একটি মজবুত সংগঠনের পরিচয়
আদর্শিক ভিত্তিতে কোন ভূ-খণ্ডের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হলে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। বলিষ্ঠ সংগঠিত উদ্যোগ ছাড়া কায়েমী স্বার্থবাদের অকটোপাস থেকে সমাজকে মুক্ত করা কিছুতেই সম্ভব নয়। সেই জন্যই আদর্শিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে দীর্ঘ সময় ধরে একটি শক্তিশালী বা মজবুত সংগঠন গড়ে তোলার জন্য অহর্নিশ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কোন সংগঠন ক্রমশঃ শক্তি অর্জন করে গণ মানুষের সংগঠনে পরিণত হলেই কাংখিত পরিবর্তনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এখানে আমরা সংক্ষেপে একটি মজবুত সংগঠনের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
১. সুযোগ্য নেতৃত্বের সমাবেশ
একটি সংগঠনের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শিকড় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দানের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিত্বের সমাবেশ প্রয়োজন। যেহেতু সংগঠনের কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব এই সকল ব্যক্তিই পালন করে থাকেন সেহেতু তাঁদের যোগ্যতার মান অনুযায়ীই সংগঠনের পরিকল্পনা প্রণীত হয় এবং তাঁদের যোগ্যতার মান অনুযায়ীই তা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
সংগঠনের যেই স্তরে বা যেই অঞ্চলে সুযোগ্য ব্যক্তিবর্গ থাকেন সেই স্তরে সেই স্তরে বা সেই অঞ্চলে কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জিত হয় এবং কর্ম এলাকায় তাঁদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সংগঠনের কোন স্তরে বা কোন কর্ম এলাকায় নেতৃত্ব দানের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ দুর্বল হলে সেখানে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়তে বাধ্য। শুধু তাই নয় সেখানে কাজ থমকেও দাঁড়াতে পারে। ফলে পরবর্তী স্তরে কাজ সম্প্রসারিত হওয়া অথবা সাংগঠনিক তৎপরতার প্রাণবন্যা নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানো দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়।
অতএব সংগঠনের অগ্রগতির স্বার্থে এর সকল স্তরে সুযোগ্য নেতৃবর্গের সমাবেশ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রকৃতপক্ষে এটিই হচ্ছে সাংগঠনিক মজবুতির প্রথম ও সর্ব প্রধান শর্ত।
২. নবীনদেরকে সম্পৃক্ত করার সক্ষমতা
এটা সত্য যে, প্রবীণের অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প নেই। তেমনিভাবে এটাও সত্য যে, নবীনদের কর্মোদ্দীপনার কোন বিকল্প নেই। কাজেই একটি সংগঠনে প্রবীণ ও নবীনের সম্মিলন প্রয়োজন। যেই সংগঠন ক্রমান্বয়ে তরুণ তাজাদেরকে সংগঠনের সর্বস্তরে সম্পৃক্ত করে নিতে পারে না তা এক পর্যায়ে এসে গতিশীলতা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য।
যোগ্যতাসম্পন্ন নবীন কর্মীগণ যাতে সংগঠনে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় সেইদিকে নজর রাখা সংগঠনের সকল স্তরের নেতৃবর্গের একটি বিশেষ কর্তব্য। বস্তুতঃ কোন সংগঠনে নবীনদের বিপুল সমাবেশ ঘটলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে সেই সংগঠন সাংগঠনিক মজবুতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করলো।
৩. ব্যবস্থাপনার যোগ্য ব্যক্তিদের সমাবেশ
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মূল নেতৃত্ব ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক লোক নিয়োগ করতে হয়। অফিস পরিচালনা, গ্রন্থাগার পরিচালনা, হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি কাজের জন্যও বেশ কিছু লোকের প্রয়োজন। এইসব কাজের পদগুলো বাহ্যতঃ ছোট বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এইগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। এইসব পদে যাঁরা থাকেন তাঁরাই মূল নেতৃত্বকে ব্যাকআপ সার্ভিস দিয়ে থাকেন। তাঁরা যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক মানে ব্যাকআপ সার্ভিস দিতে না পারেন তাহলে মূল নেতৃত্ব সঠিক সময়ে এবং সঠিক মানে তাঁদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে। সেই জন্য এই পদগুলোতেও যাতে দক্ষ ব্যক্তিত্বের সমাবেশ ঘটতে পারে সেইদিকে মূল নেতৃত্বকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
