাবী।
৩।(আরবী***) (আর রাহমানু আর রাহীম) এ দুটো শব্দ রহমত শব্দ থেকে বের হয়েছে। প্রথম শব্দটির মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও আধিক্যবোধ অর্থ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় শব্দটির মধ্যে ধারাবাহিকতা ও নিত্যতার অর্থ পাওয়া যায়। তিনিই রাহমান (করুনাময়) যাঁর করুণার মধ্যে তীব্র আবেগ পরিলক্ষিত হয়। বায়ু,পানি ও অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা আল্লাহর এ বিশেষণটিরই কাজ। আর এ বিশেষণটির ফলশ্রুতিতেই তিন মানব জাতির হেদায়েতের জন্যে তার সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত ও ইহসান হিসাবে আল কুরআন পাঠিয়েছেন।
(আরবী***)
করুণাময় তিনি কুরআন শিখিয়েছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিন মানুষকে কথা বলার শক্তি দান করেছেন।
(আরবী**) (আর রাহীমূ) শব্দের অর্থ হলো, যার করুণার ধারাবহিকতা কখনো ছিন্ন হয়না। যার করুণা অত্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ও চিরন্তন। এ গুণগুলোকে মেনে নেবার পর রহমানের পছন্দানুযায়ী রীতি মুতাবিক জীবন যাপন করা অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় এরুপভাবে জীবন যাপন করলেই আরো অধিক রহমাতের দাবীদার ও অধিকারী হতে পারবে। নিজের জীবনকে এমন ভিত্তির উপর রচনা করবে না যে ভিত্তি রহমানের অপছন্দ। অন্যথায় তিনি তার কৃপা দৃষ্টি তোমার উপর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেবেন। সূতরাং যে সমস্ত লোক ইকামাতে দ্বীনের সংগ্রামে লিপ্ত, তাদের বাঁধা বিপত্তিম, বিপদাপদ ও চরম নির্যাতনের মধ্যেও মনে রাখতে হবে তাদের প্রতিপালক আল্লাহ যখন করুণাময় তখন তিন তাঁর অপার করুণা হতে তাদেরকে অবশ্যেই বঞ্চিত করবেন না।
৪। (আরবী***) (আল-কায়েমু বিলকিসতি)।অর্থাৎ ন্যায়পরায়ন ও ন্যায় বিচারক। সুতরাং তিনি যখন ন্যায়পরায়ন ও সুবিচারক তখন তাঁর নিকট বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী, অপরাধী ও নিরপরাধী িএক হতে পারে না। উভয়ের সঙ্গে তিনি দুনিয়া এবং আখেরাতের কোন স্থানেই একই রকম ব্যবহার করতে পারেন না।
৫।(আরবী**) (আল-আযীযু)। ক্ষমতাধর, প্রতাপশালী। প্রত্যেকেই যার ক্ষমতাধীন। কেউ যার ক্ষমতাকে কখনো চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। তিনি যদি তাঁর অনুগত বান্দাগণকে বিজয়ী করে তার হাতে সকল ক্ষমতা দিতে চান, তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তি তাঁর এ সিদ্ধান্তকে বানচাল করতে পারবে না। অপর পক্ষে তিনি যদি তার কোন গোলামকে শাস্তি দিতে চান তাহলে সে কোথাও পালিযে থাকতে পারবেনা। তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কেউ কোন প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারবে না।
৬।(আরবী) (আর-রাকীবু)। তত্ত্বাবধায়ক, পর্যবেক্ষকও দেখাশুনাকারী। যখন তিনি সকলের কার্যাবলী তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ করেন তখন সে অনুযায়ীই তিনি তাদের জন্য পুরস্কার ও শাস্তি বিধান করবেন।
৭।(আরবী) (আল-আলীমু) সর্বজ্ঞ। এ বিশ্ব চরাচরের কে কোথায় আছে? কি করেছে? কি তার প্রয়োজন? তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের মধ্যে কে কোথায় কোন কঠিন অবস্থা ও বিপদের সম্মুখীন? সবই তার নখদর্পণে। সবই তাঁর জানা। এ কারণেই তিনি অপাত্রে দান ও ভুল সিদ্ধান্ত করা থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি পুরস্কার অথবা শাস্তির যোগ্য তিনি তাকেই তা দিয়ে থাকেন। তার রহমত ও সাহায্য পাবার কোন যোগ্য ও অধিকারী যেমন কখনো রহমত ও সাহায্য থেকে বঞ্চিত হন না। তেমনি তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির অধিকারী ব্যক্তিও কখনো সফলতার মুখ দেখতে পারবে না।
এখানে আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে এমন কতগুলো পূর্ন গুণবাচক নামের বিবরণ দেয়া হলো যাদের মধ্যে অন্যান্য গুণবাচক নামের বৈশিষ্ট্যও প্রায় এসে গেছে। এ পুস্তকে এর বেশী উল্লেখ করার অবকাশ নেই। তবে একথা আমি আবারো বলতে চাই। আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য জানতে হলে কুরআনও হাদীস অধ্যয়ন করা জরুরী। আরবী বাষা যারা জানেন এবং যারা জানেন না উভয় শ্রেণীকে এটা চিন্তা করে দেখতে হবে যে, আল্লাহ আল –কুরআনের আয়অতসমূহের শেষাংশে কেন তার গুণবাচক নামসমূহ সংযোজন করেছেন এবং এগুলোর মধ্যে মানুষের জন্যে কি হেদায়াত নিহিত রয়েছে।
দুনিয়ার প্রতি বিরাগ ও আখেরাতের চিন্তা
সজাগ মন ও মৃত্যুর প্রস্তুতিঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তালা- তিনি তেলওয়াত করলেন। (আরবী) ইনফাসাহা- খুলে দেন। (আরবী) আলামুন- লক্ষণ। (আরবী) ইউরাফূ- চিনা যায়।(আরবী) আততাজাফি- বিরাগ। (আরবী) দারুগুরুরি- দুনিয়ার। (আরবী) দারুল খুলূদি- চিরস্থায়ী আবাস স্থল, পরকাল। (আরবী) আল ইনাবাতু- অনুরাগ। (আরবী) আল ইসতিদাদু-প্রস্তুতি নেয়া।
৩৭৩।আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ
(আরবী**)
যাকে আল্লাহ হেদায়েত দানের ইচ্ছা করেন আল্লাহ তার অন্তর ইসলামের জন্যে খুলে দেন।– আনয়ামঃ১৫২.
এ আয়াত পাঠের পর তিনি বললেন, নিশ্চয়ই নূর যখন অন্তরে প্রবেশ করে তখন অন্তর খুলে যায়। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এর কি কোন অনুভবনীয় লক্ষণ আছে? যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারবো যে অন্তর প্রশস্ত হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ, তার অনুভব যোগ্য পরিচয় হলো, অন্তরে দুনিয়ার প্রতি বিরাগ এবং চিরস্থায়ী আবাসস্থলের জন্যে অনুরাগ। মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকবে।– মেশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ যার অন্তরে ইসলামের প্রকৃত রুপ ধরা পড়ে তার মনে এ নশ্বর দুনিয়ার প্রতি বিরাগ ও অনীহা সৃষ্টি হতে থঅকে। আখিরাতের প্রতি তার প্রবল অনুরাগ জন্মে। মৃত্যুর পরোয়ানা লাভের পূর্বেই সে আখিরাতের জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
বিপদের ঘন্টাঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়াসুদ্দু-সরিয়ে দেবে। (আরবী) তাওলুল আমালি- রঙ্গিন আশা। (আরবী) ইয়ানসা- ভুলিয়ে দিবে। (আরবী) মুরতাহিলাতুন- বিদায় নিচ্ছে।(আরবী) যাহিবাতুন- চলে যাচ্ছে। (আরবী) মুরতাহিলাতুন কাদিমাতুন – এগিয়ে এসেছে।(আরবী) বানূনুন – সন্তানাদি। (আরবী) ইসাতাতাতুম-যদি তোমরা চাও।
৩৭৪।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আমার উম্মতের জন্যে যে জিনিসটির সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো প্রবৃত্তি পূজা ও পার্থিব উন্নতির রঙ্গিন আশা। প্রবৃত্তি পূজার ফলে তারা সত্যপথ থেকে অনেক দূরে সরে পড়বে। আশা আকাংখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আখেরাতের কথা ভূলে যাবে। সুতরাং একথা মনে রেখো। এ দুনিয়া বিদায় নিচ্ছে ও চলে যাচ্ছে। আখেরাত সামনে এগিয়ে আসছে। এদের উভয়েরই সন্তানাদি (অনুগামী) আছে। যদি তোমরা দুনিয়ার সন্তান (দুনিয়াদার, আত্নপূজারী) না হতে চাও তাহলে সৎকাজ করতে থাকো। কেনোনা আজ তোমরা কর্ম ক্ষেত্রে আছো। এখানে কোন হিসাব নেয়া হচ্ছে না। কিন্তু আগামীকাল তোমরা হিসেবের জগতে যাবে যেখানে কোন কাজের সুযোগ থাকবে না।– মিশকাত
পাঁচটি জিনিসকে জিনিসের পূর্বে মহাসুযোগ হিসাবে ব্যবহার করবেঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়ায়িযুহু- তাকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন। (আরবী) ইগতানিম- মূল্যবান মনে করো। (আরবী) শাবাবাকা- তোমার যৌবন কালকে। (আরবী) হারামিকা- তোমার বার্ধক্য। (আরবী) সুকমিকা – তোমার রগ্ন অবস্থা। (আরবী) গিনাকা- তোমার সচ্ছলতাকে। (আরবী) ফিরাগাকা- তোমার অবকাশ কালকে। (আরবী) হায়াতাকা- তোমার জীবনক কালকে।
৩৭৫।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটি বস্তুর পূর্বে মহামুল্যবান বলে মনে করবেঃ(১)বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকালকে।(২)রুগ্ন হয়ে যাবার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে।(৩) দরিদ্র হয়ে যাবার পূর্বে তোমার সচ্ছলতাকে(৪) ব্যস্ততা আসার পূর্বে তোমার অবকাশকে এবং(৫) মৃত্যু আসার পূর্বে তোমার জীবনকালকে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ বার্ধক্য আসার পূর্বেই যথাসম্ভব বেশী করে সৎকাজ করে নাও। কেনোনা বৃদ্ধ বয়সে ইচ্ছা করলেও কর্মক্ষমতার অভাবে মনের মতো করে কোন সৎকাজ করা যায় না। তোমার দৈহিক সুস্থতার সময় পরকালীন প্রস্তুতি সেরে নাও। কেনোনা অসুস্থ হয়ে গেলে কোন ভাল কাজ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে । সচ্ছলতা থাকা অবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে পরকালের পূঁজি বানিয়ে নাও। কেনোনা সম্পদ কোন সময় কারো নিকট চিরস্থায়ীভাবে থাকে না। যদি হঠাৎ করে তোমার সম্পদ চলে যায় আর তুমি গরীব হয়ে পড়ো তাহলে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার আর কোন সুযোগই পাবে না। সর্বোপরি নিজের জীবনকালকে আল্লাহর কাজে লাগিয়ে রাখো। কেনোনা মৃত্যুর ছোবল সমস্ত কাজের সম্ভাবনাকে তিরোহিত করে দেবে।
মৃত্যুর কথা স্মরণ করোঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কাআন্নাহুম- যেনো তারা। (আরবী) ইয়াকতাশিরুনা- তারা খিল খিল করে হাসছে। (আরবী) হাদিমিল্লাযযাত- আহলাদ অবসানকারী। (আরবী) লাশাগালাকুম- অবশ্যই তোমাদের ফিরিয়ে রাখতো। (আরবী) আম্মা আরা- আমি যা দেখছি। (আরবী) তুকাল্লিমু- সে বলে।(আরবী) বাইতুল শুরবাতি- পান্থনিবাস। (আরবী) বাইতুল ওয়াহদাতি- নির্জন কুটির। (আরবী) বাইতুদ্দুদি- কীট পতঙ্গের আস্তানা। (আরবী) উল্লীতুকা- আমি তোমার ওলী। (আরবী) সাতারা- তুমি দেখবে। (আরবী) সানীঈ- আমার কর্মকান্ড। (আরবী) ইয়াত্তাসিউ- প্রশস্ত হবে। (আরবী) মাদ্দা নাযরিহি- তার দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত। (আরবী) ইউফাতাহু- খোলা হবে। (আরবী) আলফাজিরু- গুনাহগার। (আরবী) আবগাযু- খুব ঘৃণিত। (আরবী) যাহরী- আমার পিঠ। (আরবী) ইয়ালতায়িমু- সে চেপে যাবে। (আরবী) তাখতালিফু প্রবেশ করবে। (আরবী) ইউকাইয়্যিযু-ঠিক করা হবে। (আরবী) সাবউনা- সত্তর। (আরবী) তিনীনান- বিষধর সাপ। (আরবী) নাফাখা- নিঃশ্বাস ফেলতো। (আরবী) ইয়ানহাসনাহু- তাকে দংশন করবে। (আরবী) ইয়াখদাশনাহু- তাদের ছোবল মারবে। (আরবী) রাওদ্বাতুন- বাগান। (আরবী) হুফরাতুন- গর্ত।
৩৭৬। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের জন্যে মসজিদে এসে দেখলেন কিছু লোক খিল খিল হাসছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমরা সকল আনন্দ আহলাদের অবসানকারী মৃত্যুর কথা বেশী করে স্মরণ করতে, তাহলে এ হাসি বন্ধ হয়ে যেতো। সমস্ত স্বাদ আহলাদের অবসানকারী মৃত্যুর কথা বেশী করে স্মরণ করো। কবর প্রতিদিন একথা বলতে থাকে, আমি পান্থনিবাস। আমি নির্জন কুটির। আমি মাটির ঘর। আমি কীঠপতঙ্গের আস্তানা। যখন কোন মুমিন বান্দাকে কবরে শায়িত করা হয়, কবর তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলে, আমার উপর বিচরণকারীদের মধ্যে তুমিই আমার নিকট সবচেয়ে বেশী প্রিয় ছিলে। আজ যখন তোমাকে আমার অধীনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট এসে গেছো। তখন তুমি দেখতে পাবে আমি তোমার সংগে কতো উত্তম ব্যবহার করি।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ মুমিন ব্যক্তির জন্যে তার কবর দিগন্ত পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে যাবে। তার জন্যে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যখন কোন গুনাহগার অথবা আল্লাহদ্রোহী ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়ে। কবর তাকে স্বাগতমজানায় না। সে বলতে থাকে, আমার পিঠের উপর চলাচলকারীগণের মধ্যে তুমি ছিলে আমার নিকট সবচেয়ে বেশী ঘৃণ্য ব্যক্তি।আজ যখন তোমাকে আমার হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং আমার কব্জায় এসে গেছো,হাড়ে হাড়ে টের পাবে আমার আচরণ কতো নিষ্ঠুর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরপর তার কবর এমনভাবে সংকুচিত হয়ে চেপে যাবে যে, তার এক পাশের পাঁজর অপর পাশের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যাবে। একথা বলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এক হাতের আংগুলসমূহ অপর হাতের আংগুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন। এরপর তিনি বললেন, তারপর এমন সত্তরটি বিষধর সাপ তার উপর ছেড়ে দেয়া হবে। যদি তাদের কোন একটি সাপ এ পৃথিবীতে শুধুমাত্র নিশ্বাস ফেলতো তাহলে বিষের তীব্রতায় পৃথিবীর সবকিছুই মরে যেতো। যমীন চিরকালের জন্য উৎপাদন শক্তি হারিয়ে ফেলতো। অতপর এ বিষধর সাপগুলো তাকে অনবরত কামড়াতে ও ছোবল মারতে থাকবে। এ শাস্তি ভোগ করতে করতে হিসাব নিকাশের দিন এগিয়ে আসবে এবং হিসাব দানের জন্যে তাকে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, কবর মানুষের জন্যে জান্নাতের উদ্যানসমূহের কোন একটি উদ্যান অথবা জাহান্নামের গহবরসমূহের কোন একটি গহবরে পরিণত হয়।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ মানুষ যদি তার সাধ্যানুযায়ী পৃথিবীতে অন্যায় ও অপকর্মের বিরোধীতা করার চেষ্টা করে এবং আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করে মৃত্যু মুখে পতিত হয়, তাহলে হাশরের পূর্বে কবরের এ মধ্যবর্তী জীবনে আল্লাহ তার সংগে সদয় ব্যবহার করবেন। তাকে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখবেন। যে ব্যক্তি সারা জীবন অপকর্ম করে এবং তাওবা না করে মৃত্যু মুখে পতিত হয় আল্লাহ তার সংগে এমন ব্যবহার করবেন যেমন ব্যবহার আদালতে পেশ করারর পূর্বে নিকৃষ্টতম অপরাধে অভিযুক্ত আসামীর সংগে হাজতবাসের সময় করা হয়। হাদীসটির শেষাংশের অর্থ হলো- মানুষ ইচ্ছে করলে আল্লাহর পছন্দনীয় কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে নিজের কবরকে জান্নাতের উদ্যানের ন্যায় মনোরম আবাসে পরিণত করতে পারে। আবার ইচ্ছে করলে সারা জীবন পাপ ও অপকর্মে ডুবে থেকে নিজের কবরকে জাহান্নামের ভয়াবহ গহবরের ন্যায় নিকৃষ্ট ও ঘুণ্য নিবাসেও পরিণত করতে পারে।
কবর যিয়ারতঃ
(আরব****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কুনতু নাহাইতুকুম- আমি তোমাদের মানা করতাম। (আরবী) ফাযূরুহা- তাই তোমরা যিয়ারত করো।
৩৭৭।বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কবর যিয়ারত করা থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম। (তৌহীদের পূর্ণ ধারণা মনে বদ্ধমুল হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। এখন তা হয়ে গেছে) সূতরাং এখন কবর যিয়ারত করতে পারো।–মুসলিম।
ব্যাখ্যাঃ মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে। এখন যদি তোমরা কবর যিয়ারতে যেতে চাও, যেতে পারো। কেনোনা কবরসমূহ পরকালের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।
কবরস্থানের সম্মানঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইউআল্লিমুহুম- তিনি তাদের শিক্ষা দিতেন। (আরবী) আলমাকাবিরি- কবরস্থানগুলো। (আরবী) আহলাদ্দিয়ারি- ঘরের মালিকগণ। (আরবী) লাকিনা- মিলিত হচ্ছি। (আরবী) আসয়ালু- আমি কামনা করছি।
৩৭৮। বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের জন্যে বের হয়ো লোকদেরকে শিক্ষা দিতেন। সেখানে গিয়ে তোমরা বলবে, হে ঘরসমূহের মুমিন ও মুসলিম বান্দাগণ!তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আমরা আল্লাহ চাহেত অচিরেই তোমাদের সংগে মিলিত হচ্ছি। আমি আমাদের জন্যে এবং তোমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট মাগফেরাত কামনা করছি।–মুসলিম
আরাম প্রিয়তাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) বাআসা- তিনি পাঠালেন। (আরবী) ইয়্যাকা ওয়াততানাউমা- তুমি অবশ্যই বিলাস ব্যাসন থেকে বিরত থাকবে। (আরবী) আলমুতানায়িমীনা- বিলাস ব্যাসন থেকে বিরত থাকবে।
২৭৯।মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে ইয়ামেনে গভর্নর নিয়োগ করে পাঠাবার কালে বললেন, হে মুয়ায!বিলাস ব্যাসন থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। কেনোনা আল্লাহর বান্দাগণ বিলাস প্রিয় হন না।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ তুমি সেখানে একটি উচ্চ পদে আসীন হয়ে যাচ্ছো। আর সেখানে উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিগণের জন্যে আয়েশ ও ভোগ বিলাসের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।অতএব তুমি দুনিয়ার প্রেমে ডুবে যেয়োনা। দুনিয়াদার আমীর উমরাদের ন্যায় বিলাসী মনোভাব পোষণ করো না। কেনোনা এ বিলাসী মানসিকতা আল্লাহর বন্দেগীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপ্যূর্ণ নয়।
দুনিয়া প্রীতি ও মৃত্যু ভীতি লাঞ্চনা কারণঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইউশিকু- অচিরেই। (আরবী) তাদাআ-ঝাপিয়ে পড়বে। (আরবী) কাসআতিহা- খাদ্য ভান্ডারের উপর। (আরবী) কিল্লাতিন-কম, নগণ্য। (আরবী) ইয়াওমায়িযিন-তখন, সে সময়। (আরবী) গুসাউন খড়কুটা। (আরবী) আসাইলু-প্লাবন। (আরবী) লাইয়ানযিআন্না- অবশ্যই উঠিয়ে নিবেন। (আরবী) আলমাহাবাতু-প্রভাব প্রতিপত্তি। (আরবী) লাইয়াকযাফান্না- অবশ্যই ঢেলে দিবেন। (আরবী) আলওয়াহনু-ভয়-ভীতি, কাপুরুষতা।
৩৮০।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের উপর এমন দুঃসময় আসবে যখন অন্যান্য জাতিগুলো তাদের উপর এমনভাবে ঝাপিয়ে পড়বে যেমনভাবে ক্ষুধাতুর মানুষ খাদ্য সামগ্রীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে।সাহাবাদের কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, তখন আমরা সংখ্যায় এতোই কম থাকবো?(যে অন্যান্য জাতিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে গিলে ফেলার জন্যে ছুটে আসবে?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, না সেদিন তোমাদের সংখ্যা কম হবে না। বরং তোমরা সংখ্যায় অধিক হয়েও প্লাবনের ভাসমান ফেনার ন্যায় ভেসে যাবে।তোমাদের অন্তরে প্রবল ভীতি ও কাপুরষতা সৃষ্টি হবে। একজন জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কাপূরুষতা কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুনিয়া প্রীতি ও মৃত্যু-ভীতি। – আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ছেড়ে দিয়ে দুনিয়াকে আকড়ে ধরবে। জিহাদের নাম শুনলে প্রাণ ভয়ে আঁতকে উঠবে। দুনিয়া প্রীতিই এর মূল কারণ।
ইহকাল ও পরকালের তুলনাঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আদাবরু- অধিক ক্ষতিগ্রস্ত। (আরবী) ফাআসিরু- তাই প্রাধান্য দাও। (আরবী) মা ইয়াবকী- যা বাকী থাকবে, স্থায়ী জীবন, আখেরাত। (আরবী) মা ইয়াফনী- যা অস্থায়ী, দুনিয়া।
৩৮১।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রেমে ডুবে থাকবে সে তার আখেরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে ভালোবাসবে সে তার দুনিয়ার জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতএব, হে লোক সকল!তোমরা স্থায়ী জীবনেক অস্থায়ী জীবনের উপর প্রাধান্য দান করো।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ দুনিয়া ও আখেরাত এ দুটোর যে কোন একটিকে নিজের জন্যে বেছে নিতে হবে। পার্থিব জীবনের উন্নতিকেই জীবনের মূল লক্ষ বানাতে হবে অথবা আখেরাতের কামিয়াবীকে আসল উদ্দেশ্যে পরিণত করতে হবে।
যদি দুনিয়ার জীবনে সুখ সুবিধা লাভকেই জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ নির্ধারিত করা হয় তাহলে আখেরাতে আরাম আয়েশের মুখ দেখতে পাবে না। অপরদিকে আখিরাতের সাফল্যকেই যদি জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ নির্ধারণ করা হয় তবে পার্থিব উন্নতি বরবাদ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একথা সত্য যে পার্থিব লোকসানের পরিবর্তে তাকে পরকালের চিরস্থায়ী পুরস্কার দেয়া হবে। আখিরাতের সাফল্য লাভের পরিবর্তে দুনিয়ার যে জিনিস হারাবে তা নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। আর দুনিয়ার জীবনও ক্ষণস্থায়ী।অস্থায়ী জিনিসের পরিবর্তে যদি স্থায়ী পুরস্কার লাভ করা যায় তবে তা লোকসানের সওদা না হয়ে লাভের পণ্যই হবে।
কে বুদ্ধিমান?
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলকাইয়্যিসু- বুদ্ধিমান, মেধাবী। (আরবী) দানা- নিয়ন্ত্রনে রেখেছে। (আরবী) আলআজিযু- নির্বোধ। (আরবী) হাওয়াহু- তার প্রবৃত্তি। (আরবী) তামান্না- সে আশা করে।
৩৮২।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই বুদ্ধিমান যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে সৌন্দর্য্য মন্ডিত করার কাজে আত্ননিয়োগ করেছে। নির্বোধ ও অক্ষম হলো সে ব্যক্তি যে নিজেরকে নফসের অধীনে ছেড়ে দিয়েছে এবং আল্লাহর উপর অযথা রহমতের আশা করছে।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ নিষেধের খেলাফ করে, রাসূলের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে িএবং প্রবৃত্তির পূজারয় ডুবে থেকে আশা করছো আল্লাহ জান্নাত দেবেন। কুরআন নাযিলের যুগে ইহুদী এবং খৃষ্টান সম্প্রদায় অনুরুপ অবাস্তব ও ভিত্তিহীন কল্পনায় বিভোর ছিলো। বর্তমান যুগের অসংখ্য মুসলমানও এরুপ আকাশ কুসুম কল্পনার যাদুঘরে বসবাস করছে। মনে করছে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশের উপর জীবনের ভিত্তি রচনা না করলেও জান্নাতের নাগাল পাওয়া যাবে।
আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়াঃ
(আরবী***)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আযারা- আপত্তি উত্থাপন করার কোন সুযোগ নেই। (আরবী) আখখরা- সময় দিয়েছেন। (আরবী) আজালাহু- তার দুনিয়ার জীবন। (আরবী) সিত্তীনা সানাতান- ষাট বছর।
৩৮৩।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যাকে দীর্ঘদীন জীবিত রেখেছেন এবং শেষ পর্যন্ত যার বয়স ষাটের কোঠায় পৌছেছে।( এতো দীর্ঘ হায়াত পাবার পরও) সে যদি নেককার হতে না পারে তাহলে আল্লাহর দরবারে ওযর পেশ করার কোন সুযোগই আর তার থাকবে না। – বুখারী
প্রকৃত লজ্জাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইসতাহয়ু- তোমরা লজ্জিত থেকো। (আরবী) তাহাফাযু- তুমি হেফাযত করবে। (আরবী) মা ওয়াআ- যা একত্রিত হয়। (আরবী) মা হওয়া- যা দিয়ে পেট পুরে। (আরবী) আন তাযকুরাল মাতওতা- মৃত্যুর কথা স্মরণ করা।(আরবী) আসারা- সে প্রাধান্য দেয়।
৩৮৪।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর প্রতি লজ্জিত থাকো। আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আল্লাহকে লজ্জা করছি। রাসূলুল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি আসল লজ্জা নয় বরং আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের লজ্জা হলোঃ তুমি তোমার মন মগজে উত্থিত সমুদয় চিন্তা ভাবনার হেফাযত করবে। কি খাবার খেয়ে পেট ভরছো তার প্রতি নজর রাখবে। মৃত্যু, মৃত্যু যন্ত্রনা এবং মৃত্যু পরবর্তী ভয়ংকর অবস্থার কথা স্মরণ করবে। এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আখিরাতে সুখের আশা করে। পার্থিব জীবনের জৌলুস ছেড়ে দেয়। সর্বক্ষেত্রে আখিরতকেই প্রাধান্য দেয়। যে ব্যক্তি এসব কাজ করে সত্যিকার অর্থে সে ই আল্লাহকে লজ্জা করে। – তিরমিযি
পূর্ণাঙ্গ উপদেশঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইযনী- আমাকে উপদেশ দিন। (আরবী) আওজিয – সংক্ষেপ করুন। (আরবী) মুওয়াদ্দিয়িন- শেষ। (আরবী) লা- তুকাল্লিম – কথা বলোনা। (আরবী) তুযিরু- তুমি ক্ষমা চাইবে। (আরবী) গাদান- আগামী কাল। (আরবী) আজমিয়িল ইয়াসা-নৈরাশ্য অবলম্বন করো।
৩৮৫।আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে নিবেদন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে পূর্ণাঙ্গ উপদেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন নামায পড়ার জন্যে দাঁড়াবে তখন এমন ব্যক্তির ন্যায় নামায পড়বে যে দুনিয়া হতে বিদায় নিচ্ছে। মুখ দিয়ে এমন কোন কথা উচ্চারণ করবে না, কিয়ামতের দিন যদি সে কথার হিসেব নেয়া হয় তবে আত্নপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ থাকবে না। অন্য মানুষের ধন সম্পদের আশা পোষণ করো না। – মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ মৃত্যু পথযাত্রী কোন লোক যখন একথা বিশ্বাস করে তার আর বাঁচার আশা নেই। তখন সে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ও নিবিষ্ট চিত্তে নামায পড়বে। তার মন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর প্রতি রুজু থাকবে। নামায পড়ার সময় তার মনে দুনিয়ার কোন চিন্তাভাবনা স্থান পাবে না। মানুষ যে কথা বলে ফেলে তা যদি সত্যি না হয়ে মিথ্যে হয়, এ অপরাধের জন্যে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা না করে, তবে একথা তো খুবই স্বাভাবিক, হিসেব দেয়ার বেলা তার স্বপক্ষে বলার মতো কিছুই থাকবে না। শেষ বাক্যটির তাৎপর্য্য হলো, অপরের সঞ্চিত ধন সম্পদ ও মাল সামানার প্রতি কখনো লোভ ও ঈর্ষা করবে না। কেনোনা এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষের মন পার্থিব ধন সম্পদের লোভ লালসা হতে মুক্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আখিরাতের উচ্চাসনের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারবে না।
পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়াঃ
(আরবী****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- তাযুল- সে সরাতে পারবে না। (আরবী) ইউসআলু- সে জিজ্ঞাসিত হবে। (আরবী) ফীমা আফনাহু- কোন কাজে ব্যয় করেছে। (আরবী)ইকতাসাবাহু- সে তা উপার্জন করেছে। (আরবী) সে তা খরচ করেছে। (আরবী) আবলাহু – সে তাকে কাজে লাগিয়েছে।
৩৮৬।আবু বারযা আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন কোন মানুষ আল্লাহর দরবার থেকে তার পা সরাতে পারবে না।ঃ (১) তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, জীবন কোন কাজে ব্যয় করা হয়েছে?(২)এলেম অনুযায়ী দ্বীনের কাজ করা হয়েছে কি না?(৩) দেহকে কোন কাজে লাগিয়েছে?- তিরমিযি
জান্নাত উদাসীনের জন্যে নয়ঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মান খাফা- যে ভয় করে। (আরবী) আদলাজা- সে রাতের আঁধারে চলে। (আরবী) বালাগা- সে পৌছে। (আরবী) আলমানযিলু- গন্তব্য স্থল। (আরবী) সিলআতুন- পণ্য। (আরবী) গালিয়াতুন- বেশী দামী।
৩৮৭। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসাফিরের মনে আশাংকা থাকে তাড়াতাড়ি না চললে গন্তব্যেস্থলে পৌছা যাবে না। সে না ঘুমিয়ে রাতের অন্ধকারেই পথ চলা শুরু করে। যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে চলতে থাকে সে নির্বিঘ্নে গন্তব্যস্থলে পৌছে যায়। জেনে রেখো, আল্লাহর ধন অত্যন্ত মূল্যবান।দাম বেশী না দিলে পাওয়া যায় না। আর মনে রেখো, আল্লাহর ধন হলো জান্নাত।– তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ সত্যিকার অর্থে মানুষ এ জগতে প্রবাসী। আখেরাতই হলো তার প্রকৃত নিবাস। এ পৃথিবীতে সে কেবলমাত্র উপার্জনের জন্যে এসেছে। এখন যে ব্যক্তির আপন দেশের কথা মনে আছে সে যদি রাস্তার বিপাদাপদ ডিঙ্গিযে সহি সালামতে বাড়িতে ফিরে যেতে চায়। তার পক্ষে উদাসীন না থেকে তাড়াতাড়ি সওদা পত্র সেরে সত্তর বাড়ীর দিকে যাত্রা করতে হবে। সে যদি আলসেমী করে ঘুমিয়ে থাকে ও যথাসময়ে যাত্রা শুরু না করে। তাহলে মেষে দুর্ভোগে পড়ে পস্তাতে থাকবে।অতঃপর যে ব্যক্তি এ সিদ্ধান্তে পৌছেছে যে তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করতে হবে। তাকে মনে রাখা উচিত আল্লাহর এ ধন এমন কোন সস্তা জিনিস নয় যে, কোন ব্যবসায়ী আন্দাজ অনুমানে কিছু দিয়ে দেবে আর কোন খরিদদার তা নিয়ে নেবে। আল্লাহর এ ধন অর্জনের জন্যে অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হবে। মহা পরীক্ষার সম্মূখীন হতে হবে। নিজের সময়, ধন দৌলত, জান প্রাণ ও যোগ্যতা সবকিছুই এজন্যে ব্যয় করতে হবে। এতো সব ত্যাগ তিতিক্ষার পরই মানুষ ওই জিনিস পাবে যা পেলে সে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে যায়।
তিলাওয়াতে কুরআন
কুরআনের সুপারিশঃ
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইউতা- আনা হবে। (আরবী) ইয়ামালূনা- তারা আমল করতো।(আরবী) তাকাদ্দিমুহু- তার সামনে দাঁড়াবে। (আরবী) তাহাজ্জানি- তারা উভয়ে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। (আরবী) আন সাহিবিহিমা- তাদের পাঠকদের পক্ষে।
৩৮৮।নাওয়াস ইবনে সাময়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন কুরআন ও তার অনুসারীগণকে, যারা দুনিয়ায় েএর উপর আমল করতো, আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। সূরায়ে বাকারাহ ও সুরায়ে আলে ইমরান সমস্ত কুরআনের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের উপর আমলকারীগণের জন্যে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে( এবং বলবে এরা আপনার রহমত ও মাগফেরাত পাওয়ার যোগ্য।এদের উপর দয়অ করুন।এদের অপরাধ ক্ষমা করে দিন।) –মুসলিম
কুরআনের মর্যাদাঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সুহবাতুন- সাহচর্য। (আরবী) লা- তাতাওয়াসসাদূ- তোমরা বালিশ বানিও না। (আরবী) উতলুহু- তোমরা তা পাঠ করো। (আরবী) আনাউন- সময়। (আরবী) উফশূহ- তা পাঠ করো।(আরবী) আনাউন- সময়। (আরবী) উফশূহু- তা প্রচার করো। (আরবী) তাগান্নুহু- তাকে সুর করে পাঠ করো। (আরবী) তাদাব্বারু- চিন্তা ভাবনা করো। (আরবী) লা- তাআজ্জালূ- তাড়াতাড়ি করো না।
৩৮৯।উবায়দুল্লাহ মুলাকী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাহচার্য পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলােইহে ওয়অসাল্লাম বলেছেন, হে কুরআন অনুসারীগণ! তোমরা কুরআনকে বালিশ বানিও না। দিবস ও রাতের সময়গুলোতে সঠিকভাবে কুরআন তিলাওয়অত করো। তার প্রচার ও প্রসারে আত্ননিয়োগ করো। তার শব্দসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করো। কুরআনে যা বলা হয়েোছ তা সঠিকভাবে অনুধাবন করার জন্যে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করো। এরুপ করলে তোমরা (দুনিয়া ও আখেরাতে) সফলতা অর্জন করতে পারবে। কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে দুনিয়াবী উন্নতির আশা পোষণ করো না। কেনোনা পরকালে এর জন্যে মহা মূল্যবান পুরস্কার রয়েছে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ কুরআনের বালিশ না বানানোর অর্থ হলো। কুরআন সম্পর্কে উদাসীন না হওয়া। হাদীসের মেষ বাক্যের অর্থ হলো কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পর তাকে পার্থিব পদ মর্যাদা ও ধন দৌলত অর্জনের মাধ্যম না বানানো। কেনোনা এক হাদীসে আছে। কিছুসংখ্যক মানুষ কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পর তাকে পার্থিব ধন সম্পদ অর্জনের মাধ্যম বানাবে।
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে নূরে ইলাহী অর্জনঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আওসিননী- আমাকে উপদেশ দিন। (আরবী) উসীকা- আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি। (আরবী) বিতাকওয়াল্লাহ- আল্লাহ ভীতি সম্পর্কে । (আরবী) আযইয়ানু- অধিক সৌন্দর্য্য। (আরবী) জিদনী- আমাকে আরো বলুন। (আরবী) যিকরুল্লাহি- আল্লাহর যিকির।
৩৯০।আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহকে ভয় করার জন্যে উপদেশ দিচ্ছি। কেনোনা আল্লাহর ভয় তোমার যাবতীয় কর্মধারাকে সঠিক পথে প্রবাহিত করবে। আমি বললাম আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর স্মরণে নিজকে মশগুল রাখো। তাহলে আল্লাহ তোমাকে আকাশে স্মরণ করবেন। এ দুটো জিনিস তোমার পার্থিব জীবনের ঘোর অন্ধকারে আলোক বর্তিকার কাজ দেবে।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ স্মরণ করবেন- এর অর্থ হলো, আল্লাহ তোমাকে ভুলে যাবেন না। তিনি তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মুমিনের দিব্য দৃষ্টি লাভ ঘটে ও জীবন পথের ঘোর অমানিশায় সরল পথের সন্ধান পাওয়া যায়।
অন্তরের মরিচা বিদূরিত করার উপায়ঃ
(আরবী*****)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তাসদাউ- মরিচা ধরে। (আরবী) আসাবহু- তাকে লাগে।(আরবী) জালাউহা- তা পরিস্কারের উপায়।(আরবী) কাসরাতু যিকরিল মাউতি- মৃত্যুর কথা অধিক স্মরণ করো।