‘একজন কর্মী বেকার। কোথাও কর্মসংস্থান করা যাচ্ছে না। কাজেই সংগঠনের অফিসে ঢুকিয়ে দাও’- এই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন ব্যক্তিকে ব্যবস্থাপনার কোন দায়িত্ব দেয়া সমীচীন নয়। বেকার কর্মীর জন্য প্রয়োজনবোধে কল্যাণ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তাই বলে অযোগ্য বা কমযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ব্যাকআপ সার্ভিস দেবার মতো কোন পদে কিছুতেই নিয়োগ করা উচিত নয়। সঠিক পদে সঠিক ব্যক্তির নিয়োগও একটি মজবুত সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪. প্রয়োজনীয় ও উন্নততর উপকরণের সমাবেশ
দিনের পর দিন মানুষের বস্তু জ্ঞান বিস্তৃতি লাভ করছে। মানুষ জীবনকে সহজ ও গতিশীল করার জন্য নিত্য নতুন উপকরণ আবিষ্কার করছে। এইগেুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে দূরতম অঞ্চলের সাথে যোগাযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা মানুষ লাভ করছে। দুনিয়ার অপরাপর সংগঠন সেইগুলো ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে আর একটি ইসলামী সংগঠন সেইগুলো ব্যবহার না করে পিছিয়ে থাকবে এটা মোটেই অভিপ্রেত নয়। টেলিফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট, টেলেক্স, অডিও ভিডিও ইকুইপমেন্টস, ফটোষ্ট্যাট মেশিন, কম্পিউটার মেশিন, মোটর সাইকেল, মোটর গাড়ী ইত্যাদি বর্তমান কালে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় উপকরণ। প্রয়োজনের তীব্রতা সামনে রেখে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে এইগুলের সমাবেশ ঘটাতে হবে ক্রমান্বয়ে। এইগুলোর সমাবেশ নিঃসন্দেহে একটি গতিশীল সংগঠনের পরিচয় বহন করে।
৫. শিকড় পর্যায় পর্যন্ত সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ
একটি ভূ-খণ্ডের প্রতিটি এলাকা সংগঠনের আওতাভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সংগঠনের আদর্শিক ধ্যান-ধারণা, এর দৃষ্টিভঙ্গি এবং বক্তব্য গণ-মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছতে হলে নিম্নতম স্তর পর্যন্ত এর প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন। শিকড় পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটানো ছাড়া এটি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
তদুপরি একটি সংগঠন তো শেষাবধি গণ-মানুষের সংগঠন হতে চায়। তাই গণমানুষ যতো জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সংগঠনের শাখা সেখান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে হবে। সংগঠন গণ-মানুষের বহুমুখী সমস্যা সমধানের দায়িত্ব পালন করবে, জনগণকে সাথে নিয়েই কায়েমী স্বার্থবাদের ভিত কাঁপিয়ে তুলবে। আর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগঠন গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত থাকতে হবে।
রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র সংগঠনের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠলে ধরে নিতে হবে সংগঠন সাংগঠনিক মজবুতির আরেকটি জরুরী শর্ত পূরণ করতে পেরেছে।
৬. নেতৃত্ব ও কর্মীদের সুসম্পর্ক
কোন সংগঠনে নেতৃবৃন্দ যদি বস্ সেজে যান এবং কর্মীগণকে ভৃত্য মনে করেন তাহলে সেই সংগঠন বেশি দিন বেঁচে থাকার কথা নয়। এই ধরণের কোন সংগঠনের একজন কর্মী দুনিয়াবী কোন স্বার্থে হয়তোবা বাহ্যিকভাবে নেতৃত্বের আনুগত্য করতে পারে, কিন্তু তার অন্তরে নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকার কথা নয় এবং তার অন্তরে নেতৃত্বের প্রতি সীমাহীন ঘৃণাই বাসা বেঁধে থাকার কথা। যেই সংগঠনের নেতৃত্ব এবং কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্কের ধরণ এই, সেই সংগঠনকে মজবুত সংগঠন বলার কোন উপায় নেই।