৩৯১।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পানি লাগলে লোহায় যেমন মরিচা ধরে তেমনি অন্তরেও (গুনাহের কারণে) মরিচা পড়ে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! অন্তরের মরিচা দূর করার উপায় কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, অধিক হারে মৃত্যুর কথা স্মরণ ও কুরআন তেলাওয়াত করলে অন্তরের মরিচা বিদূরীত হয়।– মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ মৃত্যুর কথা স্মরণ করার অর্থ হলো, জীবনের এই যে অবকাশ, এটাই শেষ অবকাশ। মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে এসে কোন কাজ করার সুযোগ পাওয়িা যাবে না। কুরআন তিলাওয়াতের অর্থ হলো বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করা। কুরআনে যা কিছু বলা হয়েছে তা বুঝতে চেষ্টা করা ও সে অনুযায়ী আমল করা। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের যেখানেই কুরআন তিলাওয়াতের কথা এসেছে সেখানে উপরোক্ত অর্থই গ্রহণ করা হয়েছে। এ শব্দটির অন্য একটি অর্থ আছে। তাহলো কুরআনের তাবলীগ করা ও তাকে অন্যের নিকট পৌছিয়ে দেয়া।
নফল এবং তাহাজ্জুদ
আল্লাহর নৈকট্য লাভের পন্থা
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তাকাররাবা- নিকটবর্তী হয়। (আরবী) শিবরান- এক বিঘত পরিমাণ। (আরবী) যিরাআন- এক হাত। (আরবী) বাআন- এক গজ। (আরবী) ইয়অমশী- হেঁটে আসে। (আরবী) হারওয়ালাতান- দৌড়ে।
৩৯২। আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহপাক বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক বিঘত অগ্রসর হয়। আমি তার প্রতি এক হাত অগ্রসর হই। যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক হাত এগিয়ে আসে। আমি তার প্রতি এক গজ এগিয়ে যাই। যে ব্যক্তি পায়ে হেটে আমার দিকে আসতে থাকে। আমি তার দিকে দৌড়ে ছুটে যাই।–মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে ইচ্ছে করে। আল্লাহ তার চলার পথকে সহজ করে দেন। মানুষ যখন তার দুর্বলতা সত্ত্বেও আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়। তখন আল্লাহ তার প্রতি করুণা বর্ষণ করেন। এগিয়ে এসে তাকে কাছে টেনে নেন। শিশু যেমন পিতার নিকট যাবার জন্যে অগ্রসর হলে দুর্বলতার জন্যে যেতে না পারলে, পিতা নিজেই দৌড়ে এসে তাকে কোলে তুলে নেন। তেমনি আল্লাহও এ ধরনের বান্দাকে তাঁর কাছে টেনে নেন।
(আরবী****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইফতারাযতু- আমি ফরয করেছি। (আরবী) মা- ইয়াযালূ-সর্বদা। (আরবী) ইয়াতাকাররাবু- নৈকট্য লাভ করবে। (আরবী) আহবাবতুহু- আমি তাকে ভালোবাসি। (আরবী) কুনতু সামাউহু- আমি তার কান হয়ে যাই। (আরবী) ইয়াবতিশু- সে ধরে।(আরবী) ইয়ামশী- সে হাটে।
৩৯৩।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, যেসব কাজের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করে তন্মধ্যে ঐ কাজগুলোই আমার নিকট সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ যেগুলো আমি তার উপর ফরয করেছি। আমার বান্দা একধারে নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভের জন্যে চেষ্টা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সে আমার প্রিয় হয়ে যায়। তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই। যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হযে যাই যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্্য লাভের ইচ্ছা করে সে প্রথমে আল্লাহর ফরয হুকুম- আহকামগুলো প্রতিপালনের জন্যে চেষ্টা শুরু করে দেয়। শেষ পর্যন্ত এটাকে যথেষ্ট মনে না করে আল্লাহ প্রেমের প্রাবল্যে নিজেরই ইচ্ছায় নফল ানামায, নফল রোযা, নফল সদকা ও অন্যান্য নফল ইবাদাতে নিমগ্ন হয়ে আল্লাহর মাহবুব বান্দায় পরিণত হয়ে যায়। আল্লাহর মাহবুব বান্দায় পরিণত হওয়ার অর্থ, তার জান – প্রাণ শক্তি সামর্থ ও যাবতীয় যোগ্যতা ইত্যাদি সবকিছুকে দেখা শোনার ভার আল্লাহ স্বহস্তে গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় তার যাবতীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও শক্তি সামর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এবং শয়তানের কোন কাজে তার ক্ষতা ও যোগ্যতা ব্যবহৃত হয় না।
তাহাজ্জুদের উৎসাহঃ
(আরবী*******************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইসতাইকাযা- তিনি ঘুম থেকে জাগলেন। (আরবী) সুবহানাল্লাহ! –আল্লাহ মহান পবিত্র। (আরবী) উনযিলা- নাযিল করা হয়েছে। (আরবী) আলফিতানু- ফেতনা ফাসাদ। (আরবী) আলখাযায়িনু-সম্পদের ভান্ডার।(আরবী) সাওয়াহিবাল হুজুরাতি- পর্দানিশীন মহিলাদের। (আরবী) রুব্বা-অনেক। (আরবী) কাসিয়াতুন- অপরাধের ফিরিস্তি। (আরবী) আরিয়াতুন- উলঙ্গ।
৩৯৪।উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে জেগে উঠে বললেন, আল্লাহ যাবতীয় ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে পাক ও পবিত্র। এ রাত কতো বিপদাপদ ও ফেতনা ফাসাদে পরিপূর্ণ। এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে চেষ্টা তদবীর করা উচিত। এ রাত কত অসংখ্য মণিমানিক্যের(আল্লাহর রহমতের)ভান্ডারে ভরপুর। এগুলো সঞ্চয় করা দরকার। পর্দানশীনদেরকে কে জাগাবে? এ দুনিয়ায় এমন বহু লোক আছে যাদের অপরাধের ফিরিস্তি এখানে গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু আখেরাতে এগুলো ফাঁস হয়ে যাবে।–বুখারী
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম নিজের স্ত্রীগণকেও তাহাজ্জুদের নামাজের উৎসাহ যুগিয়েছেন। তিনি বলতেন, আল্লাহর রহমতের ভান্ডার হতে কিছু পাবার চেষ্টা করো। দুনিয়ায় তোমরা নবীর স্ত্রী। এদিক দিয়ে তোমরা মর্যাদাশীলা। কিন্তু তোমাদের কোন আমল না থাকলে পরকালে এসবে কোন কাজ হবে না। নবীর স্ত্রী হবার কারণে ওখানে কোন বিশেষ মর্যাদা পাবে না। মর্যাদা হবে আমল দ্বারা।
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তারাকাহু- দরজা নেড়ে জাগালেন। (আরবী) আলা- তুসাল্লিয়ানি- তোমরা দুজনে কি নামায পড়েছো?
৩৯৫।আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এক রাতে তাহাজ্জুদের সময় এসে তাকে ও ফাতেমাকে বললেন, তোমরা কি তাহাজ্জুদ নামায পড়ো না?- বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের বিশেষ শিক্ষা হলো, দায়িত্বশীল ও অবিভাবকগণের উচিত তাদের অধীন লোকদেরকে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্যে উৎসাহিত করা।
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কানা ইয়াকূমু- সে উঠতো। (আরবী) তারাকা- ছেড়ে দিয়েছে। (আরবী) কিয়ামাল্লাইলি- রাতের কিয়াম, তাহাজ্জুদ।
৩৯৬।আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবদুল্লা! তুমি অমুকের ন্যায় হয়ো না। কেনোনা সে আগে তাহাজ্জুদের জন্যে উঠতো, তারপর উঠা ছেড়ে দিয়েছে।– বুখারী, মুসলিম
নিয়মিত আমলঃ
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সাআলতু- আমি জিজ্ঞেস করলাম। (আরবী) আইয়ুল আমালি- কোন কাজ। (আরবী) আহাব্বুন – বেশী প্রিয়। (আরবী) আদ্দায়িমু- সবসময়। (আরবী) আইয়্যু হীনিন- কোন সময়। (আরবী) আসসারিখু- মোরগের ডাক।
৩৯৭।মাসুরুক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নিকট কোন ধরনের কাজ বেশী পছন্দনীয় ছিলো? উত্তরে তিনি বললেন, নিয়মিতভাবে যে কাজ করা হয় সে কাজই তিনি পছন্দ করতেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের জন্য কখন উঠতেন? তিনি বললেন, তিনি রাতে মোরগ ডাক দেয়ার সময়(অর্থাৎ শেষ রাতে) তাহাজ্জুদের জন্যে উঠতেন।– বুখারী, মুসলিম
রহত নাযিলের সময়ঃ
(আরবী**********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়ানযিলু- আগমন করেন। (আরবী) আসসামাউদ্দুনিয়া- দুনিয়ার আকাশে। (আরবী) ইয়াবকী- অবশিষ্ট থাকে। (আরবী) সুলুসুল্লাইলি- রাতের এক-তৃতীয়াংশ। (আরবী) ইয়াদউনী- আমাকে ডাকবে। (আরবী) ফাসতাজীবু- আমি সাড়া দেবো। (আরবী) ইয়াসআলুনী- আমার কাছে চাইবে। (আরবী) আগফিরুহু- আমি তাকে মাফ করে দেবো।
৩৯৮।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে আগমন করে তাঁর বান্দাদেরকে ডেকে বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকছো? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার নিকট প্রার্থনা করছো? আমি তার প্রার্থনা পূরণ করবো। আমার নিকট কে ক্ষমা চাচ্ছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। -বুখারী, মুসলিম
আল্লাহর পথে ব্যয়
সর্বোত্তম মুদ্রাঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আফযালু দীনারিন- উত্তম দীনার। (আরবী) মা ইয়ানফাকুহু- সে যা খরচ করে। (আরবী) দাব্বাতুহু- জন্তু। (আরবী) ফী সাবীলিল্লাহি- আল্লাহর পথে।
৩৯৯।ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম অর্থ হলো ওই অর্থ যা নিজের সন্তান সন্তুদি ও পরিবার পরিজনের জন্যে খরচ করা হয়। সে অর্থও উত্তম যা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উদ্দেশ্যে জন্তু ক্রয় করা হয়। আর সে অর্থও উত্তম, যা জিহাদে অংশ গ্রহণকারী স্বীয় সংগী সাথীগণের জন্যে খরচ করা হয়।– মুসলিম
সর্বোত্তম দানঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আইয়ুস সাদাকাতি- কোন দান। (আরবী) আযামু আজরান- বেশী সওয়াব। (আরবী) তাসাদ্দাকা- তুমি দান করবে। (আরবী) আনতা সহীহুন- তুমি সুস্থ। (আরবী) তাখশা- তুমি ভয় করো। (আরবী) তামুলু- তুমি আশা করো। (আরবী) লা- তামহিল- অবকাশ দিওনা।
৪০০।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে নিবেদন করলো। হে আল্লাহর রাসূল! কোন সদকায় সবচেয়ে বেশী সওয়াব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, সুস্থ ও সবল অবস্থায় যখন তোমার মনে দরিদ্র হয়ে যাবার আশংকা বিরাজ করবে এবং তুমি অধিক সম্পদশালী হবার আশা পোষণ করবে। এমতাবস্থার দানেই সর্বাধিক ছওয়াব পাওয়া যায়। এ রকম করো না যেনো যখন প্রাণবায়ু বের হবার উপক্রম হয় এবং তুমি এভাবে সদকা করতে থাকো, আমার সম্পদের এতটুকু অমুককে দিলাম ও এতটুকু অমুকের জন্যে রইলো। (এটা এখন বরে কি লাভ?) এখন তো অমুকের হয়েই গেছে।– বুখারী, মুসলিম।
ফেরেশতাদের দোয়াঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয়াসবাহু- সে ভোর করে।(আরবী) মালাকানি-দুজন ফেরেশতা। (আরবী) ইয়ানযিলানি- তারা দুজন আগমন করে।(আরবী) মুনফিকান- দানশীলকে। (আরবী) আতি- দান করেন। (আরবী) খালাফান-প্রতিফল। (আরবী) মুমসিকান- কৃপণ।(আরবী) তালফান- ধ্বংস।
৪০১।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,এমন কোন দিন যায় না যেদিন দুজন ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করেন না। তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্যে দোয়া করতে থঅকেন এবং বলেন, হে আল্লাহ!আপনি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম প্রতিফল দান করুন। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণ ও সংকীর্ণচেতা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট বদ দোয়া করতে থাকেন এবং বলেন। আল্লাহ! কৃপণ ব্যক্তিকে ধ্বংস ও বরবাদ করুন।– বুখারী ও মুসলিম
প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করাঃ
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তাবযুলু- তুমি খরচ করো। (আরবী) আলফাযলু- প্রয়োজনের অতিরিক্ত। (আরবী) খাইরুল্লাকা- তোমার জন্য উত্তম। (আরবী) তুমসিকু- সঞ্চয় করতে থাকো। (আরবী) শাররুল্লাকা- তোমার জন্য ক্ষতিকর। (আরবী) লা তুলামু- তোমাকে তিরস্কার করা হবে না। (আরবী) কাফাফুন- প্রয়োজনে বেশী সম্পদ না থাকে। (আরবী) তাউলু- পোষ্য।
৪০২। আবু আমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল আল্লাহর অভাবী বান্দাদের অভাব মোচনে ও দ্বীনের কাজে খরচ না করে যদি সঞ্চয় করতে থাকো তাহলে এটা তোমার জন্যে খুবই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হবে। আর যদি তোমার প্রয়োজনের বেশী সম্পদ না থাকে এবং তুমি আল্লাহর পথে খরচ করতে সক্ষম না হও।তাহলে সেজন্যে তোমাকে তিরস্কার করা হবে না। যাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব তোমার উপর অর্পিত, তাদের থেকে দান করা শুরু করো।– তিরমিযি
আল্লাহর পথে খরচের প্রতিদানঃ
(আরবী*********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আনফিক- তুমি খরচ করো। (আরবী) উনফিকুন- আমি খরচ করবো।
৪০৩। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, তুমি যদি আমার অভাবী বান্দার অভাব মোচনে ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তোমার অর্থ সম্পদ খরচ করো। তাহলে আমিও তোমার জন্যে খরচ করবো।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ তোমার জন্যে খরচ করবো একথার মর্মার্থ হলো, মানুষ নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে আল্লাহর দরিদ্র ও অভাবী বান্দার অভাব মোচনে ও আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যে অর্থ ব্যয় করে তা কখনও বৃথা যায় না।
পরকালে আল্লাহ তাকে তার পরিপূর্ণ প্রতিদান তো দেবেনই। অধিকন্তু ইহকালেও তার প্রতিফলন পাওয়া যাবে। দুনিয়াতে তার সম্পদের বরকত হবে ও তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। আখেরাতে যে কি বিপুল পরিমান পুরস্কার দেয়া হবে দুনিয়ায় বসে তার পরিমাপ করা অসম্ভব।
বিত্তবান কৃপণদের পরিণাম ফলঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইনতাহাইতু- আমি উপস্থিত হলাম। (আরবী) যিল্লি- ছায়া। (আরবী) রাআনী- আমাকে দেখলেন। (আরবী) হুমুলআকসারুনা- তারা ধ্বংস হয়েছে।(আরবী) আলকাকসারুনা আমওয়ালান- অধিক সম্পদশালী ব্যক্তিগণ। (আরবী) বাইনা ইয়াদাইহি- তার সামনে। (আরবী) খালফিহি- তাদের পিছনের।(আরবী) শিমালিহি- তার বাঁমের।
৪০৪।আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। সে সময় তিনি কাবা শরীফের ছায়ায় বসা ছিলেন। আমাকে দেখেই তিনি বললেন, ঐ সমস্ত লোক ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি বললাম, আমার পিতা মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোক। কারা ধ্বংস হয়ে গেলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, অধিক সম্পদশালী ব্যক্তিগণ(যারা আলল্লাহর রাস্তায় ধন সম্পদ ব্যয় করে না।)তাদের মধ্যে শুধু ঐ সমস্ত লোকই সফলতা লাভ করবে যারা তাদের সামনের গরীবদের দান করবে এবং পেছনের দরিদ্রের জন্যেও সাহায্য করবে। তবে আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয়কারী এরুপ বিত্তবানদের সংখ্যা খুবই কম।– বুখারী, মুসলিম
যিকির ও দোয়া
আল্লাহর সঙ্গলাভঃ
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) যাকারানী- আমাকে স্মরণ করে ।(আরবী) তাহাররাকাত- নড়ে। (আরবী) শাফাতাহু- তার দু ঠোট।
৪০৫।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, যখন আমার কোন বান্দা আমাকে স্মরণ করে, আমাকে স্মরণ করার জন্য তার দুটো ঠোঁট নাড়ে তখন আমি তার সঙ্গে অবস্থান করি।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ আমি তার সঙ্গে অবস্থান করি শব্দের মর্মার্থ হলো, আল্লাহ তখন তার সে বান্দাকে স্বীয় তত্ত্বাবধানে ও হেফাজতে নিয়ে নেন। তাকে সব রকমের দুস্কর্ম ও নাফরমানী থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। এ হাদীস দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, আল্লাহর যিকির আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে মুখে উচ্চারিত হতে হবে।
আল্লাহর স্মরণই হলো প্রকৃত জীবনঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মাসালুন- দুষ্টান্ত। (আরবী) ইয়াযকুরু-স্মরণ করে। (আরবী) আলাহাইয়্যু- প্রাণের স্সন্দন। (আরবী) আলমাইয়্যিতু- স্পন্দনহীন, নিস্প্রাণ।
৪০৬।আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে, তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে না, তার দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তির ন্যায় যার মধ্যে জীবনের কোন স্পন্দন নেই, নিস্প্রাণ।– বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর স্মরণ মানুষের অন্তরকে সজীবতা ও সচলতা দান করে। আব আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত থাকলে মানুষের অন্তর নিস্প্রাণ ও নির্জিীব হয়ে যায়।মানুষের এ বাহ্যিক ও দৈহিক জীবনের অবসান ঘটে, তেমনি মানব দেহের অভ্যন্তরে যে রুহ বা আত্না আছে। তার খাদ্য হলো আল্লাহর যিকির। আত্না বা রুহ যদি তার যথাযথ খাদ্য না পায় তাহলে আপাতঃদৃষ্টিতে তার দেহ যতো হৃষ্টপুষ্টই দেখা যাক না কেনো প্রকৃতপক্ষে তার রুহ মরে যায়।
যিকির শিক্ষাদানঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আরাবিয়্যূন- বেদুঈন। (আরবী) আল্লিমনী- আমাকে শিক্ষা দিন। (আরবী) কালামান- একটি বাক্য। (আরবী) আকূলুহু- যা দিয়ে আমি আল্লাহকে স্মরণ করবো। (আরবী) লা- শরীকা- শরীক নেই। (আরবী) কাবীরান- মহান। (আরবী) লা হাওলা- ক্ষমতা নেই। (আরবী) আলআযীযু-পরাক্রমশালী। (আরবী) আলহাকীমু- বিজ্ঞানী।
৪০৭।সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক আরব বেদুইন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে নিবেদন করলো, আমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিন যার দ্বারা আমি আল্লাহকে স্মরণ করবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলোঃ
(আরবী***********)
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তার কোন শরীক নেই।আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও মহান। যাবতীয় প্রশংসা ও স্তুতি একমাত্র আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত। আল্লাহ সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তিনি সমস্ত সৃষ্টির পালনকর্তা। মানুষের কোন ক্ষমতা ও শক্তি সামর্থ নেই। সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ যিনি মহা পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানী। সে বললো, এগুলোতো আমার প্রতিপালকের জন্যে। আমার নিজের জন্যে আমি কি বলবো বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলোঃ (আরবী********)
হে আল্লাহ! আমার অপরাধ ক্ষমা করে দাও। আমাকে দয়া করো। আমাকে সুপথ দেখাও। আমাকে জীবিকা প্রদান করো।–মুসলিম
সর্বোত্তম ইস্তিগফারঃ
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলইসতিগফারু- ক্ষমা চাওয়া।(আরবী) আল্লাহুমা- হে আল্লাহ। (আরবী) খালাকতানী- আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। (আরবী) আহদিকা – তোমার সাথে ওয়াদা করছি।(আরবী) ওয়াদিকা- তোমার সাথে ওয়াদা (আরবী) ইসতাতাতু- সাধ্যনুযায়ী। (আরবী) আবূউ-আমি স্বীকার করছি।(আরবী) লা ইয়াগফিরু- ক্ষমা করবে না।
৪০৮।শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম ইসতিগফার হলো তুমি একথা বলবেঃ
(আরবী*****)
হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতিত অন্য কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো এবং আমি তোমার বান্দাহ। আমি তোমার ইবাদত বন্দেগী করবো বলে তোমার সাথে যে কথা দিয়েছি ও ওয়াদা করেছি তা প্রতিপালনের জন্যে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবো। আমি আমার অপকর্মের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবার জন্যে তোমার নিকটই আশ্রয় চাই । আমাদের যে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছো সেগুলো আমি স্বীকার করছি। আমি যে সমস্ত গুনাহ করেছি তার অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব হে আমার প্রতিপালক! আমার অপরাধ ক্ষমা করে দাও। তুমি ছাড়া আমার অপরাধ আর কে ক্ষমা করবে?-বুখারী
শোবার নিয়ম ও দোয়াঃ
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) ওয়াযাতু –আমি রাখছি।(আরবী) জাম্বী- আমার দেহ। (আরবী) আরফাউহু- আামি উঠাবো। (আরবী) আমসাকতা- আমার জান নিয়ে নাও। (আরবী) ফারহামহা- তাহলে এর উপর রহম করো। (আরবী) আসসালিহীনা- নেক বান্দা।
৪০৯।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যখন রাতে শোবার জন্যে যেতেন, ডান হাত গালেরর নিচে রেখে) বলতেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার নাম নিয়ে আমার দেহ বিছানার রাখছি এবং তোমার নামেই আবার উটএবা। যদি (এ রাতেই) আমার জান নিয়ে নাও তাহলে তার উপর রহম করো। আর যদি জীবন না নিয়ে জীবিত থাকার সুযোগ দাও তাহলে আমাকে তোমার নেক বান্দাদের মতো হেফাজত করো।–বুখারী
দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়াঃ
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আলমাকরুবু- চিন্তাগ্রস্ত, বিপন্ন। (আরবী) আরজু- আমি প্রত্যাশী (আরবী) লা তাকিলনী- আমাকে ছেড়ে দেবেন না। (আরবী) নাফসী- আমার প্রবৃত্তি। (আমার তারফাতা আইনিন-এক পলকের জন্যও।(আরবী) আসলিহ- সুন্দর করে দাও। (আরবী) শানী- আমার অবস্থা।
৪১০।আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিপন্ন মানুষ এ দোয়া পড়বেঃ
(আরবী***)
হে আল্লাহ! আামি তোমার রহমতের প্রত্যাশী। আমাকে এক পলকের জন্যেও আমার প্রবৃত্তির হাতে চেড়ে দিও না। আমার যাবতীয় অবস্থা ও কাজ কর্ম সুষ্ঠু ও সুন্দর করে দাও। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।– আবু দাউদ
ব্যাখ্যাঃ যতক্ষণ কোন মানুষ আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকে। ততক্ষণ তার প্রবৃত্তি তাকে কাবু করতে পারে না ও তার দ্বারা কোন গুনাহের কাজ সম্পাদন করাতে সক্ষম হয় না। কিন্তু যখনই মানুষ নিজেকে আল্রাহর তত্ত্বাবধান থেকে বঞ্চিত করে তখনই প্রবৃত্তি তাকে সরাসরি ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। এ কারণে মুমিন ও দ্বীনদার ব্যক্তিগণ সর্বদা এ দোয়া করতে থাকেন। হে আল্লাহ! আমাকে প্রবৃত্তির হাতে ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবে।আমার গোটা জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠু করে দাও।
কয়েকটি বিশিষ্ট দোয়াঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আউযু- আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আরবী) বিকা- আপনার নিকট।(আরবী) আনহাম্মু- দুশ্চিন্তা। (আরবী) আরইজযু- অলসতা, অসহায়তা। (আরবী) আলহুযনি- দুঃখকষ্ট। (আরবী) আলকাসলু – অলসতা দুর্বলতা। (আরবী) দ্বালউন- দুর্বিসহ বোঝা। (আরবী) আদ্দাইনু –ঋণ। (আরবী) গালাবাতুন- প্রাধান্য।
৪১১। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া করতেনঃ
(আরবী**********) হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অশান্তি ও দুশ্চিন্তার হাত থেকে । অকর্মন্যতা ও অলসতার কবল থেকে। দুঃসহ ঋণের বোঝা থেকে এবং দুষ্ট লোকের প্রাধান্য থেকে।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর আশ্রয়ে নিজেকে সমর্পণ করার তাৎপর্য হলো, বান্দা তার নিজের দুর্বলতা ও অসহায়তা সম্পর্কে সজাগ।সে যে সম্পূর্ণ দুর্বল একথা তার জানা আছে বলেই সব রকমের অনিষ্ট থেকে আত্নরক্ষার জন্যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছে।
বিপদের আশংকা থেকে যে দুশ্চিন্তা ও অশান্তির সৃষ্টি হয় আরবী ভাষায় তাকে (আরবী) (হামমুন) বলা হয়। আর বিপদে আক্রান্ত হয়ে যাবার পর যে ব্যাথার সৃষ্টি হয় সে ব্যাথাকে বলে (আরবী) (হুযুনুন)।কোন কাজ সমাধা করতে না পারাকে(আরবী) (আজযুন) বোকামী ও চেষ্টার অত্যন্ত সহজ। আজ রাতেই করে ফেলবে। রাত চলে গেলো। কিন্তু কাজটা করা হলো না। তখন বলে, ঠিক আছে আগামী কাল করে ফেলবো। এভাবে সে কাজের সুযোগ হারিয়ে ফেলে।
এ দোয়ার সারমর্ম হলো, মুমিন নিজের প্রতিপালকের নিকট বলতে থাকে, হে আল্লাহ! আমাকে হেফাজত করো। অনাগত বিপদের আশংকায় আমার মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করো না। বিপদ যদি এসেই পড়ে তাহলে ধৈর্য্য ধারণ করার তাওফিক দিয়ো। কোন জিনিস হারিয়ে গেলে তার জন্যে যেনো ব্যাথা অনুভব না করি। তোমার পথে চলতে যেনো কোন সময় অলসতা না করি। আজ করবো কাল করবো বলে অযথা সময় ক্ষেপন না করি। আমার উপর যেনো ঋণের এমন কোন বোঝা চেপে না বসে যা পরিশোধ করতে না পেরে আমি দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়ে পড়ি। আমাকে অসৎ লোকের প্রভাবধীন করো না।
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতি – আমাকে দিন। (আরবী) তাকওয়াহা- আল্লাহভীতি। (আরবী) যাক্কিহা- তাকে পবিত্র রাখুন। (আরবী) আনতা ওয়ালিয়ুহা- আপনি এর অভিভাবক। (আরবী) মাওলাহা- তার মালিক। (আরবী) লা- ইয়াখশাউ-ভীত হয় না। (আরবী) লা ইয়াশবাউ- পরিতৃপ্ত হয় না। (আরবী) লা- ইউসতাজাবু-গৃহীত হয়না।
৪১২।যায়েদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আপনি আমার নফসকে এ পর্যায়ে উন্নীত করুন যাতে সে আপনার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকে। আমার নফসকে পবিত্র রাখুন। কেনোনা আপনিই তার সর্বোত্তম পবিত্রতা সাধনকারী। আপনিই তাঁর অভিভাবক ও মালিক। হে আল্লাহ! যে জ্ঞান আমার কোন উপকার সাধন করে না। যে অন্তর আপনার ভয়ে ভীত হয় না।যে নফস পরিতৃপ্ত হয় না এবংয় যে দোয়া আপনার দরবারে গৃহীত হয় না। এসব জিনিস থেকে বেঁচে থাকার জন্যে আমি আপনার দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ উপকারী জ্ঞান বলতে ঐ জ্ঞানকে বলা হয় যে জ্ঞান মানুষকে আল্লাহভীতি শিক্ষা দেয়, আল্লাহর পছন্দনীয় কাজে উৎসাহ যোগায় ও মানুষকে আল্লাহর রহমতের যোগ্য করে গড়ে তুলে।
নফস তৃপ্ত হয়না এ অর্থ হলো দুনিয়ার যতো ধন দৌলতই তার হাতে আসুক তাতে সে তৃপ্ত হয় না। চাহিদা মেটে না বরং আরো চায়।আরো অধিক চায়। দোয়া কবুল না হবার অনেকগুলো কারণের মধ্যে হারাম উপার্জনও একটি বিশেষ কারণ। লেন দেন অধ্যায়ে হালাল উপার্জন শিরোনামে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) যাওয়ালু- চলে না যায়। (আরবী) তাহাওযুল- তিরোহিত হয়ে না যায়। (আরবী) আফিয়াতুকা- আপনার নিরাপত্তা। (আরবী) ফুজাআহুন- হঠাৎ আপতিত বিপদ। (আরবী) নিকমাতিকা- আযাব। (আরবী) সাখাতিকা- আপনার গযব।
৪১৩।আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এ দোয়াও করতেনঃ (আরবী) থেকে শেষ পর্যন্ত যেনো(আমার গুনাহের দরুন) চলে না যায়। তার জন্যে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।যে আফিয়াত আমাকে দান করেছেন তা যেনো তিরোহীত না হয় তার জন্যেও আমি আপনার সাহায্য চাই। আপনার নিকট থেকে আপতিত আযাব ও সব রকমের গজব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় ভিক্ষা করি।–মুসলিম
ব্যাখাঃ আফিয়াত হলো দ্বীন ও ঈমান সঠিক থাকা। দৈহিক সুস্থতাও আফিয়াতের অন্তর্ভূক্ত।
নব দীক্ষিত মুসলমানের দোয়াঃ
(আরবী*******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আল্লামাহু- তাকে শিক্ষা দিতেন। (আরবী) ইয়াদউ- সে দোয়া করবে। (আরবী) ইগফিরলী- আমাকে ক্ষমা করুন। (আরবী) ইহদিনী – আমাকে হিদায়াত দান করুন। (আরবী) আফিনী- আমাকে সুস্বাস্থ্য দান করুন।
৪১৪।মালিক আশজারী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন, যখন কোন নতুন লোক ইসলাম গ্রহণ করতো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নামায শিক্ষা দিয়ে এ দোয়া করতে নির্দেশ দিতেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার উপর দয়া করুন। আমাকে সোজা সরল পথ দেখান। আমাকে সুস্থ রাখুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন। – মুসলিম
নামাযের পর দোয়াঃ
(আরবী******)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাউহিব্বুকা- আমি অবশ্যই তোমাকে পছন্দ করি। (আরবী) উসীকা- উপদেশ দিচ্ছি। (আরবী) লা- তাদাউন্না- ছেড়ে দিও না। (আরবী) দুবুরি- পরে।(আরবী) আঈন্নী- আমাকে সাহায্য করুন।
৪১৫।মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাতধরে বললেন, হে মুয়ায, আমি তোমাকে অবশ্যই পছন্দ করি। এরপর তিনি বললেন, হে মুয়ায! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর কখনো এ দোয়াটি পড়া ছেড়ে দিয়ো না। হে আল্লাহ! তোমার যিকির করতে, শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং উত্তমভাবে ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করো।– রিয়াদুস সালেহীন, আবু দাউদ, নাসায়ী
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে তোমাকে স্মরণ করবো। তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। সর্বোত্তম পন্থায় তোমার ইবাদত বন্দেগী করেবো। কিন্তু আমি দুর্বল অক্ষম, তোমার সাহায্য সহযোগিতার মুখাপেক্ষী। তোমার সাহায্য ব্যতীত কোন কাজ সম্পন্ন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী**) সালাতিন মাকতূবাতিন- ফরয নামায। (আরবী) মুতিয়া- দান কারী।
৪১৬।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয নামাযে সালামের পর এ দোয়া করতেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। তার হাতেই সার্বভৌম ক্ষমতা।সমস্ত প্রশংসা তারই জন্যে নিবেদিত। তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ ! তুমি কিছু দিতে চাইলে কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। আর তুমি দিতে না চাইলে কেউ এনেও দিতে পারবে না। তোমার মুকাবিলায় কোন শক্তিমানের শকিই কার্যকর নয়।–বুখারী
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
বাস্তব দৃষ্টান্ত
নামায ও খুতবায় মধ্যানুবর্তীতাঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কুনতু- উসাল্লী- আামি নামায আদায় করতাম। (আরবী) কাসদান- মধ্যম। (আরবী) খুতবাতুহু- ভাষণ, খুতবা।
৪১৭।জাবির ইবনে সামরা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামায আদায় করতাম। তাঁর নামায ছিলো মাধ্যম এবং খুতবাও ছিলো মধ্যম। অর্থাৎ একেবারে সংক্ষিপ্তও হতো না ।-মুসলিম
মুক্তাদিদের অবস্থার প্রতি লক্ষঃ
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (অরবী) লাআকূমু- আমি অবশ্যই দাঁড়াই। (আরবী)উরীদু আমি ইচ্ছা করি। (আরবী) আতূলা- আমি দীর্গ করিব। (আরবী) আসমাউ – আমি শুনি। (আরবী) বুকাউন- কান্না। (আরবী) আসসাবিয়্যু- শিশু। (আরবী) ফাআতাজাওয়াযু- আমি সংক্ষিপ্ত করে ফেলি। (আরবী) কারাহিয়্যাতান- অপছন্দ। (আরবী) আশুককা- আমি কষ্ট দেবো।
৪১৮।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নামায পড়তে আসি এবং দীর্ঘ করে নামায পড়ার ইচ্চে করি। কিন্তু যখন কোন শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি তখন নামায সংক্ষিপ্ত করে ফেলি। কেননা কোন শিশুর মা কষ্ট পাক এটা আমি পছন্দ করি না। – বুখারী
ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে মেয়েরাও মসজিদে এসে জামায়াতে নামায আদায় করতো। তাদের সঙ্গে শিশুদের মাও আসতো। এ হাদীসে এদের কথাই বলা হয়েছে। এ হাদীসে ইমমাগণের জন্যে শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে, যারা মুক্তাদীদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি দিকপাত না করে লম্বা সূলা দিয়ে নামায পড়েন।
দীর্ঘ নামাযঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাইয়াকুমু- তিনি এতা অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন। (আরবী) তারিমু- ফুলে যেতো। (আরবী) কাদামাহু- তাঁর দু পা। (আরবী) সাকাহু- তাঁর উভয় পায়ের গোড়ালী। (আরবী) আফালা আকূনা- আমি কি হবো না। (আরবী) শাকূরান- কৃতজ্ঞ।
৪১৯। যিয়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুগিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাজাজ্জুদ নামাযে এতো অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে তার পা অথবা গোড়ালী (বাত জমে দিয়ে) ফুলে যেতো। এ জন্যে লোকেরা যখন বলাবলি করতো। আল্লাহর নবীর এতা কষ্ট করার প্রয়োজন কি? তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না।– বুখারী
শিক্ষা দান পদ্ধতি
সামর্থ অনুযায়ী কাজের নির্দেশঃ
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আমারাহুম-তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিতেন। (আরবী) আলআমালি- কাজসমূহ। (আরবী) বিমা ইউতীকুনা- যা তারা করতে পারতো।
৪২০।আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জনগণকে কোন কাজের নির্দেশ দিতেন। তখন এমন কাজের নির্দেশই দিতেন যা তারা করতে পারতো।–বুখারী