যেই সংগঠনের নেতৃত্ব কর্মীদেরকে আন্তরিকভাবেই ভাই মনে করেন, তাদেরকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন এবং সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়ান সেই সংগঠনের কর্মীবৃন্দ স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করবে, ভালোবাসবে, অকাতরে তাঁর বা তাঁদের নির্দেশ মেনে নেবে এবং নেতৃত্বের নির্দেশে যেই কোন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই স্বাভাবিক।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এই কর্মীদের ভূমিকা ভাড়াটে কর্মীদের ভূমিকার মতো হবে না। এমতাবস্থায় সংগঠনের কাজকে তারা নিজেদেরই কাজ মনে করবে এবং সর্বোত্তমভাবে সেই কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে।
তাই নেতৃত্ব ও কর্মীদের সুসম্পর্ক সাংগঠনিক মজবুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
৭. কর্মীদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক
কোন সংগঠনে বহুসংখ্যক কর্মীর সমাবেশ ঘটলেই তাকে মজবুত সংগঠন বলা যায় না যদি না সেই সংগঠনের কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বিরাজ করে। পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকলেই এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারে, নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অপরের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
যেই সংগঠনের কর্মীগণ নিজের প্রয়োজনের ওপর অপরের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে সেই সংগঠনের শক্তি অনেক।
সেই সংগঠনের কর্মীদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ থাকে না। সেই কারণেই থাকে না পরনিন্দা। আর হিংসা-বিদ্বেষ এবং পরনিন্দার অনুপস্থিতি সঠিক অর্থেই একটি সংগঠনের পরিপূর্ণ সুস্থতার লক্ষ্যণ। কাজেই কোন সংগঠনের কর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বিরাজ করলে সেই সংগঠন সাংগঠনিক মজবুতি অত্যাবশ্যকীয় একটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পেরেছে, এই কথা জোর দিয়েই বলা যায়।
৮. ভারসাম্যপূর্ণ বহুমুখী তৎপরতা
একটি সংগঠনের থাকে নানামুখী কাজ। বিশেষ করে একটি আদর্শিক সংগঠন বহু ব্যাপক কর্মসূচী নিয়ে কাজ করে থাকে। আদর্শিক কনসেপ্টগুলোর উপস্থাপনার মাধ্যমে চিন্তা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি, ব্যক্তির স্বকীয়তায় আমূল পরিবর্তন সাধন, সামাজিক ব্যধি ও সমস্যাগুলো নিরসনকল্পে পরিচালিত সংস্কারধর্মী কমকাণ্ড এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সৎ ব্যক্তিদের উত্থান প্রয়াস একটি বাস্তবধর্মী সংগঠনের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই কর্মসূচীর বাস্তবায়নের জন্য পরিচালিত হয় বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ড। এইসব কর্মকাণ্ডের কোন একটি দিকও না বাহুল্য, না অপ্রয়োজনীয়। এইগুলোকে সামনে রেখেই সংগঠন কর্ম এলাকায় কর্ম তৎপরতা চালায়, সংগঠনের মাঠকর্মীরা মাঠ চষে বেড়ায়। কিন্তু এই মাঠ চষে বেড়ানোর কাজটা একপেশে হয়ে গেলেই সমস্যা। সবগুলো কাজই যদি যুগপৎভাবে সম্পাদিত হয় তাবেই সোনায় সোহাগা। সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে যাতে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা পায় সেইদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন সংগঠনের পরিচালকবৃন্দ। কোন একটি দিককেও উপেক্ষা বা অবহেলা না করে ভারসাম্য রক্ষা করে যদি সংগঠন কর্মতৎপরতা চালাতে পারে তাহলে এই সংগঠন মজবুত সংগঠন নামে আখ্যায়িত হওয়ার দাবি করতে পারে সংগতভাবেই।
৯. আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা
একটি সংগঠনের বিভিন্নমুখী তৎপরতা পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থাভাবে যদি কোন সাংগঠনিক কাজ ব্যাহত হয় এটা নিঃসন্দেহেই দুর্ভাগ্যজনক। তদুপরি এটা সাংগঠনিক দুর্বলতার পরিচায়কও বটে।
একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান এর গোটা কর্মী বাহিনীকেই দিতে হবে। এর জন্য কর্মী বাহিনীর মধ্যে অব্যাহতভাবে মটিভেশন প্রদানের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তবে কর্মী বাহিনীর বাইরেও সংগঠনের প্রভাব বলয়ের অন্তভুক্ত ধনী ব্যক্তিদেরকে এই সংগঠনে অর্থ দানের মর্যাদা এবং প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে বুঝাতে হবে। তাহলে তাঁরাও এই সংগঠনের তহবিলে অকাতরে দান করতে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করা যায়।
মোটকথা, অর্থাভাবে সংগঠনকে পঙ্গু করে রাখার কোন উপায় নেই। শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে কোন অর্থ পাওয়া না গেলেও সংগঠনের প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করতে হবে এবং তা করতে হবে সংগঠনের কর্মীদের কাছ থেকেই। কোন সংগঠন যখন এর কর্ম এলাকায় বিভিন্নমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিজেই দিতে পারে তখন একে শক্তিশালী সংগঠন গণ্য করার একটি মজবুত ভিত্তি পাওয়া যায়।
১০. কর্ম এলাকায় নেতা ও কর্মীদের ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি
সংগঠন যেই ভূ-খণ্ডে বা যেই অঞ্চলে কাজ করে থাকে সেই ভূ-খণ্ড বা অঞ্চলে এর নেতৃবৃন্দ এবং কর্মী বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব থাকা প্রয়োজন। অবশ্য এই প্রভাব এমনিতেই সৃষ্টি হয় না। সংগঠন যখন বহুমুখী তৎপরতা চালিয়ে জনগণের আস্থাভাজন হতে পারে তখনই এই প্রভাবের বিস্তৃতি ঘটে। আসলে সমাজের প্রতিটি মানুষই কল্যাণের কাঙ্গাল। তারা যখন নিশ্চিত হতে পারে যে এই সংগঠন এবং এর নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী সত্যিকার অর্থেই তাদের কল্যাণকামী, তখন তারা এই সংগঠনের দিকে মানসিকভাবে ঝুঁকে পড়ে।
তখন তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশা জানাবার জন্য এদের কাছেই ছুটে আসেন। তাদের নানাবিধ সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য এদেরই সহযোগিতা কামনা করে। এই অবস্থাতে সংগঠন যদি তাদের প্রতি অর্থবহ কোন সহযোগিতা দিতে পারে তাহলে তারা কাগজ কলমে না হলেও আন্তরিকভাবেই এই সংগঠনেরই লোক হয়ে যায়।
কর্ম এালাকায় এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্দ্বিধায় বলা চলে যে সংগঠন একটি মজবুত সংগঠন হওয়ার অতীত গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
১১. বৈরী শক্তিগুলোর চক্রান্ত নস্যাৎ করার ক্ষমতা
বৈরী শক্তিগুলোর ইসলামী সংগঠনের উপস্থাপিত আদর্শের বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। কেন না যেই কোন যুক্তি-তর্কে এটাই প্রমাণিত হয় যে ইসলামই সর্বোত্তম সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ। যারা এর কল্যাণকারিতা এবং সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না তারা অন্যায়ভাবে কোমর বেঁধে এর বিরোধিতায় নেমে পড়ে। যেহেতু তারা আদর্শিকভাবে একে মুকাবিলা করতে পারে না সেহেতু তারা একটি ভয়াল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এই সংগঠনের কর্মী বাহিনী এবং জনগণের মাঝে একটা ব্যবধান সৃষ্টি করতে চায়। তদুপরি মিথ্যা প্রচারণার ঝড় তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালায়।
বৈরী শক্তিগুলোর এই চক্রান্তজাল ছিন্ন করেই ইসলামী সংগঠনকে সামনে এগুতে হবে। একে অবশ্যই জনগণের কাছে পৌঁছতে হবে। জনগণ যাতে বিরুদ্ধবাদীদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সেই জন্য ব্যাপক গণ-সংযোগ, বিপুল সংখ্যক প্রচার পত্র বিতরণ, পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মোটকথা বৈরী শক্তিগুলোর যাবতীয় অপকৌশল ভণ্ডুল করে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্তি মুক্ত রেখে জনগণ এবং সংগঠনের মধ্যে একটি দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সংগঠন যদি এটি নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বুলন্দ কণ্ঠেই বলা যাবে যে সংগঠন মজবুতির আরেকটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে পেরেছে।
…….. সমাপ্ত ……..