নামাযের নিয়ত পদ্ধতি শিক্ষাঃ
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইয- এ সময়। (আরবী) আতাসা- হাঁচি দিলো। (আরবী) ফারামানী- আমার দিকে তাকালো। (আরবী) আসকালা উম্মায়াহহু- তার মা বাবা তার জন্য উৎসর্গ হোক।(আরবী) ইয়াসাম্মিতূননী- আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে। (আরবী) সাকাততু- আমি চুপ হয়ে গেলাম। (আরবী) বিআবী হুওয়া ওয়া উম্মী- তার ওপর আমার মা বাবা কুরবান হোক। (আরবী) মুআলল্লিমান- শিক্ষক।(আরবী) আহসানু- উত্তম। (আরবী) মা কাহারানী- তিনি আমাকে ধমকালেন না। (আরবী) লা- শাতামানী- গালিগালাজ করলেন না। (আরবী) লা- যারাবানী- তিনি আমাকে মারলেন না। (আরবী) লা- ইয়াসলুহু- উচিত নয়।
৪২১।মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম আস সুলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামায আদায় করতে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে আমি (নামাযের মধ্যে জবাবে) (আরবী) বলে ফেললাম। লোকের আমার দিকে তাকাতে লাগলো। ( তা দেখে) আমি বললাম, আল্লাহ তোমাদেরকে জীবিত রাখুক। আমার দিকে এভাবে হাকাচ্ছো কেনো? আামি যখন বুঝতে পারলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে। তখন আমি চুপ হয়ে গেলাম। আমার পিতা মাতা রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে ও তাঁর তিরোধানের পরে তাঁর উত্তম কোন প্রশিক্ষণ দানকারী শিক্ষক জীবনে আর দেখেনি। নামায আদায়ের পর তিনি আমাকে ধমকালেন না। মারলেন না। গালিগালাজও করলেন না। শুধু বললেন,এটা হলো নামায। আর নামাযে কথাবার্তা বলা উচিত নয়। নামাযে শুধুমাত্র আল্লাহর তসবীহ তাহলীল ও কুরআন পড়া হয়ে থাকে।– মুসলিম
ধর্মে উদারতাঃ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) বালা-পশ্রাব করে দিলো। (আরবী) ইয়াকাউ- মারতে উদ্যত হলো। (আরবী) দাউহু- তাকে ছেড়ে দাও। (আরবী) সাজলান- এক বালতি। (আরবী) মুআসসিরীনা-কষ্টসাধ্য দুরুহ।
৪২২।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদা জনৈক বেদুইন মসজিদে পশ্রাব করে দিলে লোকেরা তাকে মারতে উদ্যত হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তাকে মেরো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে সাল্লাল্লাম তখন বললেন, তাকে মেরা না। ছেড়ে দাও এবং তার পশ্রাবে এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমরা তো দ্বীনকে মানুষরে জন্যে সহজবোধ্য ও আকর্ষনীয় করে পেশ করার জন্যে প্রেরিত হয়েছো। দ্বীনের দিকে মানুষের আগমন দুরুহ ও কষ্টসাধ্য করার জন্যে তোমাদেরকে পাঠানো হয়নি।– বুখারী
ব্যাখ্যাঃ আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামেনে পাঠাবার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন। তোমরা সেখানকার লোকজনের সামনে েএমন সুন্দর ও সহজ সরলভাবে দ্বীনকে পেশ করবে। তারা যেনো এটাকে সহজ মনে করেতার প্রতি আকৃষ্ট হয়।এমন পদ্ধতি কখনো গ্রহণ করবে না যার পরিণামে লোকেরা দ্বীনকে কঠিনমনে করে দূরে সরে যায়। জনগণকে তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট গভীর ভালবাসায় উদ্ধুদ্ধ করবে। তোমাদের প্রতি ঘৃণা ও খারাপ ধারণার উদ্রেক করাবে না।
আবেগ অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাঃ
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) শাবাবাতুন- তরুণ যুবক। (আরবী) মুতাকারিবূনা- একই বয়সের।(আরবী) কাদিশতাকনা- আমরা এখন বাড়ী যেতে চাই।(আরবী) ফাআখবারনাহু- তারপর আমরা তাঁকে জানালাম। (আরবী) ইরজিউ- তোমরা ফিরে যাও। (আরবী) আল্লিমূহুম- তোমরা তাদের শিক্ষা দিবে। (আরবী) লিইউওয়াম্মাকুম- অবশ্যই তাদের ইমামতি করবে(আরবী) আকবারুকুম- তোমাদের বয়োজেষ্ঠ ব্যক্তি।
৪২৩। হযরত মালিক ইবনুল হুয়াইরাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমরা কতিপয় তরুণ যুবক দ্বীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হয়েছিলাম। তাঁর দরবারে আমরা বিশ দিন অবস্থান করলাম। আমাদের সঙ্গে তিনি অত্যন্ত সদয় ও স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলেন। অতঃপর তিনি বুঝতে পারলেন আমরা এখন বাড়ীতে ফিরে যেতে চাই। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের আত্নীয় স্বজনের মধ্যে কে কে আছে? আমরা সবার কথা খুলে বললাম। সব শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যাও।এখান থেকে যা কিছু শিখেছো তা তাদেরকে শেখাবে। তাদের ভালো কাজের আদেশ দেবে। অমুক নামায অমুক সময়ে আদায় করবে এবং অমুক নামায অমুক সময়ে পড়বে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছো তোমরা সেভাবে নামায আদায় করবে। নামাযের সময় হলে তোমাদের কেউ আযান দেবে এবং যিনি বয়োজেষ্ঠ তিনি ইমামতি করবেন।–বুখারী, মুসলিম
সৃষ্টির প্রতি দয়া
ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়াঃ
(আরবী****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সাদরিন্নাহারি- সকাল বেলা। (আরবী) আন্নামারু- মোটা চাদর, কম্বল। (আরবী) ফাতামা আরা – বিবর্ণ হয়ে গেল। (আরবী) আলফাকাতু- দুরাবস্থা। (আরবী) খাতামা –বক্তৃতা দান করলেন। (আরবী) লিইয়াতাসাদ্দাকু- অবশ্যই দান করবেন। (আরবী) বিশিককি তামারাতিন- অর্ধেক খেজুর। (আরবী) তাতাবাআ- একের পর এক।(আরবী) কাওমাইনি-দুটি স্তুপ। (আরবী) ইয়াতাহাল্লালু-চমকাচ্ছে। (আরবী) কাআন্না মুযাহাবাতিন-যেন তাতে সোনালী রং ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে।
৪২৪।জাবীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। আমরা একদিন সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসে ছিলাম। এমন সময় কিছু লোক কাঁধে তরবারী ঝুলিয়ে মোটা কম্বল গায়ে জড়ায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হলো। তাদের শরীরের অধিকাংশই ছিলো অনাবৃত।লোকগুলোর অধিকাংশই কিংবা সবাই মুযার গোত্রের লোক। তাদের দুরবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের চেহার বিবর্ণ হয়ে গেলো। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে আবার বেরিয়ে এলেন এবং বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আযান দিতে বললেন। (তখন নামাযের সময় হয়ে গিয়েছিলো) অতঃপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আযান দিলেন। তাকবীর বললেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ালেন।নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বক্তৃতা প্রদান করলেন। তিনি বক্তৃতায় সূরায়ে নিসার প্রথম আয়াত এরবং সূরায়ে হাশরের শেষ রুকূর প্রথম আয়াত তিলাওয়াত করে শুনালেন এবং বললেনঃ জনগণের উচিত আল্লাহর রাস্তায় দান করা। দীনার দেয়া, দেরহাম দেয়া। কাপড় চোপড় দেয়া। এক কাঠা গম দেয়া। শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন, যদি কারো নিকট একটি খেজুরের অর্ধেকও থাকে তবে তাও আল্লাহর পথে দিয়ে দিতে হবে। বক্তৃতা শোনার পর জনৈক আনসার একটি ভরা ব্যাগ হাতে নিয়ে এলেন। ব্যাগটি এত ভারী ছিলো যে তিনি তা ধরে রাখতে পারছিলেন না। এরপর লোকেরা একের পর এক সদকা দিতে আরম্ভ করলো। শেষ পর্যন্ত আমি দেখলাম গম, খাদ্য ও কাপড়ের দুটো স্তুপ হয়ে গেলো। জনগণের সদকা দেয়ার দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দে উৎফল্ল হয়ে উঠলেন।তাঁর মুখমন্ডল উজ্জ্বল হয়ে চমকাতে লাগলো।মনে হচ্ছিলো যেনো তাঁর চেহারায় সোনালী রং ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে।অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেন। যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম কাজ চালু করবে, তার সওয়াব তো সে পাবেই, অধিকন্তু পরবর্তীকালে যারা ঐ কাজ করবে তাদের সাথে সমান সওয়াবও পেতে থাকবে। কিন্তু পরবর্তীদের সওয়াব একটুও কমানো হবে না। অপরপক্ষে ইসলামে যদি কোন ব্যক্তি খারাপ রেওয়াজ চালু করে তাহলে সে তার গুনাহের ভাগীতো হবেই।অধিকন্তু পরবর্তীকালে যারা এ গুনাহের পথে চলবে তাদের সমান গুনাহ তার আমলনামায়ও লেখা হবে। কিন্তু তাদের গুনাহের বোঝা থেকে একটুও কমবে না। – মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ ইসলামের দুটি বুনিয়াদী শিক্ষার একটি হলো আল্লাহর একত্ববাদ। দ্বিতীয়টি আল্লাহর অভাবী বান্দাদের জন্যে দয়া, প্রীতি ও শুভেচ্ছা। মানুষের প্রতি শুভেচ্ছার কারণেই তাদের অভাব অনটন দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা দুঃখে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। তাদের খাদ্য ও কাপড়ের ব্যবস্থা হয়ে গেলে তিনি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরায়ে নিসার যে আয়াত পাঠ করেছিলেন তার মর্ম হলোঃ হে লোকেরা!তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ থেকে আত্নরক্ষা করো। যিনি তোমাদেরকে একটিমাত্র জীবন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার স্ত্রী বানিয়েছেন। এ দুজন হতে পরবর্তীকালে অসংখ্য নারী পুরুষ সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব, তোমরা নিজেদের সৃষ্টিকর্তার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করো। যার নাম নিয়ে তোমরা একে অপরের নিকট থেকে অধিকার আদায় করতে চাও। আত্নীয়তার বন্ধনের প্রতি লক্ষ রেখো এবং তাদের অধিকার প্রদান করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক।
এ আয়াতে আল্লাহ দুটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। েএকটি আল্লাহর একত্ববাদ ওঅপরটি মানব জাতির ঐক্য। আল্লাহর একত্ববাদের অর্থ হলো, একমাত্র আল্লাহরই বন্দেগী ও আনুগত্য। এটার নাম হলো তৌহিদ। মানব জাতির ঐক্যের অর্থ হলো, সমস্ত বিশ্বের মানব মন্ডলী একই পিতা মাতার সন্তান। সুতরাং ভালোবাসার ভিত্তিতেই তাদের সকল সম্পর্ক নির্ধারিত হওয়া উচিত।
এ নিঃস্ব কাঙ্গালগণকে দেখে এদের সদকা ও দানের আবেদন করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আয়াত তেলাওয়াত করা এ কথারই পরিস্কার ইঙ্গিত বহন করে যে, সমাজের অসহায় ও দরিদ্রদেরকে সাহায্য সহযোগিতা না করা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ উদ্রেকের কারণ।
সূরায়ে হাশরের যে আয়াত তিনি পাঠ করেছিলেন তার অর্থ হলো, হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক লোকেরাই এ বিষয়ে ভেবে দেখা উচিত। কিয়ামতের জন্যে সে কি জমা করেছে? হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করছো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণভাবে অবহিত।
এ আয়াত পাঠ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন যে, দরিদ্র ও অভাবীদের অভাব মোচনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় তা ধ্বংস হয় না বরং আখেরাতের পূজিতে পরিণত হয়। যে ব্যক্তি প্রথমে দান করেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রশংসা করে ঘোষণা করেছেন। এ ব্যক্তি নিজের সদকার জন্যে সওয়াব তো পাবেই সংগে সংগে তার দেখাদেখি অন্য যারা সদকা করেছে তাদের সকলের সমান ছওয়াবও সে পাবে।
দুজনের খাবারে তৃতীয়জনের অংশ নেয়াঃ
(আরবী****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আসহাবুসসুফফাতি- সুফফার অধিবাসীগণ। মসজিদে নবুবীর চত্বরে সাহাবীগণের িএকটি দল দীন শিক্ষার জন্য সবসময় উপস্থিত থাকতেন। (আরবী) কানূ উনাসান ফুকারাআ- তারা ছিলো গরীব মানুষ(আরবী) তোময়ামূ ইসনাইনি – দুজনের খাবার। (আরবী) ফালইয়াযহাব- সে যেন যায়। (আরবী) বিসালিসিন-তৃতীয় জনসহ। (আরবী) বিখামিসিন ওয়া সাদিসিন-পঞ্চম ও ষষ্ঠজনসহ। (আরবী) বিআশারাতিন-দশজনসহ।
৪২৫।আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসহাবে সুফফার সদস্যগণ অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাদের ঘরে যাবে। যাদের ঘরে চারজনের খাবার আছে তারা পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ আরো দুজন লোককে নিয়ে যাবে।(একথা শোনার পর ) আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনজন লোক ঘরে নিয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজনকে সংগে নিয়ে গেলেন। -বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন জনগণের পরিচালক ও নেতা। তিনি যদি দশ জনকে সংগে করে না নিতেন তাহলে সাধারণ লোকেরা সন্তুষ্ট চিত্তে৪/৫ জনকে কি করে নিতো? এটাই নিয়ম। দায়িত্বশীল নেতৃবর্গ যদি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ত্যাগ ও কুরবানীর দৃষ্টান্ত পেশ করতে পারেন তাহলে তার অনুসারী কর্মী বাহিনীর মধ্যে ত্যাগ ও কুরবানীর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হবে। অগ্রগামী ব্যক্তিগণই যদি পিছটান দেয় তাহলে পশ্চাতের লোকদের মনে সামনে অগ্রসর হবার মানসিকতা সৃষ্টি হওয়া সুদূর পরাহত।
মন জয় ও সদ্ভাব সৃষ্টি করাঃ
(আরবী********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) সুয়িলা- চাইতো। (আরবী) আতাহু- তাকে তা দিতেন। (আরবী) ফারাজাআ- ফিরে গিয়ে।(আরবী) আসলিমূ- তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। (আরবী) লা- ইয়াখশা- তিনি ভয় করেন না।(আরবী) আহাব্বা-অধিক প্রিয়।
৪২৬।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। ইসলামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করার লক্সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলািইহি ওয়াসাল্লাম অকাতরে দান করতেন। তাঁর নিকট যে জিনিসেরই আবেদন জানানো হতো তাকে অবশ্যই তা দিয়ে দিতেন। একদিন তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এলে তাকে দু পাহাড়েরর মধ্যে বিচরনকারী সমস্ত বকরী দিয়ে দিলেন। সে ব্যক্তি তার কওমের নিকট ফিরে গিয়ে বললো, হে আমার সগোত্রীয় লোকেরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কেননা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তির ন্যায় (মুক্ত হস্তে) দান করেন যে কখনো দারিদ্রের ভয় করেন না। বা বর্ননাকারী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মানুষ যদিও ধন-সম্পদের লোভে মুসলমান হতো কিন্তু বেশী দিন এ অবস্থা থাকতো না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণে অচিরেই ইসলামের প্রতি আকর্ষণ তার মন মগজে এমনভাবে বসে যেতো যে দুনিয়ার সমুদয় সম্পদের চেয়ে ইসলামই তার নিকট বেশী প্রিয় বলে মনে হতো।– মুসলিম
দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম
বিরোধীদের জন্যে দোয়াঃ
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কাআন্নী আনযুরু- আমি যেন দেখছি। (আরবী) ইয়াহকী- বর্ণনা করছেন। (আরবী) ফাআদমাওহু- তারা তাঁকে রক্তাক্ত করে দিয়েছেন। (আরবী) ইয়ামসাহু- তিনি মুছছেন। (আরবী) লা- ইয়ালামূনা- তারা জানে না।
৪২৭।আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নবীর কাহিনী বর্ণনা করছিলেন। দ্বীনের প্রতি আহবানের অপরাধে সে নবী আলাইহে ওয়াসাল্লামকে তাঁর জাতির লোকেরা এমন মর্মান্তিকভাবে প্রহার করে তার দেহ রক্তাক্ত করে দিয়েছিলো। এরুপ কঠিন অবস্থায়ও সেই নবী নিজের মুখমন্ডল হতে রক্ত মুছছেন আর বলচেন, হে আল্লাহ!আমার জাতির অপরাধ মাফ করে দাও। কেনোনা তারা প্রকৃত অবস্থা জানে না।–বুখারী, মুসলিম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু এর জন্যে সর্বাধিক দুঃসময়ঃ
(আরবী****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আশাদ্দু- আরো মারাত্নক কোন কঠিন। (আরবী) কাদ লাকীতু- অবশ্যই আমার জীবনে এসেছে। (আরবী) মাহমূমুন- কঠিন সময়। (আরবী) লাম আসতিাফিক- আমি সুস্থ হইনি। (আরবী) ফানাদানী – তিনি আমাকে ডেকে বলেন। (আরবী) মালাকুল জিবালি-পাহাড়ের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ফেরেশতা। (আরবী) লিতামুরুহু- আপনি যেনো তাকে আদেশ দেন। (আরবী) ফাসাল্লামা- তিনি সালাম দিলেন। (আরবী)বাআসানী- আমাকে পাঠিয়েছেন। (আরবী) লিতা মুরানী- আপনি যেন আমাকে আদেশ দেন। (আরবী)আরজূ- আমি আশা করি। (আরবী) ইয়াবুদুল্লাহা- আল্লাহর ইবাদত করবে।
৪২৮।আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ওহুদের কঠিন সময়ের চেয়ে আরো মারাত্নক কোন কঠিন সময় আপনার জীবনে এসেছিলো কি? তিনি বললেন, হে আয়েশা! তোমার সম্প্রদায় কুরাইশদের পক্ষ থেকে আমার জীবনে বহু বিপদ আপদ এসেচে। তন্মধ্যে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিলো আকাবার দিন। সে দিন আমি আবদে ইয়ালির ইবনে আবদে কুলালেরর নিকট নিজেকে পেশ করেছিলাম। কিন্তু আমি তার নিকট যা চেয়েছিলাম তা দিতে সে অস্বীকৃতি জানালো। আমি নিরাশ হয়ে নিতান্ত চিন্তিত মনে সেখান থেকে ফিরে এলাম। করনুসসায়ালিবে পৌছেযখন চিন্তা একটু হালকা হলো। তখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে জিবরীল আলাইহে ওয়াসাল্লামকে তথায় উপবিষ্ট দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আপনার জাতি আপনার সঙ্গে যে কথাবার্তা বলেছে েএবং যে ধৃষ্টতাপূর্ণ ভঙ্গীতে আপনার দাওয়াতের জবাব দিয়েছে আল্লাহ তার সবই শুনেছেন। এখন আল্লাহ পাহাড়সমূহের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ফিরিশতাদেরকে আপনার নিকট পাঠাচ্ছেন। দাওয়াত প্রত্যাখানকারী লোকদের শাস্তি বিধানের জন্যে আপনি তাদেরকে যে হুকুম করবেন তারা দ্বিধাহীন চিত্তে সে হুকুম পালন করবে। এরপর পাহাড়সমূহের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ফিরিশতাগণ আমাকে আওয়াজ দিলো। সালাম জানিয়ে বললো, হে মুহাম্মদ! আপনার জাতির লোকজন আপনার সঙ্গে যে কথাবার্তা বলেছে, আল্লাহ তা সবই শুনেছেন। আমরা পাহাড়সমূহের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত আছি। আল্লাহ আমাদেরকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। আপনার জাতির শাস্তি বিধানের জন্যে। আপনি আমাদেরকে যে আদেশ করবেন তা এক্ষুনি পালন করবো। আপনি যদি বলেন তাহলে এ দুদিকের পাহাড়গুলোকে এমনভাবে মিলিয়ে দেবো যে মাঝখানের সমস্ত অধিবাসী পিষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, না বরং আমি আশা করছি যে এদের সন্তানাদির মধ্যে এমন লোক জন্ম নেবে যারা শুধু আল্লাহর বন্দেগীই করবে এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করবে না।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আকাবার দিন এর অর্থ তায়েফের দিন। তায়েফ নগরে কুরাইশ ব্যবসায়ীগণ চামড়ার বিরাট বিরাট ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলো। তায়েফের মূল অধিবাসী ও কুরাইশদের মধ্যে আত্নীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো। মক্কাবাসীদের উপর থেকে নিরাশ হয়ে তিনি এ আশায় তায়েফে এসেছিলেন, হয়তোবা সত্য দ্বীন এখানে আশ্রয় পেতে পারে। কিন্তু ইবনে আবদে ইয়ালিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিলেন। এদের পাথরের আঘাতে আঘাতে তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন।
যখন কোন জাতি আল্লাহর নবীর আহবান প্রত্যাখান করে তখন তারা শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। কিন্তু নবীগণ নিরাশ না হয়ে কওমের মধ্যে কাজ করতেই থাকেন। তারা আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকেন। হে আল্লাহ! আজ আযাব দেবেন না। আগামীকাল হয়তো তারা ঈমান আনতে পারে। যখন পাহাড়ের ফেরেশতাগণ বললো, যদি আপনি ইচ্ছে করেন তাহলে মক্কার দু পাহাড় জাবালে আবু কুবাইস ও জাবালে আহমার একত্রে মিলিয়ে এখনই এদের পিষে ফেলবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম বললেন, আমাকে আমার কওমের লোকজনের নিকট তাবলীগ করার সুযোগ দাও।আশা করি তারা আগামীতে ঈমান আনবে। যদি তারা ঈমান না আনে তাহলে আশা কির তাদের ছেলেমেয়েরা ঈমান আনবে।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের এটাই হলো দৃষ্টান্ত। ধৈর্য্য এবং সহনশীল মনোভাবের অধিকারী না হতে পারলে দ্বনি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কার্যকর ভূমিকা পালন করা যায় না।
নবী স. এর সঙ্গী সাথীদের অবস্থা
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর তাহাজ্জুদ নামাযঃ
(আরবী****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইউসাল্লী মিনাল্লাইলি- রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তো। (আরবী) লা- ইয়ানামূ – ঘুমাতেন না।
৪২৯।সালেম রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আবদুল্লাহ কতো ভাল মানুষ হায়! সে যদি রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তো। সালেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, একথা শুনার পর আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতে খুব কমরই ঘুমাতেন।–বুখারী, মুসলিম
আল্লাহর পথে খরচ ও আল্লাহর যিকিরঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আহলুদ্দুসূরি- অর্থশালী ব্যক্তিগণ। (আরবী) বিদ্দারাজিাতিল উলা-শ্রেষ্ঠ মর্যাদা। (আরবী) লা- নুতিকু- আমরা গোলাম আযাদ করতে পারিনা। (আরবী) আফালা উআল্লিমুকুম- আমি কি েতামাদেরকে, শিক্ষঅ দিবো না?(আরবী) মা সা নাতুম- তোমরা যা করছো। (আরবী) দুবুরা কুল্লি সালাতিন- প্রত্যেক নামাযের পরে। (আরবী)ফাযলুল্লাহি- আল্লাহর ফজলে।
৪৩০।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদা দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে নিবেদন করলো। আমাদের সম্পদশালী ব্যক্তিগণ শ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও স্থায়ী নেয়ামাত(জান্নাত) পেয়ে গেলো(আর আমরা বঞ্চিত রইলাম)। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিভাবে ? তারা বললো, আমরা নামায পড়ি, তারাও নামায পড়েন। আমরা রোযা রাখি তারাও রোযা রাখেন। এ ধরনের সৎকাজগুলোতে তারা আমাদের সমান সমান। কিন্তু তারা মালদার হবার কারণে সদকা করেন। আমরা দরিদ্র হবার কারণে সদকা করতে পারি না।তাদের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু (আমল) শিখিয়ে দিবো? যার বদৌলতে তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমকক্ষ হয়ে যাবেএবং তোমাদের পরবর্তীদের উপরে থেকে যাবে। তোমরা যা করছো তা না করলে কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী মর্যাদাবান হতে পারেবেনা। তারা বললোঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তোমরা ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পড়বে। কিছুদিন পর দরিদ্র মুহাজিরগণ আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে বললো, আমাদের সম্পদশালী বন্ধুগণ। দোয়ার কথা শুনে আমাদের ন্যায় আমল করতে শুরু করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহর নেয়ামত যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি দান করেন।– মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস হতে জানা গেলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললামের সাথীদের মনে আল্লাহর পথে আগে আগে থাকার ও আখেরাতে উত্তম মর্যাদা পাবার বাসনা কতো প্রবল ছিলো। এই হাদীস দ্বারা আরো বুঝা গেলো, যে সমস্ত দরিদ্র ও বিত্তহীন মানুষ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার সংগতি রাখে না। তারা যদি দোয়া কালাম পড়ে ও অন্যান্য সৎকাজ করে তাহলে তারাও জান্নাতে যেতে পারবে।
দাসদাসীগণকে তাদের ঘৃণ্য ও অভিশপ্ত গোলামী থেকে মুক্ত করে পূর্ণ মানবিক মর্যাদায় সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করাও অত্যন্ত ছওয়াবের কাজ, তাও এ হাদীস থেকে বুঝা গেল।
এ হাদীসে আল্লাহু আকবার ৩৩ বার পড়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু অন্য হাদীসে তা ৩৪ বার পড়ার কথা আছে। আমাদের দ্বীনদার বুজুর্গ ব্যক্তিগণ শেষোক্ত হাদীস অনুযায়ী আল্লাহু আকবার ৩৪বার করেই পড়েন। কোন কোন হাদীসে ৩টি শব্দই মাত্র দশবার করে পড়ার কথা আছে।
দরিদ্রাবস্থায় মেহমানদারীঃ
(আরবী******************)
শব্দের অর্থঃ(আরবী) মাজহূদুন- ক্ষুরদার জ্বালায় কাতর। (আরবী) কুলুহুন্না-তাদের সকলেই। (আরবী) ফানতালাকা বিহি- অতপর সে তাকে নিয়ে গেল। (আরবী) আকরিমী- সম্মান করো অর্থাৎ খাবার ব্যবস্থা কর। (আরবী) কূতা সিবয়যানিনা- আমাদের বাচ্চাদের খাবার। (আরবী) ফানূমীহিম-তাদের ঘুমিয়ে দাও। (আরবী) ফায়াতফিয়িসসিরাজা-চেরাগ নিবিয়ে দিও।(আরবী)উরীহি-তাকে দেখাচ্ছি। (আরবী) বাতা তাওয়িয়াইনি-তারা উভয়ে রাতে উপোষ রইলো। (আরবী) লাকাদ আজিবাল্লাহু-আল্লাহ তাআলা খুবই সন্তুষ্ট হয়েছেন।
৪৩১।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আরজ করলো, আমি ক্ষুধার জ্বালায় অত্যন্ত কাতর।একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তাঁর কোন এক স্ত্রীর নিকট কিছু থাকলে নিয়ে আসার জন্যে পাঠালেন। সে স্ত্রী বলে পাঠালেন, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন। আমার নিকট পানি ব্যতিত অন্য কোন খাবার জিনিস নেই।একথা শুনে তিনি আর এক স্ত্রীর নিকট পাঠালেন। সেখান থেকেও একই উত্তর এলো। অবশেষে সকল স্ত্রীর নিকট থেকেই একই উত্তর এলো যে, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন আমার নিকট পানি ব্যতিত খাবার মতো কিছুই নেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে সম্বোধন করে বললেন, আজ রাতে কে এই মেহমানের মেহমানের মেহমানদারী করতে পারবে?তখন জনৈক আনসার দাঁড়িয়ে বললো, আল্লাহর রাসূল!আমি (তার মেহমানদারী করবো)।তিনি মেহমানকে নিয়ে বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমান। তার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করো। অন্য এক বর্ণনায় আছে তিনি বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, মেহমানদারী করার মেতা তোমার নিকট কিছু আছে কিিউত্তরে স্ত্রী বলল, শুধু শিশুদের খাবার আছে। তাদের এখনো খাওয়ানো হয়নি।তিনি বললেন, তাদের অন্য কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখো। খাবার চাইলে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিও। মেহমান যখন খাবার খেতে প্রবেশ করবে তখন আলো নিভিয়ে দিয়ো এবং(খেতে বসলে) এমন কিছু (টুকটাক শব্দ) করো যাতে সে বুঝে আমরাও তার সঙ্গে খাচ্ছি। অতঃপর সবািই খেতে বসলো। মেহমান তৃপ্তি সহকারে খেলো এবং স্বামী স্ত্রী সারারাত অভূক্ত অবস্থায় কাটালো। ভোরে যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হলো তখন তিনি বললেন, গত রাতে তোমরা স্বামী স্ত্রী মিলে মেহমানের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছো তাতে আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ যে লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে খাবার চেয়েছিলো সে ক্ষুধায় অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েছিলো। এ কারণেই শিশুদের খাবার না দিয়ে তাকে দেয়া হয়েছিলো এবং বাচ্চাদের সামান্য কিছু খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো। কারণ বাচ্চারা সকাল পর্যন্ত কিছু না খেলে ক্ষুধায় মারা যেতো না্ মোটকথা এ পর্যায়ে মেহমানকে অগ্রাধিকার দেয়া কর্তব্য। এ রকমভাবে নিজের বাচ্চাদেরকে অভুক্ত রেখে মেহমানকে সে ব্যক্তিই খাওয়াতে পারে যার মধ্যে ত্যাগ ও পরোপকারের প্রেরণা অধিক। উক্ত ঘটনায় ত্যাগ ও পরোপকারের একটি সর্বোত্তম নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়েছে।কারণ তার নিকট শুধু নিজের শিশু সন্তানদের খাওয়ানো পরিমাণ খাবারই অবশিষ্ট ছিলো। এ অবস্থায় তাদেরকে খাবার না দিয়ে তিনি পরোপকারের যে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সত্যি অভাবনীয় ও প্রশংসনীয়।
মুসয়াব ইবনে ওমাইর রা. এর অবস্থাঃ
(আরবী*****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) হাজারনা- আমরা হিজরত করেছি। (আররবী) নালতামিসু ওয়াজহাল্লহি- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। (আরবী) কুতিলা- শহীদ হয়েছেন। (আরবী) নামিরাতুন- একখানা মাটা চাদর, কম্বল। (আরবী) গাত্তাইনা- আমরা ঢেকে দিতাম। (আরবী) ইয়াহদিবুহা- সে তা ভোগ করতো।
৪৩২।খাব্বার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় এসেছিলাম। আল্লাহর দরবারে আমাদের পূর্ণ সওয়াব জমা হলো। আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুজাহির মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং পূর্বে তাদের পার্থিব পুরস্কার কিছুই পায়নি।মুসযাব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরই অন্তুর্ভুক্ত। ওহুদের যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন।কাফন দেয়ার জন্যে তাঁর গায়ের একটি মোট কম্বল ছাড়া আর কিছুই ছিল না।সে কম্বলটিও এমন ছিলো যে, আমরা তার মাথা ঢাকতে চাইলে পা বেরিয়ে পড়তো। আবার পা ঢাকাতে চাইলে মাথা বেরিয়ে আসতো। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে দাও আর ইযখির(এক জাতীয় ঘাস) দিয়ে পা দুটো ঢেকে ফেলো।
আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে যারা হিজরতের প্রতিফল দুনিয়াতে পাচ্ছে এবং তারা তা ভোগ করছে।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ মুসায়াব রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কার একটি অন্যতম ধনী পরিবারের নয়নমনি ছিলেন। অত্যন্ত বিলাস ব্যাসনের মদ্যে তাঁর জীবন অতিবাহিত হচ্ছিলো। আরোহণের জন্যে তিনি সর্বোত্তম ঘোড়া ব্যবহার করতেন। প্রাতঃভ্রমণের জন্যে একটি এবং সান্ধ্য ভ্রমণের জন্যে ভিন্ন আর একটি ঘোড়ায় আরোহণ করতেন। দিনে কয়েকবার পোশাক পরিবর্তন করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহবান তাঁর কানে পৌছলে সংগে সংগে তা কবুল করে নিলেন।পরিণামে কি ঘটবে তার কোন চিন্তাই করলেন না তিনি। ইসলাম গ্রহণকারী ও নও মুসলিমদের শোচনীয় দুরাবস্থা তাঁর সামনেই ছিলো। তাঁর ইসলাম পূর্ব ও ইসলামোত্তর জীবন যাত্রার কথা চিন্তা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই হি ওয়সাল্লামের চোখ অশ্রুপূর্ণ হয়ে যেতো।
কিন্তু মুসয়াব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর অতীতের বিলাসী জীবনের কথা নিজে কখনো মনে করতেন না। ইসলামোত্তর দুর্দশার জন্যে জীবনে একবারও অনুতাপ করেননি এবং উত্থাপনও করেননি কোন অভিযোগ।
আসহাবে সুফফার অবস্থাঃ
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লাকাদ রাআইতু- আমি অবশ্যই দেখেছি। (আরবী) কাদ রাবাতূ- তার বেঁধে রাখতেন। (আরবী) মা ইয়াবলুগু- যা পৌঠছত। (আরবী)তাবদূ-প্রকাশ পাবে।
৪৩৩।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আসহাবে সুফফার এমন সত্তর জন সদস্যকে দেখেছি যাদের গায়ে জড়ানোর মতো কোন চাদর ছিল না। তাদের একটি মাত্র লুংগি কিংবা কম্বল ছিলো যা তারা গলায় বেঁধে রাখতেন। এতে কারো অর্ধ হাঁটু ঢেকে থাকতো আবার কারো গোড়ালী পর্যন্ত পৌছতো। এ অবস্থায় লজ্জাস্থান খুলে যাবার আশংকায় তারা হাত দিয়ে তা ধরে রাখতেন।–বুখারী
খুবাইব রা.সম্পর্কে দুশমনদের সাক্ষ্যঃ
(আরবী****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আসীরান- কয়েদী, বন্দী। (আরবী) ফাসতাআরা-ধার নিলেন। (আরবী) মূসা-ক্ষুর।(আরবী)ইয়াসতাহিদ্দু- ধার দিচ্ছিরেন। (আরবী)আতাখশীনা- তুমি কি ভয় করছো? (আরবী) মা রাআইতু- আমি দেখিনি।
৪৩৪। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বনু হারেস গোত্রের হাতে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। তারা তাঁকে হত্যা করে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। কেনোনা বদর যদ্ধে খুবাইব রাদিয়াল্লাহ আনহুর হাতে হারেস নিহত হয়েছিলো যখন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারলেন তখন গুপ্তাঙ্গের লোম পরিস্কার করার জন্যে হারেসের এক মেয়ের নিকট থেকে একটি ক্ষুর চেয়ে নিলেন। ক্ষুর দিয়ে মেয়েটি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এমতাবস্থায় মেয়েটির অজান্তে তার একটি বাচ্চা খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে চলে এলো। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে কোলে তুলে আদর করতে লাগলেন। মেয়েটি তার বাচ্চাকে বন্দী খুবাইবের কোলে দেখে আতংকিত হয়ে পড়লো। তার ভয়, খুবাইব না আবার তার বাচ্চাকে মেরে ফেলে। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বললেন, তুমি হয়তো এ ভেবে ভয় পাচ্ছো আমি বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবো। আমি কখনও এ কাজ করতে পারি না।(কেনোনা শিশু হত্যা ইসলামে নিষিদ্ধ) সে মেয়েটি বলেছে, আমি জীবনে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুর ন্যায় উন্নত চরিত্রের আর কোন কয়েদী দেখিনি।–বুখারী
ব্যাখ্যাঃ এটা এমন একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ, যার মধ্যে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বন্দী ও শাহাদাতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু খুব ভালোভাবেই এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা তাঁকে সন্ধ্যায় অথবা আগামীকাল ভোরে শহীদ করে ফেলবে। এমতাবস্থায় দুশমনদের বাচ্চাকে হাতে পেয়ে তিনি অনায়াসে মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু মারেননি। বরং তার মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, ভয় পেয়ো না। আমি তাকে মেরে ফেলতে পারিনা। কেনোনা, আমি যে দ্বীনের অনুসারী, সে দ্বীন দুশমনের বাচ্চাকে হত্যা করার অনুমতি দেয়নি। মেয়েটি ঠিকই বলেছে, খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুর ন্যায় উত্তম চরিত্রের কয়েদী সে আর কখনো দেখেনি।
খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করার জন্যে বধ্যভূমিতে নিয়ে গেলে তিনি একটুও কাঁদলেন না। বিহবলও হলেন না। শুধু বললেন, আমি যখন ঈমানের সংগে ইসলামের জন্যে মৃত্যুবরন করছি, তখন কিভাবে মরছি তার কোন পরোয়া আমি করি না। আমার সংগে যে ব্যবহার করা হচ্ছে তা শুধু এ কারনেই হচ্ছে যে, আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামের প্রসার চাচ্ছি।
এমতাবস্থায় আমার দেহকে কত খন্ডে বিভক্ত করা হবে তার কোন পরোয়া আমি করি না।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইয়ের রা.এর সাথে আয়েশা রা. এর সম্পর্ক ছিন্নঃ
(আরবী************************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী)আতাতহু- তিনি তা দান করেছেন। (আরবী) লাআহজুরান্না- অবশ্যই তার ্পর আমি নিয়ন্ত্রন করবো। (আরবী) লা- উকাল্লিমু- আমিকথা বলবো না। (আরবী) ইসতাশফাআ- তিনি সুপারিশ পাঠালেন। (আরবী) লা- আতাহান্নাসু- আমি কসম ভাঙ্গবো না। (আরবী) আনশুদুকুমাল্লাহু- আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিচ্ছি। (আরবী) কুল্লুনা- আমরা সকলে। (আরবী) আইইয়াহজুরা- ত্যাগ করা। (আরবী) ই তাকাত- আযাদ করলেন। (আরবী) আরবাঈনা রাকাতানা-চল্লিশ গোলাম। (আরবী) তাবুল্লা – ভিজে গেলো।
৪৩৫।আউফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,কিছু লোক এসে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললো, আপনি যে ওমুক জিনিস বিক্রি করেছেন কিংবা কাউকে দান করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু(আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বোনপো) বলেছেন, যদি খাল্লাম্মা আমার কথা না মানেন তাহলে, আমি তাঁর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে দেবো। অর্তাৎ বায়তুলমাল হতে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে যে পরিমান ভাতা দেয়া হয় তা কমিয়ে দিয়ে শুধূ খরচ চালনার পরিমান অর্থ দেবো। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জিজ্ঞেস করলেন, সে কি একথা বলেছে? লোকেরা বললোঃ হাঁ, তিনি একথাই বলেছেন। অতঃপর আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, ইবনে যুবাইয়েরের সঙ্গে আর কখনো কথা বলবো না। এরপর তিনি তার সাথে সকল সম্পর্কে ছিন্ন করে নিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললো। ইবনে যুবাইয়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট সুপারিশকারী পাঠালেন। কিন্তু হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট সুপারিশকারী পাঠালেন। কিন্তু হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কারো কোন সুপারিশ মানলেন না। শপথও ভাংলেন না। এ বিষয়টি তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখযামা এবং আবদুর রহমান ইবনে আসওয়াদকে কসম দিয়ে বললেন, যে কোনভাবেই হোক আমাকে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন। তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। এ ব্যাপারে কসমও খেয়ে ফেলেছেন।অতঃপর মিসওয়ার এবং আবদুর রহমান তাকে সঙ্গে নিয়ে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বাসার দরজারয় কড়া নেড়ে আওয়াজ দিলেন। সালাম জানিয়ে বললেন, আমরা ভেতরে আসতে পারি কি? হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন হাঁ, আসুন। তখন উভয়ে বললো, আমরা সকলেই আসবো কি? তিনি বললেন, হাঁ, আপনারা সবাই আসুন। তিনি তখন জানতেন না, তাদের সঙ্গে ইবনে যুবাইয়েরও আছেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করলো। ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্দার আড়ালে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে চলে গেলেন।সেখানে গিয়েই হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জড়ায়ে ধরে তাকে মাফ করে দেবার জন্যে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাইতে লাগলেন। কসম দিয়ে দিয়ে তিনি হযরত আয়েশাকে অপরাধ মাফ করে দেবার জন্যে অনেোধ জানাতে লাগলেন।এদিকে মিসওয়ার এবং আবদুর রহমানও আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইয়েরের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়ার জন্যে এবং তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করার জন্যে কসম দিয়ে দিয়ে সুপারিশ করতে লাগলেন।
এরা উভয়ে তাঁকে ঐ হাদীস স্মরণ করিয়ে দিলেন, যে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনদিনের বেশী কোন মুসলমানের রাগ করে কথা বলা বন্ধ রাখা জায়েয নয়। যখন সবাই সমবেতভাবে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উপর চাপ সৃষ্টি করলেন েএবং জোর দিয়ে বললেন যে, আপনি যা করছেন সেটা অন্যায় ও গুনাহ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আমি কসম খেয়ে ফেলেছি এবং কসম অত্যন্ত কঠিন বিষয়। মোটকথা তারা উভয়ে হযরত আয়েশাকে ক্রমাগতভাবে বুঝাতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কসম ভংগ করে ইবনে যুবাইয়েরের সংগে কথা বললেন এবং কসমের কাফফারা স্বরুপ ৪০জন গোলাম মুক্ত করে দিলেন। পরবর্তী জীবনে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর এ ভূলের কথা মনে উঠলেই কাঁদতে শুরু করতেন এবং এতো অধিক পরিমাণে কাঁদতেন যে চোখের পানিতে তার ওড়না ভিজে যেতো।–বুখারী
দাসদের উপর অন্যায় আচরণের অনুভূমিঃ
(আরবী*****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইন্নালি মামলুকীনা- আমার কতিপয় গোলাম আছে।(আরবী) ইয়খূনূনানী- আমার সাথে খিয়ানত করে।(আরবী)ইয়াছুনূনানী- আমার নাফরমানী করে। (আরবী) আদরিবুহুম-আমি তাদের মারধোর করি।(আরবী) ইউহসাবু- হিসাব নেয়া হবে। (আরবী) ইকাবাকা- তোমার শাস্তি। (আরবী) উকতুসসা-প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে।(আরবী) ফাতানাহহাররাজুলু- লোকটি এক কোণে চলে গেলো। (আরবী) উশহিদুকা- আমি আপনাকে সাক্ষী রাখবো।
৪৩৬।আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নিকট এসে নিবেদন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কতিপয় গোলাম আছে। তারা আমার সাথে মিথ্যা কথা বলে।আমানতের খিয়ানত করে। আমার নাফরমানী করে। আমি তাদের গালিগালাজ করি ও মারধোর করি। এ বিষেয়ে আমার কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,কিয়মতের দিন তাদের মিথ্যে বলা, খিয়ানত করা, অবাধ্য আচরণ করা িএবং তাদের বিরুদ্ধে তোমার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সহ সবগুলোরই হিসেব নেয়া হবে। তুমি তাদেরকে যে শাস্তি দিচ্ছো। তা যদি তাদের অপরাধের তুলনায় কম হয় তা তোমার জন্যে মংগলের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি তোমার প্রদত্ত শাস্তি তাদের অপরাধের তুলনায় বেশী হয়ে যায় তাহল বেশীটুকুর সমপরিমাণ প্রতিশোধ তোমার থেকে গ্রহণ করা হবে। একথা শুনে সে ব্যক্তি এক কোণে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি পবিত্র কুরআনের এ আয়াত পড়োনি যেখানে আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবী) আমি কিয়ামতের দিন ইনসাফের পাল্লায় প্রত্যেকের আমল ওজন করবো। ওজনে কারো প্রতি কোন রকমের যুলুম করা হবে না। অণু পরিমাণ আমলও তা ভাল হোক কিংবা মন্দ হোক, আমলনামায় থাকলে তার হিসেবে নেয়া হবে।আর হিসেব নেবার জন্যে আমিই যথেষ্ট। তখন সে ব্যক্তি বললো, এ গোলামগুলোকে আমার নিকট থেকে পৃথক করে দেয়াই উত্তম মনে করছি।হে আল্লাহর রাসূল!আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে তাদের সবাইকে মুক্ত করে দিলাম।–তিরমিযি
ব্যাখ্যাঃ দুনিয়াতে এমন বহু লোক আছে যারা চাকরবাকরকে মারধোর করে থাকে ।কিন্তু এ লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কেনো এলো এবং কেনো জিজ্ঞেস করলো এ বিষেয়ে তার কি অবস্থা হবে? যদি আখেরাতের ভয় তার মনে উদয় না হতো তাহলে এ প্রশ্ন তার মনে কখনোই জাগতো না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুণে আকুল হয় কান্না শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত সব গোলামকে আযাদ করে দেয়। এ আশায় যে, তাদের উপর যদি কোন অতিরিক্ত যুলুম হয়ে থাকে তাহলে তার কাফফারা হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহভীতিই তাকে এ সময় এ সমস্ত কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী সাথীদের মাত্র কয়েকজনের অবস্থার সামান্য কিছু একানে আলোচনা করা হয়েছে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উন্নততম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বর্বর সমাজের লোকজনের কি পরিমাণ চারিত্রিক উন্নতি সাধন করেছিলেন এটা তারই প্রমাণ।
আখেরাতের চিন্তা
কেনো আযাব পাবার যোগ্যঃ
(আরবী*****************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) তহদিবু- চুলায় লাকড়ি ঠেলে আগুনের তেজ বাড়াচ্ছিল। (আরবী) হাজ্জা-আগুন দাউদাউ করে জ্বলতো। (আরবী) তানাহহাত বিহি- তাকে দূরে সিরিয়ে রাখতো।(আরবী) বিআবী আনতা ওয়া উস্মী- আপনার ওপর আমার মা বাপ কুরবানহোক। (আরবী) ালমারিদুল মুত্তামাররিদা- অবাধ্য অহংকারী। (আরবী) আবা- অস্বীকার করে।
৪৩৭।আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কোন এক যুদ্ধাভিযানে ছিলাম। একদিন কতিপয় লোকের নিকট দিয়ে যাবার বেলায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন ধর্মের লোক? তারা বললো, আমরা মুসলমান। (আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন) সেখানে একজন স্ত্রী লোক একটি ডেকচিতে রান্না করছিলো। চুলায় লাকড়ী ঠেলে দিয়ে দিয়ে আগুনের তেজ বাড়াচ্ছিলো। স্ত্রীলোকটির কোলে ছিলো একটি শিশু সন্তুান। যখনই আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠতো শিশুটিকে সে একটু দূরে সরিয়ে নিতো। স্ত্রীলোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, হাঁ। সে বললো, আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক।আল্লাহ কি সর্বাধিক করুণাময় নন? তিনি বললেন, হাঁ। সে বললো, মা যেরুপ সন্তানের প্রতি স্নেহশীল। আল্লাহ কি তাঁর বান্দাগণের প্রতি মায়ের চেয়ে বেশী স্নেহশীল নন? তিনি বললেন হাঁ। আল্লাহ মায়ের চেয়ে অনেক বেশী স্নেহ পরায়ণ। তখন স্ত্রীলোকটি বললো, কোন মা তো তার সন্তানদের আগুনে ফেলতে চায়না। স্ত্রীলোকটির কথা শুনে রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা নীচু করে কাঁদতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, আল্লাহ তাঁর অবাধ্য, অহংকারী ও তাঁর একত্বকেঅস্বীকারকারী বান্দা ব্যতীত অন্য কাউকে শাস্তি দেবেন না।–মিশকাত
ব্যাখ্যাঃ উল্লেখ্য যে, মহিলাটি মুসলমান ছিলো এবং আল্লাহর করুণা ও অন্যান্য গুণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও অবহিত ছিলো।তবু তিনি উপরোক্ত প্রশ্নগুলো কেনো করলেন? এ মহিলার মনে আখেরাতের চিন্তা বাসা বেঁধেছিল। সবকিছু করার পরও তিনি মনে করতেন যে জান্নাত লাভের জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট নয়। জাহান্নামের ভয়াবহ ভীতির কথা তার মনে অহরহ জাগতে ছিলো।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, জাহান্নামের অধিবাসীতো সে হবে, যে দ্বীনের আহবান প্রত্যাখান করেছে। তুমি তো মুসলমান। তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে কেনো?এমন ধরণের কোন লোককেই আল্লাহ জাহান্নামী করবেন না। আখেরাতের চিন্তায় গভীরভাবে নিমগ্ন এরুপ মুসলমানদের জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের এ জবাব অত্যন্ত বিজ্ঞজনোচিত ছিলো।
ইসলাম পূর্ব জীবনের গুনাহ সম্পর্কেঃ
(আরবী********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আতাইতু- আমি আসলাম। (আারবী) উবসুত- বাড়িয়ে দিন। (আরবী) (আরবী) ফাকাবাযতু- আমি টেনে নিলাম। (আরবী) উরীদু-আমি চাই। (আরবী) তাশতারিতু- তুমি শর্ত দিবে।(আরবী) আমা আলিমতা- তুমি কি জান না? (আরবী) ইয়াহদিমু- মাফ হয়ে যায়।
৪৩৮।ওমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ যখন আমার মনে ইসলাম গ্রহণের প্রেরণা সৃষ্টি করলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে নিবেদন করলাম। আপনার ডানহাত বাড়িয়ে দিন। আমি আপনার হাতে বাইয়াত করবো। (অর্থাৎ একথার অঙ্গীকার করবো যে একন থেকে একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী ব্যতীত অন্য কারো বন্দেগী করবো না) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন। তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন। তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বললেন, কি হলো হে ওমর!কি হলো হে ওমর!হাত টেনে নিলে কেনো? আমি বললাম, আমি কিছু শর্ত লাগাতে চাই। তিনি বললেন, কি শর্ত? আমি বললাম, আমার পেছনের গুনাহ রাশি মোচনের শর্ত লাগাতে চাই। তিনি বললেন, হে ওমর!তুমি কি জানো না, ইসলাম গ্রহণ করলে ইসলাম পূর্ব যাবতীয় গোনাহ মাফ হয়ে যায়।–বুখারী
ব্যাখ্যাঃ এখানে এ বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, অমুসলিমদের মাঝে কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাবলীগের কাজ এমন কার্যকরভাবে সম্পাদিত হতো যে, মানুষ আখেরাতের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়তো। তাদের মনে এ ধারণা বদ্ধমুল হয়ে যেতো, পূর্বপুরুষদের ধর্মকর্মে তাদের কোন উপকার হবে না। এ পার্থিব জীবনের পর আরো একটি অনন্ত অসীম জীবন আছে যেখানে বর্তমান জীবনের কৃতকর্মের হিসাব নিকাশ নেয়া হবে। সুতরাং সে জীবনের মুক্তির জন্যে চিন্তা ভাবনা করা দরকার।
বেশী করে নামায পড়ার পরামর্শঃ
(আরবী********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) কুনতু আবীতু-আমি রাত কাটাতাম।(আরবী) ফাআতীহি বিউযুয়িহি-তাঁর ওযূর পানি এনে দিতাম। (আরবী) সালনী- আমাকে জিজ্ঞেস করো। (আরবী) আসআলুকা- আমি আপনার কাছে চাই।(আরবী) মুরাফাকাতাকা-আপনার সাহচর্চ। (আরবী) ফাআয়িন্নী-অতএব তুমি আমায় সাহায্য করো।
৪৩৯।রাবিয়া ইবনে কায়াব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে থাকতাম এবং ওযুর পানি এন দেয়া সহ তাঁর অন্যান্য দরকারী কাজকর্ম করে দিতাম একদিন তিনি আমাকে বললেন,আমার নিকট কিচু চাও। আমি বললাম আমি জান্নাতে আপনার সঙ্গ পেতে চাই।এটা ছাড়া আর কি চাও? আমি বললাম,আমি অন্য কিছু চাই না।ওটাই আমার জন্যে যথেষ্ট। তিনি বললেন, তাহলে বেশী করে নামায পড়ো। আমার সহায়তা করো।–মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাইলে উৎসাহ উদ্দীপনার সংগে আল্লাহর বেন্দগী করো। বেশী করে নামায পড়ো। এ আমল ব্যতীত আমার সংগে জান্নাতে থাকা সম্ভব নয়।
শাহাদাতের পুরস্কারঃ
(আরবী********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী)ফাযাকারা- অতৎপর তিনি আলোচনা করলেন। (আরবী)তুকাফফিরু- ক্ষতিপূরণ হবে। (আরবী) খাতায়ায়া- আমার গুনাহসমূহের।(আরবী) সাবিরুন-ধৈর্যধারণকারী।(আরবী) মুহতাসিবুন-আল্লাহকে খুশী করার আশায়। (আরবী) মুকবিলুন- সামনে চলতে থাকো। (আরবী) মুদবিরুন- পলায়নকারী। (আরবী) আদ্দাইনুন-ঋন।
৪৪০।আবু কাতাদু রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলু্ল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের সামনে বক্তৃতা করার সময় বললেন, আল্লাহর উপর ঈমান আনা ও তার রাস্তায় জিহাদ করাই হলো সর্বোত্তম আমল।একথা শুনে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে গিয়ে মাহাদাত বরণ করি। তাহলে আমার অতীতের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে কি? তিনি বললেন, হাঁ যদি তুমি আল্রাহর রাস্তায় দুশমনের মুকাবিলায় অবিচল হয়ে লড়ািই করো। পালিয়ে না যাও এবং এমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় লড়তে লড়তে শাহাদাত বরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। কিচুক্ষন পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বলছিলে? সে বললো, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হই তাহলে আমার অতীতের গুনাহ মাফ হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ তোমার সব গুনাহ মাফ করা হবে, যদি তুমি একমাত্র আল্লাহকে খুশী করার আশায়,দুশমনের মুকাবিলায় অটল অবিচল থেকে লড়াই করতে থাকো।পলায়ন না করো। কিন্তু তোমার যদি কোন ঋণ থাকে তাহলে তা মাফ হবে না। জিবরীল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক্ষুনি একথা বলে গেলেন।–মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ আখেরাত সম্পর্কে যার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে তার মানসিক অবস্থা েএরুপই হয়ে যায়।যে সবসময়ই তার অতীতের গুনাহ কি করেমাফ হবে এই চিন্তা করতে থাকে।
এ হাদীস দ্বারা মানুষের অধিকার যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা প্রকাশিত হয়েছে।কেউ যদি কারো নিকট ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করে কিংবা ঋণদাতার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে না নেয় তাহলে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে গেলেও তাকে মাফ করা হবে না। ঋণের হিসাব তাকে দিতেই হবে।
ছোট ছোট গুনাহঃ
(আরবী***************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আদাককুন-সূক্ষ, নগণ্য। (আরবী) আইয়িুনুকুম- তোমাদের চোখ। (আরবী) আশশারু-চুল। (আরবী) কুন্না নাউদ্দুহা-আমরা গণ্য করতাম। (আরবী) আলমুবিকাতু- মারাত্নক ধ্বংসকারী।
৪৪১।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি সমকালীন লোকজনকে বলেছেন, তোমরা অনেক সময় বহু অপরাধ করচো যা তোমাদের চোখে একটি পশমের চেয়েও নগন্য বলে মনে হয়। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে এগুলোকে দ্বীন ও ঈমানের জন্যে অত্যন্ত মারাত্নক ধ্বংসকারী গুনাহ বলে গণ্য করতাম।–বুখারী
ব্যাখ্যাঃ মানুষ যদি ছোট ছোট অপরাধগুলোকে ক্ষুদ্র মনে করে অবহেলা করতে থাকে তাহলে তার এমন অভ্যেস গড়ে উঠবে যে, একদিন মারাত্নক অপরাধকেও সে ক্ষুদ্র মনে অবহেলা করবে।
আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভালোবাসাঃ
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী)আসসাআতু-কিয়ামত। (আরবী) ওয়াইলকা- তোমার মঙ্গল হোক। (আরবী) মা আদাদতা- তুমি কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো? (আরবী) উহিব্বু- আমি ভালবাসি। (আরবী) ফারিহূ- তারা খুশী হয়েছে।
৪৪২।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কল্যাণ হোক। তুমি কি এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছো? সে বললো, তার জন্যে তো আমি বিশেষ কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারিনি। তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে খুবই ভালোবাসি। রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তুমি যাকে ভালোবাস পরকালে তাঁর সংগেই থাকবে।(অর্থাৎ মানুষ এখানে যাকে ভালোবাাসে পরকালে তাঁর সংগেই থাকবে) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, সেদিন সমবেত মুসলমানগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একথায় এতো বেশি খুশী হয়েছিলেন যে, ইসলাম গ্রহণের পর এতো বেশী খুশী হতে আমি আর কখনো দেখিনি।–বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগী সাথীগণ নেক আমলের ক্ষেত্রে কতো বেশী অগ্রসর ছিলেন স্বয়ং কুরআনই তার সাক্ষ্য। তা সত্ত্বেও তাঁরা পরকালের ব্যাপারে খুবই চিন্তিত থাকতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেয়া এ সুসংবাদে তাঁদের অন্তরে খুশীর তুফান সৃষ্টি হওয়াতো খুবই স্বাভাবিক। অনুরুপ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত লোকদেরকে এরুপ খশীর সংবাদ দেয়াই দরকার।
ইসলামে নৈতিক চরিত্র
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (অরবী) কিয়ারুকুম- তোমাদের ভালো লোক। (আরবী) আহসানুকুম আখলাকা-চরিত্রের দিক থেকে তোমাদের সকলের চেয়ে উত্তম।
৪৪৩।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মদ্যে সর্বাধিক ভালোক লোক হলো তারা, যারা চরিত্রের দিক দিয়ে তোমাদের সকলের চেয়ে ভালো।
ব্যাখ্যাঃ উদ্ধৃত হাদীস থেকে নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব সুষ্পষ্টরুপে বুঝতে পারা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আদর্শ উপস্থাপিত করেছেন, তাতে ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েচেমানুষের নৈতিক চরিত্রের উপর এবং এটাকেই মানুষের সঠিক কল্যানের উৎস বলে ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ অসৎ চরিত্রের কাজ হতে নিজেকে দূরে রাখবে। উত্তম ও উৎকৃষ্ট নৈতিক গুনাবলী গ্রহণ করবে। এটাই হচ্ছে মানুষের বৈশিষ্ট্য। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের মন মগজ, চরিত্র ও কার্যাবলীকে নির্মল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও নিস্কলুষ এবং সর্বপ্রকারম ক্লেদ কালিমা মলিনতা হতে মুক্ত করে তোলা। কেননা,মানুষের বৈশিষ্ট্য স্বীকৃত ও প্রমাণিত হতে পারে উত্তম নৈতিক চরিত্রের বদৌলতে। অত্র হাদীসের বক্তব্য হচ্ছে এই যে, নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে যে ব্যক্তি সর্বোত্তম, ইসলামের দৃষ্টিতে সেই হচ্ছে উত্তম ব্যক্তি। এখানে প্রকৃত মানুষ্যত্ব ও উত্তম নৈতিক চরিত্র একই জিনিসের দুই নাম। যার উন্নত মনুষ্যত্ব রয়েছে সেই উৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। উত্তম চরিত্র ব্যতীত কোন মানুষই মানুষ হওয়ার দাবি করতে পারে না।
(আরবী**********************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) আকরাবুকুম- তোমার অধিক কাছাকাছি। (আরবী) মাজলিসান-অবস্থানের দিক দিয়ে। (আরবী) আসারসারুনা- অনলবর্ষি বক্তা। (আরবী) আলমুতাফাইহিকুনা- অহংকারী।
৪৪৪।হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মদ্যে আমার কাছে অধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে অধিক নিকটবর্তী সেই সব লোক যারা তোমাদের মধ্যে আখলাক ও নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম। পক্ষান্তরে তোমাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর ঘৃণিত এবং কিয়ামতের দিন আমার কাছ থেকে অধিক দূরে থাকবে সে সব লোক, অনলবর্ষি বক্তা, লম্বা লম্বা কথা বলে লোকদের অস্থির করে তোলে এবং অহংকার পোষণ করে। সাহাবীগণ বলেনঃ তিন ধরণের রোকদের মধ্যে প্রথম দুই ধরনের লোকদের তো আমরা জানি, কিন্তু শেষোক্ত লোক কারা? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারা হচ্ছে অহংকারী লোক।
ব্যাখ্যাঃ রাসূলের নিকটবর্তী ও প্রিয় লোক কে এবং কে প্রিয় নয়, তার একটি বাহ্যিক মাপকাঠি উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, উত্তম চরিত্র সম্পন্ন ব্যক্তিগণই কিয়ামতের দিন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু িআলাইহি ওয়াসাল্লামেরকাছে অধিকতর প্রিয় হবে। তারা সেদিন রাসূলের সার্হা্য লাভ করবে,রাসূলের শাফাআতেরও অধিকারী হবে। কিন্তু যাদের মধ্যে তিন ধরনের দোষের একটি থাকবে, তারা যেমন রাসূলের প্রিয়পাত্র হতে পারবে না, তেমনি রাসূলের নৈকট্য ও সাহায্য পাবে না। তাদের মধ্যে একশ্রেনীর লোক তারা, যারা খুব বেশি কথা বলে, কথা বলার সময় কৃত্রিমতা ও কপটতার আশ্রয় নেয়, এত দ্রুত এবং তাড়াতাড়ি কথা বলে যে, অনেক সময় তা সঠিকভাবে বুঝাও যায় না। দ্বিতীয় তারা, যারা দীর্ঘ ও লম্বা লম্বা কথা বলে, কথার বাহাদুরীতে এত উচ্চমর্গে পৌছে যায় যে, তাদের যেন নাগালই পাওয়া যায় না। নিজেদের কথার উচ্চ প্রশংসা নিজেরাই করতে থাকে। তাদের কথা হতে এ ভাব সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তারা দুনিয়ায় কাউকেই পরোয়া করে না, কারও মান সম্মান মার্যাদার কোন মূল্য যেন তাদের কাছে নেই। আর ততীয় তারা, যারা মুখ ভরে কথা বলে, কথা বলার সময় এমনভাবে করে যে,সমস্ত কথা যেন মুখের ভিতরই বন্ধী হয়ে পড়েছে এবং বিকট ধরনের শব্দই শুধু শ্রুুতিগোচর হয়। তাদের কথার মধ্যে এমন একটা প্রচ্ছন্ন অথচ প্রকাশ্য ভাব লক্ষ্য করা যায় যে, তারা যেন সকলের নাগালের বাইরে। অন্য সব লোক যেন তাদের থেকে অনেক ছোট, অনেক হীন এবং অনেক দূরে অবস্থিত। অহংকার, আত্নাভিমান ও আত্নশ্রেয়বোধ তাদের কথাবার্তার মধ্য দিয়ে নগ্নভাবে প্রকাশ পায়। আলোচ্য হাদীসের দৃষ্টিতে তারা শুধু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অপ্রিয় নয়, গোটা মানব সমাজেও তারা নিকৃষ্ট চরিত্রের লোক বলে বিবেচিত। তারা আর যাই করুক বা না করুক, মানুষের অন্তর জয় করতে ও ভক্তি শ্রদ্ধা অর্জন করতে সমর্থ হয় না, সত্যিকার মানুষের পরিচয় তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না।
হযরত আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ঈমানদার বান্দার দাড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্র অপেক্ষা অধিক ভারী জিনিস আর কিছুই হবে না, আর যে লোক বেহুদা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট ধরনের কথাবার্তা বলে, আল্লাহ তায়ালা তাকে মোটেই পছন্দ করেন না।
নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব
(আরবী***********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) বুইসতু- আমাকে পাঠানো হয়েছে। (আরবী) লিউতামমিমা- পরিপূ্র্ণ করার জন্য।(আরবী) মাকারিমাল আখলাকি-উত্তম চরিত্র।
৪৪৫।মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁর কাছে এ খবর পৌছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমাকে নৈতিক চরিত্র মাহাত্না পরিপূর্ণ করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করা হয়েছে।–মুয়াত্তা ইমাম মালিক
হযরত আবু হুরাইরা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানদার লোকদের মধ্যে ঈমানের দিক দিয়ে পূর্ণ ব্যক্তি সেই হতে পারে, যে তাদের মধ্যে নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে সকলের অপেক্ষা উত্তম।– আবু দাউদ, দারেমী
ইসলামের নৈতিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য
(আরবী*************)
শব্দের অর্থঃ (আববী) লাইউদরিকু- অবশ্যই লাভ করতে পারবে। (আরবী) দারাজাতুন-সর্বদা।(আরবী) কায়িমুল্লাইল-রাতে নফল নামায আদায়কারী।(আরবী) সায়িমুন্নাহারী-দিনে রোযা পালকনকারী।
৪৪৬।হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় মুমিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্রের সাহায্যে সে সব লোকদের ন্যায় সম্মান ও মর্যাদা লাভ করতে পারে, যারা সারা রাতে নফল নামায পড়ে এবং দিনে রোযা রাখে।–আবু দাউদ
ইসলামে নৈতিকতার ভিত্তি
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- ইয়াবলুগু- পৌছতে পারে না। (আরবী) আলমুত্তাকীনা- আল্লাহভীরুগণ। (আরবী) ইয়াদাউ- ছেড়ে দেয়। (আরবী) বাসুন-কষ্ট, ক্ষতি, দোষ।
৪৪৭।আতিয়া সাদী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্নিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা মুত্তাকী লোকদের মধ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত শামিল হতে পারে না, যতক্ষন পর্যণ্ত না সে কোন দোষের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশংকায় সেই সব জিনিসও ত্যাগ না করে, যাতে বাহ্যত কোনই দোষ নেই্।– তিরমিযি
তাকওয়ামূলক জীবনধারা
(আরবী************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) মুহাক্কিরাতুন- তুচ্চ নগন্য। (আরবী) আযযুনুবু- গুণাহসমূহ। (আরবী) তারিবান- জিজ্ঞাসাবাদ।
৪৪৮।হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আয়েশা! ছোট ছোট ও নগন্য গুনাহ হতেও দূরে সরে থাকা বাঞ্চনীয়। কেননা, সেই সব সম্পর্কেও আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।–ইবনে মাজাহ
সাধারণ লোকদের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ
(আরবী*********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- ইয়ারহামু- দয়া করা হবে না।
৪৪৯।হযরত জাবীর ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক সাধারণ মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করে না, তার প্রতি আল্লাহ তায়ালাও রহম করেবন না।
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইম্মাআতান- একজন আর একজনের কথায় কাজের অনুসরণকারী। (আরবী) ইন আহসানান্নাসু- লোকেরা ভাল কাজ করলে। (আরবী) ওয়াইনযালামু- তারা যুলুম করলে। (আরবী) ওয়া ইন আসাউ- তারা খারাপ কাজ করলে।
৪৫০।হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অপরকে দেখে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ো না- এভাবে যে, তোমরা বলবেঃ অপর লোক ভাল কাজ ও ভাল ব্যবহার করলে আমরাও ভাল কাজ, ভাল ব্যবহার করবো, অপর লোক যদি যুলুমের নীতি গ্রহণ করে, তবে আমরাও যুলুম করতে শুরু করবো। বরং তোমরা নিজেদের মনকে এ দিক দিয়ে দৃঢ় ও শক্ত করে নাও যে, অপর লোকেরা খারাপ ব্যবহার বা যুলুম করলে তোমরা যুলুম ও খারাপ কাজ কখনো করবে না।– তিরমিযি
(আরবী**********)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) ইকামাতু হাদ্দিন- আল্লাহর একটি হদ্দ কায়িম করা ।(আরবী) খািইরুন- কল্যানকর। (আরবী) আরাবাঈনা লাইলাতিন –চল্লিশ রাত।
৪৫১।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর কোন অনুশাসন কার্যকরী করা আল্লাহর লোকালয়ে চল্লিশ রাত পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অপেক্ষাও কল্যাণকর।–ইবনে মাজাহ
হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই মহান আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ, নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অবশ্য অবশ্যই তোমরা অন্যায় ও পাপ কাজ হতে নিষেধ করবে। অন্যথায় আল্লাহ তার নিজের তরফ হতে তোমাদের ওপর কঠিন আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমাদেরকে একেবারেই পরিত্যাগ করা হবে এবং তখন তোমাদের কোন দোয়াও কবুল করা হবে না। – তিরমিযি
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অপরিহার্যতাঃ
(আরবী**************)
শব্দের অর্থঃ (আরবী) লা- ইউআযযিবু- শাস্তি দেন না। (আরবী) আল আম্মাতু- সাধারণ লোক। (আরবী) বিআমালিল খাসসাতি- বিশেষ লোকজনের কৃতকর্মের গদরুন। (আরবী) কাদিরুনা- তারা সক্ষম।
৪৫২।আদ্দী ইবনে আলী আরকিন্দী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের এক মুক্ত ক্রীতদাস আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সে আমার দাদাকে একথা বলতে শুনেছে যে, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ কখনো বিশেষ লোকদের (অপরাধমূলক) কাজের কারণে সাধারণ লোকদের উপর আযাব নাযিল করেন না। কিন্তু তারা (সাধারণ লোক) যদি তাদের সম্মুখে প্রকাশ্যবাবে পাপ কাজ অনুষ্ঠিত হতে দেখতে পায় এবং তারা এর প্রতিবাদ করতে ও তা বন্ধ করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তা বন্ধ না করে কিংবা প্রতিবাদ না করে, তবে ঠিক তখনই আল্লাহ তায়ালা সাধারণ লোক ও বিশেষ লোক সকলকে এই আযাবে নিক্ষেপ করেন।– শরহে সুন্নাহ